Monday, August 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2013



প্রিয় অভিমান পর্ব ৭

0

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৭

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
গাড়িতে বসে আছি নববধূর সাঁজ নিয়ে,
কাব্য ভাইয়া একমনে গাড়ী চালাচ্ছেন,
কোনো কথা বলছেন কিন্তু কিছুক্ষন পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছেন ,
আর মুচকি মুচকি হাসছেন,
উনার এমনভাবে তাকানো আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে,
উনি যে কি মতলব করছেন তা উনিই ভালো জানেন,
প্রথমে তো উনার কথায় কিছু না ভেবে রাজি হয়ে গেছি কিন্তু এখন ভীষন ভয় করছে ,
কেন জানি না শুধু এ কথাই বার বার মনে হচ্ছে আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,
কেমন একটা অশান্তি কাজ করছে মনের মাঝে,
বৌ সাজার পর থেকে মনের মাঝে অদ্ভুত একটা ফিলিং হচ্ছে যেন আজই আমার বিয়ে,
কিন্তু এটা তো মিথ্যে আমি শুধু অভিনয় করার জন্য এমন সেঁজেছি।
তাহলে এমন কেন হচ্ছে সব কিছু সত্যি মনে হচ্ছে কেন?
বৌ সেঁজে বসে থাকতে একদম ভালো লাগছে না ভীষন কান্না পাচ্ছে ,
কিন্তু এছাড়া কোনো উপায় নেই কাব্য ভাইয়াকে কথা দিয়ে ফেলেছি উনি কিছুতেই এখন আমায় ছেড়ে দিবেন না।
কাব্য ভাইয়া আমার দিকে আবার তাকাতেই আমি একটু উচ্চ সুরে বলে উঠতে লাগলাম,
গাড়ী থামাও ! গাড়ী থামাও!!!
আমার এমন কথা শুনে কাব্য ভাইয়া সাথে সাথে গাড়ী থামিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোঁখে আমার দিকে তাকালেন,
আমি উনার দিকে কিঞ্চিৎ ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
তুমি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন??
আর এইভাবে হাসছোই বা কেন?
আমাকে কি তোমার জোকার মনে হচ্ছে??
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয় দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠলেন ,
তোমার দিকে কি আর সাধে তাকাচ্ছি এতো পয়সা করচ করে তোমার মতো পেত্নিকে পরি সাঁজিয়েছি নিজের জন্য , সেটা
ঠিকঠাক মতো আছে কি না দেখতে হবে না ,তা না হলে আমার বয়েই গেছে তোমার দিকে তাকাতে।
উনার কথা শুনে রাগে আমার গা জ্বলে উঠল,
যেখানে আমার রূপের প্রশংসা করতে সবাই পরি ,অপ্সরি উপাধী দিয়ে থাকে সেখানে উনি আমাকে পেত্নি বলছেন,
আমি রাগে জ্বলে উঠে বললাম,
আমি যখন পেত্নি তখন আমাকে দিয়ে নিজের নাটকে অভিনয় করাচ্ছেন কেন??
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলেন,
কপাল বুঝলে সবই কপাল তা নাহলে আমার চারিপাশে এতো এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে শেষে কিনা তোমাকে আমার প্রয়োজন পরল,
কি আর করা বলো ফেঁসে গেছিতো এখন তোমাকেই তো উদ্ধার করতে হবে আমাকে।
উনার এমন জবাবে আমি আর কিছু খুঁজে পেলাম না বলার ,রাগী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি আমার এমন তাকানো দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আবার গাড়ী স্টার্ট দিলেন,
আমিও আর কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম ,
.
গাড়ী থামার শব্দে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম,
উনি গাড়ী থেকে নামতে নামতে আমাকেও নামতে বললেন,
ভাবলাম হয়তো উনার কাজের জায়গায় এসে গেছি তাই আমিও নেমে পরলাম।
গাড়ী থেকে নেমে সামনে তাকিয়ে আমার মাথা ঘুরে উঠল ,
এটা তো কাজি অফিস !!!
এখানে উনার কি কাজ থাকতে পারে?
কাব্য ভাইয়া আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন??
আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে চোঁখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে ??এটা নিশ্চই তোমার কাজের জায়গা নয়,,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
-এসেছি যখন নিশ্চই কাজে এসেছি,
এতো বেশী প্রশ্ন করো কেন ,বকবক না করে আমার সঙ্গে এসো,
বলেই উনি হাঁটতে লাগলেন,
ভাবলাম হয়তো এখন থেকেও কাউকে নাটকের জন্য নিবেন তাই আমি আর কোনো প্রশ্ন না করে ,একরাশ কৌতূহল নিয়ে উনার পিঁছন পিঁছন ভিতরে যেতে লাগলাম,
.

ভিতরে গিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া দু জন ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন,
তাদের কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে ছেলে দুটি কাব্য ভাইয়ার বন্ধু,
আমি ভিতরে এক কোনে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছি কি হচ্ছে বা কি ঘটছে কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না ,
কি নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে রে বাবা!!নিশ্চই তাদের নাটক নিয়ে,
কিন্তু আমাকে সাঁজিয়ে এখানে এভাবে সঙ এর মতো দাঁড় করিয়ে রেখেছে কেন কে জানে,
উফ!অসহ্য।মনের মাঝে এক তিক্ত অনুভুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
হঠাৎ করে কাব্য ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বলে উঠলেন,
আমি যা বলছি মন দিয়ে শুনো ,
আমি উনার এমন আচমকা কান্ডে হতবিহ্বল হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,
কাব্য থেমে আবার বলে উঠলেন,
তোমাকে কোনো নাটকের জন্য সাঁজানো হয়নি ,আজ এখানে এই মুহূর্তে আমাদের বিয়ে হবে।
কাব্য ভাইয়া কথা শুনে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল,
আমি এক জটকায় উনার হাত থেকে আমার হাত সরিয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলাম,
-কি সব আবোল তাবোল বলছো আমি কেন তোমাকে বিয়ে করতে যাবো?
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া শয়তানি হাসি হেসে বলে উঠলেন,
-সত্যি তো তুমি কেন আমাকে বিয়ে করবে?
বিয়ে তো করবো আমি তোমাকে ,আর সেটা যে ভাবেই হোক।
উনার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বলে উঠলাম,
তার মানে তুমি আমাকে এখানে মিথ্যে বলে নিয়ে এসেছো??
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া ব্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন,
এভরি থিং ইজ ফেয়ার লাভ এন্ড ওয়ার,
আমি তোমাকে সত্য বললে তুমি নিশ্চই নাচতে নাচতে এভাবে সেঁজেগুজে বিয়ে করতে চলে আসতে না।
তাই এই অভিনয়টা করতে হলো,দেখো তোমার বর কতো বুদ্ধিমান নিজের বরের এমন ট্যালেন্ট দেখে নিশ্চই তোমার গর্ম হচ্ছে,
উনার কথা শুনে রাগে আমার সমস্ত শরীর জ্বলে উঠল,বুদ্ধি না ছাই মাথাটা আস্ত একটা শয়তানের কারখানা।হাতের কাছে একটা লাঠি থাকলে সেটা দিয়ে উনার মাথাটা ফাটিয়ে তারপর শান্তি পেতাম।
নিজের বোকামির জন্য যে ভালো ভাবে ফেঁসে গেছি সেটা হারে হারে টের পাচ্ছি,এখন রেগে গেলে চলবে না ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে।
উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
প্লিজ ভাইয়া আমার এতো বড় সর্বনাশ করো না,
আমি তো তোমার ছোট বোনের মতো নিজের বোনের এত বড় ক্ষতি কেউ করে ,প্লিজ ভাইয়া আমার সাথে এমন করো না ,বোন হই তো আমি তোমার।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
-লিসেন সুহা প্রথমত তুমি আমার নিজের বোন নও এন্ড দ্বিতীয়ত ছেলেরা নিজের থেকে বয়সে ছোট মেয়েদেরই বিয়ে করে বড়দের নয় ওকে।
তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোনো বাঁধা নেই সো এসব লেইম এক্সকিউজ দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
বিয়ে তো তোমার আমাকেই করতে হবে।
এবং সেটা আজই।
উনার এমন কথা শুনে আমি রেগে বলে উঠলাম,
আমি কখনই তোমাকে বিয়ে করবো না,
এভাবে লুকিয়ে তো করবই না বরং সবাই ও যদি চায় আমি তোমাকে বিয়ে করি তখনও করবো না।
আমার কথাগুলো শুনে কাব্য ভাইয়া ভয়ংকর রেগে গেলেন,রেগে গিয়ে উনি আমার হাত ধরে অন্য একটা রুমে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
যা বলছি ভালোয় ভালোয় মেনে নাও না হলে বিয়ের পরের কাজ বিয়ে আগে করতে বাধ্য হবো ।
আর এটা নিশ্চই তোমার ভালো লাগবে না।
আমি যা বলি তাই করে ছাড়ি সেটা নিশ্চই তোমার অজানা নয় ।
কাব্য ভাইয়ার এমন ভয়ানক আচরনে ভয়ে আমি কেঁদে দিলাম ,
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না,মাথা কাজ করছে না।
কিন্তু আমার যে আজ আর রক্ষা নেই এইটুকু বুঝতে পারছি।
আমি কিছু বলছি না দেখে কাব্য ভাইয়া আবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন,
আজ হোক বা কাল হোক বিয়ে কিন্তু তোমার আমাকেই করতে হবে ,এখন যদি তুমি আমার কথা না মানো পরের ঘটনাটা কিন্তু না তোমার জন্য সুখকর হবে না তোমার পরিবারের জন্য।
বলেই উনি আমাকে ছেড়ে আমার এক হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এসে কাজির সামনে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিলেন,আর উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।দেখলাম উনার দুই বন্ধুও সেখানে উপস্থিত ,এতক্ষনে বুঝতে পারলাম এদের দুজনের কাজ কাব্য ভাইয়া বিয়ে সাক্ষির জন্য এদের এখানে এনেছেন,
কাজি সাহেব আমাকে কবুল বলতে বলছেন কিন্তু আমি কিছু না বলে ,মাথা নিচু করে অজোর ধারায় কেঁদে চলছি ,এই রকম একটা বাজে দিন যে আমার জীবনে আসবে আমি কোনো দিন কল্পনাই করি নি,
নিজেকে ভীষন অসহায় লাগছে,
কাজি সাহেব আমাকে তাড়া দিতে লাগলেন কবুল বলার জন্য ,কিন্তু আমি কিছুই বলছি না কেঁদেই যাচ্ছি,
হঠাৎ কাব্য ভাইয়া এক চিৎকার করে বলে উঠলেন ,
-তুমি কবুল বলবে কি না বলেই সজোরে টেবিলে একটা ঘুষি মারলেন,
উনার এমন কান্ডে আমি কেঁপে উঠলাম ,
এবং ভয়ে কেঁপে কেঁপে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো
-ক ক কবুল।
এটা শুনে কাব্য ভাইয়া শান্ত হয়ে এসে আমার পাশে বসলেন তখন ও আমি মাথা নিচু করে কেঁদে চলছি,
কাজি সাহেব আমার বলা কবুল শুনে আলহামদুল্লিলাহ বলে আবার বলতে বললেন আমি ঠিক আগের বারের
মতো বলে উঠলাম উনি আমাকে আবার বলতে বললেন আমি
ঠিক একি ভাবে উচ্চারন করলাম।
তারপর কাব্য ভাইয়া কবুল বললেন।
কবিননামায় সই করে আমাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন,
বাইরে এসে আমি মূর্তির মতো দাড়িয়ে কেঁদে চলছি ,
কাব্য ভাইয়া আমার কাছে এসে উনার সঙ্গে যাবার জন্য বললেন কিন্তু উনার কোনো কথাই আমার কান দিয়ে যাচ্ছে না আমি দাঁড়িয়েই রইলাম,
অবশেষে কাব্য ভাইয়া এসে আমাকে পাজো কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন ,
আমি কোনো রিয়েক্ট করলাম না আমি শুধু কেঁদেই যাচ্ছি ।
আমাকে গাড়িতে বসিয়ে কাব্য ভাইয়া গাড়ী স্টার্ট দিলেন,আমি শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে ভাবতে লাগলাম ,
একটি রাত আর একটি দিনের ভিতরে আমার জীবন সম্পূর্ন
উলট পালট হয়ে গেল,
কি থেকে কি যে হয়ে গেল,সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে বিরাট বড় দু:স্বপ্ন।
যে মানুষটাকে আমি এক মুহূর্ত সহ্য করতে পারিনা তাকে আমি সারা জীবন কি ভাবে সহ্য করবো।
কখনই না এ বিয়ে কিছুতেই আমি মেনে নিবো না।
পরিবারের সবাই নিশ্চই সবটা শুনলে আমাকে উনার হাত থেকে রক্ষা করবে,
এই রাক্ষসটার হাতে নিশ্চই আমাকে ওরা ছেড়ে দিবে না।
এক বুক আশা নিয়ে গাড়িতে বসে রইলাম।
.
কাব্য ভাইয়া গাড়ী চালাচ্ছেন উনার মুখে বিজয়ের হাসি ,
যে হাসিটা দেখে আমার সমস্ত গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে,
উনার দিকে তাকাতেই মন চাইছে না।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলাম।
.
বাড়িতে এসে উনার সঙ্গে ভিতরে ঢুকলাম,
আমাকে এভাবে কনের সাঁজে দেখে আপু আর আন্টি অবাক হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন,
বিস্ময় নিয়ে তারা একবার আমার দিকে একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছেন,
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কাব্য ভাইয়া সবাইকে যা বললেন সেটা শুনার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।(চলবে)

প্রিয় অভিমান পর্ব ৬

0

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৬

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া আমাকে একটা বিরাট বড় পার্লারের সামনে নিয়ে এসেছে ,কিন্তু উনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন কি করতে চাইছেন উনি আমার সাথে ,
আমি বিস্ফোরিত চোঁখ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালাম কাব্য ভাইয়ার দিকে,
উনি আমাকে তাকাতে দেখে বলে উঠলেন,
,ভেতরে চলো কাজ আছে ,
উনার কথায় আমার কোনো হেরফের হলো না ,
আমি যে ভাবে ছিলাম সেভাবেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে তাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আবার বলে উঠলেন,
‘কি হল এভাবে রসগোল্লার মতো চোঁখ বানিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন,
তারপর ঝুকে আমার কানের কাছে মুখ এনে রসিকতার সুরে বলে উঠলেন,
হাঁটতে পারছো না, পায়ে ব্যাথা করছে, কোলে উঠতে চাও?
সেটা মুখ ফুটে বললেই পারো এতো হেজিটেট
করছো কেনো,
আমি তো তোমার নিজের মানুষই,
আমার কাছে এতো লজ্জা কিসের,
বলেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন,
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল ,চোঁখ রাঙিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
‘আমি এখানের ভিতরে কেন যাবো,আমাকে বাসায় না নিয়ে গিয়ে তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে ,
তোমার প্রয়োজন হলে তুমি যাও,
আমার চোঁখ রাঙ্গানো দেখে উনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
একদম আমাকে চোঁখ রাঙাবে না ,আমি কিন্তু ভুলে যাবো আমরা পাবলিক প্লেসে আছি,
উনার কথা শুনে মনের সব সাহস বেলুনের মতো চুপসে গেল,
আমি কিছু না বলে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলেন,
তোমাকে এখানে একটা জরুরি কাজের জন্য নিয়ে এসেছি,
আমি অবাক হায়ে উনার মুখের মুখের দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম উনার কথা,
কাব্য ভাইয়া থেমে আবার বলে উঠলেন,
আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে একটা নাটক বানাচ্ছি সেখানে একটা কনের রুল আছে ,যাকে এই রুলটা প্লে করতে দিয়েছিলাম সে আজ জানিয়েছে যে সে এটা করতে পারবে না,এই অল্প সময়ে এখন হিরইন পাবো কোথায় তাই এই রুলটা তোমাকে প্লে করতে হবে,তোমাকে কনে সাজানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।
উনার কথা শুনে আসমান ভেঙে আমার মাথায় পরলো,বিচলিত মুখে উনার দিকে তাকালাম,
আমার তাকানো দেখে কাব্য ভাইয়া বলে উঠলেন,
ভয় পাবার কোনো কারন নেই মাএ দশ মিনিটের একটা শট আমি কিন্তু তোমাকে ভার্সিটির অনুষ্ঠানে নাটকে অংশগ্রহন করতে দেখেছি,
তুমি যদি আমার এই উপকারটা করো তাহলে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আর কখন তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকবো না,
উনার কথা গুলো আমি এতক্ষন নিরব স্রোতার মতো শুনলাম,
ভেবে পাচ্ছি না কি বলবো ,এই কাব্য ভাইয়াটা বারবার কেন যে আমায় ফাসিয়ে দেয়,
প্যারা দেওয়ার জন্য উনি কি পৃথিবীতে আর কাউকে পান না শুধু আমাকেই পান।
আমি যে উনার কোন জন্মের শত্রু তা উনিই ভালো জানেন।
আমাকে কিছু না বলতে দেখে উনি অসহায় মুখে আবার বলে উঠলেন,
প্লিজ সুহা রাজি হয়ে যাও !! এতে কিন্তু তোমার ও লাভ আছে।
উনার অসহায় মুখ দেখে আমার খুব খারাপ লাগল,
আহারে বেচারা হয়তো সত্যি বিপদে পরেছে আর তাছাড়া এটা করলে আমিও উনার হাত থেকে বেঁচে যাবো,
উনাদের বাড়িতে তো আর জীবনেও আসবো না,আর উনি তো আমাকে কথা দিচ্ছেন ভার্সিটিতে ও আর যাবেন না।
তাহলে তো এই রাগী রাক্ষসটার মুখমুখি আমাকে আর কখনও হতে হবে না।
এই একটা সুযোগ আছে নিজেকে বাঁচানোর ।
বুদ্ধিমানেরাই তো সুযোগকে কাজে লাগায়,
আর আমি একজন বুদ্ধিমতি ,আমারও উচিত সুযোগকে কাজে লাগানো।
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,
আমি রাজি তোমার কথায়,তুমি কিন্তু তোমার কথা রেখো।
আমার কথা শুনে উনি দুর্বোধ্য হেসে মাথা নাড়ালেন,
.
ভেতরে বসে আছি দুই তিন জন মেয়ে মিলে আমাকে সাজাচ্ছে ,একদম নব বধূর সাজে,
ভীষন বিরক্ত লাগছে তবুও সব কিছু নিরবে সহ্য করছি ,এটা ভেবে মনকে শান্তনা দিচ্ছি আজকেই শেষ এর পর থেকে এই অসহ্য প্রাণিটাকে কখনও দেখতে হবে না,
আমাকে আর কোনো ভাবেই বিরক্ত করতে পারবে না।
মেয়ে গুলো অনেক যত্ন নিয়ে সাবধানে আমাকে সাঁজাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে একটু ভুল হলে কেউ ওদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে।
আমি কাঠের পুতুলের মতো বসে আছি ,
এই সাঁজগুজের প্রতি আমার কোনো আগ্রহই লাগছে না।
কাব্য ভাইয়া আমার জন্য বাইরের রুমে ওয়েট করছেন।
মন চাইছে গিয়ে গলা টিপে উনাকে মেরে ফেলি।
.
টানা এক ঘন্টা পর আমাকে সাজানো শেষ হলো ,
মেয়ে গুলো আমাকে সাঁজিয়ে দিয়ে বলতে লাগল,
‘আপনাকে কোনো অপ্সরির থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না,
আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,
যে আপনাকে চয়েজ করছে এবং আপনার সাঁজগুজের জন্য এসব জিনিস কিনেছে তার পচ্ছন্দ সত্যি অসাধারন এবং প্রশংসার যোগ্য।
ওদের কথায় আমি কিছু বললাম না শুধু একটু মৃদু হাসলাম।
আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছি না,
বাহ্! বধূবেশে আমায় তো অন্য রকমের সুন্দর লাগছে,
নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেই আশ্চার্য্য হলাম,
বধূবেশে হয়তো সব মেয়েদেরই এমন সুন্দর লাগে,
তাই হয়তো আমাকেও এমন অবাক করা সুন্দর লাগছে।
ভারী গয়না ,গাঢ় খয়েরি রংয়ে লেহেঙ্গা আর সাঁজগুজে মনে হচ্ছে কোনো রুপকাথার রাজ্যের রানী ।
.
বাইরের রুমে এসে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে গাঢ় খয়েরি রংয়ের পান্জাবী পরে চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছেন,
খয়েরি পান্জাবীতে উনাকে ভীষন সুদর্শন লাগছে ,
ফর্সা মুখ, গালে কুঁচা কুঁচা চাপ দাঁড়ী ,ঘন ব্রু যুগলের নিচে গভীর এক জোরা চোঁখ।
বেবি পিংক কালারের এক জোরা ঠোঁট সব মিলিয়ে অসাধার একজন পুরুষ ।
পার্লারে কর্মরত কয়েক জন মেয়ে হা হয়ে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,আরো অনেকে আড় চোঁখে বারবার তাকাচ্ছে।
কাব্য ভাইয়ার এমন সাঁজগুজের মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না,
আমাকে দেখা মাএ উনি দাঁড়িয়ে গেলেন ,
কাব্য ভাইয়া অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,
.
কাব্য সুহা কে দেখে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরল,
ওর মনে হচ্ছে সয়ং কোনো পরি আকাশ থেকে নেমে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।
ওর মিষ্টি পরিটাকে বধূবেশে ওর কল্পনার চাইতেও বেশী সুন্দর লাগবে নিজেই ভাবতে পারে নি।
সুহার এমন সৌন্দর্য দেখে বিভোর হয়ে আশেপাশের সব কিছু ভুলে গিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সুহার দিকে তাকিয়ে রইল,
কাব্য যেন চোঁখের পলক ফেলতে ও ভুলে গেল।
.
উনার এমন তাকানো দেখে আমার অস্বস্তি লাগল,
আমি উনার একটু কাছে গিয়ে হালকা কেঁশে উঠালাম,
আমার কাঁশির শব্দ শুনে উনার ধ্যান ভাঁঙ্গল,
উনি হকচকিয়ে উঠে একবার নিচের দিকে তাকিয়ে আবার ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন,
তখন আমি উনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে সন্দেহের চোঁখ নিয়ে বলে উঠালাম ,
‘তুমি এভাবে সেঁজেছো কোন মতলবে,
আমার প্রশ্ন শুনে উনি ব্রু নাচিয়ে জবাব দিলেন,
নাটকের একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্যারেক্টার আমাকে করতে হবে,
অভিনয় কি শুধু তুমি একা জান নাকি আমিও যে অভিনয়ে পারদর্শি সেটা আজ তোমাকে দেখিয়ে দেবো।
আমি উনার কথায় বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলাম,
বাবাহ্ কাব্য ভাইয়া নাটকও বানাচ্ছেন আবার সেই নাটকে বিশেষ চরিএে অভিনয় ও করছেন উনার কি ট্যালেন্ট মাইরি।(চলবে)

প্রিয় অভিমান পর্ব ৫

0

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ৫
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া গাড়ীতে হেলান দিয়ে দুহাত পকেটে পুরে গম্ভির মুখ নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন।
উনার চোঁখ মুখ ফোলে রয়েছে ,চোঁখটা ও ভীষন লালচে হয়ে আছে দেখে বুঝা যাচ্ছে রাতে একটুও ঘুমাননি।
উনাকে দেখে আমার মাথা ভন ভন করে ঘুরছে ,কান দিয়ে মনে হচ্ছে গরম ধোয়া বের হচ্ছে।
ভয়ে আমার অসহনিয় গরম লাগছে ,শরীর থেকে ঘাম ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে।
নিজেকে প্রচন্ড শক্তিহীন অসহায় লাগছে।
পা দুটি ভয়ে জমে বরফ হয়ে গেছে,মন চাইছে এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যাই কিন্ত এক পা ও নড়তে পারছি না।
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
এক পা ও এগুতে পারলাম না।
আমি সব সময় যা ভাবি হয় তার উল্টোটা সেটার আবার প্রমান পেয়ে গেলাম।
ভেবেছিলাম কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই এখান থেকে পালিয়ে যাবো কিন্তু পুরা কপাল আমার আমার আগেই উনি উঠে বসে আছেন।
এখন কিভাবে পালাবো সেটাই ভাবতে লাগলাম।
বিপদের সময় নিজের মাথাটাও শত্রু হয়ে যায় একদমই কাজ করে না।
.
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন ।
সেটা দেখে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ।
এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে তাকলে যে আমি ঘোর বিপদের মাঝে পরবো সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে।
নিজের মাঝে সাহস যুগিয়ে প্রাণ পণে দিলাম এক দৌড় কিন্তু বেশী দূর যেতে পারলাম না তার আগেই কাব্য ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে ফেললেন শক্ত করে।
হাত ধরায় আমি ঘুরে তাকাতেই উনি আমার হাতে একটা হেচকা টান দিলেন আর আমি গিয়ে পরলাম উনার বুকে।
আমার কপালটা উনার বুকে গিয়ে ঠেকল,
উনি উনার হাত দিয়ে আমার কোমরটা শক্ত করে ধরে রইলেন।
আমি মাথা তুলে তাকাল কাব্য ভাইয়ার দিকে ,
উনি কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি তাকতেই কাব্য ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন,
‘আমি ভেবেছিলাম তুমি এমন কিছুই করবে ,তাই তো সেই ভোর বেলা থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তোমাকে ধরার জন্য।
আর তুমি কিনা আমাকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছো।
তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে পালাতে দেবো।
এই কাব্যর কাছ থেকে পালানো এতো সহজ নয়।
এক মাএ আল্লাহ আর মৃত্যু ছাড়া এই পৃথিবীতে কারো সাধ্য নেই তোমাকে আমার কাছ আলাদা করার।
এতদিন অনেক সহ্য করেছি তোমার এই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো কিন্তু আর নয়।
তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি ,ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে তুমি আমার সাথে সহজ হতে পারবে,কিন্তু এখন বুঝতে পারছি তুমি
ঠিক হওয়ার মানুষ নও।
কাব্য ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গেল ,আমি তো উনার কথা কিছুই মন দিয়ে শুনছি না, আমি ব্যস্ত নিজেকে উনার হাত থেকে ছাড়াতে।
অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ ।কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না।অবশেষে পরাজিত মুখ নিয়ে,
কাব্য ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠালাম,
‘প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছাড়ো আমি বাসায় যাবো,
আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি আমার সাথে এমন করছো কেন?
আমার একথা শুনে কাব্য ভাইয়া তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলেন,
‘তুমি তো আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে ফেলছো,
যা এত দিন কারো করার সাধ্য হয়নি ,
তুমি আমার এতো বড় একটা ক্ষতি করেছো যেটার জন্য এই কাব্য নিজেকে নিজের মাঝ থেকে হারিয়ে ফেলেছে।
তোমাকে আমি কিছু বলার জন্য অনেক বার তোমার কাছে গিয়েছি ,কিন্তু তুমি আমাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বার বার হয় এড়িয়ে গেছো নয় পালিয়ে গেছো,
এই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো খেলাটা আমি আর নিতে পারছি না।
আজ আমি এমন কিছু করবো যা তোমার পালিয়ে বেরোনোর সব রাস্তা বন্ধ করে দিবে।
ক্ষতি যখন করেছো ক্ষতি পূরণ তো তোমাকে দিতেই হবে।
বলেই উনি আমার কোমড় ছেড়ে আমার হাত ধরলেন শক্ত করে,তারপর টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন গাড়ীর দিকে।
আমি অনেক মিনতি করলাম যে আমি উনার সাথে যেতে চাই না কিন্তু উনি আমার কোনো কথাই শুনলেন না ,জোর করে আমাকে গাড়িতে তুলে দরজা লক করে দিলেন,
তারপর উনি এসে উঠে বসে গাড়ী স্টার্ট দিলেন।
সেটা দেখে আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
‘আমি তোমার সাথে যেতে চাই না আমি একাই বাসায় ফিরতে পারবো,
তোমার আমাকে পৌচ্ছে দিতে হবে না ,প্লিজ গাড়ি থামাও!!
কিন্তু উনি আমার কোনো কথার উওর দিলেন না নির্লিপ্ত ভঙিতে ড্রাইভ করতে লাগলেন ।
ড্রাইভ করতে করতে উনি কার সাথে ফোনে কি যেন কথা বলতে লাগলেন ,
আমি সেটা বুঝতে পারলাম না কারন আমি তখনও উনার দিকে তাকিয়ে একনাগারে বলে চলছি গাড়ী থামাতে ।
অনেকক্ষন একি কথা বলতে বলতে আমি হাপিয়ে উঠালাম কিন্তু কাব্য ভাইয়ার কোনো হেলদোল নেই উনি মুখে গাম্ভীর্যপূর্ন ভাব রেখে নিজের মতো গাড়ী চালাচ্ছেন আমার দিকে তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত।
বুঝতে পারলাম আমার আর কিছুই করার নেই,আমি শুধু শুধু নিজের এনার্জি লস করছি উনি তো আমার কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না।
বড় একটা নি:শ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকালাম ।
তাকিয়ে আমার চোখ ছানা বড়া হয়ে গেল।
এটা তো আমার বাসার রাস্তা নয় ,উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
রাস্তার দিকে তাকিয়ে আমি এক বিকট চিৎকার দিয়ে বলে উঠালাম,
‘ভাইয়া এটা আমার বাসার রাস্তা নয় তুমি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো,
আমার চিৎকার শুনে কাব্য ভাইয়া জোরে গাড়ী ব্রেক করলেন তারপর অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন,
উনার এভাবে তাকানো দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলেম,
একটা ঢোক গিলে তুতলাতে তুতলাতে বলে উঠলাম,
‘ তু তুমি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া মৃদু গর্জে উঠে বললেন,
আমি অন্ধ নই কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি সেটা আমি স্পট দেখতে পাচ্ছি ।
যদি তুমি মুখ বন্ধ না করে বসো কি করে মুখ বন্ধ করতে হয়ে সেটা আমার ভালো ভাবে জানা আছে ।
রাতের কথা নিশ্চই ভুলে যাও নি সেই রকম কিছু যদি না চাও মুখ বন্ধ করে বসে থাকো।
উনার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম তবুও সাহস যুগিয়ে বলে উঠলাম,
‘ভাইয়া আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
আমার কথা শুনে উনি একটু দুর্বোধ্য হেসে বললেন,
‘কোথায় যাচ্ছি সেটা একটু পরই বুঝতে পারবে।
আর যদি কোনো প্রশ্ন করো তাহলে রাতের ঘটনাটা এখানে আবার ঘটবে ।
আমার কিন্তু কোনো প্রবলেম নেই,তোমার ঠোঁটের টেস্টটা কিন্তু অসাম।
নাউ চয়েজ ইজ ইউস!!!
বলেই উনি আবার গাড়ী ড্রাইভিং করতে লাগলেন।
উনার কথা শুনে আমি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইলাম,
আর একটি কথাও বলতে পারলাম না,
রাতের ঘটনা আবার ফেইস করার মতো সাহস আমার নেই ।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ,উনি চাইছেনটা কি,
অজানা ভয়ে আমার বুক ধুর ধুর করে কাঁপতে লাগল,
অনেক প্রশ্ন আমার মাথার মাঝে ঘুরা ফিরা করছে কিন্তু ভয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারছি না।
আমি এক মনে ভেবেই চলছি ,আমি উনার কি ক্ষতি করলাম ,আমার জানা মতে আমি তো উনার কোনো পাকা ধানে মই দেই নি,তাহলে উনি কিসের ক্ষতির কথা বলছেন।
নিজের অজান্তেই কি উনার কোনো বড়সড় ক্ষতি করে ফেললাম।আর সেটার শাস্তি দিতেই কি উনি আমাকে কোনো গোপন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে খুন করতে।
খুন কথা মনে হতেই ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠল,আমি ভয়ে ভয়ে চোরা চোঁখে একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম ,উনার মুখের দিকে তাকালে কেউই বুঝতে পারবে না উনি এতো ভয়ংকর একজন মানুষ,
আজই কি তাহলে আমার শেষ দিন,
ভয়ে আমি এসি গাড়ীর মধ্যেও কুলকুল ঘামতে লাগলাম।
হঠাৎ গাড়ী থামার শব্দে আমার ভাবনার ঘোর কাটল।
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া গাড়ী থেকে নামছেন,
উনি নেমে আমার দিকের দরজা খুলে দিলেন ,আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি চোঁখ দিয়ে ইশারা করলেন নামতে,
আমি গাড়ী থেকে নেমে সামনের দিকে তাকলাম, তাকিয়েই আমার চোঁখ বিষ্ফোরিত এবং মুখ রক্ত শূণ্য হয়ে গেল।(চলবে)
বি:দ্র:(পার্ট ছোট হওয়ার জন্য দু:খিত)

প্রিয় অভিমান পর্ব ৪

0

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৪

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা


সুহা খাটে বসে রইল গুটিশুটি মেরে ।বড় বড় শ্বাস
পরছে এলোমেলো ভাবে ।
চোঁখ দিয়ে জল পরছে অঝোর ধারায়।ঠোঁট কাঁপছে মৃদু।
মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ,যা হলো এটা নিয়ে কিছুতেই কিছু ভাবতে পারছেনা ,কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা অবিশ্বাস্য লাগছে নিজের কাছে।

সুহা মাথা নিচু করে , কপাল হাঁটুতে ঠেকিয়ে বসে ভাবতে লাগল কাব্যের কথা,
ওর বড় বোনের বিয়ের সময় কাব্য অস্ট্রেলিয়া ছিল লেখা পড়ার জন্য,
সুহা শুধু শুনেছিল ওর বোনের একজন দেবর আছে আর সে বাইরে থাকে। লেখা পড়া শেষ করে দেশে ফিরবে।
এ বিষয়ে সুহার কোনো আগ্রহই ছিল না শুধু বোনের মুখে নামটা শুনেছিল।
নামটা ওর খুব ভাল লেগেছিল।
কিন্তু কখনও ফটো বা কোনোভাবে দেখার ইচ্ছে হয় নি।
ওর বড় বোন সানার বিয়ের দের বছর পর কাব্য দেশে ফিরে ।
কাব্য দেশে ফিরার অনেক দিন পর সুহা একদিন ওর বোনের মেয়ে স্নেহাকে দেখার জন্য ওদের বাসায় আসে
তখন প্রথম কাব্যের সাথে দেখা হয়।
সুহা দেখে একটি ছেলে ফোনে কথা বলে নিচে নামছে,
ছেলেটার চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব রেগে আছে কিন্তু রাগটা যেন তার সৌন্দর্যকে একটুও কমাতে পারেনি। সুহার দু চোঁখ আটকে গিয়েছিল ওকে দেখে ।
কাব্য তখন ফোনে কারো সাথে ভীষন রেগে কথা বলছিল ,কথা বলার এক পর্যায়ে কাব্য রেগেমেগে ফোনটা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।
সুহা সেটা দেখে একটা চাপা চিৎকার দিয়ে দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

সুহার চিৎকার শুনে কাব্যের চোঁখ পড়ে সুহার দিকে ও তাকিয়ে দেখে রেড কালারের কামিজ আর হোয়াইট কলারের পায়জামা ও ওড়না পরা একটা মিষ্টি পরি চোঁখ মুখ খিচকে হাত দিয়ে কান চেপে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে,
চুলগুলো বেনি করে এক পাশে রাখা।
মেয়েটাকে এক পলক দেখে কাব্যেকের সমস্ত রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল,সেখানে জন্ম নিল একরাশ ভালো লাগার অনুভুতি।বিদেশে থাকতে কত মেয়ের সাথে রিলেশন করেছে কিন্তু কাউকে দেখে মনের ভেতর এমন অনুভুতি হয়নি।কাউকে দেখেই হার্ট বিট ফাস্ট হয় নি ।কিন্তু এই মেয়েকে এক নজর দেখার পর থেকে হার্ট বিট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালো।

সুহা কিছুক্ষন পর চোঁখ খুলে দেখল ছেলেটা তার সামনে দাড়িয়ে অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে,
সুহা কোনো কিছু না বলে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে বোনের রুমে চলে আসে।
সুহা ছোটবেলা থেকেই রাগী মানুষদের ভয় পায়।
,
সুহার পিছন ফিরে দৌড় দিতেই কাব্যরের নজর যায় সুহার পিটে থাকা তিলটার উপর,
সেটা দেখে কাব্যের বুকের বা পাশে সুক্ষ ব্যাথা অনুভুত হলো।ও শুকনো গলায় একটা বড় ঢোক গিলে সুবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ।

বোনের কাছে ছেলেটার সম্পর্কে জানতে চাইলে যানতে পারে ছেলেটা তার বোনের দেবর কাব্য ,আরো জানতে পারল বিদেশে কাব্যের একাধিক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল।আর কাব্যের ভয়ংকর রাগের কথা।
সেই থেকে কাব্যের প্রতি ওর কোনো আগ্রহই রইল না ।
কাব্যের সাথে ওর পরিচয় হওয়ার পর থেকে,যতবার ওর সাথে কাব্যের দেখা হয়েছে, কাব্য বিভিন্ন ভাবে সুহার সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সুহা সবসময় ওকে এড়িয়ে গেছে ।
ফর্মালিটির দুই একটা কথা বলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত।কাব্যের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি হতো ওর মনে হতো কোনো প্লে বয়ের সাথে কথা বলছে।
কাব্যের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে প্রায়ই কাব্যকে ওর ভার্সিটিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখতো ।কাব্য একদিন ভার্সিটিতে সুহার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল আর সুহা কথা না বলে চলে যাচ্ছিল সেটা দেখে কাব্য রেগে গিয়ে যখন জোর করছিল সুহাকে কথা বলার জন্য ,তখন ভয়ে সুহা কেঁদে দিয়েছিল।তারপর থেকে কাব্য ওর সাথে কোনো কথা বলার চেষ্টা করতো না শুধু দাড়িয়ে তাকতো ।তাই এই বিষয় নিয়ে সুহা ততোটা মাথা ঘামায় নি।
ভেবেছিল এখানে কোনো মেয়ের সাথে হয়তো রিলেশন করছে তাই আসছে।
সেদিনের পর থেকে কোনো ছেলে সুহার সাথে কথা বললে পরেরদিন সুহা কথা বলতে গেলেই সে এড়িয়ে যতো,
সুহা বিষয়টা প্রথম খেয়াল না করলেও পরে দেখলো ভার্সিটির কোনো ছেলেই ওর সাথে কথা বলে না ও বলতে গেলেই তারা কেমন ভয়ে ভয়ে ওকে এড়িয়ে যায়।
এসব বিষয় কিছুই সুহার মাথায় ঢুকল না কিন্তু সে বিষয়টাতে ততোটা পাত্তা দিলনো না।
কারন ভার্সিটিতে কোনো ছেলের সাথে সুহার গভীর কোনো সম্পর্ক ছিলো না।
তার কিছুদিন পর ভার্সিটিতে একটি নতুন ছেলে সুহার সাথে মিস বিহেভ করে আর ওর হাত ধরে ,
কাব্য সেদিন ছেলেটাকে এতো মার মেরেছিল মারতে মারতে শেষে ছেলেটার হাতটাই ভেঙ্গে দিয়েছিল ।
সেটা দেখে সেদিন সুহা ভয়ে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করেছিল কিন্তু গায়ে ছিল প্রচন্ড জ্বর যে জ্বর সারতে
টানা সাত দিন লেগেছিল ।
সেদিনের পর থেকে কাব্যকে দেখলে ভীষন ভয় পেতো।
কাব্যকে সামনের দিকে দেখলে ও পিছন দিক দিয়ে পালিয়ে যেত।
ভয়ে বোনের বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায়।
কিন্তু কাব্য প্রতিদিনই ভার্সিটিতে গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতো।
এভাবেই চলছিল দিন।
কিন্তু বোনের একমাএ মেয়ের জন্মদিন হওয়ায় বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হলো ।আর এসে এমন বিশ্রী ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।
কাব্য ভাইয়া কেন এমন করছেন আমার সাথে ,আমার কাছে কি চান উনি?
যতই আমি তাকে এড়িয়ে চলে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছি ততই উনি এগ্রেসিভ হয়ে আমার আরো কাছে চলে আসছেন।

হাঠাৎ আযানের সুর কানে আসায় ভাবনায় ছেদ পরলো আমার।

হাঁটু থেকে মাথা তুলে বসলাম,মাথাটা ভার হয়ে আছে
সারা রাত জেগে থেকে কান্না করার জন্য হয়তো এমন হচ্ছে ।
ঠোঁটে এখনও মনে হচ্ছে কাব্য ভাইয়ার স্পর্শ লেগে আছে ।উন্মাদের মতো হাতের উল্টো পিট দিয়ে কয়েক বার ঠোঁট জোরা মুছতে লাগলাম,কিন্তু নাহ তবুও মনে হচ্ছে স্পর্শটা যাচ্ছে না ।
উঠে দাঁড়ালাম আবার শাওয়ার নিতে হবে ,পানি দিয়ে এই স্পর্শগুলো মুছে ফেলতে হবে তা নাহলে শান্তি পাবো না।
আমার সমস্ত শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এই অপরাধের জন্য কাব্য ভাইয়াকে কঠোর শাস্তি দেই।
কিন্তু কি করবো আমি ,কি শাস্তিই বা দেবো এই দানবটার সাথে কিছুতেই পেরে উঠবো না আমি।
আর এই অপ্রীতিকর ঘটনা আমি কাউকে কিভাবে বলবো।
মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম আর কোনদিন কাব্য ভাইয়ার সামনে আসাতো দূরের কথা এই বাড়িতেও আর কোনদিন আসবো না, যত দিন উনি এখানে আছেন।
দরকার পরলে ভার্সিটিতে ও আর যাবো না।

ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখে চমকে উঠলাম ,চোঁখ দুটি কেমন ফুলে লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্না করার জন্য।
ঠোঁটের দিকে চোঁখ পরতেই রাগে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো ,চোঁখে সামনে বার বার রাতের ঘটনাটা ভেসে উঠতে লাগল ,মনে হচ্ছিল ঠোঁট দুটি নিজের থেকে আলাদা করে দেই।
এলোমেলো ভাবে দু হাত দিয়ে সমস্ত মুখে পানির জাপটা দিতে লাগলাম।

শাওয়ার সেরে নামাজ পরে নিলাম।
তারপর জানালা খুলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম সকাল হওয়ার অপেক্ষায়।
কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই এখান থেকে চলে যেতে চাই ।কিছুতেই উনার মুখমুখি হতে চাইনা।
এই ভয়ংকর কালো রাতটা আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাই ।

সকাল হতেই নিচে নেমে আসতে লাগলাম,ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছি কোথাও কাব্য ভাইয়া আছেন কিনা সেটা দেখার জন্য ।
উনি ঘুম থেকে দেড়িতে উঠেন জানি তবুও কেন যানি ভয় করছে।
উনাকে এখানে না দেখে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম।যত দ্রুত সম্ভব এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরতে হবে।
নিচে নামতেই আপুর সাথে দেখা হলো ।
আমাকে দেখেই আপু আতংকে উঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
চোঁখ মুখের এই অবস্তা কেনো?রাতে কি আমি ঘুমাই নি?
রাতে ভীষন মাথা ব্যাথা করেছিল তাই ঘুম হয়নি বলে আপুকে ম্যানেজ করলাম।
স্নেহাকে নিয়ে খেলা করছি,বাবুটা দেখতে একদম কিউটের ডিব্বা।গুলোমোলো একটা পুঁতুল দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছা করে।
হাসলে আবার গালে ছোটছোট দুইটা ডিম্পল পরে পুতুলটার।
কি যে মিষ্টি দেখায় ওকে হাসলে সেটা বলে বুঝাতে পরবো না।
ও আমার খুলে বসে হাসছে আর খেলা করছে ।
আর আমি ভয়ে ভয়ে কিছুক্ষণ পর পর উপরে তাকাচ্ছি কাব্য ভাইয়া আসছেন কিনা দেখার জন্য।
আপুকে তাড়া দিতে লাগলাম বাসায় ফিরার জন্য,
কিন্তু আপু তো আর আমাকে নাস্তা না করিয়ে বাসায় ফিরতে দিবেন না ।
কাজের লোকের সাহায্যে আপু নাস্তা ডাইনিং এ সাজাতে লাগলেন।
আমি স্নেহাকে নিয়ে বসে আছি কিন্তু মনে একটুও শান্তি পাচ্ছি না ।জানি না কেন কোন এক অজানা ভয়ে বাব বার বুক কেঁপে উঠছে ।
ভালোই ভালোই এই বাসা থেকে বেরিয়ে পরতে পারলেই বাঁচি।আর সেটা অবশ্যই কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই।

নাস্তার টেবিলে বসে আছি আমি ,আপু আর উনার শাশুড়ী ।আপুর শশুড় বেঁচে নেই আপুর বিয়ের অনেক বছর আগেই তিনি মারা গিয়েছেন।আর দুলাভাই ব্যবসার কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে কাটান ।
আপুর বাসায় মানুষজন বলতে আপু,আপুর শাশুড়ী ,কাব্য ভাইয়া,স্নেহা আর কাজের লোকজন।
নাস্তা করছি কিন্তু খাবার আমার গলা দিয়ে নামছে না,বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছি,
শুধু মনে হচ্ছে এই বুঝি উনি এসে পরলেন এই বুঝি উনি এসে কোনো কান্ড ঘটিয়ে ফেলেন।

আমার এই অবস্তা দেখে আন্টি জিজ্ঞেস করতে লাগলে ,আমি খাচ্ছি না কেন কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ,
আমি উনার এমন প্রশ্নে মৃদু হেসে মাথা দু দিকে নাড়লাম।
আন্টি অনেক ভালো মানুষ, ভীষন মিশুক এবং একজন পরিপাটি আধুনিক মহিলা,দেখতেও ভীষন সুন্দর।
কথা বার্তায় ,পোশাকে ,কাজে কর্মে উনার আধুনিকতা ও বুদ্ধিমতার পরিচয় পাওয়া যায়।
উনার চোঁখের দিকে তাকালে বুঝা যায় এই বুদ্ধিদীপ্ত অভিজ্ঞ চোঁখ দুটি কিছু না বললে ও অনেক কিছু বুঝে যায়।
আপুর বাসার সবাই অনেক ভালো শুধু কাব্য ভাইয়া ছাড়া ।আমি নিশ্চিত হসপিটালে যখন আন্টি ছোট ছেলের জন্ম হয়েছিল তাকে পাল্টে ফেলে কেউ এই বজ্জাতটাকে রেখে গেছে।
আন্টির মতো একজন অসাধার মহিলার ছেলে কখনই এই বজ্জাতটা হতে পারে না।
নাস্তা কোনো মতে সেরে আপু আর আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম ।
বাইরে এসে চোঁখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলাম।
আহ্! কি শান্তি এই অসহ্য প্রাণিটা আর কখনও আমার নাগাল পাবে না।
ভাবতেই ভীষন আনন্দ লাগছে।
শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে তাকালাম,তাকিয়েই আমি
৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম।(চলব)

প্রিয় অভিমান পর্ব ৩

0

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট: ৩

লেখা: নিশাত সিদ্দিকা

পার্টি শেষে বাসায় আসতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া
এসে হাজির হলেন।উনাকে দেখে আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম ,উনার চোঁখ দুটি ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে আছে , দেখে ভয়ে আমি ঘাঁমতে লাগলাম।আজ যা সাহস দেখিয়েছি তার জন্য উনি যে আমায় কি শাস্তি দেন সেটা উনিই ভালো জানেন,ভালোই ভালোই বাসায় চলে যেতে পারলেই বাঁচি।

আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে কাব্য ভাইয়ার চোঁখের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় ভস্ম হয়ে যাবো ।
উনি বারবার যে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন আমার দিকে।
ভয়ে আমার প্রান যায় যায় অবস্তা।
মাকে তাড়া দিতে লাগলাম বাসায় ফিরার জন্য।
কিন্তু মা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে কাব্য ভাইয়া কি বলতে চাইছেন সেটা শুনতে লাগলেন,
উনি মাকে অত্যন্ত মিষ্টি ভাষায় বলতে লাগলেন,
অনেক রাত হয়ে গেছে আমরা যেন এখানে থেকে যাই,
মা বললেন সুহার বাবা বাসায় একা রয়েছেন থেকে গেলে হবে না।
এটা শুনে উনি বললেন তাহলে এতো রাতে আমাকে নিয়ে যাওয়া
ঠিক হবে না আমাকে যেন এখানে রেখে যান,
উনার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম,
আমি চাইছি সিংহের গুহা থেকে বের হয়ে যেতে ,
আর সিংহ কিনা গুহার পথ আগলে দাঁড়তে চাইছে।
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম আমি এখানে কিছুতেই থাকেবোনা ।উনি যে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাখতে চাইছেন সেটা আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া আমার দিকে রক্তচুক্ষু
নিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
বড়দের কথার মাঝে যেন নাক না গলাই ,বড়রা যা ডিসাইড করবে সেটাই হবে।
আমার মা আবার ওল্ড ফ্যাশনের উনি জীন,পরি এগুলিতে ভীষন ভাবে বিশ্বাস করেন ,কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে এখানে রেখে যাবেন ,আমার মায়ের চোঁখে আমি বিশ্বসুন্দরী তাই উনি আমাকে নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকেন ,বলাতো যায় না উনার এতো সুন্দর মেয়ের উপর আবার কখন কিসের নজর লেগে যায়।তার সাথে যোগ দিলেন আমার
বোন ও সেও নাকি আমাকে এতো রাতে যেতে দেবে না।
আমি অনেক করে কাকুতি মিনতি করলাম আমি এখানে থাকবো না কিন্তু আমার মা জননি আমাকে সিংহের গুহায় রেখে চলে গেলেন।
মা চলে যেতেই কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে চলে গেলেন ,যে তাকানোর মানে ছিল আমার আর রক্ষা নেই।
ভেবেছিলাম বাড়িতেই তো চলে যাবো শাস্তি দেওয়ার জন্য সে আর আমাকে পাচ্ছে কোথায়।শেষ পরিনতিটা যে এমন হবে আমি ভাবতেই পারিনি।
উনার এমন তাকানো দেখে আমি একটা শুকনো ঢুক গিললাম।

অনেক রাত হয়ে গেছে রুমে আসলাম ,
শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন কাব্য ভাইয়ার স্পর্শ শরীরে লেগে আছে গা ঘিন ঘিন করছে শাওয়ার না নিলে শান্তি পাবো না।
হারামজাদাটার জন্য এতো রাতে ও গোসল করতে হচ্ছে ,
কাব্য ভাইয়াকে হাজারটা গালি দিতে দিতে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম।
শাওয়ারে যাওয়ার পর পানি লেগে ক্ষত জায়গাগুলিতে অনেক জ্বালা করলো সেগুলো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলাম।

শাওয়ার সেরে ভেজা চুলগুলো শুকাচ্ছি আর ভাবছি।
কাল কাব্য ভাইয়ার সাথে দেখা হওয়ার আগেই বাসায় চলে যাবো।কিছুতেই উনার সামনে পরা যাবে না।
মনে মনে প্ল্যানিং করতে লাগলাম কিভাবে কাব্য ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাবো।
এই সবই ভাবছি হঠাৎ দরজায় নক হওয়ার শব্দে আমার ভাবনায় ছেদ পরলো।
আমি শব্দ শুনে চমকে উঠলাম,
এতো রাতে কে এসেছে,নিশ্চই আপু কোনো দরকারে এসেছেন তাছাড়া এতো রাতে কে হবে?
কাব্য ভাইয়া নিশ্চই এতো রাতে আমাকে শাস্তি দিতে আসবেন না।
দরজার মাঝে ক্রমাগত নক হচ্ছে ,
হয়তো জরুরি কিছুর জন্য আপু ডাকছেন
,আমি দ্রুত উঠে দরজা খুলতে লাগলাম।
দরজা খুলে আমি অবাক ,কাব্য ভাইয়া একটি নীল টি শার্ট আর হোয়াইট কালারের থ্রি কোটার পরে দরজার ওপারে দাড়িয়ে রয়েছেন।
কি যে সুন্দর লাগছে উনাকে দেখতে ,যে কোনো মেয়ে উনার এমন সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য ।
মুখেএমন একটা ইনোসেন্ট ভাব রাখে দেখে বুঝারই উপায় নেই যে এই ছেলে শত শত মেয়ের সাথে প্রেম করে আর সে এতোটা বদ রাগী।
উনার এমন স্বভাবের জন্য উনার এমন মনমুগ্ধ করা
সৌন্দর্য কখনই আমায় আকর্ষিত করে না।
না হলে নির্ঘাত আমি এই ছেলেটার প্রেমে পরে যেতাম।
উনাকে দরজা ওপাশে দেখে আমি আতংকিত হয়ে পরলাম যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।এই প্রবাদটা হুবোহুব আমার সাথে মিলে গেল।
যেই দরজাটা লক করতে যাবো ,
উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলেন।
উনার এমন কান্ডে ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।
উনি আমার বিছানায় আয়েশী ভঙ্গিতে পায়ের উপর
পা তুলে বসে পা নাচাতে লাগলেন,
আমি রুমের এককোনে দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে চোরা চোখে
উনাকে দেখতে লাগলাম,
উনি আমার দিকে তাকিয়ে খোশ মেজাজে পা নাচিয়ে নাচিয়ে বলতে লাগলেন,কি ভেবে ছিলে আমাকে অপমান করে আমার নাকের ডগা দিয়ে নাচতে নাচতে বাসায় চলে যাবে আর আমি কিছু করতে পারবো না।
এই কাব্য মেহরাবকে তুমি চিনতেই পারো নি সুহারানী।
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভয়ংকর হাসি দিলেন ।
যেটা দেখে আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো,
উনি দাড়িয়ে গেলেন ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,
সেটা দেখে ভয়ে আমি চোঁখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
‘ভাইয়া!ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে এইবারের মতো ক্ষমা করে দাও !!এই জীবনে তোমাকে অপমান তো করা দূরের কথা তোমার সামনেই কখন আসবো না।
বলেই চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম ভয়ে তাকানোর সাহসই পাচ্ছিনা ।
হঠাৎ ঠোঁটে হাতে স্পর্শ পেয়ে চোঁখ খোলে তাকালাম,
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।
উনাকে এভাবে আমার এতো কাছে দেখে ভয়ে আমার মাথা ঘুরছে,আমি কাতর চোখে উনার দিকে তাকালাম ,
আমার তাকানো দেখে আমার মুখ চেপে ধরে রেখেই ব্রু কুচকে বলে উঠলেন,
‘এই মেয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা এতো চিৎকার করে বলার কি হলো ,তোমার এতো সাহস আমাকে কালা ভাবো,এখনতো আরো একটা শাস্তি এড হলো,আচ্ছা তোমার কি ধারনা আমি কানে কম শুনি,
উনার এমন কথা শুনে আমি চোঁখ বড় বড় করে দু দিকে মাথা নাড়তে লাগলাম যে এমটা আমি কখনই ভাবি না।
আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে উনি বলতে লাগলেন,
‘আমার শর্ত মানলে তোমার শাস্তি কিছুটা কমতে পারে।
আমি উনার কথা শুনে কিছু না ভেবে দ্রুত বলে উঠালম,
‘আমি তোমার সব শর্তে রাজি প্লিজ আমার সাথে উল্টোপাল্টো কিছু করো না।
আমার কথা শুনে উনি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললেন,
‘যা বলছো ভেবে বলছো তো?
ভাবা ভাবির কি আছে রে রাক্ষস আমি তো ভালোভাবেই জানি তর শর্ত মানলেও আমি বিপদে পরবো না মানলেও বিপদে পরবো ।শর্ত মেনেই বিপদে পরি তাহলে হয়তো শাস্তির মাএা কিছুটা কম হতে পারে।আমি যে আজ বাজে ভাবে ফেসে গেছি সেটা ভালোই বুঝতে পারছি ।
এখন মাথা ঠান্ডা রেখে উনার কথা শুনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নি:শ্বাস নিয়ে বললাম ,
‘হ্যা আমি তোমার শর্ত মানতে রাজি।
‘ওকে ! আমার শর্ত হলো আমি যা যা বলবো সেটাই তোমাকে করতে হবে।কোনো প্রশ্ন না করে।
বলেই উনি খাটে গিয়ে হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে পরলেন,
উনার এমন কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম উনি কি আজ আমার বিছানায় শুনবেন ,
এটাই কি উনার শর্ত ছিলো।
হায়!হায়! একি ভুল করে ফেললাম শর্ত মেনে।
আমি ভয়ে ভয়ে উনার কাছে গিয়ে অনুনয়ের সুরে বললাম,
‘ভাইয়া আমাকে কি করতে হবে?
আমার কথা শুনে উনি বলে উঠলেন,
‘আমার পা টা একটু টিপে দাও তো সুহা ।ইশ!ভীষন ব্যাথা করছে।
উনার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো।
আমি উনার কোন জন্মের চাকরানি যে উনার পা টিপে দিবো।
এটা শুনে রাগে আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে।
আমি রাগি রাগি দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
‘কি হলো কথা কানে যায় না ,
কি আর করা এখন মাথা গরম করলে চলবে না ভালোই ভালোই এটাকে বিদায় করলে বাঁচি।

এক রাশ বিরক্তি লাগা নিয়ে উনার পা টিপটে লাগলাম ,
আর মনে মনে উনাকে অভিশাপ দিলাম,
তর জীবনেও বিয়ে হবে না,তর কপালে বউ ঝুটবে না,
তর সব গার্ল ফ্রেন্ড তকে চ্যাকা দিয়ে চলে যাবে, তুই সারা জীবন দেবদাস হয়ে ঘুরবি।
মনে মনে উনাকে বকছি আর পা টিপে দিচ্ছি।
পা টিপতে টিপতে হাত ব্যাথা হয়ে গেল।
তাতে উনার কোনো হেলদোল নেই উনি মহা শুয়ে শুয়ে ফোন
টিপছেন।
তারপর আমাকে দিয়ে কফি বানিয়ে আনালেন ।
ইচ্ছে হচ্ছিল কফিনে বিষ মিশিয়ে দেই ।
উনার চুলগুলো ও টেনে দিতে হলো।
সমস্ত চুল ছিড়ে উনাকে নেড়া বানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল।
আমার জন্য নাকি পার্টিতে খেতে পারেনি,
এখন খেতে ইচ্ছে করছে ,নিচে গিয়ে খাবার গরম করে আনতে বললেন।
দাঁতে দাঁত চেপে উনার সব কথা মেনে চলছি।
নবাবের মতো হুকুম করছে আর আমি চাকরানির মত
সেটা পালন করছি।
সব কাজ করে উনার দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বললাম,
ভাইয়া অনেক রাত হয়ে গেছে আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে,
আমার কথা শুনে উনি বলে উঠলেন,
ঘুম পাচ্ছে তো মেঝেতে ঘুমিয়ে পরো ,আমি আজ এই বিছানা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
উনার কথা শুনে আমার সমস্ত ধৈর্য ভেঙ্গে গেল,
আমি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলাম ,
এবার কিন্তু তুমি সব কিছু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো,
আমার কথা শুনে উনার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল,
রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে,আমার কাছে এসে
আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন উনার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে ,
আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম যতই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ততই উনি শক্ত করে চেপে ধরছেন।
ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না ,
উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কটমটিয়ে বলতে লাগলেন,
‘তখন আমার রুমে আমাকে কি বলেছিলে তোমাকে কোন অধিকারে আমি টাচ করি।কিসের অধিকারে আমি তোমাকে উপদেশ দেই।আমার অধিকার নেই তাহলে কার আছে ,যেই অধিকার দেখাতে আসবে তাকেই আমি খুন করে ফেলবো।আর কি যেন বলেছিলে ,
আমি যেন আমার সীমার মধ্যে থাকি,নিজের সীমা যেন না ছাড়াই ।
আজ আমি তোমাকে দেখাবো সীমা ছাড়ানো কাকে বলে,
বলেই উনি আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট মিশিয়ে দিলেন ,
এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম।
যতই নিজেকে বাঁচানো চেষ্টা করতে লাগলাম ততই উনি আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরতে লাগলেন।
যেন উনার সমস্ত রাগ আমার ঠোঁটের ওপর মিটাতে লাগলেন।
আমি কিছুতেই উনার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারলাম না।
উনি উনার কাজ শেষ করে ধাক্কা দিয়ে আমায় বিছানায় ফেলে দিলেন।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,
‘শেষ বারের মতো অনাধিকার চর্চা করে গেলাম।
কালকের পর থেকে শুধু অধিকার ফলাবো ।কালকের পর থেকে পৃথিবীতে আমার থেকে বেশী অধিকার তোমার উপর কারো থাকবে না।
বলেই উনি হনহনিয়ে চলে গেলেন।
আর আমি ছলছল চোঁখে শূণ্য মস্তিস্ক নিয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
(চলবে)

প্রিয় অভিমান পর্ব ২

0

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট: ২

লেখা: নিশাত সিদ্দিকা


বাইরে এসে আমি অবাক।
কাব্য ভাইয়া বাইরে দাড়িয়ে রয়েছেন ,
উনাকে দেখেই ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল,
আমি একটা ঢুক গিলে ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকলাম,
উনাকে এখানে এইভাবে দাড়িয়ে তাকতে দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবতে লাগলাম ,
পার্টিতে এতো এতো সুন্দর মেয়ে থাকতে উনি আমার পিছনে পরলেন কেন?
উনার সাথে তো আমি তেমন ভাবে কথাও বলি না ,
তাহলে হঠাৎ আমার সাথে এমন জগন্য আচরন করলেন কিসের জন্য,উনি আজ যা করলেন তার জন্য উনাকে আমি কখনও ক্ষমা করবো না।
মনের মাঝে তার প্রতি চাপা অভিমান আর রাগ তৈরী হলো।
মনে মনে এসব ভাবছিলাম কাব্য ভাইয়ার ডাক শুনে কেঁপে উঠলাম,
ভয়ও পেয়ে গেলাম আবার যদি শাড়ি খুলে ফেলেন বা বাজে কথা শুনান,
কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে কাব্য ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলেন,
-সুহা আমার সঙ্গে আসো ,
আমি অবাক হলাম উনার কথায় ,একটু আগেও তো রেগে আগুন হয়ে রয়েছিলেন আর এখন কেমন শান্ত ছেলের মতো আচরন করছেন।
যেন কিছুই হয় নি,
উনাকে দেখে কিছুক্ষন আগের ঘটনা ও উনার বলা বাজে কথাগুলো মনে হয়ে বিতৃষ্ণা ও রাগে মনটা ভরে উঠল,
কি বিশ্রী আচরন আর কি আজে বাজে কথা বললেন উনি

,
আমি উনার দিকে রাগী চোঁখে তাকিয়ে বললাম,
-আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না ,আমি বাসায় যেতে চাই ,এখানে আমি এক মুহূর্ত ও আর তাকবো না,আমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাবো ।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হাল্কা হেসে ব্রু নাচিয়ে বললেন,
-এক্ষুনি চলে যাবে ?বাহ্! কি কনফিডেন্স।এক্ষুনি যাবে নাকি এক যুগ পরে যাবে সেটা তো নিয়তি
ঠিক করবে ,তুমি নও মিস.সুহা ইসলাম।
,
উনার এমন উল্টপাল্টা কথার মানে আমি কিছুই বুঝলাম না,আমি আমার নিজের বাসায় যাবো সেখানে নিয়তি আসলো কোথা থেকে ।
আমি একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠলাম,
-আমার পথ ছাড়ো ভাইয়া আর আমাকে যেতে দাও!!
আমার কঠিন কন্ঠস্বর শুনে কাব্য ভাইয়া একটু রেগে গিয়ে বললেন,
-কিছুক্ষন আগের ঘটনা কি সব ভুলে গেলে ?
একদম আমার সাথে এভাবে চোঁখ রাঙিয়ে কথা বলবে না ,তা না হলে আগের চেয়ে খারাপ কিছু ঘটবে,
কাব্য ভাইয়ার হুমকি শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম,
আজ যা করলো তারপর এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই ,
আমার ভাবনা শেষ হবার আগেই উনি আমার হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন,

কাব্য ভাইয়া আমাকে উনার রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন ,
দরজা বন্ধ করায় আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম,
ভয়ে আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল,
কি করতে চাইছেন উনি ,উনাকে আমি শুধু একজন প্লেবয় ভাবতাম কিন্তু উনি যে তার চাইতে ও বেশী খারাপ আমার জানা ছিল না ,একজন সুন্দর মানুষের চরিএ যে এতটা ভয়ানক অসুন্দর হতে পারে আমার জানা ছিল না,
নিচে সবাই পার্টিতে ব্যস্ত এখানে যদি উনি আমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করেন আর আমি বাঁচার জন্য চিৎকার করি তাহলে কেউই শুনবে না।
আমি কাব্য ভাইয়াকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অনুরোধ করতে লাগলাম ,
-প্লিজ ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিন, আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না ।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া শয়তানি হাসি দিয়ে বললেন,
-ভয়ে কোনো কারন নেই বিয়ের পরের কাজ আমি কখনই বিয়ের আগে করবো না ।ওটা আমি বিয়ের পরেই করবো।তুমি যতটা খারাপ আমায় ভাবো ততটা খারাপ ও আমি নই।
‘চুপচাপ কথা না বলে এখানে দাড়িয়ে থাকো,
বেশী কথা বলা আর কথার অবাধ্য হওয়া আমি একদম পছন্দ করি না।
আর আমি রেগে গেলে কি হতে পারে সেটা নিশ্চই তোমার অজানা নয়।

উনার কথা শুনে আমি বিস্ময় নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম,
আজ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম একটার পর একটা খারাপ ঘটনা ঘটেই চলছে আমার সাথে,
আল্লাহ্ তায়লাই ভালো জানেন এর পর কি আছে কপালে,


আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে কাব্য ভাইয়া কি যেনও খুঁজতে লাগলেন ,
একটা মলম নিয়ে আমর সামনে এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে পরলেন ,
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
আর কখনই তুমি শাড়ী পরে পার্টিতে যাবে না
শাড়ী পরলে তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে,
চুলগুলোও কখনও খোঁপা করবে না,সবসময় চুল ছেড়ে রাখবে ,চুল খোঁপা করলে তোমার পিটের তিলটা স্পস্ট দেখা যায় ,আমি চাই না ওই তিলের সৌন্দর্য কেউ দেখুক ,তুমি জানো পার্টিতে সব ছেলেরা
তোমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
মন চাইছিল সব গুলোকে ওখানেই পুতে ফেলি ।
আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ।
তার জন্য এমন আচরন করে ফেলেছি।কিন্তু তুমি যদি আমার কথার অবাধ্য হও তাহলে এর থেকেও খারাপ আচরন করতে আমি দ্বিধাবোধ করবো না।

কথা গুলো উনি ভীষন রেগে বললেন,
উনার এমন অদ্ভুত আচরনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে,
,
আচমকা উনি আমার শাড়ি পেট থেকে সরিয়ে মলম হাতে নিয়ে
উনার দেওয়া আঁচরের ক্ষত হওয়া জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে লাগলেন,
হঠাৎ উনার এমন স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম,
উনাকে দেখে ভয়ে এই আচরের ব্যাথার কথা ভুলে গিয়েছিলাম ,কিন্তু এখন মলম লাগাতেই সেই ব্যাথা দ্বিগুন হয়ে অনুভূত হচ্ছে।
পেটের মাঝে যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে,
একদিকে মলম লাগানোর জ্বালা অন্যদিকে কাব্য ভাইয়ার এমন স্পর্শ দুটোই যেন অসহ্যকর।

আমি চোঁখ বন্ধ করে উনার শার্ট কামছে ধরলাম।
উনি আলতো করে ফুঁ দিতে দিতে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলেন ।

কাব্য মলম লাগিয়ে দিতে দিতে সুহাকে এতো কাছ পেয়ে ওর ঘোর লেগে গেল ও অজান্তেই নিজের ঠোঁট জোরা ছুঁইয়ে দিল ওর পেটে।


কাব্য ভাইয়ার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আমার সম্মতি ফিরল,
আমি কাব্য ভাইয়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম , তারপর উনার থেকে সরে দাঁড়িয়ে শাড়ি দিয়ে পেটটা ঢেকে নিলাম।
এমন আচমকা ধাক্কা খেয়ে কাব্য ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন,
আমি রাগী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম,
,
-কোন অধিকারে তুমি আমার পেটে হাত দিচ্ছো বারবার,ব্যাথা দিয়ে আবার মলম লাগিয়ে দিতে আসছেন।আমাকে টাচ করার কোনো রাইট নেই তোমার ।একটু আগে যে এতো বড় বড় উপদেশ দিলে , তুমি আমাকে এসব বলার কে ?
আর তোমার কথা আমি কেন শুনবো।আমার যখন যা মন চায় সেটাই পরবো , যে ভাবে মন চায় সেভাবে চুল বাঁধবো ।নিজের অধিকারের সীমা কতটুকু সেটা ভুলে যেও না।
এই সব অধিকার তোমার সো কলড গার্ল ফ্রেন্ডদের দেখিও আমাকে নয়।

আমার বলা কথাগুলো শুনে উনি কিছু না বলে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ।
আমি উনার এমন দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ,দরজা খুলে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে লাগলাম।
বাইরে আসতেই কাব্য ভাইয়ার রুম থেকে কাঁচ ভাঙ্গার বিকট আওয়াজ পেলাম।
আমি সে দিকে পাত্তা না দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।
পার্টির এখানে আসতেই আপু আর আম্মু আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
উনাদের এভাবে তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম ।
তারা কি আমাকে দেখে কিছু বুঝে ফেললো না নাকি।এই বাজে ঘটনা আমি কিছুতেই কারো সাথে শেয়ার করতে পরবো না।
আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হাসি মুখে তাদের কাছে গেলাম।
কাছে যেতেই আপু বলে উঠলেন ,
‘কিরে কখন থেকে তোকে খুঁজচ্ছি কোথায় ছিলি আর তোর এই অবস্থা কেন?
খোঁপা খুলে চুল গুলোকে এইভাবে এলোমেলো করে রেখেছিস কেন?
আমি মুখে জোর পূর্বক হাসি এনে বললাম,
‘এই তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম ,শাড়িটা একটু খুলে গিয়েছিল সেটা
ঠিক করার জন্য আর খোঁপাটা ও কেমন হয়ে গেছিল তাই খোলে ফেললাম।
আমার কথা শুনে মা বলে উঠলেন,
‘তাহলে আমাকে বললি না কেন আমি ঠিক করে দিতাম খোঁপাটায় তোকে ভীষন ভালো লাগছিল।
আমি মায়ের কথায় একটু হেসে বললাম ,
‘মা বাদ দাও তো একটু পর তো চলেই যাবো।
আমার কথা শুনে তারা আর কিছু বলেন না।
,
এই একটি বাজে ঘটনা পার্টির পুরো আনন্দটাই মাটি করে দিল,
ভীষন বিরক্তি লাগা নিয়ে সমস্ত পার্টি শেষ করলাম,
পার্টিতে আর কোথাও কাব্য ভাইয়াকে দেখিনি,
মনে মনে খুশিই হলাম উনাকে না দেখে,দেখলেই হয়তো রাগে ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠতো ,
পার্টি শেষে বাসায় আসতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া
এসে বলে উঠলেন ।(চলব)

প্রিয় অভিমান পর্ব ১

0

হঠাৎ করেই কাব্য ভাইয়া আমার শাড়ির কুচি গুলো টেনে খোলে দিলেন ।
উনার এমন আচরনের কোনো মানেই আমি বুঝতে পারলাম না ।হতবিহ্বল হয়ে অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
উনি রেগে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে ,
দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,
তুই শাড়ি পরেছিস ছেলেদের তর সাদা পেট , পিট পার্টির ছেলেদের দেখানোর জন্য তাই না,
ছেলেদের দৃষ্টি তর প্রতি আকর্ষিত করার জন্য তাই না।
ঠোঁটে এতো কড়া লিপস্টিক দিয়েছিস কেন?
যাতে দূর থেকে ও সবার দৃষ্টি তর ঠোঁটের উপর পরে পরে তার জন্য তাই তো,
আজ তর এই শখ আমি মিটিয়ে দেব।বলেই উনি
আমার পেটের মাঝে পিটের মাঝে উনার নক দিয়ে ইচ্ছে মত আচর কাটতে লাগলেন,
ব্যাথায় আমি কুকড়িয়ে উঠলাম,উনার এমন আচরনের কোনো মানেই আমি বুঝতে পারলাম না।
আর উনি আমাকে এমন আজে বাজে নোংরা কথাই বলছে কেন?
আমি ভয়ে ব্যাথায় কেঁদে কেঁদে বলে উঠালাম,
-কি করছো কি ভাইয়া লাগছে আমার ছাড়োন আমাকে,
আমার কথাগুলো শুনে উনি আরো বেশী রেগে গেলেন,
রেগে গিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগলেন।
-এখন তো লাগবেই যখন পার্টির সবাই চোখ দিয়ে তকে গিলে খাচ্ছিল তখন বেশ আনন্দ লাগছিল তাই না।
এ কথা বলেই উনি আমার খোঁপা করা চুলগুলো মুটি করে শক্ত করে ধরে বলতে লাগলেন
-চুল খোপা করে বেঁধেছিস যাতে পিটটা দেখতে কারো অসুবিধা না হয় ,
বলেই পাগলের মতো আমার খোপা খুলতে লাগলেন,
আর আমি ব্যাথায় নিজেকে উনার কাছ থেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতে লাগলাম,
কিন্তু সে আমাকে কিছুতেই ছাড়ছে না আমার চুলগুলো টেনে খুলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গেলেন।
এই অবস্তায় বাইরে যাব কি করে,
আমি বাথরুমের ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলাম।

আমি সুহা,
শাড়ি পরতে ভীষন ভালবাসি আর শাড়ির সাথে চুল খোপা করে বাঁধা আমার খুব প্রিয়।
যে কোনো পার্টিতে আমি শাড়ি পরে যাই।
আজ আমার বোনের একমাএ মেয়ে স্নেহার জন্ম দিনছিল ,
সেজন্য তাদের বাসায় বার্থডে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে,
তারজন্য আমি ব্ল্যাক কালারের একটি জর্জেট শাড়ি পরে ,চুগুলোকে সুন্দর করে খোপা করে এখানে এসেছিলাম।
কাব্য ভাইয়া হচ্ছেন আমার বোনের একমাএ দেবর।
দেখতে ডেশিং,হ্যান্ডসাম আর অত্যন্ত সুন্দর একজন ছেলে।
আর সেই সাথে রাগী আর বদ মেজাজী।
এই সৌন্দর্যের কারনে কত মেয়ের সাথে যে উনার রিলেশন তার হিসেব নেই ।
উনার এই স্বভাবের জন্য আমি তাকে সহ্য করতে পারি না।
সবসময় উনাকে এড়িয়ে চলি ।
আমি পার্টিতে আসার পর থেকেই দেখছি এখানের সব ছেলেরা কেমন করে তাকাচ্ছে ,আমার ভীষন অস্বস্তি লাগছিল তাই এক কোনায় দাড়িয়ে ছিলাম।
,
আর কোথা থেকে হুট করে কাব্য ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন,
তারপর বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ,আমার সাথে এমন বাজে আচরন করে চলে গেলেন।
উনার করা সব আচরন আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
চোখের পানি মুছে কষ্ট করে দাঁড়াল ,পেটের মাঝে নকের আচরে দাগ বসে গেছে সেখান থেকে সামান্য রক্ত ও বের হচ্ছে।
শাড়িটা আর চুলগুলোকে কোনো রকমে
ঠিক করে বাইরে বের হলাম।
বাইরে এসে আমি অবাক।(চলবে)
#প্রিয়_অভিমান
পার্ট: ১
লেখা: নিশাত সিদ্দিকা

Protected: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

নীলাময়ীর প্রেমে পর্ব ৭ এবং শেষ

1

#নীলাময়ীর_প্রেমে

#Written_by_Tarin_Jannat
#পার্ট০৭

প্রকৃতি প্রেমিকরাই সত্যিকারের সৌন্দর্য্য রসাস্বাদন করতে দুর্দম! এমনি একজন প্রকৃতিপ্রেমী রাহা! কিন্তু ফাহান?? সেও তো প্রকৃতি কে বেশ ভালোবাসে।মনের গহীন থেকে প্রকৃতির অপরুপা স্বাদ সে গ্রহন করেছে বহুবার। কিন্তু এবারের প্রাকৃতিক দৃশ্যটা ফাহানের কাছে আগের তুলনায় বেশ উপভোগ্য । হয়তো রাহার মতো কাউকে সে এই ভ্রমণপথের-পথিক হিসেবে পেয়ে।

হালকা নাস্তা খেয়ে তারা পাহাড়ী রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে। উপভোগ করছে প্রকৃতিরঞ্জন!! মেঘাচ্ছন্ন পাহাড় কারই না ভালো লাগবে??শুধু মেঘের ছায়ার ঢেলে আছে রাহার মুখে। খুবই গম্ভীর্য্য যা ফাহানের চোখেই বার বার আটকে যাচ্ছে।

–“তোমার নানুর বাড়ি এখানে আগে বলো নি কেন রাহা??” (নোভা)

–“বললে কী করতেন??”(রাহা)

এবার নোভা চুপ হয়ে যায়। তা দেখে ফাহান বলে উঠে..

–” অন্তত খালি হাতে আসতাম না! লজ্জা করছে এখন!! (নাক ছিটকিয়ে বলে উঠে ফাহান)

ফাহানের এই রুপটা কেনো যেনো রাহার বেশ ভালো লাগে।মৃদু হাসে কিন্তু তা মনে মনে সবার অন্তরালে!

–” আপনি কী শশুর বাড়ি এসেছেন?? যে খালি হাতে এসেছেন বলে লজ্জা করছে??”(রাহা)

–“এমন জঙ্গল থেকে কোনো জঙ্গলীকে বিয়ে করার অভিনব ফাহানের নেই!!”(ফাহান)

কথাটা শুনা মাত্র রাহা দাঁত কটমট করে ফাহানের দিকে তাকাতেই দেখে রাস্তার অন্য পাশে চলে গিয়েছে। কিছক্ষন হাঁটার পর ওরা আবারো বাড়ির ভেতরে চলে যায়। সোফায় রাহার নানু বসে আছেন সাথে উনার বয়সী একজন মহিলাও।রাহা এবং ফাহানরা ডুকতেই রাহাকে দেখে মহিলাটি বলে উঠেন….

–“ওমা!! আমাদের নীলাঞ্জনার মেয়ে নীলান্তিকা তো পুরো মায়ের মতো দেখতে হয়েছে!!”(রাহার ফয়সাল মামার মা উনি) আয় নাতনি আমার পাশে এসে বস!!

এবার ফাহান আরেকদপা ঝাটকা খায় হচ্ছেটা কী?? তাদের নাম বলেছে এক আর এখানে এসে শুনছে আরেক নাম। কিন্তু নামটা যেনো কারো মুখে একবার শুনেছে বলে মনে হচ্ছে ফাহানের। কোন নামটা মনে করতে পারছে না,,রাহার নাম নাকি তার মায়ের নাম??

–“নীলান্তিকা মানে??” ওর নাম তো রাহা ইসলাম!!”(নোভা)

–” ঠিকি বলেছে তো। পুরোটা বলেনি আর কি!! ওর নাম??!!”(রাহার নানু)

–“নানু আমি আসছি একটু!! (রাহার বেশ বিরক্ত লাগছে ওদের কথায়।এজনের নামের সাথে দুইটা পদবি! কেমন জানি লাগে রাহার…তবুও এটা সত্যি যে ওর নামের সাথে দুইটা পদবি আছে)”

–“কই যাবি??” (নানু)

রাহার এবার অসহায় দৃষ্টিতে ওর নানুর দিকে তাকায় উনি রাহার কথা বুঝতে পারলেই চোখ নামিয়ে ফেলে।উনার মুখেও গম্ভীরতার চাপ চলে আসে। ফাহান পাশ থেকে সবি খেয়াল করছিলো এতক্ষন। কেনো যেনো রাহার সবকিছুর উপরেই তার নজর রাখতে ইচ্ছে করছে।

রাহা আর কথা না বলে মাথায় কাপড় টেনে দিয়ে বেরিয়ে পরে।

–“নানু রাহার পুরো নাম নিয়ে আমরা এখনো কনপিউশনে আছি প্লিজ নামটা বলেন??”(নোভা)

–(চোখের পানি মুছে) নীলান্তিকা মাহমুদ রাহা!! কিন্তু এটা শুধু আমরাই ডাকি ওর বাড়িতে সবাই ওকে রাহা ডাকে। আর এ নামটা ওর মা নিজের নামের সাথে মিল রেখেছিলো। আমরাও এই নামে ডাকি!!”

–“নামটা খুব সুইট আমরাও এই নামে ডাকবো!!”(নোভা)

–“আরে না ও এই নামটা আমাদের থেকেই শুনতে পছন্দ করে। তোমরা ডাকলে রাগ করতে পারে।”

–“ওহ..”(নোভা)

–(আমি তো এই নামেই ডাকবো। নী….লা….ম…য়ী!!)(ফাহান মনে মনে কথাটি বলে)



সোফাই বসে সবাই মিলে রাহার নানুর সাথে গল্প করছিলো। সেসময় ঝড়ের গতীতে দৌড়ে একটা ছেলে এসে তাদের মাঝে উপস্থিত হয়। উজ্জল শ্যামলা গায়ের রঙ ছেলেটির।বেশ অমায়িক চেহেরাটা, সুন্দর্যের খাতায় পরে। ফাহান ছেলেটিকে দেখে উৎসুখ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে….

–“দাদু নীলা কোথায়?? নীলা নাকি এসেছে??”(বেশ উত্তেজিত হয়ে)

–“হ্যাঁ রে এসেছে তো। বাইরে গেছে একটু!! ”

বাইরের কথা শুনতেই ছেলেটি বুঝে যায় রাহা কোথায় যেতো পারে। আশেপাশে না তাকিয়ে আবারো বেড়িয়ে যায়।

–“আব নানু ছেলেটি কে??”(ফাহান)

–“আমার নাতি!! নীল…ওর নামটাও নীলার মা মানে ওর ফুফি রেখেছিলো।নীলার মায়ের চোখের মণি ছিলো নীল…”(নানু)

এতক্ষন ঠিক ছিলো ফাহান! এখন কেনো জানি প্রচুর রাগ লাগছে। কারনটা হয়তো ওর অজানা নয়। ফোন করার বাহানায় ফাহান ও বেড়িয়ে যায়।


দুটো মাটির কবরের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে অজোরে কান্না করে যাচ্ছে রাহা। মানুষ মরনশীল এ কথাটা মানতে বেশ কষ্ট হয়েছিলো রাহার যেদিন ওর মা ওর কোলেই শেষ নিঃষাশ ত্যাগ করেছিলো। ভাবতেই ওর কান্না আরো বেগ পেতে লাগলো।

–“আম সরি মা আমি তোমার সাথে দেখা করার জন্য এখানে আসতে পারিনি।ওরা আমাকে আটকে রেখেছিলো মা। আমি পালিয়ে এসেছি জানি না কতদিন পালিয়ে থাকতো পারবো। কিন্তু আমি চায় না আর ওদের কাছে থাকতে।দরকার হয় সারাজীবন পালিয়েই বেড়াবো। ”

“তোমার দেওয়া শেষ স্মৃতিটাও আমি রাখতে পারলাম না। ওই নীলরঙের ফোনটাও আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। ”

“ছোটবেলা থেকে তুমি আমাকে এতো-পরিমানের নীল রঙের জামা পরিয়েছো যে আমি এখন এই নীল রঙের কাপড় ছাড়া কোনো কাপড় পরতেই পারি না। কিন্তু আমার বিষণ ভালো লাগে পরতে মনে হয় তুমি আমার সাথেই আছো। ”

“মা ভাবছি এবার থেকে নিজেকে অন্য রঙের বস্ত্রেও জড়াবো। তাতে যদি আমার মনের কষ্টগুলোকে মুছে ভিন্য-রঙে রাঙিয়ে দেয় আমার এই মনটাকে।”

“মা-বাবা তোমরা দুজনে স্বার্থপর। নিজেরা একসাথেই আছো অথচ আমাকে এখানে একা ফেলে চলে গেছো তোমরা। আই হোফ আমার মৃত্যুর পরে আমাকেও যেনো তোমাদের পাশেই সমাধি দেয়।বলেই আরো জোরে কান্না করতে লাগলো। চিৎকার করে কান্না করছে রাহা। ”

এর সাক্ষি হিসেবে আরো দুজন দাড়িয়ে রয়েছে ওর পেছনে। ফাহান দূর থেকে রাহার কথা শুনে বাকশক্তিহীন হয়ে দাড়িয়ে আছে।নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে লবনাক্ত পানি ঘড়িয়ে পরেছে তা সে অনুভূব করছে। রাহার কান্না এবং কান্নার শব্দ ফাহানের বুকে আঘাত করছে বেশ। রাহার দিকে যাওয়ার জন্য পা অগ্রসর করলেই ফাহানের আগে নীল গিয়ে রাহার পাশে বসে পরে। নীলকে দেখতেই রাহা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আরো কান্না করতে লাগলো।

–“আরে পাগলি কান্না থামা!! দেখ আমরা সবাই আছি তোর পাশে। প্লিজ কান্না করিস না। তোর কান্না আমার সহ্য হয় না বিশ্বাস কর। আর তুই এতোবছর পর কেন এসেছিস?? না আসলেও পারতি।জানিস আমি তোর জন্য এতোদিন অপেক্ষা করেছিলাম। ইচ্ছে করেছিলো তোর কাছে ছুটে চলে যায় কিন্তু আমি জানতাম না তুই কোথাই থাকিস। “(নীল)

–“ভাইয়া আমার আর কিচ্ছু ভালো লাগে না।দুনিয়াটা বড়ই আজব! কেউ কারো নয় সবাইকে তুমি,পাশে পাবে কিন্তু নিজ নিজ স্বার্থে।স্বার্থ পুরিয়ে গেলেই আর কাউকে পাশে পাবে না তুমি। (রাহা)

–“সবার কথা জানি না নীলা।কিন্তু তুই আমাকে সারাজীবন তোর পাশে পাবি।প্লিজ এবার কান্না থামা খেতে চল।তোর সাথে তো গেস্টও এসেছে দেখলাম।

–“ওহ হ্যাঁ। আমার খেয়াল ছিলো না। “চলো।(রাহা)

রাহা চোখের পানি মুছে উঠে নীলের সাথে হাঁটতে লাগলো। নীলার নানুর বাড়ি থেকে মাঝখানে আরো দুটো বড় পাহাড় পেরিয়েই কবরস্থান। যেখানে রাহার মা-বাবা- আর নানা কে কবর দেওয়া হয়েছে।

বাড়িতে গিয়েই দেখে তারা সবাই নানা ভাবে গল্পে ব্যাস্ত। রাহা ফাহাকে না দেখে চারপাশে খুঁজতে লাগলো।কারন সবাইকে গোসলে যেতে হবে একসাথে। তাও পাহাড়ের নিচে।



ফাহান রাস্তার পশ্চিম দিকে বড় একটা পাথরের উপরে উল্টো দিক মুখ করে বসে আছে। তার মনেও যে কালবৈশাখীর মতো ঝড় হচ্ছে।ধুমড়ে-মুছড়ে যাচ্ছিলো। এটার ভয় ছিলো এতোদিন ফাহানের। আজ তার ভাবনা বাস্তবে রুপ নিয়েছে।জানতো কারো মায়ায় পরলে সে মায়া কেটে উঠা অসাধ্যকর। তাই তো নিজের অনুভুতি এতোদিন নিজের অন্তরের গহীনে লুকিয়ে রেখেছিলো।যার উদ্ধার রাহা এসেই করেছে।

–( “এটা না হলেও পারতো। একদিনের দেখায় কারো প্রতি দুর্বল হওয়াটা কী খুবই জরুরি ছিলো?তোমার প্রতি মায়াটা আমার মনে না জন্মালোও পারতো নীলা। আমি এখন নিজেকে সামলাবো কি করে। আমার এতো শক্তিও নেই। মনে হচ্ছে বিশাল এক সমুদ্রের মাঝখানে আমি একা ভাসছি। কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিনা আশ্রয় নেওয়ার। যেদিকেই সাঁতরে যেতো চায় সেদিকেই ডুবে যাচ্ছি। আমি সত্যইই ডুবে যেতো চায় কিন্তু সমুদ্রে না তোমার……….??…..)

রাহা ফাহানকে খুঁজতে এসে দেখে পাথরের উপরে বসে আছে।

–“এই যে দুপুরে খাবেন না আপনি?? গোসল করবেন না?? “(রাহা)

রাহার গলা শুনে ফাহান চট করে পেঁছনে তাকায় দেখে।রাহা দাড়িয়ে আছে। সুন্দর চোখজোড়া এখনো লালচে হয়ে আছে কান্না করার কারনে। ঠোঁটের কোণে মিষ্টিহাসি। এবারতো ফাহান আরো পাগল হয়ে যাচ্ছে। রাহার এই মুখের মিষ্টিহাসি দেখে। নিজেকে সামলে মুখ দিয়ে একটা ছোট্ট শব্দ বের করে..”হুম” বলেই পাথর থেকে নেমে রাহাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ফাহান।

সেখানে গিয়ে দেখে আবির আর নীল কথা বলছে। ফাহান যেতেই রাহার নানু নীলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যেহেতু তারা সেম এজের তাই বেশ ফ্রি হয়ে যায়।

–আপনারা কাপড় নিয়েছেন?? “(রাহা)

–“হ্যাঁ,,,কিন্তু ওয়াসরুম কোথায়??”(নোভা)

–(হেসে) ওয়াসরুম??” আসেন আমার সাথে..(রাহা)

ফাহান রাহাকে হাসতে দেখে নিজেও হেসে দেয়। কিন্তু কেন সেটা নিজেও জানে না।হয়তো রাহার হাসি-খুশী-সুখ-দুঃখ সব সে এখন থেকে নিজের মাঝে উপলব্ধি করতে পারছে।


রাহা,ময়না,নীল,ফাহান,আবির,নোভা আধা ঘন্টা ধরে পাহাড় বেয়ে নিচে নামছে এখনো তারা ওয়াসরুমে পৌছাতে পারেনি। নোভা তো কিছুক্ষন অন্তর অন্তর পথেই বসে যাচ্ছে। আর নিচের দিকে নামা সম্ভব হচ্ছেনা। আবির টেনে উঠিয়ে সাথে করে ধরে ধরে নামতে লাগে। আরো ১০ মিনিট পর তারা সবাই পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল বড় একটা গর্তের সামনে দাড়াই। তার কারন নীল সবাইকে দেখে দাড়াতে বলে।

–“গাইস আমাদের রাহা আর ময়না পাখির ছোটবেলার একটা মজার কাহিনী সেয়ার করতে চায়। শুনবেন “(নীল)

নীলের কথা শুনে ফাহান দ্রতু বলে দেয় শুনবো। রাহা আর ময়না বার বার চোখ দিয়ে ইশারা করছে না বলতে তবুও নীল থামেনি বলতে শুরু করে দেয়।

–” নীলা ছোটবেলায় একবার বেড়াতে আসে এখানে। তখন নীলা ক্লাস ফোরে আর ময়না ক্লাস সেভেনে ছিলো। তো নীলা বারবার ওয়াসরুম যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত বাহানা করতো ময়নার কাছে। ছোট থেকে ছোট কারনের জন্যও ওকে নিচে নিয়ে যেতে হতো ময়নাকে।

ওই যে পাহাড়ে ছোট্টা একটা ঘর দেখছেন। ময়না নীলাকে বলেছিলো ওই ঘরটিতে ভুত,প্রেত,পেত্নি,জ্বিন,রাক্ষস থাকে,,বারবার নিচের যাওয়ার জন্য বাহানা করলে তোকে খেয়ে ফেলবে।ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলো,,,
ব্যাস এর পর থেকে নীলা পরপর তিনদিন ওয়াসরুমে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো।

তো একদিন আমি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে সেখানে যায়।জিনিস নিয়ে বেরিয়ে দেখি নীলা দাড়িয়ে আছে।এখানে কী জিজ্ঞেস করলে উত্তরে সে আমাকে উল্টো প্রশ্ন করে “এখানে নাকি জ্বিন,ভূত থাকে??”

ওদের এসব কথা আমি জানতাম না তাই সোজাভাবে বলে দিয়েছিলাম এখানে প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া আর কিছুই নেই।

সেদিন নীলা প্রচন্ড ক্ষেপে ময়নাকে এই গর্তে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলো দুপুরে। আর আমরা ময়নার খুঁজ পায় বিকালে। ভাবেন কতো ভয়াভহ কান্ড ঘটেছিলো।??

নীলের কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে,,,ততক্ষনে রাহা আর ময়না সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়।তারপর তারা গর্তটির দিকে তাকাতেই দেখে বেশ গভীর। এখানে কেউ পরে গেলে নিজ সাধ্যে কখনো উঠতে পারবে না।

এরপর তারা আরো কতক্ষন হেঁটে নিচের নামতে সক্ষম হয়। নিচেই নেমেই তারা অবাক এতোকষ্ট করে নিচে নেমেছে সে কষ্ট বৃসথা যায়নি তাদের।

?(চলবে)?

ময়না আপুকে সেই একটা ধাক্কা দিছিলাম।আমাকে ভয় দেখানো,,হুহ!!? কেমন লেগেছে বলবেন।নাহলে এই পার্টের পর আর দিবো না!!???

নীলাময়ীর প্রেমে পর্ব ৬

0

#নীলাময়ীর_প্রেমে

#Written_by_Tarin_Jannat
#পার্ট০৬

“চন্দ্রঘোনা ফেরীঘাট পার হলেই রাহ্খালী স্টেশন! আর ফেরী পার হওয়ার পর এই জায়গাটাই এসে বিরাট সমস্যায় পড়তে হয়। গাড়ি সব এসে একজায়গায় ভির করে। কখনো কখনো ৩ ঘন্টারো বেশি সময় প্রয়োজন হয় এই অসহ্যকর পরিস্থিতি থেকে বের হবে।

–“এইবার কী করবো এভাবে জেমে আটকে থাকলে সামনে যাবো কীভাবে??”(আবির)

–“ভাইয়া আপনি গাড়ি বামপাশে ওই যে রোডটা দেখছেন সেদিকে নিয়ে যান!!”(রাহা)

–“সেদিকে গেলে কী হবে??”(ফাহান)

–“গেলেই দেখতে পাবেন!!”(রাহা)

রাহার কথামতো আবির গাড়ি সে ছোট রোডের দিকে নিয়ে যায়। রাহার দেখানো লোকেশন অনুযায়ে আবির গাড়ি সোজা রাহখ্লী বাজারে নিয়ে যায়। তারা তো অবাক! এদিকে ও যাওয়া যায়??

–“এদিকে যাওয়ার রাস্তা আছে আগে বলেননি কেন?”(আবির)

–“আমি তখন খেয়াল করিনি!! এবার আমাদের খাবার নিয়ে নিলে ভালো হতো!! ”

–হ্যাঁ, আমি আর নোভা যাচ্ছি।(আবির)

তারা দুজনে বের হতে যাবে তখনি রাহার চিৎকার।

–“ইয়াকক!! আমার কাপড়ে এতো ময়লা?? আর আমার ব্যাগ?? আল্লাহ সেখানে রেখে এসেছি মনে হয়?

রাহার বিক্ষিপ্তচিত্ত কথা শুনে আবির তাড়াতাড়ি করে এসে সামনে থেকে রাহার ব্যাগ নিয়ে রাহার হাতে দেয়।মুহুর্তে রাহা ঠান্ডা হয়ে যায়। ব্যাগে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস আছে তাইতো রাহা হঠাৎ বিচল হয়ে পরে।

–“সরি আমার খেয়াল ছিলো না। ব্যাগটা আমি সেখান থেকেই দেখার পর নিয়ে নিয়েছিলাম।”(আবির)

–“ধন্যাবাদ ভাইয়া?? “(বিকম্পিত কন্ঠে)

রাহা তাড়াতাড়ি ব্যাগে এলবাম আছে কী না দেখে নেয়। এলবাম হাতে নিয়েই স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। ফাহান,আবির, আর নোভা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে রাহার দিকে।তাতে রাহার কোনো হেলদেল নেই স্বাভাবিকভাবেই বলে উঠে…

–“আপু আপনারা খাবার নিয়ে আসেন,,আমি এখানে পাশে একটা পার্লার আছে সেখানে গিয়ে আমার ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসি ততক্ষনে। “(রাহা)

–“তুমি একা যেও না ফাহান ও যাবে তোমার সাথে,”(নোভা)

–“”তার দরকার নেই!” (রাহা)

বলেই ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে হাঁটা দেই রাহা। ফাহানও কম কিসে? রাহা ঝাঁঝালো কন্ঠের কথা ফাহানের ইগোতে লাগে নেমে রাহার পেছনে গিয়ে হাত ধরে জোরে টান দিয়ে নিজের দিকে ফেরাই,,,
দূর থেকে আবির আর নোভা এদের কান্ড দেখে হেসে গাড়ি লক করে ফুড-কর্নারের দিকে চলে যায়।

–“এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার?? একা যাচ্ছো কেন? যদি আবার বিপদে পরতে হয় তাহলে??”(ফাহান)

এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয় ফাহানের থেকে।

–” ফাস্ট অফ অল আমাকে তুমি করে বলার অধিকার আমি আপনাকে দেই নি! সো আপনি করেই বলবেন!” (ক্রোধিত দৃষ্টি নিয়ে ফাহানের দিকে তাকিয়ে বলে)

–” এখানে এই কথাটা আসছে কেন?? আর আমি আমার ইচ্ছেতে চলি। তোমার কথা শুনতে যাবো কেন?? “তোমার সাথে আমার কী কোনো কালে শত্রুতা ছিলো?? এভাবে বিহেভ করার রেজনটা কী??”(ফাহান)

এর উত্তর রাহার নেই,,হাত ছাড়িয়ে চুপচাপ পার্লারের দিকে হাঁটা দেয়। সে ও কী বলবে??

–(আসলেই উনার সাথে আমার শত্রুতা আছে?? নাকি উনি খুব ভালো গান করেন বলেই আমার সমস্যা??একবার তো ঠকেছি।নিজেকে সামলাতে হিমসিম খেয়েছিলাম অনেক।দ্বিতীয়বার আমি সেই ভুল করতে চায় না।তাইতো এভাবে ব্যাবহার করেছি।উনার প্রতি অদ্ভুদ এক মায়া হয় যতবার দেখি।আমি চায় না এ মায়ার ক্ষিপ্রতা। নিজেকে সামলানোর শক্তি দাও আল্লাহ প্লিজ!! আমি এভাবেই ভালো আছি-মনেমনে)”(রাহা)

রাহার নিজেরই খারাপ লাগছে ফাহানের সাথে এভাবে ব্যাবহার করে। ফাহানেরও বুকে গিয়ে আঘাত করে রাহার এমন ক্রুদ্ধ কথায়!! তবুও নিজেকে সামলে নেই রাহার সাথে গিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।রাহা ফাহানকে পাশে দেখে কোনো রিয়েক্ট করেনি আর পুনরায়!!

–(কেন জানি তোমাকে জ্বালাতে ইচ্ছে করছে বিষণ। তাহলে তোমার ওই রেগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা আরেকবার দর্শন করতে পারতাম।–মনেমনে)(ফাহান)

রাহা পার্লারে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে ২০ মিনিট পর বের হয়।দেখে সামনে ফাহান দাড়িয়ে আছে।
ফাহান রাহাকে দেখে এবারো আরো মুগ্ধ হয়ে যায়। নীল রঙের লং টপসে বিষণ সুন্দর লাগছিলো রাহাকে।চুল গুলো এবার বেঁধে ফেলেছে। মুখে কোনো সাজ নেই।বেশ ফ্রেস লাগছে এবার রাহার। ফাহান এবার নিজের কিউরিসিটি আটকে রাখতে না পেরে রাহার থেকে জিজ্ঞেস করে বসে…..

–“তোমার কী নীল রঙটা বেশি প্রিয়??”

–“”নাহ আমার মায়ের বেশি প্রিয় ছিলো!! কিন্তু নীল রঙের বস্ত্রে নিজেকে জড়াতে বেশ ভালো লাগে আমার।মনে হয়…””

বলতে গিয়ে থেমে যায় আনমনে কী বলতে যাচ্ছিলো এখন। তাই আর কিছু না বলে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফাহান কিছুক্ষন তাকিয়ে আবারও ডাক দেয়..

–“#নীলাময়ী!!! (ফাহান)

এবার রাহা আবারো থেমে যায়।এ নামটায় অদ্ভুদ একটা মায়া এবং টান অনুভূব করে রাহা। চাইলেও উপেক্ষা করতে পারে না।

অপ্রতিভ হয়ে পরে ফাহান। কেন যে এই নামটায় ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে বলতে পারো না।’ রাহা’ ডাকতে গিয়েও #নীলাময়ী ডেকে ফেলে।

দুজনে স্তব্ধীত হয়ে দাড়িয়ে আছে ঠায়। তখনি নোভার ডাকে দুজনের ঘোর ভাঙে। ফাহানও হঠাৎ নোভার ডাকে বিব্রতবোধ করে।

–“কী হয়েছে চলো আমরা কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি।”(নোভা)

–“আসছি আপু!!'”

বলেই হাঁটা দেয়।তারা চারজনে এখন গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায়। ফাহান,আবির,নোভার দৃষ্টি রাহার দিকে।

–“ভাইয়া আপনি রাঙ্গামাটি গিয়েছিলেন??”(রাহা)

–“হ্যাঁ গিয়েছি তো!!কেন??”(আবির)

–“সেখানের রাস্তা কেমন লেগেছিলো আপনার কাছে”!!(রাহা)

–“আঁকাবাঁকা ছিলো।প্রথমবার গিয়েছিলাম তাই ড্রাইভ করতে অনেক ভয় লেগেছিলো।কিন্তু কেন??”

–“আমরা যেখানে যাবো সেখানের রাস্তা আরো ২০গুন ভয়ংকর। পাহাড়ী রাস্তা তার উপর কতটুক উঁচু তা আমি বলতে পারবো না কিন্তু অনেক উঁচু। বেশ সাবধানে গাড়ি ড্রাইভ করতে হয়। সে পাহাড়ের রাস্তা থেকে আপনি একশো মাইল দূর পাহাড়ের রাস্তাও দেখতে পাবেন।এখন কথা হচ্ছে আপনি ড্রাইভ করতে পারবেন নাকি আমি একজন দক্ষ ড্রাইভার হায়ার করবো??”(রাহা)

আবিরের ভিতূ মুখ দেখে ফাহান বলে উঠে…

–“তার দরকার নেই আমি ড্রাইভ করবো।গাড়িতে বসো সবাই।”(ফাহান)

তারপর সবাই গাড়িতে বসে পরে। আবির জায়গার লোকেশন ফোনে দেখতে লাগে কিন্তু ফলাফল শূন্য।

–“ফাহান “বাঙ্গালখালী”’ নামে কোনো জায়গার লোকেশন ম্যাপে পাচ্ছি না।””(ফাহান)

–“আরে ভাইয়া ওইখানে পাবেন না।আমি চিনি আমি পথ দেখিয়ে দিবো!! “(রাহা)

রাহার কথার শুনে ফাহান আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ১ ঘন্টা যাওয়ার পর রাহার ফোনটা বেজে উঠে..
তাকিয়ে দেখে রাহান ফোন দিয়েছে…

–“এ্যাঁ রাহান কেন আছোস??”(রাহান কেমন আছো)

–“আপু আঁয় ভালা আছি,,তুঁই কেন আছোস??(আমি ভালো আছি আপু তুই কেমন আছিস)

–“আঁইও ভালা আছি। কল কিল্লে দিয়োছ দে??(কল কিজন্য দিয়েছিস??)

–“তুই হডে ইয়েন ফুসাল-লইবেল্লাই!!(তুই কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করার জন্য)

রাহা খেয়াল করেছে তার ভাই কথা গুলো কেমন কেঁপেকেঁপে বলছে। নিশ্চয় কোনো না কোনো গন্ডগল আছে।

–“ওহ এতাল্লাই?? (ওহ এজন্য??)

–“ওয়ো তুই হনডে আপু?? (তুই কোথায় আপু)

–“আঁই বান্দরবান যাইদ্দি!! (আমি বান্দরবান যাচ্ছি)

কথাটা বলার সাথে সাথে কলটা ওইপাশ থেকে কেটে যায়।রাহার সন্দেহটায় ঠিক কেউ রাহানকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলো! তাইতো মিথ্যে বলেছে।

ফোনটা ব্যাগে রেখে চোখ তুলতেই দেখে নোভা আর আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে!ফাহানও গাড়ির আয়না দিয়ে রাহার দিকে তাকাচ্ছে একটু পরপর!

–“কী হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছেন যে?”(রাহা)

–“এতক্ষন এসব কী ভাষায় কথা বলছিলে রাহা”(নোভা)

–“আমাদের চিটাগং এর আঞ্চলিক ভাষা এটা!”

–ওহহহ!!

এরপর তারা আর কথা বলেনি।শুধু রাহা রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছিলো ফাহানকে। সবাই শুধু ভয়ংকর সুন্দরে ভরপুর পাহাড়ী রাস্তাটা মুগ্ধচোখে দর্শন করতে লাগলো।ফাহান নিজেও অবাক যে এতো সুন্দর জায়গা আছে।পর্যটনের জায়গা গুলোকেও যেনো হার মানায়। এক প্রান্ত থেকে অপর-প্রান্ত পর্যন্ত শুধু সবুজের সমারোহ!!

(এখানে কল্পিত কিছু নেই সবই বাস্তব)?

দীর্ঘ পাঁচঘন্টা পর তারা বাঙ্গালখালী বাজারে পৌছায়। বাজার পেরিয়েই আর্মিদের ক্যাম্প!! তাই গাড়ি আর্মিদের ক্যাম্পে থামাতে বলে রাহা। তারা তারপর গাড়ি থেকে নেমে যায়। নোভা তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলো এতোসুন্দর জায়গা দেখে।তার উপর আকাশ ঘন মেগমেদুরে। কোথাও একটু রোদের ছিটেফুটাও নেই।

–“গাড়ি এখানে থামাতে বললেন কেন??” (আবির)

–“আমার সাথে আসেন আপনারা!!”(রাহা)

তখনি তারা চারজনে আর্মিদের ক্যাম্পের সামনে একটা রিসেপশনের মতো জায়গা আছে সেখানে যায়।

–“ফয়সাল মামা! ফয়সাল মামা!! “(রাহা)

তখনি একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে বের হয়। উনি রাহাকে দেখেই চিনতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে যে রাহাকেই দেখছে।স্পষ্ট শব্দে বলে উঠেন…

–“নীলা মামনি!!( ফয়সাল মামা)

–“চিনতে পেরেছেন মামা!!”

–“ওরে কলিজা তোকে চিনবো না! ”
বলেই রাহার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে রাহাকে তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

–“মামা উনাদের দেখো আমার আপু আর ভাইয়া হয় উনারা। ”

ফাহানরা তো চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।তাহলে তার দেওয়া নামে রাহাকে আরো কেউ ডাকে?? তাহলে নিশ্চয় রাহার আসল নামও নীলা! রাহার কথায় ধ্যান ভাঙে ফাহানের।

তখনি তিনজনে সালাম দেয়। উনি সালাম দিয়ে ককথাবার্তা বলে নেই।

–“মামা গাড়িটা এখানে রেখে গেলাম! যাওয়ার সময় একেবারে নিয়ে যাবো। ততদিনের জন্য খেয়াল রাখবেন!”

–“চিন্তা করিস না যা তোর জন্য মামি-মা অপেক্ষা করছেন হয়তো। ” আর দাড়া হেঁটে যাস না গাড়ি দিয়ে যাস।

–” না তার দরকার নেই আমরা হেঁটে যাবো!!”

–“আপনাদের আপত্তি আছে??”

আবির আর নোভা চট করে বলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই ফাহান আর কিছু না বলে হাঁটা ধরে তাদের সাথে।

–“আচ্ছা রাস্তা তো ঠিক আছে!! গাড়ি থেকে নামতে বললেন কেন?? (আবির)

–“বাইরের গাড়ি ভেতরে এলাউ করেন না উনারা।যদিও আমার জন্যে কোনো সমস্যা হতো না।কিন্তু সবার জন্য নিয়ম এক। আমি কেন নিয়ম ভঙ্গ করবো।”

রাহার কথায় যুক্তি আছে তাই কিছু বলেনি আর ফাহানও। যেতে যেতে একসময় ওরা একটা সুন্দর ডিজাইন করা তিনতলা বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায়।পাহাড়ের কিনারাই একদম বাড়িটা।

কলিংবেল বাজাতেই সুন্দর বয়স্ক একজন মহিলা দরজা খুলে।রাহাকে দেখতেই কলিজা বলে রাহাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

–ওরে আমার কলিজা এতোদিনের আসার সময় হলো তোর। আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই এসেছিস।

–“আরে নানুমনি! এসেছি বলে এখন দরজার বাইরে দাড়িয়ে রাখবে।”ভেতরে আসতে দাও!

রাহার কথাই উনি ঘোর থেকে বের হয়। তারপর ভেতরে আসতে দেয়। সাথে ফাহানদেরও। রাহা ফাহানদের পরিচয় করিয়ে দেয় তার নানুর সাথে।

তখনি রাহার ময়না আপু দৌড়ে এসে রাহাকে জড়িয়ে ধরে।

–“নীলা এতো বছর পর এসেছিস তুই?? আমি তো ভাবলাম তোর দেখা আর জীবনেও পাবো না!!জানিস কতো মিস করেছি তোকে!!

–” ময়না আপু!! তোমার মিসের ঠ্যালাই আমাকে আসতে হলো এখন ছাড়ো।
সবাই রাহার কথাই হেসে দেয়।এবং ড্রইংরুমের ছোফায় বসে পড়ে।
চলবে..