Sunday, August 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1960



প্রিয় বাবা – Nadia sultana

0

#‍‍গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগীতা_২০২০
চিঠি নং-০১

প্রিয় বাবা,
বাবা পুরো একটা বছর কেটে গেল তবু তুমি এলে না। তবে জানো তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি একটুও ক্লান্ত হয়নি। কেন জানো! আসলে আমার বন্ধুদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। ওরা ওদের বাড়ির লোকের কাছে শুনে আমায় বলেছে, তুমি নাকি আর কোনও দিন ফিরবে না কারণ নাকি তুমি চলে গেছো না ফেরার দেশে ।ওদের কথা শুনে আমার হাসিই পেয়ে গিয়েছিল। আমি জানি তুমি ফিরবে, ফিরবে , ফিরবে। তুমি করোনার প্রতিষেধক নিয়েই ফিরবে আমার দেশকে তুমি সুস্থ করে তুলবে ।
তুমি আমায় একটা গল্প বলেছিলে মনে আছে! গল্পের শেষে বলেছিলে, তুমিও ওই গল্পের নায়কের মত একটা দেশ খুঁজে বের করবে সেখান থেকে তুমি করোনার প্রতিষেধক নিয়ে ফিরবে। জানি ওমন একটা দেশ খুঁজতেই তুমি গিয়েছ।

জানো ক’দিন আগেই আমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানের শেষে মাকে একটা মূর্তি দেওয়া হল, মা কাপড় দিয়ে চোখটা মুছে ছিল। মাকে কিছু বলতে খুব জোর করল ওরা। মা কিছু বলতে পারল না।
আমায় দেখে সবাই মুখ দিয়ে এমন একটা আওয়াজ করতে লাগল যেন আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মাইকটা আমার সামনে দিলে আমি বলতাম আমার বাবা হারিয়ে যায়নি, খুঁজতে গেছে। খুঁজতে গেছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, আর আন্তরিকতাকে। এ কথাটা কেন মনে হল জানো? তুমি চলে যাওয়ার পর টিভিতে যতবার তোমার আর করোনার প্রতিষেধকের কথা দেখিয়েছে ততবার বাড়ির ফোনটা বেজেছে, কলিংবেলে আওয়াজ হয়েছে। সবাই এসে মাথায় হাতও বুলিয়েছে। কিন্তু তুমি শিখিয়েছিলে না, আসল ভালবাসা আর মেকি ভালবাসার ফারাক কীভাবে ধরা যায় সেই পদ্ধতিটা। তাতে করে বুঝে গেছি ওরা ঠিক ভালবাসে না। তুমি থাকলে তুমিও এমনটাই ভাবতে….
দেখো তোমায় আর একটা কথা বলতে ভুলে গেলাম তুমি চলে যাওয়ার পর মা ক টা দিন কিচ্ছু খায়নি। টিভিতে, কাগজে, ম্যাগাজিনে কটা দিন শুধু তোমার আর ওই প্রতিষেধকের কথা। তারপর আস্তে আস্তে সবাই ভুলে গেল। মা একটা চাকরি পেল। মাঝে আরও আপন মানুষ হারিয়ে গেলো, তখন আমাদের বাড়ির সামনে ক দিন ক্যামেরার ভিড় ছিল, তোমার কথা হচ্ছিল, মা ইন্টারভিউও দিল। তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এবার আসবে। কিন্তু না…এবারও তুমি এলে না।
ওইদিন মাও বলে দিলো তুমি চলে গেছো না ফেরার দেশে তোমাকে খেয়ে নিয়েছে প্রানঘাতী করোনা। আমি মায়ের সঙ্গে তর্ক করেছিলাম। মা তখন চুপ করেছিল।

সবাই আস্তে আস্তে ভুলে গেল। জানি সবাই ভুলে যাবে, শুধু আমি ভুলব না।
স্কুলে একটা রচনা লিখতে দিয়েছিল তুমি কী হতে চাও এটা নিয়ে। আমি লিখেছিলাম বড় একজন ডাক্তার এবং গবেষক হতে চাই। কেন জানো! তুমি যেটা পারোনি আমি সেটা করে দেখিয়ে দিবো বাবা,দেখিয়ে দিবো আমি তোমার সন্তান। এখন খুব মন দিয়ে পড়ছি। ডাক্তার হতেই হবে।

তোমায় একটা মিথ্যা কথা বলেছি। চিঠির শুরুতে বলেছিলাম না, বন্ধুরা তুমি আসবে না বললে আমার হাসি পায়, ওটা মিথ্যে কথা। আসলে আমার কান্না পায়।

এখন ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে মাঝে মাঝে শুনতে পাই না তুমি আসবে শুধু শুনতে পাই আসবে না, ধ্বংস হয়ে গেছে, সবাই মারা গেছে। বাবা তুমি ফিরে এসো, এসো প্লিজ। আসার সময় কিচ্ছু আনতে হবে না।
ঠিকানা জানি না তাই লেখাটা নৌকা বানিয়ে জলে ছেড়ে দিলাম। আমি জানি লেখাটা ভেসে ভেসে তোমার কাছে যাবে। তুমি পড়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ো। আর হ্যাঁ মাকে বলো না আমি তোমায় চিঠি লিখেছি, তাহলে খুব রেগে যাবে। মা বলে বাবার কথা সব সময় ভাববে না।

ইতি- প্রিন্স

#কলমে_নাদিয়া সুলতানা

প্রিয় বাবা – Shakib Shahriar Prio

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিয় বাবা,
তোমার মনে পড়ে? মায়ের যখন বিয়ে হয়, তখন তাঁর বয়স ১৭। তোমার ২৫।
লং ডিসটেন্সে কেন বিয়ে, এই প্রশ্নের উত্তর আমি বড় হবার পরেও তোমাদের দিতে শুনেছি। আমার নানাবাড়ি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের তিন জেলার একটায়, নীলফামারী জেলায়, আর দাদাবাড়ি মাগুরাতে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল।

আমি যখন জন্মগ্রহণ করি, তখন মায়ের বয়স ১৯। জন্মের পর থেকে প্রায় ৪-৫ বছর আমি নানাবাড়িতেই ছিলাম।
শুনেছি, অনেকে জিজ্ঞেস করত, ওর বাবা কই? আসেনা?

অথচ তুমি আসতে মাঝেমধ্যেই। তিস্তা ব্যারেজের ওখানে ডালিয়ায় থাকতে তুমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডে।
কিন্তু মানুষজন দেখা হলেই জিজ্ঞেস করত, আমার বাবা আসে কি না!
আমার মাকে জিজ্ঞেস করার সাহস করত না। কিন্তু আমি নাকি অন্যের কোলে থাকলেই এই প্রশ্নের আলোকপাত।

বড় হয়ে আমি জানি। এই প্রশ্নের ভাবার্থ আর আক্ষরিক অর্থ এক নয়।
ভাবার্থ হল, ‘আসে কি না’ তা জানা নয়, বরং ‘তুমি আমাদের কবে নিয়ে যাবে’ – এটা জানার চেষ্টা করা।

অথচ তুমি তখন জীবনযুদ্ধে লড়ছো। তুমি সেসময় সরকারি চাকরিতে জুনিয়র। কয়েকজন কলিগ নিয়ে একসাথে থাকা আর বুয়ার রান্না করা ভাত-ভাজি খাওয়া ছিল তাঁর জীবনের অংশ। ভার্সিটিতে উঠে আমি বুঝেছি, এই ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। অথচ ভার্সিটির হলে খেতে আমাকে বাজার করতেও হয় নি, ডাইনিং ছিল। কিংবা আরো ভালো কিছু খেতে ক্যান্টিন, হোটেল ছিল। এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ছিল। তাছাড়া তো আছে নানান কিছু। টিভি রুম, কমন রুম, এদিকে ওয়াইফাই আর ল্যাপটপ।
এরপরেও আমার মনে হয়েছে, কত কষ্ট, জীবন কেন এমন – এইসব হাবিজাবি চিন্তা!

কিন্তু আমার বাবা এত বড় পিছুটান রেখে আর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কিভাবে দিন কাটাত, সেটা ভাবলে এখন বুঝি, আমার কষ্ট কোনো কষ্টের ডেফিনিশনেই পড়তে পারে না। এসব ব্যাপারকে সবাই হয়ত তখন বোঝার চেষ্টা করত না, তাই ওভাবে প্রশ্ন করতে বাঁধত না। তাই এলাকাবাসীকেও আমি দোষ দেই না। এসব প্রশ্ন করা মানুষ স্বাভাবিক চোখেই দেখে। কেউ কি শুনতে চায়, পেছনের গল্প কী!
….
তোমার ডায়েরীতে জেনেছি, রাজশাহী ভার্সিটিতে টিকেও তুমি কেন ভর্তি হল না, সেই গল্পটা অনেক ইন্টারেস্টিং, একইসাথে প্যাথেটিক। টিউশনি করাতে হবে বলে সে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হলে তুমি। তখন জগন্নাথ ছিল কলেজ(বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়)। এরপর তুমি ঢাকায় সে টিউশনি করাতে, আর সেই টাকা মেজো, সেজো চাচার জন্য পাঠাতে। এদিকে চাচারা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তখন ব্যবসা করে, এবং বিয়েও করে ফেলে তাঁদের বড় ভাইয়ের আগেই। এখন তাঁদের অনেক বড় বড় ব্যবসা। মাগুরা শহরে মার্কেট, গোডাউন। সেজন্য তাঁদের পরিশ্রমকেও আমি শ্রদ্ধা করি। সবার দ্বারা চাকরি হতে পারে, কিন্তু ব্যবসা হয় না। তাঁরা তো সেটা করেছে।
কিন্তু সেসব করার পর কি করেছে? আমার দাদার সকল সম্পত্তি দখল করেছে। এমনকি তোমার অফিস থেকে লোন নিয়ে ১১০ শতক জমি কেনা, সেটাও দখল করে রেখে পাট উৎপাদন করে। গ্রামের মানুষ জানে, ওটা তাঁদেরই জমি, তোমার নয়। আর ফসলি জমিতে কেউ কাগজপত্র দেখে না, দেখে কার দখল আছে, জমি তার। এদিকে গ্রামে কখনো মিটিং-সালিশ বসে না। ভূমি অফিস কখনো চেকিং করে যায় না। কারণ, টাকাপয়সাওয়ালাদের বিরুদ্ধে কোথাকার তাঁদের বড় ভাই, আমার বাবা, গভমেন্ট জব হোল্ডার, নিজের ১১০ শতক জমির দখল পাচ্ছেনা, সেটা নিয়ে কার কি দায়!
….
পৃথিবীটা এমনই হয় বাবা, খুব একপেশে। কেউ রক্ত পানি করে টাকা আয় করে, আর সেই টাকা দিয়ে অন্যরা সুখ লাভ করে।
তবে সুখ লাভ করাটাও একটা আর্ট, আমি এটা মানি। সবাই কি আর আর্টিস্ট হতে পারে?
আমি তাই জীবনে লক্ষ্য নিয়েছি শুধু তোমার জন্য আর্টিস্ট হবার, নিজের জন্য নয়। যদিও সেসব তোমাকে আমি বুঝতে দেই না। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও কেন প্রশাসনে যাওয়ার টার্গেট করেছি, তা দুটো অদ্ভুত কারণে, একটা নিজের প্যাশন, আর আরেকটা অতীতের হিসাব-নিকাশ। আল্লাহ চাইলে তোমার জন্য যুদ্ধে জিতব, অথবা হারব। তবে যুদ্ধটা করবোই, বাবা।
….
“বাবা দিবস” এর সকালে তোমার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি নি। এজন্য যথেষ্ট লজ্জিত বোধ করছি। তোমাকে চমকে দেয়া হল না কিছু করে। কিই বা চমকে দিতাম সেই লোকটাকে, যে লোকটা সারাজীবন যুদ্ধ করে চমকে দিচ্ছে আমাকেই।
তাই এই দিনেও ঘুম থেকে উঠে দেখেছি, দুই ভাইবোনের জন্য কোণ আইসক্রিম রাখা। আর তুমি কিছু খেয়ে চলে গেছ রোজকার সরকারি চাকরিটায়। এদিকে আমি নির্লজ্জ ঘুম থেকে ৯টায় উঠে নির্লজ্জের মতই খাওয়াদাওয়া করেছি। তুমি কখনো বলো নি আমাকে ‘ভালোবাসি’, কিন্তু আমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞাটাই তো তুমিই।
….
‘ফাদারস ডে’ টা বাবারা তেমন একটা পালন করে না, কিংবা অনেকে মনেই রাখে না। তুমিও রাখো না, বা রাখলেও বলো না।
কেন রাখার দরকার নেই, আমি জানি।

কারণ যোদ্ধাকে কি মনে করে দিতে হবে যুদ্ধের কথা?

কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হয়। মনে রাখা দরকার। কারণ, আমরা অকৃতজ্ঞ এবং ভুলোমনা। আর অকৃতজ্ঞদের অবশ্যই কৃতজ্ঞতার প্রাকটিস করতে হবে। নইলে অভ্যাস হবেনা। যে দায়িত্ব বাবারা সারাজীবন পালন করে আসছে, তা যদি আমরা ভুলে গিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাই?

পুরনো ইতিহাস ভুলেও তো যেতে পারি একসময়, তাই না?
এইজন্যই মনে রাখাটা দরকার।

“হ্যাপি ফাদারস ডে, বাবা”।
শুধু এটাই আফসোস, আমার কোনো চিঠিই তোমার পঠিত নয়। আমার কাছেই রয়ে যায়।
তাতে কী!
চিঠি দিয়ে আর কী হবে? যখন হৃদয়েই এঁকে রেখেছি তোমার জন্যে ভালোবাসা।
পৃথিবীর বুকে আমি হতে চাই তোমার সবচাইতে বড় শক্তি।

ইতি-
তোমার পুত্র।

প্রিয় সুনন্দ – সবুজ আহমেদ মিজান

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিয় সুনন্দ,
কেমন আছ? অনেক বছর পর তোমাকে এভাবে দেখবো কখনো ভাবনায় আসেনি। বড্ড বদলে গেছে তোমার আগের সেই সুদর্শন চেহারাটা। যে মোহিত চেহারায় ডুব দিয়ে আমি প্রেমের কাব্য সাজাতাম স্বপ্নে, ভাবনায়। সামনে এসে আচ্ছন্ন হতাম নিবিড় সম্মোহনে। অবশ্য আমিও কম বদলে যাইনি। তরুণী বয়সের প্রাণোচ্ছল ছাপ কবেই মিইয়ে গেছে অবয়ব থেকে। বড্ড ফুরিয়ে যাচ্ছি দিনদিন। বাম চোখটাতে আজকাল একটু ঝাপসা দেখি। তোমার মতো আমাকেও চোখে চশমা পরতে হয় এখন। শরীরের চারদিকে জরাজীর্ণ রোগের বাসা। বয়সের দোষ বুঝলে। সব বয়সের দোষ।
.
সুনন্দ, সেদিন বাজারের সামনে স্কুলের গেইটে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, সাদা পাঞ্জাবীতে চিনতে যদিও একটু সময় লেগেছিল। কিন্তু হৃদয়ে একসময় যে মানুষটা দাপট নিয়ে ঘুরে বেড়াত, তাকে চোখদুটো চিনতে না পারলেও মনটা একচিমটি ব্যথায় ঠিকই চিনিয়ে দিয়েছে। বড্ড সংসারী হয়েছ তুমি, দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। হাতে বাজারের ব্যাগ, আঙুলে আবদ্ধ বড় ছেলের কন্যা। মনটা ভরে গিয়েছিল খুব জানো। যে মানুষটা আমার বিয়ের কথা শুনে একদিন নিজেকে চিরকুমার করে রাখার একরোখা শপথ করেছিল, সে’ই এখন সংসারের কর্তা। কত দায়িত্ব তার কাঁধে, কত তাড়া, কত ব্যস্ততা যেন উঁকি দিচ্ছিল চোখজোড়ায়। অথচ দ্যাখো, আমার সংসারের গল্পটা কেবল আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল। প্রজাপতি ডানা ছোঁয়া বিয়ের ছয় বছর যেতে না যেতেই সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল। তখন আমার কোলে দুই বছরের এক পুত্র সন্তান। দুকূল ছাপানো কষ্টের মাঝে মুমূর্ষু সংসারটাকে ধীরে ধীরে টেনে তুলেছি। ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করেছি। সে এখন আমেরিকায় থাকে। নতুন সংসার পেতেছে সেখানে। আমার এখানেও মিছে মায়া বাড়াতে তিন-চার বছরে একবার আসে কয়েকদিনের জন্য। প্রথম প্রথম বুকভাঙা কান্না পেত ছেলেকে ছাড়া থাকতে। এখন সব সয়ে নিয়েছি। একাকীত্বটাতেও বড্ড বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর কদিনই-বা আছি পৃথিবীতে বলো!
.
সুনন্দ, জীবনের রঙ হারানোর এই শেষবেলায় এসে ঈশ্বর তোমার সাথে দেখা করাবে তা কল্পনাও করিনি। কী অদ্ভুত দ্যাখো, আমরা এখন একই শহরের বাসিন্দা! মাঝখানে শুধু একটা গলিরই ব্যবধান। গলির মোড়টা পেরিয়ে সবুজ রঙ করা ছোট্ট বাড়িটা আমার বর্তমান ঠিকানা।
.
তোমার মনে পড়ে সুনন্দ, যেদিন তুমি প্রথম আমাদের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটাতে উঠলে, আমি সেদিন ছাদে আচার শুকোতে দিচ্ছিলাম। আমার ষোড়শী চোখের পাতায় সেদিনই তুমি প্রেমের প্রথম ভাগ খুলে দিয়েছিলে। এক অনামী, অচেনা পুরুষ হয়েও মুহূর্তেই ছুঁয়েছিল আমার অতলান্তিক হৃদয়। তোমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে বলেছিলাম, ‘বলা নেই কওয়া নেই ঘরে ঢুকছেন যে!’ তুমি কোনো উত্তর না দিয়েই লজ্জাবনত চোখে হুরহুর করে ঘরে প্রবেশ করেছিলে। পরে বারান্দায় গিয়ে শুনলাম, তুমি বউদির দূর সম্পর্কের এক দাদা হও। চাকরীর সুবাদে আমাদের বাড়িতে থাকবে কিছুদিন। তোমাকে দেখার তৃষ্ণায় মাঝেমধ্যে চা দিয়ে আসতাম। তুমি যখন শব্দ করে চা খেতে আমি আড়াল থেকে শব্দটা শুনতাম। সেই চায়ের পর্ব কখন যে চাওয়ার জন্ম দিলো মনে তা আমারই অজানা ছিল। আচ্ছা সুনন্দ, এখনও কি শব্দ করে চা খাও?
.
একদিন চা দিতে গিয়ে দেখি, তুমি টেবিলে বসে কী যেন লিখছো! আমাকে দেখে দ্রুত লেখা বন্ধ করে কাগজটা বই দিয়ে ঢেকে রাখলে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল তখন। ভেবেছিলাম, প্রেমিকাকে চিঠি লিখছো তুমি! তার পরপরই দাদার ডাকে তুমি নিচের কক্ষ যেতেই আমি চুপিচুপি সেই চিঠিটা মেলে পড়ি। আর পড়তেই সে কী লজ্জা আর রাগের যুগপৎ অনুভবে ভাসছিলাম আমি! তোমার মাকে লেখা চিঠিতে আমাকেই ভালোলাগার কথা লিখেছিলে তুমি। সেদিন মেঘ না চাইতেই একমুঠো জল হয়ে আমাকে ভিজিয়েছিলে অনুরাগের বৃষ্টিতে। কেমন করে যেন শুরু হলো আমাদের অনবরুদ্ধ ভালোবাসার অধ্যায়। কয়েকদিন করে করে চারটি বছর পার করলে আমাদের বাড়িতে থেকেই। একসাথে দুর্গাপূজোয় ঘোরাঘুরি, ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো, দীপাবলির রাতে আলোভরা উঠোনে দুজনের হৃদয়ের অলিগলি চষে বেড়ানো…সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল। দেখতে দেখতে আমাদের প্রেমের বয়স তখন তিন বছর।
.
সুনন্দ তোমাকে যখন শেষবার দেখলাম, তখন আমার গায়ে কাঁচা হলুদের ঘ্রাণ। মনে পড়ে তোমার? পুরো বাড়িতে বিয়ের সাজ, বাদ্য বাজছিল একনাগাড়ে। তুমল বৃষ্টিও ছিল সেদিন। গায়ে হলুদের মঞ্চে একবার আমাকে দেখেই সেই যে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে আর তোমার খোঁজ পাইনি। ঝড়ের মতো এসে যেভাবে আমাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিলে, বৃষ্টির জলে সেভাবেই আবার ভিজিয়ে হারিয়ে গেলে আমার জীবন থেকে। দ্বিরাগমনে এসে তোমার বাড়ি ছাড়ার খবর যখন পেলাম, তোমার ঘরটা তখন তন্নতন্ন করে খুঁজেছিলাম। যদি তুমি কিছু লিখে গেছ আমার জন্য! কিন্তু না সুনন্দ, কিছুই লিখোনি তুমি। শুধু ধুলোপড়া টেবিলটাতে তোমার চশমাটা পড়ে ছিল। সেটা হাত দিয়ে ছুঁতেই বুকটা মোচড়ানো কান্নারা যেন হুরমুড়িয়ে চোখ বেয়ে নেমে আসতে শুরু করলো। চোখ মুছে তোমার শেষ চিহ্নটা সেদিন রেখেছিলাম আমার ভালোবাসার সাক্ষী করে। ঠিক এখনও যেভাবে যতন করে রেখেছি চোখের উপর।
.
আমি জানি সুনন্দ, আর কিছুই চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই আমাদের মাঝে। দুটো পথ যখন দুদিকে আমাদের আলাদা করে দিয়েছে। সেখান থেকে আর ফিরতে পারবো না কোনোদিন। তবুও ভালোবাসায় যদি কোনো পুনর্জন্ম থাকে আমি সে জন্মেই তোমার নাম নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। ঈশ্বরের পাশে তোমাকেও রাখতে চাই আমার পূজোর দেবতা হিসেবে। সেদিন আমাকে ছেড়ে হারিয়ে যেও না সুনন্দ। তুমিহীন শূন্যতা কী যে কষ্টের তা আমার চোখযুগল দেখলেই বুঝতে তুমি!
অনেক রাত হলো। ঘুমের জন্য চোখদুটো কেমন খচখচ করছে। আর লিখতে পারছি না। পারলে একবার এসো আমাকে দেখতে সুনন্দ। না হয় তোমাকে দূর থেকে দেখেই আমার প্রাণটা খানিক জুড়াবো। ভালো থেকো।

ইতি
তোমারই হারানো নন্দিতা

প্রিয় আম্মু – Sumaya Mim

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগীতা_২০২০
চিঠি নং:০৩

প্রিয় আম্মু,
বলতে পারছিনা কেমন আছো,কারণ আমার প্রতিটি লোমকূপ ও অনুভব করতে পারে কেমন থাকতে পারো তুমি।তোমার ঠোঁটে ফুটিয়ে তোলা কৃত্রিম হাসির সাথে আমি খুবই পরিচিত।তাহলে কেনই বা শুধু শুধু বলবো কেমন আছো,হয়তো সেটা কে উপহাস উপাধি দিবে আমার বিবেক।
একাকিত্ব ও অসহায়ত্বের বেড়াজালে যখন ব্যথিত তুমি আমি দু’জন দুজনের স্মরণে,প্রতিটি রাতে উষ্ণতার তৃষ্ণায় শূন্য বিছানায় যখন ছটফট করে দুটি প্রাণ তখন কি নিঝুম রাত্রি ও তাদের সাথে টুপটাপ কাঁদে না?
ফোনের দুই প্রান্তে যখন দুই অভিনয় কারী ভালো থাকার অভিনয়ে নিপুণ দক্ষতার পরিচয় দেয়,নিশুতিরাতে বিধাতার সন্তুষ্টি পেতে যখন একটা ছোট্ট প্রাণ স্নিগ্ধ চোখের বৃষ্টি সাথে দুই হাত তুলে বলে,”ভালো রেখো তাকে,সে আমার জন্যই আত্মসুখত্যাগী,
মায়াময়ী,মহিয়সী সে আমার মা।যেদিন তোমার দয়া হবে অমানিশার কাল এর সমাপ্তি ঘটিয়ে ফিরিয়ে দিয়ো আমার বুকে।”ছোট্ট প্রাণের মুখ চাপা আর্তনাদে বিধাতার আরশ কি কেঁপে উঠেনা?

হয়তো চোখ ছাপিয়ে জল আসে আশেপাশের দৃশ্য অদৃশ্য কীটপতঙ্গের ও।কিন্তু বিধাতার মন গলে না।কারণ তিনি যে মহান,পরীক্ষা নেন বান্দাদের।

জানো আম্মু তোমার জন্য খুব অভিমান জমিয়ে রাখি।একা একা তোমার সাথেই ঝগড়া করি।ভীষণ রাগ করি।কিন্তু আবার নিজেকেই নিজে শান্তনা দিই।
যখন তুমি আমার কাছে থাকো আমার একটুও অভিমান থাকে না।আমার মন চায় না আমি তোমাকে কোন ব্যাথা শেয়ার করি কারণ তোমার ব্যাথাগুলোই তো আকাশসম।আমি নিজেই তোমার ব্যাথাগুলোর ভাগ নিতে চাই।কখনো বলা হয়নি তোমাকে এ কথাটা।কারণ বলতে গেলেই নিজেকে আটকাতে পারবো না খুলে যাবে আমার কৃত্রিমতার মুখোশ।হয়তো তুমিও ঢেকে রাখো নিজেকে কৃত্রিমতার আড়ালে।

কিন্তু আমি ভালো আছি আম্মু,সত্যি বলছি আমি ভালো আছি।জানো তো তুমি, অপেক্ষার ফল মিষ্টি তাই আমি অপেক্ষা করি।এক অথবা দুই মাস অপেক্ষার পরে যখন তোমাকে পাই কাটানো মূহুর্তগুলো ভীষণ ভাবে উপভোগ করি আমি।সবসময় তোমাই পেলে হয়ত এই মূহুর্তগুলোর এতটা মূল্য তা বুঝতাম না।
তোমার বুকে মাথা রেখে শুলে আমি স্বর্গে বিচরণ করি।তোমার কোলে মাথা রেখে যখন আকাশ দেখি মনে হয় ঐ আকাশ এর মতোই বিশাল তোমার স্নেহ ভরা হৃদয়।

সবচেয়ে কষ্ট হয় কখন জানো,চলে যাবার সময় যখন তোমার হাতের বাঁধন থেকে আস্তে আস্তে আমার হাত টা ছেড়ে দাও,আসি আম্মু নিজের খেয়াল রেখো বলে প্রায় ছুটে চলার মতো যাও আর পিছু ফিরে চাওনা।যদি তুমি পিছু ফিরে দেখতে আমার বেঁধে রাখা অবাধ্য দুচোখের আছড়ে পড়া,তবে কি আর সামনে এগোতে পারতে,পা দুটো আটকে যেতোনা তোমার?

খুব ইচ্ছে করে সেখানকার কেবিনের একপাশের একটা বেডে রোগী হয়ে থাকতে।যেন মাঝে মাঝে এসে তুমি মাথায় হাত রেখে আমার খবর নিয়ে যাও,দেখে যাও আমাকে আর আমি দেখি তোমার হাসিমাখা মুখখানা। কিন্তু সেটাও তো ঘটেনা।দূর্ভাগ্য আমার।

তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো,মাঝে মাঝে আমার ডাইরির পাতা কাটা থাকে কেন,কেন পুরোনো ডাইরি গুলো আর খুজে পাওয়া যায় না?
তোমাকে তো সামনে থেকে এড়িয়ে যাই,কিন্তু ডাইরিতে আমার অনুভূতিগুলো না লিখলে যে আমার দম আটকে যায়।আমার তো প্রকাশ করার জায়গা নেই।আর সেসব আমি চাইনা কারোর সামনে আসুক তাই আড়াল করে ফেলি।

খুব অভিমান ঐ মহান বিধাতার উপর।কবে কাটবে এই অমানিশা কবে ফেরা হবে আমাদের সুখের ঘরে?
একটা কুড়ে ঘরে মলিন বিছানায় তুমি আমি পাশাপাশি,
পিছনে ফেলে আমাদের সকল বিষন্ন স্মৃতি।সামনে এগোবো সাফল্য ও উন্নতির পথে।

হ্যাঁ একদিন ঠিক আসবে আমাদের সমৃদ্ধি।
সেদিন আমাদের জীবন হবে শরৎ আকাশের মতো।দেখে নিও তুমি।
ততদিন না হয় ব্যথা দেওয়া নেওয়া হোক আকাশের ঠিকানায়।

ইতি
তোমার শরৎ আকাশ

প্রিয় ডাক্তার সাহেব – Showsan Kabir Maisha

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিয় ডাক্তার সাহেব,

না আজ আর হাজারটা অভিমানের কথা লিখবো না।। কোন লাভও নেই তাতে।। তাও নিজের শক্তি খরচ করি। আজকের চিঠিটা ভাল লাগার, চিন্তার আর অপেক্ষার। জানিনা এই অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে কবে আবার আপনার সাথে দেখা হবে। কবে আবার হাত ধরতে চাওয়া নিয়ে তোমাকে ধমক দিব। আচ্ছা, আমি কি একটু বেশিই পাগলামি করি? হয় তো বা।

আর হ্যাঁ না বলে হুট করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবেন না। তোমার কোন ধারনাই নেই কতটা চিন্তায় ছিলাম আমি সারাটা দিন। তবে দিন শেষে যখন আপনার কন্ঠে শুনেছি আপনার মন ভাল শান্তি লেগেছে খুব। এটাই তো চাই। ভাল থাক তুমি। জানো তুমি যখন মন খুলে হাস তোমাকে অসাধারণ লাগে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় শুধু।তবে সবচেয়ে সুন্দর তোমার সেই শয়তানি হাসি।
অপেক্ষায় আছি তোমার গাছের গোলাপগুলো পাবার আশায়। আচ্ছা বলেন তো চিঠি পেতে কেমন লাগে? শুধুমাত্র একটিবার কি একটা চিঠি লেখা যায় আমার জন্য? শুধু একটি বার। না দিলেও অবশ্য খুব একটা ক্ষতি নেই।। কারন তোমার থেকে কিছু পাবার আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই।
জানেন আমি না ভোরের বাস পেয়ে গেছি। একদিনের ছুটিতে ঢাকা আসা এখন আর সমস্যা না। ১০ টার মধ্যে ঢাকায় চলে আসা যায়। একদিন হুট করেই চলে আসব। এসে টি এস সি তে বসে ফোন দিব এই বলে যে, ” এইযে ডাক্তার সাহেব শুভ সকাল, ঘুম থেকে উঠে আসেন তো একসাথে চা খাই” তখন দয়া করে কিছু না ভেবে পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে চলে আসবেন।। ঠিক আছে?

ইতি
আপনার মনোযোগী শ্রোতা।

প্রাণ প্রিয় – jaminul Reja

1

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রাণ প্রিয়,
শুধু তোমার জন্য আমার নিজের শরীর টাকে যদি কেঁটে কেঁটে রক্তাক্ত করে দেই আমি এতটুকুও ব্যথা পাব না। কিন্তু, যদি কোনো কারনে আমায় ভুল বুঝ তাহলে সেই ব্যথা আমি সইতে পারব না। যার জন্য এই পৃথিবীটা সুন্দর দেখি সে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আর কোনো সাধ থাকবে না আমার। আমি বাঁচতে চাই, তোমাকে সাথে নিয়ে বাঁচতে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি আমাকে ভাবলে তার একটি মাত্র পথ খোলা সে শুধুই মরণ! প্লিজ আমায় মরতে দিও না, আই লাভ ইউ। আমি যদি কখনো পাথর হয়ে যাই আমায় একটু ছুঁয়ে দিও এ প্রাণ ফিরে পাব। যদি এ দেহে আর প্রাণ না থাকে তাহলে আর কাছে এসো না দূর থেকেই দেখো। আমার আত্তা তোমায় খুঁজবে, যখন পাবেনা হয়তো নিরব হয়ে শুধু কাঁদবে। কিন্তু যদি কাছে থাক তাহলে পাগলের মত ছুটোছুটি করবে আমার আত্তা। অনেক মানুষের ভিড়েও এসে চিৎকার করে কাঁদবে আত্তার আত্ত চিৎকার কেউ শুনবে না। সমস্ত স্মৃতি গুলো মনে পরবে দুজনে এক সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তোমায় দেখলে বেঁচে থাকার অনন্ত সাধ মরে গিয়েও হয়তো জেগে উঠবে। কিন্তু মানুষ মরে গেলে শত চেষ্টা করেও এক জীবন ফিরে পায় না। তুমি ভালো থেকে সেদিনও চেয়েছিলাম আজও চাই!

ইতি-
তোমার ভাবনায় ডুবে থাকা আমি।

প্রিয় হারিয়ে যাওয়া মানুষ – প্রেরকঃ নাইফা আফরিন অহনা

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রেরকঃ নাইফা আফরিন অহনা

প্রিয় হারিয়ে যাওয়া মানুষ,

জান,ডিয়ার,প্রিয়তমেষু,প্রিয়তমা…. কতো কিছু ভাবা লাগত তোমাকে কিছু লেখার আগে। অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে পড়া লাগত প্রতিবার ই। কারণ তুমি ছিলে পুরাই কাব্যিক আর আমি হলাম নিরামিষ। কিভাবে লিখব বলো? লিখার আগে এক গাদা ভাবা লাগে যে, “আমার কাব্যিক সে আমার লিখা পড়বে তো?”
জানো? এই ভাবনা টার জন্য কখনও লিখা হয় নি তোমাকে কিছু। তুমি কতই না বলতে লিখার জন্য। কিন্তু আমি ভাবতাম তুমি হাসবে আমার লিখায়। তাই বলে কখনও আর লিখাটা হয় নি। অথচ দেখো আজকে আমি লিখতে লিখতে ডায়েরীর পৃষ্ঠা শেষ করে ফেলছি। লিখা তবু শেষ হচ্ছে না। কিন্তু দেখার জন্য তো তুমি নেই…..!

আচ্ছা! আমি যখন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে চিঠিগুলো পড়ি তখন কি তোমার কানে পৌঁছায় না? খুব তো বলতে আমি ডাকার আগেই তুমি সবসময় আমার কাছে চলে আসবে।। আমার তোমাকে মনে করার আগেই তুমি আমার সামনে হাজির হবে। আমার অনুভূতি প্রকাশের আড়ষ্টতা র কারণে তুমি বলেছিলে তুমি নিজেই সব বুঝে নিবে।
কিন্তু এখন আমি তো গলা ফাটিয়ে ডাকছি তোমাকে। নিজের মুখে বলছি তোমাকে আমার প্রয়োজন। তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না? নাকি এতো বছর পর বলছি দেখে অভিমান করে আছো? আমার চিঠির শব্দ গুলো কি তোমার চামড়া ভেদ করে তোমার হৃদয়ে পৌঁছাচ্ছে না? তবুও কেনো আসছ না? তুমি তো এতো পাথর ছিলে না কখনও….।

আমার কি লেখায় কোনো ভুল আছে তবে? জানো জোরে জোরে পড়ার আগে কতবার আমি নিজে চিঠি গুলো পড়ি?
ওহ তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি! তোমার কি মনে পড়ে তুমি আমায় সবসময় বলতে একটা লাল টুক টুক শাড়ি আর টিপ দিয়ে তোমার সামনে আসতে? আমি কিন্তু প্রতিবার ই নাকচ করে দিতাম। জানো কি? আমি ভাবতাম আমাকে লাল রং মানায় না একদম ই। আমার একদম পছন্দ ছিলে না এই রং। তবুও তুমি সবসময় বলতে এ রং পড়তে। আমি না বলার পর ও বার বার একই কথা বলতে। আমার কিন্তু খুব বিরক্ত লাগত।। তুমি কি বুঝতে না?
অথচ দেখো আমার আলমারী তে এখন ঐ অপছন্দের রং টা ভরে আছে। যখন ই আমি চিঠি লিখতে বসি ঐ অপছন্দের রং টা ই গায়ে জড়াই। তুমি কি আমাকে দেখতে পাও? বলে তো আমায় কেমন লাগে এই রং এ?

বুঝছো? আমি কিন্তু সত্যি অনেক বিরক্ত হচ্ছি। তুমি তো জানো আমার অপেক্ষা একদমই পছন্দ না। তো কেনো তুমি আমাকে দীর্ঘ অপেক্ষার সাথে জড়িয়ে দিলে। এতো অপেক্ষা আমি কিভাবে সহ্য করব? হ্যাঁ? আমার তো এখন তোমাকে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। তুমি তো আর শুনতেই চাও না হয়ত। কিন্তু বলতে ঠিকই আমি না বললে ও তুমি শুনে ফেলো সব। তো এতদিন ধরে বলছি শুনছ না?
আমার এখন হাত ব্যথা হচ্ছে। আমি আর লিখতে পারব না, বুঝলে? লিখে তো লাভ নেই। তুমি তো আর পড়ো না আমার লিখা। যাও এগুলো ছিঁড়েই দিলাম। তবে পরে কিন্তু আমায় বকতে পারবে কেন ছিঁড়েছি বলে। আমি অনেক অপেক্ষা করছি তোমার জন্য….।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে যখন তুমি অস্থির হয়ে যেতে, তখন হঠাৎ মন গলানো বাতাস তোমার গা স্পর্শ করার সাথে সাথে তুমি কেমন আনন্দ ই না পেতে। তোমার মনে পড়ে? তখন আমাকে তুমি কিন্তু বেশ জ্বালাতে বাইরে নেওয়ার জন্য। তোমার নাকি ঐ ঝড়ো হাওয়াতে হাঁটতে ভালো লাগে। আমার কিন্তু বিরক্ত লাগত প্রচুর। কি পাগলামি করতে ঝড়ো হাওয়ার জন্য। আমি না বললে বার বার জোর করতে। তবুও যেতাম না। তখন পাড়ার বাচ্চা দের নিয়ে খেলতে ঠিকই। তুমি কি জানো? আমি তোমাকে তখন চুপি চুপি দেখতাম।

এখন ঝড়ো হওয়া শুরু হলে আমি একাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। তোমাকে তো অনেক ডাকি তুমি তো শুনো না। যাও তোমার জন্য লেখা চিঠি গুলো এই ঝড়ে হওয়ার উড়িয়ে দিলাম। তুমি পড়ে নিও..।

তুমি সবসময় ভাবতে ঝড়ো হাওয়া যেদিক থেকে আসছে। সেদিকে কিছু একটা আছে। আর পাগল হয়ে ঐদিকেই দৌড়াতে৷ জানো তুমি যখন এমন করতে আমার কতো দুশ্চিন্তা হতো? তুমি কিন্তু আমায় অনেক দুশ্চিন্তা দিয়েছ। জানো? এখনও দিচ্ছো। এখন আমি ও জানো তোমার মতো পাগল হয়ে ঐ দিক টায় দৌড় দেই। ভাবি হয়তো তোমার সন্ধান পেয়ে যাবো। কৈ তোমাকে তো পাই না।

দেখো চিঠি টুকরো গুলো এদিকে উড়ে যাচ্ছে । আচ্ছা! তুমিও কি সেদিকে যাচ্ছো? আমায় দেখে ও কি তুমি এই দিকে আসবে না?
নাকি যেদিন এ বাতাস আমার দিকে আসবে। তবে কি সেদিন ই তোমায় আমি কাছে পাবো??

ইতি,
প্রিয়জন

প্রিয় মা – মাসুদ রানা তাসিন

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং : ৬

প্রিয় মা,

আমার সমস্ত পৃথিবীর এক মাত্র নির্ভরতার স্থান। আমার পুরো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যাংক। আমার সমস্ত স্পন্দনের নাম মা। কেমন আছো মা? কতদিন তোমায় দেখিনা? তোমার আঁচলে মুখ মুছতে পারিনা কতদিন। তোমার হাতের মাখা ভাত খাইনা কতদিন। তোমার হাতের ছোঁয়ায় যে সেগুলো হয় জান্নাতের খাবারের মতো। সৃষ্টিকর্তার তৈরি জান্নাত দেখিনি, কিন্তু সৃষ্টির সব চেয়ে বড় জান্নাত দেখেছি। মা সেই জান্নাত তো তুমি।

তোমায় দেখেছি আমার সকল অঙ্গে। আমার সকল অঙ্গ সে তোমার ভেতরে সৃষ্টি। আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭ ডেল একক পরিমাণ ব্যথার সঙ্গে লড়াই করেছ। যেখানে একজন সাধারণ মানুষ ৪২ ডেল একক ব্যথা সহ্য করতে পারে। সেখানে ৫৭ ডেল একক ব্যথা যদি কোন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হয়। তাহলে অনায়াসেই দেহের ২০ টি হাড় ভেঙে যাবে। সেখানে তুমি ৫৭ ডেল একক ব্যথা সহ্য করে জন্ম দিয়েছ আমাকে।

মা আমার আকাশে দুটি তারা জ্বলজ্বল করছে প্রতিনিয়ত। একটা তুমি ও অন্যটি আমার বাবা। তোমরা ছাড়া যে আমার পৃথিবী অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তোমরা যে আমার হৃদস্পন্দন। তোমাদের ছেঁড়ে এই ইট পাথরের শহরে বন্দি হয়ে আছি। জীবিকার তাগিদে আমার এই বন্দী থাকা। দেশে ও পৃথিবীময় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতে ক্রোধের আগুন জ্বলছে মহামারী করোনা ভাইরাস নামক অসুখ দ্বারা। এই মুহূর্তে তোমরা সুস্থ থাকলে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। ছোট ভাই দিনশেষে প্রতিদিন আশ্বাস দেয়। তবুও মনের কোণে ভয় থেকে যায়।

মা ও মা আমি খুব শ্রীঘ্রই আসবো তোমার কাছে। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্য। তখন যে আসবে আমার শান্তির ঘুম। তোমাকে ও বাবাকে বলা হয়নি কোনদিন ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমাদের এই জীবনের চেয়েও বেশি।

ইতি,
তোমার আদরের
মাসুদ রানা তাসিন।

প্রিয় ট্যাম্পু – Shanzida Tasnim Ritu

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং-৫

প্রিয় ট্যাম্পু,
আমি জানি তুই এই নাম শুনলে রেগে যাস কিন্তু আমার যে তোকে এই নামে ডাকতে খুব ভালো লাগে। আচ্ছা, কেমন আছিস? জানি উত্তর দিবি তুই সবসময় ভালোই থাকিস। তোকে অনেকদিন পর চিঠি লিখছি যদিও এই চিঠি লেখার সূত্রপাত তুই করেছিলিস বিশাল আকারের বাজারের লিস্টের মতো রোল বানিয়ে আর তারপরে প্রতিটা বিশেষ দিনের আমার বিশেষ উপহার থাকে তোর লেখা মুক্তোর দানার মতো গোটা গোটা অক্ষরমালার চিঠি। আমি না তোর বাজারের লিস্টটা হারিয়ে ফেলেছি, অনেক খুঁজেছি, পাইনি রে। আজকের লেখার সূচনায় আসি…
তোকে আজকে চিঠি লেখার মুল কারণ হচ্ছে আজ তোর জন্মদিন তাই। ভাব-সম্প্রসারণে যাওয়ার আগে তোকে জানাচ্ছি তোর মনের মতোই পবিত্র অসংখ্য রঙীন আর সুগন্ধী ফুলেল শুভেচ্ছা এবং আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে তোর জন্যে যত্নে রেখে দেওয়া এক বালতি ভালোবাসা। কী ভাবছিস? আমি জানি তুই কি ভাবছিস, তোকে আমি ভালোই বাসি না তাহলে সেটা যত্নে রাখা হলো কীভাবে! তাইতো? আচ্ছা বলছি তার আগে বলি, শুভ জন্মদিন আমার প্রিয় বান্ধবী।
এবার বলি শোন, তোকে যে আমি কতটা ভালোবাসি তা আমি নিজেও জানি না। তুই ভেবে দেখ একমাত্র তুই যার সাথে আমার প্রায় ১৬/১৭ বছরের বন্ধুত্ব, সেই নার্সারী থেকে। হ্যাঁ মানছি তখন তুই আমার বান্ধবী ছিলিস না। কীভাবে থাকতি বল? তুই তো আমার সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র। আমি থাকতাম স্কুলের মাঠে-গাছে-রাস্তায় আর তুই পুরো সময়টা ক্লাসের এককোণে চুপটি করে বসে থাকতিস একা। তোকে নিয়ে আমরা কত যে হাসাহাসি করতাম, আবার সম্মানও করতাম কারণ তোকে দেখলে সবারই ভিতর থেকে সম্মান বের হতে বাধ্য তুই এতটাই নিষ্পাপ আর পবিত্র।
সেই সঙ্গপ্রিয় চঞ্চল আমাকে যখন দলছুট করে ২০০৭ সালে গার্লস স্কুলে ভর্তি করা হলো তখন সবার আগে তুই আমার হাত ধরেছিলিস। তারপরেই তো তোর সাথে আমার বইয়ের ভাষায় জনম-জনমের দোস্তি হয়ে গেল। মনে আছে, ক্লাসের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে বসে গল্প করার কথা? তুই রোজ সকালে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে প্রাইভেট পড়তে নিয়ে যেতিস আমি উঠতে চাইতাম না তাই। আমি পড়তে না গেলে তুই ও যেতিস না। আমরা স্কুলেও একসাথেই যাওয়া-আসা করতাম হেঁটে আর সারা রাস্তা আমি দুষ্টামি করতাম তুই সেগুলো দেখে হাসতি। জানিস, তুই একদিন স্কুলে না গেলে আমার নিজেকে পথহারা পথিক মনে হতো। মনে হতো আমি কাউকে চিনি না, এখানে আমার কেউ নেই। আচ্ছা দোস্তি হওয়ার আগের কাহিনী একটু মনে করিয়ে দেই তোকে। কাকতলীয় ভাবে নবম শ্রেণীতে তোর আর আমার শ্রেণী রোল আগে-পিছে ছিল। আমি বরাবরই ফাঁকিবাজ ছিলাম আর তুই পড়ুয়া ছিলিস। পরীক্ষার হলে তোকে আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর দেখাতে বলেছিলাম কিন্তু তুই দেখিয়েছিলিস না। জানিস, সেদিন তোকে খুব অহিংকারী মনে হয়েছিল আর আমার এই ভাবনাটাই পরবর্তীতে আমাকে অনেক অনুতপ্ত করেছিল।

আমার কলিজার টুম্পারানী,
তোকে লিখতে বসলে তোর সাথে কাটানো আমাদের স্বপ্নমাখা স্মৃতির ডালি খুলে যায় আমার চোখের সামনে। আমি ভেবেই পাই না কোনটা রেখে কোনটা লিখবো তারপর এক পর্যায়ে জগাখিচুড়ি একটা জিনিস তৈরি হয়ে যায়। আমি যে তোর মতো গুছিয়ে লিখতে পারি না রে।
একটা সময় ছিল যখন তোর সাথে আমার প্রায় রোজই দেখা হতো কিন্তু এখন হয়তো বছরে ২/১বার দেখা হয়। তুই বলতিস যে তুই আমার ফোনে একটা মিসকল দিতিস আর আমি তোর বাড়িতে হাজির হয়ে যেতাম কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হয় না। তুই ভাবতেই পারিস যে আমি হয়তো তোকে অবহেলা করি অথবা তোকে আমার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবীর মতো ভালোবাসি না। বিশ্বাস কর, তোকে যে আমি কতটা ভালোবাসি তা প্রকাশ করতে পারবো না আর তোকে অবহেলা করার সাহস না আমার কখনও হয়েছে আর না হবে। তোর জায়গা আমার কাছে সব সময় আলাদা আর বিশেষ। আসলে এখন আগের মতো সময় হয় না রে আর তুই তো বাইরে বের হোস না।

জানিস ট্যাম্পু,
তুই আমার একমাত্র খুব কাছের একজন যাকে আমি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারি। আমি যেকোনো বিপদে পড়লে তুই এতো সুন্দর করে সমাধান দিস আমাকে যেটা আর কেউ পারে না। হয়তো এজন্যেই এই দীর্ঘ ১৬/১৭ বছরে তোর সাথে আমার একদিনও মনোমালিন্য হয়নি অথবা কারণ এটাও হতে পারে যে তুই আমাকে এতটাই ভালো বুঝিস যে মনোমালিন্যের প্রয়োজনই হয়নি। সত্যিই তুই আমাকে আমার চেয়েও ভালো বুঝিস যতটা আমি তোকে বুঝি না। আমি তোকে বোঝার চেষ্টাই করিনি কখনও। তুই তো জানিস আমার বেশি কথা বলতে আর বেশি কথা শুনতেও ভালো লাগে না। এই পুরো পৃথিবীতে তুই একমাত্র মানুষ যার ঘন্টার পর ঘন্টার বিরতিহীন কথা আমি বিরক্তিহীন ভাবে শুনেছি। জানিস কেন? কারণ আমি জানি তোর কথাগুলো আমি ছাড়া কেউ শোনে না। কতদিন এমন হয়েছে যে তোর কথা শুনতে শুনতে আমার ঝিমুনি এসে যেত, আমি তবুও তোর হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর তুই বরাবরের মতো আমার হাত ধরে বসে থাকতিস। আমি একটা সময় ভাবতাম আমি যাতে তাড়াতাড়ি চলে আসতে না পারি তাই তুই আমার হাত ধরে থাকতিস কিন্তু পরে বুঝেছি, তুই আমার সাথে একাত্ম হয়ে থাকতে চাইতিস, হয়তো তুই চাইতিস আমি তোর স্পর্শের মাধ্যমে তোর ভিতরের কথাগুলোও শুনে নেই কিন্তু আমি সব সময় সফল হতে পারিনি।

টুম্পু,
তোর সরলতা, পবিত্রতা, নিষ্পাপ হাসি আমাকে সব সময় প্রভাবিত করেছে তোর মতো হওয়ায় জন্য কিন্তু আমি হতে পারিনি। আল্লাহ তো সবাইকে তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ দেন না অথবা আমিই হয়তো সেভাবে চেষ্টা করিনি। আমার জন্য দোয়া করিস যেন আমি একদিন তোর মতো হতে পারি। তুই অনেক ভালো থাক, এভাবেই বাচ্চাদের মতো সরলতার প্রতিমা হয়ে থাক সবসময়। নিজেকে পাল্টিয়ে ফেলিস না কখনও, তুই পাল্টে গেলে আমার কী হবে বল! কে আমার চোখ দেখে আমার ভিতরের সব কথা পড়তে পারবে? কে আমার অপেক্ষায় থাকবে? যাতে আমি গেলে মন ভুলানো তার মিষ্টি হাসিমাখা কথার ঝুলি নিয়ে বসতে পারে? আর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কে আমি যাবো বলে আমার প্রিয় খাবার রান্না করে রাখবে যত্ন করে, বল? আল্লাহ তোকে দীর্ঘজীবী করুন, তুই আরও পবিত্র আর সফল হ জীবনে এই দোয়া করে সমাপ্তি আনছি।

ইতি
তোর রিতু

প্রেরক: নুসরাত জাহান লিজা – প্রিয় কিশোর পাশা,

0

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: ২
প্রেরক: নুসরাত জাহান লিজা

প্রিয় কিশোর পাশা,
কেমন আছো? জানি রহস্যের গন্ধ পেলে তুমি ভালোই থাকো। তবুও জিজ্ঞেস করলাম, কারণ তোমার জন্য লেখা এটাই আমার প্রথম চিঠি। রবিন, মুসা, জিনা, রাফিয়ান, মেরী চাচী, রাশেদ চাচা সবাই ভালো আছে তো?
যাক, সূচনা তো শেষ হলো, এবার সবিস্তারে বর্ননা দেবার পালা। তোমাকে যেহেতু লিখছি ই, তোমার সাথে আমার পরিচয় পর্বের কথাটাও নাহয় বলি। আমি তখন সবে ফোরের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে ফাইভে উঠার জন্য প্রস্তুত। রূপকথা আর কমিকসের গন্ডি পেরিয়ে দুই একটা বই কেবল পড়েছি। বাড়িতে বইয়ের বিশাল সংগ্রহের মাঝে নিজের পড়ার উপযোগী বই পাচ্ছিলাম না। আমার আবদার পূরণ করতেই যেন দাদু আমার হাতে তুলে দিলেন ‘তিন গোয়েন্দার ভলিউম এক’। বইটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখছিলাম মনে পড়ে এখনো।
প্রথমে গল্পটাতেই তোমাদের গোয়েন্দা দলের নামকরণ করা, কার্ডে সেই আশ্চর্যবোধক চিহ্ন সব মিলিয়ে বুঁদ হয়ে যাই। টেরর ক্যাসল রহস্য উদঘাটনে তোমাদের সাথে সাথে আমিও কখন সামিল হয়ে যাই বুঝতেই পারিনি! এরপর তো আরও কত-শত রহস্যের কিনারা করেছো তা আর নাইবা বললাম। তবে প্রতিটি মুহূর্তে তোমাদের সাথে কিন্তু আমিও ছিলাম, সশরীরে না থাকি আত্মিক ভাবে সবসময় ছিলাম।

পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে তোমাদের হেডকোয়ার্টারের সবগুলো প্রবেশপথ চেনা ছিল, সেই আমেরিকার কল্পিত শহর রকি বীচ কবেই আপন হয়ে গিয়েছিল!

তোমার চিন্তিত হয়ে নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটা, সাথে মূসার খাওয়ার গুণ আর ভাঙা বাংলায় ‘খাইছে’ বলাটা খুব উপভোগ্য ছিল। রবিনের বই পড়ার গুণটা আমার সাথে মিলে যেতো। তোমাদের সাথে সাথে বেদুঈন বৈমানিক ওমর শরীফ কিংবা খুঁড়া গোয়েন্দা ভিক্টর সায়মন, হ্যানসন, বরিস, রোভার আরও বাকি সবাই যে কতটা কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিল, সেটা নাইবা বললাম! সবার নাম বলতে গেলে হয়তো চিঠিতেই কুলাবে না। তবে দুটো নাম না বললেই নয়, শুটকি টেরি ওরফে টেরিয়ার ডায়েল আরেকজন ফগরেম্পারকট ওরফে ঝামেলা! এরা তোমাদের পিছু লেগে থাকত বলে তোমাদের সাথে সাথে আমারও শত্রুতে পরিনত হয়েছিল।
অনেক নতুন কিছু শিখেছি তোমার কাছ থেকে, পেয়েছি ‘ভূত থেকে ভূতে’র মত অভিনব কৌশল!
এতটা নেশা হয়ে উঠেছিলে যে পাঠ্য বইয়ের নিচে লুকিয়ে কত যে পড়েছি, সেটার কোন হিসেব নাইবা দিলাম। ফাইভে পড়ার সময় ধরা পড়ে জীবনে একমাত্র এবং প্রথম বার মার খেয়েছিলাম, পরের দিন দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা ছিল বলে! এরপরও সহস্রাধিক বার এই কাজটা করেছি। কী ভীষণ স্মৃতিকাতরতায় যে আক্রান্ত হচ্ছি এই চিঠি লিখতে বসে!

কৈশোর পেছনে ফেলে এসেছি সেই কবে, এরপর আরও কত-শত বইয়ের কত চরিত্র মনে গেঁথেছে, তবুও প্রথম ভালোবাসা তুমিই ছিলে! আমার জীবনে তোমার আবেদন তাই একদমই আলাদা। কারণ তুমি আমার প্রথম প্রেম। আমার কৈশোরকে এতটা রঙিন করার জন্য তোমার একটা বিশাল ধন্যবাদ প্রাপ্য। সেইসাথে একটা বিশাল ধন্যবাদ প্রিয় ‘রকিব হাসান’কে, তোমার মতো একটা চরিত্র সৃষ্টি করার জন্য। তোমার কাছে অনুরোধ থাকলো, আগের মত অভিনব আর কৌশলী থাকো, এখনকার বইতে নিজেকে এলোমেলো করো না।

কল্পিত রকি বীচের পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড এতটা জীবন্ত ছিল যে, মনে হতো সত্যিই বুঝি এর অস্তিত্ব আছে। মনে হতো বড় হয়ে একদিন ঠিক খুঁজে বের করব তোমাকে আর তিন গোয়েন্দায় যোগ দেব। জিনা যুক্ত হবার পরেও তিন গোয়েন্দাই নাম ছিল, তো আরেকজন সদস্য বাড়লেও তাই থাকবে জানি, কোন এক বইতে বলেছিলে তুমি! ভলিউম ৬৭ পর্যন্ত প্রায় দুইশটির মতো কতবার করে যে পড়েছি! তোমাকে এরকমই দেখতে চাই জন্য পরেরগুলো আর পড়িনি।

এত লম্বা চিঠি পড়ার হয়তো ধৈর্য্য থাকবে না তোমার, তাই আর বড় করব না। আরও কত সহস্র কথা যে আছে তোমাকে বলার, সেটা নাহয় অন্য কোনদিনের জন্য তোলা রইলো। এতটা রঙিন কৈশোরে উপহার দেবার জন্য আরেকবার ভালোবাসা নিও, হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত ভালোবাসা।
ইতি,
তুমি যার প্রথম প্রেম
প্রথম ভালোবাসা।