Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2015



কাঠগোলাপ পর্ব ১৮

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব আঠারো

?

নাশতার টেবিলে ধ্রুব আর রাহি বসে আছে,সামনে দুইটা ওয়েস্টার্ন মহিলা দাড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,ধ্রুভ চেয়ার টেনে রাহিকে বসালো..আর নিজেও বসে পরলো।।

“এই হলো রিবা(বাম দিকে আঙ্গুল করে),আর এই হলো লেনা(ডান দিকে আঙ্গুল করে)…এরা দুজন আমার এখানে অনেক আগে থেকে কাজ করে,পুরোনো কর্মচারী.. এতোদিন আমি না থাকায় তারাই এই প্যালেসের দেখভাল করছিলো..গতরাতে তারা বাড়িতে ছিলো না কারন,তাদের আমি বাড়ি থেকে কয়েকদিন ঘুরে আসতে বলেছিলাম..তোমার যখন যা প্রয়োজন এদের বলবে মীরা!!আমি এদেরকে বাংলাদেশি ফুড বানানোও শিখতে বলেছি?”রাহির দিকে তাকিয়ে বললো ধ্রুভ।।

” এন্ড ইউ বোথ!!তোমাদের দায়িত্ব দিয়েছি আমার মীরার ঠিক ততক্ষন যতক্ষন আমি বাড়িতে উপস্থিত না থাকবো!!তোমরা থাকার পরেও যদি আমার মীরার কষ্ট হয়,তোমাদের কি হাল করি সেটা তোমরা আমাকে আগে থেকে যেহেতু চিনো সেই ব্যাপারে ভালো করে জানো!!আমার মীরার খেয়াল রাখায় তোমাদের প্রধান কাজ!!’ধ্রুভ আবারো ওই মেয়ে দুটির দিকে তাকিয়ে বললো।।

মেয়েগুলোকে দেখে রাহি একটু তাকালো তাদের দিকে,তারা যে বেশ ভয় পায় ধ্রুভকে তা তাদের চেহারাতে বেশ প্রকাশ পেয়েছে।।

“গো এন্ড গেট আওয়ার ফুড!!’ধ্রুভ তাদের বললো,মেয়ে দুটো সুরসুর করে চলে গেলো।।

রাহি মাথা নিচু করে আছে,ধ্রুভর হুট করে রাহির গলার দিকে নজর গেলো..সকালবেলা ধ্রুভ বেশ করে একটা কামড় দিয়ে লাল দাগ করে ফেলেছে রাহি গলায়,রাহির দিকে একটু ঝুকে আসলো ধ্রুভ..রাহি পিছু সরলে,ধ্রুভ তার হাত টান দিয়ে আটকে দেয়।।

” কাছে আসার বাহানা খুজো কিন্তু দূরে যাওয়ার নয় মীরা এন্ড মার্ক মাই ওয়ার্ডস!!”ধ্রুভ রাহির হাতে চুমু খেয়ে বললো।।

মিনিট দশেক পর, লেনা খাবার নিয়ে আসলো..খাবার সার্ভ করতে দিলো না ধ্রুভ,রাহিকে বললো করে দিতে..রাহি করে দিলো..রাহির জন্য রুটি আর ডিম ভাজি,ধ্রুভের জন্য লাইট স্যুপ আর সালাদ..ধ্রুভ নিজের খাবার একটু পর পর খাচ্ছে,আর রাহিকে রুটি ছিড়ে খাওয়াচ্ছে একটু পরপর।।

নাশতার টেবিলে কালো জুতা চোখে চশমা আর গায়ে এপ্রোন দিয়ে এক বিদেশি বেশভূষায় উপস্থিত হলো অতি ফর্সা লোক..রাহিকে সবার সাথে ধ্রুভ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে মীরা নামে..

“হোয়াট আর ইয়্যু ডুয়িং হেয়ার!!” ধ্রুভের যখন চোখ গেলো এপ্রোন পরা লোকটিক উপর তখন চোখ মুখ কুচকে বললো।।

“তোমার ত দেখা পাওয়া যায় না আজকাল তাই আমি নিজেই এসেছি দেখা করতে!!” ভদ্রলোক জানালো।।

“কাম এন্ড সিট!!” ধ্রুভ নাক গুলিয়ে বললো,ধ্রুভের বলার সাথে সাথে লোকটির ডান পাশের চেয়ার টেনে বসলো।।

“সো দিস ইজ ইউর মীরা??” লোকটি বললো।।

“ইয়েস শি ইজ মাই মীরা!!মীরা? ইনি হলো ডাক্তার স্মিথ!!” ধ্রুচ রাহির মুখে খাবার পুরে দিয়ে বললো।।

রাহি খাবারটা কোনরকমের গিলে সালাম দিলো স্মিথ কে,স্মিথ সালামটা ধরতে পারলো না যে রাহি কি বললো।।

“শি গিভস ইউ সালাম!!মুসলিমরা সবাইকে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় আরম্ভ করে?!” ধ্রুভ বললো।।

“ওহ আই সি!!হ্যালো?” স্মিথ রাহির দিকে হাত বাড়ালে ধ্রুভ রাহিকে খাইয়ে দিয়ে বললো,

“ইউ গো টু আওয়ার রুম রাইট নাও!!” ধ্রুভ রাহিকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে তাকে উপরে যাওয়ার জন্য বললো,ধ্রুভ রাহিকে যখন কথাগুলো বলছিলো তখন তার গলার আওয়াজ ভারী লাগছিলো।।

রাহি আর কি করবে,নিরব দর্শক হয়ে চেয়ে রইলো..তারপর ধীর পায়ে ডাইনিং ত্যাগ করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।।

“লিসেন?আগে আমি একা ছিলাম যখন তখন আপনি আমার বাড়িতে আসতেন!! এখন আমার সাথে আমার মীরাও আছে?আমাদের প্রাইভেসি আছে,হুটহাট এইভাবে আসবেন না??আর আমার মীরার দিকে হাত বাড়ানোর সাহস করেন কিভাবে??আপনি নেহাৎ ই আমার ডাক্তার নইতো আজ আপনার হাত আপনার শরীরের সাথে থাকতো না!!” ধ্রুভ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।

স্মিথ ত অবাক হয়ে গেছে,আসলে তারও ভুল হয়েছে এইভাবে হাতবাড়ানো টা..অন্তত উনিও জানেন মীরাকে ধ্রুভ কতটা পজেসিভ..মীরার ছবি লুকিয়ে দেখাতে,পরেরদিন যেরকম তাকে জেরা করে আজও ভুলবার নয়..ধ্রুভের পাগলামির সম্পর্কে উনি অভিহিত তারপরেও উনি বোকার মতো কাজ করেছেন।।

“সরি মাই মিসটেক!!” স্মিথ বললো।।

“কিজন্য আসছিলেন এখানে??এরপর আসার আগে আমাকে কল করে আসবেন?কলে না পেলে টেক্সট ছেড়ে যাবেন!!”ধ্রুভ বললো।।

” আজকে তোমার ইঞ্জেকশন দেয়ার ডেট!!সেইটাই দেয়ার জন্য এসেছিলাম!!”স্মিথ বললো।।

“দিস ব্লাডি শিট!!” ধ্রুভ ইঞ্জেকশনের কথা শুনে নাক মুখ কুচকে বললো।।

“হ্যা তোমার ডোজের এটা!!যেটা ছয়মাস পর পর দেয়া লাগে তোমাকে??তুমি এই কয়দিন ছিলে না এইজন্য দেয়া হয় নি!!” স্মিতজ বললো।।

ধ্রুভ ভ্রু কুচকে সোফায় বসে হাত বাড়ালো,স্মিথ ও তার ব্যাগ থেকে ইঞ্জেকশন আর এম্পুল বের করলো..ধ্রুভকে ইঞ্জেকশন দেয়ার জন্য..ইঞ্জেকশন দিতে যাবে ওই মুহূর্তে কোথা এসে একটা কুকুত এসে ধ্রুভের কোলে উঠে পরলো,আর পরমহূর্তে ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জটা নিচে পরে ভেঙ্গে গেলো..কাঁচের হওয়াতে সেটা গুড়িয়ে গেলো।।

“হোয়াটস হ্যাভ ইউ ডান বিচ!!” স্মিথ প্রায় রেগ্র চেচিয়ে বললো।।

“শাট আপ!!” ধ্রুভ দাঁত কিড়মিড় করে বললো।।

“তুমি দেখলে না এই বজ্জাত কুকুরটা কিভাবে তোমার মেডিসিন ভেঙ্গে দিলো??এই মেডিসিন টা তৈরি করতে আমার ছয়মাস লাগে আর সেটা ও ভেঙ্গে দিলো??ওকে ত আমি!!” স্মিথ তেড়ে ধ্রুভের হাতে থাকা কুকুরটাকে মারতে গেলে,ধ্রুভ রক্তিম চোখ নিয়ে তাকালো স্মিথদের দিকে..স্মিথ ওই তাকানোটা দেখে ভয়ে পেয়ে যায়।।

“আপনার তৈরি করা মেডিসিন মানে??আর আপনার সাহস কি করে হয় আমার টমিকে মারার??হ্যাভ ইউর লস্ট ইউর মাইন্ড??” ধ্রুভ চিল্লিয়ে বললো।।

“রিল্যাক্স ধ্রুভ?তুমি ভালো করে জানো,এই মেডিসিন সচরাচর পাওয়া যায় না??আমি জাপান থেকে মেডিসিন তোমার জন্য বানিয়ে আনি,এটা তৈরি হতে কমসে কম সিক্স মানথ লাগে আর এক নিমিষে তোমার বাড়ির কুকুরটা সেটা ভেঙ্গে দিলো!!” স্মিথ জবাব দিলো।।

মেডিসিনের কড়া গন্ধে ধ্রুভের মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে,এইরকম সে তখন ফিল করে যখন এই ইঞ্জেকশন টা তার হাতে পুশ করা হয়..কেমন শুন্য শুন্য লাগছে তার মাথার ভেতর..মাথাটা ধরে বসে পরলো..রিবাকে বললো টমিকে নিয়ে যেতে।।

“ইয়ু গো নাও!!” ধ্রুভ কোন রকমে বিড়বিড়িয়ে বললো স্মিথকে,স্মিথের মেজাজ চরম খারাপ মেডিসিন নষ্ট হয়ে যাওয়াতে..তাই সে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলো।।

চলবে?

কাঠগোলাপ পর্ব ১৭

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব সতেরো

?

বাংলাদেশ,
রুবেলের সামনে একটা লোক দাড়িয়ে আছে,রুবেল তার হাতে থাকা ক্লিপটা নিয়ে লোকটির দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে..লোকটি হাত দুটো তার পেটের মাঝে লোক করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে।।

“আমার মেয়ের সাথে এই পাগলের ভিডিও তোমাকে কে দিয়ে পাঠালো??” রুবেল অবাক সুরে জিজ্ঞেস করলো।।

“বস পাঠাতে বলেছে??!!” লোকটি মাথা নিচু করে জবাব দিলো।।

“তোর বস কেডা?” রুবেল দাঁত কিড়মিড় করে জিজ্ঞেস করলো।।

“বসের নাম কিভাবে নি??ভিডিওর মানুষটায় আমার বস??” লোকটি উত্তর দিলো।।

“ওই পাগলের লোক তুই??বাইর হো এখুনি বাড়ি থেকে, তোর সাহস ত কম না??আমার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে গেছে,আমাকে বেহুশ করে??আবার ভিডিও ক্লিপ পাঠায়?” রুবেল তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে ওই লোককে মারতে মারতে বললো।।

“স্যার??ও স্যার কি করছেন??আমার কাজ ত আমি করেছি??মাফ করে দেন আর আসবো না??শুধু বস পাঠালে আসবো!!”লোকটি কেমন মিনমিন করে জবাব দিলো।।

” তোর বসের গুষ্টি কিলাই!!”বাইর হ এখান থেকে!!”রুবেল স্যান্ডেল নিয়ে তেড়ে আসলে,তাৎক্ষণিকভাবে দৌড় দিলো লোকটি।।

রুবেল ধড়াস দিয়ে সোফায় বসে পরলো,চোখে পানি আর ঠোটে হাসি, কতক্ষন পর তার পুতুলকন্যাকে তিনি দেখতে পেলো..বুকের মাঝখান দিয়ে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।।

“আমার পুতুলকন্যাকে যে নিয়ে গেছে, সে যেন আমার পুতুলকে আজীবন সুখে যেন আল্লাহ!!তুমি আমার মেয়ের প্রতি সদয় হও!!” রুবেল দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার পুতুলকন্যার জন্য।।

লন্ডন,

রাতের খাবার সেরে নিয়ে ধ্রুভ রাহিকে উপরে নিয়ে যেয়ে তার হাতে লেডিস টাউজার আর ঢোলা টি-শার্ট ধরিয়ে দিলো,রাহি পরবে নার আর ধ্রুভ তাকে ছাড়বে না পরিয়ে।।

“লিসেন?এখন যদি যেয়ে তুমি চেঞ্জ না করো,আমি কিন্তু এক সেকেন্ড ও সময় নিব না তোমাকে চেঞ্জ করতে!!” ধ্রুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।

এই কথা শুনে রাহি ঢোক গিললো,এইটুকু সময়ে ধ্রুভকে সে ভালোমতো চিনেছে..তার কথা না শুনলে সত্যি তাকে চেঞ্জ করাবে এখন..ধ্রুভের দিকে তাকালো যখন রাহি তখন দেখে ধ্রুভের চোখের ভেতরে আগুন জ্বল জ্বল করছে..রাহি কোন উপায়ন্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেইগুলো নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো।।

রাহির রাতের বেলা এই রকম পোষাক না পরে ঘুমালে,রাতে তার ঘুম হয় না..ধ্রুভ এই কথাটা খুব ভালো করে জানে..তার মীরার যেন কোন কষ্ট না হোক এইজন্য তার উপর এতো জোর খাটায় সে।।

রাহি অস্বস্তি ফিল করছে কারন এই টাউজার আর টি-শার্ট পরে সে তার বাবার সামনেও কখনো যায় নি,এই লোকের সামনে কিভাবে যাবে সে??কোন রকমে ওড়না গায়ে দিয়ে বেরোলে ধ্রুভ তার দিকে ঘাড় কাত করে কেমন ভ্রু কুচকে তাকায়..রাহির কাছে এসে তার কাছে ওড়না টান দিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দিলো,রাহি চোখ বন্ধ করে নিজের টাউজারটা কুচকে ধরলো..ধ্রুভ রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বেডে শোয়ালো,পুরো ঘরে লাইট বন্ধ করে দিয়ে হালকা ড্রিমলাইট আলো জ্বালিয়ে দিলো,রাহির উপর আধশোয়া হয়ে ভরে দিলো ধ্রুভ।।

“আমার এইভাবে ঘুম আসে না!!একটু…!” রাহি মিনমিন করে বলার আগে, ধ্রুভ তার দিকে মাথা তুলে তার দিকে তাকালো।।

“অভ্যাস করো?” ধ্রুভ থম মেরে কথাগুলো বললো।।

রাহি পুরো কথা আর শেষ করতে পারলো না,ধ্রুভের কড়া আওয়াজেই রাহি নিজের কথাগুলো ঢোক গিলে খেয়ে ফেললো।।

ধ্রুভের ঘনঘন নিঃশ্বাস রাহির বুকে পরছে,বুকের মাঝখানটা কেমন গরম হয়ে গেছে ধ্রুভের নিঃশ্বাসের কারনে..ধ্রুভের এক হাত রাহির কোমরের নিচে,অপরহাত রাহির পেটের উপর শক্ত করে ধরে আছে..এক পা তার রাহির পায়ের নিচে,আরেক পা রাহির থাইয়ের উপর উঠিয়ে রেখেছে..সব দিক দিয়ে রাহি লক হয়ে আছে..একটু পরপর ধ্রুভ এমনভাবে তার মাথাটা রাহির বুকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মনে হচ্ছে ও পারে না রাহির বুকের ভিতরে ঢুকে যাক..সরতেও পারে না রাহি এমনভাবে ধ্রুভ তার হাত পা তুলে জাপটে ধরে আছে..এরকম উসখুস করতে করতে রাহি ঘুমের দেশে গভীরভাবে তলিয়ে গেলো।।

সকালবেলা,
একটা পাখির ডাকার আওয়াজের এলার্ম টিউন খুন সুন্দরভাবে বাজছে,রাহির কানে বারবার আসছে..রাহির কানে খুব সুক্ষ্ম ভাবে সেটা বাজছে..চোখ খুললো আস্তে আস্তে করে,পরক্ষনে নিজের উপর ভারী কিছু সে অনুভব করলো,বুকটা ধক করে উঠলো…রাহি চট করে সেদিকে তাকালে,ধ্রুভকে দেখতে পায় সে..ধ্রুভকে দেখে তার মনের ধুকপুকানি টা কমে আসলো,বুঝলো সে ধ্রুভের অধীনে।।

ধ্রুভের মুখে রাহির গলাতে,রাহির উপর হাত পা উঠিয়ে তার উপর অর্ধেক ভর দিয়ে রেখেছে..রাহির উপর কেমন করে সাপের মতো পেচিয়ে শুয়ে আছে,ধ্রুভের ঘুমন্ত নিঃশ্বাস বারবার রাহির মুখে বারি খাচ্ছে..ধ্রুভের মুখটা কি শান্ত লাগছে,চোখের পাপড়িগুলো কি বড়বড়।।

নিঃসন্দেহে উনি যেকোন মেয়ের স্বপ্ন পুরুষ হবে কিন্তু ভাগ্যে তার কপালেই এই পুরুষ রেখেছে..রাহি খুব চেষ্টা করছে উঠার কিন্তু পারছে না,ভারী ভারী হাত পা গুলো কেমন আটার বস্তার মতোন ভারী লাগছে।।

“উমমম!!” ধ্রুভ একটু মুখ থেকে এই আওয়াজ বের করলো,রাহির নড়াচড়া করলো..ধ্রুভের এরকম ঘুমুঘুমু আওয়াজে রাহির বুকের উপর দিয়ে মনে হচ্ছে বরফের পিন্ড ডলে দিলো।।

“ডোন্ট মুভ মীরা!!আই নিড ইউর স্মেল!!’ধ্রুভ বলেই রাহির গলাতে একটা ঘুমের মধ্যে ছোট্ট করে কুটুস করে কামড় দিয়ে,নাক দিয়ে গলার স্মেল টা টেনে ঘুম দিলো।।

রাহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে ধ্রুভের এরকম কাজে যে এখন তার শরীরের গন্ধ ও তাকে দরকার??

সকাল দশটায় উঠলো তারা,রাহিকে আগেই উঠতে হয়েছে কারন আগে গোসল করতে চায়,মাথাটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে আর শরীরটা ভারী লাগছে।।

ধ্রুভও ফ্রেশ হয়ে খালি গায়ে শর্টস পরে ঘরে আসছে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে,রাহিও জামার চেইন লাগানোর জন্য ঘরে এসেছে যে ভিজা পিঠ মুছবে যেহেতু ধ্রুভ নাই,হড়বড়িয়ে ঘরে আসতে যেয়ে ধ্রুভকে দেখে তার চোখ কপালে,আবার উল্টো পথ ধরলে ধ্রুভ তাকে ঝড়ের গতিতে দেয়ালে সেটে ধরে..রাহি যতক্ষনে উল্টা পথ ধরেছে তার আগেই ধ্রুভ যা দেখার দেখে নিয়েছে।।

পুরো ঘর অন্ধকার,জানাল গুলোতে হোয়াইট কার্টন দেয়া,হালকা মিস্টি রোদের আলোতে ঘরটাও কেমন আবেদনময়ী হয়ে উঠেছে..রাহি ত থরথর করে কাপছেই সেই সাথে।।

“এতো কাপাকাপি মনে হয় ড্রিল মেশিনও করে না দেয়াল ভেদ করার সময়!!” ধ্রুভ রাহির কানে ফিসফিস করে বললো,রাহি কাপাকাপি না কমলেও সেই সাথে যোগ হলো লজ্জা।।

ধ্রুভ রাহির খোলা ভিজা পিঠে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা পানিতে টুকরো টুকরো চুমু দিচ্ছে..আর শিউরে উঠছে,এরকম কাপাকাপি মনে হয় হাড় কাপানো শীতেও করে নাই!!

চলবে?

কাঠগোলাপ পর্ব ১৬

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ষোলো

?

রাহি শাওয়াররুম থেকে বেরিয়ে এসে ধ্রুভকে সামনে দেখতে পেলো,ধ্রুভ তার দিকে এক ধ্যানে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে আছে.. ধ্রুভের তাকানোটা কেমন আনইজি ফিল করাচ্ছে তাকে..ধ্রুভের চোখ আটকে গেছে রাহির এমন স্নিগ্ধতা দেখে।।

ধ্রুভ ধীর পায়ে তার গতি বাড়াচ্ছে,রাহি ধ্রুভের পা বাড়ানো দেখে উল্টা ঘুরে গেলো..এতে বিপরীত হয়ে গেলো আরো..ধ্রুভ রাহির পিঠ উল্টানো দেখে একটু নাক কুচকালেও রাহির কামিজের ভিতরে ভিজাচুলগুলো দেখে চোখ আটকে গেলো,রাহি চুলগুলো কামিজের নিচেই রেখেছিলো সেইটার কারনে পুরো পিঠটা ভিজে গেছে,সেই সাথে রাহির ভিতরের ইন্টারনাল জিনিসটা হাইলাইট হয়ে গেছে..ধ্রুভ চোখ আটকে গেলো রাহির গালের কুচকুচে তিলের উপর,হালকা পানি লেগে আছে তাতে।।

“উফফ কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে যে??ওয়ান সেকেন্ড আমি কন্ট্রোল করবো কেন??সে আমার মীরা!!আমার বউ!!” ধ্রুভ বাকা হাসি দিয়ে রাহির দিকে যেয়ে তার পিছনে দাড়ালো,রাহি এদিকে ভেবে কুল পাচ্ছে না যে ধ্রুভ আদৌ কি করার চেষ্টা করছে??এই হিম শীতল মতো ঘরেও রাহি কুলুকুলু করে ঘামছে..ওড়নার কোনার দিক নিয়ে বার বার দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুড়ামুড়ি করছে সে।।

ধ্রুভ তার দুই হাত দিয়ে রাহিকে পিছন থেকে জাপটে ধরলো,রাহির মনে হচ্ছে শরীরের রোবট অপশন টা চালু হয়ে গেছে..সটানভাবে সে দাড়িয়ে আছে,ধ্রুভের মতিগতি সে ধরতে পারছে না..ধ্রুভ আস্তে করে রাহির কামিজের ভিতর থেকে চুলগুলো টেনে বের করলো,চুলগুলো বের করার পর সেইগুলো আরেকদিকে করলো.. ডান গালের তিলের উপর সে তাকিয়ে আছে,আর এদিকে রাহি ভাবছে ধ্রুভের এরকম আচরণ তাকে প্রতিবাদ না করে উল্টো চুপ মেরে দাড়িয়ে আছে,মন বলছে বাধা দাও কিন্তু ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে..এই কেমন অসহ্য যন্ত্রনা!!

ধ্রুভ তার শুকনো জীর্ন ঠোট দিয়ে রাহির ডান গালে চুমু খেলো,আর ওমনিতে রাহি লাফিয়ে অন্যদিকে ছিটকে সরে গেলো ধ্রুভের থেকে..ধ্রুভ তার দিকে ছোট ছোট করে তাকাচ্ছে..রাহির হার্টবিট অনেক ফাস্ট হয়ে গেছে,এরকম ধুকপুক করছে কেন??

ধ্রুভ আবারো তার দিকে এগিয়ে গেলো,রাহি সরতে সরতে একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো যখন তখন পিছন ফিরে দেয়ালের দিকে অসহায় মুখ করে তাকালো,অন্যদিকে ফিরতে যাবে তার আগেই ধ্রুভ তার দুই বাহুর মাঝখানে আবদ্ধ করে ফেলেছে..ধ্রুভের মুখের গরম ঘন ঘন নিঃশ্বাস রাহির মুখের উপর পরছে,রাহির এই নিঃশ্বাসেও মনে হচ্ছে ঘেমে গেছে।।

“কি আছে তোমার মাঝে জানার ইচ্ছা নাই??তুমি আমাকে তোমার মাঝে গ্রাস করে ফেলেছো এটাই কথা!!” ধ্রুভ ফিসফিস করে বলে উঠলো।।

ধ্রুভের এমন ফিসফিস আওয়াজ রাহির কান গরম হতে থাকলো,চোখ তুলে তাকানোর সাহস টা নেয় তার..সে চাচ্ছে কোনভাবে এই বিষয়টা এড়িয়ে যাক,সে এতো জলদি নিজেকে বিলীন করতে চায় না..শরীর টা আজকে বিলীন হয়ে গেলেও,মনটা আজো ধোকা খেয়ে বিলীন হয় নি।।

ধ্রুভও গোসল সেরে ঘরে এসেছিলো, পরনে তার এশ কালার শর্টস আর হাত কাটা টি-শার্ট.. ধ্রুভ তার মাথাটাকে আরেকটু নিচু করে রাহির দিকে এগোলো,রাহি তার মুখটা সরিয়ে নিতে যাবে তখুনি ধ্রুভ তার শুকনো ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে দিলো..রাহির চোখ গুলো বিস্ময়ের কারনে বড় বড় হয়ে গেলো,মাথাটা তুলতে পারছে না..যখন সে তার মুখটা সরানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছিলো তখনই ধ্রুভ তাকে বেডের কাছে নিয়ে যেয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো,রাহি মাথায় হালকা ব্যাথা পেলেও তেমন গুরত্ব দিলো না..তার কাছে জরুরি হলো ধ্রুভের কাছে থেকে নিজেকে সরানোটা,ধ্রুভ কেমন ঘোর লাগা নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে..রাহির উপর নিজের সবটুকু ভর ছেড়ে দিলো..নিজের পাগলামিটা রাহির উপরে প্রকাশ করলো..অনবরত ঠোটে তার চুমু দিয়ে যাচ্ছে,ঠোটে চুমু দিতে ক্লান্ত হলে শুষে নিতে লাগলো সে..এক সময় ধ্রুভ ঠোট ছেড়ে গলায় আক্রমন করা শুরু করলো..অস্থির হয়ে ধ্রুভ তার টি-শার্ট খুলে ফেললো..রাহির গলাতে ছোট ছোট চুমুর মাধ্যমে অনেক লাভ বাইট বসিয়ে দিলো,কামিজের নিচে ধ্রুভ তার হাত রাহির কোমরে রাখলো…রাহি অনেক আকুতিভরা কথা বলছে কিন্তু ধ্রুভের মাথায় এখন অন্য খেলা চলছে..তার মীরা নেশায় আসক্ত হয়ে ডুবে যাওয়ার খেলা..রাহির চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পরছে,তার হাতদুটো ধ্রুভের হাতের মাঝে আবদ্ধ..ধ্রুভের পায়ের মাঝে রাহির পা..সবদিক থেকে রাহি লক হয়ে আছে..ধ্রুভ রাহির পেটে নিজের হাত বিচরণ করে,তার পেটে হালকা চাপ দেয়..মুখ দিয়ে রাহি উম ছাড়া আর কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না..ধ্রুভ এই সময় অস্থিরতা কাটাতে শুধু তার মীরাকে চাই,সর্বক্ষন তার মীরা কে দরকার..ধ্রুভের দিয়ে একসময় রাহির পিঠে চলে যায়,চেইন টা একটা টান মেরে খুলে ফেললো।।

রাহির কাধ থেকে জামা নামাতে যাবে,ওমনিতে একটা বিকট আওয়াজ আসলো..মনে হচ্ছে অনেক টনের জিনিস কেও তুলে আছাড় দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো,রাহিও এমন আওয়াজে ভয় পেয়ে ধ্রুভের বুকের মধ্যে নিজের মুখ লুকিয়ে ধ্রুভের নগ্ন পিঠে রাহির ভয়ার্ত প্রকাশ পেলো নখের আচড়ে।।

ধ্রুভের মেজাজটা চট করে খারাপ হয়ে গেলো..কানের মধ্যে ঝি ঝি করতে শুরু করলো..এই আওয়াজ টা কত সাইড ইফেক্ট ফেলে তার উপর সেটা সে জানে..কিন্তু কে ইচ্ছা করে এমন কাজ করলো যে আমার এরিয়াতে এসে তাও আবার??ধ্রুভের অশান্তি লাগতে শুর করলো,সে তার মীরাকে ছাড়ে নি..তার মাথাটা কেমন যেন ঝিমাচ্ছে, এই আওয়াজ সে কখনো নিতে পারে না..কোনরকম দাড়িয়ে মাথাটা ধরে ধ্রুভ ড্রয়ার খুলে তার প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন খেয়ে নিলো..ধ্রুভের এমন অস্থিরতা রাহি দেখছিলো,কেমন যেন করছে ছেলেটা..এরকম কপালে বারবার আঙ্গুল দিয়ে ঘষছে কেন??

ধ্রুভ মেডিসিন নিয়ে রাহির কাছে এসে তার ঠোটে লম্বা করে চুমু খেয়ে,তার জামার চেইন লাগিয়ে দিলো..নিজেও টি-শার্ট টা পরে নিয়ে, রাহির গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিলো।।

“চলো খাবে!!” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহিকে নিয়ে নিচে যাচ্ছে,রাহির কাছে অবাক করা বিষয়টা হলো ধ্রুভের এমন এবনরমাল বিহেভিয়ার টা..ধ্রুভকে কেন জানি মনে হচ্ছে অসুস্থ লাগছে..আওয়াজ টা হওয়ার পর থেকে ধ্রুভের আচরণ কিরকম যেন হয়ে গেছে,বিড়বিড় করে কিসব বলছে..রাহির দিকে একবার শান্ত চোখে তাকিয়ে ঠোটে চুমু খেয়ে বললো,”দুনিয়ার মানুষ চাক বা না চাক!!এই মীরা কিন্তু ধ্রুভেরই হয়েছে!!আর হতেই হবে!!মিলন ত হবেই!!”

অন্ধকারে থাকা গার্ডেনের এরিয়াতে একজন হুডি পরা অবয়ব মানুষের দাড়িয়ে আছে এক বিশ্রি হাসি নিয়ে এতোক্ষন এইসব দেখছিলো,তার এক হাতের মাঝে থাকা জিনিস টা কে নিয়ে বারবার হাতে নিয়ে খেলছে।।

“আস্তে আস্তে তোমার থেকে সবকিছু কেড়ে নিব আমি আশরিক!!এমনি তোমার মীরাকেও!!তোমার ঘড়ির উল্টা কাটার দিন গুনা শুরু করে দেও!!” এইটা বলে অন্ধকারে থাকা অবয়বটি সিটি মারতে মারতে দেয়াল টপকে পার হয়ে গেলো।।

ডাইনিং এ তারা বসে ডিনার করতে বসেছে,রাহির সামনে বয়েল করা এগ আর পাউরুটি.. এটা খেয়ে কি হবে??খাবার দেখে তার পেট টাও জানান দিলো সকাল থেকে এক ফোটা পানি তার পেটে পরে নাই..ধ্রুভ ফর্ক নিয়ে নির্বিকার হয়ে সামনে থাকা তার চিকেন সালাদ খেতে শুরু করলো…রাহি তখনও চুপ মেরে বসে আছে।।

“মীরা??” ধ্রুভ খাওয়া দুইবার মুখে পুরে নিয়ে যখন দেখলো রাহি এখনো খায় নি তখন নিজের প্লেটে ফর্কটা রেখে রাহিকে জিজ্ঞেস করলো।।

“হুম!!” রাহি মাথা নিচু করে বললো।।

“খাচ্ছো না যে?” ধ্রুভ বললো।।

রাহি কিছু বললো না,পাউরুটি এক পাশে ছিড়ে মুখে দিলো..শুকনো কোনকিছু সে খেতে পারে না..ছোটবেলা তে রুবেল রাহির জন্য গোশত আর মাছের ঝোল অনেক ঝাল আর ভুনা করে রান্না করতো,ঝোল যেন ঘন হয়ে থাকে..এরকম রান্না তার খুব পছন্দ,শুকনো খাবার রাহি খেতে পারে না এইজন্য সবসময় রান্নাতে ঝোল রাখতেন খুব ঘন করে..একবার মাছের কাটা রাহির গলাতে আটকে যেয়ে কি নাজেহাল অবস্থা হয়েছিলো তার,যে মাছ খেতে যেয়ে তার গলায় কাটা ফুটেছিলো সেই মাছ কিনায় বাদ দিয়েছিলো রুবেল..চোখের এক পাশ থেকে টুপ করে পানি বেরোলো রাহির,ধ্রুভ দেখার আগেই রাহি চোখ মুছে নিলো।।

রাহি পাউরুটির মুখে প্রথম বাইট দিয়ে,অনেক কষ্টে গিললো পানি মুখে দিয়ে..হুট করে রাহির সামনে থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে নিলো ধ্রুভ..রাহি ফ্যালফ্যাল চোখে তার দিয়ে চেয়ে, ধ্রুভ প্লেট নিয়ে সামনে থাকা একটা ঘরের মধ্যে চলে গেলো..রাহি কিছু বুঝতে পারছে না যে কি হয়ে গেলো যে প্লেট নিয়ে চলে গেলো..রাহি গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে নিলো।।

মিনিট বিশেক পর,ধ্রুভ একটা ব্ল্যাক কালারে বাটিতে কি যে নিয়ে আসলো সেটাতে ধোয়া উঠছে,বুঝায় যাচ্ছে গরম কিছু আছে এর মধ্যে..রাহির সামনে যখন প্লেট রাখলো ধ্রুভ,রাহি বাটির ভিতরের জিনিস দেখে অবাক হলো…কারন বাটির ভিতরে স্যুপ নুডুলস ছিলো।।

“প্রমিস করেছিলাম কখনো কষ্ট দিবো না আর না কাওকে দিতে দিব!!আমি নুডুলস টা মোটামুটি পারি,চিকেন টা ডিপফ্রিজে ছিলো তাই একটু দেরী হয়ে গেলো..তোমার জন্য স্পাইসি চিকেন স্যুপ নুডুলস বানিয়ে নিয়ে এসেছি!!” ধ্রুভ চেয়ার টেনে রাহিকে নিজের কাছে এনে বললো।।

রাহি অবাক হয়েছে অনেক,উনি এতো সহজে বুঝে গেলো?যে আমার শুকনো খাবার খেতে কষ্ট হয়??

“স্টপ লুকিং এট মি মীরা!!টেস্ট ইট!!” ধ্রুভ বললো।।

রাহি স্পুন উঠিয়ে মুখে নিলো আসলে স্বাদ টা অসাধারণ.. পছন্দমতো ঝাল আর স্বাদ পার্ফেক্টভাবে আছে এতে..রাহি ধ্রুভের দিকে তাকালে দেখে,ধ্রুভও তার দিকে খেতে খেতে তাকাচ্ছে।।

“দেখার সময় দিব ত!!এখন খাও??নইত এনার্জি কোথায় পাবে??” ধ্রুভ রাহির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো।।

রাহি তড়িঘড়ি করে চোখ নামিয়ে নিলো,তা দেখে ধ্রুভ মিটমিট করে হাসছে..কিন্তু পরক্ষনেই মাথার ভেতরটা কেমন ঝি ঝি ডাকতে শুরু করলো,সব ওই আওয়াজটার জন্য..ধ্রুভ চোখ মুখ শক্ত করে খেতে আরম্ভ করলো,তার ঘুম দরকার।।

তিন শব্দের কবুল আর এক তরফা ভালোবাসার জোর অনেক।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন।

কাঠগোলাপ পর্ব ১৫

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব পনেরো

?

“একটা কথা জিজ্ঞেস করি??” রাহি চোখমুখ খিচে বললো,ধ্রুভ তখনো রাহির কাধে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ঠেকিয়ে রেখেছে।।

“উম?” ধ্রুভ রাহির কাধে নিজের ওষ্ঠদ্বয় রেখেই আওয়াজ করলো।।

কখনো কোন ছেলের সংস্পর্শে রাহি আসে নি আর না ধ্রুভ কোন মেয়ের সংস্পর্শে এসেছে..দুইজন দুজনের কাছে নতুন অনুভূতির অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হচ্ছে..রাহির কাছে অস্বস্তিকর লাগছে এরকম কাছে আসাটা কিন্তু ধ্রুভের কাছে ততটায় তার জন্য শান্তিপ্রিয় হয়ে উঠছে তার মীরার কাছে নিজেকে বিলীন করা।।

“আপনি কিভাবে আমার পাসপোর্ট এতো দ্রুত করলেন?” রাহি আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলো,ধ্রুভ এমনিতেও তার কাধে নিজের ঠোটের লাগিয়ে রেখে কথা বলে রাহির নিঃশ্বাসকে গলার কাছে আটকে রেখে দিয়েছে।।

“আই উইল টেল ইউ বাট আই নিড সামথিং ফ্রম ইউ?” ধ্রুভ কাধে আরেকটা কামড় দিয়ে বললো।।

“কিছু জিজ্ঞেস করলেই আপনার কিছু না কিছু চায়,এখন মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করে বিপদে পরেছি??” রাহি বিড়বিড়িয়ে বললো।।

“স্টপ টকিং টু ইউরসেল্ফ মীরা!!” ধ্রুভ ভ্রু জোড়া খুচকে বললো।।

“আচ্ছা?কি লাগবে বলুন?আমার কাছে কিছুই নেই আপনাকে দেয়ার জন্য?” রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।।

“আই নিড ইউ!!তোমার আত্নার সাথে আমার আত্নার শিরায় শিরায় মিলিয়ে দিতে চায় তোমাকে,প্রতি পশম যেন তোমাকে দেখে কাটা দিয়ে উঠে!!তোমার ঠোট উল্টানোর ভাবটা আমার মনের এদিক সেদিক করে দেয়!!তোমার চোখের পানি দেখলে আমার হৃদয়ের মাঝে রক্তক্ষরণ হয়!!আমি তোমাতে হারাতে চাই!!তোমার মাঝে এতোটা মিশে যেতে চাই আর তোমাকেও নিজের সাথে পিষে ফেলতে চাই!!” ধ্রুভ রাহির কানে কেমন হিসহিসিয়ে বলছে।।

“পিষে ফেলতে চাই!!” কথাটা শুনে রাহি এক প্রকার আতকে উঠে,বড়বড় চোখ করে তাকায় সে..এরকম মিশ্রিত ভালোবাসা কথা শুনে হুট করে মাঝখান দিয়ে ঘূর্নিঝড়ের মতো বাতাস দিলে ত অবাক হবেই।।

“মা…মানে!!” রাহি এক প্রকার তোতলে বললো।।

“রিল্যাক্স মীরা!!” ধ্রুভ একটু মুচকি হেসে বললো,হাসিটা একটু রহস্যজনক লাগলো।।

“আমাকে তুমি বলে ডাকতে হবে,আর আমি যা বলবো তা শুনতে আর তা অক্ষরে অক্ষরে তোমাকে পালন করতে হবে??” ধ্রুভ শ্বাস ফেলে রাহির আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,রাহির কাছে ধ্রুভের এগোনো টা ভড়কে দিলো যখন তখনি ধ্রুভ তাকে তার দিকে টেনে শক্ত করে তার কোমর ধরলো।।

“কি..কি করছেন??ছাড়ুউউন??” রাহি আবারও তোতলে বললো।।

“উম!!!আগে তুমি বলো!!” ধ্রুভ রাহির নাকে নিজের নাক ঘষে বললো।।

“এই..এইভাবে হুট করে তুমি বলতে পারি না আমি!!আ…আমি চেষ্টা করবো!!” রাহি আমতাআমতা করে বললো।।

ধ্রুভের মাথায় দপ করে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলে গেলো,সে রাহিকে বেডে শুইয়ে তার উপর নিজের সমস্ত ভর দিয়ে উঠলো,রাহির হাত দুটোকে নিজের হাতের মাঝে শক্ত করে নিয়ে নিলো..ধ্রুভের এমন হুট করে এরকম কাজ করাতে রাহি অনেক ভড়কে গেছে,বুকটা দুরুদুরু করছে..হার্টবিট খুব জোরে চলাচল করছে।।

“তোমাকে পারতেই হবে,তুমি বলে ডাকতেই হবে!!আই ওয়ান্ট ইউ অনলি মীরা!!তোমার কোনকিছুর ভাগ আমি জিরো% ও কাওকে দিতে চাই না!!” ধ্রুভের আওয়াজ টা কেমন করে কড়া ভাবে বললো।।

একে ত ধ্রুভের ভর রাহির উপর,তার উপর ধ্রুভের হুট করে বিহেভিয়ার চেঞ্জ হওয়া রাহিকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছে..সংযত করছে নিজেকে বারবার,তাই ধ্রুভের অস্তিত্বের সাথে যে মীরা মিশে আছে অর্থাৎ সে মিশে আছে এটাতে তার সন্দেহ নেয়..তার সবকিছুতে মীরাকে দরকার,না পেলে যে দুনিয়া ঝাজড়া করে দিবে তাতেও কোন সন্দেহ নেই।।

“আচ্ছা তুমি করে বলবো!!” রাহি ধ্রুভের মেজাজ ঘুরানোর জন্য বললো।।

“দ্যাটস লাইক মাই মীরা!!” ধ্রুভ বলেই রাহির বুকের উপর থেকে তার ওড়না টান মেরে নিচে ফেলে দিলো,রাহির বুকের উপর মাথা দিলো ধ্রুভ..রাহি চোখ মুখ কামড়ে শুয়ে আছে,এখন কিছু করলে বিপদ ডেকে আনা হবে।।

“তোমাকে যখন সেদিন আমি রাস্তায় দেখি,যেটা আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে তুমি নিচে পরে গিয়েছিলে,তখনি আমার শিরা দন্ডতে হালকা শীতল স্রোত বয়ে গেছিলো..তোমার শরীর থেকে সেইম স্মেল টা পেয়েছিলাম যেটা আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্নে পেতাম..আর এই স্মেল টা তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে,একটা ঘরে ভুল করে ঢুকে গিয়েছিলাম মামার বাড়ি যেয়ে তখন এই স্মেলটা পেয়েছিলাম..পাগলের মতো হন্য হয়ে তোমাকে খুজেছি কিন্তু পাই নি,পরে যখন তোমার দেখা পেলাম..আমার মীরা কে পেলাম তখন সবকিছু মনে হচ্ছে পেয়ে গেছি..কিন্তু তোমার কাছে গেলে তুমি আমাকে ভয়ে দুরে সরিয়ে দিতে,পরে ডাক্তার স্মিথ এসে আমাকে নিয়ে যায় বেহুশ করে..এই নিয়ে তার সাথে অনেক দফা ঝগড়াও হয়েছে সেইদিন!!” ধ্রুভ এক নাগাড়ে বললো।।

“এরপর লন্ডন থেকে তোমার ব্যাপারে খোজ নেয়া শুরু করেছি..তোমার ইউনিভার্সিটি থেকে তোমার ছবি আর সার্টিফিকেট আমি এক সপ্তাহের মাঝে কালেক্ট করি,সবকিছু জমা দিয়ে পাসপোর্টের কাজ শুরু করে দি আর বাকি ছিলো তোমার ফিঙ্গার প্রিন্ট যেটা তোমার সাথে প্রথম মিটে তোমার বেহুশ অভস্থায় নিয়ে নি..আর এতো জলদি পাসপোর্ট আর ভিসা করা এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের কাছে চুটকির মতো..চোখের সামনে প্রকাশ না করতেই আমার সমস্ত জিনিস হাজির হয় আর সেখানে তুমি আমার লাইফ মীরা??আমার লাইফকে আমি আমার কাছে থেকে আর কতদিন দূরে সরিয়ে রাখবো??তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি ইভেন এ পিষে ফেলতেও পারি??এন্ড ইউ হ্যাভ টু একসেপ্ট দ্যাট..ইউ হ্যাভ টু উইথ মি,ইউ ওয়ান্ট অর নট”ধ্রুভ কাছে কানের কাছে নিজের নিঃশ্বাস গুলো ছেড়ে বললো।।

রাহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ধ্রুভের এমন কথা শুনেছে,লাইফে সে এরকম কম ঝটকায় খেয়েছে..কি করে পারে উনি??।।

“তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবে,আমার পাগলামি তোমার প্রতি সেটা তোমাকে মানতে হবে,আমার ভালোবাসাতে তোমাকে পিষে ফেলতে চাই আর যে আমাদের মাঝখানে আসবে তাকে পিষে ফেলবো আমি এন্ড মার্ক মাই ওয়ার্ডস” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির কামিজের নিচে হাত ঢুকালে,রাহি জোর চিৎকার দেয়।।

“প্লি..প্লিজ!!আই এম নট প্রিপেয়ার ফর দিস!!গিভ মি সাম টাইম!!” রাহি ভয়ে হরবর করে বললো।।

ধ্রুভ শ্বাস ফেললো কিন্তু হাত সরালো না কোমর থেকে,কামিজের নিচ থেকে হাত বের করে রাহি কোমরের হালকা চাপ দিলো।।

“এখন ফ্রেশ হও..কাবার্ডে সব ড্রেস রাখা আছে,নিয়ে যাও?তোমার বডি ইন্টারনালে যা লাগে সেটাও আছে!!আই থিংক আমার অনুমান করা তোমার বডি শেইপ অনুযায়ী জিনিস নিতে ভুল হবার কথা নয়!!”ধ্রুভ রাহির গলায় হালকা কামড় দিয়ে বললো।।

রাহি একে ত লজ্জা পেয়েছে ধ্রুভের এমন বেশরম কথা,কিভাবে বলছে ইন্টারনাল জিনিসের কথা..অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হলো আর রইলো কামড়??যখন সুযোগ পাচ্ছে তখনি কামড় দিচ্ছে,গলার ভোকাল কর্ডটা কেমন তড়কা করে উঠছে ধ্রুভের স্পর্শ পাওয়াতে।।

ধ্রুভ রাহির উপর থেকে উঠে তাকে দাড় করিয়ে,কাবার্ডের কাছে দাড় করালো রাহিকে।।

” ইউ হ্যাভ টুয়েন্টি মিনিটস!!সো স্টার্ট!!” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির কাছ থেকে সরে নিচে চলে গেলো দরজা লাগিয়ে।।

রাহি ওইভাবে থম মেরে রয়েছে,হুট করে বাবাকে খুব মনে পরছে..কি করছে,কেমন আছে??সব মিলিয়ে বুকের ভেতর দলা পাকিয়ে কান্না আসছে তার..বুকের ভেতর টা হু হু করে উঠছে,রুমে ত ফোন নেয় যে বাবাকে ফোন করবে..চোখের কোনের এক পাশে পানি জমেছিলো,তা মুছে নিলো সে..কাবার্ড খুলে দেখলো সব তার টেস্ট অনুযায়ী পোষাক কিন্তু নাইটি??সেটা বের করে সামনে এনে দেখলে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।।

“এতো ছোট কিভাবে??” রাহি দেখে তা চোখমুখ কুচকে নাইটিটা কাবার্ডের ভেতরে চালিয়ে,জামা আর তোয়ালে নিয়ে চলে গেলো।।

শাওয়াররুমটাও চোখ ধাধানো..ফ্লোর চকচকে গ্লাস স্কিন,বাথটাব গোল করে..বাথটাবের সামনে থাই গ্লাস দিয়ে সুইমিংপুল..বিশাল আয়নাও আছে,সিংকটাও কেমন ঝকঝক করছে..এইসব চকচকে জিনিস দেখে রাহির নিজের কাছে নিজেরে কালো লাগছে এদের কাছে,সাবধানে পা ফেলে ঝর্না ছেড়ে দিলো, যেহেতু তার বাথটাবে গোসল করে অভ্যাস নাই তাই না ইউজ করায় বেটার..পিছলে পরে না যায় এইজন্য সাবধানে পা ফেলছে সে।।

ঝর্নার পানি সারা শরীর বেয়ে পরছে সেই সাথে রাহির চোখ দিয়ে অশ্রুও বেরিয়ে পরছে,চোখগুলো আজ ভীষণ ক্লান্ত..একদিন কত কি হয়ে গেলো,কাল এই সময় বাবার সামনে ছিলো আর আজ এই সময় বাবার কাছ থেকে কত শত হাজার মাইল দুরুত্বে দূরে..গোসল করতে করতে দরজার ঠকঠক আওয়াজ তার ধ্যান ভাঙলো,তাড়াহুড়ো করে ঝর্না বন্ধ করলো।।

“মীরা??এতোক্ষন কি করছো??ঠিক আছো??ওপেন দ্যা ডোর মীরা??” এই বলে ধ্রুভ দরজা ধাক্কাচ্ছে।।

“শান্তিতে কি গোসল করাও যাবে না??এই কেমন অদ্ভুত লোকের পাল্লায় পরলো সে??” রাহি মনে মনে ভাবছে।।

রাহি কোনমতে জামাটা পরে বের হলো,চুল এখনো রাহির কামিজের নিচে আছে,ভিজা চুলে পুরা পিঠ ভিজে যাচ্ছে..কিন্তু তার এই মুহূর্তে দরজার ওপাশের মানুষকে থামানো টা জরুরি,এই তাড়াহুড়োর মাঝে তার একটা জিনিস খেয়াল করতে মিস হলো না তা হলো জামা এতো পার্ফেক্ট সাইজ তা গায়ে সেট হয়ে আছে মনে হচ্ছে জামাটা তার জন্য করা হয়েছে..ইন্টারনালের ফিটিংস গুলাও পার্ফেক্ট..অবাকের উপর অবাক হতে তার ক্লান্তি এসে গেছে,তার বুঝা যাওয়া উচিত ছিল তার কপালে আল্লাহ এমন একজনকে সেট করেছে যে তার ভাবনার গহীনের সব কাজ করে ফেলে।।

রাহি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে আসলো জামা পরে তোয়ালে গায়ের উপর জড়িয়ে নিয়েছে,ধ্রুভ এতোক্ষন উত্তেজিত হয়ে ছিলো এখন তার মীরাকে বের হতে দেখে কেমন শান্ত হয়ে গেলো এক নিমিষে,রাহির দিকে ধ্রুভের যখন পরলো সে একটা শুকনো ঢোল গিললো..তার মীরাকে তার কাছে সবচেয়ে বেশি স্নিগ্ধ লাগছে এখন।।

চলবে?

কাঠগোলাপ পর্ব ১৪

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব চৌদ্দ

?

প্লেন ল্যান্ড করলো লন্ডন শহরে..রাহির ধ্রুভের বুকের সাথে মাথা দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছে নিজেও জানে না,ধ্রুভ তার মাথাটাকে এতো শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিলো যে পরে চাইলেও নড়তে পারে নি সে।।

এনাউন্সমেন্টের তীব্র আওয়াজে যখন রাহি ধড়ফড়িয়ে উঠলো তখন ধ্রুভ দাঁত মুখে খিচে নিয়েছিলো।।

“ব্লাডি বিচ!!ভয় পেয়ো না মীরা,এইতো আমি!!দাড়াও কে এতো জোরে এনাউন্সমেন্ট করলো ওকে দেখে আসছি!!” এই বলে ধ্রুভ উঠতে গেলে,রাহি তার হাত ধরে থামিয়ে দেয় তাকে যে এখানেও নামতে নামতে সিন ক্রিয়েট না হয়ে যায়।।

“প্লিজ যাবেন না!!আর উনাদেরও ত দোষ নেয় কারন তাদের কাজই এটা!!আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর আমার একটু আওয়াজে ধড়ফড়ানো টা ছোটবেলা থেকে!!আচমকা আমি কোনকিছু নিতে পারি না!!” রাহি জানানলো ছোট উত্তরে।।

“রিল্যাক্স মীরা!!ইউ ডোন্ট নিড টু এক্সপ্লেইন ইউরসেল্ফ টু মি!!আই নো এভ্রিথিং এবাউট ইউ!!বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট লেট এনিওয়ান টু হার্ট ইউ” ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বললো।।

“যেমন আচমকা আপনিও এসেছেন,এসে নিয়ে এসেছেন আপনার দেশে,এইটাও যে আমি মানতে পারছি না আশরিক আলফাজ ধ্রুভ!!” রাহি বিড়বিড়িয়ে বলছিলো কথাগুলো।।

ধ্রুভ রাহির হাত ধরে টেনে নিয়ে নামছে,সব আস্তে আস্তে এয়ারপোর্টের সব কাজ সেরে দুজন বের হলো যখন,এয়ারপোর্টের সামনে বিশাল এক মার্সিডিজ দাড়িয়ে আছে..মার্সিডিজের পাশে কালো পোষাক পরা বিভিন্ন গার্ড দাড়িয়ে আছে,রাহির কিছু আনতে দেয় নি ধ্রুভ…ধ্রুভ রাহিকে নিয়ে তার আলিশান মার্সিডিজের মাঝে বসলো,তথাপি সে বুঝালো নিজে ড্রাইভ করবে..গাড়ি চালাতে শুরু করলো ধ্রুভ,তার এক হাতের ভাজে রাহির আরেক হাত গুজে দিয়েছে..রাহি সিটে হেলান দিয়ে দিয়েছে,মাথাটা কেমন বিশ্রিভাবে ব্যাথা করছে তার।।

বাংলাদেশ,

রুবেলের হাতে তার মেয়ের রেখে যাওয়া শেষ চিঠি..জ্ঞানে এসে যখন রুবেল নিজেকে নিজের বাড়িতে ফিরে পেলো তখন বেশ অবাক হয়েছিলো পরক্ষনে রাহির কথা মনে হতেই উনি হন্তদন্ত হয়ে রাহির রুমে গেছিলেন কিন্তু খুজে পানি নি…পুরো বাড়ির প্রতিটা রুম তিনি বারবার খুজছিলেন এই ভেবে যে তার মেয়ে ছোটবেলার মতো হয়তো লুকোচুরি খেলছে..রাহি এইভাবে লুকাতো আর রুবেল তাকে খুজে বের করতো কিন্তু আজ তার মেয়ে সত্যি বাস্তব লুকোচুরি খেলতে চলে গিয়েছে।।

এতো খুজেও যখন রুবেল রাহিকে পেলো না তখন ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে ডাইনিং এর চেয়ারে নিজের শরীর টা এলিয়ে দিলো..গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তখন সে জগ থেকে পানি ঢেলে,পানি নেয়ার সময় তার পকেট থেকে একটা কাগজ পরে যায়..পানির গ্লাস টা রেখে সে কাগজ টা খুলে, চেয়ারে বসলো তা পড়ার জন্য।।

চিঠিটা পড়া শুরু করে উনি যত নিচের দিকে যাচ্ছে তত উনার ভেতরটা ডুকরে কেদে উঠছে..যখন শেষ হলো তখন তার মনে হচ্ছে বুকের উপর কেও হাজারমনের পাথর বসিয়ে দিয়েছে,পুতুল পুতুল খেলতো বলে তার নাম রুবেল রেখেছিলো পুতুলকন্যা আর সেই তার ঘরের পুতুলকে অন্য ঘরে কেও নিয়ে চলে গেলো..রাহির যে মিছেমিছি শান্তনা ছিলো রুবেল বুঝতে পারছে,কোথায় যাবে?কিভাবে খুজবে তার পুতুলটাকে??তবে তার আত্নবিশ্বাস তার পুতুলকন্যা যেখানেই থাকুক না কেন তার সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবে,আল্লাহ তার প্রতি এতোটা নির্দয় হবে না…চিঠিটা বুকে নিয়ে রুবেল চিল্লিয়ে কাদঁতে পারছে না।।

কথায় আছে না,”পুরুষ মানুষ কাদেঁ না কিন্তু বাবারা কাদেঁ”।।

লন্ডন,

গাড়ি যেয়ে থামলো লন্ডনের সবচেয়ে ধনী এলাকা কেনসিংটনে… কেনসিংটনে প্যালেসের সামনে এসে ধ্রুভ থামালো তার গাড়ি।।

রাহি চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় তার বাবার শুকনো মুখটা ভেসে উঠলো..তার বাবা অফিস থেকে ফেরা সময় রোদে কেমন ঘেমে বাড়ি ফিরে,তখন রাহি দৌড় দিয়ে তার বাবার জন্য পানি এনে দিতো..বাবা আর মেয়ের সংসার টা ছিলো একদম ছোট আর গুছানো..সুখের অন্ত ছিলো না,হুট করে একটা তুফান এসে সব ঝাঝড়া করে দিলো..বুকের পাশটা কেমন চিনচিনে ব্যাথা করছে,কই এতোকিছুর মধ্যেও সামিরের স্মৃতি একটুও তাড়া দেয় নি তাকে।।

রাহি চোখ অবস্থায় বুঝলো সে শুন্য ভাসছে,ঝট করে চোখ খুলে দেখলো ধ্রুভ তাকে কোলে করে নিয়ে বিশাল বাড়ির দরজা দিয়ে ভিতরে দিকে এগোচ্ছে..চারিদিক কি ঝলমলে পরিবেশ আর শান্ত,কোন হৈচৈ নেয়..রাহি নামার ছটপট করলে ধ্রুভ তার দিকে তাকায়,ধ্রুভের এমন তাকানোটায় রাহিকে আটকে দেয় সবকিছু করতে।।

“আসলে আমার মাইগ্রেইন সমস্যা আছে,জার্নি ক্যারি করতে পারি না!!আপনি নামান আমি হাটতে পারবো না!!” রাহি মিনমিন করে বললো।।

ধ্রুভ কিছু বললো না বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে ভিতরে রাহিকে কোলে করে নিয়ে গেলো,ভিতরে ঢুকে রাহি প্রথমে যা অনুভব করলো তা হলো বাড়ির লিভিংরুমের ভেতরটা ভীষণ ঠান্ডা,এসি মনে হয় ফুল পাওয়ারে দিয়ে রেখছে..আশপাশে দেখে রাহির অবাক হলো না কারন ধ্রুভের এটিটিউড আর রেহেনা ফুফির কথাতে বুঝে ছিলো ধ্রুভ অনেকবেশি রিচ..ঘরের প্রতিটা জিনিস এক্সপেন্সিভ, দেয়ালে টাঙ্গানো বিভিন্ন সুন্দর পোট্রের্ট.. চারদিকে কত নামীদামি শো-পিসের কারুকার্য…কিন্তু বাড়ির ভিতর কাওকে দেখা গেলো না,এতো বাড়িতে সে কি তাহলে একা থাকে??উনি যেরকম করে মেরে যদি তাকে এই বাড়ির কোনখানে গুম করে রেখে দেয়??বিভিন্ন প্রশ্নের হুমড়ি খেয়ে পরছে রাহির মাথায়।।

ধ্রুভ রাহিকে কোলে করে সিড়ি বেয়ে একটা দোতালা রুমের ঘরে নিয়ে বেডে বসালো,সিড়ি বেয়ে যখন রাহিকে নিয়ে উঠছিলো ধ্রুভ তখন রাহি বলেছিলো কষ্ট হবে তার,নামিয়ে দিতে কিন্তু সে শুনে নি।।

“তোমার ওজন ৫৯ কেজি..আর আমি প্রতিদিন টু হান্ড্রেড পুশ আপ করি,৫কেজি করে ডাম্বল উঠায় আর নামায়..এমন অনেক ভারী কিছু আমি জিমে উঠিয়েছি সে তুলনায় তুমি কিছু না..আর তোমাকে সেখানে তুলতে আমার কষ্ট হবে??তুমি আমার মীরা!!তোমাকে কষ্ট যেন ছুতে না পারে সেটার দিকে আমি সবসময় খেয়াল রাখবো!!কষ্ট হতো তোমাকে না পেতাম যদি!!সাত বছর ধরে শুধু তোমাকে আমাকে স্বপ্নে পেয়েছি,তোমাকে না ছুতে পারার অসুখ আমাকে প্রতিদিন একটু একটু করে জ্বালিয়ে কষ্ট দিতো কিন্তু এখন তোমাকে পেয়েছি!!আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইউ,আই নিড ইউ এভ্রি সিঙ্গেল মোমেন্ট ইন মাই লাইফ!!” ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বলে রাহির কাধে একটা চুমু দিয়ে দিয়ে কুটুস করে একটা কামড় দিলো।।

একে ত ধ্রুভের হিসহিসিয়ে কথা রাহির শরীরের পশমের উপরে কাটা দিয়ে উঠে,আর এখন যা করলো তাতে সে শক যেমন হয়েছে তেমন নতুন আলাদা অনুভূতির সাথে দেখাও পেয়েছে..রাহি শক্ত করে বিছানার চাদর খামচে ধরে নিয়েছে।।

অনুভূতি কখন কার জন্য কোন সময় কিভাবে তৈরি হয় আমরা কেও জানি না।।

চলবে?

কাঠগোলাপ পর্ব ১৩

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব তেরো

?

“সাইন ইট!!” ধ্রুভ কড়া আওয়াজে বললো।।

রাহি একবার ধ্রুভের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তার হাতে থাকা কাগজের দিকে,কি বলবে সে বুঝতে পারছে না..চোখ দিয়ে অঝোরে তার পানি পরছে,আরেকবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে তার কোন উপায় নেয়।।

“ডোন্ট ক্রাই মীরা!!আই প্রমিস,আজকের পর থেকে কোন কষ্ট দিব না তোমাকে!!তোমাকে নিয়ে চলে যাবো আমার দুনিয়াতে!!” ধ্রুভ বললো রাহির মুখের দিকে এগিয়ে এসে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

ধ্রুভ রাহিকে কথাগুলো বলার পর,বের হয়ে যায়..রাহি ওখানে চেয়ারে বসে থাকে..আধাঘন্টা পর ধ্রুভ আসলো ঘরের মধ্যে সাথে কিছু হাতে নিয়ে,রাহির দিকে এগিয়ে আসলো..তার সামনে চেয়ার টেনে বসলো।।

“সো মীরা নাও আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ মাই কন্ডিশনস!!” ধ্রভ ঠান্ডা গলায় বললো।।

রাহির ভেতরটা অজানা কু ডাকে বারবার কড়া নাড়ছে,তার কানকে সে স্থির রাখতে পারছে না..সে চাচ্ছে না ধ্রুভ এমন কিছু বলুক যার কারনে সে বাধা পরে যায় সবখান থেকে।।

“১.তোমাকে এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করতে হবে”
“২.বিয়ের পর তোমাকে আমাকে সেই মুহূর্তে লন্ডন যেতে হবে”
“৩.আমি যা বলবো তোমাকে তাৎক্ষণিকভাবে মানতে হবে”
“৪.তোমার বাবাকে বেহুশ আছে, সে অবস্থায় থাকাকালীন তোমাকে যা করার করতে হবে”
“৫.তোমার বাবার সাথে দেখা করতে পারবে না কারন উনি তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে ঠেলার ফন্দি এঁটেছেন, তোমার বাবা তাই নিস্তার দিয়েছি”
“৬.এর মাঝে একটাও না মানলে তোমার বাবাকে হুশে আসতে দিবো না আমি,তোমাকে বিয়ে করাই ছাড়া আমি লন্ডন নিয়ে যাবো এখন এবং সেই মুহূর্তে”

ধ্রুভ রাহিকে তার দেয়া শর্তগুলো শুনালো,রাহি অবাক হয়ে যেয়ে রয়েছে..তার মাথার সবকিছু কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে,বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে..কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না সে।।

ধ্রুভ তার দিকে পেপার এগিয়ে দিলো,তাকে ইশারায় বুঝালো এটা ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপার।।

বর্তমান,

“কি হলো??সাইন করো??” ধ্রুভ বললো,রাহি কিছু বলছে না শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে মাথা নিচু করে।।

“ওলে ফাইন!!এজ ইউর উইশ মীরা!!চলো এইভাবেই!!” এই বলে ধ্রুভ রাহির হাতের বাধন খুলে দিচ্ছে।।

“আমি রাজি!!” রাহি জবাব দিলো।।

ধ্রুভের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো,রাহির দিকে পেপার এগিয়ে দিয়ে সাইন করালো..সাইন করানোর সময় রাহির ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিলো,চোখের পানি মুছে সাইন করলো..বারবার তার বাবার অচেতন মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো..রাহির সাইন করা শেষে ধ্রুভ সাইন করলো..তারপর ইসলামিক ভিত্তিতে একটা কাজি ডেকে আনলো,কাজি যখন আসছিলো তখন রাহির মুখটা পুরোটা ওড়না দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলো ধ্রুভ,তার মুখ কাওকে দেখতে দিবে না ধ্রুভ..রাহির শ্বাস আটকে গিয়েও ধরে রেখেছিলো,কাজিকে এক প্রকার মোটা অংকের টাকা আর ভয়ে দেখিয়ে আনতে হয়েছে..রাহির কবুল বলা শেষে,ধ্রুভ কবুল বললো..বিয়ে পড়ানো শেষ,আজ থেকে রাহির জীবন ধ্রুভের জীবনের সাথে মিশে গেল।।

কাজির বিয়ে পরানো শেষ হলে ধ্রুভ তাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়,রাহির হাতের বাধন খুলে তাকে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিতে চায়।।

“প্লিজ আমি বাবাকে একটা কিছু বলে যেতে চায়!!আর কখনো কোনকিছু চাইবো না আপনার কাছে!!” হিচকি তুলে রাহির ধ্রুভের সাথে হাটতে গিয়ে থেমে বললো।।

“ডু ইট ফাস্ট!!” ধ্রুভ শক্ত করে জবাব দিলো।।

রাহি কোনমতে রিকুয়েষ্ট করে একটা পেন আর পেপার নিয়ে আনালো ধ্রুভের দিয়ে,তারপর লিখতে বসলো।।

প্রিয় বাবা,

তুমি যখন সজাগ হয়ে দেখবে তখন তোমার পুতুল মেয়েকে দেখতে পাবে না!!তুমি একদম চিন্তা করো না কিন্তু আমাকে দেখতে না পেয়ে..তোমার পুতুল কন্যাকে অন্য একজন তার অধীনে নিয়ে নিয়েছে বাবা!!তোমার মেয়ে এখন অন্যের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেছে!!হ্যা বাবা, সে আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে..কিন্তু দেখো আমি তোমাকে আমার চেহারা দেখিয়ে বিদায় নিয়ে যেতে পারবো না,তুমি একদম চিন্তা করো না আমি যেখানেই থাকি না কেন!!আমার নিঃশ্বাস টুকু চলাচল করলে আমি অবশ্যই আমার রাজাবাবার সাথে যোগাযোগ রাখবো..বাবা তোমার মনে আছে??একবার আমি ছোটবেলাতে দাদুবাসাতে মজার ছলে কুয়া থেকে পানি তুলতে যেয়ে কুয়ার মাঝে পরে গেছিলাম তখন পানি খেয়ে আমি ফুলে গেছিলাম কেমন,তুমি কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছিলেন??কত কষ্ট করে তুমি আমাকে সেখান থেকে তুলে,ডাক্তার তুলে এনে আমার প্রান বাচাঁনোর থ্রেট দিয়েছিলে??।।আরেকবার তোমার মনে আছে স্কুলে একটা টিচার আমাকে মারাতে তুমি ওই টিচারে গালে থাপ্পড় মেরে আমার স্কুল চেঞ্জ করেছিলে??তারপর থেকে আমি তোমার থেকে আমার সব মারের কথা লুকিয়ে রাখতাম কারন তুমি জানলে ওদের মারতে..কারন তুমি আমাকে কষ্টকে রাখতেই চাইতে না..দেখো আমি কতবড় হয়ে গেছি এখন??বিয়েও হয়ে গেছে আমার..আর ভাগ্যের কি খেলা দেখো বাবা,যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেও তোমার মতো..আমাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে,আমি তাকে ভালোবাসতে কখনো পারবো কি না জানি না কারন ভালোবাসাতে খুব কষ্ট বাবা??আমি ধোকা খেতে চাই না আর..আমার পুতুল খেলতেও ভালো লাগে না..তোমার মতো উনিও আমাকে কষ্টে দেখতে পারে না বাবা..দেখো তুমি চাইছিলে না তোমার মতো কাওকে দেখে আমার বিয়ে দিতে??দেখো তোমার মতো কারো সাথে আমার বিয়ে হয়েছে নয়তো কেও কারো শ্বশুরকে বেহুশ করে তার মেয়েকে বিয়ে করে??হ্যা উনি পাগল কিন্তু বাবা দেখো আমি ভালো থাকবো,অনেক ভালো থাকবো..তুমি তোমার বিপি র ওষুধ ঠিকমতো খাবা,বেশি চিন্তা করবানা কেমন??আসি বাবা,অনেক ত কথা হলো…নিজের খেয়াল রেখো,তোমার পুতুল কন্যা বড় হয়ে গেছে বাবা!!অনেক বড়!!।।

ইতি
তোমারই পুতুলকন্যা

রাহি চিঠিটা লিখতে লিখতে কাদঁতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে,চিঠি লিখা শেষে সেটা একবার বুকে জড়িয়ে নিয়ে নিলো রাহি..চিঠিটা বাবার পকেটে দিয়ে দিলো,তার বাবার মাথায় শেষবারের মতো হাত বুলিয়ে দিলো..এটাই হয়তো শেষ দেখা!!সে থাকতে পারবে ত??তার বাবা তাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে??বাবার দিকে শেষবার অশ্রুজলে তাকিয়ে ত্যাগ করলো রুম।।

“লিসেন?উনাকে নিয়ে সোজা উনার বাড়িতে রেখে আসবা??উনার কোন ক্ষতি না হয়,নয়তো তোমাদের শরীরের একটাও হাড় আস্ত থাকবে না!!ডাক্তার ডেকে ট্রিটমেন্ট করাবা তাৎক্ষণিকভাবে!! ” ধ্রুভ তার লোককে বললো।।

রাহি যখন নিচে নামলো চোখ মুছতে মুছতে তখন ধ্রুভের সব কথা শুনতে পেলো..ধ্রুভের রুপ দেখে সেও দ্বিধায় পরে যায় যে এক সময় এক রকম তার ক্যারেক্টর?? কিভাবে থাকবে সেই পাগল রুপে মানুষটার সাথে??তাকে যেমন পাগলের মতো ভালোবাসে,তার ধারের কাছে ঘেষ্অতে দেয় না তাকে??কি করবে সে!!

রাহিকে নামতে দেখে তার লোকগুলোকে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বিদায় দিলো ধ্রুভ,রাহির কাছে এগিয়ে এসে..রাহি গালে যে পানি গুলো জমেছে,সেই গুলো মুছে দিলো..তার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো সেই বাড়ি থেকে,গাড়িতে উঠে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।।

গাড়িতে থাকা অবস্থায় রাহি মাথা নিচু করেছিলো কিছু বলে নি,ধ্রুভ আপনমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছিলো..এয়ারপোর্টে পৌছানোর পর রাহিকে নামানোর সময় ধ্রুভ রাহিকে ভালোভাবে ঢেকে দিলো,রাহি গাড়ি থেকে নামার পর দেখলো অনেকগুলো গার্ড দাড়িয়ে আছে হাতে বন্দুক নিয়ে,দুই পাশের সারিতে আর মাঝখানে ধ্রুভ রাহির হাত টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে..গার্ডগুলো মাথা নিচু করে আছে,রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটছে।।

অবশেষে তারা প্লেইনে উঠলো,প্লেইনে উড়াল দিলো অজানা ভিনিদেশের শহরে..রাহি শেষবারের মতো জানালার গ্লাস দিয়ে তার মাতৃভূমিটাকে ফেখে নিলো,সবাই ফেলে রেখে সে চলে যাচ্ছে অচেনা মানুষের সাথে অচেনা দেশে।।

রাহি যখন এইসব ভাবছিলো তখন ধ্রুভ তাকে টান মেরে তার বুকের মাঝে নিতল্যে আসলো,তার মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলো..রাহি নড়াচড়া করলে,ধ্রুভ আরো চেপে ধরলো,যখন সে পারলো না তখন বাধ্য হয়ে ধ্রুভের বুকে মাথা দিয়ে থাকতে হলো,আশেপাশের মানুষ কি ভাবছে কে জানে।।

“অন্যের কথা নিয়ে যেন ভাবতে না দেখি আর!!আমার কথা ভাবো শুধু!!ঘুমাও মীরা!!” ধ্রুভ রাহির মাথায় চুমু দিয়ে তাকে বুকের সাথে জাপটে ধরে কথাগুলো বললো,রাহি শুধু চুপচাপ শুনলো।।

সময় চলছে আপনগতিতে,কেও কারো জন্য থেমে নেয়..সময় মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়,পরিবর্তন সবসময় সুখের হয় না।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

Protected: পাপের শাস্তি

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

কাঠগোলাপ পর্ব ১২

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব বারো

?

ধ্রুভ তার ফোনে গেইমস খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে গেছিলো,যখন তার মাথার ভেইন গুলা জানান দিচ্ছে “তোমার মীরা কে তুমি কষ্ট দিচ্ছো,উঠো?এইভাবে তুমি তাকে কষ্ট দিতে পারো না,তুমি এইভাবে তাকে কষ্ট দিলে সে তোমার থেকে চলে যাবে”।।

ধ্রুভ তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠেছে,ঘেমে নেয়ে একাকার.বিড়বিড়িয়ে করে বলছে,” আমার মীরা যেতে পারে না!!আমার মীরা আমাকে ছেড়ে চলে যেতেই পারে না!!নো নো!!”।।

এইভাবে বলতে বলতে ধ্রুভ রাহির দিকে তাকালো,ওইভাবে বাধা অবস্থায় শুয়ে গেছে..ধ্রুভ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে,তার মীরাকে তার সামনে দেখতে পেয়ে মনে হচ্ছে অস্থিরতা টা কিছুটা কমে এলো..আস্তে আস্তে করে বসে তারপর রাহির হাতের বাধন আলগা করে খুলে দিলো,ঘুমন্ত রাহি একটু নড়ে উঠলেও,ঘুমের তেজ বেশী থাকার কারনে সজাগ হলো,তার ঘুমন্ত মীরাকে এতো বেশি নেশাক্ত লাগছে যে পারলে এখুনি তাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায় সে কিন্তু সে তার মীরাকে সময় দিয়েছে,যা সে সময়ের মধ্যে তার না হলে তার আশরিক আলফাজ ধ্রুভ স্টাইলে তাকে নিজের করবে।।

“তেরে ইস্ক পে কিতনে ডুব্র হুয়ে হাম”

“পার তেরি না মান নে কি এই চাহাত,গুমহ রা কারতি হে মুঝে বহাত”

ধ্রুভ রাহিকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে তার কানে হিসহিসিয়ে বললো,রাহি ঘুমের মাঝেও কেপে উঠলো..বাধার কারনে রাহির ফর্সা হাত-পায়ে কেমন লালচে দাগ পরে গেছে,ধ্রুভ সেখানে ছোট ছোট চুমু দিলো..রাহির একটা হাত ধরে মেঝেতে বসে খাটে হেলান দিয়ে দিলো,রাহিকে দেখতে দেখতে সেও ঘুমিয়ে গেলো।।

সামনে বেহুশ হয়ে পরে আছে রুবেল,চেয়ারে বাধা অবস্থায় রাহি..চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে ধ্রুভের দিকে,ধ্রুভের চুল আউলাঝাউলা..চোখ রক্তিম বর্ন ধারন করে আছে,রাহি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে ধ্রুভকে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

রাহি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে খোলা অবস্থায় পেয়ে খুব অবাক হয়েছে,পাশে দেখে ধ্রুভ তার হাত ধরে মেঝেতে শুয়ে আসে তার হাত ধরে,রাহি আস্তে করে হাত সরিয়ে তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।।

রাহি ঘর থেকে বের হতে দেখে রুবেল তার কাছে দৌড়ে আসলো।।

“তুই ঠিক আছিস??ওই পাগল তোকে কিছু করে নিতো??” রুবেল একসাথে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।।

“বাবা আমি ঠিক আছি!!কিছু করে নি ও আমার!!” রাহি জানালো।।

“তুই পালিয়ে যা!!” রুবেল শক্তভাবে জবাব দিলো।।

“মানে??কি বলছো তুমি??” রাহি অবাক হয়ে বললো।।

“হ্যা তুই পালিয়ে যা!!আমি কোনভাবে তোকে এই লোকের সাথে বিয়ে দেয়া ত দূরে থাক,আমি ওকে আমার বাড়িতে আমার মেয়ের পাশে সহ্য করতে পারছি না!!” রুবেল জানালো।।

“কিন্তু বাবা এইভাবে কিভাবে??” রাহি বললো।।

“তোকে আমার কসম!!তুই এখান থেকে যা,চল!!” এই বলে রুবেল রাহির হাতে টাকা গুজে দিয়ে,ব্যাগে কিছু জামা ঢুকিয়ে দিয়ে রুবেল তারা চাচাতী ভাইয়ের বাড়ির পাঠানোর ব্যবস্থা করে।।

রাহিকে ট্রেনে তুলে দিয়ে রুবেল বাড়ির দিকে ফিরে যায়,বাড়ি ফিরে দেখে দরজা খুলা কিন্তু কোথাও ধ্রুভ নেয়..তিনি হন্তদন্ত হয়ে খুজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না ভাবছে আপদ নিজে থেকে চলে গেছে,এইসব ভেবে যখনি পিছু ঘুরতে যাবে তখন রুবেলের মুখ ক্লোরোফর্ম মেরে দিয়েছে।।

রুবেল ঝাপ্সা চোখে শুধু দেখলো সামনে থাকা ব্যক্তিটি রক্তিম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে,হ্যা লোকটি আর কেও নই ধ্রুভ..ধ্রুভ রুবেলকে কাধে নিয়ে গাড়িতে তুলে বসিয়ে তার লোককে একটা লোকেশনে রেখে আসতে বললো।।

ট্রেন চলছে আপনগতিতে,মাত্র পাঁচমিনিট হলো ট্রেন ছাড়া..হুট করে ট্রেন থেমে গেলো,রাহি নিজেও অবাক যে চলন্ত ট্রেইন শুরু হয়ে কিভাবে বন্ধ হয়??তখন রাহি মুখ ঢেকে মাথাটা ঢেকে দেখতে যাবে ওমনি কে তাকে হ্যাচকা টান দিয়ে কাধে তুলে নিলো..রাহি চেচামেচি করছে, যখন তার নাকে আতরের স্মেল আসলো তখনি টের পেলো সেটা আর কেও নয় ধ্রুভ!!ধ্রুভের আশেপাশের অনেক গার্ড আর সবার হাতে বন্দুক,কেও সাহস করে কিছু বলছে না।।

“কি করছেন কি ধ্রুভ??নামান আমাকে??!” রাহি চিল্লিয়ে বলছে।।

ধ্রুভ কোন কথা বলছে না,রাহিকে কাধে করে নিয়ে যেয়ে গাড়িতে ফেলে দিয়ে দরজা লক করে দিলো,রাহি এখন ভয়ে কথা বলতে পারছে না কারন ধ্রুভকে তার কাছে স্বাভাবিক লাগছে..শুকনো জীর্ন ঠোটে কেমন যেন নিজে নিজে বিড়বিড় করছে,ধ্রুভ গাড়িতে উঠে শাঁ করে পাঁচমিনিটের মধ্যে একটা দোতালা বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসলো,রাহির জান ধুকপুক করছে না জানি কি হবে এখন..নামতে না চাইলে ধ্রুভ তাকে জোর করে নামায় তখনি রাহির পায়ের নিচে কাটা ফুটে গলগল করে রক্ত বের হয় কিন্তু ব্যাথাটা চেপে ধ্রুভের কাধে তাকে থাকতে হলো।।

ধ্রুভের বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলো রাহিকে কাধে করে,একটা রুমে যেয়ে যখন তাকে নামালো তখন রাহি তার বাবাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়..”বাবা”বলে চিৎকার দিয়ে এগিয়ে গেলে,ধ্রুভ তাকে টান মেরে চেয়ারে বসিয়ে তার হাত পা বেধে দেয়।।

“আমার বাবাকে কি করেছেন??প্লিজ ছেড়ে দেন!!আপনি যা বলবেন তাই শুনবো!আর অমান্য করবো না?পায়ে পরছি প্লিজ!!” রাহি নানা আকুতি মিনুতি করছে কিন্তু ধ্রুভ তখন তাকে চেয়ারে টাইট করে দড়ি দিয়ে বাধতে ব্যস্ত।।

“আই টোল্ড ইউ টূ নট টু এসকেপ ফ্রম মি!!বাট ইউ ডিড,নাউ বেয়ার ইট!!’ধ্রুভ শক্ত করে জবাব দিলো।।

বর্তমান,

রাহি চেয়ারে বাধা অবস্থায় আছে,তার বাবা অচেতন হয়ে সোফায় আছে..চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কিছু করার নেয় তার,আল্লাহকে মনে মনে ডাকছে..ধ্রুভ কিছুক্ষন হলো বাহিরে গেছে এখনো ফিরে নি,রাহি যে চেয়ার নিয়ে বাবার কাছে যাবে সেটাও পারছে না..হাতের রক্ত চলাচল মনে হচ্ছে বন্ধ হয়ে যাবে এতো শক্ত করে বেধেছে।।

দরজা খুট করে আওয়াজ হলো,রাহি ভিজা চোখ তুলে তাকালে ধ্রুভকে দেখতে পায়…চুলগুলো হাতের মাঝে উঠাতে উঠাতে আসছে,শার্টের হাতা ফোল্ড করা,প্যান্ট ব্ল্যাক কালাফ গ্যাবাডিং..গায়ের রঙ আর রুপ মনে হচ্ছে উপচে পরছে।।

” প্লিজ বাবাকে ছাড়েন??কি করেছেন আমার বাবার সাথে??আই প্রমিস আমি আর কিছু করবো না উল্টাপাল্টা?? “রাহি চোখে জল নিয়ে বললো।।

” ডোন্ট ক্রাই মীরা!!ইউ ডু নট নিড প্রমিস মি!!আই প্রমিস দ্যাট নেক্সট টাইম ইউ উইল নট এবল টু ডু সাচে শিট থিংস!!তুমি এরকম কিছু করার আর যেন ভবিষ্যতে না পাও সেই ব্যবস্থা করছি!!”ধ্রুভ বললো।।

“প্লিজ কিছু করবেন না বাবাকে!!” রাহি আরেকটু হিচকি তুলে বলছে।।

“ডোন্ট ক্রাই!!তুমি কাঁদলে আমার এখানে খুব ব্যাথা হয়(বুকের মাঝখান আঙ্গুল দেখিয়ে)!!আমি তোমার বাবাকে কিছু করবো না কিন্তু তোমাকে আমার দেয়া শর্ত এখুনি মানতে হবে মীরা, না হলে আমি কিছু করতেও সেকেন্ড টাইম ভাববো না!!” রাহির চোখের জল মুছে দিয়ে বললো ধ্রুভ।।

“যা বলবেন তাই শুনবো!! প্লিজ!!!”রাহি চোখের কোনে আবার পানি জমলো বলতে যেয়ে।।

” আমি যা শর্ত দিব তা তোমাকে এখুনি পালন করতে হবে আর না মানলে এর থেকে নেক্সট স্টেপ কি হতে পারে আর আমি বা কি করতে পারি ভালো ধারনা আছে!!আর না মানলেও আমার প্রব নাই,আমি কি করতে পারি সেইটা না হয় দেখে নিবে!!সো লেটস স্টার্ট দ্যা গেইম!!” ধ্রুভ উত্তর দিলো।।

“তুমাহরে দিল কো সামাঝ না ইতনা ভি মুশকিল নেহি”

“জিতনা তুমসে অর তুমাহরে লাফজো সে দুরিয়া বানানে কে লিয়া তারাপ না মুশকিল হোতা হে”

ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বলে রাহির বাম কানে চুমু দিয়ে বললো,”ইউ আর অনলি মাইন!!এন্ড ফরএভার মাইন!!”

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আমি যেন আপনাদের মন্তব্য দেখে পরের পর্ব দ্রুত লিখতে পারি..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ১১

1

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব এগারো

?

“আমার রুম?” ধ্রুভ বলে রাহির মুখে ফু দিলো,রাহি চোখ বন্ধ করে দিলো।।

“চলেন!!দেখাচ্ছি?” রাহি এই বলে এগোতে লাগলে,ধ্রুভ তার হাত টেনে ধরলো..রাহি অবাক হয়ে চেয়ে রইলো,এরকম টানাতে সে হকচকিয়ে গেছে।।

“এখন থেকে সর্বদা আমার হাতের মাঝে তোমার হাত রেখে হাটবা?? নেক্সট টাইম বলতে না হয়!!” ধ্রুভ কথাটা বলে,রাহির উত্তররের অপেক্ষা না করে তার হাত ধরে হাটা দিলো..বাধ্য রাহিও সেই সাথে ওইভাবে হাটতে হলো।।

ধ্রুভকে তার রুমে রেখে নিজের বাবার রুমে আসতে যেয়েও ধ্রুভ নানান প্রশ্ন করে তার মাথাটা খেয়ে দিল,শেষমেশ ধ্রুভ যখন ছাড়লো তখন রাহি তার বাবার রুমে গেলো।।

“ওই তোর সাহস তো কম না??রাফির সাথে তুই মার্কেটে গেছোস??পা কেটে তোর রেখে দিব আমি??চিনোস তুই আমারে??” প্রান্ত চিল্লিয়ে বললো।।

“আরে বাবা আস্তে!!এতো জোরে চিল্লাও কেন??আর আমি তোমাকে কতবার বললাম মার্কেট গেছি কারন আজকে ইনহেলার নেয়া লাগতো ওর আম্মার,বাধ্য হয়ে গেছি!!” রাশনা উত্তর দিলো।।

“তুই যাবি কেন??তোর ইনহেলার লাগতো??তুই জানিস না রাফি তোকে পছন্দ করে??ওর নজর কত খারাপ জানার পরেও এরকম আমাকে না জানিতে কেনো গেছিস তুই?” আরো দ্বিগুন জোরে চিল্লিয়ে প্রান্ত বললো।।

“এইজন্য তোমাকে জানাই নি আমি!! কিভাবে জেনেছো আল্লাহ জানে আর তুমি!!” রাশনা বললো।।

“ওই তুই আমার থেকে আর কি কথা লুকাস??ওই তোর জান আমি কবজ করে ফেলবো!!” প্রান্ত বললো।।

“ওই ওই করো কেন??আমার বাবা মা আমার কত সুন্দর নাম দিয়েছে সেটা ডাকো!!” রাশনা জানালো।।

“চুপ!!একদম চুপ,পাখা গজিয়েছে না তোর??একদম ডানা কেটে ফেলে দিব!!তুই দাড়া আমাকে আসতে দে শুধু আর মা ও গ্রাম থেকে ফিরুক,আকদ ছয় মাস পর না আগেই হবে!!তুই চিন্তা করতে পারবি না আমি এসে তোর কি হাল করবো??” প্রান্ত বললো চিল্লিয়ে।।

“আমি তোমাকে বিয়ে করবো না এইভাবে থ্রেট দিলে??আমি তোমাকে বকাও দি না তুমি যতটা দাও!!” রাশনা ভয়ে ভয়ে বললো।।

“তুই বিয়ে করবি না?তোর ঘাড় সহ করবে!!” প্রান্ত চিল্লিয়ে ফোন রেখে দিলো।।

রাশনা হতাশ চোখে ফোনের স্ক্রিনে হোয়াটসঅ্যাপের দিকে তাকিয়ে রইলো,সারাদিন পর একটুখানি কথা হলো তাও এই রাফির বাচ্চার জন্য সেটাও গেলো..রাফি সম্পর্কে রাশনার কাজিন হয়..রাফি রাশনাকে পছন্দ করে অনেক আগে থেকে যখন প্রান্ত আর রাশনার রিলেশনও ছিলো না..রাফির নানান ভঙ্গিতে বুঝালেও রাশনা পাত্তা দিতো না,যখন তাদের রিলেশন হলো রাশনা তাকে রাফির কথা জানায়,সে জানিয়েছিলোবতার সাথে না মিশতে..একবার রাশনাদের বাড়িতে এসে রাফির দেখা পেয়েছিলো,রাফি তখন বিশ্রিভাবে রাশনাকে দেখছিলো তখন থেকে প্রান্ত রাফিকে দেখতে পারে না।।

আজকে রাশনা কলেজ থেকে ফিরছিলো ওই সময় রাফির সাথে দেখা,মেডিসিন কিনতে যাবে সে এখন রাশনাকেও জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যাবে…রাফির মা সাথে থাকায় না করতে পারে নি আর প্রান্তকেও জানায় নি,এখন প্রান্ত কিভাবে জেনে গেছে ওর বন্ধু না হয় সিসিটিভি রাশনার পিছনে লাগিয়ে রাখছে সে জানিয়ে দিয়েছে..যার ফলাফল স্বরুপ রাশনা ঝাড়ি খেলো।।

“Ghuma!!love you!!ami ese tor obostha tight korbo!!mind it” টুং করে রাশনার ফোনে প্রান্তের মেসেজ আসাতে,যখন দেখতে পেলো তখন এইটা লিখে খুশি হলো আবার ভয় ও পেলো না জানি পরে কি করে।।

“সব ত বুঝলাম!!সে যে আস্ত পাগল,সেইটাতে কোন ডাউট নেয়!!কিন্তু তুই আমাকে আগে জানাস নি কেনো??” রুবেল জিজ্ঞেস করলো রাহিকে,রাহি তার বাবাকে এতোক্ষন সবকিছু খুলে বললো।।

“বাবা বলে কি হবে বলো??দেখছো কিভাবে সে আমাকে নিয়ে পসেসিভ??তোমার সামনেও সেটা!!” রাহি হতাশ সুরে বললো।।

“কি করা যায়??তাই ত বুঝছি না,পুলিশ কে ফোন দি!!ওরাই এই পাগলকে সামলাতে পারবে আর পাগলা গারদে ভর্তি করাবে!!’রুবেল বললো।।

” এইভাবে হয় না বাবা??সে মানসিক ভাবে স্ট্যাবল না,বুঝছি আমি আর তুমিও!!”রাহি জানালো।।

“তুই চুপ থাক!!আমি কল করি!!” এই বলে রুবেল ফোন নিয়ে পুলিশ কে ফোন করতে চলে গেলো,রাহির উত্তরের অপেক্ষা না করে..সবাই নিজেদের মতামত জানিয়ে চলে যায়,রাহির ও কিছু বলা থাকতে পারে সেটা কেও বুঝে না।।

আধাঘন্টা পর,

পুলিশ মেঝেতে পরে আছে কারন তার গালে ধ্রুভ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে..থাপ্পার মেরে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে,এদিকে রুবেল থম মেরে একবার পুলিশের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ধ্রুভের দিকে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

রুবেলা ফোন করার পাচঁমিনিটের মাথায় পুলিশ হাজির,কলিংবেল বাজাতে রুবেল যেয়ে দরজা খুললো।।

“আসুন!!দেখুন কিভাবে একটা পাগল লোক আমার বাড়িতে এসে বসে আছে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য!!” রুবেল বললো।।

“চলুন দেখান!!” পুলিশ জানালো।।

রুবেল পুলিশকে সাথে করে ধ্রুভের রুমের দিকে নিয়ে গেলো,রাহি ঘর থেকে বের হয় নি..চিল্লাফাল্লা ঠিক শুনছে..ধ্রুভ কেবলই শাওয়ার নিয়ে এসে টি-শার্ট পরছিলো আর পুলিশ এসে তার কলার ধরে টান দিলো..কলার ধরে টান দিয়ে হিড়হিড় করে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।।

ধ্রুভের ব্রেইনের প্রতিটা কোষ মনে হচ্ছে আগুনে কে জ্বালিয়ে দিলো,কলার ধরা সাহস কেও অব্দি করে নাই..ধ্রুভ তাকে আর এগোনোর সুযোগ না দিয়ে,তার দিকে ঘুরিয়ে টাইনা এক থাপ্পড়, লোকটি এতো জোরে ছিটকে পরলো যে রুবেল ও তড়াক দিয়ে লাফ দিয়ে উঠেছে..ধ্রুভের রাগ কোনভাবে কমছে না,রাহি এমন আর্তনাদ শুনে বাহিরে আসলো।।

ধ্রুভ যখন দেখলো রাহি বাহিরে আসছে তখন তার মেজাজটা আরো জ্বলে গেলো,রাহির দুই গাল চেপে ধরলো..রাহি ব্যাথতে কুকিয়ে গেলো,রুবেল এগিয়ে আসলে..ধ্রুভ তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে থেমে যেতে ওখানে,রাহি এই নজরের মানেটা বুঝে..এখন বাবা না থামলে,সে বাবাকেও কিছু করে দিতে পারে..রাহি ইশারায় তার বাবাকে না করলো,রুবেল তাটস্থ ধরে দাড়ালো।।

“না করেছিলাম না কারো সামনে আসতে??কেনো আসলে বলো বাইরে??বলো মীরা??!” ধ্রুভ এতো জোরে রাহির গাল চেপে ধরেছে আর চিল্লালো কানে মনে হচ্ছে তালা লেগে গেলো তাদের,রাহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধ্রুভ রাহিকে টানতে টানতে নিজের রুমে যেয়ে রাহির ওড়না টেনে তার হাত বাধলো বেডেএর সাথে,পা বাধলো তার টাউজারের সাথে আর মুখে দিলো কসটেপ তার ব্যাগে ছিলো সেটা বের করে।।

“দিস ইজ ইউর পানিশমেন্ট ফর নাও!!আগে বাইরের টাকে সাইজ করে আসি!!এন্ড লিসেন, ইউর ফাদার ডিড নট ডু দ্যা রাইট থিং!!” ধ্রুভ বলে বেরিয়ে গেলো,এদিকে রুবেল চিল্লাচ্ছে কি করছে তার মেয়েকে নিয়ে..ধ্রুভ বেরিয়ে আসলো যখন রুবেল ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দিয়ে বললো

,”ডোন্ট ট্রাই!!আদারওয়াইজ ইট উইল নট গুড হোয়াট হ্যাপেন নেক্সট!!”ধ্রুভ শান্তভাবে বললো,ধ্রুভের এমন আওয়াজ আর চাহনী দেখে রুবেল বাধ্য হয়ে চুপ থাকলো।।

ধ্রুভ বাহিরে এসে দেখলো পুলিশ পালানোর চেষ্টা করছে,তখনি ধ্রুভ তাকে টেনে এনে তার মেইন পার্টে এক লাথি দিলো..বেচারা আর্তনাদের আরো জোরে চিল্লালো।।

বর্তমান,

“তোকে যেন আমি ত্রীসীমানায় না দেখি??আউট!!” ধ্রুভ চিল্লিয়ে বললো,পুলিশটা অতি কষ্টে দাড়ালো আর কোন রকমে দাড়িয়ে ভৌ দৌড়ে দিলো।।

“এটা আপনার প্রথম ভুল আমার কাছে!!আমি কোন ভুল ক্ষমা করি না,এখানে আপনি মীরার বাবা এইজন্য কিছু বললাম না কিন্তু আমি চুপ থাকবো না?আজ থেকে আপনি বিয়ে হওয়া অব্দি মীরার সাথে দেখা করতে পারবেন না!!” ধ্রুভ বললো।।

“মানে কি??আমার মেয়ে,আমার বাড়ি??আমার বাড়িতে তুমি উটকো হয়ে থাকছো আর আমার বাড়িতে আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারবো না??বলি নেশা ক’বার করো দিনে??যে এখনো ছুটে নি তোমার” রুবেল রেগে বললো।।

“নেশা সাতটা বছর ৯মাস ১৮ ঘন্টা ২০মিনিট ১০সেকেন্ড প্রতি মুহূর্তে করায় আমার মীরা!!যার মাদকতা এতো তীব্র যে আমি দিন দিন ডুবছি তাতে,এই নেশায় ক্ষতি হলেও আমি চোখ বন্ধ করে ও নিতে রাজি!!কিন্তু আপনি আমার মীরার থেকে দূরে থাকবেন??আপনার জন্য মীরা আমার কাছ থেকে দূরে সরলে,আপনাকেও এই দুনিয়া থেকে সরাতে আমি দুবার ভাববো না!!” ধ্রুভ বলেই ধপাধপ পা ফেলে রাহির কাছে গেলো।।

রুবেল অবাকের চরম পর্যায়ে গেছে,তার মেয়ের সাথে দেখা করতে দিবে না এই কিছুক্ষনের আসা ছেলে??আবার তারই বাড়িতে??।।

রাহির কাছে যেয়ে দেখলো ধ্রুভ রাহি কাতরাচ্ছে হাতের বাধন খুলার জন্য কিন্তু মুখে টেপ থাকার কারনে পারছে না সেটা,ধ্রুভ তার কাছে গিয়ে যখন দাড়ালো তখন রাহি ভয়ে একটু পিছু সরলে ধ্রুভ তাকে তার পা টান মেরে সামনে আনলো।।

“কথা কেনো শুনো না আমার??আজ তোমার পানিশমেন্ট হলো তুমি সারারাত এইভাবেই থাকবে!!” ধ্রুভ বললো,রাহি চোখ বড়বড় করে তাকাচ্ছে,মুখে টেপ থাকায় কিছু বলতে পারছে না,ইশারায় অনেক কাকুতি মিনুতি করছে কিন্তু ধ্রুভ তা পাত্তা না দিয়ে তার ফোন নিয়ে বসলো কারন স্মিথ বারবার ফোন দিচ্ছে তাকে আগে ক্লিয়ার করা দরকার।।

রাহি অসহায় চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না,ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার..কি করবে সে??ওইভাবেই হেলান দিয়ে খাটের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিলো রাহি।।

চলবে?

গঠমূলল মন্ত করুন, আমি প্রথম পার্টে যতটা রেসপন্স পেয়েছি তারপর আর পাই নি আফসোস লাগে ভাবি আমারি ব্যর্থতা এখানে..আর একটা কথা রহস্য কখনো একেবারে খুলে না,ধীরে সুস্থে খুলে..ধ্রুভের ক্যারেক্টর টা আমি আরো ফুটিয়ে তুলতে চাই,আপনাদের রেসপন্স দেখলে পরের পর্ব লিখতে বসবো উৎসাহের সাথে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ১০

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব দশ

?

রাহির বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে,রাহির পাশে তার বাবা রুবেল অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন..আর তার সামনের সোফাতে ধ্রুভ পায়ের উপর পা তুলে নির্বিঘ্নে বসে আছে।।

সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে আর তার কথা শুনে রুবেলের চোখগুলো আলুর মতোন হয়ে আছে আর রাহি পায়ের নখ দিয়ে মেঝে খুটাচ্ছে..সে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,কি করবে না কি বুঝাবে একে(ধ্রুভকে) কিছুই বুঝছে না।।

“মানে কি??তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও??আবার এই তিনদিনের ভেতর আবার এই তিনদিন আমার বাড়িতে থাকতে চাও??মজা করছো আমার সাথে??” রুবেল ক্রুদ্ধ হয়ে বললো।।

“আপনার বাসায় সমস্যা হলে আমার বাসায় চলেন??সেখান থেকে না হয় বিয়েটা হবে??” ধ্রুভ ভাবলেশহীন উত্তর দিলো মাথার চুলগুলো উপরে তুলে।।

“মানে কি??আমি আমার মেয়েকে তুলে দিব অজানা অচেনা ছেলের সাথে?” রুবেল বললো।।

“আমি অচেনা অজানা নই!!আমি মীরাকে আগে থেকে চিনি!!আর মীরাকে বিয়ে করতে চাই সেটা ওর সাথে থেকেই সেটা যেখানেই হোক না,আমি ওর সাথেই থাকবো!!” ধ্রুভের ক্লিয়ার উত্তর।।

“মীরা??মীরাটা কে আবার!!” রুবেল হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।।

“বাবা আমি আমি!!” রাহি আস্তে আস্তে উত্তর দিলো।।

“কি মিনমিন করছিস তুই?” রাহিকে জিজ্ঞেস করছে রুবেল।।

“কিছু না বাবা তুমি চলো গিয়ে খেয়ে নাও,এই বিষয়ে পরে কথা বলা যেতে পারে!” রাহি নিঃশ্বাস ফেলে বললো।।

“মানে কি??এখানে কি তামাশা চলছে??এই এক কোথা থেকে এসে বিয়ে করবে বলছে,সেটা আবার আমার বাড়িতে আমার সামনে!!তিনদিনের মধ্যে বিয়ে??আর এই ছেলে নাকি বিয়ে করা অব্দি এখানেই থাকবে??” রুবেল একটু জোরে কথা বললো।।

“বাবা!!” অসহায় কন্ঠে বললো রাহি।।

রুবেল কখনো রাহির সাথে জোর গলায় কথা বলে নি,আজ এইভাবে চিল্লিয়ে বলাতে সে নিজেও গিল্ট ফিল করছে..তার মেয়ে তার জান,এরকম উড়ে আসা জুড়ে বসা লোকের সাথে ত নিজের পুতুলের তিনি বিয়ে দিতে পারেন না।।

“আচ্ছা?আপনি আমার মীরার উপর চিল্লাচ্ছেন কেন?” ধ্রুভ ক্রুদ্ধ চোখে জিজ্ঞেস করলো।।

রাহি বড়বড় চোখ করে ওর দিকে তাকাচ্ছে..তার বাবা তার উপর চিল্লিয়ে কথা বলবে না ত সে বলবে??অবশ্যও সেও চিল্লিয়ে কথা বলেছে আজকে।।

“এই ছেলে এই!!আমার মেয়ের সাথে আমি চিল্লিয়ে কথা বলি আর মেরে কথস বলি তুমি বলার কে?” রুবেল রেগে বললো।।

“আমার মীরার সাথে আমি কাওকে চিল্লিয়ে কথস বলতে দিব না!!আর আমি আপনার এখন গেস্ট+হবু জামাই!!” ধ্রুভ ঘাড় কাত করে বললো।।

“ফর গড সেক বলবি মীরাটা কে এখানে??আমি তুই আর এই লম্বু ছাড়া এখানে ত কেও নেয়,ত ও কাকে মীরা ডাকে??” রুবেল মাথায় হাত দিয়ে নিজের বললো।।

“প্লিজ তোমরা দুজন চুপ করো!!বাবা?তোমার ঘরে চলো আগে!!” রাহি ওর বাবার হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে যাচ্ছে,এদিকে রাহির হাত ধরে টান দিলো ধ্রুভ..রাহি অবাক আর ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে যে তার বাবার সামনে এই ছেলে হাত ধরছে,রুবেল ও বিস্ময়ের চোখে তাকাচ্ছে জাস্ট রাহির জন্য কিছু বলতে পারছে না।।

“এই ছেলে এই!!তুমি আমার মেয়ের হাত ধরো কোন সাহসে??ছাড়ো এখুনি ছাড়ো!” রুবেল এই বলে ধ্রুভের হাত সরাতে লাগলো,ধ্রুভের হাত তিনি সরাতে পারলেন না।।

“আমি আমার মীরার হাত ধরেছি!! কারো পারমিশনের এখানে আমার প্রয়োজন নেয় আমার??” ধ্রুভ স্থির দৃষ্টিতে জবাব দিলো রাহির দিকে।।

এদিকে বেচারী রাহি পরেছে দোটানায়..না তার বাবাকে কিছু বলতে পারছে না এই মীরার আশিককে..মনে হচ্ছে দুইজন দড়ি ধরে টানছে আর ঝুলন্ত হয়ে ঝুলে আছে রাহি।।

“আবার মীরা বলো!!” রুবেল বলে তেড়ে৷ এগিয়ে আসলে,রাহি তাকে থামায়..তাড়াহুড়ো তার বাবাকে তার রুমে নিয়ে যায়,সেখানে তার বাবাকে রুমে থাকতে বলে..সে এসে সব বুঝাবে।।

রাহি তার বাবাকে তার রুমে রেখে এসে ড্রয়িং রুমে আসছে..দেখলো ধ্রুভ কাকে কল করে তার ড্রেস,সু,বডি স্প্রে,মেডিসিন যা লাগে যাবতীয় আধাঘন্টার মাঝে নিয়ে আসতে বললো..কথা বলা শেষে পিছন ফিরে তাকালো,দেখলো সে রাহি দাড়িয়ে আছে,ধীর পায়ে রাহির দিকে এগোচ্ছে সে..তার প্রতিটা ধাপ রাহির বুকের ভেতর ভয়ের তবলা মনে হচ্ছে কেও বাজাচ্ছে।।

“মীরা?” ধ্রুভ এসে হিসহিসিয়ে রাহির চুল কানে গুজে দিয়ে বললো।।

“উম?” রাহির মনে হচ্ছে গলায় আটকে গেছে ধ্রুভের এমন কাছে আসাতে।।

“আমার থেকে তোমাকে কেও আলাদা করলে তাকে আমি জ্যান্ত রাখবো না!!” রাহির কানে ফিসফিস করে বললো ধ্রুভ,রাহির জান মনে হচ্ছে এখুনি বেরিয়ে যাবে..কথাটা যে তার বাবাকে মিন করে বুঝালো তাতে কোন সন্দেহ নেয়..বাবার কিছু হয়ে যাবে এই কথা ভাবতেই রুহ টা কেপে উঠছে তার।।

“হেই মীরা ডোন্ট স্কেয়ার্ড!!তুমি আমার থাকলে,আমি কাওকে কিছু করবো না কিন্তু কেও তোমার থেকে আমাকে সরালে তাকে আমি ঠিকও রাখবো না!!” ধ্রুভ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

রাহি যখন ভাবছিলো ধ্রুভের কথার মিন কি কি হতে পারে তখন ধ্রুভ রাহিকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো তার দিকে ঘুরিয়ে,তারপর রাহির ডান গালের কালো কুচকুচে তিলের দিকে চেয়ে রইলো,এমন চাহনিতে রাহির প্রচন্ডভাবে অস্বস্তিকর লাগছিলো..উঠতে গেলে ধ্রুভ তার দিকে কটমট করে তাকায়,রাহির বুকের ভেতরটা দপ করে নিভে গেলো..অন্তত এখান থেকে বের হতে না পারলে সে কিছুই করতে পারবে না তার কথা শুনা ছাড়া।।

ধ্রুভ তার বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে রাহির কুচকুচে কালো তিলটার উপর একটু ছুয়ে দিলো,রাহির গায়ের পশম দাড়িয়ে গেলো এমন ছোয়াতে..ধ্রুভ টুপ করে রাহির ওই কালো কুচকুচে তিলের উপরটা ছুয়ে দিলো ঠোট দিয়ে,শুষে নিতে লাগলো রাহির তিলটা..ধ্রুভের এমন বিহেভিয়ার রাহি একদম রোবট হয়ে গেছে,চোখের জল জমে গিয়ে যখন ধ্রুভের হাতে পরলো তখন ধ্রুভ তার দিকে তাকায়।।

“ম্যারি মি ইন থ্রি ডেইজ!!” ধ্রুভ চোয়াল শক্ত করে বললো।।

রাহির অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছে,তার মাথাতে ঢুকছে না এই লোক কি বলছে..বিয়ে করতে হবে আর সেটা আবার তিন দিনের মাঝে??।।

“এইভাবে কিভাবে??” রাহি অনেক কষ্টে বললো।।

“আই ডোন্ট নো!!তুমি রাজি হও?তুমি এখন বাসায় গেলে আমি সেখানে যাবো,সেখানেই তিনদিন থাকবো আর বিয়ে করে সেখান থেকে আসবো!!” ধ্রুভ বললো।।

রাহির সব কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,তিনদিন সে তার বাড়িতে থাকবে??বাবাকে কি বলবে??এএই কার পাল্লায় আল্লাহ তাকে ফেললো।।

“আর যদি সেটা না শুনো,ভুলে যাও বাড়ি যাওয়ার কথা?সেটা আর তোমার এই জনমে হবে না মীরা?” ধ্রুভ জানালো

ধ্রুভ কথা বলার সময় একটা বিড়াল খুব মেও মেও করছিলো,যখনি বিড়ালটা ম্যাও ম্যাও করছিলো ধ্রুভ চোখমুখ কুচকাচ্ছিলো,শেষে কথাটুকু বলে বিড়াল কোথায় ছিলো তাকে টেনে বের করে,এক লাথি দিয়ে বাহির ফেললো..রাহি ভয়ে এক প্রকার মৃদু চিৎকার দিয়েছে,বিড়ালটাও লাথি খেয়ে অনেক জোরে আর্তনাদ করেছিলো,রাহির চিৎকার শুনে ধ্রুভ তার কাছে তড়িৎ গতিতে ফিরে আসলো।।

“তোমার আমার মাঝে কাওকে আসতে দিবো না আমি!!দেখছিলে না কত ডিস্টার্ব করছিলো এওই ব্লাডি বিচ ক্যাট টা,এইজন্য মেরেছি!!তোমাকে ত ভালোবাসতে চায়,যে ডিস্টার্ব করবে তাকে আমি সরিয়ে ফেলবো!!” ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বললো।।

রাহি ভয়ে তার দিকে তাকাতে পারছে না,ধ্রুভ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“সো হোয়াটস ইউর ডিসিশন মীরা?”

“যা বলবেন তাই হবে!!আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন!!” রাহি উত্তর দিলো কারন এই মুহুর্তে তাকে মানা ছাড়া আর কোন উপায় নেয়,বের হতে হবে এখান থেকে আগে।।

“দ্যাটস মাই মীরা!!” ধ্রুভ মুচকি হেসে রাহির কপালে চুমু দিয়ে তার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।।

বর্তমান,

কলিংবেলের আওয়াজে রাহির ধ্যান ভাঙলো,ধ্রুভ এখনো এখনো তার হাত ধরে আছে..রাহি ঝট করে সরে গেলো,ধ্রুভ তাকালো তার দিকে।।

“কলিংবেল বাজছে দেখি কে এসেছে” রাহি আমতা আমতা করে বললো।।

“স্টপ!!দ্যাট উইল বি মাই ম্যান!!দে ব্রিং মাই থিংস!!তোমাকে আমার সামনে ছাড়া আর কোন ছেলের সামনে যাওয়ার পারমিশন দেয় নি আমি?শুধু আমি ছাড়া আর কোন ছেলের সামনে চোখ তুলে তাকাবে না” ধ্রুভ রাহিকে থামিয়ে দিয়ে কথা গুলো বললো।।

রাহিকে পর্দার আড়াল করে, দরজা খুলে ধ্রুভ তার লোকের কাছ থেকে তার জিনিসগুলো নিলো..তিনটা বড় বড় ব্যাগ,কি আছে এতে কে জানে??

“ইশ চাহাত কো তুম মাজাক না সামঝো”
“তুমাহরে ইস্ক অর নাশে মে কিতনা ডুবে হুয়ে হাম,বাস ইতনাহি মানলো”

ধ্রুভ রাহির কাছে এসে তাকে দেয়ালে দিকে ধরে,ঠান্ডা গলায় বললো রাহির থুতনী উচু করে ধরে।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,রেসপন্স করলে আমি অনেক খুশি হই।