Tuesday, August 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1973



স্পর্শের_ভাষা part – 9+10

0

স্পর্শের_ভাষা part – 9+10
writer – তানিশা

— দেখতে দেখতে ১৫ দিন চলে আসলো। আরাফ অনেক বদলে গেছে। তিন্নির সাথে এখন আর খারাপ ব্যবহার করেনা। এখন তিন্নির আশেপাশে থাকতে ভালোই লাগে, তার সঙ্গে একসাথে বসে গল্প করা, রাতের আঁধারে দোলনা বসে চাঁদ দেখা, তার হাতের রান্না খাওয়া, তিন্নির দিকে মুগ্ধনয়নে অপলক তাকিয়ে থাকা, সবমিলিয়ে তিন্নি এখন তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আরাফ ভাবছে, আজ তো ১৫ দিন। আজ যদি সে তিন্নিকে তার মতামত না জানায় তিন্নি এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে। তিন্নিকে তার সারাজীবনের জন্য চাই। তিন্নিকে কিছুতেই যেতে দেয়া যাবেনা। কিন্তু কি মতামত জানাবে? আরাফ নিজেও জানেনা তিন্নির জন্য তার মনে কি অনুভূতি আছে। কি বলবে ভাবতে ভাবতে ছাদে চলে গেলো।

আরাফ ছাদে গিয়ে দেখে তিন্নি আগে থেকেই সেখানে দাড়িয়ে আছে। তার এলোমেলো চুল গুলো খোপা করে রেখেছে, নেই কোনো সাজ, তবুও যেন তাকে একটা ফুটন্ত গোলাপের মতো লাগছে। আরাফ তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা সময় আমার সাথে কাটাবে??

— তিন্নি আগে থেকেই জানতো আজ আরাফ তাকে এমন কিছু বলবে। তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

তিন্নি : ভালবাসেন??

আরাফ : জানিনা, তবে জীবনের বাকিটা সময় তোমাকে পাশে চাই।

তিন্নি : পাশে তো সবাই থাকে যেমন আনহা, বাবা, আপনার বন্ধুরা। আর যে মানুষটাকে আপনি অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করে নিবেন, সেই মানুষটা আপনার হৃদয়ের অতি মূল্যমান ভালবাসার মানুষ হিসেবে গণ্য হতে হবে। এমনটা যদি না হয়, আমি কেন? যাকে ইচ্ছা পাশে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে পারবেন।

— বলেই তিন্নি নিচে নেমে চলে গেলো। আারাফ তার যাবার পানে তাকিয়ে রইলো। কিভাবে বুঝবে সে তিন্নিকে ভালবাসে কিনা? কিভাবে এই উত্তর খুঁজে পাবে। বিষয়টা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করলে হয়তো সে তার উত্তর পেয়ে যাবে। কিন্তু কার সাথে? স্নেহা বা অনিকা তাদের মধ্যে একজনকে সাথে।

আরাফ স্নেহার সাথে দেখা করে তাকে বলল,,,

আরাফ : আচ্ছা স্নেহা বলতো আমি কিভাবে বুঝবো কাউকে ভালবাসি কিনা??

স্নেহা : উমম,, হাজারও ব্যস্ততার মাঝে যার কথা বারবার মনে পরে, সময় অসময় যার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করে, যার প্রতিটা কথা কাজে ভাললাগা সৃষ্টি হয়, যার দিকে তাকালে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, যেন মনে হয় পৃথিবীর সব মায়া এসে তার মাঝে ভিড় করছে। যার সাথে তোমার জীবনের বাকিটা সময় পথ চলতে ইচ্ছে করে, তুমি তাকেই ভালবাসো।

আরাফ : really…??

স্নেহা : হুম

— স্নেহার প্রতিটা কথা তিন্নির সাথে আরাফের মিলে যাচ্ছে। আরাফ ভাবছে তার মানে সে তিন্নিকে সত্যি ভালবাসে। ভাবতেই আরাফের অন্যরকম খুশি লাগছে। কিন্তু তিন্নিকে কথাটা কিভাবে বলবে? তাই আবারও স্নেহাকে জিঙ্গেসা করলো,,,

আরাফ : আচ্ছা তিন্নিকে কিভাবে বলবো? যে আমি তাকে ভালবাসি।

স্নেহা : প্রত্যেকটা মানুষের কাছেই তার ভালবাসার মানুষটা অনেক special… হয়। আমার মতে এই special… মানুষটাকে যেমন তেমন ভাবে propose… করা ঠিক না। বিশেষ কিছু করা দরকার।

আরাফ : thanks…

— আরাফ চলে আসলো। তিন্নির জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে তার। আরাফ বাসায় এসে আনহাকে চুপিচুপি বলল তিন্নিকে নিয়ে বাহিরে ঘুরে আসতে। আনহা তিন্নিকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এই সময় আরাফ তিন্নির পুরো রুম ক্যান্ডল আর ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কি দিয়ে প্রপোজ করবে? আরাফ তার জন্য কিছু নিয়ে আসেনি। তিন্নি বাসায় ফিরার আগে আরাফ তার জন্য কিছু একটা গিফট নিয়ে আসবে। ভাবতে ভাবতে ইমরানকে কল দিয়ে আসতে বলল। ইমরান আরাফের সাথে যেতে যেতে বলল,,,

ইমরান : কিসের gift নিতে যাচ্ছিস? আর এতো তাড়া কিসের??

আরাফ : আজ তিন্নিকে propose… করবো। তাকে special… কিছু gift… করবো, তার জন্য এতো তাড়া। তাকে কতটা ভালবাসি এটা বলতে হবে না?

— মুখে হাসি টেনে। ইমরান আরাফের দিকে বিষময় নিয়ে তাকিয়ে বলল,,,

ইমরান : তিন্নির যে boyfriend… আছে এটা তুই জানিস না??

— সাথে সাথে আরাফ রেগে ইমরানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : এই তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি?

ইমরান : আমি পাগল হবো কেন? যা সত্যি তাই বললাম। একটা ছেলের সাথে ওর relation আছে। ছেলেটার নাম কি যেন আমার মনে নাই।

আরাফ : এই ফালতু কথাটা তোকে কে বলল?

ইমরান : তিন্নি নিজের মুখে বলেছে। বিশ্বাস না হলে তুই নিজে গিয়ে ওকে জিঙ্গেসা কর। তোর কি মনে হয় ২৩ বছরের একটা যুবতি মেয়ে এখনো single… থাকবে?? আরাফ এই যুগে ২/৪ টা relation… সবারই থাকে। এটা কোনো ব্যাপার না।

আরাফ : ও হয়তো তোকে আমার কথাই বলেছে।

ইমরান : ও তোর কথা বলেনি। ও অন্য কারো কথা বলেছে।

— আরাফ থমকে গেছে, সত্যি কি তিন্নির অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে সে আরাফের জীবনে কেন আসলো? তিন্নির থেকে তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর চাই।

তিন্নি বাসায় ফিরার পর নিজের রুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো। এতো সুন্দর করে ক্যান্ডল আর ফুল দিয়ে পুরো রুম সাজিয়েছে, তিন্নি মুগ্ধ হয়ে দেখছে। তিন্নি অপেক্ষা করছে কখন আরাফ এসে তার মনের অনুভূতি গুলো তিন্নির সামনে প্রকাশ করবে।

আরাফ বাসায় এসে তিন্নির রুমের দরজায় নক না করে ঢুকে পরলো। তিন্নি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,,,

তিন্নি : আপনার অপেক্ষা ছিলাম।

আরাফ : কেন?

তিন্নি : কেন জানেন না??

— আরাফ তিন্নির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সোফায় বসে ভ্রু কুচকে বলল,,,

আরাফ : আচ্ছা তোমার কয়টা boyfriend… আছে বা অতিতে ছিল?

— আরাফ মনে মনে ভাবছে, তিন্নি উত্তরটা যেন এমন হয় অতিথি, বর্তমান, ভবিষ্যৎ তিন্নির জীবনে যেন শুধু আরাফকে ঘিরেই।

তিন্নি আরাফের দিকে বিষময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। যে ছেলেটার জন্য তিন্নি গত ১৫ বছর অপেক্ষা ছিল। আজ সে এমন একটা বাজে প্রশ্ন কিভাবে জিঙ্গেসা করতে পারলো? তার মানে তিন্নির চরিত্র নিয়ে আরাফ সন্দেহ করছে? এমন একটা কথা ভাবতেই তিন্নির ঘৃণা লাগছে।

আরাফ : কি হলো উত্তর দাও?

— তিন্নি চুপ করে দাড়িয়ে আছে, যে মানুষটা তার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে, তার কথার জবাব দিতে তিন্নির ইচ্ছে করছে না।

তিন্নিকে চুপ থাকতে দেখে আরাফ ভাবছে তার মানে ইমরান সত্যি বলেছে। তিন্নি আরাফের সাথে এমনটা না করলেও পারতো। আরাফের প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে তিন্নির প্রতি।

আরাফ : তোমার চুপ থাকার মধ্যে আমি উত্তর খুঁজে পেয়ে গেছি। ( কিছুক্ষণ চুপ থেকে ) জানো তিন্নি তুমি এই বাসায় আসার পর তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছো। এই ১৫ দিনে আমি তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমি জানতাম না যে তুমি একটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে। যার একটা ছেলে হয়না। অবশ্য দুশ্চরিত্রা মেয়েদের এক ছেলে দিয়ে তাদের দেহের চাহিদা মিটেনা তো। হবে কিভাবে?? তোমার মতো third class… মেয়ের থেকে ভালো রাস্তার কিনারা দাড়িয়ে থাকা পতিতা গুলো। যারা টাকার বিনিময় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। তুমি নিজেকে কিসের বিনিময় বিলিয়ে বেরচ্ছো? তিন্নি তোমার কিসের অভাব নাম, খ্যাতি সব আছে। তবুও এতো নিচু কাজ করতে তোমার বিবেকে বাধেনি? একবারও আমার বাবার কথা চিন্তা করোনি? তোমার boyfriend থাকার পরেও কেন এসেছো আমার কাছে। তোমার মতো একটা third class মেয়ে কখনো আমার যোগ্য হতে পারেনা। আমি প্রথম দিন তোমার ব্যাপারে ঠিক ধারনা করেছিলাম। তোমার ১৫ দিনের সময় শেষ, দয়া করে আজ এই মুহূর্তে আমার বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাও।

— বলেই আরাফ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তিন্নি ঠায় দাড়িয়ে রইলো। আরাফ এতটা নিচু মনের মানুষ জানলে তিন্নি কখনো এই বাসায় পা রাখতো না। আজ আরাফ তিন্নির চরিত্র তার আত্মসম্মানে আঘাত করছে। যে কথা গুলো আজ আরাফ তিন্নিকে বলেছে, এর জন্য তিন্নি কখনো তাকে ক্ষমা করবেনা। তিন্নি আর এক মুহূর্ত দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা, দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। নিজের কাপড় গুলো গুছিয়ে এই রাতেই সে চলে গেছে তার বাসায়।

তিন্নি যাওয়ার সময় কেউ তাকে দেখেনি। আনহা তাকে খুঁজতে খুঁজতে আরাফকে গিয়ে জিঙ্গেসা করলো,,,

আনহা : ভাইয়া তিন্নি আপু কই?

আরাফ : ঐ third class… characterless…. মেয়ের নাম আমার সামনে নিবিনা।

আনহা : কি বললে তুমি? ( অবাক হয়ে )

আরাফ : একদম ঠিক বলেছি। ঐ দুশ্চরিত্রা মেয়ের আসল চেহারা আজ আমার সামনে এসে গেছে।

আনহা : তুমি কিভাবে বুঝলে তিন্নি আপু চরিত্রহীন? ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে )

আরাফ : ইমরান বলেছে, ঐ মেয়ের boyfriend আছে। একটা ছেলের সাথে relation থাকার পরেও আমার কাছে এসেছে। ছিঃ কতটা নিকৃষ্ট হলে একটা মেয়ে এমন কাজ করতে পারে।

— আনহা বিষময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। বাহিরের একটা ছেলের কথা বিশ্বাস করে তিন্নিকে এমন বাজে একটা অপবাদ দিতে পারলো? আজ আরাফকে তার ভাই হিসেবে পরিচয় দিতেও যেন আনহার লজ্জা লাগছে। আনহা স্বাভাবিক ভাবে বলতে লাগলো,,,

আনহা : ইমরান ভাইয়া তোমাকে বলেনি? আজ বিকেলে আমি যখন তিন্নি আপুকে নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম। ওনি আমাদের পিছনে পিছনে এসে তিন্নি আপুকে propose করেছে। আর তিন্নি আপু সরাসরি তোমার কথা বলে ওনাকে reject করে দিয়েছে। ওনি বলেনি তিন্নি আপুর boyfriend হিসেবে তোমার পরিচয় দিয়েছে।

— কথাটা শুনার সাথে সাথে আরাফ স্তব্ধ হয়ে গেলো। এটা সে কি করলো? ইমরানের কাছে তিন্নি তার কথাই বলেছে। অথচ আরাফ তার উপর এতটা জঘন্য ঘৃণিত অপবাদ দিয়ে দিলো? এখন সে কি করবে? তিন্নি প্রথম দিন তাকে বলেছিল সে তার জীবনের থেকে বেশি তার আত্মসম্মানকে ভালবাসে। আরাফ তার সাথে এতটা বাজে ব্যবহার করেছে, তার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে, তিন্নি কি তাকে কখনো ক্ষমা করবে? আনহা আবারও বলতে লাগলো,,,

আনহা : ছিঃ ভাইয়া তোমার মন মানুষিকতা এতটা নিচু হবে কখনো ভাবিনি। যে মেয়েটা ১৫ বছর নিষ্ঠার সাথে তোমার অপেক্ষা করেছে, তুমি তাকে চরিত্রহীন বলছো? তাকে তোমার অযোগ্য বলছো? তুমি নিজেই তার যোগ্য কিনা সেটা বিবেচনা করে দেখো। আমি তোমার বোন হয়ে বলছি, তোমার মতো ছেলে তিন্নি আপুর জীবন সাথী হবার যোগ্যতা বহন করেনা। সে তোমার থেকে অনেক ভালো কাউকে আশা করে। আমি এটাই চাইবো, তিন্নি আপুকে যে মন থেকে ভালবাসে তাকেই যেন পায়।

— কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কারো আসার শব্দ পেয়ে তিন্নি বাস্তবে ফিরে এলো। পিছনে তাকিয়ে দেখে আরাফ দাড়িয়ে আছে। তিন্নি কিছু না বলে বেলকুনি থেকে রুমে চলে গেলো। আরাফ তার পিছুপিছু গিয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি এখনো জেগে আছো কেন?

তিন্নি : চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে এখন জিঙ্গেসা করছেন কেন জেগে আছি। বাহহ,, মাঝেমাঝে আপনাকে দেখলে অবাক হয়ে যাই মানুষ এতটা নিখূঁত অভিনয় কিভাবে করতে পারে।

আরাফ : আমি অভিনয় করছিনা।

তিন্নি : আমি আপনার থেকে কোনো explain… শুনতে চাইনা। দয়া করে আমার সামনে থেকে চলে যান।

— কথাটা বলে তিন্নি সোফায় শুয়ে চোখদুটি বন্ধ করে ফেললো। আরাফ ঠায় দাড়িয়ে আছে কিভাবে সে তিন্নির মনে ভালবাসা জাগিয়ে তুলবে? তিন্নি যে তাকে এতটা ঘৃণা করে তার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, তার চেহারাও দেখতে চায় না।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#স্পর্শের_ভাষা
writer – তানিশা
part – 10

— সকালে আরাফ ঘুম থেকে উঠে দেখে তিন্নি রুমে নেই। কোথায় গেলো সে? ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে উঠে তাকে খুঁজে দেখে তিন্নি রান্নাঘরে। তিন্নিকে দেখে আরাফ স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। আরাফ তার কাছে গিয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি এখানে কি করছো?

তিন্নি : দেখতেই পারছেন রান্নার আয়োজন করছি। ( না তাকিয়ে )

আরাফ : তুমি আমাকে না বলে রুম থেকে বেরিয়েছো কেন?

— তিন্নি আরাফের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,

তিন্নি : এখন কি রুম থেকে বের হলেও আপনার permission… নিতে হবে নাকি?

আরাফ : না মানে,, তোমাকে রুমে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম।

তিন্নি : আপনার ভয় কেটে গেলে fresh… হয়ে নাস্তা করে নিন।

— বলেই তিন্নি রান্নার আয়োজন শুরু করলো। আরাফ তার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। থাক না তিন্নি তার উপর রেগে, করুক না যত ইচ্ছা ঘৃণা, তবুও যে তার চোখের সামনে আছে এটাই আরাফের অনেক বড় পাওয়া। এটা ভেবে আরাফ প্রতিক্ষণে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারবে।

আরাফ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে, ড্রয়িংরুমে এসে দেখে তার ছোট খালামনি বসে আছে। আরাফ ওনাকে দেখে বলল,,,

আরাফ : কি গো শাশুড়ি মা,, সকাল সকাল মেয়ের জামাইর বাড়ি চলে এলে যে? মেয়েকে miss করছো নাকি মেয়ের জামাইকে? ( মুচকি হেসে )

তিন্নির মা : আরাফ কালকে কাজটা কি তুই ঠিক করলি?? ( মুখটা মলিন করে )

আরাফ : আমি আবার কি করলাম??

তিন্নির মা : তুই তিন্নিকে এভাবে তুলে নিয়ে আসলি কেন? জানিস আমাদের কতটা লজ্জার সম্মুখে পরতে হয়েছে। গ্রামের মানুষ নানাজন নানা কথা বলতে শুরু করেছে।

আরাফ : কেন? তুমি তাদের বলোনি ছোটবেলা তিন্নির সাথে আমার বাগদান হয়ে গিয়েছিল। আমি আমার বৌকে নিয়ে এসেছি। এখানে কার কি বলার থাকতে পারে??

তিন্নি মা : বৌকে নিয়ে এসেছিস? যদি বৌ নিয়ে আসার ইচ্ছে থাকতো, বরযাত্রী নিয়ে সমাজবদ্ধ হয়ে বিয়ে করে আনলি না কেন?

আরাফ : তোমরা মা, মেয়ে আমাকে সেই সুযোগ দিলে কই? আমার বৌকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার চিন্তায় বিভোর ছিলে। কাজটা কি তুমি ঠিক করেছিলে? তাই আমি এমনটা করতে বাধ্য হয়েছি।

তিন্নির মা : কি ঠিক, কি ভুল, আমি এতো কিছু বুঝিনা। আমি চাই তোরা দুজনে সুখী হো।

— আরাফ উঠে গিয়ে তার খালামনির দুগালে হাত দিয়ে বলল,,,

আরাফ : খালামনি আমি তিন্নিকে পেয়ে অনেক সুখী।

তিন্নির মা : আর তিন্নি?

আরাফ : তিন্নিও আমাকে ভালবাসে, হয়তো কোনো এক কারণে ভালবাসাটা অপ্রকাশিত রয়েছে। যেদিন তিন্নির সব রাগ অভিমান কেটে যাবে, সেদিন দেখবে তোমার ছেলে মেয়ে গুলো পৃথিবীর সেরা দাম্পত্যজীবন কাটাবে।

তিন্নির মা : তোদের জন্য সেই দোয়া রইলো। একটা কথা মাথায় রাখ, তিন্নিকে যতটা পারবি জব্দ করে রাখবি।

আরাফ : তোমার মেয়েকে জব্দ করা এতটা সহজ নাকি?

তিন্নির মা : তুই ওর স্বামী, তুই চাইলে অবশ্য পারবি।

আরাফ : তুমি যেহেতু বলেছো চেষ্টা করে দেখতে পারি। ( একগাল হেসে )

— তিন্নির মা আর আরাফের বাবা তাদের বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করছে। বিয়েটা যেভাবেই হোক, বৌভাতের ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করলে মন্দ হয়না। তারা ভেবেছিল আরাফ, তিন্নির বিয়ে অনেক বড় অনুষ্ঠান করে ধুমধাম করে বিয়ে দিবে। কিন্তু তিন্নির মনের অবস্থা ভালো নেই, এটা ভেবে ছোটখাটো ভাবে অনুষ্ঠান মিটিয়ে নিবে। যখন তিন্নি সম্পর্কটাকে মন থেকে মেনে নিবে তখন নাহয় ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবে।

তিন্নি রান্না শেষ করে এসে দেখে তার মা এসেছে। তার মায়ের দিকে তাকাতেই তার চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে। কাল হয়তো তার মা বাবাকে সমাজের সামনে অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। তিন্নির মা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। তিন্নিকে অনেকক্ষণ বুঝিয়ে ওনি চলে গেলেন। প্রতিটা সম্পর্ককে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া উচিৎ। তিন্নি ওনার কথায় কোনো তোয়াক্কা করেনি। কারণ সে তার নিজের জায়গায় আটুট, আরাফকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া তার পক্ষে কখনো সম্ভব না।

রাত প্রায় ১১ টা বাজে, তিন্নি বিছানায় বসে বই পড়ছে। তিন্নি বই পড়তে খুব ভালবাসে, তাই আরাফ অনেক গুলো গল্পের বই কিনে রেখেছে। তিন্নি আপন মনে বই পড়ছে আর আরাফ সোফায় বসে তিন্নিকে তাকিয়ে দেখছে। আরাফ ভাবছে প্রথম দেখায় কেন সে তিন্নিকে এতটা গভীর ভাবে দেখেনি?? তিন্নিকে দেখে মনে হচ্ছে যেন জ্যোৎস্না রাতের পূর্ণিমার চাঁদ তার সামনে বসে আছে। কোন এক ফুটন্ত লাল গোলাপ হার মেনে যাবে তিন্নির সৌন্দর্যের কাছে। আরাফের যেন চোখ সরতেই চাইছেনা তিন্নির থেকে। তিন্নি আড়চোখে তাকিয়ে দেখে আরাফ তার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। আরাফের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে তিন্নির কাছে খুব অস্বস্তিকর লাগছে। তিন্নি পড়ায় মন বসাতে পারছেনা। বই বন্ধ করে তিন্নি উঠে গিয়ে তাকে বলল,,,

তিন্নি : এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে )

আরাফ : দেখছি আমার বৌ কতটা সুন্দর।

— বলেই আরাফ একগাল হেসে দিলো। বসা থেকে তিন্নির হাত ধরে একটানে তার কোলে বসিয়ে দিয়ে, দুহাত দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজে বলল,,,

আরাফ : আচ্ছা তিন্নি তুমি এতো সুন্দর কেন??

তিন্নি : ছাড়েন আমাকে। ( নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে )

আরাফ : ছাড়বো না। আমার বৌকে আমি জড়িয়ে ধরেছি, তাতে তোমার সমস্যা কোথায়? ( বলেই আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো )

তিন্নি : আরাফ কাজটা কিন্তু মোটেও ভালো হচ্ছেনা। ( রাগী গলায় )

আরাফ : ঠিক বলেছো। একজন আদর্শ স্বামী হিসাবে কোথায় তোমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করবো, তা না করে শুধু জড়িয়ে ধরে আছি। এটা কি ঠিক হচ্ছে?

— তিন্নির প্রচন্ড রেগে আরাফের থেকে জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। আরাফের থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : আগে একজন ভাল মানুষ হয়ে দেখান। তারপর নাহয় একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য পালন করতে আসেন। এখন এখান থেকে সরে বসেন, আমি ঘুমাবো।

— আরাফ সোফায় বসে থেকে ভ্রু দুটি নাচিয়ে বলল,,,

আরাফ : বিছানা থাকতে তুমি এখানে কেন ঘুমাবে?

তিন্নি : আপনার বিছানায় ঘুমানোর মতো ইচ্ছে বা রুচি আমার নেই। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : কেন? এতক্ষণ তো আমার বিছানায় বসে গল্প পড়ছিলে। তখন সমস্যা হয়নি? এখন কি ইচ্ছে আর রুচি দুইটাই বদলে গেছে??

— কথাটা বলেই আরাফ হাসতে শুরু করলো। আরাফের হাসি দেখে তিন্নির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগের চোটে কিছু না বলে তিন্নি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। আরাফ রুমের লাইট অফ করে বিছানায় গিয়ে তিন্নির পাশে শুতে গেলে তিন্নি শুয়া থেকে উঠে বসে পরলো। অন্ধকার রুমেই সে আরাফের দিকে রেগে কটমট করে তাকিয়ে রইলো। আরাফ সেদিকে তোয়াক্কা না করে বিছানায় শুয়ে পরলো। তিন্নি আরাফকে তার পাশে সহ্য করতে পারছেনা। সে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে লাগলে আরাফ হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

তিন্নি : মরতে যাচ্ছি। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : তাহলে তো তোমাকে যেতে দেয়া যাবেনা।

— বলেই আরাফ একটানে নিজের কাছে টেনে নিলো। তিন্নি রেগে গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : হচ্ছেটা কি?

আরাফ : স্বামী স্ত্রীর মাঝে অনেক কিছু হওয়াটা স্বাভাবিক। যদিও আমাদের মাঝে এখনো কিছু হয়নি, তুমি চাইলে অনেক কিছু হতে পারে।

— বলেই আরাফ চোখ টিপ মেরে তিন্নিকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরলো। আরাফের এমন আচরণে তিন্নির দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে করতে বলল,,,

তিন্নি : এখন যদি আপনি আমাকে না ছাড়েন আমি চিৎকার করতে বাধ্য হবো।

আরাফ : এই রাতে তুমি চিৎকার করলে বাড়ির সবাই কি ভাববে বলোতো? ছিঃ কি একটা বাজে ব্যাপার হয়ে যাবে। তারচেয়ে ভালো তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরো, আমি কিছু করবোনা।

তিন্নি : আমাকে ছাড়েন, আপনার প্রতিটা স্পর্শে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে আমার।

আরাফ : আমি ছাড়তে ইচ্ছুক না। ছাড়াছাড়ির চিন্তা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরো। কালকে অনুষ্ঠানে তোমাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখাতে হবে। এখন যদি না ঘুমাও চোখের নিচে কালো দাগ পরে যাবে। যেটা আমি মোটেও মানতে রাজি না।

তিন্নি : আপনার এই বাড়াবাড়ির ফল কিন্তু অনেক খারাপ হবে। ( রাগী গলায় )

আরাফ : দেখা যাবে।

— তিন্নি অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও আরাফের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারেনি। কাল রাতে তার ঠিকমতো ঘুম হয়নি। তাই আজ ঘুমের রাজ্য চোখে এসে ভিড় করছে। তিন্নি, আরাফ দুজনেই কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেছে।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 8

0

স্পর্শের_ভাষা part – 8
writer – তানিশা

— পরদিন সকালে আরাফ তৈরি হয়ে গাড়িতে বসে সবার অপেক্ষা করছে। কেমন যেন তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে, এতো বছরের মধ্যে সে একবারও যে তার খালামনির খুঁজ নেয়নি। এতো বছর পর ওনার বাসায় যাবে, খালামনি তাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে?

তিন্নি আনহা আর তার বাবা এসে গাড়িতে বসেছে। তিন্নি তার মাকে যাওয়ার কথা বলেনি, আরাফ বলতে না করে দিয়েছে। কারণ সে তার খালামনিকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। আরাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে, পেছন বসে তিন্নি, আনহা নানান গল্প জুড়ে দিয়েছে। মাঝেমাঝে তাদের সাথে বাবাও তাল মেলাচ্ছে। আরাফ বিষয়টা উপভোগ করছে, তারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে তাদের সাথে একটু গল্পের আসরে অংশগ্রহণ করতে। কিন্তু সে নিজেকে তাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারছেনা। কিভাবে গল্প শুরু করবে?? কোনো টপিক নেই তার কাছে। তখনি আনহা বলতে শুরু করলো,,,

আনহা : আপ্পি তোমার মনে আছে? তোমার জহির কাকার বাড়ির পিছনে যে খেত আছে। ঐখানে আমি আর তাহরিম selfee… তোলার সময় style করতে করতে উল্টে গিয়ে খেতে পরে গিয়ে ছিলাম। style করা আর হলো কই? পুরো শরীরে কাদা লেগে ভুত মতো খেতের কিনারায় দাড়িয়ে ছিলাম। খেতের মালিক আমাদের দেখে লাঠি নিয়ে কি দৌড়ানিটাই না দিয়েছিল। কারণ ওনার খেতের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

— কথাটা শুনার সাথে সাথে সবাই খুব জোরে হেসে দিলো। আরাফ হাসতে হাসতে বলল,,,

আরাফ : really…??

আনহা : হ্যাঁ ভাইয়া, ঐ দিন কোনোরকম নিজের জীবন বাচিয়ে দৌড়ে পালিয়েছি।

আরাফ : আচ্ছা রাস্তা দিয়ে দৌড়ে আসার সময় তোকে দেখে কেউ আতংকিত হয়ে মারা যায়নি?

আনহা : আতংকিত হতে যাবে কেন??

আরাফ : তুই না বললি, খেতে পরে ভুত হয়ে গিয়েছিলি। ভুত দেখলে তো মানুষ আতংকিত হয়ে যায় তাই বললাম।

— সবাই গল্প করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যে তিন্নিদের বাসার সামনে পৌঁছে গেছে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে চলে যেতে লাগলে তিন্নি পিছনে তাকিয়ে দেখে আরাফ এখনো গাড়িতে বসে আছে। তিন্নি ফিরে গিয়ে তাকে বলল,,,

তিন্নি : কি হলো আপনি এখনো গাড়িতে বসে আছেন কেন?

আরাফ : actually ( কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা )

তিন্নি : চলেন ভিতরে।

আরাফ : তুমি যাও আমি আসছি।

— তিন্নি চলে গেলো। তিন্নি আনহা ও তার বাবাকে দেখে তিন্নির মা অবাক হয়ে গেলেন। খুশিতে আনহা আর তিন্নিকে জড়িয়ে বুকে নিলেন। ঘরের দরজায় দাড়িয়ে আরাফ মুচকি হেসে বলল,,,

আরাফ : খালামনি আমাকে জড়িয়ে ধরবেনা??

— তিন্নির মা আরাফের কন্ঠ শুনে দরজায় তাকিয়ে দেখে আরাফ দাড়িয়ে আছে। তিনি যেন নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাদের দুজনকে ছেড়ে দিয়ে আরাফের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার দুগালে হাত দিয়ে টলমল চোখে বলতে লাগলেন,,,

তিন্নির মা : বাবা তুই সত্যি এসেছিস??

আরাফ : তোমার আরাফ কি জমজ নাকি? যে তার জমজ ভাই আসবে।

তিন্নির : এতো বছর পরে বুঝি তোর খালামনির কথা মনে পরলো?

আরাফ : আসলে খালামনি মাকে হারানোর পর নিজেকে কেমন যেন নিজের মধ্যেই বন্দি করে ফেলেছিলাম। sorry… খালামনি আমাকে মাফ করে দাও।

তিন্নি মা : বোকা ছেলে মায়ের কাছে সন্তান কখনো অপরাধী হয়না।

— বলেই আরাফকে জড়িয়ে ধরলো। আরাফের বাবা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,,

আরাফের বাবা : এই সবকিছু আমার তিন্নি মায়ের জন্য সম্ভব হয়েছে।

আনহা : বাবা তুমি ঠিক বলেছো। তিন্নি আপু আজকের দিনটার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

— তাদের কথা শুনে তিন্নি হেসে দিলো। সত্যি আজকে তিন্নির কাছে অনেক খুশি লাগছে। এখন আর আগের মতো আরাফের অহংকারটা নিজের প্রতি কাজ করেনা। আরাফ হয়তো অনেক বদলে গেছে। বিষয়টা ভাবতেই তিন্নির কাছে অনেক খুশি খুশি লাগছে।

তিন্নির মা আরাফের প্রত্যেকটা পছন্দের খাবার রান্না করে নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আজ আরাফ অনেকদিন পর তৃপ্তির সাথে খেয়েছে। খালামনির কাছে এসে তার মায়ের অনুপস্থিতি অনুভব করতে পারছেনা। তিন্নিদের বাসায় দুপুরের খাবার শেষ করে, তাদের থেকে বিদায় নিয়ে সবাই বাসায় চলে আসলো।

রাত ৮ টায় আরাফ নিজের রুমে বসে ভাবছে, আজকের দিনটার জন্য তিন্নিকে একটা ধন্যবাদ জানানো দরকার। আরাফ উঠে গিয়ে তিন্নির রুমের দরজায় নক করলো, কোনো সারা শব্দ নেই। আরাফ আস্তে দরজা খোলে ভিতরে গিয়ে দেখে তিন্নি নেয়, হয়তো আনহার রুমে হবে। আরাফ আনহার রুমে গিয়ে দেখে সেখানেও তিন্নি নেই। আনহা তাকে দুষ্টামির হাসি দিয়ে জিঙ্গেসা করলো,,,

আনহা : কি ব্যাপার অসময়ে তিন্নি আপুকে খুঁজচ্ছো?

আরাফ : তেমন কিছুনা ও কোথায় বল?

আনহা : ছাদে গিয়ে দেখো চাঁদ দেখায় বিভোর হয়ে আছে।

— আরাফ সিরি বেয়ে ছাদে চলে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখে তিন্নি দোলনায় বসে আপন মনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো আসার শব্দ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে আরাফ এসেছে। আরাফ তার পাশে গিয়ে দোলনায় বসে বলল,,,

আরাফ : চাঁদে মধ্যে এমন কি দেখো প্রতিদিন?

তিন্নি : অনেককিছু।

আরাফ : কই আমিতো কিছুই দেখিনা।

তিন্নি : চারদিকে তাকিয়ে দেখেন, চাঁদের এই জ্বলমলে আলোয়ে চারপাশ কতো উজ্জ্বল হয়ে আছে। চারদিকে নিস্তব্ধ এক মধুময় পরিবেশ। মাঝেমাঝে ঝিম বাতাস এসে শরীর শিহরিত করে তুলছে। চোখদুটি বন্ধ করে এই সময়টাকে অনুভব করে দেখেন, কতটা স্বস্তি অনুভব হয়। প্রকৃতির মাঝেই যেন নিজেকে বিলীন করে দিতে ইচ্ছে করে। সারাদিনের যত ক্লান্তি আছে সব নিমিষেই মিটে যায়। ( চোখদুটি বন্ধ করে )

— আরাফ তিন্নির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। জ্যোৎস্না রাতের জ্বলমলে আলো যেন তিন্নির মায়াবী চেহারা ঘিরে তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলছে। তিন্নির মতো তার প্রতিটা কথা, কাছেও সৌন্দর্য বিরাজ করে। মেয়েটা সবকিছু নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে পারে। আরাফ মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে। সে কি তিন্নির প্রেমে পরে গেলো? নাকি তিন্নির প্রতি তার ভাললাগা কাজ করছে?

তিন্নি চোখদুটি খোলে আরাফের দিকে তাকালো। আরাফ এখনো বেঘোরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নি কিছুটা অবাক হয়ে তার হাতে স্পর্শ করে বলল,,,

তিন্নি : এভাবে কি দেখছেন?

আরাফ : চাঁদের সৌন্দর্য দেখছি। তুমি ঠিক বলেছিলে, চাঁদের দিকে তাকালে সব ক্লান্তি নিমিষেই চলে যায়। ভিতর থেকে স্বস্তি চলে আসে। চাঁদ যেমন নিজে সুন্দর, ঠিক তার চারপাশটাও নিজের মতো করে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে।

তিন্নি : চাঁদ তো আকাশে, আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন?

আরাফ : আমার পাশে বসা পৃথিবীর সবচেয়ে সৌন্দর্যময় চাঁদেরকণা দেখছি। যে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমার মনে হয় তোমার মধ্যে আকাশের চাঁদের থেকেও বেশি সৌন্দর্য বিরাজ করে।

তিন্নি : আবেগ ভালোই জন্মেছে দেখি।

— বলেই তিন্নি জোরে হেসে দিলো। আরাফ তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে, মানুষের হাসি এতটা সুন্দর হয় এটা তিন্নিকে না দেখলে হয়তো জানা হতোনা। তিন্নি আারও আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

তিন্নি : কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

আরাফ : তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর, ঠিক তোমার মতো।

তিন্নি : আমার প্রেমে পরে গেছেন নাকি?

আরাফ : জানিনা

তিন্নি : আচ্ছা আপনি এখানে বসে জানার চেষ্টা করেন, আমি আসি।

— কথাটা বলে তিন্নি বসা থেকে উঠলে, আরাফ তার হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথাও যেতে হবেনা, বসো আমার সাথে।

তিন্নি : বসে কি করবো? আমার কাজ আছে।

আরাফ : আমরা একসাথে বসে চাঁদ দেখবো, নিস্তব্ধ মধুময় পরিবেশটা অনুভব, স্বস্তির নিশ্বাস নিবো। আর একদিন কাজ না করলেও চলবে।

— তিন্নি হা করে আরাফের দিকে তাকিয়ে রইলো, এটা সত্যি সেই প্রথম দিনের আরাফ? নাকি তিন্নি কোনো ঘোরের মধ্যে আছে? সে কি সত্যি এতটা বদলে গেছে? হয়তো। নাহয় এতো বছর পরে তিন্নিদের বাসায় আরাফ কখনোই পা রাখতো না।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 7

0

স্পর্শের_ভাষা part – 7
writer – তানিশা

— তিন্নি রেগে আরাফের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে আছে। ইমরান তিন্নিকে একা দেখে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,

ইমরান : Hi… কেমন আছো?

তিন্নি : ভালো, আপনি?

ইমরান : ভালো ছিলাম, তোমাকে দেখার পর আরও ভালো লাগছে।

— কথাটা শুনার সাথে সাথে আরাফ ভ্রু কুচকে ইমরানের দিকে তাকিয়ে আছে,,,

তিন্নি : মানে বুঝলাম না?

ইমরান : মানে যার সামনে শাড়ি পরা এতো pretty.. একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, তার ভালো না লেগে উপায় আছে?

তিন্নি : এটা আপনার ধারণা, অবশ্য আপনার আশেপাশে এমন অনেক অরুচির রুগি আছে। যাদের শাড়ি পরিহিত মেয়েদের ভাললাগে না।

— কথাটা বলে আরাফের দিকে তাকালো। আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কারণ সে বুঝতে পারছে তিন্নি কথাটা তাকেই বলেছে,,,

ইমরান : really… এমন কেউ আছে নাকি? তাহলে সেই অরুচি রুগির choice.. পুরাই third class…

— বলেই ইমরান হো হো করে হেসে দিলো। আরাফের দিকে তাকাতেই তিন্নির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। কারণ ইমরান জানেই না সে কাকে অপমান করছে। আরাফ তিন্নির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন সে চোখ দিয়ে তাকে গিলে খেয়ে ফেলবে।

ইমরান : by the way… তোমাকে না দেখলে জানতামই না মানুষ কখনো এতটা perfect… হতে পারে।

তিন্নি : মানুষ কখনোই perfect… হয়না। সবার মাঝে কিছুনা কিছু অসম্পূর্ণতা থেকে থাকে।

ইমরান : হয়তো। আচ্ছা আমার একটা কাজ আছে, একটু পরে আসছি।

তিন্নি : ok…

— ইমরান চলে যেতেই আরাফ এসে তিন্নিকে চোখ রাঙ্গিয়ে জিঙ্গেসা করলো,,,

আরাফ : আমি অরুচির রুগি?

তিন্নি : অবশ্যই।

আরাফ : তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।

তিন্নি : আপনি অপমানের যোগ্য হলে তাতে আমার কি?

— কথাটা বলতে বলতে একটা ছেলে এসে তিন্নিকে বলল,,,

সাব্বির : আপনি মালিহা মুন তিন্নি right…??

তিন্নি : হ্যাঁ, আপনি?

সাব্বির : আমি সাব্বির। আপনার সাথে কি একটা selfee… নিতে পারি??

— আরাফ ছেলেটা দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। চেনা নেই, জানা নেই কোথা থেকে উড়ে এসে ছবি তুলতে চলে আসলো। তিন্নি বলল,,,

তিন্নি : sorry… ভাইয়া আমি অপরিচিত কারো সাথে ছবি তুলি না।

সাব্বির : please… madam একটা selfee…

তিন্নি : বললাম তো ভাইয়া sorry… বিরক্ত করবেন না।

সাব্বির : please madam.. just একটা selfee

— আরাফ বুঝতে পারছে, তিন্নি ছেলেটার প্রতি বিরক্ত হচ্ছে। তাই সে কিছুটা রাগী সুরে ছেলেটাকে বলল,,,

আরাফ : আসেন ভাই আমার সাথে selfee তুলেন।

সাব্বির : আজব তো! আপনার সাথে তুলতে যাবো কেন? ( অবাক হয়ে )

আরাফ : আমার বৌয়ের সাথে ছবি তুলা যে কথা, আমার সাথে ছবি তুলা একই কথা। তাই আসেন একসাথে ছবি তুলি। ( এগিয়ে গিয়ে )

সাব্বির : sorry… madam যে বিবাহিত আগে জানতাম না।

— বলেই ছেলেটা চলে গেলো। তিন্নি হা করে আরাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরাফ এটা কি বলল? এমন তো না যে সে কিছু মুহূর্তের মধ্যেই তাকে মেনে নিবে। তিন্নিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরাফ বলল,,,

আরাফ : হা বন্ধ করো, মুখে মশা ঢুকবে। এতো অবাক হবার কিছু নেই। মিথ্যা এই জন্য বলেছি ছেলেটা যেন আর তোমাকে disturb.. না করে। এখানে খুশি হবার মতো কিছু নেই। ( অন্য দিকে তাকিয়ে )

— তিন্নির এবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আরাফের উপর। তাই সে রেগে গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : আপনাকে বলেছি ছেলেটা আমাকে disturb… করে। আমাকে ওনার হাত থেকে বাচান। একবারও কি আপনার কাছে help… চেয়েছি? আমি এক্ষণি ঐ ছেলেকে গিয়ে বলবো আপনি মিথ্যা বলেছেন।

আরাফ : তুমি কোথাও যাবেনা, আমার সাথে থাকবে।

তিন্নি : আপনি আমার কে? যে আপনার সাথে থাকতে হবে।

— বলেই তিন্নি হাটতে লাগলো। আরাফ তার পিছুপিছু গিয়ে তার হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

তিন্নি : আপনাকে বলতে বাধ্য না। আমার হাত ছাড়েন।

আরাফ : হাত ছেড়ে দিলেও তোমার পিছনেই থাকবো। কারণ তুমি আমার responsibility…

— আরাফ তার হাত ছেড়ে পিছুপিছু হাটতে লাগলো। কারণ কেউ যেন তিন্নিকে ডিস্টার্ব না করে। তিন্নি হাটতে হাটতে একপর্যায় তার দিকে ফিরে বলল,,,

তিন্নি : এখন কে কার পিছনে পরে আছে? ( ভ্রু কুচকে )

আরাফ : আমি তোমার পিছনে পরে আছি। কোনো সমস্যা?

তিন্নি : না ভালোই লাগছে। এতো অহংকারী একটা মানুষ আমার পিছনে পরে আছে বিষয়টা উপভোগ করার মতো।

— বলেই তিন্নি মুচকি হেসে আবারও হাটতে লাগলো। আরাফ আবারও তার পিছনে পিছনে হাটতে লাগলো। ভালোই লাগছে আরাফকে তার পিছনে হাটাতে।

তিন্নি, স্নেহা আর অনিকার সাথে বসে গল্প করছে। আরাফ দূর থেকে দাড়িয়ে মুগ্ধনয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নির হাত নাড়িয়ে কথা বলা, তার মুখে অদ্ভুত এক মায়া জড়ানো হাসি, মাঝেমাঝে কানের নিচে চুল গুজে নেয়া, তার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কখনো কোনো অহংকার না করা, খুব সহজেই সবাই আপন করে নেয়া, প্রত্যেকটা সম্পর্ককে এতটা প্রাধণ্য দেয়া, আর সবাই এতটা ভালবাসা। সত্যি তিন্নি অনেক সুন্দর, মন এবং সৌন্দর্য দুইদিক থেকে। আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,

তিন্নি : কি ব্যাপার? ক্রাশ খেয়েছেন? নাকি ভালো লেগেছে? কোনটা? ( ভ্রু নাচিয়ে )

আরাফ : তেমন কিছুনা। পার্টি তো প্রায় শেষ, বাসায় যাবেনা??

তিন্নি : হ্যাঁ চলেন সবার থেকে বিদায় নিয়ে আসি।

— আরাফ আর তিন্নি সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। আরাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে, তিন্নি তার পাশের সিটে বসে আছে। জানালার কাঁচ খোলা, তিন্নি তার বা হাত জানালার উপরে রেখে মুখটা হালকা বের করে অন্ধকার রাতের চলন্ত গাড়িতে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো বাতাস গুলো উপভোগ করছে। হঠাৎ তিন্নির মোবাইল বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখে তার মা কল করেছে,,,

তিন্নি : মা তুমি এখনো জেগে আছো কেন? তোমার জন্য বাবাও হয়তো ঘুমায়নি। তুমি জানোনা বাবার ঠিকমতো ঘুম না হলে বাবা অসুস্থ হয়ে যায়?

মা : চিন্তা করিসনা, তোর বাবা ঘুমিয়ে আছে। তোরা কি বাসায় ফিরেছিস??

তিন্নি : না মা এখনো গাড়িতে আছি। একটু পরে পৌঁছে যাবো। তুমি এখন ঘুমিয়ে পরো। কালকে কথা হবে।

— তিন্নি কল কেটে দিলো। আরাফ সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি সবার অনেক খেয়াল রাখো। তাইনা??

তিন্নি : খেয়াল রাখিনা, ভালবাসি। কাছের মানুষ গুলোকে ভালবাসলে খেয়াল রাখতে হয়না, এটা আপনাআপনি চলে আসে।

আরাফ : কি জানি, হয়তো।

তিন্নি : নিজের কাছের মানুষ গুলোকে একবার ভালবাসার চেষ্টা করে দেখেন, তখন উপলব্ধি করতে পারবেন ভালবাসায় কতটা আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

— তিন্নি আবারও জানালায় হাত রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আরাফ বলে উঠলো,,,

আরাফ : কালকে তৈরি থেকো খালামনির বাসায় যাবো।

— তিন্নি অনেকটা অবাক হয়ে আরাফের দিকে ফিরে তাকালো,,,

তিন্নি : হঠাৎ আমাদের বাসায় যাবেন?

আরাফ : খালামনির কথা মনে পরছে তাই।

তিন্নি : আগে মনে পরতো না?

আরাফ : পরতো, কিন্তু তখন তো তুমি পাশে ছিলেনা, তাই সম্পর্ককে কিভাবে গুছিয়ে নিতে হয় না জানতাম না। এখন শিখতে চাইছি।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 6

0

স্পর্শের_ভাষা part – 6
writer – তানিশা

— তিন্নি রুমের দরজা নক করতে আরাফ ভিতর থেকে বলল,,,

আরাফ : কে?

তিন্নি : আমি, দরজা কি খোলা যাবে?

আরাফ : sorry… আমি ব্যস্ত।

তিন্নি : কি নিয়ে ব্যস্ত? খালামনির স্মৃতি?

— আরাফ চুপ করে বসে আছে। দরজার ওপাশ থেকে তিন্নি আবারও বলল,,,

তিন্নি : একটু কথা বলা যাবে?

— আরাফ কিছু না বলে বসা থেকে উঠে দরজা খোলে আবারও নিজের জায়গা গিয়ে বসে পরলো। তিন্নি তার রুমে ঢুকে আরাফের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে বলল,,,

তিন্নি : যেসব স্মৃতি আমাদের মনে কষ্ট সঞ্চারণ করে সেসব স্মৃতি ভুলে যাওয়া উচিৎ। যে স্মৃতি গুলো স্মরণ করলে আমাদের মনে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ পায় সে স্মৃতি গুলো মনে রাখা উচিৎ। যেমন মনে করেন,, আপনার মনে আছে কিনা আমি জানিনা, ছোটবেলা একবার ঝগড়া করে আপনি আমার চুলের বেণী ধরে টেনে ছিলেন। আর আমি কাঁদোকাঁদো গলায় খালামনির কাছে গিয়ে আপনার নামে নালিশ করেছিলাম

— তিন্নি কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই আরাফ বলতে লাগলো,,,

আরাফ : আর মা আমাকে লাঠি নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছিল। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি ছেড়ে কই যেন চলে গেলাম, সারাদিন বাড়ি ফিরিনি। মা আমাকে সারাদিন খোঁজতে খোঁজতে বেহাল হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। যখন বাড়ি ফিরলাম মা জড়িয়ে ধরে কি কান্না। আর আমি ভেবেছিলাম বাসায় ফিরলে মা হয়তো আমাকে মারবে। মাঝেমাঝে কথাটা মনে পরলে প্রচন্ড হাসি পায়।

— কথাটা বলেই আরাফ হেসে দিলো। তিন্নি আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা এতটাও খারাপ না। আরাফ হাসতে হাসতে তিন্নির মুখের দিকে তাকাতেই তার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। তিন্নির থেকে মুখ ফিরিয়ে বলল,,,

আরাফ : আমার ক্ষুধা পেয়েছে।

তিন্নি : টেবিলে খাবার রেডি আছে। বাবা আর আনহা আপনার অপেক্ষা করছে।

— বলেই তিন্নি আরাফের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সকালে আরাফ ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে দেখে, তিন্নি বাহিরে দাড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। আরাফের মনে কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে নিশ্চয় কোনো ছেলের সাথে লাইন মারছে। অন্য ছেলের সাথে লাইন মেরে এই বাড়ির বৌ হবার ইচ্ছা, বের করবে আরাফ। আজকেই সবার সামনে তিন্নির আসল চেহারা দেখিয়ে দিবে। ভাবতে ভাবতে আরাফ নিচে তিন্নির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে গেলো। ইশারায় তিন্নিকে লাউড স্পিকার অন কারতে বলল। তিন্নি হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আরাফ আবারও ইশারায় লাউড স্পিকার অন করতে বলল। তিন্নি অন করতেই আরাফের ছোট খালামনির কন্ঠ ভেসে আসছে। আরাফ কিছুটা বিচলিত হয়ে চলে যেতে লাগলে তিন্নি তার হাত ধরে বলল,,,

তিন্নি : মা কি বলে একটু শুনবেন?

— আরাফ অন্য দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। তিন্নি তার মাকে বলতে লাগলো,,,

তিন্নি : মা তখন কি যেন বলছিলে??

তিন্নির মা : বলছি, আমার আরাফের সাথে খারাপ ব্যবহার করবিনা। ওকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবি। ছেলেটা তো আমার কাছে আসেনা, আসলে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম। আমার বোনের চোখের মনি ছিল সে।

তিন্নি : শুধু তোমার বোনের চোখের মনি? তোমার কিছু ছিলনা??

তিন্নির মা : কি যে বলিস তুই? ও তো আমার কলিজার টুকরা। বোনের ছেলে মেয়ে গুলো, নিজের সন্তানের থেকেও বেশি আদরের হয়। বুঝলি?

তিন্নি : বুঝেছি। আচ্ছা মা রাখছি, পরে কথা বলবো।

— তিন্নি কল কেটে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে আর আরাফ নিচের দিকে,,,

তিন্নি : যে মানুষটাকে আপনি নিম্ন পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য করেন, সে মানুষটাই আপনাকে একবার নিজ হাতে খাইয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। আপনাকে তার কলিজায় ঠাই দিয়েছে। এটাই হচ্ছে ভালবাসা। অবশ্য আপনি এসব বুঝবেন না। প্রত্যেকটা সম্পর্ক ভালবাসা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হয়, টাকা দিয়ে নয়। উমম আপনার কাছে ভালবাসার ক্ষমতা আছে কিনা জানিনা,, তবে টাকার ক্ষমতা অনেক আছে। একটা কথা মনে রাখবেন টাকা সবসময় সাথে থাকেনা, আর প্রিয়জন গুলো কখনো ছেড়ে যায়না। তাই সম্পর্ককে ভালবাসা দিয়ে মূল্যায়ন করতে শিখেন।

— কথাটা বলে তিন্নি বাসার ভিতরে চলে গেলো, আরাফ তিন্নির যাবার পানে তাকিয়ে রইলো। একটা মেয়ে সম্পর্ককে কিভাবে এতটা প্রাধন্য দিতে পারে? আর ছোট খালামনি কি সত্যি তাকে এতোটা স্নেহ করে? তাকে জানতে হবে। আরাফ তিন্নির পিছু পিছু গিয়ে বলল,,,

আরাফ : তিন্নি খালামনি কি সবসময় আমার কথা বলতো??

— তিন্নি নাস্তার আয়োজন করতে করতে বলল,,,

তিন্নি : কেন আপনার মনে নেই, যখনি আমরা নানুর বাসায় যেতাম। মা আমাদের একি প্লেটে খাইয়ে দিতো, এক সাথে গোসল করিয়ে দিতো। আমার জন্য নতুন জামা কিনলে আপনাকেও কিনে দিতো। আমাদের সবার জন্য এটি রকম খেলনা কিনতো। তাহলে তো মা আপনাকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতো। তাইনা?? আর মা কখনো সন্তানকে ভুলতে পারেনা। কিন্তু সন্তানরা পারে, যেমন আপনি। অবশ্য এটা আপনাদের মতো সন্তানদের ক্ষেত্রেই সম্ভব।

— তিন্নির কথায় আরাফকে চুপ থাকতে দেখে তার বাবা বলে উঠলো,,,

বাবা : আরাফ তোর খালামনি তোকে অনেক miss.. করে। তুই কি একবার ঘুরে আসবি তোর খালামনির বাড়ি থেকে?

আরাফ : আচ্ছা বাবা দেখি।

— আরাফ নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে গেলো। অফিসে বসে ভাবছে তার কি যাওয়া ঠিক হবে? আচ্ছা পরে ভেবে দেখবে। তখনি ইমরানের কল আসলো,,,

আরাফ : হ্যা দোস্ত বল,,

ইমরান : কালকের পার্টিতে তিন্নিকে নিয়ে আসিস।

আরাফ : তিন্নিকে কেন?

ইমরান : just friendly… নিয়ে আসবি।

আরাফ : sorry… আমি পারবো না।

ইমরান : কেন??

আরাফ : কেন এর জবাব দিতে পারবোনা, তোর এতো ইচ্ছে হলে তুই নিয়ে যাস।

— আরাফ বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিলো।

পরেরদিন আরাফ, ইমরানের বাসায় পার্টিতে গিয়ে দেখে তিন্নি স্নেহার সাথে আগে থেকেই বসে আছে। তিন্নিকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য আরাফের চোখ আটকে গেলো। পরনে সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের একটা সিল্ক শাড়ি, চোখে কাজল, কানে বড় বড় ঝুমকা, একপাশে সীঁথি করা খোলা চুল, এক হাতে অনেকগুলা সিলভার কালার স্টোনের চুড়ি পরেছে। এক কথায় অপূর্ব লাগছে। হঠাৎ তিন্নি আরাফকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসলো। আরাফ এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নি আরাফের চোখের সামনে ডান হাতে একটা তুরি বাজিয়ে বলল,,,

তিন্নি : কি দেখছেন?

— আরাফের ঘোর কাটতেই সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকে তিন্নির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাই কিছুটা রাগী গলায় তাকে জিঙ্গেসা করলো,,,

আরাফ : তুমি এখানে কি করছো?

তিন্নি : বিকেলে স্নেহা বাসায় গিয়ে অনেক request করছিল এখানে আসার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো।

আরাফ : request করছিল তাই চলে আসবে নাকি? এটা একটা অভদ্রতা তুমি জানোনা?

তিন্নি : এটা অভদ্রতা না, এটাকে সম্মান রক্ষা বলে। আর আমি বাবার থেকে বলেই এখানে এসেছি। ভদ্রতা, অভদ্রতা আমাকে শিখাতে আসবেন না। ভদ্রতা কাকে বলে আগে নিজেই ভালো করে শিখে নিন।

আরাফ : তুমি আমাকে ভদ্রতা শিখতে বলছো? ( রাগী চোখে তাকিয়ে )

তিন্নি : কেন আপনার মধ্যে ভদ্রতা বলতে কিছু আছে নাকি? ( ভ্রু কুচকে ) কই আমিতো জানিনা। তো কিভাবে আপনার মাঝে ভদ্রতা বিরাজমান আছে kindly… আমাকে বলবেন? আমি জানতে অনেক ইচ্ছুক। ( হাসি দিয়ে )

আরাফ : তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো। ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে )

তিন্নি : এখন কি দেখতে পাচ্ছেন না? নাকি চোখে কাঠের চশমা লাগিয়ে রেখেছেন??

আরাফ : বাসায় আসো তারপর দেখছি।

— বলে আরাফ তিন্নির সামনে থেকে চলে গেলো। তিন্নি মিটমিট হাসতে হাসতে আরাফের পিছনে গিয়ে আবারও তার সাথে দাড়িয়ে গেলো। আরাফ পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : আমার পিছনে এসেছো কেন? নাকি আমাকে দেখে নিজেকে আর control… করতে পারছোনা??

তিন্নি : what…?? ( চোখদুটি বড় বড় করে )

আরাফ : yea… তাইতো আমার পিছনে পরে আছো।

তিন্নি : wait… করেন। দেখবেন একটু পরে কে কার পিছনে পরে আছে।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 5

0

স্পর্শের_ভাষা part – 5
writer – তানিশা

— আরাফ অফিসে বসে ভাবছে, গ্রামের একটা নিম্ন পরিবারের মেয়ে তার সাথে এভাবে কথা বলবে এটা সে মেনে নিবেনা। তিন্নিকে একটা উপযুক্ত জবাব দিতে হবে তার। যতটা উচ্চ সুরে সে আরাফের সাথে কথা বলেছে, ঠিক ততটাই নিচু সুরে কথা বলতে বাধ্য করবে তাকে। তাকে এটা বুঝাতে হবে, সামান্য একটা গ্রামের মেয়ে হয়ে সে আরাফের যোগ্য হতে পারেনা। তিন্নির সাথে তার কালচারের কোনো মিল নেই। আরাফ কোন কালচারে মেয়েকে প্রত্যাশা করে সেটা তিন্নিকে জানতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ভাবতে ভাবতে তার ফ্রেন্ড স্নেহার কথা মনে পরলো। স্নেহা এযুগের মর্ডান মেয়ে, তার সামনে তিন্নি পুরাই আনকালচার একটা মেয়ে। তিন্নিকে আজ খুব ভালভাবে তার অবস্থানটা বুঝিয়ে দিতে পারবে। কথাটা ভাবতেই তার এতো খুশি লাগছে। যখন তিন্নি সামনে স্নেহাকে নিয়ে দাড় করাবে, তখন তিন্নির অবস্থা দেখে কতটা খুশি লাগবে ভাবতেই আরাফ স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।

বিকেলে তিন্নি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে গল্প পড়ছে, গল্পের বই পড়তে সে একটু বেশিই পছন্দ করে। তখন বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। তিন্নি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই, তাই সে নিজেই গেলো দরজা খোলার জন্য। দরজা খোলে দেখে আরাফের সাথে তিনটা ছেলে আর দুটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আরাফ স্নেহাকে একা নিয়ে আসেনি তার বাবা যদি অন্যকিছু ভাবে? তাই তার সব বন্ধু ইমরান, হাবিব, রায়হান, স্নেহা ও অনিকাকে নিয়ে এসেছে। আরাফের বন্ধুরা তিন্নিকে খেয়াল করেনি, একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় ঢুকেছে। তিন্নি তাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করতে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তিন্নি নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে তাদের সামনে এসে নাস্তার ট্রেটা টেবিলের উপর রাখতে যাবে, আরাফের বন্ধু ইমরান তিন্নিকে দেখে বলে উঠলো,,,

ইমরান : আপনি মালিহা মুন তিন্নি right…??

— আরাফ ইমরানের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে, সে তিন্নির নাম জানলো কিভাবে?? “মালিহা মুন তিন্নি” নামটা শুনার সাথে সাথে স্নেহা আর অনিকা তিন্নির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেছে। তিন্নি কিছুটা বিষময় নিয়ে বলল,,,

তিন্নি : জ্বি, আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে??

ইমরান : কতো সালে মনে নেই আপনার একটা ছবি আমি newspaper… দেখেছিলাম। ঐই বছরের রেকেট খেলায় মেয়েদের মধ্যে আপনি আমাদের জেলার প্রথম বিজয়ী ছিলেন।

তিন্নি : maybe… ২০১৪ সালের কথা আপনার এখনো মনে আছে?? strange…

ইমরান : মনে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছুনা। আমি ইমরান আরাফের ফ্রেন্ড।

স্নেহা : Hi… আমি স্নেহা আর ও অনিকা।

তিন্নি : আমি আপনাদের দুজনকে চিনি। ( মুখে হাসি এঁকে ) আচ্ছা আপনারা কি সবাই ওনার বেস্ট ফ্রেন্ড? ( আরাফকে ইশারা করে )

ইমরান : হ্যা আমরা এখানে সবাই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনি বসুন আমাদের সাথে।

তিন্নি : no thanks… আপনারা বসে গল্প করেন, আমি চলে যাই। ( বলেই একগাল হেসে দিলো )

স্নেহা : এতো বড় একজন famous মানুষ আমাদের মাঝ থেকে চলে যাবে এটা কি মেনে নেওয়া যায়?

তিন্নি : আমি famous না, অতি নগণ্য একজন।

স্নেহা : বাংলাদেশের top fashion designer… যদি এই কথা বলে এটা মানা যায়? আপনি যদি অতি নগণ্য হোন তাহলে আমরা কি??

তিন্নি : আমি, আপনি, আমরা সবাই সমান, প্রত্যেকের নিজের একটা যোগ্যতা থাকে। যে কাজটা আপনি পারেন, সেটা হয়তো আমি পারিনা, যেটা আমি পারি, সেটা হয়তো আপনি পারেন না। তাই বলে আমি গণ্য, আপনি নগণ্য এটা কিন্তু ভুল। আর একটা কথা আমাকে তুমি করে বললে খুশি হবো।

স্নেহা : সত্যি তুমি অনেক ভাল, তোমার মনটাও অনেক সুন্দর।

তিন্নি : ধন্যবাদ, আপনারা সবাইও অনেক ভালো। আচ্ছা আপনারা নাস্তা করেন আমি পরে আসছি।

অনিকা : please… একটু বসো আমাদের ভাললাগবে।

— আরাফ ভ্যাবাচেকা খেয়ে একবার তিন্নির দিকে তাকাচ্ছে একবার তাদের দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এরা সবাই তিন্নিকে চিনে? আর তিন্নি famous বলতে কি বুঝাতে চাইছে। তিন্নি কি সত্যি বাংলাদেশের top fashion designer… দের মধ্যে একজন? প্রথম দিন সে তিন্নি সাথে যেভাবে কথা বলেছে তাকে নিম্ন, অখ্যাতি, অযোগ্য বলেছে। কই তিন্নি তো একবারও কিছু বলেনি?? আরাফ কি এটা সত্যি শুনেছে নাকি কিছু ভুল??

আরাফ : তিন্নি তুমি fashion designer…??

তিন্নি : হুম।

অনিকা : আরাফ তুমি এভাবে জিঙ্গেসা করছো কেন? যেন তুমি জানোনা??

আরাফ : এই প্রথম জানলাম।

স্নেহা : seriously…? তোমার ছোট খালামনির মেয়ে অথচ তুমি জানোনা?

— আরাফ কিছুই বলল না। কোথায় তিন্নিকে তাদের সামনে নিচু করার জন্য তাদের নিয়ে এসেছে। উল্টো তারা তিন্নিকে বিখ্যাত বানিয়ে দিয়েছে। আরাফের ইচ্ছে করছে সবকটাকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না, সে নিজেই তাদের নিয়ে এসেছে। এখন তো তিন্নির সাথে বসে সবকটা গল্প জুড়ে দিয়েছে। আরাফের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি।

রাত ৯ টায় আরাফ কফি জন্য রান্না ঘরে গিয়ে দেখে তিন্নি নিজ হাতে রান্নার আয়োজন করছে, তিন্নিকে দেখে আরাফ রান্না ঘরে না ঢুকে দরজা হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি যে এতো বড় একজন designer.. কই আগে বলোনি যে? I mean… এমনটাও তো হতে পারতো, যে তোমার যোগ্যতা যাচাই করার পর তোমাকে আমি স্বীকৃতি দিতাম।

তিন্নি : আমি আপনার মতো মানুষকে নিজের যোগ্যতা দেখিয়ে বেরই না। আমার যদি কোনো যোগ্যতা থেকে থাকে সময় হলে আপনি নিজে দেখতে পাবেন। এখানে বলার কি আছে?? আর আমার খ্যাতিমান দেখে যদি আপনি আমাকে স্বীকৃতি দিতেন? তাহলে আমার খ্যাতিমানকে গণ্য করা হতো আমাকে না। আমি চাই আপনি আমাকে গণ্য করুন।

আরাফ : তো বাংলাদেশের top designer… হয়ে রান্না ঘরে কাজ করছো যে?? তুমি জানো তোমার অবস্থানটা এখন কোথায়??

তিন্নি : রান্না করাটা আমার ফ্যাশন, ভাললাগে রান্না করতে। আর অবস্থান বলতে কি বুঝাতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি।

আরাফ : really…?? তাহলে তোমার মুখ থেকে শুনি তোমার অবস্থানটা কোথায়? ( শয়তানি হাসি দিয়ে )

তিন্নি : আপনি এটাই বুঝাতে চাইছেন আমরা যারা রান্না করি, তাদের জন্য আপনি যখন ইচ্ছে তৃপ্তির সাথে খেতে পারেন। আর আমরা যদি রান্না করা ছেড়ে দেই। তাহলে আপনার মতো কিছু অহংকারী মানুষকে রান্না ব্যতিত সবকিছু গরুর মতো কাঁচা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হতো। এই দিক থেকে আমাদের অবস্থানটা কাজের লোকের জায়গায় না, সর্ব উত্তম জায়গা বহন করে। তাইনা??

— আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে কথায় কথায় তাকে অপমান করে, কিন্তু সে তার প্রতি উত্তরে কিছুই বলতে পারেনা।

তিন্নি : আর একটা কথা রান্নার কাজকে কখনো ছোট মনে করবেন না। বড় খালামনির হাতের রান্না অনেক স্বাদ ছিল, ওনি সবাইকে নিজের হাতের রান্না করে খাওয়াতেন। তাই বলে ওনার অবস্থানটা নিম্নস্তরে চলে যায়নি, সবার উচ্চ স্তরে ছিল। কারণ রান্না করতে পারাটা ছিল ওনার যোগ্যতা, আপনি ওনার ছেলে হয়ে রান্না করতে পারেন না এটা আপনার ব্যর্থতা।

— কথাগুলো বলে তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রান্না শুরু করলো। আরাফ কিছু না বলে চলে গেলো। তিন্নি রান্না করছে আর ভাবছে, আরাফ কিছু না বলে চলে গেলো কেন? সে তো মোটেও এমন না। কিছু না কিছু তো অবশ্য তিন্নিকে বলে যেতো। না বলে যাওয়ার কারণ কি? আরাফকে কি একবার জিঙ্গেসা করা ঠিক হবে?? রান্না শেষ করে খাবারের টেবিলে খাবার পরিবেশন করে দেখে আরাফ আসেনি। তাই সে আরাফের রুমে যায়, রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। সে ভাবছে দরজায় টোকা দিবে কিনা?

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 3+4

0

স্পর্শের_ভাষা
part – 3+4
writer – তানিশা

— বিয়ে সম্পূর্ণ হবার পরপর সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, তিন্নি বিছানা এককোণে চুপটি মেরে বসে পরলো। রাগে ঘৃণায় গা জ্বলে যাচ্ছে তার। আজ আরাফ তার সাথে মোটেও কাজটা ঠিক করেনি। এর প্রতিদান সে অবশ্য আরাফকে দিবে, যেটা আরাফ কল্পনাও করতে পারবেনা।

আরাফ রুমে ঢুকে দেখে তিন্নি প্রচন্ড রেগে বসে আছে। দেখতে আরাফের কাছে বিষয়টা ভালই লাগছে, অবশ্য তাকে আরেকটু রাগালে মন্দ হয়না। আরাফ তিন্নির কাছে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসে একগাল হেসে বলল,,,

আরাফ : তুমি অনেক happy… তাইনা??

— কথাটা শুনার সাথে সাথে তিন্নি আরাফের দিকে মাথা তুলে তাকালো। তিন্নি সুখী হবার মতো আজ পর্যন্ত আরাফ এমন কিছুই করেনি। তার জীবনটা এলোমেলো করে আজ থেকে সুখ নামক জিনিসটা ও তার জীবন থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এই মানুষটার সাথে সে কখনো সুখী হবে, ভাবতেই হাস্যকর মনে হয়। তিন্নি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,,,

তিন্নি : কোন দুঃখে?

আরাফ : এইযে একটু আগে তোমার ভালবাসার মানুষটার সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেলো। যে ছেলেটাকে তুমি পাগলের মতো ভালবাসতে, আজ তুমি তাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়ে গেছো। তুমি আমাকে পেয়ে গেছো তিন্নি। তুমি বুঝতে পারছো, তুমি কতটা ভাগ্যবতী? আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা। তুমি আমাকে পেয়ে গেছো? রায়মান এহসান আরাফকে?? আমাকে পেয়ে তোমার জীবন তো ধন্য হয়ে গেলো।

তিন্নি : মিঃ “রায়মান এহসান আরাফ” আপনি এমন কে? যাকে পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো? ( ভ্রু কুচকে )

আরাফ : আমার দিকে তাকিয়ে দেখো আমি কতটা smart, handsome… আমার personality দেখে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে।

— আরাফের কথায় তিন্নি একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলো। মানুষ দেখতে সুন্দর হলে যে তার চরিত্র, মন, মানুষিকতা সুন্দর হবে এমনটা নয়। তাদের মধ্যে আরাফ একজন। সৌন্দর্য একসময় বয়সের সাথে মলিন হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্দর চরিত্র আর মন কখনো মলিন হয়না। তিন্নি কখনো সুদর্শন কাউকে খুঁজেনি, একটা ভালো মনের মানুষকে খুঁজেছে। তিন্নি খুব স্বাভাবিক ভাবেই আরাফকে বলতে লাগলো,,,

তিন্নি : ঠিক বলেছেন আপনি দেখতে অনেক সুদর্শন একজন ব্যক্তি। কিন্তু আপনি কি জানেন সুদর্শন কাকে বলে? জানেন না। মানুষ দেখতে সুন্দর হলেই যে সুদর্শন হয়না এটা আপনাকে দেখলে বুঝা যায়। আপনি দেখতে সুদর্শন হলে কি হবে? আপনার ভিতরে থাকা কুৎসিত হৃদয়টার কারণে আপনার বাহিরের সৌন্দর্য আমাকে আকর্ষিত করেনা। আর আমি কখনো আপনার জন্য পাগল ছিলাম না। আমার কাছে সম্পর্ক আর বিশ্বাসের মূল্যটা অনেক ছিল। সেই সম্পর্ক আর বিশ্বাসকে সম্মান করে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আপনি যেটার যোগ্য ছিলেন না।

— কথাগুলো বলে তিন্নি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো। আরাফের সামনে তার বসে থাকতে ইচ্ছে করছেনা। আরাফ মাথা নিচু করে বসে আছে। ভেবেছিল তিন্নিকে একটু রাগায়ে তার সাথে কিছুক্ষণ দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করবে। কিন্তু পিছনের কথাগুলো আবারও তিন্নির মনে নাড়া দিয়ে উঠলো। সত্যি আরাফ তিন্নির বিশ্বাসের যোগ্য ছিলনা। এবার আরাফ যেকোনো মূল্যে নিজেকে তিন্নির বিশ্বাসের যোগ্য করবে। তার ভালবাসাকে জয় করবে।

তিন্নির পরনের বেনারসি শাড়িটা চেঞ্জ করতে হবে। তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে আনহার কাছে যাওয়ার সময় দরজার খোলার শব্দ হলে, আরাফ মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে তিন্নি রুমের দরজা খোলছে।

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

তিন্নি : ভয়ের কিছু নেই, যতদিন পর্যন্ত আপনার সাথে আমার ডিবোর্স না হয় ততদিন আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমি আনহার রুমে যাচ্ছি শাড়ি চেঞ্জ করবো।

আরাফ : আনহার রুমে যাওয়ার দরকার নেই। আলমারিতে তোমার জন্য অধিক পরিমাণ ড্রেস রাখা আছে, যেটা পছন্দ হয় পরে নাও।

তিন্নি : বিষয়টা কেমন যেন হাস্যকর মনে হচ্ছে আমার জন্য আগে থেকেই ড্রেস রাখা আছে?? strange…

আরাফ : তুমি আমার একমাত্র বৌ, তোমার ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, অফুরন্ত চাহিদা গুলো পূরণ করা যদিও আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে। কিন্তু এখন এটা আমার শখ।

তিন্নি : আপনার কাছে আমার একটাই চাহিদা ডিবোর্স। এই মিথ্যা সম্পর্কের বাধন থেকে আমাকে মুক্ত করে দিন। আমার চাহিদা পূরণ করার একটা সুযোগ আপনি পেয়ে যাবেন।

আরাফ : এটা তোমার চাহিদা না, আমার থেকে নিজেকে দূরে রাখার জেদ। যদি কখনো আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করো? পা দুটি কেটে বিছানায় পঙ্গু করে ফেলে রাখবো। আমার বৌ পঙ্গু হলে কোনো সমস্যা নেই, সবসময় আমার চোখের সামনে তো থাকবে।

— তিন্নি কিছু না বলে আরাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যে মানুষটার সাথে কথার বলতেও তার রুচিতে বাদে, তার সাথে সারাজীবন কিভাবে কাটাবে? আরাফ বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে তিন্নি তার সাথে কথা বলতে চাইছেনা। তাই সে বসা থেকে উঠে তিন্নির হাত ধরে বিনয়ীর সাথে বলতে লাগলো,,,

আরাফ : আমার জন্য তোমার মনে যে পরিমাণ রাগ, ঘৃণা জন্মে আছে আমি সেটার যোগ্য। আমার উপর যতটা ইচ্ছা রেগে থাকো, ঘৃণা করো আমি কিছু মনে করবো না। কারণ আমি জানি কিছুদিনের মধ্যেই তোমার সব রাগ, ঘৃণা আমার জন্য ভালবাসায় পরিণত হবে।

তিন্নি : আপনার কথা শেষ? নাকি আরও বাকি আছে??

আরাফ : আমি বুঝতে পারছি আমার কথাগুলো শুনতে তোমার কাছে মোটেও ভাললাগছে না।

তিন্নি : বুঝতে পারছেন তার জন্য শুকরিয়া। এবার আমার হাত ছেড়ে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলুন।

— আরাফ তিন্নির হাত ছেড়ে দিলো। তিন্নি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আরাফ কি বলেছে তাতে তিন্নির কিছু যায় আসেনা। আরাফের সাথে ভালো ব্যবহার করা তার পক্ষে কখনোই সম্ভবনা। অনেকটা সময় পর তিন্নি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আরাফ রুমে নেই আনহা একা দাড়িয়ে আছে,,,

তিন্নি : আনহা কিছু বলবে??

আনহা : ভাবি খেতে চলো,

তিন্নি : আমি খাবোনা, তুমি খেয়ে নাও।

আনহা : সেই বিকেলে তোমাকে বাসায় আনা হয়েছে, এখনো কিছু খাওনি। বাবা অপেক্ষা করছে তোমার জন্য নিচে চলো।

তিন্নি : আমার ক্ষুধা নেই, বাবাকে বলো খেয়ে নিতে।

আনহা : তুমি না খেলে আমিও কিন্তু খাবোনা। তুমি খুব ভালো করে জানো আমি না খেয়ে থাকতে পারিনা। ( মাথা নিচু করে )

— তিন্নি এবার হেসে দিলো, আনহার বাচ্চামো গুলো এখনো রয়ে গেছে। এই মেয়েটা তিন্নিকে সবসময় নিজের বড় বোনের মতো ভালবেসে এসেছে। তিন্নি হাসতে হাসতে বলল,,,

তিন্নি : আমিও কিন্তু না খেয়ে থাকতে পারিনা।

আনহা : আমি জানি, এবার চলো।

— তিন্নি আনহার সাথে খাবার টেবিলে চলে গেলো। খাবার টেবিলে বসে তিন্নি অনেক স্বস্তি পাচ্ছে, কারণ আরাফ নেই। আশরাফুল এহসান তিন্নিকে আনহার মতো স্নেহ করে। তিন্নির প্রতি আরাফের এমন আচরণে তিনি নিজেকে অনেক ছোট ভাবছে, তাই খাবারের টেবিলে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে তিন্নির কাছে। ওনার এমন ক্ষমার দৃষ্টান্ত দেখে তিন্নি মন খারাপ করে বলল,,,

তিন্নি : বাবা আপনি কি আমাকে আগের মতো স্নেহ করেন না।

বাবা : বাবার স্নেহ, ভালবাসা কি সন্তানের জন্য কখনো বদলে যায়? না,,রে মা আমি আমার এই মেয়েটাকে আগের মতোই ভালবাসি।

তিন্নি : তাহলে ক্ষমা চাইছেন কেন? বাবারা কখনো সন্তানের খারাপ চাইনা। সময় আর পরিস্থিতি মানুষের জীবনটাকে এলোমেলো করে দেয়।

বাবা : আমি চাইলে হয়তো আরাফকে আটকাতে পারতাম। ( মাথা নিচু করে )

তিন্নি : বাবা আপনার প্রতি আমার কোন রাগ নেয়। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

— তিন্নি একগাল হেসে খাওয়া শুরু করলো। খাবার শেষে এখন কি সে আরাফের রুমে যাবে নাকি যাবেনা, এমন একটা দ্বিধায় আছে। কি করবে বুঝতে পারছেনা। আরাফের সাথে একই রুমে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। তাই আমতা আমতা করে আনহাকে বলেই ফেললো,,,

তিন্নি : আনহা গেস্ট রুমের চাবিটা কোথায়?

আনহা : চাবি ভাইয়ার কাছে। বাসায় যেকয়টি খালি রুম আছে, ভাইয়া সেগুলো লক করে রেখেছে। তোমার কাছে কোনো অপশন নেই তোমাকে ভাইয়ার রুমেই ঘুমাতে হবে।

— কথাটা বলে আনহা মৃদু হাসলো, সাথে সাথে তিন্নির মুখটা মলিন হয়ে গেলো। অনিচ্ছা সত্বেও এখন তাকে আরাফের রুমেই থাকতে হবে। তিন্নি সিরি বেয়ে উপরে উঠে দেখে রুমের দরজা বন্ধ। রুমের সামনে দাড়িয়ে থেকে ভাবছে দরজা টোকা দিবে নাকি দিবেনা। আরাফের সাথে একই রুমে থাকার চেয়ে সারারাত ড্রয়িং রুমে কাটিয়ে দিবে এটাই ভালো। কথাটা ভাবতে ভাবতে আরাফ দরজা খোলে তিন্নির দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে দিলো। আরাফের এই হাসিটা তিন্নির মোটেও সহ্য হয়না। তিন্নি আরাফের থেকে মুখ ফিরিয়ে দাড়াতেই আরাফ তাকে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি চোখদুটি বড় বড় করে বলল,,,

তিন্নি : হচ্ছেটা কি? কি করছেন?

আরাফ : এখনো কিছু হয়নি, সময় হোক সবকিছু হবে। এতো তাড়া কিসের? অপেক্ষা করো, অপেক্ষার ফল অনেক মিষ্টি হয়। ( রুমে নিয়ে যেতে যেতে )

তিন্নি : আমাকে নামান বলছি ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : তোমাকে সারারাত কোলে নিয়ে রাখবো নাকি? তুমি যে পরিমাণ মোটা আমার হাত ব্যথা হয়ে যাবে। ( বলেই বিছানা বসিয়ে দিলো )

তিন্নি : কি বললেন আমি মোটা? আর আপনি কি? আপনি তো আস্ত একটা জলহস্তী। ( রেগে গিয়ে )

আরাফ : আমি জলহস্তী?

তিন্নি : নিঃসন্দেহ, যদি বিশ্বাস না হয় আয়না নিজের চেহারা ভালভাবে দেখে নিন। জলহস্তী কোথাকার।

— আরাফ মুচকি হেসে তিন্নির সামনে একটা লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,,,

আরাফ : এই জলহস্তীটা তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসে।

— তিন্নি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেছে। নিজের চারপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো রুম জুড়ে লাল গোলাপের সমারোহ আর ক্যান্ডল দিয়ে রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো গুছানো। বিছানা পরে থাকা লাল গোলাপের পাপড়ি গুলো যেন রুমের সৌন্দর্য আরও বারিয়ে দিচ্ছে। একপাশে অনেক গুলো বেলুন দিয়ে সাজিয়ে লিখে রেখেছে ভালবাসি মায়াবতী। তিন্নি চারপাশে তাকিয়ে চোখদুটি বন্ধ করে নিজেকে স্থির করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই তার মন স্থির হচ্ছেনা। তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

তিন্নি : কি চাই আপনার?

চলবে,,,

#স্পর্শের_ভাষা
writer – তানিশা
part – 4

আরাফ : তোমার সাথে সারারাত গল্প করতে চাই, ছোটবেলা স্মৃতিচারণ ঘুরে আসতে চাই, জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত তোমার সাথে বাচতে চাই। তোমাকে প্রাণ খোলে ভালবাসতে চাই। আমি শুধু তোমাকে চাই, আজ রাতে আমাকে কি একটু সময় দেয়া যাবে? শুধু গল্প করবো।

তিন্নি : প্রত্যেকবার একই কথা বলতে বলতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। আপনার সাথে গল্প করা, সময় কাটানোর রুচি বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।

— তিন্নি আরাফের পাশ কাটিয়ে সোফায় বসে পরলো। সাজানো ঘরের দিকে তাকিয়ে তার সেদিনের কথা গুলো মনে পরে যাচ্ছে। মূলত তিন্নি একটা ধৈয্যশীল মেয়ে, কিন্তু আজ সে কিছুতেই নিজেকে স্থির করতে পারছেনা। ইচ্ছে করছে ঘরের সব ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে, কিন্তু সে এমন করবে না। তিন্নি চোখদুটি বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পরলো। আরাফ তার পাশে গিয়ে হাঁটুগেরে বসে বলল,,,

আরাফ : আমাকে একটা second chance… দাও please…

তিন্নি : আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না, আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো। আর একবার ডিস্টার্ব করলে আমি এই রুম ছেড়ে যেতে বাধ্য হবো। আর হ্যা দয়া করে রুমটা পরিষ্কার করেন, রুমটা যে জঘন্য ভাবে ময়লা করেছেন, এগুলো দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

— কথাগুলো বলে তিন্নি আবারও চোখদুটি বন্ধ করে ফেললো। আরাফ তিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ঘুমাচ্ছে না, ঘুমানোর ভান করছে। চোখের কোণে নোনাজল চিকচিক করছে, হয়তো কান্না আসছে তবুও নিজেকে আটকে রেখেছে তিন্নি। আরাফ বসা থেকে উঠে সাজানো ঘরটা আবারও আগের ন্যায় গুছিয়ে নিয়েছে। বিছানায় শুয়ে তিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নি কি ঘুমাচ্ছে নাকি এখনো জেগে আছে? ভাবতে ভাবতে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেছে আরাফ।

তিন্নির চোখে ঘুম নেই, কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না সে। শুয়া থেকে উঠে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে। গভীর রাতে চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে আছে। আর চোখ থেকে টপটপ নোনাজল গড়িয়ে পরছে তিন্নির। তার জীবনটাও এই অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। এর জন্য হয়তো তিন্নি নিজেই দায়ী। সেদিন যদি সে এই বাসায় না আসতো, আরাফের সাথে শর্তে না জড়াতো, তাহলে আজকে জীবনটা এমন হতোনা। প্রথম দিনে তিন্নির সাথে আরাফের ব্যবহারে বুঝা উচিৎ ছিল, আরাফের মন মানষিকতা কেমন হবে। কই বড় খালামনি আর বাবা তো এমন ছিলনা, আরাফ এমন কেন হলো?? আজ বড্ড মনে পরছে বড় খালামনির কথা।

ছোটবেলা আরাফের সাথে তিন্নির বাগদান হয়ে যায়, আরাফের মায়ের ইচ্ছায়। তার মা, বাবা দুজনে তিন্নিকে অনেক স্নেহ করতো। আরাফের মা কখনো তিন্নিকে ছোট বোনের মেয়ের মতো দেখতো না, নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করতো। তিন্নিও সারাদিন তার বড় খালামনিকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। এই ভালবাসার টানে আরাফের মা তিন্নি হাত চেয়ে নেয় আরাফের জন্য। তখনি তাদের বাগদান হয়ে যায়। কয়েক বছর পর একটা দুর্ঘটনা আরাফের মা মারা যায়। তখন থেকে তিন্নি আর আরাফের সম্পর্ক কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। সবকিছু পিছনে ফেলে আরাফ ছুঁয়েছে সফলতার চাবিকাঠি।
আর তিন্নি রয়ে গেছে তার আগের জায়গায়।
সবকিছু পিছনে ছুটে গেলেও তিন্নির স্বপ্ন গুলো রয়ে গেছে আরাফের সম্মিত পাবার আশায়। তিন্নির বিশ্বাস ছিল, সে বৌ সেজে বসে থাকবে, আর আরাফ মাথায় পাগড়ি পরে বর সেজে এসে তাকে নিয়ে যাবে। মাঝেমাঝে আশরাফুল এহসান আর আনহা আসতো তাদের বাসায়, আরাফ আসতো না। সময় চলতে থাকে আপন গতিতে, আর তিন্নি পা রাখে ২৩ বছরে। কিন্তু আরাফের কোনো খবর নেই। আশেপাশের মানুষের নানান কথা তো আছেই। তবুও সে নিজের জায়গা অটুট ছিল, কারণ ছোটবেলাই যে তার বাগদান হয়ে গেছে। তিন্নি ভাবছে এবার আরাফের সাথে তার সরাসরি কথা বলা উচিৎ।

সেদিন প্রথম তিন্নি আরাফের বাসায় যায়। আরাফের মায়ে মৃত্যুর পর প্রথমবার দুজনে মুখামুখি দাড়িয়ে ছিল। আরাফের সাথে কথা বলতে বলতে একপর্যায় তিন্নি তার সাথে শর্তে জড়িয়ে যায়,,,

তিন্নি : মাত্র ৭ দিন।

আরাফ : আপনার কি মনে হচ্ছে? ৭ দিন কম হয়ে গেলো না?? ( ভ্রু কুচকে ) well… আমি আপনাকে ১৫ দিন সময় দিলাম।

তিন্নি : ok done… ১৫ দিন আমার জন্য অনেক। এই ১৫ দিনে আপনি নিজে আপনার অনুভূতি গুলো নিয়ে আমার কাছে আসবেন। এটা আমার বিশ্বাস।

আরাফ : confidence থাকা ভালো, but over confidence ভালো না। এই ১৫ দিনে আমার সম্পর্কে সব জানার পর আপনি হয়তো নিজেই ফিরে যাবেন।

— তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। এই আরাফ ছোটবেলা তার পিছু ছাড়তো না। কথায় কথায় বলতো,, তিন্নি তুই আমার বৌ হবি?? আমরা দুজন সবসময় একসাথে থাকবো। তোকে অনেক সুখে রাখবো আর এত্তো গুলা ভালবাসবো। কথাগুলো মনে পরলে নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসে। তবে আজকের এই আরাফ বড্ড অচেনা। আর সম্পর্ক গুলো কত আগোছালো। তিন্নি কি পারবে, এই সম্পর্ক’কে আরো একবার ভালবাসার ডোরে বাধতে? চেষ্টা না করেই তিন্নি কখনো হার মানতে পারবে না,,,

তিন্নি : আপনার প্রতি আমার কিছু মুহূর্তের চাহিদা নয় যেটা মাত্র ১৫ দিনে শেষ হয়ে যাবে। এটা আমার ১৫ বছরের অপেক্ষা যেটা আমি বিন্দু বিন্দু করে আমার সব স্বপ্ন, আশা, আর অফুরন্ত ভালবাসা দিয়ে জড়ো করেছি। যা কখনো ১৫ দিনে শেষ হতে দিবো না।

আরাফ : আর যদি ১৫ দিন পরেও আমার এটা মনে হয় যে আপনার মতো একটা গ্রাম্য, অখ্যাতি, নিম্ন পরিবারের মেয়ের সাথে আমার থাকা সম্ভব না তখন?

— তিন্নি নিজের জীবনের থেকেও বেশি নিজের আত্মসম্মান’কে ভালবাসে। এমন নয় যে সে আরাফ’কে অনেক ভালবাসে। ভালবাসার জন্য কোনো কারণ থাকতে হয়। শৈশবের কিছু স্মৃতি আকড়ে হয়তো স্বপ্ন দেখেছে আরাফ’কে নিয়ে। আরাফ’কে ভালবাসার জন্য তার কাছে কোনো কারণ নেই। সে আদৌ আরাফের সম্পর্কে ঠিকমতো কিছুই জানে না। এই ১৫ দিনে আরাফ’কে ভালবাসার কোনো কারণ খুঁজে নিবে এটাই ভেবেছিল তিন্নি। আরাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল,,,

তিন্নি : মিঃ “রায়মান এহসান আরাফ” আপনার সাথে আমার সম্পর্ক জড়ো হয় ১৫ বছর আগে। তখন আমার বয়স মাত্র ৮ বছর। তখন থেকে আজ পর্যন্ত আপনাকে না দেখে, এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ না জেনে সম্পর্কটাকে আমি সম্মান করে এসেছি। একটা সম্পর্কের মূল্য যদি আমার কাছে এতটা মূল্যবান হয়? তাহলে আমার আত্মসম্মান আমার কাছে কতটা মূল্যবান হবে? যেই সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই। আমি “মালিহা মুন তিন্নি” আমার আত্মসম্মানের উপর আজ পর্যন্ত কোনোদিন আচ লাগতে দেইনি। নিজের জীবনের থেকেও বেশি নিজের আত্মসম্মানকে ভালবাসি। আর যার কাছে আমার কোনো মূল্য নেই। তার কাছে নিজের আত্মসম্মান বিলিয়ে থাকার মতো মেয়ে আমি নই। আমি নিজেই এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো promise…

আরাফ : well… দেখা যাক কি হয়?

— বলেই আরাফ নিজের রুমে চলে গেলো। তিন্নি গেস্টরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে তার মায়ের কাছে কল করলো। তার মা কল রিসিভ করে বলল,,,

মা : তোকে এতবার না করার পরেও তুই চলে গেলি। আরাফ না করার পরেও কিভাবে গেলি তুই? তোর কি আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই??

তিন্নি : মা!! আমার আত্মসম্মান আছে বলেই তো আজ আমি এই বাসায় এসেছি। তোমার কি মনে হয় তোমার বোনের ছেলে আমাকে না দেখে না করে দিলো। এটা আমার আত্মসম্মানে লাগেনি? অবশ্য লেগেছে।

মা : তোকে দেখে আরাফ কি বলল?

তিন্নি : আমাকে ১৫ দিনের সময় দিয়েছে।

মা : মানে!!

তিন্নি : মানে ১৫ দিনের মধ্যে এটা প্রমাণ করতে হবে যে আমি ওনার অর্ধাঙ্গিনী হবার যোগ্য।

মা : আর যদি প্রমাণ না করতে পারিস?

তিন্নি : এমনটা অবশ্য আমি ভাবিনি, পরে ভেবে তোমাকে জানাবো।

— তিন্নির মা হেসে দিলো, ওনার মেয়ের সম্পর্কে ওনার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা। পরের দিন সকালে তিন্নি নাস্তার টেবিলে এসে দেখে আরাফ, আনহা আর তার বাবা বসে আছে। তিন্নি একটা চেয়ার টেনে বসতে যাবে তখনি আরাফ বলল,,,

আরাফ : আপনি এখানে কি করছেন? এই বাসায় মেহমানদের নাস্তা তাদের রুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আপনি উপরে যান, আপনার জন্য নাস্তা উপরে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

তিন্নি : ভুল বলতে এবং শুনতে দুটোই আমার অপছন্দ। যেহেতু ১৫ দিনের জন্য আমি এই বাসায় আছি, এই দিনগুলো আমি আমার মতো করে চলবো। এই ১৫ দিন আমি মেহমান না, এই বাসার সদস্য হয়ে থাকবো। কে কি বলবে সেগুলো তোয়াক্কা করার সময় আমার নেই। আর আমি আপনার মতো মেহমান সেজে বসে থাকতে পছন্দ করিনা। সবাইকে আপন করে নিতে পছন্দ করি। আপনার মন মানুষিকা চেঞ্জ করেন জীবন বদলে যাবে।

— কথাগুলো বলে সে চেয়ার টেনে বসে পরলো। আনহা আর তার বাবা তিন্নির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কথাগুলো আরাফের গায়ে কাটার মতো লাগলো। তাই সে রেগে গিয়ে বসা থেকে উঠে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ের সাথে একই টেবিলে বসে নাস্তা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

তিন্নি : অসম্ভব হলে আপনি নিজের রুমে গিয়ে নাস্তা করতে পারেন।

আনহা : মানে??

তিন্নি : মানে আমি এই বাড়ির বৌ হয়ে আসার পর, এই বাড়িতে সবকিছু আমার কথা মতো চলবে। তাই আগে থেকে আমার কথায় উঠবস করার অভ্যাস করে নিন।

— আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,,,

আরাফ : তোমার সাহস ত কম না?

তিন্নি : তো? আপনি কি চান? আমি আপনার মতো ভিতু হয়ে নিজের রুমে গিয়ে নাস্তা করি?? ( ভ্রু কুচকে )

আরাফ : আমি ভিতু?? ( অবাক হয়ে )

তিন্নি : কোনো সন্দেহ আছে নাকি? ( স্বাভাবিক গলায় )

আরাফ : অবশ্য সন্দেহ আছে।

— বলেই আরাফ নিজের চেয়ারে বসে নাস্তা করতে লাগলো। নাস্তা শেষ করে আরাফ উঠে যেতে লাগলে, দেখে তিন্নি তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে,,,

আরাফ : এই মেয়ে তুমি হাসছো কেন?

তিন্নি : যাওয়ার আগে আমাকে একটা thanks… বলে যাওয়া উচিৎ।

আরাফ : কেন? তুমি এমন কি করলে যে তোমাকে thanks বলতে হবে??

তিন্নি : আপনার পক্ষে একই টেবিলে বসে নাস্তা করা সম্ভব ছিলনা। আমি সেটা সম্ভব করে দিয়েছি।

আরাফ : মানে?

তিন্নি : মানে,, আমি আপনার মধ্যে সন্দেহর বিচ রোপণ করেছি। আর আপনি নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য আমার সাথে একি টেবিলে বসে নাস্তা করেছেন। আমার জন্যই তো আপনার পক্ষে একি টেবিলে বসে নাস্তা করা সম্ভব হলো। কিছু ভুল বললাম?

আরাফ : নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাইনা?

তিন্নি : মোটেও না।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

স্পর্শের_ভাষা part – 1+2

0

স্পর্শের_ভাষা part – 1+2
writer – তানিশা

— তিন্নির জ্ঞান ফিরতেই চোখদুটি মিটমিট করে খোলে দেখে সে আরাফের পাশে গাড়িতে বসে আছে। উঠে নড়েচড়ে আরাফকে কিছু বলতে যাবে তখনি টের পেলো তার হাত, পা রশি দিয়ে বাধাঁ। কিছু বলতে ও পারছেনা আরাফ তার মুখে একটা ওড়না দিয়ে বেধেঁ রেখেছে।

মুহূর্তে তিন্নির চোখদুটি রাগের চোটে লাল হয়ে গেছে। রাগে, ঘৃণায় একাকার হয়ে আরাফের দিকে আগুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরাফ তিন্নির হাত, পা বেধেঁ জোর করে তাকে নিজের সাথে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

আরাফ সামনে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে, আর মাঝেমাঝে তিন্নির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিচ্ছে। আরাফের এই হাসিটা তিন্নির কাছে মোটেও সহ্য হচ্ছে না। আরাফের থেকে চোখ সরিয়ে তিন্নি বাহিরে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ কিছু একটা ভাবতেই তিন্নি ছটফট করতে শুরু করলো। তার হাত পায়ে বাধাঁ রশি গুলো খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। তা দেখে আরাফ বলল,,,

আরাফ : ছটফট করতে হবে না, আমরা চলে এসেছি। আর sorry… এভাবে বেধেঁ রাখার জন্য, এর থেকে ভালো কোনো উপায় আমার কাছে ছিলনা।

— কথাটা বলে আরাফ তার বাসার সামনে গাড়িটা ব্রেক করে, মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছোট বোন আনহাকে কল করে। সাথে সাথে আনহা কল রিসিভ করে বলল,,,

আনহা : ভাবিকে নিয়ে এসেছো??
আরাফ : হ্যা, নিয়ে এসেছি। উপরে সব ready তো??
আনহা : সবকিছু ready তুমি শুধু ভাবিকে নিয়ে ভিতরে চলে আসো।
আরাফ : ok…

— আরাফ গাড়ি থেকে নেমে তিন্নিকে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। একটা সময় ছিল যখন তিন্নি নিজের সবটা উজাড় করে আরাফকে ভালবেসে ছিল। আজ এই মানুষটাই তার কাছে পৃথিবীর সব চাইতে ঘৃণিত মানুষ। যাকে চাইলেও সে দ্বিতীয়বার কখনো ভালবাসতে পারবেনা।

আরাফ তিন্নিকে কোলে নিয়ে বাসার মেইন ডোরে ঢোকতেই, তার বাবা আশরাফুল এহসান তিন্নিকে দেখে বলল,,,

বাবা : আরাফ মেয়েটার সাথে কাজটা তুই ঠিক করিসনি।
আরাফ : বাবা আজ প্রথম আমি একটা কাজ ঠিক করতে যাচ্ছি। আমি জানি তুমিও এটাই চাও।

— আশরাফুল এহসান কিছু না বলে ভিতরে চলে গেলেন। তিনি সবসময় চাইতেন তিন্নি এই বাড়ির বৌ হয়ে আসুক। ছোটবেলা থেকেই তিনি তিন্নিকে অনেক পছন্দ করতেন। কারণ তিন্নি একমাত্র মেয়ে যে, ছোটবেলা থেকে আরাফকে নিঃস্বার্থ ভালবেসে গেছে। যার ভালবাসায় ছিলনা কোনো খাদ, কোনো চাহিদা, কোনোকিছু পাওয়ার আশা। ছিল ১৫ বছরের অপেক্ষা আর এক বুক ভালবাসা।

আরাফ তিন্নিকে নিয়ে সিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে তিন্নিকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো। ফ্লোরে হাটুগেঁরে বসে বিছানায় দুই হাতের কনুইতে ভর দিয়ে আরাফ তিন্নির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। খয়েরি বেনারসি শাড়ি, টানা টানা কাজল কালো চোখ, নাকে নলক, গা ভর্তি গহনা, মেহেদি রাঙ্গা হাতে দুহাত মুঠো চুড়ি, মায়াবী মুখটায় বধূ সাজে যেন কোনো অপ্সরীকে হার মানাবে। আরাফ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে। মেয়েটা কি সত্যি এতো সুন্দর? নাকি আরাফের কাছেই এমনটা মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অপরূপা মেয়েটা তার সামনে বসে আছে। আর সে বেঘোরে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

আরাফের এই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা তিন্নির কাছে মোটেও সহ্য হচ্ছেনা। তিন্নি নিজের মুখটা আরাফের থেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে আরাফের চোখদুটি তোলে ফেলতে। কিন্তু তার হাত, পা দুটোই বাধাঁ তাই এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব না।

আনহা এসে দরজায় নক করতেই আরাফ চমকে উঠলো। তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভুলেই গেছে এখন তাকে কি করতে হবে। আরাফ বসা থেকে উঠে কিছু বলতে যাবে তখনি আনহা বলল,,,

আনহা : ভাইয়া হয়েছে হয়েছে,, কিছু বলতে হবেনা। এখন কি কাঁজি আঙ্কেলকে আসতে বলবো?
আরাফ : আজ আমার বিয়ে!! আমার পরনের টিশার্ট দেখেছিস?? কেমন দেখাচ্ছে?? দাড়া একটা নতুন শেরওয়ানি পরে আসি। তারপর,,

— কথাটা বলার সাথে সাথে তিন্নি চোখদুটি বড় বড় করে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নির এমন তাকানো দেখে আরাফ বলল,,,

আরাফ : কি? অবাক হবার মতো কিছু বলিনি। আজ প্রথম তো আর আমাদের বিয়ের কথা হচ্ছে না। সেই ১৫ বছর আগে থেকেই তো তুমি এই দিনের অপেক্ষায় ছিলে। আজ তোমার সব অপেক্ষা আমি শেষ করে দিবো।

— কথাটা বলে আরাফ শেরওয়ানিটা হাতে নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেলো। আনহা এসে তিন্নির পাশে বসতেই তিন্নি ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করছে। তিন্নির মুখে বাধাঁ ওড়নাটা আনহা খোলে দিলে তিন্নি বলল,,,

তিন্নি : আনহা প্লিজ আমার হাতের বাধঁনটা খোলে দাও। আমাকে যেতে হবে, আজ আমার বিয়ে। বাড়িতে সবাই আমার অপেক্ষায় আছে।
আনহা : ভাবি ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালবাসে।
তিন্নি : তারচেয়ে অধিক পরিমাণ আমি নিজের আত্মসম্মানকে ভালবাসি। সেটা তুমি এবং তোমার ভাইয়া খুব ভালো করে জানো।
আনহা : ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ভাবি প্লিজ ভাইয়াকে ক্ষমা করে দাও। ( করুণ গলায় )
তিন্নি : সেটা আমার পক্ষে অসম্ভব। আর আমি তোমার ভাবি না।

— আরাফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে শেরওয়ানির হাতাটা ঠিক করতে করতে বলল,,,

আরাফ : ভাবি না তো কি হয়েছে? কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে যাবে। এতো তাড়া কিসের?
তিন্নি : “মিঃ রায়মান এহসান আরাফ” আপনি যদি দয়া করে আমার হাত, পায়ের বাধঁনটা খোলে দেন, আমি বাসায় যেতাম। আপনার বোনের ভাবি হবার তাড়া না থাকলেও অন্যকারো ভাবি হবার তাড়া আমার ঠিকি আছে। কারণ আমার হবু বর ফারহান এখনো আমার অপেক্ষায় আছে।

— আরাফ তিন্নির দিকে তাকিয়ে তার কথার কোনো তোয়াক্কা না করে আনহাকে বলল,,,

আরাফ : আনহা কাঁজি আঙ্কেলকে নিয়ে আয়। আমি বিয়ের জন্য সম্পূর্ণ তৈরি।
তিন্নি : কিন্তু আমি তৈরি না।
আরাফ : আমি তো ঠিকমতো বর সাজিনি। তুমিতো বেনারসি শাড়ি পরে নতুন বৌ সেজে বসে আছো। তোমাকে দেখে কে বলবে, তুমি বিয়ের জন্য তৈরি না।

— বলেই আরাফ হো হো করে হেসে দিলো। আরাফের হাসি দেখে তিন্নির রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। আনহা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে, আরাফ তিন্নির কাছে গিয়ে তার হাত পায়ের রশি গুলো খুলে দেয়। তিন্নি মুক্ত হতেই বিছানা ছেড়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলে, আরাফ তার হাত ধরে বলে,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

— কথাটা বলার সাথে সাথে তিন্নি আরাফের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,,,

তিন্নি : আমার হাত ছাড়েন।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )

#স্পর্শের_ভাষা
writer – তানিশা
part – 2

আরাফ : ছাড়ার জন্য এই হাত ধরিনি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একসাথে পথ চলার জন্য এই হাত ধরেছি।
তিন্নি : আপনার সাথে পথ চলার স্বপ্ন আমার সেদিন শেষ হয়ে গেছে, যেদিন আমি শর্তে হেরে গেছি।
আরাফ : তিন্নি তুমি তো বলেছিলে ভালবাসা কোনো শর্তে আবদ্ধ হয়না। আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালবাসো।
তিন্নি : মিঃ “রায়মান এহসান আরাফ” আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি “মালিহা মুন তিন্নি” নিজের আত্মসম্মানের থেকে বেশি কখনো কাউকে ভালবাসি না। যদি এমনটা ভেবে থাকেন এটা একান্ত আপনার ভুল ধারণা। অবশ্য আপনার সাথে আমার পথ চলার স্বপ্নটা সেদিন শেষ হয়নি যখন আমি শর্তে হেরে ছিলাম। স্বপ্নটা তখন ভেঙ্গে ছিল যখন আপনি আমার আত্মসম্মানে আঘাত করেছিলেন।
আরাফ : বললাম তো sorry… আর কতবার বলবো?? ভুল তো যে কেউ করতে পারে, তেমন আমারও হয়ে গেছে। আমি সত্যি অনুতপ্ত। আমি কি একটা second chance পাবার যোগ্য না??

— আরাফ অনেক বিনয়ী হয়ে কথা গুলো বলছিল। তখনি কাঁজি সাহেব আর আনহা তাদের রুমে চলে আসলো। আরাফ এখনো তিন্নির হাত ধরে আছে। আজ যদি তিন্নি তাকে ছেড়ে চলে যায়, আরাফ কখনোই তাকে আর ফিরে পাবেনা। কাঁজি সাহেব বিয়ের সব কাজ সম্পাদন করে তিন্নির দিকে রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দিলো সাইন করার জন্য। তিন্নি সাইন না করে চুপ করে বসে আছে। আরাফ তিন্নির দিকে একটা কলম এগিয়ে দিয়ে বলল,,,

আরাফ : সাইন করো।
তিন্নি : করবো না।
আরাফ : আমি বলছি সাইন করো।
তিন্নি : বললাম তো করবো না।
আরাফ : তোমাকে বলছি সাইন করতে।
তিন্নি : আমি সাইন করবো না। কি করবেন আপনি? ( উচু গলায় )
কাঁজি : সাইন না করলে বিয়ে হবে কিভাবে? আপনি কি এই বিয়ে নিজের ইচ্ছায় করছেন না?? ( তিন্নিকে )
তিন্নি : না।
আরাফ : কাঁজি আঙ্কেল এই মেয়েকে দেখে কি আপনার মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আমি জোর করে বিয়ে করতে চাইছি?? আপনিই বলেন কাউকে জোর করে এতো সুন্দর বৌ সাজানো যায়?? আমাকে দেখে কি আপনার মনে হয়না এই মেয়ে আমাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছে। মাথায় পাগড়ী নেই, ভালো একটা শেরওয়ানি পরিনি। আমার তো কপালটাই খারাপ। কোথায় ভেবেছিলাম অনেক বড় অনুষ্ঠান করে, ধুমধাম করে বিয়ে করবো। পুরো এলাকার মানুষকে আমার বিয়েতে ইনভাইট করবো। তা আর হলো না। এই মেয়ে এতো তাড়া দিচ্ছে যে বিয়েটা আজকেই করতে হচ্ছে।

— কথাটা বলে আরাফ তিন্নির দিকে তাকাতেই দেখে সে আরাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,

আরাফ : এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে ফেলবে।
তিন্নি : সময় থাকতে চুপ হয়ে যান,,
আরাফ : কেন কিছু ভুল বললাম নাকি? এতক্ষণ তো বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিলে এখন এমন করছো কেন?
তিন্নি : আমি বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিলাম? নাকি আপনি আমাকে আমার বিয়ের আসর থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছেন?
আরাফ : তোমাকে বিয়ের আসর থেকে কই জোর করে তুলে নিয়ে আসলাম? তুমি পার্লার থেকে বাসায় ফিরছিলে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি। একবার ও তো বলোনি আমার সাথে আসবেনা।
তিন্নি : বলবো কিভাবে? আমাকে বেহুশ করে দিয়েছেন। ( রাগে গজগজ করে )
আরাফ : আচ্ছা বাদ দাও,, আজ তোমার বিয়ে। বিয়ে যার সাথেই হোক তাতে কি? আমাকে বিয়ে করো আর যাকেই করো, তোমার বিয়ে করা দরকার তুমি বিয়ে করো। রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে কবুল বললেই হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে। ব্যস আর কি চাই?
তিন্নি : আপনি কি বুঝতে পারছেন না? যার নাম নিতে আমার রুচিতে বাধেঁ, যাকে কল্পনা করতেও আমার ঘৃণা হয়। তাকে বিয়ে আমার জীবন সাজাবো, এটা আমার পক্ষে সম্ভব না।

— আরাফ ভাবেনি তিন্নি তাকে এতটা ঘৃণা করে। হয়তো এটা তার প্রাপ্য ছিল। এটা ভেবেই নিজেকে সামলে নিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল,,,

আরাফ : চাইলে সবকিছু সম্ভব।
তিন্নি : আমি আপনাকে ঘৃণা করি। ঘৃণার মানে বুঝেন না??

— এমন পরিস্থিতি দেখে কাঁজি সাহেব কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন,,,

কাঁজি : আপনারা কি সত্যি বিয়ে করবেন? নাকি করবেন না??
আরাফ : কাঁজি আঙ্কেল আপনি আমাকে ৫ মিনিট সময় দিন। আমি ওর সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই।
কাঁজি : ঠিক আছে আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি। আপনাদের কথা শেষ করে আমাকে মতামত জানান।
আরাফ : হুম

— কাঁজি সাহেব আর আনহা বাহিরে চলে গেলে আরাফ দরজাটা বন্ধ করে এসে তিন্নিকে বলল,,,

আরাফ : তুমি কি রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করবে নাকি? ( চোখ রাঙ্গিয়ে )
তিন্নি : নাকি? কি করবেন শুনি? ( ভ্রু কুচকে )
আরাফ : কি করবো সেটাতো সময় হলে দেখতেই পাবে।
তিন্নি : জোর করে বিয়ে করবেন??
আরাফ : প্রয়োজনে তাই করবো।
তিন্নি : আমি বিয়ে করবো না। সারাজীবন চিরকুমারী হয়ে থাকবো তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না।
আরাফ : নিজের আত্মসম্মানকে খুব ভালবাসো তাইনা?? ( তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে )
তিন্নি : কোনো? সন্দেহ আছে??
আরাফ : নিজের আত্মসম্মান, সতীত্ব বাচিয়ে যেতে পারবে আমার হাত থেকে??
তিন্নি : কি বলতে চাইছেন?
আরাফ : আমি কি বলতে চাইছি তুমি বুঝতে পারছো না??

— আরাফ কি বলতে চাইছে তিন্নি খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে। তাই আরাফের থেকে পিছুপা হতে লাগলে, আরাফ তার হাত ছেড়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?? আমি না চাইলে তুমি এই বাড়ি থেকে তো দূরের কথা, এই রুম থেকে কোথাও যেতে পারবে না। তুমি বিয়ে করো আর না করো তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। যদি বৈধ ভাবে থাকতে চাও তো রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দাও। আর অবৈধ ভাবে নিজের সতীত্ব, আত্মসম্মান বিলিয়ে থাকতে চাইলে আমার কিছু যায় আসেনা। আমি শুধু তোমাকে চাই। হোক বৈধ বা অবৈধ।

— আরাফ খুব ভালভাবে জানে এই কথা গুলো বলার পর তিন্নি তাকে আরো বেশি ঘৃণা করবে। কিন্তু তিন্নিকে সে এতটা ভালবাসে যে,, এখন আর তিন্নিকে ছাড়া থাকা তার পক্ষে সম্ভব না।

তিন্নি বিষময় নিয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি কি একটা সময় এই মানুষটাকে নিজের সবটা উজাড় করে ভালবেসে ছিল তিন্নি? যার কাছে তার আত্মসম্মানের কোনো মূল্য নেই। আজ তার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। কেন সে এই মানুষটাকে ভালবেসে ছিল?? মানুষ চিনতে তো কখনো ভুল করতো না তিন্নি। তাহলে আরাফকে চিনতে এতবড় ভুল কিভাবে করলো?? তিন্নি আরাফের চোখে চোখ রেখে বলল,,,

তিন্নি : সরাসরি বললেই পারেন আমার দেহটা চাই আপনার।
আরাফ : তুমি আবারও ভুল ভাবছো, তোমার সবটা চাই আমার।
তিন্নি : অবৈধ ভাবে নিজের আত্মসম্মান বিলিয়ে থাকবো এটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না। বিয়েটা আমি অবশ্যই করবো। তবে একটা বিষয় খুব ভালভাবে ভেবে দেখেন বিয়ের পর আবার আপনাকে যেন অনুতপ্ত না হতে হয়।
আরাফ : এই ১ সপ্তাহ অনেক ভেবেছি আর ভাবতে চাই না।

— আরাফ আর তিন্নির বিয়েটা হয়ে গেলো। তিন্নি একপ্রকার আরাফের সাথে জেদ করেই বিয়েটা করেছে। আরাফকে ভালবেসে যে প্রতিদান সে পেয়েছে, বিয়ের পর যেন সেগুলো একটা একটা করে আরাফকে ফেরত দিতে পারে সে জন্য।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )

লতাকরঞ্চ (১৭) [উপসংহার]

0

লতাকরঞ্চ (১৭) [উপসংহার]

প্রান্তিক ভাই বাসায় এসে পৌঁছেছে।
বোধ হয় এসেই আমার কাছে চলে আসছে।
– কিরে লতা, মিস লতাকরঞ্চ! কি করছিস?

আমি মাথা আঁচড়াচ্ছিলাম।
চিরুনি দিয়ে লম্বা লম্বা চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দেখছিলাম নিজেকে।
খুব আনচান করছে মন কারণ কিশোর ভাই এভাবে হুট করে চলে এসেছে তাও আবার মা-বাবাকে নিয়ে। কেন এসেছে, কি হয়েছে কিছুই জানতে পারছিনা কারণ আমার বাহক ‘কালু’ এখন পর্যন্ত অবসর পায়নি রান্না ঘর থেকে। অবসর পেলেই সে এদিকে একবার আসবে। কিন্তু এখনো আসছে না।

আমি নিজ থেকে যেতে ও পারছিনা কারণ আম্মা একবার এসে বলে গিয়েছে,
– লতা, রুম থেকে আমি না বলা পর্যন্ত বের হবিনা। বাড়িতে মেহমান আসছে। টৈটৈ করে ঘুরাঘুরি কম করবি আজ।
অথচ আমি একদমই টৈটৈ করিনা।

সারাক্ষন নিজের রুমে নিজেকে বন্ধ করে রাখি।
আম্মা এইতো সেদিনই উঁচু গলায় বলেছিলো,
এভাবে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকিস না লতা। একটু বের হবি। আকাশ দেখবি, বাতাস দেখবি, পুকুর দেখবি । মানুষের সাথে মেলামেশা করবি। এভাবে ঘরবন্দি হয়ে বসে থাকলে মানুষ তোকে অসামাজিক বলবে।

সাধারণত আমি খুব কমই বেরোই। কেবল সপ্তাহে একবার করে বারান্দায় উঁকি মারা আর মাসে একবার করে ছাদে যাওয়া- এই হলো আমার ঘুরাঘুরি বা নিত্যকর্ম।
একটা গান আছে না? আমার আছে জল?
আমার জন্য পার্ফেক্ট হবে,
” আমার আছে বারান্দা! ”

সবসময় সেন্টার সিঁথি করে বিণুনি অথবা হিজিবিজি করে বাঁকা সিঁথির বিণুনি বা চুল টাইট করে বেঁধে রাখতে রাখতে নিজেকে এখন একঘেয়ে মনে হয়। এইজন্যই হয়তো শোভা আপু সারাক্ষন আমায় অপমান করতো..

তাই আয়নায় আজ খোলা চুলে নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করছি।
একপাশে নিয়ে নিলাম চুলগুলো।
কপালে কালো টিপ দিয়ে এমনি করেই দেখছিলাম নিজেকে। তখনি প্রান্ত ভাই এসে হাজির।

ভাই আবার বললো,
– কিরে? কি করছিস? সাজুগুজু করছিস? হাহ্ হা হা..

আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।

লজ্জ্বা পেয়েই বললাম,
– হ্যাঁ তো? হাসার কি আছে?

ভাই হাসতে হাসতে ব্যঙ্গ করে বললো,
– তুই সাজছিস? হাহ্ হা হা… উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে লাভ কি! তোর যা চেহারা! আমার তো দেখেই হাসি আসতেছে… হেহ্ হে হে!!!

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
– হ্যাঁ। বটে। তা আমি তো আমার সাজগোজ কাউকে দেখাতে যাইনি। নিজের রুমে নিজে নিজেকে সাজাই,গুছাই,খাই। যা ইচ্ছা তাই করি। তো, এগুলো কি আপনার দেখার বিষয়?
– না, এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তো, এক পলক দেখতেই ভাবলাম একবার গিয়ে দেখে আসি জোকারটাকে।(প্রান্ত)
– আমিতো জোকার। জানি। কিন্তু এইভাবে আমার রুমে ঢুকে পড়ার কোনো অধিকার নেই আপনার।

ভাই আবার হেসে হেসে বললো,
– এই তোকে একটা কথা বলবো বলবো করে বলা হয়না। বলি?
আমি টিপটা খুলে রেখে দিয়ে চুলে তেল দিচ্ছি।
সাড়া না পেয়ে নিজে নিজেই বললো,
– এই তুই কি বিয়ে করবি না? সারাজীবন কি এভাবেই থাকবি? চিরকুমারী? হাহ্ হা হা। অবশ্য তোর বিয়ে হবেনা আমি জানি।

আমি কোনো কথার উত্তর দিবো না ভাবছিলাম কিন্তু তবুও ভুল করে বলে ফেললাম,
– কিভাবে?
উনি উৎসাহ পেয়ে বললেন,
– জানি। কারণ এমন মেয়েকে কে বিয়ে করবে! সবাই_ই একজন সেই লেভেলের সুন্দরী,স্মার্ট,শহুরে মেয়ে চায়..বুঝলি? তুই তো তুই_ই। ভাবছিলাম আস্তে আস্তে বড় হলে ঠিক হয়ে যাবি। কিন্তু না, হলিনা। এইজন্যই বলে, যেই লাউ সেই কদু।

আমি প্রচন্ড বিরক্তি অনুভব করলাম।
বিরক্তি নিয়েই বললাম,
– আপনি রুম থেকে বের হন।
ভাই হাসতে হাসতে বললো,
– রাগ হইছিস? আগে উত্তরটা দে। তারপর চলে যাচ্ছি।
আমি বললাম,
– হ্যাঁ। আমার ভবিষ্যৎ তো আপনিই বলেই দিয়েছেন। আমি আর কি বলবো,বলেন? আমি তো আর আপনার মত ভবিষ্যৎ দেখতে পাইনা, তাই কিছু বলতে পারছিনা। আপনি তো সবসময়ই আপনার নিজের কথায় অনড়। আপনি যা বলবেন তাই সঠিক। যাইহোক, এবার যান।

উনি হা করে তাকিয়ে আছে।

আমি আবার হাত দিয়ে দরজার দিকে ইশারা দিয়ে বললাম,
– আপনি এখান থেকে যাবেন কিনা?
উনি আমতা আমতা করে বললো,
– তুই রেগে গেছিস? আমিতো সিরিয়াসলি বলিনি।
শোন,

আমি তাকে আর সুযোগ দিলাম না।
রুম থেকে ঠেলে বাইরে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

অন্যসময় হলে আশা করতাম এখনি দরজায় একটা টোকা দিক। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজ এরকমটা আশা করছিনা, দিলেও খোলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পোষণ করছিনা। ঐদিকে ঐ ব্যক্তিটিও অটল। সেও দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেনা। ধাক্কাতো দূর, টোকা পর্যন্ত দিচ্ছেনা।

আমি নিশ্চিত, সে পাত্তা না দিয়ে চলে গিয়েছে।
__________________________________________

” স্যার একটু কষ্ট করে ড্রয়িংরুমে আসেন দয়া করে। আমার আব্বা-আম্মা এসে বসে আছে। একটু আসুন। ”
কিশোর ভাই কথাটা বলার পর আব্বা নাকি গায়ের চাদরটা তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমের দিকে গিয়েছে। যাওয়ার আগে নাকি আম্মাকে বলে গিয়েছে যাতে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে রাখে ঠিকঠাকমত করে।

কালু এসে আমাকে শুধু এতটুকু জানিয়েই আবার হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সে এখনো রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত আছে। এদিকে আসার আর কোনো নামগন্ধ ও নেই।

আমি খুব চিন্তিত আছি।
পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।
কি হচ্ছে না হচ্ছে জানা দরকার।
জানতে পারছি না। কারণ আমার স্পাই এখনো মহাব্যস্ত।

আব্বা এসেছে অনেক আগেই।
কিশোর ভাইয়ের আব্বার সাথে অনেকক্ষন যাবৎ খোশগল্প চলছে।
কিশোর ভাইয়ের বোন রাফা আজ আসেনি।
নয়তো এতক্ষনে ও আমার কাছেই চলে আসতো।
আর উনার মা আমার আম্মার সাথে ভেতরের রুমে গল্প করছেন।

আব্বা- আম্মা লজ্জ্বিত হয়ে আছে কারণ আলাদা করে দাওয়াত করা উচিত ছিলো। অনেকবার আব্বা আম্মার দাওয়াত পড়েছিলো ঐ বাড়ি। অথচ লিমা আপুর বিয়ে ছাড়া এ পর্যন্ত আর একবার ও উনারা আসেনি। দাওয়াত ছাড়াই হঠাৎ করে সবাই এসে হাজির; তাই আমরা সবাই বিস্মিত হয়ে আছি।

এবারে পরিবারের সবাই একসাথে আছে। লিমা আপু নেই, শশুর বাড়িতে আছে।
কিশোর ভাইয়ের আব্বা শুরু করলেন,
– আমি এইখানে কেন হঠাৎ করে আসছি এই নিয়ে টেনশনে আছেন নাকি স্যার?
আব্বা ইতস্ত করে বললেন,
– আরে না না। কি বলেন এসব! আমরাই তো আপনাদের দাওয়া করতাম.. বিশ্বাস করেন.. কিন্তু আমাদের কি সৌভাগ্য।
আব্বাকে আজ একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে; অজানা কোনো কারণে আব্বা ঘাবড়ে আছে।
তো বলেন কি খবর?

কিশোর ভাইয়ার আব্বা বললেন,
– আসলে ছেলেমেয়ে বড় হলে যে খবর হওয়ার কথা সেই খবরই আরকি.. ছেলের বিয়ে নিয়ে কথা বলতে আসছি একটু।
আব্বা আরো ঘাবড়ে গেলেন।
– তো, ছেলেতো একটাই। বিয়ের বন্দোবস্ত হয়ে গিয়েছে মনে হয়?
– না না। এখনো হয়নি। হবে আশা করি। যদিনা আপনি আপত্তি না জানান।
আব্বা অবাক হয়ে গেলেন।
– মানে?

– মানে হচ্ছে এই যে…
আপনার ছোট মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্য চাই। দিবেন নাকি?
আব্বা বাকরুদ্ধ।
কিশোর ভাইয়ের আম্মা বলছেন,
– সম্বন্ধ করতে আসছি স্যার। আপনার লতাকে আমাদের দারুন লাগে। আমরা ওকে আমাদের বাড়িতে চিরদিনের জন্য নিয়ে যেতে চাই।

আব্বার চোখ চকচক করছে খুশিতে।
আব্বা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
– আপনাদের ছেলে কি বলে?
কথাটা শুনতেই কিশোর ভাই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
উনি উনার আব্বাকে বললো,
– আব্বা আমি ভিতরে যাচ্ছি। আপনারা কথা বলেন।

উনার আব্বা রাগী স্বরে বললো,
– ভিতরে যাচ্ছিস মানে? এখানেই থাক।
আমার আব্বা বললেন,
– থাক না। ও যখন লজ্জা পাচ্ছে তখন ভিতরে গিয়েই বসুক না।
কিশোর ভাইয়ের আব্বা বললেন,
– না স্যার। আমরা পাত্রী দেখতে আসিনি।
আব্বা ভ্রু কুঁচকে বললো,
– মানে! এই মাত্রই তো বললেন..

কিশোর ভাইয়ের আব্বা মৃদ্যু হেসে বললো,
– আমরা পাত্রীকে চিনি। খুব ভালো করেই চিনি। ঐ পাত্রীকে আমরা ও মন থেকে চাই, আমাদের ছেলেও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই আমরা পাত্র দেখাতে আসছি, পাত্রী দেখতে নয়।

এই কথাটা শুনে খুশিতে আব্বার চোখে জল এসে গেলো।
আব্বা বললেন,
– যে ছেলের বাবা এত আদর্শবান হয়, সে ঘরে মেয়ে দিতে আপত্তি থাকবে কেন.. আলহামদুলিল্লাহ।

উনি বললেন,
– লজ্জা দিয়েন না। আমার ছেলের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক আপনি। আর তার মেয়েকে বৌমা হিসেবে পাওয়াও সৌভাগ্যের ব্যাপার। আপনি রাজি থাকলে… পাকা কথা সামনে এগোবে আরকি।
আব্বা বললেন,
– কি বলেন এসব। আমি রাজি। আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র এই ছেলেটা, এটা কি আর এমনি এমনি?
এই বলে আব্বা আম্মাকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন,
– লিমার আম্মা যাও মিষ্টি নিয়ে আসো। লতাকেও রেডি করে নিয়ে আসো। আজ কিন্তু সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসবা।

আম্মার চোখে মুখে আনন্দময়ী হাসি।
__________________________________________

আমাকে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হলো।

কি হতে যাচ্ছে সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। কিন্তু কিছুই বলিনি।

আমি আসার পর আব্বা বললেন,
– এই যে আমার লতা মা। যা যা জিজ্ঞেস করার, করে নেন বেয়ান।
কিশোর ভাইয়ের আব্বা বললেন,
– আমাদের কারোরই কিছু জিজ্ঞেস করার নেই।
এই রইলো আপনার ছাত্র। আপনি বরং তাকে সেসব জিজ্ঞেস করুন যা যা জিজ্ঞেস করার কথা ছিলো আমাদের, আপনার মেয়েকে।

আব্বা খুশিতে বার বার কেঁদে দিচ্ছে। একটা বাবার কাছে যে যোগ্য শশুর বাড়িতে নিজের মেয়েকে সম্প্রদান করাটা কতটা আনন্দের হয়; সেটা কেবলমাত্র বাবা সম্প্রদায়রাই আন্দাজ করতে পারে।

সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো।
আমি কোনো অসম্মতি জানাতে পারলাম না আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আব্বাকে এতটা খুশি হতে কোনোদিন দেখিনি। হার্ট এট্যাকের পর এই প্রথম আমি আমার আব্বাকে মন খুলে হাসতে দেখছি।

____________________________________________

কিশোর ভাইকে আব্বা ডেকে বললেন,
– বাবা, তোমার কিছু বলার আছে?
কিশোর ভাই একবার উপরের দিকে চোখ নিয়ে বললো,
– স্যার আপনি আজকে ঔষধ খান নি কেন?
আব্বা বললেন,
– দেখছেন বেয়ান? এইজন্যই আপনার ছেলেকে আমার এত পছন্দ। হাহ্ হা হা। তোমার কি এই ছাড়া আর কিছু বলার নেই?
কিশোর ভাই বললো,
– লতার কিছু বলাটাকে আমি আবশ্যক মনে করি স্যার। ও চাইলে তবেই সব হবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত ওর উপরে চাপিয়ে দিবোনা। ওকে জিজ্ঞেস করুন।

আব্বা আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি কিছুই বলতে পারলাম না লজ্জায়।

প্রান্ত ভাই একপাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি ভিতরে চলে গেলাম।

রুমে ঢুকেই বালিশ চাপা দিয়ে কিছুক্ষন জোরে জোরে কাঁদলাম। কেন কাঁদলাম জানিনা, তবে আমি কেঁদেছিলাম।

হঠাৎ দেখলাম প্রান্ত ভাই আমার জানালার পাশে বসে আছে।

আমাকে উঠতে দেখে উদাসীনভাবে বললো,
– অত:পর তোর বিয়েটা হয়েই যাচ্ছে.. আজই বললাম আর আজই জেদ করে রাজি হয়ে গেলি? আমার কথাটা একবারের জন্যও ভাবলিনা?

আমি চমকে উঠলাম। কি বলছে এসব?

প্রান্ত ভাই উঠে এসে হাঁটু ফ্লোরে রেখে আমার বিছানায় মাথা রেখে কিছুক্ষন কাঁদলো না কি করলো জানিনা। তবে এভাবেই আছে অনেকক্ষন যাবৎ।

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।

আমি বললাম,
– কি হলো হঠাৎ? কাঁদছেন কেন?

প্রান্ত ভাই বললো,
– এতদিন বুঝিনি। আজ আমার হৃদয় হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে কি যেন একটা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি।

আমি ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত চোখে তাকিয়ে আছি।

– লতা তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমি কি করবো রে?
কাকে রাগাবো, কার সাথে ঝাল ঝাল কথা বলবো?
কে হবে আমার দুস্টামির সঙ্গী?

আমি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।
প্রান্ত ভাইয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়াচ্ছে। এবার দেখলাম।

কিছুক্ষন পর একটা শব্দ ভেসে আসলো…
” এখনো সময় আছে লতা। তুমি যেটা চাও সেটাই হবে। আমি জানি তুমি প্রান্তের প্রতি দূর্বল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটা ভুলে যেওনা যে আমিও তোমার প্রতি দূর্বল। মাত্রাতিরিক্ত দূর্বল। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি প্রান্তের হলে ও আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো, আমার হলেতো বাসবোই। ”

কথাটা শুনে প্রান্ত ভাই চেঁচিয়ে উঠে বললো,
– আপনি যান তো। লতাকে আমি ভালোবাসি। ও আমারি। বেশি ঢং না? খুব ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে? পরের বউকে ভালোবাসবেন আপনি, আহ্ কি বীরপুরুষ উনি। গেট লস্ট। এই লতা, তুই বলে দেতো..

কিশোর ভাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর দেখলাম, কিশোর ভাইয়ের এক চোখের এক কোণা দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে।

তাই দেখে প্রান্ত ভাইয়ের ঠোঁটের কোণায় ফুঁটে উঠেছে বাঁকা, রুক্ষপ্রকৃতির এক বিভৎস্য হাসি।

এই দৃশ্য দেখে আমার হৃদয় হু হু করে কেঁদে উঠলো। তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে আমার জান-প্রাণ। আমি কিছুতেই কিশোর ভাইয়ের ঐ এক ফোঁটা চোখের জলকে সহ্য করতে পারছিনা।

দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম কিশোর ভাইকে।

এবার তার সেই নি:স্বার্থ বুকে ঠাঁই পেয়ে আমিও হাউমাউ করে কাঁদছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– আপনি কাঁদছেন কেন?
উনি কান্না জড়ানো গলায় বললো,
– ভালোবাসি তাই।
কিশোর ভাই ও বোকার মত আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি কেন এত কাঁদছো?
আমি বললাম,
– আমিও ভালোবাসি। তাই…

কিশোর ভাইকে জড়িয়ে ধরার পর তার পকেট থেকে ফুলের সুগন্ধ পেলাম।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি,
একটা টকটকে লাল গোলাপ…

” সে আজো ফুল আনতে ভুলে যায়নি.. ”

(#সমাপ্ত)

(শেষটা ভালো না লাগলেও ভালো লাগাতে জানতে হয়। আমার পাশে থাকবেন। এমন আরো কিছু গল্প বলতে চাই। ধন্যবাদ সবাইকে।)

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

লতাকরঞ্চ (১৬)

0

লতাকরঞ্চ (১৬)

আমি আবার ঐ আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষন পর প্রান্ত ভাই আসলো।
আমার পাশের সিটে বসার অনুমতি চাইলো।
আমি অবাক হলাম, প্রান্ত ভাই আমার অনুমতি চাচ্ছে, তাও আবার আমার পাশে! ভাবা যায়?

– ব্যাথা কি খুব বেশিই পাইছিস?
– না।
– ঔষধ নিয়েছিস?
– হুম।
– হাতের এই অবস্থা নিয়েও লিমাকে মেহেদী পরাতে গেলি কেন? আর তোর বোনটা এমন কেন? গাঁধা নাকি?

আমি মনে মনে বললাম, হ্যাঁ আমরা সবাই_ইতো গাঁধা শ্রেণীর। আমার বোন গাঁধা, আমি বলদ। আমার গোষ্ঠীর সব হচ্ছে বোকা। আর আপনি একমাত্তর এক জিনিস, চালাক কেবল আপনিই। আহারেএ…
আমি ঢোক গিলে বললাম,
– আপু বলছিলো তাই দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার বোনকে আমি বুঝবো, আপনার দেখার বিষয় না।

প্রান্ত ভাই বললো,
– লতা..
– বলেন।
– আমার সাথে একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারবি,প্লিজ?

~উত্তর দিলাম না।

প্রান্ত ভাই আবার বললো,
– ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছেলেটাকে বিদায় করে দিয়েছি, জানিস? বেয়াদব একটা। সাহস কত বড়! আমার..
কথাটা শেষ না করতেই,
প্রান্ত ভাইয়ার আম্মা এসে তড়িঘড়ি করে বলে গেলো যাতে তাড়াতাড়ি শোভার কাছে যায় উনি। শোভা আপু নাকি ডাকতেছে অনেকক্ষন ধরে।

আসলে ডাকাডাকি কিচ্ছু না।
আমার কাছে আসলেই উনার(শোভা আপুর) গায়ে আগুন ধরে; তাই হয়তো এমন করে।

প্রান্ত ভাই সোজা তার মাকে জানিয়ে দিলো আমার সামনে,
– এখন এখান থেকে যান আম্মা। আমি এতক্ষন শোভার কাছেই ছিলাম। কই এতক্ষন তো কিছু বললো না.. এখনি দরকার পড়লো কেন ওর?

উনি বললেন,
– বাবা মেয়েটা একা আছেতো। ডাকছে তোকে। শুধু শুধু এখানে বসে আছিস কেন? যা না।
প্রান্ত ভাইয়ার আম্মা কেন কথাটা বললো তা আমি বুঝতে পেরে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। উনার বউ হিসেবে শোভা আপুকে ভালো লাগে, মানে উনি শোভা আপুকেই বউ হিসেবে চান।
এটা আমি জানি,বুঝি। তাইজন্যই অন্য কারো ধারে কাছে ঘেষতে দেয়না নিজের ছেলেকে।
ভাই বললো,
– আচ্ছা যান। আমি যাচ্ছি।
________________
____________

প্রান্ত ভাইয়া আস্তে আস্তে বলছে,
– শোভার সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান চলছে এটা আমি জানতাম না। সত্যি বলছি জানতাম না। কেন উনারা এইরকম অপ্রীতিকর ডিসিশনটা নিলো তা ভাবলেই আমার অবাক লাগে।
আচ্ছা,তুই জানতি ব্যাপারটা?

আমি কি বলবো, কি বলবো করে আওড়াতে লাগলাম মনে মনে। তারপর বললাম,
– আপনাদের এসব বিষয় নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না ভাইয়া। আপনি এখন যান দয়া করে। আমার পক্ষে এখন আপনার কোনোরকমের বাঁকা কথা শোনা সম্ভব না। মুড নেই। ভালোও লাগেনা। সো,প্লিজ।

ভাই ক্লান্ত স্বরে বললো,
– আচ্ছা, কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলবোনা। শোন, শোভাকে আমি বিয়ে করবো এটা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিওনি।

– তাহলে?
– ও আমার পুরোনো বন্ধু। বয়সে এক বছরের ছোট যদিও। আমার বাসায় আসতে চেয়েছিলো অনেকবার। আনবো আনবো করে আর আনা হয়নি। ও আমার প্রতি একটু বেশিই কেয়ারফুল তাই ও হচ্ছে আমার সেরা বন্ধুদের তালিকার একজন। ব্যস।
কিন্তু আমার আম্মাতো আবার তোদের বাড়িতেই শান্তি পায়। তাই বাসায় না নিয়ে গিয়ে তোদের ওখানেই আনলাম। খুব জোরাজোরি করেছিলো বলেই আনছিলাম। কিন্তু তাই বলে বিয়ে টিয়ে…

আমি অস্বস্তি বোধ করছি।শোভা আপু আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে দূর থেকে।চোখ দিয়ে মনে হয় যেন বলছে,
– তোর এত বড় সাহস তুই আমার প্রান্তিকের সাথে কথা বলিস?
আমি ভাইকে কিছুই জিজ্ঞেস করছিনা। উনি নিজে নিজেই উত্তর দিচ্ছেন, কথা বলছেন।
আবার বলোলো,
– এইজন্যই তো বলি আম্মা শোভাকে কেন এত আদর -আপ্যায়ন করে.. কিন্তু আমিতো শোভাকে বিয়ে করতে চাইনা…

কিছুক্ষন পর কিশোর ভাই আসলো।
এসেই আমার কোলের উপর মেডিসিন রেখে দিয়ে বললো,
– এগুলো প্রেসক্রাইব করা। হাতের জন্য আর তোমার গ্যাস্ট্রিকের জন্য। এই হলো পানি। ছটফট খেয়ে ফেলো।

প্রান্ত ভাই মাথা নিচু করে বসে রইলো।
কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে হেঁটে চলে গেলো।

অত:পর, এনগেইজমেন্ট পার্টি খতম হলো..

★★★(শেষ পর্যায়)★★★

বাড়িতে বসে বসে হোমওয়ার্ক করছি।
প্রান্ত ভাই আজ বাড়িতে আসতেছে।
কিশোর ভাইকে আব্বা আজ জরুরি কাজে ডেকে পাঠিয়েছে।
আমি এখন ফোর্থ ইয়ারের ফাইনালে।
অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছি।

প্রান্তিক ভাই শোভা আপুকে বিয়ে করেনি শেষ পর্যন্ত। উনি নিজেই সটান হয়ে না করে দিয়েছিলো বড় ফুফুকে।

ওদিকে আমার জন্যও নানা জায়গা থেকে হরেক রকমের, হরেক প্রফেশনের পাত্র আসা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আমাকে একবারো আব্বা সেজেগুজে বসতে দেয়নি কোনো পাত্রের সামনে।
আব্বা কিশোর ভাইকে মনে মনে পছন্দ করে। কিন্তু আব্বা চায় কিশোর ভাই নিজে থেকে প্রস্তাব পাড়ুক। তাই মনে মনে অপেক্ষা করছে।

আম্মা আর আপু অনেক চেষ্টা করেও সাজাতে পারেনি। আব্বার কড়া নিষেধ। আব্বা বলেন, মেয়ে নিলে আসল চেহারা দেখেই নিবে, নকল না।

কিন্তু কিশোর ভাই এখন পর্যন্ত না আমায় প্রপোজ করেছে; না দিয়েছে বিয়ের প্রস্তাব।
সামনের মাসে নাকি বিদেশ চলে যাবে।

কিশোর ভাই আজ আমাদের বাড়িতে আসছেন।
আমার জন্য এবারো কিছু ফুল নিয়ে আসছে।
তবে এবারের ফুলগুলো প্রথমে আমি দেখতে পাইনি। পরে যখন গিফটটের মোড়ক খুললাম, তখন দেখলাম
ম্যাক্সিম গোর্গির বইয়ের মলাট। তুলনামূলকভাবে ভারী।
এত ভারী হওয়ার কথা তো না…

বারান্দায় বসে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি।
বেশ, চমৎকার তো!
বইয়ের ৫/৬পাতা পর পর দেখা যাচ্ছে হয় চকোলেট নতুবা ফুল আছে। এমনভাবেই পাওয়া যাচ্ছে।

ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম এমন কেন? উনি বললেন,
– তুমিতো নাকি গল্পের বই কম পড়ো। চকোলেট, ফুল এই দুইটাইতো তোমার পছন্দের। তাই আকর্ষণের জন্য রেখে দিয়েছি। এট লিস্ট এগুলো পাওয়ার টানে টানে অন্তত বইটা পড়বা। পড়েও ফেলবা আশা করি।
আমি কথাটা শুনে হেসে দিলাম।
সত্যিই তো!

ভাইয়া কেবল আমায় হাসায়।

কালু এসে কিশোর ভাইকে বললো,,
– আফনাগো দুইজনেরে স্যারে ডাকে।
(কালু স্যার ডাকে আব্বাকে কারণ এটা ডাকলে নাকি তার নিজেকে অফিস কর্মচারী টাইপ কিছু একটা লাগে।)

আমরা দুজন নিচে গেলাম।
পরিবারের সকলে উপস্থিত।

কিশোর ভাই তার আব্বা-আম্মাকে এনেছে।

আমি সকালে উঠে কেবল হালকা করে মুখে ক্রিম দিয়েছিলাম। পরনে ঘরোয়া পোশাক। বিষয়টা আমি কালুর থেকে আধো আধো শুনেছি। পুরোটা বুঝতে পারছিনা,কি হচ্ছে আসলে।

কিশোর ভাই আব্বাকে খুব বিনয়ীভাবে বললো,
– স্যার আজ একটা কথা বলি।
আব্বা অবাক হয়ে আছেন। তারপর ও বললো,
– বলো বলো।
কিশোর ভাই বললো,
– আপনাকে না জানিয়েই আমি একটা কাজ করে ফেলেছি। দু:খিত।
আব্বা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– ব্যাপারটা কি? কি করছো?
কিশোর ভাই আমতা আমতা করে বললো,
– স্যার আপনাদের ড্রয়িংরুমে আমার আব্বা আম্মা এসে বসে আছে।

চলবে..

(আর এক পর্ব দরকার মনে হচ্ছে.. তাই আর এক পর্বের অপেক্ষায় রাখলাম। কিছু মনে করলেন? ভাবছিলাম শেষ করে দিবো কিন্তু মন মানছে না, আর এক পর্ব জরুরি। আশা করি সবাই পাশে থাকবেন। আমার অন্যান্য গল্পগুলোও পড়ে দেখবেন। একদম সাধারণ এবং অন্য রকম এক ভিন্নধর্মী নতুন ধারাবাহিক শুরু করবো ইনশাল্লাহ্। তাছাড়া পেইজের সংস্পর্শে থাকলে সবই পাবেন। পাবেন কিছু ভালো লাগার মত উক্তি, গল্প, কবিতা। কিছু ছোট গল্প ও পাবেন। ধন্যবাদ।)

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

লতাকরঞ্চ (১৫)

0

লতাকরঞ্চ (১৫)

আবির আমার হাতটা এমনভাবে ধরে আছে যে আমার সারা শরীর ব্যাথায়,ভয়ে অবশ হয়ে অচেতন হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। আমার দিকে তাকিয়ে সে যখন লোভাতুর দৃষ্টিতে ডুব দিলো তখন আমি ঘৃণায় কুঁকড়ে উঠলাম। কিছুক্ষন পর দেখলাম, কিশার ভাই এসেছে। আর অবাক দৃষ্টিতে আবিরকে বলছে,
– এত বড় স্পর্ধা তোমার! তুমি ওর হাত ধরে টানাটানি করছেন? সমস্যা কি?

তার কিছুক্ষন পরেই প্রান্ত ভাই ও আসলো।
প্রান্ত ভাই আসা মাত্রই আবির আমার হাতটা ছেড়ে দিলো। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম আমার হাতের নতুন চুড়িগুলোর কিছু বাঁকা হয়ে গেছে,কিছু একদম চামড়ার ভেতরে ঢুকে গেছে। এত শক্ত করে ধরায় হাতের কিছু অংশ কেটে গিয়েছে, সেখান থেকে রক্তপাত ও হচ্ছে সামান্য।

কিশোর ভাই আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলো না কারণ আবির হলো প্রান্তের গেস্ট। তাছাড়া মানুষজনের ভীড় উপচে পড়ছে। এখন কিছু না করাই শ্রেয়, এই ভেবে কিশোর ভাই কিছু বলছেনা।

প্রান্ত ভাই কিশোর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাই আপনি তো এসেই ঠাঁস করে একটা চড় ওর গালে মারতে পারতেন। তাইনা? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভালো ভালো কথা এখানেও? এভাবে চলবে? সব জায়গায় কি স্মার্টনেস ধরে রাখা লাগে?

কিশোর ভাই স্বাভাবিকভাবে বললো,
– না। আপনি ভুল বুঝতেছেন মিস্টার প্রান্তিক।
আমি আসছি এইতো কিছুক্ষন আগে। আমার আসার মিনিটখানেকের মধ্যেই আপনি চলে আসছেন। আসলে, আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম এই দৃশ্য দেখে।

প্রান্ত ভাই রাগী স্বরে ভ্রু কুঁচকে বললো,
– ও,এজন্য আপনি নীরব দর্শক সেজে বসে বসে দেখবেন; একটা বখাটে কিভাবে লতাকে হ্যারেসমেন্ট করছে… তাইতো?

কিশোর ভাই বললো,
– প্রান্ত, আপনি একটু বেশিই রেগে যাচ্ছেন আমার উপর। এই ছেলেটা আপনাদের গেস্ট, বিশেষ করে আপনার গেস্ট। তাই হুট করে কিছু বলিনি। তাছাড়া এত মানুষের ভীড়ে তো চিৎকার, চেঁচামেচি, মারামারি করা যায়না। আর আমি একে কিছু একটা করতে যাচ্ছিলাম কারণ আমার মাথাও ঠিক নেই এখন; ওর এই স্পর্ধা দেখে। হাউ ডেয়ার হি ইজ!

প্রান্ত ভাই এইসব হাবিজাবিই গিজগিজ করে বলছে। উনার রাগে বোধ হয় গা জ্বলে যাচ্ছে।

কিশোর ভাই যথেষ্ট ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। উনার সব কার্যকলাপ ধীরে-সুস্থে। আজ ও তার কমতি নেই। প্রান্ত ভাইকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কিশোর ভাই আমাকে বললো,
– এখানে একা একা কি করছিলা? কেন আসলা এখানে?

ওদিকে প্রান্ত ভাই আবিরের সাথে বোঝাপড়া করছে।

আমাকে কিশোর ভাই কথাটা বলার পর আমি বললাম,
– কিছুইনা। একটু রিলেক্সেশনের জন্যই আসছিলাম।
কিশোর ভাই আমার হাত ধরে বললো,
– চলো। ঐখানে চলো।
হাতটা ধরতেই আমি আস্তে করে ‘উহ্’ করে উঠলাম। চোখে পানি চলে আসলো। উল্টানো চামড়ায় আর কেটে যাওয়া স্থানে ঘষা পড়ায় জ্বলে যাচ্ছে একদম।

আমি উহ্ করে উঠতেই কিশোর ভাই থমকে গিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললো।
চোখ বড় বড় করেই বলছে,
– কি হয়েছে?
– আমি পুরোটা বললাম।

কিশোর ভাই এবার রেগে গেলেন।
উনি গিয়ে আবিরকে গিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো।
প্রান্ত ভাই এটা দেখে মস্করা করে বললো,
– কি ভাই? এতক্ষন কি এই একশনটা ডুব দিয়ে ছিলো নাকি?

কিশোর ভাই আরো রেগে গিয়ে বললো,
– প্রান্ত, তোমার কমন- সেন্স আর বোধ-বুদ্ধি বলে কিছুই নেই। কথাটা জানো?
প্রান্ত ভাই হাসি দিয়ে বললো,
– জানি। আপনার জানানো আবশ্যক না।
কিশোর ভাই আবার বললো,
– তুমি জানো ছেলেটা কি করছে?
(এই বলে কিশোর ভাই সবটা বলে দিলো প্রান্ত ভাইকে।)
_______________
___________

কিশোর ভাই আমার হাতটা আলতো করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,
– কথাটা তোমার আব্বাকে বলার দরকার নেই। আমিই দেখছি কি করা যায়। এত মানুষ এখানে কাউকে দেইখো এগুলো বলতে যেওনা। মানুষ ‘অ’ কে ‘আ’ বানায়। মনে রাখবা।

আমি হেঁটে চলে যাচ্ছি।

প্রান্ত ভাই চোখ স্থির করে আমার চলে যাওয়া দেখছে হা করে।

কিশোর ভাইকে দেখছিনা অনেকক্ষন।
আমি মানুষের ভীড়ে মধ্যেই এক জায়গায় গুটিসুটি হয়ে বসে আছি। আম্মা এসে বললো, আপুর সাজগোজ দেখে দিতে, আপু নাকি ডাকছে।
আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই কারণ ওর জীবনে কারো কিছু পছন্দ হয়না। আমার সাজ যে ওর পছন্দ হবেনা সেটা তো জানা কথা। অবশ্য সেজেই আছে। আরো সাজবে।

শোভা আপু অনেক দামী ড্রেস পরে হাঁটাহাঁটি করছে। অনেক খুশি দেখাচ্ছে। কার বোনের এনগেইজমেন্ট আমার না বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।

আমি লিমা আপুর কাছে গেলাম।
আপু ইনিয়ে বিনিয়ে বলছে,
– জানিস? আব্বা না আজকেই কাজী ডাকার পার্মিশন দিয়ে দিয়েছে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– কেন? তোর না আজ এনগেইজমেন্ট?
এত তাড়াহুড়া কেন?
— আরে আব্বা তো আব্বাই। উনি এইসব এনগেইজমেন্ট টেনগেইজমেন্ট কিছু বুঝে? উনার নাকি বিশ্বাস হয়না এসব। তাই উনি উনার হবু বেয়াইকে কথাটা জানাতেই… উনি সম্মতি দিয়ে দিলো।

– আপু, আব্বা এনগেইজমেন্ট কি তা খুব ভালো করেই জানে। শুধুমাত্র তোর ভালোর জন্যই এত চিন্তা করে। আর আব্বা সেকালের বি এস সি, বি এড। না জানার তো কোনো মানে নেই। তাইনা?
— এই,তোর হাতে কি? কাটলি কিভাবে?
– আরে তুই জানিস না আ-আ…
মুখ ফসকে কথাটা এই পেট পাতলা লিমা আপুকে বলেই ফেলতে যাচ্ছিলাম।

— হ্যাঁ, বল?
– না মানে… হিল পরছিতো, তার উপর আবার এগুলোকে নাকি পেন্সিল শু বলে। পড়ে গিয়েছি আরকি। দরজার ইয়েতে লেগে কিভাবে যেন…
— আচ্ছা দাঁড়া আমি মঞ্জুকে ডাকছি।
– না না আপু। এখন থাক। আমি এইতো এখনি যাবো। আর ওয়াশ করেছিতো। কিশোর ভাই দেখে দিয়েছে। ব্যাথা নেই এখন, পরে ঔষধ নিয়ে নিবোনে।
— আচ্ছা। কিন্তু দেখ না… আব্বা এইটা কি করলো বলতো?

– আবার কি করছে?
— বিয়েটা…
– কেন যার সাথে এনগেইজমেন্ট তার সাথেই তো তোর বিয়ে হবে। একদিন আগে পরে হলে তোরতো কোনো ক্ষতি হবেনা তাইনা? সমস্যা হবে কেন, বলতো?
— ক্ষতি মানে মহাক্ষতি। আমার শাড়ি,গহনা,ড্রেস কমে যাবে। বিয়েতে এক্সট্রা কতকিছু দেয় সব মিসড। কত বড় লোকসান, ভাবতে পারিস? হায় আল্লাহ….

আমি আর কথা বাড়ালাম না।
কারণ জানা কথা আর শুনতে ভালো লাগেনা।
ওর সব চিন্তাধারা এমনই হয়।
কিভাবে পারে এরা?

আপু ব্যাগ থেকে একটা মেহেদীর টিউব বের করে বললো,
— এই নে, এটা তাড়াতাড়ি লাগানো শুরু কর। তুই তো খুব ভালো ডিজাইন করতে পারিস।
– মেহেদী!
— হ্যাঁ। মেহেদী। আমার ব্যাগে ভাগ্যিস এই একটা ছিলো। নয়তো ওহ্!

– নয়তো কি? তুই এখন এটা লাগাবি? মাথা ঠিক আছে? গেস্টরা সব চলে আসছে..
— আরে তুই দেতো। ১০মিনিটের মধ্যে গর্জিয়াস করে দিয়ে দিবি একদম। তারপর আমি ৫মিনিট রাখবো। এত অল্প সময়ে নিশ্চয়ই শুরু হয়ে যাবেনা অনুষ্ঠান?
– আরে… কি বলবে মানুষ।
— ওসব বাদ দে তো! আমার তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– মেহেদী না পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে?

— হ্যাঁ হবে। সর্বনাশ না শুধু মহাসর্বনাশ হয়ে যাবে।
– কিভাবে?
— আরে, ঐ ফটোগুলো ফেবুতে আপলোড হবেনা? কত মানুষজন দেখবে। আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই, মঞ্জুর ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইও দেখবে। আমার তো প্রেস্টিজ বলে একটা কিছু আছে,তাইনা? নে লাগানো শুরু কর।
– আমি লাগিয়ে দিলাম।
ডিজাইনটা আপুর বেশ ভালোরকমভাবেই পছন্দ হয়েছে।

আপুর পাশেই বসে আছি। শোভা আপু এসে বললো,
– এই সরো। তুমি এবার এখান থেকে নামো। বাচ্চা নাকি? সারাক্ষন এখানে উঠে বসে থাকো কেন?
– আম্মা বলছে তাই।
– এখন একটু যাও। আমি পিক তুলবো লিমা আপুর সাথে।
লিমা আপু বললো,
– তোলো সমস্যা নেই। কিন্তু লতা থাক না, আমার ওকে দরকার পড়ে।

শোভা আপু গুরুত্ব দিয়ে বললো,
– কি দরকার তুমি আমাকে বলবা। আমি এখানে আছি। অনেকক্ষন ও এখানে ছিলো এখন আমি থাকবো। হুম?
লিমা আপু বললো,-আচ্ছা।
আমি নেমে আসলাম।

আসতে আসতে শুনলাম শোভা আপু বলছে,
– এই তুমি এত বোকা কেন আপু? আমি থাকতে তুমি লতাকে দিয়ে এসব করাচ্ছো? কেন? ওকি এগুলো আমার চেয়েও বেশি বুঝে না পারে? এগুলো কিছু বুঝে ও?
ছি:! কি বাজে, পুরাতন ডিজাইন দিয়ে দিয়েছে…

আপু চিন্তিত স্বরে বললো,
– সত্যিই?

চলবে…

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।