অবিবাহিত বউ পর্ব-০৬

0
384

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৬
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

আজ ভার্সিটিতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। অবশ্য অরিনের জন্যই দেরি হয়েছে। তোহা অরিন রিকশা থেকে নেমে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিল। ভাড়া মিটিয়ে পেছনে ফিরতেই তোহার চোখ গেল ভীড় জমে থাকা মেয়েদের দিকে। কালকে যেখানে নাহিদের ছবিটা লাগিয়ে ছিল সেই খানেই মেয়েদের ভীড় জমে আছে। তোহার মুখে হাসি ফুটলো। সকলে তাহলে এখনো নাহিদের ছবিটা দেখছে। তোহা অরিনকে বলল,
“দেখেছিস? উনি সবার কাছে কি রকম ভাইরাল হয়ে গেছে। চল আমরাও একটু দেখে আসি।

অরিন তোহার সাথে পা বাড়াল। ভীড় জমিয়ে রাখা মেয়ে গুলো কেমন করে যেন তাকালো তোহার দিকে। দেয়ালের দিকে তাকাতেই তোহা বিস্ম’য়ে হত’ভম্ব হয়ে গেল। অরিন ও কম অবাক হলো না। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। চেতনা ফিরতেই হাসতে শুরু করল। অরিনকে হাসতে দেখে তোহা চোখ পাকিয়ে তাকাল। কিন্তু অরিন সেই দিকে পাত্তা দিল না। সে হাসতেই লাগলো। তোহা বি’রক্ত হয়ে রাগী গলায় বলল,
“এমন একটা অবস্থায় তোর হাসি পাচ্ছে? আমার তো জাস্ট রাগে শরীরটা জ্ব’লে যাচ্ছে।

তোহার কথাটা কানে গেলেও অরিন হাসি থামাল না। কোনো মতে মুখ চেপে ধরে হাসি থামিয়ে বলল,
“তো হাসবো না? তোদের যা কাহিনী দেখছি তাতে না হেসে উপায় আছে? এক জনের থেকে আরেকজন এক কাঠি উপরে। উফ দোস্ত। তুই যেমন তোর বরটাও ঠিক তেমন। দুজনের মধ্যে এতো মিল? আমি তো জাস্ট হা হয়ে গেছি।

তোহা কড়া দৃষ্টিতে তাকাল। কিন্তু তাতে অরিনের কি? অরিন তার মতোই রইল।‌ তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। অরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“একদম হাসবি না তুই। আমার এই অবস্থা দেখে তোর খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? তুই আমার বান্ধবী? আমার এই অবস্থায় তুই হাসছিস?

অরিন মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“কি এমন হয়েছে তোর? আজকে তোর যেমন লাগছে গতকাল নাহিদ ভাইয়ার ও এমনই লেগেছিল। আমি তো মানা করেছিলাম এইসব করতে। তখন তো শুনিসনি। এখন বুঝ।

তোহা আবারো দেয়ালের দিকে তাকাল। সেখানে নাহিদের আর তোহার একটা ছবি লাগানো। তাদের ছবির নিচে লেখা ‘এদের রিলেশনের আজ দুই দিন। সবাই এদের জন্য দোয়া করবেন। যাতে দুজনের রিলেশনটা বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

তোহা লেখাটা পড়ে আবারো জ্ব’লে উঠলো। প্রচুর রাগ লাগছে তার। অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি তো ভেবেছিলাম কিছু করবো না। কিন্তু তুই ফোন দিয়ে আইডিয়াটা দিলি। এখন সব দোষ তোর। তুই আইডিয়া না দিলে আমি এমন কিছুই করতাম না।

অরিন তোহার কথায় হাঁ হয়ে গেল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“এই জন্যই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। আমি কি তোর কাছে গিয়ে বলেছিলাম যে ‘তোহা নাহিদ ভাইয়াকে শায়ে’স্তা করার একটা আইডিয়া পেয়েছি। তুই আমার আইডিয়াটা ফলো কর।

তোহা জবাব দিল না। চুপ করে রইল। জবাব দিবেই বা কি? অরিন তো আর যেচে আইডিয়া দিতে আসেনি। তোহাকে চুপ থাকতে দেখে অরিন আবারো বলল,
“আমি এইসব কিছুই বলিনি। উল্টো তুই বলেছিস নাহিদ ভাইয়াকে শায়ে’স্তা করার জন্য আইডিয়া দিতে। আমি মানা করাতে জোর করেছিস। আর এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল?

তোহা অরিনের দিকে মুখ ছোট করে তাকাল। তারপর করুণ স্ব’রে বলল,
“এইসব বাদ দে। এখন বল এই কাগজটার কি করবো? সকলে কিভাবে দেখছে।

অরিন সাথে সাথে জবাব দিল,
“একটা রঙিন কাগজ কিনে এইটার উপর লাগিয়ে দে। তাইলেই রঙিন কাগজের আড়ালে এই কাগজটা ঢেকে যাবে। তখন আর কেউ দেখতে পারবে না।

তোহা তাতেই রাজি হলো। দোকান থেকে একটা কালো রঙের কাগজ নিয়ে এলো। দেয়ালে লাগানো কাগজটার উপর কালো কাগজটা লাগিয়ে দিল। ব্যাস। ভেতরের কাগজটা আর দেখা গেল না। তোহা হাসি মুখে বলল,
“এবার শান্তি। এখন আর কেউ দেখতে পারবে না।

এবার কেউ দেখতে না পারলেও তোহা ভার্সিটিতে আসার আগেই অনেকে দেখে নিয়েছে। তোহা ভার্সিটির ভেতরে যেতেই তোহার সামনে একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“তোমরা কি ভার্সিটিতে নতুন নাটক শুরু করেছো। প্রথম যেদিন ভার্সিটিতে আসলে সকলে বুঝল তুমি নাহিদের বউ। কিন্তু কালকে পোস্টারে দেখি নাহিদ সিঙ্গেল। কিন্তু আজকে দেখি তোমার আর নাহিদের রিলেশন আছে। যত্ত’সব ডং।

তোহা করুণ চোখে অরিনের মুখের দিকে তাকাল। মেয়েটা সম্ভবত তার সিনিয়র। তাই কোনো কিছু বলার সাহস পেল না। চুপ করে রইল। তোহার নীরবতা দেখে মেয়েটা বুঝে গেল নাহিদের সাথে সত্যিই তোহার রিলেশন আছে। তোহার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেল।

মেয়েটা চলে যেতেই তোহা রাগে ফেটে পড়ল। একমাত্র ওই নাহিদের জন্য এতো গুলো কথা শুনতে হলো। তোহা দ্রুত পায়ে হেঁটে ক্লাসে চলে গেল। ক্লাসে গিয়ে আরেক কাহিনী। রিয়া তোহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কঠিন স্ব’রে বলল,
“সব তোমার প্ল্যান তাইনা? ভার্সিটির সকলের সামনে নাহিদের গার্লফ্রেন্ড সেজে বসে আছো। ইচ্ছে করে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছো যেন সবাই জানে তুমি নাহিদের গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু সেই দিন তো মুখ দিয়ে অন্য কথা বের হয়েছিল।

তোহা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে তাকাল। কৌতুক করে বলল,
“আমি তো তোমার নাহিদের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি। দেখো আমার প্রান যায় যায়। বেঁচে থাকার জন্যই দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দিয়েছি। নাহলে যে নাহিদের বিরহে আমার মরণ হতো। যত্ত’সব আজাইরা প্যাঁ’চাল।

শেষের কথাটা তোহা বি’রক্তি নিয়ে বলল। রিয়া ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“এখন আজাইরা প্যাঁ’চাল বলছো। কিন্তু সকলের কাছে তো ঠিকই নাহিদের গার্লফ্রেন্ড সেজে বসে আছো।

তোহা দুচোখ বন্ধ করল। এইসব যন্ত্র’নায় মাথা ব্য’থা শুরু হয়েছে। রিয়ার কথার জবাবে অরিন বলল,
“দেখো তোহা এসবের কিছুই জানে না। যা করার তোমার নাহিদই বলেছে। তোহাকে কিছু না বলে নাহিদ ভাইয়াকে গিয়ে বল।

রিয়া জবাব দেওয়ার আগেই অরিন তোহাকে নিয়ে ক্লাসে চলে গেল। তোহা ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ক্লাসে আসার সময় একবার ও নাহিদের দেখা পায়নি সে। অতএব এখন ছুটির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।

ক্লাস শেষে ছুটির ঘন্টা বাজলো। তোহা অরিন ক্লাস থেকে বের হলো। মাঠের মাঝখানেই নাহিদ, ফাহিম ও রনি দেখা পেল। তোহা নাহিদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নাহিদ তোহাকে দেখে হেসে বলল,
“সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো বউ? দারুন না?

পাশ থেকে রনি বলে উঠল,
“আরে কি বলছিস? দারুণ তো লাগবেই। এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? এখন সবাই জেনে গেছে ভাবী তোর গার্লফ্রেন্ড। এখন কেউ ভাবীকে বি’রক্ত করবে না।

“আপনারা কিন্তু বেশি বেশি করছেন। আমার সাথে এমনটা করার খুব দরকার ছিল? এমন হেন’স্থা না করলে হতো না? আমাকে হেন’স্থা করে খুব মজা পান তাই না?

তোহার কথায় নাহিদ হেসে বলল,
“শুরুটা তো তুমিই করো বউ। আমি নাহয় শেষটা করলাম।

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“দেখুন শুরু শেষ কিছু করার দরকার নেই। আপনি আপনার মতো থাকুন আমি আমার মতো থাকি। আমি ও কিছু করবো না আপনি ও কিছু করবেন না।

“এতো তাড়াতাড়ি হেরে গেলে হবে? যু’দ্ধ তো এখনও শুরুই হলো না। তুমি এতো জলদি হার মেনে নিচ্ছ। তোমার থেকে এটা আশা করিনি বউ।

তোহার রাগটা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। এই ছেলেটা কিছুতেই শান্ত থাকতে দেয় না। কোনো না কোনো ভাবে রাগিয়ে দেয়। তোহা তবুও শীতল কন্ঠে বলল,
“আমাকে বউ বলবেন না। আমি আপনার বউ না।

তোহার এমন ভাবে কথা বলা নাহিদের স’হ্য হচ্ছে না। তোহাকে রাগাতে বলে উঠল,
“রেস্টুরেন্টে তুমিই তো বলেছিলে আমি তোমার বর। আমি তোমার বর হলে তুমিই তো আমার বউ। তো বউকে বউ বলবো না? তুমি যতই বল আমি তোমাকে বউ বলবোই।

নাহিদ তার কাজে সফল হলো। তোহা বেশ ভালো ভাবেই রেগে গেল। রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে। তোহা রাগী গলায় বলল,
“এই মিস্টার ভালো কথা বললে ভালো লাগে না বুঝি? আমি যে ভালোভাবে কথা বলছি আপনি কানে শুনতে পাচ্ছেন না? নাকি এখন কানে তুলো গুঁজে রেখেছেন? আপনার সাথে রেগে কথা না বললে আপনার শিক্ষা হয় না।

নাহিদ তোহার কাছে এগিয়ে এলো। গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলল,
“রেগে কথা বললে তো শিক্ষা হয় না। শিক্ষা হয় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে পড়লে। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। তুমি এমন শান্ত ভাবে কথা বললে আমার ভালো লাগে না। আমার বউকে রাগলেই সুন্দর লাগে।

তোহা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“আপনি মানুষটা সত্যিই বিরক্তি’কর।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে