Wednesday, July 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1955



ক্যালেন্ডার! পর্ব: ২১!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ২১!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মুবিন লাগাতার ফোন করেও যখন মিছিলের নাম্বার বন্ধ পায় তখন মুবিন মিছিলের বাবার নাম্বারে ফোন করে। মিছিলের বাবার নাম্বারটাও বন্ধ পায় মুবিন। মুবিন শাওনকে ফোন করে হাসপাতালের এড্রেস দিয়ে বলে খোজ নিয়ে মুবিনকে জানাতে। শাওন জানায়, ওখানে মিছিলকে পায়নি সে। এভাবে ৪ দিন কানাডায় অস্থির মাথা খারাপ অবস্থায় কাটিয়ে দেয় মুবিন। কারন শরীরের জ্বর ছাড়ছিলোই না। জ্বর খানিক ছাড়তেই মুবিন দেশে ফিরে আসে। এয়ারপোর্টে নেমেই সোজা আহাদ শেখ এর অফিসে চলে যায় মুবিন। মুবিনকে হঠাৎ করেই নিজের কেবিনে দেখে চমকে যায় আহাদ শেখ। চেহারায় তার অবাক হয়ে যাওয়ার ছাপ স্পষ্ট। আহাদ শেখ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ” তুই সাডেন দেশে ফিরলি? ”
মুবিন আহাদ শেখের প্রশ্নের পিঠে জবাব না দিয়ে বলে, ” আমার গাড়ির চাবিটা দিন! ”
– ” হ্য দিচ্ছি। তোকে অস্থির লাগছে কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে? সাডেন দেশে ফিরলি কিছু জানালি না তো! ”
– ” প্লিয গাড়ির চাবিটা দিন তো আমার কাজ আছে। ”
আহাদ শেখ আর কথা না বাড়িয়ে ম্যানেজারকে ফোন করে মুবিনের গাড়ির চাবিটা নিয়ে আসতে বলে। এর মধ্যেই আহাদ শেখের সেক্রেটারি আহাদ শেখের রুমে ঢুকে। সেক্রেটারি রুমে ঢুকতেই মুবিন জিজ্ঞেস করে, ” আপনাকে মিছিল কোনো কারনে ফোন-টোন করেছিলো? ”
– ” না তো। কিন্তু স্যার আপনি কখন ফিরলেন? আমায় তো টিকেট বুক করতে বলেননি! ”
মুবিন সেক্রেটারিকে জবাব না দিয়ে চেয়ার টেনে বসে দুশ্চিন্তার শ্বাস ফেলে। আহাদ শেখ মুবিনকে অস্থির দেখে জিজ্ঞেস করে, ” মিছিলের সাথে ঝগড়া হয়েছে তোর? শুনলাম মিছিল ৩-৪ দিন আগেই দেশে ফিরলো। ওর তো বাবা অসুস্থ ছিলো নাকি…”
আহাদ শেখ পুরো কথা শেষ করার আগেই ম্যানেজার এসে কেবিনের দড়জায় টোকা লাগায়। মুবিন উঠে গিয়ে ম্যানেজারের হাত থেকে চাবিটা ছো মেরে নিয়ে বেড়িয়ে। ম্যানেজার বেচারার সালাম অর্ধেক মুখেই আটকে থাকে। ছেলের এই ব্যাবহারে খানিক দুঃখ পেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আহাদ শেখ।

মুবিন আহাদ শেখের অফিস থেকে বেড়িয়ে গাড়ি ছুটিয়ে সোজা চলে আসে হসপিটালে। হসপিটালে এসে যা জানতে পারে তা জেনে মুবিনের হৃদস্পন্দনই থমকে যায়। মুবিন হসপিটালে এসে জানতে পারে, ” যেদিন মিছিল দেশে ফিরেছে তার পরের দিনই মিছিলের বাবা মারা গেছে। ”

মিছিলের বাবা মারা গেছেন কথাটা শুনে মুবিন যতটা না হতবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি আশ্চর্য হয়েছে এটা ভেবে যে মিছিলের বাবা মারা গেছে এই অথচ এই কথাটা মিছিল তাকে বলেনি। তাহলে কী মিছিলও অসুস্থ হয়ে পড়লো? মুবিন মিছিলের বাবার প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে মিছিলের সমন্ধ্যে জানতে চাইলে ডাক্তার জানায় সে মিছিলকে তার বাবার লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাবার সময়ই শেষ দেখেছে। মুবিন দেরী না করে সোজা মিছিলদের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। সেখানে গিয়ে যেনো মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গতিই থেমে যায় মুবিনের। ফ্ল্যাট টা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যার কাছে বিক্রি করেছে তার কাছে মুবিন বিক্রেতার নাম জানতে চাইলে সে জানায় ফ্ল্যাটের দলিল সই করিয়ে কোনো ব্রোকার দিয়ে গেছে। আর ফ্ল্যাটের টাকা সে কোনো ব্যাংক একাউন্টে অনলাইন ট্রানজেকশন করিয়ে দিয়েছে। এমন অদ্ভুত আর অবাক করা হাউজ ডিলিং এর কথা শুনে মুবিন ফ্ল্যাটের প্রেজেন্ট অউনার কে জিজ্ঞেস করে, ” আপনি এভাবে কীভাবে ফ্ল্যাট কিনে ফেললেন? আপনার কোনো ডাউট হয়নি? ”
ওপাশে সোফায় বসে বিজ্ঞ ভঙ্গিতে পায়ের ওপর পা তুলে ব্যাক্তিটি বলে, ” ডাউট তো একটু হয়েছিলো। কিন্তু আমি বর্তমান বাজারের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম দামে কিনেছি ফ্ল্যাটটা তাই আর ডাউট-ফাউট কেয়ার করিনি! ”
– ” আপনার ফ্ল্যাটের দলিলটা দেখান। ”
ফ্ল্যাটের দলিল দেখে বেশ অবাক হয় মুবিন। প্রায় ২-৩ মিনিট খুটিয়ে খুটিয়ে সাইনটা দেখতে থাকে মুবিন। দলিলের সাইনটা মিছিলেরই। কিন্তু মিছিল হঠাৎ ফ্ল্যাট বিক্রি করতে গেলো কেনো?

এর উত্তর সামনে থাকা ব্যাক্তির কাছে প্রশ্ন করেও পায়না মুবিন। মুবিন ওই হাউজ ব্রোকারকে ফ্ল্যাটের প্রেজেন্ট ওনার দিয়ে ফ্ল্যাটে ডাকায়। হাউজ ব্রোকার জানায় যে মিছিল কে ও জানে না। সমস্ত কথাবার্তা ওর ফোনেই হয়েছে আর ওর সাথে কথা কোনো ছেলে বলেছে তবে ও সেই ছেলের নাম জানে না। এমনকি ও ওর পুরো কমিশনও অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেয়েছে।

মিছিল ফ্ল্যাট বিক্রি করলো? তাও এমন একটা পরিস্থিতিতে? আর সেই ফ্ল্যাটের ডিল হলো এমন অদ্ভুদ উপায়ে তাও কিনা ডিলিং করলো একটা ছেলে? মুবিন ব্রোকারের কাছ থেকে ঐ ছেলের নাম্বারটা নিয়ে বেরিয়ে সোজা মিছিলের নানুর বাসায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে কয়েকশত প্রশ্নের উত্তরের খোজে দিশেহারা হয়ে যায় মুবিন।

মিছিলের নানু বলে, মিছিলকে মিছিলের বাবার জানাজা নামাজের পর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে না। একদমই উধাও হয়ে গেছে মিছিল।
মুবিন মিছিলের নানুর কাছে জানতে চায় সে ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যাপারে কিছু জানে নাকি। মিছিলের নানু বলে, শুধু ফ্ল্যাট না মিছিলের নামে যেসব প্রোপার্টি ছিলো সবই কমদামে বিক্রি হয়ে গেছে। পুলিশ কমিশনারকে সাথে নিয়ে সে সব প্রোপার্টির ডিলিং এর্টনি পেপার দেখেছে। প্রত্যেকটা পেপারে মিছিলের সাইনই ছিলো।
মিছিলের নানুর কথা শুনে মুহুর্তেই যেনো মুবিনের শরীর পুরো অবশ হয়ে যায়। মাত্র দুদিনের মাথায় এতসব কিছু? কোথায় মিছিল? মিছিল নিজের বাবার মৃত্যুশোক পালন করেছে নাকি প্রোপার্টি ডিলিং করেছে? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা মুবিনের। মুবিন মিছিলের নানুর বাসায় থাকতেই শাওনকে ফোন করে বলে, ” একটা নাম্বার পাঠাচ্ছি এটার এক্সট্রিমড ক্রসড ডিটেইল পাঠা আমায় আর্লি। ”

তখন প্রায় রাত ১০ টা বাজে। শাওন অফিস থেকে ফিরে খাচ্ছে আর মুভি দেখছে। শাওন-সীমান্ত দুজনেই নিজের বাবার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেখাশোনা করছে এখন। অথচ পেশায় দুজনেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। শাওন মুবিনের কথা গায়ে না মেখে বলে, ” আমি এখন মাত্র অফিস থেকে এসেছি প্রচুর টায়ার্ড আমি। তুই করছিস না কেনো? ”
– ” প্রচুর কাজ আছে তুই খেতে খেতে সীমান্তকে নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে আয় আমি পৌছাচ্ছি ! ”
– ” ফ্ল্যাটে আয় মানে? তুই দেশে কখন ফিরলি? বিয়ে করছিস নাকি মিছিলের সঙ্গে? এই আচ্ছা মিছিলকে তো ওইদিন হাসপাতালে পাইনি ওর বাবা ঠিক আছে তো এখন? ”
– ” অনেক কথা আছে তুই মুড সিরিয়াস করে ফ্ল্যাটে যা। আমি আসছি! ”
বলেই ফোন রেখে মুবিন মিছিলের নানুকে জিজ্ঞেস করে, ” মিছিলের মিসিং কেস ফাইল করেছেন? ”
মিছিলের নানু বলে, ” হ্যা। কমিশনার বলছে কোনো ক্লু’ই নাকি পাচ্ছে না মিছিলকে ট্র‍্যাক করার। ”

মুবিন আর কিছু না বলে গাড়ি টেনে ফ্ল্যাটে এসে পড়ে। ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখে শাওন-সীমান্ত দুজনেই হতভম্ব হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মুবিন কারন জানতে চাইলে শাওন বলে, ” ভাই তুই খালি সিরিয়াস হইতে বলছিস আমায়? এই সিমের ডিটেইলস তো আমায় সিরিয়াস হওয়াই ভুলিয়ে দিয়েছে। ”
– ” মানে? ”
– ” এই সিমটা গত ৩ দিন আগে এক্টিভেট করা হয়েছে। আর যার ডিটেইলস দিয়ে এই সিম কেনা হয়েছে সে ৮ বছর আগে মারা গেছে। ”
– ” সিম কোম্পানির ডাটাবেজ হ্যাক করে ফিঙ্গারপ্রিন্টটা নে ওইটা ন্যাশনাল ডাটাবেজ এর সাথে ম্যাচ করবো। ”
– ” অলরেডি হ্যাক করে ফেলেছি কিন্তু ওই সিমের অউনার এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই ডাটাবেজে। ”

তারপর মুবিন হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুরু করে, হাসপাতালের ট্রানজেকশন ডাটাবেজ, ব্যাংকের ট্রানজেকশন ডাটাবেজ সব হ্যাক করে ক্লু খুজেছে কিন্তু কিচ্ছু খুজে পায়নি। হসপিটালের স্পেসিফিক কিছু কিছু টাইমের সিসিটিভি ফুটেজ কারাপ্টেড। আর এমনভাবে কারাপ্টেড যে হাসপাতালের স্টোরেজ আর্কাইভ থেকেও তা রিকোভার করা যায়নি। প্রোপার্টি ডিলিংয়ের টাকা যে ব্যাংক একাউন্টে ঢুকেছিলো সেটা এমন একজনের যে প্রায় আড়াইবছর আগে মারা গেছে। আর তার একাউন্ট প্রায় বন্ধই। সে একাউন্ট থেকে টাকা প্রায় ৮০ টা ভিন্ন ভিন্ন একাউন্টে ছোট ছোট এমাউন্টে ভাগ করে তারপর উইথড্র করা হয়েছে। মিছিল দেশের বাইরে কোথাও গিয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য মুবিন ইমিগ্রেশন ডাটাবেজও হ্যাক করে ফেলে কিন্তু ডাটাবেজ অনুযায়ী জানতে পারে যে মিছিল লাস্ট কানাডা থেকে বাংলাদেশেই ফ্লাই করেছে।

সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে অবশেষে মুবিন নিজের মা আলেয়া শিকদারের ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে মিছিলের মিসিং নিউজ টেলিকাষ্ট করায়। কিন্তু তাতেও কোনো খোজ পাওয়া যায় না মিছিলের।

আজ প্রায় ১২ দিন যাবৎ মিছিল উধাও। কেউ কিডন্যাপ করেছে নাকি সোজা মেরে দিয়েছে তা জানে না মুবিন। কোনী সুত্রই খুজে পায়নি এই অবধি। সবটা আবারো ভাবতেই মিছিল নিজের কাছে নেই এটা তীব্রভাবে অনুভব করে মুবিন। মিছিলকে হারানোর আর মিছিলকে খুজে না পাবার ক্ষোভে আবারো নিজের মাথাটাকে বাথটাবের পানিতে ঢুকিয়ে চুবিয়ে ধরে মুবিন।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ২০!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ২০!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাত প্রায় দেড়টা। শহরের সবচেয়ে নিরিবিলি রাস্তাটা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরছে মুবিন। গাড়ির ভেতরে গিয়ারবক্সের ঠিক পাশেই একটা উইস্কি-র বোতল রাখা যেটায় খানিক বাদে বাদে চুমুক দিচ্ছে মুবিন। বাম হাত দিয়ে স্টিয়ারিং সামলাচ্ছে আর ডান হাত দিয়ে সিগারেট ফুকছে মুবিন। প্রায় ১৫-২০ মিনিট যাবৎ ধরে চলছে এই প্রক্রিয়া। সোডা আর পানি ছাড়া খালি উইস্কি পান করায় বেশ কড়া নেশায় ধরেছে মুবিনের। স্টিয়ারিং টা বেসামাল হচ্ছে ধীরে ধীরে!

স্টিয়ারিং পুরোপুরি বেসামাল হবার আগেই মুবিন নিজের এপার্টমেন্ট এর নিচে এসে পৌছায়। লিফট বেয়ে নিজের ফ্লোরে উঠতে উঠতে আরেকটা সিগারেটের বংশ নির্মুল করে দেয় মুবিন। একটু উইস্কিও চাচ্ছিলো গলাটা, কিন্তু দিতে পারেনি মুবিন। কারন উইস্কির বোতলটা ভুলক্রমে গাড়িতেই ফেলে এসেছে সে।

রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই প্রায় চোখ ঝলসে যায় যায় অবস্থা মুবিনের। মুবিনের চোখ স্বাভাবিক হতেই গায়ে থাকা ঘামে ভিজে যাওয়া শার্টটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে মুবিন। ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে, মুখ উচিয়ে চেহারায় খালি করে দেয় পুরো এক বোতল ঠান্ডা পানি। তারপর ফ্রিজ থেকে একটা লেবু নিয়ে দাত দিয়েই ছিলে ফেলে লেবুটা। দাত দিয়ে লেবু ছিলে ফেলার ফলে লেবুর ছোলার তিক্তস্বাদে ভরে ওঠে মুবিনের মুখ। মুখের তিক্তস্বাদ এবং মস্তিষ্কের অনিয়ম লাইভাব কাটানোর জন্য মুবিন পুরো লেবুটাকে মুখে পুড়ে চেপে ধরে। লেবুর প্রবল টক রসে পুরো শরীর শিরশির করে ওঠে মুবিনের। টক সহ্য করতে না পেরে লেবুটা মুখ থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ফ্রিজের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে মুবিন। পেছনে কোমড়ে থাকা রিভলভারটা ফ্লোরে রেখে কিছুক্ষন চুপচাপ হাটুতে হাত রেখে ঝিম ধরে বসে থাকে মুবিন। তারপর বসা থেকে উঠে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায় মুবিন। বাথরুমে ঢুকে সোজা বাথটাবের পানিতে পুরো মুখটা ঢুকিয়ে দেয় মুবিন। মাথাটা এখন বেশ ঠান্ডা লাগছে। শ্বাসগুচ্ছ দলাপাকিয়ে ফুসফুসে আটকে আছে,শ্বাসগুচ্ছ ফুসফুস থেকে মুক্তি পাবার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছে মুবিনের কাছে। কিন্তু মুবিন সে আবেদনকে সম্পুর্ন নজরান্দাজ করে নিজের মুখটাকে বাথটাবেই ঢুকিয়ে রেখেছে। দীর্ঘক্ষণ শ্বাস আটকে বাথটাবে মুখ ঢুকিয়ে রাখার ফলে মুবিনের মুখের মাথার শিরা-উপশিরা গুলো চরমভাবে মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠেছে। মুখটা রক্তিম লাল হয়ে উঠেছে, দেখে মনে হচ্ছে মুবিনের পুরো শরীরের রক্ত যেনো এসে তার মুখেই ঘাটি গেড়েছে।

বাথটাবের থেকে মাথা উঠিয়ে অশান্তির শ্বাস ছাড়ে মুবিন। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে। পুরো দুনিয়াটাই যেনো অশান্তিতে ভরে গেছে আজ, কোথাও খানিক শান্তির চিহ্ন আছে বলে মনে হচ্ছে না মুবিনের। বসা অবস্থায় মাথার উপরের ঝরনাটা ছেড়ে দিয়ে কাদতে থাকে মুবিন। কান্না ছাড়া অন্য কোনো শান্তিবস্তুর খোজ জানা নেই মুবিনের। যদি এই কান্নাই তাকে একটু শান্তি এনে দিতে পারে এই মুহুর্তে। কাদতে কাদতে সুত্র খুজতে থাকে মুবিন, সুত্রের সন্ধানে পুরো ঘটনাটা আবার সাজিয়ে ভাবতে থাকে মুবিন।

প্রতিদিনের মতো আজও মুবিনের আগেই ঘুম থেকে উঠেছে মিছিল। ঘুম থেকে উঠেই নিয়মমাফিক গোসল সেড়ে নিয়েছে। তারপর নাস্তা বানাতে কিচেনে চলে গেছে। অন্যদিন হলে নাস্তা বানানোর আগে মুবিনকে ডেকে উঠিয়ে নিজের সাথে কিচেনে নিয়ে যেতো মিছিল। কিন্তু মুবিনের জ্বর থাকায় আজ আর মুবিনকে ডাকেনি মিছিল। নাস্তা বানিয়ে যখনই মুবিনকে ডাকতে বেডরুমে যাবে মিছিল তখনই মিছিলের ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিতেই দেখে বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার ফোন করেছে। এই ডাক্তার মুলত মিছিলের বাবার পার্সোনাল ডাক্তার। মিছিলের বাবার বেশ কিছুদিন ধরেই হার্টের গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছিলো। আর সমস্যা এতোটাই গুরুতর হয়ে উঠেছিলো যে হার্ট ট্র‍্যান্সপ্ল্যান্ট অবধি গড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা। মিছিল ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ডাক্তার বলে, ” হ্যালো মিছিল বলছো? তোমার বাবার অবস্থা খুবই গুরুতর। যেকোনো সময় মারা যেতে পারে। তুমি যত শিঘ্রই সম্ভব দেশে চলে আসো! ”
কথাটা শুনতেই মাথা ঘুরে যায় মিছিলের। এখন দেশে যাবে কীভাবে? মুবিনের যে অবস্থা, ও এই অবস্থায় ফ্লাই তো করতে পারবে না। আর মুবিন তো ওকে একা দেশেও যেতে দেবে না। ওদিকে বাবার এই অবস্থা!
মিছিল আর সাতপাঁচ না ভেবে মুবিনকে গিয়ে ঘুম থেকে উঠায়। মুবিন সবটা শুনে মুবিনও মিছিলের সঙ্গে যেতে চায়। মিছিল বলে, ” তুমি তোমার এই হেলথ কন্ডিশনে ফ্লাই করতে পারবা না। এমনিতেই তোমার ফ্লায়িং ফোবিয়া আর হাইট ফোবিয়া আছে! ”
– ” তো কী হয়েছে? তুমি তো আছো! ”
– ” উফ প্লিয মুবিন এই সময়ে অন্তত এরকম সেন্টিমেন্টাল ফুল মার্কা কথাবার্তা বইলো না। আমার দেশে যেতে হবে আর আজকেই যেতে হবে। তুমি আমার জন্য আর্জেন্ট টিকেট বুক করে দাও! ”
– ” তুমি একা যাবা? ওদিকে যদি কোনো সমস্যা হয়? আমিও আসি না। জ্বর ফ্লাইট দেশে ল্যান্ড করতে করতেই সেরে যাবে! ”
মিছিল মুবিন কপালে গলায় হাত দিয়ে জ্বর দেখে বলে, ” প্রচুর জ্বর। প্লিয এইরকম কইরো না, এমনিতেও তোমার জ্বর। নিজের যত্ন তো নিজে নেবে না। এই অবস্থায় তোমায় একা রেখে যেতে আমারও মন চাচ্ছে না। কিন্তু কী করবো বলো বাবার অবস্থা মারাত্মক। প্লিয আর কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট করিও না! ”
মুবিন আর কিছু বলে না। আহাদ শেখ এর সেক্রেটারিকে ফোন দিয়ে কানাডা টু বাংলাদেশ এর একটা এয়ার টিকেট বুক করিয়ে নেয়। মিছিল তাড়াহুড়ো করে শুধু কয়েকটা জামাকাপড় নিয়ে লাগেজ প্যাক করে নেয়। কানাডার সময় অনুযায়ী সকাল ৯ টায় ফ্লাইট পেয়ে যায় মিছিল। তাই আর দেরী না করে বেড়িয়ে পড়ে মিছিল।

সামনেই ইমিগ্রেশন। মিছিলের কাধে মাথা এলিয়ে মিছিলকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুবিন। মুবিনের মন একদমই ছাড়তে চাইছে না মিছিলকে একা। কিন্তু পরিস্থিতির টানাপোড়নে না ছেড়ে উপায়ও নেই। মিছিল মুবিনের মাথা উঠিয়ে মুবিনের গালে, ঠোটে, কপালে চুমু খেয়ে বলে, ” একটু যত্ন নিও নিজের। ঔষধ গুলো নিয়মিত খেলে ৩-৪ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবা। সুস্থ না হলে কিন্তু ফ্লাই করবা না তুমি। পুরো সুস্থ হলে দ্যান আইসো। আর আমি ফ্রি টাইমে ভিডিও কলে কথা বলে নিবো! ”

মুবিন মিছিলের কপালে চুমু খেয়ে বলে, ” ওদিকে কোনো দরকার হলে আমায় অথবা শেখ সাহেবের সেক্রেটারিকে জানিও। আর আমি তাড়াতাড়ি এসে পড়বো ডোন্ট ওয়ারি! ”
মিছিল আরেকবার মুবিনের কপালে একটা গভীর চুমু খেয়ে বলে, ” আসছি, আল্লাহ হাফেজ। টেক কেয়ার! ”

সেদিনই মিছিলকে শেষবারের মতো দেখেছিলো মুবিন। আর দেখেনি মিছিলকে, মিছিলের ছায়ার দেখাও পায়নি আর মুবিন। সেদিন বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে নামার পর শেষবারের মতো ফোনে কথা হয়েছিলো মুবিনের মিছিলের সঙ্গে। মিছিল ফোন করে বলেছিলো, ও এয়ারপোর্টে এসে পৌছেছে। এখন হসপিটালে যাচ্ছে, ওখানে গিয়ে বাবাকে দেখে তারপর ফোন করবে মুবিনকে। কিন্তু মিছিল আর কোনো ফোন করেনি মুবিনকে। মুবিন ফোন দিয়েও মিছিলের নাম্বার বন্ধ পেয়েছে।।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৯!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৯!
লেখক: তানভীর তুহিন!

প্রায় চার বছর পর!

কানাডার আকাশে সুর্য উঠে সকালের সংকেত স্পষ্ট করছে। মিছিল মুবিনের বাহুতে আলতো চিমটি কেটে কেটে মুবিনকে ডাকছে, ” উঠো, ব্রেকফাস্ট বানাও গিয়ে। ”
মুবিনের কোনো সাড়াশব্দ নেই, মুবিন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। মিছিল ঘুম জড়ানো কন্ঠে আবার গোঙায়, ” উহ! উঠো না। ”
এবার মুবিনের কানে মিছিলের ডাক পৌছায়। মুবিন মিছিলের দিকে ফিরে মিছিলকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” এখন উঠতে পারবো না। ঘুম পাচ্ছে! ”
মিছিল বিরক্তি নিয়ে বলে, ” শুধু উইকেন্ডের দুদিনই তো তুমি নাস্তা বানাও। সেই দুদিনও হাজার অযুহাত, ঘুমাও তুমি। আমার তো ঠ্যাকা পড়ছে না, আমিই বানাচ্ছি! ”
বলেই উঠে বসে মিছিল। মুবিনও আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে। মিছিল খাট ছেড়ে নামতে যাবে তখনই মুবিন বলে, ” আমি যাচ্ছি তুমি ঘুমাও! ”

মিছিল ঘুম নিভু নিভু চোখে রাগ নিয়ে তাকায় মুবিনের দিকে। মুবিন চোখ ডলে ঘুম তাড়াতে ব্যাস্ত। মিছিল বলে, ” তোমার প্রত্যেক সপ্তাহের এই একই ঢং তাইনা? সেই তো নাস্তা তুমি বানাতে যাচ্ছো, তাহলে আমার ঘুমে বিরক্তি ক্যান করলা? ” কথা বলতে বলতেই মিছিল মাথা এলিয়ে দেয় বালিশে। মুবিন কিছু না বলে মিছিলের কপালে একটা আলতো চুমু খেয়ে খাট থেকে নেমে পড়ে।

ব্রাশ করে কিচেনে এসে আটা মাখছে মুবিন। মুখে তার চরম বিরক্তি, এখনও ঘুম কাটেনি বরং ঘুম আরো বেশি করে এসে জটলা পাকিয়েছে। আটা মাখছে আর বিরক্তিস্বরে বিড়বিড় করছে মুবিন, ” আরো প্রেম কর বলদ শালা। প্রেম ঠিক ছিলো, এই লিভ ইন রিলেশনশিপটাই যত আকামের কারন। ছুটির দিন কোথায় একটু ঘুমাবো, না এসে ঘরের বাধ্য বউদের মতো আটা মাখছি। থাগ লাইফ, শালার! ”
মিছিলের ঘুম চলে গেছিলো তাই মিছিলও ব্রাশ করে কিচেনে ঢুকছিলো মুবিনকে হেল্প করার জন্য। কিচেনে ঢুকতে ঢুকতেই মুবিনের বিড়বিড়ানো শুনতে পায় মিছিল। কারন মিছিল ঘুমোচ্ছে ভেবে মুবিন একটু জোরে জোরেই আপনমনে বিড়বিড় করছিলো। মিছিল কপট রাগ দেখি শক্ত গলায় পেছন থেকে বলে, ” খুব কষ্ট লেগে গেছে একদম! তাইনা? আর আমি যে সপ্তাহের ৫ দিন ব্রেকফাস্ট বানাই তখন আমার কষ্ট লাগে না? আর আমি তো উঠছিলামই, আলহাদ দেখিয়ে তুমি আসলা ক্যান? আর এসে এখন লিভ ইন এর দোষ দিচ্ছো কেনো? লিভ ইন এর প্ল্যান কার ছিলো? ”

মিছিলের একাধিক প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মুবিন। মুবিন পিছন ফিরে মিছিলের কথা শুনছিলো, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়ায় কোনো উত্তর বা অযুহাত না দিয়েই আটা মাখায় মন লাগায় মুবিন। মুবিনের আচরনে রাগে লাল হয়ে যায় মিছিল, সে ভেবেছিলো মুবিন হয় সফট আর্গুমেন্ট করবে নাহয় এমনি কোনো অযুহাত দেবে। কিন্তু তা কিছু না করে মুবিন ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ায় প্রচন্ড রাগ হয় মিছিলের। মিছিল এগিয়ে গিয়ে আটা মাখার মাঝারি গামলাটা টান মেরে নিজের দিকে এগিয়ে নেয়, তারপর আটায় হাত দিয়ে আটা মাখতে শুরু করে। মুবিন কিছু না বলে ওখানেই দাঁড়িয়ে মিছিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিছিলের কপালের সামনের কোনায় গোটাকতক চুল পড়ে আছে। আর চুল সব হাতখোপা করে বাধা। ওই গোটাকতক পড়ে থাকা চুল আলতো আদ্র বাতাসে দুলছে সাথে মুবিনের মনের ভেতরটাও দুলছে। সম্পর্কের প্রায় পাচবছর পরেও মিছিলের জন্য ঠিক প্রথমকার মতো অনুভুতি হচ্ছে মুবিনের। ব্যাপারটা উপলব্ধি করতেই মুচকি হেসে ফেলে মুবিন। মুবিনকে দাঁড়িয়ে মিছিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে দেখে মিছিল মুবিনকে বলে, ” এখানে দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে সময় নষ্ট না করে গিয়ে ঘুমাও। তোমার না ঘুম নষ্ট হয়েছে! ” বলেই চোখ দুটো আবার আটার গামলায় নিক্ষেপ করে মিছিল। মুবিন কিছু না বলে গিয়ে মিছিলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিছিলের খোলা ঘাড়ে ঠোট ছোয়ায়। তারপর মিছিলের পাতলা টি-শার্ট সরিয়ে মিছিলের পেট খামচে ধরে। মুবিনের আকস্মিক আচরনে মোটেও অবাক হয়ে যায়নি মিছিল, কারন সে জানতো মুবিন এখন এমন কিছুই করবে। মিছিল কোনো প্রতিক্রিয়া না করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে, ” এই ঢং আলহাদ না করে গিয়ে ঘুমাও। ঘুম নষ্ট হলো তো তোমার!, যাও ঘুমাও গিয়ে কাজে দিবে। ”
– ” এখানে এতো সুন্দর বালিশ থাকতে খাটে গিয়ে ঘুমাবো কেনো? এখানেই ঘুমিয়ে যাচ্ছি, খাটের চেয়ে এখানেই বেটার ফিল করবো। ” বলেই মুবিন নিজের মাথাটা বাকিয়ে মিছিলের ঘাড়ে পেতে দেয়। মিছিল কিছু বলে না। কারন মিছিল জানে এখন সে হাজারবার বললেও মুবিন এখান থেকে যাবে না। তাই মিছিল কিছু না বলে আটা মাখাতে মনযোগ দেয়, আর মুবিন ওভাবেই মিছিলের কাধে মাথা পেতে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে থাকে।

খানিকবাদে মিছিল বলে, ” এই তুমি রুটি বেলে দাও আমি ভাজছি! ”
মুবিন মৃদু গোঙানো স্বরে বলে, ” তুমি বেলে ফেলো আমি ভেজে দিবোনে! ”
মিছিল মুবিনের পেটে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বলে, ” এতো আলসে ক্যান তুই? ”
মুবিন কিছু বলে না। মিছিল আবার বলে, ” সারাদিন শুধু এসবই করিস খালি। কোনো কাজে তো হেল্প জীবনেও করবি না, সব কাজ একার আমারই করতে হয়। ”
মুবিন চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই মিছিলের টি-শার্টটা একটু হেচকা টান মেরে বলে, ” এই যে এটা পড়ে আছস? এটাও গত সপ্তাহে আমারে দিয়ে ধোয়াইছিস। তারপরেও আমি তোর কাজে হেল্প করি না? ”
মিছিল আবার মুবিনের পেটে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বলে, ” একসাথে গোসল করতে ঢুকবেন। গোসল করতে ঢুকে তিনঘণ্টা লাগায় আপনি গোসল গোসল খেলবেন তাহলে জামাকাপড় তো আপনারই ধুতে হবে তাইনা? ”
– ” এমনিতেও তুমি আমার উপর বেশি জোরজুলুম করো! ”
– ” সহ্য না হলে নতুন প্রেমিকা খুজে নাও, এমনিতেও প্রেমের পাচ বছর হয়ে গেছে। বিয়ের আগেই বিয়ের পরের সব কাজ করে ফেলছো, এখন আর জোরজুলুম ভালো লাগবে কেনো? অথচ রিলেশনশিপের শুরুর দিকে এই জোরজুলুম’ই তোমার প্রিয় পছন্দের ছিলো! ”
– ” তো এখন অপ্রিয়, অপছন্দের সেটা কখন বললাম? ”
মিছিল ঘাড় ঘুরিয়ে মুবিনের দিকে তাকিয়ে বলে, ” এই মাত্রই না বললা আমি তোমার উপর বেশি জোরজুলুম করি? ”
– ” হু বললাম, কিন্তু এটা কখন বললাম যে তোমার জোরজুলুম আমার কাছে অসহ্যকর? ”
– ” বুঝিয়ে বলা লাগে না। গলার ভয়েস টোন শুনলেই বোঝা যায়! ”
– ” তুমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাকি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার? ”
– ” নিজের বিগড়ে যাওয়া বয়ফ্রেন্ডের ভয়েস টোন যেকোনো সাধারন স্বাভাবিক মেয়েই বুঝতে পারবে। তার জন্য সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় না! ”
– ” রিলেশনশিপে লয়াল থাকাটাকে বিগড়ে যাওয়া বলে? ”
মিছিল কিছু না বলে না। মুবিন আবার জিজ্ঞেস করে, ” এখন চুপ করে আছিস কেনো? বাই এনি চান্স তুই আমায় কোনো মেয়ে-ফেয়ে নিয়ে ডাউট করছিস না তো জানু? ”
– ” ক্যাজুয়ালি বলছি। আর মেয়ে নিয়ে ডাউট? তাও তোরে? কোন মেয়ের মাথা খারাপ হইলো রে ভাই যে তোর সাথে প্রেম করবে? আমার কপাল ফুটো ছিলো যে আমি পটে গেছিলাম! ”
– ” মুড সুইংয়ের বস্তা তো তুমি। এই না গতকাল রাতে যখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলা তখন বললা তোমায় পেয়ে লাকি, এমএসসি’র পরেই বিয়ে করে ফেলবা, আর বিয়ের পরেই বাচ্চা নিয়ে নিবা। আর এখন তোমার কপাল ফুটো? ”
– ” অনেক ঢং করছো, এখন আমায় ছেড়ে খুন্তি ধরো। রুটি ভাজো! ”
– ” তুমি ভাজো না, আমি হেল্প করছি। ”
মিছিল কপাল কুচকে পেছনে তাকিয়ে বলে, ” রুটি ভেজে দিলে আমার হেল্প হবে। রুটি যদি আমিই ভাজি তাহলে তুমি আমায় হেল্প করছো কীভাবে? ”
– ” এই যে সকাল সকাল আদর করছি, এভাবে! ”
– ” এটাকে আদর বলে না। খাস বাংলায় লুইচ্চামি বলে এটাকে! ”
মুবিন সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকে ছেড়ে পাশে থাকা খুন্তিটা হাতে নিয়ে বলে, ” আমি রুটি ভেজেই হেল্প করছি! ”
মিছিল খিলখিলিয়ে হেসে বলে, ” আহালে বাচ্চাটা, আমি মজা করছিলাম। তুই জড়িয়ে ধরে থাক আমি ভাজছি, এতেই হেল্প হবে। ”
মুবিন খুন্তি ছেড়ে বাকা হেসে বলে, ” লুক ইটস কলড ডাবল ক্রসিং! ”
মিছিল ভ্রু কুচকে বলে, ” এখানে কে কী ডাবল ক্রস করলো? ”
– ” এই যেমন আমি তোমায় ইমোশনাল করে দিয়ে কাজ থেকে বেচে গেলাম! ”
– ” আমি ইমোশনাল কখন হলাম? ”
– ” জাস্ট কিডিং, রুটি ভাজো ক্ষুদা লাগছে। ”
– ” আগে ক্লিয়ার করো ইমোশনাল কখন হলাম? ”
– ” যখন বললা তুই জড়িয়ে ধরে থাক আমি ভাজছি, এতেই হেল্প হবে, তখন! ”
– ” এটাকে ইমোশনাল হয়ে যাওয়া বলে নাকি? ”
– ” রুটি ভাজো, তুমি বুঝবানা। ”
– ” আচ্ছা। বাই দ্যা ওয়ে আজকে সব জামাকাপড় তুমি ধুয়ে দিবা। ”
– ” তার মানে আজকেও ৩ ঘন্টার গোসল শো হবে! ” বলেই চওড়া হাসে মুবিন।
– ” হু ঢং, নিউমোনিয়া হয়ে যাবে আমার। ”
– ” আচ্ছা তাহলে ২ ঘন্টা! ”
– ” আরেকটা কথাও বলবি না, ব্রেকফাস্ট বানাতে দে! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৮!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৮!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাত প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। আলমারির সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে হাটুতে মুখ গুজে অঝোরে কাদছে মিছিল। মিছিল নিজেকে খুব শক্ত মনে করতো কিন্তু মাত্র একদিনের মুবিনহীনতায় সে বুঝে গেছে যে সে যতই শক্ত হোক না কেনো মুবিনের জন্য তার মন তুলোর মতো নরম। আর সে তুলোর মতো মন আজ মুবিনহীনতার বেতাল হাওয়ায় বেসামাল। এতো কান্না যে কোত্থেকে চলে এলো তা মিছিল জানে না, তবে সে প্রচুর কাদছে। কেদে সব ভাসিয়ে দিচ্ছে প্রায়। তার আফসোস একটাই সে এই কান্নাটাকে পুরোপুরি বের করার জন্য চিৎকার দিতে পারছে না।

দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনতে পায় মিছিল। হাটু থেকে মুখ তুলতেই বাবার ডাক কানে আসে মিছিলের। মিছিল চোখ দুটো পটু হাতে মুছে নেয়, সে চায় না তার এই চোখের পানি দেখে তার বাবা চিন্তিত হয়ে পড়ুক। চোখের চারপাশ থেকে চোখের পানির অস্তিত্ব নির্মুল করে গিয়ে দরজা খুলে দেয় মিছিল। দরজা খুলতেই মিছিলের বাবা বলে, ” আমি একটু বের হচ্ছি আসতে এক-দেড় ঘন্টা লাগবে। তুই ঘুমিয়ে পড়িস না, এসে একসাথে খাবো! ”
মিছিল কন্ঠে স্বাভাবিকতা মিশিয়ে মৃদু হেসে বলে, ” কোথায় যাচ্ছো? ”
– ” এসে বলবো। ”
– ” আচ্ছা! ”

ঘড়ির কাটায় রাত ১১ টা ৫২ মিনিট। মিছিলের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে, স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শাওনের নাম। মিছিল ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হাপানো স্বরে শাওন বলে, ” মিছিল আমি তোর বাসার নিচে। মুবিনের খোজ পেয়েছি, তাড়াতাড়ি আয়। ওর অবস্থা খুবই খারাপ! ”

মুবিনের খোজ পাওয়া গেছে কথাটা শুনতেই মিছিলের মনটা হেসে ওঠে, কিন্তু যখনই শোনে মুবিনের অবস্থা খুবই খারাপ বুকটা যেনো মাঝ বরাবর ছিড় ধরে যায়। মিছিল কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই ফোন কেটে দেয় শাওন, মিছিল কান্নায় ভেঙে পড়ে। কয়েকমুহূর্ত কেদেই উঠে পড়ে মিছিল। তার এভাবে বসে বসে কাদলে হবে না, মুবিনের কাছে যেতে হবে তাকে। মিছিল গলায় ওড়না পেচিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। লিফট দিয়ে নিচে নামছে মিছিল। বদ্ধ এই ছোট কামড়াটায় স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে নিজের বেসামাল নিঃশ্বাস এবং হৃদযন্ত্রের শব্দ। ব্যাখ্যাব্যার্থ এক যন্ত্রনায় বারবার কুকড়ে উঠছে মিছিলের ভেতরটা।

গেটের বাইরে বের হতেই চোখের সামনে সব ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখতে পায় মিছিল। এমন তো কোনোদিন থাকেনা, রাতে তো ল্যাম্পপোস্ট এর আলো থাকে এখানে। মিছিল আরেকটু সামনে এগিয়ে আসে। সে এখন আবাসিকের রাস্তার মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে, এই মাঝারি আকারের রাস্তায় শুধু আবাসিক নিবাসীদের গাড়িই চলাচল করে। শাওন এখানে থাকলে তো গাড়ির লাইট জ্বলতো, কিন্তু সবটাই তো অন্ধকার। মিছিল একবার শাওন বলে ডাক দেয়। কোনো সাড়াশব্দ নেই আশেপাশে। মিছিল আরেকবার ডাক দেয় এবারও সবটা সাড়াশব্দহীন। এবার মিছিলের ভয়ে ধরে যায়। একেতো এই পরিস্থিতি তারউপরে এই থমথমে পরিবেশ। আস্তে আস্তে মিছিলের ভয়ের মাত্রা বাড়ছে। হঠাৎ করে চারপাশ আলোয় ভরে ওঠে, প্রথমে জ্বলে ওঠে মাথার উপরের মরিচবাতিগুলো। চমকে ওঠে মিছিল, বিকেলবেলাও সে যখন বাসায় ঢুকছিলো তখন এসব তার চোখে পড়েনি। বিকেলবেলা এসব ছিলো কী ছিলো না তা নিশ্চিত না মিছিল। কারন তখন তার মাথায় দুশ্চিন্তার সমুদ্র ছিলো। দুম করেই মিছিলের ঠিক সামনের ল্যাম্পপোস্ট টা জ্বলে ওঠে। ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় এক স্পষ্ট মুখ এবং চেনা অবয়ব দেখতে পায় মিছিল। মুবিন!?

ল্যাম্পপোস্টের ঠিক নিচে কী মুবিন দাঁড়িয়ে আছে? না অন্যকেউ? নিশ্চিত হবার জন্য ছোট ছোট পায়ে সামনে এগিয়ে যায় মিছিল। হ্যা এটা মুবিনই!

মুবিনের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিছিল। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মুবিনের চোখদুটোর দিকে, চোখে তার বহুপ্রশ্নের দাগ। মুবিনও তাকিয়ে আছে তার জাদুকন্যার দিকে। তবে মুবিনের চোখে কোনো প্রশ্ন, উত্তরের দাগ নেই। মুবিনকে এভাবে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হবার চরম পর্যায়ে পৌছে যায় মিছিল। মুবিন কোথায় ছিলো? শাওন যে বললো মুবিনের নাকি কী অবস্থা খারাপ? তাহলে কী তার সামনে এটা ভ্রম? সে কী একবার ছুয়ে দেখবে সামনে থাকা মুবিনকে? এই ভাবনাগুলো যখন ছুটোছুটি করছিলো মিছিলের মাথায় তখনই একটা তীক্ষ্ণ হুইসেল এর আওয়াজ শুনতে পায় মিছিল। সাথে সাথে আবার চোখের সামনের দৃশ্যপট ঘুটঘুটে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। মিছিল হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার সাথে কী হচ্ছে এসব? সে কী ঘুমিয়ে আছে? এসব কী তার স্বপ্ন? আর কোনো প্রশ্ন এসে মিছিলের মাথায় দানাবাধবে তার আগেই সামনে থাকা ল্যাম্পপোস্টের লাইট জ্বলে ওঠে। মিছিলের চোখটা একটু বড় হয়ে যায় হঠাৎ আলোর প্রভাবে। আলো ফিরতেই মিছিল আবিষ্কার করে মুবিনকে। মুবিন হাটুগেড়ে বসে একগুচ্ছ গোলাপ উচিয়ে ধরে রেখেছে। মিছিল মুবিনের দিকে তাকাতেই মুবিন মায়ামাখা হাসি হেসে স্নিগ্ধ কন্ঠে বলে, ” শুভ জন্মদিন মিছিল মনি, হ্যাপি বার্থডে মাই ড্রিম প্ল্যানেট! ”

আজ কী সত্যিই মিছিলের জন্মদিন? কয়েকমুহূর্ত চেষ্টা করেও আজকের তারিখটা মনে করতে পারেনা মিছিল। তারিখ মনে করায় ব্যার্থ হয়ে নিচে ঝুকে গোলাপগুচ্ছটা হাতে নেয় মিছিল। গোলাপগুলো মিথ্যে না, তাহলে এটা তার ভ্রম নয়। মিছিল হাতবাড়িয়ে মুবিনের গাল স্পর্ষ করে এটা বোঝার জন্য যে এটা আদৌ মুবিন কিনা। মুবিন ভ্রু নাচায় মিছিলের কান্ড দেখে। মিছিল একমুহুর্তও দেরী না করে বসে শক্ত করে মুবিনকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। মুবিন মিছিলের পিঠে হাত রেখে বলে, ” বার্থডে উইশ করলাম থ্যাংকস না বলে। কান্না শোনাচ্ছো? ”

মিছিলের কান্না থামে না। কান্নার শব্দ আরো খানিক বেড়ে যায়। মুবিন আর কিছু না বলে মিছিলের পিঠে ছোট ছোট চাপড় মারতে থাকে। মিছিল মাথা উঠিয়ে কোনোমতে কান্না থামিয়ে মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” কোথায় ছিলে সারাদিন? ”
মুবিন একটু চওড়া হেসে বলে, ” লুকিয়ে ছিলাম যাতে তুমি চিন্তা করে করে পেরেশান হয়ে ওঠো। আর আমি রাতে এসে তোমায় বার্থডে সারপ্রাইজ দিতে পারি! ”
কথাটা বলে শেষ করার পরমুহুর্তেই মুবিন নিজের গালে কিঞ্চিৎ ঝিনঝিন অনুভব করে এবং কানে ঠাসস! একটা শব্দ শোনে। এইমাত্র মিছিল কী তার গালে থাপ্পড় মারলো? মুবিন গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসাসুচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে। মিছিল মুবিনের জিজ্ঞাসা ঘোচাতে চেচিয়ে বলে, ” আমি তোর কাছ থেকে বার্থডে সারপ্রাইজ চাইছিলাম? না আমি বলছিলাম যে বার্থডেতে আমায় সারপ্রাইজড করিস? ” কান্নায় কথা আটকে যায় মিছিলের। মুবিন এখোনো বোকাভাবে স্থিরদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে।

মিছিলে কিছু মুহুর্ত চুপ থেকে নিজের কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলে, ” তুই জানিস সারাটাদিন কীভাবে কাটছে আমার? কতশত আজেবাজে চিন্তা আসছিলো মাথায়। একবারও মনে হয় নাই যে এটা মাত্রাতিরিক্ত ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে? এটা কোনধরনের বার্থডে সারপ্রাইজ? সারাটাদিন নরকযন্ত্রণা দিয়ে কিরকম বার্থডে সারপ্রাইজ এটা? ” আবার কান্নার কারনে কথা আটকে যায় মিছিলের। মুবিনও চুপচাপ তাকিয়ে থাকে মিছিলের দিকে। মুগ্ধে মুগ্ধে মুগ্ধান্বিত হয়ে গেছে মুবিন। মিছিল যে এতো অল্পসময়ে তার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পড়বে সেটা মুবিনের কল্পনাতীত ছিলো। মুবিন মিছিলের যায়গায় থাকলে এভাবেই রিয়েক্ট করতো তাই মুবিন চুপচাপ থেকে মিছিলকে হালকা করার জন্য মিছিলকে বলতে দেয়। মুবিন ভাবে মিছিল হয়তো এবারও কিছুক্ষন থেমে থেকে তারপর বকাবকি শুরু করবে, কিন্তু মিছিল এবার কিছু না বলেই উঠে দাঁড়িয়ে যায়। যেই মিছিল পেছন ফিরে হাটা ধরবে তখনই মুবিন দাঁড়িয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিছিলকে। মিছিল ছোটার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে, মুবিন সেদিকে খেয়াল না করে বলে, ” বুঝিনি এতোটা দুশ্চিন্তা করবে। এতো ভালোবেসে ফেললা কীভাবে? ”
– ” তুই ছাড় আমি বাসায় যাবো! ”
– ” যা গেছে তা গেছে। আমি সত্যিই বুঝিনি তোমার এতো খারাপ অবস্থা হবে। জানলে অন্যকোনো সারপ্রাইজ প্ল্যান করতাম। আসলে আমি ঐ দিন ইচ্ছেকরেই সীনক্রিয়েট করেছিলাম যাতে তোমার সাথে আমার ঝগড়া হয়। আর আমি এই কাহিনিটা করতে পারি। তুমি যদি ঐদিন আই লাভ ইউ টু বলেও দিতা তাহলেও আমি অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে সিনক্রিয়েট করতাম। কারন আমি আজকের জন্য এই সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিলাম তাই। সরি বুঝিনি এভাবে কষ্ট পাবে, জানলে করতাম না। তোমার বার্থডে বলে কথা, সরি বাদ দাও। ”
মুবিনের কথায় মিছিল নরম হয়ে যায়। হাত-পা ছোড়াছুড়ি না করে স্থির হয়ে যায় মিছিল। মিছিলকে শান্ত দেখে মুবিন মিছিলকে ওর দিকে ঘুরিয়ে নেয়। মুবিন মিছিলের কপালে চুমু খেয়ে বলে, ” হ্যাপি বার্থডে! ”
মিছিল কিছু না বলে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মিছিলকে চুপ থাকতে দেখে মুবিন বলে, ” বুঝলাম সারাদিন যেটা করেছি সেটা ঠিক করিনি। অন্যায় করেছি, মানলাম সারপ্রাইজ ও পছন্দ হয়নি। তাই বলে এভাবে চুপ থাকবা? কিছু তো বলো! ”

মিছিল আরো কিছু মুহুর্ত নিরব থেকে নিচের দিকে তাকিয়েই বলে, ” সারপ্রাইজ পছন্দ হয়েছে, সারাদিন এর কার্যকলাপ পছন্দ হয়নি! ”
– ” জানিতো এটা, অন্যকিছু বলো। ”
মিছিল মাথা তুলে মুবিনের চোখে চোখ রেখে বলে, ” আমায় লাইফে প্রথম কেউ বাবার আগে বার্থডে উইশ করলো। এই অবধি প্রত্যেকটা বার্থডেতে বাবা’ই সবার আগে উইশ করে এসেছে। তুমিই প্রথম যে বাবার আগে কোনো বার্থডেতে আমায় উইশ করলা! ”
মুবিন মৃদুহেসে মিছিলের গাল টেনে বলে, ” অভ্যাস করে নাও। তোমার এই জন্মদিন থেকে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার সব জন্মদিনে প্রথম আমিই তোমায় শুভ জন্মদিন বলবো! ”
মিছিল চুপচাপ তাকিয়ে আছে মুবিনের পানে। সে আর কত মুগ্ধ হবে এই ছেলের প্রতি? মুগ্ধতার সীমা তো সে বহু আগেই লঙ্ঘন করে ফেলেছে।
মুবিন বলে, ” আই লাভ….” মুবিন কথা শেষ করার আগেই মিছিল আই লাভ ইউ টু বলে মুবিনকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৭!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৭!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মুবিনের ফ্ল্যাটের দরজায় তালা ঝুলছে। গাড়ি ছাড়া মুবিন কোথাও বের হয় না। গাড়ি পার্কিংয়ে পার্ক করা অথচ ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। মুবিন গেলো কোথায়?

মিছিল ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না যে সে এখন কী করবে। কেমন যেনো দিশেহারা লাগছে নিজেকে তার। থমকে দাঁড়িয়ে আছে মিছিল। শাওন মিছিলের কাধে হাত দিয়ে বলে, ” আরে টেনশন করিস না। দাড়া, আমি পাশের ফ্ল্যাটে জিজ্ঞেস দেখছি ওনারা কিছু জানেন কিনা। ”
মিছিল কিছু বলে না, স্তব্ধতায় যেনো তলিয়ে গেছে মিছিল। শাওন গিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের দড়জায় টোকা লাগায়। একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা বেড়িয়ে আসে। শাওনকে দেখেই মহিলা একটু হেসে বলে, ” শাওন যে! কেমন আছো? ”
– ” এইতো আন্টি ভালো। আসলে মুবিনের ফোনটা গতকাল রাত থেকে অফ। ভার্সিটিতেও যায়নি আজ। তাই ওর সাথে দেখা করার জন্য এলাম। নিচে দেখলাম ওর গাড়ি পার্ক করা কিন্তু এখানে তালা ঝুলছে। মুবিন কোথায় গেছে সে ব্যাপারে কিছু জানেন আন্টি? ”
– ” না। মুবিনকে তো গতকাল রাত প্রায় ১১ টার দিকে বেড়িয়ে যেতে দেখেছি। হয়তো তারপরে আর ফ্ল্যাটে আসেনি। কিন্তু ও গাড়ি না নিয়ে গেলো কোথায়? ”
– ” সেটাই তো ভাবার বিষয়। ও তো গাড়ি ছাড়া বের হয় না। ”
– ” আমার মতে আহাদ সাহেবকে ব্যাপারটা জানাও। উনি দেখে নেবে সবটা! ”
– ” না আন্টি। যদি মুবিন একটু পরে চলে আসে আর যদি শোনে যে ওর বাবাকে এসব জানিয়েছি তাহলে শুধু শুধুই চিল্লাচিল্লি করবে। আপনি তো জানেন ওর আর ওর বাবার বন্ডিং এর ব্যাপারে! ”
– ” হ্যা তাও ঠিক। আচ্ছা তোমরা বরং ভেতরে এসে বসো? ”
– ” না আন্টি। আমরা বরং ওর দরজার সামনেই ওয়েট করি! ”
– ” আচ্ছা, ও এলে আমায়ও জানিয়ে দিও। ”
– ” আচ্ছা আন্টি। ”

প্রায় আড়াইঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকে, সিড়িতে বসে, দেয়ালে হেলান দিয়ে, হাটু ভর দিয়ে বসে মুবিনের অপেক্ষা করছে ওরা। কিন্তু মুবিনের কোন পাত্তা-ফাত্তা নেই। এভাবে অপেক্ষা করটাও বিরক্তির। অবশেষে অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে শাওন আহাদ শেখকে কল করে। আহাদ শেখ ফোন রিসিভ করতেই শাওন সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কেমন আছেন আঙ্কেল? ”
আহাদ শেখ সালামের উত্তর দিয়ে চনমনে মেজাজে বলে, ” এইতো ভালো। তা তোমার কী খবর শাওন? ”
– ” হ্যা আঙ্কেল ভালোই। আসলে আঙ্কেল মুবিনকে না খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর ফোন গতকাল রাত থেকে বন্ধ, গাড়িটাও ওর এপার্টমেন্টের পার্কিংয়ে পার্ক করা, এখানে এসে ওর পাশের ফ্ল্যাটের আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম ওর ব্যাপারে। আন্টি বললো, ও নাকি গতকাল রাত ১১ টায় বেড়িয়েছে। ”
– ” গাড়ি পার্কিংয়ে। গাড়ি ছাড়া কোথায় গেলো? আচ্ছা তোমাদের সাথে কী ওর কোনো কিছু হয়েছে? ”
আহাদ শেখের কথায় ভাবনায় পড়ে যায় শাওন। কারন আহাদ শেখ মিছিলের ব্যাপারে কিছু জানেনা, এখন কী মিছিলের সাথের ঝগড়াটার কথা বলবে? ঝগড়ার কথা বলতে গেলে তো ওদের সম্পর্কের কথাও বলতে হবে। শাওন কান থেকে ফোন নামিয়ে মুখের কাছ থেকে ফোনটা খানিক দূড়ে সরিয়ে মিছিলকে ডাক দেয়। মিছিল নিশ্চুপভাবে মনমরাভাবে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। শাওন ডাকায় হেলান ভেঙে এগিয়ে আসে। মিছিল আসতেই শাওন ফিসফিসিয়ে বলে, ” আঙ্কেল জিজ্ঞেস করছে আমাদের সাথে মুবিনের কিছু হয়েছে নাকি? তোর আর মুবিনের ওই ঝগড়া আর মুবিনের ওই কথাগুলোর কথা বলবো ওনাকে? ”

মিছিল শাওনকে কিছু না বলে ইশারায় ফোনটা তার কাছে দিতে বলে। ফোন হাতে নিয়ে কানের কাছে ধরে মিছিল বলে, ” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। ”
ওপাশ থেকে আহাদ শেখ বলে, ” হুস দিস? ”
– ” আমি মিছিল, আঙ্কেল। মুবিনের বন্ধু! ”
আহাদ শেখ কিছু বলে না। আহাদ শেখ চুপ থাকায় মিছিলও চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করে। কিছু মুহুর্ত চুপ থাকার পরে আহাদ শেখ গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে মারে, ” শুধু বন্ধু নাকি প্রেমিকা? ”
মিছিল একটুও অবাক হয় না। কারন সে মনে মনে এই প্রশ্নটারই আশা করেছিলো আহাদ শেখ এর কাছ থেকে। প্রশ্ন অনুমান করে রাখায় উত্তরও তৈরীই ছিলো মিছিলের। মিছিল দ্রুতভঙ্গিতে বলে, ” হ্যা আঙ্কেল প্রেমিকা! ”
আহাদ শেখ হাসতে শুরু করে। হাসির শব্দ শুনে এপাশ থেকে মিছিল বুঝে যায় আহাদ শেখ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে। তাচ্ছিল্যের হাসিটাকে কিচ্ছুক্ষন খুচিয়ে খুচিয়ে সুড়সুড়ি দেবার পরে আহাদ শেখ বলে, ” স্ট্রেঞ্জ না? উইয়ার্ড আর অকওয়ার্ডও আমার ছেলে প্রেম করে সেই কথাটা আমার জানতে হয় ছেলের প্রেমিকার কাছ থেকে। মানে আমি আমার ছেলের জন্যে মোটেই কেউ নই, আম সাচ এ্যা লুজার! আন্ড সাচ এ্যা ওরস্ট ফাদার! ”
মিছিল জবাব খুজে পায় না। আহাদ শেখকে সে মোটেই ঘৃনা করে না কিন্তু প্রথমবার কথা বলাতে কেমন যেনো একটা চরম অস্বস্তিবোধ হচ্ছে তার। মিছিল আহাদ শেখের কথায় কর্নপাত না করে বলে, ” আসলে আঙ্কেল মুবিনের সাথে গতকাল আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে! ”
তারপর মিছিল কিছু না লুকিয়ে নির্দিধ্বায় সবটা বলে আহাদ শেখকে। আহাদ শেখ সবটা শুনে মিছিলকে বলে, ” আমি মুবিনকে চিনি এই ছোট একটা জিনিস নিয়ে ও ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে এমন করবে এটা হতে পারে না। অন্য আর কোনো কথা থাকলে তুমি নিশ্চিন্তে, নির্দিধ্বায়, ফ্রি’লি বলতে পারো। আমি মাইন্ড করবো না! ”

মানুষটা কতোটা ভাবে মুবিনের জন্য। আর মুবিন মানুষটার নাম অবধি শুনলে রেগে যায়। বড়ই আশ্চর্যের! ব্যাপার তাইনা?

মিছিল মলিন হেসে উত্তর দেয়, ” আঙ্কেল আমি কিছুই লুকোইনি। যা হয়েছে সেটাই বলেছি! ”
– ” আচ্ছা আমি দেখে নিচ্ছি ব্যাপারটা। ওর কোনো ট্রেস পেলেই জানাবো তোমাদের! ”
– ” থ্যাংকস আঙ্কেল! ” একপ্রকার মুখ ফসকেই মিছিলের মুখ থেকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে। এই চরম ভুলটা সে কীভাবে করে ফেললো? মিছিল থুতুনি শক্ত করে চোখদুটো বন্ধ করে নেয়।

ওপাশ থেকে আহাদ শেখ তীব্র কন্ঠে হাসে। হ্যা এবারও তাচ্ছিল্যের হাসিই হাসে। হাসতে হাসতে আহাদ শেখ বলে, ” আমার ছেলের খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার খোজ বের করবো তার জন্যই আমার তার গার্লফ্রেন্ডের মুখ থেকে থ্যাংকস শুনতে হচ্ছে। আম দ্যা মোস্ট লাকিয়েস্ট ড্যাড ইন দ্যা আর্থ! ” বলেই হাসতে থাকে আহাদ শেখ। মিছিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনটা কেটে দেয় আহাদ শেখ। মিছিলের মুখের কথাটুকু মিছিলের মুখেই আটকে পড়ে। মিছিল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা শাওনের দিকে এগিয়ে দেয়, শাওন ফোনটা নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে যথারীতি দেয়ালে হেলান দিয়ে মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সীমান্তও শাওনের পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চৈতি সিড়িতে বসে সিড়ির রেলিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে আছে, মিছিলও গিয়ে সিড়িতে বসে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দেয়। এপার্টমেন্ট এর সিড়ি তেমন বেশ ব্যাবহার হয় না। কারন সবাই উপর-নিচ যাতায়াতের জন্য লিফটই ব্যাবহার করে।

আসরের আযান দিচ্ছে। সেই সকাল প্রায় সাড়ে ১০ টা থেকে সবাই মুবিনের ফ্ল্যাটের সামনে অপেক্ষা করছে , অপেক্ষা করতে করতে হাপিয়ে উঠেছে ওরা। মিছিলের মনে নানান ধরনের আজে-বাজে চিন্তা আসছে। এই যেমন, মুবিন ওকে ছেড়ে চিরকালের জন্য দুড়ে কোথাও চলে যায়নি তো?, মুবিন কী গতকালের কথাগুলো সিরিয়াস হয়েই বলেছিলো? মিছিল এসব ভেবে ভেবে নিজেকে অপরাধী দাবি করতে থাকে। সে যদি কাল ভালোবাসি কথাটা বলে দিতো তাহলে তো আর এসব হতো না, তাইনা? সে কাল মুবিনকে ওভাবে ট্রিট না করলেই পারতো। তাহলে আজ সব ঠিক থাকতো, সে মুবিনের সাথে বাইরে কোথাও বসে প্রেম করতো। ভাবতেই চোখ দিয়ে দুফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে মিছিলের।
সে তো শুধুমাত্র মজার ছলেই গতকাল অমন করেছিলো। কিন্তু সে ব্যাপারটাকেই যে মুবিন টেনে এতো বিশাল করে ফেলবে তা তার কল্পনাতীত ছিলো। মিছিল হু! হু! শব্দ করে ফুপিয়ে কেদে ওঠে। শাওন-সীমান্ত অবাক স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিছিলের দিকে। মিছিলকে শান্তনা দেবার ভাষাও তাদের জানা নেই, তারা নিজেদেরই শান্তনা দিতে পারছে না। কারন এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি তারা।
চৈতি মিছিলকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” আরে পাগল কাদিস না। আঙ্কেল ঠিকই কিছু না কিছু জানাবে! ” কথা বলার সময় চৈতির গলাও কান্নায় জড়িয়ে আসে।
সীমান্ত মিছিলের কাছে গিয়ে বলে, ” আর কতক্ষন এভাবে বসে থাকবি? চল বাসায় চল। আর কাদিস না, দেখিস কালকের মধ্যেই মুবিনকে পাওয়া যাবে। ”
মিছিল কিছু না বলে, ফুপিয়ে কাদতে থাকে।

মুবিনের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে শাওন-সীমান্ত মিছিলকে ওর বাড়িতে দিতে আসে, চৈতিও আসে। মিছিল এখনও কাদছে। শাওন মিছিলকে বলে, ” কাদিস না। আমি এখন বাসায় গিয়ে আমাদের সার্কেল নিয়ে ওকে খোজা শুরু করবো। আর কোনো কিছু জানতে পারলেই তোকে জানাবো। যা বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে রেস্ট কর! ”
মিছিল কিছু বলার জন্য খুজে পায়না। কাদতে কাদতে বাসার ভেতরে চলে যায়।

শাওন-সীমান্ত চৈতিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে, নিজেরা বাসায় গিয়ে নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের সাহায্য নিয়ে মুবিনের খোজ লাগানোর চেষ্টা চালাতে থাকে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৬!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৬!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাত প্রায় তিনটা বাজে। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মুবিনের কল দেওয়ার অপেক্ষা করছে মিছিল। মুবিনের সাথে রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যাওয়া মিছিলের নিয়মিত অভ্যাস। আজ সে অভ্যাসের নড়চড় হচ্ছে বলে ভীষন অসুবিধা হচ্ছে মিছিলের।
মুবিন কল করছে না কেনো এখোনো? আমার সাথে কথা না বলে ও ঘুমিয়ে গেলো নাকি? আদৌ কী ও আমার সাথে কথা না বলে ঘুমিয়ে যেতে পারে? আচ্ছা আমিতো কল দিতে না করেছিলাম সেজন্য কল করছেনা নাকি? ধুর! ও এতো টিনি জিনিস নিয়ে মাইন্ড করবে নাকি? উফফ! ফোন করতেছে না কেনো ও? এরকম নানান প্রশ্নের উত্তর খোজাতে ব্যাস্ত মিছিল। নিজেকে প্রশ্ন করছে, আবার নিজের কাছ থেকেই আনুমানিক সঠিক উত্তর চাচ্ছে। কিন্তু এতে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না বরং সময়ের আমুল লোকসান হচ্ছে। অবশেষে মিছিল সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে ই ফোন করবে মুবিনকে। ভালোবাসার মানুষকে এতো ওভার ইগো দেখাতে নেই, কী হবে রাগ পুষে রেখে যখন মানুষটা নিজেরই, সম্পর্কে মনের সংকেত কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। মিছিল নিজে নিজেকে এসব বোঝাতে বোঝাতে মুবিনের নাম্বারে ডায়াল করে।

কল দেবার পর টু….. শব্দ করে রিঙ পড়ার আগে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থাকে না ফোনের স্পিকার? ঠিক ঐ মুহুর্তটায় মিছিলের ভেতরটাও নিশ্চুপ হয়ে যায়। কেমন যেনো এক অজানা অদ্ভুত অনুভুতিকে অনুভব করছে মিছিল। মনের মধ্যে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে, মুবিন ফোন রিসিভ করার পরে সে বলবো কী? ফোন দিলে না কেনো? এটা জিজ্ঞেস করবে নাকি প্রেম ফুরিয়ে গেছে সেটা জিজ্ঞেস করবে? রিঙ পড়ার আগের কিছু মুহুর্তে এমন নানান ধরনের প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলতে থাকে মিছিলের মনে। সব প্রশ্নগুলোই বাজেভাবে হতাশ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যখন ওপাশ থেকে আওয়াজ শোনা যায়, ” আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে! ”
মিছিল বেশ অবাক হয়। এই অবধি কখনও কোনোদিন মুবিনের নাম্বার বন্ধ পায়নি মিছিল। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে ফোনটার দিকে তাকায় মিছিল। মুবিনের নাম্বার বন্ধ কেনো? সে এখন ঘুমাবে কীভাবে? কিছুক্ষন চুপচাপ অসহায়ের মতো স্থিরদৃষ্টে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে মিছিল। হয়তো নেটওয়ার্ক ইস্যুর জন্য ফোন বন্ধ বলছে! এটা ভেবে মনে আশা নিয়ে আবার মুবিনের নাম্বার ডায়াল করে মিছিল।

রিঙ পড়বে নাকি পড়বে না? রিঙ পড়বে নাকি বন্ধ বলবে? নিস্তব্ধ নিশ্চুপ মুহুর্তে এই দুটো প্রশ্নের ফলে মিছিলের হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক আচরন শুরু করে, শরীরটাও যেনো আচমকা কেমন শীতল হয়ে আলতো কাপা শুরু করে দেয়। মিছিল চোখ দুটো বন্ধ করে খিটে, আঙুল ক্রস করে আছে, মনটা শুধু বলছে ” আল্লাহ নাম্বারটা যাতে খোলা থাকে, আল্লাহ নাম্বারটা যাতে খোলা থাকে। ” কিন্তু না! মিছিলকে আরো একবার হতাশ করে দিয়ে সিম কোম্পানির একজন তরুণী বলে, ” আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে! ”

মিছিল ফোনটা পাশে রেখে চুপচাপ কিছুক্ষন বসে থাকে। মুবিনের নাম্বার বন্ধ কেনো? মিছিলের মুবিনের ” আর কোনোদিন তোমার সামনে আসবো না। ” কথাটা মনে পড়ে যায়। মিছিলের বুকটা খানিক দুমড়ে-মুচড়ে ওঠে। তাহলে কী…? পরক্ষনেই মিছিল ডান দিক – বা দিক মাথা নাড়িয়ে বিড়বিড় করে, ” মুবিনের মতো ম্যাচিউড একটা ছেলে থোরাই এই টিনি জিনিস নিয়ে এমন করবে নাকি? যত্তসব ফালতু চিন্তাভাবনা আমার! ”

মিছিল আবার কিছুক্ষন নিশ্চুপভাবে বসে থাকে।

বসে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে মিছিল। বাবার ডাকে সকাল ৯ টায় ঘুম ভাঙে মিছিলের। ঘুম থেকে উঠেই ফোন চেক করে মিছিল। প্রতিদিন সকালে মুবিন মিছিলকে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে ওঠায়, কিন্তু আশ্চর্য! আজ মুবিন ফোনই করেনি। মনখারাপের মেঘে ঢেকে যায় মিছিলের মন আকাশ। মুবিনের প্রতি প্রচন্ড রাগ আর ভীষন অভিমান জন্মেছে মিছিলের মনে। মিছিল ঠিক করে নেয় মুবিন আজ ভার্সিটিতে তার সাথে কথা বলতে এলে সে ইচ্ছেমতো ঝাড়বে আজ মুবিনকে।

তড়িঘড়ি করে তৈরী হয়ে ভার্সিটিতে চলে আসে মিছিল। আজ বহুদিন পরে স্কুটার চালিয়ে ভার্সিটি এসেছে মিছিল। কারন এখন মুবিনের গাড়িতেই ভার্সিটি থেকে বাসা আসা যাওয়া করে মিছিল। মুবিন কত কাঠখড় পুড়িয়ে যে মিছিলকে প্রতিদিন তার গাড়িতে করে ভার্সিটি আসার জন্য রাজি করিয়েছিলো তা শুধু মুবিনই জানে। অথচ সেই মুবিনই আজ মিছিলকে নিতে যায়নি, এমনকি সকালে কল করে ঘুম থেকেও ওঠায়নি, এমনকি রাতে কথা না বলে ঘুমিয়েছে। গত কয়েকঘন্টার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আর অনিয়মিত ঘটনাগুলোতে মিছিল আশাহত। সে মুবিনের কাছ থেকে কখনই এরকমটা আশা করেনি।

ভার্সিটিতে ঢুকেই চমকে যায় মিছিল। বুকের ভেতর এক অদ্ভুত চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয় তার। ক্যাম্পাসে মুবিনের গাড়ি নেই যে? মুবিন কী আজ ভার্সিটি আসেনি? এই অবধি এমন কোনোদিনই হয়নি যেদিন মিছিল ভার্সিটি এসেছে অথচ মুবিন আসেনি। মিছিল চমকের ওপর চমক পাচ্ছে, এ যেনো চমক বর্ষণ। মিছিল ক্লাসে গিয়ে শাওন-সীমান্তকে জিজ্ঞেস করে মুবিন কোথায়? মিছিলের প্রশ্নে চরম অবাক হয় শাওন-সীমান্ত। শাওন বলে, ” ওর সাথে তো কাল সেই ক্যাম্পাসেই কথা হয়েছে। তুই ও তো ছিলি তখন। রাতে ফোন দিলাম, ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। ভাবলাম হয়তো তোর সাথে কথা বলে বলে চার্জ খুইয়ে ফেলেছে। কিন্তু তুই এখন এসে জিজ্ঞেস করছিস মুবিন কোথায়? মানে? মানে কী? মুবিন কোথায় মানে কী? তুই এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করবি? তোদের মধ্যে কী কিছু হয়েছে? ”
– ” আসলে! ”

মিছিল কথা বলতে যাবে তখনই চৈতি আসে। চৈতি এসে বলে, ” কীরে কিসের সভা পারিষদ করিতেছিস? আর মুবিন কোথায়? ”
সীমান্ত বলে, ” জানি না। ওটা নিয়েই কথা হচ্ছিলো। ”
মিছিল গতকালের সব ঘটনা খুলে বলে শাওন, সীমান্ত আর চৈতিকে। সবটা শোনার পর ওরা সবাই বেশ অবাক হয়। কারন মুবিনের মতো বিন্দাস স্বভাবের মানুষ এমন ছোট ব্যাপার নিয়ে বেপাত্তা হবে, এটা নিতান্তই অবিশ্বাস্য।

মিছিল বলে, ” আমি ক্লাস করবো না। আমি ওর ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। আর গিয়ে ফ্ল্যাটে পাচ্ছি কী পাচ্ছি না সেটা ফোনে জানাবো তোদের। ”
শাওন উঠে বলে, ” আরে তুই যাচ্ছিস মানে? আমরাও যাবো তো। চল! ”
মিছিল, শাওন, চৈতি, সীমান্ত সবাই মুবিনের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

মুবিনের এপার্টমেন্টের পার্কিং এ এসে মুবিনের গাড়ি দেখতে পায় ওরা। মুবিন তাহলে ফ্ল্যাটেই আছে ভেবে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। লিফটে করে সুরসুর করে উপরে উঠে যায় সবাই। উপরে উঠতেই বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খায় সবাই, সবার হুশ উড়ে যায়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৫!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৫!
লেখক: তানভীর তুহিন!

প্রায় চারমাস পর!

ক্যাফেতে বসে আছে মিছিল আর মুবিন। আজ ভার্সিটিতে যায়নি দুজন, ভার্সিটিতে না গিয়ে ঘুরতে এসেছে দুজনে। মিছিল একের পর এক ছোট ছোট চুমুক দিয়ে কফি শেষ করতে ব্যাস্ত। মুবিন চুপচাপ কফির কাপ সামনে নিয়ে বসে আছে। সকাল থেকে মুবিনের ঘ্যানঘ্যান,আজ আই লাভ ইউ টু বলতেই হবে মিছিলকে। অনেক চেনা হয়েছে, অনেক জানা হয়েছে দুজন দুজনকে। এতো স্বাধিন আর স্বাভাবিক স্বম্পর্ক তাদের অথচ মিছিল এখনও অবধি তাকে ভালোবাসি বা আই লাভ ইউ টু বলবে না। এটা মেনে নেবে না সে।
মিছিলেরও একই সয়ংক্রিয় তৈরী করা উত্তর, ” আমি বলবো না। আমি এখনো তোমায় ভালোবেসে উঠতে পারিনি। আর তুমিই তো বলেছিলে প্রেম প্রকাশের আগেই সব মধু থাকে, সব রসগোল্লা থাকে। এখনই যেমন আছে ভালো আছে। তোমায় আমার উপরে ফালানোর জন্য যথেষ্ট অধিকার দিয়েছি, তোমার সাথে ঘুরিফিরি, রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার সাথে কথাবলি, আর পাচটা সাধারন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড যা যা করে আমরাও তাই করি। এন্ড আই থিংক সো তুমি ফীল করে যে আমি তোমায় অল্পখানিক ভালোবাসি। যখন বেশিখানিক বাসবো তখন বলবো আই লাভ ইউ টু, তখন সারাদিনই ন্যাকা প্রেমিকার মতো ঘ্যাঙাবো আই লাভ ইউ টু বলে বলে। এখন এসব নিয়ে আর কোনো ডিসকাশন তুমি করবা না! ”

কে শুনে কার কথা। মুবিন নাছোড়বান্দা, আজ সে মিছিলের মুখ থেকে ভালোবাসি কথা শুনেই তবে ক্ষান্ত হবে। শুনবে মানে শুনবেই। মুবিন কফি না খেয়ে কপাল কুচকে মিছিলের দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে তার রাগ-বিরক্তির ঢেউ। মিছিল মুবিনের এই চেহারার বেশ মজা নিচ্ছে। সচরাচর মুবিনকে এরকম অসহায় অবস্থায় দেখা যায় না। সবসময় মুবিনই ছড়ি ঘোরায় মিছিলের ওপর এই যেমন মিছিল কবে তার সাথে ঘুরতে যাবে, কোথায় ঘুরতে যাবে, ভার্সিটির পরে মিছিল কতক্ষন তারসাথে থাকবে, রাতে ফোনে কথা বলে কখন ঘুমাবে, আরো নানা ধরনের মুবিনের শাসন মেনে চলতে হয় মিছিলের। যদিও মিছিলের কখনো এসব জিনিসকে শাসন বলে মনে হয় না কারন মুবিন কখনই কোনো ব্যাপার নিয়ে তাকে জোর করে না। একদমই নরম ভাবে, ভেজা বেড়ালের মতো করে বলে, অনেকটা আবদার করার মতো। মিছিলও হাসিমুখে মুবিনের সকল আবদার পুরন করে, কারন এসব আবদারের মাঝে তারও যে ভালোবাসা, অনুভুতি, সুখ নিহিত আছে। মিছিল মুবিনকে ভালোবাসে, পাগলের মতো ভালোবাসে এটা বাইরের যেকোনো একজন মানুষ দেখেই বুঝে যাবে। মুবিনও বোঝে মিছিল তাকে ভালোবাসে, তবুও প্রেয়সীর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে শখ জাগতেই পারে। মিছিল শখটা পুরন করে দিলেই পারে।

মুবিন চোখ মুখ ফুলিয়ে ব্যাঙ সেজে বসে আছে। মিছিল মুবিনের সামনে মিটিমিটি করে হেসে মুবিনকে ক্ষ্যাপাচ্ছে। মুবিন অসহায় কাতর কন্ঠে বলে, ” একবারই তো বলবা। জাস্ট একবার, ছোট করে। একদম তাড়াতাড়ি করে বলে দিলেও হবে। শুধু বললেই হবে আমার, বলো না! ”
মিছিল এতোক্ষন মিটিমিটি হাসছিলো। মুবিনের কথায় হাসিটা খানিক আলগা করে, চোখ দুটো চওড়া করে উপরে টেনে বলে, ” তোমার চুমু খেতে ইচ্ছে করছে? চুমু খাবা? চুমু খাও বা আমি চুমু দিয়ে দিচ্ছি। তবুও বলবো না! ”
– ” না চুমু লাগবে না। শুধু একবার বললেই হবে! ”
– ” তুমি ইতিহাসের প্রথম বয়ফ্রেন্ড যে কিনা গার্লফ্রেন্ড চুমু খাবার পার্মিশন দিচ্ছে তবুও চুমু না খেয়ে গার্লফ্রেন্ডকে আই লাভ ইউ টু বলার জন্য প্যানপ্যান করছে। হাবা কোথাকারের! ”
– ” হু, হাবাই। আচ্ছা আমরা প্রেমিক প্রেমিকা তো? ”
– ” হুম। ক্যান কোনো ডাউট আছে তোমার? ”
– ” তাহলে আই লাভ ইউ টু বলছো না কেনো? রিলেশনশিপে টাচ করা নিয়ে, চুমু খাওয়া নিয়ে, ঘুরতে যাওয়া নিয়ে আরো হাজার কারনে দুজনের মধ্যে ইস্যু ক্রিয়েট হয়। আর আমাদের মধ্যে কী নিয়ে ইস্যু ক্রিয়েট হচ্ছে? আই লাভ ইউ বলা নিয়ে? মানে এটা একদম অদ্ভুত আর আশ্চর্যজনক একটা ব্যাপার না? ”
– ” না কোনো আশ্চর্য নেই এই ব্যাপারে! ”
– ” একজন আউটসাইডার কেউ যদি এসব জানে তাহলে বলবে আমি তোমার জাস্টফ্রেন্ড আর তুমিও আমার জাস্টফ্রেন্ড। আমরা কোনো প্রকার কমিটেড রিলেশনশিপে নাই! ”
– ” আচ্ছা নাই। ধরে নাও আমি তোমার জাস্টফ্রেন্ড। তবুও এই প্যানপ্যানানি অফ করো। ভাল্লাগছে না আর! ”
– ” তোমার কেনো ভালো লাগবে না? ভালো তো লাগতেছে না আমার। প্রায় আড়াইমাস ধরে প্রেম করছি, প্রেমিকার সাথে হাগিং, কিসিং, আউটিং সব হয়েগেছে অথচ আমার প্রেমিকা আমায় এখন অবধি আই লাভ ইউ টু বললো না। ইজন্ট ইট সো স্ট্রেঞ্জ? ”
– ” তুমি কী এখন এইটা নিয়াই আমার মাথা খাবা? যদি তোমার মাথা খাওয়ারই থাকে তাহলে বলো, আমি উঠে যাচ্ছি। কারন আমি আর জাস্ট টলারেট করতে পারছি না। এখন বিরক্তি লাগতেছে আমার ” ঝাঝালো কন্ঠে কথাগুলো বলে টেবিলে মাঝারি ধরনের একটা থাপ্পড় মারে মিছিল।
মুবিন চুপ হয়ে যায়। চুপচাপ বসে আছে মুবিন, মিছিল ফোন টিপছে আর একটু পর পর ফোন থেকে চোখ তুলে মুবিনকে দেখছে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট এভাবে চলার পরে মুবিন বলে, ” এই শেষবার জিজ্ঞেস করছি তুমি বলবা নাকি বলবা না? আম সিরিয়াস নাউ মিছিল। আমার কেমন যেনো উইয়ার্ড লাগছে ব্যাপারটা, আর ভেতর থেকে ইনসিকিউরিটিও কাজ করছে। এখন যদি না বলো তাহলে আর বলার সুযোগ পাবে না। বলার জন্য আর আমাকে খুজেই পাবে না! ”
– ” কেনো তুমি নাসার সাথে চুক্তি মঙ্গলে চলে যাবে? ”
মুবিন চোখটা কিছুক্ষন বন্ধ রেখে, দাত খিটে বলে ” তোমার কী আমায় দেখে মনে হচ্ছে না যে আম ড্যাম সিরিয়াস? ”
– ” উফ! উফ! উফ! একটা সাধারন জিনিস নিয়ে তুমি এভাবে সীন ক্রিয়েট করতেছো কীভাবে? আমার বলতে ইচ্ছে করছে না আমি বলবো না। জাস্ট একসেপ্ট ইট! ”
– ” তারমানে তুমি বলবে না? ”
– ” না। কোনোমতেই না! ”

মুবিন ওয়েটারকে ডাক দিয়ে বিল চেয়ে নেয়। তারপর বিল পে করে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে যায়। মিছিলও বেড়িয়ে আসে। বিকাল প্রায় ৪ টা বাজে। মুবিন গাড়ি চালাচ্ছে, মিছিল পাশে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। তাকিয়ে থেকে থেকে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, মুবিন একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না তার দিকে, কোনো কথাও বলছে না। একদম ড্যামকেয়ার ভঙ্গিতে গাড়ি চালাচ্ছে। মিছিল একদমই মুবিনের সাথে থাকলে মুবিনের সাথে কথা না বলে বেশিক্ষন চুপ করে থাকতে পারে না। তার এই বদঅভ্যাসের কারন মুবিন, কারন মুবিন কখনই মিছিলের সাথে এভাবে কথা না বলে থাকে না। মুবিনের সদা সর্বদা মুখ চলতেই থাকে। অথচ আজ একদম চুপ! তাও আবার প্রায় আধাঘন্টা যাবৎ! তাও আবার সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে অযথা তর্ক করে চুপ!
মিছিল আর চুপ করে থাকতে না পেরে বলে, ” কী হইছে? এমনি সময় তো কথা বলে বলে কানের পোকা বের করে ফেলো। এখন একদম সব উল্টে গেছে না? কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না এখন? ”
মুবন একপলক মিছিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ” এখন তোমার সাথে কথা বললেই ঝগড়া হবে। তাছাড়াও আমাদের আর কখনো দেখাই হবে না যখন, তখন শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ কী? ”
মুবিনের কথায় মিছিলের বুকটা ছেৎ করে ওঠে। মিছিলের মনে হয় কেউ যেনো তার মনে কিছু সুচ ফুটিয়ে দিয়েছে। কন্ঠটাও যেনো মুহুর্তের মধ্যেই কেমন জড়িয়ে আসে, মিছিল স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ” কখনো দেখা হবে না মানে? ”
মুবিন আবার মিছিলের দিকে একপলক তাকায়। তারপর আবার সামনের দিকে তাকায়। মুবিন নিরবতার দেয়াল না ভেঙেই নিশ্চুপভাবে গাড়ি চালায়। মিছিল বলে, ” আমি তোমায় জিজ্ঞেস করলাম তো কিছু। দেখা হবে না মানে? ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো কেনো? ”
– ” ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল না। আমি ডিসাইড করেছি আর কখনও তোমার সামনে আসবো না, আর তোমায় ভালোবাসি বলার সুযোগও করে দেবো না। ”
মিছিল হো হো করে হেসে ওঠে বলে, ” আহারে আমার ছ্যাকাখোর বাপ্পারাজটা রে! যে কিনা এক-দেড় ঘন্টা আমার সাথে ফোনে কথা না বলে থাকতে পারে না। সে কি না কখনও আমার সামনে আসবে না। সো ফানি! ”
মুবিন নিশ্চুপ। মিছিলই আবার বলে, ” একদিক থেকে ভালোই হলো তুমি আমায় ছেড়ে দিলে আমি অন্য একটা নতুন বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারবো। এমনিতেও তোমায় ইদানিং বোরিং লাগছে খুব! ” বলেই খিটখিট শব্দ করে হাসে মিছিল। মুবিন এখনও নিশ্চুপ। মিছিলের এবার ইগো হার্ট হয়, একেতো সাধারন বিষয়টা নিয়ে মুবিন এমন করছে তারউপরে আবার ইগনোর করছে, কথা বলছে না।
মিছিল রাগিস্বরে বলে, ” এখন তোর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না তো? রাত্রে ফোন দিস! আমিও ফোন ধরবো না। তখন দেখিস কেমন মজা লাগে যখন কেউ ইগনোর করে! ”
মুবিন কোনো কথা না বলে নিরবতাকে প্রাধান্য দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।

মুবিনের গাড়ি মিছিলের বাসার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ২-৩ মিনিট যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে। মিছিল এখনও গাড়ির ভেতরেই বসে আছে। বসে বসে ভাবছে, তাহলে কী আজ মুবিন চুমুও খাবে না? আরদিন তো নামিয়ে দিয়ে যাবার সময় কত ন্যাকামি করে। আর আজ কথাও বলবে না? মিছিল একবার মুবিনের দিকে তাকায়। মুবিন শক্তমুখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, শরীরের কোনো হেলদোল নেই। তবে চোখদুটো আবছা খানিক লাল। হয়তো ভেতরে ভেতরে রাগে ফুসছে। মুবিন চুমু খাচ্ছে না দেখে মিছিল নিজ থেকেই মুবিনের গালে আলতো কর একটা চুমু খায়। না! তাতেও মুবিনের হেলদোল নেই। কোনো প্রতিক্রিয়াই করলো না মুবিন, এমনভাবে বসে আছে যেনো মিছিল তার পাশে বসে নেই, আর মিছিল যেনো এই মাত্র তার গালে চুমুও খেলো না। ব্যাপারটা একদমই সহ্য হচ্ছে না মিছিলের। সে আগবাড়িয়ে চুমু খেলো, রাগ ঠান্ডা করতে চাইলো, কিছু না বলুক, না করুক একবার একটু তাকাবে তো এদিকে? তাকালোই না? এসব ভেবে নিজের রাগকে প্রশ্রয় দিয়ে দেয় মিছিল। দাত খিটে মুবিনের দিকে তাকিয়ে বলে, ” তুই বেশি আলহাদ পেয়ে গেছিস না? রাগ নিয়ে কুইপ্পা বইসা থাক, তোর রাগের গুষ্টি কিলাই! ”
বলেই সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে যায় মিছিল। নেমেই সজোরে গাড়ির দড়জাটা বন্ধ করে দেয়, তারপর এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে হেটে চলে যায়। মুবিনও মিছিলের দিকে না তাকিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে চলে যায়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গগল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৪!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৪!
লেখক: তানভীর তুহিন!

সকাল সাতটা বাজে। দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভাঙে মিছিলের। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে গিয়ে দড়জা খোলে মিছিল। দড়জা খুলতেই দেখতে পায় চেনামুখ মুবিনকে। দড়জা খুলে মুবিনকে দেখে মিছিল হেটে গিয়ে আবার ধুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মুবিন রুমে ঢুকে বলে, ” বের হবো একটু পরে। আবার শুয়ে পড়লা কেনো? ”
মিছিল গুঙিয়ে বলে, ” ঘুম পাচ্ছে খুব! ”
– ” পেট ঠিক হয়েছে? ”
মিছিল কিছু না বলে শোয়া অবস্থাতেই মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মুবিন গিয়ে খাটে মিছিলের পাশে একহাঁটু ভাজ করে বসে। মিছিলের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে, মিছিলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মিছিল কিছু বলে না, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার ফলে তার বেশ আরাম অনুভব হচ্ছিলো তাই। মুবিন মিছিলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, ” কাল রাতে তুমি ঘুমিয়ে যাবার পরে তোমার ঠোটে চুমু খেয়েছিলাম। তোমার ঠোটদুটো এতো সফট আর সুইট ক্যান? ”
মিছিলের ঘুম দৌড়ে পালায়। কী শুনছে সে এসব? সে ঘুমিয়ে যাবার পর মুবিন তাকে চুমু খেয়েছে? তাও আবার তার ঠোটে? মিছিল হকচকিয়ে উঠে বসে। চোখদুটো মার্বেলের ন্যায় গোলাকার আর বড় করে মিছিল বলে, ” তুমি সত্যিই আমি ঘুমিয়ে যাবার পর লিপকিস করছো? ”
মুবিনের স্বাভাবিক উত্তর, ” হু! ”
মিছিল চুপচাপ বসে আছে। সে এটা আশাই করেনি। সে তো মুবিনের প্রতি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করেছিলো, আর এই সময়েই মুবিন এভাবে বিশ্বাস ভাঙলো? মিছিলের চেহারায় মনখারাপ এবং আশাভঙ্গের ছাপ স্পষ্ট।
মুবিন একটু গুরুতর ভঙ্গিতে বলে, ” আসলে তুমি ঘুমিয়ে যাবার পর চলেই যাচ্ছিলাম। উঠতে যাবো তখনই ঠোটদুটোর দিকে চোখ পড়ে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম, নিজেকে অনেক বুঝিয়েও ছিলাম। যে এটা অন্যায়, করা ঠিক হবে না। কিন্তু কন্ট্রোল করতে পারিনি। তবে হ্যা শুধু লিপকিস’ই করেছি, আর কিছু না। ”
মিছিল নিশ্চুপভাবে বসে আছে। চোখদুটো মেঝের দিকে স্থির। মুবিন হো হো করে হেসে উঠে বলে, ” তুমি এতো আপসেট কেনো হয়ে গেলে? আমি চুমু টুমু খাইনি। তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই তোমায় ওঠানোর জন্য বলেছি যে আমি চুমু খেয়েছিলাম। চীলল! তুমি ঘুমিয়ে যাবার পর আমি তোমায় সেভাবে ছুয়েও দেখিনি! ”
মিছিল মাথা উঠিয়ে মুবিনের দিকে তাকায়। মুবিন মিছিলের কাছাকাছি এসে আদ্রকন্ঠে বলে, ” তুমি জেগে থাকতেই যখন তোমায় চুমু খেতে পারি। সেখানে তুমি ঘুমিয়ে যাবার পরে কাপুরুষের মতো তোমার সুযোগ নিতে যাবো কেনো? ”
মিছিলের বুকে একদল শীতল বাতাস বয়ে গেলো মুবিনের কথাটা শুনতেই। চেহারা থেকে মনখারাপের মেঘটাও উড়ে অন্য আকাশে চলে গেছে। মুবিন আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিছিল একটা বালিশ নিয়ে মুবিনের মুখ বরাবর ছুড়ে মারে। উঠে দাঁড়িয়ে দাত খিটে বলে, ” আমার কেমন লাগছিলো জানিস তুই? এরকম সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে মজা করার কোনো মানে হয় না! ”
মুবিন বালিশটা মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে বলে, ” কিস আবার কবে থেকে সেন্সিটিভ ইস্যু হলো? ”
– ” তোর কাছে তো সবই হেলাফেলা মনে হয়! ”
– ” এই ক্যাঁচক্যাঁচানির স্বভাবটা বাদ দাও তো জাদুসোনা। সব বিষয়ে ফ্যাচফ্যাচ না করলেই হয়না তোমার? তাইনা? ”
– ” আহাহা! কী ন্যাকা নাম জাদুসোনা। এত্তো ন্যাকামি তুই কোত্থুকে পাস? সারাদিন তোর ফ্ল্যার্টিং মুডটা অন’ই থাকে তাইনা? ”
– ” অনলি ফর ইউ বেব! ”
বলেই চোখ মারে মুবিন। মিছিল চেঁচিয়ে মুবিনকে কথা শোনাতে যাবে তার আগেই মুবিন বলে, ” আমরা এভাবে এখানে শুয়ে বসে প্রেম করতে থাকলে আজ আর ঘুরতে যাওয়া হবে না। তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, যাও। আর ফ্যাচফ্যাচ কইরো না! ”
মিছিল চোখ সরু করে মুখ ভেংচে বাথরুমে চলে যায়।

সবাই মিলে চা বাগান ঘুরতে এসেছে। মাথার পেছনে ঝাপির মতো কিছু একটা বেধে চা পাতা সংগ্রহের কাজ করছে কিছু মানুষ। চারপাশটা সব সবুজে ঢেকে আছে, চা বাগানের মাঝখানের মানুষজনকে দেখে মনে হচ্ছে সবাই এই সবুজ রঙের মাঝে হারিয়ে গেছে। আর বুঝি বেরই হতে পারবে না এই সবুজরঙের মায়াজাল থেকে। এতোটাই বিস্তৃত এই সবুজ রঙের মায়াজাল। সবাই চা বাগানের ভেতরে ঢুকে ঘুরে ঘুরে দেখছে, কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ পাতা ছিড়ে দেখছে, কেউ আবার পাতা ছিড়ে শুকছে। শাওন দুটো পাতা ছিড়ে একসাথে মুখে দিয়ে চিবানো শুরু করে। নিজেকে ডিসকভারি চ্যানেলের বিয়ার গ্রিলের মতো এডভেঞ্চেরাস বোঝানোর জন্য। কিন্তু দু-তিনটে চিবোন দেবার পরেই থু! থু! করে সব ফেলে দেয়। বেচারার মুখটা একদম কুচকে কুচুকুচু হয়ে গেছে। পাতাদুটো বোধহয় ভীষন তেতো ছিলো। চৈতি শাওনের দশা দেখে শাওনের সামনে গিয়ে বলে, ” কীরে বিয়ার গ্রিলের দাদার নাতি চা পাতা খাচ্ছিস কেনো? এনাকোন্ডা’র হালুয়া এনে দেই খাওয়ার জন্য, ওই হালুয়া খা। ”
পাশে দাঁড়িয়ে সীমান্ত, মুবিন, মিছিল হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শাওন বেচারা এমনিতেই মুখের তিক্তস্বাদ নিয়ে বিরক্ত ছিলো, মিছিলের কথা শুনতেই বেচারার মেজাজ গরম হয়ে যায়। শাওন কোনো কথা না বলে চৈতির মুখ চেপে ধরে কয়েকটা পাতা চৈতির মুখে ঢুকিয়ে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে চৈতিও শাওনের মতো মুখ কুচকে কুচুকুচু করে থু! থু! শব্দ করে ওঠে।

সবাই চা বাগানের সৌন্দর্য ভেদ করে হাটছে আর দেখছে চারপাশ। চারপাশটা একদম সতেজ এবং স্নিগ্ধ। প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যেনো একযুগ জীবন ঢুকছে এমন মনে হচ্ছে। চারপাশটা সব সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে। চা বাগানের সরু আইল ধরে চা বাগানের মধ্যে হাটছে মিছিল, মিছিলের পেছনেই হাটছে মুবিন। দুজনে তেমন কোনো কথা বলছে না, দুজনেই চা বাগান দেখতে ব্যাস্ত। হঠাৎ মিছিল মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” আচ্ছা আমি যে তোমায় রিলেশনশিপের জন্য হ্যা বলি না, এতে তোমার ইগো হার্ট হয় না? মনে হয় না যে আর ঘুরবো না ছেড়ে দেই? মন খারাপ হয় না তোমার? ”
– ” সাডেন এই কথা বলছো? তুমি আমায় হ্যা বলছো না এজন্য কী তোমার মন খারাপ হচ্ছে নাকি? ”
– ” উফ! একদম সব কথায় মস্কারি না করলে ভালো লাগে না তোমার, তাইনা? ”
– ” মস্কারি কোথায় করছি? তুমি প্রশ্ন করলে, আমিও প্রশ্ন করলাম! ”
– ” না তোমার প্রশ্ন করা লাগবে না। আমার প্রশ্নের আন্সার করো! ”
– ” দেখো তুমি যে আমায় এক-আধটু পছন্দ করো সেটা আমি জানি! ” বলেই মুবিন চুপ হয়ে যায়। মিছিল কিছু বলবে তা ভেবে। কিন্তু মিছিল কিছুই বলে না। মুবিন আবার বলে, ” সো তুমি যখন আমায় পছন্দ করো, আমি তোমার পিছনে ঘুরছি সেটাকে এপ্রিশিয়েটও করো সেখানে আর তোমার হ্যা বলা লাগে নাকি? মুখের শোনা হ্যা এর থেকে মনের অনুভব করা হ্যা অনেকটা প্রাপ্তির এবং সুখের। তাছাড়াও প্রেমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মধুর মুহুর্ত হলো যখন দুজন দুজনকে পছন্দ করে, ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলে না। বলে দিলেই তো সব শেষ, মধুর মুহুর্তটাও শেষ। আর তাছাড়া প্রেম শুরু হলে প্রেমের শুরুর দিকে অনেক কম্পিলিকেশন’স তৈরী হয় প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং বদলে যায়, অনেক ফিলিংস বদলে যায়, ব্যাক্তিস্বাধিনতার অভাববোধ হয়, অনেকক্ষেত্রে মেন্টালিটি সিঙ্ক করে না। আর এসব প্রেম শুরু হলেই আবিষ্কার করে তারা। আবিষ্কার করতে করতে বিপরীত পাশের মানুষটা হতে পারে সে ছেলে কিংবা মেয়ে, যার মন দুর্বল! আরকি যে ইমোশনাল ফুল সে কম্প্রোমাইজ করে ফেলে। একবার কম্প্রোমাইজ করায় তার কম্প্রোমাইজেশন এর অভ্যাস হয়ে যায়। তারপর নানান ঝামেলার সৃষ্টি হয় দ্যান শেষমেশ গিয়ে ব্রেকাপ হয়ে যায়। এই প্রেমের চেয়ে, অপ্রকাশ্য প্রেমই বেটার। যখন দুজন দুজনকে পুরোপুরিভাবে বুঝে নেবে, আবিষ্কার করে নেবে তখন প্রেম শুরু করা উচিত। সেজন্যই তুমি হ্যা নাবলাতে আমার অসুবিধা হচ্ছে না। ”
– ” তুমি এতোসবকিছু জানো কী করে? কয় লাখ প্রেম করছো এই অবধি? ”
– ” লাখ না কয়েক কোটি হবে! ”
– ” আলুর দরের চরিত্র! ”
মিছিলের কথায় মুবিন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

খুব ভালোভাবে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে ওরা ওদের ট্রাভেল ট্রিপের ইতি টানে। পাচদিন ট্রিপের পর সবাই মিলে চট্রগ্রাম চলে আসে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৩!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৩!
লেখক: তানভীর তুহিন!

সকাল ৮ টা বাজে। সবাই জাফলং এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে। হোটেল কায়কোবাদ এরিয়া থেকে জাফলং যাবার মাধ্যম ৪ টা তা হলো লোকাল বাস, অটো কিংবা সিএনজি, মাইক্রোবাস এবং লেগুনা। সবাই মিলে ঠিক করলো ওরা লেগুনা করে জাফলং যাবে। কারন এই বাস, টেম্পু, মাইক্রো এসবে ওরা সবাই’ই চড়েছে। কিন্তু লেগুনায় চড়েনি, আর লেগুনায় সচরাচর চড়াও হয় না। তাই লেগুনায় যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই, একদম যৌথ ঐক্যমত। দুটো লেগুনা ভাড়া করা হলো, যাবে আসবে প্রতিটা লেগুনা ১২০০ টাকা দরে। ২১ জন হওয়ায় দুটো লেগুনায় অনায়াসেই ম্যানেজ হয়ে গেছে সবাই।

লেগুনা খট খট আওয়াজ শুরু করে পথচলা শুরু করেছে। রাস্তাটা অনেকটা ছ্যাকাখাওয়া প্রেমিকের মতো, একদমই নিশ্চুপ নির্বিকার। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ’ই আর্তনাদ দিয়ে চারপাশ ফাটিয়ে দেওয়া হৃদয়ভাঙন। রাস্তার এই হৃদয়ভাঙন মানে হলো রাস্তার বুকের খোপ খোপ গর্তগুলো। যখনই এই ছোট ছোট গর্তগুলো পিছনে ফেলে লেগুনাটা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই পুরো লেগুনাটা নেচে উঠছে, একদম উঠোন কাপানো নৃত্য যাকে বলে। লেগুনার এই অনাকাঙ্ক্ষিত নৃত্যের তাড়নায় সীমান্ত বিরক্ত হয়ে বলে, ” এই বালের গাড়িতে উঠলাম ক্যা বাল? আমার পাছা তো নাই হইয়া গেলো। এইভাবে চলতে থাকলে আমি আর পাছা নিয়ে হোটেলে ফিরতে পারবো না। ডাইনোসর এর মতো আমার পাছাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে! ”
সবাই’ই লেগুনার এই হেলদোলে বিরক্ত ছিলো। কিন্তু সীমান্তর কথায় সবারই বিরক্তি কেটে গেছে, সকালবেলার তাজা বিনোদনের প্রভাবে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। শাওন লেগুনার ড্রাইভারকে ডাক লাগায়, ” মামা তোমার লেগুনা আর কতক্ষন এমন বিনা গানে নাচানাচি করবো? ”
লেগুনার ড্রাইভারের হাসিমুখের সরল উত্তর, ” এই তো মামা আরোটটু! ”

এখন আর লেগুনা মহাশয় ক্ষ্যাপা ষাড়ের মতো পাগলামি করছে না। একদম ভদ্রগতিতে এগোচ্ছে। লেগুনার প্রবেশদ্বারের পাশের সিটেই বসেছে মুবিন, আর মুবিনের পাশেই মিছিল। একটু বাদে বাদেই মিছিল মুবিনের হাটুতে কনুই দিয়ে ভর দিয়ে বাইরেটা দেখছে। আজ যেনো রোদ আর প্রকৃতির বাসর, ঠিক এমনভাবেই রোদ উঠেছে। মাথার উপর লেগুনার এই লোহার ছাদটুকু না থাকলে হয়তো সবার চামড়া পুড়ে রুটি হয়ে যেতো। বাইরে প্রখর রোদ থাকলেও তেমন গরম লাগছে না, তেমন কি? কোনো গরমই লাগছে না। বরং লেগুনা দ্রুতগতিতে চলার ফলে ফুরফুরে বাতাস লাগছে। বাতাসের ফলে মিছিলের চুলগুলো এসে মুবিনের মুখের বা পাশটায় আছড়ে পড়ছে। মুবিন সেই চুলগুলোর দিকে তাকাতে গিয়ে আর মিছিল নিজের বেহায়া চুলগুলোকে শাসন করতে গিয়ে বারবার চোখাচোখি হচ্ছে দুজনে। মুবিনের বেশ ভালো লাগছে এই চোখাচোখি হওয়ার মুহুর্তটা। যখনই চোখদুটোর কেন্দ্রবিন্দু এক হয়ে যায় তখনই মনে হয় সময়টা যেনো থেমে গেছে, থেমে গেছে যেনো সব, থেমে গেছে নিঃশ্বাস, থেমে গেছে চারপাশ, থেমে গেছে বাতাস, থেমে গেছে আকাশ, চলছে শুধুই দুজনার মাতাল হৃদযন্ত্র। দুজনেই যেনো সেই মুহুর্তে শুনতে পাচ্ছে দুজনার হৃদযন্ত্রের উত্তাল, মাতাল ধ্বনি। নিজের পছন্দের মানুষটার পাশে বসে সকালের এই প্রকৃতিতে ভ্রমন করাটা চরম সৌভাগ্যের, সেই সৌভাগ্যটার রস নিগড়ে সৌভাগ্যটাকে উপভোগ করছে মুবিন।

সকাল ১০ টায় ওরা সবাই জাফলং পৌছায়। সকাল থেকে এই অবধি কারো পেটে কিছু না পড়ায় সবার পেট ক্ষুধায় চো! চো! করছিলো। তাই দেরী না করে সবাই মিলে পাশের একটা ছোট হোটেলে পরোটা, ডিম, ডাল, ভাজি দিয়ে নাস্তা সেড়ে নেয়। তারপর সবাই মিলে ঘোরা শুরু করে জাফলং। আজ জাফলং এর পুরোটা ঘুরে নেবে ওরা, কারন ট্রিপ পাচদিনের। আর পাচদিনে পুরো সিলেট ঘুরতে হবে, পুরো সিলেট বলতে পুরো সিলেট না। কিছু কিছু বিখ্যাত ভ্রমনযোগ্য যায়গা আরকি।

পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে হাটছে সবাই। চারপাশটা এতোটা মনোমুগ্ধকর যে তা বলে প্রকাশ করা অসম্ভব। এই পৃথিবীতে এমন কিছু কিছু জিনিস থাকে যার সমন্ধ্যে বলার জন্য শব্দকোষে শব্দ কম পড়ে যায়, ওদের সামনের দৃশ্যপট’ও ঠিক তেমন। সবাই চোখ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে বিচিত্র প্রকৃতির, বিচিত্র রঙ। মিছিলও দেখছে, মুবিন দেখছে তার প্রকৃতিকন্যাকে। হ্যা জাফলংকে অনেকেই প্রকৃতিকন্যা বলে, আর এটা সত্যিও যে জাফলং যায়গাটা এই খেতাব পাবার যোগ্য। কিন্তু মুবিনের কাছে যে তার প্রকৃতিকন্যা শুধুই মিছিল। একমাত্র মিছিলই!

চারপাশ হেটে হেটে ঘুড়ে দেখা শেষ। এই অপরুপ প্রকৃতি দেখিয়ে নিজের চোখকে ধন্য ও সার্থক করা হয়ে গেছে সবার। এবার নিজের দেহটাকে প্রকৃতি মাখিয়ে সার্থক করার পালা। জাফলং এসে যদি ঝর্নার পানিতে গোসল না করা হয় তাহলে সেটা একদমই প্রকৃতিবিরোধী কাজ। কে না চাইবে? এই হীরার মতো সচ্ছ পানিতে নিজের দেহটাকে বিলিয়ে দিতে? কে না চাইবে এই ঝরনার আছড়ে পড়া পানির শব্দে হারিয়ে যেতে? প্রকৃতিপ্রেম থাকলে এসব চাইতে আপনাকে হবেই। সবাই প্রকৃতিকে সমর্থন করে ঝর্নার পানিতে গোসল করে নিলো। তারপর টুকটাক হালকা খাবার খেয়ে নিয়ে সবাই জাফলং এর আশপাশের যায়গাগুলো ঘুরে দেখা শুরু করলো।

বিকাল ৪ টা বাজে। সারাদিনে কারো পেটেই ভাত পড়েনি। সবার পেট এখন ভাত চাই! ভাত চাই! করছে। তাই সবাই এখন পেটের দাবি পালনে হোটেলে ঢুকবে। সবাই মিলে জিন্দাবাজার এলাকার পালকি রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। জিন্দাবাজার এলাকায় বেশ বিখ্যাত এই পালকি রেস্টুরেন্ট। এখানে প্রায় ত্রিশ রকমের ভিন্ন ভিন্ন ভর্তা পাওয়া যায়। অবশ্য জিন্দাবাজার এলাকার প্রায় সব হোটেলেই এরকম নানা পদের ভর্তা পাওয়া যায়। সবাই মিলে খাওয়া শুরু করলো। যেহেতু এখানের ওয়ান অফ দ্যা স্পেশাল ডিশ ভর্তা, তাই সবাই ভর্তা দিয়েই শুরু করলো। আর আশ্চর্যজনক বিষয় হলো সবাই এই বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে ভাত টেষ্ট করতে গিয়েই ক্ষুধার্ত পেটকে ঢোল বানিয়ে ফেললো। পেট ঢোল হয়ে যাওয়ায় কেউ আর অন্য কোনো তরকারি টেষ্টই করতে পারলো না। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপের পর, চায়ের দেশ সিলেটের স্পেশাল চা খেয়ে সবাই সন্ধ্যা সাতটায় হোটেলে ফেরে।

হোটেলে ফিরে অনেকেই পেট নামক ঢোল আগলে ঘুমিয়ে পড়ে। মুবিনেরও ভর্তাগুলো বেশ ভালো লেগেছিলো, কিন্তু ও বেশি খায়নি। সেই কারনে ঘুমও আসেনি ওর। তবে শরীরটা ক্লান্তির চোটে ম্যাচ-ম্যাচ করছিলো। মুবিন আর মিছিলের ঘর একদম পাশাপাশি। মুবিন বেলকনিতে গিয়ে মিছিলকে ফোন লাগায়। দুবার টানা রিঙ হয়ে কেটে যায়, তিনবারের বার ফোন ধরে।

ওপাশ থেকে মিছিলের কাতর কন্ঠ, ” হ্যালো, এতোবার ফোন দিচ্ছো কেনো? ”
– ” এভাবে কাতরাচ্ছো কেনো? এখনও পেটে ভর্তা দৌড়াদৌড়ি করতেছে নাকি? ”
– ” উহহু! উহু! উহুহু! উহু! উহু ”
– ” আরে নাকিকান্না কাদবা নাকি কিছু বলবা? ”
– ” বেশি খেয়ে ফেলছি। এখন পেট ব্যাথা করতেছে! ”
– ” আরে আস্তে আস্তে ঠিক হবে। শুধু শুধু প্যানিক হয়ে ঘ্যান ঘ্যান করবা না তো? ”
– ” ফোন রাখ তুই! ”
মিছিল মুবিনকে ঝারি মেরে ফোন কেটে দেয়।

মুবিনের পেট পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় মুবিন ফার্মেসিতে চলে যায়। আর ফার্মাসিস্টকে সবার পেট ঢোল হবার ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে, মধ্যবয়স্ক ফার্মাসিস্ট মহাশয় তো হাসিতে অক্কা পায় পায় অবস্থা। অবশেষে হাসি কোনোমতে পকেটচাপা দিয়ে সে মুবিনকে এক বক্স হজমের ট্যাবলেট দেয়। মুবিন রিসেপশনে গিয়ে বলে এই ট্যাবলেট গুলো যাতে স্টাফ দিয়ে ওর সাথের সবার রুমে দিয়ে দেওয়া হয়।

মুবিন একটা ট্যাবলেট নিয়ে মিছিলের রুমের দড়জার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় দুই মিনিট যাবৎ দড়জা ধাক্কাচ্ছে, কিন্তু মিছিল খুলছে না। তার একই প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান সে নাকি নড়তেও পারবে না, কারন তার পেট ব্যাথা করছে। অবশেষে মুবিন কোনো উপায় না পেয়ে বেলকনি দিয়ে মিছিলের রুমে ঢোকে। ওদের রুম পাশাপাশি হওয়ায় বেলকনি দুটোও একদম পাশাপাশি, তাই এই বেলকনি পেড়িয়ে ওই বেলকনিতে যেতে মুবিনের তেমন কোনো কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। এই কাতর অবস্থায় মুবিনকে রুমে দেখে হতবাক হয়ে যায় মিছিল। সে তো দড়জা খোলেনি তাহলে মুবিন রুমে আসলো কোত্থেকে? বেশি খাবার ফলে কী হ্যালুসিনেশন হয় নাকি? মিছিল হাতদুটো পেট থেকে কোনোমতে সড়িয়ে নিয়ে চোখ দুটো একটু জোড়ালো ভাবে ডলে নেয়। এটা কীরকম হ্যালুসিনেশন? চোখ ডললাম তাও গেলোনা? কই ফিল্মে তো চোখ ডললেই চলে যায়? এসব ভেবে ভেবে আবারও চোখ ডলে নেয় মিছিল। না এবারও তো গেলো না, এখনও তো সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। মুবিন মিছিলের তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, তামাশার সময়কাল দীর্ঘ না করে মুবিন ঝাড়ি মারে, ” পেটে যতটুকু ধরে তার বেশি খাও ক্যান? এখন তোমার সাথে আমার প্রেম করার কথা ছিলো। তা না করে কী করছি আমি? ফার্মেসিতে গিয়ে হজমের ট্যাবলেট কিনে, বেলকনি টপকে তোমার রুমে তোমায় হজমের ট্যাবলেট খাওয়াতে আসছি। আমার কপালটারে এভাবে ফুটা কইরা দিলা ক্যান? ”
মিছিল খানিক কেপে ওঠে। আরে এ তো মুবিন’ই, কোনো হ্যালুসিনেশন ফ্যালুসিনেশন না। মিছিল মুবিনকে মুবিনের থেকেও জোরে ঝাড়ি মেরে বলে, ” একেতো আমার প্রাইভেসি নষ্ট করে চোরের মতো আমার রুমে ঢুকছো। তারউপরে আমার উপরেই ঝারি মারতেছো? কেনো মারতেছো? আমার পেট আমি যা ইচ্ছা তাই করবো, আমার পেটে আমি খাবার ঢুকাবো, জাহাজ ঢুকাবো, গোলাবারুদ ঢোকাবো, ক্ষেপণাস্ত্র ঢোকাবো, বাচ্চা ঢোকাবো সেটা আমার ইচ্ছা। তোমার কী? ”
– ” বাচ্চা ছাড়া বাকি যেসব বলছো ওগুলো পেটে ঢোকাতে ইচ্ছে করলে ঢোকাও। তবে তোমার পেটে বাচ্চা তো আমিই ঢোকাবো মিছিল মনি! ” বলেই হালকা মৃদু মুচকি হাসে মুবিন।
– ” মুবিইইইন্না! পেটের এই অবস্থা না হলে এখনই তোর পিঠে আমি তবলা বাজাইতাম! ”
– ” আমার পিঠে তবলা বাজানোর দরকার কী? নিজের পেটই তো ঢোল হয়ে আছে। ওটায় বাজাও, বেশ রিদম আসবে। এই আমি না ভালো ড্রাম বাজাই, বাজাবো তোমার পেটে? ”
মিছিল নাকিকান্না কাদে। মিছিল হতাশ অসহায় কন্ঠে বলে, ” তুই কী আমায় জ্বালাইতে আসছস এখানে? ”
– ” তুমি না একদমই জন্মনিরামিষ। আমি কই কেয়ারিং লাভারের মতো তোমার জন্য হজমের ঔষধ নিয়ে আসলাম। তোমায় রিলিফ দেবার জন্য, আর তুমি কিনা আমার কেয়ারিং ন্যাচারকে, আমার প্রেমকে জ্বালা বলে অপমান করছো! ”
– ” মেডিসিন আনছো? তাহলে প্লিয বকবক না করে দাও! ”
মুবিন গ্লাসে পানি নিয়ে নিজের হাতে মিছিলকে ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর পাশে বসে বলে, ” আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই, তুমি ঘুমাও। ঠিক আছে? ”
– ” আহাহা! আলহাদ পাইছে উনি। ঢং! উনি আমার বিয়ে করা জামাই লাগে উনি মাথায় হাত বুলায় দিবে আর আমি ঘুমাবো। রুম থেকে বের হ তুই! ”
– ” ফ্যাচফ্যাচ ভালো লাগতেছে না। তুমি জানো আমি বলছি মানে বলছি’ই। আর আমি তো কোনো অন্যায় আবদার করতেছি না, শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে চাচ্ছি। আর এটা তো আমি তোমার সেবা করছি, আচ্ছা তুমিই বলো বিয়ের পরে আমি অসুস্থ হলে তুমি আমার সেবা করবা না? তুমি যেটা বিয়ের পরে করবা, সেটা আমি বিয়ের আগে করছি। ব্যাস শেষ! ”
– ” এতো লজিক আমি শুনবো না। আমি ঘুমায় গেলে যদি তুমি উল্টাপাল্টা কিছু করো? তখন? ”
– ” তুমি হজমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমাচ্ছো কোনো স্লিপিং পিল কিংবা মদ খেয়ে ঘুমাচ্ছো না। যে আমি তোমার সাথে উল্টাপাল্টা করলে তুমি টের পাবা না! ”
– ” তবুও তুমি বের হও রুম থেকে! ”
– ” প্রমিস শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবো। আর তুমি ঘুমিয়ে গেলেই বেলকনি টপকে আমার রুমে চলে যাবো। উঠে তোমার দরজাও লাগাতে হবে না। আর ঘ্যানঘ্যান কইরো না, ঘুমাও। ” বলেই মুবিন মিছিলের মাথায় হাত বোলানো শুরু করে। মিছিলও আর তর্কে না জড়িয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে নেয়, ঘুমানোর চেষ্টায়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১২!

0

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১২!
লেখক: তানভীর তুহিন!

মিছিল বলে, ” হাত ছাড়ো মুবিন। এখন লিমিট ক্রস করছো তুমি! ”
মুবিন হেসে বলে, ” কিছুই তো করলাম না। তাহলে লিমিট ক্রস হলো কোথায়? ”
মিছিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মুবিনের স্পর্ষে তার বুকে ধ্রিম ধ্রিম শব্দে ঢাক, ঢোল, ড্রাম সব একসাথে বাজছে। মুবিন খানিক চওড়া হেসে মিছিলের হাতটা ধরে আছে, মিছিলের হাতের উল্টোপিঠে থাম্বফিংগার দিয়ে স্লাইড করছে মুবিন। মুবিনের এই অতিসাধারণ ছোয়ায়’ও মাতাল হয়ে উঠছে মিছিলের মন। মিছিল চোয়াল শক্ত করে বলে, ” মুবিন ছাড়ো! ”
মুবিন সঙ্গে সঙ্গে মিছিলের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, ” আচ্ছা ছেড়ে দিলাম। তবে এখান থেকে যেয়ো না, কিছুক্ষন দাড়াও এখানে! ”
মিছিল চুপচাপ ট্রেনের দরজার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মুবিন ট্রেনের অবিরাম পথচলা দেখছে, মিছিলও দেখছে। মুবিন বাইরের আধো ঝাপসা রেললাইনের পাশের চলমান রাস্তা দেখতে দেখতে মিছিলকে বলে, ” আচ্ছা মিছিল তুমি আমায় ভালোবাসো এটা কবে বলবে? ”
মিছিলের চটজলদি জবাব, ” কোনোদিনও না। কারন আমি তোমায় কোনোদিনও ভালোবাসবো না! ”
মুবিন দাত বের করে হেসে আত্মবিশ্বাসী বাক্যে বলে, ” এজন্য’ই তো তোমায় আরো বেশি করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ”
মিছিল চোখ সরু করে বলে, ” মানে? কীসের জন্য বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে? ”
– ” এইযে তুমি এতো নিশ্চিতভাবে বলো যে কোনোদিনও ভালোবাসবে না। এটাই আমায় আভাস দিয়ে দেয় যে তুমি আমায় ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছো। আর এরকম আভাস পেলে যেকারোরই ভেতরকার প্রেম ফুলে-ফেপে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক! ”
– ” কোত্থেকে যে পাও এসব মুলাপচা লজিক, গড নৌস। ”
– ” জানবে, তুমিও একদিন জানবে। আর যেদিন জানবে সেদিন এই মুলাপচা লজিকগুলোই তোমার কাছে চকলেট আইস্ক্রিমের মতো লাগবে! ”
– ” হু! যা! তা! যত্তসব! ”
মুবিন আর মিছিল ছোটোখাটো ধরনের একটা তর্কে জড়াচ্ছিলো। তখনই শাওন এসে বলে, ” কীরে তোরা এখানেই দাঁড়ায় থাকবি নাকি? এখানে যদি দাঁড়িয়েই থাকবি তাহলে টাকা খরচ করে ট্রেনের টিকেট কিনলি কেনো? ”
মুবিন শাওনকে ধমক দিয়ে বলে, ” তুই শালা শান্তিতে প্রেমও করতে দিবি না। দেখছিস যখন এখানে দাঁড়িয়ে আছি, তারমানে নিশ্চই প্রেম করছি তাইনা? ”
মিছিল চোখ রাঙিয়ে তাকায় মুবিনের দিকে। তারপর শাওনকে বলে, ” আমরা মোটেই প্রেম-ট্রেম করছি না রে এখানে। তুই সিটে চল তো! ” বলেই মিছিল সিটের দিকে আগায়।
শাওন মুবিনকে বলে, ” কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যাবিনা? চল সিটে চল! ”
– ” তোরা যা একটা সিগারেট টেনে আসছি! ”
– ” আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়! ”
মিছিল মুবিনকে সিগারেট না খাওয়ার জন্য বলবে ভেবেছিলো। কিন্তু কী না কী ভেবে কথাটা না বলেই চলে যায় মিছিল। মিছিল আর শাওন চলে গেলেই মুবিন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ধোয়া টানা শুরু করে, ছোট ছোট টান দিয়ে সিগারেটের ধোয়া ভেতর বাহির করছে মুবিন। এক অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে তার মধ্যে!

মুবিন একটা সেন্টার ফ্রুট মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে গিয়ে সিটে বসলো। মুবিন গিয়ে বসতেই যেনো আড্ডাটা জমজমাট হলো। এতোক্ষন চারপাশে কথা তো হচ্ছিলো কিন্তু তেমন প্রান ছিলো না এই আড্ডায়। বগির প্রায় অর্ধেকটা জুড়েই ওরা, ২১ জনের প্রায় সবাই’ই সিট ছেড়ে উঠে সিটে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথায় কথায় চৈতি মুবিনকে গান গাইতে বলে। মুবিন অবশ্য গান গাইবে বলে, নিজের গিটারটা নিয়ে এসেছিলো। তাই আর দেরি না করে গিটারের টুং! টাং! শব্দের সাথে সুর তোলে মুবিন,

” মনে পড়ে রুবি রায়
মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে
একদিন কত করে ডেকেছি!
আজ হায় রুবি রায় ডেকে বল আমাকে
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি

মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে
একদিন কত করে ডেকেছি!
আজ হায় রুবি রায়, ডেকে বল আমাকে
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি

রোদ জ্বলা দুপুরে, সুর তুলে নূপুরে
বাস থেকে তুমি যবে নাবতে
রোদ জ্বলা দুপুরে, সুর তুলে নূপুরে
বাস থেকে তুমি যবে নাবতে

একটি কিশোর ছেলে একা কেন দাঁড়িয়ে
সে কথা কি কোনোদিন ভাবতে?

মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে
একদিন কত করে ডেকেছি!
আজ হায় রুবি রায় ডেকে বল আমাকে
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি

দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায়
দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায়, হৃদয়ের জানালায়
কান্নার খাঁচা শুধু রেখেছি
দ্বীপ জ্বলা সন্ধ্যায়, হৃদয়ের জানালায়
কান্নার খাঁচা শুধু রেখেছি

ও পাখি সেতো আসে নি
তুমি ভালোবাসনি
স্বপ্নের জাল বৃথা বুনেছি

মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে
একদিন কত করে ডেকেছি!
আজ হায় রুবি রায় ডেকে বল আমাকে
তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি

মনে পড়ে রুবি রায়
মনে পড়ে রুবি রায়! ”

সবাই মুবিনের সাথে সুর মেলায়। তারপর একে একে সীমান্ত, চৈতি, অলোক, শ্রাবন সবাই’ই গান গায়। সীমান্ত অবশ্য একটা ইংলিশ গান গেয়েছিলো, কারন ওর ইংলিশ একসেন্ট এবং গানের সুর এককথায় চরম জোশ। তারপর গান গাওয়ার পালা আসে মিছিলের, প্রথমে গাইবে না গাইবে না করলেও পরে গেয়ে ফেলে। মিছিল গায় ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত!’ গানটা। মিছিল যখন গান গাইছিলো তখন মুবিন ওর গানের তালে তালে গিটার বাজাচ্ছিলো আর স্থির মুগ্ধ নয়নে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো মিছিলকে। মুবিন যখন এভাবে স্থির মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো মিছিলকে, তখন মিছিলের মনে হচ্ছিলো কেউ অতি নিকট থেকে তাকে আলিঙ্গন করছে।মিছিলের গান গাওয়া শেষ হতেই মুবিন নিজের হাতটা মিছিলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ” এই নাও বাড়িয়ে দিয়েছি আমার হাত, তুমি আমার আঙুল ধরে! আমায় ধরে হাটতে পারো। ”
মিছিল মিথ্যে চোখ গরম দেখিয়ে হেসে দিয়ে বলে, ” ধুর! ”
সবাই একসাথে হো হো করে হেসে ওঠে মুবিন মিছিলের রঙ্গতামাশায়।

আসলেই কী কেউ তাকিয়ে থেকেই এভাবে মাতাল করে দিতে পারে কাউকে? শুধুমাত্র চাহনিতেই কী যাদুর তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে অনুভুতির ঢেউ কে উত্তাল করে দেওয়া যায়? হ্যা যায় হয়তো, নাহলে মুবিন কীভাবে পারছে? ওর প্রত্যেকটা চাহনি’ই যেনো কামিয়াব এবং সফল। কীভাবে পারছে আমায় অদৃশ্যভাবে কাছে টেনে নিতে? এসব ভেবে ভেবে ছোট ছোট মুহুর্তগুলোকে অতীত করছে মিছিল। সামনেই মুবিন বসা। থুতনিতে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে রক্তিম আকাশের পানে, আকাশটাকে যেনো কেউ খুন করেছে। এলোপাথাড়ি যেনো কোপানো হয়েছে আকাশটাকে, পশ্চিম আকাশটা রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। সেই রক্তিম আকাশের শেষ প্রান্তের নিভু হলুদ রঙের সূর্যটা আকাশের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তলিয়ে যাচ্ছে অজানায়। অনেকটা অপরাধির মতো তলিয়ে যাচ্ছে, হয়তো অনুসন্ধান করলে জানা যাবে এই রক্তাক্ত আকাশের খুনি এই নিভু হলদে রঙা সূর্যটা। যার বুকে সে সারাটাদিন ছিলো তাকেই খুন করে পালিয়ে যাচ্ছে? কেনো খুন করলো? এতোটা স্বার্থপর কেনো হলো সূর্যটা? বেইমান! অকৃতজ্ঞ! বিশ্বাসঘাতক সূর্য! এসব আবোলতাবোল ভাবছে মিছিল। কেনো ভাবছে? এই প্রশ্নের তদন্ত করবে সে। হ্যা এখনই তদন্ত শুরু করবে। মিছিল অবান্তর বিষয়টা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে যাবে তার আগেই মিছিলকে অবাক করে দিয়ে মুবিন মিছিলের হাতটা ধরে।
হঠাৎ হাত ধরলো কেনো? এতক্ষন তো আকাশ নিয়ে গবেষনা করছিলো জনাব, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই হাত ধরে বসলো? কথাটা ভেবেই মিছিল পাশে তাকালো। সবাই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। মিছিলের পাশে বসা চৈতি ঘুমোচ্ছে, মুবিনের পাশে বসা শাওন-সীমান্ত’ও ঘুমোচ্ছে। মিছিলের ইচ্ছে করছেনা মুবিনকে কটুকথা শুনিয়ে মুবিনের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে, তাই হাতটা আর ছাড়িয়ে নিলো না মিছিল। শুধু মুখে একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন এনে চোখ দিয়ে নিজের হাতের দিকে ইশারা করে চোখ নাচিয়ে ইঙ্গিতে মুবিনের কাছে হাত ধরার কারন জানতে চায় মিছিল। মুবিন প্রশ্ন বুঝেও কোনো উত্তর দেয় না, উত্তর না দিয়েই মিছিলের হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে। মিছিলের চেহারার প্রশ্নবোধক চিহ্নটা আরো গাঢ়ো হয়ে ওঠে। মিছিলের চেহারায় থাকা গাঢ়ো প্রশ্নবোধক চিহ্নটা মুছে দেবার কোনো ভ্রুক্ষেপ’ই নেই মুবিনের। তার সমস্ত ভ্রুক্ষেপ এখন মিছিল! শুধুই মিছিল!, মিছিলের চেহারার প্রশ্নবোধক চিহ্ন না।
মুবিন মিছিলের হাত ধরার শক্ততার মাত্রা বাড়িয়ে মিছিলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আই লাভ ইউ মিছিল মনি! ”
কথাটা শুনতেই পরাপর লাগাতার বেশ কয়েকবার হার্ট বিট মিস করে মিছিল। প্রোপোজ করার একটা অতিসাধারণ ধরন আই লাভ ইউ বলা, এর আগেও বহু ছেলের মুখে বহুবার আই লাভ ইউ শুনেছে সে। কিন্তু কখনো এমন ভালোলাগা, এমন মুগ্ধতা, এমন স্নিগ্ধতা, এমন প্রাপ্তি অনুভব করেনি সে। কী আছে মুবিনের মধ্যে? কী দিয়ে দিন দিন আমায় পাগল করে নিচ্ছে ও?
মুবিন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মিছিলের চোখ দুটোর পানে, মিছিলের চোখ দুটোও স্থিরভাবে তাক করা মুবিনের চোখদুটোর দিকে। মিছিল অস্ফুট বাক্যে বলে, ” হঠাৎ এসব বলছো? ”
মুবিন মিছিলের হাতটা ছেড়ে দেয়, মিছিল চাচ্ছিলো মুবিন আরেকটু ধরে রাখুক হাতটা। একদম শক্ত করে ধরে রাখুক। কিন্তু মিছিলের ইচ্ছাটা অজানাই রয়ে যায় মুবিনের, মুবিন হাতটা ছেড়ে দিয়ে নরম গলায় বলে, ” আকাশ দেখে খুব ইচ্ছে করছিলো আমার সাহিত্যকনাটাকে প্রেম নিবেদন করার। তাই দেরী না করে বলে দিলাম! ”
মিছিল নিভু গলায় ছোট করে বলে, ” ওহ! ”
মুবিন আর কিছু না বলে, আকাশ দেখায় মনোযোগ দেয়। তার সবচেয়ে কাছের বস্তু এই আকাশ! যদিও অবস্থানের দিক থেকে অনেক দূরত্ব এই দুই বন্ধুর মাঝে। তবুও অন্তরাত্মার দিক থেকে তারা অতি সন্নিকটে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ট্রেন এসে সিলেট রেলস্টেশনে দাড়িয়েছে। সবাই গা”ছেড়ে দিয়ে ট্রেন থেকে নেমেছে, সবারই ঘুম আধপাকা হয়ে আছে। শুধু মুবিন আর মিছিলের ছাড়া।
রেলস্টেশন থেলে লেগুনায় চড়ে সবাই সিলেটের আম্বরখানার হোটেল কায়কোবাদে গিয়ে উঠলো। গতকাল রাতেই এখানে সবার জন্য রুম বুক করে রেখেছিলো মুবিন।
সবাই হোটেলের ডাইনিং এরিয়ায় খাবার খেয়ে যে যার রুমে গিয়ে গা এলিয়ে দেয়। কার সবার’ই ক্লান্তিতে গা ছেড়ে দিয়েছে প্রায়।

#ExtremelySorry
আসলে আইডির নানাবিধ সমস্যা এবং একশ্যন ব্লক’স এর কারনে সবাইকে গড়ে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছি। তাই যেসব পাঠক আগে আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে ছিলেন তারা রিকোয়েস্ট পাঠান, আর অবশ্যই রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে এই পোষ্টে কমেন্ট করবেন অথবা ইনবক্স করবেন। আর হ্যা যেসব পাঠক আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন অথচ আমি এক্সেপ্ট করিনি তারাও এই পোষ্টে কমেন্ট করুন! ❤

সাময়িক বিভ্রাটের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত! ?

চলবে!
#thetanvirtuhin