Saturday, June 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1584



খুশনূর পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-৭(শেষ পর্ব)

খুশনূর চোখ খুলতেই দেখতে পেলো অর্ধ নগ্ন কিছু লোককে তার দিকে এগিয়ে আসচ্ছে। সে ঘাবড়ে গেল। পিছিয়ে যেতে লাগলো সে। তার মুখশ্রী ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের হলো তকর মাথার উপর জ্বলজ্বল করছে হলদে লাইট। খুশনূর ভয়ে জমে আছে। তার চোখ দিয়ে আশেপাশে তার আপন মানুষকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু ভেসে উঠলো চোখে পাতায় আপন মানুষ গুলো তো নেই! হারিয়ে গেছে সবাই এক রাতেই, অন্ধকার কালো রাতেই। খুশনূরের চোখের কার্ণিষ ঘেসে জল গড়িয়ে পড়লো। সে দু চোখ খিঁচে বন্ধ করে আবার চাইলো। লোক গুলো তার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে। খুশনূরের গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। মনে মনে আল্লাহকে স্বরণ করে যাচ্ছে।

একটি লোক এগিয়ে এলো। খুশনূরে স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে লাগলো। খুশনূর চিৎকার করে উঠলো। হাত-পা বাঁধা ছুটতে পাড়ছে না। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার যেন মরণ হয়। সে আর বাঁচতে চায় না। মরে যেতে চায়। এ যে কঠিন শাস্তি!!

লোকদের অত্যচার বেড়েই চলছে। ঘন্টা খানেক পর খুশনূর নেতিয়ে পরে। লোক গুলো দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। তখনি খট করে দরজা দিয়ে কেউ প্রবেশ করে। খুশনূর তার ঘোলাটে দৃষ্টিতে পা দুটি দেখতে ফেলো। আলোর কাছে আসতেই লোকটি মুখ দেখে ঘৃণা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তাতে ভ্রুক্ষেপ হলো না সামনের ব্যক্তিটির। সে হাতে ইশরা করতেই অর্ধ নগ্ন লোক গুলো বের হয়ে গেলো। সেই ব্যাক্তিটি তখন বলে উঠলো,,

—“কেমন লাগচ্ছে খুশনূর! এ জাহান্নামে? ”

খুশনূর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। লোকটি হোহো করে হেসে বলল,,

—” এতো কিছুর পর তেজ কমেনি তোর। কি ভেবেছিলি? আমার আসল চেহার ফাস করবি আর আমি আঙ্গুল চুসবো? হা হা হা, মোটেও না। উম হুম! যেভাবে নিবেদিতা, আর অঞ্জলিকে শেষ করেছি? সেভাবে তোকেও করবো।”

খুশনূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,,

—” উনাদের তো এক্সিডেন্টে মারা গেছিলো তার মানে…!”

সমিত হাসলো ঘর কাঁপানো হাসি। খুশনূর বিস্মিত। এত খারাপ কিভাবে হতে পারে মানুষ।খুশনূর কেঁদে দিলো। বলল,,

—” কেন তাদের মারলেন? এ হিংস্র, শয়তান আপনি!”

সমিতে মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। খুশনূর সামনে হাটু গেরে বসলো। বলল,,

—” নয়তো আদালতে আমি দোষী সাব্যস্ত করে দিতো।আর তা আমি কখনো হতে দিবো না।”

—” আপনি মেঘাকে মেরেছেন। আর যাই হোক, যত ই ধামাচাপা দিন না কেন.. সত্য কখনো চাঁপা পড়বে না।”

সমিত হাসলো,,

—” তা কে বলবে সত্য? তুই??

খুশনূর বলল,,

—” হে আমি বলবো সবাইকে বলবো। আপনার চরিত্র সকলের সামনে আবার আনবো!”

—” এবার আর সেই সুযোগ দিচ্ছি না তোমাকে! ধাড়ালো ছুঁড়ি গুঁজে দিলো খুশনূরের গলায়।তখনি বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসে। সমিত ভ্রু কুুঁচকে যায়। সে বের হয়ে দেখবে সেই মুহূর্তে শুদ্ধ দরজা ভেঙ্গে ঢুকে৷ তার সাথে পুলিশ। সমিত ভয় পেয়ে যায়। কিছু বলবে বা করবে তার আগেই ধরে নিয়ে যায় তাকে। খুশনূর শুদ্ধকে দেখে প্রান ফিরে পায় কান্না করতে লাগে সে। অঞ্জলি আর নিবেদিতা মরার পর থেকেই শুদ্ধ আর তার মা তাকে দেখেছে। কতটা কেয়ার করেছে প্রতি খনে খনে। শুদ্ধ খুশনূরের হাত খুলে দিলো। খুশনূর আবেগে আপ্লূত হয়ে জড়িয়ে ধরলো শুদ্ধকে। শুদ্ধ শরীর কেমন করে উঠলো। সারা শরীরের অনুভূতির নতুন রং লেগে গেলো। খুশনূর জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো শুদ্ধর বুকে। শুদ্ধ তাকে পাঁজো কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেল সেখান থেকে।

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে খুশনূর। দূরে দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের সাথে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে শুদ্ধ। খুশনূর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে তাকে। বিয়ের এক মাস চলছে তাদের। কখনো এভাবে তাকায়নি শুদ্ধর দিক। ছেলেটি সুন্দর, সুদর্শন। তার পার্সোনালিটি অালাদা। শুদ্ধের সম্পর্কে শুরু থেকে ভুল ধারণা জম্মে খুশনূরের তাইতো চেয়েও তাকাতো না। কিন্তু কি থেকে কি হলো। জানা নেই!

এক পলক পিছনের স্মৃতি গুলো ভেবে নিলো সে।

প্রথমে তার বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দিলো। অঞ্জলি তাকে আপন করে নিলো। কাজে গিয়ে দেখা পেলো নিবেদিতার সাথে সে বোনের মত দায়িত্ব পালন করলো। কাজ শেষে ফেরার পথে এক দূর্ঘটনায় ফেরেস্তা হয়ে এলো শুদ্ধ। ঘটনা চক্রে খুশনূর কোথা থেকে কোথায় চলে এলো। ডাঃ সমিতের চরিত্র সকলের সামনে আসার পর অঞ্জলি কেশ করে তার নামে। নিবেদিতা কেঁদে কুটে ঘর বন্দি। এভাবে ১৫ দিন কেঁটে যায়। এক তিন রাতে অঞ্জলি এসে বলে,,

—” আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। তোমার কোনো আপত্তি আচ্ছে?”

খুশনূর সেদিন কিছু বলেনি চুপ তরে মাথা কাত করে সম্মতি দিয়েছিলো। তারপর দিন হুট করেই বিয়ে হয়ে গেলো। ছেলেকে সে চিন্ত না জানত না বাসর রাতে শুদ্ধকে তার বর হিসেবে দেখে আকাশ থেকে পরে যেন। শুদ্ধও কম চমকায়নি!

সেদিন রাত থেকেই বৌবাহিক সম্পর্ক দূর, দুজন আরো দূরে দূরে চলে যায়। তবুও কেমন একটি মায়া কাজ করতে লাগে দুজনের মাঝে। দিন চলতে লাগলো। এর মাঝে খবর এলো অঞ্জলি আর নিবেদিতা আর নেই। ভেঙ্গে পরে খুশনূর, সে সময় থেকেই শুদ্ধ আর খুশনূরের দূরত্ব আরো কিছুটা কমে যায়। বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় তাদের মাঝে।

একদিন বিকেলে শুদ্ধ এসে খুশনূরকে ঘুরতে নিয়ে যায়। হাইওয়ের সামনে এসে বাইতে তেল ভরবে তখন খুশনূর প্রকৃতির ডাকে সাড়া পেয়ে টয়েলেটে যায়। টয়েলেট থেকে বের হতেই খুশনূরকে কিছু লোক কিডন্যাপ করে সমিতের আস্থানায় নিয়ে আসে।

খুশনূর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো এটুক বয়সে কত কি দেখে ফেললো সে। চোখ বুজলো খুশনূর ভেসে উঠলো শুদ্ধের মুখখানি। তখন অনুভব করলো কেউ তার হাতে স্পর্শ করেছে। খুশনূর মিহি চোখে তাকালো। শুদ্ধ বলল,,

—” এখন কেমন ফিল করছো?”

খুশনূর চোখে ইশারায় বুঝালো ভালো। শুদ্ধ আরেকটু ঝুঁকে এলো। খুশনূরের কঁপালে চুমু একে বলল,,

—” ভয় পেও না। আমি আছি তোমার পাশে!”

কথাটি তীরের মতো বিঁধল খুশনূরের। এটিতো চাইছিলো সে! ভরসা করা মতো হাত। পেয়ে গেল সে। এবার বুঝি হবে তাদের একি সাথে পথ চলা…!

সমাপ্ত

খুশনূর পর্ব-০৬

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

০৬
নিবেদিতার আজ বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান অ্যারেঞ্জ করেছেন। চারপাশের হলুদ লাল টিমটিম আলোর সীমা নেই। সকলেই ফর্মাল ড্রেস আপ পড়েছেন। রং কালো। উপর থেকে মনে হচ্ছে ছোট ছোট কালো পিপড়া। খুশনূর ছোট শ্বাস ছাড়লো। মনের মাঝে চলছে এখনো দ্বিধা দন্দ। কি হবে শেষ পর্যন্ত??

নিবেদিতাদের ডুপ্লেক্স ভবনটি আজ ফুলের বাগান মনে হচ্ছে। বড়ই খরচ করেছেন তারা। নিবেদিতা আজ সেজেছে খুব। হালকা সাদা রঙ্গের সিল্ক জামদানী পড়েছেন। মাথায় খোপা করে লাল গোলাপ গুঁজেছেন। বয়স ত্রিশ এর কাছাকাছি হলেও বোঝার উপায় নেই। তার পাশে ছিলেন তার অর্ধাঙ্গ ডাঃ সমিত। নিবেদিতার ৭ বছরের বড় তিনি। তার পড়নেও সাদা পাঞ্জাবি। তিনিও সুদর্শন কোনো এঙ্গেলে কম নন। তার বাবা-মা নিবেদিতাকে পছন্দ করে বিয়ে করিয়েছিলেন তাকে।

নিবেদিতার দিক হাত বাড়ালো সমিত। গালে তার টান টান হাসি। চোখ দেখে মনে হচ্ছে তার অর্ধাঙ্গীনি তার পাশে তাই সে গর্বিত? কিন্তু তা কি সত্যি?
দূরে দাঁড়িয়ে ছিল অঞ্জলি। নিবেদিতা সমিতকে পাত্তা না দিয়ে নিজেই নিচে চলে আসে অঞ্জলির কাছে। ডাঃ সমিত মনে মনে ক্ষুন্ন হন খুব। নিবেদিতার এহেন কাজে আশেপাশের মানুষের কানাঘুষা শুরু। সেদিকে খেয়াল করেই সমিত রাগে ফেঁটে পড়লেও মুখে তার প্রকাশ করলো না। হাসি মুখে সেও নিচে এসে অঞ্জলির পাশ। সে বিরক্তি নিয়ে এক পলক তাকিয়ে অঞ্জলির সাথে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।

খুশনূর আজ অবাক হয়েছে যেনে। যে হসপিটালটিতে সে যব করে সেটির মালিক অঞ্জলি। আরও অবাক হয় যেনে নিবেদিতা অঞ্জলির ছায়াতেই মানুষ হয়েছে। খুশনূর ফোঁসকরে শ্বাস ছাড়লো। তারপর পা বাড়ালো ড্রিংকিং এরিয়ায়।

শুদ্ধ আর তার কিছু বন্ধু মিলে গ্লাসে সুরা ডালছে আর গিলছে।তখনি দূর থেকে একটি কমলা কালার ড্রেস পড়া মেয়েটিকে আসতে দেখে কঁপাল কুঁচকায় সে। তার পাশে বসে ছিল মুসফিক। শুদ্ধর কাঁধে চাপর মেরে বলল,,

—” দোস্ত দেখ সামনে। তোর মাথা ব্যথা আসচ্ছে!”

শুদ্ধ ভ্রূ কুটি কুচকে ফেলে। বলে,,

—” ফাজলামো করিস কেন? ”

—” ফাজলামো কই করলাম? সামনে তাকা!”

শুদ্ধ সামনে তাকালো। রাগে, বিস্ময়ে ফেঁটে পড়লো। এগিয়ে গিয়ে মুখো মুখি দাঁড়ালো খুশনূরের। কাঠ, কাঠ গলায় বলল,,

—” আমাকে ফোলো করছো কেন? ”

খুশনূর আকাশ থেকে পড়লো যেন। চারিদিক চোখ বুলিয়ে নিলো। সকলেই সবার কাজে ব্যস্ত। বললো,,

—” নিজেকে এতো প্রায়োরিটি দিয়ার কোনো প্রয়োজন নেই! আপনি আমার পায়ে জুঁতো সমানো না। একজন চোরকে আমি ফোলো করবো নো ওয়ে…! হা। ”

পাশ কেঁটে চলে গেল খুশনূর। রাগ মাথার রগ ধপধপ করতে লাগে শুদ্ধের। এমেয়েটিকে সে যত এরিয়ে যেতে চায়। ততই তার সামনে এসে হাজির। সেতিনে পর থেকে আরো বেশি। ভার্সিটিতে শুদ্ধদের দল একটু দাপটি বটে। স্যারাও ভয় পায় এদের। শুদ্ধ সে দল নেতা বলে পরিচিতি। বাবা ভার্সিটির ট্রাস্টি হওয়াতে পাওয়ার যেন দু গুন। তবে সে মেয়েদের সম্মান করে চলে। কিন্তু এই মেয়েকে সে সহ্য করতে পারে না। ছোট ছোট বিষয়ে যেন লেগে যায় তারা।

এই তো সেদিন পরীক্ষার আগের দিন ভার্সিটি বন্ধ ছিল। অফিস রুম খোলা ছিল শুধু বেতন, ভর্তির জন্য। সেদিন খুশনূর আসে বেতন দিতে! বেশি ভির ছিল না আবার কমও ছিল না। সেই সুযোগে সে লাইব্রেরি ঘর ঘুরে আসতে যায়। বড় মাঠ পেড়িয়ে যখন প্রিন্সিপালের রুম ক্রস করে তখনি খট খট শব্দ হয় ভিতরে। মনের মাঝে খুশনূরের কেমন সন্দেহ হয়। কারণ সে যত টুকু জানে প্রিন্সিপাল স্যার না থাকলে তার রুমে আসা নিষেধ। খুশনূর দরজা ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল। বিস্ময়ে চোখ জোড়া বেড়িয়ে আসার উপক্রম। শুদ্ধ আর তার এক বন্ধু মিলে প্রশ্ন চুরি করছে। খুশনূর আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না ভিতরে এসে চেঁচিয়ে উঠলো,,

—” আপনারা প্রশ্ন চুরি করছেন কেন? আমি স্যারকে বলে দেবো!”

শুদ্ধ ভরকে গেলো। নিজেকে সামলে বললো,,

—” তুমি এখানে কি করছো? যাও এখান থেকে। নয়তো তোমাকে ফাসিয়ে দিবো।”

খুশনূর ভ্রু কুচকে বললো,,
—” আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি এখনি পিয়নকে ডাকছি।”

শুদ্ধ হাসলো। বলল,,
—” তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি ডাকছি!”

পিয়নকে ডাকা হলো। পিয়ন দাঁত বের করে হাসি দিলো,,

—” মামা কাজ হইছে আপনাগো?”

শুদ্ধ কঁপাল চুলকিয়ে দু হাত পকেটে গুঁজে বলল,,
—” কেমনে হবে মামা! দেখছেনি তো!”

পিয়ন খুশনূরকে দেখে অবাক হয়ে বললো,,
–” মামা আপনে কি করেন এনে যান বাহিরে!”

খুশনূর অবাকের শেষ চুড়ায়,,
—” মামা অনৈতিক কাজ তারা করছে আর আপনি আমায় তাড়াতে চাইছেন?”

শুদ্ধ বলল,,
—” আমরা অনৈতিক কাজ করি না। কাজ করছো তুমি!”

খুশনূর চোখ বড় বড় করে বলল,,
—” মানে!”

শুদ্ধ হেসে পিয়নের দিক এগিয়ে গেল। তার কাঁধে মাথা রেখে আলাদে সুরে বলল,,

—” মামা ও মামা, প্রশ্ন কে চুরি করছে?”

পিয়ন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,,

—” এই যে এই মামায়!”

খুশনূর চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম তাকেই চোর বানিয়ে দিলো এরা! খুশনূর শুখনো ঢুক গিললো। আঙ্গুল উচিয়ে বলল,,

—” সব কটার চেহারা আমি সামনে আনবো। ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

শুদ্ধ হাওয়া হাত নাড়িয়ে বললো,,

—” অপেক্ষায় থাকবো!”

মাইকের আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে শুদ্ধের। খুশনূরে উপর রাগ ক্ষোভ এক সাইডে রেখে সামনে যায়।নিবেদিতা কিছু বলছে। আর তখনি স্ক্রিনে ভেসে ওঠে…!

চলবে,

বলেন তো কি ভেসে উঠলো??

খুশনূর পর্ব-০৫

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

০৫
শীতের মাঝেও ভ্যাপসা গরম লাগচ্ছে। ঘেমে-নেয়ে একাকার খুশনূর। বুকের ভিতর এখনো দুরু দুরু করছে। শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। মেডিসিন রুমের সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসচ্ছে। খুশনূর তখন ডাঃ নিবেদিতার কথায় মেডিসিন রুম থেকে কিছু ঔষধ নিতে আসে খুশনূর। ঔষধের সেল্ফ গুলো ঠিক কোনা থেকে ভেসে আসচ্ছে ফিসফিস শব্দ৷ খুশনূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে দেখার চেষ্টা করলো। ঝাঁপসা আলো দেখেও ফেললো। ডাঃ সমিত আর মেঘা। মেঘার চোখে পানি। ডাঃ সমিতের চোখে মুখে ভয়, অস্থিরতা।খুশনূরের কঁপাল কুঁচকে এলো। ডাঃ নিবেদিতার হাসবেন্ড ডাঃ সমিত। তাদের এসময় এখানে দেখে সন্দেহ হচ্ছে খুশনূরের। সে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। হাতের কাছে ফোন থাকা ভিডিও করতে ভুললো না। কিন্তু সে যা শুনলো তাতে যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ল। মেঘা কেঁদে কেঁদে বলল,,

—” আমি প্রেগন্যান্ট। কিছু করো? আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।”

জড়িয়ে ধরলো ডাঃ সুমিতকে। সুমিত বিরক্ত লাগলো। সে ফিসফিস করেই চেঁচিয়ে বলল,,

—” বলেছিলাম প্রটেকশন নিতে। কেন নিলে না? এখন এই উটকো ঝামালে কিভাবে সামলাবো? নিবেদিতা ওল রেডি ডাউট করছে! আর এখন তুমি?”

মেঘা কাঁদতে লাগলো। ডাঃ সমিতকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

—” আমি কি করবো এখন?”

ডাঃ সমিত মেঘাকে ছাড়িয়ে নিল। কাঠ গলায় বলল,,

—” ফেলে দাও!”

মেঘা বিস্ময় নিয়ে বলল,,

—” এসব কি বলছো? আমাদের ভালবাসার চিন্হ!”

ডাঃ সমিতের কঁপাল কুঁচকে গেল। দাঁতে চোয়াল শক্ত করে বলল,,

—” তোমার ফালতু কথা শোনার সময় নেই। বাচ্চা ফেলাও। যা টাকা লাগে আমি দিব। তোমার জন্য আমার ক্যারিয়ার নষ্ট করতে পাড়বো না। আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ!”

মেঘার যেন পুড়ো দুনিয়া উলটে গেল।সে পা জড়িয়ে ধরলো ডাঃ সমিতের লাভ হলো না। উনি পা ছাড়িয়ে চলে গেল। মেঘা বসেই কাঁদতে লাগলো ” দ” এর মতো করে বসে কাঁদে বুক ভাসতে লাগলো। খুশনূরের কষ্ট লাগলো। তবুও তার কাছে গেল না। নিজের জায়গায় ফিরত এলো।

“টং” করে শব্দ হতেই উঠে ডাঃ নিবেদিতার রুমে গেল খুশনূর। ডাঃ নিবেদিতার হাসি মুখখানি দেখেও বলার সাহস করতে পাড়লো না সে। সুপ্তপর্ণে শ্বাস ছেড়ে হাসার চেষ্টে করে বলল,,

—” বলুন মেম!”

নিবেদিতা হাসলো। বলল,,

—” দেখোতো কোন ঘড়িটা সুন্দর? পরশু আমাদের অ্যানিভার্সারি বিয়ের তিন বছর হবে। তাই কিছু দিতে চাইছি। কিন্তু মাথায় আসচ্ছেনা।”

খুশনূরের বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো। নিবেদিতার মায়াবী মুখখানা তখন এই হাসি থাকবে না। যখন তার অর্ধ্যঙ্গ পরক্রিয়া লিপ্ত। খুশনূর বলতে চাইলো। নিবেদিতা খুশির মুহূর্তে নষ্ট হবে ভেবে চেপে গেল। নিবেদিতার কাছে সে ঋণী অনেক ঋণী। সে আর যাই হোক কষ্ট দিবেনা। খুশনূরকে চুপ থাকতে দেখে নিবেদিতা বলল,,

—” কি হলো? কোথায় হারালে? বলো?

খুশনূরের শূন্যে চেয়ে এসব ভেবে যাচ্ছিলো ব্যাকুল ভাবে। নিবেদিতা কথা শুনে তার সম্মতি ফিরে। চাঁপা হেসে বলে,,

—” মেম এসবে একদম ঢ্যারস আমি!”

নিবেদিতা ফেসে ফেললো। খুশনূরের মনে হলো। তার হাসিতে মুক্ত ঝড়চ্ছে। তার মনে প্রশ্ন উদিত হয়,,

—” এমন একটি মানুষকে কিভাবে ধোকা দিতে পারে ডাঃ সমিত। হাউ? একবার কি বুক কাঁপেনি?”

________

ভার্সিটিতে আজ এক সপ্তাহ চলছে খুশনূরের। সে ক্লাস করে বের হতেই সেই রাতের ছেলেটির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির শিকার হয়। এবার অস্থিরতা ধরে রাখতে না পেরে তার সামনে আসে। ভিতরে ভিতরে ভয়ে জুবুথুবু অবস্থা। কেন এমন লাগচ্ছে ভেবে পাচ্ছে না কুহু। আয়াতুল কুরসি পরে বুকে ফু দিয়ে ছেলেটির সামনে এসে গড় গড় করে বলতে লাগে,,

—” দেখুন আম সরি! সেদিন হঠাৎ সে সিচুয়েশনে আমি বেহাল ছিলাম। তার উপর আপনি আমার গায়ে হাত দিয়েছিলেন। সহ্য হয়নি। তাই থাপ্পড় মেড়েছি। তার জন্য আমি দুঃখীত। আর হে এভাবে আর তাকাবেন না। আমার অস্বস্তি লাগে!”

খুশনূরের কথায় শুদ্ধকে নির্বিকার দেখালো। পক্যাটে দু হাত গুঁজে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,

—” হু আর ইউ? ”

খুশনূর থতমত খেয়ে গেল। লোকটি কি তাকে চিন্তে পাড়ছেনা? নাকি চিন্তে চাইছেনা কোনটা?? খুশনূর বলল,,

—” আপনি সত্যি ভুলে গেছেন? নাকি ভোলার নাটক করছেন?”

শুদ্ধ বাঁকা হাসলো। বলল,,

—” আপনি কি আমার আত্মীয়া? ”

খুশনূর মাথা নাড়লো,,

—” নাহ্।”

—” তাহলে আপনাকে আমার চেনার কথাও না!”

খুশনূর ছোট শ্বাস ছাড়লো। এক পলক শুদ্ধকে দেখে স্থান ত্যাগ করলো। কথা বাড়াতে চায় না সে। তার সরি বলার ছিল বলে দিয়েছে ঝামেলা শেষ।

—————

অঞ্জলির মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে পারভিন। সম্পর্ক তার শাশুড়ী হলেও দুজন বান্ধবীর মতো। অঞ্জলি চোখ বুঝে আছেন আরামে। বললেন,,

—” ও বাড়িতে আবার কি হয়েছে? চলে এলি কেন??”

পারভিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,,

—” আপনার ছেলে আর নাতীর কাছে আমার কোনো দাম নেই। ছেলেটা এক দমই কথা শুনে না।”

অঞ্জলি হাসলো। বলল,,

—” শুদ্ধ একদম দাদার মতো হয়েছে। ধরে বেঁধে থাকতে চায় না।”

—” আমার তো মনে হয় আম্মা তার থেকে ডেঞ্জারাস। ”

আঞ্জলি হাসে ফেললেন। পারভিন আবার বললেন,,

—” আম্মা আমি ভাবছি এই বেপরোয়া ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দেই। তাহলে যদি ঠান্ডা হয়?”

অঞ্জলি ফিকে হেসে বলল,,

—” তোমার শশুরকে এই ভেবেই আমার সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। আজ দেখো আমি কই আর উনি কই!”

হুট করেই বুকটা হাহাকার করে উঠলো অঞ্জলির৷ পুড়নো স্মৃতি ভুলতে চায়। তবুও পাল তোলা নৌকার মতো ভেসে উঠে চোখের পাতায়। দিনটি ছিল গ্রীস্মের একটি দিন। চারিদিকে চৌচির মাঠ, আর খাঁ খাঁ খাল বিল। উত্তপ্ত রোদে পুড়ে স্কুলে থেকে বাড়ি ফিরে সপ্তম শ্রেনীর অধ্যায়ন রত অঞ্জলি। তখনি মা তারা দিয়ে বললেন,,

—” জলধি তৈরি হো মা। হেরা আয়া পড়লো।”

অঞ্জলি ছোট মন। জানতে চাইলো,,
—” কে আম্মা?”

—” তোর হোর বাড়ির লোক!”

অঞ্জলি নির্বিকার। সেদবন তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। বাবা-মাকে বলে,,

—” আমি বিয়ে করবো না আব্বা। আমি পড়বো!”

—” বিয়ের পর তারা পড়াবে।”

—” তবুও এ বিয়ে করবো না আমি!”

—” বাবা-মার মুখের উপর কথা বলতে নেই যা করতাছি তোমার ভালোর জন্যই!”

সেদিন হাত ছড়িয়ে, মাটিতে গড়াগড়ি করে কেঁদেও লাভ হয় নি। আগত আসা এক আগুন্তকে তার কবুল বলতে হয়।

বিয়ের রাতেই তার বড় মেহরাজ হৈ হৈ করে নিজের বিছানা থেকে নামিয়ে দেয়। সেদিন কতই না কেঁদেছিল সে। সেদিন থেকেই বুঝে গেছিলো। আর যাই হোক এ স্বামী নামক মানুষটি তার আপন নয়।কিন্তু একদিক দিয়ে শান্তিতে ছিল সে। তার পড়াশোনা চলতে লাগলো। তাইতো আজ নিজের স্বপ্ন পুরন করেছে। এবং কি তার মতোই অসহায় মেয়ের স্বপ্ন তিনি পুরন করে চলছে নির্দ্বিধায়।

অঞ্জলির চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। মেহরাজ তাকে কখনো ভালবেসে কাছে ডাকেন নি। একটি বারের জন্য ও না। অথচ সে ব্যাক্তিটির জন্য মনের এক কোনে গভীর অনুভূতি গুলো কবর দেয়া।

—-” তুমি কাঁদছ কেন?”

খুশনূরের কথায় পুড়নো স্মৃতি থেকে বের হয়ে আসে অঞ্জলি। বলে,,

—” পুড়নো স্মৃতি মনে পড়ে গেছে।তোর কথা বল। কলেজ কেমন চলছে?”

খুশনূর হেসে পাশে বসে বলল,,

—” ভালোই চলছে!”

এভাবে আর কিছু সময় পার হলো। পারভিনের সাথে অঞ্জলি পরিচয় করিয়ে দিলো। খুশনূর তো অবাক। বউ শাশুড়ীর কি মিল! যেন মা মেয়ে।

খুশনূর উঠে যেতেই পারভিন বলল,,

—” আম্মা মেয়েটি ভারি মিষ্টি। ”

অঞ্জলি হাই তুলে বলল,,

—” মনে মনে যা ভাবছিস ঝেড়ে ফেল। ”

পারভীন কাচুমাচু করতে লাগলো। মনের মাঝে এক ইচ্ছের বীজ বপন করতে লাগলো। আজ নয় কাল এ ইচ্ছে পুরন করবেই।

চলবে,

খুশনূর পর্ব-০৪

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
০৪

আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বসলো শুদ্ধ ।গায়ের চাদর সরিয়ে ডান পাশে তাকাতেই চোখ মুখ কুচকে ফেললো। চেচিয়ে ডাকলো,,

—-” রিয়াজ এই রিয়াজ?”

দরজা ঠেলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে নতজানু হয়ে বলল রিয়াজ,,

—“জি স্যার?”

—” এ মেয়েটি এখানে কি করছে?”

কাচুমাচু হয়ে বলল রিয়াজ,,
—” স্যার আমি তাকে চলে যেতে বলেছি কিন্তু সে যায়নি।”
শুদ্ধ ভ্রু কুচকে ফেললো। এত চিল্লা, পাল্লার মাঝে বেহায়া মেয়ে কিভাবে ঘুমিয়ে আছে? নাকি অভিনয় করছে ঘুমের?

শুদ্ধ উঠে দাঁড়ালো। ডিভানের পাশে গিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে ফেলে দিল। মেয়েটি ব্যথায় ” আহ্” করে উঠতেই বাঁকা হাসে শুদ্ধ।

মেয়েটি অবাক হয়ে বলে,,
—” আর ইউ মেড শুদ্ধ? তুমি আমাকে ফেললে কেন?”

—” তুমি তারই যোগ্য আফরোজা। ”

—” শুদ্ধ?” চেঁচিয়ে উঠে আফরোজা। ”

অপমানে ধপ ধপ করে জ্বলছে সে। শুদ্ধ ভাবলেশহীন। আফরোজা বলল,,

—” কাল থেকে তুমি আমাকে ইগনোর করছে? কেনো?”

শুদ্ধ কাঠ কাঠ জবাব,,

—“সেকেন্ড হ্যান্ড যে কোনো জিনিসের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
চলে গেল ওয়াশরুমে। আফরোজা বিস্ময়ে আকাশ ছুঁয়ে গেছে। লজ্জায়, অপমানে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়লো না।বেড়িয়ে গেলো আফরোজা।
______

আজ খুশনূরের ভার্সিটির প্রথম দিন। অঞ্জলি নিজ দায়িত্বে তাকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। সেদিন অঞ্জলির রুমে যেতেই তার থমথমে মুখ দেখে ভয় পায় খুশনূর। অঞ্জলি কি তার দিকে কোনো বিষয়ে রেগে আছে? ভেবেই শুখনো ঢুক গিললো।

—” দাঁড়িয়ে কেন বসো!”

খুশনূর বসল। মুখ নত করে আছে। অঞ্জলি তার থুতনিতে ধরে উপরে তুলে বলল,,

—” এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া, কখনও করো সামনে মাথা নত করবে না।”

খুশনূর মাথা হ্যা সুচক নাড়ালো। অঞ্জলি হেসে ফেললো।

—” ভয় পেয়েছো?”

খুশনূর কিছু বলল না। চেয়ে রইলো অঞ্জলির দিক।অঞ্জলি কোনো ভনিতা ছাড়া বলল,,

—” আমি তোমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিয়েছি। পরশু থেকে ক্লাস। চলে যাবে।”

অঞ্জলি উঠে যেতে চাইলো। খুশনূর মিনমিন করে বলল,,

—” আমি আর পড়তে চাইনা!”

অঞ্জলি আগের জায়গায় এসে বসলো। খুশনূরের মুখটি পর্যবেক্ষন করলো। মেয়েটি কালো হয়ে গেছে আগে থেকে। শুকনোও হয়েছে অনেক। বড় চুল গুলোতে তেল-পানি দিতে ভুলে গেছে যেন। তিনি খুশনূরের কঁপালে পরে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো আদুরে হাতে পিছনে গুঁজে দিলো। বলল,,

—” প্রতিটি মেয়ের জীবন পড়াশোনা অমূল্য রত্নের মত। মেয়েদের ভাগ্য হয় বাপের বাড়ি, নয়তো স্বামীর বাড়ির দোরগোড়ায় ঠেকে। ভাত কাপড়ের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের মুখে। কারণ আমাদের খুঁটি দূর্বল। খুঁটি মজবুত করতে পড়াশোনা অনেক প্রয়োজন। ”

খুশনূর চুপ করে শুনলো। তারপর বলল,,

—” আমি পড়ব৷ ”

অঞ্জলি খুশি হয়ে চুমু এঁকে দিলেন খুশনূরের কঁপালে। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে খুশনূর। ভার্সিটিতে ঢুকে প্রিন্সিপালের রুমের কাছে আসতেই খুশনূরের পা থমকে যায়। খুশনূরের দিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে সেই রাতে ছেলেটি। খুশনূর অস্বস্তিতে পড়ে গেল। সেদিন তাকে বাঁচিয়ে ছিল ছেলেটি অথচ সে তাকে থাপড় মেরে দিয়েছিলো। যদিও পরে রিয়েলাইজ করেছে সে ভুল ছিল। সে তাকাতে পাড়লো না আর অফিসে ঢুকে গেলো।

——–

ক্লাসে ঢুকতেই এক চিরচেনা মুখ দেখে কান্না পেল খুশনূরের। দৌড়ে এসে ঝুমা ঝাপটে ধরে খুশনূরকে।

—” কোথায় হারিয়ে গেছিলি?”

—” নিজেরের অস্তিত্ব খুঁজতে বের হয়ে ছিলাম!”

ঝুমা অদ্ভুত ভাবে তাকালো। গলা খাদে নামিয়ে বলল,,

—” তোর বাবার খবর জানিস?”

খুশনূর চকিতে তাকালো।

—” না কিছু হয়েছে?”

ঝুমা খুশনূরকে ধরে ব্রাঞ্চে বসালো। তার সামনে হাটু গেরে বললো,,

—” উনি আর নেই!”

খুশনূর আকাশ থেকে পড়লো। তার বাবা নেই ভেবেই মনের অজান্তে চোখের জল গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তাকে শান্ত দেখালো। ঝুমা অবাক হলো খুশনূরের ভাবমূর্তি দেখে। একটি মেয়ে তার বাবার এমন খবর শোনার পর এতো শক্ত কিভাবে? ঝুমার ভাবার মাঝেই উঠে দাঁড়ালো খুশনূর। বলল,,

—-” আমার অফিস আছে। কাল থেকে ক্লাস করবো। আসি!”

চলে গেলো সে। ঝুমা পিছন থেকে চেয়ে দেখতে লাগলো খুশনূরকে। যে মেয়েটির কোমল হৃদয়ের ছিল, সে যেন পাথর হয়ে গেছে।

———

খুশনূর তার রুমে বসে আছে। হাতে তার ছোট একটি অ্যালবাম। সেখানে কত শত স্মৃতি তার বাবা-মায়ের। খুশনূর বাহিরে তাকিয়ে আছে। গাছের উপর একটি পাখির বাসা। কি সুন্দর করে বেঁধেছে পাখিটি। তার ঘরে ছোট ছোট কিন, চারটে ডিম। সেই ঘরের উপর দিয়েই উড়াউড়ি করছে দুটো পাখি। হয়তো বাবা-মা তারা৷ সন্তানের আগমনের জন্য তার মন আকুলতায় ভরপুর।

ডিম ফেটে বাচ্চা বের হলো। তাদের চি চি করে শব্দ কানে আসচ্ছে। পাখি দুটি এবার শান্ত। সন্তানদের আঁকড়ে বসে আছে।

খুশনূর হাসলো। বিদ্রুপের হাসি। তারোও কত সুন্দর পরিবার ছিল। আর সে এখন কই!

—” কি ভাবো এতো?”

খুশনূর তাকালো। তাদের সাথে একটি নতুন মেয়ে থাকতে এসেছে। যাকে একটুও পছন্দ না খুশনূরের। মেয়েটি আবার বলল,,

—” বাবা-মা কারো চিরদিন বেঁচে থাকে না। আর থাকলেই কি? তারা প্যাড়া দায়ক। তাদের জন্য স্বাধীন ভাবে বাঁচাই যায় না।”

—-” তোমার ধারণা ভুল। বাবা-মা ছাড়া আমরা অসহায়। ”

খুশনূরের কথা অগ্রাহ্য করে তুলি বলল,,

—” তারা কেবল মাথা ব্যথা।”

খুশনূরের রাগ উঠলো। মেয়েটি ভারি বেয়াদব এরে কেন অঞ্জলি এখানে থাকতে দিচ্ছে বুঝতে পারে না।

—-” ওর সাথে কথা বলো না খুশনূর। গলা ছিলা মুরগী একটা।”

ফারিয়ার কথায় হেসে দিলো খুশনূর। ফারিয়াও হাসলো। তাদের দেখে মুখ বাকালো তুলি। হালকা ঝুঁকি ফোন নিতেই দুজনের চোখে পড়লো তুলির দেহে অসংখ্য কামড়ের দাগ। যাকে বলে লাভ বাইট। খুশনূর ফারিয়া দুজনেই শিউরে উঠলো। তুলি বুঝতে পেরে জলধি গায়ে ওড়না টেনে অন্যপাশে চলে গেল রুমের। খুশনূরের মনে প্রশ্ন জাগে সেই মুহূর্তে,,

—” এইটা কেমন স্বাধীনতা? যেখানে নিজের সত্তাকে বিলীন করতে হয়? আদো কি এটি স্বাধীনতা নাকি কোনো রোগ?”

চলবে,

খুশনূর পর্ব-০৩

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০৩

আজ বড্ড দেড়ি হয়ে গেছে বের হতে হতে হসপিটাল থেকে খুশনূরের। চারপাশে গাড়ি-ঘোড়া দূর থাক, মানুষের ছিঠে ফোঁটাও নেই। নিজের কঁপালে নিজে চাপড়াতে মন চাইছে তার। তখন ডাক্তার নিবেদিতা বলেছিলো,,

—” রাত হয়েছে অনেক। আমি ছেড়ে দিবো নে তোমাকে?”

—” নানা মেডাম আমি যেতে পারবো। তার উপর আপনার উল্টো পথে যাওয়া হবে!”

নিবেদিতা হেসে বলেন,,
—” আমার সমস্যা নেই। তুমি চলো?” তোমাকে নামিয়ে দিবো নে!”

খুশনূর আমতা আমতা করতে লাগলো। এত বড় ডাক্তার তারউপর তার জন্য এত কিছু করেছেন। সেদিন সায়েমের কাজে তিনি নিজে কমপ্লেন করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাকে বরখাস্ত করে তারপর স্থীর হয়েছেন। তার পর থেকে তিনি প্রায়ই খুশনূরকে বাসায় ড্রপ করে যান। এত কিছুর পর খুশনূর তার কাছে বড্ড ঋনি। তাই আর সাহায্য নিতে চাইছে না । খুশনূর আশ্বস্ত করে বলল,,

—” মেডাম সমস্যা নেই যেতে পাড়বো। ”

মেডাম ছোট শ্বাস ফেলে বলে,,

—” ওকে তাহলে আমি বের হই। ”

—“আচ্ছা!”

ডাক্তার নিবেদিতা যাওয়ার পর সব গুছিয়ে বের হতে হতেই রাত বেশি হয়ে গেলো। খুশনূর এবার হাটা ধরলো। ঢাকা শহরের চারপাশের লাল নীল হলুদ সবুজ বাতি জ্বলছে আর নিভছে। খুশনূর তা দেখে দেখেই চলছে। তার কাছে মনে হচ্ছে রঙ্গিন শহর মানে ঢাকা শহর। ছোট বেলায় মা বলতেন,,

—” ঢাকায় টাকা উড়ে!”

ছোট খুশনূর তখন ফিক করে হেসে বলতো,,

—” আম্মু তাহলে ঢাকা থেকে বস্তা ভরে ভরে টাকা আনবো আমি। তারপর তুমি আর আমি চকলেট খাবো। হে হে হে।”

খুশনূরের বুলিতে হাসি পেয়েছিল, মুশকানের। তিনি মেয়ের গালে চুমু এঁকে আহ্লাদের সুরে বলেন,,

—” আচ্ছা আমার আম্মু টা!”

বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। আজ সে ঢাকায়। কিন্তু টাকা উড়তে দেখেনি। টাকা কামাতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করে সে পায় ৭/৮ হাজারের মতোন। যা দিয়ে টেনেটুনে চলতে হয় পুরোটা মাস। ছোট বেলার বোকা বোকা কথা ভেবেই হাসতে লাগলো আনমনে।

—” ওই তোর কাছে যা যা আছে আমাগো দে? জলধি। নয়তো এইডা দিয়া ফাইড়া দিমু!”

খুশনূর ভয়ে তার ব্যাগ খামচে ধরলো।তার ভাবার মাঝেই কত গুলো ছেলে এসে চাকু, চাপাতি নিয়ে ঘিরে ধরলো খুশনূরকে। ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে এলো তার। জ্বিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দেখে নিলো তাদের। শুকনা, ছিম ছাম দেহের গঠনের তিন থেকে চারজন লোকেদের মুখ ঢাকা। খোলো চোখ গুলো টকটকে লাল। শুকনো ঢুক গিলল খুশনূর।

—-” আ…মার কাছে কিছু নেই?” কাঁপছে যেন কন্ঠ খুশনূরের।

—” ঢং বাদ। ব্যাগ দে, সোনা-দানা কি আছে দে?” ঝাঁঝালো কন্ঠ ব্যক্তিটির।

—” আমি সত্যি বলছি কিছু নেই আমার কাছে! যেতে দিন আমায়!” কান্না করছে খুশনূর।

—” ওই ওর ব্যাগ ছিন!” বলল আরেকজন।

—-” প্লীজ এমন করবেন না? ” আকুতি, মিনতি তার কন্ঠে।

লোক গুলোর কানে পৌঁছালো না। ছো মেরে ব্যাগ নিয়ে নিলো। একজন চেক করে বলল,,

—“ওস্তাদ! শালী ফকিন্নি! ফোন পর্যন্ত নাই!”নাক ছিটকে বলল।

লোকটি বলল,,

—” খুদাই টাইম নষ্ট করলাম। পুরাই লশ। ”

তখনি আরেকজন লোক তাদের ওস্তাদের কানে ফিসফিস করে বলল,,

—” বস লস না? মাইয়াটা খাসা মাল।”

লোকটি খুশনূরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেই। খুশনূর ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। মাটি থেকে কোনো রকম ব্যাগ উঠিয়ে এক দৌড় দিলো। মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো। পিছন থেকে একজন বলে উঠলো,,

—” ধর শালীরে!”

খুশনূর একবার পিছনে তাকলো। লোক গুলো তার খুব কাছে। সে রাস্তার মোড়ে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা খেলো। লোকটিকে দেখে হকচকিয়ে গেল। জনশূন্য মানুষহীন জায়গায় একজন মানুষ পেয়ে আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া করলো।

—” আর ইউ ওকে? এভাবে দাঁড়াচ্ছেন কেন?”

খুশনূর হাঁপাচ্ছে। বলল,,

—” পি..ছ..নে ছিনতাইকারী! ”

সামনের ব্যক্তিটি ভ্রু কুচকালো। আলো আঁধারের মাঝে চোখে পড়লো না খুশনূরের। তখনি পিছন থেকে বলল,,

—” এখন কই পালবি?”

খুশনূর ভয়ে ভয়ে সামনে ব্যক্তিটিকে বলল,,

—” প্লীজ হেল্প!”

তখনি পিছন থেকে ওদের দলের ওস্তাদ বলল,,

—” কেডারে তুই! ওরে ছাড়। মালডা আমাগো।”

ব্যক্তিটি হেসে বলল,,

—” কি কও মামা? আমার বউ তোমার মাল কেমনে হয়? ”

খুশনূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছেলেটি বলে উঠে,,

—“কতবার বলেছি ঝগড়া করে বের হবা না বাসা থেকে! কিন্তু তুমি? জানো আমি পুলিশকেও খবর দিয়ে দিছি আসেছে এখন! আর কখনো এমন করবে না।”

জড়িয়ে ধরলো খুশনূরকে। খুশনূর থতমত খেয়ে গেল। অপরিচিত এক ছেলে এসে বলছে, খুশনূর তার বউ? হাউ ফানি!

পুলিশের কথায় ভড়কে যায় ছিনতাইকারীর দল।ওস্তাদ বলল,,

—” ঘরের বউ ঘরে লইয়া যাও। ওই চল। ”

এক প্রকার পালিয়ে গেল তারা। তা দেখে ছেলেটি হেসে দিলো। পুলিশের ভয় দেখানো কাজে দিলো। খুশনূরকে ছেড়ে দিতেই। এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেলো। খুশনূর ঠাস করে এক চড় মেরে বসলো। ছেলেটি চোখ-মুখ সাথে সাথে যেন রাগে লাল হয়ে গেল। আজ পর্যনরত তার গায়ে কেউ হাত তুলেনি। সেখানে অপরিচিত একটি মেয়ে মারলো। অথচ সে তাকে কিছুক্ষন আগে বাচাঁলো। রাগ তীর তীর করে মাথায় চড়ে গেল। রেগেই বলল,,

—“আপনি আমাকে মারলেন কেন?” কঠিন কন্ঠ তার।

খুশনূর চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,,

—” আপনারা সব ছেলেরা একই রকম! সুযোগ পেলেই ছুঁতে চান। ছিঃ!” ঘৃণা প্রকাশ পেল খুব।

ছেলেটি চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়েটিকে বাচাঁনো উচিত হয়নি। এখনি ছুরে ফেলতে ইচ্ছে করছে সেই লোকেদের কাছে। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দম করতে চাইলো।

_______________

—” তুমি কিভাবে পাড়লে তুমি? আমার তো “ছিনতাইকারীর” শব্দ শুনতেই ভয় লাগে। তোমার জায়গায় আমি থাকলে তখন মরেই যেতাম।”

খুশনূরকে এলোমেলো ভাবে রুমে ঢুকতে দেখেই ফারিয়া কৌতূহল নিয়ে জিগ্যেস করতেই সব বলে খুশনূর । ফারিয়া খুশনূরের সামনে গোল হয়ে বসে চিন্তিত সুরে বলল,,

—” কিন্তু যে তোমাকে বাঁচালো? তাকে মারলা কেন?”

খুশনূর বইয়ের পাতা উল্টোতে উল্টোতে বলল,,

—” আমাকে স্পর্শ করলো কেন?”

—” তোমাকে বাঁচানোর জন্যই করেছে?”

—” আরো ওয়ে ছিলো বাঁচানোর! তাই বলে জড়িয়ে ধরতে হবে? এসব অজুহাত! একলা মেয়ে পেয়ে ফায়দা উঠালো।”

—” তুমি যা ভাবছো তা নাও হতে পারে! সব সময় আমরা যা বুঝি, দেখি তা ঠিক নাও হতে পারে!”

খুশনূর চুপ রইলো। এ বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ আর নেই বুঝতে পারলো ফারিয়া। এখন বোম পাটলেও সে বলবে না। এতদিনে খুশনূরকে চিনেছে এতটুকু। ফারিয়া উঠে চলে গেলো তার বিছানায়। তখনি রুমে ঢুকে অঞ্জলি। চোখ-মুখে গম্ভীরতায় ঢাকা। বলল,,

—” খুশনূর কথা আছে তোমার সাথে! রুমে এসো আমার।”

চলবে,,

খুশনূর পর্ব-০২

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

০২
বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে গেছে খুশনূরের। আজ যেন রোগীর আসা থামছেই না। লাষ্ট রোগীকে ডাক্তারের কেবিনের ভিতরে ডুকিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো খুশনূর। আজ ১০ দিন যাবত ডাক্তার নিবেদিতা রায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত হয়েছে সে।

—” আজ মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত? ”

পাশের কেবিনের ডাক্তার নিয়াজের অ্যাসিস্ট্যান্ট স্মৃতি হেসে বলল। মেয়েটি হাসি মুখো। সুন্দর ছিম ছাম। এ সেন্টারের প্রথম বন্ধুও খুশনূরের। খুশনূর একটু হেলে বসলো চেয়ারে।

—” হুম। আজ রোগী বেশি-ই ছিল। তোমারও তো কম না?”

—” আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। তুমি নতুন তাই কষ্ট হচ্ছে সয়ে যাবে জলদি। ”

খুশনূর মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। তাদের কথার মাঝেই ডাক্তার আমিরের কেবিন থেকে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট মেঘা জীর্ণশীর্ণ কাপড় ঠিক করতে করতে বের হয়ে আসে। চোরা চোখে এদিক সেদিক তাকায় সে। দেখতে স্মার্ট। মুখে ভারী মেকআপ পড়নের তার টপস আর জিন্স। টপসের উপরের তিনটা বোতাম খোলা। খুশনূর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিক। পাশ থেকে স্মৃতি আবার বলল,,

—” অবাক হবার কিছু নেই খুশনূর। ওর মতে ডাক্তারদের খুশি করলেই গাদ্দি গাদ্দি টাকা পায়ের কাছে!”

—” এসব কি বলো? ওকে দেখে এমনটা মনে হয় না!”

—” দুনিয়াতে সবাই যে ভাল হবে তাতো না? সব ভালোর মাঝে খারাপ থাকবেই!”

খুশনূর তাকিয়ে রইলো মেঘার দিক। তার গা গুলিয়ে এলো। ঘৃণায় শরীর কাঁটা দিচ্ছে তার।নিজের সম্মানের চেয়ে বড় কিছু নেই এ পৃথিবীতে। টাকাতো হাতে ময়লা আসবে আবার চলে যাবে তাই বলে নিজের সম্মানটা বিসর্জন দিবে?

______________

আজ বাসায় ফিরে খুশনূর নিজ ঘরে না গিয়ে তার পাশের রুমে ঢুকলো। ফারিয়া আর খুশনূর ছাড়া এ অট্টালিকায় আর কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা থাকে। যাদের পড়াশোনার খরচ অঞ্জলি দেয়। খুশনূর আসার সময় আজ ডাক্তার নিবেদিতা তাকে ডেকে কত গুলো পেট, কলম আর টিস্যুর বক্স দিয়েছে। তাই দিতে রুমে ঢুকলো সে। বাচ্চা গুলো পড়চ্ছে। তারই গুন গুন শব্দ হচ্ছে। খুশনূরকে দেখে পড়া থামালো। খুশনূর সব কিছু ভাগ করে দিতে লাগলো। বাচ্চাদের দেখলে তার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে খুব। এদের সাথে সময় কাঁটাতে খুব ভালোই লাগে তার।

—” তোমাদের পছন্দ হয়েছে?”

সবাই এক সাথে বলল,,

—” হে অনেক!”

তাদের মাঝেই নিলি খুশনূরকে জড়িয়ে ধরলো। বয়স তার ১১/১২ হবে। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,,

—” আজ খাতার প্রয়োজন ছিল আপু। স্কুলে খাতা শেষ হয়ে গেছিলো। মেম বকেছে অনেক! ”

খুশনূরের মায়া হলো খুব। নিলির সামনে হাটু গেরে বসে বলল,,

—“কাঁদিস না। পরে থেকে খাতা শেষ হলে আমায় বলবি কেমন?”

—“আচ্ছা!”

খুশনূর এবার রান্না ঘরে এলো। অঞ্জলি বাচ্চাদের জন্য দুধ গরম করছে।

—” কখন এলে?”

—” মাত্রই!”

—” হাতে কি? ”

,—” তোমার জন্য আম্মা?”

অঞ্জলিকে এখন খুশনূর আম্মা বলে। অঞ্জলিকে যখন কেউ আম্মা বলে ডাকে সে যেন সর্গের সুখ পায়। খুশনূর অঞ্জলিকে একটি মিক্সার হাত তুলে দিলো।

—” এখন আর তোমার হাত দিয়ে মশলা বাটতে হবে না।”

অঞ্জলি চোখে জল ছলছল করে উঠলো।

—” এসবে টাকা কেন নষ্ট করলে?”

—” মেডাম দিয়েছে! কাঁদছো কেন আম্মা?”

—” তুই আমার জীবন আসছিস পর থেকে যেন আমার কষ্ট কমছে!”

খুশনূর হাসলো।

_______________

—” আপনি আমাকে কেন বিরক্ত করছেন?”

চেচিয়ে উঠলো খুশনূর। কেবিনের বাহিরে বসে রোগীর নামের লিষ্ট করছিলো খুশনূর।তখনি সায়েম ভিজিটরের জন্য আসে। ডাক্তারের সাথে দেখা করবে বলে। খুশনূর বসতে বলে। সায়েম খুশনূরের সোজা বসলো। এক ধেয়ানে খুশনূরের দিক তাকিয়ে রইলো। কি রূপ তার চোখ ফেরানো দায়। অস্বস্তি লাগছে খুশনূরের। মাঝে দুবার ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলতে আসে। খুশনূর বার কয়েক ইগনোর করে। কিন্তু যখনি ডাক্তার নিবেদিতা এক রোগীর রিপোর্টের কাজে তখনি পিছন থেকে সায়েম হাত ধরে টান দেয়। দাঁত কেলিয়ে বলে,,

—” আপনার নাম্বারটা দিন?”

ঠিক সেই মুহূর্তে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে তার।চেচিঁয়ে উঠাতে সকলেই জমা হয়ে যায়। সায়েম ভরকে যায়।

—” কাজটি ভাল হলো না।”

খুশনূর কাঁপতে লাগে। ভয়ংকর ভাবে। সায়েমের সেই নিকৃষ্ট চাহনিতে বুক পর্যন্ত কাঁপছে। কাজটি সত্যি খারাপ হলো?

চলবে,

(গল্পটি একটু ব্যতিক্রম আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

খুশনূর পর্ব-০১

0

#খুশনূর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০১

নিরব স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের একটি চেয়ারে ঝিম মেরে বসে আছে একটি ১৮-১৯ বছরের শুভ্র সুন্দরী মেয়ে।উস্কোখুস্কো চুল, এলেমেলো জামা কাপড়, চোখের জলের সাথে কাজলের দাগ শুকিয়ে ছোপ ছোপ কালির দাগ লেপ্টে আছে গাল খানিতে।তাতেও তার রূপ এক ফুটো ফেকাসে করতে পারেনি। বরং রূপ যেন আরো বেড়েছে। আশে-পাশে দু-একজন মানুষ বার বার তাকাছে তার দিকে। অঞ্জলির কৌতূহল জাগলো। এত সুন্দরী, রূপসীর এ হাল কেন?কৌতুহল দামতে না পেরে এগিয়ে গেলো সে।

—” তোমার কিছু হয়েছে?”

মেয়েটি মাথা নত করেই না জানালো। অঞ্জলি তার পাশে বসে মাথা হাত বুলিয়ে বলল,,

—” তোমার সাথে কেউ নেই?”

মেয়েটি এবার মাথা তুলে তাকালো। কাজল কালো চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। আবারো আগের মত ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,

—“আমার কেউ নেই!”

কথাটি যেন অঞ্জলির বুকে গিয়ে বিঁধল। তারোতো কেউ নেই। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। এ বয়সে পরিজন ছেড়ে একা থাকতে হচ্ছে তাঁর।কি ভেবে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে ফেললেন তিনি। আদুরে কন্ঠে বললেন,,

—” যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন!”

মেয়েটি ফুপিয়ে উঠলো। অঞ্জলির বুকে তার মায়ের সুখ পাচ্ছে। সে আরো আকড়ে ধরলো।

অঞ্জলি প্রশ্ন করলেন,,
–” তোমার নাম কি মা?”

মেয়েটি অঞ্জলির বুক থেকে মাথা তুলে ম্লান হেসে বলে,,
—“খুশনূর”

অঞ্জলি তাকিয়ে রইলো মেয়েটি ফিকে পড়ে যাওয়া মুখ খানিতে। দেখে মনে হচ্ছে আজ কতদিন যেন মেয়েটি ভালো করে খায় নি। সুন্দর মুখখানা কান্নার ফলে লাল হয়ে আছে। অঞ্জলি চোখের পানি মুছে দিলেন জিগ্যেস করলেন,,

—” কোথায় যাবে?”

—” ঢাকা!”

—” কার কাছে যাবে?”

মাথা নত করে ফেললো খুশনূর।

—” কেন যাচ্ছো?”

—” চাকরির জন্য!”

অঞ্জলি ছোট শ্বাস ছাড়লো। বললো,,

—” হয়তো ভাবছো? একজন অপরিচিত মানুষ এত কথা কেন জিগ্যেস করছে? ”

খুশনূর তাকালো তার দিক। মাথায় এ প্রশ্নিটি ঘুর ঘুর করছিলো। কিন্তু? তার বিষাদের কাছে সব প্রশ্ন উবে গেছিলো। অঞ্জলি নির্বিকার, নির্লিপ্ত ভাবে বলল,,

—” আমার ভাগ্যটা তোমার মতোই। আমারো কেউ নেই!”

_______________

রাতের হিম শীতল হাওয়া ঘরের কোনে কোনে ডুকে পড়ছে। জানালার পাশে মাথা ঠেকে দাঁড়িয়ে আছে খুশনূর। চোখ জোড়া বাহিরের দূর টিমটিম আলোর দিকে।

—” আম্মাও তোমাকে আশ্রয় দিলো?”

ছোট শ্বাস ফেলে বলল ফারিয়া। খুশনূর পিছনে না ফিরেই বলল,,

–“হুম!”

–” আম্মার মন অনেক বড়। আমাকেউ সেই রাস্তা থেকে তার এই অট্টালিকা আশ্রয় দিয়েছে।”

হাসলো ফারিয়া। তারপর বিছানা গুছাতে লেগে পড়লো সে। আর খুশনূর? সে চোখ বুঝে আছে। তার চোখের পাতায় ভাসাচ্ছে, তার অতীত!

বাবা-মার আদরের সন্তান ছিল খুশনূর। ছয় মাস আগেই মা মারা গেছে তার। শোকে কাতরে থাকা খুশনূর। মা মারা যাওয়ার ১০ দিন যায়নি? বাবা বিয়ে করে নিয়ে আসেন। সৎ মার অত্যচারে অতিষ্ঠ খুশনূর। বাবাকে নালিশ করতেই, সৎ মা খুশনূরের নামে বাবার কাছে রসিয়ে রসিয়ে বলে,,

—” তোমার মেয়ে তো হাত ছাড়া হয়ে গেছে? দারোয়ান নয়, সবজি ওয়ালা নয়, ফেক্সিলোড এর দোকান ওয়ালা নয়, সকলের সাথে প্রেমলিলায় মত্ত। ”

বাবা তার মার কথা বিশ্বাস করেই ঘর থেকে বের করে দেয় খুশনূরকে। খুশনূর কেঁদে কুটে নানা বাড়ি আসে সেখানেও ঠায় মিলেনি তার। তাইতো একাই পথ চলতে নেমে পড়েছে সে। সে বাড়িটিতে আর ফিরতে চায় না সে। এখান থেকেই হয়তো জীবন যুদ্ধের শুরু!

___________

মায়া ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল থেকে হাসি মুখে বের হয় খুশনূর। চাকরিটা সে পেয়েই গেছে। এত দিনের কষ্টের মাঝে একটি খুশির ঝলক পেলো। খবরটি অঞ্জলিকে দিবে ভেবেই ছুটে চললো বাস ধরতে। কিন্তু খুশিটি কিছু মুহূর্তেই তার কাছ থেকে হাজার মাইল দূরে ছুটে গেল। বাসে উঠার সময় পিছন থেকে কেউ খুশনূরের বুকে মাঝে বিশ্রী ভাবে স্পর্শ করলো। মুহূর্তেই ঘৃণিত অনুভূতি শরীরের কাঁটা দিয়ে উঠলো। পিছনে ফিরে কিছু অপরিচিত মুখ দেখে ভয়ে মুখ শুকিয়ে এলো। বাসের সিটে চেপে বসে দু হাতে মুখে গুঁজে কান্না করে দিলো। এমন পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পরেনি সে।

বাসায় ফিরে ঝরনা নিচে বসে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠে খুশনূর। সাবান দিয়ে শরীরের স্পর্শ করার জায়গাটি ধুতে লাগলো। এমনটি কি না হলে পাড়তো না? পুরুষ গুলো বুঝি এমনি হয়? মনের মাঝে এক ঝাঁক প্রশ্ন উদিত হলো।তার।

—” খুশনূর? কি হয়েছে? দরজা খোলো!”

শান্ত হলো খুশনূর ভেজা শরীরে বেড়িয়ে এলো। অঞ্জলি চমাকলো।

—” তোমার এ হাল কেন?”

খুশনূর কেঁদে দিলো। তার সাথে ঘটে যাওয়া কথাটি সম্পূর্ণ বলেই থামলো। অঞ্জলি ফোস করে দম ছেড়ে বলল,,

—” জীবনে চলতে গেলে এমন সিচুয়েশনে পড়তেই হয়। সে পর্দাশীল হোক বা বেপর্দা। আমাদের সমাজের আছেই এমন কিছু কাপুরুষ। তাদের জন্য এভাবে ভেঙ্গে পড়তে নেই খুশনূর। কখনো হাতে নাতে ধরতে পেলে কখনো ছাড়বে না। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো সব।”

চলবে

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৬ ও শেষ
#Devjani

আরাদ্ধা নিরুপায় হয়ে রোদ্দুরের পেছন পেছন যেতে থাকে।কি হলো ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। রোদ্দুরকে বেশ রাগী মনে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এভাবে রাগ করার মানে কি!

আরাদ্ধা রোদ্দুরের পেছন পেছন যাচ্ছে। রোদ্দুর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করার আগেই আরাদ্ধা ঢুকে যায়।

রোদ্দুর ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানার উপর বসে পড়ে। ভাবলেশহীন ভাবে বলে,মিস সরি মিসেস রেজওয়ান আমার পেছনে এভাবে ছুটেছেন কেন? টাইগার তাড়া করল নাকি?

আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে,আপনি ঠিক আছেন?রেগে গিয়েছিলেন কেন?এখন আবার এভাবে কথা বলছেন, অদ্ভুত!

রোদ্দুর রাগী দৃষ্টিতে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।উঠে আরাদ্ধার সামনে এসে দাঁড়ায়।হালকা ঝুঁকে বলে,কালকে কি?

— কালকে কি?

— আমি তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি কালকে কি?

আরাদ্ধা অবাক হয়ে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,ওহ্!কালকে আমার শেষ পরীক্ষা। কিন্তু এটার সাথে আপনার রাগের সম্পর্ক কি!

— তুই একা গেলে ভাবতাম তোর পড়তে ভালো লাগছিল না।তাই ছাদে গিয়েছিলি। কিন্তু তোর সাথে আকাশ গিয়েছে।তার মানে হলো তোরা দুইজন গল্প করছিলি অনেকক্ষন ধরে। পড়াশোনা করা লাগবে না?রেজাল্ট যদি খারাপ হয় তো তোকে আছাড় মারবো।

আরাদ্ধা জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,কথার কি লজিক!এই জন্য রাগ করেছেন!উফ,,,ভাবেছিলাম কি না কি হয়েছে আবার।ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে, কেন কোনো ভয় পাওয়ার মতো কাজ করেছিস?
— উহুম,,
— যা গিয়ে পড়তে বোস।নয়তো,,,,
— যাচ্ছি।
আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে পড়তে বসে যায়।কালকে পরীক্ষা শেষ হবে।এরপর শান্তি!

রোদ্দুর আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আরাদ্ধা রোদ্দুরের বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখা শুরু করে। হঠাৎ রোদ্দুরের একটা বইয়ের ভিতর থেকে অনেকগুলো ছবি নিচে পড়ে যায়।

আরাদ্ধা কৌতুহল নিয়ে ছবিগুলো দেখে চুপসে যায়।তার রোদ্দুরের ছোট বেলার ছবি।একটা ছবিতে হুট করেই তার চোখ আটকে যায়। ছবিটাতে রোদ্দুর তাকে কোলে নিয়েছে।তখন আনুমানিক তার বয়স চার আর রোদ্দুরের বারো। কিন্তু এই ছবিটা তুললো কে?

আরাদ্ধা ছবিটা হাতে নিয়ে অন্য ছবিগুলো ঠিক জায়গা মতো রেখে দেয়।
রোদ্দুর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরাদ্ধা বলে উঠে,আমি একটু বাসা থেকে আসছি।দাদির সাথে দেখা করতে যাব। বেশিরভাগ পড়াই শেষ।বাকিটা এসে পড়বো।যাই?

— যা।

রোদ্দুরের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি বেরোনোর আগেই হুট করে আকাশ তাদের রুমে চলে আসে। রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলে, রোদ্দুর ভাইয়া তোমার সাথে কথা আছে।

— বল।

আকাশ বলতে গিয়েও থেমে আরাদ্ধার দিকে তাকায়। মৃদু গলায় ডাক দেয়,আরাদ্ধা!

আরাদ্ধা রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলে,আসলে ভাইয়া উনি বিয়ে করবে।সেটা বলতে চায়।
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বলে,তো আমি কি করবো।আমি কি কাজি নাকি।

— সেটা না।ওনার মা বাবাকে আপনি রাজি করাবেন।

— আকাশ!তুই বিয়ে করবি আর আমি তোর মা বাবাকে রাজি করাবো?পারবো না।দেখিস নাই মা বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আরুকে কেমন বিয়ে করেছি!তুইও করে নে।

আকাশ মন খারাপ করে বলে,যদি আম্মু বকা দেয়।
রোদ্দুর বিরক্ত হয়ে বলে,ভাই তুই দেখি মেয়েদের থেকেও বেশি লজ্জা পাস।

আরাদ্ধা বলে, আপনারা কথা বলেন আমি আসছি।
কথাটা বলে আরাদ্ধা বেরিয়ে যায়।

তাদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে আসতেই দাঁড়িয়ে যায়। এ্যাপার্টমেন্টের সামনে থাকা ফুলগাছ গুলোতে দাদি অত্যন্ত যত্ন সহকারে পানি দিচ্ছে।ফুলগাছ গুলো সে লাগিয়েছে।আর দাদি কত যত্ন নিচ্ছে।দাদি আসলেই ভালো মানুষ। কিন্তু তার সাথে কেন এমন করে?

আরাদ্ধা গিয়ে পেছন থেকে দাদিকে জড়িয়ে ধরে।
— এই কে রে!ছাড় আমাকে।কাজ করছি দেখছিস না। গাছগুলো মরেই যাচ্ছিল একদম।কেউ একটু যত্ন নেয় না।

— তাই বুঝি তুমি যত্ন করছো দাদি?

— আরু তুই।ছাড় আমাকে।ধরবি না একদম।

— একদম ছাড়ব না।আমার দাদিকে আমি ধরেছি।ছাড়বো কেন?এই দাদি তুমি আমার সাথে এমন করো কেন? কষ্ট লাগে তো!

দাদি ঘুরে আরাদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে।বলে,বুড়িটা তোকে কত খারাপ কথা বলেছি।তাও,,,,,,

— তাও আমি এই বুড়িটাকে ভালোবাসি। আচ্ছা দাদি তুমি আমার সাথে এমন করতে কেন?

— সরি আরু,মার্জিয়া,,,,,,,

— বুঝেছি মার্জিয়া আমার নামে খারাপ কথা বলেছে তাই তো!

দাদি চুপ করে আছে।
আরাদ্ধা আবারও বলে, তুমি মার্জিয়ার কথা শুনে কেন আমার সাথে এমন করতে? সত্যি মিথ্যে যাচাই করলে না!আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও। তুমি যে আবার আমাকে কাছে টেনে নিয়েছো এটাই বড়ো।




রাতের আকাশে আজ অনেকগুলো তারা উঠেছে।দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।আরাদ্ধা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তারা দেখছে।পাশে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর।সে আরাদ্ধাকে দেখছে।আরাদ্ধা আড় চোখে একবার রোদ্দুরকে দেখে নেয়।দেখতে দেখতে সাত বছর কেটে গেছে। রোদ্দুর এখনো পাল্টায় নি। আগের মতোই আছে। আগের মতো বকে তাকে।তবে তাকে খুব ভালোবাসে ব্যাপারটা আরাদ্ধা বেশ ভালোভাবেই বুঝেছে। কিন্তু আরাদ্ধা এখনো রোদ্দুরকে অনুভূতির অন্তরালের কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারে নি।কখনো হয়ত বলতে পারবে না।হয়ত রোদ্দুর নিজে থেকেই তার মনের কথাগুলো বুঝে নিয়েছে।
রোদ্দুর মৃদু গলায় আরাদ্ধাকে বলে, পিচ্চি! কতগুলো বছর কেটে গেল। অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে তাই না?

— হুম।

— কি পরিবর্তন হয়েছে পিচ্চি?

— আমি ডাক্তার হয়েছি। হার্ট সার্জন ডাঃ আরাদ্ধা কায়নাত!

— আর?

— আকাশ আর মার্জিয়া বিয়ে করেছে।শ্রেয়ান ভাইয়া আর অদ্রির বেবি হয়েছে। টাইগার আর অলির বেবি হয়েছে।

— আর?

— আর….!আর আমি আবারও মা হতে চলেছি।

রোদ্দুর মুখ টিপে হাসে।বলে,আমাকে বাদ দিয়ে দিলি!আমি যে বাবা হচ্ছি?

হঠাৎ পেছন থেকে আরশি এসে আরাদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে।চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।আরাদ্ধার হাতগুলো টানতে টানতে বলে, আম্মু টমি,,,কোলে!

রোদ্দুর অসহায় দৃষ্টিতে আরাদ্ধার তাকিয়ে আরশিকে কোলে তুলে নেয়।বলে,মা মেয়ে দুজন একই রকম। কুকুরকে এতো ভয় পাস কেন তোরা? কিউট একটা প্রাণী!

আরাদ্ধা রাগী গলায় বলে, আপনার সাহস তো কম না। টাইগারকে কুকুর বলছেন!

রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বলে, আমার ডায়লগ আমাকেই শুনাচ্ছিস!

— আমি বললে দোষ আর আপনি বললে কিছু না!বাই দা ওয়ে, আমি এখন কুকুর মানে টাইগারকে আর ভয় নাই না। দেখবেন?

কথাটা বলে আরাদ্ধা মিষ্টি গলায় টাইগারকে ডাক দেয়।আরাদ্ধার ডাক শুনেই টাইগার দৌড়ে আসে।সাথে অলি আর টমি।টমি টাইগার আর অলির বেবি।বয়স হয়েছে টাইগারের। আগের মতো তরতাজা ভাব নেই চেহারায়। কিন্তু আরাদ্ধা এখন আর ভয় পায় না টাইগারকে। খুব যত্ন করে তার।

আরাদ্ধা গিয়ে টাইগারকে জড়িয়ে ধরে।
— আই লাভ ইউ টাইগার!

(সমাপ্ত)
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর কেমন হয়েছে গল্পটা জানাবেন।

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১৫

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৫
#Devjani

গতকালের অলির ঘটনা মনে পড়তেই আজ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়েছে আরাদ্ধা।উঠেই দেখে বিছানার পাশে আকাশ বসে ফোন টিপছে।আরাদ্ধা বিরক্ত হয়ে বলে,
— এত সকালে আপনি এখানে কি করছেন?
— আপনাকে গুড মর্নিং বলতে এসেছি।
আরাদ্ধা রুক্ষ গলায় বলে,বলা হয়ে গেলে এবার আসতে পারেন।
— আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?
আরাদ্ধা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলে, আবার জিজ্ঞেস করে।
মুখে বলে,আসলে আমি যখন তখন আমার রুমে আসা পছন্দ করি না।
আকাশ ভ্রু উঁচিয়ে বলে,এটা আপনি ভুল বললেন।এটা তো রোদ্দুরের রুম।
— তাতে কি।আমি রোদ্দুর ভাইয়ার স্ত্রী।সো এটা আমারও রুম।আর আপনি ওনাকে নাম ধরে ডাকলেন কেন? উনি তো আপনার বড় হয়!
— তুমি দেখছি আমাকে শাসন করছো।ভালো! কিন্তু শুনেছি তোমাদের বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়েছে। তুমি কি এই বিয়েটা মানো?আর তুমি তো রোদ্দুরকে ভাইয়া বলে ডাকো।
— বিয়ে যখন হয়েছে তখন না মানার কি আছে আর আপনি সকাল সকাল এসব কথা বলে মাথা খারাপ কেন করেছেন?
— আরে রাগ করো না। আচ্ছা তুমি সকাল বেলাটা প্রতিদিন কিভাবে উপভোগ করো?

আরাদ্ধা রাগী দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আকাশ আরাদ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। উঠে ছোট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আকাশ যেতেই আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হয়। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে রোদ্দুরকে কল করে।ওপাশ থেকে রোদ্দুর ঘুমঘুম গলায় বলে,হ্যালো,আরু?
— আপনি দেখছি আমার কোনো খবর নেন না।
— ঘুমাচ্ছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই তোকে কল করতাম। কলেজ যাবি না?
— যাব। সকাল সকাল আপনার ওই আকাশ নামের ভাইটা মাথা খারাপ করে দিল।এমন গায়ে পড়া ছেলে আমি আগে কখনো দেখিনি। অসহ্য!
— ও ওই রকম।তুই চিন্তা করিস না।
— ও এখানে কেন এসেছে?আপনি জানেন?
— কি একটা কাজে এসেছে। আমি ঠিক জানি না।তবে তুই ওকে যেমন ভাবছিস ও তেমন নয়।ও অনেক ভালো ছেলে।
— আচ্ছা এদিকটা আমি সামলে নিব। আপনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন।
— হুম।রাখছি।
আরাদ্ধা ফোন কেটে দিয়ে পেছনে ফিরে দেখে আকাশ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ দেখে মনে হচ্ছে আরাদ্ধাকে কিছু বলতে চায়।আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে। বাসা থেকে বের হতেই রুনা বেগম ডাক দেয় তাকে।বলে,আরু মা কিছু খেয়ে যা।
আরাদ্ধা আকাশকে একপলক দেখে বলে, আন্টি এখন কিছু খাবো না।
— না খেয়ে তোকে যেতে দিব না।পরে রোদ্দুরকে বলবি আমি তোর যত্ন নেইনি।
— আন্টি প্লিজ খাব না এখন।একবার শ্রেয়ান ভাইয়ার বাসায় যাব।
— আকাশও বাইরে যাবে। আকাশের সাথে যা!আকাশ তোর টাইম হবে তো?
আকাশ কিছু বলার আগেই আরাদ্ধা বলে,না আন্টি ওনার কষ্ট করা লাগবে না।
আকাশ বলে, আমার কোনো কষ্ট হবে না।
— অসভ্য লোক কোথাকার!বিরবির করে বলে আরাদ্ধা।
মুখে হালকা হাসি নিয়ে বলে,আপনি আমাদের অতিথি।আপনাকে কষ্ট দেই কি করে।আপনি বললেও আপনার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি রাজি নন।
আকাশ মুখে হাত দিয়ে বলে, কেন মুখ তো ঠিকই আছে!
আরাদ্ধা চোখমুখ কুঁচকে বলে, অদ্ভুত! আপনার মুখ আপনি কি করে দেখবেন? আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ান তারপর বুঝবেন।
— সেটা অবশ্য ঠিক।
আরাদ্ধা রুনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে, আন্টি আমি আসছি।আজ বাসায় নাও আসতে পারি।শ্রেয়ান ভাইয়াদের বাসায় থাকব।কথাটা বলে আড় চোখে একবার আকাশের দিকে তাকাল।

রুনা বেগম গম্ভীর গলায় বলে, বিয়ের পর এত ঘনঘন বাপের বাড়ি যাওয়া বেমানান আরু। তুমি নিশ্চয়ই এসব বুঝতে পারছো!
আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে,আমার বাবা তো নেই। এখন ওটা মায়ের বাড়ি। মায়ের বাড়ি যাওয়া তো যায়।আপনি চিন্তা করবেন না।
কথাটা বলে কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসে আরাদ্ধা। রোদ্দুরের মাকে বলার মতো যুক্তি পাচ্ছিল না।তাই এটা বানিয়ে বলে দিয়েছে।তবে এখন মনে হচ্ছে কথাটা এভাবে না বললেও পারতো।

♡♡♡

শ্রেয়ানের সাথে কলেজে যাচ্ছে আরাদ্ধা।শ্রেয়ানের সাথে দেখা হওয়ার পরপরই আকাশের কথা বলেছে। যদিও শ্রেয়ান এখন পর্যন্ত তার সাথে কোনো কথা বলেনি।সেই সব কথা বলে যাচ্ছে।
হঠাৎ শ্রেয়ান আরাদ্ধার হাতের উপর হাত রেখে বলে,আরু, আম্মুর শরীরের অবস্থা ভালো নেই।ভাবছি আম্মুকে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাব।

আরাদ্ধা সাথে সাথে কোনো উত্তর দিল না। কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বলে,তুমিও চলে যাচ্ছ।আমি একা একা কিভাবে থাকবো?

— চিন্তা করিস না। রোদ্দুর ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন তাড়াতাড়ি চলে আসবে।আর তোকে তো সেদিন বলাই হয়নি আসলে ব্যাপারটা হলো তোর বিয়ের ব্যাপারটা আমরা সবাই জানতাম। যদিও বড়রা কেউ জানতো না। রোদ্দুর ভাইয়া বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু ওনার আম্মুর জন্য বাধ্য হতে হয়েছে।আর সুমাইয়ার ঠিক একই অবস্থা।ওকে জোর করে রাজি করানো হয়েছে।সবটা রোদ্দুর ভাইয়া আর সুমাইয়ার প্ল্যান ছিল।বিয়ের দিন সবাই সবটা জানতে পেরেছে। রোদ্দুর ভাইয়া আর সুমাইয়ার উপর সবাই অবশ্য রাগ করেছে খুব।

আরাদ্ধা শ্রেয়ানের কথার কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ শুনেছে।শ্রেয়ান আরাদ্ধাকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। অদ্রি আরাদ্ধার আগেই কলেজ চলে এসেছে।
আরাদ্ধাকে আসতে দেখে অদ্রি ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।মুখ ঘুরিয়ে বলে,বিয়ে করে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছিস!

আরাদ্ধা নির্বিকার ভাবে বলে, তুই মনে হয় যেন মনে রেখেছিস।দিনে একবারও ফোন করিস না।

অদ্রি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।আরাদ্ধাকে ইশারায় গেটের দিকে তাকাতে বলে।আরাদ্ধা গেটের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। মনে কাউকে খুঁজছে।

হুট করে মার্জিয়া ওদের পাশ কাটিয়ে গিয়ে আকাশের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। চোখেমুখে খুশির আভা।বলে, আকাশ তুমি তাহলে শেষ পর্যন্ত আমার সাথে দেখা করতে এলে!

আকাশ হালকা হেসে বলে, হুম। কিন্তু তোমাকে খুঁজতে খুব কষ্ট হয়েছে।তোমার একটা বোন আছে না আরাদ্ধা ভেবেছিলাম ওর সাথে আসব।তাহলে তোমাকে খুঁজে পেতে সুবিধা হতো। কিন্তু ওতো চলে এলো আমার আগে।

মার্জিয়া মুখ ছিটকে বলে, তুমি আর মানুষ পেলে না। শেষ পর্যন্ত ওই মেয়েটাকে,,,,!ও একটা হিংসুটে মেয়ে।আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না।

— কিন্তু আমার তো ওকে এমন মনে হয়নি।ভালো মেয়ে ও। যদিও ওর সাথে মিশতে গিয়েছিলাম কিন্তু মনে হলো ও বিরক্ত হয়েছে।

— ভালো মেয়ে না ও। শয়তান একটা।জানো ও একবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।থাক ওর কথা বাদ দাও। কতদিন পর দেখছি তোমাকে।কেমন আছো?

— ভালো। তুমি?

— খুব ভালো।

আরাদ্ধা আড় চোখে অদ্রির দিকে তাকায়। অদ্রি অবাক হয়ে ওদের দেখছে।আরাদ্ধা হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,ওই অদ্রি কি দেখিস?

অদ্রি আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে,মার্জিয়াকে ভালো ভাবতাম।

— হয়েছে আর বলা লাগবে না।কি মিথ্যুক!আমি নাকি ওকে ফেলে দিয়েছি। যত্তসব!

— ঠিক।

আরাদ্ধা বিরক্তি নিয়ে বলে, শুধু শুধু আকাশকে নিয়ে খারাপ কথা বললাম।এখন রোদ্দুর ভাইয়া আমার সম্বন্ধে কি ভাববে কি জানি?

অদ্রিকে বলে, ভেবেছিলাম আজ তোর বাসায় মানে শ্রেয়ান ভাইয়ার বাসায় থাকব। কিন্তু হলো না।অন্য একদিন যাবো।মাকে যে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করবে তুই যাবি?

অদ্রি মন খারাপ করে বলে, ইচ্ছে ছিল।শ্রেয়ান নিবে না। পরীক্ষা তাই।

আরাদ্ধা ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,ভালোই হলো।নাহলে একা হয়ে যেতাম।



ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরাদ্ধা পাশে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ।এই কয়েকদিনে আকাশের সাথে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
হুট করে নিচ থেকে কলিংবেল বেজে উঠার শব্দে নড়েচড়ে উঠে আরাদ্ধা।খুশিতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।আকাশ আড় চোখে একবার আরাদ্ধাকে দেখে নিয়ে বলে, রোদ্দুর ভাইয়া এসেছে হয়ত।চল নিচে যাই।
আরাদ্ধা আকাশের কথার উত্তর না দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে যায়। পেছন পেছন যাচ্ছে আকাশ।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে দেখে রোদ্দুর দরজার কলিংবেল বাজাচ্ছে। কিন্তু এখনো কেউ দরজা খুলছে না।
সিঁড়ি দিয়ে আরাদ্ধাকে নামতে দেখে রোদ্দুরের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু পেছনে আকাশকে দেখেই সে হাসি নিমিষেই উড়ে গেল।
রুনা বেগম দরজা খুলে রোদ্দুরকে দেখে প্রশান্তির হাসি দেয়। রোদ্দুর গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরেই হালকা কথা বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। পেছন থেকে আরাদ্ধা বেশ কয়েকবার ডাক দেয়। রোদ্দুর শুনেছে ঠিকই কিন্তু দাঁড়াল না।
আরাদ্ধা নিরুপায় হয়ে রোদ্দুরের পেছন পেছন যেতে থাকে।কি হলো ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। রোদ্দুরকে বেশ রাগী মনে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এভাবে রাগ করার মানে কি!

চলবে,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১৪

0

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৪
#Devjani

কলেজে ক্যান্টিনে বসে আছে আরাদ্ধা। সকালের ঘটনাগুলো মাথায় ঘুরছে। রোদ্দুরের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।তার কোনো কথাকেই গুরুত্ব দেয় না। সকালে এতগুলো কথা বলেছে।পরিবর্তে রোদ্দুর ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করেছে,আর কোনো কথা আছে? রোদ্দুরের কথাটা মনে পড়লেই রাগ বেড়ে যায়।
আজ রোদ্দুরের সাথে আসে নি।শ্রেয়ানকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বলেছে।শ্রেয়ান অবশ্য কারণ জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু সে বলেনি।

হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই পেছনে তাকিয়ে দেখে শ্রেয়ান দাঁড়িয়ে আছে।

— কিরে কি এত চিন্তা করছিস?আরাদ্ধার পাশে বসতে বসতে প্রশ্ন করে শ্রেয়ান।
— কিছু না।
— না বলতে চাইলে বলার দরকার নেই।
— উহুম বলছি।ভাইয়া তুমি জানো রোদ্দুর ভাইয়া সব ইচ্ছে করে করেছে।
— তো কি হয়েছে?

শ্রেয়ানের কথায় অবাক হয় আরাদ্ধা এত সিরিয়াস হয়ে বলছে অথচ শ্রেয়ান কিনা ভাবলেশহীন ভাবে বলছে কি হয়েছে!তার ব্যাপারটা এলোমেলো লাগছে। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,আমার সাথে অন্যায় হয়েছে।
— কি অন্যায় হয়েছে?
— আমি কিছু জানতাম না কেন?
— তাতে কি আমি তো জানতাম।
— মানে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অদ্রি।

হঠাৎ শ্রেয়ানের ফোনটা বেজে উঠে।ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে আরাদ্ধাকে বসতে বলে কল অ্যাটেন্ড করতে একটু দূরে চলে যায়।
আরাদ্ধা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ তার ফোনটাও বেজে উঠে। রোদ্দুরের মা ফোন করছে।আরাদ্ধা রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে রোদ্দুরের মা বলে উঠে,আজ এত দেরি করছিস কেন?রোদ্দুরের সাথে দেখা করবি না?একটু পর তো বেরিয়ে যাবে!

আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, একটু পর বেরিয়ে যাবে মানে? কোথায় যাবেন উনি?
— ওহ্!তোকে তো বলাই হয়নি।কিভাবে বলা হবে কালই তো সব হলো।শোন রোদ্দুর একটু বাইরে যাচ্ছে।বাইরে বলতে লন্ডন যাচ্ছে। কিছুদিনের জন্য।তো একটু পরেই বেরোবে। তুই কখন আসবি?
আরাদ্ধা ফোনের মধ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করে।রাগের সাথে এখন অভিমান হচ্ছে খুব। রোদ্দুর লন্ডন যাচ্ছে অথচ তাকে জানাল না।তাকে তো কাল রাতেও বলেছিল আসল মায়ের কাছে নিয়ে যাবে।যদি নাই নিয়ে যাবে তো শুধু শুধু বলার কি দরকার ছিল।আরাদ্ধা রাগ করতে যেয়েও এখন আর রাগ হচ্ছে না। হচ্ছে একরাশ অভিমান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,আসছি।
আরাদ্ধা ফোন কেটে দেয়।শ্রেয়ান এখনও ফোন নিয়ে ব্যস্ত।আরাদ্ধা ইশারায় আসি বলে বেরিয়ে যায়।

♡♡♡

রোদ্দুর ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আস্তে করে বলে,আসছি।
রোদ্দুরের মা রুনা বেগমও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, সাবধানে যাস বাবা।
— হুম।
রোদ্দুর ধীর পায়ে আরাদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আরাদ্ধা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখে পানি টলমল করছে। রোদ্দুর হালকা হেসে আরাদ্ধাকে কাছে টেনে নেয়।
— কাঁদছিস কেন পিচ্চি?

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, আপনি যাচ্ছেন আগে বলেন নি কেন?

— হুট করে কাজ পরে গেছে তাই।সরি।আমি তাড়াতাড়ি চলে আসব।মন খারাপ করিস না। আর হ্যাঁ, মনোযোগ দিয়ে পড়বি।আমি যেন খারাপ রেজাল্ট না শুনি।

— আপনি কেন আমাকে কিছু বলেননি।

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,তুই তো বলেছিস তোর বিয়েতে এমন কোনো ঘটনা চাই যাতে তুই সবার কাছে তোর বিয়ের ঘটনাটা বলতে পারিস!কথাটা বলে রোদ্দুর মুখ টিপে হাসল।

— সুমাইয়া আপু কষ্ট পেয়েছে।ওনার মা বাবার অপমান হয়েছে।আপনি এমনটা না করলেও পারতেন।

— সময় থাকলে সবটা বলতাম। কিন্তু এখন এসব বলার প্রয়োজন মনে করছি না।এসব কথা বাদ দে, মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলেছি।কথাটা মাথায় রাখিস।

রোদ্দুর আরাদ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে টাইগারের সামনে গিয়ে বসে।আদর করতে করতে বলে, টাইগার তোর ভাবিকে একদম ডিস্টার্ব করবি না।অলিকেও নিষেধ করে দিবি।
আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,কে ভাবি?কার ভাবি? কিসের ভাবি?

রোদ্দুর ধমক দিয়ে বলে,মাথার মধ্যে বুদ্ধি বলতে কিছু নাই তোর।ভাবি হলি তুই। টাইগারের একমাত্র ভাবি।
আরাদ্ধা চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে,আমি ভাবি!তাও এই কুকুরের!

— এই আবার আমার টাইগারকে কুকুর বলছিস!তুই কখনো ঠিক হবি না।এটা কুকুর নয়।এটা আমার একমাত্র ভাই।কথাটা বলে রোদ্দুর টাইগারকে জড়িয়ে ধরে।

আরাদ্ধা টাইগারকে বোঝার চেষ্টা করে। রোদ্দুরের কথা টাইগার বুঝলো কিনা বোঝা গেল না।তবে রোদ্দুর টাইগারকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে টাইগার স্থির হয়ে চোখগুলো বন্ধ করে নেয়।আরাদ্ধার ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল। ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে টাইগারের মাথায় ভয়ে ভয়ে তার ঠান্ডা হাত রাখে।এই প্রথম টাইগারকে ছুঁয়েছে। টাইগার হুট করে চোখ খুলে তাকাতেই ভয়ে দূরে সরে যায়। টাইগার পুনরায় চোখ বন্ধ করে নেয়।আরাদ্ধা দেখে টাইগারকে এখনো রোদ্দুর জড়িয়ে ধরে আছে।আরাদ্ধার গতকালের কথা মনে পড়তেই গিয়ে টাইগারের কান টেনে ধরে। সাথে সাথে টাইগার জোরে জোরে ডাকা শুরু করে দেয়।

রোদ্দুর চোখ রাঙিয়ে বলে,আরু!ব্যাথা পেয়েছে তো আমার ভাইটা।কি করছিস এগুলা?
আরাদ্ধা ভেংচি কেটে দূরে সরে দাঁড়ায়।

♡♡♡

পড়ার টেবিলে বসে এক নাগাড়ে পড়ে যাচ্ছে আরাদ্ধা। হুট করেই কেউ এসে তার চোখ জড়িয়ে ধরে।আরাদ্ধা চোখে জিজ্ঞেস করে,কে?

অপরিচিত কন্ঠস্বর বলে উঠে,আহ্!ঈশু আমাকে চিনতে পারছিস না?

— কে আপনি?আর কে ঈশু?চোখ থেকে হাত সরান।আমার এগুলো পছন্দ না।

— এত তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না তোকে।আমাকে তো একেবারে ভুলেই গেলি।

— দেখুন আপনি কে আমি জানি না চোখ থেকে হাত সরান।ভালো হবে না কিন্তু।আমি আন্টিকে ডাকব।

— কোন আন্টি?কে আন্টি?
লোকটা আরাদ্ধা কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,কোনো আন্টিকে ডাকতে দিচ্ছি না আমি।

— কি হচ্ছে এখানে?
হঠাৎ রুনা বেগমের এমন কথায় ছিটকে সরে যায় লোকটি।
থতমত খেয়ে বলে,ফুপি তুমি?দেখ না ঈশু আমাকে চিনতে পারছে না।

রুনা বেগম অবাক হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,ও ঈশু নয় আকাশ।আর ঈশু তো ইন্ডিয়া।এখানে কিভাবে আসবে!

— ও সরি সরি ফুপি।আমি ভেবেছিলাম ও ঈশু।আমি ভুল করে এমন করেছি। কিন্তু ও কে?

— ঈশু এখানে কিভাবে আসবে? তুইও পারিস!ও হলো আরু। মানে আরাদ্ধা।তোর রোদ্দুর ভাইয়ার বউ।

আরাদ্ধা এতক্ষণ অবাক হয়ে এদের কথা শুনছিল।তার মানে লোকটার নাম আকাশ।আর ফুপি ডেকেছে মানে রোদ্দুরের মামাতো ভাই। কিন্তু আকাশকে তার মোটেও পছন্দ হয়নি। রোদ্দুরের পড়ার টেবিলের অবস্থান অনুসারে রুমে ঢুকতেই তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাবে।আর এই লোক কিনা বলে না দেখে এই আচরণ করেছে!কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।

রুনা বেগম আরাদ্ধার কাছে গিয়ে বলে,ও আমার ভাইয়ের ছেলে আকাশ।একটু কাছে এখানে এসেছে। কয়েকদিন ও এখানেই থাকবে। তোর পাশের রুমেই থাকবে।যদি প্রয়োজন হয় ওকে ডাকবি।

আকাশ একটু এগিয়ে গিয়ে হেসে বলে, তোমার বয়স খুব কম।তোমাকে ভাবি ডাকার ইচ্ছে আমার মোটেই নেই।আমি তোমাকে নাম ধরেই ডাকব।তোমার কোনো সমস্যা আছে?

আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে, না!

রুনা বেগম আরাদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে, অনেক রাত হয়ে গেছে।আর পড়তে হবে না।খেতে চল।
— আমি পরে খাব আন্টি।

— না।এখনি খাবি।চল।এই আকাশ আরাদ্ধাকে নিয়ে আয়।আমি যাচ্ছি।

কথাটা বলে রুনা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আকাশ আরাদ্ধার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে, সত্যিই আমি বুঝতে পারি নি তুমি আরাদ্ধা।আমি তোমাকে চিনতে পারিনি।

— সমস্যা নেই।

— চল আমরা যাই। আন্টি ডেকেছে তো!

— আপনি যান আমি আসছি।

— না,আমার সাথেই যেতে হবে।

আকাশ আরাদ্ধার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।আরাদ্ধা বিরক্ত হচ্ছে আকাশের ব্যবহারে। কিন্তু মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে আকাশের সাথে যাওয়া শুরু করে।
খাওয়ার টেবিলে আরাদ্ধার বরাবর আকাশ বসে। পাশে রুনা বেগম।

আকাশ খাওয়ার মাঝে আড় চোখে আরাদ্ধার দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা বুঝতে পারছে আরাদ্ধা। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। আকাশের এই ব্যবহারে বেশ অস্বস্তি লাগছে তার। হঠাৎ তার পায়ে উপর কারো পায়ের অস্তিত্ব অনুভব করে আরাদ্ধা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশ মিটিমিটি হাসছে। বিরক্ত হয় সে।এমন মানুষ আগে কখনো দেখে নি।কয়েক মিনিটের পরিচয়ে আকাশের এই ব্যবহারে রাগ হচ্ছে আরাদ্ধার। খুব!

চলবে,