Saturday, June 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1582



আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৬

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৬
জারিফ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আমি কফি নিয়ে গিয়ে তার পিছনে দাড়িয়ে আছি। সে বুঝতে পেরে আমার দিকে ঘুরে দাড়িয়ে হাত থেকে কাপটা নিয়ে আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। “আপনার সাথে আমার কথা আছে!” আমার কথা শুনে সে কপাল ভাঁজ করে দাড়িয়ে থাকলো আমার দিকে তাকিয়ে। “আপনি কেন নিলা কে বললেন আমি আপনার উত্তর টা দিবো? আমি তো জানিনা আপনার কি উত্তর?” আমি একটু আসতে করে কথাটা বললাম।উনি সেই কঠিন দৃষ্টি নিয়ে এক পা এক পা করে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আর আমি তার কাছ থেকে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। উনি পাশের টেবিলে কাপটা রাখলেন আমার দিকে তাকিয়েই। আমি পিছাতে পিছাতে দেয়ালে ঠেকে গেলাম। উনি আমার দুই পাশে দুই হাত রেখে আমার দিকে ঝুকে গেলেন। ওনার নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। ওনার হার্ট বিট আমি শুনতে পাচ্ছি। তার চোখের মাঝে আমি হারিয়ে যাচ্ছি। তার মাতাল করা পারফিউমের ঘ্রান আমাকে তার কাছে টানছে। এতদিনে তৈরি হওয়া সমস্ত আবেগ ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। “তুমি কি উত্তর দিয়েছ?” উনি নেশা ভরা কণ্ঠে বললেন। তার কথা শুনে আমি একটু চোখ বন্ধ করে সাহস সঞ্চয় করে নিলাম। তারপর চোখ খুলে “আমি না বলে দিয়েছি। বলেছি আপনি এসব নিয়ে ইন্টারেস্টেড না।” এক নিঃশ্বাসে বলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম। উনি খুব শান্ত কণ্ঠে বলল “কেন বলেছ?”। এবার আমি একটু রেগে গেলাম। একটু চিৎকার করেই বললাম “কেন বলেছি মানে কি? আপনি তো বিবাহিত। তাহলে ওর সাথে কেন প্রেম করবেন?” উনি এবার একটু রাগি স্বরে বললেন “তাহলে কাজিন কেন বলেছিলে?” আমি এবার ভয় পেয়ে যাই। কিছু না বলে মাথা নিচু করে নেই। “উত্তর দিবা না থাপ্পড় খাবা?” ওনার ধমকে আমি কেঁপে উঠি। এবার উনি সত্যি সত্যি অনেক রেগে গেছেন। প্রথম বার ওনার রাগ দেখে ভয়ে চোখ থেকে পানি পড়ছে। চোখের পাতা পিটপিট করে পানি আটকাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তারা অঝরে নিচে নামছে। “স্টপ ক্রায়িং!” এতোটা শান্ত গলায় বলল যে শুধু আমার কান পর্যন্তই কথাটা পৌঁছালো। আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল “মিথ্যা বলে অন্যায় করেছো। কিন্তু কেন বলেছ জানতে পারি?” তার শান্ত কণ্ঠ শুনে আমি সাহস পেলাম। মাথা তুলে বললাম “ওরা ভাববে এতো ছোট মেয়ে বিয়ে করেছে। তাই বলতে চাইনি।” “কেন ছোট মেয়েরা বিয়ে করেনা?” “করে। কিন্তু ওই সময় কিছু না ভেবেই বলে ফেলছি।” আমার কথা শেষ হতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে কাপটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট জালালেন। বেশি কিছু না বুঝলেও এটা বুঝতে বাকি রইলনা যে উনি আমার কাজে একটু হলেও কষ্ট পেয়েছেন। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি বুঝতে পেরে একটু আড় চোখে আমাকে দেখে সিগারেট টা ফেলে দিলেন। আমি মাথা নিচু করে কাদো কাদো কণ্ঠে বললাম “আপনি আমার উপরে রাগ করেছেন? সরি! আমি আর কখনও মিথ্যা বলবনা।“ “ইটস ওকে! যাও শুয়ে পড়।” উনি সামনে তাকিয়েই বললেন। আমি আর কথা না বাড়িয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

ভালবাসা বড়ই অদ্ভুত। ভালবাসলে মানুষ স্বার্থপর হয়ে যায়। পাশের মানুষটার কথা চিন্তা করেনা। আমি শুধু নিজের ভালবাসার কথা ভেবে তাকে আমার প্রতি দুর্বল করার চেষ্টা করছি। কিন্তু একবারও তার কথা ভাবিনি। সে কি আমাকে মেনে নিতে পেরেছে। নাকি শুধু সবার চাপেই বিয়েটা করেছে। আমি বারান্দায় দাড়িয়ে ভাবছি। সেকি আমাকে ভালবাসতে পারবে? তার মনে কি আমাকে জায়গা দিতে পারবে? ও অনেক ছোট। সবে মাত্র ওর জীবন শুরু। ভালবাসা ভাললাগা এই সময়ে তার জিবনে আসতে শুরু করবে। তখন যদি সে আমাকে মেনে নিতে না পারে? মা কি আমাকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে তার উপর জোর করে চাপিয়ে দিলো? আমি তাকে ভালবেসেছি তাই বলে আমার ভালবাসা তার উপরে চাপিয়ে দিতে পারিনা। নাহ! আমাকে তার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। আমি গিয়ে তার পাশে বিছানায় বসলাম। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আমি তাকে কোন রকম জোর করতে চাইনা। সব কিছু তার উপরে ছেড়ে দিলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পড়লাম।

আজ কলেজ ছুটি তাই বাড়ির কাজ করছিলাম। জারিফ সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। কি যেন কাজ আছে তাই তাড়াতাড়ি করে না খেয়েই বাইরে চলে গেলো। আমার দিকে একবারও তাকাল না। মনে হয় তার রাগ এখনো কমেনি।আমি তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কিন্তু সে সেই দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো।

“তোর কি হয়েছে ঠিক করে বলত?” সাইফ আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম। তার কথায় চোখ খুলে বললাম “কিছুনা।” সে আমার কথা বিশ্বাস করলো না। শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল “তুই আমি আর জারিফ আমরা ঠিক কবে থেকে এক সাথে আছি বলতে পারিস?” শাওন একটু ভেবে বলল “সেই ছোট বেলার কথা। এতদিনে কি মনে আছে?” এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এতো দিনে একটা মানুষ কে এতোটা চেনা সম্ভব যে সেই মানুষ টা মিথ্যা বলছে না সত্যি বলছে।” আমি কোন কথা না বলে উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট জালিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। “ফারিয়া কে বিয়ে করে আমি ভুল করিনি তো?” অসহায় ভাবে বললাম। দুজনি একসাথে বলে উঠলো “কি বলছিস এসব?” সাইফ আমার কাধে হাত রেখে বলল “কি হয়েছে খুলে বল।” “ফারিয়া অনেক ছোট। ও নিজের পছন্দ অপছন্দ ভালো করে এখনো বোঝেনা। যখন বুঝতে পারবে তখন যদি আমাকে মেনে নিতে না পারে?” আমি একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম। শাওন আমার কথা শুনে বলল “আমার মনে হয় কোন কিছু ভাবার আগে তোর ওকে একটু সময় দেয়া দরকার। তারপর সব কিছু ভেবে দেখা যাবে কি করা যায়।” আমি কোন কথা না বলে মাথা নাড়ালাম। সাইফ বলল “তোর যদি তাই মনে হয় তাহলে কিছুদিন ওর কাছ থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখ। তাহলেই অন্তত ওর আচরনে বুঝতে পারবি ও কি চায়। কারন ও যেই পরিবেশে বড় হয়েছে সেখান থেকে ভালবাসাটা বোঝা ওর জন্য একটু কঠিন।” আমি বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছি।

অনেক রাত হয়ে গেছে জারিফ এখনো আসছেনা।সে সন্ধ্যা বেলায় বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু আজ এতো রাত হয়ে গেলো তার কোন খবর নেই। আমি তাকে ফোন দিলাম। প্রথম বার ফোনটা বেজে গেলো কিন্তু ধরলনা। দ্বিতীয়ও বার ফোনটা বাজতেই ধরে ফেলল “হ্যালো।” “কোথায় আপনি? কখন আসবেন?” আমি একটু বিচলিত হয়ে বললাম। উনি একটু ভেবে বললেন “আসছি।” বলেই ফোনটা রেখে দিলেন। আমি ফোনটা রেখে দিয়ে নিচে গিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে দিলাম। বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষন পর কলিং বেল বাজলো। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। জারিফ দাড়িয়ে আছে। তাকে দেখে আমার মনটা খুশি হয়ে গেলো। আমি হেসে বললাম “এতো দেরি হল যে?” উনি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন “একটু কাজ ছিল।” বলেই উপরে চলে গেলেন। আমিও উপরে গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছি। আর উনি ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হচ্ছেন। বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম “খাবার দিবো?” উনি চুল ঠিক করতে করতেই বললেন “আমি খেয়েছি।” বলেই এসে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আমি তার আচরনে একটু অবাক হলাম। প্রায় ৬ মাস হল আমি এই বাড়িতে এসেছি। কিন্তু কখনও এরকম আচরণ সে করেনি। আমি একটু বসে থেকে শুয়ে পড়লাম।

কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে জারিফের জন্য অপেক্ষা করছি। জারিফ ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে বলল ”আমার একটা মিটিং আছে। তোমাকে ড্রাইভার কলেজে নামিয়ে দিবে।“ আমি অবাক হয়ে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম। ওনার শত ব্যস্ততা থাকলেও অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যায়। এমন কি কাজ আছে যে আমাকে নামিয়ে দিতে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু সেই দিকে তার কোন খেয়াল ছিলোনা। ড্রাইভার আমাকে কলেজে নামিয়ে দিলো। মন টা ভীষণ খারাপ। কিছুই ভালো লাগছেনা। ক্লাসে মন বসছেনা। বুকের মাঝে কেমন যেন শুন্যতা কাজ করছে। কেমন জানি একটা অনুভুতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা নাই। কিন্তু কেন তা বুঝতে পারছিনা। কলেজ থেকে ফিরে দেখি ফুপু এসেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে ফুপু কে জড়িয়ে ধরলাম। “কেমন আছিস মা?” “ভালো। তুমি কেমন আছ ফুপু?” “ভালো আছি। শোন! তোর বাবা ফোন করেছিলো। আমাদের যে একটা মিলাদ মাহফিল হয় সেটা হবে আগামি পরশু। তাই আমি গ্রামে যাচ্ছি। তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।” গ্রামে যাওয়ার কথা শুনে আমি খুব খুশি হলাম। কিন্তু কি একটা মনে করে সবার দিকে তাকালাম। মা বলল “জারিফ কে আমি বলেছি। ওর কাজ আছে তাই আসতে পারবেনা। তোমাকে যেতে বলেছে। ও গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবে।” আমি খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে ফুপুর সাথে রওনা হলাম। বাড়ি যাওয়ার খুশি তে আমার কিছুই মাথায় থাকলোনা।

বেশ কয়দিন থাকলাম বাড়িতে। এই কয়দিনে জারিফের সাথে আমার কথাই হয়নি। অফিসের কাজে নাকি খুব ব্যাস্ত। সাইফ ভাইয়ার সাথে তার কথা হয় আর আমি সেখান থেকেই তার খবর নিয়েছি। কাল সাইফ ভাইয়া রা চলে যাবে। কিন্তু আমি যেতে পারবোনা। কারন জারিফ বলেছে সে এসে আমাকে নিয়ে যাবে। সে কবে আসবে আমি জানিনা। আমার আর ভালো লাগছেনা। মনে হচ্ছে জারিফের কাছে ছুটে যাই। তার প্রতি আমার সমস্ত অনুভুতি আজ যেন উপচে পড়ছে। তার কথা মনে পড়তেই আমার চোখ থেকে পানি বেয়ে পড়ল। নিজের বাড়ি ছেড়ে যেদিন তাদের বাড়ি গিয়েছিলাম সেদিনের থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে আজ জারিফ কে ছেড়ে থাকতে। নিজের বাড়ি আর বাড়ির মানুষ গুলোকেও আজ তেমন আপন মনে হচ্ছেনা। সবার মাঝে থেকেও কেমন যেন একটা অপূর্ণতা আমাকে গ্রাস করছে। সেটা এক মাত্র জারিফই পারে পুরন করতে। কিন্তু সে কি আসবে আমাকে পূর্ণ করতে।

চলবে……

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৫

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৫

গত আধা ঘণ্টা যাবত সেই প্যানপ্যানানি ইংলিশ গান শুনছি। মাথাটা ধরে এলো। একে তো জ্যাম। তারপর সেই গান! অসহ্য লাগছে। মাঝে মাঝে জারিফ গুন গুন করে গান গাচ্ছে। তার গানের গলা কিন্তু বেশ! ইংলিশ গান হলেও শুনতে ভালই লাগছে। জানালার কাচ টা উঠিয়ে দিয়ে তাতে মাথাটা ঠেকিয়ে রাখলাম। জারিফ আমার দিকে তাকিয়ে বলল “কোন সমস্যা?” আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম। সে গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিলো। কলেজের সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো।

“আচ্ছা তোকে ওই যে হ্যান্ডসাম ছেলেটা প্রতিদিন নামিয়ে দিয়ে যায় আবার নিয়ে যায় ওটা কে রে?” জারিফের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল নিলা। আমিও তার আঙ্গুলের দিকে তাক করে জারিফের দিকে তাকালাম। সামনের দিকে গাড়ির উপরে বসে হেলানি দিয়ে শাওন ভাইয়ার সাথে কথা বলছে আর হাসছে। তার হাসি দেখে মনে হল দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি। কি সুন্দর সেই হাসি। মেয়েদের মনে জন্মের পর থেকেই তার বিয়ের জন্য একটা ছবি তৈরি হয়ে থাকে। সেটা সাধারণত প্রকৃতি গত ভাবেই হয়।তাতে কারও কোন হাত থাকেনা। সেখানে নিজের বউ সাজার ছবি আর পাশে বরের একটা আবছা ছবি থাকে। যখন মনের মানুষটা বাস্তবে খুজে পায় তখন তাকে সেই ছবিতে আলতো করে বসিয়ে দেয়। এটাও প্রকৃতির নিয়ম। আমার সেই ছবিতেও যেন জারিফ আজ জায়গা করে নিলো। “কি রে বল না কে হয়?” আবার নিলার কথায় ঘোর কাটল। আমি নিলার দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে নিলাম। এখনি ওদেরকে বিয়ের কথা কিছুই বলা যাবেনা। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম “আমার কাজিন।” কথাটা শুনেই কেন জানি নিলা খুব খুশি হল। সেই খুশির কারন আমি বুঝতে পারলাম না। তাকে কিছু বলার আগেই জারিফ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি একবার হাতের দিকে তাকিয়ে জারিফের দিকে তাকালাম। সে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু মুচকি হেসে তার হাতে হাত দিলাম। সে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমি তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার হাত কাঁপছে। আর কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে। এই অনুভূতিটার নাম কি তা ঠিক আমি জানিনা। কিন্তু আমার শরীরে যে শিহরণ হচ্ছে আর বুকের ভিতরে শিতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে তা আমি বেশ উপলব্ধি করতে পারছি। আর এটাও বুঝতে পারছি যে এই মুহূর্ত টা আর এই অনুভুতি টাকে কোন ভাবেই আমি হারাতে চাইছিনা। গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে আমাকে ভিতরে বসিয়ে দিয়ে হাত ছেড়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর পাশের সিটে গিয়ে বসে পড়ল। তার মুখে হাসি লেগেই আছে। আমি সেই হাসির মায়ায় পড়ে গেছি। তার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছি। সে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল “কি দেখছ?” “আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে!” আমি তার দিকে তাকিয়েই বললাম। সে আমার কথায় অবাক হয়ে হাসি টা বন্ধ করে দিলো। তার সেই হাসি বন্ধ হওয়ার সাথেই আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। চোখ বড় বড় করে তাকালাম। কি বলেছি তা বুঝতে পেরে কথা ঘোরানোর জন্য বললাম “আমার বন্ধু নিলা বলছিল।” সে একটু সময় কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে থেকে গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিলো। কি বলতে কি বলে ফেললাম। কেন যে তার দিকে তাকাতে গেলাম। না তাকালেই এমন হতনা। একটা মেয়ে কখনও একটা ছেলেকে বলে যে তাকে সুন্দর লাগছে? ছি ছি! ভাগ্যিস বুঝতে পারেনি পারলে কি হতো। আমি তার সামনে যেতেই পারতাম না। আর উনি আমাকে ধমক দিত এমন উলটা পাল্টা কথা বলার জন্য।

ক্লাসের ফাকে বসে গল্প করছিলাম সবাই। প্রেম করলে কি কি করতে হয় তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনছিলাম। এমন সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে নিলা বলল “ফারিয়া তোর কাজিনের কোন গার্ল ফ্রেন্ড আছে নাকি?” “নেই” তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম। “কাল যেভাবে তোর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল দেখে তো মনে হচ্ছিল তোর প্রেমে পড়েছে?” সে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল। আমি একটু রাগ করে তার হাতে আলতো করে মেরে বললাম “আমার প্রেমে কেন পড়বে?” সে ভয় পেয়ে আর কিছু বলল না। কিন্তু তার কথাটা আমার মাথায় ঘুরছিল। আমি কঠিন ভাবনায় ডুবে গেলাম।

বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছি। পিচ্চি টা ঘরের এক বার এদিকে যাচ্ছে তো আরেকবার ওদিকে যাচ্ছে। আমি একটু মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম। মুখে আঙ্গুল দিয়ে কি যেন ভেবে হাঁটাহাঁটি করছে। আমি আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। “আপনি কি আমার প্রেমে পড়েছেন?” সে সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি তার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম। এটা কি বলল? ও কিভাবে জানলো এসব? সাইফ কি ওকে কিছু বলেছে? না ও তো কখনই বলবে না। তাহলে? আমি তাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম “প্রেম কি তুমি বোঝ?” “বুঝি।” “বল দেখি প্রেম করলে কি হয়?” আমি তাকে ইশারায় সামনে বসতে বলে জিজ্ঞেস করলাম। সে বসতে বসতে বলল “সারাদিন ঘুরে বেড়ায়, এক সাথে থাকে, ফুচকা খেতে যায়, সুন্দর সুন্দর কথা বলে।” “আমি কি এরকম কিছু করেছি?” সে মাথা নাড়িয়ে না বলল। “তাহলে?” “কিছুনা। এমনিতেই জানতে ইচ্ছা করলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।” বলেই সে উঠে গেলো। আমি তার যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবলাম এতদিনে যতটুকু চিনেছি এটা তার কথা না। কেউ তো তাকে এসব বলেছে? তা নাহলে তার মাথায় এসব আসার কথা না। কাল একটু দেখতে হচ্ছে বিষয়টা!

আমি আজ একটু আগেই গিয়েছিলাম কলেজে ফারিয়াকে আনতে। শাওনের সাথে গল্প করে বের হয়ে দেখি ফারিয়া সব ফ্রেন্ডরা মিলে মাঠে বসে বাদাম খাচ্ছে। “কি হচ্ছে?” আমার কথায় সবাই পিছনে ঘুরে তাকায়। আমি কথাটা বলে তাদের মাঝখানে বসে পড়লাম। তার এক বন্ধু আমার দিকে বাদাম এগিয়ে দিলো। “থ্যাঙ্কস!” বলে কয়েকটা বাদাম হাতে নিয়ে ছিলতে লাগলাম। আমি একটা বাদাম মুখে দিতে যাব এমন সময় নিলা বলল “আপনি ফারিয়ার কাজিন হলে তো আমাদেরও ভাইয়া হচ্ছেন।” তার কথা শুনে আমি হা করে মুখের সামনে বাদাম টা ধরে ফারিয়ার দিকে একবার কঠিন দৃষ্টিতে তাকালাম। তার মানে আমাকে সে নিজের কাজিন বলে পরিচয় দিয়েছে। তোমাকে যতটা ইনোসেন্ট ভেবেছিলাম ততটা তুমি নও। আমাকে তুমি এখনো চিনতে পারনি। আমি এতো সহজে ছেড়ে দেইনা বেবি। আমি বাদাম টা মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে নিলার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম “আমি ফারিয়ার যেই হই। তুমি আমাকে কি বলবে সেটা তুমিই ডিসাইড কর।” আমার কথায় মেয়েটা রীতিমতো ক্রাশ খেল। সব কয়টা দাঁত বের করে আমার দিকে তাকাল। আমি একটু কপাল ভাঁজ করে বাকা হেসে এটিটীঊট নিয়ে তার সাথে আই কন্ট্যাক্ট করলাম। সে আরেক দফা ক্রাশ খেল আমার উপরে। সেও আমার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।এসব দেখে ফারিয়ার গায়ে আগুন লেগে গেলো। আমি তার দিকে না তাকিয়েও বেশ বুঝতে পারছি। সেই মুহূর্ত টাকে নষ্ট করতে ফারিয়া চেচিয়ে বলল “বাসায় যাব দেরি হয়ে যাচ্ছে।” আমি একটু বিরক্ত ভাব দেখিয়ে তার দিকে তাকালাম। ফারিয়া এবার চরম রেগে গেলো। আমি একটা ইনোসেন্ট লুক নিয়ে নিলার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম “আজ আসি। দেখা হবে।” বলেই ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম “চল।“ সে আমার পিছনে পিছনে এসে গাড়িতে বসে পড়ল। আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়েই একটা হিন্দি রোমান্টিক গান চালিয়ে দিয়ে গুন গুন করে গাইতে গাইতে গাড়ি চালাতে লাগলাম। ফারিয়া মুখটা কাল করে সামনে তাকিয়ে থাকলো। আমি তার দিকে একবারো তাকালাম না।

দুই হাতের কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে আছি। “খাবেন না?” আমি পিছনে ঘুরে দেখি পিচ্চি টা দাড়িয়ে আছে। আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে এক হাত ভাঁজ করে আরেক হাত থুতনিতে রেখে বললাম “তুমি না আমাকে জারিফ ভাইয়া বলতে?” সে আমার কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আমি আবার বললাম “বলনা কেন?” সে ভ্রু কুচকে বলল “আপনি তো বলতে নিষেধ করেছেন।” “ওহ আচ্ছা আজ থেকে আবার বলবে।” আমি কথাটা শেষ করেই নিচে গেলাম। আর সে আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

আমি রেডি হচ্ছি। পিচ্চি টা সেই তখন থেকে আমার রেডি হওয়া দেখেই যাচ্ছে। আমি আয়নায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে আয়নায় তার দিকে একবার দেখে নিলাম। সে আজ কোন কারনে আমার উপরে ভীষণ বিরক্ত। এক রাশ বিরক্ত নিয়ে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে। তার সেই বিরক্ত ভাবকে পাত্তা না দিয়ে আমি ফোন টা নিয়ে নিচে গেলাম। সে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিচে নেমে এলো। আমি কাল থেকেই তার সাথে কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করছি যেটা তার পছন্দ হয়নি। কিন্তু আমি তার সেসব পাত্তা না দিয়েই নিজের মতই চলছি। গাড়িতে আমরা একটা কথাও বললাম না। প্রতিদিনের মতো ইংলিশ গান শুনতে শুনতে কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি আর ফারিয়া গাড়ি থেকে নেমে সামনা সামনি দাড়িয়ে আছি। এমন সময় নিলা কোথা থেকে এক গুচ্ছ গোলাপ আমার সামনে ধরে আমাকে আই লাভ ইউ বলল। সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একবার ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে নিলার দিকে তাকালাম। আমার উপরে ক্রাশ খেয়েছে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু এমন কিছু করবে টা আন্দাজও করতে পারিনি। আমি একটু হেসে তার হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে বললাম “এভাবে আগে কখনও কেউ প্রপোজ করেনি। এটাই প্রথম তো তাই একটু ভাবতে হবে। আমি তোমাকে পরে উত্তর দিবো কেমন। ” সে একটু লজ্জা পেয়ে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে চলে গেলো। আমি ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে ফারিয়ার দিকে তাকালাম । কিন্তু ফারিয়া যেন তার দৃষ্টি দিয়ে আমাকে খেয়ে ফেলবে। কিছু না বলেই রাগ করে চলে গেলো। দূর থেকে এসব শাওন দেখছিল। সে কাছে এসে বলল “কি সব নাটক চলছে? কিছুই বুঝলাম না।” আমি একটু হেসে বললাম “বউ আমার তার বন্ধুদের বলেছে আমি কাজিন। তাই বউ কে একটু শেখাচ্ছি মিথ্যা বলার বিপদ কি হতে পারে।” বলেই দুজনে হাসতে লাগলাম।

সেই সকাল থেকেই মাথাটা গরম হয়ে আছে। আরও বেশি গরম হয়ে যাচ্ছে জারিফ কে দেখলেই। এই জন্যই আমি জারিফের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে চলছি। যাতে আরও বেশি মাথাটা গরম না হয়ে যায়। লোকটা কেমন অদ্ভুত। একটা মেয়ে এসে প্রপোজ করলো আর উনি হাসি মুখে ফুল নিয়ে নিলো। উনি তো বিবাহিত। বললেই পারতো। কেন বলল্না? আর কি দরকার ছিল কাল অতো হাসাহাসি করার। সেই জন্যই তো এমন হয়েছে। ওদের সাথে অতো কথা না বললেই কিছুই হতনা। বাজে লোক একটা।

নিলার ওই ঘটনার পর থেকে ফারিয়া আমার সাথে খুব ভালো আচরণ করছেনা। এমন একটা ভাব ধরছে যেন এই সব কিছুর জন্য আমিই দায়ি। সব কিছু বুঝতে পেরে আমিও তাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছিনা। তবে ও আমার উপরে এতোটা রেগে আছে যে স্বাভাবিক কোথাও বলছেনা। কিন্তু এখানে আমার কি দোষ। সত্যি কথাটা বললেই তো এমন হতনা। তার একটু শিক্ষা পাওয়া উচিৎ। পরের দিন আমি ফারিয়াকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠতে যাব ঠিক তখনি নিলা এসে সামনে দাঁড়ায়। তারপর আমার কাছে জানতে চাইলো আমিকি ভেবেছি। আমি একটু হালকা হেসে তাকে বললাম “আমার কাজিন তোমাকে উত্তর টা দিবে। আমি তাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি।” বলেই আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম ”ওকে ভালো করে বুঝিয়ে দিও কেমন।” সে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন আমি তার উপরে ১০০ কেজি ওজনের বস্তু চাপিয়ে দিয়েছি। আমি আর না দাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।
চলবে…

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৪

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৪

বারান্দায় দাড়িয়ে কফি খাচ্ছি। পিছনে ঘুরতেই পিচ্চি টার দিকে চোখ পড়ল। টেবিলে বসে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। বাতাসে সিল্কি চুল গুলো থেমে থেমে উড়ছে। কি স্নিগ্ধ লাগছে। এভাবে কখনও দেখা হয়নি। কিন্তু আজ চোখ আটকে যাচ্ছে। অপূর্ব! আমি নিজে কাউকে খুজে নিলে হয়তোবা এমনি একজনকে খুজে নিতাম। আমি আসলে তার দিকে সেভাবে কোনদিন তাকাইনি। তাই তার সৌন্দর্য সেভাবে আমার কাছে ধরাও পড়েনি। বিয়ের পরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমি তার দিকে তাকালাম। তার প্রতি একটা অন্য রকম অনুভুতি কাজ করছে। কিছু একটা আজ আমাকে তার কাছে টানছে। আমি কফি টা হাতে নিয়ে গেলাম তার কাছে। কাপটা টেবিলে রেখে হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে “খাও।“ আমার কথা শুনে সে একটু অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে। তারপর কাপটার দিকে মাথা বাড়িয়ে একবার দেখে নিয়ে বলল “এটা তো আপনার কফি।“ “তো?” একটু ভ্রু কুচকে বললাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “আমি কেন খাব?” “বেশি কথা না বলে খাও।“ আমি গম্ভীর ভাবে বললাম। “এখন খেতে ইচ্ছা করছেনা। আপনি খান।“ আমার দিকে না তাকিয়েই বলল। “কফি খাবা না থাপ্পড় খাবা? খেতে বলেছি খাও” আমি ধমক দিয়ে বললাম। সে আমার ধমকে ভয় পেয়ে এক নিমিষেই কফি শেষ করে কাপটা টেবিলে রেখে বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি তার মাথায় হাত দিয়ে একটু হেসে বললাম “পড়।“ সে কোন কথা না বলে পড়তে শুরু করলো।

বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছি। কিন্তু আমার চোখ সেই পিচ্চি পরীটার দিকেই আটকে যাচ্ছে। আমার পিচ্চি পরী। আমার পরী মানে? কি বললাম এটা।মুহূর্তেই ঠোটের কোণে একটা হাসি চলে এলো। আমি কি তার প্রেমে পড়েছি? কি থেকে কি হয়ে গেলো। কিছুই বুঝলাম না।অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে। তার মায়াবি চেহারা আমাকে টানছে।

ভীষণ মাথা ব্যাথা করছিলো। কফিটা খেয়ে মাথাটা ছেড়ে দিলো। মানুষটা খারাপ না। একটু মুচকি হেসে বইটা বন্ধ করে উঠে গেলাম। সব ঠিক করে রেখে পানি খেয়ে শুয়ে পড়ব। পানি গ্লাসে ঢালতে একটু খানি মেঝেতে পড়েছে। পানিটা খেয়ে তারপর মুছে দিবো। পানি খেয়ে গ্লাস টা রেখে ঘুরতে যাব তখনি পানিতে পা পড়ল। আর পা পিছলে পড়ে গেলাম। কিন্তু মেঝেতে না। জারিফ আমার পিছনে দাড়িয়ে ছিল। তার গায়ের উপরে। দুজন মিলে গিয়ে পড়লাম বেডে। আমি জারিফের উপরে পড়লাম আর আমার ঠোঁট জারিফের ঠোঁট স্পর্শ করলো। কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলাম। এ কেমন অনুভুতি হল। এরকম তো আগে কখনও হয়নি। আমি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে উঠতে গিয়ে পারলাম না। কারন জারিফ আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে রেখেছে। সে তার হাত আমার পিঠে স্লাইড করছে। নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। আমি তার চোখের দিকে তাকাতেই আমার গলা শুকিয়ে গেলো। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে মাথার নিচে একটা হাত দিয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি। আমার অস্বস্তি হতে লাগলো। এভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলে অস্বস্তি তো হবেই। কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।

আমি একটু মুচকি হেসে উঠে বসলাম। আমি ওকে যতটা পিচ্চি ভেবেছিলাম ততটাও না। নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে স্লাইড করছি। তখনি ফারিয়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আমাকে দেখেই থমকে দাঁড়ালো। আমি তার দিকে একটু সিরিয়াস লুকে তাকালাম। আমার তাকানো দেখেই তার গলা শুকিয়ে গেলো সেটা বেশ বুঝতে পারলাম। উঠে বারান্দায় চলে গেলাম। বারান্দায় দাড়িয়ে প্রথম প্রেমের প্রথম অনুভুতি সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে উড়িয়ে প্রকৃতির সাথে ছেলিব্রেট করছি। আসলেই প্রেমের এক অদ্ভুত অনুভুতি হয়। এটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। অবশেষে আমিও প্রেমে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে দেখছি আমার পিচ্চি কলেজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে। আমিও উঠে ওয়াশ রুমে গেলাম। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চোখে কাজল। কপালে টিপ। এই মেয়েটাকে সেদিনই বলেছিলাম এভাবে কলেজে না যেতে। সকাল সকাল মেজাজ টাই খারাপ করে দিলো।ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে সামনে এনে ধমক দিয়ে বললাম “বলেছিলাম না এভাবে সং সেজে কলেজে যাবেনা। তবুও কেন সেজেছ? মুছে ফেল।“ সে ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। “সোজা কথা সোজা ভাবে না শুনলে থাপ্পড় দিয়ে শোনাবো।“ সে ভয়ে সব কিছু মুছে ফেলে একদম সাধারন ভাবে নিচে গেলো।

এতদিন শুধু রাগ দেখাত এখন মারতেও চায়। কি আজব মানুষ। একটু মন ভরে সাজতেও পারবোনা। সকাল বেলাতেই মুড টা খারাপ করে দিলো। সে আমাকে আজ একাই কলেজে নামিয়ে দেয়নি। আমার সাথে সেও গিয়েছে কলেজে তার বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে। আজ নাকি অফিসে তেমন কাজ নেই তাই অফিসে যাবেনা। আমি ক্লাসে চলে গেলাম। আর সে তার বন্ধুর রুমে।

“কি রে এতক্ষনে এলি? সাইফ ও প্রায় চলেই এসেছে। আজ জমিয়ে আড্ডা দিবো।“ শাওন বলল। আমি গিয়ে একটা চেয়ারে বসতেই সাইফ ভিতরে ঢুকে বলল “ফারিয়ার কি হয়েছে রে? ওর মন খারাপ দেখলাম?” আমি চেয়ারে আরাম করে বসে তার দিকে তাকিয়ে বললাম “ওর সেজে গুজে কলেজে আসাটা আমার একদম পছন্দ না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। সাজতে নিষেধ করেছি মন খারাপ করছিলো। তাই থাপ্পড় মারতে চেয়েছি।“ সাইফ আর শাওন দুজনেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সাইফ তার হাত আমার কপালে লাগিয়ে বলল “তুই সুস্থ আছিস তো?” “কি যা তা বলছিস” আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম। শাওন বলল “বন্ধু প্রেমে পড়েছে!” বলেই দুজন হাসতে শুরু করলো। আমিও তাদের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বললাম “প্রেমে তো পড়তেই হতো। ওরকম একটা কিউট সারাদিন চোখের সামনে ঘুরে বেড়ালে প্রেম না হয়ে কি পারে।“ “তোর সেই কিউট জানে প্রেমে পড়ার কথা?” শাওন বলল। “মাথা খারাপ! এখনি ওকে জানাবোনা। আর একটু বড় হোক। সেও আমার মতো আমার প্রেমে পড়ুক আগে তারপর।“ আমি একটু মুচকি হেসে বললাম। সাইফ বলল “দেখিস আবার দেরি যেন না হয়ে যায়। সময়ের কাজ সময়ে করে নিস বন্ধু।“ বলেই সবাই হাসতে লাগলাম। “পিচ্চিটা আসলেই অনেক কিউট! খুব মায়াবি চেহারা।“ আমি কোথাও একটা যেন হারিয়ে গিয়ে কথাটা বললাম। “তাই বলি আনটি বিয়ে করতে বলল আর বন্ধু আমার রাজি হয়ে গেলো। আমিও বেশ অবাক হয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি আসল কারন। ” সাইফ শাওনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল। আমি সামনে থাকা একটা কাগজ সাইফের গায়ে ছুড়ে মেরে হাসতে লাগলাম।

বাবা তাকে ডাকছিল তাই ডাকতে এসে দেখি উনি বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। ভেবেছিলাম ঘুমিয়েছে। তাই আসতে করে কাছে বসে বললাম “জারিফ ভাইয়া।“ উনি আমার ডাক শুনে চট করে চোখ খুলে কঠিন ভাবে আমার দিকে তাকালেন। তার সেই দৃষ্টি দেখে আমি ঢোক গিলতে শুরু করলাম। আমার হাত টা জোরে চাপ দিয়ে ধরে বলল “আবার ভাইয়া।“ আমি মাথা নিচু করে সরি বললাম।হাতে ব্যাথা লাগছে। নাড়াতেও পারছিনা। জোরে চেপে ধরার কারনে অনুভুতি শুন্য হয়ে যাচ্ছে। “আমি কে?” তার কথায় চমকে উঠলাম। উত্তর দিতে পারছিনা। নিচে তাকিয়ে থাকলাম। এবার ধমক দিয়ে “কি হল? মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না কেন?” আমি ভয় পেয়ে এবার কেদে দিবো। “বাবা ডাকছে” কাপা কাপা গলায় বললাম। “যতক্ষণ না বলতে পারছ আমি কে ততক্ষন কোথাও যাবেনা।“ চাপা ধমক দিয়ে বলল। কেমন পরিক্ষায় পড়লাম। সব নষ্টের মুল ওই ভাইয়া! আর কখনও কাউকেই ভাইয়া ডাকবোনা। কিন্তু এখন কি করি? “কি হল?” আবার ধমকে চমকে বলে ফেললাম “বর!” “কি বললে জোরে বল।“ “বর।“ “কার বর?” ’”আ…আ…মার বর” ভয়ে কাপতে কাপতে বললাম। হাতটা ছেড়ে দিয়ে উঠে বাইরে চলে গেলো। আমি কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে হাতের দিকে তাকালাম। চমকে উঠলাম। সব কয়টা আঙ্গুলের দাগ! লাল হয়ে আছে।কি নিষ্ঠুর। ভাইয়া বলেছি তাই এভাবে শাস্তি দিতে হবে। আমি মন খারাপ করে একটু সময় বসে থাকলাম। তারপর নিচে নামছি সিঁড়ি দিয়ে। সবাই বসে সোফায় গল্প করছে কিন্তু জারিফ নেই। আমি অমনোযোগী হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচে নামছি। জানিনা ভুল করে কোথায় পা দিলাম। কি হল বুঝতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠবো তখনি পিচ্চি টা লাফিয়ে লাফিয়ে নামতে নামতে পা পিছলে পড়ে গেলো। আর আমি তাকে ধরে ফেললাম। নিজের সাথে তাকে জড়িয়ে নিলাম দু হাতে। সে ভয় পাওয়ার কারনে চোখ বন্ধ করে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমিও তাকে আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। দুজনেই খানিক্ষন চুপ করে থাকলাম। সে ভয় কাটাতে চেষ্টা করছে আর আমি তাকে অনুভব করছি গভীর ভাবে। বুকটা যেন ভরে গেলো। একটু সময়ের জন্য মনে হল আমার সারাজীবনের অপূর্ণতা আজ পূর্ণ হল। “তোমরা ঠিক আছ তো?” মায়ের কথায় আমার ঘোর কাটল। পিচ্চি চোখ খুলে এই অবস্থা দেখে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উপরে চলে গেলো। অনেকটা লজ্জা পেয়েছে। আমি হাসলাম। কিন্তু মা আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল “আমিও পড়ে গেলে কি এভাবে ধরতে?” আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। মা বাবা দুজনে এবার দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে ।এবার মনে হচ্ছে আমি সত্যিই লজ্জা পেলাম। আমার দাড়িয়ে থাকা দেখে মা মুখ চেপে হাসি আটকে আমাকে ইশারা করে উপরে যেতে বলল। আমি সামনে তাকিয়ে চলে গেলাম।

চলবে………

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৩

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৩
আমার ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস। তাই আজও তার ব্যাতিক্রম হলনা। আমি উঠে যেতেই দেখি জারিফ মাঝখানে রাখা কোল বালিশ টা আসটে পৃষ্টে ধরে ঘুমাচ্ছে। রাতে কোথায় ঘুমাব বুঝতে পারছিলাম না। তাই দাড়িয়ে পুরো ঘরটা দেখছিলাম। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম কোথায় কি প্রয়োজন। কোনটা কিভাবে বদলাতে হবে। “এই মেয়ে! ওভাবে দাড়িয়ে না থেকে শুয়ে পড়।“ ধমক শুনেই চমকে জারিফের দিকে তাকাই। বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো। এভাবে কেউ ধমক দেয়। এই লোকটা কি ধমক ছাড়া আর কিছুই পারেনা। খুব কম সময় কথা হয়েছে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু ধমক ই খেয়েছি। মাঝখানে কোল বালিশ টা রেখে বলল ”ও পাশে শুয়ে পড়।“ আমি কোন কথা না বলে শুয়ে পড়লাম। আবার ধমক খাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।

জারিফ কিছুটা নড়ে উঠতেই আমি তাড়াতাড়ি করে ওয়াস রুমে ঢুকে গেলাম। তাকে যে এভাবে দেখছিলাম না জানি সেটা দেখে ফেলে আবার ধমক না দেয়। সেই ভয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি কেউ এখনো ঘুম থেকেই উঠেনি। পুরো বাড়ি নিসচুপ! কখন উঠবে কে জানে। সোজা রান্না ঘরে গিয়ে সব খুজে খুজে নাস্তা বানিয়ে রেডি করে নিলাম।সব কাজ শেষ করে গুছিয়ে নিতেই দরজায় চোখ পড়ল। আচমা খালা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই বলল “ও মা! দেখ কাণ্ড। নতুন বউ কি করতাছে? এতো সকালে উঠছে।“ তার চিল্লাচিল্লি তে সবাই জেগে গেলো।

আমি ডাইনিং এ মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো দাড়িয়ে আছি। শাশুড়ি মা কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার শ্বশুর মশাই এসব দেখে মুখ টিপে হাসছে। “তুমি এভাবে কথা শুনবেনা। তোমার একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। জারিফ ঘুম থেকে উঠুক। তারপর তোমার ব্যাবস্থা করবো” বলেই মা রেগে উপরে চলে গেলেন। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। তার হাসি দেখে আমি নিজেকে আটকাতে পারলাম না। আমিও জোরে শব্দ করে হেসে উঠলাম।

ডাইনিং টেবিলে থম্থমে পরিবেশ কেউ তেমন কথা বলছেনা। বাবা শুধু মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছেন। জারিফ আমার পাশে বসে খাবার টা মুখে তুলবেন এমন সময় “জারিফ” মায়ের ডাক শুনেই উনি চমকে উঠলেন। আমরা সবাই চমকে উঠলাম। “খাওয়া শেষ করে তুমি ফারিয়াকে নিয়ে আজি ভালো কলেজে ভর্তি করাবে।“ “আজই?” উনি অপ্রস্তুত হয়ে বললেন। “হ্যা আজই।“ “ঠিক আছে মা। আমার এক বন্ধু নতুন কলেজ ওপেন করেছে। ওখানে ভর্তি করালে কেমন হয়?” বাবার দিকে তাকিয়ে বলল। “ভালই হবে। পরিচয় করিয়ে দিবে ভালো করে তাহলে এক্সট্রা কেয়ার নেবে।“ বাবা খেতে খেতে বলল। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এই মেয়েকে আর বাড়িতে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা।“ জারিফ মায়ের দিকে প্রশ্ন সুচক দৃষ্টিতে তাকালে তার দিকে তাকিয়ে মা বলেন “ সাংঘাতিক সব কাণ্ড ঘটায় এই মেয়ে। কত সকালে উঠেছে। একা একা সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে রেডি করেছে। আচমা কে কোন কাজ করতে দেয়নি।“ কথার মাঝেই ফোন বেজে উঠলো। মা ফোন ধরতে গেলেন। এবার বাবা আর আমি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে উঠলাম।

জারিফ গাড়ি তে বসে একটু পর পর হর্ন দিয়েই যাচ্ছে। আর আমি এমন ভাবে এক এক করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে লাগলাম যেন শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি। এক দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে বসলাম। পাশে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। জারিফ অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। “এতক্ষণ কি করছিলে? কখন থেকে হর্ন দিয়েই যাচ্ছি?” আবার সেই ধমক। কিন্তু এবার তো আমার পুরো দোষ। তাই মাথা পেতে নিয়ে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে “সরি!”। জারিফ আমার সেই চেহারা দেখে হেসে ফেলল। আমিও একটু হাসলাম।

প্রিনসিপালের রুমে বসে আছি। কি এক জরুরি মিটিং এ উনি ব্যাস্ত। কেউ একজন রুমে ঢুকে বলল “কি রে কখন আসলি?” জারিফ হাসি মুখে উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল “এই তো একটু আগে।“ আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এই বুঝি তোর পিচ্চি বউ।“ জারিফ পিছনে ঘুরে একটু আমার দিকে তাকিয়ে “হ্যা।“ লোকটা আমার দিকে আসতেই সাইফ ভাইয়া রুমে ঢুকে বলল “তোরা এসেছিস?” আমি এক গাল হেসে বললাম “তুমি জানতে আমরা আসব?” ভাইয়া আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল “হুম। জারিফ আমাকে ফোন করেছিলো।“ প্রিন্সিপ্যাল আসলেন রুমে। আমরা সবাই সালাম দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। উনি বসতে ইশারা করে চেয়ারে বসলেন। তারপর আমরা সব ফর্মালিটি শেষ করে বাইরে এলাম। সাইফ ভাইয়া বলল “কি রে পিচ্চি! কলেজে তো ভর্তি হয়ে গেলি। এখন?” “এটা তো আসলে একটা শাস্তি!” সাইফ ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন। জারিফ সকালের সব ঘটনা তাদের শোনালেন। সব শুনে আমরা সবাই হাসতে লাগলাম। আমি আর সাইফ ভাইয়া এক পাশে দাড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম আর জারিফ শাওন ভাইয়ার সাথে অন্য পাশে দাড়িয়ে সিগারেট টানছিল। আমি ভ্রু কুচকে সেই দিকে তাকাতেই সাইফ ভাইয়া বলল “এসব ছেলেদের অভ্যাস। প্রায় প্রতিটা ছেলের এসব অভ্যাস থাকেই। এগুলা নিয়ে অশান্তি করাটা মোটেও শোভনীয় নয়।“ আমি সাইফ ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম। সে আর কিছু বলল না।

কলেজে প্রথম ক্লাস আমি রেডি হচ্ছি। জারিফ এসে বলল “আমি নিচে আছি। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।“ আমি মাথা নাড়িয়ে রেডি হতে শুরু করলাম। আমি নিচে গিয়ে দেখি জারিফ গাড়িতে হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে ফোন চাপছে। আমি গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। সে খেয়াল করলনা। একটু শব্দ করলাম তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। উনি ফোন থেকে চোখ সরায়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে দেখে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। আমিও তার পাশের সিটে গিয়ে বসলাম। কেউ কোন কথা বলছিনা। ইংলিশ গান বাজছে। ওনার বোধহয় পছন্দের কোন গান। কলেজের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমাকে ইশারা করে নামতে বললেন। আমি নেমে যেতেই উনি গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন অফিসে। কি একটা মিটিং আছে। তার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আমি ক্লাস শেষ করে আসতে আসতে হাঁটছি। এমন সময় কয়েকটা ছেলে এসে আমাকে বলল “নাম কি তোমার?” আমি তাদের উদ্দেশ্য ভালো করে বুঝতে পেরে ভদ্র ভাবে বললাম “ফারিয়া।“ “ও! নতুন বুঝি?। “ ”জি।“ “বাসা কোথায়?” আমি সামনে তাকাতেই জারিফের গাড়ি দেখতে পেলাম। “আমার হাসবেন্ড অপেক্ষা করছে।“ বলেই সেই দিকে হাঁটা ধরলাম। সোজা এসে গাড়িতে বসে পড়লাম। জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে সামনে তাকালাম। জারিফ কিছু না বলে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে দাড়িয়ে গেলো। সামনে তাকিয়েই বলল “নামো।“ আমি কিছু না বলেই নেমে গেলাম। সে সামনে এগুতে লাগলো।আমি তার পিছু পিছু গেলাম। একটা টেবিলে গিয়ে বসে পড়ল। আমাকে ইশারা করে সামনে বসতে বলল। আমি বসে পড়লাম। ওয়েটার কে কফি দিতে বলল। আমি ভালো করে রেস্টুরেন্ট টা ঘুরে দেখছিলাম। এমন সময় আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে জারিফ বলল “এভাবে সং সেজে কলেজে গেলে ছেলেরা ডিস্টার্ব করবেই।“ আমি তার কথায় একটু লজ্জা পেলাম। আসলে আমি একটু বেশিই সেজে ফেলেছি। তা এখন বুঝতে পারলাম। তাই মাথা নিচু করে থাকলাম। ওয়েটার কফি নিয়ে আসলো। “কফি খাও।“ জারিফ বলল। আমি কফি তে চুমুক দিলাম। সামনে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম জারিফ আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এতো সেজে গুজে কলেজে যাওয়ার কি আছে? এভাবে গেলে ছেলেরা ওকে প্রতিদিন ডিস্টার্ব করতেই থাকবে। আমাকে আগে নিজের ঘর ঠিক করতে হবে তারপর বাকিদের। ভাবতেই জারিফের মাথায় এলো ও এসব নিয়ে এতো অস্থির হচ্ছে কেন? আচ্ছা আমি সব কিছু এতো সহজ ভাবে মেনে নিলাম কেন? মা তো আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। তাহলে? তাহলে কি ওই ১ টা সপ্তাহে পিচ্চি টা আমার মনের কোথাও জায়গা করে নিয়েছে? তাই কি আমি সব কিছু এতো সহজ ভাবে নিলাম। এতো কেয়ার করছি তার প্রতি? ভাবতেই জারিফের চোখ ফারিয়ার উপরে আটকে গেলো। পিচ্চি টার মাঝে কিছু তো একটা আছে। এতদিন ভালো ভাবে খেয়াল করাই হয়নি। আজ তাকে অন্য রকম লাগছে। মায়াবি মুখটা।
বড় বড় চোখে হালকা কাজল কি যে মানিয়েছে। তার চোখের মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

সবাই খেতে বসেছে কিন্তু জারিফের কোন খবর নেই। মা আমাকে ডাকতে পাঠালেন। আমি গিয়ে দেখি উনি বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরে দেখছেন। “জারিফ ভাইয়া। মা আপনাকে ডাকছেন।“ আমার কথা শুনে উনি এমন ভাবে তাকালেন যেন আমি মহা অপরাধ করে ফেলেছি। আমি তার দৃষ্টি বুঝতে পারলাম। কি আবার অপরাধ করে ফেললাম। ঠিকি তো বললাম। উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারপর আমার হাত ধরে বললেন “আমি তোমার কে হই? ভাইয়া!” এবার আমার হুশ ফিরল। আমি তাকে ভাইয়া বলেছি। লজ্জায় মাথা কাটা গেলো। আমি আমতা আমতা করে বললাম “মা…আ ডাকছে।“ উনি আমার আর একটু কাছে এসে বললেন “আমি কে হই?” লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে! জানেই তো কে হয়। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছে। এসব কথা কি মুখে বলা যায়। কেমন মানুষ উনি। যেন বুঝেইনা কিছু। আমি একটু সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে নিচে চলে এলাম। আর জারিফ আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল।
চলবে……

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০২

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ২

অবশেষে সেই মুহূর্ত এলো। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। আমার পাশে জারিফ আর সামনে কাজি সাহেব। রাত প্রায় ২ টা বাজে। আমার বিয়েটা হয়ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাঝ রাতে বিয়ে। নাতি নাতনির জন্য একটা সুন্দর গল্প তৈরি হতে যাচ্ছে। কাজি সাহেব কি যেন অনেক জোরে জোরে পড়ছেন। কানে আসলেও মাথায় ঢুকছেনা। কি হচ্ছে এই মুহূর্তে তা বোঝার চেষ্টা করছি। একটু পর পর আম্মু কেদে উঠছেন। কাদার কি আছে। ছোট বেলাতেই আমাকে বলেছিল একদিন বিয়ে হবে। আমি এ বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে চলে যাব। তাহলে আজ কেন সবাই এতো কাঁদছে। কাজি সাহেব জারিফ কে উদ্দেশ্য করে বললেন “বল বাবা কবুল”। জারিফ মাথা নিচু করেই কবুল বলল। এবার আমার পালা। তাই নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম। কিন্তু এখন কি এমন হল যে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। কোন আওয়াজই করতে পারছিনা। কিন্তু কেন? বেশ করে প্রস্তুতি নিলাম তো। তাহলে? সব কেমন এলোমেলো লাগছে। বুকের মাঝে কেমন যেন অজানা এক অনুভুতি। ভালো লাগা না খারাপ লাগা বুঝতে পারছিনা। জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে বলতে যাব তখনি কেন যেন চোখ থেকে উছলে পানি বের হয়ে গেলো। কাঁদতে চাইছিনা। তবুও চোখের পানি যেন বাধ মানছেনা। এই জন্যই বোধহয় মেয়েরা কবুল বলার সময় কান্নায় ফেটে পড়ে। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ফুপু মাথায় হাত দিয়ে বলল “বল মা। ভয় পাস না।“ জারিফ নিরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের মাঝে সাহস সঞ্চয় করে এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম। কিন্তু বিপত্তি হল তারপর।

চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি আর সবাই আমাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না। আমি তো কবুল বলছিলাম। তাহলে এখন শুয়ে আছি কেন? আর সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? ছোট মা কোথা থেকে এক গ্লাস পানি হাতে ছুটে এসে আমার সামনে গ্লাস টা ধরে বললেন “খেয়ে নে মা।“ আমি গ্লাস টা নিয়ে খেয়ে নিলাম। ফুপু আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল “তুই ঠিক আছিস?” আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।কি হচ্ছে বোঝার জন্য আশে পাশে চোখ বুলাতেই দেখলাম জারিফ কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পরল।আবার সেই অনুভুতি তাই নামিয়ে নিলাম। সব আয়োজন শেষ এখন বিদায়ের পালা।
সবাই কাঁদতে ব্যাস্ত। আমাকে জড়িয়ে ধরে সবাই কাঁদছে পালাক্রমে। এতো কাদার কি আছে। মরে তো যাইনি। শহরে যাচ্ছি। আবার আসব কয়দিন পর। নতুন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি। মন ভরে গেলে আবার আসব। তারপর আবার যাব। এটাই তো নিয়ম। আব্বুকে এভাবে কখনও কাঁদতে দেখিনি। আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদছেন। তার কান্না দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সীমা আর ফুপু আমাকে টেনে গাড়িতে উঠালেন। গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ফুপু পিছনের গাড়িতে গিয়ে বসলো। সীমা ভালো করে চারিদিকে দেখে নিলো কেউ আছে কিনা। তারপর আমার কানের কাছে এসে “আচ্ছা বল তো তুই কি ইচ্ছা করে অজ্ঞান হয়েছিলি নাকি সত্যি সত্যি?”। “কি যা তা বলছিস?” ধমক দিয়ে বললাম। “ও ! আমি এখন যা তা বলছি। আর তুই কবুল বলার পর যে জারিফ ভাইয়ার কোলে গিয়ে শুয়ে পড়লি। ভাইয়া তোকে কোলে তুলে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো। তাতে কিছু হলনা।“ আমি তার দিকে অসহায় হয়ে তাকালাম। তার মানে কবুল বলার পরে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। তাও আবার জারিফ ভাইয়া্র কোলে! ছি ছি! কি একটা পরিস্থিতি। না জানি আমার সম্পর্কে কি ভেবে বসে আছে। আর উনি আমাকে কেন কোলে তুলে নিলো। মানুষটাও না আজব! সবার সামনে এভাবে কেন কোলে তুলে নিবে। ভাবতেই সাইফ ভাই বলল “সীমা তুই সামনে বস।“ সীমা বের হয়ে সামনে বসে পড়ল।
জারিফ গাড়ি ড্রাইভ করতে চাইলো। “ নতুন বউকে পিছনে রেখে সামনে বসে ড্রাইভ করবি শালা। যা পিছনে বউয়ের কাছে বস।“ সাইফ ভাইয়া ধমক দিয়ে বললেন। জারিফ কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে পিছনে এসে বসলো আমার পাশে। সাইফ ভাইয়া গাড়ি ড্রাইভ করছে। প্রায় ৫ ঘণ্টা জার্নি করতে হবে। কিন্তু রাতে ঠিক মতো ঘুম না হওয়ায় চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।
আশে পাশে কোলাহল কানে আসতেই বিরক্ত হয়ে চোখ খুললাম। কিন্তু কোথায় আছি তা বুঝতে পারলাম না। বোঝার চেষ্টা করতেই যা দেখলাম। তা মোটেও আমার হজম হলনা। আমি জারিফের বুকে আর জারিফ আমার মাথা টা এক হাতে চেপে ধরে আছে যাতে পড়ে না যাই। অস্বস্তি হচ্ছে। মাথাটা তুলতেও পারছিনা। মাথা তুলে কিভাবে তার সাথে চোখ মেলাবো। কেন যে ঘুমাতে গেলাম। আর এই লোকটাও বটে। কি দরকার ছিল এভাবে বুকের মাঝে মাথাটা চেপে ধরার। চারিদিকে চোখ ঘুরাতেই সামনের আয়নায় চোখ গেলো সাইফ ভাইয়া আমাদের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসছে। এবার বোধহয় আমি লজ্জার মাথা খেলাম। তাড়াতাড়ি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে বিপত্তি হয়ে গেলো। জারিফের শার্ট এর বোতামে আমার চুল আটকে গেলো। আমি সেদিকে তাকিয়ে চুল খোলার জন্য জোরে টান দিলেই বোতাম টা ছিঁড়ে গেলো। জারিফ খুব শান্ত দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে তাকাল তারপর বোতামের দিকে তাকিয়ে বোতাম টা হাতে নিয়ে আমার সামনে ধরে “নাও। এটা যত্ন করে রেখে দাও। এতদিন এসব নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা ছিল। এখন আর নেই। এখন এসব তোমার মাথা ব্যাথা। বাসায় গিয়ে সুন্দর করে লাগিয়ে দিবে কেমন?” আমি কিছু না বলে তার হাত থেকে বোতাম টা নিয়ে মাথা নাড়ালাম। সে আমার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে সামনের আয়নায় সাইফ ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দুজনে শব্দ করে হেসে দিলো। আমি ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম। কি থেকে কি হয়ে গেলো। কেন যে ঘুমাতে গেলাম। সব নষ্টের গোঁড়া ওই ঘুম। আর কিছুতেই ঘুমান যাবেনা।
গ্রামে থাকলেও চা খাওয়ার অভ্যাসটা আমার একটু বেশিই। বিয়ের জন্য আজ সকাল থেকে একবারও চা খাওয়া হয়নি। মাথাটা ধরে গেছে। বারবার মাথায় হাত দেয়াটা বোধহয় কোনভাবে জারিফের চোখে পড়ল। সাইফ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল “সামনে গাড়িটা একটু থামা। চা খাওয়া দরকার।“ সাইফ ভাইয়া চায়ের দোকান থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো। আমাদের দুজনকে চা এনে দিলো। আমরা গাড়িতে বসেই চা খাচ্ছি। আর ওরা দুজন সামনে চায়ের দোকানে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে আর সাথে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি তাদের দিকে।

মেয়েটা আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে বেশ বুঝতে পারছি বিষয়টা ওর পছন্দ হয়নি। “তোর বোনের জন্য আমাকে এতদিনের সখ মনে হয় বিসর্জন দিতে হবে।“ আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়েই সাইফকে বললাম। “আমার মনে হয়না এসব নিয়ে ও কোন ঝামেলা করবে। ও তো তেমন মেয়ে না।“ সাইফ শান্ত ভাবে বলল। “এতদিন মেয়ে ছিল। এখন বউ হয়েছে। বউরা মেয়েদের থেকে সব সময় আলাদা হয়। বউ হওয়া মাত্রই মেয়েরা একটা আলাদা ক্যারেক্টারে ঢুকে যায়।আমি তার চোখ দেখে বেশ বুঝতে পারছি” “কিরে! তুই কি আমার বোনের প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?” সাইফ ভাইয়ার কথায় জারিফ বাস্তবে ফিরে এলো। তার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বলল “আমি প্রেমে পড়লেও বা কি? তোর বোনকে শেখাতেই প্রেমের বয়স পার হয়ে যাবে।“ বলেই দুজন হাসতে লাগলো।
দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা জার্নি করে অবশেষে পৌছালাম তার শহরে। রাত হয়ে এসেছে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে আছি। আমার শাশুড়ি মা কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করবে।তিনি বাটিতে কিছু মিষ্টি এনে আমাদের দুজনকে খাওয়ালেন। তারপর সবাই মিলে আমাকে ঘরে নিয়ে গেলো। শাশুড়ি মা কিছু কাপড় হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন “ফ্রেশ হয়ে এগুলো পরে নিচে আসো।“ আমি মাথা নেড়ে ফ্রেশ হতে গেলাম। ওয়াশ রুমের অবস্থা দেখে বেশ বুঝতে পারছি ব্যাচেলর ব্যাচেলর একটা ভাব। পুরো ওয়াশ রুম শুধু ওনার জিনিস পত্র। সব কিছু নিজের মতো করে সাজিয়ে নিলাম। সাথে আমার জিনিস পত্র গুলও রেখে দিলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। নতুন বাড়ি কিছুই চিনিনা। তবুও কাজ করার আর তর সইলনা। খুজে খুজে রান্না ঘরে চলে গেলাম। বাটিটা হাতে নিতেই শাশুড়ি মা এসে চিৎকার দিলেন। “কি করছ? কাজের জন্য অনেক লোক আছে। তোমাকে কাজ করতে হবেনা। তুমি শুধু মন দিয়ে পড়বে।“ আমি কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম।

ওয়াশ রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলাম। সব কিছু সাজানো। আমার অগোছালো কাপড় গুলোও নেই। আমার বুঝতে বাকি রইলনা কার কাজ এটা। আম্মুর জেদে বিয়েটা তো করলাম ঠিকি। কিন্তু বউ কি সে আমার হতে পারবে? আমি কি আদৌ তাকে নিজের মনে জায়গা দিতে পারব। ভালবাসতে পারব তাকে? এতো কিছু জানিনা। মেয়েটা আমার হাত ধরে আমার উপরে ভরসা করে এতদুর এলো। তাকে আগলে রাখা আমার দায়িত্ব। ভালবাসাটা না হয় পরে দেখা যাবে। একটু মুচকি হেসে জারিফ বলল “ #আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ পিচ্চি।“
চলবে…………

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০১

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
সূচনা পর্ব
লেখক- এ রহমান

“তোমাকে এই বিয়ে করতেই হবে। আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। এই মেয়েকেই আমার ঘরের বউ বানাতে চাই। এটা শুধু আমার না তোমার বাবারও সিদ্ধান্ত। তোমার বাবা আসছেন আজ রাতে।“ কথাগুলো ঘর ভর্তি মানুষের সামনে জারিফ ভাইয়াকে তার আম্মু বলল।

জারিফ ভাইয়া বোকার মতো দাড়িয়ে তার মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে দেখে আছে। “এতো কথা বলার পরও আম্মু তার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছেনা। কি যে দেখেছে এই মেয়ের মধ্যে। এই মেয়েকেই তার বউ বানাতে চায়। আর আম্মুর জেদ তো কখনই এরকম ছিলনা। তাহলে এই একটা বিষয় নিয়ে আম্মু কেন এরকম করে জেদ করছে। তাছাড়া ফারিয়ার বাড়ির লোকজনও তো তেমন রাজি না। তারা তাদের মেয়েকে আরও পড়াতে চায়। সবে মাত্র এস এস সি পাশ করেছে। আল্লাহ !! এতো ছোট একটা মেয়েকে আমি কিভাবে বিয়ে করি। আম্মু কেন বুঝতে পারছেনা।“

“আম্মু আমার কথাটা শুনো। ও তো অনেক ছোট। তাছাড়াও সবাই চায় ও আরও পড়াশুনা করবে।“

“তো আমি কখন বলেছি যে সে পড়বে না। অবশ্যই পড়বে। আমি ঢাকায় নিয়ে গিয়ে ওকে ভালো কলেজে ভর্তি করাবো। আমি জানি সে খুব ভালো ছাত্রি। আর বারবার ওকে এভাবে ছোট বলবে না। ভুলে যেওনা আমার বিয়ের সময় আমিও এতো টুকু ছিলাম। আর এভাবেই তোমাকে মানুষ করেছি ।”

কিন্তু আম্মু…

কোন কিন্তু না জারিফ। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নাও। তোমার বাবা রাতেই চলে আসবে। আমরা তখন এসব নিয়ে কথা বলব।“

“আম্মু তুমি ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করেছো ? ওর মতামত কি জানতে চেয়েছ ?”

“শোন জারিফ ! ফারিয়া অমন মেয়ে না। ওর পরিবার যা সিদ্ধান্ত নেবে ও তাই মেনে নিবে। ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। এখন তোমরা ছোটরা এই ঘর থেকে বাইরে যাও। আমি বড় দের সাথে কথা বলতে চাই।”

আমি বাইরে এসে বারান্দায় চেয়ারে বসে পড়লাম। “ এই মেয়ে তুমি ভিতরে কোন কথা বললে না কেন ? ” আচমকা জারিফ ভাইয়ার ধমক শুনে চমকে উঠলাম। আমি যে বড়দের মাঝে কথা বলিনা এতদিনে সে হয়ত সেটা বুঝে গেছে। তবুও আমাকে এভাবে ধমকাচ্ছে।

“ও কিছু বলবে সেই সাহস ওর নেই। ও বড়দের মাঝে কথা বলেনা। কখনই আমরা ওকে এটা করতে দেখিনি।“ আমি কিছু বলার আগেই সাইফ ভাইয়া বলল।

সবাই কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে গেলো। জারিফ ভাইয়া শুধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো বোঝার জন্য আমি কি ভাবছি।

১ সপ্তাহ আগে তারা গ্রামে এসেছিলো বেড়াতে। সাইফ ভাইয়ার বন্ধু জারিফ ভাইয়া। সাইফ আমার এক মাত্র ফুপুর ছেলে। দুজনি বিদেশ থেকে পড়া শেষ করে এসেছে। তাই গ্রামে বেড়াতে এসেছে। কিন্তু এই এক সপ্তাহেই জারিফ ভাইয়ার মা আমার মধ্যে কি এমন দেখলেন যে আমাকেই তার ছেলের বউ করতে চান। আব্বু আম্মু কেউই বিষয়টাকে ভালো ভাবে দেখছেন না। তবে এখানে ফুপাজির সম্মতি আছে তাই কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলছেন না। কারন ফুপাজিকে আব্বুরা ৩ ভাই খুব সম্মান করে। ওনার কথায় কেউ কখনও অমত করেনি।জারিফ ভাইয়ার বাবা আর ফুপাজি খুব ভালো বন্ধু। তারা দুজনেই আসছেন আজ রাতে আমার বিয়ের কথা বলতে। তারা আসার পর যদি সব ঠিক থাকে তাহলে আজ রাতেই আমাদের বিয়ে হবে আর কাল আমরা ঢাকায় চলে যাব। এটা ভেবেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন খা খা করে উঠলো। আমি তো গ্রামেই বড় হয়েছি। শহরে কখনও যাব তা ভাবিনি। আমি এবার এস এস সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। তাই পরিবারের সবাই আমাকে পড়াতে চায়। আমিও পড়তে চাই। কিন্তু এরকম কিছু হবে তা আমি ভাবিনি।

আমি পাশে ঘুরে তাকাতেই দেখলাম একটা ইটের টুকরো সোজা জারিফ ভাইয়ার দিকে আসছে। আমি ঝড়ের গতিতে জারিফ ভাইয়াকে এক ধাক্কা দিলাম। কিন্তু এমন কিছু হবে তা আমার ধারনা ছিলোনা। ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে শুধু জারিফ ভাইয়া না আমিও তার উপরে পাশে থাকা চৌকির উপর পড়ে গেলাম। আমার দুই হাত তার বুকের উপর। আমি পুরোটাই তার উপরে ভর দিয়ে শুয়ে আছি। সে দুইহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে আছে। আমি তার বুকের ধুকধুকানি শব্দ শুনতে পাচ্ছি। হাতের উপর থেকে চোখ সরিয়ে তার চোখে তাকাতেই আমার শরীর কেঁপে উঠলো। মুহূর্তেই ঘেমে যাচ্ছি। আমি উঠে দাঁড়ালাম। সাইফ ভাইয়া আর সীমা আমাদের কাছে এসে বলল “তোরা ঠিক আছিস তো?” আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমার মুখে কথা আঁতকে গেছিলো। আমি আর সেখানে দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। এক দৌড়ে ঘরে চলে এলাম। কেমন জানি একটা অনুভুতি। আগে কখনও এমন হয়নি তো। তাহলে আজ কেন এমন হল। আমি তো সবার চোখে তাকিয়ে কথা বলি। তখন তো আমার এরকম শরীর কাপেনি কিংবা গরমে ঘেমেও যাইনি। তাহলে এখন কেন এমন হচ্ছে।

“ তুই ঠিক আছিস তো? ”সীমার কথায় বাস্তবে আসলাম।

“ হ্যা। ঠিক আছি। ” “ যেভাবে তার গায়ের উপরে পড়ে গিয়েছিলি আমি তো ভাবলাম আবার ফিট হয়ে গেলি না তো। তোর তো আবার অন্যের গায়ে পড়ার একদম অভ্যাস নাই। ” ফিক করে হেসে দিলো।

“ কি সব বলছিস? আর গায়ে পড়া মানে কি? ” আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম।

সীমা হতাশ হয়ে বলল“ জারিফ ভাইয়ার কপালে খুব দুঃখ আছে রে। এই জন্যই হয়ত সে তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছেনা। তোকে বিয়ে করলে প্রেম করা শেখাতেই তার রোমাঞ্চ করার মুড চলে যাবে। ”

তার সব কথা না বুঝলেও রোমাঞ্চ করার কথা বুঝতে আমার কষ্ট হলনা। সীমার কান ধরে বললাম

“ খুব পেকেছিস। সাইফ ভাইয়া আর ফুপিকে বলব তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করতে? ”

দুজন মিলে হাসতে লাগলাম। সীমা সাইফ ভাইয়ার বোন আর মানে ফুপুর মেয়ে। সেও আমার সাথেই এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছে।

আমরা ছোটরা সবাই বসে গল্প করছিলাম। এমন সময় সাইফ ভাইয়া এসে বলল “ বাবা এসেছে। সবাইকে ঘরে যেতে বলল। ” বুকের মাঝে কেমন ধক করে উঠলো। হাত পা অসাড় হয়ে গেলো। হাটতে পারব কিনা জানিনা। তবুও দাড়িয়ে গেলাম। ফুপাজি ডেকেছে যেতেই হবে। বড় বড় ধাপ ফেলে চলে গেলাম ঘরে। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। ফুপাজি আমাকে দেখতে পেয়ে উঠে এসে আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়ে জারিফ ভাইয়ার বাবার পাশে বসিয়ে দিলেন। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। সবাই চুপচাপ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

“ এই মেয়ের জন্য তুমি তোমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছ। ” জারিফ ভাইয়ার মা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

কয়দিন আগে আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম পুকুর পাড়ে। সবাই বসে গল্প করছিলো। অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন জারিফ ভাইয়া। আমি কি মনে করে তার দিকে তাকাতেই দেখি উনি একদম পুকুরের ধারে এসে গেছেন। একপা এগলেই পড়ে যাবেন। আমি দৌড়ে গিয়ে তার হাত টেনে ধরি। উনি পাশে থাকা গাছটা আক্ড়ে ধরেন। সবাই ছুটে আসে। আনটি তো ভয়ে প্রায় কেদে দেয়। সবাই নিজেদের মতো ঘটনা টা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। নিজে বেঁচে যাওয়ার চেয়ে আমার ওনাকে বাঁচানোটাই ওনাকে বেশি আশ্চর্য করে। আমরা সবাই বাড়ি চলে এলে উনি আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কিভাবে বুঝতে পেরেছিলাম উনি পড়ে যাচ্ছেন। আমি সেই কথার কোন উত্তর দিতে পারিনি। কারন আমিও জানতাম না কিভাবে বুঝতে পেরেছি।

অনেক রাত ধরে অনেক কথা চলল। কথার পিঠে কথা। আমি তাদের কথা শুনতে শুনতে হাপিয়ে উঠেছি। অবশেষে ফুপাজি আব্বুর হাত ধরে বলল “ ভাই জান আপনার মেয়ের আমি কোন ক্ষতি হতে দিবনা। আপনি নিশ্চিন্তে জারিফের হাতে মেয়েকে তুলে দেন। আমি কথা দিচ্ছি জারিফ খুব ভালো ছেলে। ও আপনার মেয়েকে খুব ভালো রাখবে। ”

আব্বু ফুপাজির কথা শুনে বসে পড়ল। মাথা নিচু করে একটু চিন্তা করে বলল “ তুমি যা ভালো মনে কর তাই কর। মেয়ের দায়িত্ব আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম। ”

চলবে।

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১৪(শেষ)
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আবির অনিমা আর আদিবকে দেখছে৷ তার মেয়ে হয়েছে তার মতো আর ছেলে একেবারে মায়ের মতো৷ সব সময় রাগ যেনো নাকের ডগায় থাকে৷ আজ বাবা আর ছেলে সেম ড্রেস পড়েছে৷ সাদা শার্ট কালো জিন্স চোখে আবার সানগ্লাসও আছে৷ ব্র্যান্ডের ঘড়ি৷ সব মিলিয়ে একেবারে পারফেক্ট৷ আবিরের দুই হাতে দুইজন এসে ধরলো৷

অনিমাঃচলো পাপা!!
.
হুম৷
.
আবির অনিমা আর আদিবকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো৷

আবির ড্রাইভিং করছে আর ছেলে মেয়ের কথার এটা সেটার উত্তর দিচ্ছে৷

অাদিবঃআচ্ছা পাপা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
.
তোমার মাকে যেখানে বেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনারের এ্যাওয়ার্ড হবে সেখানে৷
.
অনিমাঃওহ মাকে দিবে তোমাকে দিবেনা৷
.
না মামনী৷ তোমার পাপার ওতো অনেকগুলো এ্যাওয়ার্ড আছে৷
.
অনিতাঃওহ আচ্ছা৷ আরেকটা কথা বলি?
.
সব পরে বলবে৷ আগে পাপাকে ড্রাইভিং করতে দাও সোনা৷ তোমার মাম্মামের কাছে পৌঁছাতে হবে তো৷
.
“ওকে পাপা(মুখে আঙুল দিয়ে)
.
অনিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,

“পাপা আমার মুখে চুলকাচ্ছে৷

আবির কথাটা শুনা মাত্রই কার থামিয়ে দিলো৷

“কী হয়েছে সোনা৷ মুখে চুলকাচ্ছে কেনো তোমার?
.
ওই যে কথা বলছিনা সেইজন্যে৷
.
আবির মেয়ের কথা শুনে নিজের কপালেই নিজে বারি দিলো৷
🍁
স্টেজে এনাউস হচ্ছে,,,,

আমাদের শহরে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনাররা আছেন৷ কিন্তু এ বছরের সবচাইতে জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার যিনি যার প্রত্যেকটা ফ্যাশনই মানুষের মন ছোঁয়ে যায়৷ দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তার পোষাকের চাহিদা আছে৷একটা টেক্সটাইল কোম্পানির সামান্য একজন স্টাফ ছিলেন উনি৷ এক বছর সেখানে কাজ করে নিজেই স্বামীর নামে টেক্সটাইল খুলে ফেললেন৷ আর খুব তারাতাড়ি শো রুমও ওপেন করলেন৷ উনার প্রতিটি ড্রেসের কাজ একেবারে মোহনীয়,নিখুঁত ভাবে তৈরি৷ শহরে উনার ড্রেসের চাহিদা বেড়েই চলছে৷ সবার মনেই প্রশ্ন জাগছে যে কে উনি তাইতো৷ তাহলে আর আপনাদের অপেক্ষা করাবোনা৷ মিসেস অনিতা রায়হান চোধুরী অনু আপনাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো৷

অনু স্টেজের পিছনের পর্দা টেলে স্টেজে উপস্থিত হলো৷ সেখানে ওকে বেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনারের এ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে৷ স্টেজের উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়ছে৷ পরনে একটা দামী ডিজাইন করা ড্রেস অনুকে এই মুহুর্তে আবিরের কাছে খুব মোহনীয় লাগছে৷ আবির ওর চারিপাশে তাকিয়ে দেখলো একবার৷ ছেলে মেয়ে সবাই অনুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷

আদিবঃপাপা আমার মাম্মাম কতো সুন্দর তাই-না৷ দেখো এখানের সবচাইতে আমার মাম্মাই সুন্দর৷
.
অনিমাঃকেনো আমার পাপা বুঝি সুন্দর না৷ আমার পাপাও অনেক সুন্দর৷ এখানের সবার চাইতে বেশি সুন্দর৷
.
কথা বন্ধ৷ তোমাদের মাম্মাম এখন কিছু বলবে মনোযোগ দিয়ে শুনো৷

“আসসালামু আলাইকুম৷ আশা করি সবাই ভালো আছেন৷ আজকে আমি যে এই এ্যাওয়ার্ড পেয়েছি তাতে আমি কতটা খুশি আপনাদের বলে বুঝানো সম্ভব নয়৷ আমার যে লক্ষ্য ছিলো সেটা আমি পুরন করতে পেরেছি৷ আমি আজ যে এতো দূরে এলাম সেটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে আমার স্বামী আর শশুড় বাড়ির লোকদের জন্য৷ তারা আমার পাশে না থাকলে আমি এতদূর পৌঁছাতে পারতাম না৷ আরেকজনের ভুমিকা আছে যিনি আমার খারাপ সময়ে পাশে ছিলেন সব সময় সাহস জোগানোর প্রেরনা দিতেন৷ তিনি হলেন আমার মেসের আপু রুমি৷ উনি এখানেই আছে৷ উনাকেও শুভেচ্ছা জানালে আমি খুব খুশি হতাম৷
.
“নিশ্চয়৷ মিসেস রুমি আপনাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো৷
.
রুমি ওর স্বামী আর মেয়েকে রেখে স্টেজে গেলো৷ অনু রুমির কাছে গিয়ে ওকে হাগ করলো৷

ওয়েলকাম রুমি৷ অনুর পাশাপাশি কিন্তু আপনার নামও অনেক শুনা যাচ্ছে৷ আপনার প্রশংসাও চারিদিকে চরাচরি৷ কিছু বলবেন কী আপনি?

হ্যাঁ৷
“আসসালামু আলাইকুম৷ ভালো আছেন সবাই আশা করি৷ অনু আজ আমাকে যে সম্মান পাইয়েছে সেটা আমি কোনদিন ভুলবো না৷ মানুষ বলে যে ভালো সময় আসলে বিপদে যে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করে তাকে মানুষ ভুলো যায়৷ কথাটা কত পারসেন্ট সত্য সেটা আমার জানা নেই৷ তবে হে সবাই কিন্তু একরকম না৷ আমি অনুকে হেল্প করেছিলাম ছোট বোন হিসেবে৷ অনু খুব ভালো মেয়ে ওকে হেল্প করতে যে কারোই ভালো লাগবে৷ অনুকে সাহায্য করার জন্য ও আমাকে তার এতো বড় প্রতিদান দিবে সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো৷ আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে বিয়েও হয়েছে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতেই৷ অবস্থা ততটাও ভালো ছিলো না আমাদের৷ হঠাৎই একদিন দেখলাম অনু আমাদের বাড়িতে আসছে৷ অনুর পরিবর্তন দেখে দৃষ্টির অগোচরে মুচকি হাসলাম আমি৷ ওকে জিজ্ঞেস করতে জানতে চাইলাম ও আমার খবর কীভাবে জানে তখন ও বললো আমার বাড়িতে গিয়েই আমার শশুড় বাড়ির এড্রেস এনেছে৷
.
থাক না আপু এসব কেনো বলছো?
.
না অনু সবারই জানার অধিকার আছে৷ মানুষও জানুক শুনুক যে কাউকে খারাপ সময়ে সাহায্য করলে সে ছোট হয়ে যায়না বরং সাহায্য স্বরুপ বড় কিছু প্রতিদান হিসেবে পাওয়া যায়৷ রুমি মাইক্রোফোনটা আবারও মুখের সামনে তুলে ধরে বললো,,,

“অনুর অনেক নাম ডাক৷ ওকে তো নিউজ চ্যানেলেও দেখায়৷ অনেক ইন্টারভিউতে আনা হয়৷ যখন ওকে টিভিতে দেখতাম তখন আনন্দে মনটা পরিপূর্ণ হয়ে যেতো৷ অনু আমাদের বাড়িতে এসে বললো,আমাকে নাকি ওর এসিস্ট্যান্ট হতে হবে৷ আগেও যেভাবে এসিস্ট্যান্টের মতো হেল্প করে গেছি এখনও নাকি হেল্প করতে হবে৷ কথাটা শুনে কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম আমি পরমুহূর্তে অনুকে ধরে কেঁদে দিলাম৷অনু কে আমি জাস্ট অনুপ্রেরণা দিতাম তার জন্যে এত বড় পুরুষ্কার পাবো ভাবিনি৷সেই থেকে ওর সাথেই আছি৷টাকার অভাবে আমার লেখ পড়া বন্ধ করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়৷ নিজের স্বপ্ন কে মাটির তলায় চাপা দিয়েছিলাম সেদিন৷ সত্যি অনুর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ৷
.
“আমি রুমি আপুকে আমার বড় বোনের মতোই ভালোবাসি তাকে শ্রদ্ধা করি৷ আপু যেমন আমার দুর্দিনে পাশে ছিলো তেমনি আমারও আপুর পাশে থাকাটা প্রয়োজনীয় মনে করেছি৷ফ্যাশন নিয়ে লেখা পড়া করাতে আপুকেও কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি৷ একটার পর একটা নিউ ফ্যাশন আবিষ্কার করেই চলছেন৷
আমার স্বামীও কিন্তু কম না৷ তখন যদি উনি আমাকে হেল্প না করতেন তাহলে হয়তো কোন এক রাস্তার পাশে বা নদীর কিনারায় মরে পড়ে থাকতাম আরো আগেই৷
.
“মিস্টার আবির রায়হান চৌধুরী৷ প্লিজ স্টেজে আসুন৷

আবির অনিমা আর আদিবের হাত ধরে স্টেজে গেলো৷
.
“তা আপনার কী কিছু বলার নেই৷
.
আবিরঃতেমন কিছু বলার নেই শুধু এটুকুই বলবো যে আমি যাকে ভালোবেসেছি তার পাশে থেকেছি৷ অনুর পাশে থাকাটা আমার কর্তব্য৷ ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকলে আর কিচ্ছু চাই না আমার৷ আর আমি সত্যি অনুর জন্য খুব প্রাউড ফিল করি৷
.
আপনারা ভালোবেসে বিয়ে করেছেন হাও সুইট৷
.
হুম৷ আমরা একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসি আর দোয়া করবেন সবাই আমাদের জন্য৷
.
মেয়েটি আদিব আর অনিমার সামনে মাইক্রোফোন ধরে বললো,,,,

“বাবু তোমরা কিছু বলবে?
.
অনিমাঃহ্যাঁ৷ বলবো
.
বলো৷
.
অনিমাঃআমার পাপা মাম্মামকে বেশি ভালোবাসে আমাদের চেয়ে৷
.
অনিমার কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো৷
.
আদিবঃতবে আমার মাম্মাম আমাকে বেশি ভালোবাসে
.
অনিমাঃআর আমার পাপা তার প্রিন্সেস কে৷
.
সত্যি আপনাদের মতো সুখি পরিবার খুব কমই আছে৷ আপনাদের বায়োগ্রাফি শুনে খুব ভালো লাগলো৷আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারলাম৷
.
থ্যাংক ইউ৷
🍁

বিকেলে~~~~

আদিবঃমাম্মাম আমার ক্যাপ কোথায় পাচ্ছিনা কেনো?
.
অনিমাঃআদিব এতো জোড়ে ডাকছিস কেনো?মাম্মাকে এটলিস্ট কিচেন থেকে আসতে তো দে৷
.
তুই চুপ কর বুচি৷
.
পাপা দেখেছো আমাকে বুচি বলছে৷ আমি কী সত্যি বুচি পাপা?
.
কে বলেছে আমার মামনী বুচি না কিউট৷
.
হিহি
.
অনুঃকী হয়েছে আদিব?
.
এতক্ষণ সময় লাগে আসতে৷
.
আবির ছেলের ধমক শুনে সোফা থেকে উঠে এলো৷
.
আদিব এসব কী ধরনের অভদ্রতামি৷ মায়ের সাথে এভাবে কেনো কথা বলছো?এই শিক্ষা তোমাকে দিয়েছি? এখুনি মাকে স্যরি বলো নাহলে কিন্তু খুব বকবো?

আদিব কানে হাত দিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,,,,

স্যরি মাম্মাম আর এভাবে তোমার সাথে কথা বলবো না৷ আমাকে মাফ করে দাও৷
.
আবির আর অনু ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো৷
.
রাতে~~~

আবির আর অনু বিছানায় বসে বসে অনিমা আর আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ দুই বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে৷

আবির এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে৷
.
কী দেখছো?
.
তোমাকে?
.
আগে বুঝি দেখোনি৷
.
হুম দেখেছি তবে এটা দেখছি যে তুমি আগের চাইতে আরেকটু মোটা আর কিউট হয়ে গেছো৷
.
তারমানে আমাকে এখন সুন্দর লাগেনা?
.
আরে ভাভা বললামই তো এখন তোমাকে আরও বেশি কিউট লাগে৷ একেবারে কিউটের ডিব্বা৷
আর এই দেখো ডিব্বার বাচ্চারাও কতো কিউট তাই না৷ কিন্তু একটা জিনিস তোমার প্রিন্স কিন্তু তোমার মতোই রাগী আর জেদি হয়েছে আর আমার প্রিন্সেস আমার মতোই হয়েছে৷
.
কচু হয়েছে৷
.
জেলাস হচ্ছে তাই না?
.
মোটেও না৷

আবির ওর মেয়েকে বালিশে রেখে অনুর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো৷

“অনু
.
হুম৷
.
থ্যাংক ইউ৷
.
হঠাৎ?
.
হুম৷ দুটো চাঁদ কে আমায় উপহার দেওয়ার জন্য৷
.
ধন্যবাদ তো আমার তোমাকে দেওয়া উচিৎ৷
.
আবির অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
.
ভালোবাসি অনু
.
আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি আবির৷
.
আজ একটা জিনিস লক্ষ্য করছি তুমি আমাকে তুমি করে সম্বোধন করছো ব্যাপার কী হুম?
.
এখন থেকে তুমি করেই বলবো আপত্তি আছে?
.
একদমি না৷
.
এখন তাহলে আমার জন্য তোমার মনের কোনে “সুপ্ত অনুভূতি” জাগ্রত হয়েছে৷
.
সেটা অনেক আগে থেকেই৷
.
আবির অনুর কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে আবারো জড়িয়ে ধরলো৷

[বেঁচে থাকুক আবির অনুর ভালোবাসা]

~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-১৩

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

চার মাস পর~~~~~

অনুর রেজাল্ট দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর সে চাকরীর জন্য এপ্লাই করে৷অফিসে যাওয়ার পর টেক্সটাইল কোম্পানির ম্যানেজার অনুকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে পরিক্ষা করছে৷ কয়েক ধরনের কাজ দিয়েছে ওকে যেমন,, পোষাকের নকশা বানানো,পোষাকের রং নির্নয়, পোষাকের ধরন ঠিক করা,একটি নির্দিষ্ট পোষাক তৈরির ক্ষেত্রে কী ধরনের কাপড় ব্যবহার করা হবে তা ঠিক করা,পোষাক তৈরিতে আনুমানিক কত খরচ হতে পারে তার হিসাব তৈরি করা,চলতি ফ্যাশন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখা৷
অনুকে সবকিছু পরিক্ষার জন্য দেওয়া হলো৷ অনু পোষাকের বর্ননা করে তার সাথে ম্যাচ করে সুতো, পাথর রাখছে৷ কোন কালার সুতার সাথে কোন কালার কাপড় বেস্ট ওগুলোর বর্ননা দিচ্ছে৷ সিম্পল,গর্জিয়াস ড্রেসে কতো টাকা ইনভেস্ট হতে পারে তার হিসাব দিচ্ছে৷ কোন ফ্যাশন এখন বেশি জনপ্রিয়তা,,কোন ফ্যাশনে ড্রেস বানালে কোম্পানির লাভ হবে সেগুলো ম্যানেজার আর টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক কে বলছে

৷ টেক্সটাইল কোম্পানির মালিকের সব থেকে ভালো লেগেছে অনুর রুচিশীলতা দেখে৷ অনুকে অনেক গুলো ড্রয়িং দিয়েছে,, অনু একেকটাতে একেক রকমের ড্রো করেছে৷ বিভিন্ন ধরনের মানুষের জীবনযাত্রা চিন্তাভাবনা ও রুচির কথা চিন্তা করেই ড্রো করেছে৷সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা ও আঁকাআঁকিতে দক্ষ হওয়ায় তেমন সমস্যা হয়নি ওর৷

অনুর কাজ দেখে সবাই খুব খুশি৷ টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক চাইছেন অনু যেনো কাল থেকেই জয়েন করে৷ অনুর মতো দক্ষ আর পটু ফ্যাশন ডিজাইনারই নাকি খুঁজছিলেন উনি৷
অনুও খুশি মনে বেড়িয়ে আসলো সেখান থেকে৷ প্রথমবার এসেই চাকরী কনফার্ম হয়ে যাবে সেটা কখনো ভাবেনি৷

“আর এক বা দুই বছর পর আমিও আবিরের নামে টেক্সটাইল খুলবো, শো রুম ওপেন করবো৷ শহরের একজন নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনার হবো৷ হে আল্লাহ্ তুমি আমার স্বপ্নটা পুরন করো প্লিজ৷

অনু নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর কিছু দূর এগোলেই গাড়ির দেখা মিলবে৷ রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ফোন চেক করছে আবির ফোন দিয়েছে কী না? আজ ও বাংলাদেশে ফিরেছে তাই তারাতাড়ি যেতে হবে৷

“হ্যালো মাই সুইট সিস্টার৷ কী খবর?
.
অনুর চাচাতো ভাইয়ের কন্ঠ শুনে পাশে তাকালো সে৷ সেখানে আকাশ আর ওর চাচাও আছে৷
.
“একি তোমরা এখানে? কী চাই?
.
চাচাঃতোকে৷
.
ওয়াট৷ পাগল হয়ে গেছো তোমরা হে৷
.
হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি৷ যতক্ষণ না তোকেও তোর বাপের মতো উপরে পাঠাচ্ছি ততক্ষণ আমরা পাগলই থাকবো৷
.
কী যা তা বলছো প্রোপার্টি তো পেয়ে গেছো তাহলে এবার আমাকে কেনো উপরে পাঠাতে চাইছো?কী ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের?
.
কারন যতদিন তুই থাকবি ততদিন আমাদের শাস্তি একেবারে নিশ্চিত৷ তো তাই তোকে উপরে পাঠিয়ে দিবো৷ তুই যদি না থাকিস তাহলে আমাদেরকে কে শাস্তি দিবে হুম?
.
আকাশ আর অনুর চাচাতো ভাই যেমনি অনুকে ধরার জন্য ওর দিকে এগোতে যাবে ওমনি ওদের মধ্যখানে একটা কার ঢুকে গেলো৷ কার দেখে ওরা ভ্রু কুঁচকালো৷
আবির কার থেকে নেমে এলো৷ ওকে দেখে সবাই দুই কদম পিছিয়ে গেলো৷

চাচাঃএটা কে আর মধ্যখানে কেনো ঢুকেছে এতো রাস্তা রেখে?
.
চাচাতো ভাইঃআরে চিনোনি ও ওইতো টপ বিজনেস ম্যান আবির রায়হান চৌধুরী৷
.
আবির কারে হেলান দিয়ে সানগ্লাস শার্টে গেঁথে বললো,,,

“আরেহ্ বাহ্ শালাবাবু৷ কতো সহজে নিজের বোনের বরকে চিনে গেলে হুম৷ তা সোয়াগকে সোয়াগাত করবেনা?
.
কিসের সোয়াগ আর কিসের সোয়াগাত আমি তোমাকে ওয়েলকাম জানাতে পারবোনা ওকে৷আর দেখো এখান থেকে ভালোই ভালো কেটে পড়ো৷ এটাই তোমার জন্য মঙ্গল হবে৷
.
আমি খুব ভয় পেয়েছি৷ আমার খুব ভয় করছে দেখেন রীতিমতো হাত পাও কাঁপছে৷ অনু তুমি থাকো আমি গেলাম৷
কথাটা বলে আবির পিছনে ইশারা করলো৷পিছন থেকে কয়েকটা ছেলে এসে ওদের ধরে নিলো৷

চাচাঃএই কী করছেন আপনি?আমাদের কেনো ধরালেন?ছাড়ুন বলছি৷ আপনি জানেনও না আমরা কী করতে পারি!!
.
আবিরঃব্যস!!! জানি আমি আপনারা কী করতে পারেন৷ কী করবেন মেরে ফেলবেন এটাইতো তাহলে মারুন৷ আমিও দেখি আপনাদের কতটা পাওয়ার৷
এই নিয়ে যাও এদের৷ আর যেখানে বলেছিলাম ঠিক সেখানেই রাখবে পালাতে যাতে না পারে৷
.
ছেলেগুলো ওদের সবাইকে টেনে হিচরে কারে তুললো৷

ওরা চলে যাওয়ার পর অনু আবিরের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো৷
.
“আপনি কী করে জানলেন আমি এখানে আছি আর আমার বিপদ আছে?
.
তুমি কী ভাবলে আমি বাহিরে থাকি বলে তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনা হুম?
.
কথাটা সেটা নয়৷
.
বুঝেছি৷ ওই যে ছেলেগুলো ওদের কে আমি রেখেছি যাতে তোমার উপর নজর রাখে৷ দুইদিন হবে এদের রেখেছি৷ দেখলে তোমার বিপদের ঘন্টা বেজে গিয়েছিলো৷ওরা আমাকে জানিয়েছে যে তোমাকে কিছু পুরুষেরা বিরক্ত করছে৷ আমি তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আসছিলাম যখন ওরা আমাকে বললো তখন খুব তারাতাড়ি ড্রাইভ করে আসলাম৷
আচ্ছা বাসায় চলো এখন৷

আবির আর অনু বাড়িতে চলে গেলো৷
🍁
রাতে~~~~

“চাচা ওদের সবাইকে কোথায় রাখলেন?
.
আবির সোফায় বসে কফি খাচ্ছিলো অনুর কথা শুনে ওর দিকে তাকালো৷
.
কেনো বলোতো?
.
এমনি!!!
.
আমাদের গোডাউনে৷
.
ওহ্৷
.
তোমার কী ওদের জন্য খারাপ লাগছে?
.
নাহ!!!এসব কী বলছেন?ওরা আমার বাবার খুনি ওদের জন্য খারাপ লাগতে যাবে কেনো?
.
ওহ আমি ভাবলাম আরকি?
.
আবিরের ফোন বাজছে৷

“অনু ফোনটা একটু এনে দাও তো৷

অনু ফোন নিয়ে আবিরের কাছে দিলো৷
.
“হ্যালো!!!
.
ভাইয়া সর্বনাশ হয়ে গেছে৷
.
কী হয়েছে?
.
আপনি যাদেরকে বন্দী করার কথা বলেছিলেন তাদের মধ্য দুইজন মার্ডার হয়ে গেছে৷
.
কী বলো?কিন্তু কে খুন করলো৷
.
আকাশ খুন করেছে৷ ও খুন করে পালিয়ে যেতে চাইছিলো তার আগেই আমরা ওকে ধরে ফেলেছি৷
.
গুড৷ যাই হয়ে যাক খুনিকে কিছুতেই ছাড়বেনা৷ ওকে শাস্তি আইন দিবে৷ রাখছি আমি৷
.
আবির ফোন রেখে অনুর দিকে তাকালো৷

“কী হয়েছে?
.
তোমার চাচা আর চাচাতো ভাই খুন হয়েছে৷ আর কে খুন করেছো জানো আকাশ!!
.
কীহ!!!
.
হুম৷
.
দেখলেন খুনের বদলে খুন৷ দুনিয়া বদলার জায়গা৷ ওরা ওদের শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়ে গেছে৷
🍁
পাঁচ বছর পর~~~

আবির ওর চার বছরের মেয়ে অনিতা আর ছেলে আদিব কে রেডি করে দিচ্ছে৷

আবির অনিতাকে চুল আচড়ে দিচ্ছে আর সে বারবার চুল এলোমেলো করছে৷

অনিতাঃপাপা তুমি পঁচা আমার চুলও বেঁধে দিতে পারোনা৷
কোন কাজের না তুমি৷
.
“এভাবে বলে না মা৷ পাপা কষ্ট পাইতো৷
.
আদিবঃপাপা তুমি আমার শ্যু লেইস লাগিয়ে দিলে না কেনো?
.
আবির আদিবের জুতোর ফিতে লাগিয়ে দিলো৷

“এখন হয়েছে?
.
ইয়াপ৷
.
অনিতাঃপাপা আমার চুল৷
.
ইশশশ কোথাই যাই আমি৷ অনু তুমি যদি থাকতে তাহলে আজ আমাকে এসব করতে হতো না৷
.
কী হলো পাপা আমার চুল ঠিক করে দাও৷
.
আবির অনিতার মাথায় ঝুটি বেঁধে দিলো৷

“এখন হয়েছে?
.
হ৷
.
আদিবঃকী হয়েছে যেনো মনে হচ্ছে মাথায় একটা তাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে৷
.
পাপা ওকে বলো যাতে আমাকে পিঞ্চ না করে৷
.
হয়েছে এবার তারাতাড়ি চলো৷
.
অনিতাঃপাপা মাম্মাম কোথায়?মাম্মাম আসেনা কেনো?
.
চলে আসবে মামনী এখন তারাতাড়ি চলো লেট হয়ে যাচ্ছে তো৷
.
[অনিতা আর আদিব আবির আর অনুর ছেলে মেয়ে৷ জমজ হয়েছিলো ওরা]

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-১২

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

“আপনি আমাকে এতো কিছু দিলেন আমার ওতো কর্তব্য আপনাকে কিছু দেওয়া৷ চোখ বন্ধ করুন৷
.
কেনো?
.
যেটা বললাম সেটা করুন নাও চোখ বন্ধ করুন৷

আবির চোখ বন্ধ করলো৷ অনু আস্তে আস্তে আবিরের কাছে গিয়ে ওর গালে একটা কিস করে দৌড়ে চলে গেলো৷

আবির চোখ খুলে দেখলো অনু নেই৷গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো৷

“পাগলী একটা৷
.
🍁পাঁচদিন পর~~~

আবির আজ ফিরে যাচ্ছে আমেরিকায়৷ সবারই ভিষন মন খারাপ৷ অনু তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ৷ আবির অনেকবার ধমক দিয়েছে তাতেও কাজ হয়না৷ সে কাঁদছেই৷

“অনু তুমি যদি এভাবে কাঁদতে থাকো তাহলে আই
প্রমিস আমি আমেরিকায় যাবোনা৷ তুমি কী চাও তোমার স্বামী আমেরিকায় না যাক আর বিজনেসের লস হোক?যদি এটাই চাও তাহলে ঠিকাছে আমি যাবো না৷
.
“কী রকম মানুষ আপনি হ্যাঁ৷ আমি কাঁদছিলাম বলে এভাবে বলবেন নাকি৷ কোনো স্ত্রীই চায়না তার স্বামীর লস হোক তেমনি আমিও চাইনা৷ আপনি গিয়ে ভালো করে আপনার বিজনেসের দেখবাল করুন যাতে আমাদের কোম্পানি এগিয়ে যেতে পারে৷
.
এই তো লক্ষী মেয়ে৷ এবার আমার শার্টের বাটনস্ গুলো লাগিয়ে দাও তো তারাতাড়ি৷ লেট হয়ে যাচ্ছে৷
.
অনু আবিরের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে আর আবিরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে৷ আবিরও এক দৃষ্টিতে অনুর দিকেই তাকিয়ে আছে৷

অনু বোতাম লাগিয়ে দিয়ে এবার আবিরের সব কাপড় চোপড় গুছিয়ে দিচ্ছে৷ আবিরের মা ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন৷

আবির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অনুর কাছে গেলো৷ কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে বললো,,,
ভালো করে চলবে আর সাবধানে ভার্সিটিতে যাবে৷ আর হ্যাঁ লেখাপড়া নিয়ে একদম ফাঁকি বাজি করবেনা আমি কিন্তু আমেরিকায় বসে বসেই সব দেখতে পারবো৷তোমার এখন একটাই লক্ষ্য আর সেটা হলো নিজের স্বপ্ন পুরন করা৷ তোমাকে ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হবে অনু৷

অনুও মাথা ঝাঁকিয়ে আবিরের পায়ের উপর ওর দুই পা রেখে ভর দিয়ে উঠে আবিরের কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিলো৷,,,,

“সাবধানে যাবেন!আর গিয়ে ফোন দিবেন৷
.
অনুর চোখ থেকে না চাইতেও পানি পরছে৷ আবির আর পিছনে তাকালো না রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ পিছনে তাকালে সে আর আজ যেতেই পারবেনা৷

আবির চলে যেতেই অনু ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷

“পাঁচটা বছর আপনাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি৷ আপনি আমার কাছে কী সেটা বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন যখন বুঝতে পারলাম তখন আপনাকে আমার কাছে রাখতে পারিনি৷
🍁
একমাস পর ~~~~

অনু আজ ফাইনাল এক্সাম দিয়ে এসেছে৷ বাড়ির সবাই ওকে জিজ্ঞেস করছে পরিক্ষা কেমন হয়েছে অনু সবাইকে হাসিমুখেই বললো,,তার পরিক্ষা খুব খুব ভালো হয়েছে৷

সে খুশিমনে রুমে গেলো আবিরকে ফোন করে জানাবে তার পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছে৷

আবির অনুর পরিক্ষা ভালো হয়েছে বলে সেও খুব খুশি৷ অলরেডি বাড়িতে মিষ্টি কেনার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে৷
রেজাল্ট দেওয়ার দুইমাস পড়েই অনু চাকরির জন্য এপ্লাই করবে৷
🍁
বিকেলে অনু ছাঁদের দোলনায় বসে বসে ফুল দিয়ে মালা গাঁথছে আর গুন গুন করে গান গাইছে,,

দিও তোমার মালা খানি,বাউলের এই মনটারে,,
.
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে৷

অনুর গান গাওয়ার মধ্যেই ওর ফোন বেজে উঠলো পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আবিরের৷ অনু মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করলো৷

“হ্যালো!!!
.
বাহ্ আজ এত তারাতাড়ি ফোন রিসিভ করলে যে৷ তা কী করছে আমার জানপাখি?
.
মালা গাঁথছি আর,,,
.
গান গাইতেছো রাইট??
.
আপনি কী করে জানলেন?
.
এটা জানা কোন ব্যাপার না৷ মানুষ অসময়ে কখন মালা গাঁথে জানো যখন তার মন ফুলের মতোই ফুরফুরে থাকে৷ আর আনন্দে আবেশে মালা গাঁথার সাথে মনের সুখে গানও গায়৷
.
বাহ্ নারী সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান আছে দেখছি৷
.
তা তো থাকবেই৷ বিয়ে হয়েছে বউ আছে এখন তো সব জানার দরকার তাই-না?
.
হুম সেটাই! আচ্ছা আপনি এখন কী করছেন?
.
এইতো কয়েকটা ফাইলে চেক করছি৷
.
আর কখন আসবেন দেশে?
.
এইতো তিন চারমাস পরেই৷

ওহ,,(মন খারাপ করে)
.
মন খারাপ করোনা সুইটহার্ট৷ তুমি তো জানোই ঘন ঘন বাংলাদেশে যাওয়া পড়েছে এইবার৷ তাছাড়াও কোম্পানি লসের দিকে৷ কোম্পানিকে দাড় করিয়েই তোমার কাছে দৌড়ে চলে আসবো৷কিন্তু একটা আফসোস৷
.
কী???
.
এই যে তুমি মালা গাঁথছো সেই মালাটা আমি গলায় দিতে পারবোনা৷
.
আপনি আসলে মালা বানিয়ে দিবো তখন গলায় দিয়েন৷
.
আচ্ছা কী ফুল দিয়ে মালা বানাচ্ছো সেটা তো বললেনা৷
.
বকুল ফুল দিয়ে৷ একটা ছোট ছেলেকে দেখলাম নিয়ে যেতে ব্যস ওর কাছ থেকেই রেখে দিলাম৷ মালাটাকে ডায়েরির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবো৷ শুকনো বুকলের মালায় অনেক ঘ্রান,সুবাস থাকে৷
.
রেখে দাও৷শুকনো বকুলের মালাই আমি এসে গলায় দিবো৷

আউচচচ!!!!
.
কী হয়েছে অনু?
.
ও কিচ্ছু না একটু সুই আঙুলে ঢুকে গেছে৷
.
রক্ত ঝরছে?
.
না৷
.
মিথ্যা বলোনা৷ আ’ম ড্যাম সিওর তোমার রক্ত ঝরছে৷ খুব বেশিই ব্যাথা পেয়েছো তুমি তা নাহলে এতো জোরে চিৎকার করতে না৷ আমি এক্ষুনি ভিডিও কল দিচ্ছি রিসিভ করো৷ আর হ্যাঁ একদম চালাকির চেষ্টা করবানা৷

আবির সাথেসাথেই ভিডিও কল দিলো৷অনু একবার আঙুলের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ফোনের দিকে৷ আঙুল বেয়ে রক্ত ঝরছে আবির যদি দেখে তাহলে অনেক বকবে৷ অনু আঙুলটা ঝারা দিয়ে ফোন রিসিভ করলো৷
.
এতো দেরি লাগে ফোন রিসিভ করতে?(রেগে)
.
কোথায় দেরি হয়েছে?
.
আজকাল মিথ্যা কথা বলা তোমার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ দেখি আঙুল দেখাও৷
.
অনু ক্যামেরার সামনে আঙুল ধরলো৷
.
তুমি না বললে সামান্য তাহলে রক্ত ঝরছে কেনো? ড্যাম ইট!!!
.
অনু কিছু বলছেনা এখন কিছু বললে আবার আবির বকবে৷

“একটু সাবধানে থাকতে পারোনা তুমি?কথা বলার সময় মালা না গাঁথলে কী ছিলো?যাও আঙুলে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ো৷ কথাটা বলে আবির ফোন কেটে দিলো৷
.
ধ্যাত!!!বুঝা যায় তার আঙুলে সুই ঢুকেছে৷
🍁
“অনুর ব্যাপারে জানো কিছু?
.
অনুর চাচা মুখে খাবার দিতে যাবে ওমনি উনার ছেলের মুখে কথাটা শুনে খাবার খাওয়া থামিয়ে দিলো৷

“কেনো?হঠাৎ এই কথা বললি যে?
.
কেনো আবার তোমার ভাতিজি৷ খোঁজ তো তোমার রাখাই উচিৎ তাই নয় কী?
.
বাহ আজ আমার ছেলে এতো সতী সাবিত্রী হলো যে৷
আকাশ আমি কানে কম শুনছি না তো?
.
আকাশঃনা আমরা ওতো সেম কথাই শুনলাম৷ তা প্রোপার্টি ভাগ করার কী হলো?
.
চাচাঃকেনো বলোতো?
.
আকাশঃকারন আমি চাইছি আমার প্রোপার্টি আমি নিয়ে যেতে?
.
চাচাঃযদি বলি তুমি সম্পত্তি পাবে না তো?
.
আকাশঃদেখুন বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না ওকে৷ আমি যদি সেদিন অনুর সাথে মিথ্যা বিয়ের নাটক না করতাম তাহলে একটা কানাকড়িও আপনারা পেতেন না৷
.
চাচাঃদেখো আকাশ এতে তোমার কোন ভুমিকা নেই৷ সো এটাই ভালো হবে যদি তুমি এসবে নাক না গলাও৷
.
আকাশঃভুমিকা নেই মানে?অবশ্যই ভুমিকা আছে৷ আপনারা বলেছিলেন যে আমি অনুকে বিয়ে করে ওর বাবার সম্পত্তি নিজের নামে করে ফেলবো আর এর থেকে আপনাদের অর্ধেক দিবো তাহলে এবার আপনারা আমাকে দিবেন না কেনো?
.
চাচাঃদেখো আকাশ তোমাকে যে কাজটা করতে দিয়েছিলাম সেইটা আমার মেয়ে করে ফেলেছে আর দেখো তুমি এই বাড়িতে ঘর জামাই হয়ে আছো আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিয়েছি সো জামাই, জামাইর মতো থাকবে৷
.
সেটআপ৷ তোমরা মুখটা অফ করবে৷সারাদিন শুধু প্রোপার্টি, প্রোপার্টি, প্রোপার্টি৷ উফ এই কথাটা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে৷ দেখো আবার এই প্রোপার্টি না আবার তোমাদের ডেস্ট্রয়ের কারন না হয়ে দাঁড়ায়৷ বাই দ্যা ওয়ে অনু কোথায় আছে কিছু জানো তোমরা?
.
বাবাঃনাতো ও আবার কোথায় থাকবে, হয়তো টাকার অভাবে,কোন ছেলের সাথে চলে গেছে নয়তো পতিতা পল্লিতে৷
.
“এসব কিচ্ছুনা টপ বিজনেস ম্যান আবির রায়হান চৌধুরীর ওয়াইফ ও৷আবির ওকে বিয়ে করেছে৷এখন বুঝতে পারছো আমাদের সামনে কী হতে পারে৷ অনু যে মেয়ে কিছুতেই চুপ করে বসে থাকবেনা ও৷
.
চাচাঃটপ বিজনেস ম্যানের চোখ এই এতিমের দিকে কীভাবে পরলো?
.
অনুর সাথে ওর ছয় বছরের সম্পর্ক ছিলো৷
.
কীহ!!!!!
.
হ্যাঁ শুধু তাই নয় আর কয়েক মাস পরেই ও ফ্যাশন ডিজিইনার হতে যাচ্ছে৷
.
চাচাঃফ্যাশন ডিজাইনার কী হাতের মোয়া যে চাইলেই পেয়ে যাবে?
.
বাবা তুমি ভুলে যাচ্ছো যে অনু কতটা ইনটেলিজেন্ট৷ ও সব পারে আর হাতের কাজ তো আরও বেশি৷ ও সব দিক থেকে পারফেক্ট বাবা এসব ওর জন্য কোনো ব্যাপার না৷
.
আকাশঃতাহলে তো আমরা খুব বিপদে পড়ে যাবো৷
.
চাচাঃনা সেটা হতে দিলে চলবেনা কিছু তো একটা করতে হবেই৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-১১

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১১
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকালে চোখে মুখে পানির ছিটে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো আবিরের৷ পিটপিট করে চোখ খোলে তাকিয়ে দেখলো ওর থেকেই কিছুটা দূরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অনু চুল ঝারছে৷ আর ওর চুলের পানিই আবিরের চোখে মুখে পরেছে৷ নীল কাতান শাড়ি, চুল দিয়ে এখনও টপটপ করে পানি পরছে৷ অনুকে যেনো আজ সদ্য ফোটে ওটা গোলাপের মতোই নিষ্পাপ লাগছে৷ আবির অনুর দিকে মুগ্ধ ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো৷

আবির কিছুক্ষণ অনুর দিকে তাকিয়ে দেখে আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে অনুর কাছে গিয়ে ওর চুল কানে গুজে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো৷

“আপনার ঘুম ভেঙেছে?তাহলে শাওয়ার সেরে আসুন যান৷ আর আমাকে ছাড়ুন৷
.
উহু৷ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে৷.
.
এই কথাটা অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি৷
.
তবে আজ তোমাকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে৷
.
হয়েছে ছাড়ুন এবার৷
অনু আবিরকে ছাড়িয়ে জোড় করে টেলে বাথরুমে পাটিয়ে দিলো৷ তারপর সেও নিচে চলে গেলো৷
🍁
সকাল নয়টা বাজে৷ কেউ এখনও উঠেনি৷ দুইজন সার্ভেন্ট কিচেনে বসে বসে সবজি কাটছে৷
অনু তাদের দিকে এগিয়ে গেলো৷

“আচ্ছা উনার সকালে কী খান?
.
একজন সার্ভেন্ট হাতের ছুড়ি রেখে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,,
.
ম্যাডাম আপনি কেনো আসছেন? আমরাই নাস্তা বানিয়ে দিবো৷ আপনি আরাম করুন গিয়ে৷ তাছাড়াও বড় ম্যাডাম যদি জানেন তাহলে আমাদের খুব করে বকা দিবে৷
.
এই নিয়ে তোমাদের চিন্তা না করলেও চলবে৷ আমি সবাইকে নাহয় পুষিয়ে নিবো৷ এবার চট করে বলতো কী খান উনারা সকালে৷ আর আমাকে ম্যাডাম ডাকা অফ করো৷
.
তাহলে কী ডাকবো?৷
.
সেটা তোমাদের ইচ্ছা৷
.
যদি আবির কে আমরা ভাইজান বলে ডাকি সেক্ষেত্রে তো আপনি আমদের ভাবী৷ ভাবী ডাকলে চলবে?
.
চলবে মানে?দৌড়াবে৷
.
অনুর কথা শুনে সারভেন্ট দু’জন ফিক করে হেঁসে দিলো৷
.
এবার বলো তো তারাতাড়ি৷
.
ভাবী উনারা সকালে রুটি খান৷ ব্রেড দিয়ে জেলি ,বিরিয়ানি সাথে কষানো মাংস, ওমলেট আর স্যান্ডউইচ৷তবে আবির ভাইজানের খাবার একটু অন্য ধরনের৷
.
আবির কী খান তাহলে?
.
উনি সকালে কম চিনি দিয়ে কফি,অমলেট,আর ভেজিটেবল স্যুপ খান৷ আর কিচ্ছু না৷
.
স্যুপ!! ওয়াক!৷ আচ্ছা তোমাদের নাম তো বললেনা৷
.
আমার নাম নাসিমা আর ওর নাম জ্যুতি৷
.
বাহ্ নাইস নেম৷ আচ্ছা তোমরা আমাকে সব বেড় করে দাও ৷
.
সব রান্না শেষ শুধু রুটি করা বাকি৷
.
ওকে আমি নাহয় রুটিই বানাবো৷ ময়দা আমাকে বেড় করে দাও৷
.
আচ্ছা ভাবী
.
নাসিমা আর জ্যুতি অনুকে ময়দা বেড় করে দিলো৷
অনু চুলায় একটা পাতিলে পানি বসিয়ে দিলো৷ পানি গরম হলে এটা দিয়ে ময়দার গোলা বানিয়ে তারপর রুটি বানাবে৷
🍁
অনু!!অনু!!!আরে কোথায় তুমি ইয়ার৷?
আবির অনুকে বাথরুম থেকে ডাকছে কিন্তু অনুর কোনো খোঁজই নেই৷ বাথরুমের দরজা হাল্কা ফাঁক করে দেখলো অনু কোথায়৷রুমের কোথাও নেই রুম একেবারে ফাঁকা৷
আবির টাওয়াল পড়ে বেড়িয়ে আসলো৷ তখন অনুর টেলা ধাক্কার জন্য কাপড়ও নিয়ে যেতে পারেনি সাথে করে সেইজন্যেই ডাকছিলো৷

আবির কাপড় পড়ে নিচে গেলো৷ ড্রয়িং রুমে চোখ বুলালো না এখানেও অনু নেই৷ আবির এবার কিচেনে গেলো৷ দেখলো অনু শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে পাক্কা রাধুনীর মতো রুটি বেলছে৷

আবিরও কিচেনের ভিতরে গেলো৷ নাসিমা আর জ্যুতিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো চলে যাওয়ার জন্য৷ ওরা দু’জন চলে গেলো৷

আবির অনুর পিছন গিয়ে দাঁড়ালো৷

“আমার বউতো দেখছে রুটিও বানাতে জানে হুম৷
.
লিসেন আমি সবই জানি ওকে৷ আর এখন ভালো হবে যদি আপনি বকবক না করে আমাকে একা ছেড়ে দিন আমার রুটি বেলতে অসুবিধে হবে আপনার বকবকানির জন্যে৷৷
.
কোথায় অসুবিধে হচ্ছে৷ চলো বরং একসাথে রুটি বেলি৷
.
একসাথে কীভাবে করবো?
.
ওয়েট আমি দেখিয়ে দিচ্ছি৷
আবির অনুর হাতের উপর ওর দুই হাত রাখলো৷ তারপর বেলন দিয়ে রুটি বেলতে শুরু করলো৷
.
এবার বুঝেছো?তুমি আর আমি একসাথে কীভাবে রুটি বেলবো?
.
হুম বুঝেছি৷

আবির আর অনু প্রায় পাঁচটা রুটি এভাবে একজন আরেকজনের হাত ধরেই বানালো৷ বাকি রুটি অনু আগেই বানিয়ে ফেলেছিলো৷

আবির অনুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,,,একটা জিনিস মিসিং৷
.
কী জিনিস?
.
ওয়েট৷
আবির একটা লাল শাকের পাতা ছিড়ে তাতে গুল করে নখ দিয়ে কেটে অনুর কপালে লাগিয়ে দিলো৷

যাও টিপ দিয়ে দিলাম৷ লাল শাকের লাল টিপ হিহি৷
.
আপনারও একটা জিনিস মিসিং
.
আমার আবার কি মিসিং?
.
ওয়েট দেখাচ্ছি৷
অনু হাতে করে ময়দা এনে আবিরের সারা মুখে মাখিয়ে দিলো৷

এটা মিসিং ছিলো৷ নাও মেকাপ করিয়ে দিলাম হিহি৷ জানেন আপনাকে না একেবারে ভুত লাগছে না না ভুত না জোকার লাগছে৷ এখন সার্কাস দেখানো শুরু করেন তো৷
অনু আবিরকে দেখে হাসছে৷

হাসতে হাসতে হঠাৎ আবিরকেও ওর খুব কাছে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো৷
.
একি আপনি দূরে সরুন তো৷এতো কাছে এসেছেন কেনো হুম?
.
আবির আরও এগিয়ে এসে অনুকে টান দিয়ে একেবারে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলে৷
.
আমার কাজ শেষ হলে তবেই আমি দূরে সরবো সুইটহার্ট৷ ৷
.
আপনার তো কোন কাজ নেই৷
.
কে বলেছে কাজ নেই?

আবির আর কিছু না বলে নিজের গালের ময়দা অনুর গালে ঘষে লাগিয়ে দিলো৷

অনুকে ছেড়ে দিয়ে বললো,,নাও আমার কাজ শেষ৷

আবির পিছন ফিরতেই দেখলো ওর দাদিমা ওর দিকে তাকিয়ে আছেন ভ্রু কুচকে৷
.
তোমার আবার কী হলো?এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?আর এখানে দাঁড়িয়েই বা কী করছো?
.
দেখছি তোর আকাম কুকাম৷ কেমন ছেলেরে তুই রান্না ঘরেও বউয়ের পিছন পিছন চলে আসছিস৷ বেচারিকে রান্না করা সুযোগটাতো দে৷ একমুহূর্তের জন্যও ছাড়ছিস না৷ সবেমাত্র তো বিয়ে হলো৷

ফার্স্ট দাদিমা, আমি আমার বউয়ের সাথে আছি সো আকাম কুকাম বলবানা৷ সেকেন্ড আমি আমার বউকে ডিস্টার্ব করিনি বরং হেল্প করেছি৷ তাইনা অনু?
.
মোটেও না৷
.
এমা এসব কী বলছো তুমি?
.
হয়েছে হয়েছে৷ এবার বলো কি নাস্তা বানিয়েছো৷
.
সব নাসিমা আর জ্যুতিই করেছে আমি শুধু রুটি করেছি দাদীমা৷
.
আচ্ছা আমি যাই৷ গিয়ে দেখি আবিরের মা বাবা উঠেছে কী না সবাইকে নিয়ে একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো৷আর আবির এবার ভুত থেকে একটু মানুষ হ৷ যে কেউ দেখে তোকে ভয় পাবে৷
কথাটা বলে দাদীমা চলে গেলো৷

“তোমার জন্যে দাদীমাও আমাকে অপমান করলো৷ রুমে এসো তারপর তোমার ফাজলামি বেড় করছি৷
.
এমা আমি তো আজ রুমেই যাবোনা৷ আমার না আপনাকে খুব ভয় করছে৷ আমি খুব ভয় পেয়েছি৷
সরেন তো এখান থেকে যত্তসব আউল ফাউল৷
.
ওয়াট আউল ফাউল!!! কে আউল ফাউল? আগে তো এই কথাটা কখনো শুনিনি৷
.
ঔ আসলে এই কথাটা আমি আবিষ্কার করেছি এবার থেকে নিয়মিত শুনবেন ওকে৷
🍁
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই৷ আবিরের বাবা কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন,,,,
.
আবির আর পাঁচদিন পর আমেরিকায় চলে যাচ্ছে৷
.
অনু কথাটা শুনে আবিরের দিকে তাকালো৷ আবির গম্ভীর মুখ করে অমলেট খাচ্ছে৷

“আর অনু মা তোমারও কিন্তু নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে৷ শুনলাম তোমার নাকি একমাস পরেই ফাইনাল এক্সাম?
.
জ্বী বাবা৷
.
তাহলে আর কী মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যাও৷ তোমার বাবার খুনিকে ওতো শাস্তি দিতে হবে না-কি৷
🍁
আবির ব্রেকফাস্ট করে কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে গেলো৷

অনু রুমে গিয়ে দেখলো আবির ল্যাপটপে কী যেনো করছে৷ওর কাছ থেকে ল্যাপটপ নিয়ে খাটে ছুঁড়ে মেরে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো৷

“আপনি চলে যাবেন সেটা আগে বলেননি কেনো?
.
আবির অনু মাথায় হাত রেখে বললো,,আরে পাগলী গেলে তো শুনবেই ৷ তাছাড়াও যেতেতো হবেই আজ নাহয় কাল৷আমি মাত্র কয়েকদিনের জন্য এসেছিলাম৷ তোমাকে এসে যে বিয়ে করে নিবো সেটা কখনো ভাবিনি৷ কোম্পানি কিছুটা লসের দিকে আছে৷ গিয়ে আবার সব কিছু ঠিকঠাক করতে হবে৷ তোমাকে ওতো পড়তে হবে নিজের স্বপ্ন যে সত্যি করতে হবে তোমায়৷ বিয়ে করে সেটা ভুলে গেলে তো চলবেনা৷
আবির একের পর এক বলেই যাচ্ছে কিন্তু অনু পাল্টা কিচ্ছু বলছেনা৷ কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো ওর বুকে তরল কী যেনো পড়ছে৷ আবির তারাতাড়ি অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কাঁদছে৷ আবির অনুকে ওর বুক থেকে তুলে ফেললো অনুর কান্না দেখে প্রচন্ড রেগে গেছে সে৷

“যা মন চায় সেটাই করো গিয়ে যাও৷ তুৃমি কী চাইছো নিজেও লেখা পড়া করবেনা আর আমাকেও বিজনেস করতে দিবেনা হুম৷ এখানে কাঁদার কী আছে সেটাই বুঝতে পারছিনা৷ পাঁচ বছর আমাকে ছাড়া থাকতে পেরেছো আর এই ক’টা দিন থাকতে পারবেনা?
আবির রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ অনু যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে৷ আবিরের কথা শুনে বেচারি মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে৷
🍁
আবির রুমে বিশ মিনিট পর এসে দেখলো অনু ব্লাঙ্কেট টেনে শুয়ে আছে৷ আবির এগিয়ে গেলো অনুর দিকে৷
.
অনু!!অনু উঠো৷
.
অনু উঠছেনা আরও ঘুমের ভাব ধরে পড়ে আছে৷

কী হলো উঠো?
.
অনু তবুও উঠছেনা দেখে আবির অনুকে এসে সোজা কোলে তুলে নিলো৷

এই এই কী করছেন আপনি?
.
তুমি না ঘুমিয়ে ছিলে তাহলে উঠলে কী করে হুম?

অনু আবিরের কথার উত্তর না দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো৷ আবির অনুকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা দিলো৷ পথেই তার দাদীমার সাথে দেখা৷

“একি তুই ওকে কোলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস হতচ্ছাড়া?
.
উফ দাদীমা সেটাও কী তোমাকে বলতে হবে নাকি৷ যেখানে যাই সেখানেই তোমার আগমন৷ বলি কী তোমার কী আমার রোমান্সের বারোটা না বাজালে হয়না৷
.
না হয় না৷দিন দুপুরে কিসের রোমান্স৷?
.
ওসব তুমি বুঝবেনা বুড়ি৷ তুমি থাকো আমি চললাম৷
.
হ্যাঁ হ্যাঁ যাও যাও৷ এখন তো বউ পাইছো এখন তো আমি কেউ না৷
.
আবির ওর দাদীমার দিকে পিছন ফিরে বললো,,,

তোমার কেনো জ্বলে গো বুড়ি, তোমার কেনো জ্বলে? হাহাহা!!
.
আবির অনুকে ছাঁদে গিয়ে তবেই কোল থেকে নামালো৷ অনু লজ্জা আর অভিমানে মাথা নিচু করে রেখেছে৷

অনু আ’ম স্যরি৷ তখন তোমার সাথে এভাবে কথাটা বলা উচিৎ হয়নি৷ কিন্তু কী করবো বলো,আমি চাইছিলাম আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে তোমার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রুও ঝরতে দিবোনা৷ তখন তুমি কাঁদছিলে তাই খুব রাগ হয়েছিলো৷
.
ঔ আসলে বাবার কথাও তখন খুব মনে পরেছিলো তাই৷
.
অনু আর একটা কথাও বললোনা৷ আবির জানে অনু অভিমান করেছে তাই ওর কাছে গিয়ে বললো,,

“ছাঁদ টা একটু ভালো করে দেখো তো ম্যাডাম

অনু আবিরের কথা শুনে চারিদিকে চোখ বুলালো৷ ছাঁদের প্রতিটা কোনায় কোনায় শুধু অপরাজিতা ফুল৷ অন্য ফুলও আছে তবে এই ফুলটাই বেশি৷

আবির অপরাজিতার একটা লতা ছিঁড়ে আনলো৷ লতায় পাচঁ থেকে ছয়টা ফুল আছে৷ আবির লতাটা দুই দিক থেকে এনে গিট্টু দিয়ে একটা ক্রাউন বানালো আর সেটা অনুর মাথায় লাগিয়ে দিলো৷ অনু শুধু আবিরকে চেয়ে চেয়ে দেখছে আবির কতটা ক্রিয়েটিভ৷

অনুঃওয়াও খুব সুন্দর এটা৷

দাদীমাঃআমারও সেম লাগবে৷
.
দাদীমা তুমি?
.
হ্যাঁ আমি৷ তাহলে এটাকেই রোমান্স বলে তাই না?আর শুন আমাকেও সেম ফুলের মালা বানিয়ে দে আমিও মাথায় দিবো৷ তবে হ্যাঁ আমার মালায় কিন্তু গোলাপও গিট্টু দিয়ে লাগিয়ে দিবি৷
.
দাদীমা এটা মালা নয়৷ মালা তো গলায় দেওয়ার জিনিস৷ এটা তো মাথায় দেয় এটাকে ক্রাউন বলে৷
.
কাউল বাউল যাই বলুক আমাকে দে বানিয়ে৷
.
হায় আল্লাহ্৷
.
আবির ওর দাদীমাকেও বানিয়ে দিলো তাতে তিনটি গোলাপও লাগিয়ে দিয়েছে৷

আবিরঃওয়াও তোমাকে তো একেবারে শাবানা লাগছে৷ ও শাবানা, শাবানা,শাবানা ওহো৷
.
আর তোকে ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো লাগে৷
দাদীমা কথাটা বলে হেঁসে চলে গেলেন৷
আবিরের মুখের হাসিও উধাও
.
এই অনু আমাকে কী দেখতে ইলিয়াস কাঞ্চন লাগে?
.
একদম না৷ আপনাকে কারও মতোই লাগেনা৷ আপনি সবার চাইতে অন্যরকম৷ আমার জীবনের দেখা সবচাইতে ভালো আর সুদর্শন পুরুষ৷

চলবে♥️