অবিবাহিত বউ পর্ব-১৭+১৮

0
339

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৭
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ভার্সিটিতে গিয়েই তোহা হত’ভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অরিন তোহার পাশে দাঁড়িয়ে নাহিদকে দেখছে। বাম পা টা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে সে। তার পাশেই রনি আর ফাহিম রয়েছে। তোহার সাথে নাহিদের চোখাচোখি হতেই নাহিদ মুচকি হাসল।

তোহা আর দাঁড়িয়ে রইল না। অরিনের সাথে ওদের দিকে এগিয়ে গেল। তোহা নাহিদের কাছাকাছি যেতেই তোহাকে শুনিয়ে রনি বলল,
“সুন্দর করে বললাম আজ যখন ক্লাস করবি না তাহলে ভার্সিটিতে আসার দরকার নেই। কিন্তু রোমিও তো আমার এই সুন্দর কথাটা শুনল না। তার জুলিয়েডকে দেখার জন্য আমার কথাটা অমান্য করে ভার্সিটিতে চলে আসল। আর আসার সময় বাইক এক্সি’ডেন্ট করে পায়ে চোট পেয়ে অঘ’টন ঘটিয়ে এলো।

তোহা বেশ বুঝতে পারল রনি তাকে শুনাতেই এই কথাগুলো বলল। নাহিদ রনির কথায় কিছুটা শাসিয়ে বলল,
“শা’লা, তুই বেশি কথা বলছিস।

“উচিত কথা বলছি তো তাই বেশি বলছি।

নাহিদ রনির কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দিল না। তোহার দিকে তাকিয়ে দেখল তোহার চোখ জোড়া তার পায়ের দিকে স্থি’র হয়ে আছে। নাহিদের হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল। মেয়েটা অবশেষে তাকে লক্ষ্য করছে।
নাহিদের পা থেকে চোখ সরিয়ে তোহা যেই নাহিদের মুখের দিকে তাকাল অমনি দেখল নাহিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তোহার বুকটা ছ্যা’ৎ করে উঠল। ছেলেটা তাকে দেখতে এসেই এক্সি’ডেন্ট করল। তোহার চোখ দুটোতে পানি চিকচিক করল। নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“বউটা কাল বোধহয় ল’জ্জা পেয়েছিল। আমি সেই লাজে রাঙা মুখ দেখতেই ছুটে এসেছি। কিন্তু তার পরিবর্তে আমাকে বউয়ের ছল’ছল দৃষ্টিতে কেন দেখতে হচ্ছে? ত্ত

নাহিদের বলা কথাগুলো তোহার এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেড়িয়ে গেল। তার মনে চলছে আরেক ভাবনা। ছেলেটা তাকে দেখতে এসে এক্সি’ডেন্ট করল। এখন তার দুজন বন্ধু কি ভাববে? তোহার প্রতি নাহিদের প্রেমটা দেখবে নাকি এক্সি’ডেন্ট হওয়ায় তোহাকে দায়ী করবে?

তোহার মনে এসব ভাবনা এলেও ফাহিম, রনি তোহার প্রতি নাহিদের প্রেমটাই দেখল। নাহিদের কথাগুলো তোহা অ’স্পষ্ট শুনলেও ফাহিম নাহিদের কথার জবাবে বলল,
“নাহিদ তুই কি লুকিয়ে প্রেম-ট্রেম করে ফেলেছিস? অথচ আমাদের একবারও জানালি না।

ফাহিমের কথায় নাহিদ ক’ন্ঠে আ’ক্ষেপ, হতা’শা নিয়ে বলল,
“প্রেমটা হয়েও হচ্ছে না রে বন্ধু। একবার মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রেমটা হয়ে গেল। কিন্তু পরে দেখছি আর হচ্ছে না। এই প্রেম আমায় বহুত পো’ড়াচ্ছে।

নাহিদের কথায় রনি, ফাহিম দুঃখ প্রকাশ করতে সমস্বরে বলে উঠল,
“আহারে।

তোহার চোখে নাহিদের প্রেমটা চোখে পড়লেও সেই সাথে নাহিদের প্রতি তী’ব্র ক্ষো’ভ, রা’গ, অভিমান জমল। কে বলেছিল এতো প্রেম দেখাতে? প্রেম দেখাতে গিয়ে এক্সি’ডেন্ট করে বসে আছে? তাও আমার জন্য। আমি বলেছিলাম এমন করতে? তোহা নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি যখন ক্লাস করবেন না তখন কেন ভার্সিটিতে আসতে গেলেন? আমার প্রতি প্রেম দেখিয়ে মহৎ সাজা হচ্ছে তাই না?

তোহার এমন কথায় নাহিদ ভেতরে ভেতরে আহত হলো। কার জন্য আসলো এতোটা পথ পেরিয়ে? কাকে দেখার জন্য মনটা বারবার ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল? যাকে দেখতে এসে এক্সি’ডেন্ট করে পায়ে চোট পেল সে তার মনের ব্যাকুলতা বুঝল না। তার প্রেম বুঝল না। তবে লাভ কি দেখতে এসে? হয়তো চোখের তৃষ্ণা মিটবে, মনের শান্তি মিলবে কিন্তু প্রেম মিলবে না।

নাহিদ মুখ খুলতে গেলে তোহা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে শ্বা’স নিয়ে বলল,
“আপনার আর কিছু বলে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে না। দয়া করে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন। আর এসব লোক দেখানো প্রেম, ভালোবাসা বন্ধ করুন।

তোহার বলা কথাটা ধনুকের তীরের মতো নাহিদের বুকে বিঁধলো। কি বলল মেয়েটা? এতো সহজে, এতো সহজে তার মনের প্রেমটাকে, ভালোবাসাটাকে লোক দেখানো প্রেম ভালোবাসা বলে উপে’ক্ষা করে গেল। তার মনের প্রেম, ভালোবাসা কি এতোই ফিকে, এতোই তু’চ্ছ?

তোহা যখন অরিনকে নিয়ে নাহিদদের থেকে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে তখন অরিন বলে উঠল,
“এটা তুই কি বললি তোহা? নাহিদ ভাইয়াকে কি করে বললি লোক দেখানো প্রেম, ভালোবাসা বদ্ধ করতে? তোর মনে হয় নাহিদ ভাইয়ার ভালোবাসাটা লোক দেখানো?

তোহা অরিনের দিকে তাকাল। চোখ দুটোতে পানি টলটল করছে। একটু হলেই গড়িয়ে পড়বে। তোহা অরিনকে বলল,
“উনি কেন আমাকে দেখতে এলো? ভালোবাসেন ঠিক আছে কিন্তু উনার বন্ধু কি বলল শুনলি না। আমাকে দেখতে এসে এক্সি’ডেন্ট করেছে। তার মানে উনার এক্সি’ডেন্টের জন্য আমি দায়ী।

তোহার এমন কথায় অরিন ক্রু’দ্ধ হলো অরিন। ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“তুই যে এমন গবেট আমি কল্পনা ও করিনি। তোর মাথায় কি করে এসব ফালতু চিন্তা ভাবনা এলো? নাহিদ ভাইয়া তোকে কতোটা ভালোবাসে সেটা বুঝাতেই উনার বন্ধু কথাটা বলেছে। আর তুই তার উল্টো মানে বের করে বসে আছিস।

তোহার চোখের পানিগুলো নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। অরিনের কথাটা বুঝতে পেরে করুণ স্ব’রে বলল,
“আমি না বুঝেই উনাকে ক’ষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?

অরিন তোহার দিকে ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। মেয়েটা এতো বোকা হলো কবে থেকে। ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“সেটা বুঝতে তোর এতক্ষণ সময় লাগলো?

তোহা কোনো কথা বলল না। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। কি করল সে? এমন করে ছেলেটাকে ক’ষ্ট দিয়ে ফেলল?

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাসের ভিতরে গেল। প্রথম বেঞ্চে রিয়াকে দেখল একটা মেয়ের সাথে হেসে কথা বলছে। রিয়াকে দেখা মাত্রই রিয়ার গতকালের দৃষ্টির কথা মনে পড়ল। তোহা কিছু একটা ভেবে রিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“তুমি কি জানো? তোমার নাহিদ ভাইয়া এক্সি’ডেন্ট করেছে।

তোহার কথাটা কর্নকুহুরে প্রবেশ করা মাত্র রিয়া উঠে দাঁড়াল। বুকের ভেতরে জ্বা’লা শুরু হয়েছে। চোখ দুটোতে পানি এসে ভর করছে। রিয়া ব্যা’কুল হয়ে বলল,
“এক্সি’ডেন্ট করেছে মানে? কোথায় এক্সি’ডেন্ট করেছে? কীভাবে করেছে? আজকে তো ভার্সিটিতে ক্লাস করবে না বলেছিল। তাহলে এক্সি’ডেন্ট করল কোথায়? এখন কেমন আছে ও?

তোহা দুচোখ দিয়ে রিয়ার ব্যাকু’লতা দেখল। মেয়েটা উত্তরের আশায় কেমন ছটফট করছে। তোহা রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করল,
“তুমি কি তোমার নাহিদ ভাইয়াকে ভালোবাসো রিয়া?

আচমকা তোহার এমন প্রশ্নে হত’ভম্ব হয়ে গেল রিয়া। মেয়েটা বুঝল কীভাবে? না, না। ওকে তো বুঝতে দিলে চলবে না। রিয়া নিজেকে সামলে বলল,
“মানে? আমি কেন নাহিদ ভাইয়াকে ভালোবাসবো? তোমাকে তো বলেছিলাম এমনি দুষ্টুমি করতে তোমার কাছে নিজেকে নাহিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছি। নাকি আমার এসব প্রশ্ন শুনে ভাবলে? ছোট থেকে এক ছাদের নিচে বসবাস করছি। হঠাৎ করে যদি শুনি উনি এক্সি’ডেন্ট করেছে তবে এই প্রশ্ন গুলো করা স্বাভাবিক না?

রিয়ার কথায় তোহা দমে গেল। নিজের মনের ভাবনাগুলো অহেতুক মনে হলো। দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে বলল,
“উনি পায়ে চোট পেয়েছেন। এখন হয়তো বাসায় চলে গিয়েছে।

তোহার কথায় রিয়া স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। তবুও মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে নাহিদকে এক পলক দেখার জন্য। তোহা নিজের জায়গায় চলে গেল। তোহা যেতেই রিয়া নিজ মনে বলল,
“কি অ’দ্ভুত! দুদিনের এই মেয়েটা বুঝে ফেলল আমি তোমাকে ভালোবাসি। অথচ ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েও তুমি বুঝলে না।
_________________

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় যখন বারোটা বাজলো তখন হুট করে তোহার ঘুমটা ভেঙে গেল। হয়তো গত তিনদিন ঘুম ভাঙার কারনেই। তবে গত তিনদিনের মতো আজকে নাহিদের কল আসলো না। তোহা মোবাইল হাতে অপেক্ষা করতে লাগলো। মিনিট পাঁচেক সময় কেটে গেল। তবুও কল এলো না। তোহার মনটা ছটফট করছে। আজকে কি উনি কল করবেন না?

তোহা হাঁস’ফাঁস করতে লাগলো। কল কেন করছে না। তোহার অ’স্থিরতা বাড়তে লাগলো। আরো দশ মিনিট পেরিয়ে যেতেই তোহা নিজে কল করল নাহিদের নাম্বারে। একবার রিং হতেই নাহিদ কল রিসিভ করল। তোহা ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আজকে কল করলেন না কেন?

তোহার কথায় নাহিদ অবাক হলো। মেয়েটা কি তার কলের জন্য অপেক্ষা করছিল? মুহূর্তের মধ্যেই নাহিদ খুশি হয়ে গেল। কিন্তু পরক্ষনেই সকালে তোহার বলা কথাটা মনে পড়ল। প্রচন্ড অভিমান জমল মনে। অভিমান নিয়ে বলল,
“ভাবছি আর লোক দেখানো ভালোবাসা দেখাবো না। তাই কল করিনি।

তোহা বেশ বুঝতে পারল নাহিদের অভিমান। সকালে নিজের বলা কথাটার জন্য অনুশোচনা হতে লাগলো। ভেতরটা পুড়তে লাগলো। নাহিদকে বলল,
“আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।

তোহার কথায় নাহিদ হেসে উঠল। মুখে হাসলেও তার ভেতরটাও জ্ব’লে যাচ্ছে। মেয়েটা কি করে এতো কঠিন কথাটা বলতে পারল?

নাহিদ হাসি থামিয়ে নি’ষ্প্রাণ ক’ন্ঠে বলল,
“আমি জানি কীভাবে বলেছিলে।

তোহা এবার একটা অভাবনীয় কাজ করে বসল। নাহিদকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠল,
“আমাকে আপনার অবিবাহিত বউ থেকে বিবাহিত বউ করবেন?

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৮
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

আক’স্মিক তোহার অভাবনীয়, অকল্পনীয় কথায় বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হয়ে যায় নাহিদ। অপ্রত্যা’শিত আনন্দ এসে হানা দেয় হৃ’দয় আঙি’নায়। নাহিদ নিজেকে ধা’তস্থ করে। নিজের এই আনন্দ খুব সন্ত’র্পনে গোপন করে তোহার কাছ থেকে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
“যে লোক দেখানো ভালোবাসে তার বউ হয়ে লাভ কী? দিনশেষে হাহাকার আর আফসোস মিলবে।

তোহা এক পাশ থেকে আরেক পাশে শুয়ে চোখ দুটো ব’ন্ধ করে বলল,
“আফসোস তো এখন হচ্ছে। সকালে বলা কথাটার জন্য। বউ হলে কেবল প্রণয় মিলবে। হাহাকার, আফসোস এক ছুটে পালাবে।

নাহিদ খুব গোপনে মুচকি হাসল। সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। হৃদয়ে বয়ে যাচ্ছে প্রণয় বাতাস। ইশ, প্রেম এতো সুখের কেন? ভালোবাসার মানুষের কথাগুলো এতো মিষ্টি কেন? নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কে বলল প্রণয় মিলবে? প্রণয়ের বদলে যদি প্রলয় হয়ে যায় তখন?

তোহা বড্ড বি’রক্ত বোধ করার চেষ্টা করল‌। কিন্তু হায়! বিরক্তি’কর ছিটে ফোটা ও আসছে না। কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করছে। তোহা অ’ধৈর্য গলায় বলল,
“উফ! আপনি কি হ্যাঁ? আমি নিজ ইচ্ছায় প্রণয় চাইছি আর আপনি প্রলয়ের কথা বলছেন। কেন হ্যাঁ? আমার প্রণয়কে প্রলয়ে পরিনত করার এতো শখ কেন?

নাহিদ তোহার অ’ধৈর্য ক’ন্ঠে হেসে উঠল। শব্দ করে হেসে জবাব দিল,
“কারণ প্রণয় পাওয়া এতো সহজ নয়। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, সাধনা করে পেতে হয়।

তোহা মুখ ভেং’চি দিল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“এ্যা’হ! বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, সাধনা করে পেতে হয়। আপনি কোন সাধনা করেছেন শুনি।

“সাধনা করিনি বলছো? এই যে বারবার, অকারণে তোমার মুখটা চোখের সাথে ভেসে উঠে। কথা বলার তৃষ্ণা মেটাতে রাত-বিরাতে কল দিয়ে কথা বলা। চোখে তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে এক্সি’ডেন্ট করা। এই গুলো সাধনা নয় বলছো?

তোহা নাহিদের কথার জবাব দিল না। চোখ দুটো ব’ন্ধ রেখেই মোহনীয় স্বরে বলল,
“এই শুনুন না। একটু প্রেম প্রেম কথা বলুন তো।

তোহার কথায় নাহিদ হেসে ফেললো। কিছু একটা বলতে গেলেই মাথার মধ্যে দু’ষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“একটু প্রেম প্রেম কথা।

নাহিদের কথা শুনে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। তৎক্ষণাৎ নাহিদের কথাটার মানে বুঝতে পারল না। কয়েক সেকেন্ড পার হতেই যখন কথার মানে বুঝতে স’ক্ষম হলো তখন বলে উঠল,
“আপনি তো দেখছি ভারী অস’ভ্য। ইচ্ছে করে এমন করছেন।

নাহিদ এবারো হাসল। ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমি অস’ভ্য বুঝি? আচ্ছা, তুমি কি করে বুঝলে আমি অস’ভ্য? আমি কি তোমার সাথে অস’ভ্যতা করেছিলাম? ঠিক কি কি করেছিলাম? মানে, আমাকে একটু ব্যাখ্যা করে বলো তো।

তোহা মুখ খুলতে নিল। তখনই নাহিদ তোহাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এই শুনো, শুনো। আচ্ছা, তুমি যেহেতু অস’ভ্যতার স্বীকার হয়েছো সেহেতু অস’ভ্য কাকে বলে? অস’ভ্যতা কতো প্রকার ও কি কি বলো তো।

নাহিদ যে ইচ্ছে করে এসব বলছে তোহার বুঝতে এক মিনিট ও সময় লাগে নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আপনি শুধু অস’ভ্য না। মারা’ত্মক লেভেলের ভয়া’নক অস’ভ্য।

তোহা কথাটা বলেই কলটা কেটে দিল। ছেলেটা ইচ্ছে করে তাকে জ্বালা’চ্ছে। কিন্তু এই জ্বা’লায় যে শরীরে জ্ব’লুনি জ্ব’লছে না। উল্টো ভালো লাগছে। অ’দ্ভুত রকমের ভালোলাগার সৃষ্টি হচ্ছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটছে। প্রেম কতো অ’দ্ভুত, কতো আ’শ্চর্যময়। ইশ, প্রেম এতো সুখ কেন? প্রেম কেন হৃদয় আঙি’নায় ভয়া’বহ তোলপাড়ের সৃষ্টি করে?

তোহা কলটা কেটে দিতেই নাহিদ হেসে উঠল। মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে ভাবল আরেক বার কল করবে কিনা। তারপর ভাবল থাক। আজকে আর কল করার দরকার নেই।

নাহিদ মোবাইলটা হাত থেকে বিছানার পাশে রেখে দিল। বালিশে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে নিজ মনে বলল,
“অবশেষে, অবশেষে তাহলে প্রেমটা হয়ে গেল।

নাহিদের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। চোখ দুটো ব’ন্ধ করতেই চোখের সামনে তোহার রাগী মুখটা ভেসে উঠলো। নাহিদ আবারো বলল,
“মেয়েটা রেগে গেলেও সেই লাগে।
__________________

তারেকুল সাহেব ডাইনিং টেবিলে বসে তোহার জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়ে আসছে। তারেকুলের হাতে খবরের কাগজ। আপাতত চোখ দুটো কাগজের দিকে স্থি’র হয়ে আছে। তোহা আসলেই খাওয়ায় মন দিবে। তারেকুল যখন খবরের কাগজে ম’গ্ন হয়ে আছে তখনই তোহা পেছন থেকে ডেকে উঠল,
“আব্বু।

তারেকুল তোহার ডাক শুনে কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে তোহার দিকে তাকাল। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাসি মুখে এগিয়ে আসছে। তারেকুল মুচকি হেসে বলল,
“আসো মামনি।

তোহা আসলো। তারেকুলের পাশের চেয়ারটায় বসল। তোহার আম্মু নাস্তা এগিয়ে দিতেই খাওয়ায় মনোযোগ দিল। তোহা খাওয়ার মাঝে হুট করে বলে উঠল,
“আচ্ছা আব্বু? আমি যদি কাউকে ভালোবাসি তুমি কি আমাকে তার সাথে বিয়ে দেবে?

তোহার প্রশ্নে তারেকুল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। মুখের খাবারটা খেয়ে ধীরে সুস্থে বলল,
“কেন দেব না মামনি? ছেলেটা যদি তোমার যোগ্য মনে হয় তাহলে অবশ্যই বিয়ে দেব।

তোহা মুচকি হাসল। মুহূর্তের মধ্যেই মুখে আঁধার নেমে এলো। আচ্ছা, আমি যদি বলি আমি নাহিদকে ভালোবাসি তাহলে কি আব্বু বিয়ে দিবে? আমি যে সেদিন আব্বুকে বুঝিয়ে কথাগুলো বললাম, আব্বু কথাগুলো মিথ্যে ভাববে না তো? নাহিদের কথা বললে যদি আমাকে ভুল বুঝে?

তোহা এসব ভাবনায় যখন অন্য মনস্ক হয়ে পড়ল তখনই তারেকুল বলল,
“কি হয়েছে মামনি? তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?

তারেকুলের কথায় তোহা স্ত’ম্ভিত ফিরে পেল। মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“না, আব্বু। আমি কি নিয়ে চিন্তা করবো। তেমন কিছু না।

তারেকুল আর কিছু বলল না। তবে তোহার মাথায় প্রশ্ন গুলো রয়েই গেল। প্রশ্নগুলো তাকে অজানা আ’তঙ্কে জর্জ’রিত করে তুলছে।
____________

তোহা অরিনকে যখন গতকাল রাতের কথা বলল অরিন তখন উৎ’কণ্ঠায়, উত্তেজনায় চেঁচিয়ে বলল,
“কি সত্যি? তুই সত্যি বলছিস? তুই এমনে কীভাবে প্রোপোজ করে ফেললি?

অরিন কথাটা একটু চেঁচিয়ে বলায় কয়েক জোড়া চোখ তার দিকে তাকাল। তা দেখে তোহা কিছুটা ধ’মক দিয়ে বলল,
“আরে, আস্তে কথা বলবি তো। এভাবে চেঁচিয়ে কথা বলে? সকলে কেমন করে তাকিয়ে আছে। তাছাড়া আমি কি এমন বলেছি? এভাবে চেঁচানোর কি আছে? আমি কি কাউকে প্রোপোজ করতে পারি না? অ’দ্ভুত!

তোহার কথাটায় অরিন খুশি হলো। তখনই দেখল ফাহিম, রনি, নাহিদ এদিকে এগিয়ে আসছে। অরিন তোহাকে দেখিয়ে বলল,
“ওই দেখ তোর বর আসছে।

তোহা সামনের দিকে তাকাল। নাহিদের চোখে চোখ পড়তেই নাহিদ চোখ টিপ মারল। ল’জ্জায় তোহা চোখ নামিয়ে নিল। নাহিদ তোহার সামনে এসে দাড়িয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে রইল। তবে তোহার চোখ দুটো মাটির দিকে। নাহিদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহিম বলল,
“দেখ, দেখ। এখন তো তোরই দেখার দিন।

নাহিদ ফাহিমের ঠাট্টার ছলে বলা কথাটার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,
“আর দেখবো কি? বউ তো তাকাচ্ছেই না।

পাশ থেকে রনি তোহার উদ্দেশ্যে বলল,
“এই যে ভাবি, তাকান তাকান। আপনাদের মধ্যে শুভ দৃষ্টিটা হয়ে যাক। তা দেখে আমরা ধন্য হই।

রনির কথায় তোহা আরো ল’জ্জা পেল। এমন ল’জ্জার সম্মুখীন তাকে কখনো হতে হয়নি। তোহাকে ল’জ্জা পেতে দেখে অরিন বলে উঠল,
“আপনারা দেখছেন তো তোহা ল’জ্জা পাচ্ছে। তারপরও ইচ্ছে করে ল’জ্জায় ফেলছেন কেন?

ফাহিম এবার বলে উঠল,
“আমরা ল’জ্জায় ফেলছি বুঝি? কই? আমরা তো ল’জ্জায় ফেলছি না। আমরা একটু মজা করছি। এতে যদি ভাবি ল’জ্জা পায় আমাদের কি দোষ? আমরা কি ভাবির সাথে একটু মজা করতে পারব না?

“এখনো পার্মানেন্টলি ভাবি হয়নি। এতেই আপনারা যা শুরু করেছেন। পার্মানেন্টলি ভাবি হলে না জানি কি করেন।

নাহিদ তোহার দিকে এগিয়ে গেল। তোহার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“একটু তাকাও না বউ।

নাহিদের কথায় তোহা একপলক তাকাল। চোখাচোখি হতেই সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল। ভীষণ ল’জ্জা লাগছে। নিচু সুরে বলল,
“আপনি আমায় বড্ড ল’জ্জা দেন।

তোহা কথাটা বলে দাঁড়ালো না। অরিনকে নিয়ে চলে গেল। নাহিদ তোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। নিজ মনে বলল,
“বউটা বড্ড বেশি ল’জ্জা পায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে