Monday, August 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2014



নীলাময়ীর প্রেমে পর্ব ৫

0

#নীলাময়ীর_প্রেমে

#Written_by_Tarin_Jannat
#পার্ট০৫

নিজেদের সবকিছু ঠিকটাক মতো নিয়ে কটেজ থেকে
পশ্চাদপসরণ করে ফাহানরা।কাপ্তাই যাওয়ার অভিপ্রায় তাদের। কয়েকদিন পরে সেখান থেকে ফিরে অন্য কোথায় যাওয়ার তফসিল করবে। পাহাড়ী এলোমেলো রাস্তা অতিক্রম করে তারা এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। ভোরের সতেজ বাতাস গায়ে মাখানোর জন্য গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দেয়।এবং অনুভূব করতে লাগে ভোরের মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস।

আবির আর নোভা সামনে বসেছে আর ফাহান পেছনে।
আকস্মিকভাবে আবির কাউকে দৌড়ে আসতে দেখে অনেক জোরেই গাড়ির ব্রেক কষে। ফাহান আর নোভা সামনের দিকে ছিটকে পরে কিন্তু তেমন আঘাত পায় নি। আবির দেড়ি না করে দ্রুতগতীতে বেরুয় দেখার জন্য কে গাড়ির সামনে এভাবে দৌড়ে এসেছিলো।মানুষটি আঘাত যে পেয়েছে তা নিশ্চিত। আবিরের পেছনে ফাহান নোভা বের হয়।

বেড়িয়ে দেখে একটা মেয়ে নিথরভাবে পরে আছে।মুখ দেখা যাচ্ছে না। মেয়ে বলে ফাহান আর আবির স্পর্শ করতে দ্বিধাবোধ করছিলে।তাই নোভা গিয়ে হাঁটু মোড়ে বসে মেয়েটিকে নিজের দিকে ফেরাই। হঠাৎ চেনা মুখটি দেখে ফাহান আতকে উঠে। দৌড়ে গিয়ে আলতো করে টেনে নিজের কোলে নিয়ে নেয়।

মেয়েটি রাহাই ছিলো। দৌড়ানোর সময় হুট করে ফাহানদের গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে পরে যায়।

ফাহানের ভেতরে অসম্ভব ভয় করছিলো।বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভূব করছিলো। মুখ থেকে চুল সরাতেই দেখে কপালের একপাশে ফেটে রক্ত পরছে।

দেড়ি না করে কোলে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে দেয়। নোভাকে দ্রুত ফাস্টএইড বক্স বের করতে বলে। রক্ত পরিষ্কার করে বেন্ডেজ লাগিয়ে দেয়। আবির বাইরে দাড়িয়েই ছিলো। তখনি পেছনে কাঁধে হাত দেয়।পেছন ফিরতেই দেখে দুটো লোক দাড়িয়ে আছে। চোখ মুখ বিষন লাল চোখে বার বার হাত দিচ্ছে। তাতে আবির ভ্রু কোঁচকে তাদের দিকে তাকায়।

–“এখান দিয়ে কোনো মেয়েকে দৌড়ে যেতে দেখেছেন ভাই”???(ভারী কন্ঠে লোকটি বলে উঠে)

তখনি আবিরের মাথা চক্কর দিতে লাগে।দৌড়ে তো রাহা গিয়েছিলো।যদিওবা তারা তখনো রাহার নাম জানতো না।বুঝতে পেরেছে তাদের থেকে বাঁচতেই রাহা দৌড়ে এসেছিলো।

ফাহান লোক দু’টোকে দেখে এবং তাদের কথা শুনার সাথে সাথে মেজাজ গরম হয়ে যায়।কারন বুঝতে পেরেছিলো তাদের জন্যই রাহা আঘাত পেয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে উল্টো এক্সিডেন্ট করে বসেছে।

রাহাকে নিজের বুকের সাথে আরো চেপে ধরে লোকগুলোর থেকে আড়াল করতে। আবিরও ঠান্ডা মাথায় একটা বুদ্ধি বের করে।

–“হ্যাঁ দেখেছিলাম তো”?? (আবির)

–“কোনদিকে গিয়েছে বলেনতো ভাই”??(ঝাঁঝালো কন্ঠে)

–“ওইতো ওই পাশে ঘন জঙ্গল দেখতে পাচ্ছেন। সেদিকেই নামতে দেখেছিলাম। “আমি ভাবলাম হয়তো ওদিকে মেয়েটির বাড়ি”!!

–“ওইদিকে কোনো বাড়ি নেই,,নদী এবং গাছ-বাগান রয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে”।

বলেই লোক দুটো সেইদিকে গিয়ে সাবধানে নিচে নামতে লাগলো। পাহাড়ী উঁচু রাস্তা তাই নিচে নামতে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আবির ও হাফ ছেড়ে বাঁচে।

–“আশেপাশে কোনো হসপিটাল বা মেডিক্যাল স্টোর আছে কী না একটু খুঁজ নে”!(ফাহান)

–“নেই ব্রো!!”’ চন্দ্রঘোনায়” আছে হসপিটাল,মেডিক্যাল স্টোর সব।”(আবির)

–“তাহলে সেখানে চল,,দেখ এখনো সেন্স আসেনি”প্লিজ তাড়াতাড়ি চল।”(ফাহান)

–“হ্যাঁ,,কিন্তু রাস্তা তো উল্টো!! (আবির)

ফাহান চোখ লাল করে তাকাতেই আবির চুপচাপ গাড়িতে বসে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তখনি গাড়ির পাশে রাহার ব্যাগগুলোর দিকে চোখ যায়।আবার বের হয়ে সেগুলা নিয়ে পাশের সিটে রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

ফাহানের কেমন জানি অস্থির লাগছিলো।দম বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছিলো।পাশ থেকে নোভা ফাহানকে বেশ গভীরভাবে লক্ষ করছে।

–“”ফাহান”??(নোভা)

–“হুমম”

–” ও কালকের সেই মেয়েটা না?? যার পেছনে ছুটেছিলি,,কিন্তু তোকে পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলো??””

নোভা কথাটা বলতেই আবির পেছনের দিকে তাকায়। দেখে ফাহান খুব যত্নে নিজের বুকে আগলো রেখেছে অচেনা এই মেয়েটিকে। হঠাৎ মুছকি একটা হাসি চলে আসে আনমনে। তারপর আবারো ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।

নোভার কথা ফাহানের গায়ে লাগে বেশ।তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠে…

–“হ্যাঁ তো?? কোনো সমস্যা??

–” নাহ! আমার কোনো সমস্যা নেই।ইদনিং তোকে বড্ড অচেনা লাগছে তাই…

আবারো ফাহান রাগী দৃষ্টি নোভার দিকে ছুড়ে মারে।তাতে কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারো বলে উঠে…

–” ফাহান এভাবে জড়িয়ে ধরে আছিস কেন?? ছাড় ওকে আমি আছি কেন?? আমিই ওকে ধরছি?”

বলে যেই রাহাকে ধরতে যাবে…ফাহান বলে উঠে…

–“ডোন্ট!!(হাত দিয়ে এগিয়ে দিয়ে) এভাবেই থাক।নড়াচড়া করলে ওর ব্যাথা লাগতে পারে।

ফাহান আর কি বলবে রাহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে বেশ ভালো লাগছিলো।বুক থেকে ছাড়ানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তার।যদিওবা এটা ঠিক নয়।কোনো মেয়েকে এভাবে তারই অজন্ততে স্পর্শ করে জড়িয়ে ধরা ।যা একেবারেই অনুচিত। কিন্তু নিজের মনটাকেও বুঝাতে পারছিলো না সে।

নোভাকে অখত্যা একটা অযুহাত দিয়ে দেয়। নোভার দিকে ফাহানের চোখ যেতেই দেখে মিটিমিটি হাসছে।যা মুহুর্তে ফাহানের রাগকে দ্বিগুন করে তুলে। ফাহানের চোখে চোখ পরতেই নোভা ভয় পেয়ে বাইরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।



খুবই কড়া একটা পার্পিউমের স্মেল রাহার নাকে আসে। বন্ধ চোখে কোনো মতেই খুলতে পারছে না।কিন্তু কারো গরম নিশ্বাস নিজের উপর আচড়ে পরছে তা বেশ অনুভব করতে পারছে। নিজের চোখের সাথে যুদ্ধ করে অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকায়। চোখ মেলতেই মাথায় কপালে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূব করে। সাথে কেউ ওকে অনেক যত্নে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে রেখেছে সেটাও অনুভূব করতে পারে। বুঝার জন্য অতি কষ্টে মাথা হালকা নিচু করতেই দেখে পুরুষালী হাত।মুহুর্তে ভয়ে আতকে উঠে।কোনো ছেলে তার এতো কাছে ভয় পাওয়ারই কথা তার সাথে যে……….????

এবার আস্তে করে মাথা তুলে তাকাতেই ফাহানকে দেখে আবারো আরেকটা ঝাটকা খায়।মুহুর্তে ছিটকে সরে যায় ফাহানের বাহু থেকে। আশেপাশে তাকিয়ে কোথায় আছে বুঝার চেষ্টা করছে। রাহার এভাবে সরে যাওয়াই ফাহান অপ্রস্তুত হয়ে পরে।

–“আম আমি কোথায়?? আর আপনারা? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?? গাড়ি থামান?? (চেঁচিয়ে)(উত্তেজিত হয়ে)

হঠাৎই মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।মাথা দুপাশে চেপে ধরে মুহুর্তে মুখটা একটা শব্দ বেরিয়ে আসে ‘”আহ”

–”হেই হেই কাম ডাউন সিস,,তুমি মাথায় আঘাত পেয়েছো এভাবে কথা বললে আরো বেশি ব্যাথা করবে।(নোভা)

তখনি রাহার মনে পরে যায় কিভাবে দৌড়ে আসার সময় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো।

–উনাকে আমার পাশ থেকে সরে যেতে বলেন আপু!(ফাহানকে)

নোভা ফাহানের দিকে তাকায় একবার। দেখে ফাহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নোভা চোখ দিয়ে ইশারা করে নিজেকে সামলে নিতে বলে।তারপর নোভা রাহাকে সরিয়ে নিজে মাঝখানে বসে।

রাহা ভয়ে কাঁপছিলো প্রচুর। কোনো ছেলেকে এভাবে নিজের নিকটে দেখে ঘাবরে যায়।তাও আবার অচেনা কেউ।

নোভা পানি এবং ব্যাথার মেডিসিন দিলে রাহ খেয়ে নেয়। তাতে ব্যাথা হালকা কমে যাবে।

–দেখো আমাদের ভয় পেতো হবে না। আমরা তোমার ক্ষতি করবো না।বরং ফাহান এবং আবির তোমাকে হেল্প করেছে(আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে) ওই লোক দুটো থেকে তোমাকে বাঁচাতে। সো ডোন্ট ওয়ারি।আমরা।এখন তোমাকো ড. কাছে নিয়ে যাবো।

ড. নাম শুনতেই রাহা সাথে সাথে বিষম খায়।কোন ড. এর কাছে নিয়ে যাবে।এখানে সবাই রাহা কে চিনে। তার বাবার নাম ডাকের কারনে। এখন সেখানে গেলেই তো বাসায় খবর চলে যাবে।এসব ভাবতে ভাবতে রাহার ভয়টা চলে যায়। রাহা চট করে বলে উঠে..

–‘নো নো আম ফাইন!! আমি কোথাও যাবো না প্লিজ আপু!! মানে দেখেন আমি ঠিক আছি। আমাকে সামনে নামিয়ে দিলেই হবে।(রাহা)

–“আপনার বাসার এড্রেস দেন। আমরা আপনাকে নামিয়ে দিবো”।(আবির)

বাসায় যাওয়ার কথা শুনে এবারতো রাহার প্রান যায় যায় অবস্থা। এখন কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না আর।

–“আমি বাসায় যাবো না। মানে আমি ১ মাসের জন্য ভ্রমনে বেরিয়েছি।বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করছিলো মেন্টালি রিপরেসমেন্টের জন্যে বের হয়েছি।”
(রাহা)

–“তাই বলে আপনি একা বের হবেন?? বিপদে পরতে পরতে বেঁচে গিয়েছেন। আমরা নাহলে তো…..(রাহার কথা শুনে ফাহান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে)”

রাহা ফাহানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়,,কোনো উত্তর দেয় নি ফাহানের কথায়…

–উপস!! এতো কিছু মধ্যে তোমার নামটায় জানা হলো না!! নাম কী তোমার?? মানে তোমার সম্পর্কে বলো একটু আমাদের??(নোভা)

–আমি রাহা ইসলাম। অনার্স ফাস্ট ইয়ারের স্টোডেন্ট! আমার সম্পর্কে জানার মতো আর কিছুই নেই..(বলেই একটা হাসি দেয়)

আরচোখে ফাহান বারবার রাহাকে দেখছিলো।বেহায়া চোখকে সংযত রাখাটা নিজের খাবুতে নেয়।তাই বার বার আরচোখে তাকাচ্ছিলো।আজো নীল রঙের গাউন পরেছে রাহা।তা দেখে ফাহান মনে মনে হাসতে লাগলো এটা ভেবে যে হয়তো রাহার নীলরঙটা অতিরিক্ত-মাত্রায় প্রিয়। নামটা শুনে অদ্ভুদ এক ফিলিংস হয় মনের মধ্যে। পরক্ষনে চোয়াল শক্ত করে নিজের আবেগকে সংযত করার চেষ্টায় লেগে পরে। চায়না সে কারো মায়ায় জড়াতে। এ মায়াটা বেশ ভয়ংকর পরিস্থিতে নিয়ে যায় একসময়। যেখানে সুখ থাকলে সুখ পাবে দুঃখ থাকলে দুঃখ!!

–“আচ্ছা ফাহান আমরা তো অল-মোস্ট লিচুবাগান চলে এসেছি।এখান থেকে সামনে কিছুদূর গেলেই ফেরীঘাট!! সেখান থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়!! তো কি বলিস কোথায় যাবি।(আবির)

–“বান্দরবান চল”তোকে বলেছিলাম গতবার বান্দরবান আসলে এবার”রোমাক্রি’ “আমিয়াখুম”নাফাখুম”কেওক্রাডং” বগালেক”’তিনাপ সাইতার”’ সবজায়গায় যাবো। তখন হাতে সময় কম ছিলে বলে বেশিক্ষন থাকতে পারিনি।এবার সব মন দিয়ে উপভোগ করতে চায়””(ফাহান)

রাহা তো হা করে ফাহানের কথাগুলো শুনে নেয়। এসব জায়গার নাম শুনে রাহা তো পাগল প্রায়। এদের দেখে ভালো মানুষ মনে হচ্ছে,,অন্তত ওর ক্ষতি করবে না সেই বিশ্বাস রাখতে পেরেছে।তাদের সাথে ওই জায়গাগুলোতে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারবে না রাহা আর। তাই নোভাকে বলে উঠে..

–“আপু আপনাদের যদি সমস্যা না থাকে তাহলে আমিও আপনাদের সাথে যাবো।”(কিউট ফেস করে)

–“”অবশ্যই!! ফাহান তো কোনো আপত্তি নেয় তো??

ফাহান কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না কাল পর্যন্ত যাকে নিজেই আনমনে খুঁজে চলেছিলো সেই তাদের সাথে থাকবে ভাবতেই কেমন এক ভালোলাগা কাজ করছিলো। নোভার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

–আমার আরো একটা আবদার আছে রাখবেন??”(রাহা)

–হ্যাঁ বলো।(নোভা)

–“আমি বান্দরবান যাওয়ার আগে একটা যায়গায় যেতে চায় বিশ্বাস করুন জায়গাটাতে গেলে আপনাদের ভালো লাগবে বিষন।ভালোলাগার মতো জায়গা??যাবেন???

–কোথায়?? জায়গার নামটা বলো?? আমরা তো ফেরী পার করে ফেলেছি!!(আবির)

–”’বাঙ্গালখালী”’ আপনারা গেলেই বুঝতে পারবেন কতো সুন্দর জায়গা আসতে মন চায়বে না। আর হ্যাঁ এখান থেকে পানি এবং খাবার নিতে হবে।অনেক দূর মঝরাস্তায় কোনো খাবারের দোকান পাবেন না।কারন অনেক উঁচু পাহাড়ী রাস্তা সেখানে।মানে আমরা বর্তমান অবস্থান থেকে আরো উপরের দিকে যাবো।সেখান থেকে আপনাদের মিষ্টি পানিও খাওয়াবো। আর খাবার একেবারে ”’বাঙ্গালখালী ”’ বাজারে গেলেই পাবোন।

রাহার কথা শুনে এবার ফাহাম, আবির নোভা একে-অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।জায়গাটা বেশ ইউনিক মনে হচ্ছে।এবার তো না গেলে আফসোস থেকে যাবে।

চলবে

নীলাময়ীর প্রেমে পর্ব ৪স

0

#নীলাময়ীর_প্রেমে

#Written_by_Tarin_jannat
#পার্ট০৪

কটেজে ফিরেই ব্লেজার খুলে ছুড়ে মারে ফাহান।আজকের মতো ইনসাল্ট কখনো হয়নি সে।ইভেন কখনো ভাবেনি এভাবে সবার সামনে নিজেকে ছোট হতে হবে।তার দোষটায় বা কোথায়??সে তো রাহার ফোনটা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলো দেখা হয়েছিলো বলে। দেখা না হলে হয়তো ফোনটা নিজের কাছেই রেখে দিতো।

–“এই ফোনের জন্য সব হয়েছে” (বলেই ছুড়ে মারতে গিয়েও থেমে যায় কারন চাপ পরে স্ক্রিনের লাইট জ্বলে উঠে,,এবং রাহার হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠে,,ফেলতে গিয়েও ফেলে না কারন হাত আর সামনে আগাচ্ছিলো না)

ফোনটা আগের ন্যায়ায়ে রেখে দিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে যায়। বের হতেই দেখে আবির আর নোভা দাড়িয়ে আছে। তাদের চেহেরার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেনো ফাহান কোনো অপরাধ করেছে।আর তারা সেই অপরাধের কারন জানতে এসেছে।

–“হুয়াট”? (ফাহান)

–“মেয়েটা কে?? “এভাবে পেছনে ছুটেছিলি কেন”??(সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে)

–“আমারও সেম প্রশ্ন?? ” Who is she fahan”??

ফাহান তাদের কথা আর কানে না নিয়ে ব্যাগ থেকে নীল রঙের একটা টি-শার্ট নিয়ে দুজনের সামনে গিয়ে দাড়ায় তারপর হালকা ধাক্কা দিয়ে দুজনকে দু’দিকে সরিয়ে দেয়।

–“”Keep your questions to yourself”!!

বলেই টি-শার্ট গায়ে জরিয়ে বেরিয়ে যায় কটেজ থেকে।
!
!
!
!

মিয়ান : দেখ রাহা,, স্যাররা প্রত্যেক বাসে চেকিং দিচ্ছে কেউ বাদ পরেছে কি না জানতে..এখন তুই না গেলে তোর সিট খালি থেকে যাবে,,তখন কিন্তু…

–“স্টপ” (বলেই নিজের ফোনটা নিয়ে কাউকে যেনো কল দেয়?)

{চিটাগং এর ভাষা ইউস করছি কারো সমস্যা না হওয়ার জন্য ট্রান্সলেট করে দিয়েছি}

–“হ্যালো! রাহান তুই হনডে?? জলদি আয়ছুনা! বাস এহন ছাড়ি দিবু! “(হ্যালো রাহান তুই কোথায়?? জলদি আয় না!বাস এখন ছেড়ে দিবে)

–“আইর আপু! আরেক্কানা থিয়ে!! (আসছি আপু আরেকটু দাড়াও)

–‘”দেরি নগরিস সরে আয় যা..(দেরি করিসনা শীগ্রই এসো)

বলেই রাহা ফোনটি কেটে দে।তাকিয়ে দেখে মিয়ান হা করে এবং অবাক হয়ে ওর কথাগুলো শুনছিলো।

-“”মুখ হাটট মাছি ডুকিবো!! (মুখ বন্ধ করো মাছি ডুকবে)

সাথে সাথে মিয়ানের হা বন্ধ করে ফেলে। এই মাঝে মাঝে রাহার মুখে অদ্ভুদ ভাষাগুলো শুনে মিয়ানের মাথা হ্যাং হওয়ার উপক্রম! তবুও নিজেকে সামলে নেই মিয়ান।

–“”তুই তো চিটাইংগা না,,তাই আমাদের ভাষাও বুঝবি না,তাই এই ছোট মাথায় এতো চাপ নিস না”!!

–“”রাহা আপু আঁয় আইস্সি!!(রাহা আপু আমি আসছি,,[রাহার ভাই রাহান কথাটা বলে])

রাহানের কথা শুনে রাহা এবং মিয়ান দুজনের ওর দিকে তাকায়। “একি বোরকা পরা কেন তোর ভাই”?? মিয়ানের প্রশ্ন।

–“তোকে এক্সপ্লেইন করার সময় আমার হাতে নেই”যা বাসে গিয়ে উঠে পর আর কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে রাহানকে দেখিয়ে দিবি” [মিয়ানকে রাহা কথাটা বলে]

-“এবার যা আমি আসছি,”রাহান মিয়ানকে ভালোভাবে বেন্ডেজ করিয়েই আমাদের বাসায় নিয়ে যাবি।বাকিটা ওই বলে দিবে সবাইকে,,আর তুই সাবধানে থাকিস,,তোর বাপ কী করে না করে তার খবর দিবি আমায় “!!!

পটাপট কথাগুলো বলেই রাহা নিজের মুখ ডেকে রাস্তা থেকে সোজা জুমুরের ভেতরে চলে যায়।যাওয়ার সময় রাতের খাবার ও সাথে করে নিয়ে যায়।

যেতেযেত আবারও আচমকা ফাহানকে দেখতে পায়। এবার আশেপাশে যাওয়ার আর পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না। ফাহান ক্রমস সামনের দিকে এগিয়ে আসছিলো।এবার হয়তো রাহার আর শেষ নিস্তার নেই। তাৎক্ষণিক রাহার নিজের বোধশক্তিকে কাজে লাগায়,,উল্টো দিক মুখ করে নিচে বসে যায় কিছু খুঁজার বান করতে লাগলো।

ফাহান ধপাধপ পা চালিয়ে রাহার পাশে কেটে চলে যায়। ফাহান যেতেই রাহা হ্রাসকরণ হয়। দেড়ি না করে দ্রুত পা চালিয়ে সেই জায়গাটা প্রস্থান করে।




অসহ্য মাথা ব্যাথা করছিলো ফাহানের।এটাই তার সমস্যা অতিরিক্ত রাগ তার মাথায় পাহাড় সমান যান্ত্রনা এনে দিতে দুর্দম!! এই মুহুর্তে স্ট্রং ব্ল্যাক কফি খুবই হেল্পফুল হবে ফাহানের জন্য। তাই সেও কাঠের রেস্টোরেন্টে যায়।

“”জুম রেস্তোরা” মাত্র একটায় রেস্টোরেন্ট। সকল প্রকার খাবার,পনীয়,স্ন্যাকস, মূলত যা অর্ডার করবেন তাই পেয়ে যাবেন অনায়াসে!

ফাহান একটা ব্ল্যাক কফি অর্ডার করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। উপরে অসম্ভব সুন্দর ছাউনি আর চারপাশে সচ্ছিদ্র!! ঠান্ডা বাতাস সবার চুল উড়ে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ফাহান বসা থেকে উঠে কোনায় চলে যায়। সেখান থেকে নিচে তাকাতেই অদ্ভুদ অনুভতির বিচরন হয় তার মাঝে। উপর থেকে নিচে রাতের আধারের সাথে লাইটিং দেখা যাচ্ছে যা নদীতে পরে নদীর সুন্দর্য্যকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলে। ফাহানের কাছে বেশ আকর্ষনীয় লাগছে। ওর হাইটের ফোবিয়া নেই বলেই ওর কাছে সুশোভন লাগছে!!!

কফি আসতেই কফি নিয়ে বসে পরে চেয়ারে।পকেটে হাত দিয়ে নিজের ফোন বের করতে গিয়ে দেখে ফোনটা সেই মেয়েটির। মানে “মিস নীলরঙের”

হঠাৎই কৌতূহল জন্মায় ফাহানের ফোনটি দেখার। নিজের কৈাতূহল আটকাতে না পেরে ফোনটি আনলক করে। করেই দেখে একটা নাম্বার থেকে দশটার মতো কল আসে বিকালে এখন তো সন্ধ্যা। যখন ফোন দিয়েছিলো তখন কনসার্টে মিউজিকে সাউন্ডের কারনে শুনতে পায়নি হয়তো।

কফি শেষ করে কটেজে ফিরে যায়।গিয়ে দেখে আবির নেই হয়তো নোভার সাথে।দরজা আটকিয়ে বিছানায় বসে ভাবছিলো ফোন দিবে কী না??

পনেরো মিনিট যাবত ভাবার পর সিদ্ধান্ত নেই ফোন দিবে সেই নাম্বারে।যেই ভাবা সেই কাজ দিয়ে দেয় কল।



রাহা বিছানায় বসে ব্যাংক থেকে তুলে আনা টাকা গুলো প্রাক্কলন করছিলো। যা তুলেছে তাতে আগামী ছয়মাস ভ্রমন করতে পারবে ভিন্ন জায়গায়।তাছাড়া কার্ডতো আছেই। ব্যাঘাত ঘটায় একটা ফোনকলে বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাম্বারটা ওর নীলরঙের ফোনটির। সাথে সাথে ফোন রিসিভ করো।সালাম দেয়।

-অপরপাশ থেকে ফাহানের বুক ধক করে উঠে এতো মিষ্টি কন্ঠ শুনে।কন্টে কোনো উদারা নেই। কী নিখুতভাবে শুনাচ্ছিলো ফাহানের কানে।অদ্ভুদ এক শিহরণ ভয়ে যায় শরীর দিয়ে অথচ তার রাগ করার কথাছিলো। বিকালের সেই কান্ডটার জন্য।

–“এই যে কে আপনি!! ফোন দিয়েছেন অথচ চুপ করে আছেন।তো আমার মোবাইল যেহেতু আপনার কাছে আছে।ফোনটা নিশ্চয় আমার ফোন আমাকে ফেরত দেওয়ার জন্য করেছেন। তো এড্রেস দেন আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”(ঝাঁঝালো কন্ঠে)

এতোক্ষন মিষ্টি কন্ঠ শুনলেও ঝাঁঝালো কন্ঠে ফাহানের ধ্যান ভাঙে।বেশ ঝাঁঝালো হলেও ফাহানের শুনতে বেশ ভালো লাগছিলো। এবং আরো চমকিত হয় শেষের কথাটি শুনে”এড্রেস দেন আমি গিয়ে নিয়ে আসবো””
তারমানে ফোনটা সেই মেয়েটির।আরেকটু সিউর হওয়ার জন্য আবারো নিরবতা পালন করে।

–“”এই যে আপনি আমার ফোন ফেরত দিবেন কী না? “”

এবার ফাহান চট করে ফোন কেটে দেয়।এবং মোবাইলে প্লাইট মোড অন করে দেয়।বাঁকা হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোনায়।!!




সকাল ছয়টায় রাহা ব্যাগপত্র গুছিয়ে কটেজের বিল পে করে কটেজ থেকে বেড়িয়ে যায়।উদ্দেশ্যে “চিৎমৌরম”যাবে।যাওয়াটা খুব সহজ হলেও আসাটা খুবই কঠিন সেখান থেকে। কারন ২৫১+ থাক সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামা ইজি বাট উঠে আসা অনেক টাফ।

“”চিৎমৌরম”” উপভোগ করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বাংলা শুভনববর্ষের দিন।সেদিন বিরাট এক মেলা বসে।কিন্তু রাহার কাছে জনমানবহীন সময়েই “”চিৎমৌরম।” ভালো লাগে। নদাী পার হয়ে সেখানে গিয়ে সর্বপ্রথম দোলনায় উঠে দোল খাওয়ার জন্য।

এরপর সেখান থেকে পাশে একট ফুড-কর্নারে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। সাড়ে সাতটা ভেজে যাওয়ার ওর অনেক কষ্টে উঠে আসে। উঠতেই সামনে দু’জনকে দেখে ভয়ে আতকে উঠে রাহা।

রাহা এখানে কীভাবে এলো?? এদের রাহার খুঁজ কে দিয়েছে ভাবতেই রাহার মাথার ঝিমঝিমানি বেড়ে যায়।

–“”বাহ একা একা ঘুরাফেরা করছো।বেশ ভালোই তো কিন্তুর আমার জন্য সেটা ভালো নয়। “তাই তো তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।আফটার-অল ইউ আর মাই পার্সনাল প্রপার্টি..(বলেই বিশ্রীভাবে হাসতে লাগলো)

যেই রাহাকে ধরার জন্য হাত বাড়ায় রাহা পেছন থেকে হাত সামনে এনে মরিচের ঘুড়া ছুড়ে মারে তাদের চোখে এবং মুহুর্তে দৌড় দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।তবুও তারা থামেনি চোখ হাত দিয়ে অসহ্য যান্ত্রনা সহ্য করেও রাহার পেছনে দৌড় লাগায় রাহাকে ধরতে।ততক্ষনে রাহা অনেকটা দূর চলে গেছে।জায়গাটা বেশ নিরিবিলি বলেই তাদের দৌড়াতে সমস্যা হচ্ছে না।

রাহা দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় একটা গাড়ির সাথে।ধাক্কা লাগে এবং সেখানেই সেন্স হারায়।

আর গাড়ি থেকে দ্রুত বের হয়….

??(চলবে)??

কাঠগোলাপ পর্ব ২৬ এবং শেষ পর্ব

2

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ছাব্বিশ

?
রাহি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,মানুষ ঠিক কতটা নিম্ন পর্যায়ে গেলে এমন কাজ করে??

“তাদের আপনি কোথায় পেলেন??” রাহি জিজ্ঞেস করলো।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

সেদিন তোমাকে হসপিটালে এডমিট করার পর,আমি মাইক্রফোনটা ল্যাবে পাঠাই তারপর তারা খোজ চালায় যে এটার মধ্যে কি আছে??অতি চালাকের গলায় দড়ি বলে একটা কথা আছে না??তারাও ঠিক চালাকি করতে যেয়ে এই ভুলটা করেছে তা হলো মাইক্রোফোনে তাদের অজান্তে লোকেশন সেট হয়ে গেছে..আমি দুইদিন পর যখন স্মিথকে ডাকি মিথ্যা বলে এই যে আমার শরীর খারাপ করছে মেডিসিন না নেয়ার কারনে..উনি কথাটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেছিলেন,দ্রুতভাবে মেডিসিন নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছিলেন..উনি যেখানে যেখানে যায় তার পিছনে আমি আমার লোক ঠিক করেছিলাম,চার দিনের মাথায় দেখি হুডি পরে স্মিথ কোথায় যেন যাচ্ছে,আমার লোক ফোন দেয়াতে আমিও ছদ্মবেশে উনার পিছন ধরি..লন্ডনের শেষ সীমান্তে উনার গাড়ি থামায়,উনি একটা ছোট্ট খুপরি মতো ঘরে গেলো..ভিতরে যেয়ে আমি যা দেখি তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম,দুইটা স্মিথ একসাথে..একটা চেয়ারে বাধা অবস্থায়,যার চেহারা কেমন হয়ে গেছে দ্বিতীয়টা তার সামনে।।

“আবার এখানে কেন এসেছো??” চেয়ারে বাধা অবস্থায় স্মিথ বললো।।

“তোমার সুখ দেখতে!!” দাড়ানো স্মিথ বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো।।

“তুমি কখনো সফল হতে পারবে না!!” চেয়ারে বসা স্মিথ বললো।।

“লেটস সি!!” দাড়ানো অবস্থায় স্মিথ বললো।।

কিছুক্ষন একটু পর আরেকটা লোক আসলো,সেও হুডি পরে আছে।।

“দেয়ার ইউ মাই বয়!!” দাড়ানো অবস্থায় স্মিথ বললো।।

“তোর ওই ধ্রুভের জন্য আমার ভাই মরেছে!!তোর ধ্রুভকে আমি শেষ করে দিব!!”স্টিভ বললো।।

” চিনতে পেরেছো স্মিথ তাকে??এটা জেমসের সন্তান স্টিভ!!সেদিন ল্যাবে আমি নয় জেমস মারা গেছিলো??তাদের সন্তানগুলোকে আমি নিয়েছি!!আমি যা বলবো তারা তাই করবে!!ধ্রুভ তার ভাইকে কোন খুন করেছে সেটার বদলাও নেয়া হবে!!ওহ হো তুমি ত জানো না সেটা!!তোমার মনে আছে সেই মডেল ক্যাথরিনের কথা যার জন্য ধ্রুভ না মেয়েটা পাগল ছিল!!ক্যাথরিনকে ধ্রুভ মেরেছিলো আমি সময়মতো না আটকালে ক্যাথরিন এই দুনিয়াতে আর বিরাজ করতো না,ক্যাথরিনকে ভালোবাসতো স্টিভের ভাই লুকাস..লুকাস ক্যাথরিনের মার সহ্য করতে না পেরে ধ্রুভকে মারত্ব যায়,আর ধ্রুভ মনে করে ক্যাথরিন লোক পাঠিয়েছে অথচ ক্যাথরিন সেদিন দেশ ছেড়ে চলে যায়..লুকাস ধ্রুভকে মার‍্যে গিয়ে নিজেই খুন হয়ে যায়,লুকাসের হান্ড্রেড পিস করে লন্ডনের হান্ড্রেড জায়গাতে রেখেছিলো??সি স্টিভ বেচে আছে তার ভাইয়ের বদলা নেয়ার জন্য!!”দাড়ানো অবস্থায় স্মিথ বললো।।

“ড্যাড চলো এই বেজান শরীরের সাথে কথা বলে কি হবে??”স্টিভ স্মিথ কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।।

ধ্রুভ এতোক্ষন সব শুনছিলো,রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছিলো এক প্রকার.. তার লোককে ফোন দিয়ে বললো ওদের উঠিয়ে নিতে,ওরা বেরিয়ে যাবার পর ধ্রুভ স্মিথের কাছে গেলো..ধ্রুভকে দেখে বেশ অবাক হয়েছেন উনি,ধ্রুভ তাকে নিয়ে গেলো ন্যামিয়ানের কাছে আগে..ন্যামিয়ান এতোদিন পর স্বামীকে দেখতে পেয়ে চোখের জল ফেলে দিলো..ধ্রুভ তাকে সমস্ত কথস খুলে বললো,স্মিথের ট্রিটমেন্ট আর সেফের জন্য ধ্রুভ তাদের লন্ডন ত্যাগ করতে বললো..এদিকের ধ্রুভের লোক বব আর স্টিভকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে সাথে করে তার বাড়ির গার্ডেন এরিয়ে পিছন ঘরে..ধ্রুভ সেখানে যায়,তাদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়।।

ধ্রুভকে দেখে তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠে,স্টিভ দাত মুখ খিচে উঠেছে তাকে দেখে।।

” সাপের লেজে পা দিয়েছো ত ছোবল ত খেতেই হবে?”ধ্রুভ কথাটা বলে হাতে থাকা হকিস্টিক নিয়ে মারা শুরু করলো,স্টিভের পুরুষাঙ্গের উপর বেশি মেরেছে ধ্রুভ কারন ও তার মীরার দিকে নজর দিয়েছে..এইভাবে
সেদিনের পর থেকে ধ্রুভ রাতে এসে তাদের মারে।।

বর্তমান,
রাহি সব শুনে স্তম্ভ হয়ে গেছে,কি বলবে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না..চোখ দিয়ে পানি পরছে তার,ধ্রুভ তার কাছে এসে চোখের জল মুছে দিলো।।

“তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদেরও কাওকে আমি আস্ত রাখি নি!!সামির না কি কুকুর ছিলো সে এইডসে আক্রান্ত কারন মিথিলার তার অগোচরে আরেক বফের সাথে ফিজিক্যালি এটাচ হয়েছে,ছেলেটার এইডস ছিলো যার ফলে মিথিলার কাছে এসেছে,মিথিলার হওয়াতে তখন সামিরের হয়েছে!!তারা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে লড়ছে!!’ধ্রুভ বললো।।

রাহি অবাক চোখে চেয়ে রয়েছে তার মানে ধ্রুভ শুরু থেকে সব জানে কিন্তু আড়াল করে গেছে।।

” তুমি আমার জান মীরা!!তোমাকে ভুলা কখনো সম্ভব না!!জীবনের প্রতিটা সময়ে তোমাকে প্রয়োজন আমার!!”ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির কপালে চুমু দিলো।।

দুই মাস পর,

ন্যামিয়ান আর স্মিথের আন্ডারে থেকে অনেকটায় সুস্থ ধ্রুভ তবে দুর্বল হয়ে গেছে ভুল মেডিসিনের কারনে কিন্তু এই কয়েকদিন রাহি ধ্রুভকে এক সেকেন্ডের জন্যও চোখের আড়াল করে নি,ধ্রুভ যে মীরাকে ভুলে নি আগের থেকেও বেশি মীরাকে চেয়ে ফেলেছে..উঠতে বসতে সবসময় তার মীরাকে দরকার,প্রতিক্ষনে।।

বব আর স্টিভকে পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে ধ্রুভ,রাহি কসম দিয়েছে যেন সে যতদিন আছে উল্টাপাল্টা কাজে যেন সে আর জড়িত না থাকে..সবকিছু থেকে দূরে থাকতে বলেছে যেগুলো করা অন্যায়,বব আর স্টিভ হকিস্টিকের বারি মেরে মেরে এতোবেশি কাহিল করেছে যে আগামী ছয়মাস হাসপাতালের বেড থেকে উঠতে পারবে না,বিশেষ করে স্টিভকে..তার পুরুষাঙ্গের বারোটা বাজায় দিয়েছে ধ্রুভ।।

কোন একদিন সকালবেলা,

রাহি ঘুম থেকে উঠে চোখের সামনে মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে গেছে,চোখ ভর্তি জল তার।।

“বাবা তুমি?” রাহি বললো,রুবেল মুচকি হেসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।।

“তোর পাগলা জামাই নিয়ে এসেছে আমাকে!!তুই কি ভেবেছিস আমি তোর খোজ নি নাই এতোদিন??তুই যাওয়ার পর ওই আমার খোজ নিতো,বাজার করে দিতো!!এতোদিন লাগলো এখানে আসতে কারন ভিসা হয় নাই,ধ্রুভ ভিসা করে একেবারে আমাকে এখানে নিয়ে চলে আসছে!!আমি আসতাম না আর নাছোড়বান্দা!! তাই আসা,পুতুলকন্যার রাজ্যে তার বাবা হাজির!!” রুবেল কথাগুলো বললো,রাহি হাসছে সাথে চোখে পানি।।

“আপনি আসতে না আসতে আমার মীরাকে কাদালেন?আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়বো না!” ধ্রুভ ঘরে নাক ফুলিয়ে বললো,ধ্রুভের কথা শুনে বাবা মেয়ে দুজনেই ঘর কাপিয়ে হাসলো।।

ঘনঘন নিঃশ্বাসে ছেয়ে আছে ঘর,পুরো ঘরে কাঠগোলাপের সুগন্ধে ভরপুর..আজ যে ধ্রুভ আর রাহির মিলনের রাত..রাহির দিকে এক এক পা করে আগাচ্ছে ধ্রুভ,রাহি পিছুচ্ছে..রাহি এক সময় দেয়াল ঠেকে গেলো,ধ্রুভ রাহির সামনে হাটু গেড়ে বসলো..রাহি আজকে কালো শাড়ি পরেছে,রাহির পেটের উপর থেকে আচল সরিয়ে ধ্রুভ রাহি উদাম পেটে নাভীর উপরে চুমু খাচ্ছে,ভিজিয়ে দিচ্ছে ধ্রুভ তার চুমুর রাহি ঠোট,গলা আর কাধ..রাহি আবেশে চোখ বন্ধ করে ধ্রুভের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছে।।

“তুমি কাঠগোলাপের মতো পবিত্র মীরা!!আজ থেকে তোমার রূহ ও আমার!!” ধ্রুভ রাহির কানে ফিসফিস করে বলে রাহির ঠোট চেপে ধরে অন্য জগতে পা দিল,যেখানে শুধু খুশি থাকবে।।

সমাপ্ত?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আমার লেখা এই প্রথম কোন গল্প এতো পর্বের..যতদিন নিজের ফোন না আসছে কোন গল্প লেখা হবে না,ভালো থাকবেন সবাই..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন,ভালোবাসা রইলো।।

কাঠগোলাপ পর্ব ২৫

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব পঁচিশ

?

“আমার ভাইয়ের খুনের বদলা আমি ওই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের কাছ থেকে নিবোই!!” স্টিভ বলে উঠলো।।

“শিসসস!!দেয়ালেরও কান আছে,এটাকে রহস্যই থাকতে দাও!!” বব উত্তর দিলো।।

স্টিভ রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো বাহিরে..বব চেয়ারে বসে নিজের পায়ের উপর পা তুললো।।

“ধ্রুভের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে আমার কার্য হাসিল করবো আর ধ্রুভের সমস্ত কিছু আমার হাতের মুঠোই করে নিব তার মাইন্ড কন্ট্রোল আমার হাতে!!সে তার মীরাকেও ভুলে যাবে!!এক ঢিলে দুই পাখি!!” বব উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।।

রাহি ক্লিনিকের বেডে শুয়ে আছে,ধ্রুভ ধীর পায়ে রাহির দিক একটু একটু করে এগিয়ে আসছে..রাহির কাছে আসার পর,রাহির বেডে একটু জায়গা করে নিয়ে সেখানে শুয়ে পরলো সে..ন্যামিয়ানকে সে বলে এসেছে কেও যাতে তাদের বিরক্ত না করে।।

ধ্রুভ একধ্যানে রাহির কপালের সেলাইয়ের ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে আছে,তার কাছে পানির মতো খোলাসা সবকিছু..তার মাথায় অন্য খেলা চলছে,যে খেলায় মারাত্নক ভাবে সবকিছু শেষ হবে..তার প্রথম কাজ হলো,স্মিথ বেঁচে আছে কি না।।

“আমি দুনিয়াতে আমার অস্তিত্ব ভুলে যাবো কিন্তু তোমার অস্তিত্ব আমি কোনদিন ভুলবো না!!তোমাকে ভুলানোর ক্ষমতা এই সামান্য মেডিসিনের ও নাই!!তুমি ধ্রুভের জান মীরা!!যে তোমাকে আমার মস্তিষ্ক থেকে মুছার জন্য ব্যবহার করতে চায়,তাকে আমি ভুলিয়ে দিব সে কার সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছে!!টাইম উইল শো ইউ এভ্রিথিং মীরা!!প্লিজ ইউ ডোন্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি!!” ধ্রুভ বিড়বিড় করে কথাগুলো বললো।।

ধ্রুভ রাহির সাথে ওই ক্লিনিকের বেডেই শুয়ে পরলো,রাহির গলাতে ধ্রুভের গরম নিঃশ্বাস পরছে.. ধ্রুভ রাহিকে এটে ধরে ওখানেই ঘুমিয়ে গেলো কারন আজকের রাতটা এখানেই থাকতে হবে তাদের।।

মাঝরাতে রাহির ঘুম ভাঙলো মাথার পেইনের কারনে,সেলাই করার সময় অবশ করা হয়ছিলো এক সাইড যা এখন ছুটতে শুরু করেছে,সেটার ফলে ব্যাথাটা নাড়া দিয়ে উঠেছে..পিটপিট চোখে দেখছে সে কোথায় আছে,নিজের উপর ভারী কিছু অনুভব করছে সে..বুঝলো রাহি সে ক্লিনিকে আছে আর তার উপরে ধ্রুভ আছে,ধ্রুভকে দেখে রাহির চোখে জল চলে আসছে..নিজের অজান্তে এই মানুষটার উপর এতো মায়া জন্মে গেছে যে এখন উনি যদি সুস্থ হয়ে তাকে ভুলে যায় আর সে নিঃশ্বাস নিতে পারবে না..সামির নামে কোন ছেলেকে কখনো সে মনে রেখেছে কি না এখন সন্দেহ,ধ্রুভ তার পাগলামিতে ওই কুকুরকে রাহির মন থেকে মুছে ফেলেছে।।

রাহি তার একটা হাত ধ্রুভের কোমরে দিলো,নিজে থেকে চোখ ভর্তি জল নিয়ে ধ্রুভের কপালে চুমু খেলো..মাথার চুল গুলো ফু দিল হালকা..এইসবের শেষ সে চায় না,ধ্রুভের সাথে বাকিটা জীবনে এইভাবে পার করতে চায় সে..রাহি আস্তে আস্তে চোখ বুঝলো হয়তো নতুন সকালের অপেক্ষায়।।

বেশ কয়েকদিন পর রাহি মোটামুটি সুস্থ ফিল করছে..ধ্রুভ তাকে পরের দিন বাড়ি নিয়ে চলে এসেছে,এই কয়দিন ধ্রুভ রাহিকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের আড়াল করে নি উল্টো অফিসের কাজগুলো বাড়ি নিয়ে চলে আসছে।।

কয়েক সপ্তাহ পর,আজ প্রান্ত আর রাশনার আকদ হয়ে গেলো..প্রান্ত এক প্রকার উঠে পরে লেগেছে রাশনারকে বিয়ে করার,রাশনার টেস্ট এক্সাম পর্যন্ত সে ওয়েট করতে পারলো না..বাসর ঘরে বসে আছে রাশনা,অপেক্ষা করছে প্রান্তের জন্য বুকটা কেমন ধুকপুক করছে..কি হবে ওর ভিতরে এসে এইটা ভেবে..বেশকিছুক্ষন পর প্রান্ত আসলো ঘরে।।

রাশনার দরজার খুট করে আওগাজে ধ্যান ভাঙলো,চোখ মেলে তার দিকে তাকালো..বিছানা থেকে নেমে তার দিকে তাকালো,উঠে এসে সালাম করলো সে।।

“চল তোকে বাবুর মা বানিয়ে দেয়ার প্ল্যান করি!!”প্রান্ত কথাটা বলে রাশনাকে কোলে নিয়ে দরজা লক করে,বাবুর বাবু ডাক শোনার কাজে লেগে গেলো।।

লন্ডন রাতেরবেলা,

ইদানীং ধ্রুভ মাঝরাতে কোথাও যেন যায়..রাহির মাঝরাতে উঠে ধ্রুভকে পাশে পায় না,সে যখন ঘরে আসে তখন রাহি ঘুমের ভান ধরে থাকে যে সে কোথায় যায় তা দেখার জন্য..আজও ধ্রুভ বাহিরে গেছে, রাহি এই সময়টার অপেক্ষায় আছে যে কখন ধ্রুভ বাহিরে যাবে আর তার পিছু নিবে..ধ্রুভ বের হলে,রাহি তার পিছু পিছু যায়।।

ধ্রুভ নিজের বাড়ির গার্ডেন এরিয়া ছেড়ে কোনার ঘরে দিকে গেলো,সেখানে রাহিও গেলো..ধ্রুভ একটা ছোট্ট রুমের মধ্যে ঢুকলো,রাহিও পা টিপে টিপে সেখানে গেলো।।

ভিতরে রাহি যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না..চোখটা বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে গেছে তার।।

ধ্রুভ হকিস্টিক নিয়ে সামনে বসে থাকা চেয়ারের মানুষটাকে খুব মারছে,ব্যাথায় লোকটা খুব আর্তনাদ করছে তবুও ধ্রুভ থামছে,এইগুলো থেকে রাহির হাত পা কাপঁতে লেগেছে।।

“ধ্রুভ!” রাহি অস্ফুটস্বরে ডাকলো।।

রাহির ডাকের আওয়াজে ধ্রুভ পিছন ফিরে তাকালো,রাহিকে দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না..রাহিকে এখানে দেখে তার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো,সে তার হাতে থাকা হকিস্টিক টাকে এতো জোরে নিচে ফেলেছে যে মেঝেটা আরেকটু হলে মাটি ফাক হয়ে যেতো।।

ধ্রুব ধপাধপ পা ফেলে রাহির দিকে এগিয়ে আসলো,তার মেজাজ এখনো চরম খারাপ একে ত ঠিকমতো মারতে পারলো না এইজন্য আবার রাহির উপস্থিতিতে,সব মিলিয়ে শরীরের ভেতরের রগগুলো কেমন টগবগ করছে..ইচ্ছা করছে সব দুনিয়ার লোকগুলোকে একসাথে শেষ করে দিতে।।

“তুমি কেনো গেছো ওখানে??তোমাকে আমি বারন করি নাই আমার অনুমতি ছাড়া কোথায় যেন না যেতে??তাহলে কেনো গেছো তুমি সেখানে??” ধ্রুভ রাহির কাধ ঝুকিয়ে চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করছে,রাহি এদিকে ভয়ে জুবুথুবু হয়ে গেছে।।

“আ..আপনি কেন ডাক্তার স্মিথকে মারছিলেন আর সাথের ওই ছেলেটাকে??” রাহি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো।।

“ড্যাম ইট!!কেন মারছি শুনবা ত শুনো?” ধ্রুভ চিল্লিয়ে বললো।।

“তোমার সাথে আমি যতবার ইন্টিমেট হতে চেয়েছি ততবার কোন না কোন বাধাতে আমি আটকে গেছি!!তুমি জানো না লাস্ট টাইম তোমাকে আঘাত করে কি ফল টায় ভুগেছি আমি??এই স্মিথ আর ওর ছেলে মিলে আমাদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি করেছিলো,আমি কি করে সহ্য করতে পারি সেটা??ওই স্টিভ আমাদের ঘরের রোবটিক মাইক্রফোন পাঠিয়েছিলো যার রিমোট কন্ট্রোল তার হাতে ছিল??ওই রোবটিক মাইক্রফোন সেদিন আমি আমার পায়ের নিচে পাই যা আমি সায়েন্স ল্যাবে পাঠাই!!তারা কি বলেছে জানো??তারা জানায় যে এইটা মাইক্রোফোনে সাউন্ড আর প্রতিচ্ছবি সেট করা হয়ে থাকে!!আমি যে আওয়াজে বিরক্ত হয়ে থাকি সেই আওয়াজটা আমার কানে সেদিন এই মাইক্রফোন দ্বারা বেজে যাচ্ছিলো,আর সেই মাইক্রোফোন ওই বিচ ক্যাথরিনের ছবি তারা সেট করে রাখছিলো যার ফলে তোমার মুখের সেটার ফ্ল্যাশ পরায় তোমাকে আমি ধাক্কা দি??ইউ নো হোয়াট হাও মাচ ইরিটেট দিস টু মি!!আহ!!” ধ্রুভ মাথা ধরে চিল্লিয়ে বললো।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আপনাদের মন্তব্যে পরের পর্ব নির্ভর করছে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ২৪

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব চব্বিশ

?

অন্ধকারে চেয়ারে বসে আছে একটি লোক,চেয়ারের একটা লাঠির উপর বাম হাতের উপর ভর দিয়ে হাতের পাঁচ আঙ্গুল ঘুরাচ্ছে..তার সামনে আরেকটা হুডি পরা লোক আসলো,মুখ ভর্তি তার ভিলেনি হাসি।।

“প্ল্যান কতদূর?” অন্ধকারে বসে থাকা লোকটি জিজ্ঞেস করলো।।

“প্ল্যান সাকসেসফুল ড্যাড!!” ছেলেটি বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো।।

“আহ!!দ্যাটস লাইক মাই সান!!” লোকটি খটখটে হাসি দিয়ে বললো।।

“ধ্রুভ মীরা নামক আমার রাহিকে আঘাত করে ফেলেছে!!” ছেলেটা চোখ মুখ শক্ত করে বললো।।

“আহ হা!!স্টিভ রিল্যাক্স!!ধ্রুভ আঘাত করলে রাহি নিজে থেকে তার কাছ থেকে সরে যাবে!!” লোকটি বললো।।

“আই নো ড্যাড!!কিন্তু আমি ওকে ওই ধ্রুভের সাথে সহ্য করতে পারছি না!!আমি ওদের ইন্টিমেট হতে দিব না এইজন্য এতোদিন ধরে ওদের বাড়িতে বিভিন্ন কিছু করে ওদের ইন্টিমেসি আটকিয়েছি!!” স্টিভ বললো।।

“আই আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট!!যা করবা সাবধানে?নয় বছরের প্ল্যান এইভাবে নষ্ট হতে দিব না আমি তোমার একটু ভুলের কারনে!!’লোকটি বললো।।

” বাট ইউ প্রমিসড মি দ্যা ইউ আফটার ইউ সাকসেস,ইউ গিভ মি রাহি!!”স্টিভ জানালো।।

“আমার মনে আছে তোমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়া লাগবে না?আচ্ছা ওই টমি দ্যা বিচের নিউজ কি টিভিতে আসছিলো?” লোকটি জিজ্ঞেস করলো।।

“আসবে না আবার??তুমি তাকে যেভাবে মেরেছো,তাও আবার ধ্রুভের মতো রিচ লোকের পালিত কুকুরকে, নিউজ ত আসবেই!!!” স্টিভ জানালো।।

“তাকে মেরেছি বেশ করেছি!!সে আমার ছয়মাসের করা ফল নষ্ট করে দিয়েছে!!আমার পথে যে আসবে তাকে আমি সরিয়ে ফেলবো!!” লোকটি উত্তর দিলো।।

“বাট বাবা তুমি ধ্রুভকে কেন চুজ করলা তোমার এই কাজের জন্য??আর অন্যের আইডেন্টিটি বা নিয়ে কেন বেঁচে আছো??” স্টিভ জিজ্ঞেস করলো।।

“ইটস এ লং স্টোরি মাই সান!!” লোকটি বাকা হেসে বললো।।

“আজকে আমি শুনতে চাই!!তুমি আমাকে বলতে চেয়েও এতোদিন বলো নি!!তুমি আমাকে এতোদিন লুকিয়ে রেখেছো এইসব থেকে!!!আমি সব জানতে চাই!!” স্টিভ জানালো।।

“দ্যান লিসেন!!” লোকটি অন্ধকার থেকে বেরিয়ে,আলোর সামনে আসলো ওয়াইনের বোতল নিয়ে।।

“আই এম দ্যা গ্রেটেস্ট দ্যা মোস্ট পাওয়ারফুল পারসোন বব জ্যাকসন!!জাপানের ল্যাবে সেদিন আগুন লাগার পর,আমি সেখানে আটকে থেকে যাই..আর তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যায় সেখান থেকে…আগুনের কারনে আমার অর্ধেক চেহারা ঝলসে যায়,কিন্তু ওই ল্যাবে আমি আর স্মিথ ছাড়াও আরেকটা লোক ছিলো..তা হলো তোমার জন্মপিতা জেমস..সেদিন ল্যাবে জেমস কেমিক্যাল নিয়ে বাহিরে যেতে যেয়ে আগুনে আটকা পরেছিলো…সেদিন ল্যাবের আগুনে পুড়েছিলো জেমসের লাশ,কিন্তু ব্রেকিং নিউজে আসছিলো ববের লাশ..লাশ পুড়ে যাওয়ার কারনে কেও সেটা চিনতে পারে নি যে এইটা জেমসের লাশ..আমি সেদিন অর্ধ ঝলসে থাকা মুখ নিয়ে জাপান ত্যাগ করি..যখন আমি জাপান ছেড়ে কানাডায় চলে যাই,তখন এক বছরের মাথায় জানতে পারি..স্মিথ আর ন্যামিয়ান ও আছে এখানে,তারা বেশি খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছিলো সেখানে..আমি প্রথমে তাদের কয়েকমাস ফলো করি,বিশেষ করে স্মিথ কে..তার প্রতিটা কাজ আমি অতি সূক্ষভাবে খেয়াল করেছি..হঠাৎ করে একদিন শুনলাম স্মিথের বদলির ব্যাপারটা, সে নাকি লন্ডনে শিফট হয়ে যাবে..সে যখন লন্ডন চলে যায়,আমি সেখানেও তার পিছু না..যখন দেখলাম দুই বছর ধরে একটা ছেলের চিকিৎসা করছে যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত.. ছেলেটার ব্যাপারে খোজ নিতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো..ছেলেটা আর কেও নয় ধ্রুভই ছিলো..ধ্রুভের বাবা আশরাফুল সাহেব এটা সাসপেন্স রাখতে চেয়েছিলো যে ধ্রুভ যে অসুস্থ এটা যেন কোনভাবে লিক না হয়..যখন জানতে পারলাম,ধ্রুভ মানসিকভাবে অসুস্থ আর সেটা ছোটবেলা থেকে তার কারন হলো ছোটবেলায় খেলার ছলে ছোটভাইয়ের মারা যাওয়া তার মাথায় প্রচুর চাপ দিয়েছিলো..যে কারনে ছেলেটার নিউরন কাজ করা একদমই বন্ধ করে দিয়েছে,স্মিথ সেই ছেলের চিকিৎসা করবে..ধ্রুভকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন্য স্মিথ কড়া ওষুধ দেয় যা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে, পুরনো স্মৃতি মুছে দিয়ে..স্মিথ যখন প্রাথমিক কাজে ধ্রুভকে সুস্থ করতে না পারে এক বছর তখন মেডিসিনের আশ্রয় নেয়,যা মানসিক রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে..ধ্রুভের এরকম অবস্থা আমার খেলার আরেকটা অংশ হয়ে গেলো,ধ্রুভের চিকিৎসা করতে করতে তার বাবা কারা গেলো তার কয়েক মাস পর তার মা..এইভাবে ভাই,বাবা-মা হারিয়ে আরো বেশি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো..ধ্রুভের আপন বলতে কেউ নেই শুনে আমার জন্য সেটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো,স্মিথ ছাড়া ধ্রুভ কাওকে বিশ্বাস করবে না সেটাও বুঝে গিয়েছিলাম..ধ্রুভ চিকিৎসা করার পর যখন দেখি ধ্রুভ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে তখন আমার জন্য সেটা দুঃসংবাদ ছিলো..তখন আমি আরেকটা চাল চাললাম আমার খেলায়”লোকটি এতোক্ষণ কথাগুলো বললো।।

“দ্যান হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান ড্যাড!!” স্টিভ উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।।

“স্মিথ একদিন রাতেরবেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছে ধ্রুভের সাথে দেখা করতে,সেদিন কেনসিংটনে সারাক্ষণ ঝুমঝুম বৃষ্টি হয়েছে..স্মিথ ড্রাইভ করে আসছিলো মাঝরাস্তাতে দেখে একজন হুডি পরে লোক দাড়িয়ে আছে, ও গাড়ি থেকে জিজ্ঞেস করছে কে আমি??উত্তর যখন পাচ্ছে না,তখন গাড়ি থেকে নেমে আসলে যখন আমার সামনে তখন সে জিজ্ঞেস করছে,

” এইভাবে মাঝরাস্তায় দাড়িয়ে তামাশা করার কোন মানে নেয়!!সরুন সামনে থেকে!”স্মিথ বলছে।।

আমি যখন আমার মুখটা উঠালাম তখন সেটা দেখে স্মিথের চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেছে।।

“বব তুমি?!” স্মিথ জিজ্ঞেস করার সাথে,আমি ইঞ্জেকশন তার ঘাড়ে পুশ করে তার জ্ঞান
সেদিন আমি স্মিথের ফোন থেকে ধ্রুভের সেক্রেটারীকে মেসেজ করে দি যে কিছু পারসোনাল সমস্যার জন্য সে লন্ডন ত্যাগ করে,এক মাসের মধ্যে ফিরে আসবে।।

সেদিন আমি স্মিথকে নিয়ে চলে আসি আমার গোডাউনে, তাকে সেখানে বন্দি করে রাখি..তারপর আমার আসল কাজ শুরু করি,বব থেকে নিজেকে স্মিথে ট্রান্সফার করা..সার্জারী করে আমি হুবহু স্মিথে রুপান্তর হয়ে যাই,এক মাসেরর মধ্যে নিজেকে চেঞ্জ করে বব থেকে স্মিথ হলাম হুবহু কিন্তু প্লাস্টিক সার্জারীর কারনে সেটা সারতে আরো বেশকিছুদিন সময় লাগবে কিন্তু আমি রিস্ক নিতে চাই নি,এক মাসের আগে লন্ডনে ব্যাক করি..লন্ডম যেয়ে প্রথমে ধ্রুভের সাথে মিট করি আগে,ধ্রুভের সাথে মিট করার পর যখন বুঝলাম সেই কিছুই ধরতে পারে নি তখন মনে মনে জয়ের খুশি পালন করলাম..আমি আমার এখন নেক্সট স্টেপ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তা হলো ধ্রুভের মাইন্ড কন্ট্রোল করা..আমার এক্সপেরিমেন্টে এমন কাওকে দরকার ছিলো যে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকবে আর ধ্রুভ ও তাই ছিলো যদিও তখন স্মিথের মেডিসিনের কারনে কিছুটা সুস্থ ছিলো..মেডিসিন আমার তৈরি করাই ছিলো,কয়েক সপ্তাহ পর ধ্রুভের মেডিসিন নেয়ার ডেট সেখানে আমি এই ইঞ্জেকশন পুশ করবো..ঠিক তাই করলাম,মেডিসিন নেয়ার ডেটে আমি ইঞ্জেকশন পুশ করলাম তার শরীরের..ইঞ্জেকশন দেয়ার সাথে ধ্রুভের শরীর কেমন ঝা ঝা করে উঠলো,দুই তিনদিন মতো বেহুশ হয়ে থাকলো..তার এই দুই তিনদিন বেহুশ হওয়ার সুযোগটাও আমি নিলাম..সে বেহুশ অবস্থায় তার সাথে মাইন্ড কানেক্ট করলাম তা হলো স্বপ্নের সেই নারী..তাকে তার মাইন্ডে এমন ভাবে সেটাপ দিব যে হ্যা স্বপ্নে সেই নারীটা আসছে কিন্তু এর পেছনের কারন যে আমি কখনোই জানতে পারবে না..ভিজুয়েলশনে তাকে আমি শো করাবো যে এই মেয়ের জন্য সে পাগল,তার প্রতি সে দুর্বল হয়ে যাবে আর সেটা হয়েছেও..এরপর থেকে যখনি সে বেহুশ হতো ইঞ্জেকশন নিয়ে ততবারই আমি এই কাজ করতাম তবে এখানে যে আমার প্রথম করা কাজটা সত্যি হয়ে যাবে এটা আমার ধারনার বাহিরে ছিলো..সেদিন তার মাইন্ড কানেক্ট করে আমি দেখিয়েছিলেন এক নারীকে তার স্বপ্নে কিন্তু সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন ওই নারীকে সে স্বপ্নে দেখতো যার নাম দিয়েছে সে মীরা..আমার সাথে সব কথা শেয়ার করতো কিন্তু আমি বুঝে যেতাম মেয়েটার উপর সে সম্পূর্ণভাবে ততদিনে দুর্বল হয়ে গেছে..সবসময় সে মীরাকে খুজতো,মীরা তার পাগলামি ভালোবাসার কারন..তার মীরা শুধু তার হবে অন্যকারো না,তন্ন তন্ন হয়ে মীরাকে খুজতো..এইটাতে সে হিংস্র হয়ে গেছিলো যেমন কোন আওয়াজ তার কানে গেলে কেমন ক্ষেপে উঠতো,কোন বেগানা নারী তার কাছে ঘেষলে তার মাথায় রক্ত উঠতো..কেও তার উপর এট্যাক করলে তার উপর বিশ্রিভাবে সে এট্যাক করতো..যখন থেকে সে মীরাকে তার স্বপ্নে দেখেছে তার পাঁচ বছর পর সে মীরার ছবি আকঁতে সক্ষম হয়,আমাকে দেখতে দেয় নি সে কিন্তু মেডিসিন দেয়ার ফলে ওইদিন বেহুশ থাকার কারনে আমি ওর রুমে যেয়ে সেই নারীর ছবি দেখি..এই নারীর এতো সৌন্দর্য দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম,তারপর খুব একটা পাত্তা দেয় নি কারন আমি ভেবেছি এটা আমার করা ইমেজিনেশন..কিন্তু সাত বছর এইভাবে চলার পর যখন হুট করে বাংলাদেশ যেয়ে ধ্রুভ ওই নারীর সাক্ষাৎ পায়,তার পাগলামো বেড়ে যায় তখন তার রিলেটিভ আমাকে ডেকে পাঠায়, তার মামা আমাকে চিনতো সে সুবাদে কন্টাক্ট করে ডাকে..সেখানে যে তার কাজিনের ফোন ধ্রুভের মীরা ছবি থেকে আমি আকাশ থেকে পরেছিলাম!!আর ভেবেছিলাম এতোটা হুবহু মিল কিভাবে??আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে চলে আসি তাকে নিয়ে..কিন্তু পরক্ষনে সে আবার বাংলাদেশ চলে যায় কয়েক সপ্তাহ পর,আমি মেডিসিন এইটা করার জন্য জাপান চলে যাই এইজন্য সে এর মধ্যে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে লন্ডন আনে!!আর তোমার ওই মডেল ক্যাথরিনের কথা মনে আছে যে ধ্রুভের জন্য পাগল ছিল!আমি সময়মতো তখন গেলে সেদিন মেরেই ফেলতো তাকে সে!!আর ছেলেটাকে কি মারটায় না মারলো,হান্ড্রেড পিস!!কিন্তু তার থেকেও বিষ মাল আমি,এই বর্ব দ্যা গ্রেট কখনো বেঁচে আছে কখনো কেও জানতে পারবে না!!থাকবে শুধু রহস্য আর রহস্যা!!”বলেই লোকটি অর্থাৎ বব খটখট করে হাসতে লাগলো।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আপনাদের মন্তব্যের উপর আমার পরের পর্ব নির্ভর করছে..রহস্য জটলা খুলছে,কেমন লাগছে জানাবেন..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ২৩

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব তেইশ

?

ন্যামিয়ানের সব কথা শুনে ধ্রুভ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে,কেও তার মাইন্ড কন্ট্রোল করতে চায়??আশ্চর্যজনক লাগছে এই ভেবে এতোদিন সে এটা বুঝতে পারলো না??তাকে কেও ইচ্ছা করে মানসিক অসুস্থ করতে চায়??কে সে??ন্যামিয়ান স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।।

“হাও ক্যান আই বিলিভ অন ইউ মিস ন্যামিয়ান? ” ধ্রুভ শান্ত কন্ঠে বললো।।

ধ্রুভের এমন প্রশ্নের অপেক্ষাই ছিলো ন্যামিয়ান, সে জানে ধ্রুভ এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং ধ্রুভ এরকম কিছুই তাকে জিজ্ঞেস করবে..ধ্রুভের এমন প্রশ্ন শুনে সে স্মিত হাসলো।।

“ইটস মিসেস ন্যামিয়ান.. আমি বিবাহিত আর আপনি যে আমার কথা বিলিভ করবেন তা আমি জানতাম..এইটা দেখুন?” ন্যামিয়ান কথাটা বলে ধ্রুভের দিকে ফাইলটা এগিয়ে দিলো।।

ফাইলটা হাতে নিয়ে ধ্রুভের চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে..এখানে ন্যামিয়ানের বলা প্রতিটা কথায় সত্যি আর তার প্রমানসহ।।

“এইখানে আপনার ব্লাড টেস্ট যা O+..সেদিন আপনার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমি নিয়ে গেছিলাম..আপনার ব্লাডে যে দ্রব্য পাওয়া গেছে,সেই দ্রব্য ওই মেডিসিনেও পাওয়া গেছে..অর্থাৎ আপনার মাইন্ড কন্ট্রোল করে কেও সেটা অন্য কাজে লাগাতে চাইছে!!” ন্যামিয়ান জবাব দিলো।।

“বাট দ্যা বিচ আই মিন স্মিথ আমার মাইন্ড কন্ট্রোল কিজন্য করবে??আমি যতদূর মনে পরছে আমি ওই কুকুরের মতো বেজন্মার কোন ক্ষতি করি নি!!” ধ্রুভ রাগে চিবিয়ে কথাগুলো বললো।।

“কেন করতে চায় সেটা আমি জানি না মিস্টার ধ্রুভ,একটা কমন কারন হতে পারে আপনি লন্ডনের সবচেয়ে বড় রিচ পারসোন,আপনার প্রোপার্টির জন্যও করতে পারে..তবে আশ্চর্যজনক বিষয় আরেকটা এখানে??!” ন্যামিয়ান বললো।।

“হোয়াট!!” ধ্রুভ ভ্রু কুচকে বললো।।

“আমার কাছে সারপ্রাইজিং এটা যে এই মেডিসিন আমার খুব কাছে কেও পরিচিত একজন বানাতো!!” ন্যামিয়ান চিন্তিত স্বরে বললো।।

“ত?” ধ্রুভ ভ্রু কুচকে বললো।।

“কিন্তু ও ত আর পৃথিবীতে নেই তাহলে কিভাবে সম্ভব এটা বানানো কারন এটা ও ছাড়া কেও বানাতে পারে না, ও কাওকে এটার দ্রব্য গুলো কি কি লাগে বলে যায় নি!!”ন্যামিয়ান জবাব দিলো।।

” এক্সপ্লেইন!!”

“আমি, আমার স্বামী আর আমাদের দুজনের একটা বন্ধু জাপানের একটা ল্যাবে কাজ করতাম একসাথে..এটা যদিও দশ বছর আগের কথা..আমরা তিনজন তিন ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলাম,আমি মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেছি..আমার স্বামী মানসিক রোগীদের কি ওষুধ লাগবে এই বিষয়ের আর আমাদের বন্ধুটা কিভাবে মেডিসিন বানাতে হয় এই বিষয়ে পড়াশোনা করছিলাম..আমাদের বন্ধু যেটা ছিলো খুব স্বার্থপর ছিলো,আমাদের মাঝেমধ্যে মনে হতো ও আমাদের সাথে স্বার্থের জন্য মিশছে আবার আমার এইও মনে হতো যে ও আমার স্বামীর খুব হিংসাও করে.. আমার স্বামীর খুব নাম ডাক ছিলো ওই ল্যাবে..একদিন দেখি দুই বন্ধুর মধ্যে খুব ঝগড়া,আমি তখন ল্যাবে ইন করছিলাম কিন্তু ঝগড়া শুনে আমি দরজার আড়াল হয়ে দাড়িয়ে গেছিলাম..বুঝার চেষ্টা করছিলাম কি হচ্ছে এখানে।।

#ফ্ল্যাশব্যাক,

” তুমি এইভাবে কারো ক্ষতি করতে পারো না বব!!আমি এটা হতে দিবো না!!তুমি ওরকম মেডিসিন তৈরি করছো আগে থেকে সন্দেহ করছিলাম তুমি যে সেটা বানিয়ে ফেলেছো আমি আজ না দেখলে জানতাম না!!”ন্যামিয়ানের স্বামী হার্বাট স্মিথ বলছে।।

“তুমি আমাকে হিংসা করো এইজন্য চাও না আমি দুনিয়াতে ফেমাসিটি অর্জন করি!!তুমি সবসময় আমার থেকে এগিয়ে ছিলে এখন যখন দেখছো আমি তোমার থেকে বেশি ভালো কিছু বানিয়ে ফেলেছি তখন তুমি আমাকে বাধা দিচ্ছো!!” বব উত্তর দিলো।।

“এটা কোন ভালো আমি চোখে দেখি না,তুমি মানুষ আর প্রানীর মাইন্ড কন্ট্রোল করে তাকে মেরে ফেলতে চাইছো..একটা নিষ্পাপ খরগোশের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে এখন তাকেও মেরে ফেললে..আমি বেঁচে থাকতে তা হতে দিতে পারি না!!” স্মিথ চিল্লিয়ে বললো।।

“আমি গোটা দুনিয়াকে নিজের মুঠোই আনতে চাই!!!তুমি আমার পথে দাড়াবে না!!তোমাকেও জানে শেষ করে দিব!!আমার সাথে সাথ দাও, দুজন মিলে গোটা দুনিয়া রাজ করি!!” বব ভিলেনি হাসি দিয়ে বললো।।

“তোমার এই হিংসা তোমাকে নিয়ে একদিন ডুববে!!আমি মানুষের সেবা করতে চাই,তাদের মারতে চাই না!!ওটা আমাকে দিয়ে দাও!!” স্মিথ বলেই হাত বাড়ালো ববের দিকে।।

“কখনো না!!” বব বললো।।

স্মিথ আর বব সেই মেডিসিনের কেমিক্যাল নিয়ে টানা হিচড়া করতে লাগলো ল্যাবের মধ্যে..এক সময় দুজনের হাত টানা হিচডা করতে করতে ঘেমে থাকার ফলে ববের হাত পিছলে যেয়ে ল্যাবের একটা এক্সপেরিমেন্টের উপর পরে যায়,দুম করে বিস্ফোরণ হয়..সমস্ত ল্যাব সেন্টার ধোয়াই ভরে গেছে,আগুন লেগে গেছে..স্মিথ ও পুড়ে যেতো যদি সেদিন ন্যামিয়ান তাকে ওই মুহূর্তে টেনে নিয়া আসতো..ন্যামিয়ান যখন দেখলো অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে,ল্যাব পুড়ে যাচ্ছে..এখন না গেলে স্মিথ ও পুড়ে যাবে তখন সে হ্যাচকা টান দিয়ে স্মিথ কে ল্যাব থেকে বের করে নিয়ে আসে।।

সেদিনের ঘটনা ওই তিনজনের মধ্যে ছিলো শুধু জাপানবাসী জেনে ছিলো ল্যাবের বিস্ফোরণ ঘটায় একজনের প্রানহানী হয়েছে..ন্যামিয়ান আর স্মিথ বুঝে ছিলো সেটা ববের লাশ ছিলো,তারা তাকে দেখতে গেলে সেই লাশ পুড়ে ঝাঝড়া হয়ে গেছিলো।।

#বর্তমান,

“সেই ঘটনার পর আমরা জাপান ছেড়ে দি,চলে আসি ক্যানাডাতে..ক্যানাডাতে এসে আমরা এক বছরের মধ্যে বিয়েও করে ফেলি..আমার স্বামীর নতুন করে ট্রান্সফার হয় লন্ডনে তখন,আমার হচ্ছিলো না ট্রান্সফার তখন আমি কানাডাতেই থাকি..আমার স্বামী ট্রান্সফার হয় কারন লন্ডনের কোন ছেলের ছোটবেলাতে অতিরিক্ত মানসিক সমস্যাই আছে,তাকে ট্রিটমেন্ট করার জন্য স্মিথকে ডাকা হয়েছে..ওই ছেলের চিকিৎসা করার দুই বছরের মাথায় আমার স্বামী গায়েব হয়ে যায়,শুনেছি রোড এক্সিডেন্টে খাদে গাড়ি পরে যেয়ে বনের হিংস্র প্রানী তার লাশ খেয়ে নিয়েছে..রোডে শুধু তার গাড়ি পাওয়া গেছিলো তাকে পাওয়া যায় নি..স্মিথ চলে যাওয়া আজ সাত বছর হয়ে গেলো,কিন্তু আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় ও কোথাও না কোথাও বেচে আছে..আমার স্বামী খুব ভালো সাইকোলজিস্ট ছিলেন..তিনি মানুষের সেবা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতেন,অথচ এই সাত বছর ধরে তিনি নেই আর আমি নিঃসঙ্গতায় জীবন কাটাচ্ছি!!” ন্যামিয়ান কথাগুলো বলে চোখের জল মুছলো।।

সব শুনে ধ্রুভের মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে গেলো,কি হচ্ছে এইসব..সে অন্তত কিছু জিনিস ভালোমতো ক্লিয়ার হয়েছে,এর শুরু যে করেছে শেষ এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভই করবে।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করু,আপনাদের মন্তব্যে পরের পর্ব নির্ভর করছে..রহস্য খুলতে শুরু করেছে,পাশে থাকুন এইভাবে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ২২

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব বাইশ

?

রাহি মেঝেতে লুটিয়ে পরে আছে,ধ্রুভের হিংস্র রক্তিম চোখ আস্তে আস্তে বরফের মতো শীতল হয়ে গেছে..সে কি করে পারলো তার মীরাকে ধাক্কা দিতে কিন্তু তার চোখের সামনে ত ক্যাথরিন ছিলো..আর ক্যাথরিন বা কোথা থেকে আসলো।।

ধ্রুভ উঠতে যাবে তার আগে তার পায়ের নিচে ছোট কিছু একটাতে পা পরাতে, পা সরিয়ে সেটা দেখতে গেলে মাইক্রোফোন জাতীয় কিছু পায়..আওয়াজটা যখন তার কানের নিচে ঘুরঘুর করছিলো তখন হাত দিয়ে এক ঝাপটা দিয়েছিলো তার বাম কানে..কিন্তু এই মিনি মাইক্রোফোন এখানে কি করছে??মাইক্রোফোনটাকে পকেটে ঢুকিয়ে,রাহির দিকে নজর গেলে তার চোখ ভিজে আসে..তাৎক্ষণিকভাবে ধ্রুভ রাহিকে কোলে তুলে নিলো।।

গাড়ির কাছে আসতে যেয়ে রাস্তাটাও ধ্রুভের মনে হচ্ছে কত লম্বা,বিপদের সময় সবকিছু দীর্ঘকাল মনে হয়..পা টাও চলছে না,রাহির মাথার রক্ত দেখে ধ্রুভের শ্বাস টাও আটকে গেছে,কোনমতে কাপা কাপা পায়ের গতিতে ধ্রুভ রাহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো..তাকে সিটে বসালো না,নিজের কোলে নিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো..পথটাও ফুরাচ্ছে না,রাহির দিকে তাকাতেও পারছে না..বুকের বা পাশটা কেমন চিনচিন করছে,কি করে পারলো সে তার মীরাকে এইভাবে আঘাত করতে??

মিনিট দশেক পর ধ্রুভ রাহিকে নিয়ে এমারজেন্সি মেডিক্যালে পৌছালো,ধ্রুভ আসার পথে রাহিকে প্লাজো পরিয়ে দিয়েছে যেন উদাম কোনকিছু না থাকে..ধ্রুভ হসপিটালে এসে চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিয়েছে।।

নার্সরা ধ্রুভকে ভালো করে চিনে কারন ধ্রুভ প্রতি বছর এই মেডিক্যালে ডোনেট করে,ধ্রুভের চিল্লানিতে একটা লেডি ডাক্তার বেরিয়ে আসলো..তিনি বের হয়ে আসামাত্রই রাহিকে দেখে চিনে ফেলেছে,আরেকটু কাছে এসে যখন দেখলেন তখন ধ্রুভ দেখলেন।।

ধ্রুভ আর রাহিকে চিনতে পারার কারন তিনি ধ্রুভের লাস্ট ট্রিটমেন্ট করার সময় ছিলেন..রাহিকে উনি চিনেছে কারন ধ্রুভ যখন লাস্ট টাইম সেন্সলেস হয়েছিলো তখন উনাকেই ডাকা হয়েছিলো।।

“প্লিজ আমার মীরাকে দেখেন!!” ধ্রুভ হরহর করে বললো।।

“গো এন্ড গেট দ্যা লেডি ইন ক্যাবিন!!” ডাক্তার বললো।।

“ওকে ডক্টর ন্যামিয়ান!” নার্স বললো।।

রাহিকে নিয়ে অবজারভেশনে নিয়ে চলে গেলো ডাক্তার আর নার্স আর ধ্রুভ ছুটছে তাদের পিছু পিছু..রাহিকে যখন কেবিনে ইন করানো হলো তখন ঢুকতে বাধা দেয়ার পরও সে শুনে নাই,জোর করে ঢুকলো তাদের সাথে..ডাক্তার রাহির মাথার ব্লাডগুলো পরিষ্কার করছে,নার্সরা এটা সেটা দিচ্ছে..রাহির কপালের ব্লাড মুছা হলো যখন সেলাই করার সময়,ধ্রুভ চিৎকার দিয়ে উঠলো।।

“আমার মীরা এতে ব্যাথা পাবে ত?সেলাই করছেন আপনি!!ছাড়েন!” ধ্রুভ এগিয়ে আসলে ন্যামিয়ান বাধা দেয়।।

“শি গট ইনজুরড!!সেলাই করার আবশ্যক!! প্লিজ হ্যাভ সাম পেসেন্স মিস্টার ধ্রুভ!!” ন্যামিয়ান উত্তর দিলো।।

ধ্রুভ অবাক হলো এই ভেবে যে এই ডাক্তার ওর নাম জানে কিভাবে,ধ্রুভ চুপ থাকলেও রাহির কপালে কাটা সেলাই করার সময় তার পাশে ঘুরঘুর করছিলো..সেলাই করার প্রতিটা ধাপে সে আওয়াজ করছিলো মনে হচ্ছে ব্যাথাটা সে পাচ্ছে..রাহির কপালে তিনটা সেলাই পরলো..সে এখনো অজ্ঞান অবস্থায় আছে..রাহিকে রোগীদের পোষাকে চেঞ্জ করানোর সময় ধ্রুভ চেতে উঠেছিলো,নার্সকে শুধু খুন করতে বাকি রেখেছিলো..সে নিজে রাহির পোষাক চেঞ্জ করিয়ে দিলো..ধ্রুভ কেমন ছোট বাচ্চার মতো বিহেভিয়ার করছে,মনে হচ্ছে ছোটবেলাতে কারো প্রিয় জিনিস হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে সে সবসময় সেটাকে আগলে রাখতো ঠিক তেমনি..ন্যামিয়ান এতোক্ষন সব পর্যবেক্ষণ করছিলো,ধ্রুভের বিহেভিয়ার নিয়ে আর সেই মেডিসিন নিয়ে তিনি এই দুই সপ্তাহ রিসার্চ করেছেন..আজই উনি জাপান থেকে ব্যাক করেছেম,উদ্দেশ্য ছিলো রাহির সাথে যোগাযোগ করতে যাওয়া কিন্তু তার আগে এই হাল।।

“মিস্টার ধ্রুভ?ক্যান ইউ গিভ মি সাম টাইম?” ন্যামিয়ান জিজ্ঞেস করলো।।

” রাইট নাও?” ধ্রুভ রাহির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো।।

“ইয়েস মিস্টার আশরিক আলফাজ ধ্রুভ!!ইটস আরজেন্ট” ন্যামিয়ান উত্তর দিলো।।

ধ্রুভ শ্বাস ফেলে নার্সকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে গেলো ভালোভাবে খেয়াল রাখতে।।

ধ্রুভ আর ন্যামিয়ান কেবিন ত্যাগ করলো,তারা সেখান থেকে ন্যামিয়ানের কেবিনে গেলো..ন্যামিয়ানের কেবিনে যাওয়ার পর, ন্যামিয়ান নিজের চেয়ারে বসলে,ধ্রুভ তার সামনের চেয়ারে পা তুলে বসে..চুলগুলো উঠিয়ে নিলো তবে সে যে তার মীরার জন্য অসুস্থবোধ করছে তা তার কপালে কিঞ্চিৎ দেখা যাচ্ছে।।

“হ্যাভ সাম টি অর কফি?” ন্যামিয়ান জিজ্ঞেস করলো।।

“নাহ!!যা কথা বলার সরাসরি বলুন?!” ধ্রুভ ভাবলেশহীন উত্তর দিলো।।

“আপনি ত সহজে কাওকে টাইম দেন না??ত আজকে আমার বলার সাথে এখানে আসলেন যে?” ন্যামিয়ান স্মিত হেসে বললো।।

“এক্সাক্টলি!! আমি কাওকে সময় দেয় না!!কিন্তু এখানে আমার মীরা রিলেটেড কিছু না থাকলে অবশ্যই আপনাকেও আমার মূল্যবান সময় গুলো দিতাম না?” ধ্রুভ ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে বললো।।

“ত মিস্টার গ্রেট বিলিয়নিয়ার আশরিক আলফাজ ধ্রুভ আমার কথাগুলো তাহলে শুরু করতে পারি?” ন্যামিয়ান গম্ভীরমুখে বললো।।

“কন্টিনিউ!” ধ্রুভ জবাব দিলো।।

“আপনি যে মানসিক ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল অর্থাৎ নিজের ব্রেইনের নিউরন গুলোকে কন্ট্রোল রাখতে চান সেইগুলো কি আপনি কখনো জানতে চেয়েছেন এইগুলো কিভাবে হয় বা যা মেডিসিন নেন সেই মেডিসিন গুলোর নাম নিয়ে কখনো গুগলো সার্চ করেছেন??কিংবা মেডিসিন গুলো কখনো ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছেন যে আদৌ মেডিসিন গুলো আপনার জন্য কি না?” ন্যামিয়ান এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো।।

“ওয়েল,এইসবের কখনো প্রয়োজন হয় নি!!আমার ফ্যামিলি ডক্টর আমাকে দেখে সেখানে এতো কিছু রিসার্চ করা তাকে অসম্মান করার কাতারে পরে!!” ধ্রুভ নাক ফুলিয়ে বললো।।

ধ্রুভের জবাব শুনে, ন্যামিয়ান হাসলো।।

“এতো বড় নামীদামী বিজনেসম্যান আপনি!!চারপাশে এতো গার্ড নিয়ে ঘুরেন অথচ নিজে কি মেডিসিন নেন সেটা একবারো যাচাই করবেন না?” ন্যামিয়ান হেসে জিজ্ঞেস করলো।।

“ভনিতা না করে সরাসরি বলুন!!” ধ্রুভ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।

“আপনাকে যে মেডিসিন দেয়া হচ্ছে সেটা মাইন্ড কন্ট্রোল করার জন্য নয় উল্টো আপনাকে কন্ট্রোল করার জন্য দেয়া হচ্ছে আপনাকে!!” ন্যামিয়ান সোজা উত্তর দিলো।।

ন্যামিয়ানের এই কথা শুনে ধ্রুভের টনক করলো..কেও আশরিক আলফাজ ধ্রুভকে কন্ট্রোল করতে চায়?সত্যি অবাক করার বিষয়ত!!

“হোয়াট ডু ইউ মিন?” ধ্রুভ জিজ্ঞেস করলো।।

“আপনার মনে আচ্ছে আপনি যখন লাস্ট টাইম অজ্ঞান হোন ওষুধের কড়া গন্ধে আপনার নার্ভ গুলো সাড়া দিচ্ছিলো না আপনাকে সজাগ রাখার জন্য..আপনাতল্র ফ্যামিলি ডক্টত স্মিথ আপনাকে সেদিন ইঞ্জেকশন পুশ করতে এসে,আপনার বাড়ির পালিত কুকুর তা বাধা দিয়ে ফেলে দেয়??আর সেই ওষুধটা ভেঙ্গে যায়..আপনার ফ্যামিলি ডাক্তার কখনো ওষুধের কোনকিছু আপনার বাড়িতে রেখে যান না কিন্তু সেদিন উনি ওষুধের প্যাকেটটা ফেলে রেখে চলে যান..আপনার বাড়ির মেইড সেটা পরিষ্কার করার সময় ডাস্টবিনে ফেলে রাখে,ওষুধের কড়া গন্ধে আপনার অবস্থা ঠিক সেরকম হয় যেরকম আপনার শরীরের ওই ওষুধ প্রবেশ করলে হয়..কখনো ভেবে দেখেছেন কি কোন মেডিসিন শরীরের গেলে সেটা আপনাকে সুস্থ আর ফ্রেশ ফিল করার জায়গাতে উল্টো আপনাকে অসুস্থ করে ফেলে??” ন্যামিয়ান এতোটুক বললো।।

ধ্রুভ সমস্ত কথা শুনছে এবং মিলাচ্ছে কি কতদূর অব্দি সঠিক সেটা..আসলে তাই,মেডিসিন নেয়ার পর তার শরীর দুই তিন দিন পর্যন্ত অবশ থাকে..কিছু মনে থাকে না আর।।

“আপনি যখন বেহুশ হোন তখন আপনাত ওয়াইফ মীরা অনেকবেশি ভয় পেয়ে বসেছিলেন..উনি লন্ডনে মেবি নিউ এইজন্য কিছু চিনে তখন আপনার বাড়ির মেইড অনলাইন থেকে আমার হসপিটালের ইমার্জেন্সি নাম্বার কালেক্ট করে আমাকে কল দেয়..আমি যখন যেয়ে আপনার অবস্থা এতোটা ক্রিটিকাল আমি ততক্ষন বুঝি নি যতক্ষন আপনার মেডিসিন না দেখেছি..আপনার মেডিসিনের কিছু দ্রব আমি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছি,আর প্যাকেটটা নিজের সাথে করে নিয়ে এসেছি..আপনাকে যে মেডিসিন দেয়া হচ্ছে সেটা আপনার পুরো শরীর আর আপনার মাইন্ড কন্ট্রোল করার জন্য দেয়া হচ্ছে মিস্টার ধ্রুভ..এর মেয়াদ ছয়মাস থাকে,মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তখন সে পুরোনো কিছু আস্তে আস্তে ভুলে যেতে শুরু করে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে..আপনার ক্ষেত্রেও তাই মিস্টার ধ্রুভ,আপনাকে সেদিন ইঞ্জেকশন না দেয়ার ফলে আজকে এরকম অস্বাভাবিক আচরণ করছেন..এই মেডিসিন তাদের জন্য তৈরি করা হয় যখন তাদের কেও কন্ট্রোল করতে চায়..তাদের স্বার্থ আদায় করতে চায়..এইসব কিছু আপনার ওয়াইফ জানে মিস্টার ধ্রুভ,উনি এতোদিন আমার টাচে ছিলেন উনার মেইডের মাধ্যমে..প্রথমে শুনে উনি কান্নায় ভেঙ্গে পরলে,অনেক কাকুতি মিনুতি করে আপনাকে সুস্থ করার জন্য..সে আপনাকে কতটুক ভালোবাসে কিংবা আদৌ ভালোবাসে কিনা জানা নেই আমার তবে আপনার অসুস্থতা শুনে উনি যতটা উদগ্রীব আর অস্থির হয়ে পরেছেন তাতে আমি বলতে পারি উনি আপনার মায়াতে অনেক পরেছে..মেডিসিন টা স্পেশালি জাপানে তৈরি করা হয়,এই মেডিসিন যাদের দেয়া হয় তাদের কন্ট্রোল রেখে ওদের দিয়ে সবকাজ করায়..এক সময় মেডিসিন দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে সে পাগলের মতো আচরন করবে অথবা মেডিসিনের অভাবে মারাও যেতে পারে!!” ন্যামিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে এতোগুলো কথা এক নাগাড়ে বললো।।

চলবে?

কাঠগোলাপ পর্ব ২১

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব একুশ

?

বাংলাদেশ,

প্রায় দুই সপ্তাহ পর আজকে প্রান্ত বাড়ি ফিরে এসেছে,বাড়ি ফেরার সাথে সাথে সে তার মাকে জানিয়ে দিয়েছে যে এই সপ্তাহেই রাশনাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনবে আর সেটা আকদই হোক না কেন।।

রেহেনা চুপচাপ হু হ্যা বলে গেলো..ছেলের মতিগতি সুবিধার ঠেকছে না,তিনি ছেলের কথায় তালে তাল মিলাচ্ছে..প্রান্ত ফ্রেশ হয়ে আসলে তার মাকে উপরে ডাকলো।।

“আম্মা রাহির কি খবর??ওর জন্য কিছু আনা হয় নি যদিও!!একটা হ্যান্ডব্যাগ এনেছি শুধু!!ও আসলে দিয়ে দিও!!’প্রান্ত চায়ের কাপে চুমু দিয়ে বললো।।

প্রান্তের কথা শুনে রেহেনা চুপ আছে..রাহি যে নেই বাংলাদেশে আজ দুই সপ্তাহ ধরে সেটা প্রান্ত শুনলে কি রিয়াক্ট করবে,উনি তা বুঝতে পারছে না।।

” কি হলো আম্মা??তুমি চুপ কেন??শরীর খারাপ??রাহিকে দিয়ে প্রেশার মাপাইছো কি??!”প্রান্ত এক নাগাড়ে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো।।

“রাহি বাংলাদেশে নেয় প্রান্ত!!” রুবেল প্রান্তের ঘরে ঢুকতে যেয়ে এইসব শুনে বললো কারন রেহেনা চুপ আছে,প্রান্ত দেশে ব্যাক এসেছে শুনে উনি দেখা করতে এসেছেন।।

“মানে?বাংলাদেশ নেয় ত কোথায় গেছে!!” প্রান্ত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।।

রুবেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু থেকে শেষ অব্দি সমস্ত ঘটনা এক এক করে খুলে বলতে লাগলো..সেই সাথে রেহেনাও বললো..সব কিছু শুনে প্রান্তের নাক রাগে লাল হয়ে গেছে।।

“সে বাড়ির মেয়েকে নিয়ে ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে নিয়ে চলে গেলো আর তোমরা কিছু করতে পারলানা!!সাব্বাশ!! ” প্রান্ত রাগে দাঁত মুখ খিচে বললো।।

“রাহি ভালো থাকবে সেখানে!!” রুবেল শান্তস্বরে জবাব দিলো।।

“আপনি কি করে জানেন??ওই পাগল রাহিকে কথা বলতে না আপনার সাথে আর আপনি বলছেন ভালো আছে!!না জানি এখনো মেরে তারে গুম করে দিয়েছে কিনা ওই পাগলটা কে জানে!!” প্রান্ত আরো জোরে বললো।।

“প্রান্ত আমার রাহি ভালো আছে কারন রাহি যেদিন থেকে ওখানে গেছে সেদিন থেকে প্রতিটা ভিডিও ক্লিপ আমার কাছে ধ্রুভ পাঠায়!!আমি যেভাবে রাহিকে রেখেছি বা রাখতে চাইছিলাম ভবিষ্যতে কারো সাথে সে তার চেয়ে আরো দশগুন ভালো আছে!!” রুবেল কথাগুলো বলে সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলো।।

“ধ্রুভ রাহিকে কেনো তার বাবার সাথে কথা বলতে দেয় না তা আমার জানা নেই কিন্তু ধ্রুভ রুবেলকে রাহির প্রতিটা ভিডিও ক্লিপ পাঠায় তার গার্ডকে দিয়ে,এমনকি রুবেলের সুরক্ষার জন্য রুবেলের পিছনে গার্ড দিয়ে দিয়েছে সে..প্রতিদিন বাজার ও একটা লোক করে দিয়ে যায় এতো না করার স্বত্তেও এখন বল কেন বলবো ধ্রুভ খারাপ??এমন যা সে জিনিস দিচ্ছে এইজন্য আমাদের কাছে ভালো,রুবেল কিসে ভালো থাকবে সেটা ধ্রুভ ভালোভাবে জানে এইজন্য রাহি রিলেটেড সমস্ত কিছু তার সামনে ক্যামেরাবন্দী করে তার গার্ডকে দিয়ে পাঠায়!!হ্যা ভয় একটাই যে ধ্রুভের পাগলামির পরিমানটা বাড়লে সে নিজের মধ্যে আর থাকে না,রাহি তাকে সুস্থ করবে কিন্তু সে যদি রাহিকে ভুলে যায়??আশংকা শুধু এখানেই!!’রেহেনা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো।।

” বাল!!”প্রান্ত কথাগুলো বলেই সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ছাদে চলে গেলো তার ফোন নিয়ে,রেহেনা সেখানে বসে শ্বাস ফেলতে লাগলো।।

রাশনা অনেকক্ষন যাবত ফোন দিচ্ছে কিন্তু প্রান্ত রাগের কারনে ফোন রিসিভ করছে না,সিগারেট একটার পর একটা ফুকেই যাচ্ছে..লাস্ট টাইম যখন রাশনা মেসেজ দিলো প্রান্তকে।।

“ki hoyeche amar babutar!!deshe ese amake mone pore ni!!phone dhoro babu!!”

মেসেজ দেখে প্রান্তের মেজাজ আরো সপ্তমে উঠে গেছে,সাথে সাথে কল ব্যাক করলো প্রান্ত রাশনাকে।।

“ওই কে বাবু??আমি কি ফিডার খাই??নাকি আমারে কখনো নিভের মতো ন্যাপকিন পরে হাগতে দেখছোস যে এতো কথা কস??২৭ বছরের বাচ্চাকে বাবু ডাকোস??ওই তোরে বিয়া করলে দশটা বাবু তোর পেটে দেয়ার ক্ষমতা রাখি উল্টা আমারে বাবু ডাকোস?বাবুর বাপ হওয়ার ক্ষমতা রাখাকে তুই বাবু বানিয়ে দিয়েছিস!!কানের নিচে এমন এক থাপ্পড় মারুম বাবু ডাকা ভুলবি!!ফোন রাখ!!” প্রান্ত রাগে কথা গুলো বললো।।

রাশনা প্রথমে কল রিসিভ করে এমন ঝাডি শুনে ফোনটা কান থেকে পরতে পরতে যেয়ে বেচেছে..সে ত আহ্লাদী আর আদর মাখা কথা বলতে চেয়েছে,এই লোক রাগলো কেন??রাশনার মন খারাপ হয় না কারন প্রান্ত প্রায় এই সময় কথা বলে থাকে।।

“আজ বাবুসাহেবের মেজাজ এতো তুঙ্গে কেনো??”রাশনা বিড়বিড় করে বললো,পরক্ষনে সে আবার নিজেকে বলছে আবার বাবু ডাকছিস??শুনোস নাই ওই বলছে বাবু পেটে দেয়ার ক্ষমতা রাখে আর ওরে উল্টা বাবু ডাকিস!!।।

রাশনা তওবা তওবা দুই গালে হাত দিয়ে বলে,বইয়ের পড়াতে মুখ গুজলো..সামনে মাসে তার টেস্ট এক্সাম,পড়তে হবে তারে খুব।।

লন্ডনে রাতেরবেলা,

ধ্রুভ রাহির দুই হাতের ভাজে নিজের হাত ঢুকিয়ে রাহির ঠোটকে সেই আধাঘন্টা যাবত গ্রাস করে যাচ্ছে,রাহি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছে না মনে হচ্ছে এখনি সে শ্বাস আটকে মরে যাবে..এদিকে ধ্রুভের ছাড়ার কোন লক্ষণ নেয়।।

রাহি আর ধ্রুভের এই নতুন বাড়িতে আসা দুই সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলো,এই বাড়িটা আগের বাড়ির থেকেও বড়..খুব বেশি সুন্দর ও..বিশেষ করে রাহি আর ধ্রুভের রুমটা..ব্ল্যাক কালারের পেইন্ট করা তাদের রুমে,আর দেয়ালে টাঙ্গানো আছে রাহির পোট্রের্ট যেটা ধ্রুভ প্রথম একেছিলো..অবশ্য সেটা এখন ধ্রুভের সিক্রেট রুমে শিফট করে দেয়া হয়েছে..রাহি পোট্রের্ট টা দেখে প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলো,যে এই পোষাক সে কখনো পরেছে বলে মনে হয় না..এতো দাত কেলিয়ে কখনো সে ছবি তুলেছে কিনা সেটাও অজানা..কিন্তু ছবির মালিক ত সে।।

ধ্রুভ রাহির সাথে এই দুই সপ্তাহে অনেকবার ইন্টিমেট হতে চেয়েছে কিন্তু অসফল হয়ে গেছে..রাহি প্রথমে না করলেও ধ্রুভের আসক্তি দেখে নিজেও থমকে যেতো..কখনো দেখা যেতো কেও ধ্রুভের নাম্বারে কল করতো,অথবা কোথা থেকে কুত্তার ঘেউঘেউ আওয়াজ আসতো..এইসবকিছু ধ্রুভকে কতটা ইরিটেট করে সেটা সবকিছু একমাত্র একজনই জানে,কিন্তু উনি এরকম করবে বলে ধ্রুভের মাথায় খেলছে না..ধ্রুভ রাহিকে সবসময় এতোটা নজরে রাখছে মনে হচ্ছে ও আড়াল হলে কেও তার মীরাকে নিয়ে ফেলবে আর নয় মেরে ফেলবে।।

যতবার ধ্রুভ তার মীরার কাছে এসেছে ততবারই কিছু না কিছুর কারনে তাদের ইন্টিমেটে বাধা দিয়েছে..আজ সবকিছু অগ্রাহ্য করে ধ্রুভ রাহির উপর নিজের সব আসক্তি উজাড় করে দিচ্ছে,আজ ধ্রুভ অনেকবেশি ডেসপেরেট হয়ে গেছে।।

ধ্রুভ রাহিকে চুমু খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে গেলে,চুষে নিতে লাগলো রাহির ঠোট..রাহি ঠোট মনে হচ্ছে ছিলে যাচ্ছে,এতো গরম আর উষ্ণতাতে ছেয়ে গেছে দুজনের ঠোট..ধ্রুভ হুট করে রাহিকে উল্টা ঘুরিয়ে দিলো,রাহি উল্টা ঘুরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে,ধ্রুভ আরো পাগল হয়ে যাচ্ছে রাহির শ্বাস উঠানামা দেখে..রাহির নাইটির ফিতা একটান মেরে খুল দিলো,রাহি দেয়ালটাকে আরেকটু আকড়ে ধরলো..চোখ মুখ বন্ধ করে আছে,ধ্রুভ রাহির রাহির নাইটি পার্ট উপরের টুকু খুলে নিলো..রাহির সারা পিঠ আর ঘাড়ে ধ্রুভের ঠোট বিচরণ করছে,রাহি শিউরে উঠছে..ছোট ছোট কামড়ে ভরিয়ে দিচ্ছে রাহির গলা।।

হুট করে ধ্রুভের কানে আবার সেই আওয়াজ ঘুরঘুর করছে,সেই আওয়াজটা তাকে হিংস্র করে তুলে..দপ করে ধ্রুভের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো..রাহির কাছ থেক্র ছিটকে সরে আসলো,রাহি এতোক্ষন নিঃশ্বাস নিতে পারছিলো কারন ধ্রুভ তার গলাটা ধরেছিলো..রাহি যখন দেখলো ধ্রুভকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে,তার কাছে যেতে লাগলে..ধ্রুভ তাকে ধাক্কা মেরে দিলো,রাহি ছিটকে সরে পরাতে ছোট টি টেবিলে মাথায় আঘাত লেগে,মাথা ফেটে গেলো।।

“আহ!!” রাহি ব্যাথাতুর আওয়াজ করে মাঝেতে লুটিয়ে পরলো।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,মন্তব্যের উপরে পরের পার্ট নির্ভর করছে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ২০

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব বিশ

?

রাহির শক্তিটুকু নেই আর দাড়ানোর যে শরীরে ভর দিয়ে দাড়াবে সে,চোখের পানি এক সাইড দিয়ে পরছে..ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যেতে লাগলে কোথা থেকে ধ্রুভ এসে রাহির কোমড় চেপে ধরে..রাহিও ভয়ে ধ্রুভের গেঞ্জি খামচে ধরে..চোখ দিয়ে আর তাকাতে পারছে না সেই জিনিসটার দিকে।।

“তুমি নিচে কিজন্য আসছো মীরা??এখুনি উপরে চলো!!” ধ্রুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।

“এটা কি করে হলো??!” রাহি ক্ষীন স্বরে জিজ্ঞেস করলো।।

“সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না মীরা?চলো!!” ধ্রুভ বলেই রাহিকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে চলে গেলো।।

রাহি তখন যা দেখছিলো তা আসলেই বিভৎসকর..কারন রাহির সামনে টমির লাশকে পাঁচ ভাগ করে গার্ডেনের গাছ গুলোতে দড়ি দিয়ে টাঙানো ছিলো..সেই কাটা শরীর থেকে টপাটপ রক্ত পরছিলো..রাহি এটা দেখে মনে হচ্ছে কতটা নির্দয় হলে মানুষ কাওকে এইভাবে মারে।।

পুলিশকে খবর দিয়েছে ধ্রুভ নিজেই,ধ্রুভ যখন ঘুম থেকে উঠে ভোরবেলা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য তখনই থাই গ্লাস থেকে টমিকে সে ওই অবস্থায় দেখতে পায়..তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে কেও উঠে পরে তার পিছনে লেগেছে..রাহির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে,তাকে আর না ডেকে সে নিচে চলে গেলো..ধ্রুভের যাওয়া দেখে রিবা আর লেনাও পিছু ছুটলো..তারা উঠেছিলো চার্চে যাওয়ার জন্য,ধ্রুভের এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাওয়া দেখে ওরাও গেলো..টমিকে ওই অবস্থায় দেখে রিবা আর লেনাও কান্নায় ভেঙ্গে পরলো..ধ্রুভ শুন্য দৃষ্টিতে টমির দিকে তাকিয়ে আছে।।

টমি ধ্রুভের পালিত কুকুর ছিলো..খুব ছোট থেকেই ওর কাছে ছিলো,যখন ও বাংলাদেশ রাহিকে খুজার জন্য আসে তখন ওকে একটা ডগস কেয়ার সেন্টারে রেখে আসে..যেহেতু সে নাই,রিবা আর লেনাও থাকবে না,টমিকে সেখানে রেখে আসাটায় শ্রেয় মনে হয়েছে তার..যেদিন ধ্রুভ লন্ডন ব্যাক করে সেদিন কেয়ার সেন্টারে জানিয়ে দেয়া হয় সে আসছে,তারা সেইজন্য গতকালকে টমিকে বাড়িতে রাখতে এসেছিলো..কিন্তু আজ সকালে টমির এরকম নির্মম ভাবে মেরে ফেলাটা কিছুতেই মানা যাচ্ছে না..রিবা আর লেনার ও খুব প্রিয় ছিলো টমি..ধ্রুভ ওখানে দাড়িয়েই পুলিশকে ডেকে ছিলো..আলো ফুটার সাথে সাথে জনগন ও দেখতে আসতে লাগলো যে কি সমস্যা এখানে..সবাই টমির লাশের টুকরো দেখে ভয় পেয়েছে কারন তারাও জানে ধ্রুভের কাছে টমি কি ছিলো।।

ধ্রুভ চায় নি রাহি এইসব কিছু দেখুক..এইজন্য সে সকাল সকাল এই বাড়ি আর শহর ছেড়ে অন্য শহরে শিফট হতে চেয়েছে..ব্যবস্থা অলরেডি করেও ফেলেছে,অন্য শহরে তার আরেকটা বাড়ি আছে সেখানে যাবে..কিন্তু যার জন্য এইসব করা সে অলরেডি এইসব দেখে ফেলেছে..ধ্রুভের মেজাজ সপ্তমে উঠে আছে এক ত টমির খুন আর দ্বিতীয়ত তার আড়ালে কে এতোকিছু করার সাহস পায়??

টমিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফরেনসিক ল্যাবে,তার শরীরের যদি কিছু পাওয়া যায় এই ভেবে পুলিশ টমির লাশ নিয়ে গেছে..অবাক করার বিষয় টমির চার পায়ে একটাও নখ নেই..কেমন বিশ্রিভাবে সেই নখগুলো তুলে ফেলা হয়েছে..চোখগুলো ও তুলে ফেলা হয়েছে..এরকম মর্মান্তিক কাজ করতে ওই খুনীর বুক কাপে নাই!!

এদিকে লন্ডনের ব্রেকিং নিউজে ধ্রুভের বাড়িতে তার পালিত কুকুরের খুনের খবর সারা লন্ডন ছেয়ে গেছে..সেই সাথে ছেয়ে ধ্রুভের বিবাহিত হবার খবর..সবচেয়ে অবাক করার বিষয় ধ্রুভের এইসব নিয়ে মাথাব্যাথা নেয়,তার মাথায় চলছে অন্য খেলা..আপাতত সে তার মীরাকে নিয়ে ব্যস্ত..উপরের আসার পর থেকে সে বেহুশ হয়ে পরে আছে..ডাক্তার ও ডাকা হয়েছে।।

একটা অবয়ব রাহির পিছনে মস্তবড় চাকু নিয়ে বিকট হাসি নিয়ে রাহির পিছনে ধাওয়া করছে প্রথমে সে টমিকে কাটলো তারপর এখন রাহির পিছনে পরেছে..রাহি প্রানপনে ছুটছে,ছুটতে ছুটতে এক সময় ইটের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেছে সে..পিছু সরছে আর সামনে এগিয়ে আসছে অবয়বটি চাকু নিয়ে..রাহি ডুকরে কাদঁছে, পিছু সরতে সরতে রাহির কিছুতে আটকে গেলো..ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালে সে দেখতে পায় ধ্রুভকে..রক্তিম চোখ,চুল আউলা ঝাউলা..পরনে ময়লা শার্ট,উস্কুখুস্কু হয়ে আছে সে..ধ্রুভ রাহির কাছে বসে, রাহিকে দাড় করিয়ে তার সামনে আসলো..আর ওমনি অবয়বটি রেগে ধ্রুভের পিছন থেকে চাকু ঢুকিয়ে দিলো।।

“না!!” অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে রাহি বিছানাতে শোয়া থেকে বসা অবস্থায় উঠলো,এমন চিৎকার ধ্রুভ ও ভয় পেয়ে গেছে।।

রুমের দরজা সাউন্ডপ্রুফ,সে নিচে এসেছিলো তার মীরার জন্য চিকেন নাগেট নিয়ে যেতে..দরজা খুলে রেখেছিলো যেন সে বন্ধ দরজা দেখে ভয় না পায়,কিচেনে এসে কাজ সারে..যারা জিনিসপত্র অন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে কথা বলতে লেগেছিলো..এমন সময় রাহির চিৎকার শুনে ধ্রুভ ভয়ে এক দৌড় দিলো।।

“হেয় মীরা!!কি হয়েছে বলো??!” ধ্রুভ দৌড়ে ঘরে রাহিকে বুকের মধ্যে ধরে বললো।।

রাহি তখন হাসফাস করছে,এসি চলছে তারপরেও সে কুলুকুলু কতদ ঘেমেই চলছে..নিঃশ্বাস নিতে পারছে না সে।।

“টমিকে কেও মেরেছে ধ্রুভ!!বিশ্বাস করো!!ও তোমাকেও মারবে ধ্রুভ!!” রাহি এক নাগাড়ে এই কথাগুলো বারবার বলছে ধ্রুভকে।।

ধ্রুভের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো,তার মীরা তাকে তুমি ডেকেছে..সে তার মীরাকে বুকের সাথে আরেকটা লেপ্টে ধরলো।।

“রিল্যাক্স মীরা!!ডোন্ট স্কেয়ার্ড,আ’ম হেয়ার ফর ইউ!! আমি যতদিন আছি কেও তোমাকে টাচ করা দূরে থাক,তাকালেও সেই চোখ উপড়ে ফেলবো!!আর তুমি যতদিন আছো আমি নিঃশ্বাস নিব ভালোভাবে!!আর তোমাকে থাকতেই হবে!!তুমি আমারি!!আর হ্যা তুমি বলার জন্য এটা গিফট!!” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির ঠোটে বেশ লম্বা একটা চুমু খেলো।।

রাহি ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে,একে ত এই দুঃস্বপ্ন আর ধ্রুভকে সে তুমি ডেকেছে।।

“ইয়ে মানে,..আপনি!!” রাহি বলতে গেলে ধ্রুভ তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো।।

“তুমিতে থাকো,আপনিতে নামলে খবর আছে!! ” ধ্রুভ রাহির ঠোটে আরেকটা চুমু সাথে হালকা কামড় দিয়ে বললো।।

“টমিকে খুন করা হয়েছে!!আমার মন বলছে বিশ্বাস করো!!” রাহি কাঁদতে কাঁদতে বললো।।

“আই নো মীরা!!কে করেছে,তার দশাও ঠিক টমির মতোই হবে!!তুমি শুধু শুধু চাপ নিও না!!আমি আছি ত!!’ধ্রুভ রাহিকে বুঝাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার মাথায় চলছে অনেক ভয়ংকর অন্যকিছু,মাথার একপাশ কেমন অবশ লাগছে হয়তো সময়মত ইঞ্জেকশনটা নেয়া হয় নি এইজন্য।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।

কাঠগোলাপ পর্ব ১৯

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ঊনিশ

?

ধ্রুভ মাথা চেপে নিজের রুমের দিকে এগোলো,রাহি দাড়িয়ে এতোক্ষন নিজের ঘটনাগুলো আড়াল হয়ে দেখছিলো..সে অবাক একটা ডাক্তার মানুষ কিভাবে এরকম ব্যবহার করতে পারে??আর এই কুকুর এখানে কি করে??কুকুর দেখে সে ভীষণ ভয় পায় এটা কি এই লোক জানে না??।।

“মীরা!!’ধ্রুভ ঘরে এসে ক্ষীন স্বরে ডাকলো।।

” হুম!!”রাহি ধীর স্বরে বললো।।

“আমার মাথার ভেতরটা কেমন করতেছে??নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না!!” ধ্রুভ কথাটা বলে ধপাস করে পরে যেতে গেলে রাহি দৌড়ে তাকে এসে ধরে ততক্ষনে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে অলরেডি।।

“ধ্রুভ কি হয়েছে?? প্লিজ উঠুন!!” রাহি নানান ভাবে ডাকতে লাগলো ধ্রুভকে কিন্তু রেসপন্স নাই,রাহি তখন কোন রকমে রিবা আর লেনাকে ডাকলো..ওদের সাহায্যে ধ্রুভকে বেডে শোয়ালো..এখন ধ্রুভের কিভাবে জ্ঞান ফিরাবে বুঝতে পারছে না,তখন রিবা পরিচিত একটা লেডি ডাক্তারকে ফোন করলো..যেহেতু ধ্রুভের কড়া নির্দেশ এই বাড়িতে মীরার উপস্থিতিতে কোন পুরুষের আসা নিষেধ সেহেতু জানাশোনা ভালো জ্ঞান সম্পন্ন ডাক্তারকে ডাকা হলো।।

মিনিট দশেক পর ডাক্তার আসলো,ধ্রুভের কাছে বসে আছে..পালস রেট আরো বিভিন্ন কিছু চেক করছে..রাহি এক কোনে দাড়িয়ে আছে,বুক তার দুরুদুরু করছে এর আগে কখনো এই মানুষটার জন্য এরকম ভয় কাজ করে নি তবে আজ কেন??।।

“উনার এই সমস্যা কতদিন থেকে??”লেডি ডাক্তার জিজ্ঞেস ইংরেজিতে।।

রাহিও জবাব দিলো ইংরেজিতে যতটুকু সে রেহেনা ফুফির কাছ থেকে শুনেছে আর নিচে স্মিথের ওষুধ নিয়ে যতটুকু তার মনে ছিলো ততটুকু বললো।।

” ক্যান আই সি দ্যাট মেডিসিন?? “লেডি ডাক্তার বললো।।

রাহি ভ্রু নাচিয়ে রিবাকে জিজ্ঞেস করলে জানায়,যে ওই মেডিসিন টা স্মিথ সাথে করে নিয়ে চলে গেছে কিন্তু ভুলে প্যাকেট ফেলে রেখে গেছে..উনি কখনো মেডিসিনের কোনকিছু ফেলে রেখে যান না,আজ কিভাবে ফেলে রেখে গেছে কে জানে??রিবা সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে সেটা নিচে যেয়ে দৌড়ে আনতে গেলো।।

রিবা নিচ থেকে সেই প্যাকেট তুলে এনে রাহির হাতে দিলো,রাহি তখন সেই লেডির হাতে দিলো..উনি মেডিসিন হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকালো।।

অন্ধকারে চেয়ারে বাধা অবস্থায় একজন লোককে দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে,মার খাওয়ার কারনে লোকটি মাথা নিচু করে আছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে..তার সামনে একটা অবয়ব এসে গরম পানি ছুরে মারলো মুখে..ওমনি লোকটি অসহায় ব্যাথাতুর স্বরে আওয়াজ বের করলো।।

লোকটির দিকে অবয়বটি কেমন ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে তাকে ভস্ম করে দিবে।।

” কেনো এসেছিস এখানে??বললাম না কোনদিন তুই সফল হতে পারবিব না??!!’লোকটি ধীর কন্ঠে জবাব দিলো।।

লোকটির এমন কথা শুনে অবয়বটি ভীষন রেগে গেলো,সে তার হাত দিয়ে ওই লোকটির দুই গাল চেপে ধরলো।।

“আমার স্বপ্ন সেই সাত বছর ধরে দেখছি??এতো সহজে আমি হাল ছেড়ে দিব??কখনো না!!আমার স্বপ্ন সেটা খুব শীঘ্রই পূরন হবে!!আশরিক আলফাজ ধ্রুভ খুব জলদি শেষ হবে!!’অবয়বটি লোকটির মুখের উপর কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো।।

” প্লিজ গড সেভ ধ্রুভ ফর দিস ম্যান!!”লোকটি বিড়বিড় করে বলছে।।

ধ্রুভের মাথার কাছে বসে আছে রাহি,তার মাথার চুলগুলো আস্তে আস্তে নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে..ধ্রুভ পিটপিট করে চোখ খুলছে,সেই নিভু নিভু চোখ দিয়ে দেখলো রাহি তার মাথার কাছে বসে আছে।।

ধ্রুভ রাহিকে টান মেরে তার কাছে নিয়ে এসে,তার উপর ভর দিলো..রাহি অবাক হলেও শান্ত হয়ে গেলো,সে আস্তে আস্তে ধ্রুভ নামক মায়াতে জড়াচ্ছে..ধ্রুভ তার উপর ভর দিয়ে থাকলেও,রাহির মাথাটাকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে আছে ধ্রুভ।।

“আমি তোমার সাথে হাজার বছর বাঁচতে চাই!!তোমার মধ্যে বাঁচতে চাই,তোমার সাথে থাকতে চাই!!”

ধ্রুভ কথাগুলো বলে রাহির ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো..এতো গভীরভাবে তার ঠোটে চুমু খাচ্ছে মনে হচ্ছে কত শত বছর ধরে সে এইটার জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছে,রাহি বাধা দিচ্ছে না কিন্তু রেসপন্স ও করছে না..সে ধ্রুভের টি-শার্ট দুই হাতে মুঠ করে ধরে আছে..ধ্রুভ রাহির কোমর শক্ত করে ধরে আছে,চুমুর পাল্লা ভারী হচ্ছে..নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে,ধ্রুভের পাগলামি বাড়ছে..ঠোট ছেড়ে গলায় নেমে আসলো..কাধের কালো তিলে একটু করে কামড় দিলো,দুই গালে শক্ত করে চুমু দিলো..গলাতে টুকরো টুকরো অনেকগুলা চুমু দিলো..এক সময় চুমুর প্রতিযোগিতাতে ক্লান্ত হয়ে,একে অপরের বাহুডোরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমের মাঝে তলিয়ে গেলো।।

“তোমাকে যতটা ভালোবাসা যায় সেটা সবসময় ধারনার বাহিরে থাকবে!!” ধ্রুভ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছিলো যখন রাহির কানের কাছে ঘুমানোর আগে এই কথা বলেছিলো।।

বাংলাদেশ,

রেহেনা মাথায় হাত দিয়ে রুবেলের সামনে বসে আছে..কিছুক্ষন আগে রুবেল তাকে ধ্রুভ আর রাহির সমস্ত কথা বলে দিয়েছে..গ্রাম থেকে ফিরে এসে উনি যখন রাহির খোজ করতে ওদের বাড়িতে আসে তখন রুবেলকে একা একা খেতে দেখে জিজ্ঞে করে রাহি কোথায়??আর সে একা কেন রেধে খাচ্ছে??

রুবেল তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো সমস্ত কিছু.. সব শুনে উনার চোখ ত কপালে,উনি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরলো।।

“তুই কিভাবে পারলি ওই পাগলের সাথে রাহিকে ছেড়ে দিতে??যেদিন এসেছিলো সেদিনই পাঠিয়ে দিতি??” রেহেনা হতাশ গলায় বললো।।

“আমি কিছু করি নি ভাবছো??চিন্তা করো যে আমার উপস্থিতিতে আমার বাড়িতে থাকার কথা বলে আবার যতদিন বিয়ে না হয় ততদিন থাকার হুমকি দেয়??আবার আমাকে বেহুশ করে আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যায়??” রুবেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।।

“কি যে অবস্থায় আছে আমার রাহি কে জানে??!” রেহেনা বললো।।

“ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ!! আমি এরকম কাওকে আমার পুতুলকন্যার জন্য খুজছিলাম!!আমার পুতুলকন্যার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠবে!!আমি জানি আমার রাহি ভালো থাকবে!!” রুবেল স্মিত হেসে বললো।।

“তুই কি পাগল??অবশ্য তোকে আর কি বলবো, তুই নিজেও ইস্পিকে(রাহির মা)স্কুল থেকে তুলে নিয়ে গেছিলি??স্কুল ইউনিফর্মে বেচারি ঘেমে নেয়ে একাকার!!তুই সেদিন ওরে ধমকে বিয়ে করেছিলি!!” রেহেনা বললো।।

“সেদিন ইস্পিকে যদি আমি তুলে বিয়ে না করতাম তাহলে আমার ওকে নিয়ে যেটা ভয় পেতাম সেটা দূর হতো না!!ইস্পিকে আমার চাওয়াই শেষ চাওয়া ছিলো!ইস্পিকে প্রথম দেখাতে আমি গলে গেছিলাম তার উপর!!ভয়ে ভয়ে যদিও সে সাইন করেছিলো রেজিস্টার পেপারে!!সেদিন ওকে নিজের না করলে ওর বাবা অকে অন্য কারো করে দিতো,আমি বেচে থাকতে আমার ভালোবাসাকে কিভাবে অন্যের করে দি বলো??ইস্পি আমাকে ভালোবাসতে যদিও সময় লাগিয়েছিলো কিন্তু যখন ভালোবাসতে শুরু করেছিলো তখন তার ভালোবাসার গভীরতা মাপা মুশকিল ছিলো!!ইস্পি চলে গেছে ঠিকই কিন্ত শেষ স্মৃতি হিসেবে আমার পুতুলকন্যাকে রেখে গেছে!!ইস্পির বাবার সেদিন যা হয়েছিলো অনুভূতি, আমারো সেইম হয়েছিলো অনুভূতি!! আমরা বাবারা মেয়ের প্রতি আলাদা দুর্বল থাকি!!মেয়েদের মা ভাবি!!আমার রাহিকে যে নিয়ে গেছে সে নিশ্চয় ভালো রাখবে!!আর আমার বিশ্বাস আমার পুতুলকন্যা তাকে সুস্থ করবে!!কিন্তু ভয় একটাই যদি আমার পুতুলকন্যাকে ভুলে যায় কখনো??আমার মেয়ে যদি তাকে ভালোবেসে সব শুরু করে আর সে যদি ছুড়ে ফেলে দেয়?আমার ইস্পির শেষ স্মৃতিকে আমি কষ্টে দেখতে পারবো না রে!!” রুবেলের কথাগুলো বলার সময় চোখে জল চিকচিক করছিলো।।

রেহেনারও চোখে জল চিকচিক করছে,ভাইকে কি বলে শান্তনা দিবে বুঝছে না..সে নিজেও দেখছে,ইস্পি ভাবীর জন্য রুবেল কতটা পজেসিভ ছিলো!!

লন্ডন,
সকালবেলা,

কেমন একটা মৃদু আওয়াজ রাহির কানে আসছে,পুলিশের গাড়ির যেরকম আওয়াজ হয় ঠিক সেরকম আওয়াজ কানে আসছে বুঝছে না কার আওয়াজ এটা..রাহি পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো ধ্রুভ আজ পাশে নেই,চোখে খুলেও বুঝছে আওয়াজটা নিচ থেকে আসছে..কোনরকমে মাথায় ওড়না দিয়ে রাহি নিচে গেলো।।

রাহি গার্ডেন এরিয়াতে এসে যা দেখলো তাতে তার চোখ কপালে..ভয়ে জনা ধুকপুক করছে,গার্ডেন ভর্তি মানুষ..ফরেনার পুলিশ সামনে,রিবা আর লেনা কাঁদছে..রাহির ও চোখে জল জমেছে..দাড়ানো শক্তিটুকু মনে হচ্ছে নাই আর!!

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,রেসপন্স আসলে লিখার আগ্রহ আসে..কালকে গল্প দিব না,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।