হে অপ্রিয় মৃত্যু – Saidul Hasan

0
444

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

হে অপ্রিয় মৃত্যু,

‘যারে টানি খুব কাছে
সে রয়ে যায় পাছে,
যারে ঠেলি বহুদূরে
সে সদা সম্মুখে ঘুরে।’
কেউ বলে পৃথিবীটা রঙিন স্বপ্ন, কেউ বলে ঘোর আবার কারো মতে সমরক্ষেত্র। অতি সত্য একটি প্রবাদ আছে ‘জন্মিলে মরিতে হবে’। মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও বর্ণিত আছে ‘ প্রত্যেক প্রাণিই তার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণির জন্যই মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু হতে রক্ষা পাবার জন্য কেউ যদি সুবিশাল আকৃতির মই বানিয়েও সুদূর আকাশের বুকে পাড়ি জমায় কিংবা চাঁদের দেশেও বসতি স্থাপন করে তাহলে তাকেও কোনো একদিন মৃত্যু গ্রাস করবে নিশ্চিত। মানব জীবনের অবসানে যার হাত রয়েছে তারি নাম মৃত্যু। শিশু হতে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও প্রবীণদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। তবে মৃত্যের সময়টা আমাদের নিকট সুপ্ত অবস্থানরত। যেকোনো সময়ে হানা দিতে পারে এই স্বজন হারানোর হাতিয়ার।
প্রতিটি মানুষ তার জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলতে চাই। জীবনে সংগঠিত ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে তাকেও রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। প্রকৃতির পরিক্রমায় তাকেও সুখের স্বপ্ন দেখতে হয়। সংসার রণক্ষেত্র। জীবনে নানা সংগ্রাম করে সফলতা অর্জন করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমে যেমন সফলতা আসে তেমনি হওয়া যায় অনন্য মানব। পৃথিবীর বুকে যার রেশ থেকে যায়। আমরা পৃথিবীর অপরূপা সৌন্দর্যের মোহে পড়ে ভুলে যাই চিরসত্য মৃত্যুকে। ব্যস্ত হয়ে পড়ি দুনিয়ার সব কাজকর্মে। মনের মাঝে কখনো মরণের ভয় আসতেই শাইতান এসে বাঁধা দেয়।

একজন মানুষের কাছে তার জীবনটা একটি সুরভিত ও সুসজ্জিত ফুলের বাগানের সামিল। সে তার এই বাগানটাকে ছোট্ট থেকে বৃহৎ পরিসরে ছড়াতে বা বানাতে চায়। বাগানে সে নানা রঙের ফুলের গাছ লাগায়। নিয়মিত পুষ্পের গাছের নিচে জল ঢালে। পরিচর্যা করে। বাগানে যতসব আগাছা জন্মেছে সবগুলোই সে উপড়ে ফেলে। সর্বোপরি সে ফুলের বাগানটাকে খুব সুন্দর ও আগাছামুক্ত দেখতে চায়। কোনো সময় পোকার উপদ্রব হলে সে নানা রকম ঔষধ স্প্রে করার মাধ্যমে সেগুলো মেরে ফেলে। আস্তে আস্তে গাছগুলো বড় হয়। তারপর ফুলের গাছগুলোতে ফুলের মুথা বা কলি ধরে। ধীরে ধীরে কলিরা ফুটতে শুরু করে। সেই দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর ও নয়নাভিরাম। বাগানের মালিকের বদনে তখন এক চিলতে মিষ্টি হাসির দেখা মেলে। এতোদিনের সকল যাতনা ও পরিশ্রমের ফল আজ তার সামনে ফুটে আছে। সার্থকতার বহিঃপ্রকাশ তার মাঝে ফুটে উঠে।
কলিরা তখন পূর্ণ পুষ্পে পরিণত হয়। ফুলগুলো বাহারি রঙের। বাগানের মাঝে গিয়ে কেউ বাগানের চারপাশে চোখে বুলালে তার মনে হবে সেই যেনো ফুলের রাজ্যে দাড়িয়ে, সেটা যোনো স্বর্গীয় উদ্যান। এবার বাগানের মালিক ভাবতে থাকে এতো ফুল সে কি করবে! তৎক্ষণাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসে কিছু ফুল প্রিয়জনদের উপহার প্রদান করে বাকিগুলো বেঁচে দিতে হবে। এভাবে দিন, সপ্তাহ, মাস এবং বছরও কেটে যায়। প্রতিবারই ঘটে সে একই ঘটনা। তবে কোনো এক সময় ফুলের বাগানে গাছগুলোর পাতা ঝড়ে পড়ে।

ধীরেধীরে শুকাতে শুরু করে গাছগুলো। একসময় হয়ে যায় প্রাণহীন। তখন আর মালিকের সেসব গাছ কাজে লাগে না। গাছগুলো সাফ করে ফেলো বাগান হতে। বাগানটাতে গাছগুলো হয়ে যায় বিলীন। বাগানের সৌন্দর্য ও রূপের বিণাশ ঘটে। আবার নতুন ফুলের চারা রোপন। এভাবেই হারিয়ে যায় ফুল, ফুলগাছ। মানুষের জীবনটাও ঠিক তেমন। সৌন্দর্য ও রূপের বড়াই বড় হওয়ার সাথে সাথে হৃাস পেতে থাকে। হঠাৎ ঝড়ে যায়। মৃত্যুর কবলে পড়ে তাকে পাড়ি দিতে আকাশের দেশে। তখন তার রূপ-লাবণ্য, অর্থ-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি কোনো কাজে আসে না। সেইগুলো অনর্থক হয় মৃত মানুষটির জন্য। তবুও তো মৃত্যু, তোমার কথা না ভেবে আমি জড়িয়ে পড়ি নানা অন্যায় ও অবিচারে। লিপ্ত হই অনৈতিক সব কাজকর্মে। ভাবনায় আসে না “আমাকে তো মরতে হবে, জীবনের প্রত্যেকটি কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে সেই মহান রবের হাশর মাঠে। তবে কেনো আমি অন্যায় কাজে সমর্থন দেই? পাপের রাজ্যেয় কেন হাবুডুবু খাই? কেন জালিমের বিরুদ্ধে রুখতে জানি না?” প্রশ্নগুলো আমার মনে জাগে না। আমি প্রতিনিয়ত তোমায় ভুলে দুনিয়ার রং তামাশায় মেতে রই। চারদিকে মৃত্যের মিছিল তবুও আমার মনে মৃত্যুর ভয় সংঞ্চারিত হয় না। প্রতিদিন কবর আমার ৭০ বার ডাকে, ডাকে আমার কঠিন হৃদয় গলে না। আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হই। পৃথিবীর সাজানো নিয়মকানুনে ব্যস্ত সময় পার করি। সঠিক কথা বলার বেলায় নিজ মুখ চেপে ধরি।

হে মৃত্যু,
আমার এই সুন্দর ও সুঠাম দেহ কোনো একদিন এই পৃথিবীর বুক হতে হারিয়ে যাবে শুধু তোমার কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যুর পরে আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জনরা আমায় এক অন্ধকারময় গর্তে ফেলে রেখে আসবে। রাখার কিছুদিন পর আমার নখগুলো ঝরে যাবে, দাঁতগুলোও পড়ে যাবে, শরীরের গোস্তগুলল খসে পড়বে, পোকার উপদ্রব হবে। তখন কি মূল্য রবে এই সুশ্রী দেহের? শুধু তোমার স্পর্শের ফলেই আমার হবে এমন করুণ পরিণতি।
পৃথিবীর মানুষগুলো মরতে চায় না। তারা শুধু বাঁচার স্বপ্ন দেখে। কিভাবে বাঁচবে, কি কি করবে এসব নিয়ে থাকে তাদের বৃহৎ পরিকল্পনা। মৃত্যু, তোমাকে যে ভীষণ ভয় পায় মানুষগুলো। তাদের কেউই মরতে ইচ্ছুক নয় তবে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে একে-একে সবাইকেই রবের দরবারে পাড়ি দিতে হয়। মানুষগুলো তাদের পরিবার, পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের খুব ভালোবাসে। তাদের মায়া ত্যাগ করে একলা হয়ে সঙ্গিহীন কবর পথের যাত্রী হতে তাদের কেউই চায় না। এমন চিন্তা কখনো মাথায় এলে দু’চোখ জুড়ে শুধু অশ্রু ঝরে। তখন ওলটপালট হয়ে যায় লক্ষ্য ও পরিকল্পনা। মগ্নে থাকার চেষ্টায় প্রভুর দেওয়া বিধিবিধান পালনে।

হে মৃত্যুবাণ,
তোমার স্পর্শে আসতে না চাইলেও তুমি আমার সম্মুখ জুড়ে আছো। তোমার কবল হতে বাঁচার চেষ্টায় কখনো সফল হতে পারবো না এবং অতিতে কেউ পারেননি, ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না। তবে আমার আবদার, আমার সাক্ষাৎ যেনো তোমার সাথে রমজান মাসের কোনো এক জুমাবার দিনে রবের চরণে থাকাকালীন সময়ে হয়।

ইতি,
তোমার পথের এক যাত্রী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে