আমার তুমি পর্ব-১৩

0
393

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“ছিঃ ছিঃ।
এই তোর ভালোবাসা?
কি করেছিস অবস্থা ছোট ও কনট্রোল করা দরকার ছিল।”

রাহান খাবার টেবিলে সাদনানের পাশে বসে ফিসফিস করে কথা গুলো বলে উঠে।
সাদনান রাহানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়।
রাহান সে দিকে তাকিয়ে নিজের মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে যায়।
সাদনান খাবার খেয়ে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে উপর রুমে চলে আসে।
সাদনান রুমে এসে ওয়াশ রুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
মিনিট দুই এর মাথায় ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা ড্রেস আলমারি হতে নামিয়ে বিছানায় রেখেছে। আর নিজে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
সাদনান সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে গায়ের কালো টি-শার্ট টা এক টানে খুলে বিছানায় থেকে সাদা পাঞ্জাবি টা গায়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো সুন্দর করে আচঁড়ে গায়ে পারফিউম দেয়।
আর প্রিয়তা বসে বসে তার ব্যক্তিগত পুরুষ টাকে দেখছে।
সাদনান ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ঘড়ি পড়ে নেয়। ওয়ালেট নিয়ে আর ফোন পকেটে রেখে এগিয়ে আসে ছোট জানের নিকট।
কপালে চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে

-“আজ স্কুল যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”

-“ঠিক আছি আমি যেতে পারবো।”

মিনমিন করে জানায় প্রিয়তা।
সাদনান প্রিয়তা কে আরও কিছু টা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের বুকের সাথে।
অতঃপর শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“জানি আমি।
কিন্তু যেতে হবে না।
সারাও যাবে না। নয় দিন পর টেস্ট পরীক্ষা। বাসায় পড়লেও হবে।সাবধানে থাকবে।”

-“আপনি দুপুর বাড়ি আসবেন না?”

-“হয়তো হ্যাঁ আবার না।
সব কাজ শেষ করতে পারলে তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”

প্রিয়তা আর কিছু বলে না।
চুপ চাপ সেভাবে পড়ে থাকে।
সাদনান নিজেও অনেকক্ষণ পর বউ কে ছেড়ে দিয়ে নিজের ওষ্ঠ জোড়া দিয়ে প্রিয়তার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
গভীর একটা চুম্বন করে।
মিনিটের মাথায় ছেড়ে দিয়ে দু’জনেই একে অপরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস নেয়।
সাদনান নিজে কে স্বাভাবিক করে প্রিয়তার দিকে তাকালো।
রাতে দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন স্পর্শ গলায় এখনো ঝলঝল করছে।
শাড়ী পরে আছে প্রিয়তা বাহিরে সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে ছিল।
কিন্তু এখন রুমে শাড়ী সম্পূর্ণ এলোমেলো।
তাই ভালোবাসার স্পর্শ গুলো স্পষ্ট।
সাদনান সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
তার এখন বেরুতে হবে।

-“খাবার খাবে টাইমলি।”

কথা শেষ সাদনান উত্তর এর অপেক্ষা করে না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
প্রিয়তা তখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে।

————–

সাদনান মাত্র সমাবেশ শেষ করে বেরিয়ে এসছে সেখান থেকে।
সাথে ওয়াসিফ দেওয়ানও আছে।
সাদনান গাড়ি নিয়ে এসছে।
সাথে ড্রাইভারও এনেছে।
ওয়াসিফ দেওয়ান এর সাথে কিছু আলোচনা শেষ সাদনান রাহান কে নিয়ে গাড়ি বসে। আর তার দলের ছেলেপেলে রা বাইক নিয়ে তার গাড়ি অনুসরণ করছে।
আজ গ্রামে ছিল সমাবেশ।
সমাবেশের আয়োজন টা কয়েক টা গ্রামের কিছু চেয়ারম্যান মিলে করেছে।
সেখানে সাদনানের উপস্থিতি ছিল হবু এমপি হিসেবে সবাই তাকে চায়।
বেশ নাম তার জনগণের মুখে মুখে।
এবার আর আগের এমপি কিছুতেই আসতে পারবে না।
যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের হয় তবে মির্জা সাদনান শাহরিয়া জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
ওয়াসিফ দেওয়ান এ ব্যাপার একশো পারসেন্ট নিশ্চিত।
এখন বিকেল।
সাদনান গাড়ি ড্রাইভার কে সোজা বাড়ি নিয়ে যেতে বলে।
তার ছোট বউ নিশ্চয়ই তার অপেক্ষা বসে।
সময়ের জন্য একটা বার ফোনও করা হয়নি।

—————-

-“মফিজ তোর মেয়ে টাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
বলছিলাম কি আমার ছেলে তো তোদের ভার্সিটির প্রফেসর।
তুই তো জানিস।
আমি ওদের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাই।
তুই কি বলিস?”

মফিজুর মির্জা বন্ধু কালাম খাঁন এর কথায় তিনি একট্ ইতস্তত বোধ করলেন।
বাড়িতে তার বড় ভাই আছে।বাপ এখনো জীবিত সেখানে তিনি এ ব্যাপার একা কি করে মত পোষণ করে।
মফিজুর মির্জা বেশ সরল আর খুব ভালো মনের মানুষ।
এই মেয়ে তাদের একমাত্র সন্তান তাদের আর কোনো সন্তান হয় নি।
সেখানে অনেক আদরের মেয়ে তার। পরিবারের সাথে
বোঝাপড়ার একটা বিষয় আছে।

-“বাবার সাথে কথা বলে তোকে জানাচ্ছি আমি।”

কথা শেষ করে তিনি ফোন টা কেটে টেবিলে রেখে একটু চিন্তিত হলেন।
কালাম খাঁন সে দিন বিয়েতে এসছিল তক্ষুনি হয়তো দেখেছে মাইশাকে।
অনেক ছোট বেলা থেকে তাদের বন্ধু সম্পর্ক।
কালামের স্ত্রী নেই শুধু এই এক ছেলে কবির।
মানুষ হিসেবে অনেক ভালো।স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করে নি।
ছেলে কে লেখা পড়া সাথে ব্যবসা সব দিক সামলেছে।
পরিবার বংশধর ভালো তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলো বাপ ভাইয়ের সাথে কথা বলবে।
আর মেয়েও তো বড় হচ্ছে।
কয় দিন পর ভার্সিটিতে যাবে।
আর বিয়ে দিলেও তো লেখা পড়া করা যায়।
ছেলে নিজে একজন শিক্ষক সেখানে বউ নিশ্চয়ই অশিক্ষিত রাখবে না।

————-

মাইশা ক্লাস করছে আর ওর ফ্রেন্ড তিন্নি ওর পাশে বসেই কবির খাঁন এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যে এখন পরিসংখ্যান করাচ্ছে বোর্ডে।
কিছু কিছু মেয়ে শুধু অংক করছে আর বাকি অর্ধেক তিন্নির মতো স্যার এর দিকে তাকিয়ে আছে।
এটা নতুন নয়।
ক্লাস শেষ স্যার চলে গেলো। মাইশা
তিন্নিও ক্লাস হতে বেরিয়ে আসে।
মাইশা জানে তিন্নি কবির খাঁন পছন্দ করে।
কিন্তু এতিম হওয়ার আর নিজের পড়া লেখার খরচ চালিয়ে নিজে নিজে নিজের জীবন চালানো মেয়েটার নিকট এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে এমন একজন মানুষের সামনে দাড়ানো বিলাসিতা বই কিছুই না।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই মাইশা বলে উঠে

-“ভালোবাসা, অনুভূতি বলে কইয়ে আসে না।
আর স্যার, ছাত্রী, গরিব, বড়লোক এসব দেখেও ভালোবাসা হয় না।
বলে তো দেখতে পারিস।”

-“ছাড়তো এসব।
এসব আমার জন্য না।”

তিন্নির এমন খামখেয়ালি পানা কথায় মাইশা বিরক্ত হলো।
তাই কথা বাড়ালো না আর। কলেজ এড়িয়া থেকে বেড়িয়ে
দু’জনেই দুই দিকে চলে যায়।

————-

সাদনান বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে আসে।
বউ তার বিছানায় বসে পড়ছে।
সাদনান সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তাও বই বন্ধ করে সাদা পড়ার টেবিলটায় উপর বই টা রাখে।
এই রুমে প্রতি টা জিনিস সাদা।
একদম সাদা।
পুরো বাড়ি জুড়ে এই রুমটা বেশি সুন্দর।
পরিপাটি গোছানো।
সাদনানের বেশির ভাগ কাপড় সাদা।
অবশ্য সাদা পড়লে বেশ লাগে প্রিয়তার নিকট।
না সাদা না যাই পড়ে সব তাই ভালো লাগে।
প্রিয়তা এসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে আলমারি হতে একটা গাঢ় সবুজ রঙের টি-শার্ট আর একটা ট্রাউজার বের করে বিছানায় রাখে।
অতঃপর শাড়ী আঁচল টা সুন্দর করে মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
একটু আগে আম্বিয়া মির্জা এসছিল।
অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
তার নাতির কখন কি লাগে কি পছন্দ করে সব।
সাথে এটা বলে গিয়েছে সাদনান বাসায় এলে যেনো সাথে সাথে কফি দেয়।
কাজের লোকেরা যেনো এসব আর না করে।
স্বামীর তার সেবা কেন অন্য কেউ করবে?
স্বামীর ভালোবাসা এতে আরও বাড়বে।
প্রিয়তা কফি করে রুমে এসে দেখলো সাদনান এখনো টাওয়াল পড়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। ছোট ছোট চুল গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি চিকচিক করছে।
আর বিছানায় কাপড় সেভাবেই রাখা আছে যেভাবে প্রিয়তা রেখে গিয়েছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে কফি টা সেন্টার টেবিলে রেখে ব্যালকনি হতে আরেক টা টাওয়াল এনে সাদনান কে সোফায় বসতে ইশারা করে।
সাদনান বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়ে।
আর প্রিয়তা টাওয়াল দিয়ে সাদনানের চুল গুলো মুছে দিতে লাগলো।
সাদনান ফোনে কি কথা বলবে সে তো এই মেয়ের হাতের স্পর্শে বুলি হারিয়েছে।
তাই ওপাশের লোক টাকে “পরে ফোন করছি” বলে ফোন কেটে একটানে বউ কে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।
প্রিয়তা অনেক টা চমকাল শক্ত করে সাদনানের চুল খামচে ধরে।
সাদনান মুচকি হেসে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় প্রিয়তার ঠোঁটে।
অতঃপর মাদকাসক্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“কাল রাতে অব্দি যার সব আমি করে দিলাম।
সেখানে আজ সন্ধ্যা সে সব নিজে আমাকে করে দিচ্ছে।
ইন্টারেস্টিং।
বউ দেখি বড় হয়ে গিয়েছে।”

-“হ্যাঁ, আপনার ভালোবাসা পেয়ে।”

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে