Saturday, June 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1585



অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১৩

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৩
#Devjani

হাতে টিস্যু নিয়ে আধ ঘন্টা ধরে কেঁদে যাচ্ছে আরাদ্ধা।পাশে টিস্যুর বক্স নিয়ে আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে রোদ্দুর।আরাদ্ধা সেখান থেকে টিস্যু নিচ্ছে না। তবুও রোদ্দুর নিয়ে বসে আছে।

আরাদ্ধা তেজি গলায় বলে,সব হয়েছে ওই টাইগারের জন্য। ফালতু কুকুর।কাজ কর্ম নাই।

রোদ্দুর রাগী গলায় বলে,তোর সাহস কম না আমার সামনে আমার টাইগারকে কুকুর বলছিস!

আরাদ্ধা রাগী গলায় বলে,ওই কুকুরটার জন্য আমার এই অবস্থা।আমি বিয়ে করবো না।

রোদ্দুর ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। আস্তে করে বলে,বিয়ে হয়ে গেছে।আর তুই আমার রুমে বসে আছিস।তাও বউ সেজে।

আরাদ্ধা রেগে গিয়ে বলে,কে বউ। কিসের বউ।আমি আপনার বউ নই। আপনার বউ সুমাইয়া।

— ওহ আচ্ছা।আমি ভুলে গিয়েছিলাম। সুমাইয়া আর কাঁদিস না।আরাদ্ধাকে আমি বকে দিব। খুব খারাপ মেয়ে ও।

— মানে?আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

— মানে এই যে তুই বলেছিস আমার বউ সুমাইয়া।আর তোর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।তাই তোর কথার মানে তোর নাম সুমাইয়া।আর তুই যেহেতু সুমাইয়া হয়ে গেছিস। সুমাইয়া নিশ্চয়ই আরাদ্ধা হয়ে যাবে।

আরাদ্ধা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় রোদ্দুরের দিকে।বলে,আপনি ফান করছেন? আচ্ছা টাইগার নামক খারাপ কুকুরটার সাথে আরেকটা যে কুকুর আছে ওইটা কে?

রোদ্দুর মেকি হাসি দিয়ে বলে,ওটা টাইগারের লাইফ পার্টনার অলি।কালই এনেছি ওটাকে।বেচারা টাইগার একা একা থাকে তাই ভাবলাম,,,,,,,

আরাদ্ধা রোদ্দুরকে থামিয়ে দিয়ে বলে, বুঝতে পারেছি।

আরাদ্ধা উঠে গিয়ে রোদ্দুরের পড়ার টেবিলে বসে পড়ে।মাথা কাজ করছে না।তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার জন্য বাজেভাবে রিয়েক্ট করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কার সাথে করবে সবাই তার থেকে বড়।তার উপর একটা ব্যাপার তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।সেটা হলো সুমাইয়া কোথায়? কেন চলে গিয়েছে এভাবে?যদি বিয়েই না করতে চায় তবে বিয়েতে রাজি হলো কেন?

আরাদ্ধা রোদ্দুরের স্টেথোস্কোপটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে একটু আগের ঘটনাগুলো ভাবছে।
টাইগারের পাশ কাটিয়ে যেতেই টাইগার বাজেভাবে চেঁচিয়ে উঠে।সে ভয়ে পেছনে চলে যেতেই রোদ্দুরের মা হাসিমুখে এসে তাকে জরিয়ে ধরে বলে,আমি জানতাম আরু মা,তুই আমার কথা ফেলবি না। অদ্রি, শ্রেয়া তোরা ওকে একটু রেডি করিয়ে দে তাড়াতাড়ি।

আরাদ্ধা বারবার বলেছিল, টাইগারের ভয়ে সে এসেছে। কিন্তু রোদ্দুরের মা কানে না নিয়ে উল্টা বলে,সে লজ্জা পেয়ে এসব বলছে।

আরাদ্ধার ভাবতেই রাগে চোখে পানি চলে আসে।তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সব হয়েছে।

আরাদ্ধা টেবিলের মাথাটা রাখে। হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল। কিন্তু আসল মা তো তার কিছুই জানে না।খারাপ লাগছে ব্যাপারটা।
মুখ তুলে রোদ্দুরকে উদ্দেশ্য করে বলে, শুনুন!কাল আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন?আসল মায়ের কাছে?

— নিয়ে যাব। শুনেছি উনি নাকি অসুস্থ।কি হয়েছে ওনার?

— প্যারালাইসিস।কথাটা বলতেই এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে আরাদ্ধা চোখ থেকে।

রোদ্দুর আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
আরাদ্ধা খানিকটা সংকোচ নিয়ে বলে,আমি কোথায় ঘুমাবো?

রোদ্দুর ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়, বিছানা আছে, সোফা আছে, এতো বড় মেঝে আছে যেখানে পারিস ঘুমা।বাই দা ওয়ে,এখন ঘুমানোর কথা আসছে কোথা থেকে।মাত্র নয়টা বাজে, এগারোটা পর্যন্ত পড়বি।সামনে পরীক্ষা!

— আজকের দিনে পড়বো?আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

রোদ্দুর ছোট ছোট করে বলে,আজকের দিন বলতে কি মিন করছিস?

— কিছু না।
আরাদ্ধা বই খুলে পড়া শুরু করে।

♡♡♡

জানালার কাচ ভেদ করে তীব্র রোদের আলো আরাদ্ধার চোখে পড়তেই আরাদ্ধা খানিকটা নড়েচড়ে উঠে। ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে,নরম কিছুকে আঁকড়ে ধরে আছে সে।বেশ আরাম লাগছে।আরাদ্ধা জিনিসটাকে আরো কাছে টেনে শক্ত করে আকড়ে ধরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে।
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে আঁকড়ে ধরা জিনিসটা হালকা নড়াচড়া করছে।সাথে অদ্ভুত আওয়াজ আসছে।আরাদ্ধা হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে জিনিসটা কি হতে পারে। কিন্তু আকৃতি অনুসারে বুঝতে পারছে না কি হতে পারে।হালকা চোখ খুলে তাকায় জিনিসটা দেখার জন্য।

— আম্মুউউউউ,,,,,,,
ঘুমের মধ্যে গায়ের সব শক্তি একসাথে করে চিৎকার করে দূরে সরে যায় আরাদ্ধা। বিছানা থেকে ধপ করে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপছে।

আরাদ্ধার চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে আসে রোদ্দুর আর তার মা।দেখে আরাদ্ধা নিচে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।এক পর্যায়ে কেঁদে দেয়।

আরাদ্ধার বুক ধড়ফড় করছে। বিছানার উপর থেকে অলি নামক কুকুরটা এখনো তার দিকে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে আছে।আরাদ্ধা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ঘুম থেকে উঠে এমন পরিস্থিতির সে মোটেও আশা করেনি।এই প্রথম কোনো কুকুর এত কাছ থেকে দেখছে। শুধু দেখেনি। জড়িয়ে ধরেছে।
রোদ্দুর এসে আরাদ্ধার মাথাটা বুকে চেপে ধরে শান্ত করার চেষ্টায় বলে,ভয় পেয়েছে পিচ্চিটা। কিছু হয় নি। কান্না বন্ধ কর।

রোদ্দুর মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আম্মু তুমি কুকুরটাকে বাইরে নিয়ে যাও।

আরাদ্ধা এখনো কাঁপছে ভয়ে। রোদ্দুরের শার্ট শক্ত করে ধরে আছে।অলি দেখতে ততটাও ভয়ঙ্কর না।সাদা লোমশ তুলতুলে কুকুর। তবুও হঠাৎ এই ঘটনায় বেশ ভয় পেয়েছে। কিন্তু আজ যদি টাইগার থাকতো সে নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করতো।
রোদ্দুর আরাদ্ধাকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দেয়।বলে,অলি চলে গেছে।ভয় পাস না কিছু হবে না। ওদের এতো ভয় পাস কেন? কিছু করবে নাতো ওরা।

রোদ্দুর টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা আরাদ্ধার দিকে এগিয়ে দেয়। প্রচুর হাসি পাচ্ছে তার। কিন্তু আরাদ্ধার সামনে হাসতে পারছে না। পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যেতে পারে।

আরাদ্ধা এক নিঃশ্বাসে সমস্ত পানি খেয়ে ফেলে।এখন কিছুটা ভয় কমেছে। কিন্তু এখনো বুক ধড়ফড় করছে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলছে, আল্লাহ্!এমন বাজে ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে।

♡♡♡

কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে তার বাবা দাদিকে গাড়িতে তুলেছে।দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাচ্ছে।আরাদ্ধা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, আব্বু তোমরা কোথায় যাচ্ছ?

— তোর দাদি একটু অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।

আরাদ্ধা দাদির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মৃদু কন্ঠে বলে,দাদি কেমন আছ? তুমি নাকি অসুস্থ!

দাদি রেগে গিয়ে বলে,কথা বলবি না একদম।তোর মুখ দেখতেই ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা তুই কি করে পারলি সুমাইয়ার সাথে এমন করতে?তোর তো নিজের বোনের মতো ও!

— দাদি তুমি ভুল বলছো।আমি কিছু করিনি।আমি তো অতিথি হিসেবে এসেছিলাম।এমন হবে জানলে আসতাম না।

— এভাবে একটা কথা বানিয়ে বানিয়ে বলবি আর আমি বিশ্বাস করব ভাবচ্ছিস?তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত একটা কাজও তোকে করানো যায় নি।আর তোকে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করিয়ে দিল?

আরাদ্ধা এবার কোনো উত্তর দিল না।কি উত্তর দিবে মনে মনে খুঁজছে।আসলে দাদির কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। কালকে ঘটনাটায় যে তার একটু হলেও ইচ্ছে ছিল সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করছে।
মৃদু গলায় বলে,আসলে কুকুরটার ভয়ে ভিতরে গিয়েছিলাম।সবাই ভেবেছে আমার ইচ্ছে আছে লজ্জায় বলতে পারছি না।

— কেন রে? কুকুরকে এতো ভয় পাস কেন?তোকে খেয়ে খেলবে নাকি? তীক্ষ্ণ গলায় বলে দাদি।

— দেখ দাদি একই প্রশ্ন যদি তোমাকে করি, তেলাপোকা দেখলে দূরে সরে যাও কেন?ওটা তো কুকুরের থেকেও ক্ষুদ্র প্রাণী।

— তোর সাহস তো কম না আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস?

আরাদ্ধা গিয়ে শক্ত করে দাদিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,আমার সাথে সবসময় এমন করে কথা কেন বল দাদি?কি করেছি আমি?

— ছাড় আমাকে। ব্যাথা পাচ্ছি।

আরাদ্ধা জেদ ধরে বলে, উহুম,,,,ছাড়বো না আমি।বলো আমার সাথে এমন কেন কর?আগে তো কত আদর করেছো,আর এখন,,,!

— ছাড়বি!

আরাদ্ধার বাবা এতক্ষণ ফোনে কথা বলছিল।ফোন রেখে আরাদ্ধাকে ধমক দিয়ে বলে,ছেড়ে দে আরু,মা অসুস্থ!

আরাদ্ধা ছেড়ে দেয়। দাদির গালগুলো টেনে বলে, অসুস্থ বলে ছেড়ে দিয়েছি। সুস্থ হয়ে আসো এরপর দেখছি,,,কথাটা বলে আরাদ্ধা উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করে।
কিন্তু মাথায় দাদির কথাগুলো ঘুরছে।যেভাবে তার বিয়ে হয়েছে মনে হচ্ছে সবটাই পরিকল্পিত।হঠাৎ তার ফোনে একটা মেসেজ আসে।
আরাদ্ধা মেসেজটা দেখে অবাক হয়। সুমাইয়া পাঠিয়েছে। অভিনন্দন জানিয়েছে তাকে।

— আরু গাড়িতে উঠে বোস!
রোদ্দুরের ডাকে ফোনের উপর উপর থেকে চোখ সরিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকায়।
ধীর পায়ে রোদ্দুরের কাছে গিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন করে,কাল যেসব হয়েছে সেগুলো আপনি ইচ্ছে করে ঘটিয়েছেন!আমি কি ঠিক?

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,তুই যা ভাববি!

আরাদ্ধা রাগ হয়। চেঁচিয়ে বলে, আপনি কেন এসব করেছেন?জীবনটাকে খেলা পেয়েছেন নাকি?যদি আমাকেই আপনার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল তাহলে সুমাইয়া আপুকে কেন ঠেকালেন?এটার কি খুব দরকার ছিল। সুমাইয়া আপুর মা বাবার মান সম্মান নষ্ট হয়েছে শুধু আপনার জন্য।আমি,,,আমি আবার সবার কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম শুধু আপনার জন্য। কেন করেছেন আপনি এসব?আমাকে আপনার জীবনের সাথে জড়ানোর আগে আমার মতামতটা জানার চেষ্টাও করলেন না। অসহ্য লাগে আপনাকে আমার।

রোদ্দুর আরাদ্ধাকে ধরতে আসতেই আরাদ্ধা দূরে সরে যায়।রাগী গলায় বলে, ধরবেন না আমাকে। আমি কি উত্তর দেব সুমাইয়া আপুর মা বাবাকে বলতে পারেন?আজ নয়তো কাল সত্যিটা তো ওনারা জানবেন,তখন কি বলবেন ওনাদের?

রোদ্দুর এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আরাদ্ধার কথাগুলো শুনছিল।আরাদ্ধা থামতেই,,,,,,,,,

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১২

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১২
#Devjani

আরাদ্ধার সামনে গম্ভীর মুখে বসে আছে শ্রেয়ান। পাশে অদ্রি। লজ্জায় গালগুলো লাল হয়ে গেছে।
আরাদ্ধা খুশিতে বলে,ভাইয়া চল এবার নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফিরি।

শ্রেয়ান গম্ভীর গলায় বলে,তুই রোদ্দুর স্যারের সাথে চলে যা। অদ্রিকে নিয়ে ওর বাড়ি যাব।ওর মা বাবাকে সরি বলতে।

রোদ্দুর পাশেই আরাদ্ধার দাঁড়িয়ে আছে।হালকা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে, শ্রেয়ান আমাকে স্যার বলার প্রয়োজন নেই।শুনো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি কথাগুলো বলার জন্যই তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো,,,,,,আমি জানি তুমি এই কথাগুলো শোনার পরিস্থিতিতে নেই। তবুও আমি চাই না বেশি দেরি হয়ে যাক।বেশি সময় নিবো না তোমার কাছ থেকে।

শ্রেয়ান ভদ্রতামূলক হাসি দিয়ে বলে, বলুন ভাইয়া।

— এখানে নয়।একটু দূরে চলো।

আরাদ্ধা তেজি গলায় বলে,কি বলবে তোমরা? আমিও শুনব!

রোদ্দুর বিরক্তিকর কন্ঠে বলে, একটু বেশিই কথা বলিস তুই!তোকে শোনানোর প্রয়োজন বোধ করলে তোকে অবশ্যই ডাকতাম।

রোদ্দুর শ্রেয়ানকে নিয়ে দূরে চলে যায়।আরাদ্ধা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে।হেসে হেসে কথা বলছে।কোনো পার্সোনাল কথা মনেই হচ্ছে না।তাকে বললে কি হতো! ঢং!

রোদ্দুর কিছুক্ষণ পর এসে বলে,আরু চল।

— কোথায়?

— এখানে থাকার ইচ্ছে আছে নাকি।পরশু আমার বিয়ে,,,, আমার অনেক কাজ আছে।

আরাদ্ধার বিরবির করে বলে,বিয়ে পাগল!

হালকা গলা ঝেড়ে বলে,শুনেন ওই সময় যা বলতে চেয়েছিলাম,,,,,,সেটা হলো কালকে আপনার কাছে যে মেসেজ গুলো এসেছে সেগুলো আমি করিনি।

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,জানি না।তুই যে গাধী তোর পক্ষে এসব রোমান্টিক মেসেজ করা সম্ভব না।

আরাদ্ধা মেকি হেসে বলে,ওই আরকি! ট্যালেন্টেড!

— তোর মতো গাধী না।বাই দা ওয়ে,তোর কাছে কিন্তু প্রমাণ নেই যে মেসেজ গুলো তুই করিস নি।

— মানে?

— যদি আমি আন্টিকে দেখাই?

আরাদ্ধা চোখমুখ কুঁচকে বলে,ভয় দেখাচ্ছেন?

রোদ্দুর রাগী গলায় বলে,গাধী তোকে আমি ভয় পেতে বলেছি?এখন তুই যদি ভয় পেতে চাস তো আমার কি করার আছে।শোন তোকে একটা কথা বলি,কার সাথে কখন কি হয়,,,সেটা কিন্তু আগে থেকে বলা যায় না।তোর সাথেও কিন্তু এমন অনেক কিছুই হতে পারে যেটা তুই ভাবতেও পারিস না।

আরাদ্ধা বড়বড় চোখে প্রশ্ন করে,মানে?

— তোর ছোট মাথায় এসব ঢুকবে না।

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, শ্রেয়ান ভাইয়াও একি কথা বলেছে। আচ্ছা সত্যি কি আমার মাথা আকারে ছোট?

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,নিজেই মেপে দেখে নে।

♡♡♡

ঘুমের মধ্যে মনে আরাদ্ধার মনে হচ্ছিল কেউ তাকে দেখছে।চোখ খুলে দেখে শ্রেয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরাদ্ধা প্রশ্ন করে, ভাইয়া কখন এসেছ তোমরা? অদ্রি কোথায়?

শ্রেয়ান জবাব দেয়, অদ্রির মা বাবা আমাদের মেনে নিয়েছে। অদ্রি খুব কাঁদছিল।একটু আগে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছি।

আরাদ্ধা আবার প্রশ্ন করে,এত রাতে এখানে কেন এসেছো?যাও গিয়ে রেস্ট নাও।

শ্রেয়ান মলিন হেসে জবাব দেয়,তোকে দেখতে এসেছিলাম। আমাদের অগোচরে কত্তো বড় হয়ে গেছিস তুই। কিন্তু আফসোস,,, তোর বড় হওয়াটা দেখতে পারি নি। নিজের হাতে বড় করবো ভেবেছিলাম কিন্তু সে সুযোগটা আসে নি। কিন্তু দোয়া করি, তুই অনেক বড় হ।

আরাদ্ধার চোখে পানি চলে আসে। তবুও রাগী গলায় বলে,এই এতো রাতে তুমি বউয়ের কাছে না যেয়ে আমার কাছে এসে আমাকে কাঁদাচ্ছো!যাও বউয়ের যাও!
আরাদ্ধা শ্রেয়ানকে জোর করে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়।



ঘরির কাঁটায় সন্ধ্যা ছয়টা বাজছে।পড়ার টেবিলে বসে পরছে আরাদ্ধা।পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। আগামী মাসে পরীক্ষা।একটু পর রুমে প্রবেশ করে অদ্রি।ভারী সাজ।আরাদ্ধার কাছে গিয়ে বই টেনে নিয়ে বন্ধ করে দেয়।
আরাদ্ধা বিরক্তি সহকারে অদ্রির দিকে তাকায়।রাগী গলায় বলে, অদ্রি বই এভাবে টেনে নিলি কেন?

অদ্রি আরাদ্ধার হাত টান দিয়ে বসা থেকে উঠিয়ে দেয়। বলে, পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে নে।শ্রেয়া আপুও রেডি হয়ে গেছে।

আরাদ্ধা অদ্রিকে একবার স্ক্যান করে নেয়। মৃদু গলায় বলে,তোকে দেখতে দারুণ লাগছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস?

অদ্রি চড়া গলায় বলে,জেনেও না জানার ভান কেন করছিস?আজ রোদ্দুর স্যারের বিয়ে ভুলে গেছিস নাকি?

আরাদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সত্যি ভুলে গিয়েছিল আজ রোদ্দুরের বিয়ে। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করেই নিচ্ছে।হয়ত সেদিন সে ভুল শুনেছিল।
অদ্রি আবার বলে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা!
আরাদ্ধা হালকা মাথা নেড়ে রেডি হতে চলে যায়।



রোদ্দুরদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরাদ্ধা । ভেতরে ঢুকতে অস্বস্তি হচ্ছে।এখানে আসার পরই লক্ষ্য করেছে সবাই আড় চোখে বারবার তাকাচ্ছে তার দিকে।যেন সে কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী।
অদ্রি আর শ্রেয়া তার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।
আরাদ্ধা চারিদিকে তাকিয়ে রোদ্দুরকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ রোদ্দুরের মা এসে শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে।আরাদ্ধা ঘাবড়ে যায়। রোদ্দুরের মা তাকে এ্যাপার্টমেন্টের নিচ তলার একটা দ খালি রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন পেছন অদ্রি আর শ্রেয়াও যাচ্ছে।

রোদ্দুরের মা খালি ঘরটায় এনে দরজা বন্ধ করে দেয়।আরাদ্ধা তাকিয়ে দেখে সবাই আছে এখানে।তার মা বাবা, রোদ্দুর তার বাবা। সুমাইয়ার মা বাবা আর মার্জিয়া।

আরাদ্ধা গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করে,কেমন আছ আম্মু?

— ভালোই।তোর আন্টির কথাটা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন।

রোদ্দুরের মা এসে আরাদ্ধার ধরে বলে,আরু!আমার মাথা একদম কাজ করছে না। প্লিজ কিছু কর।

আরাদ্ধা কথার মানে বুঝতে পারছে না। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,কি হয়েছে আন্টি?

রোদ্দুরের মা আরাদ্ধার হাতে চিঠি ধরিয়ে দেয়।আরাদ্ধা আগ্রহ নিয়ে চিঠি পড়া শুরু করে। সুমাইয়ার চিঠি।বড়বড় করে লেখা,আমাকে ক্ষমা কর সবাই।আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।

আরাদ্ধার চিঠি পড়া অনেক আগেই শেষ।সে আড় চোখে দেখছে সবাইকে।কি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এভাবে তাকানোর মানে কি?
আরাদ্ধা গলা ঝেড়ে বলে, ব্যাপারটা সত্যি খুব খারাপ হয়েছে।

রোদ্দুরের সামনে গিয়ে বলে,ইস,,,আপনার বউও পালিয়ে গেছে।হায়রে,,,,ভাইয়া বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আপনার। ভেঙ্গে গেল। খারাপ লাগছে। শুধু শুধু পড়া নষ্ট করে এখানে এসেছি। সমস্যা নেই। আচ্ছা আমি বরং আসি।পরেরবার যখন বিয়ে করবেন তখন আবার আসব।আসি!

আরাদ্ধা দূরে যেতেই হাতে টান পড়ে। তাকিয়ে দেখে রোদ্দুরের মা হাত ধরে রেখেছে। রোদ্দুরকে চোখ রাঙিয়ে আরাদ্ধাকে বলে,মা তুই এভাবে চলে যাস না। কিছু কর।নয়তো আমাদের মান সম্মান নষ্ট হবে।সব আত্মীয় স্বজন পরিচিত লোকজন এসে পড়েছে।

আরাদ্ধা মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে,আমি আবার কি করবো!

— তুই রোদ্দুরকে বিয়ে করে আরু মা।

আরাদ্ধার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। রোদ্দুরকে বিয়ে!তাও সে! চেঁচিয়ে বলে, অসম্ভব।এটা সম্ভব না।

আরাদ্ধার মা গিয়ে বলে, কেন সম্ভব না। ব্যাপারটা ভেবে দেখেছি। রোদ্দুর ভালো ছেলে।ওর কাছে তুই ভালো থাকবি।

আরাদ্ধা বাবা গম্ভীর গলায় বলে,আমারও তাই মনে হয় আরু। ব্যাপারটা ভেবে দেখ।

মার্জিয়া মন খারাপ করে বলে,আরু ছাড়াও আমি আছি।আমাকে তোমরা দেখতে পাও না।

মার্জিয়ার মা ধমক দিয়ে বলে, চুপ কর।এক মেয়ের জন্য মান সম্মান গেছে। তুই আর নষ্ট করতে যাস না।

রোদ্দুরের মা আবার বলে, প্লিজ আরু!

আরাদ্ধা আড় চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকায়।মুখ টিপে হাসছে।আরাদ্ধা অবাক হয়।বউ পালিয়েছে তাও হাসছে!আরাদ্ধা গলা ঝেড়ে বলে, ইম্পসিবল!আমি আসছি।

আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে যেতেই আরাদ্ধার মা আটকে দেয়।বলে,তোকে তো শুধু শুধু জোর করছি না। কারণ আছে বলেই জোর করছি। তাছাড়া তুইও তো রোদ্দুরকে পছন্দ করিস।

আরাদ্ধা বিস্ময়ভরা চোখে তাকায় মায়ের দিকে।বলে,কে বলেছে? অসম্ভব!

— রোদ্দুরের সাথে সেদিন তোর কথা বলা মেসেজ গুলো দেখেছি।তোর রুমে তোর ডায়েরীও পেয়েছি যেগুলোতে তুই তোর মনের কথাগুলো,,,,,

আরাদ্ধা থামিয়ে দিয়ে বলে, আম্মু ওগুলো আমি করিনি।শ্রেয়া আপু করেছে। জিজ্ঞেস কর!

শ্রেয়া নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দেখছিল। হঠাৎ আরাদ্ধার এমন কথায় বলে উঠে,না আন্টি আমি করিনি।

রোদ্দুরের মা গিয়ে বলে, আমাদের মান সম্মানের দিকটা একবার ভাববি না?

আরাদ্ধা নির্বিকার ভাবে বলে,না!

তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে শ্রেয়া আর অদ্রি তাকে ডাকছে।আরাদ্ধা শুনেও না শোনার ভান করে দ্রুতগতিতে হেঁটে যাচ্ছে।

গেটের সামনে এসে দেখে টাইগার বসে আছে।সাথে আরেকটা কুকুর আছে।তবে এই কুকুরটাকে আগে দেখেনি।

আরাদ্ধা আরেকটু সামনে এগোতেই টাইগার উঠে দাঁড়ায়।
আরাদ্ধা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে, আম্মু টাইগার,,,,, হেল্প!

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১১

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১১
#Devjani

শ্রেয়ার রুমে বসে মুখ চেপে কাঁদছে আরাদ্ধা। মায়ের জন্য খারাপ লাগছে।শ্রেয়া পাশে বসেই আরাদ্ধার ফোন টিপছে। বিরক্ত হচ্ছে আরাদ্ধার কান্নায়। কিন্তু থামাচ্ছে না ওকে।থামাতে গেলেই সান্ত্বনায় কান্নার শব্দ দ্বিগুণ বেরে যায়।

হঠাৎ আরাদ্ধার ফোনে একটা মেসেজ আসে। শ্রেয়া মেসেজটা পড়েই চমকে উঠে।আরাদ্ধাকে তাড়াতাড়ি দেখায়।

মেসেজ পড়েই আরাদ্ধার কান্না বন্ধ হয়ে যায়। অদ্রি মেসেজ করেছে।ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামীকাল বিয়ে। কিন্তু বিয়ে করবে না।ওর মা ওর কাছ থেকে ফোন নিয়ে গেছে। লুকিয়ে বাবার ফোন মেসেজ করেছে। সাহায্য চাইছে তার কাছে।

আরাদ্ধা টেনশনের ভেতর ঢুকে যায়। কান্না করছিল বলে হালকা লাগছিল। কিন্তু এখন আবার মাথা জ্যাম হয়ে আসছে। দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো শুরু করে।

শ্রেয়ার কাছে ফোন দিয়ে শ্রেয়ানের রুমে চলে যায়।
শ্রেয়ান রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।আরাদ্ধা গিয়ে পাশে বসে পড়ে। আস্তে করে বলে,ভাইয়া তুমি জানো অদ্রির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।কাল বিয়ে।

শ্রেয়ান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,তো?

আরাদ্ধা অবাক হয়ে বলে, তুমি অদ্রিকে বাঁচাবে না? তুমি তো অদ্রিকে,,,,,,,

শ্রেয়িন আরাদ্ধাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,তোর ছোট মাথায় এতো কিছু ঢুকানোর দরকার নেই।যা গিয়ে পড়তে বোস!

— তাও ঠিক। কিন্তু,,,,

শ্রেয়ান রাগী গলায় বলে,যাবি?

আরাদ্ধা মুখ ভেংচি কেটে উঠে পড়ে।শ্রেয়ানের কথায় রহস্য আছে।এই শ্রেয়ান আর রোদ্দুর একই গোয়ালের গরু।সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারে না।কথা বলবে ঠিকই কিন্তু রহস্য রেখে দেয় কথা ভাজে।

আরাদ্ধা শ্রেয়ার রুমে ঢুকতেই শ্রেয়া দৌড়ে তার কাছে চলে আসে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে,মোহন রোদ্দুর তোর কি হয়?

আরাদ্ধা অবাক হয় শ্রেয়ার কথায়। বলে, স্যার হয়!ভাইয়াও ডাকি। কেন?

— কিহহ?

আরাদ্ধা ভয় পেয়ে যায়। ফোনটা শ্রেয়ার কাছে দিয়ে গিয়েছিল।শ্রেয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছে উল্টাপাল্টা কিছু করেছে। আস্তে করে জিজ্ঞেস করে, কোনো সমস্যা?

শ্রেয়া টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে হালকা পানি খেয়ে নেয়।ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,সরি মোহন!আমি একটা বাজে কাজ করে ফেলেছি।

আরাদ্ধা বড়বড় চোখ করে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।এই ভয়টাই সে পাচ্ছিল।আবার জিজ্ঞেস করে,কি করেছ?

শ্রেয়া আরাদ্ধার হাতে ফোন দিয়ে বলে,তুই ওই রোদ্দুরের মেসেজগুলো দেখে নে।আমি না তোর হয়ে উত্তর দিয়ে ফেলেছি।কথাটা বলে শ্রেয়া দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আরাদ্ধা ভয়ে ভয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকে রোদ্দুর আর শ্রেয়ার করা মেসেজ গুলো দেখা শুরু করে,,,

— আন্টির কাছ থেকে সব শুনলাম।এবার কি তুই আমাদের ভুলে যাবি?
— উহুম,,, তোমাদের কিভাবে ভুলে যাই।
— কি করছিস?
— তোমার সাথে কথা বলছি,,,
— যা গিয়ে পড়তে বোস।সামনে পরীক্ষা।
— তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
— আরু তোর শরীর ঠিক আছে?
— এত খেয়াল রাখো আমার!
— আমি রাখবো নাতো কে রাখবে? আচ্ছা আমার জন্য তোর খারাপ লাগছে না?
— লাগছে তো।আপনি জানেন দু ঘন্টা ধরে আমি আপনার জন্য কেঁদেছি।
— অ্যাহ? কেন?
— সব কথা কি মুখে বলতে হয়? মনের কথাগুলো বুঝে নিতে হয়।
— বেয়াদব মেয়ে! লজ্জা করে না আমার সাথে প্রেমালাপ করতে। ওখানে যেতে না যেতেই এসব শুরু করে দিয়েছিস ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে আমার সাথে?এখনি আন্টির কাছে বিচার দিচ্ছি।তার মেয়ের উন্নতি হয়েছে।

আরাদ্ধার গাল লাল হয়ে গেছে।এসব কি লিখেছে শ্রেয়া! রোদ্দুরকে তুমি করে বলেছে!এবার রোদ্দুর তার সম্পর্কে না জানি কি ভাবে।আর মায়ের কানে গেলে বকা নিশ্চিত।

আরাদ্ধা অসহায় দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকায়। দরজার আড়ালে লুকিয়ে আরাদ্ধাকে দেখছিল।
আরাদ্ধা বলে,আপু তুমি এটা কি করেছো?আমি ওনার সামনে দাঁড়াবো কিভাবে?

শ্রেয়া আরাদ্ধার সামনে এসে কানে হাত দিয়ে বলে, এত্তোগুলা সরি। তুই ব্যাপারটা সামলে নে।কথাটা বলে মুখ টিপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আরাদ্ধার শ্রেয়ার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।বকা দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু শ্রেয়া তার থেকে বয়সে অনেক বড়।তাই কিছু বলতে পারছেনা। রোদ্দুরকেও মেসেজ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। রোদ্দুর তাকে ব্লক করে দিয়েছে।

☆☆☆

রোদ্দুর ক্লাসে টানা আধ ঘন্টা ধরে পড়াচ্ছে।সবাই মনোযোগ দিয়ে রোদ্দুরের কথা শুনছে। কিন্তু আরাদ্ধার পড়ায় মনোযোগ নেই।বই দিয়ে রোদ্দুরের থেকে নিজেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।রোদ্দুরের দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে।এভাবে পড়া যায় নাকি!

হঠাৎ রোদ্দুর আরাদ্ধার সামনে এসে দাঁড়ায়।আরাদ্ধা ভয়ে বইয়ের তাকিয়ে আছে।আড় চোখে একবার রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
রোদ্দুর গম্ভীর গলায় বলে, স্ট্যান্ড আপ!

আরাদ্ধা আড় চোখে আবার দেখে উঠে দাঁড়ায়। রোদ্দুর রাগী গলায় বলে,আমি পড়াচ্ছি কিন্তু মনোযোগ কোথায় আপনার?

আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে, মনোযোগ দিয়েই তো শুনছি!

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমি ভুল বলছি? আপনি খুব মনোযোগী?

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, আমি কিভাবে বলবো?আমি তো মনোযোগ দিয়ে শুনছি।

রোদ্দুর আরাদ্ধার খোলো বইটা ওর সামনে ধরে বলে, এই আপনার মনোযোগ?আমি কি এই পৃষ্ঠা পড়াচ্ছি?

— হ্যাঁ?

পেছন থেকে মার্জিয়া উঠে বলে, জিজু ও একটু সরি বেশিই ট্যালেন্টেড তাই আমাদের থেকেও ফাস্ট পড়ে।

রোদ্দুর বিরক্ত হয়ে বলে,আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছে?আপনি চুপ করে বসেন।আর আমাকে জিজু নয় স্যার বলে ডাকুন।এখানে আমি আপনার স্যার আর আপনি আমার স্টুডেন্ট। মাইন্ড ইট।

আরাদ্ধা মার্জিয়া দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দেয়।মার্জিয়া আরাদ্ধাকে চোখ রাঙিয়ে বসে পড়ে।

রোদ্দুর আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলে,পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।পরের বার অমনোযোগী দেখলে শাস্তি পেতে হবে।কথাটা বলে রোদ্দুর সামনে থেকে সরে যায়।

আরাদ্ধা জোরে শ্বাস ছেড়ে বসে পড়ে। রোদ্দুরের নরমাল বিহেভে ভয় কিছুটা কমেছে। রোদ্দুর হয়ত ঘটনাটা ভুলে গেছে।পরে সরি বলে দিবে।


রোদ্দুর ক্লাস শেষে বের হতেই আরাদ্ধা পেছন থেকে ডাক দেয়। রোদ্দুর পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।

আরাদ্ধা রোদ্দুরের সামনে গিয়ে বলে, কিছু কথা আছে আপনার সাথে!

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,কীহ্? তোমার সাথে!তুই আমাকে তুমি করে বলা কবে থেকে শিখলি?বাই দা ওয়ে, তুমি ডাকটা অনেক মিষ্টি লাগে শুনতে!

আরাদ্ধা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলতে এসেছে রোদ্দুরের কথায় সব ভুলে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখমুখ কুঁচকে বলে, বিশ্বাস করেন,,,,,

— কি বিশ্বাস করবো?

আরাদ্ধা আবার আটকে যায়। অসহায় ভাবে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। রোদ্দুর মিটিমিটি হাসছে।আরাদ্ধা গলা ঝেড়ে বলে,ইয়ে মানে,,,,

— কি?

— মানে আমি,,,,

— তুই কি?

আরাদ্ধা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, কিছু না।পরে বলব।কথাটা বলে উল্টা দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই রোদ্দুর বলে উঠে,আজকে বিয়ের শপিং করতে যাবো সুমাইয়ার সাথে। তুইও যাবি আমাদের সাথে।

আরাদ্ধা গম্ভীর গলায় বলে,আমি গিয়ে কি করবো? তাছাড়া আমার সামনে পরীক্ষা।পড়বো তো!

— বেশি সময় নিবো না।আসবি কিন্তু!

☆☆☆

শ্রেয়ানকে দশবারের মতো ফোন করেও পাচ্ছে না।রাগ লাগছে। অদ্রির বিয়ে হয়ে যাবে তো!

হঠাৎ আরাদ্ধার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।আরাদ্ধা ফোন কেটে দেয়। আবার ফোন বেজে উঠে।আরাদ্ধার এবার রিসিভ করে।ওপাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলা চিন্তিত গলায় বলে, তুমি আরাদ্ধা?

আরাদ্ধা জবাব দেয়, হ্যাঁ।

— অদ্রি তোমার বাসায় আছে?

আরাদ্ধা অবাক হয়।বলে,না। কেন?কে আপনি?

— আমি অদ্রির মা। অদ্রিকে কোথাও পাচ্ছি না।ও ওর রুমেই ছিল। কিন্তু এখন কোথাও পাচ্ছি না।তোমার সাথে অদ্রির কথা হয়েছে?

আরাদ্ধা বিস্ময় নিয়ে বলে,না তো আমি জানি না। কোথায় যেতে পারে ও। খোঁজ পেলে জানাবো।এখন রাখি।
কথাটা বলে আরাদ্ধা ফোন কেটে দেয়। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে, ইয়েস! অদ্রি চুরি হয়েছে। আমি সিউর কাজটা শ্রেয়ান ভাইয়া করেছে।
সাথে সাথে আরাদ্ধার ফোনে একটা মেসেজ আসে।শ্রেয়ান মেসেজ করেছে।একটা কাজি অফিসের ঠিকানা।
আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।


এ্যাপার্টমেন্টের নিচে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।আরাদ্ধা ড্রাইভিং সিটে তাকিয়ে দেখে রোদ্দুর বসে আছে।

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,আসেছেন যখন আমাকে একটু নিয়ে যান গাড়ি পাচ্ছি না।

রোদ্দুর গম্ভীর গলায় বলে, উঠে বোস।

আরাদ্ধা খুশি হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি গিয়ে রোদ্দুরের পাশের সিটে বসে যায়।
রোদ্দুরকে ঠিকানা দিয়ে বলে,এই কাজি অফিসে চলুন তাড়াতাড়ি, প্লিজ!

রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে, কেন?

আরাদ্ধা মুখে হাসি নিয়ে বলে, শ্রেয়ান ভাইয়া অদ্রিকে বিয়ে করবে।ইসস,,কি সুন্দর ব্যাপার!আপনি তো জানেন অদ্রির বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাই শ্রেয়ান ভাইয়া,,,

— কিন্তু পরে অদ্রি তার মা বাবাকে কি উত্তর দিবে?

আরাদ্ধা আফসোসের সুরে বলে, সেটা পরের ব্যাপার। অদ্রির ভাগ্য ভালো।বিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে সবাইকে মজার কাহিনী শোনাতে পারবে।ইসস,,,আমার বিয়ে নিয়ে যদি এমন কোনো ঘটনা হয় অনেক মজা হবে!
রোদ্দুর ছোট ছোট চোখ করে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১০

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১০
#Devjani

কলেজে ঢুকতেই বিরক্ত হয়ে যায় আরাদ্ধা। গতকাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ভেজা মাটি খেয়াল করেনি।কাদায় পা মাখামাখি হয়ে গেছে। অদ্রিকে ডাকতে যাচ্ছিল।আজ ভীষণ খুশি লাগছে তার।মাথা হালকা।টেনশন মুক্ত। গতকাল শ্রেয়ান তাকে অনলাইনের মাধ্যমে সব পড়া বুঝিয়ে দিয়েছে।খুশির চোটে কাদা খেয়াল করেনি।যার ফলস্বরূপ কাদাযুক্ত পা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে।



ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সামনে এগোতেই শ্রেয়ান এসে জরিয়ে ধরে আরাদ্ধাকে।আরাদ্ধাকে চমকে উঠে।শ্রেয়ানকে ধাক্কা দিতে থাকে সরানোর জন্য। হঠাৎ খেয়াল করে কাঁধের দিকে জামাটা হালকা ভিজে গেছে।শ্রেয়ান কাঁদছে। কিন্তু কেন?আরাদ্ধা ধাক্কা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কাঁধে হালকা হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,আপনি কাঁদছেন কেন ভাইয়া?

শ্রেয়ান মুখ তুলে বলে, থাপ্পড় দিব আপনি করে বলবি তো! কেন চলে গিয়েছিলি আমাকে ছেড়ে। জানিস তোকে ছাড়া থাকতে কতো কষ্ট হয়েছিল।

আরাদ্ধা অবাক দৃষ্টিতে তাকায় শ্রেয়ানের দিকে।শ্রেয়ানের হাতে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট।আরাদ্ধা শ্রেয়ানের কাছ থেকে রিপোর্টটা নিয়ে দেখা শুরু করে।
আরাদ্ধার হাত থরথর করে কাঁপছে।তার আর শ্রেয়ানের ডিএনএ মিলেছে।তার মানে সে আর শ্রেয়ান ভাইবোন।এটাও কি সম্ভব!আরাদ্ধা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় শ্রেয়ানের দিকে। স্বপ্ন দেখছে। হ্যাঁ স্বপ্নই!আরাদ্ধা হাত উঁচিয়ে শ্রেয়ানের চোখে হাত রাখে।একি! চোখে তো পানি।যা হচ্ছে সত্যি তো!আরাদ্ধা শ্রেয়ানের চোখের পানিগুলো মুছে দেয়।

আরাদ্ধা অবিশ্বাসের সাথে বলে, বিশ্বাস করি না।এমনও হয় নাকি!

শ্রেয়ান শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছে আরাদ্ধার হাত ধরে বলে,হয়না কেন?হয়েছে তো!

শ্রেয়ান আরাদ্ধার সামনে একটা ছবি ধরে।একটা বাচ্চা ছেলে হাসিমুখে একটা বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়েছে।হয়ত ওজন সামলাতে পারছিল না।পাশ থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা ধরে রেখেছে যাতে পরে না যায়।

শ্রেয়ান মুখে হাসি টেনে বলে আমি,তুই আর আম্মু।ওই শ্রেয়াটাকে এই ছবিতে ঢুকতে দেইনি।ছবি তোলার সময় বেশি নড়াচড়া করে। সেজন্য ছবি নষ্ট হয়ে যায়।

আরাদ্ধা ছবিটা হাতে নেয়। সত্যিই ছবির বাচ্চা মেয়েটা সে। দুদিন আগেও রোদ্দুরের কাছে দেখেছে ছবিটা।তবে রোদ্দুরের কাছে ছবিটার তুলনায় এই ছবিতে সে অনেক ছোট।

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,এটা আমি!

শ্রেয়ান হেসে বলে, হুম।কি কিউট!

আরাদ্ধা ছবিটা হাতে নিয়ে বলে,যদি তুমি আমার ভাই হও তো এখানের এই ভদ্রমহিলা নিশ্চয়ই আমার মা হবে তাই না? কোথায় উনি?আমি দেখবো!
আরাদ্ধার দু চোখে পানি টলমল করছে।

শ্রেয়ানের মুখটা হুট করে কালো হয়ে যায়।ধীর কন্ঠে বলে,তুই দেখবি ওনাকে?

— হ্যাঁ,দেখবো!

শ্রেয়ান আরাদ্ধার হাত ধরে গাড়ির সামনে যায়।দরজা খুলে দিয়ে বলে, গিয়ে বোস।নিয়ে যাচ্ছি তোকে ওনার কাছে।

আরাদ্ধা গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখে রোদ্দুর ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আরাদ্ধা দেখেও না দেখার ভান করে গাড়ীতে উঠে বসে।

☆☆☆

শ্রেয়ান একটা বড় এ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামায়।চারতলা এ্যাপার্টমেন্টটা।আরাদ্ধার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায়। তিনতলায় গিয়ে কলিংবেল চাপতেই শ্রেয়া দরজা খুলে দেয়।
শ্রেয়ান শ্রেয়ার হাত ধরে বলতে লাগে,শ্রেয়া ও আরাদ্ধা।মানে আমাদের মোহন। আম্মুকে নিয়ে আয়।বল আম্মুর মোহ ফিরে এসেছে।

শ্রেয়া অবাক দৃষ্টিতে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।হালকা মাথা নেড়ে ভিতরের রুমে চলে যায়।আরাদ্ধা অবাক হয়।শ্রেয়া তার বড় বোন। কিন্তু তাকে দেখে এভাবে চলে গেল কেন? অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ফিরে পাওয়ায় কি সে খুশি হয়নি?
শ্রেয়া গিয়ে আবার ফিরে আসে। মৃদু কন্ঠে বলে, আম্মু ঘুমাচ্ছে!মোহন তুই আমার সাথে চল।
আরাদ্ধা মাথা নাড়ে। শ্রেয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।শ্রেয়ার আরাদ্ধার হাত ধরে একটা ঘরে যায়।

রুমে ঢুকতেই আরাদ্ধার বুক ধক করে উঠে। বিছানার উপর একজন বয়স্ক মহিলা শুয়ে আছে।আরাদ্ধা সামনে গিয়ে মাথায় হাত রাখে।
পেছন থেকে শ্রেয়ান বলে, আম্মুর প্যারালাইসিস হয়েছে। আব্বু মারা গেছে তিন বছর আগে।

আরাদ্ধা ছোট ছোট চোখ করে মায়ের দিকে তাকায়।হুট করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ভাবতেই অবাক লাগছে এটা তার আসল মা।যে তাকে জন্ম দিয়েছে।এবার আর কেউ তাকে এডোপ্টেড চাইল্ড বলতে পারবে না। রোদ্দুর তাকে বকতে পারবে না। সবাইকে বলবে,তার একটা পরিবার আছে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো দাদির কথাগুলো শুনতে হবে না।আর থাকবে না ওখানে।এবার তার দাদি থাকুক তার নিজের বাসা নিয়ে।সে তো থাকবে এখানে!তার নিজের বাসায়!

☆☆☆

শ্রেয়ানকে নিয়ে বাসায় ঢুকতেই দেখে দাদি সোফায় বসে পান খাচ্ছে।আরাদ্ধাকে দেখেই রুক্ষ কন্ঠে বলে,আজ এতো তাড়াতাড়ি! ব্যাপার কি? পাশের এই ছেলেটা কে?আমার অনুমতি ছাড়া একে বাসায় ঢুকালি কোন সাহসে?

আরাদ্ধা দাদির কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। সোজা গিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। মৃদু গলায় মাকে ডাকে।

কিচেনে কাজ করছিল তার মা।ডাক শুনেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। অজানা ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে তার।আরাদ্ধার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে। মমতা ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,কি হয়েছে তোর? চোখেমুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন?আর আজ এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লি যে!

আরাদ্ধা পানিতে টলমল চোখগুলো মুছে মাকে জড়িয়ে ধরে।শব্দ করে কেঁদে দেয়।বলে, আম্মু আমি পেয়ে গেছি। তাদের পেয়ে গেছি।জানো আম্মু আমি আমি মাকে ছুঁয়েছি।আসল মা।আসল ভাইয়া আর আপু!

আরাদ্ধা মা বুক ধক করে উঠে।।আরাদ্ধা কি পাওয়ার কথা বলছে?কি পেয়েছে?আসল মা,ভাই বোন মানে?দরজার ধারে শ্রেয়ানকে দেখে চোখে পানি চলে আসে।শ্রেয়ানের মুখটা একটু হলেও আরাদ্ধার সাথে মিল আছে।
জিজ্ঞেস করে,আরু মা কি বলছিস এসব?

আরাদ্ধা কান্নার মাঝেও এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে বলে, আম্মু ও শ্রেয়ান!আমার ভাইয়া।জানো আমাদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে।

আরাদ্ধার মা অবাক হয়ে বলে,তুই ডিএনএ টেস্ট করেছিস? কোথায় আমি তো জানি না!

— সরি মা তোমাদের বলা হয়নি।

আরাদ্ধার মা হঠাৎ ধমক দিয়ে বলে, থাপ্পড় দিব বেয়াদব মেয়ে!বেশি সাহস বেড়ে গেছে তোর।আমাকে না জানিয়ে এসব করার সাহস হয় কি করে তোর।কোথা থেকে একটা ছেলে এসে বলল তোর ভাই ওমনে মেনে নিলি। ডিএনএ টেস্টে তো ভুলও আসতে পারে।যা রুমে যা।এসব ফালতু ব্যাপারে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। সামনে পরীক্ষা!

আরাদ্ধা অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের কথা তার বোধগম্য হয়নি।

শ্রেয়ান এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও এবার আরাদ্ধার মায়ের কাছে এসে বলে,আপনি মা। মোহিনীকে এতদিন ধরে মা হিসেবে বড় করেছেন।আপনার কষ্ট হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট ছাড়াও আমি যে ওর ভাই বা ওর সাথে আমার সম্পর্ক থাকতে পারে সেটা নিশ্চয়ই আমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু ওকে হারানোর ভয়ে এসব কথা বলছেন। কিন্তু ভয় পাবেন না। মোহিনীকে কেউ কেড়ে নিচ্ছে না আপনার থেকে।ও এখানে আসবে।আর আপনিও যাবেন।

আরাদ্ধার মা এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়।শ্রেয়ানের সামনে হাত জোর করে বলে,তোমার কাছে হাত জোর করছি বাবা তুমি আমার আরুকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেও না। প্রয়োজনে তুমি এসে ওর সাথে এখান থেকে দেখা করে যেও।

আরাদ্ধা মায়ের কাছে গিয়ে হাত নামিয়ে দিয়ে বলে, আম্মু আমি স্বেচ্ছায় যাচ্ছি।যেখানে থাকার মতো পরিবেশ নেই সেখানে থাকার কোনো মানে নেই।কথাটা বলে আড় চোখে দাদির দিকে তাকায়।নিরব দর্শক হয়ে এসব কান্ড দেখে যাচ্ছে।

আরাদ্ধার কথার মানে বুঝতে পেরে দাদি রেগে গিয়ে বলে, মেয়ে কি অকৃতজ্ঞ।আপনজন পেয়ে আমাদেরকে ইঙ্গিতে কথা শোনাচ্ছে।সব বুঝি আমি।

আরাদ্ধা হালকা মলিন হেসে বলে,তার মানে তুমি বলতে চাইছো তোমরা আমার আপনজন ছিলে না। আশ্রয় দিয়েছিলে।ভালো!চলে যাচ্ছি। আশ্রয় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

দাদি মুখ বেঁকিয়ে বলে, মেয়ের দেমাগ দেখে আমি অবাক!

আরাদ্ধা হাসে।মাকে উদ্দেশ্য করে বলে, আম্মু আব্বু লন্ডন থেকে ফিরলে দেখা করে যাব।আসি।
— মাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিস? করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরাদ্ধাকে প্রশ্ন করে তার মা।

আরাদ্ধা জড়িয়ে ধরে বলে, যাচ্ছি না তো।তোমার কাছেই আছি।আমি আসবো তো তোমার কাছে।আজ আসি।

শ্রেয়ান আরাদ্ধার হাত ধরে আরাদ্ধার মাকে বিদায় দিয়ে নিচে চলে আসে।আরাদ্ধা শ্রেয়ানের গাড়ির সামনে যেতেই হাতে টান পড়ে। পেছনে তাকিয়ে দেখে রোদ্দুর ওর হাত ধরে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরাদ্ধা জিজ্ঞেস করে,রেগে আছেন মনে হচ্ছে!কি হয়েছে?
রোদ্দুর আরাদ্ধার হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে, কিছু বলছি না বলে বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।শ্রেয়ানের সাথে এতো,,,,,,

আরাদ্ধা থামিয়ে দিয়ে বলে, উনি আমার ভাইয়া হন।আসল ভাইয়া।হাত ছাড়ুন। মানুষ দেখলে খারাপ বলবে।কথাটা বলেই রোদ্দুরের কাছ থেকে হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।
একপলক দেখে শ্রেয়ানের গাড়িতে উঠে বসে।

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৯

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৯
#Devjani

শ্রেয়ান হাঁটা শুরু করে।আরাদ্ধা শ্রেয়ানকে ফলো করে সামনের দিকে এগোতেই পেছন থেকে রোদ্দুর চড়া গলায় ডাক দেয়,আরাদ্ধা,,,,,!

আরাদ্ধা পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়। রোদ্দুরের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। লজ্জা লাগছে। চোখের দৃষ্টি নিচে মাটির দিকে স্থির।রোদ্দুরের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে।

রোদ্দুর আরাদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।সামনে হালকা ঝুঁকে বলে, আম্মু ফোন করেছে। আগামী সপ্তাহে সুমাইয়ার সাথে বিয়ে তোকে কিন্তু অবশ্যই থাকতে হবে।থাকবি তো!

আরাদ্ধা অবাক দৃষ্টিতে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। রোদ্দুরের কথাগুলো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। একটু আগেই তো রোদ্দুরের কথা শুনেছে।রোদ্দুর তো বলেছে তাকে,,,,তাহলে এখন এসব কি কেন বলছে?আরাদ্ধার খারাপ লাগছে।তবে এই খারাপ লাগার যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।হয়ত রোদ্দুর তার অপ্রকাশিত ভালোলাগা ছিল।নয়ত অব্যক্ত ভালোবাসা।
আরাদ্ধা মুখে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বলে, অবশ্যই থাকবো,আসি।

☆☆☆

ঘড়ির কাঁটায় সাতটা বাজছে।ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয় আরাদ্ধা।হুট করে ফোনটা বেজে উঠে।আরাদ্ধা বিরক্ত হয়।এই ফোন যেন তার বিশাল বড় শত্রু।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ভেঙ্গে ফেলে দিতে।
আরাদ্ধা ফোন তুলে দেখে রোদ্দুর ফোন করেছে।আরদ্ধা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন তুলে।ওপাশ থেকে রোদ্দুর ভারী গলায় বলে,হাসান মারা গেছে।

আরাদ্ধার মন খারাপ হলো না।মনে হলো যা হয়েছে ঠিক হয়েছে।হয়ত হাসান তার কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে। রাইয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার শাস্তি পেয়েছে।তবে রাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে।আরাদ্ধা কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিতে ইচ্ছে হলো।কথা বলার ইচ্ছে নেই তার। তাছাড়া কি বলবে বুঝতেও পারছে না। কিন্তু ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।তাই ভদ্রভাবে বলে,ওহ্, আচ্ছা।রাখছি!

রোদ্দুরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরাদ্ধা ফোনটা কেটে দেয়।ফোন অফ করে দেয় যাতে কেউ ফোন দিয়ে বিরক্ত না করতে পারে।

☆☆☆

কফিশপে আধ ঘন্টা ধরে বসে আছে অদ্রি।শ্রেয়ান আর আরাদ্ধার জন্য অপেক্ষা করছে। অদ্রি বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে আরাদ্ধাকে।এক পর্যায়ে চার্জ শেষ হয়ে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। অদ্রি বিরক্ত হয়।
হঠাৎ পেছন থেকে শ্রেয়ানের ডাক শুনে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়।শ্রেয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
শ্রেয়ান অদ্রির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।বলে,কি হয়েছে তোমার?

অদ্রি শ্রেয়ানের কথার মানে বুঝলো না। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো এই কথার মানে কি। কিন্তু জিজ্ঞেস না করে চুপ করে থাকে।

শ্রেয়ান আবার প্রশ্ন করে,কি হয়েছে তোমার এমন করছো কেন?

অদ্রি এবার মুখ খুলে।বলে,কি বলতে চাইছেন পরিষ্কার করে বলুন।

শ্রেয়ান আমতা আমতা করে বলে, তুমি আমাকে এভোয়েড করছো কেন?

অদ্রি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, আপনার পিছন পিছন ঘুরার কথা বুঝি?

— তা বলিনি।

— তো কি বলেছেন?

— তুমি আমার সাথে কথা বলো না কেন?

— যে আমাকে পাত্তাই দেয় না তার পিছনে ঘুরে নিজের মান সম্মান নষ্ট করতে আমি রাজি না।আপনি আমাকে এসব কথা কেন বলছেন?আরু কোথায়?ওর তো এতক্ষণে এসে পড়ার কথা।আর আমাকে শুধু শুধু আপনাদের পার্সোনাল ব্যাপারে জড়াচ্ছেন। আপনার আর আরুর মাঝে আমি থেকে কি করবো?

— আরু আসবে না।ও না করে দিয়েছে।

অদ্রি রাগী গলায় বলে,তাহলে আমাকে এতক্ষণ এখনে অপেক্ষা করানোর মানে কি!ও কি পেয়েছে আমাকে?

— সরি সরি।আরাদ্ধা আমাকে নিষেধ করতে বলেছিল আমি করিনি।

— আমাকে এভাবে অপেক্ষা করানোর মানে কি!

শ্রেয়ান অদ্রির একটু কাছে চলে যায়।বলে, পরিষ্কার করে বলো তো তোমার কি হয়েছে?আমার সাথে কথা বলছো না কেন?

অদ্রি চড়া গলায় বলে,আরু মাইন্ড করতে পারে।

শ্রেয়ান হালকা হাসে।বলে, এই তাহলে তোমার সমস্যা?

অদ্রি চুপ করে আছে।শ্রেয়ান আবার বলে,কি করলে আমার সাথে কথা বলবে?

অদ্রি ছোট ছোট চোখ করে শ্রেয়ানের দিকে তাকায়।বলে, হঠাৎ আমার সাথে কথা বলার জন্য এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন?

— কথা বলতে চাই বলে!

শ্রেয়ানের উত্তর অদ্রির পছন্দ হয় না।বলে,আরুর সাথে আপনি মিশতে পারবেন না।যদি রাজি থাকেন তো আমি আপনার সাথে কথা বলব।

শ্রেয়ান চমকে উঠে বলে, অসম্ভব।আরাদ্ধার সাথে কথা না বলে আমি থাকতেই পারবো না।আরাদ্ধাকে আমি তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি।

অদ্রি ছোট ছোট চোখ করে শ্রেয়ানের দিকে তাকায়। মৃদু গলায় বলে,কি বলতে চান আপনি?আমার থেকেও বেশি মানে?তার মানে আপনি আমাকে একটু হলেও,,,,,,

— হয়ত!

অদ্রি জবাব দেয়, আমার একটুতে চলবে না।

শ্রেয়ান হেসে বলে,তাহলে ধরো পুরোটাই।আরাদ্ধা আর তুমি সমান সমান।

অদ্রি ভেংচি কাটে।বলে,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি বাসায় চলে যাবো।

শ্রেয়ান অবাক হয়ে বলে,এত তাড়াতাড়ি!

অদ্রি রাগী গলায় বলে, আপনার সাথে পিকনিক করতে আসিনি।দরকারে এসেছি।কাজ নেই চলে যাচ্ছি।

— একটু থাকো।ভালো লাগবে।

অদ্রি খানিকটা ভেবে বলে, আচ্ছা!

☆☆☆

বইয়ের পাতায় মুখ গুজে বসে আছে আরাদ্ধা। রক্তনালী সম্পর্কে পড়ছে। কিন্তু মাথায় ঢুকছে না। পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই। কিন্তু ছোটখাটো বিষয়গুলো কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। মনোযোগ দিয়ে পড়তে গেলেই হাজারটা চিন্তা এসে মাথায় ভর করে।
এভাবে চলতে থাকলে নিশ্চিত পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করবে।লোকে যাই বলুক একবার রোদ্দুরের কাছে যাওয়া উচিত।পড়া বুঝতেই তো যাচ্ছে।
আরাদ্ধা ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। খুব সাবধানে বাসা থেকে বের হয়।দাদি জানলে আবার অশান্তি হবে।

রোদ্দুরের বাসার সামনে এসে কলিংবেল চাপতেই রোদ্দুরের মা দরজা খুলে দেয়।আরাদ্ধাকে দেখে হালকা হেসে বলে,আরু মা!কোনো দরকার?

আরাদ্ধা সংকোচ নিয়ে বলে, রোদ্দুর ভাইয়া বাসায় আছে?

— না। সুমাইয়াকে নিয়ে একটু বাইরে বেরিয়েছে।

আরাদ্ধার মন ছোট হয়ে যায়।সে তো ভুলেই গিয়েছিল রোদ্দুরের জীবনে নতুন একজন আসছে।এখন তো তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময়।
আরাদ্ধা বলে,ওহ্!আমার আসলে একটু পড়া বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল তাই ভাইলাম ভাইয়ার কাছ থেকে বুঝে যাই।

রোদ্দুরের মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,এখন এত বাইরে বেশি এসো না। সামনে না পরীক্ষা।এখন এত বের হলে ক্ষতি হবে।আর ক্লাসেই পড়াগুলো মনোযোগ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করবে। রোদ্দুর আছে বলে তোর সুবিধা হয়।একবার ভেবে দেখ এমন সুযোগ কিন্তু সবার নেই।তারা কিভাবে পড়ে বলতো!

রোদ্দুরের মা কথাগুলো শান্তভাবে বললেও আরাদ্ধার মনে হলো কথাগুলো দিয়ে তিনি ইঙ্গিতে কিছু বুঝাতে চাইছে।আরাদ্ধার অবাক হয়।চেনা চেনা মানুষগুলোকে হুট করেই কেমন অচেনা লাগে। ভদ্রভাবে বলে, আন্টি আমি আসছি।ভালো থাকবেন।

আরাদ্ধা পেছনে ঘুরতেই রোদ্দুরের মা ডাক দেয়।বলে,আরু তুমি আমার কথায় কিছু মনে করনি তো!

আরাদ্ধা হেসে বলে, না।কি মনে করবো?আপনি তো ভালোর জন্যই বলেছেন।
আরাদ্ধা নিচে নামতেই খেয়াল করে টাইগার ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।
তাকে দেখেই ঘেউ ঘেউ শব্দে ডাকা শুরু করে।আরাদ্ধার এই মুহূর্তে ভয় লাগছে না টাইগারকে। বরং মনে হচ্ছে,সবাই পাল্টে গেছে। কিন্তু টাইগার পাল্টে নি।
টাইগার এক পর্যায়ে ডাকা বন্ধ করে তার দিকে এগিয়ে এলো।আরাদ্ধার এবার বেশ ভয় লাগছে।নাহ! টাইগারও পাল্টে গেছে।নাহলে না ডেকে তার দিকে কেন এগিয়ে আসছে?

টাইগার আরাদ্ধার কাছে এসে গায়ে গা ঘেষে দাড়াতেই আরাদ্ধা ভয়ে দৌড়ানো শুরু করে। কিছুদূর যেতেই পাথরের সাথে পা লেগে ধপ করে নিচে পড়ে যায়। টাইগারের দিকে তাকিয়ে দেখে আলসেমি ঝেড়ে আরামে ওই জায়গায় বসে পড়ল।

আরাদ্ধা রাগে চেঁচিয়ে বলে,একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম সেটাও তোর সহ্য হলো না।কেন রে তোর বসার আর কোনো জায়গা নেই, হুম?

নিচে বসে জামা পরিষ্কার করছিল সে। হঠাৎ কেউ একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে দেয়।ধরে উঠার জন্য।আরাদ্ধার তাকিয়ে দেখে রোদ্দুরের হাত।আরাদ্ধা ধরতে গিয়েও ধরে না। নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ায়।

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৮

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৮
#Devjani

নিচে নামতেই আরাদ্ধা দেখে ড্রাইভার মুখ ভার করে বসে আছে।তাকে দেখতেই তাড়াতাড়ি উঠে গাড়ি বের করে।আরাদ্ধা গিয়ে উঠে বসে।

ড্রাইভার করিম সবসময়ই হাসিখুশি থাকে। কিন্তু আজ মুখ ভার করে রাখার ব্যাপারটা আরাদ্ধাকে খুব ভাবাচ্ছে।সে জিজ্ঞেস করে,চাচা আপনার কি হয়েছে?মন খারাপ কেন?

করিম মন খারাপ করে বলে, কিছু হয়নি মা।

করিম চাচার মুখ থেকে “মা” ডাকটা আরাদ্ধার মন ছুঁয়ে যায়। মলিন হেসে বলে,মা যখন ডাকলেন বলেন কি হয়েছে?আমি কিন্তু সব বুঝতে পারি।
— আপনি রাগ করবেন।
— আপনি আগে বলেন!

করিম কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলে,আপনারা তো মাসের প্রথমদিকে বেতন দেন।মাসের প্রথমে বেতনগুলো সমস্যা মিটাতে মিটাতে এক সপ্তাহে শেষ হয়ে যায়।
— আব্বুকে আপনার বেতন বাড়াতে বলব?
— না মা আমি সেই কথা বলি নি।মাস তো শেষের দিকে।হাতে টাকা তেমন নেই।ছোট মেয়ের জ্বর।টাকার জন্য,,,,,
পুরো কথাটা শেষ করলেন না তিনি।আবার বলেন,চলে এসেছি মা!

আরাদ্ধার মন খারাপ হয়ে যায়। সত্যিই ব্যাপারটা ভেবে দেখে নি। গাড়ি থেকে নেমে হাতের টাকাটা করিমের দিকে এগিয়ে দেয়।বলে,এটা নিন। সমস্যা হলে বলবেন।দোয়া করি আল্লাহ্ আপনার মেয়েকে সুস্থ করে দিক।

করিমের চোখমুখ খুশিতে জ্বল জ্বল করে উঠে। ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য মুখ খুলতেই আরাদ্ধা হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয়। মিষ্টি হেসে বলে, ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।দোয়া করবেন আমার জন্য।

আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি ভিতরে চলে যায়।
মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল বিল্ডিং অনেক বড়।এখানকার কিছুই ঠিক ভাবে চিনে না আরাদ্ধা। তৃতীয় বর্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল ক্লাস শুরু হলে রোগীদের সাথে সম্পর্ক হয়। কারণ ক্লিনিক্যাল ক্লাস এ্যাটেন্ড করতে হয় ওয়ার্ডে।

আরাদ্ধা বুঝতে পারছে না ইউনিট থ্রি কোথায় খুঁজবে।তার উপর আবার রোগী!
হঠাৎ আরাদ্ধার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল শ্রেয়ান।আরাদ্ধা ডাক দেয়, ভাইয়া ইউনিট থ্রি কোথায়?

শ্রেয়ান হালকা হেসে আরাদ্ধাকে বলে,চলো দেখিয়ে দিচ্ছি।
শ্রেয়ান আরাদ্ধাকে দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এই এতো বড় ওয়ার্ডে পরিচিত রোগী কোথায় খুঁজবে?
বিশাল বড় ওয়ার্ডের পূর্ব দিকে ডাক্তাররা বসে।আরাদ্ধা সেদিকে যেতে লাগে। রোদ্দুর ওখানে থাকতে পারে। রোদ্দুরকে জিজ্ঞেস করলে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে।
আরাদ্ধা গিয়ে দেখে রোদ্দুর পেছন দিক করে একটা চেয়ারে বসে আছে। আরো অনেকেই আছে।আরাদ্ধা ভদ্রভাবে বলে,মে আই কাম ইন?

তাদের মধ্যে একজন মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, ইয়েস!
আরাদ্ধা ভিতরে ঢুকে রোদ্দুরকে পেছন থেকে একবার ডাক দিল। কিন্তু কোনো রেসপন্স পেলো না।আরাদ্ধা আবার ডাক দেয়। রোদ্দুর হয়ত শুনেনি।আরাদ্ধা গিয়ে রোদ্দুরের পেছনে দাঁড়ায়। রোদ্দুর গভীর মনোযোগ দিয়ে একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।আরাদ্ধা বোঝে ছবির উপর মনোযোগ দেওয়ায় অন্য কোথাও মনোযোগ নেই।
আরাদ্ধা মনের কৌতুহল থেকে ছবিটার দিকে উঁকি দেয়। ছবিতে একটা বাচ্চা মেয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
আরাদ্ধার বুক ধক করে উঠে।আরাদ্ধার মাথায় অনেকগুলো চিন্তা এসে ভড় করে।বাচ্চা মেয়েটা সে। কিন্তু তার ছবি কেন রোদ্দুরের কাছে?আর এত গভীরভাবেই বা কেন দেখছে?

আরাদ্ধার রোদ্দুরের হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নেয়। রোদ্দুর চমকে উঠে।আরাদ্ধাকে দেখে ধমক দিয়ে বলে,আরু কি করেছিস এটা?ছবিটা এভাবে টেনে নিলি কেন?বেয়াদব মেয়ে!দে ছবিটা।

আরাদ্ধা মুখ ঘুরিয়ে বলে,দেব না।আগে বলেন আমার ছবি এভাবে দেখছিলেন কেন?

রোদ্দুর আবারও ধমক দিয়ে বলে, নিজের লিমিটের মধ্যে থাক।ছবিটা দে!
— দেব না।
রোদ্দুরের রাগ হলো।আরাদ্ধার হাত মুচড়ে ধরে ছবিটা হাতে নেয়। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহন করে রুম থেকে।
উপস্থিত একজন ডাক্তার এসে আরাদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে,এটা কি ধরনের অভদ্রতা?ওনার সাথে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি।

আরাদ্ধা মৃদু কন্ঠে বলে,সরি স্যার!
— আমাকে নয় ওনাকে গিয়ে বল।
— জ্বী!
আরাদ্ধা হেঁটে বাইরে চলে আসে।দেখে রোদ্দুর পকেটে হাত দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হালকা বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।রাগের জন্য হয়ত মুখটা হালকা লাল হয়ে আছে।এই মুহূর্তে রোদ্দুরকে দারুণ লাগছে।অন্য সময় হলে আরাদ্ধা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো রোদ্দুরের দিকে। কিন্তু আজ রোদ্দুরকে দেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। রোদ্দুর বিয়ে করছে দেখে নাকি বকেছে বলে বুঝতে পারছে না সে।মনে হচ্ছে কাঁদলে হয়ত মনের যন্ত্রণাটা একটু হলেও কমতো।
আরাদ্ধা পেছন থেকে নিজের নাম ধরে কাউকে ডাকতে শুনে চমকে উঠে। পেছনে তাকিয়ে দেখে রাই দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি শূন্যতায় ভরা। চোখেমুখ লাল হয়ে আছে। অনেক কেঁদেছে হয়ত।হুট করে আরাদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
কাঁদতে কাঁদতে বলে,আরু,হাসান আর বাঁচবে না। ডাক্তার বলেছে ওর লিভার শেষ।

আরাদ্ধাও কেঁদে দেয়। হাসানের শোকে না।একটু আগের ঘটনাগুলোর জন্য। কষ্টগুলো কান্না হয়ে বের হচ্ছে।রাই আরাদ্ধাকে টেনে হাসানের কাছে নিয়ে যায়।বলে,তুই এখানে থাক।আমি আসছি।

আরাদ্ধা কান্না বন্ধ করে দেয়। রাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়। অস্বস্তি বোধ করছে। কিন্তু বলার আগেই রাই সেখান থেকে চলে যায়।

☆☆☆

— রোদ্দুর!
হঠাৎ রাইয়ের ডাক শুনে পেছনে ঘুরে তাকায় রোদ্দুর। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে।
রাই আস্তে করে বলে,কি ভুল করেছিলাম আমি?

রোদ্দুর রাইয়ের চোখের ভাষা বুঝতে পারে। কিন্তু মুখের ভাষা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, মানে?
— সেদিন তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে বলেই কিন্তু আজ আমার এই অবস্থা সেটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবে না।
— না করবো না। তোমার সাথে যা হয়েছে সেটা সত্যিই খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু সেটার সাথে আমার ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ আমি তোকে নিজের বোনের মতো দেখে এসেছি।ব্যস্!
— কেন দেখলে বোনের মতো।আমি তো কখনো তোমাকে ভাইয়া ডাকিনি।অথচ আরু ভাইয়া ডাকা সত্ত্বেও তুমি ওকে বোনের চোখে দেখো নি।
— সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।
— আরু আমার সব শেষ করে দিয়েছে।ওর জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।

রোদ্দুর এবার কোনো উত্তর দেয় না। রাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।রাই রোদ্দুরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়ত কোনো উত্তর আশা করেছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করছো!

রোদ্দুর তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।বলে,তাহলে তো জানোই। শুধু শুধু আরুকে দোষ দিচ্ছো কেন?আরু কারো কোনো ক্ষতি করেনি।
— আরুকে ঠকাচ্ছো তুমি।আরু কষ্ট পাবে। তুমি বিয়েটা কোরো না প্লিজ।
— তোমাকে বুঝতে খুব কষ্ট হয় আমার। কখনো আরুর দোষ দিচ্ছ।আবার আরুর ভালো চাইছো। বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা!আরুকে আমি কোনদিন ঠকাইনি।আরু তো এখন পর্যন্ত আমার মনের কথাগুলোই বুঝতে পারে না।
— তুমি তো আরুকে বকো। কিভাবে বুঝবে?
— আমার এই হুটহাট করে বকা রেগে যাওয়া এই,,, এই অনুভূতির অন্তরালে যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে সেটা আরু কখনো বুঝবে না।
— সেজন্য তুমি অন্য একজনকে বিয়ে করে নিবে?
রোদ্দুর বিরক্তি নিয়ে বলে,আমি কি চাই আর ভবিষ্যতে কি হবে সেটা নাহয় সবার নাজানাই থাক!
রাই পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে আরাদ্ধা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রাই কিছু বলার আগেই আরাদ্ধা সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়।
রাই মলিন হেসে রোদ্দুরকে বলে,আরু সরাসরি তোমার মনের কথাই শুনে ফেললো।

আরাদ্ধা দৌড়ে কলেজের বাইরে চলে আসে। রীতিমত হাপাচ্ছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না একটু আগে রোদ্দুরের বলা কথাগুলো।
হুট করে তার ফোনটা বেজে উঠে। আননোন নাম্বার।আরাদ্ধা কল অ্যাটেন্ড করে।ওপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসে।
,
,
কল অ্যাটেন্ড পেছনে তাকাতেই দেখে শ্রেয়ান মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক কিছু বলতে চায়। কিন্তু সংকোচে বলতে পারছে না।
আরাদ্ধা হাসে।বলে, মেয়েদের মতো এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন, হুম?একটা সাধারণ কথা বলতে এতো সংকোচ ঠিক না।
শ্রেয়ান অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে, তুমি জানো আমি কি বলবো?
আরাদ্ধা শান্তির হাসি দেয়।বলে, জানি তো।আমি ডিএনএ টেস্ট করতে রাজি। আপনার বোন শ্রেয়া ফোন দিয়েছে।
— ওহ্!
— শুনুন আমি আপনার সাথে আলাদাভাবে আমার দেখা করতে পারবো না।আমার বাসায় প্রবলেম আছে।আর অদ্রিকে জানিয়ে দিন প্রোগ্রামটা ক্যান্সেল। নির্বিকার গলায় বলে আরাদ্ধা।
শ্রেয়ান বলে,আমার সাথে আসো।
শ্রেয়ান হাঁটা শুরু করে।আরাদ্ধা শ্রেয়ানকে ফলো করে সামনের দিকে এগোতেই পেছন থেকে রোদ্দুর চড়া গলায় ডাক দেয়,আরাদ্ধা,,,,,!

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৭

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৭
#Devjani

নিজের রুমে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে আছে শ্রেয়ান।আরাদ্ধার বিষয়টা তাকে দারুণভাবে ভাবাচ্ছে।শ্রেয়া আর সে টুইন। মোহিনী তাদের কলিজার টুকরা বোন ছিল। পনের বছর আগে রোড এ্যাক্সিডেন্টে হারিয়ে ফেলেছে তাকে।ধরা হয়েছে সে মারা গেছে। যদিও ডেড বডি পাওয়া যায়নি।

সেদিন কলেজে যখন প্রথম দেখা হয়েছিল তখন তার মনে হচ্ছিল মোহিনী তার খুব কাছে আছে।সে কলেজের বারান্দা দিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ দেখে একটা মেয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।হয়ত কিছু খুঁজচ্ছে। কিন্তু চোখেমুখে খুশির আভা।শ্রেয়ান তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনি কি কিছু খুঁজছেন?

মেয়েটা হাসতে হাসতে বলে,আসলে আমি ক্লাসটা খুঁজে পাচ্ছিনা।

শ্রেয়ানের একমুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল মেয়েটা হয়ত পাগল।নাহলে টেনশনের পরিবর্তে হাসছে কেন?শ্রেয়ান অবাকের সুরে বলে,আপনি হাসছেন কেন?

মেয়েটার হাসি নিমিষেই উড়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,তো কান্না করবো নাকি?আমার অনেকদিনের ইচ্ছা আজকে পূরণ হলো। মেডিকেলে আমি চান্স পেয়েই গেলাম।হাসব না!

শ্রেয়ান আস্তে করে বলে,ওহ্ আচ্ছা।আমি ভাবছিলাম,,,,,,

— কি?

শ্রেয়ান মেকি হেসে বলে,পাগল!বাই দা ওয়ে নাম কি তোমার?

মেয়েটা ভেংচি কেটে বলে,আরাদ্ধা!

শ্রেয়ান মনে মনে রিপিড করে নামটা,আরাদ্ধা!

গলা ঝেড়ে বলে, আচ্ছা চলো তোমাকে ক্লাস খুঁজতে সাহায্য করছি,চলো!

সেই থেকে প্রায়ই কথা হতো আরাদ্ধার সাথে।মাঝে মাঝে মনে মোহিনীর সাথে কথা বলছে। মোহিনী ওর খুব কাছে আছে।ওর সাথে কথা না বলতে পারলে খারাপ লাগে।ওর সাথে এসব কথা শেয়ার করতে গিয়েও সংকোচ হয়। কিন্তু আজকে আরাদ্ধার সম্পর্কে কথাটা শুনে মনে হলো মোহিনীকে পেয়ে গেছে।
এখন আরাদ্ধার ডিএনএ তার সাথে মিল গেলেই বোঝা যাবে ও মোহিনী না অন্য কেউ।ওরা ভাইবোন হলে অবশ্যই ওদের ডিএনএ মিলবে। কিন্তু কিভাবে বলবে তাকে এই বিষয়টা ভাবাচ্ছে তাকে।

আজকাল অদ্রির ব্যাপারটাও বেশ ভাবায়। অদ্রি আগের মতো তার সাথে মেশে না।আগে তার সাথে মিশতে আসলে বিরক্ত হতো। কিন্তু এখন বকলেও ব্যাপারটা বেশ এনজয় করতো।তবে এখন তার ব্যাচমেটদের সাথে কথা বলে ঠিকই কিন্তু তাকে ইগনোর করে।আজ ইন্টার্নির একজন স্টুডেন্টের সাথে কথা বলতে দেখে খুব রাগ হয়েছিল। ইচ্ছে করছে গিয়ে ধমক দিক। কিন্তু তার ইগো তাকে বাধা দিয়েছে।

শ্রেয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে আরাদ্ধাকে কল করে।

☆☆☆
আরাদ্ধা নিজের রুমে বসে আছে।একটু আগে রোদ্দুররা তার বাসায় এসেছে।আরাদ্ধার এসব অসহ্য লাগছে। নিজের রুম থেকে মার্জিয়ার আদিক্ষেতাগুলো রাগিয়ে তুলছে তাকে।একটু আগে লোক দেখানোর জন্য তাকে ডাকতে এসে দুচারটা বাজে কথা শুনিয়ে গেছে মার্জিয়া।

হুট করে আরাদ্ধার ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে শ্রেয়ানের নাম ভেসে উঠছে।আরাদ্ধার ফোন তুলতে অসহ্য লাগছে। তবুও তুলে কানের কাছে নেয়।শ্রেয়ান বলে,আরু কি করছিস?

আরাদ্ধা চড়া গলায় জবাব দেয়,এটা জানার জন্য ফোন করেছেন?
শ্রেয়ান সংকোচ নিয়ে বলে,না।

আরাদ্ধা বুঝতে পারে শ্রেয়ানের সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি।শান্ত গলায় বলে,সরি!যেটা বলার জন্য ফোন করেছেন সেটা বলুন।

শ্রেয়ান গলা ঝেড়ে বলে,আমার সাথে আজ দেখা করতে পারবে? সন্ধ্যায়!আমি গাড়ি নিয়ে তোমার জন্য তোমাদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে অপেক্ষা করবো।

আরাদ্ধা প্রত্যুত্তরে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।শ্রেয়ানের সাথে একা কোথায় যাওয়া ঠিক নাও হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,আমি যাবো। কিন্তু একা না। অদ্রিও যাবে সাথে।

শ্রেয়ান আরাদ্ধার কথার মানে বুঝে। হাসিমুখে বলে,ঠিক আছে।তাই হবে। তুমি অদ্রিকে বলে দাও।
আরাদ্ধা ছোট করে জবাব দেয়,হুম!রাখছি।
আরদ্ধা ফোন কেটেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে।কি ঝামেলা!এখন আবার এর সাথে দেখা করে সময় নষ্ট করতে হবে তার। সামনে পরীক্ষা।এখন এমনেই পড়ায় মন বসে না। সবকিছুতে কেমন বিষন্নতা খুঁজে পায়। রোদ্দুর অবশ্য বলেছিল পড়া না বুঝলে তার কাছে যেতে। কিন্তু এখন হয়ত সেটা দৃষ্টিকটু লাগতে পারে।আর তার দাদি তো আছেই!

আরাদ্ধার ফোনটা আবারও বেজে উঠে।আরাদ্ধা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।
সাথে সাথে একটা মেসেজ আসে তার ফোনে। অদ্রি মেসেজ করেছে।
“তোর একজন পরিচিত রোগী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। রোদ্দুর স্যার আছে।বলেছেন,লিভার শেষ। ওনার লিভার এনজাইম এসজিপিটি সাতশ’ ছাড়িয়ে গেছে।রোগী তোকে খুঁজছে। স্যার ফোন করেছে তোকে তুই ধরিস নি।মেডিসিন ইউনিট থ্রি-এর একজন ইন্টার্নি ডাক্তার ভাইয়া আমাকে বলেছে।”

আরাদ্ধার বুক ধক করে উঠে।তার পরিচিত রোগী কে?আরাদ্ধা চোখ বন্ধ করে একবার ভাবার চেষ্টা করে কে হতে পারে। কিন্তু তেমন কাউকেই মনে পড়ছে না। তাছাড়া রোদ্দুর ওখানে কিভাবে? রোদ্দুরের তো এখানে থাকার কথা!আরাদ্ধা রুম থেকে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে।বসার রুমে সোফায় রোদ্দুরের মা বাবা আর কিছু আত্মীয় স্বজন বসে আছে।আর আছে সুমাইয়া। লজ্জায় নেতিয়ে বসে আছে।

তার মানে রোদ্দুর এখানে ছিল না। ভুল ভেবেছিল সে।সবাইকে নিয়ে অশুভ চিন্তা তাকে ঘিরে ধরেছে।ব্যাগ থেকে কিছু টাকা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। নিজের গাড়িতেই যাবে। তবুও প্রয়োজন হতেও পারে।
সবার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দাদি তাকে প্রশ্ন করে,কই যাচ্ছিস এই অসময়?

আরাদ্ধা ভদ্রভাবে জবাব দেয়,কাজ আছে।

দাদি আবার চড়া গলায় বলে,কি কাজ শুনি।আমার বাড়িতে আমি যখনতখন এভাবে যাওয়া আসা এলাউ করবো না।

আরাদ্ধা বিরক্তিতে উত্তর দেয়, তুমি থাক তোমার বাড়ি নিয়ে।থাকবো না এখানে আমি।ঠিক আছে?

রোদ্দুরের মা শাসনের সুরে বলে,ছিঃ আরু মা!এসব বলে না গুরুজন হয় তোমার!

আরাদ্ধার মা চোখ রাঙিয়ে বলে,দিনে দিনে অনেক বাজে আচার আচরণ শিখেছিস।ভাব দেখাচ্ছিস?যা তোর যেখানে ইচ্ছা সেখানে যা।

দাদি ধমক দিয়ে বলে, শুধু মুখেই বড় বড় কথা কাজের বেলায় কিচ্ছু নাই!যাই হোক না কেন এখানেই তো মাটি কামড়ে পড়ে থাকিস।আবার কথা শোনাচ্ছে সবাইকে।

মার্জিয়া আরাদ্ধার সামনে গিয়ে মুখ টিপে হাসে। আফসোসের সুরে বলে,কার না কার রক্ত এর গায়ে বইছে। রক্তের স্বভাব নামে একটা বিষয় আছে না,,,,!

আরাদ্ধার চড়া গলায় বলতে ইচ্ছে হলো,তোমার মা বাবা আর আপু তো অনেক ভালো।মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করে। তাদের মেয়ে তুমি এমন কর কিভাবে এমন কথা বলো?তোমার রক্তের স্বভাব তো এরকম না।তাহলে,,?
কিন্তু আরাদ্ধা বলল না। ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে। মনের কথা মনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

দাদি মার্জিয়াকে সমর্থন করে বলে,এই বিষয়টা আগে ভাবিনি বলে খোকাকে নিষেধ করতে পারিনি। প্রয়োজনে নিঃসন্তান থাকত। তবুও কার না কার বাচ্চা বলা তো যায় না।ছেলে হলেও চলত। কিন্তু,,,,,,

রোদ্দুরের মা বাধা দিয়ে বলে,থাক না মামীমা। বাচ্চা মেয়ে।

আরাদ্ধার চোখ পানিতে টলমল করে উঠে। করুণ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায়। ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখটা কালো হয়ে গেছে।আরাদ্ধার চোখে চোখ পড়ায় সেখান থেকে চলে যায়।

আরাদ্ধার কাঁদতে ইচ্ছা করছে। তবুও সে ইচ্ছে মাটি চাপা দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৬

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৬
#Devjani

ওনার কথা উপেক্ষা করে গাড়ির হ্যান্ডেলে চাপ দিলাম।পেছনের দরজা খুলতেই ভয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলাম।
পেছনের সিটে ওনার টাইগার ঘুমাচ্ছে। টাইগার ঘুমঘুম চোখে আমাকে একবার দেখে আবার চোখ বন্ধ করে নিল।
বুক ধড়ফড় করছে।এই কুকুর এখানে কোথা থেকে এলো!
উনি জোরে জোরে হাসা শুরু করলো।
— এটা কি হলো?
— চুপ আমার টাইগার ঘুমাচ্ছে।উঠলে তোরই বিপদ আমার কি!
আমি অসহায় ভাবে বললাম,আপনি এখানেও কুকুরটাকে নিয়ে এলেন? আপনি জানেন আমি এটাকে ভয় পাই।
উনি সাথে সাথে একটা ধমক দিলেন। বললেন, খবরদার!আমার টাইগারকে কুকুর বলবি তো!আর তুই ওকে দেখে ভয় পেলে ও তোকে ভয় দেখাবে এটা স্বাভাবিক।বাই দা ওয়ে,যা গিয়ে ওর পাশে বোস। তুই তো আবার আমার পাশে বসবি না।আর আমিও বসতে দেব না।আগেই বলেছিলাম!
আমি বোকার মতো হেসে বললাম,বসবো তো।বসবো।
— নাহ্! বসবি না এখানে।
— বসবো!
গিয়ে ওনার পাশে বসে পড়লাম।রাগ হচ্ছে ওনার উপর।এই কুকুরটাকে এখানে আনার কি দরকার ছিল!এবার শুধু ঘুম থেকে না উঠলেই ভালো। আল্লাহ্!এই কুকুরটা যেন একটু শান্তিতে ঘুমায়। আমি না পৌঁছানো পর্যন্ত ঘুমাক।

কিছুদূর যেতেই বাজেভাবে ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়লাম। কি ঝামেলা! কুকুরটা উঠে যাবে তো! পেছনে তাকিয়ে দেখি কুকুরটা উঠে গেছে।তবে শান্ত ভাবে বসে।আমার দিকে একবার তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে আলসেমি ঝেড়ে আবার বসে মাথা নিচু করে রাখলো।
সোজা হয়ে ঠিকভাবে বসলাম। হঠাৎ দেখলাম রাস্তার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে কিছু ফাইল।

আমি তাড়াতাড়ি ওনাকে ডেকে ওদিকে তাকাতে বললাম। কারণ ঐ মেয়েটা দেখতে রাইয়ের মতো।উনিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,জ্যামটা ছাড়তে দেরি হবে। আমার মনে হচ্ছে ঐ মেয়েটা রাই।চল একবার যাচাই করে আসি।

আমি সায় দিলাম। ওনার সাথে নেমে নেমে ঐ মেয়েটার সামনে যেতেই ও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।তার মানে এটা রাই।

ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,কেমন আছিস আরু?আমার তো খোঁজ খবর নিস না!
— সরি রাই।কেমন আছিস তুই?
— ভালো নেই।
রাইয়ের এই কথা শুনে বুক ধক করে উঠল।তার মানে কি ওগুলো সত্যি!ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনিও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রাইকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
ও মন খারাপ করে বলল, হাসানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়েছে।
আমার আশঙ্কা সত্যি হলো।এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম।ও তেজি গলায় আবার বলা শুরু করলো,ও আমাকে ঠকিয়েছে।ও আগে বিয়ে করেছে আমাকে বলেনি। তবুও সবটা আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ও চায় আমি ওর সাথে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে ক্লাবে যাই।পার্টি করি।মিল যেখানে নেই সেখানে সুখের কোনো প্রশ্নই আসে না।
উনি সান্ত্বনার সুরে বললেন,তুই চিন্তা করিস না রাই সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাই করুন দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে, সত্যিই কি সব ঠিক হবে?

রাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে উনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন।ওর চোখের ভাষা অনেক গভীর।এই ভাষা বোঝার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

ও মুখে হাসি নিয়ে বলে,আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করা লাগবে না।আমি ঠিক আছি।আমি একটা ভালো জব করে নিজের খরচ নিজেই চালাই। তোমাদের কথা বল।কেমন আছ?
আমি বললাম, ভালোই আছি রাই।
ও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,তা তো থাকবেই।আমি আসি।ভালো থেকো।
ও রোদ্দুর ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।
আমরাও গাড়িতে উঠে বসে পড়লাম। রাইয়ের জন্য খারাপ লাগলেও ও নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে ভেবে ভালো লাগল।
রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে আমাদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।

বাসায় ঢুকতেই দাদি তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললেন,কি মহারাণী কোথা থেকে আসা হচ্ছে শুনি?
— একটু বাইরে গিয়েছিলাম।
— শোন কাল মার্জিয়ারা আসবে। সুমাইয়াও থাকবে। ওদের সাথে কোনো ঝামেলা করবি না।যদি করেছিস তো তোর একদিন কি আমার একদিন।

মার্জিয়ার আসার কথা শুনে রাগ উঠে গলো।এ আবার কেন আসবে এখানে। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।দাদিকে জিজ্ঞেস করলাম।দাদি বলল কাল নাকি রোদ্দুর ভাইয়ারা মার্জিয়ার বড় বোন সুমাইয়া আপুকে দেখতে আসবে। রোদ্দুর ভাইয়ার মা নাকি সুমাইয়া আপুকে অনেক পছন্দ করে।

এই কথা শুনে নিজের অজান্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। নিজের রুমে চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু মন বসছে না পড়ায়। কেন সেটা জানি না।
পড়ায় মন না বসলে শুধু শুধু বসে থেকে লাভ নেই।তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যাবে।

☆☆☆

এনাটমি ডিসেকশন রুম থেকে সবে বের হলো আরাদ্ধা আর অদ্রি। এখানে কেটেকুটে হাতে কলমে শিখতে হয় সব।ভিসেরাও পড়তে হয়। এগুলো জারে প্রিজার্ভ করা হয়।হিস্টোলজি ক্লাসে স্লাইডে ভিসেরার মাইক্রোস্কোপিক গঠন দেখতে হয়।

আরাদ্ধা আর অদ্রি সোজা হেঁটে যাচ্ছে। ওদের পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল মার্জিয়া।আরাদ্ধা পেছন থেকে ডাক দেয়,ম্যারি!

মার্জিয়া আরাদ্ধার মুখ থেকে এই নামটা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।ধমক দিয়ে বলে,হাউ ডেয়ার ইউ!আমাকে এই নামে ডাকার সাহস কি হয়?
আরাদ্ধা মেকি হাসি দেয়।মন খারাপ করে বলে,আমার কি দোষ? তুমিই তো সেদিন বলছিলে তোমার নাম ম্যারি।
মার্জিয়া রাগী গলায় বলে,সেটা শুধু রোদ্দুর স্যারের জন্য।ওকে?

আরাদ্ধা ভ্রু উঁচিয়ে বলে, স্যার তো তোমাকে এই নামে ডাকেই না। তাছাড়া সুমাইয়া আপুর সাথে যদি ওনার বিয়ে হয় তাহলে উনি তোমার দুলাভাই হবে।রাইট?

মার্জিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,সেটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না। যত্তসব!না জানি কোন চূড়ায় জন্ম হয়েছে।এসেছে আমার ব্যাপারে নাক গলাতে।হেহ!
মার্জিয়া হেলেদুলে চলে যায়।

আরাদ্ধার মন খারাপ হয়ে গেল।এটা কি ধরনের কথা!জন্ম যেখানেই হোক না কেন সে তো একটা মানুষ।একটা মানুষ হয়ে কিভাবে অন্য একটা মানুষকে এসব কথা বলে!
আরাদ্ধা পাশে থাকিয়ে দেখে শ্রেয়ান হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।আরাদ্ধা শ্রেয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে, হাসছেন কেন অকারণে?
শ্রেয়ান খুশি হয়ে বলে,তোমার ঐ ফ্রেন্ডটা একটু আগে কি বলল?কেন বলল? কারণটা বলনা প্লিজ!

আরাদ্ধার রাগ হলো।তাকা বাজে কথা বলে গেল আর ছেলে হাসিমুখে আবার জিজ্ঞেস করছে। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,জানি না।
আরাদ্ধার আবার মন খারাপ হয়ে যায়।এমন কথা আগে অনেক শুনেছে। কিন্তু আজ এই কথায় খুব কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া আজকাল ছোটখাটো ব্যাপারেই মন খারাপ হয়ে যায়।হেঁটে চলে গেল।

শ্রেয়ান বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি ওর সামনে এসে বলে, আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।ও ওর মা বাবার এডোপ্টেড চাইল্ড।তাই মার্জিয়া এসব কথা বলল।

শ্রেয়ান আরাদ্ধার চলে যাওয়া দিকে তাকায়। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে, মোহিনী,,,,,,,

☆☆☆

ঘরে ঢুকেই আরাদ্ধা দেখে তার দাদি সোফায় বসে চা খাচ্ছে। ভেতরের রুম থেকে অনেক আওয়াজ আসছে।হয়ত মার্জিয়ার মা বাবা আর সুমাইয়া চলে এসেছে।আরাদ্ধা খুশি হয়ে যায়। কতদিন পর সবার সাথে দেখা হচ্ছে।আরাদ্ধা ভেতরের রুমের দিকে এগোতেই দাদি তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,মনে থাকে যেন!কোনো ঝামেলা আমি চাই না।
আরাদ্ধা রাগ হয়।চোখ মুখ কুঁচকে বলে,ওরা এখানে এসেছে কেন? রোদ্দুর ভাইয়ারা তো ওদের বাসায় গিয়েও ওকে দেখে আসতে পারে তাই না? আমাদের বাসায় কেন এলো?

দাদি ধমক দিয়ে বলে,থাপড়ে গাল লাল করে দেব মুখপুরী।আমার বাসায় যে ইচ্ছা সে আসুক তোর কি?তোর বাসা মানে তুই নিজেই তো এখানে আশ্রিতা হয়ে থাকিস আবার বড়বড় কথা।যা সামনে থেকে।

আরাদ্ধার আবার মন খারাপ হয়ে যায়। মনের মধ্যে অভিমান বাসা বাঁধে। নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।মনে মনে বলে,এতো সমস্যা আমাকে নিয়ে!ঠিক আছে আর সমস্যায় থাকতে হবে না।চলে যাব অনেক দূরে।আর আসব না এখানে। সত্যি!
আরাদ্ধা ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয়।ক্লান্ত লাগছে। খুব!

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৫

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৫
#Devjani

____________________
রোদ্দুর ভাইয়াকে মেসেজ দিয়ে নদীর পাড়ে আসতে বললাম।আমার প্রিয় জায়গা।আমি ভেবেছিলাম উনি হয়ত ভুলে গেছেন। কিন্তু এসে দেখি উনি গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।

রোদ্দুর ভাইয়াকে মৃদু কন্ঠে ডাক দিলাম।
উনি মুখে হাসি নিয়ে বলে,আরাদ্ধা তুই এসেছিস?
— হুম!
ওনার দিকে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,গত দশদিনের ইমেইল চেক করুন! ভাইয়া রাইয়ের হাসবেন্ড হাসান বিবাহিত ছিল।ইরা ওনার প্রথম স্ত্রী।আর এই ভদ্রমহিলাই আমাকে এসব পাঠাচ্ছে।
উনি ফোনটা নিয়ে আবার দিয়ে দিলেন।রাগী গলায় বললেন,হাসান সম্পর্কে উল্টাপাল্টা এসব কি বলে ঐ ভদ্রমহিলা! হাসানের প্রথম স্ত্রী রাই।আর আমার জানামতে ও খুব ভালো মানুষ।

— ভাইয়া আমি কিছু জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা খুব ভুল করে ফেলেছি। রাইয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে।হতেও পারে ওটা হাসান ভাইয়ের মুখোশ ছিল!বলে আমি কাঁদতে লাগলাম।

রাইকে আমি বোনের মতো ভালোবাসি।আমার থেকে বড় কিন্তু নাম ধরেই ডাকি। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে।বাবা বড়ো করেছে। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি তাড়াতাড়ি রাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়।কেউ ভালো করে খোঁজ নেই নি। কিন্তু আমরা চাইলে সেসব করতে পারতাম।তাই এখন আরো বেশি খারাপ লাগছে। বারবার মনে হচ্ছে,এত তাড়াতাড়ি কেন রাইয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের হাসান ভাই সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল। বিয়ের আগে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে দিতে হয়।আমরা জানতাম না যে হাসান ভাই আগে বিবাহিত ছিল।তাহলে নিশ্চয়ই রাইয়ের বিয়েতে বাঁধা দাতাম।

রোদ্দুর ভাইয়া আমার মাথাটা ওনার বুকে চেপে ধরে।শান্ত কন্ঠে বললেন, চিন্তা করিস না পিচ্চি। এগুলোর উপর ভিত্তি করে কমেন্ট করা উচিত না।প্র্যাকটিক্যালি সব যাচাই করতে হবে। যদিও হাসান এখন আমার কল রিসিভ করে না।
— ভাইয়া ওকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া হলো কেন?
— ভুলটা আমাদেরই।
— এর দায় কে নেবে?রাই কি এসব জানে?
— জানি না।কাল তোকে নিয়ে রাইয়ের সাথে দেখা করতে যাব।আর এগুলো মিথ্যেও হতে পারে।সো এত সিরিয়াস হোস না।

আমি ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।উনি আমার হাতগুলো ধরে বলে,আরু এসব চিন্তা বাদ দে।দেখ জায়গাটা খুব সুন্দর।চল একটু নদীর পাড় থেকে হেঁটে আসি।মনটাও ভালো হবে।
আমি ওনার কথায় সায় দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।উনি পাশে হাঁটছে।
এখন আনুমানিক পাঁচটা বাজছে।জায়গাটা বেশ নদীর পাড়ের এই জায়গাটা বেশ নির্জন। আশেপাশে অবশ্য একজন দুজন মানুষও ঘোরাফেরা করছে।ওনার সাথে ভালোই লাগছে। সাথে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে মনের ভিতর।

হঠাৎ উনি হালকা হেসে বললেন,আরু তোর মনে আছে ছোটবেলায় তুই আমার কোলে উঠতি।আর আমি তোকে ফেলে দিব বলে ভয় দেখাতাম,,,

ওনার এমন কথায় এতক্ষণের অনুভূতিটা নিমিষেই উড়ে গেল।একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো সম্পুর্ণভাবে।গলা ঝেড়ে বললাম, ছোটবেলায় বাচ্চারা কোলে উঠতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।আর আমি ছোটবেলায় শুধু তিনবার আপনার কোলে উঠেছি।

উনি ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। ওনার এরুপ হাসিতে লজ্জাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। উনি বললেন,মনেও রেখে দিলি? জানিস তোর ওই ছোট ছোট নরম হাতগুলো এখনো মনে পড়ে। ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি।

লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে উনি আমায় লজ্জা দিচ্ছে।তাহলে আমিও একটু লজ্জা দেই দোষ কি তাতে!সাহস নিয়ে বললাম, আমি তিনবার আপনার কোলে উঠেছি। তৃতীয় বারে আপনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন।তাই আর উঠিনি।আমার এখনো মনে আছে।কোমড়ের ব্যথায় দুদিন ঠিকভাবে বসতে পারিনি।

আমার কথা শুনে হঠাৎ উনি দাঁড়িয়ে গেলেন।আমি ওনার দিকে তাকালাম। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে দাঁড়ালেন কেন।উনি মেকি হেসে বললেন,সরি রে তোকে ফেলে দেওয়ার জন্য।বিলিভ মি, এরপর থেকে কোলে নিলে আর ফেলবো না।

আমি ওনার কথায় পুরোপুরি চুপসে গেলাম।বলে কি এসব! এরপর থেকে কোলে মানে!আমি এখন বড় হয়ে গেছি। কোলের কথা আসছে কোথা থেকে?এই লোকটা কি বলে এসব!
ওনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।আমি উল্টো দিকে ঘুরে গেলাম। মৃদু কন্ঠে বললাম, ভাইয়া বাসায় যাব!
উনি বিরক্ত হয়ে বললেন, এখনো সন্ধ্যা হয়নি।রাতের তারাগুলো না দেখে যাব না।
আমি বেকে বসলাম। বললাম,তাহলে আপনি থাকুন।আমি যাচ্ছি!
উনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,যা যা আমি আটকে রেখেছি নাকি!
ওনার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।উনি জানেন সন্ধ্যার দিকে রাস্তাটা ভালো না। উনি জানেন আমি একা যেতে পারবো না তাই এভাবে কথা বলছেন। ডেভিল একটা!
উনি নদীর পাড়ের এক সাইডে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লেন।আমাকে একবার ডাকলেও পারত।নিজে থেকে গিয়ে ওনার পাশে দাঁড়ালাম।উনি একবার তাকিয়ে হাত টান দিয়ে ওনার পাশে বসিয়ে দিলেন। ওনার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে বসে পড়লাম। অস্তমিত সূর্যের লাল আভা নদীর পানির উপর পড়ে পানিটা চিকচিক করছে। পরিবেশটা ছবির চেয়েও সুন্দর লাগছে।
আড় চোখে একবার ওনাকে দেখলাম।মুখটা গম্ভীর।।।।

অদ্রির কথা এখন মনে পড়ছে। অদ্রি সাথে থাকলে ভালো হতো।আগে অদ্রির সাথে এখানে অনেক এসেছি। অদ্রির প্রিয় জায়গা।আজকাল অদ্রির সাথে তেমন কথাও হয় না। কিভাবে হবে! অদ্রি এখন ফ্যামিলিগত সমস্যায় আছে। অদ্রির খালা প্রতিদিন তাদের বাড়িতে আসে। অদ্রির বিয়ের ব্যাপারে ওর মাকে উস্কে দেয়। ব্যাপারটা অদ্রির পছন্দ না। অদ্রি এত তাড়াতাড়ি বিয়ের ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তাছাড়া অদ্রি যে শ্রেয়ান ভাইয়ার উপর দুর্বল তা এ কয়দিনে বেশ ভালোভাবেই বুঝেছি।এত তো সেদিন অদ্রি হিস্টোলজি ক্লাসের পড়া না বুঝায় রিডিং রুমে আমার কাছে বুঝতে এসেছিল।
কিন্তু আমি বুঝাতে পারছিলাম না। সেখানে শ্রেয়ান ভাইয়াও ছিল। অদ্রিকে ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো।অদ্রিকে দেখে আরো কয়েকজন যেতেই রেগেমেগে ওদের দুচারটা কথা শুনিয়ে শ্রেয়ান ভাইয়াকে টেনে বেরিয়ে যায়।শ্রেয়ান ভাইয়াও অবাক হয়েছিল। উনি যদি কাউকে বুঝিয়ে দেয় তবে স্বার্থ ছাড়া অদ্রির এতো রিয়েক্ট করার কি আছে?

রোদ্দুর ভাইয়া আস্তে করে আমায় ডাক দিলেন। বললেন,আরু,,, কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? কতক্ষণ ধরে ডাকছি!

উনার কথা অবাক হলাম। অনেক্ষণ ধরে কোথায় ডাকছে সবেই তো ওনার ডাক শুনলাম। বললাম, কতক্ষণ ধরে ডাকছেন?
উনি রাগী গলায় বললেন,আমি সময় দেখে হিসেব করে রেখেছি নাকি?
— সরি,স্যার!
উনি আবার ধমক দিয়ে বললেন, কি শুরু করেছিস এসব একবার স্যার একবার ভাইয়া?যা ডাকবি একটা ডাকবি!
আমি বললাম, ভাইয়া ডাকব।
সাথে সাথে উনি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি কি করলাম! উনিই তো বললেন যা ডাকবি একটা ডাকবি।আমি ওনার রাগী দৃষ্টি উপেক্ষা করে মেকি হাসলাম।
উনি অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন, গাড়িতে গিয়ে বোস।
— হুম!
আমি উঠে দাঁড়িয়ে জামাটা হালকা ঝেড়ে গাড়ির দিকে এগোতে লাগলাম।উনি দ্রুত পায়ে হেঁটে আমার আগে গাড়িতে উঠে বসে পড়লেন।আমি গিয়ে পেছনের সিটের দরজায় হাত দিতেই উনি বললেন,ওখানে বসিস না পিচ্চি।সামনে এসে বোস।
আমার কি হলো জানি না। জেদ ধরে বললাম,আমি এখানেই বসবো।
উনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,ভালোর জন্য বলছি তো তাই গায়ে লাগছে না।বোস তোর ইচ্ছা!পরে আমার পাশে বসতে দিব না।
ওনার কথা উপেক্ষা করে গাড়ির হ্যান্ডেলে চাপ দিলাম।পেছনের দরজা খুলতেই ভয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলাম।

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-০৪

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৪
#Devjani

রোদ্দুর আরাদ্ধাকে শান্ত কন্ঠে বলে, বুঝিস না তো দেখে কি করবি?
— ইয়ে মানে স্যার,,,,সেটা বুঝতে কোনো কষ্টই হবে না।ঐ যে বললাম, মনের কানেকশন!
রোদ্দুর খানিকটা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে, কিন্তু মনের কানেকশন দিয়ে তো শুধু মনের কথা বোঝা যায়।
আরাদ্ধা জেদি কন্ঠে বলে,এত কথা কেন বলেন আপনি?আমি দেখবো মানে দেখব!
আরাদ্ধা রোদ্দুরের স্টেথোস্কোপটা নিয়ে বলে,সামনে আসুন দেখছি।
রোদ্দুর প্রশ্ন করে,মানে?
— আহ্!এত মানে মানে করেন কেন? সামনে আসুন। বিরক্তি সহকারে বলে আরাদ্ধা।
রোদ্দুর বুঝতে পারছে না আরাদ্ধা কি করতে চাচ্ছে।তবে সামনে ঝুঁকলো।
আরাদ্ধা কিছুক্ষণ দেখে।খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে বলে, বুঝতে পারেছি।
— কী? ছোট ছোট চোখ করে প্রশ্ন করে রোদ্দুর।
— স্টুডেন্ট আর টিচার হিসেবে বলতে পারবো না।তবে ভাইয়া হিসেবে বলছি, আপনি একাকীত্বে ভুগছেন। আপনার কাউকে প্রয়োজন।
আরাদ্ধার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলছে।

— মানে?
— মানে হলো আপনার বিয়ে করা উচিত।ইয়েস! আমার একটা ভাবি লাগবে।
রোদ্দুর বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায়।বলে,বিয়ে?ভাবি?
হঠাৎ রুমে রোদ্দুরের মা রুনা বেগম প্রবেশ করে।আরাদ্ধার সবকথাই তিনি শুনেছেন। মিটিমিটি হাসতে হাসতে আরাদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথায় হালকা বাড়ি দিয়ে বলে,আরু তুই বোঝা এই ছেলেকে।এই ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে। কতদিন ধরে বলছি একটা বিয়ে করতে।কথা শুনে আমার?

রোদ্দুর বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে।বলে, আম্মু এখনো সময় হয়নি।সময় হলে করব বললাম তো।
— বিয়ের কথা বললেই এইসব কথা বলিস। কিছুটা রাগী গলায় বলে রুনা বেগম।
— আম্মু কাকে বিয়ে করবো।যাকে বিয়ে করতে চাই সে না বুঝলে আমার কিছু করার আছে?আড় চোখে একবার আরাদ্ধাকে দেখে নেয়। ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুরের রাগ হয় আরাদ্ধার উপর। মনের কানেকশন নিয়ে এতো বকবক করে অথচ মনের কথাগুলোই বুঝতে পারে না মেয়েটা।
রোদ্দুরের কথায় রুনা বেগমের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠে। মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

— তার মানে কেউ আছে তোর মনে।আগে বলবি না! আচ্ছা আমি যাচ্ছি।আরু তোর মাকে কাল আসতে বলিস।একটু জরুরী কথা আছে।বলে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে একবার হাসেন।
ছোট করে “আসি”বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রোদ্দুর রাগী দৃষ্টিতে আরাদ্ধার দিকে তাকায়। থমথমে গলায় ডাকে,আরু,,,,!

আরাদ্ধা মেকি হাসি দিয়ে বলে,আমিও যাই।তার
এই মুহূর্তে এখানে থাকা রিস্কি।বলা যায় না যেভাবে তাকিয়ে আছে বকা খাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, টাইগার এখন ঘুমাচ্ছে।ওর ঘুম থেকে উঠার আগে আগে যেতে পারলেই মঙ্গল।
আরাদ্ধা গিয়ে আবার ফিরে আসে।বলে, ভাইয়া
রাগ না করলে একটা কথা বলব?
— আমি কি বেশি রাগী?
আরাদ্ধা অবাকের সাথে বলে, আপনার মনে হয় আপনি একজন ভালো মানুষ?আচ্ছা বাদ দিন।শুনুন বলছিলাম যে,রাইয়ের সাথে কথা হয় আপনার?

হঠাৎ রাইয়ের কথায় খারাপ লাগে তার।সেই সাথে অপরাধবোধ কাজ করে নিজের মধ্যে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,হয়না।ওর শাশুড়ি হয়ত পছন্দ করে না। কিন্তু আমি জানি ও ভালো নেই।
— কাল বিকেলে আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?আমি ঠিকানা পাঠিয়ে দেব। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে।এখানে বলতে পারবো না।

☆☆☆

বিছানার উপর বসে এক নাগাড়ে শ্রেয়ানকে ফোন করে যাচ্ছে অদ্রি। মেজাজ গরম হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে না।শ্রেয়ান এখন ফাইনাল ইয়ারে। অনেক ব্যস্ত থাকে সে।আর শ্রেয়ান যে এত সহজে তার ফোন ধরবে না সে সম্পর্কে তার যথেষ্ট ধারণা আছে। কিন্তু সেও এতো সহজে ছাড়বে না।গুনে গুনে দশবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু কল ক্যান নট বি রিচড্।
অদ্রি আবার কল করে। তিন বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
অদ্রি খুশির সাথে বলে উঠে, এতক্ষণে আপনার ফোন ধরার টাইম হলো।আরাদ্ধা হলে তো ঠিকই ফোন ধরতেন।আমার সাথে এমন করেন কেন?

ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।
— আমি শ্রেয়া!ভাইয়া ছাদে গেছে।ফোন নেয় নি।
অদ্রির মন খারাপ হয়ে যায়।বলে,আসলে কল ব্যাক করতে বলবেন।

শ্রেয়া প্রশ্ন করে, আপনি কে?আরাদ্ধা?

অদ্রি এই মুহূর্তে আরাদ্ধার নাম আশা করেনি।রাগ লাগছে তার।ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,নাহ্!আমি আরাদ্ধা নই।অদ্রি!অদ্রিজা রায়হান।
— ওহ্! আচ্ছা।রাখি।

☆☆☆

নিজের রুম জুড়ে রীতিমত পায়চারি করছে আরাদ্ধা। সময়ের গতিটা মনে হয় যেন অনেক স্লো হয়ে গেছে।সময়টা কাটছেই না। অন্যান্য দিন না চাইতেই সময়টা দ্রুতগতিতে চলে যায়। কিন্তু আজ কত করে চাইছে সময়টা তাড়াতাড়ি বয়ে যাক।রাত পেরিয়ে সকাল হোক তাড়াতাড়ি। কিন্তু সময়টা যাচ্ছেই না।
রোদ্দুরকে রাইয়ের কথাগুলো না বলা পর্যন্ত শান্তি নেই তার। ইদানিং তার ফোনে অনেক ইমেইল আসছে।ব্যাপারটা রোদ্দুর ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করতে পারছে না।

আরাদ্ধা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।চারিদিকটা আলোকিত হয়ে আছে।হয়ত পূর্ণিমা। জানালা দিয়ে থেকে চাঁদটা দেখা যাচ্ছে না। অদ্রি ভেবে নেয়,এই মুহূর্তে ছাদে যাওয়াই যায়। চাঁদ দেখা হবে। সেই সাথে সময়টাও কাটবে।

আরাদ্ধা ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।রাত ১১টা বাজছে। কিন্তু এখনো কেউ ঘুমায়নি।তার দাদির রুমে বসে কথা বলছে।কথা বিষয়বস্তুটা যে সে নিজে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ইদানিং তার দাদি তার বিয়ের জন্য মা বাবাকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তাতে কি হবে!তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।

তবে মন খারাপের বিষয়টা হলো এই আগে তার দাদি মোটেই এমন ছিল না। অনেক ভালোবাসত তাকে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হুট করে পাল্টে গেছে।

আরাদ্ধা নিঃশব্দে ছাদে উঠে আসে।থালার মতো রুপালি চাঁদটাকে একবার দেখে নেয়।

হুট করেই তার মনে হচ্ছে তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।ভয় লাগছে তার। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার সাহস পাচ্ছে না। মনের ভ্রম ভেবে আরেকটু সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা বাতাস আসছে।পরিবেশটা কিছুটা ‌ভুতুড়ে মনে হচ্ছে।সেই সাথে মনেও সব ভুতুড়ে চিন্তা জেগে উঠেছে।কি ঝামেলা!এত রিস্ক নিয়ে চাঁদ দেখা যায়!

আরাদ্ধা ভেবে নেয় চলে যাবে ঘরে।আর চাঁদ দেখা লাগবে না। চাঁদ কি জীবনে প্রথম দেখছে নাকি!এভাবে এতরাতে এসে দেখার কি আছে!

আরাদ্ধা উল্টো দিকে ঘুরেই হাঁটা শুরু করে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পায়ে হালকা ব্যথা পায়। অন্ধকারে ঠিকভাবে ব্যথা পাওয়া দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চিনচিন ব্যথা‌ করছে।

রুমের সামনে এসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়।
বিছানার উপর বসে জায়গাটা দেখে নেয়। রক্ত বের হয় নি।তবে লাল হয়ে গেছে।
ফোনটা হাতে নেয়। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই রোদ্দুরের আর শ্রেয়ানের অনেকগুলো মেসেজ দেখে।আগ্রহ নিয়ে রোদ্দুরের মেসেজ পড়া শুরু করে,,,,,,এত রাতে ছাদে যাস না পিচ্চি।বলা তো যায় কখন কার নজর পড়ে তোর উপর।হয়তো কারো নজর আরো আগেই তোর উপর পরেছে।আর এই সুযোগে সেটার ফায়দা নিচ্ছে,,, লেখাটার পরে অনেকগুলো হাসির ইমোজি দেওয়া।

আরাদ্ধা লেখাটা পড়ে চুপসে গেছে।এই কথার মানে কি?নজর,,,! কিন্তু কার?
দিনদিন রোদ্দুরকে আগের থেকে অন্যরকম লাগে আরাদ্ধার। কিন্তু একটা জিনিস ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। রোদ্দুরকে যেমনটা মনে হয় ও ঠিক তেমনটা নয়।এই রোদ্দুরের মাঝে সূক্ষ্ম একটা শয়তানি আছে,,,,যেটা কেউ ধরতে পারে না।

চলবে,