Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1959



প্রিয় চিত্তলতা – লেখনীতে রিয়া খাতুন

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
লেখনীতে – রিয়া খাতুন
#চিঠি_নং_১

প্রিয় চিত্তলতা,,
কুশল সংবাদ আর না বিনিময় কোনটিই করবোনা। আজ আর সেই পরিস্থিতি নেই হয়তো বা আছে। আবার থাকবেও,,কেননা তুমি ছাড়া প্রত্যদিনের অংশে আমি অস্তিত্বহীনা।

বেশ কিছু মাস হল তোমার সঙ্গে আমার সখ্যতার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু পূর্বের স্মৃতিগুলো তুমি ভুলতে পেরেছো শুধু অসহায়তার অবহেলায় আমি থমকে গিয়েছি‌। তুমি বারংবার আমাকে নিষেধ করো এইসব ভাবতে বারংবার উজ্জীবিত করো নীল আকাশের সাদা বক পাখির মতো উড়তে তবে পারিনি জানো… আর পারছিনা। তোমার কাছে ছোট্ট শিশুর ক্ষন ক্ষন ক্রন্দনের ন্যায় পতিত হচ্ছি : একটা ছোট নিমিত্ততা কাজ করে আর মনে হয় শুধু ‘চিত্তলতা আছে’ এই জীবনে অমার।

বিধাতা ছক করে তোমাকে পাঠিয়েছে। তার অনবদ্যতায় আমরা তো ক্ষুদ্রাংশ নয়। তবে সামনের দিকে এগোতে গেলেই পথ অবরোধ করছি নিজেই। এ পথের যোগ্য আমি নয় আর না এই জীবনের!
বেশ কিছুমাস ন্যাকামির সুর বুনেছি। তোমাকে ছাড়া নাকি আমি থাকতে পারিনা। তবে চিত্ত আমি জানি প্রতিটা দিন তুমি একটু সময় চেয়েছো, সিকিভাগ মাত্র। আমাকে সর্বদায় ছায়ার মত পরিবেষ্টন করেছো, কোন কষ্ট হলে তুমি সব সহ্য করেছো আর আমি….

মনে পড়ে কলেজে কাটানো দিনগুলো,,
বারংবার বুঝিয়ে ছিলে আমায় ‘বন্ধু’ শব্দটির তাৎপর্য ; যা উচ্চারনে সরল এবং গঠনে জটিল। এই জটিলতায় সরলতাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম ক্রমাগত। নিজেকে উজাড় করে সকলকে ভালোবাসতাম, সাহায্যের পাহাড় গড়েছিলাম অথচ তুমি আমাকে সাঁই দাওনি এই বিষয়ে‌। তৎক্ষণাৎ আমি ভাবতাম তোমার দিক থেকে কান আর চোখ দুটোই ফেরানো উচিত আর না থাকা উচিত কোন অনুভব। আমি আমার নিজ ইচ্ছায় পাড়ি দেব আর হিমেল পরশে নিজেকে ভাসিয়ে দেব বালিহাঁসের ন্যায় যেখানে সবার সঙ্গে একতায় থাকবো। এক ঐক্যবদ্ধের প্রতীক হয়ে থাকবো আমরা বন্ধুগন।
সবাই মিলে একসঙ্গে হুল্লোড়, গল্প এবং ঝগড়ায় বেশ সুন্দর কাটছিল আমাদের আবেগঘন মুহূর্ত। হয়তো তখন তোমার কথা মনে এলেও চিত্তলতা, ইচ্ছা করেনি তোমাকে প্রাধান্য দিতে। ইচ্ছা করেনি একটু অপেক্ষায় অপেক্ষিত হতে। তবে খুব আঘাত পেয়েছিলাম সেইদিন যেদিন আমাকে কলেজে ম্যাম ভুল বুঝেছিল। রানীর কথা শুনে বিনা দোষে আমাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল তখন তুমি ছাড়া আর কেউ ছিলনা প্রতিবাদ করার জন্য। আমি নাকি আমাদের এইচ. ও. ডি ম্যামের অফিসিয়ালি কিছু কথা আদান-প্রদান করি বিপক্ষীয়দের কাছে।তবে সেইদিন বারবার তুমি বলেছিলে না এই কাজ অন্তত করতে পারিনা আমি। বাকিরা সবাই আমাকে পতিত করেছিল, স্পর্শ করিয়েছিল ভূমিতলকে। চরম অপমানের নিরীক্ষণে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। সেদিন বুঝেছিলাম বন্ধুত্বের আসল স্বরূপতা: ‘বন্ধুত্ব’ শব্দের স্বার্থপরতা। সবাই বন্ধু হতে পারে কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণতায় পরিণত করেনা। এই পৃথিবীতে সঠিকতার সংজ্ঞা খোঁজা বড্ড দুস্কর।

আর সেইদিন মনে আছে চিত্ত,, গন্ধনের কথাগুলো। শারীরিক সম্পর্কে নাকি আমি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই কিন্তু ওর হাতটা শুধু আমি ধরতে চেয়েছিলাম শুধু ওর হাতের মুঠোয় এক চিলতে নীলাময়কে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম। হয়তো আমার ভুল ছিল। হ্যাঁ তাইতো,, মেঘমুক্ত নীলাভা আসলে সকলের জন্য নয়‌। ওর অপমানের দিকগুলো তুমি আগে থেকেই আভা প্রতীক রূপে রূপায়িত করেছিলে শুধু রূপান্তরিত করতে পারিনি আমি তাই আজ জীবনটা কালিদাসের ডালচোপের মত লাগে। সবটা যেন হারিয়ে ফেলেছি যেমন পরেরটা তেমন আগেরটাও….. চাইলেই যে সবকিছু ঠিক করা যায়, আগের মত নয়: পরের থেকে পূর্বের গুলো পরিবর্তন করা যায় তা তুমি শিখিয়েছো। তবে প্রতিক্ষন এক অপরাধবোধে ভুগি সর্বদায়।
খুব ইচ্ছা করছে আজকে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে আর একটা ছোট্ট চুম্বন এঁকে বলতে ইচ্ছা করছে তুমি আমার ধ্রুবতারা। বলতে ইচ্ছা করছো আমার প্রাণভোমরা আমার একমাত্র প্রাণবন্ততা।

অনেকে তার প্রেয়শী, প্রিয়া বা তার সুহৃদদের নিয়ে বন্ধনময়তার কোন বার্তা গঠন আবার কখনো শ্রান্ত পথিকের বিমূঢ়তার ন্যায় নিজের একরাশ অনুভূতি ফুটিয়ে তোলে। তবে তোমাকে নিয়ে ভাবার মানুষ খুব কম। আজ তোমাকে নিয়ে চিঠির পাতায়, জানিনা কেন এই মেঘলা আমাকে উন্মাদ করে তোলে, উদ্দীপিত করে তোলে! বারংবার এক রৌদ্রলৌহ এনে দেয় তীব্র বেদনা। সবাই যদি তোমাকে নিয়ে প্রশ্ন করে কে তুমি,, যদি জানতে চাই ‘চিত্তলতা’ কে! অনেকের মনে এই আকাঙ্খা জড়তার সৃষ্টিও করতে পারে।
তোমাকে নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জানো,, একদিন মা বলছিল চিত্তলতা কে! যার জন্য আমরা তোর কাছে ছন্নছাড়া। মাঝে মাঝে বাবা তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে চায়। আচ্ছা আমিতো তোমাকে নিয়ে ভালো আছি, কেন সবাই বোঝেনা! আমি তোমাকে সত্যিই বড্ড ভালোবাসি। তোমাকে খুব জাপটে ধরতে ইচ্ছা করছে: গাঙচিলের মতো বারবার নিজেকে শিমুল বনে রাখতে ইচ্ছা করছে। শিমুলের ঐ রাস্তাজোড়া দখলকে দিগন্তের ন্যায় জাপটে ধরতে ইচ্ছা করছে..

ভাষায় যা প্রকাশ অবোধ্য তা ব্যক্ত করার জন্য কারোর সাহায্য নেওয়া উচিত। আর সেই সাহায্য হল চিঠি। জানো চিত্ত তোমার পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় লাগে যদি তোমাকেও স্বার্থপর করে দেয় সবাই। যদি দলছুট সাদাবকের দলে ফেলে! না আজতো আমি প্রকাশকে অবলম্বন করেছি,, তাই আজ উজাড় করে কিছু বলতে চাই। বাঁধ ভাঙা সেতু তৈরি করতে চাই….
চিত্তলতা আমার চিত্ত: মন। এই জীবন যদি পাড়ি দেয় শতসমুদ্রে তাহলে সেটা তোমার জন্য। আমার কাছে প্রেয়শী হল তুমি: আমার মধ্যে যার অবস্থান; আমার মন। শত দুঃখ- কষ্টের মাঝে তুমি আমায় সঙ্গ দাও। সমস্ত কষ্ট তুমি সহ্য করো। অথচ নিজের জীবনের সিকিভাগের দাবিদার তোমাকে রাখিনা।

অবুঝতার ন্যায় সত্যিই আমি বুঝিনি আমার জীবনে প্রকৃত বন্ধু তুমি: আমার চিত্তলতা। নিজস্ব আঙ্গিনায় আমার আসল বন্ধু হিসাবে নাম দিয়েছি চিত্তলতা। জানো এখন যখন সকলকে দেখি বন্ধুত্বের মিথ্যা ছলনায় ভাসছে তখন বলতে ইচ্ছা করে কেন অন্তঃপুরের বন্ধুটাকে খুন করে বাহিরের রামধনুর হাতছনিকে বিশ্বাস করছো! যদি এই জীবনের পরামর্শদাতা না পাও নিজেকে নিজের করে গড়ে তোলো।
হয়তো এই চিঠিটা কারোর মাধ্যমে পৌঁছাবেনা। হাঃ! আর না আছে কোন উপমাধ্যম। তবে তোমার জন্য কোনদিন দুই কলি লেখা হয়না। কাউকে দ্যাখনোর জন্য নয় আর না তোমার অস্তিত্বকে রূপ দিতে। আসলে মনের মানুষের জন্য খুব লিখতে ইচ্ছা করছিল তাই তোমায় নিয়ে লিখলাম। তুমি প্রতিক্ষন দুঃখ-সুখের বেড়াজালে উপন্যাস তৈরি করো আমিও নয় একটা ভীত প্রতিষ্ঠা করলাম। আজ থেকে নিবেদনে রাখলাম শুধু তোমাকে। হয়তো তোমার মতো বিশার অট্টালিকা করতে পারবোনা। তবে একটা ছোট্ট ‘আলোকসেতু’ তৈরি করবো যেখানে তুমি সর্বদা বিকিরিত হও।।

ইতি-
তোমার মনের মানুষ

তাং – 5/8/2020
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ

লেখনীতে – রিয়া খাতুন – প্রিয় মম অন্তরের উৎসাহস্পন্দন,

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

চিঠি নং -২
লেখনীতে – রিয়া খাতুন

প্রিয় মম অন্তরের উৎসাহস্পন্দন,
কিভাবে কথা বলবো সম্বোধনে নাকি স্পর্শে! তুমি না বললেও তুমি কিছুক্ষন পরে ফিরবে আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো আর বলব উৎসাহস্পন্দন লাভ ইউ। শুধু তোমার অপেক্ষার প্রহর অতিক্রমের জন্য লিখতে বসা। খামখেয়ালী পূর্ণ চিঠি দেখলে তুমি হেসেই পাগল হবে তাই আর হাসির পাত্র তোমাকে নাই বা করলাম!

“পাগলি তোমাকে সাহিত্যিক হতেই হবে,, তোমাকে উচ্চাঙ্গে উথাল স্রোত তৈরি করতে হবে। যেই স্রোতে সমগ্ৰ সাহিত্যের কলঙ্ককে ভাসাতে হবে আর ধ্বংস করতে হবে কিছু কবি ছদ্মবেশীদের। ছন্দিকা(রিয়া); তৈরি করবে তুমি এক তরুনমেলা যেই তরুণদের জাগরনে সমগ্ৰ ভারতবর্ষে এক সাহিত্যমেলা শুরু হবে। তুমিই পারবে হ্যাঁ তুমি।।” তোমার এই কথাগুলোর উৎসাহিকতা আমাকে কোন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে তা কোনদিনও মুখে প্রকাশ করতে পারিনি তাই এই চিঠি লিখছি। তুমি যখন অফিস থেকে ফিরবে এই ছোট্ট খামটা তোমার দেহের সিক্ত ঘাম আমার আঁচলে শুকিয়ে দিয়ে ব্যালকনির ছোট্ট কোনঠাসা জায়গায় দুই হাতের মুঠোয় যখন তুমি আমার শরীরে হালকা শিহরণ তুলবে ঠিক তখন এই খামটি ভাবছি তোমার দেব। আজকেই দেব উৎসাহ তোমায়,, প্লিজ যেন বলোনা, এতো কঠিন কঠিন অক্ষর তুমি বোঝোনা একদম বলবেনা তুমি আমাকে পড়ে শোনাও খবরদার বলবেনা এতো কঠিন ভাষা তুমি বোঝোনা! আজকে প্লিজ পড়বে বলো…
এটাই হয়তো শেষ চিঠিও হতে পারে আবার প্রথমও হতে পারে।
তোমার মনে আছে সোনা, যখন তুমি রাত জেগে থাকতে আমার জন্য। ৩.০০ টার প্রহরে আমার জন্য ক্ষনের বুনন কাটতে। আর আমি তখন হয়েছিলাম সাহিত্যিক। তোমার অভিমান ভাঙচুর করে যখন দুই চোখে তোমার দিকে তাকাতাম আর আমি আবার অভিমানের কন্ঠে সুর বাজিয়ে বলতাম আমি এবার সাহিত্য চর্চায় অব্যাহতি নেবো তখনই তুমি আমাকে জাপটে বুকের মধ্যে নিয়ে বলা অভিমানের ছন্দপত্তন করে সাহিত্যকে নিয়ে একটু চটিয়ে তুলে সাহিত্য চর্চায় আমাকে বারবার রসদ জোগাতে‌। এখন ব্যস্ততায় হয়তো তোমার অভিমানকে ইচ্ছা করেই বাড়াতে চাই হয়তো তুমি আর বাসা বাঁধতে চাওনা। তাই এখন সাহিত্যকে আর রসদ বানায়না পেশা আর আমার ফ্যানদের জন্য লেখাটা চালাচ্ছি। তবে তুমি তা হয়তো জানতে পারবেনা কখনোই, হয়তোবা পারছো। অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছো তবে বিভিন্ন কথার অতিক্রমে তুমি অতিক্রমিত হও বারবার। কোনদিনও বলতে পারবোনা শুধু চাইতে পারবো যে তুমি আবার অভিমানের ড্রাফট বক্স খোলো।

অপরাহ্নের অন্তিমতায় সূর্যের বিদায়বেলায় ঠিক আমার নাকের মধ্যস্থতায় চুম্বন করছে আর চিঠির পাতায় এক শূন্যতা নামছে অন্ধকারের। জানি এই অন্ধকার আর চিরস্থায়ী হবেনা,, কেন কিছু ঘন্টা পর তুমি ফিরবে। আর আমার এই চিঠিটা……

উৎসাহ এই বিদায়বেলায় বড্ড আজ মনে করাচ্ছে পানাগড় ভ্রমন। সারাদিন কেনাকাটার ব্যস্ততায় যখন বাসটা মিস হয়ে গেল তখন আমার কিসমিসের মত মুখটা দেখে আমার দুটো হাতধরে ‘আমি আছি’ কথাটা বলে লাড্ডু করার চেষ্টা করছিলে। সূয্যি মামা এইবার চলে গেল উৎসাহ।আর কিছুক্ষন: তারপর তুমি ফিরবে। জানিনা ৪ বছর সংসারের পর এই কথাগুলো এখনো কাষ্ঠলিপিতে লিপিবদ্ধ করতে হচ্ছে! হয়তো দূরে থেকেও আমরা অদূরে আর কাছে থেকেও নিছক ‘কাছে’ আবদ্ধ। তাহলে কি কাজের ব্যস্ততা মানুষকে সম্পর্কের পুরাতন ছাঁচ ফেলে নতুনকে আবহিত করে! হ্যাঁ করে তবে পুরাতন ছাঁচে নব নির্মিত করে। নির্মাণ মানে হলে সুন্দরভাবে গুছিয়ে গড়ে তোলা তার মানে এইতো নয় নির্মাণ মানে সুন্দরভাবে সবকিছুকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু উৎসহপ্রবণতাকে মুছে দেওয়া…

রাত ১২.০০টা বাজতে আর ৪ মিনিট‌ দেরী। এবার তুমি আসবে আর জড়িয়ে ধরে বলবে,, “ছন্দি ও ছন্দি প্লিজ রাগ করোনা।‌একটু লেট হয়ে গেল। আজ কয়টা কবিতা আর গল্পের সমাহার করলে নাকি আমার জন্য ভেবে ভেবেই দিনকে‌ পাড়ি দিয়ে রাতকে ডাকলে! আর আমাকে তুমিতো এখন যেতেই দেবেনা কিন্তু আমাকেতো চলে যেতেই হবে।”‌ জানি তুমি আমার কাছে থাকতে চাওনা তবুও হৃদয়ের প্রতি স্পন্দন তোমাকে নিমন্ত্রন জানাতে চায়।
উৎসাহ সবাই বলে আমি নাকি বিধবা তুমি নাকি চলে গেছ আজ ৬ মাস হল। সবাই খুব বকাবকি করে। তাদেরকে আমি বলতে পারিনা তুমি আছো: তোমার বারণ অগ্ৰাহ্য করার ক্ষমতা হয়নি যে এখনো। রাত ১২.০০র পর তুমি যখন আমার কাছে এসে একরাশ নিমিত্ততায় আমাকে তোমার ঘর্মসিক্ত বক্ষকুঠুরিতে স্থান দাও তখন দুধসাগরের পাড় বেয়ে যাওয়া জোনাকিদের মুখ ভেংচি দেখিয়ে একটু গর্বেই জড়িয়ে ধরি। তবে আমার খুব অভিমান হয় কেন সবসময়ের জন্য থাকোনা! কিছু সময়ের জন্য কেন! সূর্যোদয়ের নূতন প্রভার সৃষ্টি হয় তাহলে তুমি এই প্রভাকে নিশকিরণে রাখো কেন সর্বদা! ঘুম ভেঙে যখন দেখি আমার হৃৎস্পন্দন তাদের গতিবিধি থামিয়েছে তখন বুঝতে পারি তুমি আর নেই।‌ জানো উৎসাহ সবাই বলে নতুন জীবন বাছার‌। এ আবার কেমন কথা বলতো! তুমিতো আমার জীবনের পুরোধা। পুরোধায় আবার নতুন,‌ পুরনো কি কথা! আমিতো জানি সকলের প্রতি অভিমানেই তুমি রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে আসো…
সবাই যখন আমাকে বকতো যে পাগলের মতো ‘উৎসাহস্পন্দন’ কেন তোমাকে বলি, তখন আমি একটা কথাই বলতাম ওর প্রকৃত নাম যাই হোক ওর মানবিক নাম ‘উৎসাহস্পন্দন’। ও না থাকলে সাহিত্যে আমার তীব্রতর প্রচেষ্টা জুড়তোনা।‌ তাই রাহুল নয় তুমি সারাজীবন আমার কাছে থাকবে ‘উৎসাহস্পন্দন’ হিসাবে।

এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিভাবে জানিনা,, শুধু একটা ইচ্ছা পূরণ করবে পূর্বের ন্যায় আমার চোখের একফোটা জলকে হাতে নিয়ে আর আমাদের আসন্ন নবজাত শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে রক্তিমাকাশ যখন আচমকায় একটু জোৎস্না এনে দেবে তখন শুধু চিঠির ভাঁজটা খুলে আমার মাথাটা তোমার কাঁধে রেখে একবার চিঠাটা পড়বেতো? তুমি তো আছোই আমার হৃদয় জুড়ে। যদি কেউ পাল্টাতে পারে এই পাতা তাহলে আমার উৎসাহস্পন্দন।। চিঠিটাকে তোমার বাস্তবের এক ছোট্ট পঙক্তিমালায় রাখবেগো??

ইতি-
তুমি রূপী নিঃশ্বাস ছন্দিকা (রিয়া)

তাং- ৯/৮/২০২০

প্রিয় বৃষ্টিমালা – Faiza Habib Nebula

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং-০৪
প্রিয় বৃষ্টিমালা,
আজি ঝরো ঝরো মুখরো বাদল দিনে,
জানি নে,জানি নে
কিছুতে মনো নাহি লাগে না, লাগে না…………
আজকে যখন তোমাকে লিখতে বসেছি তখন আমি গাজীপুরে নানার বৃষ্টি দেখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি বৃষ্টিবিলাসে বসে আছি।সামনে ডায়রির সাদা পাতা আর টিনের চালে বৃষ্টির মূর্চ্ছনা।এ যেন কোনো এক ওস্তাদের হাতের কারুকাজ, এ যেন করুণ এক সানাতুর, নাকি সেতার, জানি না আমি কিন্তু আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কণা থেকে রক্তের প্রতিটি অনু কণিকায় ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র গতিতে।
আমার জানালা দিয়ে দেখা যায় এক বিশাল প্রান্তর যা আজ পানিতে প্লাবিত।এক নৌকার মাঝি বয়ে চলেছে বৈঠা কিন্তু চারিদিকে কেউ নেই।এ মাঝিকে দেখে মনে পড়ে গেল সোনার তরী কবিতাটি….
আমি যখন আমার সেই বৃষ্টিবিলাসে বসে অন্য দিকে তাকাই,তখন গাছের পাতার গায়ে বৃষ্টির পতনের ফলে যে চমৎকার সবুজাভ রং দেখি,বেলিফুলের গন্ধ পাই তা যেন অমূল্য।ফুলভর্তি গাছটাকে যেন সাদা ছোট পায়রার মতো লাগে।কামিনী,হাসনাহেনা,গন্ধরাজের গন্ধে যেমন বিমোহিত হই তেমনি যদি ধূমায়িত এক কাপ চা এর সাথে গজলসংগীত শুনি মনে হয় এ ত্রিভুবনে আমার চেয়ে সুখী আর কেউ নয়।
মাঝে মাঝে টানা বৃষ্টি এক সময় ক্লান্তির আমেজ নিয়ে আসে,তাই তো মন বিরহী হয়ে উঠে।
আজকের এ চিঠি শেষ করছি সেই বিরহী মনের প্রিয় গানের কিছু লাইন দিয়ে,
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো,চলে এসো এক বরষায়………..
ইতি তোমার
বৃষ্টিপ্রেমি

পরম শ্রদ্ধেয় জাতির জনক – suriya nipa sufi

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

পরম শ্রদ্ধেয় জাতির জনক,
সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করবেন। ‘কেমন আছেন?’ প্রশ্নটা অবান্তর কারণ আমার বিশ্বাস, শহীদের আত্মা আল্লাহ্ ‘র কাছে ফিরে গিয়ে জান্নাতি প্রশান্তিতে অবস্থান করেন। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান অনেক ভালো আছেন।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু,
আমার জন্মের অনেক আগেই আপনাকে চলে যেতে হয়েছে এ পৃথিবী থেকে। আপনাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু জ্ঞান হবার পর থেকেই আপনার সাথে পরিচিত হয়েছি মা-বাবার কাছে, জেনেছি বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে আপনার অবিচ্ছেদ‍্য সম্পর্কের কথা। আপনার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হবার মনোকষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যেই আজকের এই চিঠি লেখা। আপনার কাছে এ চিঠি কখনো পৌঁছাবেনা জেনেও লিখছি শুধু জাতীয় বীরকে না দেখতে পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশের উদ্দেশ্যে।

হে বিজয়ী বীর,
মাতৃভূমিকে ভালোবেসে যে স্বাধীনতার ডাক আপনি দিয়েছিলেন তা উদ্দীপনার জোয়ার এনেছিল তের কোটি বাঙ্গালীর প্রাণে। ” এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ” – আপনার বজ্রকণ্ঠের এই আহ্বান ধ্বনিত হয়েছিল বাংলার আকাশে বাতাসে। মনে আক্ষেপ জাগে কেন আমি ছিলামনা তখন আপনার আন্দোলনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশের মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে! সশরীরে উপস্থিত না থেকেও আপনি মিশে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের টগবগে রক্তে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে মিশে ছিল আপনার উদ্দীপ্ত কণ্ঠের বাণী।

আপনার সাহিত‍্যিক সত্তার সাথে পরিচিত হলাম আপনার অমর লেখনী ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘র মাধ‍্যমে। কত দরদের সাথে বন্দীদের জীবণধারাকে লিপিবদ্ধ করেছেন আপনি! ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে আপনি লিপিবদ্ধ করেছেন ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত আপনার জীবণের কথা। আজ আপনি আমাদের মাঝে থাকলে এর সম্পূর্ণ রূপ হয়তো আমরা পেতাম।

১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত‍্যাবর্তনের পর আপনি যেভাবে এই ভাঙাচোরা জাতির হাল শক্ত হাতে ধরেছিলেন তা অতুলনীয়। ধীরে ধীরে গড়ে তুলছিলেন আপনার সোনার বাংলা। কিন্তু কিছু লোভী রাষ্ট্রদ্রোহীর ষড়যন্ত্রের কারণে আপনাকে চলে যেতে হল। নিজের মানুষদের এমন কালো রূপ দেখে আপনার হৃদয়ে তখন রক্তক্ষরণ হয়েছিল, তাইনা?

আপনাকে স্বপরিবারে যারা হত‍্যা করেছিল তারা তো নরকের কীট। বাঙ্গালী জাতির এক কলঙ্কের অধ‍্যায় এটি। জাতি হিসেবে এ দায় আমাদের সবার। আপনার মহানুভবতা দিয়ে আমাদের ক্ষমা করুন।

ইতি
আপনার এক উত্তরসূরী।।

আমার অক্সিজেন- ইনায়াত হাসান ইনায়া

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: নয়

আমার অক্সিজেন,

তুমি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো আমার এই সম্বোধন দেখে…
অবশ্য অবাক হওয়ার ই কথা। কারণ তোমাকে কখনো তোমার উপস্থিতি তে অক্সিজেন নামে সম্বোধন করিনি আমি। কি করবো বলো তুমি কাছে থাকতে তো বুঝিই নি তুমি যে আমার অক্সিজেন! কিন্তু এখন হারে হারে আমি টের পাচ্ছি তুমি আমার কতোটা জুড়ে ছিলে আর তোমাকে ছাড়া আমি কতোটা অসম্পূর্ণ।
আমার বাবা-মা আর তোমার বাবা-মা এই চারজন মিলে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে অন্য একটা নতুন মানুষকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু এটা কি এতই সহজ! ওদের কিভাবে বোঝাই বলো তো, তোমায় কতোটা ভালোবাসি আমি…
তোমার শরীরের ঘ্রাণ ছাড়া আমি ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারিনা, যতক্ষণ পর্যন্ত কাবার্ড খুলে তোমার টিশার্ট,জ্যাকেট,হুডি আর শার্ট গুলো জড়িয়ে ধরে থেকে তোমার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ টা না নিতে পারি ততক্ষণ আমার মনে হয় আমি অক্সিজেন পাচ্ছি না, মনে হয় মরে যাচ্ছি। কেমন যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর এদিকে চারজন বুড়ো-বুড়ি প্ল্যান করছে আমাকে নতুন করে বিয়ে দেওয়ার।
যেদিন আমরা দুজন কবুল বলে একে অপরের সাথে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম, সেদিন থেকেই তো আমাদের মধ্যে একটা অপ্রকাশিত,অলিখিত চুক্তি হয়েছিল শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত একে অপরকে ভালোবেসে যাওয়ার। একে অপরকে ছেড়ে না যাওয়ার। আল্লাহ রব্বুল আলামিন চেয়েছে তাই তুমি আমার আগেই ওপারে চলে গেছো। তাই বলে কি আমার উচিৎ তোমাকে ভুলে গিয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু করার? তোমার সব অধিকার অন্য একজন কে দিয়ে দেওয়ার?

“তুমি তোমার ওয়াদা পালন করেছো। তোমার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তুমি শুধু আমাকেই ভালোবেসে গেছো। এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তুমি শুধু আমার ই ছিলে। তোমার মনে শুধু আমার বসবাস ছিল।”

“কিন্তু এদিকে আমাকে বলা হচ্ছে তোমাকে ভুলে গিয়ে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে,তোমাকে করা ওয়াদা ভুলে যেতে। আমি খুব ভালো করেই জানি যদি আমার আরেকটা বিয়ে হয় তাহলে তোমাকে আমি আর এরকম ভাবে ভালোবাসতে পারবো না। তোমার জায়গাটা তখন অন্য একজনের দখলে থাকবে। আমার রুমে অন্য একজন পুরুষ থাকবে। আমার কাবার্ডে তোমার পরিবর্তে অন্য একজন পুরুষের জিনিসপত্র জায়গা পাবে। আমার অক্সিজেন নামক তোমার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণটা হারিয়ে যাবে।”

আমি তোমাকে দেয়া অঙ্গীকার পালন করতে চাই। আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যেতে চাই ক্বালবি। আমার এবং আমার ক্বালবির মাঝখানে অন্য কেউ আসবেনা, আমি কাউকে আসতেই দেবো না। তাই বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছি একটা বাচ্চা দত্তক নিবো। তাহলে আমারও সময় কাটবে ভালো আর বাবা-মায়ের ও ভালো লাগবে। তখন আর বাসাটা খালি খালি লাগবেনা। আর আমাকেও নতুন করে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা সবার মাথা থেকে বের হয়ে যাবে। কেমন আইডিয়া বের করলাম বলো তো…

আচ্ছা ক্বালবি, তুমি কি আমাকে আর বাবামাকে দেখতে পাও সবসময় ওপার থেকে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়। আমার এই চিঠি কি তোমার কাছে পৌঁছবে? তুমি কি আমার সব কথা শুনতে পাও?
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে মাঝে মাঝে দুইটা লাইন খুব বেশি মনে পড়ে,
“হৃদয়ের লেনাদেনা এই পাড়েতে আর হবে না,
তোমার আমার দেখা হবে ঐ পাড়ে”

এই আশায় ই আমি বেঁচে আছি। কোনোরকমে দিনগুলো পাড় করছি আর ঐ পাড়ে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

ইতি
তোমার ভালোবাসার ত্বাহা

রিয়া খাতুন – প্রিয় সর্বদৃষ্টির পতিতগণ,,

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং – ৩
কলমে – রিয়া খাতুন

প্রিয় সর্বদৃষ্টির পতিতগণ,,
কি বলবো আর কিভাবে শুরু করবো: অবগত নয়।‌ তবে কলমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং কালি ভর্তি করার উদ্দেশ্যে আমাকেতো বলতেই হবে। হ্যাঁ বলতে হবে তোমাদের উদ্দেশ্যে। লেখনী ক্ষুরধারের তাগিদে একপ্রকার…

প্রতিদিন মা যখন রন্ধনশালায় যায় তখন আমি মায়ের ঠিক পাশে বসেই দেখি মা কতটা কষ্টে, ঘর্মমাখা দেহে রান্না করে যাচ্ছে। সময় মতোই খাবার জুগিয়ে চলেছে। দিন- রাতের চক্রাকারে মায়ের পরিশ্রম যেন এক অনাহুত অগ্নিতে বারংবার ঘৃতাহুতি দেওয়ার ন্যায়। চার দেওয়ালের গন্ডীবদ্ধের আবদ্ধতায় স্পর্শ করতে পারিনি তমালির যন্ত্রনার প্রলেপ। ‌সবাই তাকে বারবনিতা বললেও শুধু ভাবতাম এর অর্থ বোধহয় বড্ড দুস্কর। তাই হয়তো সকলেই এই নামটায় টান বসাতে পারে।। সকলেই যোগবিয়োগ আর ভাগের বুলি আওড়াতে পারে।
পরিশ্রম ও উপহাস এবং পরিস্থিতি ও উপমা দুইটিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এক বিষাদের ছাঁয়ায় কিরনমালা চুম্বন করলো। রাত্রি ঘনীভূত মেঘের একজোটের সমাহার রূপ যেন এলোমেলো চুলগুলোকে কিছু আড়াল করছে। হঠাৎ করেই সেইদিন আমার চোখে পড়ে গেল রাজুকে নিয়ে কোলাহল‌। চোর অপরাধে তাকে খুন করা হয়েছে। বারংবার প্রশ্ন জাগছিল শীতের জঠরে মধ্যরাতে চুপিসারে মধু এবং গুড় বিক্রি করে উপার্জনকে কি চোর বলে! প্রকৃতি যদি তাকে চোর বলে উপাধি দেয় তাহলে মানুষতো দেবেই। কারোর দাখিলে না থাকা সত্ত্বেও যদি ধরিত্রীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা গাছদের মানুষ আশ্রয় করে জীবিকার পথ বাছে তাহলে হয়তো তাকে চোর বলে! বারংবার জীবন যেন সংজ্ঞাকে উপসংজ্ঞায় পরিণত করছে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা সব কিছুই জোড়ার জোড়া বানিয়ে রেখেছে।

মায়ের আঁচলে মুখ নামিয়ে ভাবছিলাম তমালির কথা।
“কি রে রিয়া মায়ের আঁচলে মুখ লুকাচ্ছিস! আজ আমার মা নেই বলে নাহলে আমিও তোকে ধরা দিতাম না।” প্রতিটা কথা এখনো ভাসে। সেইদিন এক পড়ন্ত বিকাল থেমেছিল আমার সামনে। বুঝতে পারলাম জীবনে তিনি পরিস্থিতি কিছুটা অদ্ভূত করেছেন বোধহয়! তমালির হাতটা মুঠোয় নিয়ে মায়ের আঁচলে চাপা দিয়েছিলাম তবে পারলাম কোথায় সারাজীবন অনাথিনীর সহায় হতে!

বরাবরের মতো যখন কলেজে যেতাম তখন দেখতাম পথের পাশে কিছু অবলা প্রাণী বসে আছে। কোন পশুর সঙ্গে না তুলনা করলেও তারাও ভোগের স্বীকার অথবা পাশবিকতার খেলায় নিয়ন্ত্রিত। নিজেকে তাদের জায়গায় ফেলতে ইচ্ছা করতো আর মানুষকে কণ্ঠ ভেদ করে এটাই বলতে ইচ্ছা করত,, উপহাস যদি বিজীতের আশ্রয় হয় তাহলে সহায়ও থাকা উচিত তাদের আহ্বায়। উপহাস তারায় করতে পারে যারা যথেষ্ট প্রাপ্যতার অধিকারী। তাহলে বলতে গেলে ঈশ্বর সহায়ের মাধ্যমে উপহাসের যোগ্য করে। আর যোগ্যকারীরা আবার তৈরি করে উপহাসের পঙ্ক্তিমালা ; হাস্যকর!

চিঠির পাতায় ঘোর নেশা পুঞ্জীভূত হয়েছে। চোখটা যেন ইচ্ছা করে ঘুমের রাশকে শক্ত করছেনা!
“তুই অনেক পড়াশোনা করবি আর আমাকেতো বোধহয় কাজ করেই খেতে হবে রে। মামি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। খুব পড়তে ইচ্ছা করে। মাধ্যমিকে লেটার পেয়েছিলাম তাতে আরও পড়ার নেশা বেড়ে গেল তবে জানি আমার পাঠ চুকছে। কয়দিন পর আমার বিয়ে। আচ্ছা রিয়া, বর পড়ালেখা করতে দেবে আমাকে!” তমালিকার হিসাবটা মেলাতে পারলামনা । হয়তো অভাগীরা পরিস্থিতির হিসাবে অথবা পুরুষদের ভাগ-বাটোয়ারার হিসাবে পরিণত হতে হয় বারবনিতায়। তাইতো আজ সে স্থান পেয়েছে বারখানায়।
আমার লেখা চিঠিটা বোধহয় কারোর উন্মেষনাকে উন্মোচিত করবেনা। না পরবে কোন ডাকবক্সে। তবে চিঠির ভাঁজে খাপে খাপে লেখাগুলো হয়তো চাইলেও মিথ্যা হতে পারবেনা। সত্য যদি সুন্দরের জন্য হয় তাহলে তার কোন পিওন লাগেনা আর না লাগে কোন প্রাপক।।

” ‘প্রহসন’ পতিতাদের সৃষ্টক সমাজ।
যাহাদের সংশোধন করিতে নরকূল নারাজ।।”

এই দুই লাইন তৈরি করেছি নিজ অন্তরে। যা প্রকাশে মূল্যহীন তা হৃদয়ে অমলীন। বারখানায় যেদিন তমালিকে প্রথম দেখেছিলাম আর কয়েকজনের মত ধারনা হয়নি কেন আজ চৌরাস্তায় কেন আজ এই অবস্থা! শুধু ভাবছিলাম সেদিন যদি বিয়ের বলিদানে ভাসতে না দিতাম তাহলে হয়তো দুই মুঠো অন্নের জন্য আজ রাস্তায় নামতে হতনা। তাহলে কি পরিশ্রম একবার নোংরামীর উপহাস! কেন কেউ বোঝেনা এই পথটা ছাড়া আর কোন আশ্রয় ছিলনা এই আশ্রয় না থাকলে হয়তো প্রাণটা থাকতোনা। সবাই ইতিহাস রচনা করে তবের ইতি – হাস এই বিশ্লেষণতা কেন কেউ বোঝেনা! আমি আর কি করবো,, আমার দ্বারা যদি সমাজের এই ময়লাগুলোকে স্যানিটাইজ করতে বলা হত তাহলে অন্তত দৃষ্টান্ত হিসাবে না থাকলেও দায়িত্ব পালনে অটুট থাকতাম।

কিছু সময় পর নূতন পঙক্তিমালায় নবপ্রভার সূচনা হবে। প্রতিদিন নতুনের শুভারম্ভ হয়‌ ভিড় জমে সেই পতিতালয়ে। রাজুর মতো প্রায়শই মরছে আর রাতের ঘন আঁধার বারবার তাই প্রমান করছে। চন্দ্রিমাকে ঢেকে দেওয়ার মতো কোন রোদেলা তেজ আসেনি, এসেছে একরাশ মেঘবদ্ধ; সমাহার।

প্রতিটাক্ষন মাকে দেখতে দেখতে পরিস্থিতি যেন সাবলীলতায় আকর্ষন করে। সত্যিই এই পরিশ্রম মায়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েক মা-বোনের প্রতি দ্যাখা যেত তাহলে…….
‘বারবনিতা’ বলে ভনিতা সৃষ্টকদের শুধু বলব তাদের এই বারবনিতার মূল উচ্চারণ হলো ‘বারভনিতা’।তারা ভনিতা করে তারা নোংরামীকে শ্রেয়তায় আনে তবে কোনদিনও বোঝেনা এই ভনিতা কি সত্যিই বারবনিতার অর্থে পড়ে! ছোট্ট ছোট্ট জোৎস্নার আলোয় অন্ধকার নামা অনাথগন, শত রাজুর দল শত পরিশ্রমী হয়েও কিছু পাশবিকদের কবলে নিজের জীবনটা শহিদের খাতায় লেখাতোনা!
অবমাননা যদি আমাদের রক্তের দোষ হয়, ভোগ যদি মনের ফুর্তি পূরণ করে, উপহাস যদি অবহেলায় পতিত করে তাহলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। তবে পরিস্থিতিকে নিজেরা নিয়ন্ত্রন করি তাহলে প্রতিটা পদক্ষেপ অতিক্রম করা সম্ভব।।

পারিনা এই কলমকে ক্ষুরধার করে এক নূতন পরিস্থিতিকে পরিস্থিতিতে আনতে?? পরিশ্রমকে উপহাস করে পরিস্থিতিকে উপমা করে গড়ে তোলাটা কি নিতান্তই সহজ মনে হয়?? তাহলে যাদেরকে নিয়ে এতটা সময় বের করে এইসব উপমা আনি তাহলে সেই সময়টাকে উপমেয়দের কথা একটু ভাবতে পারিনা!

ইতি-
তোমাদের চিন্তারোহী রিয়া

ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গ
১৪.৮.২০২০

হে অপ্রিয় মৃত্যু – Saidul Hasan

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

হে অপ্রিয় মৃত্যু,

‘যারে টানি খুব কাছে
সে রয়ে যায় পাছে,
যারে ঠেলি বহুদূরে
সে সদা সম্মুখে ঘুরে।’
কেউ বলে পৃথিবীটা রঙিন স্বপ্ন, কেউ বলে ঘোর আবার কারো মতে সমরক্ষেত্র। অতি সত্য একটি প্রবাদ আছে ‘জন্মিলে মরিতে হবে’। মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও বর্ণিত আছে ‘ প্রত্যেক প্রাণিই তার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণির জন্যই মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু হতে রক্ষা পাবার জন্য কেউ যদি সুবিশাল আকৃতির মই বানিয়েও সুদূর আকাশের বুকে পাড়ি জমায় কিংবা চাঁদের দেশেও বসতি স্থাপন করে তাহলে তাকেও কোনো একদিন মৃত্যু গ্রাস করবে নিশ্চিত। মানব জীবনের অবসানে যার হাত রয়েছে তারি নাম মৃত্যু। শিশু হতে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও প্রবীণদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। তবে মৃত্যের সময়টা আমাদের নিকট সুপ্ত অবস্থানরত। যেকোনো সময়ে হানা দিতে পারে এই স্বজন হারানোর হাতিয়ার।
প্রতিটি মানুষ তার জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলতে চাই। জীবনে সংগঠিত ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে তাকেও রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। প্রকৃতির পরিক্রমায় তাকেও সুখের স্বপ্ন দেখতে হয়। সংসার রণক্ষেত্র। জীবনে নানা সংগ্রাম করে সফলতা অর্জন করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমে যেমন সফলতা আসে তেমনি হওয়া যায় অনন্য মানব। পৃথিবীর বুকে যার রেশ থেকে যায়। আমরা পৃথিবীর অপরূপা সৌন্দর্যের মোহে পড়ে ভুলে যাই চিরসত্য মৃত্যুকে। ব্যস্ত হয়ে পড়ি দুনিয়ার সব কাজকর্মে। মনের মাঝে কখনো মরণের ভয় আসতেই শাইতান এসে বাঁধা দেয়।

একজন মানুষের কাছে তার জীবনটা একটি সুরভিত ও সুসজ্জিত ফুলের বাগানের সামিল। সে তার এই বাগানটাকে ছোট্ট থেকে বৃহৎ পরিসরে ছড়াতে বা বানাতে চায়। বাগানে সে নানা রঙের ফুলের গাছ লাগায়। নিয়মিত পুষ্পের গাছের নিচে জল ঢালে। পরিচর্যা করে। বাগানে যতসব আগাছা জন্মেছে সবগুলোই সে উপড়ে ফেলে। সর্বোপরি সে ফুলের বাগানটাকে খুব সুন্দর ও আগাছামুক্ত দেখতে চায়। কোনো সময় পোকার উপদ্রব হলে সে নানা রকম ঔষধ স্প্রে করার মাধ্যমে সেগুলো মেরে ফেলে। আস্তে আস্তে গাছগুলো বড় হয়। তারপর ফুলের গাছগুলোতে ফুলের মুথা বা কলি ধরে। ধীরে ধীরে কলিরা ফুটতে শুরু করে। সেই দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর ও নয়নাভিরাম। বাগানের মালিকের বদনে তখন এক চিলতে মিষ্টি হাসির দেখা মেলে। এতোদিনের সকল যাতনা ও পরিশ্রমের ফল আজ তার সামনে ফুটে আছে। সার্থকতার বহিঃপ্রকাশ তার মাঝে ফুটে উঠে।
কলিরা তখন পূর্ণ পুষ্পে পরিণত হয়। ফুলগুলো বাহারি রঙের। বাগানের মাঝে গিয়ে কেউ বাগানের চারপাশে চোখে বুলালে তার মনে হবে সেই যেনো ফুলের রাজ্যে দাড়িয়ে, সেটা যোনো স্বর্গীয় উদ্যান। এবার বাগানের মালিক ভাবতে থাকে এতো ফুল সে কি করবে! তৎক্ষণাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসে কিছু ফুল প্রিয়জনদের উপহার প্রদান করে বাকিগুলো বেঁচে দিতে হবে। এভাবে দিন, সপ্তাহ, মাস এবং বছরও কেটে যায়। প্রতিবারই ঘটে সে একই ঘটনা। তবে কোনো এক সময় ফুলের বাগানে গাছগুলোর পাতা ঝড়ে পড়ে।

ধীরেধীরে শুকাতে শুরু করে গাছগুলো। একসময় হয়ে যায় প্রাণহীন। তখন আর মালিকের সেসব গাছ কাজে লাগে না। গাছগুলো সাফ করে ফেলো বাগান হতে। বাগানটাতে গাছগুলো হয়ে যায় বিলীন। বাগানের সৌন্দর্য ও রূপের বিণাশ ঘটে। আবার নতুন ফুলের চারা রোপন। এভাবেই হারিয়ে যায় ফুল, ফুলগাছ। মানুষের জীবনটাও ঠিক তেমন। সৌন্দর্য ও রূপের বড়াই বড় হওয়ার সাথে সাথে হৃাস পেতে থাকে। হঠাৎ ঝড়ে যায়। মৃত্যুর কবলে পড়ে তাকে পাড়ি দিতে আকাশের দেশে। তখন তার রূপ-লাবণ্য, অর্থ-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি কোনো কাজে আসে না। সেইগুলো অনর্থক হয় মৃত মানুষটির জন্য। তবুও তো মৃত্যু, তোমার কথা না ভেবে আমি জড়িয়ে পড়ি নানা অন্যায় ও অবিচারে। লিপ্ত হই অনৈতিক সব কাজকর্মে। ভাবনায় আসে না “আমাকে তো মরতে হবে, জীবনের প্রত্যেকটি কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে সেই মহান রবের হাশর মাঠে। তবে কেনো আমি অন্যায় কাজে সমর্থন দেই? পাপের রাজ্যেয় কেন হাবুডুবু খাই? কেন জালিমের বিরুদ্ধে রুখতে জানি না?” প্রশ্নগুলো আমার মনে জাগে না। আমি প্রতিনিয়ত তোমায় ভুলে দুনিয়ার রং তামাশায় মেতে রই। চারদিকে মৃত্যের মিছিল তবুও আমার মনে মৃত্যুর ভয় সংঞ্চারিত হয় না। প্রতিদিন কবর আমার ৭০ বার ডাকে, ডাকে আমার কঠিন হৃদয় গলে না। আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হই। পৃথিবীর সাজানো নিয়মকানুনে ব্যস্ত সময় পার করি। সঠিক কথা বলার বেলায় নিজ মুখ চেপে ধরি।

হে মৃত্যু,
আমার এই সুন্দর ও সুঠাম দেহ কোনো একদিন এই পৃথিবীর বুক হতে হারিয়ে যাবে শুধু তোমার কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যুর পরে আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জনরা আমায় এক অন্ধকারময় গর্তে ফেলে রেখে আসবে। রাখার কিছুদিন পর আমার নখগুলো ঝরে যাবে, দাঁতগুলোও পড়ে যাবে, শরীরের গোস্তগুলল খসে পড়বে, পোকার উপদ্রব হবে। তখন কি মূল্য রবে এই সুশ্রী দেহের? শুধু তোমার স্পর্শের ফলেই আমার হবে এমন করুণ পরিণতি।
পৃথিবীর মানুষগুলো মরতে চায় না। তারা শুধু বাঁচার স্বপ্ন দেখে। কিভাবে বাঁচবে, কি কি করবে এসব নিয়ে থাকে তাদের বৃহৎ পরিকল্পনা। মৃত্যু, তোমাকে যে ভীষণ ভয় পায় মানুষগুলো। তাদের কেউই মরতে ইচ্ছুক নয় তবে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে একে-একে সবাইকেই রবের দরবারে পাড়ি দিতে হয়। মানুষগুলো তাদের পরিবার, পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের খুব ভালোবাসে। তাদের মায়া ত্যাগ করে একলা হয়ে সঙ্গিহীন কবর পথের যাত্রী হতে তাদের কেউই চায় না। এমন চিন্তা কখনো মাথায় এলে দু’চোখ জুড়ে শুধু অশ্রু ঝরে। তখন ওলটপালট হয়ে যায় লক্ষ্য ও পরিকল্পনা। মগ্নে থাকার চেষ্টায় প্রভুর দেওয়া বিধিবিধান পালনে।

হে মৃত্যুবাণ,
তোমার স্পর্শে আসতে না চাইলেও তুমি আমার সম্মুখ জুড়ে আছো। তোমার কবল হতে বাঁচার চেষ্টায় কখনো সফল হতে পারবো না এবং অতিতে কেউ পারেননি, ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না। তবে আমার আবদার, আমার সাক্ষাৎ যেনো তোমার সাথে রমজান মাসের কোনো এক জুমাবার দিনে রবের চরণে থাকাকালীন সময়ে হয়।

ইতি,
তোমার পথের এক যাত্রী

অজ্ঞাতপাড়া, অচিনপুর। – Momin Shuvo

0

#গল্প_পোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং:- ০২

[খামের উপরে লেখা :- আমার এই চিঠি ডাকঘরে যাবে না। হয়তো মৃত্যুভয়ে কেউ ছুঁবে ও না। তবুও লিখছি…! যদি কোন সাহসী ব্যক্তি পারে, সে যেন সুহাসের আম্মুর ঠিকানায় আমার চিঠিটা পাঠিয়ে দেয়।]

১৩-০৮-২০২০
অজ্ঞাতপাড়া, অচিনপুর।

প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী,
ঘড়ির কাটায় ঠিক বারোটা বাজে এখন। রাত বারোটা। তবু অন্ধকার এই গৃহে আমার সেটা অনুভব হয় না জানো? আমার কাছে রাতদিন সমান মনে হয়। হবেই বা না কেন? সেই যে বাইরের দরজায় খিল এঁটে দিয়ে চলে গেলে আর তো এক মূহুর্তের জন্যেও আকাশ দেখিনি আমি। জানো, আমার প্রায় মনে হয় এই বুঝি দরজার বাইরে কারো পদধ্বনি শুনতে পাবো। এই বুঝি কেউ চেঁচিয়ে বলবে, “অফিস যাওয়ার সময় হয়েছে যে কারো কী খেয়াল আছে?” কল্পনায় শুনতে পাওয়া সেই শব্দেরা আমার কর্ণকুহরে পৌঁছায় না। আমি অধির আগ্রহে তবু অপেক্ষা করি। দেয়ালে হেলান দিয়ে মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রই। যেন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এই চার দেয়ালে আটকে আছে সেও। জীবনচক্র যেন এই গণ্ডির ভিতরেই ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে ঝুলে থাকা ফ্যানের মতো। জানো, সুহাসের আম্মু? এই সংসার নিয়ে যখন ভেবে মরতাম। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতাম। তখন আমার মনে হতো প্রিয়জনদের জন্যেই তো করছি। তোমার জন্য আর আমাদের সুহাসের জন্য। আমার খারাপ সময়টাতে আর কেউ না থাকুক তোমরা ঠিক পাশে থাকবে। কিন্তু, দেখো.. আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে তোমরা দূরে চলে গেলে। মরণব্যাধি ভাইরাসের সাথে আমাকে যে একাই লড়তে হচ্ছে। এই এতটুকুন ভরসা দেওয়ার মতো কেউ নেই আমার। কেউ নেই যে বলবে, “একদম চিন্তা করবে না, ক’দিন বাধেই সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি।” জানো পল্লবী? গরম পানি কিংবা লেবুর চা বানাতে গিয়ে আমার হাত কেঁপে উঠে। শরীরে জোর পাই না তবু, নিজের জন্য খাবার বানাতে হয়। প্রথম প্রথম খুব চেষ্টা করেছি। আমি নিজেকে ভরসা দিতাম, তোমরা ঠিক ফিরে আসবে। তোমাদের জন্য আমাকে সুস্থ হতেই হবে। গত দুইদিন ধরে আর কোনো চেষ্টা করছি না। হাল ছেড়ে দিয়েছি আমি। কাদের জন্যেই বা বেঁচে থাকবো বলো? বেঁচে গিয়ে তোমাদের স্বার্থপর বানানোর ইচ্ছে নেই আমার। তার চেয়ে বরং…। তোমরা চলে গেলে আজ ৭ দিন হলো! ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে জানো? হয়তো আর বেশি লিখতে পারবো না। প্রিয় সুহাসের আম্মু, “মৃত্যু আমার প্রাণ কেড়েছে সপ্তাহ খানেক পরে। তার আগেই মরেছি আমি, যেদিন গেলে ছেড়ে।” শেষ বেলায় একটাই অনুরোধ, আমার সুহাসকে দেখে রেখো। নিজের ভালোর জন্য আমায় ছেড়ে গেলে, ওকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ…

ইতি,
মৃত্যুপথযাত্রী

প্রিয় গল্পপোকা

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিয় গল্পপোকা,
পড়ন্ত বর্ষার সদ্য ফোটা কদম, কেয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে তোমায় লিখছি আজ। ভালোবাসাময় তোমার গৌরবান্বিত পদচারণা। কেমন আছো তা জিজ্ঞাসা করার আবশ্যকতা মনে করি না। কারণ অসংখ্য নবীন কিংবা প্রবীণ লেখক এবং পাঠকের মিলনমেলা তুমি। তোমার ভালো থাকাকে ঘিরেই তো আমাদের ভালো থাকা।
তুমি কি জানো কত নবীন লেখক তোমার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে সম্মুখপানে? শুধু তা-ই নয় অনেকের লেখালেখির সূচনায় তোমার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তোমার পথচলার সূচনা থেকে তোমার পাশে থাকতে পেরে যেন আমি তোমার অনন্য গৌরবের এক ভাগিদার। সেই সূচনালগ্ন থেকেই দেখছি তোমার গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলা। কখনো হোঁচট খেয়ে পড়তে হয়নি। কারণ তুমি কাজ করো অন্যের তরে। তোমার প্রতি রয়েছে হাজারো মানুষের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
তোমার তরে বলতে ইচ্ছে হয়-
ভ্রমর যেমন পরাগায়নে পুষ্প ফুটায়,
নবীন লেখকের সূচনা তোমার ছোঁয়ায়।

বর্তমানে অনলাইন জগতে যখন চলে গ্রুপ নিয়ে স্বার্থের খেলা সেখানে তুমি খেলছ সাহিত্য নিয়ে। তোমার মর্মে ও চিত্তে যেন শুধুই শব্দের খেলা। লেখকের তরে দিয়েছ তোমার দ্বার উন্মোচন করে। তোমার সদস্যদের প্রতি রাখোনি তুমি নিজ স্বার্থের শক্ত শৃঙ্খল। বরং দিয়েছ স্বাধীনভাবে চলার সকল সুবিধা।

তোমায় নিয়ে বলতে চাই-

গল্প পোকা তুমি নও শুধুই যে অনলাইন গ্রুপ,
তুমি যে লেখক/লেখিকা আর পাঠক/পাঠিকার সমাবেশ।
একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকে সবাই,
নাই কারো মাঝে কোনো হিংসা বিদ্বেষ।

প্রতি সপ্তাহে গল্পপোকা তুমি সকলের তরে,
করো সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন।
কেউ বা লিখে আবার কেউ বা পড়ে,
এই প্রতিযোগিতায় করে অংশগ্রহণ।

লেখক/লেখিকা তাদের সেরা লেখা দিয়ে,
প্রতিযোগিতা হতে অর্জন করে পুরষ্কার,
পুরষ্কার দিয়ে দাও তাদের যোগ্য সম্মান।
অনুপ্রেরণা পায় তারা আরও ভালো লেখার।

পাঠক/পাঠিকা বাদ যাবে কেন?
তাদেরকেও দাও তুমি যোগ্য অধিকার।
গল্প/কবিতায় গঠনমূলক মন্তব্য করে যারা,
তারাও পায় গল্প পোকার পুরষ্কার।

অনলাইন সাহিত্য জগতে লেখক/লেখিকার জন্য
গল্প পোকা অনন্য এক প্ল্যাটফর্ম,
যদি কারো সমস্যা বা থাকে কোনো জিজ্ঞাসা,
তাদের জন্য আছে গল্প পোকা ডট কম।

তোমার নিঃস্বার্থ অবদান তোমাকে একদিন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সেরা অবস্থানে নিয়ে যাবে সেই কামনা করি এবং সেই দিনটি দেখার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

শুভকামনায়
তোমার এক ক্ষুদ্র শুভাকাঙ্ক্ষী
অনন্যা

আমার সবচেয়ে প্রিয় তুমি – Meheyrun Nessa Hitoyshi

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

আমার সবচেয়ে প্রিয় তুমি,
তোমার মনে পরে সেই দিনের কথা? মাঘ মাসের সেই হাড়কাঁপানো শীতের মাঝেও সেদিন কুয়াশাকে ফাঁকি দিয়ে সূয্যিমামা উঁকি দিয়েছিলেন! লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখতে গিয়ে ধরা পরে গেলাম সেদিন। ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরতেই তুমি আমার হাতে গুঁজে দিয়েছিলে ছোট্ট একটি চিরকুট আর একটা বাক্স। ধরা পরে যাওয়ায় সেদিন লজ্জায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।
তোমার চিরকুটে ছিলো ছোট্ট একগুচ্ছ আবদার। তুমি চেয়েছিলে তোমার দেওয়া লাল রঙা শাড়ি আর কাচের চুড়িগুলোতে নিজেকে সাজিয়ে যেন তোমার সামনে দাঁড়াই।
মনের কোণ থেকে লুকিয়ে রাখা ভালোবাসাগুলো যেন সেদিন দানব হয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছিলো।

তুমি আমার জীবনে এসেছিলে দমকা হাওয়ার মত। অদ্ভুত ভাবে আমার জীবনে এলে, ঝড়ো হাওয়ার মত আমার আমিকে এলোমেলো করে দিয়ে গেলে।
তুমি এসেছিলে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমার ভালো থাকার নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে। যাতে সাজানো ছিলো আমার বদ্ধ জীবনটাকে খোলা আকাশে মেলে ধরার মত সুখ।

তোমার দেওয়া একগুচ্ছ আবদার রেখে তোমার মনের মত করে তোমার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম কদিন পরেই।
মনে আছে তোমার সেদিনটার কথা? যেদিন তুমি আমার কাছ থেকে আমাকে চেয়ে নিয়েছিলে? আর তোমাকে আমার করে দিয়েছিলে? তুমি আর আমি মিলে সেদিন হয়েছিলাম আমরা!

আমার প্রতিটি মুহূর্তকে খুশিতে মুড়িয়ে রাখার বিশাল দ্বায়িত্বটা যেন তুমি কখনোই ভুলতে না। প্রচন্ড ঘরকুনো আর চুপচাপ সেই আমিটাকেও তুমি হাসতে শিখিয়েছিলে, খোলা আকাশের সেই মুক্ত বাতাসটুকু উপভোগ করতে শিখিয়েছিলে৷ বৃষ্টি নামলে প্রতিটি ফোঁটা থেকে ভালবাসাটুকু নিজের করে নিতে শিখিয়েছিলে। আমার সেই অজানা আমি’টাকে চিনিয়েছিলে।
তোমাকে কখনো গুছিয়ে চিঠি লেখা হয়নি। গুছিয়ে ভালোবাসার কথাগুলো বলা হয়নি। আমার সব না বলা কথাগুলো তুমি আপনাতেই বুঝে যেতে।

তোমার উপর আজ ভীষণ অভিমান হয় জানো? হাজারো অভিযোগের ডালি সাজিয়ে বসে থাকি তোমার শেষ স্মৃতিগুলো আকঁড়ে ধরে৷ আমাকে এপাড়ে ফেলেই শুধুমাত্র রোড এক্সিডেন্টের অজুহাত দিয়ে তুমি ওপাড়ে চলে গেলে। হাসিগুলো আজ হারিয়ে গেছে কোন মেঘের আড়ালে। খোলা আকাশে আজ আর সেই মুক্ত বাতাস নেই। ‘আমাদের’ থেকে তুমি স্বার্থপরের মত তোমাকে নিয়ে একাই চলে গেলে।

তুমি জানো! এখন প্রায়ই তোমার জন্য চিঠি লিখি। খুব গুছিয়ে। তোমাকে না বলা হাজারো ভালোবাসার কথাগুলো! সেগুলোও লিখি চিঠিতে। কিন্তু তোমাকে পাঠানোর মত কোনো ডাকবাক্স যে আমার জানা নেই!
তোমাকে গুছিয়ে লেখা চিঠিগুলোর জন্য হয়ত একদিন আমিই সেই ডাক বাক্স হব। হয়ত সেদিন আবার আমরা এক হবো৷ ওপারেও যে আমার দ্বায়িত্ব শুধু তোমাকেই নিতে হবে। কী! নেবে তো?
ইতি তোমার,
তুমি!

লেখনিতে – মেহেরুন নেছা হিতৈষী