আমার তুমি পর্ব-০১

0
556

#আমার_তুমি
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমার বয়স জানো?”

সামনে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক টার করা প্রশ্নে সামনে নীল ড্রেস পড়া স্কুল ব্যাগ কাঁধে দাড়ানো
ষোড়শী কন্যা প্রিয়তা খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়

-“হুম।’

-“তুমি দশম শ্রেণিতে।
আমাদের বয়সের তফাৎ দেখছো?”

-“হুম।”

-“গুড।
আশা করি আমাকে আর ফলো করবে না। ”

-“কেন করবো না?”
বয়সে ছোট বলে কি বড়দের প্রতি অনুভূতি তৈরি হওয়া বারণ?”

প্রিয়তা ফটাফট প্রশ্ন করে বসে।মেয়ে টা ভিতরে ভিতরে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু উপর তা প্রকাশ করছে না। নিজে কে স্বাভাবিক রাখা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে সাদনান আবারও ধমকের সুরে হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“এই মেয়ে বেশি বলছো।
চাচি জানে এ-সব?”

মায়ের কথা শুনে প্রিয়তা কিছু টা ভীতু হয়।চোরা চোখে চাইলো একবার সামনে দাঁড়ানো লম্বা সুদর্শন যুবক সাদনানের এর দিকে।
সাদনানের গভীর দৃষ্টি তাকেই পর্যবেক্ষণ করছে।
যা দেখে আরো এক দফা ভড়কালো।
প্রিয়তা আবারও আগের নেয় মাথা নুইয়ে নিলো।
আর ঠিক তক্ষুনি সাদনানের গম্ভীর কণ্ঠ আবারও শোনা গেলো

-“বাড়ি যাও।
সন্ধ্যায় হওয়ার আগে বাড়ি চলে যাবে রোজ।”

-“বিকেল সাড়ে চারটায় প্রাইভেট থাকে।”

প্রিয়তা মিনমিন করে জানায়।
যা শুনে সাদনান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।

-“কোন স্যার?”

-“মাহিন স্যার।”

-“হুম বাড়ি যাও।
কাল থেকে সকালে আটটায় প্রাইভেট যাবে।
আর প্রাইভেট শেষ স্কুল।”

-“কিন্তু,,,

-“আমি যেতে বললাম তো।”

প্রিয়তা সবটা কথা না শুনেই সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করে।
প্রিয়তা আর কিছু বলে না মোটা চার দিকে ডাল পালা মেলে রাখা বট গাছের নিচ থেকে রাস্তা আড়ালে দাঁড়ানো সারা কে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।
প্রিয়তা দৃষ্টি আড়াল হতেই অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সাত আটজন ছেলে এগিয়ে এলো সাদনানের নিকট।
সব কয়টা ছেলে এসে সাদনান নামক যুবক টাকে চার দিক হতে ঘিরে দাঁড়িয়ে মাথা নুইয়ে রাখে।
এর মধ্যে একজন শুধু সাদনানের এর সময় বয়সী রাহান।

-“কি বলল?”

রাহান সাদনান কে প্রশ্ন করে। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে ভালো উত্তর এর আশায় তাকিয়ে।
কিন্তু সাদনান সবাই কে হতাশ করে দিয়ে উদাস কণ্ঠে জবাব দিল

-“ছোট মানুষ।
বাদ দে না।”

আর কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। মিনিট খানিক্ষন সবাই চুপ চাপ থাকে।
সাদনান ততক্ষণে একটা স্প্রাইট শেষ করে বোতল টা ছুড়ে ফেলে পাশের ডাস্টবিনে।তার পর নিজে বাইকে উঠে রাহান কেও ইশারা করে। রাহান চুপ চাপ উঠে বসে সাদনান এর পেছনে।
সাদনান বাইকে চাবি ঢোকাতে ঢোকাতে আদেশের সুরে গম্ভীর কণ্ঠে ছেলে গুলো কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“কাল সকালে চলে যাবো।
কোনো রকম সমস্যা যেনো না হয় খেয়াল রাখবি।”

নিজের কথা সমাপ্তি করেই সাদনান চাবি ঘুরিয়ে বাইক স্টাট নিয়ে মূহুর্তের মধ্যে মেইন রাস্তায় উঠে মাহিন স্যার এর বাসার দিকে যেতে লাগলো।
যা দেখে রাহান কিছু টা অবাক হয়।নরম গলায় বন্ধু কে জিজ্ঞেস করে

-“এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”

-“গেলেই দেখতে পাবি।”

প্রশ্নের জবাব তো দিলে ও-ই না উল্টো ত্যাড়া কথা। রাহান আর কিছু বলে না চুপ চাপ বসে থাকে।
প্রায় দশ মিনিট পর বাইক টা একটা টিন দিয়ে বেড়ি দেওয়া একটা বাড়ির সামনে থামিয়ে সাদনান ভিতরে যায়।
পেছনে পেছন রাহানও যায়।
চার রুম বিশিষ্ট একটা একতলা বাড়ির গেইট কড়া নাড়ে।
মিনিটের মাথায় একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা এসে গেইট খোলে দিলেন।
মহিলা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সাদনান জিজ্ঞেস করে উঠে

-“মাহিন স্যার বাড়ি আছে?”

মহিলাটা উত্তর “আছে” বলে তাদের ভিতরে আসতে বলে তিনি তার স্বামী কে ডাকতে চলে গেলো।
একটু পর একটা মাঝবয়সী লোক ভিতর থেকে গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে আসে। সাদনান সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
লোক টাও সালামের উত্তর দিয়ে কুশল বিনিময় করে।
স্ত্রী কে নাস্তা দিতে বলে।

-“স্যার আপনি দশম শ্রেণির কিছু মেয়ে কে বিকেল সাড়ে চারটায় প্রাইভেট পড়ান।
ওদের একটু কষ্ট করে সকালে পড়াবেন।
মেয়ে মানুষ পড়া শেষ করে বাড়ি যেতে অনেক টা সন্ধ্যা হয়ে আসে।
বুঝতে পারছেন আশা করি।”

মাহিন স্যার সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়।
সাদনানও রাহান কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।
এদিকে মাহিন স্যার এই শীতের মাঝেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করে।
তিনি তা বাম হাতে থাকা গামছা দিয়ে মুছেন।
আর ঠিক তক্ষুনি ওনার স্ত্রী নাস্তার ট্রে হাতে হাজির হয়।
ছেলে গুলো নেই আর নিজের স্বামী কে এমন অবস্থায় দেখে।
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে আপনার?
আর ছেলে গুলো কারা এলো আবার চলেও গেলো?”

-“গাঢ় নীল সার্ট পড়া ছেলে টা আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান এর নাতি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আজ্জম মির্জার ছোট ছেলে।”

-“ওহ আচ্ছা।
এইজন্যই বলি ছেলে টা কে চেনা চেনা লাগে। ”

-“লাগবে না ভবিষ্যতে এমপি যে।”

—————

-“থালা বাসন গুলো রান্না ঘরে রাখা আছে।
আমি আধঘন্টা পর রান্না করতে যাব।
তখন গিয়ে যেনো সব পরিস্কার দেখি।”

-“মনি প্লিজ আজ শিউলি আপু কে দিয়ে করিয়ে নেও না প্লিজ।
আমার হাত কেটে গিয়েছে কাল।
আজ স্কুলে লিখতেও পারি নি সারা লিখে দিয়েছে। ”

কথা টা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় মিতা সওদাগর।
প্রিয়তার কাঁধে বেয়ে পিঠের উপর পড়ে থাকা লম্বা বিনুনি টা খপ করে শক্ত হাতের মুঠো পুরে নেয় মিতা সওদাগর
ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“আমার মুখে উপর কথা না?
কে দিয়েছে এতো সাহস ওই বড় লোক দরদী বান্ধবী?
চুপ চাপ গিয়ে বাসন গুলো মেজে নে।”

কথা গুলো বলেই ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে তিনি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
ঠিক তক্ষুনি প্রিয়তার ছোট নরমাল মুটো ফোন টা এটার ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে তুলে।
প্রিয়তা চোখের জল মুছে এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে তার বড় ভাই আয়ান ফোন দিয়েছে।
প্রিয়তা গলা টা কেশে ঠিক করে ফোন টা রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসে

-“মা আবার মেরেছে?”

-“এমা তা কেন হবে।
আমি তো মাত্র স্কুল থেকে এলাম।”

-“থাপড়ে তোর মিথ্যা বলা আমি ছুটি দেবো।
আয়না আছে বাড়িতে ভুলে গিয়েছিস?”

প্রিয়তা জ্বি হা কামড়ে ধরে দাঁত দ্বারা।
তার তো মনেই ছিল আয়না আপু আছে বাড়িতে।

-“ছাড়তো এসব।
সন্তান ভুল করলে মা শাসন করতেই পারে।
আচ্ছা তুমি বাড়ি কবে আসবে ভাইয়া?”

-“এটাকে মা-গত শাসন বলে না।
এটাকে অত্যাচার বলে।
তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
খাবার খেয়েছিস?”

-“না ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছিলাম।”

-“আচ্ছা তবে যা।
আর মন দিয়ে পড়বি কিন্তু।
এক্সাম কিন্তু বেশি দূর নয়।”

-“হুম।”

কথা শেষ করে ফোন রাখে আয়ান।
প্রিয়তাও কাজে লেগে পড়ে।নয়তো দেখা যাবে রাতে আবার খাবার দেবে না।
মা তো নেই।কিন্তু বাবা শফিক সওদাগরের উপর ভীষণ অভিমান জমে আছে।
আচ্ছা তিনি কি তা জানে?
———–

-“ভাইয়া বাবা ডাকে।”

কথা টা বলে সারা চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে বোন কে ডেকে উঠে

-“তুই ছিল আজ তোর বান্ধবীর সাথে?”

-“না ভাইয়া মানে,,,

-“চল যা। ”

সারা আমতা আমতা করে কিছু বলতে চায়।
কিন্তু সাদনান শুনে না তার আগে গম্ভীর কণ্ঠে যেতে বলে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে