Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1957



ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০১!

1

– ” একটা রাতেরই তো ব্যাপার। আমি শুধু তোমার সাথে একটা রাত কাটাতে চাই! ”
কথাটা মিছিলের কানে পৌছাতেই মিছিল গত দুদিনের মতো আজও মুবিনের গালে একটা থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় টা মোটেই বেশি জোরে ছিলো না। কিঞ্চিত ‘ঠাস’ শব্দ হয়েছে আর মুবিনের গালেও কিঞ্চিত ঝিম ধরে গেছে। এখন মিছিলের গায়ে শক্তি নেই নাকি সে ইচ্ছে করেই মুবিনকে আস্তে থাপ্পড় মেরেছে সেটা বোঝা মুশকিল। সে ইচ্ছে করেই মুবিনের ফর্সা খোচা দাড়িওয়ালা গালে দাগ বসাতে চায়নি নাকি মুবিনকে ভয় পেয়েই আস্তে থাপ্পড় মারলো সেটাও বোঝা দুঃসাধ্য। গত দুদিনের মতো মুবিন আজও থাপ্পড় খাবার পর একটু ফ্ল্যার্টি মুডে মুচকি হেসে তাকায় মিছিলের দিকে। মিছিল দাত খিটিমিটি দিয়ে আঙুল নাচিয়ে মুবিনকে বলে, ” দেখো মুবিন তুমি আমায় যে ধরনের মেয়ে মনে করছো আমি মোটেই ওই ধরনের মেয়ে না। হতে পারো তুমি পুরো ভার্সিটির ক্রাশ ম্যাটেরিয়াল। কিন্তু আমার তোমার প্রতি বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই। সো প্লিজ স্টে এওয়ে ফ্রম মী! ”
মুবিন মুচকি হাসে। সামনের দাতগুলো দিয়ে ঠোটে কামড় দিয়ে একটু চওড়া হাসে। তারপর বলে, ” তোমার কী মনে হয়? আমি তোমায় কেমন মেয়ে মনে করি? ”
– ” মুবিন প্লিজ! তুমি আমার ক্লাসমেট। আমাদের বহুদিন একই ক্লাসে দেখা হবে। তাই এমন ব্যাবহার প্লিজ বর্জন করো! ”
– ” প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো? বলো না। তোমার মতে আমি তোমায় কেমন মেয়ে মনে করি? ”
মিছিলের চোখের আগুনে যেনো এই কথা বলে খানিক কেরোসিন ঢেলে দিলো মুবিন। মিছিল আগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। মনে হচ্ছে এই চোখ দিয়েই ঝলসে দেবে মুবিনকে। মিছিলের চোখের জ্বলন্ত আগুনে মুবিনের কিছু যাচ্ছে আসছে বলে মোটেই মনে হচ্ছে না। মিছিল আর পারছে মুবিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। এই অমানুষের সামনে সে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না। মিছিল হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায় লাইব্রেরি থেকে।

মুবিন আর মিছিলের মধ্যকার এসব কথোপকথন লাইব্রেরিতে কারো চোখেই পড়ে না। শুধু শাওন আর সীমান্ত ছাড়া। শাওন আর সীমান্ত দুজনে জমজ ভাই। চেহারার প্রায় ৯৮ শতাংশ মিলে যায় একজনের সাথে আরেকজনের। এদের শুধু চেহারারই নয় বরং মন-মানসিকতা সবই এক। আর এরা দুজনেই মুবিনের বন্ধু, বন্ধু বললে কম হবে বেষ্টফ্রেন্ড, বেষ্টফ্রেন্ড বললে ভুল হবে ভাই, হয়তো ভ্রাতৃত্বেরও উর্ধ্বে। সেই প্রাইমারি থেকে পরিচয় এদের তিনজনের। মিছিল বেরিয়ে যাবার পরপরই বুকশেলফ এর আড়াল থেকে বের হয় শাওন আর সীমান্ত। সীমান্ত এসেই মুবিনের কাধে হাত রেখে বলে, ” এই মেয়ে পটার মতো মাল না মামা! ”
মুবিন নিজের নাকটা দু-আঙুল দিয়ে ডলে বলে, ” এখনও একদিন আছে। চিল্ম্যান, কালকে শিওর কনভেইন্সড হয়ে যাবে ”
পাশ থেকে শাওন অবাক ভঙ্গিতে বলে, ” তিনদিন টানা থাপ্পড় খেয়েও। কাল আবার অফার করতে যাবি? ”
মুবিন হেসে বলে, ” থাপ্পড়? এটাকে থাপ্পড় কীভাবে বলিস তোরা? এই মেয়ের শরীরে তো কোনো শক্তিই নেই। শুধু দেখতেই সুন্দর, হট আর সেক্সি। থাপ্পড় মারে নাকি গাল ছুয়ে আদর করে বোঝা মুশকিল! ”
শাওন শব্দ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, ” কালকেই লাষ্ট ডেট। যদি মেয়ে পাত্তা দেয় বা রাজি হয় তাহলে তো হইলোই। আর নাহয় এই মেয়ের পিছু নেওয়া ছেড়ে দিবো আমরা! ”
মুবিন আর সীমান্ত একত্রে ‘হু’ আওয়াজ করে। তারপর শাওন বলে, ” লাইব্রেরির কাজ শেষ। চল এবার ক্যাম্পাসে যাই। ”
সীমান্ত ফোনে টাইম দেখতে দেখতে বলে, ” মুবিন আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। আড্ডা তেমন দিবো না। আর রাতেও বের হবো না আজ। আব্বু-আম্মুর বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আছে! ”
পাশ থেকে শাওন দাত দিয়ে জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে, ” উফ ভুলেই গেছিলাম! ”
সীমান্ত শাওনের পেটে একটা হালকা ঘুষি মেরে বলে, ” তোর মনেও থাকবে না শালা। চল! ”
শাওন আর সীমান্ত চলে গেলে মুবিনও আর বেশিক্ষন ক্যাম্পাসে থাকে না। নিজের ফ্ল্যাটে চলে আসে।

সন্ধ্যা সাতটা ছুঁইছুঁই। মুবিন কিচেনে নুডুলস রান্না করছে। বহুদিন হয় নিজের হাত পুড়িয়ে রান্না করে না সে। তাই আজ খুব শখ হলো নিজের হাতে রান্না করা বিস্বাদ নুডুলস খেতে। মুবিন নুডুলস রান্না করছে আর গান শুনছে। মিউজিক সিস্টেমে ‘সিং মী টু স্লিপ’ গানটা বাজছে। মুবিনও গানের তালে তালে ঠোট মেলাচ্ছে। বেশ চাঙ্গা মেজাজে রয়েছে সে। হঠাৎ করেই মুবিনের মনে হলো একটা সিগারেট ফুঁকলে মন্দ হয় না। তাই আর দেরী না করে ঝটপট একটা সিগারেটের আগায় আগুন ধরিয়ে নিলো। এখন এটা টানার জন্য প্রস্তুত। সিগারেটটা দুই ঠোটের মাঝখানে রেখে একটানে প্রায় অর্ধেক সিগারেটের ধোয়া বুকে টেনে নিলো। তারপর সিগারেটের আগাটা থেতলে আগুন নিভিয়ে সিগারেটটাকে ফ্লোরে ফেলে দিলো মুবিন। এবার সে একটু একটু করে ধোয়ার স্বাদ নেবে আর একটু একটু করে ধোয়া ছাড়বে। আহ! শান্তি। মুবিন খুবই প্রানবন্ত প্রকৃতির মানুষ। জীবনকে যাপন নয় বরং উপভোগে বিশ্বাসি সে। মুবিনের মতে জীবনকে উপভোগ করার জন্য তিন জিনিসের প্রয়োজন। তাহলো টাকা,ছন্নছাড়াপনা,মাটির মন। যে তিনটাই তার কাছে রয়েছে। তাই সে জীবনকে যাপন না বরং উপভোগই করে।
নুডুলস রান্না শেষ। মুবিন নুডুলস নিয়ে গিয়ে টিভির রিমোট’টা হাতে নেয়। নুডুলস খেতে খেতে একটু টিভি দেখলে মন্দ হবে না। টিভিটা ছাড়বে ঠিক তখনই দরজা ধাক্কানোর শব্দ শোনে মুবিন। টিভি না ছেড়েই রিমোট আর নুডুলসের বাটি’টা সোফার সামনের টি-টেবিলের ওপরে রেখে দরজা খুলতে চলে যায় মুবিন। দরজা খুলতেই মুবিনের মেজাজ তেতে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে অপছন্দের দুজন মানুষের একজন এসেছে তারসাথে দেখা করতে। মুবিন কপালে বিরক্তির ভাজ নিয়ে সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে জিজ্ঞেস করে, ” আপনি এখানে? ”
সামনে দাঁড়ানো মানুষটি কোনো উত্তর না দিয়েই মুবিনকে ঠেলে ভেতরে চলে যায়। তারপর টি-টেবিলের ওপর রাখা নুডুলসের বাটি থেকে এক চামচ পরিমান নুডুলস মুখে দেয়। তারপর কিছুক্ষন নুডুলস মুখে নাড়িয়ে সে ফ্রিজের দিকে দৌড় লাগায়। সেখান থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে এক চুমুক পানি খেয়ে মুবিনকে বলে, ” নুডুলসে কেউ এতো ঝাল খায় নাকি? ”
মুবিন মুচকি হেসে বলে, ” যার যার টেষ্ট চয়েস যেরকম আরকি! ”
আহাদ শেখ পানির বোতলটা ফ্রিজে রাখতে গিয়ে লক্ষ্য করে পুরো ফ্রিজ ভর্তি মদ আর বিয়ারের বোতল। আহাদ শেখ নিজের ছেলেকে বলে, ” বাবা তুই বড় হয়েছিস। এক-আধটু ড্রিংকস করবি ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে নিজের ফ্ল্যাটের ফ্রিজকে পুরো মদের দোকান বানিয়ে ফেলবি? ”
মুবিন তীক্ষ্ণ মেজাজ দেখিয়ে কপাল কুচকে বলে, ” কল মী মুবিন, মিস্টার শেখ। আমি আপনার বা আপনি আমার বাবা-টাবা নন! ”
আহাদ শেখ মুবিনের কথা এড়িয়ে গিয়ে বলে, ” আমি আর পারছি না রে। এবার তোর সাম্রাজ্য তুই বুঝে নে। এবার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন আমার। ব্যাবসাটা আমি তোকে হ্যান্ডওভার করতে চাই! ”
– ” আই ডোন্ট ওয়ান্ট দিস ফাকিং শীট! ”
মুবিনের বলা ইংরেজি কথাটার বাংলা বোঝেন আহাদ শেখ। আর বাংলাটা বোঝেন বলেই আহাদ শেখ তেতে গিয়ে বলেন, ” বিহ্যাভ ইওর সেলফ মুবিন। আ’ম ইওর ড্যাড নট ইওর বাডি অর ফ্রেন্ড! ”
মুবিন এবার একটু চওড়া হাসে আহাদ শেখের কথা শুনে। মুবিনের মেজাজ আরো উত্তপ্ত হয়ে যায়। সে দেখতেই পারে না এই মানুষটাকে। একদমই দেখতে পারে না। মুবিন চওড়া হেসে অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে, ” বিহ্যাভিয়ার? কোন ব্যাবহারটা ভালো লাগছে না আপনার? আমি ব্যাবসার দ্বায়ভার নিতে চাচ্ছি না সেটা? নাকি আমি আপনার সামনে ‘ফাক’ বলেছি সেটা? ”
আহাদ শেখের রাগ মাথায় উঠে গেছে। আহাদ শেখ চেচিয়ে বলে, ” ইউ আর ক্রসিং ইওর লিমিট মুবিন! ”
মুবিন আহাদ শেখের চেয়েও জোরে চিৎকার দিয়ে সামনে থাকা সিঙ্গেল সোফাটায় সজোরে লাথি মেরে বলে, ” নো আ’ম নট। আ’ম নট ক্রসিং মাই লিমিট। একচুয়ালি ইউ আর ক্রসিং ইওর লিমিট। হু দ্যা ফাক আর ইউ টু ডিসাইড মাই লিমিট? ”
– ” আ’ম ইওর ফাদার! ”
– ” নো ইউ আর নট। শুধু জন্ম দিলেই বাবা হয় না। আর দায়িত্ব পালনের নামে টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট ভর্তি করে দিলেই বাবা হয় না। আমার বাবা হবার জন্য আপনার যে যোগ্যতার প্রয়োজন সে যোগ্যতা নেই আপনার মধ্যে। আর কী শুনে আপনার ইগো হার্ট হচ্ছে? দিস ওয়ার্ড? দিস ফাকিং ওয়ার্ড ‘ফাক’? না এটা শুনে তো আপনার ইগো হার্ট হবার কথা না। যে মানুষ তিন তিনটে বিয়ে করতে পারে সে মানুষের ‘ফাক’ শুনলে ইগো হার্ট হবে কেনো? শুনুন মিস্টার আহাদ শেখ আমি আপনার সাথে কথা বলে নিজের সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না, নিজের মেজাজও গরম করতে চাচ্ছিনা। সো প্লিজ লীভ! দেখতে এসেছিলেন তো? দেখা হয়ে গেছে? নাউ প্লিজ লীভ! ”
– ” বাবা আমার কথাটা শোন। তুই ভুল বুঝছিস আমায়! ”
– ” গেট দ্যা ফাক আউট অফ হিয়ার, জাস্ট গেট আউট। ”
নিজের ছেলের কাছে আর অপমানিত হবার ইচ্ছে খুজে পায় না আহাদ শেখ। হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায় মুবিনের ফ্ল্যাট থেকে। আহাদ শেখ বেড়িয়ে যেতেই মুবিন চোখ বন্ধ করে একটা বড় শ্বাস নেয়। তারপর ফ্রিজ থেকে একটা বিয়ারের বোতল বের করে। নুডুলস আর বিয়ার খেতে খেতে টিভি দেখায় মনযোগ দেয় মুবিন।
একটু আগে যে মানুষটার সাথে চিল্লা-পাল্লা করছিলো মুবিন সে মানুষটা মুবিনের বাবা। ‘দ্যা শেখ মাল্টিন্যাশনালস’ এর বর্তমান মালিক ‘দ্যা আহাদ শেখ’। আহাদ শেখের ছেলে মুবিন শেখ। আহাদ শেখের ছেলে একটা হলেও তার বউ তিনটা। যদিও দুইটার সাথে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন আহাদ শেখ নিজের থেকে এগারো বছরের ছোট একটা মেয়ের সাথে সংসার করছে। মুবিন আহাদ শেখকে নিজের বাবা হিসেবে মানে না। আর আলেয়া শিকদারকেও নিজের মা হিসেবে মানে না। কারন মুবিনের কাছে মুবিনের মা-বাবা হবার জন্য যে যোগ্যতার প্রয়োজন সে যোগ্যতা আহাদ শেখ বা আলেয়া শিকদার কারো মধ্যেই নেই। মুবিন যখন ক্লাস ফোরে পড়ে তখন আহাদ শেখ আর আলেয়া শিকদারের ডিভোর্স হয়ে যায়। মিউচুয়াল ডিভোর্স ছিলো। মানে তাদের দুজনের ইচ্ছাতেই ডিভোর্স হয়েছিলো। ক্লাস ফোর থেকে সেভেন অবধি মুবিন আলেয়া শিকদারের কাছেই ছিলো আহাদ শেখ প্রত্যেক সপ্তাহে দেখা করতে যেতো শুধু। মুবিনের জীবন দিনদিন অসহনীয় হয়ে উঠতে থাকে। তার নিজের মা আলেয়া শিকদার তার সামনেই অন্য একজনের সাথে মেলামেশা করতো। মুবিন যখন ক্লাস ফাইভে তখন আলেয়া শিকদার আবার বিয়ে করে। আহাদ শেখ আলেয়া শিকদারের বিয়ের কিছুদিন আগেই বিয়ে করে আরেকজনকে। মুবিন বাইরে ছেলেমেয়েদের সাথে খেলতে পারতো না, স্কুলে কারো সাথে মিশতে পারতো না, কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারতো সবাই ওকে ওর বাবা-মায়ের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে খোটা দিতো, ক্ষ্যাপাতো। সবাই বলতো তোর তো মা’ই নেই তোর মা আরেকটা বিয়ে করেছে। আবার সেই সবাই’ই বলতো তোর তো বাবা’ও নেই তোর বাবাও তো আরেকটা বিয়ে করেছে। তোর তো বাবা-মা থেকেও নেই। তুই তো একটা এতিম রে। এসব কথার জন্য মুবিনের শৈশব টা জাস্ট জাহান্নাম হয়ে যায়। কৈশরটাও ভালো যায় নী মুবিনের। সবার এরকম খোটা শুনতে শুনতেই মুবিনের হাইস্কুলের অর্ধেক চলে যায়। মুবিন ঠিক করে সে আহাদ শেখের কাছে থাকবে। কারন তার মা তার সামনেই অন্যকারো সাথে মিশিতো এটা দেখে খুব কষ্ট হতো তার। আলেয়া শিকদারকে মা বলতেই কেমন যেনো ঘৃনা লাগতো মুবিনের। তাই সে আহাদ শেখের কাছে থাকা শুরু করে। সেখানের পরিস্থিতিও এক। মুবিনের বুক ফেটে যেতো এসব দেখে। মুবিন জীবনে শুধু একটা স্বাভাবিকতা খুজছিলো, একটু স্বাভাবিকতার জন্য হাতরে মরছিলো মুবিন। কিন্তু সে জীবনে স্বাভাবিক আমেজটা খুজেই পায়নি। একটু স্বাভাবিক আর একটু ভালো থাকার জন্য মুবিন ঠিক করে সে হোস্টেলে থাকবে। না থাকবে বাবা, না থাকবে মা, না থাকবে এই অস্বাভাবিক জীবন আর না থাকবে এই অসহনীয় বুকে ব্যাথা। হোস্টেলে গিয়েও মুবিনের শান্তি নেই। সবাই মুবিনকে সেই একই কথা নিয়ে ক্ষ্যাপাতে থাকে। ‘ তোর বাবা নেই, তোর মা নেই! ‘। মুবিন একদম ক্লান্ত হয়ে গেছিলো এসব শুনতে শুনতে। এরপর মুবিন চিন্তা করে ওরা কেউ তো ভুল কিছু বলছে না। আসলেই কী আমার বাবা-মা আছে? ওনারা কী বাবা-মা হিসেবে আমার কোনো দায়িত্ব পালন করেছে? ওনারা কী বাবা-মায়ের কাতারে পড়ে? ব্যাস মুবিন নিজেই মেনে নেয় যে তার বাবা-মা বেচে থাকতেও সে এতিম। এরপর থেকে যে মুবিনকে বলতো, ” তোর তো মা-বাবা নেই! ” মুবিন তাকেই, ‘ হ্যা আমার বাবা-মা নেই তা নিয়ে তোর এতো জ্বলছে কেনো? ‘ বলেই সোজা নাক ফাটিয়ে দিতো। হাইস্কুলের হোস্টেল লাইফের শেষ দুই বছরে তুমুল মারা-মারি করেছে মুবিন। আর সেসব মারামারিতে তার লেফট হ্যান্ড আর রাইট হ্যান্ড ছিলো শাওন আর সীমান্ত। হাইস্কুলে তো ওরা নিজেদের গ্যাং’ও বানিয়ে নিয়েছিলো। ‘ দ্যা এসএমএস স্কোয়াড’ নামে। এসএমএস এর মানে হলো শাওন,মুবিন,সীমান্ত। এসএসসি পাশের পর মুবিন ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়ে যায়। ডিপ্লোমার শুরু থেকেই মুবিন নিজের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে। মুবিনের কখনই কোনোপ্রকার আর্থিক অভাব হয়নি। উনিশ বছর বয়সেই মুবিন নিজের গাড়ি পেয়েছে, থাকার জন্য নিজের ফ্ল্যাট পেয়েছে, ব্যাংক একাউন্ট ভর্তি টাকা পেয়েছে, বাচার জন্য পেয়েছে পূর্ন স্বাধিনতা। আর কী লাগে? মুবিন এসবের মধ্যেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। এসবের মধ্যেই নিজেকে ভালো রেখে, জীবন উপভোগ করছে। মুবিন এতো ধাক্কা খেয়েছে জীবনে, এতো অবহেলা পেয়েছে জীবনে তবুও অমানুষ হয়ে যায়নি। নিজেই নিজেকে মানুষ করেছে মুবিন। নিজেই নিজেকে ভালো-মন্দের জ্ঞান দিয়েছে মুবিন। তার আজ কিছুরই অভাব নেই। প্রত্যেক মাসে তার মা আলেয়া শিকদার, তার বাবা আহাদ শেখ তার ব্যাংক একাউন্ট একদম ভরিয়ে দেয়। আর মুবিন সারামাস শুধু টাকা উড়ায়। আলেয়া শিকদার নিজেও প্রতিষ্ঠিত। আলেয়া শিকদার একটা ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলের মালিক। মুবিনের একদম কিছুর অভাব পড়ে না। যখন যা চায় তাই পেয়ে যায়। মুবিনের আবার একদমই অভাব নেই সেটাও নয়। তার একটা জিনিসের অভাব আছে, সেটা হলো একটা মেয়ে। মেয়েটাকে খুব বেশি ভালোবাসে সে। কিন্তু এ অবধি মেয়েটাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার, শুধু মেয়েটার কথাই শুনেছে সে। বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে মেয়েটা। আর মেয়েটার কন্ঠটা একদমই অন্যরকম যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে এই কন্ঠে। সে কন্ঠের প্রেমেই পড়েছে মুবিন, সেই কন্ঠেই বারংবার মুগ্ধ হয়েছে মুবিন…!

চলবে!

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০১!
লেখক: তানভীর তুহিন!

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন PART:20

1

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:20………………………….

গোত্রের প্রায় অর্ধেকটা মানুষই মৃত। রক্তে ভিজে গেছে জঙ্গলের পাতাঝরা ঘ্রাণের তপ্ত মাটি। তৃষ্ণার্ত মাটি রক্ত দিয়ে পিপাসা মিটিয়েছে। এবার বেরোনোর পালা নতুন গোত্রপ্রধানের। নতুন গোত্রপ্রধান এসেছে এখনো এলিনা আর ট্রুডোর কাছে অজানা। অপেক্ষিত প্রতিশোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজন গোত্রপ্রধানের বন্ধ ঘরের দিকে। টের পেয়ে গেলো নতুন গোত্রপ্রধান হিপোস যে তার গোত্রের সবাই হেরে গেছে। তার যাবার পালা এখন। জাদুবিদ্যা শেখা হয়নি। যতোটুকু হয়েছে তাতে একটা প্রাণীর একটা পশমও উঠাতে সক্ষম নয়। দরজার দিকে এগোতে লাগলো সে। হঠাৎ মায়া আয়না থেকে বাধা দিলো আগের গোত্রপ্রধান। থেমে গেলো হিপোস। আয়নার দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলো, “মায়াবী পাথর তোর সন্নিকটে কিন্তু এখন বাইরে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু।” কথা শেষ হতেই আয়নায় অদৃশ্য হয়ে গেলো গোত্রপ্রধান। চিন্তা শুরু হলো হিপোসের। তার প্রাণরক্ষক মায়াবী পাথর তার এতো সন্নিকটে থাকার পরও নিতে পারছে না সে। শেষে ঘরের এক ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো মায়াবী পাথর কার কাছে। ট্রুডোর দিকে চোখ পড়তেই তার গলায় দেখতে পেলো সেই মায়াবী পাথর। সবুজ আলো ঝকঝক করছে। সাথে একটা চাবি। তার শার্টের এক কোণায় আটকে আছে সেই আলপিনটি যেটা দিয়ে গোত্রপ্রধানকে আঘাত করা হয়েছিলো। আলপিনের আগাটা চকচক করে উঠলো। হিপোস বুঝতে পারলো যে আলপিনটা যতক্ষণ তার কাছে আছে ততক্ষণ তার কাছে যাওয়াটা ঠিক হবে না। এদিকে ট্রুডোর আলপিনের দিকে কোনো নজরই নেই। চারদিকে ছটফট করে তাকাচ্ছে সে কোথাও আবার কোনো বিপদ আসছে কি না। এলিনার হাত ধরে আবার বন্দিঘরে গেলো। খুঁজাখুঁজি করার পর এলিনা তার বাবা-মাকে খুঁজে না পেয়ে মনে মনে ভেঙ্গে পড়লো সে। বসে পড়লো মাটিতে। চোখের চোখ টুপটাপ করে মাটিতে পড়ছে। এলিনাকে শান্তনা দিতে গিয়ে তার সামনে দেখতে পেলো একটা ভ্যাক্সিনের কৌটা। সন্দেহের মোহে হাতে নিলো কৌটাটি। ভালোভাবে দেখে বুঝল এটা সেই কৌটা যাতে ভ্যাম্পায়ার শক্তি নষ্ট করার জন্য আনাহী তৈরি করেছিলো। ট্রুডো এলিনাকে ডাকতেই দাঁড়িয়ে কৌটাটি দেখতে লাগল উল্টে-পাল্টে। কৌটা খুলতেই দেখতে পেলো কৌটার ভেতরে রক্ত লেগে আছে। রক্ত দেখে কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল, “তার মানে তোমার রক্ত খাওয়ার নেশাটা নষ্ট করার পেছনে আনাহীর হাত ছিলো। কিন্তু সে কিভাবে জানতে পেলো তোমার কথা? আর তুমি যে ভ্যাম্পায়ার সেটাই সে জানলো কিভাবে?”

আনমনা দৃষ্টিতে চোখের কোণে একফোঁটা জল নিয়ে এলিনা বলল, “কাইরো। কাইরোর কাজ এটা। আমি যখন তাকে প্রশ্ন করেছিলাম তখন সে রেগে গিয়েছিলো।”
ট্রুডো ভ্রু কুচকে এলিনার দিকে তাকিয়ে বলল, “কাইরো! তার রেগে যাওয়ার সাথে এটার কি সম্পর্ক?”

“কাইরো যখন কোনো খারাপ কাজ করে আর সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করি তখন সে রেগে যায়। আমি তখন বুঝতে পারিনি যে কাইরোই আনাহীকে দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে।” আনাহী রাগি রণ্ঠে বলল।
ট্রুডো এ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো কিন্তু কৌটাটি এই বন্দিঘরে কিভাবে এলো সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। অবশেষে বলল, “তোমার বাবা মা কেও আনাহী নিয়ে গেছে।”
এলিনা আশ্চর্য হয়ে গেলো। ট্রুডোর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি কি বলছো জানো? এখান থেকে কোনো মানুষ বেঁচে ফিরতে পারে না। আর আনাহী তো অনেক দূর। সে কি না আমার বাবা-মাকে নিয়ে যাবে? না, এটা নিতে পারছি না। ”
ট্রুডো শান্তকণ্ঠে এলিনাকে বুঝিয়ে বলল, “আমি নিশ্চিত যে আনাহীই এই কাজ করেছে কারণ তোমাকে খাওয়ানোর জন্য কৌটাটি খুলতে সে নিশ্চয় এখানে আসেনি। আর সে যখন একটা কিছু তৈরি করে তখন তার একটা নমুনা তার কাছে রেখে দেয়। জঙ্গলের ভেতরে সে এই ভ্যাক্সিন বানিয়েছিলো। তাই এর নমুনা হিসেবে এইটুকুই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো কিন্তু তোমার বাবা-মাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ভুল করে এটা ফেলেই চলে যায়।”
এলিনা সন্দেহের দৃষ্টিতে বলল, “আনাহী কেন আমার বাবা-মাকে নিয়ে যাবে? তাদেরকে দিয়ে ওর কাজ কি? তাছাড়া এতো বাধা বিপত্তির মাঝে সে কেন বাঁচাবে আমার বাবা-মাকে?”
ট্রুডোর মাথায় এখনো আনাহীর কাজকর্মগুলোর স্মৃতি ঘোরাঘুরি করছে৷ মাথার ভেতরে শুধু আনাহীর বিরুদ্ধে বিরক্তি আর ঘৃণ্যতা। একটু রাগি গলায় বলল, “তা জানি না, তবে আনাহীর কাজ এটা। তাড়াতাড়ি আনাহীর কাছে যেতে হবে নাহলে খুব বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে৷”
কথাটা বলেই ক্রিডির দিকে এগিয়ে গেলো ট্রুডো। এলিনা কথাগুলো কেমন জানি মেনে নিতে পারছে না৷ তবুও ট্রুডোর বিশ্বাস-নির্ভর কথা শুনে রাজি হলো আনাহীর কাছে যেতে। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে ক্রিডির পায়ের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে। রক্ত মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে ট্রুডো। দ্রুতবেগে জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা গাছের পাতা এনে পিষিয়ে ক্রিডির পায়ে লাগিয়ে দিলো সে। ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বলল,”ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ক্রিডিকে এখন বিশ্রাম নিতে হবে।”
এদিকে বেশিক্ষণ সেখানে থাকাটাও বিপজ্জনক। কখন আবার গোত্রপ্রধান চলে আসে। ঘরের ভেতরে হিপোস রাগে হিসফিস করছে। চোখদুটো রাগে অগ্নিশিখার মতো লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেটে গেলো হিপোসের মাথায়। ভাবতে ভাবতে নিজে নিজে বলল, “গোত্রপ্রধান মারা গিয়েছে সেটা তো এলিনা আর ঐ ছেলেটা জানে না। তার মানে আমি নতুন গোত্রপ্রধান এটাও জানে না। এই সুযোগে অসহায়ত্বের ভান করে মায়াবী পাথরটা হাতিয়ে নেওয়া যাবে।”
পুরোনো গোত্রপ্রধানের কথা অমান্য করে দরজা খুলে বাইরে বেরলো সে। চাকু হাতে এলিনা তৈরি হয়ে গেলো ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। লাঠি হাতে ট্রুডোও প্রস্তুত। অসহায়ত্বের ভান করে হিপোস কাঁদোগলায় বলতে লাগলো, “আমাকে মেরো না। আমাকে বাঁচাও। গোত্রপ্রধান আমাকে মেরে ফেলতে চায়। আমাকে বাঁচাও।”
বলতে বলতে সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো সে। এলিনা মনকে শক্ত করে চাকু হাতে দাঁড়িয়েই রইলো। লাঠি নামালো ট্রুডো। শান্তকণ্ঠে হিপোসকে বলল, “কেন? তোমাকে মারতে চাইছে কেন? কোথায় গোত্রপ্রধান।”
হিপোস বলল, “আমি এলিনার বাবা-মাকে পালাতে সাহায্য করেছিলাম বলে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে। আর বলছে তোমার কাছে যে লকেটটা আছে সেটা যদি ফেরৎ দাও তবে নাকি সে এলিনার বাবা-মাকে ছেড়ে দেবে।”
হিপোস এর বানোয়াট কথা শুনে বিগড়ে গেলো ট্রুডোর মাথা। তার ধারণা অনুযায়ী যা হওয়ার কথা ছিলো সেগুলো মিথ্যা মনে হতে শুরু করলো। এলিনা ট্রুডোকে সাবধান করে বলল, “একদম ওর কথায় সায় দিবে না। সব মিথ্যা। এখন আমাদের হাত থেকে বাঁচতে ও এমন অভিনয় করছে। ওকে আমি ভালো করেই চিনি। এর আগেও বহুবার জঙ্গলের ভেতর থেকে মানুষকে ছলনার জালে ফেলে বন্দি করে এনেছিলো।”

এলিনা আর হিপোস এর কথা শুনে ট্রুডো তার গলায় সেই গোত্রপ্রধানের লকেটের দিকে তাকালো। সেই একটা চাবি আর একটা পাথর ঝুলানো আছে লকেটটায়। ট্রুডো মনে মনে ভাবলো, “এটার তেমন কাজ নেই আমার। এটা দিয়ে দেওয়াটাই বরং ভালো হবে তাতে অন্তত দুজন বেঁচে যাবে? কিন্তু আমার সন্দেহ অনুযায়ী এলিনার বাবা মা তো আনাহীর কাছে থাকার কথা তবে কি এই লোকটি মিথ্যা কথা বলছে?”
ট্রুডোর ভাবনামুখর মুখটা দেখে হিপোস একটু খুশি হলো। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো গোত্রের সব লোক আধমরা হয়ে চারদিকে নেতিয়ে পড়ে আছে। তাদের মধ্যে থেকে একজনের জ্ঞান ফিরে হিপোসকে দেখতেই কষ্ট করে উঠে এসে হিপোসের পায়ের কাছে সেজদারত হয়ে বলল, “আমাদেরকে বাঁচান গোত্রপ্রধান। এরা আমাদের এই হাল করেছে। ”
ফেসে গেল হিপোস। বুঝে গেলো এলিনা যে এই হিপোসই নতুন গোত্রপ্রধান হয়েছে। চাকু হাতে হিপোসের দিকে তেড়ে আসতে লাগলো সে। হিপোস ঘটনার প্রবাহমানতা লক্ষ করে ট্রুডোর গলা থেকে লকেটটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই ট্রুডো তার শার্টের একপ্রান্তে আটকে থাকা সেই আলপিনটা দিয়ে হিপোসের বুকে বসিয়ে দিলো এক ঘা। থকথক কালচে রক্ত বের হতে শুরু করলো। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ধপাস করে পড়ে গেল হিপোস। এলিনা তার চাকুটা দিয়ে গোত্রের সেই লোকটাকে ক্ষত বিক্ষত করে হাত পা চারদিকে ছিঁড়ে ফেলে দিলো।

অনেক দেরি হয়ে গেছে। না জানি আনাহী এলিনার বাবা-মার সাথে কি করছে। ট্রুডো ক্রিডির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ফিরে যা ক্রিডি, আমি ফিরে আসবো। আবার দেখা হবে।”
ট্রুডোর কথায় ক্রিডি জঙ্গলের ভেতরের দিকে ফিরে যেতে লাগলো আর বারবার পেছনে ফিরে তাকাতে লাগলো। অবশেষে জঙ্গলের ঘন জাছপালার ভেতরে বিলিন হয়ে গেলো ক্রিডি। এলিনার সাথে ট্রুডো রওনা হলো আনাহীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। কয়েকমিনিটের তফাতে দুজনে পৌঁছে গেলো আনাহীর বাড়িতে। বাড়ির ছাদে নামার পর এলিনা মানুষ রুপে এলো। ট্রুডো বলল, “বাড়ির দরজা দিয়ে প্রবেশ করা ঠিক হবেনা। এতে সে সতর্ক হয়ে যেতে পারে। আনাহীর রুমের জানালা দিয়ে ঢুকতে হবে।”

ট্রুডোর কথামতো আবারও ভ্যাম্পায়ার হয়ে ট্রুডোকে নিয়ে আনাহীর রুমের জানালার কাছে যেতেই খোলা জানালা পাওয়া মাত্রই দুজনে ঢুকে পড়লো। ভেতরে ঢুকে ট্রুডো কাউকে না পেয়ে দরজার দিকে গেলো বন্ধ করার জন্য যাতে কেউ ভেতরে আসতে না পারে। দরজাটা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে তা বাইরে থেকে বন্ধ করা। বেশি কিছু না ভেবে নিরাপত্তার জন্য ভেতর থেকেও বন্ধ করে দিলো সে। ভিরেক্স এর মতো শুরু হলো ট্রুডো আর এলিনার খুঁজাখুঁজি। হঠাৎ একজনের আর্তচিৎকার ভেসে আসলো খাটের নিচ থেকে। তাড়াতাড়ি খাটের নিচে গেলো ট্রুডো। এলিনা কয়েকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখার জন্য সেও খাটের নিচে যেতেই সুড়ঙ্গ দিয়ে চলে গেল আনাহীর গুপ্তঘরে। খুব পুরোনো একটা ঘর। মনে হচ্ছে প্রস্তর যুগে চলে এসেছে দুজন। তবে জায়গাটা মোটামুটি একটা বড় প্রাসাদের মতো লাগছে। কিন্তু জিনিসপত্রের জন্য তা একেবারে প্রাসাদ তো দূরে থাক চিড়িয়াখানাও মনে হবে না। হাজারো খাঁচা। বিভিন্ন খাঁচায় বিভিন্ন ধরণের প্রাণী বন্দি করে রাখা। চোখ ধাধানো সব জিনিসপত্রে ভরপুর। অবাক দৃষ্টিতে সামনে এগোতে এগোতেই ধাক্কা খেয়ে আহ্ করে উঠলো এলিনা। ট্রুডো ফিক করে একটু হেসে তাকে টেনে তুলল। সামনে হাত বাড়াতেই দেখে একটা কাঁচের দেওয়াল। এমনিতে একদমই মনে হচ্ছিলো না যে সামনে একটা কাঁচের দেওয়াল আছে। দেওয়ালের ওপাশে একটা চুল পাকা চামড়া কুচকানো বৃদ্ধা মহিলা। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। চুলগুলো দিয়ে মুখটা ঢাকা পড়ে গেছে। আস্তে আস্তে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখতে লাগলো দুজন। হাত অবধি দৃষ্টি আসতেই তা রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো। বৃদ্ধা মহিলার হাতে মাংস কাটার ছুড়ি। গুপ্তরুমের আবছা আলায় ছুড়ির ফলাটা চকচক করছে। আস্তে আস্তে অন্যদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে কাঁচের দেওয়ালটা থাকায় পিছু নিতে পারলো না দুজন। চারদিকে চোখ বুলোতেই দেখে কাঁচের দেওয়াল ঘেঁষে একটা রাস্তা ভেতরে চলে গেছে। রাস্তা ধরে হাটতে লাগল দুজন। একটু জোর পায়েই হাটতে লাগলো। যদি ভেতরে যাওয়ার কোনো দরজা থাকে সেজন্য। মনে ভয়। এমনিতে আনাহীর ঘরে গুপ্তকক্ষ। তার উপর গুপ্তকক্ষে বিচরণ করছে বৃদ্ধা মহিলা। সন্দেহের বোঝা মাথাতে আছে ট্রুডোর কিন্তু এখন তা ঘাটাবার সময় নয়।
এলিনার হাত ধরে সামনে এগোতেই দেখতে পেলো একটা ছোট্ট দরজা। আপাত দৃষ্টিতে কেউ বুঝতেই পারবে না যে সেখানে দরজা আছে। ট্রুডোর গলার সেই পাওয়ার স্টোন জ্বলজ্বল করে উঠার কারণে দরজাটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কিন্তু সে এখনো বুঝতে পারছে না তার কাছে কতো শক্তিশালী একটা পাথর আছে। উল্টোভাবে নিজেকে বিচক্ষণ ভেবে এলিনাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। পিছু নিলো বৃদ্ধা মহিলাটির। দুজনের পায়ের শব্দে পেতেই বৃদ্ধ মহিলা পেছনে তাকানোর আগেই দুজনে লুকিয়ে পড়ল। আবার এগোতে লাগলো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বৃদ্ধা মহিলাটি চেয়ারে বসে থাকা একজন লোকের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। হাতের ছুড়িটা উপরের দিকে উঠালো আঘাত করার জন্য। থামানোর জন্য এলিনা আর ট্রুডো কাছে যেতে না যেতেই এক আঘাতে মাথার শক্ত করোটিকা আলাদা করে ফেলল মহিলাটি। ভয়ঙ্কর এক চিৎকার দিয়ে মারা গেলো লোকটি। সাথে সাথে রক্ত ছিটকে মুখ ভরে গেলো এলিনা আর ট্রুডোর। হাতের ছুরিটা ফেলে লোকটার কাটা মাথা থেকে মস্তিষ্কটা টেনে বের করে অন্য একটা টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার থেকে একটা ছোট্ট ধারালো চাকু বের করে ছোট ছোট করে কেটে রেখে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলল, “স্বাগতম ট্রুডো। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। এই নাও এটা খাও।”
কথাটা বলে ট্রুডোর সামনে এক টুকরো মস্তিষ্ক এগিয়ে দিলো মহিলাটি। বিষ্ফোরিত চোখে মুকটা দেখার চেষ্টা করতে লাগলো সে। এলিনা ভ্যাম্পায়ার হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু হতে পারলো না। হঠাৎ মৃত লোকটির চেয়ার পড়ে গেলো। লাশটা গড়িয়ে এলিনার পায়ের কাছে এসে পড়তেই চিৎকার করে বলে উঠল, “বাবা!!”
ট্রুডোর নিথর স্থির দৃষ্টি গেলো এলিনার মৃত বাবার লাশের দিকে। ব্যর্থ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে লাগলো। কোনো প্রতিক্রিয়াই যেন হচ্ছে না তার মস্তিষ্কে। এলিনার আর্তচিৎকার শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো বৃদ্ধা মহিলাটি। সাদা চুলগুলো সরিয়ে চামড়া কুচকানো মুখটি বের করা মাত্র ট্রুডো দেখে মৃদুস্বরে বলল, “আনাহী!!”
মুখ থেকে রক্ত ঝরছে আনাহীর। হাত দিয়ে রক্ত মুছে বৃদ্ধাস্বরে বলল, “হ্যাঁ আনাহী, তুমি এসেছে বলে খুব খুশি হলাম। চলো আমরা ভিরেক্স এর সাথে দেখা করি। পরে এই মেয়েটার (এলিনা) ব্যবস্থা করবো।”
এলিনা তার বাবার লাশটা ধরে বসে বসে কাঁদছে। চোখের জল আর তার বাবার রক্ত মিশে একাকার। আনাহীর এই রুপ, কাজ, গুপ্তকক্ষ এসব কিছুই বুঝতে পারছে না ট্রুডো। শুধু জ্ঞানহীন পাথরের স্তম্ভের মতো দেখে যাচ্ছে। অনেকটা সম্মোহিত করার মতো। ট্রুডো আনাহীর মতের বিরুদ্ধে না গিয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে লাগলো। এলিনাকে রেখে আনাহীর সাথে সাথে চলল। আশেপাশে বিচিত্র রকমের প্রাণীর উদ্ভট শব্দে একরকম ভয় হচ্ছে। গুপ্তকক্ষের এক কোণে একটা পরিষ্কার টেবিল আর চেয়ার বসানো। সেখানে বসতে বলল ট্রুডোকে। চুপচাপ বসে পড়লো ট্রুডো। তার সামনে এক গ্লাস তাজা রক্ত আর কয়েক টুকরো কলিজা দিয়ে নিজেও একটা চেয়ারে বসে বলল, “খাও, খুব ভালো লাগবে। ”
ট্রুডো নম্রকণ্ঠে বলল, “আমি এসব খাই না তা তো তুমি জানো।”
আনাহী একটা বাকা হাসি দিয়ে একটা লাশের শরীরের এক অংশ থেকে একটুকরো মাংস কেটে এনে কলিজার টুকরোগুলোর উপর চিপে কালচে থকথকে রক্ত দিলো। ফেলে দিলো মাংসের টুকরোটা। ধীরে সুস্থে শান্তকণ্ঠে বলল, “এবার নিশ্চয় ভালো লাগবে। এবার খেয়ে নাও। এটাও যদি ভালো না লাগে তাহলে ভিরেক্স এর কলিজা খাওয়াবো। একদম টাটকা। খুব ভালো লাগবে। ”
আনাহীর কথা আর কাজগুলো এবার সত্যিই সীমার বাইরে চলে গিয়েছে। রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রুডো আনাহীকে বলল, “কি হয়েছে তোর? এসব করছিস কেন? চেহারা এমন হলো কিভাবে? এসব কি করছিস খেয়াল আছে তোর?”
ভালোবাসার মানুষটা রাগ করলেও আনাহী একটুকুও রাগ করলো না বরং ড্রয়ার খুলে একটা লম্বা চাকু বের করে ট্রুডোর মুখ দিয়ে ঘেঁষে নিতে নিতে বলল, “একজন ভ্যাম্পায়ারকে ভালোবাসার জন্য যা করার দরকার আমি তাই করছি। এসব দেখছিস না! এসব শুধু তোর জন্য। হ্যাঁ, অনেক অনেক রক্ত জমিয়েছি তোর জন্য। শুধু তোকে পাবো বলে। এখন তো আমাকে ছাড়বি না বল। ”
ট্রুডোর আর বুঝতে বাকী রইলো না যে আনাহীর মাথাটা বিগড়ে গেছে। আনাহীর মাথা ধরে ঝাকিয়ে মুখের সামনে এনে মৃদুস্বরে ট্রুডো বলল, “আমরা বন্ধু ওকে?? ভালোবাসার আগে আমরা বন্ধু। আর তুই তো ভ্যাম্পায়ার শক্তি নষ্টই করে দিয়েছিস তাহলে এসব কি? কিসের জন্য তুই এসব করছিস? একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে এমন কাজ আশা করিনি তোর থেকে। এখন বল ভিরেক্স কোথায়? আর এলিনার মা কোথায়? ”
এলিনার কথা শুনেই মাথাটা আরো বিগড়ে গেলো আনাহীর। হন হন করে হেঁটে চাকু হাতে এগিয়ে গেলো এলিনার দিকে। এলিনাকে মারার জন্য চাকু হাতে উদ্বত হতেই পেছন থেকে ধরলো ট্রুডো। কষিয়ে একটা থাপ্পড় দেওয়ার পর চাকুটা কেড়ে নিলো। রেগে বলল, “এসব বন্ধ না করলে আমি তোকে মেরে ফেলবো? চাস তো ভালোবাসার মানুষটার হাতে মরতে?”
মাটিতে পড়ে ঘাড় উঠিয়ে খিলখিল করে হেসে আনাহী বলল, “পারবি না। আমাকে মারতে পারবি না তুই। কারণ ভিরেক্স আমার হাতে বন্দি। তাকে বাঁচাবি না??”
এলিনা উঠে দাঁড়ালো। ট্রুডো আর আনাহী কথা বলছে। এই সুযোগে পুরো রুমটা খুঁজতে গেলো তার মাকে বাঁচানোর জন্য। হন্যহারা হয়ে খুঁজতে শুরু করলো সে। অদ্ভুত একটা শব্দের উৎসের দিকে এগোতে লাগলো। আনাহী উঠে ট্রুডোর নাকের কাছে স্প্রে করতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে রইলো ট্রুডো। এলিনাকে ধরার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো আনাহী। যাওয়ার সময় টেবিলের উপর থেকে ছোট্ট ধারালো কুড়োল হাতে রেগেমেগে ছুটতে লাগলো সে। শব্দের উৎস অনুধাবন করে এলিনা পৌঁছে গেলো তার মায়ের কাছে কিন্তু তার মাকে দেখার পর মাথা ঘুরে গেল। ভয়ঙ্কর চেহারা হয়েছে। চোখদুটো চোখের জায়গায় নেই। চোখের কোটর থেকে রক্ত নিগড়ে নিগড়ে পড়ছে। হাতদুটো পূয়ের জায়গায় আর পা-দুটো পীঠের সাথে সংযুক্ত। কপালে মুখ। মুখ থেকে রক্তাভ জিহ্বা বেরিয়ে নাক বরাবর চলে এসেছে। শব্দ হচ্ছে ভয়ঙ্করভাবে। বুকে হৃৎপিন্ডটা ঝুলছে আর কালচে রক্ত পড়ছে টুপটাপ করে। গড় গড় আওয়াজ করছে। এলিনা তার মাকে দেখেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এদিকে পেছন থেকে কুড়োল দিয়ে এলিনাকে মারার জন্য আঘাত করতেই সামনে এসে দাঁড়ালো ভিরেক্স। মাথা বরারবর দুটো ভাগ করে ছটফট করতে করতে মারা গেলো। ভিরেক্স এর রক্তে ভিজে পেলো এলিনার পীঠ।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পেছনে তাকিয়ে দেখে রক্তাক্ত আনাহী। হাতে রক্তমাখা কুড়ুল। আনাহী আবার উদ্বত হলো এলিনাকে মারার জন্য। কুড়োল দিয়ে আরেকবার আঘাত করতেই এলিনা সরে গেলো আর আঘাত লাগলো এলিনার মায়ের শরীরে। দুখণ্ড হয়ে গেলো এলিনার মায়ের শরীরটা। সাথে সাথে এলিনা ভ্যাম্পায়ার হয়ে বিশাল পাখাদুটি দিয়ে আনাহীকে আচড়ে মেরে উড়ে গিয়ে ঘারটা মটকে নিজের বড় বড় দাঁতদুটি ঘাড়ে বসিয়ে দিলো রক্ত চুষে বিকট এক হাসি দিলো। প্রতিশোধের হাসিতে ফেটে পড়লো গুপ্তকক্ষ। হাসির সাথে সাথে চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো এলিনার। মারা গেলো আনাহী। তার বৃদ্ধা হওয়ার কারণ, এসব আজব কাজগুলো, গুপ্তকক্ষ এসব অজানাই থেকে গেলো। হয়ে গেলো একদফা প্রতিশোধ। ট্রুডোর জ্ঞান ফেরা মাতৃর দৌঁড়ে এসে দেখে আনাহীর মৃত শরীরের পাশে ভ্যাম্পায়ার রুপে বসে আছো এলিনা। তার কাছে যেতেই ট্রুডোর গলার পাওয়ার স্টোনটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। লকেটের সংস্পর্শে এসে মানুষ রুপ পেলো এলিনা। সমাপ্তির দৃষ্টিতে তাকালো ট্রুডোর দিকে। ট্রুডোও আর কিছু বলল না। এলিনাকে সাথে নিয়ে গুপ্তকক্ষ থেকে বের হয়ে গেলো। আনাহীর বাড়ির পেছনের বাগানটায় যেতেই ট্রুডো দেখলো তার জন্য ক্রিডি অপেক্ষা করছে। নিচে নেমে ক্রিডির উপর সওয়ান হলো ট্রুডো। হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগলো জঙ্গলের উদ্দেশ্যে।

কিছুক্ষণ পর………..
সন্ধ্যার আলো আধারীতে রুপ নিয়েছে। আকাশে ভেসে উঠেছে রুপোর থালার মতো চাঁদ। চারদিকে মিষ্টি আলো ছড়িয়েছে। জঙ্গলে এসে পৌঁছানোর পর সেই বড় গাছটার নিচে নামলো দুজন। মানুষ রুপে এলো এলিনা। ক্রিডির গলায় দেখতে পেলো একটা চিঠি বাঁধা। গলা থেকে চিঠিটা খুলে ট্রুডো পড়ে দেখলো তার বাবা তাকে তার পরিবারে ফেরৎ যেতে বলেছেন। জঙ্গলের সেই উঁচু জায়গাটা থেকে যে রাজ্য দেখা যায় সেই রাজ্যের রাজকুমার হচ্ছে ট্রুডো। ভ্যাম্পায়ার হওয়ার কারণে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিলো তাকে কিন্তু এখন মানুষ হওয়ায় আগামী রাজ্যশাসনের ভার ট্রুডোর উপর। চিঠিটা পড়ে শেষ করে এলিনার দিকে এক বিচ্ছেদের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ট্রুডো বলল, “আমি যাচ্ছি। আমি মাঝে মধ্যে আসবো দেখা করার জন্য। তুমিই হবে আমার রানী।”
কথাটা বলার পর দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। ক্রিডি সামনের পা-দুটো উঁচু করে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। ক্রিডির পীঠে সওয়ান হলো ট্রুডো। এলিনাকে রেখে চলে যেতে লাগলো ট্রুডো। ক্রিডির পায়ের খুড়ের শব্দ আস্তে আস্তে মলিন হতে হতে বিলিন হয়ে গেলো ঘন জঙ্গলের গাছপালার মাঝে। এলিনা একা গাছের নিচে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্যনিঃশ্বাস ছাড়লো।






★≠≠≠≠≠≠≠≠≠≠[…..সমাপ্ত…..]≠≠≠≠≠≠≠≠≠≠
..
..
..
..
গল্পের একটা রিভিও চাচ্ছি। আগামীতে নতুন একটা থ্রিলার নিয়ে আসছি। পাশে থাকুন ধন্যবাদ। ❤❤❤

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 19

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:19………………………….

ট্রুডোর কথা শুনে এলিনা তার বাবা-মাকে বাঁচানোর দিশা খুঁজে পেল। মনোবল ফিরে পেল সে। আগ্রহের সাথে বলল, “তাহলে এখনি রওনা দেওয়া যাক। চলো।”
মুহূর্তের মধ্যেই ভ্যাম্পায়ার রুপ নিলো এলিনা। কালো পালকের বিশাল দুটি ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো। পাখার ঝাপটানির বাতাসে গাছের অর্ধমৃত পাতাগুলি ঝরে পড়তে লাগলো। ডানাদুটো দেখে ট্রুডোর অন্য এক চিন্তা মাথায় এলো। কথা না বাড়িয়ে ট্রুডোকে নিয়ে আকাশে উড়াল দিলো এলিনা। হাওয়ার বেগে চলতে লাগল সে। হঠাৎ ট্রুডো বলতে লাগল, “তুমি কি সত্যিই ভ্যাম্পায়ার? আমার কিন্তু এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আসলে ভ্যাম্পায়ারদের……”
কথা শেষ না হতেই নিচে চোখ গেলো ট্রুডোর। তার চিরচেনা একটা ঘোড়াকে দেখে তাড়াতাড়ি এলিনাকে বলল, “এখানে নামো। তাড়াতাড়ি। ”
ট্রুডোর কথা শুনে নিচে নামলো এলিনা। বিরক্তির সাথে বলল, “হঠাৎ এখানে নামতে বললে কেন? কি হয়েছে? ”
ট্রুডোকে দেকেই ঘোড়াটি এসে তার মুখে চাটতে শুরু করলো। সেও ঘোড়াটিকে আদর করতে লাগল। চোখের সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখে এলিনা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ডানাদুটো ঘুড়িয়ে নিমেষেই মানুষ রুপে এলো সে। দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো ট্রুডো আর ঘোড়াটির কার্যকলাপ। চোখে পানি এসে গেছে ট্রুডোর। কাদোস্বরে বলল, “আমার ক্রিডি। কেমন আছিস তুই? বাকীরা কেমন আছে? ”
ক্রিডি সামনের পাদুটো উঁচু করে একটা আনন্দমুখর চিৎকার দিয়ে আবার ট্রুডোর গালে চাটতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়ালো ট্রুডো। এলিনা বিষ্মিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “এসব কি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ”
এলিনাকে শান্ত করে এক তৃপ্তিদায়ক হাসি দিয়ে বুঝিয়ে বলল, “এ হচ্ছে আমার ছোটবেলার বন্ধু ক্রিডি। অবাক হলেও সত্য যে একটা ঘোড়া যে কি না আমাকে হাজারো বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছে। সময় নেই। পরে সবকিছু বলবো। এখন রওনা দেওয়া যাক।”
এলিনার কাছে ট্রুডোর কথাবার্তা আচার-আচরণ সবকিছুই রহস্য হয়ে রয়ে গেলো। জেনেও জানতে পারছে না তার সম্পর্কে। তার পরিচয় কুয়াশার মতো ঝাপসা হয়েই রয়ে গেলো মনের কুঠিরে। আবার ভ্যাম্পায়ার হয়ে ট্রুডোকে বলল তার পীঠে উঠতে। ট্রুডো বলল, “না, আমি আমার ক্রিডিকে পেয়ে গেছি। এখন আর আমাকে কেউ থামাতে পারবে না। তুমি উড়ে যেতে থাকো। আমি ক্রিডির পীঠে চড়েই চলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলার পরই পা তুলে আকাশের দিকে মুখ করে বিকট এক আওয়াজ করে ঘুড়ে দাঁড়ালো ক্রিডি। ক্রিডির উপর সওয়ান হলো ট্টুডো। আকাশে উড়াল দিলো এলিনা। বের হলো সেই জেরায়াস গোত্রের দিকে। শুরু হলো আরেক বিপদ।

ধূলো উড়িয়ে পাড়ি দিলো ক্রিডি। মনে হচ্ছে টাইম মেশিনে উঠেছে ট্রুডো। এতো দ্রুত দৌড়াচ্ছে যেন সময় তাদের হাতে স্থির। উপেক্ষিত। মাথার উপরে কয়েকমিনিটের মধ্যেই মাইল বাই মাইল উড়ে যাচ্ছে এলিনা। ডানা ঝাপটানোর বাতাসের দাপটে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে জঙ্গলের গাছগুলো। ভেঙ্গে পড়ছে গাছের শুকনো ডালগুলো। সমান বেগে পেছনে পেছনে উড়ে যাচ্ছে কাইরোর দাঁড়কাক। কর্কশ কণ্ঠে মাতিয়ে তুলেছে পরিবেশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে পৌঁছে গেল গোত্রের কাছে সেই ঝর্ণাতীরে। সেখানেই নামলো দুজন। চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো সতর্কভাবে। লুকিয়ে লুকিয়ে এলিনার ঘরের দিকে এগোতে লাগল। চারদিক ফাঁকা। জনমানবহীন। মনে হচ্ছে যেন কোনো দুমকা হাওয়া বা দুর্যোগ এসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে সবাইকে। একেবারে স্তব্ধ। এই সুযোগে তার ঘরে ঢুকলো এলিনা তার বাবা-মাকে উদ্ধার করার জন্য। ঘরে ঢুকেই দেখল ঘর খালি। কেউ নেই। মনে হলো নির্ঘাত তাদের বন্দি করে রেখেছে গুপ্তকক্ষে অথবা বলি দিয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি গুপ্তকক্ষের দিকে এগিয়ে গেলো এলিনা। ট্রুডো বাইরের দিকটায় নজর রাখতে লাগলো। গুপ্তকক্ষেও কেউ নেই। যারা বন্দি ছিলো তারাও নেই। সবকিছু খালি পড়ে আছে। বাইরে বেরিয়ে এলো এলিনা। ট্রুডোকে দেখতেই ইশারা করে বুঝালো খুঁজে পায়নি। ট্রুডো ব্যাপারটায় একটু সন্দেহ করলো। হঠাৎ ট্রুডোর সামনে ধুপ করে একটা শক্ত লাঠি পড়লো। যেমনটা আকাশ থেকে পড়ার মতো। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো লাঠিটা তুলতে। নিচ হয়ে লাঠি তুলতেই চারদিক ঘীরে ধরলো হিংস্র চুপাকাবরার দল। চোখদুটো আতঙ্কে বড় হয়ে গেলো এলিনার। চিৎকার দিয়ে ট্রুডোকে ডাক দিলো সে। চুপাকাবরার পেছনে একে একে জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো গোত্রের লোকজন। প্রত্যেকের হাতে শান দেওয়া ধরালো অস্ত্র। দুজনকে ঘীরে নিয়েছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে তারা। ট্রুডো ফিসফিসিয়ে এলিনার কানে বলল, “চুপাকাবরাদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দাও। এদের আমি দেখছি।”
এলিনা আস্তে আস্তে বলল, “এগুলো গোত্রপ্রধানের শিকারী চুপাকাবরা। তার আদেশ ছাড়া এক পাও নড়বে না।”
ক্রিডি এখানে নেই। ঝর্ণার তীরে রেখে আসা হয়েছে তাকে। হঠাৎ শব্দ করলে সবাই টের পেয়ে যাবে বলে। চারদিকে তাকিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলো দুজন। এলিনা খেয়াল করলো এদের মাঝে গোত্রপ্রধান নেই। আবারো ভালো করে দেখে নিশ্চিত হয়ে নিলো। বুঝতে পারলো তার ভ্যাম্পায়ার হয়ে আক্রমণ করাটা বেশি সুবিধাজনক। ভাবতে ভাবতেই চারদিক থেকে হিংস্র গর্জন করতে করতে তেড়ে আসতে লাগল চুপাকাবরার দল। চোখের পলকেই ভ্যাম্পায়ার রুপ নিলো এলিনা। ট্রুডোকে কাছে নিয়ে বিশাল ডানাদুটি ঝাপটানো শুরু করলো। ছিটকে দূরে গিয়ে পড়তে লাগল একেকটা চুপাকাবরা। কয়েকমিনিটের ব্যবধানে চিবানো ঘাসের মতো অবস্থা হলো চুপাকাবরা দলের। এবার লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো গোত্রের লোকজন। ট্রুডো চিৎকার করে ডাক দিলো, “ক্রিডি….”
সাথে সাথে আওয়াজ করতে করতে গোত্রের লোকজন পিষিয়ে ট্রুডোর কাছে এসে হাজির হলো ক্রিডি। তাড়াতাড়ি সওয়ান হলো ক্রিডির উপর। হাতের শক্ত পাকাপোক্ত লাঠি ঘুড়িয়ে আঘাত করতে লাগলো গোত্রের লোকজনের উপর। ট্রুডোর কার্যকলাপ এক নজর দেখেই এলিনার মনে হলো ট্রুডো একজন সুদক্ষ যোদ্ধা। তার যুদ্ধকৌশল অত্যন্ত নিখুঁত আর ভ্রষ্টহীন। মোহ কাটিয়ে নিজেও লেগে পড়লো। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই ডানা দিয়ে আছাড় মারতে লাগলো। চলতে লাগলো খণ্ডযুদ্ধ। হঠাৎ ক্রিডির পায়ে এক ঘা লেগে চামড়া ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করলো। ব্যথায় ক্ষেপে গেলো ক্রিডি। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই পিষিয়ে মেরে ফেলতে লাগলো। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো ক্রিডি। চারদিকে রক্তে লাল হয়ে গেছে।
..
..
..
..
..
..(চলবে…………)
গল্প লিখতেছি বাট ভালোমন্দ কোনো রিভিও পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে গল্প লেখাই বৃথা। তাছাড়া কমেন্টেও সেই এক ডায়লগ। ভালো লাগেনা এইসব ??

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 18

0

…………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:18…………………………

আনাহীর রুমটা খুব গোছালো আর পরিপাটি। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। বিছানা খালি। ভিরেক্স চারদিকে তাকিয়ে দেখল আনাহী কোথাও নেই। এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না খুঁজে জিনিসপত্র, আলমারি সবকিছু খুলে দেখতে শুরু করল সে।
হঠাৎ পায়ে হাঁটার শব্দ পেলো সে। থেমে গেলো। সাধারণভাবে বসে পড়ল সোফায়। দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো ভদ্র মহিলাটি। ভিরেক্স এর জন্য চা আর আনাহীর জন্য কফি রেখে বললেন, “কোথায় আনাহী?”
ভিরেক্স তাড়াতাড়ি উত্তর দিলো, “মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে।”
ভিরেক্স এর কথা শুনে আচ্ছা বলে চলে গেলেন তিনি। তাড়াতাড়ি দরজাটা লক করলো সে। গোয়েন্দার মতো ঘরের আনাচে কানাচে খু্টিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। মেঝেতে কান পেতে পরীক্ষা, দেওয়ালে টুকা দেওয়া কিছুই বাদ রাখলো না। অবশেষে ক্লান্ত মনে খাটের উপর বসতেই একটা শব্দ হলো। একটু চমকে দাঁড়িয়ে গেল সে। খাটের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আরেকবার খাটে বসে পরীক্ষা করলো কিন্তু আগেরবারের মতো তেমন শব্দ পাওয়া যায়নি। শব্দটা মেঝেতে অস্ত্র বা লোহা জাতীয় জিনিসপত্র পড়ে যাওয়ার মতো ছিলো। কিন্তু রুমে তো কোনো কিছুই পড়ে যায়নি। চা-কফির কাপদুটোও ঠিকঠাক আছে। তাহলে এমন শব্দ এল কোথা থেকে? ভিরেক্স ভাবলো নিচে ভদ্রমহিলা কাজ করতে গিয়ে বোধয় কোনো জিনিস ফেলে দিয়েছে। সব চিন্তা খানিকের জন্য দূরে ঠেলে সোফায় বসে পড়ল সে। কপালে চিন্তার ঘোরে জমে উঠেছে শিশিরবিন্দুর মতো ঘাম। চোখদুটো চঞ্চল, স্থিরতা পায় না। মস্তিষ্কের কার্যকলাপ প্রায় উন্মাদের মতো। মাথায় ঘুরছে বিতিকিচ্ছিরি সব চিন্তা-ভাবনা।
অথচ পুরো রুম শান্ত। পিন পড়ার আওয়াজও শুনতে পাওয়া যাবে। এসি অন করা। ঠান্ডা হওয়া তবুও ঘেমে একসের। যে মেয়ে বাড়িতেই আসেনি তাকে খুঁজতে এসেছে তার বাড়িতে। তবুও মাত্র একটা রুমে। তবে ভিরেক্স যে ভুলভাল কাজ করবে সেটাও কিন্তু অবিশ্বাস্য। কোনো কথা না বলে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকতে লাগল সে। একদিকে চুপটি করে তাকিয়ে বসে আছে। মৃদু একটা শব্দ শুনতে পেয়েই চোখদুটো হালকা নেড়ে উঠলো। খরগোশ এর মতো কানখাড়া করে শুনার চেষ্টা করল শব্দটি। খুব আস্তে শুনা যাচ্ছে। তবুও কান পেতে শুনে শব্দের উৎসের দিকে একটু একটু করে এগোতে লাগল ভিরেক্স। এগোতে এগোতে একেবারে প্রায় খাটের নিচে চলে যাওয়ার অবস্থা। খাটের নিচ থেকেই হিল পড়ে হাটার শব্দ আসছে। শব্দটাও খুব সুক্ষ। আস্তে আস্তে খাটের নিচে যাওয়ার পরই একটা চিৎকার দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল ভিরেক্স। ড্রয়িংরুম থেকে দৌঁড়ে এলেন ভদ্রমহিলাটি। এসে দেখলেন পুরো রুম খালি। ভিরেক্স কোথাও নেই আর আনাহীও নেই। শুধু পড়ে আছে খালি চায়ের কাপটা আর কফিপূর্ণ কাপ। ভয় পেয়ে গেলেন ভদ্রমহিলা। হঠাৎ একটা তাগড়া ছেলে রুমের ভেতর থেকে কোথায় উধাও হয়ে গেল! এ নিয়ে আবার যদি একটা বড় রকমের ঝামেলা হয়! ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে চা আর কফির কাপদুটো নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

এদিকে ট্রুডো এলিনাকে হাজারো প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার মাঝে ফেলে দিলো। ভালোবাসার মোহজালে জড়িয়ে নিলো তাকে। প্রশ্ন করল এলিনাকে, “তুমি আমাকে পছন্দ করতে?”
এলিনা মাথা নেড়ে বলল, “হুমম, সেই কলেজ থেকেই।”
ট্রুডো চালাকি করে বলল, “তাহলে তো একদিনও বললে না আমাকে। তাছাড়া আমাকে চিনতে পেরেও প্রথম যেদিন ঝর্ণাতীরে দেখা হয়েছিলো তখন ওমনভাবে আচরণ করেছিলে কেন?”
এলিনা ট্রুডোর কথার জালে বন্দি হয়ে গেল। আটকে গেল তার কথায়। অবশেষে ধীরে সুস্থ্যে বলল, ” তখন তো অন্ধকার ছিলো, তাছাড়া তুমি ওমনভাবে জঙ্গলের ভেতরে আসবে আমি ভাবতেই পারিনি। মোটকথা আমাকে স্পর্শ করার পর কেমন একটা লাগছিলো তাই তাড়াহুড়োয় ওমনভাবে বলে ফেলেছি।”
বলতে বলতে শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ আরও সুমধুর হয়ে উঠলো। মিষ্টি মৃদু বাতাস বইতে শুরু করলো। ট্রুডোর ঘাড়ে মাথা রেখে বসলো এলিনা। চেয়ে রইলো সামনের দূরত্বে থাকা ছোট্ট অবয়বের সেই রাজ্যটির দিকে। ট্রুডো তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ আজব একটা কথা বলে উঠল, “আমি হয়তো তোমার সাথে আজীবন থাকতেন পারব না। আমি অন্যকিছুর ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমাকে আমার পরিবারের কাছে চলে যেতে হবে।”

অবাক হলো এলিনা। বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বলল, “কি বলছো এসব? তুমি ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে? তাছাড়া তোমার পরিবার মানে? ভ্যাম্পায়ারদের আবার কিসের পরিবার?”
ট্রুডো চুপটি করে বসে রইলো। খানিকপর নীরবতা নষ্ট করে আলতো করে বলে উঠল, “আমি চলে যাওয়ার আগেই তোমার রক্ত খাওয়ার নেশা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। আর তোমার পরিবারের সাথে তোমাকে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করবো।”
ট্রুডোর মুখে এসব আজব কথাগুলি শুনতে পেয়ে এলিনা অবাক তো হচ্ছেই আরো ট্রুডোকে মনে হচ্ছে তার গোত্রের লোক। হয়তো ট্রুডোর বেশে এসেছে। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এলিনা।
স্থির দৃষ্টি। চোখদুটো মারবেলের মতো বড় বড় হয়ে রয়েছে। ফিসফিসিয়ে ট্রুডোর মুখের কাছে গিয়ে বলল, “এসব কি বলছো তুমি? আমাকে আবার আমার গোত্রে ফেরৎ পাঠাবে?? তাহলে আমাকে বাঁচালে কেন?”

ট্রুডো ইতস্তত করে উত্তর দিতে লাগল, “আমি সেটা বলিনি। আমি বলেছি….”
কথা শেষ না করতেই তাকে থামিয়ে এলিনা বলল, “আমি শুনেছি। আমার রক্তের নেশাটা ফেরাতে সাহায্য করবে যাতে আমার কোনো বিপদ হলে আমি নিজেই তার সমাধান করতে পারি। আর তোমাকে ভুলে থাকার জন্য পরিবারের কাছে চলে যাই। তাই তো? ”

ট্রুডো মাথা ঝাকিয়ে বিরক্তির চেহারায় বলল, “কেন বুঝতে পারছো না, তুমি আমাকে যা ভাবছো তা আমি নই। আর আমাকে ভুলে যেতেও বলিনি তোমায়। চাইলে চিরজীবন মনে রেখো আমায়।”

এলিনা উঁচুগলায় কাদোস্বরে বলে উঠল, “আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তুমি আসলে কি চাইছো। তুমি ভালোবাসো বলে বন্ধুদের সাথে এতোদিনের সম্পর্কটা শেষ করে চলে এলে। এখন আমাকেও ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছো। কি হয়েছে তোমার?”

ট্রুডো আবারো মাথা নাড়িয়ে এলিনাকে বুঝানোর জন্য বলল, “আমাকে যেতে হবে। আমি তোমাকে সেই গোত্রে ফেরৎ পাঠানোর কথা বলছি না। আমি চাই তুমি তোমার বাবা-মার সাথে এখানেই ভালোভাবে থাকো।”
এলিনা তাচ্ছিলতার সাথে চোখের কোণে একবিন্দু অশ্রুজল নিয়ে ট্রুডোকে বলল,”হু। তুমি কি ভেবেছো? গোত্রপ্রধান আমার বাবা-মাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে?”
ট্রুডো বলল, “মানে? এসব কি বলছো?”
এলিনা অন্যমুখ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তাদেরকে বোধয় মেরে ফেলেছে সেই পাষাণ গোত্রপ্রধান। আমাকে না পেয়ে তাদের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে সে।”
ট্রুডো বলল, “আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। আমি নিশ্চিত যে তোমার বাবা-মা এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।”
কিভাবে এতো নিশ্চিত হয়ে বলতে পারলে কথাটি? দেখোনি গোত্রপ্রধান কেমন প্রকৃতির লোক নাকি আন্দাজ করতে পারছো না সে কি কি করতে পারে?”
ট্রুডো একরকম নিশ্চিত হয়েই বলল, “আমি জানি সে কি করতে পারে আর না পারে। সে সজ্ঞানে থাকলে তো তোমার বাবা মাকে মেরে ফেলবে কিন্তু তিনি যদি অচেতন থাকেন তাহলে? খেয়াল করেছো যখন তোমাকে বাঁচানোর জন্য তার গলা থেকে চাবিটা টেনে ছিঁড়ে আনি তখন তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তুমি উড়ে আসার সময় গোত্রের একজন বলছিলো গোত্রপ্রধান নাকি দুইদিন ওভাবে অজ্ঞান হয়ে থাকবেন। তার মানে এখন তার জ্ঞান ফেরার কথা। আমরা চাইলেই তাদের বাঁচাতে পারি। ”
..
..
..
..
..
..
..
..
..(চলবে……………)

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 17

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:17………………………….

বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ট্রুডো। প্রশ্নের জবাব নেই আর দেওয়ার ইচ্ছাও নেই। এলিনা জানে না যে ট্রুডোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি তার কাছে চলে গেছে। অজ্ঞাতসারে তার কাছে ট্রুডো এখনো ভ্যাম্পায়ার। নিজের ভ্যাম্পায়ার শক্তি হারানোর কথা এলিনাকে বলল না ট্রুডো। এড়িয়ে গেল কথাটি। এলিনাও ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ঘাটাল না। ট্রুডো মাঝখান থেকে টেনে আনলো অন্য বিষয়। “এই জঙ্গলে কী কোথাও লোকালয় আছে?”
এলিনা নির্দ্বিধায় উত্তর দিলো, “না তো! এখান থেকে কিলো দুয়েক পর আছে একটা রাজ্য।”
সন্দেহের ভাজ কপালে। ভ্রু কুচকে বলল ট্রুডো, “তাহলে জঙ্গলে ঘোড়ার আওয়াজ শুনা যায় কেন?”
“বন্য ঘোড়া থাকতে পারে।” এলিনা বলল।
ট্রুডো তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “না তো! বন্য ঘোড়ার আওয়াজ পাইনি। আওয়াজ শুনে মনে হয়েছে ঘোড়ার পীঠে কেউ ছিলো। বন্য ঘোড়া হলে তো আওয়াজ করতে করতে এদিক-সেদিক ছুটতো।”

কথাটা শুনে এলিনাও একটু বিভ্রান্ত হলো। তার জানা মতে এই জঙ্গলে সেই রাজ্য থেকে সিপাহি ছাড়া আর তো কেউ ঘোড়া নিয়ে এদিকে আসে না। আর আসলেও বিশেষ কোনো প্রয়োজনে আসে। ব্যাপারটা ভাবালো এলিনাকে।

ভাবতে লাগলো এলিনা। তার গোত্রের কেউ নয় তো? কিন্তু তাদের তো ঘোড়াই নেই। থাকার মধ্যে আছে কয়েকটা বন্য কুকুর। আর সেই চুপাকাবরার দল। ট্রুডো নারিকেল ফাটাতে লাগলো। এলিনাকে বললো,”চাকুটা দিয়ে ডাবের মুখটা কেটে ফেলো ঝটপট।”
ভাবনার মোহ কাটিয়ে চাকু দিয়ে ডাবের মুখটা কাটতে শুরু করলো এলিনা। নারিকেল আর ডাবের পানি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করল দুজন। এলিনার মনে পড়ে গেল ট্রুডোর বন্ধু-বান্ধবীদের কথা। “তোমার বন্ধুকে চুপাকাবরার হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি বলে দুঃখিত। চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেই পাষাণ গোত্রপ্রধান আমাকে বন্দি করে ফেলে।” বলল এলিনা।
“আমরা তো বাঁচিয়েছি। তাছাড়া তুমি যেটুকু সাহায্য করেছো সেটুকুই অনেক।” ট্রুডো বিনয়ের সাথে বলল।
দুজনে কথাচ্ছলে বুঝতেও পারলো না যে তাদের মাঝে আপনিটা তুমি হয়ে গেছে। ভাব হয়েছে আরো গভীর। মিষ্টতা এসেছে বন্ধুত্বে।
“তোমার বাকীসব বন্ধুরা কোথায়? তারা কি চলে গেছে?” এলিনা প্রশ্ন করল।
মাথা নিচু হয়ে গেল ট্রুডোর। কথা নেই। এলিনা তাকিয়ে আছে তার দিকে উত্তরের আশায়। মাথা আস্তে করে উঁচু করে ঘাড় নেড়ে বলল,”হুম, তবে আমি তাদের সাথে বন্ধুত্বটা শেষ করে দিয়েছি। ”

“কেন? এতে বন্ধুত্ব শেষ করার কি হলো? সবকিছু তো ঠিকঠাক হয়েই গিয়েছিলো।” এলিনা বলল।
“তারা আমাকে ছাড়া যেতে চাইছিল না। আবার আমি চলে গেলে তোমার বিপদ হতো। তাই তোমার সাথেই রয়ে গেলাম। তাছাড়া আনাহীর ভালোবাসার হাত থেকে বাঁচার জন্যও এই চেষ্টা বলতে পারো।” ট্রুডো নিচুস্বরে উত্তর দিলো।
এলিনা আন্দাজ করতে পারল যে ট্রুডো তাকে পছন্দ করে। হঠাৎ জড়িয়ে ধরল ট্রুডোকে। কথা না বাড়িয়ে ট্রুডোও জড়িয়ে ধরল এলিনাকে। এমন একটা মুহূর্তে কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করতে করতে উড়ে এসে গাছের ডালে বসল কাইরোর সেই দাঁড়কাকটা। ছেড়ে দিলো দুজন দুজনকে। এলিনা উপড়ে তাকাতেই উড়ে এসে তার হাতের উপর বসল কাকটি। চিৎকার করতে শুরু করল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো এলিনা। ট্রুডো একটু রেগে অন্যমুখ হয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগল, “এখানেও চলে এসেছে। সব তো নেওয়া হয়ে গেছে আবার কি চায় সে?”

কাইরো এলো না। কাকটা কিছুক্ষণ পর আবার উড়ে চলে গেলো। সম্ভবত তাদের খোঁজ নিতে এসেছিলো। দেখতে এসেছিলো কোথায় এসেছে তারা।

এদিকে সবাই যে যার মতো আনাহীকে খুঁজছে। সন্ধ্যার আলো তখনো গাঢ় হয়নি। আবছা আলো। ভিরেক্স ভালোবাসার টানে খাওয়া দাওয়া প্রায় ভুলেই গেছে। হন্যহারা হয়ে খুঁজছে আনাহীকে। আনাহীর বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। একটা বাড়িতে একাই থাকে সে আত্মীয় স্বজনহীনভাবে। শুধু আছে একটা আয়া। মাঝবয়সী। তবে খুব কর্মঠ, সচেতন। উনাকে আনাহীর মায়ের মতোই মনে হয়। মায়ের সম্মানেই বাড়িতে থাকেন তিনি। আনাহীর খোঁজ-খবর সবকিছু তিনিই রাখেন।খুব যত্নে রাখেন আনাহীকে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কেউ উনাকে এখন পর্যন্ত খবরটা দেয়নি। চেচামেচি করবেন খুব। শেষে আনাহীর বাড়িতে হাজির হলো ভিরেক্স। দরজা খোলার পরই ভিরেক্স বলল, “ভালো আছেন আন্টি? আনাহী কোথায়? ”
“ভালো আছি। তোমরা তো বেড়াতে গিয়েছিলে। তারপর থেকে তো আনাহী আর ফেরেনি। তোমরা চলে এসেছো সে কোথায়? ” বললেন মহিলাটি।
ভিরেক্স চালাকি করে বলল, “কি বলছেন? আমাকে তো আনাহী আসতে বলেছিলো তাই এলাম।”
ভদ্রমহিলা বললেন, “তাহলে বোধয় সে আসার সময় আমি কাজ করছিলাম তাই টের পায়নি। এসো এসো ভেতরে এসো।”
ভেতরে গিয়েই সরাসরি আনাহীর ঘরে চলে গেল ভিরেক্স। ভদ্রমহিলা আনাহী আর ভিরেক্স এর জন্য চা-কফি তৈরি করতে চলে গেল।
..
..
..
..
..
..
..
..(চলবে…………..)

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 16

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
………………………….PART:16…………………………

আস্তে আস্তে শব্দটা আরও বাড়তে লাগলো। চাকু হাতে তৈরি হয়ে গেলো ট্রুডো। হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো শব্দটা। টাসকি খেয়ে গেলো ট্রুডো। এটা কি হলো? গোলমাল পাকিয়ে গেলো আবার। ভাবতে ভাবতে সামনে এগোতে লাগলো ট্রুডো। খানিকদূর যাওয়ার পর একটা নারিকেল গাছের পাশে দাঁড়ালো ট্রুডো। জঙ্গলের সব গাছগুলোই স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি লম্বা হয়ে থাকে। নারিকেল গাছের মাথা অবধি তাকাতে প্রায় উল্টো হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ট্রুডোর। হাতে চাকু। অতো উঁচুতে উঠতে পারবে না। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেটে গেলো। এলিনাকে দিয়ে কয়েকটা নারিকেল আর কচি ডাব পাড়ানোর কথা মনে পড়লো ট্রুডোর। জঙ্গলের মাঝখান থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে ডাক দিলো এলিনাকে। এলিনা ট্রুডোর চিৎকার শুনে ভাবলো হয়তো ট্রুডো বিপদে পড়েছে তাই তাড়াতাড়ি ভ্যাম্পায়ার হয়ে উড়ে আসতে লাগলো ট্রুডোর দিকে। জঙ্গলের মাঝে ট্রুডোকে দেখে নিচে নামলো এলিনা। ট্রুডোকে বললো,”আবার কি হলো?”
ট্রুডো মুচকি একটা হাসি দিয়ে এলিনাকে বললো, “নারিকেল পারতে হবে। সাথে কয়েকটা ডাব।”
এলিনা বললো,”তো! পেরে নিন, এতে আমাকে চিৎকার দিকে ডাকার কি আছে?”
ট্রুডো বললো,”আপনাকেই নারিকেলটা পারতে হবে, আমি তো আর আপনার মতো উড়তে পারবো না। তাই প্লিজ, কাজটা করে দিন তাড়াতাড়ি। খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ”

ট্রুডোর কথামতো এলিনা উড়ে গিয়ে নারিকেলসহ কয়েকটা ডাব পেরে নিয়ে গেলো সেই গাছের নিচে। ট্রুডোও এগোতে লাগলো। ট্রুডোর পেছনে পেছনে উড়ে যেতে লাগলো সেই কাইরোর দাঁড়কাকটা। নজর রাখতে লাগলো ট্রুডোর উপর।

এদিকে আয়নার লেখার মর্মার্থ বুঝতে না পেরে নাজেহাল অবস্থা হিপোসের। ঘরের সব জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে দিতে লাগলো। হঠাৎ চোখ পড়লো একটা ছোট্ট পুঁথির উপর। খুব ছোট। হাত দিয়ে ধরাটাই মুশকিল। একটা ইঁদুরের জন্য পুঁথিটা পড়া পারফেক্ট হবে এমন ছোট। এমনিতেই একটা ঝামেলায় আটকে আছে হিপোস তার উপর এই পুঁথির চিন্তা মাথাতে ঢুকে গেলো। পুঁথিটা আঙ্গুল দিয়ে সরাতেই কাঠের বাক্সতে একটা ছিদ্র বের হলো। বেরিয়ে এলো একটা নেংটি ইঁদুর। অবাক করে দিলো হিপোসকে। ইঁদুরটা বেরিয়েই মাথা নত করে কথা বলা শুরু করলো, “স্বাগত আপনাকে। গোত্রপ্রধান আপনার কথা আমাকে বলে গেছে। বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য।”
হিপোস তো ইঁদুরের কথা শুনে চমকে চ হয়ে গেছে। আর কি কি বাকী আছে এই গোত্রপ্রধানের ঘরে সেটাই দেখার বাকী। সব আজব আজব জিনিস, ঘটনা দিয়ে ভরপুর। ঝটপট ভেবে ইঁদুরকে বললো হিপোস,”পুঁথিটা পড়ে আমাকে শুনাও।”
শুরু হলো ইঁদুরের পুঁথি পড়া। পুঁথিটাতে আয়নাতে কিভাবে গোত্রপ্রধানের সাথে দেখা করা যাবে আর মায়াশক্তি অর্জন করার জন্য কি কি করতে হবে সব ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা আছে। পুরো পুঁথি পড়ে শুনার পর হিপোস বুঝতে পারলো সবকিছু। কেউ যদি জোর করে গোত্রপ্রধান হয় তবে কোনো লাভ হবে না বরং কয়েক মাসেই তার মৃত্যু হবে আর যদি গোত্রপ্রধানের ইচ্ছানুযায়ী কেউ গোত্রপ্রধান নির্বাচিত হন তাহলে তাকে সেই মায়াবী পাথর অর্জন করতে হবে। পুঁথিপাঠ শেষ হলে ইঁদুরকে প্রশ্ন করলো হিপোস,”আমি তোমার কথা বুঝতেছি কিভাবে? আর গোত্রপ্রধান তো মারা গেছে তো কিভাবে সে তোমাকে আমার কথা বলে গেলো?”
চিকন গলায় চোঁ-চোঁ করতে করতে বলতে লাগলো ইঁদুর,”মৃত্যুর সময় আপনার মাঝে যে মায়াশক্তি তিনি ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন সেটার জন্যই আপনি আমার সাথে কথা বলতে ও বুঝতে পারছেন। আমার কাজ হচ্ছে এই গুপ্ত পুঁথিটা নতুন গোত্রপ্রধানকে পড়ে শুনানো। কারণ এর অক্ষরগুলো এতো ছোট যে কোনো মানুষের পক্ষে এটা পড়া সম্ভব নয়। আর প্রত্যেক গোত্রপ্রধান মৃত্যুর পর অশরীরী হয়ে এই আয়নার ভেতর বন্দি হয়। যিনি নতুন গোত্রপ্রধান নির্বাচিত হন তার মায়াশক্তি অর্জন করতে হয়। কিন্তু আগের গোত্রপ্রধানের সাথে যোগাযোগ না করে তা সম্ভব নয়। তাই যোগাযোগ করার উপায় হিসেবে এই ছোট্ট পুঁথি রয়েছে। আগের গোত্রপ্রধানের অশরীরীই আমাকে আপনার কথা বলেছিলেন।”

কথাটা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো হিপোস। কি জটিল একটা নিয়ম। কথা শেষ করে আবার নিজের গর্তে ঢুকে গেলো ইঁদুরটি। পুঁথিটাও তার আগের জায়গায় চলে গেলো আপনা-আপনি। গোত্রপ্রধানের সাথে কথা বলার উপায়ও জানা হয়ে গেছে। এখন শুধু প্রয়োগের অপেক্ষা। হিপোসের মায়াশক্তি অর্জন করার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না কিন্তু সে গোত্রপ্রধান নির্বাচিত হয়েছে তাই বাঁচতে হলে অবশ্যই তাকে মায়াশক্তি অর্জন করতে হবে। স্থিরতা কাটিয়ে খুঁজে খু্ঁজে একটা বই বের করলো হিপোস। বইটি নিয়ে আয়নার সামনে হাজির হলো। শুরু করলো বই পড়া।

এদিকে ট্রুডো আর এলিনা খাওয়া শেষে বসে আছে। ট্রুডো তার চাকুর কথা মনে পড়তেই এলিনাকে বললো,”আমার চাকুটা দিন।”
এলিনা তার কোমড় থেকে চাকুটা বের করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই বের হলো না। ট্রুডো বুঝে গেলো সেই চাকুটা আর পাবার নয়। ভ্যাম্পায়ার চাকু ভ্যাম্পায়ারদের কাছেই চলে গেছে। ট্রুডো বললো,”থাক্, সেটা আর লাগবে না আমার।”
এলিনা বললো,”এটা তো ভ্যাম্পায়ারদের কাছে থাকে। আর আমার কাছে যখন আছে তখন আর চিন্তা কিসের।”
কথাটা বলার পর হঠাৎ ট্রুডোর বলা সেই কথাটা মনে পড়লো। ট্রুডো নারিকেল পারার সময় বলেছিলো,”আমি তো আর আপনার মতো উড়তে পারি না।”
কথাটা শুনার পর তখন চিন্তা না করে চলে এসেছিলো এলিনা কিন্তু এখন হঠাৎ মনে পড়তেই ট্রুডোকে প্রশ্ন করলো এলিনা,”আপনি তখন বললেন আপনি উড়তে পারেন না। ভ্যাম্পায়ার হয়ে এমন একটা মিথ্যা কথা কিভাবে বলতে পারলেন?”
..
..
..
..
..
..
..
..(চলবে……….)

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 15

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………..
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………..
………………….………PART:15………………………….

দুদিন পর…….
জ্ঞান ফিরলো গোত্রপ্রধানের। সবাই চারদিকে বসা। সব মায়াশক্তি শেষ। অ্যাথিনার পূজা করতে না পারায় বাকী শক্তিটুকুও চলে গেছে। তাছাড়া যে পাথরটার শক্তির জন্য এতোদিন ধরে বেঁচে ছিলো সেটাও নেই। শুয়ে থেকে ইশারায় বলে দিলো গোত্রের সেরা মানুষটিকে তার সামনে হাজির করার। হিপোস নামক এক ব্যক্তিকে সবাই গোত্রপ্রধানের সামনে হাজির করলো। বিশাল দেহ, বাঘের মতো শক্তি শরীরে, স্থির চাহনি, চলাফেরাও বীরের মতো। আস্তে আস্তে গোত্রপ্রধানের কাছে গিয়ে বসলো সে। গোত্রপ্রধান হিপোস এর মাথাটা নিজের মাথার সাথে লাগিয়ে মন্ত্র জপতে শুরু করলেন। চোখ বন্ধ করে কয়েক্ষণ মন্ত্র জপার পর চোখ খোলা মাত্রই একটা মায়াবী আলো হিপোস এর চোখ মুখ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। শিউরে উঠলো হিপোস। মারা গেলেন গোত্রপ্রধান। লাশটাকে রেখে উঠে দাঁড়ালো হিপোস। ঘোষণা দিলো,”আমি হলাম এই উপজাতির গোত্রপ্রধান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করো।”
গোত্রপ্রধানের লাশটাকে তুচ্ছ করে চুপাকাবরার আস্তানায় ফেলে দেওয়া হলো। নিমেষের মধ্যেই রক্ত চুষে সাবার করে দিলো চুপাকাবরা। নতুন গোত্রপ্রধান হওয়ায় রক্ত দিয়ে গোসল করানো হবে হিপোসকে। কিন্তু রক্ত কোথায়?
ধীরে ধীরে এলিনার বাবা মাকে যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে সেদিকে এগোতে লাগলো হিপোস। মুখে শয়তানি এক মুচকি হাসি। চোখদুটোও শয়তানির দৃষ্টিতে মাতোয়ারা। বন্ধ দুয়ার খুলে দেখলো কদিন না খেয়ে আধমরা হয়ে গেছে এলিনার বাবা মা। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো হিপোস,”এদেরকে খায়িয়ে বলি দেওয়ার ব্যবস্থা করো আর স্নানের জন্য রক্ত সংগ্রহ করো। যাও, তাড়াতাড়ি।”
মুক্ত করা হলো এলিনার বাবা মাকে। সামনে দেওয়া হলো বিভিন্ন রকমের খাবার। ক্ষুধার জ্বালায় পেটপুরে খেয়ে নিলো তারা। শরীর নেতিয়ে পড়লো তাদের। বন্দি করে রাখা হলো আবার। আয়োজন করতে লাগলো বলি দেওয়ার জন্য।
ঘন্টাখানিক পর….
রক্ত সংগ্রহের জন্য আছে বড় বড় দুটি গামলা। হিপোস এখনো ঘর থেকে বের হয়নি। সম্ভবত গোত্রপ্রধানের রেখে যাওয়া বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও মায়াবী পুঁথি পড়ছে। বাইরে সব তোড়জোড় করে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। অপেক্ষা করছে হিপোস এর জন্য। হঠাৎ রেডি হয়ে বাইরে আসার জন্য পা বাড়াতেই চোখে জ্বলজ্বল করে উঠলো সেই মায়াবী আয়না। আলোকিত হতে দেখে আস্তে আস্তে আয়নার দিকে এগোতে লাগলো হিপোস। চোখে চমকানো উচ্ছ্বাস। মনে খানিক ভয়। আনন্দের এক মুচকি হাসি ভেসে উঠলো হিপোস এর মুখে। সে কল্পনাও করতে পারেনি তার শৌর্যবীর্য দ্বারা একদিন সে এই উপজাতির গোত্রপ্রধান হবে। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আয়নার আলো নিভে গেলো। অন্ধকার হয়ে গেলো আয়নাটা। রক্ত দিয়ে লেখা দুটি লাইন ভেসে উঠলো আয়নায়।
“সেই ছেলেটার কাছ থেকে মায়াবী পাথর আনতে হবে নাহলে মৃত্যু খুব সন্নিকটে। যাও মায়াবী পাথর উদ্ধার করো।”
লেখাটা পড়ে হতবাক কয়ে গেলো হিপোস। কি অদ্ভুত আয়না। ভাবতে লাগলো,”কোন ছেলেটার কথা বলা হয়েছে? আর মায়াবী পাথরটাকেই চিনবো কিভাবে? আর ছেলেটাই বা কোথায়? উফ্ এখন দেখছি গোত্রপ্রধান হয়েও ফেসে গেলাম। ”
আয়নাটার রহস্যটা আপাতত রেখে বাইরের অনুষ্ঠানের কাজটা আগে সম্পন্ন করার জন্য বাইরে চলে গেলো হিপোস। একটা উঁচু ঢিবির উপর দাঁড়িয়ে এলিনার বাবা মাকে আনার জন্য ঘোষণা দিলো। দুজন লোক গেলো তাদেরকে আনতে কিন্তু দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখে কেউ নেই। ভ্যানিস হয়ে গেছে এলিনার বাবা মা। দৌঁড়ে বাইরে এসে বললো,”পালিয়ে গেছে তারা। ঘরে নেই। ”
সাথে সাথে দৌঁড়ে ঘরে গেলো হিপোস। চারদিকে ভালো করে দেখে সত্যিই এলিনার বাবা মা ভ্যানিস। বাইরে এসে সবাইকে বললো যেন সবাই পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে। যে করেই হোক তাদেরকে খুঁজে পেতেই হবে। হিপোস এর কথামতো সবাই অস্ত্র হাতে পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো। দিশেহারার মতো সবাই খুঁজতে লাগলো এলিনার বাবা-মাকে।
সবাই খালি হাতে ফিরে এলো। জঙ্গলের কোথাও খোঁজে পেলো না এলিনার বাবা-মাকে। একটু রেগে গেলো হিপোস কিন্তু রাগটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মনে মনে শুধু ভাবতে লাগলো সেই আয়নার লেখাটার কথা। দ্রুত হেঁটে ঘরে চলপ গেলো হিপোস। বের করলো তিনশো খানেক পুরোনো পুঁথি। খুঁজতে লাগলো মায়াবী পাথরটার রহস্য। একের পর এক বই পড়তে লাগলো হিপোস। হঠাৎ একজন দরজাতে কড়া নাড়তেই রেগে গেলো হিপোস। দৌঁড়ে চলে গেলো লোকটা। প্রায় পনেরোটা বই পড়ে কিছু না পেয়ে আবার সামনে গেলো আয়নার। নেই, কিছুই নেই। স্বাভাবিক আয়নার মতো আয়নাটায় নিজের অবয়ব দেখতে পেলো হিপোস। হড়কে গেলো সে। চিন্তা বাড়তে থাকলো তার।

এদিকে ট্রুডো আর এলিনা ক্ষুধার জ্বালায় নেতিয়ে পড়েছে। এলিনাকে রেখে জঙ্গলের ভেতরে গেলো ট্রুডো খাওয়ার জন্য কিছু আনতে। একা একা গাছের নিচে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো এলিনা। মিষ্টি একটা বাতাস বয়ে গেলো নিমেষেই। শীতল করে দিলো এলিনার শরীর৷ ট্রুডোর কাছ থেকে ভ্যাম্পায়ার লকেট আর শক্তি নিতে পারলেও একটা জিনিস নিতে পারেনি কাইরো। তা হচ্ছে একটা চাকু। সব ভ্যাম্পায়ারের কাছেই পুরোনো একটা চাকু থাকে। যেটা দিয়ে তারা একটা বিশেষ সময়ে অন্যদের আঘাত করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে তাদেরকেও ভ্যাম্পায়ার করে দেওয়া যায়। ভ্যাম্পায়ার শক্তি আর নেই তাই চাকুটা সেই কাজে ব্যবহার করারও কোনো প্রয়োজন মনে করলো না ট্রুডো। চাকুটা হাতে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে হাঁটতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ থেমে গেলো একটা আওয়াজ পেয়ে। ঘোড়ার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সতর্ক হয়ে গেলো ট্রুডো। তার আশপাশ থেকেই শব্দটা ভেসে আসছে।
..
..
..
..
..
..(চলবে……………)
..
..
..
..গল্পটির টুইস্ট নিয়ে মন্তব্য করার আশা করছি। অনেকে গল্প পড়েন কিন্তু গঠনমূলক মন্তব্য করেন না বিধায় গল্প লেখার উৎসাহটা হারিয়ে যায়। গল্পের ভালোমন্দ দিক উল্লেখ করে কমেন্ট করলে উৎসাহ পাই। শেয়ার করে, বন্ধুদের মেনশন করে তাদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিন। গল্প নিয়ে যেকোনো আড্ডা, সমালোচনা বা আলোচনামূলক পোস্ট করুন “Black fantasy” গ্রুপে। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 14

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:14…………………………

সকাল হতে চলেছে। ক্লান্ত শরীর। নেই কোনো বিশেষ শক্তি। ঘুমোবার জন্য তাবুটাও নেই। চারদিকে শুধুই নিঃসঙ্গতার ধূসর প্রবাহ। খারাপ লাগছে। মন খারাপ হয়ে গেলো হঠাৎ। হাঁটা শুরু করলো ট্রুডো। হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই জায়গা। চারদিকে ভোরের মিষ্টি আলো। ঝর্ণার পানির কলকল প্রতিধ্বনি। গাছপালার নিঃশব্দ ক্রন্দন। জঙ্গলের ভেতরে পড়ে থাকা সাজানো শুকনো পাতাগুলি এলোমেলো হয়ে আছে। হবে না কেন সারারাত ছুটাছুটি, হানাহানি। কতো ধকল গেলো। এতো বছরের বন্ধুত্বকে নিমেষের মধ্যেই শেষ করা হলো। ভ্যাম্পায়ার শক্তিটাও হারাতে হলো। ঝর্ণার তীরে বসে ভাবতে লাগলো ট্রুডো। ঝর্ণার পানির ঠান্ডা বাষ্পহাওয়ায় শীতল প্রবাহ দিচ্ছে। চোখটা লেগে এলো। ঘুমিয়ে পড়লো ট্রুডো। আর মৃত্যুর ভয় নেই, নেই হারানোর ভয়।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ট্রুডো। সেই দাঁড়কাকটা উড়ে এসে ট্রুডোর মাথায় ঠুকরাতে লাগলো। হুরমুড়িয়ে উঠলো ট্রুডো। সাথে সাথে ভ্যানিস হয়ে গেলো কাকটি। রওনা দিলো সেই গোত্রের আস্তানায়। এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। সবখানে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সতর্কতার সাথে এলিনাকে খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। ট্রুডোর উপস্থিতি বুঝতে পেরে এলিনা ডাক দিলো ট্রুডোকে। তাড়াতাড়ি এলিনার কাছে দৌঁড়ে গেলো ট্রুডো। শিকলবন্দি এলিনাকে দেখে চোখ ছলছল করে উঠলো তার। শিকটা খোলার জন্য চাবি খুঁজতে লাগলো ট্রুডো।
এলিনা বললো,”গোত্রপ্রধানের কাছে চাবি আছে কিন্তু তার থেকে নেওয়াটা অসম্ভব। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।”
ট্রুডো আস্তে আস্তে গোত্রপ্রধানের ঘরের দিকে এগোতে লাগলো। দরজা খুলার শব্দে একটা গাছের আড়ালে লুকালো ট্রুডো। বেরিয়ে এলো গোত্রপ্রধান। হাটতে হাটতে এলিনার সামনে এলো। এলিনা চোখ দিয়ে ইশারা করলো তার ঘরে যাওয়ার জন্য। ট্রুডো তাড়াতাড়ি গোত্রপ্রধানের ঘরে প্রবেশ করলো। শুরু হলো চিরুনি তল্লাশি। ঘরের যেদিকেই হাত দেওয়া হচ্ছে শুধু পুরোনো পুঁথি আর বই। মায়াবিদ্যার যতো বই আছে মনে হয় সব এই গোত্রপ্রধানের কাছে। সবকিছু উল্টিয়ে পাল্টিয়ে চাবিটা খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। গোত্রপ্রধানকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলো এলিনা। এলিনার কথাকে পাত্তা না দিয়ে ঘরের দিকে যেতে লাগলো গোত্রপ্রধান। ভয়ে এলিনার মন অস্থির হয়ে উঠলো। পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো ট্রুডো। ঘরে ঢুকলো গোত্রপ্রধান। পেছনে সরে যেতে লাগলো ট্রুডো। আটকে গেলো দেয়ালে। ট্রুডোকে দেখে গোত্রপ্রধান প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে মারার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো। হাত লেগে একটা মোটা বই মাটিতে পড়ে গেলো। বইয়ের ভেতর থেকে একটা চোখা ধারালো সুইয়ের মতো একটা পিন গড়িয়ে এলো ট্রুডোর পায়ের কাছে। তাড়াতাড়ি পিনটাকে হাতে নিয়ে গোত্রপ্রধানের বুকে বসিয়ে দিলো এক ঘা। মাটিতে পড়ে গেলো গোত্রপ্রধান। গোত্রের অন্য লোকেরা আসার আগেই তাড়াতাড়ি গোত্রপ্রধানের শরীরে চাবি খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ গোত্রপ্রধানের গলার দিকে চোখ যায় ট্রুডোর। একটা সবুজ আলো ঝলকানো পাথরের সাথে একটা চাবি গলায়। অতোশত না ভেবে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে গলা থেকে লকেটসহ চাবিটা নিয়ে দৌঁড়ে বাইরে চলে এলো ট্রুডো। তাড়াতাড়ি শিকলের তালাটা খুলতে লাগলো ট্রুডো। আস্তে আস্তে গোত্রের লোকেরাও ঘুম থেকক উঠে বাইরে আসতে লাগলো। তালাটা প্রায় খোলে গেছে। গোত্রের কয়েকজন ট্রুডোকে তালা খুলতে দেখে তেড়ে আসতে লাগলো তার দিকে। তালাটা খুলে যেতেই ভয়ঙ্কর এক গর্জনে এলিনা ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেলো। বিশাল পাখাদুটি দিয়ে আছাড় দিলো গোত্রের লোকগুলোকে। তাদের আওয়াজ শুনে ঘর থেকে সবাই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলো। সাথে সাথে ট্রুডোকে নিয়ে আকাশে উড়াল দিলো এলিনা। তাদের ধরতে না পেরে রাগে খিচতে লাগলো গোত্রের লোকগুলো। গোত্রের একজন তাড়াতাড়ি গোত্রপ্রধানের ঘরে প্রবেশ করে দেখে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে আছে গোত্রপ্রধান। চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো সে। বাইরে বের করা হলো গোত্রপ্রধানকে। বুকে একটা ছোট ছিদ্র দেখতে পেয়ে একজন সবাইকে বললো,”সরে যাও সবাই। দুদিন সময় লাগবে উনার। তার মায়াশক্তি দিয়ে দুদিন পর তিনি আবার ফিরে আসবেন।”
চমকানো চোখে সবাই তাকিয়ে রইলো গোত্রপ্রধানের দিকে। চোখ ছলছল দৃষ্টি সবার। গোত্রপ্রধান অচেতন থাকায় গোত্রের ভেতরে সবাই স্তব্ধ হয়ে রইলো। কেউ কোথাও বের হওয়ার সাহসও পেলো না। এলিনাকে ফিরে আনতে গোত্রের সেই লোকটি এলিনার বাবা মাকে বন্দি করার আদেশ দিলো। সাথে সাথে বন্দি করা হলো এলিনার বাবা মাকে।
ট্রুডোকে নিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে আরেক অজানা জঙ্গলে নামলো এলিনা। উঁচু পাহাড়ের শেষ মাথাটা বেকে গিরিখাদের উপরে এসে পড়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পুরো জায়গাটায় নজর রাখা যায়। একটা বিশাল বড় গাছও আছে। গাছের নিচে বসে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে একটা মুচকি হাসি দিলো ট্রুডো। এলিনাও মানুষ রুপে এসে বসে পড়লো ট্রুডোর পাশে।

এদিকে মিউরিসকে একটা হাসপাতালে নেওয়া হলো। অপারেশন করে পা টা কেটে ফেলে দেওয়া হলো। মাত্র একজনের জন্য ভেঙ্গে গেলো এতোবছরের প্রিয় গ্রুপটি। আনাহীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভিরেক্স অনেক খু্ঁজাখুঁজি করেছে আনাহীকে। কোথাও খুঁজে পায়নি। আনাহীর জন্য চিন্তায় আছে তারা। অভিমান করে চলে গেছে আনাহী। যেকোনো সময় যাকিছু করে ফেলতে পারে। হসপিটালে জেফারীকে রেখে বাকীসব বের হলো আনাহীকে খুঁজে আনার জন্য। সারাদিন খুঁজাখুঁজি করার পর সবাই একত্রিত হলো ভিরেক্স এর বাসায়। ভিরেক্সও খুব কষ্ট পাচ্ছে। অবশেষে ঠিক করা হলো থানায় জানানোর জন্য। দুজন চলে গেলো থানায়। শুরু হলো পুলিশ আর তাদের খুঁজাখুঁজি। পার হতে লাগলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চিন্তা বাড়তে লাগলো সবার।
..
..
..
..
..
..
..(চলবে……………)

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 13

0

……………….#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
……………….মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
…………………………PART:13…………………………

এলিনা আবার কাইরোকে প্রশ্ন করলো,”আমার রক্ত খাওয়ার নেশাটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাকে রক্তের নেশাটা ফেরাতে কি করতে হবে?”
একটু মুচকি হাসলো কাইরো। গম্ভীরতার সাথে বললো, “ঠিক সময়ে আবার ফিরে পাবে।” কথাটা বলেই একটা আলোকীয় মায়া ছুড়ে অন্ধকারে বিলিন হয়ে গেলো কাইরো। মায়াটা শিকলে গিয়ে পড়ার সাথে শিকলের মায়াটা কেটে গেলো। এলিনা ভাবলো হয়তো শিকলটা খুলে গেছে কিন্তু পরে আন্দাজ করতে পারলো যে শিকল খুলেনি বরং শিকলের মায়াটা নষ্ট করা হয়েছে।
এদিকে মিউরিসকে নিয়ে আসা হলো। সবাই মিউরিসকে দেখে খুব খুশি হলো কিন্তু পরে যখন তার পা টা ভাঙ্গা দেখলো তখন সবারই প্রায় কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। আনাহী এগিয়ে গেলো কিছু করার জন্য। দেখে শুনে বললো,”কেটে ফেলে দিতে হবে। কিছুই করার নেই।”
সবাই আনাহীর কথা শুনে কেঁদে দিলো। আনাহী বললো,”যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে মিউরিসকে কোনো হসপিটালে নিতে হবে নাহলে আরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সবাই জঙ্গল থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিউরিস ব্যথায় লুটিয়ে গেছে। ব্লেডিকো অনেকটাই সুস্থ্য। সবাই রেডি চলে যাওয়ার জন্য।
রওনা দিলো সবাই কিন্তু ট্রুডো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থামলো সবাই। ভিরেক্স এগিয়ে গিয়ে বললো,”কিরে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল তাড়াতাড়ি। ”
ট্রুডো বললো,”তোরা যা, আমাকে ছেড়ে দে। আমি যেতে পারবো না। ”
বুঝতে পারলো সবাই ট্রুডো কি বলতে চাইছে। আনাহী এগিয়ে গেলো ট্রুডোকে বুঝানোর জন্য কিন্তু আনাহী কিছু বলার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,”যে আমাদেরকে বাঁচালো তার কথাটা একবারও চিন্তা করলিনা তোরা? কতোটুকু স্বার্থপর হলে এমন করা যায় বলতে পারবি?”
লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো সবাই। ব্লেডিকো ধীরে ধীরে বললো,”কিছু করার নেই। আমরা চাইলেও এখন তাকে বাঁচাতে পারবো না। তাছাড়া এলিনা তো নিজেই ভ্যাম্পায়ার, সে নিজেকে বাঁচাতে পারে। আর কি চাই?”
ট্রুডো মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো,”না, সে ভ্যাম্পায়ার ঠিক আছে কিন্তু সে চাইলেও নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। কারণ সেই কালো ছায়াটার (কাইরো) জন্য সে মরতেও পারে। খুব চতুর আর ধুর্ত কাইরো। আমার মনে হচ্ছে কিছু পাওয়ার জন্য সে এলিনাকে ব্যবহার করছে।”
এলিনার প্রতি ট্রুডোর এমন ভাবনা দেখে আনাহী হিংসাত্মকভাবে বললো,” একজন অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলবে। তাছাড়া সে তো মানুষ নয়, একজন ভ্যাম্পায়ার। আমরা নিজেদেরকে বিপদে ফেলে কেন তাকে বাঁচাতে যাবো?”
আনাহীর কথা শুনে রেগে গেলো ট্রুডো। যতটুকু যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো আনাহীর কথা শুনে ততটুকু ইচ্ছাও নষ্ট হয়ে গেলো ট্রুডোর। মনে শুধু এলিনার কথাই ভেসে উঠতে লাগলো ট্রুডোর। রেগে গিয়ে আনাহীকে বললো,”আমিও তো ভ্যাম্পায়ার ছিলাম। মেনে নিলাম আমাকে না জেনেই ভালোবেসে ফেলেছিলি, কিন্তু যখন জানলি তখন তো আমাকে ছেড়ে দিতে পারতি। কি করলি! আমাকে ভ্যাক্সিন দিয়ে ভ্যাম্পায়ার শক্তিটাকে দিয়ে দিলি এলিনাকে।”
ট্রুডোর কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেলো। একস্বরে সবাই বলে উঠলো, “এলিনাকে!! কি বলছিস এসব? তোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি এলিনার কাছে গিয়েছে নাকি?? ”
ট্রুডো মাথা নেড়ে রাগি কণ্ঠে বললো,”হ্যাঁ গিয়েছে শুধু তাই নয় আমার ভ্যাম্পায়ার লকেটটিও এলিনার কাছে।”
সবাই বললো,”কিভাবে?”
ট্রুডো বললো,”যখন ড্রেকইনস জেফারীর রুপ নিয়ে তাবুতে ছিলো আর আমাকে জঙ্গলে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলো তখন আমি সেখানে গিয়ে দেখি মিউরিস সেখানে নেই। শুধু চুপাকাবরা হিংস্রভাবে এগোচ্ছে আমার দিকে। ভ্যাম্পায়ারদের দেখলে চুপাকাবরা মাথা নিচু করে দৌঁড়ে পালায়। তাই আমি ভ্যাম্পায়ার রুপে তাদের সামনে যাই কিন্তু জানতাম না যে চুপাকাবরার দল কাইরোর কথামতো চলে। তাই শুরু হলো আমার উপর চুপাকাবরার হামলা। তবে আমাকে মেরে ফেলার জন্য নয় শুধু সেই ভ্যাম্পায়ার লকেটটি নেওয়ার জন্য যাতে আমি আর উড়তে না পারি। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে উড়ে পালাতে শুরু করি আমি কিন্তু চুপাকাবরার দল উড়ে এসে আঘাত করতে লাগল আমাকে। গলা থেকে পড়ে গেলো ভ্যাম্পায়ার লকেটটি। জ্ঞান হারালাম আমি। তারপর আর কি হয়েছে সেটা জানা নেই ?”
ভিরেক্স গোয়েন্দার মতো সঠিক কথাটা বলে দিলো,”তারপর আর কি হতে পারে, লকেটটি গিয়োছে এলিনার গলায়।”
ট্রুডো বললো,”সেটা গিয়েছে বলে ততোটা আক্ষেপ নেই কিন্তু আমার ভ্যাম্পায়ার শক্তি তো ছিলো কিন্তু সেই ড্রেকইনস এর ফাঁদে পা দিয়ে আনাহী এরকম একটা ভুল করে ফেললো এটা আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না। ”
আনাহী নিচুগলায় বললো,”আমি শুধু তোকে ভালোবাসি বলেই এমনটা করেছি। আমি চাই নস তুই আমার থেকে দূরে সরে যা। কিন্তু তোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি এলিনার কাছে কিভাবে যাবে? তোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি চলে গেছে তো ভ্যাক্সিন খেয়ে। ”
ট্রুডো বিরক্তির সাথে বললো,”আমাকে এমনিতেই তুই পাবি না। ভ্যাম্পায়ার থাকার কারণে যতোটুকু কাছে পেয়েছিলি এখন মানুষ হয়ে আরও দূরে ঠেলে দিলি আমাকে।
যখন আবার আমি মিউরিসকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলের ভেতরে যাই তখন কাইরো আমার উপর একটা মায়া প্রয়োগ করেছিলো যাতে ভ্যাক্সিন খাওয়ার পর ভ্যাম্পায়ার শক্তিটা এলিনার কাছে চলে যায়।”
ট্রুডোর কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে জঙ্গলের বাইরের দিকে দৌঁড়ে চলে আনাহী। তার পেছনে পেছনে যেতে লাগলো ভিরেক্স। অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লো ট্রুডো। ব্লেডিকো আস্তে আস্তে হেঁটে ট্রুডোর কাধে হাত রাখতেই ট্রুডো বললো, “চলে যা তোরা। এলিনাকে ছেড়ে যেতে পারবো না আমি। তাছাড়া কাইরোর উপর প্রতিশোধ নিতে হবে আমাকে৷”
ব্লেডিকো ট্রুডোর কথা শুনে কিছু মনে না করে উল্টো তাকে বুঝাতে লাগলো,”দেখ এসব করে কিছুই হবে না বরং তেরসহ আমাদের সকলের ক্ষতি। এলিনাকে আমরা পরেও বাঁচাতে পারবো। আর কাইরো তো একটা ছায়া। বিশাল শক্তি তার। একটা মানুষ হয়ে তার উপর কি প্রতিশোধ নিবি তুই? এখন চল আমাদের সাথে। এটাই ভালো হবে। ”
ট্রুডোর কোনো উত্তর নেই। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাত ধরে টানলো ব্লেডিকো। কিন্তু না, ট্রুডো মানলো না ব্লেডিকোর কথা। রেগে গিয়ে ব্লেডিকো জোরে বলে উঠলো,”এলিনা কে হয় তোর? একটা উপজাতির মেয়ে সে। দুদিনের পরিচয় তার সাথে আর আমারা? কতবছর একসাথে আছি? আমাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিবি?”
ট্রুডোও রেগে গিয়ে ব্লেডিকোর কথার জবাব দিলো,”আমি এলিনাকে ভালোবাসি। আমি জানি না সে উপজাতি বলে কি দোষ করেছে৷ আর হ্যাঁ, আমি ছাড়া তে আর সবাই থাকছে গ্রুপে। ছেড়ে দে না আমাকে। আমাকে আমার মতো কাজ করতে দে। ”
ব্লেডিকো বললো,”ঠিক আছে। একটা সম্পর্ক যতো তাড়াতাড়ি মিষ্টি হয়ে উঠে সেটা ভাঙলে ঠিক দ্বিগুণ তিক্ত হয়। আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার ফল তুই নিশ্চয় পাবি। এলিনাকে ভালোবাসিস না? তোর ভালোবাসাই তোর মৃত্যুর কারণ হবে।”
কথাটা বলার পর সবাইকে নিয়ে রেগেমেগে চলে গেলো ব্লেডিকো। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো ট্রুডো। সে অনড়, যা ভাবে তাই করে সে। একবার যখন বলেছে তখন তাই করবে। ব্লেডিকোর কথা সত্য হলেও তাই করবে ট্রুডো। রয়ে গেলো জঙ্গলের মাঝে একা। চলে গেলো সবাই। শুরু হলো আরেক অধ্যায়।
..
..
..
..
..
..(চলবে…………..)
..
..
..
..
গল্পটির কাহিনীটা অনেক বড়। চেয়েছিলাম পুরোটা লিখবো কিন্তু পারবো না। শুরুটুকু দিয়েই শেষ করবো। আর মাত্র কয়েকটা পর্ব দিয়েই বন্ধ করে দিবো গল্প। গল্পটা নিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করার আশা করছি। ধন্যবাদ সকলকে।

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 12

0

………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
………………………..PART:12………………………….

সবকিছু এলোমেলো লাগছে ট্রুডোর। বুঝতে পারছে না এমনি এমনি এলিনার রক্ত খাওয়ার ইচ্ছাটা নষ্ট কিভাবে হবে। এলিনাকে প্রশ্ন করলো ট্রুডো, “কিন্তু আপনার তো এমনি এমনি এরকমটা হওয়ার কথা নয় তবুও কিভাবে হলো?”
এলিনা বললো,”সেটা তো জানি না। আমি ভ্যাম্পায়ার শক্তি সম্পূর্ণ পাওয়ার পর থেকে প্রথমবার রক্ত খেয়েছি।”
কথাটা শুনতেই আনাহীর উপর সন্দেহ হলো ট্রুডোর। অনুষ্ঠানে যখন এলিনা ব্লেডিকোর রক্ত খাওয়ার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলো তখন আনাহী তার সামনে এক গ্লাস রক্ত নিয়ে গিয়েছিলো। নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করলো আনাহীকে, “তুই যখন এলিনাকে এক গ্লাস রক্ত দিয়েছিলি তখন সে রক্ত কোথায় পেয়েছিলি?”
সাথে সাথে ভিরেক্সও প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,”আমরা যখন সেখানে গিয়েছিলাম আর ট্রুডো বলেছিলো ঝোপের আড়ালে লুকোতে তখনও তো আনাহী ছিলো। কিন্তু পরে তাকিয়ে দেখি আনাহী নেই। কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই?”
আনাহী কিছুর উত্তর দিতে পারছে না। কারণ তখন সে কাইরোর মায়াজালে সম্মোহিত ছিলো। কাইরো যা যা বলেছে তাই তাই করেছে আনাহী। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো আনাহী কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না। নিচুস্বরে উত্তর দিলো, “আমার কিছু মনে নেই।”
ট্রুডো বললো,”তাহলে কি এলিনার রক্তের নেশা নষ্ট হওয়ার পেছনে আনাহীর সেই রক্তের কোনো কোনো সম্পর্ক আছে?”
আনাহী বললো,”আমি জানি না। আমার তো এটাও ভালোভাবে মনে নেই যে আমি এলিনাকে রক্ত দিয়েছি কি না৷”
জ্ঞান ফিরলো ব্লেডিকোর। উঠার চেষ্টা করতেই আহ্ করে চিৎকার করে উঠলো সে। আনাহী দৌঁড়ে গেলো ব্লেডিকোর কাছে। প্রশ্ন করলো,”সবকিছু ঠিক আছে তো?”
মাথা থেকে অনেক রক্ত বেরিয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরেছে এটাই অনেক। তবুও আনাহী জঙ্গলের লতাপাতা দিয়ে একটা এন্টিসেপ্টিক তৈরি করে ব্লেডিকোর মাথায় লাগিয়ে দিলো। আনাহীর উপর কেউ জোর করলো না কোথায় সে রক্ত পেয়েছিলো। বরং ব্যাপারটা রেখে দিলো। হয়তো পরে আনাহীর মনে পড়ে যেতে পারে। আর এখন সেসব নিয়ে তর্কাতর্কি করারও সময় নয়। ভিরেক্স বললো,”আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মিউরিসকে বাঁচানোর চেষ্টা কর।”
কথাটা শুনার পরই ট্রুডো এলিনাকে বললো,”মিউরিসকে চুপাকাবরাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। ”
এলিনা ট্রুডোর কথাটা শুনে সাথে সাথে উড়ে গেলো মিউরিসকে বাঁচানোর জন্য। বাকীরা অপেক্ষা করতে লাগলো।
আনাহী আস্তে আস্তে পায়চারি শুরু করে দিলো। মুখে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো একের পর এক ঘটনা। সেই অ্যাডোনিস গাছ পর্যন্ত সবকিছু মনে আছে আনাহীর কিন্তু তারপরের ঘটনা কিছুই মনে নেই তার।
এদিকে গোত্রপ্রধান তার ঘর থেকে একটা আয়না বের করলো। শুকনো তালপাতায় মোড়ানো। আয়নাটাকে সামনে রেখে এক গামলা পানিতে মায়া প্রয়োগ করলো গোত্রপ্রধান। পানিতে ভেসে উঠলো এলিনার প্রতিচ্ছবি। দেখে নিলো এলিনা কোথায় আছে। আয়নাটাকে কাঁধে নিয়ে বের হলো এলিনাকে ধরার জন্য।
এলিনা কয়েকমিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলো চুপাকাবরার আস্তানায়। এলিনাকে দেখে সব চুপাকাবরা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এলিনা তার বিশাল পাখাদুটি ঝাপটিয়ে এগোতে লাগলো সামনে। পাখার বাতাসে ডালপালা সব ভেঙ্গে যেতে লাগলো। পেছন থেকে ঝাকে ঝাকে উড়ে আসতে লাগলো চুপাকাবরার দল। আওয়াজ করতে লাগলো সব।লাল আলো ঝলাকানো চোখদুটো দিয়ে উড়ন্ত চুপাকাবরাদের দিকে তাকাতেই সব মাটিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়তে লাগলো। বাকী চুপাকাবরাগুলো পেছনে উড়ে যেতে লাগলো। কয়েকক্ষণের মধ্যে খালি হয়ে গেলো আস্তানা। উড়ে উড়ে মিউরিসকে খুঁজতে লাগলো এলিনা। কাটাওয়ালা ডালপালা দিয়ে তৈরি একটা ঘরে বন্দি হয়ে আছে মিউরিস। ক্ষুধায় তৃষ্ণায় মুখ থেকে শব্দও বের হচ্ছে না মিউরিসের। কোনোরকমে আওয়াজ আসছে, “বাঁচাও আমাকে।” কান পেতে শব্দ শুনে উৎসের দিকে এগোতে লাগলো এলিনা। পৌঁছে গেলো মিউরিসের কাছে কিন্তু কাটাযুক্ত ডাল দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের করার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে নিজের বিশাল দুটি ডানা দিয়ে আঘাত করলো ঘরে। ভেঙে চুরমাড় হয়ে গেলো ঘর। মিউরিসকে নিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্বত হলো। কিন্তু পরোক্ষণেই এসে গেলো গোত্রপ্রধান। তালপাতায় মোড়ানো আয়নাটা বের করার সাথে সাথে পুরো জায়গাটা জুড়ে আলোয় ভরে গেলো। এতো আলোয় তাকানো যাচ্ছে না। আলোর প্রতিফলনে এলিনার ভ্যাম্পায়ার শক্তি অচল হয়ে আসতে লাগলো। ধুম করে পড়ে গেলো মাটিতে। মানুষ রুপে ফিরে এলো এলিনা। তাড়াতাড়ি জংলী লতা দিয়ে বেঁধে ফেললো এলিনাকে। উপড় থেকে পড়ে গিয়ে মিউরিসের ডান পা ভেঙ্গে গেলো। চিৎকার দিয়ে উঠলো মিউরিস। পায়ে হাত দিয়ে চিৎকার করতে লাগলো সে। ধরে নিয়ে গেলো এলিনাকে। যেহেতু সূর্যের আলো কিংবা আলোতে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি কাজ করে না সেজন্য গোত্রপ্রধান একটা মায়াবী আয়নায় আলো মায়া করে রেখেছিলো। যদিও তিনি জানতেন না যে এলিনা ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে আর সেটা এমনভাবে কাজে লেগে যাবে। এমন আরো অনেক জিনিস আছে গোত্রপ্রধানের কাছে। কিন্তু আসল অস্ত্র তিনি এখনো কাউকে দেখাননি এবং বেরও করেননি।
এলিনাকে নিয়ে গোত্রপ্রধান হাজির হলো সেই বলি দেওয়ার স্থানে। সময় দেখলো গোত্রপ্রধান। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে এলিনাকে মুক্ত করে শিকলবন্দি করা হলো। খিলখিল করে হাসতে হাসতে এলিনা বললো,”আবার একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ততদিনে আমি কি থাকবো? হা হা হা”
গোত্রপ্রধান রেগেমেগে তার ঘরে চলে গেলো। ওদিকে মিউরিস জঙ্গলের ভেতরে চিৎকার করতে থাকলো। প্রায় দুয়েক ঘন্টা পর খুব দেরি হচ্ছে দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো ট্রুডো। ভাবতে লাগলো,” ভ্যাম্পায়ারের এতো সময় লাগার কথা নয়। তাদের গতি বাতাসের থেকেও অনেকগুণ বেশি কিন্তু এলিনার এতো সময় লাগছে কেন? কোনো বিপদ হয়নি তো?”
মেডেকি, আনাহী আর ব্লেডিকোকে রেখে ট্রুডো আর ভিরেক্স একসাথে রওনা দিলো চুপাকাবরার আস্তানার উদ্দেশ্যে। আনাহীদেরকে সতর্ক হয়ে থাকতে বললো ট্রুডো।
ঘন্টাখানিক খুঁজাখুঁজির পর…….
ভিরেক্স শুনতে পেলো একটা চাপা গলার চিৎকারের শব্দ। বুঝতে পারলো শব্দটা মিউরিসের। ট্রুডোকে বলে তাড়াতাড়ি মিউরিসের দিকে দৌঁড়ে গেলো তারা। মিউরিসের কাছে গিয়ে দেখে তার অবস্থা প্রায় মৃত্যুমুখ। কোনোরকমে প্রাণটা আছে দেহে। চেংদোলা করে উঠাতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো মিউরিস। ট্রুডো লক্ষ করলো তার ডান পা উল্টোভাবে ঝুলছে। মিউরিসের অবস্থা দেখে প্রায় কেঁদে দিলো ট্রুডো। ভিরেক্স শান্তনা দিয়ে বললো,”এখন কাঁদার সনয় নয়। কিছু একটা করে মিউরিসকে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে।”
কান্না থামিয়ে ট্রুডো মিউরিসের কাছে বসে বললো,” তোকে যে বাঁচাতে এসেছিলো সে কোথায়? তোর এই হাল হলো কিভাবে?”
মিউরিস খুব কষ্টে চেষ্টা করলো বলার কিন্তু পারলো না। ভিরেক্স ট্রুডোকে মানা করে বললো,” সেসব পরে নাহয় ভাবা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি এখান থেকে চল, নাহলে যেকোনো সময় আরেকটা বিপদ আসতে পারে।”
বলতে বলতেই দূর থেকে মৃদু আওয়াজ আসতে লাগলো চুপাকাবরার দলের। তাড়াতাড়ি দুজনে মিউরিসকে ধরে তাদের বন্ধুদের কাছে যেতে লাগলো। ব্যথায় চিৎকার করতে লাগলো মিউরিস। তার ডান পা ঝুলছে। ভেঙ্গে গিয়ে শুধু চামড়াটার জন্য আটকে আছে মিউরিসের পা। শরীরের কয়েক জায়গায় ক্ষত হওয়ার চিহ্ন।

এদিকে সবকিছু নিশ্চুপ। গোত্রের সবাই যে যার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অনুষ্ঠানের হাজারো জিনিসপত্র। কয়েক জায়গায় লেগে আছে রক্ত। শিকলবন্দি এলিনা অন্ধকারের দিকে আনমনা হয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি ভাবছে আর শিউরে উঠছে। প্রায় মরে যেতে যেতে বেঁচে গেছে সবাই। কিন্তু মিউরিসের কথাটা চিন্তা করেই মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো এলিনার। তার দেওয়া কথাটা রাখতে পারলো না। তার উপর উড়ন্ত অবস্থায় পড়ে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছে মিউরিসের সেটাও দেখতে পারেনি সে। তাকে সেখান থেকে মিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রুডো আসবে কি না সেটা নিয়ে আরও জোড়ালো ভাবনা মাথাতে ঘুরপাক খাচ্ছে এলিনার। হঠাৎ কর্কশ কণ্ঠে উড়ে এলো সেই কাক। এলিনাকে যে গাছে বেঁধে রেখেছে সেই গাছের একটা শুকনো ডালে এসে বসলো। শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে আসার শব্দ আসতে লাগলো। সতর্ক হয়ে গেলো এলিনা। অন্ধকারের ভেতর থেকে বেরিয়প এলো কাইরোর ছায়া। মাথা নত করে স্বাগত জানালো এলিনা। আশপাশ ভরে গেলো নীলচে ধোয়ায়। ভেসে উঠলো কাইরোর আলো ঝলকানো চোখ। এলিনা প্রশ্ন করলো কাইরোকে, “চুপাকাবরা আমাকে চিনতে পেরেও ওমন আক্রমন করলো কেন? আমি তো এখন ভ্যাম্পায়ার। এখন তো আমাকে দেখে চুপাকাবরার পালানোর কথা। কি হলো এসব?”
এলিনার কথা শুনে রাগে কাইরোর চোখদুটো লাল হয়ে গেলো। থেমে গেলো এলিনা। কাকটা কর্কশ কণ্ঠে ডাকতে শুরু করলো। রাগে কাইরো কাকটার উপর একটা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেই উড়ে চলে গেলো।কাকের গা থেকে ঝরে পড়লো কয়েকটা পালক। ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠানের সব কিছু নষ্ট হওয়া দেখতে লাগলো কাইরো। মিটমিট করে হেসে আবার এলিনার সামনে এসে দাঁড়ালো।
..
..
..
..
..
..(চলবে………….)
..