Thursday, July 31, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1956



ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১১!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১১!
লেখক: তানভীর তুহিন!

– ” তোমার না সব বিষয়েই বেশি ফ্যাচফ্যাচ, কোনো কথা সোজাসাপ্টা ভাবে মেনে নেওয়া যেনো তোমার রক্তেই নেই! ” বলেই মুবিন মিছিলের হাত থেকে একপ্রকার জোর করে টেনে চায়ের কাপটা নিয়ে নেয়। তারপর একমুহুর্তও দেরী না করে চায়ের কাপে চুমুক লাগায় মুবিন। খানিক চা মুখে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় মুবিন, তাকে দেখে মনে হবে না সে চা খাচ্ছে। তাকে দেখলে যেকেউ’ই ভাববে সে হয়তো কী না কী ধরনের কী খাচ্ছে। মুবিন চা টুকু অতিযত্নে গলা দিয়ে পেটে নামিয়ে মিছিলকে বলে, ” ঠোটে কী চিনির লিপস্টিক লাগায় আসছো তুমি? কই আমার চা তো এতো মিষ্টি ছিলো না! ”
মিছিল এতক্ষন চোখ ছোট করে মুবিনের এসব ঢং দেখছিলো। এই বদমায়েশ ছেলের জন্য সে একটু স্বস্তিতে চা’ও খেতে পারলো না। জ্বালাতনের সার্ফ-এক্সেল, পচা মুবিইইন্না, শালা, হারামজাদা মনে মনে এসব বলে মিছিল গালমন্দ করছিলো মুবিনকে। যেই মুবিন ন্যাকা মার্কা কথাটা বললো মিছিলের যেনো গা-পিত্তি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠে মিছিল বললো, ” একদম ঢং মারাবি না তুই, যত্তসব ন্যাকা ন্যাকা কাহিনি! ”
– ” সত্যি বললেও দোষ! ”
– ” হু দোষ। চুপ থাক তো এখন! ”
মুবিন আর কথা না বাড়িয়ে মিছিলের চায়ের কাপের চা খেতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। মিছিল বসে বসে ফোন ঘাটতে থাকে। মুবিন আপনমনে চা খাচ্ছিলো, তখনই মুবিনের রোমান্টিক বিজ্ঞানি চোখদুটো চলে যায় সীমান্ত আর চৈতি’র দিকে। প্ল্যাটফর্মের বিপরীতপাশের ট্রেনের একটা বগিতে উঠে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সীমান্ত, আর চৈতি খানিক দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে আসছে। এমন ভাবে ঢং করে আসছে যেনো সীমান্ত ওর বয়ফ্রেন্ড, আর ট্রেনটাও ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অথচ ট্রেনটা কিন্তু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে ওরা এমন করছে কেনো?

মুবিন চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাক পাড়ে, ” এইই সীমান্ত এদিকে আয়! ”
সীমান্ত দাঁড়িয়ে চৈতির সাথে হাসাহাসি করছিলো। মুবিনের ডাক শুনেই ছুটে আসে। মুবিন জিজ্ঞেস করে, ” একটু আগে তুই আর চৈতি অমন ধরা-ছোয়া! ধরা-ছোয়া! খেলছিলি ক্যান? ”
মুবিন আর সীমান্ত কথা বলছিলো এর মধ্যেই ওদের পাশে এসে চৈতি দাঁড়ায়। চৈতি এসে মুবিনের কথা শুনে ফেলে। কথাগুলো শুনেই চৈতি সীমান্তর কাধে হাত দিয়ে মুবিনের দিকে চোখ নাচায়, তারপর সীমান্তর দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি আর সীমান্ত ডার্লিং রোমান্টিক সীনের রিক্রিয়েশন করছিলাম। সুন্দর হয়েছে না? ”
মুবিন চোখদুটো সরু করে নিজের ঘারটা এক ঝটকায় টেনে পেছনে নিয়ে যায়। সে বুদ্ধিগত ভাবে মারাত্মক ঝটকা খেয়েছে, চৈতি সীমান্তকে ডার্লিং বলে সম্বোধন করায়। মুবিন নিজের ভেতরে কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন না রেখে চৈতিকে জিজ্ঞেস করে, ” সীমান্ত তোর ডার্লিং হলো কবে থেকে? প্রেম শুরু করলি কবে তোরা? ”
মুবিনের কথায় হোহো করে হেসে ওঠে সীমান্ত, এক চিমটি পরিমান মুহুর্ত পরে চৈতিও শব্দ করে হেসে ওঠে। মুবিন বেয়াক্কেলের মতো দাঁড়িয়ে আছে, সে সামনের ঘটনার বিরামচিহ্ন নিয়ে সন্দিহান। চৈতি এসে এবার মুবিনের কাধ জড়িয়ে ধরে, মুবিন ভ্রু-কুচকে তাকায় চৈতির দিকে। মিছিল আপনমনে ফোন ঘাটছিলো হঠাৎ সামনে চোখ যেতেই দেখে চৈতি মুবিনের কাধ জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মিছিলের ভেতরটা ধক করে ওঠে, কী দেখছে সে এসব? ব্যাপারটা আরেকটু কাছ থেকে বোঝার জন্য মিছিল উঠে মুবিনের কাছে যায়। মিছিলকে পাশে দেখতেই মুবিন চৈতিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ” আরে বাল ডলাডলি না মারাইয়া বল না কী করছিলি? ”
চৈতি মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে, ” আরে বাল ওরে এমনিই ডার্লিং বলেছি। মজা করে!, আর তখন আমরা ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ফিল্মের ট্রেনের সীনটা রিক্রিয়েট করছিলাম দুষ্টুমি করে। ”
মুবিন মাথাটা উচিয়ে বলে, ” ওহ আচ্ছা! ”

‘ওহ আচ্ছা’ বলে শেষ করার পরমুহুর্তেই মুবিন বলে, ” এই আমি আর মিছিলও করবো এটা! ” মিছিলের চোখ কপালে উঠে যায়। মুহুর্তেই মুখ ঘুরিয়ে বলে, ” আমি গাজা খাইনি, যে এসব ঢং করতে যাবো। ”
মুবিন মিছিলের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চৈতিকে একপাশে টেনে নিয়ে যায়। চৈতিকে টেনে নিয়ে গিয়ে মুবিন চৈতিকে বলে, ” শোন মিছিল যদি ট্রেনে ওঠে তাহলে দিপিকার মতো দৌড়েই টেনে উঠবে। আর আমি শাহরুখের মতো ওর হাত ধরে ট্রেনে টেনে তুলবো। এখন কী করবি জানি না, কিন্তু তোর এটা করতে হবে। ব্যাস শেষ! ”
চৈতি দাত দিয়ে নখ কাটছিলো আর মনযোগ দিয়ে মুবিনের কথা শুনছিলো। মুবিনের কথা শেষ হবার পরে চৈতি বলে, ” হু করে দিবো। কিন্তু বড়সড় ট্রিট দিতে হবে! ”
– ” আরে দিবো। তুই আগে ওরে ম্যানেজ কর! ”
চৈতি ড্যাং ড্যাং করে পা নাচিয়ে মিছিলের কাছে যায়।

মিছিল সামনে হাত বেধে দাঁড়িয়ে আছে। সে চৈতিকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে চৈতি তাকে কী বলতে এসেছে। চৈতি কিছু বলবে তার আগেই মিছিল বলে, ” একদম ঐ পাগলাটার কথায় আমায় মানাতে আসবি না। আমি ওসব ন্যাকামি করতে পারবো না, কোনো মতেই না! ”
চৈতি কপাল কুচকে তীক্ষ্ণ কন্ঠে মিছিলকে ঝাড়ি মেরে বলে, ” আরে বেডি আগে আমায় কথা বলতে তো দিবি। শোন তোর ব্যাগটা আগেই আমি নিয়ে ট্রেনে উঠে যাবো, তুই শুধু ট্রেন যখন ছাড়বে তখন দৌড়ে যাবি। আর মুবিন তোর হাত ধরে ট্রেনে টেনে তুলবে। ব্যাস এটুকুই, আর ট্রেন তো প্ল্যাটফর্ম এরিয়ায় জোরে চলে না। একদমই আস্তে আস্তে চলে। সো নো প্রব্লেম! ”
মিছিল কিছুতেই মানবে না। সে চৈতিকে উল্টো ঝাড়ি মেরে বলে, ” আমি পারবো না। মানে পারবো না! ”
চৈতি বিজ্ঞ কন্ঠে বলে, ” তুই কী ভালোমতো ট্রিপটা ইঞ্জয় করতে চাসনা? তুই যদি এখন মুবিনের ইচ্ছা পুরন না করিস, তাহলে ঐ হারামি পুরো ট্রিপে তোর হাড় জ্বালিয়ে খাবে। আমি ওকে কলেজ থেকে চিনি, ও এমনই। আমি ওকে কলেজ থেকে চিনি তো তাই’ই বলছি। আর তোর এতো প্রব্লেমের কিন্তু কিছু দেখছি না, মুবিন তোকে ভালোবাসে! প্রোপোজও করে দিয়েছে। আর তুইও তো মুবিনকে লাইক করিস, প্রব্লেমের কোনো ইস্যুই দেখছি না! ”
মিছিল থতমত খেয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, ” আমি মোটেই ওই বেদ্দপটাকে পছন্দ করি না! ”
চৈতি মিছিলের দিকে চোখ টান টান করে তাকিয়ে মিছিলকে কোমড় দিয়ে একটা ধাক্কা মেরে বলে, ” আহারা ন্যাকামনি’টা। আমি বুঝি, বুঝিনা? ”
– ” বাল বুঝো তুমি! ”
– ” হু তোর বাল বুঝি! ”
মিছিল মুখ ভেংচায়। চৈতি বলে, ” এখন তুই এই ছোট কাজটা করবি নাকি পুরো ট্রিপ অশান্তির মধ্যে কাটাবি? ”
মিছিল রেগে চেচিয়ে বলে, ” করবো করবো! ”
চৈতি মিছিলের গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে, ” অও, চো চুইট চোনা! ”

আস্তে আস্তে ট্রেনটা গতি বাড়িয়ে প্ল্যাটফর্মের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে। সবাই ট্রেনে উঠে গেছে, এমনকি মুবিনও ট্রেনে উঠে গেছে। মুবিন বগির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মিছিলের দিকে তাকিয়ে ক্যাবলাভাবে ফোকলা হাসছে। মিছিল সঙের মতো প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মুবিনের ইশারার অপেক্ষা করছে। কখন মুবিন হাত বাড়িয়ে দেবে আর সে দৌড়ানো শুরু করবে। গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে মিছিলের। মন চাচ্ছে মুবিনের দিকে দৌড়ে না গিয়ে, দৌড়ে বাড়ি চলে যেতে। ট্রেন আরেকটু গতি বাড়িয়ে দিতেই, মুবিন শিষ বাজিয়ে মিছিলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মিছিল দৌড় লাগায়, দৌড়ে একদম তুহিনের কাছাকাছি চলে এসেছে সে। হাত বাড়িয়ে মুবিনকে বলছে, ” হাত ধরে উঠাচ্ছো না কেনো? ”
মুবিন বোকা হেসে বলে, ” এখনও লম্বা প্ল্যাটফর্মটা পড়ে আছে। আরেকটু দৌড়াও না, কিযে ভালো লাগছে। আমার মিছিল মনি আমার দিকেই ছুটে আসছে, আবার এসে আমায়ই বলছে হাত ধরে টেনে ওঠাতে। আহ! ”
মিছিলের রাগ মাথায় উঠে গেছে। মিছিল চেচিয়ে বলে, ” আমি কিন্তু এখন দৌড় থামিয়ে প্ল্যাটফর্মেই থেকে যাবো। তখন তুই একলা একলা জাফলং যাইস! ”
মুবিন সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেয় মিছিলের দিকে। মিছিল হাত ধরতেই, মুবিন মিছিলকে ট্রেনে টেনে তুলে নেয়। মিছিল ট্রেনে উঠেই হাত মুঠ করে মুবিনের পেটে ঘুষি মারে। মুবিন ‘উহ’ মতো শব্দ করে। হাপিয়ে গেছে মেয়েটা। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে, নিজেকে স্বাভাবিক করতে মুখ দিয়ে ‘হুহ! হুহ!’ করে নিঃশ্বাস ফেলছে মিছিল। মুবিন মাতাল দৃষ্টে দেখছে মিছিলকে, এই ক্লান্ত হাপিয়ে ওঠা মিছিলকে যেনো স্বাভাবিক মিছিলের থেকে হাজার কোটি গুন বেশি মায়াবতি,স্নিগ্ধ এবং নিষ্পাপ লাগছে। মিছিল মুবিনের দিকে তাকায়, তাকিয়ে দেখে মুবিন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কী এমন দেখছে যে এভাবে তাকিয়ে আছে? মিছিল ভ্রু-কুচকে বলে, ” এভাবে কী দেখছো? ”
মুবিন মিছিলের কথার পিঠেই দ্রুত বলে, ” একটা চুমু খাই তোমায়? ঠোটে না! গালে অথবা কপালে খেলেও হবে। ”
মিছিলের চোখদুটো কুলবড়ইয়ের ন্যায় বড় হয়ে গেছে, মিছিল ঢোক গিলে আমতানো স্বরে বলে, ” দাত খুলে একদম পকেটে ভরে দেবো। অসভ্য, বদমাইশ কোথাকার! ” বলেই মিছিল হেটে চলে যাওয়া ধরে। পেছন থেকে মুবিন মিছিলের হাত টেনে ধরে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings ”

পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন – ছাইরঙা ফেস্টুন

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১০!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১০!
লেখক: তানভীর তুহিন!

সকাল সাড়ে আটটা বাজে, সবাই প্ল্যাটফর্মে বসে চা খাচ্ছে আর পাহাড়িকার অপেক্ষা করছে। ‘পাহাড়িকা এক্সপ্রেস’ সকাল নয়টায় চট্রগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মিছিল চায়ে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে আর প্ল্যাটফর্মের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে চারপাশটা দেখে নিচ্ছে। সে সারাজীবনেও কখনও ট্রেনে চড়েনি, এমনকি রেলস্টেশন নামক যায়গাটাও সে শুধু মাত্র টিভিতেই দেখেছে। আজ প্রথমই এলো রেলস্টেশন, আর সে আজই প্রথম ট্রেনে চড়বে। তাও তার বাবাকে ছাড়া! ভাবতেই মিছিলের মন আকাশে খানিক মন খারাপের দমকা হাওয়া বয়ে গেলো। সে তার সারাজীবনে তার বাবাকে ছাড়া দূরে কোথাও ঘুরতে যায়িনি, তার বাবা’ই তাকে ঘুরতে নিয়ে যায়। বাবার সাথে বিদেশও ঘুরতে গেছে সে, কিন্তু বাবাকে রেখে একা কখনও কোথাও ঘুরতে যায়নি। মিছিল মনখারাপের মধ্যেই একটু ফিক করে হেসে দিলো, গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেছে তার।

গতকাল রাতে মিছিল নাকিকান্না কেদে কেদে তার বাবাকে বলছে, ” আব্বু দাও না যেতে। মাত্র পাচটা দিনই তো। আর আমার সাথে আরো ৪-৫ জন মেয়ে যাচ্ছে কিচ্ছু হবে না। দাও না! ”
– ” না! একদমই না! এর আগে তুই কখনই একা কোথাও যাসনি। আমি তোকে একা ছেড়ে এখানে চিন্তা করে করে মরতে পারবো না। তোর জাফলং ঘুরতে ইচ্ছে করছে তো? সামনের মাসে আমি তোকে নিয়ে যাবো। কিন্তু এই ট্রি-ফ্রিপে তোর যাওয়া হবে না। ”
– ” হু আসছে উনি! আমায় সামনের মাসে নিয়ে যাবে। সামনের মাসে কী আমার ফ্রেন্ডরা আবার যাবে নাকি? ”
– ” আবার যাবে কেনো? ওদের এখন যেতে না করে দে, সামনের মাসে সবাইকে আমি নিয়ে যাবো। সবার সব খরচ দিয়ে আমি নিয়ে যাবো! ”
– ” ধুর! ধুর! লাগবে না। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে আমি ওদের সাথে কাল ট্রিপে যাবো। এখন যদি এসব বলি তাহলে ওরা আমায় ক্ষ্যাপাইতে ক্ষ্যাপাইতে আমার গুষ্টি উদ্ধার করে দিবে। ওরা বলবে, আমি এখনও ল্যাদা বাচ্চা! তাই তুমি আমায় একা যেতে দাও না। ”
– ” হু ক্ষ্যাপাক! তবুও তুই যাবি না। ব্যাস শেষ! ”
নাক দিয়ে ‘হুউহু! উহুহু’ আওয়াজ করে মিছিল বলে, ” আব্বু তোমায় ছাড়া ট্রাভেল করার একটা অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য হলেও যেতে দাও প্লিয! ”
– ” আচ্ছা তোকে নাহয় যেতে দিলাম। ধর তোর ফোন বন্ধ থাকলো, তখন আমার কী অবস্থা হবে? আমার ঠিক কতটা চিন্তা হবে তুই ভেবে দেখেছিস? ”
– ” থাকবে না আমার ফোন অফ। ইহজিন্দিগিতে আমার ফোন কখনও বন্ধ ছিলো নাকি? আচ্ছা তবুও বাই এনি চান্স যদি অফ থাকে তাহলে এই নাও তুমি এই নাম্বারে ফোন দিও। আমি তোমার ফোনে সেইভ করে দিচ্ছি! ”
বলেই মিছিল মুবিনের নাম্বারটা তার বাবা ফোনে সেইভ করে দিলো। সে কেন মুবিনের নাম্বারটা দিলো সেটা সে জানে না। তবে তার মনে হয়েছে ট্রিপে সে সারাক্ষন মুবিনের সঙ্গেই থাকবে। তাই মুবিনের নাম্বারটাই দিয়েছে। বাবার ফোনে নাম্বারটা সেইভ’ও করেছে মুবিন নাম দিয়ে। মিছিলের বাবা ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে নাম দেখেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় মিছিলের দিকে। তারপর ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে, ” এই মুবিনটা কে? আগে তো কখনও এর নাম বলিসনি! ”
মিছিলের মুখটা কাচুমাচু হয়ে যায়। সে তো চৈতির নাম্বারটাও দিতে পারতো, ঐ হাবলাটার নাম্বার দিতে গেলো কেনো? এখন খাও কেইস!, মিছিল মনে মনে নিজেকে গালমন্দ করে, আমতানো স্বরে তার বাবাকে বলে, ” মুবিন বন্ধু হয় আমার। কোনোদিন ওর কথা ওঠেনি তাই বলা হয়নি! ”
মিছিলের বাবা হালকা কর্কশ গলায় বলে, ” বন্ধু নাকি প্রেমিক? ”
মিছিল ঝাঝালো কন্ঠে তার বাবাকে ধমকে বলে, ” বললাম না বন্ধু? তুমি আবার প্রেমিক টেনে আনছো কেনো? শুধুই বন্ধু হয়! বন্ধু মানে বন্ধুই! ”
মিছিলের বাবা বেচারা মেয়ের ধমকে থতমত খেয়ে যায়। তার আর তার মেয়ের সম্পর্ক অতি মিষ্টি-মধুর। তাই সচরাচর’ই তাকে তার মেয়ের কাছ থেকে এমন ধমক শুনতে হয়, আর সে ধমকগুলো হাসিমুখে হজমও করে নেয়। মিছিলের বাবা ঠোট চওড়া করে ভেচকে আশপাশে চোখ ঘোরায়। মিছিল তার বাবার দিকে ভ্রুকুটিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। মিছিলের বাবা রসিক সুরে বলে, ” যা সিমরান! জ্যিলে আপন্যি জিন্দেগি। ”
মিছিল চোখটা বা দিকে ঘুরিয়ে বলে, ” সিমরান না, মিছিল হবে। যা মিছিল জ্যিলে আপন্যি জিন্দেগি! ”
বলেই মিছিল খিটখিট করে হেসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তার বাবাও মেয়ের ইচ্ছেপুরন করতে পেরে বিজয়ের হাসি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

এসব ভাবছিলো আর আনমনে মুচকি হাসছিলো মিছিল। মুবিনের তুড়ির শব্দে হুশে ফিরে চমকে ওঠে মিছিল। মিছিল এতক্ষন অর্ধেক কাপ চা হাতে নিয়েই আনমনে এসব ভাবছিলো। মুবিন মিছিলের হাতের চায়ের কাপের দিকে ইশারা করে বলে, ” চায়ের কাপটা এদিকে দাও। চা খাবো! ”
মিছিল নাক দিয়ে মুবিনের চায়ের কাপের দিকে ইশারা করে বলে, ” তোমার কাপে চা থাকতেও আমারটা চাইছো কেনো? খেতে ইচ্ছে করলে আরেক কাপ নাও! ”
– ” ধুরু আনরোমান্টিক কোথাকার! আমি তোমার চুমু লাগা কাপ থেকে চা খেতে চাইছি। নাও তুমি আমার কাপের চা খাও, আমি তোমারটা খাচ্ছি! ”
মিছিল মুখ কুচকে বলে, ” আমি তোমায় রোমান্টিকতা দেখাতে যাবো কেনো? আর তোমার মুখ লাগানো কাপ থেকে আমি চা ই বা খাবো কেনো? ”
– ” আচ্ছা তোমার খাওয়া লাগবে না। তোমারটা আমায় দাও, আমি খাবো! ”
মিছিল নাক-মুখ ছিটকে বলে, ” কোনোমতেই না! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন – ছাইরঙা ফেস্টুন

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৯!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৯!
লেখক: তানভীর তুহিন!

ভার্সিটির ক্লাস শেষে সবাই ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সবাই টুকটাক এই স্যার! ওই স্যার! নিয়ে সমালোচনা করছে। আড্ডার এক পর্যায়ে সীমান্ত বলে, ” ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে ঠিক মজা পাওয়া যাচ্ছে না, আর ভার্সিটিতে আসতে আসতেও বোর হয়ে গেছি। চলনা সবাই মিলে দু-তিন দিনের জন্য কোথাও ট্রিপ মেরে আসি? ”
মিছিল মুবিনকে বাদাম ছুলে খাওয়াচ্ছিলো। না, মিছিলের কোনো ইচ্ছেই ছিলো মুবিনকে এতো আলহাদ করে বাদাম ছুলে খাওয়ানোর। কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়েই খাওয়াচ্ছে সে, মুবিন হচ্ছে জাতঠ্যাটা একদম। বলছে বাদাম ছুলে খাওয়াতে হবে, মানে খাওয়াতে হবেই। মিছিল কয়েকবার এই গোলমিটিং টাইপ আড্ডার আসর ছেড়ে উঠে যেতে চেয়েছে কিন্তু মুবিনের তাড়নায় পারেনি। বারবার হ্যাচকা টান মেরে বসিয়ে দেয়, এমন ভাবে বসায় যেনো মনে হয় মিছিল তার সবকথা শুনতে বাধ্য। মিছিলের ওপর তার অধিকার আমরণ, মিছিলের ওপর তার অধিকার আজন্ম এমন একটা ব্যাপার। মিছিল রাগে ক্ষোভে বিরক্তি নিয়ে কপাল কুচকে বাদাম ছুলে ছুলে মুবিনের হাতে দিচ্ছে, আর মুবিন টুক টুক করে খাচ্ছে। মিছিলের এমনিতেই বিরক্তির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এই অনিচ্ছাকৃত কামলা খাটাতে। তারউপরে সীমান্তর ট্রিপের প্ল্যান!

সীমান্তর ট্রিপের কথা শেষ হতে না হতেই মুবিন মুখে থাকা বাদামটুকু চিবিয়ে গিলে ফেলে সীমান্তকে বলে, ” ভালো কথা বলছস, এর জন্য তুই বখশিশ পাবি! ”
মুবিন সীমান্তর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মিছিলের দিকে লজ্বামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” বলো মিছিল মনি কোথায় যেতে চাও তুমি? তুমি যেখানে বলবে সেখানেই যাবো! ”
গোল হয়ে বসে থাকা সব আড্ডা পোকাগুলো একসাথে, ” হোওওওওও! ” মতো শব্দ করে ওঠে। মিছিল কপাল কুচকে মুবিনকে একটু পরখ করতে চাচ্ছিলো। এতোগুলো পোলাপানের সামনে এই ন্যাকামি করার মানেটা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলো তার আগেই সব বেয়াদবগুলার এরকম আওয়াজে আক্কেলগুড়ুম হয়েছে মিছিলের। মুবিন আমায় জ্বালাতন করছে আর এরা কিনা মুবিনকে চিয়ার-আপ করছে? মুবিনকে উৎসাহ দিচ্ছে?
মিছিল প্রচন্ড রাগ আর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। মন চাচ্ছে এক্ষুনি মুবিনের এই ক্যাবলা হাসি ওয়ালা মুখটা ঘুষি মেরে ভচকায় দিতে। কিন্তু সে অপরাগ, কারন মুবিন এমনদৃষ্টে তাকিয়ে আছে যেনো সে বুঝেই ফেলেছে মিছিল মনে মনে ঠিক কী ভাবছে। আর সবটা বুঝেই সে এভাবে বেপাত্তাভাবে তাকিয়ে আছে, মিছিল তাকে মারুক, কাটুক, বকুক তাতে তার কিছুই যায় আসে না। সে এরকম করবেই!

মিছিলের রাগিদৃষ্টেও যখন মুবিনের কিছু এলো গেলো না তখন মিছিল একটু হতাশ হলো। হতাশ হলেও তার রাগ বা বিরক্তি কিছুই কমেনি। মিছিল তার কন্ঠে যথেষ্ট পরিমান তীব্র বিরক্তি মাখিয়ে ধুরছাই কন্ঠে বলে, ” আমার এসব ট্রিপ-ফ্রিপে ইন্ট্রেস্ট নাই। তোরাই যা! ”
– ” তুমিও না বাল। একটা রসকষহীন আইটেম, ট্রিপে কার ইন্ট্রেস্ট থাকে না? ”
মিছিল চোখ দুটো খানিক উপরে টেনে বলে, ” এইযে আমি! আমার ইন্ট্রেস্ট থাকে না! ”
– ” আচ্ছা ইন্ট্রেস্ট থাকা লাগবে না। আমাদের সাথে তো যাবা নাকি? ”
– ” ইন্ট্রেস্ট’ই যখন নাই তখন যাবো কেনো? তোমার চেদারাখান দেখতে? ”
মুবিন টিটকারি মেরে বলে, ” আমি জানি তো তুমি আমায় ভালোবাসো, আমার চেহারা তোমার অতিপ্রিয়, আমার চেহারাখানা না দেখে তুমি থাকতেই পারো না, আমার চেহারাখানা না দেখলে যে তোমার মনখারাপ থাকে সেটা জানিতো আমি। এসব সবার সামনে বলার দরকার আছে নাকি? এসব তো তোমার আর আমার ভেতরকার কথা, মোটেই এসব আর পাবলিকলি বলবা না! ”
মুবিনের কথায় সবাই হো হো শব্দে চারপাশ কাপিয়ে হেসে ওঠে। মিছিল পারছে না রাগে ক্ষোভে চিল্লিয়ে একটা দৌড় মারতে, একদম উসাইন বোল্টের মতো দৌড়। এই ছেলেটা কীভাবে পারে এতো জ্বালাতে, এতো বিরক্ত করতে? প্রত্যেকটা কথার কাউন্টার না করলেই কী হয় না? প্রত্যেকটা কথার পিঠে কথা তার তৈরী’ই থাকে। মুবিনের দিকে মুখ লাল করে তাকিয়ে এসব ভাবছে মিছিল।

মুবিন মিছিলের নাকের ডগার সামনে একটা তুড়ি মেরে বলে, ” এভাবে তাকায় আছো কেনো? বাদাম ছুলো, পরে দেইখো আমায়। আর কত দেখতে মনচায় তোমার? এতো দেখো, সারাদিন দেখো তবুও পেটভরে না তোমার? ”
মিছিলের রাগ এতক্ষন মাথায় ওঠা অবস্থায় ছিলো, মুবিনের কথা শুনে রাগ এখন দৌড়ে চুলের আগায় উঠে গেছে। চুলের আগা থেকে উড়ে এখন আকাশে প্রস্থানের পরিকল্পনা করছে মিছিলের রাগেরপাল। মিছিল মুবিনের বাহুতে নিজের কোদালের ন্যায় বড় নখ দিয়ে গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে একটা চিমটি দিয়ে বলে, ” মুবিইন্না! তুই যদি আরেকবার এরকম ন্যাকামি মারাইছস তো দেখিস। লিমিট থাকে একটা, তুমি লিমিটের মা-বইন করে দিচ্ছিস একদম। ”

মুবিনে নিজের বাহুর যন্ত্রনায় কাতর। মুখ সরু করে ছোট ছোট, ” উহ! ” আওড়াতে আওড়াতে মুবিন বলে, ” জানু তুমি না দিন দিন খুব বেশিই নটি হয়ে যাচ্ছো। কালকে কামড় দিয়ে প্রায় মাংস উঠায় ফেললা, আর আজ এই মিলিটারি চিমটি। আমায় কী গিলে খেয়ে ফেলতে চাচ্ছো নাকি তুমি? ”
মিছিল কান-কর্তাল ফাটিয়ে বিকট চিৎকার দিয়ে বলে, ” মুবিইইইন্না! তুই চুপ করবি? নাকি আমি তোর খুন করে জেলে যাবো! ”
মুবিন খিটখিট করে হাসে। গোল হয়ে বসে থাকা সবাই বিনামূল্যের বিনোদন উপভোগ করছে, মজালুটে হেসে হেসে মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

সব গড়াগড়ি লড়ালড়ি’র পর ঠিক হলো সবাই মিলে পাঁচদিনের জন্য ‘জাফলং’ যাবে। মিছিলকেও রাজি করালো মুবিন, অবশ্য মুবিন একা রাজি করায়নি! সবাই মিলে মিছিলের কানের পাশে ” চল না মিছিল, চল না মিছিল! ” বলে মাছির মতো ভনভন করে মিছিলকে রাজি করিয়েছে। এতোগুলো মাছির ভনভনের শব্দে অতিষ্ঠ হয়েই মিছিল রাজি হয়েছে। পুরো ২১ জন মিলে তারা ট্রিপে যাবে, সবাই মিলে ঠিক করেছে চট্রগ্রাম থেকে সিলেট তারা ট্রেনে করেই যাবে। কারন ট্রেনভ্রমনের অভিজ্ঞতাটা সবারই অল্প, তাই তারা ট্রেনভ্রমনের স্বাদ নিতে চায়। আর তাছাড়া সড়কপথ ছাড়া রেলপথ অনেকটাই স্বস্তির। একদম যানজটহীন স্বস্তির ভ্রমন…!

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৮!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৮!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মুবিন বাইক চালাচ্ছে। মিছিল লেডি স্টাইলে বাইকে বসে মুবিনের কাধে ধরেছে। তাতে মুবিনের একদমই পোষাচ্ছে না, সে তো এই আশায় ছিলো যে মিছিল তার পেট জড়িয়ে ধরে বসবে। কিন্তু না, মিছিল বসলো এইভাবে। মুবিন উসখুস না করে মিছিলকে সোজা বললো, ” মিছিল মনি, কাধ থেকে হাত নামিয়ে পেট জড়িয়ে ধরে বসো! ”
মিছিল চুপচাপ। সে রাগ সঞ্চার করছে মুবিনের ওপর রাগ ঝাড়ার জন্য। মিছিলকে চুপ থাকতে দেখে মুবিন আবার বলে, ” কী হলো? পেট জড়িয়ে ধরো না! ”
মিছিল এবার উত্তর দিলো। কর্কশ গলায় বললো, ” এতোটা চিপ কেনো তুমি? ”
মুবিন মুখ পেছনে ঘুরিয়ে নিয়ে মিছিলকে একপলক দেখে নিলো। তার কেমন যেনো অপমানবোধ হয়েছে মিছিলের কথায়। মুবিন আবার একপলক পেছনে তাকায়। তারপর বলে, ” কোনদিক থেকে চীপ দেখলে? ”
– ” কদিন হয়েছে তোমার আমার পরিচয়? কদিন হয়েছে তুমি আমায় প্রোপোজ করেছো? আচ্ছা বাদ দাও তুমি প্রোপোজ করেছো ঠিক আছে। কিন্তু আমি কী তোমায় সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছি? নাকি সম্পর্কের আস্থা দিয়েছি? এসব কিছুই যখন আমি করিনি তাহলে কেনো এতোটা অনধিকারচর্চা করছো? পেট জড়িয়ে ধরে বসতে বলছো এটা চীপ এর কাতারে পড়ে না? ইজন্ট ইট সো চীপ? ”
মিছিলের কথায় মুবিন খানিক বিজ্ঞ হাসি হাসে। মিছিলের কথায় মুবিনের ভেতরকার ঘুমিয়ে থাকা সুপ্ত দার্শনিক জেগে যায়। মুবিন বলে, ” জানো মিছিল আমাদের জীবনে আমাদের জন্যই সবচেয়ে খারাপ জিনিস কোনটা? সিরিয়াসনেস! খুব ছোটো ছোটো জিনিস নিয়ে ওভার সিরিয়াস হয়ে যাওয়া, ওভার এক্সাইটেড হয়ে যাওয়া। আমি কিন্তু কথাটা তোমায় হাসি-মজার ছলেই বলেছি, অনেকটা রসিকিতার আদলে বলেছি। কিন্তু তুমি সেটা নিলে কীভাবে? অপমান হিসেবে! তোমার মনে হলো আমি তোমায় সস্তা ভাবছি, আমি তোমার সুযোগ নেবার চেষ্টা করছি কিন্তু আদৌ তোমার সুযোগ নেবার অধিকার আমার হয়নি। তাই তুমি চীপ বলছো তাইনা? এখন পর্যালোচনা করে দেখো, আমি মজার ছলে বলেছি এটা তুমি না বুঝে আমায় কথা শোনালে। আমিও অপমান বোধ করেছি। কিন্তু আমি কী তোমার মতো প্রতিক্রিয়া করেছি? করিনি! এজন্যই ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে সিরিয়াস হয়ে যাবে না। ব্যাপারটা একদমই ফালতু এবং অনর্থক। জীবনটাকে উপভোগ করতে শেখো, বিস্তর ভাবে বাচতে শেখো! ”
মিছিল চুপচাপ। সে বেশ জোড়ালো যুক্তি খুজে পেয়েছে মুবিনের কথায়। কিন্তু সেটা স্বীকার সে মোটেই করবে না। স্বীকার করলেই মুবিন একদম তার মাথার উপর উঠে তালুতে ঘাটি গেড়ে বসবে। সে মোটেই তা চায় না। তাই মিছিল বেহুদা তর্কে জড়ানোর জন্য বললো, ” তুমি কী নিজেকে ফিলোসফার মনে করো নাকি? ফিলোসফার তুমি? তোমার কী মনে হয় আমি তোমায় একটু এলাউ করেছি বলেই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি? মোটেই তা না কিন্তু, আমি শুধুই তোমায় ক্লাসমেট স্ল্যাস বন্ধু ভাবি! ”
মুবিন বাইক চালাতে চালাতেই হো হো করে হেসে ওঠে। মুখে হাসি বজায় রেখে মুবিন বলে, ” আমি কখন বললাম যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছো? প্রেমে তো আমি পড়েছি। মরন প্রেমে পড়েছি, যে প্রেম শুধু অবিচল প্রত্যয়ে প্রকাশই হতে চায়। অপরদিক থেকে প্রেম ফিরে আসুক না আসুক তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। সে শুধু নিজেকে গভীর থেকে গভীরে নিয়ে যেতে চায়। বিপরীতের স্বায়ের তার প্রোয়োজন পড়ে না! ”
মুবিনের কথাগুলোর প্রত্যেকটা অক্ষরেই বারবার হার্টবিট মিস হচ্ছিলো মিছিলের। বুকের ভেতরটায় কেমন যেনো তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, একদম প্রচন্ড তীব্র তোলপাড়। তার অন্তরাত্মার ভাবনায় এখন মুবিন। আসলেই কী এভাবে প্রেমে পড়া যায়? যে প্রেমে শুধু প্রকাশেই স্বস্তি? আদৌ কী এমন কিছুর অস্তিত্ব বিরাজ করে এই ত্রিলোকে? কীভাবে যাকে ভালোবাসে তার কোনোপ্রকার প্রতিক্রিয়ার আশা করা ছাড়াই ভালোবাসা যায়? মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় না এই প্রেমপ্রেম খেলায়? আসলেই কী মুবিন আমায় ওভাবে, অতটা উর্ধ্বে ভালোবাসে? নাকি কথার কথা’ই পাঞ্চি ডায়লগ মেরে দিলো?
মিছিলকে সাড়াশব্দহীন দেখে মুবিন আবার বলে, ” কী হলো মিছিল মনি আমার প্রেমে আছাড় খেয়ে পড়লে নাকি? ”
মিছিলের ঘোর ভাঙে মুবিনের কথার শব্দে। মনের অজান্তেই তার হুশ কোথায় যেনো চলে গিয়েছিলো, কোথায় গিয়েছিলো তার উত্তর অজানা তার। সে ব্যাপারে একদমই সন্দিহান মিছিল। হুশ ফিরতেই খানিক থতমত খেয়ে যায় মিছিল, কারন সে আসলেই এই মাত্র পা পিছলে মুবিনের প্রেম উঠোনে আছাড় খেয়েছে। আছাড় খেয়ে একদম এবরোথেবড়ো হয়ে গেছে সে, দাত ভেঙে গেছে তার, হাত! পা! কোমড় ঘাড় সবই ভেঙে গেছে প্রায়…!
মিছিল গলা খাঁকারি দিয়ে মুবিনের প্রশ্নের জবাব দেয়, ” আমার জুতোয় বেশ ভালো খাজ আছে। তোমার প্রেমের ওই বেহায়া পিছলে কাদায় আমার জুতো পা পিছলে আমায় কখনই পড়তে দিবে না! ”
মিছিলের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মুবিন। হাসির চোটে কান-কর্তাল বন্ধ হয়ে যাবার পালা তার। কোনোমতে খুব কষ্টে হাসি খানিক চেপে মুবিন বলে, ” তুমি সব কথার যুক্তিখণ্ডনে যম ওস্তাদ তাই না? ”
মিছিলও পেছনে বসে নিশ্চুপ হাসছিলো। মিছিল বলে, ” হ্যা ওস্তাদই, এখন থেকে ওই মিছিল মনি ন্যাকা নামটা ধরে না ডেকে ওস্তাদ বলে ডাকবা! ”
– ” আচ্ছা ওস্তাদ! ”
মুবিনের কথায় দুজনেই একত্রে শব্দ করে হেসে ওঠে!

ভার্সিটিতে পৌছে ক্লাসে ঢুকে যায় দুজনে। ক্লাশ শুরু হবে হবে তখনই ঢুকেছে দুজনে। শাওন-সীমান্ত পেছনে বসে মেয়েদের সাথে টিটকারি করছে। মুবিন আর মিছিল পেছনে গিয়ে বসতেই শাওনের ক্ষ্যাপা প্রশ্ন মিছিলের জন্য, ” কেমন আছো ভাবি? ”
মিছিল স্ট্যাচু হয়ে গেছে, সাথে মুবিনও। মিছিলের সামনে বসা মেয়েগুলো মিছিলের পানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। মিছিলের মনে হচ্ছে সে লজ্বা আর বিব্রতি’র আগুনে পুড়ছে। আগুনে একটু এক্সট্রা ঘি! ঢালার জন্য চৈতি এসে বলে, ” তা ভাবি আজ কী ভাইয়ার বাইকে করে এলেন নাকি? ”
চৈতি শাওন, সীমান্ত, মুবিনের খুব ভালো বান্ধবি। মিছিলের সাথেও তার সম্পর্ক বেশ মধুর এবং খুনসুটির। চৈতির কথায় যেনো লজ্বায় একদম পাথর হয়ে গেছে মিছিল। মুবিন চৈতির মাথায় গাট্রা মেরে, ” হারামজাদি দেখছিস এম্বারেসড ফীল করছে, তারপরেও এসব বলছিস কেনো? ”
চৈতি মুবিনের কথার পাত্তা না দিয়ে মিছিলকে আবার বলে, ” দুই চাকার চেয়ে চার চাকায় বেশি প্রাইভেসি ছিলো না বেহেনজি? দুই চাকাটা একদম খোলামেলা হয়ে গেলো না? ” কথাটা বলেই চৈতি শাওন-সীমান্তের সাথে এক হাতে তালি নেয়। মুবিন বেচারা অসহায় ভঙ্গিতে বসে আছে, মিছিল রেগে ফুসে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। চৈতি মিছিলের চেহারায় ক্ষ্যাপা ষাঁড় মার্কা ভাব দেখে মিছিলের কাধ জড়িয়ে ধরে বলে, ” আরে মামানি জাস্ট চীলল! এতো প্যারা নিচ্ছিস ক্যান তুই? ”
মিছিল অবাক হয়ে ভ্রু-কুচকে চৈতিকে বলে, ” এই মাত্রই না ভাবি বললি? এখন আবার মামানি বলছিস কেনো? ”
চৈতি খিটখিট করে হেসে বলে, ” আরে মুবিনকে তো প্রায়ই মামা বলে ডাকি। সেই খাতিরে হইলি না তুই আমার মামানি? এখন তুই’ই বল তুই কোনটায় কমফোর্টেবল ভাবিতে নাকি মামিতে? কী বলে ডাকবো তোকে ভাবি নাকি মামি? ”
মিছিল চ্যাতা দেখিয়ে বলে, ” বাল বলে ডাকবি বাল! ”
মিছিলের জবাবে সবাই একসাথে শব্দ করে হেসে ওঠে। চৈতি হাসতে হাসতেই বলে, ” আচ্ছা বালাপা! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৭!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৭!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মিছিল গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। খুব অস্থির লাগছিলো তার, কেমন যেনো ভ্যাপসা গরম অনুভব করছিলো দেহে। গোসল করার পর এখন বেশ স্বস্তি অনুভব হচ্ছে তার। মুবিনও মাত্রই গোসল করেছে, এসেই সোজা বাথরুমে ঢুকেছিলো। বাথরুম থেকে বের হয়েই মিছিলকে ফোন করে মুবিন। ফোনটা কানে লাগিয়ে মাথা দিয়ে ঘাড়ে চেপে ধরে আলমারির দিকে এগোয়। ফোন রিং হয়ে যাচ্ছে কিন্তু মিছিল ধরছে না। অদ্ভুত নজরে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে মিছিল। দেখে মনে হবে জীবনে এই প্রথমবার ফোন নামক বিস্ময়কর যন্ত্রটি দেখেছে সে। ফোনটা বেজেই চলছে, কিন্তু মিছিল ধরছে না। মিছিল ফোন না ধরায় মুবিন মিছিলকে টেক্সট করলো, ” টেক্সট টা পড়ার সাথে সাথে ফোন দেবে আমায়! ”

মুবিনের কল কেটে যাবার পরপরই টেক্সট আসায় মিছিল উৎসাহ নিয়ে ফোন হাতে নেয়। টেক্সট টা দেখার পর নাকটা খানিক উচিয়ে চোখ ডান-বাম, উপর-নিচ ঘুরিয়ে ভাবতে থাকে মুবিনকে ফোন দেবে কিনা। ভাবনার অবসান ঘটিয়ে মিছিল ফোন দিয়েই দেয়। মুবিন ফোন রিসিভ করেই বলে, ” কোথায় ছিলে মিছিল মনি? ফোন দিতে দিতে হার্টফেল হয়ে গেলো আমার! ”
মিছিলের ঝটপট জবাব, ” কই হার্টফেল হইছে? একবারই তো ফোন দিলা! ”
– ” তারমানে তুমি ফোনের কাছে থেকেও ফোন ধরো নাই? ”
ধরা পড়ে গিয়ে জিহ্বায় একটা ছোট কামড় বসায় মিছিল। পরমুহুর্তেই, সে একটা প্রযুক্তিগত যুক্তি খুজে পায়। একটু চড়াভাব নিয়ে চড়াগলায় বলে, ” গর্দভ! কম্পিউটার নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করছো কেনো? যখন জানোই না যে ফোনে মিসডকল কাউন্ট করার প্রোগ্রাম আছে! ”
মুবিনের প্রানবন্ত হাসি বেড়িয়ে আসে মিছিলের কথায়। মিছিল অপমান করে, শাসন করে নাকি খুনসুটি’র ছলে কথাটা বলেছে তা সে জানে না। তবে কথাটায় বেশ প্রেম প্রেম প্রলেপ পেয়েছে সে। যে প্রলেপ হৃদয়ের ঠিক চারপাশটায় শিহরন জাগিয়ে দিতে পারে প্রখরভাবে।

মুবিন মুখে হাসি লেপে বলে, ” কী করতেছো? ”
– ” গোসল করে, চুল মুছছিলাম। তুমি? ”
– ” এই তো তোয়ালে খুলে শর্টপ্যান্ট পড়ছি। ”
– ” ছি! ” বলেই নাক কোচকালো মিছিল।
– ” কীহ? ”
মিছিল মুখটাকে খানিক বাকিয়ে ভেংচি কেটে বলে, ” কিছুনা! ”
মুবিনের মুখে ফেলুদা ধরনের গোয়েন্দা ছাপ। সে চোখটাকে খানিক ছোট করে বলে, ” কিছুনা হতে যাবে কেনো? তুমি এই মাত্রই ছি! বললে। ”
– ” হ্যা বলেছি! ”
– ” কেনো বলেছো? ছি! এর মতো কী হয়েছে? ”
– ” অনেক কিছু হয়েছে। তুমি তোয়ালে ছেড়ে শর্টপ্যান্ট পড়ছো এটাও বলা লাগে নাকি? যখন বলছিলে কথাটা উইয়ার্ড লাগেনি তোমার কাছে? ”
– ” এখানে উইয়ার্ড এর কী আছে? উইয়ার্ড তো তখন হতো আমি বলতাম যে আমি ল্যাং….. ”
– ” হইছে! হইছে! আমি বুঝছি। অসভ্য কোথাকার! ” বলেই একটু হাসে মিছিল।
মুবিনও হাসছিলো। মুবিন বলে, ” আচ্ছা শোনো কাল স্কুটার নিয়ে ভার্সিটি যাওয়া লাগবে না। আমি যাবার সময় তোমায় পিক করে নেবো আর বাসায় ড্রপ’ও করে দেবো! ”
মিছিল ভনিতামাখা শক্ত গলায় বলে, ” কোন দুঃখে এই আকামটা করতে যাবো আমি? ”
মুবিন হো হো শব্দে চারপাশ কাপিয়ে হেসে ওঠে। কন্ঠে হাসির আভা মিশিয়ে মুবিন বলে, ” তুমি জানো বরিশাল, যশোর ওসব অঞ্চলে আকাম এর মানে কী? ”
লজ্বায় মিছিলের কপাল কুচকে চোখদুটো বুজে যায়। দাতদুটো খিটে খানিক লজ্বামিশ্রিত স্বরে মিছিল বলে, ” আমি মোটেই ওভাবে মানে বের করে বলিনি! ”
– ” হ্যা বুজেছি। এখন শোনো, কাল স্কুটার নেবার প্রয়োজন নেই। আমি তোমায় ভার্সিটি নিয়ে যাবো আর বাসায় ছেড়েও যাবো! ”
– ” কোন দুঃখে এই আজাইরা কাজটা করবা শুনি? আর বাসা থেকে স্কুটার না নিয়ে বের হলে আব্বুর কাছে জবাবদিহি করতে হবে! ”
– ” দুঃখে হতে যাবে কেনো? প্রেমে! প্রচুর প্রেমে! ” বলেই মুচকি হেসে চুপ করে যায় মুবিন। কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে। মিছিল ও মিটিমিটি হাসছে। মুবিন আবার বলে,
– ” একদিনের’ই তো ব্যাপার। যেকোনো একটা অজুহাত বানিয়ে নিও। আমার একটা সারপ্রাইজ দেবার আছে তাই বলছিলাম! ”
– ” সারপ্রাইজ? তা চান্দু তোমার কেনই বা মনে হলো তোমার সারপ্রাইজ দেওয়াটাকে আমি এপ্রিশিয়েট করবো? আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড! এখনো সারপ্রাইজ দেবার মতো কোনো সম্পর্ক তৈরী হয়নি আমাদের মধ্যে। ”
– ” জাস্টফ্রেন্ড!? তুমি কী এই মাত্র আমায় জাস্টফ্রেন্ড বললে মিছিল? আসলেই আমি তোমার জাস্টফ্রেন্ড? ” মোক্ষম সময়ে মোক্ষম যুক্তিটা যে কীভাবে মুবিনের মাথায় চলে এসেছে সেটা ভেবেই হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে মুবিন। মিছিলকে জব্দ করে যেনো সে রাজ্য জয়ের সুখ ভোগ করছে।
মুবিনের ডাবলমিনিং কথাটায় আহাম্মক বনে গেছে মিছিল। সে অন্যকোনো মিনিং ছাড়া এমনিতেই ক্যাজুয়াল ভাবে বলেছিলো কথাটা। কিন্তু মুবিন সেটার কী বাজে একটা মানে বের করলো। মুবিন সামনে থাকলে মিছিল ঠিকই ওর নাক টেনে উঠিয়ে, চুল টেনে ছিড়ে ন্যাড়া করে দিতো ওকে। মিছিল দাতখিটে বলে, ” ওরে অসভ্যর ছাও ওটা কথার কথা ছিলো। তুই যা ভেবে এরকম লাফালাফি করছিস আমি ওই মিনিং’এ বলি নাই! ”
মুবিন হেসে হেসে বলে, ” আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তুমি কাল স্কুটার নিয়ে বের হচ্ছো না। এটা ফাইনাল! আমি তোমায় ভার্সিটি নিয়ে যাবো! ”
– ” কোনোমতেই না। আমি স্কুটার নিয়েই যাবো, আব্বুর কাছে অজুহাত সাজিয়ে বলতে পারবো না! ”
– ” আমি মেইনরোডের কাছে অপেক্ষা করবো। আসা না আসাটা তোমার ব্যাপার। তোমার ব্যাক্তি স্বাধিনতা। আর আমি স্বাধিনতায় হস্তক্ষেপ করতে পছন্দও করি না। তাই তুমি এলে আসবে, আর না এলেও সমস্যা নেই। আমি এই ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে মাইন্ড করবো না। সো ডোন্ট ওরি! ”
মুবিনের কথায় মুখ ভেংচায় মিছিল। আসছে স্বাধিনতা রক্ষার সৈনিক। অধিকার ফলাতে আসে, দু-তিন দিন প্রোপোজের পরেই নিজের প্রোপার্টি মনে করতেছে। যেই দেখলো কনভেইন্সড হচ্ছি না ওমনি বীরপুরুষ লজিক দিয়ে কনভেইন্স করার ধান্ধা। আমি মোটেও কাল সারপ্রাইজ ডিসকভার করার জন্য তোর সাথে যাবো না।

সকাল সাড়ে নয়টা মতো বাজে। মিছিল মেইনরোডের কাছে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় পাচ মিনিট। কোনো ইচ্ছেই ছিলো না তার মুবিনের কথায় ড্যাংড্যাং করে নাচার। কিন্তু সে না চাইলেও তার মন চায় যে সে মুবিনের কথায় ড্যাংড্যাং করে নাচুক। নেচে নেচে একদম পা ভেঙে লুলা হয়ে যাক, তারপর মুবিনের কোলে উঠে বসে থাকুক। মিছিলের গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা ঘামে ভিজে গেছে প্রায়। বাইরে আজ প্রখর রোদ। আজ যেনো রোদ সূর্যের সাথে তার বিবাহবার্ষিকী পালন করছে এমন অবস্থা। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে মিছিল। সে কী এই অসহ্য গরম থেকে রেহাই পাবার জন্য স্কুটার নিয়ে ভার্সিটি চলে যাবে নাকি এখানে মুবিনের জন্য অপেক্ষা করে করে মানুষরুপি আমসত্ত্ব হয়ে যাবে। না এখন স্কুটার নিয়ে যাবার কোনো মানেই হয় না। এতোক্ষন দাঁড়িয়ে যখন আছে আরো কিছুক্ষন নাহয় দাঁড়িয়েই থাকুক। মিছিল গরমে অতিষ্ট। হাত নাড়িয়ে বাতাস করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে, ঠোট সরু করে মুখ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করছে মিছিল। হঠাৎ করেই একটা বাইক এসে কষে ব্রেক করে মিছিলের সামনে। একদম নাকের ডগার পাশ ঘেষা ব্রেক। মিছিল গর্জে ওঠে। হুংকার দিয়ে বলে, ” এ্যাই! এটা কোন ধরনের বেয়াদবি? বাইক কী ফুটপাত দিয়ে চালাবেন নাকি? ”
মিছিল চেহারায় আগুন মেখে তাকিয়ে আছে সামনের হেলমেটটার দিকে। উদ্দেশ্য হেলমেটের পেছনের বেয়াদবটাকে দেখবে সে। মুখ না দেখলে ঠিক ভালোভাবে শিক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। সামনে থাকা মানুষটা হেলমেট খুলতেই পরিচিত একটা মুখ আবিষ্কার করে মিছিল। আরে এটা তো মুবিন!
মুহুর্তেই মিছিলের রাগ পড়ে যায়। এটুকু মজা মুবিন মিছিলের সাথে করতেই পারে, সেটুকু অধিকার অবশ্যই মুবিন অর্জন করেছে। কিন্তু পরমুহুর্তেই মিছিলের রাগ মাথায় উঠে যায়। না মানে ওয়েট করানোর তো একটা লিমিট আছে, হারামজাদা কালকে সারপ্রাইজের ভাষন মারিয়ে আজ এভাবে হ্যাপা দেওয়া? পাইছস টা কী? মিছিল মুবিনকে কড়াকথা শোনাতে যাবে তার আগেই মুবিন মিছিলের দিকে তাকিয়ে হেসে ভ্রু-নাচিয়ে বলে, ” গাড়ির ভেতরে কেমন যেনো দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। তাই ওই স্কুটারটায় যাতায়াত করি, একদম ফুরফুরে বাতাস পাই চালানোর সময়। বেশ ভালো লাগে! এটাই বলেছিলে না কাল? নাও এখন থেকে চারচাকা বাদ, দুচাকা নিয়ে তোমার সাথে ফুরফুরে বাতাসের সঙ্গে ভাববিলাস করবো। এখন চটজলদি উঠে পড়, বাইকের ব্যাকসিট তোমার জন্য ওয়েট করে আছে! ”

মিছিল হতবাক দৃষ্টিতে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। বাইকটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এখনই শো-রুম থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। সব স্টিকার-ফিস্টিকার যায়গারটা যায়গাই আছে। মানে কী এসবের? একটা কথার জন্য সোজা বাইক কিনে ফেলবে? এসব কোনধরনের পাগলামি? এভাবে টাকা অপচয়ের কোনো মানে হয়?
মিছিল শীতল কন্ঠে বলে, ” এসব কী মুবিন? তুমি বাইক কেনো কিনেছো? ”
– ” যাতে তোমার আমার সাথে গাড়িতে যেতে দমবন্ধ না লাগে। এখন থেকে বাইকের মধ্যে পিওর অক্সিজেন পাবা, সাথে আমি ফ্রিতে তোমার জড়িয়ে ধরাও পাবো! ” বলেই খিটখিট করে দুষ্টু হাসে মুবিন। মুবিনের হাসিতে গা জ্বলে মিছিলের। তার মোটেই অপচয় পছন্দের না। টাকার মুল্য ঠিক কতটা তা সে তার বাবার কাছ থেকে শিখেছে। তাই সে একদমই অযথা টাকা অপচয় পছন্দ করে না। মিছিল এবার মুখে বিরক্তি এনে বলে, ” একদম এরকম ফালতু কাজ করবা না। এসব কোনধরনের ফালতুগিরি? আমার বাতাস ভালোলাগে বলেই বাইক কিনে ফেলবা? তাও আবার হুট করেই। আমার ছোট একটা ইচ্ছের জন্য সোজা লাখটাকার অপচয়? এসব আমার একদমই পছন্দ না মুবিন! ”
মুবিন মিছিলের বিরক্তির কারনটা বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হ্যা এটা একধরনের অপচয় সেটা সে জানে। তবে সে আশা করেছিলো তার এই কাজে মিছিল ইম্প্রেস হবে, ইম্প্রেস না হলেও খুশি অন্তত হবে। অথচ মিছিলের মুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ দেখতে পাচ্ছে সে। মুবিন চুপ করে আছে। হাত দিয়ে হেলমেটের উপরের অংশে ঢোল বাজাচ্ছে। মিছিল সামনে হাত বেধে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। মিছিল মুবিনের মুখে অপরাধবোধ এবং মন খারাপের আলমারি আবিষ্কার করেছে। তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাইকের পেছনের হেলমেটটা পড়ে নিয়ে বাইকে উঠে বসে!

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৬!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৬!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মিছিল সন্দেহের দৃষ্টি ছুড়ে মারে মুবিনের দিকে। মুবিন মিছিলের ছুড়ে মারা দৃষ্টির মানে বুঝে বাকা হেসে ভ্রু নাচায়। মিছিল শীতল শব্দে মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” কিসের শর্ত? ”
মুবিন একমুহুর্তও দেরি না করে বলে, ” আজও শাওনকে স্কুটার চালাতে দিয়ে, আমার সাথে গাড়িতে যেতে হবে। ”
মিছিলের চেহারায় স্পষ্ট হতাশার ছাপ। সে কি না কি ভেবে নিয়েছিলো। মুবিন হয়তো শক্ত কোনো শর্ত রাখবে কোথাও ঘুরতে যেতে-টেতে বলবে বা অন্যকিছু। অথচ…! মিছিল আর কিছু না ভেবে মুবিনকে বলে, ” তোমার কথা শোনার জন্য শাওনকে কেনো স্কুটার চালাতে দিতে হবে? আজিব! ”
মুবিন দাত কেলিয়ে হেসে বলে, ” যাতে তুমি আমার সাথে গাড়িতে যেতে পারো। আর আমি তোমার সাথে একান্তে কথা বলতে পারি। ”
– ” এতো একান্ত মারানো লাগবে না। এখানে বললে বলো নাহয় বলাই লাগবে না! ”
– ” শাওন কী তোমার স্কুটার খেয়ে ফেলবে নাকি? ওটা কী খাবার জিনিস? কী হয় ওকে চালাতে দিলে? ”
– ” শাওনকে স্কুটার চালাতে দেওয়াটা সমস্যার না। সমস্যা তোমার সাথে একান্তে গাড়িতে যাওয়া! ”
– ” কেনো তুমি কী খাওয়ার জিনিস? আমি খেয়ে ফেলবো তোমায়? অবশ্য তুমি চাইলে তোমায় খেতেই…..! ”
মুবিনের কথা শেষ হবার আগেই মুবিনের বাহুতে থাপ্পড় মেরে মিছিল বলে, ” একদম অসভ্য কথা বলবি না। এজন্যই তো যেতে চাচ্ছি না তোর সাথে! ”
– ” গতকালকেও তো গেলা, কিছু করেছি আমি? শুধু শুধুই মিথ্যে অভিযোগ দিবা না মিছিল মনি! ”
– ” গতকাল গাড়িতে আমি আর তুমি ছাড়াও মানুষ ছিলো। আজ তো শুধু আমি আর তুমি তাইনা? ”
– ” বিশ্বাস করে একদিন যেতেই পারো। আমি অতোটাও অবিশ্বাস যোগ্য না মিছিল মনি! ”
– ” আমি গাড়ির ব্যাকসিটে বসবো! ”
– ” আমি কী তাহলে গাড়ি পার্ক করে পিছনে তোমার দিকে ফিরে কথা বলবো? ”
মিছিল চুপ মেরে যায়। মুবিনের সাথে তর্ক বাড়ানোর আর কোনো যুক্তি খুজে পায় না সে। মুবিনও তর্কে জিতে ভেতরে ভেতরে নিজের বিজয় উদযাপন করে।

মিছিল পাশের সিটে বসে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। একদম পলকহীন নয়নে তাকিয়ে আছে। একজন আগন্তুক যদি মিছিল মুবিনের এমতাবস্থার স্থিরচিত্র দেখে তাহলে সে নিঃসংকোচে বলবে মিছিল মুবিনকে চোখ দিয়ে গিলে খাবার পায়তারা করছে। কিন্তু না এটা একদমই ভুল ধারনা। মিছিল আসলে মুবিনকে না বরং মুবিনের কথাগুলো গিলে খাচ্ছে। হ্যা একদম গিলছেই, কারন মুবিনের কথায় মিছিলের তীব্র মনযোগ রয়েছে। মুবিন বলছে,
– ” আমি খুব ছোট থাকতেই বাবা-মায়ের ঝগড়া দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। ওনারা অবশ্য ক্লাস মেন্টেইন করে ঝগড়া করতেন। ক্লাস মেন্টেইন মানে হলো, ঝগড়ায় কোনোপ্রকার গালাগালি নেই, কোনোপ্রকার হাতাহাতি কিংবা মারামারি নেই, কোনো প্রকার তেমন মারাত্মক কিছুও নেই, শুধু ওনাদের মাঝারি ধরনের চেঁচামেচি’র আওয়াজে কিছু যুক্তি প্রদর্শন করাই ছিলো ওনাদের ঝগড়া। বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয় না? অনেকটা বিতর্ক প্রতিযোগিতার মতো। আসলে ওনাদের মেন্টালিটি সিঙ্ক হতো না, মানসিকতায় প্রচন্ড ব্যাবধান ছিলো নাকি ওনাদের। যদিও এই কথাটা ওনাদের দুজনেরই। ওনারা প্রতিদিনই ঝগড়া করতেন, প্রতিদিন বলতে মুখোমুখি হলেই। কারন ওনারা তেমন বেশি মুখোমুখি হতেন না। শুধু রাতের বেলাতেই বাড়ি দেখতাম ওনাদের। দুজনই কর্পোরেট দুনিয়ার মানুষ ছিলো কিনা। দু’দুটো টাকা পয়দা করার মেশিন যাকে বলে আরকি। একসময় ওনাদের একজনের প্রতি আরেকজনের ফ্রাস্টেশন কাজ করতে শুরু করে, ফেড-আপ অবস্থার সৃষ্টি হয় একে অপরের প্রতি। তারপর দুজনেই মিউচুয়াল ডিভোর্স নিয়ে নেয়। ওনারা দুজনই ম্যাচিউড ছিলো। ওভার ম্যাচিউড যাকে বলে, সেজন্যই সংসার টেকেনী। যদি একজন কম্প্রোমাইজ করতো, যদি একজন খানিক স্যাক্রিফাইস করতো তাহলেই সংসার টিকে যেতো আর আমার ছেলেবেলাটাও সুন্দর যেতো! ” কথাগুলো বলেই একটু চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মুবিন। মিছিল খুব কাছ থেকে গভীর ভাবে মুবিনের এই দীর্ঘশ্বাসের পেছনের দুঃখটাকে অনুভব করে। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ থাকে। তারপর মিছিল বলে, ” ছোটোবেলায় কার কাছে ছিলে? আর এখন কার কাছে থাকো? ”
– ” আমি কোনোদিন’ই বাবা কিংবা মায়ের কাছে ছিলাম না। শুধু ওনাদের বাড়িতে থাকতাম। অনেকটা ভাড়াটে কিংবা পেয়িং গেষ্টের মতো। ওনারা শুধুই আমার ভরন-পোষন চালাতো এই ই যা। আর কিছুই না। আমায় কোনোদিন বাবা-মায়ের ভালোবাসার স্বাদ কেমন হয় সেটা বুঝতে দেয়নি ওনারা। হাইস্কুল অবধি ওনাদের কাছেই ছিলাম ভাড়াটে’র মতো, নাইন-টেন ছিলাম হোস্টেলে, তারপর ডিপ্লোমার শুরু থেকেই নিজে একা আলাদা ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেছি। এখন একাই থাকি, নিজের ফ্ল্যাটে। ”
– ” একদম একা থাকো? একা লাগে না? বোরিং লাগে না? আর রান্নাবান্না করে কে তোমার জন্য? ”
মুবিন প্রানখুলে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” আমি তো সেই জন্ম থেকেই একা। না চাওয়া সত্তেও একা থাকাটা অভ্যেস হয়ে গেছে কেমন যেনো। জানো ছোটো বেলায় খুব চাইতাম, একটু বাবা-মায়ের সাথে থাকতে। ওনাদের একটু সময়ের জন্য একটু ভালোবাসার জন্য আমার আত্মাটা শুকিয়ে থাকতো। কিন্তু ওনারা কোনদিনই সেসব দিয়ে আমার আত্মার তৃষ্ণা মেটায় নী। তাই এখন একা থাকতে তেমন অসুবিধা হয় না। আর বোরিংও লাগে না কারন সারাদিনই ইন্টারনেট, গেইম, গ্যাজেট, মুভি এসব নিয়ে পড়ে থাকি। আর রান্নাবান্নার জন্য হোটেলের বাবুর্চিতো আছেই। হোটেলের খাবারই বেশি খাই। যখন হোটেলের খাবার একঘেয়ে লাগে তখন কিছুদিনের জন্য রান্নার বুয়া রেখে দেই। এভাবেই চলে যায় আমার! ”
– ” ওহ! ”
মিছিলে ‘ওহ’-তে খানিক আশাহত হয় মুবিন। সে মিছিলের কাছ থেকে শুধুমাত্র ওহ এর থেকে একটু বেশি কিছু আশা করেছিলো। থাক ব্যাপারনা! তার আশাহত হবার অভ্যাস আছে। আসলে মিছিলও ওহ এর বাইরে গিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু বলতে পারেনি! কেনো বলতে পারে নি তা সে জানে না। হয়তো তার ছোটবেলাটা আটকে দিয়েছে তাকে এই বলে যে, ” তুই কাকে সহমর্মিতা দেখাবি? তুই’ও তো সহমর্মিতার কাঙালি। যেখানে তোর জীবন সহমর্মিতার কাঙালি সেখানে অন্যকে সহমর্মিতা দেখানোটা কেমন যেনো বিলাসিতা হয়ে যায় না? ”
মিছিল চুপ মেরে বসে থাকায় মুবিন নিরবতা দূরীকরণে মিছিলকে জিজ্ঞেস করে, ” তোমার ফ্যামিলির কী হাল-চাল? কে কে আছে ফ্যামিলিতে? ”
মিছিল মুবিনের প্রশ্নের উত্তর দেয় না। চুপ করে বসে থাকে। মুবিনও আর জিজ্ঞেস করে না। শুধু বুকচেপে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কেনো যানে ভেতরে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করছে সে। মিছিলকে সবটা বলতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের দেওয়া কষ্টগুলো তাজা হয়ে ফুলে-ফেপে উঠেছে তার বুকে। আর সে কষ্টগুলো ফুলে যাবার ফলেই হয়তো তার বুকে খানিক চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে সে। এইমুহুর্তে ঠিক একইরকম ব্যাথা অনুভব করছে মিছিলও। মিছিল মোটেই চাচ্ছিলো না মুবিনকে কথা গুলো বলতে, কিন্তু মিছিলের অবচেতন মন বারবার সংকেত দিচ্ছিলো মিছিলকে যে, ” বলেই ফেল না। কী করবি এই চাপাকষ্ট লুকিয়ে রেখে? প্রকাশ করে নাহয় একটু হালকা’ই হয়ে নে। এতে দোষ কথায়? ”
মিছিল ঠিক মুবিনের মতোই একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ” আমার পরিবার শুধু আমার বাবা’ই। উনি আমার বাবাও, উনি আমার মা’ও। আমার মা মারা যায়নি, হারিয়ে যায়নি, পালিয়েও যায়নি, ছেড়ে চলে গেছে! আমাকে আর আমার বাবাকে ফেলে রেখে চলে গেছে। ওই মহিলাকে নাকি জোর-জবরদস্তি করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আমার বাবার সাথে। বিয়ের আগে নাকি তার প্রেমিক ছিলো। মস্তবড় ব্যাবসায়ী প্রেমিক, তার প্রেমিক বড়লোক হবার কারনেই নাকি তার বাবা তাকে তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে দেয়নি। কারন তার বাবার ইচ্ছে ছিলো সে তার মেয়েকে একটা গরীব ছেলের সাথে বিয়ে দেবে। আর সে গরিব ছেলেটাই ছিলো আমার বাবা, এক গরিব স্কুলমাস্টার। বিয়ের পরের কোনো এক অঘটনের ফল আমি। আমার মা, মানে ওই মহিলা বলেছিলেন বাবাকে যে, ‘ আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না। যেটা হয়েছে সেটা একটা দূর্ঘটনা। তোমায় কোনো বোঝা বইতে হবে না বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। ‘ কিন্তু বাবা রাজি হয়নি। সে বলেছিলো, ‘ বাচ্চার কোনো দ্বায়ভার তোমার নিতে হবে না, শুধু যতদিন বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন ততদিন বাচ্চাটাকে তোমার কাছে রেখো। তারপর তুমি মুক্ত। তুমি যাবার পর আমি আর বিয়ে করবো না। সারাটাজীবন কাটানোর জন্য শুধু বাচ্চাটাকে আমায় দিয়ে যাও। তোমার সাথে ঘটে যাওয়া আমার এই দূর্ঘটনা, এ অঘটনটাই আখড়ে ধরে আমি সারাটাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। প্লিয বাচ্চাটা আমায় দিয়ে যাও। ‘ মহিলার বিবেকে বেধে যায় কথাগুলো। সে আর বাবাকে না করতে পারেনি। আমি জন্মানোর ৮ মাস পরেই সে বাবার থেকে তালাক নিয়ে তার প্রেমিকের কাছে চলে যায়। তার প্রেমিক সোকলড হাই সোসাইটির মানুষ হওয়ায় তার সবকিছু জেনেও তাকে মেনে নেয়। ব্যাস তারপর থেকেই বাবা আমায় নিয়ে আর আমি বাবাকে নিয়েই বেচে আছি। শুনেছি মহিলা যেদিন চলে যাচ্ছিলো সেদিন নাকি বাবাকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলো যে বাবা যাতে কোনোদিন এই সন্তানের দোহাই দেখিয়ে তার সামনে গিয়ে না দাঁড়ায়। আর এই সন্তানও যাতে কোনোদিন তারকাছে কোনো দাবি নিয়ে না দাঁড়ায়। তারপর থেকে বাবা কোনোদিন খোজ নেয়নি ওই মহিলার, আমিও কোনোদিন খোজ নেবার চেষ্টা করিনি ওনার, উনিও নেয়নি আমাদের খোজ, এমনকি আমি কোনোদিন মহিলার মুখও দেখিনি, কোনো ছবিতেও না। ” কথাগুলো বলেই তাজা হয়ে যাওয়া চাপাকষ্টের তাড়নায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিছিল। মুবিন ঠোট বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে, ” এই মানুষজাতিটা খুবই বিচিত্রকর! তাই না মিছিল? কারো কাছে সম্পর্ক মানে তাজমহল আর কারো কাছে সম্পর্ক মানে তুচ্ছ ধুলোবালি! ” থেমে যায় মুবিন। হয়তো একটু কান্না পাচ্ছে। গলা ধরে এসেছিল তাই আর কথাটা এগিয়ে নিতে পারেনি সে। মিছিলের চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়েছে দু’ফোটা। সেগুলো মুছতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে মিছিল। কান্না যেনো চিরশত্রু তার, তাই একদম অস্তিত্ব মিটিয়ে দিচ্ছে নোনাজল দু’ফোটার। মুবিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলে, ” আচ্ছা মিছিল আঙ্কেল তো নাকি গরিব স্কুল মাস্টার ছিলেন। তা হঠাৎ এতো প্রগ্রেস করলো কীভাবে? তুমি প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছো, আর তোমাদের বাসাও তো আবাসিক এরিয়ায়! ”
মিছিল তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে, ” গরীব ছিলেন কিন্তু ওই মহিলার বাবা আরকি আমার নানুভাই মরে যাবার আগে সব সম্পত্তি আমার নামে করে দিয়ে যায়। সেই খাতিরেই বাবার বড়লোক হওয়া। বাবা নিতে চায়নি সম্পত্তি। সম্পত্তি যখন দিচ্ছিলেন তখন আমি এইটে পড়ি। একপ্রকার অনুশোচনা আর অপরাধবোধের কারনেই জোর করে সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে দেয় আমায়। নানুর সম্পত্তি ভোগ করেই আমরা দুজনে বিলাশবহুল জীবন যাপন করছি। আমার নিজের তিনখানা গাড়িও আছে। শখের বশে কিনেছিলাম। কিন্তু তেমন ব্যাবহার করি না। গাড়ির ভেতরে কেমন যেনো দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। তাই ওই স্কুটারটায় যাতায়াত করি, একদম ফুরফুরে বাতাস পাই চালানোর সময়। বেশ ভালো লাগে! ”
মুবিন আর কিছু বলে না। মিছিলও নিশ্চুপভাবে বসে বাইরেটা দেখতে থাকে আনমনে। মিছিল গাড়ি থেকে নেমে জানালা দিয়ে ভেতরে উকি মেরে বলে, ” থ্যাংকস ফর দ্যা টাইম। তোমার সাথে কথাগুলো শেয়ার করে অনেকটা হালকা লাগছে, আসলে আমার তেমন কোনো ভালো বন্ধু নেই যার সাথে এভাবে এসব মনখুলে শেয়ার করতে পারবো। তোমার সাথে কিছুদিনেরই পরিচয় তবুও মন খুব করে বলছিলো তোমার সাথে কথাগুলো শেয়ার করতে। তাই মনের বাধ্যগত হয়ে বলেই ফেললাম, থ্যাংক্স এগ্যাইন! ”
– ” আই লাভ ইউ, বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মুড ঠিক করে নাও। আমি বাসায় গিয়ে ফোন দিচ্ছি! ”
অন্যসময় মুবিন যদি এভাবে অধিকার ফলিয়ে কথা বলতো মিছিল নিশ্চিত ক্ষেপে যেতো। কিন্তু এখন মুবিনের অধিকার ফালানোটা কেমন যেনো সঠিক মনে হয়েছে তার। এক অজানা ভালোলাগা যেনো বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে তার অনুভুতিতে…!

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৫!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৫!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মিছিল আজ তাড়াহুড়ো করেই তাড়াতাড়ি ভার্সিটি এসেছে। কেনো এসেছে তা সে জানে না। কিন্তু আজ কেনো যেনো একটু তাড়াতাড়ি’ই আসতে ইচ্ছে করছিলো তার। খুব ইচ্ছে করছিলো, অথচ সে কিন্তু ক্লাস শুরু হবে হবে সে মুহুর্তে ভার্সিটিতে ঢোকে।

মিছিল স্কুটারটা ধীর গতিতে চালিয়ে পার্কিং অবধি যাচ্ছে। চোখদুটো শুধুই মুবিন মুবিন করছে। কেনো করছে তা সে জানে না। বুকটাও ধুম্মুর-ধাম্মুর করে লাফানোর জন্য মুবিনটাকে চাইছে। কারন মুবিনকে না দেখে মিছিলের বুক ওভাবে উন্মাদ হতে পারে না। মাত্র একদিনে যে মুবিন ছেলেটা তাকে কী জাদু করলো, কে জানে?

২৫ মিনিট যাবৎ মিছিল ভার্সিটিতে এসেছে। ক্লাসে বসে সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে। গতকাল মুবিন বলছিলো না মিছিল ক্লাসে কেমন চুপচাপ থাকে। আসলেই মিছিল চুপ করেই থাকতো ক্লাসে। তার কারন হলো মিছিল ভর্তির তিন মাস পরে ভার্সিটিতে এসেছে। সবাই কেমন যেনো একদম মিলেমিশে গেছে একে অপরের সাথে। অথচ সে? সে তো কাউকে চেনেই না! তাই মিছিল একপ্রকার বাধ্য হয়েই একা বসে থাকতো। মিছিল ভেবে নিয়েছিলো সবার সাথে ধীরেসুস্থে ভাব জমাবে সে। কারন মিছিল মোটেই বন্ধুবান্ধব ছাড়া থাকতে পছন্দ করে না। কিন্তু গতকাল মুবিনের কথা শুনে সে বুঝেছে যে ক্লাসের মেয়েরা সবাই’ই তার সাথে কথা বলতে আগ্রহি। অথচ তারা কেউ কথাই বলেনি। তাই আজ মিছিলই সবার সাথে কথা বলে নিয়েছে। মিছিলের চোখ দুটো মুবিনকে খুজতে খুজতে এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে গেছে। এতোক্ষনে তো এসে যাবার কথা। শাওন-সীমান্ত’ও তো আজ আসেনি। তাহলে কী আজ আসবে না? মিছিলের যে কী পরিমান অস্থির লাগছে তা শুধু মিছিলের অন্তরাত্মাই ভালো জানে। মনে হচ্ছে কেউ পিস্তলের নলের সামনে মাথা ঠেকিয়ে ট্রিগারে নিজেরই আঙুল বেধে দিয়েছে। মিছিলের সব অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে মুবিন ক্লাসে ঢুকছে। মিছিলের এখন ইচ্ছে করছে উঠে দাঁড়িয়ে মুবিনের কলার চেপে জিজ্ঞেস করতে, ” এই হারামাজাদা এতোক্ষন কই ছিলি? ” কিন্তু সে কেনই বা জিজ্ঞেস করবে? কে হয় মুবিন তার? একদিনেই কীভাবে সে মুবিনের প্রেমে পড়ে যেতে পারে? সে তো একটা মেয়ে তাইনা? আর মেয়েরা তো একটু রয়েসয়ে তারপর প্রেমে পড়বে, এটাই তো নিয়ম! মিছিল মাথাটা খানিক বাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে এসব নিয়ে ধ্যান করছিলো। মুবিনের তুড়ির শব্দে ধ্যানভঙ্গ হয় মিছিলের। মিছিল ভ্রু কুচকে তাকায় মুবিনের দিকে। কীরকম একটা জ্যাকেটের মতো পড়ে এসেছে যার প্রায় পুরোটাই ছেড়া সেটারই পকেটে হাত দিয়ে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে। মিছিল মিথ্যে বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুবিন বলে, ” এখানে বসছো কেনো মিছিল মনি? এখানে বসলে আমি তোমায় পেছন থেকে দেখবো কীভাবে? চলো পেছনে আসো! ”
মিছিলের কোনোপ্রকার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মুবিন মিছিলের ব্যাগ নিয়ে পেছনে চলে যায়। মিছিল বেয়াক্কেলের মতো বসে আছে। এই ছেলে এতো ড্যামকেয়ার কেনো? পুরো ক্লাসের সামনে এভাবে ব্যাগ নিয়ে গেলো যেনো আমি ওর বিয়ে করা বউ? আর ও এভাবে পুরো ক্লাসের সামনে মিছিল মনি বলেই বা ডাকবে কেনো? ও কী বুঝিয়ে গেলো যে আমি একদিনেই পটে গেছি? মিছিলের রক্তে রাগ দৌড়ানো শুরু করেছে। মিছিল উঠে হনহনিয়ে পিছনে গিয়ে মুবিনের সামনে দাড়ালো।
– ” আমার ব্যাগ দে। আমি সামনে বসবো! ”
– ” উহু তুমি পেছনে বসবে মিছিল মনি। আর আজকে না, তুমি প্রতিদিনই পেছনে বসবে! ”
– ” কে রে তুই? আমি তোর কথা কেনো শুনবো? আমার ব্যাগ দে আমি সামনে বসবো! ”
মুবিন একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, ” আরে আশ্চর্য! তুমি এখন সামনে গিয়ে বসলে আমি তোমায় দেখবো কীভাবে? আর তোমার কানের নিচে ঐ ছোট মিষ্টি তিলটাই বা দেখবো কীভাবে? ”
মিছিল একটু দ্বিধায় পড়ে গেলো। কই তার কানের নিচে যে তিল আছে সেটা তো সে জানে না। এতো বছর যাবৎ আয়নায় নিজেকে দেখছে কই কখনও তো এই তিলের সন্ধান সে পেলো না। তাহলে কী আয়নার দৃষ্টি ঐ যায়গাটায় পৌছায় না? আর মুবিন কিনা কয়েকদিন তাকে দেখেই তার সে অজানা তিলের সন্ধান দিয়ে দিলো। মিছিল চোখ এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে এসব ভাবছিলো।
মুবিন একটু স্পষ্ট হেসে বলে, ” আরে মিছিল মনি তোমার কানের নিচে কোনো তিলই নেই। আসলে তুমি কনফিউজড হলে তোমায় কেমন দেখায় সেটাই দেখার ছিলো আমার। দেখে নিয়েছি, ড্যাম কিউট লাগে! বিশ্বাস করো। এরপর থেকে জেনেবুঝে তোমায় কনফিউজড করে দিবো! ”
মিছিল এখনও কনফিউজড। সে কী এই মাত্রই আবারও মুবিনের কথায় পা পিছলে মুবিনের প্রেমে পড়ে গেলো? এ ব্যাপার নিয়ে তার সন্দেহ আছে। প্রেমে না পড়লে তার বুক এরকম লাফালাফি করছে কেনো?
ক্লাসে প্রফেসর চলে এসেছে। মিছিল আর কী করবে? মিছিল বাধ্যহয়েই বসে পড়ে মুবিনের পাশে। মিছিল লেকচারে মনযোগ দেবার চেষ্টা করছে। আর মুবিন মিছিলে মনযোগ দিচ্ছে। এভাবে কেউ একধ্যানে তাকিয়ে থাকলে স্বস্তিতে থাকা যায় নাকি? মারাত্মক অস্বস্তি বোধ হয়! একদম মারাত্মক। আর সেই মারাত্মক অস্বস্তিকর অবস্থাতেই পড়েছে মিছিল। মিছিল মুবিনকে বলে, ” এভাবে তাকিয়ে না থেকে লেকচারে মনযোগ দাও না! ”
মুবিন মিছিলের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে, ” এই তোমার গায়ের ঘ্রানটা এত্তো মাতাল মাতাল কেনো? কী মাখো গায়ে? ”
মিছিলের একদমই এরকম পুরোনো ছবির ডায়লগ ভালো লাগে না। মিছিল মুবিনের দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে বলে, ” বিড়ির ছাই মাখি। তুই মাখবি? ”
মুবিন একটু লাফিয়ে ওঠে। সে চরম অবাক হয়েছে, মুবিন নিজের মধ্যে স্বাভাবিকতা আনতে আনতে বলে, ” আমিতো সারাদিন সিগারেট খাই। কই আমার থেকে তো এমন ঘ্রান আসে না! ”
মিছিল বিরক্তিভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মুবিনের দিকে। এই দৃষ্টির মানে হলো, ” তুই এখন চুপ থাক। আমায় লেকচার শুনতে দে! ”
মুবিন মিছিলের দৃষ্টিতে থাকা বার্তাকে তোয়াক্কা না করে বলে, ” একদিন পুরো সারাদিন তোমার গায়ের ঘ্রান শুকবো। একদম তোমার গায়ের ঘ্রান নিজের গায়ে টেনে নিয়ে আসবো। ঠিক আছে? ”
মিছিলের কিছুই বলার ইচ্ছে ছিলো না। সে চুপ থাকতে চাচ্ছিলো। কিন্তু কী না কী ভেবে মিছিল বললো, ” কীভাবে ঘ্রান নেবে? কীভাবে টানবে? আমার গায়ের ঘ্রান কী লোহার, যে তুমি চুম্বক দিয়ে টানবে? ”
মিছিলের কথায় মুবিন ক্যাবলা হাসে। হেসে হেসে একদম গদগদ হয়ে যায়। মিছিল মুবিনের বাহুতে একটা আলতো থাপ্পড় মেরে বলে, ” এ্যাই! একদম ছ্যাবলামি করবি না। লেকচার শুনতে দে! ”
মুবিনও আর কিছু না বলে লেকচারে মনযোগ দেয়।

ভার্সিটি ছুটির পর মিছিল লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছে। মুবিনও পাশে হাটছে। মিছিল হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। মুবিনও এক মুহুর্তও দেরি না করে দাঁড়িয়ে পড়লো। এমনভাবে দাঁড়িয়ে পড়লো যেনো সে মিছিলের রোবট, আর মিছিল দাড়িয়েছে বলে সেও দাঁড়িয়ে গেছে। মিছিল মুবিনকে বলে,
– ” আচ্ছা তুমি এভাবে ঘুরঘুর করছো কেনো? তুমি যতো যাই করো আমি তোমার প্রেমে পড়বো না! ”
– ” ধুর! তুমি এতো তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে যাবা ভাবিনি। মাত্র তো একদিনই হলো। আমি ভেবেছিলাম কয়েকমাস ঘুরবো, কিন্তু তুমি তো একদিনেই প্রেমে পড়ে গেছো! ”
মিছিলের হুশ উড়ে গেছে। মিছিল যে মুবিনের প্রেমে পড়তে শুরু করেছে এটা মুবিন জানলো কীভাবে? এই ছেলে কী আসলেই যাদুটোনা জানে নাকি? না না যত যাই হোক, মুখে স্বীকার করা যাবে না যে সে মুবিনের প্রেমে পড়েছে। কারন সে বড়মুখ করে বলেছে সে পটবেই না। এখন যে একদিনেই সে কাবু হয়ে গেছে এটা মুবিনের কাছে স্বীকার করলে তার মান-ইজ্জ্বত’ই থাকবে না।
মিছিল থতমত খেয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, ” কী আবোলতাবোল বলছো? আমি প্রেমে পড়বো? তাও আবার তোমার? ”
– ” প্রেমে না পড়লে তোমার আমার প্রতি এতো মায়া আসছে কেনো? আমি তোমার পেছনে ঘুরঘুর করে ক্লান্ত হচ্ছি এটাতে তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো? ”
মিছিল হা হয়ে যায়। এই ছেলের সাথে কথায় পেড়ে ওঠা মুশকিল। এই ছেলে কথার মারপ্যাঁচে ওস্তাদ একদম। তাই মিছিল কিছু না বলেই সামনে হাটা ধরে। মুবিনও সামনের হাটা শুরু করে মিছিলের পাশাপাশি, মিছিলের সাথে তাল মিলিয়ে।

হঠাৎ করেই মুবিন বলে, ” আই লাভ ইউ মিছিল মনি! ”
মুবিনের মুখে ‘আই লাভ ইউ’ কথাটা শুনে মিছিলের বুক ধক করে ওঠে। মিছিল সঙ্গে সঙ্গে বলে, ” আই লাভ ইউ বলছো কেনো? চলে যাবা নাকি এখন? ”
মুবিন কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ” আমি কী তোমায় রেখে চলে যাবো নাকি? আর আমি কী তোমায় অকারনে আই লাভ ইউ বলতে পারি না? অদ্ভুত! ”
মিছিল ফিক করে হেসে ফেলে। কেনো হেসেছে তা জানে না। তবে মুবিন যখন কথাগুলো বলছিলো মুবিনকে একদম ছোটবাচ্চা লাগছিলো। হয়তো মিছিলের ফিক করে হেসে ফেলার কারন এটাই। মিছিল মুখে হাসি বজায় রেখে বলে, ” ভার্সিটিতে পড়ো তুমি মুবিন। তারপরেও একটা মেয়ের পেছনে এভাবে ঘুরছো লজ্বা করে না? নিজেকে ইম্যাচিউড লাগে না? ”
মুবিন এবার একটু সিরিয়াস ভাবে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। মুবিন বলে, ” সব জায়গায় ম্যাচিউরিটি দেখালে হয় না। কিছু কিছু যায়গায় জেনেবুঝেও ইম্যাচিউড হতে হয়। আর বিশ্বাস করো মিছিল মনি আমি কখনই তোমার সাথে ম্যাচিউড ব্যাবহার করবো না। একদম বুড়ো বয়সেও আমি তোমার কাছে ইম্যাচিউড’ই থাকবো! ” কথাগুলো বলেই মুবিন তাচ্ছিল্যেরর হাসিটা গায়েব করে ক্যাবলা বোকা হাসে। মিছিলও আড়চোখে মুবিনকে দেখে খানিক মিটিমিটি হেসে বলে, ” ইউ আর সাচ এ্যা ফ্ল্যার্ট মুবিন! মানে মেয়ে পটানোর জন্য যা ইচ্ছা তাই বলবা নাকি? ”
মুবিন নিজের বোকা হাসিমাখা মুখটা গুটিয়ে নিয়ে কপাল কুচকে বলে, ” আরে সত্যি কথা বলছি। যেখানে দুজনই ম্যাচিউড হয় সেখানে সম্পর্ক ঠিক ভালোভাবে এগোয় না। যেমন আমার বাপ-মা! আইটেম দুইটাই ওভার ম্যাচিউড ছিলো। ব্যাস সংসার টিকলো না! ”
মিছিল থমকে যায়। মুবিন ড্যামকেয়ার প্রকৃতির ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে নিজের বাবা-মা স্বমন্ধ্যে এভাবে বলবে? মিছিলের এর কারন জানা প্রয়োজন। মিছিল কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” সংসার টিকলো না মানে? ”
মুবিন চওড়া হেসে ভ্রু কুচকে মিছিলের দিকে এগিয়ে বলে, ” বলবো তবে একটা শর্ত আছে। ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৪!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৪!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাতে মুবিন মিছিলকে ফোন দেবার পর….!
– ” হ্যালো মিছিল! ”
– ” এ্যাই! এ্যাই! কয়টা বাজে এখন? ”
মুবিন ফোনটা কান থেকে নামিয়ে স্ক্রিনে টাইম দেখে নেয়। তারপর বলে,
– ” ১২:০২ বাজে। ”
– ” এত্তো ছ্যাছড়া ক্যান রে তুই? বারোটা বলছি বলে কী বারোটা বাজেই ফোন দিবি তুই? ”
– ” আশ্চর্য! তুমি না বললা তুমি ১২ টা বাজে ফ্রি হও। আমি তো আরো আগেই ফোন দিতাম। শুধু তুমি বারোটা বলে দিসো বলে সেই কখন থেকে ফোন নিয়ে পায়চারি করছিলাম আর ঘড়িতে সময় দেখছিলাম। ”
মিছিল মুবিনের সরল সিকারোক্তি’তে মুচকি হাসে। মুবিন চুপচাপ কানের কাছে ফোন ধরে আছে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মিছিলের স্নিগ্ধ কোমল কণ্ঠস্বরের। মিছিল বলে, ” হ্যা বল। ফোন কেনো দিয়েছিস? ”
প্রচন্ড রাগ, ক্ষোভ আর বিরক্তিতে মুবিন দাত খিটে চোখ বন্ধ করে কপাল কুচকে ফেলে। বিরক্তি’র ফলে মুবিনের মুখ থেকে ‘চ্যা’ মতো শব্দ হয়। মুবিন চুপচাপ ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার প্রচুর মেজাজ গরম হয়েছে তার জাদুকন্যার ওপরে। এটা কেমন কথা? মুবিনের একদমই তুই-তোকারি পছন্দের না। কিন্তু মিছিল তাকে তুই তুই করেই বলছে। মিছিলের মুখ থেকে তুই শব্দটা কেমন যেনো গালির মতো মনে হচ্ছে মুবিনের। মিছিল ফোন কান থেকে নামিয়ে চেক করে নেয় লাইন কেটে গেছে কীনা। কারন ওপাশ থেকে কোন শব্দই আসছে না। না! লাইনতো কাটেনি। তাহলে হারামাজাদা’টা চুপ চাপ ক্যান?
– ” তুই কিজন্য ফোন করছিস ওইটা বলবি? নাকি আমি ফোন রাখবো। ”
খানিক ঝাঁঝালো কন্ঠে মুবিন বলে, ” এই তোমায় বলছি না তুই-তোকারি করবা না। তোমার মুখে তুই শুনলে মনে হয় তুমি আমায় গালি দিচ্ছো! ”
মিছিলের ঝটপট রেডিমেড উত্তর, ” আমি তুই করেই বলবো। পোষাইলে আদাব, নাহয় রাস্তা মাপ। ”
– ” নিজে ড্যাং ড্যাং করে নাম্বার দিলা। আর এখন নিজেই ফোনে যা! তা! ব্যাবহার করছো। তোমার কী মনে হয়…? ”
মুবিনকে থামিয়ে দিয়ে মিছিল বলে, ” তোর কী মনে হয় বাছা? আমি নাম্বার দিয়েছি বলে পটে গেছি? একদমই না! আমি নাম্বার দিয়ে শুধু তোকে বোঝাতে চেয়েছি যে তুই পটানোর সব সুযোগ পেয়েও আমায় পটাতে পারবি না। ”
– ” ধ্যাত! শুধু এক ঘ্যানঘ্যানানি পটবা না, পটবা না। আমি একবারো বলেছি তোমায়, যে পটে যাও? পটতে হবে না তোমায়। তুমি যেভাবে পটা নিয়ে পড়েছো মনে হচ্ছে তুমি চাচ্ছো আমি তোমায় পটায় ফেলি! ”
– ” আসছে রে সিপাহী বিদ্রোহে’র প্রধান সিপাহী। উনি পটালেন আর আমি পটে গেলাম। আমায় তুমি কোনোদিন পটাতে পারবে না! ”
– ” উফফফ! আরেকবার যদি এই ‘পটানো’ ওয়ার্ড ইউজ করছো। আরে মিছিল মনি আমি ভালোবাসি তোমায়। পটাতে কেনো যাবো? যদি পছন্দ করতাম তোমায়, তাহলে পটানোর প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমায় পটাতে হবে না। তুমি এমনিতেই ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলবা আমায়! ”
মিছিলের সব হম্বিতম্বি গায়েব। চোখগুলো বড়বড় হয়ে গেছে তার। আবার সেই বদমায়েশ অনুভুতি হচ্ছে তার। পুরোটা শরীরে কেমন যেনো সুড়সুড়ি! সুড়সুড়ি লাগছে। তাকে তো কত কত ছেলে প্রপোজ করেছে, কই কখনও তো কোনো ছেলেকে এতো কনফিডেন্ট দেখেনি সে। সবাই নার্ভাস নার্ভাস থাকতো। সে’ও সেই নার্ভাসনেসকে এপ্রিশিয়েট করার জন্য চুপচাপ থেকে মাথা নিচু করে রাখতো। আর যেই কেউ প্রোপোজ করতো মিছিল টুক করে না করে দিতো। কারন তার এই অবধি কোনো ছেলেকেই পছন্দ হয়নি। তবে কলেজে একটা সিনিয়রের ওপর মারাত্মক ক্রাশ ছিলো মিছিলের। মারাত্মক বলে মারাত্মক! মিছিল তো একদম বিয়ে করতে চাইতো ওই সিনিয়রকে। কিন্তু সিনিয়র বেটার প্রেমিকা ছিলো, আর প্রেমিকা নিয়ে শো-অফ মারতো। শো-অফ বলতে একদম রাজকীয় শো-অফ। মিছিলও দেখেও না দেখার ভান করে, ড্যামকেয়ার এটিটিউড এর ভং ধরতো।
– ” প্যানপ্যান হলেও করো। চুপ কেনো? ”
মিছিল একটু কেপে ওঠে। কোথাও একটা গায়েব হয়ে যাওয়া ধরেছিলো সে। মিছিল নিরবতা পালন করছে, কেনো করছে তা সে জানে না। তবে তার ভেতর থেকে কোনো এক বিজ্ঞানি বলছে, ” যত চুপ থাকবি ততই মঙ্গল। যতই কথা বলবি ততই বিপদ! একদম মহাবিপদ। ” সেই বিজ্ঞানি’র কথা মানতেই চুপ আছে মিছিল।
মুবিন আদুরে কন্ঠে বলে, ” শোনো মিছিল মনি! আমার এতো তাড়াহুড়ো নেই। একদমই কোনো তাড়াহুড়ো নেই। তুমি যতদিন ইচ্ছে, ততদিন নিতে পারো। এক যুগ হলে একযুগ। শুধু একযুগ পরে হলেও আমায় ভালোবাসতে হবে। মুখে বলারও প্রয়োজনও নেই আই লাভ ইউ হ্যানত্যান টাইপ কিছু। শুধু একবার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভালোবাসি বলিও আমি তোমার চোখ থেকে পড়ে নেবো! ”
কথাগুলো বলেই একটু চুপ হয়ে যায় মুবিন। তারপর একটু শব্দ করে হেসে বলে, ” এই মিছিল তুমি কী সাহিত্য ভাজা টাজা খাও নাকি? আমি তো সাহিত্যের কিছুই জানতাম না। অথচ তোমাকে কেমন কাব্যিক ধরনে প্রেম নিবেদন করছি! ”
সাহিত্য ভাজা শব্দটা শুনে মিছিল ফিক করে হেসে ফেলে। মিছিলের আবার সেই ল্যাদা বাচ্চা!, ল্যাদা বাচ্চা মার্কা ফিলিংসটা হচ্ছে। ভেতরটা কেমন যেনো অস্থির আর আনচান লাগছে। আচ্ছা মুবিনেরও কী এমন লাগছে? মিছিল মনের মধ্যে একদমই কৌতুহল পুষে রাখতে পারে না। তাই সে মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” আচ্ছা তোমার ভেতরে এখন কেমন ফিলিংস হচ্ছে? ”
মুবিন বুঝতে পারে মিছিল কী বোঝাতে চাইছে। কিন্তু মুবিন একটু রসিকতা করে বলে, ” কীসের ভেতরের ফিলিংস এর কথা বলছো? শার্টের ভেতরের? নাকি প্যান্টের ভেতরের? ”
মিছিল আহাম্মক বনে যায়। ছেলেটা এতো কঠিন কঠিন কথাগুলো কতো সহজ করে বলে ফেলে। আর এই সহজ কথাটাই বুঝতে পারলো না? আচ্ছা ও কী এই ডাবলমিনিং অসভ্য কথাটা ইচ্ছে করেই বললো? অবচেতন মনে মিছিল নিজের তর্জনী আঙুলের বড় নখটা দাত দিয়ে একটু খুটে ফেললো। নখ খুটে ফেলেছে খেয়াল হতেই আফসোস হলো। ধুর! পুরো নখটাই এখন কেটে ফেলতে হবে। মিছিল কী করবে এখন? ফোনটা কেটে দেবে? নাকি আবার স্পষ্টভাষ্যে জিজ্ঞেস করবে, ” তোমার মনের মধ্যে এখন ঠিক কী চলছে? ” উহু! সে জিজ্ঞেস করবে না। কেনো জিজ্ঞেস করবে? এতো পাকনা পাকনা ডায়লগ দিতে পারে। আর এটা বোঝে না? মিছিল কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দেয়। ফোনটা কেটে দিয়ে, ফোনটাকে নিষ্ঠুর ভাবে খাটের ওপর ছুড়ে মারে। ফোনটাও অসহায়ভাবে খাটে মুখ থুবড়ে পড়ে। মুবিনের মাথায় ঢুকলো না ব্যাপারটা। মিছিল কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো কেনো? মিছিলের কী ব্যালেন্স শেষ? ধুর মিছিলের ব্যালেন্স কীভাবে শেষ হবে ফোন তো আমি দিয়েছি! তাহলে আমার ব্যালেন্স শেষ? মুবিন ঝটপট ব্যালেন্স চেক করে। এখনও যথেষ্ট আছে। তাহলে মিছিল ইচ্ছে করেই ফোন কেটে দিলো? রুমে হয়তো কেউ এসেছে, তাই কেটে দিয়েছে।

মিছিল পায়চারি করছে। মুবিনও পায়চারি করছে। মিছিল বারবার খাটের উপর পড়ে থাকা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে হারামাজাদা এখনও ফোন দিচ্ছে না কেনো? ওদিকে মুবিন অপেক্ষা করছে ৩০০ মুহুর্ত পার হবার। সে ফোনে টাইমার’ও সেট করে নিয়েছে। ৩০০ সেকেন্ড মানে ৫ মিনিট শেষ হলেই সে তার জাদুকন্যাকে ফোন লাগাবে। ৫ মিনিট শেষ। মুবিন মিছিলকে ফোন দেয়। ফুল রিং হয়ে কেটে যায়, মিছিল ইচ্ছে করেই ফোন ধরে না। এতো লেট করলি কেনো রে শালা? আমি তো ওয়েট করে ছিলাম নাকি? তাহলে তুই লেট করলি কেনো? এসব বিড়বিড় করে মুবিনকে শাসিয়ে নিচ্ছে মিছিল। মুবিন দুবার ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন ধরছেই না। তাহলে কী মিছিল বাথরুমে গেছে? নাকি রুমের বাইরে গেছে? আচ্ছা লাস্ট একবার ট্রাই করি। এবার রিসিভ করলে করবে। নাহয় আবার পাচ মিনিট পর করবো। মুবিন মিছিলকে ফোন দেয়। মিছিলের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। রিংটোন’টা কয়েক মুহুর্ত বাজার পরেই মিছিল ফোনটা রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করেই মুবিনকে ঝারি মারে মিছিল, ” এ্যাই! তুমি এতো বেহায়া কেনো? আমি ফোন কেটে দেবার পরেও এতোবার ফোন দিচ্ছো কেনো? ”
ওপাশ থেকে মুবিন বলে, ” তুমি ইচ্ছে করে ফোন কেটেছিলে? আরে বলে কাটবে তো, যে তুমি ইচ্ছে করে ফোন কেটেছো। তাহলে আমি পাচ মিনিট অপেক্ষা না করেই তোমায় সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতাম। আচ্ছা বলো কী কারনে ফোন কেটে দিলে? ”
– ” বলবো না। তুমি বলো তুমি এতো বেহায়া কেনো? ”
– ” প্রেমিকরা একটু বেহায়া বেশরম না হলে প্রেমিকা জোটেও না, টেকেও না তাই। ”
মিছিলের কথাই ফুরিয়ে গেছে। কী বলবে সে? মিছিল কিছুই বলছে না। ওদিকে মুবিনও চুপ। সে অপেক্ষা করছে মিছিলের কথা বলার। মিছিল বলে, ” আচ্ছা ঘুমাবো। রাখছি! ”
– ” অন্যদিন হলে আরো কিছুক্ষন আটকে রাখতাম কথা বলার জন্য। কিন্তু আজ প্রথমদিন তো তাই ছেড়ে দিচ্ছি। গুড নাইট! লাভ ইউ মিছিল মনি! ”
মিছিল চুপ করে আছে। সে ও কী গুড নাইট বলবে? গুড নাইট বললে কেমন আস্কারা দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা? সে গুড নাইট কেনো বলতে যাবে? ওই হারামাজাদার নাইট গুড যাক ব্যাড যাক তাতে থোরাই তার ফারাক পড়ে? মিছিল কিছু না বলেই ফোন কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনই মুবিন বলে, ” এই শোনো আমি তোমায় ফোন রাখার সময় লাভ ইউ বললে তুমি কখনই লাভ ইউ টু বলবে না! ”
মিছিল খানিক অবাক হয়। খানিক না! অনেকখানি অবাক হয়। এ কেমন উদ্ভট চিন্তাধারা? সবাই তো লাভ ইউ টু’ই শুনতে চায়। তাহলে ও কেনো এমন কথা বললো? মিছিল চটজলদি প্রশ্ন করে ফেলে, ” কেনো বলবো না? ”
– ” কারন তুমি লাভ ইউ টু বললে আমি ফোন কাটতেই পারবো না। ” বলেই আধামুহুর্ত সময়ের জন্য থেমে যায় মুবিন। তারপর একটু উৎসুকভাবে মিছিলকে জিজ্ঞেস করে, ” এই তুমি কেন বলবো না জিজ্ঞেস করলে কেনো? তোমার কী লাভ ইউ টু বলতে ইচ্ছে করছিলো? ”
মাত্রই চরম বেয়াক্কেল হয়ে গেলো মিছিল। সে তো কৌতুহল নিবারনে জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু হারামাজাদা’টা কী অভিযোগ তুলছে এসব? সে কীনা লাভ ইউ টু বলতে যাবে তাও এই বদমায়েশ ছ্যামড়াকে? তাও আবার মাত্র একদিনের মধ্যে প্রেমে পড়ে গিয়ে? মিছিল একটু কড়া শব্দে বলে, ” জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে ঘুমাও। রাখছি! ” বলেই মিছিল ফোন কেটে দিচ্ছিলো। কিন্তু কী যেনো একটা ভেবে মিছিল ফোনটা আবার কানের কাছে নিয়ে বলে, ” গুড নাইট! ” বলেই চোর যেমনি পালায়, মিছিলও তেমনি ফোনটা কেটে দেয়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৩!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৩!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মিছিল সিনেপ্লেক্সে ঢুকে বসেছে। মুবিনও গিয়ে ঠিক মিছিলের পাশেই বসেছে। মুবিনকে পাশে বসতে দেখেই মিছিলের পুরো মুখ বিরক্তিতে ভরে গেলো। কপাল,ভ্রু,নাক,চোখ সব মুহুর্তেই কুচকে গেলো। মিছিল মুবিনকে অনেকটা শাসানো মতো করে বললো, ” দেখো মুবিন একটা লিমিট থাকে সবকিছুর। একটা ছেলে হিসেবে একটা মেয়েকে পছন্দ হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক বা অন্যায় কিছু না কিন্তু মেয়েটা যদি তোমায় প্রত্যাখ্যান করে দেয়। আর তারপরেও যদি তুমি মেয়েটার পিছু নাও, বিরক্ত করো, ঘুরঘুর করো তাহলে সেটা সম্পুর্ন অস্বাভাবিক এবং অন্যায় কাজ! ”
মুবিন নিশ্চুপ শ্রোতার মতো শুনছিলো মিছিলের কথাগুলো। মিছিল কথাগুলো বলে একদম স্বাভাবিক নজরে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। পাশ থেকে মিছিলের পিচ্চি কাজিনটাও উকি দিয়ে মুবিনকে দেখছে। পুরো মুখটা মিছিলের পাশ থেকে বের করছে না সে। বোধহয় লজ্বা পাচ্ছে। কিন্তু এই পিচ্চির আবার কোন কারনে এতো লজ্বা পাওয়া? সে ব্যাপারে খানিক সন্দিহান মুবিন। মুবিন পিচ্চিটার উকি দেওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কারন পিচ্চিটা প্রতি সেকেন্ড পরপরই টুক করে একটু করে উকি দিচ্ছে। মিছিল প্রায় মিনিটখানেক অপেক্ষা করছে মুবিনের মুখ থেকে পজিটিভ কিছু শোনার আশায়। কিন্তু মুবিন ওই পিচ্চির আচরনের রহস্য উদঘাটনে মহাব্যাস্ত। মিছিল কিছু মিনিটের অপেক্ষার ইতি টেনে বলে, ” মুবিন প্লিয। আমার ব্যাপারটা কেমন যেনো উইয়ার্ড আর অকওয়ার্ড লাগছে। সো প্লিজ যাও এখান থেকে, এন্ড ফর গড সেক আমায় ইন ফিউচার ডিস্টার্ব করিও না! ”
মিছিল পুরো কথাটা শেষ করার আগেই মুবিন মিছিলের মুখের সামনে নিজের হাতের পাচটা আঙুল তুলে দিয়ে বলে, ” ধুর তুমি এতো সিরিয়াস কেনো? এতো সিরিয়াসনেস নিয়ে লাইফ ইঞ্জয় করা যায় নাকি? ”
মুবিনের এমন কথার জন্য তো মিছিল অপেক্ষা করেনি। মিছিল অপেক্ষা করছিলো মুবিনের অনুতাপ মিশ্রিত বুলি’র। কিন্তু মুবিন এসব কী বলছে? মিছিলের পুরো মুখে কৌতুহল দৌড়াদৌড়ি করছে। মিছিল কপালটা কুচকে পুরো কপালের চামড়া একদম কপালের মাঝখানে জড়ো করে ফেলেছে। চোখদুটো একদম হাতির চোখের ন্যায় ছোটো করে ফেলেছে। মুবিনও হালকা ভ্রু কুচকে মিছিলের দিকে তাকালো। তারপর বাম চোখটা একটু ছোট করে ঠোটদুটো বাম দিকে বাকিয়ে একটু বাকা হাসলো। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলের গালদুটো ধরে আলতো করে টেনে দিলো। মিছিলের হাতির চোখের ন্যায় ছোট চোখ দুটো কুল বড়ইয়ের মতো বড় হয়ে গেলো। মিছিল হুংকার দিয়ে মুবিনকে অধিকারের ভাষন শোনাতে যাবে তার আগেই মুবিন আবার মিছিলের মুখের সামনে নিজের হাতের পাচ আঙুল তুলে দেয়। মিছিলের চোখ এবং উৎসুক ভাব’টা স্বাভাবিক হয়। মুবিন একটু বিজ্ঞভঙ্গিতে মিছিলকে জিজ্ঞেস করে, ” আচ্ছা মিছিল মনি তুমি নিশ্চিত তো যে তুমি আমায় প্রত্যাখ্যান করেছো? ”
মিছিল মনি? হারামাজাদা’য় একদম ফ্লার্ট এর আঁতুড়ঘর। মিছিল মুবিনকে মনেমনে কিছু গালাগালি দিয়ে, মুখে বলে ” অবশ্যই আমি তোমায় স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। এন্ড লিসেন আমার নাম মিছিল নট দিস রাবিশ মিছিল মনি! ”
মিছিল যে মুবিনকে অপমান করে কথাগুলো বললো সেটা একদমই স্পষ্ট। কিন্তু তাতে মুবিনের কিছুই ফারাক পড়লো না। মুবিন একদম ড্যামকেয়ারভাবে আবার বিজ্ঞভঙ্গিতে বললো, ” দেখো মিছিল মনি তুমি মোটেই আমায় প্রত্যাখ্যান করে দাওনি চিরতরে। শুধু তোমার বর্তমান অনুভুতিটা বলেছো আমায় যে তোমার আমায় পছন্দ না। আর হুট করেই কেউ কারো পছন্দের হয়ে ওঠে নাকি? আমার তোমার প্রেমে পাগল হতে পাক্কা ছয় মাস লেগেছে। তোমার আমার প্রেমে পড়তে অন্ততপক্ষে ছয়দিনতো লাগবে নাকি? ”
মুবিন কথাগুলো বেশ বিজ্ঞভঙ্গিতে’ই বলছিলো। মানে হলো একদম মারাত্মক সিরিয়াস ভঙ্গিতে। কিন্তু মুবিনের কথাগুলো শোনার পরেই মিছিল হাসলো। হাসলো বললে অন্যায় হবে মুবিনকে ব্যাঙ্গ করে হাসলো। মিছিল হাসতে হাসতেই কপট রাগ দেখিয়ে শক্ত গলায় বললো, ” তোমার কী মনে হয় তুমি আমায় ছয় দিনে পটিয়ে ফেলবা? ফিল্ম পেয়েছো এটা…? ”
মিছিল কথা শেষ করার আগেই মুবিন আবার মিছিলের মুখের সামনে নিজের পাচ আঙুল উঠিয়ে দিয়ে বলে, ” শোনো আমার ছোট্র মিছিল মনি প্রত্যেকটা ফিল্ম, প্রত্যেকটা গল্প, প্রত্যেকটা সৃষ্টি, প্রত্যেকটা আবিষ্কার, প্রত্যেকটা উদ্ভাবন কারো না কারো জীবনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারো না কারো জীবন থেকেই নেওয়া। তাই এমন ভঙ্গিতে বলার কিছু নেই, আর তুমি মিস ওয়ার্ল্ড টাইপ কেউ না যে তোমায় পটানো যাবে না। ”
মিছিল ভেংচি কাটে। মিস ওয়ার্ল্ড না তাহলে পিছনে পড়েছিস কেনো রে শালা? যা না মিস ওয়ার্ল্ড টাইপ কারো পিছে যা!, হারামাজাদা প্লেবয়। ভার্সিটির একটা মেয়েও তো ছাড়লি না। শুনেছি প্রত্যেকটা মেয়ের সাথে ফ্ল্যার্ট করেছিস। ক্যারেকটারলেস উল্লুক! ইয়ং ম্যাডামদেরও নাকি ছাড় দিস না। আর এখন এসেছিস আমায় প্রেম নিবেদন করতে? তোর প্রেম তোর মানিব্যাগে রাখ। মুবিনের দিকে স্থিরদৃষ্টে তাকিয়ে এক চোখ ছোট এক চোখ একটু বড় করে কপাল কুচকে মনে মনে কথাগুলো মুবিনকে বলছিলো মিছিল। মুবিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ছুড়ে মারলো মিছিলকে। মিছিলও কথা বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টির জবাব দিলো, ” শোনো তোমার এসব ভং-ছং আমায় শুনিয়ে কোনো লাভ নেই। তোমার এসব কথায় আমি পটবো না। আর আমি যদিও মনের ভুলে বা বুদ্ধির দোষে পটেও যাই তাহলে সেটা তোমায় বলবোই না। তাই তুমি আমায় কোনোদিনই প্রেমিকা হিসেবে পাবে না। এবার তুমি তোমার মতো করে প্রেম নিয়ে লাফাতে থাকো আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার! ”
– ” ব্যাস এই তো আমার সোনামনিটা অর্ধেকটা পটে গেছে। আপাতত আর কিছু লাগবে না! ” বলেই মুবিন শরীর টানা দিলো।
মিছিলের চোখ দুটো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সে কিনা অর্ধেকটা পটে গেছে? কই সে তো বিন্দুমাত্র টের পেলো না! তাহলে? তাহলে সে কীভাবে পটে গেলো? নাকি সে এখন এই পটাপটি নিয়ে ভাবছে তাই পটে গেছে? এভাবে ভাবা মানেই কী পটে যাওয়া? আসলেই কী সে অর্ধেক পটে গেছে? এসব লক্ষাধিক এমসিকিউ’র মতো প্রশ্ন মিছিলের মাথার চারপাশে নাগরদোলার মতো ঘুরছে। মিছিলের মুখটা মাঝারি ‘হা’ আকার ধারন করেছে। তার পুরোটা মুখে এক চরম বিস্ময়ের ছাপ। এর চেয়ে বিস্মিত সে ইহজীবনেও হয়নি বোধহয়। মুবিন মিছিলের এই ‘হা’ হয়ে যাওয়া দশা থেকে মিছিলকে বের করার জন্য মিছিলের থুঁতনি ধরে মিছিলের হা করে থাকা মুখটা প্রথমে বন্ধ করে দেয়। তারপর মিছিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ” এতো অবাক হলে চলবে মিছিল মনি? আমি তোমায় এতো এতো ভালবাসবো, এতো এতো ভাবে ভালোবাসবো যে তোমার ভালোবাসা নিয়ে সকল বিস্ময় নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে! ”
কথাটা শুনতেই মিছিল মেরুদন্ডে অদ্ভুত এক শিহরন অনুভব করে। ঠিক মেরুদন্ডের শিহরনের মতোই বুকেও শিহরন অনুভব করে মিছিল। তবে মেরুদন্ডের চেয়ে বুকের শিহরনের মাত্রাটা তীব্র সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই মিছিলের। মুহুর্তেই মিছিলের পিলে চমকে উঠলো ভয়ে। সে এই চরিত্রহীনের প্রেমে পড়তে শুরু করলো নাকি? না! না! কিছুতেই এর প্রেমে পড়া যাবে না। তাহলে জীবনের রঙ’ই পড়ে যাবে। প্রচুর পস্তাতে হবে। মুহুর্তেই মিছিল হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মিছিল বলে, ” আমি ফিল্ম দেখবো না। বাসায় যাবো আমি! ”
মুবিন মিছিলের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে, ” চুপচাপ বসে ফিল্ম দেখো। পিচ্চিটা ফিল্ম দেখতে এসেছে, ফিল্ম না দেখে চলে গেলে মন খারাপ হবে তো ওর! ”
অন্যসময় মুবিন যদি তার হাত ধরতো তাহলে সে নিশ্চই ক্ষেপে গিয়ে মুবিনকে কথা শোনাতো। কিন্তু কী মহাআশ্চর্য ব্যাপার সে এখন কিছুই বলতে পারছে না। মুবিনের এই অনধিকারচর্চাটাও যেনো কেমন অদ্ভুতভাবে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভালো লাগছে তার। ভালো না অবশ্য, খুব বেশিই ভালো লাগছে। মুবিন মিছিলকে বলে, ” আচ্ছা যতক্ষন ফিল্ম চলছে ততক্ষন আমি আর তোমায় জ্বালাবো না। শুধু আমার হাতে থাকা পপকর্নের পট থেকে পপকর্ন নিয়ে খেতে হবে! ”
মিছিলের এবার একটু কথা শোনাতে ইচ্ছে হয় মুবিনকে। সে মুখটা মুবিনের কাছাকাছি তেড়ে নিয়ে বলে, ” মগেরমুল্লুক নাকি? আমি কেনো তোমার থেকে পপকর্ন খেতে যাবো? কে তুমি আমার? ”
– ” আপাতত বন্ধুই ভেবে নাও! ”
মিছিল কয়েকদানা লবনের পরিমান অবাক হয়। সে ভেবেছিলো মুবিন হয়তো বলবে, সে তার স্বামি,জামাই,প্রেমিক,সবকিছু,লাইফলাইন,হার্টওয়েভ, এইসেই,হ্যানত্যান কিন্তু না! মুবিন কী স্বাভাবিকভাবেই বলে দিলো ‘বন্ধু’। মিছিল কেমন যেনো পা পিছলে আরেকটু মুবিনের প্রেমে পড়ে গেলো। এই ছেলে জাদুটাদু জানে নাকি? কথাদিয়ে কীভাবে বশ করে নিচ্ছে আমাকে? এর কাছে কোনো পীর-হুজুরের তাবিজ নেই তো? মিছিল মুবিনের গলায় এবং হাতের কব্জিতে চোখ দিলো। না! তাবিজ তো নেই। তাহলে কীভাবে করছে এসব? মিছিল এসব নিয়ে গবেষণারত অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে মুবিন বলে, ” চুপ হয়ে গেলে যে? তুমি কী ভেবেছিলে যে আমি প্রেমিক বা জামাই হই ওইটা বলবো? ”
মিছিলের ভেতরটা চমকে উঠলো। এই যা এই হারামাজাদাটা কী মনের কথাও শুনতে পায়? মিছিলের বুকের ধুকপুকানি’র মিছিলটা দ্রুতপায়ে এগোচ্ছে। মিছিলের এখন নিজেকে ক্লাস থ্রি-ফোরের ছোট বাচ্চা মনে হচ্ছে। যে বাচ্চাটা বাসা থেকে ২ টাকা চুরি করে হাতেনাতে ধরা খেয়েছে। ঠিক এমনই অনুভুতি হচ্ছে মিছিলের। মিছিল কিছুই বলছে না। কোথাও যেনো কথাগুলো জমাহয়ে আটকে যাচ্ছে। মুখের কাছে আসতেই পারছে না, তাহলে কী বুক থেকে গলা অবধি ট্র‍্যাফিক জ্যাম লাগলো তার? মিছিলের যে কেমন লাগছে মিছিল তা নিজের কাছেই ব্যাখ্যা করতে পারছে না। কারন এই অদ্ভুত অনুভুতির শিকার সে আগে কখনোই হয়নি। একদমই তাজা আর নতুন অভিজ্ঞতা। মিছিল কিছু বলছে না দেখে মুবিনই শাওনকে বলে, ” ওই পিচ্চিটাকে এনে আমার বাম পাশে বসিয়ে দে তো! ” মিছিল মুবিনের ডান পাশে বসা। মিছিল কিছুই বলছে না। খানিক নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তো খানিক ফ্যালফ্যালিয়ে মুবিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। শাওন গিয়ে পিচ্চিটাকে বলে, ” চলো ভাইয়া তোমার দুলাভাইয়ের পাশে বসবা! ” পিচ্চিটা ফিক করে মুখ চেপে হেসে ফেলে। শাওনের মুখে কথাটা শুনতেই চমকে ওঠে মিছিল। দুলাভাই? এই হারামজাটা’র বন্ধুগুলাও তো খবিশ সোজা বিয়ে পড়ায় দিলো? পিচ্চিটা গিয়ে মুবিনের পাশে বসে পড়ে। ফিল্ম শুরু হয়ে গেছে। মিছিল একদৃষ্টে সামনে থাকা বড় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে বারবার আড়চোখে দেখছে মুবিনকে। মুবিনকে লুকিয়ে দেখতে গিয়ে মুবিনের কাছে ধরা পড়ছে বারবার। আর ধরা পড়তেই চোখটাও সড়িয়ে নিচ্ছে বারবার। সে মুবিনকে লুকিয়ে দেখছে? কেনো দেখছে? কী করেছে মুবিন তাকে? তাহলে কী কয়েক মিনিটের কথার মাধ্যমেই মুবিন তাকে পটিয়ে ফেললো? হায় হায় সে তো বড় মুখ করে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলো যে ছয়দিনেও মুবিন তাকে পটাতে পারবে না। তাহলে এখন কী হলো? কয়েকমিনিটেই তো পটিয়ে ফেললো? না! না! আমি মোটেই পটি’নি শুধুই ভুলভাল ভাবছি। এসব ভাবতে ভাবতেই ফিল্ম শেষ হয়ে যায়। মুবিন, শাওন, সীমান্ত আর পিচ্চি খুব ভালোভাবেই ফিল্ম ইঞ্জয় করেছে। পিচ্চিটা যদিও ইংরেজি বোঝেনি তবুও তাকে দেখে মনে হয়েছে এখানে বসা সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মজা নিয়ে ফিল্মটাকে উপভোগ করেছে এই পিচ্চি। পিচ্চিটার একটা জিনিসে মারাত্মক অবাক হয়েছে মুবিন, শাওন, সীমান্ত। যখনই স্ক্রিনে কোনো কিসিং বা ইন্টিমেট সীন আসতো এই পিচ্চি নিজে নিজেই নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলতো। মুবিন এর কারন জিজ্ঞেস করতেই পিচ্চিটা বলে, ” আমার আম্মু বলেছে আমি তো এখন ছোট। আর ছোট বয়সে বড়দের পাপ্পি দেওয়া দেখতে হয় না। দেখলে নাকি বড় হলে সব দাত পড়ে যায়! ”
পিচ্চির কথা শুনে ওরা তিনজন পুরো দশমিনিট হেসে গড়াগড়ি করছে। কিন্তু ওদের এই গড়াগড়ির দৃশ্য মিছিলের চোখে পড়েনি। কারন মিছিল এক আবছা ঘোরে ছিলো। যে ঘোরে থেকে মিছিল শুধুই ভেবেছে যে, ” আসলেই কী মুবিন তাকে পটিয়ে ফেলেছে? ”

মুবিন মিছিল সহ সবাই শপিংমলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুবিন মিছিলকে জিজ্ঞেস করে, ” কী দিয়ে বাসায় যাবে? ”
– ” স্কুটার দিয়ে! ”
মুবিন একটু গদগদ ভাব নিয়ে মিছিলকে বলে,” এই মিছিল একটা রিকোয়েস্ট রাখবে? প্লিজ! প্লিজ! ”
মিছিল ভ্রু-কুচকে বলে, ” কীসের রিকোয়েস্ট? ”
মুবিন একটু দাত কেলিয়ে শাওনের দিকে তাকায়। তারপর মিছিলকে বলে, ” শাওনের না বহুদিনের শখ স্কুটার চালাবে। আজ তোমার স্কুটারটা একটু ওকে চালাতে দেবে? প্লিজ! তুমি আমার সাথে গাড়িতে চলো না। ও তোমার স্কুটার নিয়ে আমাদের পিছু পিছু আসবে। ”
মুবিনের কথা শুনতেই চমকে যায় শাওন-সীমান্ত। শাওনের আবার কবে বহুদিনের শখ হয়ে দাড়ালো স্কুটার চালানো? এরকম শখতো শাওনের কোনোদিনও ছিলো না। মিছিল সঙ্গে সঙ্গে নিজের মাথাটাকে বাম দিকে ডান দিকে কয়েকবার নাড়িয়ে বলে, ” না! না! আমি পারবো না। ”
মুবিন শাওনের দিকে তাকিয়ে বলে, ” কীরে শাওন চুপ করে আছিস কেনো শালা? বল মিছিলকে, রিকোয়েস্ট কর মিছিলকে। মিছিলকে বল, স্কুটার চালানোটা তোর কতদিনের শখ! ” মুবিন শাওনকে এসব বলতে বলতে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো যাতে শাওন বলেই। সে মিছিলকে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যেতে চায়। আর শাওন যদি এখন মিছিলকে স্কুটার দিতে রাজি না করায় তাহলে সে শাওনকে ভর্তা করে শাওন ভর্তা খাবে। শাওনও বুঝে যায় ব্যাপারটা। শাওন আকুতির স্বরে মিছিলকে বলে, ” জানো মিছিল আমি লঞ্চ,স্টিমার, রেসিংকার, ঠেলাগাড়ি, রিকশা, সাইকেল সবকিছু চালিয়েছি। একদম সবকিছু এমনকি আমি যুদ্ধবিমানও চালিয়েছি শুধু এই স্কুটার চালানোটাই বাকি। প্লিয বোন না করিও না। আর মুবিন তো বলছে যে তোমায় ওর গাড়ি করে ড্রপ করে দেবে! ”
– ” কীহ? তুমি যুদ্ধবিমান চালিয়েছো? ”
শাওন দাত কেলিয়ে খিটখিট করে হাসে। মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে, ” আরে তুমিও না একদম সরল-সিধা। যুদ্ধ বিমান চালিয়েছি মানে হল ভিডিও গেমে চালিয়েছি। প্লেস্টোরে পাওয়া যায় তো, এপল স্টোরেও পাবে। আমি প্লেস্টোর থেকে নামিয়ে খেলেছি মাত্র ৩৬২ এম্বির গেমস। আহ কী চরম গ্রাফিক্স, কী চরম গেমপ্লে কী বলবো! ”
– ” আচ্ছা! আচ্ছা! তুমি স্কুটার চালিয়ে শখ পুরন করে নাও। তবে স্কুটার নিয়ে যদি কোথাও পড়ে গিয়ে স্কুটারে দাগ বা স্ক্র‍্যাচ করিয়েছো তাহলে রিপেয়ার বিল তোমার! ”
– ” একদম। আরে রিপেয়ার কী বলছো? আমি নতুন স্ক্রুটার কিনে দিবো একদম যদি একটু স্ক্র‍্যাচ’ও হয়! ”

মিছিল আর কথা না বাড়িয়ে পিচ্চিটাকে নিয়ে গাড়ির দিকে হাটা ধরে। মুবিন গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। মিছিল পিচ্চিটাকে গাড়ির পিছনের সিটে বসিয়ে দেয়। যেই মিছিল উঠতে যাবে তখনই মুবিন বলে, ” এই মিছিল তুমি পিছনে উঠছো কেনো? তুমি সামনে বসো! ”
মিছিল বিরক্তি নিয়ে বলে, ” কোন দুঃখে? ”
– ” সীমান্ত না সামনে বসতেই পারে না। একদম গলগল করে বমি করে দেয়! ”
মুবিন সীমান্তর দিকে তাকিয়ে বলে, ” কীরে শালা বল। তুই সামনে বসে কেমন প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মতো বমি করিস! ”
সীমান্ত তুহিনের সাথে তাল মিলিয়ে বলে, ” হ্যা মিছিল। আমি সামনে বসতে পারি না। একটু কষ্ট করে সামনে বসো! ”
মিছিল সব বুঝতে পারছে যে মুবিন এসব ইচ্ছে করে করছে। মিছিলের ভেতরে কেমন যেনো ভালো লাগা অনুভব করছে মিছিল। ভেতরে একটু অপ্রকাশ্য মুচকি হেসে মিছিল গিয়ে গাড়ির সামনে বসে পড়ে। মুবিন উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে। একদমই ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে মুবিন। এরকম ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে দেখে মিছিল মুবিনকে একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন ছুড়ে মারে, ” আশ্চর্য! এতো আস্তে আস্তে কেনো গাড়ি চালাচ্ছো? ”
মুবিন চমকে গিয়ে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে, ” তুমি আমায় ভালো না’ই বাসতে পারো মিছিল। কিন্তু তা বলে মেরে ফেলতে চাচ্ছো আমায়? তুমি জানো না একটি দুর্ঘটনা, সারাজীবনের কান্না! ”
মিছিল মুবিনের দিকে তাকিয়ে নাক ছিটকে, মুখ ভেংচে বলে ” ন্যাকামি যত্তসব! ”
মুবিন মুচকি হাসে। ২৫ মিনিটের রাস্তা ৪০ মিনিট ড্রাইভ করে এসেছে মুবিন। ইচ্ছে করেই এসেছে। কারন সে ড্রাইভ করছিলো আর মিছিলকে দেখছিলো। প্রানভরে দেখে নিচ্ছিলো। এতোদিন তো শুধু কন্ঠ’ই শুনেছে। আজ সুযোগ হয়েছে তার সৌন্দর্য খুটিয়ে দেখার। সে সুযোগ মোটেই হাত ছাড়া করেনি মুবিন।

শাওন মিছিলকে মিছিলের স্কুটার বুঝিয়ে দিয়েছে উইথয়াউট এনি স্ক্র‍্যাচ। পিচ্চিটা বাসার সামনে আসতেই দৌড়ে ভেতরে চলে গেছে। মিছিলও স্কুটার হাটিয়ে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছিলো। মুবিন পিছুডাকে। মিছিল ফিরে তাকায়, ভ্রু-কুচকে নিক্ষেপ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। মুবিন হেসে বলে, ” নাম্বারটা দিয়ে যাও না। রাতে একটু প্রেম প্রেম খেলবো! ”
মুবিনের কথা শুনতেই মিছিলের চোখের জিজ্ঞাসাবোধক চিহ্ন উঠে গিয়ে আগুন জ্বলে যায়। মুবিন সে আগুনকে উপেক্ষা করে মায়াজড়ানো কন্ঠে বলে, ” কথাদিচ্ছি বিরক্ত করবো না। ভদ্রভাবে চাচ্ছি দিয়ে দাও। আমি যদি অন্যভাবে নেই তাহলে প্রচুর বিরক্ত করবো! ”
মিছিল স্কুটার স্ট্যান্ড করে মুবিনের সামনে তেড়ে গিয়ে বলে, ” এই ছ্যামড়া কে ভয় পায় রে তোর ডিস্টার্ব করা? আমায় কী আর পাচটা অর্ডিনারি মেয়ের মতো পাইছিস? ”
– ” দেখো মিছিল তুই তোকারি করবা না। শুনতে কেমন যেনো রুড লাগে! ”
– ” হাজার বার করবো। তুই আমার ব্যাচমেট। আমি তোকে তুই বলতেই পারি! ”
মুবিনের রাগ এসেছে খানিক। কিন্তু সে চাইলেও রাগটা মিছিলের ওপর ঝাড়তে পাড়ছে। রাগটা ভেতরে কোথাও একটা আটকে যাচ্ছে। বাইরে আসতেই চাচ্ছে না। মুবিন চুপ করে আছে। মিছিলও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। দুদিকেই নিরবতার দেয়াল। মিছিল নিরবতার দেয়াল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়ে বলে, ” তোর ফোন দে! ”
মুবিন পকেট থেকে ফোন বের করে মিছিলের হাতে দেয়। মিছিল নাম্বার উঠিয়ে ডায়াল করে দেয়। তারপর ফোনটা মুবিনের হাতে দিয়ে বলে, ” আমি ১১ টা অবধি পড়ি। তারপর খেয়েদেয়ে ১২ টার দিকে ফ্রি হই। তার আগে যদি ফোন দেস তাহলে ফোনের মধ্যে ঢুকে তোর দাত ভাঙবো! ” বলেই মিছিল হাটা ধরে। সে বাসায় ঢুকবে, বাসায় ঢোকার যেনো মস্ত তাড়া তার। মুবিন আবার পিছুডেকে বলে ফেসবুক আইডিটা বলে যাও না। মিছিল পিছনে না তাকিয়েই বলে, ” মিছিল মেহরিন! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

গল্প: ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০২!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০২!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাতে টিভি দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে যায় মুবিন……!

শুক্রবার সকাল ৯ টা ৫৫ বাজতেই মুবিনের ফোনের এলার্ম বেজে ওঠে। প্রচুর ঘুমকাতুরে মুবিন, একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর উঠতেই ইচ্ছে করে না তার। যতক্ষন পর্যন্ত না ঘুমের গুষ্টি উদ্ধার করে দিচ্ছে সে। প্রায় দেড় মিনিট নাগাদ টানা এলার্ম বাজার পর এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে মুবিনের। কপালে ভাজ নিয়ে চোখ কুচকে হাতরে ফোন খুজে আন্দাজেই এলার্মটা বন্ধ করে দেয় মুবিন। তারপর আবার চোখ বন্ধ করে নেয় আরেকটু ঘুমিয়ে নেবে সেই প্রচেষ্টায়। চোখের পাতায় ঘুম আবার নাচানাচি করা শুরু করেছে ঠিক তখনই মুবিনের মনে পড়ে আজ তো শুক্রবার। আজ তো তার জাদুকন্যার লাইভ শো আছে। মুবিন ঝটপট উঠে ফোনটা মিউজিক সিস্টেমের সাথে কানেক্ট করে এফএম চালিয়ে দেয়। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা অবধি মুবিনের কেটে যায় তার জাদুকন্যার শো শুনতে শুনতে। মুবিন দীর্ঘ প্রায় ছয়মাস যাবৎ এই আরজে’র প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। একদম হাবু খেয়ে ডুবে যায় যায় অবস্থা। মুবিন একদমই আগে এই এফএম-টেফএম শুনতো না বা এসব শোনার অভ্যাসও ছিলো না তার। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে মুবিন তার গাড়ির রেডিওটা ছেড়েছিলো, তখন শুক্রবারের সাড়েদশটা মতো বাজে। ব্যাস সেদিন থেকেই শুরু হয় মুবিনের এই অদেখা,অজানা,অদৃশ্য প্রেম। শাওন-সীমান্ত বহুবার বলেছে মুবিনকে, ” তোর যখন মেয়েটাকে এতো পছন্দ। চল না, রেডিও স্টেষন। মেয়েটাকে দেখেও আসবি, আর মেয়েটার কন্টাক্ট নাম্বার বা ফেসবুক আইডিও নাহয় নিয়ে আসবি। এভাবে পছন্দ করে রেখে দিয়ে কী লাভটা পাবি? যদি মন খুলে সেটা সামনে গিয়ে বলতেই না পারিস? ”
কিন্তু মুবিনের প্রত্যেকবার একই কথা, ” প্রেমটা আরেকটু গভীর হোক। প্রেমটা এখনও কেমন যেনো পাতলা পাতলা আরেকটু ঘন হতে দে। এতোটা ঘন যাতে ও আমার প্রেম প্রকাশ দেখেই ফিদা হয়ে যায়। আর তাছাড়াও আমি যখন জানি মেয়েটা সিঙ্গেলই আছে। তাহলে এতো তাড়াহুড়ো’র কী প্রয়োজন? ”
এসব শুনে শাওন-সীমান্তও আর জোর করে না। মুবিনকে মুবিনের মতো করে প্রেমবিলাস করতে দেয়।

মুবিন মিউজিক সিস্টেম থেকে ফোন ডিসকানেক্ট করে হেডফোন লাগিয়ে এসে বেলকনিতে বসেছে। আজ নাহয় একটু আকাশ দেখতে দেখতে তার জাদুকন্যার কথা শুনবে, তার হাসির আওয়াজ শুনবে। মুবিনের মাঝে মাঝে বহুসদস্যের একটা তদন্তকমিটি গঠন করতে ইচ্ছা করে এটা জানার জন্য যে একটা মেয়ের হাসির শব্দ এতো সুন্দর হয় কীভাবে? যখনই মেয়েটা খিলখিল করে হাসে মুবিনের বুকটা একদম তোলপাড় করা শুরু করে দেয়। বুকে কেউ এলোপাথাড়ি হাতুড়িপেটা করে এমন মনে হউ মুবিনের। আর মুবিনের ঠোট দুটোও তার অজান্তেই চওড়া হয়ে ক্যাবলা হেসে ফেলে। মেয়েটার প্রত্যেকটা বুলিতে মুগ্ধ হয়ে যায় মুবিন। আর সবচেয়ে মুগ্ধ হয় মেয়েটার সেন্স অফ সং দেখে। মুবিন আগে একদমই বাংলা গান শুনতে পছন্দ করতো না কিন্তু এই মেয়ের শো শোনার পর থেকে কিছু বাংলা গানের প্রতি মুবিনের প্রেম একদম উতলে পড়ে পড়ে অবস্থা। ১১ টা বাজছে প্রায়, আর ৫ মিনিট বাকি আছে। চোখ বন্ধ করে তার জাদুকন্যার কথা শুনছে মুবিন, ” জীবনতো একটাই তাহলে এতো কীসের ভাবনাচিন্তা? এতো কীসের ফর্মালিটিস জীবন নিয়ে? শুধু মন থেকে ভাবুন আপনি কী চান আর মাথা খাটিয়ে সেটা করে ফেলুন। মনের কথা শুনুন, দেখবেন অনেক বেশি ভালো থাকবেন! ”
মেয়েটা কীভাবে পারে এভাবে মুগ্ধ করে দিতে? জাদুটাদু জানে নাকি আসলে? মুবিন এসব ভাবতে ভাবতেই গান শুরু হয়ে যায়। এটা আজকের শেষ গান, এরপর আবার সামনের শুক্রবারে তার জাদুকন্যার কন্ঠ শুনবে মুবিন। তাই চোখ বন্ধ করে ভেতরের সবটুকু দিয়ে গানটা অনুভব করছে মুবিন…!

তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তোমার কথার শব্দ দূষণ
তোমার গলার স্বর
আমার দরজায় খিল দিয়েছি
আমার দারুণ জ্বর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর…..!

১১ টা বাজে। শো শেষ হয়ে গেছে। মুবিন ফোনে খাবার অর্ডার দিয়ে ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেছে। ফ্রেশ হয়ে বের হবার ১০-১৫ মিনিট বাদেই ডেলিভারিবয় এসে খাবার দিয়ে যায়। মুবিন খেয়েদেয়ে গোসল সেরে নেয়, নামাজে যেতে হবে।

নামাজ পড়ে এসে দুপুরের খাবারদাবার খেয়ে মুবিন নিজের ড্রামসেটাপ দিয়ে নতুন বিটে রিদম তোলার চেষ্টা করছে। মুবিন শখের বসেই ড্রাম বাজায়, আর যখনই ড্রাম বাজায়। ড্রামের বিটে আশপাশের সবকিছু নাচতে থাকে। ড্রাম প্র‍্যাকটিস করছে আর ঠোট দিয়ে শিষ বাজাচ্ছে মুবিন। দারুন চাঙ্গা আর টগবগা মেজাজে রয়েছে মুবিন। দুপুর প্রায় আড়াইটা বাজে। শাওন আর সীমান্ত মুবিনের ফ্ল্যাটে এসেছে। দুজনেই সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামায়। মুবিন ওদের এভাবে দেখে ড্রামের বিট ছেড়ে বলে, ” কীরে লুচ্চা পাডারা এই দরবেশের ভং ধরছস ক্যান? ”
শাওন এসে মুবিনের হাত থেকে স্টিক নিয়ে প্রথমে মুবিনের পাছায় বারি মারে। তারপর বেসুরা রিদমে ড্রামে বারি দিতে দিতে বলে, ” আজ শুক্রবার তো, তাই এই স্পেশাল মোল্লা লুক! ”
মুবিন মুচকি হাসে। সীমান্ত এসেই পা চেগিয়ে দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়েছে। সীমান্ত চাচ্ছিলো দুপুরে একটু ঘুমাবে গতরাতে ঘুমাতে পারেনি তার বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু শাওন ঘুমাতে না দিয়ে টেনে মুবিনের কাছে নিয়ে এলো। মুবিন সীমান্তর হাল দেখে শাওনকে জিজ্ঞেস করে, ” কীরে ওই হালার এমন দম যায়যায় অবস্থা ক্যান? ”
শাওন ঠোট কামড়ে এক চোখ বন্ধ করে বেসুরা রিদমে ড্রাম বাজাচ্ছে। একদমই ড্রামে বিট তুলতে পারেনা শাওন। তবুও এই বেসুরা বিটেই যে কী স্বর্গসুখ পায় সে তা একমাত্র সেই জানে। শাওন ড্রাম বাজাতে বাজতেই বলে, ” গতরাতে ঘুম হয় নাই তো তাই ঘুম আসতেছে নাকি! ”
মুবিন হেসে বলে, ” আহারে নান্টুমিয়াটা আমার। ” কথা বলতে বলতেই মুবিন গিয়ে সীমান্তর পেটের উপর ধুপ করে বসে পড়ে। সীমান্ত চোখ বন্ধ করেই শুয়ে ছিলো। মুবিন পেটের উপর বসে পড়ায় ভ্রুকুটিয়ে মুখ থেকে ‘উহহ!’ আওয়াজ বের করে। এর মানে হলো সে ব্যাথা পেয়েছে, এখন শুরু হবে সীমান্তর জ্ঞান দেওয়া। শুরু হয়ে গেলো, ” ওই শালা মাত্র খেয়েই এদিকে আসলাম। পেটে ভাতগুলা ঢুকছে ১০ মিনিটও হবে না তার আগেই তুই পেটের ভাত বের করার জন্য এয়ার এট্যাক ক্যান করতেছস? ”
মুবিন হালকা হেসে বলে, ” তুই ঘুমাচ্ছিস কেনো? রাতে ঘুমাস নাই ক্যান? ”
সীমান্ত মুবিনকে পেটের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসতে বসতে বলে, ” আরে বাল সারারাত আব্বু-আম্মু তাদের বন্ধু-বান্ধুবিদের সাথে আড্ডা দিসে। আর ঘুমাই কীভাবে? ফর্মালিটি মেন্টেইন করার জন্য পুতুলের মতো ওনাদের সামনেই বসে ছিলাম! ”
মুবিন অট্রহেসে বলে, ” এই আকাইম্মা কাহিনির জন্যই আমি বয়সে সিনিয়রদের পার্টি বা অনুষ্ঠানে যাই না। ”

শাওন ড্রাম ছেড়ে এসে বলে, ” এইসব বাদ দে। এখন আইজকা কী করবি ওইটা বল! ”
মুবিন বলে, ” তোরাই ঠিক কর। ”
সীমান্ত ঝটপট বলে, ” চল সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখি। বহুদিন হয় মুভি দেখা হয় না! ”
মুবিন আর শাওন সীমান্তর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। কারন এর থেকে বেটার কোনো প্ল্যান আপাতত নেই তাদের কাছে।

শপিংমলে সিনেপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাওন আর মুবিন। সীমান্ত পপকর্ন আর কোলড্রিংক্স আনতে গেছে। আজ সিনেপ্লেক্সে একটু বেশিই ভীড় লেগে আছে। অবশ্য ভীড় লাগারই কথা কারন স্ক্রিনে এখন ‘জুমাঞ্জি দ্যা নেক্সট লেভেল’ চলছে। মুবিন আর শাওন লিফটের পাশের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে। হঠাৎ মুবিন খেয়াল করলো ভার্সিটির সেই মেয়েটা। মুবিনের খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে একটু ক্ষ্যাপানোর। কিন্তু মেয়েটা তো হেটে চলে যাচ্ছে!, থামাতে হবে। থামানোর জন্য ডাকতো দিতে হবে। মেয়েটার নাম কী? মেয়েটার নামটাই জানে না মুবিন। কী বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। মুবিন সাতপাঁচ না ভেবেই জোরে হাক মারে, ” এই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড! ”
মিছিল দাঁড়িয়ে যায়। কারন এই গলাটা তার চেনা। কিন্তু এটা কী ধরনের অশ্লিল আর কুরুচিপূর্ণ নাম ধরে ডাকা হচ্ছে তাকে? মিছিল ঘুরে মুবিনকে দেখতে পায়। দেখেই গায়ের রক্ত এসিডে পরিনত হয় মিছিলের। এই ম্যানারলেসটা এছাড়া আর কি বলেই বা ডাকবে। পাভার্ট কোথাকার!, কোনোপ্রকার উত্তর বা জবাব না দিয়েই মিছিল সামনের দিকে হাটা ধরে। মিছিলের সাথে এখন মিছিলের কাজিন সিস্টার না থাকলে মুবিনের দাতগুলো হাতে ধরিয়ে দিতো মিছিল। মিছিল দুই পা সমান দুরত্ব সামনে এগোতেই মুবিনের আবার সেই গলাছাড়া অপ্রীতিকর নামে ডাক, ” ওইই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। এদিকে আসো! ”
মিছিল মুবিনের চেয়ে বেশি দূরে দাঁড়ানো না। সেজন্য আশেপাশের জনগন অনায়াসেই বুঝে যায় মুবিন এই নামটা ধরে ঠিক কাকে ডাকছে। আশপাশের মানুষ সবাই এলিয়েন দেখার মতো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে। প্রত্যেকটা পুরুষ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে। একটা মাঝবয়সি ছেলেতো তার পাশে থাকা ছেলেটাকে বলেই উঠলো, ” মামা এই মালের রেট কতো রে? কী মাল রে মাম্মা! ”
মিছিলের আর সহ্য হয় না। কী ধরনের একটা মারাত্মক অসম্মানের ব্যাপার হয়ে গেলো না ব্যাপারটা? মিছিল সোজা রেগে আগুন হয়ে গিয়ে মুবিনের পাঞ্জাবির কলার ধরে চেচিয়ে বলে, ” এই জানোয়ারের বাচ্চা! কবে আমি তোর বাপের সাথে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডে ছিলাম রে? ” অন্য কোনো ছেলে নিজের বাবার স্বমন্ধে এই কথাটা শুনলে হয়তো মারাত্মক রেগে যেতো। কিন্তু মুবিন হেসে ফেলে। হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে, ” আমার বাবা কী আবার বিয়ে করলো নাকি? এই লোকটার কী বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? ” মিছিলের রাগ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। একেতো পাব্লিকপ্লেসে এরকম একটা নামে ডেকেছে, তারউপরে আবার এই ড্যামকেয়ার এটিটিউড দেখাচ্ছে তাকে। আশপাশের সবাই ঝটলা বেধে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মুবিন আর মিছিলের দিকে। মুবিন ব্যাপারটা খেয়াল করে। মুবিন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আরে আশ্চর্য আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে এভাবে কী দেখছেন? ও গার্লফ্রেন্ড হয় আমার। রেগে আছে তাই একটু রাগ ঝাড়ছে। এভাবে তাকিয়ে থেকে প্লিয আমাদের এম্বারেসড করবেন না! ” মুহুর্তেই ঝটলাটা ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যায়। মিছিল অবাক হবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সে কিনা গার্লফ্রেন্ড তাও আবার এই অমানুষ পাভার্টের? মিছিল মুবিনের কলারটা আরো জোরে চেপে ধরে বলে, ” এই জানোয়ারের বাচ্চা আমি তোর গার্লফ্রেন্ড হলাম কবে রে? ” মিছিল পারছে না মুবিনের পাঞ্জাবিটা টেনে ছিড়েই ফেলতে। পাঞ্জাবিটা টেনে ছিড়ে ফেললেই বোধহয় তার রাগ খানিকটা নামতো। শাওন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে, আর ইঞ্জয় করছে সীনটা। সীমান্ত পপকর্ন আর কোল্ডড্রিংক্স নিয়ে এসেছে। মিছিল এখনও দাত খিটে মুবিনের কলার চেপে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে-মুখে তার জ্বলন্ত আগুনের শিখা। মুবিন একটা ঠান্ডা কোল্ডড্রিংক্স এর ক্যান হাতে নিয়ে মিছিলের গালে লাগায়। মিছিল মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মুবিন মিছিলের হাতটা কালারের থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে, ” দেখো আমি তোমার নামই জানি না। কিন্তু তোমায় দেখে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো তাই এই নামটা ছাড়া আর কোনো ওয়ে পেলাম না ডাক দেবার! ”
– ” এটা নামের কাতারে পড়ে? তুই এই ওয়ার্ডটার মিনিং জানিস না? ওয়ার্ডটা কতটা চীপ জানিস না? আর দাড়া তোর আমার সাথে কথা বলতেই বা ইচ্ছে করবে কোন দুঃখে? ”
– ” দুঃখ কেনো হতে যাবে? সুখের জন্যই তো কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। ” বলেই মুবিন মিছিলকে চোখ টিপি মারে।
মিছিল একবার নিজের কাজিনের দিকে তাকায়। মেয়েটা অবাকদৃষ্টিতে ওদের হাঙ্গামা দেখছে। মিছিল মুবিনের সামনে আঙুল নাচিয়ে বলে, ” দেখ পাশে আমার কাজিন দাঁড়ানো। ওর সামনে যদি তুই গতকালের মতো তোর ওই নোংরা প্রস্তাবটা দিস না তোকে এখানেই খুন করে ফেলবো! ” মিছিলের কাজিনের বয়স এই ৭-৮ হবে। ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড ইংরেজি শব্দটার প্রকৃত অর্থ জানে না মেয়েটা। তাই হয়তো এভাবে অবাকদৃষ্টিতে ওদের দেখছে, নয়তো সেও হয়তো তার বোনের মতো এসে কলার চেপে ধরতো মুবিনের। মুবিন বুঝতে পারে ব্যাপারটা আসলেই মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। কারন মিছিলের রাগটা আসলেই মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। তা মিছিলকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মিছিল পারছে না মুবিনকে এখন খুন করে ফেলে একদম এমন একটা অবস্থা মিছিলের। মুবিন মিছিলকে বলে, ” দেখো তুমি ভার্সিটিতে আসার পরে অমনভাবে শান্ত থাকতে, চুপচাপ থাকতে, এমনকি মেয়েদের সাথেও কম আড্ডা দিতে সেটা দেখেই শাওন-সীমান্ত আর আমাদের ক্যাম্পাসের কিছু বান্ধবি আমায় এটা ডেয়ার দেয় যে তোমায় ওভাবে ডাবলমিনিং ভাবে অফার করবো আমি। আচ্ছা তুমি মনে করে দেখো তো আমি কী তোমায় কখনও সেক্স করার জন্য বলেছি? শুধু নাইট স্পেন্ট করার জন্যই তো বলেছি নাকি? আর সেটাও ডেয়ার কম্পলিট করার জন্য। আর তাছাড়া তুমি যদি বাই এনি চান্স কনভেন্সড হয়ে যেতে বা আমার ফ্ল্যার্টিং এ সায় দিতে তাহলে আমি ওদের থেকে পনেরো হাজার টাকা পেতাম। আর ট্রাস্ট মী আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমায় এভাবে বিরক্ত করার। আমিতো শুধু ওদের দেওয়া ডেয়ারটা কম্পলিট করছিলাম ব্যাস শেষ! ”
মিছিল এবার একটু স্বাভাবিক হয়। মিছিল শাওন আর সীমান্তকে বলে, ” এমন উইয়ার্ড ডেয়ার দেয় নাকি কেউ? যেখানে অন্য কেউ পার্সোনালি ডিস্টার্ব’ড ফীল করে! ”
শাওন বলে, ” আমরা এমনিই মজা করে দিয়েছিলাম। তবে আর এরকম করবো না শিক্ষা হয়ে গেছে! ” বলেই একটু হাসে শাওন। সাথে সীমান্ত আর মুবিনও হাসে। মিছিল কিছু না বলেই হেটে চলে যাওয়া ধরে। মুবিন পিছন থেকে ডেকে বলে, ” ওই তোমার নাম’ই তো বললে না। এরপরেও কী ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড বলেই ডাকবো? ”
মিছিল পিছন ফিরে বিরক্তি নিয়ে বলে, ” ইউ ক্যান কল মী মিছিল। আমার নাম মিছিল! ”
মুবিন চওড়া হেসে বলে, ” আচ্ছা মিছিল, কাল ক্যাম্পাসে দেখা হচ্ছে তাহলে। ”
মিছিল কিছু না বলেই হাটা ধরে। হঠাৎ মুবিন পিছন থেকে গিয়ে খপ করে মিছিলের হাত টেনে ধরে। মিছিলের পরানপাখিটাই উড়ে যাওয়া ধরছিলো মুবিনের এই আকস্মিক হাত ধরায়। মিছিল চরম অবাক হয়েছে মুবিনের এই আচরনে। প্রচুর রেগেও গেছে। মিছিল রাগ ঝেড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুবিন বলে, ” বাই এনি চান্স তুমি আমায় ট্র‍্যাপে ফেলে পটাতে চাচ্ছো না তো? ”
মিছিলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মুবিনের কথা। মিছিল বিরক্তিভরা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে, ” মাথায় ছিট আছে নাকি তোমার? আমি পটাতে যাবো? তাও আবার তোমায়? ”
মুবিন এখনও মিছিলের হাত চেপে ধরে রেখেছে। মুবিন মিছিলের হাত চেপে ধরেই বলে, ” তাহলে তোমার নাম মিছিল বললে কেনো? ”
মিছিল এসেছিলো ফিল্ম দেখে একটু রিফ্রেশ হবে। আর এদিকে আসার পর রিফ্রেশমেন্ট তো দূরের কথা একের পর এক হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ছে সে। মিছিল চরম বিরক্ত হয়ে বলে, ” আরে আজিব তো। আমার নাম মিছিল তাই মিছিল বলেছি। ”
মুবিন মিছিলকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ওর কাজিনকে জিজ্ঞেস করে, ” ভাইয়া তোমার আপুর নাম কী মিছিল? ”
মিছিলের কাজিন মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মুবিন সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকে জিজ্ঞেস করে, ” তুমি কী প্রতি শুক্রবার এফএমে একটা শো হোস্ট করো? তুমি আরজে মিছিল? ”
– ” হুম। তুমি জানো কীভাবে? আমার শো শোনো নাকি? ”
– ” আরে শো শুনি মানে। আমি তোমার আওয়াজের, তোমার, প্রেমে পড়ে আছি। তুমি আসলেই আরজে মিছিল তো? ”
মিছিল চোখ ছোট করে ভ্রু কুচকে তাকায় মুবিনের দিকে। তারপর হ্যান্ডব্যাগ থেকে রেডিও স্টেষনের আইডি কার্ডটা মুবিনের সামনে ধরে বলে, ” এবার বিশ্বাস হইসে তো যে আমি আরজে মিছিল? ”
মুবিন যেনো চোখের সামনে আসলেই কোনো জাদুকন্যাকে দেখছে। যত সুন্দর এই মেয়ের কন্ঠ তার চেয়েও কোটিগুন সুন্দর এই মেয়ে। মুবিন এখনও মিছিলের হাতটা চেপে ধরে আছে। মুবিন বারবার মিছিলকে পা থেকে মাথা অবধি খুটে খুটে দেখছে। চোখে তার অন্যরকম এক প্রাপ্তির ছাপ, মুখে স্পষ্ট তার মিছিলের প্রতি মুগ্ধতা। মিছিল মুবিনকে বলে, ” এবার তো চিনেছো যে আমি আরজে মিছিল। এখন আমার হাতটা ছাড়ো মুভি দেখতে ঢুকবো! ”
মুবিন ফ্যালফ্যালিয়ে মুখে একটা ক্যাবলা হাসি রেখে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো মিছিলকে। এক অজানা ঘোর ঘিরে ধরেছিলো তাকে। মিছিলের কথায় ঘিরে ধরা ঘোরগুলো দৌড়ে পালিয়েছে। মুবিন ক্যাবলা হেসে আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে বলে, ” আরে মুভি তো এখন আমরা বানাবো। আই লাভ ইউ! ”
মিছিল হা করে তাকিয়ে আছে। কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে এই ছেলে? সোজা আই লাভ ইউ মেরে দিলো? তার আগে ইম্প্রেস করার জন্য কোনো ক্যাচি ডায়লগ বা ক্রাশ হিস্ট্রিও বলবে না?
মিছিলের কাজিনটা আই লাভ ইউ’র অর্থ জানে। সে অনেক বাংলা ছবিতে দেখেছে নায়ক নায়িকাকে আই লাভ ইউ বলে আর নায়িকা লজ্বা পেয়ে হাসে। তারপরেই হয় নায়ক দৌড় মারে নাহয় নায়িকা দৌড় মারে তারপরই শুরু হয়ে যায় নায়ক নায়িকার নাচাগানা। তাই সে আই লাভ ইউ কথাটা শুনে মুখ চেপে ফিক করে হেসে দেয়। মুবিন পিচ্চিটাকে হাসতে দেখে বলে, ” এই পিচ্চি তুমি হাসতেছো কেনো? আচ্ছা তোমার আপুর সাথে তোমায়ও আই লাভ ইউ! ” কথাটা শুনতেই পিচ্চিটা হাসি থামিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মুবিনের দিকে। তারপর কি না কি ভেবে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। মুবিন, শাওন, সীমান্ত একসাথে হো হো শব্দ করে হেসে ওঠে। আর হাসির কী শব্দ!, একদম আকাশ বাতাস কাপানো শব্দ। মিছিলেরও ইচ্ছে করছে এই ঘটনার মজা লুটে নেওয়ার জন্য একটু শব্দ করে হাসতে। কিন্তু সে হাসতে পারবে না, তাহলেই এই বজ্জাত ছ্যামড়া আস্কারা পেয়ে যাবে। আর তার মোটেই পছন্দ না এই ছেলেকে। প্রেম তো দূরের কথা সে এই ছেলের সাথে আলগা ফ্রেন্ডশীপও করতে চায় না। তাই মিছিল এক ঝটকায় নিজের হাত মুবিনের থেকে ছাড়িয়ে বলে, ” ওয়েল ট্রাই। বাট আমি পটছি না। তোমার মতো হাজারটা ছেলে দৈনিক আমায় আই লাভ ইউ বলে। ঐ হাজারটার মধ্যে যেকোনো একটাকে চোখ বন্ধ করে হ্যা বলে দেওয়া যাবে কিন্তু তোমায় চোখ খুলেও হ্যা বলা যাবে না। সো কীপ ডিস্টেন্স ফ্রম মী! ”
– ” চোখ খুলেও হ্যা বলা যাচ্ছে না কেনো? তুমি জানো পুরো ভার্সিটির মেয়েরা মরে যায় আমার সাথে প্রেম করার জন্য! ”
– ” হু জানিতো। এজন্যইতো চোখ খুলেও হ্যা বলা যায় না। বিকজ এ প্লেবয় অলওয়েজ বী এ প্লেবয়, সো প্লিজ আমায় আর ডিস্টার্ব করবা না নেক্সট টাইম। আমার সাফ সাফ উত্তর না, না মানে একদম না! ” বলেই মিছিল হেটে চলে যায়।
মুবিন একটা চওড়া হাসি দিয়ে চেচিয়ে বলে, ” আরে না মানে হ্যা তো আমি করবো। এখন আগে পাশাপাশি বসে ফিল্ম দেখে নেই। সুন রাহা হ্যায় না তু আ রাহা হু ম্যায়! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “