Wednesday, August 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2016



কাঠগোলাপ পর্ব ৯

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব নয়

?

রাহি কুলুকুলু করে ঘামছে,কি করবে কি ভাববে কিছুই তার মাথায় এখন আসছে না,আদৌ কি সে এখান থেকে বের হতে পারবে??বাবা কত চিন্তা করছে এই টেনশনে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে,সামনে তাকিয়ে একবার দেখলো ধ্রুভের দিকে সে এখনো তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে..মনের সাহস জোগাচ্ছে কিছু ত করা উচিত তার,এইভাবে চেয়ারে বেধে থাকা অবস্থায় মনে হচ্ছে ব্লাড গুলো নিঃশ্চল হয়ে যাচ্ছে।।

“প্লিজ খুলুন আমার হাতে লাগছে!!” রাহি এই দড়ি দিয়ে বাধার ব্যাথা আর সহ্য করতে না পেরে বলেই ফেললো।।

“শিট!!সরি মীরা!!হাও ক্যান বি আই সো কেয়ারলেস!!ড্যাম ইট” ধ্রুভ অন্য আরেকটা চেয়ারে লাথি মেরে,হন্তদন্ত হয়ে রাহির কাছে গেলো..রাহিকে দড়ি বাধা অবস্থা থেকে মুক্ত করে দিলো কিন্তু রাহির হাত সে ছাড়ে নি..রাহির হাত নিয়ে দেখলো ফর্সা নরম হাতে দড়ির দাগ কেমনে দেবে কালচে হয়ে বসে গেছে,ধ্রুভ তাকে সোফায় বসিয়ে হাত ধরে অনবরত চুমু দিতে লাগলো।।

রাহির এমন ছোয়া সহ্য করতে পারছে না,সে হাত সরাতে চাইছে কিন্তু ধ্রুভ এতোবেশি শক্ত করে ধরে আছে যে ব্যাথা জায়গাটা মনে হচ্ছে আরও ব্যাথা করে দিচ্ছে..চুমু দিতে দিতে রাহির হাত দুটো ভিজিয়ে দিলো..তার ধারনা চুমু দিলে তার মীরার ব্যাথাটা কমে যাবে।।

ধ্রুভ চুমু হাতের উপর দিতে দিতে এক সময় শান্ত হয়ে গেলো কিন্তু রাহির কাছ থেকে সে নড়লো না..রাহির দুই হাটুর উপর মাথা রেখে তার কোমর দুই হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরলো,রাহির অস্বস্তি হচ্ছে অনেক..বেশি নড়াচড়া যখন রাহি শুরু করলো তখন ধ্রুভ রাহির হাটুর উপর একটা কামড় দিলো।।

“আহ!” রাহি আওয়াজ করে উঠলো।।

“ডোন্ট মুভ!আই নিড ইউ!!” ধ্রুভ এই প্রথম ফিসফিসিয়ে আওয়াজের থেকে একটু ভারী গাম্ভীর্যের সাথে কথা বললো।।

রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগে ধ্রুভ ইনসেইন করার মতো একটা কথা বললো,

“দুনিয়া মুঝে ঢুনঢি তি হে মুঝে পানে কে লিয়া”

“ওর মে মেরী মীরা কো ঢুনঢে কে লিয়া উস দুনিয়াকে লোগো কো আন্ধেরো মে ঢাকেল দে তা হু”

রাহির বুকের ভিতরটা ফুড়ুৎ করে উবে গেলো,এরকম করে বলছে কেন??এতোক্ষন ত শুধু ভয় লাগছিলো এখন মনে হচ্ছে চিল্লিয়ে গলা ফাটিয়ে কাদি।।

“জানো সেই সাত বছর থেকে তোমাকে স্বপ্নে দেখে আসছি আমি!!জাস্ট একটু করে তোমাকে ছুতে চেয়েছি কিন্তু তুমি তার আগেই আমার কাছ থেকে সরে যেতে, এইবার তোমাকে পেয়েছি!কোথাও যেতে দিব না!!” এই বলে ধ্রুভ সারা মুখ জুড়ে চুমু খেতে লাগলো,আর তার চুমু টা এতোবেশি দ্রুততম হচ্ছিলো যে রাহির সারামুখ এই চুমুর কারনে গরম হয়ে গেছে।।

“প্লিজ ছাড়েন!!আপনি যাকে খুজছেন আমি সে না আর আমি হতেও পারি না অন্য কেও..আমার নাম ইশরাতুল ইসলাম রাহি,আপনি ভুল মানুষকে এনেছেন” রাহি জোর করে ধ্রুভকে থামিয়ে দিয়ে কথাগুলো বললো।।

রাহির এমন কথা শুনে ধ্রুভের মাথায় দপ করে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলে গেলো,সে চুমু খাওয়া বন্ধ করে স্থির হয়ে গেলো..রাহির দিকে রক্তিম চোখে তাকালো।।

“আমি ভুল??নো নো নো!!আমি আমার মীরাকে চিনতে ভুল করতে পারি না” ধ্রুভ বলেই রাহির গাল দুটো দুই আঙ্গুলের মাঝে চেপে ধরলো..রাহির চোখে টুপ করে জল জমে যেয়ে নিচে গড়িয়ে পরলো।।

রাহির চোখের জল দেখে ধ্রুভের ওই রক্তিম চোখদুটো নিমিষেই ঠান্ডা বরফে পরিনত হলো,ধূসর রাঙা চোখে তার করুনা জন্মালো..সাথে সাথে গাল ছেড়ে রাহির গালে হাত বুলাতে লাগলো আর বিড়বিড় করে সরি বলতে লাগলো..রাহি যখন একটু আওয়াজ করে কাদতে লাগলো তখন ধ্রুভের হুশ আসলো।।

“প্লিজ মীরা কেদো না!!আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি!!এই সাতটা বছর তোমার জন্য খাওয়া ঘুম কিছু ঠিক ছিলো না মীরা,তুমি আমার হয়ে যাও মীরা..আমার আর কিছু চাই না!!” রাহির দুই হাত ধরে বললো।।

“প্লিজ আমার বাবা টেনশন করছে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন প্লিজ!!” রাহি অনুনয়ের সাথে বললো।।

“না কোথাও যাবা না তুমি!!তুমি গেলে যদি আবার হারিয়ে যাও??তোমাকে খুজে পেতে আমি যদি আর পাই??আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য আর কষ্ট করতে পারবো না!!দেখো আমার এখানে ব্যাথা হচ্ছে খুব!!” ধ্রুভ কেমন বাচ্চাদের মতো তার বুকে রাহির হাত রেখে কথাগুলো বলছে,রাহির হাত অলরেডি কাপতে শুরু করছে..হাত সরাতে চাইলে সেখানে ধ্রুভ আরো শক্ত করে চেপে ধরে আছে।।

রাহি বুঝতে পারছে না কিছুই যে এখান থেকে সে বেরুবে কি করে,কিভাবে ছাড়া পাবে এই ধ্রুভ নামের লোকটা থেকে..ধ্রুভ তার হাটুতে মাথা রেখে কোমর ধরে নিচে বসে পরলো আবার..দেখে মনে হচ্ছে কোন ছোটবাচ্চার জিনিস হারিয়ে যাবে এইজন্য তা শক্ত করে ধরে আছে সে।।

রাহি তখন অনেক চিন্তাভাবনা করে একটা বুদ্ধি বের করলো..যেহেতু তার মানসিক সমস্যা আছে,আর এই মানসিক সমস্যার পুরোটা জুড়ে মীরা নাম..এখন সেই নামটায় ব্যবহার করবে সে।।

“শুনছেন!!একটু কথা ছিলো!!” রাহি আস্তে করে বললো।।

“উমম!!” রাহির হাটুর মাঝে মাথা রেখে ধ্রুভ আওয়াজ করলো।।

“দেখুন আপনি যেমন আপনার মীরার জন্য চিন্তা করেন ঠিক তেমনি এই মীরার জন্য ও তার বাবা চিন্তা করে,তার বাবার যদি চিন্তায় কিছু হয়ে যায় তখন মীরার যদি নিজেকে কিছু করে ফেলে” রাহি বললো।।

রাহির এমন কথা শুনে ধ্রুভ তড়িৎ গতিতে লাফ দিয়ে উঠলো..তার মীরার কিছু হয়ে যাবে বা নিজেকে কিছু করে দিবে এই কথা তার হজম হচ্ছে না..তার মীরার কিছু হলে সে কি করে বাঁঁচবে??তাৎক্ষণিকভাবে সে রাহির কাছে গেলো।।

“নো নো মীরা!!তুমি নিজেকে কিছু করতে পারো না,আমি তোমার কিছু হতে দিবো না..তুমি নিজেকে কিছু করলে সবাইকে শেষ করে দিব আমি” ধ্রুভ এইসব বলে কেমন বিড়বিড় করতে লাগলো,রাহিকে বুকের সাথে চেপে ধরলো..এমন শক্ত করে চেপে ধরছে যে নিঃশ্বাসটাও আটকে যাচ্ছে তার।।

“আমি নিজেকে কিছু করবো না কিন্তু আমার বাবার যদি আমার কারনে কিছু হয়ে যায়,আমি নিজেকে শেষ করে দিব!!আগে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন,আমি কোথাও যাবো না আপনাকে ছেড়ে” রাহি দম আটকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।

“তোমাকে যদি আমার থেকে কেও কেড়ে নেয়??আমি কাওকে ছাড় দিব না মীরা” কেমন ব্যাকুল কন্ঠে বললো ধ্রুভ।।

“কেও নিবে না!!মীরাকে ভরসা করেন না?” রাহি বললো।।

“তুমি এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের সমস্তের অস্বিত্বে বিরাজমান করো!!তোমার কথা শুনবো কিন্তু তোমাকে আমার হতে হবে!” ধ্রুভ বললো।।

“আমি ত আপনারই!!” রাহি আমতাআমতা করে বললো।।

“এইভাবে নয়” ধ্রুভ বাকা হেসে বললো।।

“হাজারো নে তুম চাহা হো গা!!”

“পার মেহসুস অর পিয়ার কারনে কা হাক শিরফ মুঝে হে অর মেহি রাহুন গা !!” হিসহিসিয়ে ধ্রুভ রাহির কানের কাছে বললো এগিয়ে এসে।।

ধ্রুভের এইভাবে নয় কথাটা শুনে রাহির মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো,সে কি চাইছে??প্রশ্নের ঘুরপাক তাকে খেয়ে ফেলছে..এদিকে ধ্রুভের মতিগতি শুরু থেকেই রাহির সুবিধার ঠেকছে না তার,কি করবে তাকে নিয়ে ধ্রুভ!!ধ্রুভের এমন হাসি বুকের ভিতরের কলিজাটা কেমন লাফ দিয়ে উঠছে বারবার।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,রেসপন্স করলে আমি দ্রুততার আর উৎসাহর সাথে পরের পর্ব দ্রুত লিখতে পারবো,রহস্য আস্তে আস্তে খুলছে বা খুলবে..ধৈর্য্য হারা হইয়েন না,তাড়াহুড়ো করলে আমি তালগোল পাকিয়ে ফেলবো..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ৮

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব আট

?

সবুজ কলাপাতা রঙের শাড়িতে পরা এক ভয়ার্ত মুখের নারী চেহারা চোখের সামনে জল জল করছে,মনে হচ্ছে আরেকটু বকা দিলে সে কেদে উঠবে।।

“আমার মীরা” ধ্রুভ হাতে থাকা রঙের ডিব্বাটা টেবিলের উপর রেখে বললো..সে আবারো তার মীরার ছবি আকঁতে সক্ষম হয়েছে তবে এটা এবার স্বপ্নের অদৃশ্য নারীর ছবি মীরা নয়,বাস্তবে নারীর ছবির মীরা সে একেঁছে..ডাক্তার স্মিথের কেবিন থেকে যখন হন্তদন্ত হয়ে সে রেগে বের হয়ে গেছিলো তখন এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সেই প্লেনের টিকেট অর্ডার করেছিলো কিন্থ প্লেন কোথাহ ক্র‍্যাশ হবার কারনে সপ্তাহখানেক আকাশপথে চলাচল নাকি বন্ধ থাকবে,নিজের প্রাইভেট চপারটাও নাকি নষ্ট হয়ে গেছে আজকে..তার লোক তাকে সেটা আজ জানালো..সব মিলিয়ে তার মেজাজ আরো বিগড়ে গেছে,তখন তার বাড়ি ফিরে এসে..রঙ আর তুলি নিয়ে যে ওই ঘরে গেছে আজ তিনদিন পর সে আবারো তার মীরার ছবি আঁকতে সক্ষম হয়েছে।।

“আই এম কামিং টু ইউ সুন মীরা” ধ্রুভ পোট্রের্টের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বললো,এমন ফিসফিসানি আওয়াজে ঘরটাও জানান দিলো যে “সে আসছে”।।

বেশ কয়েক সপ্তাহ পর,

রাহি আজকে ইউনিভার্সিটিতে যাবে,সেখানে যেয়ে যে পড়ার ঘাটি জমে আছে তা পূরন করবে..বিয়ে বাড়ি থেকে আসার পর সে এক প্রকার গুরুত্বর জ্বরে ভুগছিলো,তিনদিন হলো সুস্থ হয়েছে..কিন্তু তার বাবা তাকে ভার্সিটি পাঠায় নি..আজকে জোর করে অনুমতি নিয়েছে।।

এদিকে প্রান্ত কোম্পানির কাজে বিডির বাহিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে,বাহিরের কোম্পানির সাথে ডিলটা হলে তার পদোন্নতি টা আরেকটু উপরে উঠে যাবে..নিজের বেষ্ট প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য বাহিরে যেতে হলো তাকে,এদিকে ঘুরাও হবে..রাশনা তার শপিং লিস্ট একপ্রকার দিয়ে দিয়েছে প্রান্তকে,যে ওখানে যেয়ে এইসব আনতেই হবে তবে যা লিখেছে সে বেশিরভাগ চকলেট তা।।

ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে যখন ঢুকছিলো রাহি তখন অনেক বেলা হয়ে গেছিলো,অবশ্য বেলা ১২টায় একটায় ক্লাস তার..ক্লাস করতে ভিতরে যেয়ে দেখলো ধর্ম ঘাট চলছে,ছেলেমেয়েরা কি নিয়ে ধর্ম ঘাট বসিয়েছে তা জানা নাই..পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে মানুষের গিজগিজানিতে ভরে গেছে।।

হুট করে অনেক মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে,মনে হচ্ছে পুলিশের দৌড়ানি লেগেছে..এতো মানুষের দৌড়াদৌড়ির ভিড়ে রাহির কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতেই কারো বুকে বাধা পরলো..বুকে রাহির মুখ পরাতে সেই ঘরের আতরের স্মেলের মতো স্মেল এই বুক থেকে পাওয়া যাচ্ছে।।

রাহি চোখ তুলে উপরে তাকালে যাকে দেখতে পেলো সে তাতে তার সমস্ত হুশ উড়াল দিয়ে দিলো..তার সামনে আর কেও না ধ্রুভ আছে।।

ধ্রুভের বুকের উপর মীরার মাথা,চারদিকে মানুষের হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজ আর এদিকে তারা দুজন..ধ্রুভের ধূসর মনির আশেপাশের সাদা অংশগুলোতে কিছুটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে..কপালে কয়েকটা ভাজ পরে আছে,এক ধ্যানে তার মীরার দিকে তাকিয়ে আছে সে।।

রাহির সারামুখ ধ্রুভের উপস্থিতিতে অবাকের অবকাশ ছেয়ে গিয়েছে..রাহি ধ্রুভের বুক থেকে তড়িঘড়ি করে সরে আসতে চাইলে,ধ্রুভ তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরছে..এরকম চেপে ধরাটা রাহির সারা শরীরের বিদ্যুৎ গতিতে ছেয়ে দিলেও সে, ধ্রুভের এরকম ভাবে ছোয়া তার কাছে যেমন কাটাঁদায়ক তেমনি ব্যাথাতুর ও।।

“কি করছেন ছাড়ুন!” রাহি ব্যাথাতুর কন্ঠে বললো।।

ধ্রুভের কথাটা কানে গেলো কিনা রাহি বুঝতে পারলো না যখন দে দেখলো তার বলার পরও ধ্রুভ তাকে ছাড়ছে না তখন মুখ তুলে তার দিকে তাকালে দেখলো ঠোট তার অনবরত কাঁপছে,কিন্তু তার হাত পা লোহার মতো শক্ত করে রাহিকে ধরে আছে..রাহি কেন জানি ভয় পেতে লাগলো, এই ধ্রুভ নামের ছেলেটাকে..মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলে,ধ্রুভ তার কানের কাছে তার কাঁপা ঠোট নিয়ে যেয়ে বললো ফিসফিস করে,”শিসস”।।

এমন হিসহিসিয়ে বলাটা রাহির বুকের ভেতর কেমন যেন মনে হচ্ছে দশ কেজি ওজনের পাথর বসিয়ে দিয়েছে..ধ্রুভের এমন বিহেভিয়ারে একটু হলেও অবগত তার ফুফুর কাছ থেকে যতটুকু সে শুনেছে..তার বোধগম্য হচ্ছে না এই ধ্রুভ নামক প্রানীটিকে।।

ধ্রুভ হুট করে রাহির কোমর ছেড়ে দিলেও,তার হাতটা ছাড়লো না বরং আগের থেকেও দ্বিগুন শক্তিতে ধরলো..ধুপধাপ পা ফেলে রাহিকে ওই ভিড়ের মধ্যে দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,এমনভাবে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাওয়াতে রাহি তাল মিলাতে পারছিলো না হোচট খেয়ে পরে যাচ্ছিলো বারবার।।

“আরে আজব লোক আপনি??বলছি কখন থেকে ছাড়েন??প্লিজ ছাড়েন,সবার সামনে এইটা কোন ধরনের পাগলামি??” রাহি হাত ছুটাতে ছুটাতে বললো।।

এইভাবে নানান প্রশ্ন ছুড়তে লাগলো ধ্রুভের দিকে,কিন্তু ধ্রুভের কান অব্দি আদৌ রাহির কোন কথা যাচ্ছে কিনা সন্দেহ!!সে আপনমনে রাহির হাত ধরে হেটেই যাচ্ছে,যখন গাড়ির কাছে গিয়ে থামলো তারা..ধ্রুভ গাড়ির ডোর ওপেন করে রাহিকে বসতে বললে,সে চিৎকার দিয়ে বললো,

“অসম্ভব!!আমি আপনার সাথে একটা সেকেন্ডের জন্য কোথাও!!ছাড়েন!” রাহি এইবার ভয়ার্ত কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো।।

“জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট মীরা!!ডোন্ট ট্রাই টু এস্কেপ ফ্রম মি!!” ধ্রুভ এগিয়ে এসে রাহির দিকে তাকিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,বলার সাথে সাথে ধ্রুভ তার হাতের দুই আঙ্গুলের মাঝ দিয়ে রাহির কাধেঁ চাপ দিলো…চাপ দেয়ার পরপরই রাহি বেহুশ হয়ে ঢলে পরলো ধ্রুভের দিকে..ধ্রুভ রাহিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,

“সাতটা বছরের শুধু স্বপ্নে না এখন থেকে এই মুহুর্ত থেকে এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের কাছে বদ্ধ থাকবা..আমাকে বদ্ধ বা উন্মাদ তোমার যাই মনে হোক না কেন..আই ডোন্ট কেয়ার..শান্তি চাই আমি!!আর সেটার তোমার মাঝে বাস্তবে পেতে চেয়েছি,এতোদিন শুধু স্বপ্নে ছিলে..সকল কিছু উপেক্ষা আমি করতে পারবো আমি তোমার জন্য”

রাহিকে গাড়িতে ঢুকিয়ে সিট বেল্ট বেধে,রওনা দিলো..কোথায় রওনা দিলো কেও জানে না।।

এদিকে ডাক্তার স্মিথ বারবার ধ্রুভের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছেন কিন্তু বরাবরই তিনি ব্যর্থ্য..ধ্রুভের পাগলামি কতটা ডেঞ্জারাস হতে পারে সেইটা উনি নিজে স্বচোক্ষে দেখেছেন..লাস্ট টাইম যেটা সে মার্ডার করে সেই বডিকে হান্ড্রেড পিস করে লন্ডনের হান্ড্রেড জায়গাতে নিজে পুতেঁ রেখেছে..তাকে মার্ডার করার কারন হলো,সফল ব্যবসায়ী হওয়ার কারনে ধ্রুভের শত্রুর অভাব ছিলো না তবে কেও কখনো কোন আঘাত করে উঠতে পারে নি কারন একে ত ধ্রুভের পাশে দুইটা গরিলার মতো গার্ড থাকতো আর দুই ধ্রুভের রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত..ক্যাথরিন নামের এক বিদেশি নারী ধ্রুভকে অফার করেছিলো বেড রিলেশনে যাওয়ার জন্য,ক্যাথরিন ছিলো লন্ডনের সবচেয়ে ইয়াংগেস্ট সুন্দরি রিচ মডেল..তাকে পাওয়ার জন্য কত ছেলে হা হয়ে থাকে সেখানে সে ধ্রুভের কাছে বিছানায় যাওয়ার জন্য পাগল ছিলো।।

ক্যাথরিন যখন ধ্রুভকে অফার করে তখন ধ্রুভ তার কথার রেসপন্স ত দূরে থাক তার দিকে চোখে তুলেই তাকায় নি,তখন সে তার মীরার ছবি দেখছিলো ফোনে যা সে পোট্রেট করেছিলো,সেটাই ফোনে তুলে রেখেছে যেন সে বাড়িতে না থাকলেও বাহিরে থেকে তার মীরার ছবি দেখতে পায়..ধ্রুভের এমন আগ্রাহ্য দেখে ক্যাহরিনের অনেক রাগ হয়,সে সেদিন কিছু না বলে চলে যায়..এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাথরিন ধ্রুভের সাথে এই নিয়ে কথা বলতে আসতো কিন্তু কখনো ধ্রুভকে পেতো না আবার কখনো ধ্রুভ তার গার্ডকে দিয়ে তাকে আটকে রাখতো..এইভাবে একদিন ধ্রুভের ইঞ্জেকশনের দিন আসে যা তাকে প্রতি চার মাস পরপর নিতে হয়,না নিলে তাকে কন্ট্রোলে রাখা যায় না…সেদিন ধ্রুভ ডাক্তার স্মিথের চেম্বারে নিজে যেয়ে মিট করতে চায়,ওখানে পৌছানোর পর সে জানতে পারলো স্মিথ একটা টিন এইজ বাচ্চার লেসন নিচ্ছে,সেই টিন এইজ বাচ্চাটা তার ফ্রেন্ডকে চাকু দিয়ে খুন করে ফেলার চেষ্টা করছিলো তাই তার বাবা মা তাকে একটা সাইকোলজিস্টের আন্ডারে নিয়ে এসেছে..স্মিথ সেখানে ব্যস্ত থাকার কারনে,ধ্রুভ উনার চেম্বারে বসে উনার ওয়েট করতে লাগলো..বসে থাকতে বিরক্ত লাগায়,সে রুমের ভিতরে পায়চারী করতে শুরু করলো..ক্যাথরিন কিভাবে জেনেছে ধ্রুভ হসপিটালে এসেছে,তাই সে সেখানেও যেয়ে উপস্থিত হলো..ক্যাথরিন চেম্বারে আসলে,ধ্রুভ পিছন ফিরে দেখলো কে আসছে,দেখে নিয়ে সে আবারো ব্যাক করলো।।

এদিকে ক্যাথরিন তার সাথে ফিজিক্যালি এটাচ হতে চাইছে বারবার,এক সময় ধ্রুভ সহ্য করতে না পারে কষিয়ে দিয়েছে এক থাপ্পড় ক্যাথরিনকে..থাপ্পড় খেয়ে ক্যাথরিনের মেজাজ সপ্তমে উঠে গেছে।।

“ইউ ব্লাডি বিচ সাইকো!!হাও ডেয়ার ইউ!! ” ক্যাথরিন দাঁত কিড়মিড় করে বলতে বলতে ধ্রুভের হাতের কব্জিতে তার হাতে নখ দিয়ে আচড়ে দেয়।।

আর এই নখের দাগের আচড়ানোটা ক্যাথরিনের কাল হয়ে দাড়ায়,একে ত আজকে তার ইঞ্জেকশন শরীরে পুশ করা হয় নি আবার দ্বিতীয়ত ক্যাথরিনের এমন বিহেভিয়ার।।

“সো ইউ ওয়ান্ট টু সি মাই সাইকোনেস??দ্যান সি” বলেই পাশে টেবিলে থাকা একুরিয়াম টা তুলে ক্যাথরিনের মাথায় ফেললো,ক্যাথরিন এমন আক্রমনে মাথা দিয়ে দরদর রক্ত বেরুতে লাগলো..সে সেখানে বেহুশ হয়ে পরলো।।

ক্যাথরিন যখন হুশে আসলো,তখন সে দেখলো নিজেকে একটা টেবিলে বাধা অবস্থায়..তার সামনে বসে আছে ঠোটে বাকা হাসি দিয়ে ধ্রুভ,ধ্রুভ এসে ক্যাথরিনকে কিছু করতে যাবে তার আগেই স্মিথ এসে তাকে থামিয়ে দেয়..ইঞ্জেকশন পুশ করে বেহুশ করে ফেলে।।

ক্যাথরিন সেদিন চলে গেলেও তার হিংসার উত্তাপে সে ঝলসে যাচ্ছিলো দিনের পর দিন,তার লোক ঠিক করলো ধ্রুভকে মারার জন্য..লোকটা যখন ধ্রুভকে মারতে গেলো তখন ধ্রুভের পুরোনো পাগলামি নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো,লোকটা জ্যান্ত থাকা অবস্থায় ধ্রুভ তার শরীর হান্ড্রেড পিসে কাটলো এবং নিজে ড্রাইভ করে লন্ডনে হান্ড্রেড জায়গাতে রেখে আসছে।।

ক্যাথরিন যখন শুনলো তার পাঠানো লোককে খুজে পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে,উল্টো লন্ডনের ব্রেকিং নিউজে তাকে খুজে বেড়াচ্ছে পুলিশ ফোর্স যে এই লোক গুম হওয়ার পিছনে য়ার হাত কারন ওই লোকের সাথে লাস্ট সিন ছিলো ক্যাথরিনের..সব মিলিয়ে ক্যাথরিন লন্ডন ত্যাগ করে,এখন পর্যন্ত তাকে খুজে পাওয়া যায় নি কোথায় আছে সে।।

ব্রেকিং নিউজ,

ইয়াংগেস্ট রিচ মডেল ক্যাথরিন রাতারাতি গায়েব!!

এরপর থেকে স্মিথ আরো বেশি ভয় ধ্রুভকে নিয়ে,ধ্রুভের এমন পাগলামি জান নেয়ার কারন যদি হয় কারো,তাহলে সেটা অনেক বিপ্পজনক।।

রাহি যখন চোখ খুললো তখন সে নিজেকে চেয়ারের সাথে দড়ি বাধা অবস্থায় পেলো..এমন অবস্থায় নিজেকে পেয়ে রাহির বুক দুরুদুরু করতে লাগলো,চোখটা ভীষণ জ্বালা করছে..চারপাশ অন্ধকার একটা লাইট মাথার উপরে জ্বলছে।।

“হ্যালো মাই বিউটিফুল মীরা!”ধ্রুভ পিছনে দাড়িয়ে রাহির কানে হিসহিসিয়ে বললো।।

চলবে?

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আপনারা না জানালে আমি বুঝতে পারবো না কেমন লিখছি..রেসপন্স দেখলে উৎসাহ আসে লিখার,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

কাঠগোলাপ পর্ব ৭

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব সাত

?

রাহি গায়ে হলুদ আর বিয়ে ঠিকঠাক এটেন্ড করতে পারে নি.. বেশি মানুষজন পছন্দ না তার..কিন্তু এই কয়েকদিনে রাশনার সাথে তার ভালোভাবে ভাব জমাতে পেরেছে..রাশনার সাথে ফোন নাম্বার ও ওদল বদল করেছে।।

“রাশনা এদিকে শুন” প্রান্ত চিল্লিয়ে ডাকলো।।

“কি হয়েছে এমন গরুর মতো চিল্লাও কেন??” প্রান্তকে জিজ্ঞেস করলো রাশনা ভেঙচি দিয়া।।

“আমাকে ষাড় বললি??তোর সাহস ত কম না পুকুর পাড়ের পেয়ারা গাছের পেত্নি??” প্রান্ত তেড়ে এসে বললো রাশনাকে,প্রান্তর এমন তেড়ে আসা দেখে রাশনা ভয়ে রাহির পিছনে লুকিয়ে গেলো।।

“বের হো ওখান থেকে??তোর সাহস কম না ত??তোর দাঁত ভেঙ্গে ওই পুকুরের মাছের খাবারের জোগান দিব আমি” প্রান্ত বললো।।

“আপু বাঁচাও নইত এই খবিশ লোক আজকে আমার সুন্দর দাঁত গুলো নিয়ে তাই করে নিয়ে যাবে ” রাশনা রাহিকে জাপটে ধরে বললো।।

রাহি এদের দুজনের মাঝে নিজেকে এলিয়েন ভাবছে আবার ভালোও লাগছে এমন খুনশুটিময় ভালোবাসা দেখে..কয়জন পায় মনের মতোন মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী রুপে পাওয়ার।।

“কার পিছে লুকাচ্ছিস??যে নিজের শোক লুকায়??যে নিজের কষ্টটুকু প্রকাশ করতে ভয় পায়??যে তারে ছেড়ে তার বান্ধবীর সাথে লটরপটর করে তাকে ভেবে নিজের ক্ষতি করছে যে মেয়ে তার কাছে যাস কেন, এদিকে আয় তুই?তোর খবর আছে?” প্রান্ত বললো।।

প্রান্তের এমন কথায় রাহির ভিতরটা নাড়া দিলেও মুচকি হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করলো সে।।

“সব জেনে থাকার পরেও কেনো তুমি আপুর সাথে ওমন মিসবিহেভিয়ার করো??” রাশনা জিজ্ঞেস করলো।।

“ওর বুঝা উচিত,কখনো কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না??যাকে ভেবে সে শোক পালন করছে সে তারই বান্ধবীকে নিয়ে দিনের পর দিন বিছানায় সুখ পালন করছে!!তার দেখায় দেয়া উচিত যে সামিরের জন্য রাহি যোগ্য না বরং রাহির নখের যোগ্যও না সামির” প্রান্ত চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠলো।।

প্রান্ত তার কথা শেষে ওই জায়গা নিঃশব্দে ত্যাগ করলো..রাশনাও সেই সাথে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।।

রাশনা শুরু থেকে সবকিছু জানে..প্রান্ত তাকে বলেছে সেই যখন থেকে রাহি তাদের বাসার নিচে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসে..প্রান্ত রাহির সমস্ত কিছু জানে কারন রাহির যে বান্ধবী নামে বিষধর প্রানীটি তার ফুফাতো বোন মিথিলা..মিথিলা তার সাথে সম্পর্কে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারে নি..একবার মিথিলা প্রান্তের বাড়িতে এসে তার সাথে তার রুমে ফিজিক্যাল হওয়ার ট্রাই করেছিলো তখন প্রান্ত কষিয়ে মিথিলাকে চড় মেরেছিলো..কিন্তু মিথিলা বাইরে এসে বলে প্রান্তই তার সাথে ফিজিক্যালি এটাচ হতে চেয়েছিলো,কিন্তু রেহেনা বেগম ছেলের সাথে ছিলেন বলে মিথিলাকে তিনিও থাপ্পড় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেন..সেই থেকে তাদের সাথে প্রান্তদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়..প্রান্তের ফুফু মাঝেমধ্যে লুকিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলে কিন্তু মিথিলার বাবার অহংকার বেশি থাকার কারনে তিনি জানিয়েছিলেন যদি ওই বাড়ির কারোর সাথে উনি সম্পর্ক রাখেন তাহলে প্রান্তের ফুফুকে তিনি তালাক দিবেন..নিজের সংসার বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের ভাইয়ের বউয়ের সাথে লুকিয়ে কথা বলেন।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

এক বছর আগে প্রান্তর বর্তমান কোম্পানিতে জয়েন দেয়ার আগে বিভিন্ন জায়গাতে ইন্টারভিউ দিতে গেছিলো..সেই সূত্রে রাহির ভার্সিটিতে প্রান্ত প্রফেসরের সিভি জমা দিতে গেছিলো..রাহির সাথে কখনোই প্রান্ত সোজামুখে কথা বলে নি ছোট থেকেই,রাহিও আগে থেকে চুপ চাপ স্বভাবের থাকলেও সহ্যের সীমা পার হলে প্রান্তকে উল্টা বাঁশ মেরে দেয়..যখন প্রান্ত সিভি জমা দিয়ে বের হয়ে আসে প্রিন্সিপালের রুম থেকে তখন একটা ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে ক্রশ করে আসার সময় দেখে রাহিকে,যেখানে রাহি দাড়িয়ে চোখ দিয়ে জল ফেলছে..রাহির এমন ফেইস দেখে প্রান্ত আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো দুইজন ছেলে মেয়ে একে অপরের সাথে লেপ্টে বিশ্রিভাবে চুমু খাচ্ছে,এমন কিছু দৃশ্য দেখে প্রান্তের চোখ কপালে উঠে গেছে..মিথিলা যখন তার মুখ সরালো সামিরের কাছ থেকে,সামনে আসলো তখন প্রান্তের অবাকের চরম পর্যায়ে গেছে যে মিথিলা এতোটা জঘন্য হয়ে গেছে??আরেকটু যখন এগিয়ে গেলো তখন দেখলো সামির নামে ছেলেটা রাহিকে বিশ্রি হেসে উল্টাপাল্টা কিছু বলছে(প্রান্ত জানতো না তখন ছেলেটার সামির,বুঝার অর্থে দেয়া),ছেলেটা আউল ফাউল বকেই যাচ্ছে কিন্তু রাহি কিছু বলছে না দেখে প্রান্ত এগিয়ে আসবে ঝাড়ার জন্য তখুনি মিথিলার আওয়াজ শুনলো..মিথিলার বলা প্রত্যেকটা কথা তার অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেও,রাহি নিশ্চুপ থাকতে দেখে তাকে রাগে শেষ পর্যায়ে চলে গেছে সে।।

“অবুকের মতো চেয়ে না থেকে সেদিন যদি সে মুখ তুলে জবাব দিয়ে কয়েকটা কষিয়ে থাপ্পড় দিতো আজ এই কাল দেমখা লাগতো না তার,সে তামাশা দেখে চোখের জল ফেলছিলো” প্রান্তের ধারনা এটা,এইজন্য তার রাহির উপরে রাগ..সেদিন যদি দুজনকে ইচ্ছামতো ধুয়ে দিতো আজ এতো আকাল আসতো না।।

বর্তমান,
রাশনা রামিশার সাথে এইসব বিষয়ে আলোচনা করছিলো..রামিশাও আফসোস করছে যে রাহির সাথে ছোট বয়সে কি ঝড়টায় না গেছে..রামিশার বিয়ে খুব শান্তিমতো নির্বিঘ্নে কেটে গেলো..বিয়ে শেষে রেহেনা,প্রান্ত আর রাহিও বাড়ির পথে রওনা দিলো..সিদ্ধান্ত নিলো রাশনার এইচ.এস.সি এক্সামের আগ দিয়ে আকদ করিয়ে রাখা হবে..প্রান্ত যখনি এইভাবে বিদায় নেয় তখনি রাশনা কাদে,আজও ব্যাতিক্রম নয়..রাশনা যখন কাদতে আরম্ভ করলো তখন প্রান্ত তার ঠোট দিয়ে নিজের ঠোট আবদ্ধ করে শুষে নিতে লাগলো..তাদের রিলেশনে আজ প্রথম কিস..জড়িয়ে ধরেছিলো সেও প্রান্তকে।।

“তোর এরকম ভ্যা কান্দা বোরিং আর পুরোনো হয়ে গেছে,তাই নিউ টেস্ট দিলাম..আশা করি শুধু তুই না আমিও যেন এই বিচ্ছেদ আকদ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই স্বাদ মনে রাখতে পারি” প্রান্ত রাশনাকে ছেড়ে তার ঠোটে আবার টুপ করে কামড় দিয়ে বেরিয়ে যায়,রাশনাও লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়।।

লন্ডন,

“ইউ ডিড নট ডু দ্যা রাইট থিং মি.স্মিথ!!ইউ নো দ্যাট, আই ফাউন্ড মাই মীরা দেয়ার??দ্যান হাউ ডেয়ার ইউ টু কিপ ব্রিংগিং মি হেয়ার” ধ্রুভ চিল্লিয়ে তার ডাক্তারের উপর ক্ষেপেছে,সেদিন ডাক্তার স্মিথ এস ইঞ্জেকশন দিয়ে ধ্রুভকে নিয়ে গেছে..কিন্তু তিনি এখনো এইটা বুঝতে পারছেন না স্বপ্নে থাকা নারীর সাথে কারো হুবহু কিভাবে মিল হয়।।

ধ্রুভের মামা উনি ডাক্তার স্মিথ কে চিনেন,যখন ধ্রুভের পাগলামির কথা তিনি ফোন করে জানালেন তখুনি তিনি বিডিতে আসেন..কারন,তিনি একমাত্র দেখেছেন ধ্রুভ কেমন হয়ে যায় রাগলে..ধ্রুভ অনেক ভালো ছবি আকে,এতো সুন্দর আকে মনে হবে ছবির মাধ্যমে বাস্তবতা ঢেলে দিয়েছে..যখন সে স্বপ্নে অদৃশ্য নারী মীরা নামে যাকে সে দিয়েছে তাকে দেখে তখন ছবি আকার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু সে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছিলো,এমন কখনো তার সময় গেছে যে সাতদিন সে ছবি আকতে যেয়ে লাগিয়েছে সময়..ঘরে তার খাওয়া,গোসল..থাকে ত সে প্যালেসের মতো বাড়িতে, কোনকিছুর অভাব নেয় তার..তারপরেও সে সামান্য এক নারীর পিছনে কিভাবে ছুটে।।

ধ্রুভ যখন ছবি আকঁতে সক্ষম হলো দুই বছর আগে তখন একটাই ছবি আকতে পেরেছিলো আর পারে নি..ওই ছবিটায় সে বড় করে বাধিয়ে রেখেছে..যেখানে মেয়েটার লম্বা চুল ছেড়ে আছে,মাথায় তার কাঠগোলাপ ফুলের ক্রাউন,পরনে সাদা জামদানী শাড়ি..চোখে মোটা করে কাজল..বাম গালে পক্সের দাগের গর্ত আর ডান গালে কালো কুচকুচে তিল..গেজা দুইটা দাঁত বেরিয়ে আছে আর খিলখিল করে হাসছে..এমন ছবিতে তার রুপ যেন উপচে পরেছে..স্মিথকে ছবি দেখাতে চায় না ধ্রুভ,সে চায় না তার মীরাকে সে ছাড়া অন্য কেও দেখুক…একদিন ধ্রুভর যখনি পাগলামি বেড়ে যাচ্ছিলো তখন স্মিথ এসে তার শরীরের ইঞ্জেকশন পুশ করে, ঘুমের ঘোরে তাকে পাঠায়..ধ্রুভের রুমে কাওকে আসা নিষেধ কিন্তু সেদিন স্মিথ অনেক বুদ্ধি করে ধ্রুভের রুমে যেয়ে সেই ছবি দেখেছিলেন..অবাক হইছেন এই ভেবে বিদেশে থাকা ছেলে বাঙালী নারীর ছবি কিভাবে আকলো তাও আবার সামান্য স্বপ্নে আসা মেয়ে..তিনি আরও বেশি ঝটকা খেয়েছেন যখন তিনি রাহির ছবি দেখেছিলেন..ধ্রুভের পাগলাটে স্বভাবের জন্য তিনি দৌড়ে বিডিতে যেয়ে যখন শুনলো মীরার জন্য ধ্রুভের পাগলামি আবার নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে তখন উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন কাকে দেখে এরকম তার হাল??তখন রাশনা মেহেদী ফাংশনে তোলা ছবি দেখিয়েছিলো..রাহির ছবি দেখে তিনি ৪৪০ ঝটকা খেয়েছিলেন,কাওকে কিছু না জানিয়ে সোজা ধ্রুভকে সেন্সলেস করে লন্ডন ব্যাক করেন..তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো স্বপ্নে থাকা মানুষের সাথে এতো মিল পায় কিভাবে সে!!

“লিসেন ধ্রুভ!!তোমার দেখা স্বপ্নের নারীটির সাথে এই মেয়ের মিল নেয়,আমি তাকে দেখেছিই!!” স্মিথ ধ্রুভকে তটস্থ করে বললো।।

“আর ইউ জোকিং টু মি?” ধ্রুভ বলেই স্মিথের চেম্বারে থাকা কাচের টেবিল এক লাথিতে ভেঙ্গে ফেললো।।

“আমি আমার মীরাকে চিনতে ভুল করবো??কখনো না!!যার জন্য আমি সাতটা বছর আমার আহার নিদ্রা সব ত্যাগ করেছি তাকে চিনতে ভুল করবো??” ধ্রুভ আরও জোরে চিল্লিয়ে বললো।।

“রিল্যাক্স ধ্রুভ!!” স্মিথ বললো।।

“আমার ওকে চাই মানে চাই!!যেভাবে হোক চাই!!হয় জীবিত ভাবে আসবে আর না আসতে চাইলে মৃতভাবে!!সে আমার!!মাই মীরা অনলি বিলংস টু দিস আশরিক আলফাজ ধ্রুভ!!” এইটা বলে ঠোটের কোনে বাকা হাসি দিয়ে,জ্যাকেট হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরলো ধ্রুভ।।

চলবে?

Protected: গল্পঃ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: জোনাকির আলো

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: গল্প:জলপথের প্রেমে।

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

কাঠগোলাপ পর্ব ৬

0

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ছয়

?

সেদিন সারারাত রাহি নিজের রুমে ওইভাবে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে গেছে..রাতে এইসব ভাবতে ভাবতে রাহির মাঝরাতে কেমন করে কেপে উঠছিলো..দরজা বন্ধ থাকার কারনে কেও চাইলেও ডেকে উঠাতে পারে নি রাহিকে।।

সকালবেলা,

সূর্যের আলোর রশ্মিতে রাহি চোখে পরছে…রাহি আস্তে আস্তে চোখ খুলছে,সূর্যের আলো পরায় চোখমুখ কুচকে উঠছে বারবার..চোখ খুলে নিজেকে শাড়ি পরিধান অবস্থায় পাওয়া গেছে..হাতে তার শুকনো মেহেদী লেগে আছে..রাতের কথা ভাবতেই তার শুকনো বুকটা আবারো ধুক করে উঠছে..নিজেকে ফ্রেশ করলো বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হলো..মেহেদী লুকিয়ে যাওয়ার ফলে উঠাতে রাহির কষ্ট হচ্ছিলো..ভিজিয়ে রেখেছিলো হাত মিনিট ২০এর মতো..শাড়ি খুলে নিজেকে সালোয়ার-কামিজে আনলো রাহি..বাহিরে যাওয়ার সাহসটা কুলোচ্ছে না তার আর..দরজা নকের আওয়াজে রাহি ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলো রেহেনা ফুফির আওয়াজ পেলো যখন..ঝটপট যেয়ে দরজা খুলে দিলো।।

“কিরে তুই ঠিক আছিস??কাল রাতে কি পরিমান ভয় পেয়েছিলাম তুই জানিস??” রেহেনা রাহিকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো।।

রাহির চোখে জল জমে গেছে,রেহেনা তাকে শান্তনা দিচ্ছে বুকে নিয়ে..তারপর নানান কথা জানালো, কালকের ঘটনা যে ফুফি জানে সেটাও বললো..তারপর ধ্রুভের ব্যাপারে কাহিনী রেহেনা বলতে শুরু করলো

ধ্রুভ হলো উনার ননদ রিজিয়ার ননদের ছেলে..ধ্রুভের বাবা বছরখানেক আগে একটা অফিস মিটিং এ হার্ট এট্যাক করে মারা যায়,স্বামী হারার শোকে ধ্রুভের মা ও একসময় অতিরিক্ত টেনশনের কারনে শ্বাসকষ্টের রোগ বাধিয়ে ফেলে নিজের মধ্যে..ধ্রুভ ছোট থেকে একরোখা আর রাগী..যার ওর চায় যেকোন মূল্য চায়..ধ্রুভের ফ্যামিলি অনেক উচ্চবিত্ত হবার কারনে ধ্রুভের কখনো কোনকিছুর কমতি হয় নি..ধ্রুভকে ছোট থেকে বাইরের রেখেছিলো তার পিতা মরহুম আশরাফুল সাহেব..ছেলের এরকম স্বভাব নিয়ে তিনি বরাবরই চিন্তিত ছিলেন,তাই এই দেশ থেকে দূরে তাকে রেখেছিলো..ধ্রুভের ছোটভাই ছোটবেলাতে বন্ধ দরজায় আটকা পরে গেছিলো..লুকোচুরি খেলছিলো তার ছোট ভাইয়ের সাথে,তার ছোটভাই তার থেকে ৫বছরের ছোট ছিলো..সে তার ভাইকে মজার ছলে আটকে দিয়েছিলো যেন তাকে তার ভাই খুজে না পায়..কিন্তু ওই মুহূর্তে ধ্রুভের ভাই আয়ুশ শ্বাসকষ্ট উঠে গেছিলো বন্ধ থাকা অবস্থায়..রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়াই সেদিন আয়ুশের ডাক ধ্রুভের কানে যায় নি..ধ্রুভকে তখন তার বাবা কি কাজে ডেকেছিলো তার কাছে..ধ্রুভের মাথা থেকে এটা স্কিপ হয়ে গেছিলো যে তার ভাইকে সে খেলার ছলে রুমে লক করে আসছে…আধাঘন্টা পর যখন তার মনে হলো তার ভাইকে সে ঘরে আটকিয়ে রেখে আসছে তখন তাৎক্ষণিকভাবে দৌড়ে রুমের দরজা খুললো সে,দরজা খুলে দেখলো তার ভাই নিচে পরে আছে বেহুশ হয়ে..চিৎকার দিয়ে সবাইকে একসাথে ডেকে নিচে নামালো..আয়ুশ কে নিয়ে তখুনি সবাই হাসপাতাল গেলো..অক্সিজেনের অভাবে সেদিন আয়ুশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো..তখন থেকে ধ্রুভ মানসিকভাবে কেমন হয়ে যায়..তার বাবা মা তাকে কখনো দোষারোপ করেন নি কিন্তু ছেলে হারানোর শোকে তারা পাথর হয়ে গেছিলো..এদিকে ধ্রুভের অবস্থার ও অবন্তি ঘটছে,রাতের বেলা নিজেই চিল্লিয়ে কেদে উঠে।।

এরকম অবস্থা দেখে ধ্রুভকে সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গেলো তার বাবা মা..যত বড় হয়েছে ততই তার এই পাগলামিটা বাড়ছিলো,শেষে তারা শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলো ধ্রুভকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার…ধ্রুভ বাইরে যেয়েও একটা সাইকোলজিস্ট লোকের আন্ডারে ছিলো..তার এরকম পাগলাটে বিহেভিয়ার তখন শুরু হয় যখন তার মনে পরে তার ভাই চোখের সামনে কিভাবে খেলার ছলে মারা গেছে..তার ভাই মারা যাওয়ার কারন সে নিজেকে দোষারোপ করে..তার মাথা থেকে এই স্মৃতিটুকু মুছে দেয়ার জন্য তখন ডাক্তার একটা স্ট্রং ড্রাগ ধ্রুভের উপর এপ্লাই করে..ধ্রুভের উপর ওষুধটা কাজ করলেও নতুন একটা সমস্যা দেখা দিলো তা হলো সে যখনি ঘুমাতো স্বপ্নে এমন এক নারীকে দেখতো যে তার সামনে আসতো..ঘুম ভাঙলেই তখুনি মীরা মীরা বলে চিৎকার দিতো..স্বপ্নে দেখা ওই নারীটাকে ধ্রুভ নাম দিয়েছে মীরা..স্বপ্নে দেখা ওই নারীর প্রেমে সে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলো..ওই নারীকে সামনে আনার জন্য সে জিনের সঙ্গও নেয়..কিন্তু ফলাফল তাতে আরো বিগড়ে যায়..ধ্রুভের সাইকো ভাবটা সিরিয়াসে রুপান্তরিত হয়..কোন নারীর সংস্পর্শে না নিজে এসেছে, আর না কোন নারীকে আসতে দিয়েছে..বিগত সাত বছর ধরে সে জিনদের মাধ্যমে মীরা নামক অদৃশ্য নারীটাকে সামনে আনতো কিন্তু ব্যর্থতা শিকার হতো সে..নিজেকে কন্ট্রোল রাখার জন্য সে সব উপায় অবলম্বন করতো.. নিজের এমন সাইকো ভাবটা থাকলেও বিজনেসের ক্ষেত্রে তার মতো চালাক দুইটা নেয় লন্ডনে..কতশত ফন্দি এটেছে তাকে মেরে ফেলার কিন্তু সে সবসময় পার পেয়ে গেছে..তার মা যখন জানলো তার ছেলে জিন দের সাহায্য নিচ্ছে তখন ধ্রুভের শরীর ইমামকে দিয়ে বন্ধ করে দেয়..ধ্রুভের সবকিছু মুছে গেলেও মীরা নামের সেই অদৃশ্য নারীকে সে মুছতে পারে নি..আর মনেও হয় না কখনো মুছবে,কারন ওই মীরা নামক অদৃশ্য নারীকে সে বিগত সাত বছর ধরে বাস্তব ভেবে ভালোবেসে আসছে”

রাহি শুয়ে সবকথা শুনলো..তার মাথা ঘুরাচ্ছে যে কি একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে ছেলেটা গেছে।।

“প্রথমে তার ভাই,পরে বাবা তারপর মা সবাইকে হারিয়ে ধ্রুভ এক প্রকার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছিলো..যতক্ষন কোন মনোবিজ্ঞানী ডাক্তারের আন্ডারে থেকে মেডিসিন৷ নেয় ততক্ষন ভালো থাকে..তাকে এই মেডিসিন দেয়া হয় পুরোনো স্মৃতি মুছার জন্য কিন্তু স্বপ্নের ওই নারীকে তিনি মুছতে পারেন নি..কাল ওর মায়ের বার্ষিকী ছিলো এইজন্য দেশে আসছিলো,বিয়ে বা রিলেটিভের প্রতি তার কোন ইন্টারেস্ট দেখায় না..তোকে এরকম করার কারন আমি এখনো বুঝে উঠতে পারছি না..নিভ সেদিন যেয়ে না বললে বুঝতে পারতাম না আমরা” রেহেনা বললো।।

“ধ্রুভকে জোর করে এসে নিয়ে গেছে তার ডাক্তার..তিনি জানতেন ধ্রুভ পুরোনো কিছু দেখলে পাগলামি স্বভাব দেখাবে..আমরাও এইসব দেখে এক প্রকার শকে গেছিলাম..যে ধ্রুভর পাগলাটে স্বভাব অনেক ভয়ংকর” কিছুক্ষন থেমে রেহেনা বললো।।

রাহি শুয়ে এখনো ভাবছে যে সে নিজেও সাইকোলজির স্টুডেন্ট তার ত এটা মাথায় রাখা উচিত ছিলো যে মানুষ অতিরিক্ত প্রেশারের শিকার হইলে সব গুলিয়ে ফেলে..এবং বিভিন্ন উদ্ভট বিহেভিয়ার করে।।

সেইবারের মতো রাহি আরো একটা কথা জানতে পারলো যে রাশনা আর প্রান্তের সম্পর্কে..তারা বিগত তিন বছর ধরে সম্পর্কে আছে কিন্তু কাওকে জানায় নি তারা..প্রান্তের ইচ্ছা ছিলো রাশনার ভার্সিটিতে উঠলে একেবারে বিয়ের কথা বলবে কিন্ত রাশনা মুখ ফসকে আগেই সব ক্লিয়ার করে দিয়েছে..যার ফলে প্রান্তকেও স্বীকার করতে হয়েছে তাদের সম্পর্কটা।।

চলবে?

  • কাঠগোলাপ পর্ব ৫

    0

    কাঠগোলাপ?

    তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

    পর্ব পাঁচ

    ?

    “পরীপু কেমন করে ধ্রুভ ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরেছো??উঠো জলদি?” নিভ দূর থেকে দৌড়ে এসে বললো।।

    “ধ্রুভ কে?” রাহি নিজের শরীর ঝাড়তে ঝাড়তে উঠলো।।

    “আরে ধ্রুভ ভাইয়াকে চিনো না??উনি আমার ফুফাতো ভাই হয়..পারভীন ফুফির ছেলে” নিভ ঠোট উল্টে বললো।।

    “ওহ!”রাহি নিঃশব্দে বললো।।

    ” তুমি একটু ভাইয়ার কাছ থেকে দূরে থাকবে?”নিভ আস্তে করে রাহির কানের কাছে গিয়ে বললো।।

    “কেন?” রাহি ভ্রু কুচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।।

    “আসলে আপু মা ও আমাকে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে না করে তবুও আমি কথা বলি ভাইয়ার সাথে মাঝেমধ্যে ভিডিও কলে,আসলে ভাইয়া ত এখানে থাকে না..ভাইয়া ত থাকে লন্ডনে..বিয়েতে আসছে আর ধ্রুভ ভাইয়া অনেক রাগী,রাগ উঠেলে কেমন বিড়বিড় করে আর জিনিসপত্র ভাঙচুর করে” নিভ আস্তে করে বললো।।

    রাহি আর কথা বাড়ালো না,নিভের হাত ধরে ঘরের ভিতরে রওনা দিলো..যাওয়ার পথে নিভের মায়ের সাথেও দেখা হলো..বেশ রসিক মহিলা উনি..ভালো কথা বললেন..আমি নিভকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম গোসল করতে।।

    গোসল সেরে এসে হালকা রঙের একটা জামা পরে বের হয়ে গামছ নিয়ে চুল মুছছি,বারান্দার দিকে একটু এগোলে দেখলাম প্রান্ত ভাইয়া খুব আয়েশ করে তার কাজিনের সাথে এক কোনায় কথা বলছে..মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা চলছে তাদের মাঝে,প্রান্ত ভাইয়া কেমন আঙ্গুল নাচিয়ে নাচিয়ে বলছে কথাগুলো..আসলে প্রান্ত ভাইয়াও দেখতে সুন্দর ধবধবা ফর্সা মরহুম ফুফার মতো,চুল পাতলা হওয়ার কারনে সামনে এসে পরছে উনার চুলগুলো।।

    রাহি এতোক্ষন ওদের দেখছিলো,চোখ একটু সোজা করে তাকালে দেখলো সামনের বারান্দায় সকালের ছেলেটা দাড়িয়ে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে..তার চাহনিতে রাহির কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে..নিজের দিকে তাকালে দেখে ওড়না নাই,তার টনক নড়লো..আবার ছেলেটার দিকে তাকালে দেখে সে এখনো তাকিয়ে আছে..রাহি এক দৌড়ে রুমের ভিতরে যেয়ে ওড়না আগে নিলো।।

    আজকে নাকি বাড়িতে সঙ্গীত আর মেহেদী হবে বাড়িতে,তাই বাড়ির মেয়েরা সবাই সবুজ কালার সিলেক্ট করেছে..যে যাই পরুক কালার সবুজ হতে হবে..রাহি যাবে না ভাবছে কিন্তু নিভ সবুজ পাঞ্জাবি পরে এসে রাহিকে জোর করে পাঠালো রেডি হতে..ভাবছে সালোয়ার কামিজ ত সে পরে থাকেই যে কয়দিন অনুষ্ঠান হবে দেশি স্টাইলে শাড়ি পরবে শুধু।।

    সন্ধ্যাবেলা,

    বাড়িতে প্রচুর লাইটিং দেয়া হয়েছে যদিও বিয়ে দুইদিন বাদে কিন্ত বাড়ির পরিবেশ এখন থেকে ঝলমল করছে..রাহি কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পরেছে ফর্সা গায়ে কেমন যেন উপচে পরছে কালার টা..চুল খোপা করে সামনে কিছু ছেড়ে দিয়েছে..আর যেহেতু কাঠগোলাপ তার প্রিয় ফুল..সেটা দিয়ে খোপা সেট করে দিয়েছে সে..নথ তাইর বালি সিস্টেম যা সে সবসময় পরে..কানে সিম্পল দুল,টিপ তার ভাল্লাগেনা তাই পরে নি..আঙ্গুলে এনটিক আংটি পরেছে..এতোক্ষন নিভ বসে বসে রাহির এইসব দেখছিলো।।

    “সবুজ পরী!!আমি বড় হলে তোমাকে বিয়ে করবে কিন্তু” নিভ বললো।।

    “আচ্ছা তখন আমার দাঁত না উঠে গেলে হলো” রাহি হাসতে হাসতে বললো।।

    নিভ রাহির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো,চারপাশে কত মানুষ..অথচ কাওকে চেনে না সে..প্রান্তকে দেখলো সে তার কাজিন রাশনার সাথে আবার সকালের মতো চিপকে কি কথা বলছে..রাহি নিচে আসাতে প্রান্তর চোখগুলো তার দিকে গেলো,এক মুহূর্তের জন্য চোখ আটকে গেলেও তার আবার রাশনার দিকে তাকালো..রাশনাকেও সবুজ লেহেঙ্গাতে পরীর মতো লাগছে..রামিশার মেহেদী সবাই কত আনন্দ ফুর্তি করছে।।

    রাহিকে একজন মেহেদী আর্টিস্ট নিয়ে গেলো মেহেদী দেয়ার জন্য,রামিশা ডেকে পাঠিয়েছে তাকে..এখানে এসে রামিশার সাথে যদিও কথা হয় নি কিন্তু মেহেদী দিতে বসে অনেক কথা হলো..মনে হচ্ছিলো সে নতুন এখানে..কেমন মিশুক সব মেয়েরা এখানকার..এক ঘন্টার মধ্যে রাহির দুই হাতের উপর নিচ একদম কব্জি পর্যন্ত মেহেদী দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে..রাহি না করেছিলো অনেকবার এতো করে না দিতে কিন্তু রামিশার জন্য দিতে হলো..রাহি ওখানে বসে মেহেদী শুকাতে লাগলো।।

    রাশনা এসে মিউজিক চালু করে একটা ডান্স দিলো..রাহিকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু সে এইসব পছন্দ করে না তাই গেলো না…রাহির মেহেদী শুকানো হয়ে গেছে অলমোস্ট, সে শাড়ি সামলে উঠে মেহেদী উঠার জন্য নিজের ঘরের দিকে রওনা দিচ্ছে।।

    রাহি হাটতে হাটতে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিচ্ছে,লাইটিং এর কারনে পুরা বাড়ির লুক চেঞ্জ..হুট করে ঘরে যাওয়ার রাস্তার লাইট অফ হয়ে গেছে..রাহির হাতের কাছে ফোন নাই যে লাইট অন করবে..একটু একটু করে আগাচ্ছে,অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।।

    রাহিকে কে পিছন থেকে হ্যাচকা টান দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরলো..এরকম আকস্মিক আক্রমণে রাহি মুখ দিয়ে একটু মৃদু চিৎকার বের হলো..হালকা আলো শুধু ওই ব্যক্তির চোখে পরছে,চোখের রঙ ছিল ধূসর।।

    “হুসস!!ইটস মি মীরা” ছেলেটি অন্ধকারে ফিসফিস করে বললো,তার এমন করে ফিসফিসিয়ে বলাটা কেমন এই ভয়ংকর পরিবেশকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে..রাহির পিঠের উপর মনে হচ্ছে হালকা শীতল বাতাস বয়ে গেলো ছেলেটার এমন আওয়াজে কথা বলায়।।

    “দে..দেখুন!!আমি কোন মীরা খিরা না?আপনি ভুল মানুষকে ধরেছেন!!” রাহি উত্তর দিলো।।

    “উহুম!!(রাহির গলার স্মেল নিয়ে)আমি আমার মীরা কে চিনতে ভুল করতে পারি না?তুমি জানো?তোমাকে দেখার পর থেকে আমার মধ্যে কোনকিছু ঠিক নেই আর” ছেলেটা আরেকটু চেপে ধরে বললো কথাটা রাহিকে।।

    রাহি এই গরমের মধ্যেও ঠকঠক করে কাঁপছে,সামিরকে এতো কাছে আসা ত দূরে থাক কখনো হাত ধরতে দেয় নি..এই লোক কেমনে করে সাপের মতো পেচিয়ে জাপটে ধরেছে..দুই হাত দিয়ে ঠেললেও তার বলিষ্ঠ শরীর টা একটুও নড়াতে পারছে না।।

    লাইট চলে আসছে,এই আলোতে প্রথম আমি তাকে দেখলাম..তার চেহারা কি সুন্দর একটা মায়াভরা ভাব, তার ঠোট টা কেমন যেন জীর্ন দেখাচ্ছে..চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।।

    “ধ্রুভ ভাইয়া কি করছো??পরীকে ছাড়ো??” নিভ কোথা থেকে দৌড়ে এসে ধ্রুভকে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে..কিন্তু ধ্রুভ এক চুল সরছে না,সে এক ধ্যানে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে।।

    নিভ আসাতে রাহির মনে হচ্ছে এখন নিঃশব্দের কান্নাটা প্রবল বেগে ধারন করলো।।

    “মীরা তুমি কাদছো কেন??দেখো আমি তোমাকে হার্ট করছি কি বলো??মীরা তুমি প্লিজ কেদো না” এইভাবে ধ্রুভ রাহির চোখ মুখ মুছতে লাগলো,রাহির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো..এদিকে নিভ কি কি বলছে ধ্রুভ কে কিন্তু সে রাহির কান্না মুছতে ব্যস্ত..রাহি যখন দেখলো ধ্রুভের হাত আলগা তখন সর্বশক্তি দিয়ে ধ্রুভকে এক ধাক্কা দিলো,ধ্রুভ কিছুটা সরে ছিটকে পরলেও থামিয়ে দিলো..আবার রাহির দিকে এগোলে রাহি এক দৌড়ে নিজের ঘরে যেয়ে দরজা লাগালো..এদিকে ধ্রুভ ও তার পিছনে দৌড় দিলো..দরজার কাছে যেয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।।

    “মীরা দরজা খুলো??এইভাবে দরজা বন্ধ করে কেন আছো মীরা??ভালো হবে না বলছি??” এরকম নানান কথা ধ্রুভ বলে যাচ্ছে।।

    রাহি ত ঘরের দরজা লাগিয়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাপছে,দরজা মনে হচ্ছে ভেঙ্গে যাবে..অনেক্ষন এরকম ধস্তাধস্তি চলার পর,এক সময় বন্ধ হয়ে গেলো..রাহি ওইভাবে গুটিসুটি মেরে বিছানার চাদর ধরে বসে রইলো।।

    চলবে?

    গঠমূলক কমেন্ট করুন যাতে আমি নেক্সট পার্ট দ্রুতভাবে দিতে পারি,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

    কাঠগোলাপ পর্ব ৪

    0

    কাঠগোলাপ?

    তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

    পর্ব চার

    ?

    ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো গাড়ি ছাড়া তাদের..রেহেনা ভাবলো মাঝরাস্তায় কিছু খেয়ে নেয়া ভালো, উনি আবার ভাত আর মুরগী করে নিয়ে এসেছেন সাথে।।

    “প্রান্ত সাইডে গাড়ি থামা খেয়ে নে?” রেহেনা বললো।।

    “তুমি খাবার এনেছো আগে বলবা না?আমি কখনো থেকে গাড়ি চালাচ্ছি,খিদেই পেট চৌ চৌ করছে” প্রান্ত গাড়ি থামিয়ে বললো।।

    “রাহি মা?উঠ,খেয়ে নে..রাস্তা এখনো অনেক বাকি!!” রেহেনা পিছন ফিরে রাহি কে ডাকছে।।

    “নাহ ফুফি!!খেলে বমি কন্ট্রোল আর হবে না..এমনিতে বদ্ধ কিছুতে জার্নি করলে আমার অনেক বমি হয়,আর বাসা থেকে আজ আসার সময় বমির ট্যাবলেট খেয়ে বের হয়েছি তারপরেও এখন লাগতাছে..এখন যদি সে খায় কোনকিছু বমি করে ভাসিয়ে দিবে গাড়ি” রাহি চোখ বন্ধ করে জানালো।।

    “না মা দিও না খেতে!!আমার সাধের গাড়িতে বমি করে নষ্ট করে ফেলবে!!” প্রান্ত দ্রুতভাবে বললো।।

    “এই চুপ!!বেশি বকিস তুই?!” রেহেনা এক ধমক দিলো প্রান্তকে।।

    “ফুফি?আমি সত্যি খাবো না,আমাদ জার্নিতে খেলে খুব প্রব হয়..তোমরা খাও??” রাহি কথাগুলো বলে আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।।

    রেহেনা আর কি করবে..প্রান্তকে নিয়ে খেয়ে নিলো,গাড়ি এক সাইডে করে..মিনিট বিশেক পর গাড়ি আবারো চলছে আপন গতিতে.. প্রান্ত আড়চোখে মাঝেমধ্যে রাহির দিকে তাকাচ্ছে..হালকা সূর্যাস্তের আলোতে রাহির হলদেটে ফর্সা গাল কেমন চকচক করছে।।

    “প্রান্ত ভুলে যাস না সে তোর কাজিন হয়??আর এরকম বোরিং মেয়ের দিকে ভুলেও নজর দিস না যে সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে..চোখ ফিরা..আর তোর আর ওর সম্পর্ক দা-কুমড়ার থেকে খারাপ..কিন্তু ও এতো সুন্দর কেন?” প্রান্ত আপনমনে বিড়বিড় করছে।।

    ঘন্টা তিনেক পর তারা পৌশালি পুর গ্রামে,সন্ধ্যাও হয়ে গেছে..চারিদিক ঝি ঝি পোকাতে ডাকছে..গাড়িটা কোনরকমে পার্ক করে প্রান্ত নেমে আসলো..রাহি নিজের ব্যাগ নিজে ধরে আছে,প্রান্ত উঠানোর আগেই সে নিজে উঠিয়ে চলে আসে।।

    “অলওয়েজ একরোখা” প্রান্ত নাক ফুলিয়ে বললো।।

    প্রান্ত তার আর তার মায়ের ব্যাগ নিয়ে সামনে হাটা দিলো,রেহেনা আর রাহি একসাথে হাটছে..চারপাশে দেখে কিছু লোক দেখে মনে হলো কাজ থেকে বাড়িতে ফিরছে তারা।।

    কলিংবেল বাজাতে একটা ১৮বছর বয়সী এক মেয়ে দরজা খুলোলো..দরজা খুলেই একটা চাপা চিৎকার।।

    “প্রান্ত তুমি??” মেয়েটি বললো।।

    পিছনে যেয়ে রেহেনা আর রাহি আছে বেচারি মনে হয় দেখে নি..প্রান্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।।

    “রাশনা?প্লিজ সাইড হ?আমি অনেক ক্লান্ত” মেয়েটিকে সাইড করে প্রান্ত হনহন করে ভেতরে চলে গেলো।।

    রেহেনা ফুফিকে সালাম দিলো মেয়েটি তারপর রাহির দিকে এক নজর তাকালো..নজরের পর্ব শেষ হলে তার রেহেনা ফুফি কে নিয়ে সে ভিতরে গেলো।।

    রাহি ভিতরে ঢুকে দেখলো গ্রামের বাড়ি হলেও বাড়ির ভিতর সাজ সজ্জায় ভরপুর.. হয়তো এই বাড়ির প্রথম মেয়ের বিয়ে বলে কথা..আস্তে আস্তে গুটিকয়েক পায়ে সে ভিতরে প্রবেশ করছে..সে দেখলো রেহেনা ফুফির মতো এক মহিলা এসে ফুপি কে সালাম দিলো..কথার ধরন দেখে যা মনে হলো ইনিই ফুফির ননদ।।

    “কেমন আছো রাহি মা?” রিজিয়া জিজ্ঞেস করলো।।

    এইভাবে নানান কুশলাদি আদায় হতে লাগলো দুই ফ্যামিলি,আর প্রান্ত ভাইয়া সোফায় চিত হয়ে শুয়ে পরেছে..রাহি এক নজর তাকিয়ে,আবারো তাদের কথার মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।।

    রাহিকে দেয়া হলো একটা ঘর সেখানে বাড়ির কর্নারে আছে..মোটমুটি ঘরটা পরিপাটি.. রাহি ব্যাগ থেকে নিজের হলুদ সালোয়ার কামিজ বের করে,ফ্রেশ হতে চললো..রাহি যখন ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসলো তখন দেখলো ঘরে আতরের সুবাস মন মাতানো..ঘরে হুট করে আতরের সুবাস??রাহি ঘর থেকে বের হয়ে গেলো,অন্যের বাড়ি বেশিকিছু ভেবে কি হবে..ঘর থেকে বের হয়ে ডাইনিং গেলো সে,রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিলো সে..ভাগ্যিস সামনে প্রান্ত ফোনে কথা বলছিলো ওর পিছু পিছু সে এসেছে।।

    ডাইনিং এ বসে সবাই যে যার মতো খাচ্ছিলো..খাবারের আইটেম ও অনেক..বাড়ির লোকের কথা শুনে মনে হলো কালকে থেকে মেহমান আসা শুরু হবে..ঘর ভর্তি মানুষে গিজগিজ করবে।।

    “মা?তোমার ভাতিজিকে বলে দিও এলোকেশী কন্যা সেজে এখানে এসেও যেন শোক পালন না করে জানালার কাছে বসে??প্রান্ত তার মাকে বললো।।

    ” চুপ তুই” রেহেনা বললো ফিসফিস করে।।

    রাহি সব শুনতে পেয়েছে কিছুই বললো না..এই লোক যে তাকে দেখতে পারে না সেটা তার কাছে অজানা না..তাই তার বলা কথাগুলো গায়ে মাখিয়ে লাভ নেই।।

    সেদিনের মতো খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে যে যার ঘরে চলে গেছিলো..রাহিও নিজের রুমে যেয়ে, বিছানায় যেয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুম দিলো..নতুন জায়গাতে ঘুম আসতে দেরী হচ্ছিলো তার..ঘন্টা দুয়েকের মাঝে সে ঘুমিয়ে গেছে।।

    সকালবেলা,

    সকাল ৮টায় রাহির ঘুম ভাঙলো বাবার কলে..এতোক্ষন ঘুমিয়েছে সে,ভাবতে মাথা চক্কর দিচ্ছে..বাবার সাথে টুকিটাকি কথা সেরে,ফ্রেশ হয়ে নিলো..রাতের জামা চেঞ্জ করে সাদা জামা পরে নিলো..ধুতি পায়জামা,সালোয়ার কামিজ..নিচে এসে দেখলো সবার অলমোস্ট নাস্তা খাওয়া শেষে..কি একটা বেশরম পরিস্থিতি..রাহিকে দেখে রেহেনা এগিয়ে এসে নাস্তার প্লেট দিলো..সোফায় বসে নাস্তাটুকু খেয়ে রাহি রুমের দিকে যাবে,তার আগে একটা পিচ্চি ছেলে হাত ধরে টানলো।।

    “এই সুন্দরী পরি?আমার সাথে খেলবা?” ছেলেটা বললো।।

    “ছেলেটার বয়স খুব করে ৪-৫ হবে?তোমার নাম কি?” রাহি মুচকি হেসে হাটু গেড়ে বসে ছেলেটার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বললো।।

    “আমার নাম নিভ!!বলো না পরী তুমি খেলবা আমার সাথে?” নিভ বললো।।

    “আচ্ছা?আমাকে পরি মনে হয় কি দেখে তা শুনি?আমার ত ডানাও নেয়?” রাহি নিজের ঠোট উল্টিয়ে বললো।।

    “তোমার মতো সুন্দর আমি দেখি নাই এইজন্য!!আর মা বলে যে সুন্দর সবচেয়ে বেশি সে পরি হয়??আমার কাছে তুমি পরী” নিভ বললো কুটিকুটি দাত দিয়ে।।

    “আচ্ছা?চলো কি খেলবে??আমি ত এখানকার কিছু চিনি না??আমি ত মেহমান পিচ্চি?” রাহি উঠে দাড়িয়ে বললো।।

    “তুমি চলো ত আগে?” নিভ বলে রাহির হাত ধরে হাত টানতে টানতে নিয়ে গেলো।।

    নিভ যেখানে নিয়ে গেলো সেখানে একটা ছোট বাগান আছে,সেখানে হরেক রকম ফুলে ভরা..নিভের সাথে আরো তার বয়সী কয়েকটা বাচ্চা খেলছে,সেখানে যেয়ে রাহি কি খেলবে ওদের সাথে বুঝতে পারছে না..তারা দেখি ছোটাছুটি খেলছে,দেখতে তাদের ভালোই লাগছে এক প্রকার।।

    রাহির নজর গেলো বাগানের এক পাশে একটা ফুলের উপর..ফুল টা তার পছন্দের খুব..কাঠগোলাপ কি সুন্দর গুচ্ছ হয়ে এক জায়গাতে আছে অনেকগুলো,রাহি হাত দিয়ে একবার ছুয়ে দিলো।।

    এইভাবে তাদের সাথে রাহিও খেলতে লেগে পরেছে..এরই মাঝে নিভ কাঠগোলাপের একটা ক্রাউন করে রাহির মাথায় পরিয়ে দিলো,আশেপাশে যারা ছিলো সবাই এই বাচ্চার কাজ দেখে হেসে দিছিলো..আমিও অবাক হয়েছি নিভের এরকম কাজ দেখে..নিভ হলো রিজিয়া ফুফির দেবরের ছেলে,তারাও বিয়ে খেতে এসেছে।।

    “পরী তুমি ছুটো আমি তোমাকে ধরি?” নিভ বললো।।

    “আচ্ছা?পরে গিয়ে ব্যাথা পেলে?” রাহি বললো।।

    “আমি প্রতিদিন হরলিক্স আর দুধ খাই?আর আমি মাম্মা’স স্ট্রং বয়,কিছু হবে না তুমি যাও” নিভ বললো কোমরে হাত দিয়ে।।

    রাহি নিভের এরকম কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে..এমনিতে রোদে তাদের সাথে খেলতে যেয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার,রাহি আবার ছুট দিলো..মাথায় তার এখনো কাঠগোলাপের ক্রাউন।।

    দৌড়াতে দৌড়াতে সে এক পর্যায়ে বাড়ির লম্বা রাস্তায় চলে আসছে..পিছন ফিরে নিভ কে দেখতে যেয়ে রাহি খেলো এক ধাক্কা,ধাক্কা খাওয়ার ফলে সে নিচে পরে গেছে।।

    রাহি চোখ তুলে তাকালে দেখে একটা পুরুষ তার সামনে..ঠিক পুরুষ না সুদর্শন পুরুষ..উজ্জল শ্যামলা গায়ের রঙ,ফর্সাই কিন্তু খুব দুধে আলতা তা না চাপা ফর্সা এইজন্য উজ্জল শ্যামলা..চাপ দাড়ি,চুলগুলো ভীষন ঘন হওয়ার কারনে উপরের দিকে তুলে রেখেছে… আর সবচেয়ে যা আর্কষণীয় যা ছেলেটার মধ্যে তার ধূসর চোখের মনি…গায়ে তার জিম করা বডিতে পার্ফেক্ট টি-শার্ট, থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পরে আছে..দেখতে মাশাল্লাহ একজন সুদর্শন পুরুষ(লেখিকার ডেসক্রিপশন)।।

    রাহি ঘেমে যাওয়ার কারনে গলাতে তার চুলগুলো কেমনভাবে লেপ্টে আছে..কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম..দৌড়াবার কারনে শ্বাস ওঠানামা হচ্ছে তার..ছেলেটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে,রাহির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে লম্বার নিঃশ্বাস নিলো।।

    “মীরা!!” ছেলেটা বিড়বিড় করে বলে হালকা হেসে ওই জায়গা প্রস্থান করলো।।

    রাহির খেয়াল হলো নিচে পরে যাওয়ার কারনে ওড়নাটাও সরে গেছে কোন ফাকে নিচে পরে গেছে সে বুঝতে পারে নি..ছেলেটা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে চলে গেলো।।

    চলবে?

    কেমন লাগছে জানাবেন??গঠনমুলক কমেন্ট করবেন যেন আমি উৎসাহিত হয়ে পরের পর্ব দেয়ার জন্য আরোবেশি উত্তেজিত থাকি,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

    কাঠগোলাপ পর্ব ৩

    0

    কাঠগোলাপ?

    তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

    পর্ব তিন

    ?

    প্রান্ত তার মায়ের ঘরে শুয়ে বিছানায় মোবাইল টিপছে আর রেহেনা টিভি দেখছে..ওই সময় রেহেনার ফোনে কল আসে।।

    রেহেনা ফোনটা দেখে ঠোটের কোনে হাসিটা আরেকটু টেনে ধরলো,ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ফোন রিসিভ করলো।।

    “ভাইআসসালামুলাইকুম…কেমন আছো তোমরা?” রেহেনা জিজ্ঞেস করলো।।

    “………..”

    “হ্যা আমরা ভালো আছি তা আমার ননদ রিনি কই??নাকি তোমাকে দিয়ে সব বলাচ্ছে??” রেহেনা বললো।।

    “……….”

    “কেমন আছিস তুই??ভাবীকে ভুলে গেছিস??” রেহেনা অভিমান সুরে বললো।।

    এই নিয়ে রেহেনার আর তার ননদ রিজিয়া নানান কথায় মেতে থাকলো গল্প করতে..এদিকে প্রান্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে, তার মায়ের হুশ থাকে না..সে আবারো তার ফোনে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।।

    আধাঘন্টা কথা বলার পর রেহেনা ফোন কাটলো..প্রান্ত ফোন রেখে উঠে বসলো নিজের জায়গাতে।।

    “ফুপি ফোন করেছিলো??” প্রান্ত জিজ্ঞেস করলো।।

    “হুমম..তোর ফুফাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে,তাই দশদিন আগে থেকে দাওয়াত দিলো” রেহেনা জানালো প্রান্তকে।।

    “দশদিন??এতো আগে যেয়ে কি হবে??আর রাশনার বিয়ে এতো আগে ঠিক??কিভাবে??” প্রান্ত অবাক হয়ে বললো।।

    “আরে রাশনার বিয়ে কেন ঠিক হবে??তার আগে ওর বড় বোন রামিশার বিয়ে ত দিতে হবে??রামিশার বিয়ে ঠিক হয়েছে”প্রান্তর মাথায় গাট্টা মেরে বললো রেহেনা।।

    ” আউচ!!তাই বলো…কিন্তু দশদিন আগে ছুটি নেয়া একদমই পসিবল না..৭দিন নিতে পারবো না কিনা তাও জানি না?”প্রান্ত মাথার চুল ঠিক করতে করতে বললো।।

    “সে আমি জানি না??আমি আর রাহি চলে যাবো আগে?” রেহেনা বললো।।

    “ওয়েট এ সেকেন্ড?রাহি?ও কিজন্য যাবে??ওই কি আমাদের ফ্যামিলির কেও??” প্রান্ত মুখ ঘুরিয়ে বললো।।

    “তোর কেও না লাগুক রাহি আমার একমাত্র ভাতিজি?আর ওরে নিয়া আমার কোথাও ঘুরা হয় নি,মা মরা মেয়ে সারাদিন মন মরা হয়ে পরে থাকে..ঘুরিয়ে আসবো ভাইকে বলে” রেহেনা বললো।।

    মা মরা মেয়ে রাহির কথা শুনতেই বুকটা ধুক করে উঠলো প্রান্তের।।

    “আচ্ছা যেয়ো?আমি এতোদিন আগে ছুটি নিতে পারবো না..বিয়ের ২-৩দিন আগে গেলেই হলো?” প্রান্ত বললো।।

    “ভুলেও না??বিয়ের পাঁচদিন আগে যাবো আমি!!আমি একমাত্র ননদের বাচ্চার বিয়ে!!তুই না যাস,আমি আর রাহি চলে যাবো ট্রেনে করে” রেহেনা দাড়িয়ে বললো।।

    “যার বিয়ে তার ধুম নাই পাড়া পড়শিদের চোখে ঘুম নাই” প্রান্ত বিড়বিড় করে বলে বেরিয়ে পরলো।।

    রেহেনা গেলো রাহিদের বাসায়..যেয়ে দেখলো বাবা মেয়ে একসাথে খেতে বসেছে…রাহি উঠে যেতে গেলে,রেহেনা তার নিষেধ করে.. নিজে যেয়ে ওখানে বসে পরলো..রাহি ভাত খুলার জন্য প্লেট নিলে রেহেনা জানালো সে খেয়েই এসেছে..কোনমতে গ্লাসে পানি ঢাললো রেহেনা..রুবেলকে রেহেনা তার ননদের বিয়ের আর বাকি পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কথা জানালো।।

    “ভাই আমি রাহিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি??আসলে এখানে আসার পর ও ভার্সিটি ছাড়া কোথাও যায় না,আর আমিও যায় না কোথাও যে সাথে করে নিয়ে যাবো??সারাদিন একলা গুমোট মেরে বসে থাকে ঘরে??” রেহেনা জানালো।।

    “যেতে চাস আম্মা??কয়টা দিন ঘুরে আসো??আমার ট্রেনিং পরেছে ঢাকায়,নইত আমি আসতাম তোমাদের সাথে..তোমাকে এখানে একা রেখে যেতেও সংকোচ লাগছিলো” রুবেল রাহিকে জিজ্ঞেস করলো।।

    রাহি তার বাবাকে ছেড়ে কখনো কোনদিন একটা দিন কাটায় নি..আর ফুফুকে না করতেও পারছে না,তার জন্য বাবা তার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে..না তার জন্য বাবাকে আর কষ্ট পেতে দিবে না,তার বাবা যা চাইবে তাই হবে।।

    “আচ্ছা বাবা?তুমি যা বলবা তাই?” রাহি নিচু শব্দে জানালো।।

    “তোর যদি মন না চায় যাস না,তোর প্রায়োরিটি আগে আমার কাছদ” রুবেল বললো।।

    “না বাবা ঘুরে আসি?ঘরে সারাদিন একা থাকা হয়?আর ফুফি ত আছেই সাথে” রাহি জানালো।।

    “তাহলে ত হয়েই গেলো?তুই প্যাকিং শুরু করে দে??কাল না হয় মা মেয়ে মিলে শপিং এ যেয়ে জামা কিনে আসবো?” রেহেনা দাড়িয়ে বললো।।

    “না ফুফি,বাবা আমাকে এমনিতে অনেক জামা কিনে দেয়” রাহি বললো।।

    রেহেনা রাহির মাথায় মুচকি হেসে হাত বুলিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।।

    বেশ কয়েকদিন পর,

    “এই রাহি??কই তুই??তোর ফুফি আর প্রান্ত নিচে ওয়েট করছে মা??জলদি আয়” রুবেল চিল্লিয়ে ডাকছে রাহিকে।।

    রাহি এদিকে নার্ভাস ফিল করছে,অনেকদিন পর কোথাও বের হচ্ছে তার বাবাকে ছাড়া..যথাসম্ভব নিজেকে পরিপাটি করে নিলো..ফুফি এমনিতেও পরের দিন জোর করে শপিং এ গিয়ে কয়েকটা জামা আর জুতা কিনে দিয়েছিলো আবার বাবাও কিনে নিয়ে আসছে..বাবা আমার টেস্ট বুঝে তাই জামা গুলো পছন্দ হয়েছে কিন্তু ফুফি বেশি ভারী কাজ ওয়ালা জামা কিনে দিয়েছে সাথে শাড়িও..কি আর করা সবগুলোকে প্যাক করে নিয়েছি..রাহি ব্যাগ নিয়ে বের হলে,রুবেল তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ নিয়ে নিলো..বাবা মেয়ে মিলে দুজন একসাথে নামলো।।

    “মেয়ে মানুষের সাজে এতোবেশি ক্যান সময় লাগে আজ বুঝলাম!!গরম লাগে মা,ওরে নিয়ে যাওয়া কি খুব জরুরি?” প্রান্ত রেগে ওর মাকে বললো।।

    তখুনি রুবেল আর রাহি উপস্থিত, প্রান্তকে কিছু বলতে যাবে রেহেনা তার আগেই তাদের দেখে তিনি প্রান্তকে দাত কটমট করে ইশারায় চুপ করতে বললেন।।

    “মাশাল্লাহহ!!আমার পরি মা” রেহেনা এগিয়ে এসে রাহির থুতনী ধরে চুমু দিলো।।

    রাহির দিকে তাকিয়ে প্রান্তের বুকের উপর দিয়ে হালকা হিম শীতল বাতাস বয়ে গেলো..রাহির পরনের ছিলো সাদা জামা,চুল খোপা করে মাথায় ওড়না..চোখ ভর্তি কাজল ছাড়া আর কোন সাজগোছ নেয়..গালের বাম পাশে পক্সের দাগটা একদম হাইলাইটারের মতো চকচক করছে,আর ডান পাশের কালো কুচকুচে তিলটাও মনে হচ্ছে উকি মারছে..হালকা চকলেট কালার ঠোটটা মনে হচ্ছে শুকনো মরুভূমি, একটু পরপর ঠোটটাকে ভিজিয়ে নিচ্ছে রাহি..এইটা দেখে প্রান্ত চোখ সরিয়ে নিলো।।

    প্রান্তকেও কম লাগছে না..পরনে ক্রিম কালার পাঞ্জাবি আর পায়জামা..চুল স্পাইক করা,হাতে ঘড়ি..চোখের কালোমনি সূর্যের আলোতে মনে হচ্ছে চিকচিক করছে।।

    রেহেনা তাড়া দিলো সবাইকে গাড়িতে উঠার জন্য নইত পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে ওইদিকে গ্রামের দিক..ডাকাতের আশংকা বেশি..রুবেল রাহির মাথায় চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠালো,রাহিও বাবাকে একবার জাপটে ধরলো।।

    “আমাকে ছাড়া ও কখনো থাকে নি??প্লিজ একটু খেয়াল রাখিস আমার পুতুলের??জানি না ও কিজন্য এতো চেঞ্জ আর এতো টেন্স থাকে??আশা করি এই ভ্রমনে তার সব গ্লানি মুছে যাবে” রুবেল রেহেনাকে বললো।।

    “চিন্তা করিও না ভাই!!আমি ওর মা ই,আমার মেয়ের যত্ন নিব!!ফি আমানিল্লাহ্! ” রেহেনা বলে গাড়িতে উঠে পরলো।।

    রুবেল ও সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজের যাওয়ার টিকেট কাটতে লাগলো।।

    গাড়ি চলছে আপন গতিতে.. প্রান্ত সামনে তার পাশে রেহেনা,পিছনে একা রাহি বসে আছে,গাড়ির জানালা খুলে..শেষ যখন তার শহর ছেড়ে ছিলো তখন রাহি বাসে থেকে দেখেছিলো সামির আর মিথিলাকে বাইকে উঠে ঘুরাঘুরি করতে..তারা অনেক হাসাহাসি করছিলো..তাদের দেখে রাহি মুখটা ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলো..বাবা সাথে থাকায় চিল্লিয়ে কাদতে পারে নি..নিঃশব্দে ডুকরে কেদে উঠেছিলো,ভিতর ভিতর তাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলেছিলো..তাদের সেদিনে চুমুর সাদৃশ্য মনে পরলেই বুকটা ধক করে উঠে..মানুষ চলে যায় ঠিকই কিন্তু স্মৃতি রেখে যায় অনেক..স্মৃতি গুলো যা পোড়ায় অনেক,বুকের বা পাশটা কেমন অসহ্য চিনচিন ব্যাথা করে..যদি এই ব্যাথা মরন নিয়ে নিতো তাও হতো!!!

    “তুমি অন্যকারোর সঙ্গে বেধো ঘর” রাহি চোখের জলের কোনাটা মুছে,বাহিরে দিকে তাকালো।।

    প্রান্ত অনেকক্ষন যাবত দেখছে রাহি জানালার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে,চোখে তার অনেক কথা কিন্তু মুখে নেয়।।

    “এখানেও এসে জানালা খুলে শোক পালন করা যাবে না বলে তোমার ভাগ্নিকে মা” প্রান্ত চোখ মুখ শক্ত করে বললো রেহেনা কে।।

    “ফুফি আমি একটু ঘুমাবো?বাড়তি নয়েজ যেন না হয়” এই বলে রাহি চোখ বন্ধ করলো।।

    প্রান্ত রাহির এমন কথা শুনে নিজের কান লাল করে ফেললো..কিছু বলতে যাবে তার আগে রেহেনা প্রান্তের হাত চেপে ধরে যেন কিছু না বলে।।

    চলবে?