Tuesday, August 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1972



? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৫

0

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৫

Urme prema (sajiana monir)

পর্দার আড়াল থেকে সূর্যের কিরন মুখে পড়তেই সুবাহ র ঘুম ভেঙ্গে যায় ।ঘুম ভাংতেই আরোশের দিকে তাকায় দেখে আরোশ এখনো সুবাহ র গলায় মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছে ঠোঁট গুলো বাচ্চাদের মত গুঁজে রয়েছে ।চুল গুলো কপাল ছুইঁছে একদম শান্ত বাচ্চাদের মত লাগছে ।সুবাহ মুচকি হেসে আরোশের কপালে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগে ।আরোশ কিছুটা নড়ে উঠে তার পর ঘুমের মধ্যে আরো গভীর ভাবে সুবাহকে জরিয়ে ধরে ।সুবাহর কাল রাতে করা আরোশের পাগলামির কথা মনে পড়তেই সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগে !কাল রাতে আরোশ নিজের থেকে সুবাহকে এক সেকেন্ডে নিজের থেকে আলাদা করেনি নিজের বুকের সাথে জরিয়ে রেখেছে ।
কাল সুবাহ পুরোপুরি ভাবে আরোশের হয়ে গেছে ।আরোশ তাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের নিয়েছে ।
তার প্রত্যেকটা স্পর্শ সুবাহ কে পাগল করে দিয়েছে ।হ্যা সে পুরোপুরি ভাবে আরোশের স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছে ।তার হয়ে গেছে ।
সুবাহ এসব ভাবতে ভাবতেই আরোশ নড়ে উঠে ।আরোশ কে নড়ে উঠতে দেখেই সুবাহ মুখে আগের মত মুচকি হাসি রেখে বলতে লাগে
“গুডমর্নিং মি: হাসবেন্ড !”
আরোশ বাকাঁ হেসে সুবাহকে নিজের আরো কাছে টেনে তার মুখের সামনের চুল কানের পিছনে গুজেঁ দিতে দিতে বলতে লাগে
“গুড মর্নিং “
সুবাহ আরোশের কাধেঁ মাথা রেখে বলতে লাগে
“থেংকিউ আমাকে আপন করে নেওয়ার জন্য ।আমাদের সম্পর্শটাকে নতুন ভাবে শুরু করার জন্য ।সব ভুলে নতুন ভাবে সম্পর্কটাকে নাম দেওয়ার জন্য ।”
আরোশ সুবাহর এসব কথা শুনে শব্দ করে হাসতে লাগে ।সুবাহ আরোশের এমন হাসির পিছনের কারন খুজঁতে লাগে ।সে মাথা তুলে আরোশের দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে আরোশ নিজের হাসি থামিয়ে বলতে লাগে
“সিরিয়াসলি সুবাহ তোমার মনে হয়েছে আমি তোমাকে আপন করে নিয়েছি ?”
বলেই আবার আগের মত জোরে জোরে হাসতে লাগে। সুবাহ আরোশের দিকে ড্রাব ড্রাব করে তাকিয়ে আছে আরোশ আবার বলতে লাগে
“আমাদের মধ্যে কাল রাতে যা হয়েছে তা শুধুই একটা নাটক ছিলো ।তোমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য ।”
সুবাহ কাপাকাপা গলায় বলতে লাগে
“মা…মা…মানে ?”
আরোশ সুবাহ র গালে হাত রেখে বলতে লাগে
“আমি তোমাকে নিজের সাথে বেধেঁ রাখতে কাল তোমাকে আপন করে নিয়েছি যাতে তুমি আমাকে ছাড়ার চিন্তা ও না করতে পারো ।
সারাজীবনের জন্য আমার কাছে বন্ধি থাকো ।
তুমি কি ভেবেছো আমি সব ভুলে গেছি ?
না কখনো না আমি কিছু ভুলিনি আমি আমার প্রতিশোধ নিবো ।যতটা কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছো ততটাই কষ্ট এবার তুমি পাবে। “
আরো এসব বলেই বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় ।সুবাহ থম মেরে সেখানেই বসে থাকে ।
আরোশ এসব কি বলছে ?
কাল রাতের সব কিছু মিথ্যা ছিলো ?
কাল রাতে তার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো ?
শুধু আমাকে আটকানোর জন্য এসব করছে যাতে আমি তাকে ছেড়ে না যাই !
এসব ভাবতে ভাবতেই সুবাহ কাদঁতে লাগে সে আরোশ থেকে এমন কিছু কখনই আশা করেনি ।সুবাহ বালিশে মুখ গুজেঁ কাদঁতে লাগে ।
আরোশ বেশ কিছুসময় ওয়াশরুম থেকে বের হয় ।বের হয়ে সুবাহ কে এভাবে শুয়ে কাদঁতে দেখে বেশ কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকে অবশেষে সয্য করতে না পেরে সে রুম থেকে বের হয়ে যায় ।সে সুবাহর চোখের পানি সয্য করতে পারবেনা আবার তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়বে কালকের রাতের মত ।আর আরোশ কোন ভাবেই সুবাহর প্রতি দূর্বল হতে চায়না ।
সুবাহ বেশ কিছু সময় রুমে এভাবেই কান্না করে যায় ।
সুবাহ সেদিন সারাদিনের মধ্যে আর আরোশের সামনে আসেনা ।নিজেকে তার আড়াল করে রাখে ।আরোশের সকালের বলা কথা গুলো তার বেশ কষ্ট লেগেছে ।সে সারাদিন মায়ার রুমে কাটিয়ে দেয় ।যে কোন কারনেই হোক না কেন আরোশ থাকাকালিন সময়ে সে নিজের রুমে যায়না ।‌অন্যদিকে আরোশ কিছু সময় পর পর সুবাহকে দেখার জন্য বারে বারে মায়ার রুমের পাশে ঘুরাঘুরি করেছে ।কিন্তু তাতে তার কোন লাভ হয়নি সে সুবাহ কে এক পলকের জন্যেও দেখতে পারেনি । সুবাহ ইচ্ছা করেই তার সামনে আসেনি !
সারাদিন মায়ার রুমে কাটিয়ে রাত ১১ টায় নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সে চায়নি আরোশকে ফেস করতে ।তাই ভেবেছে আরোশ শুয়ে পড়লে তারপর রুমে আসবে ।
সুবাহ রুমের দরজার হালকা খুলে দেখে পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে ।তাই পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করতে লাগে ।বেডের কাছে আসতেই হঠাৎ কেউ তাকে টান দিয়ে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলে সুবাহ ভয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগে ।সে জানে আরোশ করছে তারপর ও এমন আচমকা টানে ভয় পেয়ে যায় সুবাহ ।
ফেইরি লাইটের আলোয় সুবাহ স্পষ্ট আরোশের রাগানিত্ব চোখ দেখতে পাচ্ছে ।চোখে তার ভয়ঙ্কর রাগ জমে আছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।সুবাহ আরোশের ভয়ে বড় ডোক গিলে ।আরোশ তার মুখটা সুবাহ র আরো কাছাকাছি এনে দাতেঁ দাতঁ চেপে বলতে লাগে
“সারাদিন কোথায় ছিলে ?
কত বার ডেকেছি তারপর ও কেন আসোনি !”
সুবাহ মুখ ঘুরিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বলতে লাগে
“আমি কোথায় ছিলাম তা আপনার না জানলেও চলবে আপনি আমাকে কাল রাতে আপন করে নিয়েছেন শুধুই আপনার কাছে বন্ধি করে রাখার জন্য যাতে আপনি আমার উপর নিজের প্রতিশোধটা নিতে পারেন তাই তো !
হ্যা ভয় নেই আমি এ বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছিনা ।”
আরোশ রেগে সুবাহ র হাত আরো জোরে শক্ত করে মুঠ করে ধরে ফলে সুবাহ র কাটা হাতে ব্যথা লাগে সুবাহ শব্দ করে “আহহহহ”উঠে ।
আরোশ তা লক্ষ করে তারাতারি করে সুবাহ র হাত দেখতে লাগে ।তার চোখে মুখে স্পষ্ট অস্তিরতা দেখা যাচ্ছে !
সুবাহ আরোশের দিকে একমনে তাকিয়ে বলতে লাগে
“নিজেই কষ্ট দেন আবার নিজেই সে কষ্ট লাঘব করার জন্য অস্তির হয়ে পড়েন !
আমাকে যতটা কষ্ট দিচ্ছে ঠিক ততটা কষ্ট তো নিজেও পাচ্ছেন তাহলে কেন এসব করছেন ।
না পুরোপুরি ভাবে নিজের কাছে আসতে দিচ্ছেন , না দূরে যেতে দিচ্ছেন ।
নিজে আঘাত দিয়ে নিজেই তাতে মলম লাগাচ্ছেন ।কেন এমন করছেন কেন মেনে নিচ্ছেন না সব কিছু ?”
আরোশ সুবাহর কমোড় ধরে তাকে আরো কাছে এনে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে কমোড়ে রাখা হাত জোরা আরো শক্ত করে ধরে বলতে লাগে
“আমি না তোমাকে আপন করে নিবো না তোমাকে দূরে যেতে দিবো সারাজীবন এভাবেই থাকবে ।
তুমি যা করেছো তার পর তোমাকে যতই শাস্তি দেইনা কেন কম হয়ে যাবে ।”
বলেই সুবাকে ছেড়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায় আরোশ ।তারপর সেখান থেকে বারান্ধায় চলে যায় সুবাহ আরোশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের কোনে জমে থাকা জলটা মুছে ।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগে
যদি আজ তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবীক হতো তাহলে হয়তো সবকিছু অন্যরকম থাকতো ।আরোশ প্রতিশোধ নেওয়ার নেশা ভুলে তাদের ভালোবাসার নেশায় ডুবে থাকতো !
এসব ভাবতে ভাবতেই তার কানে গিটারের শব্দ ভেসে আসে ।সুবাহ জানে কে বাজাচ্ছে সুবাহ সেদিকে নিজের পা আগাতে লাগে যেন সেই সুরটা তাকে টানছে ।বারান্ধার সামনে যেয়েই সে থেমে যায় !
আরোশ চোখ বন্ধ করে গিটার বাজাচ্ছে সুবাহ তা বারান্ধার দরজার আড়াল থেকে দেখতে লাগে ।
আরোশ গিটারে সুর তুলে চোখ বন্ধ করে গাইতে লাগে

“আমার চোখে সব কিছু ঝাপসা মনে হয় ।
আমার মনে সবকিছু কেনো এলোমেল লাগে ?

আমার চোখে সব কিছু ঝাপসা মনে হয় ।
আমার মনে সবকিছু কেনো এলোমেল লাগে ?

দিনের শুরু থেকে
ভাবি শুধু তোমায় নিয়ে
মনে তবু এক কঠিন
যন্ত্রনার…………. অন্ত নেই………
মন থেকে কি করে ভুলে যাব তোমার ছবি ?
এই অনুভূতি থেকে ছুটে যাব ক……বে
যন্ত্রনার…………অন্ত নেই……… “

সুবাহ আজ কতদিন পর আরোশের কন্ঠে গান শুনছে যা শুনা একসময় তার নেশা হয়ে গিয়েছিলো ।আজ তার কন্ঠে গান শুনছে !
চোখ বন্ধ করে আরোশের গান শুনছে আরোশের গানে স্পষ্ট যন্ত্রনা কষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে ।
সুবাহ ফ্লোরে বসে দরজায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আরোশের সাথে প্রথম দেখা এই কাহিনীটার শুরু কল্পনা করতে লাগে ১.৫ বছর আগে কোম্পাসে এমনই গান গেতে সে আরোশকে দেখেছিলো ।সুবাহ এসব ভাবতেই তার কল্পনায় ডুব দেয় ।

ছোট থেকেই বেশ শান্ত স্বভাবের ছিলো বাড়ির সবার চোখের মনি হলেও কখনো তার দাদীর ভালোবাসাটা সে পায়নি ! কারনটা ছিলো তার দাদী কখনো তার মাকে মেনে নেয়নি সেই সূত্র ধরে সুবাহ ও তার ছোট ভাইবোন কখনো তার দাদীর ভালোবাসাটা পায়নি । সুবাহর বাবার সাথে আগে থেকেই তার দাদী কথা বলেনা না কারনটা ছিলো সুবাহ র বাবা তার দাদীর বিরুদ্ধে তার মাকে বিয়ে করে তাই !
তার মাঝে সুবাহর ফুপা মারা যাবার পর তার ফুপি ফুপাতো বোন নিদ্রা তাদের বাসায় থাকতে লাগে ।নিদ্রা আর সুবাহ সমবয়সী হওয়ায় তাদের মধ্যে বেশ বেদভাব করতে শুরু করে দেয় তার দাদী ।তার মাঝে সুবাহ নিদ্রার থেকে সব দিক থেকে একটু এগিয়ে ছিলো হোক তা রূপে বা গুনে ।
আস্তে আস্তে সে বড় হতে লাগে আর তার সাথে তাদের এই ভেদভাদ ও অত্যাচার ।সুবাহর মা সুবাহ সব কিছু মুখ বুঝে সয্য করে যেত ।তাদের বাবাকে কখনই কিছু জানতে দিতোনা ।এদিকে নিদ্রার আবদার ও বাড়তে লাগে সুবাহর দাদী নাতনীর প্রেমে অন্ধ হয়ে সব আবদার পূরন করতে লাগে সব কিছু বলার আগেই তা হাজির করে দিতো !
এমনই চলতে লাগে আস্তে আস্তে সুবাহ নিদ্রা বড় হতে লাগে তারা একই ভার্সিটিতে এডমিশন নেয় ।কিন্তু তাদের দুজনের মধ্যে তেমন ভালো সম্পর্শ ছিলোনা সুবাহ নিদ্রাকে আপন ভেবে তাকে কাছে টানতে চাইলে নিদ্রা তাকে অপমান করে দূরে সরিয়ে দিতো তাই সুবাহ ও তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করে ।
ভার্সিটির প্রথম দিন সুবাহ জান্নাতের সাথে ভার্সিটিতে যায় আর পাচঁটা দিনের মতই সেদিন ছিলো তার কাছে কিন্তু কে জানতো ভালোবাসা নামক ঝড়টা তার মনে এভাবে সাড়া দিবে !
জান্নাত অন্য ডিপার্টমেন্টের হওয়ায় ক্লাস শেষে কেম্পাস মাঠে তার জন্য অপেক্ষা করছিলো ।হঠাৎ কানে কানে গিটারের সুরের বেসে আসতে লাগে সুবাহ এই সুরটা শুনতেই মনের মাঝে কেমন যানো উঠাল পাথাল করে দিচ্ছে খুব চেনা এই সুর টা কিন্তু তা কোথায় শুনেছে তা ধরতে পারছেনা ।না চাইতেও সেদিকে ছুটে চলে সুবাহ সামনে যেয়ে দেখে বেশ ভিড় জমে আছে ।মাঝে কেউ বসে গিটার বাজাচ্ছে চারিদিকে সবাই তাকে ঘিরে আছে !
সুবাহ আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে ভিতরে ডুকতে লাগে ।ভিতরে ডুকে ছেলেটাকে দেখে পুরো থমকিয়ে যায় !
ঠিক কতটা সুন্দর হলে কোন মেয়ে কোন ছেলেকে দেখে এভাবে থমকিয়ে যেতে পারে তা হয়তো সুবাহ র জানা ছিলো না !
সুবাহ হার্ড বিট দ্রুত চলতে লাগে তার কখনো কোন ছেলে কে দেখে এমন অনুভূতি হয়নি সে তো ছেলেদের দিকে তাকায়না পর্যন্ত কিন্তু তাকে দেখে যেন থমকিয়ে গেছে ।গায়ের রং ফরসা চুল গুলো স্টাইল করে ব্রাশ করা তার সমুদ্রের মত গভীর চোখ গুলো তে তাকিয়ে যে কোন মেয়ে সারাজিবন কাটিয়ে দিতে পারবে ।ঠোটেঁ মৃদ্যু হাসি আর তার মাঝে সব চেয়ে আকর্ষনীয় হল তার বাম গালের মাঝ বরাবরের তিল আর নিচের ঠোঁটের তিল !
গানের প্রত্যেকটা সুরের সাথে তার এক্সপ্রেইশন ও সেম !
ছেলেটি গিটারে বাজাতে বাজাতে গান গাইতে লাগে

“ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে………

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালো ফসলের ঘুম

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালো ফসলের ঘুম

তেমনি তোমার নিবিড় চলা……..

তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরনের মূল পথ ধরে……

আমার ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

আমার ভিতর ও বাহির অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে …………

সুবাহ চোখ বন্ধ করে গানটা শুনতে লাগে গানের প্রত্যেকটা সুর প্রত্যেকটা কথা তার শরীরের লোম দাড় করিয়ে দিয়েছে এক অজানা শিহরন ভালোলাগা তৈরী করে দিয়েছে …….

চলবে……
❤️❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন ???

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৪

0

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৪

Urme prema (sajiana monir)

সকাল থেকেই পুরো বাড়ির মানুষ বেশ বেস্ত আজ রিসেপশনের অনুষ্টান তাই । সুবাহ ও সকালে ঘুম থেকে উঠে আরোশ কে খুজেঁ যাচ্ছে ।কারন আজ এখন পর্যন্ত আরোশ কে দেখেনি বেশ কয়েক বার জিগাস করার চেষ্টা করেছে কিন্তু লজ্জায় আর ভয়ে জিগাস করা হয়নি কে কি মনে করবে তা ভেবে ।দুপুরে মেকআপ আর্টিষ্ট চলে আসে ।এসে সুবাহকে রেডি করতে শুরু করে সন্ধ্যার জন্য ।
বিকাল হতে হতেই সুবাহকে পুরোপুরি রেডি করে তারা চলে যায় ।
বিকালে আরোশ নিজের রুমে আসে রেডি হতে সকাল থেকে সারাদিন বেশ বেস্ত ছিলো কাজে ।হঠাৎ রুমে ডুকে বেডের কাছে সুবাহর দিকে চোখ যেতেই থমকিয়ে যায় !
সুবাহ নিজের আচল আর কুচি সামলাতে বেস্ত পড়নে সোনালি ব্রাইডাল শাড়ি !মনমুগ্ধকর সাজ চুল গুলো কার্ল করা তার মধ্যে আর্টিফিসিয়াল ফ্লাওয়ার ।
সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ।আরোশ সুবাহ র কাছে এসে সুবাহ র সামনে হাটু গেড়ে বসে শাড়ির কুচি গুলো ঠি ক করতে লাগে ।সুবাহ আরোশের এমন কাজে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে ।আরোশ রুমে এসেছে সে তো টেরই পায়নি !
আরোশ কুচি গুলো ঠি ক করতে করতে বলতে লাগে
“যা সামলাতে পারো না তা পড়ো কেন ?”
সুবাহ মৃদ্যু সুরে বলতে লাগে
“ইয়ে মানে আসলে আন্টি বলেছিলো এটা পড়তে রাতের অনুষ্টানে পড়তে !”
আরোশ কুচি ঠি ক করে সুবাহর সামনে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“শাড়ি সামলাতে পারবে ?
প্রবলেম হবে না তো !”
সুবাহ মুচকি হেসে বলতে লাগে
“আসলে এটা একটু ভারি শাড়ি তো তাই একটু প্রবলেম হচ্ছিল কিন্তু সমস্যা নেই আমি সামলাতে পারবো !”
আরোশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে কাবার্ড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে যায় ।সুবাহ মুচকি হাসি দিয়ে আরোশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।কারন সুবাহ জানে আরোশের মনে এখনো তার জন্য ভালোবাসা রয়েছে তা হয়তো অভিমান আর রাগের পিছনে চাপা পড়ে আছে যা মাঝে মাঝে আরোশ অজান্তেই প্রকাশ করে দেয়।সে চাওয়ার পর ও নিজের ভালোবাসাটা আড়াল করতে পারে না !

সন্ধ্যায় সুবাহকে হলে নেওয়া হয় চারদিকে অনেক মানুষে ঘেরা ।সবাই সুবাহর অচেনা আরোশের মা আর মায়া তাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ।কিন্তু সবার আড়ালে সুবাহর চোখ বার বারে শুধু আরোশের দিকে যাচ্ছে ।অসম্ভব হেন্ডসাম লাগছে তাকে তার পড়নে ব্রাউন স্যুট ফরসা গালে চাপ দাড়ি চুল গুলো স্টাইল করে ব্রাশ করা হাতে ব্রেন্ডেড ঘড়ি ।পুরো ফরমাল লুক একদম হিরো লাগছে ।কিছু লোকেদের সাথে কথা বলছে ।
সুবাহ বার বার আরোশের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে ।হঠাৎ কারো আওয়াজে তার ধ্যান ভাঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে তার দাড়িয়ে আছে ।সুবাহ তার মাকে দেখে দৌড় দিয়ে কাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“আম্মু তুমি কেমন আছো ?
আব্বু কেমন আছে ?
আব্বু কি এখনো আমার উপর রেগে আছে ?
বিশ্বাস কর আম্মু আমি এসব কিছু করতে চাইনি আমি এসবের কিছুই জানিনা আ…..!”
আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই সুবার মা তাকে থামিয়ে দেয় তার চোখ মুছতে মুছতে বলতে লাগে
“আস্তে সুবাহ আমি সব বলছি !
আমি ভালো আছি !
তুমি কান্না করছো কেন ?
আমি জানি তুমি কিছু করনি আমি আমার মেয়েকে চিনি যা হয়েছে তা ভালোর জন্যই হয়েছে তোমার আদিকে বিয়ে করার ডিসিশন টা আমার কাছে ঠি ক লাগেনি । তুমি আরোশকে ভালোবাসো শুধু মাত্র নিদ্রার আর তোমার দাদীর চাপে পড়ে তুমি আরোশকে ছাড়তে চেয়েছো তুমি তোমার দাদী আর বাবার সম্পর্কটা ঠি ক করার জন্য তুমি নিজের ভালোবাসাকে বলি দিতে চেয়েছো ।
তাকে নিদ্রাকে দিয়ে দিতে চেয়েছো ।তুমি এটা ভুলে গিয়েছে নিয়তি বলতে ও কোন কিছু আছে !
ভাগ্যের লেখা কখনো পরিবর্তন হয়না ।আল্লাহ তোমাকে আরোশের জন্য আর আরোশকে তোমার জন্য বানিয়েছে দুনিয়ার কেউ চাইলেই তোমাদের আলাদা করতে পারবেনা ।যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে !”
সুবাহ আবার নিজের মাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগে
“থেংকিউ আম্মু আমাকে বুঝার জন্য !”
হঠাৎ পিছন থেকে সুবাহ র দাদী বলতে লাগে
“উমমম মা মেয়ের ঢং !
এই সবই তো তোরা মা মেয়ে চেয়েছিস যে আমার নাতনিটার বিয়েটা না হোক এই বাড়িতে বড়লোক ছেলে দেখে দুই মা মেয়ে নিজের লোভ সামলাতে পারিস নি ।আমাদের সামনে নাটক করেছিস যে আরোশ কে বিয়ে করবিনা তার সাথে যোগাযোগ করবিনা কিন্তু তলেতলে ঠি কই এসব প্লান করেছিস !
আদির সাথে বিয়ের দিন আরোশের সাথে পালিয়ে গেছিস !
কি করে পারলি এসব করতে ?
কি করে পারিস তোরা মা মেয়ে এত রং বদলাতে ?
তোদের থেকে গিরগিট ও ভালো ।
দেখিস তোদের মা মেয়ের জীবনে ভালো হবেনা আমার বাপ মরা নাতনিটার জীবন নষ্ট করেছিস তোর ভালো কখনই হবে না !
তুই সুখি হবি না কোন দিন ।
আমি অভিশাপ দিলাম ।”
সুবাহ মা রেগে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সুবাহ তার মায়ের হাতের উপর হাত রেখে তাকে থামিয়ে দেয় ।তারপর নিজে তার দাদীর দিকে আর নিদ্রার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলতে লাগে
“আমি সত্যি কিছু জানতাম না ।আরোশ আমারে অজ্ঞান করে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে তারপর ও আমি বিয়ে করতে চাইনি কিন্তু আরোশ মানেনি তাই বিয়েটা হয়েছে ।
জানি তোমরা বিশ্বাস করবেনা কিন্তু সত্যি এটাই ”
নিদ্রা রেগে বলতে লাগে
“কি ভেবেছিস সুবাহ আরোশ তোকে বিয়ে করেছে বলেই তোর হয়ে যাবে তোর থাকবে ?
কখনো না আমি আরোশকে কখনই তোর হতে দিবো না যে ভাবেই হোক আমি তোর থেকে আরোশকে ছিনিয়ে নিবো !
নিজের করেই ছাড়বো ?”
সুবাহ র মা বলতে লাগে
“শকুনের দোয়ায় গরু মরে না ।
আমি জানি আমার মেয়ে কোন অন্যায় করেনি তার সাথে ও কখনো খারাপ কিছু হবেনা ।
আপনারা কোন ভাবেই তার ক্ষতি করতে পারবেনা !”
এসব কথা শুনেই সুবাহ র দাদী হন হন করে সেখান থেকে চলে যায় আর তার পিছন পিছন লেজের মত ছুটে নিদ্রা ।তারা যেতেই আবার সুবাহর মা বলতে লাগে
“যা হবার তা হয়ে গেছে সুবাহ আরোশের সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে ।ভালো হবে যদি তুমি সবকিছু মেনে পুরনো কথা ভুলে নতুন করে আরোশের সাথে সব কিছু শুরু কর ।অন্যের কথা না ভেবে এখন একটু নিজের কথা ভাবো !
আদর্শ স্ত্রীর মত নিজের সব দায়িত্ব মেনে চল ।
আরোশকে আবার আপন করে নেও ।”
সুবাহ মুচকি হেসে আরোশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“হুম মা আমি আরোশকে আপন করে নিবো আমাদের সম্পর্কটাকে নতুন করে শুরু করবো ।
সম্পর্কের সকল দূরত্ব বাধাঁ দূর করবো ।”
সুবাহ র মা সুবাহর গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বলতে লাগে
“আমি জানি আমার তুমি পারবে মা !”
সুবাহ তার মায়ের সাথে কথা বলছে হঠাৎ কারো ডাকে সুবাহ পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে আদি দাড়িয়ে আছে মুখে মুচকি হাসি হয়তো এই হাসির পিছনে চাপা কষ্ট জমে আছে ।সুবাহ আজ আদিকে এখানে দেখবে একদম আশা করেনি আদিকে কি বলবে তা খুজেঁ পাচ্ছেনা ।সুবাহর মা তাদের কথা বলতে দেখে দূরে সরে যায় ।সুবাহ মাথা নিচু করে রেখেছে আদি বলতে লাগে
“আরে আরে তুই তো দেখছি আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছিস !
বিয়ের পর তোর মধ্যে এত পরিবর্তন বাহ ভালোই ।”
সুবাহ মাথা নিচু করে মৃদ্যু স্বারে বলতে লাগে
“আদি আ’ম সরি !
আসলে এমন কিছু হবে আমি জানতাম না বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে এসব করিনি ।
আমার…..”
আদি মুচকি হেসে বলতে লাগে
“হুসসস !
তোকে কোন কৈফিয়াত দিতে হবেনা আমি তোকে ছোট থেকে চিনি তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড আমি জানি তুই এসব কিছু ইচ্ছে করে করিসনি ।কিন্তু যা হয়েছে ভালো হয়েছে তুই তো সুখে থাকবি এটাই আমার কাছে অনেক ।তোর সুখ একমাত্র আরোশের সাথে ছিলো আমাকে তুই কখনো ভালোবাসিস নি !
আমার ভালোবাসাটা ছিলো এক তরফা ।হয়তো নিজের এক তরফা ভালোবাসার জোরে তোকে পেতে চেয়েছিলাম স্বর্থপর হয়ে গিয়েছিলাম তোকে পাবার লোভে তাই তোর কষ্টটা দেখার চেষ্টা করিনি ।
কিন্তু এখন যা হয়েছে ভালোই হয়েছে তুই খুশি থাকবি আর তোর খুশিতেই আমার সুখ !”
সুবাহ ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলতে লাগে
“থেংকউ থেংকউ সো মাচ !
আমাকে বুঝার জন্য আমার নিজেকে খুব অপরাধি মনে হচ্ছিল এসব কিছুর পর কিন্তু এখন নিজেকে ফ্রি লাগছে !”
আদি মজা করে বলতে লাগে
“হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না তাহলে আমি আবার ইমোসনাল হয়ে পরবো তখন তুই আবার বলবি যে আমি মেয়েদের মত বিহেব করি !”
সুবাহ আদির কথা শুনে হেসে দেয় ।তারপর দুজন টুকটাক কথা বলতে লাগে ।
এত সময় ধরে আরোশ তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ সুবাহ র কথা মনে পড়তেই তাকে খুজঁতে লাগলো ।সুবাহ কে আদির সাথে হেসে কথা বলতে দেখেই আরোশের মাথায় রক্ত উঠে যায় ।সে সুবাহ কে আদির সাথে একদম সয্য করতে পারছেনা ।রেগে নিজের হাতে কাচের গ্লাসটা শক্ত করে মুঠ করে ধরে ফলে গ্লাসটা ভেঙ্গে আরোশের হাতে ডুকে পড়ে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে আরোশের সেদিকে খেয়াল নেই তার অগ্নিদৃষ্টি সুবাহ র দিকে ।সে নিজের সুবাহ কে আদির সাথে একদম সয্য করতে পারছেনা !
পিছন থেকে নিদ্রা আরোশ কে আদি আর সুবাহ র দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে আরোশের সামনে এসে হাত ধরে বলতে লাগে
“আরোশ কি করছো এসব ?
পাগল হয়ে গেলে নাকি !”
আরোশের নিদ্রার কথায় খেয়াল নেই তার দৃষ্টি এখনো সুবাহ আর আদির দিকে ।নিদ্রা বাকা চোখে সেদিকে তাকিয়ে আরোশ কে বলতে লাগে
“তুমি কার জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো ?
এই চরিত্রহীন মেয়ের জন্য যে কিনা তোমার সাথে প্রেম করে আদিকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলো ।”
নিদ্রার মুখে সুবাহ র কে চরিত্রহীন শুনে আরোশ নিদ্রার হাত ঝারি দিয়ে ফেলে নিদ্রার মুখ চেপে ধরে বলতে লাগে
“সুবাহ কে কিছু বলার আগে হাজার বার ভেবে নিবে !
উলটা পালটা কিছু বললে তোমার আমি কি হাল করবো তোমার জানা নেই !
ওকে কিছু বলার আগে নিজের দিকে লক্ষ করো কারন তুমি দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না !”
নিদ্রা আরোশ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগে
“আমি যা করেছি সব সুবাহ র কথায় করেছি সুবাহ আমাকে বলেছে এসব কিছু করতে প্রথমে তোমার সাথে প্রভা সেজে ফেসবুকে রিলেশন করে টাইম পাস করে তারপর তোমাকে ভালো লাগেনা ।আদির প্রতি নিজের পুরনো প্রেম জেগে উঠে তাই তুমি দেখা করতে চাইলে তোমার সামনে আমাকে প্রভা বানিয়ে নিয়ে যায় ।
আর নিজে আদিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় ।
এখানে সব দোষ ওর !”
তারপর নিদ্রা আরোশের কাছে ঘেসে আরোশের গালে হাত রেখে বলতে লাগে
“বেবী তুমি কেন সুবাহ কে বিয়ে করলে ?
দেখো আমি তোমাকে ভালোবাসি আমি তোমাকে সুখে রাখতাম আমি তো আর সুবাহর মত না বলো ।আমি যা করেছি সুবাহর কথায় করেছি ।”
আরোশ নিদ্রা কে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তারপর রেগে বলতে লাগে
“আমি না কাউকে ছাড়বোনা !
সুবাহ যা করেছে তার ফল ও পাবে ।”
বলেই আরোশ উপরে নিজের রুমে চলে যায় ।নিদ্রা শয়তানি হাসি দিয়ে বলতে লাগে
“আমি চাই তুমি তাই করো সুবাহ কে শাস্তি দেও তারপর সুবাহ তোমাকে ছেড়ে সারাজীবনের জন্য চলে যাবে আর আমি তোমাকে নিজের করে নিবো ।
আসল সত্যটা কখনো তুমি জানবেনা আরোশ তা তোমার আড়ালেই রয়ে যাবে !”

আরোশ নিজের রুমে সবকিছু ভাঙ্গচুর করছে সে । হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আরোশ কে জরিয়ে ধরে আরোশ থেমে যায় কারন সে জানে কে সে !
সে পিছনে না ঘুরেই উপলব্ধি করতে পারে এটা সুবাহ ।
তারপর তাকে ঝারি দিয়ে সরিয়ে দেয় ।
তারপর সুবাহর বাহু শক্ত করে ধরে রেগে দাতেঁ দাতঁ চেপে বলতে লাগে
“কেন করলে এমন ?
কেন সুবাহ !!!!
কেন আমার জীবনে এসে সব কিছু অগোছালো করে দিলে কেন এই গেম খেললে আমার সাথে ?
কেন !
আমি তো শুধু আমার প্রভাকে ভালোবেসে ছিলাম তাকে পেতে চেয়েছিলাম তাহলে তুমি কেন এমন করলে আমার সাথে কেন এমন গেম খেললে ?”
সুবাহ ভয়ে কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলতে লাগে
“আরোশ আমার কথা টা শুনুন আমি সব খুলে বলছি আমি কেন এমন করেছি আমাকে একটা সুযোগ দিন প্লিজ আমার কথাটা শুনুন !”
আরোশ রেগে সুবাহ র বাহু আরো শক্ত করে বলতে লাগে
“চাইনা শুনতে তোমার কথা তুমি একটা মিথ্যা বাদি !
তুমি শুধু মানুষকে ঠকাতে পারো আর মানুষের ভালোবাসা নিয়ে খেলতে পারো !
আমি চাইনা কিছু শুনতে ।”
বলেই সুবাহকে জোরে ধাক্কা দিয়ে পিছনে ঘুরে যায় সুবাহ নিচে পরে যায় আর তার হাত কাচের উপর গিয়ে পড়ে ।হাতে কাচ ডুকে পরে সুবাহ ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠে !
সেখানে বসে হাত ধরে মুখ ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে কান্না করতে লাগে ।আরোশ বেশ কিছুসময় ধরে কোন সারা শব্দ না পেয়ে পিছনে ঘুরে !
ঘুরে দেখে সুবাহ হাত ধরে কান্না করছে তার হাত থেকে রক্ত জোড়ছে তা দেখে আরোশ তারাতারি করে সুবাহর কাছে যেয়ে তাকে কোলে তুলে বেডে বসিয়ে পাগলের মত করে ফাস্টএইড বক্স খুজঁতে লাগে ।তা খুজে এনে সুবাহর সামনে এসে নিচে বসে তার হাত ধরে সেখানে ঔষধ লাগাতে বেস্ত হয়ে পড়ে ।তার চোখে মুখে বেশ অস্তিরতা যেন কষ্টটা সুবাহ না আরোশ পেয়েছে ।আর বার বার বলছে
“সরি আমি ইচ্ছে করে করিনি !
খুব লেগে গেছে !
কষ্ট হচ্ছে খুব ?”
সুবাহ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এ তার কেমন ভালোবাসা ?
একটু আগে তাকে সয্য করতে পারছিলো না আর এখন তাকে কষ্টে দেখে নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছে তার কষ্ট লাঘব করতে ।
আরোশ বার বার নিজের ঠোঁট ছোয়াচ্ছে সুবাহর হাতে আর “সরি “বলছে !
সুবাহ আরোশের কাছে যেয়ে তার বুকে মাথা রেখে শক্ত করে তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগে ।আর আরোশ ও সুবাহ কে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে ।………

চলবে….
❤️❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন ???

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৩

0

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৩

Urme prema (sajiana monir)

সকালে সুবাহ ঘুম থেকে উঠে দেখে সে বেডে ঠিক ভাবে শুয়ে আছে ।চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে চারদিকে তাকাতে লাগে আরোশকে খুজতে লাগে কিন্তু পুরো রুমে কোথাও আরোশ নেই পুরো রুম খালি !
সুবাহ বেডে থেকে উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে এক এক করে নিজের গহনা গুলো খুলতে লাগে ।কাল রাতে ‌কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তা তার জানাই ছিলো না এই গহনা গুলো নিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো !
হঠাৎ পিছন থেকে কারো ডাকার মধ্যে পিছন ঘুরে সুবাহ !
পিছনে ঘুরে দেখে আরোশের কাজিন মায়া দাড়িয়ে আছে হাতে কিছু কাপড় !
নিদ্রা আর আরোশের বিয়ের কথাবর্তা যখন পাকারাকি করা হয়েছিল তখন মায়ার সাথে সুবাহর পরিচয় হয়েছিলো
সুবাহ মায়াকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগে
“আরে মায়া আসো ভিতরে আসো ।
দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছো কেন ?”
মায়া মুচকি হেসে ভিতরে ডুকে বলতে লাগে
“নতুন ভাবি আসলে এগুলো খালামনি তোমাকে দিয়েছে বলেছে ফ্রেশ হয়ে এগুলো পড়ে নিতে !”
সুবাহ মুচকি হেসে মাথা দুলায় ।মায়া বলতে লাগে
“ভাবি আমি না হয় এখন আসি তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো ব্রেকফাস্ট করে যাও !”
সুবাহ উত্তরে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগে
“আমি এখনি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি “
মায়া চলে যায় সুবাহ শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে যায় ।

অন্যদিকে আরোশ মাত্র জগিং করে বাড়িতে ফিরতেই দেখে ড্রইং রুমে সবাই বসে আছে আর সবার চেহারায়ও বেশ চিন্তার ছায়া ।আরোশ কে বাড়িতে ডুকতে দেখে তার বাবা তাকে নিজের কাছে ডাকে আরোশও তার বাবার পাশে বসে জুস খেতে লাগে ।সবাই আরোশের দিকে তাকিয়ে আছে তাকে এতটা টেন্স্যানফ্রি দেখে ।আরোশের বাবা বলতে লাগে
“আরোশ সত্যি আমি অবাক হচ্ছি কাল থেকে তোমার আচরনে !
কাল এতো কিছু হওয়ার পর ও তুমি এতোটা রিলেক্স মুডে কি করে আছো ?”
আরোশ জুসটা এক নিশ্বাসে শেষ করে বলতে লাগে
“এতোটা টেন্স্যান কি আছে আব্বু !
যা হবার তা হয়ে গেছে !
আমার বিয়ে হবার কথা ছিলো তা হয়েছে সেই একই বাড়ি তে শুধু কনে চেন্স আর তো কিছুনা !”
আরোশের বাবা রেগে বলতে লাগে
“এটা তোমার সাধারন ব্যাপার মনে হয়ে ?
তোমার যদি সুবাহ কে আগের থেকে পছন্দ ছিলো তাহলে তুমি কেন নিদ্রার জন্য আমাদেরকে বিয়ের প্রোপোজাল নিয়ে যেতে বললে ?
নিদ্রা মেয়েটার কেন জীবন নষ্ট করলে ?
তোমরা দুজন দুজনকে পছন্দ কর তা আমাদের আগে বললেই পারতে তাহলে আমরা সুবাহর জন্য বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে যেতাম !
মাঝে দিয়ে তোমাদের দুজনের জন্য নিদ্রার জিবন টা শুধু শুধু নষ্ট হলো !”
আরোশের খালা মুখ ভেঙচি দিয়ে বলতে লাগে
“বুঝি না ঐ বাড়ির মেয়েরা আমাদের ছেলেটাকে কি যাদু করেছে যে ঐ বাড়ির মেয়ে ছাড়া অন্যকোন মেয়েদের দিকে নজর যায়না !
বলি কি দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব ছিলো যে ঐ বাড়িতেই বিয়েটা করতে হলো !
এক বোন মডেলিং আর আর একজন চরিত্রহীন যে নিজের বিয়ের দিন বোনের হবু স্বামীর সাথে পালিয়ে বিয়ে করে ।
আমাদের ছেলের মাথা টা শেষ করে দিলো ঐ বাড়ির মেয়েরা !”
আরোশ তার খালার দিকে চোখ বাকাঁ করে তাকিয়ে বলতে লাগে
“সুবাহ এখন আমার বউ ওর ব্যপারে কেউ আজেবাজে কথা বললে আমি তা সয্য করবোনা !
অন্যকাউকে আমার বউয়ের ব্যপারে কথা বলতে হবে না !
আর আমার বউকে নিয়ে মাথা না ঘামালেই আমি খুশি হবো !
আর আপনাদের যদি আমার বউ কে নিয়ে প্রবলেম হয় তাহলে বলে দিন আমি তাকে নিয়ে অন্য কোথাও সিফ্ট হয়ে যাবো ।
আর আরেকটা কথা নিদ্রার জীবন নষ্ট হয়নি তার জীবন নষ্ট হওয়ার থেকে বেচেঁ গেছে ।”
বলেই আরোশ নিজের রুমে চলে যায় ।এদিকে সবাই আরোশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ।আরোশের বাবা মা জানে আরোশ ছোট থেকেই বেপরোয়া জেদি যা বলে তাই করে কিন্তু তারা এটাও জানে আরোশ কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না কখনো কারো সাথে অন্যায় হতে দিবেনা !
তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপের পিছনে কোন না কোন কারন থাকে ।

আরোশ দরজা ঠেলে রুমে ডুকতেই হঠাৎ তার মুখে কয়েক ফোটা পানির ছিটা এসে পড়ে আরোশ সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেলে ।আরোশ আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে সুবাহ তার ভেজা চুল গুলো ঝাড়ছে পড়নে টকটকে লাল শাড়ি ব্লাউজের পিঠ বড় হওয়ায় পিঠ দেখা যাচ্ছে পিঠে চুল থেকে ঝরে পড়া বিন্দু বিন্দু পানি গুলো সুবাহর ফরসা পিঠে লেগে আছে পুরো মুক্তার মত লাগছে !
জানালা দিয়ে বাহিরের রোদের কিরনটা একদম সুবাহ র মুখেমখি পড়ছে একদম অন্যরকম সুন্দর্য বিরাজ করছে !
‌তাকে বেশ মায়াবী লাগছে কেমন যেন এক নেশা আরোশকে টানছে !
আরোশ ইচ্ছা করেও নিজেকে আটকাতে পারছেনা সব কিছু যেন তার আয়ত্বের বাহিরে চলে গেছে কোন মায়াজালে বাধাঁ পড়ে গেছে আরোশ !
আরোশ এক পা এক পা করে সুবাহ র দিকে আগাতে লাগে ।অন্যদিকে সুবাহ বেখেয়ালি হয়ে নিজের চুল ঝাড়ছে হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তার শাড়ির ভাজের মধ্যে দিয়ে কেউ তার কমোড় জরিয়ে ধরতেই ভয়ে সে লাফিয়ে উঠে !
কিন্তু যখন পিছনে থাকা বেক্তি তার কাধেঁ নিজের ঠোঁট ছোয়ায় তখন তার বুঝতে বাকি রইলো না কে সে তাই কিছুটা স্থির নিশ্বাস ফেলে কিন্তু তার মনের অস্থিরতা এখনো কমছেনা কারন আরোশের এভাবে তাকে জরিয়ে ধরাটা তার মাঝে অস্থিরতা তৈরী করছে ।তাকে ভিতর থেকে তোলপাড় করে দিচ্ছে আরোশের স্পর্শগুলো ।আরোশের ঠোঁটের স্পর্শগুলো আস্তে আস্তে গভীর হতে লাগছে আরোশের স্পর্শ যতটা গভীর হচ্ছে সুবাহ র অস্থিরতা ঠি ক ততটাই প্রবল হচ্ছে ।
সুবাহ বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে হঠাৎ আরোশ সুবাহ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় ।নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখে সুবাহ চোখ বুঝে আছে বেশ কিছু সময় সুবাহ র দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে চলে যায় ।সুবাহ হা হয়ে আরোশের এমন ব্যবহারে তাকিয়ে থাকে !
হয়তো আরোশ রেগে তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে !
আবার হয়তো বুকে জমে থাকা এত সময়ের অভিমানের কারনে কাছে টানতে পারেনি !
আরোশ নিজে থেকে তাকে কাছে টেনে আবার নিজেই তাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দেওয়াতে সে বেশ অপমানবোধ করে কিন্তু তারপর আরোশের পরিস্থিতীটা বিবেচনা করে তা স্বাভাবীক ভাবে নেয় !কারন দোষ টা তারই ছিলো সে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আরোশকে !
আরোশের তার প্রতি এই রাগ অভিমান জিদ করাটা জায়েজ আছে কারন সে খুব বেশি অন্যায় করেছে আরোশের প্রতি !
তাকে সত্যি থেকে আড়াল করেছে কিন্তু তাকে কখনো ঠকাতে চায়নি পরিস্থিতীটা এমন ছিলো তাকে সব বাদ্ধ হয়ে করতে হয়েছে নিজেকে আড়াল করতে হয়েছে তার থেকে ।
সে সব করতে বাদ্ধ ছিলো !
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কারো ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে আরোশের মা দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে হাতে কিছু ব্যাগ ।
সুবাহ আরোশের মাকে দেখে মুচকি হেসে সালাম দেয় আরোশের মা সালামের উত্তর নিয়ে বলতে লাগে
“এখানে কিছু শাড়ি আর জুয়েলারি আছে কালকের reception এর জন্য ও ড্রেস আছে ।
আর হ্যা আমি ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি মায়া কে দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিও ।”
আরোশের মায়ের কথায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তিনি সুবাহ র উপর কিছুটা রেগে আছে ।আরোশের মা যেতে নিলে সুবাহ পিছন থেকে তার হাত আটকিয়ে ধরে ।ছলছল চোখে তাকিয়ে বলতে লাগে
“আন্টি আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন ?
আন্টি বিশ্বাস করুন আমি এসবের কিছুই জানতাম না ..”
আরোশের মা সুবাহ কে থামিয়ে বলতে লাগে
“সুবাহ তুমি আর আরোশ একে অপরকে ভালোবাসো তা যদি আমাকে আরো আগে জানাতে তাহলে সব কিছু এতটা অগোছালো হতো না সমাজে সবার সামনে সবাইকে ছোট হতে হতো না !
প্রথম থেকেই তুমি আমার পছন্দের ছিলে নিদ্রা থেকে বেশি আমার কাছে তুমি পছন্দের ছিলে ।আমি তোমাকে প্রথম দেখে আমার ছেলের বউ করে আনতে চাইছিলাম আমার নিদ্রা থেকে তোমাকে বেশি পছন্দ ছিলো !
তোমরা আমাকে একবার বললেই পারতে আমি সব ঠি ক করতাম তা না করে তোমরা এত বড় একটা স্টেপ নিলে যা দুই পরিবারের মানসম্মানের উপর প্রভাব পড়লো ।
আমার কাছে তুমি অন্যরকম ছিলে আমার মেয়ের মত অন্ততো তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি !”
সুবাহ কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“আন্টি সত্যি আমি এমন কিছু করতে চাইনি আরোশ …”
আরোশের মা সুবাহ কে থামিয়ে বলতে লাগে
“যা হবার তা হয়ে গেছে তা নিয়ে এখন আর ভাবতে হবে না তা বলেও লাভ নেই ।আমি চাই তুমি সবকিছু নতুন করে শুরু করো সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেও ।
যদিও সবাই এখন একটু রেগে আছে কিন্তু আমার বিশ্বাস তুমি ঠিকই সবার মন জয় করে নিবে !”
এসব বলে সুবাহ র মাথায় হাত বুলিয়ে আরোশের মা চলে যায় ।

সারাদিন নিজের রুমে একা বসেই কাটিয়ে দেয় আরোশকেও সকালের সেই ঘটনার পর আর দেখেনি ।বিকাল দিকে মায়ার সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায় ।
রাত ১০ টার দিকে আরোশ বাড়ি ফিরে নিজের রুমে এসে দেখে সুবাহ নেই পুরো রুম অন্ধকার তা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় আরোশ ।তার মনে একটা ভয় কাজ করে
আবার সুবাহ তাকে ছেড়ে চলে যায়নি তো ?
সুবাহকে আসে পাশে খুঁজতে লাগে রুমে বারান্ধায় ওয়াশরুমে না পেয়ে তারাতারি করে নিচে যেয়ে খুজতেঁ লাগে ।নিচে যেয়ে হঠাৎ বাড়ির পিছন দিকে বাগানে হাসির শব্দ পায় আরোশ তারাতারি করে সেদিকে যায় যেয়ে দেখে আরোশের কাজিনরা সুবাহ কে ঘিরে বসে আছে তারা হাসি ঠাট্টা করছে সুবাহ তাদের মাঝে বসে আছে টুকটাক কথা বলছে ।আরোশ সুবাহ কে দেখে স্থির একটা নিশ্বাস নেয় ।
সুবাহ দেখার আগেই সেখান থেকে সরে যায় রুমে যেয়ে গাঁ এলিয়ে দেয় আজ সারাদিন বেশ বেস্ত ছিলো কাল রিসেপশন তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়েছে তাছাড়া সুবাহর আসে পাশে থাকলে সে নিজেকে সুবাহ র আড়াল করতে পারে না ।বারে বারে সুবাহ র কাছে চলে যায় কোন এক আকর্ষন শক্তি তাকে তার দিকে টানে ।
নিজের মনের উপর কন্ট্রোল হারায় আবার তার থেকে দূরে ও থাকতে পারছেনা ।তার কাছে গেলে তার আঘাত গুলো বার বার মনে পড়ে তার মিথ্যা ছলনা গুলো মনে পড়ে যায় ।আরোশ কি করবে তা সে নিজেও বুঝছেনা কোন এক অদৃশ্য যন্ত্রনা তাকে ঘ্রাশ করছে ।
রাত ১১ টার দিকে সুবাহ রুমে এসে দেখে আরোশ বেডে শুয়ে আছে কপালে একহাত পুরো রুম অন্ধকার সুবাহ তা দেখে কোন শব্দ ছাড়া দরজা লক করে আস্তে আস্তে আলতো পায়ে রুমে ডুকে তারপর ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আরোশের পাশের থেকে বালিশ নিয়ে সোফার দিকে পা বাড়ায় ঘুমানোর জন্য ।
হঠাৎ পিছন থেকে আরোশের গম্ভির কন্ঠে থেমে যায় ।আরোশ আগের মতই একই অবস্থায় বলতে লাগে
“চুপচাপ এখানে আমার পাশে শুয়ে পড়ো !
এখানে কোন সিরিয়াল চলছে না যে হিরোইনদের মত সোফায় গিয়ে ঘুমাবে ।
সুবাহ আর কোন কথা বাড়ায় না চুপচাপ বেডের এক কোনায় আরোশের থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়ে ।সকালের বেপারটা নিয়ে এমনিতেই আরোশ হয়তো তার উপর বেশ রেগে আছে এখন যদি টাচ লাগে তাহলে হয়তো তাকে চিবিয়েই খেয়ে ফেলবে !
এসব ভাবতে ভাবতেই সুবাহ ঘুমিয়ে পরে ।সুবাহ ঘুমিয়ে পড়ার পরই আরোশ সুবাহর কাছে এসে তাকে বেশ কিছু সময় দেখতে লাগে তারপর সুবাহকে আরোশ নিজের বুকের মাঝে গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে সুবাহ ও ঘুমের ঘোরে আরোশের সাথে গভীর ভাবে মিশে যায় হয়তো এতো সময় ধরে এমনই একটা আশ্রয় খুজঁছিলো যা সে পেয়ে গেছে ।এতো সময় ধরে তার বুকে কেমন জানো অশান্তি লাগছিল চোখে ঘুম আসছিল না কিন্তু এখন এক শান্তি বিরাজ করছে ।সে যতই সুবাহ র উপর রাগ দেখাক অভিমান করুক ভালো তো তাকেই বাসে ।আরোশ সুবাহর বুকে জরিয়ে রেখে গভীর ভাবে তাকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয় হয়তো এখন একটু শান্তিতে ঘুম আসবে ।………

চলবে……..
❤️❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন ???

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :২

0

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :২

Urme prema (sajiana monir)

নিভু নিভু চোখে তাকালো সুবাহ কোন এক অন্ধকার রুমে সে আছে বাহিরের আলোয় আবছা আলোকিত হয়ে আছে পুরো রুম ।
নিজের কাপড়ের দিকে তাকাতেই দেখে সে বিয়ের সাজসজ্জায় আছে ।বিয়ের কথা মনে পড়েই লাফ দিয়ে উঠে বসে ।সে তো তার রুমে ছিলো তাহলে সে এখানে কি করে আসে তা ভাবতে লাগে !
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ বেডের সামনা সামনি থাকা সোফার দিকে নজর যায় ।আরোশ পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে তার অগ্নিদৃষ্টি সুবাহ র দিকে নিক্ষেপ করছে চোখ লাল হয়ে আছে তার !
সুবাহ আরোশের এমন চাহনি দেখে বড় ডোক গিলে ।
তারপর নিজের ভয়কে দূর করে আরোশের দিকে আঘাতে লাগে কারন তার এই মুহূর্তে সবকিছু ভুলে তার বাড়ি যাওয়াটা জরুরী ঐ দিকে বাড়িতে হয়তো আদীর বাড়ির লোক পৌছিয়ে গেছে আর সবাই সুবাহ কে না পেয়ে হয়তো খুঁজাখুজি করছে !
সুবাহ ঠি ক সময়ে না পৌছালে সর্বনাশ হয়ে যাবে পুরো এলাকার লোকেদের সামনে তার বাবার দাদাভাই চাচাদের মাথা কাটা যাবে !
সবাই ভাববে সুবাহ পালিয়ে গেছে মানসম্মান নষ্ট হবে ।তার উপর সে যদি আদিকে বিয়ে না করে তার দাদী সব শেষ করে দিবে ।তাদের পুরো পরিবার ভেঙ্গে যাবে !
সুবাহ আরোশের সামনে যেয়ে বলতে লাগে
“আরোশ ভাইয়া আমি জানিনা আপনি কি চান !
কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন !
আর কেনই বা আমাকে শাস্তি দিবেন ?
যদি আপনার আমাকে শাস্তি দেওয়ার থাকে তাহলে দিয়েন কিন্তু প্লিজ আমাকে যেতে দিন !
আদির বাড়ির লোক এসে গেছে বাসায় সবাই আমাকে না পেয়ে বেশ চিন্তা করছে ।
প্লিজ আমাকে যেতে দিন !”
সুবাহ র সব কথা আরোশ দাতেঁ দাতঁ চেপে হাত মুঠি বদ্ধ করে শুনছে !
হঠাৎ আরোশ রেগে সুবাহ র হাত টান দিয়ে নিজের কাছে বসিয়ে ফেলে তারপর কার কমোড়ে চাপ দিয়ে কাছে টেনে আনে তারপর অন্যহাতে চুলের মুঠিটা ধরে বলতে লাগে
“উড়না টা ঠিক করে নেও !
নিচে কাজি বসে অপেক্ষা করছে ।”
সুবাহ মাথায় যেন বাজ পরে ।সুবাহ কাপাঁকাপা গলায় বলতে লাগে
“কাজি কেন ?
আর আমি এখন বাসায় যাবো আমাকে যেতে দেন !”
আরোশ শান্ত গলায় বলতে লাগে
“কাজি এসেছে কারন আমরা বিয়ে করছি !
২ মিনিটের মধ্যে সব ঠি ক ঠাক করে নিচে চলো না হয় খারাপ কিছু হয়ে যাবে !”
সুবাহ চোখ থেকে গড়িয়ে পানি ঝড়ছে সুবাহ কান্না করচে করতে বলতে লাগে
“আপনি কি পাগল ?
আজ আমার বিয়ে আদির সাথে আর কাল আপনার বিয়ে নিদ্রার সাথে আর আপনি আমাকে এখন বলছেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন ?
পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি ?
আমি বাসায় যাবো আমাকে যেতে দিন প্লিজ !”
আরোশ সুবাহ র কথার শুনে আরো গর্জিয়ে উঠে হিংস্র বাঘের মত !
সুবাহ চুলের মুঠি আরো শক্ত করে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে !
সুবাহ ব্যথায় “আহহহ” করে কুকড়িয়ে উঠে !আরোশ চিৎকার রেগে চিৎকার করে বলতে লাগে
“ভেবেছিলাম তুই সব কিছু মেনে নিবি নিজের অপরাধ স্বিকার করবি ! নতুন করে সব শুরু করবো পুরনো সব ভুলে ।
কিন্তু না তুই তো আদি কে বিয়ে করার জন্য অস্তির হয়ে পড়েছিস ।
আমি তোকে কখন অন্য কারো হতে দিবোনা বুঝেছিস তুই শুধু আমার থাকবি তোর সাথে যা করার সব আমি করবো তোকে কষ্ট দিবো তোকে শাস্তি দিবো তোকে ভালো….”
আরোশ আর কিছু বলে না কিছুসময়ের জন্য চুপ হয়ে যায় তারপর আবার বলতে লাগে
“আমি নিদ্রাকে বিয়ে করছিনা !
২ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে চল কাজি বসে আছে !
যদি তা না করিস তাহলে যা করতে চাইছিনা তা করবো তখন তুই নিজে বিয়েটা করতে বাদ্ধ থাকবি !”
আরোশের কথা শুনে সুবাহ ভয়ে ডোক গিলে থম মেরে বসে থাকে ।আরোশ সুবাহ কে থম মেরে বসে থাকতে দেখে নিজেই সুবাহ র উড়না ঠি ক করে দিয়ে মাথায় ঘুমটা টেনে দিয়ে হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে যায় !

অন্যদিকে সুবাহ র বাড়িতে তাকে না পেয়ে পুরো বাড়ি তোলপাড় হয়ে আছে এলাকার মানুষ বিভিন্ন কথা বলছে কেউ বলছে মেয়ের চরিত্র ভালো না ,আবার কেউ বলছে বিয়ের আগে নিজের প্রেমিকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো তাই তার সাথে পালিয়েছে !
সুবাহ দাদাভাই ,বাবা ,চাচা সব কিছু মাথা নত করে শুনছে কোন কিছুর উত্তর দিতে পারছেনা !
যারা চোখ তুলে তাদের সামনে কথা বলার সাহস পায় না তারা আজ এত কথা শুনিয়ে যাচ্ছে ।এলাকায় তাদের সবার সামনে নত হয়ে গেছে !
প্রায় অনেকেই জানাজানি হয়ে গেছে সুবাহ আর আরোশ এক সাথে আছে ।তা নিয়ে সুবাহকে যা তা বলে যাচ্ছে বার বার তার চরিত্রের দোষ দিচ্ছে সবাই !
আর বলছে নিজের বোনের জামাইকে ফাসিয়ে তার সাথে বিয়ের দিন পালিয়েছে ।
আদির বাড়ির লোকেও বেশ অপমান হতে হয়েছে !
আদির বাড়ির লোকেরা ও সুবাহ র পরিবারকে বেশ কথা শুনিয়েছে ।
অন্যদিকে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সুবাহ র দাদী নাসরিন বেগমের চেহারায় স্পষ্ট চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে ।পাশেই বসে কান্না করে যাচ্ছে নিদ্রা !
নাতনির কান্না টা সয্য করতে পারছেনা নাসরিন বেগম বার বার সুবাহকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে ।
আর যাতা করে বকাযকা করে যাচ্ছে। রাত ১২ টা বাজতে চলছে মেহমান সব চলে গেছে বরযাত্রী ও ফিরে গেছে শুধু রয়ে গেছে আদি আর তার বাবা মা !
ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে বেশ চিন্তিত হয়ে সবার চোখ দরজার দিকে সুবাহ ফিরার অপেক্ষা করছে !
হঠাৎ বাহিরে গাড়ির শব্দ পায় ।গাড়ির শব্দ পেয়ে সবাই দরজার সামনে এগিয়ে যায় ।যেয়ে দেখে আরোশ সুবাহ এক হাত ধরে দাড়িয়ে আছে !
আর সুবাহ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ।
এমন দৃশ্য দেখে সুবাহ বাবা রেগে সুবাহ র কাছে যেয়ে রেগে ২ টা থাপ্পর বসিয়ে দেয় ।বাবার থাপ্পরে পুরো স্থব্দ হয়ে যায় সুবাহ !
যে বাবা তাকে কখনো জোর গলায় ধমক দেয়নি আজ তার গায়ে আঘাত করলো !
তা ভেবেই চোখে জল এসে পড়ে সুবাহ কান্না করতে লাগে !
আরোশের কল্পনার বাহিরে ছিলো সুবাহ র বাবা সুবাহ গায়ে হাত তুলাটা !
সুবাহ র বাবা রেগে বলতে লাগে
“আমার আদরের এমন সুযোগ নিবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমার গর্ব ছিলে তুমি আমার অহংকার ছিলে তুমি আজ আমার অগংকার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল !
সমাজের সামনে আমাকে তুমি ছোট করে দিলে ।আমার মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলে !
আমি তোমার চেহারা ও দেখতে চাই না ।”
সুবাহ তার বাবার কথা শুনে কান্না করতে লাগে ।তার বাবার হাতে ধরে বলতে লাগে
“প্লিজ আব্বু আমার কথাটা একবার শুনো !
আমাকে সব কিছু ক্লিয়ার করার একটা সুযোগ দেও আমার কথাটা একবার শুনো ।
প্লিজ আব্বু এমন করো না !”
সুবাহ বাবা নিজের হাত ঝারি দিয়ে ছাড়িয়ে পিছন ফিরে বাড়ির দিকে চলে যায় !
সুবাহ হাটু গেড়ে নিচে বসে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগে !
নিজের বাবা কে সবচেয়ে বেশি ভালেবাসে সুবাহ আজ নিজের বাবার মুখে এসব কথা শুনে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার !
পাশ থেকে সুবাহ র দাদী তার দিকে তেড়ে এসে বলতে লাগে
“তোর কোন দিন ও ভালো হবে না !
তুই বাপ মরা এতিম মেয়ের থেকে তার সুখ কেড়ে নিয়েছিস তোর কোন দিনও ভালো হবে দেখিস !
কোন দিন ও তুই সুখি হবি না !
তুই একটা নষ্টা মেয়ে !”
বলেই যেই সুবাহ র উপর হাত উঠাতে নেয় আরোশ সুবাহ র দাদীর হাত আটকিয়ে ফেলে !
এত সব সুবাহ র দাদীর প্রত্যেকটা কথা হাতের মুঠি বদ্ধ করে দাতেঁ দাতঁ চেপে শুনছিলো ।
সুবাহ র উপর হাত উঠানোটা সে সয্য করতে পারে না ।আরোশ তার দাদীর হাত ঝারি দিয়ে ফেলে রেগে বলতে লাগে
“ব্যাসসসস !অনেক হয়েছে !
আপনারা অনেক বলেছেন চুপচাপ শুনে যাচ্ছি বলে এইনা যা খুশি তা করবেন !
সুবাহ এখন আর শুধু এই বাড়ির মেয়ে না !
শুধুই যাবরিন সুবাহ আহমেদ না !
এখন সে যাবরিন সুবাহ খাঁন আরোশ খাঁনের স্ত্রী ।আর আমার স্ত্রীকে যাতা বললে আমি সয্য করবোনা !
আমার স্ত্রীর উপর হাত তোলা তো দূর তাকে কিছু বলার আগে ও ভেবে চিন্তে নিবেন !
আমি এখানে সুবাহ কে নিয়ে এসেছি সবাইকে জানাতে যে আমরা বিয়ে করে নিয়েছি !
আমাদের কর্তব্য ছিল সবাইকে জানানো তা জানিয়েছি এখন মেনে নেওয়া আর মেনে না নেওয়া সেটা আপনাদের ব্যপার !”
সুবাহ আরোশের কথায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ।আরোশ সুবাহ র দাদীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“এরপর থেকে আমার স্ত্রীকে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে করে নিবেন ।”
কথা গুলো বলে আরোশ নিজের মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“আব্বু আম্মু তোমরা কি এখন বাসায় যাবে ?
নাকি আরো দেরি করবে ?”
আরোশের বাবা বলতে লাগে
“না আমরা এখনই যাবো !”
আরোশ সুবাহর হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসায় গাড়ি স্টার্ড দেয় বাসার উদ্দ্যশে অন্য গাড়িতে আরোশের বাবা মা ও অন্য গাড়িতে করে রওনা দেয় উনারা এসেছিলো সুবাহ আর আদির বিয়ে এটেন্ড করতে কিন্তু এত সব ঝামেলায় উনারা স্থব্দ হয়ে গেছে নিজেদের ছেলের হঠাৎ এমন পদক্ষেপ এ উনারা বেশ শকে আছে ! কি বলবে তা খুজেঁ পাচ্ছেনা ।

ঘড়িতে ২ বাজতে চলছে সুবাহ আরোশের বেডে বসে মুখ গুজেঁ কান্না করে যাচ্ছে ।কিছুক্ষন আগেই বাড়ি ফিরেছে বাড়িতে তাদের বিয়ে নিয়ে বেশ আনাগুনা চলছে ।আরোশের আত্নীয় স্বজন রা এসব নিয়ে বেশ কথা বলা বলি করছে !
আরোশ কাউকে তেক্কার না করে সুবাহকে সোজা নিজের ঘরে নিয়ে এসেছে ।
আরোশ বেডের সামনে সোফায় বসে একের পর এক ডিংক্স করে যাচ্ছে আর নিজের নেশা ভরা চোখে সুবাহকে দেখে যাচ্ছে ।তার সামনে সুবাহ কে বউ সাজে দেখে নেশা চড়ে যাচ্ছে তার কাছে এই মূহুর্তে মদের নেশা থেকে সুবাহ র নেশা বেশি ঝেকেঁ ধোরেছে !
নিজেকে বার বার কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বারই নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে সে !
অবশেষে নিজেকে আটকাতে না পেরে সুবাহ র কাছে চলেই যায় বেডের সামনে ফ্লোরে হাটুঁ ভেঙ্গে সুবাহ র মুখটা দু হাতে আলতো করে ধরে তার দিকে তাকিয়ে থাকে একনজরে আরোশের চোখে হাজারো নেশা ভিড় করছে । আরোশ আস্তে আস্তে নিজের মুখটা সুহাহর দিকে আগাতে লাগে সুবাহ র ঠোঁটের কাছে আঘাতে লাগে আরোশের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে সুবাহ অসহায় ভাবে বলতে লাগে
“কেন এমন করলেন ?
কেন সব কিছু শেষ করে দিলেন ?
আপনি নিদ্রাকে বিয়েটা করলেও পারতেন কেন আমাকে বিয়ে করলেন ?”
আরোশের মুহূর্তেই ধ্যান ফিরে আসে সুবাহ র করা প্রত্যেকটা কাজ তার দেওয়া ধোকা তার মনে পড়ে যায় ।সে সুবাহর গালে রাখা দুই হাত আরো শক্ত করে ধরে ।তার পর রাগে বলতে লাগে
“তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে ভালোবাসতে বিয়ে করেছি ?
মটেও না আমাকে দেওয়া আঘাত কষ্ট আর ধোকার প্রতিশোধ নিতে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি !
তুমি আমার সাথে যা করেছো তার শাস্তি দিতে তোমাকে বিয়ে করেছি ।তুমি আমাকে তিলে তিলে মেরেছো !
আমি তোমাকে কি করে ক্ষমা করবো ?
কেন আমার মন কে নিয়ে এমন খেললে ?
তোমরা দু বোন ?
আমার ভালোবাসার তো কোন কমতি ছিলোনা তাহলে কেন এমন করলে ?
আদিকে পাবার জন্য !
আদির এমন কি আছে যা আমার নেই ?
আমার কিসের অভাব ছিলো ?
আমার সাথে কেন এমন লাভ গেইম খেললে ?
সুবাহ যা করেছো সব কিছুর ফল তোমাকে পেতে হবে !
শাস্তি তোমাকে পেতে হবে ।”
বলেই আরোশ সুবাহকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বারান্ধায় চলে যায় ।সুবাহ বিছানায় মুখ গুজেঁ কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“যদি আপনাকে বুঝাতে পারতাম আমি কেন এসব করেছি !
আমিও যে আপনাকে ততটাই ভালোবাসি যতটা আপনি আমাকে ভালোবাসেন ।”

অন্যদিকে আরোশ আকাশের দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে তার বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যথা করছে সে চায়নি কখন সুবাহ র সাথে এমন কিছু করতে সে তো সব সুন্দর ভাবে মেনে নিচে চেয়েছিল তার প্রভাকে চেয়েছিলো তার প্রভাকে সারাজীবনের জন্য ভালোবেসে আপন করে নিতে চেয়েছিল কিন্তু সুবাহ আর নিদ্রা তার সাথে এমন গেম প্লান করবে তাকে এত ধোকা দিবে সে এটা কল্পনাও করতে পারিনি ।
তার মনটাকে দুবোন ভেঙ্গে দিয়েছে !
এসব ভাবতে ভাবতে আরোশ তার পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে
“এই জিনিসটাই আমাকে ৪ টা বছর ধরে অগোছালো করে রেখেছে !
এত কিছু হবার পরও কেন আমি সুবাহ কে ঘৃনা করতে পারছিনা ?
কেন তাকে দেখলে নিজের মনকে নিজের অনুভূতি কে আটকিয়ে রাখতে পারিনা !”
এসব ভাবতে ভাবতেই ভোরের আজানের আওয়াজ তার কানে আসে ।আরোশ রুমের দিকে আগায় সেখানে যেয় দেখে সুবাহ কান্না করতে করতে অগোছালো হয়ে ঘুমিয়ে আছে চোখ এখনো ভেজা ভেজা রয়েছে !
সুবাহ কে এমন ভাবে দেখে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে বুকে চিন চিন করে ব্যথা করছে কিন্তু সুবাহ র বিশ্বাসঘাতকতার পর থেকে তাকে মেনেও নিতে পারছে না ।
সুবাহকে বেডে ঠিক ভাবে শুয়িয়ে দিয়ে তার মুখের কাছে পড়া চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগে
“তুমি যদি এসব না করতে তাহলে হয়তো আমাদের গল্পটা অন্যরকম হতো ।
আজকের দিনটা ‌অন্যরকম হতো যেখানে শুধুই ভালোবাসা থাকতো ।”

চলবে……
❤️❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন ???

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :১

0

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :১

Urme prema (sajiana monir)

আজ যাবরীন সুবাহ র বিয়ে পুরো বাড়ি বাহারী রং এর আলোয় জলমল করছে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে হবে নাই বা কেন একসাথে বাড়ির দুই মেয়ের বিয়ে আজ সুবাহ র আর কাল তার ফুফাতো বোন নিদ্রার ।সুবাহ অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী বাবা মায়ের বড় মেয়ে তার ছোট দুই ভাইবোন রয়েছে ।এলাকায় আর ৫ টা প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে তার পরিবার একটা ।এলাকায় বেশ নামডাক রয়েছে সুবাহ র দাদাভাইয়ের !
আয়নার সামনে কনে সেজে মনমরা হয়ে বসে আছে সুবাহ হাতে আরোশের ছবি ।নিজের বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের কতই না জলপনা কল্পনা থাকে !
চোখে কতই না স্বপ্ন থাকে অথচ সুবাহ চোখে না আছে কোন স্বপ্ন না আছে কোন আনন্দ ।থাকবেই কি করে ?
যার মনে বসবাস অন্য কারো আর বিয়ে হতে যাচ্ছে অন্য কারো সাথে তার চোখে কি করে কোন স্বপ্ন আনন্দ থাকবে !
সুবাহ র সব কিছুই বিরক্ত লাগছে অসয্য লাগছে ।
কিন্তু সব কিছু বিরক্ত লাগলেও তার মেনে নিতে হবে !
এই তো ২ মাস আগেই তো সে সবকিছু ছাড়ার আরোশ কে ভুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে !
সে নিজের ভালোবাসাকে কুরবান করে দিয়েছে নিজের পরিবারের সুখের জন্য !
আরোশের সারাজীবন অজানাই থেকে যাবে সুবাহ র অবক্ত ভালোবাসাটা !
এই সব ভাবতে ভাবতেই সুবাহ র চোখের জল গড়িয়ে পড়ে !
এমন সময়ই দরজা ঠেলে হুরমুর করে ভিতরে ডুকে পরে সুবাহ র দাদী আর ফুফাতো বোন নিদ্রা !
সুবাহ তাদের দেখেই নিজের চোখের জল আর আরোশের ছবি লুকাতে বেস্ত হয়ে পড়ে ।কিন্তু সুবাহ র চোখের জলটা না দেখলেও আরোশের ছবিটা তারা ঠি কই দেখে ফেলে আর তা দেখে নিদ্রা মুখ ভেঙ্গছি দিয়ে বলতে লাগে
“আর কত অভিনয় করবি সুবাহ ?
এবার তো আমার আরোশের উপর থেকে নিজের কুনজর সড়া ।
আজ তোর বিয়ে আদির সাথে !
আর কাল আমার আর আরোশের বিয়ে ।
এখনো তুই আরোশের ছবি নিয়ে এতো নাটক করছিস ?
আর কত এবার তো আমার আরোশের পিছন ছাড় !
আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দে !”
সুবাহ নিদ্রার এসব কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারে না রেগে বলতে লাগে
“নিদ্রা সত্যিই কি আরোশ তোর ছিলো কখনো ?
ভুলে যাসনা আমি পিছন সরে এসেছি বলে তুই আরোশকে পেয়েছিস !
আর আরোশ যদি সত্যিটা জানতে পারে সে কি তোর থাকবে ?
ভুলে যাসনা আমার দয়ায় তুই আরোশ কে পাচ্ছিস ।”
নিদ্রা চুপ হয়ে যায় তার চোখে মুখে ভয় ফুটে উঠে ।পাশ থেকে সুবাহ র দাদী রেগে ধমকের স্বরে বলতে লাগে
“সুবাহহহ !
তুই খুব বেশি বেড়ে গেছিস ।
তুই ও ভুলে যাসনা তুই এর বিনিময়ে কি চেয়েছিস !
আমার একটা কথায় সব কিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে ।”
সুবাহ তার দাদীর কথা শুনে নিশব্দে নিজের চোখের জল ফেলতে লাগে ।মানুষ ঠি ক কতটা স্বার্থপর হতে পারে তা হয়তো নিজের দাদীকে না দেখলে সে বুঝতো না !
সুবাহ কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“আফসোস দাদু তুমি নিদ্রাকে ঠি ক যতটা ভালোবাসো তার শত ভাগের এক ভাগ যদি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে হয়তো তুমি আমার কষ্টটা বুঝতে !
আমার কষ্টটা অনুভব করতে পারতে !
আমি সারাটা জীবন তোমাকে আপন মনে করে ভালোবেসে এসেছি !
অথচ তুমি আমাকে আমার মাকে আর আমার ভাই বোনকে কখনই নিজের মনে করনি !
সবসময় দু চোখে দেখেছো ।
আমাদের জানা ছিলোনা এতটা ঘৃনা কর আমাদের যে আমাদের তোমার সয্য হয়না !”
সুবাহ র দাদী রেগে গর্জিয়ে বলতে লাগে
“আমি তোর এত কথা শুনতে চাইনা !
আমি চাই তুই এই বাড়ি থেকে আর নিদ্রা আর আরোশের জীবন থেকে দূরে চলে যা ।
আমার নাতনির জীবন আমি তোর কারনে নষ্ট হতে দিবোনা !
তোরা মা মেয়ে একদম এক হয়েছিস নাগিন !
যেখানে যাস নিজেদের বিষ ছাড়াস !
তোর মায়ের কারনে আমার আর আমার ছেলের মধ্যে এত দূরত্ব হয়েছে !
আর তুই যদি চাস সব ঠি ক হোক তাহলে আরোশ আর নিদ্রার জীবন থেকে দূরে সরে যাহ !
আদি কে বিয়ে করে বিদায় হ এ বাড়ি থেকে ।”
বলেই আর এক সেকেন্ড দেরীনা করে সুবাহ র দাদী নাসরিন বেগম চলে যায় ।আর তার পিছু পিছু লেজের মত নিদ্রা ছুটে !
নাসরিন বেগম যেতেই সুবাহ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে চিৎকার করে কান্না করতে লাগে ।পাশ থেকেই সুবাহ র বান্ধুবী জান্নাত তার পাশে বসে তাকে সামলাতে লাগে !
এত সময় সবকিছু নিরব দর্শকের মত দেখছিলো জান্নাত !
তার প্রথম থেকে এই পর্যন্ত সব কিছু জানা আছে ।
সে চাইলেও কিছু বলতে পারছেনা কারন সুবাহ কড়া ভাবে তাকে মানা করেছে !
দাতেঁ দাতঁ চেপে সব কিছু সয্য করেছে ।তারা যেতেই জান্নাত পাশ থেকে বলতে লাগে
“সুবাহ তুই কার জন্য করছিস এসব তোর এই স্বার্থপর দাদীর জন্য ?
যে নিজের মেয়ে ঘরের নাতনিকে ছাড়া কিছুই বুঝে না ! “
সেহের চোখ মুছতে মুছতে বলতে লাগে
“আমি মটেও দাদীর জন্য কিছু করছিনা !
আমি যা করছি সব আমার আব্বুর খুশির জন্য করছি ১৯ বছর ধরে আব্বু নিজের মায়ের ভালোবাসা পায় না আদর পায় না !
এক বাড়িতে থাকার পর ও দাদী তার সাথে কথা বলে না নিজের কাছে টেনে নেয় না করনাটা ছিলো আব্বু কাউকে না জানিয়ে মাকে বিয়ে করার অপরাদে !
দাদাভাই মেনে নিলেও দাদী কখনো মাকে মেনে নেয়নি না আমাদের ভাই বোনদের !
আব্বুকে দাদীর ভালোবাসা আদর পাওয়ার জন্য আমি ১৯ বছর আব্বুকে কাতরাতে দেখেছি কষ্টে দেখেছি যদি আমার ভালোবাসা ত্যাগে আমার আব্বু নিজের মায়ের ভালোবাসা ফিরে পায় তাহলে এমন হাজার বার নিজের ভালোবাসা আমি ত্যাগ করতে রাজি !”
জান্নাত করুন কন্ঠে বলতে লাগে
“তুই কি মনে করিস যদি আরোশ ভাইয়া সত্যিটা কখনো জানতে পারে তাহলে নিদ্রাকে মেনে নিবে ?
আরোশ ভাইয়া সব কিছু তছনছ করে দিবে !
শেষ করে দিবে ।”
সুবাহ বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলতে লাগে
“আরোশের সামনে কখনো সত্যিটা আসবেনা !
আমি কখনই জানতে দিবোনা তার “প্রভা “ নিদ্রা না আমি !”
জান্নাত বলতে লাগে
“সত্যি কখনো আড়াল থাকে না !”
সুবাহ বলতে লাগে
“আমি সত্যটা সব সময় আড়াল করেই রাখবো আরোশ কে কখনই জানতে দেবনা কিছু !
আর কয়েক ৩ ঘন্টা পরই আদির সাথে আমার বিয়ে ।
আর এই বিয়ের সাথে সাথেই সারাজীবনের জন্য আরোশের প্রভার মৃত্যু হবে জন্ম হবে হৃদয়হীন সুবাহ র ।”
জান্নাত সুবাহ র এসব কথা শুনে তার কাছ থেকে রেগে উঠে চলে আসে তারপর দরজার সামনে দাড়িয়ে পিছনে ঘুরে বলতে লাগে
“আরোশ ভাইয়ার সামনে একদিন ঠি ক সবকিছু আসবে আর সেদিন সব কিছু সে ধ্বংস করে দিবে !”
সুবাহ তাচ্ছিলোর হাসি দিয়ে বলতে লাগে
“ধ্বংস হবার জন্য কোন কিছু অবশিষ্ট নেই আর !
(বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে আরোশের ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে )আর কয়েক ঘন্টা তারপর সারাজীবনের জন্য চলে যাবো “ তোমার আড়ালে “ !
জান্নাত সুবাহ র পাগলামো আর জিদ দেখে হনহন করে রেগে চলে যায় !
তার এইসব সয্য হচ্ছেনা সুবাহ র কষ্টটা সে স্পষ্ট দেখতে পারছে অথচ তার পরিবার তা বুঝতে পারছেনা ।
সে নিজের পরিবারের জন্য নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করছে !

সুবাহ বেডে বসে আছে আর কয়েক ঘন্টা পরই তো সে অন্য কারো হয়ে যাবে আদির সাথে তার বিয়ে ।আচ্ছা বিয়ের পর আরোশ কে মনে মনে ভালোবেসে যাওয়াটা কি তার অন্যায় হবে ?
খুব বেশি অপরাধের হবে ?
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রুমের লাইট অফ হয়ে যায় লাইট অফ হওয়ায় পুরো অন্ধকার হয়ে যায় রুম কারন বাহিরে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ।সুবাহ বেড থেকে উঠে দরজার কাছে চলে যায় সেখানে গিয়ে দেখে পুরো বাড়িরই লাইট অফ !
হয়তো লোর্ড শেডিং হয়েছে কিন্তু এসময় তো লোর্ড শেডিং হবার কথা না তারপরও কি করে হলো ?
সুবাহ তার মাকে ডাকতে লাগলো কিন্তু কোন সাড়া পেলো না হয়তো সবাই বাড়ির পিছনে বাগানে পেন্ডেলের মধ্যে রয়েছে এসব ভেবে সুবাহ রুমে চলে আসে ।এসে মোমবাতি খুজঁতে লাগে হঠাৎ কেউ রুমে প্রবেশ করে !
কারো আসার শব্দ পেয়ে সুবাহ কিছুসময় থেমে যায় তারপর পিছন ঘুরে অন্ধকারে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার মোমবাতি খুজঁতে বেস্ত হয়ে পড়ে !
কিছুসময় পর সুবাহ মোমবাতি খুজেঁ তা জ্বালাতে নিলেই পিঠে কারো গরম নিশ্বাস অনুভব করে ।পিছনে থেকে এক জোড়া হাত তার লেহেঙ্গার উড়নাটা বেদ করে তার খালি পেট স্পর্শ করে !
হঠাৎ কেউ পিছন থেকে এভাবে জরিয়ে ধরায় সুবাহ ভয় পেয়ে যায় ।
সে পিছনে ঘুরতে নেয় কিন্তু পিছনের থাকা মানুষটি আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে তারপর সুবাহর ঘাড়ে নিজের থুতনিঁ রাখে সুবাহ কেপেঁ উঠে !
পিছনে থাকা লোকটি দাতঁ কটকট করে মৃদ্যু আওয়াজে বলতে লাগে
“খুব বেশি অন্যায় করেছো সুবাহ !
তোমার এমনটা করা মটেও উচিত হয়নি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করার পরিনতী তুমি অবশ্যই পাবে ।
আমার বিশ্বাস ভাঙ্গার পরিনাম তুমি ঠিকই পাবে !
তোমাকে নিজের করে ভয়ানক শাস্তি দেবো ।”
বলেই পিছনে থাকা লোকটা আরো শক্ত করে সুবাহ র কমোড় জরিয়ে ধরে বেশ রাগ ক্ষোপ জেদ নিয়ে ।
সুবাহ ব্যথায় কুকড়িঁয়ে উঠে চোখ থেকে গড়িয়ে পানি ঝড়তে লাগে !
পিছনের লোকটির কন্ঠ শুনে সুবাহর বুঝতে বাকি রইলে না সে কে !
সুবাহ ভয়ে কাপাকাপাঁ কন্ঠে আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুড়িয়ে বলতে লাগে
“আ..আ..আরোশ ভাইয়া আ..আ…আপনি ?
আপনি এখানে কি করছেন !
আর এসব কি বলছেন ?”
আরোশ একটানে সুবাহকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে !
একহাতে শক্ত সুবাহ র চুলের মুঠি ধরে অসম্ভব লাল হয়ে আছে আরোশের চোখ ফরসা চেহারা রাগে জিদে লাল হয়ে !
ভয়ংকর রেগে আছে আরোশ রাগে ফুসতে ফুসতে বলতে লাগে
“এই ইনোসেন্ট সাজার নাটক করবি না তোকে এইসব মানায় না !
তুই আর তোর সো কল্ড বোন যা করেছিস ইচ্ছা তো করছে তোদের দুজনকে খুন করে দি !
আমার বিশ্বাসকে তোরা দু বোন কাচের মত ভেঙ্গে দিয়েছিস !
সবকিছুর মূলে তুই ছিলি তাই না ?তোকে এর শাস্তি পেতে হবে !
খুব শখ আদিকে বিয়ে করার তাই তো ?
তা আর হবে না !
আমি হতে দিবো না ।
তোকে তো আমাকেই বিয়ে করতে হবে ।
আমি জানি আমার জিনিস আমার কি করে আদায় করে নিতে হয় !”
সুবাহ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ।সুবাহ কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরোশ সুবাহ র মুখে স্প্রে করে দেয় !
সুবাহ আরোশের বুকে হেলে পড়ে ।
আরোশ সুবাহকে কোলে নিয়ে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে তাকে গাড়িতে তার পাশের সিটে বসিয়ে দেয় তারপর সুবাহ র দিকে তাকিয়ে বলতে
“Everything is fair in love and war”
বলেই গাড়ি স্টার্ড দেয়………

চলবে……..
❤️❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন ???

এই গল্পটা আমার অন্যসব গল্প থেকে একদম আলাদা হবে অন্য রকম ভালোবাসার গল্প থাকবে ❤️❤️❤️

স্পর্শের_ভাষা part – 15 ( শেষ পর্ব )

1

স্পর্শের_ভাষা part – 15 ( শেষ পর্ব )
writer – তানিশা

— তিন্নির চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে। সে আজ আবারও শর্তে হেরে গেছে। হেরে গেছে আরাফের প্রতি তার ঘৃণা, জিতে গেছে তিন্নি জন্য আরাফের হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা। এতো ঘৃণা, অবহেলা, অবজ্ঞার পরেও আরাফ তাকে এতটা ভালবাসে। ভাবতেই তিন্নি স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। যে আরাফ মুহূর্তের মধ্যে তার আত্মসম্মানকে দূমড়েমূচড়ে শেষ করে দিয়ে ছিল। আজ সেই আরাফ তার আত্মসম্মানে একটা আচ লাগতে দেয়না। তার সম্পর্কে একটা বাজে মন্তব্য শুনার জন্য প্রস্তুত না। আরাফের মতো একজন জীবন সাথী থাকতে আর কি বা চাওয়ার থাকতে পারে তার? তিন্নি চোখদুটি বন্ধ করে আনহাকে বলল,,,

তিন্নি : এতো সহজে কি ক্ষমা করা যায়?

আনহা : ভাবি please… ( করুণ গলায় )

নাদিয়া : এই তুই কি মানুষ নাকি অন্যকিছু? এতো কিছুর পরেও বলছিস ক্ষমা করা যায়না?

তিন্নি : আমি কখন বললাম ক্ষমা করিনি?

— কথাটা বলেই তিন্নি নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নির চোখে নোনাজল টলমল করছে। এই নোনাজল কষ্টের না পরম সুখের। নিজের ভালবাসার মানুষটাকে আজ আপন করে নিতে পারবে অটুট বিশ্বাস আর ভালবাসার সাথে। সেই সুখে কাঁদছে তিন্নি। আনহা তাকে কাঁদতে দেখে বলল,,,

আনহা : ভাবি তুমি কাঁদছো কেন?

তিন্নি : কিছু কান্না মনের সুখ আর আত্মতৃপ্তি থেকে আসে আনহা।

— নাদিয়া তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,,

নাদিয়া : তোর মনে তো সুখের রঙ্গ লেগেছে। আর আমি যে এতো কষ্ট করলাম, বিনিময়ে আমি কি পেলাম?

তিন্নি : কি চাই তোর?

নাদিয়া : তোর জামাই আমাকে কতবার কুটনি ডেকেছে, তার জন্য তুই আমার হয়ে প্রতিশোধ নিবি। বুঝলি? তোর জামাইকে বলবি আমাকে বাসায় গিয়ে sorry বলতে। সম্মানের সাথে খুব সুন্দর আয়োজন করে, তোদের বাসায় আমাকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে। নাহলে তোরা কখনো সুখী হবিনা। এটা আমার অভিশাপ।

আনহা : ভাবি খাবারের আয়োজন করো তো, আপুকে এখনি নিমন্ত্রণ করে খাইয়ে দেই। আমি চাইনা আমার ভাইয়া ভাবির সংসার ঘরার আগে মিটে যাক।

— আনহার কথা শুনে তিন্নি আর নাদিয়া দুজনে হেসে দিলো। নাদিয়া হাসতে হাসতে বলল,,,

নাদিয়া : আরে বাবা আমি দুষ্টামি করছি। আচ্ছা আজকে আসি।

তিন্নি : রাতের খাবারটা খেয়ে যা,,

নাদিয়া : না, যখন তোর জামাই আমাকে sorry বলবে তখন খাবো।

তিন্নি : আমি তাহলে ওনাকে ডেকে নিয়ে আসি।

নাদিয়া : এখন না, আগে কিছুক্ষণ ভাইয়াকে জ্বালিয়ে নে তারপর।

— বলেই নাদিয়া চোখটিপ মেরে হেসে দিলো। আনহা আর তিন্নির থেকে বিদায় নিয়ে নাদিয়া চলে গেলো।

তিন্নি সেই কখন থেকে আরাফের অপেক্ষা করে যাচ্ছে। কিন্তু তার আসার কোনো নামই নেই। ছাদে বসে এতক্ষণ কি করছে সে? তিন্নির কি এই মুহূর্তে ছাদে যাওয়া ঠিক হবে? ভাবতে ভাবতেই ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

রাত প্রায় ১.০০ টা বাজে, আরাফ এখনো ছাদে বসে আছে। আনহা অনেকবার ডেকে গেছে, রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। আরাফ যায়নি। বসে বসে ভাবছে, তিন্নি কি এখনো আছে? নাকি তাকে ছেড়ে চলে গেছে? হয়তো চলে গেছে। এতকিছুর পর তিন্নি এখানে থাকবে, এটা আশা করাও তার বোকামি। তিন্নিকে ছাড়া কিভাবে থাকবে সে? ভাবতেই চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে। আরাফ দুহাত দিয়ে তার চোখের জল মুছতে লাগলে পেছন থেকে তিন্নি বলে উঠলো,,,

তিন্নি : সারারাত কি এখানে বসেই কাঁদবেন? নাকি রুমে যাবেন?

— আরাফ পেছনে ফিরে তিন্নিকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তিন্নি এখনো এই বাড়িতে আছে এটা কিভাবে সম্ভব?? আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি মনে মনে ভাবছে, এতো সহজে আত্মসমর্পণ করা কি ঠিক হবে?? অবশ্য ওনাকে একটু জ্বালালে ব্যাপারটা মন্দ হয়না। তিন্নি ভ্রু দুটি নাচিয়ে আবারও বলল,,,

তিন্নি : কি ভাবছেন? এখনো যাইনি কেন? কয়েক দিন অপেক্ষা করেন, আগে ডিবোর্সটা হোক তারপর চলে যাবো।

আরাফ : কি ভেবেছো? তুমি ডিবোর্স চাইলেই আমি দিয়ে দিবো? কখনোই দিবো না। তুমি যত দূরে যাওনা কেন? সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়েই থাকতে হবে।

তিন্নি : যখনের টা তখন দেখা যাবে। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে তাই যেতে পারিনি, কাল সকালেই ঘুম থেকে উঠে চলে যাবো।

— তিন্নি কথাটা বলতেই আরাফ তার কাছে এসে তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদোকাঁদো গলায় বলতে লাগলো,,,

আরাফ : তিন্নি please আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি জানিনা নাদিয়া কুটনিটা তোমাকে কি বলেছে। আমি শুধু এতটুকু জানি, আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকা এখন আর আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। please…

— আজ আরাফের প্রতিটা #স্পর্শের_ভাষা তিন্নিকে বলে দিচ্ছে, সে কতটা অনুতপ্ত, তিন্নির ভালবাসা পাবার জন্য আজ সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে আছে। আরাফের বুকে মাথা রাখতেই তিন্নি অনুভব করতে পারছে, তার হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন যেন বলে দিচ্ছে তিন্নিকে সে কতটা ভালবাসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে আরাফের থেকে ছাড়িয়ে নিলো তিন্নি। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,,

তিন্নি : আপনার প্রতিটা স্পর্শে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।

— আরাফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার কাছে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। এতদিনে তিন্নির মনে তার জন্য একটুও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলোনা। আরাফকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিন্নিরও কষ্ট হচ্ছে। সাথে প্রচন্ড হাসিও পাচ্ছে তার। তিন্নি নিজের হাসিটাকে থামিয়ে রেখে বলল,,,

তিন্নি : অনেকে ভেবে দেখলাম আপনার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

আরাফ : আমি অনুতপ্ত তিন্নি।

তিন্নি : কিসের জন্য নাদিয়াকে কুটনি ডেকেছেন সেই জন্য??

আরাফ : না, আমার ভুলের জন্য।

তিন্নি : ওহহ,, আমি ভাবছি নাদিয়াকে কুটনি ডেকেছেন তার জন্য হয়তো।

আরাফ : ওকে আমাদের মাঝে টানছো কেন? ওকে কি বলেছি সেটা দিয়ে কি করবে?

তিন্নি : সেটাই তো নাদিয়া তখন সন্ধায় এসে বলে গেলো। আপনি আমার সম্পর্কে একটাও বাজে মন্তব্য শুনতে পারেননা। আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার নাকি আপনাকে ক্ষমা দেওয়া উচিৎ, আরও কতো কি। তখন ভাবলাম আপনাকে ভালবেসে, আপনার বুকে মাথা রেখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিবো। কিন্তু না আপনি তো সেই কখন থেকে নাদিয়াকে কতো কিছু বলে যাচ্ছেন। পরক্ষনে ভাবলাম যেই মেয়েটা আপনাকে সাপোর্ট করতে এসেছে, আপনি তাকেই বারবার কুটনি ডেকে যাচ্ছেন। তাহলে আপনার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে? নাদিয়াকে আমাদের মাঝে না টানলে তো হচ্ছেনা। আগে আপনি ওকে বাসায় গিয়ে সরি বলে আসবেন। তারপর নাহয় আমাদের সংসারটা ভালবাসা ময় করে তুলবো। কি বলেন? ওকে বাসায় গিয়ে সরি বলে আসবেন তো? নাকি আমি আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে চলে যাবো?

— বলেই তিন্নি মিটমিট হসতে লাগলো। আরাফ আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি কি বলল কিছুই বুঝতে পারলো না। নাদিয়া তো আরাফকে অফিসে বলে এসেছে সে তিন্নির কাছে তার নামে অনেক কিছু ভুলভাল বলবে। তাদের সংসার নাকি তুরিতেই ভেঙ্গে দিবে। তাহলে নাদিয়া তার সাপোর্ট করেছে এটা কিভাবে সম্ভব হবে? অবশ্য আরাফকে সাপোর্ট করার মতো সে এমন কিছুই করনি। বরং নাদিয়াকে অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। কিন্তু নাদিয়া তাকে সাপোর্ট করবে কেন? নাকি আরাফ কিছু ভুল শুনলো?? কিছু মাথায় ঢুকছে না। আরাফকে চুপ থাকতে দেখে তিন্নি আবারও বলল,,,

তিন্নি : কিছু বলছেন না যে?

আরাফ : নাদিয়া আমাকে সাপোর্ট করবে কেন? ( অবাক হয়ে )

তিন্নি : সেটা পরে বলবো। আগে বলেন ওর বাসায় গিয়ে ওকে সরি বলে আসবেন তো? ও বলেছে, ওকে সরি না বললে নাকি আমরা সুখী হবোনা।

আরাফ : তোমাকে পাবার জন্য একশো বার বলবো, হাজার বার বলবো। যদি ক্ষমা না করে প্রয়োজনে ওকে আমাদের বাসায় কিডন্যাপ করে নিয়ে আসবো, এটা কোনো ব্যাপারই না।

— আরাফের কথা শুনে তিন্নি হো হো করে হেসে দিলো। আরাফ ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : ভালবাসো আমায়?

— তিন্নি আরাফের কাছে এসে তার দুপায়ের উপর ভর করে তিন্নির দুহাত দিয়ে তার গলায় জড়িয়ে ধরলো। নিজের অজান্তে আরাফের হাত দুটি তিন্নি কোমরে চলে গেলো। আরাফ তিন্নির চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে, এই চোখে আরাফের জন্য স্পষ্ট ভালবাসা দেখতে পাচ্ছে। আরাফের এতটা কাছে আসায় তিন্নির হৃদয়ের স্পন্দন গুলো খুব জোরে ধকধক করছে। সাথে তার ঠোঁট দুটিও কাঁপছে। আরাফ মুচকি হেসে আলতো করে নিজের ঠোঁটদুটি তিন্নির ঠোঁটে ছুয়ে দিলো। সাথে সাথেই তিন্নি চোখদুটি বন্ধ করে আরাফের বুকে মাথা রেখে তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরাফ তাকে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

আরাফ : একবার নিজের মুখে বলোনা আমাকে ভালবাসো।

তিন্নি : ভালবাসি। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আপনার ভালবাসার মানুষটার পা ব্যথা হয়ে গেছে।

— আরাফ তিন্নিকে তার বাহুডোর থেকে ছেড়ে দিয়ে তিন্নির দুই বাহু ধরে ভ্রু কুচকে বলল,,,

আরাফ : এতক্ষণ বলনি কেন?

তিন্নি : এতো কথা না বলে, আমাকে কোলে নিয়ে রুমে চলেন। আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। ( আরাফের শার্টের বোতামে ধরে )

আরাফ : সবকিছু আমার কাছে আসার বাহানা তাইনা?? ( মুচকি হেসে )

তিন্নি : নিতে হবেনা। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।

— তিন্নি রেগে চলে যেতে লাগলো। আরাফ তার হাত ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এনে কোলে তুলে নিয়ে বলল,,,

আরাফ : আমার মতো একটা আদর্শ স্বামী থাকতে আমার বৌ হেটে যাবে। এটা কখনো সম্ভব?

— তিন্নি আরাফের বুকে আলতো করে একটা ঘুষি দিয়ে রাগী চোখে বলল,,,

তিন্নি : নামান আমাকে।

আরাফ : একেবারে রুমে গিয়ে। ( মুচকি হেসে )

সমাপ্ত
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ? )

স্পর্শের_ভাষা part – 14.

0

স্পর্শের_ভাষা part – 14.
writer – তানিশা

নাদিয়া : আমি তিন্নির সাথে দেখা করতে এসেছি।

আরাফ : কেন? ( ভ্রু কুচকে )

নাদিয়া : ওর সাথে আমার কথা আছে।

আরাফ : কোনো কথা নেই, বের হও আমার বাড়ি থেকে। নাহয় ধাক্কা দিয়ে বের করতে বাধ্য হবো। ( রাগী চোখে )

— নাদিয়ার সাথে আরাফের ব্যবহার দেখে আনহা তাকে বলল,,,

আনহা : ভাইয়া এটা কোন ধরনের ব্যবহার? ভাবি যদি জানতে পারে, তোমার খবর আছে।

আরাফ : কিসের খবর আছে? এসব কুটনিদের সাথে এমন ব্যবহারই করতে হয়। নাহয় এই কুটনি গুলো দিশেহারা হয়ে থাকে আমাদের মতো নিরিহ মানুষদের সংসার ভাঙ্গার জন্য।

আনহা : ভাইয়া চুপ করো, নাদিয়া আপু কারো সংসার ভাঙ্গতে আসেনি। ও আমাদের বাসায় মেহমান। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : কিসের মেহমান ও আস্ত একটা কুটনি।

— আনহা, আরাফকে শান্ত করার চেষ্টা করে। আরাফ কিছুতেই শান্ত হচ্ছেনা, নাদিয়ার কাছে এসে তার হাত ধরে টেনে দরজার কাছে নিয়ে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ে এখনি বের হও আমার বাড়ি থেকে।

নাদিয়া : আনহা তিন্নিকে ডাকো তো,,

— আনহার দিকে তাকিয়ে। আজ তিন্নির জন্য আরাফ তাকে এতটা অপমান করছে। তিন্নি কোথায় গিয়ে বসে আছে? প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নাদিয়ার। তিন্নি সিরি বেয়ে নিচে নেমে এসে বলল,,,

তিন্নি : ডাকতে হবেনা, আমি এসেছি। আরাফ ওর হাত ছাড়েন।

— তিন্নিকে দেখে আরাফ থমথমে হয়ে নাদিয়ার হাত ছেড়ে তিন্নির কাছে এসে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি এখানে কিভাবে এলে? তোমাকে তো রুমে লক করে এসেছি।

তিন্নি : তো কি হয়েছে? বাসায় কি মানুষের অভাব আছে নাকি? বাবা রুমের দরজা খুলে দিছে।

— বলেই তিন্নি নাদিয়ার দিকে তাকালো। নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর কাছে যেতে লাগলে আরাফ তিন্নির হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো? রুমে আসো, তোমার সাথে কথা আছে।

তিন্নি : আপনি যান, ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি আপনার সাথে পরে কথা বলছি।

— আরাফ তিন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ের সাথে তোমার কোনো কথা নেই। তুমি আমার সাথে এক্ষণি রুমে যাবে।

তিন্নি : আশ্চর্য! আপনি এমন রিয়েক্ট করছেন কেন?? এটা কোন ধরনের অভদ্রতা আরাফ?? আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এসেছে, আমার সাথে দেখা করার জন্য। আপনি আমাকে রুমে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

— আরাফ থেমে গিয়ে তিন্নির হাত ছেড়ে দিয়ে বিষময় নিয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি তো বলছিলে ও তোমার কোনো ক্লায়েন্ট হবে। এখন বেস্ট ফ্রেন্ড কেন বলছো??

তিন্নি : আপনি কি রিয়েক্ট করেন সেটা দেখার জন্য ইচ্ছে করেই বলেছি। আপনি কি ভেবেছেন ও আপনার অফিসে সাধারণ একজন স্টাফ? না ওকে আমি বলেছিলাম আপনার কোম্পানিতে জব নিতে।

— আরাফ স্তব্ধ হয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো। তিন্নি তার সাথে এমন করলো কেন? আরাফ অবাক হয়ে বলল,,,

আরাফ : কেন তিন্নি?

তিন্নি : তার আগে আপনি বলেন? আজ ওকে চড় মেরে অফিস থেকে অপমান করে কেন বের করে দিয়েছেন? ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে )

— আরাফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নিকে যদি সে সত্যিটা বলে তিন্নি কি তাকে বিশ্বাস করবে? কখনোই করবেনা। তার উপর নাদিয়াকে কতবার সবার সামনে কুটনিও ডেকে ফলেছে। এখন তো সে তাকে কিছুতেই বিশ্বাস করবেনা। নাদিয়া কুটনিটা এখন উল্টাপাল্টা যা বলবে তিন্নি তার সব কথাই বিশ্বাস করবে। কি করবে সে এখন??

তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, সে সত্যিটা বলতে এতো ভয় পাচ্ছে কেন? নাদিয়া তিন্নির কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,

নাদিয়া : কি হলো জিঙ্গেসা কর?

তিন্নি : আরাফ আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?

আরাফ : আমার যা ভাল মনে হয়েছে, আমি তাই করেছি। ( মাথা নিচু করে )

তিন্নি : আপনার কি এখনো মনে হচ্ছে? একটা মেয়েকে চড় মেরে তাকে অপমান করে কাজটা আপনি ঠিক করেছেন?

আরাফ : জানিনা।

তিন্নি : কেন ওর সাথে এমন করলেন?

আরাফ : আমি যদি সত্যিটা বলি তুমি কখনো আমাকে বিশ্বাস করবেনা, জানি তুমি আমাকেই ভুল বুঝবে। তাই বলতে ইচ্ছুক না। তিন্নি একটা কথা বলতে চাই, আমি একবার ভুল করেছিলাম, একই ভুল বারবার করতে চাইনা। ভুল থেকে মানুষ অনেককিছু শিখে। আমিও শিখেছি, তোমাকে হারানোর বেদনা আমাকে শিখিয়েছে যাকে ভালবাসবো, তার প্রতি অটুট বিশ্বাস নিয়ে হৃদয় উজাড় করে ভালবাসবো। আমি সক্ষম হয়েছি কিনা জানিনা, তবে এতটুকু বলবো, সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।

— কথা গুলো বলে আরাফ এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না। সিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে তার, পিছনে ফিরে তাকানোর শক্তি নেই। হয়তো তিন্নির আর তার সম্পর্কের ইতি টানবে আজ, হয়তো বা তিন্নি আবারও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে তাকে। কি হতে চলেছে এখন আরাফ নিজেও জানেনা। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ছাদে চলে গেছে। অন্ধকার রাতে আজ চাঁদের ঝলমলে আলো নেই। এই অন্ধকার রাতের মতো কি আরাফের জীবনটাও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে? হয়তো, কারণ তিন্নিকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেই তার দম বন্ধ হয়ে আসে।

আরাফ চলে যেতেই তিন্নি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছে আরাফ অনেক কষ্ট পাচ্ছে সাথে তিন্নিও। নাদিয়া তিন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে বলল,,,

নাদিয়া : তোর জামাই আর তুই তো বলবিনা বসার জন্য, থাক আমি নিজেই বসে পরি।

তিন্নি : sorry… আরাফের পক্ষ থেকে। ( নিচের দিকে তাকিয়ে ) আসলে বৌভাতের অনুষ্ঠানে ও তোকে খেয়াল করেনি। তাই এরকম আচরণ করেছে।

নাদিয়া : হয়েছে,, স্বামীর এতো গুণগান করতে হবেনা। অবশ্য এতে ভাইয়ার কি দোষ? সব দোষ তো তোর। তোর কারণে ভাইয়া আজকে আমাকে চড় মেরেছে। ( নিজের গালে হাত দিয়ে ) তোর কারণে যা হয়েছে। তুই আমাকে sorry বলবি।

তিন্নি : তোকে sorry বলতে হবে? আমার জন্য এতটুকু করতি পারবিনা তুই। ( রাগী চোখে )

নাদিয়া : আচ্ছা যা বলতে হবেনা, এবার আসল কথায় আসি??

— আনহা কিছুক্ষণ তাদের কথাবার্তা শুনে তাদের মাঝে বসে বলল,,,

আনহা : কিসের কথা? তোমরা দুজন আমাকে ফেলে কি গোলমাল পাকিয়েছো বলোতো?

নাদিয়া : আনহা আর বলোনা, ফাজিলটা আমাকে ভাইয়ার সামনে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে। ভাইয়া যদি সত্যিটা জানতে পারে আমি ওনার সামনে কিভাবে যাবো? ( চিন্তিত হয়ে )

আনহা : আগে বলো কি হয়েছে।

নাদিয়া : বেচারি তিন্নি শর্তে হেরে গেছে, আর আমি জিতে গেছি। যদিও একটা থাপ্পড় খেয়েছি তাতে কোনো সমস্যা না। আহারে তিন্নির জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তার পরিকল্পনা সফল হয়নি। ( দুষ্টামির হাসি দিয়ে )

তিন্নি : হয়েছে, আপনাকে আমার কষ্ট উপলব্ধি করতে হবেনা। এখন অফিসে কি হয়েছে দয়া করে বলবেন? নাকি এখনো বলবেন না??

— শর্তের কথা শুনে আনহা অনেক আগ্রহী হয়ে আছে, কি হয়েছে শুনার জন্য। তিন্নি চোখ গরম করে তাকাতেই নাদিয়া বলল,,,

নাদিয়া : আরে বলছি তো এমন করছিস কেন?

আনহা : আপু রহস্য নিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি তাড়াতাড়ি বলো। আমার তড় সৈছেনা।

নাদিয়া : তাহলে বলেই ফেলি,, আরাফ ভাইয়া আর তিন্নির মধ্যে কি হয়েছিল সেটা শুধু আমি আর নীলিমা জানতাম। বৌভাতের অনুষ্ঠানে একটা বিষয় খুব ভালভাবেই লক্ষ করে ছিলাম সেটা হচ্ছে আরাফ ভাইয়ার কান্ড। সেদিন ভাইয়া তার হাত এক মুহূর্তের জন্য ছাড়েনি। এটা তো বুঝতে পারছিলাম ভাইয়া তাকে অনেক ভালবাসে। তো আমি তিন্নিকে বুঝাতে চাইলাম, ভাইয়াকে একটা সুযোগ দেয়া দরকার। কিন্তু ফাজিল মেয়ে নারাজ। কথায় কথায় তিন্নি বলে ফেললো,,,

– তুই দেখেনিস মাত্র ৭ দিনের মধ্যে ওনি আবারও আমার আত্মসম্মানকে দূমড়েমূচড়ে দিয়ে নিজের ভিতরে থাকা রূপটাকে দেখিয়ে দিবে।
– এমনটা নাও হতে পারে তিন্নি, আমি দেখেছি ভাইয়া তোকে কতটা ভালবাসে।
– যদি এমনটাই হয়?
– আচ্ছা বল আমি কিভাবে প্রমাণ করতে পারি ৭ দিন পর তুই নিজেই সম্পর্কটাকে মেনে নিবি?

তখন তিন্নি বলল ভাইয়ার অফিসে একটা জব নিতে, নিলাম। বলল ভাইয়ার আশেপাশে সারাক্ষণ ঘুরাঘুরি করতে করলাম। বৌ পাগলা বেটার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতেই বেটা রেগে ফায়ার হয়ে বলল,,,

– এই মেয়ে তোমাকে কতবার বলবো আমার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবেনা। কাজ করতে এসেছো, কাজ শেষ করে চলে যাও।

প্রথমে তো পুরো ভয় পেয়ে গেছিলাম। পরক্ষনে তিন্নির কথা ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে তার শিখানো কথা গুলোই বললাম,,,

– স্যার ঘুরাঘুরি করলে সমস্যা কি?
– আমি বিবাহিত, আমার ঘরে বৌ আছে।
– আপনার বৌ তো আপনার সাথে কথাই বলেনা। ফারহান নামের একটা ছেলের সাথে ওর রিলেশন আছে, যার সাথে আপনাদের বিয়ের আগে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ঐ মেয়ের সম্পর্কে,,

আর কিছু বলার আগে ভাইয়া কষিয়ে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। তাকিয়ে দেখি ওনি প্রচন্ড রেগে আছে, পারলে আরও কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতো। ওনি রেগে আমাকে বলল,,,

– আমার বৌয়ের সম্পর্কে তোমার কোনো আইডিয়া আছে ও কেমন মেয়ে? ওকে পেয়ে আমি ধন্য, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষদের মধ্যে একজন। ওর চরিত্র এতটাই নিখুঁত মাঝেমাঝে আমি নিজেকে ওর যোগ্য মনে করিনা। তুমি ওর সম্পর্কে এতো বাজে কথা বলার সাহস পেলে কোথায়? এক্ষণি বেরিয়ে যাও অফিস থেকে, নাহয় থাপ্পড়াইয়া সব দাঁত ফেলে দিবো। বেয়াদব মেয়ে,,
– আপনি তো বলেছিলেন ও একটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে। আপনার থেকে শুনেই আমি বলেছি। আপনি আমাকে চড় মেরেছেন তাইনা? এখন দেখবেন আপনার বৌয়ের কাছে আপনার নামে কিভাবে পেঁচ লাগাই। আমাকে চড় মারার শাস্তি তো পেতেই হবে। আপনাদের সম্পর্ক যদি আমি তুরিতে শেষ না করেছি, তাহলে আমার নাম নাদিয়া না।

কথা গুলো বলে আমি ওনার অফিস থেকে বেরিয়ে গেছি। ওনি ভয়ে রিতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছিল, এটা ভেবে আমি যদি তিন্নির কাছে ওনার নামে উল্টাপাল্টা পেঁচ লাগাই তিন্নি ওনাকে ছেড়ে চলে যাবে। ওনি আমার সম্পর্কে সব তথ্য বের করার চেষ্টা করতে করতে বাসায় ফিরতে সন্ধা হয়ে গেছে। আমি যখন তোমাদের বাসায় আসছি, আমাকে দেখে মনে হয় ভয়ে ভাইয়ার পুরো কলিজার পানি শুকাইয়া গেছে।

— বলেই নাদিয়া হো হো করে হেসে দিলো। আনহা তিন্নির সামনে এসে হাঁটুগেরে বসে তার দুহাত ধরে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,

আনহা : ভাবি এবার কি আমার ভাইয়াটাকে ক্ষমা করা যায়? আমি জানি ভাইয়া অনেক কষ্ট পাচ্ছে।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 13

0

স্পর্শের_ভাষা part – 13
writer – তানিশা

— রাত প্রায় ৯ টা বাজে, আরাফ তিন্নির পায়ে আলতো করে মলম দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছে। পায়ে ব্যথা তিন্নি পেলেও আরাফ যেন তীব্রতার সাথে নিজেই তার ব্যথাটা অনুভব করছে। আর তিন্নি আরাফের দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে। সত্যি আরাফ তাকে এতটা ভালবাসে? নাকি আবারও কোনো অবিশ্বাসে কড়া নাড়া দিয়ে আরাফ তার আত্মসম্মানকে দূমড়েমূচড়ে দিবে?? আরাফকে বিশ্বাস করতেও তার অনেক ভয় হয়। আরাফ তার পায়ে মালিশ করে দিয়ে বলল,,,

আরাফ : ব্যথা কি কমেছে?

তিন্নি : আমি আহামরি কোনো ব্যথা পাইনি। এতটা reacted… করার কোনো প্রয়োজন নেই। ( স্বাভাবিক ভাবে )

আরাফ : reacted… কই করলাম? আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

তিন্নি : না, আমি নিজেই যেতে পারবো।

— আরাফ বিছানা ছেড়ে উঠে তিন্নির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : যেতে পারবা?

তিন্নি : হুম।

— তিন্নি বিছানা থেকে নেমে হাটার জন্য পা বাড়াতেই, পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেলো। নিজেকে সামলাতে না পেরে আরাফের কাঁধে জড়িয়ে ধরলো। আরাফ মুচকি হেসে একহাত দিয়ে তার কোমরে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

আরাফ : সবকিছু আমার কাছে আসার বাহানা তাইনা?

তিন্নি : মোটেও না, আমি হাটার চেষ্টা করছি।

— তিন্নি মাথা নিচু করে আরাফের থেকে কিছুটা দূরে সরতে চাইলো। আরাফ তার দুহাত দিয়ে তিন্নির কোমরে জড়িয়ে ধরে তাকে আরও কাছে টেনে নিলো। আরাফ তাকে এতটা কাছে টেনে নিয়েছে, আরাফের গরম নিশ্বাস তিন্নির মুখে এসে পরছে। আরাফের নিশ্বাস এসে তার মুখে পরতেই সে শিউরে উঠে চোখদুটি বন্ধ করে নিলো। তার ঠোঁট দুটি কাঁপছে, না পারছে আরাফকে দূরে ঠেলে দিতে, না পারছে কাছে টেনে নিতে। আরাফ তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এই মায়াবী মুখটার দিকে সে যতবার তাকায়, ততবার যেন তার মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তিন্নির কাঁপাকাঁপা ঠোঁট দুটি নিজের ঠোঁটে আলতো করে ছুয়ে দিতে। কিন্তু সব ইচ্ছে তো আর পূরণ হয়না। তিন্নি তার পাশে আছে এটাই আরাফের অনেক বড় পাওয়া। তবুও কেন জানি তিন্নিকে নিজের অন্তরঙ্গর কাছে পাবার নেশাকে কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। তিন্নিকে তার সবটা জুড়ে চাই। আরাফ তার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : তিন্নি তুমি তো বলতে স্পর্শের ও একটা ভাষা আছে। আমার এই স্পর্শে কি তুমি ভালবাসা খুঁজে পাওনা? একবার আমার এই #স্পর্শের_ভাষা অনুভব করে দেখো না, আমার ভালবাসায় কোনো অবিশ্বাসের ছায়া নেই। আছে অটুট বিশ্বাস আর তোমার জন্য হৃদয়ের উজাড় করা ভালবাসা।

— তিন্নি চোখদুটি খুলে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফ ক্লান্ত তার ভালবাসা পাবার জন্য। আরাফের চোখ দেখে বুঝা যায় তিন্নির জন্য তার ভালবাসার গভীরতা কতটা। আরাফের এই স্পর্শে শুধু পবিত্রতা অনুভব হয়। তিন্নি যেন হারিয়ে যাচ্ছে আরাফের ভালবাসার গভীরতা। ক্ষণিকের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। আরাফ তার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ হয়ে বলল,,,

আরাফ : এই খাটাশটাকে কি একটু ভালবাসা যায় না? একটুও কি কাছে টেনে নেয়া যায় না?

তিন্নি : জানিনা। ( নিচের দিকে তাকিয়ে )

— আরাফ যেন তিন্নির জানিনা কথার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পেয়েছে। এই জানিনা কথার মাঝে একটাই উত্তর “হ্যা” খুঁজে নিয়ে একগাল হেসে দিলো। তিন্নিকে বিছানায় বসিয়ে নিচে নেমে খাবার নিয়ে আসলো। তিন্নির খাওয়ার শেষে অনেক ঘুম পাচ্ছে। তাই সে আরাফকে বলল,,,

তিন্নি : এই যে শুনছেন?

আরাফ : কিছু লাগবে?? ( তিন্নি কাছে এসে )

তিন্নি : আমাকে একটু ধরেন। ( এক হাত এগিয়ে দিয়ে )

আরাফ : ওয়াশরুমে যাবা?

তিন্নি : না সোফায় গিয়ে শুইবো।

আরাফ : ফাজলামি পাইছো? প্রতিদিন একই নাটক। প্রতিদিন এক নাটক ভালো লাগেনা। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকো। ( ধমক দিয়ে )

তিন্নি : আমি সোফায় শুইবো, এখানে কিসের ফাজলামি দেখলেন আপনি? প্রতিদিন নাটক আপনি করেন। আপনার এসব নাটক দেখতে দেখতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। ( রাগে গজগজ করে )

আরাফ : আমার নাটক দেখে অতিষ্ঠ হয়ে গেছো? আচ্ছা বলো কার নাটক ভাললাগে? আমি ডাউনলোড করে দিচ্ছি। ( মোবাইল হাতে নিয়ে )

তিন্নি : এই আপনি কি পাগল নাকি? আমি আপনার সাথে ঝগড়া করছি, বুঝতে পারছেন না?

আরাফ : না বুঝার কি আছে? তুমি শুধু ঝগড়া করতেই জানো। রোমান্স কিভাবে করতে হয় এটা জানোনা। আসো ঝগড়া বন্ধ করে রোমান্স কিভাবে করতে হয় আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি।

— আরাফ দুষ্টামি করে তিন্নির পাশে গিয়ে বসতে গেলে। তিন্নি চোখ রাঙ্গিয়ে এক ধমক দিয়ে বলল,,,

তিন্নি : এই একদম আমার কাছে আসবেন না। আসলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবো।

আরাফ : তোমার নিজের ঠ্যাং কি অবস্থা আছে সেটা দেখো। আমার ঠ্যাং কিভাবে ভাঙ্গবে?

— বলেই আরাফ হো হো করে হেসে দিলো। তিন্নি রেগে ফোঁপাতে লাগলো, কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। আরাফ হাসতে হাসতে তিন্নির পাশ থেকে উঠে বলল,,,

আরাফ : অনেক ঝগড়া হয়েছে। এবার ঘুমিয়ে পরি।

— আরাফ লাইট অফ করে তিন্নির পাশে শুয়ে পরেছে। তিন্নি আরাফের সাথে কথা না বাড়িয়ে মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে তার উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো। আরাফ মাঝখান থেকে বালিশটা নিয়ে একপাশে রেখে তিন্নির পেটে একহাত দিয়ে তাকে তার দিকে ফিরানোর চেষ্টা করতেই তিন্নি আরাফের হাতে জোরে একটা চিমটি দিলো। চিমটি অনেক জোরে পরতেই আরাফ তার হাত তিন্নির পেটের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। তিন্নি তাকে চিমটি দিয়েছে এর প্রতিশোধ তো নিতেই হবে, এতো সহজে তো আর তিন্নিকে ছেড়ে দেয়া যাবেনা। ভাবতে ভাবতেই তিন্নিকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে, গলায়, গালে অনেক গুলো চুমু দিয়ে বলল,,,

আরাফ : চিমটি দেবার স্বাদ এবার টের পাও। সারারাত এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখবো, এটাই তোমার শাস্তি।

তিন্নি : আরাফ ভাল হচ্ছেনা কিন্তু, ছাড়েন আমাকে। ( রেগে গিয়ে )

আরাফ : ভাল মন্দ সবই বুঝি, চুপচাপ ঘুমাও।

তিন্নি : আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমি ঘুমাবো কিভাবে? ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : আমার ভালবাসা অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পরবা।

— অনেকক্ষণ ছটফট করে তিন্নি আরাফের থেকে নিস্তার পেলোনা। শেষমেশ দুজনেই ঘুমিয়ে পরলো।

২ দিন পর,,
আজ আরাফের বাসায় ফিরতে সন্ধা হয়ে গেছে, বাসায় ফিরে সোজা রুমে চলে গেছে। মনটা অনেক খারাপ করে সোফায় বসে নাদিয়ার কথা ভাবছে। নাদিয়া আরাফের অফিসে জব করে। নাদিয়া মেয়েটা আরাফ আর তিন্নির ব্যাপারে সব জানে। কিভাবে জানলো মেয়েটা? এটাই তার মাথায় আসছেনা। তিন্নি যদি নাদিয়া আর আরাফের আজকের বিষয়টা জানতে পারে তখন কি হবে? এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই আরাফকে ছেড়ে চলে যাবে। আজকের বিষয়টা কখনোই তিন্নি পর্যন্ত পৌঁছাতে দিবেনা। নাদিয়া তো তিন্নিকে চিনে, যদি কখনো তিন্নির সামনে এসে পরে। তখন কি হবে? ভাবতেই আরাফের গলা শুকিয়ে গেছে।

তিন্নি রুমে ঢুকে আরাফকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে বলল,,,

তিন্নি : এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? আজ আপনার ফিরতে লেট হলো যে?

— তিন্নির কথায় আরাফের হুশ ফিরতেই সে স্তব্ধ হয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো। তিন্নি তাকে প্রশ্ন করছে? হঠাৎ সে কিভাবে এতটা চেঞ্জ হয়ে গেলো? তার মানে কি সে আরাফের কেয়ার করতে শুরু করেছে? নাকি সে কিছু ভুল শুনেছে? আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি আবারও বলল,,,

তিন্নি : কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন??

— আরাফ কিছুটা আমতা আমতা করে বলল,,,

আরাফ : একটা ফ্রেন্ডের সাথে ছিলাম।

তিন্নি : সত্যি বলছেন তো? ( ভ্রু কুচকে )

— আরাফ মাথা নিচু করে ফেললো। তিন্নির সাথে সে মিথ্যা বলতে মোটেও অভ্যস্ত না। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আজ হঠাৎ তিন্নি তাকে এতটা জেরা করছে কেন? আরাফকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে তিন্নি বলল,,,

তিন্নি : আচ্ছা থাক বলতে হবেনা। আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন, আমি কফি নিয়ে আসছি।

— তিন্নি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরাফের সবকিছু ঘুলিয়ে যাচ্ছে। তিন্নি সকালেও তার সাথে কেমন ব্যবহার করেছে। হঠাৎ এমন কি হলো তিন্নি এতটা চেঞ্জ? অনেক ভাবনাচিন্তার পর, আরাফ উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে দেখে টেবিলর উপর দুই মগ কফি রাখা। তিন্নি কি দুই মগ কফি তার জন্যই এনেছে? নাকি সে নিজেও খাবে? ভাবতে ভাবতে হাতে থাকা তোয়ালেটা বিছানার পাশে রেখে আরাফ সোফায় এসে বসে পরলো। তিন্নি কোথায় থেকে এসে তার পাশে বসে, কফির মগ হাতে নিয়ে কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,,,

তিন্নি : এক মগ কফিতে সারাদিনের কান্তি নিমিষেই চলে যায়।

আরাফ : তুমি ঠিক আছো তো? ( অবাক হয়ে )

তিন্নি : হ্যা ঠিক আছি, পা একদম ভাল হয়ে গেছে।

আরাফ : আমি পায়ের কথা বলছিনা। তোমার মাথার কথা বলছি। তোমার মাথা ঠিক আছে? নাকি পাগল টাগল হয়ে গেছো?

তিন্নি : আমি পাগল হতে যাবো কেন? পাগলের সংলাপ তো আপনি করছেন।

আরাফ : আমার সাথে বসতে গেলে তোমার কতো এলার্জি দেখা দেয়। তাই জিঙ্গেসা করছি।

— বলেই আরাফ কফিতে চুমুক দিলো। তিন্নি তাকে কিছু বলতে যাবে তখনি আনহা ড্রয়িংরুম থেকে চেচিয়ে তিন্নিকে ডাকতে লাগলো,,,

আনহা : ভাবি,, নাদিয়া আপু এসেছে।

— নাদিয়া নামটা শুনার সাথে সাথে আরাফ থমকে গেলো। তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : নাদিয়া কে?

তিন্নি : জানিনা, হয়তো আমার কোনো ক্লায়েন্ট হবে।

— তিন্নি বসা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই, আরাফ উঠে গিয়ে তিন্নির হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

তিন্নি : কি আশ্চর্য! আপনি তো এখনি শুনলেন একটা মেয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।

আরাফ : কোথাও যেতে হবেনা, তুমি বসো আমি আসছি।

তিন্নি : আপনি বলবেন আর আমি বসে পরবো? হাত ছাড়েন।

আরাফ : বললাম না কোথাও যেতে হবেনা।

— আরাফ তিন্নিকে ধমক দিয়ে টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে বাহির থেকে দরজা লক করে দিলো। ভিতর থেকে তিন্নি দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল,,,

তিন্নি : আরাফ দরজা খুলেন, কাজটা কিন্তু মোটেও ভালো হচ্ছেনা।

— আরাফ তিন্নির কথায় তোয়াক্কা না করে নিচে নেমে গেলো। আগে দেখতে হবে কোন নাদিয়া। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে তার অফিসে স্টাফ নাদিয়া বসে আছে। তাকে দেখেই তার মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠলো। মেয়েটা এখানে কেন এসেছে? আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ে তুমি এখানে এসেছো কেন?

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 12

0

স্পর্শের_ভাষা part – 12
writer – তানিশা

আরাফ : ছেড়ে দিচ্ছি, রুমে চলো।

— বলেই আরাফ তিন্নিকে তার বাহুডোর থেকে ছেড়ে তাকে টেনে কোলে নিয়ে রুমে হাটা শুরু করলো। তিন্নির ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলতে। আরাফ তিন্নিকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বলল,,,

আরাফ : এখন কি ঘুমাবে? নাকি চাঁদ দেখতে ছাদে যাবে?

— তিন্নি আরাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,,,

তিন্নি : কি ভাবেন নিজেকে? আপনি বলবেন আর আমি দৌড়ে আপনার পিছনে পিছনে চলে যাবো?

আরাফ : আমার মতো একটা আদর্শ স্বামী থাকতে তুমি দৌড়ে যাবে কেন? আমি তোমাকে পাজকোলে করে সিরি বেয়ে ছাদে নিয়ে যাবো। তুমি শুধু বলো দেখবা কিনা?

তিন্নি : আপনার দেখতে ইচ্ছে হলে আপনি যান। আমাকে বিরক্ত করবেন না, আমি এখন ঘুমাবো। ( বিরক্ত নিয়ে )

— তিন্নি বিছানা ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসে পরলো। দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে চিন্তা করতে লাগলো, কিভাবে আরাফের হাত থেকে বাচা যায়। আরাফ তিন্নির সামনে গিয়ে বলল,,,

আরাফ : মুখের থেকে হাত সরাও।

— তিন্নি মুখের থেকে হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বলল,,,

তিন্নি : কেন?

আরাফ : তুমি মুখ ঢেকে রাখলে আমি চাঁদ দেখবো কিভাবে?

তিন্নি : চাঁদ কি আমার মুখে লেগে আছে? ( রেগে গিয়ে )

আরাফ : আজব!! চাঁদ তোমার মুখে লেগে থাকবে কেন? তুমি আমার চাঁদ সুন্দরী। তোমার মুখের দিকে তাকালেই তো চাঁদ দেখা যায়।

— আরাফ তাকে এতটা বিরক্ত করছে যে, সে আর সহ্য করতে পারছেনা। এতটা প্যারা নেয়া সম্ভব না। তিন্নির ইচ্ছে করছে আরাফের হাত, পা, মুখ সব বেধে তাকে নির্জন কোনো জঙ্গলে ফেলে আসতে। তিন্নি প্রচন্ড রেগে নিজের চুল গুলো টেনে ধরেছে, ছিড়ে ফেলার জন্য। আরাফ তিন্নির হাতদুটি ধরে বলল,,,

আরাফ : কি হলো মাথা ব্যথা করছে? আসো মাথায় তেল দিয়ে বিলি করে দেই।

তিন্নি : হ্যা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। আমার মাথায় তেল দেবার প্রয়োজন নেই, আমি একটু ঘুমাতে চাই। আমাকে কি শান্তিতে ঘুমাতে দিবেন? নাকি দিবেন না??

— তিন্নির চোখদুটি রাগের চোটে লাল হয়ে গেছে। আরাফ বুঝতে পারছে তিন্নি প্রচন্ড রেগে আছে, তাকে এই মুহূর্তে বিরক্ত না করলেই ভালো হবে। আরাফ কিছুটা নিচু সুরে বলল,,,

আরাফ : sorry… তোমাকে বিরক্ত করার জন্য। তুমি বিছানা গিয়ে শুয়ে পরো।

তিন্নি : বিরক্তি হচ্ছি বুঝতে পারছেন, তার জন্য শুকরিয়া। আর আমি এখানেই ঘুমাবো।

আরাফ : আমি যেহেতু বলছি তুমি বিছানায় ঘুমাবে, তারমানে তুমি বিছানায় ঘুমাবে।

— বলেই আরাফ আবারও তিন্নিকে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : কথায় কথায় এভাবে কোলে তুলে নেন কেন?? আমাকে কি আপনার ছোট বাচ্চা মনে হয়??

আরাফ : তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার থেকে ৪ বছরের বড়। সেক্ষেত্রে তো তুমি আমার অনেক ছোট তাইনা?? আর আমার বৌকে আমি কোলে নিচ্ছি তোমার সমস্যা কোথায়??

— বলেই আরাফ তিন্নিকে বিছানায় নামানোর সময় তার গালে ছোট একটা চুমু খেয়ে একগাল হেসে দিলো। সাথে সাথে যেন তিন্নি রোবটের মতো শক্ত হয়ে গেছে। আরাফ এটা কি করলো? এতটা বাড়াবাড়ি তিন্নির সহ্য হচ্ছে না। কিছু একটা করতে হবে। তিন্নি ভাবছে কি করা যায়? তখনি আরাফ বলল,,,

আরাফ : তুমি ঘুমিয়ে পরো, আমি আসছি।

— বলেই আরাফ বাথরুমে গেলো। বাথরুমে যাওয়ার পর তিন্নির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। তিন্নি বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমের দরজাটা আস্তে করে বাহির থেকে লক করে দিলো। যে আরাফ টেরই পেলো না। তিন্নি পরম শান্তিতে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলো। এখন আর আরাফ তাকে জ্বালাতে পারবেনা, এখন তার শান্তিতে ঘুম হবে। আরাফ বাথরুম থেকে বের হবার জন্য দরজা খুলতে গেলো দেখে দরজা খুলছে না। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরে আরাফ বুঝতে পারলো, দরজা বাহির থেকে লক করা। দরজা বাহির থেকে কিভাবে লক হলো? ভাবতে ভাবতেই তিন্নিকে ডাকতে লাগলো,,,

আরাফ : তিন্নি? এই তিন্নি? ও বৌ? ও আমার কলিজা বৌ তুমি শুনতে পাচ্ছোনা?

— তিন্নি বিরক্ত নিয়ে বাথরুমের দরজার দিকে তাকালো। আরাফ এভাবে ডাকাডাকি করলে সে ঘুমাবে কিভাবে? আরাফ দরজা ধাক্কা দিয়ে তিন্নিকে ডেকেই যাচ্ছে। তিন্নি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে উঠে বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : একদম ডাকাডাকি করবেন না। অনেক সখ না আপনার বাসর করার?? এখন বাথরুমে বসেই বাসর করেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

আরাফ : তিন্নি please দরজাটা খুলো। এখানে বসার মতোও জায়গা নেয়, আমি সারারাত কিভাবে থাকবো? আমি তোমাকে আর বিরক্ত করবোনা। please… ( অনেক বিনয়ী হয়ে )

তিন্নি : আপনাকে বিশ্বাস করিনা।

আরাফ : ok promise… করছি, তোমাকে আর বিরক্ত করবোনা।

তিন্নি : ok…

— তিন্নি দরজাটা খুলে দিলো। আরাফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো, বাসরঘরে কোনো বৌ তার স্বামীর সাথে এমন করে এটা তার জানা ছিলনা। তিন্নি সেদিকে তোয়াক্কা না করে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। আরাফ চাইলেও এখন কিছু করতে পারবেনা, কারণ সে তাকে ওয়াদা করেছে বিরক্ত করবেনা।

ভোর সারে ৫ টায় তিন্নি ঘুম থেকে উঠে দেখে আরাফ বিছানায় নেই। লোকটা এতো সকাল কোথায় গেলো? সেখানেই যাক অবশ্য তাতে তিন্নির কিছু যায় আসেনা। তিন্নি উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে রান্না ঘরের যাওয়ার জন্য সিরি বেয়ে নিচে নামলো। নিচে আসতেই দেখে আরাফের বাবা আর আরাফ একসাথে বাসায় ঢুকছে। তার শশুড় একজন নামাজি ব্যক্তি এটা সে ভালো করে জানে। কিন্তু আরাফের মাথায় টুপি দেখে তিন্নি কিছুটা অবাক হলো। হয়তো সেও তার বাবার সাথে মসজিদে গেছে। বাহহ আরাফের মধ্যে এতটা পরিবর্তন? বিষয়টা নিয়ে তিন্নি সত্যি অনেক অবাক। তাহলে আরাফকে কি সে একটা সুযোগ দিবে?

আরাফের অফিসে নাদিয়া নামের একটা মেয়ে নতুন জয়েনিং করেছে। মেয়েটা কিছুক্ষণ পর পর কিছু একটা বাহানা দিয়ে আরাফের কেবিনে বারবার আসছে। আরাফ প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। তার উপর তিন্নিকে বারবার কল করছে কিন্তু সে রিসিভ করছেনা। বিকেলে আরাফ বাসায় গিয়ে দেখে তিন্নি রুমে নেই, বাথরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। আরাফ দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো,,,

আরাফ : তিন্নি দরজা খুলো।

— হঠাৎ আরাফের এমন ডাকে তিন্নি কিছুটা চমকে উঠলো। এই লোকটার জন্য বাথরুমে গিয়েও তার শান্তি নাই। আরাফের এমন চেঁচামেচিতে তিন্নি খেয়াল করেনি, বাথরুমের ফ্লোর অনেক পিচ্ছিল হয়ে আছে। তিন্নি ফ্রেস হয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতে যাবে তখনি ধপাস করে ফ্লোরে পরে গিয়ে পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলো,,,

তিন্নি : আহহ,,

আরাফ : তিন্নি কি হয়েছে?

তিন্নি : দেখেন না? পরে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি। ( রেগে গিয়ে )

আরাফ : কিভাবে দেখবো দরজা বন্ধ তো। দরজাটা খুলো আমি দেখছি।

তিন্নি : খুলবো কিভাবে আমি নড়তে পারছিনা।

আরাফ : আচ্ছা দেখি কি করা যায়।

তিন্নি : আপনাকে কিছু করতে হবেনা। আমি উঠার চেষ্টা করছি।

— বলেই তিন্নি অনেক কষ্টে দরজাটা খুললো। দরজা খুলতেই আরাফ তাকে কোলে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া করে পিছনে একটা বালিশ দিয়ে বসিয়ে দিলো। তিন্নির পায়ে হাত দিয়ে দেখতে দেখতে বলল,,,

আরাফ : কোন পায়ে ব্যথা পেয়েছো?

— তিন্নি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,,,

তিন্নি : আনহাকে ডাকেন।

আরাফ : কেন?

তিন্নি : চোখে দেখেননা? আমার পরনের ড্রেসটা ভিজে গেছে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।

আরাফ : আমি থাকতে আনহাকে ডাকবো কেন? আমি তোমার ড্রেস চেঞ্জ করবো। এটা আমার অধিকার আমি তোমার একমাত্র আদর্শ স্বামী।

— তিন্নি আরাফের দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হচ্ছে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। তিন্নি আরাফকে কিছু না বলে নিজেই চেঁচিয়ে আনহাকে ডাকতে লাগলো,,,

তিন্নি : আনহা? এই আনহা?

— আরাফ রুমে থাকলে আনহা তাদের রুমে আসেনা। নতুন বিয়ে হয়েছে তাদেরও তো নিজেদের মতো সময় কাটানোর একটা ব্যাপার আছে। আনহা রুমে এসে বলল,,,

আনহা : কি হয়েছে ভাবি? ডাকছো কেন?

তিন্নি : আমাকে একটু হেল্প করো, আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।

আরাফ : আনহা তুই তোর রুমে যা। আমি ওর হেল্প করবো।

তিন্নি : আনহা তুমি যাবেনা।

আরাফ : আনহা তোকে যেতে বলেছি।

তিন্নি : ও যাবেনা।

আরাফ : আমি বলছি ও যাবে।

তিন্নি : আপনি বুঝতে পারছেন না? আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।

আরাফ : আমি থাকতে আনহা কেন করবে? আমি তোমার হেল্প করবো।

তিন্নি : আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।

আআরাফ : এটা আমি সবসময় করি।

— আনহা একবার তিন্নির মুখের দিকে তাকাচ্ছে একবার আরাফের মুখের দিকে। তাদের ঝগড়া করতে দেখে আনহা বলল,,,

আনহা : তোমরা ঝগড়া করো আমি বরং চলে যাই।

— আনহা চলে যেতেই আরাফ আলমারি থেকে একটা ড্রেস এনে তিন্নিকে বলল,,,

আরাফ : এটা পরবে?

— তিন্নির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগে গজগজ করে বলল,,,

তিন্নি : আপনার কি নিম্নতম লজ্জাবোধ বলতে কিছু নেই?? আনহার সামনে বলছেন আমার ড্রেস চেঞ্জ করবেন। ছিঃ,, আমি এখন আনহার সামনে যাবো কি করে? ( মাথা নিচু করে )

আরাফ : এখানে লজ্জার কি আছে? আমি তোমার স্বামী। আর বিয়ের পর লজ্জা শরম সব চলে যায় এটা তুমি জানোনা? এতো লজ্জা নিয়ে থাকলে দুজনে দুজনের কাছে আসবো কি করে? আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হবে কিভাবে? আমার বাবার বুঝি নাতিনাতনি দেখতে ইচ্ছে করেনা?

— তিন্নি হা করে মাথা তুলে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে বাচ্চাকাচ্চার কথা কোথা থেকে আসলো? তিন্নি আরাফকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : একদম আজেবাজে কথা বলবেন না। আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যান, আমি নিজেই চেঞ্জ করে নিবো।

আরাফ : আমি যাবোনা।

তিন্নি : ঠিক আছে যাওয়ার দরকার নেই। আমি ভেজা শরীর নিয়ে এভাবেই বসে থাকবো।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 11

0

স্পর্শের_ভাষা part – 11
writer – তানিশা

— নানারকম ফুল আর ঝাড়বাতি দিয়ে বাড়ির চারপাশে সাজিয়েছে। পুরো বাড়ির ভিতরটা লাল, সবুজ, হলুদ, সাদা রঙ্গের নানান ফুলের সমারোহ দিয়ে বৌভাত অনুষ্ঠানের জমজমাট আয়োজন করেছে। পার্লারের মেয়েরা তিন্নিকে সকাল থেকে সাজাতে ব্যস্ত। লাল খয়েরি রঙ্গের একটা বেনারসি শাড়ি পরিয়েছে, সাথে গা ভর্তি গহনা। এসব দেখে তিন্নি প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। কি দরকার একটা অসম্পূর্ণ সম্পর্ককে নিয়ে এতটা হৈচৈ করার, লোক দেখানো এতো আয়োজন করার?? আনহা এসে তিন্নিকে দেখে তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল,,,

আনহা : ভাবি আজ যদি মা বেচে থাকতো, তোমাকে এই রূপে দেখে এতটা খুশি হতো যার কোনো সীমানা থাকতো না। তোমাকে এতোটা সুন্দর লাগছে যা বলে বুঝাতে পারবোনা। যেন সর্গ থেকে নেমে আসা একটা অপ্সরী।

তিন্নি : আটা ময়দা মেখে ভূত বানিয়ে দিয়েছে, আর তুমি বলছো অপ্সরী? ( বিরক্ত নিয়ে )

আনহা : আজকের দিনটাই সহ্য করে নাও। please… ( করুণ দৃষ্টিতে )

তিন্নি : আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কি এখানেই বসে থাকতে হবে?

আনহা : না, নিচে চলো। অনেক মেহমান চলে এসেছে।

তিন্নি : হুম চলো।

— সকাল থেকে বাসায় মেহমান আসতে শুরু করেছে, এখনো আসছে। বলেছিল ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করবে। এটাকে ছোটখাটো অনুষ্ঠান বলে? আনহা তিন্নিকে নিচে নিয়ে এসে আরাফের পাশে বসিয়ে দিলো। আরাফ পাশ ফিরে তিন্নির দিকে তাকাতে তার চোখদুটি আটকে গেলো। হা করে অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। তিন্নিকে দেখে তার যেন হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার উপক্রম। মেয়েটা এতোটাই সুন্দর যতবার আরাফ দেখে ততবার তার প্রেমে পরে যায়। তিন্নি আড়চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলল,,,

তিন্নি : হা বন্ধ করেন, নাহয় মুখে মশা ঢুকবে।

— আরাফ তিন্নির বাম হাতটা তার দুই হাতের মাঝে টেনে নিয়ে বলল,,,

আরাফ : ঢুকলে ঢুকবে, তোমাকে পাবার নেশায় দুএকটা মশা খেতেই পারি। তাতে সমস্যা কি??

তিন্নি : ছিঃ,, খাটাশ একটা।

— বলেই তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে তার হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। আরাফ হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,,,

আরাফ : এমন করছো কেন?

তিন্নি : হাত ছাড়েন। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : যদি না ছাড়ি? ( মুচকি হেসে )

তিন্নি : আমি এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হবো।

আরাফ : গিয়ে দেখাও।

— তিন্নি সাথে সাথে রেগে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলো। পাশে দাড়িয়ে থাকা তিন্নির মা বলল,,,

তিন্নির মা : কি হয়েছে? উঠলি কেন?

তিন্নি : আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

তিন্নির মা : তাড়াতাড়ি বস, নাহয় থাপ্পড়াইয়া সব দাঁত ফেলে দিবো ফাজিল মেয়ে।

তিন্নি : মা!

তিন্নির মা : বাড়ি ভর্তি মেহমান দেখছিসনা বেয়াদব মেয়ে, ফাজিল কোথাকার।

— পাশে বসে আরাফ হেসে কুটকুট হয়ে পরছে, তার হাসি যেন থামছেই না। তিন্নি আরাফের দিকে রেগে তাকিয়ে আছে, ইচ্ছে করছে একটা লাঠি দিয়ে আরাফের মুখে বারি দিয়ে তার মুখের হাসিটা বন্ধ করে দিতে। সাথে সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে মাথা ন্যাড়া করে দিতে। তিন্নি রেগে আবারও আরাফের পাশে বসে পরলো। আরাফ দুষ্টামির হাসি দিয়ে বলল,,,

আরাফ : কি হয়েছে যাবেনা? নাকি আমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা?

তিন্নি : একদম চুপ থাকেন। নাহয় কিছু একটা দিয়ে বারি দিয়ে আপনার মুখটা বোচা করে ফেলবো। এতো কথা কিভাবে বলেন? ছাগলের মতো সারাক্ষণ ম্যা ম্যা করতে থাকেন। পাগল ছাগল কোথাকার। ফাজিলের হাড্ডি, অস্বস্তিকর লোক একটা।

— তিন্নি প্রচন্ড রেগে ফোঁপাতে লাগলো। আরাফের মুখটা চুপসে গেলো। এই মুহূর্তে তার চুপ থাকাই ভালো, এটা ভেবে আরাফ আর তার সাথে কথা বললনা।

কখন থেকে সেই একই জায়গায় বসে থাকতে থাকতে তিন্নি বিরক্ত হয়ে গেছে। একের পর এক মেহমান এসে তিন্নিকে দেখে তার গুণাবলি করে যাচ্ছে। তিন্নির প্রচন্ড অস্বস্তিকর লাগছে। কিছুদিন পরে সে আরাফের সাথে থাকবেই না তাহলে কেন সবার সামনে আরাফের স্ত্রী বলে তাকে পরিচিত করা হচ্ছে? যে সম্পর্কটা তিন্নি মন থেকে মানতে পারছেনা, এটাকে নিয়ে এতো আয়োজন কেন??

দুপুরের খাবারের সময় হলে, আনহা আর তার কয়েকজন বান্ধুবি মিলে বড় একটা প্লেটে অনেক রকমের খাবার সাজিয়ে আরাফ আর তিন্নির সামনে নিয়ে আসলো। বৌভাত অনুষ্ঠানে স্বামী স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খাওয়া নিয়ম। এক প্লেটে খাবার খেলে নাকি স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা বাড়ে। প্রতিটা অঞ্চলে কিছু ভিন্ন নিয়ম থাকে। এটা তাদের আঞ্চলিক নিয়ম। তিন্নির মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ভাব দেখা যাচ্ছে। কে বানিয়েছে এই নিয়ম? তিন্নির মা এগিয়ে এসে তিন্নিকে বলল,,,

তিন্নির মা : কি হলো? দুজনে খাওয়া শুরু কর।

তিন্নি : মা সব কিছুতে এমন বাড়াবাড়ি না করলে হয়না?? ( করুণ দৃষ্টিতে )

তিন্নির মা : এটা বাড়াবাড়ি না, এটা আমাদের সমাজের নিয়ম।

আরাফ : শাশুড়ি মা সমাজের এই নিয়মটা যে বানিয়েছে, তাকে অনেক ধন্যবাদ।

— বলেই আরাফ একগাল হেসে দিলো। তিন্নি তার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আরাফের সাথে একই প্লেটে খাবার খেলো।

রাত প্রায় ৯ টা বাজে, অনুষ্ঠান শেষে তিন্নির পরিবার সহ একে একে সব মেহমান চলে গেলো। আনহা তার বান্ধুবিরা মিলে তিন্নিকে আরাফের রুমে নিয়ে গেলো। বাসর ঘরটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে, মনে হচ্ছে বিছানার চারপাশ লাল ও সাদা গোলাপ দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে। বিছানার উপরের দিকের নীল রঙ্গের দেয়ালটাই লাল ফুল দিয়ে লিখে রেখেছে আরাফ তিন্নির বাসরঘর। তার চারপাশে সোনালি রঙ্গের বেলুন দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। রুমটা দেখে তিন্নির চোখদুটি আটকে গেলেও মুহূর্তের মধ্যে সামলে নিলো নিজেকে। আনহা তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটি নাচিয়ে বলল,,,

আনহা : ভাবি কেমন হয়েছে?

তিন্নি : অনেক সুন্দর। ( একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে )

আনহা : তুমি ভাইয়ার অপেক্ষা করো, আমরা চললাম।

— আনহা তার বান্ধুবিদের নিয়ে চলে গেলো। তিন্নি বিছানায় বসে বিছানার চাদরে একবার হাত বুলিয়ে নিলো। হয়তো আবেগের বসে। এই সময়টার জন্য তিন্নি অনেক অপেক্ষা করেছিল, অনেক স্বপ্ন ছিল তার এই সময়টা জোড়ে। কিন্তু আজ সময় কতটা বদলে গেছে। তিন্নির মনে এখন আর আরাফকে নিয়ে কোনো চাহিদা বা স্বপ্ন নেই। আছে একরাশ রাগ, ঘৃণা, অভিমান। আরাফের কথা মনে পরতে তিন্নির কাল রাতের কথা মনে পরলো। কাল রাতে আরাফ তিন্নির সাথে ঘুমানো নিয়ে যা অত্যাচার করেছিল, আজ সে এমনটা মোটেও হতে দিবেনা। আরাফ আসার আগে তিন্নি উঠে গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় এসে শুয়ে পরলো। এখন তার কাছে নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। আজ আরাফ তাকে বিরক্ত করতে পারবে না, সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চোখ দুটি বন্ধ করে ঘুমাতে যাবে। তখনি দরজার ওপাশ থেকে আরাফের বাবা দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে তিন্নিকে ডাকতে লাগলো,,,

বাবা : তিন্নি মা দরজাটা খুলবি? একটা দরকার ছিল।

— তিন্নি অনেকটা চিন্তিত হয়ে শুয়া থেকে উঠে বলল,,,

তিন্নি : বাবা কিছু হয়েছে??

বাবা : হ্যা মা। দরজাটা খুল তারপর বলছি।

তিন্নি : আসছি বাবা।

— তিন্নি দরজা খুলে দেখে আরাফ তার বাবার পেছনে দাড়িয়ে মিটমিট হাসছে। তিন্নি বুঝতে পারছে দরজাটা ইচ্ছে করে আরাফ তার বাবাকে দিয়ে খুলিয়েছে। কারণ আরাফ একা আসলে কখনোই সে দরজাটা খুলতো না। তবুও তিন্নি তার শশুড়কে জিঙ্গেসা করলো,,,

তিন্নি : কি হয়েছে বাবা? কেন ডাকলেন?

আরাফ : কিছুনা, এমনি ডেকেছে। অনেক রাত হয়েছে বাবা তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।

— বলেই আরাফ রুমে ঢুকে পরলো। তিন্নির মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে। আরাফের বাবা চলে যেতেই আরাফ দরজা লক করে ফেললো। তিন্নি আরাফের সাথে কোনো কথা না বারিয়ে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে। আজকে তার আর শান্তির ঘুম হবেনা। অশান্তির মূল কারণ, শয়তানে জম চলে এসেছে রুমে। আরাফ তার পিছনে বেলকুনিতে গিয়ে তিন্নিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

আরাফ : তুমি কি ভেবেছিলে আমাকে ছাড়া একা একা বাসর রাত কাটাবে, আর তা আমি হতে দিবো। কখনো না।

তিন্নি : কথায় কথায় জড়িয়ে ধরেন কেন? দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে পারেন না?

আরাফ : কখনোই না। এসবের অভ্যাস করে নাও।

— তিন্নি আরাফের হাতটা তার কোমর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই, আরাফ আরও শক্ত করে চেপে ধরলো। আরাফ তিন্নির ঘারের কাছে তার মুখ নিতেই আরাফের গরম নিশ্বাস এসে তিন্নি ঘারে পরছে। আরাফ তিন্নির গলায় একটা চুমু খেয়ে তার খোপা করা চুল গুলো খুলে দিলো। তিন্নি শিহরে উঠে চোখদুটি বন্ধ করে আরাফের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরাফ দুহাতে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে তার খোলা চুল গুলোতে মুখ গুঁজে বলল,,,

আরাফ : এমন ছটফট করছো কেন??

তিন্নি : এমন বজ্জাত শয়তান যদি আমাকে সাপের মতো পেঁচিয়ে রাখে আমি কি খুশিতে নাচবো নাকি? ছাড়েন আমাকে। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)