আমার তুমি পর্ব-১৫

0
351

#আমার_তুমি
#পর্ব_১৫[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সাদনান ঘুমিয়ে আছে।প্রিয়তা সাদনান বুকে থুতনি ঠেকিয়ে সাদনানের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রাত এখন কয় টা বাজে?
হয়তো তিন টা বা তারচেয়েও বেশি। প্রিয়তার ইচ্ছে করছে না পাশের দেয়ালে তাকিয়ে দেওয়াল ঘড়ি টায় দেখতে কয় টা বাজে।
তার শুধু এখন এই সাদনান নামক সুন্দর সুশ্রী সুদর্শন পুরুষ টার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
মন টা আরও অনেক কিছু চাইছে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো তার ব্যক্তিগত পুরুষ টার চাপ দাঁড়ি ভর্তি গালে নিজের পাতলা ঠোঁট জোড়া সেখানে বসিয়ে চুমু খাওয়া।
যেই ভাবা সেই কাজ। কনুই দিয়ে ভর করে সামান্য উঁচু হলো এরচেয়ে বেশি হলে সাদনান হয়তো জেগে যাবে তার কারণ হলো সাদনান তার ছোট জান কে শক্ত করে বুকে আগলে নিশ্চিন্তমনে ঘুমিয়ে আছে।
প্রিয়তা মাথা টা একটু এগিয়ে নিয়ে হাল্কা করে সাদনানের গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
আর অমনি সাদনান চোখ পিটপিট করে তাকালো।
প্রিয়তা ভড়কালো হকচকিয়ে উঠলো।
তাড়াহুড়ো সহিতে মুখে হাত দিয়ে সাদনানের বুকের উপর হতে সরে আসতে চাইলো।
কিন্তু এটা কি সম্ভব সামনের সাদনান নামক পুরুষ টার জন্য?
উঁহু, মোটেও না।
তাই তো প্রিয়তা পারলো না সরতে।
সাদনান দিলো না ছেড়ে তার ছোট জান কে।
উন্মুক্ত বুকের সাথে চেপে ধরে।
মাদকাসক্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“একটু আগে তো এতো ভালোবাসা দিলাম।
এখন আবার চাই বললেই পারতে।
আমার ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নেওয়ার দরকার কি ছিল?”

প্রিয়তা সাদনানের এমন ঘুম ঘুম কণ্ঠ শুনে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
বুকের ভেতর কেমন একটা করছে।
হয়তো বুকের বা পাশে থাকা লাল ছোট যন্ত্র টা যদি পারতো তবে হয়তো এখুনি ছিটকে শরীর থেকে বাহির বেরিয়ে আসতো।

প্রিয়তা চোখ বন্ধরত অবস্থায় মিনমিন করে নিজের সাফাই গাইতে বলল

-“আমি তো শুধু গালে,,,

-“এখন তো এসব বললে হবে না।
ঘুম যখন ভেঙ্গে দিয়েছও তখন শাস্তি তো পেতেই হবে আমার ছোট জান।”

কথা শেষ করেই সাদনান প্রিয়তা কে এক ঝটকায় নিজের উপর হতে নিচে ফেলে নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে ছোট প্রিয়তার শরীরের উপর।
আর অমনি সাদনানের বলিষ্ঠ দেহখানা প্রিয়তার ছোট দেহপিঞ্জরা ঢেকে গেলো।

——-

সারা,প্রিয়তা,মাইশা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার সাইডে।
তার কারণ সাদনান বলেছে ছুটির পর সে এসে নিয়ে যাবে তাদের।
বলেছে দুই টার দিকে আসবে আজ তিন জনেই হাফ ক্লাস করেছে।
এখন আড়াইটার মতো বাজে।
কিন্তু সাদনানের খবর নেই।
হয়তো কোনো কাজে আঁটকে গিয়েছে।
আজ এই এলাকায় একটা মিটিং আছে প্রিয়তা শুনেছে হয়তো এখনো শেষ হয় নি।
তারা অবশ্য বাড়ি চলে যেতো।কিন্তু সাদনান বলেছে ছুটির পর এক জায়গায় যাবে তাই মূলত অপেক্ষা করা।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনানের কালো গাড়ি টা এদিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো।
গাড়ি টা ওদের সামনে এসে থামল।
পেছনে একটা বাইকও আছে আর সেটায় আয়ান।
সাদনান গাড়ি কাচ নামিয়ে মাইশা কে উদ্দেশ্য করে বলল

-“তুই আয়ানের সাথে আয়।
আর তুই সামনে বসে পড়।”

শেষের কথা টা সারা কে উদ্দেশ্য করে বলে। অতঃপর নিজের পাশে বসা রাহানের দিকে তাকাতেই রাহান তড়িঘড়ি করে গাড়ি হতে নেমে পড়ে।
সাদনানও নামে।
অতঃপর পেছনে বসে পড়ে আর রাহান ড্রাইভিং সিটে সারা ফ্রন্ট সিটে।
প্রিয়তাও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে ওপাশের দরজা খুলে সাদনানের পাশে বসে।
আর রাহান গাড়ি স্টার্ট দেয়।
আয়ান বাইক নিয়ে ওদের গাড়ি অনুসরণ করে।
রাহান নার্ভাস। ওর কেমন লাগছে পাশে বসা নীল ড্রেস পড়া সারা শরীর থেকে সুন্দর একটা স্মেল আসছে।
আর সেই গন্ধে রাহানের বুকের ভেতর ধুপধাপ শব্দ করছে।
আচ্ছা পাশে বসা ছোট সারারও কি এমন লাগছে?

সাদমান প্রিয়তার ডান হাত টা ওর বুকের বা পাশে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে রেখেছে।
ছয় ঘন্টা পর বউয়ের দেখা পেয়েছে ছুঁতে পেরেছে।
দিন যত যাচ্ছে তার এই মেয়ের প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়ছে।
প্রিয়তা উশখুশ করছে।
সাদনান এভাবে চোখ বন্ধ করে রাখায় প্রিয়তার অস্থির অস্থির লাগছে।
হয়তো বেশি ক্লান্ত।
প্রিয়তা ঘুরে বসে নিজের বা হাত টা সাদনানের মুখের ডান পাশের চোয়ালে রেখে জিজ্ঞেস করে

-“বেশি খারাপ লাগছে?”

সাদনান ফট করে চোখ মেলে।
প্রিয়তা একটু ভয় পেলো রেগে গেলো না তো আবার?
কিন্তু প্রিয়তার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সাদনান প্রিয়তার মাথা টা টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
পাঞ্জাবি দুই টা বোতাম খোলে লোমযুক্ত উন্মুক্ত বুকের বা পাশ টায় নিজের ডান হাত দিয়ে ইশারা করে ধীরে কন্ঠে বলে উঠে

-“এখানে বড্ড জ্বালা করে।
যখন তোমাকে চোখের আড়াল করি।”

প্রিয়তা অবাক হলো।
এই লোক টা সত্যি তাকে এতো ভালোবাসে?
কই আগে তো কখনো বুঝতে পারে নি।ব্যবহার, কথা বার্তার ধরন দেখেও মনে হতো না।
সব সময় তো কেমন গম্ভীর কণ্ঠে তার সাথে কথা বলতো।
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই গাড়ি টা একটা তিন তলা বিল্ডিং এর সামনে থামে।
রাহান সবাই কে নামতে বলে।
সবাই নেমে সাইডে দাঁড়ায়।
আর সাদনান একটা কালো মাক্স পাঞ্জাবির পকেট হতে বের করে মুখে পড়ে নেয়।
রাহান গাড়ি আর আয়ান বাইক পার্ক করে এলে তারা সবাই লিফ্টে করে সোজা তিন তলার ছাঁদে চলে আসে।
একটা বড় রেস্টুরেন্টে। দুই তালা আর তিন তলা মিলিয়ে।
সাদনান সবাই কে নিয়ে কর্নারে দুই টা টেবিলে গিয়ে বসে।
তার পর ওয়েটার ডেকে খাবার অর্ডার দেয়।ওরা ছয় জন কিন্তু খাবার আট জনের অর্ডার করেছে।
ওয়েটার চলে যাওয়ার মিনিট দশের এর মধ্যে কবির খাঁন কে আসতে দেখা গেলো।
সাদনান উঠে হাত এগিয়ে হ্যান্সেক করে।
অতঃপর রাহান এর পাশে আর সাদনান প্রিয়তার বরাবর বসতে বলে।
এভাবে রাহান আয়ানের সাথেও কুশল বিনিময় করে। তার ঠিক পাঁচ মিনিট এর মাথায় মাইশার ফ্রেন্ড তিন্নিও আসে।
মাইশা অবাক হয়েছে কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারে সাদনান ভাই হয়তো ডেকেছে।
আজ তিন্নি কলেজ আসে নি নয়তো মাইশা ওকে সাথে করে নিয়ে আসতো।
তাদের আড্ডার মাঝেই তিন জন ওয়েটার এসে তাদের দুই টেবিলে খাবার গুলো সুন্দর করে পরিবেশন করে দিয়ে গেলো।
অতঃপর সবাই নানান আলাপ করতে করতে খাবার শেষ করে।

-“আয়ান মাইশা একে অপরকে ভালোবাসে।”

-“এটা আপনাদের ফ্যামিলিতে বললে আমার মনে হয় ভালো হতো।
আমার দিক হতে কোনো ঝামেলা হবে না।
এমনিতেও বাবা জোর করছিল তাই রাজি হয়েছি।”

সাদনানের কথার পৃষ্ঠে বলে উঠলো কবির।
সাদনান মুচকি হাসলো। মনে মনে আওড়ালো “রাজি হবে কি করে তোমার তো আমার কলিজার দিকে নজর”
কিন্তু মুখে যথেষ্ট কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে

-“এই ব্যাপার নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
আপনি শুধু বিয়েতে না করে দিলেই হবে।”

-“ওকে।”

মাইশা ভাবে নি এতো সহজ হবে ব্যাপার টা।
মাইশা খুশি হলো।
আয়ানের হাত শক্ত করে চেপে আয়ান নিজেও ভীষণ খুশি। এমন বন্ধু কয়েকজন পায়।
সাদনান রাহানের দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতেই রাহান মাইশা কে বাদে সবাই কে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
কবির খাঁন একটু নড়েচড়ে বসে।
সাদনান আগের ন্যায় গম্ভীর মুখ করে বসে।
মাইশা সুন্দর করে নমনীয় কণ্ঠে বলে উঠে

-“তিন্নি তাহসিনা। বাবা মা নেই এতিম খানায় বড় হয়েছে। আঠারো হওয়ার পর নিজে হোস্টেল থাকে আর টিউশনি করিয়ে নিজের জীবন চালায়।আমার সাথে সেই স্কুল জীবন থেকে ফ্রেন্ড কখনো কোনো খারাপ দিক নজরে আসে নি।বরং সব সময় আমি ওর ব্যবহার আর চিন্তা ভাবনা দেখে মুগ্ধ হই।ভাবি বাবা মা নেই তবুও কত সুন্দর শিক্ষা শিক্ষিত করেছে নিজে কে।
আর আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠান আসার পর আমি আমার লাইফে ওর সাথে চলার পথে প্রথম কোনো পুরুষের নাম শুনেছি ওর মুখে।
আমি অনেক বার এই বিষয় টা নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে বলেছি।ও প্রতি বার সে টা এড়িয়ে যায়।
জানেন ও কি বলে ও সব সময় বলে এতিম আর গরীব দের কখনো কেউ ভালোবাসে না।”

মাইশার কথা শুনে কবির স্তব্ধ।
ওর ভাবনাতীতের বাহিরে এসব।
কেউ ওকে এতো টা ভালোবাসে ওর দৃষ্টির আড়ালে সেটাও বুঝতেই পারে নি।
তবে একবার যখন জেনে গিয়েছে তখন নিশ্চিত তার ভালোবাসার মূল্য আর তার চিন্তা দ্বারা বদলে দেবে।
কে বলেছে এতিম গরীব দের কেউ ভালোবাসে না?কবির বাসবে
নিজের সর্বশ দিয়ে ভালোবাসবে এই এতিম মেয়ে টা কে।
যদিও এটা এতো সহজ নয় তার মনও যে অন্য কাউ কে দিয়ে ফেলেছে। তবে চেষ্টা করলে অবশ্যই সফল হওয়া যাবে।
কবির চুপ চাপ থমথমে মুডে বসে আছে।
সাদনান ফোন টিপছে।
এর মধ্যে মুখে মাক্স পরেও নিয়েছে।
মাইশা দুজন কে পর্যবেক্ষণ করছে।
এর মধ্যে কবির খাঁন এর কণ্ঠে শোনা গেলো

-“আমি আমার সব টা দিয়ে চেষ্টা করবো।
তুমি ওকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।”

#চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে