Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 305



কে বাঁশি বাজায় রে পর্ব-০১

0

#কে_বাঁশি_বাজায়_রে
#সূচনা_পর্ব
#নুর_নবী_হাসান_অধির

পারুল গলায় দড়ি দিয়ে বড় বটগাছে ঝুলে আছে৷ নদীর তীরে বটগাছটা অনেকটা জায়গা জুড়ে দখল করে রেখেছে৷ গ্রীষ্মের দুপুরে মায়ের মতো ছায়া দিয়ে কৃষকদের বুকে আগলে রাখে৷ পারুলের জামাটা বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া। দেখে মনে হচ্ছে কোন পশু আক্রমণ করেছে৷ পাড়ার ছেলেরা দড়ি কেটে পারুলের লা’শ নামাল৷ পারুলের মা, বোন মেয়ের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছে৷ কারো বুঝতে বাকী রইল না, একদল ক্ষুধার্ত পশু পারুলের সম্মান নষ্ট করেছে৷
পারুলের মা ভেজা গলায় চিৎকার করে বললেন,

“হ্যাঁ আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে বিচার দিলাম৷ আমার মেয়েকে যারা পৃথিবীতে বাঁচতে দিল না৷ তুমি তাদের তুলে নাও৷ তুমি দুঃখীনি অসহায় মায়ের দোয়া কবুল কর৷”
লোকমুখে অনেক কথা শুনা যাচ্ছে৷ কেউ কেউ বলছে মেয়ে মানুষের পড়াশোনা করতে দিতে হয়না৷ মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিতে হবে৷ ধমক দিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন,

“এসব কথা বাদ দিয়ে মরহুমার জানাযা নামাজের ব্যবস্থা করেন৷ মৃত দেহ বাহিরে বেশিক্ষণ রাখা ঠিক না৷”
পারুলের মা কান্না জনিত ভেজা গলায় বললেন,

“ইমাম সাহেব আমার মেয়ের এত বড় ক্ষতি হলো আর আপনি বলছেন জানাযা নামাজের ব্যবস্থা করতে। আপনার মেয়ের সাথে এমন হলে আপনি এ কথা বলতে পারতেন৷”
ইমাম সাহেব কোন কথা বলল না৷ উনার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। পাশ থেকে অন্য জন বললেন,

“কি করে পারুলের এ অবস্থা হলো? আমরা কেউ কিছু জানি না। পুলিশের কাছে চিঠি লিখলেও পুলিশ আসতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে৷ এখান থেকে কেউ পুলিশের কাছে গেলে আসতে অনেক সময় লাগবে৷”

পারুলের মা আয়েশা বেগম সব দিক বিবেচনা করে আর কোন কথা বাড়ালেন না৷ তিনি পারুলের জানাযা নামাজের অনুমতি দিলেন৷ সন্ধ্যায় আয়েশা বেগম নিজের ছোট মেয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন৷ দুই মেয়েকে নিয়েই ছিল আয়েশা বেগমের পৃথিবী। যুদ্ধের সময় মা বাবা ভাই বোন সবাইকে হারিয়েছে৷ বাবা স্কুল শিক্ষক হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সবাইকে হত্যা করে৷ বাঁচতে দেয়নি দুই বছরের শিশুকেও৷ আয়েশা বেগম কাছে বাহিরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে৷
পরী পারুলের থেকে অনেক ভীতু মেয়ে৷ বোনের এমন অবস্থা দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরে এসেছে৷ পরী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“মা, আপু আর আমাদের কাছে ফিরে আসবে না৷”
পরীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কান্না করে যাচ্ছে৷ ৭১ এর যুদ্ধের সময়ও এতো কষ্ট হয়নি। সেখানে শত্রু চেনা ছিল৷ এখন অচেনা শত্রুর সাথে কিভাবে মোকাবেলা করবেন?”
____________

দুইদিন পর নদীর তীরে আরও একজন মেয়ের লাশ পাওয়া যায়৷ তারও অবস্থা পারুলের মতো৷ প্রথমে তার সম্মান আত্মসাৎ করেছে৷ তারপর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ এতটা নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে দেখেই লোকজন ভয় পেয়ে গেছে৷ পরপর দুইজন মেয়ের সম্মানে হাত দেওয়ার ফলে আনন্দপুরে কোন মেয়েকে ঘর থেকে বের হতে দেয়না৷ সকলের মনে ভয় ঢুকে গেছে৷ মেয়েরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ পরীকে ঘর থেকে বের করা দায় হয়ে পড়েছে৷ আয়েশা বেগম পরীকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছেন৷ মেয়েটা অনেক ভীতু৷ কিছু হলেই ভয়ে বের হয়না৷ আয়েশা বেগম মেয়ের হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে৷ আর কত নিজেকে লুকিয়ে রাখবে৷

হেমন্তের সোনালী রোদের আলোয় খেলা করে স্কুলে যাচ্ছে পরী৷ সাথে মা আছে। তার কোন ভয় নেই৷ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় বাংলার প্রকৃতি ও জীবন। কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস বাংলাদেশে হেমন্তকাল। এক অপরূপ রূপ হেমন্ত, যে ঋতুর সঙ্গে মানুষের হাসি-কান্না জড়িয়ে আছে। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে ওঠে শীতের আগমনী বার্তা। মাঠের পাকা সোনালি ধান, কৃষকের ধান ঘরে তোলার দৃশ্য,কৃষক-কৃষাণির আনন্দ সবই হেমন্তের রূপের অণুষঙ্গ। বৈচিত্র্য রূপের সাজে প্রকৃতিতে হেমন্ত বিরাজ করে। হেমন্ত ঋতুতে চলে শীত-গরমের খেলা। হেমন্তের শুরুর দিকে এক অনুভূতি আর শেষ হেমন্তে অন্য অনুভূতি। ভোরের আকাশে হালকা কুয়াশা, শিশিরে ভেজা মাঠ-ঘাট তারপর ক্রমেই ধরণী উত্তপ্ত হতে থাকে। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য লালিমায় বাংলার ঋতুর রানী হেমন্ত।

কৃষকরা মনের সুখে গানের সাথে ধান কাটছে৷ মৃদু হলকা বাতাসে ধানগুলো প্রকৃতির সাথে নৃত্য করছে৷ আঁকাবাকা মেঠো পথ ধরে মহিষের গাড়ি যাচ্ছে৷ কেউ একজন ধান কাটা বন্ধ করে আয়েশা বেগমকে ডাক দিয়ে বলল,

“তুমি ওহন আবার মাইয়াডারে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছো। এক মাইয়াকে হারাইয়া মন ভরে নাই৷ এহন পরীকেও হারাতে চাও৷”

লোকটির কথা শুনে পরী মায়ের হাত চেপে ধরে৷ চোখে মুখে ভয়ের অনুষঙ্গ স্পর্শ। মেয়েকে ইশারায় ভয় না পাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন৷ আয়েশা বেগম সুন্দরভাবে গুছিয়ে জবাব দিলেন,

“মজিদ ভাই, মেয়েরা শুধু ঘরে বসে থাকার জন্য জন্ম নেয়নি৷ বেগম রোকেয়া মেয়েদের পড়াশোনার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে৷ আমি একজন শিক্ষিত মা হয়ে নিজেকে মেয়েকে কিভাবে মুর্খ বানায়৷ আমি চেষ্টা করব আমার মেয়েকে সর্বোচ্চ শিক্ষা দেওয়ার৷”

“দেখমু তোমার দেমাগ কতদিন থাকে৷ ঘর বাড়ির কাম কাজ শিখিয়ে বিয়ে দিয়ে দাও৷”
অন্য আরেকজন কৃষক বলল,

“মজিদ ভাই কি যে কন? আয়েশা বেগমের দেমাগ বেশি দেইক্কা ওর সোয়ামী ঢাকায় আর একটা বিয়া করছে৷”
সবাই হাসিতে মেতে উঠল৷ মজিদ পানের পিক ফেলে বলল,

“মাও তো মাস্টন্নি। মাইয়াও মাস্টন্নি হইব৷ মাস্টন্নি বানাতে গিয়ে পাড়ার ছেলেদের হাতে তুলে দিও না৷”

পরী তাদের কথোপকথন শুনে যাচ্ছে৷ পরীর চোখে পড়ে এক টুকরো মাটি৷ সূর্যের তাপে শক্ত হয়ে সাদাটে হয়ে গেছে৷ মায়ের অপমান যেন সহ্য হচ্ছে না৷ চোখ থেকে ভয়ের পর্দা কেটে গেছে৷ জ্বলছে প্রতিশোধের নেশা৷ মাটি হাতে নিয়ে কৃষকদের দিকে ছুঁড়ে দেয়। মজিদের চোখে লাগার ফলে চিৎকার করে চোখে হাত দেয়। পরী চিৎকার করে ক্ষোভ নিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

“আমার নামের কিছু বললে আমি সহ্য করব না৷ আমার মা খারাপ নয়৷ আমার মায়ের নামে আর একটা বাজে কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলব৷”

পরীর এমন অগ্নিমূর্তি ন্যায় রুপ দেখে আয়েশা বেগম অবাক হয়ে যায়৷ দেখে মনে হচ্ছে কোন সাহসী যোদ্ধা। আয়োশা বেগম কোন কথা না বলে পরীকে স্কুলে দিয়ে যায়৷ অন্যদিকে কৃষকরা বাজে কথা বলেই যাচ্ছে৷
___________

আজ শুক্রবার। পরীর স্কুল বন্ধ। আয়েশা বেগম রান্না শেষে পরীর হাতে একটা লাঠি দেয় এবং আয়েশা বেগমের হাতে একটা লাঠি৷ পরী চাকিত হয়ে বলল,

“মা লাঠি দিয়ে কি করব?”

“আজ থেকে তোকে লাঠি খেলা শেখাব৷”

“কিন্তু লাঠি খেলা ছেলেদের কাজ৷ আমার গায়ে ছেলেদের মতো শক্তি নেই৷ কিভাবে খেলব এতো শক্তশালী খেলা৷”

“বেশি শক্তি থাকলেই লাঠি খেলায় জয় লাভ করা যায়না৷ জয় লাভ করতে হলে কৌশন জানতে হয়৷ কঠোর অত্যাবসায়ের প্রয়োজন হয়৷ গভীর মনোযোগী হতে হয়৷ বিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হয়৷”
পরী কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

“মা আমি এই খেলা পারব না৷ আমার ভীষণ ভয় লাগে৷ আমি যদি মা’র খাই৷”

“মা’র খাইলে খাবি৷ তবুও তোকে লাঠি খেলা শিখতে হবে৷ আমি তোকে সকল বিষয়ে পারদর্শী দেখতে চাই৷ ভয়কে জয় করতে শিখ৷ তোর বোনের কথা ভাব৷ তোর বাবার কথা মনে কর৷ তারা কেন তোকে ছেঁড়ে চলে গেছে? তোর বোন লাঠি খেলা জানলে আজ বেঁচে থাকত৷”

পরী চোখের জল মুছে লাঠি খেলা শিখতে চাইল৷ কিন্তু প্রথমেই হেরে গেল৷ মাটিতে বসে কান্না করে দিল৷ আয়েশা বেগম কিছু বলল না৷ মেয়ের পাশে বসে মাথায় বিলি কেটে বলল,

“মারে, মেয়েদের সবাই নিচু করে দেখে৷ তুই যত বড় হবি না কেন তোকে কিছু লোক নিচু করেই দেখব৷ তাদের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে না৷ তাদেরকে জবাব দেওয়ার জন্য অনেক কিছু শিখতে হবে৷”
___________

গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়ি থেকে ফিরার সময় কিছু বখাটে ছেলের উক্তি আয়েশা বেগমের কানে ভেসে উঠে৷ তাদের কথা শুনে মনে পড়ে যায় পারুলের কথা৷ সেখানে ছেলেগুলোর মাঝে বেশির ভাগই তার ছাত্র৷ আয়েশা বেগম চোখের কোণ থেকে মনের অজান্তেই চোখ গড়িয়ে পড়ল৷ ছেলেগুলোর কথা এতোটাই ভাবিয়ে তুলল যে, সেদিন রাতে উদরে কিছু পড়ল না৷

রাত গভীর হতেই অন্ধকারে চিৎকারের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে৷ আকুল আবেদনে প্রার্থনা সহিত বলছে,

“আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি আর কখনও এমন কাজ করব না৷ আমি একদম ভালো হয়ে যাব৷ কোনদিন মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে দেখব না৷”

ছেলেটির কোন কথা ঘাতকের কর্ণধারে পৌঁছাল না। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে৷ ফজরের আজান কানে আসার আগেই ছেলেটির দেহ থেকে জীবন চলে যায়৷ ফজরের আজান কানে আসতেই ঘাতক চিৎকার করে বলল,

“আমি পেরেছি নোংরা মানসিকতার মানুষকে শাস্তি দিতে৷ আল্লাহ তুমি আমার পাশে থাকবে৷ আমি দেশের বুকে এমন আবর্জনা রাখব না৷”

ভোরের আলো ফুটতেই চারদিকে রটে যায় ফিরুজ মিয়াকে কে জানি নদীর তীরে নির্মমভাবে হত্যা করেছে? সবথেকে বেশি চিন্তার বিষয় হচ্ছে ফিরোজের গোপন লিঙ্ক কেটে টুকরো টুকরো করে রেখেছে৷ পাশে রক্ত দিয়ে লেখা ❝ধ’র্ষ’ক❞। ধ’র্ষ’কদের পৃথিবীতে বেঁচে থাজার অধিকার নেই৷

চলবে

আমার তুমি পর্ব-১৬

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৬ [অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“তোমার পছন্দ আছে?”

-“হ্যাঁ,আমি সময় করে তোমার সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দেবো।”

কালাম খাঁন রাতে খাবার টেবিলে বসে কবির কে জিজ্ঞেস করেছিল মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না? কিন্তু কবির সোজা বলে দিয়েছে পছন্দ হয় নি আর সে এখন বিয়ে করতে চায় না।
কালাম খাঁন ছেলের কথায় চেহারায় চকচক করে উঠে।
ছেলে যেহেতু বলেছে তার মানে কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আর তাই তো গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করে নিলেন উপরোক্ত প্রশ্ন টা।
কবির বাবার প্রশ্নের জবাব দিয়ে কফির মগ টা হাতে নিয়ে উপরে নিজের রুমে উদ্দেশ্য চলে গেলো।

কালাম খাঁন তৎক্ষনাৎ একটু চিন্তিত হলেন।
বন্ধু কে নিজ মুখে বলেছে এখন কি করে বলবে ছেলে রাজি নয় আর তার ছেলের নিজের পছন্দ করা মেয়ে আছে।
মা হারা ছেলে তার তাও আবার এই একটা মাত্র স্ত্রী শেষ চিহ্ন।
সেই ভালোবাসার অংশ কে কি করে কষ্ট দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে তিনি ফোন হাতে বন্ধু কে কল লাগায়।

————–

মফিজুর মির্জা রাতের খাবার খেয়ে মাত্র রুমে এসছে ঠিক তক্ষুনি ওনার ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে।
তিনি তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গিয়ে বিছানা হতে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো কালাম খাঁন এর ফোন।
তিনি চট করে ভেবে নিলেন হয়তো বিয়ের ব্যাপার কথা এগুবে।
তাই ফোন টা রিসিভ করতেই কালাম খাঁন মলিন কণ্ঠে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
মফিজুর মির্জা একটু চিন্তিত হলেন বন্ধুর কণ্ঠ এমন শোনাল কেন?

-“তোর কিছু হয়েছে?”

-“আসলে কিভাবে বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না।”

-“আরে এতো ভনিতা না করে বলে ফেল।
তুই আমি একই রকম।”

বলেই উচ্চস্বরে হেসে ফেলেন।
সাথে কালাম খাঁন হাসলেন তবে হাসিতে যেনো প্রাণ নেই।
তিনি ইতস্তত ছাড়িয়ে অপরাধী কণ্ঠে বলে উঠে

-“আসলে হয়েছে কি ও না কিছুতেই বিয়ে করতে এখন রাজি হচ্ছে না।”

মফিজুর মির্জা কেমন চুপ হয়ে গেলো যা ওপাশ হতে কালাম খাঁন বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলো কথা কেন বলছে না?
এদিকে মফিজুর মির্জা ভাবছেন এই কথা বাপ, ভাই কে কি করে বলবেন।
কিন্তু অন্তরের কথা অন্তরে রেখে মুখ বলল

-“পছন্দ আছে?”

-“বলল তো তাই।”

-“খুব ভালো।”

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে মফিজুর মির্জা ফোন কাটে।
তার ঠিক মিনিট এর মাথায় সাদনান ওনার রুমে প্রবেশ করে।তিনি কালাম খাঁন এর বলা কথা গুলো সাদনান কে বলেন।
সাদনান মুখ গম্ভীর করে রাখলেও মনে মনে বেশ খুশি।
আর সেই খুশি নিয়ে মনে মনে ভাবে এখনি ঠিক সময় কথা পাতিয়ে ফেলা যাবে।
তাই তো ফট করে প্রশ্ন করে মফিজুর মির্জা কে

-“বাবাই আয়ান কেমন?”

সাদনান সোফায় বসে একটা ম্যাগাজিন উল্টাতে উল্টাতে জিজ্ঞেস করে। সাদনানের এমন প্রশ্নে
তিনি একটু অদ্ভুত নয়নে তাকালো সাদনানের দিকে।
এটার মানে কি?

ছেলে হয়ে আরেক ছেলে কে তার কেমন লাগবে?
তিনি কি মেয়ে নাকি যে অন্য রকম লাগবে?
তবে মনের কথা মনে রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল

-“ভালোই তো।
একজন পুরুষ হিসেবে যেমন লাগা দরকার।”

সাদনান মফিজুর মির্জা কথা হো হা করে হেসে দিলো।
দরজা থেকে আরও একজন মহিলার হাসির শব্দও হলো
আর সে টা সুফিয়া বেগম।
তিনি চা নিয়ে এসছে আর এসেই কথা টা কর্নপাত হতেই ফিক করে হেঁসে রুমে প্রবেশ করেন।
দুই মা ছেলের হাসির মানে বুঝতে পারে না মফিজুর মির্জা।
তাই তিনি চা হাতে বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো দু’জনের দিকেই।
সুফিয়া বেগম চা দিয়ে চলে গেলো আবার।
সে দিকে তাকিয়ে কিছু বিরবির করে মফিজুর মির্জা।
সাদনানের কানে তা পৌঁছায় না।
সাদনান নিজের হাসি কন্ট্রোল এনেই বলে উঠে

-“তুমি তো বললে কবির বিয়ে করতে রাজি না।
আর এটা এখন মাইশা কে বললে ওর হয়তো খারাপ লাগবে।
আর এমনিতেও কয়েক দিন আগে শফিক চাচা তোমার সাথে আয়ান আর মাইশার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলেন।
কিন্তু কবির খাঁন এর সাথে বিয়ের কথা শুনে আর এগিয়ে আসে নি।
তুমি চাইলে এটা দেখতে পারো।
আর আয়ান কে তো চিনো কেমন ও।”

মফিজুর মির্জা চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে একটু চিন্তিত হলেন।
অতঃপর মাথা ঝাঁকিয়ে আবারও বলে উঠে

-“এটা ঠিক বলেছি।
আমি তো কখনো ভাবি নি এসব।
আচ্ছা বাবা,আর ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখি?”

-“একদম। ”

কথা শেষ করে সাদনান রুমে চলে আসে।
রুমে এসেই দেখলো তার ছোট জান এখনো বইয়ের মাঝে মুখ গুঁজে বসে আছে।
মূলত সাদনান বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
সাথে এত্তো গুলো পড়াও কমপ্লিট করতে বলেছে।
আর এসে সব গুলো পড়া নেবে এটাও বলেছে।
তাই তো প্রিয়তা তখন থেকে বসে আছে কিন্তু এতো কঠিন কঠিন পড়া কি আর মুখস্থ হয়?

কিন্তু প্রাণপণ চেষ্টা সে করে যাচ্ছে।
সাদনান যে তার পেছন এসে দাঁড়িয়েছে সে দিকেও তার খেয়াল নেই।
সাদনান মুচকি হাসলো।
কিন্তু প্রিয়তা ততক্ষণে অনুভব করতে পারছে।
পেছনে তার সুদর্শন ব্যক্তিগত পুরুষ টা অবস্থান করছে।

সাদনান বই টা বন্ধ করে দিয়ে দিলো পেছন হতে হাত দিয়ে।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে তার ছোট জান কে দাঁড় করিয়ে দুই হাতে প্রিয়তার কোমড় জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
এক হাত দিয়ে ডান গালে তর্জনী আঙ্গুল ছুঁয়ে ধীরে কন্ঠে বলে উঠে

-“থালার মতো বড় একটা চাঁদ উঠেছে আকাশে।
বাবাইর রুম থেকে আসার সময় দেখেছি।
কিন্তু আমার কি মনে হয়? উঁহু মনে হয় না সতি ওই চাঁদের চেয়ে আমার ব্যক্তিগাত চাঁদ টা বেশি সুন্দর।

সাদনানের কথায় প্রিয়তা লজ্জা রংধনু রং ধারণ করে।
গালে লাল আভা ফুটে উঠে।
সাদনান সেই গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।

-“পরীক্ষা না হলে।
শাস্তি হতো এভাবে পাগলের করার জন্য আর সাথে পাগলামি টা দেখিয়ে দিতাম।”

সাদনান কথা শেষ করে চট করে কোলে তুলে বউ কে।
অতঃপর বিছানায় শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে এসে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মাঝে তার ছোট জান কে।
প্রিয়তাও গুটিসুটি মেরে সেভাবে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সাথে সাদনান নিজেও।

————

-“রাহান ভাই আপনি এতো রাতে এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন?”

সারার প্রশ্নে রাহান একটু চমকাল।আজ সাদনান তাকে বাড়ি যেতে দেয় নি আর সে লিভিং রুমে একটা পিলারের পেছনে
সে তো এই মেয়ে কে দেখতে এখানে দাঁড়িয়ে ছিল।
কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে কখন যে সারা এসে পরেছে টেরই পায় নি।

-“পানি নিতে যাচ্ছিলাম।”

আমতা আমতা করে বলে উঠলো রাহান।
সারা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিশ্বাস করে নি।
তাই রাহান ফোন টা পকেটে রেখে ডাইনিং এর দিকে চলে গেলো।
সারাও পেছন পেছন গেলো।
রাহান গিয়ে টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে জগ হতে পানি নিয়ে এক টানে খেয়ে নিলো।
অতঃপর গ্লাস টা টেবিলে রেখে পেছন ফিরতেই সারা কে দুই হাত কোমড়ে রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভয় পেলো।
তবে চেহারায় তা ফুটতে দিলো।
উল্টো নিজে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে

-“কি হয়েছে?”

-“বিশ্বাস হচ্ছে না।”

চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল সারা।
রাহান এবার আর কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।
বরং একটু এগিয়ে আসে সারার নিকট।
সামান্য ঝুঁকে আসে সারার মুখের উপর।
অতঃপর খুব শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“ঘুমের জন্য ঔষধ এর প্রয়োজন ছিল আর সেটাই নিতে এসছি।”

#চলবে…..

পরবর্তী পর্ব নিয়মিত আপলোড করা হবে।

আমার তুমি পর্ব-১৫

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৫[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সাদনান ঘুমিয়ে আছে।প্রিয়তা সাদনান বুকে থুতনি ঠেকিয়ে সাদনানের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রাত এখন কয় টা বাজে?
হয়তো তিন টা বা তারচেয়েও বেশি। প্রিয়তার ইচ্ছে করছে না পাশের দেয়ালে তাকিয়ে দেওয়াল ঘড়ি টায় দেখতে কয় টা বাজে।
তার শুধু এখন এই সাদনান নামক সুন্দর সুশ্রী সুদর্শন পুরুষ টার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
মন টা আরও অনেক কিছু চাইছে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো তার ব্যক্তিগত পুরুষ টার চাপ দাঁড়ি ভর্তি গালে নিজের পাতলা ঠোঁট জোড়া সেখানে বসিয়ে চুমু খাওয়া।
যেই ভাবা সেই কাজ। কনুই দিয়ে ভর করে সামান্য উঁচু হলো এরচেয়ে বেশি হলে সাদনান হয়তো জেগে যাবে তার কারণ হলো সাদনান তার ছোট জান কে শক্ত করে বুকে আগলে নিশ্চিন্তমনে ঘুমিয়ে আছে।
প্রিয়তা মাথা টা একটু এগিয়ে নিয়ে হাল্কা করে সাদনানের গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
আর অমনি সাদনান চোখ পিটপিট করে তাকালো।
প্রিয়তা ভড়কালো হকচকিয়ে উঠলো।
তাড়াহুড়ো সহিতে মুখে হাত দিয়ে সাদনানের বুকের উপর হতে সরে আসতে চাইলো।
কিন্তু এটা কি সম্ভব সামনের সাদনান নামক পুরুষ টার জন্য?
উঁহু, মোটেও না।
তাই তো প্রিয়তা পারলো না সরতে।
সাদনান দিলো না ছেড়ে তার ছোট জান কে।
উন্মুক্ত বুকের সাথে চেপে ধরে।
মাদকাসক্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“একটু আগে তো এতো ভালোবাসা দিলাম।
এখন আবার চাই বললেই পারতে।
আমার ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নেওয়ার দরকার কি ছিল?”

প্রিয়তা সাদনানের এমন ঘুম ঘুম কণ্ঠ শুনে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
বুকের ভেতর কেমন একটা করছে।
হয়তো বুকের বা পাশে থাকা লাল ছোট যন্ত্র টা যদি পারতো তবে হয়তো এখুনি ছিটকে শরীর থেকে বাহির বেরিয়ে আসতো।

প্রিয়তা চোখ বন্ধরত অবস্থায় মিনমিন করে নিজের সাফাই গাইতে বলল

-“আমি তো শুধু গালে,,,

-“এখন তো এসব বললে হবে না।
ঘুম যখন ভেঙ্গে দিয়েছও তখন শাস্তি তো পেতেই হবে আমার ছোট জান।”

কথা শেষ করেই সাদনান প্রিয়তা কে এক ঝটকায় নিজের উপর হতে নিচে ফেলে নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে ছোট প্রিয়তার শরীরের উপর।
আর অমনি সাদনানের বলিষ্ঠ দেহখানা প্রিয়তার ছোট দেহপিঞ্জরা ঢেকে গেলো।

——-

সারা,প্রিয়তা,মাইশা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার সাইডে।
তার কারণ সাদনান বলেছে ছুটির পর সে এসে নিয়ে যাবে তাদের।
বলেছে দুই টার দিকে আসবে আজ তিন জনেই হাফ ক্লাস করেছে।
এখন আড়াইটার মতো বাজে।
কিন্তু সাদনানের খবর নেই।
হয়তো কোনো কাজে আঁটকে গিয়েছে।
আজ এই এলাকায় একটা মিটিং আছে প্রিয়তা শুনেছে হয়তো এখনো শেষ হয় নি।
তারা অবশ্য বাড়ি চলে যেতো।কিন্তু সাদনান বলেছে ছুটির পর এক জায়গায় যাবে তাই মূলত অপেক্ষা করা।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনানের কালো গাড়ি টা এদিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো।
গাড়ি টা ওদের সামনে এসে থামল।
পেছনে একটা বাইকও আছে আর সেটায় আয়ান।
সাদনান গাড়ি কাচ নামিয়ে মাইশা কে উদ্দেশ্য করে বলল

-“তুই আয়ানের সাথে আয়।
আর তুই সামনে বসে পড়।”

শেষের কথা টা সারা কে উদ্দেশ্য করে বলে। অতঃপর নিজের পাশে বসা রাহানের দিকে তাকাতেই রাহান তড়িঘড়ি করে গাড়ি হতে নেমে পড়ে।
সাদনানও নামে।
অতঃপর পেছনে বসে পড়ে আর রাহান ড্রাইভিং সিটে সারা ফ্রন্ট সিটে।
প্রিয়তাও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে ওপাশের দরজা খুলে সাদনানের পাশে বসে।
আর রাহান গাড়ি স্টার্ট দেয়।
আয়ান বাইক নিয়ে ওদের গাড়ি অনুসরণ করে।
রাহান নার্ভাস। ওর কেমন লাগছে পাশে বসা নীল ড্রেস পড়া সারা শরীর থেকে সুন্দর একটা স্মেল আসছে।
আর সেই গন্ধে রাহানের বুকের ভেতর ধুপধাপ শব্দ করছে।
আচ্ছা পাশে বসা ছোট সারারও কি এমন লাগছে?

সাদমান প্রিয়তার ডান হাত টা ওর বুকের বা পাশে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে রেখেছে।
ছয় ঘন্টা পর বউয়ের দেখা পেয়েছে ছুঁতে পেরেছে।
দিন যত যাচ্ছে তার এই মেয়ের প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়ছে।
প্রিয়তা উশখুশ করছে।
সাদনান এভাবে চোখ বন্ধ করে রাখায় প্রিয়তার অস্থির অস্থির লাগছে।
হয়তো বেশি ক্লান্ত।
প্রিয়তা ঘুরে বসে নিজের বা হাত টা সাদনানের মুখের ডান পাশের চোয়ালে রেখে জিজ্ঞেস করে

-“বেশি খারাপ লাগছে?”

সাদনান ফট করে চোখ মেলে।
প্রিয়তা একটু ভয় পেলো রেগে গেলো না তো আবার?
কিন্তু প্রিয়তার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সাদনান প্রিয়তার মাথা টা টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
পাঞ্জাবি দুই টা বোতাম খোলে লোমযুক্ত উন্মুক্ত বুকের বা পাশ টায় নিজের ডান হাত দিয়ে ইশারা করে ধীরে কন্ঠে বলে উঠে

-“এখানে বড্ড জ্বালা করে।
যখন তোমাকে চোখের আড়াল করি।”

প্রিয়তা অবাক হলো।
এই লোক টা সত্যি তাকে এতো ভালোবাসে?
কই আগে তো কখনো বুঝতে পারে নি।ব্যবহার, কথা বার্তার ধরন দেখেও মনে হতো না।
সব সময় তো কেমন গম্ভীর কণ্ঠে তার সাথে কথা বলতো।
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই গাড়ি টা একটা তিন তলা বিল্ডিং এর সামনে থামে।
রাহান সবাই কে নামতে বলে।
সবাই নেমে সাইডে দাঁড়ায়।
আর সাদনান একটা কালো মাক্স পাঞ্জাবির পকেট হতে বের করে মুখে পড়ে নেয়।
রাহান গাড়ি আর আয়ান বাইক পার্ক করে এলে তারা সবাই লিফ্টে করে সোজা তিন তলার ছাঁদে চলে আসে।
একটা বড় রেস্টুরেন্টে। দুই তালা আর তিন তলা মিলিয়ে।
সাদনান সবাই কে নিয়ে কর্নারে দুই টা টেবিলে গিয়ে বসে।
তার পর ওয়েটার ডেকে খাবার অর্ডার দেয়।ওরা ছয় জন কিন্তু খাবার আট জনের অর্ডার করেছে।
ওয়েটার চলে যাওয়ার মিনিট দশের এর মধ্যে কবির খাঁন কে আসতে দেখা গেলো।
সাদনান উঠে হাত এগিয়ে হ্যান্সেক করে।
অতঃপর রাহান এর পাশে আর সাদনান প্রিয়তার বরাবর বসতে বলে।
এভাবে রাহান আয়ানের সাথেও কুশল বিনিময় করে। তার ঠিক পাঁচ মিনিট এর মাথায় মাইশার ফ্রেন্ড তিন্নিও আসে।
মাইশা অবাক হয়েছে কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারে সাদনান ভাই হয়তো ডেকেছে।
আজ তিন্নি কলেজ আসে নি নয়তো মাইশা ওকে সাথে করে নিয়ে আসতো।
তাদের আড্ডার মাঝেই তিন জন ওয়েটার এসে তাদের দুই টেবিলে খাবার গুলো সুন্দর করে পরিবেশন করে দিয়ে গেলো।
অতঃপর সবাই নানান আলাপ করতে করতে খাবার শেষ করে।

-“আয়ান মাইশা একে অপরকে ভালোবাসে।”

-“এটা আপনাদের ফ্যামিলিতে বললে আমার মনে হয় ভালো হতো।
আমার দিক হতে কোনো ঝামেলা হবে না।
এমনিতেও বাবা জোর করছিল তাই রাজি হয়েছি।”

সাদনানের কথার পৃষ্ঠে বলে উঠলো কবির।
সাদনান মুচকি হাসলো। মনে মনে আওড়ালো “রাজি হবে কি করে তোমার তো আমার কলিজার দিকে নজর”
কিন্তু মুখে যথেষ্ট কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে

-“এই ব্যাপার নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
আপনি শুধু বিয়েতে না করে দিলেই হবে।”

-“ওকে।”

মাইশা ভাবে নি এতো সহজ হবে ব্যাপার টা।
মাইশা খুশি হলো।
আয়ানের হাত শক্ত করে চেপে আয়ান নিজেও ভীষণ খুশি। এমন বন্ধু কয়েকজন পায়।
সাদনান রাহানের দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতেই রাহান মাইশা কে বাদে সবাই কে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
কবির খাঁন একটু নড়েচড়ে বসে।
সাদনান আগের ন্যায় গম্ভীর মুখ করে বসে।
মাইশা সুন্দর করে নমনীয় কণ্ঠে বলে উঠে

-“তিন্নি তাহসিনা। বাবা মা নেই এতিম খানায় বড় হয়েছে। আঠারো হওয়ার পর নিজে হোস্টেল থাকে আর টিউশনি করিয়ে নিজের জীবন চালায়।আমার সাথে সেই স্কুল জীবন থেকে ফ্রেন্ড কখনো কোনো খারাপ দিক নজরে আসে নি।বরং সব সময় আমি ওর ব্যবহার আর চিন্তা ভাবনা দেখে মুগ্ধ হই।ভাবি বাবা মা নেই তবুও কত সুন্দর শিক্ষা শিক্ষিত করেছে নিজে কে।
আর আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠান আসার পর আমি আমার লাইফে ওর সাথে চলার পথে প্রথম কোনো পুরুষের নাম শুনেছি ওর মুখে।
আমি অনেক বার এই বিষয় টা নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে বলেছি।ও প্রতি বার সে টা এড়িয়ে যায়।
জানেন ও কি বলে ও সব সময় বলে এতিম আর গরীব দের কখনো কেউ ভালোবাসে না।”

মাইশার কথা শুনে কবির স্তব্ধ।
ওর ভাবনাতীতের বাহিরে এসব।
কেউ ওকে এতো টা ভালোবাসে ওর দৃষ্টির আড়ালে সেটাও বুঝতেই পারে নি।
তবে একবার যখন জেনে গিয়েছে তখন নিশ্চিত তার ভালোবাসার মূল্য আর তার চিন্তা দ্বারা বদলে দেবে।
কে বলেছে এতিম গরীব দের কেউ ভালোবাসে না?কবির বাসবে
নিজের সর্বশ দিয়ে ভালোবাসবে এই এতিম মেয়ে টা কে।
যদিও এটা এতো সহজ নয় তার মনও যে অন্য কাউ কে দিয়ে ফেলেছে। তবে চেষ্টা করলে অবশ্যই সফল হওয়া যাবে।
কবির চুপ চাপ থমথমে মুডে বসে আছে।
সাদনান ফোন টিপছে।
এর মধ্যে মুখে মাক্স পরেও নিয়েছে।
মাইশা দুজন কে পর্যবেক্ষণ করছে।
এর মধ্যে কবির খাঁন এর কণ্ঠে শোনা গেলো

-“আমি আমার সব টা দিয়ে চেষ্টা করবো।
তুমি ওকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।”

#চলবে………

আমার তুমি পর্ব-১৪

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৪[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা কথা টা বলে বুঝতে পারছে লজ্জাহীন কথা বলে ফেলেছে।
তাই একবার সাদনানের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে সাদনান এর কোল হতে উঠতে চাইলো।
তবে সে টা সাদনান হতে দিলো না।
শক্ত করে চেপে ধরলো নিজের উন্মুক্ত বুকে।
নিজের মুখ টা প্রিয়তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে

-“তাই?
তবে তো বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে।”

প্রিয়তা কিছু টা লজ্জা মরিমরি অবস্থা। মুখ ফোটে কিছু বলতে যাবে
ঠিক তক্ষুনি দরজা কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে নেয়।
বিরক্ত মুখে বউ কে কোল হতে নামি বিছানা হতে টি-শার্ট নিয়ে গায়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে

-“কে?”

-“ছোট সাহেব আপনেরে দাদাজান ডাকতাছে।”

বাইরে থেকে একজন মহিলা বলে উঠে।
সাদনান বুঝতে পারলো দাদা জান ডাকে তাই বাহিরে থাকা মহিলা টা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“খালা আপনি যান।
আসছি আমি।”

-“আচ্ছা।”

আর কোনো সারা শব্দ হয় না হয়তো চলে গিয়েছে।
সাদনান ট্রাউজারও পড়ে নেয়।
প্রিয়তা ততক্ষণে ব্যালকনিতে ভেজা দুই টা টাওয়াল মেলে দিয়ে আসে।
সাদনান প্রিয়তার দিকে এগিয়ে যায়।
মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে

-“কাল থেকে আর শাড়ী পড়ে বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
শাড়ী শুধু রুমে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত বাসায় থাকবো ততক্ষণে পড়বে।”

কথা শেষ বউয়ের হাত ধরে রুম হতে বেড়িয়ে আসে। প্রিয়তা কিছু বলে না।
উপর থেকে দেখা যাচ্ছে বাড়ির প্রতি টা সদস্য এখন লিভিং রুমে উপস্থিত আছে।
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ওর মায়ের কাছে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে জাফর মির্জা বরাবর মফিজুর মির্জা আর রাহাতের পাশে বসে।
আম্বিয়া মির্জা কেমন করে প্রিয়তার দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালো।
প্রিয়তা একটু কেমন ভীতু চোখে তাকায় ওনার দিকে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে এসছে তাই রান্না ঘরে চলে গেলো সালেহা বেগম সাথে প্রিয়তা আয়নাও গেলো রান্না ঘরে সুফিয়া বেগম আগে থেকে ছিল সেখানে।
প্রিয়তা হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দেয়।
অতঃপর দু কাজের লোকদের বানানো নাস্তা নিয়ে লিভিং রুমে আসে পেছন পেছন সালেহা, সুফিয়াও আসে।
সবাই এটা সেটা নিয়ে আলোচনা করছে।
জাফর মির্জা নাতি কে আজকের সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন করছে।
মফিজুর মির্জা উশখুশ করছে।
কিভাবে কোথা থেকে কথা শুরু করবেন বুঝতে পারছে না।
সাদনান বিষয় টা লক্ষ করে।
বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে।
অতঃপর সাদনান নিজে থেকে জিজ্ঞেস করে

-“বাবাই কিছু বলবে?”

-“হ্যাঁ, না মানে,,,,

সাদনানের এমন প্রশ্নে আর মফিজুর মির্জা এমন তোতলানো দেখে সবার দৃষ্টি এখন তাদের দিকে।সাদনান মুচকি হাসে। সে তবে ঠিক ধরেছে তার বাবাই কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু বাবা আর ভাইয়ের ভয়ে বলতে পারছে না।
ভয় যেমন পায় তেমন সম্মানও করে বড় ভাই বাপ কে।

-“তো বলে ফেলো।
এতো ভয় কেন পাচ্ছো?”

-“ভয় পাওয়ার কি আছে?
ও কি চুরি করেছে?”

সাদনানের প্রশ্নের বিপরীতে জাফর মির্জা থমথমে কণ্ঠে বলে উঠে।
মফিজুর মির্জা পরলো বিপাকে।
এই কেমন মুশকিল তাদের সম্মান দিতে গিয়ে এখন তারা তাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছে?
কিন্তু তিনি বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে এক টা ঢোক গিলে নেয়।
ভয় পায় না কিন্তু মেয়ে তার ছোট আর এটা নিয়ে কথা বললে কি রিয়েক্ট করতে পারে আজ্জম মির্জা সেটাই ভাবছে।
কারণ একটাই সারা থেকেও বেশি তিনি মাইশা কে স্নেহ করে।
যদিও মফিজুরও সারা কে মাইশার চেয়ে ঢেরবেশি স্নেহ করে।

-“কি হলো বল?”

আজ্জম মির্জা প্রশ্নে তিনি ভাবনা বাদ দিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতে শুরু করে

-“আমার বন্ধু কালাম খাঁন আছে না?
বিয়েতে এসছে সে দিন ওর মাইশা কে পছন্দ হয়েছে। তাই ওর ছেলের জন্য চেয়েছে।”

মফিজুর মির্জার কথায় মাইশা স্তব্ধ।
অসহায় চোখে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান চোখ দিয়ে ভরসা দৃষ্টিতে আশ্বাস দেয়।
এর মধ্যে জাফর মির্জা বলে উঠে

-“ভালো কথা।
মেয়ে যেহেতু হয়েছে বিয়ে তো দিবে এক দিন আগে পরে।
কথা বলে দেখো।”

সবার মাথায় যেনো চক্কর দিয়ে উঠে।
সবার না শুধু পাঁচ জন।
সালেহা, সুফিয়াও খুশি।
আম্বিয়া মির্জা স্বামী সামনে বসে বিধায় কিছু বলতে পারছে না।
তিনিও বেশ খুশি নাতনির বিয়ে হবে ভাবতেই খুশি লাগছে।
শুধু সাদনান নির্লিপ্ত।
রাহাত তার এ-সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই যেখানে বাপ, চাচা,দাদা জীবিত সেখানে এসব চিন্তা করা ফাউ মনে করলো।
কিন্তু বোন তো একটা দায়িত্ব আছে না সেই সুবাধে বসে আছে।
তার তো এখন বউয়ের সাথে খুব রোমাঞ্চ করতে ইচ্ছে করছে।

-“ইলেকশন আড়াই মাস পর।
এর পর ওর পরীক্ষা।
আর ইলেকশন এর আগে সারা,প্রিয়তারও পরীক্ষা আছে।”

আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে বলে উঠে।
সবাই একটু নড়েচড়ে বসে।
সত্যি সামনে ইলেকশন যদিও প্রিয়তাদের পরীক্ষা আগে তার পর ইলেকশন আর ইলেকশনের পর মাইশার পরীক্ষা শুরু।
কিন্তু এখন কোনো অনুষ্ঠান বা কিছু হলে ওদের পড়া লেখার বারো টা বেজে যাবে।

-“তা ঠিক তবে না হয় ছেলে টার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে রাখা যাক।”

জাফর মির্জা বলে উঠে।
আজ্জম মির্জা শান্ত কন্ঠে বলল

-“হুম।
তুমি ওদের আসতে বলো ভালো একটা দিন দেখে সবাই যখন বাড়ি থাকবে।”

-“বাবাই বলছিলাম কি ছেলে টা কে?”

-“তুই চিনিস তো।
মাইশা দের কলেজ এর প্রফেসর কবির খাঁন।”

সারা,প্রিয়তা চমকে উঠলো।
সাদনান খুব স্বাভাবিক।
যেনো এসব আগেই তার জানা।

-“আচ্ছা আমি বরং মাইশা কে নিয়ে একবার ছেলেটার সাথে দেখা করি?”

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ তুমি বরং একবার দেখে আসো দাদু ভাই।”

আম্বিয়া মির্জা বলে উঠে।
সবাই এক মত পোষণ করে।
অতঃপর রাতের খাবার খেতে সবাই ডাইনিং -এ চলে যায়।

———-

-“ভাই তুমি এটা কি বললে?
আমরা কেন দেখা করবো?”

মাইশা লিভিং রুমের সোফায় বসে ছিল।
খাবার শেষ সবাই রুমে চলে গিয়েছে আর মহিলা সব রান্না ঘর আর ডাইনিং এ আছে।
আর সারা তখনো খাবার খাচ্ছে।
সাদনান খাবার শেষ ধপ করে মাইশার পাশে বসে।
বেশ অনেক টা দূরত্ব।
আর মাইশা এই সুযোগে ফিসফিস করে প্রশ্ন গুলো করে।
যা শুনে সাদনানও মাইশার মতো আওয়াজ করে উত্তর দেয়

-“দেখ এখনো বাবাই কে যদি বলি তোর আর আয়ানের বিয়ে হয়ে আছে।তখন তারা কষ্ট পাবে যদিও বা মেনে নিবে এটা তুই আমি খুব ভালো করে জানি।
সবাই কে কষ্ট দেওয়ার চেয়ে এটাই ভালো হবে আমরা কবির এর সাথে কথা বলে সব মিটমাট করে নেবো।আর আয়ান আর তোর বিয়ে ব্যাপার কেউ জানবে না।এটা আমি সামলে নেবো।
তাছাড়া তোর ফ্রেন্ড তিন্নি না কি জানি নাম ওতো কবির কে পছন্দ করে। তখন না হয় কবির এর সাথে দেখা হলে তুই ওর কথা বলে দিবি।”

-“এক মিনিট, এক মিনিট তুমি কি করে জানলে তিন্নি স্যার কে পছন্দ করে?”

সাদনান কিছু বলে না শুধু হাসে।
মাইশা তখনো উত্তর এর আশায় তাকিয়ে ভাইয়ের দিকে।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে খামখেয়ালি উত্তর করে

-“তোর টা কিভাবে জেনেছি?”

মাইশা উত্তর দেয় না।
কারণ সে তো জানে না সাদনান তার আর আয়ানের রিলেশন এর কথা কিভাবে জেনেছে।
তাই তার কাছে উত্তরও নেই।
সাদনান আর কিছু না বলেই রহস্যময় হেসে সোফায় ছেড়ে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়।

———–

প্রিয়তা কফির মগ টা নিয়ে রুমে এসে দেখলো সাদনান সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে।
প্রিয়তা কফি টা সাদনানের সামনে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে চলে যায়।
অতঃপর বই নিয়ে বসে পড়ে।
সাদনান আঁড়চোখে সে দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-“কাল থেকে যেনো কিচেনে যেতে না দেখি।
পড়া গুলো কমপ্লিট?”

-“হ্যাঁ।
আর একটু বাকি।”

সাদনান ততক্ষণে উঠে সাদা সার্ট টা টেনে টুনে ঠিক করে এগিয়ে আসে বউয়ের নিকট।
বই টা বন্ধ করে দিয়ে বলে উঠে

-“ফ্রেশ হয়ে এসো।
আর পড়তে হবে না।”

প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে আলমারি হতে সাদনানের আজ সকালে অনলাইনে অর্ডার দেওয়া ড্রেস গুলোর মাঝে থেকে একটা রাতের পোষাক নামিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
সাদনান আজ সকালেই অনেক গুলো ড্রেস আনিয়েছ।
একদম সকালেই রাহান রিসিভ করেছে।
কেউ দেখে নি।
সব গুলো ড্রেসের মাঝে একটা সুন্দর ছোট গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো একটা বক্স ছিল।
যেটা খুব সাবধানে সাদনান তার আলমারি ড্রয়ারে রেখে দিয়েছে প্রিয়তার না দেখার আগে।
এই ড্রয়ারের চাবি সাদনান কাছে থাকে।

-“আপনি ওখানে কি করছেন?”

সাদনান বক্স টা হাতে নিয়ে কথা গুলো ভাবছিল।
কিন্তু প্রিয়তার প্রশ্নে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
অতঃপর হাতে থাকা বক্স টা নিয়ে এগিয়ে যায় ছোট জানের নিকট।
প্রিয়তা একটা গেঞ্জি ছোট ছোট বিড়াল ছাপা আর গেঞ্জির টার সাথে ম্যাচিং করে ট্রাউজার পড়ে আছে।
সাদনান তার ছোট বউ কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
বেশ লাগছে তার বউ কে।
সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে বক্স টা খোলে সেখান থেকে এক জোড়া ইয়ার রিং একটা রিং আর একটা লকেট বের করে।
সে দিকে তাকিয়ে প্রিয়তার চোখ বেরিয়ে আসার জোগাড়।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“এগুলো সব ডায়মন্ড?
আপনি এসব কেন করতে গেলেন?”

-“আমার ইচ্ছে।
আমার বউয়ের জন্য অনেক আগে থেকেই নিজের উপার্জন এর টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম।আমার সাধ্য এটুকুই। কিন্তু ভবিষ্যতের টা বলতে পারছি না।
কাল দেওয়ার কথা ছিল এগুলো। সমস্যা নেই দ্বিতীয় বাসরে দিয়ে দিলাম। আমার ছোট জান।”

প্রিয়তার প্রশ্ন সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিতে দিতে বক্স টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ইয়ার রিং জোড়া পরিয়ে দিয়ে গলায় লকেট টা পড়িয়ে দিয়ে প্রিয়তার গেঞ্জি টা কাঁধ থেকে সরিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে গভীর চুম্বন করে সেখানে।

#চলবে…….

আমার তুমি পর্ব-১৩

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“ছিঃ ছিঃ।
এই তোর ভালোবাসা?
কি করেছিস অবস্থা ছোট ও কনট্রোল করা দরকার ছিল।”

রাহান খাবার টেবিলে সাদনানের পাশে বসে ফিসফিস করে কথা গুলো বলে উঠে।
সাদনান রাহানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়।
রাহান সে দিকে তাকিয়ে নিজের মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে যায়।
সাদনান খাবার খেয়ে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে উপর রুমে চলে আসে।
সাদনান রুমে এসে ওয়াশ রুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
মিনিট দুই এর মাথায় ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা ড্রেস আলমারি হতে নামিয়ে বিছানায় রেখেছে। আর নিজে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
সাদনান সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে গায়ের কালো টি-শার্ট টা এক টানে খুলে বিছানায় থেকে সাদা পাঞ্জাবি টা গায়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো সুন্দর করে আচঁড়ে গায়ে পারফিউম দেয়।
আর প্রিয়তা বসে বসে তার ব্যক্তিগত পুরুষ টাকে দেখছে।
সাদনান ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ঘড়ি পড়ে নেয়। ওয়ালেট নিয়ে আর ফোন পকেটে রেখে এগিয়ে আসে ছোট জানের নিকট।
কপালে চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে

-“আজ স্কুল যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”

-“ঠিক আছি আমি যেতে পারবো।”

মিনমিন করে জানায় প্রিয়তা।
সাদনান প্রিয়তা কে আরও কিছু টা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের বুকের সাথে।
অতঃপর শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“জানি আমি।
কিন্তু যেতে হবে না।
সারাও যাবে না। নয় দিন পর টেস্ট পরীক্ষা। বাসায় পড়লেও হবে।সাবধানে থাকবে।”

-“আপনি দুপুর বাড়ি আসবেন না?”

-“হয়তো হ্যাঁ আবার না।
সব কাজ শেষ করতে পারলে তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”

প্রিয়তা আর কিছু বলে না।
চুপ চাপ সেভাবে পড়ে থাকে।
সাদনান নিজেও অনেকক্ষণ পর বউ কে ছেড়ে দিয়ে নিজের ওষ্ঠ জোড়া দিয়ে প্রিয়তার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
গভীর একটা চুম্বন করে।
মিনিটের মাথায় ছেড়ে দিয়ে দু’জনেই একে অপরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস নেয়।
সাদনান নিজে কে স্বাভাবিক করে প্রিয়তার দিকে তাকালো।
রাতে দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন স্পর্শ গলায় এখনো ঝলঝল করছে।
শাড়ী পরে আছে প্রিয়তা বাহিরে সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে ছিল।
কিন্তু এখন রুমে শাড়ী সম্পূর্ণ এলোমেলো।
তাই ভালোবাসার স্পর্শ গুলো স্পষ্ট।
সাদনান সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
তার এখন বেরুতে হবে।

-“খাবার খাবে টাইমলি।”

কথা শেষ সাদনান উত্তর এর অপেক্ষা করে না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
প্রিয়তা তখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে।

————–

সাদনান মাত্র সমাবেশ শেষ করে বেরিয়ে এসছে সেখান থেকে।
সাথে ওয়াসিফ দেওয়ানও আছে।
সাদনান গাড়ি নিয়ে এসছে।
সাথে ড্রাইভারও এনেছে।
ওয়াসিফ দেওয়ান এর সাথে কিছু আলোচনা শেষ সাদনান রাহান কে নিয়ে গাড়ি বসে। আর তার দলের ছেলেপেলে রা বাইক নিয়ে তার গাড়ি অনুসরণ করছে।
আজ গ্রামে ছিল সমাবেশ।
সমাবেশের আয়োজন টা কয়েক টা গ্রামের কিছু চেয়ারম্যান মিলে করেছে।
সেখানে সাদনানের উপস্থিতি ছিল হবু এমপি হিসেবে সবাই তাকে চায়।
বেশ নাম তার জনগণের মুখে মুখে।
এবার আর আগের এমপি কিছুতেই আসতে পারবে না।
যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের হয় তবে মির্জা সাদনান শাহরিয়া জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
ওয়াসিফ দেওয়ান এ ব্যাপার একশো পারসেন্ট নিশ্চিত।
এখন বিকেল।
সাদনান গাড়ি ড্রাইভার কে সোজা বাড়ি নিয়ে যেতে বলে।
তার ছোট বউ নিশ্চয়ই তার অপেক্ষা বসে।
সময়ের জন্য একটা বার ফোনও করা হয়নি।

—————-

-“মফিজ তোর মেয়ে টাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
বলছিলাম কি আমার ছেলে তো তোদের ভার্সিটির প্রফেসর।
তুই তো জানিস।
আমি ওদের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাই।
তুই কি বলিস?”

মফিজুর মির্জা বন্ধু কালাম খাঁন এর কথায় তিনি একট্ ইতস্তত বোধ করলেন।
বাড়িতে তার বড় ভাই আছে।বাপ এখনো জীবিত সেখানে তিনি এ ব্যাপার একা কি করে মত পোষণ করে।
মফিজুর মির্জা বেশ সরল আর খুব ভালো মনের মানুষ।
এই মেয়ে তাদের একমাত্র সন্তান তাদের আর কোনো সন্তান হয় নি।
সেখানে অনেক আদরের মেয়ে তার। পরিবারের সাথে
বোঝাপড়ার একটা বিষয় আছে।

-“বাবার সাথে কথা বলে তোকে জানাচ্ছি আমি।”

কথা শেষ করে তিনি ফোন টা কেটে টেবিলে রেখে একটু চিন্তিত হলেন।
কালাম খাঁন সে দিন বিয়েতে এসছিল তক্ষুনি হয়তো দেখেছে মাইশাকে।
অনেক ছোট বেলা থেকে তাদের বন্ধু সম্পর্ক।
কালামের স্ত্রী নেই শুধু এই এক ছেলে কবির।
মানুষ হিসেবে অনেক ভালো।স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করে নি।
ছেলে কে লেখা পড়া সাথে ব্যবসা সব দিক সামলেছে।
পরিবার বংশধর ভালো তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলো বাপ ভাইয়ের সাথে কথা বলবে।
আর মেয়েও তো বড় হচ্ছে।
কয় দিন পর ভার্সিটিতে যাবে।
আর বিয়ে দিলেও তো লেখা পড়া করা যায়।
ছেলে নিজে একজন শিক্ষক সেখানে বউ নিশ্চয়ই অশিক্ষিত রাখবে না।

————-

মাইশা ক্লাস করছে আর ওর ফ্রেন্ড তিন্নি ওর পাশে বসেই কবির খাঁন এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যে এখন পরিসংখ্যান করাচ্ছে বোর্ডে।
কিছু কিছু মেয়ে শুধু অংক করছে আর বাকি অর্ধেক তিন্নির মতো স্যার এর দিকে তাকিয়ে আছে।
এটা নতুন নয়।
ক্লাস শেষ স্যার চলে গেলো। মাইশা
তিন্নিও ক্লাস হতে বেরিয়ে আসে।
মাইশা জানে তিন্নি কবির খাঁন পছন্দ করে।
কিন্তু এতিম হওয়ার আর নিজের পড়া লেখার খরচ চালিয়ে নিজে নিজে নিজের জীবন চালানো মেয়েটার নিকট এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে এমন একজন মানুষের সামনে দাড়ানো বিলাসিতা বই কিছুই না।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই মাইশা বলে উঠে

-“ভালোবাসা, অনুভূতি বলে কইয়ে আসে না।
আর স্যার, ছাত্রী, গরিব, বড়লোক এসব দেখেও ভালোবাসা হয় না।
বলে তো দেখতে পারিস।”

-“ছাড়তো এসব।
এসব আমার জন্য না।”

তিন্নির এমন খামখেয়ালি পানা কথায় মাইশা বিরক্ত হলো।
তাই কথা বাড়ালো না আর। কলেজ এড়িয়া থেকে বেড়িয়ে
দু’জনেই দুই দিকে চলে যায়।

————-

সাদনান বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে আসে।
বউ তার বিছানায় বসে পড়ছে।
সাদনান সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তাও বই বন্ধ করে সাদা পড়ার টেবিলটায় উপর বই টা রাখে।
এই রুমে প্রতি টা জিনিস সাদা।
একদম সাদা।
পুরো বাড়ি জুড়ে এই রুমটা বেশি সুন্দর।
পরিপাটি গোছানো।
সাদনানের বেশির ভাগ কাপড় সাদা।
অবশ্য সাদা পড়লে বেশ লাগে প্রিয়তার নিকট।
না সাদা না যাই পড়ে সব তাই ভালো লাগে।
প্রিয়তা এসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে আলমারি হতে একটা গাঢ় সবুজ রঙের টি-শার্ট আর একটা ট্রাউজার বের করে বিছানায় রাখে।
অতঃপর শাড়ী আঁচল টা সুন্দর করে মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
একটু আগে আম্বিয়া মির্জা এসছিল।
অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
তার নাতির কখন কি লাগে কি পছন্দ করে সব।
সাথে এটা বলে গিয়েছে সাদনান বাসায় এলে যেনো সাথে সাথে কফি দেয়।
কাজের লোকেরা যেনো এসব আর না করে।
স্বামীর তার সেবা কেন অন্য কেউ করবে?
স্বামীর ভালোবাসা এতে আরও বাড়বে।
প্রিয়তা কফি করে রুমে এসে দেখলো সাদনান এখনো টাওয়াল পড়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। ছোট ছোট চুল গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি চিকচিক করছে।
আর বিছানায় কাপড় সেভাবেই রাখা আছে যেভাবে প্রিয়তা রেখে গিয়েছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে কফি টা সেন্টার টেবিলে রেখে ব্যালকনি হতে আরেক টা টাওয়াল এনে সাদনান কে সোফায় বসতে ইশারা করে।
সাদনান বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়ে।
আর প্রিয়তা টাওয়াল দিয়ে সাদনানের চুল গুলো মুছে দিতে লাগলো।
সাদনান ফোনে কি কথা বলবে সে তো এই মেয়ের হাতের স্পর্শে বুলি হারিয়েছে।
তাই ওপাশের লোক টাকে “পরে ফোন করছি” বলে ফোন কেটে একটানে বউ কে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।
প্রিয়তা অনেক টা চমকাল শক্ত করে সাদনানের চুল খামচে ধরে।
সাদনান মুচকি হেসে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় প্রিয়তার ঠোঁটে।
অতঃপর মাদকাসক্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“কাল রাতে অব্দি যার সব আমি করে দিলাম।
সেখানে আজ সন্ধ্যা সে সব নিজে আমাকে করে দিচ্ছে।
ইন্টারেস্টিং।
বউ দেখি বড় হয়ে গিয়েছে।”

-“হ্যাঁ, আপনার ভালোবাসা পেয়ে।”

#চলবে……

আমার তুমি পর্ব-১২ + বোনাস পর্ব

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১২[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে পাশে তাকিয়ে থমকে গেলো। আবার তড়িঘড়ি করে চোখ নামিয়ে মাথা নুইয়ে নেয়।
তার ঠিক ডান পাশে সাদনান বসা খুব নরমাল সাজ শুধু সাদা একটা পাঞ্জাবি পরিহিত।
প্রিয়তার ছোট মন তখন নানা প্রশ্ন আওড়াতে ব্যস্ত।
আচ্ছা তিনি কি বিয়ে করতে এসছে?
ওনার সাথে কি তবে আমার বিয়ে?

-“মা বলো কবুল।”

কাজির ডাকে সম্মতি ফিরে প্রিয়তার একবার মিতা সওদাগর একবার ভাইয়ের দিকে সবার দিকে তাকাতেই সবাই ইশারায় “কবুল” বলতে বলে।
প্রিয়তা পেছেনে দাঁড়িয়ে থাকা সারা হাত টা শক্ত করে ধরে পর পর তিনবার কবুল বলে দেয়।
সাদনানও বলে তবে খুব স্বাভাবিক ভাবে।
কোনো তারাহুরো নয় আবার দেরীও নয়।
কিন্তু রাহান পেছন থেকে ঠিক খুঁচা মেরেছে।
রাহাত আর আয়নার বিয়ে প্রথম হয়েছে। আর প্রিয়তা দেরী করছিল বলে আয়ান আনতে গিয়ে ছিল।
বিয়ে শেষ করে সব ঝামেলা নিয়ম কানুন পালন করে প্রিয়তা আর আয়না কে বিদায় দেওয়া হলো।
কিন্তু সাদনান সে গাড়ি দিয়ে যাবে না।
সে তার দলের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ছেলে কে বাইক নিয়ে আসতে বলে।
এতে আর কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।
আয়না আর রাহাত কে নিয়ে তিন টা গাড়ি সহ সব আত্মীয় স্বজনরা চলে যায়।
শুধু রাহান আর চার পাঁচ জন ছেলে রেখে দিয়েছে।
ওহ হ্যাঁ সাদনান সারা কেও সাথে রেখে দিয়েছে।
অতঃপর সারা ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে রাহানের পেছন উঠে বসে। সারা বেশ অনেক টা দূরত্ব রেখেই বসেছে বাইকে।
রাহানের মুখ হুতুমপেঁচার মতো করে রেখেছে।
ইস তারও ইচ্ছে করে সাদনানের মতো বিয়ে করে নিতে আর তারই বোন কে।
কিন্তু সাদনান জানতে পারলে কি করে আল্লাহ মালুম।
রাহান আঁড়চোখে একবার বাইকে মিররে দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে সারা কে বলে উঠে

-“আমার কোনো ছুঁয়াছুঁয়ি রোগ নেই।
ধরে বসো নয়তো ধপাস করে পরলে তোমার ভাই আমার সব হাড্ডি ভেঙ্গে মাংসতে পরিণত করবে।”

সারা ফিক করে হেসে ফেলে রাহানের কথা শুনে।
রাহান চোখ বন্ধ করে আবার ঝটপট চোখ খোলে ফেলে।
এই মেয়ে এভাবে হাসে কেন?
সে কি জানে পাশে বসা সুদর্শন যুবক টার এতে বুকের বা পাশে তীব্র যন্ত্রণা হয়?

-“হেসো না পেত্নী লাগে দেখতে।”

ব্যস মূহুর্তের মধ্যে সারার মুখ মলিন হয়।
সত্যি কি সে হাসলে বাজে দেখায়?
কিন্তু মনের কথা মনে রেখেই
মুখে ভেংচি কেটে বলে উঠে

-“হ্যাঁ, আপনার থেকে ভালো দেখায়।”

এবার রাহান নিজেও হাসে।জবাব দেয় না আর।
সে খুব করে বুঝে এই মেয়ে তাকে তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে যেমন টা সে নিজে এই মেয়ে কে বাসে।
আগের দুই টা ছেলে বাইক চালাচ্ছে।
আর মাঝে রাহান আর সবার পেছনে সাদনান প্রিয়তা।
প্রিয়তা আগের ন্যায় মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
সে রেগে আছে না খুশি না-কি অভিমান সাদনান বুঝতে পারলো না।
আর বেশি বুঝেতেও চাইলো না।
সবাই ওদের থেকে বেশ অনেক টা সামনে হওয়াতে।
সাদনান প্রিয়তা কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে

-“বিয়ে করেছি কি এভাবে আগের মতো মাঝে ভারত বাংলাদেশ বর্ডার দিয়ে রাখার জন্য?
চুপ চাপ শক্ত করে জড়িয়ে ধরো মেয়ে।
নয়তো ধাক্কা দিয়ে এখানেই ফেলে রেখে চলে যাবে।”

প্রিয়তা সাদনানের এরূপ কথায় একটু ভয় পেলো।
সত্যি ফেলে দিতে পারে বিশ্বাস নেই।
তাই নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া দিয়ে সাদনান কে শক্ত করে আলিঙ্গন করতে চাইলো।
তবে সাদনানের এমন লম্বা চওড়া পেটানো বলিষ্ঠ শরীরে প্রিয়তার হাতের বাঁধনে কিছুতেই আসে না।
তাই যতটুকু সম্ভব ততটাই আঁকড়ে ধরে।
সাদনান মুচকি হাসে।
বউ তার বড্ড ছোট।
আর এখন এটা কে লালন পালন করে বড় করতে হবে।
কিন্তু ভালোবাসা এক ফোঁটাও এদিক সে দিক হবে না। এটা আজ রাত থেকেই শুরু হবে।
সওদাগর বাড়ি পরে আগে মির্জা বাড়ি মির্জা বাড়ি থেকে সওদাগর বাড়ি হেঁটে গেলে লাগবে হয়তো দশ বারো মিনিট আর গাড়ি বা বাইকে গেলে লাগবে তিন চার মিনিট কিন্তু আজ যেনো রাস্তা ফুরচ্ছে না।
আর সাদনান সে তো সাইকেল এর গতিতে বাইক চালাচ্ছে।
প্রিয়তা ভালো লাগছে তবে মনে মনে বেশ ভয়ে আছে।
আগে যাওয়া আসা আর আজকের মাঝে ভীষণ পার্থক্য।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই তিন টা বাইক এসে মির্জা বাড়ির গেইট -এ থামে আর ভেতর হতে গেইট খোলে দেয় দুই জন দারোয়ান।
আগে সাদনান প্রবেশ করে তার পর রাহান আর দুই টা ছেলে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

———–

আয়না, প্রিয়তা দুই বোন কেই বসিয়ে রাখা হয়েছে লিভিং রুমে।
আর চার দিক হতে মানুষ জন তাদের ভিড় জমিয়ে দেখতে এসছে।
বিয়ের দিন বউ দেখতে যাওয়া টা যেমন লোকের ভালো লাগে ঠিক তেমন যেই বউ টা কে দেখতে যাওয়া হয় সেই নতুন বউ জানে এই বিষয় টা কত টা অস্বস্তিকর।
তাই তো সালেহা বেগম আর আম্বিয়া মির্জা সারা, আর মাইশা কে বলে যাতে দুই নাত বউ কে রুমে নিয়ে যেতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা তখন সাত টার কোঠা ছাড়িয়েছ।
প্রিয়তা এসছে আধঘণ্টা হবে।
সাদনানের মা বড় ছেলে বউ কে আগেই বরণ করে বাড়ি তে তুলেছে।
তার পর প্রিয়তা সাদনান কে।
কিন্তু বরণ শেষ সাদনান এক মিনিটও অপেক্ষা করে নি।
মাকে কিছু ইশারা করে রুমে চলে গিয়েছে। তার পর ফ্রেশ হয়ে একটু আগে বেরিয়ে গেছে বাড়ি হতে।
তাই সালেহা বেগম শাশুড়ী কে বুঝিয়ে টুঝিয়ে ছেলে বউদের রুমে পাঠিয়েছে।
তিনি ছেলের ইশারা বুঝতে পেরেছে।
ছেলের বউ তার ভীষণ ছোট। আর এই বয়সে বিয়ে তার উপর এতো মানুষের ভীড়ে মেয়ে টার অস্বস্তি হওয়া টাই স্বাভাবিক।

—————

সারা, মাইশা দুজনে মিলে দুই বোন কে দুই টা শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে।
বিয়ের সাজ একদম ধুয়ে মুছে ছাফ করে দিয়েছে।
এ-র মধ্যে প্রিয়তা একবারও কারোর সঙ্গে কথা বলে নি।
সারা দুই এক বার কিছু বলতে গিয়েও বলে নি।
কি দরকার নিজের সাফাই গাওয়ার।
তার ভাই সব ঝামেলা বাধিয়েছে তার ভাইয়ে খুলে দিবে সে নিশ্চিত।
আর একবার যদি সাদনান প্রিয়তার রাগ অভিমান যাই হোক ভেঙে দিতে পারে তবে নিশ্চিত প্রিয়তা সারা কে বাসর ঘরের কাহিনি বলতেও হয়তো দ্বিধা করবে না।
না করবে হয়তো লজ্জাও পাবে।
সারার ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার চুল বেধে দিচ্ছিল।
কিন্তু দরজায় কড়া নড়ার শব্দে ভাবনার সুতু ছিঁড়ে।
মাইশা গিয়ে দরজা খোলতেই দুইজন কাজের লোক ঘরে প্রবেশ করে হাতে তাদের থালা ভর্তি খাবার।
সালেহা বেগম পাঠিয়েছে জানালো তারা।
বাড়িতে তো খেতে পারে নি আর আজ প্রথম এই বাড়িতে এক সাথে বসে সবার সমানে বসে খেতে অস্বস্তি হবে সে সব ভেবে তিনি খাবার পাঠিয়েছে। যদিও শফিক সওদাগর,আর আজ্জম মির্জা বন্ধু হাওয়ার সুবাধে আগে অনেক বার এই বাড়িতে ভিন্ন সময় ঈদ,বা নানা অনুষ্ঠানে এসছে আর এক সাথে বসে খাবার খেয়েছে। তবে আজ ভিন্ন আর সাথে আছে বাড়ি ভর্তি মেহমান।
সারা আয়নার খাবার থালাসহ ওকে রাহাতের রুমে দিয়ে আসে।
আর মাইশা প্রিয়তা কে সাদনানের রুমে।
ওরা এতোক্ষণ মাইশার রুমে ছিল।

———–

-“এই কাজ টা বোকামি হয়ে গেলো।”

-“ভালোবাসি আমি ওকে।
আর আপনার এতো আপত্তি থাকলে নমিনেশন দিতে হবে না আমাকে।”

ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথা শুনে সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।
ওয়াসিফ দেওয়ান আবারও বোঝানোর স্বরে বলে উঠে

-“আহ,রেগে যাচ্ছো কেন?
আমি বলতে চাইছি বিপক্ষ দলের লোকেরা এটা জানতে পারলে ঝামেলা করবে।
তাই বিয়ে টা গোপন রাখাই মঙ্গল।”

-“তাই হবে।আর এমনিতেও আজ বিয়ে শুধু একটাই হয়েছে বলে জানে সবাই।
আমাদের বিয়ের কথা দুই পরিবার আর খুব কাছের কয়েকজন তার মধ্যে আপনি একজন।”

#চলবে……..

#আমার_তুমি
#বোনাস_পর্ব[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সাদনান বাইক চালাচ্ছে। রাহান ওর পেছনে বসে আছে।
রাত এখন দশ টা ছুঁই ছুঁই করছে।
এই দশ মিনিট হবে তারা ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে।
সাদনান কে বেশ ফুরফুরে লাগছে।
আগের মতো আজ অতো টা গম্ভীর নয়।
নিজে থেকে এটা সে টা জিজ্ঞেস করছে রাহান কে।
এক পর্যায় হঠাৎ করে অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে সাদনান

-“তুই বিয়ে করবি না?”

রাহান চমকে উঠে।
কি বলবে?
নিজে তো ঠিক সতেরো ছুঁই ছুঁই একটা বাচ্চা কে বিয়ে ঠিক করে নিয়েছে।
আর এখন যদি আমি বলি তোর বোন কে করবো?
তখন নিশ্চয়ই উষ্ঠা দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দেবে।
রাহানের ভাবনার মাঝেই সাদনান আবারও জিজ্ঞেস করে উঠে

-“কি হলো বল?
না-কি কাউ কে পছন্দ করিস?”

-“হ্যাঁ, না মানে,,,,

-“হ্যাঁ, না কি তোলাচ্ছি?
এমন কিছু হলে বলে ফেল।”

-“হ্যাঁ আছে।”

-“জানা জাবে?”

-“না মানে।
আমি তোকে সময় করে দেখিয়ে দেবো ওকে।”

রাহানের কথায় সাদনান বাঁকা হেসে মনে মনে বলে উঠে

-“তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না? তবে ভুল এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া এক দেখায় মানুষের চোখ দেখে বলে দিতে পারে কে কেমন মানুষ সেখানে তুই আমার বন্ধু। রোজ রোজ তোকে দেখি আমি। ”

সাদনানের ভাবনার মাঝেই রাহান বলে উঠে

-“আমি বাড়ি চলে যাই আজ।”

-“না।
কাল সকালে একটা মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে।
আর তুই বাড়ি গেলে কাল দশটার আগে ঘুম থেকে উঠবি না আমি ভালো করে জানি।”

কথা টা বলেই সাদনান বাইক গ্যারেজে রাখার জন্য দারোয়ানের হাতে চাবি দিয়ে রাহান কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।

সালেহা বেগম ওদের খাবার দেয়।
সাদনান মায়ের রুম হতে ফ্রেশ হয়ে আসে।
আর রাহান রান্না ঘরে বেসিনে।
অতঃপর দুই জনে খেতে বসে পড়ে।
সাদনান তার মধ্যে মায়ের সাথে টুকটাক আলাপ সেড়ে নেয়।
তার পর মাকে বলে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
রাত তো অনেক হলো সাদনানের জোড়া জুড়িতে সালেহা বেগম রুমে চলে যায়।
আর রান্না ঘরে দুই জন কাজের লোক আছে।
ওদের খাবার শেষ সাদনান হাত ধুয়ে টিসু দিয়ে হাত মুছে নেয়।
রাহানও সাদনান কে অনুসরণ করে।

-“গেস্ট রুমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
সেখানে হয়তো মহিলা আছে।
তুই বরং আমার সাথে আয়।”

সাদনান কথা টা বলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
আর রাহান বিস্ময় চাহনি দিয়ে বলে উঠে

-“তুই কি তোর বাসর ঘরে আমাকে পাহাড়া দিতে,,,

-“চুপ চাপ আমার সাথে আয়।”

সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
রাহান মুখে হাত দিয়ে উপর সাদনানের পেছন পেছন যেতে লাগলো।
সাদনান সোজা সারার রুমের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে।
একটু পর এসে সারা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে।
বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে

-“কি হয়েছে ভাই?”

-“তুই মাইশার রুমে যা।
আজ রাহান থাকবে এখানে।”

সারা এতোক্ষণ চোখ কচলাচ্ছিল।
কিন্তু সাদনানের কথায় ঝট করে চোখ খোলে সাদনানের দিকে তাকিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সারা চোখ ঘুরিয়ে মিনমিন করে বলে উঠে

-“আচ্ছা।”

সারা ফের রুমে গিয়ে ওর ওর চাদর টা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে।
সাদনান রাহান কে রুমে যেতে বলে।
সারা ততক্ষণে অনেক টা এগিয়ে গিয়েছে।
রাহান এতোক্ষণ সারা দিকে তাকিয়ে ছিল।
এই মেয়ে তাকে না মারা অব্দি শান্তি হবে না না-কি?
সাদনান ওকে রুমে যেতে বলেই নিজেও রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
কিন্তু রাহান পেছন থেকে দুষ্ট হেসে বলে উঠে

-“ছোট মানুষ ভাই।
একটু,,,,

সাদনান পেছন ফিরতেই রাহান তড়িঘড়ি করে রুমে ঢোকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আর সাদনান মুচকি হাসে।
সব সময় খুঁচা না মারলে হয়তো বেডা রাহানের পেটের ভাত হজম হয় না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সাদনান রুমে আসতে থমকে গেলো।
বউ তার এখনো ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় গাপটি মেরে বসে আছে। সারা ঘর বিভিন্ন রকমের ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
রাত কয় টা বাজে?
হয়তো এগারো টার কোঠা ছাড়িয়েছ।
দরজা খোলার শব্দে প্রিয়তা একটু নড়েচড়ে বসে।
ওর ঘুম চলে আসছিল কিন্তু ওকে মাইশা রুমে দিয়ে যাওয়ার পর আম্বিয়া মির্জা পইপই করে বলে দিয়ে গিয়েছে যেনো সে না ঘুমায়।
ছোট বলে কি হয়েছে।
স্বামীর জন্য বাসর ঘরে বসে অপেক্ষা করতে হয়।
আর সেই কথা ভেবেই বসে বসে ঝিমাচ্ছিল প্রিয়তা।
তবে সাদনান কে দেখে চট করে উঠে এগিয়ে আসে।
অতঃপর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গিয়ে শাড়ীতে পা বেঁধে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। অল্পের জন্যে সাদনানের উপর পরে নি।
আর সাদনান ফিক করে হেসে ফেলে।
কিন্তু প্রিয়তা বেশ ব্যথা পেয়েছে।
সে দিকে তার খেয়াল নেই সে তো সামনে দাঁড়ানো গাঢ় নীল সার্ট পড়া সুদর্শন পুরুষ কে দেখতে ব্যস্ত।
হাসলে কি সুন্দর লাগে ওনাকে।কিন্তু এই গোমড়া মুখু সাদনান ভাই তো ভুলেও হাসে না সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকে।

-“এই মেয়ে উঠো।
নিজে কে সামলাতে পারে না।
আর সে না-কি নেবে মির্জা সাদনান শাহরিয়া সামলানোর দায়িত্ব?”

সাদনানের কথা প্রিয়তা কিছু বলে না।
মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ায়।
সে তো এই লোকের সাথে কথাই বলবে না আজ।
কত কষ্ট পেয়েছিল কোনো ধারণা আছে ওনার?
একবার বলে দিলে কি এমন হতো?
আচ্ছা ওনি আমায় বিয়ে কেন করেছে?

-“এখনি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তা চোখ গোল গোল করে তাকায়।
মানে মনের কথ শুনে ফেলেছে নাকি?
নয়তো এই কথার মানে কি?

-“মানে?”

-“বোঝাচ্ছি।”

আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা।
যা দেখে সাদনান আরও একটু এগিয়ে আসে সার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বলে।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে গিয়ে বিছানার সাথে লেগে ধপাস করে আবারও পরে যায়।
ও সাদনান কি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে।
অনেক কথা বলেছে।
স্বপ্ন অনেক বার সাদনানের চাপদাড়ি ভর্তি গালে চুমু খেয়েছে।
তবে আর কিছু ভাবে নি।
সাদনান প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই ওর উপর উঠে বসে দুই হাত চেপে ধরে বিছানার সাথে।
সার্ট এর বোতাম খুলে ফেলার কারণে গলা হতে পেট পর্যন্ত উন্মুক্ত।
প্রিয়তা কতক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে দেখে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান তার দিকেই কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যেখানে আছে শুধু ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের মতো করে আপন করে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করা।
সাদনান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা একটা ঢোক গিলে দৃষ্টি ঘুরায় এলোমেলো।
আজ তার ভালোবাসার মানুষটা তারই স্বামী ভাবতে খুশিতে চোখে অশ্রু হানা দেওয়ার জোগাড়।
তবে নিজে কে সামলে নিলো ছোট প্রিয়তা।
ধরে আসা গলায় আবার বলে উঠে

-“কি করছেন সাদনান ভ,,,

-“হুশ।
কোনো কথা না।
আজ আমার পালা কম জ্বালাও নি আমাকে।
সব সময় ধৈর্য্য ধরে থেকেছি।
তবে আজ আর কোনো কথা না।
আজ এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া সময়।”

প্রিয়তার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই সাদনান ফিসফিস করে বলে উঠে।
কথা শেষ করে সাদনান প্রিয়তার ঘাড়ে হাল্কা করে কামড়ে ধরে।
প্রিয়তা ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে।
সাদনান সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় থেকে মুখ তুলে নিজের ওষ্ঠ দিয়ে প্রিয়তার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাদনান চোখ বন্ধ করেই তার ছোট জানের ভালোবাসায় মত্ত।
স্বামীর এমন এলোমেলো স্পর্শে ছোট প্রিয়তা সর্বাঙ্গে জুড়ে অন্য রকম ভালো লাগার সঞ্চারণ হলো।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদনানের বলিষ্ঠ দেহখানা। কিন্তু হাতের নাগালে আসে না সব টা। শারীরিক
স্পর্শ গুলো তখনি সুখের হয় যখন স্পর্শ গুলো ভালোবাসার মানুষটার হয়।
প্রিয়তার দশাও তাই।
নিজেও সাদনানের সঙ্গ দিলো।
সাদনান যেনো আরও উন্মাদ হলো।
কিন্তু তার বউ যে বড্ড ছোট সে দিকে তার নজর রইলো।
কিন্তু প্রিয়তার পাগলামি নিজের ভালোবাসা কোনো টার কাছেই আর পেরে না উঠে ডুবে গেলো ছোট প্রিয়তার মাঝে।

রাত তখন প্রায় তিন টা।
সাদনান তার ছোট চড়ুই জান কে বুকে আগলে শুয়ে আছে।
প্রিয়তা এতোক্ষণ ব্যথায় ছটফট করছিল।
কিন্তু একটা চিপস খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার পর একটু ঘুমিয়েছে।
সাদনান তখনো সজাগ।
একটু আগে শাওয়ার নেওয়ার ফলে দুজনের শরীর বেশ ঠান্ডা।
সাথে প্রিয়তার লম্বা চুল গুলো হালকা ভেজা।
সাদনান সব করিয়ে দিয়েছে বউ কে গোসল করা থেকে শুরু করে কাপড় ধুয়ে ব্যালকনিতে দেওয়া ব্যথার পিলও দিয়েছে।
সাদনান প্রিয়তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মাথার তালুতে একটা চুমু খেয়ে বিরবির করে বলে উঠে

-“সরি।
আমি চাই নি।
কিন্তু তুমি আমাকে পাগল করে দিলে আমার ছোট জান।
কবে বড় হবে তুমি?
আমি তো তোমাকে বড়ও হতে দিলাম না। ”

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-১১

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১১[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সওদাগর বাড়ি জমজমাট পরিবেশ।তবে তাদের নিজস্ব খুব কাছের আত্মীয় স্বজন নেই বললে চলে।
মিতা সওদাগরের এক ভাই আছে তবে তিনি দেশের বাহিরে থাকে স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে।তাই তিনি আসতে পারবে না।
আর প্রিয়তার নানা বাড়ি তো নেই।তার নানা নানি ছিল শুধু কিন্তু তাদের সে দেখে নি শুধু দাদুর কাছে তাদের নিয়ে গল্পই শুনেছে।আর রাহানের বাবা মা এসছে সওদাগর বাড়ি।রাহান মির্জা বাড়িতে থেকে গিয়েছে।
বাড়িতে তেমন মানুষ জন নেই।
আয়না কে সাজাতে পার্লার থেকে মেয়ে এসছে।তাদের মির্জা বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছে।
প্রিয়তা সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো ওর রুমেও দুইটা মেয়ে বসে আছে।
সাথে মিতা সওদাগর আর শফিক সওদাগর আয়ানও আছে।
প্রিয়তা বিস্ময় চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।
যা দেখে আয়ান এগিয়ে এসে ছোট বোন কে বাহুতে আগলে নিয়ে ধরে আসা কণ্ঠে বলে উঠে

-“এখন কিছু জিজ্ঞেস করিস না প্লিজ।
কিন্তু এতোটুকুও বিশ্বাস রাখ তোর খারাপ করবো না।”

কিছু ছিল আয়ানের কণ্ঠে। কিন্তু কি?
হয়তো বোন তার চিরদিনের জন্য তাদের বাড়ির অতিথি হচ্ছে।

মিতা সওদাগর চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে।
শফিক নিজেও একই অবস্থা।
মানুষ বলে এক সাথে নাকি দুই জন কে ভালোবাসা যায় না। আর প্রথম জন কে ভালোবাসলে নাকি অন্য কাউ কে ভালোবাসা যায় না। কই শফিক সওদাগর তো দ্বিতীয় বার ভালোবেসে ফেলেছিল প্রহেলিকা কে। তবে কি তিনি প্রথম জন মিতা কে ভালোবাসে নি?

-“ভাইয়া আমি বুঝতে পারছি না ঠিক।”

প্রিয়তা মিনমিন করে বলে উঠে।
আয়ান বোনের কথায় মুচকি হেসে প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বলল

-“বুঝতে হবে না।
যা হবে শুধু চুপ চাপ মেনে নিবি কোনো ঝামেলা করবি না।”

আয়ান শক্ত কণ্ঠে কথা টা বলেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
শফিক শুধু মেয়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।
মিতা সওদাগর একবার ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতেই তিনি হাত চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হলেন।
কিন্তু মেয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে মেয়ে কে বুকে আগলে নেওয়ার মতো সাহস সঞ্চয় করতে পারে না।
তাই ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
আচ্ছা ওনি কি কান্না করলো?
চোখে জল ছিল?
আর তা আড়াল করতেই কি চলে গেলো?

কিন্তু প্রিয়তা এক মনে ভেবে যাচ্ছে।তার ভাই তার সাথে এভাবে কথা বলল?কিন্তু কেন? মনে মনে বেশ অভিমান হলো ভাইয়ের উপর ছোট প্রিয়তার।
প্রিয়তা আরও একটা জিনিস ভেবে নিলো সে আর কিছু বলবে না।
যদি তাকে আজ সবাই মিলে আগুনেও ফেলে দেয় তবুও না।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই মিতা সওদাগর এগিয়ে এসে ওর কপালে চুমু খেয়ে নিলো।
প্রিয়তা স্তব্ধ হয়ে গেলো।
এটা কি সত্যি? না-কি সে স্বপ্ন দেখছে? এটা সম্ভব? পরক্ষণেই ভাবে
কেন সম্ভব না?
এটা তো হতো সব সময়।
তার মনি তাকে রোজ স্কুল যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিতো স্কুল থেকে বাড়ি এলে খাবার খাইয়ে দিতো।
কতো ভালোবাসতো।
কিন্তু হঠাৎ করে কেমন হয়ে গেলো।
প্রিয়তা সেভেন ওঠার পর পর কেমন খারাপ আচরণ করতো আর আস্তে আস্তে তা আরও বাড়লো বই কমলো না। এর মধ্যে মিতা সওদাগর মেয়ে দু’টো কে বাহিরে যেতে ইশারা করে।
মেয়ে গুলো মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো।
মিতা সওদাগর তখন আস্তে ধীরে বলতে শুরু করলো-

-“আমি জানি তোর মায়ের কোনো দোষ ছিল না আর না ছিল তোর।কিন্তু জানিস একটা মন জিনিস আছে না?আমার এই মন তোদের মেনে নিতে পারে নি। মস্তিষ্ক মানলেও মন থেকে মেনে নিতে পারে নি। আমি তোর মায়ের সাথে তোর সাথে অনেক খারাপ করেছি।কিন্তু তাই বলে আমি ক্ষমা চাইবো না।তুই তো অনেক ছোট তবে তোর খারাপ চাই না আমি।শুধু এটুকু বলবো যখন বুঝতে পারবি ভুল ঠিক বোঝার মতো মন মানসিকতা তৈরি হবে তখন ঘৃণা না করে একবার নিজে কে আমার জায়গায় দাঁড় করিয়ে নিজে কে ভাবিস।
আর আজ যা হবে সব মেনে নিস।তোর ভালো হবে।”

কথা গুলো বলে তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
প্রিয়তা এখনো কিছু বুঝতে পারছে না। কি বলে গেলো তার মনি?
আচ্ছা তার মা কি না চাইতেও একটা নারীর সুখের সংসার ভেঙে দিয়েছিল?
না, না প্রিয়তার এখন খুব করে মনে হচ্ছে সব টা দোষ তার দাদুর
কেন তার মায়ের জীবন টা নষ্ট করে দিয়ে ছিল।
সাথে এই ছোট্ট প্রাণ টাকেও এখন সেই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে।

-“ম্যাম আপনি বসুন।
বারো টা বেজে গিয়েছে। ”

একটা মেয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথা গুলো বলে উঠে।
প্রিয়তা সে দিকে একবার তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আর মেয়ে গুলো একটা শাড়ী প্রিয়তা কে সুন্দর করে পড়িয়ে সাজাতে লাগলো।
কিন্তু বেশি না হাল্কা।
তার পর সাজানো শেষ মাথায় একটা দোপাট্টা বেঁধে দেয়।
প্রিয়তা কে সাজানো শেষ করতে করতে প্রায় একটা বেজে যায়।
আর আয়না কে ততক্ষণে সারা, আর মাইশা প্রিয়তার রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
বর চলে এসছে।
আগে বিয়ে পড়ানো হবে।
তার পর খাওয়া দাওয়া। অনেক অতিথি আবার খাবার খেয়ে নিচ্ছে আগে।
খাবারের জায়গায় বাহিরে প্রিয়তা দের দোতলা বাড়ি টার সামনে ছোট উঠুন টায় করা হয়েছে।
আর বর বউ বসার জায়গা লিভিং রুমে।
একটু পর দুই বোন কে নিয়ে যা-ওয়া হবে।
কি ভালো ভাগ্য দেখেছি দুই বোনের এক সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে।
আর ছোট টা দেখেছি এটার বা বয়স কত হবে হয়তো সতেরো।
কিছু পাড়া প্রতিবেশী গুঞ্জন ভেসে এলো। চার দিক হতে রুম ভর্তি মেয়ে আর মাঝবয়েসী মহিলা দিয়ে ঘর ভরপুর।
প্রিয়তার অস্বস্তি হচ্ছিল এতোক্ষণ কিন্তু মানুষের চার দিক হতে ভেসে আসায় কথার ইঙ্গিতে বুঝতে পারছে আজ তারও বিয়ে।
আর এতোক্ষণ এটা মনে হওয়ার কোনো পাকাপোক্ত কারণ দেখতে পায় নি।
তাকে বেশি সাজানো হয় নি শুধু শাড়ী আর হাল্কা পাতলা কিছু গহনা। আর মুখে হাল্কা সাজ। এটা কে কেউ বিয়ের সাজ বলবে না। বোনের বিয়ে সেই সুবাধে তাকে একদম নরমাল সাজিয়েছে মেয়ে গুলো।
কিন্তু তার বিয়ে টা কার সাথে?
সাদনান ভাই জানে?
আচ্ছা ওনি কি কিছু করবে না?
প্রিয়তা একবার অসহায় চোখে বোনের দিকে তো একবার সারা,মাইশা দিকে।
সবাই খুশি খুশি আর এতো মানুষের মাঝে যে কাউ কে কিছু জিজ্ঞেস করবে সে সাহস টাও পাচ্ছে না প্রিয়তা।
তাই চুপ চাপ বসে রইলো।
কারণ বিয়ে যদি সত্যি তার হয় তবে নিশ্চয়ই কাজি বিয়ে পড়ানোর সময় বরের নাম বলবে।
আর তখন তো শোনা যাবে।
কিন্তু তখন কি বিয়ে টা ভাঙা যাবে?
আর সবাই তো কেমন করে বলে গেলো যেনো সে ঝামেলা না করে।
তবে কি সে বিয়ে টা করে নিবে?
তাছাড়া সাদনান ভাই তাকে ভালোবাসে কি না সে এটাও তো শিওর না।
যদি শিওর হতো তবে না হয় বিয়ের সময় কিছু একটা বলে দিতো আর সাদনান ভাই যদি পাশে থাকে তবেই এটা সম্ভব।
আর নয়তো তার কপালে যা আছে তাই মানতে হবে।

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বাহির থেকে জাফর মির্জা সহ তার বাবা এসে বলল সারা,আর মাইশা যেনো দুই বোন কে লিভিং রুমে নিয়ে আসে।
আয়না কে মাইশা আগে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
প্রিয়তা তখনো থম মেরে বসে।আয়নার পেছন পেছন প্রায় বেশ মানুষ চলে গেলো।
রুম অনেক টা ফাঁকা হলো শুধু চার পাঁচ জন মেয়ে রয়ে গেলো।
প্রিয়তা এই সুযোগে সারা হাত চেপে ধরে বলল

-“প্লিজ আমি যাব না।
তুই তো জানিস সব।”

-“দেখ আমার কিছু করার নেই।
এখ,,,

-“প্লিজ একবার কথা ব,,,,

সারা কথা না শোনেই প্রিয়তা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সে নিজেও সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না।
তার আগেই বাহির থেকে আয়ান ডাকতে ডাকতে রুমের ভেতর প্রবেশ করে।
কিন্তু প্রিয়তা কে এভাবে বসে থাকতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে? ”

প্রিয়তা কিছু বলে না।
সারাও চুপ থাকে।
আয়ান এগিয়ে গিয়ে বোনের হাত ধরে টেনে রুম থেকে নিয়ে এসে লিভিং রুমে বসা আয়নার পাশে বসিয়ে দেয়।
আর প্রিয়াতা সেখানে যেতে খুব চেনা পারফিউম স্মেইল পেলো সাথে পাশ হতে খুব চিনা পরিচিত কণ্ঠে কেউ বলে উঠে

-“আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”

#চলবে……

আমার তুমি পর্ব-১০

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_১০[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“মাশাআল্লাহ।”

রাহানের মুখে এমন বাক্য শুনে আয়ান ভ্রু কুঁচকে
রাহানের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই তার বুকের ভেতরও ধক করে উঠে। মাইশা, সারা দুইজন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসছে দু’জনেই এক রকম কাপড় হলুদ শাড়ী লাল পাড়ের। বাঙালী স্টাইলে পড়া।কাঁচা ফুলের গহনাও পড়েছে তবে গহনা গুলো খুব নরমাল।এতেই যেনো আরও বেশি সুন্দর লাগছে।আয়ান তার প্রেয়সীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিন্তু
পরক্ষণেই রাহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“ভুলেও যেনো নজর ওদিকে না যায়।”

-“উফ, তুই চুপ কর।
আমার নজর এতো টাও বাজে নয় যে বিবাহিত মহিল,,,,

রাহান সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না তার আগে আয়ান ওর মুখ চেপে ধরে হাত দিয়ে।
চোখ কটমট করে তাকিয়ে বিরক্তিকর মুখে বলে উঠে

-“ওই সব মুখে আনবি না।”

-“বা*ল ছাড়তো।
কেউ নেই এখানে।”

আয়ানের হাত টা মুখ থেকে টেনে সরিয়ে রাহান আয়ানের চেয়ে আরও দিগুণ বিরক্ত মুখে বলে উঠে।

-“ভাইয়া ভাবি’রা কখন আসবে?”

ওদেরকে কথার মাঝেই মাইশা,সারা দুজনেই এগিয়ে আসে।
আর সারা জিজ্ঞেস করে।

-“মা তো বলল গাড়িতে আছে।
বেশিক্ষণ লাগবে না।মিনিট দুই এক এর মধ্যে পৌঁছে যাবে।”

সারা’র প্রশ্নের জবাবে হাল্কা হেসে উত্তর দেয় আয়ান।
তাদের কথার মাঝেই একটা গাড়ি গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
আর সে টা থেকে প্রথম মিতা সওদাগর তার পর আয়না ওর পরে প্রিয়তা নেমে আসে।
প্রিয়তা আর তাদের সবাই ঘিরে ধরে।
বাড়ির মহিলারা গিয়ে তাদের নিয়ে আসে।
আয়না কে একদম সাজিয়ে আনা হয়ছে।কিন্তু সারা একদম নরমাল পোষাক। নরমাল তো হবে তার কিছুই তো সাদনান দেয় নি। তাই আয়না কে সালেহা বেগম স্টেজে বসিয়ে দিয়ে প্রিয়তা কে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাড়ির ভেতরে চলে আসে।
অতঃপর সোজা নিজের রুমে এনে একটা হলুদ শাড়ী সুন্দর করে পড়ি একদম তরতাজা বিভিন্ন রকমের ফুলের গহনা দিয়ে সাজিয়ে দেয়।
কোনো রকম কৃত্রিম সাজসজ্জা নেই।
এতেই অপরূপ সুন্দরী লাগছে প্রিয়তা কে।
সালেহা বেগম প্রিয়তার কানের নিচে নিজের চোখ হতে কাজল লাগিয়ে মুগ্ধতা নিয়ে বলে উঠে

-“মাশাআল্লাহ।
কারোর নজর না লাগে।”

এতো সবের মাঝে প্রিয়তা নির্বিকার। সে বুঝতে পারছে না কিছু।
তাকে কেন এতো যত্ন করে সাজানো হলো?
তাকে তো আয়ান ভাই বলেছিল যাতে বাড়ি থেকে সেজে না আসে আর তাই তো সে সাজে নি।
কিন্তু ও ভেবেছে অনেক লোকজন থাকবে।আর আয়ান তাই হয়তো সাজতে না করেছে।
কিন্তু এখন তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
প্রিয়তা কে এভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
সালেহা বেগম হাল্কা হাসলেন।
অতঃপর হাত ধরে বেরিয়ে আসে বাড়ির ভেতর হতে।
সারা, মাইশাও,আয়নাও একি রকম সাজ।
তাই ও বুঝতে পারলো সব মেয়েরা এক রকম সেজেছে।
কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে কয়েকজন মেয়ে আবার ভিন্ন রকম।
তাই চোখ পিটপিট করে সালেহা বেগম এর দিকে তাকাতেই তিনি বলে উঠে

-“এটাই নিয়ম ছেলের বাড়ি আর মেয়ের বাড়ি খুব কাছের মানুষ গুলো বউয়ের মতো সাজে।
আর অন্যদের আলাদা।
এটা সাদনানের দাদির কথা।”

প্রিয়তা কিছু বলে না আর।
ততক্ষণে সারা, মাইশা এসে ওকে স্টেজে নিয়ে আয়নার পাশে বসিয়ে দিয়ে ওরা দুইজন দুই সাইডে বসে পরে।
আর একে একে সবাই এসে হলুদ দিচ্ছে।
প্রথম আয়না কে দ্বিতীয় প্রিয়তা কে।
সাদনান নেই এখানে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো মিতা সওদাগর নিজেও প্রিয়তার গালে হলুদ ছুঁয়ে দেওয়ার সময় ওনার চোখে স্পষ্ট জল ছিল।
এটা কেউ খেয়াল না করলেও প্রিয়তা করেছে।
কিন্তু তার মনি কেন কান্না করছে?
বিয়ে তো আয়না আপুর তবে তাকেই বা কেন সবাই আয়নার সমান সমান হলুদ লাগাচ্ছে?
রাহাতও পাশের একটায় সোফায় বসে আছে। রাহাতের পাশে আয়ান,রাহান,মাইশা দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা কে বাড়ির সব মহিলার হলুদ লাগিয়েছে।
এখন পাড়াপ্রতিবেশি আর কিছু আত্মীয় স্বজনরা লাগাবে।
তাই প্রিয়তা একটু সুযোগ বুঝে সারার কানে ফিসফিস করে বলে উঠে

-“ওয়াশ রুমে যেতে হবে।”

-“আর একটু অপেক্ষা কর প্রায় শেষ।
তুই, আমি চলে গেলে ভাবির অস্বস্তি হবে।”

প্রিয়তা এতোক্ষণে এটা বুঝতে পারলো ওকে আয়নার জন্য এখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
কিন্তু সবাই ওকে কেন আয়নার সমান সমান হলুদ ছোঁয়া দিচ্ছে?

এর মধ্যে প্রিয়তার নজর যায় বাগানে এক সাইডে সাদনান দাঁড়িয়ে কয়েকজন লোকের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।
সাদনানও সবার মতো হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা কটি পরেছে।
কিন্তু অদ্ভুত হলো সবার গুলো কালো শুধু সাদনানের টা সাদা।
এই লোক সব সময় একটা না একটা সাদা পড়বেই হয়তো সার্ট নয়তো প্যান্ট মোদ্দা কথা তার সাদা একটা না একটা পরিহিত থাকবেই।
ইশ,কি সুন্দর লাগছে।
হলুদে আসা কিছু মেয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সাদনান কে। কিন্তু সাদনান সে দিকে কোনো হেলেদুলে নেই।
কিন্তু প্রিয়তার ভীষণ রাগ লাগছে।
মেয়ে গুলো উপর।
কিন্তু হায় আফসোস সে চাইলে কিছু করতে পারবে না আর নাই পারবে বলতে।
এসব ভেবেই প্রিয়তার রাগ মন খারাপে পরিণত হলো।
সে চুপ চাপ সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
রাত প্রায় দশ টা বাজেতে চলে।
তাই তাড়াতাড়ি হলুদের অনুষ্ঠান শেষে করে।
প্রিয়তা আর আয়না কে সারা মাইশা ওদের রুমে নিয়ে গেলো।
সারা প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে দিয়ে নিজে বাবা মায়ের ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে গেলো।
মাইশা আয়না কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়েছে।
আর ও নিজে তাদের দুই বোনের জন্য কাপড় নিতে আম্বিয়া মির্জার রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।

————

সারা ফ্রেশ হয়ে আর উপর নিজের রুমে আসে নি সে নিচে থেকে গিয়েছে।
আর মাইশা কে দিয়ে আম্বিয়া মির্জা দুই টা শাড়ী দিয়েছে।
এগুলো দুই বোন কে দুই টা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সালেহা বেগম একটা শাড়ী রেখে বাড়ি থেকে পড়ে আসা প্রিয়তার ড্রেস গুলো দিয়ে দিলো।
আর এগুলো পড়ে নিচে আসার জন্য বলে।

মাইশা বাধ্য মেয়ের মতো প্রিয়তা কে ড্রেস দিয়ে আয়নার জন্য শাড়ী নিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়তা সে গুলো ওয়াশ রুম থেকে পড়ে বেরিয়ে এসে দেখলো রুমের লাইট অফ।
প্রথম ভাবলো হয়তো কারেন্ট চলে গিয়েছে।
কিন্তু চার পাশ থেকে হাল্কা আলো আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো।
মানে কারেন্ট আছে কিন্তু রুমের আলো নেই।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই কেউ ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসার একটা অবয়ব দেখতে পেলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ ভয়ে পেয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো।
কিন্তু ও খুব পরিচিত একটা পারফিউম এর স্মেইল পেলো।
আর এই টা শুধু সাদনানের আশে পাশে থাকলেই পাওয়া যায়।
কিন্তু এই রুমে সাদনান ভাই কি করে আসবে?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝে ব্যক্তি টা ওর একদম নিকটে এসে দাঁড়ালো।
একটা হাত উঁচু করে প্রিয়তার গালে রাখে।
প্রিয়তা ঠান্ডা শক্ত হাতের স্পর্শ মাঝেও ভেজা কিছু অনুভব করলো।
আর সেই শক্ত হাতের মালিক যে সাদনান সেটাও বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
কিন্তু শিওর হতে মিনমিন স্বরে ডাকলো

-“সাদনান ভাই?”

-“হুম।”

সাদনান হাতের সব টা হলুদ গাল হত ঘাড়সহ লাগিয়ে দেয় নিজের ছোট জান’কে।
আর সেটা লাগাতে লাগাতে জবাব দেয়।
প্রিয়তা আবারও অভিযোগের স্বর তুলে বলে উঠে

-“আপনি ছিলেন না তখন।”

-“এখন তো এসছি।”

-“কিন্তু কেন?”

সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তা ফটাফট প্রশ্ন করে।
যার উত্তর স্বরূপ সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়

-“হলুদ দিতে।”

-“কিন্তু হলুদ তো আপুর?”

-“না আমার।
কাল সারপ্রাইজ আছে।”

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-০৯

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৯ [অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সাদনান বাইকে বসে প্রিয়তা কে ইশারায় বসতে বলে।
প্রিয়তা সাদনানের দিকে তাকিয়ে সাবধানে উঠে বসে।
বেশ দূরত্ব রেখেই বসে নিজের ছোট নরম তুলতুলে হাত টা সাদনানের কাঁধে রাখে।
সাদনান তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিলো।
তাকে এই ছোট্ট হাতের মালিক অনেক জ্বালায়।
বুকের বা পাশটায় কেমন কেমন করে।
আচ্ছা তার ছোট জান টারও কি এমন লাগে?
এই যে এখন হাত রেখে আছে তাই তার মন কেমন করছে।
এই মেয়েরও কি এমন লাগছে?

কিন্তু সাদনান একটা বিষয় লক্ষ করে প্রিয়তা ওর বাইকে উঠলে বেশ দূরত্ব আর শুধু কাঁধে হাত রেখে বসে।
আর আজ যেনো আরও গুটিয়ে আছে।
তবে মনের কথা মনে রেখে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে

-“শক্ত করে ধরে বসো।”

-“ধরেছি তো।”

সাদনান আর কিছু বলে না।
সন্ধ্যার পরিবেশ টা উপভোগ করতে থাকে।
যদিও এই রাস্তা টা চিরচেনা তবে আজ যেনো অচেনা মনে হচ্ছে।
চার দিকে তাকিয়ে সব নতুন মনে হচ্ছে। হয়তো ভালোবাসার মানুষ টা পাশে আছে তাই।সাদনান নিজেও ধীরে গতিতে বাইক চালাচ্ছে।
আর একটু পর পর আয়নার মাঝে নিজের প্রেয়সীর দিকে তাকাচ্ছে, হাল্কা অন্ধকারে মাঝে। বেশ লাগছে। প্রিয়তা জর্জেট এর ওড়না টা ভালো করে মাথায় পেচিয়ে রেখেছে।
ছোট মুখ টা আরও ছোট মোহনীয় লাগছে। সাদনানের মনে হচ্ছে সে এই ভাবেই তার প্রেয়সী কে দেখে যাক আর রাস্তা টাও শেষ না হোক।
সাদনানের বেশ করে একটা গান মনে গুরুপাক খেলো “এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো?”
কিন্তু সে টা তো আর হওয়ার নয়।
সত্যি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে সব কিছু ভালো লাগে।
প্রায় পাঁচ মিনিট এর মাথায় সাদনানের বাইক টা এসে সওদাগর বাড়ির সামনে দাঁড়াল।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায়।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“তৈরি থেকো।
খুব শীগগির নিতে আসবো।”

কথা টা বলে আর সেকেন্ডও অপেক্ষা করে না সাদনান বাইক নিয়ে চলে যায়।
ছোট প্রিয়তার মাথায় ঢুকে নি সাদনান ভাই কিসের কথা বলে গেলো?

—————-

-“আপনি এখন কি চাইছেন?”

-“আমার প্রস্তাবে একসেপ্ট করে নাও।”

-“আচ্ছা।
তবে তাই হোক।
কিন্তু আপনি এটা ভাববেন না আমি আপনার কথায় রাজি হয়েছি।
আমি আমার প্রতি টা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এটা মেনে নিয়েছি।”

-“বোকা নই আমি।
আমি জানতাম তুমি জায়গায় শক্ত করে নিতে এতো দিন এমন টা করেছো।
কিন্তু তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার যথাযথ মর্যাদায় তোমাকে শক্ত করে খুঁটি বানিয়ে দেবো।”

-“বুঝতে পেরেছেন তবে।”

-“সে টা আর বলতে।
তিন মাস পর ইলেকশন। প্রস্তুতি নিতে শুরু করো।
অবশ্য তোমার আর কিসের প্রস্তুতি সব তো তোমার কথায় আর বাকি টা আমি সামলে নেবো।”

সাদনান বাঁকা হাসে।
কে বলেছে সে রাজনৈতি করে না?
জেলার পুরো ছাত্র সংগঠন তার হাতের মুঠোয়।আর সাদনান কেমন মানুষ সে টা এখনো কেউ টেরই পায় নি।
উঁহু, পেয়েছে। ওয়াসিফ দেওয়ান তাই তো এতো টা অভিজ্ঞতার সাথে সে নিশ্চয়তা দিয়েছে মির্জা সাদনান শাহরিয়া জয় নিশ্চিত।
এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সাদনান ওয়াসিফ দেওয়ান এর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে তার অফিস থেকে।
অতঃপর বাইকে বসতে ফোন টা বেজে উঠে প্যান্ট এর পকেটে।
রাহান কল দিয়েছে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে রাহান উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে

-“দোস্ত কাজ হলো?”

-“একদম।
সাদনান যা বলে তাই করে।
আর সেটা পাকাপোক্ত ভাবে।”

-“জানি তো আমি।
আচ্ছা এখন চলে আয় দলের সব ছেলেরা অপেক্ষা করছে।
কয়েক দিন পর একটা সমাবেশ আছে।
সেটা নিয়ে আলোচনা করবি বলেছিলি।”

-“মনে আছে।
আসছি আমি।”

ফোন কেটে সাদনান বাইক স্টার্ট দিয়ে নিজের গন্তব্য পার্টি অফিসের দিকে ছুটে।
সে তার বাবা, দাদার থেকেও বড় নেতা।
এটা সে নিজে না মানলেও জনগণ খুব করে মানে।

————–

আজ মির্জা বাড়ি থেকে গায়ে হলুদ আর বিয়ের জন্য সব জিনিস সওদাগর বাড়ি আসবে।
আর সব ওই দিন তাদের নিজেদের পছন্দ করে আসা।
সওদাগর বাড়িতে আজ মির্জা বাড়ির সব মহিলার যাবে।কোনো পুরুষ যাবে না।
আজ সব দিয়ে আসবে। কাল গায়ে হলুদ মির্জা বাড়িতে হবে আর ছেলে মেয়ে দু’জনের এক সঙ্গে।
সাদনান ওর মা আর দাদির সাথে কথা বলে বিয়ের এক সেট সব বাড়িতেই রেখে যেতে বলেছে।
সে চায় না বিষয় টা জানা জানি হোক।
আর শফিক আর আয়ানও এ ব্যাপার এক মত পোষণ করেছে।
অগত্যা সালেহা বেগম ছেলের কথা মোতাবেক কাজ করে।
মির্জা বাড়ি একদম শুনশান নীরবতা।
লিভিং রুমে জাফর মির্জা সহ সাদনান, মফিজুর মির্জা, রাহাত,আজ্জম মির্জা সবাই বসে আছে।
কারোর মুখে কোনো কথা নেই।
তবে নীরবতা ভেঙে জাফর মির্জা বলে উঠে

-“রাজনীতি আমাদের রক্তে মিশে আছে।
সেখানে তোমার প্রথম আচরণে বেশ অবাক হয়েছি।
তবে ভাবতে পারি নি এতো টা এগিয়ে আছো।”

জাফর মির্জার কথায় সাদনান কিছু বলে না।
শুধু মুচকি হাসে।
আজ্জম মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে

-“আমাদের ব্যবসার কি হবে।
সব টা সাদনান দেখে।”

-“তুমি চিন্তা করো না বাবা।
আমি সব দিক সামলে নেবো।”

সাদনান আজ্জম মির্জা কে আস্বস্ত করে বলে উঠে।

-“ভাই আমিও কিন্তু সাথে আছি।”

মফিজুর মির্জা বলে।তিনি খুব সাদাসিধা মানুষ প্যাচ জিনিস টা বড্ড কম আর ভীষণ ভালো মানুষ।

-“একদম ছোট বাবাই।
আর ভাইয়া তো আছে।”

সাদনান একমত পোষণ করে।
এভাবেই তারা অনেক টা সময় বসে আড্ডা দেয়।

—————–

-“গাড়ি কিন্তু পাঠিয়ে দেওয়া হবে সকাল সকাল চলে আসবেন আপা।”

-“অবশ্যই আপা।”

সাদনানের মায়ের কথার বিনিময়ে মিতা সওদাগর মুচকি হেসে জবাব দেয়।
এরমধ্যে প্রিয়তা ট্রে হাতে নাস্তা নিয়ে আসে পেছন পেছন শিউলিও আসে।

-“তোকে কাজ করতে হবে না।
তুই যা সারা’র সাথে।”

সালেহা বেগম বলে উঠে।
প্রিয়তা মুচকি হাসে।
অতঃপর উপর আয়নার রুমে চলে আসে।
সারা আয়না বসে আছে।
মাইশা নেই ওর একটা ফোন এসছে।
বলেছে ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছে।
এটা বলে সে ছাঁদে চলে এসছে।

-“কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি।
আর তুমি সেখানে বসে বসে আলাপ মারছিলে।”

মাইশা ছাঁদে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত দুই টা হাত ওকে আগলে নিয়ে কথা গুলো বলে উঠে।
মাইশা কেঁপে উঠল আয়ানের এমন অনাকাঙ্খিত স্পর্শে।
কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে।
সে সব ভেবেই মিনমিন করে বলে

-“ছাড়ুন।
কেউ আসলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।”

-“কেউ আসবে না।”

কথা টা বলতে বলতে আয়ান মাইশার কাঁধ হতে ওড়না টা একটু সরিয়ে সেখানে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল।
মাইশা চোখ বন্ধ করে নিয়ে আগের ন্যায় আবারও বলে

-“বাড়িতে নিয়ে এলেই তো হয়।”

-“আসবো।
খুব শীগগির নিয়ে আসবো সুইটহার্ট।”

-“আমার কেমন ভয় করে।”

-“কোনো কারণ নেই।
কারণ আমরা পাপ করছি না।”

-“তবুও।”

-“হুঁশ।
আছি না আমি।সব সামলে নেবো।
এখন একটু ভালোবাসা দিয়ে দাও।”

কথা শেষ আয়ান মাইশার ওষ্ঠ জোড়া দিয়ে নিজের ওষ্ঠ সাহায্য চেপে ধরে।
বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান মাইশা কে ছেড়ে দিয়ে মাইশার দুই গালে হাত রাখে মাইশা তখনো চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ব্যস্ত।
অতঃপর চোখ খোলে আয়ান কে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে আসে।
আর আয়ান নিজের চুল খামচে ধরে নিজে নিজে হেসে ফেলে।

এদিকে মাইশা রুমে আসতেই সব গুলো মাইশার দিকে কেমন করে তাকালো শুধু সারা রাগে ফুঁসছে।
আয়না আর প্রিয়তা মুখ টিপে হাসছে।
প্রিয়তা হাসতে হাসতে বলেই ফেলে

-“ভাবি হওয়ার এতো শখ বলতে পারতে।”

-“তুমি আমাকেও একবার বলার প্রয়োজন মনে করো নি।”

প্রিয়তার কথা শেষ সারা বলে উঠে।
শুধু আয়না চুপ।
ও বরাবরই চুপ চাপ থাকে।
মাইশা ওদের ভাবসাব আর কথা শুনে বুঝতে পারলো।
সবাই সব দেখে পেলেছে।
আর একবার যখন দেখে ফেলেছে তখন ওদের সবটা বলে দেওয়াই উচিত বলে মনে করলো মাইশা।
তাই মুচকি হেসে ঘড়ঘড় করে সব বলে দিলো।
মাইশার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ।
বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর ওরা কেউ সেটা বুঝতেও পারলো না।
বিশেষ করে সারার নিজে কে বড্ড বোকা মনে হলো কারণ ও মাইশার সাথে এতো ক্লোজ হয়ে এতো বড় একটা বিষয় এতো মাস ধরেও টের পায় নি তাই।
অবশ্য কার মনের ভেতর কে ঢোকে বসে থাকে।
আর কার মনে কি চলে সেটা যদি বোঝাই যেতো তবে হয়তো সবচেয়ে বেশি সুবিধা হতো আবার বিরক্তিকরও হতো।

————-

-“আপনি জানেন মাইশা আপুর আর আমার ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে, সাদনান ভাই?”

-“তো? ”

-“মানে আপনি অবাক হন নি?”

-“অবাক হওয়ার কি আছে।
আমি তো জানি।”

-“আল্লাহ, কি?
আপনি আমাকে বললেন না কেন?”

-“তোমাকে বলতে যাব কেন?”

-“ঠিক।”

কথা টা বলেই প্রিয়তা ফোন টা কেটে দেয়।
সাদনান ফোন টা সামনে এনে ধরে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
এই মেয়ে ফোন কেন কেটে দিলো?
পরক্ষণেই সাদনান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হেসে ফেলে। ফোন টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে বিছানায় ধপ করে শুয়ে উন্মুক্ত বুকে হাত বুলাতে বুলাতে বিরবির করে বলে উঠে

-“বড্ড খালি খালি লাগে।
কবে এখানে তুমি মাথা রেখে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে, আমার ছোট জান?”

#চলবে……

আমার তুমি পর্ব-০৮

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

আজ সওদাগর বাড়ি সবাই মির্জা বাড়ির যাবে।কারণ মির্জা বাড়িতে বিয়ের জন্য সব শাড়ী, গহনা আনা হয়েছে এখন গিয়ে তারা পছন্দ করে যা যা লাগবে তা রেখে দেবে।
মির্জা বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়েছে জাফর মির্জা যদিও প্রিয়তাদের একটা গাড়ি আছে। কিন্তু এটা নাকি তাদের নিয়ম বাড়ির বউয়ের যাবতীয় সব বরের বাড়ি থেকে দিতে হয়।
প্রিয়তা আয়ানের পাশে বসে আছে। আয়ান ড্রাইভ করছে। আয়না আর মিতা সওদাগর পেছনে বসে আছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। শফিক সওদাগর আসে নি তিনি হোটেল থেকে পরে এসে এখানে পৌঁছাবে।
আজ দুই দিন হয় প্রিয়তার জ্বর ভালো হয়েছে।
তিন দিন জ্বর ছিল মেয়েটার।
আজ সকালে আয়না কিছু কথা শোনে প্রিয়তা স্তব্ধ। যদিও এর মাঝে প্রতি দিন রাতে সাদনানের সাথে তার ছোট বাটন ফোন টা দিয়ে কথা হয়েছে সজ্ঞানে কিন্তু সে দিন সে জ্বরের তাড়নায় কি বলেছে সে নিজেও জানে না। কিন্তু আয়নার কাছে আজ কিছু কথা শোনে নিজে কে নিজে ইচ্ছে মতো বকেছে কি দরকার ছিল এতো টা বেহায়া পানার পরিচয় দেওয়ার।
নিশ্চয়ই এখন সাদনান ভাই তাকে আরও বেশি ছেঁচড়া বলবে?
পরক্ষণেই ভাবে যদি বলার হতো তো ফোনেই নিশ্চয়ই বলতো।
যদিও তাদের মাঝে বেশি কথা হতো না।
কেমন আছো? জ্বর কমছে?ঔষধ খাওয়া?আর ঠিক মতো খাবার ব্যস এটুকুই।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে মির্জা বাড়ির সামনে থামে।
এই বাড়ি টা এলাকার সব গুলো বাড়ি থেকে বড় এবং ভিন্ন।
দেখতেও সুন্দর সাদা রং করা পুরো বাড়ি টা।
রাস্তার সাথে হওয়াতে প্রথমে ইয়া বড় গেইট সেটায় দুইজন দারোয়ান থাকে।
তার পর সুন্দর করে রাস্তা বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য আর তার এক পাশে সুন্দর একটা বাগান আছে আর অন্য পাশে গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজ।
আয়ান সবাইকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি টা রাখতে চলে যায়।
তাদের আসার খবর পেয়ে মির্জা বাড়ির সবাই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে তাদের এগিয়ে নিতে।
সবাই কুশল বিনিময় করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
সাদনান নেই এখানে।
প্রিয়তা চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে সাদনান কে দেখতে পায় না।
তাই সবার সাথে বসে মার্কেট থেকে নিয়ে আসা শপিং গুলো সবার সাথে দেখতে লাগলো।আয়ান মাইশার কয়েক বার চোখে চোখে ইশারায় কথাও সেরে নিয়েছে। আর আয়না লজ্জায় রংধনু হচ্ছে। রাহাতের সাথে তেমন একটা কথা হতো না কখনো। আর আম্বিয়া মির্জা ওকে এক দিন এই বাড়িতে দেখেই পছন্দ করেছে।আর হঠাৎ এত সব হওয়াতে যেমন লজ্জা তেমন অস্থিরতা কাজ করছে।এসব ভাবতে ভাবতে আয়না সবার প্রশ্নের টুকটাক জবাব দিচ্ছে।
বউয়ের সব কিছু দুই সেট করে রাখা হচ্ছে।
মিতা সওদাগর এটা নিয়ে অমত করলেও পরে তেমন পাত্তা দেয় নি।
তিনি ভাবছে এটা হয়তো কোনো নিয়ম টিয়ম হবে।
এসব ভেবে আর তিনি চিন্তিত হলেন না।
খুশি মনে মেয়ের শরীরে এটা সেটা ফেলে দেখে নিচ্ছে।
সব দেখা শেষ সবাই আরও একদফা আলোচনা করতে বসে গেলো বড়’রা তাই সারা, মাইশা, আয়না আর প্রিয়তা কে নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসে।
রাহাত আয়ান বাড়ি ভেতরেই রয় গেলো।
বাগানে সুন্দর একটা বসার জায়গাও আছে।
ওরা চার জন সেখানে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।কিসের আর আড্ডা এক জন আরেক জন কে খুঁচা মেরে কথা বলছে।
বিশেষ করে আয়না কে সবাই বেশি করে জ্বালাচ্ছে।
শেষমেশ আয়না লজ্জা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো পেছন পেছন মাইশাও চলে আসে।
সারা আর প্রিয়তা দু’জনেই হেঁসে তখন লুটোপুটি খাচ্ছে।
ঠিক তক্ষুনি সাদনান বাইক নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।
পেছনে রাহানও আছে।
সাদনান সোজা গ্যারেজে চলে যায়।
আর রাহান ওর বাইক বাগানে রেখে সারা আর প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসে।

-“তা দুই সুন্দরী কি করা হচ্ছে এখানে?”

মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে রাহান।
সারা কিছু বলে না চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রিয়তা হাল্কা হেসে জবাব দেয়

-“এমনি এসছিলাম।
আপনারা এই অসময়ে বাড়িতে?”

-“বন্ধুর বিয়ে কত কাজ যখন তখন যেখানে সেখানে যেতে হয়।”

রাহানের কথায় প্রিয়তা ভাবে রাহাত ভাইয়ের কথা বলছে হয়তো।
আর সারা উশখুশ করছে।
রাহান ভাইয়া না আবার মুখ ফসকে কিছু বলে ফেলে।

-“তা আর নয় দিন পর তো বোনের বিয়ে।
তার পর কিন্তু তোমাদের টেস্ট পরীক্ষা।
মনে আছে?”

-“হ্যাঁ ভাই আর সাতাইশ দিন পর।”

রাহানের প্রশ্নের জবাব উত্তর দেয় সারা।

এর মধ্যে সাদনানও এদিকে আসে।
প্রিয়তা সে দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
মারাত্মক সুন্দর লাগে তার সাদনান ভাই কে সাদা সার্ট -এ।
আচ্ছা ওনি সব সময় সাদা কেন পড়ে?
ওনি কি জানে ওনাকে সাদা রঙে কত টা সুন্দর লাগে।
তবে সবচে বড় কথা হলো আমি যেভাবে ওনাকে দেখি আমার কাছে ওনাকে যতটা সুন্দর লাগে সব মেয়ের কাছেও কি তাই?
প্রিয়তার ছোট মন টা বড্ড খারাপ হয় নিজের মনে কথা গুলো ভেবেই।
প্রিয়তা এতোক্ষণ খেয়ালই করে নি ওর সামনে এসে সাদনান কখন দাঁড়িয়েছে।
আর সারা, রাহান ভাই বা কখন চলে গেলো?
প্রিয়তা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে কাউ কেই চার পাশে দেখতে পেলো না।
তখনও সাদনান ওর দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
যা দেখে আরও এক দফা লজ্জা পেলো প্রিয়তা নিজ মনেই ভাবলো ইস সকালের কথা গুলো বোধহয় না শুনলেই ভালো হতো।
এখন তো নিজেরই কেমন লাগছে।

-“আমাকে দেখা শেষ?”

সাদনানের প্রশ্নে চমকে উঠে প্রিয়তা।
আসলেও আবার কখন যে সাদনানের দিকে তাকিয়ে ফেলেছে নিজেই বুঝতে পারে নি।
সাদনান দেখছে তার ছোট জান টাকে।
এই পাঁচ দিনে শরীর টা অনেক শুকিয়েছে।সাথে চোখের নিচে কালিও পড়েছে।
কিন্তু তাতে যেনো আর মোহনীয় লাগছে তার ছোট জান কে।
আচ্ছা ও এতো লেইট করে কেন পৃথিবীতে এসছে?
আরো চার পাঁচ বছর আগে এলে কি হতো।
এখন নিশ্চয়ই ওর সাথে প্রিয়তার বিয়ে হলে তখন লোকে তাকে বলবে “সুগার ড্যাডি”সাথে বিয়ে হয়েছে কচি মেয়ের।
সাদনান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা নিজের মাথা টা আরও একটু নুইয়ে নিলো।
অতঃপর মিনমিন করে বলে উঠে

-” আপনি এসছেন কেন আমার সামনে?”

-“বাড়ি টা আমার।”

-“চোখ টাও আমার।”

সাদনানের কথার বিপরীতে কথা টা অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলেই এক দৌড়ে বাড়ি ভেতর চলে গেলো প্রিয়তা।
সাদনান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। বিষয় টা বুঝতে ওর সেকেন্ড খানিক সময় লাগলো।
যখন বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে প্রিয়তা পগার পার।
সাদনান মুচকি হাসলো।
সাদনান নিজে পরিহিত
কালো প্যান্ট এর পকেটে দুই হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বিরবির করে বলে উঠে

-“আর বেশি দিন না।
তোমাকে খুব শীগগির সাদনান তার নিজের ভালোবাসার খাঁচা বন্দী করে নেবে মিস প্রিয়তা।
অনেক জ্বালিয়েছো আমায়।
ভালোবাসা শর্তেও কখনো বলতে পারি নি ভালোবাসি।
তখনো না যখন তুমি নিজে আমাকে ভালোবাসো বলতে।
ইউ নো হোয়াট? ভালোবাসার মানুষটার মুখে ভালোবাসি শব্দ টা শুনতে কত টা ভালো লাগা কাজ করে, আর কতো টা লাকী হলে সেটা সম্ভব?”

————-

-“ক্ষমা করবেন।
আমি এই প্রস্তাবে রাজি নই।”

-“ঠিক আছে আপনি চিন্তা করবেন না।
আমি আরেক বার চেষ্টা করে দেখবো।”

-“না,না তার প্রয়োজন নেই।
আপনি বরং আপনার নাতি আর জনগণের ভরসার, আস্থার হবু এমপি মহোদয় কে আমার সাথে একবার দেখা করতে বলবেন।”

-“আচ্ছা।
আজ তবে উঠি।
বুঝতেই পারছেন বড় নাতির বিয়ে।”

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ।
আমি কিন্তু আসছি।”

-“অবশ্যই।”

জাফর মির্জা লম্বা চওড়া হেসে বলে বলে উঠে।
অতঃপর ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাড়ি হতে বেরিয়ে আসে।
ওয়াসিফ দেওয়ান এখন বর্তমান অবস্থানরত এমপির বিরোধী দলের হয়ে তিনি সাদনান কে চায়।
সাদনান রাজি নয়।এটা বলতেই আজ জাফর মির্জা এসেছিল যে সাদনান রাজি নয় তিনি চাইলে আজ্জম মির্জা কে নমিনেশন পাইয়ে দিতে পারে। কিন্তু ওয়াসিফ দেওয়ান কিছুতেই রাজি নয়।
ওয়াসিফ দেওয়ান খুব ভালো মানুষ। তিনি জানে সাদনান কে যদি একবার এই পথে আনা যায় তবে জনগণের কোনো সমস্যা হবে।আর জনগণ তাকে চায়।জয় তার নিশ্চিত।
আর তিনি এটাও নিশ্চিত সাদনান কে একবার যদি রাজি করানো যায় তবে তিনি এবার নিশ্চিন্তে তার পদত্যাগ করবে আর সামনে ইলেকশন সাদনান কে মন্ত্রী পদে দেবে।

———–

দুপুর সবাই মির্জা বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে তার পর বিকেলে চলে যায় শুধু প্রিয়তা কে সারা যেতে দেয় নি।
ও বায়না ধরেছে প্রিয়তা কে থাকতে হবে।
মিতা সওদাগর কিছুতেই রাজি ছিল না।
শফিক কিছু বলে নি।
কিন্তু আয়ান বলেছে সে এসে সন্ধ্যা নিয়ে যাবে।
যদিও মিতা সওদাগর রাজি ছিল না।
কিন্তু ছেলের কথায় আর কিছু টা নিমরাজি হয়ে রেখে গিয়েছে প্রিয়তা কে।
এখন সারা,প্রিয়তা,মাইশা বসে আছে ছাঁদে।
এখানে থেকে বাড়ির গেইট একদম পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
ওরা গল্প করছে বসে।
ঠিক তক্ষুনি সাদনান গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে বাইকে নিয়ে প্রবেশ করে।
প্রিয়তা সে দিকে এক ধ্যান এ তাকিয়ে আছে।
সাদনান একবার তাকিয়েছে ছাঁদে।
আর প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিলো।
সেই সকালের পর আর কথা হয় নি।
কয়েক বার লিভিং রুমে চোখাচোখি হয়েছে মাত্র।
আর এখন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচ টা বাজে।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সারা মাইশা তাগাদা দিয়ে নিজে চলে আসে কারণ সন্ধ্যা হলে ছাঁদে থাকা নিষেধ আর এই হুকুম জারি করেছে আম্বিয়া মির্জা।
তিনি আগের দিনের মানুষ বেশ নিয়ম কানুন আর কিছু ভূত-প্রেত বিশ্বাস করে।

নিচে আসার পর জানা গেলো আয়ান আসতে পারবে না ওর হোটেলে কাজ পড়ে গিয়েছে। আর তাই রাহাত কে দিয়ে আসতে বলেছে।
কিন্তু রাহাত যেতে পারবে না বলেছে তার শরীর ভালো লাগছে না বাহানা দিয়ে দিয়েছে। আসলেই কি ভালো লাগছে না?
তাই আম্বিয়া মির্জা সাদনান কে সেই দায়িত্ব দিয়েছে। যদিও তিনি বেশ ভয়ে আছে কখন আবার তার স্বামী কি বলে বসে।
সে তো আর তার মতামত জানায় নি এখনো।
তার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা ওনার কাছ হতে বলে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাদনানের পেছন পেছন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।

#চলবে…..