Saturday, June 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1583



সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-১০

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১০
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

এই মেয়ে তুমি এতক্ষন আমার ছেলের রুমে কী করছিলে হ্যাঁ? কী এমন দরকার তোমার আমার ছেলের সাথে যে এতো সময় তার সাথে কাটিয়ে আসলে৷

অনু উনার কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো৷ আবিরের মা অনুর দিকে আরও এগিয়ে এসে বললেন,,,কী হলো বলছোনা কেনো?

অনু তবুও কিছু বলছেনা মাথা নিচু করেই আছে৷ আবিরের মা এখন একেবারে অনুর কাছেই চলে গেলেন৷ অনু রীতিমতো কাপঁছে৷ যদি আবিরের মা মারেন এটা ভেবে৷চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে ভয়ে৷

আবিরের মা অনুর থুতনি উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিলেন৷ তারপর মৃদু হেঁসে বললেন,,বোকা মেয়ে কাঁদছো কেনো হুম?ভয় পেয়েছিলে বুঝি?আরে আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম৷ আমি জানি তুমি কে?

অনু এবার আবিরের মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকালো৷ উনি জানেন মানে?

হুম আমি জানি তুমি কে?তুমি হলে আমার আবিরের ভালোবাসার মানুষ, মনের মানুষ৷ যাকে আবির ছয় বছর ধরে পাগলের মতো ভালোবেসে এসেছে৷ তুমি যখন আমাদের বাড়িতে এলে তখন তোমাকে চিনতে আমাদের লেট হয়নি৷ আবির তোমার ছবি অনেক আগেই আমাদের দেখিয়েছিলো৷

আবির রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো ওর মা আর অনু হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ আবির পকেটে দুই হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে একটা এটিটিউড নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
.
আবিরঃআরেহ্ বাহ অনু,আমার মায়ের মনও জয় করে নিলে ওয়াও৷
.
আবিরের মা আবিরের দিকে এগিয়ে এসে ওর কান মুলে ধরলেন৷
.
আউচচচচ!!!মা কী করছো লাগছে ছাড়ো!!
.
আবিরের মা কান ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,আমার রোমান্টিক ছেলে,আজ যখন অনু তোমার রুমে গেলো তখন তোমার চিৎকার কই ছিলো হুম৷
.
মা অনু, ওর হাসবেন্ডের রুমে ঢুকেছে তাতে চিৎকার করার কী আছে আজব?
.
অনুঃআপনি আমার হাসবেন্ড কোনদিন থেকে হলেন৷ এখনও হননি যখন হবেন তখন বইলেন৷
.
এক্সাক্টলি!! আচ্ছা তোমরা নিচে এসো আবির তোমার বাবা আর দাদিমা তোমাদের দুজনের সাথে কথা বলতে চাইছেন৷

আবিরের মা চলে গেলেন৷ আবির আর অনুও দেড়ি না করে নিচে চলে গেলো৷
🍁
বাবাঃতাহলে আবির শেষে অনুকে পেয়েই গেলে,তা কী সিদ্ধান্ত নিলে তোমরা দুজন?
.
আবিরঃমানে কীসের সিদ্ধান্ত বাবা?
.
মাঃবিয়ের সিদ্ধান্ত৷
.
আবিরঃওয়াট?বিয়ে মানে?
.
দাদিমাঃআবির তুমি কোনো বাচ্চা মানুষ নও যে বিয়ে মানে বুঝতে পারছোনা?
অনুর মা বাবা নেই, এখন অনুর যদি কারও সাথে দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতে পারে সেটা একমাত্র তুমি৷ অনুর জন্য এখন একটা শক্ত হাতের খুব দরকার৷ ওকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারও হেল্পের দরকার৷ আর তুমিই পারো ওকে হেল্প করতে৷জানো তো এই পৃথিবীতে এখন মানুষের হেল্প পাওয়াটা সহজ ব্যাপার নয়৷
আবির আমি আর তোমার মা বাবা চাচ্ছি তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিতে৷এবার তোমাদের মতামত জানাও৷ তাছাড়াও বয়স তো কম হয়নি ছাব্বিশ হয়ে গেছে অলরেডি৷
.
বাবা, মা,দাদিমা আমি রাজী কিন্তু অনু রাজী কী না সেটা জানিনা৷
.
মাঃঅনু তুমি রাজী নও?
.
অনু কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা৷ ওর মন বলছে বিয়েতে রাজী হতে কিন্তু মস্তিষ্ক না করছে৷ অনু কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো৷ তারপর কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে বললো,,,আমি রাজী৷
.
দাদিমাঃআলহামদুলিল্লাহ!!! তাহলে আরকি আমরা আজ রাতেই কাজী ডাকছি৷
.
আবিরঃআজ রাতেই বিয়ে হবে নাকি৷
.
বাবাঃহ্যাঁ আজ রাতেই৷ অনুর সিদ্ধান্ত আমরা জেনে গেছি সো আর লেট করতে চাইনা৷
এটাই ফাইনাল আজই তোমাদের বিয়ে হচ্ছে তাহলে৷ আর ঘরোয়া ভাবেই হবে৷ কাউকে জানাবো না এখন৷ বাড়িতে প্রেসের লোক বিনা নিমন্ত্রণে এসেই হামলে পরবে অনুকে নিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করবে৷ তিল কে তাল বানানোই এদের স্বভাব৷ পরবর্তীতে অনুষ্টান বড় করে করা যাবে৷ এটা আমাদের মতামত এবার তোমাদের কোনো মতামত থাকলে বলতে পারো৷
.
না বাবা আমার কোনো মতামত নেই৷
.
আবিরের মা অনুকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন৷

“অনু তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি৷
.
না আন্টি তার দরকার নেই৷ আমার খিদে নেই৷
.
চুপ করো মেয়ে তোমার খিদে পেয়েছে কী না পেয়েছে সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে৷
.
আবিরের মা খাবার এনে অনুকে সুন্দর ভাবে খাইয়ে দিলেন৷
🍁
রাতে~~~~

অনুকে একটা কাতান শাড়ি আর কিছু গয়না পড়ানো হয়েছে৷ অনু নিজেকে বার বার আয়নাতে দেখছে৷ আজ থেকে ও আবিরের স্ত্রী হয়ে যাবে ভাবতেই মনের ভিতরে একটা আলাদা শিহরন বয়ে যাচ্ছে৷ তবে আজ তার বাবাকেও খুব মনে পড়ছে৷ বাবা থাকলে কতই না খুশি হতেন নিজের একমাত্র মেয়েকে বধু রুপে দেখে৷

কিছুক্ষণ পর আবিরের মা এসে অনুকে নিচে নিয়ে গেলেন৷অনু সিড়ি বেয়ে যতই নিচে নামছে ততই যেনো ক্রমশ ওর মনের ধুকপুকানি বেড়েই চলছে৷

অনুকে আবিরের পাশে বসানো হয়েছে৷আবির বার বার আড়চোখে অনুকেই দেখছে৷
🍁🍁🍁
ইসলামিক সব নিয়ম কানুন মেনেই ওদের বিয়ে হয়েছে৷ আবিরের মা অনুকে নিয়ে আবিরের রুমে দিয়ে গিয়ে চলে গেলেন৷ অনু তো রুম দেখে হা৷ কী সুন্দর ফুল দিয়ে মশারী ডিজাইনে সাজানো হয়েছে ফুলসজ্জার খাট৷ শুধু গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে৷ খাটের মধ্যখানে আবার বকুল ফুলও আছে৷ সবই অনুর পছন্দের৷ অন্য কিছুর ব্যবস্থা না হলেও এটার ব্যবস্থা ভালোই করা হয়েছে৷

দরজা খুলার শব্দে অনু পিছনে তাকালো৷ আবির এসেছে হাতে একটা প্লেট আরেক হাতে শরবতের জগ নিয়ে৷

অনু ভ্রু কুচকে এগিয়ে গেলো আবিরের দিকে৷

এসব কী?
.
কীসব?
.
আপনার হাতে৷
.
ও এই সব মা দিয়েছেন মিষ্টি মুখ করার জন্যে৷
.
ও তাই৷ ঠিকাছে৷ আগে দরজা বন্ধ করুন৷
.
আবির দরজা বন্ধ করলো৷ অনু আবিরের হাতে কাটা চামচ তুলে দিয়ে বললো,,,নিন আমাকে মিষ্টি মুখ করান জলদি৷
.
এত তাড়া?
.
হু৷
.
আবির একটু মিষ্টি নিয়ে অনুর মুখে দিলো৷ অনু নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবির বুঝতে পারছেনা অনুর এমন তাকানোর মানে৷

কী হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
.
চামচটা আমার কাছে দিন৷
.
কেনো?
.
দিন আগে তারপর বলছি৷
.
অনু আবির যতটুকু মিষ্টি দিয়েছিলো অনু তার চাইতেও এক গুন কমিয়ে ওকে মিষ্টি দিলো৷
.
এটা কী হলো?
.
কী হলো?

আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি৷
.
নাথিং৷
অনু মিষ্টি গপাগপ করে খেতে লাগলো৷
জানেন আমার না ছানার মিষ্টি খুব ফেভারিট৷ এই মিষ্টিটাই খাই৷ তাই এখনও খাচ্ছি কিছু মনে করবেননা হ্যাঁ৷
অনু খাচ্ছে আর বকবক করছে৷ আবির বেচারা শরবত খেয়ে নিজেই নিজের মিষ্টি মুখ করছে৷

অনু মিষ্টি খাওয়াতে এতটাই মগ্ন ছিলো যে আবির কখন ওর পাশ থেকে উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো সেটাই টের পায়নি৷

একি আবির কোথায় গেলো৷
আবির!!আবির!!কোথায় আপনি৷

অনু ডাকছে বাট আবিরের কোনো রেসপন্স নেই৷

অনু ব্যালকনিতে যেতেই দেখলো আবির রেলিঙে হাত দিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷
অনু আবিরের কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো৷

কী হয়েছে??
.
কিছুনা৷ শুয়ে পড়ো যাও৷
.
আপনি শুবেন না??
.
না পরে৷
.
আমি এখন শুবো না আপনার সাথে চন্দ্র বিলাশ করবো আর গল্প করবো৷
.
আমার মুড নেই অনু৷ প্লিজ তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো৷
.
না আমি যখন বলেছি তখন গল্প করে তবেই শুবো হু৷
.
বললাম না গিয়ে শুয়ে পড়ো এক কথা বার বার বলতে হয় কেনো তোমায়?সব কিছুর জন্যই একটা মুড দরকার বুঝেছো৷ আমার এখন গল্প করার মুড নেই৷ (হাল্কা ধমক দিয়ে)
.
আপনি আমার সাথে এমন করে কেনো কথা বলছেন? আমি কী কোনো দোষ করে ফেলেছি?প্লিজ দোষ করে থাকলে বলুন আমি শুধরে নিবো তারপরও রাগ করবেননা(ছলছল চোখে)
.
তুমি কোনো দোষ করোনি৷ যাও শুয়ে পড়ো৷
.
অনু কেঁদে দিলো৷ কাঁদাটা যেনো এখন ওর নিত্যদিনের সঙ্গি হয়ে গেছে৷

“এখন আর কেউ আমাকে ভালোবাসে না৷ থাকবো না আর এই পৃথিবীতে একে বারে চলে যাবো সবাইকে ছেড়ে তখন সবাই বুঝবে হু৷
অনু বকবক করে ব্লাঙ্কেট টেনে শুয়ে পরলো৷

.
ধ্যাত ওকে বকে আমিও শান্তিতে থাকতে পারিনা৷ কেনো যে অতীত কে মনে করতে গেছিলাম৷ যাই ম্যাডামের রাগ ভাঙাই আগে৷
.
আবিরও গিয়ে অনুর পাশে শুয়ে পরলো৷ অনু বুঝতে পেরে আরেকটু সরলো৷আবির অনুকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও পারছেনা৷ অনুর গায়ে হাত দিচ্ছে তো আরেকবার সরাচ্ছে৷ এভাবে অনেক্ষণ করে শেষে অনুকে জড়িয়েই ধরলো৷
.
রাগ করেছো জানেমন?
.
ছাড়োন আমাকে৷ কেনো এসেছেন আমার কাছে?(ভাঙা গলায়)
.
কেমন বউ তুমি হ্যাঁ স্বামীর রাগও ভাঙাতে জানোনা?
.
আবির অনুর গা থেকে ব্লাঙ্কেট সরিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো৷
.
এই এই কী করছেন নামান নামান আমাকে বলছি৷
.
আবির অনুর কথায় কর্নপাত না করে ওকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো৷
.
তুমি না গল্প করতে চাইছিলে৷ শুরু করো৷
.
মুড চলে গেছে শখও মিটে গেছে৷
.
হঠাৎ মুড চলে গেলো?বকেছি সেই কারনে?
.
না৷
.
তাহলে কী নতুন কোনো মুড এড হলো নাকি৷ (ভ্রু নাচিয়ে)
.
একদম না
.
আচ্ছা৷
আবির ওর পকেট থেকে একটা বক্স বেড় করলো৷
.
এটা কী?
.
রিং৷ তোমাকে তো রিং পরাইনি৷ আমি এই রিং আমেরিকা থেকেই অর্ডার দিয়ে বানিয়ে এনেছিলাম৷
.
আবির অনুর হাত টেনে ওর অনামিকা আঙুলে রিং পরিয়ে দিলো৷
.
পছন্দ হয়েছে?
.
খুব৷ থ্যাংক ইউ এতো সুন্দর রিং গিফট করার জন্য৷
.
হুম৷ তা আমি তো তোমাকে গিফট করলাম৷ তোমার ওতো উচিত আমাকে কিছু গিফট করা তাই-না৷
.
কিন্তু আমার কাছে যে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই৷
.
কে বলেছে দেওয়ার মতো কিছু নেই?আমার টা আমি নিয়ে নিবো(চোখ টিপ দিয়ে)
.
অনু মুখ ফিরিয়ে নিলো৷ আবির এগিয়ে এসে অনুকে আবারো কোলে তুলে নিলো৷

“কী দিবেনা আমাকে উপহার?
.
অনু মৃদু হেঁসে লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লুকালো৷ অনুর লজ্জা পাওয়ার কারন অনুর সম্মতি৷আবিরও বুঝে গেলো৷সে মুচকি হেসে অনুকে নিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে গেলো৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৯

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৯
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

দেখতে দেখতে কেটে গেলো একমাস৷ হাতের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার কারনে অনু এখন টিউশনি করাচ্ছে৷ ভার্সিটি থেকে এসে কোনরকমে ফ্রেস হয়ে একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে চলে যায়৷ আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি৷

ত্রিশ মিনিটের পথ হাঁটতে হয় তাকে৷ প্রতিদিন হেঁটে হেঁটেই যায়৷ রিক্সার ভাড়া দেবার মতো টাকা নেই অনুর কাছে৷
🍁
ছাত্রর মা আজ অনুকে একটা কলা আর দুটো ব্রেড দিয়েছে৷ অন্যদিন চা বিস্কুট দিতো৷ অনু ব্রেড আর কলা নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে পুরে নিলো আজ আর রান্না করবেনা এগুলো দিয়েই রাতে খাবে৷ আর একটা আলু যে ছিলো ওটা দিয়ে কাল সকালে রান্না করে খাবে৷

আজ টিউশনির বেতন দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ছাত্রর মা বলে দিয়েছি ছয় সাত দিন পর টাকা দিবে তারা নাকি কী সমস্যায় পেড়েছে৷টাকা দিতে পারবেনা কথাটা শুনে অনুর চোখে পানি চলে আসলো৷ টাকাটা না দিলে যে কালকের খাবারটাও জুটবেনা৷ রুমিও মেস থেকে চলে গেছে ওকে সাহায্য করার মতোও কেউ নেই৷ রুমি যাওয়ার সময় অনুকে চাল ডাল সব দিয়ে গেছে এগুলো দিয়েই অনু পনেরো বিশ দিন কাটিয়েছে৷ কিন্তু এখন?

অনু মনে একরাশ কষ্ট নিয়ে টলমল পায়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷ রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটা পাঁচ বছরের ছেলে এসে অনুর পা জড়িয়ে ধরলো৷

“আপা আমারে কিচ্ছু খাইবার দিন৷ আমি দুইদিন কিচ্ছু খাইনা গো আপা৷
.
“আমিতো শুধু আজ দুপুরে খাইনি কিন্তু ছেলেটা দুইদিন ধরে খায়না৷ ”
অনু ব্যাগ থেকে ব্রেড আর কলা বেড় করে ছেলেটির হাতে দিলো৷ ছেলেটা খুশি মনে সেখান থেকে চলে গেলো৷
.
কাউকে খুশি করতে যেয়েও যে আমাদেরও কষ্ট পেতে হয়৷ হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম৷
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
🍁
আবির কালই দেশে ফিরেছে৷ এই কথা অনু জানেনা শুধু রিমি জানে৷ আবির রিমিকে মানা করে দিয়েছে যেনো অনুকে আবিরের দেশে ফিরার কথা না বলে৷

অনু ফিরার পথে দেখলো আবিরের মতোই একটা ছেলে যেনো কার সঙ্গে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ অনু ছেলেটাকে ভালো করে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখলো না এটাই আবির৷

অনু দৌড়ে আবিরের কাছে যেতেই আবির তার কারে উঠে পরলো৷ অনুও আর কিছু না ভেবে একটা সিএনজিতে উঠে পরলো আর ড্রাইভারকে বললো যাতে সামনের কারটাকে ফলো করে৷আবিরের কার স্লো মোশনে চলছিলো তাই সহজেই ওর কারকে ড্রাইভারের ফলো করতে সুবিধা হচ্ছিলো

আবিরের কার একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে থামলো৷ আবির জানেনা অনুও ওর পিছন পিছন আসছে৷তাই সে কোনদিকে না তাকিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো৷

অনুও সিএনজি থেকে নামলো৷এত বড় বাড়ি দেখে অনু কিছুটা অবাক হলো৷ কখনো আবিরের বাড়িতে আসেনি আগে৷

ড্রাইভারঃম্যাডাম ভাড়া কোথায়?
.
অনু ব্যাগ খুঁজে দু’টি দশ টাকার নোট পেলো আর সেটাই ড্রাইভারকে দিলো৷

“একি ম্যাডাম এখানে তো বিশ টাকা মাত্র কিন্তু ভাড়া তো চল্লিশ টাকা৷
.
চাচা আমার কাছে আর একটা কানাকড়িও নেই৷ প্লিজ আপনি এই বিশ টাকাটাই নিন৷ আমি নাহয় বাকি টাকা আপনাকে পরে দিয়ে দিবো৷
.
ড্রাইভার কিছুক্ষন টাকা টার দিকে তাকিয়ে রইলো৷ তারপর সিএনজি নিয়ে চলে গেলো৷
অনু কাঁপা-কাঁপা পায়ে আবিরের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো৷

মেইন ডুরে হাল্কা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো৷ ড্রয়িং রুমেই দুজন মধ্য বয়সি মহিলা আর পুরুষ বসে বসে টিভি দেখছেন আর গল্প করছেন৷ হয়তো উনারা আবিরের মা বাবা হবেন৷
অনু উনাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলো৷ আবিরের মা বাবা সালামের উত্তর দিয়ে দুজনেই প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে আছেন অনুর দিকে৷

বাবাঃবসো এখানে৷ কে তুমি?তোমাকে তো আগে দেখিনি?
.
অনু সোফায় বসে বললো,,আমি আসলে,,,
.
মাঃকী আসলে বলো?
.
আমি আসলে আবিরের বান্ধবী৷
.
বাবাঃ বান্ধবী? কিন্তু আবিরের তো কোনো মেয়ে বান্ধবী নেই৷ থাকলে আমাদের অবশ্যই বলতো৷
.
মাঃহ্যাঁ আবিরের কোনো মেয়ে বান্ধবী নেই৷ একটা মেয়েকে ভালোবাসতো আমার ছেলে মেয়েটি রাগ করবে ভেবে কোন মেয়ের সাথে কথাও বলতো না৷ ইভেন আমার বোনের মেয়ের সাথেও কথাও বলেনা৷যে মেয়ের জন্য এমন পাগলামু করতো সেই মেয়ের এখন কোনো হদিসই নেই৷
.
অনু কী বলবে কিচ্ছু মাথায় আসছেনা৷ মিথ্যা বলে সেইরকমের ফাঁসা ফেঁসে গেছে৷ আমতা আমতা করে বললো,,ওই আসলে,আমি আবিরের পুরনো ফ্রেন্ড৷ স্কুলের ফ্রেন্ড বলতে পারেন অনেক দিন ধরে আবিরকে দেখিনি তো তাই ভাবলাম ওকে দেখে আসি৷ আপনারা শুধু আবিরকে ডেকে বলুন যে ওর ফ্রেন্ড এসেছে আর কিছু বলতে হবেনা৷

মাঃঠিকাছে ওকে বলছি আমি৷
আবির!!তোমার এক ফ্রেন্ড দেখা করতে এসেছে৷
.
আবির উপরে ওর রুম থেকে জবাব দিলো,,,রুমে পাঠিয়ে দাও৷
.
বাবাঃওই যে দেখছো সিড়ির বাম পাশের দুই নাম্বার রুমটাই আবিরের৷
.
অনু উপরে গেলো৷ আবিরের রুমের দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে৷ ভয়ে ওর মন ধুরুধুরু করছে৷ বুকের মধ্যে একটা ফু দিয়ে ভিতরে চলে গেলো৷

আবির তখন শাওয়ার সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছিলো৷

আফটার শাওয়ার লুকে আবিরকে দেখে অনু কিছুটা ঘাবরে গেলেও ন্যাকামু না করে আবিরকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে সোজা জড়িয়ে ধরলো৷

আবিরকে কোন মেয়ে জড়িয়ে ধরাতে সে খুব রেগে গেলো৷ অনুর হাত দুটো নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে অনুকে ঘুরিয়ে ওর সামনে আনলো৷অনুকে দেখে আবিরের রাগ নিমিষেই উধাও৷

“অনু তুমি!!!!!!
.
হুম,,,(মাথা নিচু করে)
.
এখানে কী করছো তুমি? কেনো এসেছো?
.
আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি আর আপনাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইনা৷ প্লিজ আমাকে ছেড়ে আর যাবেননা৷
.
যখন আমি বলেছিলাম এই কথাটা তখন শুনেছিলে তুমি আমার কথা হুম৷ তাহলে ভাবলে কী করে যে আমি তোমার কথা শুনবো৷ একটা মিথ্যা প্রমানের ভিত্তিতে তুমি আমার সাথে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটালে৷ একটুও বিশ্বাস ছিলোনা তোমার আমার প্রতি৷ আমি যখন তোমাকে মানাতে চাইছিলাম তখন তুমি না মানছিলে আর না আমার কথা বুঝার চেষ্টা করেছিলে তাহলে এখন কোন অধিকার নিয়ে আমার সামনে এসেছো৷ চলে যাও এখান থেকে৷ আর হ্যাঁ আমি নিজেকে খুব কষ্ট করে গুটিয়ে নিয়েছি আমি আর চাইনা তুমি আবারো আমার লাইফে এসে আমার গোছালো জীবনকে অগোছালো করে দাও৷
.
প্লিজ আপনি আমার কথা বুঝার চেষ্টা করুন(কেঁদে)
.
স্টপ৷বাহ্ অনু৷ পাঁচ বছর আগে যখন আমি তোমাকে এই কথাটা বলেছিলাম তখন তুমি আমাকে কী যেনো বলেছিলে,,ওহ হে মনে পড়েছে৷ তুমি আমাকে বলেছিলে যে তুমি আমাকে ঘৃণা করো৷ তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম জানো?চোখ থেকে তখন পানি গড়িয়ে পরার অবস্থা ছিলো তবুও পড়েনি আটকে নিয়েছিলাম চোখের অশ্রুকে কারন ছেলেদের যে কাঁদতে বারন৷ আর আজ আমি তোমার কথাই তোমাকে রিপিট করছি আর তাতেই তুমি কেঁদে কেটে শেষ৷ ওয়াও৷
দেখো অনু আমি আর কথা বাড়াতে চাইনা প্লিজ চলে যাও এখান থেকে৷
.
অনু আবিরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো৷

অনু শুধু আবিরকে চেয়ে চেয়ে দেখছে৷ এ যেনো অনুর দেখা এক নতুন আবির৷
যে আবির ওর কথা শুনার জন্য পাগল ব্যাকুল হয়ে থাকতো সেই আবির এখন অনুর কোন কথাই শুনতে চাইছেনা৷ এর জন্যে তো স্বয়ং সে নিজেই দায়ী৷

অনু আবিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো৷ দরজার বাইরে পা রাখতেই আবির ওর হাত ধরে টেনে আবার রুমের ভিতর নিয়ে গেলো৷
অনুকে ওর সামনে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷

“এতো রাগ তোমার আমার প্রতি এখনো৷ তোমাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে নিজেকে শান্ত রাখতে চাইছিলাম কিন্তু পারিনি৷ আমার মনে হলো আমি তোমাকে একটু বেশিই হার্ট করে ফেলেছি৷ তুমি বোধহয় আমাকে ভালোবাসোনা কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি৷ আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো জানি,, আমাকে মাফ করে দাও অনু প্লিজ৷

অনু আবিরের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে বললো,,,

জানেন আমি না খুব খারাপ৷ দেখেন না পাঁচ বছর ধরে আমি আপনাকে কষ্ট দিয়ে গেছি কিন্তু একবারো মাফ চাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি৷ কিন্তু আপনি আমাকে দু একটা কথা বলেই আমার কাছে মাফ চেয়ে নিলেন৷ আসলে জানেন আমি না ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই৷ নাহলে কীভাবে পারলাম আপনার ভালোবাসাকে পায়ে টেলে দূরে সরিয়ে দিতে৷
.
হ্যাঁ যদি তোমার আর আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকতো তাহলে বিয়ে হয়ে এতদিনে আমাদের একটা বেবিও থাকতো৷
.
যাহ্৷
.
ভালোবাসি অনু৷
.
আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি৷
.
অনু আবিরের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,,চেঞ্জ করে নিন আমার আনকম্ফরটেবল ফিল হচ্ছে৷
.
এতক্ষণ আমার উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে এখন তোমার আনকম্ফরটেবল ফিল হচ্ছে হুম?
.
হুম আমি বাইরে যাচ্ছি আপনি চেঞ্জ করে আসুন৷
.
কেনো? তুমি বাইরে যাবে কেনো? তোমার সামনে পোষাক পরলে কী সমস্যা? তুমি তো আমার হবু বউই৷
.
হবু বউ এখনও বউ হয়নি৷ আমি বাইরে যাচ্ছি৷
অনু হেঁসে বাইরে চলে গেলো৷ সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো আবিরের মা ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন৷ উনার এমন চাহনি দেখো অনুর মন ধক করে উঠলো৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৮

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৮
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু চিঠিটা ভাজ করে ডায়েরির ভিতরে রেখে দিলো৷ ওর চোখ বেয়ে অঝোরে নোনা জল গরিয়ে পরছে৷

“আমি যদি আবিরকে একটা বার বলতাম তাহলে হয়তো আজকের এই দিনটি দেখতে হতোনা৷
খিদেও পেয়েছে প্রচুর৷ অনু খাট থেকে নেমে রান্না ঘরে গেলো৷ পাতিল উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো কিন্তু খাওয়ার মতো কিছু নেই৷
অনু দুটো রুটি আর আলুর ভাজি করলো৷ খাবারটা মুখে দিতে গিয়েও কেঁদে দিলো৷
আজ কয়টা দিন হয়ে গেলো মাছ মাংস খায়না সে৷ তেলের ভাজা জিনিস সবসময় খাওয়া যায় নাকি৷ কিন্তু খেতে তো হবেই না খেলে চলবে কী করে৷ অনু রুটি টুকরো করতে যেতেই রুমি এসে ওর হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে নিলো৷
.
“প্লেট নিয়ে নিলে কেনো আপু? আমার খুব খিদে পেয়েছে আমি খাবো তো৷
.
আমি কী তোমাকে না করেছি নাকি৷ আজ তুমি আমার সাথে খাবে৷
.
না আপু আমারটা আমি খেয়ে নিবো৷ এইতো দেখোনা ভাজি করেছি আর রুটি ওগুলো খেলেই আমার পেট ভরে যাবে৷
.
জানি তো কী পেট পুরে খাও তুমি৷ আসার পর থেকে একদিনও দেখিনি ঝুল দিয়ে ভাত খেতে সবসময় এরকম শুকনো খাবার খাও কী করে বলোতো৷
আজ মা আমার জন্য ইলিশ মাছ আর দেশী মুরগির তরকারি রান্না করে পাঠিয়েছেন৷ কিছুক্ষণ আগেই বাবা এসে দিয়ে গেলেন৷ আমি একা খাবো কেনো?তাই তুমিও খাবে আমার সাথে৷
.
কিন্তু আপু আমাদের রুমে তো আরও তিনজন আছে ওদেরকে তো বললেনা৷ আমি এতিম বলে আমাকে দয়া করে খাওয়াচ্ছো?
.
ছিঃ ছিঃ অনু এসব তুমি কী বলছো৷ এসব তোমার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করিনি৷ আমার ওদের সবার মাঝে তোমাকেই ভালো লাগে৷ কেমন একটা টান অনুভব হয় তোমার প্রতি৷ তোমার এই মায়াবী চেহারা,কথা বার্তা এসব আমার খুব ভালো লাগে অনু৷ নিজের বোন মনে করি তোমায়৷ আর তুমি কী না আমাকে এসব বলছো৷ এই কয়েকদিনে এটাই মনে হয়েছে তোমার৷ এই চিনেছো তুমি আমাকে৷
.
আপু আমি তোমার মনে কষ্ট দিতে চাইনি স্যরি৷
.
আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে৷
.
রুমি একটা প্লেটে করে ভাতের সাথে মাছ, মাংস নিয়ে এলো৷

“অনু হা করো৷
.
একি আপু তুমি কী আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে নাকি?
.
হুম৷ তাতে কী?হা করো৷
.
অনু হা করলো৷ রুমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছে আর অনু কাঁদছে আর খাচ্ছে৷

“আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছো কেনো?
.
জানো আপু আমাকে না বাবা ছাড়া কেউ নিজ হাতে খাইয়ে দেয়নি৷ বাবার হাতেও খেয়েছিলাম দশ পনেরো বছর আগে৷ বড় হওয়ার পর আর খাইনি৷ কোন নারীর হাত থেকে এই প্রথম খাবার খাচ্ছি তো তাই৷
.
হুম৷ কিন্তু তোমার মা উনি কোথায়?
.
আমার মা তো আমার জন্মের সময়ই মারা গেছিলেন৷ খুব কষ্ট করে আমার বাবা আমাকে মানুষ করেছিলেন৷ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েও করেননি৷ সব সময় আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছেন৷
.
থাক কেঁদোনা বোন৷কেউ তো আর অমর হয়ে জন্মায় না৷ মানছি আংকেল কে খুন করা হয়েছে উনার সাথে তোমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে কিন্তু এখন চাইলেই তুমি তো আর তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি দিতে পারবেনা৷
🍁
রাতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে অনু৷ মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে৷ বৃষ্টির তালে তালে যে বাতাসটা বয় সেটা খুব ভালো লাগে অনুর৷

“যদি এমন হতো বৃষ্টির পানির সাথে আমার সব দুঃখ কষ্ট চলে যেতো৷
.
রুমিঃঅনু কী করছো?
.
এইতো আপু বৃষ্টি দেখছি৷ কিছু বলবে?
.
হ্যাঁ৷ ওয়েট আসছি৷
.
রুমি হাতে করে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আসলো৷
এনে অনুর খাটের উপরে সব কিছু বেড় করে রাখলো৷
.
একি এসব দিয়ে কী হবে আপু?
.
বাহ্ রে ফ্যাশন ডিজাইনার কী কাগজ কেটে সেলাই করে হয়ে যাবে নাকি৷ আমি বাবাকে দিয়ে এই পাঁচ গজ কাপড়,রেশমি সুতো,আর এই পাথর গুলো আনিয়েছি৷ আর এই দেখো চাকও আছে৷ আমার বাবাও মধ্যবিত্ত তা না হলে আরও অনেক কিছু আনাতাম৷
.
না আপু তুমি আমার জন্য যতটুকু করছো ততটুকুই যথেষ্ট৷আমি সত্যিই তোমার কাছে খুব কৃতজ্ঞ৷
.
আচ্ছা, এবার ঝটপট কাজে লেগে পরতো৷
🍁
পরের দিন~~~~

অনু আর রিমি বট তলায় বসে আছে৷ রিমি বসে বসে বাদাম খাচ্ছে৷অনুকে দিচ্ছে অনু নিচ্ছেনা৷

“আবে ইয়ার কী হয়েছে বলবি তো৷ এভাবে এখানে বসিয়ে রাখার কী মানে?এমনিই আমার বট গাছ দেখলে কেমন জানি ভয় লাগে তার মধ্যে আবার তুই আমাকে বট গাছের নিচে বসিয়ে রেখেছিস৷
.
রিমি আমি অনেক করে ভুল করে ফেলেছি৷
.
এটাতো এখন নিয়ে পাঁচশবার বলে ফেলেছিস৷ কী ভুল করেছিস সেইটাতো এটলিস্ট বল৷
.
আমি আবিরকে ভুল বুঝেছি রিমি৷আবির কোনো ভুল করেনি তারপরও ওকে ভুল বুঝে এসেছি৷ আবির তো চলে গেছে তাই-না৷ ওতো আর ফিরবে না৷ আর ফিরবেই বা কেনো ওকে যে আমি সেদিন খুব হার্ট করেছিলাম রে৷
.
তা এতো বছর পর তোর মনে হলো যে তুই কাজটা ভুল করেছিস ওয়াও৷
.
আমি এসব জানতামও না যদি রনি আমাকে না বলতো৷
.
রনি!!রনি কী বলেছে তোকে?
.
অনু রিমিকে কালকের ঘটনা সব খুলে বললো৷

“লাইক সিরিয়াসলি রনি এসব করেছিলো? এখন কী করবি?
.
কী আর করার প্রায়শ্চিত্ত আর আফসোস করা ছাড়া কিছু করার নেই৷
🍁
রাতে~~~

ক্রিং,ক্রিং,ক্রিং আবিরের ফোন বাজছে৷ আবির সবেমাত্র মিটিং সেড়ে একটু রেস্ট করার জন্য বসেছিলো৷ ফোনের স্ক্রিনে রিমির নাম্বার দেখে তারাতাড়ি রিসিভ করলো৷

“হ্যা বলো রিমি কী খবর?
.
ভাইয়া অনু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে৷
.
এখন বুঝতে পারলেই কী আমি তো চলেই এসেছি৷
.
ভাইয়া অনু আর আপনার মধ্যে যে মিসআন্ডারস্ট্যানডিং হয়েছিলো সেটা একটা নাটক ছিলো৷ রনি আমাদের ক্লাসমেট ও আপনাদের আলাদা করার জন্য আপনার ফেইক ছবি দেখিয়েছিলো অনুকে৷আর অনু ছবিগুলো দেখেই আপনার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলো৷
রিমি আবিরকে সব খুলে বললো,,

“ভাইয়া অনু নিজের কাজের জন্য ভিষণ অনুতপ্ত৷ আজ ভার্সিটিতে এসে শুধু কেঁদেছে এটা ভেবে যে এই পাঁচ বছর ধরে ও আপনাকে ভুল ভেবে এসেছে৷ আর ও এটা মনে করছে যে আপনি ওকে ভুলে যাবেন আর ওর কাছে ফিরবেননা৷
.
আমি পাঁচ বছর ধরে ওকে ভুলিনি আর এখন ভুলে যাবো?
.
হুম
.
আর একটা কথা ওকে তুমি বলবেনা যে আমি তোমার সাথে কথা বলি৷ আমি বাংলাদেশে আসবো কিন্তু এখন নয়৷ হুট করে দেশে ফিরে যাওয়াতে বিজন্যাসে কিছু প্রবলেম দেখা দিয়েছে সব ঠিকঠাক করে তবে ফিরতে হবে৷
আচ্ছা এখন আমি রাখছি মাথাটা ব্যাথা করতেছে৷
.
ওকে ভাইয়া টেক কেয়ার বাই৷
.
আবির ফোনটা রেখে একটু মুচকি হাসলো যে ওর আর অনুর মধ্যে সব ঠিকঠাক হতে যাচ্ছে৷ অনু ওর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৭

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

পরেরদিন~~~~
আবির আর রিমি একটা কফিশপে বসে আছে৷ রিমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আর আবির কপালে হাত রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷

রিমিঃআশ্চর্য৷ আমাকে কেনো এনেছেন খবর দিয়ে এখানে? আর এনেছেন তো এনেছেন কিছু বলছেননা কেনো?আমাকে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে৷

আবির কপাল থেকে হাত সরিয়ে রিমির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো৷

“তোমায় আমাকে সাহায্য করতে হবে৷
.
সাহায্য! কী ধরনের সাহায্য?
.
তুমি তো অনুর বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই-না৷ তুমি নিশ্চয় জানো অনু কোথায় থাকে?৷
.
হ্যাঁ জানিতো অনুতো অনুর বাড়িতেই থাকে(জেনেও না জানার ভান করে)
.
না অনু ওর বাড়িতে নেই৷ আমি গিয়েছিলাম সেখানে অনুর চাচী বললেন,অনু নাকি আরেকটা ছেলের হাত ধরে চলে গেছে আর অনুর বাবা সেটা সহ্য করতে না পেরে হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছেন৷
.
ছিঃ মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে এতো নিচ কথা বলতে পারে৷ অনু কোনো ছেলের হাত ধরে যায়নি বরং ওকে ওর বাড়ি থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে৷ আর অনুর বাবা অনুর জন্য হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাননি উনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে৷আর অনুর বিয়ে দিয়েই শুরু হয় ষড়যন্ত্র৷
.
অনুর বিয়ে মানে?
.
অনুর বিয়ে ঠিক ছিলো সেদিন যেদিন ওর বাবাকে হত্যা করা হয়৷
.
ও রাজী ছিলো বিয়েতে৷
.
হুম৷
.
আবির কথাটা শুনে খুব কষ্ট পেলো৷ অনু ওর উপরে রাগ করে বিয়ে পর্যন্ত করতে চাইছিলো৷
.
কিন্তু কে মেরেছে উনাকে? আর অনুর চাচা চাচী খুনিকে ধরতে পারেননি?
.
রিমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,যে জায়গায় অনুর চাচা চাচী নিজেই খুনি সেই জায়গায় উনারা খুনিকে কীভাবে ধরবেন৷
.
কীহ!!! অনুর চাচা চাচী উনাকে খুন করেছে নিজের ভাইকে বাট ওয়াই?
.
প্রোপার্টির জন্য হত্যা করেছে৷ আর অনু এখন লেডিস মেসে থাকছে৷ কোথায় মেস সেটা বলেনি৷
.
আবির আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো আবির ফোন নিয়ে একটা কেবিনে ঢুকে গেলো৷
প্রায় পাঁচ ছয় মিনিট পর বেড়িয়ে আসলো৷

“কোথায় গেছিলেন আপনি?
.
একচুয়েলি ম্যানেজার কল দিয়েছিলো৷ আমাকে আজ রাতের ফ্লাইটেই ফিরে যেতে হবে৷সেখানকার নামকরা বিজন্যাস ম্যান আমার সাথে ডিল করতে চাইছেন৷ আর ডিলটা না করলে আমার কোম্পানিরও খুব লস হয়ে যাবে৷
একদিকে অনু আরেকদিকে কোম্পানি৷ কী করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা৷ ওর জন্যই তো দেশে ফিরেছিলাম কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখো ওর সাথে ভালো করে দু’টো কথাও বলতে পারিনি৷
.
চিন্তা করবেননা ভাইয়া আপনার অনু আপনারই
থাকবে সেটার সিওরিটি আমি আপনাকে দিচ্ছি৷ এখন আপনার উচিৎ আপনার কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷
.
“অনুকে দেখে রেখো বোন৷
আবির ওর পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজ বেড় করে রিমির হাতে দিলো৷

“এটা অনুকে দিবে৷
.
আচ্ছা৷
.
🍁
অনু ভার্সিটির গেট পেরিয়ে মাঠে পা রাখতেই পিছন থেকে কেউ ওর ওরনা ধরে টান মারলো৷ অনু ভালো করেই জানে এ কাজটা কে করতে পারে৷ সে রেগে পিছনে তাকিয়ে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো৷

“রনি,,কোন সাহসে তুই আমার ওরনা টান দিয়েছিস৷ কতোবার বলবো যে এসব অসভ্যতামী আমার সাথে একদম করবিনা৷
.
রনিঃএখনো এতো রাগ?
.
তো কী৷ আমার বাবা নেই বলে কী আমাকে অসহায় আর অবলা হয়ে থাকতে হবে নাকি৷ অন্যায়তো অন্যায়ই৷ আর আমি অন্যায়কে একদম প্রশ্রয় দেইনা৷ এতই যদি অসভ্যতামী করার শখ থাকে তাহলে যা না যা রাস্তায় যা তোদের মতো বখাটেদের এটাই আসল জায়গা৷ তোদেরকে ভার্সিটিতে নয় রাস্তায়ই ভালো মানায়৷ভার্সিটিতে কেনো আসিস এখানে তো ভালো মানুষেরা পড়তে আসে৷তুই তো ভালো মানুষ নস৷
.
ওহ্ অনু তোর ওই রাগের উপরেই তো আমি ফিদা৷ তোর কথাগুলো না আমার খুব ভালো লাগে শুধু কথাই না তোকেও ভালো লাগে৷ বলতে লজ্জা নেই আমি তোকে সেই পাঁচ ছয় বছর ধরেই ভালো বেসে আসছি বাট তুই পাত্তাই দিচ্ছিস না৷
.
ওই তা তুই আমাকে ভালোবাসিস কী প্রুফের ভিত্তিতে কথাটা বলছিস?
.
তোর প্রমান লাগবে,হাহাহা৷ যে প্রমান তোকে পাঁচ বছর আগে দিয়েছি সেটার চাইতে বেটার প্রমান হতেই পারেনা৷
.
মানে কোন প্রমানের কথা বলছিস তুই?
.
লাইক সিরিয়াসলি, তুই বুঝতে পারছিসনা আমি কোন প্রমানের কথা বলছি৷ তাহলে শুন,,মনে আছে তোর,রিয়া একদিন আবির আর আর একটা মেয়ের ছবি তোকে দেখিয়েছিলো?
.
হ্যাঁ মনে আছে তো?
.
সেগুলো এডিট করা ছিলো৷ মানে সেখানে আবিরের চেহারা বসানো ছিলো৷ আর তুইও কী বোকা এখনকার যুগের মেয়ে হয়ে সেটা বিশ্বাস করে নিলি এত সহজে৷ শুধু তাই নয় তোকে যে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়েছিলো সেটাও আমিই ছিলাম৷ ছবিটা দেখে এরকমটা মনে হয়েছিলো যেনো আবির কোনো মেয়েকে কিস করছে৷ হ্যাঁ করছিলো কিন্তু কাকে করছিলো জানিস নিজের কাজিনের পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে চুমো দিচ্ছিলো আর তুই কী মনে করেছিস যে আবিরের অন্য কোন মেয়ের সাথে এ্যাফায়ার আছে আর তাকেই কিস করছে হাহাহা৷তুই জানি আমাকে একটা কথা বলিস সবসময় যে আমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই৷ সত্যি কথা বলতে কিন্তু তুই কারও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নস৷ তা না হলে কত সহজেই বিশ্বাস করে নিলি আর এক দুই বছরের সম্পর্কে ইতি টেনে দিলি৷ তোকে দেখেনা আমার খুব আফসোস হয় এটা ভেবে যে তুই কেনো এত বোকা৷
এখন তুই বল আমি যদি তোকে ভালো না বাসতাম তাহলে কী তোকে পাওয়ার জন্য এসব করতাম,উহু করতাম না৷আর কী প্রুফ চাই তোর বল৷

অনু রেগে আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো রনির গালে৷
.
খুব খারাপ তুই রনি খুব খারাপ৷ তোর এই ভুলের কোনো ক্ষমা নেই৷ কক্ষনো তোকে ক্ষমা করবোনা আমি কক্ষনো না৷
.
আজব তোকে কী জোড় করেছিলাম নাকি বিশ্বাস করার জন্য৷
.
অনু কেঁদে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ রিমিও তখন গেটের কাছেই ছিলো অনুকে চলে যেতে দেখে দৌড়েঁ ওর কাছে চলে গেলো৷

“অনু কী হয়েছে তোর?তুই চলে যাচ্ছিস কেনো?
.
আমাকে ছাড় রিমি৷ আমার ভালো লাগছেনা আমি মেসে যাবো৷
.
রিমিও জানে অনু যা বলে তাই করে৷ তাই তাকে আর আটকালো না৷

“যাবি ঠিক আছে যা৷ কিন্তু এটা নিয়ে যা৷ (আবিরের দেওয়া কাগজ হাতে দিয়ে)
.
কী এটা?
.
জানিনা মেসে গিয়ে খুলে পড়িস বাই৷
🍁
অনু একটা রিক্সা ধরে মেসে ফিরে গেলো৷কাগজে কী লিখা আছে সেটা পড়ার জন্য একেবারে ব্যাকুল হয়ে আছে ও৷ কোনমতে ফ্রেস হয়ে এসে কাগজ খুললো,,,,

প্রিয়,,
“অপরাজিতা”৷

“প্রথমেই তোমাকে অপরাজিতা বলার জন্য স্যরি বলে নিচ্ছি৷ ভালো আছো আশা করি৷আমার চিঠি দেখে বোধহয় তুমি অনেক রাগ করেছো৷ কিন্তু কী করবো বলো আমি যে এখনো জানতে পারিনি তোমার আমার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার কারন৷ কেনো তুমি আমাকে নেগলেক্ট করছো কী অপরাধ ছিলো আমার৷ আমার জানামতে আমি কোন অন্যায় করিনি যার উপর ডিপেন্ড করে তুমি সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবে৷ এই আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি৷ সম্পর্ক তো আর একজনের পক্ষে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়৷ তুমি ছাড়া আমি আর কোন মেয়ের দিকে ভালো করে তাকাইনি কথাও বলিনি শুধু এটাই মনে করতাম যে ওদের দিকে তাকালে কথা বললে আমার অনু রাগ করবে৷কিন্তু তুমি বিয়ে করতে পর্যন্ত রাজী হয়ে গিয়েছিলে৷আমার কী মনে হয় জানো অনু তুমি আমাকে কোনদিন ভালোই বাসোনি৷ তা না হলে আমাকে ইগনোর করার কারনটা এটলিস্ট বলতে৷ আমি বোধহয় তোমাকে একটু বেশিই প্রেশার দিয়েছিলাম যার জন্যে তুমি বাধ্য হয়ে আমাকে ভালোবেসেছিলে৷ সত্যিকারের ভালবাসাটা এমন হয়না অনু৷ সত্যিকারের ভালোবাসাটা অনেক মজবুত হয়৷ একজন আরেকজনের প্রতি অটুট বিশ্বাস থাকে যাই হয়ে যাক না কেনো তারা আলাদা হবেনা কিন্তু তুমি কী দেখলে শুনলে জানিনা যার দরুন তুমি আমার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটালে৷ তোমার থেকে দূরে থাকার জন্যই আমেরিকায় গিয়েছিলাম কিন্তু দেখো সেখানেও থাকতে পারিনি আবারো বেহায়ার মতো ছুটে আসলাম তোমাকে এক নজর দেখবো বলে কিন্তু তুমি আমাকে এর বিনিময়ে কী দিলে একরাশ ঘৃনা৷ তোমার কথা আমি রাখবো অনু আমি আর স্বেচ্ছায় কোনদিন তোমার সামনে আসবোনা৷ আমি বোধহয় ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই তাইতো যাকে এতো ভালোবাসতাম তার কাছ তেকে শুধু ঘৃনাই পেলাম৷ আমি চলে যাচ্ছি আজ আর কোনদিন ফিরবো কী না জানিনা,তবে না ফেরার সম্ভবনাটাই বেশি৷ বাংলাদেশে থাকলে আমার আর তোমার কোন না কোন ভাবে দেখা হয়ে যাবে এতে তোমার মনে আমার জন্য আরও ঘৃণার সৃষ্টি হবে৷ আমি যে চাইনা আর তোমার ঘৃণার পাত্র হতে৷ ভালোবাসার মানুষটার মুখ থেকে ঘৃনা শব্দটা শুনা যে কতটা কষ্টের সেটা তুমি বুঝবেনা অনু৷ এখনো খুব ভালোবাসি তোমায় আর বেসেও যাবো৷ভালো থেকো আর আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো৷

ইতি তোমার ঘৃনার
“আবির”

অনু চিঠিটা পড়ে কেঁদে দিলো৷ চিঠির অনেক লিখাই লেপ্টে গেছে বুঝাই যাচ্ছে আবির কেঁদেছে আর চিঠিটা লিখেছে৷

“আমি কী করে ওকে এতোটা অবিশ্বাস করলাম কী করে৷ একটা ফটোর উপর ভিত্তি করে সম্পর্কের বিচ্ছেদ টানলাম৷ আবির আসলে আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই৷ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি প্লিজ ফিরে এসো আবির প্লিজ ফিরে এসো৷ একদিকে বাবা আরেকদিকে তুমি৷ পাঁচ বছরেও তোমাকে এতটা মিস করিনি যতটা এই একঘন্টা যাবৎ করছি৷ এখন সত্যিটা জানি আমি আবির আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি আবির হারিয়ে ফেলেছি৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৬

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৬
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু তার নীল ডায়েরি বের করলো৷ এটা সে হাত ছাড়া করেনা৷ নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া মুহুর্ত,সুখ, দুঃখ সব লিখে রাখে ডায়েরি’তে৷
ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই সেখানে লিখা “ভালোবাসি আবির”৷

অনু লিখাটার উপরে হাত বুলালো৷
তারপর পরের পাতা উল্টালো সেখানে লিখা,,,,,

“২০১৪ সাল পহেলা ফাল্গুন৷এই দিনটা আমার কাছে সব চেয়ে স্মৃতিময় একটা দিন৷
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে সারা রাস্তায় ফুলে ভরে গেছে৷ কেউ ফুল বিক্রি করছেতো কেউ কিনছে৷
আমিও এগিয়ে গেলাম ফুল কেনার জন্য একজন লোকের কাছে৷লোকটা বকুল ফুলের মালা এনেছে৷ এই বকুল ফুলটা বরাবরই আমার খুব পছন্দের তাই এই ফুলে কাউকে ভাগ দেইনা আমি৷ লোকটার কাছ থেকে ফুলের মালাটা নিতে যেতেই কেউ ছো মেরে নিয়ে নিলো৷
আমি রেগে পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা ছেলে৷ ছেলেটা আর কেউ নয় আমার আবির ছিলো৷ তখন ওকে চিনতাম না৷ এখান থেকেই আমাদের দেখা চেনা, সাক্ষাৎ শুরু হয়৷
আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আবির আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেঁসে লোকটাকে বললো,,

“এই বকুলের মালা কত টাকা মামা?
.
পনেরো টাকা৷
.
অনুঃএক্সকিউজ মি এই মালাটা আমার প্লিজ আমার মালাটা আমাকে দিয়ে দিন৷
.
আবিরঃবকুল ফুলকে এতো ভালোবাসেন৷ এক কাজ করুন আপনি বরং এই যে দেখছেন বেলীফুল ওগুলো কিনুন৷
.
আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা গোলাপ নিয়ে ওর মুখে ছুড়ে মেরে চলে আসলাম৷
আসার সময় পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সে এই গোলাপটাও কিনছে৷ পাগল কোথাকার হুহ
🍁
রাত নয়টা৷ বাবার সাথে গল্প করে ব্যালকনিতে গেলাম৷ খুব সুন্দর মৃদু বাতাস বইছে৷ব্যালকনিতে যাওয়ার একটা কারন আছে৷ আকাশে আজ খুব বড় চাঁদ উঠেছে৷ আমি একমনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ প্রকৃতিকে নিখুত ভাবে দেখলে যেনো মনের মধ্যে আনন্দের একটা ঢেউ বয়ে যায়৷আকাশের দিক থেকে মুখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা ঝুড়ি৷ঝুড়িটা দেখেই আমি অজান্তেই হেঁসে ফেললাম৷ঝুড়িটা হাতে নিয়ে রুমে গেলাম৷
ঝুড়ির ভিতরে একটা বকুলের মালা, দুটো বেলীফুলের মালা,চৌদ্দটা গোলাপ,আর দু মুঠো কাচের চুড়ি,চকলেট আর সাথে দুটো লাল,নীল চিরকুট৷
চিরকুটটা খুলতে না খুলতেই ফোন বেজে উঠলো আমি তারাতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম,,

“হ্যালো অপরাজিতা কেমন আছো? এন্ড আই হোপ আজকের পাঠানো গিফ্ট তোমার পছন্দ হয়েছে৷
.
ওই ওই কে আপনি বলুন তো?আপনাকে কতবার বলবো যে আমাকে অপরাজিতা বলে ডাকবেননা৷
.
তো কী নামে ডাকবে কদম,হাহাহা৷ দেখো অপরাজিতা তোমার নাম আমি জানিনা তবে তোমাকে যেদিন দেখেছিলাম সেদিন তোমাকে একেবার সদ্য ফোটে ওটা অপরাজিতা ফুলের মতোই লাগছিলো তারমধ্যে আবার ড্রেসের কালারও এই ফুলের মতোই ছিলো৷তাই তোমাকে আমি ভালোবেসে অপরাজিতা বলে ডাকি৷
.
দেখুন আমি আপনাকে চিনিওনা কে আপনি৷ আর এভাবে কেনো চিরকুট দেন সামনে আসেননা কেনো?ভয় পান নাকি?
.
আমি আর ভয় নেভার৷তবে এক কাজ করো ফোনটা রেখে চিরকুটটা খুলে পড়ে দেখো তাহলেই চিনতে পারবে আমি কে?

ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো৷
আমি তারাতাড়ি নীল চিরকুটটা খুললাম সেখানে লিখা,,

“তোমাকে আমি গোলাপও বলবোনা আর ডালিয়াও বলবোনা৷ তুমি আমার কাছে লতা পাতায় ফুটন্ত অপরাজিতা ফুল৷ জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে কে আমি যে তোমাকে প্রত্যেকদিন ফুল আর চিরকুট পাঠাই৷তোমাকে আমি ফুলগুলো পাঠাই কারন তোমায় ভালোবাসি৷ আর আমি আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটা এভাবেই করতে চাই৷ কারন আমি চাই তুমি আমার প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে আমার ছোট ছোট পাগলামুতে আকৃষ্ট হও৷ আমার এমন অদ্ভুদ উপহার পাঠানোতে জানি তুমি আগে অনেক বিরক্ত হতে কিন্তু এখন হওনা কারন এখন এমন উপহার পাঠানো দেখলে তুমি বিরক্তের চাইতে খুশিই বেশি হও অপেক্ষায় থাকো কখন উপহার পাবে আর আমার পাগলামুময় চিরকুট গুলো খুলে পড়বে৷তুমি উইক হয়ে পরেছো আমার আর আমার উপহারের প্রতি৷
আর আমি এটাও জানি তুমি আগে নীল চিরকুটটাই খুলবে৷ তাই নীল চিরকুটটা পড়ে লাল চিরকুটটা খুলও সেখানেই আমার পরিচয় দেওয়া আছে৷

কথাগুলো যা বলেছে সব সত্যি৷ আমি আগে বিরক্ত হতাম কিন্তু আস্তে আস্তে এগুলো আমার অভ্যাস হয়ে গেছে ফুল আর চিরকুট না পেলে একদম ভালো লাগেনা আমার৷ ব্যাক্তিটার প্রতিটি কথা আমার মনে গেঁথে যায় একেবারে৷
আমি নীল চিরকুটটা ভাজ করে রেখে তারাতাড়ি লাল চিরকুটটা খুললাম সেখানে লিখা,,,

“আমি জানি তুমি আমার পরিচয় পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পরেছো তাছাড়া আমারো ভালো লাগছেনা আমার পরিচয় গোপন করে রাখতে তাই আজ বলেই দিলাম আমার পরিচয়৷,,,,,,

“আমি আবির রায়হান চৌধুরী৷ নামটা অনেক জায়গাতেই শুনেছো৷ হয়তো তোমার বিশ্বাস না ও হতে পারে যে টপ বিজন্যাস ম্যান আবির তোমাকে চিরকুট ফুল পাঠায়৷ অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য৷ আজ আমার সাথে তোমার দেখাও হয়েছে ওই যে তোমার হাত থেকে বকুলের মালাটা নিয়ে নিছিলাম আমি সেই আবির৷ বকুলের মালা নেওয়ার আসল কারন ছিলো তোমার এ্যাটেনশন পাওয়া৷
আশা করি আমার ব্যাপারে তোমার আর কিছু জানার দরকার নেই এটুকুই যথেষ্ট৷আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ তবে হ্যাঁ এটা বলবোনা যে তোমাকেও ভালোবাসতে হবে৷ আমিই নাহয় বেহায়া হয়ে তোমাকে ভালোবেসে যাবো৷ ভালো থেকো৷ “ভালোবাসি অপরাজিতা”৷

আমার চোখ থেকে কখন পানি গরিয়ে পরেছে সেটা বুঝতেই পারিনি৷ টপ বিজন্যাস ম্যান আবির আমাকে ভালোবাসে আমার জন্য ফুল, চিরকুট পাঠায় ওহ্ মাই গডন্যাস৷
🍁
দেখতে দেখতে কেটে যায় এক বছর৷ আবির আর অনু একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসে৷দুষ্ট মিষ্টির সম্পর্কে এই দুজন যেনো বাবুই পাখির জোড়া৷

একদিন অনু ক্যান্টিনে বসেছিলো৷তখুনি ওর ফ্রেন্ড রিয়া আসে৷

“কী করছিস?
.
এইতো বসে আছি দেখছিস না
.
কী শুনলাম আবিরের ব্যাপারে?
.
কী শুনেছিস?
.
শুনলাম আবিরের নাকি আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন আছে৷
.
অনু কথাটা শুনে রিয়ার গালে মিনি একটা চড় বসিয়ে দিলো৷

“আমার আবিরের ব্যাপারে কতটা জানিস তুই যে আবুল তাবুল বকছিস৷ ওকে আমি বিশ্বাস করি৷ ও আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতেই পারেনা৷
.
বয়ফ্রেন্ডকে এতো বিশ্বাস করিস৷ ভালো বিশ্বাস করা ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস ভালো নয়৷
.
কী প্রমান আছে তোর কাছে কী প্রমানের ভিত্তিতে তুই আবিরের নামে উল্টা পাল্টা বলছিস৷
.
প্রমান দেখবি এই দেখ প্রমান৷
.
রিয়া কতগুলো ছবি বেড় করে দেখালো৷ ছবিতে আবির একটা মেয়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে আছে৷
.
হুহ চড় তো বসিয়ে দিলি এখন এসব কী৷ আমি তোর ফ্রেন্ড তোর ভালো চাই তাই ছবিগুলো দেখিয়েছি৷ এখন বিশ্বাস করা না করা তোর ব্যাপার৷
.
রিয়া চলে গেলো৷ অনু ফোন বেড় করে আবিরকে কল দিলো কিন্তু আবির ধরলো না৷ অনু একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে তবুও আবির ধরছেনা৷

প্রায় পনেরো মিনিট পর অনুর মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসলো৷ অনু মেসেজটা ওপেন করলো,,

“আবিরকে কল করছিলে কিন্ত সো স্যাড আবির যে তোমার কল রিসিভ করবেনা সে তো এখন অন্য কাজে ব্যাস্ত৷

অনু রিপ্লাই করতে যাবে ঠিক তখুনি ওর ফোনে একটা ছবি আসলো৷ ছবিটা অস্পষ্ট হলেও দেখা যাচ্ছে আবির একটা মেয়েকে কিস করছে৷

আবারো মেসেজ আসলো,,,আমার কথা বিশ্বাস না হলে বয়ফ্রেন্ডকে কল করে জিজ্ঞেস করো সে এখন কফি শপে আছে কী না আর তার সাথে কোন মেয়ে আছে কী না৷
.
অনু আবিরকে কল দিলো৷ এবার আবির কল রিসিভ করলো৷
.
হ্যাঁ বলো অপরাজিতা৷
.
আপনি কোথায়?
.
হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলে যে?
.
কেনো জিজ্ঞেস করতে পারিনা নাকি৷ না অন্য কেউ জিজ্ঞেস করার জন্য চলে এসেছে?৷
.
কী যে বলো৷ আমি তো এখন কফি শপে আছি৷
.
তোমার সাথে একটা মেয়ে আছে রাইট৷
.
হ্যাঁ,,,
.
আবির আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু কল কেটে দিয়ে আবিরের নাম্বার ব্লক করে দিলো৷

আমার আগেই বুঝা উচিৎ ছিলো৷ অনেক দেড়ি করে ফেলেছি ওকে চিনতে৷
অনু কেঁদেকেটে বাড়ি ফিরে গেলো৷

এরপর থেকেই ওদের ভুল বুঝাবুঝির পর্ব শুরু৷
🍁
অনু আর পড়লোনা ডায়েরি বন্ধ ফেললো৷ এক হাত দিয়ে চোখ মুছে আরেক হাত দিয়ে কাপ টেবিলে রাখলো৷

ঝুমাঃঅনু তো দেখছি আজকাল চা বেচাও শুরু করে দিয়েছে৷
.
ঝুমার এই কথা শুনে অনু ভ্রু কুচকে থাকালো ওর দিকে৷

“কী হলো অনু এটাই তো ভাবছো আমি কী করে জানলাম?তবে শুনো তুমি যখব চা বানাচ্ছিলে তখন আমি টিউশনি পড়ে এদিক থেকেই রিক্সা করে আসছিলাম আর তখনই দেখলাম৷ আগেই বলেছিলাম টাকা পয়সা না থাকলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়না আর তুমি তো চা বেচো৷ চা বেচে কীভাবে লেখা পড়ার খরচ চালাবে৷ হাহাহা তুমি পারোও বটে৷
.
” ব্যস অনেক বলেছো ঝুমা৷ নিজেকে কী মনে করো জানিনা৷ তুমিতো রিক্সা করে বাড়ি ফিরো কিন্তু আমি একসময় নিজের প্রাইভেট কার করে বাড়িতে ফিরতাম৷ আমারতো কেউ নেই তাই আমি মেসে থাকি কিন্তু তোমার তো সব আছে তবুও কেনো মেসে থাকছো৷ তোমাকে দেখেও কিন্তু মনে হয়না যে তুমি উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির৷
আমি চা বেচছিলাম না বরং চায়ের দোকানের ছোট্ট ছেলেটার হাত পুড়ে গিয়েছিলো বলে ওকে আমি চা বানাতে সাহায্য করেছিলাম৷তোমরাতো মানুষের বিপদ দেখলে এগিয়ে যাও ওই না আরও দেখা যায় কেউ সাহায্য করতে গেলে তাকে নিয়ে মজা করতেও ছাড়ো না৷ মন মানসিকতা বদলাও৷
আর আমার লেখা পড়ার খরচ আমি কীভাবে বহন করবো সেটা বরং আমার উপরে ছেড়ে দাও৷ আমার বিষয় আমি দেখে নিবো৷ তোমাকে এর মধ্যে নাক না গলালেও চলবে৷ আর আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত৷

চলবে♥️…

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৫

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আবির গেট পেরিয়ে দেখলো অনু কোথায়ও নেই৷ তারাতাড়ি কার নিয়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলো৷ রাস্তার একপাশে কার দাঁড় করিয়ে অনুকে আশে পাশে খুঁজতে লাগলো৷

আবিরঃনিজের চোখে দেখা ভুলের জন্য ও কী আমায় এভাবে শাস্তি দিবে নাকি৷
.
রাস্তাটা একেবারে নির্জন জনমানব নেই বললেই চলে৷ আবির আনাচে কানাচে ডানে বামে সবদিক দেখছে কোথাও অনু নেই৷ আবির হাল ছেড়ে দিলো৷ কারে হেলান দিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
অনু আবিরের থেকে একটু সামনে একটা বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলো সে মনে করছে আবির চলে গেছে তাই নিজেও আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে চলে যেতে নিলো৷
আবির আকাশের দিক থেকে মুখ সরিয়ে পাশে থাকাতেই সেই নীল শাড়ি পড়া মেয়েকে৷ আবির দৌড়ে অনুর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টান মারলো৷ অনুর হাতে টান পরায় সে ঘাবড়ে গেলো৷ আবির মুখ দেখার আগেই সে আবারো আঁচল দিয়ে ঘোমটা দিয়ে দিলো৷ আবির রেগে অনুর হাত ছেড়ে ঘোমটা তুলে ফেললো৷

আবিরঃঅনু!!!আমি জানতাম এটা তুমিই৷ তোমাকে চিনতে আমার কখনো ভুল হয়নি আর হবেওনা৷
.
কেনো এসেছেন এখানে৷ আর আমাকেই বা কেনো ফলো করছেন৷ নিজের বউকে নিয়ে সুখে থাকেন৷
.
অনু আমি তোমাকে সেদিনও বলেছি আর আজও বলছি সব সময় চোখের দেখা সত্যি হয়না৷ তাছাড়া তুমি আমাদের সম্পর্কে যা ভাবছো সেইরকমটা একদমি না৷ দেখো অনু তোমার কথায় আমি পাঁচটা বছর তোমার থেকে দূরে দূরে থেকেছি আর থাকা সম্ভব নয়৷
.
আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে মেনে নিবো তাহলে আপনি ভুল৷বাবার পরে আপনাকেই বিশ্বাস করতাম বেশি কিন্তু এর পরিবর্তে আমি কী পেলাম বিশ্বাসঘাতকতা৷দেখুন চলে যান এখান থেকে আর আমার পিছু নিবেননা এতে আপনার মঙ্গল না হলেও আমার মঙ্গল হবে৷ আপনার মুখও দেখতে চাইনা আমি৷আপনার যদি লজ্জা শরম বলতে কিছু থাকে তাহলে আর আমার সামনে আসবেননা৷

অনু একফোটা চোখের জল বিসর্জন দিয়ে চলে আসলো সেখান থেকে৷
আবির রেগে কারের গ্লাসেই ঘুষি মারলো৷

“ড্যাম!!! কতোবার বলেছি তুমি যা দেখেছো তা সত্যি নয় কিন্তু আমার কথা শুনার প্রয়োজনই মনে করছে না৷ এতোটা ইগু ওর তাহলে আমিও ওর এই ইগু যদি ভেঙে চুরমার না করছি তাহলে আমার নামও আবির রায়হান চৌধুরী নয়৷
আবির ফোন বেড় করে কল করে জানিয়ে দিলো সে আজ অনুষ্ঠানে পার্টিসিপ্যাট করতে পারবেনা৷
তারাতাড়ি করে চলে গেলো অনুর বাড়ির উদ্দেশ্যে সেখান থেকে যদি কিছু জানা যায়৷
🍁
প্রায় বিশ মিনিট পর পৌঁছালো অনুর বাড়িতে৷ অনুর চাচী তখন শুকনো লাল মরিচ রোদে শুকাতে দিচ্ছেন৷

“এক্সকিউজ মি! মিস অনু কী বাসায় আছেন?

ছেলে মানুষের কন্ঠ শুনে মুখ তুলে তাকালেন অনুর চাচী৷ তারপর আঁচলে হাত মুছে এগিয়ে এলেন আবিরের দিকে৷

“কে আপনি?আর অনুকে কেনো খুঁজছেন?
.
অনুর সাথে খুব দরকার ছিলো আমার তাই৷
.
অনু বাসায় নেই৷
.
অনু বাসায় না থাকলেও প্রবলেম নেই ওর বাবা থাকলেই চলবে৷
.
অনুর বাবা আর নেই উনি মারা গেছেন৷
.
কীহ!!! কিন্তু কীভাবে?
.
অনুর চাচী একটা ভেঙচি কেটে বললো,,,কীভাবে আবার উনার যে গুণবতী মেয়ে ওর কারনে৷
.
ও কী করেছে?
.
বাইরে যে আকাম কুকাম করে বেড়ায় সেইজন্যে ওর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছিলো কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখো বিয়ের দিনই ওর নষ্টামী করার সত্যিটা সবার সামনে আসলো আর ওর বাবাকে মানুষ যা নয় তাই বলে অপমান করলো৷তিনি অপমান সহ্য না করতে পেরে হার্ট এ্যাটাক করে সেদিনই মারা গেলেন৷ কিন্তু দেখেন উনার মেয়ে বাবার জন্য শুক পালন না করে নিজের সুখের জন্য অন্য ছেলের হাত ধরে চলে গেলো৷ হায় আল্লাহ এরকম মেয়ে যাতে কেউ গর্ভে ধারণ না করে৷

আবির কিছু না বলে চলে এলো৷ ওর রাগ উঠে গেলো অনুর চাচীর মুখে এসব কথা শুনে৷ কতটা নিকৃষ্ট হলে মানুষ এমন মিথ্যা কথা বার্তা বলতে পারে৷

“আমিতো জানি অনু অন্য কোনো ছেলের হাত ধরে যেতেই পারেনা৷ কারন ওর মনে এখনো আমার জন্যে অনুভূতি আছে৷ আই প্রমিস অনু আমি যদি আবারো তোমার মনে আমার জন্য সুপ্ত অনুভূতি জাগিয়ে না তুলতে পারি তাহলে আমিও আমার নাম পাল্টে ফেলবো৷
আবির কার নিয়ে চলে গেলো আর ভাবতে থাকলো কাকে জিজ্ঞেস করলে সব সত্যিটা জানতে পারবে৷
🍁
অনু হেঁটে হেঁটে মেসে ফিরছিলো৷আরও চল্লিশ মিনিটের পথ হাঁটলে তবে মেসে ফিরতে পারবে৷ পায়েও ব্যাথা করছে অনেক দিন হাঁটা হয়নি তো তাই৷
হাঁটার মধ্যেই অনুর জুতো ছিঁড়ে গেলো৷ অনু জুতোটা হাতে নিয়ে কেঁদে দিলো৷

“আমার বাবার হাতের জুতোটাও ছিড়ে গেলো৷ আমি এই জুতোটা ফেলতে পারবোনা মাথায় নিয়ে হাঁটবো আমি৷ আমার বাবার স্মৃতি এটা৷ আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে কী করবো আমি৷
অনু আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো দূরে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে অনু জুতোটা হাতে নিয়ে সেখানে গেলো৷ কড়া রোদ হওয়াতে রাস্তা একেবারে ফুটন্ত পানির মতো গরম হয়ে আছে আর অনু সেখান দিয়েই হাঁটছে গরমের জন্য ওর পা লাল হয়ে গেছে জ্বালাপোড়া করছে৷ তবুও খুব কষ্ট করে সেখানে গেলো৷

চায়ের দোকানের চারিদিকে বাঁশের বেড়া দেওয়া আর উপরে টিন৷একটা আট নয় বছরের ছেলে চুলায় চা বসিয়েছে৷ একটা বাঁশে পেছানো তার আছে দেখে অনু তারটা খুলে নিলো৷তারের দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো৷ একদিন সে একটা ভিখারিকে দেখেছিলো তার দিয়ে জুতো আটকাতে অনুও নিচে বসে তারটা লাগিয়ে নিলো৷ পায়ে দিয়ে দেখলো না ঠিক আছে বুঝাই যায়না জুতোতে তার লাগানো আছে হিহি৷ গরীব হলে বুঝি মানুষ আলাদা ট্যালেন্টেড হয়ে যায় আমার তো তাই মনে হয়৷ অনু একা বকবক করে দেখলো ছেলেটা হাত ধরে কাঁদছে৷

“কী হলো তোমার?তুমি কাঁদছো কেনো?
.
আপা আমার হাত পুড়ে গেছে খুব জ্বলছে৷ আর চা বানাতেও কষ্ট হচ্ছে পারছিনা বানাতে৷ আগুনের আঁচে হাত আরও বেশি জ্বলছে৷ এখন যদি চা না বানাই তাহলে মালিক আমারে মারবে৷
কথাটা বলে ছেলেটা আবারো কেঁদে দিলো৷

যে জায়গায় নিজের চাচা চাচী আমার সাথে এমন করতে পারলো সেখানে মালিকের জন্য তো এই ছেলেটা কিছুইনা৷ হয়তো ছেলেটা দোষ করলে ওর মালিক ওকে মারধর করে তাই এতো ভয় পাচ্ছে৷
অনু ছেলেটার মাথায় হাত রেখে বললো,,

“চিন্তা করোনা ভাই আমি চা বানিয়ে দিবো৷
.
না আপা তুমি বড় ঘরের মেয়ে এসব করলে মানুষ তোমায় মন্দ ভাববে৷ রাস্তা থেকে এই জায়গাটা স্পষ্ট দেখা যায় তুমি চা বানালে মানুষ তোমাকে দেখে কী বলবে৷ থাক আপা আমি বানিয়ে নিবো প্রথমে কষ্টে হবে তারপর আস্তে আস্তে সেই কষ্ট দূর হয়ে যাবে৷ কষ্টের দ্বারাই কষ্ট দূর হয়৷
.
এতো ছোট ছেলের মুখে এসব শুনে নিজেকে আরও শক্ত করে নিলো অনু৷ ছেলেটা একটা কথা ওর মনে একেবারে গেঁথে গেছে৷”কষ্টের দ্বারাই কষ্ট দূর হয় ”

“তুমি কাল বানিয়ো৷ আর কে আমায় মন্দ বলবে হে৷ যে জায়গায় আমি স্বয়ং নিজে চা বানাচ্ছি৷
অনু ছেলেটাকে সরিয়ে চা বসিয়ে দিলো৷ সুন্দর করে চাপাতা দুধ দিয়ে চা বানালো৷

“ভাই আমি বরং আসি৷
.
আপা তোমারে খুব ক্লান্ত লাগতেছে এক কাপ চা খেয়ে যাও৷
.
না থাক, এমনিতেই গরম চা খেলে আরও গরম লাগবে৷ তাছাড়াও এক কাপ চা খেলে তোমার মালিকের পাঁচ টাকা কমে যাবে আর তাতে তার ক্ষতি হবে আমি কারও ক্ষতি করতে চাইনা৷ গরীবের জন্য যে পাঁচ টাকাই অনেক৷ আর শুন পেস্ট আছেনা যেটা দিয়ে দাঁত মাজো একটু পেস্ট হাতে লাগিয়ে দিয়ো দেখবে জ্বলা পুঁড়া কমে যাবে৷
.
আপা তুমি খুব ভালো আপা৷ সবাই যদি তোমার মতো হতো৷ দোয়া করি আপা তুমি অনেক বড় হও৷
.
অনু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে এলো৷
এতোদিন সে গরীবের অবস্থা বুঝতে না পারলেও এখন পারে কারন এখন যে সে তাদের মধ্যেই একজন হয়ে গেছে৷
🍁
অনু টলমল পায়ে মেসে ফিরলো৷ঝুমা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা ভেঙচি কাটলো অনু দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো৷

কিছু কিছু মানুষের স্বভাব কখনো পাল্টায় না৷

শাড়ি চেঞ্জ করে শাওয়ার নিয়ে চুলায় এসে চা বসালো৷ আপাতত ভাত রান্না করার কোন শক্তি বা ইচ্ছে কোনটিই নেই ওর মধ্যে৷

অনু চা নিয়ে জানালার পাশে বসলো৷ ওর খাট জানালার পাশেই পরেছে তাই মন খারাপ হলেই জানালায় হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে৷ আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি৷ অনু আকাশের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে৷

“বাবা কেমন আছো?তুমি আবার কেমন থাকবে তুমিতো ভালোই আছো কিন্তু আমি যে ভালো নেই বাবা৷ যতক্ষণ না তোমার খুনিদের শাস্তি দিচ্ছি ততক্ষণ আমি ভালো থাকবোনা৷
আচ্ছা বাবা ওরা যখন তোমায় বালিশ চাপা দিয়েছিলো তখন তোমার খুব কষ্ট হয়েছিলো তাইনা গো বাবা৷ শ্বাস নিতে না পেরে দম বন্ধে তুমি মারা গেলে৷ তোমাকে মারা কী এতটাই প্রয়োজন ছিলো এদের আর কোন উপায় ছিলোনা ওদের কাছে৷ মা হারানোর বেদনা আমি বুঝতে পারিনি কারন তুমি আমার পাশে ঢাল হয়ে ছিলে কিন্তু এখন আমার পাশে যে আমি ছাড়া আর কেউ নেই বাবা৷ তুমি আমার যোগ্য বাবা হয়ে দেখিয়েছো কিন্তু আমি তোমার যোগ্য মেয়ে হয়ে দেখাতে পারলাম না৷ দেখোনা,কোথায় তোমায় কবর দেওয়া হয়েছে সেটাও জানিনা৷ তোমার কবর জিয়ারতও করতে পারিনি৷কাছ থেকে না হোক দূর থেকে ওতো দেখে করতে পারতাম কিন্তু আমি পারিনি৷বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আর দোয়া করো যেনো আমি সফল হতে পারি৷বাবা আমি আমার মনে কতটা আর্দনাদ চেপে রেখেছি সেটা আমি আর আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা৷ বাবা তুমি ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে৷আমাকে কেউ ভালোবাসে না৷ প্লিজ ফিরে এসো বাবা প্লিজ৷আমি আর কক্ষনো তোমার সাথে রাগারাগি করবোনা৷তুমি যা বলবে তাই করবো৷
অনু ডুকরে কেঁদে দিলো৷
হঠাৎই ওর মনে হলো আবিরের কথা৷
আবির তো এতদিন আমেরিকায় ছিলো৷আর ও এখনো আমায় ভুলেনি ওর চোখে আমার জন্য এখনো ভালোবাসা দেখতে পাই আমি৷ আবিরের কথা ওতো সত্যি হতে পারে৷ আমরা চোখে সব সময় যা দেখি তা সত্যি না ওতো হতে পারে৷ আমার কী আবিরকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ৷ কিন্তু কীভাবে সেদিন আমি নিজের চোখে দেখেছি আর অনেক প্রমানও পেয়েছি সব কীভাবে মিথ্যা হতে পারে৷ কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৪

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

রুমিঃঅনু আমি তোমার অবস্থাটা বুঝতে পারছি৷ দেখো সবার মন-মানসিকতা তো আর একরকম হয়না তাইনা৷ তাই এতো হাইপার হয়োনা প্লিজ৷
.
“আমার হাইপার হওয়াটা কী স্বাভাবিক নয় বলুন৷ আর কি যেনো বলছিলেন আপনি আমার অবস্থা বুঝতে পারছেন? না বুঝতে পারছেন না আর পারবেনও না৷ আমি যে পজিশনে আছি সেই পজিশনে আপনারা কেউ নেই৷ আচ্ছা একটি বারও কী ভেবে দেখেছেন যে একটা মেয়ে এতোগুলো রুমমেট থাকা সত্ত্বেও কেনো কারও সাথে মিশেনা এতো চুপচাপ থাকে৷ হ্যাঁ আপনারা ভেবেছেন কিন্তু জিজ্ঞেস করতে আসেননি৷উল্টো আমার চুপচাপ থাকাটা আপনাদের মনে এক প্রকার রাগের সৃষ্টি করেছে যে কারনে আপনারা যেকোন বিষয়ে ভালোমন্দ না জেনে তার বিচার করতে শুরু করেছেন৷ যে মানুষটার বিয়ে ভেঙে গিয়েছে সাথে চড় মেরে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে অপমান করা হয়েছে তার উপর তার বাবাকে খুন করা হয়েছে সেই মেয়েটা এক সাথে এতো ধাক্কা খেয়ে কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখবে বলুন আর তারমধ্যে আবার আপনাদের খোঁচা মেরে কথা বলা শুনলে তো একদমি না৷
.
অনুর রুমমেট সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ রুমির চোখে অলরেডি পানি চলে এসেছে৷সবার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন অনুর বাবা খুন হয়েছে আর কে বা কারা খুন করেছে আর রিজনটা কী ছিলো?অনু সবার দিকে তাকিয়ে বাবার ছবিটা রেখে কাঁথা টেনে শুয়ে পরলো৷
🍁
রাত এগারোটা কী মনে হতেই অনু শুয়া থেকে উঠে পরলো৷ তারপর আস্তে আস্তে রুমির দিকে এগিয়ে গেলো৷ রুমি তখন টেবিলে বসে বসে পড়ছে৷
.
“আপু আপনার ফোনটা একটু দিবেন প্লিজ৷আমি আমার বান্ধবীকে ফোন করবো৷ ভার্সিটির ব্যাপারে কিছুই জানিনা তাই৷
.
হুম৷
রুমি ওর ফোনটা অনুকে দিলো৷ অনু ওর বান্ধবী রিমিকে ফোন করলো৷ বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিমি ফোন রিসিভ করলো৷

রিমিঃহ্যাঁলো কে বলছেন?
.
“রিমি আমি অনু বলছি৷
.
তুই!!তোকে এই তিন চার দিন যাবৎ ফোন দিচ্ছি বাট ফোন সুইচড্ অফ বলছে৷ আচ্ছা তুই কেমন আছিস আর আংকেল কেমন আছেন?
.
ভালো৷ আচ্ছা রিমি ভার্সিটির কী খবর৷
.
হে তোকে বলতে তো ভুলেই গেসিলাম, শুন কাল ভার্সিটিতে একটা অনুষ্ঠান আছে৷ কোনো স্পেশাল অনুষ্ঠান বোধহয়৷ আর নাজমা ম্যাম বলেছেন শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজেগুজে আসতে৷ তুইও শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজেগুজে চলে আসিস৷অনেক মানুষ আসবে তাই৷ আমি বাবাকে নিয়ে আসবো তুইও চলে আসিস আংকেল কে নিয়ে
.
হুম৷ আচ্ছা আমি রাখছি বাই৷ কাল দেখা হচ্ছে৷
অনু তারাতাড়ি ফোন রেখে কেঁদে দিলো৷ এতদিন সেও তার বাবাকে যেকোন অনুষ্ঠান হলে নিয়ে যেত৷কিন্তু এখন সবকিছুতেই তাকে একা একা যেতে হবে৷ কারও বুকে পরমে মাথা রেখে যে একটু গল্প করবে সুখ দুঃখ প্রকাশ করবে সেই আশাটুকু নেই৷
রুমি উঠে এসে অনুর কাঁধে হাত রাখলো৷

“আমি তোমার কষ্ট হয়তো ভাগ করে নিতে পারবোনা কিন্তু এতটুকু বলি যারা তোমার বাবাকে খুন করে তোমার সাথে এতবড় অন্যায় করেছে তাদের তুমি ছেড়োনা শাস্তি দিতে হবে ওদের আর এটা তখনি সম্ভব যখন তুমিও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে৷তুমি মনে এতো কষ্ট নিয়ে ঘুরছো৷ আসলেই আমার ভিষন খারাপ লাগছে+কষ্টও হচ্ছে৷ আর একটা কথা,তুমি এত সময় ধরে কাঁদছো নিশ্চয় তোমার মাথা ব্যাথা করছে৷ আমি তোমার জন্য কড়া করে চা বানিয়ে আনছি দেখবে চা টা খেলে মাথা ব্যাথা কমে যাবে৷
অনু রুমির দিকে তাকিয়ে রইলো৷ রুমের চারটা মেয়েদের মধ্যে রুমিই একটু অন্যরকম মিশুক সবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে, বুঝার চেষ্টা করে৷

কিছুক্ষণ পর রুমি দুই কাপ চা নিয়ে এলো৷ একটা অনুকে দিয়ে আরেকটা নিজে নিলো৷

“আচ্ছা আপু এখন থেকে ভার্সিটিতে যেতে কত সময় লাগবে৷
.
পায়ে হেঁটে গেলে এক ঘন্টা,বাসে গেলে পনেরো মিনিট আর রিক্সায় করে গেলে ত্রিশ মিনিট চল্লিশ মিনিট লেগে যায়৷
.
ওহ৷
🍁🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো নয়টা বেজে গেছে৷ অনু তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না বসালো৷ কিন্তু এখন রান্না করলে ভার্সিটিতে যেতে লেট হয়ে যাবে তাই সে ভাত,কাঁচা মরিচ আর পেয়াজ দিয়ে বেজে নিলো৷

অনু খাবার মুখে দিচ্ছে কিন্তু গিলতে পারছেনা৷ কালকের রাখা ভাজি ভাতে মিক্স করে নিলো৷ এখন খেতে পারবে৷
খাবার খেয়ে কী পড়ে যাবে ভার্সিটিতে সেটাই ভাবছে৷ হঠাৎ ওর মনে পরলো অনেক দিন আগে একটা নীল শাড়ি আর দু মুঠো নীল চুড়ি কিনেছিলো ব্যাগে রেখেছিলো আর খোলে দেখা হয়নি৷
অনু তারাতাড়ি ব্যাগ খোলে দেখলো শাড়ি, চুড়ি যেভাবে রেখেছিলো সেভাবেই আছে ব্যাগের এক কোনায় পড়ে৷

জলদি করে শাড়ি, চুড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিলো৷ লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিলো৷
ম্যাচ থেকে বেড়িয়ে একটু সামনে এগুলো৷ সেখান থেকে রিক্সায় করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলো৷
🍁
রিমি ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে অনুর জন্যই অপেক্ষা করছিলো৷ অনুকে আসতে দেখে রিমি খুশি হয়ে দৌড়ে ওর কাছে চলে গেলো৷ কিন্তু অনুর কাছে গিয়ে রিমির মুখ মলিন হয়ে গেলো৷

“অনু সিরিয়াসলি এটা তুই৷
.
ক্লাসে চল তোর সাথে কথা আছে৷
🍁
অনু আর রিমি একটা ফাকা ক্লাস রুমে গেলো৷

“এখন বল আর এটা তুই বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি৷লিপস্টিক শেড দিবি তো দূর একটু কাজল পর্যন্ত দিসনি৷আজকে অনুষ্ঠান আছে ভুলে গেছিস৷
.
তুইও দেখছি অন্যদের মতো ব্লেম করতে শিখে গেছিস৷
.
অনু তুই ভুল ভাবছিস আমি তোকে ব্লেম করছিনা৷ অন্যদিন তুই সেজেগুজে আসতি আর অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই৷ আজকে এতো সাদাসিধে হয়ে এসেছিস তাই একটু খটকা লাগলো৷ আর একাই এসেছিস আংকেল আসেননি?
.
আংকেল বেঁচে থাকলে তবেই না আসবে৷
.
কীহ!!!!মানে আংকেল,,,,,,
.
হ্যাঁ আমার বাবা মারা গেছেন৷খুন করা হয়েছে আমার বাবাকে৷ আমার বিয়েও ঠিক ছিলো কিন্তু আমার বিয়েও একটা মিথ্যার ফাঁদে পড়ে ভেঙে গেছে৷শুধু তাই নয় আমার বাড়ি থেকে পর্যন্ত আমাকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে৷ এবার তুই বল এতো শক একসাথে পেয়ে আমি কীভাবে আগের মতো থাকবো৷লিপস্টিক, শেড,কাজল লাগাবো৷
.
এসব কী বলছিস তুই? আমি তো কিছুই জানিনা আর কে বা কারা আংকেল কে খুন করলো আর কেনো?৷
.
আমার চাচা,চাচী চাচাতো ভাইবোন মিলে সম্পত্তির জন্য আমার বাবাকে খুন করেছে৷আমি এখন ম্যাচে থাকছি তারপরও যতটুকু পারছি নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি৷ আচ্ছা এখন বল কিসের অনুষ্ঠান আজ৷
.
জানিনা রে তবে প্রত্যেক ক্লাসের ফার্স্ট, সেকেন্ড,থার্ড যারা আছে তাদের কে বক্তব্য দিতে হবে৷ যেহেতো তুই ক্লাসের থার্ড গার্ল তাই তোর নামও দেওয়া হয়েছে৷ আর শুনলাম আজকের অনুষ্ঠানে যে চিফ গেস্ট হিসেবে থাকবে সে নাকি স্পেশাল৷ চল অডিটরিয়াম রুমে যাই৷ নাহলে পরে সিট পাবোনা৷
🍁
চিফ গেস্ট হিসেবে যার আসার কথা ছিলো উনি জ্যামের কারনে আসতে পারছেননা৷ তাই বক্তব্য শুরু করে দেওয়া হয়েছে৷ অনুর হাত পা কাঁপছে৷ কী বক্তব্য দিবে সেটাই জানেনা৷ ক্লাসের ছেলে মেয়েরা অনুকে দেখে হাসছে, ভেঙচি কাটছে কেউ কেউ শুনিয়ে শুনিয়ে কটু কথা বলছে৷ অনু বুঝতে পারছে এসব করার কারন তবুও সে এসবে তোয়াক্কা না করে কী বক্তব্য দিবে সেটাই ভাবছে৷

“অনিতা রহমান অনু৷”
.
অনুর নাম এনাউস করা হয়েছো বক্তব্য দেওয়ার জন্যে৷ অনু কাঁপা কাঁপা পায়ে স্টেজে গেলো৷

বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বিসমিল্লাহ বলে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলো৷

” আসসালামু আলাইকুম৷আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন৷আমি অনিতা রহমান অনু৷আজকের এই অনুষ্টান সম্বন্ধে বক্তব্যের বিষয়ে কিচ্ছু জানতাম না আমি৷তাই কী বক্তব্য দিবো সেটা বুঝতে পারছিনা৷ তাই অন্যদিন তো চিরস্মরণীয় ব্যাক্তিদের নিয়ে বক্তব্য দিতাম আজ নাহয় নিজের বিষয় নিয়ে একটা ছোট্ট বক্তব্য দেই৷ এখানে আমার সহপাঠী,জুনিয়র ভাইবোনেরা আছে৷ এদের মধ্যে অনেকেরই আজকের আমিকে দেখে অনেকটা অবাক লাগছে৷আমি কীভাবে এতো সাদামাটা হয়ে গেলাম এটা দেখে অনেকই অবাক হচ্ছে আর হওয়ারই কথা৷ কিন্তু কী করবো সময়ের সাথে সাথে নিজেকেও কীভাবে পরিবর্তন করে নিতে হয় সেটা আমি বুঝে গেছি৷ রঙের দুনিয়ায় বাস করতে করতে যখন রঙটাই হারিয়ে যায় তখন আর সেই রঙটাকে খুঁজে পাওয়া যায়না আর খুঁজে না পেয়ে মানুষ হয়ে উঠে রংহীন৷ আমার ক্ষেত্রেও তাই৷ আমার লাইফ থেকে রং নামক বস্তুটাই হারিয়ে গেছে৷ তাই এসব কৃত্রিম রং চংয়ের এখন আমার কাছে কোনো মানে নেই৷ আমার বাবা নামক রংটাই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে৷আমার পজিশনে কেউ হয়তো আসেননি তাই বুঝতেও পারবেননা৷হ্যাঁ মানুষ মরনশীল, সবারই বাবা মা মারা যায় কিন্তু আমার বাবা হারিয়ে যাওয়ার পিছনে বড় এক রহস্য আছে যেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা৷ এতো কিছুর মধ্যেও আমি নিজেকে ভেঙে না ফেলে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করছি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখছি৷হ্যাঁ আমি গরীব আমার অনেক বড় স্বপ্ন৷এটা নিয়ে অনেকে উপহাস করছে৷ আমিতো একটা মানুষ স্বপ্ন তো দেখতেই পারি৷ যতদিন আমার এই দেহে প্রান থাকবে ঠিক ততদিন আমি আমার স্বপ্নের সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছানোর জন্য লড়াই করে যাবো৷ দুঃ সময়ে ভেঙে পড়া আমার সংস্কার, বা শিক্ষা কোনটিই নয়৷ বরং দুঃ সময়ের সব বিপদ, আশংকা,ভয়,অসহায়ত্বের সাথে লড়াই করাই হলো আমার শিক্ষা, আমার সংস্কার৷ গরীব,অসহায়দের মধ্যেও আলাদা একটা প্রতিভা থাকে যা সবার মধ্যে থাকেনা৷
এতক্ষণ আমার সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমি খুব দুঃখিত৷ কিন্তু এই মুহুর্তে এটা ছাড়া আমার মাথায় আর কিছু আসেনি৷ স্যরি৷
.
অনু মাইক্রোফোন রেখে চলে আসতে নিতেই প্রিন্সিপাল ম্যাম এসে ওকে জড়িয়ে ধরলেন৷
.
“বরাবরই তোমার বক্তব্য অনেক ভালো লাগে এবার আরো বেশি৷ সত্যি মা খুব সুন্দর করে তুমি উপস্থাপন করেছো৷ তোমার আত্নবিশ্বাস দেখে আমরা মুগ্ধ৷ জীবনে অনেক বড় হও তোমার জন্য দোয়া রইলো৷
.
প্রিন্সিপাল ম্যামের কাঁধ থেকে মাথা তুলতেই অনুর চোখ গেলো করিডোর দিয়ে হেঁটে আসা ব্যাক্তির দিকে৷ আবির রায়হান চৌধুরী এখানে? অনু আর দেরি না করে স্টেজ থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেলো৷ পিছন থেকে সবাই ওকে ডাকছে কিন্তু ও না শুনে চলে গেলো৷ করিডোর ছাড়া পালানোর আর কোনো রাস্তা নেই তাই অনু করিডোর দিয়েই গেলো৷ আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো৷ আবির তখন ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিলো৷একটা মেয়েকে মুখ ঢেকে চলে যেতে দেখে কিছুটা অবাক হলো৷ আর যখন মেয়েটার পায়ের তিল আর চিরচেনা নুপুর দেখলো তখন আরও বেশি অবাক হলো৷

“আমি আপনাকে পরে ফোন করছি”
আবির ফোন রেখে পিছনে তাকিয়ে দেখলো অনু উধাও৷ আবির দৌড়ে মাঠে চলে গেলো গেটের দিকে তাকাতেই দেখলো অনু এতক্ষনে গেট পেরিয়ে গেছে৷

“বড্ড দেরি করে ফেলেছি আমি৷”
আবিরও আর দেরি না করে অনুর পিছন পিছন কার নিয়ে চলে গেলো৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৩

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনুর পাশেই একটা মেয়ে এসে বসলো৷ প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও শেষে বলেই ফেললো,,”আচ্ছা এখানে থাকার মতো কোনো ম্যাচ বা হোস্টেল কী পাওয়া যাবে৷

মেয়েটা একবার ভালো করে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,হুম আছেতো৷ ম্যাচ পাওয়া যাবে৷ এখান থেকে সোজা গিয়ে ডানে গিয়ে বামের যে একটা মুচর আছে সেখানে পাঁচতলা একটা বিল্ডিংয়ের চারতলা আর পাঁচতলা ফ্লোর নিয়ে ম্যাচের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে৷আমিও থাকতাম সেখানে বেশ উন্নত৷

কথাটা শুনে অনু যেনো স্বস্তি পেলো৷
“”আচ্ছা সেখানের ভাড়া কতো নিবে৷??
.
“ওইতো বেশি না মাত্র আড়াই হাজার টাকা৷
.
আড়াই হাজার টাকা শুনে ঘাবড়ে গেলো অনু৷ তার কাছে আছেই মাত্র দশ হাজার টাকা৷ একসময় তার কাছেও আড়াই হাজার টাকা হাতের ময়লা ছিলো৷ কিন্তু এখন আড়াই হাজার টাকাই তার কাছে আড়াই লাখের সমান৷
অনু চুপচাপ ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে গেলো৷
সামনের দোকান থেকে কিছু হাঁড়ি পাতিল,তালা বাসন, সাবান,ডিটারজেন্ট পাউডার,সুই,সুতো,রঙ্গিন পেপার আর কাচি কিনলো৷ আপাতত এই প্রয়োজন জিনিসগুলো হলেই চলবে৷পাশের আরেকটা দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় বই,খাতা, কলম পেন্সিল নিলো৷
অনু দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে লাগলো৷ মেয়েটার কথামতো ডানে গিয়ে বামের মুচরে গেলো৷ পাঁচতলা বিল্ডিং দেখে অনু একেবারে সিওর এখানেই ভাড়া দেওয়া হয় আরও শিওর হলো নোটিশ বোর্ড দেখে৷
সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছে৷ অনেক মেয়ে উপর থেকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে৷ একটা লোক একেবারে নিচতলা থেকে বেড়িয়ে আসলো৷

“এই মেয়ে কে তুমি?আর তোমার হাতের ব্যাগপত্র কিসের?
.
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল৷ আসলে আমি ম্যাচে থাকার জন্য এসেছি৷ শুনলাম এখানে নাকি ম্যাচের ব্যবস্থা করা আছে৷।।
.
“ওয়ালাইকুম আসসালাম৷ হ্যাঁ এখানে আমরা মেয়েদের থাকার জন্য ম্যাচ দিয়েছি৷ কিন্তু তুমি কী লেখা পড়া করো আসলে আমরা ছাত্রীদের ছাড়া ভাড়া দেইনা৷
.
“হ্যাঁ আংকেল আমি কলেজ ছাত্রীই৷
.
“তাহলে প্রবলেম নেই৷ তবে তোমাকে তিন হাজার টাকা করে এডভান্স দিতে হবে প্রথমে৷
.
“কিন্তু আমিতো শুনলাম আড়াই হাজার৷
.
“ঔ যে বললাম এডভান্স৷
.
অনু কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বেড় করে লোকটির হাতে দিলো৷ চোখে পানি টলমল করছে যেনো এখুনি গড়িয়ে পরবে৷

লোকটি টাকাটা নিয়ে হেঁসে চলে গেলো৷ অনুও নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে পাঁচতলায় চলে গেলো৷ যে রুম ওকে দেওয়া হয়েছে সেখানে আরও চারজন আছে৷ অনু সবকিছু গুছিয়ে রেখে শাওয়ার সেরে নিলো৷ ওর রুমের সবাই তখন লাঞ্চ করছে৷

“ম্যাচেতো নিজের খাবার নিজে রেধেই খেতে হয়৷ খাওয়ার জন্য কিছু আনলাম ওতো না৷ সকালে দুটো পরোটা আর ভাজি খেয়েছিলাম এরপর পেটে একটা দানাপানিও পড়ে নাই বড্ড খিদে পেয়েছে৷ অনু তার ব্যাগ থেকে টাকা বেড় করে দেখলো মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বাকি আছে৷
তিন হাজার টাকা ভার্সিটিতে দিতে হবে৷ দুই হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে এতোদিন কাটাবো আমি৷হে আল্লাহ কিসের ভুলের শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো৷
অনু টাকাটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো৷আসার সময় দেখেছিলো একটা ছোটখাটো মুদির দোকান আছে সামনে৷ সে টাকাটা নিয়ে সেখানেই গেলো৷
দুই কেজি আটা আর পাঁচ কেজি চাল কিনলো৷ আধা কেজি আলু,টমেটো আর আধা কেজি পেয়াজ একশো কাঁচা মরিচ,তেল আর যাবতীয় রান্নার মশলা৷
এখানেও পাঁচশ টাকা খরচ হয়ে গেলো৷

অনু ম্যাচে ফিরে একটা আলু আর একটা টমেটো ছোট ছোট করে টুকরো করলো৷আপাতত আজ এসব দিয়েই খাবে সে৷ পেয়াজ আর মরিচও কাটলো৷ কড়াইয়ে তেল ঢেলে তাতে পেয়াজ কুঁচি আর মরিচ দিয়ে একটু পর মশলা,টমেটো আর আলু দিয়ে ভেজে নিলো৷ দুটো রুটি করলো আজ নিজের হাতের খাবার খাবে সে পেট পুরে৷ রুমের অন্যান্য মেয়েরা কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে অনুর দিকে৷ অনু বিষয়টা দেখেও না দেখার ভান করলো৷

খাটে বসে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে অনু৷ কাঁধে কারও স্পর্শ পেয়ে পাশে তাকালো সে৷ একটা মেয়ে মুখে হাসি টেনে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷

“হাই আমি রুমি তোমার রুমমেট৷ তুমি এখানে নতুন তাই আমাদের কাউকেই চেননা৷নিজের বাড়ির সবাইকে ফেলে এসেছো এই জন্যই বোধহয় তোমার মন খারাপ৷আমি বলি কী তুমি সবার সাথে পরিচিত হয়ে নাও দেখবে আস্তে আস্তে আমাদেরকে তোমার পরিবারের লোকজন আর এটাকে তোমার নিজের বাড়িই মনে হবে৷
.
“নিজের বাড়ির আপন বলতে কেউ থাকলে তবেই না কাউকে ফেলে আসতাম৷ যারা আছে তারা ওতো খুনি৷ নিজের পরিবারের মানুষকেই বিশ্বাস করতে পারিনা আর অপরিচতরা তো,,(মনে মনে)
.
অনু রুমির দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে আবারো বাইরে তাকিয়ে রইলো৷ রুমিও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুর পাশ থেকে উঠে গেলো৷রুমের অন্যেন্যরা ভাবছে অনুর দেমাগ বেশি তাই কারো সাথে কথা বলেনা সেজন্য অনুর জন্য তাদের মনে এক প্রকার রাগ সৃষ্টি হচ্ছে৷

রাতে🍁
কালারিং পেপার কাটছে বসে বসে আর তাতে পেন্সিল দিয়ে ডিজাইন করে রাখছে৷ কোন ড্রেসের জন্য কোন ধরনের সুতো কোন ধরনের ডিজাইন বেস্ট হবে সেটা মনোযোগ দিয়ে ভাবছে অনু৷একটা লাল পেপার হাতে নিলো তাতে সুন্দর করে ডিজাইন করলো৷ তারপর নীল সুতা দিয়ে খুব নিখুত ভাবে সেলাই করলো৷ রুমি ওর পাশের টেবিলেই পড়তেছিলো অনুর এতো সুন্দর হাতের কাজ আর ডিজাইন দেখে সে অবাক হয়ে গেলো৷

রুমিঃওয়াও কী সুন্দর৷ তুমি কী সুন্দর করে ডিজাইন করো৷ আর কী নিখুত তোমার হাতের কাজ৷ আচ্ছা তুমি কী ফ্যাশন নিয়ে লেখা পড়া করছো৷
.
অনুঃহ্যাঁ৷ ছোটবেলা থেকে এটাই আমার হবি৷ এখন যদি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি তাহলে আলহামদুলিল্লাহ৷
.
জুহীঃফ্যাশন ডিজাইনার হতে গেলে কিন্তু অনেক পয়সার দরকার৷ তুমি কী তা পারবে নাকি৷ ভালো ড্রেস ওতো পরতে পারোনা৷ ভালো জুতো ওতো নেই৷ এত খরচ চালাবে কীভাবে তুমি৷
.
অনুঃআমারটা নাহয় আমিই ভেবে নেবো৷ আপনি বরং নিজের চরকায় তেল দিন৷ পোষাক আষাকই কী আসল ম্যাটার৷ আজ আপনি বলছেন আমি ভালো ড্রেস পরতে পারিনা জুতো পরতে পারিনা অথচ আমার কী বিরাট স্বপ্ন তাইনা৷ তবে একটা কথা কী জানেন ইতিহাসের পাতাটা একটু উল্টে দেখুন তখন দেখতে পারবেন পৃথিবীতে যে এতো বড় বড় ব্যাক্তিবর্গ গন আছে না সবাই কিন্তু ছোট থেকেই বড় হয়েছে৷ আমি গরীব তাই বলে হেলা করবেন না৷ নিজের ভালো আমি বুঝি৷সো চিল আমারটা আমি নিজেই বুঝে নিবো৷
.
অনু কথাগুলো বলে জুহীর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো৷ জুহীকে ইচ্ছেমতো কথা তো শুনিয়ে দিলো কিন্তু মনে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ওর জীবনযাপন দেখে একসময় মানুষ আফসোস করতো কিন্তু এখন ওর জীবনযাপন দেখলে মানুষ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসবে৷ থাক সব সময় মানুষের দিন তো একরকম যায়না৷ প্রথমে সুখ করেছি তারপর দুঃখ এরপর নাহয় আবার সুখ করবো৷
🍁
“তোমাকে যে বলেছিলাম অনুর সম্বন্ধে খোঁজ নিতে নিয়েছো তুমি৷
.
“হ্যাঁ স্যার৷ অনুর বাবা কাল মারা গেছেন৷ আর অনুও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে৷ ওর চাচা চাচীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ও নাকি একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে৷
.
আবির ফোনটা রেখে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে৷অনু এরকম করতে পারেনা কিছুতেই না৷ অনু খুব আত্মসম্মান বোধ মেয়ে,ও কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে যেতেই পারেনা৷ অনুর বাবা মারা গেছে অথচ অনু ওর বাবার জন্য শুক পালন না করে নিজের সুখের জন্য অন্যের হাত ধরে নিজের বাড়ি ছেড়ে কিছুতেই পালিয়ে যেতে পারেনা৷ এটা ওর সংস্কার নয়,শিক্ষা নয় বিশ্বাস করিনা আমি এসব৷ অনুকে নিয়ে খুব বড় চক্রান্ত করা হচ্ছে৷আমি আর লেইট করবো না খুব শীগ্রই যাচ্ছি বাংলাদেশে৷
🍁
অনু নিজের বাবার ছবির ফ্রেম হাতে নিয়ে বসে আছে আর কাঁদছে৷

ঝুমাঃ”বয়ফ্রেন্ড বোধহয় সেই লেভেলের ছ্যাকা দিসে দেখ বেচারার ছবি বুকে নিয়ে কেমন কাঁদছে৷
.
রিয়াঃঠিক বলেছিস৷
.
রুমমেট ঝুমা আর রিয়ার মুখে কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো অনুর৷
.
“সব সময় নিজেদের মতো মানুষকে ভাবেন কেনো হে৷ আমি আগেও বলেছি আর এখনও বলছি সব সময় নিজেদের নিচ মন-মানসিকতার পরিচয় দেওয়াটা কী খুব জরুরী৷ আপনারা বোধ হয় নিজেদের বয়ফ্রেন্ডকে মিস করে কেঁদেকেটে রাত পার করেন৷ কিন্তু আমার কাছে সময়ের অনেক মুল্য বয়ফ্রেন্ডের জন্য কেঁদে টাইম ওয়েস্ট করার ওতো টাইম নেই আমার কাছে৷

অনু ছবিটা হাতে নিয়ে সবাইকে দেখালো৷
.
“দেখতে পাচ্ছেন, এই দেখুন এই ফ্রেমের মধ্যে যে লোকটা আছে উনি আমার বাবা৷ আমার বাবা কালই মারা গেছেন৷ বাবাকে খুব মিস করছিলাম তাই বাবার ছবিটা নিয়ে বসেছিলাম কিন্তু আপনারা আমার বাবাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে দিলেন৷ আপনাদের এমন কথা একজন মানুষকে কতোটা কষ্ট দিতে পারে তা আপনারা বুঝতে পারবেননা৷ তাই আপনাদের মন-মানসিকতা চেঞ্জ করুন৷ভেবে চিন্তে কথা বলুন৷ আমি ওতো মানুষ নাকি৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ গল্পটা নিয়ে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে৷ আর তাদের একটাই সমস্যা অনুর জীবনে এতো কষ্ট কেনো৷ মানুষ যত জীবন বেঁচে যায় তত জীবন শুধু সুখি আর দুঃখি ভাবেই কাটায় না৷ সবার জীবনে একবার হলেও সুখ দুঃখ আসে৷ অনু বোকা সে তাদের কথা মতো কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে এলো এটাও সমস্যা৷ যে জায়গায় একজন ভাই আরেক ভাইকে খুন করে ফেলতে পারে সে জায়গায় তো অনু কোন ছা৷ যদি অনু বাড়িতে থাকতোও তাহলে প্রত্যেক দিন সে অমানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে এক সময় ঝরে পরতো৷অনেকে বলছে অনু কেনো আইনের আশ্রয় নিলোনা৷ নিবে কী করে ওর চাচাতো প্রমানই রাখেনি৷ এই গল্পটা বাস্তবতা রিলেটেড৷ আপনারা ভেবে দেখেনতো অনুর সাথে যা হয়েছে সেটা যদি আপনার সাথে হতো তাহলে কী আপনি এখন যেভাবে মন্তব্য করে জ্ঞান দিচ্ছেন সেভাবে কী বাস্তবে করতে পারতেন৷ না পারতেননা কারন বাস্তবতা অতটাও সহজ নয়৷ আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন৷ আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেনা৷ ধন্যবাদ🙏]

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০২

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

“হাত কাঁপলোনা নিজের ভাইকে খুন করতে?কী ক্ষতি করে ছিলো আমার বাবা তোমাদের? যার জন্যে উনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলে৷ শুধুই কী সম্পত্তির জন্যে?৷ আমাকে বলতে পারতে আমি সব সম্পত্তি তোমাদের নামে করে দিতাম৷
কথাটা বলে অনু কেঁদে ফ্লোরে বসে পরলো৷ঊর্মি এগিয়ে এসে অনুর চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করালো৷

“খুব তো রাগী জেদী ছিলিস৷ কম কথা তো শুনাসনি আমাদের৷ এখন আমাদেরও সময় এসেছে৷আর তুই সম্পত্তি আমাদের নামে করে দিবি কী করে তোর বাবাতো তোর নামে এখনো সম্পত্তি লিখে দেয়নি৷ যদি দিতোও তাহলে তোকেও তোর বাপের সাথে মেরে দিতাম৷
.
চাচীঃকাল সকালেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি৷ কারণ এখন আর এটা তোর বাড়ি নয় আমাদের বাড়ি৷
.
অনুঃআমি এই বাড়ি ছেড়ে যাবোনা৷ কেনো যাবো?আমার বাবা নিজে এই বাড়ি বানিয়েছে বাবার স্মৃতি ভুলে আমি থাকতে পারবোনা৷ আর কোথায়ই বা যাবো আমি৷
.
হতচ্ছাড়িনি তোকে কেউ জিজ্ঞেস করেনি তুই যাবি কী না৷ তুই যাবি মানে যাবে৷আমরা দয়ালু তাই তোকে আজ রাতে এখানে থাকতে দিলাম৷ আর সকালে ঘুম থেকে উঠে যাতে তোকে আর এখানে দেখি৷
চাচী কথাটা বলে অনুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিলো৷ অনু কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো৷ বার-বার রুমের দিকে তাকাচ্ছে আর কাঁদছে৷
🍁🍁🍁
সকালে মুখে গরম পানি পড়াতে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো অনু৷ তারাতাড়ি মুখ মুছে তাকিয়ে দেখলো ঊর্মি হাতে মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অনু শক্ত চোখে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো৷ কারণ আগের দিন তো আর নেই৷

ঊর্মিঃকাল কী বলেছিলাম কানে যায়নি তোর৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে যাতে তোকে আর এখানে না দেখি আর এখন নয়টা বাজে তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস? সে যাইহোক নিজের কাপড় চোপড় ব্যাগে পুর আর এখান থেকে চলে যা তোর ছায়াও যাতে আশেপাশে না দেখি৷
কথাটা বলে ঊর্মি আবারো মগে থাকা বাকি পানিটুকু অনুর মুখে ছুড়ে মেরে চলে গেলো৷
অনু তারাতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গিয়ে পানির ঝাপটা দিতে থাকলো৷ মুখ লাল হয়ে গেছে প্রচন্ড রকমে জ্বালাপোড়া করছে৷
অনু নিজের জামাকাপড় নিতে গিয়ে দেখলো মাত্র দুটো সুতির জামা কাবার্টে পড়ে আছে৷ সব দামী দামী ড্রেসই মিসিং৷ জুতার ক্ষেত্রেও সেইম এক পাটি স্যান্ডেল ছাড়া আর কোনো জুতাই নেই৷ যেগুলো ছিলো সেগুলোই ব্যাগে পুরে নিলো৷ বাবার ছবিটাও নিলো৷
খিদায় পেট চো-চো করছে৷ ব্যাগপত্র নিয়ে রুম থেকেই বেড় হতে পারছেনা সারা শরীর অবশ হয়ে আছে৷ কাল সকালে দু মুঠো ভাত খেয়েছিলো এরপর মুখে একটা দানাপানিও পড়ে নাই৷ অনু ব্যাগ রেখে ধীরে ধীরে চাচির কাছে গেলো৷ চাচী তখন মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছিলো৷

অনুঃচাচী আমাকে দু মুঠো ভাত দাও প্লিজ৷ আমার খুব খিদে পেয়েছে৷
.
চাচীঃমাংস দেখেই তোর খিদে পেয়ে গেলো৷ তুই ভাবলি কী করে তোকে ভাত দিবো৷ দু মুঠো তো দূরে থাক এক মুঠোও দিবোনা৷ কম কথা শুনাসনি আমাদের সব মনে আছে আমার৷
.
প্লিজ চাচী আমার সত্যি খিদে পেয়েছে আমাকে দু মুঠো ভাত দাও৷
.
ভাত তো দূরে পানিও পাবিনা তুই৷ বেড় হয়ে যা এখান থেকে৷
.
অনু টলমল পায়ে চলে গেলো৷ কোথায় যাবে সেটা জানেনা৷ নিজের মামুর বাড়িও যেতে পারবেনা৷ ওর মা বাবা পালিয়ে বিয়ে করেছিলো বিধায় কেউ ওদের মেনে নেয়নি৷ হাতে একটা কানাকড়িও নেই যে গাড়ি করে যাবে৷ ব্যাগ খোলে ভালো করে খুঁজে দেখলো বেঁচার মতো কিছু আছে কী না৷ খুঁজে নিজের আইফোন পেলো যেটা চৌদ্দ দিন আগে ওর বাবা ওকে কিনে দিয়েছিলো৷ এটাই তার শেষ সম্বল৷ অনু ফোনটা হাতে নিয়ে কেঁদে দিলো৷ এই ফোনটা কতো বায়না করে কিনেছিলো৷ ফোনটা হাতে নিয়ে পাশে একটা ম্যাকানিকের দোকানে গেলো৷
ম্যাকানিককে ফোনের মুল্য জিজ্ঞেস করতেই ম্যাকানিক বললো ফোনের মুল্য দশ হাজার টাকা৷ এতো কম দাম শুনে রেগে গেলো অনু৷

“এসব আপনি কী বলছেন ফোন কিনেছি আমি আশি হাজার দিয়ে৷ মাত্র চৌদ্দ দিন হলো কিনেছি তেমন ইউজও করিনি৷ মিনিমাম সত্তর হাজার হওয়ার তো কথা৷
.
“স্যরি ম্যাম৷ আমরা দশ হাজার দিয়েই কিনতে পারবো৷
.
অনু কোনো উপায় না পেয়ে ফোনটা দশ হাজার দিয়েই বেঁছে দিলো৷ ম্যাকানিকের দোকান ছাড়া আর কোনো দোকানও নেই যেখান থেকে সূলভ মুল্যে বিক্রি করতে পারবে৷ সবাই হয়তো আজ অনুর শত্রু হয়ে গেছে৷ টাকাটার দিকে তাকিয়ে এক ফোটা চোখের জল ফেলে দিলো অনু৷
একটা ছোট খাটো হোটেলে উঠলো৷ হাঁটতে পারছেনা শরীরে শক্তি নেই বললেই চলে৷ আপাতত কিছু খেতে হবে৷ অনু একটা ছেলেকে ডেকে বললো এখানে সকালের হাল্কা পাতলা কিছু নাস্তা পাওয়া যাবে কী না৷ ছেলেটা ” পাওয়া যাবে” বলে চলে গেলো৷ প্রায় এক দুই মিনিট পর প্লেটে করে দুটো পরটা আর আলুর বাজি নিয়ে আসলো৷ বাজিটা দেখে মনে হচ্ছে কালকের বানানো৷অনু খাবারটা দেখে আবারো কেঁদে দিলো৷ জীবনে তার সাথে যা হয়নি সেটাই হচ্ছে৷ মা বাবা মরে গেলে এরকম পরিস্থিতিতেও পরতে হয় সেটা তার বাবা না মারা গেলে বুঝতে পারতোনা৷ পেটের জ্বালায় পরটা আর বাসি রুটিটাই খেয়ে নিলো৷
নাস্তার টাকা মিটিয়ে আবারো হাঁটা ধরলো৷ কিন্তু কোথায় যাবে সে৷
🍁🍁🍁🍁
আমেরিকার নিউইয়র্কে একটি রুমে দাঁড়িয়ে থাই গ্লাস দিয়ে বাহিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবির৷ আর মিনমিন করছে,,

“প্রায় পাচঁ বছর ধরে তোমাকে দেখছিনা এটাও জানিনা তুমি কতো বড় হয়েছো কীরকম দেখতে হয়েছো৷ আমাকে তোমার আদৌও মনে আছে কী না৷ কিন্তু চিন্তা করুনা আমি খুব শীগ্রই তোমার কাছে ফিরছি৷ আর দূরে থাকা সম্ভব নয় তোমার থেকে৷
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাহিরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটা ফাইল নিয়ে কাজে বসে পরলো৷ কিন্তু একদম মনোযোগ দিতে পারছেনা৷

“না ওকে না দেখা পর্যন্ত আমি কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারবোনা৷ আমাকে যত তারাতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে ফিরতেই হবে৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০১

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#সূচনা_পর্ব
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

“লজ্জা করছেনা অলক্ষী নিজের বোনের বরকে বিয়ে করতে৷”কবুল বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো অনু, ঠিক সেই মুহুর্তেই অনুর চাচাতো বোন ঊর্মি সবার সামনে কথাটা বলে অনুর গালে চড় বসিয়ে দিলো৷ দিয়ে চিৎকার করে বললো,,” বলছিস না কেনো? লজ্জা করছেনা তোর নিজের বোনের বরকে বিয়ে করতে৷ আর কীই বা লজ্জা করবে তোর মতো মেয়েদের আবার লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে নাকি৷এই ছিলো তোর আসল প্ল্যান তাহলে৷

ঊর্মির কথা শুনে সবাই নির্বাক হয়ে গেছে৷ বর ঊর্মির স্বামী কিন্তু কীভাবে ঊর্মির তো বিয়েই হয়নি, এই কথাটাই সবার মাথা ঢুকছেনা সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সব থেকে অবাক হয়েছে বেশি অনু৷ সে তো বরকে চিনেও না৷ আর ঊর্মি ওকে সবার সামনে চড় মেরে অপমান করছে৷

ঊর্মি চিৎকার বললো,,
সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সত্যিটা কি শুনতে চাও তোমরা তাহলে শুনো,,,অনুকে নিয়ে আমি একদিন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম আর সেখানো গিয়ে ওকে বললাম যে আমি ওয়াশরুমে যাবো ও যাতে আমার সাথে আসে তারপর ওকে দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে আমি ওয়াশরুমে গেলাম আর তখন আকাশ (বর)ও ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য আসলো অনুকে জিজ্ঞেস করলো ওয়াশরুমে কেউ আছে কি-না অনু না করলো তারপর আাকাশ ওয়াশরুমে ঢুকতেই অনু বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে আসলো আমাদের চিৎকার শুনে রেস্টুরেন্টের সবাই ওয়াশরুমের সামনে চলে এলো৷ দরজা খুলে আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে সবাই বলাবলি করছিলো আমরা নাকি,, থাক সে কথা না-ই বলি৷ সবার এরকম খারাপ খারাপ কথা শুনতে খুব কষ্ট হয়েছিলো আমার যে জায়গায় আমার আর আাকাশের কোনো দোষ ছিলোনা৷ তারপর সবাই ঠিক করলো আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে, আর দিলোও,এই দেখো রেজিস্ট্রি পেপার৷(হাতের কাগজ দেখিয়ে)আর এসবের সবই অনু জানতো৷ আমি চাইছিলাম তোমাদেরকে ধীরে সুস্তে জানাবো কিন্তু তার আগেইতো অনু বিয়ের পিড়িতে বসে গেলো৷ আকাশের সাথে আমার যেভাবেই বিয়েটা হোক না কেনো ওতো আমার স্বামী৷ তাই আমি বিয়েটা ভাঙতে চলে এলাম৷

অনুর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে৷ ঊর্মি সবসময় নিজে দোষ করে অনুর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়৷ অনুর বাবা একজন ভালো মানুষ বিধায় তিনি কারও সাথে তর্কে জড়ান না৷ খুব বিশ্বাস করেন নিজের এক মাত্র মেয়ে অনুকে৷
অনুর চোখ দুটো শুধু তারা বাবাকেই খুঁজছে৷ বাবা শুনলে খুব কষ্ট পাবে৷ কিন্তু আমি জানি বাবা আমাকে অবিশ্বাস করবেনা৷

আকাশকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো ঊর্মি সত্যি কথাই বলছে৷ আকাশের কথা শুনে আরও এক দফা অবাক হলো অনু৷ আকাশ কেনো মিথ্যা কথা বললো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা তার৷ আর ঊর্মি আপু নিজেই তো বর খুঁজে দিলো তাহলে এসব কী শুরু করছে এখন? অনু ঊর্মির দিকে তাকাতেই ঊর্মি সবার দৃষ্টির অগোচরে ডেভিল হাসি দিলো৷ অনু দৌড়ে স্টেজ থেকে চলে গেলো৷

বিকেলে🍁🍁
কাদঁতে কাদঁতে ঘুমিয়ে পরছিলো অনু৷ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো চারটা বেজে বিশ মিনিট৷ হয়তো এতক্ষনে আকাশের সাথে ঊর্মি আপুর বিয়েও হয়ে গেছে৷ অনু আর না ভেবে তারাতাড়ি শাড়ী অর্নামেন্টস্ খোলে শাওয়ার করতে চলে গেলো৷লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো অনু৷ তারপর বাবার রুমের দিকে চলে গেলো৷রুমে ঢুকে খাটের দিকে তাকাতেই দেখলো তার বাবা খাটে সটান হয়ে ঘুমিয়ে আছেন৷

“আশ্চর্য এদিকে আমার বিয়ে ভাঙলো সবাই যা নয় তাই বলে অপমান করেছে আর এদিকে বাবা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন৷
অনু তার বাবার দিকে এগিয়ে গেলো৷ ওর বাবার মুখের পাশেই একটা বালিশ পড়ে আছে৷ অনু বেশ কয়েকবার ওর বাবাকে ডাকলো কিন্তু ওর বাবা কোনো রেসপন্স করছেনা
“বাবাতো এমন করেননা কোনদিন তাহলে কী,, অনুর মন অজানা কারনেই কেঁপে উঠলো৷ সে তারাতাড়ি তার বাবার নাকের কাছে হাত নিয়ে গেলো কিন্তু না শ্বাস প্রশ্বাস মিসিং৷ তারাতাড়ি পার্লস রেট চেক করলো এটাও মিসিং সন্দেহ দূর করার জন্য বাবার বুকে মাথা রাখলো হার্টবিট শুনা যাচ্ছেনা৷ অনু ওর বাবাকে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলো৷ সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা তার বাবা আর বেঁচে নেই৷

অনু তারাতাড়ি ওর চাচার রুমে দৌড়ে চলে গেলো৷
তারপর জানালো তার বাবা মারা গেছে৷ অনুর চাচা কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,,, আমি জানতাম এটাই হবে তুই যা করেছিস এসব শুনে তোর বাবা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে৷ যাইহোক আমাদের তারাতাড়ি দাফন করার ব্যবস্থা করতে হবে৷

অনু ওর চাচার মুখে এসব শুনে খুব কষ্ট পেলো৷ নিজের ভাই মারা গেলো মানছি সৎ ভাই কিন্তু আমার বাবাতো নিজের আপন ভাই মনে করতো৷ আমি আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনালাম আমার চাচা একটু বিলাপও করলোনা আরও উল্টো বলছে তারাতাড়ি দাফনের ব্যবস্থা করতে৷
অনু ওর বাবার কাছে গিয়ে আবারো কাঁদতে থাকলো৷ বাড়িতে এতো মানুষ তারপরও কারও চোখ দিয়ে একফোটা জল পরছেনা শুধু অনু ছাড়া৷ অনু কাঁদছে বলে ওর চাচী ওকে বলছে ও নাকি ন্যাকামু করছে৷
🍁🍁🍁🍁
রাত এগারোটা বাজে, জানালা দিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অনু৷ চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে৷ অনু চোখের পানি মুছে বড় একটা উজ্জল তারার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,বাবা খুব তো বলতে আমার মা স্বার্থপর আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু এখন তুমি কেনো আমাকে একা রেখে চলে গিয়ে নিজেকে স্বার্থপরের পরিচয় দিলে৷ একদিন তোমার মুখ না দেখলে আমি থাকতে পারতাম না কিন্তু এখন দিনের পর দিন কীভাবে থাকবো বাবা৷ তুমি তো নিশ্চিন্তে অপারে চলে গেলে৷ আমাকেও ওতো নিয়ে যেতে পারতে কিন্তু কেনো নিলেনা বাবা কেনো৷ এখন কে আমি মন খারাপ করলে আমার মন ভালো করবে৷ বায়না ধরলে এনে দিবে৷ দুনিয়াটা যে খুব স্বার্থপর বাবা খুব৷ নিজের মা বাবার চেয়ে কেউ আপন হতে পারেনা৷এখন তো আমার আপন বলতে আর কেউ রইলো না৷ অনু আবারো হাউমাউ করে কেঁদে দিলো৷ দেয়ালে টাঙানো তার বাবার ছবি নামিয়ে তাতে চুমো দিয়ে বুকে চেপে ধরে বাবা বলে কেঁদে দিলো৷

মাথা ব্যাথায় বিছানার একপাশে পরে আছে অনু৷ এমন সময় হলে ওর বাবা ওর জন্য চা নিয়ে আসতো৷ কিন্তু এখন চাতো দূূর কেউ ভাত খাওয়ার জন্যও ডাকলোনা৷
ভারি মাথা নিয়েই কিচেনে যাচ্ছিলো৷ চাচার রুমের পাশ দিশে যেতেই অনুর কানে কিছু মানুষের হাসির আওয়াজ এলো৷ অনু চুপিচুপি দরজার পাশে গিয়ে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে শুনার চেষ্টা করলো কী হচ্ছে ভিতরে৷

চাচাঃএই লোকটার জান একেবারে কই মাছের৷ বালিশ দিয়ে মুখে চাপ দিতে দিতে আমার হাতে ব্যাথা হয়ে গেছিলো কিন্তু তার প্রাণ যাচ্ছিলোনা৷এখন কেউ আমাদের সন্দেহ করবেনা সবাই বলবে অনুর কারনে ওর বাবা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে৷
.
চাচীঃবেশ করেছো মেরেছো,তা না হলে আমরা সব সময় আশ্রিতার মতো এই বাড়িতে পরে থাকতাম আর অনু সব কিছুর মালিক হয়ে যেতো৷
.
চাচাতো ভাইঃবাবা ইউ আর এ বেস্ট এসব কিছু তুমি আমার জন্যই করেছো তাইনা৷
.
ঊর্মিঃকচু,,আমি এতে প্ল্যান করলাম আর এখন আইসে৷

অনু সব কথা শুনে মুখ চেপে ধরে নিচে বসে পরলো৷
” আমার বাবাকে মারার জন্য এতো বড় প্ল্যান করলো৷ ওরা আমার বাবাকে এই সম্পত্তির জন্য প্রাণে মেরে ফেললো৷ একবার বলতো সব সম্পত্তি ওদের নামে করে দিতাম৷নিজে নিজের ভাইকে মেরে ফেললো৷ ওরা কি মানুষ নাকি মানুষ রুপি জানোয়ার৷ একবারো ভেবে দেখেছে একটা সন্তানের জন্য তার বাবা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট৷ ওরা আমার বাবাকে খুন করে ফেললো একবারো হাত কাপলোনা এদের৷শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাসই করতে পারছেনা তার বাবার খুনি তার চাচা৷

অনু উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে দরজা টেলে ভিতরে চলে গেলো৷ অনুকে দেখে সবাই চমকে গেলো৷ ওর চাচা চাচী আর চাচাতো ভাইবোনের মুখের হাসি উধাও৷ওকে দেখে৷

চলবে♥️