Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 331



যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো পর্ব-০১

0

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১. ( অবতরণিকা )

গ্রীষ্মের তান্ডব যখন পুরোদমে চলছে তখনকার কোনো এক দুপুরের কথা। শান্তশিষ্ট প্রাইভেট হসপিটালটা হঠাৎ করেই কোলাহল পূর্ণ হয়ে উঠলো। একদল যুবক ধরাধরি করে একটি রক্তাক্ত ছেলেকে নিয়ে হসপিটালের ইমার্জেন্সি ইউনিটের দিকে দৌঁড়ে যাচ্ছে। ছেলেটির ধূসর রঙা শার্ট রক্তে ভিজে স্যাতস্যাতা রঙ ধারণ করেছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রাণ প্রদীপ নিভু নিভু প্রায়। ছেলেটির নাম সিয়াম। যুবকদল ছেলেটিকে ইমার্জেন্সি ইউনিটের একটি শুভ্র রঙের বেডে শুইয়ে দিয়েই চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। আশেপাশে ইতিমধ্যে মানুষ জোড়ো হয়ে গিয়েছে। সকলেই কৌতূহল নিয়ে ইমার্জেন্সি ইউনিটের দরজা দিয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে।

ছেলেগুলোর চিৎকার চেঁচামেচিতে নার্সরা বিরক্ত হয়ে বুঝানোর সুরে বলছে,

” আপনারা দয়া করে শান্ত হন। বাকি পেশেন্টদের অসুবিধা হচ্ছে। ”

এবার যেন ছেলেগুলো নিজেদের কণ্ঠস্বর সামান্য নিচু করে। এদের মধ্যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছুটা বেঁটে দেখতে আসিফ নামক ছেলেটি বলে উঠে,

” ডাক্তার কোথায়? ওর এখনি চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ”

নার্স জবাব দেয়,

” ডাক্তার আসছে। আপনি আগে বলুন উনার কি হয়েছে? ”

যুবকদের দলবলের মধ্য থেকে একটি কণ্ঠ ভেসে আসে,

” বুকে-পিঠে কোপানো হয়েছে। ”

কথাটা শোনা যেতেই নার্সদের চোখে মুখে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে একজন ব্যস্ত পায়ে চলে যায় পুলিশকে খবর দিতে। আরেকজন বলে,

” পেশেন্টের ডিটেইলস নোট করতে হবে। একজন আমার সাথে কাউন্টারে চলুন। ”

সাথে সাথে একজন যুবক সেই নার্সের পিছু পিছু চলে যায়। আসিফ সিয়ামের অবস্থা দেখে কিছুটা চেঁচিয়ে বলে,

” এখানে ডাক্তার কোথায়? চিকিৎসা কেনো শুরু করছে না? ”

একজন নার্স শান্ত ভঙ্গিতে বলে উঠে,

” ইনফর্ম করা হয়েছে। এখুনি আসছে। ”

কথাটুকু বলেই সে-ও বাকি নার্সদের সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যুবক দলকে বেশ অশান্ত দেখাচ্ছে। তখনই পিছন থেকে একটি শান্ত স্বর ভেসে আসে,

” ও কতক্ষণ ধরে এভাবে পরে আছে? ”

সাথে সাথে সবাই পিছনে ফিরে তাকায়। শুভ্র পাঞ্জাবি গায়ে জোড়ানো পুরুষটিকে দেখতে পেয়েই সবাই দু’দিকে কিছুটা সরে দাঁড়ায়। যেন মাঝখানে পুরুষটির আসার জন্য রাস্তা করে দিচ্ছে৷ আসিফ পুরুষটির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে,

” পার্থ ভাই, রাস্তায় জ্যামে পড়েছিলাম। মাত্রই নিয়ে আসলাম। ”

শক্তপোক্ত মুখশ্রীর পুরুষটা এগিয়ে এসে চেঁচিয়ে বলে,

” হু ইজ ইনচার্জ রাইট নাও? ”

পার্থর কথা শেষ হতেই একটি দৃঢ় নারীকণ্ঠ ভেসে উঠে,

” হসপিটালকে গরু ছাগলের বাজার বানিয়ে রাখা হয়েছে কেন? ”

কথাটা কানে যেতেই যুবক দলের মুখ অপমানে থমথমে রূপ ধারণ করে। পার্থ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পিছনে। পায়ে স্লিপার, গায়ে সার্জিক্যাল এপ্রোণ আর মাথায় সার্জিক্যাল ক্যাপ পরিহিত নারীর চোখে মুখে চরম বিরক্তির ছাপ। সে সবাইকে পাশ কাঁটিয়ে পেশেন্টের কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠে,

” সিকিউরিটিকে ইনফর্ম করো শরীফা। নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে নাকি? আমি ১৫ সেকেন্ডের ভিতরে এখানে নার্স ব্যাতিত একটা মাছিও দেখতে চাই না। ”

শেষের কথাটা কিছুটা তেজ মিশিয়ে বলে সে। কিন্তু তার কথায় কেউ এক পা-ও নড়ে না। ডক্টর সিয়ামের অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি বলে উঠে,

” প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। ওটি রেডি করে পেশেন্টকে এখনই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাও। আমি ডক্টর ইরফানকে খবর দিচ্ছি। আর পেশেন্টের ব্লাড গ্রুপ জেনে তার জন্য ব্লাড এরেঞ্জ করো তাড়াতাড়ি ব্লাড ব্যাংক থেকে। ”

” ঠিক আছে ডক্টর। ”

কথাটা বলেই নার্স এবং ওয়ার্ড বয়রা মিলে সিয়ামকে একটা স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি ফোর্থ ফ্লোরের ওটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। অগ্নিরূপী নারী পিছনে ফিরে দেখে সেই ছেলেপেলেরা এখনো সেখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে সে আবার বিরক্তি মিশ্রিত সুরে বলে উঠে,

” কথা কানে যায়নি নাকি? ”

পার্থ থমথমে স্বরে জবাব দেয়,

” কারো হুকুম মানার অভ্যাস নেই আমার ডাক্তার। আমি যেখানে, আমার ছেলেরাও সেখানে থাকবে। ”

একজন নার্স দৌড়ে এসে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” ডক্টর তরী, আপনি আসবেন না? ”

তরী শান্ত স্বরে বলে,

” আসছি। ”

কথাটুকু বলেই তরী পার্থর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

” ওহ। গুন্ডা মাফিয়ার দল? কিন্তু আমার হাসপাতালে কোনো দাদাগিরি চলবে না। পেশেন্টদের অসুবিধা হচ্ছে। এই মুহুর্তে যদি এই ভীড় না কমে তবে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সবগুলোকে বের করবো হসপিটাল থেকে। ”

পার্থ গম্ভীর কিন্তু বিদ্রুপের সুরে বলে,

” কেন? আপনার বাপের হাসপাতাল নাকি? যে আপনার মর্জি চলবে? ”

” হ্যাঁ। আমার বাপেরই হাসপাতাল। ”

পার্থর চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি। সে এই মুহুর্তে এখানে ঝামেলা করতে চাচ্ছে না। ইতিমধ্যে আরেক ঝামেলা কিভাবে সামলাবে তা নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত সে। তাই সিন ক্রিয়েট এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পাশ ফিরে তার দল-বলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” আসিফ, শামীম বাদে বাকি সবাই গিয়ে ঝামেলা সামাল দে আপাতত। বাকি কথা আমি ফোনে জানিয়ে দিবো। ”

সকলে মাথা নেড়ে সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। শামীম পার্থকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,

” ভাই? সিয়ামের আম্মা মানে খালাম্মাকে বিষয়টা জানাবো? ”

পার্থ তরীর থেকে চোখ না ফিরিয়েই শক্ত গলায় জবাব দেয়,

” হ্যাঁ। খালাম্মাকে গিয়ে বাসা থেকে নিয়ে আয়। এই অবস্থায় উনার ছেলের পাশে থাকা উচিত। ”

শামীমও আদেশ পেতেই বেরিয়ে পড়ে। তরী বিদ্রুপের সুরে বলে উঠে,

” যত্তসব মূর্খের দল। ”

তরীর কথাটা কানে যেতেই আসিফ তেঁতে উঠে। সে কাঠকাঠ স্বরে বলে উঠে,

” এইযে ম্যাডাম! ভাইরে চিনেন আপনি? পার্থ মুন্তাসির চৌধুরী। এই জেলার যুবক দলের সভাপতি উনি। সম্মান দেন। ”

তরী তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,

” সম্মান এতো সস্তা না যে যাকে তাকে দিয়ে দিবো। সম্মান উপার্জন করতে হয়। এসব রাজনীতির নামে করা গুন্ডামী আর ভণ্ডামি করা মানুষকে তরী রশীদ কখনো সম্মান করে না। ”

কথাটা বলেই তরী বেরিয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে পার্থ বলে উঠে,

” ডাক্তার সাহেবা। নিজের পেশেন্টের ভালো করে চিকিৎসা করেন। ওর জীবন আমার জন্য মূল্যবান। যত টাকা লাগুক না কেন, চিকিৎসায় যেন কোনো কমতি না থাকে। ”

তরী সাথে সাথে পিছনে ফিরে পার্থর দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসে। এক হাত উঁচু করে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

” আমার কাজ আমি খুব ভালো করেই করতে পারি। তাই আমার কাজ আমাকে শেখানোর প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার সো কল্ড জনসেবায় মন দেন, নেতা সাহেব। ”

কথাটা বলেই তরী গটগট পায়ে ইমারজেন্সি ইউনিট থেকে বেরিয়ে যায়। আসিফ শান্তনার সুরে বলে,

” থাক ভাই। বাদ দেন। বেডি মানুষ। কাজ কম প্যাঁচাল বেশি পারতে ভালোবাসে এই প্রজাতি। ”

__________

নিজের পার্টি অফিসে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে রুবেল হোসেন। তখনই তার বাম হাত সুজন ব্যস্ত পায়ে এসে বলে উঠে,

” ভাই। একটা সমস্যা হইয়া গেসে। ”

চায়ের কাপ থেকে মনযোগ সরিয়ে সরু চোখে সুজনের দিকে তাকায় রুবেল। চোখের ইশারায় জানতে চায় কি সমস্যা। সুজন ইতস্ততভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলে উঠে,

” আমাদের ছেলেরা পার্থ মুন্তাসির চৌধুরীর ডান হাত আসিফের জায়গায় ভুল কইরা তার দলের আরেক ছেলে সিয়ামরে কোপায় আসছে। ”

রুবেল রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠে,

” ভাদাইম্মার দল। তোদের একটা কাজ দিসি এটাও ঠিকঠাক করতে পারলি না। নির্বাচন হইতে মাত্র তিন মাসও বাকি নাই আর তোরা এখনো ভুল করে যাইতেসোস। সবগুলো গিয়ে বুড়িগঙ্গায় ডুব দে। ”

সুজন মনে মনে রাগ হয়। সে তো রুবেলের কথামতন ঠিকঠাকই আদেশ দিয়েছিলো। এখন ছেলেরা যদি সেই আদেশ ঠিকভাবে পালন না করে তাহলে সেটার দায়ভার তো আর তার না। রুবেল বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করে,

” ওই সিয়াম কি বাইচ্চা আছে নাকি মইরা গেসে? ”

” সেই খবর তো জানিনা ভাই। হসপিটালে নাকি নিয়ে গেসে খবর পাইলাম। কিন্তু যেমনে মারসে বাইচ্চা থাকার তো কথা না। ”

রুবেল বিরক্তিকর ভঙ্গিতে মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে। পরপর সুজনকে আদেশ দেয় হসপিটালে গিয়ে নজর রাখতে। সিয়ামের যেকোনো আপডেট যেনো তাকে জানানো হয়। সুজন আদেশ অনুযায়ী বেরিয়ে পড়তেই রুবেল বসে বসে ছক কষতে থাকে। এইবারের নির্বাচন সে যেকোনো মূল্যেই জিততে চায়।

__________

সারাদিনের তপ্ত আবহাওয়ার ক্লান্তি গায়ে মেখে পার্থ যখন চৌধুরী ভবনে প্রবেশ করে তখন সবার আগে তার মা সাদিকা বেগম দৌড়ে তার কাছে আসে। ব্যস্ত গলায় সুধায়,

“ আব্বাজান। ঠিক আছো তুমি? “

পার্থ ক্লান্ত গলায় জবাব দেয়,

“ আমি ঠিক আছি আম্মা। চিন্তা করো না। “

লিভিং রুম হতে সেই মুহুর্তে একটি ভরাট পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসে,

“ তোমার দলের একজনকে নাকি আজকে কোপানো হয়েছে। এতো বড় দুঃসাহস যে দেখিয়েছে তাকে আশা করছি সহজেই ছেড়ে দিবে না। “

পার্থ লিভিং রুমে প্রবেশ করে সোফায় আরাম করে গা এলিয়ে বসে শান্ত স্বরে জবাব দেয়,

“ এই দুঃসাহস ওই রুবেল হোসেন দেখিয়েছে। ইট ইজ এ ওপেন সিক্রেট অলরেডি। নির্বাচনের আগে ওর খুব ডানা গজিয়েছে। সেই ডানা ছাটাই করার উপায় আমি ভালো করেই জানি। তুমি চিন্তা করো না আব্বা। “

ছেলের কথা শুনে সামান্য হাসে আফজাল চৌধুরী। হেসে তিনি লিভিং রুমের বিশাল টিভির স্ক্রিনে চলমান নিউজের হেডলাইনের দিকে দৃষ্টি নিবেশ করেন। ততক্ষণে রান্নাঘর হতে জমিলা খালা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে সাদিকা বেগমের হাতে দেয়। সাদিকা বেগম সেই পানির গ্লাস ক্লান্ত ছেলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

“ ওই ছেলে যে হসপিটালে, সিয়াম না নাম? ওর কি অবস্থা? এখন কেমন আছে? “

পার্থ ঠান্ডা পানির গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে উত্তপ্ত চিত্ত আগে শীতল করে নেয়। পরে সহজ স্বরে জবাব দেয়,

“ অপারেশন হয়েছে। এখন আইসিইউতে আছে। ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। “

কথাটুকু বলেই পার্থ নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,

“ শোভন এখনো ফিরে নি? “

আফজাল চৌধুরী পাশ থেকে জবাব দেয়,

“ বনানীর ওদিকে কোন ম্যানহোলে নাকি একটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। সেই ইনভেস্টিগেশনে ব্যস্ত ও। “

পার্থ ছোট করে কেবল ওহ বলে। আফজাল সাহেব আবার বলে উঠে,

“ তোমার ভাইকে ভালো করে বুঝাও এই পুলিশের চাকরিটা ছেড়ে দিতে। আমার কি কোনো কিছুর অভাব আছে যে ও শুধু শুধু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরকম একটা চাকরি করছে? “

“ ওর চাকরিতে তো আমি দোষের কিছু দেখি না আব্বা। জনগণের সেবা করা ওর পেশা। আর জনগণের সেবা করতে গেলে নিজের জীবনের আগে জনগণের জীবনকে প্রাধান্য দেওয়াটাই স্বাভাবিক। “

আফজাল সাহেব ছেলের কথার আর কোনো জবাব দেয় না। তিনি চুপচাপ উঠে নিজের রুমে ফিরে যান। এতক্ষণ বাপ ছেলের কথার মাঝে নীরব স্রোতার দায়িত্ব পালন করছিলেন সাদিকা বেগম। পার্থকে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে দেখে তিনি পিছন থেকে প্রশ্ন করে,

“ এখন খাবার দিবো আব্বাজান? কাচ্চি রান্না করেছি আজকে। “

পার্থ এক দন্ড মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

“ আচ্ছা। আমি ফ্রেশ হয়ে তাহলে আসছি। আর আম্মা সিয়ামের মা মানে খালাম্মা হসপিটালে আছে ছেলের সাথে। উনার ডায়েবিটিস আছে। তাই সেই অনুযায়ী জমিলা খালাকে রান্না করে প্যাক করে রাখতে বলবে। কালকে হসপিটালে আমাদের বাসা থেকে খাবার যাবে। আমি সময়মতো শামীমকে পাঠিয়ে দিবো খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য। “

সাদিকা বেগম কেবল সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে আবার ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘরে চলে যায়।

__________

সিয়ামের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৪৮ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে। আশংকাজনক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতেই তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে শিফট করা হয়। এর মাঝে পার্থ বেশ কয়েকবার কাজের ফাঁকে হাসপাতালে এসেছিলো। এছাড়া হসপিটালে ছিলো কেবল সিয়ামের মা, আসিফ, শামীম আর দু তিনজন দলের ছেলে পেলে। রাত ৯ টার দিকে পার্থ হসপিটালে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর পায় সিয়ামের জ্ঞান ফিরেছে। সবার আগে সিয়ামের মা গিয়ে নিজের ছেলের সাথে দেখা করে আসেন। উনি বেরিয়ে আসতেই পার্থ ভিতরে প্রবেশ করে। সিয়াম পার্থকে দেখেই অস্ফুটে বলে উঠে,

“ ভাই। “

পার্থ শান্ত ভঙ্গিতে বলে,

“ হুশ। রেস্ট নে তুই। আগামী তিন মাস তোর একটাই ডিউটি। শুধু রেস্ট করবি। “

সিয়াম নীরব হাসে সামান্য। পরপরই সে বলে উঠে,

“ ভাই, ওইটা রুবেলের লোক ছিলো। “

পার্থের মুখভাব এখনো নির্বিকার দেখায়। সে একই ভঙ্গিতে বলে,

“ আমি জানি। তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। “

সিয়াম তবুও চিন্তিত সুরে বলে,

“ ভাই, আপনি সাবধানে থাকবেন। “

কথার এই পর্যায় পার্থ এগিয়ে এসে সিয়ামের মাথায় সামান্য হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

“ কারো বাপের সাহস নেই আমার গায়ে হাত দেওয়ার। যে এরকম কিছু চিন্তা করবে তার হাত ভেঙে গুড়িয়ে দিবো। “

তরী কেবল ডিউটি শেষের আগে পেশেন্ট ভিজিটের জন্য রুমে প্রবেশ করেছিলো। পিছন থেকে পার্থর এই কথা শুনতেই তার চেহারা শক্ত হয়ে যায়। এই রাজনীতি পেশা তার বরাবরই অপছন্দের। রাজনীতির নাম করে মানুষ কেবল নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গুন্ডামী করে বেড়ায় বলেই তার ধারণা। আর তার এই ধারণা আজ পর্যন্ত কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারে নি।

তরী গটগট পায়ে ভিতরে এসে বেডের অপরপাশে দাঁড়ায়। পার্থ একবার বেখেয়ালি চোখে তরীকে দেখে আবার নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। সিয়ামকে জ্ঞান ফেরার পর প্রাথমিক টুকটাক কিছু প্রশ্ন করে তা ফাইলে নোট করতে ব্যস্ত তরীকে পার্থ প্রশ্ন করে,

“ ওর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কতদিন সময় লাগবে? “

তরী ফাইলের দিকে তাকিয়েই বিদ্রুপের সুরে পাল্টা প্রশ্ন করে,

“ কেন? সুস্থ হতেই আবার চামচামি শুরু করে দিবে নাকি? “

পার্থর মুখ কিছুটা শক্ত হয়ে আসে। সোজা প্রশ্নের সোজা উত্তর না পেয়ে কিছুটা বিরক্ত সে। কাটখোট্টা স্বরে বলে উঠে,

“ যতটুকু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কেবল ততটুকুর জবাবই দেন ডাক্তার সাহেবা। “

তরী হাতের ফাইলটা একটা টেবিলের উপর রেখে দু’হাত বুকের উপর ভাজ করে বলে,

“ উনার বুকে পিঠে কোপানো হয়েছে। পিঠের ক্ষত বেশি গভীর না হলেও বুকে বেশ গভীর ক্ষত হয়েছে। এই যাত্রায় যে উনি বেঁচে গিয়েছেন সেটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলেন। এই সেলাই শুকাতে এবং সম্পূর্ণ ক্ষত সারতে বেশ কয়েক মাস লাগবে। কিন্তু আপনাদের মতো সো কল্ড নেতারা এসব বুঝার ক্ষমতা রাখেন না। পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করার বয়সে এসব ছেলেপেলেদের মাথায় রাজনীতির ভূত গছিয়ে দেওয়া আর এদের দিয়ে নিজেদের চামচামি করানোই কেবল আপনাদের কাজ। “

এই পর্যায়ে সিয়াম বলে উঠে,

“ দেখেন ডাক্তার আপা, ভাইকে কিছু বলবেন না। আমি নিজে স্ব ইচ্ছায় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। “

তরী মনে মনে সামান্য বিরক্ত হয়। যেমন নেতা তার তেমন চামচা। দুটোর সাথেই কথা বলা অর্থহীন। সে হাত ঘড়িতে একবার সময় দেখে নিয়ে সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

“ নার্সকে সব ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতের দিকে আপনার জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে। তাই সেরকম অনুভব করলে সাথে সাথে নার্সকে জানাবেন। গেট ওয়েল সুন। “

কথাটা বলেই তরী আর কোনো কথা না বলার সুযোগ দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে। সিয়াম পার্থর দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক সুরে প্রশ্ন করে,

“ ডাক্তার আপা আপনার সাথে এতো ত্যাড়া ত্যাড়া কথা কেন বললো ভাই? আপনাদের মাঝে কোনো ঝামেলা হয়েছে? “

পার্থ বিরস মুখে জবাব দেয়,

“ কি জানি! হয়তো সোজা কথার ত্যাড়া জবাব দেওয়া ডাক্তার সাহেবার স্বভাব। “

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩৮ এবং শেষ পর্ব

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৮ (শেষ)

পারফি রুমে এসে দেখলো ইয়ানা ইমার বেবেকি ঘুম পারিয়ে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে ব্লাংকেট গায়ে দিয়ে বুকের উপর হালকা করে চাপর মারছে যাতে ঘুম ছুটে না যায়। কিছুক্ষণ পর আলতো করে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো বাহিরে যাওয়া উদ্দেশ্যে।

ইয়ানা পিছু ঘুরতে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। কার সাথে ধাক্কা খেয়েছে দেখার জন্য উপরে তাকাতে পারফির মুখশ্রী ভেসে উঠলো। এতক্ষণ বেবি নিয়ে এতো বিজি ছিলো যে কখন রুমে পারফি এসেছে টের ও পায় নি।

পারফি কোনো কথা না বলে ইয়ানাকে আলতো করে জড়িয়ে বুকের মাঝে আগলে নিলো।

পারফির হঠাৎ কি হলো ইয়ানা বুঝতে পারলো না তাই পারফির পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলল,

কি হয়েছে মিস্টার?

পারফি ইয়ানাকে ছাড়িয়ে পিছ থেকে ফের জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বলল, কিছুনা।

কিছু না হলে হলে এমন করছো কেনো? ছাড়ো রেডি হতে হবে তো।

ইয়ানার কথায় পারফি ছাড়লো তো না এই আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আলতো করে ডাক দিলো, বিড়াল ছানা….

পারফির ডাকে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকিয়ে উঠলো। কেনো যেনো এই ডাকটা শুনলে মনের ভিতর এক অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে যায়। ইয়ানা নিজেকে সামলে ছোট করে বলল, হুম…

বেবি খুব পছন্দ করো?

খুব খুব পছন্দ করি। আগেতো ওভাবে বেবি কাছে পাই নি বাট ইমা আপুর বেবি হওয়ার পর থেকে অদ্ভুত এক টাব অনুভব করি।

পারফি ইয়ানার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে ইয়ানাকে ফের সামনে এনে দু গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
বেবি লাগবে?

চকমে তাকালো ইয়ানা পারফির দিকে কথাটা শুনে। ঝংকার দিয়ে উঠলো পুরো শরীর। গলাটা ক্রমশ শুকিয়ে আসছে কেমন। ওদের মাঝে এখন সম্পর্কটা একদম স্বাভাবিক। বেবি নিয়ে ইয়ানা কথা উঠালে পারফি এক কথায় বলতো তুৃমি নিজেই এখন বেবি, ছোট বিড়াল ছানা। তোমার এখনো বেবি ক্যারি করার বয়স হয় নি তাই এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেও। পড়ালেখা শেষ হলে তারপর বেবি প্লানিং করা হবে এর আগে না।
পারফি যে কিছুতে এতো তারাতাড়ি বেবি দিবে না তা খুব ভালো করেই ইয়ানার বোঝা হয়ে গিয়েছিলো তাই এই ব্যাপার নিয়ে তেমন কথা বলতো না। কিন্তু আজ পারফির মুখে নিজ থেকে বেবির কথা শুনে একদম থমকে গেলো ইয়ানা। কি বলবে পারফির কথার পৃষ্ঠে তা খুঁজে পেলো না।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ওর মন বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। পরক্ষণে বুঝেও নিলো ওর স্নিগ্ধ ফুলের মন। স্নিগ্ধ ফুল যেই লেভেল এর বেবি পাগল সেই হিসেবে এক কথায় এই যে এই মেয়ে বেবি নিতে রাজি হয়ে যাবে তা বেশ ভালো করেই জানে। কিন্তু ওর বিড়াল ছানা এখনো নিজেই বাচ্চা, এতো তারাতাড়ি বেবি নেওয়াটা প্রয়োজন মনে হলো না। সবে আঠারোতে পা দিয়েছে। আরেকটু বড় হোক তারপর বিড়াল ছানার মনের ইচ্ছে পূরণ করবে এর আগে না। এখন ওর ইচ্ছে পূরণ করতে গেলে উল্টো ওর ফুলের ক্ষতি টাই বেশি হবে। যে ফুলের গায়ে কখনো একটা ফুলের টোকা কউকে দিতে দেয় না সেখানে নিজে কিভাবে জেনেশুনে ওর বিড়াল ছানার এতবড় ক্ষতি করবে৷ এখনো যে ওর বিড়াল ছানার বেবি ক্যারি করার বয়স হয় নাই।

কথাগুলো ভেবে পারফি ইয়ানার গালে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,

অরেকটু বড় হও বিড়াল ছানা তারপর তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করবো। বেবি ক্যারি করার বয়স এখনো তোমার হয় নি। সত্যি বলতে আজ তোমার কোলে ইমার বেবি দেখে আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করেছি। যে অনুভূতিটা হয়তো তুমি আরো আগে থেকেই করেছো। কিন্তু জেনেশুনে তোমার কোনো ক্ষতি হোক সেই কাজ আমি কোনোদিন করবো না এতে মনের ভিতর যতো অনুভূতি আসুক। একটা মেয়ের কম করে হলেও বিশ বছরের আগে বেবি নেওয়াটা কতটা রিস্কি তাতো জানোই আর সেখানে তুমি সবে আঠারোতে পা দিয়েছো। আরেকটু বড় হও তখন তোমার সব ইচ্ছে পূরণ হবে বিড়াল ছানা। এখন তো তোমার একটা মাম্মা আছেই। তুমি আরো বড় হতে হতে না হয় এই মাম্মাটা নিয়েই হ্যাপি থাকো। সময় হলে তোমার নিজের মাম্মা/পাপাকে পেয়ে যাবে। কখনো এটা নিয়ে মন খারাপ কাবে না ওঁকে?

পারফি প্রতিটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো ইয়ানা। প্রতিটি কথায় মিশে আছে ওর জন্য গভীর ভালোবাসা। ভালোবেসে সব সময় আগলে রাখা। যেখানে এক বিন্দু পরিমাণ কষ্ট যাতে ওকে ছুতে না পারে সেই ভরসা দিয়ে আগলে রাখা। ইয়ানার চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো এই লোকটার এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে। সব সময় ওর ভালো খারাপটা খুব যত্ন করে আদর করে ওকে বুঝিয়ে দিবে বকাঝকা না করে। জিনিস গুলো ভাবতেও মনের ভিতর একরাশ মুগ্ধতায় ভোরে ওঠে। ইয়ানা শক্ত করে পারফিকে ঝাপটে ধরে পারফির বুকে মাথা রাখলো। বুকে মাথা রেখেই সম্মতি দিলো বিষয়টা নিয়ে আর মন খারাপ করবে না কখনো।

ইয়ানার সম্মতিতে মুচকি হসলো পারফি। নিজেও শক্ত করে অর্ধাঙ্গিনীকে বুকের মাঝে আগলে নিলো। কিছুক্ষণ পর নিজ থেকে ছাড়িয়ে কপালে গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলল,

রেডি হয়ে নেও এবার। প্রীতি সেই কখন বলেছে রেডি হতে। অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

ইয়ানা মুচকি হেসে সম্মতি দিয়ে রেডি হতে লাগলো, পারফি ও রেডি হয়ে নিলো। তারপর এক সাথে দুজন নিচে নেমে গেলো। নিচে যেয়ে ইয়ানা ইমাকে ওর রুমে বেবির কাছে যেতে বললো। ইমার শরীরটা একটু খারাপ তার উপর এতো ছোট বেবি রেখে শপিংয়ে যাওয়া ওর জন্য সম্ভব হলো না।

ইয়ানারা গেলো সাথে শাহানা আর পিয়াসা বেগমকে ও নিয়ে গেলো।
সবার পছন্দ মতো কেনাকাটা করতে করতে রাত হয়ে গেলো। এক বারে বাহির থেকে ডিনার করে সবাই বাসায় ফিরলো। এতো এতো কেনাকাটা করে সবাই মোটামুটি টায়ার্ড তাই রেস্ট নিতে যে যার ঘরে চলে গেলো।

এভাবেই দেখতে দেখতে এক এক করে সব অনুষ্ঠান পালন করে অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসলো। সকাল সকাল পার্লার থেকে লোক এসে পড়লো প্রীতিকে সাজানোর জন্য। সাজ কমপ্লিট হলো দুপুরে।

ইয়ানা সেই সকাল থেকে সবার সাথে কাজে হেল্প করছে। ভাইর বিয়ে বলে কথা চুপচাপ তো আর বসে থাকা যায় না। শাহানা বেগম সব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তাই তার পাশে থেকে টুকটাক কাজে সাহায্য করছে। তখন রিমা বেগম এসে ইয়ানাকে বলল,

তুমি এবার যেয়ে রেডি হয়ে নেও আমি আপাকে সাহায্য করছি। রিমা বেগমের প্রথমে একটু মন খারাপ হয়েছিলো প্রীতিকে তার ছেলের বউ করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু প্রীতিকে তারা বিয়ে দিলো তার ননদের ছেলের সাথে। পরক্ষণে আবার মন খারাপটা কাটিয়ে নিলো এই ভেবে যে ননদের ছেলে আর নিজের ছেলের ভিতর পার্থক্য আর কিসের। দুজনেই তো তার ছেলে, সাথে শাফিনকে তিনি নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে তাই মন খারাপ কাটিয়ে সব কিছু হাসিমুখে মেনে নিলো।

রিমা বেগমের কথায় শাহানা বেগমের খেয়াল হলো আসলেই তার মেয়েটা সকাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সবাই রেডি হয়ে গেছে আর তার মেয়ে রেডি হয় নাই সেই দিকটা কাজের প্রেশারে খেয়াল এই ছিলো না। খেয়াল হতে জোর করে ইয়ানাকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিলো।

ইয়ানা প্রথমে চলে গেলো প্রীতিকে দেখতে। কাজের জন্য সকাল থেকে মেয়েটাকে একটু সময় ও দিতে পারে নাই। প্রীতির কাছে আসতে দেখতে পেলো লাল টুকটুকে লেহাঙ্গে পড়ে পরী সেজে ওর জানের বেস্টু ওরুফে ননদিনী বসে আছে। ইয়ানা মুচকি হেসে প্রীতির কাছে এগিয়ে যেতে প্রীতি গাল ফুলিয়ে বলল,

এতক্ষণে তোর সময় হয়েছে আসার? এখন আর আসা লাগবে না তোর।

ইয়ানা প্রীতিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,

রাগ করিস না জানু সকাল থেকে কাজে বিজি ছিলাম তাই এখানে আসার সময় হয় নি।

হয়েছে এখন এক্সকিউজ দেওয়া লাগবে না। বড় হয়ে গিয়েছিস না? এখনো রেডি না হয়ে কাজ করে যাচ্ছিস। এখন চুপচাপ এখানে বোস তোকে তারা সাজিয়ে দিবে।

ইয়ানা একবার পার্লারের লোকদের দিকে তাকিয়ে বলল,

এই না না আমি এতো ভারী মেকআপ তাদের থেকে নিতে পারবো না। তুইতো জানিস এই আমি ভারী মেকআপ করি না তার থেকে বরং আমি নিজেই সিম্পল ভাবে সেজে নিবো।

চুপ কর পার্লারের লোক সাজাবে দেখে যে ভারী মেকআপ করাবে তা তোকে কে বলেছে? সিম্পল ভাবেই তোকে সাজিয়ে দিবে এখন চুপচাপ বস এখানে।

প্রীতির জোরাজোরিতে অগত্য ইয়ানার সাজতে বসতে হলো। প্রীতি বলে দিলো সিম্পল করে ওকে সাজিয়ে দিতে তাই পর্লারের লোকরা তাই করলো। সাজানো হলে পার্পেল কালার একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলো সুন্দর করে। শাড়িটা পারফি চয়েস করে দিয়েছিলো। সাজ কমপ্লিট হতে প্রীতির সাথে আরো কিছু সময় কাটিয়ে রুমে আসলো ইয়ানা। রুমে আসার আগে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে পারফিকে খুঁজলো কিন্তু কোথাও দেখা মিললো না। বোনের বিয়েতে এই লোকটা নিঃশ্বাস নেওয়ার ও সময় পাচ্ছে না। সেই ফজরের পর রুম থেকে বের হয়েছিলো তারপর আর দেখা মেলে নি। অবশ্য ইয়ানা নিজেও মোটামুটি বিজি ছিলো কাজে ভাইর বিয়ে বলে কথা।

ইয়ানা রুমে এসে শুনতে পেলে ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। বুঝলো যে পারফি আছে ভিতরে এই জন্যই তখন বাহিরে কোথাও পায় নি।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ওয়াশরুম থেকে বের হলো পারফি। তাকালো ইয়ানা সেদিকে, সদ্য গোসল করাতে লোকটাকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে। সেই সাথে মুখে ফুটে উঠেছে ক্লান্তির ছাপ। কয়টা দিন থেকে প্রচুর ধকল যাচ্ছে লোকটার উপর দিয়ে। পারফির ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ইয়ানা একটা তোয়ালে নিয়ে পারফির মাথা ভালো করে মুছে দিতে দিতে বলল,

এতো প্রেশার কেনো নিচ্ছো নিজের উপরে? কাজ করার জন্য তো কতো লোক রাখা আছে। এই কয়দিনে নিজের কি হাল করেছো তা দেখেছো একবার?

ইয়ানার কথার জবাব না দিয়ে পারফি আচমকা ইয়ানার কোমড় আঁকড়ে ধরে ইয়ানাকে কাছে টেনে নিলো।
পারফির ঠান্ডা হাতের স্পর্শ কোমড়ে লাগতে কেঁপে উঠলো ইয়ানা৷
তা দেখে পারফি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

আমাকে পাগল করার জন্য এই লুকে আমার সামনে হাজির হয়েছো?

পারফির কথায় ইয়ানা লজ্জামাখা হেসে বলল,
হয়েছে এখন আর পাগল হওয়া লাগবে না, দেখি ছাড়ো রেডি হয়ে নেও আমি সাহায্য করছি।

পারফি ছাড়লো না আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে আলতো করে ইয়ানার অধরে অধর ছুঁয়ে দিলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো ইয়ানা। কিছুক্ষণ পর পারফি ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে গালে হাত রেখে বলল,

খুব সুন্দর লাগছে আমার বউজানকে।

পারফির কথায় হাসলো ইয়ানা কিন্তু কিছু বললো না। তারপর পারফিকে তারা দিয়ে রেডি হতে বলল, সাথে নিজেও হেল্প করলো রেডি হতে।
—————————
অনেক অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে প্রীতি হয়ে গেলো একান্ত শাফিনের। কেমন জানি সব কিছু প্রীতির কাছে সপ্নের মতো লাগছে। ঘন্টা খানেক আগে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। সময় হয়ে গেলো বিদায়ের পালা। অন্য পাঁচটা বিয়ের বিদায়ের মতো এই বিয়ের বিদায়টা হলো না। অন্যসব বিয়েতে বিদায়ের বেলা সবার চোখে লেগে থাকে পানি। প্রিয় জন ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। আর প্রীতির বেলায় হলো অন্য। কারো মুখে কষ্টের রেশ মাত্র নেই কারণ এটা অন্যসব বিয়ের মতো বিদায় না। প্রীতি তো আর দূরে কোথায় বিদায় হয়ে যাচ্ছে না। নিজের বাড়িতেই থেকে যাচ্ছে। শুধু আজকের পর থেকে ঘরটা চেঞ্জ হয়ে গেলো। আগে ছিলো চৌধুরী বাসায় আর আজ থেকে থাকবে শিকদার বাসায়। পাশাপাশি বাসা এক ছাঁদ টপকে আরেক ছাদে চলে যাওয়া যায় সেখানে আবার কিসের বিদায়। অন্য পাচটা বিয়ের মতো গাড়িতে চরে প্রীতির শশুর বাড়ি যাওয়া হলো না। পাশাপাশি বাসা হওয়াতে পায়ে হেঁটেই বিদায় নিতে হলো।

বিদায়ের সময় প্রীতি পিয়াসা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,

আম্মু তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। কোথায় মেয়ের বিদায় দিতে এসে একটু কান্না কাটি করবা তানা দাঁত কেলিয়ে হাসছো।

প্রীতির কথায় সবাই এক সাথে হেসে উঠলো। শাফিন প্রীতির কথায় বলে উঠলো তুই এতো ভালোবাসিস তাহলে তোর চোখের পানি কোথায়? যেখানে কান্না করে গড়াগড়ি খাবি তা না করে নাচতে নাচতে শশুর বাড়ি যাচ্ছিস।

শাফিনের কথায়ও আরেকবার হাসির রোল পড়ে গেলো। প্রীতি ঠোঁট উল্টে পাশে পারফির দিকে তাকিয়ে বলল,

দেখছো ভাইয়া তোমার বন্ধু আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলছে।

বোনের কথায় পারফি রাগ করার ভান করে শাফিনকে বলল,

কতবড় সাহস আমার বোনকে খোঁচা মেরে কথা বলিস। যা তোর কাছে আমার বোনকে দিবোই না।

পারফির কথায় ইয়ানা বলল,
এহ্ বললেই হলো নাকি বোন দিবে না? আমার ভাইর বউকে তারাতাড়ি আমার ভাইর হাতে তুলে দেও আর নাহলে আমার ভাইর বোন ও কিন্তু শশুর বাড়ি যাবে না।

ভাই বোন ভাই বোনের খুনসুটিতে সবার হাসতে হাসতে পেট ব্যথার উপক্রম হয়ে গেলো। ওরা চারজন এমন খুনসুটিতে মেতে রইলো আর এদিকে পিয়াসা, শাহানা, ইতি বেগম, ইসহাক আহমেদ, শরিফ শিকার, আর পাভেল চৌধুরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েদের খুনসুটি দেখতে লাগলো। আজ কারে মুখের হাসি যেনো বাঁধ মানছে না। সবার মুখে আজ হাসি লেগে আছে যেই হাসি হলো এক তৃপ্তির হাসি।

অবশেষে খুনসুটির মাঝে প্রীতিকে নিয়ে সবাই শাফিনদের বাসায় প্রবেশ করলো। সবাই মিলে গল্পের আসর বসিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে রাত বারতে প্রীতিকে নিয়ে শাফিনের রুমে দিয়ে আসলো। আর গেট বাঁধলো ইয়ানা, ইমা, রাফি আরো কিছু মামাতো ফুপাতো ভাইবোন মিলে। এগুলোর মাঝে পারফি ছিলো না। শত হলেও বোনের বাসর ঘরের গেট তো আর ভাই হয়ে বাঁধতে পারে না। এই যাত্রায় পারফির হাত থেকে শাফিন বেঁচে গেলো কিন্তু বাকি যেই বিচ্ছুরা গেট ধরেছে এদের থেকে কি আদো বাঁচতে পারবে?

কিছুক্ষণ পর আসলো শাফিন। এতসময় পারফির সাথে ছাঁদে ছিলো। ছাঁদ থেকে এসে রুমে যেতে গিয়ে পড়ে গেলো বিপাকে। এ নিয়ে একধাপ যুদ্ধ হয়ে গেলো। অবশেষে সবার কাছে হার মেনে সবার দাবি মিটিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো। শাফিন রুমে ঢুকে দরজা আটকে ধপাস করে যেয়ে বেডে শুইয়ে পড়লো। এতক্ষণ যুদ্ধ করে যেনো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এমন একটা ভাব।

এদিকে প্রীতি লম্বা ঘোমটা টেনে বসে থেকে এতক্ষণ লাল, নীল বেগুনি হচ্ছিলে লজ্জায়। শাফিন এসে ঘোমটা তুলবে তখন লজ্জায় কি করবে না করবে তাই ভেবে লজ্জায় লাল, নীল হচ্ছিলো। এইদিকে শাফিন এগুলো কিছু না করে ধপাস করে শুয়ে পড়েছে তা দেখে প্রীতির লজ্জা হওয়ায় মিশিয়ে গিয়ে ভর করলো সেই আগের ডাইনি রুপ।
রাগে ফুঁসে উঠে প্রীতি এক টানে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে শাফিনের দিকে কিছুটা ঝুকে শাফিনের পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরে বলল,

আমি এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে ইয়া লম্বা ঘোমটা টেনে তোমার জন্য বসে আছি আর তুমি এসে ঘোমটা তো তুললে না এই উল্টো এসে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছো। এই তোমাকে এখানে আসতে বলেছে কে? যাও এই মুহূর্তে রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে।

প্রীতির কাজে শাফিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ও ইচ্ছে করেই তখন এভাবে শুয়ে পড়েছিলো ওর ক্ষ্যাপাটে বউটাকে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার জন্য। আর হলো ও তাই অবশেষে ওর ক্ষ্যাপাটে বউ ক্ষেপেছে। কেনো যেনো প্রীতিকে না ক্ষেপাতে পারলে ওর পেটের ভাত হজম হয় না তাই বাসর রাত এও ক্ষ্যাপাতে ছাড়লো না।

প্রীতি এখনো শাফিনের দিকে কিছুটা ঝুকে ওর কলার টেনে ধরে আছে তা দেখে শাফিন হাত ধরে টান দিয়ে প্রীতিকে নিজের উপরে ফেলে দিলো।

আকস্মিক কাজে প্রীতি কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।

শাফির প্রীতির ঘবড়ানো মুখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললে তুই তাহলে কি চাচ্ছিলি তোর ঘোমটা উঠিয়ে তোর লজ্জামাখা মুখ দেখে বেসামাল হয়ে যাই? পারবি তো সামলাতে একবার বেসামাল হয়ে উঠলে?

শাফিনের কথায় প্রীতির হুশ আসলো। এতক্ষণ বোকার মতো কাজ করে এখন ফেঁসে গিয়েছে। সাথে শাফিনের এমন লাগাম ছাড়া কথায় কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। শাফিনের উপর থেকে সরে যেতে চেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

ছ..ছাড়ো…. তোমা….

আর কিছু বলার আগে শাফিন প্রীতির মুখে আঙুল দিয়ে কথা আটকে দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,

আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নেই জান। তুমি নিজ থেকেই কাছে এসেছো তাহলেতো ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এ বলে আস্তে ধীরে হরিয়ে গেলো প্রীতির মাঝে। পেয়ে গেলো পূর্নতা আরো একটা ভালোবাসার।
———————————–
গভীর রাত চারেদিকে নিস্তব্ধতায় ঘেরা। আর এই নিস্তব্ধতার মাঝে ছাঁদে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পারফি আর পারফির বুকে মাথা রেখে পারফিকে ঝাপটে ধরে দাঁড়িয়ে আছক ইয়ানা।

দুজনের মাঝে নীরবতা বিরাজমান। নীরবতা ভেঙে পারফি ডেকে উঠলো,

বিড়াল ছানা…

হুম,,,

ভালোবাসি খুব আমার স্নিগ্ধ ফুল। একান্ত আমার ব্যক্তিগত স্নিগ্ধ ফুল।

ইয়ানার পারফিকে আরো দৃর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,

আমিও খুব ভালোবাসি আমার নীলমনি। খুব খুব ভালোবাসি তোমায়। এভাবে সারাজীবন ভালোবেসে তোমার বুকের মাঝে থাকতে চাই।

সব সময় এই বুকের ভিতর আগলে রাখবো আমার স্নিগ্ধ ফুল এ বলে পারফি ইয়ানাকে শক্ত করে বুকের মাঝে আগলে নিলো।

এভাবেই পূর্ণতা পেলো পারফি ইয়ানা আর শাফিন প্রীতির ভালোবাসা। পৃথিবীর সকল ভালোবাসা এভাবেই যেনো পূর্ণতা পায়।

#সমাপ্ত

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩৭

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৭

শাফিন গাড়ি থামালো বিশাল এক রাজবাড়ির সামনে। সবাই আস্তে ধীরে নামলো। রাফি যেহেতু বাইক নিয়ে এসেছে তাই সবার আগে এখানে পৌঁছে ওদের জন্যই ওয়েট করছিলো। সবাই আসতে আস্তে ধীরে সবাই পুরোনো রাজবাড়ির গেট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।

ভিতরে প্রবেশ করতে ইয়ানা অবাক চোখে চারেদিকে চোখ বুলালো একবার। এই প্রথম এই জায়গায় এসেছে। চারেদিকে সবুজে ঘেরা গাছপালা তার ভিতরে বিশাল আলিশান পুরোনো এক রাজপ্রাসাদ। প্রীতির মুখে যতটুকু শুনেছে তার চেয়েও বেশি সুন্দর জায়গায় টা। চারপাশে অল্প কিছু মানুষজন দেখা যাচ্ছে। হয়তো ওরাও ওদের মতো ঘুরতে এসেছে। ঘোরার জন্য আসলেই খুব সুন্দর একটা জায়গা এটা।

হঠাৎ কারো ঠান্ডা শীতল হাতের স্পর্শ নিজের হাতে পেতে ইয়ানা পাশে তাকালো। দেখলো পারফি ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। ও তাকাতে পারফি বলে উঠলো,

এখানে দাঁড়িয়েই দেখবে নাকি ভিতরে যাবে? সবাই চলে গেছে সেই খেয়াল আছে?

পারফির কথায় ইয়ানা সামনে তাকিয়ে দেখলো আসলেই প্রীতিরা অনেকটা সামনে এগিয়ে গিয়েছে। এতক্ষণ সবকিছু দেখতে এতোটাই বিভোর ছিলো যে খেয়াল এই করে নাই কখন ওরা চলে গেছে।

পারফি ইয়ানার দৃষ্টি দেখে সামনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললো, চলো…..।

ইয়ানাও সম্মতি দিয়ে পারফির সাথে পাশাপাশি হেঁটে সামনের দিকে আগাতে লাগলো। নিরিবিলি একটা পরিবেশে পাশাপাশি এভাবে হাত ধরে হাঁটতে বেশ লাগছে ইয়ানার কাছে।

পারফিরা প্রীতিদের কাছে আসতে প্রীতির শুরু হয়ে গেলো ইয়ানাকে নিয়ে ছবি তোলা। রাফি ওদের ছবি তুলে দিচ্ছিলো তখন আচমকা একটা মেয়ে ঝড়ের গতিতে এসে রাফিকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটার আকস্মিক কাজে উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।

তখন রাফিকে জড়িয়ে ধরা মেয়েটা খুশিতে আপ্লূত হয়ে বলল,

বেবি তুমিও এখানে? কত খুশি হয়েছি তোমাকে এখানে দেখে জানো। বান্ধবীদের সাথে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম বাট বোরিং লাগছিলো৷ তোমাকে দেখে এখন কি যে ভালো লাগছে। আজ তো ভার্সিটিতেও যাও নাই, সারাদিন খুব মিস করেছি তোমায় বেবি।

মেয়েটর কথায় রাফির কাশি উঠে গেলো। ভাই বোনদের সামনে কি কেলেঙ্কারি বাঁধিয়ে দিলো মেয়েটা। রাফি অত্যান্ত দুষ্ট প্রকৃতির একটা ছেলে। মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করায় যেনো পিএইচডি করা। সাথে কতগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে তা ওর নিজের ও হিসেব নেই।
এখন কথা হলো জড়িয়ে ধরা রাখা মেয়েটা ওর কয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ড তা বুঝতে পারছে না কারণ এখনো মেয়েটার মুখ দেখে নি। তার উপরে ভাইবোনদের সামনে এমন চিপকে ধরে আছে তা দেখে দ্রুত মেয়েটাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দেখলো ওর তিন নাম্বার গার্লফ্রেন্ড রাইসা।
রাফি একবার পারফি, শাফিন, ইয়ানা আর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বোকা হেঁসে বলল,

আমার গার্লফ্রেন্ড রাইসা। আর রাইসা ওরা হলো আমার মামাতো ভাই বোন তারপর এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।

রাইসার চোখ আঁটকে গেলো ব্লাক কালার শার্ট পড়া পারফির দিকে। একবার রাফির দিকে তাকালো আরেকবার পারফির দিকে তাকালো। মনে মনে ভাবলো রাফির চেয়েও বেশি সুন্দর পারফি। পারফির পাশের ডার্ক ব্লু কালার শার্ট পড়া ছেলেটা শাফিন ও দেখতে পুরোই ড্যানিশ বয় কিন্তু রাইসার চোখ আপাতত আঁটকে গেলো পারফিতে।

পারফির দিকে এক অমায়িক হাসি দিয়ে তাকিয়ে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো হেই আমি রাইসা।

রাইসার বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে পারফি একবার তাকিয়ে রাইসাকে পুরো অগ্রাহ্য করে হাত না বাড়িয়ে ছোট করে বলল আম পারফি।

পারফি হাত না মেলাতে রাইসা সবার মাঝে একটু অপমানিত বোধ করলো। তবুও এই অপমান গায় না লাগিয়ে সবার সামনে দাঁত কেলিয়ে হেসে সবার সাথে নিজেই পরিচিত হলো।

রাইসা যে গায়ে পড়া টাইপের মেয়ে তা এতক্ষণে সবার বোঝা হয়ে গেছে। সবাই দাঁত কটমট করে রাফির দিকে তাকাতে রাফি মাথা চুলকে তারাতাড়ি বলল,

ব্রো তোমরা তাহলে এদিকটা ঘোরো আমি ওকে নিয়ে যাই এ বলে রাইসার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। রাইসা অবশ্য যেতে চাইলো না কিন্তু রাফি এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো কারণ এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে কে জানে আবার কোন কেলেঙ্কারি বাজিয়ে দেয়।

রাফি রাইসা কে নিয়ে যেতে প্রীতি শব্দ করে হেঁসে ফেলে বলল,

আমায় মনে হয় রাইসা ভাইয়ার উপর ক্রাশ খেয়েছে। রাফি ভাইয়া ওকে নিয়ে গেলো আর নাহলে ছেকা খাইয়ে ব্যাকা করে দিতাম কতবড় সাহস আমার ভাইর দিকে নজর দেয়।

প্রীতির কথায় শাফিন বলল, তোর দাঁত কেলানো হলে সামনে যাওয়া যাক।

শাফিনের কথায় প্রীতি তাকালো শাফিনের দিকে। মহাশয় যে এখনো রাগ করে আছে তা ঢের বুঝতে পারছে।

পুরো বিকেলে মিলে সবাই অনেক ঘোরাঘুরি করলো। রাত হয়ে আসতে সবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো। বাসায় এসে সবাই ফ্রেশ হতে উপরে চলে গেলো।

বসার ঘরে বসে শাহানা, পিয়াসা আর রিমা বেগম গল্প করছিলো তখন রিমা বেগম পিয়াসা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,

মেয়ে তো বড় হয়ে যাচ্ছে আপা, কি অবস্থা বিয়ে সাদি কি দিবেন না? আপনার মেয়েটাকে আমার রাফির জন্য দিয়ে দেন আপা। কখনো অযত্ন করবো না সবসময় নিজের মেয়ের মতো করে রাখবো।

রিমা বেগমের কথায় শাহানা বেগম আর পিয়াসা বেগম একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো। রিমা বেগম যে এমন একটা প্রস্তাব রাখবে কেউ ভাবে নি।

পিয়াসা বেগম একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

এখনো এসব নিয়ে ভাবছি না। মেয়ে পড়াশোনা করছে করুক এসব নিয়ে পড়ে ভাববো।

এই প্রসঙ্গ পাল্টানো জন্য শাহানা বেগম অন্য কথা বলতে লাগলো।
————
দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটি বছর। প্রীতি আর ইয়ানার আজ এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। পরীক্ষা শেষ হতে শুরু হয়ে গেলো বিয়ের তোরজোর। বিয়েটা আরো করো না শাফিন আর প্রীতির।

এই এক বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু সেই সাথে বদলেছে কিছু সম্পর্ক।

শাফিন প্রীতর মাঝে তৈরি হয়েছে এক ভালোবাসাময় সম্পর্ক। লুকিয়ে চুকিয়ে দুজন ঝাকানাকা প্রেম চালিয়ে গিয়েছিলো। একদিন হুট করে পারফির হাতে সরাসরি দুজন ধরা খায়। সেদিন প্রীতি কি ভয় টাই না পেয়েছিলো। প্রথমে এভাবে লুকিয়ে প্রেম করার জন্য পারফি একটু বকাঝকা করেছিলো। পরে আবার নিজেই নিজ দায়িত্ব দুজনের বিয়ে ঠিক করেছে ফ্যামিলির সবাইকে বলে। ঠিক করা হয়েছিলো প্রীতি আর ইয়ানার এইচএসসি এক্সামের পর ধুমধাম করে দুজনের বিয়ে দিবে। আর সেই দিন দেখতে দেখতে চলেও আসলো।

এই এক বছরের ভিতরে পুলিশরা খুঁজে পেয়েছে রফিক খানকে। রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাইকে যাবত জীবন কারাদন্ড দেওয়া হলো। এলিজাও বাবা চাচাদের সাথে এই কালোবাজারি কারবারে কম বেশি লিপ্ত ছিলো তাই এলিজাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

সব শেষে পারফি আর ইয়ানার সম্পর্কে আসলো পূর্নতা। এখন দুজন দুজনার পরিপূরক। একে অপরকে যেনো চোখে হারায় এখন। খুব সুন্দর ভালোবাসাময় সংসার গড়ে তুললো ইয়ানা। যেখনে চারপাশে সুখ আর সুখ। সবার ভালোবাসায় সুখময় একটা জীবন পার করছে।

শাফিন আর প্রীতির বিয়ের বাকি আছে আর এক সপ্তাহ। চৌধুরী আর শিকদার বাড়ি জুড়ে রমরমা এক পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলো। সারা বাড়ি সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এই বিয়েতে পারফি আর ইয়ানা হয়ে গেলো দুই পক্ষের। ইয়ানা শাফিনের পক্ষ থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকবে আর পারফি থাকবে আদরের বোনের পক্ষ থেকে। ইয়ানা শাফিনদের পক্ষ থেকে সব কিছু করবে দেখে পারফির সেই কি রাগ ইয়ানার উপরে। পারফি কিছুতেই ইয়ানাকে নিজের পক্ষ থেকে ওই পক্ষে যেতে দিবে না আর ইয়ানা ও নিজের ভাইর পক্ষ থেকে এই পক্ষে আসবে না।

বোনের বিয়ে বলে কথা পারফি যেনো সব কিছু সামলাতে নিঃশ্বাস নেওয়ার ও সময় পাচ্ছে না আর এদিকে শাফিন নাকে তেল দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা দেখে পারফি শাফিনের উদ্দেশ্যে বলল,

শালা তুই আমার বন্ধ নাকি শত্রু? দেখতে পারছিস নিঃশ্বাস নেওয়ার ও সময় পাচ্ছি না। কোথায় আমাকে সাহায্য করবি তা না করে নাকে তেল দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।

শাফিন টিপ্পনী কেটে পারফির কথার প্রতিত্তোরে বলল,

আমি হলাম এই সাম্রাজ্যের রাজা। রাজারা কাজ করে না। রাজাদের কাজ হলো নাকে তেল দিয়ে ঘুরে বেরানো। এসব কাজ রাজাদের না প্রজাদের হা হা।

শাফিনের কথায় পারফি শাফিনের কলার টেনে ধরে বললো কি বললি? আমি প্রজা? এতোবড় সাহস তোর আমাকে প্রজা বলছিস।

শাফিন ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। কজ আমি এখন তোর বোনের হবু হাসবেন্ড। কতোবড় সাহস বোনের হবু বরের কলার টেনে ধরেছিস।

পারফি বাঁকা হেসে বলল, তাই নাকি? কেউ একজন মনে হয় ভুলে গেছে আমি কারো মতো কারো বোনের শুধু হবু বর না একেবারে পার্মানেন্ট বর। এখন কেউ একজন বলে দেউক কার সম্মানটা উপরে।

শাফিন মাফ চাওয়ার ভঙ্গিমা করে বলল, মাফ চাই আমার বোনের পার্মানেন্ট জামাই। আপনাকে সম্মান করে মাথায় তুললাম এবার বলেন আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি?

শাফিনের কথায় পারফি হেঁসে দিয়ে শাফিনের কাধ জড়িয়ে ধরে কিছু বলতে যাবে তখন দেখতে পেলো ইয়ানা ছুটে এদিক আসছে। ওদের কাছাকাছি আসতে পারফি ইয়ানাকে থামিয়ে দিয়ে বললো এভাবে ছুটছো কেনো? আস্তে ধীরে ওতো হাঁটা যায়।

ইয়ানার পারফির পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল,

আমার মাম্মা আসছে আর আমি ছুটে যাবো না তা হয় নাকি?এ বলে আবার এক ছুটে গেটের কাছে চলে গেলো।

পারফি ভ্রু কুঁচকে ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলো ইয়ানার কোলে ছোট একটা বেবি। যাকে পরম যত্নে নিজের সাথে মিশিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বাসায় প্রবেশ করছে। এতক্ষণে বুঝলো মহারানীর ওভাবে ছুটে যাওয়ার মানে।
ইয়ানার কোনো ইমার ২ মাসের বাচ্চা। দুইমাস হলো ইমা ফুটফুটে একটা মেয়ের জন্ম দিয়েছে। সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট বাচ্চা পেয়ে সেই কি খুশি ইয়ানা। সুযোগ পেলেই ইমার কাছে ছুটে চলে যায় ইয়ানা ওর কলিজার মাম্মাকে কোলে নেওয়ার জন্য।

পারফি মুগ্ধ হয়ে ইয়ানাকে দেখতে লাগলো। এই মেয়ে যে এতো বেবি পাগল তা ইমার বেবি না হলে জানতেই পারতো না। ইয়ানার দিকে একবার তাকিয়ে কল্পনা করলো বোনের বেবি পেয়েই যে মেয়ে এতো খুশি সেখানে নিজের বেবি হলে কি করবে? কথাটা ভাবতেই শরীরে সব লোম দাঁড়িয়ে গেলো পারফির। নিজের বেবির কথা ভাবতেই ঝংকার দিয়ে উঠলো পুরো শরীর। এক অন্যরকম কিছু অনুভব করলো পারফি নিজের বেবির কথা ভাবতেই। এই অনুভূতি সাথে আজ প্রথম পরিচিত হলো পারফি। কেমন যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব হচ্ছে এই মুহূর্তে।

এই ভাইয়া…….

প্রীতির ডাকে হুঁশ আসলো পারফির। নিজেকে ধাতস্থ করে দেখলো ইয়ানা নেই। ভাবনায় এতো বিভোর ছিলো যে কখন ইয়ানা পাশ কাটিয়ে চলে গেছে খেয়াল এই করে নি। হঠাৎ প্রীতির ডাকে হুঁশ আসলো। প্রীতি দিকে তাকিয়ে বলল,

হ..হ্যা? কিছু বলছিস?

কোন জগতে আছো তুমি ভাইয়া? কখন থেকে ডাকছি। এখন এসব কাজ সব রাখো। যেয়ে রেডি হয়ে নেও এখন শপিং এ যাবো, আমাদের নিয়ে যাবে।

পারফি কেমন জানি ঘোরের মাঝে বার বার হারিয়ে যাচ্ছে তখন এর কথা ভাবতে। ঘোরের মাঝে পারফি আচ্ছা বলে রেডি হওয়ার জন্য উপরে চলে গেলো।

প্রীতিও যেতে নিবে তখন হঠাৎ হাতে টান পড়লো। পিছু ঘুরতে দেখতে পেলো শাফিন শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

শাফিনের এমন শয়তানি হাসি দেখে প্রীতি বুঝে গেলো এর মনে কিছু একটা চলছে। কিন্তু কি চলছে তা মাথায় আসলো না। অনেক ভাবনা চিন্তা করে শাফিনকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাফিন প্রীতিকে টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কোমর আঁকড়ে ধরলো।

শাফিনের স্পর্শে কেঁপে উঠল প্রীতি। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

ক..কি করছো সবাই আ..আছে ছাড়ো।

প্রীতির কথায় শাফিন ছাড়লো তো না এই উল্টো বাঁকা হেসে আরে কাছে টেনে নিয়ে আসলো।

প্রীতি কি করবে, না করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এতো মানুষ জনের সামনে মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিচ্ছে ভাবতে প্রীতি পালানোর ফন্দি আঁটতে লাগলো।

প্রীতিকে এমন পালানোর ফন্দি আঁটত দেখে শাফিন প্রীতির মুখে ফু দিয়ে সামনে আসা চুল গুলো পিছে সরিয়ে বলল,

পালানোর ফন্দি এটে লাভ নেই। আমি যতক্ষণ না ছাড়ছি ততক্ষণ যতই চেষ্টা করিস ছাড়া পাবি না। কোথায় একটু লজ্জা পেয়ে লজ্জা মাখা হাসবি তানা উল্টো পালানোর ফন্দি খুজছিস। এটা ভারী অন্যয় ইনোসেন্ট বান্দর।

একসপ্তাহ পর যার সাথে বিয়ে তার মুখে এখনো ইনোসেন্ট বান্দর ডাক শুনে প্রীতির মুখ হা হয়ে গেলো। এর সাথে ভালো করে কথা বলাটাই ভুল হয়েছে। প্রীতি এবার ক্ষেপে বলল,

তোমার সাথে ভালো করে কথা বলতে আসাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। ছাড়ো বলছি আমায় আর নাহলে…..

প্রীতিকে ক্ষেপতে দেখে যেনো মজা পেলো শাফিন। প্রীতিকে আরো ক্ষেপানোর জন্য বলল,

আর নাহলে কি? তোর সেই বিখ্যাত কুকুর রুপে ফিরে এসে কামড় দিয়ে পালাবি?

দরকার হলে তাই করবো এ বলে প্রীতি আচমকা শাফিনের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।

প্রীতি যে সত্যি কামড় বসিয়ে দিবে তা শাফিন ভুলেও ভাবে নাই। আচমকা প্রীতির কামড়ে ভড়কে গিয়ে হাত আলগা হতে প্রীতি এক ছুটে পালিয়ে গেলো।

শাফিন প্রীতির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট উল্টে ভাবলো এটা বউ নাকি ডাইনি। এ জীবন শেষ হয়ে যাবে এর রাক্ষসের মতো কামড় খেতে খেতেই।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩৬

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৬

বিকেলে ছোটরা সবাই ঘুরতে বের হবে সেই প্লান করা হলো। মূলত ঘুরতে যাওয়ার বায়নাটা প্রীতি এই ধরেছে। আবার যেহেতু সব কিছু ইয়ানার অপরিচিত তাই সবাই ভাবলো এখন বের হলে ইয়নার ও সব জায়গায় দেখা হবে ভালো লাগবে। তাই বড়রা শাফিনদের বললো ওদের নিয়ে ঘুরে আসতে।

বসার ঘরে এক সাথে পারফি, শাফিন আর রাফি বসে ছিলো তখন সবার এই কথা শুনে ওরা প্রীতি আর ইয়ানাকে রেডি হতে বললো। মেয়েদের এমনি ও রেডি হতে হতে কম করে হলেও এক ঘন্টা সময় ব্যয় করবে তাই আগে ভাগেই রেডি হতে বললো।

প্রীতি খুশি হয়ে ইয়ানাকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। উপরে এসে ইয়ানা ব্যাগ থেকে থ্রিপিস বের করতে নিবে তা দেখে প্রীতি বলে উঠলো,

এই না না থ্রিপিস পড়ে আজ যাবো না।

ইয়ানার ভ্রু কুঁচকে বলল,

তাহলে কি পড়ে যাবি?

ইয়ানার কথায় প্রীতি উৎসুক চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো দোস্ত চলনা শাড়ি পড়ে যাই।

প্রীতির কথায় ইয়ানার চোখ কপালে উঠে গেলো। চোখ বড় বড় করে বলল,

কি বলছিস? মাথা ঠিক আছে তোর?

একদম মাথা ঠিক আছে। চলনা জানু শাড়ি পড়ে যাই। যেখানে আজ ঘুড়তে যাবে সেখানে একটা পুরোনো রাজবাড়ী আছে। শুনেছি বহু যুগ আগে ওখানে রাজারা রাজত্ব করতো। জায়গাটা জোস দোস্ত চারেদিকে সবুজে ঘেরা তার মাঝ খানে বিশাল রাজবাড়ি। এতো সুন্দর একটা জায়গায় শাড়ি না পড়ে গেলে হয় বল? শাড়ি পড়ে যাবো ঝাক্কানাক্কা পিকচার তুলবো উফফ ভাবতেও ভালো লাগছে।

প্রীতির মুখে এতো এতো বর্ণনা শুনে ইয়ানার ও ইচ্ছে জাগলো শাড়ি পড়ার। কিন্তু শাড়িতো আনে নি তাই প্রীতি দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো দোস্ত শাড়ি তো আনা হয় নাই চল এর থেকে থ্রিপিস এই পড়ি।

ইয়ানার কথার শুনে প্রীতি এবার ভাবনায় পড়ে গেলো আসলেইতো শাড়ি আনা হয় নাই। পরক্ষণে কিছু একটা মনে পড়তে বললো সমস্যা নেই তোর মামি তো সব সময় শাড়ি পড়ে তাই তার কাছে অনেক শাড়ি আছে। তার থেকে দুটো নিয়ে আসছি তুই বস আমি এখনি নিয়ে আসছি এ বসে ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। সিঁড়ির
কাছে এসে উপর থেকে দেখতে পেলো নিচে সবার সাথে বসে রিমা বেগম গল্প করছে তাই আর কষ্ট করে নিচে না গিয়ে উপর থেকে ডাক দিলো মামি বলে।

কারো ডাকে সবাই এক সাথে উপরে তাকালো। উপরে তাকাতে চোখে পড়লো প্রীতিকে।
রিমা বেগম প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো আমায় ডাকছো?

প্রীতি সম্মতি দিয়ে বলল,

হ্যা তোমাকেই ডাকছি। একটু উপরে আসবে? দরকার ছিলো তোমাকে একটু।

রিমা বেগম মুচকি হেসে বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল আসছি। তারপর উপরে যেতে প্রীতির থেকে জানতে পারলো শাড়ি পড়বে তাই শাড়ি লাগবে।

রিমা মুচকি হেসে প্রীতিকে নিয়ে নিজের রুমে যেয়ে আলমারি খুলে দিয়ে বললো তোমার যেটা যেটা লাগবে এখান থেকে নেও।

প্রীতি সব শাড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে দুটো শাড়ি তুলে নিলো। দুটোই কালো কালার শাড়ি বেছে নিলো। ভাবলো আজ দুই বান্ধবী একি কালার শাড়ি পড়বে। শাড়ি বের করতে প্রীতি রিমা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো মামি তুমিতো অনেক ভালো শাড়ি পড়তে পারো। হাতে সময় কম চলো না একটু ইয়ানাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবে। আমি শাড়ি পড়তে পারি, ওই ইয়ানাটা আবার শাড়ি পড়তে পারে না।

রিমা বেগম সম্মতি দিয়ে প্রীতির সাথে যেতে লাগলো। প্রীতিকে তার বরাবর এই খুব ভালো লাগে। মেয়েটা অনেক চঞ্চল কিন্তু খুব সহজসরল। নিজের আগে অন্যের কথা চিন্তা করে। এই যে নিজের চেয়ে যেনো ইয়ানার জন্য ওর চিন্তা আরো বেশি। প্রীতির এই বাচ্চাসুলভ চঞ্চলতা খুবি ভালো লাগে।

প্রীতির সাথে এসে রিমা বেগম নিজ হাতে ইয়ানাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো। সাথে প্রীতিকেও হেল্প করলো পড়তে তারপরের কাজ গুলো ওরা নিজেরাই করে নিতে পারবে তাই তিনি নিচে চলে গেলো।

রিমা বেগম যেতে প্রীতি সাজতে বসে গেলো। বরাবর এই প্রীতির গর্জিয়াস সাজ পছন্দ তাই নিজে সেজে নিলো মন মতো।
আর ইয়ানাতো মোটেও সাজগোছ পছন্দ করে না। তাই বেশি সাজতে চাইলো না কিন্তু প্রীতি জোর করে ঠোঁটে গারো করে লিপস্টিপ দিয়ে দিলো। চোখে আইলেনার দিয়ে দিলো। ব্যস এতেই যেনো পরীর চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না।
প্রীতি ইয়ানার থুতনি ধরে বলল,

মাশা আল্লাহ তোকে এই অল্প সাজেও ঝাক্কাস পরীর মতো লাগছে। নে এবার চুল বেঁধে নে।

প্রীতির কথায় ইয়ানা মুচকি হেসে চুল বাঁধায় মন দিলো। লম্বা চুল ছেড়ে রাখতে ঝামেলা তাই চুলগুলো একটা কাঁকড়া দিয়ে উপরে বেঁধে নিলো। ইয়ানার দেখা দেখি প্রীতিও ওর চুল বেঁধে নিলো কারণ দুজন আজ একি রকম সাজবে। দুজনের সাজ কমপ্লিট হতে প্রীতি ফোন বের করে ফটাফট ইয়ানার সাথে দুটো সেলফি তুলে নিলো। এতো কষ্ট করে সেজেছে এখন ছবি না তুললে হয় নাকি।

তখন দরজার নক দিলো কেউ। প্রীতি যেয়ে দরজা খুলে দিয়ে পারফিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পারফিকে ভিতরে আসতে বলে ও চলে গেলো নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে হাত ব্যাগ নিতে।

পাফি রুমে ডুকতে এক ঝটকা খেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীকে দেখে। রুমে এসে যে এমন একটা ঝটকা খাবে কল্পনা ও করে নি। মনে পরে গেলো সেই প্রথম দিনের কথা যেদিন প্রথম ইয়ানাকে দেখেছিলো। সেদিন ও ঠিক এভাবেই থমকে গিয়েছিলো স্নিগ্ধ ফুলকে দেখে। আজো ঠিল একি ভাবে থমকে গেলো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বড় করে নিঃশ্বাস নিলো। আস্তে করে বলে ফেললো মাশা আল্লাহ।

এদিকে পারফিকে হঠাৎ রুমে আসতে দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। তারপর এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হার্টবিট বেড়ে গেলো। তখন শুনতে পেলো পারফির আস্তে করে বলা মাশা আল্লাহ শব্দটা। শব্দটা কানে যেতে মনের ভিতর বয়ে গেলো এক ভালোলাগার শিহরন।

পারফি নিজেকে সামলে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল, শার্ট-প্যান্ট বের করো রেডি হবো।

ইয়ানা বাধ্য মেয়ের মতো ব্যাগ থেকে পারফির জন্য শার্ট প্যান্ট বের করতে নিবে তখন ভাবতে লাগলো কোনটা নিবে।

এদিকে ইয়ানা পিছু ঘুরে ব্যাগের কাছে যাচ্ছিলো তখন পারফির চোখে পড়লো ইয়ানার উন্মুক্ত ঘাড়ে গারো কালো তিলটার দিকে। তিলটা দেখে শুকনো ঢোক গিললো পারফি।

ইয়ানা অনেক ভেবে চিন্তে নিজের শাড়ির সাথে মিলিয়ে কালো কালার শার্ট বের করলো। তারপর শার্ট-প্যান্ট নিয়ে এগিয়ে গেলো পারফির কাছে। পারফির কাছে এসে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে শার্ট প্যান্ট বাড়িয়ে দিলো।

পারফি শার্ট-প্যান্ট হাতে নিয়ে ইয়ানার দিকে গভীর দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে বলল,চুল গুলো ছেড়ে দেও।

পারফির বলা কথায় ইয়ানা আমতা আমতা করে বলল,

বড় চুল সামলাতে কষ্ট হয় তাই বেঁধে রেখেছি। কেনো কোনো সমস্যা এভাবে থাকলে?

পারফি কপালে কাছে এক হাত দিয়ে চুলকিয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে বললো চুল সামলানোর জন্য আমি আছি এ বলে আস্তে করে ইয়ানার মাথা থেকে কাঁকড়াটা খুলে ফেললো। সাথে সাথে ইয়ার সিল্কি চুল গুলো সারা পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো। এতে যেনো ইয়ানা সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো।

পারফি মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ ইয়ানাকে দেখলো তারপর সামনে আসা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো এখন সুন্দর লাগছে।

পারফির কথায় ইয়ানা মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।

ইয়ানার হাসি দেখে পারফি ও হাসলো তারপর ইয়ানাকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করার জন্য।

পারফি যেতে ইয়ানা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। তারপর প্রীতিকে নিয়ে আস্তে ধীরে নিচে নামলো।

নিচে আসতে সবাই মিলে এক সাথে বলে উঠলো মাশাআল্লাহ। সবাই অনেক প্রশংসা করলো দু’জনের। ওরা দুজন যেয়ে সোফায় বসলো। অপেক্ষা করতে লাগলো পারফিদের আসার।

শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নামছিলো শাফিন তখন সামনের সোফায় বসে থাকা প্রীতির দিকে চোখ পড়তে হাঁটার গতি কমে গেলো। থমকানো চোখে তাকালো প্রীতির হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে। এতো সময় প্রীতির উপর ভয়ংকর রকম রেগে থাকাটা বেমালুম ভুলেই গেলো। এতক্ষণের রাগটা পরিণত হলো মুগ্ধতায়। মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ ওই চঞ্চল মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর ধীর পায়ে নিচে নেমে এসে প্রীতি আর ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো চল।

প্রীতি আর ইয়ানা উঠে দাঁড়ালো শাফিনের সাথে যেতে নিলে সেখানে উপস্থিত হলো রাফি। রাফি এসে প্রীতি আর ইয়ানার দিকে একবার তাকিয়ে বললো বাহ্ দুজনকে একি লুকে ফাটাফাটি লাগছে।

রাফি কথাটা মজার ছলে বললেও শাফিনের রাগ লাগলো খুব। কেনো যেনো রাফিকে দেখলেই তরতর করে রাগ বারতে থাকে শাফিনের।
আপাতত কোনো রাগ দেখাতে চায় না তাই চুপচাপ সামনের দিকে পা বাড়ালো।
শাফিনের পিছু পিছু প্রীতি, ইয়ানা, রাফি ও গেলো। বাসার বাহিরে এসে দাঁড়াতে রাফি বাইক নিয়ে এসে প্রীতি আর ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে ওদের উদ্দেশ্যে বললো ইয়ানাতো পারফি ব্রোর সাথে যাবে। প্রীটি উঠে পর বাইকে।

প্রীতি রাগি লুকে তাকালো রাফির দিকে ওকে আবার ও প্রীটি ডাকার জন্য। রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগে শাফিন এসে প্রীতির হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যেতে যেতে রাফিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

ও বাইকে উঠতে ভয় পায় তাই গাড়িতে যাবে এ বলে প্রীতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে সামনে বসিয়ে দিলো। তারপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো তুই পিছে বোস পারফি আসছে এ বলে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।

ভাইয়ের কাজে মুখ টিপে হাসলো ইয়ানা। আসার পর থেকে খেয়াল করছে ওর ভাইটা রাফিকে নিয়ে প্রচুর জেলাস ফিল করছে। মুখে কিছু না বললেও ওর ভাই যে প্রীতির প্রতি ভয়ংকর ভাবে আসক্ত তা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে ইয়ানা। মনে মনে ঠিক করলো নানু বাসা থেকে যেয়ে সবার সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে। যেহেতু দুজন দুজনকে ভালোবাসে সেহেতু এখানে কিছু একটা তো এবার করা যায় এই। এতো দিন প্রীতির এক পাক্ষিক ভালোবাসা দেখে এসেছে আর আজ সিওর হয়ে গিয়েছে ওর ভাইটাও কতটা আসক্ত ওর জানের বেস্টুর উপরে।

এদিকে শাফিন গাড়িতে উঠতে প্রীতি অবাক হয়ে বলল,

আমি আবার কবে থেকে বাইকে উঠতে ভয় পাই?

প্রীতির কথায় শাফিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

খুব শখ না ওর সাথে বাইকে যাওয়ার?

শাফিনের দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলতে দেখে শুঁকনো ঢোক গিললো প্রীতি। তবুও হার মানলো না শাফিনকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বলল, আমি বাইকে যাবো।

এমনিতে শাফিনের মেজাজ চোটে ছিলো এবার প্রীতির কথায় মেজাজ আরো চোটে গেলো। এবার আর নিজেকে সামলাতে না পেরে দিক বেদিক ভুলে প্রীতির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে দাঁত কটমট করে বলল,

শাড়ি পড়েছিস কার জন্য? ওকে দেখানোর জন্য? আবার ওর সাথে বাইকে যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছিস। তোকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি প্রীতি আর একবার যদি ওর সাথে তোকে দেখি তাহলে আমি ভুলে যাবো ও আমার মামাতো ভাই।

শাফিনের কাজে প্রীতি ভড়কে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো। বুঝতে চাইলো শাফিনের চোখের ভাষা। ওই চোখের ভাষা বুঝে উঠতে ঠোটের কোনে সুপ্ত হাসির রেখা ফুটে উঠলো। তবুও নিজের কানে সত্যি কথাটা শুনতে চায় তাই প্রীতি আস্তে করে বলে উঠলো,

রাফি ভাইয়ার জন্য শাড়ি পড়ি বা তার বাইকে উঠে ঘুরতে যাই তাতে তোমার কি? বাই এনি চান্স তুমি আমাদের নিয়ে জেলাস নাকি?

প্রীতির কথায় শাফিন রেগে গিয়ে বলল,

জেলাস? হ্যা আমি জেলাস। অন্যের জন্য তুই কেনো শাড়ি পড়বি? তুই শাড়ি পড়বি আমার জন্য। একান্ত আমার জন্য বুঝতে পেরেছিস এ বলে এক ঝটকায় প্রীতিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে রাগে ফুঁসতে লাগলো।

এদিকে প্রীতির মনে ছেয়ে গেলো এক খুশি ঢেউ। অবশেষে, হ্যা অবশেষে এতো এতো অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে কাঙ্ক্ষিত কথাটা শুনতে পেলো। পুরো কথাটা না বললেও বুঝে নিলো এই অধিকারবোধের মানে। বুঝে নিলো মানুষটা কখনো প্রকাশ না করলেও ভয়ংকর ভাবে ওতে আসক্ত। কথাগুলো ভাবতেই এক ভালোলাগার শিহরণ বয়ে গেলো মন প্রাণ জুড়ে। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ফের চোখ খুলে তাকালো শাফিনের রাগে লাল হয়ে যাওয়া রক্তিম মুখশ্রীর দিকে। ওই মুখের দিকে তাকাতে ঠোঁট কামড়ে হাসলো প্রীতি।

শাফিনের হঠাৎ খেয়াল হলো ওর দিকে তাকিয়ে প্রীতি ঠোঁট কামড়ে হাসছে তা দেখে শাফিনের হুঁশ আসলো বুঝে গেলো এতক্ষণ প্রীতি ইচ্ছে করে ওকে রাগিয়েছে। এবার রাগি লুকে প্রীতির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন দেখলো পারফি আসছে তাই কথাগুলো গিলে ফেললো আর কিছু না বলে।

পারফি ইয়ানার কাছে এসে ইয়ানাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

কি হয়েছে ম্যাডাম গাড়িতে না উঠে এখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবা হচ্ছে?

পারফির কথা শুনে ইয়ানার ভাবনা থেকে বের হলো তারপর বেখেয়ালি ভাবে বলল,

হ…হ্যা? হুম চলো এ বলে সামনে এগোতে নিবে অমনি পা জোড়া থেমে গেলো কি বলেছে ভেবে। বেখেয়ালি ভাবে তুমি করে বলে ফেলেছে খেয়ালে আসতে একরাশ লজ্জা এসে হানা দিলো মন জুড়ে। আরো চোখে পারফির দিকে তাকাতে দেখলো ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে তা দেখে ইয়ানার লজ্জা যেনো আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। তারাতাড়ি পা ফেলে গাড়িতে যেয়ে উঠে বসলো আর কোনো দিকে না তাকিয়ে।

পারফি মিটিমিটি হেসে ইয়ানার পাশে উঠে বসলো। পারফি উঠতে শাফিন গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছুক্ষণ পর পারফি খেয়াল করলো আজ প্রীতি আর শাফিন ঝগড়া না করে দুজন এতো শান্ত হয়ে বসে আছে কি করে বিষয়টা যেনো ঠিক হজম হচ্ছে না পারফির তাই ইয়ানার দিকে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বললো সামনের দুটোর কি হয়েছে? আজ এতো চুপচাপ যে?

পারফির কথায় ইয়ানা একবার সামনে তাকালো দেখলো আসলেই প্রীতি আর শাফিন একদম চুপ। বিষয়টা আসলেই কারো চোখে পড়ার মতো কারণ এই দুজন এক জায়গায় হলে ভুলেও কোনোদিন চুপ থাকে না ঝগড়া লাগিয়েই থাকে। ইয়ানা একবার ভাবলো ওদের বিষয়টা নিয়ে পারফির সাথে আগে কথা বলবে ঢাকা ফিরে। তারপর পারফির প্রশ্নসূচক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল, হয়তো ঝগড়া করেছে দুজন তাই কারো সাথে কেউ কথা বলে না।

ইয়ানার কথাটা শুনে পারফি আর কথা বাড়ালো না কারণ ওদের কাজ এই এমন ঝগড়া করে কেউ কারে সাথে কথা বন্ধ বলবে না । ঝগড়া করতেও সময় লাগে না আবার মিশতেও সময় লাগে না।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩৫

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৫

গাড়ি এসে থামলো চারেদিকে সবুজে ঘেরা দোতলা একটা বাড়ির সামনে। সব কিছু মুগ্ধ চোখে ইয়ানা দেখতে লাগলো। সবুজে ঘেরা পরিবেশ বরাবর এই মুগ্ধ করে ইয়ানাকে।
চারপাশে দেখতে দেখতে ইয়ানা সবার সাথে আস্তে ধীরে গাড়ি থেকে নামলো।

ওদের আগেই বড়দের গাড়ি এসে পড়েছে। তারা সবাই নেমে ওদের জন্যই ওয়েট করছিলো সাথে দেখা মিললো অপরিচিত কতগুলো মুখের সাথে।
ইয়ানারা সবাই সেখানে যেতে শাহানা বেগম ইয়ানার হাত ধরে অপরিচিত মানুষগুলোর সামনে নিয়ে গেলো।
প্রথমে নিয়ে গেলো এক বৃদ্ধার কাছে। তার কাছে যেয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,

এটা তোর নানুমনি আর মা ও হলো আমাদের শ্রুতি।

ইয়ানা ছোট করে নানুমনিকে সালাম দিলো। বৃদ্ধা সালামের উত্তর দিয়ে ইয়ানার থুতনি ধরে বলল,

মা শা আল্লাহ আবার নানুভাই তো একদম আমার মেয়ের মতো হয়েছে। অনেক অনেক দোয়া রইলো নানুভাই তোমার জন্য।

ইয়ানার মুচকি হাসলো বৃদ্ধার কথায়। তারপর শাহানা বেগম আরেকটা ভদ্রলোকের সামনে নিয়ে গিয়ে বললো এটা হলো তোর মামা রিয়াজ আর ও হলো তোর মামি রিমা।

ইয়ানা দুজনের উদ্দেশ্যে সালাম দিলো। তারা সালাম এর উত্তর দিয়ে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। রিয়াজ আহমেদ তো এতো বছর পর নিজের বোনঝি কে পেয়ে আবেগে আপ্লূত হয়ে গেলো। চোখের কোটরে জমা হলো চিকচিক অশ্রু।

সবাই কথা বলছিলো তখন হঠাৎ করে পিছ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো হেই ইয়ানা পরী আমি রাফি তোমার একমাত্র মামাতো ভাই। এখানে কারো তো আমাকে চোখেই পরছে না তাই নিজের পরিচয় নিজেই দিয়ে দিলাম।

রাফির কথায় সবাই হেঁসে ফেললো। ইয়ানাও হাসিমুখে রাফির সাথে কুশল বিনিময় করলো।

সবার সাথে কুশল বিনিময় করা হলে রিমা বেগম বলে উঠলো সবাই কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি চলো চলো সবাই ভিতরে চলো।

রিমা বেগমের কথায় সবাই এক সাথে আস্তে ধীরে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো। ইয়ানা ওর নানুর হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলো, পাশাপাশি বড়রা সবাই এগোতে লাগলো।

তাদের পিছু প্রীতি যাচ্ছিলো তখন আচমকা রাফি প্রীতির মাথায় গাট্টা মেরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললো কিরে প্রীটি তোর ভাব বেরেছে নাকি? একবার জিজ্ঞেস ও করলি না কেমন আছি। ( রাফির সাথে প্রীতির সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুত্বের মতো তাই তুই করেই বলে।)

প্রীতি ক্ষেপে বলল রাফি ভাইয়া আসতে না আসতে আমার পিছে লেগে গেছো। আবার প্রীটি বলে ডাকছো? আমি একবার ক্ষেপে গেলে তোমার দশা বেহাল করবো বলে দিলাম।

কে শোনে কার কথা রাফি এক একটা কথা বলে প্রীতিকে ক্ষেপাতে লাগলো আর প্রীতি ক্ষেপে রাফির সাথে তর্ক জুড়ে দিলো।

প্রীতিদের পিছে পারফি আর শাফিন আসছিলো। শাফিন তীক্ষ্ণ চোখে প্রীতি আর রাফির কাজ দেখতে লাগলো। তখন দেখলো রাফি আবার কথায় মাঝে প্রীতি মাথায় গাট্টা মেরেছে তা দেখে শাফিনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। দাঁত কটমট করে প্রীতি আর রাফির দিকে তাকিয়ে রইলো।

এদিকে পারফি শাফিনের সাথে কথা বলছিলো তখন হঠাৎ শাফিনকে চুপ হয়ে যেতে দেখে ওর দিকে তাকালো। শাফিনের চোয়াল শক্ত করা মুখ দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো পারফির। শাফিনকে ধাক্কা দিয়ে বললো তোর আবার কি হয়েছে?

শাফিন দাঁত কটমট করে বললো কিছুনা।

শাফিনের হঠাৎ এরুপ আচরনের মানে পারফির মাথায় ঢুকলো না। ভ্রু কুঁচকে একবার শাফিনের দিকে তাকিয়ে তারপর ওর চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকাতে ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না চুপচাপ বাসায় প্রবেশ করে সবাই এক সাথে ড্রয়িংরুমের যেয়ে বসলো।

রিমা বেগম এসে সবাইকে হালকা নাস্তা এনে দিতে লাগলো। সবাই গল্পগুজব করতে করতে নাস্তা খেতে লাগলো তখন রাফি একটা আপেল হাতে নিয়ে খেতে খেতে প্রীতির পাশে ধিরিম করে যেয়ে বসলো।

প্রীতি প্রথম ভড়কে গেলেও পরক্ষণে রাফির সাথে গল্প জুড়ে দিলো।

এদিকে শাফিন নিজেকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে নিজেকে শান্ত করেছিলো এখন আবার ধপ করে মাথায় আগুন জ্বলে গেলো রাফি প্রীতির পাশে বসাতে আর প্রীতির এমন দাঁত কেলিয়ে রাফির সাথে গল্প করতে দেখে। ইচ্ছে হলো থাপড়িয়ে প্রীতির গাল লাল করে দিতে কিন্তু আপাতত নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে রেখেছে।

প্রীতির আর রাফির দিকে আগুন চোখে একবার তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো শাফিন। থমথমে স্বরে সবার উদ্দেশ্যে বললো আমি উপরে যাই মাথা ধরেছে জার্নি করে, একটু রেস্টের প্রয়োজন এ বলে আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে উপরে উঠে গেলো।

কেউ শাফিনের বিষয়টা নিয়ে না ভাবলেও পারফির মনে বেশ খটকা লাগলো। কখন থেকে আজব আজব বিহেভিয়ার করে চলেছে। এমনকি মাত্র মিথ্যে কথা বলে এখান থেকে উঠে ও গেলো তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে।

যেহেতু সবাই লম্বা এক জার্নি করে এসেছে তাই রিয়াজ আহমেদ সবাইকে বললো একটু রেস্ট নিতে।

পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার রেস্ট নেবে না বলে রিয়াজ আহমেদের সাথে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে।

পিয়াসা বেগম আর শাহানা বেগম ও বলল রেস্ট নেওয়ার প্রয়োজন নেই তাই তারা চলে গেলো রিমা বেগমকে কাজে সাহায্য করতে। এতো গুলো মানুষের জন্য রান্না বান্নার ব্যবস্থা করতে একা হাতে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ইয়ানা ওর নানুমনির সাথে গল্প করছিলো তখন নানুমনি বলে উঠলো,

যাও নানুভাই একটু রেস্ট নেও এখন, তোমাকে দেখে ক্লান্ত লাগছে।

আসলেই ইয়ানার একটু টায়ার্ড লাগছিলো। ছোটবেলা থেকে জার্নি করার অভ্যাস নেই। ঢাকা থেকে নানু বাড়ির দূরত্ব টা মোটামুটি দূরের পথ এই ছিলো তাই মাথা ধরেছে।

পারফি একবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বিষয়টা বুঝেতে পারলো তাই বসা থেকে উঠে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বলল,

চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি উপরে।

পারফির কথায় সম্মতি দিয়ে পারফির সাথে আস্তে ধীরে উপরে উঠে গেলো ইয়ানা।

এদিকে প্রীতির চোখমুখে নেই ক্লান্তি ছাপ। ও কোনো দিকে কোনো ধ্যান খেয়াল না দিয়ে রাফির সাথে রাজ্যর গল্প করতে লাগলো।

গল্পের মাঝে শাহানা বেগম এসে প্রীতির হাতে এক মগ কফি ধরিয়ে দিয়ে বললো যাতো মা কফিটা একটু শাফিনকে দিয়ে আয়। ছেলেটার মাথা ধরেছে নাকি একটু কফি খেলে ভালো লাগবে।

প্রীতি কফিটা হাতে নিয়ে রাফির উদ্দেশ্যে বললো তুমি একটু বসো ভাইয়া। আমি কফিটা দিয়ে আসছি এ বলে উপরে চলে গেলো।

এই বাসায় শাফিনের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো প্রীতি। রুমে যেয়ে দেখলো শাফিন মাথার চুল খামছে ধরে বসে আছে। তা দেখে প্রীতি কফিটা পাশের টেবিলে রেখে শাফিনের উদ্দেশ্যে বলল,

মাথা কি বেশি ধরেছে? কফিটা খেয়ে নেও ভালো লাগবে।

আচমকা প্রীতির কন্ঠস্বর শুনে শাফিনের জ্বলন্ত মাথা যেনো আরো জ্বলে উঠলো। আচমকা উঠে প্রীতিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

শাফিনের আচমকা আক্রমনে প্রীতি ভড়কে গেলো। মাথা তুলে শাফিনের দিকে তাকাতে কলিজা ছ্যাত করে উঠলো। শাফিনের চোখজোড়া অসম্ভব পরিমান লাল হয়ে আছে। বুঝতে পারলো না মাথা যন্ত্রণায় এমন লাগছে নাকি কোনো কারণে রাগ করে আছে। প্রীতি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললে উঠলো,

ত..তোমাকে এমন লাগছে কেনো? ক…কিছু কি হয়েছে?

প্রীতির কথায় যেনো শাফিন আরো রেগে গেলো। দেয়ালের সাথে প্রীতির চেপে রাখা হাত আরো জোরে চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলল,

রাফির সাথে এতো কিসের কথা তোর? খুব মজা লাগে না ওর সাথে কথা বলতে? তো যানা ওর সাথে কথা বল আমার এখানে কেনো আসছিস?

শাফিনের দাঁত কটমট করা কথায় প্রীতি চুপসে গেলো। রাফি ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি দেখে এতো রাগ? কিন্তু কেনো? তার মানে শাফিন ভাই জেলাস? কথাটা ভাবতে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো প্রীতির।

এদিকে প্রীতিকে এমন হাসতে দেখে শাফিন আরো ফুঁসে উঠে ধমক দিয়ে বললো তোকে হাসতে বলি নাই, আমার কথায় এন্সার দিতে বলেছি।

শাফিনের কান্ডে ঠোঁট কামড়ে হাসলো প্রীতি। তারপর শাফিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

আমি রাফি ভাইয়ার সাথে কথা বলি বা যাই করি তাতে তোমার কি সমস্যা?

শাফিন প্রীতির কথাটা এরিয়ে যেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো রাফির থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবি। নেক্সট টাইম যদি দেখি গায়ে পড়ে কথা বলছিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।

প্রীতি মুখ ভেঙচিয়ে বলল,

বয়েই গেছে আমার তোমার কথা শুনতে। আমি ১০০ বার কথা বলবো তাতে তোমার কি?

প্রীতির কথায় যেনো শাফিনের রাগ এবার তুঙ্গে উঠে গেলো। রাগের মাথায় এখন না চর বসিয়ে দেয়।

শাফিনকে এতো রেগে যেতে দেখে প্রীতির এবার কিছুটা ভায় লাগতে লাগলো। হাতে ব্যথা ও লাগছে যেখানে শাফিন নিজের শরীরের সব জোর দিয়ে চেপে ধরেছে। শেষের কথাটা যে বলা ঠিক হয় নাই ভাবতে প্রীতি ঢোক গিললো। ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,ছাড়ো লাগছে আমার।

প্রীতির কথা যেনো শাফিনের কানে গেলো না উল্টো আরো শক্ত করে হাত ধরলো। রাগে ফুঁসে উঠে কিছু বলতে নিবে তখন রাফির কন্ঠস্বর শুনতে পেলো যে রাফি ওর রুমেই আসছে। এই মুহূর্তে রাফির আসাতে শাফিনের রাগ মাথায় চরে বসলো কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে প্রীতিকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো।

শাফিন দূরে যেতে প্রীতি যেনো হাপ ছেড়ে বাচলো। বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। তখন প্রবেশ করলো রাফি। রাফি এসেই প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো,

কিরে পেত্নী আমাকে কখন থেকে বসিয়ে রেখে এখানে কি করছিস?

প্রীতি ঢোক গিলে একবার রাফির দিকে তাকালো আরেকবার শাফিনের দিকে তাকালো। শাফিন দাঁত কটমট করে ওর দিকেই তাকিয়ে তা দেখে প্রীতি শুঁকনো ঢোক গিলে কোনো রকম বলল,

ক..কিছুনা তোমরা গল্প করো আমি আসছি এ বলে প্রীতি রাফিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেলো।

প্রীতির এভাবে যাওয়ার মানে বুঝলো না রাফি। পরক্ষণে আর কিছু না ভেবে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো কি অবস্থা ব্রো? মাথা ব্যথা কমেছে?

শাফিন নিজেকে সামলে একটু হাসার চেষ্টা করে টেবিলের উপর থেকে কফিটা হাতে নিতে নিতে বলল, হুম এখন একটু ভালো লাগছে।

তারপর দুজন মিলে টুকটাক গল্প করতে লাগলো। শাফিনতো মনে মনে ফুঁসতে লাগলো রাফির উপরে। কেনো যেনো খুব রাগ লাগছে ওর উপরে। মনে মনে বললো শালা শুধু মামাতো ভাই বলে বেঁচে গেলি আর নাহলে তোর দফা রফা করে দিতাম।
——————————-
এদিকে ইয়ানাকে নিয়ে পারফি একটা রুমে আসলো। ইয়ানা ওয়াশরুমে যেয়ে চোখমুখ পানি দিয়ে আসলো। মাথা যন্ত্রণা কেমন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো ইয়ানা।

ইয়ানাকে চোখমুখ কুঁচকাতে দেখে পারফি ইয়ানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,

মাথা যন্ত্রণা কি বেশি করছে?

ইয়ানার ব্যথাতুর চোখে একবার পারফির দিকে তাকিয়ে বলল,

একটু করছে রেস্ট নিলে সেরে যাবে।

পারফি একবার ইয়ানার দিকে তাকি বেডের পাশে ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করে এনে ইয়ানার ভেজা মুখটা আলতো করে মুছে দিতে লাগলো।

পারফির কাজে প্রথমে চমকে গেলেও পরক্ষণে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো ইয়ানা। লোকটার এতো এতো কেয়ার করা যেনো মুগ্ধ করতে বাধ্য করে বারংবার।

পারফি চুপচাপ ইয়ানার মুখ মুছে দিয়ে তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রেখে ইয়ানার হাত ধরে বেডের কাছে নিয়ে গেলো।

ইয়ানা পারফির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতে পারফি ইয়ানাকে বলল এখন চুপচাপ একটা ঘুম দিবে। ঘুম দিলে ভালো লাগবে।

পারফির কথায় ইয়ানার বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পড়লো। আসলেই এখন একটু ঘুমের প্রয়োজন কিন্তু মাথা যন্ত্রণায় ঘুম আসছে না।

পারফি কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ ইয়ানার পাশে শুয়ে ইয়ানাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে আলতো করে হাত দিয়ে টিপে দিতে দিতে বললো এবার ঘুমাও।

পারফির কাজে মুচকি হাসলো ইয়ানা। তারপর গুটিশুটি হয়ে পারফির বুকে মুখ গুঁজে চোখ বুজলো। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।

ইয়ানা নিঃশ্বাস ভারী হতে বুঝতে পারলো ওর স্নিগ্ধ ফুল অবশেষে ঘুম পরেছে তাই এতক্ষণ আলতে করে মাথায় হাত বুলাতে থাকা হাতটা থামালো। তারপর ঘুমন্ত স্নিগ্ধ ফুলের মাথায় গভীর ভাবে চুমু খেয়ে শক্ত করে বুকের মাঝে আগলে নিলো। কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে আস্তে করে ইয়ানাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে বালিশের শুইয়ে দিয়ে ভালো করে শরীরে কম্বল জড়িয়ে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ ঘুমন্ত ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো শাফিনের উদ্দেশ্যে।

শাফিনের রুমে এসে দেখলো রাফি আর শাফিন টুকটাক কথা বলছে। পারফি এসেও যোগ দিলো সেই কথায়, সাথে ভ্রু কুঁচকে বার বার শাফিনের দিকে তাকাচ্ছে। মূলত শাফিনের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে। এখানের আসার পর থেকে কেমন আজগুবি বিহেভিয়ার করছে যা ঠিক হজম হচ্ছে না পারফির।

#চলবে?

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩৩+৩৪

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৩

শরিফ শিকারকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

পারফি সবার উৎসুক চাওনি দেখে শাফিনকে কিছু একটা ইশারা করতে শাফিন যেয়ে টিভি অন করলো।

সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে শাফিন আর পারফির কাজ দেখতে লাগলো।

টিভি অন করতে ভেসে উঠলো এনামুল খানের মুখশ্রী যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পারফিদের বিজনেস পার্টনার হিসেবে সবাই মোটামুটি চেনে এনামুল খানকে। তাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা কারো মাথায় আসলো না তখন টিভিতে বলতে থাকা একটা কন্ঠস্বরে ভেসে উঠতে লাগলো কিছু কথা যা শুনে সবাই চমকে উৎসুক চোখে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

টিভিতে একটা মেয়ে বলে উঠলো বিজনেসম্যান এনামুল খানের কালোবাজারি কারবার সব কিছু আজ ফাঁস হয়েছে। কালোবাজারি ব্যবসা, মানুষ পাচার আরো নানা ধরনের ক্রাইম কাজের সাথে লিপ্ত ছিলো এনামুল খান। সাথে আরো জানা গেলো রফিক খানের ছোট ভাই এই হলো এনামুল খান। রফিক খানকে অনেক বছর আগে এসব কালোবাজারি ব্যবসায়ের জন্য জেলে বন্দী করা হয়েছিলো কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেখান থেকে পালিয়ে পারি জমিয়েছিলো অন্য দেশে। এখন জানা গেলো রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলে এসব কালোবাজারি ব্যবসা সবার আগোচরে করে বেড়াচ্ছে। এনামুল খানকে ধরা গেলেও রফিক খানের কোনো খোঁজ মেলে নি। পুলিশ হন্য হয়ে খোজ চালাচ্ছে রফিক খানকে খুঁজে বের করার জন্য।
সাথে এরেস্ট করা হয়েছে এনামুল খানের একমাত্র কন্যা মিস এলিজাকে। ধারণা মতে মিস এলিজাও বাবা, চাচাদের সাথে এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

সাথে জানা গিয়েছে আরো কিছু গোপন সংবাদ। বিখ্যাত জার্নালিস্ট শরিফ শিকদারের মেয়েকে ছোট বেলা এই রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলেই অপহরণ করেছিলো। আজ নিজের মুখে শিকারক্তি দিয়েছে এনামুল খান এই কথা। জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার মিলে রফিক খানের পিতার কালোবাজারি কারবার ফাঁস করে দিয়েছিলো যার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফ শিকদারের মেয়েকে জন্মের পর অপহরণ করেছিলো। সাথে চৌধুরী আর শিকদার পরিবারে প্রতিনিয়ত অ্যাটাক ও করে গিয়েছে। সাথে এ ও শিকার করেছে শরিফ শিকদারের আসল মেয়ে আর কেউ না ইসহাক আহমেদের ছোট কন্যা ইয়ানা। যে বর্তমানে টপ বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরীর ওয়াইফ।

আরো জানা গিয়েছে দুই ভাই এর এই কালোবাজারি কারবার বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরী আর শাফিন শিকদার মিলে বের করেছে যার জন্য আইনি বিভাগ এই দুই বিজনেসম্যান এর উপরে কৃতজ্ঞ দেশের এতো বড় ক্রিমিনালকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

পুরো সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার। সাথে প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে তাকালো পারফি আর শাফিনের দিকে। তাদের ছেলেরা মিলে এতো বড় একটা কাজ করেছে তাদের কিছু না জানিয়ে ভাবতেই অবাক হচ্ছে।
সাথে সবাই খুশি ও হলো তাদের এতো বছরের শত্রুরা অবশেষে ধরা পড়েছে এখন শুধু রফিক খানকে ধরার পালা।

সবার হাসিখুশি মনটা আরো অনেক বেশি আনন্দের হয়ে উঠলো নিউজ গুলো শুনে।

শরিফ শিকদার নিজে ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আগামীকাল আমন্ত্রণ জানালো তার বাসায়। এই লোকটার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে সারাজীবন। কারণ এই লোকটা না থাকলে হয়তো তার আদরের মেয়েটাকে এমন অক্ষত অবস্থায় বুকের মাঝে ফিরে পেতো না।

সবাই এক সাথে হয়ে হাসিখুশিময় সন্ধ্যা পার করলো। আজ কারো মনে নেই কোনো চাপা কষ্ট। সবাই আজ খুব খুব খুশি। রাতের ডিনারও সবাই এক সাথে করলো। শাহানা বেগম তো মেয়েকে চোখে হারায়। এক সেকেন্ড এর জন্য নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে সাথে সবার কাছে আবদার ও করেছে আজ মা মেয়ে এক সাথে ঘুমাবে। সবার সম্মতিতে আজ ঠিক হলো শাহানা বেগম, পিয়াসা বেগম, ইয়ানা আর প্রীতি এক সাথে ঘুমাবে। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার এক সাথে ঘুমাবে। পারফি আর শাফিন এক সাথে ঘুমাবে।

সবার এই সিদ্ধান্ত শুনে পারফির মুখশ্রী হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। দুদিন ধরে এই ঝামেলার জন্য ওর বিড়াল ছানার বউকে একটুও কাছে পায় নি। সব রহস্য উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে যেতো অনেক সকালে আবার ফেরা ও হতো অনেক রাত করে যখন ইয়ানা থাকতো গভীর ঘুমে। তাই দুটো দিন ধরে বউ এর সাথে দুটো কথা বলার ও সুযোগ হয় নাই আর আজ নাকি পুরো বউ ছাড়া এই থাকা লাগবে ভাবতেই পারফির মুখ হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। কতো শত ইচ্ছে ছিলো আজ ওর একান্ত স্নিগ্ধ ফুলের এতো খুশিটা খুব কাছ থেকে দেখবে কিন্তু শাশুড়ী আম্মা সব বরবাদ করে দিলো। মনে মনে বলেমও ফেললো ও শাশুড়ি আম্মাজান আমার বউটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, আমার বউ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হলো না, মান ইজ্জত বলে ওতো একটা কথা আছে।

এদিকে পারফির ফাটা বেলুনের মতো মুখশ্রী দেখে শাফিন টিপ্পনী কাটে বললো,

কি হলো মাম্মা মুখ এমন ফাটা বেলুনের মতো করে রেখেছো কেনো?

পারফি চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফিনের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে শাফিন পারফিকে ক্ষ্যাপানোর জন্য গান ধরলো, আহা কি কষ্ট আকাশে বাতাসে।

শাফিনের গান শুনে পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যদি নিজের কপালে শনি ডাকতে না চাস তাহলে তোর ওই খাডাইশের মতে মুখ বন্ধ কর।

শাফিন শুনলেতো পারফির কথা। টিপ্পনী কেটে এক একটা কথা বলে পারফিকে ক্ষেপাতে লাগলো। এক পর্যায়ে পারফি আর শাফিন মিলে দিলো মারামারি লাগিয়ে। দুই বন্ধু মিলে মারামারি করতে করতে বেডের সব বালিশ কাথা নিচে ফেলে দিলো। এক পর্যায়ে দুজন ক্লান্ত হয়ে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ ছেয়ে গেলো দুজনের মাঝে নীরবতা।

এদিকে পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, প্রীতি আর ইয়ানা এক সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো। তারপর আস্তে ধীরে রাত বারতে সবাই শুয়ে পড়লো। ইয়ানা শাহানা বেগমকে ঝাপটে ধরে শুয়ে রইলো। মনের ভিতর এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। এতো বছর পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেনো দুই বছরের বাচ্চা হয়ে গেলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো।
চোখজোড়া যখন লেগে আসছিলো তখন হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো ফোনে। মেসেজের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো ইয়ানার। এই সময় মেসেজ আসায় বিরক্ত হলো বেশ। ইয়ানা বিরক্ত নিয়ে আবার চোখ বুজতে যাবে তখন আবার টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো।
এতো রাতে কে মেসেজ দিয়েছে ভেবে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন তুললো। ফোন হাতে নিতে ভেসে উঠলো নীলমনি নামে সেভ করা নাম্বারটা ভেসে উঠলো।

নীলমনি নামটা চোখে পড়তে বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অপেন করতে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
প্রথম মেসেজটা ছিলো…. বিড়াল ছানা
দ্বিতীয় মেসেজটা ছিলো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মেসেজ দুটি দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো। সাথে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। আজ দুটো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা নামটা শুনলো। বলা বাহুল্য মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা ডাকটা এই দুইদিন খুব মিস করেছিলো ইয়ানা। দুটি দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে রকতে কখন ঘুমিয়ে যেতো টের ও পেতো না। আবার সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতো অফিসে চলে গেছে। কেনো যেনো পারফির এতো ব্যস্ততা দেখে মনের ভিতর কোনো অজানা এক অভিমান ভির করেছিলো। পারফির এই মেসেজ দুটো দেখে যেনো তীর তীর করে আবার হানা দিলো মনের মাঝে অভিমান।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ফের আবার মেসেজ করলো পারফি। মেসেজটা ছিলো কিছু বলছো না কেনো? ঘুমিয়ে পড়েছো? নাকি জেগে আছো?

প্রিয় মানুষটার মেসেজ পেয়ে ইয়ানার চোখ ভোরে উঠলো। ছোট করে বললো, জেগে আছি।

ইয়ানার মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে পারফি রিপ্লাই করলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে একটু ছাঁদে আসতে পারবে বিড়াল ছানা?

মেসেজটা পড়ে ইয়ানার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো যেনো মনে হলে মেসেজটার মাঝে লুকিয়ে ছিলো গভীর আকুলতা। কেনো এতো আকুলতা?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়ানা কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, আবার মনে হলো উত্তর খুঁজে পেয়ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক চিতলে হাসি। দুদিনের জমে থাকা অভিমান মুহূর্তের মাঝে গলে পানি হয়ে গেলো। ফেলতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত মানুষটার আকুলতায় ভরা ছোট একটা অনুরোধ।

ঠোঁটের কোনো সুপ্ত হাসি নিয়ে রিপ্লাই করলো ১০ মিনিট পর আসছি।

ইয়ানার শেষের এসএমএসটা দেখে পাফির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাসি। মনে মনে ভেবেছিলো ওর স্নিগ্ধ ফুল ওর আকুলতা ফেলতে পারবে না আর হলোও তাই, তা দে বুকের ভিতর এক প্রশান্তি কাজ করলো।

অনেক সময় শুয়ে গুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম ধরা দেয় নাই চোখে। দুটো দিন স্নিগ্ধ ফুলের সাথে কথা না বলতে পেরে বুকের ভিতর এক হাহাকার লাগছিলো। আর আজ স্নিগ্ধ ফুলের সবচেয়ে খুশির একটা দিন। এই খুশিটা কাছ থেকে দেখার তিব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। কাছ থেকে অনুভব করতে চাইলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর এই সুখ টুকু।

ছাঁদে বসে প্রহর গুনতে লাগলো কখন আসবে ওর বিড়াল ছানা। কখন দেখা মিলবে ওই স্নিগ্ধ মুখশ্রী। শীতের রাত হওয়াতে বেশ ঠান্ডা লাগছে ছাঁদে তবুও সেই ঠান্ডাটা যেনো গায়ে লাগলো না। কোনো এক অজানা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন মস্তিষ্ক।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা গুটিগুটি পায়ে বিড়াল ছানায় ন্যায় এসে উপস্থিত হলো ছাঁদে। সেই আদুরে বিড়াল ছানা উপর চোখ পড়তে এক ভালোলাগায় টইটুম্বুর হয়ে গেলো বুকের বা পাশটায়।

ইয়ানা ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পারফির পাশে। ইয়ানার আজ যেনো মনটা একটু বেশি ফুরফুরে। হাস্যজ্জ্বল মুখে একবার তাকালো আকাশে গোল আকৃতির হলদে চাঁদটার দিকে। আজ যেনো চাঁদ টাকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মন ভালো থাকলে মনে হয় সব কিছুই এক অন্যরকম সুন্দর লাগায় ভোরে ওঠে। এই যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওকে দেখতে ব্যস্ত সেওটাও যেনো এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। সাথে আস্তে আস্তে ভীর করতে লাগলো লজ্জারা। রক্তিম হতে লাগলো গুলুমুলু গাল দুটো সাথে নুয়ে গেলো মাথা।। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রী আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৩

শরিফ শিকারকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

পারফি সবার উৎসুক চাওনি দেখে শাফিনকে কিছু একটা ইশারা করতে শাফিন যেয়ে টিভি অন করলো।

সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে শাফিন আর পারফির কাজ দেখতে লাগলো।

টিভি অন করতে ভেসে উঠলো এনামুল খানের মুখশ্রী যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পারফিদের বিজনেস পার্টনার হিসেবে সবাই মোটামুটি চেনে এনামুল খানকে। তাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা কারো মাথায় আসলো না তখন টিভিতে বলতে থাকা একটা কন্ঠস্বরে ভেসে উঠতে লাগলো কিছু কথা যা শুনে সবাই চমকে উৎসুক চোখে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

টিভিতে একটা মেয়ে বলে উঠলো বিজনেসম্যান এনামুল খানের কালোবাজারি কারবার সব কিছু আজ ফাঁস হয়েছে। কালোবাজারি ব্যবসা, মানুষ পাচার আরো নানা ধরনের ক্রাইম কাজের সাথে লিপ্ত ছিলো এনামুল খান। সাথে আরো জানা গেলো রফিক খানের ছোট ভাই এই হলো এনামুল খান। রফিক খানকে অনেক বছর আগে এসব কালোবাজারি ব্যবসায়ের জন্য জেলে বন্দী করা হয়েছিলো কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেখান থেকে পালিয়ে পারি জমিয়েছিলো অন্য দেশে। এখন জানা গেলো রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলে এসব কালোবাজারি ব্যবসা সবার আগোচরে করে বেড়াচ্ছে। এনামুল খানকে ধরা গেলেও রফিক খানের কোনো খোঁজ মেলে নি। পুলিশ হন্য হয়ে খোজ চালাচ্ছে রফিক খানকে খুঁজে বের করার জন্য।
সাথে এরেস্ট করা হয়েছে এনামুল খানের একমাত্র কন্যা মিস এলিজাকে। ধারণা মতে মিস এলিজাও বাবা, চাচাদের সাথে এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

সাথে জানা গিয়েছে আরো কিছু গোপন সংবাদ। বিখ্যাত জার্নালিস্ট শরিফ শিকদারের মেয়েকে ছোট বেলা এই রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলেই অপহরণ করেছিলো। আজ নিজের মুখে শিকারক্তি দিয়েছে এনামুল খান এই কথা। জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার মিলে রফিক খানের পিতার কালোবাজারি কারবার ফাঁস করে দিয়েছিলো যার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফ শিকদারের মেয়েকে জন্মের পর অপহরণ করেছিলো। সাথে চৌধুরী আর শিকদার পরিবারে প্রতিনিয়ত অ্যাটাক ও করে গিয়েছে। সাথে এ ও শিকার করেছে শরিফ শিকদারের আসল মেয়ে আর কেউ না ইসহাক আহমেদের ছোট কন্যা ইয়ানা। যে বর্তমানে টপ বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরীর ওয়াইফ।

আরো জানা গিয়েছে দুই ভাই এর এই কালোবাজারি কারবার বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরী আর শাফিন শিকদার মিলে বের করেছে যার জন্য আইনি বিভাগ এই দুই বিজনেসম্যান এর উপরে কৃতজ্ঞ দেশের এতো বড় ক্রিমিনালকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

পুরো সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার। সাথে প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে তাকালো পারফি আর শাফিনের দিকে। তাদের ছেলেরা মিলে এতো বড় একটা কাজ করেছে তাদের কিছু না জানিয়ে ভাবতেই অবাক হচ্ছে।
সাথে সবাই খুশি ও হলো তাদের এতো বছরের শত্রুরা অবশেষে ধরা পড়েছে এখন শুধু রফিক খানকে ধরার পালা।

সবার হাসিখুশি মনটা আরো অনেক বেশি আনন্দের হয়ে উঠলো নিউজ গুলো শুনে।

শরিফ শিকদার নিজে ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আগামীকাল আমন্ত্রণ জানালো তার বাসায়। এই লোকটার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে সারাজীবন। কারণ এই লোকটা না থাকলে হয়তো তার আদরের মেয়েটাকে এমন অক্ষত অবস্থায় বুকের মাঝে ফিরে পেতো না।

সবাই এক সাথে হয়ে হাসিখুশিময় সন্ধ্যা পার করলো। আজ কারো মনে নেই কোনো চাপা কষ্ট। সবাই আজ খুব খুব খুশি। রাতের ডিনারও সবাই এক সাথে করলো। শাহানা বেগম তো মেয়েকে চোখে হারায়। এক সেকেন্ড এর জন্য নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে সাথে সবার কাছে আবদার ও করেছে আজ মা মেয়ে এক সাথে ঘুমাবে। সবার সম্মতিতে আজ ঠিক হলো শাহানা বেগম, পিয়াসা বেগম, ইয়ানা আর প্রীতি এক সাথে ঘুমাবে। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার এক সাথে ঘুমাবে। পারফি আর শাফিন এক সাথে ঘুমাবে।

সবার এই সিদ্ধান্ত শুনে পারফির মুখশ্রী হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। দুদিন ধরে এই ঝামেলার জন্য ওর বিড়াল ছানার বউকে একটুও কাছে পায় নি। সব রহস্য উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে যেতো অনেক সকালে আবার ফেরা ও হতো অনেক রাত করে যখন ইয়ানা থাকতো গভীর ঘুমে। তাই দুটো দিন ধরে বউ এর সাথে দুটো কথা বলার ও সুযোগ হয় নাই আর আজ নাকি পুরো বউ ছাড়া এই থাকা লাগবে ভাবতেই পারফির মুখ হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। কতো শত ইচ্ছে ছিলো আজ ওর একান্ত স্নিগ্ধ ফুলের এতো খুশিটা খুব কাছ থেকে দেখবে কিন্তু শাশুড়ী আম্মা সব বরবাদ করে দিলো। মনে মনে বলেমও ফেললো ও শাশুড়ি আম্মাজান আমার বউটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, আমার বউ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হলো না, মান ইজ্জত বলে ওতো একটা কথা আছে।

এদিকে পারফির ফাটা বেলুনের মতো মুখশ্রী দেখে শাফিন টিপ্পনী কাটে বললো,

কি হলো মাম্মা মুখ এমন ফাটা বেলুনের মতো করে রেখেছো কেনো?

পারফি চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফিনের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে শাফিন পারফিকে ক্ষ্যাপানোর জন্য গান ধরলো, আহা কি কষ্ট আকাশে বাতাসে।

শাফিনের গান শুনে পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যদি নিজের কপালে শনি ডাকতে না চাস তাহলে তোর ওই খাডাইশের মতে মুখ বন্ধ কর।

শাফিন শুনলেতো পারফির কথা। টিপ্পনী কেটে এক একটা কথা বলে পারফিকে ক্ষেপাতে লাগলো। এক পর্যায়ে পারফি আর শাফিন মিলে দিলো মারামারি লাগিয়ে। দুই বন্ধু মিলে মারামারি করতে করতে বেডের সব বালিশ কাথা নিচে ফেলে দিলো। এক পর্যায়ে দুজন ক্লান্ত হয়ে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ ছেয়ে গেলো দুজনের মাঝে নীরবতা।

এদিকে পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, প্রীতি আর ইয়ানা এক সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো। তারপর আস্তে ধীরে রাত বারতে সবাই শুয়ে পড়লো। ইয়ানা শাহানা বেগমকে ঝাপটে ধরে শুয়ে রইলো। মনের ভিতর এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। এতো বছর পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেনো দুই বছরের বাচ্চা হয়ে গেলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো।
চোখজোড়া যখন লেগে আসছিলো তখন হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো ফোনে। মেসেজের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো ইয়ানার। এই সময় মেসেজ আসায় বিরক্ত হলো বেশ। ইয়ানা বিরক্ত নিয়ে আবার চোখ বুজতে যাবে তখন আবার টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো।
এতো রাতে কে মেসেজ দিয়েছে ভেবে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন তুললো। ফোন হাতে নিতে ভেসে উঠলো নীলমনি নামে সেভ করা নাম্বারটা ভেসে উঠলো।

নীলমনি নামটা চোখে পড়তে বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অপেন করতে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
প্রথম মেসেজটা ছিলো…. বিড়াল ছানা
দ্বিতীয় মেসেজটা ছিলো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মেসেজ দুটি দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো। সাথে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। আজ দুটো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা নামটা শুনলো। বলা বাহুল্য মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা ডাকটা এই দুইদিন খুব মিস করেছিলো ইয়ানা। দুটি দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে রকতে কখন ঘুমিয়ে যেতো টের ও পেতো না। আবার সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতো অফিসে চলে গেছে। কেনো যেনো পারফির এতো ব্যস্ততা দেখে মনের ভিতর কোনো অজানা এক অভিমান ভির করেছিলো। পারফির এই মেসেজ দুটো দেখে যেনো তীর তীর করে আবার হানা দিলো মনের মাঝে অভিমান।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ফের আবার মেসেজ করলো পারফি। মেসেজটা ছিলো কিছু বলছো না কেনো? ঘুমিয়ে পড়েছো? নাকি জেগে আছো?

প্রিয় মানুষটার মেসেজ পেয়ে ইয়ানার চোখ ভোরে উঠলো। ছোট করে বললো, জেগে আছি।

ইয়ানার মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে পারফি রিপ্লাই করলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে একটু ছাঁদে আসতে পারবে বিড়াল ছানা?

মেসেজটা পড়ে ইয়ানার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো যেনো মনে হলে মেসেজটার মাঝে লুকিয়ে ছিলো গভীর আকুলতা। কেনো এতো আকুলতা?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়ানা কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, আবার মনে হলো উত্তর খুঁজে পেয়ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক চিতলে হাসি। দুদিনের জমে থাকা অভিমান মুহূর্তের মাঝে গলে পানি হয়ে গেলো। ফেলতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত মানুষটার আকুলতায় ভরা ছোট একটা অনুরোধ।

ঠোঁটের কোনো সুপ্ত হাসি নিয়ে রিপ্লাই করলো ১০ মিনিট পর আসছি।

ইয়ানার শেষের এসএমএসটা দেখে পাফির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাসি। মনে মনে ভেবেছিলো ওর স্নিগ্ধ ফুল ওর আকুলতা ফেলতে পারবে না আর হলোও তাই, তা দে বুকের ভিতর এক প্রশান্তি কাজ করলো।

অনেক সময় শুয়ে গুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম ধরা দেয় নাই চোখে। দুটো দিন স্নিগ্ধ ফুলের সাথে কথা না বলতে পেরে বুকের ভিতর এক হাহাকার লাগছিলো। আর আজ স্নিগ্ধ ফুলের সবচেয়ে খুশির একটা দিন। এই খুশিটা কাছ থেকে দেখার তিব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। কাছ থেকে অনুভব করতে চাইলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর এই সুখ টুকু।

ছাঁদে বসে প্রহর গুনতে লাগলো কখন আসবে ওর বিড়াল ছানা। কখন দেখা মিলবে ওই স্নিগ্ধ মুখশ্রী। শীতের রাত হওয়াতে বেশ ঠান্ডা লাগছে ছাঁদে তবুও সেই ঠান্ডাটা যেনো গায়ে লাগলো না। কোনো এক অজানা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন মস্তিষ্ক।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা গুটিগুটি পায়ে বিড়াল ছানায় ন্যায় এসে উপস্থিত হলো ছাঁদে। সেই আদুরে বিড়াল ছানা উপর চোখ পড়তে এক ভালোলাগায় টইটুম্বুর হয়ে গেলো বুকের বা পাশটায়।

ইয়ানা ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পারফির পাশে। ইয়ানার আজ যেনো মনটা একটু বেশি ফুরফুরে। হাস্যজ্জ্বল মুখে একবার তাকালো আকাশে গোল আকৃতির হলদে চাঁদটার দিকে। আজ যেনো চাঁদ টাকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মন ভালো থাকলে মনে হয় সব কিছুই এক অন্যরকম সুন্দর লাগায় ভোরে ওঠে। এই যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওকে দেখতে ব্যস্ত সেওটাও যেনো এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। সাথে আস্তে আস্তে ভীর করতে লাগলো লজ্জারা। রক্তিম হতে লাগলো গুলুমুলু গাল দুটো সাথে নুয়ে গেলো মাথা।। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রী আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৪

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রীতে আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বাম পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

পারফি ঠোঁট কামড়ে তাকালো ইয়ানার দিকে। নিজেকে কিছু সময় নিয়ে ধাতস্থ করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,

কি ব্যপার ম্যাডাম আজ একটু বেশি খুশি মনে হচ্ছে।

পারফির কথায় ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখে আরো হাসি ফুটে উঠলো। আজ যেনো সব কিছুতেই হাসি উপচে পড়ছে মন জুড়ে।

কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে ইয়ানা প্রশ্ন ছুড়লো,

এতো রাতে এখানে ডাকলেন যে? কোনো প্রয়োজন?

ইয়ানার কথায় পারফি ইয়ানার কিছুটা কাছে চলে আসলো। ইয়ানার স্নিগ্ধ মুখপানে গভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘোর লাগা কন্ঠে বললে উঠলো হুম প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন।

এতো রাতে পারফির কি প্রয়োজন পড়লো যার জন্য ছাঁদে নিয়ে আসলো মাথায় আসলো না ইয়ানার। সাথে মনের ভিতর হানা দিলো দুদিনের জরো হওয়া অভিমান গুলো। তার মানে এখানে প্রয়োজনে ডেকেছে অন্য কোনো কারণে না ভাবতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো একটু। মন খারাপ নিয়ে ছোট করে বলল কি প্রয়োজন।

ইয়ানার হঠাৎ মন খারাপটা সূক্ষ্ম ভাবে পরখ করলো পারফি। বুঝে নিলো বউয়ের অভিমানী দৃষ্টি। আজকাল যে বউ অভিমান ও করে ভাবতেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো পারফি। এক হত বাড়িয়ে আলতো করে ইয়ানার এক গালে হাত রাখলো।

হঠাৎ পারফির ঠান্ডা হাত গাল স্পর্শ করতে ইয়ানা কেঁপে উঠলো।

পারফি ইয়ানর গালে হাত রেখে ইয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে উঠলো,

তোমাকে প্রয়োজন……।

তোমাকে প্রয়োজন কথাটা শুনে এক ঝটকায় ইয়ানা মাথা তুলে তাকালো পারফির দিকে। বুকের ভিতর টিপটিপ করতে লাগলো। খুব সামান্য একটা কথা তবুও এক অসামান্য অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো মন জুড়ে।

পারফি হঠাৎ ইয়ানাকে আলতো করে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে ঝাপটে ধরে ফের বললো,

খুব মিস করছিলাম বউজান তোমাকে। ঘুম আছিলো না এই বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিড়াল ছানাটাকে ছাড়া।

পারফির কাজে ইয়ানা প্রথমের ভড়কে গেলেও পরক্ষণে নিশ্চুপে লেপ্টে রইলো সব চেয়ে ভরসাময় স্থান বুক জুড়ে। সাথে ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মনপ্রাণ। পারফির মুখে এই প্রথম বউজান নামটা শুনে বুকের ভিতর ধুকপুকনি শুরু হয়ে গেলো। কেনো যেনো পারফির মুখে এই নামটা কতোটা মুধুমিশ্রিত ছিলো বলে বোঝানো যাবে না। আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো ইয়ানা। পেরিয়ে গেলো দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ নীরবতা।

নীরবতা ভেঙে পারফি ইয়ানাকে ছেড়ে ইয়ানার সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে তাকালো ইশানার স্নিগ্ধ মুখশ্রীর দিকে। তারপর ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে দোনলার উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসলো। ইয়ানাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ইয়ানার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে ধীর গলায় বললো শীত লাগছে বেশি?

ইয়ানা ছোট করে বললো একটু লাগছে তবে সমস্যা নেই।

তাহলে থাকি এখানে আরো কিছু সময়?আকুলতায় জর্জরিত হয়ে বললো পারফি।

পারফির এই আকুলতা ভরা কন্ঠস্বরে শুনে ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

ইয়ানার সম্মতি পেয়ে পারফি অমায়িক এক হাসি উপহার দিলো তারপর ফট করে ইয়ানার কোলে মাথা রেখে দোলনায় শুয়ে পড়লো।

পারফির হঠাৎ এমন কাজে ইয়ানার পুরো শরীর কেঁপে
উঠলো মৃদু।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইয়ানার এক হাত মাথার উপর নিয়ে রেখে বললো,

বিড়াল ছানা চুল গুলো একটু টেনে দেও। দুদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না খুব মাথা ধরেছে।

পারফির কথায় ইয়ানা তাকালো পারফির মুখ পানে। আসলেই মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মায়া হলো খুব ইয়ানার। তাই আলতো করে পারফি চুল গুলো টেনে দিতে লাগলো।

পারফি আবেশে চোখ বুজে নিলো। এভাবে কেটে গেলো অনেকটা সময়। পারফি সেই যে চোখ বুজেছে আর চোখ খোলে নি তা দেখে ইয়ানা মনে মনে ভাবলো লোকটা ঘুমিয়ে পড়লো নাকি। এদিকে ছাঁদের হীমশীতল হাওয়ায় এবার কিছুটা ঠান্ডা ও লাগছে। ক্ষনে ক্ষনে ঠান্ডায় কেঁপে উঠছে ঠোঁট জোড়া। সাথে মনের মাঝে উঁকি দিলো এখন ফিরে যাওয়া উচিত। মায়েদের ঘুম ভেঙে গেলে পাশে না পেলে দুশ্চিন্তা করবে সাথে লজ্জাকর পরিস্থিতি ও তৈরি হয়ে যাবে। অন্তত লজ্জাকার পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য হলেও এখান থেকে এখন যাওয়া উচিত তাই ইয়ানার আলতো করে পারফি গালে মৃদু চাপর মেরে ডাক দিলো শুনছেন…..

ইয়ানার ডাকে টিপটিপ করে চোখ খুললো পারফি। ইয়ানার নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখজোড়া লেগে আসছিলো। ইয়ানার ডাকে ঘুমের রেশটা কেটে গেলো। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো ইয়ানার দিকে কেনো ডেকেছে।

পারফির প্রশ্নসূচক দৃষ্টি দেখে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত বলতে বলতে ইয়ানার ঠোঁট জোড়া ফের মৃদু কাপতে লগলো ঠান্ডায়।

পারফির চোখজোড়া আঁটকে গেলো ইয়ানার কম্পিত ঠোঁট জোড়ায়। শুকনো ঢোক গিললো পারফি তা দেখে। নিজেকে সামলাতে চেয়েও বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। কেমন এক ঘোরের মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলো। ঘোরের মাঝে উঠে বসলো পারাফি। তাকিয়ে রইলো ইয়ানার মৃদু কম্পিত ঠোঁট জোড়ার দিকে।

এদিকে পারফির এমন ঘোলাটে দৃষ্টি দেখে ইয়ানা শিউরে উঠলো। বুকের ভিতর ধুকপুকানির সাথে ঠোঁট জোড়া আরো কেঁপে উঠলো। ধীরে ধীরে আবার হানা দিলো মনের মাঝে একরাশ লজ্জারা। এখান থেকে পালানোর জন্য যেই উঠে দৌড় দিতে নিবে অমনি হাতে টান পড়লো সাথে সাথে ধড়াস করে উঠলো বুকের ভিতর। ঠান্ডায় হাত-পা আর শীতল হয়ে যেতে লাগলো।

তখন পারফি ও ইয়ানার সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে চলে গেলো ইয়ানার অনেকটা কাছে তা দেখে ইয়ানা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো ক…কি কর…
বাকি কথা বলার আগে অনুভব করলো পুরুষালি উষ্ণ অধরের আলতো স্পর্শ নিজের অধরে। এই উষ্ণ স্পর্শটুকু অনুভব করতে ঝংকার দিয়ে উঠলো শরীর। অবশ হয়ে আসলো পুরো শরীর। নিজের ভারসাম্য বজায় রাখা যেনো খুব কষ্টকর হয়ে উঠলো। মৃদু কম্পিত শরীর এবার ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠলো। সাথে লজ্জায় নুইয়ে পড়ে লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।

ইয়ানার অবস্থা বুঝে পারফি আস্তে করে সরে আসলো। কেটে গেলো ঘোর, ঘোরের মাঝে কি করে ফেলেছে বুঝে উঠতে ইয়ানার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে চোখে পড়লো লজ্জায় হাসফাস করতে থাকা ইয়নার রক্তিম মুখশ্রী। ইয়ানার রক্তিম মুখশ্রী দেখে যেনো পারফি বেসামাল হয়ে উঠছে। এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোল হারাবে বুঝতে পারফি ছোট করে বললো ভিতরে যাও।

এতক্ষণ যেনো ইয়ানার দম আটকে ছিলো। লজ্জায় ইচ্ছে হলো মাটির সাথে মিশে যেতে। তখন পারফির কথায় এক ছুটে নিচে যেয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আরেকটু হলে যেনো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো। ইয়ানা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে আস্তে করে যেয়ে শাহানা বেগমের পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুমাতে পারলো না। তখন এর কথা মনে পড়তে বার বার লজ্জা মিইয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ইয়ানার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পারফি ও নিচে চলে গেলো। ঠোঁটে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। এ যেনো এক অমায়িক তৃপ্তি। রুমে এসে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলে চোখ বুজলো। চোখ বুজতে চোখের সামনে ফুটে উঠলো ইয়ানার লজ্জামিশ্রিত রক্তিম মুখশ্রী। এভাবে কল্পনা ঝল্পনা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
————–

সেদিনের পর কেটে গেলো দুদিন। এই দুদিন ধরে ইয়ানা পারফির থেকে পালাই পালাই করে বেড়িয়েছে। সেদিনের পর থেকে লজ্জায় পারফির সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না৷ সব সময় পালাই পালাই করে বেড়ায়।

ইয়ানার এমন পালাই পলাই অবস্থা দেখে পারফি প্রথম দিন কিছু না বললেও আজ আর চুপ থাকতে পারলো না। সামন্য একটা চুমু এইতো খেয়েছি তাই বলে এমন পালাই পালাই করা লাগবে?

এই যে ইয়ানা ব্যাগ গোছাচ্ছে। আজ সবাই মিলে ইয়ানাকে ওর নানু বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যাবে। তাই ব্যাগ গোছাচ্ছে, আর ইয়ানা এই ব্যাগ গোচ্ছে না যেনো কোনো রকম জামাকাপড় ব্যাগের ভিতরে রেখে এখান থেকে পালানোর ধান্দা করছে।

ইয়ানার কাজ নিশ্চুপে পারফি এতক্ষণ দেখছিলো। এবার আর এই পালাই পালাই মেনে নিতে না পেরে ইয়ানার হাত ক্ষপ করে ধরে ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

কি সমস্যা তেমার? এমন পালাই পালাই করছো কেনো আমার থেকে?

একেতে লজ্জায় পারফির সামনে আসতে পারে না তার উপর পারফির এমন ক্ষপ করে ধরে ওই কথা জিজ্ঞেস করাতে ইয়ানার অবস্থা যেনো করুন। আমতা আমতা করে বলল,

ছাড়ুন অসভ্য লোক কোথাকার সেদিন রাতে কি করেছিলেন আমার সাথে…।

ইয়ানার কথায় পারফির মাথায় যেনে আকাশ ভেঙে পড়লো। সামন্য একটা কিস এর জন্য এই মেয়ে ওকে এভয়েড করে চলছে। এতো লজ্জা কোথা থেকে এই মেয়ে আমদানি করে আনে তাই বুঝে না পারফি। ইয়নার লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখে পারফির গম্ভীর মুখে দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসলো। দুদিন খুব জ্বালিয়েছে মেয়েটা এবার এর একটা বিহিত করতেই হবে। তাই ঠোঁট কামড়ে হেসে পারফি বলল,

কি করেছি আমি সেদিন রাতে?

পারফির এবারের কথায় ইয়ানা আরো হাসফাস করতে লাগলো। কি জবাব দিবে খুঁজে পেলো তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

আর তা দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে পারফি বলে উঠলো,

সামান্য একটা কিস এর জন্য এমন পালাই পালাই করছো। এমন হলে এ জীবনে আমার আর বাবা ডাক শোনা লাগবে না। আমার সাথে এমন যদি আর একবার পালাই পালাই করো তাহলে কিন্তু বাবা হওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলবো।

পারফির কথায় ইয়ানার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো যেনো। ততক্ষণাত পারফির বুকে এক হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো ছাড়ুন অসভ্য ঠোঁট কাটা লোক একটা।

পারফি ইয়নার কাজে ঠোঁট কামড়ে হেসে ফের কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়ানা পারফির মুখের উপর এক হাত দিয়ে কথা বলা আঁটকে দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো চুপ করুন প্লিজ।

ইয়ানার কাজে এবার শব্দ করে হেসে ফেললো পারফি। মুখের উপর থেকে ইয়ানার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,

ওঁকে চুপ করলাম বাট আমার সাথে এভাবে পালাই পালাই করতে পারবে না মনে থাকবে?

ইয়ানা চটজলদি মাথা উপর নিচ নামিয়ে সম্মতি দিলো যে মনে থাকবে।

পারফি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বলল গুড। এবাট যাও ভালো করে ব্যাগ গোছাও।

ইয়ানা স্মিত হেসে ব্যাগ গুছানোতে মন দিলো।

ব্যাগ গুছানো হলে রেডি হয়ে পারফির সাথে নিচে নামলো ইয়ানা।
সবার রেডি হওয়া হয়ে গিয়েছে তাই সবাই এক সাথে বের হলো। বড়রা এক গাড়িতে উঠলো আর পারফি,শাফিন, ইয়ানা, প্রীতি এক গাড়িতে উঠে বসলো। সবাই ঠিকঠাক ভাবে গাড়িতে উঠতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
ড্রাইভ করছে পারফি আর পাশে শাফিন বসা। পিছে ইয়ানা আর প্রীতি বসলো।
চারজন মিলে টুকটাক গল্প জুড়ে দিলো। নানু বাসায় কি কি আছে না আছে তা শুনাতে লাগলো ইয়ানাকে কারণ এর আগেও অনেক বার শাফিনদের নানু বাসায় প্রীতিরা গিয়েছিলো তাই সব কিছুই সবার মোটামুটি পরিচিত শুধু ইয়ানার বাদে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩১+৩২

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩১

শাফিন বসে আছে পারফির কেবিনে। পারফি ওর দিকে দাঁত কটমট করে তাকাতে শাফিন এক নিঃশ্বাস বলে উঠলো,

দেখ ভাই আমার কোনো দোষ নেই। আমি সকাল সকাল অফিসে আসছিলাম কিন্তু তোর খাডাইশ (খাটাশ) বোন এর জন্য দেরি হয়ে গেছে।
আজ কতো কষ্ট করে একদম টাইম মতো ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে আসছিলাম তখন তোর খাডাইশ বোন আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে যার জন্য দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার কোনো দোষ নেই, আমি আজ ওই বাঁদরের সাথে ঝগড়াও লাগাই নাই। ওই বাঁদর ইচ্ছে করে আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে যাতে অফিসে আসতে লেট করে তোর থেকে বকা খাই।

শাফিনের কথায় পারফি হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো তারপর ফের শাফিনের দিকে তাকিয়ে হাতটা শাফিনের দিকে ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখাতে দেখাতে বললো কয়টা বাজে?

এতোগুলো কথার পৃষ্ঠে পারফির এই কথা শুনে শাফিন বেকুব বনে গেলো। পারফির দেখানো হাতের দিকে তাকাতে তাকাতে বললো,

এমা তুই ঘড়ির টাইম বুঝিস না? ছিঃ ছিঃ ছিঃ এই বয়সে এগুলো দেখা লাগলো? এখনো ঘড়ির টাইম বুঝিস না আর কিনা সেই ঘড়ি হাতে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস ছিহ্ ছিহ্।

শাফিনের কথায় পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

তোকে এতো পক পক করতে বলি নাই টাইম বলতে বলেছি।

পারফির কথায় শাফিন এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো ১০,৫৬

তোকে অফিসে আসতে বলেছিলাম কয়টা বাজে?

পারফির এবারের কথায় শাফিন শুকনো ঢোক গিলে বললো ৮ টায়।

বাসা থেকে বের হয়েছিলি কয়টায়?

৯ ট.. এই না না ৭:৩০ সে। সত্যি কথা মুখ ফস্কে বলে দিতে নিয়েও তারাতাড়ি কথা ঘুড়িয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে দিলো শাফিন।

শাফিনের কথায় পারফি এবার বললো যেহেতু ৭:৩০ সে বেড়িয়েছিস তাহলে নিশ্চিয়ই ৭:৩০ কি ৩৫ সের দিকে তোকে প্রীতি ভিজিয়ে দিয়েছে রাইট?

শাফিন ঢোক গিলে বললে হ..হ্যা।

৭:৩০ সে তোকে প্রীতি ভিজিয়ে দিয়েছে আর এখন বাজে ১০:৫৬ তাহলে ৩ ঘন্টা ২৪ মিনিট লেট। তোকে ৭:৩০ সে ভিজালে তোর ফের চেঞ্জ করতে হায়েষ্ট ৩০ মিনিট এই লাগলো? তাহলে চেঞ্জ করে ৮ টা বাজে তুই বাসা থেকে বের হলি বাকি রইলো ৩ ঘন্টা। আমার জানা মতে অফিসে পৌঁছাতে ৩০ মিনিট এই এনাফ। তাহলে বাকি ২:৩০ মিনিট কোথায় গেলো? এখন নিশ্চয়ই বলবি না হেঁটে এসেছিস তাই লেট হয়েছে। তাহলে বলবো বাসা থেকে অফিসে হেঁটে আসলেও ১ ঘন্টার ভিতরে পৌঁছে যাওয়া যায় তাহলে বাকি ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট কোথায় গেলো?

পারফির কথায় শাফিনের মাথা ঘুরে উঠলো। এমন কাঠ কাঠ টাইম সেট করে বলাতে শুকনো ঢোক গিললো। মিথ্যে কথা বলেও রক্ষা হলো না ধূর্ত শিয়ালের কাছে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েই গেলো। এতক্ষণ মাথায় এই ছিলো না কার কাছে মিথ্যে বলছে। ধূর্ত শিয়ালের সাথে আদো পাঙ্গা লড়া যায়? এখন কি বলে এখান থেকে পার পাবে ভাবতেই শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো শাফিন।

পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,

যা হয়েছে সব নিজ থেকে বলবি নাকি অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে?

শাফিন আর কোনো উপায় না পেয়ে মুখ গোমড়া করে সকাল থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বললো।

সব শুনে পারফি বললো এবার নিজেই বলে দে তোকে কি শাস্তি দিবো।

পারফির কথায় শাফিন ঢোক গিলে বললো,

তুই না আমার জানের দোস্ত আমর ভাই। এবারের মতো ছেড়ে দে প্রমিজ আর জীবনেও লেট করবো না। দরকার হলে বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসবো যাতে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিয়ে দেও তবুও আর দেরি করবো না।

শাফিনের শেষ কথায় পারফি কি রিয়াকশন দিবে ঠিক বুঝে উঠলো না। এই বাঁচাল ছেলের কথায় হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার জন্য নাকি বিয়ে করে ঘরে বউ আনবে এটাও কি মানা যায়?
পারফি নিজেকে সামলে বললো শালা জীবনেও তুই সোজা হবি না।

শাফিন ৩২ টা দাঁত বের করে বোকা হেঁসে বললো আজকালকার যুগে সোজা মানুষের ভাত নেই।

শাফিনের কথায় পারফি হতাশ শ্বাস ফেললো। এতো আজগুবি কথা ও কোথায় খুঁজে পায় তাই বুঝে না।
পারফি চোখ রাঙিয়ে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো

গাধার মতো না হেসে এবার মুখ বন্ধ কর। তোর মুখ বন্ধ করলে কাজের কথায় আসতে পারি।

শাফিন ঠোঁট উল্টে বললো

ভালো করে ওতো কথাটা বলতি পারতি। শেষে কিনা গাধা বানিয়ে দিলি? জীবনেও বউ পাবি না তুই শালা আমি অভিশাপ দিলাম।

শাফিনের কথায় পারফি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

তোর ননস্টপ বকবক বন্ধ করবি নাকি লেট করে আসার শাস্তির ব্যবস্থা করবো?

শাফিন ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো এই যে একদম চুপ, আর একটা কথাও বলবো না।

গুড এবার শোন সেই ৫ জনের লিডার ১ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে।

শাফিন এবার সিরিয়াস হয়ে বললো কি বলিস? কোথায় খুঁজে পাওয়া গেছে আর কেথায় আছে এখন?

ঢাকার বাহিরে ঘাপটি মেরে ছিলো এতদিন এখন আমাদের আস্তানায় আছে।

মুখ থেকে কথা বের করেছে নাকি যাবো মুখ খুলতে?

তার প্রয়োজন নেই অলরেডি মুখ খুলে দিয়েছে।

কি বলিস? কার কথায় এমন করছে? ওই শালার নাম শুধু একবার বল এই মুহূর্তে যেয়ে তুলে আনবো।

পারফি এবার শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো এনামুল খান।

ওহ্ আচ্ছা এখনি তুলে আনছি শালাকে এ বলে উঠে যেতে নিবে তখন চোখ কপালে উঠিয়ে বললো কি? এনামুল খান? আমাদের বিজনেস পার্টনার? ওর সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা?

সেটাই ভাবছি ওর সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা। এবার ওর ব্যপারে খোঁজ লাগা। আমি আজকের ভিতরে ওর ব্যপারে সব ডিটেইলস চাই।

কাজ হয়ে যাবে, ওই শালাকে তো আমি দেখে নিবো। তাহলে আমি যাই কাজে লেগে পড়ি, এ দিকটা তুই সামলা এ বলে শাফিন চলে গেলো।
————————
বদ্ধ রুমের ভিতরে হাত-পা বাঁধা অবস্থা পড়ে আছে এনামুল খান।
তখন সেখানে প্রবেশ করলো পারফি আর শাফিন। সেদিনের পর কেটে গিয়েছিলো দুদিন। এই দুই দিনে এনামুল খানের সব তথ্য কালেক্ট করা হয়ে গেলো।
সব তথ্য হাতে পেতেই এনামুল খানকে এখানে আনা।

পারফি আর শাফিন রুমে প্রবেশ করতেই এনামুখ খান ওদের দেখে চমলে গেলো। চমকে বলে উঠলো,

তোমরা? ত..তোমরা আমাকে এভাবে তুলে এনেছো? কিন্তু কেনো?

তোকে একটু স্পেশাল ভাবে আদর যত্ন করার জন্য এনেছি বাঁকা হেসে বলে উঠলো শাফিন।

শাফিনের কথায় এনামুল খান কিছুটা রেগে উঠে বললো,

মজা করছো আমার সাথে? এগুলোর মানে কি? ভুলে যেও না আমি তোমাদের বিজনেস পার্টনার হই। এসব কোন ধরনের ব্যবহার? তুইতোকারি করছো কেনে? আমাকে ছাড়ো বলছি।

পারফি এনামুল খানের সামনে একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

মাত্র দু ঘন্টা এভাবে বাঁধা অবস্থায় থেকে বিরক্ত হয়ে গেলি? কয়েকমাস আগে আমিও ছিলাম এভাবে বাঁধা অবস্থায় তাও তোর মতো মাত্র দুই ঘন্টা না দুই দিন ছিলাম।

পারফির কথায় এনামুল খান চমকে উঠলো। আমতা আমতা করে বলে উঠলো,

ম…মানে? আর এসব কথা আমাকেই বা বলছো কেনো?

শাফিন বলে উঠলো আরে মিস্টার এনামুল খান আর কতো নাটক করবি? তোর সব লুকোচুরি এবার ফাঁস হতে চলেছে। কি ভেবেছিস আমরা কিছুই জানবো না? এবার অন্তত সব শিকার কর।

এনামুল খান এবার কিছুটা ঘাবড়ে যেয়ে বলল,

কি সব বলছো তোমরা? কি শিকার করবো আমি?

পারফি এবার একটা অডিও ক্লিপ ছাড়লো এনামুল খানের সামনে যেখানে তার স্পষ্ট কথোপকথন ভেসে উঠছে সেদিনের যেদিন পারফি আর ইয়ানাকে কিডন্যাপ করিয়েছিলো।

অডিও ক্লিপটা শুনে এনামুল খানের কপালে চিকচিক ঘাম জড়ো হতে লাগলো। এগুলো ওদের হাতে গেলো কিভাবে ভাবতে শিউরে উঠলো।

পারফি এবার এনামুল খানের দিকে তাকিয়ে বললো,

এবার বলে ফেল আমার সাথে তোর কি শত্রুতা? কেনো সেদিন আমাকে আর ইয়ানাকে কিডন্যাপ করেছিলি? কি উদ্দেশ্য ছিলো তোর?

এনামুল খান কিছুটা সময় নিয়ে আমতা আমতা করে বললো আ..আসলে আমার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে, ও তোমাকে পাওয়ার জন্য পাগলামো করছিলো। তাই আমার উদ্দেশ্য ছিলো ওই মেয়েকে ভয় দেখিয়ে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেওয়া। এইটুকুই উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বাস করো আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।

এনামুল খানের কথায় পারফি চোখ ছোট ছোট করে বললো,

তাই নাকি? তাহলে সেদিন কে যেনো বলেছিলো পুরোনো শত্রু বলে কথা এখনো অনেক হিসেব নেওয়া বাকি কথাটা হয়তো আমি ভুল শুনেছি তাইনা?

পারফির কথায় এনামুল খান আরো ঘামতে লাগলো। এই কথার পৃষ্ঠে কি জবাব দিবে খুঁজে পেলো না। কিছু বলার জন্য আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখন পারফি বলে উঠলো,

কি ভেবেছিলি আমরা বোকা? তুই আমাদের কিডন্যাপ করবি আর তা খুঁজে বের করতে পারবো না? তুই আমাদের কিডন্যাপ করে ভালোই করেছিস। কারণ আর নাহলে তোর এতো এতো কুকর্মের কথা জানতেই পারতম না।

এনামুল খান ঘাবড়ে যেয়ে বললো ম..মানে?

এনামুল খানের ঘাবড়ানো মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে পারফি শাফিনের কাছে কিছু একটা চাইলো। শাফিন একটা ল্যাপটপ আর একটা পেনড্রাইভ পারফির হাতে দিলো। পেনড্রাইভ টা পারফি ল্যাপটপে ঢুকিয়ে ল্যাপটপ অপেন করে এনামুল খানের দিকে ঘুরালো যেখানে এনামুল খানের এতো বছরের কুকর্মের সব প্রমান ভেসে উঠতে লাগলো। কালোবাজারি বিজনেস, মানুষ পাচার, খুন খারাবি আরো যতো নোংরা কাজ আছে তা ভেসে উঠলো।

এসব দেখে এনামুল খান চমকো গেলো। থমকে গেলো কিছু সময়। কিছুক্ষণ পর পারফিদের উদ্দেশ্যে রেগে বললো এতো কিছু তোরা জানলি কিভাবে?

শাফিন এবার এনামুল খানের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো,

এইতো নিজের আসল রুপে অবশেষে ফিরলি। এতক্ষণ কি অভিনয়টাই না করলি। কি ভেবেছিলি তোর কুকর্মের কথা কখনো জানতে পারবো না? আরে তোরাতো কাপুরুষ তাই লুকিয়ে লুকিয়ে এসব কাজ করে বেরাস। তোর ভাই রফিক খান কাপুরুষের মতো বিদেশে লুকিয়ে আছে কেনো? সাহস থাকলে আমাদের সামনে আসতে বল। ঠিকি বলেছিলি পুরোনো শত্রু, তোর বাবা ছিলো একটা জা* আর তোরাও হয়েছিস তাই।

এনামুল খান আরো রেগে যেয়ে বললো আমাকে তোরা চিনিস না। ধ্বংস করে দিবো তোদের পুরো ফ্যামিলি তাই ভালোই ভালোই বলছি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওই পেনড্রাইভ আমার হাতে তুলে দে।

এনামুল খানের কাথায় ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো শাফিন আর পারফি। শাফিন ফের বললো তাই নাকি?এতো তারা? আগেতো এখান থেকে জীবন নিয়ে ফিরে দেখা তারপর নাহয় আমাদের ফ্যামিলি ধ্বংস করিস।

এনামুল খান আস্তে আস্তে ঘাবড়ে যেতে লাগলো। এতক্ষণ রেগে থাকা এনামুল খান শান্ত হয়ে যেয়ে কিছুটা সময় নিয়ে বললো,

আমার কিছু হলে কখনো নিজের বোনের খোঁজ পাবি না। সারাজীবন খুঁজেই যেতে পারবি কিন্তু খোঁজ আর পাবি না তাই বলছি নিজের বোনের পরিচয় জানতে চাইলে পেনড্রাইভ আমার হাতে দিয়ে আমাকে এখন থেকে যেতে দে।

এনামুল খানের এবারের কথা শুনে পারফি শাফিন দুজনেই থমকে গেলো। এনামুল খানের কথা বুঝে উঠতে শাফিন ছুটে যেয়ে এনামুল খানকে এলোপাতাড়ি মারতে মারতে বলে উঠলো,

তার মানে তুই আমার বোনকে আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিস? আজতো তোকে আমি জানে মে/রে ফেলবো এ বলে কোনো দিকে না তাকিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে লাতলো।

মার খেতে খেতে এনামুল খানের চোখমুখের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো এবার পারফি শাফিনকে এনামুল খানের থেকে জোর করে ছাড়িয়ে এনে বললো,

রিলাক্স মারার জন্য অনেক টাইম পাবি আগে ওর মুখ থেকে কথা বের করতে হবে।

শাফিন থামলো কিন্তু চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে যেনো। পারলে এই চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিতো এনামুল খানকে।

পারফি এনামুল খানের কাছে যেয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,

ওর বোন কোথায়? কোথায় নিয়ে রেখেছিস? যদি জানের মায়া থাকে তাহলে ভালোয় ভালোয় সব শিকার কর।

এনামুল খান ক্লান্ত চোখে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো,

আমাকে এখান থেকে যেতে দিয়ে সাথে সব প্রমাণ আমার হাতে তুলে দে তাহলেই আমি ওর বোনের পরিচয় দিবো। আর নাহলে যদি আমাকে মেরেও ফেলিস তবুও আমার মুখ দিয়ে কথা বের হবে না।

পারাফি এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে এনামুল খানের নাক বারবার ঘুষি মেরে দিয়ে বললো,

কিভাবে মুখ থেকে কথা বের করতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে এ বলে হুংকার দিয়ে একজন গার্ডকে ডাক দিলো। পারফির হুংকারে গার্ডটা ছুটে এলো হাতে কিছু একটা নিয়ে।

পারফি গার্ড হাত থেকে ফোন নিয়ে সেটা এনামুল খানের দিকে ঘুরালো যেখানে ভেসে উঠলো এলিজার মুখশ্রী। তারি মতো বাঁধা অবস্থায় একটা রুমে পড়ে আছে। মুখের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতর চিন্হ তা দেখে তর বুক কেঁপে উঠলো।

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে এনামুল খান বলে উঠলো আমার মেয়ের এই অবস্থা কেনো? কি করেছিস আমার কলিজার সাথে তোরা?

এনামুল খানের দিকে তাকিয়ে পারফি বাঁকা হেসে বললো, এখন ওতো কিছুুই করি নি বাট এবার করবো। এ বলে গার্ডেদের ইশারা করতে এলিজার মাথায় রিভলবার ধরলো। তা দেখে এনামুল খান চিৎকার করে বলে উঠলো ছেড়ে দে আমার মেয়েকে।

পারফি এবার বলে উঠলো,

আমি তিন পর্যন্ত বলবো এর ভিতরে তুই সত্যিটা শিকার করবি আর নাহলে নিজের চোখে নিজের মেয়ের মৃত্যু দেখবি। এবার কোনটা করবি সেটা তুই জানিস বলতে বলতে পারফি এক দুই গুনতে লাগলো। যেই তিন বলতে যাবে অমনি এনামুল খান ভয় পেয়ে বলে উঠলো বলছি বলছি আমি সব বলছি।

এনামুল খানের কথায় পারফি কল কেটে দিয়ে গার্ডের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করলো চলে যেতে। গার্ড যেতে পারফি আর শাফিন এনামুল খানের সামনে বসে বললো এবার শুরু কর বলা।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩২

সন্ধ্যায় পারফি আর শাফিন বাসায় ফিরে আসলো। বাসায় প্রবেশ করতে দেখলো বাসায় কেউ নেই বুঝলো যে সবাই শাফিনদের বাসায় আছে তাই পারফি আর শাফিন ওদের বাসায় গেলো।

বাসায় প্রবেশ করতে দেখতে পেলো পভেল চৌধুরী আর শরিফ আহমেদ কিছু নিয়ে আলোচনা করছে আর অন্য পাশে ইয়ানা, প্রীতি, পিয়াসা ও শাহানা বেগম গল্প করছে।

পারফি আর শাফিন প্রবেশ করতে সবাই তাকালো ওদের দিকে। পিয়াসা বেগম বলে উঠলো,

সারাদিন কোথায় ছিলি দুটোয়? দুপুরে বাসায় আসলি না কেউ, আবার কোনো খোঁজ খবর ও ছিলো না।

পারফি উত্তর দিলো, ওই একটু কাজে বিজি ছিলাম তারপর পভেল চৌধুরীদের পাশে যেয়ে বসতে বসতে বললো কি নিয়ে কথা বলছো দুজন এতো মনোযোগ দিয়ে?

পাভেল চৌধুরী চিন্তিত গলায় বললো,

রফিক খান দেশে ফিরেছে খাবর পেলাম। ওকে কিভাবে ধরা যায় সেটা নিয়েই আলোচনা করছিলাম।

পারফি নির্বিকার ভাবে বললো,

ওহ্ আচ্ছা, এখন রাখো এসব কথা। তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো আন্টি যাও তো আমাদের পুরোনো অ্যালবাম টা নিয়ে আসো। আজ সবাই মিলে আমাদের ছোট বেলার ছবি দেখবো।

পারফির এমন কথায় উপস্থিত সবাই অবাক হলো বেশ। পারফির হঠাৎ পুরোনো ছবি দেখার ইচ্ছে জাগলো কেনো তা কেউ বুঝে উঠলো না।

একরাশ বিস্ময় নিয়ে শরিফ আহমেদ বলে উঠলো,

হঠাৎ পুরোনো ছবি দেখার ইচ্ছে জাগলো কি মনে করে?

শরীফ শিকদারের কথায় পারফি চোখ ছোট ছোট করে বললো,

কেনো দেখতে পারি না?

ত..তা কখন বললাম হঠাৎ দেখতে চাইলে তাই বললাম।

হঠাৎ হঠাৎ কোনো কাজ করার মজাই আলাদা আঙ্কেল। হতে ওতো পারে হঠাৎ কোনো কাজ করে তোমাদের চমকে দিলাম।

পারফির কথার আগামাথা কেউ বুঝলো না সবাই বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো পারফির দিকে। তা দেখে পারফি বলে উঠলো,

আজব সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি কি অন্য ভাষায় কথা বলছি যার জন্য আমার কথা তোমরা বুঝতে পারছো না?

শাফিন এবার পারফিকে বললো,

শালা যেভাবে জিলাপির পেচ পেচিয়ে কথা বলছিস তা সবার মাথার এক হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে। তুই চুপ থাক আমি দেখছি ব্যপারটা এ বলে শাহানা বেগমের উদ্দেশ্য বললো আম্মু যাওতো আগে অ্যালবামটা নিয়ে আসো।

শাহানা বেগম বিস্ময় নিয়ে উঠে যেয়ে অ্যালবামটা নিয়ে আসলো তারপর সবাই গোল হয়ে এক সাথে বসলো।

পারফি অ্যালবামটা ইয়ানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো নেও তুমি খোলো অ্যালবামটা, কজ আমরা সবাই এখানে সব পিক দেখেছি, কিন্তু তুমি দেখো নি তাই তুমি এক এক করে ছবি বের করবে আর সেটার বর্ণনা আমরা দিবো।

পারফির কথার আগামাথা কিছু না বুঝলেও ইয়ানা খুশি হয়ে অ্যালবামটা হাতে নিলো। পুরোনো পিকচার দেখতে বেশ লাগে ওর কাছে। অ্যালবাম খুলতে ভেসে উঠলো প্রথমে শাহানা বেগম আর শরিফ শিকদারের বিয়ের ছবি। যেখানে শাহানা বেগমের যুবতী বয়সের ছবিটা ভেসে উঠলো। কি অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলো তা এই ছবিটাতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এখন মুখে বয়সের হালকা ছাপ পড়ে গিয়েছে তবুও দেখতে মা শা আল্লাহ আর এই যুবতী বয়সের তো তুলোনা এই হয় না।৷
ইয়ানা ছবিটা দেখে বলে উঠলো,

ওয়াও আন্টি তুমিতো অল্প বয়েছে দেখতে পুরোই নাইকা ছিলে।

ইশানার কথায় মুচকি হাসলো শাহানা নেগম। তখন প্রীতি বলে উঠলো দেখতে হবে না কার আন্টি, তুইও দেখতে অনেকটা আন্টির মতো আমার গুলুমুলু বেস্টু।

প্রীতির কথায় সবাই কিছুটা চমকালো। সবার চোখ পড়লো ইয়ানার দিকে। আসলেই শাহানা বেগমের সাথে অনেকটা মিল পাচ্ছে ইয়ানার। এতদিন দেখলেও বিষয়টা ওভাবে কেউ খেয়াল করে নি।

এতগুলো মানুষের দৃষ্টি এক সাথে ইয়ানার দিকে পড়তে ইয়ানা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। তা দেখে পারফি বললো হয়েছে নেক্সট পিক দেখা যাক।

পারফির কথায় সম্মতি দিয়ে ইয়ানা পরের পেজে যেতে দেখতে পেলে দুটো ছেলে কান ধরে একে অপরের দিকে মুখ ভেঙচিয়ে তাকিয়ে আছে।

ছবিটা দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে উঠলো। পিয়াসা হাসতে হাসতে বললে,

জানিস এই দুটো কে? পারফি আর শাফিন। ছোটবেলা বাচ্চাদের সাথে খেলতে গিয়ে কি নিয়ে জানি বাজিয়ে দিয়ে দুটোয় মিলে বাচ্চাদের সাথে মারামারি করছিলো তখন শরিফ ভাই যেয়ে দুটোর কান ধরে টেনে এনে এভাবে পুরো এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো।

পিয়াসা বেগমের কথায় সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো আবার।

পারফি আর শাফিন মাথা চুলকালো তা দেখে। ছোট বেলার কথা এভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়াতে কিছুটা বিব্রতবোধ করলো।

তারপর এক এক করে সব ছবি দেখতে লাগলো আর প্রতিটা ছবির বিবরণ এক এক জনে দিতে লাগলো। ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা ছবির কাছে এসে ইয়ানার হাত জোড়া থেমে গেলো। সাথে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। হাতে থাকা অ্যাবামটাও কাঁপতে লাগলো সমান তালে ইয়ানার হাত কাঁপার সাথে।

এতক্ষণ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত ছবিটা সামনে আসাতে মৃদু হাসলো পারফি। সাথে তাকালো ইয়ানার কম্পনরত মুখপানে। এতক্ষণ যে এটার এই অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলো। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটলো। পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে করে বললো,

জানো এটা কে? এটাই হলো আমাদের সেই ছোট শ্রুতি যাকে সেই জন্মের পর অপহরণ করা হয়। এর পর আর কোনো খোঁজ মিলে নি আমাদের ছোট পরীর।

পারফির কথায় ইয়ানা চমকে তাকালো পারফির দিকে। কি হচ্ছে কিছু মাথায় আসছে না। এ কিভাবে সম্ভব? আস্তে ধীরে ইয়ানার পুরো শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগলো। কম্পিত শরীর আরো কাঁপতে লাগলো। কারণ এটা আর কারো না ওর নিজের ছবি। হ্যা এটা ওর এই ছবি কারণ ওর ছোট বেলার ছবি দিয়ে অ্যালবাম ভোরে রেখেছিলো ইসহাক আহমেদ। ইয়ানার বরাবর এই ছোট বেলার ছবি দেখতে খুব ভালো লাগতো তাই প্রায় প্রতিদিন এই নিজের ছোট বেলার ছবি গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতো। যার জন্য নিজের ছোট বেলার মুখশ্রী একবার দেখলেই চিনে ফেলতে সক্ষম। আর সেই জন্যই মাত্র একটা বাচ্চার ছবি সামনে আসতে ছবিটা চিনতে দু সেকেন্ড সময় ও লাগে নি। ছবিটা চোখের সামনে পড়তে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো এই ভেবে যে ওর ছবি এই অ্যালবামের ভিতর আসলো কিভাবে। পরক্ষণে পারফির কথা শুনে যেনো পুরো শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগলো।

ইয়ানাকে এভাবে কাঁপতে দেখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পারফি বলে উঠলো,

আর ইউ ওঁকে ইয়ানা? এভাবে কাপছো কেনো? কোনো সমস্যা?

পারফির কথায় সবাই তাকলো ইয়ানার দিকে। হাঠাৎ ইয়ানাকে এভাবে কাঁপতে দেখে সবাই চমকে গেলো। সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে কিন্তু কারো কথা ইয়ানার যেনো কানেই ঢুকছে না।

তখন শাফিন বলে উঠলো,

আমি বলছি ফুল পরীর এমন করার কারণ।

শাফিনের কথায় সবাই তাকলো শাফিনের দিকে। শাফিন কিছুটা সময় নিয়ে শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,

আম্মু আমরা আমাদের যেই ছোট্ট শ্রুতিকে এতো বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি ও আর কেউ না আমাদের ইয়ানা। হ্যা ইয়ানা আমাদের সেই ছোট শ্রুতি বলতে বলতে কণ্ঠ কেঁপে উঠলো শাফিনের।

আর এদিকে শাফিনের কথায় উপস্থিত চমকে গেলো। বজ্রপাতের ন্যায় শাফিনের কথাটা সবার কানে বাজতে লাগলো। শাহানা বেগমের শরীর ও কম্পিত হলো শাফিনের কথায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শাহানা বেগম বলে উঠলো,

ক..কি ব..বললি? আ..আমি কি স..সত্যি শুনতে প..পারছি?

পারফি এবার উঠে যেয়ে ইয়ানার পাশে বসলো। তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,

তুমি ঠিক শুনতে পারছো আন্টি এটাই সত্যি। ইয়ানাই হলো আমাদের সেই ছোট্ট শ্রুতি। কথাটা বলে পারফি আলতো করে ইয়ানার হাতের উপর নিজের হাত রেখে ইয়ানার অশ্রুসিক্ত নয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,

হ্যা এরাই তোমার আসল বাবা-মা ইয়ানা। বলেছিলাম না তুমি কারো কারো অবৈধ সন্তান না। বলেছিলাম না তুমি পবিত্র এক ফুল এবার বিশ্বাস হলো সেই কথা? তোমার বাবা-মা তোমাকে ফেলে দেই নাই ইয়ানা, তোমাকে অপহরণ করে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো।

পারফির কথায় ইয়ানা ছলছল চোখে তাকালো শাহানা বেগম, শরিফ শিকদার আর শাফিনের দিকে। শরীর এখনো কাঁপছে যেনো এতো বড় সত্যি এভাবে সামনে আসবে কখনো কল্পনাও করে নি।

শাহানা বেগম ইয়ানার পাশেই বসা ছিলো। তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে ইয়ানার সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে হঠাৎ করে ইয়ানাকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কান্না করে বলতে লাগলো,

তুই আমার শ্রুতি? আমার সোনা মেয়ে। কেনো হারিয়ে গিয়েছিলি আমাদের জীবন থেকে মা? তোকে হারিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে বুকের ভিতর এক হাহাকার নিয়ে বেঁচে ছিলাম। কতো খুঁজেছি তোকে কোথাও খুঁজে পাই নি। আমার কলিজা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যেতো তোকে একটা বার বুকে জড়িয়ে নেওয়ার আকুলতায়। আল্লাহ কাছো লাখো কোটি শুকরিয়া আমার কলিজার টুকরোটাকে আবার আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তোকে আর কোথাও হারাতে দিবো না এই বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবো যাতে কোনো কালো ছায়া তোকে স্পর্শ করতে না পারে।

ইয়ানাও কান্না জড়িত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডেকে উঠলো,

ম..মা।

ইয়ানার মুখে মা ডাক শুনে শাহানা বেগম যেনো পাগল প্রায় হয়ে গেলো। ইয়ানার সারা মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে আবার বুকের মাঝে আগলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। এ কান্না যে কষ্টের না এক সুখের কান্না। ১৭ টি বছর পর মেয়েকে বুকে ফিরে পাওয়ার সুখের কান্না।

এদিকে শরিফ শিকদার যেনো জমে বরফ হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইয়ানার মুখ পানে। আস্তে আস্তে চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে। ছেলেদের নাকি কান্না করা বারণ কিন্তু আজ শরিফ শিকদার পারছে না নিজেকে সামলাতে। এতো বছর পর মেয়েকে এভাবে ফিরে পাবে কখনো কল্পনাও করে নি। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ কাঁধে পেয়ে শরিফ শিকদার ঝাপসা চোখে তাকাতে দেখতে পেলো পাভেল চৌধুরী তাকিয়ে। শরীফ শিকদার তাকাতে পাভেল চৌধুরী চোখ দিয়ে ইশারা করলো মেয়ের কাছে যেতে।
শরিফ শিকদার কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। শরিফ শিকদারকে ইয়ানার পাশে বসিয়ে দিয়ে পারফি উঠে গেলো। শরিফ শিকদার ইয়ানার পাশে বসে কাঁপা কাঁপা হাতে ইয়ানার মাথায় হাত রাখলো।

মাথায় করো হাতের স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা তাকালো পাশে। নিজের পাশে নিজের জন্মদাতা পিতাকে দেখে ইয়ানা ফের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বাবা ডেকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

সাথে কেঁদে উঠলো শরীফ শিকদার ও। চোখের পানি ছেড়ে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তখন চোখে পড়লো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা শাফিনের পানে। যে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের দিকেই তাকিয়ে তা দেখে শরিফ আহমেদ হাত বাড়িয়ে শাফিনকে কাছে ডাকলো।

শাফিন ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তাদের কাছে। কাছে এসে আস্তে করে ইয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। ইয়ানা তাকালো অশ্রুসিক্ত নয়নে শাফিনের দিকে। শাফিন কাঁপা কাঁপা হাতে ইয়ানার দু গালে হাত রেখে বললো,

আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার সেই ছোট্ট পরী বোনটা আজ এতো বড় হয়ে গেছে। আমার পরী বোনটাকে কেনো আমি ছোট বেলা কাছে পেলাম না? কেনো বোনটা আমার কাছে ফিরে আসে নি বলতে বলতে শাফিনের চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।

ইয়ানা ভাইয়া বলে শাফিনকে ঝাপটে ধরলো। শাফিন পরম স্নেহে বোনকে বুকের মাঝে আগলে নিলো। পাশ থেকে শাহানা বেগম আর শরিফ শিকদার ও জড়িয়ে ধরলো। আজ কারো সুখে যেনো বাঁধ মানছে না। পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেনো উপচে পরছে তাদের, এতো দিনের হারানো সন্তানকে বুকে ফিরে পেয়ে।

কিছুটা দূরে বসে পিয়াস বেগম, পাভেল চৌধুরী, প্রীতি, পারফি মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলো বাবা-মা, ভাই-বোনের সুখের মুহূর্ত। ওদের সবার চোখেও আজ যেনো পানি বাধ মানছে না। এতোদিনের সবার মনের চাপা কষ্টের অবসান অবশেষে ঘটলো।

অনেক সময় পর একে একে সবাই ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিলো পরম স্নেহের সাথে। আজ যেনো কারো সুখের কমতি নেই।

শরিফ শিকদার খুশি হয়ে বললো পাভেল দেখছিস আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমার মেয়ে ফিরে এসেছে আজ আমি পুরো এলাকায় মিষ্টি বিলাবো। সকল এতিম বাচ্চাদের পেট পুরে খাওয়াবো। সব ব্যবস্থা কর আমার খুশির আজ বাঁধ মানছে না।

শরিফ শিকদারের আজ এতো এতো খুশি সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখলো। লোকটাকে এতোটা খুশি হতে আজ পর্যন্ত কেউ দেখি নি। বারাবর এই শরিফ শিকদার ছিলো কিছুটা চাপা স্বভাবের। আজ যেনো তার খুশির কাছে তার চাপা স্বভাবটা ঢাকা পড়ে গেছে।

শরিফ আহমেদকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে উঠলো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-২৯+৩০

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৯

বসার ঘর জুরে পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে গেলো। কারো মুখে কোনো কথায় নেই।

একটু আগে ইসহাক আহমেদ পারফিকে এতো বিচলিত হতে দেখে ভাঙা গলায় সব খুলে বললো। সব শুনে পারফি স্তব্ধ হয়ে গেলো। তাকালো ইয়ানার নিস্তব্ধ নীরব মুখশ্রীর দিকে। ওই মুখের দিকে তাকিয়ে যেনো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।
কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ইয়ানাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা উঠে দাঁড়িয়ে কোনো রকম বললো

আমি একটু একা থাকতে চাই এ বলে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।

ইয়ানার পিছু পিছু পারফিও দ্রুত গেলো। এখন কিছুতে ওকে একা ছাড়া যাবে না। ইয়ানা যেই রুমের দরজা লাগাতে যাবে তার আগেই পারফি রুমে ঢুকে গেলো।

পারফিকে দেখে ইয়ানা ভাঙা গলায় বললো –

আমাকে একটু একটা থাকতে দিন প্লিজ।

পারফি কোনো কথা না বলে ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিলো।

ইয়ানা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে ডুকরে কান্না করে উঠলো।

ইয়ানার কান্নায় পারফির বুকের ভিতর ও ঝড় বয়ে গেলো কিন্তু ইয়ানার কান্না থামালো না। কান্না করে মনটা হালকা করতে দিলো। পাথর হয়ে থাকাট চেয়ে কান্না করে মন হালকা করাটা জরুরি।

অনেক সময় ধরে এক নাগারে কান্না করেই চলেছে ইয়ানা, তা দেখে পারফি ইয়ানাকে ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে দু গালে হাত রেখে বললো –

আর কান্না করো না বিড়াল ছানা তাহলে শরীর খারাপ করবে। সবার জীবনে কোনো না কোনো অতীত থাকে। ধরে নেও এটা তোমার এক দুঃস্বপ্ন। তুৃৃমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো কারণ সেদিন তোমার সাথে খারাপ কিছুও ঘটতে পারতো। কিন্তু দেখো আল্লাহ তোমাকে এতো ভালো একটা বাবা এনে দিয়েছে। যে কোনো দিন একটা বারের জন্য ভাবে ও নি সে তোমার বাবা না। এমনকি তোমাকে তোমার অতীত থেকে দূরে রাখার জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে এখানে চলে এসেছে পর্যন্ত।
জানো তো সবার ভাগ্যে এতো ভালো বাবা জোটে না কিন্তু দেখে তুমি কতো ভালো একটা বাবা পেয়েছো যে তোমার জন্য নিজের জীবন টাও দিতে রাজি। আজ তোমার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে ওই বাবাটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে ইয়ানা।
মানছি সে তোমার আসল বাবা না কিন্তু সে তোমার আসল বাবার থেকেও অনেক বেশি কিছু। আজ নিজেকে এভাবে কষ্ট দিয়ে আমাদের সবাইকে এভাবে কষ্ট দিও না বিড়াল ছানা। ছোট বেলার ওই ঘটনাটা একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে জীবন থেকে মুছে ফেলো। ওই যে দেখো তোমার বাবা-মা, বোন সবাই আছে। তুৃৃমি আরো গর্ব করে বলবে আমার এতো সুন্দর একটা পরিবার আছে। যাদের সবার কলিজার টুকরো তুৃমি।

কথা গুলো বলে পারফি ফের ইয়ানাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো-

সব ভুলে যাও বিড়াল ছানা। আমরা আছি তো, আমরা সবাই তেমার পাশে আছি। তুমি অনেক লাকি গার্ল কারণ তোমার একটা না দু দুটো করে বাবা-মা। আমার বাবা-মা, তোমার বাবা-মা সবার কলিজার টুকরো মেয়ে তুমি। এতোগুলো ভালোবাসার মানুষ থাকতে তুমি নিজেকে কেনো একা ভাববে বলো? আমরা সবাই আছি তোমার পাশে আর সারাজীবন থাকবো। এগুলো নিয়ে আর ভাববে না ওগুলো সব তোমার এক দুঃস্বপ্ন ওঁকে?

পারফির কথায় ইয়ানার কান্না আস্তে ধীরে কমে আসলো। এক পর্যায়ে নীরব হয়ে পারফির বুকে সাথে লেপ্টে রইলো। কিছুক্ষণ পর পর হেকচি উঠছে কান্নার ফলে। জীবনের এতো বড় ধাক্কটা যেনো জীবনটা এলোমেলো করে দিলো।

ইয়ানাকে শান্ত হতে দেখে পারফি ইয়ানার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিলো একটা সময় ইয়ানার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পারফি ইয়ানাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে দেখলো ইয়ানা হুঁশে নেই। পারফি কয়েকবার ডাকলো ইয়ানাকে কিন্তু কোনে সাড়াশব্দ পেলো না। তারাতাড়ি করে ইয়ানাকে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে ইসহাক আহমেদ আর ইতি বেগমকে বিষয়টা জানালো। ইয়ানার অবস্থা দেখে ইসহাক আহমেদের পাগলপ্রায় অবস্থা। ইতি বেগম ও বিচলিত হয়ে পড়েছে। পারফি দ্রুত পরিচিত ডাক্তারকে কল করে এখানে আসতে বললো।

ডক্টর এসে ইয়ানাকে দেখে গেলো, যাওয়ার সময় বলে গেলো শরীর প্রচুর দুর্বল তার উপরে কোনো কিছু নিয়ে মেবি মাথায় প্রেশার পড়েছে তাই জ্ঞান হারিয়েছে। আস্তে ধীরে জ্ঞান ফিরে আসবে ঘন্টা খানেকের ভিতরে কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ওর কোনে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যতটা পারেন রোগীকে টেনশনমুক্ত রাখার ট্রাই করবেন।

ডক্টরের কথায় সম্মতি দিয়ে পারফি যেয়ে বাসার নিচ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এসে আবার ফিরে আসলো। রুমে এসে চোখে পড়লো ইয়ানার নিস্তব্ধ মুখশ্রীর দিকে।
বুকটা খুব ভারী লাগছে, স্নিগ্ধ ফুলের এমন বিধ্বস্ত রূপে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। ওই বিধ্বস্ত মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার সাধ্য হলো না, বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
————————-
ড্রয়িংরুমে বসে আছে পাভেল চৌধুরী, শরীফ শিকদার , পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, শাফিন, প্রীতি ও পারফি।
তাদের সবার চোখমুখে একরাশ বিষ্ময়ক। ঘন্টাখানেক আগে ইসহাক আহমেদ ফোন করে সবাইকে আসতে বলেছে এখানে। এখানে এসে এমন কিছু শুনবে কেউ কল্পনাও করে নি।
কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবার মাঝে নীরবতা বিরাজমান। কি এই বা বলবে? কেউ কল্পনাও করতে পারছে না ইয়ানার জীবনে এমন একটা অতীত ছিলো। একটু আগে ইসহাক আহমেদ শুরু থেকে সবটা খুলে বলেছে সবাইকে। সব শোনার পর থেকে সবাই থম মেরে বসে রইলো।

অবশেষে নীরবতা ভেঙে ইসহাক আহমেদ ফের বললো

সব তো শুনলেন এবার আসল কথাটা বলছি কিছু মনে করবেন না। জানি আপনারা অমন মানুষ না তবুও বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চাই। আমি চাইনা আমার মেয়েটা আর এক বিন্দু কষ্ট পাক। হ্যা ইয়ানা শুধু আমার এই মেয়ে আমার কলিজার টুকরো। শুধু জন্ম দিলেই যে বাবা-মা হওয়া যায় তা না, ও আমার রক্তের না হলেও ও আমার মেয়ে আর সারাজীবন আমার মেয়ে হয়েই থাকবে।
এখন কথা হলো আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থাকে ইয়ানাকে নিয়ে যে ইয়ানা আমার মেয়ে না, কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে তাকে আপনারা আপনাদের ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারবেন না তাহলে আমি বলবো আমার মেয়েকে নির্দ্বিধায় আমার কাছে রেখে যেতে পারেন তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আমার কথায় আপনারা কষ্ট পেলে বা আমার কথায় কোনো ভুল হলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু আমি একজন বাবা আমি চাইনা আমার কলিজার টুকরো মেয়ে আর এক বিন্দু পরিমাণ কষ্ট পাক। আমার মা টাকে নিয়ে আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে আমার কলিজাটাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। আমি আমার কলিজাটাকে বুকের ভিতর আগলে বাকি জীবন বেঁচে থাকবো, কাউকে কষ্ট দিতে দিবো না আমার মেয়েটাকে। দরকার হলে আমি আবার এই শহর ছেড়ে চলে যাবো। আমার মেয়ের জন্য আমি সব করতে পারি, আমার মেয়ের এক বিন্দু কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না বলতে বলতে চোখজোড়া ভিজে উঠলো ইসহাক আহমেদের।

ইসহাক আহমেদের কথায় সবার চোখ ছলছল করে উঠলো। মেয়ের প্রতি বাবার এতো গভীর ভালোবাসা সবাইকে মুগ্ধ করে দিলো। কে বলেছে ইয়ানা তার মেয়ে না? ইয়ানা তার মেয়ের চেয়েও অনেক বেশি কিছু।

পাভেল চৌধুরী ইসহাক আহমেদের কাঁধে হাত রেখে বললো –

কি বলছেন ভাই এসব কথা? ইয়ানা মামনী কি শুধু আপনার একার মেয়ে নাকি? ইয়ানা আমাদের সবার মেয়ে। মানছি ইয়ানা মামনীর অতীত এর কথা কিন্তু ওটা একটা দুঃস্বপ্ন হিসেবে ভেবে নিলাম আমরা। কে বলেছে ইয়ানা মামনী আপনার মেয়ে না, ইয়ানা মামনী শুধু আপনার মেয়ে আর সারাজীবন আপনার কলিজার টুকরো মেয়ে হয়েই থাকবে সাথে আমাদের ও মেয়ে। আমার ছেলের বিয়ের আগে আমরা কি বলেছিলাম মনে নেই? আমরা বলে ছিলাম ইয়ানা মামনীকে আমরা পুত্রবধূ না নিজেদের মেয়ে হিসেবে নিতে এসেছি। ও আমাদের ও মেয়ে তাহলে মেয়ের এই দুঃস্বপ্নময় অতীত শুনে মেয়েকে পর করে দিবো নাকি?

পাভেল চৌধুরীর কথায় ইসহাক আহমেদ ছলছল চোখে তাকালেন তাদের দিকে তখন শরীফ শিকদার বললো-

আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ভাই। আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি। ইয়ানা সারাজীবন আমাদের সবার মেয়ে হয়ে থাকবে। ও কখনো নিজের বাবা-মার অভাব অনুভব ও করতে পারবে না কারণ আমরা সবাই আছি ইয়ানা মামনীর পাশে।

পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম সবাই ইসহাক আহমেদকে আস্বস্ত করলো যে ইয়ানাকে তারা সবাই আগলে রাখবে। কারো এক বিন্দু পরিমাণ আপত্তি নেই নিয়ানার অতীত নিয়ে।

সবার এই আস্বস্ততা দেখে ইসহাক আহমেদ একটু শান্তি অনুভব করলো। তার মেয়ে যে সবার এতো আদরের হয়ে উঠেছে সেটা ভেবেই ভালো লাগছে যে তা মেয়েকে কখনো কষ্ট পেতে হবে না।
———————-
সেদিনের পর কেটে গেলো আরো কিছু দিন। ইয়ানা এখন কিছুটা স্বাভাবিক। সবার এতো এতো ভালোবাসার মাঝে খারাপ থাকা যায় নাকি? পিয়াসা,শাহানা, ইতি বেগমের মতো তিনটি মা পেয়েছে। পাভেল চৌধুরী, শরীফ শিকদার, ইসহাক আহমেদের মতো তিনটি বাবা পেয়েছে। শাফিন, প্রীতি, ইমার মতো তিনটি ভাইবোন পেয়েছে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে?
সব শেষে পারফির মতো বন্ধুসুলভ একজন জীবনসঙ্গী যে ওর কষ্টে কষ্ট পায়, ওর আনন্দে আনন্দ পায়, ছায়া হয়ে প্রতিটা মুহূর্ত পাশে থাকে তারপর ও কি খারাপ থাকা যায়? আদো কি কেউ খারাপ থাকতে দেয় ওকে? সব সময় ছায়া হয়ে প্রতিটা মানুষ ওর পাশে থাকে। সবার এতো এতো ভালোবাসায় নিজেকে খুব লাকি গার্ল মনে হয়। ভাগ্য করে এতোগুলো ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে।

মাঝে মাঝে মন খারাপ হতো এ ভেবে যে ও কারো অবৈধ সন্তান হয়তো তাই ওকে ওভাবে ফেলে দিয়েছিলো, নিজেকে অপবিত্র মনে করে কষ্ট পেতো তখন পারফি ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে বোঝাতো ওর ধারণা ভুল। ও পবিত্র একটা ফুল, সবার চোখের মনি স্নিগ্ধ ফুল।

ইয়ানা বসে কথা গুলো ভাবছিলো তখন পারফি ইয়ানার সামনে এসে ইয়ানার দিকে হাতে টাই বাড়িয়ে দিয়ে বললো

বিড়াল ছানা এটা বেঁধে দেও।

ইয়ানা টাইটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে টাই বাঁধতে বাঁধতে বললো-

আমার এতো সুন্দর একটা নাম রেখে সব সময় বিড়াল ছানা ডাকেন কেনো?

পারফির ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে হেঁসে বললো

কারণ তুমি শুধু আমার বিড়াল ছানা।
পারফির কথায় ইয়ানা ও হেসে ফেললো। টাই বাঁধা শেষ হতে বললো-

হয়ে গেছে।

পারফি ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে ইয়ানার দু গালে হাত রেখে কোমল স্বরে বললো-

সবসময় এভাবে হাসিখুশি থাকবে। স্নিগ্ধ ফুলের মুখে শুধু হাসি টাই মানায় বুঝলে?

পারফির কথায় ইয়ানা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।

পারফি ইয়ানাকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো। কেঁপে উঠলো ইয়ানা পারফির এই আলতে স্পর্শে। এটা পারফির রোজকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আফিসে যাওয়ার আগে কপালে অধর ছুঁয়ে দেওয়া। প্রতিবার এই পারফির এই স্পর্শ টুকুতে ইয়ানা কেঁপে উঠে যা দেখে পারফি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে উঠলো:-

সামন্য কাঁপলে চুমুতে তোমার কাঁপা কাঁপি উঠে যায় যদি অন্য কিছু করি তাহলে কি অবস্থা হবে শুনি?

পারফির কথায় ইয়ানার কান কোন দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো। লজ্জায় নুইয়ে গেলো, এই ঠোঁট কাটা ছেলের সামনে থাকলে এক একটা কথা বলে লজ্জায় ফেলে দেবেই।

ইয়ানার লজ্জায় রাঙা রক্তিম মুখশ্রী দেখে পারফি ফট করে ফের ইয়ানার গালে চুমু দিয়ে বললো –

এই চুমুটার জন্য তুমি নিজে দায়ী। তোমার লজ্জা রাঙা রক্তিম টমেটোর মতো গাল দেখলে আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। কে বলেছে তোমাকে লজ্জা পেয়ে এমন ভয়ংকর রকম সুন্দর হতে? এখন চুৃুমু, কমড় টামড় খেয়ে বসলে আমার দোষ নেই বলে দিলাম।

পারফি কাজে ইয়ানা আরো লজ্জায় পড়ে গেলো। লজ্জায় হাসফাস করতে করতে বলে উঠলো অসভ্য ছেলে।

ইয়ানার কথায় পারফি ফের ঠোঁট কামড়ে হেসে ইয়ানার কানে ফিসফিস করে বললো

এখনো তো কিছুই করলাম না এর ভিতরেই অসভ্য উপাধি দিয়ে দিলে? পারফির ফিসফিসানিতে কেঁপে উঠলো ইয়ানা। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-

স..সরুন আ..আপনার দেরি হয়ে য..যাচ্ছে।

ইয়ানার এমন কাঁপা কাঁপি অবস্থা দেখতে বেশ মজা লাগছে পারফির। ইয়ানাকে আর জ্বালাতন না করে ইয়ানর থেকে দূরে সরে বললো –

যাচ্ছি তাহলে, সাবধানে থেকো আমার আদুরে বিড়াল ছানা।

পারফি যেতে ইয়ানা বিরবির করে বললো দিনদিন এই লোক আরো বেশি ঠোঁট কাটা স্বভাবের হয়ে যাচ্ছে। মুখে কিছু আটকায় না।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩০

সকাল সকাল প্রীতি ফুল গাছে পানি দিচ্ছিলো। আজ হঠাৎ কলেজ বন্ধ কোনো এক কারণে তাই রিলাক্স মুডে সকাল সকাল গাছে পানি দিতে নামলো।

এদিকে শাফিন এক প্রকার দৌড়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে। পারফি বলেছিলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই যেনো আজ ঠিক টাইমে আফিসে পৌঁছায়। ওর কাজ তো সবসময় লেট লতিফের মতো লেট করে অফিসে উপস্থিত হওয়া। এর জন্য জীবনে পারফির থেকে কম বকা খায় নি। পারফি যখন বকা দিতো তখন ঠোঁট উল্টে মনে মনে ভাবতো শালা তোর মতো যদি সব কিছু টাইম মতো করতে পারতাম তাহলে কি আর লেট লতিফ উপাধি পেতাম সবার কাছে? শুধু শুধু আমাকে বকা দেস শালা। সকাল সকাল ঘুম ভাঙে না তাতে আমার কি দোষ? তোরতো বউ আছে তোর বউ তোকে ডেকে দেয়। আমারতো বউ নাই তাই ডেকে দেওয়ার মানুষ ও নাই। শালা পাষাণ এতোগুলা বকা না দিয়া একটা বউ ওতো এনে দিতে পারিস। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হয় নাই কখনো। এগুলো সামনা সামনি বললো পারফি ওকে এক থাবড়ে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবে।

এই যে আজ আবার কতোগুলো বচন খাওয়া লাগবে ভাবতেই শাফিনের ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজে টাকাতে। সকাল বেলা এতো ঘুম কই থেকে যে আসে তাই মাথায় আসে না। যেখানে ৮ টা বাজে অফিসে থাকতে বলেছে সেখানে ৯ টা বাজে ভেঙেছে ঘুম। শালা ঘুমের সাথে আমার কি এতো শত্রুতামি বুঝি না। যেদিন তারাতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা লাগবে সেদিন শালার ঘুম হাত-পা টিপে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে যাতে পারফির থেকে ঝারি খেতে পারি। এই শালা*র ঘুম ও আমার বিরুদ্ধে চলে, এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে ভাবতে ভাবতে শাফিন ছুট লাগালো অফিসের উদ্দেশ্যে।

কোনোদিক না তাকিয়ে এভাবে ছোটার জন্য হঠাৎ করো সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো। কারো সাথে বেখেয়ালি ভাবে ধাক্কা লাগায় সরি বলতে যাবে অমনি সামনে তাকাতে হো হো করে হেঁসে উঠলো। কারণ সামনে হাত-পা মুখে কাঁদা পানি লেগে প্রীতির অবস্থা জোকারের মতো হয়ে গেছে। প্রীতির এই জোকার রুপ দেখে নিজের হাসি আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।

একেতো শাফিন ধাক্কা মেরে প্রীতিকে ফেলে দিয়েছে তার উপর এভাবে আবার হাসছে তা দেখে প্রীতি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,

শাফিনের বাচ্চা তুই আমাকে ফেলে দিয়েছিস আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছিস আজতো তোকে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।

প্রীতির মুখে আবার ও তুইতোকারি শুনে শাফিনের হাসি থেমে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আবার তুই আমাকে তুই তোকারি করছিস?

করেছি বেশ করেছি, আরো করবো। সকাল সকাল ডাকাতি করতে বের হচ্ছো যে কোনো দিকে না তাকিয়ে কানার মতো দৌড়াচ্ছো, তোমার জন্য আমার কি অবস্থা হয়েছে? যেখানে সরি বলবা তানা উল্টা দাঁত কেলিয়ে হাসছো।

হাসছিস বেশ করেছি, আরো হাসবো। তোর মতো ঘাড় ত্যারা মেয়েকে সরি বললে জীবনেও মানতি না আমি জানি। তোকে বেকার সরি বলার চেয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসা অধিক উত্তম।

প্রীতি ক্ষেপে যেয়ে বললো,

কি বললে তুমি আমি ঘাড় ত্যারা? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা এ বলে এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে পানির পাইপটা হাতে উঠিয়ে শাফিনকে ভিজিয়ে দিতে লাগলো।

প্রীতি কি করছে বুঝে উঠতে শাফিন তারাতাড়ি প্রীতিকে আটকানোর জন্য ওকে ধরতে যাবে তার আগে প্রীতি ছুটে অন্য পাশে চলে যেয়ে শাফিনকে ভেজাতে ভেজাতে বললো,

এবার দেখো কেমন লাগে? আমার সাথে লাগতে আসা তাইনা এবার দেখো প্রীতির সাথে লাগতে আসার ফল।

শাফিন প্রীতির দিকে তেরে যেতে যেতে বললো প্রীতি থাম বলছি, আমি একবার তোকে ধরতে পারলে থাপ্পড় খাবি কিন্তু বলে দিলাম।

প্রীতি থামলো না বরং এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে শাফিনকে ভেজাতে লাগলো। এক পর্যায়ে শাফিন প্রীতির হাত ক্ষপ করে ধরে ফেলে পাইপটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। শাফিন এবার এক হাত দিয়ে প্রীতিকে ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে প্রীতির দিকে পাইপ ঘুরিয়ে দিলো। প্রীতি ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

বাহিরে হঠাৎ এমন শোরগোলের শব্দ শুনে শাহানা বেগম ছুটে আসলো। দুই ছেলে মেয়ের এমন পাগলামো দেখে তার মাথায় হাত। এই দুটোকে নিয়ে আর পারে না সব সময় মা/রা/মা/রি ঝগড়া বিবাধ লাগিয়েই রাখবে।
তখন সেখানে এসে আরো উপস্থিত হলো পিয়াসা বেগম আর ইয়ানা। শাহানা বেগমের মতো পিয়াসা বেগমের ও একি অবস্থা হলো দুজনের অবস্থা দেখে।

এদিকে প্রীতি আর শাফিনের অবস্থা দেখে ইয়ানা শব্দ করে হেঁসে ফেললো। দুজনে কাঁদা পানি মেখে এক একার অবস্থা। দুজনের এমন পাগলামো দেখে নিজের হাসি আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।

কারো হাসির শব্দ শুনে শাফিন আর প্রীতি ওদের লড়াই বন্ধ করে পিছু ঘুরলো। পিছু ঘুরে সবাইকে এমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাতে থাকা পাইপ ফেলে দিয়ে ভদ্রের মতো দাঁড়িয়ে গেলো। দেখে যেনো মনে হচ্ছে এদের মতো ইনোসেন্ট মানুষ আর দুটো নেই।

শাহানা বেগম এবার বলল,

কি হলো থামলি কেনো? আরো কর মা/রা/মা/রি।

শাহানা বেগমের কথায় শাফিন বলল,

আম্মু আমার কোনো দোষ নাই এই রাক্ষসী আমাকে আগে ভিজিয়েছে। শাফিনের কথায় প্রীতি ফোঁস ফোঁস বললে উঠলো,

নিজে যে আগে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছো তার দোষ নেই? আসছে আমার নামে বিচার দিতে।

মিথ্যা বললে একটা থাপ্পড় খাবি আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছি? এক্সিডেন্টলি ধাক্কা লেগে গিয়েছিলো।

আসছে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে এখন এক্সিডেন্ট বলতে।

শাফিন রেগে বলল,

একদম মিথ্যা বলবি না প্রীতি তাহলে কিন্তু তোর কপালে শনি আছে বলে দিলাম।

প্রীতি আর শাফিনকে আবার ও ঝগড়া বাজাতে দেখে পিয়াসা বেগম এবার এদের থামানোর জন্য বলল,

থামবি দুটোয়? আর নাহলে এখন দুটোকে ধরেই পেটাবো বলে দিলাম।

পিয়াসা বেগমের ধমকে দুজনে থামলো। শাফিন কিছু বলতে যাবে তার আগে শাহানা বেগম শাফিনের কান টেনে ধরে বলল,

বাচ্চা মেয়েটার সাথে তোর না বাজালে হয় না? তোর না অফিসে যেতে লেট হয়ে গিয়েছে তার জন্য না খেয়ে বের হয়ে গিয়েছিস আর এখন এভাবে মা/রা/মা/রি করছিস তাতে দেরি হচ্ছে না?

পিয়াসা বেগম বলল ওকে একা বলছো কেনো পাশেরটাকে ধরেও কিছু বলো। ও ছোট হয়ে কেনো শাফিনের সাথে লাগতে যাবে? তোমার লাই পেয়ে পেয়ে এটায় আজ বাঁদর হয়েছে।

পিয়াসা বেগমর কথায় শাহানা বেগম বললো,

আজ দুটোকে ধরেই মার দিবো এ বলে প্রীতির আরেক কান ধরে বললো দুটোয় দিন দিন বাঁদর হচ্ছিস। এই তোরা না বড় হেয়েছিস এখন তো একটু মিলেমিশে থাক এভাবে ঝগড়া মা/রা/মা/রি না করে। আর কতোদিন এভাবে ঝগড়া মা/রা/মা/রি করে কাটাবি?

শাহানা বেগম কান ধরায় প্রীতি ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,

আন্টি এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না সব দোষ তোমার বাঁদর ছেলের।

হ এখন সব দোষ আমার আর তুইতো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারিস না ইনোসেন্ট বান্দর।

দুজনকে আবার বাজাতে দেখে শাহানা বেগম বললো,

আবার শুরু করেছিস এবার কিন্তু সত্যি দুটোয় মার খাবি।

শাহানা বেগমের কথায় প্রীতি আর শাফিন ঠোঁট উল্টে তাকালো শাহানা বেগমের দিকে তা দেখে তিনি কান ছেড়ে দিয়ে বললো দুটোয় এখন দুজনের কাছে সরি বলে বল আর কখনো ঝগড়া করবি না।

প্রীতি আর শাফিন এক সাথে বলে উঠলো জীবনেও না।

দুজনের কথায় মাথায় হাত শাহানা বেগমের।

এদিকে প্রীতি আর শাফিনের অবস্থা দেখে ইয়ানা মুখ টিপে হেসেই চলেছে তা প্রীতির চোখে পড়তে প্রীতি বলে উঠলো,

খুব মজা নেওয়া হচ্ছে ওখানে বসে তাইনা? আর একটু হাসলে তোকেও ভিজিয়ে দিবো বেলে দিলাম।

প্রীতির কথায় পিয়াসা বেগম বলল,

আর তুই ভেজাতে আমার মেয়েকে। তোর মতো বাঁদর নাকি আমার মেয়ে যে তুই আমার মাকে ভেজাতে আসবি? পিটিয়ে তোর বাঁদরামি ছুটাবো আমি।

পিয়াসা বেগমের কথায় ইয়ানা হেঁসে ফেললো। পিয়াসা বেগমকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে প্রীতির দিকে তাকিয়ে জ্বিভ ভেঙচিয়ে বলল ,

কতোবড় সাহস আমার ভালো মার মেয়েকে ভেজাতে চাস। আমার মা তোকে পিটিয়ে বাঁদর থেকে মানুষ বানিয়ে দিবে একদম।

ইয়ানার কথায় শাফিন বলে উঠলো,

একদম ঠিক বলেছো ফুল পরী আমার বনু। এটা আসলেই বাঁদর,এটাকে পিটিয়ে মানুষ বানাতে হবে।

শাফিনের কথায় শাহানা বেগম ফের শাফিনের কান টেনে ধরে বলল,

আবার শুরু করেছিস? তুইতো ওর থেকেও বড় বাঁদর আবার কথা বলিস।

শাফিনকে বাঁদর বলায় প্রীতি যেনো ঈদের থেকেও বেশি খুশি হলো।

প্রীতিকে এমন খুশি হতে দেখে শাফিন বিড়বিড় করে বললো তোকে পড়ে দেখে নিবো আগে এখান থেকে ছাড়া পাই। তারপর শাহানা বেগমকে বলল,

উফফ আম্মু এবার তো ছাড়ো অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখানে তোমার মার খাচ্ছি অফিসে যেয়ে এই বাঁদরের ভাইর হাতে মার খাওয়া লাগবে। এতো মার খেয়ে কবে জানি চেপ্টা হয়ে যাবো আমি।

শাহানা বেগম কান ছেড়ে দিয়ে বলল,

তোর জন্য মার এই ঠিক আছে, যা সর এখান থেকে।

শাফিন ছাড়া পেয়ে বিড়বিড় করতে করতে বাসার প্রবেশ করলো চেঞ্জ করার জন্য।

শাফিন যেতে শাহানা বেগম প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,

যা ফ্রেশ হয়ে নে ঠান্ডা লেগে যাবে।

পিয়াসা বেগম বললো এটাকে এতো সহজে ছেড়ে দিচ্ছো কেনো? আগে পিঠের উপরে দুটো দেও আর নাহলে জীবনেও সোজা হবে না বলতে বলতে ভিতরে চলে গেলো।

পিয়াসা বেগমের কথায় প্রীতি ঠোঁট উল্টে বলল,

দেখেছো আমার সাথে কেমন করে?

প্রীতি কথায় শাহানা বেগম হেঁসে ফেললো তারপর প্রীতিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,

রাগের মাথায় বলেছে এবার যা তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে এ বলে শাহানা বেগম ও চলে গেলো।

শাহানা বেগম যেতে ইয়ানা হো হো করে হেঁসে বলল,

দোস্ত তোকে দারুণ লাগছে। আয় একটা সেলফি তুলি তোর সাথে।

ইয়ানার কথায় প্রীতি ইয়ানার দিকে তেরে যেতে যেতে বলল তবে রে দেখাচ্ছি মজা।

এদিকে প্রীতিকে নিজের দিকে আসতে দেখে ইয়ানা ভো দৌড়। এক দৌড়ে যেয়ে পিয়াসা বেগমের পিছে লুকালো।

পিয়াসা বেগমের পিছে লুকাতে প্রীতি আর কিছু বলতে পারলো না। পিছ থেকে বলে গেলো কতক্ষণ লুকিয়ে থাকবি? তোকে তো পড়ে দেখে নিবো আমি হুহ্।

ইয়ানা প্রীতিকে জ্বিভ দিয়ে ভেঙচি কাটলো।

তা দেখে প্রীতি দাঁতে দাঁত চেপে উপরে উঠে গেলো ফ্রেশ হতে।
—————–
এদিকে শাফিন অফিসে পৌঁছে নিজের কেবিনে যেয়ে বসতে একজন স্টাফ এসে বলল শাফিন স্যার পারফি স্যার বলেছে আপনাকে তার সাথে দেখা করতে।

অফিসে আসতে না আসতে পারফির ডাক পড়াতে শুকনো ঢোক গিললো শাফিন। আজ যে কপালে শনি আছে তা ঢের বুঝতে পারছে।

কিছুক্ষণ বসে থেকে কথা সাজিয়ে নিলো কি বলবে পারফিকে তারপর ঢোক গিলে পা বারালো পারফির কেবিনে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-২৭+২৮

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৭

কেটে গেলো আরো কিছু সপ্তাহ। সবার জীবন ব্যস্ততায় ঘিরে ধরলো। প্রীতি আর ইয়ানাও পড়াশোনা নিয়ে বিজি হয়ে পড়লো। সাথে কিছু সম্পর্কের ও পরিবর্তন আসলো। ইয়ানা আর পারফির সম্পর্ক অনেকটা উন্নত হলো। আগের মতো ইয়ানা পারফির সাথে কথা বলতে জড়তায় গুটিশুটি হয়ে থাকে না এখন পারফির সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গিয়েছে। পারফি বন্ধুসুলভ আচরণ ইয়ানার মন জয় করে নিয়েছে। এখন আর দুজন আলাদা ঘুমোয় না। এখন ইয়নার ঠাই হয়েছে পারফির বুকে।
ইয়ানা বুঝতে পারছে ও দিন দিন পারফির প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, এটাকে ভালোবসা বলে কিনা ঠিক জানা নেই ইয়ানার। কিন্তু এইটুকু জানে ওর জীবনে পারফি এখন সব। যার কাছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পায়।
পারফির প্রতিটা কাজে ইয়ানাকে প্রতিটা মুহূর্ত মুগ্ধ করে। এই যে প্রতিটি রাতে অফিস থেকে ফেরার সময় একটা করে ফুল নিয়ে আসবে। রাতে ঘুমানোর সময় বুকের মাঝে আগলে রাখবে। রোজ সকালে কলেজে পৌঁছে দিয়ে তারপর অফিসে যাবে আবার দুপুরে গাড়ি পাঠিয়ে দিবে ঠিক ভাবে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। পারফির প্রতিটি কাজে খুব খুব কেয়ার করবে যার প্রতিটা কাজ ইয়ানা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে।

সকাল সকাল কলেজে যাওয়ার জন্য ইয়ানা রেডি হচ্ছিলো আর কথা গুলো ভাবছিলো তখন পিছ থেকে পারফি বলে উঠলো এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবা হচ্ছে ম্যাডাম?

পারফির কথায় ইয়ানা ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো। পিছু ঘুরে পারফির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো তেমন কিছু না। চলুন আমার রেডি হওয়া হয়ে গিয়েছি।

পারফি সম্মতি দিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে পিয়াসা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কলেজের সামনে এসে ইয়ানাকে বললো সাবধানে থেকো, আজ তো প্রীতি নেই তাই একা কোথাও যেও না। আমার সময় হলে দুপুরে এসে নিয়ে যেতে আসবো।

ইয়ানা সম্মতি দিয়ে পারফিকে বাই বলে কলেজের ভিতরে ঢুকে গেলো। প্রীতি ওর নানু বাড়ি দুদিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে যার জন্য আজ ইয়ানাকে একা আসতে হলো কলেজে। ঠিক করেছিলো দুদিন ক্লাস করবে না কিন্তু সামনে এক্সাম আছে তাই ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস চলছে তাই বাধ্য হয়ে আসা লাগলো।

প্রীতি নেই দেখে ইয়ানার একা একা মন খারাপ লাগছিলো। মন খারাপ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে তখন চোখে পড়লো এলিজাকে। করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিন রিসিপশনের পর আর দেখে নি এলিজাকে কিন্তু আজ হঠাৎ ওদের কলেজে এলিজাকে দেখে অবাক হলো বেশ।

ইয়ানা কোনো কথা না বলে এলিজার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিবে অমনি পিছু থেকে ডেকে উঠলো এলিজা।

এলিজার ডাকে থামলো ইয়ানা, আবার কিছু একটা মনে করে চলে যেতে নিবে অমনি এলিজা ইয়ানার সামনে এসে বললো ডাকার পড় ও চলে যাচ্ছো কেনো? দেখছো না আমি ডাকছি?

ইয়ানা চোখমুখ কঠিন করে বললো আসলে আপু শুনতে পাই নি,কিছু বলবেন?

হ্যা বলার জন্য এইতো ডেকেছি।

হ্যা বলুন কি বলবেন?

এলিজা কিছুটা সময় নিয়ে বললো তুমি পারফির জীবন থেকে সরে যাও। আমরা একে অপরকে ভালোবেসি, এখন তুমি থার্ড পারসন আমাদের মাঝে ঢুকে আমাদের আলাদা করে দিচ্ছো। তাই বলছি পারফির জীবন থেকে সরে যাও।

এলিজার কথা শুনে ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো এলিজাট দিকে। তারপর তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো কি ভেবেছেন আপনি বলবেন আপনারা একে অপরকে ভালোবেসেন আর তা বিশ্বাস করে আমি সুরসুর করে পারফির জীবন থেকে সরে যাবো?

অফকোর্স সরে যাবে, তোমার কোনো অধিকার নেই আমার পারফির জীবনে থাকার তাই ভালোয় ভালোয় বলছি পারফির জীবন থেকে সরে যাও।

ইয়ানা চোখমুখ শক্ত করে বললো জানতাম আপনি থার্ডক্লাশ একটা মেয়ে কিন্তু এখন দেখছি তার থেকেও নিচু আপনি। অন্যের হাসবেন্ডকে নিজের বলে দাবি করছেন। আর কি বললেন জানি আমি আপনাদের ভিতর থার্ড পারসন? আমি না বরং আপনি সেই থার্ড পারসন। আপনার ভিতর নূন্যতম লজ্জাবোধ টুকু ও নেই বেহায়ার মতো অন্যের হাসবেন্ডের পিছু পড়ে আছেন।

ইয়ানার কথায় এলিজা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো আর নাহলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। কি যোগ্যতা আছে তোমার পারফির পাশে থাকার? কোথায় তুমি আর কোথায় পারফি। মিডিক্লাশ মেয়ে একটা, তুমি আমার পারফিকে ফাশিয়ে বিয়ে করে আমার থেকে ওকে কেঁড়ে নিয়েছো। তোমার মতো মিডেলক্লাস মেয়েদের কাজ এইতো অন্যের জিনিস কেঁড়ে নেওয়া।

ইয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো যতটুকু বলেছেন এখানেই থেমে যান। ওই মুখ দিয়ে আর একটা বাজে কথা বের করলে খুব খারাপ বলে দিলাম মিস এলিজা। মিডিলক্লাস আমি না আপনি নিজের ব্যবহারে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আসলে কে মিডিক্লাস। নেক্সট টাইম আমার আশেপাশেও আসার চেষ্টা করবেন না এ বলে ইয়ানা চলে যেতে নিবে অমনি পিছ থেকে এলিজার কিছু কথা শুনে পা জোড়া থেমে গেলো।

এলিজা রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো তুমি একটা নির্লজ্জ মেয়ে। আগে নিজের লভেল টা দেখো তারপর পারফিকে নিয়ে ভাবো। একজন এতিম কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে হয়ে বিখ্যাত বিজনেসম্যান পারফি চৌধুরীকে ফাঁসিয়ে তার গলায় ঝুলে পড়েছো। এখনো সময় আছে পারফির জীবন থেকে সরে যাও।

এলিজার কোনো কথা ইয়ানার কানে গেলো না শুধু একটা কথাই কানের কাছে বারংবার বাজতে লাগলো এতিম শব্দটা।ইয়ানা পিছু ঘুরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো কি যা-তা বলছেন? কে এতিম হুম? আর একটা বাজে কথা বললে আমি এখানে পারফিকে ডাকতে বাধ্য হবো বলে দিলাম।

এলিজা বাঁকা হেসে বললো এমন ভাব করছো যেনো কিছুই জানো না। নিজে তো খুব ভালো করেই জানো রাস্তায় পড়ে থাকা মেয়ে তুমি। তোমাকে কুড়িয়ে নিয়ে নিজের পরিচয় এ বড় করেছে তোমার বর্তমান বাবা। কে জানে কার কুকর্মের ফল তুমি যার জন্য রাস্তায় ফেলে রেখে গিয়েছিলো। বিশ্বাস না হলে নিজের বাবার কাছ থেকে সত্যিটা জেনে নিতে পারো। অবশ্য সবতো তোমার জানাই, এখন না জানার ভান করে আমার পারফির গলায় ঝুলে আছো। কিন্তু বেশিদিন এভাবে ঝুলে থাকতে পারবে না। পারফি যখন জানবে তুমি একটা রাস্তার মেয়ে তখন তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে।

এলিজার কথায় ইয়ানা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। বিরবির করে বললো এ হতে পারে না, সব মিথ্যে, কিছু বিশ্বাস করি না আমি বলতে বলতে কোনো দিকে না তাকিয়ে ইয়ানা ছুটে কলেজের বাহিরে চলে গেলো। নিজেকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য লাগছে। কি করবে কোন দিকে যাবে কিছু মাথায় আসছে না। ইয়না নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বিরবির করে বললো সব মিথ্যে, আমি জানি ও আমাকে পারফির জীবন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য এগুলো বলেছে।
ইয়ানা নিজেকে যতই বুঝাক তবুও মনটা ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে একটু শক্ত করে সিএনজি তে উঠে বসলো। সোজা চলে গেলো ইসহাক আহমেদের কাছে।

ইসহাক আহমেদে কাজের জন্য বের হতে যাবে তখন কলিংবেল বেজে উঠলো। ইসহাক আহমেদ দরজা খুলে ইয়ানাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে বিচলিত হয়ে ইয়ানাকে বাসার ভিতরে এনে গালে হাত রেখে বললো কি হয়েছে মামনী তোমাকে এমন লাগছে কেনো? কেউ কিছু বলেছে?

ইয়ানা কোনো কথা না বলে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো ইসহাক আহমেদের দিকে।

ইয়ানাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইসহাক আহমেদ আরো বিচলিত হয়ে পড়লেন। বার বার ইয়ানাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন কি হয়েছে।

ড্রয়িংরুমে কথার আওয়াজ পেয়ে ইতি বেগম রান্নার ঘর থেকে ড্রয়িংরুমে এসে ইয়ানাকে অমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তিনি নিজেও বিচলিত হয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে।

ইয়ানা একবার ইতি বেগের দিকে তাকিয়ে ফের ইসহাক আহমেদের দিকে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বললো আমি তোমার আসল মেয়ে না তাইনা বাবা?

ইয়ানার কথায় বুকের ভিতর কামড় মেয়ে উঠলো ইসহাক আহমেদের। মনে পড়ে গেলো ১৭ বছরের আগের সেই রাত্রির কথা।

আজ থেকে ঠিক ১৭ বছর আগে বৃষ্টিময় এক রাতে ইসহাক আহমেদ রাতের বেলা কাজ থেকে ফিরছিলেন। রাত কিছুটা গভীরে ছিলো আর বৃষ্টি হওয়াতে চারপাশে কোনো মানুষজন ছিলো না, কোনো গাড়ি ও ছিলো না। তিনি বুঝলো যে এখন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে লাভ নেই। রাত বারছে তাই হাতে থাকা ছাতাটা মাথায় দিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁসে হাটতে লাগলেন। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় অস্পষ্ট ভাবে একটা বাচ্চার কান্না কানে ভেসে আসলো। এতো রাতে এমন বাচ্চার কান্না কোথা থেকে ভেসে আসছে মাথায় আসলো না ইসহাক আহমেদের। আশেপাশে কোনো বাড়ি ও নেই যে সেখান থেকে কান্না ভেসে আসবে। তিনি সচেতন চোখে বারবার এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো তখন চোখে পড়লো রাস্তার অপজিট পাশে কপড়ে মোড়ানো কিছুর দিকে। তিনি ছুটে রাস্তা অপজিট পাশে যেয়ে কাপড়ে মোড়ানো জিনিসটার দিকে এগিয়ে গেলো।

সেখানে যেতে দেখতে পেলো সেখানে কাপড়ে মোড়ানো ফুটফুটে একটা বাচ্চা কান্না করে চলেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট দেখা গেলো ফুলের মতো একটা নবজাতক বাচ্চার গগনবিহারী চিৎকার।
ওই নবজাতক বাচ্চাকে এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে ইসহাক আহমেদ হাত থেকে ছাতা ফেলে দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো। বৃষ্টিতে ভিজে শরীর ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেছে।
ইসহাক আহমেদ আশেপাশে চোখ বুলালো কেউ আছে কিনা দেখার জন্য। কিন্তু কাউকে চোখে পড়লো না। বুঝলো যে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ফুটফুটে বাচ্চাটাকে এভাবে এখানে ফেলে গিয়েছে। তিনি বাচ্চাটার দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো কোন পাষাণ মা এভাবে পারলো এই ফুটফুটে বাচ্চাটাকে এভাবে ফেলে দিতে?
বাচ্চাটার কান্না ক্রমশ বেড়েই চলেছে তা দেখে তিনি বুকের মাঝে বাচ্চাটাকে আগলে নিলো। তারাতাড়ি ছাতাটা উঠিয়ে দ্রুত বাচ্চাটাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

বাসায় আসতে কলিংবেল চাপতে ইতি বেগম দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে ইসহাক আহমেদের কোলে এক নবজাতক বাচ্চাকে দেখে অবাক হয়ে বললো একি এই বাচ্চা কার? এভাবে ভিজে আছে কেনো?

ইসহাক আহমেদ বিচলিত হয়ে বললো সব পরে বলছি আগে বাচ্চাটাকে ভেজা সব কিছু পাল্টে গরম করার ব্যবস্থা করো। ঠান্ডায় শরীর বরফ হয়ে গিয়েছে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

ইসহাক আহমেদের কথায় ইতি আর কথা না বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর ভেজা কাপড় পাল্টে বাচ্চাটাকে উষ্ণ করতে লাগলো। বাচ্চাটার শরীর উষ্ণ হতে আস্তে আস্তে কান্নার রেশটা কমে আসলো। একসময় বিড়াল ছানার মতো ইতি বেগমের কোলে ঘুমিয়ে পড়লো।
বাচ্চাটা শান্ত হতে ইতি বেগম ইসহাক আহমেদের কাছে জানতে চাইলো কিভাবে কি ঘটেছে।

ইসহাক আহমেদ আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে বললো ইতি বেগমকে। সব শুনে ইতি বেগমের ও খারাপ লাগলো। তখন ইসহাক আহমেদ বললো আজ থেকে ও আমাদের মেয়ে। আমরা ওকে আমাদের পরিচয়ে বড় করবো।

ইতি বেগম তাকালো বাচ্চাটার দিকে। বাচ্চাটার দিকে তাকাতে খুব মায়া হলো ইতি বেগমের। ফুটফুটে ফুলের মতো বাচ্চাটা তার সাথে লেপ্টে আছে। ইতি বেগম ও ইসহাক আহমেদের কথায় সম্মতি দিলো যে এখন থেকে এটা ওদের মেয়ে।

বাচ্চাটার নাম দিলো ইমার সাথে মিলিয়ে ইয়ানা। ইমা তখন খুব ছোট, তখন নিজের একটা বোন পেয়ে ইমা সে কি খুশি। আস্তে ধীরে ইয়ানা বড় হতে লাগলো সেই সাথে ইতি বেগম ও পাল্টে গেলো। ইয়ানার সাথে আস্তে আস্তে দূর ব্যবহার করতে লাগলো।

ইসহাক আহমেদ ইতি বেগমকে অনেক বোঝাতো কিন্তু ইতি বেগম দিন দিন নির্দয় হয়ে উঠলো। তখন থেকে ইসহাক আহমেদ একা হাতে ইয়ানাকে সামলে রাখতো। বুকের ভিতর সবসময় আগলে রাখতো। কখনো একবারের জন্য ভাবে নি ইয়ানা তার আপন মেয়ে না। তার কাছে ইমা, ইয়ানা সমান ছিলো। দুটো মেয়েকে নিয়েই ছিলো তার পৃথিবী।

সবসময় ভেবেছে ইয়ানাকে ওর আসল পরিচয় কখনো জানতে দিবে না। ইতি বেগম যতই ইয়ানার প্রতি নির্দয় থাকুক না কেনো ইসহাক আহমেদ কাঠকাঠ বলে দিয়েছিলো যদি কোনো দিন ইয়ানাকে ওর আসল পরিচয় জানায় তাহলে তার চেয়ে বেশি খারাপ আর কেউ হবে না।
ইতি বেগম ও তাই যাই করুক না কেনো ইয়ানার সাথে কিন্তু কখনো ও যে তার নিজের মেয়ে না সেটা ইয়ানার সামনে ভুলেও বলে নি।

আর রইলো ইমা, ইয়ানা ছিলো ইমার কলিজার টুকরো বোন। ইসহাক আহমেদের মতো সব সময় বোনকে আগলে রেখেছে। কখনো ভাবে নি ও ওর আপন বোন না। কখনো জানতেও দিবে না বোনকে যে ওর বোন ওর আপন বোন না। কিন্তু সত্যি কথা কি আদো কোনো দিন লুকিয়ে রাখা যায়?

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৮

ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে ঝাকিয়ে পাগলের মতো কান্না করতে করতে বললো কি হলো বাবা কথা বলছো না কেনো? বলো না আমি তোমার মেয়ে কিনা? বলোনা ও সব মিথ্যা বলছে, আমি শুধু তেমার মেয়ে। আমিতো তেমার মেয়ে শুধু তোমারি মেয়ে কথাগুলো বলে বিলাপ করে কান্না করতে লাগলো ইয়ানা৷

ইয়ানার কান্নায় ইসহাক আহমেদ ভাবনা থেকে বের হলো। তারাতাড়ি করে ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে বললো কে বলেছে মামনী তুমি আমার মেয়ে না? তুমি শুধুই আমার মেয়ে। তুমি আমাকে বলো কে তোমাকে কি বলেছে? আমি এখনি তাকে তোমার কাছে এনে জিজ্ঞেস করবো আমাকে মেয়েকে কেনো মিথ্যা বলেছে।

ইয়ানা কিছুক্ষণ ইসহাক আহমেদের বুকে পড়ে কান্না করে হঠাৎ করে ইসহাক আহমেদকে ছেড়ে কিছুটা দূরে যেয়ে কন্নারত গলায় বললো আর মিথ্যে বলো না বাবা, আমাকে তুমি রাস্তা কুড়িয়ে পেয়েছিলে তাইনা? আর এই জন্যই মা আমাকে এতো বছর দূরে ঠেলে দিয়েছিলো?

ইয়ানার কথায় ইতি বেগম ইয়ানার দিকে যেতে যেতে বললো এরকম কিছু না ইয়ানা। তুই আমাদের মেয়ে, কে কি বলেছে সেটা মাথা থেকে ঝেরে ফেল মা। এই যে আমি তোর মা আর এই তোর বাবা।

ইতি বেগমকে নিজের দিকে এগোতে দেখে ইয়ানা সরে যেয়ে কান্না করতে করতে বললো তোমরা সবাই মিথ্যা বলছো, আমার কাছে আসবে না এ বলে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইয়ানা দৌড়ে ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে ছু/রি নিয়ে হাত বরাবর ধরলো।

ইয়ানার কাজে ইসহাক আহমেদ আর ইতি বেগম দুজন ভরকে গেলো। ইসহাক আহমেদ ইয়ানার দিকে যেতে যেতে বললো ইয়ানা মামনী এমন পাগলামো করে না। এই যে আমি, আমি তোমার বাবা হই বিশ্বাস করো মামনী তুমি আমারি মেয়ে।

ইয়ানা ইসহাক আহমেদকে থামিয়ে দিয়ে বললো এদিকে আসবে না বাবা আমি কিন্তু ছু/রি চালিয়ে দিবো। আমি সত্যিটা জানতে চাই, আমাকে আর মিথ্যে বলো না বাবা। আমাকে এই মুহূর্তে সত্যি বলবে আর নাহলে আমি নিজেকে নিজে শেষ করে দিবো এ বলে ইয়ানা হাতে ছু/রি চালাতে যাবে অমনি ইসহাক আহমেদ করুণ স্বরে বললো না মামনী এমন করো না, আমি বলছি, আমি সব বলছি তুমি একটু শান্ত হও মামনী হাত জোর করে বলছি তোমাকে।

ইসহাক আহমেদের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো ইয়ানা, ছু/রি টা আস্তে করে রেখে ঝাপসা চোখে ইসহাক আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললো তার মানে সত্যি আমি তোমার মেয়ে না? বলতে বলতে ইয়ানা মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলে ইসহাক আহমেদ দৌড়ে যেয়ে ইয়ানাকে আগলে নিলো। ইতি বেগম ও দৌড়ে এসে ইয়ানাকে ধরলো।
——————————————
পারফি দুপুরে আসলো ইয়ানার কলেজের সামনে। মেয়েটা আজ কলেজে একা তাই সময় করে নিজেই আসলো নিতে। অনেক্ষণ যাবত অপেক্ষা করে চলেছে কিন্তু ইয়ানার দেখা মিলছে না। কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে একে একে সব স্টুডেন্ট চলে গেছে কিন্তু ইয়ানা এখনো আসছে না দেখে পারফি গাড়ি থেকে নেমে কলেজে প্রবেশ করলো। চারপাশে চোখ বুলালো দুই একটা স্টুডেন্ট ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না।

কলেজের ভিতর ইয়ানাকে না পেয়ে পারফি মনে মনে ভাবলো বাসায় চলে গেলো নাতো? কিন্তু কলেজ তো মাত্র ছুটি হলো বাসায় গেলেতো আমার সামনে দিয়েই যেতো।
পারফি এবার পকেট থেকে ফোন বের করে ইয়ানার নাম্বারে কল লাগালো।রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। আরো কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। পারফির কপালে এবার ভাজ পড়লো, ইয়ানাতো এমন করে না। ফোন করলে সাথে সব সময় চেষ্টা করে প্রথম বারে ফোন রিসিভ করতে। আজ হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারছে না। এবার কল করলো পিয়াসা বেগমের কাছে কিন্তু তার ফোন ও রিসিভ হচ্ছে না তা দেখে পারফির এবার টেনশন হতে লাগলো কোনো বিপদ হয় নি তো।
পারফি দ্রুত গাড়িতে উঠে ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে ১০ মিনিটের ভিতরে বাসায় পৌঁছে গেলো।
বাসায় প্রবেশ করতে দেখতে পেলো পিয়াসা বেগম রান্না করছে। পারফি পিয়াসা বেগমের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো আম্মু কখন থেকে ফোন করছি ফোন তুলছিলে না কেনো?

পিয়াসা বেগম পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কাজ করছিলাম বাবা, ফোন রুমে তাই শুনতে পাই নি, কিছু কি হয়েছে?

ইয়ানা কোথায়? আমাকে না বলে বাসায় চলে এসেছে কেনো?

পিয়াসা বেগম তরকারি নাড়াচাড়া করছিলো পারফির কথায় হাতজোড়া থেমে গেলো। পারফির দিকে তাকিয়ে বললো ইয়ানা চলে এসেছে মানে? ওতো এখনো আসে নি কি বলছিস তুই?

পিয়াসা বেগমের কথায় পারফি চিন্তিত মন আরো চিন্তিত হয়ে পড়লো। পিয়াসা বেগম চিন্তা করবে ভেবে তারাতাড়ি কথা ঘুড়িয়ে বললো ওহ্ আমিতো ভুলেই গিয়েছি ইয়ানা বলেছিলো আজ ওদের বাসায় যাবে, বাবা এসে নিয়ে গিয়েছে হয়তো।

পারফির কথায় পিয়াসা বেগম যেনো জীবন ফিরে পেলো। তখন পারফির মুখে ইয়ানার ওই কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কোনো বিপদ হয় নাইতো।
পিয়াসা বেগম বললো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি আমাকে। কাজের প্রেশার বেশি নাকি যে সব গুলিয়ে ফেলছিস?

হ..হ্যা ইদানীং একটু বেশি প্রেশার যাচ্ছে। আচ্ছা তুমি রান্না করো আমার একটু কাজ আছে এখন যেতে হবে।

সেকি মাত্র এইতো আসলি, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে যা।

বাহিরে খেয়ে নিবো ইমার্জেন্সি কাজ পড়ে গিয়েছে বলতে বলতে পিয়াসা বেগমকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো।
পারফির ফের গাড়িতে উঠে ফোন লাগালো ইসহাক আহমেদের কাছে। ইসহাক আহমেদের ফোন ও রিসিভ হচ্ছে না। বারবার ফোন করতে লাগলো কিন্তু কোনো ফলাফল পাচ্ছে না। টেনশনে পারফির মনে কু ডাকতে লাগলো। গাড়ি ছুটালো ইয়ানাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
——————————————-
ইয়ানা পাথর হয়ে নির্বিকার ভাবে বসে আছে। জীবনের এতো বড় একটা ধাক্কা মেনে নিতে পারলো না। এ যেনো এক অনুভূতি শূন্য পাথরে রুপ নেওয়া ইয়ানা।

পাশেই ইসহাক আহমেদ বসা, চোখ জোড়া ভিজে আছে। কিছুক্ষণ আগে ইয়ানা সব জানার জন্য অনেক পাগলামো করছিলো, নিজের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো, শেষে কোনো উপায় না পেয়ে ইয়ানাকে সব কথা বাধ্য হয়ে খুলে বলতে হলো। জীবনে কোনো দিন ভাবে নি এভাবে সত্য টা সামনে চলে আসবে। তার কলিজার টুকরো মেয়েটা যেনে যাবে সে ওর বাবা না। কষ্ট বুকটা ফেটে যাচ্ছে, মেয়েটার দিকে আজ তাকানো যাচ্ছে না।

ইয়ানার অন্য পাশে ইতি বেগম বসা তার চোখেও পানি। তিনি ইয়ানাকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে লাগলো আমাকে ক্ষমা করে দিস মা, সৎ মা আসলেই কোনো দিন আপন মা হয় না তাই তোকে পর করে রেখেছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর মা তোকে যখন প্রথম এই দুই হাত দিয়ে কোলে তুলে নিয়েছিলাম তখন অদ্ভুত এক টান অনুভব করেছিলাম তোর প্রতি। তার পর থেকে একটা বারের জন্য ভাবি নাই তুই আমার মেয়ে না। ইমা আর তোকে নিজের সবটা ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে লাগলাম।
তুই যখন একটু বড় হয়েছিলি তখন এলাকার বিভিন্ন মানুষ এসে আমাকে বলতো পর কখনো আপন হয় না। এই মেয়েকে এতো আদর দিয়ে বড় করছো এক সময় দেখবে এই মেয়ে তোমাকে পড় করে দিয়ে চলে গেছে। তোমার সব সুখ কেরে নিয়েছে আরো অনেক ধরনের কথা বলতো। আমি তাদের কথা কানে তুলতাম না উল্টো তাদের কথা শুনিয়ে দিতাম। তারপর তুই যখন আরেকটু বড় হয়েছিলি তখন এলাকার মানুষ তোর সামনে বলতো তুই আমাদের আসল মেয়ে না, আমরা তোকে কুড়িয়ে পেয়েছি। তুই তখন ছোট ছিলি তাই ওদের কথার মানে বুঝতি না।
তোর বাবা সারাদিন আতঙ্কে থাকতো তুই বড় হলে এলাকার মানুষের কথার মানে তুই বুঝে যাবি। তিনি চাইতো না কোনো দিন তোর সামনে সত্যিটা আসুক। তিনি চাইতো তুই সারাজীবন তার আপন মেয়ে হয়ে থাকবি তাই তোর বাবা হুট করে সিদ্ধান্ত নিলো এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে অন্য এলাকায় যেখানে আমাদের কেউ যেনো না চিনে আর সত্যিটাও যেনো তোর সামনে কখনো না আসে।

এই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাওয়া আমার ছিলো ঘোর আপত্তি। কারণ ছোট বেলা থেকে এই এলাকায় আমি থেকে এসেছি। ওই এলাকায় এই ছিলো আমার বাবার বাড়ি তাই ছোট বেলা থেকে ওই এলাকা আমার বেড়ে ওঠা। সেদিন আমি তোর বাবার বিরুদ্ধে বললাম আমি এ এলাকা ছাড়তে রাজি না কিন্তু তোর বাবা আমার কথা শুনে নি, তিনি আমাদের নিয়ে চলে আসলো অন্য এলাকায়।
অন্য এলাকায় আসার পর সেদিন প্রথম বারের মতো আমার মনে হয়েছিলো তুই আমার আপন মেয়ে না। তোর জন্য আমার ছোট বেলা থেকে বেড়ে ওঠা এলাকা ছেড়ে দিতে হয়েছে। সেদিন মনে হলো আসলেই পর কখনো আপন হয় না। তুই পর তাই তুই আমার সুখ কেঁড়ে নিচ্ছিস। সেদিনের পর থেকে আস্তে আস্তে তোর প্রতি আমার বিরক্তবোধ শুরু হলো। তোর বাবা তুই বলতে পাগল ছিলো তখন আমার মনে হতো তুই আমার সব কেঁড়ে নিচ্ছিস, মনে হতো আমার ইমার থেকে ওর বাবাকে তুই কেঁড়ে নিচ্ছিস দিন দিন, তাই তোকে সহ্য করতে পারতাম না। সেই থেকে তোকে নিজের থেকে দূরে রেখে পর করে দিয়েছি।

কথাগুলো বলে থামলো ইতি বেগম। তারপর ডুকরে কেঁদে উঠে ফের বললো কিন্তু বিশ্বাস কর মা আমার এতো দিনের কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত। তুই শুধু আমার মেয়ে, আমার মেয়ে হয়ে থাকবি। সেই প্রথম যেদিন তোকে কোলে নিয়ে নিজের বুকে আগলে নিয়েছিলাম ঠিক সেভাবে বাকি জীবন আগলে রাখতে চাই। এসব কথা তুই কখনো মাথায় ও আনবি না। তুই আমার সোনা মেয়ে, আমার মেয়ে হয়েই সারাজীবন থাকবি।

ইতি বেগমের সব কথা নীরবে শুনে গেলো ইয়ানা। এতো কিছু শোনার পর ও ইয়ানার ভিতর কোনো ভাব ভঙ্গি দেখা গেলো না। ঠিক আগের মতো নির্বিকার ভাবে নীরবে বসে আছে।

ইয়ানার অবস্থা দেখে ইসহাক আহমেদ, ইতি বেগম মিলে ইয়ানাকে অনেক কিছু বলে স্বাভাবিক করতে চাইলো কিন্তু ইয়ানার কোনো রেসস্পন্স নেই তা দেখে দুজনের মন হুহু করে কেঁদে উঠলো।

তখন কলিংবেল বেজে উঠলো। ইতি বেগম নিজের চোখের পানি মুছে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে আস্তে ধীরে যেয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতে ভেসে উঠলো পারফিট চিন্তিত মুখশ্রী।

পারফি চিন্তিত গলায় বললো আন্টি ইয়ানা কি এখানে এসেছে? আপনারা কেউ ফোন রিসিভ করছেন না কেনো? কিছু কি হয়েছে? ইয়ানা ঠিক আছে?

পারফির বিচলিত কন্ঠস্বর শুনে ইতি বেগম কি জবাব দিবে খুঁজে পেলো না। কি বলবেন উনি তোমার ইয়ানা ঠিক নেই? কোন মুখে সব খুলে বলবে কিছু বুঝতে পারলো না। ইতি বেগম দরজার সামনে থেকে সরে ভাঙা গলায় বললো ভিতরে এসো।

ইতি বেগমের ভাঙা গলা শুনে পারফি আরো ব্যাকুল হয়ে গেলো। বুঝতে পারছে কিছু হয়েছে। তখন বাসায় প্রবেশ করতে বসার ঘরে সোফায় ইয়ানাকে বসে থাকতে দেখে সেখানে এগিয়ে গেলো। ইয়ানার কাছাকাছি আসতে পারফির বুকের ভিতর কামড় মেরে উঠলো। কেমন বিধ্বস্ত লাগছে ইয়ানাকে, চোখ গুলো ফুলে গেছে, কেমন নির্বিকার ভাবে বসে আছে তা দেখে পারফি কাঁপা কাঁপা পায়ে ইয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ইয়ানার দুই গালে হাত দেখে বিচলিত হয়ে বলতে লাগলো এই ইয়ানা কি হয়েছে তোমার? তোমাকে দেখতে এমন লাগছে কেনো? কেউ কিছু বলেছে তোমায়? বলোনা কি হয়েছে তোমার বিড়াল ছানা?

পারফি এতো কিছু বলার পর ও ইয়ানার কোনো রেসপন্স না পেয়ে পারফি আরো বিচলিত হয়ে পড়লো। বিচলিত হয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করেই চলেছে কিন্তু ইয়ার ভিতরে কোনো ভাব ভঙ্গি প্রকাশ পেলো না।

পারফিকে এমন বিচলিত হতে দেখে ইসহাক আহমেদ মাথা নিচু করে ভাঙা গলায় বললো ওকে কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই বাবা। আমার মেয়েটা এখন কথা বলার অবস্থায় নেই।

ইসহাক আহমেদের কথায় পারফি ইসহাক আহমেদের দিকে তাকালো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে আমার বিড়াল ছানার? আমাকে সব খুলে বলুন প্লিজ। ওকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেনো? কে কি করেছে ওর সাথে আমাকে সব বলুন বাবা।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰

তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-২৫+২৬

0

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২৫

ছাঁদে বসে বেলুন ফুলাচ্ছে প্রীতি আর শাফিন ফুল দিয়ে ছাঁদ ডেকোরেশন করছে।
আজ ইয়ানার বার্থডে তাই মূলত এসব কাজ করা। একটু অবাক করার বিষয় হলেও পর পর তিনজনের বার্থডে এক সাথে পড়ে গেলো।

তখন সেখানে আসলো পারফি। চারেদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললো তোরা দুজনেইতো সব কিছু করতে পারছিস আমি বরং বসে থাকি তোরা সামলা এ দিকটা।

শাফিন বলে উঠলো শালা তুই করবি সবার থেকে বেশি কাজ বিকজ তোর বউর বার্থডে। এদিকে আয় আমাকে হেল্প কর।

পারফি ভ্রু কুঁচকে বললো তুই যে সারাদিন শালা শালা করিস তুই আমার কোন বোনকে বিয়ে করেছিস যে আমি তোর শালা হই?

শাফিন বাঁকা হেসে বললো তোর বোন কয়টা শুনি?

আমার বোনের দিকে তাকালে তোর চোখ কানা করে দিবো।

শাফিন মজা করে বললো ওরে বাবা ভয় পেয়েছি আমি। আমার বয়েই গেছে তোর বাদর মার্কা বোনের দিকে নজর দিতে। তারপর শাফিন দূরে বসে বেলুন ফুলাতে থাকা প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো এই ফাটা বাঁশ বেলুন গুলো এখানে নিয়ে আয় জলদি।

প্রীতি ক্ষেপে পারফির উদ্দেশ্যে বললো ভাইয়া আমাকে আলি জালি বলতে না করো কিন্তু বলে দিলাম।

পারফি শাফিনের মাথায় গাট্টা মেরে বললো ওকে না ক্ষেপালে তোর পেটের ভাত হজম হয় না?

শাফিন হেসে বললো এটাইতো মজা।

হাসি ঠাট্টার মাঝে তিনজন মিলে ছাঁদটাকে সুন্দর করে সাজালো।

সব শেষে কেক বের করতে সেখানে লেখা দেখলো শুভ জন্মদিন স্নিগ্ধ ফুল।
স্নিগ্ধ ফুল নামটা দেখে প্রীতি বলে উঠলো ওহ্ হহহো স্নিগ্ধ ফুল।

শাফিন টিটকারি মেরে বললো আজ একটা স্নিগ্ধ ফুল নেই দেখে স্নিগ্ধ ফুল নাম লিখে কেক ও কাটতে পারি না।

প্রীতি খোঁচা মেরে বললো তোমার মতো ঢেরসের হবে আবার স্নিগ্ধ ফুল হুহ্।

তুই চুপ থাক ফাটা বেলুন, আমি এক হাতে তুরি বাজালে এমন হাজারটা ফুল আমার সমনে এসে হাজির হবে। আমি আবার ভদ্র ছেলে তাই মেয়েদের দিকে তাকাই না।

শাফিনের কথায় মুখ ভেঙচি কাটলো প্রীতি।

তখন হাতে পায়েস নিয়ে ছাঁদে আসলো পিয়াসা আর শাহানা বেগম।
পিয়াসা বেগম আসতে আসতে বললো কতদূর হলো তোদের সাজানো?

প্রীতি লাফ মেরে বলে উঠলো সব কিছু কমপ্লিট এবার ১২ টা বাজার অপেক্ষা।

পারফি ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বললো আর ১৫ মিনিট আছে, প্রীতি যা ওকে নিয়ে আয় এবার।

প্রীতি বলে উঠলো এখন ইয়ানাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আনা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি গেলে বলবে প্রীতি তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে এতো রাতে ছাঁদে যাবো কি করতে। এতো রাতে ছাঁদে যাবো না, ছাদে ভূত আছে আরো কতো কি। এর চেয়ে ভালো ভাইয়া তুমি নিয়ে এসো গিয়ে কারণ তোমার সব কথা ও এক কথায় এই মেনে নেয়।

শাফিন পারফির পিঠে চাপর মেরে বললো যা যা বউকে নিয়ে আয়।

সবাই বললো পারফিকে নিয়ে আসতে তাই পারফি পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য তখন পিছু ডেকে পিয়াসা বেগম বললো তোর আব্বুকে আর আঙ্কেলকে উপরে পাঠিয়ে দিস। সেই কখন বলেছে আসছে এখনো আসার নাম গন্ধ নেই, তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আর এ জনমে শেষ হবে না।

পারফি সম্মতি দিয়ে পাভেল চৌধুরী আর শরীফ আহমেদকে ডেকে দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে প্রবেশ করতে ইয়ানার স্নিগ্ধ ঘুমন্ত মুখশ্রী চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কম্বল জড়িয়ে বিড়াল ছানার মতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।
পারফি আস্তে করে এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। কিছুক্ষণ ওই নিস্পাপ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলো। এতো সুন্দর ঘুমটা ভাঙাতে ইচ্ছে হলো না কিন্তু সময় চলে যাচ্ছে এখন না ডেকে কোনো উপায় নেই তাই আলতো করে ইয়ানাকে ডাক দিলো।

করো ডাকে ইয়ানার ঘুম হালকা হয়ে আসলো। পিটপিট করে চোখ খুলতে পারফিকে চোখে পড়লো। এতো রাতে পারফিকে ডাকতে দেখে তারাতাড়ি উঠে বসে বললো ক..কিছু হয়েছে? ডাকছেন কেনো?

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো রিলাক্স কিছু হয় নি। একটু উঠতে পারবে? কাজ আছে।

কি কাজ?

আগে উঠে চোখমুখে পানি দিয়ে আসো তারপর বলছি।

ইয়ানা বাধ্য মেয়ের মতো উঠে চোখমুখে পানি দিয়ে আসলো।

পারফি ইয়ানার দিকে একটা তোয়ালে বাড়িয়ে দিলো। ইয়ানা সেটা নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো এবার বলেন কি কাজ?

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বললো ছাঁদে যাবে?

এতো রাতে ছাঁদে যাওয়ার কথা শুনে ইয়ানা বেকুব বনে গেলো। এতো রাতে ছাঁদে যেয়ে কি হবে? নাকি কানে ভুল শুনছে? সঠিকটা জানার জন্য ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো কি?

ইয়ানার বিস্ময় বুঝে পারফি মুখ টিপে হাসলো তাই ফের বললো ছাঁদে যাবে?

পারফির মুখে ফের একি কথা শুনে ইয়ানা কি রিয়াকশন দিবে ভুলে গেলো। কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো এতো রাতে ছাঁদে যাবো কি করতে?

পারফি ইয়ানাকে একটু বিভ্রান্তে ফালার জন্য ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো প্রেম করতে……

পারফির মুখে প্রেম করতে শুনে ইয়ানার চোখ কপালে উঠে গেলো। চোখ গোল গোল করে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কি?

ইয়ানার রিয়াকশন দেখে হেসে ফেললো পারফি। তারপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো রিলাক্স মজা করছি আমি। আজকে চাঁদটা খুব সুন্দর ইচ্ছে করছে ছাঁদে যেয়ে মুহূর্তটা উপভোগ করতে কিন্তু একা একা যেতে ভয় লাগছে যদি ভূতে ঘাড় মটকে দেয়। আমি শুনেছি দুজন থাকলে নাকি ভূত আসে না। সবাই ঘুমাচ্ছে তাই সাথে নেওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছি না।

পারফির কথায় ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো পারফির দিকে। এই লোক কি এতো রাতে আমার সাথে মজা করছে? ঘুম থেকে উঠিয়ে কিসব আজগুবি কথা বলে চলেছে। ইয়ানা কিছু বলতে যাবে কিন্তু পারফি কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো ছাঁদের দিকে।

সিঁড়ি পেরিয়ে চুপচাপ পারফির সাথে ছাঁদে উঠতে লাগলো ইয়ানা। ছাঁদের কাছাকাছি আসতে দেখতে পেলো সব কিছু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এবার ইয়ানার ভয় লাগতে লাগলো এতো রাতে পারফি কেনো ছাঁদে আসছে তা মাথায় আসছে না। ভয়ে আরেক হাত দিয়ে পারফির শার্টের হাতা খামছে ধরলো।

পারফি একবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছাদের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। তারপর ঠিক ১২ টা বাজতে দরজা খুলে ইয়ানাকে নিয়ে প্রবেশ করলো সাথে সাথে পুরো ছাঁদ আলোকিত হয়ে গেলো উপর থেকে কতোগুলো ফুল এসে পড়লো ইয়ানার গায়ে। আর সবাই চিল্লিয়ে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে ইয়ানা।

সব কিছু দেখে ইয়ানা বিস্ময়ে হতভাগ হয়ে গেলো। অটোমেটিক বিস্ময়ে মুখে হাত চলে গললো। এতো রাতে এমন একটা সারপ্রাইজ পাবে কল্পনাও করে নি। এক কথায় সব কিছু কল্পনার বাহিরে ছিলো।
ইয়ানা খুশিতে প্রীতিকে ঝাপটে ধরলো, এক এক করে শাহানা ও পিয়াসা বেগমকেও জড়িয়ে ধরলো। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো এভাবে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

তারপর আস্তে ধীরে কেক কাটতে সবাই নিয়ে গেলো ইয়ানাকে। কেকের উপরে শুভ জন্মদিন স্নিগ্ধ ফুল নামটা দেখে চমকে গেলো। স্নিগ্ধ ফুল নামটার মানে বুঝলো না, কে স্নিগ্ধ ফুল? এই নামে তো কেউ ডাকে না। তখন হঠাৎ ইয়ানার মনে পড়লো সেদিন কিডন্যাপ হওয়ার পর পারফি ওকে এই নামে সম্মোধন করেছিলো। তখন বিষয়টা ওতোটা খেয়ালে ছিলো না কারণ তখন মাথায় ছিলো ভয় ভীতি। কিন্তু আজ খুব অবাক লাগছে এই নামটা দেখে।
অবশেষে সব বিস্ময় কাটিয়ে ইয়ানা ইয়ানা কেক কাটলো। এক এক করে সবাইকে খাইয়ে দিলো, সবাই ও ওকে খাইয়ে দিলো। কেক খাওয়া হলে পিয়াসা আর শাহানা বেগম ইয়ানাকে পায়েস খাইয়ে দিলো। সবার এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে ইয়ানার চোখ চিকচিক করে উঠলো।

সব শেষে সবাই মিলে আরো কিছু সময় থেকে ছোটদের আড্ডা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে বড়রা সবাই নিচে নেমে গেলো। এখন ছাদে আছে শুধু পারফি, ইয়ানা, শাফিন ও প্রীতি।

শাফিন ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো সারপ্রাইজ কেমন লেগেছে ফুল পরী?

ইয়ানা মুচকি হেসে বললো অনেক অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া। তোমাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্রীতি বলে উঠলো সব ধন্যবাদের প্রাপ্য আমি কজ সমস্ত ক্রেডিট কিন্তু আমার।

ইয়ানা প্রীতিকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো এত্তো গুলো ভালোবাসা তোর জন্য জানু।

শাফিন প্রীতির দিকে কিছু একটা ইশারা করতে প্রীতি ইয়ানাকে ছাড়য়ি বললো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তোমরা আড্ডা দেও আমি এবার যাই এ বলে ইয়ানাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো।

প্রীতি যেতে শাফিন ও হামি দেওয়ার ভান করে বললো আমার ও মনে হয় ঘুম পাচ্ছে তোমরা থকো আমি যাই কেমন? এ বলে শাফিন ও চলে গেলো।

ইয়ানা বুঝলো যে ওরা প্লান করে ওদের একা ছাড়ার জন্য এভাবে চলে গেছে। এবার ইয়ানার আস্তে আস্তে অস্বস্তি লাগতে লাগলো। পুরো ছাঁদ জুড়ে পিনপতন নীরবতা। পারফি কিছুটা দূরে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে নীরবে। ইয়ানা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না।
তখন পারফি কোমল স্বরে বললো এদিকে আসো।

পারফির ডাকে ইয়ানা ধীর পায়ে পারফির কাছে এগিয়ে গেলো।

ইয়ানা কাছে আসতে পারফি ঠোঁট টিপে হেসে বললো চাঁদ দেখবে না?

পারফির কথায় ইয়ানা আকাশের দিকে তাকালো কিন্তু কোনো চাঁদ খুঁজে পেলো না৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারে আচ্ছন্ন আকাশ জুড়ে, তা দেখে ইয়ানা পারফির উদ্দেশ্যে বললো আকাশে তো আজ কোনো চাঁদ এই নেই তার মানে আমাকে এখানে আনার জন্য ওগুলো বলেছিলেন তখন?

পারফি ইয়ানার দিকে তকিয়ে বললো আমিতো চাঁদ দেখতে পারছি।

ইয়ানা ফের আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো কোথায়?

আমার সামনে দাঁড়িয়ে।

পারফির কথার মানে ইয়ানা বুঝতে না পেরে ইয়ানা বললো মানে?

কিছুনা মজা করছিসলাম এ বলে পকেট থেকে একটা বকুল ফুলের ছোট একটা মালা বের করে ইয়ানা হাত ধরে আলতো করে হাতে পড়িয়ে দিলো মালাটা পারফি।

এদিকে ইয়ানা অবাক হয়ে তাকালো পারফির দিকে। বকুল ফুল ওর সবচেয়ে প্রিয় ফুল সেটা এই লোক জানলো কিভাবে তাই ভাবছে। সাথে খুব খুশি ও হলো প্রিয় ফুলের মালা উপহার পেয়ে। এটা ওর কাছে সবচেয়ে দামি উপহার। হাতে পড়িয়ে দেওয়া মালাটা আলতো করে ছুঁয়ে দিতে দিতে বললো আপনি জানলেন কীভাবে আমার বকুল ফুল পছন্দ?

ইয়ানার কথার উত্তরে পারফি কোনো জবাব দিলো না। তাকিয়ে রইলো ইয়ানা হাস্যজ্জ্বল মুখপানে। সবাই এতো দামি দামি উপহার দিলো সেগুলো রেখে এই মেয়ে সামন্য ৫০ টাকার একটা ফুলের মালা পেয়ে কতোটা খুশি। মনে হচ্ছে সব দামী উপহার এই ফুলের কাছে তুচ্ছ।
পারফি ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বললো পছন্দ হয়েছে?

ইয়ানা ফুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম উপহার এটা আমার কাছে। আপনাকে এত্তোগুলো থ্যাংক ইউ।

ফুল পেয়ে ইয়ানাকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি মনে মনে বললো একটা ফুল যদি তোমাকে এতো আনন্দ দিতে পারে তাহলে এমন ফুল তোমাকে হাজার বার দিতেও আমি রাজি স্নিগ্ধ ফুল।

পারফি ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন দরজার কাছে কিছু পড়ার শব্দ সেদিকে তাকালো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰