দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 3

0
1307

………………দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
……………………..PART:03…………………………

ইতোমধ্যেই প্রাণীটা তার দলবল নিয়ে পুরো তাবু ঘীরে ফেললো। একসাথে অনেকগুলোর আওয়াজে কান ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা। বড় বড় চোখালো দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরছে অঝোর ধারায়। ট্রুডো প্রাণীগুলোকে দেখেই বলে উঠলো,”চুপাকাবরা!”
মিউরিস অবাক হয়ে ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বললো,” এই প্রাণীই তো আক্রমণ করেছিলো। এখন এতোগুলোর সাথে আমরা লড়বো কিভাবে? ”
ট্রুডো সবাইকে শান্ত করে বললো,”কেউ ভয় পেয়ো না। সবাই চোখ বন্ধ করো। আর আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখ খুলতে বলবো কেউ চোখ খুলবে না। ”
ট্রুডোর কথায় সবাই চোখ বন্ধ করলো। ট্রুডো তার শার্টটা খুলে একটা বিকট চিৎকার করে তার ভ্যাম্পায়ার রুপ ধারণ করলো। পেছন হয়ে তার ঘাড়ে থাকা ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি চুপাকাবরা প্রাণীদেরকে দেখানো মাত্রই সবাই জঙ্গলের ভেতরে দৌঁড়ে পালালো। ট্রুডোও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা পাখি এনে কামড় দিয়ে সব রক্ত চুষে ছুড়ে ফেলে দিলো জঙ্গলের ভেতর। রক্ত খেয়ে আবার মানুষ রুপে এসে তাড়াতাড়ি শার্টটা পড়ে সবাইকে চোখ খুলতে বললো। কিন্তু পাখিটার রক্ত খাওয়ার সময় যে রক্ত তার মুখে লেগে ছিলো তা মুছতে ভুলে গেলো ট্রুডো। সবাই চোখ খুলে দেখে ট্রুডোর মুখে রক্ত লেগে আছে। ভয় পেয়ে গেলো সবাই। আনাহী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবগুলো চুপাকাবরা চলে গেছে। ট্রুডোকে হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সবাই। ভিরেক্স বললো,”তোর মুখে রক্ত কোথা থেকে এলো? আর এরা কোথায় চলে গেলো হঠাৎ?”
ট্রুডো একটু চালাকি করে বললো,”ও কিছু নয়। চিৎকার দেওয়ার সময় মুখ থেকে বেরিয়েছে।” বলতে বলতে মুখের রক্তটা মুছে নিলো ট্রুডো। এরই মাঝে আনাহী বললো,”চুপাকাবরা আবার কি রকম প্রাণী? এদের বিশেষত্ব কি?”
সবাই শান্ত করে একজায়গায় বসিয়ে চুপাকাবরা সম্পর্কে ট্রুডো বললো,”চুপাকাবরা এক ধরনের ছাগল ভ্যাম্পায়ার। এরা প্রথমত প্রাণীদের হত্যা করে তারপর তাদের রক্ত চুষে খায়। এর নামের অনুবাদিক অর্থ দাঁড়ায় ‘চুষে চুষে চলা’। এরা সামনে যে প্রাণীকেই পাক না কেন সবাইকে রক্তশূন্য করে ফেলে। অতিরিক্ত প্রয়োজনে এরা মাংস খুবলে খায়। এরা এতোটাই হিংস্র যে যাকে একবার খাওয়ার জন্য মনস্থির করে তাকে খেয়েই ছাড়ে। তবে মিউরিস তুই ভয় পাস না। সাবধানে থাকবি। যখনই চুপাকাবরার কবলে পড়বি তখনই তাদের সামনে আগুন ধরবি। আর সাহায্য করার জন্য আমি আছি। ”
কথাটা বলে শেষ করতেই উঠে দাঁড়ালো ট্রুডো। সবাইকে রেখে জেফারী আর মেডেকিকে খুঁজতে বের হলো আর তাদেরকে তাবুতে অপেক্ষা করতে বললো।
কয়েকমিনিট হাঁটার পর তাদের থেকে আড়াল হয়েই ভ্যাম্পায়ারের পাওয়ার ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে আশপাশ খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। কিন্তু কয়েকক্ষণ পর তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে গেলো কারণ সূর্য উঠেছে। দিনের বেলাতে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি প্রায় অচল। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই খুঁজতে লাগলো মেডেকি আর জেফারীকে। খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেলো সামনে এক জংলী মানুষ। তাড়াতাড়ি গাছের আড়ালে লুকালো ট্রুডো। উঁকি দিয়ে দেখে লোকটা অন্যদিকে চলে গেছে। আবার হাঁটতে শুরু করলো ট্রুডো। কিন্তু পেছন থেকে একটা দাঁড়কাক পিছু নিলো। যখনই ট্রুডো হাঁটা থামায় তখনই কাকটা গাছের পাতার আড়ালে লুকায়। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো ট্রুডো। এদিকে আনাহী, ভিরেক্স আর ব্লেডিকো একা। যেকোনো সময় চুপাকাবরা আবার এসে আক্রমণ করবে তাই আবার তাবুতে ফিরে আসতে লাগলো ট্রুডো। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় একটা কালো জেকেট পড়া ছায়া বারবার ট্রুডোর পেছনে দৌঁড়ে যেতে লাগলো আর শুকনো পাতায় খচখচ আওয়াজ হতে লাগলো। ট্রুডো রাগে চোখদুটো লাল করে পেছনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই। এভাবে চলতে চলতে অবশেষে তাবুতে ফিরে এলো ট্রুডো। ক্লান্ত শরীরে নিজের তাবুতে গিয়ে বসলো। সাথে সাথেই আনাহী আর ভিরেক্স এসে কাঁদো গলায় বললো,”মিউরিসকে চুপাকাবরা নিয়ে গেছে। আমরা তাবুতেই ছিলাম কিন্তু সে হঠাৎ তাবু থেকে বের হতেই তাকে নিয়ে গেছে।”
এদিকে ক্লান্ত শরীর পুরো নেতিয়ে গেছে ট্রুডোর। এমনিতেই দিনের আলোয় তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কাজ করে না তার উপর এই দুদিকে ঝামেলা। হঠাৎ জেফারী আর মেডেকির কথা মনে পড়লে আনাহী বললো,”জেফারী আর আনাহীর কোনো খোঁজ পেলি? ”
কষ্ট করে ট্রুডো বললো,”আমি ঠিক সময়ে তাদের খুঁজে আনবো। এখন আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দে। আর হ্যাঁ, তোরা সব তাবুতেই থাক। ”
কথাটা শুনার পর ভিরেক্স এর কাছে ট্রুডো একজন স্বার্থপর মনে হলো। মনে মনে ভাবলো, বন্ধুদের না বাঁচিয়ে নিজে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু ট্রুডো নিরুপায়। বন্ধুদের বাঁচাতে গেলে তাকে প্রথমে বাঁচতে হবে। শুয়ে থেকে ট্রুডো সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো চুপাকাবরার কথা। ট্রুডো ভ্যাম্পায়ার। চুপাকাবরাগুলোও ছাগল ভ্যাম্পায়ার। ট্রুডো যা কমান্ড করবে তা তাদের শুনবার কথা। ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটা দেখে চুপাকাবরাগুলো আবার মিউরিসকে ধরে নিয়ে গেলো কেন? তবে কি তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে যাচ্ছে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাক্সটা বের করলো ট্রুডো। বাক্স থেকে রক্তের ব্যাগটা বের করে অর্ধেকটা চুষে খেয়ে নিলো। মোবাইলের গ্লাসের দিকে তাকাতেই দেখে তার চোখ লাল আলোয় ঝলকাচ্ছে। দুটি দাঁত বের হয়ে আছে। নিজেকে সংযম করে মানুষ রুপে ফিরে এলো ট্রুডো আর অপেক্ষা করতে লাগলো সন্ধ্যা পর্যন্ত।
কালসন্ধ্যা। এখনো সূর্য পুরোপুরি অস্ত যায়নি। তাবু থেকে বেরিয়ে পড়লো ট্রুডো। চুপাকাবরাদের ওমন আচরণের কথা চিন্তা করে রাগে চোখদুটো থেকে আগুনের অশ্রু ঝরতে লাগলো। তাবু থেকে একটু দূরে এসে ভয়ঙ্কর হুঙ্কার ছাড়তে লাগলো। অন্ধকার একটু ঘন হয়ে আসতেই বিশাল পাখাযুক্ত এক ভ্যাম্পায়ারে রুপ নিলো ট্রুডো। চোখদুটো লাল আলোয় ঝলকাচ্ছে। রাগের চোটে চারদিকে দিশেহারার মতো তাকিয়ে পশুপাখি খুঁজতে লাগলো। গাছের ডাল থেকে একটা জংলী পাখি ধরে নিমিষের মধ্যেই রক্ত চুষে ছুড়ে ফেলে দিলো ট্রুডো। ভ্যাম্পায়াররা এমনিতেই জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে মাত্র কয়েক মিনিট বা সেকেন্ড লাগে। আর উড়ে উড়ে গেলে আরও কম সময়। কিন্তু ঘন জঙ্গলের মাঝে উড়ে যাওয়ার কোনো পন্থা নেই বলে চারদিকে তার বন্ধুদের দিশেহারার মতো খুঁজতে লাগলো। আগেই মিউরিসকে বাঁচাতে গেলো না কারণ ট্রুডোর জানা আছে যে তার কথা অমান্য করে মিউরিসকে চুপাকাবরা নিয়ে গেলেও তাকে মেরে ফেলবে না। চুপাকাবরা যতোই হিংস্র আর ভয়ানক হোক না কেন ভ্যাম্পায়ারদের চেয়ে তাদের শক্তি কম। তাছাড়া মিউরিসকে বাঁচিয়ে এনে তাবুতে রাখলে চুপাকাবরা আবার আসবে। তাতে অন্যদেরও ক্ষতি হবার প্রবল আশঙ্কা আছে। গতকালের মতো জঙ্গলের সেই সরু পথ ধরে এগোতে লাগলো ট্রুডো। আজকেও আকাশে চাঁদ উঠেছে। শুক্লপক্ষ শেষ হতে আগামী দিনটাই বাকী আছে। কিন্তু আজকে আকাশে মেঘের কারণে চাঁদের আলো তেমন জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারেনি। মেঘের আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়েছে। গতদিনের মতো সেই ঝর্ণার ধারে আবারও মেয়েটিকে দেখে চোখ আটকে গেলো ট্রুডোর। চাপা গলায় আবারও সেই শিহরণ কান্না। কিন্তু আজকে আর দেরি না করে মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য সামনে এগোতেই হঠাৎ মনে পড়লো সে ভ্যাম্পায়ারের রুপে আছে। মেয়েটি তাকে এই অবস্থায় দেখলে ভয় পেয়ে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি মানুষ রুপে ফিরে মেয়েটির কাছে যেতে লাগলো ট্রুডো।
..
..
..
..(চলবে…….)
..
..
..
গল্পটি কেমন হচ্ছে তা জানাতে পারেন আমার গ্রুপটিতে। যেকোনো আলোচনা, সমালোচনা, রিভিও ইত্যাদিও করতে পারেন। গল্প সম্পর্কে কারো কোনো অভিযোগ বা মতামত থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন অথবা গ্রুপে যুক্ত হয়ে সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন কারণ আপনি যেটা বুঝছেন না তা হয়তো অন্যকেউ বুঝেছে তাই সেটা সকলের সাথে শেয়ার করলে নিশ্চয় উত্তরটা পাবেন। ধন্যবাদ সকলকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে