কাঠগোলাপ পর্ব ৩

0
2392

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব তিন

?

প্রান্ত তার মায়ের ঘরে শুয়ে বিছানায় মোবাইল টিপছে আর রেহেনা টিভি দেখছে..ওই সময় রেহেনার ফোনে কল আসে।।

রেহেনা ফোনটা দেখে ঠোটের কোনে হাসিটা আরেকটু টেনে ধরলো,ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ফোন রিসিভ করলো।।

“ভাইআসসালামুলাইকুম…কেমন আছো তোমরা?” রেহেনা জিজ্ঞেস করলো।।

“………..”

“হ্যা আমরা ভালো আছি তা আমার ননদ রিনি কই??নাকি তোমাকে দিয়ে সব বলাচ্ছে??” রেহেনা বললো।।

“……….”

“কেমন আছিস তুই??ভাবীকে ভুলে গেছিস??” রেহেনা অভিমান সুরে বললো।।

এই নিয়ে রেহেনার আর তার ননদ রিজিয়া নানান কথায় মেতে থাকলো গল্প করতে..এদিকে প্রান্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে, তার মায়ের হুশ থাকে না..সে আবারো তার ফোনে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।।

আধাঘন্টা কথা বলার পর রেহেনা ফোন কাটলো..প্রান্ত ফোন রেখে উঠে বসলো নিজের জায়গাতে।।

“ফুপি ফোন করেছিলো??” প্রান্ত জিজ্ঞেস করলো।।

“হুমম..তোর ফুফাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে,তাই দশদিন আগে থেকে দাওয়াত দিলো” রেহেনা জানালো প্রান্তকে।।

“দশদিন??এতো আগে যেয়ে কি হবে??আর রাশনার বিয়ে এতো আগে ঠিক??কিভাবে??” প্রান্ত অবাক হয়ে বললো।।

“আরে রাশনার বিয়ে কেন ঠিক হবে??তার আগে ওর বড় বোন রামিশার বিয়ে ত দিতে হবে??রামিশার বিয়ে ঠিক হয়েছে”প্রান্তর মাথায় গাট্টা মেরে বললো রেহেনা।।

” আউচ!!তাই বলো…কিন্তু দশদিন আগে ছুটি নেয়া একদমই পসিবল না..৭দিন নিতে পারবো না কিনা তাও জানি না?”প্রান্ত মাথার চুল ঠিক করতে করতে বললো।।

“সে আমি জানি না??আমি আর রাহি চলে যাবো আগে?” রেহেনা বললো।।

“ওয়েট এ সেকেন্ড?রাহি?ও কিজন্য যাবে??ওই কি আমাদের ফ্যামিলির কেও??” প্রান্ত মুখ ঘুরিয়ে বললো।।

“তোর কেও না লাগুক রাহি আমার একমাত্র ভাতিজি?আর ওরে নিয়া আমার কোথাও ঘুরা হয় নি,মা মরা মেয়ে সারাদিন মন মরা হয়ে পরে থাকে..ঘুরিয়ে আসবো ভাইকে বলে” রেহেনা বললো।।

মা মরা মেয়ে রাহির কথা শুনতেই বুকটা ধুক করে উঠলো প্রান্তের।।

“আচ্ছা যেয়ো?আমি এতোদিন আগে ছুটি নিতে পারবো না..বিয়ের ২-৩দিন আগে গেলেই হলো?” প্রান্ত বললো।।

“ভুলেও না??বিয়ের পাঁচদিন আগে যাবো আমি!!আমি একমাত্র ননদের বাচ্চার বিয়ে!!তুই না যাস,আমি আর রাহি চলে যাবো ট্রেনে করে” রেহেনা দাড়িয়ে বললো।।

“যার বিয়ে তার ধুম নাই পাড়া পড়শিদের চোখে ঘুম নাই” প্রান্ত বিড়বিড় করে বলে বেরিয়ে পরলো।।

রেহেনা গেলো রাহিদের বাসায়..যেয়ে দেখলো বাবা মেয়ে একসাথে খেতে বসেছে…রাহি উঠে যেতে গেলে,রেহেনা তার নিষেধ করে.. নিজে যেয়ে ওখানে বসে পরলো..রাহি ভাত খুলার জন্য প্লেট নিলে রেহেনা জানালো সে খেয়েই এসেছে..কোনমতে গ্লাসে পানি ঢাললো রেহেনা..রুবেলকে রেহেনা তার ননদের বিয়ের আর বাকি পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কথা জানালো।।

“ভাই আমি রাহিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি??আসলে এখানে আসার পর ও ভার্সিটি ছাড়া কোথাও যায় না,আর আমিও যায় না কোথাও যে সাথে করে নিয়ে যাবো??সারাদিন একলা গুমোট মেরে বসে থাকে ঘরে??” রেহেনা জানালো।।

“যেতে চাস আম্মা??কয়টা দিন ঘুরে আসো??আমার ট্রেনিং পরেছে ঢাকায়,নইত আমি আসতাম তোমাদের সাথে..তোমাকে এখানে একা রেখে যেতেও সংকোচ লাগছিলো” রুবেল রাহিকে জিজ্ঞেস করলো।।

রাহি তার বাবাকে ছেড়ে কখনো কোনদিন একটা দিন কাটায় নি..আর ফুফুকে না করতেও পারছে না,তার জন্য বাবা তার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে..না তার জন্য বাবাকে আর কষ্ট পেতে দিবে না,তার বাবা যা চাইবে তাই হবে।।

“আচ্ছা বাবা?তুমি যা বলবা তাই?” রাহি নিচু শব্দে জানালো।।

“তোর যদি মন না চায় যাস না,তোর প্রায়োরিটি আগে আমার কাছদ” রুবেল বললো।।

“না বাবা ঘুরে আসি?ঘরে সারাদিন একা থাকা হয়?আর ফুফি ত আছেই সাথে” রাহি জানালো।।

“তাহলে ত হয়েই গেলো?তুই প্যাকিং শুরু করে দে??কাল না হয় মা মেয়ে মিলে শপিং এ যেয়ে জামা কিনে আসবো?” রেহেনা দাড়িয়ে বললো।।

“না ফুফি,বাবা আমাকে এমনিতে অনেক জামা কিনে দেয়” রাহি বললো।।

রেহেনা রাহির মাথায় মুচকি হেসে হাত বুলিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।।

বেশ কয়েকদিন পর,

“এই রাহি??কই তুই??তোর ফুফি আর প্রান্ত নিচে ওয়েট করছে মা??জলদি আয়” রুবেল চিল্লিয়ে ডাকছে রাহিকে।।

রাহি এদিকে নার্ভাস ফিল করছে,অনেকদিন পর কোথাও বের হচ্ছে তার বাবাকে ছাড়া..যথাসম্ভব নিজেকে পরিপাটি করে নিলো..ফুফি এমনিতেও পরের দিন জোর করে শপিং এ গিয়ে কয়েকটা জামা আর জুতা কিনে দিয়েছিলো আবার বাবাও কিনে নিয়ে আসছে..বাবা আমার টেস্ট বুঝে তাই জামা গুলো পছন্দ হয়েছে কিন্তু ফুফি বেশি ভারী কাজ ওয়ালা জামা কিনে দিয়েছে সাথে শাড়িও..কি আর করা সবগুলোকে প্যাক করে নিয়েছি..রাহি ব্যাগ নিয়ে বের হলে,রুবেল তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ নিয়ে নিলো..বাবা মেয়ে মিলে দুজন একসাথে নামলো।।

“মেয়ে মানুষের সাজে এতোবেশি ক্যান সময় লাগে আজ বুঝলাম!!গরম লাগে মা,ওরে নিয়ে যাওয়া কি খুব জরুরি?” প্রান্ত রেগে ওর মাকে বললো।।

তখুনি রুবেল আর রাহি উপস্থিত, প্রান্তকে কিছু বলতে যাবে রেহেনা তার আগেই তাদের দেখে তিনি প্রান্তকে দাত কটমট করে ইশারায় চুপ করতে বললেন।।

“মাশাল্লাহহ!!আমার পরি মা” রেহেনা এগিয়ে এসে রাহির থুতনী ধরে চুমু দিলো।।

রাহির দিকে তাকিয়ে প্রান্তের বুকের উপর দিয়ে হালকা হিম শীতল বাতাস বয়ে গেলো..রাহির পরনের ছিলো সাদা জামা,চুল খোপা করে মাথায় ওড়না..চোখ ভর্তি কাজল ছাড়া আর কোন সাজগোছ নেয়..গালের বাম পাশে পক্সের দাগটা একদম হাইলাইটারের মতো চকচক করছে,আর ডান পাশের কালো কুচকুচে তিলটাও মনে হচ্ছে উকি মারছে..হালকা চকলেট কালার ঠোটটা মনে হচ্ছে শুকনো মরুভূমি, একটু পরপর ঠোটটাকে ভিজিয়ে নিচ্ছে রাহি..এইটা দেখে প্রান্ত চোখ সরিয়ে নিলো।।

প্রান্তকেও কম লাগছে না..পরনে ক্রিম কালার পাঞ্জাবি আর পায়জামা..চুল স্পাইক করা,হাতে ঘড়ি..চোখের কালোমনি সূর্যের আলোতে মনে হচ্ছে চিকচিক করছে।।

রেহেনা তাড়া দিলো সবাইকে গাড়িতে উঠার জন্য নইত পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে ওইদিকে গ্রামের দিক..ডাকাতের আশংকা বেশি..রুবেল রাহির মাথায় চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠালো,রাহিও বাবাকে একবার জাপটে ধরলো।।

“আমাকে ছাড়া ও কখনো থাকে নি??প্লিজ একটু খেয়াল রাখিস আমার পুতুলের??জানি না ও কিজন্য এতো চেঞ্জ আর এতো টেন্স থাকে??আশা করি এই ভ্রমনে তার সব গ্লানি মুছে যাবে” রুবেল রেহেনাকে বললো।।

“চিন্তা করিও না ভাই!!আমি ওর মা ই,আমার মেয়ের যত্ন নিব!!ফি আমানিল্লাহ্! ” রেহেনা বলে গাড়িতে উঠে পরলো।।

রুবেল ও সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজের যাওয়ার টিকেট কাটতে লাগলো।।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে.. প্রান্ত সামনে তার পাশে রেহেনা,পিছনে একা রাহি বসে আছে,গাড়ির জানালা খুলে..শেষ যখন তার শহর ছেড়ে ছিলো তখন রাহি বাসে থেকে দেখেছিলো সামির আর মিথিলাকে বাইকে উঠে ঘুরাঘুরি করতে..তারা অনেক হাসাহাসি করছিলো..তাদের দেখে রাহি মুখটা ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলো..বাবা সাথে থাকায় চিল্লিয়ে কাদতে পারে নি..নিঃশব্দে ডুকরে কেদে উঠেছিলো,ভিতর ভিতর তাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলেছিলো..তাদের সেদিনে চুমুর সাদৃশ্য মনে পরলেই বুকটা ধক করে উঠে..মানুষ চলে যায় ঠিকই কিন্তু স্মৃতি রেখে যায় অনেক..স্মৃতি গুলো যা পোড়ায় অনেক,বুকের বা পাশটা কেমন অসহ্য চিনচিন ব্যাথা করে..যদি এই ব্যাথা মরন নিয়ে নিতো তাও হতো!!!

“তুমি অন্যকারোর সঙ্গে বেধো ঘর” রাহি চোখের জলের কোনাটা মুছে,বাহিরে দিকে তাকালো।।

প্রান্ত অনেকক্ষন যাবত দেখছে রাহি জানালার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে,চোখে তার অনেক কথা কিন্তু মুখে নেয়।।

“এখানেও এসে জানালা খুলে শোক পালন করা যাবে না বলে তোমার ভাগ্নিকে মা” প্রান্ত চোখ মুখ শক্ত করে বললো রেহেনা কে।।

“ফুফি আমি একটু ঘুমাবো?বাড়তি নয়েজ যেন না হয়” এই বলে রাহি চোখ বন্ধ করলো।।

প্রান্ত রাহির এমন কথা শুনে নিজের কান লাল করে ফেললো..কিছু বলতে যাবে তার আগে রেহেনা প্রান্তের হাত চেপে ধরে যেন কিছু না বলে।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে