খাদ থেকে পড়ে যাওয়ার সময় ওমেগার মনে হলো সে কোনো সুরঙ্গে প্রবেশ করছে।মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো সে।মাথার পিছনে হাত দিতেই চিপচিপে রক্ত ভেজা পেলো।এরপর বেহুশ হয়ে গেলো।কোথায় সে পড়েছে কিছু মনে নেই তার।
চোখ মেলে তাকালো ওমেগা।ঠিক কতক্ষণ বা কতদিন পর সে সম্পর্কে ধারণা নেই তার।সে হাওয়ায় ভাসছে বলে মনে হলো তার কাছে।আশে পাশে তাকাতেই দেখলো একটা ছোট খুপরি ঘরে হাওয়ায় ভাসছে সে।দেয়ালের আশেপাশে বিভিন্ন ধরণের চোখসহ আজগুবি নকশা আঁকা।আশেপাশে আবার চোখ ভুলিয়ে নিলো সে।এরপর চোখ বুঝে মুখে কিছু বির বির করলো।ঠাস করে পড়ে যেতে লাগলো সে।ওমেগা ভেবেছিলো সে সোজা ফ্লোরে যেয়ে পড়বে কিন্তু সে ফ্লোর ভেদ করে নিচের দিকে পড়ে গেলো।
হালকা হালকা ভাবে তাকালো ওমেগা।আবারো মাথায় আঘাত পেয়েছে সে।বেশ ভালো ভাবেই পেয়েছে।মাথায় হাত দিতেই কিছু হাতড়ে পেলো সে।টান দিয়ে মাথা থেকে খুলে নিয়ে এলো।এক ধরণের চামড়ার সাহায্য নিয়ে মাথা বাঁধা হয়েছিলো তার।কিন্তু এগুলো কিসের চামড়া কে-ই বা বেঁধে দিয়েছে।অথবা সেই বা আছে কোথায়?
রক্তমাখা মাথাটা বাঁধার জন্য নিজের শার্টের হাতা ছিড়ে ফেলে নিতে লাগলে খেয়াল করলো তার শরীর অবশ হয়ে আসছে।সে কিছুতেই শার্টের হাতা ছিড়তে পারছেনা।প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে সে উঠে দাড়াতে লাগলো কিন্তু সে দাড়াতে পারছে না।অবশ হয়ে যাচ্ছে শরীর।নিজের সাথে বহু যুদ্ধের পর কিছুদূর আগাতে পারলো সে।তিন চোখ আঁকা এক দরজা দেখতে পাচ্ছে সে।দরজার আড়ে এসে ধপ করে বসে পড়লো ওমেগা।বিন্দুমাত্র চলার শক্তি যে নেই আর তার।
একটা ঘরের সমস্তটুকু জুড়ে ইলুমিনাতির বিভিন্ন জিনিস আঁকা।কোথাও কোনো ইঞ্চি ফাঁকা নেই।ওমেগা বুঝতে পারলো সে এমন কোনো জায়গায় এসেছে যেখানে সরাসরি শয়তানের উপাসনা করা হয়।সাইডে চোখ চলে গেলো ওমেগার।সেখানে এক বিস্তর জুড়ে রক্তের দাগ লেগেছে।বিভিন্ন সীসা থেকে শুরু করে এক বড় কড়াইয়ে দাও দাও করে রক্ত ফুটছে।আর সেই রক্ত থেকে বেরিয়ে আসছে কিছু আর্তনাদ এবং কান্না।সারা শরীরে এক রোমহর্ষক শিহরণ বয়ে গেলো তার।কারো আসার শব্দে কিছুটা সরে গেলো ওমেগা।আবার চোখ রাখলো দরজার ফাঁকে।দেখলো দুইজন কেউ এলো ঘরটাতে।সাথে একজন মানুষকে নিয়ে এলো।দুইজনের সারাশরীরে ইলুমিনাতর চিহ্ন আঁকা।ওমেগা দেখলো মানুষটা আকুতি মিনতি করছে তাদের পা ধরে।মনে হচ্ছে মানুষটি কোনো মেয়ে।কিন্তু তারা কোনো কিছু শুনলো না।এর মধ্যে কোনো এক অদ্ভুত লম্বাটে বস্তু এসে তাদের হাতে কোদাল দিয়ে দিলো আর সেই কোদাল দিয়ে একজন মানুষটিকে দু’ভাগ করে ফেললো।চোখ বন্ধ করে ফেললো ওমেগা।এমন বস্তু চোখের সামনে দেখা অসম্ভব।আবার কিছুক্ষন পর চোখ মেললো ওমেগা।দেখলো তারা মানুষটাকে কাটছে এবং যত্ন সহকারে টুকরাগুলো সেগুলো চেটেপুটে খাচ্ছে।আর কিছু মাংস পাশে রেখে দিচ্ছে।এরপর সদ্য জবাই করা লোকটির রক্তগুলো তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে তারা।মুহুর্তের মাঝেই তাদের দানব ভ্যাম্পায়ার হয়ে উঠতে দেখলো ওমেগা এবং সেই সাথে গুটিখানিক ভ্যাম্পায়ার এসে তাদের কাছে রক্ত চাইতে লাগলো খাওয়ার জন্য।সবাইকে অর্ধ জবাই করা মাংসের দলার কাছে পাঠানো হলে তারা যেয়ে মাংসের দলা থেকে রক্তগুলো চেটেপুটে খেতে লাগলো।সে এক অসহ্যনীয় দৃশ্য।গা গুলিয়ে আসছে ওমেগার।সেই সাথে বুঝতে পারলো তার মাথায় তখন মানুষের চামড়া বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো।কিন্তু কারা এরা?চেহারার মধ্যে তিন চোখ ওয়ালা মাস্ক ঢেকে দেওয়া আর মুহুর্তের মাঝে দানব ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাওয়া।সব গড়মিল লেগে যাচ্ছে তার।হঠাৎ মনে হলো কেউ তার দিকে এগিয়ে আসছে।সামনে আসতে আসতে দেখলো গুটিখানিক চোখজোড়া তার দিকে এগিয়ে আসছে।সাথে সাথে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলো সে। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ওমেগা চোখ মেলে দেখলো যে সে শুয়ে আছে।তার পাশে বসে আছে এরিনের বাবা।চোখ মুখ ফুলে অবস্থা একাকার তার।
-আঙ্কেল আপনি এখানে?
-ওমেগা!তুমি দুইদিন যাবত এই হসপিটালে ছিলে।তোমাকে হাইওয়ে থেকে পেয়েছিলাম আমরা অজ্ঞান অবস্থায়।ডাক্তার বলেছে ব্রেইনে খুব এফেক্ট পড়েছে তোমার।
-আঙ্কেল এরিন কোথায়?
-ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ওমেগা।শেষ এক সপ্তাহ আগে ওর সাথে কথা হয়েছিলো আমাদের।এরপর ওকে ওর বাসায় খুঁজতে যাই।কিন্তু ওকে নাকি কোথাও দেখা যায়নি।তারপর খোঁজ নিয়ে তোমার বাসায় যেতে নিলেই দেখি তুমি হাইওয়ে তে পড়ে আছো।রক্তে গড়াগড়ি খাচ্ছিলে।
ওমেগা যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।তার মানে সেই স্বপ্ন থেকে শুরু করে সবকিছু একদম সত্যি ছিলো?তারা কি এরিন কে মেরে ফেলেছে?সে কি হারিয়ে ফেলেছে এরিন কে?চিরদিনের জন্য?????
-ফাদার যোসেফ!ফাদার যোসেফ কোথায় আপনি?
-হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই সন?এভাবে চিৎকার করছো কেন?কি হয়েছে?
-ফাদার ইউ নো মাই গার্লফ্রেন্ড এরিন।
-ইয়েস আই নো হার।বাট কি হয়েছে এরিনের?
-আমি তাকে খুঁজে পাচ্ছি না ফাদার।আমার এরিন কে ওরা কোথায় যেন লুকিয়ে রেখেছে।
-কারা লুকিয়ে রেখেছে তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে?
-ভ্যাম্পায়ার রা।
-কি বলছো তুমি ওমেগা এসব?
-আমি ঠিকই বলছি ফাদার যোসেফ।এরপর ওমেগা সব কিছু খুলে বললো ফাদার যোসেফ কে।
-এরিন কে কি আমি ফিরে পাবো ফাদার যোসেফ?বলুন না।আপনি তো ভবিষ্যত সম্বন্ধে ভালো ধারণা দিতে পারেন।
-আমি দেখছি মাই চাইল্ড।
ফাদার যোসেফ গির্জার শেষ প্রান্তের টেবিল থেকে বাইবেল টা তুলে নিলেন।এরপর কিছু মন্ত্র পড়া শুরু করেন বির বির করে।তারপর ওমেগার কাছে ফিরে এলেন।
-মাই চাইল্ড অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে তোমার ভালোবাসার মানুষটি আর এই পৃথিবীতে নেই।ওরা তাকে শেষ করে দিয়েছে।বি স্ট্রং!
কথাটা বলেই হালকা ঘাড় চাপড়ে দিয়ে চলে গেলেন ফাদার যোসেফ।ওমেগার চোখ লাল হয়ে এসেছে।ভীষণ মাথা ব্যথা ধরেছে।হঠাৎ করে চোখ ছেড়ে পানিগুলো জলপ্রপাতের মতো গড়িয়ে পড়তে লাগলো।আস্তে করে ধপ করে বসে পড়লো ওমেগা।জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো
-এরিন!!!!!!!
ঘুম থেকে ধপ করে উঠে পড়লো ওমেগা।কি স্বপ্ন দেখলো সে এটা।সিডনিতে ঠান্ডায় রীতিমতো কাপাকাপির অবস্থা কিন্তু ওমেগা দরদর করে ঘামছে।প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয় যে জেগেছে মনে।এক্ষুনি এরিনকে ফোন দেয়া প্রয়োজন তার।এরিন কে কল দিলো সে।কিন্তু এরিন কল তুলছে না।চিন্তায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে ওমেগার।কিছু না ভেবেই রওনা দিলো এরিনের বাসার উদ্দেশ্য নিয়ে।
ওমেগা জিপ চালাতে চালাতে খেয়াল করে পিছনে কে যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে।ওমেগা বিড় বিড় করে কিছু পড়ে তাকাতেই যেন দেখে একজোড়া লাল চোখ আর রক্তাক্ত বড় বড় দাঁত তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।বুক-পিঠ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন।বিভৎস এক চেহারা দেখে ঘৃণা লাগছে ওমেগার। হুট করে হাতের রক্তাক্ত নখ গুলো দিয়ে ওমেগার মুখে আচড় টানতে গেলে ওমেগা হাত দিয়ে তাকে স্পর্শ করলো এবং সাথে সাথে জ্বলে পুড়ে ভ্যানিশ গেলো ভ্যাম্পায়ারটি।
-ডা…ডাইনামিক ভ্যাম্পায়ার? বললো ওমেগা। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কোনোমতে নিজের গলায় ঝুলে থাকা একটা কালো রঙয়ের পেনডেন্টে চুমো আঁকলো ওমেগা।এই লকেট টার জন্য আজ বেঁচে গিয়েছে সে।জিপ আবার সামনে টানতে লাগলো ওমেগার।হঠাৎ করে জোরে জিপের ব্রেক ঘষলো ওমেগা।দেখলো গাছে এরিনের লাশ ঝুলছে।বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো তার।সোজা জিপ থেকে নেমে লাফ দিলো সে।ঝুলানো দেহটার সামনে যেতেই এক ভ্যাম্পায়ার কোদাল নিয়ে ওমেগাকে দুই ভাগ করতে যায়।ওমেগার মাথা বরাবর কোদাল ঠেকানোর পর পরই ইচ্ছাকৃতভাবে পাশে থাকা খাদে ছিটকে যায় ওমেগা।সে এখন হাওয়ায় ভাসছে।চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা।বাতাসের গতি তাকে আরও খাদের পাথরের কাছে ঠেলে দিচ্ছে।ওমেগা আঘাত পাচ্ছে বেশ।পাথরের সাথে ঘষা খেয়ে মুখ আর মস্তিষ্ক যাতে থেতলে না যায় একটাই প্রার্থনা।
#চলবে
(গল্পটার এন্ডিং সাজিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু মাথায় একটার পর একটা বিষয় ঘুরছে।ভাবলাম এবার খেলা যাক গল্প নিয়ে।দেখা যাক কি হয়।)
পরের দিন সকাল বেলা বিছানায় শয়নরত অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে ওমেগা।মাথা শরীর দুটোই যেন অবশ হয়ে আছে তার।কি হয়েছিলো কাল রাতে?মনে করার চেষ্টা করছে সে।যতদূর মনে পড়ে সে প্ল্যানচ্যাট করছিলো।তারপর আর কিছু মনে পড়ছে না তার।আবার নিজের মাথায় প্রেশার দিয়ে চেষ্টা করে মনে করার।শুধু মনে পড়ে সে এক ফ্যাক্টরি তে ছিলো আর তার হাতে ছিলো এক কোদাল।
-আমার হাতে কোদাল ছিলো কেন?
আবারও মাথায় হাত দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করে ওমেগা।কিন্তু তার কিছুতেই কিছু মনে পড়ছে না।এদিকে ডিপার্টমেন্ট থেকে কল আসলে জানায় যে ডক্টর মিলান কে বোধহয় কেউ মেরে ফেলেছে।তার রক্ত আর একটা আঙুল পাওয়া গেছে ফরেন্সিক ল্যাবের ফ্লোরে।কিন্তু তার বডি পাওয়া যাচ্ছে না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওমেগাকে ওখানে যেতে বলে তারা।ওমেগা আর এক মুহুর্ত না বাড়িয়ে চলে যায় সেখানে।
একটু আগেই ফরেনসিক ল্যাব থেকে ফিরেছে সি আই ডি এর পুরো টিম।ওমেগাও ছিলো সেখানে।ফ্লোর থেকে রক্ত আর আঙুল কালেক্ট করা হয়েছে।এখন ডি এন এ পরীক্ষার উপরই ভিত্তি করছে যে আঙুল ব্লাড ডক্টর মিলানের ম্যাচ যায় কি-না।সবাই অপেক্ষা করছে টেস্টের রেজাল্ট আসার।ঘন্টাখানিক বাদেই সি আই ডি টিমের একজন অফিসার এসে জানান দিলো যে রক্ত আর আঙুল টা ডক্টর মিলান এরই।শরীর টা প্রচুর খারাপ লাগছে ওমেগার।তার উপর দিয়ে যেন কোনো এক ঝড় পার হয়ে যাচ্ছে।ডক্টর মিলানের জন্য খারাপ লাগছে তার।এই সি আই ডি সোর্স এর মাধ্যমে একে অপরের সাথে পরিচিত হয় তারা।এর মধ্যে একজন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে অফিসে।
-স্যার আমার ছোট ভাই কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
-মানে খুলে বলুন সব!
-আমার ছোট ভাই ক্যামেরন ব্র্যান্ডের ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো।কাল রাতের বেলা বললো যে কিছু কাজ আছে।কাজ করেই এসে পড়বে।আজ বিকাল হয়ে গেলো এখনো আসেনি।ওকে খুঁজেছিও পাচ্ছি না।
-হয়তো কোনো ইমারজেন্সি কাজ পড়ে গেছে।এসে পড়বে।বাট আপনি তাকে কল দিয়েছিলেন?
-কল বাজছে।কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।
-আপনার ছোট ভাইয়ের কোনো ছবি আছে? এতক্ষনে মুখ খুললো ওমেগা।
-হ্যাঁ আছে তো!লোকটি তার ফোন বের করে দেখালো।ওমেগার ছবি দেখে মনে হলো যে সে লোকটাকে আগে কোথাও দেখেছে।আবার কিছু মনে করার চেষ্টা করলো ওমেগা।কোদাল হাতে কোনো ফ্যাক্টরিতে দাঁড়িয়ে আছে সে।তার সামনে কেউ একজন আকুতি মিনতি করছে।কিন্তু সে যেন নির্বিকার।প্রশস্ত এক ভয়ানক হাসি দিয়ে লোকটাকে কোদাল দিয়ে জবাই দিলো সে। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আবার বর্তমানে ফিরে এলো ওমেগা।এ কি দেখলো সে?এমন তো নয় যে সেই লোকটিকে খুন করেছে?কিন্তু সে কিভাবে করবে?আর করলেও বা লাশ কোথায়?এক্ষুনি ফ্যাক্টরি তে যাওয়া প্রয়োজন।
ফ্যাক্টরি তে গেলো ওমেগা।ফ্যাক্টরি টা ঠিক ওইরকম ই যেমন টা সে মনে করতে পারছে।আস্তে আস্তে ফ্যাক্টরি টা ঘুরে দেখছে সে।হুবহু তার মনে করা জায়গার সাথে মিলে যাচ্ছে।মন টা ভীষণ অবচৈতন্য লাগছে তার।এই অব্দি মোটামুটি ভালো রকম প্যারানরমাল কেসে জড়িয়েছে সে কিন্তু এমন কোনোদিন হয়নি।এরিনের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।সেই আপাতত এখন তাকে সামলানোর একমাত্র মানুষ।
এরিনের সাথে ওমেগার পরিচয় হয় হাই স্কুলে থাকতে।এরিন যখন প্রথমবার স্কুল এ আসে তখন থেকেই ভালোলাগা শুরু করে তার।লং স্কার্ট আর দুই বেণুণী করা এই সাধারণ মেয়েটিকে যেন অপসরী লাগছিলো সেদিন।ধীরে ধীরে ভালো লাগা থেকে পরিণত হয় ভালোবাসায়।এরিনের ও ভালো লাগতো ওমেগা কে।একজোড়া সুশীল ভদ্র চোখ যে সবসময় তার দিকে তাকিয়ে থাকতো এটা সে আন্দাজ করতে পারতো।এখান থেকেই ভালোবাসার শুরু।দেখতে দেখতে বারো বছর পেরিয়ে গেছে সম্পর্কের।তবে কেউই এখনো বিয়ে নামক বন্ধন এ আবদ্ধ হওয়ার চিন্তা ভাবনা করেনি।যেভাবে আছে সেভাবেই যে দিব্যি চলছে বেশ।একমাত্র এরিনের জন্যই তার ক্যারিয়ারে উন্নতি হয়েছে।ওমেগা কখনোই তার ক্যারিয়ার সম্বন্ধে সচেতন ছিলো না।এই এরিনই তাকে উৎসাহিত করে।এর জন্য বোঝাপড়াও কম হয়নি দু’জনার মধ্যে।এখন এরিন কে মনে মনে হাজার কৃতজ্ঞতা জানায় সে।একটা নির্জন রাস্তায় এরিনের জন্য অপেক্ষা করছে ওমেগা।এই রাস্তার সাথে হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের।আন্ডারএজ থাকাকালীন সময় দুইজন লুকিয়ে লুকিয়ে এখানে এসে দেখা করতো।দশ বছর পেরিয়ে গেছে সে সময়ের।রাস্তা ঘাটও পাল্টিয়েছে।কিন্তু স্মৃতি?তা কি ভোলা সম্ভব?ওমেগা দেখলো যে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে এরিন।
-আমি এসে গেছি ওমেগা।
-আরে সাবধানে।কি দরকার ছিলো এভাবে ছুটে আসার?
-তুমি তো অপেক্ষা করছিলে।
-আমার ক্ষতি হচ্ছিলো না।
-চলো হাঁটা যাক।
ওমেগা এরিনের দিকে তাকালো কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে এরিন কে।
-এরিন তুমি কি অসুস্থ?
-না না কই?ঠিক ই তো আছি।
-দেখে মনে হচ্ছে না। বলেই ওমেগা হাত ধরতে নিলো এরিনের।এরিন চিৎকার দিয়ে উঠলো।
-নো ওমেগা!ইউ ক্যান্ট হোল্ড মাই হ্যান্ড।
-সিরিয়াসলি এরিন?এই বারো বছরে কয়েক হাজার বার আমি তোমার হাত ধরেছি।তোমার এই হাতে চুমো খেয়েছি।আজ তুমি একথা বলছো?
-আমাকে বোঝার চেষ্টা করো ওমেগা।প্লিজ!
-তুমি আমার এরিন তো?
-হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ! কোনো সন্দেহ আছে তাতে?
-অবশ্যই আছে।
এস ট্রে টা প্রায় সিগারেটে ভরপুর হয়ে গেছে।অফিসে বসে একটার পর একটা সিগারেট টান দিচ্ছে ওমেগা।মাথায় কিছু কাজ করছে না তার।সকাল বেলা হসপিটালের দিকে গিয়েছিলো সে।তারপর মর্গে যেয়ে দেখলো যে প্রায় বেশিরভাগ লাশ ই উধাও।এই কয়েক ঘন্টায় কি আদো কোনো মানুষের পক্ষে এতো লাশ গায়েব করা সম্ভব?আর যতদূর পাহারাদার সম্বন্ধে জানা হয়েছে তিনি বহু বছর ধরে এই হসপিটালে কর্মরত ছিলেন।যদি ওনার লাশ গুম করারই হতো তাহলে কয়েক ঘন্টায় এতো কিভাবে করতে পারবে?আর তাছাড়া গুম করলেও এতোগুলা লাশ কোথায় ই বা রাখতে পারে?মাথা পুরো শূন্য হয়ে আছে তার।সেলফোনে ফোন আসার মুহূর্তে তৎক্ষনাৎ সিগারেট মুখে দিয়েই উঠে চলে যায় সে। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ফরেন্সিক ল্যাব এ রিসার্চ করছে ডক্টর মিলান।গভীর মনোযোগ দিয়ে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের দিকে পর্যবেক্ষন করছে।
-কোনো ক্লু পেলেন ডক্টর মিলান?
-তুমি আবার স্মোক করে আমার ল্যাবে ঢুকেছো ওমেগা?
-ওইতো আপনি তো জানেন ই আমি চেইন স্মোকার।
-এই মাউথ ওয়াস টা নাও।আগে মুখ ক্লিন করে আসো।ইউ নো না ওমেগা যে আমি স্মোকিং পছন্দ করিনা।গন্ধ আমার নাকে এলেই দম বন্ধ হয়ে আসে।
-হুম।ওয়াসরুমের দিকে চলে যায় ওমেগা।কিছুক্ষন পরেই ফিরে আসে।
-হুম তো ডক্টর মিলান।কোনো ক্লু পেলেন?
-ক্লু তো পেয়েছি অবশ্যই।সে এক ভয়ংকর ক্লু!
-যেমন?
-মর্গের এক বিছানায় সামান্য রক্তের ছাপ পাওয়া গেছে।
-মানুষের রক্ত?
-মানুষের রক্ত তো অবশ্যই।কিন্তু তার সাথে অন্য কিছুও ছিলো যা মানুষ বা অন্যান্য পশু/পাখি থেকে ভিন্ন।যার কারণে মানুষের রক্তের সাথে মিশে যায়নি।খুব কালচে টাইপের।তুমি নিজেই দেখে নাও না।
ওমেগা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো।আসলেই খুব কালচে প্রায় কালো রঙয়ের কোনো পদার্থ ভেসে বেড়াচ্ছে মনে হচ্ছে যেন জীবন্ত।পদার্থগুলো যেন তাকে খুব কাছে টানছে।অণুবীক্ষণ যন্ত্র ভেদ করে যেন তার শরীর থেকে রক্ত বের করে নিতে চাচ্ছে এমনটা মনে হচ্ছে ওমেগার কাছে।ওমেগা দ্রুত অণুবীক্ষণ যন্ত্র থেকে সরে এলো।
-কি বুঝলে ওমেগা?
-ডক্টর মিলান!আমার এমন মনে হচ্ছে যেন এক অদম্য শক্তি আমার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত নিয়ে ফেলতে চাইছে।
-একদম!
-আপনি কি পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছেন কিছু যে কিসের জন্য এমন হচ্ছে?
-বের করতে পারলে তো অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়েই যেতো।তবে আমার কি মনে হয় জানো তো ওমেগা?এই রক্ত টা ওই লাশ পাহারাদারের।আর তার সাথেই কারো জোর জবরদস্তি হয় খুব যার ফলে দুইজনের থেকেই এই স্যাম্পল পাওয়া যায়।
-আচ্ছা ডক্টর!আপনার কি মনে হয় এই কেসটাতে প্যারানরমাল কিছু আছে?
-থাকতেই পারে।দেখো ওমেগা!আমি ডাক্তার হতে পারি।কিন্তু আমিও কিন্তু ভুত-প্রেতে বিশ্বাস করি।
-তাহলে আজ ছোট খাটো প্ল্যানচ্যাট করা যায়।কি বলেন?
-শিওর।করতে পারো তুমি।
-তাহলে আজ আসি আমি।
-এসো কোনো আপডেট পেলে তোমাকে জানাবো।
সাথে সাথে বেরিয়ে যায় ওমেগা।আজ বহুদিন পর প্রেতাত্মা দের সাথে সাক্ষাৎ হবে তার।ভাবতেই কেমন শিহরণ বয়ে যাচ্ছে শরীরে।
ল্যাবে বসে কাজ করছিলো ডক্টর মিলান।হঠাৎ করে বাহিরে দরজা খোলার শব্দ হয় তার।বাহিরে ঝড় হচ্ছে।যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে বারবার।
-কাম ইন!উফ এই লোডশেডিং এর ও যে কি হচ্ছে আজকাল।
সামনে থেকে আর কোনো সারাশব্দ পেলো না ডক্টর মিলান।কেন যেন মনে হলো তার পিছনে কেউ আছে।ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাতেই চমকে উঠে মিলান।একটা বিভৎস চেহারার লম্বাটে কিছু টা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।বড় বড় দাঁতগুলো দিয়ে গড়িয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
-কে কে কে তুমি?
বিভৎস চেহারার জিনিসটি কেবল তার দিকে তাকিয়ে হাসলো।এরপর পাশে থাকা একটা কোদাল হাতে নিয়ে সরাসরি ডক্টর মিলানের মাথার মাঝখানে আঘাত হানলো।
ফ্লোরের একপাশে ডক্টর মিলানের দুইভাগ মাথা হওয়া মাথা পড়ে আছে।আর কেউ একজন বসে বসে কোদাল দিয়ে মাংসের দলা বানাচ্ছে।আর মাংসতে লেগে থাকা রক্তগুলো চেটেপুটে খাচ্ছে।
এদিকে অন্ধকার রুমে বসে আছে ওমেগা।মাঝখানে একটা নকশা,মৃত মাথার কঙ্কাল,রসুন,আর একটা মোমবাতি বিছিয়ে রাখা।ওমেগা মুখে কিছু একটা পড়তেই মনে হলো কারা যেন তার শরীর অবশ করে ফেলছে।কিন্তু না তা তো হতে দেওয়া যাবেনা।কিছুতেই ওমেগাকে তাদের হাতে আত্নসমর্পণ করতে দেওয়া যাবে না।চারপাশে কেমন যেন ধোঁয়াতে ছেয়ে গেছে।ওমেগা বুঝে গেছে যে তারা এসে গেছে।মন্ত্র পড়তে শুরু করে দিয়েছে সে।কিন্তু মন্ত্র মুখ থেকে আসছে না একটুও।হঠাৎ করে অনেকগুলো বিভৎস প্রেতাত্মা তার সামনে ভেসে উঠলো।সবাই তার দিকে ভয়ানক ভাবে এগিয়ে আসছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে ওমেগার।এর আগেও বেশ কয়েকবার প্ল্যানচ্যাট করেছে সে।কিন্তু এমন ঘটনা কোনোদিনও ঘটে নি।হুট করে পিছন থেকে মনে হলো কেউ যেন তার ঘাড় অবশ করে দিচ্ছে।কোনোমতে মোমবাতি টা হাতে নিয়ে পিছের দিকে তাকালো সে আর জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে লাগলো।তৎক্ষণাৎ প্রেতাত্মার বিভৎস চেহারা গলে পড়তে লাগলো।সারা ঘর এম দুর্গন্ধে ভরপুর হয়ে গেছে।গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে ওমেগার।কিন্তু না!এখন একটু অন্যমনস্ক হলেই বিপদ।সরাসরি মৃত্যুর মুখে পৌঁছে যেতে হবে তাকে।এরপর আবার মন্ত্র পড়ে আস্তে আস্তে প্রেতাত্মা গুলোকে বশে আনলো সে।রুম পুরোপুরি কাঁপছে।এর মধ্যে ওমেগা বলে উঠলো-
-বলো তোমরা ক্যামেরন কোম্পানির সিইও থেকে শুরু করে একের পর এক মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে।এতে কি তোমাদের জগতের কারো সংযোগ আছে।
সারা ঘর ভূমিকম্পনের মতো কেঁপে উঠলো।এর অর্থাৎ হ্যাঁ আছে সংযোগ।ওমেগা আবার প্রশ্ন করে উঠলো-
-কারা করছে এসব আর কেন-ই বা করছে?কি চাই তাদের?
প্রশ্নটা করে অনেকক্ষন বসে রইলো ওমেগা।কিন্তু কোনো উত্তর এলো না।হঠাৎ করে বাতাস এসে হুট করে নিভে যায় মোমবাতি টা।ওমেগা বেশ ভয় পেয়ে যায়।হুট করে তার শরীরের ভিতর কি যেন ঢুকে পড়ে।সাথে সাথে লাল হয়ে যায় চোখ জোড়া।দাঁতগুলো বড় হয়ে যায়।রক্ত উপচে পড়ছে দাঁত থেকে।বাড়ির দেয়াল ভেদ করে সহসা উড়ে যায় সে!!
হাইওয়ে রোডে ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে ওমেগা।কারের প্লে লিস্টে ইমাজিন ড্রাগনস এর বিলিভার গানটি চলছে।সেই সাথে ওমেগা গানের সুর তুলছে।
“পেইন!!ইউ মেড মি এ বিলিভার!”
ওমেগার মুড আজ আকাশ পর্যায়।কারণ ক্যামেরন কোম্পানির তত্ত্বাবধানে যারা রয়েছে তারা একে একে গায়েব হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোথায় গায়েব হচ্ছে?বেঁচে আছে আদো নাকি মারা গেছে তার কিছুই কেউ জানেনা।সিআইডি ডিপার্টমেন্টে সি আই ডি অফিসারদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ হচ্ছে ওমেগা।কিন্তু বিচক্ষণতা আর দক্ষতার দিক দিয়ে সর্বোচ্চ এগিয়ে রয়েছে এই ওমেগা।তাই ডিপার্টমেন্টের হেড অফিসার তাকে এই কেস হ্যান্ডেল করার দায়িত্ব নিজে তার হাতে তুলে দিয়েছে।শুরুতেই কেসটাতে অন্যরকম কিছু একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলো ওমেগা।কেসটা নিজের কাঁধে নেওয়ার জন্য মন ইশপিশ করছিলো যেন।অবশেষে পেয়েই গেলো। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ক্লাবে যেয়ে সবেমাত্র প্রবেশ করলো ওমেগা।দেখলো বার সাইডের কর্ণারে তার প্রেমিকা এরিন হাতে এক পেগ নিয়ে বসে আছে।
-হেই বিউটিফুল! আমি এসে গেছি।
-ওহ ওমেগা!কনগ্রাচুলেশনস সুইটহার্ট!দুইজন একে অপরকে হালকাভাবে জড়িয়ে ধরলো।
-সো ইট’স ইউর ডে।হয়ে যাক কিছু পেগ?
-হোয়াই নট!চিয়ারস!!!এরপর দুইজন কিছুক্ষন একসাথে টাইম স্পেন্ড করার পর ওমেগা বলে উঠলো-
-আচ্ছা এরিন!ক্যামেরন ব্র্যান্ডের সিইওর একমাত্র কন্যা ডায়ানা ক্যামেরন তোমার বন্ধু ছিলো না?
-হ্যাঁ ও আর আমি মেট ছিলাম।কেন বলো তো?
-নাহ!তার বাবা নিখোঁজ এভাবে কিভাবে দিনগুলো পার করছে মেয়েটা!
-ধুর!ওমেগা তুমিও না?ওর বাবা নিখোঁজ ওর সেই ব্যাপারে কোনো হুশ থাকলে তো!
-মানে?
-মানে কি তার সেই বিষয় নিয়ে চিন্তাই নেই।একটু আগেও তো এই ক্লাবে পোল ড্যান্স করলো ড্রাঙ্ক হয়ে।
-আর ইউ সিরিয়াস এরিন?ডায়ানা এখন এই ক্লাবেই আছে?
-হ্যাঁ আমার সাথে কথাও বলেছে কিছুক্ষন।
-ও মাই গড!এই কথাটা তুমি আমাকে এখন বলতেছো?
ক্লাবের দ্বিতীয় তলা থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসলে সবাই দৌড়িয়ে ক্লাবের উপর তলায় যায়।দেখে একজন অল্পবয়স্ক ওয়েটার ফ্লোরে পড়ে আছে।ওমেগা হাতে গ্লাভস পড়ে ছেলেটার হাত চেক করলো।নাহ!রেস্পন্স এখনো আছে তবে খুব কম।এর মধ্যে ছেলেটা একটু হাপানি দিয়ে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বললো-
-ওই ম্যাডা…ওই ম্যাডাম টার খুলি আর শরীর নিয়ে ওদের এগিয়ে যেতে দেখেছি আ..আমি! বলেই ওমেগার কোলে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো ছেলেটি।সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে।কার খুলি?কিসের খুলি?কে নিয়ে গেছে?সবকিছু যেন ঝাপসা লাগছে ওমেগার কাছে।আচ্ছা ডায়ানা?ডায়ানা কোথায়?ওকে তো দেখছি না! এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এলো এরিন।
-“ওমেগা!ডায়ানাকে সারা ক্লাব খুঁজলাম।কিন্তু কোথাও পেলাম না।”
এরিনের কথায় ওমেগার সন্দেহ আরও প্রবল হয়।তদন্তের জন্য ক্যামেরন পরিবারের সব সদস্যদের ছবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো সে।সেই ছবিটাই এক এক করে সবাইকে দেখাতে লাগলো ওমেগা।তারা ডায়ানাকে দেখেছে নাকি কোথাও এই বলে।সবশেষে একজন ওয়েটার বলে উঠলো-
-এই ম্যাডামটাকে আমি দোতলার রুম দেখিয়ে দিয়েছিলাম।ম্যাডাম প্রচুর হাই ছিলো।বমি নাকি পাচ্ছিলো খুব।তাই আমিই ম্যাডামকে দোতলার এই রুমটা দেখিয়ে দেই।
-ম্যাডামের সাথে অন্য কেউ ছিলো নাকি একা ছিলো শুধু?
-না স্যার।ম্যাডাম একাই ছিলো।
ওমেগা এবার আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখে ডায়ানাকে কোথাও পাওয়া যায়নি।তার মানে ওটা ডায়ানাই ছিলো।কিন্তু কারা ওকে খুন করলো?এটা কোনো মানব কার্যক্রম?কিন্তু তাহলে যাবে কোথায়?এতোগুলা মানুষের চোখে ফাঁকি দিয়ে যাওয়া কি আদো সম্ভব?যদিও লুকিয়েই যায়।আর সবাই তো একসাথেই আছে এখন!কাউকে বাহিরেও যেতে দেওয়া হচ্ছেনা।আর পালানোর মতো কোনো ব্যবস্থাও তো নেই।তাহলে?মাথাটা বেশ ধরেছে ওমেগার।সবকিছু ধোয়াশা লাগছে তার কাছে।মেডিটেশন করার খুব প্রয়োজন এই মুহুর্তে।অন্যান্য অফিসারদের সহায়তায় তদন্ত অব্যাহত রাখার জন্য ক্লাবটা বন্ধ করা হলো।এমনকি ক্লাবের উপস্থিত সবাইকে ভালো করে চেক করা হলো।এমনকি এরিন ও তাতে বাদ যায়নি।কিন্তু কারো কাছেই তেমন ক্লু পাওয়া যায়নি।লাশটাকে মর্গে পাঠানো হলে পরের দিন সকালেই খোঁজ আসে লাশটা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।কে বা কারা গুম করে নিয়েছে তারও ধারণা নেই।এমনকি আরো গুটিখানেক লাশও গায়েব।সবচাইতে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে মর্গ পাহারদারকেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
লাশ কাটার কট মট শব্দ হচ্ছে কোদাল দিয়ে।টুকরো টুকরো করে মাংসের দলাগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে।হাতুড়িটা রক্তে লালে লাল হয়ে গেছে।মাংসের দলাগুলো থেকে ফিনকি রক্ত পড়ছে একটু একটু করে।মগজটা আলাদা করে রাখা হলো এক কালো রঙের প্লাস্টিক পলিথিনে।হাড় গুলো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হলো।আর মাংসের দলা গুলো থেকে চামড়াগুলো আলাদা করা হলে সেগুলো আলাদা করে রাখা হলো।আর রক্তাক্ত জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা হলো কিছুক্ষনের মধ্যেই।
রকিং চেয়ারে বসে নিজের ভারি শরীরটাকে সমানভাবে হেসে হেসে নাড়াচ্ছেন ডেভিড ক্যামেরন।এতো সুন্দর ভয়ংকর মৃত্যু দেখলে আত্নাটা আনন্দে মেতে উঠে তার।ডিসেম্বর মাস।সামনেই বড়দিন আসতেছে।এবার তার স্বপ্ন পূরণের পালা।কোটিপতি হওয়ার যে সময় হয়ে গেছে। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রাত ২ টা বেজে ৫৬ মিনিট।একটা লম্বা কালো ছায়া হেঁটে যাচ্ছে।তার এক হাতে রয়েছে একটা মাংসের দলা পাকানো পরিষ্কার সাদা প্যাকেট।আর এক হাতে রয়েছে হাড়গোড় সহ মাথার খুলি।খুলি টা আর কারো নয় বরং ডেভিড ক্যামেরনের।
“বিগত সাতদিন যাবত সিডনির বিখ্যাত ” ক্যামেরন” ব্র্যান্ডের মালিক মি. ডেভিড আজ সাত দিনের ধরে নিখোঁজ। শেষবার তাকে নাকি কোনো এক ফ্যাক্টরির সামনে দেখা গিয়েছিলো।এরপর আর সন্ধান মিলেনি।পুলিশের তল্লাশি চলছে।”
খবরের কাগজটা সাইডে রেখে গরম গরম কফির কাপে চুমুক দেন মি.ওমেগা এডওয়ার্ড।এভাবে এতো বড় কোম্পানির মালিক উধাও হয়ে যাওয়াটা কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে তার কাছে।সিডনি শহরের একজন বিখ্যাত সি আই ডি অফিসার ওমেগা এডওয়ার্ড।কিন্তু তিনি প্যারানরমালে বিশ্বাসী।আদি,বর্তমান,ভবিষ্যত,ভূত,প্রেতাত্মা সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ তার।শোনা যায়,তার পূর্বপুরুষেরা নাকি বিভিন্ন কায়দা কানুন করে আত্না,ভ্যাম্পায়ারদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো।তাই বলা যায়,বংশ পরম্পরায় সে এই অভ্যাস টা পেয়েছে।তবে একটা লোক উধাও হয়ে গেলো হঠাৎ এভাবে?অথচ কোনো পরিমাণের চিহ্ন রেখে গেলো না।মানুষের দ্বারা কি এটা সম্ভব?মানুষ হলে নিশ্চয়ই হাতের ছাপ বা কোনো ক্লু রেখে যেতো।তাহলে কি কোনো অদ্ভুত কিছুর কাজ এটা?আর ভাবতে পারছেনা মি.ওমেগা।মাথা ধরে এসেছে তার।কিন্তু আজ রাতে তার ঘুম হবেনা।যেভাবেই হোক তাকে এই কেস এর তদন্ত করার ব্যাপারটা হাতে নিতেই হবে।নিতেই হবে!!!!
#চলবে………
(গল্পের রেসপন্সের উপর ভিত্তি এই লেখাটা কন্টিনিউ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে)
গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ২৫ (শেষপর্ব!)
লেখক: তানভীর তুহিন!
ঠিকানাটা মুলত একটা রিসোর্টের ছিলো। রিসোর্টের সামনে এসে রিসোর্টের নামটা পড়ে অবাক হয়ে যায় মুবিন। রিসোর্টের নাম মিউব’স ড্রিমল্যান্ড। মুবিন যখন কানাডায় ছিলো তখন সেখানকার ফ্রেন্ড সার্কেল মুবিনকে মিউব বলে ডাকতো। তাহলে কী এই রিসোর্টের মালিক মিছিল? মনে আর কোনো প্রশ্ন বাসা বাধার আগেই মুবিন জিপ নিয়ে রিসোর্টের ভেতরে চলে যায়। জিপ পার্ক করে রিসোর্টে ঢুকতেই রিসোর্টের পুল সাইডে শাড়ি পরিহিতা এক মেয়েকে দেখতে পায় মুবিন। মুবিনের মতে এটা মিছিলই। আরেকটু নিশ্চিত হবার জন্য সামনের দিকে এগোয় মুবিন। সামনে এগিয়ে যেতেই স্পষ্ট হয় সামনে থাকা অবয়বটা। মুবিন বুকের ভেতরে একটা তীব্র সরু ব্যাথা অনুভব করে। মুবিন মিছিলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই মিছিল চাপাকন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ” কেমন আছো মুবিন? ”
ইতোমধ্যেই মুবিনের চোখে পানি চলে এসেছিলো। বহুদিন পরে মিছিলের কণ্ঠস্বর শুনে বুকটা কেন যেনো একদম বাজেভাবে থেতলে যায়। মুবিন চাপাশ্বাস ফেলে। মুবিনের বাকশক্তি যেনো হারিয়ে গেছে। তার মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছে না। সামনে মিছিলও কাদছে। মিছিল একহাতে নিজের চোখের পানি মুছে কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলে, ” ভালো নেই জানি। আমার মতো একটা নিষ্টুর, প্রতারক, বিশ্বাসঘাতিনীকে ভালোবেসে কেউ ভালো থাকতে পারে নাকি? ” মিছিল কান্নায় ভেঙে পড়ে। চিৎকার করে কাদতে থাকে মিছিল। মুবিন নির্বাক, নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ। কান্না খানিক নিয়ন্ত্রনে এনে মিছিল আবার বলতে থাকে, ” আমি তো হতে চাইনি নিষ্ঠুর, আমি তো বিশ্বাসঘাতিনী প্রতারক হতে চাইনি, তাহলে খোদা কেনো করলো এটা? কেনো করলো এটা? কেনো? কেনো? ” আবারো কান্নার কারনে আটকে যায় মিছিলের কথা। কয়েকমুহূর্ত চুপ থেকে কান্না নিয়ন্ত্রনে এনে মিছিল বলে, ” আমি বিয়ে করে নিয়েছি মুবিন। ”
কথাটা কানে পৌছাতেই মুবিনের নিঃশ্বাস নিষ্টুরভাবে বুকের কোথাও একটা আটকে। বুকের ভেতরটা ভেঙেচুড়ে কয়েক হাজার কোটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। মুবিন মুখটা হা করে জোরে জোরে শ্বাস নেবার চেষ্টা করে। শ্বাসটা টেনে তুলতেই পারছে না মুবিন। ব্যাখ্যা করা যাবে না এমন অসহ্য যন্ত্রনায় কুকড়ে মরছে মুবিন। একটু কান্নাও করতে পারছে না, কেমন একটা যেনো থেমে গেছে পুরো শরীর। মুবিন মিছিলের দিকে তাকিয়ে মুখ হা করে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছে। মিছিল অঝোরে কাদছে। কাদতে কাদতে মিছিল চিৎকার করে বলে, ” হ্যা! হ্যা! মুবিন আমি বিয়ে করে নিয়েছি। আমি এখন অন্যকারো, তোমার মিছিল আর তোমার নেই মুবিন। আমার বাবা মারা যাবার আগে তোমার থেকে কেড়ে নিয়েছে আমায়। বাবা মারা যাবার কয়েকঘন্টা আগে বাবা আমায় আমার কোনো প্রেমিক আছে নাকি সে ব্যাপারে জানতে চায়। আমি তোমার আর আমার কথা বলি। বাবা তোমার ফ্যামিলি স্বমন্ধে জানতে চায়। তোমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স এর কারনে বাবা অসম্মতি জানায় আমাদের সম্পর্কে। বলে যে ছেলে বাবা-মাকে পায়নি ছোটবেলায় সে আর কতটুকু মানুষ হয়েছে? আমি জানি আমার আয়ু ফুরিয়েছে। আমি মরার আগে আমার মেয়েকে কোনো ভুল মানুষের কাছে তুলে দিতে পারবো না। আমি অনেকবার বোঝাই কিন্তু বাবা আমার কোনো কথাই গায়ে মাখে না। বাবা মারা যাবার আগে আমায় অনুভবের সাথে পরিচয় করায়। অনুভব বাবার দুঃসম্পর্কের এক আত্মিয়র ছেলে। ও এতিম, ও অবশ্য এতিম হয়েছে বড় হবার। মারা যাবার আগে আমার স্বামি হিসেবে অনুভবকে ঠিক করে যায় বাবা। আমায় অনুভবকে বিয়ে করার কসম দিয়ে মারা যায় বাবা। আমি কী করতাম বলো? কী করার উচিৎ ছিলো আমার? আমি নিরুপায় ছিলাম। যে বাবা আমার জন্য এতো ত্যাগস্বীকার করেছিলো সে বাবার কসম কী করে অস্বীকার করতাম? আমি পারিনি অস্বীকার করতে। বাবার কসম রক্ষার্থে বিয়ে করে নিয়েছি অনুভবকে। বাবা মারা যাবার পরের দিনই আমি আমার সব প্রোপার্টি বিক্রি করে দিয়ে অনুভবকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে আসি। প্রোপার্টি বিক্রির টাকা দিয়ে একটা আবাসিক হোটেল আর এই রিসোর্টটা কিনি। তারপর সব প্রোমান লোপাট করে দেই। তুমি যাতে কোনোভাবেই আমার খোজ না পাও সেজন্য আমি আমার ইমিগ্রেশন রেকর্ডও ইমিগ্রেশন ডাটাবেজ হ্যাক করে ইরেজ করে দেই। আমি তোমার মুখোমুখি হতে চাইনি কোনোদিন। কারন তোমার মুখোমুখি হবার মুখ আমার ছিলোনা। আমি চাইনি তুমি জানো তোমার মিছিল অন্যকারো হয়ে গেছো, আমি চেয়েছিলাম তুমি এটা জেনে বেচে থাকো যে তোমার মিছিল তোমার থেকেই কোথাও হারিয়ে গেছে বা মারা গেছে। অথচ দেখো খোদার কী নিষ্ঠুর পরিহাস সেই আমাদের মুখোমুখি করেই দিলো। আর আমায় তোমার সামনে প্রতারকও প্রমান করে দিলো। ” মিছিল চিৎকার করে কাদতে থাকে।
মুবিন শ্বাস নিতে পারছে না, কথা বলতে পারছে না, চোখের পানিও ফেলতে পারছে না, শরীরটা ইঞ্চি পরিমান নাড়ানোর শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে মুবিন। বুকটা যেনো কোনো ভারী বড় বিশাল পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে গেছে মুবিনের। তার ফলেই হয়তো এই অসহনীয় বুকে ব্যাথা হচ্ছে তার। চোখের সামনে মিছিল অঝোরে কেদে যাচ্ছে। মুবিন চাপাশ্বাস ফেলে চাপাকন্ঠে বলে, ” তুমি প্রতারক নও মিছিল। এটা নিয়তি! ”
মিছিল চিৎকার করে কাদছে। কিন্তু মুবিন চিৎকারও করতে পারছে না। চিৎকার করে কাদা মুবিনের সামর্থ্যের বাইরে। মুবিন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, সে আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে তার মিছিলের আর্ত্মনাদ শুনতে পারবে না।
মুবিন কান্নাজড়ানো অস্ফুট স্বরে বলে, ” আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা মিছিল। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। ভালো থেকো! ” বলেই মুবিন সামনের দিকে হাটা ধরে। একটু এগিয়ে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়ে মুবিন। পেছন ফিরে অস্ফুট স্বরে মুবিন মিছিলকে বলে, ” জানি অধিকার নেই। তবুও তোমার কপালে একটা চুমু খেতে দেবে মিছিল? ” কথাটা খানিকটা মুবিনের বুকেই আটকে থাকে।
মিছিল মুবিনের কাছে এসে মুবিনকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে মুবিনের ঠোটে নিজের ঠোট চেপে ধরে। মুবিনও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিছিলকে। মুবিন মিছিলের কপালে লম্বা চুমু আকে। মুবিনের চোখের কয়েকফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে মিছিলের কপালে। মুবিন মিছিলের কপাল থেকে ঠোট সরিয়ে মিছিলের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে, ” আজকের পর থেকে অনুভবকে নিয়ে ভালো থেকো। নিজেকে অপরাধী ভেবে নিজেকে দোষারোপ করিও না। তোমার কোনো দোষ নেই। সবটাই ভাগ্যের পরিহাস, ভালো থেকে মিছিল। ” কান্নার কারনে থেমে যায় মুবিন।
মুবিন আবার বলে, ” শেষবারের মতো বলছি। জীবনে হয়তো আর কোনোদিন বলতে পারবো না। তোমায় খুব বেশি ভালোবাসি মিছিল! ” কথাটা বলে শেষবারের মতো একপলক তাকিয়ে মিছিলকে দেখে নেয় মুবিন। তারপর হেটে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। একবারও আর পিছন ফিরে তাকায় না। মন তো খুব চাচ্ছে মিছিলকে আরেক পলক দেখার কিন্তু কিছু একটার জন্য মনের আকাঙ্ক্ষাটাকে চাইলেও স্বায় দিতে পারছে না মুবিন। মিছিল সেখানে বসেই চিৎকার করে কাদতে থাকে। যে চিৎকার ভাগ্যের কাছে হেরে যাওয়া এক অসহায়ের চিৎকার!
গাড়ি চালাচ্ছে আর অঝোরে কাদছে মুবিন। কাদছে আর ভাবছে মুবিন, সারাজীবনে সে আদৌ কী পেলো? কার ভালোবাসা সে সম্পুর্ন পেলো? কারোর ভালোবাসাই সে পায়নি? আর কিছু ভেবে উঠতে পারে না মুবিন। বুকটা খা! খা! করে ওঠে। মুখটা সরু হা করে শ্বাস নেবার চেষ্টা চালায় মুবিন। বুকের চাপা যন্ত্রনাটা যেনো শ্বাসই নিতে দিচ্ছে না তাকে। অবর্ণনীয় যন্ত্রনায় নিশ্চুপ মরন হচ্ছে মুবিনের। জিপের মিউজিক সিস্টেমে একটা গান চালায় মুবিন। গানটা হলো আদনান আশিফের ‘দেবী’। বাংলা গান তেমন না শুনলেও প্রায়ই এই গানটা কেনো যেনো শুনতো মুবিন। আজ এই গানটার সাথে নিজের জীবনের চরম সাদৃশ্য খুজে পাচ্ছে মুবিন…!
এই রাস্তা গুলো লাগে বড় অচেনা।
আকাশটার সাথে নাই জানাশোনা।
এই রাস্তা গুলো লাগে বড় অচেনা।
আকাশটার সাথে নাই জানাশোনা।
আমি তোর প্রেমেতে অন্ধ।
ছিলো চোখ কান সব বন্ধ।
থেমে গেছে জীবনের লেনাদেনা।
এখন এমনি করে ভালো ,
কেমনি করে বাসি অন্য কোনো পাখিকে।
তার চেয়ে ভালো ছিল তুই, নিজ হাতে খুন! করে.. যেতি আমাকে….!
কষে ব্রেক চাপে মুবিন। চোখের পানি মুছে গানটা বন্ধ করে দিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। সামনেই একটা বড় মোড়। মুবিন পারবে না আর বড় বিশাল পাহাড় সম ব্যাথা বুকে বয়ে বেচে থাকতে। গাড়িটা রিভার্স গিয়ারে ফেলে খানিক পেছনে চলে যায়। তারপর ফুল গিয়ার দিয়ে নিজের সমস্ত যন্ত্রনা, নিজের সমস্ত ব্যাথা দিয়ে এক্সেলেটর চেপে ধরে মুবিন। গাড়িটা দ্রুত গতিতে সাই সাই করে সামনের দিকে এগোতে থাকে, এগোতে এগোতে গাড়ি যখন মোড়ের কাছে আসে তখন মুবিন স্টিয়ারিং বামদিকে না ঘুরিয়ে স্টিয়ারিং থেকে হাত নামিয়ে নেয়। ব্যাস শেষ, সব শেষ, মুহুর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় মুবিন, শেষ হয়ে যায় মুবিন শ্বাস নিতে না পাড়ার অসুখ, শেষ হয়ে যায় মুবিনের একবুক চাপা কষ্ট, শেষ হয়ে যায় মুবিন বড় বিশাল পাহাড় সম যন্ত্রনা, শেষ হয়ে যায় মুবিনের জীবন ক্যালেন্ডারের। শেষমেশ অবসান ঘটেই যায় মুবিনের দীর্ঘদিনের যন্ত্রনার স্মারকচিহ্ন ক্যালেন্ডার….!
লাইফ ইজ ভেরি আনপ্রেডিক্টেবল। বোধহয় আমি দার্শনিক নই তবুও দার্শনিক বনে একটা কথা বলছি, ” জীবনে কখনও কোনো বস্তু নিয়ে মনে আশা পুষবেন না। ” কোনো জিনিস নিয়ে আশা করে যখন সে আশা পুরন হয় না, যখন সে আশা ভেঙে যায় তখন পৃথীবির সবচেয়ে যন্ত্রনার অনুভুতি অনুভুব হয়ে বুকে। আশা কিংবা মন ভাঙার কোনো শব্দ হয় না, এই দুটো জিনিসের ভাঙন চোখে দেখাও যায় না। তবে যার আশা আর মন এই দুটো জিনিস ভাঙে সেই জানে বেচে থাকাটা ঠিক কতটা কষ্টের, ঠিক কতটা যন্ত্রনার।
সমাপ্ত!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “
অস্ট্রেলিয়ার এয়ারপোর্টে নামতেই সীমান্ত মুবিনকে বলে, ” তোর জন্য বাইরে একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। চল! ”
মুবিন বলে, ” কীসের সারপ্রাইজ? ”
– ” চল না। ”
এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোতেই মুবিন দেখতে পায় গর্জিয়াস রেড কালারের একটা রুফলেস জীপ। জীপগাড়ির খুব শখ মুবিনের। সীমান্ত বলে, ” এই হলো তোর সারপ্রাইজ। ট্রাভেল এজেন্টকে বলে বহু কষ্টে ম্যানেজ করিয়েছি। যতদিন এখানে আছি আমরা ততদিন এটা আমাদের আর এটা তুই চালাবি! ”
মুবিন দেরী না করে জীপে উঠে পড়ে। তারপর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় জীপ চালাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য প্রচুর মনোযোগের প্রয়োজন তাই গাড়ি চালাতেই মনোযোগী মুবিন। মুবিন কিঞ্চিত স্বাভাবিক জীবনকে উপভোগ করছে, মুবিনকে এইভাবে দেখে শাওন-সীমান্ত বেশ স্বস্তি অনুভব করছে।
অস্ট্রেলিয়ায় যাবার পরেরদিন সন্ধ্যাবেলা। শাওন-সীমান্ত হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখছে। বাইরে বেশ ঠান্ডা। রাতের দিকে এদিকে তুষারপাতও হয়। ওরা অস্ট্রেলিয়ার যে জায়গায় আছে সেটা হলো ‘কুইন্সল্যান্ড’। কুইন্সল্যান্ডে বেশ কিছু পাহাড় রয়েছে। প্রত্যেকটা পাহাড়ের উচ্চতা যেমন আলাদা ঠিক তেমনি রুপও আলাদা। আর এই সন্ধ্যায় পাহাড়ের পেছনে সুর্যের লুকিয়ে যাবার দৃশ্য! সত্যিই অপরুপ। সেই অপরুপ দৃশ্য নিজেদের চোখকে দেখিয়ে নিজেদের চোখকে সার্থক করছে শাওন-সীমান্ত। মুবিনও এতোক্ষন পাহাড় দেখছিলো। হঠাৎ করে প্যান্ট শার্ট পড়ে শাওন-সীমান্তকে মুবিন বলে, ” আমার দুই-তিনটা জ্যাকেট কিনতে হবে রে। যে একটা জ্যাকেট এনেছি ওটার জিপার কাজ করছে না। তাই শপিং মলে যাচ্ছি! ”
শাওন বলে, ” তুই একা যাবি নাকি? আমরাও যাবো! ”
– ” না। একটু একা যাবো। একা একটু পাহাড়ি রাস্তায় লং ড্রাইভ ইঞ্জয় করতে চাই! ”
মুবিন এমন করুন গলায় কথাটা বলে যে শাওন-সীমান্ত আর আটকায় না। সন্ধ্যাবেলা একটা অফ গ্রে কালারের প্যান্ট, ব্রাইট হোয়াইট কালারের ভারী শার্ট আর গলায় একটা কালো মাফলার পেচিয়ে জীপ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে মুবিন।
সবে মাত্র সন্ধ্যার আধারে ঢেকে গেছে চারপাশ। জীপের হেডলাইটের আলোতে রাস্তার আকবাক সামলে গাড়ি চালাচ্ছে মুবিন। জীপের মিউজিক সিস্টেমের সাথে ফোন কানেক্ট করে গান শুনছে মুবিন। জীপে ছাদ না থাকায় বেশ বেশিই ঠান্ডা বাতাসের সাথে বার্তালাপ হচ্ছে মুবিনের। গান শুনতে শুনতে আর বাতাসের সাথে বার্তালাপ করতে করতেই মুবিন শপিং মলে এসে পৌছায়। জীপ পার্কিংয়ে পার্ক করে শপিং মলে ঢুকে পড়ে মুবিন। এস্কেলেটর বেয়ে ফার্স্ট ফ্লোরে উঠে হঠাৎ করে পেছনে তাকাতেই কঠিন ভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় মুবিন, থমকে যায় মুবিনের আশপাশ চারপাশ, শরীরের রক্তের প্রবাহও যেনো থেমে গেছে, সাথে রক্ত হিম হয়ে শরীরটাও যেনো বরফে পরিনত হয়েছে, আর হৃদপিন্ডটা যেনো স্পন্দনের তালও হারিয়ে ফেলেছে। চোখের সামনে সে কী দেখছে এটা? আদৌ কী বাস্তব কিছু দেখছে সে? নাকি সবটাই ভ্রম? মিছিল!? এস্কেলেটর বেয়ে মিছিল উপরে উঠছে? সামনের অবয়বটাও যেনো কেমন অবাকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনের দিকে। তাহলে কী সত্যিই এটা মিছিল? এস্কেলেটরের অবয়বটা ধীরে ধীরে মুবিনের দিকে উঠে আসছে আর মুবিন চরমভাবে বিস্মিত হচ্ছে। চোখটাকে একবার বুজে আবার পুনরায় খুলে নেয় মুবিন। না! সামনের অবয়ব টা ঠিকই আছে। এটা মিছিলই! আকস্মিক বিস্ময়ের ফলে জ্ঞান হারিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে মুবিন।
প্রায় ১৫ মিনিট পরে চোখ খুলে নিজেকে শপিংমলের ফ্লোরে আবিষ্কার করে মুবিন। মাথা থেকে শুরু করে পা অবধি গোল হয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের চেহারা খুটিয়ে বারবার দেখছে মুবিন। না, এখানে তো মিছিল নেই। তাহলে কী সে ভুল দেখেছে? সে কী এতোটাই ভুল দেখেছে যে সে ভুলের ফলে সে বেহুশ হয়ে পড়লো? কই এই কয়মাসে তো একবারও এমন ভুল সে দেখেনি। এই গোলকধাঁধার উত্তর খুজছিলো মুবিনের স্পর্ষকাতর মন এবং কৌতুহলি মস্তিষ্ক। ঠিক তখনই মাথার পাশে বসে থাকা বিদেশিনী তরুণী মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” আর ইউ অলরাইট মিউবিন? ”
চমকে যায় মুবিন। এই বিদেশি মেয়ে তার নাম জানলো কীভাবে? তীব্র শকের ফলে মুবিনের আবার বেহুশ হবার উপক্রম। তখনই বিদেশি মেয়েটা আবার প্রশ্ন করে মুবিনকে, ” আর ইউ ফিলিং বেটার মিউবিন? ”
মুবিন পাথরের মুর্তির ন্যায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই বলে, ” ইয়াহ আম ফাইন। বাট হাউ ডু ইউ নৌ মাই নেইম? ”
– ” মেছিল টোল্ড মী! ”
কথাটা শুনতেই কিছুক্ষন আগের মতো আবারও কঠিনভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় মুবিন। বুকের ভেতরটা যেনো এক অসহ্য ব্যাথায় দুমড়ে-মুচড়ে ওঠে। মুবিনের চোখ দুটো নোনাজলে ভরে ওঠে। বিদেশি মেয়েটা মুবিনকে প্রশ্ন করে, ” হোয়াট আর ইউ ক্রায়িং? ”
মুবিন ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে করুন স্বরে বিদেশি মেয়েটাকে বলে, ” ডু ইউ নৌ মিছিল? প্লিজ টুক মি টু মিছিল। প্লিজ!, আই ওয়ান্ট টু মীট হার। প্লিজ! প্লিজ! আই বেগ ইউ, প্লিজ! ”
– ” হেই! হেই! কুল ডাউন। আই ডোন্ট নৌ হার পার্সোনালি। বাট ইউ ক্যান মীট হার, শী লেফট এ এড্রেস নোট ফর ইউ। ” বলেই বিদেশি মেয়েটা মুবিনের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেয়। মুবিন চিঠিটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে মুবিন বিদেশি মেয়েটাকে বলে, ” থ্যাংকস এ লট! টেল মী ওয়ান থিং হাউ লং হ্যাভ আই বিন আনকনসিয়াস হিয়ার? ”
– ” এরাউন্ড টুয়েলভ টু ফিফটিন মিনিটস! ”
মুবিন আর এক মুহুর্তও দেরী না করে ঠিকানাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শপিং মল থেকে। এড্রেস নোট দেখে ফোনের গুগল ম্যাপে ডেস্টিনেশন সেট করে গাড়ি চালাতে শুরু করে মুবিন। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যেই গন্তব্যে পৌছে যায় মুবিন।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “
শাওন মুবিনকে শান্তনা দেবার মতো শব্দ খুজে পায়না নিজের নগন্য শব্দকোষে। অনেকদিন পরে চোখে কয়েকফোটা নোনাজল আবিষ্কার করে মুবিন। সেগুলো মুছে ফ্লোর ছেড়ে উঠে বেলকনির দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু বেলকনি অবধি যেতে পারেনা সীমান্তর কথায় আটকে যায় পা।
সীমান্ত বলে, ” তুই আর শাওন আমার কাছে আলাদা না মুবিন। শাওন আমার মায়ের পেটের ভাই, হয়তো তুই আমার মায়ের পেটের না। কিন্তু বিশ্বাস কর তুই আমার কাছে অতোটাই যতোটা শাওন। কথাগুলো এজন্য বলছি যাতে তুই আমায় ভুল না বুঝিস। ভুল বুঝিস না ভাই। কিন্তু দেখ একটা মানুষ নিখোজ হওয়া এক জিনিস আর নিজের থেকে হারিয়ে যাওয়া আরেক জিনিস। আমি একটু অন্য দিক থেকে ব্যাপারটা ভেবেছি। ভুল বুঝিস না কিন্তু আমি তোর এই অবস্থা দেখে তোকে কথাটা না বলে পারছি না। আমার মনে হয় মিছিল নিজের ইচ্ছায় নিখোজ হয়েছে! ”
অবাক দৃষ্টিতে সীমান্তর দিকে তাকায় মুবিন। চোখে মুবিনের হাজারটা প্রশ্ন। সীমান্ত আবার বলে, ” দেখ যেরকম ভাবে সব ভার্চুয়াল ডাটা লোপাট করা হয়েছে তা শুধু মাত্র আমাদের মতো ঝানু হ্যাকাররাই পারবে। আর ডোন্ট ফরগেট মিছিল আমাদের ফিল্ডেরই মেয়ে। মিছিলও আইটি এক্সপার্ট, মিছিলও হ্যাকার। শুধু হ্যাকার বললে ভুল হবে গড লেভেলের হ্যাকার। মনে আছে ও একবার ফরেনের একটা টিভি চ্যানেল হ্যাক করেছিলো আমাদের সাথে দুষ্টামি করে বাজি ধরে? ”
মুবিনের মাথার তার ছিড়ে যাবার উপক্রম। মিছিল যে একজন প্রখর বুদ্ধিমতী লেডি হ্যাকার সেটা অস্বীকার করতে পারবে না মুবিন। কিন্তু তা বলে মিছিল মুবিনের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে? কিন্তু কেনো? কোনো কারনই তো নেই নিখোজ হবার। সীমান্ত চুপ ছিলো। সীমান্ত আবার বলে, ” দেখ মুবিন যেভাবে সব যায়গার ডাটা ইরেজ করা হয়েছে তা একজন আইটি জিনিয়াস ছাড়া কেউ পারবে না। আর তোর কী মনে হয় মুবিনকে এমন কে কিডন্যাপ করতে পারে যে এরকম আইটি নলেজ রাখে? আমি ব্যাপারটা স্টাডি করেছি। এমন কোনো আইটি প্রোফেশনাল এর সাথে মিছিলের কোনো প্রকার যোগাযোগ ছিলো না। মিছিল এই অবধি ব্ল্যাকমার্কেটে কোনো হ্যাকিং অপারেশন করেনি তাই ওর হ্যাকার শত্রু তৈরী হবার কোনো চান্স নেই। তাহলে ও নিখোজ হলো কীভাবে? ভাবলাম কেউ কিডন্যাপ করেছে। কিন্তু কিডন্যাপ করলে এভাবে সব প্রোপার্টি কেনো বিক্রি করাবে? আর যদি কিডন্যাপার বিক্রি করায়ই তাহলে সব টাকা হাতানোর পরে তো মিছিলকে ছেড়ে দেবার কথা তাইনা? আচ্ছা বাদ দে যদি টাকার জন্যই কেউ মিছিলকে কিডন্যাপ করে আর সে যদি এতোই ইন্টেলিজেন্ট হয় তাহলে তার জানার কথা তুই মিছিলের বয়ফ্রেন্ড। কারন সে এটা জানতো যে তুই মিছিলের খোজে মরিয়া হয়ে উঠবি। সে জন্যই সে সব প্রোমান লোপাট করেছে। মিছিলকে যদি টাকার জন্যই কিডন্যাপ করা হতো তাহলে তোর কাছ থেকে টাকা চাওয়া হতো না? তোর কাছে কয়েকশ কোটি চাইলে তুই কয়েকশ কোটিই দিয়ে দিতি। তাহলে সে তোর কাছে চাইলো না কেনো? জাস্ট থিংক এবাউট ইট। ইমোশনাল ভাবে না ভেবে প্র্যাক্টিকাল ভাবে ভেবে দেখ মিছিল নিজেই নিখোজ হয়নি তো? ”
মুবিন নিজের অর্ধ উন্মাদ মস্তিষ্কের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। কারন খোজার জন্য। কিন্তু কোনো কারনই খুজে পায় না। মিছিল নিজ থেকে নিখোজ হতে যাবে কেনো? কিন্তু সীমান্তর যুক্তিগুলোও ফেলে দেবার মতো না। যেভাবে আইটির মারপ্যাঁচ হয়েছে তা মিছিল অনায়াসেই করতে পারবে। তাহলে কী মিছিল জেনেবুঝেই মুবিনের কাছ থেকে পালিয়ে নিখোজ হয়েছে?
মুবিনের মাথায় তেমন কোনো সন্দেহের অবকাশ কখনোই আসেনি। এখনও সে এই জিনিসটা বিশ্বাস করতে পারবে না। হ্যা বিশ্বাস করলে অবশ্য মিছিলকে ভুলে নতুন করে বাচতে পারবে। কিন্তু যদি তার মনগড়া বিশ্বাসটা ভুল হয়? ভুল হলে সে নিজেকে কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারবে না। তারচেয়ে এরকমভাবে মিছিলের জন্য অপেক্ষা করাটাই উত্তম। কোনো না কোনোদিন তো উপরওয়ালা মিছিলের খোজ দেবে, কোনো না কোনোদিন তো উপরওয়ালা এই জীবন ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আনবে। সেই পরিবর্তিত দিনের অপেক্ষাই করবে মুবিন।
এতোক্ষন রুমের মধ্যে তিনজনই চুপচাপ ছিলো। একদমই নিশ্চুপ নিরব ছিলো পুরো রুম। নিরবতা পাশে ঠেলে শাওন দাঁড়িয়ে মুবিনকে বলে, ” যেজন্য এখন এখানে আসলাম। আমরা ২ সপ্তাহের জন্য বিজনেস সেমিনারে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। তুইও চল না! ”
– ” আমি যাবো না। ”
সীমান্ত এসে মুবিনের একটা হাত চেপে ধরে বলে, ” প্লিয চল না। বহুদিন হয় তিনজন একসাথে দেশের বাইরে যাওয়া হয়নি। দেশের বাইরে কী বহুদিন হয় তিনজন একসাথে বাইরে যাওয়া হয় না। প্লিয চল, তোর না পাহাড় পছন্দ? আমরা মাউন্টেন এরিয়ায় যাবো। প্লিয চল! ”
– ” তোরা যাচ্ছিস বিজনেস সেমিনারে। সেখানে আমি গিয়ে কী করবো? অযথাই তোরা আমায় নিয়ে চিন্তা করবি। আর আমি এমনিই তোদের সাথে গিয়ে তোদের বোর করতে চাইনা। ”
– ” ভাই প্লিয এভাবে বলিস না। একটাবার চল, দেখিস একটু ভালো লাগবে। ”
– ” প্লিয ফোর্স করিস না। ”
– ” যদি তোকে ফোর্স করলে তুই রাজি হস তাহলে ফোর্স করতে দোষ কোথায়? প্লিয ভাই বহুদিন হয় কোথাও আউটিং এ যাওয়া হয় না। ”
– ” ফ্লাইট কবে? ”
শাওন এগিয়ে এসে বলে, ” কবে টবে লাগবে না। তুই জাস্ট লাগেজ পেচিয়ে নে। আমি দেখি অস্ট্রেলিয়ার নেক্সট ফ্লাইট কয়টায়! ”
– ” আচ্ছা! ”
সীমান্ত মুবিনকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” থ্যাংকস ব্যাটা! ”
মুবিন একটু হাসে। শাওন পেছন থেকে মুবিনের ঘাড়ে চাপড় মেরে বলে, ” তোর মুখের এই জঙ্গল নিধন করতে হবে। চল সেলুনে চল! তোকে সেলুনে দিয়ে টিকেট কনফার্ম করে আমরা লাগেজ নিয়ে তোর ফ্ল্যাটে আসবো। তারপর এখান থেকেই এয়ারপোর্ট রওনা হবো।
শাওন-সীমান্ত মুবিনকে সেলুনে দিয়ে চলে যায়। মুবিন চুল কেটে ক্লীন সেভড হয়ে ফ্ল্যাটে চলে আসে। এসে গোসল করে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। তারপর কিছুক্ষন আগের মানুষটা আর এখনকার মানুষটার মধ্যে তফাৎ খুজতে থাকে। বহু তফাৎ খুজে পায় মুবিন। তফাৎ পেয়ে খানিক হাসে। পরমুহুর্তেই চাপাকষ্টের দীর্ঘশ্বাসে বিলীন হয়ে যায় হাসিটা। মুবিন কিছু কাপড়চোপড় অগোছালো ভাবে সুটকেস বন্দি করে নেয়। এর মধ্যেই শাওন-সীমান্ত চলে আসে। শাওন এসেই বলে, ” অল সেট আমরা এখনই বের হবো। আর আঙ্কেলকে বলে দিয়েছি উনি খুবই খুশি হয়েছে তুই আমাদের সাথে যাবি শুনে। উনি বলেছে এয়ারপোর্টে তোকে সী-অফ করতে আসবে। ”
মুবিন এখনও রেডি হয়নি। একটা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পড়েই ব্যাগপ্যাক করছিলো। সীমান্ত মুবিনকে বলে, ” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। আজকে তুই গাড়ি চালিয়ে আমাদের এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবি তাও তোর গাড়িতে। আর শোন স্যুট পড়িস। তিনভাই একসাথে স্যুট পড়ে ফ্লাই করবো। প্লেনের এয়ারহস্টেজ সুন্দরি মেয়েরা দেখে ক্রাশ খাবে। ”
মুবিন একটু চওড়া হাসে।
রেডি হয়ে বের হয়েছে মুবিন। পড়নে একটা আকাশি কালারের স্যুট, ভেতরে ডার্ক ব্ল্যাক শার্ট, পায়ে ব্রাউন শু! পুরো স্যুটটাই মিছিল কিনেছিলো। স্যুট টা পড়ে নিজেই নিজের দিকে আয়নায় অসহায় অপলক তাকিয়ে আছে মুবিন। মুবিনকে স্যুটটায় বেশ মানিয়েছে তা দেখে খুব খুশি শাওন আর সীমান্ত। ওরা তারচেয়েও বেশি খুশি মুবিন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সেজন্য। নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনেই মুবিন বলে, ” মিছিল আমার অস্তিত্ব রে! আমার সবকিছু ও, অথচ দেখ ওর কোনো অস্তিত্বের হদিসই আমি পাচ্ছি না! ”
শাওন-সীমান্তের মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে যায়। শাওন এগিয়ে এসে বলে, ” কী করবি রে ভাই? বহু গল্প এমন অপুর্নতায়ই ডুবে গেছে। কষ্ট হচ্ছে বলতে তবুও বলছি, হয়তো তোর গল্পটাও অপুর্নতায় ডুবে যাওয়া গল্পগুচ্ছের একটা গল্প! ”
মুবিন একটু চাপাশ্বাস ছাড়ে। চোখ দুটোতে পানি জমে দৃশ্যপট ঝাপসা হয়ে যায় মুবিনের। পাশ থেকে শাওন জড়িয়ে ধরে মুবিনকে, সীমান্তও এসে জড়িয়ে ধরে মুবিনকে। মুবিন ওদের কাধে হাত রেখে বলে, ” অনেক কেদেছিস আমার জন্য। আজকে আর না, চল যাওয়া যাক। ”
শাওন-সীমান্ত একসাথে বলে, ” হুম চল! ”
নিচে নেমে বহুদিন পরে নিজের গাড়িটাকে দেখতে পায় মুবিন। অনেক শখ করে কিনেছিলো গাড়িটা। আজ বহুদিন পরে দেখলো, গাড়িটাকে বোধহয় শাওন-সীমান্ত ওয়াশ করিয়েছে আজকে। গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট বেধে স্টিয়ারিং এ হাত দিতেই গাড়ির ড্যাশবোর্ডের শোপিসটার দিকে চোখ পড়ে মুবিনের। প্রায় আড়াই বছর আগে একটা মেলায় গিয়েছিলো মুবিন আর মিছিল। তখনই মিছিল পছন্দ করে শোপিসটা কিনেছিলো। আজও শোপিসটা আছে অথচ মিছিল আছে কিনা সেটাও জানে না মুবিন। কতটা অদ্ভুত আর অসহায়ত্বের কথা তাইনা?
মুবিন ড্রাইভ করে এয়ারপোর্টে চলে আসে। এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকতেই লবিতে আহাদ শেখ আর আলেয়া শিকদারকে একসাথে দেখতে পায় মুবিন। বহুদিন পরে নিজের বাবা-মা কে একসাথে দেখতে পাচ্ছে মুবিন। কিন্তু তাতে তেমন কোনো আলাদা অনুভুতি অনুভব করছে না মুবিন। আহাদ শেখ মুবিনের দিকে এগিয়ে এসে বলে, ” শেভ করেছিস? অনেক ফ্রেশ লাগছে তোকে। খুব ইঞ্জয় করিস আব্বু, আর কিছু দরকার হলে সেক্রেটারিকে ফোন না করে সোজা আমায় ফোন দিস! ”
– ” আমি সাথে করে নিজের গাড়িটা নিয়ে এসেছি। ওটাকে ড্রাইভার দিয়ে আমার এপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিয়েন। ”
– ” আচ্ছা! আচ্ছা! তুই চিন্তা করিস না। ”
পাশ থেকে আলেয়া সিকদার বলে, ” আর এভাবে থেমে থাকিস না বাবা। একটু মুভ অন কর, আমরাও তো একসময় একে অপরের থেকে মুভ অন করেছিলাম। চাইলেই মুভ অন করা যায়, এভাবে কষ্ট পেয়ে নিজের উপর অন্যায় করিস না। ”
– ” আপনারা একটা সন্তান রেখে মুভ অন করেছিলেন নিজেদের স্বার্থে। নিজেদের যৌবনের জন্য। আপনাদের কাছে মুভ অন করার রিজন ছিলো, বাট আই ডোন্ট হ্যাভ। ”
আহাদ শেখ আর আলেয়া বেগম একসাথে মাথা নিচু করে ফেলে। মুবিন আবার বলে, ” মাথা নিচু করলেই তো আমার শৈশবটা ফিরে আসবে না। বাদ দিন! ”
আহাদ শেখ শাওনকে বলে, ” শাওন বাবা ওর একটু যত্ন করিস। বুঝছিসই তো অনেকদিন পর দেশের বাইরে যাচ্ছে। ”
– ” ডোন্ট ওয়ারি আঙ্কেল। আমরা দেখে রাখবো মুবিনিকে! ”
সীমান্ত পাশ থেকে বলে, ” চল। ফ্লাইট টেক অফ এর সময় হয়ে আসছে প্রায়। ”
মুবিন বলে, ” চল! ” বলে মুবিন সামনে এগিয়ে যায়। তারপর হঠাৎ করেই এসে একসাথে জড়িয়ে ধরে আহাদ শেখ আর আলেয়া বেগমকে। ঘটনার আকস্মিকতায় বেশ চমকে যায় দুজনেই। কিন্তু পরক্ষনেই ব্যাপারটা উপলব্ধি করে আনন্দে ভরে ওঠে ওনাদের বুক। মুবিন নিজের বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” ছোটবেলায় তোমরা আমায় পর্যাপ্ত ভালোবাসা দেওনি। কিন্তু আমিও কখনও তোমাদের পর্যাপ্ত মর্যাদা, গুরুত্ব, ভালোবাসা দেইনি। একদিক থেকে আমিও সন্তান হিসেবে অপরাধি। ক্ষমা করে দিও আব্বু-আম্মু। ”
একসাথে হু! হু! করে কেদে ওঠে আহাদ শেখ আর আলেয়া শিকদার। মুবিনও কেদে দেয়। এভাবে কতক্ষন জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পরে ওনাদের ছেড়ে মুবিন বলে, ” আসচ্ছি আব্বু! আম্মু! ”
আহাদ শেখ আর আলেয়া বেগম কান্নার বেগে কথা বলতে পারে না। শুধু মাথা নাড়ে!
মুবিন মুচকি হেসে এগিয়ে যায়। মুবিন, শাওন, সীমান্ত অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসে।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “
একটা হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খোজার আর কোনো উপায় জানা নেই মুবিনের। আদৌ মিছিল কী কিডন্যাপ হয়েছে না কী হয়েছে তা স্বমন্ধে কিচ্ছুই জানা নেই মুবিনের। জানার তো বহু চেষ্টাই করেছে কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই কোনো ফায়দা হয়নি। এভাবে একটা মানুষ যে ঠিক কীভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে সেই গোলকধাঁধাটার উত্তরই খুজে পাচ্ছে না মুবিন। কোনো সুত্র তো সে ছাড়েনি। প্রত্যেকটা এঙ্গেল থেকে ইনভেস্টিগেট করেছে সে। তাহলে কী মিছিল আর বেচেই নেই? মরে গেছে এমন কোনো খোজও তো পায়নি সে। কী করা উচিৎ তার? কী করবে এখন? পুরো জীবনটাই যেনো চোখের পলকে বাজেভাবে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। চারদিকে শুধু অসীম অজানা। যে অজানায় একটা মানুষ প্রত্যেকটা মুহুর্তে দুমড়ে দুমড়ে মরে, যে অজানায় একজন মানুষের চিৎকার কেউ শুনতে পারে না নিজের আর্ত্মনাদের শব্দে নিজেই হাপিয়ে ওঠে। যে পরিস্থিতিতে প্রতিটা নিঃশ্বাসের মুল্য নিশ্চুপ মৃত্যু….!
দীর্ঘ নয় মাস পর….!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন মুখভর্তি দাড়ি, আর মাথাভর্তি লম্বাচুলওয়ালা মানুষ। পুরো মুখটা যেনো দখল করে নিয়েছে এই চুলদাড়ি। স্পষ্টভাবে বোঝাই যাচ্ছে না চেহারার গঠন। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে চেনারই বৃথা চেষ্টা করছে মুবিন। চেষ্টা চালাতে চালাতেই হাতে থাকা মদের বোতলে আরেকটা চুমুক লাগায় মুবিন। গলার ভেতরটা যেনো মদের ঝাঝে ঝাঝে পুড়ে ঝলসে গেছে, পেটের ভেতরের সবকিছু যেনো মদে অভ্যস্থ হয়ে গেছে, আর মাথার ভেতরের? মাথার ভেতরের সমস্ত সব যেনো মদে মাতাল হয়ে উন্মাদ হয়ে আছে। গত নয়মাসে প্রায় অর্ধেক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে মুবিন। প্রায় সাতমাস যাবৎ বাইরের আলো গায়ে মাখে না মুবিন। দিনে একবার এসে মদ আর খাবার দিয়ে যায় আহাদ শেখ সাথে নিজের ছেলের এই করুন পরিস্থিতি দেখে ফুপিয়ে কেদেও যায় কতক্ষন। আলেয়া বেগমও আসে সপ্তাহে দু-তিন দিন নাড়ির টান যে, এসে এসব দেখে সেও না কেদে পারে না। শাওন-সীমান্ত দিনে প্রায় দুই-তিনবারই আসে। প্রতিদিন একবার সাইক্রিয়াটিস্ট এসে দেখে যায় মুবিনকে। এই কয়জনেরই যাতায়াত মুবিনের ফ্ল্যাটে।
বেলকনিতে বসে রেলিংয়ের বাইরে পা ঝুলিয়ে মদের সাথে ছোট ছোট প্রেমালাপ করছে মুবিন। মদের সাথে মুবিনের সম্পর্ক অনেক গাঢ়ো। কারন যার সাথে সম্পর্ক গাঢ়ো ছিলো সে তো বেপাত্তা। মাঝে মাঝেই মুবিনের মনে হয় আত্মহত্যা করে মরে যেতে। কিন্তু মিছিলের কারনে শান্তিতে মরতেও পারে না মুবিন। যখনই আত্মহত্যার চিন্তাটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখনই মুবিনের মনে হয় মিছিল যদি কোনোদিন ফিরে আসে? সেদিন যদি এসে মিছিল মুবিনকে দেখতে না পায়? তাহলে তো মিছিল খুব কষ্ট পাবে। মিছিলকে সেই মরন যন্ত্রনার স্বাদ দিতে চায় না মুবিন। তাই নিজেই প্রত্যেকদিন জীবন্ত লাশের ন্যায় জীবনের যাপন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রায়ই আকাশের দিকে অবাক অনেক তাকিয়ে থাকে মুবিন। সেও তো এই আকাশের মতোই শূন্য। আজ একটু আকাশ দেখাও মুবিনের কপালে জুটছে না। সেই কখন থেকে সমানে মদ খাচ্ছে আর ঘাড় সটানে উপরের দিকে উঠিয়ে রেখেছে আকাশ দেখার জন্য। কিন্তু দেখতেই পারছে না। দেখবে কীভাবে? পুরো আকাশ যে কালো মেঘের বেনারসিতে পেচানো। এতক্ষন তাকিয়ে থেকেও আকাশ না দেখতে পেয়ে বিরক্তি তাচ্ছিল্যে মুবিন বলে, ” মিছিল, এই মেঘের নামে কারো কাছে নালিশ জানাতে হবে। আমায় আকাশই দেখতে দিচ্ছে না মেঘ! ” মুবিন আপনমনে বিড়বিড় করছিলো তখনই শাওন-সীমান্ত মুবিনের ফ্ল্যাটে ঢোকে। আর ঢুকে প্রত্যেকদিনের মতো মুবিনকে বেলকনির কার্নিশের পাশেই দেখতে পায় ওরা। শাওন মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” কেমন আছিস মুবিন? ”
মুবিন পেছনে ঘাড় ফিরিয়ে এক পলক শাওন-সীমান্তকে দেখে বলে, ” অনেক ভালো। তোদের কী খবর? ”
মুবিনকে এভাবে দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে শাওন। চনমনা মুবিনের এই করুন পরিস্থিতি দেখে দেখে যেনো তার চোখ কেদে মরে যায়। শাওন শক্ত গলায় বলে, ” দেখছিই তো খুব ভালো আছিস। এইতো একটু পরেই সাইক্রিয়াটিস্ট আসবে এসে বলবে কন্ডিশন আরো বিগড়ে যাচ্ছে। ভালো আছিস না? খুব ভালো আছিস! ”
সীমান্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পাশে থেকে। মুবিন কিছুই বলে না। মুবিনের ওপরে এরকম অধিকার খাটানোর অধিকার আছে শাওনের।
মুবিন যেনো প্রানই হারিয়ে ফেলেছে। আগে মুবিনের সাথে দেখা করলে আলাদা এক আনন্দ অনুভব হতো শাওন-সীমান্ত’র। এখন মনে হয় কোনো অপরিচিতর সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেছে। যাকে চেনেই না ওরা।
শাওন মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” আর কতদিন এভাবে কাটাবি মুবিন? ”
সাথে সাথেই মুবিন জবাব দেয়। এমনভাবে জবাব দেয় যেনো এই প্রশ্নটার অপেক্ষাই সে করছিলো, আর এই প্রশ্নটার উত্তর যেনো সে অনেক যত্নেই তৈরী করেছে। মুবিন উত্তর দেয়, ” যতদিন বেচে আছি। যতদিন শ্বাস আছে! ”
– ” লাভ কী এতে? নয় মাস হয়ে গেছে মুবিন। নয় মাস!, কোনো ফাক-ফোকড় তো আমরা ছাড়িনি। গায়েব হয়েগেছে, উধাও হয়ে গেছে মিছিল। কোনোদিন তোর মিছিলের সাথে দেখাই হয়নি এটা ভেবে মুভ অন কর। জাস্ট ভুলে যা না ওকে, আর কতদিন মুবিন? জাস্ট গেট ড্যাম ফাকেন গ্রো আপ! ”
মুবিন কোনো উত্তর দেয় না। শাওনের কথা গায়েও মাখায় না। এভাবে চাইলেই কী ভুলে যাওয়া যায়? কোনোমতেই যায় না। মুবিনের নিশ্চুপ ব্যাবহারে শাওনের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। একটা ফুলদানি হাতে নিয়ে সজোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। ফুলদানিটা গঠনের টান ছেড়ে মুহুর্তেই গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়। শাওন চিৎকার দিয়ে বলে, ” এভাবে দেখতে পারছি না তোকে। হয় মরে যা আর নাহয় বাচার মতো বাচ। এভাবে বেচে থাকার দরকার নেই তোর! ”
সীমান্ত শাওনের মুখ চেপে ধরে টেনে নিয়ে শাওনকে খাটে বসায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে শাওন। মুবিন উঠে এসে শাওনের সামনে ফ্লোরে বসে বলে, ” আমি আসলেই এভাবে বাচতে চাই না রে! প্রত্যেকটা মুহুর্তে আমি নিশ্চুপভাবে মরে যাই। প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের ব্যাবধানে আমার মরন হয়। ভেতরটায় একদম অদ্ভুত একধরনের ব্যাথা হয়। পুরো শরীরটায় যেনো কেমন একধরনের নির্বাক যন্ত্রনায় হারিয়ে যায়। এই অসুখের নাম জানা নেই আমার, এই অসুখের ঔষধের খোজও নেই আমার কাছে। আমি কিচ্ছু চাই না বিশ্বাস কর, কিচ্ছু না। শুধু মিছিলের একটা খবর চাই আর এই জীবন ক্যালেন্ডারটা থেকে মুক্তি চাই। খোদার কাছে দোয়া কর হয় এই ক্যালেন্ডারের অবসান ঘটুক নাহয় আমার অস্তিত্বের অবসান ঘটুক! ” শ্বাস চেপে আসার ফলে কথা বুকে আটকে যায় মুবিনের।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “