আমার তুমি পর্ব-১১

0
359

#আমার_তুমি
#পর্ব_১১[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সওদাগর বাড়ি জমজমাট পরিবেশ।তবে তাদের নিজস্ব খুব কাছের আত্মীয় স্বজন নেই বললে চলে।
মিতা সওদাগরের এক ভাই আছে তবে তিনি দেশের বাহিরে থাকে স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে।তাই তিনি আসতে পারবে না।
আর প্রিয়তার নানা বাড়ি তো নেই।তার নানা নানি ছিল শুধু কিন্তু তাদের সে দেখে নি শুধু দাদুর কাছে তাদের নিয়ে গল্পই শুনেছে।আর রাহানের বাবা মা এসছে সওদাগর বাড়ি।রাহান মির্জা বাড়িতে থেকে গিয়েছে।
বাড়িতে তেমন মানুষ জন নেই।
আয়না কে সাজাতে পার্লার থেকে মেয়ে এসছে।তাদের মির্জা বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছে।
প্রিয়তা সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো ওর রুমেও দুইটা মেয়ে বসে আছে।
সাথে মিতা সওদাগর আর শফিক সওদাগর আয়ানও আছে।
প্রিয়তা বিস্ময় চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।
যা দেখে আয়ান এগিয়ে এসে ছোট বোন কে বাহুতে আগলে নিয়ে ধরে আসা কণ্ঠে বলে উঠে

-“এখন কিছু জিজ্ঞেস করিস না প্লিজ।
কিন্তু এতোটুকুও বিশ্বাস রাখ তোর খারাপ করবো না।”

কিছু ছিল আয়ানের কণ্ঠে। কিন্তু কি?
হয়তো বোন তার চিরদিনের জন্য তাদের বাড়ির অতিথি হচ্ছে।

মিতা সওদাগর চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে।
শফিক নিজেও একই অবস্থা।
মানুষ বলে এক সাথে নাকি দুই জন কে ভালোবাসা যায় না। আর প্রথম জন কে ভালোবাসলে নাকি অন্য কাউ কে ভালোবাসা যায় না। কই শফিক সওদাগর তো দ্বিতীয় বার ভালোবেসে ফেলেছিল প্রহেলিকা কে। তবে কি তিনি প্রথম জন মিতা কে ভালোবাসে নি?

-“ভাইয়া আমি বুঝতে পারছি না ঠিক।”

প্রিয়তা মিনমিন করে বলে উঠে।
আয়ান বোনের কথায় মুচকি হেসে প্রিয়তার মাথায় হাত রেখে বলল

-“বুঝতে হবে না।
যা হবে শুধু চুপ চাপ মেনে নিবি কোনো ঝামেলা করবি না।”

আয়ান শক্ত কণ্ঠে কথা টা বলেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
শফিক শুধু মেয়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।
মিতা সওদাগর একবার ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতেই তিনি হাত চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হলেন।
কিন্তু মেয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে মেয়ে কে বুকে আগলে নেওয়ার মতো সাহস সঞ্চয় করতে পারে না।
তাই ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
আচ্ছা ওনি কি কান্না করলো?
চোখে জল ছিল?
আর তা আড়াল করতেই কি চলে গেলো?

কিন্তু প্রিয়তা এক মনে ভেবে যাচ্ছে।তার ভাই তার সাথে এভাবে কথা বলল?কিন্তু কেন? মনে মনে বেশ অভিমান হলো ভাইয়ের উপর ছোট প্রিয়তার।
প্রিয়তা আরও একটা জিনিস ভেবে নিলো সে আর কিছু বলবে না।
যদি তাকে আজ সবাই মিলে আগুনেও ফেলে দেয় তবুও না।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই মিতা সওদাগর এগিয়ে এসে ওর কপালে চুমু খেয়ে নিলো।
প্রিয়তা স্তব্ধ হয়ে গেলো।
এটা কি সত্যি? না-কি সে স্বপ্ন দেখছে? এটা সম্ভব? পরক্ষণেই ভাবে
কেন সম্ভব না?
এটা তো হতো সব সময়।
তার মনি তাকে রোজ স্কুল যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিতো স্কুল থেকে বাড়ি এলে খাবার খাইয়ে দিতো।
কতো ভালোবাসতো।
কিন্তু হঠাৎ করে কেমন হয়ে গেলো।
প্রিয়তা সেভেন ওঠার পর পর কেমন খারাপ আচরণ করতো আর আস্তে আস্তে তা আরও বাড়লো বই কমলো না। এর মধ্যে মিতা সওদাগর মেয়ে দু’টো কে বাহিরে যেতে ইশারা করে।
মেয়ে গুলো মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো।
মিতা সওদাগর তখন আস্তে ধীরে বলতে শুরু করলো-

-“আমি জানি তোর মায়ের কোনো দোষ ছিল না আর না ছিল তোর।কিন্তু জানিস একটা মন জিনিস আছে না?আমার এই মন তোদের মেনে নিতে পারে নি। মস্তিষ্ক মানলেও মন থেকে মেনে নিতে পারে নি। আমি তোর মায়ের সাথে তোর সাথে অনেক খারাপ করেছি।কিন্তু তাই বলে আমি ক্ষমা চাইবো না।তুই তো অনেক ছোট তবে তোর খারাপ চাই না আমি।শুধু এটুকু বলবো যখন বুঝতে পারবি ভুল ঠিক বোঝার মতো মন মানসিকতা তৈরি হবে তখন ঘৃণা না করে একবার নিজে কে আমার জায়গায় দাঁড় করিয়ে নিজে কে ভাবিস।
আর আজ যা হবে সব মেনে নিস।তোর ভালো হবে।”

কথা গুলো বলে তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
প্রিয়তা এখনো কিছু বুঝতে পারছে না। কি বলে গেলো তার মনি?
আচ্ছা তার মা কি না চাইতেও একটা নারীর সুখের সংসার ভেঙে দিয়েছিল?
না, না প্রিয়তার এখন খুব করে মনে হচ্ছে সব টা দোষ তার দাদুর
কেন তার মায়ের জীবন টা নষ্ট করে দিয়ে ছিল।
সাথে এই ছোট্ট প্রাণ টাকেও এখন সেই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে।

-“ম্যাম আপনি বসুন।
বারো টা বেজে গিয়েছে। ”

একটা মেয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথা গুলো বলে উঠে।
প্রিয়তা সে দিকে একবার তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আর মেয়ে গুলো একটা শাড়ী প্রিয়তা কে সুন্দর করে পড়িয়ে সাজাতে লাগলো।
কিন্তু বেশি না হাল্কা।
তার পর সাজানো শেষ মাথায় একটা দোপাট্টা বেঁধে দেয়।
প্রিয়তা কে সাজানো শেষ করতে করতে প্রায় একটা বেজে যায়।
আর আয়না কে ততক্ষণে সারা, আর মাইশা প্রিয়তার রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।
বর চলে এসছে।
আগে বিয়ে পড়ানো হবে।
তার পর খাওয়া দাওয়া। অনেক অতিথি আবার খাবার খেয়ে নিচ্ছে আগে।
খাবারের জায়গায় বাহিরে প্রিয়তা দের দোতলা বাড়ি টার সামনে ছোট উঠুন টায় করা হয়েছে।
আর বর বউ বসার জায়গা লিভিং রুমে।
একটু পর দুই বোন কে নিয়ে যা-ওয়া হবে।
কি ভালো ভাগ্য দেখেছি দুই বোনের এক সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে।
আর ছোট টা দেখেছি এটার বা বয়স কত হবে হয়তো সতেরো।
কিছু পাড়া প্রতিবেশী গুঞ্জন ভেসে এলো। চার দিক হতে রুম ভর্তি মেয়ে আর মাঝবয়েসী মহিলা দিয়ে ঘর ভরপুর।
প্রিয়তার অস্বস্তি হচ্ছিল এতোক্ষণ কিন্তু মানুষের চার দিক হতে ভেসে আসায় কথার ইঙ্গিতে বুঝতে পারছে আজ তারও বিয়ে।
আর এতোক্ষণ এটা মনে হওয়ার কোনো পাকাপোক্ত কারণ দেখতে পায় নি।
তাকে বেশি সাজানো হয় নি শুধু শাড়ী আর হাল্কা পাতলা কিছু গহনা। আর মুখে হাল্কা সাজ। এটা কে কেউ বিয়ের সাজ বলবে না। বোনের বিয়ে সেই সুবাধে তাকে একদম নরমাল সাজিয়েছে মেয়ে গুলো।
কিন্তু তার বিয়ে টা কার সাথে?
সাদনান ভাই জানে?
আচ্ছা ওনি কি কিছু করবে না?
প্রিয়তা একবার অসহায় চোখে বোনের দিকে তো একবার সারা,মাইশা দিকে।
সবাই খুশি খুশি আর এতো মানুষের মাঝে যে কাউ কে কিছু জিজ্ঞেস করবে সে সাহস টাও পাচ্ছে না প্রিয়তা।
তাই চুপ চাপ বসে রইলো।
কারণ বিয়ে যদি সত্যি তার হয় তবে নিশ্চয়ই কাজি বিয়ে পড়ানোর সময় বরের নাম বলবে।
আর তখন তো শোনা যাবে।
কিন্তু তখন কি বিয়ে টা ভাঙা যাবে?
আর সবাই তো কেমন করে বলে গেলো যেনো সে ঝামেলা না করে।
তবে কি সে বিয়ে টা করে নিবে?
তাছাড়া সাদনান ভাই তাকে ভালোবাসে কি না সে এটাও তো শিওর না।
যদি শিওর হতো তবে না হয় বিয়ের সময় কিছু একটা বলে দিতো আর সাদনান ভাই যদি পাশে থাকে তবেই এটা সম্ভব।
আর নয়তো তার কপালে যা আছে তাই মানতে হবে।

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বাহির থেকে জাফর মির্জা সহ তার বাবা এসে বলল সারা,আর মাইশা যেনো দুই বোন কে লিভিং রুমে নিয়ে আসে।
আয়না কে মাইশা আগে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
প্রিয়তা তখনো থম মেরে বসে।আয়নার পেছন পেছন প্রায় বেশ মানুষ চলে গেলো।
রুম অনেক টা ফাঁকা হলো শুধু চার পাঁচ জন মেয়ে রয়ে গেলো।
প্রিয়তা এই সুযোগে সারা হাত চেপে ধরে বলল

-“প্লিজ আমি যাব না।
তুই তো জানিস সব।”

-“দেখ আমার কিছু করার নেই।
এখ,,,

-“প্লিজ একবার কথা ব,,,,

সারা কথা না শোনেই প্রিয়তা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সে নিজেও সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না।
তার আগেই বাহির থেকে আয়ান ডাকতে ডাকতে রুমের ভেতর প্রবেশ করে।
কিন্তু প্রিয়তা কে এভাবে বসে থাকতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে? ”

প্রিয়তা কিছু বলে না।
সারাও চুপ থাকে।
আয়ান এগিয়ে গিয়ে বোনের হাত ধরে টেনে রুম থেকে নিয়ে এসে লিভিং রুমে বসা আয়নার পাশে বসিয়ে দেয়।
আর প্রিয়াতা সেখানে যেতে খুব চেনা পারফিউম স্মেইল পেলো সাথে পাশ হতে খুব চিনা পরিচিত কণ্ঠে কেউ বলে উঠে

-“আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে