Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1958



দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 11

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………..
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………..
…………………….….PART:11……………………………

সবাইকে নিয়ে উড়ে পালাতে লাগলো এলিনা। জঙ্গলের ভেতরে অ্যাডোনিস গাছের নিচে নামলো সে। গাছটা দেখেই ট্রুডো বললো,”এই গাছটা এখানে কিভাবে জন্মালো? আর এর সাথে কি ড্রেকইনসদের কোনো সম্পর্ক আছে?”
এলিনা বললো,”কিভাবে জন্মেছে সেটা জানা নেই তবে এই গাছের একটা অবাক করা বিশেষত্ব আছে। এই গাছ প্রায় হাজার বছরের পুরোনো কিন্তু দেখে তা মনে হয় না। আপাত দৃষ্টিতে এটিকে শত বছরের একটা সাধারণ গাছ বলেই মনে হবে। আর এর সাথে ড্রেকইনস এর তো গভীর যোগসূত্র আছে। কখনো কখনো ড্রেকইনসরা এই গাছের নিচে অন্য কারো রুপ নিয়ে বসে থাকে। মানুষকে বোকা বানানোর জন্য তারা যেকারো সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করে পরে ভয়ানক বিপদের মুখে ফেলে দেয়।”
ট্রুডো অবাক হয়ে গেলো এলিনার কথা শুনে। তার সাথে ঠিক তেমনভাবেই আচরণ করেছে ড্রেকইনস যেমনটা এলিনা বলছে। ট্রুডো ভাবতে ভাবতে বললো,”একদম মিলে যাচ্ছে। আমি যখন এই গাছের নিচে থেকে জেফারীর রুপ নেওয়া ড্রেকইনসকে তাবুতে নিয়ে যাই তখন তার আচার আচরণ দেখে আমি একটু সন্দেহের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।”
হঠাৎ কথাবার্তা চলতে চলতেই আনাহীর মাথা ধরে গেলো। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো আনাহী। ব্যথায় ভ্রু কুচকে আলতোভাবে বললো, “আহ্! মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার।”
সাথে সাথেই এলিনারও শুরু হলো সমস্যা। ছটফট করতে শুরু করলো এলিনা। চোখ মুখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো। বিশাল পাখাদুটির ঝাপটানিতে গাছের ডালপালা দুমড়ে মুচড়ে গেলো। কেউ বুঝতে পারলো না এসব কি হচ্ছে। গড়গড় করে বমি করার মতো মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগলো এলিনার।
এদিকে দৌঁড়ানোর আওয়াজ আসতে লাগলো জঙ্গলের ভেতর থেকে। ভিরেক্স জোরে বলে উঠলো,” মনে হয় সেই গোত্রের লোক আসছে। এলিনাকে ধরার জন্য। এক্ষণি এখান থেকে পালাতে হবে নাহলে ঘোর বিপদের মুখে পড়তে হবে আমাদের।”
সবাই ভিরেক্সের কথাটা সমর্থন করলো। আনাহী পালানোর মতো সুস্থ্য আছে কিন্তু সমস্যা হলো এলিনা আর ব্লেডিকোকে নিয়ে। এখনো জ্ঞান ফিরেনি ব্লেডিকোর আর এলিনার শুরু হয়েছে আরেক সমস্যা।
এলিনার মুখ থেকে রক্ত পড়া দেখে ট্রুডো একটু ভয় পেয়ে গেলো। মনে আসা কথাটা বলেই দিলো, “ভ্যাম্পায়ারদের মুখ থেকে তখনই রক্ত ঝরে তখন তাদের রক্ত খাওয়ার নেশাটা চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যায়। তাহলে কি আপনারও…..”
ট্রুডোর দিকে বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো সবাই বিশেষ করে এলিনা। এদিকে গোত্রের লোকজন প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। আর কোনো দিক খুঁজে না পেয়ে হাটুর উপর হাত রেখে বসে পড়লো এলিনা। মন্ত্র জপতে শুরু করলো। সাথে সাথে শুরু হলো আবারও সেই আকষ্মিক ধোয়ার সৃষ্টি। মেঘের গর্জন। ধোয়ার মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠলো সেই দানবীয় কালো ছায়া। চোখ মেলে এলিনা বললো,”কাইরো,আমাকে সাহায্য করুন।”
ট্রুডো ভ্রু কুচকে বিরবির করে বললো,”তাহলে ইনিই সেই কাইরো! নেহাৎ ভ্যাম্পায়ার শক্তি নেই নাহলে দেখিয়ে দিতাম আমার সাথে ওমন আচরণ করার ফল কি হতে পারে।”
খিলখিল করে হাসতে লাগলো কাইরো। কাইরোর হাসা দেখে এলিনাও চমকে গেলো। এলিনার কথা বা প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না কাইরো। ট্রুডো বুঝতে পারলো যে কাইরো তাদের সময় নষ্ট করাচ্ছে যাতে গোত্রের লোকেরা তাদের ধরতে পারে। সবাইকে দৌঁড়ানোর কথা বলে দিলো ট্রুডো। উঠে দাঁড়ালো এলিনা। সাথে সাথে কাইরো লাল আলোর এক মায়াশক্তি প্রয়োগ করলো এলিনার উপর। মৃদুভাবে আওয়াজ আসলো এলিনার চিৎকারের। বন্ধ হয়ে গেলো এলিনার রক্তঝরা। সবাই দৌঁড়াতে শুরু করলো জঙ্গলের বাইরের দিকে বের হওয়ার জন্য। ব্লেডিকোকে উড়ে নিয়ে যেতে লাগলো এলিনা। কিছুক্ষণ পর শেষ হয়ে এলো জঙ্গলের পালানোর রাস্তা। সামনে বিশাল সৈন্যবাহিনীর সজ্জিত আসরের মতো দাঁড়িয়ে আছে হিংস্র চুপাকাবরার দল। একটা গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মিউরিসকে। শরীরের অনেক জায়গায় ক্ষত। মিউরিস দেখে সবাই চিৎকার দিয়ে ডাক দিলো। কিন্তু মিউরিসের শরীর পুরো নেতিয়ে গেছে।
আস্তে আস্তে নীচে নেমে ব্লেডিকোকে মাটিতে রাখলো এলিনা। বিশাল শক্তির সাথে সজোরে দাঁড়িয়ে মিউরিসের দিকে লাল চোখদুটো তাক করে প্রচন্ড গতিতে আঘাত করতে গেলো এলিনা। সবাই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “না…..”
কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। এলিনার একটা ডানার আঘাতে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো মিউরিস। কুকড়ে কুকড়ে উঠে বসে মিউরিস অস্ফট স্বরে বললো,”আমাকে বাঁচা তোরা”
কথাটা বলেই জ্ঞান হারানোর মতো মাটিতে নুয়িয়ে পড়লো মিউরিস। সবাই একরকম এলিনার উপর রাগ করলো। ভিরেক্স রেগে গিয়ে বললো,”কি করছেন আপনি? সে আমাদের বন্ধু মিউরিস। তাকে বাঁচানোর কথা আপনার।”
কারো কথার কোনো জবাব না দিয়ে বারবার মিউরিসকে আঘাত করতে লাগলো এলিনা। মিউরিস বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীরের কয়েক জায়গায় মাংস খসে গেলো। রক্ত বের হতে লাগলো মাংস খসা জায়গা থেকে। রক্ত দেখে এলিনার আর খেতে ইচ্ছে করছে না। ট্রুডো অবাক হয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছে এলিনার কাজগুলো আর মনে মনে ভাবছে,”এটা কি হচ্ছে? একটা ভ্যাম্পায়ারের সামনে তাজা রক্ত আর সে তা না খেয়ে বরং আঘাত করছে? আমি তো আমার চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। ”
এদিকে সবাই ট্রুডোর কাছে এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,”ওকে থামতে বল, নাহলে তো মিউরিস মরে যাবে। ”
ট্রুডো এলিনার উপর বিশ্বাস রেখে সবাইকে বললো,”সে যখন বলেছে যে মিউরিসকে সে বাঁচাবে তখন সে নিশ্চয় বাঁচাবে। আমাদের একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। ”
ট্রুডোর কথস শুনে সবার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। কি বলছে ট্রুডো। তার চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় বন্ধু ট্রুডোকে মেরে ফেলছে একটা ভ্যাম্পায়ার আর সে বলছে ধৈর্য্য ধরতে। তাছাড়া দুদিনের মধ্যে পরিচয় হওয়া মেয়েটির উপর এতো বিশ্বাসই করছে কি ভেবে!মিউরিসকে এলিনার হাত থেকে বাঁচানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। শুধু দেখছে আর ছটফট করছে সবাই।
কিছুক্ষণ চলার পর….। গোত্রের লোকেরা এসে ঘেরাও করে নিলো সবাইকে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র। এদিকে মিউরিসের যখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা তখন একটা হুংকার দিয়ে নিজের রুপ বদলে ফেললো মিউরিস। হয়ে গেলো বিশাল এক ড্রাগন। মুখ দিয়ে আগুন বের করে চারদিক পুড়াতে লাগলো। পিছিয়ে যেতে লাগলো সবাই। এলিনাও আর মিউরিসের কাছো গেলো না। মিউরিসের ড্রাগন রুপ থেকে গ্রুপের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। চারদিকে আগুন লেগে গেলো। আগুনের লেলিহান শিখা আস্তে আস্তে গ্রাস করতে শুরু করলো সবকিছু। ভয়ে আতঙ্কে গোত্রের সব লোক পালিয়ে যেতে লাগলো। রাগ থেমে গেলো মিউরিসের। ফিরে এলো নিজের আসল ড্রেকইনসের রুপে। যেন রুপ বদলের খেলা চলছে। মিউরিসের ড্রেকইনস এর রুপ দেখে সবাই বুঝে গেলো যে এই ড্রেকইনস মিউরিসের রুপ নিয়েছিলো। তাই এলিনা এর উপর ক্ষেপে গেছে। আনাহী অবাক হয়ে ট্রুডোকে বললো,”এসব কি? মিউরিসও কি তাহলে ড্রেকইনস? নাকি ড্রেকইনস মিউরিসের রুপ নিয়েছিলো?”
ট্রুডো শান্ত কণ্ঠে বললো,”ড্রেকইনস আমাদেরকে আবার বিপদে ফেলার জন্য মিউরিসের রুপ নিয়েছিলো। এলিনা ভ্যাম্পায়ার আর সে এই ড্রেকইনসদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে তাই সে বুঝতে পেরেছিলো যে এটা মিউরিস নয় তাই তার উপর ওমন আক্রমণ করেছিলো যাতে তার আসল রুপ সবার সামনে চলে আসে।”
এই প্রথম ড্রেকইনসদের আসল রুপ দেখতে পেলো সবাই। সাধারণত ড্রেকইনসরা মহিলা হয়। তাদের বৈশিষ্ট্য সাধারণ মানুষের মতোই তবে ভিন্ন রুপধারণ করতে পারে।
চারদিকে আগুন আরও বেড়েই চলছে। সবাই তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে যেতে লাগলো কিন্তু চুপাকাবরার দল ধেয়ে আসতে লাগলো তাদের দিকে। ট্রুডো এলিনাকে বললো চুপাকাবরাদের সরে যেতে। এলিনা তার ভ্যাম্পায়ার রুপে লাল চোখদুটো চুপাকাবরাদের দেখাই সব জঙ্গলের ভেতরে দৌঁড়ে চলে যেতে লাগলো। আপাতত বিপদ কাটলো সবার।
স্বস্তিবোধ করে এলিনাকে প্রশ্ন করলো ট্রুডো, “আপনি তো ভ্যাম্পায়ার, রক্ত দেখেও আপনি খেলেন না যে? নাকি ড্রেকইনস বলে রক্ত খাননি?”
এলিনা বললো,”সেটার জন্য নয়। আপনি তখন আমায় বলছিলেন না যে ভ্যাম্পায়ারদের মুখ থেকে রক্ত বের হলে তার রক্ত খাওয়ার নেশা চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায় সেজন্যই বোধয় রক্ত খাওয়ার ইচ্ছা হয়নি।”
..
..
..
..
..(চলবে………..)
..
..
গল্পটি কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না। শেয়ার করুন, বন্ধুদের মেনশন করুন। গঠনমূলক মন্তব্য করুন। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 10

0

…………………দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:10………………………….

অনুষ্ঠানের সব শব্দ, আওয়াজ, মাতামাতি থেমে গেলো। এলিনাকে বলি দেওয়ার জায়গায় দাঁড় করানো হলো। গোত্রপ্রধান ঘোষণা দিলো, “আজকেই সেই দিন, আজকের পর থেকেই আমরা দেবী অ্যাথিনার পূজা শুরু করতে পারবো। আজকে এই জেরায়াস উপজাতির মিনার্ভার পূজারী এলিনাকে বলিদানের মাধ্যমে পাহাড়ের সর্বশেষ সিঁড়ি কাটা হবে। কিন্তু তার আগে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক।”
ট্রুডো দেখলো গোত্রের সবাই গোত্রপ্রধানের দিকে মনোযোগ দিয়ে তার ঘোষণা শুনছে। এই সুযোগে তার বন্ধুদের খোঁজতে লাগলো। ঝোঁপের আড়ালে ব্লেডিকোকে ইঙ্গিত করলো তার সাথে খুঁজার জন্য। ব্লেডিকো এসে ট্রুডোর সাথে জেফারী আর মেডেকিকে খুঁজতে লাগলো। আর ভিরেক্সকে ইশারা করে কয়েকটি শক্ত ডাল জোগাড় করতে বললো ট্রুডো যাতে বিপদের সময় কাজে লাগে। ভিরেক্স তার আশেপাশে শক্ত ডাল খুঁজতে লাগলো। জেফারী আর মেডেকিকে চারদিকে হন্যহারা হয়ে খু্ঁজছে দুজন। এতটুকু জায়গায় কোথাও খুঁজে পেলো না তাদের। হঠাৎ গোত্রের এক টং ঘর থেকে টেনে হিচড়ে নামালো হলো জেফারী আর মেডেকিকে। ট্রুডো আর ব্লেডিকো তাদের শোচনীয় অবস্থা দেখে খুব আফসোস করতে লাগলো। হয়তো তাদের সচেতনতা বজায় থাকলে আজকে এই অবস্থা হতো না। হঠাৎ এলিনার দিকে নজর চলে গেলো ট্রুডোর। এমনিতেই গোত্রের মাঝে সবচেয়ে রুপসী নারী এলিনা। তার উপর জঙ্গলের ফুল-লতাপাতা দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে তাকে দেখে চোখ আটকে গেছে ট্রুডোর। স্থির দৃষ্টিতে এলিনার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। এদিকে জেফারী আর মেডেকিকে জঙ্গলের এক অংশে বেঁধে রাখলো দুজন লোক। সাথে সাথে পেছনে ভেসে উঠলো লাল আলো ঝলকানো শতশত চুপাকাবরার চোখ। অন্ধকারে তারার মতো ফুটে উঠেছে চুপাকাবরার হিংস্র চোখ। আলোর ঝলকানিতেই বুঝা যাচ্ছে এরা কতোটা হিংস্র আর ক্ষুধার্ত। কয়েকশ মানুষ বা প্রাণীকে এরা কয়েকমিনিটের মধ্যেই রক্তচুষে সাবাড় করে দিতে সক্ষম। ব্লেডিকো ট্রুডোকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ট্রুডো এলিনার রুপের সাগরে ডুবে আছে। সবাইকে বাঁচানোর কথা মনেই নেই তার। ব্লেডিকো জোরে একটা ধাক্কা দিলো ট্রুডোকে। স্বজ্ঞানে ফিরে এসে ট্রুডো আমতা আমতা করতে লাগলো। জেফারী আর মেডেকিকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে গেলো ব্লেডিকো আর ট্রুডো।
এদিকে গোত্রপ্রধান সেই ছোট্ট অনুষ্ঠান শুরু করার ঘোষণা দিলো,”এখন সেই ছোট্ট অনুষ্ঠান শুরু করা হোক। বন্দি মেয়েদুটোকে এনে একজনকে বলি দিয়ে তার রক্ত গোত্রের সকল উঁচুজাতের মানুষের মধ্যে দাও আর আরেকজন মেয়েকে চুপাকাবরার দলে ছেড়ে দাও। এই অনুষ্ঠান শেষ হলেই বলি দেওয়া হবে।”

শুরু হলো আয়োজন। নাচ-গান, আনন্দ-ফুর্তি ও জাক-জমকতার মধ্যে ট্রুডো মেডেকিকে মুক্ত করলো। ব্লেডিকো জেফারীর রশ্মি খুঁলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলো চুপাকাবরার গিরিখাদে। চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো জেফারী। চোখ খুলে দেখে ব্লেডিকো গাছের একটা ছোট্ট ডাল ধরে আটকে আছে। তাড়াতাড়ি ট্রুডো গিয়ে ব্লেডিকোকে টেনে হিচড়ে তুললো। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে অস্ত্র হাতে উপজাতিদের গোত্র রক্ষক পালোয়ান। একেকজনের চেহারা দানবের মতো। শরীরের আকার আকৃতি দানবকেও হার মানাবে। দেরি না করে ভিরেক্সকে ইশারা করলো ট্রুডো। সাথে সাথে ডালপালা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো সবাই। মেডেকি একটু চালাকি করে একটা ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলো। সবাই ভয়ে একদিকে সরে যেতে লাগলো। ট্রুডো মৃত্যুকে উপেক্ষা করে দৌঁড় দিলো এলিনাকে বাঁচানোর জন্য। সাথে সাথে পালোয়ানের দল চুপাকাবরা আসার রাস্তা খুলে দিলো। মৌমাছির মতো ঝাকে ঝাকে চুপাকাবরা আসতে লাগলো। জেফারী, মেডেকি, ব্লেডিকো আর ভিরেক্স ভয়ে পেছনে যেতে লাগলো। ব্লেডিকোর হঠাৎ মনে পড়ে গেলো মিউরিস এর কথা। মিউরিস যখন চুপাকাবরার কবলে পড়েছিলো তখন তার সামনে আগুন ধরলেই তা পালিয়ে গিয়েছিলো। বুদ্ধি খাটিয়ে জ্বলন্ত ঘর থেকে একটা জ্বলন্ত লাঠি নিয়ে চুপাকাবরার সামনে ধরলো ব্লেডিকো। আগুনের আলো আর উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে অদ্ভুত সব আওয়াজ করতে লাগলো। তাদেরকে ঘীরে নিলো চুপাকাবরার দল। চারপাশে ঘুরতে লাগলো গড়গড় আওয়াজ করতে করতে। মুখ দিয়ে রক্তমিশ্রিত লালা মাটিতে নিগড়ে পড়ছে। চোখগুলো জ্বলছে। সবার হাতের গাছের ডালটায় আগুন ধরিয়ে চুপাকাবরার সামনে ধরতেই চুপাকাবরাগুলো জঙ্গলের ভেতরে অন্ধকারে চলে যেতে লাগলো।
আবার ঝাপিয়ে পড়লো পালোয়ানের দল। ব্লেডিকোর মাথায় এক ঘা বসিয়ে দিলো এক পালোয়ান৷ মাথায় হাত চিৎকার দিয়ে উঠলো ব্লেডিকো। মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে লাগলো অঝোর ধারায়। ব্লেডিকোর চিৎকারে সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইলো। জ্ঞান হারালো ব্লেডিকো। ক্ষেপে গেলো ভিরেক্স। পকেট থেকে একটা ছোট্র কৌটা বের করে জোরে মাটিতে আঘাত করা সাথেই নীলচে ধোয়া বের হতে শুরু করলো। ট্রুডোর দলের সবাই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। ট্রুডো এক হাত দিয়ে নিজের মুখ ধরে আরেক হাত দিয়ে এলিনার মুখ চেপে ধরলো। সাথে সাথে গোত্রের সব লোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো মাটিতে। কিছু মায়াবিদ্যার জন্য শুধু রইলো গোত্রপ্রধান। ধোয়া কমতে লাগলো। হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ভরে গেলো। শুরু হলো বিদ্যুৎ চমকানো। নীলচে ধোয়া কমতেই ভেসে উঠলো সেই দানবীয় ছায়া। এলিনা ব্লেডিকোর দিকে এক নজর তাকাতেই দেখে তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। রক্ত দেখে এলিনার মাঝে ভ্যাম্পায়ার শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। চোখদুটো লাল হয়ে গেলো। ঠোট ভেদ করে বেরিয়ে এলো চোখালো বড় দুটি দাঁত। পীঠে তৈরি হলো কালো পালকের বিশাল দুটি ডানা।

সাথে সাথে দুপা পিছিয়ে নিলো ট্রুডো। ভয়ে আতঙ্কে চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে গেলো গোত্রপ্রধানের। সাথে সাথেই খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো ছায়াটি। একটা গাছের ডালে এসে বসলো সেই লাল চোখের দাঁড়কাকটি। এলিনা উড়তে লাগলো হাওয়ায়। বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া। কর্কশ কণ্ঠে ডাকতে শুরু করলো কাকটি। আস্তে আস্তে ব্লেডিকোর দিকে উড়ে যেতে লাগলো এলিনা। ট্রুডো বুঝতে পারলো যে এলিনা এখন ব্লেডিকোর রক্ত খাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ব্লেডিকোকে বাঁচানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা ট্রুডো। আশেপাশে ছটফট করে তাকাতে লাগলো ট্রুডো। এলিনাকে থামানোও যাচ্ছে না। হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে সে। মনে মনে মেনেই নিলো ট্রুডো যে আজকে ব্লেডিকো এলিনার খাদ্য হবে। তাকে আর বাঁচানো যাবে না। তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে ট্রুডো জোরে জোরে এলিনাকে বললো,”না, এলিনা থামো। আমার কথা শুনো। আমার বন্ধু সে। ”
এলিনা কাউকে পরোয়া না করে সামনে যেতে লাগলো। উড়ে গিয়ে ব্লেডিকোর মাথার কাছে বসলো। মাটিতে পড়া রক্ত জিহ্বা দিয়ে একটু চেটে একটু মুচকি হাসলো এলিনা। চোখের লাল আলো আরও ঝকঝক করতে লাগলো এলিনার। সবাই এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে এলিনার দিকে। আস্তে আস্তে হাত বাড়াচ্ছে এলিনা ব্লেডিকোর রক্ত চুষে খাওয়ার জন্য। কালো ছায়াটাও আরও জোরে জোরে হাসতে লাগলে। তার হাসির আওয়াজে কান ধরলো সবাই। ব্লেডিকোকে ধরে মুখের কাছে নিলো এলিনা। ঘাড়টা মুড়িয়ে বড় বড় দাঁতদুটি ব্লেডিকোর ঘাড়ের দিকে নিতে লাগলো। হঠাৎ সামনে এলো আনাহী। হাতে এক গ্লাস রক্ত। টুকটুকে লাল রক্ত দেখে এলিনা ব্লেডিকোকে ছেড়ে দিয়ে আনাহীর দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকালো। আনাহীর মুখে বড় বড় নখ দিয়ে একটা আচড় দিয়ে হাত থেকে রক্তপূর্ণ গ্লাসটা নিয়ে দাঁড়ালো এলিনা। এলিনার দাঁড়ানো দেখে সবাই ব্লেডিকোর বেঁচে যাওয়ার একটা দিশা খুঁজে পেলো। হঠাৎ হাসি থেমে গেলো কালো ছায়াটার। শুরু হলো এলিনার হাসি। কিছুক্ষণ হেসে গ্লাসের সব রক্ত তৃপ্তিভরে খেয়ে নিলো এলিনা। কালো ছায়াটা আর দাঁড়কাকটা জঙ্গলের অন্ধকারে মিশে গেলো।
এলিনা আবার মানুষ রুপে ফিরে এলো। গোত্রপ্রধান তাড়াতাড়ি ধ্যানে বসলো। মন্ত্র জপতে লাগলো। এদিকে এলিনা ট্রুডোকে বললো,”এখনই পালাতে হবে নাহলে পরে আফসোস করতে হবে।”
ট্রুডো বললো,”কিন্তু আমার বন্ধু মিউরিস তো চুপাকাবরার কাছে এখনো বন্দি আছে। তাকে না নিয়ে পালাতে পারবো না।”
এলিনা বললো,”এখন পালাতে হবে। আপনার বন্ধুকে আমি পালানোর পর ফিরিয়ে আনবো।” কথাটা বলার পর আবার ভ্যাম্পায়ার হলো এলিনা। আনাহী তাড়াতাড়ি ব্লেডিকোর মাথা বেধে দিলো। সবাইকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে উড়ে যেতে লাগলো এলিনা। গোত্রপ্রধান তার মায়াবী শক্তি আর মান্ত্র দিয়ে গোত্রের সবাইকে আবার জাগিয়ে তুললো। ঘোষণা দিলো গোত্রপ্রধান,”যে করেই হোক এলিনাকে এনে বলি দিতে হবে। তা না হলে দেবী অ্যাথিনার অভিশাপ লাগবে আমাদের।”
সবাই পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো এলিনাকে ধরতে। গোত্রপ্রধান উঠে তার ঘরে গেলো। তার পেছনে পেছনে উড়ে যেতে লাগলো দাঁড়কাক। এদিকে বলি দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
..
..
..
..
..(চলবে………..)
..
..
..
আগামীকাল ১-১০ পর্যন্ত পর্বের লিংক একসাথে দেওয়া হবে। গল্প পড়ে গঠনমুলক মন্তব্য করবেন। শেয়ার, মেনশন করে আপনার বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 9

0

…………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:09………………………….

আনাহীর তৈরি ভ্যাক্সিন ট্রুডোর শরীরে কাজ করতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে ট্রুডোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে আসতে লাগলো। অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করলো ট্রুডো। সে ড্রেকইনস এর সামনে থাকার সময় যে মায়ার বলয় তার উপর এসে পড়েছিলো সেটাও মূলত ভ্যাম্পায়ার শক্তিকে চুষে নেওয়ার জন্য। এদিকে ট্রুডোর শরীর থেকে ভ্যাম্পায়ার শক্তি বেরিয়ে এলিনার শরীরে গিয়ে ঢুকতে লাগলো। ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটা আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যেতে লাগলো আর একটা নতুন ধরনের চিহ্ন ভেসে উঠতে লাগলো। আনাহী মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে আফসোস করতে লাগলো,”আমি এটা কি করলাম। জেফারীর রুপ নেওয়া একটা ড্রেকইনস এর কথায় ট্রুডোর ভ্যাম্পায়ার শক্তিকে নষ্ট করে দিলাম!!”

আনাহীর মাথায় হাত দেখে ব্লেডিকো একটু রাগি কণ্ঠে বললো, “তুই কি করলি এটা? এখন এই চুপাকাবরার হাত থেকে মিউরিস আর অন্যদের বাঁচাবে কে? ভ্যাম্পায়ার শক্তি থাকলে হয়তো তা সম্ভব হতো কিন্তু তুই?ছিঃ, স্বার্থপরের মতো নিজের ভালোবাসাকে বড় মনে করে বন্ধুদের বিপদের মুখে ফেলে দিলি?”
আনাহী আফসোসের স্বরে বললো,”কি করতাম বল, আমি চাইনা ট্রুডো অন্য কারো হোক। আমি বুঝতে পারিনি জেফারী একটা ড্রেকইনস। ?”
ভিরেক্স আনাহীর কষ্ট দেখে নিজেও কেমন গুমড়ে গুমড়ে মুখটা ভার করে আছে। ভিরেক্স তার ভালোবাসার কথা আর বলতে পারলো না আনাহীকে। কারণ এটা নিশ্চিত যে তার ভালোবাসা লুটিয়ে যাবে জঙ্গলের শুকনো পাতার ঘ্রাণ আর মাটির গন্ধের সাথে। তার অপ্রকাশিত ভালোবাসা মনের কোণেই রেখে দিলো ভিরেক্স।

ব্লেডিকো এসব দেখে একটু রেগে গেলো। সবাইকে বুঝিয়ে বললো,”পরিস্থিতি যেমনই হোক আমাদেরকে তো মোকাবিলা করতে হবে। আর তোরা কি করছিস, ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয়ে নিজেদেরকে আরও ঘোর বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছিস। কয়েকটি প্রকৃত ভালোবাসা হতে পারে দৈহিক কিংবা ঐশ্বরিক। সত্য ভালোবাসা এমন কিছু যা শাশ্বত ও অধিক শান্তিপূর্ণ। তোরা ভালোবাসা সেটাকেই বুঝিস যার সুন্দর দেহটাকে পাওয়া যায়। ক্ষণিকের জন্য সুখ আর আনন্দ উপভোগ করা যায়।”
ব্লেডিকোর কথা শুনে আনাহী আর ভিরেক্স এর ভালোবাসার ঘোর একটু কাটলো। বন্ধুদের কথা চিন্তা করতে লাগলো। ভেবে দেখলো ব্লেডিকো একদম সত্যি কথা বলেছে। আনাহী সরি বলার জন্য ট্রুডোর কাছে যেতেই ভিরেক্স বললো,”দাঁড়া। ওকে ধরিস না। ও খানিকক্ষণের মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে যাবে। ওর ভ্যাম্পায়ার শক্তি বেরিয়ে যাচ্ছে। ওকে ধরলে তোর উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। যা হয়েছে সেটা ভুলবশত। এখন জেনেশুনে ভুল করারটা বোকামী হবে।”
ভিরেক্স এর কথা শুনে আনাহী ট্রুডোর থেকে খানিক দূরে সরে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমাকে ক্ষমা করে দিস ট্রুডো। আমি জেনেশুনে এটা করিনি। আমার সাথে ষড়যন্ত্র করে এসব করানো হয়েছে। আমাকে মাফ করে দিস।”

আনাহী কাঁদতে শুরু করলে ব্লেডিকো আর ভিরেক্স এসে তার পাশে বসলো। তাকে শান্তনা দিলো। হয়তো এটাই হওয়ার ছিলো। আনাহী কান্না থামিয়ে তাদের দিকে তাকাতেই দেখে ব্লেডিকোর হাতের কয়েক জায়গায় ড্রেকইনস ড্রাগনের আগুনে ঝলসে গেছে। দগদগে ঘা হয়ে গেছে। আর ভিরেক্স এর পীঠে ও বা হাতের কয়েক জায়গায়। ঘায়ে কিছু লাগানোর জন্য আনাহী ঝটপট উঠে দাঁড়ালো। সামনের দিকে তাকাতেই দেখে তাবুগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার আনা সকল ডাক্তারী সরঞ্জামও পুড়ে গেছে। যে এন্টিসেপ্টিক ও অষুধগুলো এনেছিলো সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি আশেপাশে ছুটাছুটি করে এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে এমন প্রকৃতিক কিছু লতাপাতা খুঁজতে লাগলো। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর একটা গাছের পাতা এনে তা তালুতে ঘষে ভিরেক্স আর ব্লেডিকোর ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলো। এদিকে ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি পুরোটাই উঠে গিয়ে অন্যরকম একটা চিহ্নে পরিণত হয়েছে। উঠে দাঁড়ালো ট্রুডো। আনাহীকে বললো,”আমাকে সাধারণ মানুষে পরিণত করেছিস ঠিকই কিন্তু আমাকে তুই কোনোদিন পাবি না।”
আনাহী ট্রুডোর কথা শুনে আরও মন খারাপ করে কেঁদে দিলো। ব্লেডিকো বললো,”এটা ভালোবাসা দেওয়া-নেওয়ার সময় নয়।এখন আমাদের বন্ধুদের বাঁচাতে হবে।”
ব্লেডিকোর কথাটা সবাই একাধারে সমর্থন করলো। যা হয়েছে সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে সবাই একজায়গায় হলো এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। ট্রুডোর ধারণা অনুযায়ী সে বললো,”এই পাহাড়ের পাদদেশে জেরায়াস উপজাতির বাস। খুব ভয়ঙ্কর আর অদ্ভুত নিয়ম সেখানে। আমার মনে হয় জেফারী আর মেডেকি সেখানেই বন্দি আছে। আর মিউরিস বন্দি হয়ে আছে চুপাকাবরার কাছে।”
ভিরেক্স অবাক হওয়ার স্বরে বললো,”মিউরিস বন্দি আছে মানে? এতো হিংস্র চুপাকাবরার দল এখনো কি তাকে আস্ত রেখেছে? ”
ট্রুডো ভেবে ভেবে উত্তর দিলো,”অবশ্যই৷ চুপাকাবরার দলকে একজন কমান্ড দিচ্ছে। তাই সে যতক্ষণ পর্যন্ত না বলবে চুপাকাবরা মিউরিসকে মারবে না।”
ভিরেক্স বললো,”তুই এতোসব জানলি কিভাবে? আর মিউরিস যদি এখনো জীবিত থেকে থাকে তাহলে তাকে বাঁচাবি কিভাবে? আমি তো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। ”
ট্রুডো সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বললো,”মিউরিস আমরা কেউ বাঁচাতে পারবো না কারণ ড্রেকইনস ড্রাগন আর চুপাকাবরার সাথে লড়াই করার মতো শক্তি আর সাহস আমাদের কারোরই নেই। ভ্যাম্পায়ার শক্তি থাকলে হয়তো চেষ্টা করতাম কিন্তু সেটা তো হলো না। ”
ট্রুডোর কথা শুনে বাকীসব একসাথে বলে উঠলো,”তাহলে কি মিউরিসকে এভাবেই এমনি এমনি মরে যেতে দেখতে হবে? তাকে বাঁচানোর কি কোনো উপায় নেই। ”
ট্রুডো ভেবে কোনোভাবে উত্তর দিলো,”উপায় আছে। তবে ঠিক সময়ে আমি সেই উপায় প্রয়োগ করবো। এখন বাকী রইলো জেফারী আর মেডেকি।”
ব্লেডিকো বললো,”জেফারী তো একটা ড্রেকইনস ড্রাগন। তাকে আবার উদ্ধার করবি কিভাবে?”
ট্রুডো কথাটা শুনার পর তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,”না, এখানে যে জেফারী ছিলো সে ড্রাগন কিন্তু আসল জেফারী মেডেকির সাথে হয়তো সেই উপজাতির কাছে বন্দি আছে।”
আনাহী বললো,”তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য কি কোনো উপায় জানা আছে? থাকলে আমাদের এখনই বল।”

ট্রুডো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তাবু আগুনে পুড়ে গিয়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। শুক্লপক্ষ শেষ হতে চলেছে। এক্ষুণি রওনা না দিলে কাউকেই বাঁচানো যাবে না। হয়তো ওদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ট্রুডো বললো,”আমাদের হাতে সময় নেই। সবাই চল। যেতে যেতে বলছি।”
অসুস্থ্য শরীরে সবাই রওনা দিলো সেই গোত্রের আস্তানার উদ্দেশ্যে। পেছন পেছন উড়ে যেতে লাগলো সেই কালো কুচকুচে দাঁড়কাক। অন্যদিকে নজর না দিয়ে সবাই দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলো। অ্যাডোনিস গাছের পাশ দিয়ে যেতেই আনাহী হঠাৎ একটা কালো ছায়া দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। সবাই আনাহীকে খেয়াল না করে তাড়াহুড়োর বশে তাকে ফেলেই চলে গেলো। আনাহীকে বশ করে নিলো সেই কালো ছায়া। কালো ছায়াটা আনাহীকে নিজের মায়াবিদ্যা দ্বারা বশ করে নিজের আসল রুপে ফিরে এলো। হয়ে গেলো শয়তানের পূজারী সেই কাইরো। খিলখিল করে পৈশাচিক হাসি দিলো কাইরো। আনাহীকে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করানোর জন্য তাকে গোত্রের দিকে পাঠিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পর। শুক্লপক্ষ প্রায় শেষ। ট্রুডো সবাইকে ঝোপের আড়ালো লুকিয়ে থাকতে বললো। যখন ইঙ্গিত পাবে তখন ঝাপিয়ে পড়বে সেই উপজাতিদের উপর। ট্রুডো অনুষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করলো। অনেক আয়োজনের মধ্য ট্রুডোকে কেউ খেয়ালও করলো না। হঠাৎ গোত্রপ্রধান ঘোষণা করার জন্য পাহাড়ের সর্বশেষ সিড়ির উপর দাঁড়ালো। এদিকে এলিনাকে সাজিয়ে গুজিয়ে আনা হলো বলি দেওয়ার জন্য। রক্ত সংগ্রহ করার জন্য সামনে কয়েকটি পাত্র রাখা। কয়েকটি গ্লাসও রাখা হয়েছে।
..
..
..
..
..(চলবে………)
..
..
..
.. গল্পটি সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করার আশা করছি। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 7

0

…………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:07………………………….

ট্রুডো বুঝতে পারলো যে লোকটা তার কাছ থেকে ভ্যাম্পায়ার লকেটটি নেওয়ার জন্যই এই কাজটা করেছে কিন্তু সেখানে যাওয়ার রাস্তা তো জেফারী দেখিয়ে দিয়েছিলো। তাহলে জেফারী কি লোকটার এজেন্ট? নাকি জেফারীকে নিজের মায়াবী শক্তি দ্বারা আয়ত্তে এনেছে? সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে গেলো ট্রুডোর। মাথা ঠান্ডা করে আবার এলিনাকে প্রশ্ন করলো, “লোকটার নাম কি? আর এখন সে কোথায় থাকে?”
ট্রুডোর প্রশ্ন শুনে এলিনা একটু বিভ্রান্ত হলো। হঠাৎ তাকে নিয়ে এতো আগ্রহ কেন। অন্যমনষ্ক হয়ে উত্তর দিলো এলিনা, “তার নাম কাইরো। এখন সে এই জঙ্গলের মাঝে বিলিন হয়ে আছে। আমার যখন প্রয়োজন হয় তখন আমি ডাকি। ”
ট্রুডো বললো, “তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়েই গেলো। কাইরোকে ডেকে আপনি বলি হওয়া থেকে বাঁচুন। সব সমস্যা মিটে গেলো। ”
এলিনা একটু রেগে গেলো। ট্রুডো তার দিকে তাকাতেই দেখে চোখের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শিরাগুলো লাল হয়ে গেছে। এলিনা রাগান্বিত স্বরে বললো,” তিনি আমাকে সাহায্য করেন ঠিকই তবে এসব সাধারণ কোনো ঘটনায় নয়। কোনো জাদুবিদ্যা, মায়াবিদ্যা বা অলৌকিক সব বিষয়ে পাশে থাকেন। কিন্তু এতে আমার মৃত্যু হলেও তিনি সাহায্য করবেন না।”
ট্রুডো আর কিছু বললো না। শুধু কাইরোর উপর একটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মনে মনে তৈরি হতে লাগলো। তার ভ্যাম্পায়ার লকেটটি এমনভাবে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রুডোর কাছে কাইরো এক জঘন্য আত্মার প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হলো। কারণ তার কাছে এখনো অজানা কাইরো আদৌ মানুষ কি না।

এলিনা সত্যিই ভ্যাম্পায়ার কিনা তা আবার যাচাই করার জন্য ট্রুডো এলিনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রশ্ন করলো, “আপনি তো ভ্যাম্পায়ার। তো আপনি নিজেই তো নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।”
এলিনা বললো,”আমি এখনো ভ্যাম্পায়ার হয়নি। ভ্যাম্পায়ার হওয়ার জন্য শুধু প্রাথমিকভাবে আমার উপর মায়া প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা গতকাল রাত থেকে সম্পূর্ণ ভ্যাম্পায়ারের মতো সবকিছু করতে পারছি।”

ট্রুডো এলিনার কথা শুনে চমকে গেলো। একজন মানুষ কি সত্যিই ভ্যাম্পায়ার হতে পারে? আর যদি তা কোনোভাবে সম্ভবও হয় তাহলে এ কেমন কাজ? অর্ধেক ভ্যাম্পায়ারের শক্তি পেয়ে আবার পূ্র্ণতা লাভ করা যায় এমনি এমনি! এলিনার সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে ও নির্দিষ্ট কোনো তথ্যই পাচ্ছে না ট্রুডো। তার সম্পর্কে যতোই জানছে আরও গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মনে মনে এলিনাকে ভালোবেসে ফেলেছে একথা বলতেও পারছে না ট্রুডো। আবার এলিনাকে বাঁচানোট জন্য পালানোর পর যদি তাকে ভালোবাসার কথা বলা হয় তাহলে সুযোগ নিচ্ছে বলে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হতে পারে। ট্রুডো বুঝে উঠে পারছে না এখন সে কি করবে।

বিকেলবেলা। চারদিকে শান্ত পরিবেশ। জঙ্গলের ভেতরে আলোছায়ার ক্লান্ত ছুটাছুটি। ট্রুডো তার তাবুর ভেতরে শুয়ে আছে আর কি যেন ভাবছে। ব্লেডিকো আর ভিরেক্স তাদের তাবুতে জঙ্গলের এসব অদ্ভুত কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে তাদের অন্যান্য মিথলজিস্ট বন্ধুদের ফোন করে। আনাহী আর জেফারী তাদের তাবুর ভেতর একসাথে কাজ করছে কিন্তু ট্রুডো যে কাজ করতে বলেছিলো সেটা নয় বরং তার উল্টোটা। জেফারী শুধু আনাহীর কাজগুলো দেখে যাচ্ছে। আনাহী প্রশ্ন করলো জেফারীকে,”তোকে যে কাজটা দিয়েছে সেটা না করে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?”
জেফারী উত্তর দিতে না পেরে উল্টো আনাহীকে প্রশ্ন করলো,”আমি নাহয় করবো কিন্তু তুই এটা কি করছিস?তোকে কি বলেছে আর তুই কি করছিস?”
জেফারীর কথা শুনে আনাহী পুরো অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। একদম স্থির। চোখদুটো বড় বড় করে জেফারীকে দেখতে লাগলো আনাহী। জেফারী আনাহীর চোখের সামনে হাত নেড়ে বললো,”কি হলো অবাক হলি নাকি? ”
আনাহী বললো,”যে কোনোদিন কাজ পেলে এক সেকেন্ডও দেরি না করে ঝটপট করে ফেলে সে কিনা বলছে পরে করবো!! তো এটা শুনে অবাক না হয়ে কিভাবে থাকি বল। সত্যিই জঙ্গল থেকে তোকে খুঁজে আনার পর থেকেই কেমন জানি হয়ে গেছিস তুই। সারাদিন শুধু আমার দিকেই তাক করে থাকিস। হঠাৎ করে তোকে দেখলে মনে হয় আমাকে পুরোই গিলে খাবি।”
জেফারী একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে যেন আনাহীর কথাটা আড়াল করতে চাইলো। নিজেকে আড়াল করে হঠাৎ করে ট্রুডোর বিষয়ে বললো,”তুই ট্রুডোকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”
আনাহীও জেফারীর ফাঁদে পা দিলো। নম্রকণ্ঠে বললো,”বাসি তো কিন্তু বলতে পারছি কই?”
জেফারী বললো,”কিন্তু ট্রুডো তো মানুষই না। তাকে ভালোবাসবি কি করে?”
আনাহী প্রথমে কথাটাকে নিছক মজাচ্ছলে নিলেও একটু ভাবনার পর দেখলো কথাটা সত্যিও হতে পারে। ট্রুডোর আচার-আচরন, খাওয়া-দাওয়া এসব এমনিতেই কেমন অদ্ভুত লাগে। তাছাড়া বাস্তব একটা প্রমাণ হলো ট্রুডোর তাবুতে রক্তের ব্যাগ পাওয়া। কথাটা নিয়ে ভাবতে লাগলো আনাহী। জেফারী আনাহীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার মতো কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে ভৌতিক কণ্ঠে বললো,”ট্রুডো একটা ভ্যাম্পায়ার। আর সে তোকে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে সাধারণ মানুষে রুপান্তরিত না হয়।”
আনাহী বুঝে গেলো তার এখন কি করতে হবে। ট্রুডোর প্রেমে অন্ধের মতো হয়ে গেছে আনাহী। জেফারী যা যা বললো আনাহী তাই বিশ্বাস করে নিলো। ট্রুডোকে মানুষে রুপান্তরিত করার জন্য ভ্যাম্পায়ার ডিএনএ পরিবর্তন করে একজন সাধারণ মানুষের ডিএনএ তে পরিণত করতে ভ্যাক্সিন তৈরি করতে লাগলো। ভ্যাক্সিন তৈরিতে সাহায্য করতে লাগলো জেফারী।
এদিকে মাথায় হাজারো চিন্তা একটুও স্বস্তি দিচ্ছে না ট্রুডোর। একটা রহস্যের উদঘাটন করতে গেলে বাকীগুলোর হাল বেহাল হয়ে যাচ্ছে। মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেরে ফেলে আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করলো আবার সেই চুপাকাবরার আস্তানার সেই সরু রাস্তাটা ধরে। হয়তো একটা রহস্যের উদঘাটনে আরও দুইটা রহস্যের জট খুলবে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর মাঝপথে থেমে গেলো ট্রুডো। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো শুধু ঘন জঙ্গল। কিন্তু সরু রাস্তাটার একপাশ দিয়ে একটা কৃত্রিম রাস্তামতো জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। ভালোমন্দ না ভেবে সেই বিকল্প রাস্তা ধরে এগোতে লাগলো ট্রুডো। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর চলে গেলো সেই জায়গায় যেখানে জেফারীকে সে খুঁজে পেয়েছিলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফিরে চুপাকাবরার আস্তানার অভিমুখে যাত্রা শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে উপর নিচে, চারদিকে খুব সতর্কভাবে নজর রাখতে লাগলো ট্রুডো। এবার আর পেছনে পেছনে নয় সরাসরি সামনে দিয়েই সেই লাল চোখের রক্ত নিংড়ানো কালো কুচকুচে দাঁড়কাক উড়ে যেতে লাগলো। ভয় নেই। তবে অবাক হওয়ার জন্য ঘটনাটি যথেষ্ট কেননা যে কাকটা দু-একদিন আগে এমনিতেই পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সাথে মিশে গেলো সেই কাক ট্রুডোর সামনে দিব্বি উড়ে বেরাচ্ছে। নজর রাখছে ট্রুডোর উপর। নেহাৎ ভ্যাম্পায়ার লকেট হারানোর পর উড়তে পারছে না ট্রুডো তা নাহলে উড়ে গিয়ে কাকটাকে ধরে রক্ত চুষে খেতো ট্রুডো। তবে এখন আর তেমন রাগ উঠলো না। কাকের দিকে নজর না দিয়ে সামনে এগোতে লাগলো সে।
বেশকিছুক্ষণ পর। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। জঙ্গলের ভেতর থেকে ভারী হাওয়ার সাথে ভেসে আসতে লাগলো চুপাকাবরার ভয়ানক গর্জনের প্রতিধ্বনি। বাদুড়ের কিচিরমিচির শব্দ। সব মিলিয়ে মনে হলো যেন এক অন্য জগতে চলে এসেছে ট্রুডো। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে গেলো ট্রুডো। সে যেখানে চলে এসেছে সেখানের সামনের অনেকখানি জায়গাই সমতল। কোনো ঝোপঝাড় নেই। গাছপালা কিংবা একটা ঝরাপাতাও নেই। লালচে রক্তের মাটি সন্ধ্যার আবছা আলোয় ভয়ানক হয়ে উঠেছে। থেকে থেকে আসছে কোনো এক অজানা প্রাণীর ভয়ানক গর্জনের শব্দ। জায়গাটুকু জুড়ে নীলচে আলো ঝলকাতে শুরু করলো। সন্ধ্যার আলোও রাতের তমাধারের আড়ালো গিয়ে লুকালো। শুধুমাত্র জায়গাটুকু ছাড়া আর চারদিক নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকপ গেছে। আবহাওয়া ভালোই ছিলো কিন্তু হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো। ট্রুডো বুঝতে পারলো না এসব কি হচ্ছে। এটা কি কোনো স্বাভাবিক নাকি অলৌকিক কোনো বিপর্যয় আসতে চলেছে। ট্রুডোর মুখে হালকা ভয়ের আভাস দেখা দিলো। চারদিকে ছটফট করে তাকাতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ এক দিকে চোখ আটকে গেলো তার। একটা কালো ছায়া ট্রুডোর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ট্রুডোও মনে মনে ভ্যাম্পায়ার হওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলো। আস্তে আস্তে ছায়াটা এগোচ্ছে আর নীলচে আলোয় স্পষ্ট হয়ে আসছে লোকটার দেহ। ট্রুডো ভাবলো ইনিই হয়তো সেই কাইরো। তাই তার উপর এক আচমকা আক্রমণের জন্য তৈরি হতে লাগলো। কিন্তু ছায়াটা স্পষ্ট হওয়ার পর পুরো থমকে গেলো ট্রুডো। তার রহস্যের সমাধান পেলো নাকি আরও একটা রহস্যের মধ্যে জড়ালো বুঝতে পারলো না সে। ছায়াটার মুখ স্পষ্ট হওয়ার পর ট্রুডো মৃদুস্বরে বলে উঠলো,”জেফারী!!!”
..
..
..
..(চলবে………)
..
..
গল্পটি এখন থেকে নিয়মিত দেওয়া হবে। আর এই গল্পটিকে ১৫০ পর্ব দিয়েই শেষ করা হবে। পুরো গল্পটা পড়তে সি ফার্স্ট করে নিতে পারেন যাতে কোনো পর্ব মিস না হয়। আর আশা করছি গ্রুপে গল্পটি নিয়ে আলোচনামূলক পোস্ট করবেন। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 6

0

……………….#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
……………….মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
………………………PART:06…………………………

নানান বিষয়ে ভাবতে ভাবতে ট্রুডোর মনে পড়ে গেলো এলিনার কথা। মনে পড়ে গেলো তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা। কিন্তু এলিনা আর তার গোত্র সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু অজানা। বিশ্রাম শেষে বিকেলের দিকে বেরোলো এলিনার সাথে দেখা করার জন্য। এলিনার কথাগুলো শুধু মনে ভেসে উঠতে লাগলো ট্রুডোর। কি সুন্দর দেহের গঠন, মুখমন্ডল অবর্ণনীয়, শূভ্র দেহে মিষ্টি ফুলের গন্ধ সত্যিই যে কাউকে আকর্ষিত করবে। কিন্তু ট্রুডোর মনটা খারাপ হয়ে গেলো জেরায়াস উপজাতির সেই অনুষ্ঠানের কথা মনে করে। আগামীকাল রাতেই এলিনাকে বলি দেওয়া হবে কথাটা ভাবতেই হৃদয়টা হু-হু করে উঠে ট্রুডোর। আনমনে ভালোবেসে ফেলে এলিনাকে। কারণ ট্রুডোর ধারণা এলিনাও একজন ভ্যাম্পায়ার। তার গায়েও ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি আছে। এসব ভাবতে ভাবতে সেই ঝর্ণার তীরে পৌঁছে গেলো ট্রুডো। এলিনা পাড়ে বসে পানিতে পা দোলাচ্ছে। হালকা বাতাসে তার এলোকেশী চুল নগ্ন ঢেউয়ে মেতে উঠেছে। পেছন থেকে একটু হাসিখুশিই লাগছে এলিনাকে। ট্রুডো পাশে গিয়ে বসলো।

এলিনার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখটা মিষ্টি মায়াবী এক হাসিতে আচ্ছন্ন। শূভ্র গালে টোল পড়েছে। ধবধবে চেহারায় ঠোঁটের কোণের কালো কুচকুচে তিলটা পুরো মুখমন্ডলকে আরও হৃদয়আকর্ষী করে তুলেছে। ট্রুডোকে দেখে একটু রাগ করে এলিনা বললো,”আমার কথা না শুনেই গতকাল ওভাবে দৌঁড়ে গেলেন কেন? নিশ্চয় আপনার কোনো ক্ষতি হয়েছে। ”
ট্রুডো অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,”আপনি জানেন কিভাবে?”
এলিনা মুচকি হেসে বললো,”এই জঙ্গলের প্রত্যেকটা গাছের পাতার সাথে চিরচেনা এক রহস্য লুকিয়ে আছে আমার। আমি জানবো না মানে? ”
কথাটা ট্রুডোর কাছে ঝাপসা লাগলো। ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। কালকে কি বলতে চেয়েছিলো এলিনা তা শুনার জন্য ট্রুডো প্রশ্ন করার মুহূর্তেই চোখে পড়লো তার ভ্যাম্পায়ার লকেট। এলিনার গলাতেও ঠিক একই লকেট। এলিনার পীঠেও ঠিক একই ভ্যাম্পায়ার চিহ্ন। ট্রুডো মনে মনে জোড়ালোভাবে বিশ্বাস করে নিলো যে এলিনা একজন ভ্যাম্পায়ার। আর তাকে বলি দেওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটাই উপায় আছে আর তা তাকে নিয়ে পালানো। ভ্যাম্পায়ার লকেটটা থাকলে অবশ্য পালাতে হতো না। সবগুলোর রক্ত চুষে নিলেই সমস্যা মিটে যেতো কিন্তু লকেটটা হারাতেই হয়েছে যত বিপদ।
সাত পাঁচ ভেবে ট্রুডো এলিনাকে হঠাৎ বলে দিলো, “আমার সাথে আপনাকে পালাতে হবে। এটাই আপনার সমস্যার সমাধান। ”
এলিনা কথাটা শুনার পর একটুও অবাক হলো না বরং এমন ভাব দেখালো যাতে এতে কোনো কাজই হবে না। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে এলিনা বললো,”তাতে কি কোনো লাভ হবে? একদিন না একদিন তো আমাকে তারা খুঁজেই নেবে। তখন বাঁচাতে পারবেন আমাকে? ”
ট্রুডো নিশ্চিন্তে বলে দিলো,”নিশ্চয় পারবো। এখন যেহেতু পালানার সাহস আছে তেমনি বাঁচানোর সাহসও মনে আছে।”
এলিনা শেষ চেষ্টা হিসেবে ট্রুডোর কথা মেনে নিলো। কিভাবে ও কখন পালাবে সেগুলো সব ঠিক করলো তারা। ট্রুডো এলিনার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এলিনাও ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বললো,”কি দেখছেন আপনি?”
ট্রুডো হকচকিয়ে গেলো এলিনার কথা শুনে। ঝটপট উত্তর দিলো,”ভাবছি। ”
এলিনা ভ্রু কুচকে বললো,”ভাবছেন, কি ভাবছেন শুনি। ”
ট্রুডো বললো,”ভাবছি আপনি তো এক উপজাতির মেয়ে। বর্তমান বিশ্বের সাথে আপনার কোনো তফাৎ খুঁজে পাচ্ছি না। না ভাষার তফাৎ, না পোশাক,না আচরণের। কারণটা বলবেন? ”
কথাটা শুনেই এলিনা ফিক করে হেসে দিলো। এলিনার হাসি দেখে ট্রুডো একটু হরকে গেলো। হাসি থামিয়ে বললো,”আপনাকে কিন্তু আমি আগে থেকেই চিনতাম। তবে আপনার নামটা জানতাম না।”
এলিনার কথা শুনে ট্রুডো যেন আকাশ থেকে পড়লো। বিষ্ময়ের সপ্ত আকাশে উদয়ন করলো ট্রুডো। গভীর মনোযোগের সাথে জিজ্ঞাসা করলো এলিনাকে,”কি বলছেন আপনি? আমাকে আপনি আগে থেকে কিভাবে চিনবেন? আপনাদের বিচরণ তো এই পাহাড়কে ঘীরেই। ঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটা।”
এলিনা ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বললো,”আপনি যে কলেজে পড়েছেন আমিও সেখানে পড়েছি। কিন্তু আমি প্রতিদিন কলেজে যেতাম না। আপনিও মিথলজি ও ভ্যাম্পায়ার বিষয়ে স্টাডি করেছেন আমিও সেই বিষয়েই করেছি।”
এলিনার কথা যেন ট্রুডোর কাছে অমাবশ্যার চাঁদের মতো মনে হচ্ছে। একটু জোড়ালো গলায় বললো,”যদি তাই হয় তাহলে আমি আপনাকে একটি দিনও দেখতে পেলাম না কেন? ”
এলিনা বললো,”আমি প্রতিদিন কলেজে যেতাম না। যেদিন কলেজে যেতাম ছদ্মবেশে যেতাম। আমি যে পড়াশুনা করেছি তা গোত্রের কেউ জানে না। এমনকি আমার বাবা মা ও পর্যন্ত নয়।”

ট্রুডো মনে মনে সবকিছু মেলাতে লাগলো। ভাবতে লাগলো ভ্যাম্পায়ার বলেই হয়তো সম্ভব। অবশেষে ট্রুডো বিশ্বাস করে নিলো এলিনার কথা। কিন্তু প্রশ্ন করলো,”সেটা নাহয় বুঝলাম। আপনার পড়াশুনা শুরু হলো কিভাবে? গোত্রের তো কেউ পড়াশুনা করেনি বলে মনে হচ্ছে। ”
এলিনা বললো,”ঠিক বলেছেন। আমার পড়াশুনা শুরু হয় এক ধূর্ত ও চতুর ব্যক্তির হাত ধরে। যেহেতু আমরা নিচুজাতের লোকেরা দেবী মিনার্ভার পূজা করতাম তেমনি গোত্রে এমন একজন ছিলো যে গোপনে শয়তানের পূজা করতো। শয়তানের পূজা করে বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্ব অর্জন করেন তিনি। আমি উনার কাছ থেকেই পড়াশুনা শুরু করেছিলাম। একদিন তিনি আমাকেও ভ্যাম্পায়ার শক্তির কিছু অংশ প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন। আমার পীঠে যে ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি আছে সেটা উনারই করা। চিহ্নটাকে খুব সাবধানে লুকিয়ে রেখেছি এতোদিন।”
ট্রুডো নিজেও যে একজন ভ্যাম্পায়ার সেটা আগেই এলিনাকে বললো না। উল্টো প্রশ্ন করলো এলিনাকে,”চিহ্নটা লুকানোর কি প্রয়োজন ছিলো? আর লোকটি এখন কোথায়? ”
এলিনা ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে কয়েক্ষণ স্থির থেকে বললো,”লোকটা শয়তানের পূজা করতো এটা গোত্রপ্রধান জেনে গিয়েছিলো তাই তাকে গোত্র থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। আর এই চিহ্নটা দেখলে আমাকে বহিষ্কার করতো না বরং খাবার বানানো হতো চুপাকাবরাদের। যদিও লোকটা এখন বিশাল শক্তির অধিকারী। এই জঙ্গলের সব হিংস্র প্রাণীদের সামলায় সে। চুপাকাবরার দলও তার অধীনে। তিনি চাইলেই আমাকে চুপাকাবরার খাবার হওয়া থেকে বাঁচাতে পারতো কিন্তু তিনিই আমাকে বলেছিলেন এই চিহ্নটি লুকিয়ে রাখার জন্য।”
কথাটা শুনার পর একটা রহস্যের উদঘাটন করতে পারলো ট্রুডো। বুঝতে পারলো যে চুপাকাবরাগুলো কেন তার ভ্যাম্পায়ার রুপ দেখেও তার উপর আক্রমণ করেছিলো। একটা উদ্দেশ্য নিয়েই লোকটা ট্রুডোর পেছনে চুপাকাবরার দলকে লেলিয়ে দিয়েছিলো।
..
..
..
..
..(চলবে………..)
..
আজকের পর্বটি ছোট করে দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসব্যাপি গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো রাত নয়টা থেকে দশটার মধ্যে। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 5

0

………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
……………………..PART:05………………………….

জঙ্গলের ভেতরে হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ একটা বিষয় মাথাতে আসতেই থেমে গেলো। ভাবতে লাগলো জেফারীর কথাগুলো। জেফারী বলেছিলো সে কোনোমতে বাঁচতে পেরেছে কিন্তু চুপাকাবরার হাত থেকে কোনো মানুষের বেঁচে ফেরাটা তো প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া জেফারী একজন কেমিস্ট্রি সাইনটিস্ট। তার তো চুপাকাবরা সম্পর্কে জানার কথা নয়। আর যদিও কোনোভাবে জানতে পারে তাহলে তার তো চুপাকাবরার হাত থেকে বাঁচার উপায় জানার কথা নয়। তাহলে জেফারী কি মিথ্যা কথা বলছে? ভাবতে ভাবতে সামনে এগোতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ তার পেছনে আবার সেই কালো ছায়ার দৌঁড়ে যাওয়ার শব্দ পাওয়া মাত্র পেছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। বিরক্ত হয়ে আবার সামনে যেতে লাগলো। তার মাথার উপর দিয়ে একটা কুচকুচে কালো দাঁড়কাক উড়ে যেতে লাগলো। ঘটনাটা আন্দাজ করে ভয়ানক এক চিৎকার দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই উড়ে গিয়ে কাকটাকে ধরলো ট্রুডো। লাল আলো ঝলকানো চোখ দিয়ে কাকটার দিকে তাকাতেই দেখে কাকটা কোনো সাধারণ কাক নয়। বেশি কিছু না ভেবে কাকটার রক্ত খাওয়ার জন্য বড় বড় দাঁতগুলি বের করে মুখের দিকে নিতেই কাকটা পুড়ে ছাই হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। অবাক হয়ে গেলো ট্রুডো। বুঝতে পারলো না ঘটনাটা। এমনিতেই বিপদে আছে তার উপর আরেক ঝামেলা। আনমনা হয়ে হাটতে হাটতে চলে গেলো পাহাড়ের অন্ধকার দিকটায় যেখানে ভয়ানক অদৃষ্ট গিরিখাদে শুধু পশুপাখিদের মৃত লাশের অসহ্যনীয় গন্ধ। গলিত মৃতদেহে প্রাণনাশী সব কীটের জন্ম হয়েছে। চারদিকে ধুয়াশা। নিকষ কালো অন্ধকার। চিৎকার দিয়ে মেডেকিকে ডাক দিলো ট্রুডো,” মেডেকি। কোথায় তুই?”
আওয়াজের প্রতিধ্বনি এলো। সাথে সাথে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভেসে উঠলো হাজারো লাল আলো ঝলকানো চোখ। আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ট্রুডোর দিকে। সতর্ক হয়ে গেলো ট্রুডো। তীক্ষ্ম নজরে আলোগুলোকে দেখে বুঝলো এসব চুপাকাবরার চোখ। যেভাবে এগোচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে খুবই ক্ষুধার্ত। কোনো মানুষ বা বড় কোনো পশুকে পেলে কয়েকমিনিটের মধ্যে রক্ত চুষে মেরে ফেলবে এরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে কানফাটা এক চিৎকার দিয়ে উঠলো ট্রুডো। গায়ের শার্টটা ফেটে লোহার মতো বডি বের হয়ে এলো। ঘাড়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠলো ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি। সব চুপাকাবরা তার উপর লাফিয়ে আসতেই বিশাল দুটি পাখা দিয়ে হওয়ায় উড়তে লাগলো ট্রুডো। কিন্তু তাতে এদের হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় রইলো না। ভয়ঙ্কর আওয়াজ করতে করতে অন্ধকারের ভেতর থেকে উড়ে আসতে লাগলো চুপাকাবরার দল। অন্যদিকে উড়ে যেতে লাগলো ট্রুডো। কিন্তু চুপাকাবরাগুলোও পিছু ছাড়লো না ট্রুডোর। শুরু হলো আরেক বিপদ। ট্রুডোর মাথায় হঠাৎ একটা কথা খেলে গেলো। ভ্যাম্পায়ার তো ভ্যাম্পায়ারকে খেতে পারবে না বা মেরে ফেলতে পারবে না। তাহলে তো এদের কাছ থেকে পালানোটা বোকামী। প্রচন্ড গতিতে উড়ে একজায়গায় টার্ন নিলো ট্রুডো। উড়ন্ত চুপাকাবরাগুলোও প্রচন্ড গতিতে ট্রুডোর বুকের পাশ দিয়ে ঘেঁষে উড়ে যেতে লাগলো। উড়ন্ত অবস্থায় এক জায়গায় স্থির রইলো ট্রুডো। চুপাকাবরার পাখার ঘর্ষণে ট্রুডোর গলার ভ্যাম্পায়ার লকেটটি খুলে মাটিতে পড়ে গেলো। সাথে সাথে ট্রুডোও অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।
শেষ রাত। কয়েকক্ষণের মধ্যেই সকাল হবে। জঙ্গলের অন্ধকার ম্লান হয়ে আসছে। নীরবস্তব্ধ পরিবেশ। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরলো ট্রুডোর। খালি গায়ে হাজারো আঁচড়ের চিহ্ন ফুলে আছে। ব্যথা করছে। আস্তে আস্তে উঠে বসলো ট্রুডো। চারদিক তাকিয়ে দেখলো সকাল হতে চলেছে। অন্ধকারও হালকা হয়ে আসছে। হঠাৎ উপরের দিকে চোখ যেতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো ট্রুডো। অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বললো,”আমি এখানে কেন? এটা তো সেই জায়গা যেখানে জেফারীকে খুঁজে পেয়েছিলাম!”
কথাটা বলার পর বুকে পীঠে আঁচড় খাওয়া জায়গাগুলোতে হাত বুলোতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ খেয়াল করলো তার লকেট নেই। চমকে উঠলো ট্রুডো। ভালো করে দেখে নিশ্চিত হলো যে সত্যিই তার ভ্যাম্পায়ার লকেটটি নেই। চিন্তায় পড়ে গেলো সে। এখন আর উড়তে পারবে না। ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো জেফারীর কথা। সে এতোবড় মিথ্যা কথা কেন বললো? মেডেকি তো চুপাকাবরার আস্তানায় নেই? তাহলে মেডেকি কোথায়? আর জেফারী মিথ্যা কথা বললো কেন?

তাবুর দিকে যাত্রা শুরু করলো ট্রুডো। সব রহস্য যেন তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে। কোনদিকে যাবে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এমনিতেই বন্ধুদের বিপদ তার উপর আবার এলিনাকে কথা দিয়েছে যে তাকে তার সমস্যার সমাধান করবে। এদিকে আনাহী চুপি চুপি ট্রুডোর তাবুতে ঢুকলো। তাবু খালি। কেউ নেই। ট্রুডোর ব্যাগ ও জিনিপত্র খুঁজতে লাগলো সে। তার ব্যাগ থেকে টি শার্ট বের করে বুকে জড়িয়ে বসে রইলো। ভালোবাসার মোহে অন্য এক কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলো সে। তার শার্টের গন্ধটা যেন তাকে আরও আকৃষ্ট করে তোলছে। অবশেষে দিশেহারার মতো তার ব্যাগপত্র খুঁজাখুজি করতে লাগলো আনাহী। সবকিছু খোঁজার পর চোখে পড়লো সেই বাক্সটা যেখানে ট্রুডো রক্তের ব্যাগ লুকিয়ে রেখেছে। বাক্সটাকে বের করে খুলতেই দেখে কয়েক ব্যাগ রক্ত। পাশে কাঁচের গ্লাস। গ্লাসে রক্ত লেগে আছে। সবকিছু দেখে আনাহীর মাথা ধরে গেলো। সবকিছু যেন উলাটপালট হয়ে আসছে। মনে ধোয়াশার কালো অন্ধকারের রহস্য সৃষ্টি হচ্ছে। মনে মনে বললো,”রক্ত! এখানে এতো রক্ত কেন? আর এই গ্লাসে রক্ত লেগে আছে কেন?” ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার জন্য নিজের তাবুতে গিয়ে ব্যাগ থেকে রক্ত পরীক্ষার কিছু ইনস্ট্রুমেন্টস নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখলো সত্যিই এটা রক্ত। একদম তাজা রক্ত। একজন সুস্থ্য জীবিত লোকের শরীরের রক্তের মতোই। হঠাৎ পায়ে হাঁটার আওয়াজ আসতেই সবকিছু তাড়াতাড়ি গুছিয়ে রাখতেই কাচের গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে গেলো। সবকিছু আগের মতো রেখে ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরাগুলো তুলতে গিয়ে হাত কেটে গেলো আনাহীর। এদিকে কে যেন তাবুর দিকেই আসছে। ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরোগুলো রেখেই তাবু থেকে বের হয়ে গেলো আনাহী। তাবুতে ঢুকলো ট্রুডো। বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। পাশ ফিরে শুয়ে থাকতেই চোখে পড়লো ভাঙ্গা রক্তমাখা গ্লাসের টুকরগুলো। উঠে এসে একটা রক্তমাখা ভাঙ্গা টুকরো নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকতে লাগলো ট্রুডো। সন্দেহ হলো আনাহীর উপর। কারণ সেদিন রক্ত খাওয়ার সময় আনাহী তাবুর ভেতরে চলে এসেছিলো। ভাঙ্গা টুকরোগুলো তুলে ফেলে দিয়ে আসলো ট্রুডো। আনাহী লক্ষ করলো যে ট্রুডো কি করছে। দূর থেকে আড়ালে দেখতে লাগলো আনাহী। হঠাৎ আনাহীর কাঁধের উপর হাত রাখলো জেফারী। চমকে উঠে বলে উঠলো,”কে!” পেছনে তাকিয়ে দেখে জেফারী। জেফারী প্রশ্ন করলো,”এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস তুই?”
আনাহী হকচকিয়ে গেলো। আমতা আমতা করতে লাগলো সে। হঠাৎ বলে দিলো,”ট্রুডোকে দেখছিলাম। জানিসই তো ওকে আমার খুব ভালো লাগে। ” ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বলতে বলতেই ট্রুডোর খালি শরীরে দেখতে পেলো অনেকগুলো আঁচড়ের চিহ্ন। রক্তাভ হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো ট্রুডোর কাছে। তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,”এ কি হয়েছে তোর? কিভাবে এসব হলো? রক্ত বেরোচ্ছে তো! ”
বলতে বলতে ট্রুডোর গায়ে হাত দেবে তখনই ট্রুডো আনাহীর হাতটা ধরে ফেললো। হাতটা ছেড়ে বললো,”তেমন কিছু না। জেফারী কোথায়? তাকে ডেকে আমার তাবুতে আয় আর হ্যাঁ সবাইকে নিয়ে আসবি।”
মুখভার করে সবাইকে ডেকে আনতে গেলো আনাহী। ট্রুডো তাবুতে গিয়ে একটা শার্ট পড়ে নিলো। খানিকক্ষণ পর আনাহী সবাইকে নিয়ে ট্রুডোর তাবুতে প্রবেশ করলো। সবাই একসাথে বসলো। ট্রুডো বললো,”মেডেকি আর মিউরিসকে এখনো খুঁজে পাইনি। আমার মনে হচ্ছে এখানে কোনো একটা খেলা চলছে যেটা আমরা ধরতে পারছি না।”
ব্লেডিকো ট্রুডোর কথাটা বুঝতে পেরে বললো, “খেলাটা বুঝতে আমাদের গ্রুপের আসল শক্তিগুলোকে কাজে লাগাতে হবে তাই তো?”
ট্রুডো বললো,”ঠিক তাই তবে খুব সতর্কভাবে। আমাদের উপর কেউ নজর রাখছে।”
কথাটাশুনার পর তৎক্ষণাৎ জেফারী বললো,”কে নজর রাখছে? জঙ্গলের ভেতর আমাদের নজর রাখার জন্য কেউ আছে নাকি? ”
ট্রুডো জেফারীর কথাটাকে তুচ্ছ করে উত্তর দিলো,”নিশ্চয় আছে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বা আমাদের মাঝেই কেউ আছে যাকে আমরা চিনতে পারছি না। ”
কথাটা শুনার পর জেফারীর মুখটা চুপসে গেলো। ট্রুডো সবকিছু খেয়াল করছে। হঠাৎ ভিরেক্স বললো,”কিন্তু মিউরিসকে তো চুপাকাবরা তুলে নিয়ে গেছে। এই জঙ্গলে এমন অনেক কিছু আছে যা ঐতিহ্যবাহী এবং পৌরাণিক। অনেক ঘটনাও আছে এসব জিনিসের সাথে জড়িয়ে। মিউরিস মিথলজিস্ট। তার সবকিছু জানা। কিন্তু সেই তো চুপাকাবরার কাছে বন্দি।”
ট্রুডো জেফারীর দিকে তাকিয়ে বললো,”যা করার সবাই মিলে করবো। হয়তো আমরা যতোটা জটিল মনে করছি এটা ততোটাও জটিল নয়।”
সবাই আলোচনা করে যার যে কাজ তাকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হলো। হঠাৎই এসব সিরিয়াস আলোচনার মধ্যে দুষ্টমির ছলে ট্রুডোর মাথা থেকে একটা চুল ছিঁড়ে বললো,”তোর মাথায় এতো বুদ্ধি কেন?”
চুল ছেঁড়ার সাথেই ট্রুডো রেগে গেলো। এদিকে জেফারী আনাহীর সব কাজ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করতে লাগলো। জেফারী দেখলো আনাহী যে চুলটা ট্রুডোর মাথা থেকে ছিঁড়েছিলো সেটা সে ধরেই রেখেছে। আনাহী কি করতে চাইছে সেটা ঠিক পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলো না সে। আনাহী আর জেফারীকে মিলিতভাবে একটা কাজ দিলো। জেফারীর মুখটায় এক লুকোনো হাসির আভাস দেখা গেলো। মনে হচ্ছে তাদের একসাথে কাজটা দেওয়াতে জেফারী অনেক খুশি হয়েছে।
আনাহীকে একটা ভ্যাক্সিন তৈরি করতে বলা হলো যেটা খাওয়া পর যেকোনো প্রাণীর ডিএনএ তে পরিবর্তন হবে। যেহেতু এতে আলোকরশ্মির একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে সেজন্য আনাহীর সাথে জেফারীকে বলা হলো এমন এক ধরনের আলোকরশ্মি তৈরি করার জন্য যেটা যেকোনো শক্তিশালী প্রাণীর সামনে রাখলে কিছুই দেখতে পাওয়া যাবে না এবং প্রাণিটির ডিএনএ পরিবর্তনে সহায়ক হবে। এবং গগলস এর কাঁচ তৈরি করার জন্য যেটা দিয়ে সেই আলোরশ্মি বিচ্ছুরণের সময় সবকিছু দেখা যাবে। হঠাৎ আনাহী সবার সামনে বলে উঠলো,”জেফারী তো একবার এই কাজটা করেছিলো। আবার নতুন করে না করে সেটা আবার ব্যবহার করলে হয় না?”
ট্রুডো আনাহীকে চোখ মেরে চুপ থাকাতে বললো। জেফারীকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,”না, আবার নতুন করে করাই ভালো। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

যে যার কাজে লেগে পড়লো আদাজল খেয়ে। শার্ট পড়ার কারণে আঁচড়ে যাওয়া স্থানগুলোতে শার্টের ঘষা লেগে আরও জ্বলছে ট্রুডোর। সবাই যাওয়ার পর তাড়াতাড়ি শার্টটা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়লো ট্রুডো। অন্ধকারে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি মনে করতেই তার মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো ভ্যাম্পায়ার শক্তি। লকেট হারানোর পর উড়তে পারছেনা ঠিকই কিন্তু তার মাঝে রক্ত খাওয়ার নেশাটা এখনো আছে। কিন্তু রক্তও খেতে পারছে না। গ্লাসটা ভেঙ্গে গেছে। তাছাড়া দিনের বেলায় কে না কে তাবুতে এসে পড়বে। দেখে ফেললেই সমস্যা। নিজেকে সংযত করে বিছানায় চোখ বুঝে শুয়ে রইলো ট্রুডো। আনাহী হাতে একটা এন্টিসেপ্টিক নিয়ে ট্রুডোর তাবুতে গেলো। চোখ বুজা দেখে মনে করলো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তার কাছে বসে আঁচড়ে যাওয়া জায়গাতে এন্টিসেপ্টিক লাগাতে লাগলো আনাহী। হুড়মুড়িয়ে উঠে ট্রুডো রাগ করে বললো, “তুই আবার এসেছিস? আর এসব কি লাগাচ্ছিস? আমার এসবের দরকার নেই তুই যা এখান থেকে। ”
আনাহী তার কথার কোনো মূল্যায়ন না করে সে তার কাজ করতে লাগলো। ট্রুডো যখন বেশি রেগে গেলো তখন মুচকি হেসে চোখ মেরে চলে গেলো আনাহী। কনফিউসড হয়ে গেলো ট্রুডো। এসব কি! আনাহী হঠাৎ এমন আচরণ করছে কেন? একটা ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো ট্রুডো। কারণ সে ভ্যাম্পায়ার আর আনাহী একটা সাধারণ মানুষ। তাদের দুজনের মিল কখনো সম্ভব নয়।
..
..

..
..(চলবে…….)
..

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 4

0

………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
……………………..PART:04………………………….

ট্রুডো সামনে এগোতেই হালকা মিষ্টি গন্ধের সাথে মৃদু বাতাস বইতে লাগলো। মেয়েটির চুলগুলো উড়ে পীঠের একদিকে সরে গেলো। ধবধবে গায়ে পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠলো ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নের মতো একটা চিহ্ন। ট্রুডো মেয়েটির কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই হালকা চমকে উঠলো। আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে ট্রুডোকে দেখে চমকে বলে উঠলো,”একি! কে আপনি? আমাকে স্পর্শ করলেন কেন? ”
ট্রুডো মেয়েটির কথা শুনে একটু বিব্রত হয়ে নম্রভাবে উত্তর দিলো,”আমি ট্রুডো। আপনার গায়ে স্পর্শ করার জন্য দুঃখিত। আসলে কাল এদিকে ঘুরতে এসে দেখি আপনি বসে বসে কাঁদছেন। আজকেও এসে দেখলাম কাঁদছেন। আপনার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? ”
মেয়েটি উদাস হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,”আমার সমস্যা আপনাকে বললে কি আপনি তার সমাধান করতে পারবেন? আর আপনি এখানে এলেন কিভাবে?”
ট্রুডো বিচক্ষণতার সাথে আশ্বাস দিয়ে বললো,”সমাধান করতে পারবো কি না সেটা সমস্যাটা জেনে ঠিক করতে হবে। না জানলে কিভাবে সমাধান করবো? আর আপনার নাম কি? পরিচয়টা কি জানতে পারি? ”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলতোভাবে চোখের পলক ফেলিয়ে ঝর্ণার পানির মৃদু স্রোতের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,”আমার নাম এলিনা। এই ঝর্ণাটা যে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে সেই পাহাড়ের সাথেই আমার বাড়ি। আমরা উপজাতি। তবে একই উপজাতি হলেও জাত-পাতের বৈষম্য আছে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাদের ঘরগুলো তারা উঁচু জাতের আর যাদের বাড়ি খানিক দূরে তারা নিচুজাতের।”
ট্রুডো এলিনার কথার মাঝেই প্রশ্ন করলো,” বুঝলাম। মনে হয় পাহাড়ের কোনো বিশেষত্ব আছে আর তা নিয়ে অন্ধবিশ্বাসে ডুবে আছে সবাই। কিন্তু আপনার সমস্যাটা কি? ”
এলিনা ব্যর্থতার সাথে বললো,”আমিও এক নিচুজাতের ঘরের মেয়ে। আর পাহাড়ের বিশেষত্ব পুরোটা আজ পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি তা হলো আমাদের গোত্রপ্রধান অনেক বছর আগে অন্য এক জায়গায় থাকতো। অবশ্য তখন তিনি গোত্রপ্রধান ছিলেন না। যখন গ্রীসের বিভিন্ন দেব-দেবীদের মধ্যে নির্লিপ্ততা, লালসা ও অহংকারের প্রতিযোগীতা দেখা দিলো আর ধর্মযাজকদের উপর পড়তে লাগলো সেসব দেবদেবীর ক্রোধ তখন আমাদের গোত্রপ্রধান তার কিছু অনুসারিদের নিয়ে এখানে চলে আসে। তিনিই ছিলেন তখন লোকদের মাঝে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ আর অ্যাথিনা দেবীর এক প্রাণভক্ত ধর্মযাজক। তাই এখানে চলে আসার পর তিনিই গোত্রপ্রধান হন। ”
কথা বলতে বলতেই এলিনার চোখে যেন সেই পুরোনো ইতিহাসের ছবিগুলো ভেসে উঠতে লাগলো। মনে হতে লাগলো একের পর এক ঘটনা। কিন্তু ট্রুডো এলিনাকে এক আজব প্রশ্ন করলো,”এসবের সাথে পাহাড়ের কি সম্পর্ক? ”
এলিনা আবার বলতে লাগলো,” যখন আমরা এখানে আসি তখন এই পাহাড় জুড়ে ছিলো চুপাকাবরাদের বসবাস। হিংস্র হায়েনাকেও এরা হার মানায়। কিন্তু এই নরখাদক চুপাকাবরার সাথে দেবী অ্যাথিনার এক যোগসূত্র থাকায় গোত্রপ্রধান অ্যাথিনা দেবীর পূজা করে যে শক্তি অর্জন করেছিলো তা দ্বারা এই চুপাকাবরাদের এই পাহাড় থেকে বিতাড়িত করেন। আর যেহেতু গোত্রপ্রধান অ্যাথিনা দেবীর প্রাণভক্ত ধর্মযাজক তাই এখানেও তার মুর্তি স্থাপন করে পূজা করে ক্ষমতাশালী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু তার জীবনে অর্জিত সব শক্তি চুপাকাবরাদের তাড়াতে ব্যবহার করে ফেলেন যার জন্য অ্যাথিনা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেন গোত্রপ্রধান। আর এই গোত্রপ্রধান দেবী অ্যাথিনার মুর্তি এই পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপন করার জন্য কিছু লোককে পাহাড়ের চূড়া সমতল করার জন্য নির্দেশ দেয়। তার নির্দেশমতো তারাই সেখানে গিয়েছিলো যারা অ্যাথিনার সমকক্ষ রোমান দেবী মিনার্ভার ভক্ত ছিলেন। পাহাড়ের চূড়া কাটা হলো। কিন্তু উপরে উঠার জন্য তারা সিঁড়ি বা ছোট ছোট খাদ দিতে ভুল করেছিলো বলে আর মিনার্ভা দেবীর ভক্ত হওয়ার কারণে তাদের শাস্তিস্বরুপ পরবর্তী বংশধরে যতগুলো কালো সুন্দরী মেয়ে আসবে তাদের বলি দিয়ে একেকটা সিঁড়ি কাটা হবে। আর তাদের চিনে রাখবার জন্য নিচুজাত মনে করে পাহাড়ের খানিক দূরে ঘর বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ”
কথাটা শুনার পর অবাক হয়ে গেলো ট্রুডো। বুঝতে পারলো এলিনার সমস্যাটা। তার মনে আস্তে আস্তে অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। মেয়েটির রুপের মায়ায় আর সেই চিহ্নটার রহস্য বের করাট জন্য তার বন্ধুদের কথা ভুলে গেলো। দুইজন বান্ধবীদের সে খোঁজতে বেরিয়েছে আর তার বন্ধু মিউরিস চুপাকাবরার কবলে এসব কিছুই খেয়াল নেই তার। মেয়েটির মায়াবী আচরণ আষ্টেপৃষ্টে ঘীরে নিয়েছে তাকে। বিচলিত কণ্ঠে ট্রুডো এলিনাকে বললো,”তার মানে এবারের শিকার আপনি? আপনাকে বলি দিয়ে আরেকটি সিঁড়ি কাটা হবে?”
মেয়েটি মুখ ভার করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,”হ্যাঁ। এবার আমার পালা।”
ট্রুডো আগ্রহী কণ্ঠে আবারও এলিনাকে প্রশ্ন করলো,” কিন্তু আপনাকে আগে বলি দেওয়া হলো না কেন? আর যদি আপনাকে বলি দেওয়ার সময় হয়ে থাকে তবে কোন সময়ে এই বলি দেওয়ার অনুষ্ঠানটা পালন করা হয়? ”
এলিনা বললো,”বলি দেওয়ার জন্য কিছু নিয়ম কানুন আছে। যে মেয়েকে বলি দেওয়া হবে তাকে প্রথমে প্রাপ্তবয়স্ক নারী হতে হবে। চেহারা হতে হবে অনন্যা সুন্দরী যাতে গোত্রের সব নারীদের থেকে তার আলাদা বৈশিষ্ট বা গুণ থাকে। আর এই অনুষ্ঠানটা পালন করা হয় প্রতিবছর শুক্লপক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষের মাঝামাঝি সময়ে। অর্থাৎ, অমাবশ্যা আর পূর্ণিমার ঠিক মাঝ সময়ে।”
ট্রুডো আশ্চর্য হয়ে গেলো এলিনার কথা শুনে। কোথায় সৌন্দর্য ও বিশেষ গুণের জন্য অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার কথা আর এখানে দেওয়া হচ্ছে শাস্তিস্বরুপ বলি। কি অমানবিক কাজ!
ট্রুডো এলিনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অজ্ঞাতসারে প্রশ্ন করলো,”কি বলছো! আগামী পরশুই তো শুক্লপক্ষ শেষ! তার মানে সেদিনই………! ”
আনমনা হয়ে এলিনা মাথা নাড়লো। প্রশ্ন করলো ট্রুডোকে,”আপনি এখানে আসলেন কিভাবে? এখনই চলে যান নাহলে মরতে হবে।”
কথাটা শুনে ট্রুডোর হঠাৎ তার বান্ধবীদের কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি এলিনাকে বললো, “আপনি কি দুইটা মেয়েকে দেখেছেন। সম্ভবত এদিকেই মর্নিং ওয়াক করতে এসেছিলো।”
এলিনা বলতে যাবে ঠিক এমন সময়ে হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে জেফারীর গলার আওয়াজ ভেসে আসলো বাঁচাও বাঁচাও বলে। তৎক্ষণাৎ ট্রুডো জঙ্গলের দিকে ছুটে চলে গেলো। এলিনাও তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে ট্রুডোকে সতর্ক করতে বললো,”দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন। বিপদে পড়বেন। কথাটা শুনে যান। ” এলিনার কথা না শুনেই জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলো ট্রুডো। এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে একটা গাছের নিচে দেখতে পেলো জেফারীকে। দৌঁড়ে জেফারীর কাছে গেলো ট্রুডো। শরীরের কয়েক জায়গায় আঁচড়ের দাগ। রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে আছে। ট্রুডোকে দেখে অস্থির হয়ে পড়লো জেফারী। হাপাতে হাপাতে বললো,”চুপাকাবরা। মেডেকি….”
কথাটা শেষ না হতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো জেফারী। তার হাতের দিকে তাকাতেই দেখে হিংস্র চুপাকাবরার আঁচড়ে রক্ত বের হয়ে জমাট বেঁধে গেছে। রক্ত দেখার সাথে সাথে ট্রুডোর মাঝে ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বাটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। মাথা ভনভন করতে লাগলো। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভ্যাম্পায়ার রুপ এসে গেলো ট্রুডোর। রক্ত খাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। সামনে জেফারী অজ্ঞান হয়ে আছে। বারবার জেফারীর রক্ত চুষে খেতে ইচ্ছে করছে ট্রুডোর। কিন্তু তার মাঝের মনুষ্যত্ব বাধা দিচ্ছে। রক্তের নেশা কাটানোর জন্য টি-শার্টের ভেতর থেকে ভ্যাম্পায়ার লকেটটি বের করে তার দিকে তাকাতেই রক্ত খাওয়ার অস্থিরতাটা কমলো ট্রুডোর। জেফারীকে কাঁধে তুলে নিয়ে তাবুর দিকে যেতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো মেডেকির কথা। জেফারী অজ্ঞান হওয়ার আগে চুপাকাবরার কথা বলেছিলো। তার মানে মেডেকিকে চুপাকাবরা ধরে নিয়ে গেছে। এখনই না গেলে মেডেকির রক্ত চুষে খাবে চুপাকাবরার দল। প্রচন্ড গতিবেগে তাবুর কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে নিজের মানুষ রুপে এসে জেফারীকে তাবুতে আনাহীর কাছে রেখেই তাবু থেকে বের হয়ে গেলো মেডেকি আর মিউরিসকে বাঁচানোর জন্য। পুরো জঙ্গলের মাঝে আলোড়ন তুললো ট্রুডো। যদিকে মন চাইছে সেদিক থেকেই খুঁজছে। অবশেষে খুঁজে না পেয়ে আবার তাবুতে ফিরে এলো ট্রুডো। এসে দেখে জেফারীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি। ট্রুডোকে দেখামাত্র আনাহী বললো,”তুই তো এইমাত্র বের হলি। আবার এখনই চলে আসলি। বুঝলাম না। কি করছিস তুই? আর জেফারীকে নিয়ে এলি মেডেকি কোথায়?”
ট্রুডো বললো,”জেফারী একটা গাছের নিচে ছিলো। আমি দৌঁড়ে গিয়ে দেখি তার শরীরে চুপাকাবরা আঁচড় কেটেছে কিন্তু তাকে নিয়ে যেতে পারেনি। আমাকে দেখে জেফারী বললো চুপাকাবরা, মেডেকি।ব্যাস। এতটুকু বলার পরই অজ্ঞান হয়ে গেলো।”
বলতে বলতে জেফারীর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলো ট্রুডো। খানিকপর জেফারীর জ্ঞান ফিরতেই ট্রুডো তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো, “তখন কি বলতে চেয়েছিলি? তোরা কি চুপাকাবরার কবলে পড়েছিলি? ”
জেফারী ভয়ার্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বললো,”হ্যাঁ। আমি কোনো মতে বাঁচতে পেরেছি কিন্তু মেডেকিকে চুপাকাবরার দল ধরে নিয়ে গেছে।”
ট্রুডো বললো,” কোনদিকে গেছে বলতে পারবি? ”
জেফারী আঙ্গুল দিয়ে জঙ্গলের ভেতরের একটা সরু অন্ধকার রাস্তা দেখিয়ে দিলো। ট্রুডো জেফারীর দেখা রাস্তায় দৌঁড়ে গেলো মেডেকিকে বাঁচানোর জন্য।
..
..
..
..(চলবে…….)
..
..
গল্পটির রহস্য নিয়ে আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্নের আশা করছি কমেন্টে। নাইস, ওয়াও, অসাম ইত্যাদি কমেন্ট না করে গল্পের যেকোনো দিক তুলে ধরে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 3

0

………………দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
……………………..PART:03…………………………

ইতোমধ্যেই প্রাণীটা তার দলবল নিয়ে পুরো তাবু ঘীরে ফেললো। একসাথে অনেকগুলোর আওয়াজে কান ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা। বড় বড় চোখালো দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরছে অঝোর ধারায়। ট্রুডো প্রাণীগুলোকে দেখেই বলে উঠলো,”চুপাকাবরা!”
মিউরিস অবাক হয়ে ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বললো,” এই প্রাণীই তো আক্রমণ করেছিলো। এখন এতোগুলোর সাথে আমরা লড়বো কিভাবে? ”
ট্রুডো সবাইকে শান্ত করে বললো,”কেউ ভয় পেয়ো না। সবাই চোখ বন্ধ করো। আর আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখ খুলতে বলবো কেউ চোখ খুলবে না। ”
ট্রুডোর কথায় সবাই চোখ বন্ধ করলো। ট্রুডো তার শার্টটা খুলে একটা বিকট চিৎকার করে তার ভ্যাম্পায়ার রুপ ধারণ করলো। পেছন হয়ে তার ঘাড়ে থাকা ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি চুপাকাবরা প্রাণীদেরকে দেখানো মাত্রই সবাই জঙ্গলের ভেতরে দৌঁড়ে পালালো। ট্রুডোও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা পাখি এনে কামড় দিয়ে সব রক্ত চুষে ছুড়ে ফেলে দিলো জঙ্গলের ভেতর। রক্ত খেয়ে আবার মানুষ রুপে এসে তাড়াতাড়ি শার্টটা পড়ে সবাইকে চোখ খুলতে বললো। কিন্তু পাখিটার রক্ত খাওয়ার সময় যে রক্ত তার মুখে লেগে ছিলো তা মুছতে ভুলে গেলো ট্রুডো। সবাই চোখ খুলে দেখে ট্রুডোর মুখে রক্ত লেগে আছে। ভয় পেয়ে গেলো সবাই। আনাহী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবগুলো চুপাকাবরা চলে গেছে। ট্রুডোকে হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সবাই। ভিরেক্স বললো,”তোর মুখে রক্ত কোথা থেকে এলো? আর এরা কোথায় চলে গেলো হঠাৎ?”
ট্রুডো একটু চালাকি করে বললো,”ও কিছু নয়। চিৎকার দেওয়ার সময় মুখ থেকে বেরিয়েছে।” বলতে বলতে মুখের রক্তটা মুছে নিলো ট্রুডো। এরই মাঝে আনাহী বললো,”চুপাকাবরা আবার কি রকম প্রাণী? এদের বিশেষত্ব কি?”
সবাই শান্ত করে একজায়গায় বসিয়ে চুপাকাবরা সম্পর্কে ট্রুডো বললো,”চুপাকাবরা এক ধরনের ছাগল ভ্যাম্পায়ার। এরা প্রথমত প্রাণীদের হত্যা করে তারপর তাদের রক্ত চুষে খায়। এর নামের অনুবাদিক অর্থ দাঁড়ায় ‘চুষে চুষে চলা’। এরা সামনে যে প্রাণীকেই পাক না কেন সবাইকে রক্তশূন্য করে ফেলে। অতিরিক্ত প্রয়োজনে এরা মাংস খুবলে খায়। এরা এতোটাই হিংস্র যে যাকে একবার খাওয়ার জন্য মনস্থির করে তাকে খেয়েই ছাড়ে। তবে মিউরিস তুই ভয় পাস না। সাবধানে থাকবি। যখনই চুপাকাবরার কবলে পড়বি তখনই তাদের সামনে আগুন ধরবি। আর সাহায্য করার জন্য আমি আছি। ”
কথাটা বলে শেষ করতেই উঠে দাঁড়ালো ট্রুডো। সবাইকে রেখে জেফারী আর মেডেকিকে খুঁজতে বের হলো আর তাদেরকে তাবুতে অপেক্ষা করতে বললো।
কয়েকমিনিট হাঁটার পর তাদের থেকে আড়াল হয়েই ভ্যাম্পায়ারের পাওয়ার ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে আশপাশ খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। কিন্তু কয়েকক্ষণ পর তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে গেলো কারণ সূর্য উঠেছে। দিনের বেলাতে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি প্রায় অচল। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই খুঁজতে লাগলো মেডেকি আর জেফারীকে। খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেলো সামনে এক জংলী মানুষ। তাড়াতাড়ি গাছের আড়ালে লুকালো ট্রুডো। উঁকি দিয়ে দেখে লোকটা অন্যদিকে চলে গেছে। আবার হাঁটতে শুরু করলো ট্রুডো। কিন্তু পেছন থেকে একটা দাঁড়কাক পিছু নিলো। যখনই ট্রুডো হাঁটা থামায় তখনই কাকটা গাছের পাতার আড়ালে লুকায়। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো ট্রুডো। এদিকে আনাহী, ভিরেক্স আর ব্লেডিকো একা। যেকোনো সময় চুপাকাবরা আবার এসে আক্রমণ করবে তাই আবার তাবুতে ফিরে আসতে লাগলো ট্রুডো। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় একটা কালো জেকেট পড়া ছায়া বারবার ট্রুডোর পেছনে দৌঁড়ে যেতে লাগলো আর শুকনো পাতায় খচখচ আওয়াজ হতে লাগলো। ট্রুডো রাগে চোখদুটো লাল করে পেছনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই। এভাবে চলতে চলতে অবশেষে তাবুতে ফিরে এলো ট্রুডো। ক্লান্ত শরীরে নিজের তাবুতে গিয়ে বসলো। সাথে সাথেই আনাহী আর ভিরেক্স এসে কাঁদো গলায় বললো,”মিউরিসকে চুপাকাবরা নিয়ে গেছে। আমরা তাবুতেই ছিলাম কিন্তু সে হঠাৎ তাবু থেকে বের হতেই তাকে নিয়ে গেছে।”
এদিকে ক্লান্ত শরীর পুরো নেতিয়ে গেছে ট্রুডোর। এমনিতেই দিনের আলোয় তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কাজ করে না তার উপর এই দুদিকে ঝামেলা। হঠাৎ জেফারী আর মেডেকির কথা মনে পড়লে আনাহী বললো,”জেফারী আর আনাহীর কোনো খোঁজ পেলি? ”
কষ্ট করে ট্রুডো বললো,”আমি ঠিক সময়ে তাদের খুঁজে আনবো। এখন আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দে। আর হ্যাঁ, তোরা সব তাবুতেই থাক। ”
কথাটা শুনার পর ভিরেক্স এর কাছে ট্রুডো একজন স্বার্থপর মনে হলো। মনে মনে ভাবলো, বন্ধুদের না বাঁচিয়ে নিজে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু ট্রুডো নিরুপায়। বন্ধুদের বাঁচাতে গেলে তাকে প্রথমে বাঁচতে হবে। শুয়ে থেকে ট্রুডো সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো চুপাকাবরার কথা। ট্রুডো ভ্যাম্পায়ার। চুপাকাবরাগুলোও ছাগল ভ্যাম্পায়ার। ট্রুডো যা কমান্ড করবে তা তাদের শুনবার কথা। ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটা দেখে চুপাকাবরাগুলো আবার মিউরিসকে ধরে নিয়ে গেলো কেন? তবে কি তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে যাচ্ছে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাক্সটা বের করলো ট্রুডো। বাক্স থেকে রক্তের ব্যাগটা বের করে অর্ধেকটা চুষে খেয়ে নিলো। মোবাইলের গ্লাসের দিকে তাকাতেই দেখে তার চোখ লাল আলোয় ঝলকাচ্ছে। দুটি দাঁত বের হয়ে আছে। নিজেকে সংযম করে মানুষ রুপে ফিরে এলো ট্রুডো আর অপেক্ষা করতে লাগলো সন্ধ্যা পর্যন্ত।
কালসন্ধ্যা। এখনো সূর্য পুরোপুরি অস্ত যায়নি। তাবু থেকে বেরিয়ে পড়লো ট্রুডো। চুপাকাবরাদের ওমন আচরণের কথা চিন্তা করে রাগে চোখদুটো থেকে আগুনের অশ্রু ঝরতে লাগলো। তাবু থেকে একটু দূরে এসে ভয়ঙ্কর হুঙ্কার ছাড়তে লাগলো। অন্ধকার একটু ঘন হয়ে আসতেই বিশাল পাখাযুক্ত এক ভ্যাম্পায়ারে রুপ নিলো ট্রুডো। চোখদুটো লাল আলোয় ঝলকাচ্ছে। রাগের চোটে চারদিকে দিশেহারার মতো তাকিয়ে পশুপাখি খুঁজতে লাগলো। গাছের ডাল থেকে একটা জংলী পাখি ধরে নিমিষের মধ্যেই রক্ত চুষে ছুড়ে ফেলে দিলো ট্রুডো। ভ্যাম্পায়াররা এমনিতেই জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে মাত্র কয়েক মিনিট বা সেকেন্ড লাগে। আর উড়ে উড়ে গেলে আরও কম সময়। কিন্তু ঘন জঙ্গলের মাঝে উড়ে যাওয়ার কোনো পন্থা নেই বলে চারদিকে তার বন্ধুদের দিশেহারার মতো খুঁজতে লাগলো। আগেই মিউরিসকে বাঁচাতে গেলো না কারণ ট্রুডোর জানা আছে যে তার কথা অমান্য করে মিউরিসকে চুপাকাবরা নিয়ে গেলেও তাকে মেরে ফেলবে না। চুপাকাবরা যতোই হিংস্র আর ভয়ানক হোক না কেন ভ্যাম্পায়ারদের চেয়ে তাদের শক্তি কম। তাছাড়া মিউরিসকে বাঁচিয়ে এনে তাবুতে রাখলে চুপাকাবরা আবার আসবে। তাতে অন্যদেরও ক্ষতি হবার প্রবল আশঙ্কা আছে। গতকালের মতো জঙ্গলের সেই সরু পথ ধরে এগোতে লাগলো ট্রুডো। আজকেও আকাশে চাঁদ উঠেছে। শুক্লপক্ষ শেষ হতে আগামী দিনটাই বাকী আছে। কিন্তু আজকে আকাশে মেঘের কারণে চাঁদের আলো তেমন জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারেনি। মেঘের আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়েছে। গতদিনের মতো সেই ঝর্ণার ধারে আবারও মেয়েটিকে দেখে চোখ আটকে গেলো ট্রুডোর। চাপা গলায় আবারও সেই শিহরণ কান্না। কিন্তু আজকে আর দেরি না করে মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য সামনে এগোতেই হঠাৎ মনে পড়লো সে ভ্যাম্পায়ারের রুপে আছে। মেয়েটি তাকে এই অবস্থায় দেখলে ভয় পেয়ে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি মানুষ রুপে ফিরে মেয়েটির কাছে যেতে লাগলো ট্রুডো।
..
..
..
..(চলবে…….)
..
..
..
গল্পটি কেমন হচ্ছে তা জানাতে পারেন আমার গ্রুপটিতে। যেকোনো আলোচনা, সমালোচনা, রিভিও ইত্যাদিও করতে পারেন। গল্প সম্পর্কে কারো কোনো অভিযোগ বা মতামত থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন অথবা গ্রুপে যুক্ত হয়ে সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন কারণ আপনি যেটা বুঝছেন না তা হয়তো অন্যকেউ বুঝেছে তাই সেটা সকলের সাথে শেয়ার করলে নিশ্চয় উত্তরটা পাবেন। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 2

0

………………দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
……………………..PART::02……………………….

ট্রুডো মেয়েটির দিকে যেতে যেতেই হঠাৎ ঝর্ণার পানিতে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে তার শরীরে গিয়ে পড়লো। গায়ে আগুন লাগার মতো ছটফট করতে লাগলো ট্রুডো। তাড়াতাড়ি একটা গাছের আড়ালে গিয়ে লুকালো। অন্ধকারে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো ট্রুডো। সামনে চাঁদের আলো থাকায় গাছের আড়াল থেকেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো ট্রুডো। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে ঝর্ণার পানিতে পা ডোবালো আর সাথে সাথেই শীতল ঠান্ডা বাতাস এসে মেয়েটির লম্বা কালো চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিলো। চুলগুলো একদিকে সরে যাওয়াতে ফুটফুটে চাঁদের আলোয় মেয়েটির পিঠে একটা চিহ্ন দেখতে পেলো ট্রুডো। চিহ্নটা দেখতে পাওয়া মাত্রই অবাক হয়ে গেলো। ট্রুডোর ঘাড়েও ঠিক সেরকম চিহ্ন আছে। মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে উঠলো ট্রুডো। কিন্তু সামনে যেতে পারছে না তাই গাছের আড়াল থেকেই দেখতে লাগলো মেয়েটিকে। এদিকে রাত ক্রমশ গভীর হতে চলেছে। রাত বারোটায় আনাহীকে জন্মদিনের উইস করতে হবে। এসব কিছুই খেয়াল নেই ট্রুডোর। দেখতে দেখতে মেয়েটি কান্না থামিয়ে ঝর্ণার জলে হাত পা ধুয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটির লম্বা চুলগুলো হাটু পর্যন্ত পুরো শরীর ঘীরে নিলো যেন কালো চাঁদরে ঢাকা। চুলগুলোকে উড়িয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে মেয়েটি তার ঘরে যেতে লাগলো। ধবধবে পরীর মতো চেহারা দেখে ট্রুডো টাসকি খেয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো সে। কিন্তু এদিকে আস্তে আস্তে জঙ্গলের ভেতরের রাস্তা ধরে অন্ধকারে বিলিন হয়ে গেলো মেয়েটি। কিন্তু ট্রুডোর পলক পড়লো না। একদিকে তাকিয়েই রইলো সে। কয়েকক্ষণ পর ব্লেডিকোর ডাক শুনে হুশ এলো ট্রুডোর। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঝর্ণা থেকে পানি নিয়ে তাবুতে ফিরে গেলো ট্রুডো।
তাবুতে এসে দেখে সবকিছু রেডি। মশাল জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু মেডেকি, আনাহী আর জেফারী এখনো তাবু থেকে বের হয়নি। সম্ভবত এখনো রেডি হচ্ছে। রাত প্রায় বারোটা বাজে। আনাহী সাজতে ব্যস্ত। জেফারী আর মেডেকি এই সুযোগে বাইরে এসে সবার সাথে সবকিছু রেডি করলো। কিন্তু ট্রুডো একবারও এদিকে না এসে দূর থেকেই সবকিছু রেডি করতে বললো। সবকিছু রেডি হয়ে গেলে নিজে রেডি হওয়ার জন্য তাবুর ভেতরে গেলো ট্রুডো। সে যাওয়ার সাথে সাথে আবার আনাহী এসে গেলো। বারোটা বাজার সাথে সাথে সবাই উইশ করলো আনাহীকে। চমকে গেলো আনাহী। মজা করতে লাগলো সবাই। কেক কাটার সময়ে দেখলো ট্রুডো নেই। আনাহী বললো,”ট্রুডো কোথায়? সে তো আমাকে উইশ করলো না। ”
ব্লেডিকো জঙ্গল থেকে ধেয়ে এসে বললো,”সরি, ট্রুডোকে খুঁজতে গিয়ে আমারই দেরি হয়ে গেলো। ট্রুডো ফিরেছে?”
ভিরেক্স বললো,”সে রেডি হচ্ছে।”
আনাহী মৃদুভাবে বকবক করে বলতে লাগলো,”বার করছি তার রেডি হওয়া, এখনিই তাকে রেডি হতে হলো! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। ”
কথাটা বলেই ট্রুডোর তাবুতে প্রবেশ করা মাত্রই অবাক হয়ে গেলো। টি-শার্ট এখনো পড়া হয়নি। শুধু প্যান্ট পড়া ট্রুডোর। বিছানায় টি-শার্ট। এখনি পড়তে যাবে এই সময়ে আনাহী তাবুতে প্রবেশ করেছে। ট্রুডোর পুরো বডি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো আনাহী। ট্রুডো আনাহীকে লক্ষ না করে ব্যাগ থেকে কি যেন গ্লাসে ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে টি-শার্ট পরে পেছনে তাকাতেই দেখে আনাহী। ভয়ে ট্রুডো বললো,” কি রে, তুই এখানে কি করছিস?”
ভ্রু কুচকে আনাহী মুচকি হেসে বললো, “ড্রিলমাস্টার ভয় পেলো বুঝি? এই প্রথম তোর চোখে ভয়ের আভাস দেখতে পেলাম। কি সৌভাগ্য আমার!”
ট্রুডোও একটু মুচকি হেসে বললো, “ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন তুই বাইরে যা। আমিও যাচ্ছি।”

বাইরে গিয়ে ট্রুডো ব্লেডিকোকে ইশারা করতেই মশাল নিভিয়ে দিলো। ঘন গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে নম্র আলোয় চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। ট্রুডো তাবুর পেছনে গিয়ে জেনারেটর অন করলো। সাথে সাথে তাবুর আশেপাশের সব গাছে লাগানো লাইটগুলি জ্বলে উঠলো। জেনারেটরের আলোয় পরিবেশটা সাজানো হয়েছে পুরো ভূত চতুর্দশীর মতো। সাজানোর আইডিয়াটা পুরোটাই ট্রুডোর। সারারাত পার্টি, আনন্দে মাতামাতি করে ঘুমিয়ে পড়লো সবাই। সবার তাবুতে লাইট নেভানো কিন্তু একমাত্র ট্রুডোর তাবুতে লাইট জ্বলছে। তবে সেটা মোমবাতির। শার্ট খুলে খানিক ব্যয়াম করে বিছানায় বসলো ট্রুডো। একটা বাক্স থেকে এক প্যাকেট রক্ত বের করলো। সামনে কাচের গ্লাসে এক গ্লাস রক্ত নিয়ে আবার রক্তের ব্যাগটা বাক্সতে লুকিয়ে রাখলো ট্রুডো। তৃপ্তিভরে এক গ্লাস রক্ত খেয়ে শুয়ে পড়লো।

সকাল। সূর্যের আলো এখনো জঙ্গলের ভেতরে পৌঁছায়নি। শুধু অন্ধকার কেটেছে মাত্র। মিউরিস তার তাবু থেকে বের হয়ে সকালে মর্নিং ওয়াক করতে বের হলো। কয়েকমিনিট পর জেফারী আর মেডেকিও একসাথে বের হলো মর্নিং ওয়াক করার জন্য। জেফারী আর মেডেকি জঙ্গলের ভেতরের এক সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু রাস্তাটি গিয়ে শেষ হয়েছে সেই উপজাতিদের আস্তানায়। বাকীরা সব মরার মতো ঘুমাচ্ছে। জঙ্গলের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় হরেক রকমের গাছের সামনে দাঁড়িয়ে একসাথে ছবি তুলতে লাগলো আর এগোতে লাগলো জেফারী ও মেডেকি। চলতে চলতে দুজনে পৌঁছে গেলো জেরায়াস উপজাতির আস্তানায়। তাদের টং ঘরগুলো দেখে আনন্দে ছবি তুলতে লাগলো। হঠাৎ চারদিক থেকে ঘীরে নিলো উপজাতির কয়েকজন পালোয়ান। ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো দুজনের। দুজনে বন্দি হলো উপজাতিদের কাছে।

এদিকে মিউরিসও চলতে চলতে হঠাৎ জঙ্গলের রাস্তায় কয়েকটা মরা পশু দেখে থেমে গেলো। পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে মুখে চেপে ধরে এগিয়ে গেলো দেখার জন্য। মরা পশুগুলোকে দেখে ভীমড়ে গেলো মিউরিস। সবকটা প্রাণীরই দেহের কয়েক জায়গা থেকে মাংস খুবলে খাওয়া। তার উপর আরও অবাক করা একটা ঘটনা হচ্ছে মরা প্রাণীগুলোকে যদি কোনো হিংস্র প্রাণী খেয়েও থাকে তবে জায়গাটিতে রক্ত লেগে থাকবে কিন্তু সেখানে এক ফোটা রক্তও নেই। এমনকি প্রাণীগুলোর শরীরের যে অংশগুলো খুবলে খাওয়া হয়েছে সে ক্ষত স্থানেও রক্তের ছিটেফোটা নেই। প্রাণীগুলোর দিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে এসব ভাবতে লাগলো মিউরিস। হঠাৎ তার পেছনে একটা হিংস্র পশুর গড়গড় আওয়াজ শুনা গেলো। চমকে গিয়ে পেছনে তাকাতেই মিউরিস দেখে ছাগলের আকৃতির একটা পশু। মুখটা বড় ধারালো চোখা রক্তমাখা দাঁত। লম্বা লেজটা কাটায় ভরা। ভয়ানক দেখতে পুরো শরীর। শরীরের কিছু অংশ কুমিরের সাথে মিল আর কিছু অংশ গিরগিটির সাথে মিল আছে। চোখদুটো লাল টকটকে। মুখ থেকে রক্ত পড়ছে টুপটুপ করে। ভয়ে পেছনে যেতে লাগলো মিউরিস। অদ্ভুত প্রাণীটাও গড়গড় আওয়াজ করতে করতে মিউরিসের দিকে ধেয়ে যেতে লাগলো। পেছনে সরতে সরতে মাটিতে পড়ে গেলো মিউরিস। বসে বসেই পেছনে যেতে লাগলো সে। প্রাণীটাও আস্তে আস্তে হা করে এগোতে লাগলো তার দিকে। সরতে সরতে মিউরিসের হাতের কাছে একটা শুকনো গাছের ডাল আটকে পড়লো। ডালটিকে হাতে নিলো মিউরিস। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো কিন্তু সে অতোটাও বোকা নয় যে তা দিয়ে প্রাণীটাকে আঘাত করবে। মিউরিস বুঝতে পারলো যে কয়েকক্ষণের মধ্যেই কয়েকটা প্রাণীকে খেয়েছে তাই তাকে শুধু আক্রমণ করে নিজের কাছে রাখবে যাতে পরে খেতে পারে। কিন্তু সে দৌঁড় না দিতে আস্তে আস্তে পেছনে সরে যেতে লাগলো কারণ সে জানে এসব জঙ্গলের প্রাণীদের সাথে দৌঁড়ে পেরে উঠা যাবে না। আস্তে আস্তে মুখ থেকে রুমালটা খুলে ডালটায় বেধে নিলো মিউরিস। দ্রুত পকেট থেকে দিয়াসলাইটা বের করা মাত্রই মিউরিসের উপর ঝাপিয়ে পড়লো প্রাণীটা। দ্রুত সরে গিয়ে ডালটার আগায় বাঁধা রুমালে আগুন লাগিয়ে প্রাণীটার সামনে ধরলো। সাথে সাথে ভয়ঙ্কর চিৎকার করতে করতে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলো প্রাণীটা। মিউরিসও দেরি না করে তাবুর দিকে দৌঁড়ে যেতে লাগলো। তাবুতে পৌঁছে সবাইকে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো। তাবু থেকে তাড়াতাড়ি আনাহী, ভিরেক্স, ব্লোডিকো আর ট্রুডো বেরিয়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে মিউরিস বললো,”এখনই এখান থেকে চলে যেতে হবে। এখানে হিংস্র প্রাণী আছে। আমি কোনোরকমে রক্ষা পেয়েছি।”
আনাহী বললো,”কি হয়েছে? ঘটনাটা কি? ”
মিউরিস সবকিছু বলার পর ট্রুডো বললো, “জেফারী আর মেডেকি কোথায়? তারাও কি প্রাণীটার কবলে পড়েছে? ”
চারদিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই জোফারী আর মেডেকি নেই। হঠাৎ আনাহী বললো,”তারা তো মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছিলো। আমাকেও ডেকেছিলো কিন্তু ঘুমের কারণে যেতে পারিনি।”
ভিরেক্স বললো,”আমি তাদের খুঁজে আনছি। ” একথা বলে জঙ্গলের ভেতরের দিকে যেতে লাগলে হঠাৎ ট্রুডো ভিরেক্সকে থামিয়ে দিয়ে বললো,”না। হয়তো তারা ফিরে আসছে। আর নয়তো সেই প্রাণীর কবলে আছে। আমরা বরং একসাথে যাবো। ”
..
..
..
..(চলবে….)
..
গল্পটি সম্পর্কে যেকোনো অভিমত গ্রুপে জানাতে পারবেন। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন..PART1

0

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন..PART1
মোঃ জুবাইদুল ইসলাম.
বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল জঙ্গলের সবুজে ঘেরা এক রহস্যময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস জেরায়াস নামক এক উপজাতির। গোত্রের মাঝে এক অদ্ভুত নিয়ম। অদ্ভুত সব রীতিনীতি। তবে অবাক করা একটা ব্যাপার হলো গোত্রের সব মানুষের চেহারার গঠন খুবই সুন্দর তবে গায়ের বর্ণ নিকষ কালো। তাদের বিচরণ সেই পাহাড় ঘীরেই। কাঠের তৈরি ঘরগুলো সব বড় বড় গাছের সাথে সংযুক্ত। গোত্রের মাঝে রয়েছে উঁচু-নিচু জাতপাতের বৈষম্য। যারা নিচু জাতের তারাই গোত্রের অদ্ভুত সব নিয়মনীতির সম্মুখীন হয়। বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয় সেসব নীতি। তাদের ঘরগুলো পাহাড় থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে। আর যারা উঁচু জাতের তারা সবসময় সবকিছু উপভোগ করে। তাদের ঘরগুলো পাহাড়ের পাদদেশে গা ঘেঁষে গাছের সাথে তৈরি করা। এর একটা বিশেষ কারণও রয়েছে। সবুজে আচ্ছন্ন এ পাহাড়ের চূড়াটা সমতল। চূড়াটা সমতল করা হয়েছে বিশেষ অানুষ্ঠানিকতার জন্য। তবে চূড়ায় উঠার জন্য নেই কোনো সিঁড়ি, খাদ বা অন্য সরঞ্জাম। প্রতিবছর পাহাড়ের চূড়ায় উঠার জন্য একটি করে সিঁড়ি কাটা হয়। তবে সিঁড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হয় কুমারী সুন্দরী মেয়ের বক্ষপিঞ্জরের হাড় আর মাথার খুলি। একটা সিড়ি কাটার পর বলি দেওয়া সেই কুমারী মেয়ের রক্তে পা ধুয়ে সেই রক্ত দিয়ে সিঁড়ি লেপে দেওয়ার পর গোত্রের প্রধান খুলির উপর পা দিয়ে সিঁড়িতে উঠেন। অনুষ্ঠানটা করা হয় প্রত্যেক বছরের কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের মাঝামাঝি সময়ে। এভাবে প্রতিবছর একটি একটি করে সিঁড়ি কাটা হয় পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার জন্য। তবে প্রতিবছর গোত্রপ্রধান পাহাড়ের চূড়ায় উঠেন না। যতগুলো সিঁড়ি কাটা ঠিক ততোটুকু উঠে পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পুরো রাত। তার সামনে চলে বিশাল অনুষ্ঠান।

শুক্লপক্ষ শেষ হতে আরও তিনদিন বাকী। তিনদিন পর শুরু হবে গোত্রের মাঝে সেই অদ্ভুত অনুষ্ঠান। এদিকে একজন মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করার জন্য ডি ডট এমজি নামক তরুণদের গ্রুপ সন্ধ্যামুখে প্রবেশ করলো বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলে। মেয়েটির নাম আনাহী। একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। গ্রুপের সকল সদস্যরা একেকজন একেক বিষয়ের স্টুডেন্ট। পুরোনো ফ্রেন্ডসার্কেল টিকিয়ে রাখার জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন এডভেঞ্চারে ঘুরে বেড়ায় এই গ্রুপ। গ্রুপের থ্রিলমাষ্টার হলো ট্রুডো। বলতে গেলে সেই গ্রুপের প্রধান। যেমন রহস্যপ্রেমী তেমনি হাজারো বিস্তৃত রহস্যে ঘেরা তার জীবন। যেকোনো মিশনে সবার আগে সামনে থাকে সে। তাকে দেখে বুঝাই যায় না যে তার মাঝে ভয়ভীতি বলে কিছু আছে কিনা। গ্রুপের সাতজন সদস্য যার তিনজন হলো মেয়ে। জেফারী, মেডেকি, আনাহী। আর বাকী চারজন ছেলে হলো ট্রুডো, ভিরেক্স, ব্লেডিকো আর মিউরিস। সব টেলেন্ট সদস্যদের নিয়ে এই গ্রুপ। ভয়ঙ্কর ও দুঃসাহসিক সব অভিযানের রেকর্ড রয়েছে এই গ্রুপের।
সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ধীরে ধীরে রাতের তমাধারে রুপ নিলো তখনই থেমে গেলো চলাচল৷ তাবু খাটানোর জায়গা হিসেবে বেছে নিলো সেই পাহাড়ে থাকা উপজাতির বসবাসের ঠিক বিপরীত জায়গায়। বিশাল বড় পাহাড়। তাই আন্দাজও করা গেলো না যে জঙ্গলে এক উপজাতি আছে। মেয়েদের জন্য পর বড়সড় একটি আর ছেলেদের জন্য দুইটি তাবু খাটানো হলো। এখন কে কোথায় থাকবে সেটা নিয়ে হলো এক ঝামেলা। জেফারী, মেডেকি আর আনাহী এক তাবুতে থাকার জন্য রাজি কিন্তু ছেলেদের মধ্যে ট্রুডো একাই এক তাবুতে থাকতে চাইছে। এদিকে আরেকটা তাবু খাটানোর মতো তেমন সরঞ্জামও নেই। অনেক ঝামেলার পর ট্রুডোকে এক তাবুতে দেওয়া হলো আর বাকী তিনজন রাজি হলো আরেক তাবুতে থাকার জন্য। সবাই যার যার জিনিসপত্র তাবুতে গুছিয়ে রাখতে গেলো।
কিছুক্ষণ পর….
জেফারী আর মেডেকি বাইরে যাওয়ার কথা বলে তাবু থেকে বের হয়ে ট্রুডোর তাবুতে প্রবেশ করলো। এদিকে ব্লেডিকো আর মিউরিসও ট্রুডোর তাবুতে এসে হাজির জন্মদিনের সারপ্রাইজ কিভাবে দেওয়া যায় সেসব নিয়ে আলোচনা করার জন্য। হঠাৎ ভিরেক্সকে না দেখতে পেয়ে ট্রুডো বললো, “ভিরেক্স কোথায়? নিশ্চয় আনাহীর কাছে গিয়েছে। সত্যিই একে আর সামলাতে পারলাম না। ”
জেফারী ট্রুডোর কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,”সুযোগ একটা পেয়েছে, হাতছাড়া করবে কেন!! এক দিনে দুইটা সারপ্রাইজ পাবে আনাহী। ”
ট্রুডো একটু রাগি গলায় বললো,”তো প্রোপোজ করার সময় এটা? আমরা এখানে এসেছি অন্য কারণে আর সে? ”
ট্রুডোর কথা শেষ না হতেই ব্লেডিকো বলে উঠল,”আচ্ছা বাদ দে না সেসব, এখন কি প্ল্যানটা কি? ”
সবাই মিলে প্ল্যান করে ঠিক করলো কিভাবে আনাহীকে সারপ্রাইজ দেওয়া যায়। সবাই বাইরে বের হয়ে যে যার কাজে লেগে পড়লো। ট্রুডো মশাল জ্বালানোর জন্য গেলো কাঠ আনতে। ব্লেডিকো গেলো বার্থডে কেক ঠিক আছে কিনা আর সব সরঞ্জাম ঠিক আছে কিনা তা দেখতে। মিউরিস তাবুর সামনের জায়গাটা পরিষ্কার করতে শুরু করলো। মেডেকি আর জেফারী তাদের তাবুতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই দেখলো ভিরেক্স ইতস্তত করছে। প্রপোজ করার কতোনা ইচ্ছা ছেলেটার কিন্তু কথাগুলো এসে মুখ পর্যন্ত থেমে গেছে আর বের হচ্ছে না। মেডেকি আর জেফারীকে দেখে তাবু থেকে বের হয়ে গেলো ভিরেক্স। জেফারী আনাহীর কাছে গিয়ে গা ঘেঁষে বসে বললো,”ভিরেক্স কি বললো রে? ”
আনাহী মোবাইল টিপতে টিপতে বললো,”কই! কিছু না তো। সে তো এসেই কেমন ইয়ে মানে ইয়ে মানে করে চলে গেলো।”
তিন বান্ধবী মিলে একটু মজা করে রাতের জন্য রেডি হতে শুরু করলো। এদিকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রুডো মশাল জ্বালানোর জন্য শুকনো কাঠ এনে আবার জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলো দ্রুত পায়ে। সময় যেন তার জন্য স্থির। চারিদিক হন্তদন্ত হয়ে দেখতে লাগলো। রাতের আধারে জঙ্গলের ভেতরের পরিবেশটা পুরো চেনা পরিচিত জায়গায় রুপান্তরিত করতে হবে। শুরু হলো ট্রুডোর রাতের বিচরণ। দ্রুতপায়ে চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেলো ট্রুডো। কোনো এক মেয়ের কান্নার আওয়াজ আসছে। চাপা গলার করুণ কান্না। শব্দের উৎসের আন্দাজ অনুভব করে সেদিকে যেতে লাগলো ট্রুডো। শুষ্ক পরিবেশ। জঙ্গলের ভেতরে শুকনো গাছের পাতা পড়ে ভরে গেছে। চলার সময় খচখচ আওয়াজ হচ্ছে। কয়েকমিনিট হাঁটার পর সামনে চোখে পড়লো একটা ফাঁকা জায়গা।পাহাড়ের এককোণ থেকে ঝর্ণা নেমে এসেছে। নিদারুণ পরিবেশ। জঙ্গলের যে সমতল জায়গা দিয়ে ঝর্ণার পানি প্রবাহিত হয়ে চলেছে তার দুপাশে ঘাসের নতুন কচি পাতার আস্তরণ। যেন সবুজের মাদুর বিছানো দুইপাশে। অর্ধেক চাঁদের মিষ্টি আলোয় ভুবন মাতানো পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। একটা গাছের আড়ালে বসে আছে একটা মেয়ে। আসছে কান্নার শিহরণ শব্দ। পেছন থেকে পুরো পিঠ লম্বা চুলে ঢেকে গেছে। ঘন কালো লম্বা চুলে যেন নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে মেয়েটি। আস্তে আস্তে ধীর পায়ে সামনে এগোতে লাগলো ট্রুডো।
..
..
..(চলবে….)
..
..
..
গল্প সম্পর্কে যেকোনো অভিমত, রিভিও, আলোচনা ইত্যাদি গ্রুপে করতে পারবেন। ধন্যবাদ সকলকে।