Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 306



আমার তুমি পর্ব-০৭

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“মা ও কে খুব মেরেছে।
আর বলেছে যদি আপনার সাথে যোগাযোগ করে তা হলে ভালো হবে না।”

-“কারণ টা কি তোমার বিয়ে ভেঙ্গে যাবে তাই?”

-“হুম।
মায়ের মতে।
প্লিজ একটা কিছু করুন। আমার বোন টা ভীষণ কষ্টে আছে।”

কথা গুলো বলতে বলতে আয়না কেঁদে ফেলে।
রাহাত পাশেই বসে আছে। সাদনান সামনে বসে আছে বলে ধরতে পারছে না। কিছু বলে সান্ত্বনাও দিতে পারছে না।
সাদনান বড় ভাইয়ের মনের কথা আন্দাজ করতে পেরে সর্ট কার্ট জবাব দেয়

-“চিন্তা করো না মাই ডিয়ার হবু ভাবি।
আমি আমার ছোট জান কে নরক থেকে নিয়ে এসে নিজের বাহুবন্ধনী করে নেবো।”

কথা গুলো বলেই সাদনান চেয়ার ছেড়ে টেবিলের উপর থেকে বাইক এর চাবি টা তুলে নিয়ে হনহনিয়ে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো।তার বুকে ভীষণ জ্বালা করছে। সাদনান আগেই কিছু টা আন্দাজ করে ছিল। আর এখন সে পুরো পুরি কনফার্ম। মিতা সওদাগর এসব করছে।
আয়না তখনো কাঁদছে।
রাহাত আয়না কে নিজের কাঁধে নিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে উঠে

-“আর কেঁদো না।
তুমি আমার ভাই কে চিনো না। ও ওর জিনিস খুব ভালো করেই আগলে রাখতে জানে।”

-“জানেন ছোট মনি প্রিয়তার জন্ম দিয়ে মা-রা যায় অপারেশন থিয়েটারে।
ছোট মনির জরায়ুতে টিউমার ছিল যেটে আগে ধরা পড়ে নি।তাই মনি বাঁচে নি।তখন মা ছোট প্রিয়তা কে আগলে নেয়।মা ওকে খুব ভালোবাসতো। এবং এখনো বাসে।ওর খাবার থেকে শুরু করে ঘুম যাবতীয় সব কাজ মা করতো।
সাথে আমাদের হোটেল। বাবা তো পাগল হয়ে ছয় বছর মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি ছিল ছোট মনির মৃত্যুর পর পাগল হয়ে গিয়ে ছিল।
তখন মা ব্যবসা বাড়ি, আমাদের ছোট প্রিয়তা কে সামলাতো।সাথে ভাইয়া মায়ের সঙ্গে লেখা পড়ার সঙ্গে ব্যবসারও দেখা শোনা করতো।এভাবেই চলছিল দিন। এরমধ্যে প্রিয়তার যখন সাত বছর তখন দাদু হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।এর মধ্যে বাবাও সুস্থ হয়ে গিয়ে ছিল।কিন্তু ঝামেলা হলো তখন যখন দাদু মারা গেলো বাবা সুস্থ হয়ে ফিরে এসে সবার থেকে বেশি প্রিয়তা কে বেশি ভালোবাসত আলাদা একটা যত্ন করতো। আর মা তখন থেকে আবার কেমন হয়ে গেলো।”

কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই আয়না টেবিলে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সব টা পানি এক টানে খেয়ে ফেলে।
অতঃপর গভীর শ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠে

-“এখানে এতো কিছুর মাঝে সব থেকে বড় অপরাধী কে জানেন?”

রাহাত প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠে

-“তোমার মা?”

-“না আমার বাবা।
তিনি যদি তখন এক কথা বিয়ে করবে না বলে চলে আসতো। তাহলেই হতো। না ছোট মনি কে এতো কষ্ট পেতে হতো না প্রিয়তা আর নাই আমার মা এমন পাষাণ হতো।”

আয়না আবারও কেঁদে ফেলে। রাহাত আয়না কে নিজের এক বাহুতে আগলে নিয়ে বলে উঠে

-“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আয়না কিছু বলে না চুপ চাপ পড়ে থাকে সেভাবেই।

——-
জাফর মির্জা গম্ভীর মুখ করে বসে আছে সোফায়। বাড়ির প্রতি টা ব্যক্তি এখানে উপস্থিত আছে।
মূলত সাদনান একটু আগে এমন সব কথা বলেছে যে সবার কাছে মনে হচ্ছে বোমা ফাটার মতো অবস্থা ছিল আর এখন তা শীতল হলো।
আজ্জম মির্জা চুপ কোনো কথা বলছে না সে নির্বিকার। তার বাবা যা সিদ্ধান্ত নেবে তিনি তাই মেনে নেবে।
সবার ভাবনার মাঝেই জাফর মির্জা উঠে দাঁড়ালো সোফা ছেড়ে।
একটু এগিয়ে এসে সাদনানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে

-“রাতে আমার রুমে আসবে।
তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।”

কথা শেষ তিনি হনহনিয়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে।
আম্বিয়া মির্জাও স্বামীর পিছু নিলেন।
সুফিয়া বেগম রান্না ঘরে চলে গেলো। মাইশা সারা নিজেদের রুমে।
যাওয়ার সময় ফুসুর ফুসুর করে কিছু বলাবলি করছিল।
রাহাত বাড়ি আসে নি এখনো।
মাইশার বাবা মফিজুর মির্জা ব্যবসায়িক কাজে দুই দিন যাবত বাড়ির বাহিরে।
আজ্জম মির্জা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছেলে কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“আরেক বার ভেবে দেখতে পারো বিষয় টা।
আমার মনে হয় না শফিক ওর ছোট মেয়ে কে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবে বলে।”

-“ভেবেই বলছি।
আর বিয়ে দিবে না তো আমার অন্য পদ্ধতি জানা আছে।”

শান্ত আর গম্ভীর কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
সালেহা বেগম স্বামীর নিকট এগিয়ে এলেন।
চিন্তিত কণ্ঠে কপালে ভাজ ফেলে শুধালো

-“মেয়ে টা বেশ ভালো।
কিন্তু বাবা কি রাজি হবে?”

আজ্জম মির্জা স্ত্রী কথার কোনো উত্তর করে না।
তিনি ভাবছে।
খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু ভেবে চলছে।
তার ছেলের মাথায় যা বৃদ্ধি ঠিক তার বাপ কে রাজি করিয়ে নেবে তিনি জানেন।
এ-সব ভেবেই আজ্জম মির্জা আপনমনে হাসলেন।

———

-“আমি কি বলেছি বুঝতে পেরেছো?”

-“সুযোগ নিচ্ছো?”

-“মোটেও না।
আমি শুধু তোমার ভালো চাই।”

জাফর মির্জা সাদনান কে এমপি পদে দাঁড় করাতে চায়।
আর তিনি সেটা সাদনান কে বলেছে সাথে এটাও বলেছে এমপি পদে তার জয় নিশ্চিত।
আর চাইলে সে পড়ে পদত্যাগ করতে পারবে।

-“তোমার পর তোমার বাবা আছে।”

-“তা হলে বাবা কেই দেও।”

সাদনানের কথায় জাফর মির্জা একটু চুপ থাকে অতঃপর মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলে উঠে

-“এটা মন্দ বলো নি।
আচ্ছা আমি দলের সাথে কথা বলে দেখছি।”

সাদনান দাদার কথায় মুচকি হেসে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।
আজ্জম মির্জার ভাবনা সত্যি হয়েছে তার ছেলে বৃদ্ধি মান।
কিভাবে জাফর মির্জা কে রাজি করিয়ে নিলো।

——–

রাত প্রায় এগারো টা।
আয়ান বোন কে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো।
আজ প্রিয়তার ভীষণ জ্বর কিন্তু একবারও মিতা সওদাগর আসে নি।শফিক সওদাগর সন্ধ্যা মেয়ের পাশে বসে ছিল।প্রিয়তা তখন ঘুমিয়ে ছিল।আয়না শুধু দেখেছে আর কেউ না।
আয়নাও বসে আছে বোনের পাশে।
আজ আয়না থাকবে এখানে।
আয়ান প্রিয়তার খেয়াল রাখতে বলে সে চলে গেলো।
আয়নাও প্রিয়তার এক পাশে শুয়ে বোন কে জড়িয়ে ধরে।
ঠিক তক্ষুনি বালিশের তলায় থাকা আয়নার ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে আয়না ভাবে হয়তো রাহাত কল করেছে।
কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
সাদনান কল দিয়েছে।
কিন্তু কেন?
আয়না সব ভাবনা বাদ দিয়ে ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে রাশভারী কণ্ঠে সাদনান বলে উঠে

-“এ-তো রাতে ডিসটার্ব করার জন্য দুঃখীত ভাবি।”

-“না না ঠিক আছে।
প্রিয়তা তো জ্বর ঘুমিয়ে পরেছে।”

-“তুমি ফোন টা দেও ওর কাছে।”

আয়না কান হতে ফোন নামিয়ে প্রিয়তা কে ডেকে ওর হাতে ফোন টা দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে

-“নে ধর।
সাদনান ভাই।”

প্রিয়তা পিটপিট করে চোখে তাকিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বলে উঠে

-“আপনি আবার আমার স্বপ্নে এসছেন, সাদনান ভাই?”

প্রিয়তার কথা শুনে আয়নার চোখ ছানাবড়া।
এই মেয়ে কি সব বলছে?
কিন্তু ফোনের ওপাশে থাকা সাদনান ঠোঁট টিপে হেসে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“আমি তোমার স্বপ্নে আসি?”

-“হ্যাঁ।
আসেনেই তো।এইযে এখন এসছেন।
কিন্তু সবসময় আপনি চুপ থাকেন আজ প্রথম কথা বললেন।”

প্রিয়তা ঘুম ঘুম কন্ঠে উত্তর দেয়।
সাদনানের ভ্রু কুঁচকে আসে।
আয়না বুঝতে পারে বোন তার জ্বরের মধ্যে আজেবাজে বলছে।
কিন্তু চুপ চাপ বসে থাকে সে।
সাদনান ওপাশ থেকে এবারও রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে

-“এখন থেকে আর স্বপ্নে নয় রোজ সামনে থেকে দেখতে পারবে।
সে দিন বেশি দূর না আমার ছোট জান।”

#চলবে…….

আমার তুমি পর্ব-০৬

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা ভীষণ ব্যথা পাচ্ছে চুল খামচে ধরে রাখায়।তবুও কিছু বলে নি। কিন্তু তার মাকে নিয়ে এভাবে বলা সে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠে

-“প্লিজ মনি তুমি যা বলার আমাকে বলো।
তবুও আমার মাকে নিয়ে কিছু বলো না।”

-“এই চুপ একদম চুপ।
বেশি বার বেড়েছিস।আর যদি মির্জা বাড়ির মেজো ছেলের আসে পাশে দেখেছি তো তুই আমার আসল রূপ দেখবি।”

কথা গুলো বলেই তিনি প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
প্রিয়তা ধপ করে নিচে বসে পড়ে।
দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে শব্দহীন কান্না কাঁদতে থাকে।
তার ভীষণ কষ্ট হয় এই ষোল বছর বয়সে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। সে তো এখান থেকে মুক্তি চায়।
কিন্তু আজ থেকে তার সেই চেষ্টাও করা যে বারণ।
কেন তার জীবন টা এমন হলো? একটু সুখ হলো কি এমন হতো?
সব অভিমান বাবা আর মৃত মায়ের উপর হয়।তার মা কি করে পারলো এমন নিষ্টুর পৃথিবীর তাকে একা ফেলে চলে যেতে?
একবারও কি মনে হয় নি তার ছোট মেয়ে টা এই নিষ্টুর পৃথিবীর কিভাবে বেঁচে থাকবে?
এসব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা কান্না করতে করতে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে।

————–

-“মা তুমি কেন করো এমন ওর সাথে?
তুমি নিজেও তো কষ্ট পাও ওর সাথে এমন ব্যবহার করে।”

-“চুপ চাপ নিজের রুমে যাও।
আর ভুলেও ভাইকে এসব বলতে যেয়েও না।”

আয়না ঘৃণার দৃষ্টি ফেলে মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে দরজা ঘেঁষে মেঝেতে বসে কাঁদতে কাঁদতে বিরবির করে বলে উঠে

-“আমি জানি না তোকে কষ্ট দিয়ে মা কি পায়।
কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করি যাতে তুই এই নরক জীবন থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাস আমার ছোট কলিজা।”

আয়নাও মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
কি মিল দুই বোনের মাঝে কি সুন্দর ভালোবাসা। তবে তা কারোই প্রকাশ করা হয় না।
তবে তাদের অজান্তেই তারা নিজেদের কষ্ট একে অপরের মাঝে ভাগ করে নিচ্ছে।
শুধু মিতা সওদাগরের জন্য তা প্রকাশে ফুটছে না।

—–
এদিকে মিতা সওদাগর হাউমাউ করে কান্না করছে।সে চায় না এই ছোট্ট নিষ্পাপ জান টাকে কষ্ট দিতে।
কিন্তু তিনি এই মেয়ে কে দেখলে কিছুতেই ভুলতে পারে না তার কালো দিনের কথা গুলো।
সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে মন চায়।
তিনি তার প্রথম যে দিন সংসারের তার স্বামী শফিক সওদাগর দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি ফিরে তিনি সে দিন স্তব্ধ হয়ে গিয়ে ছিলেন।
কারণ তারা একে-অপরে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, আর তাদের দুই টা বাচ্চাও ছিল একজন বারো বছরের একটা পুত্র সন্তান আর সাত বছরের একটা ক্যানা সন্তান ছিল।
সেখানে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে? এটা কোনো স্ত্রী মেনে নিতে পারবে? ভালোবাসার মানুষটার পাশে কাউকে মেনে নেওয়া যায় না সেখানে ভালোবাসার মানুষ তার উপর স্বামী সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে, কি করে মানতো?আর তাই তিনি কোনো দিন মেনে নিতে পারে নি।
প্রিয়তার মা প্রহেলিকা শফিক সওদাগরের ফুফাতো বোন ছিল।
সিরাজ সওদাগর আর তার ছেলে শফিক সওদাগর বোনের এক মাত্র ভাগ্নের বিয়েতে যায়।
সব ঠিক ঠাক ছিল।
কিন্তু বিয়ের দিন জানতে পারে যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ভালো না।
আর তাকে পুলিশ থানায় আটকে রেখেছে তাই সে বিয়ে করতে আসে নি।
সে দিন বোনের দিকে তাকিয়ে প্রহেলিকা কে শফিক সওদাগরের সাথে বিয়ে দেবে বলে ঠিক করে শফিক সওদাগরের বাবা সিরাজ সওদাগর।
শফিক সওদাগর কিছুতেই রাজি না।
কম বয়সে বিয়ে করে ছিল বিধায় তার দুই বাচ্চা আছে কেউ বলতো না।
আর তখন সিরাজ সওদাগর বাধ্য করে তাকে বিয়ে করার জন্য।
তিনিও শর্ত দিয়েছিল বাবা কে যে বিয়ে করবে কিন্তু কখনো স্বামীর অধিকার দেবে না মেনেও নেবে।কারণ তার মন হৃদয়ে, মস্তিষ্ক জুড়ে ছিল তার প্রিয়তমা স্ত্রী আর দুই সন্তান।
সিরাজ সওদাগর তাতেই রাজি হলেন।
অবশেষে বিয়ে করে বউ নিয়ে ওই দিন রাতে বাড়ি ফিরে তারা।
প্রহেলিকা কোনো শব্দ করে নি সে যেনো কাঠের পুতুলের মতো সব মেনে নিয়ে ছিল বাবা, মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।
এক মাত্র মেয়ে ছিলেন তিনি।
চাইলেই তাকে পড়া লেখা করাতে পারতো তার বাবা মা।
কিন্তু প্রহেলিকা সে দিন বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিয়ে করে শফিক সওদাগরের কে।
তবে সে দিন রাতে মিতা সওদাগর কিছু বলে নি।
শফিক সওদাগরও থাকে নি নতুন বউয়ের সাথে।
তিনি মাথায়ও আনে নি আরও একটা বিয়ে করেছে।
প্রথম স্ত্রী কে কথা দিয়েছিলন বাবা যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিনে তিনি কিছু করতে পারবে না।
কিন্তু তিনি প্রহেলিকার ধারে কাছেও যাবে না।
প্রহেলিকা মেনে নিয়ে ছিল সব শুধু মানতে পারে নি মিতা সওদাগর।
উঠতে বসতে খোঁটা আর বাড়ির সব কাজ করাতো ছোট প্রহেলিকা কে দিয়ে।
এভাবে চলছিল দিন।
প্রহেলিকা ইন্টার পাস করেছিল কিন্তু ভার্সিটির আর যাওয়ার সুযোগ হয় নি।দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছিল দুই বছর।
এর মধ্যে শোনা গেলো প্রহেলিকার মা মারা গিয়েছে।
সবাই ছুটে গেলো সে দিন শুধু বাড়িতে রয়ে চায় মিতা আর তার দুই সন্তান।
সেখানে যাওয়ার পর তার মা মারা যাওয়ার দুই ঘন্টা পর তার বাবাও চলে যায়।
প্রহেলিকা তখন পাগল হয়ে পড়ে।
ষোলো বছর বিয়ে হয়ে আঠারো বছর পা দেওয়া যুবতীর মা বাবা সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেলো।
শফিকের ততদিনে প্রহেলিকার প্রতি কিছু টা অনুভূতি তৈরি হয়ে গিয়ে ছিল।
সেখানে তারা দু রাত তিন দিন ছিল আর সেই রাতের ভালোবাসার চিহ্নস্বরূপ প্রিয়তা আসে।
কিন্তু তাতে করে আরও অত্যাচার বেরে যায় মিতার।আগের চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট দিতেন প্রহেলিকা কে।শফিক কিছু বলতো না আর সে তো বাড়িতেও বেশি থাকতো না নতুন নতুন হোটেলের কাজের চাপে ভুলেই বসে ছিল।তার ভুলের কষ্ট একটা মেয়ে দিন রাত সহ্য করছিল।অথচ ভুল টা কিন্তু তারও সমান দোষ ছিল কিন্তু কষ্ট টা শুধু একজনই ভুগ করতো।আর আয়না আয়ান তাদের মনে হতো সত্যি প্রহেলিকার জন্য তাদের সংসারের অশান্তি সাথে দুজনেই ছোট কিছু করার ছিল না।
সিরাজ সওদাগরের কিছু করার ছিল না তিনি ততদিনে বিছানায় থেকে আর উঠতে পারতেন না।
সে নিজেই অন্যর উপর নির্ভরশীল সেখানে তিনি কি করে কি করতেন।

-“মিতু?”

শফিক সওদাগরের ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে মিতা সওদাগর।
চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ে তা শুকিয়ে দাগ বসেছে।
তিনি কঠিন চোখে তাকিয়ে রূঢ় কণ্ঠে খিটখিটে স্বরে বলে উঠে

-“আমাকে তুমি ওই নামে একদম ডাকবে না।
সেই অধিকার তুমি ঊনিশ বছর আগেই হারিয়েছো।”

শফিক সওদাগর আর কিছু বলে না চুপ চাপ লুঙ্গি হাতে ওয়াশ রুম চলে যায়।
তিনি তার কথা রাখতে পারে নি।
আর আজও স্ত্রী কথা রাখতে এই ছোট্ট প্রাণ টার দিকে ফিরেও দেখে না তবুও তার স্ত্রীর ক্ষোভের শেষ নেই।
তার মেয়ের নিশ্চয়ই এই খারাপ বাবা টার উপর বড্ড অভিমান জমে আছে।
আচ্ছা মিতা কি কোনো দিন তার উপর থেকে সেই ওয়াদা তুলে নেবা না?
না, না অবশ্যই তুলে নিবে আর মিতা নিজেও তার ভালোবাসার মানুষের শেষ চিহ্ন কে আগলে নিবে।
আচ্ছা সেই দিন কবে আসবে?
আদোও কোনো দিন আসবে?

————-

-“চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?”

প্রিয়তা স্কুল থেকে বেড়িয়ে এসেই দেখলো আজ সাদনান একা বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আজ সারা আসে নি। আর প্রিয়তার এমন অবস্থা থেকে সাদনানের বুকের ভিতর মুচড় দিয়ে উঠে।
চোখ মুখ ফোলে লাল হয়ে আছে।যে কেউ দেখলে নিসন্দেহে বলে দিতে পারবে মেয়ে অনেক কেঁদেছে।
প্রিয়তা সাদনানের প্রশ্নে একটু ভীতু হয়।আমতা আমতা করে জবাব দেয়

-“বেশি ঘুমিয়েছি।”

-“মিথ্যা।
কান্না করার কারণ কি আমি?”

প্রিয়তার উত্তরে সাদনান শান্ত কন্ঠে বলে উঠে।

-“কি মনে করেন নিজে কে?
আমি কেন আপনার জন্য কান্না করবো?
আর আমার পা আছে আমি হেঁটে বাড়ি যেতে পারবো রোজ আমাকে নিতে আসতে হবে না।”

কথা গুলো প্রিয়তা জোরে জোরে বলেই উল্টো ঘুরে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে। আশে পাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে।কিছু মেয়েও সাদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।অন্য সময় হলে প্রিয়তা এদের চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিতো।কিন্তু এখন সে চুপ চাপ
তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। সাদনান ভ্রু কুঁচকে সে দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইক থেকে নেমে গিয়ে প্রিয়তার কাঁধে ব্যাগ টা টেনে ধরে।
প্রিয়তা কাঁদছে।
চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।সে তো ইচ্ছে করে এমন ব্যবহার করে নি এসব চায়ও না করতে। কিন্তু না করলে যে মিতা সওদাগর তাকে আবারও মারবে আর মা কে গা*লি দেবে।
সাদনানের প্রিয়তার এরূপ অবস্থা থেকে থমকে গেলো। তার চঞ্চলতা মস্তিষ্ক এটাও বুঝে নিলো মেয়ে টা ইচ্ছে করে তাকে এসব বলে নি।
কিন্তু কেন বলেছে?
কি কারণ হতে পারে?

-“এটা যেনো আমার সামনে লাস্ট কান্না হয়।
তুমি কি ভাবো তুমি না বললে আমি জানতে পারবো না?
ভুল, এক ঘন্টার ভিতর আমি সব ইনফরমেশন পেয়ে যাব।
আর তার পর কি হবে সে টা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
তৈরি থেকো প্রিয়তা সওদাগর।
মির্জা সাদনান শাহরিয়া খাঁচায় খুব শীগগির বন্দী হওয়ার জন্য ”

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-০৫

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“জানিস কবির খাঁন আমাদের আর ক্লাস নেবে না।
even আমাদের কোনো ক্লাস এ নিবে না।”

ক্লাস এ সারা আর প্রিয়তা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মেয়ে খুশি খুশি মনে কথা গুলো সমালোচনা করতে শোনা গেলো।
সারা নির্বিকার। সে গিয়ে দ্বিতীয় সারির তে টেবিলে বসে পড়ে।
প্রিয়তা অবাক হয়।
এই মেয়ে গুলোই কয়েক মাস আগে কবির স্যার নতুন আসাতে কি খুশিই না ছিল।
আর এখন চলে যাওয়াতেও এতটা খুশি?
এই মেয়ে গুলো গিরগিটির মতো।
গিরগিটী যেমন রঙ পরিবর্তন করতে সময় লাগে না কিছু কিছু মানুষও ঠিক এমন সময় সময় নিজেদের রূপ দেখায়।
প্রিয়তা বেশি আর ভাবে না সারার পাশে গিয়ে বসে পড়ে আর ম্যাম ক্লাস এ এলে ক্লাসে মনোযোগী হয়।
কিন্তু মাথায় ঘুরছে কবির স্যার কেন আর ক্লাস নেবে না?
—————–

কবির খাঁন চার মাস আগে প্রিয়তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসছে।
তিনি সাইন্স এর শিক্ষক তাই তাদের Higher math ক্লাস টা নিতো।
দেখতে যেমন মাশাআল্লাহ ঠিক তার রাগ আর ব্রিলিয়ান্টও তেমন যাকে এক কথায় বলা চলে পারফেক্ট।
কিন্তু তার রাগের আর অত্যাচারের কারণেই কয়েক মাসেই মেয়েদের মন তিক্ততায় ভরে গিয়েছে।
কিন্তু সব মেয়েদের সাথে খারাপ আর রূঢ়ভাবে কথা বললেও প্রিয়তা আর সারা’র সাথে বেশ সুন্দর করে কথা বলতো নিজ থেকে এটা সেটা বুঝিয়ে দিতো।
কিন্তু হঠাৎ ওই দিন কেন কবির খাঁন এমন করলো প্রিয়তা বা সারা কারোর মস্তিষ্ক উত্তর তৈরি করতে পারে না।

———-
স্কুল ছুটির পর প্রিয়তা আর সারা দুজনেই ব্যাগ গুছিয়ে সবার লাস্ট ক্লাস হতে বেরিয়ে আসে।
কম বেশি সবাই চলে গিয়েছে। শুধু কয়েকজন বাদে।
ওদের ক্লাস দোতলায় আর আসার সময় স্যার দের কেবিনের সামনে দিয়ে আসতে হয়।
সারা আর প্রিয়তা টুকটাক কথা বলতে বলতে উপর থেকে নেমে স্যার দের লাইব্রেরীর সামনে আসার পর হঠাৎ করে সামনে এসে কবির স্যার দাঁড়িয়ে যাওয়াতে দুই জনেই আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠে।
তবে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।প্রিয়তা ভয় পাচ্ছে। এটা ভেবে যদি স্যার আবার তাকে মারে।
আর সারা রাগে ফুঁসছে কিন্তু স্যার বলে কিছু বলতে পারছে না তাই মাথা নুইয়ে দু’জনে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ চাপ।

যা দেখে সামনে দাঁড়ানো কবির খাঁন মলিন হাসে।
সে কেন পারে না এই মেয়ে টার সামনে এলে নিজে কে সামলাতে?
কাল তো রাগে অভিমান এতো গুলো স্টিলের স্কিল দিয়ে হাতে ইচ্ছে মতো মারলো।
কিন্তু এই মেয়ে কি তার রাগ, অভিমান সম্পর্কে মোটেও অবগত? এসবের ছিটে ফোঁটাও কিছু জানে।কিন্তু কবিরের নিজেরই বা কি দোষ ওই দিন যখন সাদনানের সঙ্গে কথা বলছিল আর সারা দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল তখন কবির সেখান দিয়ে যাচ্ছিল আর সব টা দেখার পর তক্ষুনি সন্দেহ হয়ে ছিল নিজের মনে।
আর যখন একটা ছেলে কে দিয়ে খুঁজ নিলো তখন সত্যি তার সন্দেহ ঠিক হলো।
প্রিয়তা সাদনান কে ভালোবাসে।
আর এটা জানার পর কেন জানি রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারে নি।
কবির এক দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা মাথা নিচু করে থাকলেও তার দৃষ্টি সামনে দাঁড়ানো মেরুন রং এর সার্ট পড়ে কলো সুট তার উপর জড়িয়ে রাখা মানবটার ডান হাতের দিকে।
সবার ভাবনার তেরো টা বাজিয়ে সারা কবির খাঁন কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে উঠে

-“স্যার আমরা কি যেতে পারি?”

-“হ,হ্যাঁ।
আসলে কাল একটু বেশি হয়েছে। তার জন্য সরি।”

কবির খাঁন একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে আমতা আমতা করে উত্তর দেয়।
কবির খাঁনের মুখে এমন কথা শোনে সারা, প্রিয়তা দুজনেই অবাক হয়ে একে অপরের মুখে চাওয়া চাই করে।

-“ঠিক বুঝতে পারি নি স্যার? ”

সারা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে।
কবির খাঁন আঁড়চোখে একবার প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে
অপরাধী ভঙ্গিতে বলে উঠে

-“আসলে আমি প্রিয়তা কে বলছি।
সরি আমি কাল ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি।”

-“না না স্যার কোনো ব্যাপার না।
তাছাড়া আপনি গুরুজন শিক্ষক বাবার সমতুল্যা আপনারাই তো আমরা ভুল করলে শাসন করবেন,আবার ভুল শুধরেও দেবেন।”

প্রিয়তার মুখে “বাবার মতো” কথা টা শোনে কবির অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তা দিকে।
এই মেয়ে তাকে ডিরেক্ট বাবার আসনে বসিয়ে দিলো?
কবির স্যার একটু তাড়াহুড়ো সহিতে পা চালিয়ে যেতে বলে উঠে

-“পাঁচ টা বেজে যাচ্ছে।
বাসায় চলে যাও।”

কথা টা বলেই কবির খাঁন চলে যায়।
সারা আর প্রিয়তা দু’জনেই স্কুলে আঙিনা থেকে বেড়িয়ে এসে রাস্তায় বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।
হাঁটতে হাঁটতে দু’জনই খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে আলোচনা করছে তাদের মুখ দেখে যে কেও অনায়েসে বলে দিতে পারবে।
এ-র মধ্যেই কিছু মনে পড়ার মতো করে প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে সারা কে জিজ্ঞেস করে

-“দুই স্যার’র হাত খেয়াল করেছিস?”

-“আমার খেয়ে কাজ নেই।
এখন স্যার হাত, পা খুঁজতে যাব?”

মুখ ভেংচি কেটে জবাব দেয় সারা।
প্রিয়তা এবার একটু সিরিয়াস মুড এনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে

-“স্যার’র ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা ছিল।”

-“কি বলছিস?”

অবাক হয়ে জোরে বলে উঠে সারা।
প্রিয়তা স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়

-“হুম সত্যি।

-“আমি কিছুর গন্ধ পাচ্ছি।
সাবধানে থাকবি।”

এদের কথার মাঝেই দুই টা বাইক এসে ওদের সামনে থামে।
একটায় সাদনান অপরটায় রাহান।
সাদনান আজও একটা সাদা টি-শার্ট পড়ে আছে।দেখতে মাশাআল্লাহ ফর্সা ত্বকে মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল মুখ ভর্তি চাপ দাঁড়ি, সরু নাক তার ঠিক নিচে সিগারেটে পোড়া ঠোঁট। পরক্ষনেই প্রিয়তা নিজের এসব আজে বাজে চিন্তা ভেবে নিজেই লজ্জা পায়।কিন্তু একটা কথা তবুও মনে কোথা থেকে যেনো বলে উঠে
ইস এই মানুষ টা এতো কেন সুন্দর?
আচ্ছা আমাকে কি ওনার পাশে সত্যি মানাবে?
প্রিয়তা আবার ভাবে কেন আমি দেখতে ততটাও খারাপ নয়।
পাঁচ ফিটে্র বেশি লম্বা।
গায়ের রঙ টা অতোটা ফর্সা নয়।কিন্তু চেয়ারায় আলাদা একটা মায়া আছে আর সাথে আছে সুন্দর ভালো এক টা মন।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে হুকুমের স্বরে বলে উঠে

-“তাড়াতাড়ি উঠে বস।”

-“তুই বরং ভ,,

-“বেশি বকবক করিস না।”

রাহান কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু সাদনানের ধমকে আর সব টা বলা হয় না।

-“আমরা কি কোথাও যাব ভাইয়া?”

-“হ্যাঁ।
রাহাত ভাই আয়না আপু কে নিয়ে আসছে।
সাথে আমাদেরও যেতে বলেছে।”

সারা প্রশ্নের উত্তরে বলে উঠে রাহান।
সারা বিরক্ত হয়।
এই লোক সব সময় ভাইয়া বলে প্রশ্ন করলেই উত্তর নিজের মুখে রেডি রাখে।
আচ্ছা ওনি কি সত্যি কিছু বুঝতে পারে না?
সারা’র ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা বলে উঠে

-“আমি যাব না।
বাড়ি যেতে দেরী হলে মনি চিন্তা করবে।”

-“তোমার মনির কাছে পারমিশন নেওয়া হয়েছে।
আর তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার আপু ওখানে আছে।”

-“সারা আমার বাইক যাক?”

-“নাহ আমার সাথে যাবে।
আয়ান মোড়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে প্রিয়তা আয়ানের বাইকে যাবে।”

রাহানের হাসি হাসি মুখ টা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে।
সে তো জানে প্রিয়তা কে কিছুতেই সাদনান তার বাইকে উঠতে দেবে না।
তাই লাস্ট একটা আশা ছিল।
কিন্তু সেটায়ও বেট্টা আয়ান বাগাড় দিয়ে দিলো।
নিজে তো ঠিক লাইন মা’রে মাইশার সাথে।
রাহানের বিষাদময় মুখ টা আবারও চকচক করে উঠে সাদনানের কথা শুনে

-“কিন্তু আপাতত তুই সারা কে নিয়ে যা।
আমি আসছি ওকে নিয়ে।”

কেউ আর কিছু বলে না সারা গিয়ে চুপ চাপ রাহানের পাশে বসে পড়ে।
আর প্রিয়তা সাদনানের।

-“ধরে বসো।”

সাদনান বলে উঠে।
প্রিয়তা সুন্দর করে এক হাত সাদনানের কাঁধে রেখে সুন্দর করে ধরে বসে।
ওরা রেস্টুরেন্টে এসছে।
বাইক থামিয়ে রাস্তায় আয়ানের দেখা মিলে নি।
এতে অবশ্য অনেকের ভালো হয়েছে কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করে নি কেউ।
সবাই দোতলায় রেস্টুরেন্টে এর ভিতর বসে আছে মাইশা সহ রাহাত,আয়না।
ওরা মোট দুই টা টেবিলে বসে।
কিন্তু রাহাত আর আয়নার প্রাইভেসি দিতে ওদের আলাদা একটা কর্নারে টেবিলে বসিয়েছে।
সাদনানের ঠিক বরাবর প্রিয়তা।
রাহান সারও পাশা পাশি।
মাইশা, আয়ানও টেবিলের এপার ওপার বসছে।
তার পর সবাই আড্ডা দিয়ে খাবার খেয়ে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরে।
এ-র মধ্যে সাদনান একবারও প্রিয়তার সাথে আর কথা বলে নি।
শুধু রেস্টুরেন্টে প্রিয়তা যখন খাবার খাচ্ছিল তখন খাবার টা একটু ঝাল ছিল তাই সে একটু পর পর পানি খাচ্ছিল।তখন একবার জিজ্ঞেস করেছিল খাবার কি বেশি ঝাল ব্যস আর কিছু না।
প্রিয়তা চুপ করে ছিল আসলে খাবার ঝাল নয়।
কিন্তু সকালে মিতা সওদাগর ওকে থাপ্পড় মেরেছিল আর দাঁতের সাথে লেগে তখন ঠোঁটের নিচে কিছু টা অংশ কেটে গিয়েছে।
কিন্তু ওর চুপ করে থাকা দেখে সাদনান ভ্রু কুঁচকে ওয়াটার ডেকে আইসক্রিম এনে দিয়ে ছিল।
প্রিয়তা এতেই ভীষণ খুশি।
যাক তার বড় ভাই বোনের পরে তাকে কেউ একটু খেয়াল রাখে।
আচ্ছা এই খেয়াল রাখা টা যদি সব সময় সবার আগে সাদনান ভাই করে এতে কি বেশি ক্ষতি হতো?
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই মিতা সওদাগর হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে প্রিয়তার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে।
চুল গুলো মুঠোয় পুরে টেনে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“তোর মা আমার সংসার কালনাগিনী হয়ে এসে আমার সোনার সংসার, এতো ভালো স্বামী সব কেড়ে নিয়ে ছিল।
আর এখন তুই আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাইছি?”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

আমার তুমি পর্ব-০৪

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুই বোস।
আমি ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”

কথা টা বলে সালেহা বেগম সারা কে ডাকতে এক জন কাজের মহিলা কে বলে।
প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জা সঙ্গে বসে টুকটাক কথা বলে।
কিন্তু ওর মন টা বড্ড খারাপ।
তবে মুখে যথেষ্ট কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
এই বাড়িতে কেউ জানে না মিতা সওদাগর প্রিয়তার সাথে খারাপ ব্যবহারের কথা শুধু সারা বাদে।
মূলত প্রিয়তাই চায় না ঘরের কথা বাহিরে কেউ জানুক আর তার পরিবারের বদনাম হোক।তাছাড়া শুধু মিতা সওদাগরই তো একটু কঠোর আর সবাই তো বেশ ভালোবাসে তাকে।
প্রিয়তা আর আম্বিয়া মির্জা কথার মাঝেই এক জন মেইড ট্রে তে করে প্রিয়তার আনা পিঠা আর মোয়া দিয়ে যায়।
পেছন পেছন সালেহা বেগমও এসে প্রিয়তার পাশে বসে।
বাড়িতে পুরুষ লোক কেউ নেই।
কিন্তু প্রিয়তার চোখ কাউ কে খুঁজে চলেছে।
এর মধ্যে সারা এসে হাজির হয়।
সারা এসেই সেন্টার টেবিলের উপর খাবার দেখে বুঝতে পারে এ গুলো প্রিয়তাই নিয়ে এসছে।
আর ওর ছোট মস্তিষ্ক এটাও ভেবে নিলো প্রিয়তা কে ওর মা নিশ্চয়ই এসবের কিছুই ছোঁয়াই দেয় নি।
সারা তৎক্ষনাৎ একটা মেইড কে একটা ছোট বক্স আনতে বলে রান্না ঘর থেকে।
প্রিয়তা কে আম্বিয়া মির্জা সালেহা বেগম খেতে বললেও সে কিছুই মুখে নেয় নি সে খেয়ে এসছে বলে এড়িয়ে গেলো।
কাজের লোক বক্স নিয়ে এলে সারা সেটায় ঝটপট কয়ে এক টা পিঠা সেটায় পুরো কাঁধে থাকা ব্যাগটায় নিয়ে সবার কাছ হতে বিদায় নিয়ে প্রিয়তা কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।

———–

-“বেশি ব্যথা করছে না?
ইস, কি লাল হয়েছে দেখেছিস?”

-“ভালো হয়ে যাবে।
তাছাড়া দোষ তো আমারই।”

সারা প্রিয়তার কথার পিঠে আর কিছু বলে না ওর খুব খারাপ লাগছে স্যার কি করে পারলো এতো জোরে মারতে।
মাত্র তিন দিন বন্ধ করেছে।
আর কই অন্য সময় তো স্কুল বন্ধ করলে কাউ কে মারে না তবে প্রিয়তা কে কেন মারলো?
সারা এ-সব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার হাতে রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে পানি ঢালে।
তার পর একটা টিসু দিয়ে হাত টা আস্তে আস্তে করে মুছিয়ে দিলো।
আলতো করে ফু দিয়ে মলিন মুখ করে জিজ্ঞেস করে উঠে

-“এখন বেশি জ্বলে?”

প্রিয়তা মুচকি হেসে বাম হাত টা সারার গালে রেখে জবাব দেয়

-“একটু।”

-“বাসায় গিয়ে কিন্তু মলম লাগাবি।”

-“আচ্ছা।”

-“স্কুল ছুটি দিয়েছে চার টায়।
এখন সাড়ে চার টা বাজে।”

হঠাৎ সাদনানের কণ্ঠ শুনে সারা প্রিয়তা দু জনেই চমকে উঠে। সাদনান, রাহান দু জনেই দাঁড়িয়ে আছে তাদের থেকে কিছু টা দূরে।
সাদনানের গায়ে সাদা একটা সার্ট যা দেখে প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে আসে।
এই লোকের কি আর সার্ট নেই সব সময় এক সার্ট পড়ে থাকে।আর ওনি কি জানে না ওনাকে সাদা রঙে কত টা মারাত্মক সুন্দর লাগে ওনাকে। প্রিয়তা নিজের মনেই কথা গুলো ভাবে।
তবে প্রিয়তা ভীষণ খুশি হয়।
আজ সারা দিন একবারও দেখা মিলে নি লোক টার।
ভেবেছিল হয়তো আজ দেখা পাবে না।

-“যাচ্ছিলাম তো।
ওই প্রিয়তার হ,,,,,

সারা আর কিছু বলতে পারে না প্রিয়তা সারার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
সারাও আর কিছু বলে না। সাদনান ভ্রু কুঁচকে নেয় সারা কে চুপ করে যেতে দেখে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই সাদনানের পেছন থেকে রাহান বলে উঠে

-“কি হলো?
বলছো না কেন প্রিয়তার কি?”

-“কিছু না।”

ফট করে বলে উঠে প্রিয়তা।
সাদনানের ততক্ষণে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু প্রিয়তার জবাবে ভ্রু কুঁচকে নেয়।
এই মেয়ে এমন নার্ভাস কেন?
সাদনান কথা টা মনে মনে ভেবেই বোনের দিকে আঁড়চোখে একবার তাকালে আর অমনি সারা চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করে।

-“হাত দেখি।”

-“ক,, কেন?”

আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা।
সাদনান চোখ বন্ধ করে নেয়।
রাগ হচ্ছে এই মেয়ের উপর কোনো দিন শান্তি দিবে না তাকে।
প্রথমত পৃথিবীতে এসছে লেইট করে।তারউপর ভীষণ বাজে ভাবে প্যারা দেয় তাকে এই মেয়ে। একবার শুধু সময় হোকে সুদে আসলে সব উসুল করে নিবে।কথা গুলো ভেবেই
সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে চোখ খুলে এক ঝটকায় প্রিয়তার ডান হাত ধরে সামনে এনে থমকে গেলো সাদনান।
বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
যেনো কেউ ধারালো অস্ত্রের দিয়ে খুঁচাচ্ছে।
চোখ রাগে লাল হয়ে আসে।
প্রিয়তা সে দিকে তাকিয়ে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ভয়ে আবারও মাথা নুইয়ে নিলো।
সাদনান ভাই তাকে ভালোবাসে না কিন্তু সেই ছোট্ট বেলা থেকেই সারা আর তাকে বেশ যত্ন করে আগলে রাখে।

-“কি হয়েছে?”

-“কিছু না তো।
আমি বাড়ি যাবো।”

-“আমি জানতে যাচ্ছি কে করেছে এটা?”

সাদনানের ধমকে কেঁপে উঠে ছোট প্রিয়তা।
সারাও ভাইয়ের এই রূপ দেখে কিছু টা ভয় পায়।
তার ভাই নিশ্চয়ই এখন এই নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটাবে।সারা নিশ্চিত।
তার ভাইয়ের মনে যে কি চায় সে এটাই এই আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারে না।
সারার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা মিনমিন করে বলে উঠে

-“রাস্তায় পড়ে গিয়েছে।”

-“মিথ্যা।
সত্যি টা বলো।”

ঠান্ডা স্বরে বলে উঠে সাদনান।
প্রিয়তা ততক্ষণে হাত ছাড়িয়ে নিলো।
সারা এগিয়ে এসে ভাইয়ের থেকে দূরত্ব রেখেই প্রিয়তা কে আগলে দাঁড়িয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠে

-“তিন দিন স্কুল আসে নি।
তাই স্যার মেরেছে।”

-“কোন স্যার?

-“ক্লাস টিচার।
কবির খাঁন।”

সারার কথা শুনে সাদনান চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
কিন্তু রাগ টা কে গিলে নিলো সে।
এখন কিছুতেই উল্টো পাল্টা কিছু করা যাবে না।আর এই মেয়ের সামনে তো আরে আগেই না।
ভেবেই সাদনান রাহান কে কিছু বলে নিজে বাইকে বসে সারা আর প্রিয়তা কে তার পেছনে বসার জন্য বলে।
কিন্তু প্রিয়তা সে তো অবাক ভীষণ অবাক।
এটা সম্ভব?
সারা গিয়ে আগে বসে তার পর প্রিয়তা কে বসতে সাহায্য করে।
সাদনানের বলিষ্ঠ শরীরে এই বাইকে বসার পর শুধু আর এক জন পুরুষ বসার জায়গা রাখে। কিন্তু সারা,প্রিয়তা দুজনেই স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে কম হওয়া সাদনানের পেছনে দুইজন অনায়েসে বসতে পারে।
প্রিয়তার মনে পড়ে না কবে লাস্ট সাদনান তাকে বাইকে নিয়েছে।
ছোট বেলায় প্রায় নিতো।কিন্তু প্রিয়তা জেএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর আর নেয় নি।
আর আগের মতো ঠিক করে কথাও বলে না।

-“তুই বাড়ি যা।
আমি ওকে নামিয়ে দিয়ে আসছি।”

মির্জা বাড়ির সামনে বাইক থামিয়ে সারা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে সাদনান।
সারা নেমে পড়ে।
প্রিয়তা কে আবারও হুকুমের স্বরে বলে উঠে

-“ঔষধ লাগাবি কিন্তু।
আর কাল তো স্কুল বন্ধ তুই আসবি না আমি যাব?”

-“তুই যাস।
মনি আসতে দেবে না।”

মলিন হেসে জবাব দেয় প্রিয়তা।
সাদনান এদের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইক স্টাট দেয়।
আর আকস্মিক ঘটনায় প্রিয়তা চমকে উঠে চোখ বন্ধ করে খামচে ধরে সাদনানের সফেদা সার্ট এর পেছনের অংশ।
তার পর আস্তে আস্তে যখন বাইক এর গতি স্থিতিশীল হয় তখন প্রিয়তা সুন্দর করে সাদনানের কাঁধে হাত রেখে বসে।

চার, কি পাঁচ মিনিট এর মাথায় বাইক টা এসে সওদাগর বাড়ির গেইট এ রাস্তায় থামে।
আর প্রিয়তা নেমে দাঁড়ায়।
কিছু বলবে তার আগেই সাদনান বলে উঠে

-“সাদনান তার জিনিস কি করে যত্নে রাখতে হয় সেটা ভালো করেই জানে।
আর মিথ্যা বলা টা একদম উচিত হয় নি।যদিও তুমি বা সারা না বললে আমার কিছু আসতে যেতো না।
এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া খবর টা পেতে দু’মিনিট সময়ও লাগতো না।”

কথা গুলো শেষ করেই সাদনান প্রিয়তা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে
বাইক স্টাট দিয়ে চলে যায়।
প্রিয়তার মন টা খারাপ হয়ে যায়। কি বলে গেলো এসব?
কিন্তু প্রিয়তা সব ভাবনা বাদ দিয়ে মনে মনে আফসোস সুর তুলে
ইস একটু কথা বলা হলো না লোক টার সাথে।

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-০৩

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুমি এখানে? ”

সাদনান ফ্রেশ হয়ে মাত্র ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসছে।
আর বেরিয়ে এসেই দরজায় প্রিয়তা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে।

-“আপনার টাওয়াল।”
আর বাড়ি টা আমার।আপনি ভুলে যাচ্ছেন।”

-“বাড়ি টা তোমার আমি জানি আর এই রুমে যেহেতু এখন আমি আছি তাই নক করে পারমিশন নিয়ে ঢোকার প্রয়োজন ছিল।”

-“এই আপনি টাই সম্পূর্ণ আমি আমার করে নেবো।”

প্রিয়তা বিরবির করে বলে উঠে।
সাদনানের কান অব্দি তা পৌঁছায় না।তাই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“এই মেয়ে কি বিরবির করছো?”

-“কিছু না।
আপনাকে খাবারের জন্য ডাকে।”

কথা টা বলেই প্রিয়তা টাওয়াল টা বিছানায় রেখে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো।

সাদনান টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছে ঘর ছেড়ে নিজেও কি সব বিরবির করতে করতে চলে এলো।

————-

-“আমি ইচ্ছে করে করি নি জান।”

আয়ানের কণ্ঠে অসহায়ত্বের ছোঁয়া।
কিন্তু সামনে দাঁড়ানো রমণী খুব ভাবলেশহীন ভাবে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“তো আমি কি করবো?”

-“তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?”

-“কি ভাবে বলছি?”

-“এই মেয়ে আমাকে রাগাবে না, ফল ভালো হবে না।”

মাইশা কিছু বলে না।
আয়ানের কথা না শোনার মতো করে ছাঁদ হতে নেমে চলে যেতে নেয়।
আর আয়ানের মাথায় ধপ করে আগুন ধরে যায়।
এই মেয়ে একটু বেশি করছে।
ভাবতে ভাবতে আয়ান মাইশার হাত টেনে ধরে।
মাইশা পেছন ফিরতেই আয়ান মাইশা কে এক টানে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে।
শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠে মাইশা। কিন্তু যখন ঘটনা বুঝতে পারলো।
আয়ান মাইশা কে আরও কিছু টা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে নিজের বাম হাত প্রেয়সীর ডান গালে রাখে।
আর মাইশা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আয়ান তার প্রেয়সীর লজ্জা রাঙা মুখ দেখে নিজে কে আর দমাতে পারে না।
মূহুর্তের মধ্যে মাইশার ওষ্ঠ আঁকড়ে ধরে।
মাইশা স্তব্ধ। নড়াচড়া শক্ত করতে পারছে না।চোখ বড় বড় করে আয়ানের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ি ভর্তি গালের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আয়ান নিজের ইচ্ছে মতো প্রেয়সীর ঠোঁটে নিজের ভালোবাসার পরশ দেয়।
দীর্ঘ একটা চুম্বন এর পর আয়ান মাইশা কে ছেড়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে।

-“সরি জান।
কিন্তু আমার ছোঁয়া পবিত্র, অধিকার আছে আমার।”

মাইশা কিছু বলে না চুপ চাপ আয়ানের বুকে মাথা রেখে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

—————-

মাইশা যখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।
তখন আয়ান অনার্স শেষ ইয়ার।স্কুল কলেজ ভার্সিটির এক সাথে হওয়ার সুবিধায় দুই জনের সেখানে থেকে ভালোবাসার প্রণয় হয়।
আয়ান মাইশা কে আগে থেকে পছন্দ করতো।সাদনানের, রাহাতের সাথে বন্ধুত্ব ছিল বিধায় প্রায় যাতায়াতে ছিল মির্জা বাড়ি।
আর তখন থেকে ছোট মাইশা কে ভালো লাগতো। কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করে নি।
কিন্তু আয়ান প্রকাশ না করলেও ছোট মাইশা তখন থেকে আয়ানের পেছন পেছন ঘুরতো।
এভাবে দেখতে দেখতে আয়ান অনার্স ফাইনাল এক্সাম শেষ করে।
আর মাইশা তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হয়।
আয়ান মাস্টার্স করার জন্য শহরে আসার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়।
কিন্তু মাইশার পাগলামি তখন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ততদিনে আয়ানও তার প্রেম নিবেদন করে ফেলে ছিল প্রেয়সীর নিকট।
আর যখন আয়ানের শহরে আসার সব বন্দবস্ত হয়ে এলো।শহরে আসার দিন ঘনিয়ে এলো।
মাইশা তখন নাছোড় বান্দা সে কিছুতেই আয়ান কে ছাড়বে না।
তার মনে ভয় বাসা বাঁধে যদি আয়ান শহরে এসে বদলে যায়।
কিন্তু বেচারি মাইশা তখনো বুঝতো না আয়ান ওকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।
মাইশার পাগলামি যখন আকাশ ছোঁয়া রাত বিরাতে ফোন দিয়ে কান্না কাটি।দেখা হলে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে আয়ান কে যেতে না করা তখন আয়ান বিশাল বড় সিদ্ধান্ত নেয়।
কাউ কে না জানিয়ে ওই দিন কাজি অফিসে গিয়ে সেখানের দুই জন মানুষ সাক্ষী রেখে কাজি দিয়ে বিয়ে করে নেয় তার ছোট জান কে।
আজ ছয় মাসের বেশি সময় হয় ওদের বিয়ে হয়েছে।
কিন্তু এটা কেউ জানে না।

—————

আয়না কে সবার পছন্দ হয়েছে। বিয়ে টা এক মাস পর হবে বলে ঠিক করেছে জাফর মির্জা।
তার বাড়ির বড় নাতি আবার গ্রামের নামী-দামী লোক।
তিনি বেশ জোয়ান এখনো।এলাকার চেয়ারম্যান। বড় ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান। ছোট ছেলে ব্যবসায়ী, বড় নাতি বড় ছেলে আজ্জম মির্জা সাথে রাজনৈতি সাথে বাবার ব্যবসায় দেখা ভাল করে।
আর মেজো নাতি কে সামনে ইলেকশনে এমপি পদে দাঁড় করাবে।
যদি মেজো নাতি তার এসব ধারে কাছেও নেই। কিন্তু তার এলাকায় দাপট আছে। সাথে ব্যবহারের দিক আর এখন কার নিউ জেনারেশন তার নাতির বেশ আয়াত্তে।কিন্তু সমস্যা হলো সে এসব করতে চায় না।
তবে তিনি এবার যে করেই হোক মেজো নাতি কে এমপি পদে দাঁড় করাবেই।
আর এক টা বড় দল থেকে অফারও এসছে।
সেই দলের হয়ে যদি একবার কাজ করা যায় তাহলে নিশ্চিত তার নাতি পাস করে যাবে।
কারণ একটাই গত পনেরো বছর ধরে যেই লোক এমপি পদে আছে তিনি কোনো উন্নতি করে নি শহরে। তাই জনগণ খেপে ফুঁসে আছে।একবার যদি যোগ্য কাউ কে পায় তবে আগের এমপি কে কোনো মতেই আর আসন্নে আসতে দেবে না।
তাই মির্জা সাদনান শাহরিয়া জয় নিশ্চিত।
এবার শুধু নাতি কে রাজি করনোর পালা।
এসব ভাবতে ভাবতেই জাফর মির্জা চায়ের কাপ শেষ চুমুক দেয়।
অতঃপর সওদাগর বাড়ির লোকদের নিমন্ত্রণ করে যায়।
যদিও সওদাগরের বাড়ি তুলনায় মির্জা বাড়ি রাজপ্রাসাদ আর ছেলে সে সম্পর্কে সব জানা আছে।
এখন শুধু ফর্মালিটি আর কি।

———-

প্রিয়তা রেডি হচ্ছে স্কুলের জন্য।
আজ তিন দিন পর স্কুল যাবে ভাবতেই খুশি লাগছে। কত দিন হয় সারার সাথে জমিয়ে কথা বলা হয় না। সব কথা মাথায় কিলবিল করছে।
আসলে প্রিয়তা পড়া লেখায় যে অতটা ভালো তা না আবার ততটা খারাপও না।
স্কুল যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলে সে এই বন্দী জীবন টা থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও রেহায় পায় তাই বাড়ি থেকে বেরুতে পারলেই যেনো সে ভালো করে শ্বাস ফেলতে পারে।
এখানে সব তিক্ত লাগে প্রিয়তার। অন্য কেউ কতক্ষণ তার হয়ে লড়াই করবে।সে নিজে তো করতে পারে না।
আর তার বাবা সে তো তার মাকেই বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছিল।
আর শুধু দায়িত্ব পালন করে ছিল কিন্তু ভুল বসত প্রিয়তা দুনিয়া এসে পড়েছিল।
আর সেই ভুলই তো আজ তিনি মাটির তল হলেন।
যদিও প্রিয়তার ওর মায়ের কথা মনে নেই তবে ওর দাদা বলতো প্রায়ই এসব।
আর বছর তিন এক আগে তিনি প্রিয়তা কে একা করে চলে গেলো।
সবার উপর এই ছোট্ট প্রিয়তার বড্ড অভিমান।
প্রিয়তা এ-সব ভাবতে ভাবতে ব্যাগ এ বই নিচ্ছিল কিন্তু মিতা সওদাগরের ডাকে বাস্তবে ফিরে

-“এই মেয়ে।
কোথায় থাকে মন?”

-“না মনি।
অনেক দিন স্কুল যাই না তাই ভাবছিলাম।
কবির স্যার না আবার ম,,,,

-“হয়েছে হয়েছে তোর ন্যাকামি করা।
এমন ভাব করছিস যেনো তোকে এক বছর পর স্কুল যেতে দিচ্ছি।
আচ্ছা যাই হোক নে এ গুলো ধর।
যাওয়ার সময় মির্জা বাড়িতে দিয়ে যাবি।”

প্রিয়তা কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তিনি বিরক্তিকর মুখ করে কথা গুলো বলে একটা কাপড়ের ব্যাগ প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দেয়।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে নিজে মেয়ের হবু শশুর বাড়িতে কিছু দিচ্ছে।
ব্যাগ টার ভেতর বড় দুই টা বক্স।
প্রিয়তা ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলো ব্যাগ টা বেশ ভারি।
না চাইতে কৌতুহল বসত জিজ্ঞেস করেই নিলো মিতা সওদাগরের কে

-“মনি এটার ভেতর কি,,,,,

-“তোর কাছে এখন সব কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে?”

-“না মনি আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করে ছিলাম।
আর এমন হবে না। ”

কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা চোখের পানি আড়াল করতে তাড়াহুড়ো সহিতে পা চালিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।
তার ভীষণ কষ্ট হয়।
কেন মিতা সওদাগরের তাকে একটু ভালোবাসে না একটু স্নেহ করে কাছে ডাকে না? আদর করে একটু খাবার দেয় না?
স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান বলে?

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

আমার তুমি পর্ব-০২

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা

আজ সকাল থেকে সওদাগর বাড়িতে রান্না বান্না বেশ আয়োজন করা হচ্ছে।
বাড়ি বড় মেয়ে কে চেয়ারম্যান এর নাতির জন্য দেখতে আসবে।
কিন্তু কোন নাতি এটা প্রিয়তা বুঝতে পারছে না।
আজ দু টি দিন হয় স্কুলও যেতে পারে না।
বাড়ি ঘর ঝাড়ু মুছা করা থেকে শুরু করে সব আসবাবপত্র পরিস্কার করা।
রান্না বান্না সব করার জন্য কাজের লোক আছে।
কিন্তু মিতা সওদাগর কিছুতেই এই দুই দিন ধরে প্রিয়তা কে বাড়ির থেকে বেরুতে দেয় না।
এটা সে টা কাজ করিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে প্রিয়তা বেশ চিন্তা আছে। পাত্র কে হতে পারে?
মির্জা পরিবারে বড় ছেলে মির্জা রাহাত মাহমুদ আর ছোট ছেলে মির্জা সাদনান শাহরিয়া। আচ্ছা আর যাই হোক বাড়ির বড় ছেলে কে রেখে নিশ্চয়ই ছোট ছেলের বিয়ে দেবে না।
এ-সব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা রেডি হয়ে নেয়।
সুন্দর একটা ফ্রক পড়ে গলায় জর্জেট এর একটা ওড়না পেচিয়ে চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় নিচে নজর পড়তেই দেখা মিলে দুই জন মধ্যবয়সী লোক আর এক জন মুরব্বি আর কলো সুট পড়া এক জন ব্যক্তি আর তিন জন মহিলাও আছে।
আর সারা আর ওর ছোট চাচার এক মাত্র মেয়ে মাইশা কে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপর আসছে।
মাইশা ওদের দুই বছরের বড় এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
সারা আর মাইশা উপর এসে দু জনেই প্রিয়তার সাথে কুশল বিনিময় করে আয়নার রুমের দিকে চলে যায়। মাইশা সাথে আছে বলে আর সারা কে জিজ্ঞেস করা হলো না পাত্র কে।অবশ্য প্রিয়তা ভাবে যদি সাদনান মির্জা পাত্র হতো তবে অবশ্যই সারা তাকে জানাতো আর জানাতে না পারলে এতো টা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতো না।
কারণ সারা জানে প্রিয়তা সাদনান কে কি পরিমাণ ভালোবাসে। যদিও সাদনান তা ছোট মানুষ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু হয়তো এক দিন সত্যি তা উপলব্ধি করতে পারবে।
প্রিয়তারা আয়নার রুমে এসে দেখলো
আয়না শুধু শাড়ী পড়ে বসে আছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে একটা টুলে।
প্রিয়তা আয়না কে এভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“আপু তুমি রেডি হও নি কেন?
সবাই চলে এসছে।”

বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের উপর হতে ইয়ার রিং জোড়া হাতে নিয়ে তা পড়িয়ে দেয় আয়না কে।
সারা মাইশা দু জনেই চুপ চাপ বিছানায় বসে দেখে যাচ্ছে। ছোট প্রিয়তা কিভাবে তার বড় বোন কে রেডি করে দিচ্ছে।
প্রিয়তা হঠাৎ করে প্রশ্ন করে আয়না কে

-“মন খারাপ?”

আয়না অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো ছোট বোনের দিকে।
টুপ করে গড়িয়ে পড়ে বাম চোখ হতে এক ফোঁটা জল

-“ভাইয়া আসবে না?”

চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করে আয়না।

-“বলেছে তো চলে আসবে।
হয়তো এসে পড়েছে।
প্লিজ লক্ষী আপু কাঁদে না।
আর কাঁদলে চোখের কাজল লেপ্টে তোমাকে ভূত দেখা যাবে।
পরে দেখা যাবে পাত্র মানে দুলাভাই তোমাকে দেখতে এসে না দেখেই পালিয়ে যাবে।”

কথা টা বলতে বলতে হেসে দেয় প্রিয়তা।
পাশ থেকে মাইশা সারাও হাসে।
ঠিক তক্ষুনি কেউ দরজা থেকে বলে উঠে

-“মাশাআল্লাহ।
আমার দুই টা প্রিন্সেস।”

কথা টা বলতে বলতে আয়ান ঘরে ভেতর প্রবেশ করেই বোনদের কপালে আদর করে দিলো।
আয়না জড়িয়ে ধরে আয়ান কে আয়ান ছোট বোনের দিকে নিজের ডান হাত টা বাড়িয়ে দিতেই প্রিয়তাও ঝাপটে জড়িত ধরে বড় ভাই-বোন কে।
কে বলবে এরা দুই মায়ের গর্বে জন্ম?
এদিকে সারা আর মাইশা মুচকি হাসে।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখানে একজন রমণীর গালে লাল আভা দেখা দিয়েছে।
আয়ান হুট করে নজর পড়ে বিছানায় দুই রমণীর উপর। আয়ান বোনের নিয়ে এতো টাই বিভোর যে এতক্ষণ তাদের নজরেই আসে নি।
কিন্তু এখানে যে তার প্রেয়সীও থাকতে পারে জানা ছিল না।
যাক এক কাজে দুই কাজ হলো।
আয়ান বোনদের ছেড়ে দিয়ে সারা মাইশার সাথে হালকা কথা বলে রুম ত্যাগ করে।
আয়নাও সবার সাথে কথা বলে এখন।এতোক্ষণ মন টা বেচারির বড্ড খারাপ ছিল।
বড় ভাইয়ের আগমনে তা উবে গেলো।
প্রিয়তা আয়নার শাড়ীর কুঁচি গুলো ঠিক করে উঠে দাঁড়াতেই শিউলি এসে বলে গেলো প্রিয়তা কে রান্না ঘরে ডাকছে।
প্রিয়তার মন টা বড্ড খারাপ হলো।
তবে মুখে হাসি রেখে সারা আর মাইশা কে আয়নার রুমে রেখে নিচে যাওয়ার অগ্রসর হয়।
নিচে যেয়ে প্রিয়তা লিভিং রুমে থাকা সব কয়টা মানুষ কে সালাম দিলো।
শফিক সওদাগর পরিচয় করিয়ে দিলো।
বাড়ি ছোট মেয়ে কে।
এক জন মিতা সওদাগরের বয়সী মহিলা ওকে কাছে ডেকে নিয়ে আদর করে দেয়।
প্রিয়তা গিয়েছে অনেক বার মির্জা বাড়ি এটা সাদনানের মা সালেহা বেগম।
কথা বলে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে সালেহা প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা সবার সাথে কথা বলে রান্না ঘরে চলে যায়।
প্রিয়তা রান্না ঘরে প্রবেশ করতেই মিতা সওদাগর অনেক গুলো ফল একটা ঝুরিতে প্রিয়তার হাতে দিয়ে বলল

-“এগুলো কেটে নিয়ে বসার ঘরে দিয়ে আসবি।”

হুকুমের স্বরে বলেই তিনি রান্না ঘর থেকে চলে গেলো। প্রিয়তা বটি নিয়ে সে গুলো কাটতে বসে গেলো।
শিউলি থালা বাসন সব গুছিয়ে রাখছে।
একটু আগেই হয়তো খাবার পর্ব শেষ হয়েছে বুঝতে পারলো প্রিয়তা।
খাবার কথা মাথায় আসতেই পেটের ভেতর ক্ষুধা অনুভব করে।
ইস সকালে শুধু লুকিয়ে দুই টা বিস্কিট খেয়েছে।
মনে হতেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ে গেলো।
শিউলি বুঝতে পারে।
এগিয়ে এসে কাঁধে রেখে বলে উঠে

-“তোমার বান্ধবী আছে না ছোট আপা?
সারা না কি জানি।অয় কিন্তু খায় নায়।
বলছে তোমার সাথে খাবে বলে সুন্দরী আপা ডারে লইয়া উপর চলে গেছে।”

প্রিয়তা হতভম্ব। অবাক হয়ে তাকালো শিউলির দিকে।
বিস্ময় চাহনি দিয়ে প্রশ্ন করে শিউলি কে

-“কি বলছো এসব চার টা বাজে এখন।”

-“তো আর কইতাছি কি।”

প্রিয়তা আর কিছু বলে না। শিউলিও নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
আর প্রিয়তা তাড়াহুড়ো সহিতে ফল গুলো কেটে সুন্দর করে সাজিয়ে ট্রেতে করে লিভিং রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসে রান্না ঘর হতে।
এরমধ্যে সাদনানের দাদা দাদি তাগাদা দেয়।
মেয়ে কে নিয়ে আসার জন্য।
প্রিয়তা উপর চলে যায় আয়না কে আনতে পেছন পেছন আয়ানও আসে।
তার পর সারা আর মাইশা দু জনেই আগে নিচে চলে আসে।
আর আয়ানের অসহায় চোখে তাকায় প্রেয়সীর দিকে।
সে তো এসছিল এই মেয়ের সাথে একটু কথা বলার জন্য।
সব জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছে তার প্রেয়সী তাকে।
অবশ্য রাখবে নাই বা কেন।সে তো করেছেও এমন অপরাধ। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে এমন টা করে নি।এক বার মনে হয় সব দোষ নিজের
তো একবার মনে হয় এই মেয়ে কষ্ট করে একটু মানিয়ে নিলেই তো হয়।
এ-সব ভাবতে ভাবতে আয়ান আয়না কে ধরে নিয়ে নিচে চলে আসে।
রাহাতের দাদি আম্বিয়া মির্জা তিনি তার পাশে বসিয়ে মুচকি হেসে এটা সে টা জিজ্ঞেস করে আয়না কে।
সবাই কথাবার্তা বলে আয়নার সাথে।
কিন্তু প্রিয়তা ভাবছে।
অন্য কথা সাদনান ভাই কেন আসে নি?
ওনি কোথায়?
প্রিয়তা ভাবনার মাঝেই রাহান সহ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সাদনান।
সাদনান কে দেখেই প্রিয়তার বুকের ভিতর ধক করে উঠে। সাদা সার্ট চুল গুলো এলোমেলো। মুখে ক্লান্তির ছাপ।এই লোক টা এতো সুন্দর কেন? প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই
সালেহা বেগম গিয়ে ছেলের গালে হাত রেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বলে উঠে

-“কি দরকার ছিল এতো টা পথ জার্নি করে এখানে আসার?
কাল সকালেও আসা যেতো।”

সাদনান মাকে আশ্বাস দিয়ে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানায়

-“আমি ঠিক আছি।
তবে একটু ফ্রেশ হতে পারলে ভালো হতো।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

আমার তুমি পর্ব-০১

0

#আমার_তুমি
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমার বয়স জানো?”

সামনে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক টার করা প্রশ্নে সামনে নীল ড্রেস পড়া স্কুল ব্যাগ কাঁধে দাড়ানো
ষোড়শী কন্যা প্রিয়তা খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়

-“হুম।’

-“তুমি দশম শ্রেণিতে।
আমাদের বয়সের তফাৎ দেখছো?”

-“হুম।”

-“গুড।
আশা করি আমাকে আর ফলো করবে না। ”

-“কেন করবো না?”
বয়সে ছোট বলে কি বড়দের প্রতি অনুভূতি তৈরি হওয়া বারণ?”

প্রিয়তা ফটাফট প্রশ্ন করে বসে।মেয়ে টা ভিতরে ভিতরে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু উপর তা প্রকাশ করছে না। নিজে কে স্বাভাবিক রাখা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে সাদনান আবারও ধমকের সুরে হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“এই মেয়ে বেশি বলছো।
চাচি জানে এ-সব?”

মায়ের কথা শুনে প্রিয়তা কিছু টা ভীতু হয়।চোরা চোখে চাইলো একবার সামনে দাঁড়ানো লম্বা সুদর্শন যুবক সাদনানের এর দিকে।
সাদনানের গভীর দৃষ্টি তাকেই পর্যবেক্ষণ করছে।
যা দেখে আরো এক দফা ভড়কালো।
প্রিয়তা আবারও আগের নেয় মাথা নুইয়ে নিলো।
আর ঠিক তক্ষুনি সাদনানের গম্ভীর কণ্ঠ আবারও শোনা গেলো

-“বাড়ি যাও।
সন্ধ্যায় হওয়ার আগে বাড়ি চলে যাবে রোজ।”

-“বিকেল সাড়ে চারটায় প্রাইভেট থাকে।”

প্রিয়তা মিনমিন করে জানায়।
যা শুনে সাদনান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।

-“কোন স্যার?”

-“মাহিন স্যার।”

-“হুম বাড়ি যাও।
কাল থেকে সকালে আটটায় প্রাইভেট যাবে।
আর প্রাইভেট শেষ স্কুল।”

-“কিন্তু,,,

-“আমি যেতে বললাম তো।”

প্রিয়তা সবটা কথা না শুনেই সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করে।
প্রিয়তা আর কিছু বলে না মোটা চার দিকে ডাল পালা মেলে রাখা বট গাছের নিচ থেকে রাস্তা আড়ালে দাঁড়ানো সারা কে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।
প্রিয়তা দৃষ্টি আড়াল হতেই অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সাত আটজন ছেলে এগিয়ে এলো সাদনানের নিকট।
সব কয়টা ছেলে এসে সাদনান নামক যুবক টাকে চার দিক হতে ঘিরে দাঁড়িয়ে মাথা নুইয়ে রাখে।
এর মধ্যে একজন শুধু সাদনানের এর সময় বয়সী রাহান।

-“কি বলল?”

রাহান সাদনান কে প্রশ্ন করে। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে ভালো উত্তর এর আশায় তাকিয়ে।
কিন্তু সাদনান সবাই কে হতাশ করে দিয়ে উদাস কণ্ঠে জবাব দিল

-“ছোট মানুষ।
বাদ দে না।”

আর কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। মিনিট খানিক্ষন সবাই চুপ চাপ থাকে।
সাদনান ততক্ষণে একটা স্প্রাইট শেষ করে বোতল টা ছুড়ে ফেলে পাশের ডাস্টবিনে।তার পর নিজে বাইকে উঠে রাহান কেও ইশারা করে। রাহান চুপ চাপ উঠে বসে সাদনান এর পেছনে।
সাদনান বাইকে চাবি ঢোকাতে ঢোকাতে আদেশের সুরে গম্ভীর কণ্ঠে ছেলে গুলো কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“কাল সকালে চলে যাবো।
কোনো রকম সমস্যা যেনো না হয় খেয়াল রাখবি।”

নিজের কথা সমাপ্তি করেই সাদনান চাবি ঘুরিয়ে বাইক স্টাট নিয়ে মূহুর্তের মধ্যে মেইন রাস্তায় উঠে মাহিন স্যার এর বাসার দিকে যেতে লাগলো।
যা দেখে রাহান কিছু টা অবাক হয়।নরম গলায় বন্ধু কে জিজ্ঞেস করে

-“এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”

-“গেলেই দেখতে পাবি।”

প্রশ্নের জবাব তো দিলে ও-ই না উল্টো ত্যাড়া কথা। রাহান আর কিছু বলে না চুপ চাপ বসে থাকে।
প্রায় দশ মিনিট পর বাইক টা একটা টিন দিয়ে বেড়ি দেওয়া একটা বাড়ির সামনে থামিয়ে সাদনান ভিতরে যায়।
পেছনে পেছন রাহানও যায়।
চার রুম বিশিষ্ট একটা একতলা বাড়ির গেইট কড়া নাড়ে।
মিনিটের মাথায় একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা এসে গেইট খোলে দিলেন।
মহিলা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সাদনান জিজ্ঞেস করে উঠে

-“মাহিন স্যার বাড়ি আছে?”

মহিলাটা উত্তর “আছে” বলে তাদের ভিতরে আসতে বলে তিনি তার স্বামী কে ডাকতে চলে গেলো।
একটু পর একটা মাঝবয়সী লোক ভিতর থেকে গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে আসে। সাদনান সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
লোক টাও সালামের উত্তর দিয়ে কুশল বিনিময় করে।
স্ত্রী কে নাস্তা দিতে বলে।

-“স্যার আপনি দশম শ্রেণির কিছু মেয়ে কে বিকেল সাড়ে চারটায় প্রাইভেট পড়ান।
ওদের একটু কষ্ট করে সকালে পড়াবেন।
মেয়ে মানুষ পড়া শেষ করে বাড়ি যেতে অনেক টা সন্ধ্যা হয়ে আসে।
বুঝতে পারছেন আশা করি।”

মাহিন স্যার সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়।
সাদনানও রাহান কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।
এদিকে মাহিন স্যার এই শীতের মাঝেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করে।
তিনি তা বাম হাতে থাকা গামছা দিয়ে মুছেন।
আর ঠিক তক্ষুনি ওনার স্ত্রী নাস্তার ট্রে হাতে হাজির হয়।
ছেলে গুলো নেই আর নিজের স্বামী কে এমন অবস্থায় দেখে।
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে আপনার?
আর ছেলে গুলো কারা এলো আবার চলেও গেলো?”

-“গাঢ় নীল সার্ট পড়া ছেলে টা আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান এর নাতি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আজ্জম মির্জার ছোট ছেলে।”

-“ওহ আচ্ছা।
এইজন্যই বলি ছেলে টা কে চেনা চেনা লাগে। ”

-“লাগবে না ভবিষ্যতে এমপি যে।”

—————

-“থালা বাসন গুলো রান্না ঘরে রাখা আছে।
আমি আধঘন্টা পর রান্না করতে যাব।
তখন গিয়ে যেনো সব পরিস্কার দেখি।”

-“মনি প্লিজ আজ শিউলি আপু কে দিয়ে করিয়ে নেও না প্লিজ।
আমার হাত কেটে গিয়েছে কাল।
আজ স্কুলে লিখতেও পারি নি সারা লিখে দিয়েছে। ”

কথা টা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় মিতা সওদাগর।
প্রিয়তার কাঁধে বেয়ে পিঠের উপর পড়ে থাকা লম্বা বিনুনি টা খপ করে শক্ত হাতের মুঠো পুরে নেয় মিতা সওদাগর
ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“আমার মুখে উপর কথা না?
কে দিয়েছে এতো সাহস ওই বড় লোক দরদী বান্ধবী?
চুপ চাপ গিয়ে বাসন গুলো মেজে নে।”

কথা গুলো বলেই ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে তিনি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
ঠিক তক্ষুনি প্রিয়তার ছোট নরমাল মুটো ফোন টা এটার ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে তুলে।
প্রিয়তা চোখের জল মুছে এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে তার বড় ভাই আয়ান ফোন দিয়েছে।
প্রিয়তা গলা টা কেশে ঠিক করে ফোন টা রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসে

-“মা আবার মেরেছে?”

-“এমা তা কেন হবে।
আমি তো মাত্র স্কুল থেকে এলাম।”

-“থাপড়ে তোর মিথ্যা বলা আমি ছুটি দেবো।
আয়না আছে বাড়িতে ভুলে গিয়েছিস?”

প্রিয়তা জ্বি হা কামড়ে ধরে দাঁত দ্বারা।
তার তো মনেই ছিল আয়না আপু আছে বাড়িতে।

-“ছাড়তো এসব।
সন্তান ভুল করলে মা শাসন করতেই পারে।
আচ্ছা তুমি বাড়ি কবে আসবে ভাইয়া?”

-“এটাকে মা-গত শাসন বলে না।
এটাকে অত্যাচার বলে।
তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
খাবার খেয়েছিস?”

-“না ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছিলাম।”

-“আচ্ছা তবে যা।
আর মন দিয়ে পড়বি কিন্তু।
এক্সাম কিন্তু বেশি দূর নয়।”

-“হুম।”

কথা শেষ করে ফোন রাখে আয়ান।
প্রিয়তাও কাজে লেগে পড়ে।নয়তো দেখা যাবে রাতে আবার খাবার দেবে না।
মা তো নেই।কিন্তু বাবা শফিক সওদাগরের উপর ভীষণ অভিমান জমে আছে।
আচ্ছা তিনি কি তা জানে?
———–

-“ভাইয়া বাবা ডাকে।”

কথা টা বলে সারা চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে বোন কে ডেকে উঠে

-“তুই ছিল আজ তোর বান্ধবীর সাথে?”

-“না ভাইয়া মানে,,,

-“চল যা। ”

সারা আমতা আমতা করে কিছু বলতে চায়।
কিন্তু সাদনান শুনে না তার আগে গম্ভীর কণ্ঠে যেতে বলে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

রজনী প্রভাতে পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#রজনী_প্রভাতে (শেষ পর্ব)
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৯.
শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে নয় বছর আগে। কোনো এক মাঘের প্রভাত বেলায়। ছোট চাচীর সাথে খেজুরের রস নিয়ে তার বাবার বাড়িতে এসেছিল তাযীম। সেটাই তার প্রথমবার আসা জ্ঞান হওয়ার পরে। এর আগে যখন এসেছিল তখন চাচা আর চাচীর বিয়েতে এসেছিল সেও তখন এক কিংবা দুই বছর বয়সের ছিল। তাই এই মানুষজন কিংবা বাড়িটা তার কাছে অনেকটাই অচেনা ছিল। ছোট চাচীর বাবার বাড়ির খুব কম সদস্যের সাথেই দেখা হয়েছিল তার। এর মধ্যে একজন ছিল তটিনী। যার সাথে সেবারই প্রথম দেখা হয়েছিল। আর প্রথম দেখাতেই কি যেন হলো! কলেজ পড়ুয়া ছেলেটার হুট করেই একটা নতুন অনুভূতি হলো। চঞ্চলা, দুষ্টু একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগল। এতই ভালো লাগল যে শুধুই কোনো না কোনো উপায় খুঁজত মেয়েটার সাথে দেখা করার। দিনের পর দিন ছোট চাচীর বাবার বাড়িতে গিয়ে মোর্শেদের সাথে আড্ডা দিতো। সে ভাবটা করত এমন যেন সে মোর্শেদের কাছে এসেছে কিংবা কোনো দরকারি কাজে কিন্তু আসল কারণটা ছিল তটিনী।

এভাবে বছর ঘুরল। আরেকটু বড় হলো সে। আরেকটু বুঝদার হলো। এবং বুঝতে পারল যে, সে যে মেয়েটির জন্য এত পা’গ’ল সেই মেয়েটি তাকে দুই চোখেও স’হ্য করতে পারে না। তাযীমের এতে যে খুব ক’ষ্ট হতো তা না। বরং সে আরো ভালো করে মেয়েটিকে জ্বা’লা’তো। অযথাই এই সেই পরমায়েশ দিতো, এটা সেটা বলে খোঁ’চা দিতো। সবচেয়ে বি’র’ক্ত করত বুচি ডেকে। সে যখন বুঝতে পারল তটিনী তাকে যতটা অপছন্দ করে তার চেয়েও বেশি অপছন্দ করে এই বুচি ডাকটাকে। তখন থেকেই যেন লাগাম ছাড়া হয়ে পড়ল তার এই ডাক। তটিনীর ও একদিন ধৈর্যের সীমা ভা’ঙ’ল। তাযীম নিতে পারেনি তটিনীর ঔদ্ধত্যতা। ভেবেছিল বিচার দিলে তটিনী হয়তো একটু ভদ্র ভাবে কথা বলবে তার সাথে এবং তার নিজের একটা ভাব বাড়বে তটিনীর সামনে কিন্তু সেটা হয়নি। বরং যা হলো তা ভাবনারও বাইরে ছিল তার। তটিনী আর এলো না কোনো দিন তার সামনে। তিন চার বছরের অভ্যাসটা হুট করেই বদলে গেল। আর দেখা হলো না মেয়েটার সাথে। তাযীম নিরূপায় হয়ে পড়ে। তার যে তটিনী ছাড়া চলবে না সে তা আরো আগেই বুঝে গিয়েছে। অথচ মেয়েটা তাকে ছাড়া দিব্যি চলছে। তার ক’ষ্ট হতো। কয়েকবার চেষ্টা করেছে ক্ষ’মা চেয়ে নেওয়ার। মেয়েটা ধরা-ই দিল না!

এর মধ্যে আরো কিছু বছর কেটে গেল। তটিনীও কিশোরী থেকে যুবতী হলো। তাযীমও নিজের পায়ে দাঁড়ালো। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করল। এর মধ্যে হঠাৎই আয়রার বিয়ের আয়োজন শুরু হলো। তাযীম ভেবেছিল তটিনী আসবে না। কেননা আয়রার বড় বোনের বিয়েতেও সে আসেনি। যদিও তটিনী এসেছিল শুধু বিয়ের দিন কিন্তু দেখা হয়নি তার সাথে। তাই সে জানেই না তটিনী এসেছিল কিনা।

অফিসে কাজ থাকায় তাযীম একেবারে বিয়ের দিন যাবে বলেই ঠিক করেছিল। হঠাৎ করেই খবর পেল তটিনী এসেছে। তাযীম সব ফেলে বাড়ি ছুটল হন্তদন্ত হয়ে। আর বাড়ি ঢুকেই সে দর্শন পেল তার বহু বছরের আকাঙ্ক্ষিত সেই মানুষটির। তাযীমের সারা দেহে তখন শীতল হাওয়া বয়ে যায়। এত গভীর অনুভূতি সে কতই না কঠোর ভাবে আড়াল করেছিল সেদিন। এক বারও তটিনীকে বুঝতে দিল না। বরং তাকে আগের মতোই কথা দিয়ে বি’র’ক্ত করল।

এরপর আরো দুটো দিন কাটল। তাযীমের মনে হলো তটিনী তাকে অন্যভাবে দেখছে। তটিনীর হাবভাব আচার-আচরণ কেমন যেন অন্যরকম লাগল তার চোখে। তার কাছে মনে হতে লাগল আগের মতো তটিনী বিরক্ত হয় না তার ওপর। বরং তাকে আশেপাশে দেখলেই ল’জ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। তাযীম হুট করেই ভাবল পরীক্ষা করা যাক। সে আগের মতোই তটিনীকে বুচি বলে ডাকল। তটিনী সেবার খুব বেশিই অভিমান করল। রা’গের বশে তাযীমকে কথা শোনাতেও ছাড়েনি। পরবর্তীতে অ’স’ভ্য বলল। তাযীমও অ’স’ভ্যতা কেমন হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে। অথচ এটা নিয়ে তটিনী বড় ধরনের ইস্যু ক্রিয়েট করতে পারত। যা সে করেনি। বরং এটাই ভাবিয়েছে তাযীমকে। এই মেয়েটা নিশ্চয়ই এই সুযোগে পুরোনো ক্ষ’তের প্র’তি’শো’ধ নিতে পারত। কিন্তু সে তা কেন করল না?

তাযীমের মা বাবা হজে যাচ্ছেন সামনে। এর মধ্যে তারা চাইছে তার বিয়েটা অনানুষ্ঠানিক ভাবে পড়িয়ে যেতে। মৈথীকে তার মা প্রথম পছন্দে রেখেছিলেন। মৈথীর কথা তুলতেই তাযীম সরাসরি নাকোচ করল। মৈথীকে আলাদা ভাবে বাইরে ডেকে যখন বলল যে বিয়েটা সে করতে পারবে না। মৈথী তখন কিছুই বলেনি। বরং সে নিজেই তটিনীকে বিয়ে করতে বলেছে। মৈথী মু’ক্তমনা মেয়ে। জে’দ রা’গ তার যে নেই তা নয়। তবে আত্মমর্যাদা খুইয়ে কারো পেছনে পড়ে থাকা তার সাথে যায় না। সে খুব সুক্ষ্ম ভাবে তাযীমকে বুঝিয়ে দিয়েছে তার তাযীম না হলেও চলবে। বরং তার এমন কাউকেই দরকার যে তাকে ভালোবাসবে। জো’র করে আর সব হলেও ভালোবাসা তো হয় না।

অতঃপর তাযীম তার বাবা-মাকে জানায় সে তটিনীকে পছন্দ করে, বিয়ে করতে চায়। এতে আপত্তি করার তেমন কিছুই ছিল না। কেননা বংশ, মেয়ে দুটোই কোনো দিকে খা’রা’প নয়। তারা মেনে নিলেন। তবে তটিনীর বাড়ির দিক থেকে এটা প্রথমে মানেনি। চন্দ্রমল্লিকার আগে তটিনীর বিয়ের কথা তারা ভাবছেন না। কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। হজের সময় হয়ে আসছে। তাযীমের বাবা-মা আর এক সপ্তাহ আছেন। এবার তটিনীর ছোট ফুফু চেষ্টা চালান। ভাইদের বুঝিয়ে বলেন এটা পারিবারিক ভাবে হয়ে যাক আপাতত। এত দিকে জানানোর দরকার নেই। অনুষ্ঠান দুই বছর পরে হলেও সমস্যা নেই। তাযীম সুপাত্র তাই সবাই আর না করল না। চন্দ্রমল্লিকাও বলল তার সমস্যা নেই কোনো। বোন রাজি থাকলেই হলো। এই সবই তটিনীর কাছে আড়াল ছিল। কারণ সে যে সহজেই মানবে না তা সবাই জানত। সবাই জানে তার আর তাযীমের মধ্যে দ্ব’ন্দ রয়েছে। তবে এটা একসময় কা’টিয়ে উঠবে বিয়ে হলে এটাও সবাই ভেবে দেখল। এত কিছু হলেও তাযীমের মন মানছিল না। সে দেখা করতে গেল তটিনীর সাথে। তটিনীর কথা শুনে মনে হলো, তার সেই ধারণাটা ভুল ছিল না। তার মনেও যে দ্বি’ধা দ্ব’ন্দ ছিল তা কে’টে যায়।

তটিনীর সাথে তাযীমের দেখা হলো বিয়ের পরে। দেখা করার জন্য তাযীমকে তটিনীর রুমে যেতে হয়। তটিনীর রুমে গিয়ে সে দেখল তটিনী বিছানায় বসে কাঁদছে। তাযীম শুনেছিল চন্দ্রমল্লিকার মুখ থেকে যে একটু ব’কা’ঝ’কা করা হয়েছে তটিনীকে। রাজি হয়নি প্রথম দফায় তাই। তাযীমকে দেখেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তটিনী। তাযীম গম্ভীর গলায় বলল,

-‘কাঁদছ কেন?’

তটিনী কিছু বলল না। তাযীম একটু এগিয়ে এসে তটিনীর দিকে ঝুঁকে বলল,

-‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করেছ বলে কাঁ’দ’ছ?’

তটিনী মাথা নাড়ল। ফুঁপিয়ে উঠে বলল,

-‘আপনি এটা ঠিক করেননি। আমি আপনাকে মাফ করব না।’

তাযীম জোরে এক ধ’ম’ক দিলো তটিনীকে। তটিনী তাতে একটু কেঁ’পে উঠল।

-‘এই মেয়ে তোমার কাছে আমি মাফ চেয়েছি?’

তটিনী এমনটা আশা করেনি। সে এবার আরো বেশি করে কাঁদল। এই অস’হ্যকর মানুষটার সাথে একটা জীবন সে কীভাবে পার করবে? বাবা এটা কি করল! তার মেয়েকে এই ছেলেটা কতটা ক’ষ্ট দেয় সে কি জানে? জানলে কি দিতো বিয়ে? তটিনীর মনে হলো নতুন শুরুর চিন্তা করে বিয়েতে হ্যাঁ বলা তার উচিত হয়নি। আরেকটু ভাবতে পারত।

তাযীম পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা লাল রঙের লম্বা বক্স বের করল। বক্স খুলে একটা সুন্দর হী’রার প্যান্ডেন্ট বের করল। সেটা হাতে নিয়ে তটিনীকে বলল,

-‘কাছে এসো।’

তটিনী এক পা পিছিয়ে গেল। তাযীম বুঝল সবে তো শুরু, আরো পোহাতে হবে এই সব জ্বা’লা, য’ন্ত্র’না তাকে। অবাধ্য বউ পেয়েছে যে! সে নিজেই এগিয়ে গেল তটিনীর কাছে। ভালো করে একবার চোখ বুলিয়ে নিল সে। লাল জামদানিতে তটিনীকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। খোপা করায় খুব ম্যাচিউরড মনে হচ্ছে বাস্তবে যা সে নয়। তটিনী এক মুহূর্তে জন্য নিরব হয়ে গেল যখন তাযীম তাকে প্যান্ডেন্টটা পরিয়ে দিল। তটিনীকে আরো বেশি অবাক করে দিয়ে তার মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে তাযীম বলল,

-‘পার্ফেক্ট।’

এতক্ষণের কান্না সব কোথায় যে উধাও হলো তখন! তটিনী ল’জ্জা পেয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। তাযীম হেসে ফেলল। মনে মনে ভাবল, খুব জলদি মেয়েটিকে নিজের কাছে নিয়ে যাবে। এভাবে আর নয়, তার আগামী দিনের প্রতিটি রজনী প্রভাতে সে তটিনীকে কাছে চায়।

২০.
চন্দ্রমল্লিকা বসার ঘরের এক কোণে একজনকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল। মানুষটাকে সে আয়রাদের বাড়িতেও একবার দেখেছিল। চন্দ্রমল্লিকার খুব ইচ্ছে তার সাথে আলাপ করার। আজ ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতে না পেরেই কাছে গেল।

-‘হাই, আমি চন্দ্রমল্লিকা। আপনি?’

চন্দ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো। একটা কারণে তার মুড অফ। তার ওপর একটা অচেনা মেয়ের গায়ে পড়ে আলাপ করতে আসা তাকে আরো বি’র’ক্ত করল। সে চন্দ্রমল্লিকার দিকে না তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল,

-‘আপনি কে তা তো জানতে চাইনি। আমি কে তা বলতেও আমি আগ্রহী না।’

চন্দ্রমল্লিকা বুঝল লোকটা ভীষণ বি’র’ক্ত হয়েছে। লোকটার বি’র’ক্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিতেই যেন সে বলল,

-‘সমস্যা নেই। আমি আগে থেকেই জেনে নিয়েছি। আপনি হলেন চন্দ্র। আমার মল্লিকা নামের আগেও একটা চন্দ্র আছে। আমাদের নামের কী সুন্দর মিল না? যদি কাপল হই তবে ইজিলি চন্দ্রমল্লিকা বলে দেওয়া যাবে। কী বলেন!’

চন্দ্রর মুখটা হা হয়ে গেল। মেয়েটা এটা কেমন কথা বলল? অচেনা অজানা এক পুরুষকে এসে বলছে আমরা যদি কাপল হই! আরে এই টাইপের মেয়েকে তো চন্দ্র পছন্দই করেনা। আবার তার সাথে জুটি বাঁধবে? অসম্ভব! মেয়েটি নিতান্তই বে’হা’য়া, বে’শ’র’ম। উহু একটু ভুল হয়েছে, সুন্দরী বে’হা’য়া, বে’শ’র’ম মেয়ে। চন্দ্র মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে আরেকবার তাকালো। চন্দ্রমল্লিকা হাসছে। সে ভাবুক হয়ে পড়ল তাকে জোকার লাগছে কি না এই ভেবে!

সমাপ্ত।

রজনী প্রভাতে পর্ব-০৯

0

#রজনী_প্রভাতে (পর্ব-৯)
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৭.
তটিনীর আজ সিটি ছিল। আগের দিন সারা রাত জেগে ধুমধাম পড়েছে সে। এতদিনের পড়া একরাতে পড়তে গিয়ে মাথা গ’র’মও করে ফেলেছিল। সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে এসে দেখল সিটি আজ হচ্ছে না। স্যার আসেননি। নিজের এক রাতের ভো’গান্তির কথা ভেবে তার ক’ষ্টে বুকটা ফেঁ’টে যাচ্ছে। ক্যাম্পাস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়েছে সে বাড়ি গিয়ে আগে একটা ঘুম দেবে এই ভেবেই। কিন্তু পথে তার দেখা হয়ে গেল তাযীমের সাথে। সেই আয়রার বিয়ের সময় প্রথম সাক্ষাৎে যেমন ফর্মাল গেট আপে দেখেছিল এখনও তেমনিই ফর্মাল গেট আপেই সে দাঁড়িয়ে আছে জারুল গাছের নিচে। সে একা নয় অবশ্য। সাথে তার বয়সী আরো দুজন যুবক আছে। মনে হচ্ছে বন্ধু। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে বেশ হাসি ঠাট্টা করছে তারা। তটিনী নিজের দিকে খেয়াল করল। আজ এত বি’শ্রী ভাবে তৈরি হয়েছে সে! মুখে একটু ক্রিম পর্যন্ত দেয়নি, জামাটাও আয়রন করা ছিল না। চুলটা কোনো রকম বাধা। তার ভীষণ অ’স্ব’স্তি লাগল এই ভেবে যে তাযীম তাকে এভাবে দেখে ফেললে কি ভাববে। তৎক্ষণাত তার মস্তিষ্কে এই চিন্তারও উদয় হলো, তাযীমের ভাবাভাবি দিয়ে তার কী কাজ? আশ্চর্য! তার মাথায় এমন একটা চিন্তা এলো-ই বা কেন?

তটিনী আপনমনে হাঁটতে লাগল। কোথায় কে আছে না আছে এতকিছু ভাবনায় আর মন দিল না। একটু হাঁটার পরেই পেছন থেকে ডাক এলো। তটিনী শুনেও না শোনার ভান করে হাঁটতে লাগল। তার হাঁটার গতি মোটামুটি কমই ছিল তাযীম একটু দ্রুত হেঁটেই তাকে ধরতে পারল।

-‘এই মেয়ে ডাকছি শুনছ না?’

তটিনী পাশ ফিরে তাকালো তাযীমের মুখের দিকে। বাহ্! লোকটার মুখ বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। খোশ মেজাজেও আছে বোধ হয়। এত খুশির কারণ কী?

-‘কি? এতক্ষণ ডাকছিলাম শোনোনি আর এখন দেখছি হা করে তাকিয়েই আছো। এভাবে তাকানোর দরকার নেই। আমি জানি আমি সুন্দর। তুমি রাস্তায় খেয়াল করো, এ’ক্সি’ডে’ন্ট হতে পারে।’

তটিনী ভীষণ ল’জ্জা পেল। সে তাযীমকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে নিজের মতো চলতে লাগল। তাযীমও পাশাপাশি হাঁটছে। তটিনী বি’র’ক্ত হয়ে বলল,

-‘কি সমস্যা? আপনি আমার পেছন পেছন কেন আসছেন?’

-‘আমি তো হাঁটছি। রাস্তায় হাঁটছি। তোমার সামনে আর পেছনে কি? আমি আমার মতো হাঁটছি।’

তটিনী দাঁড়িয়ে পড়ল। একটা রিকশা যাচ্ছে। সে ডাক দিলো, তাযীম তাড়াতাড়ি করে তটিনীকে টেনে নিয়ে একটু সামনে গিয়ে একটা গাড়ির দরজা খুলে তটিনীকে বলল,

-‘চলো, আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমায়।’

তটিনী হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ক্ষি’প্ত গলায় বলল,

-‘আগেও একবার বারণ করেছি এসব আমার পছন্দ না। আপনার সমস্যা কী? আমি আপনার সাথে সত্যিই তর্কে যেতে চাই না।’

-‘যেও না। গাড়িতে ওঠো।’

-‘উঠব না। হুকুম করছেন?’

-‘না। চাইলে করতেও পারি।’

-‘আপনার হুকুম আমি মানলেই তো?’

-‘এত রা’গ করছ কেন? আমরা নরমালি কথা বলতে পারি!’

তটিনী খেয়াল করল সে শুধু শুধুই এত রা’গ দেখাচ্ছে। একটু বেশিই হয়ে গেছে কি ব্যাপারটা?

-‘আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।’

তটিনী চমকে উঠল। কি বলতে চায় তাযীম তাকে? তাযীম আরেকবার মৃদু গলায় বলল,

-‘গাড়িতে ওঠো।’

কেন যেন তটিনী গাড়িতে উঠে বসল। তাযীমও দেরি না করে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। প্রথমে কিছুক্ষণ সবটা নিরব ছিল। নিরবতা ভেঙে তটিনীই বলল,

-‘কি বলতে চান?’

তাযীম তটিনীর দিকে এক বার তাকালো। খুবই শান্ত দৃষ্টি। তটিনীর গা ছমছম করে উঠল। তাযীম কিছুই বলল না। তটিনী তবুও কিছু শোনার আশায় বসে ছিল। অবাক করা ব্যাপার তাযীম একটা কথাও বলেনি গাড়িতে। তটিনীও কেন যেন আবার জিজ্ঞেস করতে পারল না কেন যেন মনের মধ্যে কোথাও তাযীমের বলতে চাওয়া কোথাটা কেউ বলে দিয়েছে তাকে। তটিনীর বাড়ির সামনে গাড়ি থামানোর পরই তাযীম বলল,

-‘তুমি আমাকে নিয়ে কী ভাবো?’

তটিনী এমন প্রশ্নের আশা করেনি। কিছুটা সময় নিয়ে বলল,

-‘কি ভাবব?’

-‘জানি না। ভালো খা’রা’প কিছু তো একটা ভাবো।’

-‘আপনার জানার কথা তো।’

-‘না, যেটা সচরাচর দেখা যায় বা জানা হয় আসলে সেটা হয় না। আমার মনে হচ্ছে আমি যা জানি যা দেখি তাতে ভুল আছে। তুমি আমাকে ম’ন্দ বাসো না।’

তটিনী বুঝতে পারল না ম’ন্দ বাসাটা। সে আনমনেই বলল,

-‘হ্যাঁ ভালোবাসার মধ্যে আবার ম’ন্দ বাসা কী?’

তাযীম তটিনীর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই তটিনী বুঝল ভুলভাল বলে ফেলেছে। সে এটা বলতে চায়নি কিন্তু বলে ফেলেছে।

-‘আমি বলছিলাম আসলে ম’ন্দ বাসা বলতে তো কিছু নেই। যা আছে সব তো ভালোবাসা।’

তাযীম হেসে ফেলল। তটিনী আসলেই বুঝে উঠতে পারছে না। অতিরিক্ত স্ট্রেস নিয়ে ফেলছে সে। গাড়ি থেকে নেমে সে ভাবল তাযীমকে বলবে ভেতরে যেতে কিন্তু তাযীম খুব দ্রুতই চলে গেল। কোনো কথা শুনল না আর।

তটিনীর অবচেতন মন কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে উ’ত্ত’জি’ত হয়ে পড়ে তাতে। তাযীম কি কোনো ভুল বার্তা নিয়ে যাচ্ছে? না! তেমনটা যেন একদমই না হয়। একদমই না।

১৮.
পরদিন সকালে তটিনী ঘুম থেকে উঠে দেখল ছোট ফুফু এসেছেন। আয়রাও নাকি আসবে। হঠাৎ উপলক্ষটা কি সে বুঝতে পারল না। চন্দ্রমল্লিকা বারান্দায় বসে যোগ ব্যায়াম করছিল। তটিনী গিয়ে বলল,

-‘কি হয়েছে আপা? বাড়িতে আজ কিছু আছে? ছোট ফুফু এলো এত সকালে এখন আবার বড় মামারা এলেন। ব্যাপার কী? তুমি কি চলে যাচ্ছো?’

চন্দ্রমল্লিকা অন্য সবার মতো বি’র’ক্ত হলো না একসাথে এত প্রশ্ন শুনে। সে ধীরে সুস্থে বসা থেকে উঠে দুই হাত উপরে তুলে এক পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলল,

-‘তোর বিয়ে।’

তটিনী হেসে ফেলল। বলল,

-‘ধুর! তুমি মজা করছ কেন? কি হয়েছে বলো না? এই এই! তুমি চলে যাচ্ছো আপা?’

চন্দ্রমল্লিকা এবার স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে তটিনীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-‘মজা করব কেন? সত্যিই বলছি।’

-‘আচ্ছা বলো তো কে সে? আমার হবু স্বামীটা কে? কোন দেশের রাজপুত্র!’

তটিনীও ভাবল বোনের সাথে মজার সুর মেলানো যাক। কিন্তু চন্দ্রমল্লিকা তাকে আসলে মজা নয় সত্যিই বলছে এমন ভাবে বলল,

-‘রাজপুত্র তো বটেই। সে দেখতে ভারী চমৎকার।’

তটিনীর মনে হলো চন্দ্রমল্লিকা মজা করছে না। সে জোর করে বোনের হাত চেপে ধরে বলল,

-‘এই আপা মজা করছ তাই না?’

-‘ধুর! মজা করব কেন? সত্যিই তোর বিয়ে। আজকে জাস্ট বিয়েটা পড়ানো হবে। অনুষ্ঠান হবে পড়ে।’

-‘কি! কি বলছ? কার সাথে?’

-‘তাযীম ভাইয়ার সাথে। ওই যে কাল যার গাড়ি করে এলি।’

চন্দ্রমল্লিকা চোখ টিপ দিল ইশারা করে। তটিনীর মনে হলো পায়ের তলার মাটি কাঁপছে। সে ধপ করে বেতের সোফায় বসে পড়ল। আসলেই সত্যি বলেছিল চন্দ্রমল্লিকা। দুপুর গড়াতেই তাযীমরা ঠিকই এসেছিল। বিয়েটাও সময় মতোই পড়ানো হলো। মাঝে যা ঘটেছে তা ঘটার ছিল। পরিবার থেকে একটু চাপ মনের মধ্যে থাকা কিছু অনুভূতি সব মিলিয়ে তটিনীকে রাজি হতেই হলো। সত্যি বলতে অন্য উপায় ছিল না। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ গুলো বোধহয় এমনই। চায় না তবুও হুট করেই হয়ে যায়।

#চলবে।

রজনী প্রভাতে পর্ব-০৮

0

#রজনী_প্রভাতে (পর্ব-৮)
লেখনিতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৫.
গায়ে হলুদ জমকালো আয়োজনে পালিত হচ্ছে। এত সুন্দর সুসজ্জিত অনুষ্ঠানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ করছেন এলাকাবাসী, আত্মীয় স্বজন সকলেই। আয়রার বাবা চাচারা তাতে তৃপ্ত এবং একই সাথে সন্তুষ্ট তাযীমের উপর। ছেলেটাই তো দায়িত্ব নিয়ে সবটা করেছে।

হলুদ পর্ব শেষ হতে চলেছে অথচ তটিনী তখনও আয়রাকে হলুদ ছোঁয়াতে আসেনি দেখে চন্দ্রমল্লিকা গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। হলুদ ছুঁইয়ে তটিনী বাধ্য হয়ে একপাশে একটা টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে। তখন গান বাজনা শুরু হয়ে গেছে। কেউ নাচছে না। এমনিতেই গান বাজছে। আপাতত তেমন কেউ ছাদে নেই। অধিকাংশ মানুষ খাবার খাওয়ার জন্য নিচে গার্ডেনের দিকে চলে গেছে। আয়রা স্টেজে আছে তার ফটোসেশন চলছে। সাথে তার ফুফাতো বোনগুলো আছে। এক পাশে মৈথীকেও দেখা যাচ্ছে। আয়রা রা’গ করবে দেখেই সে বসে আছে নয়তো চলে যেতো। ভালো লাগছে না তার।

খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সে ভাবুক হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তার সামনে কেউ একজন কোকের বোতল ধরতেই সে চমকে উঠল। তাযীম! সে উঠতে চাইলে পারে না। বরং তাযীম তার সামনে চেয়ার টেনে বসে। আর বাম পা দিয়ে তটিনীর বের হওয়ার পথও বন্ধ করে দেয়। ক্ষি’প্ত তটিনী অ’গ্নি দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করলেও টলে না যুবক। ঠোঁটে তার দু’ষ্টু হাসি। উপায় না পেয়ে তটিনী আর নড়ল না এমনকি কোনো কথাই বলল না। মুখ ফিরিয়ে নিলো। কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরও তাযীম সরে যাচ্ছে না দেখে সে পুনরায় তাকালো তাযীমের দিকে। তাযীম তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তটিনী চোখের ইশারায় তাকে বোঝালো যে সে যেন সরে যায়। তাযীম যেন সেটা বুঝেও বুঝল না। নিজে আবার ইশারা করল তটিনীর ডান গালে। যেখানটা লাল হয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে বেশ ঘষা মাজা করা হয়েছে এই জায়গাটায়।

তটিনী হাত দিয়ে দুই গাল ঢেকে বসে রইল। আবার অ’স’ভ্যটা তাকে চু’মু খাবে এই নিয়েই ভ’য় পায় সে। এক চু’মুতেই তার যাই যাই অবস্থা হয়েছে আবার কিছু হলে সে তো চলেই যাবে। এত বার গাল ঘষে ধুঁয়েছে যে এখন চামড়া জ্ব ল ছে তার।

-‘এই তোমরা দুজন কি করছ এখানে?’

মৈথী আসতেই তাযীম সরে বসল। সুযোগ পেয়ে তটিনী উঠে দাঁড়ায় এবং আয়রার কাছে এগিয়ে যায়। মৈথীর এই হুট করে চলে আসাটা তাযীমের পছন্দ হলো না। সেই সাথে তটিনী চলে যাওয়াতে তার রা’গ ও হলো।

মৈথী তাযীমের পাশে চেয়ার টেনে অবাক সুরে বলল,

-‘আশ্চর্য! মেয়েটা এভাবে চলে গেল কেন? কি কথা হচ্ছিল আপনাদের!’

তাযীমও কোনো জবাব না দিয়েই উঠে পড়ল। মৈথী পেছন থেকে ডাকলেও শুনল না যেন এমন ভান করেই নিচে নেমে গেল সোজা। আনমনেই কত কিছু ভেবে বসল মৈথী। দূরে আয়রার সাথে হাসি মুখ করে ছবি তুলতে থাকা তটিনীর দিকে সরু দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো লাগল না।

________________________
পরদিন তাযীমের সাথে তটিনীর আর দেখা হলো না। সে যথা সম্ভব নিজেকে আড়াল রেখেছে। আয়রার বিদায়ের পর পরই তটিনীরাও সপরিবারে নিজ বাড়ির দিকে রওনা হয়। তটিনী, চন্দ্রমল্লিকা আর মোর্শেদ তাদের বড় ফুফুকে নিয়ে এক গাড়িতে ছিল। কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তার এক পাশে গাড়িটা থামানো হয়। তটিনী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ গাড়ি থামানোর কারণটা তার বোধগম্য হলো না। একটু পরেই আরেকটা গাড়ি সামনের থেকে আসতেই দেখা গেল মোর্শেদ গাড়ি থেকে নেমে সেই গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তটিনী কাঁচ নামিয়ে মাথা বের করে দেখল ওই গাড়ি থেকে তাযীমকে বের হতে। তটিনীকে দেখে তাযীম হাসল। তটিনী দ্রুত মাথা ভেতরে নিয়ে চুপচাপ বসে রইল। একটু পর তাযীম তার জানলার পাশেই এসে দাঁড়ালো। চন্দ্রমল্লিকা আর বড় ফুফুর সাথে কথা বলল তাদের বিদায় জানালো। তটিনীর সাথে কথা হলো না কোনো। মোর্শেদ তটিনীকে ধ’ম’কে উঠল,

-‘এই টিনী! বে’য়া’দ’বি করছিস কেন? সালাম দে যীমকে।’

তাযীম কথাটা শুনে তাকিয়ে রইল তটিনীর দিকে। তার চোখটাই যেন কথা বলছে, ‘দাও, সালাম দাও।’

তটিনী সালাম দিলো। সুর করে সেই সালামের জবাব দিতে তাযীমও ভুলল না। তাযীমকে বিদায় দেওয়ার পর মোর্শেদ বলতে থাকে,

-‘কি ভালো একটা ছেলে দেখলি! ওদের বাড়ি থেকে আসার সময় আমাদের সাথে দেখা হলো না, ও বাহিরে ছিল বন্ধুদের সাথে, আমরা চলে যাচ্ছি শুনে বিদায় দেওয়ার জন্য কত দূর ছুটে এলো। টিনী! তুই যে ওকে সম্মান দিস না অথচ ও সবার আগে তোর খবর নেয়। ছোট বোনের মতো ভালোবাসে ও তোকে। আর তুই কিনা এত বা’জে ব্যবহার করিস।’

তটিনী চুপ করে সবটা হজম করল। ছোট বোনের মতো ভালোবাসে! এই ছেলে তার সাথে যা করেছে তা যদি সে একটু বলতে পারত কাউকে! বললেও কি? কেউ বিশ্বাস করবে? তাযীমকে কেউ অবিশ্বাস করে না। যা করার তটিনীকেই করবে।

১৬.
তটিনীর নানু হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়াতে আয়রার বৌ ভাতে তটিনীদের কারো যাওয়া হলো না। তারা সেদিন রাতেই রাজশাহী তার নানুর বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে নানুর অবস্থা কিছুটা ভালো আগের থেকে। কিন্তু তারপরও তটিনীর মায়ের মন মানছিল না দেখে তারা আর ফেরেনি। এক সপ্তাহের মতো সেখানে থাকে। চন্দ্রমল্লিকাও নানুর বাড়ির সকলের সাথে ভালো একটা সময় কাটায় অনেক বছর পরে। এর আগে এতদিন তার তেমন একটা থাকা হয়নি কোথাও।

নানু বাড়ি থেকে ফেরার পর দিনগুলো তটিনীর খুব ব্যস্ততায় কাটে। পড়ালেখার চাপে তাযীমকে নিয়ে ভাবার সময়ও সে পায় না। দেড় মাস তার পরীক্ষা থাকে। দেড় মাস পর ছুটি পেতেই এক বিকেলে চন্দ্রমল্লিকা এসে জানালো বিবিকিউ পার্টি দিবে। চেনা পরিচিত সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। হুট করে এই আয়োজনটা হবে শুনে তটিনী চমকালেও অখুশি হয় না। তার কাছে ভালোই লাগে।

সন্ধ্যার দিকে ছোট ফুফুরা যখন এলো তখনই তার বুক ধড়ফড় করতে থাকে। ছোট ফুফুদের সাথে সবার আদরের তাযীমও এসেছে। মৈথীকে সাথে করে এনেছে। তটিনীর সব আনন্দ এক নিমিষে গায়েব হয়ে গেল। এই অ’স’ভ্য যে আসতে পারে তা তো সে ভুলেই বসেছিল।

আয়রা এসেছে দেখে তটিনী রুমে দরজা দিয়ে থাকতে পারল না। তার সাথে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছিল, গল্প করছিল। বাগানের এক পাশে চন্দ্রমল্লিকা রান্না বান্নার তদারকি করছে। বিবিকিউ পার্টিটা এখন শুধু আর বিবিকিউ পার্টি নেই। বাবা চাচারা কাচ্চি বিরিয়ানির ব্যবস্থা করে তাদের সবার পরিকল্পনা কিছুটা ন’ষ্ট করে দিচ্ছিল। কিন্তু এদিকে বিবিকিউ এর সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলায় সেটাও বাদ দিতে পারল না। তাই একপাশে সেটাও করা হচ্ছে। তটিনী বরাবরই এসব থেকে গা বাঁচিয়ে চললেও আজ পারল না। চন্দ্রমল্লিকা তাকে সেখানে দাঁড় করিয়ে ভেতরে একটা কাজে গেল। আয়রার স্বামীর কল আসায় সেও এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তটিনী একাই তখন দাঁড়িয়েছিল।

-‘তটিনীর বুকে মৃদু ছন্দ!’

তটিনী কেঁপে উঠল। পেছন ফিরতেই দেখল তার চিরচেনা সেই অ’স’ভ্যকে।

-‘কি করছিলে?’

কথা না বলতে চাইলেও তটিনী বলে ফেলল,

-‘আপনার মাথা।’

-‘আমার মাথা? আমার মাথা দিয়ে কি করবে তুমি?’

-‘উফ! আপনি এখানে কেন এসেছেন?’

-‘এসেছি। রান্না কেমন হচ্ছে দেখছি।’

-‘দেখা লাগবে না। খেতে পারলেই হলো তো! যান এখান থেকে।’

-‘আশ্চর্য! কি খাবো তা আগে পরখ করে দেখব না?’

তটিনী ভীষণ রে’গে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-‘আপনার কি মনে হয় আমরা আপনাকে উলটো পালটা কিছু খাইয়ে দিব?’

-‘তোমাকে তো বিশ্বাস নেই। বলা যায় না কোন শ’ত্রুতা থেকে কি করে ফেলো!’

-‘আচ্ছা বেশ। থাকুন আপনি এখানে। আমার কাজ কমেছে। আপনি থাকুন আমি যাই।’

তটিনী চলে যেতে নিলেই তাযীম তার হাত ধরে তাকে আটকায়।

-‘এসব কোন ধরনের অ’স’ভ্যতা? বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। আমার এসব একদমই ভালো লাগে না। হাত ছাড়ুন।’

তাযীম হাত ছেড়ে দিলো। তটিনী চলে গেল। তাযীমের মনে হলো হাতটা আবারও ধরতে। কিন্তু সেটা অনধিকার চর্চা হয়। আচ্ছা? অধিকার তৈরি করে নিলেই তো হয় তাহলে! এটুকু কি সে পারবে না?

#চলবে।