Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 332



তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-২৩+২৪

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৩

এইযে মিস্টার খাটাশ তখন এর জন্য সরি। ভেবো না আমি নিজ থেকে বলছি সরি। মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে বলছি তাই এখন ভাব নিয়ে লাভ নেই মুখ ভেঙচি কেটে শাফিনকে বললো প্রীতি।

শাফিন বসে বসে ফোন টিপছিলো তখন প্রীতির এই কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো প্রীতির দিকে। প্রীতির কথার আগা মাথা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। কথার মানে বুঝতে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো তোর সরি এক্সেপ্ট করি নাই আমি।

সরি বলেছি এই অনেক এখন এক্সেপ্ট করবা কিনা সেটা তোমার ব্যপার।

শাফিন ভ্রু কুঁচকে বললো জানি তুই সরি বলার মেয়ে না। আন্টি বলতে বলেছে তাই বলেছিস এখন আমি আন্টির কাছে যেয়ে বললো তুই আমাকে সরি বলিস নি উল্টো বেয়াদবি করেছিস তখন আন্টি তোর কি হাল করবে? উফফ ভাবতেই ভালো লাগছে। তাহলে তুই থাক আমি যাই কেমন? আন্টিকে খবরটা দিয়ে আসি এ বলে উঠে যেতে নিলে প্রীতি তারাতড়ি সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো এই না না।

শাফিন ভ্রু নাচিয়ে বললো কি না?

প্রীতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো আম্মুর কাছে বিচার দিবে না। আমি কিন্তু সরি বলেছি এখম আম্মুর কাছে মিথ্যাে কেনো বলবা?

তোর সরি আমার পছন্দ হয় নাই তাই এক্সেপ্ট করি নাই আমি, তাই বিচার দিবো এবার সর সামনে থেকে আমাকে যেতে দে।

প্রীতি পড়ে গেলো এবার বিপাকে। মন চাচ্ছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হনুমানের মাথা ফাটিয়ে দিতে কিন্তু আপাতত তা করতে পারবে না। মায়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য হলেও মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তাই শাফিনের দিকে তাকিয়ে বোকা হাসি দিয়ে বললো এখন কি করলে সরি এক্সেপ্ট হবে শুনি?

শাফিন বাকা হেঁসে বললো এবার এসেছিস লাইনে। কিন্তু আমি যা করতে বলবো তুই এখন তা করবি না আমি জানি তাই বাদ দে আমি বরং আন্টির কাছে যাই এ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আবার ও প্রীতি সামনে এসে দাঁত কটমট করে বললো কি করতে হবে?

বেশি কিছু না এখন কান ধরে ১০ বার ওঠবস করবি এবং সাথে বলবি তখন এর বেয়াদবির জন্য সরি।

প্রীতি ছিটকে দূরে যেয়ে বললো মরে গেলেও করবো না এহ্ আসছে কান ধরে ওঠবস করাতে। তোকে কান ধরে ওঠবস করাবো, আবার বলে আমি বেয়াদবি করেছি। তুই তাহলে দাঁত কেলিয়ে হাসছিলি কেনো তার দোষ নাই?

শাফিন দাঁত কটমট করে প্রীতির হাত শক্ত করে ধরে বললো আর একবার তুই তোকারি করলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম প্রীতি।

শাফিনকে এমন রেগে যেতে দেখে প্রীতি কিছুটা ভড়কে গেলো। আমতা আমতা করে বললো হাত ছাড়ো লাগছে আমার।

শাফিন দাঁতে দাঁত চেপে বললো তোর শাস্তি দিগুণ হলো এবার শাস্তির জন্য প্রস্তুত হ।

প্রীতি কাঁপা কন্ঠে বললো ক..কিসের শাস্তি? আ.. আমি কিন্তু আন্টিকে ড…ডাক দিবো বলে দিলাম।

শাফিন ভ্রু কুঁচকে বললো আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস? ভয় দেখাতে হলেও মাথায় বুদ্ধি লাগে সেটা তোর মতো গাধার মাথায় নাই। ডাক মাকে, সারা রাত বসে ডাকলেও শুনবে না কারণ একটু আগে তুই নিজেই আব্বু আম্মুকে তোদের বাসায় পাঠিয়েছিস।

প্রীতি এবার গেলো ফেঁসে এখন এখান থেকে কিভাবে ছাড়া পাবে তাই ভাবতে লাগলো। ঠিক করলো সেদিনের মতো কামড় দিয়ে দৌড়ে দিবে কিন্তু সেই আশায় ও পানি ঢেলে শাফিন বলে উঠলো কামড় দেওয়ার কথা ভুলে যা। এখন কামড় দিলে তোর দাঁত একটাও আস্তো রাখবো না।

প্রীতি এবার কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো ছেড়ে দেওনা।

শাফিন বাঁকা হেসে আচমকা প্রীতির ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলো।

শাফিনের এমন আচমকা আক্রমণে প্রীতি আর্তনাদ করে উঠলো।

প্রীতির আর্তনাদে শাফিন সরে যেয়ে তাকালো প্রীতির দিকে। ফর্সা ঘাড়ে কামড়ের লালচে দাগ পড়ে গেছে তা দেখে বাঁকা হেসে বললো এটাই তোর শাস্তি এ বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।

এদিকে প্রীতি যেনো কিছু বলার ভাষা এই হারিয়ে ফেললো। শাফিনের এমন আচমকা আক্রমণে যেনো জমে বরফ হয়ে গেলো। কি হয়েছে ভালো করে মাথায় ঢুকতেই বুকের ভিতর ধুকপুক করতে লাগলো। শাফিনের এমন আচরণটা ঠিক হজম করতে পারলো না। এটা কি আসলেই শাস্তি ছিলো?
——————–
সবাই এক সাথে খাচ্ছে আর প্রীতি ইয়ানার রান্নার খুব প্রশংসা করছে। প্রথমবার রান্না হিসেবে অনেক ভালো রান্না করেছে।

শাফিন খাওয়ার মাঝে আরচোখে প্রীতির দিকে তাকাচ্ছে। প্রীতি ওর্না দিয়ে ভালো করে মাথা পেচিয়ে আছে। মূলত ঘাড়ের দাগ লুকানোর চেষ্টা। প্রীতির এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো শাফিন তা দেখে প্রীতি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগী চোখে বার বার শাফিনের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু সবাই আছে তাই কিছু বলতেও পারছে না দাঁতে দাঁত চেপে খাবার গিলতে লাগলো।

খাওয়া শেষ হলে বড়রা কিছু নিয়ে আলোচনা করতে বসলো তাই প্রীতি আর ইয়ানা উপরে চলে গেলো। এখন এখানে ওদের থেকে কোনো লাভ নেই।

সিঁড়ী দিয়ে উপরো উঠতে উঠতে ইয়ানা প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো তুই এমন মাথা পেঁচিয়ে আছিস কেনো?

ইয়ানার প্রশ্নে প্রীতি কি জবাব দিবে খুঁজে পেলো না। তাই একটু সময় নিয়ে কথা সাজিয়ে বললো তেমন কিছু না রাতে গোসল করার জন্য গলা ব্যথা করছে।

ইয়ানা বিষয়টা নিয়ে বেশি ঘাটলো না রুমে যেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো, রাতে গোসল করার জন্য এখন প্রচন্ড মাথা ধরেছে, শরীর টাও ম্যাজ ম্যাজ করছে।

কিছুক্ষণ পর পারফি আসলো রুমে। ইয়ানাকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললো কোনো সমস্যা?

ইয়ানা মাথা থেকে হাত সরিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো না কোনো সমস্যা না।

পারফি ইয়ানার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সোফার কাছে যেতে যেতে বললো কোনো সমস্যা হলে বলতে পারো।

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো তেমন কিছু না, আপনি কি এখন কোনো কাজ করবেন?

পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো কেনো?

আ..আসলে রুমের লাইটটা নিভিয়ে দিলে ভালো হতো ঘুম পাচ্ছে খুব।

পারফি তাকালো ইয়ানার দিকে। কেনো যেনো ইয়ানাকে ঠিক লাগছে না কিন্তু কিছু বললো না। উঠে যেয়ে রুমের লাইটটা বন্ধ করে ড্রিমলাইট জ্বালানি দিয়ে ফের সোফায় যেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।

রুমের লাইট বন্ধ করতে ইয়ানা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। প্রচন্ড শীত লাগছে তাই ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুলো। একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

পারফি ল্যাপটপে কাজ করছিলো তখন হঠাৎ কারো গোঙানির শব্দ শুনে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরালো। গোঙানির উৎস খুঁজতে চারপাশে চোখ বুলাতে চোখে পড়লো বেড থেকে শব্দটা আসছে। পারফি ল্যাপটপ বন্ধ করে বেডের কাছে এগিয়ে গেলো। বেডের কাছে যেতে দেখলো ইয়ানা থরথর করে কাঁপছে আর বিরবির করে কিছু বলছে।

পারফি দ্রুত ইয়ানার পাশে বসে কপালে হাত রাখতে চমকে গেলো। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে, সব কিছু যে এই শীতের ভিতর রাতে গোসল করার জন্য হয়েছে তা ঢের বুঝতে পারছে। এই জন্য তখন ঠিক লাগছিলো না আর এই মেয়ে বলেছে কিছু না। মন চাচ্ছে এখন ঠাটিয়ে একটা চর মারতে তখন সত্যি না বলার জন্য। তখন সত্যি বললে মেডিসিন খাইয়ে দিলে এখন এই অবস্থা হতো?

শরীরের তাপমাত্রা অধিক হওয়ার জন্য পারফি পানি এনে রুমাল ভিজিয়ে কপালে দিতে লাগলো। এভাবে অনেক সময় জলপট্টি দেওয়াতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসলো। তাপমাত্রা একটু কমতে পারফি ইয়ানার গালে হালকা করে চাপর মেরে ডাক দিলো। কয়েকবার ডাকার পর ইয়ানা হালকা করে সারা দিলো।

পারফি ঔষধ আর পানির গ্লাস পাশে রেখে ইয়ানার হাত ধরে উঠিয়ে বাসাতে বসাতে বললো একটু উঠে বসে ঔষধ টা খেয়ে নেও তাহলে ভালো লাগবে।

ইয়ানা ঢুলুমুলু হয়ে বসে পারফির হাত আকরে ধরে ধীর গলায় বললো খুব খারাপ লাগছে একটু ঘুমাতে দেন না পরে খাবো।

ইয়ানাকে এমন হাত আকরে ধরতে দেখে পারফি বুঝলো যে ইয়ানা হুঁশে নেই। তাই জোর করে ইয়ানাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে শুইয়ে দিলো। তারপর শরীরে ব্লাংকেট জড়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একসময় ইয়ানা ঘুমিয়ে পড়লো তা দেখে পারফি বেড থেকে উঠতে যাবে অমনি হাতে টান পড়লো। পিছু ঘুরে তাকিয়ে দেখে ইয়ানা এখনো ওর এক হাত জড়িয়ে ধরে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে।

পারফি এবার দ্বিধায় পরে গেলো এখনে থাকবে নাকি সোফায় চলে যাবে। কিন্তু এখন হাত ছাড়াবে কিভাবে যদি ঘুম ভেঙে যায় হাত ছাড়ালে? আবার রাতে যদি জ্বর আসে তখন কি হবে তাই সব ভেবে চিন্তে ইয়ানার পাশে শুয়ে পড়লো। তারপর আলতো করে ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিলো। স্নিগ্ধ ফুলের একটু কষ্টেই যেনো নিজের বুকের ভিতর হাহাকার শুরু হয়ে যায়। এখন কিছুটা শান্তি লাগছে আদুরে বিড়াল ছানাকে নিজের বুকে আগলে নিতে।

পারফির মনে পড়ে গেলো সেদিন রাতের কথা যেদিন ইয়ানাদের বাসায় ছিলো। মেয়েটা সেদিন রাতে ঘুমের মাঝে ওর কাছে চলে এসেছিলো। বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে বিড়াল ছানার মতো সারারাত ঘুমিয়ে ছিলো। সকাল সকাল পারফি আবার ইয়ানাকে ওর জায়গায় শুইয়ে দিয়েছিলো আর নাহলে এই মেয়ে যেই লজ্জাবতী, ঘুৃম ভেঙে ওভাবে নিজেকে দেখলে লজ্জায় স্ট্রোক না করে বসতো। সেদিনের কথা মনে করে মুচকি হাসলো পারফি।
———————————————
সকালে ঘুম ভাঙতে কারো বাহুডোরে নিজেকে আবধ্য দেখে চমকে গেলো ইয়ানা। চমকে উপরে তাকাতে পারফির ঘুমন্ত মুখশ্রী চোখের সামনে ভেসে উঠলো। পারফি এখানে কিভাবে আসলো ভাবতেই মাথা শূন্য হয়ে গেলো। তখন মনে পড়লো কাল রাতের আবছা আবছা কিছু ঘটনা। জ্বরের ঘোরে পারফির হাত আকরে ধরা, পারফির ঔষধ খাইয়ে দেও, মাথায় জলপট্টি দেওয়া তারপর আর কিছুই মনে নেই। ইয়ানা ফের তাকালো পারফির দিকে লোকটা নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ ইয়ানার একরাশ লজ্জায় ঘিরে ধরলো কারণ বুঝতে পারছে ওর জন্যই পারফি এখানে এসেছে কারণ পারফি ওমন ছেলে না যে ওর অনুমতি ব্যতীত ওর কাছে আসবে।

ইয়ানা লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো কিভাবে এখান থেকে ছাড়া পাবে সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। পারফির বাহুডোর থেকে ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো৷

ইয়ানার মোচড়ামুচড়িতে পারফির ঘুম ছুটে গেলো। পিটপিট করে তাকাতে চোখে পড়লো ইয়ানার লজ্জামাখা মুখশ্রী। ঘুম থেকে উঠেই এমন মুখশ্রী দেখে থমকে গেলো পারফি।

পারফিকে কোনো কথা বলতে না দেখে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা আরো অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। ছোটার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বললো ছাড়ুন উঠবো আমি।

ইয়ানার কথায় ঘোর থেকে বের হলো পারফি। ইয়ানার অস্বস্তি বুঝতে পেরে ছেড়ে দিতে যেয়েও কিছু একটা মনে করে ছাড়লো না। হাত এগিয়ে নিয়ে আলতো করে ইয়ানার কপালে হাত রাখলো সাথে সাথে কেঁপে উঠলো ইয়ানা।

পারফি একবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে তারপর বললো ত্যাড়ামো করে রাতে জ্বর উঠিয়ে জ্বালিয়ে মেরেছো। যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম কি হয়েছে তখন সত্যিটা বললে এমন হতো?

ইয়ানা কি বলবে খুঁজে পেলো না। একেতে পারফি এতো কাছে যেনো জমে বরফ হয়ে যাবে আরেকটু হলে। এখন কি করা উচিত বা কি করবে কিছুই মাথায় আসলো না।

ইয়ানাকে কোনো কথা না বলে থম মেরে থাকতে দেখে পারফি উঠতে উঠতে বললো নেক্সট টাইম কোনো সমস্যা হলে আমার থেকে লুকাতে যেনো না দেখি।

পারফি উঠে যাওয়াতে ইয়ানা বড় করে নিঃশ্বাস নিলো তারপর আস্তে ধীরে উঠে বসে পারফির কথায় মাথা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিলো যে আর লুকাবে না।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৪

চারদিকে বাচ্চাদের শোরগোল মেতে উঠেছে চৌধুরী আর শিকদার বাড়িতে। আর সেই বাচ্চাদের সাথে ইয়ানা আর প্রীতি খেলা করছে। আজ যেনো এই বাচ্চাদের সাথে ওরাও বাচ্চা হয়ে গেছে। ক্ষনিক খেলছে কানামাছি, আবার খেলছে লুকালুকি আবার খেলছে দৌড়াদৌড়ি কে কাকে ধরতে পারে।

কিছুটা দূরে শরীফ আহমেদ, পাভেল শিকদার, পারফি, শাফিন ও আরো কিছু স্টাফ মিলে রান্নায় ব্যস্ত।
পাশেই পিয়াসা বেগম আর শাহানা বেগম গল্প করছে বসে বসে। আজ মহিলাদের ছুটি কারণ এই দিনটার সব কাজ ছেলেদের দায়িত্বে থাকে৷ প্রতিবছর এই দিনটা সবার এভাবেই কাটে।

আজ শ্রুতির জন্মদিন তাই এতো আয়োজন। এই জন্মদিনটা অন্য পাঁচটা জন্মদিনের মতো কেক কেটে পার্টি করে পালন করা হয় না। এটা একটু বেতিক্রম ভাবে পালন করা হয়। প্রতি বছর শ্রুতির জন্মদিন আসলে এলাকার সকল এতিম বাচ্চাদের এনে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানো হয়। সাথে সকল বাচ্চাদের নতুন জামাকাপড়, চকলেট, খেলনা আরো অনেক কিছু দেওয়া হয়। প্রতিবাদেরে মতো এবার ও সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

দিনটি সবার জন্য মন খারাপ এর হলেও এতো গুলো বাচ্চার মুখে হাসি ফুটাতে পেরে সবার মন ভালো হয়ে যায়।
এইযে এতক্ষণ শানাহা বেগম মন খারাপ করে বসে ছিলো। বার বার শুধু মনের ভিতর হানা দিচ্ছিলো আজ আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকলে কতো সুন্দর হতো। নিজের হাতে সাজিয়ে দিতাম, খাইয়ে দিতাম আরো কতো কি এসব ভেবে মন খারাপ লাগছিলো কিন্তু বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড়ে সেই মন খারাপটা কেটে গেলো। ওই দূরে ইয়ানা আর প্রীতি বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে আর মন খুলে হাসছে তা দেখে মন শান্ত হয়ে গেলো। তার মেয়ে তার কাছে নেই কিন্তু এই দুটো মেয়েতো কাছে আছে তাতেই মনে শান্তি অনুভব করছে।

পিয়াসা বেগম পাশ থেকে বলে উঠলো দেখছো ভাবি মেয়ে দুটো কেমন ছেলেমানুষী করছে। এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে যদি পড়ে যেয়ে ব্যথা পায়।

শাহানা বেগম প্রীতি আর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো থাকনা করুক আজ একটা দিন মন খুলে দুষ্টমি। দেখো আজ কতোটা প্রাণবন্ত ওরা যেটা দেখতেও ভালো লাগছে।

তা ঠিক বলেছো পাগলি দুটি মেয়ে আমার।

সবাই রান্না করছিলো তখন পারফির ফোনে কল আসলো, পারফি ফোনটা নিয়ে একটু সাইডে গেলো কথা বলতে। কথা শেষ করে ফিরে আসতে নিবে তখন হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলো। সামনের ব্যক্তি ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে পারফি কোমর আকরে ধরে পড়া থেকে বাঁচালো।

এদিকে ইয়ানা হঠাৎ দৌড়াদৌড়ির মাঝে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিতে ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। একটু পর অনুভব করলো নিচে পড়ে নি তার আগেই কেউ কোমর আকরে ধরে পড়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কে পড়া থেকে বাঁচিয়েছে দেখার জন্য চোখ খুলতে পারফির মুখশ্রী ভেসে উঠলো। পারফিকে এই মুহুর্তে দেখে চমকে গেলো ইয়ানা। তারাতাড়ি আশেপাশে তাকালো কেউ দেখছে কিনা। কিন্তু না কেউ দেখছে না সবাই সবার কাজ নিয়ে বিজি তা দেখে ইয়ানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

পারফি ইয়ানাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো এই মেয়ে তুমি না অসুস্থ তাহলে এমন ছোটাছুটি করছো কেনো? মাত্র এইতো পড়ে হাত-পা ভাঙতে।

পারফির ধমক খেয়ে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আ..আসলে সরি খেয়াল করি নি আপনি এখানে।

ইয়ানার নরম গলা শুনে পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আর ধমক দিলো না। এবার কোমল স্বরে বললো শরীর দুর্বল তোমার তাই এখন এমন ছোটাছুটি করা ঠিক হবে না। অনেক খেলেছো এবার যাও আম্মুদের ওখানে যেয়ে বসে বসে গল্প করো।

ইয়ানা ভদ্রমেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো তা দেখে পারফি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বললো গুড।

পারফিকে গাল টানতে দেখে ইয়ানা ঠোঁট উল্টে বললো আপনি আবার আমার গাল টানছেন।

পারফি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো বাচ্চাদের গাল দেখলে আমার টানতে ইচ্ছে করে তাতে আমার কি দোষ?

পারফির কথায় ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে বললো আমি বাচ্চা?

তো তোমার কি নিজেকে বড় মনে হয়? আমারতো মনে হয় না।

তখন প্রীতি ইয়ানার কাছে আসতে আসতে বললো এই ইয়ানা এখানে কি করছিস? কখন থেকে খুঁজছি তোকে আয় তারাতাড়ি খেলা শেষ হয়ে গেলো।

প্রীতির কথায় পারফি প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে বললো বানরের মতো ছোটাছুটি না করে এবার যেয়ে চুপচাপ বস আর নাহলে কাজ করতে লাগিয়ে দিবো কিন্তু।

প্রীতি কোমরে হাত দিয়ে বললো তুৃমি আমাকে বানর বললে কেনো?

বানরের মতো ছোটাছুটি করলে বানর বলবো নয়তো কি বলবো?

ভাইয়া আরেকবার যদি আমাকে বানর বলছো না তাহলে কিন্তু আমি আব্বুর কাছে তোমার নামে বিচার দিবো।

তুই কি আমাকে ভায় দেখাচ্ছিস?

সরো তুমি তোমার সাথে কথা নেই এ বলে ইয়ানাকে নিয়ে পিয়াসা আর শাহানা বেগমের কাছে চলে গেলো তারপর সবাই মিলে গল্পের আসর জমিয়ে দিলো।

গল্পগুজবের মাঝে রান্না কমপ্লিট হয়ে গেলো। রান্না শেষ হতে সব বাচ্চাদের এক সাথে বসিয়ে দিয়ে শাফিন, ইয়ানা, প্রীতি, পারফি মিলে খাবার বেরে দিলো।
বাচ্চাদের খাওয়া হলে সবাই মিলে ওদের নতুন জামাকাপড় দিলো। ইয়ানা চকলেট এর বক্স হাতে নিয়ে সব বাচ্চাদের হাতে চকলেট দিচ্ছে। সব বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ওদের হাসি দেখে সবাই তৃপ্তির হাসি হাসলো।

খাবার দাবার বাচ্চাদের নিয়ে মোট কথা আজকের দিনটা খুব ভালো কাটলো। বাচ্চারা সবাই চলে গেছে আরো অনেক সময় হলো। সবাই মোটামুটি পরিশ্রম করেছে তাই সবাই রেস্ট করতো যার যার রুমে চলে গেলো।

বিকেলের দিকে পারফি আর শাফিন বেড়িয়ে গেলো কাজ আছে বলে।
পারফি আর শাফিন সোজা চলে গেলো ওদের গোপন আস্তানায়। আস্তানার ভিতর প্রবেশ করতে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ৫ জন মানুষকে পড়ে থাকতে দেখলো। সেই সিমকার্ড থেকে যে কয়টা নাম্বার কালেক্ট করেছে এরা এক এক জন তারাই। সিম কার্ডের ভিতর ৬ জনের নাম্বার পাওয়া গিয়েছিলো তার ভিতরে ৫ জনকে গার্ডরা খুঁজে বের করেছে, বাকি আছে একজন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। তবে আশা করছে কিছুদিনের মাঝেই খোঁজ পেয়ে যাবে।

পারফি আর শাফিন গিয়ে লোকগুলোর সামনে বসলো। লোকগুলো ভয়ে কেঁপে উঠলো। এক এক জনে থর থর কারে কাঁপতে লাগলো।

পারফি শান্ত গলায় বললো আমি জানি সেদিন তোরা সব কয়জন ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলি এবার সরাসরি শিকার করবি কার কথায় এমন করেছিস নাকি অন্য উপায়ে কথা বের করবো?

লোকগুলো ভয়ে ঘামতে লাগলো। কিন্তু কেউ শিকার করলো না কার কথায় এমন করছে। তা দেখে পারফি গার্ডদের ইশারা করলো এদের উত্তম মাধ্যম দিতে। পারফির কথায় গার্ডরা সবকয়জনকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেললো তবুও কোনো কথা বের করলো না মুখ দিয়ে।

পারফি এবার গার্ডদের ইশারা করলো থামতে। গার্ডরা থামতে পারফি ফের বললো শেষ বারের মতো বলছি কার কথায় এমন করছিস।

৫ জনের ভিতরে একজন বলে উঠলো আমাদের মেরে ফেলুন তবুও আমাদের মুখ দিয়ে কথা বের হবে না। আমরা মুখ খুললে এমনিও আমরা মারা পড়বো সাথে আমাদের পরিবার ও ধ্বংস হয়ে যাবে।

লোকগুলোর কথা শুনে বুঝলো এরা জীবন দিতে রাজি কিন্তু মুখ খুলতে রাজি না তা দেখে পারফি বললো এদের থেকো কিছু জানা যাবে না, এদের লিডার বাকি যেই একজন আছে ওটাকে আগে খুঁজে বের করতে হবে। ওটার থেকেই সব জানা যাবে।

পারফি চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে গার্ডদের নির্দেশ দিলো যেই একজনকে খুঁজে পাওয়া যায় নি তাকে খুঁজে বের করতে সাথে এদের সব কয়টার একটা ব্যবস্থা করতে।

গার্ডরা সম্মতি দিতে পারফি আর শাফিন বেড়িয়ে গেলো। আস্তানার বাহিরে আসতে শুনতে পেলো বাহির থেকে লোকগুলোর আর্তনাদ। তা শুনে শাফিন বললো শালা গুলোর দম আছে বেশ। জীবন দিবে তবুও মুখ খুলবে না।
——-
রাত ১০ টার দিকে পারফি আর শাফিন বাসায় আসলো তা দেখে প্রীতি কোমরে হাত দিয়ে দুজনের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে রইলো।

প্রীতির এমন রনোচন্ডি রুপ দেখে শাফিন বললো এমন শাঁকচুন্নির মতো তাকিয়ে আছিস কেনো?

প্রীতি ক্ষেপে গিয়ে বললো আর একটা কথা বললে মাথার চুল একটাও আস্ত রাখবো না বলে দিলাম।

পারফি প্রীতিকে শান্ত করার জন্য বললো থাম তোরা, কি হয়েছে সেটা বল, কিছু না বলে এমন করে তাকিয়ে থাকলে হবে?

প্রীতি তেতে গিয়ে বললো এতো সময় লাগলো কেনো তোমাদের আসতে? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।

শাফিন খোঁচা মেরে বললো তোর মতো সারাদিন কি বেকার ঘুরি যে বললি আর চলে আসলাম।

প্রীতি ক্ষেপে কিছু বলতে যাবে তার আগে পারফি আবার থামিয়ে দিয়ে বললো হয়েছে থাম এখন ঝগড়া বাজানোর সময় না। ঝগড়া করার অনেক টাইম আছে তখন করিস আপাতত চুপ থাক, একটু বিজি ছিলাম তাই আসতে লেট হয়েছে।

পারফির কথায় প্রীতি শাফিনের দিকে দাঁত কটমট করে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। তারপর পারফির দিকে তাকিয়ে বললো যা যা আনতে বলেছি সব এনেছো?

পারফি প্রীতির হাতে কতোগুলো ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো সব আছে।

প্রীতি খুশি হয়ে বললো চলো তাহলে এখন ছাঁদে যাই।

পারফি প্রীতি আর শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো তোরা যেয়ে কাজে লেগে পড় আমি একটু আসছি এ বলে উপরে উঠতে নিয়ে আবার কিছু একটা মনে করে পিছু তাকিয়ে বললো যেয়ে যদি দেখি দুইটায় আবার ঝগড়া লাগিয়েছিস তাহলে দুটোকে ধরে সুইমিংপুলের ভিতরে চুবিয়ে রাখবো মনে রাখিস।

শাফিন প্রীতির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো এই কথা তোর বোনের মাথায় ঢুকা, আমার সাথে যেনো কেউ লাগতে না আসে।

প্রীতি ও চোখ পাকিয়ে বললো বয়েই গেছে যা তা মানুষের সাথে আমার লাগতে।

শাফিন রেগে বললো তুই আমাকে যা-তা বললি কেনো? আজতো তোকে আমি….

পারফি হতাশ হয়ে উপরে চলে গেলো। ঝগড়া না করার জন্য এদের বুঝানোর থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে কথা শেখানো সহজ। এদের বোঝানো মানে যেই লাউ সেই কদু।
পারফি সোজা রুমে চলে গেলো। রুমে আসতে দেখতে পেলো ইয়ানা এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে। এতো তারাতাড়ি ইয়ানাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে পারফি এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। ইয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে কপালে আলতো করে হাত রাখলো জ্বর চেক করার জন্য। কপালে হাত রাখতে হালকা গরম অনুভব করলো। শরীরে হালকা জ্বর আছে তাই হয়তো শরীর খারাপ লাগার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।

পারফি কিছুক্ষণ ঘুমন্ত স্নিগ্ধ ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ইয়ানাকে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে ব্লাংকেট টেনে দিলো শরীরে। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ফের ইয়ানার দিকে একপলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ছাঁদের উদ্দেশ্যে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-২১+২২

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২১

রাত বাজে প্রায় ১১ টা। ড্রয়িংরুমে বসে ইয়ানা, প্রীতি,ইমা, ইতি বেগম ও ইসহাক আহমেদ গল্প করছে।
ইতি বেগম সবার কাছে এতো দিনের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলো। যেহেতু ইতি বেগম নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তাই সবাই ক্ষমা করে দিলো কারণ তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি অনুশোচনায় ভুগছে। কেউ তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা ভোগ করলে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তাই সবাই ইতি বেগমকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার নতুন করে হাসিখুশি একটা জীবন শুরি করতে চাইলো।

সবাই গল্প করছিলো তখব কলিংবেল বেজে উঠলো।
ইয়ানা উঠে বললো আমি খুলে দিচ্ছি এ বলে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতে পারফির ক্লান্ত মুখশ্রী ভেসে উঠলো। এই টাইমে পারফিকে দেখে অবাক হলো বেশ কারণ অনেক রাত হয়ে গেছে তাই ভেবেছিলো পারফি আসবে না।

দরজা খুলে ইয়ানাকে এভাবে শটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পারফি বললো সারারাত কি এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে নিবে?

ইয়ানা তারাতাড়ি দরজার সামনে থেকে সরে যেয়ে বললো না না আসুন ভিতরে।

পারফি ক্লান্ত পায়ে ভিতরে প্রবেশ করতে সবার সাথে ড্রয়িংরুমে দেখা হলো। পারফি সালাম দিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ইসহাক আহমেদের পাশে যেয়ে বসলো।

সবাই টুকটাক কথা বলছে তখন ইতি বেগম পারফির কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিলো সেদিনের ব্যবহারের জন্য। ইতি বেগম যেহেতু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে শুনে খুশি হলো।

গল্পের মাঝে কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ সময় তখন ইতি বেগম ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো ইয়ানা মা পারফিকে নিয়ে রুমে যা আমি খাবার গরম করে রুমে পাঠাচ্ছি, পারফিকে দেখে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে এখন একটু রেস্টের প্রয়োজন।

ইসহাক আহমেদ পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কিছু মনে করো না বাবা আমরা ভেবেছিলাম তুমি আসবে না তাই তোমাকে রেখেই সবাই খেয়ে ফেললাম।

ইসহাক আহমেদের কথায় পারফি মুচকি হেসে বললো সমস্যা নেই বাবা, ভালো হয়েছে সবাই খেয়ে নিয়েছেন।

ইসহাক আহমেদ বাবা ডাকটা শুনে পিল চমকালেন। আশা করে নি পারফি বাবা বলবে কারণ কাল ও আঙ্কেল বলে সম্মোধন করেছিলো। আজ পারফির মুখে বাবা ডাক শুনে খুশি হলেন বেশ। খুশি হয়েই বললো যাও বাবা তাহলে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেও।

পারফি সম্মতি দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। পিছু পিছু ইয়ানা ও গেলো।

কিছুক্ষণ পর ইমা এসে খাবার দিয়ে গেলো। পারফি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইয়ানা খাবার সাজাচ্ছে তা দেখে তোলায়া দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এটে নিলো।

পারফিকে ফ্রেশ হয়ে বের হতে দেখে ইয়ানা পারফি উদ্দেশ্যে বললো খেয়ে নিন।

পারফি অলস ভঙ্গিতে বেডে বসতে বসতে বললো খাইয়ে দাও।

পারফির কথায় ইয়ানার কাশি উঠে গেলো। তারাতাড়ি করে গ্লাসের পানি পুরোটা খেয়ে নিয়ে তাকালো পারফির দিকে। ও কানে ভুল শুনেছে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছে না।

ইয়ানার অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো পারফি। ইয়ানাকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো ভুল শোনো নি ঠিকি শুনেছো খাইয়ে দিতে বলেছি।

ইয়ানা কি বলবে খুঁজে পেলো না, এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো আপার হাতে কি হয়েছে?

বউ থাকতে হাত দিয়ে কেনো খাবো? জলদি খাইয়ে দেও খিদে পেয়েছে খুব।

পারফির কথায় ফের ইয়ানার কাশি ওঠার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। এই লোক যে কি লেভেল এর ঠোঁট কাটা স্বভাবের এখন তা ভালো করেই বুঝতে পারছে। কি করবে না করবে ভেবে চিন্তে কাঁপা কাঁপা হাতে খাবার মেখে পারফির মুখের সামনে ধরলো।

পারফি মুচকি হেসে খাবার টা মুখে নিলো। খাবার মুখে দেওয়ার সময় ইয়ানার আঙুল ঠোঁটে হালকা করে লাগতে ইয়ানা কেঁপে উঠলো। ব্যপারটা খুবি মজা লাগলো পারফির, সাথে ইয়ানাকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য খাবার মাঝে আস্তে করে আঙুলে কামড় মেরে দিলো।

ইয়ানা দ্রুত হাত সরিয়ে বললো হাতে কামড় দিলেন কেনো?

পারফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আমি কখন কামড় দিলাম?

এই মাত্রই তো দিলেন।

তোমার যেই তুলতুলে হাত আমিতো ভাত ভেবে কামড় দিয়েছি এখন যদি সেই কামড় হাতে পড়ে তাতে আমার কি দোষ?

ইয়ানা দাঁত কটমট করে তাকালো পারফির দিকে, বিরবির করে বললো ফাজিল লোক একটা। তারপর পারফিকে পুরোটা খাইয়ে দিয়ে সব কিছু রেখে দিয়ে আসলো। রুমে এসে এখন বিপাকে পড়ে গেলো ঘুমাবে কোথায়? ওর রুমে তো সোফা নেই। এদিকে পারফি টান হয়ে শুয়ে আছে ইয়ানা এখন কি করবে ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।

ইয়ানার অবস্থা দেখে পারফি মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে বললো বেড টা যথেষ্ট বড় আছে আশা করি এক রাতের জন্য ম্যানেজ করে নিতে পারবে এতে।

ইয়ানা একরাশ দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে ধীর পায়ে কোলবালিশের অপজিট পাশে শুয়ে পড়লো। অস্বস্তিতে গা কাটা দিয়ে উঠলো। সাথে ভয় ও লাগছে যদি ঘুমের ঘোরে বালিশের অপজিট পাশে চলে যায় তখন কি হবে?

ইয়ানার অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে পারফি বললো রিলাক্স আমি কিছু করবো না। বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে তাই আমি জানি তোমার সময় প্রয়োজন। তুমি তোমার মতো করে সময় নিতে পারো আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আজকের রাতটার জন্য এক বেডে কষ্ট করে ম্যানেজ করে নেও কারণ এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ইয়ানা মনে মনে বললো সমস্যা তো আপনাকে নিয়ে না, সমস্যা তো আমার নিজেকে নিয়েই। আমি জানি আপনি আমাকে টাচ ও করবেন না কিন্তু আমার ঘুম যে ওতোটা ভালো না। নিজেকে নিয়েই নিজের টেনশন হচ্ছে তা কি করে বোঝাই আপনাকে?
ইয়ানা নিজেকে সামলে আস্তে করে বললো সমস্যা নেই আপনি ঘুমান এ বলে অন্যপাশ ফিরে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো ইয়ানা।

পারফি ও আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লো।
——-
সকাল সকাল সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইয়ানা ও প্রীতিকে নিয়ে পারফি বেড়িয়ে গেলো। ওদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাবে তাই এতো তাড়া। ইতি বেগম আর ইসহাক আহমেদ অনেক করে বললো থেকে যেতে কিন্তু এখন থাকার সময় নেই।

এতোদিন পর ইতি বেগমকে আপন করে কছে পেয়ে ইয়ানার ইচ্ছে হয়েছিলো আরো কিছুদিন থাকার কিন্তু কাল নাকি বাসায় কিসের একটা অনুষ্ঠান আছে তাই থাকা হলো না, সবার সাথে যাওয়া লাগলো। যেতে কিছুটা কষ্ট লাগলেও পড়ে প্রীতির বকবকানিতে মন ভালো হয়ে গেলো।

বাসায় এসে পিয়াসা বেগমের সাথে গল্প জুড়ে দিলো প্রীতি আর ইয়ানা। আর পারফি চলে গেলো শাফিনদের বাসায়। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে শাহানা বেগমকে দেখলো সোফায় বসে আছে।পারফি শাহানা বেগমের পাশে বসতে বসতে বললো কি অবস্থা কেমন আছো আন্টি?

শাহানা বেগম মুচকি হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ বাবা। তোমার কি অবস্থা? ইয়ানাদের বাসা থেকে কখন আসলে?

এইতো মাত্রই আসলাম বলতে বলতে পারফির চোখ পড়লো শাহানা বেগমের হাতে ছবির অ্যালবামের দিকে। যেখানে ফুটফুটে একটা বাচ্চার ছবি ফুটে আছে। ছবিটা তার মেয়ে শ্রুতির,যেদিন শ্রুতি পৃথিবীতে এসেছিলো সেদিনের তোলা ছবি এটা।
ছবিটা দেখে পারফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো ছবিটা না দেখলে হয় না? কেনো এই ছবি দেখে নিজের কষ্ট বাড়াও?

শাহানা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কালকে আমার সোনা মেয়েটার জন্মদিন। খুব করে ওকে মনে পড়ছে। আজ যদি আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকতো তাহলে কতোই না সুন্দর হতো।

পারফি শাহানা বেগমকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মন খারাপ করো না। দেখবে একদিন ঠিকি আমাদের শ্রুতি পরীকে আমরা খুঁজে পাবো।

শাফিন উপর থেকে নামতে নামতে বললো দুজন মিলে কি কথা হচ্ছে শুনি?

শাহানা বেগম চোখের পানি মুছে অ্যালবামটা বন্ধ করতে করতে বললো তেমন কিছু না।

শাফিন সোফায় বসতে বাসতে শাহানা বেগমের হাতে অ্যালবামটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যা বোঝার তা বুঝে গেলো। এখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

এই টপিক চেঞ্জ করার জন্য শাফিন বললো খিদে পেয়েছে খেতে দাও।

শাহানা বেগম উঠতে উঠতে বললো আয় খাবার দিচ্ছি আমি তারপর পারফির দিকে তাকিয়ে বললে তুমিও চলো কিছু খেয়ে নিবে।

পারফি শাহানা বেগমকে নিষেধ করলো খাবে না কিন্তু কে শোনে কার কথা। শাহানা বেগম জোর করে খেতে নিয়ে গেলো।

খাওয়া হলে শাহানা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে পারফি আর শাফিন বাসা থেকে বের হলো। বাহিরে এসে শাফিন বললো সিমের ভিতরের তথ্য কালেক্ট করা হয়েছে?

পারফি গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো না। তবে আজকের ভিতরেই সব তথ্য পেয়ে যাবো আশা করি।

পারফি আর শাফিন টুকটাক কথা বলতে বলতে অফিসে পৌঁছে গেলো। অফিসে পৌঁছে পারফি কাউকে ফোন করে অফিসে আসতে বললো। সে আসতে তার হাতে ওই সিমটা দিয়ে বললো এই সিমের ভিতর সকল ইনফর্ম আমার আজকের ভিতরে চাই।

লোকটা সম্মতি দিয়ে সিমটা নিয়ে চলে গেলো।
———————-
সন্ধ্যায় ইয়ানা আর প্রীতি মিলে বিরিয়ানির রান্না করবে ঠিক করলো। পিয়াসা বেগম কিছুতেই রাজি হলো না ওদের রান্না করতে দিতে কিন্তু কে শোনে কার কথা। ইয়ানা আর প্রীতি মিলে জোর করে রাজি করালো।

পিয়াসা বেগম রাজি হলো কিন্তু বললো সে পাশে থেকে হেল্প করবে যদি কোনো বিপদ ঘটিয়ে ফেলে।

তখন প্রীতি পিয়াসা বেগমকে বললো উফফ আম্মু আমরা কি বাচ্চা নাকি যে বিপদ ঘটাবো। আজ তুমি রিলাক্স করো আমরা দুজন সামলে নিবো। এমনেতো সারাদিন পক পক করতে কান ঝালাপালা করে ফেলো কেনো কাজ করি না এখন যেই কাজ করতে চাচ্ছি এখন করতে দিচ্ছো না কেনো?

পিয়াসা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। মায়ের মন কি আর এরা বুঝবে?

ইয়ানা পিয়াসা বেগমকে বললো আন্ট… না মানে মা এতো টেনশন করছো কেনো? আমি টুকিটাকি রান্না পারি তাই রান্না করতে সমস্যা হবে না। আজ একটা দিন এইতো করবো আর না করো না প্লিজ।

পিয়াসা বেগম বললো আচ্ছা যা বাবা কর। যদি কোনো অঘটন ঘটাস তাহলে কিন্তু দুটোকেই ধরে পেটাবো মনে রাখিস।

ইয়ানা পিয়াসা বেগমের গাল টেনে দিয়ে বললো কিছু হবে না যাই তাহলে এ বলে প্রীতিকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো।

পিয়াসা বেগম হাসলো দুই মেয়ের কান্ড দেখে।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২২

বিরিয়ানি রান্না করতে করতে রাত দশটা বাজিয়ে দিলো প্রীতি আর ইয়ানা। এখনো পুরোপুরি রান্না করা হলো না। এই প্রথম রান্না করছে তাই দুজন সব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই শিতের ভিতরেও দুজন ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।

প্রীতি ঠোঁট উল্টে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো তখন পাকনামি করে রান্না করতে না আসলেও হতো।রান্না করা যে এতো কষ্ট আগে জানলে জীবনেও আসতাম না।

ইয়ানা হেসে বললো শশুর বাড়ি যাও একবার চান্দু তখন সারাদিন এই রান্নাবান্না নিয়েই থাকা লাগবে।

থাক বইন আমার বিয়ে করার শখ মিটে গেছে। এ জীবনে বিয়ে করছি না আমি।

ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে বললো তাইনাকি? তাহলে শাফিন ভাইয়ার জন্য একটা মেয়ে খুঁজতে হবে। দেখি কোনো মেয়ে খুঁজে পাই কিনা।

প্রীতি ইয়ানার দিকে কটমট করে চেয়ে বললো তুই কি আমার বন্ধু নাকি শত্রু?

ইয়ানা না বোঝার ভান করে বললো যা বাবা আমি কি করলাম?

কি করেছিস? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা এ বলে পাশে রাখা আটার পেকেট থেকে আটা বের করে ইয়ানার দু গালে লাগিয়ে দিলো।

কি হয়েছে বুঝতে ইয়ানাও প্রীতিকে আটা মেখে দিলো এ নিয়ে হয়ে গেলো দুজনের মাঝে লড়াই। আটা দিয়ে দুজন সাদা ভূত হয়ে গেছে।

রান্নাঘর থেকে দু’জনের হাসাহাসির শব্দ শুনে পিয়াসা বেগম উকি দিতে তাজ্জব বনে গেলো। পরক্ষণে দুজনের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। নিজেকে সামলে প্রীতি আর ইয়ানাকে বললো এ কি অবস্থা করেছিস দুজনে বাচ্চাদের মতো? পুরোই জোকার লাগছে দুজনকে বলতে বলতে আবার হাসতে লাগলো।

তখন কলিংবেল বেজে উঠলো পিয়াসা বেগম নিজেকে সামলে যেয়ে দরজা খুলে দিয়ে আবার কিচেনে এসে ইয়ানা আর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো হয়েছে আপনাদের আর রান্না করতে হবে না এবার যেয়ে দুজন গোসল করে নেন বাকিটা আমি করে নিচ্ছি।

ইয়ানা আর প্রীতি একে অপরকে এই অবস্থার জন্য দোষারোপ করতে করতে ড্রয়িংরুমে আসছিলো তখন কারো চিৎকারে সামনে তাকাতে দুজন থতমত খেয়ে গেলো।

পাফির আর শাফিন মাত্রই এসে সোফায় সবে মাত্র বসলো তখন শাফিনের চোখ পড়লো সামনে। ভরকে যেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো মাগো ভূত এ বলে পারফির কোলে উঠে বসে পড়লো।

শাফিনের কথায় সেদিকে পারফি তাকাতে প্রথমে চমকে গেলো। এই রাতে বেলা প্রীতি আর ইয়ানার এই লুকের মানে মাথায় ঢুকলো না। দুজন পুরো সাদা ভূত হয়ে আছে আচমকা কারো চোখ পড়লে ভরকে যাওয়ার এই কথা। পরক্ষণে দুজনের এই অবস্থা দেখে নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে না পেরে হো হো করে হেঁসে উঠলো।

পারফিকে হাসতে দেখে শাফিন বলে উঠলো তুই হাসছিস কোন দুঃখে? মানুষ ভূত দেখলে কান্না করে আর তুই হাসছিস কেনো?

পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো শালা আগে কোল থেকে নাম তারপর ভালো করে দেখ এরা কারা।

শাফিন কোল থেকে নেমে ভালো করে প্রীতি আর ইয়ানাকে খেয়াল করতে পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো।

এদিকে ইয়ানার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। এভাবে যে তাদের সামনে পড়ে যাবে কল্পনাও করে নি। ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে এক ছুটে উপরে উঠে গেলো।

আর প্রীতি দাঁত কটমট করে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো এখানে এমন বানরের মতো হাসার কি হলো? আর একটু হাসলে ঘুষি মেরে একদম সব দাঁত ফেলে দিবো।

আয় দেখি কার দাঁত কে ফেলে। রাতে বেলা এমন ভূত সেজে বসে থাকবি আর হাসলেই দোষ। একটু আগে একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি নি। এখন সেই জন্য সরি বলবি তানা উল্টো ঘুষি মারতে চাস। সরি বল তারাতাড়ি।

পারফি তারাতাড়ি উঠে দাঁড়ালো এখন এখানে থাকলে এদের ঝগড়া শুনতে শুনতে কান পঁচে যাবে। সবেতো ঝগড়া লাগা শুরু এই ঝগড়া কখন থামবে তার কোনো তালঠিক নেই। তাই এদের বেকার ঝগড়া শুনে কান না পচিয়ে সোজা উপরে চলে গেলো।

প্রীতি রেগে বললো আসছে রে সরি শুনতে। সরি আমি না তুমি বলবা তখন দাঁত কেলিয়ে হাসার জন্য।

আমি সরি বলবো কোন দুঃখে? হাসার কাজ করেছিস তাই হেসেছি। যা ভাগ এখান দেখে ভূতনি আর নাহলে দেখা যাবে তোর এই ভূতনি লুক কেউ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।

প্রীতি ক্ষেপে শাহিনের কাছে যেয়ে বললো আর একবার যদি ভূত বলেছো না তাহলে এখন একদম ঘাড় মটকে দিবো বলে দিলাম।

তুই ভূত, তুই শাঁকচুন্নি, তুই শেওড়া গাছের পেত্নী সব তুই, বলেছি এবার কি করবি? ঘাড় মটকাবি? পারলে মটকাতো।

তবে রে দেখাচ্ছি মজা এ বলে প্রীতি শাফিনের দিকে ঝুকে নিজের চুল গুলো নাড়িয়ে মাথার ভিতরে থাকা সব আটাগুলো শাফিনের গায়ে ফেলে দিয়ে দিলো দৌড়ে। দৌড়ে যেতে যেতে বললো এবার আয়নায় যেয়ে দেখো কে ভূত।

প্রীতির কাজে শাফিন থতমত খেয়ে গেলো। প্রীতি যে এমন কিছু করবে কুক্ষণেও ভাবে নি। এখন নিজের মাথা নিজের টাকাতে ইচ্ছে করলো কেনো লাগতে গেলো। এখন এই শীতের ভিতরে গোসল করা লাগবে এটা কি মানা যায়?

পিয়াসা বেগম কিচেনের কাজ শেষ করে ড্রয়িংরুমে এসে শাফিনের এই অবস্থা দেখে বললো একি বাবা তোমার এই অবস্থা কেনো?

শাফিন একবার উপরে তাকিয়ে পিয়াসা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো তোমার শাঁকচুন্নি মেয়ে ছাড়া এই কাজ কে করবে?

পিয়াসা বেগম কপালে হাত রেখে বললো দেখো মেয়ে কান্ড এই মেয়েকে নিয়ে আর আমি পারি না। প্রীতি আর ইয়ানা গিয়েছিলো আজ রান্না করতে। রান্না করে দুজন মিলে এমন বাচ্চামো করলো। প্রীতিকে পড়ে দেখে নিবো তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও বাবা।

এতক্ষণ শাফিন বুঝলো প্রীতিদের এই অবস্থার মানে। দুজনের বাচ্চামোর কথা শুনে হেঁসে ফেললো তারপর পিয়াসা বেগমকে বলে ওদের বাসার চলে গেলো।

এদিকে ইয়ানা একবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলো। এই শীতের রাতে শাওয়ার নিয়ে শীতে কাপাকাপি অবস্থা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে চুল ভালো করে মুছতে লাগলো। লম্বা চুল মুছতে হিমশিম খাচ্ছে।

পারফি বেলকনিতে ছিলো, রুমে ইয়ানার অস্তিত্ব টের পেতে বেলকনি থেকে রুমে আসতে আয়নার দিকে থাকাতে থমকে গেলো। সদ্য শাওয়ার নেওয়া ইয়ানাকে স্নিগ্ধ ফুলের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না। ভেজা চুল কোমড় ছাড়িয়ে কিছুটা নিচে পড়ে। এই লম্বা চুল যেনো সৌন্দর্য টা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গালদুটো, নাকের ডগা লালা হয়ে আছে। স্নিগ্ধ ফুলের এই স্নিগ্ধ রুপের মাঝে পারফি নিজেকে হারিয়ে ফেলছে বারংবার। তখন পারফির চোখ পড়লো ইয়ানার গোলাপি অধরের দিকে, গোলাপি অধর জোড়া মৃদু কাঁপছে। যা দেখে পারফি শুকনো ঢোল গিললো।

ইয়না তোয়ালা দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার দিকে চোখ পড়তে হাতজোড় থেমে গেলো। আয়নার ভিতরে পারফির অবয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠলো। নীলমনির সেই ধারালো চাওনি ওর দিকেই সীমাবদ্ধ। এই চাওনিতে বুকের ভিতর ধুকপুকনি বাঁধিয়ে দিলো সাথে পুরো শরীর মৃদু কম্পন অনুভব করলো।

ইয়ানাকে হঠাৎ এমন স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘোর থেকে বের হলো পারফি তখন চোখ পড়লো ইয়ানার হাতের পাশে কিছুটা জায়গা লালচে হয়ে আছে। পারফি সেটা দেখে ইয়ানার সামনে যেয়ে কোনো কথা না বলে ইয়ানার হাত ধরে সামনে এনে ভালো করে দেখতে দেখতে বললো হাতে কি হয়েছে?

পারফির কথায় ইয়ানা চমকে হাত সরিয়ে নিতে চাইলে পারফি শক্ত করে হাত ধরে জানতে চাইলো হাতের এই আঘাত লেগেছে কিভাবে।

ইয়ানার মনে পড়লো তখন এর কথা যখন প্রীতি আর ও রান্না করছিলো তখন ঢাকনা ওঠাতে যেয়ে কড়াইয়ের পাশে হাত লেগে যায়। এখন এ খবর পিয়াসা বেগমের কানে গেলে কপালে শনি আছে তাই হাতে জ্বলন অনুভব করতেও মুখ বুজে সয়ে নিলো। প্রীতির থেকেও বিষয়টা লুকিয়ে গেছে কারণ প্রীতি দেখলে সবাইকে বলে দিতো। কিন্তু পারফির কাছে এভাবে ধরা পড়ে যাবে বুঝতে পারে নি। এখন কি বলবে তাই খুঁজতে লাগলো।

ইয়ানাকে কোনো কথা বলতে না দেখে পারফি ফের বললো কি হলো বলছো না কেনো কি হয়েছে।

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আসলে রান্না করতে যেয়ে একটু লেগে গেছে। সমস্যা নেই সামন্য লেগেছে সেরে যাবে।

পারফি গম্ভীর কন্ঠে বললো যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও? এখন আঘাতটা কে পেলো?

ইয়ানা মাথা নিচু করে বললো বেশি লাগে নি সামান্য লেগেছে।

সামান্য লেগেছে নাকি কি লেগেছে তা দেখতেই পারছি বলতে বলতে পারফি ড্রয়ার খুলে মলম এনে হাতে লাগিয়ে দিতে লাগলো।

মলমটা হাতে লাগতে জ্বলে উঠলো যার দরুন না চাইতেও ইয়ানার মুখ থেকে শব্দ বের হয়ে গেলো। ব্যথায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো।

পারফি একবার ইয়ানার ব্যথাতুর মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে হাতে ফু দিতে লাগলো।

হাতের জ্বলন কিছুটা কম অনুভব করতে ইয়ানা আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই পারফির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো কারণ পারফি এতক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।

ইয়ানা নিজেকে সামলে পারফির উদ্দেশ্যে বললো একটা কথা বলি?

পারফি গম্ভীর কন্ঠে বললো হুম।

আ..আসলে হাতের কথাটা মাকে প্লিজ বলবেন না। এটা জানতে পারলে বকা দিবে কারণ তখন জোর করে আমি আর প্রীতি রান্না করতে গিয়েছিলাম। প্লিজ কিছু বলবেন না, সত্যি আমার বেশি লাগে নি সামান্য লেগেছে।

এখন কেনো বলতে না করছো? এখন আম্মুকে বলে তোমাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিৎ পাকনামো করে রান্না করতে যাওয়ার জন্য।

ইয়ানা ইনোসেন্ট ফেস করে ঠোঁট উল্টে বললো প্লিজ….

এতক্ষণ পারফির ইয়ানার প্রতি রাগ লাগছিলো খুব পাকনামো করে এভাবে আঘাত পাওয়ার জন্য কিন্তু এখন ইয়ানার এমন ঠোঁট উল্টে আবদার করতে দেখে রাগ গলে পানি হয়ে গেলো। নিজের রাগ একপাশে ফেলে দিয়ে ইয়ানার নাক টেনে দিয়ে বললো এবারের মতো ছেড়ে দিলাম বাট নেক্সট টাইম এমন কোনো কাজ যাতে করতে না দেখি যেটায় নিজে আঘাত পাও।

পারফিকে ম্যানেজ করতে পেরে ইয়ানা খুব খুশি হলো সাথে মুগ্ধ ও হলো পারফির এই কেয়ার গুলোতে।
—————————————–
রাতে সবাই খাবার খেতে বসবে তখন পিয়াসা বেগম প্রীতিকে বললো যা শাফিনদের ডেকে নিয়ে আয়। আর শাফিনকে সরি বলবি তখন ওর ওই অবস্থা করার জন্য। ছেলেটা কাজ করে এতো রাতে বাসায় এসেছে আর তুই ছেলেটার সাথে কি করলি? এখন যেয়ে সরি বলবি আর নাহলে মার একটাও নিচে পড়বে না।

প্রীতি ঠোঁট উল্টে যেতে যেতে বিরবির করে বললো আমার দোষ নাকি খাটাশটা কেনো আমার সাথে লাগতে এসেছে?

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১৯+২০

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৯

ফজরের নামাজ আদার করে পাভেল, শরীফ, পারফি ও শাফিন এক সাথে বাসায় প্রবেশ করলো। সবার মন খুব ফুরফুরে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চারজনে এক সাথে হাসি আনন্দ গল্প করতে করতে আসছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর সবাই এক সাথে প্রাণ খুলে হাসছে গল্প করছে।
তখন মসজিদে যাওয়ার আগে পারফি শাফিনকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার সে কি খুশি ছেলেদের এভাবে সকাল সকাল নামাজে যাওয়ার জন্য।

বেলকনি থেকে ইয়ানা চারজনের হাসিখুশি মুখশ্রী মুগ্ধ হয়ে দেখলো। তারা সবাই কতোটা প্রাণবন্ত, কতটা মিশুক দেখতেও ভালো লাগে।

ইয়ানা বেলকনির রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে স্নিগ্ধ সকালের আবহাওয়াটা অনুভব করতে লাগলো তখন হঠাৎ পিছ থেকে পারফি বলে উঠলো এই ঠান্ডার ভিতরে বেলকনিতে কি করছো?

কারো কন্ঠস্বর শুনে ইয়ানা পিছু ঘুরে তাকালো। পিছে তাকাতে চোখে পড়লো পারফি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে। ইয়ানা এবার আস্তে করে বললো এমনি দাঁড়িয়ে আছি, ভালো লাগছে সকালের এই আবহাওয়াটা।

পারফি মুচকি হাসি দিয়ে বললো ঠান্ডা লেগে যাবে। এবার ভিতরে এসে ঘুমিয়ে পড়ো।

ইয়ানা বাধ্য মেয়ের মতো সম্মতি দিয়ে রুমে চলে আসলো।

পারফিও ইয়ানার সাথে আসলো তারপর সোফায় চলে গেলো এখন একটু ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ভালো ঘুম হয় নি তাই মাথা ধরেছে।

পারফিকে আবার সোফায় শুতে দেখে ইয়ানা ভাবলো বেডে শুতে বলবে কিনা। অবশেষে নিজের ভিতর জড়তা কাটিয়ে থেমে থেমে ইয়ানা পারফির উদ্দেশ্যে বললো আপনি চাইলে এখন বেডে শুতে পারেন, সোফায় শুতে কষ্ট হবে আপনার।

পারফি তাকালো ইয়ানার দিকে তারপর ধীর গলায় বললো সমস্যা নেই আমি এখানে শুতে পারবো।

ইয়ানা কি বলবে বুঝতে পারলো না। বুঝতে পারছে যে পারফি ওর জন্যই বেডে আসতে চাচ্ছে না কিন্তু ওর জন্য লোকটা এতো কষ্ট করবে ভাবতে খারাপ লাগছে ইয়ানার। তাই ফের পারফিকে বললো আপনি বেডে আসতে পারেন আমি এখন ঘুমাবো না। বেড তো ফাঁকা আছে তাই ঘুমাতে পারেন।

পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো ঘুমাবে না কেনো?

আ..আসলে এখন ঘুম পাচ্ছে না, আপনি ঘুমান না। আমার ঘুম পেলে সোফায় ম্যানেজ করে নিতে পারবো।

পারফি বুঝলো ইয়ানা ওর জন্যই এমন করছে তাই বসা থেকে উঠে ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়ালো।

পারফিকে হঠাৎ নিজের সামনে আসতে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো ইয়ানা।

ইয়ানাকে অবাক করে দিয়ে পারফি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বললো বাচ্চা মেয়ে আমার জন্য এতো চিন্তা করতে হবে না বুঝলে এখন চুপচাপ শুয়ে পড়ো।

পারফির এভাবে গাল টেনে দেওয়াতে বেকুব বনে গেলো ইয়ানা। ঠোঁট উল্টে ভাবলো আমি কি বাচ্চা যে এভাবে গাল টেনে দিলো? আবার বাচ্চা বলেও সম্মোধন করলো।

ইয়ানাকে এমন ঠোঁট উল্টাতে দেখে শুকনো ঢোক গিললো পারফি। এই মেয়েকে এমন ঠোঁট উল্টালে যে কি মারাত্মক লাগে আর তাতে যে কারো বুজে ঝড় বয়ে যায় সেটা কি এই মেয়ে জানে? এটা ভারী অন্যায়। অন্যের বুকে ঝড় উঠিয়ে দিয়ে নিজে রিলাক্সে দিন পার করছে।

নিজেকে সামলে পারফি ডাক দিলো বিড়াল ছানা….

বিড়াল ছানা ডাকটা শুনে চমকে তাকালো ইয়ানা পারফির দিকে। বিড়াল ছানা বললে আগে রাগ লাগতো কিন্তু সব সময় এই নামটা পারফির মুখে শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই ছোট করে বললো জ্বি?

পারফি কিছু বলতে যেয়েও বললো না, কথা ঘুরিয়ে কোমল স্বরে বললো যাও ঘুমাও এখন জেগে থেকে একা একা কি করবে? এতো সকালে কেউ উঠবে না যে যার রুমে আছে।

ইয়ানা সম্মতি দিয়ে বললো তাহলে আমি সোফায় যাই? সত্যি আমার সমস্যা হবে না।

ইয়ানার কথায় হালকা হাসলো পারফি, এখন বেডে না গেলে যে এই মেয়ে মন খারাপ করবে তা ভালো করেই জানে তাই পারফি সম্মতি দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো।

পারফি ওর কথায় সম্মতি দিতে ইয়ানা খুশি হয়ে গেলো। তারপর আস্তে ধীরে সোফায় যেয়ে ছোট শরীরটা এলিয়ে দিলো সোফায়। তেমন একটা সমস্যা হলো না এভাবে শুতে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।

দরজায় কারো করাঘাতে ঘুম ভাঙলো ইয়ানার। আস্তে ধীরে উঠে দরজা খুলতে প্রীতিকে দেখতে পেলো।

প্রীতি ইয়ানাকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো ঘুম কেমন হলো ভাবিজী?

প্রীতির মুখে ভাবি ডাক শুনে থতমত খেয়ে গেলো ইয়ানা। কুনোই দিয়ে পাশ থেকে ইয়ানাকে খোঁচা মেরে বললো আমাকে ভাবি বলছিস কোন দুঃখে?

প্রীতি হেসে বললো তুই আমার ভাইর বউ তাহলে তোকে ভাবি ডাকবো নয়তো কি খালাম্মা ডাকবো?

ইয়ানা প্রীতির কান টেনে দিয়ে বললো ফাজিল মেয়ে উল্টা পাল্টা বকবকানির স্বভাব তোর জীবনেও যাবে না।

প্রীতি ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বললো তোর সাথে বকবক করবো নাতো কার সাথে করবো? সবাই নিচে ওয়েট করছে ফ্রেশ হয়ে নিচে চল।

পারফি পিছ থেকে বলে উঠলো যেভাবে চিপকে ধরে আছিস এভাবে থাকলে সারাদিন ও নিচে যেতে পারবে না আবার বলছিস তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে।

পারফির কথায় প্রীতি ইয়ানাকে ছেড়ে কোমরে হাত দিয়ে বললো আমার জানুকে আমি ধরেছি দরকার হলে সারাদিন ধরে রাখবো কোনো সমস্যা?

সমস্যা মানে ওফ কোর্স সমস্যা। আমার বউকে তুই ক্যান ধরে রাখবি?

ওহ-হহহো এক দিনেই বউকে নিয়ে এতো জেলাস?

দুই ভাই বোনের কথায় ইয়ানা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। লজ্জায় গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। এই দুই ভাই বোনের মুখে যে কোনো কথা আঁটকায় না ভালো করেই জানে। এখন যে মুখ দিয়ে আরো কি কি বেফাঁস কথা বের করে তার ঠিক নেই তাই ইয়ানা ফাঁক বুঝে ওখান থেকে কেটে পড়লো। এখন এখানে থাকা মানেই লজ্জায় পড়া এর থেকে কেটে পড়া ভালো তাই চুপচাপ ওখান থেকে কেটে পড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

ইয়ানাকে এভাবে যেতে দেখে পারফি আর প্রীতি এক সাথে হেসে ফেললো।
——————
ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে সকালের নাস্তা করছিলো তখন পাভেল চৌধুরী পারফি উদ্দেশ্যে বললো আমি চাচ্ছিলাম নেক্সট উইকে তোমাদের বিয়ের জন্য রিসিপশন করতে। যেহেতু বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়েছে তাই কেউ তোমাদের বিয়ের ব্যপারে জানে না তাই চাচ্ছিলাম রিসিপশন করে সবাইকে বিষয়টা জানিয়ে দেই এতে তোমার মতামত কি?

পারফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো আমার সমস্যা নেই।

পিয়াসা বেগম বললো যাক ভালো তাহলে আর শোন বাবা আজ একটু ইয়ানাকে নিয়ে ওদের বাড়ি ঘুরে আয় তাহলে ওর একটু ভালো লাগবে।

ইয়ানা চমকে তাকালো পিয়াসা বেগমের দিকে। ওর সত্যি বাবার কাছে খুব যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু কাউকে বললো না আর পিয়াসা বেগম কিনা না বলতেও মনের অবস্থাটা বুঝে ফেললো ভাবতেই চমকে গেলো ইয়ানা। মনে মনে খুব খুশি হলো পিয়াসা বেগমের উপরে।

পারফি তাকালো ইয়ানার দিকে। বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে মেয়েটা যে খুশি হয়েছে তা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছ। মনে মনে বললো তোমার এই মুখে সবসময় এই খুশিটাই দেখতে চাই স্নিগ্ধ ফুল।

খাওয়া শেষ হলে পারফি ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো রেডি হয়ে নেও এ বলে উপরে চলে গেলো।

পাভেল চৌধুরী ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো সাবধানে যেও মামনী। যদি থাকতে ইচ্ছে হয় তাহলে আজ থেকে যেও সেখানে।

পাভেল চৌধুরীর কথায় অশ্রুসিক্ত নয়নে ইয়ানা তাকালো তার দিকে। এই বাসার লোক গুলো কতো ভালো কতোটা বোঝে ওকে ভাবতেই মনের ভিতর একরাশ ভালোলাগায় ভরে গেলো।

পাভেল চৌধুরী ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো কাজে। পাভেল চৌধুরী যেতে ইয়ানা কিছু একটা মনে করে পিয়াসা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো আন্টি একটা কথা বলি?

পিয়াসা বেগম টেবিলের সব কিছু গুছাতে গুছাতে বললো আমি কারো আন্টি না যদি কেউ মা বলতে পারে তাহলে কিছু বলতে পারে শুনতে পারছি।

ইয়ানা মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে পিয়াসা বেগমকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো আন্টি না মানে মা প্রীতিকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই?

পিয়াসা বেগম হেসে একপাশ থেকে ইয়ানার গালে হাত রেখে বললো এবার ঠিক আছে। আর কখনো যদি আন্টি ডাকিস তাহলে মার খাবি আমার হাতে।

আচ্ছা আর ডাকবো না এবার বলো প্রীতিকে নিয়ে যাবো?

ও গেলে নিয়ে যাবি তা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করা লাগে? তারপর প্রীতি দিকে তাকিয়ে বললো যাবি তুই?

প্রীতি লাফ দিয়ে উঠে বললো যাবো মানে অবশ্যই যাবো। আমি না গেলে হয় নাকি?

প্রীতির কথায় ইয়ানা আর পিয়াসা বেগম হেসে ফেললো তারপর ওরা রেডি হতে রুমে চলে গেলো।

সবাই রেডি হয়ে পিয়াসা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। সোজা চলে গেলো ইয়ানাদের বাসার সামনে। বাসার সামনে গাড়ি থামাতে ইয়ানা আর প্রীতি নেমে দাঁড়ালো। পারফি গাড়ি থেকে না নেমে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো আমার একটু জরুরি কাজ আছে তাই এখন বাসায় যেতে পারবো না। সমস্যা নেই রাতে আসবো তোমরা ভিতরে যাও আর সাবধানে থেকো।

ইয়ানা আর প্রীতি সম্মতি দিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেলো। ইয়ানারা যেতে পারফি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফোন লাগালো শাফিনকে। শাফিনকে কিছু গার্ড নিয়ে অফিসের সামনে দাঁড়াতে বলে বললো আমি আসছি।

পারফির কথা মতো কিছু গার্ড নিয়ে শাফিন অফিসের সামনে দাঁড়ালো তখন আসলো পারফি।

পারফি নেমে আসতে শাফিন বললো কোনো সমস্যা? এখানে গার্ড নিয়ে আসতে বললি কেনো?

একটা জায়গায় যেতে হবে তাই এদের নিয়ে আসতে বলেছি চল এবার।

এখন আবার কোথায় যাবি?

গাড়িতে ওঠ তারপর বলছি এখন চল সময় কম আজকের ভিতরেই আবার সেখান থেকে ফিরতে হবে।

শাফিন আর কথা না বাড়িয়ে পারফির সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগলো আর পিছু পিছু গার্ডের গাড়ি যাচ্ছে।

#চলবে?
#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২০

পারফি, শাফিন আর কিছু গার্ড দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গলের মাঝে সেই বাড়িটার সামনে যে বাড়িতে পারফি আর ইয়ানাকে আঁটকে রাখা হয়েছিলো।
এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো ক্লু খুঁজে বের করা। কারা এমন করেছিলো তাদের ধরার জন্য হলেও অন্তত একটা ক্লু তো লাতবেই। জানে এখন এখানে কেউ থাকবে না, সব ক্লু সরিয়ে ফেলবে তবুও আশায় আছে কোনো না কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়ার।

সবাই এক সাথে ওই পুরোনো বাড়িটার কাছে গেলো। দরজার সামনে ঝুলে আছে বিশাল এক জং পড়া তালা। দেখে মনে হচ্ছে কয়েক যুগ থেকে এখানে কেউ থাকে না কিন্তু ধারণাটা পুরোটাই ভুল। এখানে সবসময় কেউ যাওয়া আসা করে, যাতে বাহিরের কেউ বুঝতে না পারে তাই এরকম পুরোনো করে রেখেছে জায়গাটা। কেউ যে প্রখর বুদ্ধিমত্তার সাথে এগুলো করছে তা খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শাফিন বললো তুই কি সিওর এটা সেই জায়গা? বাড়িটা দেখে তো মনে হচ্ছে কয়েক যুগ থেকে এটা তালাবদ্ধ।

পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো জানতাম তুই মাথা মোটা কিন্তু এখন দেখছি তার থেকেও অধম তুই। এটা ওদের গোপন আস্তানা, এখন এখানে কি তোর জন্য সোনা দিয়ে বাধাই করে চকচকে করে রাখবে? গাধা একটা…..

শাফিন ঠোঁট উল্টে বললো এভাবে বলতে পারলি তুই আমাকে? ভালো করে বুঝিয়ে বললেইতো হয়। আমার এই ছোটখাটো সহজসরল মাথাটা এতো পেছগোছ বুঝে না তা জানিস না?

হয়েছে তোর পকপক থামা এবার তালা ভাঙার ব্যবস্থা কর।

শাফিন গার্ডের নির্দেশ দিলো তালা ভাঙতে। তারা তালা ভেঙে দিতে ভিতরে প্রবেশ করলো পারফি আর শাফিন। গার্ডের বলে দিলে বাহিরে পাহাড়া দিতে।

শাফিন আর পারফি ভিতর প্রবেশ করতে দেখলো ধুলোবালিতে পুরো ঘর ভরে আছে এটা যে ইচ্ছাকৃত ভাবেই করেছে তা জানা আছে পারফির কারণ সেদিন এই ঘর পুরো ক্লিন ছিলো।

এদিকে শাফিন মনে মনে ভাবছে পারফি ওকে ভুল জায়গায় নিয়ে এসেছে কারণ এই বাসার যে ছিরি দেখে মনে হচ্ছে কয়েক বছর থেকে কেউ পাও দেয় নি কিন্তু মুখে কিছু বললো না। এখন কিছু বলা মানে পারফির থেকে এতোগুলা কথা শোনা তাই চুপচাপ পারফির পিছু পিছু যেতে লাগলো।

পারফি চারেদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে প্রথমে চলে গেলো সেই রুমে যে রুমে ওদের বেঁধে রাখা হয়েছিলো। সেখানে যেতে দেখতে পেলো সেদিনের সেই চেয়ার দুটো ভেঙেচুরে নিচে পড়ে আছে বুঝলো যে ওদের খুঁজে না পেয়ে কেউ এই চেয়ার দুটোর উপরে নিজের জিদ ঢেলেছে। তারপর কিছুটা দূরে পড়ে আছে কিছু রশি যেগুলো দিয়ে ওদরে বাঁধা হয়েছিলো। এগুলো ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না।

পারফির সাথে সাথে শাফিন ও সব কিছু পর্যবেক্ষণ করলো। সব কিছু দেখে এবার শাফিনের মনে হচ্ছে ঠিক জায়গায় এই এসেছে। এতক্ষণ নিজের বোকা বোকা ভাবনার জন্য নিজের মাথায় নিজের চাপর মারলো।

ওই রুমে কোনো কিছু খুঁজে না পেয়ে পাশের রুমে চলে গেলো এভাবে এক এক করে সবকয়টা রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোনো ক্লু চোখে পড়লো না। সব প্রমাণ যে নিখুঁত ভাবে মুছে দিয়ে গেছে তা বুঝতে পারলো।

শাফিন বললো শালা খুব ধূর্তবাজ কিভাবে সব প্রমাণ একবারে লুট করে দিয়েছে।

তাইতো দেখছি চল এখানে বেশি সময় থাকা ঠিক হবে না ওরা আগে থেকেই জানতো এখানে কেউ আসবে তাই আগে থেকে সব ক্লু সরিয়ে ফেলেছে।

পারফির কথায় শাফিন সম্মতি দিয়ে আশাহত হয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলো। গার্ডদের নির্দেশ দিলো তালাটা আবার লাগিয়ে দিতে আগের মতো। কথানুযায়ী গার্ডরা তাই করতে লাগলো।

পারফি আর শাফিন যেই চলে আসতে যাবে অমনি কিছুর উপরে পারফির চোখ আটকালো। বাসার সামনে শুঁকনো পাতার ফাঁকে একটা সিম পড়ে থাকতে দেখলো। পারফি নুয়ে সিমটা হাতে নিলো তারপর ভালো করে ওই জায়গাটা দেখতে চোখে পড়লো ফোন ভাঙার ছোট ছোট টুকরো যেগুলো গভীর ভাবে না দেখলে চোখে পড়ার মতো না।

পারফি সিমটা এপিট ওপিট করে দেখতে দেখতে বললো মনে হচ্ছে কেউ রাগ দেখিয়ে ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙেছে যার দরুন সিমটা ফোন থেকে খুলে পড়ে গেছে। ফোনের টুকরোগুলো সরিয়ে ফেললেও হয়তো এই ছোট সিমটা চোখে পড়ে নি। মনে হচ্ছে এই সিম থেকে কিছু হলেও জানতে পারবো।

শাফিন বললো আমার ও তাই মনে হচ্ছে। তাহলে চল এখন যাওয়া যাক আশা করি এই সিম থেকেই আসল কালপ্রিট এর কাছে পৌঁছাতে পারবো।

পারফি সম্মতি দিয়ে সবাইকে নিয়ে বের হলো ওই জায়গা থেকে। এখন বিকেল হয়ে গেছে এবার ঢাকা ফিরতে ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে যাবে তাই ওখানে আর সময় নষ্ট না করে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
——————————————-
এদিকে বিকেলে ছাঁদে বসে ইয়ানা, ইমা আর প্রীতি গল্প করছিলো। ইয়ানা সবার সাথে গল্প করলেও ওর মন বসছে না গল্পে। আসার পড় থেকে ইতি বেগমের সাথে দেখা হয় নি। কেনো যেনো একটা বার মায়ের মুখটা দেখার জন্য হাসফাস করতে লাগলো। ইচ্ছে করলো ছুটে যেতে তার কাছে কিন্তু সেদিনের কথা গুলো মনে করতে আর যেতে পারলো না তার কাছে। তাকে আর বিরক্ত করতে চাইলো না।

ইয়ানার গল্পের দিকে মন না দিয়ে অন্যমনষ্ক হয়ে থাকতে দেখে ইমা বললো কি হয়েছে তোর এতো কি ভাবছিস?

ইয়ানা নিজেকে সামলে বললো না কিছু না।

প্রীতি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো আমাদের বোকা পেয়েছিস? তুই কিছু না বললি আর বিশ্বাস করে নিলাম। তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোর মনে কিছু একটা চলছে, কি হয়েছে সত্যি করে বল।

ইয়ানা কি করবে বুঝতে পারলো না। বলবে কি বলবে না দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলো অবশেষে ওদের জোরাজোরিতে ইয়ানা থেমে থেমে বললো আসলে মাকে এক নজর খুব দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মাতো আমার উপরে বিরক্ত তাই এই বিরক্ত মুখশ্রী নিয়ে তার কাছে যেতে পারলাম না বলতে বলতে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো ইয়ানার।

ইয়ানার কথায় প্রীতি আর ইমার মন ও খারাপ হয়ে গেলো। ইমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো জানিনা মা এতোদিন কেনো তোর সাথে এমন করতো। কিন্তু তুই যাওয়ার পর থেকে একটাবার এর জন্য রুম থেকে বের হয় নি। বাবা ও রাগ করে মায়ের সাথে কথা বলে নি এখনো। আমি গিয়েছিলাম কয়েকবার কথা বলতে কিন্তু লাভ হয় নি। কোনো কথা বলে নি, কিছু খায় ও নি। কালকে থেকে না খাওয়া।

ইমার কথায় ইয়ানার বুকের ভিতর কামড় মেরে উঠলো। মা যতোই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করুক না কেনো মাতো মা এই। মায়ের অবস্থা এমন শুনে ইয়ানার মন কেঁদে ইঠলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো আপু আ..আমি কি যাবো একবার মায়ের কাছে?

ইমা ফের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো কথা বলবে কিনা জানিনা, তবে যেয়ে দেখতে পারিস একবার।

ইয়ানা সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বললো তোমরা তাহলে গল্প করো আমি দেখে আসি মাকে এ বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছুটে চলে গেলো।

ইয়ানার যাওয়ার পানে প্রীতি তাকিয়ে ভাবলো এতো কিছুর পর ও মেয়েটা মায়ের জন্য কতটা পাগল হয়ে আছে। আন্টি যে কেনো ওর সাথে এমন করে ভাবতেই খারাপ লাগে।

ইয়ানা এক ছুটে ইতি বেগমের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। এবার ভিতরে যাবে কি যাবে না তাই ভাতে লাগলো। অবশেষে হালকা করে নিঃশব্দে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলো। পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। অন্ধকারের মাঝে চোখে পড়লো ইতি বেগম চুপচাপ শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে না জেগে আছে তা বোঝা যাচ্ছে না। ইয়ানা ধীর পায়ে বেডের কাছে এগিয়ে গেলো।

আস্তে করে ডাক দিলো….. মা।

মা ডাকটা শুনে বুকের ভিতর কামড় মেরে উঠলো ইতি বেগমের। বন্ধ করা চোখ খুলে সামনে তাকাতে অন্ধকার রুমে ইয়ানাকে দেখতে পেলো। ইয়ানাকে দেখে অপরাধবোধ টা আরো বেরে গেলো কয়েক গুন। দুটো দিন থেকে অপরাধবোধ তাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। না পারছে কাউকে কিছু বলতে আর না পারছে এই অপরাধে বোঝা বয়ে বেরাতে।

ইতি বেগমকে কোনো কথা না বলতে দেখে ইয়ানা আস্তে করে পাশে বসলো। কেনো যেনো মনে হচ্ছে মা ভালো নেই তাই কোমল গলায় বললো কাল থেকে কিছু খাও নি নাকি?চলো খাবে এখন।

ইতি বেগম ছলছল চোখে তাকালো ইয়ানার দিকে। এই মেয়েটাকে এতোটা বছর কতোটা অবহেলা করে আসছে আর সেই মেয়েটা এখনো তার কথা ভেবে চলেছে ভাবতেই কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আসছে।

ইতি বেগমকে এবার ও কথা বলতে না দেখে ইয়ানা আস্তে করে ইতি বেগমের হাত ধরে বললো চলো এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।

ইতি বেগম এবার নিজেকে একটু সামলে ভাঙা গলায় বললো পড়ে খেয়ে নিবো আমি এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

ইতি বেগমের এমন ভাঙা গলা শুনে ইয়ানা চমকে গেলো। তারমানে সত্যি মা ঠিক নেই, ইয়ানা তারাতাড়ি রুমের লাইট জ্বালিয়ে ইতি বেগমের দিকে তাকাতে থমকে গেলো। চোখনামুখ ফুলে আছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে৷ মাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে ইয়ানা দ্রুত ইতি বেগমের কাছে যেয়ে তার দু গালে হাত রেখে বিচলিত হয়ে বললো এ কি হাল করেছো নিজের? কি হয়েছে মা তোমার? আমাকে বলো। বাবা রাগ করেছে দেখে কি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে? আমি এখনি বাবাকে বলছি তোমার সাথে কথা বলতে প্লিজ আর কষ্ট পেও না। তোমার…

আর কিছু বলার আগে ইতি বেগম ইয়ানাকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কান্না করে উঠলো।

মায়ের এমন কান্না দেখে ইয়ানা ও কান্না করে দিলো। মায়ের এতো কষ্টে ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছে।কিভাবে মাকে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারলো না।

তখন ইতি বেগম কান্না করতে করতে বলে উঠলো আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। এতো বছর তোর সাথে অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলেছি আমি। জানি আমার অন্যায়ের ক্ষমা হয় না। আমি তোকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে এসেছি যার অনুশোচনায় আজ আমি দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।

ইয়ানাও ইতি বেগমকে ঝাপটে ধরে কান্না করতে লাগলো। এক পর্যায়ে নিজেকে একটু সামলে ইতি বেগমের চোখে পানি মুছে দিতে দিতে বললো পুরোনো সব কথা ভুলে যাও মা। আমি ওসব কিছু মনে রাখি নি, এখন মা হয়ে মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে প্লিজ ছোট করবে না। আমরা মা মেয়ে মিলে আবার নতুন করে একটা জীবন শুরু করবো। পুরোনো সব অতীত পিছে ফেলে দিবো বুঝলে?

ইতি বেগম ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।

ইয়ানা কিছুক্ষণ ওভাবে চুপ থেকে ইতি বেগমের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ইতি বেগমের হাত ধরে টেনে নিতে নিতে বললো অনেক হয়েছে কান্না এবার চলো কিছু খেয়ে নিবে এ বলে ইতি বেগমকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে খাবার বেরে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো।

আজ ইয়ানা খুব খুব খুশি। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। অনেক অপেক্ষার পর আজ মাকে আপন করে পেয়েছে এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু আছে?

ইতি বেগম ইয়ানার দিকে ছলছল করে তাকিয়ে রইলো শুধু।

এদিকে ড্রয়িংরুমে বসে অবাক হয়ে তাকিয়ে ইয়ানা আর ইতি বেগমকে দেখছে প্রীতি, ইমা ও ইসহাক আহমেদ। ব্যপারটা যেনো কারো হজম হচ্ছে না। এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছে তাও বুঝতে পারছে।

ইমা এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছে তা বোঝার জন্য প্রীতিকে বললো প্রীতি আমাকে একটু চিমটি কাটতো, আমি কি চোখে ঠিক দেখছি নাকি স্বপ্ন দেখছি?

প্রীতি বেখেয়ালি ভাবে ইমার হাতে চিমটি কেটে বললো আমার ওতো একি অবস্থা আপু। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুলছে না।

এদিকে ইসহাক আহমেদ থম মেরে বসে রইলেন। সত্যি নিজের চোখকে কেনো যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার কাছে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১৭+১৮

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৭

ইয়ানা গুটিশুটি হয়ে বেডে বসে আছে এক রাশ অস্বস্তি নিয়ে। দু হাত কচলাতে লাগলো অসস্তিতে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে। তখন হুট তখন ইমা পারফিকে নিয়ে রুমে এসে দিয়ে গেলো। হঠাৎ করে পারফিকে এমন আশা করে নি। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো সেই থেকে এখন পর্যন্ত ধুকপুকনি করেই চলেছে। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে স্টাচু হয়ে বসে আছে। অস্বস্তি আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে পারফির ধারালো চাওনি। কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে পারফি শুক্ষ ভাবে ইয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। ড্রেসিংটেবিলের সাথে হেলান দিয়ে ইয়ানার কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। তখন রুমে প্রবেশ করে বিড়াল ছানার এই লুক দেখে থমকে গিয়েছিলো পারফি। মেরুন রঙের সিম্পল একটা শাড়ি পরিহিত সিম্পল সাজে ইয়ানাকে দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো। চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছিলো। আজ থেকে এই বিড়াল ছানা একান্ত ওর ভাবতেই একরাশ ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন। তখন মাথায় দুষ্টবুদ্ধি চাপলো, ইয়ানাকে একটু লজ্জায় ফালানো ছিলো মেইন উদ্দেশ্য। কেনো যেনো বিড়াল ছানার লজ্জমাখা মুখশ্রী দেখার তীব্র ইচ্ছে জাগলো মনে তাই তখন থেকে কোনো কথা না বলে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রইলো এতে ইয়ানা লজ্জায় মাথা নুইয়ে এভাবে হাসফাস করে চলেছে। তা দেখে পারফি ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
বিড়াল ছানাকে আর অস্বস্তিতে ফালাতে চাইলো না তাই গলা পরিস্কার করে কোমল স্বরে ডাকলো…. ইয়ানা।

ইয়ানা চমকে পারফির দিকে তাকালো। এই প্রথম পারফির মুখে নিজের নাম শুনলো। এই প্রথম নিজের নাম পারফির মুখে শুনে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। চমকে পারফির দিকে তাকিয়ে রইলো।

তা দেখে পারফি ফের ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো কিছু কথা বলার ছিলো অনুমতি দিলে বলতে পারি।

ইয়ানা নিজেকে সামলে আস্তে করে বললো হ…হুম বলুন।

পারফি এবার কিছুটা সিরিয়াস হয়ে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো এই বিয়েতে তুৃমি রাজি তো?

এ কথার উত্তরে ইয়ানা কি বলবে খুঁজে পেলো না। এর উত্তর যে ওর নিজেরও জানা নেই। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো আসলেই কি আমি এ বিয়েতে রাজি? কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না নিজের ভিতর। কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে ইয়ানা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলো।

পারফি কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে বললো নীরবতা কি তাহলে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিবো মিস বিড়াল ছানা?

ইয়ানা কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না। মনের ভিতর কেমন এক জড়তা কাজ করছে। মন কি চাচ্ছে তা ওর নিজেরও জানা নেই।

পারফি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো ওঁকে আমার উত্তর আমি পেয়ে গেছি চলো তাহলে এ বলে ইয়ানার হাত ধরে ওকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।

ইয়ানা কেঁপে উঠলো পারফির স্পর্শে। এই প্রথম পারফির স্পর্শে অন্য কিছু অনুভব করলো। বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেলো কয়েক গুণ। কাঁপা কাঁপা পায়ে পারফির সাথে হেঁটে চলেছে।

পারফি ড্রয়িংরুমের কাছে এসে ইয়ানার হাত ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলে গেলো।

ইয়ানা ধীরপায়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে ইমা এসে ইয়ানাকে ধরে নিয়ে পারফির পাশে বসিয়ে দিলো। বুকের ভিতর ধুকপুকনি বেড়েই চলেছে। এ কেমন অনুভূতির সাথে পরিচয় হচ্ছে ইয়ানার জানা নেই।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সুষ্ঠু ভাবে দুজের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। আবদ্ধ হয়ে গেলো দুজন এক পবিত্র বন্ধনে।

তৃপ্তির হাসি হাসলো পারফি। অবশেষে স্নিগ্ধ ফুলকে নিজের করে পেয়ে গেলো। এই নিস্পাপ মায়াবী মেয়েটাকে পারফি ভালোবাসে কিনা জানা নেই কিন্তু এই ফুলের আশপাশে থাকলে বুকের ভিতর এক শান্তি অনুভব করে। ইচ্ছে হয় স্নিগ্ধ ফুলকে সব সময় বুকের মাঝে আগলে রেখে সব কষ্ট দূর করে দিতে।
————————————-
অবশেষে বিদায়ের সময় হয়ে আসলো। ধীরে ধীরে বুক ভারী হয়ে উঠছে ইয়ানার। কষ্ট হচ্ছে, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে।

ইয়ানা ধীর পায়ে হেঁটে ইতি বেগমের রুমে প্রবেশ করলো। দেখলো ইতি বেগম খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখের উপর হাত দিয়ে নীরবে বসে আছে।

ইয়ানা ধীরপায়ে বেডের কাছে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে ডাক দিলো… মা….

মা ডাকটা শুনে ইতি বেগমের বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। চমকে তাকালো সামনে, সামনে তাকাতে শাড়ি পরিহিত ইয়ানার বিষাদী মুখটা ভেসে উঠলো। কিছু না বলে নিশ্চুপে তাকিয়ে রইলো ওই মায়াবী মুখশ্রীর দিকে।

ইয়ানা নিঃশব্দে ইতি বেগমের পাশে বসে ভেজা গলায় বললো চলে যাচ্ছি মা দূরে, এখন আর তোমার বিরক্ত হওয়ার কারণ মেয়েটা তোমার কাছে থাকবে না। তুমি খুশি তো মা? বলতে বলতে কন্ঠ কেঁপে উঠলো ইয়ানার।

চোখের পানি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু ব্যর্থ হলো আটকাতে। কান্না ভেজা কন্ঠে ফের বললো তুমি ভালো থেকে মা,, পারলে তোমার এই মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছি। সবশেষে বলবো তোমার এই মেয়েটা তোমাকে খুব ভালোবাসে মা বলতে বলতে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়তে লগলো। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে, এই কষ্ট যে সহ্য করার মতো না।

ইয়ানার যাওয়ার পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো ইতি বেগম। চাইলেও পারলো না মেয়েকে আঁটকে একটাবার বুকে আগলে নিতে। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে ভিতর টা। ইচ্ছে করছে ছুটে যেয়ে মেয়েটাকে একটা বার বুকে আগলে নিতে। কিন্তু কোন মুখে যাবে? এতো বছর যেই অন্যায় করে এসেছে তা যে ক্ষমার অযোগ্য। বুকের ভিতর যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো ইতি বেগম।
কথায় আছে না হারিয়ে গেলে সেই জিনিস এর মূল্য মানুষ বুঝতে পারে। আজ তার সেই অবস্থা হলো। এতো বছর ইয়ানাকে দেওয়া অবহেলা আজ চোখের সামনে ভেসে আসছে। অপরাধবোধে কুঁকড়ে যাচ্ছে।

এদিকে ইয়ানা অঝোরে কান্না করেই যাচ্ছে ইমাকে আর ইসহাক আহমেদকে ধরে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে এই দুইটা মানুষকে ছেড়ে যেতে। ইমাও কান্না করছে ইয়ানার সাথে, খুব আদরের বোনটাকে আজ অন্যের ঘরে চলে যেতে ভাবতেই কষ্ট লাগছে।

ইসহাক আহমেদের চোখেও পানি। এক মেয়ে অন্যের ঘরে চলে গেছে এক বছর হয়েছে এখন আরেকটা মেয়েকেও অন্যের ঘরে চলে যেতে হবে। কি করে থাকবে উনি এখন? মেয়েদের যে বড্ড বেশি ভালোবাসেন। ভিতরে ভিতরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন ভেঙে পড়লে হবে না তাই নিজেকে শক্ত করে ইয়ানাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে বসালো। তারপর একে একে সবাই বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে লাগলো তখন পারফি ইসহাক আহমেদের কাছে এসে হাতে হাত রেখে বললো কষ্ট পাবেন না আঙ্কেল। আমি আমার সবটা দিয়ে ওকে আগলে রাখবো সবসময়। আপনি একজন বাবা নিজের মেয়েকে সবমসময় ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। আপনার মতো পারবো কিনা জানিনা কিন্তু আমার দিক থেকে আমি সবসময় চেষ্টা করবো ওকে আগলে রাখার।

ইসহাক আহমেদ পারফিকে জড়িয়ে ধরে বললো ভরসা করি তোমাকে বাবা তাই তোমার হাতে আমার মেয়েটাকে নিঃসঙ্কোচে তুলে দিলাম। আমার মেয়েটা বড্ড সহজসরল, ওর দিকে খেয়াল রেখো বাবা।

পারফি অভয় দিয়ে বললো ইন শা আল্লাহ রাখবো আঙ্কেল। নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন, যখন ইয়ানাকে দেখতে ইচ্ছে হবে আমাকে নিজের ছেলে ভেবে একটাবার ফোন করে বলবেন আমি ওকে নিয়ে আসবো।

ইসহাক আহমেদ সন্তুষ্ট হলো পারফির কথায়। মেয়েকে যে সঠিক কারো হাতে তুলে দিতে পেয়েছেন ভাবতেই বুকটা শান্তিতে ভরে উঠছে। তিনি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে পারফির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে সবাইকে বিদায় দিলো।

পারফি গাড়িতে উঠতে শাফিন গাড়ি স্টার্ট দিলো। শাফিনের পাশে পারফি বসা চুপচাপ। ইয়ানা এখনো কান্না করছে আর পাশে বসে প্রীতি ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ইয়ানার চোখে পানি দেখে পারফির মনটাও ভারী হয়ে আছে। স্নিগ্ধ ফুলের কষ্টে যেনো নিজেও সমান পরিমাণ কষ্ট পাচ্ছে।

পারফিকে এমন চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শাফিন বললো ধুর শালা বিয়ে করতে এসেছিস নাকি নীরবতা পালন করতে এসেছিস? তোরতো এখন খুশিতে নাচার কথা।

পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো তোর এতো শখ জাগলে তুই নাচ।

নাচবো মানে আমার বিয়ের সময় পুরো এলাকা ঘুরে নাচবো আমি দেখে নিস। কবে যে একটা বউ পাবো আর কবে যে একটু এলাকে জুড়ে নাচবো।

পারফি খোঁচা মেরে বললো তোর মতো বাঁচালের কাছে মেয়ে দিবে কে? সারাজীবন বিয়ের স্বপ্ন এই দেখে যেতে পারবি মেয়ে আর পাবি না।

ইনসাল্ট করলি আপনাকে? তুই জানিস আমার জন্য কতো মেয়ে পাগল? এই শাফিন শিকদারের জন্য মেয়েরা লাইন লেগে থাকে আর তুই বলছিস আমি মেয়ে পাবো না। তোরে আমি অভিশাপ দিলাম জীবনেও বউ পাবি না।

পারফি শাফিনের মাথায় চাপর মেরে বললো তোর অভিশাপ তোর গায়েই লাগে নাকি তা দেখ। আমার বউ অলরেডি পিছে বসে আছে।

শাফিন দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো ওহ তুই বউ পেয়েই গেছিস তাতো ভুলেই গেছি।
—————————
এলিজা জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করছে আর কান্না করে যাচ্ছে। এনামুল খান মেয়েকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে এলিজাকে।

এলিজা চিৎকার করে বললো এতো কিছু করার পর ও পারফি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে পাপা। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না, আমার পারফিকে চাই এই চাই এ বলে আবার জিনিসপত্র ভাঙা শুরু করে দিলো।

এনামুল খান ও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। সব কিছুতো ওনার প্লান মতোই হচ্ছিলো তাহলে শেষে এসে এভাবে প্লান এর মোর অন্যদিকে ঘুরে গেলো কোনো।
প্লান করে সেদিন রাতে পারফিদের উপরে এনামুল হক এই অ্যাটাক করিয়েছিলো। উদ্দেশ্য অন্য কিছু থাকলেও পারফি চালাকি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তারপর অন্য প্লান করে মিডিয়াকে টাকা খাইয়ে উস্কে উনি এই দিয়েছিলো যাতে ওদের নাম এ মিথ্যে কথা ছড়ায়। ভেবেছিলো এতে তাদের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তাদের দুর্বল করে দিতে পারবে কিন্তু তার এই প্লান ও সাকসেস হলো না। ক্ষমতার জোর দিয়ে মিডিয়ার মুখ ও বন্ধ করে দিয়েছে। শেষে কিনা ওই মেয়েটাকেও বিয়ে করেছে এখন নিজের মেয়েকে কিভাবে সামলাবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না।

এনামুল খান এলিজাকে থামানোর জন্য বললো শান্ত হও মামনী বিয়ে করেছে তাতে কি হয়েছে ওই মেয়েকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি শান্ত হও আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলবো৷

এনামুল খানের কথায় এলিজা কিছুটা শান্ত হলো। যেভাবেই হোক পারফিকে ওর চাই এই চাই এতে যদি ইয়ানাকে রাস্তা থেকে সরাতে হয় তাহলে তাই করবে।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৮

পারফির রুমে একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে ইয়ানা। একটু আগেই প্রীতি এসে ইয়ানাকে পারফির রুমে দিয়ে গেলো।
ইয়ানার কেমন নার্ভাস লাগছে মাত্র কয় মাস এর পরিচয় পারফির সাথে। এই কয় মাসে পারফিকে যতোটা চিনেছে তাতে মনে হয়নি লোকটা খারাপ উল্টো সব সময় তার ব্যবহার এই বুঝিয়ে দিয়েছে সে কতোটা ভালো মনের একজন মানুষ তবুও ইয়ানা আজ খুব নার্ভাস। ভয় লাগছে যদি অধিকার চায় তখন কি করবে? সব কিছু স্বাভাবিক করার জন্য একটু সময় প্রয়োজন সেই সমটা কি দিবে না?

এসব ভাবনা চিন্তার মধ্যে চোখ জোড়া লেগে আসছে। কয়টা দিন থেকে শরীর এর উপর দিয়ে কতো ধকল যাচ্ছে। শরীর দুর্বলতার জন্য প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ইয়ানা আর কিছু না ভেবে বেডে শরীর এলিয়ে দিলো। চোখে এসে রাজ্যের ঘুম হানা দিলো। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমের দেশে পারি জমালো।

সবাই অনেক টায়ার্ড রাত প্রায় ১ টার মতো বেজে গেছে তাই সবাই রেস্ট নিতে নিজেদের রুমে চলে গেলো। পারফি যেই রুমে ঢুকতে যাবে অমনি দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো প্রীতি আর শাফিন।

হাঠাৎ ওদের এমন দরজা আকরে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কি চাই?

প্রীতি বললো টাকা চাই টাকা।

পারফির কুঁচকে যাওয়া ভ্রু আরো কুঁচকে বললো কিসের টাকা?

শাফিন বললো কিসের টাকা মানে? বউয়ের কাছে যেতে হলে টাকা দিয়ে তারপর যাওয়া লাগবে।

এবার পারফি বুঝলো এদের মতলব তাই ত্যাড়া ভাবে বললো আমার বউয়ের কাছে আমি যাবো তাতে তোদের টাকা দিতে যাবো কোন দুঃখে?

প্রীতি বললো ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না, টাকা না দিলে আমরা ঢুকতে দিবো না ভিতরে।
প্রীতির সাথে সায় দিয়ে শাফিন ও বললো শালা বাসর ঘরে যাবি আর টাকা দিবি না তা হবে নাকি? তারাতাড়ি টাকা বের কর।

পরাফি ফের ভ্রু কুঁচকে বললো তোরা কি বাসর ঘর সাজিয়েছিস নাকি যে টাকা দিবো? আমার রুম আগে যেমন ছিলো তেমন এই আছে সো ভাগ এখন এখান থেকে। যদি রুম সাজিয়ে দিতি তাহলে ভেবে দেখতাম টাকার কথা।

শাফিন বাঁকা হেসে বললো তাহলে তুই যা এখান থেকে আমরা রুম সাজাবো তারপর ভিতরে যাবি। তারপর শাফিন পারফির কানে ফিসফিস করে বললো তাহলে কিন্তু আজ আর বাসর করা লাগবে না, রুম সাজাতে সাজাতে দেখবি ভোরের আলো ফুটে গেছে। এখন কি করবি নিজেই বল বলে ভ্রু নাচালো শাফিন।

পারফি এবার দাঁতে দাঁত চেপে প্রীতি আর শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো কতো লাগবে?

প্রীতি দুই হাত উপরে উঠেয়ে বললো পাক্কা দশ হাজার।

প্রীতির কথায় পারফি চোখ কপালে উঠিয়ে বললো মানুষ মাত্র তোরা দুইজন আর চাচ্ছিস দশজনের টাকা। সম্ভব না ডিমান্ড কমা তারাতাড়ি।

শাফিন বললো শালা তোর দিকে মায়া করে কম করে চেয়েছি আর তুই বলছিস বেশি। যা তোর আজ ভিতরে যাওয়াই লাগবে না তুই ছাঁদে যেয়ে ঘুমা।

পারফি বুঝলো যে এরা নাছোড়বান্দা এদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই তাই হার মেনে দশ হাজার টাকা শাফিনের হাতে দিতে ওরা গেট খুললো।

পারফি যেতে প্রীতি শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো ফিফটি ফিফটি এবার আমার ভাগেরটা আমাকে দিয়ে দেও তারাতাড়ি।

শাফিন ত্যাড়া ভাবে বললো যদি না দেই তোকে?

প্রীতি ক্ষেপে বললো দিবে না মানে? তারাতাড়ি দেও বলছি আর না হলে….

শাফিন প্রীতির মুখের কথা কেঁড়ে নিতে প্রীতির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো আর নাহলে কি?

শাফিনকে এভাবে ঝুকতে দেখে প্রীতির হার্টবিট বেড়ে গেলো। গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না কথা গুলো সব গলায় আঁটকে গেছে।

তা দেখে শাফিন ফের বললো কি হলো বলছিস না কেনো আর নাহলে কি করবি?

প্রীতি এবার আমতা আমতা করে বললো আ..আর নাহলে ক..কামড় দিবো।

প্রীতি কথায় যেনো শাফিন বেশ মজা পেলো। চমৎকার এক হাসি দিয়ে প্রীতি দিকে আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো তাই নাকি?

প্রীতি কি বলবে খুঁজে পেলো না। শাফিনের এমন ফিসফিসানিতে বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটানো শুরু করে দিয়েছে। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।

প্রীতির অবস্থা দেখে শাফিন ঠোঁট টিপে হাসলো। তারপর কিছুটা দূরে সরে প্রীতি হাত ধরে ওর হাতের উপর সব টাকা দিয়ে বললো পুরোটাই তোর এবার খুশি?

শাফিন একটু দূরে সরাতে প্রীতি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারপর শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো তুমি নিবে না?

শাফিন প্রীতির মাথা গাট্টা মেরে বললো আমারটা তোকে দিয়ে দিলাম। এবার যেয়ে ঘুমা রাত অনেক হয়েছে এ বলে শাফিন চলে গেলো।

প্রীতি শাফিনের যাওয়ার পানে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। কেনো যেনো শাফিনের এই ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করা খুব খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় শাফিন ও ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। শাফিনের এই ছোট ছোট কেয়ার, সারাদিন পিছনে পড়ে থাকা, ঝগড়া করা সবটাই প্রীতির খুব ভালোলাগে।
—————————————–
এদিকে পারফি রুমে ঢুকতে চোখে পড়লো ইয়ানা গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে তা দেখে নিঃশব্দে হাসলো পারফি। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো ইয়নার কাছে। তাকালো সেই মায়াবী মুখশ্রীর দিকে। কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে স্নিগ্ধ ফুল। এদিকে তার এই মায়াবী মুখশ্রী যে অন্য কারো চোখের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে সেই খবর কি একটি বার নিয়েছে?
পারফি আরো কিছুক্ষণ ইয়ানার মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো। মন ভরে কাছ থেকে স্নিগ্ধ ফুলকে দেখলো। বুকের ভিতর এক অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করছে এটা ভেবে যে স্নিগ্ধ ফুল এখন থেকে ওর, শুধুই ওর।

পারফি এবার নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে ইয়ানার শরীরে ব্লাংকেট জড়িয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে দিয়ে সোফায় যেয়ে শুয়ে পড়লো। এখন বেডে শুলে ইয়ানা অস্বস্তিতে পড়ে যাবে সেটা খুব ভালো করেই জানে। মেয়েটাকে একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন তাই পারফি সোফায় শুয়ে পড়লো। সোফায় শুতে একটু কষ্ট হলেও মানিয়ে নিলো।

সোফায় শুয়ে তাকালো ফের ইয়ানার স্নিগ্ধ মুখপানে। কম্বল জড়িয়ে মনে হচ্ছে এক আদুরে বিড়াল ছানা আরামসে ঘুমিয়ে আছে।

ইয়ানাকে দেখতে দেখতে একসময় পারফিও ঘুমিয়ে পড়লো।
——–
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো ইয়ানার। ঘুম ভাঙতে ড্রিমলাইটের হালকা আলোতে দেখতে পেলো এটা ওর রুম না। হঠাৎ এমন অচেনা রুমে আসলো কিভাবে ভাবতে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। উঠে বসতে চারেদিকে ভয়ে ভয়ে চোখ বুলালো তখন চোখ পড়লো সোফায় শুয়ে থাকা পারফির দিকে। পারফিকে দেখে আস্তে আস্তে কাল রাতের সব কথা মনে পড়লো। সব কথা মনে পড়তে কিছুটা শান্ত হলো। কাল রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টের এই পায় নি।

ইয়ানা ফের তাকালো পারফির দিকে। সোফায় টান হয়ে শুয়ে আছে, এতবড় শরীর নিয়ে সোফায় ঘুমাতে যে খুব কষ্ট হচ্ছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

পারফিকে দেখে ইয়ানার খারাপ লাগলো খুব। ওনার রুমে উনি কষ্ট করে সোফায় ঘুমিয়ে আছে আর আমি আরামসে বেডে ঘুমিয়ে রাত পার করে দিলাম ভাবতেই খারাপ লাগছে। সাথে পারফির প্রতি রেসপেক্ট কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। অন্য পাঁচটা স্বামীন মতো স্বামীর অধিকার না চেয়ে নিজ থেকে ইজি হতে সময় দিয়ে দিলো। এমন কি নিজে কষ্ট করে সোফায় ম্যানেজ করে নিয়ে বেড আমাকে দিয়ে দিলো। তিনি চাইলেই পারতো নিজে বেডে ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু তা না করে আমার দিকটা আগে চিন্তা করেছে ভাবতেই একরাশ ভালোলাগা কাজ করলো পারফির প্রতি।

ইয়ানা বেড থেকে আস্তে ধীরে নেমে সোফার কাছে গেলো। এখন পারফিকে ডাক দিয়ে বেডে যেতে বলবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুগতে লাগলো। তাছাড়া নামাজ আদায় করার জন্য জায়নামাজের প্রয়োজন। রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে কোনো জায়নামাজ চোখে পড়লো না। ভাবলে হয়তো আলমারিতে তোলা আছে কিন্তু অন্যের জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া সোভা পায় না তাই ইয়ানা বাধ্য হয়ে পারফিকে আস্তে করে ডাক দিলো… শুনছেন….

কিন্তু পারফির কোনো সাড়াশব্দ নেই তা দেখে ইয়ানা কাঁপা কাঁপা হাতে কিছুটা ঝুঁকে পারফিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাক দিলো।

ঘুমের মাঝে কারো ডাকার আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো পারফি। ইয়ানা যেহেতু পারফির দিকে কিছুটা ঝুকে ছিলো তাই পারফি এভাবে ধড়ফড়িয়ে উঠাতে দুজনে একে অপরের মাথার সাথে টাক খেলো।

মাথায় মৃদু ব্যথা অনুভব করতে আহ্ করে উঠলো ইয়ানা।

কি হয়েছে বুঝে উঠতে পারফি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ইয়নার কাছে যেয়ে বললো সরি সরি সরি আই একট্রেমলি সরি। আমি খেয়াল করি নি একদম। বেশি ব্যথা পেয়েছো? আম রিয়েলি সরি তখন হঠাৎ ওভাবে ঘুম ভেঙে যাওয়াতে খেয়াল করতে পারি নি কিছু।

পারফিকে এমন বিচলিত হতে দেখে ইয়ানা মৃদু হেসে বললো ইটস ওঁকে আমার তেমন লাগে নি সামান্য একটু লেগেছে এতে সমস্যা নেই।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো সত্যি জোরে লাগেনিতো?

ইয়ানা হেসে দিয়ে বললো সত্যি লাগেনি।

পারফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এতে। তারপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো ডাকছিলে কেনো? কোনো সমস্যা?

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো সমস্যা না আসলে একটা জায়নামাজ লাগতো নামাজ পড়ার জন্য।

ওহ্ একটু ওয়েট করো আমি এখনি দিচ্ছি এ বলে পারফি কাবার্ড থেকে একটা জায়নামাজ ইয়ানার হাতে দিয়ে বললো কোনো কিছু প্রয়োজন হলে কাবার্ড খুলে দেখো পেয়ে যাবে।

ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজে দাঁড়াতে যাবে তখন দেখলো পারফি সোফায় বসে আছে তা দেখে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো নামাজ পড়বেন?

ইয়ানার এই প্রশ্নে পারফি কি উত্তর দিবে খুঁজে পেলো না। সচারাচর সকালের নামাজটা আদায় করা হয় না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে ইয়ানা হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছে তাই একটু মুচকি হেসে বললো ফজরের নামাজ আদায় করলে মনের ভিতর এক শান্তি লাগা অনুভব করা যায় যেই শান্তি অন্য কিছুতে মিলে না। চাইলে নামাজটা আদায় করে নিতে পারেন।

পারফি বাধ্য ছেলের মতো সাথে সাথে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে বের হলো। বের হয়ে দেখলো ইয়ানা নামাজে দাঁড়িয়ে গেছে তাই মাথার টুপিটা নিয়ে দরজা হালকা করে চাপ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে।

বাসার নিচে নামতে দেখা হয়ে গেলো পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদারের সাথে। তারাও মসজিদে যেতে নিয়েছিলো তখন পারফিকে এতো সকাল সকাল দেখে দুজনে বেশ অবাক হলো।
পারফি কাছে আসার পর জানতে পারলো নামাজ পড়তে যাবে তা শুনে দুজনেই খুব খুশি হলো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১৫+১৬

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৫

আমি ইয়ানাকে বিয়ে করতে চাই আর সেটা আজকের ভিতরেই।

পারফির এ কথা শুনে সবাই চমকে তাকালো পারফির দিকে।

সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে পারফি ফের বললো এটাই এখন একমাত্র রাস্তা ওকে রক্ষা করার। আজ আমাদের জন্য ওই নিস্পাপ মেয়েটার কলঙ্কে দাগ লাগুক এটা কখনো চাই না। আজ ওর পাশে আমরা না দাঁড়ালে এ সমাজ ওকে বাঁচতে দিবে না। আমাদের জন্য নিষ্পাপ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক সেটা নিশ্চয়ই কেউ চাও না। তাই আশা করি এ ব্যপারে কারো আপত্তি থাকবে না। এবার তোমরা কি করবে সেটা জানাও আমাকে। হাতে সময় কম যা করার আজকের ভিতরেই করতে হবে।

পিয়াস বেগম সাথে সাথে বললেন আমিও এই কথাটাই ভেবেছি। এটাই এখন একমাত্র রাস্তা ওকে রক্ষা করা। আর ইয়ানা কতোটা ভদ্রমেয়ে তোমরা সবাই জানো। এখানে কারো আপত্তি থাকার কথা না।
তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো কি বলো ভাবি তুমি?

শাহানা বেগম বললে আমারও তাই মনে হয়। মেয়েটা নম্র ভদ্র খুব সহজসরল। এখন ওর পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো উচিৎ। তাছাড়া আমাদের পারফি নিজ থেকেই যেহেতু রাজি সেহেতু আমাদের এ দিকে আগাতে কোনো সমস্যা নেই এবার।

পিয়াসা এবার পাভেল চৌধুরীর দিকে তকিয়ে বললো তোমরা কি বলো?

পাভেল চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো তোমরা সবাই যেহেতু রাজি সেহেতু আমরা আর কি বলবো। ইয়ানা মামনীকে আমার পুত্রবধূ করে আনতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো ইসহাক আহমেদ কি রাজি হবে?

শরীফ আহমেদ বললো ইসহাক আহমেদ খুব নম্র ভদ্র একটা লোক। আশা করি উনি মানবেন, মেয়ের দিকে তাকিয়ে হলেও মানবেন।

সবার কথা শুনে প্রীতির খুশি দেখে কে। ওর অনেক ইচ্ছে ছিলো পারফির বউ করে ইয়ানাকে আনার কিন্তু কখনো কাউকে বলা হয় নি। অবশেষে ওর ইচ্ছে পুরোন হতে চলেছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?

পিয়াস বেগম বললো তাহলে আর সমস্যা কোথায় তুমি এখনি ইসহাক ভাইর কাছে ফোন করে বিষয়টা খুলে বলো।

পাভেল চৌধুরী সম্মতি দিয়ে ফোন নিয়ে ইসহাক আহমেদ এর কাছে ফোন করতে করতে বাহিরে চলে গেলো শরীফ আহমেদকে নিয়ে।

তখন শাফিন বললো যা বাবা আমাকে কেউ গোনায় এই ধড়লো না। আমার কাছ থেকে কেউ অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করলো না।

শাফিনের কথায় সবাই হেসে দিলো।

পারফি খোচা মেরে বললে তুই ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না যে তোর থেকে অনুমতি নেওয়া লাগবে।

শাফিন বললো এতো বড় কথা? আমার বোনকে বিয়ে করবি আর আমাকে বলছিস আমি ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না? যা তোর কাছে আমার বোন বিয়ে দিবো না।

পারফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো তোর দেওয়া লাগবে না আমি নিজেই তুলে আনতে পারবো।

পারফি আর শাফিনের কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলে।
পিয়াসা বেগম হেঁসে বললে দুটোয় আর বড় হলি না এখনো ছোট বেলার মতো এক জনের পিছে আরেকজন লেগে থাকিস।

কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলো পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার। তাদের আসতে দেখে পিয়াসা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো ইয়ানার বাবা কি বলেছে।

পাভেল চৌধুরী বললো তার কোনো সমস্যা নেই এখন সব কিছু ইয়ানা মামনীর উপরে। ইসহাক আহমেদ বলেছেন ইয়ানা রাজি হলে তার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু ইয়ানা রাজি না হলে তার কিছু করার নেই। তিনি বললেন কিছুক্ষণ পর জানাবেন ইয়ানা কি চায়।

সবাই এবার কিছুটা টেনশনে পড়ে গেলো। ইয়ানা রাজি হবে তো?
—————————–

ইয়ানা চুপচাপ শুয়ে আছে। মাথার কাছে ইমা বসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন কথা বলছে কিন্তু ইয়ানার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারলো না। জ্ঞান ফেরার পর থেকে একটা কথাও বলে নি চুপচাপ সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তখন রুমে প্রবেশ করলো ইসহাক আহমেদ। আস্তে ধীরে ইয়ানার পাশে বসে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো মামনী কিছু কথা বলতে চাই তোমাকে।

ইয়ানা তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

ইসহাক আহমেদ বলতে লাগলো চৌধুরী বাড়ি থেকে ফোন করেছে। তারা তোমাকে তাদের পুত্রবধূ করে নিতে চায় তাও আজকের ভিতরে। মিডিয়া তোমাকে আর পারফিকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলেছে। তারা মিডিয়ার মুখ বন্ধ করেছে কিন্তু মামনী এই সমাজের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? পারফি একটা ছেলে মানুষ তাই ওর দিকে কেউ আঙুল তুলবে না কিন্তু তুৃমি একটা মেয়ে মামনী। তোমাকে এ সমাজের মানুষ সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিবে না। সবাই তোমার দিকে আঙুল তুলবে। তোমাদের সাথে কি ঘটেছে সেটা আমরা জানি কিন্তু সমাজ জানে না। সমাজ জানলেও তারা উল্টোটাই ঠেলবে সব সময়। সবাই তোমাকে দোষারোপ করবে সেগুলো একজন বাবা হয়ে কি করে সহ্য করবো আমি? তুৃমি নিজেও পারবে সমাজের ওই ধারালো কথা সহ্য করতে?

এখন তুমি বলতে পারো চৌধুরী পরিবার তোমাকে করুণা করে লোকের মুখ বন্ধ করার জন্য পুত্রবধূ করতে চায়। তুমি কারো করুণার পাত্রী হতে চাও না। সত্যি বলতে তারা যদি করুণা করতো তাহলে আমি নিজেও কোনো দিন তাদের হাতে তোমাকে তুলে দিতে রাজি হতাম না।
কিন্তু সত্যি বলতে তারা তোমাকে করুণা করছে না মামনী। তারা তোনাকে ভালোবেসে নিতে চায়।
আমার থেকে তুমি চৌধুরী পরিবারকে ভালো করে চেনো। তুমি জানো তারা কেমন মানুষ। তারা ক্ষমতশীল মানুষ তারা কয়েক ঘন্টার ভিতরে মিডিয়ার মুখ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি রইলো সমাজের মানুষ, তারা কখনো সাহস ও করতে পারবে না তাদের নিয়ে কটু কথা বলতে। কিন্তু আমাদের দেখো আমরা তাদের মতো ক্ষমতাবান লোক না। আমরা চাইলেও পারবো না সমাজের মুখ বন্ধ করতে। তারা তোমার দিকে আঙুল তুলবেই।
এখন কথা হলো চৌধুরী পরিবার এতো ক্ষমতাবান হওয়ার পর ও তারা মানুষের কথার ভয়ে তোমাকে নিতে চায়? সেটা কিন্তু না মামনী তারা তোমাকে ভালোবেসে তাঁদের ঘরে নিতে চায়। তুৃমি সমাজের কাছে ছোট হও এটা তারা চায় না। এটা তোমার জন্য তাদের করুণা না মামনী এটা তোমার জন্য তাদের ভালোবাসা। আমি এই কয়দিনে তাদের যতটুকু চিনেছি মামনী তাতে বুঝেছি তারা খুবি ভালো মানুষ, তোমাকেও খুব ভালোবাসে। তোমরা নিখোঁজ হওয়ার পর তারা পারতো শুধু তাদের ছেলের কথা চিন্তা করতে কিন্তু তারা সমান পরিমাণ তোমার জন্য ও চিন্তিত ছিলো।

তুমি পারফিকে দেখো যে ওই বিপদে তোমাকে ফেলে রেখেও আসতে পারতে কিন্তু ও তোমাকে অক্ষত অবস্থা নিজের সবটা দিয়ে আগলে নিয়ে এসেছে। সব শেষে বলবো ওই পরিবারকে আমার থেকে তুমি আরো ভালো করে চেনো তারা কেমন মানুষ। এখন সবটা তোমার উপরে মামনী এখানে কোনো জোর নেই। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তাদের আসতে বলি আর তুমি যদি রাজি না থাকো তাহলে আমি তাদের না করে দিবো। আমার কাছে তোমার মতামতটাই মেইন তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে। এখন তুমি বলো তুমি কি চাও?

ইয়ানা এতক্ষণ চুপচাপ ইসহাক আহমেদের কথা শুনে গেলো। তার একটা কথাও মিথ্যে না সবটাই সত্যি। ওই পরিবারের প্রতিটা মানুষ কতোটা ভালো সেটা ওর চেয়ে ভালো আর কে জানে? মনে পড়লো পারফির কথা যখন বন্দী ছিলো তখন নিজের দিকে একবার না তাকিয়ে ওকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলো। পারফিকে ও মন থেকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু বর্তমানে ইয়ানা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। মনটা কেমন পাথর হয়ে গেছে, না লাগছে আনন্দ না লাগছে কষ্ট। মানুষের কথা বাদেই দিলো নিজের মায়ের মুখে তখন এর কথা গুলো শুনে একবার ও ইচ্ছে হলো না বেঁচে থাকার। ভিতরটা পাথরে রুপ নিয়েছে। সবটা সহ্য করে নেওয়া ক্ষমতা থাকলেও নিজের মায়ের মুখে ওসব কথা শোনার কোন সন্তানের ক্ষমতা আছে?

তাচ্ছিল্য হাসলো ইয়ানা। ইয়ানা জানে ওর উপরে ইতি বেগম সবসময় বিরক্ত কিন্তু এতোটা বিরক্ত তা কখনো ভাবে ও নি ও। ঠিক করলো ইতি বেগমকে মুক্তি দিয়ে দিবে। হ্যা মুক্তি, এখান থেকে চলে গিয়ে তাকে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে দিবে। আর ওকে দেখে তার বিরক্ত হতে হবে না। মায়ের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেউ আকাঙ্খা নিয়ে বসে থাকবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো কয়েকফোটা। কলিজাটা কেমন যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।

ইয়ানাকে কান্না করতে দেখে ইসহাক আহমেদ বিচলিত হয়ে বললো তুমি এ বিয়েতে রাজি না মামনী? আমি এখনি তাদের ফোন করে না করে দিচ্ছি তবুও তুমি কান্না করো না। তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না মামনী আমি এখনি তাদের না করে দিচ্ছি এ বলে উঠে চলে যেতে নিবে তখন ইয়ানা হাত ধরে ফেললো।

ইয়ানা হাত ধরাতে তিনি কোমন গলায় বললো কিছু বলবে মামনী?

ইয়ানা অনেক কষ্টে মুখ থেকে বের করলো তাদের আসতে বলো বাবা।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো তুমি মন থেকে বলছো তো এই কথা মামনী? তুমি মনের বিরুদ্ধে কিছু করো না, তোমার মন যেটা বলছে তুমি সেটা করো। তোমার সব কথার পাশে আমি আছি।

ইয়ানা অসহাক আহমেদের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললে আমি মন থেকে বলছি বাবা তুমি তাদের আসতে বলো।

ইসহাক আহমেদ খুশি হলেন ইয়ানার কথায়। ইয়ানার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে তিনি চলে গেলেন বাহিরে চৌধুরী পরিবারকে কথাটা জানাতে।

ইসহাক আহমেদ যেতে ইয়ানা ইমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে বলতে লাগলো আপু মাকে মুক্তি দিয়ে আমি চলে যাবো এবার নিশ্চিই মা খুব খুশি হবে তাইনা? আমি যাওয়ার পর মাকে বলো তার এই মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে।

ইমার চোখেও পানি কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আছে। এই নিস্পাপ মেয়েটাকে কিভাবে পারলো এতো অবহেলা করতে? এতো পাষাণ আমার মা? মা তো আগে এমন ছিলো না তাহলে কেনো এখন এমন হয়ে গেলো? কেনো আমার এই নিষ্পাপ বোনটাকে এতো কষ্ট দিলো?
ইমা নিজেকে সামলে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো কান্না করে না আমার কলিজার বোন। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই পাশে আছিতো সোনা। আমাদের মায়ের ভালোবাসা পাসনি এই জন্য দেখ আল্লাহ তোকে এতো ভালো একটা মা এনে দিচ্ছে। প্রীতির আম্মু তোকে মায়ের অভাবটা দেখবি মুছে দিবে। তিনি খুব ভালো একটা মানুষ। আমি খুব খুব খুশি তুই ওমন একটা পরিবার পাবি। এখন থেকে আর কান্না না নতুন জীবনে পা দিয়ে নতুন করে জীবনটা শুরু করবি। পুরোনো অতীত সব জীবন থেকে মুছে ফলবি। অনেক অনেক সুখী হ এই দোয়া করি বোন আমার।

ইয়ানা আর কিছু বললো না চুপটি করে ইমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।

এদিকে ইসহাক আহমেদ ফোন করে ইয়ানার মতামত জানাতে চৌধুরী পরিবারে খুশি উপচে পড়তে লাগলো। সবচেয়ে খুশি হয়েছে প্রীতি, খুশির কারনে নাচতে নাচতে পুরো ড্রয়িংরুম জুরে চক্কর দিতে লাগলো।

প্রীতি পাগলামো দেখে শাফিন প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে বললো ছাগলেরর মতো লাফালাফি করে পড়ে যেয়ে পা ভাঙলে তোকে রেখেই চলে যাবো আমরা।

প্রীতি ক্ষেপে বললো তুৃমি ছাগল। তোমাকে রেখে আমরা চলে যাবো। এহ আসছে আমাকে রেখে যেতে। আমার জানের বেস্টু আমার ভাবি হতে চলেছে আর আমাকে নাকি না নিয়ে যাবে।

প্রীতির কান্ডকলাপ দেখে সবাই হেঁসে উঠলো। তারপর পাভেল চৌধুরী বললে সব ব্যবস্থা করতে হবে তো সবাই রেডি হয়ে নেও।

প্রীতি খুশি হয়ে সবার আগে এক দৌড়ে উপরে উঠে গেলো রেডি হতে তারপর একে একে সবাই চলে গেলো রেডি হতে।

শাফিন যাওয়ার আগে পারফির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো তবে এই তাহলে তোমার সেই স্নিগ্ধ ফুল?

পারফি কিছু বললো না শুধু হাসলো তৃপ্তির হাসি।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৬

প্রীতিরা ইয়ানাদের বাসায় এসেই প্রীতি এক ছুটে ইয়ানার রুমে যেয়ে ইয়ানাকে ঝাপটে ধরলো।

ইয়ানা আর ইমা বসে বসে টুকিটাকি কথা বলছিলো তখন হঠাৎ এমন করে কেউ ঝাপটে ধরাতে ইয়ানা ভয় পেয়ে গেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে দেখলো প্রীতি। প্রীতিকে দেখে ইয়ানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো কিন্তু কিছু বললো না।

প্রীতি ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে উৎফুল্ল মেজাজে বললো জানু জানু জানু আজ আমি অনেক অনেক খুশি। তুই আমার ভাইর বউ হবি উফফ ভাবতেই কি যে ভালো লাগছে। আমরা এক সাথে থাকতে পারবো ঘুরতে পারবো। জানিস আমার কতো স্বপ্ন ছিলো তোকে পারফি ভাইয়ার বউ করে নিবো কিন্তু ভয়ে কাউকে বলি নি। এখন দেখ আল্লাহ আমার ইচ্ছেটা পূরণ করে দিয়েছে। আজ আমি অনেক অনেক হ্যাপি।

প্রীতি এক ধাপ বকবক করার পর ও ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইয়ানাকে ছেড়ে ওর দিকে তাকাতে দেখলো ইয়ানার ভিতর কোনো ভাবান্তর নেই। নির্বিকার ভাবে বসে আছে। হয়তো ইয়ানার মনের অবস্থাটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তাই ইয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ইয়ানার দু গালে হাত রেখে বললো জানু এমন করে থাকিস না প্লিজ। তোর মন খারাপ দেখলে আমার খুব কষ্ট লাগে। যা হয়েছে সব ভুলে যা আজ থেকে নতুন করে জীবনটা শুরু কর। দেখবি তোর এই নতুন জীবনটা আমরা সবাই মিলে রাঙিয়ে তুলবো। কোনো কষ্ট পেতে দিবো না আমরা সবাই তোর পাশে আছি।

ইয়ানা ছলছল চোখে তাকালো প্রীতির দিকে। কোনো কিছু না বলে প্রীতিকে ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে দিলো।

তা দেখে ইমা বলে উঠলো এই মেয়েটা আবার কান্না করছে। এতো সময় আমি কাকে কি বুঝালাম? প্রীতি এবার তুই সামলা এটাকে আমি যাই সবার সাথে দেখা করে আসি এ বলে চলে গেলো।

প্রীতি ইয়ানাকে বললো আর কাঁদিস না জানু এবার একটু হাস আর নাহলে কিন্তু আমিও কান্না করে দিবো। আর জানিস এইতো আমি কান্না শুরু করলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবো তখন নিজের কান্না ভুলে আমার পিছে পড়ে থাকবি তখন আমিও তোকে পাত্তা দিবো না হুহ।

প্রীতির কথায় ইয়ানা কান্নার মাঝেও হেসে ফেললো তা দেখে প্রীতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অবশেষে হাসাতে পাড়লো তো।

তখন রুমে প্রবেশ করলো পিয়াসা আর শাহানা বেগম। পিয়াসা বেগম রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো ইয়ানা মার চোখে পানি কেনো?

পিয়াসা আর শাহানা বেগমকে আসতে দেখে ইয়ানা নিজেকে সামলে প্রীতিকে ছেড়ে আস্তে করে সালাম দিলো।

তারা সালামের উত্তর দিয়ে দুজন দু পাশে বসলো ইয়ানার। শাহানা বেগম বললো দেখো মেয়ের কান্ড কান্না করতে করতে নিজের কি হাল করেছে।

পিয়াসা বেগম বললো কান্না করে না মামনী সব ঠিক হয়ে যাবে। আজকের পর থেকে তোর আর কোনো কষ্ট থাকবে না। আমি তোকে আমার পুত্রবধূর না নিজের মেয়ে করে নিতে এসেছি বুঝেছিস? তোর এই মা তোকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না এইটুকু ভরসা করতে পারিস।

ইয়ানা ছলছল চোখে তাকালো তাদের দিকে। এই মানুষ গুলো কতো ভালো কতটা আপনা ভাবে ওঁকে ভাবতেই চোখ ভোরে উঠছে।

ইয়ানার চোখের পানি মুছে দিয়ে শাহানা বেগম বললো হয়েছে আর কান্না করতে হবে না এবার একটু হাসো। তারপর সবাই মিলে ইয়ানাকে বিভিন্ন কথা বলে একটু নরমাল করার চেষ্টা করতে লাগলো।
——————————-
এদিকে ড্রয়িংরুমে বসে আছে ইসহাক আহমেদ, পাভেল চৌধুরী, শরীফ আহমেদ, শাফিন ও পারফি। সবাই টুকিটাকি কথা বলছে তখন ইমা এসে সবাইকে কিছু নাস্তা পানি দিয়ে ইয়ানার রুমে গেলো। সেখানে যেতে পিয়াসা আর শাহানা বেগম ছোটখাটো একটা ট্রলি ইমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো ইয়ানা মাকে রেডি করে দেও তুমি আর প্রীতি মিলে, ওদিকটা আমরা সামলাই।

ইমা সম্মতি দিতে তারা ড্রয়িংরুমের চলে গেলো।

ইমা আর প্রীতি মিলে ইয়ানাকে সাজাতে লাগলো আর বিভিন্ন কথা বলে ওর মন মানসিকতা ঠিক করতে লাগলো।
———
বদ্ধ রুমের মাঝে নীরবে শুয়ে আছে ইতি বেগম। জীবনের কিছু হিসেব কষতে ব্যস্ত তিনি। নিজেকে আজ বড্ড এলোমেলো লাগছে। ইসহাক আহমেদের হাতে চর খাওয়ার পর থেকে একদম নীরব হয়ে আছে। কখনো ভাবতে পারে নি প্রিয় স্বামী এভাবে গায়ে হাত তুলবে। সবচেয়ে আজব ব্যপার হলো ইয়ানার জন্য মার খেয়েছে কিন্তু আজ ইয়ানার উপর কোনো রাগ লাগছে না। উল্টো নিজের করা এতো বছরের ভুল গুলো চোখের সামনে ভাসছে। নিজের অপরাধ নিজেকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আজ। ওই নিস্পাপ মেয়েটার সাথে এতো বছর বড্ড অন্যায় করে ফেলেছেন যে। এতোদিন ইয়ানার কষ্ট না বুঝলেও আজ স্বামীর চোখে ঘৃণা দেখে খুব গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে আপনজনের অবহেলা, ঘৃণা কতটা কষ্টের। যেই কষ্ট ওই নিস্পাপ মেয়েটাকে এতোটা বছর ধরে দিয়ে আসছে ভাবতেই চোখজোড়া ভিজে উঠছে।

বেশ অনেক সময় ধরে বাহিরের মানুষজনের কথা শোনা যাচ্ছে তা কানে ভেসে আসছে ইতি বেগমর কিন্তু এতো সময় ভাবনায় বিভো ছিলো তাই অতোটা খেয়াল করে নি। এবার ভালো করে খেয়াল করতে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে ওয়াশরুমের যেয়ে চোখমুখে পানি দিয়ে আসলো। তারপর আস্তে ধীরে দরজা খুলে ড্রয়িংরুমে পা রাখলো। ড্রয়িংরুমের যেয়ে কতগুলো অচেনা মুখ ভেসে উঠলো। কারা এরা কিছুই বুঝতে পারলো না, তখন চোখে পড়লো পারফিকে। যে ছেলেটাকে তিনি চেনে, যেই ছেলেটাকে নিয়েই আজ তিনি ইয়ানাকে এতো জঘন্য কথা বলেছে। কিন্তু এই ছেলে এখানে কি করছে বুঝতে সক্ষম হলো না। তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে। ইসহাক আহমেদ একবার ও তার দিকে ফিরে তাকালো না তা দেখে তার ভিতর হাহাকার করে উঠলো। পিছু ঘুরে চলে যেতে নিবে তখন ইসহাক আহমেদ ইতি বেগমকে দাঁড়াতে বললেন তারপর এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। শতহলেও মেয়ের মা সবার সাথে পরিচয় না করিয়ে রাখেই বা কিভাবে?

ইতি বেগম সবার সাথে বিনয়ী ভাবে পরিচিত হলো। কথার মাঝে জানতে পারলো আজ ইয়ানার বিয়ে। নিজের মেয়ের বিয়ে আর সেটা ওনাকেই জানানো প্রয়োজন মনে করলো না কেউ। সবার সাথে কথা বলে আস্তে করে ইসহাক আহমেদকে বললো একটু কথা ছিলো রুমে আসবে?

ইসহাক আহমেদ কিছু বললো না ইতিকে। পাভেল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো ভাই আপনারা গল্প করুন আমি একটু আসছি ইয়ানা মামনীকে আমার কিছু দেওয়ার আছে সেটা দিয়ে আসি।

ইসহাক আহমেদ যেতে পিছু পিছু ইতি বেগম ও গেলো।

পারফি তাকিয়ে রইলো ইতি বেগমের যাওয়ার পানে। আজ যেই ভদ্রমহিলাকে দেখছে এর ব্যবহার ঠিক হজম হচ্ছে না। পাষাণ সেই লোক আজ এতো বিনয়ী হলো কিভাবে তাই ভাবছে পারফি।

ইসহাক আহমেদ রুমে এসে আলমারি খুলে দুটো বক্স বের করলেন। সেটা নিয়ে বের হতে যাবে তখন রুমে প্রবেশ করলো ইতি বেগম। ইসহাক আহমেদ একবার ও সেদিকে না তাকিয়ে চলে যেতে নিলে ইতি বেগম পিছ থেকে বলে উঠলো আমার মেয়ের বিয়ে আর আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলে না?

ইতির কথায় ইসহাক আহমেদ থামলেন। পিছু ঘুরে তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো তুৃমি কি আদো আমার মেয়ের মা হয়ে উঠতে পেরেছো?

কথাটা শুনে থমকালেন প্রীতি বেগম। নিজের মনের ভিতর উকি দিলো আসলেই কি ইয়ানার মা হয়ে উঠতে পেরেছি আমি?

ইসহাক আহমেদ একবার ইতির দিকে তাকিয়ে বললো তোমার মাথা থেকে বোঝা নামিয়ে দিলাম। আজ থেকে তুমি মুক্ত, কারো জন্য এখন আর তোমার বিরক্ত হওয়া লাগবে না৷ এবার খুশি?

ইতি বেগম ছলছল চোখে তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে। বলার মতো কোনো ভাসা খুঁজে পেলো না কিন্তু বুকের ভিতর এক অসহীন ব্যথা অনুভব করলো। যে ব্যথা না পারছে প্রকাশ করতে আর না পারছে চেপে রাখতে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে ক্রমশ।

ইসহাক আহমেদ আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

ইতি বেগম আস্তে আস্তে বেডের উপর যেয়ে বসলো। চোখগুলো ঝাপসা হয়ে উঠলো। আজ কি সত্যি তার খুশি হওয়ার দিন? হ্যা সত্যি তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তিনি খুশি হতে পারছে না। অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বুকের ভিতর। চোখের সামনে ভেসে আসছে এতো বছরের অন্যায় গুলো। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
———————-
ইসহাক আহমেদ ইয়ানার রুমে এসে নক করলো। ইমা এসে দরজা খুলে দিলো। বাহিরে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভিতরে নিয়ে গেলো। ইসহাক আহমেদ ভেতরে যেয়ে দেখলেন ড্রেসিংটেবিলের সামনে তার পরীর মতো মেয়েটা পরী সেজে বসে আছে। পরীর মতো মেয়েটা আজ অন্যের ঘরে চলে যাবে ভাবতেই বুকটা ভারী হয়ে উঠলো। বারবার চোখ জোড়া ভিজে উঠতে চাচ্ছে কিন্তু মেয়ের সামনে এখন দূর্বল হওয়া চলবে না তাহলে মেয়েটা আরো ভেঙে পড়বে।

ইসহাক আহমেদ নিজেকে সামলে আস্তে করে ইয়ানার কাছে এগিয়ে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো মা শা আল্লাহ আমার মেয়েটাকে পরীর মতো লাগছে।

ইয়ানা কোনো কথা না বলে ঝাপটে ধরলো ইসহাক আহমেদকে। কলিজাটা কষ্টে ছিড়ে যাচ্ছে আজ প্রিয় বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানাকে ছাড়িয়ে গালে হাত রেখে বললো আজ কোনো কান্না না মামনী। তুমি কান্না করলে বাবা কষ্ট পায় এখন যদি বাবাকে কষ্ট দিতে চাও তাহলে কান্না করতে পারো কিছু বলবো না।

ইয়ানা নিজের কান্না আটকে ইসহাক আহমেদকে ফের জড়িয়ে ধরলো। চুপটি করে বাবার বুকের মাঝে পড়ে রইলো। অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না কান্না গুলো দলাপাকিয়ে কথা গুলো গলায় আঁটকে আসছে।

ইসহাক আহমেদ ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটা বক্স খুলে একটা চেইন বের করে ইয়ানার গলায় পড়িয়ে দিলো। আরেকটা বক্স খুলে এক জোরা কানের দুল বের করে ইয়ানার হাতে দিয়ে বললো এগুলো আমার মায়ের জন্য বানিয়ে রেখেছি পছন্দ হয়েছে মামনী?

ইয়ানা অশ্রুসিক্ত নয়নে ইসহাক আহমেদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো খুব পছন্দ হয়েছে।

ইসহাক আহমেদ মেয়েকে ফের বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বুকটা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। এখানে আর বেশি সময় থাকলে নিজেকে সামলাতে পারবে না তাই ইয়ানাকে ছেড়ে ইয়ানাকে বুঝিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

ইয়ানা বাবার যাওয়ার পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো। বাবার মনের অবস্থাটা ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে কারণ ওর নিজের ও যে একি অবস্থা।

ইমা যেয়ে ইয়ানাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মন খারাপ করে না আমার কলিজার বোন। সারাজীবনের জন্য তো আর বাবাকে ছেড়ে যাচ্ছিস না, তোর যখন খুশি চলে আসবি।

প্রীতি বললো হয়েছে এবার ইমোশনাল কথা ছাড়ো আপু। আপু তুমি কি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?

ইমা ভ্রু কুঁচকে বললো কি?

ইয়ানাকে এই সিম্পল সাজেও কতোটা মারাত্মক লাগছে। এখন আমার ভাই যদি তার বিড়াল ছানার এই লুক দেখে স্ট্রোক মেস্ট্রোক করে বসে তখন কি হবে?

প্রীতির কথায় ইমা হেঁসে ফেললো আর ইয়ানা প্রীতির এমন লাগামহীন কথায় অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।
————————————-
ড্রয়িংরুমের সবাই বসে ছিলো আর কিছুক্ষণ এর ভিতরে বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে যাবে। তখন পারফি ফট করে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো বিয়ের আগে আমি একটু বিড়াল আই মিন ইয়ানার সাথে কথা বলতে চাই।

পারফির সবার সামনে এমন কথা বলায় সবাই থতমত খেয়ে গেলো। পাভেল চৌধুরী খুকখুক করে কেশে উঠে বিরবির করে বললো মুখে কিছু আটকায় না এই ছেলের। হবু শশুরের সামনে অন্তত একটু লজ্জা বোধ করা উচিত বজ্জাত ছেলে একটা।

পারফির কাজে ইমা আর প্রীতি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মুখ টিপে হাসছে।

সবাইকে এভাবে থতমত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পারফি বললো আজব সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

শাফিন পারফির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো শালা হবু শশুরের সামনে একটু মুখে লাগাম দিয়ে কথা বল।

ইসহাক আহমেদ এতোক্ষণ থতমত খেয়ে ছিলেন। নিজেকে সামনে বললো হ,,হ্যা যাও, ইমা মা পারফিকে ইয়ানার রুমে নিয়ে যাও।

ইমা মুখ টিপে হেসে পারফিকে নিয়ে ইয়ানার রুমে গেলো।

#চলবে?

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১৩+১৪

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৩

ফজরের আজানের শব্দে প্রীতির ঘুম ভাঙলো। কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো টের পায় নি। ঘুম ভাঙতে কান্নাগুলো আবার উপচে পড়তে লাগলো। নিজেকে একটু সামলে উঠে যেয়ে ওজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামাজে শেষ করে কান্না করে করে আল্লাহর কাছে চাইলো যাতে ওর ভাই আর প্রিয় বন্ধু যেনো সুস্থ থাকে আবার ওদের মাঝে ফিরে আসে।

প্রীতি নামাজ শেষ করে ছাঁদে গেলো। সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে। বাসার ভিতরে দম বন্ধ হয়ে আসছে তাই ছাঁদে গেলো। চারেদিকে এখনো ভোরের আলো ভালো করে ফোটে নি। শীতের সকাল তাই চারেদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু ফলতে লাগলো।

এদিকে শাফিন ওদের বাসার ছাঁদে দোলনায় মাথা নিচু করে চুল খামছে ধরে বসে আছে। সারারাত এখানেই ছিলো। সব কিছু কেমন বিষাদে ছেয়ে গেছে। এতো চেষ্টার পর ও প্রাণ প্রিয় বন্ধুর খোঁজ মিললো না সাথে পিচ্চি বোনটার ও। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে কি করলে ওদের খোঁজ পাবে।

শাফিন যখন এগুলো ভাবতে ব্যস্ত তখন কারো ফোপাঁনির শব্দ কানে ভেসে আসলো। শব্দ অনুসরণ করে সামনে তাকাতে দেখলো প্রীতি কান্না করছে।

শাফিন দ্রুত উঠে প্রীতিদের ছাঁদে চলে গেলো। পাশাপাশি বাড়ি হওয়াতে এক ছাঁদ থেকে আরেক ছাঁদে যাওয়া যায়। শাফিন প্রীতির কাছে এসে প্রীতির এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে শাফিনের বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। মেয়েটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না দুটো দিন ধরে পাগলের মতো কান্না করেই যাচ্ছে।

শাফিন কোনো কথা না বলে প্রীতির সামনে যেয়ে আলতো করে চোখের পানি মুছে দিলো।
প্রীতি শাফিনের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকি ভাঙা গলায় বললো ভাইয়াদের কোনো খোঁজ পাও নি?

এ কথায়র কোনো উওর দিতে পারলো না শাফিন চুপচাপ প্রীতির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

শাফিনকে কোনো কথা না বলতে দেখে প্রীতি বুঝে গেলো উত্তর। উত্তর বুঝতে ডুকরে কান্না করে উঠলো।

শাফিন আলতো করে প্রীতিকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ ওভাবে চুপ থেকে শাফিন ধীর গলায় বললো কান্না করো না। দেখো পারফিদের কিছু হবে না আল্লাহ সহায় আছেন। ওদের যেকোনো মূল্যে খুঁজে বের করবো। আর কান্না করো না, তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে হবে বলো? নিজের কি হাল করেছো? পারফি আর ইয়ানা ফিরে এসে তোমার এই অবস্থা দেখলে ওরা কষ্ট পাবে না বলো? নিজেকে একটু সামলাও আর কান্না করবে না এ বলে প্রীতির চোখের পানি মুছে দিয়ে আবার বুকের মাঝে আগলে নিলো।

প্রীতি ওভাবে থেকে ফের ভাঙা গলায় বললো ভাইয়াদের এনে দেওনা আমার কাছে। ইয়ানা, ভাইয়াকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওদের কিছু হলে আমি বাঁচবো না। এনে দেওনা ওদের আমার কাছে।

শাফিন প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো কিছু হবে না ওদের। প্রমিজ ওদের সুস্থ অবস্থায় তোমার কাছে এনে দিবো। আর কান্না করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

শাফিনের কথায় প্রীতি কিছুটা শান্ত হলো। ওভাবে নীরবে কিছুক্ষণ শাফিনের বাহুডোরে ছিলো।

ভোরের আলো চারেদিকে ভালো করে ফুটতে শাফিন প্রীতিকে নিজের থেকে ছাড়ি প্রীতি গালে হাত রেখে বললো এখন ভদ্র মেয়ের মতো নিচে যেয়ে কিছু খেয়ে ঘুৃম দিবে। দুদিন থেকে কিছু খাও নি এখন খেয়ে ঘুৃম দিবে। আমি তোমার কাছে ওদের দুজনকে এনে দিবো প্রমিজ। এবার চুপচাপ নিচে যাবে আর যা বলেছি তা সুন্দর ভাবে সব করবে কেমন?

প্রীতি উপর নিচে মাথা দুলিয়ে বুঝালো করবে। তা দেখে শাফিন বললো গুড এবার যাও এ বলে প্রীতিকে ছেড়ে দিলো।

প্রীতি শাফিনের দিকে একবার তাকিয়ে ধীর পায়ে নিচে নেমে গেলো।

শাফিন প্রীতির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর নিজেও নিচে নেমে গেলো এখন বের হতে হবে।
——————————————-
বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে একটা বেঞ্চের উপরে বসে আছে পারফি আর ইয়ানা। বাস আসতে আরো অনেকটা সময় বাকি তাই দুজন বসে রইলো।
কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলো পাশে ছোট একটা দোকান খুলছে। পারফি সেখানে যেয়ে দু বোতল পানি আর শুঁকনো কিছু খাবার কিনে এনে ইয়ানার পাশে বসে সেগুলো ইয়ানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো এর থেকে বেশি কিছু এখানে পাওয়া যাবে না। আপাতত কষ্ট করে এইটুকু দিয়ে ম্যানেজ করে নেও।

ইয়ানা মুচকি হেসে বললো এতেই হবে তারপর বোতল খুলে চোখমুখে পানি দিয়ে খেতে লাগলো। খাওয়ার মাঝে খেয়াল করলো পারফি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ইয়ানা চোখ তুলে তাকাতে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। ইয়ানা বরাবরের মতো এবার ও পারলো না ওই নীলমনির দিকে তাকিয়ে থাকতে। তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো আপনিও চোখমুখ পানি দিয়ে একটু খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

ইয়ানার কথায় পারফি ভাবলো আসলে চোখমুখে একটু পানি দেওয়া প্রয়োজন। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তাই পানি নিয়ে চোখে পানি দিতে হাতে জ্বলন অনুভব করলো। তাই হাতের দিকে তাকাতে খেয়াল হলো হাত কাঁটার দিকে। রক্ত জমাট বেঁধে আছে তা দেখে ভালো করে হাত ধুয়ে নিলো। আশপাশে চোখ বুলালো কোনো ফার্মেসি আছে কিনা কিন্তু কোনো ফার্মেসি চোখে পড়লো না।
পারফি চোখমুখে পানি দিয়ে সেই টঙ এর দোকানে ফের যেয়ে দু কাপ চা নিয়ে আসলো। প্রচন্ড মাথা ধরেছে চা খেলে একটু ভালো লাগতে পারে তাই যেয়ে চা নিয়ে আসলো।
চা নিয়ে এসে বেঞ্চ বসে এক কাপ চা ইয়ানার দিকে বাড়িয়ে দিলো।

এখন সত্যি চা টা খুব প্রয়োজন ছিলো তাই চা টা হাত বাড়িয়ে নিয়ে ছোট করে পারফিকে বললো ধন্যবাদ।

ধন্যবাদের বিনিময়ে পারফি মুচকি হাসি দিলো। ইয়ানার চোখ আটকালো সেই মুচকি হাসিতে। নিজের অজান্তেই পারফির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

পারফি চাতে চুমুক দিয়ে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ।

পারফির কথায় ইয়ানার ঘোর কাটলো। এতো সময় এভাবে তাকিয়ে ছিলো ভাবতেই লজ্জায় পড়ে গেলো। নিজেকে মনে মনে বকতে লাগলো ওভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য।

কিছুসময় পর সেখানে এসে বাস থামলো। পারফি ইয়ানাকে নিয়ে বাসে উঠে বসলো। এখান থেকে ঢাকা পৌঁছাতে আরে ৩,৪ ঘন্টা লাগবে। তাই সিটের সাথে শরীরে এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে রইলো পারফি।

ইয়ানাও দূর্বল শরীর সিটে এলিয়ে দিতে চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
———————————
দীর্ঘ জার্নির পর অবশেষে ঢাকা পৌঁছাতে সক্ষম হলো পারফিরা। বাস থেকে নেমে পাশে একটা দোকানে যেয়ে দোকানদারের কাছ থেকে ফোন নিয়ে শাফিনকে ফোন লাগালো।

শাফিন অচেনা নাম্বার দেখে তারাতাড়ি ফোন রিসিভ করলো। ফোন রিসিভ করে ওপাশে থাকা মানুষটার ভয়েস শুনে জীবন ফিরে পেলো যেনো। বিচলিত হয়ে বলতে লাগলো পারফি ঠিক আছিস? কোথায় আছিস? দুদিন কোথায় ছিলি? ইয়ানা ঠিক আছে? কোথায় আছিস শুধু বল আমি এখনি গার্ডদের নিয়ে সেখানে পৌঁছে যাচ্ছি। সবাই কতটা টে….

আর কিছু বলার আগে পারফি বলে উঠলো রিলাক্স আমরা ঠিক আছি। ফোনে সব কিছু বলা সম্ভব না। আমি ঠিকানা দিচ্ছি এখানে এখনি চলে আয় তারপর সব বলছি। আর গার্ড আনা লাগবে না আমরা এখন বিপদমুক্ত আছি।

পারফি ঠিকানা দিতে শাফিন ছুটে চলে গেলো সেই ঠিকানায়। সেখানে পৌঁছে পারফি আর ইয়ানাকে দেখে জীবন ফিরে পেলো। ছুটে যেয়ে পারফিকে জড়িয়ে ধরে বললো সবাই কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তুই জানিস? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি?এতো এতো খুজেও কোনো খোঁজ মিলে নি।

পারফি শাফিনের পিঠে চাপর মেরে বললো বলছি সব আগে বাসায় চল।

পারফির কথায় সম্মতি দিয়ে শাফিন পারফিকে ছেড়ে দাঁড়ালো। তারপর ইয়ানার দিকে চোখ পড়তে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ঠিক আছো তুমি?

ইয়ানা দূর্বল হেসে ছোট করে বললো ঠিক আছি ভাইয়া।

শাফিনের খুব খারাপ লাগলো কারণ দেখে বোঝা যাচ্ছে দুটো দিন শরীরের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। হাতে পায়ে কপালে ছোট ছোট ক্ষত গুলো বলে দিচ্ছে কি কি গিয়েছে ওদের উপর দিয়ে। শাফিন ওদের নিয়ে পাশে একটা ফার্মেসিতে চলে গেলো।

পারফি আর ইয়ানার ক্ষত স্থান গুলো পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করিয়ে তারপর দুজনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। কিছুক্ষণ এর ভিতরেই বাসায় পৌঁছে গেলো।

ড্রয়িংরুমের সবাই উপস্থিত ছিলো কারণ শাফিন ফোন করে বলে দিয়েছিলো ওদের খুঁজে পেয়েছে কিছুক্ষণের মাঝে বাসায় আসছে। বাসায় প্রবেশ করতে পিয়াসা বেগম পারফিকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দিলো। সারা মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো।

পারফি মাকে বুকে আগলে নিয়ে শান্ত করতে লাগলো। বুঝাতে লাগলো কিছু হয়নি ও ঠিক আছে। তখন দেখলো কিছুটা দূরে প্রীতি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে তা দেখে পারফি প্রীতিকে কাছে ডেকে বোনকেও বুকে আগলে নিলো। এতক্ষণে সবাই যেনো জীবন ফিরে পেলো।

কিছুক্ষণ পর প্রীতি পারফির থেকে সরে যেয়ে ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। ইয়ানার ক্ষত গুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে ব্যথিত গলায় বললো খুব কষ্ট পেয়েছিস? সব আমার জন্য হয়েছে। আমি যদি ওদিন তোকে আমাদের বাসায় না আনতাম তাহলে এমন কিছু হতো না৷ আমার জন্য আজ কতোটা কষ্ট পেতে হলো তোকে বলতে বলতে কান্না করে দিলো।

ইয়ানা প্রীতিকে শান্ত করতে বললো আমি ঠিক আছি কান্না করিস না। এই দেখ একদম সুস্থ আছি একটুও কষ্ট হচ্ছে না। আর একটু কান্না করলে কিন্তু আমিও কান্না করে দিবো বলে দিলাম।

ইয়ানার কথায় প্রীতি কান্নার মাঝেও হেঁসে ফেললো। তারপর একে একে সবাই ওদের খোঁজ খবর নিলো।

এক পর্যায়ে পারফি প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো প্রীতি ওকে নিয়ে তোর রুমে যেয়ে ফ্রেশ করিয়ে রেস্ট নিতে দে। অনেক ধকল গিয়েছে ওর উপর এখন রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।

প্রীতি সম্মতি দিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে উপরে উঠে গেলো। শাহানা বেগম কিছু খাবার নিয়ে ওদের পিছু পিছু উপরে গেলো । কোনো এক অজানা কারনে ইয়ানার প্রতি গভীর টান অনুভব করলো। ইয়ানার এমন করুন অবস্থা দেখে তার মন ও কেঁদে উঠলো।

ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে আসতে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। ইয়ানার চোখ চিকচিক করে উঠলো এতে। এই অচেনা মানুষগুলো ওর জন্য কতোটা ব্যাকুল হয়ে আছে। এখানে হয়তো ওর নিজের মা থাকলে ফিরেও তাকাতো না ভাবতে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো একফোটা পানি।

ইয়ানাকে কান্না করতে দেখে শাহানা বেগম অস্থির হয়ে বললো কান্না করছো কেনো আম্মু? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে? ক্ষত গুলোতে খুব বেশি জ্বালাপোড়া করছে?

ইয়ানা কিছু না বলে শানাহা বেগমকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো আমি ঠিক আছি আন্টি।

শাহানা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ইয়ানার। তারপর সবটুকু খাবার খাইয়ে দিয়ে একটু রেস্ট নিতে বললো। ইয়ানাও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পড়লো। শাহানা বেগম কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিচে নেমে গেলো।

প্রীতি ইসহাক আহমেদকে ফোন করে জানিয়ে দিলো ইয়ানার কথা। ইয়ানা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই ও নিচে নেমে গেলো।

সবাই উপস্থিত হতে কি কি ঘটেছে সবটা খুলে বলতে লাগলো সবাইকে পারফি। সবটা শুনে সবাই ব্যথিত হলো কতোটাই কষ্ট পেতে হয়েছে দুটো দিন দুজনকে।
এখন পারফির রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন তাই আর কেউ কথা বাড়ালো না। কারা এমন করেছে তাদের পরে ধরা যাবে তাই কেউ কথা না বাড়িয়ে পারফিকে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে বললো।

পারফি উপরে উঠে নিজের রুমে যেতে নিয়েও কিছু একটা মনে করে প্রীতির রুমে গেলো।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১৪

পারফি প্রীতির রুমে এসে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। বিড়াল ছানার মতে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। পারফি ইয়ানার পাশে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধ মুখ পানে। কপালের কাছে আসা চুলগুলো আলতো করে কানের পিছে গুঁজে দিয়ে আস্তে করে বললো যারা যারা আমার স্নিগ্ধ ফুলকে কষ্ট দিয়েছে তাদের কাউছে ছাড়বো না। হ্যা আমারি স্নিগ্ধ ফুল, একান্ত আমার ফুল। এই ফুলের গায়ে কারো টাচ কররার অধিকার নেই। যারা আমার ফুলকে কষ্ট দিয়েছে তাদের এর থেকে দ্বিগুন কষ্ট পেতে হবে। এ বলে আরো কিছুক্ষণ ইয়ানার স্নিগ্ধ মুখপানে তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেডে শরীর টা এলিয়ে দিলো। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে এখন একটু রেস্টের প্রয়োজন।
——————
ইসহাক আহমেদ এসেছে অনেক সময় হলো। ইসহাক আহমেদ আসার পর থেকে ইয়ানা তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
ইসহাক আহমেদ ইয়ানাকে খুঁজে পাওয়ার খবর পেয়ে যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো৷ অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে এসেছেন মেয়েকে নিতে। আাসার পর থেকে ইয়ানা তাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।

ইসহাক আহমেদ এবার সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে বের হতে যাবে তখন বাহিরে হট্টগোলের শব্দে সবাই বাহিরে আসলো। বাহিরে আসতে সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো। মিডিয়ার লোকজন বাসার চারপাশে ঘেরাও করে ফেলেছে। গার্ডরা অনেক চেষ্টা করেও তাদের আটকাতে পারলো না। তাদের থামানোর জন্য পাভেল চৌধুরী বললো কি চাই আপনারা এখানে কেনো এসেছেন?

মিডিয়ার এক এক জনে এক এক কথা বলতে লাগলো। বললো শুনলম আবরার পারফি চৌধুরীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তারা ফিরে এসেছে আমরা আবার পারফিকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই তাকে ডাকুন।

শাফিন এগিয়ে এসে বললো আপনারা কোনো ঝামেলা না করে চুপচাপ বেড়িয়ে যান আর নাহলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো আমরা।

কিন্তু এ কথা কি আর মিডিয়ার কানে যায়? তাদের একটা কথাই আবরার পারফির সাথে কথা বলবে। কথা না বলা পর্যন্ত তারা কোথাও যাবে না।

এদিকে বাহিরে চেচামেচি শব্দে পারফির ঘুম ভেঙে গেলো। এতো শব্দ কেনো হচ্ছে দেখার জন্য বেলকনিতে যেয়ে নিচে মিডিয়ার মানুষ দেখে দ্রুত নিচে নেমে গেলো।

পারফিকে দেখে এক এক জনে হামলে পড়তে লাগলো। গার্ডরা ঘেরাও দিয়ে তাদের আটকালো পারফির কাছে আসা থেকে।

পারফি শান্ত গলায় বললো আপনারা এখানে কেনো? কে পাঠিয়েছে আপনাদের? কি চান এখনে?

তখন একজন সাংবাদিক বলে উঠলো আপনি আর মিস ইয়ানা দুদিন মিসিং ছিলেন। কোথায় ছিলেন? কারা কিডন্যাপ করেছে আপনাদের?সেখান থেকে ফিরে আসলেন কিভাবে?

আরেকজন বলে উঠলো সত্যি কি আপনাদের কিডন্যাপ করা হয়েছে নাকি আপনাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে যার জন্য দুজন এক সাথে সময় কাটানো জন্য অন্য কোথায় গিয়েছেন? কি সম্পর্ক আপনাদের মাঝে?

আরেকজন বললো দুদিন আপনারা এক সাথে ছিলেন? কোথায় ছিলেন? দুদিন পর আবার হঠাৎ এভবে ফিরে কেনো এসেছেন? আপনারা কি রিলেশনে আছেন? কবে থেকে আপনাদের সম্পর্ক? যে সম্পর্কের জোরে আপনারা বিয়ে না করেই আলাদা সময় কাটাচ্ছেন তাও দূরে কোথাও যেয়ে।

মিডিয়ার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো ইয়ানা। পুরো দুনিয়াটা ঘুরে উঠলো। মিডিয়ার মানুষ যে ওদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছে তাতে মুহূর্তে মাঝে চরিত্রের দাগ কেটে আনলো। চোখ দিয়ে অঝোর ধারা পানি পড়তে লাগলো। এভাবে চরিত্রে কলঙ্কের দাগ লেগে যাবে কখনো কল্পনাও করে নি। এখন এ সমাজে এ চরিত্রের দাগ নিয়ে বেঁচে থাকবে কিভাবে? সমাজের মানুষ যে বাঁচতে দিবে না। কেউ সত্যিটা যাচাই করবে না সবাই যে খুবলে খাবে ভাবতে ইয়ানার শরীর শিউরে উঠলো। মাথা শূন্য লাগছে কি করবে কিছু বুঝতে পারলো না। পুরো দুনিয়াটা কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।

তখন আরেকজন বলে উঠলো আপনাদের ভিতর কোনো অবৈধ সম্পর্ক চলছে নাতো?

পারফি আর সহ্য করতে না পেরে লাস্ট কথাটা যে বলেছে তার নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলো। লোকটা ছিটকে দূরে পড়ে গেলো। এতক্ষণ হৈ-হুল্লোড় পরিবেশ টা মুহুর্তে শান্ত হয়ে গেলো।

পারফি এবার হুংকার দিয়ে বললো জাস্ট শাট আপ। কারো মুখ দিয়ে যদি আর একটা বাজে কথা বের হয় তাহলে তাকে এখানে জ্যন্ত পু/তে দিবো। বেড়িয়ে যান এই মুহূর্তে সবাই এখান থেকে আর নাহলে আমি কি করে বসবো আমি নিজেও জানিনা।

মিডিয়ার সবাই ভয় পেয়ে গেলো। কারো আর সাহস হলো না মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করার। জানের মায়া সবারি আছে তাই সবাই চুপচাপ কেটে পড়লো সেখান থেকে।

মিডিয়ার মানুষ যেতে সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কারো মুখে কোনো কথা নেই। পরিস্থিতি যে খারাপ দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে আর কারো বাকি নেই।

পারফি ইসহাক আহমেদের কাছে যেয়ে মাথা নিচু করে বললো আঙ্কেল আমাদের ক্ষমা করবেন, না চাইতেও আমাদের ঝামেলার জীবনে আপনাদের জীবন জড়িয়ে গেলো। আপনি প্লিজ টেনশন করবেন না মিডিয়ার মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে ফেলবো। আপনার মেয়ের গায়ে কোনো কলঙ্কের দাগ লাগতে দিবো না এইটুকু ভরসা করতে পারেন।

ইসহাক আহমেদ ভাঙা গলায় পারফির দিকে তাকিয়ে বললো আমি তোমাদের বিশ্বাস করি বাবা। তোমরা যে পরিস্থিতি শিকার সেটা আমরা জানি কিন্তু এটা মিডিয়া বুঝবে না। তারা আমার মেয়েকে সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিবে না বাবা। আমার মেয়েটা যে শেষ হয়ে যাবে বলতে বলতে তার চোখ ছলছল করে উঠলো।

পারফি তাকে অভয় দিয়ে বললো কিছু হবে না আমরা আছি পাশে। যারা যারা এই সরযন্ত্রের পিছে আছে তাদের সবাইকে এর উপর্যুক্ত শাস্তি পেতে হবে।

তারপর পারফি ইয়ানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো বিড়াল ছানা ভেঙে পড়ো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আর কেউ না জানুক তুমিতো জানো তুমি লয়াল। সব ঠিক করে দিবো প্রমিজ করছি তোমায়। ভেঙে না পড়ে মনে একটু সাহস যোগাও কারণ সামনের জীবনটা খুবি কঠিন হতে চলেছে। সব কঠিনতার মাঝে আমাদের সবাইকে তুমি পাশে পাবে তাই ভয় পেও না।

ইয়ানা কিছু বললো না শুধু ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো পারফির দিকে।

পারফি ফের শাফিনকে বললো ওদের সাবধানে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয় এদিকটা আমি সামলাচ্ছি।

শাফিন সম্মতি দিয়ে ইয়ানা আর ইসহাক আহমেদ কে নিয়ে গেলো। তারা যেতে সবাই ধীর পায়ে এসে ড্রয়িংরুমে বসলো। পারফি চুল খামছে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে বসে রইলো।

তখন টিভিতে কিছু নিউজ ভেসে উঠলো তা দেখে প্রীতি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ভাইয়া দে..দেখো।

প্রীতির কথায় সবাই টিভির দিকে তাকালো যেখানে এক এক জন সাংবাদিক এক এক কথা বলে যাচ্ছে। বলছে বিখ্যাত জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে টপ বিজনেসম্যন আবরার পারফি চৌধুরীর সাথে ইসহাক আহমেদের মেয়ে মিস ইয়ানার অবৈধ সম্পর্ক আছে। সত্যি কথায় উঠাতে আবরার পারফি একজন সাংবাদিকের উপর অ্যাটাক করেছে। আবরার পারফি আর মিস ইয়ানা দুদিন নিখোঁজ ছিলো আর এই নিখোঁজের পিছে কারণ এখনো সঠিক ভাবে জানা যা নি। এমন আরো নানা ধরনের কথা বলতে লাগলো। যা দেখে পারফি দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো। পিছে পিছে পাভের চৌধুরী আর শরীফ শিকদার ও গেলো।
——————————————-
শাফিন ইয়ানাদের পৌঁছে দিয়ে চলে গেছে। ইয়ানারা বাসার ভিতর প্রবেশ করতেই ইতি বেগম চেচিয়ে বলে উঠলো ওকে বাসায় এনেছো কোন সাহসে তু্মি? মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আমি জানতাম ওই ছেলের সাথে ওর ফোস্টিনস্টি চলছে। সেদিন ওই ছেলেকে বাসায় এনেছিলো আর এখন কাউকে কিছু না বলে ওই ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে৷ পালিয়ে গিয়ে মান সম্মান তো ডুবিয়েছিস তাহলে এখন আবার কোন সাহসে ফিরে এসেছিস। এই মুহূর্তে বেড়িয়ে যাবি বাসা থেকে।

ইসহাক আহমেদ ইতি ধমক দিয়ে বললো চুপ করবে তুমি? না জেনে না শুনে আন্দাজে কথা বলবা না তাহলে আমার চেয়ে বেশি খারাপ আর কেউ হবে না।

ইতি বেগম ও তেতে গিয়ে বললো ওর মতো চরিত্রহীন মেয়ের জায়গায় আমি এ বাসায় দিবো না। এই এখনি তুই বেড়িয়ে যাবি তোর মুখ ও দেখতে চাই না আমি।

ইসহাক আহমেদ আর সহ্য করতে না পেরে ইতি বেগমের গালে সজোরে চর বসিয়ে দিলো।

ইতি বেগম অবাক হয়ে তাকালো স্বামীর দিকে। এই প্রথম তিনি গায়ে হাত তুললো।

এদিকে ইয়ানা বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের মুখে এমন জঘন্য কথা শুনে নিঃশ্বাস ক্রমশ আঁটকে আসছে। নিজেকে সামলাতে চেয়েও সামলাতে ব্যর্থ হলো। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসলো। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। আস্তে আস্তে সেই অন্ধকারে হারিয়ে গেলো ইয়ানা। এতো এতো আঘাত এই ছোট্ট শরীর এ আর নিতে পারলো না।

ইয়ানা জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলে ইসহাক আহমেদ তারাতাড়ি ইয়ানাকে ধরে সোফায় শুইয়ে দিলো। বিচলিত হয়ে ইয়ানাকে ডাকতে লাগলো কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইতি বেগমের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বললো আমার কলিজার কিছু হলে ছাড়বো না তোমাকে আমি। জানো তুমি ওর সাথে কি হয়েছিলো? মেয়েটা মরতে মরতে বেঁচে ফিরে এসেছে আর তুমি সত্যি যাচাই না করে মিডিয়ার কথায় নেচে যাচ্ছো। এতোটা নিষ্ঠুর কি করে মানুষ হতে পারে সেটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না। জঘন্য একটা মা তুমি, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তোমাকে বিয়ে করা। ভালোবাসে বিয়ে করেছি কিন্তু বুঝি নি এমন নিষ্ঠুরতম একটা মানুষকে আমি ভালোবেসেছি ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে আমার। সহ্য হচ্ছে না আমার তোমাকে, আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও আর নাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।

ইসহাক আহমেদের কথায় ইতি বেগম ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। আর যাইহোক স্বামীকে তিনি অনেক ভালোবাসেন। আজ স্বামীর চোখে নিজের জন্য এতো এতো ঘৃণা দেখে তার ভিতরটা কেঁপে উঠলো। মস্তিষ্কে হানা দিলো আমি এতোটাই জঘন্য? যার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষের চোখে আজ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছেন না। ভাবতে ভাবতে গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে অশ্রু।
তাকালো সোফার শুয়ে থাকা অবচেতন ইয়ানার দিকে। শরীর এ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতর চিন্হ সাথে ব্যান্ডেজ ও করা কিছু কিছু জায়গায়। বুঝলো যে এই মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে আর যাইহোক তিনিতো ভালো করে জানে ইয়ানা কেমন মেয়ে। ফের তাকালো ইয়ানার দিকে কি নিষ্পাপ সেই মুখশ্রী। এই নিষ্পাপ ফুলটাকে আমি বছরের পর বছর কষ্ট দিয়ে এসেছি আর আজ তো সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি। সত্যি খুব জঘন্য আমি আর নাহলে নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে এতোটা অন্যায় করতে পারতাম না। নিজেকে আজ খুব অপরাধী লাগছে সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে ধীর পায়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।
———————————
সন্ধ্যা ৬ টা বাজে। চৌধুরী বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমে চুপচাপ বসে আছে। কারো মুখে কোনে কথা নেই। কিছুক্ষণ হলো পারফি,শাফিন,পাভেল আর শরিফ শিকদার এক সাথে বাসায় আসলো। আসার পর থেকে চুপচাপ বসে রইলো সবাই কেউ কোনো কথা বলছে না দেখে পিয়াসা বেগম বললো কি হয়েছে এভাবে চুপ হয়ে আছো কেনো তোমরা?

কিছুটা সময় নিয়ে পাভেল চৌধুরী বললো মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে এসেছি। যেই যেই ভিডিও টিবিতে ছাড়া হয়েছে সব ডিলিট করা হয়েছে। এখন সমস্যা নেই কেউ আর এই ব্যাপার নিয়ে মিডিয়ায় কিছু বলবে না।

সব শুনে পিয়াসা বেগম বললো মিডিয়ার মুখ নাহয় বন্ধ করলে কিন্তু এই সমাজের মানুষের মুখ কিভাবে বন্ধ করবে? একবার ইয়ানার কথা ভেবে দেখেছো? ওই মেয়েটার কি হবে? এই সমাজ ওকে খুবলে খাবে সেটা কিভাবে আটকাবে? পারফি নাহয় ছেলে মানুষ তাই ওর দিকে কেউ আঙুল তুলবে না কিন্তু ওই নিষ্পাপ মেয়েটার কি হবে? আজ আমাদের জন্য ওই মেয়েটার জীবনটা এভাবে শেষ হয়ে যাবে?

পিয়াসার কথায় পাভেল চৌধুরী বলার মতো কিছু পেলো না। ক্ষমতার জোরে মিডিয়ার মুখ নাহয় বন্ধ করেছে কিন্তু এই সমাজের মানুষ এর মুখ বন্ধ করবে কিভাবে? এ যে অসম্ভব কাজ।

সবাই নীরব হয়ে ভাবতে লাগলো এখন কি করবে, কিভাবে এই সমাজ থেকে ওই নিষ্পাপ মেয়েটাকে রক্ষা করবে।

তখন নীরবতা ভেঙে পারফি বললো আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি।

পারফির কথায় সবাই তাকালো পারফির দিকে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১১+১২

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১১

বদ্ধ রুমে পাশাপাশি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আজ একদিন ধরে পড়ে আছে পারফি আর ইয়ানা। কোথায় আছে, কারা ধরে এনেছে কিছুই জানা নেই। শুধু বুঝলো যে গভীর কোনো জঙ্গলের ভিতরে আছে। কারণ রাতে বেলা স্পষ্ট ভেসে আসছে বিভিন্ন পশুপাখির ডাক যা শুনে ভয়ে কেঁপে উঠছে ইয়ানা। শরীরে বিন্দু পরিমাণ শক্তি অবশিষ্ট নেই।
পুরো একটা দিন রাত কেটে গেলো এভাবে বাঁধা অবস্থায় এখন পর্যন্ত এক ফোটা পানিও খেতে পারে নি। জল তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ভয়, খুদায় আর পানির তেষ্টা সব মিলিনে চোখ খুলে রাখা দায়। কান্না করতে করতে চোখ গুলো ফুলে উঠেছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এবার। মুখটাও বাঁধা যার জন্য শ্বাস নিতে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে। পাশের চেয়ারেই অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে পারফি।

কাল রাতে যখন সবার থেকে পালিয়ে পারফি ফুল স্পীডে বাইক চালাচ্ছিলো তখন হঠাৎ সামনে থেকে আরো কিছু গাড়ি এসে ওদের আঁটকে দিলো। পারফি বার বার করে বলছিলো যা বোঝাপড়া ওর সাথে ইয়ানাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু ওরা পারফির কোনো কথা শুনলো না। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে পারফি নিজের সবটা দিয়ে লড়াই করে ইয়ানাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো। জানে এতো মানুষের সাথে ওর একার পক্ষে লড়া সম্ভব না তবুও হাল ছাড়ালো না। মা/রা/মা/রি/র এক পর্যায়ে একজন পিছ থেকে পারফির মাথায় আঘাত করলো। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। ঝাপসা চোখে অস্পষ্ট ভাবে ইয়ানার ভয়ে কান্না ভেজা মুখটা ভেসে উঠলো। মন থেকে আল্লাহর কাছে বার বার বলতে লাগলো স্নিগ্ধ ফুলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় এর পর কি হয়েছে কিছুই মনে নেই।

আচমকা পারফির জ্ঞান ফিরে আসলো। জ্ঞান ফিরতে নিজেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থা পেলো। আস্তে আস্তে সব মনে পড়তে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। স্নিগ্ধ ফুলের কোনো ক্ষতি করে নিতো ওরা ভাবতে কলিজা কেঁপে উঠলো। পরক্ষণে ওর পাশে চোখ পড়তে জীবন ফিরে পেলো যেনো। পাশের চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় ইয়ানা কান্না করে যাচ্ছে। দূর্বল তার চাওনি, ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে,চোখ দুটো ফুলে গেছে। বেঁধে রাখা হাত লাল হয়ে আছে আরেকটু হলেই যেনো রক্ত বেরিয়ে যাবে।
ইয়ানার এমন করুন অবস্থা দেখে পারফির কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। বুঝলো যে এখানে অনেক সময় ধরে আটকা পড়ে আছে। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধ মুখটার দিকে।

ইয়ানার হঠাৎ মনে হলো পাশে থাকা মানুষটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দূর্বল চোখে সেদিকে তাকাতে যেনো জীবন ফিরে পেলো ইয়ানা। পুরো একটা রাত আর দিন পারফি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলো। পারফির অবস্থা দেখে ইয়ানা শুধু কান্না করে গেলো এ ছাড়া যে আর কিছুই করার নেই। লোকটা আজ ওকে বাঁচাতে যেয়ে এই অবস্থা হয়ে পড়ে আছে ভাবতে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ভয়ে বারংবার কুঁকড়ে গেলো ইয়ানা, ভাবলো এই বন্দী জীবন থেকে আর মুক্তি নেই এখানেই হয়তো জীবন টা শেষ ভাবতেই শিউরে ওঠতো। পারফির জ্ঞান ফিরতে দেখে একটু আশার আলো খুঁজে পেলো। কান্নার রেশ এবার বেরে গেলো ইচ্ছে করলো বলতে আপনি ঠিক আছেন নীলমনি? আমরা কি এখান থেকে আর বের হতে পারবো না? আমি যে আর পারছি না কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না শুধু কান্না করে গেলো।

ইয়ানার কান্না দেখে পারফির খুব কষ্ট হচ্ছে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে লাগলো কোথায় আছে। কিভাবে এখান থেকে যেতে পারবে। তখন কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো। বুঝলো যে কেউ এখানেই আসছে তখন হঠাৎ রুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। ভয়ে ইয়ানা শিউরে উঠলো।

তখন কেউ দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম দরজা খোলার পর অন্য রুম থেলে মৃদু আলো আসলো। সেই মৃদু আলোতে একটা অবয় দেখা গেলো। যেহেতু রুম অন্ধকার সেহেতু লোকটা কে তা দেখা গেলো না।

তখন লোকটি বলে উঠলো তো আবরার পারফি চৌধুরী অবশেষে আপনার জ্ঞান ফিরলো।

পারফির রাগে শরীর পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না মুখ বাঁধা থাকার জন্য।

পারফির অবস্থা দেখে লোকটা একজন গার্ডকে ইশারা করলো মুখ খুলে দিতে। মুখ খুলে দিতে পারফি হুংকার দিয়ে বললো কে তুই? এভাবে ধরে কেনো নিয়ে এসেছিস? সাহস থাকলে বাঁধন খুলে দে। কাপুরুষের মতো আঁটকে কেনো রেখেছিস?

পারফির কথায় লোকটা ঘর কাঁপিয়ে হেসে বললো আরে রিলাক্স আবরার পারফি চৌধুরী রিলাক্স। এখনো দেখি তেজ কমে নি। ডোজটা হয়তো কম হয়ে গেছে।

পারফি ফের হুংকার দিয়ে বললো আমি কাউকে পরোয়া করি না কাপুরুষের মতো লুকিয়ে না থেকে নিজের পরিচয় দে শা*।

পরিচয়? তাতো জানবে বটে পুরোনো শত্রু বলে কথা এ বলে আবার বিশ্রীভাবে হাসতে লাগলো।

পুরোনো শত্রু মানে? কে তুই আর কোন উদ্দেশ্যেই বা এখানে এনেছিস?

আরে মিস্টার চৌধুরী এতো তারা কিসের? আস্তে আস্তে সবি জানতে পারবে এখনো অনেক হিসেব নেওয়া বাকি তো। সবেতো মাত্র শুরু আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে। এবার আসি কেমন? দেখতে আসলাম মিস্টার চৌধুরীর জ্ঞান ফিরলো কিনা। যেহেতু জ্ঞান ফিরেছে এবার হবে আসল খেলা। দেখা হচ্ছে সকালে এ বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো আর গার্ডরা ফের দরজা লাগিয়ে দিলো।

পারফি আর কোনো কথা না বলে নীরব হয়ে গেলো। এখন মাথা গরম করলে চলবে না। আগে এখান থেকে বের হতে হবে। কিন্তু রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার কিভাবে কি করবে বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে ভাবতে লাগলো কি করবে তখন রুমের লাইট ফের জ্বলে উঠলো।

অনেক সময় রুম অন্ধকার থাকায় হঠাৎ লাইন জ্বলে ওঠায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ইয়ানা। পারফি সেদিকে তাকিয়ে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো ঠিক আছো তুমি? চিন্তা করো না আমি যেভাবে পারি এখান থেকে বের হবো। তোমাকে সেফলি পৌঁছে দিবো। একদম ভয় পেও না বিড়াল ছানা আমি আছিতো। কিছু হতে দিবো না তোমার।

ইয়ানা ছলছল চোখে পারফির দিকে তাকিয়ে রইলো। এই অবস্থায় এসেও লোকটা নিজের কথা না ভেবে ওর কথা ভেবে যাচ্ছে। কিন্তু আদো কি এখান থেকে ওরা বের হতে পারবে? সেই চেনা পরিচিত মুখ গুলো কি আর দেখা হবে? ভাবতে ডুকরে কেঁদে উঠলো ইয়ানা।

পারফি কি বলে ইয়ানাকে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারলো না। কিছু একটা করতে হবে যেভাবে হোক এখান থেকে ছাড়া পেতে হবে। আশেপাশে খুঁজতে লাগলো কিছু পায় কিনা কিন্তু কোনো কিছু চোখে পরলো না। আশাহত হয়ে চোখ বুঁজে নিলো পারফি।
কিছুক্ষণ পর কিছু একটা মনে পড়তে চোখ খুললো পারফি। ইয়ানার দিকে তাকি আস্তে করে ডাক দিলো বিড়াল ছানা…

ডাকটা শুনে ইয়ানা দূর্বল চোখে তাকালো পারফির দিকে কিন্তু কিছু বলার শক্তি পেলো না।
——————————
চৌধুরী পরিবারে শোকের ছায়া নেমে গেলো। রাত বাজে প্রায় ১২ টা কিন্তু কারো চোখে ঘুম নেই। সিঁড়ির কাছে বসে প্রীতি ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। ভাই আর প্রিয় বান্ধবীকে এভাবে খুঁজে না পেয়ে কাল রাত থেকে কান্না করে যাচ্ছে। পাশে বসে শাহানা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে তার চোখেও পানি।

পিয়াসা বেগম প্রায় অবচেতন অবস্থায় সোফায় বসে কান্না করছে। কয়েকবার জ্ঞান ও হারিয়েছে। কলিজার টুকরো ছেলে আজ পুরো একটা দিন থেকে নিখোঁজ এটা কোনো মা কিভাবে মানবে। বার বার মন কু ডাকছে ছেলের কিছু হয়ে যায় নিতো।

আরেকটা ছোফায় পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার বসে আছে চুপচাপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কাল রাত থেকে তন্য তন্য করে খুঁজে বেড়াচ্ছে। পুলিশকে ইনফর্ম করেছে কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ পায় নি।

পাভেল চৌধুরীর ভিতরটাও দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। আজ তার এই পেশার জন্য ছেলেকে হারাতে বসেছে। এতদিন পিয়াসার এই পেশা ছেড়ে দিতে বলার কারণটা বুঝতে পারছে পিয়াসা কেনো এমন করতো। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা কতোটা তিব্র তা তার থেকে ভালো কে বোঝে?সেই ছোট বেলা বাবা-মা কে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলো আর আজ ছেলেকে হারাতে বসেছে। নিজেকে আজ খুব অপরাধী লাগছে কেনো এই পেশায় জড়াতে গেলো কিন্তু এই পেশায় না জড়ালে নিজেকেও নিজে কখনো ক্ষমা করতে পারতেন না। নিজের মা-বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারতেন না। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারতেন না। কিন্তু আজ যে উনি বড্ড অসহায় হয়ে পড়লেন।

শাফিন মাথার চুল খামছে ধরে বসে আছে। প্রাণ প্রিয় বন্ধু বিপদে আছে আর ও কিছু করতে পারছে না। নিজের বোনের মতো মেয়েটার জন্য কিছু করতে পারছে না ভাবতে ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।

শাফিন চোখ তুলে তাকালো সিঁড়ির কাছে বসে কান্নারত প্রীতির দিকে। সবসময় চঞ্চলতার মাঝে ডুবে থাকা মেয়েটাকে আজ দেখতে কতটা বিধ্বস্ত লাগছে। এগুলো আর সহ্য করতে না পেরে শাফিন বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। সবার এই অসহায় মুখ বসে বসে দেখার আর সাধ্য হলো না। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে আজ বন্ধু এতো বড় বিপদে এদিকে ও কিছুই করতে পারলো না। হাজারো খুজে কোনো খোঁজ মিললো না। এখনো গার্ডরা, পুলিশরা তন্য তন্য করে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

চৌধুরী পরিবারের মতো শোকের ছায়া আহমেদ পরিবারে ও মনেমেছে। ইসহাক আহমেদ মেয়েকে এভাবে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা। প্রেশার বেড়ে যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ইমা বোনের নিখোঁজ হওয়ার খবর আর বাবার এমন অসুস্থতার খবর শুনে ছুটে এসেছে। বাবার পাশে বসে ইমা কান্না করে যাচ্ছে প্রিয় ছোট বোনকে খুঁজে না পেয়ে।

এসবের মাঝে শুধু মাত্র ইতি বেগমকে দেখা গেলো না কষ্ট পেতে। তিনি তার মতো চুপচাপ বসে আছে কিন্তু কিছু বলছে না এখন কিছু বলা মানে নিজের কাপালে শনি ডেকে আনা তাই চুপচাপ বসে রইলেন।
————————————-
ইয়ানা অনেক কষ্টে বাঁধা হাত দিয়ে পারফির পকেট থেকে ছোট একটা ছু/রি বের করলো। পাশাপাশি চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে যার জন্য অনেক কষ্টে এক হাত পারফির পকেট পর্যন্ত নিতে সক্ষম হলো।

পারফির পকেটে সবসময় ছোট খাটো একটা ছু/রি রেখে দেয় যেটার কথা মনেই ছিলো না এতো সময়। হঠাৎ তখন মনে পড়তে ইয়ানাকে ফিসফিস করে বললো ছু/রি টা বের করতে।

ইয়ানা পারফির কথায় সম্মতি দিয়ে অনেক চেষ্টার পর ছু/রি টা বের করতে সক্ষম হলো।

ছুরিটা বের করতে পারফি ফের ইয়ানাকে ফিসফিস করে বললো এবার আস্তে আস্তে আমার হাতের বাঁধনটা কাঁটার ট্রাই করো।

ইয়ানা দুর্বল শরীর নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো আ…আপনার হাতে ল..লাগবে।

তা তুমি ভেবো না আগে আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে। যা বলছি সেটা করো কুইক।

ইয়ানা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ছু/রি দিয়ে দড়ি কাটার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু শরীরে বিন্দু পরিমাণ শক্তি নেই হাত প্রচন্ড কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে হাত থেকে ছু/রিটা পড়ে যেতে নিলো কিন্তু পড়ার আগে ধরতে সক্ষম হলো।

পারফি ইয়ানার অবস্থা দেখে বললো বিড়াল ছানা একটু মনে সাহস জোগাও প্লিজ। আর একটু কষ্ট করো এর পর তোমাকে কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। একটু চেষ্টা করো দড়িটা কাটার।

পারফির কথায় ইয়ানা নিজের সবটা দিয়ে দড়িটা কাটার চেষ্টা করতে লাগলো। ছু/রির আঘাতে পারফির হাত কয়েক জায়গায় কেটে যেয়ে রক্ত বের হতে লাগলো তা দেখে ইয়ানা ঘাবড়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাত আরো কাঁপতে লাগলো।

ইয়ানার অবস্থা বুঝে পারফি বললো বিড়াল ছানা আমার দিকে তাকাও। ওইটুকু আঘাতে আমার কিছু হবে না সত্যি। দেখো আমার কিছু হয় নি তুমি একটু সাহস নিয়ে কাজটা করো।

ইয়ানা তাকালো পারফির দিকে। চোখ পড়লো সেই নীলমনির দিকে। যে চোখে তাকিয়ে ইয়ানা ভরসা খুঁজে পাচ্ছে। এই প্রথম ওই নীলমনির দিকে এতো সময় তাকাতে সক্ষম হলো। যেই চোখে ইয়ানাকে আস্বস্ত করছে আমি আছিতো পাশে।

ইয়ানা ফের কাঁপা কাঁপা হাতে দড়ি কাঁটার চেষ্টা করতে লাগলো। ছু/রির আঘাত যেয়ে লাগছে পারফির হাতে তা দেখে চোখে খিচে বন্ধ করে নিচ্ছে। এভাবে লোকটাকে আঘাত করতে খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এ ছাড়া যে আর কোনো উপায় নেই।
ওই ক্ষত বিক্ষত হাতে দিকে ইয়ানার তাকাতে আর সাহস হলো না। তাই চোখ খিচে বন্ধ করে বাঁধন কাটতে লাগলো। তাকালে হয়তো ওই হাত এভাবে ক্ষত বিক্ষত করে সাহস হতো না দড়ি কাঁটার।

আরো অনেক সময় পর এভাবে কাঁপা কাঁপা হাতে দড়ি কাটতে সক্ষম হলো। দড়ি কেটে গেছে বুঝতে পেরে ইয়ানা চোখ খুললো। চোখ খুলতে চোখে পড়লো সেই নীলমনি চোখজোড়া যা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।

পারফি দ্রুত এবার হাত ছুটিয়ে আরেক হাতের রশি খুললো তারপর পায়ের বাঁধন খুলে ইয়ানার হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিলো। ছাড়া পেতে ইয়ানার দূর্বল শরীর ধরে দাঁড় করালো। ইয়ানা সব ভুলে পারফিকে জড়িয়ে ধরলো।

পারফি একটু অবাক হলেও পরক্ষণে বুকে আগলে নিলো ইয়ানাকে। মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে আর শরীর খুব দূর্বল বুঝতে পারলো। এখন এখান থেকে ওকে নিয়ে কোনো রকম যেতে পারলেই হবে আর কিছু লাগবে না।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১২

পারফিকে জড়িয়ে ধরার পর ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পারফি ইয়ানাকে কয়েকবার ডাক দিলো। কিন্তু ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ পেলো না তা দেখে পারফি ইয়ানার মুখ সামনে এনে কয়েকবার গালে হালকা করে চাপর মেরে ডাক দিলো। তখন দেখলো ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বিরবির করে বলছে ইয়ানা। শব্দটা এতোটাই আস্তে যে পারফির কান পর্যন্ত সেই শব্দ পৌছালো না। তাই পারফি কানটা এগিয়ে নিলো ইয়ানার মুখের কাছে। তখন অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলো ইয়ানা বিরবির করে পানি চাচ্ছে।

পারফি ইয়ানাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। দিশেহারা হয়ে আসেপাশে পানি খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পানির ছিটে ফোঁটাও নেই। এমন বদ্ধ একটা ঘরে পানি থাকার কথাও না। পারফি কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। ইয়ানার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ইয়ানার দু গালে হাত রেখে ইয়ানাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কোনো সারা পাচ্ছে না। হাত-পা প্রচুর ঠান্ডা হয়ে আছে এই অবস্থায় পারফি কিভাবে কি করবে ভাবতে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। তারাতাড়ি নিজের পড়নের জ্যাকেট খুলে ইয়ানাকে পড়িয়ে দিলো। ইয়ানার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে উষ্ণ করার চেষ্টা করলো। এভাবে অনেক সময় পর ইয়ানা কিছুটা উষ্ণ হতে গালে হালকা করে চাপর মেরে ডাকতে লাগলো।

একটা সময় ইয়ানা কিছুটা হুঁশে আসলো। পিটপিট করে তাকাতে দেখতে পেলো পারফি ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ওর গালে হাত দিয়ে ওকে ডেকে যাচ্ছে। দূর্বল গলায় কিছু বলতে যাবে কিন্তু পানির পিপাসায় গলা এতো শুকিয়ে আছে যে কিছু বলার শক্তি পেলো না।

এদিকে ইানাকে চোখ খুলতে দেখে যেনো পারফি নিজের জীবন ফিরে পেলো। তারাতাড়ি বসা থেকে উঠে ইয়ানাকে বুকে আগলে নিলো। এতো সময় ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়াতে পারফির নিঃশ্বাস আঁটকে আসছিলো। ইয়ানাকে নিজের বাহুডোরে আগলে রেখে করুন গলায় বললো আর একটু সহ্য করো বিড়াল ছানা। নিজের ভিতর একটু শক্তি জোগাড় করো আর নাহলে এখান থেকে যাবো কিভাবে বলো? এখান থেকে যেয়ে তোমার সব কষ্ট মুছে দিবো শুধু একটু শক্ত হও স্নিগ্ধ ফুল।

ইয়ানা চুপচাপ পারফির বুকে চুপটি করে পড়ে রইলো। পারফির ব্যাকুলতা দেখে নিজেকে একটু শক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো। এখান থেকে বের হতে হলেও অনন্ত নিজেকে একটু শক্ত করা প্রয়োজন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ইয়ানা উচ্চারণ করলো এ..খান থ..থেকে ন..নিয়ে চলুন ন..না ন..নিশ্বাস নিতে খ..খুব কষ্ট হ..হচ্ছে।

পারফি ইয়ানার কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শুনে বললো আর একটু কষ্ট সহ্য করো স্নিগ্ধ ফুল আমি এখনি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। আর কখনো কষ্ট পেতে দিবো না শুধু একটু কষ্ট করো।

ইয়ানা কিছু বললো না চুপ থাকলো তা দেখে পারফি ইয়ানাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে দু গালে হাত রেখে বললো বিড়াল ছানা ঠিক আছো তুমি?

ইয়ানা অশ্রুসিক্ত চোখে পারফির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ইশারা করলো ঠিক আছে।

পারফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইয়ানাকে ফের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো তুমি এখানে বসো আমি দেখি কি করা যায় এ বলে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। বাহির থেকে দরজা লক করা। কিভাবে দরজা খুলবে তা ভাবতে লাগলো।
কিছুক্ষণ ভেবে কিছু একটা মনে করে ডাক দিলো দরজার ওই পাশে কেউ আছে?

প্রথমবার সাড়াশব্দ না পেলেও কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর ঘুম জড়ানো কন্ঠে কেউ বললো কি হয়েছে? চেঁচাচ্ছেন কেনো?

আসলে ভিতরে যেই মেয়েটাকে রেখেছেন সে পানির জন্য ছটফট করছে। একটু পানি খাইয়ে দিয়ে যাবেন আর নাহলে মেয়েটার কিছু হয়ে যেতে পারে।

এখন দরজা খোলা যাবে না বসের নিষেধ আছে। যা বলার কাল সকালে বসকে বলেন।

মেয়েটার এখন পানি না পেলে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। আপনার বস নিশ্চয়ই আমাদের মে/রে ফেলার আদেশ দেয় নি?এখন যদি মেয়েটার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন আপনার বসকে কি কইফিয়ত দিবেন?

লোকটা ভাবলো আসলেই যদি কিছু হয়ে যায় তখন বসকে কি বলবে? বসতো তাহলে জা/নে মে/রে দিবে ভাবতে কিছুটা ঘবড়ে গেলো লোকটা। তাই বললো আসছি আমি পানি নিয়ে এ বলে কিছুক্ষণ পর হাতে এক বোতল পানি নিয়ে এসে দরজা খুলতে লাগলো। দরজা খোলার সাথে সাথে পারফি লোকটার মুখ চেপে ধরে ভেতর থেকে দরজা আঁটকে দিয়ে লোকটার ঘাড় বরাবর ঘুষি মেরে দিলো। লোকটা সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো নিচে।

নিচে পড়ে থাকা পানির বোতল উঠিয়ে পারফি ইয়ানার কাছে চলে গেলো। কিছুটা পানি ইয়ানাকে খাইয়ে দিয়ে চোখমুখ পানি দিয়ে দিলো এতে যেনো ইয়ানা জীবন ফিরে পেলো। ইয়ানাকে একটু স্বাভাবিক হতে দেখে ইয়ানার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিয়ে বললো চলো।
ইয়ানা দূর্বল শরীর নিয়ে ভয়ে ভয়ে পারফি সাথে হাঁটতে লাগলো।

পারফি সতর্কতার সাথে ইয়ানাকে নিয়ে বের হতে লাগলো। রাত অনেক গভীর তাই গার্ডের আনাগোনা কম হয়তো সবাই ঘুমাচ্ছে। পারফি সাবধানে মেইন ডোর পর্যন্ত ইয়ানাকে নিয়ে আসলো। তারপর দেখতে পেলো মেইন ডোরের কাছে একজন গার্ড ঝিমাচ্ছে। পারফি সেই সুযোগে ইয়ানাকে একটু আড়ালে দাঁড় করিয়ে ওই গার্ড কেও একি ভাবে মে/রে দরজা খুলে ইয়ানাকে নিয়ে বাসাটা থেকে বের হলো।

বাসা থেকে বের হয়ে বুঝতে পারলো গভীর কোনো জঙ্গলের মাঝে ওরা আছে। চারপাশে সারিসারি বিশাল বিশাল গাছ। সব কিছু অন্ধকারে ঘেরা এখন এই অবস্থায় কোন দিকে যাবে কি করবে কিছু বুঝতে পারলো না।

এদিকে ইয়ানা ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে। চারদিক থেকে শিয়ালের ডাক একটু পর পর কানে ভেসে আসছে যা শুনে কেঁপে উঠছে ইয়ানা। এক হাত পারফির হাতের মুঠোয় অন্য হাত দিয়ে ভয়ে পারফির শার্ট খামছে ধরলো। তা দেখে পারফি ইয়ানার হাতটা আরেকটু জোরে ধরে বললো ভয় পেও না আমি আছি তো।

ইয়ানা একটু ভরসা পেলো। পাশে থাকা মানুষটা যে ওকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে এতক্ষণে বুঝে গেছে তা।

হালকা চাঁদের আলোয় পারফির চোখে সরু একটা রাস্তা চোখে পড়লো। ইয়ানাকে নিয়ে সেদিকে হাঁটা দিলো এখানে এখন বেশি সময় থাকা যাবে না যতো দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে।

সরু রাস্ত অনুসরণ করে হেঁটে চলেছে কিন্তু কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। সাথে ফোন ও নেই যে লোকেশ দেখে এই ঘনো জঙ্গল থেকে বের হবে। এই ঘনো জঙ্গলে এভাবে বেশি সময় থাকাটাও রিস্ক।

এদিকে ইয়ানার আর পা চলছে না। এমনি দূর্বল শরীর দুদিন থেকে না খাওয়া যার জন্য প্রচন্ড খুদাও লেগেছে। হাঁটার আর শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না বার বার পা ভেঙে আসছে। এভাবে আরো অনেক সময় হাটার পর মেইন রাস্তার দেখা মিললো। দূর থেকে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে মেইন রাস্তা দেখা যাচ্ছে। তা দেখে ইয়ানার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। পারফির খামছে ধরে রাখা শার্ট আরেকটু দৃঢ় ভাবে ধরে বলে উঠলো ওই দেখেন মেইন রাস্তা দেখা যাচ্ছে ।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকি বললো দেখতে পারছি চলো এ বলে দুজন দৌড়ে মেইন রাস্তায় উঠে হাঁপাতে লাগলো। দুজনের মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো।

এখন কথা হলো মেইন রাস্তা পর্যন্ত তো এসেছে কিন্তু এখন এতো রাতে গাড়ি পাবে কোথায়? দুই পাশের রাস্তার কোন দিকে যাবে কিছুই বুঝে উঠলো না কারণ জায়গায়টা পুরোই অচেনা। বুঝলো যে ঢাকার বাহিরে কোনো জায়গায় আছে ওরা।

দাঁড়িয়ে দুজন গাড়ির অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রচন্ড শীত ও লাগছে। এতক্ষণে ইয়ানা খেয়াল করলো পারফির জ্যাকেট ওর গায়ে। ইয়ানা দেখলো জ্যাকেট গায়ে তারপর ও শীত লাগছে প্রচুর আর পারফি শুধু একটা শার্ট গায় দেওয়া। তা দেখে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আপনার শীত লাগছে না? চাইলে জ্যাকেটটা নিতে পারেন।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো আমার লাগবে না আমি ঠিক আছি এটা তোমার প্রয়োজন। চলো সামনে এগিয়ে দেখি কোনো গাড়ি পাই কিনা। এ বলে ফের ইয়ানার হাত ধরে সামনে হাঁটা ধরলো। ইয়ানা বিড়াল ছানার মতো চুপটি করে পারফির সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত রাস্তায় দুজন এক সাথে হেঁটে চলেছে অজানা গন্তব্যে। কোথায় আছে, কোথায় যাচ্ছে কিছুই জানা নেই। এভাবে হাটতে হাটতে একসময় একটা সিএনজির দেখা মিললো।

সিএনজিটা কাছে আসতে পারফি হাতের ইশারায় সিএনজি থামালো। সিএনজি ড্রাইভার কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো এতো রাতে এই নির্জন রাস্তায় মানুষ আসলো কি করে? কোনো ভূত ছদ্মবেশে আসলো নাকি ভাবতে লোকটা কাঁপতে লাগলো।

হঠাৎ করে লোকটাকে কাঁপতে দেখে বেকুব বনে গেলো পারফি। লোকটার দিকে তাকি বললো আপনি কাপছেন কেনো?

লোকটা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আ..আপনারা কি সত্যি মানুষ নাকি ভ…ভূত।

লোকটার কথা শুনে পারফি কি বলবে বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষণ লোকটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ভূত হলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনার ঘাড় মটকে দিতাম? দেখেন ভাই আমরা বিপদে পরে এখানে আটকা পড়ে গিয়েছি একটু হেল্প করতে পারবেন?

লোকটা এতক্ষণ এ ভাবলো আসলেই ভূত হলে এতক্ষণে তার ঘাড় মটকে দিতো। বুঝলো যে এরা মানুষ বিপদে পরেছে তাই বললো কি হেল্প?

এই জায়গাটার নাম কি বলতে পারেন?

লোকটার থেকে জানতে পারলো জায়গাটা ঢাকা থেকে অনেক দূরে গ্রাম টাইপের একটা জায়গায় আছে। এখান থেকে ঢাকা পৌঁছাতে ৫,৬ ঘন্টা লাগবে। তা শুনে পারফি বললো আমাদের পৌঁছে দিয়ে আসতে পারবেন?

লোকটা বললো আমরা তো এই জায়গার লাইনে গাড়ি চালাই। অন্য লাইনে যাওয়া যাইবো না তবে আপনারা চাইলে আমি বাসস্ট্যান্ডে পর্যন্ত পৌঁছায় দিয়া আসতে পারি। কিন্তু এতো রাইতে বাস পাইবেন না বাসের জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবো।

আচ্ছা সমস্যা নেই আপনি তাহলে আমাদের বাসস্ট্যান্ডে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসেন তাহলেই হবে।

আচ্ছা ওঠেন তাইলে।

পারফি ড্রাইভারকে ধন্যবাদ দিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো। ওরা উঠতে ড্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো।

এদিকে ইয়ানা দূর্বল শরীর নিয়ে সিএনজির সাথে হেলায় দিয়ে চোখ বুঁজে বসে রইলো। সিএনজির ঝাঁকুনিতে বারবার মাথাটা সিএনজির সাথে মৃদু টাক খাচ্ছে সেটা দেখে পারফি ইয়ানার কিছুটা কাছে যেয়ে মাথাটা ওর কাঁধে নিয়ে রাখলো।
ইয়ানা দূর্বল চোখে একবার পারফির দিকে তাকিয়ে মাথা উঠাতে যাবে তখন পারফি বললো যেভাবে রেখেছি এভাবে থাকো চুপচাপ।

ইয়ানা আর উঠালো না মাথা। দূর্বল শরীর নিয়ে এতক্ষণ ওভাবে বসে থাকতে হিমশিম খাচ্ছিলো। এখন কিছুটা ভালো লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পারফির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

ইয়ানার ভারী নিঃশ্বাস ঘাড়ে পরতে পারফি বুঝলো ঘুমিয়ে পড়েছে ইয়ানা। ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো স্নিগ্ধ মুখ পানে। কপালের পাশ দিয়ে কিছুটা জায়গা ছিলে গেছে যেখানে রক্ত জমাট বেধে আছে। মুখের দু পাশে লাল হয়ে আছে মুখ বেঁধে রাখার জন্য।
স্নিগ্ধ ফুল ওর জন্য এতটা কষ্ট পাচ্ছে ভাবতেই পারফির খারাপ লাগছে। প্রথমে হাত কাটলো তারপর আজ দুদিন থেকে কতটাই না কষ্ট পাছে।
পারফি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলো যারা যারা স্নিগ্ধ ফুলকে কষ্ট দিয়েছে তাদের কাউকে ছাড়বে না। প্রত্যেককে এর শাস্তি পেতে হবে।

পারফি ইয়ানার মুখপানে তাকিয়ে থেকে কপালের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে আস্তে করে বুকের মাঝে আগলে নিলো ইয়ানাকে। ইয়ানাও বিড়াল ছানার মতো চুপটি করে ঘুমিয়ে রইলো পারফির বাহুডোর।
পারফি নিজের অজান্তেই ইয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। পরক্ষণে হুঁশ আসতে ভরকে গেলো ইয়ানা টের পেয়েছে কিনা। কিন্তু ইয়ানার কোনো হুঁশ নেই আদুরে বিড়াল ছানার মতো ঘুমিয়ে আছে তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-১০

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ১০

তোমার হাসির ঢেউ….লাগলো আমার চোখে..
ভিজলো চোখের দু পাতা… জানলো না… তোলোকে….
হো… তোমার হাসির ঢেউ…লাগলো আমার চোখে….
ভিজলো দু চোখের পাতা…জানলো না…তোলোকে…….

ভেজা ভেজা চোখ আমি…. রৌদ দূরে শুকাবো… ভালোবাসি তোমারে..কী করে তা লুকাবো…..

ভেজা ভেজা চোখ আমি…রোদ দূরে শুকাবো…
ভালোবাসি তোমারে… কী করে তা লুকাবো….

তোমার হাসির ঢেউ….. লাগলো আমার চোখে…..
ভিজলো চোখের দু পাতা… জানলো না… তোলোকে…

তোমার… ভালো হোক…. তুমি সুখে থাকো.. কিছুই চাইনা আমি… মনে রাখো বা না রাখো….

তোমার… ভালো হোক…. তুমি সুখে থাকো.. কিছুই চাইনা আমি… মনে রাখো বা না রাখো….

আমি একলা ভালো বেসেই যাবো…
পথো চেয়ে হায়…শুধু বসেই রবো….

ভেজা ভেজা চোখ আমি…রোদ দূরে শুকাবো…
ভালোবাসি তোমারে… কী করে তা লুকাবো…. (গানের মাঝে কোনো ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখনে)

গানটা শেষ করে চোখ খুললো পারফি।

গান শেষ হতে সবাই হাতে তালি দিয়ে উঠলো। একটু আগের মন খারাপ টা মুহূর্তে মাঝে কেটে গেলো গান শুনে।
ইয়ানা এখনো তাকিয়ে আছে পারফির দিকে। লোকটা এতো সুন্দর গান গাইতে পারে আগে জানা ছিলো না। কি মধুর গানের কন্ঠ। পুরো গানটা মুগ্ধ হয়ে শুনেছে ইয়ানা। একটু আগের মন খারাপটা কেটে গিয়ে একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করলো মনে।

পারফির গানের মাঝে ওদের খেলার সমাপ্ত হলো। এবার ডাব খাওয়ার পালা কিন্তু ডাব কাটবে দিয়ে তা নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলো। ভালো করে খেয়াল করতে দেখলো কিছুটা দূরে একজন ডাব বিক্রেতা ডাব বিক্রি করছে। তার কাছ থেকেই ডাব কেটে এনে চারজন হাসি আনন্দের মাঝে ডাব খেলো। তারপর ওই জায়গা থেকে ফিরে আসার সময় যার ডাব গাছ ছিলো তার ডাবের মূল্য দিয়ে তারপর চারজন যেয়ে গাড়িতে উঠলো। আজকের দিনটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে সবার মনে। খুব খুব এনজয় করেছে চারজন মিলে।

এরপর চলে গেলো কেকের দোকানে প্রীতি ওর পছন্দ মতো কেক অর্ডার করে দিলো সন্ধ্যার পর তারা কেক পাঠিয়ে দিবে। তরপর কিছু শপিং করে বাসায় চলে গেলো সবাই।

দিনটা খুবি ভালো কেটেছে চারজনের। বাসায় এসে আরো দুটি মানুষের সাথে ইয়ানার পরিচয় হলো। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদারের সাথে। তারাও ইয়ানাকে আপন করে নিলো। এই দুই পরিবারের সবার ব্যবহার দেখে খুবি মুগ্ধ হলো ইয়ানা।

হাসি আনন্দের মাঝে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। পুরো বাড়ি আরো আগেই সাজানো কমপ্লিট হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন মানুষজনে বাসা ভোরে গেলো। বাচ্চারা হৈ-হুল্লোড় করে খেলতে লাগলো। সবাই রেডি হয়ে কেক কাটা হলো সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা দিন গেলো।

আস্তে আস্তে সব আত্মীয়স্বজন বিদায় নিলো। অনেকটা রাত হয়েছে তাই ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আসতে বলবে তখন প্রীতি বললো আঙ্কেলের এতো কষ্ট আসার দরকার নেই আমি পারফি ভাইয়াকে বলে দিচ্ছি ভাইয়া তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।

ইয়ানা বললো উনি কষ্ট করে যাবে আবার এর থেকে বাবাকে ফোন করি আমি।

প্রীতি ধমকে উঠে বললো একদম বেশি বুঝবি না যেটা বলছি সেটা কর। আঙ্কেলকে ফোন করে বলে দে নিতে আসা লাগবে না ভাইয়া পৌঁছে দিয়ে আসবে।

প্রীতির ধমক খেয়ে ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে ফোন করে বললো সব তারপর কল কাঁটার সাথে সাথে দেখলো ফোন বন্ধ হয়ে গেছে চার্জ নেই। ভাবলো বাসায় যেয়ে চার্জ দিয়ে নিবে।

প্রীতি পারফিকে বললো ইয়ানাকে পৌঁছে দিয়ে আসতে। পারফি রাজি হতে ইয়ানা সবার থেকে বিদায় নিলো। পিয়াসা আর শাহানা বেগম অনেক করে বললো থেকে যেতে ইয়ানা তাদের অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললো আরেকদিন এসে থাকবে। এই একটা দিনের ভিতর খুব আপন করে নিয়েছে সবাই ইয়ানাকে। পিয়াসা আর শাহানা বেগম মায়ের মতো স্নেহ করেছে। এক কথায় সবাইকে অনেক অনেক ভালো লেগেছে ইয়ানার।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে পারফির সাথে বেরিয়ে পড়লো।

পারফি বাইকে উঠে ইয়ানাকে বললো বিড়াল ছানা উঠে পড়ো।

ইয়ানা চুপটি করে উঠে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো। তা দেখে পারফি বললো ধরে বসো আর নাহলে পড়ে যাবে।

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো সমস্যা নেই বসতে পারবো এভাবে।

পারফি ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো পড়ে হাত-পা ভাঙলে তখন দোষ দিতে পারবে না বলে দিলাম এ বলে বাইক স্টার্ট দিলো।

নিস্তব্ধ শীতের রাতে এভাবে বাইকে চরে ঘুরার মজাটাই অন্যরকম। কারো মুখে কোনো কথা নেই। ইয়ানার বেধে রাখা চুল আচমকা খুলে গেলো। বাতাসে চুলগুলো উড়িয়ে এলোমেলো করে দিলো। কিছু চুল যেয়ে বারি খাচ্ছে পারফির মুখে। চুলের থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি এক ঘ্রাণ। পারফির ইচ্ছে হলো মুহূর্তটা এখানেই থামিয়ে দিতে।

ইয়ানা খেয়াল করলো ওর চুলগুলো বারবার পারফির মুখের কাছে বারি খাচ্ছে। বিরক্ত হলো খুব চুল খুলে যাওয়ার জন্য। বিরবির করে বললো চুল খোলার আর টাইম পেলো না।
এক হাত দিয়ে বারবার চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিচ্ছে কিন্তু লম্বা চুল হওয়াতে বার বার উড়ে পারফির উপরে পড়ছে।
ইয়ানা এবার পারফির উদ্দেশ্যে ছোট করে বললো শুনছেন?

হুম বলো।

বাইকা একটু থামাবেন?

পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো কেনো? কোনো সমস্যা?

না মানে আসলে চুল গুলো আপনাকে ডিস্টার্ব করছে। বাইকটা একটু থামালে চুলগুলো বেঁধে নিতাম।

আমি তোমাকে বলেছি তোমার চুল আমাকে ডিস্টার্ব করছে? থাকনা এভাবে আমার সমস্যা হচ্ছে না।

সত্যি সমস্যা হচ্ছে নাতো?

তোমাকে এতো ভাবতে হবে না চুপচাপ বসে থাকো।

ইয়ানা আর কথা বললো না ওভাবে চুপচাপ বসে রইলো।
কিন্তু এই চুপচাপ বসে থাকা যে বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না তা কে জানতো?

আচমকা একটা গাড়ি এসে ধাক্কা লাগিয়ে দিলো বাইকে। হঠাৎ এমন আক্রমণে পারফি ব্যালেন্স রাখতে না পেরে বাইক নিয়ে ছিটকে পড়ে গেলো সাথে ইয়ানাও।

বাইকের স্পীড অল্প ছিলো যার জন্য গুরুতর ক্ষতি হলো না কারো। পারফি পড়া থেকে দ্রুত উঠে ছুটে এলো ইয়ানার কাছে। ইয়ানাকে ধরে বসালো হাত পায়ে কিছু কিছু জায়গায় ছিলে গেছে। সেই ক্ষত গুলোতে জ্বালা করার জন্য চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ইয়ানা।

ইয়ানার এই ক্ষত দেখে পারফির বুকের ভিতর কামর মেরে উঠলো। স্নিগ্ধ ফুলের এই আঘাত যেনো নিজের বুকে লাগলো। ইয়ানার দুই গালে হাত রেখে বিচলিত হয়ে পারফি বলতে লাগলো বিড়াল ছানা ঠিক আছো তুৃমি? বেশি ব্যথা করছে? হসপিটালে নিয়ে যাবো? বলো না কষ্ট হচ্ছে তোমার অনেক?

পারফিকে এতো বিচলিত হতে দেখে ইয়ানা বললো আমি ঠিক আছি এতো বিচলিত হবেন না। সামান্য একটু লেগেছে সেরে যাবে।

পারফি ইয়ানার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বললো আমি সত্যি দুঃখিত বিড়াল ছানা। আমার জন্য আঘাত পেলে তুমি। আমি বাইক না এনে গাড়ি আনলে এমন হতো না।

ইয়ানা পারফির দিকে তাকিয়ে বললো আপনি নিজেকে দোষারোপ করবেন না প্লিজ আপনার কোনো দোষ নেই। তখন পিছ থেকে আরেকটি গাড়ি এসে ধাক্কা মেরেছে যার জন্য এমন হয়েছে।

পারফি ইয়ানার দিকে ব্যথিত চোখে তাকিয়ে বললো তুমি সত্যি ঠিক আছো?

পারফিকে এতোটা বিচলিত হতে দেখে ইয়ানা অবাক হলো বেশ। অবাকতা কাটিয়ে মুচকি হেসে বললো আমি সত্যি ঠিক আছি।

পারফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তারপর বাইক উঠিয়ে ভাবতে লাগলো কারা করলো এমন কাজ। বুঝলো যে আশেপাশে শত্রুপক্ষের বিরাজমান, এখান থেকে তারাতাড়ি যেতে হবে তাই ইয়ানাকে সাবধানে বাইকে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট দিবে তখন কোথা থেকে চারপাঁচটা গাড়ি এসে ওদের চারপাশে ঘুরতে লাগলো।

হঠাৎ এমন হওয়াতে ইয়ানা ভয়ে পারফির শার্ট পিছ থেকে খামচে ধরলো। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় আসছে না কিন্তু বুঝতে পারছে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।

একে একে সব গাড়ি থেকে সারি সারি মানুষ বের হলো সবার হাতে হকস্টিক, ছু/রি আরো ধারালো যন্ত্রপাতি। তা দেখে ইয়ানা ভয়ে চুপসে গেলো হাত-পা কাঁপতে লাগলো।

পারফি এবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে লোকগুলোর দিকে তাকালো। এতগুলো লোকের সাথে ওর একা পারা সম্ভব না। তাই লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো দেখ তোদের সাথে আমার শত্রুতা এই মেয়েটার সাথে না। তাই যা বোঝাপড়া আমার সাথে হবে ওকে ছেড়ে দে।

লোকগুলোর ভিতর একজন বললো এটাইতো গেম। খেলা হবে এবার এ বলে বিশ্রি ভাবে হাসতে লাগলো সবাই।

সবার এমন হাসি দেখে গা কাটা দিয়ে উঠলো ইয়ানার। খামছে ধরা পারফি শার্ট আরো জোরে ধরলো।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো বিড়াল ছানা ভয় পেও না আমি আছি তো।

আমি আছিতো কথাটা শুনে ইয়ানা ভয়ের মাঝেও একটু ভরসা খুঁজে পেলো।

পারফি ফের বললো আমাকে শক্ত করে ধরো।
ইয়ানা কোনো বাক্য বিনয় না করে পারফিকে পিছ থেকে দু হাত দিয়ে শক্ত করে ঝাপটে ধরলো।

পারফি সবার দিকে একবার তাকিয়ে আচমকা ফুল স্পীডে বাইক স্টার্ট দিয়ে সামনে এগোতে লাগলো। পারফির হঠাৎ এমন কাজে ভয়ে সামনে থেকে কয়েকটা লোক সরে গেলো জীবন বাঁচানোর জন্য আর পারফি সেই ফাকা জায়গা দিয়ে গুন্ডাগুলোর মাঝ থেকে বাইক নিয়ে চলতে লাগলো।

গুন্ডাগুলো সবাই তারাতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বাইকের পিছে ধায়াও করতে লাগলো।
——————————-
রাত বাজে প্রায় একটা ইসহাক আহমেদ পায়চারি করে যাচ্ছে এখনো ইয়ানা বাসায় ফেরে নি। ইয়ানার ফিরতে এতো দেরি হচ্ছে দেখে ইয়ানার কাছে ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে বার বার। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে প্রীতির কাছে ফোন করলো। প্রীতির কাছ থেকে জানতে পারলো আরো আগেই বেড়িয়েছে ইয়ানারা। এতক্ষণে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
এবার ইসহাক আহমেদ ভয় পেতে লাগলো কোনো বিপদ হলো নাতো। তিনি বেরিয়ে গেলো মেয়েকে খুঁজতে।

এদিকে প্রীতি লাগাতরে পারফি আর ইয়ানার নাম্বারে ফোন করে যাচ্ছে। প্রীতির ফোন বন্ধ বলছে আর পারফির ফোনে রিংটোন বাজছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। প্রীতির এবার ভয়ে হাত-পা মৃদু কাঁপতে লাগলো কোনো বিপদ হয়নি তো।

প্রীতি দৌড়ে যেয়ে বাসার সবাইকে বিষয়টা জানালো। সবাই খুব টেনশনে পড়ে গেলো। পাভেল চৌধুরী আর শাফিন চলে গেলো ওদের খুঁজতে। শরীফ শিকদার ও যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তাকে রেখে গেলো বাসার সবাইকে দেখে রাখার জন্য।

শাফিনরা গার্ডদের নিয়ে সব জায়গায় খোঁজ নিতে লাগলো। পারফির ফোনে বার বার ফোন করছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। কোনো খোঁজ না পেয়ে পারফির ফোন ট্রাক করে লোকেশন যেখানে বলছে সেখানে চলে গেলো শাফিনরা। সেখানে উপস্থিত হতে পারফিদের কোনো খোঁজ পেলো না কিন্তু রাস্তার এক পাশে পারফির ফোন কুরিয়ে পেলো। সাথে কাচ ভাঙার টুকরো দেখতে পেলো। তা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। কোনো বিপদে পড়েছে তা বুঝে গেলো।

তখন সেখানে উপস্থিত হলো ইসহাক আহমেদ। প্রথমে তাকে কেউ চিনতে না পারলেও পরে পরিচয় বলাতে সবাই চিনলো। ইসহাক আহমেদ তাদের থেকে সবটা জানতে পারলো পারফিরা কোনো বিপদ পরেছে তা শুনে তার কলিজা কেঁপে উঠলো। তার আদরের মেয়ের কিছু হলো নাতো। ভয়ে আশংকায় ভেতরটা সবার দুমড়েমুচড়ে গেলো।

গার্ড দিয়ে সব জায়গায় তন্য তন্য করে খুঁজতে লাগলো সবাই কিন্তু কোনো খোঁজ মিললো না।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-০৯

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৯

ইয়ানা হাসছে আর প্রীতি তা দেখে গাল ফুলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

একটু আগেই শাহানা বেগম আর শাফিনের সাথে আড্ডা দিয়ে প্রীতির সাথে এসেছে বাসাটা ঘুরে দেখার জন্য। বাসার আশেপাশে ফুল বাগানে ঘেরাও করা। আর তার মাঝে সুন্দর একটা দোলনা। ইয়ানা ছুটে যেয়ে দোলনায় বসলো। পাশে যেয়ে প্রীতিও বসলো, এতক্ষণে ইয়ানা খেয়াল করলো একটু আগে প্রীতি যে ড্রেস টা পড়া ছিলো সেটা চেঞ্জ করে আরেকটা পড়েছে। এতো সকাল সকাল গোসল করার মেয়েতো না প্রীতি, চুল ও শুকনো তাহলে হুট করে ড্রেস চেঞ্জ করার মানেটা বুঝলো না।

ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে প্রীতির দিকে তাকি কারণ জানতে চাইলে প্রীতি সব খুলে বলে রাগে ফুঁসতে লাগলো আর বলতে লাগলো এর প্রতিশোধ তো আমি নিয়েই ছাড়বো আর নাহলে আমি প্রীতি না।

সব কথা শুনে ইয়ানার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। ইয়ানার হাসি দেখে প্রীতি গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।
ইয়ানা হাসতে হাসতে বললো কেনো লাগতে যাস শাফিন ভাইয়ার সাথে? সেইতো শেষে নিজেই জব্দ হোস। আরো লাগ বেশি করে তোদের ঝগড়া মা/রা/মা/রি দেখতে কিন্তু দারুণ লাগে।

পারফি বেলকনিতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো তখন হঠাৎ কারো হাসির শব্দে সামনে তাকাতে ভেসে উঠলো ইয়ানার হাস্যজ্বল মুখশ্রী। সেই স্নিগ্ধ হাসি যা দেখে বরাবর এর মতো এবার ও থমকে গেলো পারফি। এই স্নিগ্ধ হাসি যে কারো ঘুৃম কেরে নিয়েছে সেই খবর কি আর এই মেয়ে রাখে? কিছু একটা মনে করে পারফি ল্যাপটপ রেখে প্রীতিকে ডাক দিলো….

হঠাৎ কারো ডাকে প্রীতি ইয়ানা দুজনে উপরে তাকাতে দেখতে পেলো পারফি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
ইয়ানা এবার ভালো করে খেয়াল করে দেখলো পারফির রুম বরাবরি দোলনাটা যেখানে ওরা বসে আছে। লোকটা কি এতো সময় এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো? পারফির দিকে তাকাতে চোখে চোখ পড়ে গেলো। ব্যস হয়ে গেলো ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি। ঔ নীলমনির ধারালো চাওনিতে চোখ পড়লে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায় ইয়ানার। এতো করে চায় যাতে ওই চোখে চোখ না পড়ে তবুও বারবার ওই নীলমনিতেই চোখ আঁটকে যায়।

প্রীতি ডাকার কারণ জানতে চাইলে পারফি বলে উঠলো এখন বাহিরে যাবো যেতে চাইলে তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে এ বলে রুমে চলে গেলো।

পারফি যেতে প্রীতি ইয়ানার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো চল।

ইয়ানা কিছু না বুঝতে পেরে বললো এখন আবার কোথায় যাবি?

কাল রাতে অনেক কষ্টে ভাইয়াকে রাজি করিয়েছি আজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে শপিং করিয়ে দিতে হবে এবং আমার পছন্দ মতো কেক আমি নিজে যেয়ে অর্ডার করবো।

ইয়ানা সব শুনে বললো তুই যা, আমি না গেলে হয় না? আন্টিদের সাথে থাকি আমি?

মার চিনিস? নাকি চিনিয়ে দিবো আমি? চুপচাপ আমার সাথে চল।
অগত্য প্রীতির সাথে ইয়ানারও যাওয়া লাগলো। রেডি হয়ে গেটের কাছে আসতে দেখলো পারফি ড্রাইভিং সিটে আর তার পাশে শাফিন বসে আছে।

প্রীতি আর ইয়ানা যেয়ে পিছে বসলো। তারপর পারফি গাড়ি স্টার্ট দিলো। প্রীতি তো বকবক করেই চলেছে বাকি সবাই ওর বকবক শুনছে আর টুকিটাকি কথা বলছে। প্রীতির বকবকানির মাঝে গাড়ি এসে থামলো নিরিবিলি সুন্দর একটা জায়গায়। চারেদিকে সবুজ ঘাস মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।

এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশে ইয়ানার খুব করে ইচ্ছে করলো খালি পায়ে এই সবুজ ঘাসের ভিতর হাঁটতে। নিজের ইচ্ছে টা আর দমাতে না পেরে পা থেকে জুতো খুলে ঘাসের উপর পা রাখলো। এক অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন।

ইয়ানার কাজ কেউ খেয়াল না করলেও পারফি গভীর ভাবে দেখতে লাগলো ইয়ানার কান্ডকলাপ। ইয়ানা যখন সামনের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখন পারফি বলে উঠলো বিড়াল ছানা এভাবে হাঁটলে কিছুতে বেজে পা কেটে যেতে পারে।

ইয়ানা ঠোঁট উল্টে আদারের শুরে বললো একটু হাঁটি না।

ইয়ানার এমন বাচ্চামো দেখে ঠোঁট কামরে হাসলো পারফি। ঠিক বাচ্চাদের মতো আবদার করলো এই আবদার কি ফালানো যায়?

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে প্রীতিও ফট করে ওর পায়ের জুতো খুলে বললো আমিও খালি পায়ে হাঁটবো।

খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা কি মজা বুঝলো না শাফিন কিন্তু ইয়ানা আর প্রীতির মুখে হাসি দেখে শাফিনের ও ইচ্ছে জাগলো খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার ফিলটা নিতে। তাই শাফিন ও ফট করে বলে উঠলো আমিও হাঁটবো এ বলে জুতো খুলতে নিলে পারফি বলে উঠলো এদের সাথে সাথে তুই ও কি বাচ্চা হয়ে গেছিস?

শাফিন বললো তো তোর কি আমাকে বুড়ো মনে হয়? মাত্র ২৬ সে পা দিয়েছি।

শাফিনের কথায় সবাই হেঁসে দিলো। ইয়ানা কিছু একটা মনে করে পারফির উদ্দেশ্যে বললো আপনিও খালি পায়ে হাঁটেন না মজা লাগবে।

সবাই ভাবলো পারফি হাঁটবে না কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পারফি ও জুতো খুলতে খুলতে বললো ওকে আজ এক দিনের জন্য না-হয় তোমাদের মতো ছোট হয়ে গেলাম। এ বলে চারজন এক সাথে সামনের দিকে হাঁটা দিলো।

হাঁটাহাটি করে চারজন এক সাথে ঘাসের উপর বসে পড়লো। সত্যি খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার ফিলটাই অন্যরকম।

শাফিন বললো ইয়ানা বুদ্ধিটা তুমি দিলে। তোমার বুদ্ধির তুলনা হয় না।

শাফিনের কথায় হাসলো ইয়ানা।

এদিকে দূরে একটা বোতল পড়ে থাকতে দেখে প্রীতি দৌড়ে যেয়ে বোতলটা নিয়ে এসে বলে উঠলো চলো না আমরা চারজন মিলে ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলি।

সবাই সম্মতি দিলেও পারফি খেলতে চাইলো না শেষে সবার জোরাজোরিতে রাজি হলো।

বোতল ঘুরানো হলো প্রথমে যেয়ে পড়লো প্রীতির দিকে।
প্রীতি ডেয়ার নিতেই শাফিন চেচিয়ে বলে উঠলো আমি দিবো ডেয়ার।

শাফিন ডেয়ার দিবে শুনে প্রীতি ঢোক গিললো। বলে উঠলো আলি জালি ডেয়ার দিলে আমি কিন্তু মানবো না।

শাফিন বলে উঠলো খেলা তো খেলাই মানতে হবেই এ বলে কিছুক্ষণ ভেবে ইয়ানাকে বললো ফুল পরী তোমার কাছে লিপস্টিক আছে?

না ভাইয়া আমিতো লিপস্টিক তেমন ইউজ করি না তাই এটা থাকে না আমার কাছে।

পারফি বিরবির করে বললো ঠোঁট তো এমনি গোলাপের পাপরি লিপস্টিক ইউজ করবেই কোন দুঃখে।

শাফিন বললো তুমিতো এমনেই সুন্দর লিপস্টিক দিয়ে কি করবে তাও কথা। প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো তোর কাছে নিশ্চিই আছে বিকজ তুই সারা দিন থাকিস এই আটা ময়দা সাজগোঁজ নিয়ে।

প্রীতি ক্ষেপে বললো আর একবার যদি আমার শখের সাজগোজকে আটা ময়দা বলো না তাহলে তোমাকে আমি কিন্তু ময়দার ভিতর চুবিয়ে মা/র/বো।

চুবাচুবি পরে হবে আগে বল লিপস্টিক আছে কিনা।

আছে কি করবে?

আগে দে তারপর বলছি কি করবো।

প্রীতি ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে দিতে শাফিন প্রীতির মুখ ধরে লিপস্টিক নাকের ডগায় গোল করে দিয়ে তারপর দুই গালে বিড়ালের মতো মোছ একে দিলো।

প্রীতির অবস্থা দেখে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। ইয়ানা বেখেয়ালি ভাবে হাসতে হাসতে পারফির সাথে ধাক্কা খেলো। কি হয়েছে বুঝতে পেরে ছোট করে বললো সরি।

পারফি ইয়ানার স্নিগ্ধ মুখের দিকে তাকি মুচকি হেসে বললো ইটস ওকে।

এদিকে প্রীতি তো ক্ষেপে বোম ওর এই অবস্থা করার জন্য।

পারফি বলে উঠলো বিড়াল ছানা একজনে আর বিড়াল সাজালি আরেকজনকে।

ইয়ানা এবার বললো আমি মোটেও বিড়াল ছানা না। আপনি বিড়াল ছানা, আপনার চোখ বিড়ালের মতো তার মানে আপনি বিড়াল।

পারফি ইয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো তাইনাকি?

ইয়ানা পিছের দিকে কিছুটা হেলে যেয়ে আমতা আমতা করে বললো অবশ্যই।

শাফিন বললো এখানে সবাই বিলাই শুধু আমি ছাড়া।

এবার প্রীতি বললো তুমি বিলাই হবাই কিভাবে তুমিতে মহিষ সারাদিন হাম্বা হাম্বা করতে থাকো।

শাফিন প্রীতির মাথায় চাপড় মেরে বললো তুই চুপ থাক তোর ডেয়ার এখনো শেষ হয়নি এখন আমাদের সাথে ছবি তুলে সেটা স্টোরি দেওয়া হবে। এই কথা শুনে প্রীতি কিছুতেই মানবে না কিন্তু শাফিন মানিয়ে ছাড়লো। চারজন এক হয়ে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো। সেলফি তোলা হলে সেগুলো শাফিন সবার হোয়াটস অ্যাপে দিয়ে বললো সবাই প্রীতিকে ম্যানশন দিয়ে স্টোরি দিতে। কথা মতো শাফিন আর ইয়ানা ছবি স্টোরি দিয়ে দিলো।

আর পারফি জুম করে ইয়ানার স্নিগ্ধ হাসি দেখতে লাগলো। এই স্নিগ্ধ হাসি দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

এদিকে প্রীতি গাল ফুলিয়ে বসে রইলো মান সম্মান প্লাস্টিক হয়ে গেলো আজ। নিজের উপরেই এখন রাগ হচ্ছে কেনো খেলতে আসলো পাকনামি করে।
সবাই আরো এক ধফা প্রীতিকে নিয়ে মজা নিলো।

তারপর আবার বোতল ঘুরানো হলো। এবার যেয়ে পড়লো শাফিনের দিকে। শাফিন ভালো করে জানে এখন ডেয়ার নিলে প্রীতি ওর অবস্থা টাইট করবে তাই ট্রুথ নিলো। কিন্তু এটা প্রীতি মানলো না জোর করে ডেয়ার নেওয়ালো। কিন্তু শাফিন শর্ত জুড়ে দিলো যেহেতু জোর করে ডেয়ার দেওয়া হচ্ছে সেহেতু প্রীত বাদে অন্য দুজনের একজন ডেয়ার দিবে প্রীতি দিতে পারবে না।

শর্ত অনুযায়ী প্রীতি ডেয়ার দিতে পারলো না তাই পারফি কিছুক্ষণ ভেবে বললো ওই যে নারিকেল গাছ দেখতে পারছিস ওই গাছে উঠে আমাদের সাথে সেলফি নিবি।

পারফির ডেয়ার দেওয়া দেখে সবাই আরেক ধাপ হাসাহাসি করলো। প্রীতি তো খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো একদম ঠিক ডেয়ার দিয়েছো ভাইয়া।

শাফিন পারফির দিকে তাকিয়ে বললো শালা তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু যে এমন একটা ডেয়ার দিলি।

পারফি বাঁকা হেসে বললো এটাই তোর জন্য পারফেক্ট।

শাফিন বললো তা না হয় করলাম কিন্তু গাছের মালিক যদি দেখে ফেলে ভাবে ডাব চুরি করছি তখন কি হবে?

প্রীতি বললো কি হবে আবার তোমাকে গাছে ফেলে রেখে আমরা তিনজন দৌড়ে পালাবো তারপর গাছের মালিক তোমাকে উত্তম ক্যালানি দিবে হাহা।

শাফি প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে বললো যেমন ভাই তেমন তার বোন। এখানে সবাই আমার শত্রু শুধু আমার ফুল পরী বোন বাদে।

শাফিনের কথায় হসলো ইয়ানা।

তারপর শাফিন উঠে গেলো গাছে। এক হাত দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বললো এখান থেকে পড়ে হাত-পা ভাঙলে তোদের নামে মামলা করবো আমি।

প্রীতি চেচিয়ে বললো আগে পড়ে নেও তারপর মামলা করো।

শাফিন বললো এখান থেকে নেমে নেই তারপর তোকে দেখাচ্ছি মজা। তারপর শাফিন গাছ থেকে সবার সাথে সেলফি নিলো। তারপর গাছ থেকে ডাব পারা শুরু করলো তা দেখে পারফি বললো এ কি করছিস?

শাফিন বললো চুপ কর শালা এতো কষ্ট করে গাছে উঠেছি ডাব না খেয়ে যাবো নাকি? বলতে বলতে চারটা ডাব পেরে নিচে নামলো।

প্রীতি খোঁচা মেরে বললো চোর ডাব চুরি করেছে।

এ কথা বলেছিস না, যা তুই পাবি না।

প্রীতি ফট করে একটা ডাব হাতে নিয়ে বললো এহ আসছে। তারপর ডাব নিয়ে আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলো। ঠিক করা হলো খেলা শেষ হলে এগুলো খাবে।

বাকি রইলো পারফি আর ইয়ানা এবার বোত ঘুরাতে যেয়ে পড়লো ইয়ানার দিকে। ইয়ানা ট্রুথ নিলো।

ইয়ানাকে ট্রুথ দিলো পারাফি।
পারফি বললো বিড়াল ছানা তোমার জীবনের একটা উইশ এর কথা বলো যেটা তুমি অনেক করে চাও।

ইয়ানা কিছুক্ষণ ভেবে আকাশ পানে তাকিয়ে বললো মায়ের একটু ভালোবাসা বলতে বলতে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো।

ইয়ানার কথায় সবার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। এতক্ষণ হৈ-হুল্লোড় পরিবেশটা নীরব হয়ে গেলো।

পারফি তাকালো ইয়ানার মুখের দিকে। বুকের ভিতর কামর মেরে উঠলো ওই নিস্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে। এই নিস্পাপ মেয়েটা মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতটা আকাঙ্খা কিন্তু আজ মা থাকতেও মায়ের ভালোবাসা থেকে বিতারিত মেয়েটা। মনের মাঝে কতটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে বিড়াল ছানাটা ভাবতেই বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা করছে। ইচ্ছে করছে ম্যাজিক করে স্নিগ্ধ ফুলের সব কষ্ট দূর করে দিতে।

প্রীতি আর শাফিনের মুখেও কোনো কথা নেই। শাফিনের খুব মায়া হলো ইয়ানার জন্য। ওর যদি এমন একটা বোন থাকতো তাহলে কখনো বোনের চোখে পানি আসতে দিতো না। মনে পড়লো ওর সেই বোনের কথা যে বোনকে শুধু একটা দিন দেখতে পেরেছিলো আর দেখার সুযোগ হয় নি। আজ বোনটা থাকলে কতোই না খুশি হতো।

সবার মন ভালো করার জন্য প্রীতি বললো হয়েছে এবার ভাইয়ার পালা। ভাইয়া তুমি ডেয়ার নিবে আর ডেয়ার হিসেবে আমাদের সবাইকে একটা গান শুনাবে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-০৮

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৮

হাসি আনন্দের মাঝে কেটে গেলো কয়েকমাস। আজ প্রীতির জন্মদিন তাই সকাল সকাল প্রীতি চলে এসেছে ইয়ানাকে নিতে। ওর জন্মদিন আর ওর জানের বেস্টু যদি সারাদিন ওর পাশে না থাকে তাহলে কি হয়? তাই সকাল সকাল ইসহাক আহমেদের থেকে অনুমতি নিতে আসলো ইয়ানাকে নিয়ে যাওয়ার।

ইসহাক আহমেদ অনুমতি দিতেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো প্রীতি। তারপর খুশি মনে ইয়ানাকে নিয়ে বের হলো।

এই প্রথম ইয়ানা প্রীতিদের বাসায় যাচ্ছে। আগে কখনো সেভাবে যাওয়ার সুযোগ হয় নি। কেমন যেনো একটু নার্ভাস লাগছে। এদিকে প্রীতি বকবক করেই যাচ্ছে। ওদের বকবকানির মাঝেই গাড়ি এসে থামলো বিশাল এক গেঁটের সামনে। প্রীতি ইয়ানার হাত ধরে গেট দিয়ে প্রবেশ করতে ইয়ানার চোখে পড়লো একি রকম পাশাপাশি দুটি আলিশান বাড়ির দিকে। চারেদিকে বিভিন্ন ফল ফুল গাছে ভরপুর। যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো একটা পরিবেশ। বাড়ির চারপাশে কিছুক্ষণ পর পর দেখা যাচ্ছে কালো পোশাকধারী গার্ড। সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বাসায় প্রবেশ করলো প্রীতির সাথে ইয়ানা।

বাসায় প্রবেশ করতেই দেখা হলো পিয়াসা বেগমের সাথে। ভদ্রমহিলাকে ইয়ানা চেনে স্কুলে প্রীতির সাথে কয়েকবার গিয়েছিলো সেই থেকে পরিচয়। ভদ্রমহিলা ইয়ানাকে খুবি আদর করে। ইয়ানাকে দেখেই বুকের মাঝে আগলে নিয়ে বললো কেমন আছে ইয়ানা মা? আন্টিকে একটু দেখতেও আসো না। সেই কবে দেখেছি তোমাকে আর দেখা হলো না। প্রীতির সাথে মাঝে মধ্যে বাসায় বসলে কি হয় শুনি?

পিয়াসা বেগমের এতো এতো অভিযোগ শুনে হেঁসে ফেললো ইয়ানা। পিয়াসা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো রাগ করে আন্টি এই যে দেখো তোমাকে দেখতে চলে এসেছি। তুমি কিন্তু আগের থেকে আরো সুন্দর হয়েছো।

পিয়াসা হেসে বললো শুনো দুষ্ট মেয়ের কাথা। আমার এখন আর সুন্দর হওয়ার বয়স আছে নাকি? তা কি অবস্থা মামনী কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?

আছি মা আলহামদুলিল্লাহ, এখন থেকে মাঝে মধ্যে প্রীতির সাথে এসো কেমন? আন্টিকে তো একদম ভুলেই যাও…।

আসবো আন্টি কিন্তু শর্ত আছে আমার একটা, এই শর্ত মানলে তোমাকে দেখতে আসবো বুঝলে।

কি শর্ত শুনি একটু..।

প্রীতির মতো আমাকেও তুই করে বলতে হবে তাহলে আসবো। তোমার মুখে তুমি ডাকটা ভালো লাগে না।

পিয়াসা হেঁসে বললো শুনো পাগলি মেয়ের কথা। আচ্ছা তুই করে বলবো। এবার প্রীতির রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় কিছু খেয়ে নিবি।

না না আন্টি কিছু খাবো না মাত্র খেয়েই আসলাম।

আচ্ছা তাহলে কফি করে দেই। সকাল সকাল কফি খেলে ভালো লাগবে। এই প্রীতি তুই আয় আমি কফি করে দেই তুই নিয়ে উপরে যা এ বলে পিয়াসা বেগম কিচেনে চলে গেলো।

প্রীতি ইয়ানার কাছে এসে বললো জানু সোজা উপরে উঠে যা প্রথমে যেই রুমটা পড়বে ওটাই আমার রুম। তুই যেয়ে ফ্রেশ হ আমি কফি নিয়ে আসছি।

ইয়ানা সম্মতি দিয়ে সিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। উপরে উঠে বিপাকে পড়ে গেলো প্রথমে একটা রুম আর ঠিক সেই রুমের অপজিট পাশে আরেকটা রুম। এখন কোন রুমটা প্রীতির তা বুঝতে সক্ষম হলো না। অনেক সময় চিন্তা করে একটা রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। মৃদু চিৎকার দিয়ে পিছে ঘুরে বললো আ…আমি কিছু দেখি নি।

পারফি শাওয়ার নিয়ে মাত্রই বের হয়েছে। পড়নে শুধু ট্রাউজার, টি শার্ট পড়ার জন্য হাতে নিতেই কেউ রুমে প্রবেশ করাতে ভড়কে গেলো। কে প্রবেশ করেছে তা দেখতে থম মেরে গেলো। বুঝতে পারছে না স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি। পরক্ষণে মনে পড়লো আজ প্রীতির জন্মদিন তাই হয়তো প্রীতি নিয়ে এসেছে।

সকাল সকাল স্নিগ্ধ মুখটা দেখে পারফির মন ফুরফুরে হয়ে গেলো। তারাতাড়ি টি শার্ট পড়ে ইয়ানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো যা দেখার তাতো দেখেই ফেলেছো এখন চোখ বন্ধ করে কি লাভ? শার্ট পড়ে নিয়েছি এদিকে ঘুরতে পারো এবার।

পারফির কথায় ইয়ানার লজ্জায় গাল রক্তিম হয়ে উঠলো। চলে যাবে নাকি পিছু ঘুরবে বুঝে উঠতে পারলো না। এভাবে চলে গেলেও কেমন দেখায় তাই আস্তে আস্তে পিছে ঘুরে দেখতে পেলো পারফি সত্যি শার্ট পড়ে নিয়েছে।

এদিকে ইয়ানা ঘুরতেই পারফির হার্টবিট কয়েকটা মিস হয়ে গেলো। লজ্জা মাখা রক্তিম গাল দেখে বুকের ভিতর ঝড় শুরু হয়ে গেলো। কারো লজ্জা মাখা মুখশ্রী এতো সুন্দর ও লাগতে পারে? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো পারফির। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো তা বিড়াল ছানা কি মনে করে আমার রুমে?

ইয়ানা তুতলিয়ে বললো আ..আসলে প্রীতির র..রুমে যাওয়ার বদলে ভ..ভুলে এখানে চ..চলে এসেছি।

ইয়ানাকে এভাবে তোতলাতে দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো পারফি তারপর চোখের ইশারায় পিছে দেখিয়ে বললো ওটা প্রীতির রুম।

ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আ..আচ্ছা যাই তাহলে এ বলে ছুটে অপজিট পাশের রুমে ঢুকে হাপাতে লাগলো। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে এতো সময় কি ঘটে গেছে ভাবতেই বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।

পারফি ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বুকে হাত রাখে বললো এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। কে বলেছে এই মেয়েকে এতো স্নিগ্ধ হতে? এই স্নিগ্ধ মুখ দেখলে যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি সেই খবর কি এই মেয়ে রাখে? না রাখে না এটা ভারী অন্যায়।

প্রীতি কফি নিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে পারফিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো কি হলো ভাইয়া তুমি এমন স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

বেখেয়ালি ভাবে পারফি বলে উঠলো স্নিগ্ধ পরীর জন্য।

পারফির কথায় প্রীতি কিছু না বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে বললো মানে?

পারফির এবার হুঁশ আসলো। কি বলে ফেলেছে মনে পড়তে তারাতাড়ি বললো কিছু না। আমাকে না ঘেঁটে নিজের কাজে যা, যা ভাগ এ বলে দরজা লাগিয়ে দিলো।

প্রীতি রুমে যেতে যেতে বিরবির করে বললো পাগল হয়ে গেছে নাকি?
রুমে আসতে দেখলো ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে। প্রীতি ইয়ানার দিকে একটা কফি বাড়িয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন দেখলো ইয়ানার গাল লাল হয়ে আছে। প্রীতি বলে উঠলো তোর গাল এমন লাল হয়ে আছে কেনো?

প্রীতির কথায় ইয়ানা থতমত খেয়ে গেলে তুতলিয়ে বললো ক..কিছু না। বেশ ঠান্ডা পরেছে এই জন্য হয়তো।

প্রীতি ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিষয়টা নিয়ে আর ঘাটলো না। ইয়ানার সাথে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিলো।

গল্পের মাঝে প্রীতি বললো চল তোকে শাফিন ভাইয়াদের বাসায় নিয়ে যাই। শাহানা আন্টির সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেই এ বলে নিচে নেমে চলে গেলো শাফিনদের বাসায়।
ড্রয়িংরুমের সোফায় ইয়ানাকে বসিয়ে দিয়ে প্রীতি চলে গেলো কিচেনে শাহানা বেগমের কাছে। যেয়ে হাত ধরে টানতে টানতে বললো তারাতাড়ি চলো দেখো কাকে নিয়ে এসেছি।

এই সকাল সকাল আবার কাকে আনলি?

গেলেই দেখতে পারবে এবার তারাতাড়ি চলো এ বলে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো।

ইয়ানা বসে ছিলো তখন এক ভদ্রমহিলাকে এগিয়ে আসতে দেখলো। ভদ্রমহিলার চেয়াহারা স্পষ্ট হতে কেমন যেনো বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো এমন হলো ইয়ানা জানে না। মনের ভিতর কেমন অস্থিরতা ক্রমশ বারতে লাগলো।

ইয়ানা নিজেকে সামলে শাহানা বেগমকে সালাম দিলো। শাহানা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে ইয়ানার গালে হাত রেখে বললো মা-শা-আল্লাহ এতো দেখি একদম ফুটন্ত গোলাপ। এতদিন তোমার কথা অনেক শুনেছি প্রীতির মুখে। তোমার অনেক ছবিও দেখেছি, তুমি ছবির থেকেও দেখতে ভারী মিষ্টি।

পাশ থেকে প্রীতি বলে উঠলো একদম তোমার মতো কিউটের ডিব্বা।

কথাটা শুনে চমকে তাকালো ইয়ানা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো শাহানা বেগমকে। আসলেই সামনে থাকা ভদ্র মহিলা দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর।

শাহানা বেগম ইয়ানাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো বসো মা। তা কি অবস্থা কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আপনি কেমন আছেন?

শাহানা বেগম হেঁসে বললো আমাকে প্রীতির মতো তুমি করে বলতে পারো সমস্যা নেই। তোমার এই মিষ্টি মুখে আপনি মানাচ্ছে না।

ইয়ানা খুশি হলো কথাটা শুনে ওর নিজের ও কেমন আপনি বলতে কেমন কেমন লাগছিলো। তারপর শাহানা বেগমের সাথে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলো।

কথায় মাঝে ইয়ানা বললো শাফিন ভাইয়া, আঙ্কেল বাসায় নেই?

তোমার আঙ্কেল কাজে গেছে আর শাফিন এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। এই ছেলেকে নিয়ে আর আমি পারি না প্রীতি মা যাতো একটু ডেকে নিয়ে আয়।

প্রীতি আচ্ছা বলে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। এক দৌড়ে শাফিনের রুমের সামনে এসে থামলো। দরজা চাপানো ছিলো তাই সহজে রুমে প্রবেশ করতে পারলো।

শাফিনকে জব্দ করার ফন্দি আঁটতে লাগলো। মাথায় বুদ্ধি আসতে পা টিপে টিপে চলে গেলো ওয়াশরুমে। যেয়ে এক মগ পানি নিয়ে আসলো শাফিনকে ভিজিয়ে দৌড় দিবে সেই নেয়াত করে।

যেইনা পানি মারতে যাবে অমনি শাফিন হেচকা টান মারলো যার দরুন প্রীতির হাত থাকা পানি হাত ফস্কে পুরোটা নিজের গায়ের উপরেই পড়ে গেলো। সকাল সকাল এই ঠান্ডা পানি নিজের উপর পড়তে কেঁপে উঠলো প্রীতি
কি হয়েছে বুঝে উঠতে কাঁদো কাঁদো ফস করে বললো আমার উপরে পানি ফেললে কেনো?

প্রীতির এক হাত শাফিন ধরা ছিলো। প্রীতির কথায় হাতটা টান দিয়ে প্রীতিকে ওর দিকে একটু ঝুকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো নেক্সট টাইম আমার সাথে পাঙ্গা নিতে হলে এই কথা দশবার ভাববি।

প্রীতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো তার মানে তুমি জেগে ছিলে ঘুমের নাটক করছিলে?

শাফিন বাঁকা হেসে প্রীতিকে ছেড়ে উঠে প্রীতির দিকে তোয়ালে ছুঁড়ে মেরে ওয়াশরুম চলে গেলো। প্রীতি রাগে গিজগিজ করতে করতে হাত-পা মুছতে লাগলো। জামা অনেকটা ভিজে গেছে।

প্রীতি এখন পড়ে গেলো বিপাকে এভাবে নিচে যাবে কিভাবে?
কি করবে বুঝতে না পেরে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।

শাফিন ফ্রেশ হয়ে এসে প্রীতিকে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে দেখে বললো সকালে কি আন্টি খেতে দেয় নাই যার জন্য নখ খাচ্ছিস ওয়াক।

প্রীতি ক্ষেপে গিয়ে বললো তোমার জন্য সব হয়েছে। আমাকে বিপাকে ফেলে দিয়ে এখন আসছে ওয়াক ওয়াক করতে।

শাফিন ভ্রু কুঁচকে বললো আমি কি করলাম?

আমার উপরে পানি ফেলে দিয়েছো এখন আমি এভাবে নিচে যাবো কিভাবে?

শফিন একবার প্রীতির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে যেতে যেতে বললো উচিৎ শিক্ষা হয়েছে এবার বোঝ ঠেলা।

প্রীতি দাঁত কটমট করে তাকালো শাফিনের যাওয়ার পানে তারপর ওরনা ভালো করে পেচিয়ে নিয়েছে এখান থেকে এখন কোনো রকম পালাতে পারলেই হয়েছে।

শাফিন নিচে যেয়ে ইয়ানাকে দেখে কিছুটা অবাক হলো। অবাকের রেশ কাটিয়ে হেঁসে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো আরে ফুল পরী যে কখন আসলে?

এইতো ভাইয়া কিছুক্ষণ আগেই আসলাম। কেমন আছেন?

যা বাবা আমাকে ভাই বানালে আবার আপনি করেও বলছো এটা কিন্তু ঠিক না। এখন আপনি ডেকে পর করে দিচ্ছো।

ইয়ানা হাসলো হালকা। এই দুই পরিবারের সবাই কতটা ভালো। কয়েকদিনের পরিচয়ে সবাই কতটা আপন করে নিয়েছে ওকে। মনে হয় এই পরিবারের কেউ একজন ও, এতটা আপন করে নিয়েছে।

ইয়ানা, শাফিন আর শাহানা বেগম মিলে গল্প করছিলো তখন সেখান দিয়ে একপ্রকার ছুটে যেতে যেতে প্রীতি বলে উঠলো আন্টি তোমরা গল্প করো আমি একটু আসছি।

প্রীতির কাজে শাহানা বেগম বলে উঠলো ওর আবার হলো কি?

ইয়ানাও বুঝলো না প্রীতির এভাবে ছুটে যাওয়ার মানে। শুধু শাফিন বুঝলো কেনো এভাবে পালাচ্ছে। প্রীতিকে এভাবে জব্দ করতে পেরে মনে মনে বেশ আনন্দ পেলো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰