Saturday, June 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1581



ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০১

0

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১ : #ভালোবাসতে_ভালোলাগে
লেখিকা : #Lucky

আমার ফুলসজ্জার ঘরটা এত সুন্দর সাজানো হয়েছে যা বলার মত না। দেখেই খুশি হয়ে গেলাম। যদিও বরটা রাক্ষস আর একটা অসহ্য।
কিন্তু বর মন মত হয়নি তাই বলে নিজের ফুলসজ্জাতে সেলফি তুলবো না!
যদিও এখনো বিরক্ত লাগছে। এই বিয়ে করাটা আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে।

উফ যাই হোক। বিয়ে হয়ে যেহেতু গেছে এখন এত চিন্তা করে লাভ ত হবে না।
আমি বরং ওই রাক্ষস বর আসার আগে সেলফি তুলে নিই।
বিয়েতে কোনো সেলফিও তোলা হয়নি। সবাই জিজ্ঞেস করবে পিক দে।
আমি তাড়াতাড়ি নিজের ফোনটা বের করে ছবি তুলতে লাগলাম।
উফ কি কিউট পিক আসছে!
শুধু যদি বরটা একটু নিজের মন মত হত তাহলে ওর সাথেও সেল্ফি তোলা যেত! এই ছেলের সাথে আমি কিভাবে থাকবো!
যেভাবে আমাকে অপমান করতে থাকে! ভেবেই আমি রাগে ফুলে উঠতে লাগলাম। কিন্তু নিজেকে জোর করে শান্ত করে নিলাম। তারপর এক মুখ হাসি নিয়ে আবার সেলফি তুলতে লাগলাম।
ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার সাথে অনেক ছবি তুলতে লাগলাম। বিভিন্ন পোজে।
খোমটা দিয়ে, খোমটা খুলে, পাউট করে।

হঠাৎই মনে হলো পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
সেই কেউ, আর কেউ না, ইথান।
ও এসে গেছে?
আমার মুখ থেকে হাসি উবে গেল। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পিছন ফিরে তাকালাম।
এথান আমার একটু পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।
মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে অনেক রেগে আছে।
কিন্তু তাতে আমার কি!
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আবার সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
কিন্তু এখন সহজ ভাবে তুলতে পারছি না। হাত কাপছে।
ওকে দেখে হার্ট বিট বেড়ে গেছে। তাছাড়া অনেক সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। আরেকবার পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
এক মিনিট আমি এগুলো কি ভাবছি!
আমার কি মান সম্মান নেই? ওই ছেলের গায়ে পরব আমি? কোনো দিনো না।
আমারো মেলা ইগো।
কিন্তু যতই নিজেকে ভুলাই না কেনো, এটা ত সত্যি যে আমি এই অভদ্র ছেলেটাকে অল্প অল্প পছন্দ করি।
অল্প অল্পই, বেশি না।
“প্রথমে ত এত ভাব নিচ্ছিলা যে মাটিতে পা ই পরছিল না! কিন্তু শেষে বিয়ে পর্যন্ত করার জন্য এতটা প্লান করে নিলে!” ব্যঙ্গ করে বলল ইথান।
কথা শুনে আমার গা জ্বলে গেল।
দিলো মুডটা নষ্ট করে। এর মত ছেলের সাথে কিভাবে মানিয়ে নেব আমি? প্রথম দিন থেকে আমাকে অপমানের উপর অপমান করে যাচ্ছে।

আমি রেগে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললাম, “আমাকে এত যে শোনাচ্ছেন,আপনি কি! আপনি কেন করলেন বিয়ে! তাছাড়া এই বিয়ে আমার বাসা থেকে ঠিক হয়েছিল।”
“আমি যদি জীবনেও জানতাম যে তোমার সাথে ঠিক হয়েছে সাথে সাথেই না করে দিতাম।” তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ইথান।
“তাছাড়া আমি বিশ্বাস করিই না যে তুমি জানতে না। একটা ছেলেকে না দেখে বিয়েতে রাজি হবার মত টাইপের মেয়ে তুমি না। যেমন দেখো এতই আনন্দ তোমার যে তুমি এখন সেলফি তুলে বেড়াচ্ছ।” আরো বলল ইথান।
“নিজেকে কি মনে করেন?” রেগে বললাম আমি।
ইথান আমাকে পাত্তা না দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।
আমি পিছন থেকে লাত্থি দেওয়ার ইশারা করলাম।
জঙ্গলী একটা।
আমি মুখ ফুলিয়ে বিছানায় বসলাম।
আমি ত মনে করেছিলাম উনি পছন্দ করেন আমাকে তাই বিয়েতে রাজি হয়েছেন! অথচ উনি জানতেনই না আমার সাথে বিয়ে! শুধুমাত্র তার মায়ের কথাতেই বিয়েতে রাজী হয়ে গেলেন? এ আবার কেমন?
যদি রানু মুখার্জির মত কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিত ওনার মা!
হ্যা এটা সত্যি যে আমি জেনে শুনেই বিয়েতে রাজি হয়েছি কারণ আমি ইথানের মায়ের নিয়ে আসা বিয়ের প্রস্তাব শুনে মনে করেছি ইথান আমাকে পছন্দ করে।
কিন্তু উনি ত আমাকে সহ্যই করতে পারেন না।
এখন কি হবে আমার!
সিরিয়ালে ত দেখায় যে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। মিল হয়ে যায়। ভালোবাসা হয়। কিন্তু আমাদের টা কবে ঠিক হবে?
এই ঘাড় ত্যাড়া যদি ঠিকই না করে?
আমি হা করে অনেক সময় চিন্তায় পরে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম।
কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো আমি ঘুমাবো কোথায়?
সিরিয়ালের মত কোনো সোফা নেই। আর নিচে বিছানা পাতার মত কিছুও নেই।
সারারাত আমাকে বেলকনিতে বসিয়ে রাখলে?
তাই আগে আগে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলেই ভাল।
আমি বিছানায় উঠে বসতে না বসতেই ইথান একটা বেগুনী রঙের শার্ট পরে বের হয়ে এল। আর আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
আমার হাত পা কিছুই নড়ছে না। আমি চুপ করে মেঝের দিকে তাকিয়ে বোকা হয়ে বসে রইলাম।
কেমন একটা পরিস্থিতি! শুয়ে পরতেও লজ্জা করছে।
উনি ত মনে করছেন আমি প্লান করে সব করেছি। এখন কিনা মনে করবেন যে আমি ওনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে চাই!
আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে। কেনো যে ভুল বুঝলাম। ওইদিন উনি আমার জন্য যেটা করেছিলেন সেটাকে আমি ওনার ভালোলাগা ধরে নিয়েছিলাম। বেশি সিনেমা দেখলে যা হয় আরকি!

“এটাকে এখানে ফেলে রেখে দিয়েছ কিসের জন্য?” ইথান বলল।
ইথানের কথায় আমার ঘোর কাটলো।
আমার ল্যাগেজটা রুমের মধ্যে রাখা। যদিও সব জামাকাপড় ওনার আলমারিতে তুলে দিয়ে গেছেন ওনার মা।
আমি বিছানা থেকে উঠে ল্যাগেজটার কাছে এলাম। এটা কোথায় রাখা যায় সেটাই ভাবতে লাগলাম।
বুঝতে না পেরে ইথানের দিকে তাকালাম।
উনি তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে ব্যস্ত।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে আলমারির উপরের ফাঁকা জায়গাতে এটা উঠিয়ে রাখার কথা চিন্তা করলাম।
আমি ল্যাগেজ নিয়ে এগিয়ে গেলাম আর উপরে ল্যাগেজটা তুলে রাখার জন্য এক হাত দিয়ে ল্যাগেজের হেন্ডেল ধরলাম ও অন্য হাত ল্যাগেজের নিচে রেখে ল্যাগেজটা তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আলমারির উপরে উঠাতে পারছি না!
আমি তাও নিজের পায়ের পাতার উপর ভর রেখে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করতে লাগলাম।
কিন্তু পারছিই না। আমি চেষ্টা করতে থাকা অবস্থাতেই পিছন ফিরে তাকালাম।
ইথান আমার দিকে নির্বিকার ভঙিতে তাকিয়ে নিজের মাথা মুচ্ছে।
আমি বিরক্তির সাথে সামনে মুখ ঘুরালাম। আর আবার চেষ্টা করতে লাগলাম। তখনি হয়ে গেল আরেক কান্ড। আমার হাত ফসকে গেলো আর ল্যাগেজ আমার মাথায় এসে পরতে লাগল।
আমি ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। কিন্তু আমার মাথার উপর ল্যাগেজটা পড়লো না।
ব্যাপার কি?
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আর অনুভব করতে পারলাম যে ইথান আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে। অর্থাৎ ও ধরে নিয়েছে।
কিন্তু ইথানের এক হাত আমার হাতের উপর রেখে ল্যাগেজের হেন্ডেলটা ধরেছে। অন্য হাত দিয়ে ল্যাগেজের অপর প্রান্ত।
আমি থমকে সামনে তাকিয়ে রইলাম। আমার হার্টবিট অনেক গুন বেড়ে যেতে লাগল।
ইথান ওর হাত আলগা করতেই আমি সাথে সাথে হাত নামিয়ে নিলাম।
উনি ল্যাগেজটা উপরে উঠিয়ে দিলেন।
আমি ধুকধুক করা হার্ট নিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ইথান নিজের মত বিছানায় গিয়ে বসে পরল।
যেহেতু ইথান চলেই এসেছে তাই আমি এই ভারি শাড়ি চেঞ্জ করে তারপর দেখি কোথায় ঘুমানো যায়।

আমি আস্তে আস্তে আলমারির খুললাম আর একটা হালকা পাতলা শাড়ি নিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম।
যদিও আমি জীবনেও একা শাড়ি পরিনি। সবসময় মা পরিয়ে দিত।
এখন কিছুই করার নেই। আমার শাড়ি পরা দেখে আমি নিজেই অসন্তুষ্ট। কুচি দিই নি। ছোটো বাচ্চারা যেমন পেচিয়ে পরে তেমন করে পরেছি। কিন্তু এর চেয়ে ভাল পারব না।
শাড়ি পরে ঘুমানোরও অভ্যেস নেই। কিন্তু আমার মা কড়াকড়ি ভাবে বলেই দিয়েছে বিয়ের পর থেকে শাড়িই পরতে। এটাই নাকি নিয়ম হয় শশুর বাড়ির।
যদিও শাশুড়ী এ বিষয় কিছু বলে নি।
তাও, পরেই থাকব। পরের টা পরে বুঝা যাবে।
এমনিও বিয়ের পর নিজের মত থাকা মেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয়না।
তাছাড়া এমন ত না যে আমি নিজের মত কিছু করে বকা খেলে এই উল্লুক বরটা সবার বিপক্ষে গিয়ে আমাকে সাপোর্ট দিবে!
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বের হয়ে এলাম।

লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে রাখা।
ইথানই করেছে।
ইথান বিছানায় এক সাইডে হেলান দিয়ে বসে মাথা পিছনে হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
এক সাইডে যেহেতু আছে এর মানে আমি পাশে ঘুমাতে পারব?
মনে ত হয় পারব।
কিন্তু উনি শুয়ে না পরে হেলান দিয়ে বসে কেন আছেন?
আমার বুকের মধ্যে ত তোলপাড় হচ্ছে। অন্য মেয়েদের কেমন হয় জানিনা। আমার ত কেমন কেমন লাগছে কারণ প্রথমবার কোনো ছেলের সাথে ঘুমাব আজ।
আমি নিঃশব্দে এগিয়ে ত গেলাম কিন্তু হাতের অবাধ্য চুড়িগুলো শব্দ করে উঠল।
ইথান হেলান দিয়ে থাকা অবস্থাতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
একটা ছেলে এত সুন্দর কেন হবে!
ইথান আবার মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।

ভাব? এত ভাবের কি আছে? অসহ্য। আমাকে ভাল লাগে না ওনার? আমি ওনার মত কত সুন্দর ছেলেকে রিজেক্ট করেছি উনি জানে!
হুহ যত্তসব।
কিন্তু এখন আমি কি করব? ঢ্যাং ঢ্যাং করে পাশে গিয়ে শুয়ে পরব!
এটা করতেও ত বাধছে। তাই আমি দাড়িয়েই রইলাম। আর এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শাড়ির আঁচল হাতের আঙুলে প্যাচাতে লাগলাম। চোখ মুখে অনেক দ্বিধা আমার।
কিছুক্ষণের নীরবতার পরেই ইথান বলে উঠল, “তোমাকে কোলে করে আনবো, এমন কিছু এক্সপেক্ট করছ?”
আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকালাম।
ইথান মাথা তুলে বুকের কাছে দুই হাত গুজে আমার দিকে স্বাভাবিক চোখেই তাকিয়ে আছে।
যদিও এটা অপমান। কারণ ভাল কথা ত কখনই বলে নি।
“তোমার এসব চুড়ির আওয়াজ যেন আমার কানে না আসে।” বিরক্তির সাথে বলে ইথান বালিশ পাতিয়ে আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে পরল।
আমার ওনার এই ব্যবহারে বেশ খারাপ লাগল। উনি এত খারাপ কেনো?
আর এই খারাপ ছেলেটাকে আমি পছন্দ কেন করে ফেললাম! নিজের উপরই প্রচুর বিরক্ত লাগছে।
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে গিয়ে হাতের চুড়িগুলো খুলতে লাগলাম। আর খোলার সময় অল্প আওয়াজ হলো।
“তোমার থেকে এগুলোই আশা করা যায়।” তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ইথান।
আমি রেগে গেলেও চোখ বন্ধ করে রাগ দমন করে নিলাম। কারণ কথায় কথা বাড়বে। তা এত রাতে আমি চাচ্ছি না। পরে দেখে নিব।
ওর পাশে শুতেও ইচ্ছে করছে না। কিন্তু এছাড়া কোথায় যাব!
এদিকে হার্ট বিট থামার নাম নেই। হয়তো ঘুমানোর আগ অব্দি থামবে না।
আমি এগিয়ে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে পাশে শুয়ে একটা কম্বল গায়ে টেনে নিলাম।
শুয়ে পরার একটু পরেই ইথান আমার দিকে ঘুরে একদম আমার কাছে চলে এলো।
আমি অনেক হকচকিয়ে গেলাম আর ভয়ে চোখ মুখ কুচকে বললাম, “এ..এক মিনিট… আমি…।”
ইথান আমার পাশে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে আবার নিজের জায়গায় সরে গেল।
আমি বোকা সেজে গেলাম।
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে আমার। কি লজ্জাজনক বিষয়। আমি দ্রুত উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম।

আমার ত ঘুমই আসছে না।
শুয়ে এপাশ ওপাশ না ফিরলে কি আর ঘুম আসে?
নিরুপায় হয়ে ওভাবেই জেগে রইলাম।
অনেকক্ষণ পরে আমি আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আর অবশ্যই ঘুমন্ত অবস্থাতেও তাকে দেখতে ভালো লাগছে। আসলে কাউকে ভালোবাসলে তাকে সবসময়ই সুন্দরই লাগে।
আমি ইথানের দিকে ঘুরলাম। তারপর ইথানকে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে চোখ খুলে আশপাশ অচেনা মনে হলো।
পরক্ষনেই মনে পরলো আমি এখন আর নিজের বাড়িতে নেই।
তারপরই মনে হলো আমার শাড়ির আঁচল আমার গায়ে নেই। নিজের দিকে দেখার সাথে সাথে আমার চোখ গোলগোল হয়ে গেল।
আমি মুহুর্তে উঠে বসে শাড়ির আঁচল গায়ে দিলাম।
তারপর এক বিশাল লজ্জায় পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম।
ইথান কোথাও নেই। কিন্তু দরজা ত বন্ধ করা। মানে উনি রুমেই আছেন! আমি বাথরুমের দিকে তাকালাম। বাথরুমে ত নেই। বেলকোনিতে? হতে পারে।
উনি কি দেখেছেন? ছি! দেখেছেন ত অবশ্যই!
আমি নাক মুখ কুচকে শাড়ির আঁচল দুই হাতের মুঠোয় চেপে ধরলাম।
জীবনেও শাড়ি না পরে ঘুমালে যা হয়।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল নয়টা প্রায়।
হায় হায়!
তাড়াতাড়ি ওঠা উচিত ছিল। আমি তাড়াতাড়ি উঠে কোনো রকম শব্দ না করার চেষ্টা করে শাড়ি নিয়ে গোসল করতে ঢুকে গেলাম।
বের হয়ে রুমের দরজা খোলা দেখলাম। অর্থাৎ ইথান বের হয়ে চলে গেছে।
ভাল করেছে। আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে।
আমি শাড়ি যা পরেছি তা দেখে কেউ হেসে না দেয়।আমি নীচে নেমে এলাম। সবাই খাবার টেবিলে হৈ চৈ শুরু করেছে।
আমাকে দেখা মাত্র দিবা বলে উঠল, অইত এসে গেছে আমাদের ভাবী।
সবাই আমার দিকে তাকালো।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
ইথান তাকাল না। সে চুপচাপ টেবিলে দুইহাত একসাথে ধরে বসে আছে।
ইথানের মা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন, “আসো, তোমাদের দুইজনের অপেক্ষাই করছিলাম।”
দিবা ইথানের পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিয়ে বলল, বসে পরো।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম। সে তার মতই বসে আছে।
আমি ইথানের মা কে বললাম, আমি পরে খাবো। আগে সবাইকে দিয়ে দিই।
ইথানের মা হেসে বলে উঠল, “এত ফর্মালিটির দরকার নেই। বাব্বা, সেই ছোট্ট এরিন কত বড় হয়ে গেছে! সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম।”
আমি শুধু একটু নিঃশব্দে হাসলাম।
“বসো, আজ বৌভাত অনেক লোকজন আসবে, খেয়ে রেডি হতে হবে।” দিবা বলল।
আমি এগিয়ে গিয়ে ইথানের পাশে বসলাম। যদিও এখন লজ্জায় তাকাতেও পারছিনা ওর দিকে।
(চলবে…)

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১৫ এবং অন্তিম পর্ব

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
শেষ পর্ব

আমি চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলানি দিয়ে আছি। দরজায় নক করতেই বললাম “কামিং।” বলে চোখ তুলে তাকাতেই আমার চোখ থমকে গেলো। ফারিয়া নীল রঙের একটা সুতি শাড়ী পরেছে। চোখে হালকা কাজল। ঠোঁটে পিংক লিপস্টিক। চুল গুলো সাইডে সিথি করে ছেড়ে দেয়া। কপালে নীল টিপ। কি অদ্ভুত লাগছে। আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। এর মাঝে কখন সে এসে সোফায় বসে পড়েছে আমি খেয়াল করিনি। আমার ঘোর কাটল তার কথা শুনে। “ওখানে বসে আমাকে দেখলে কি পেট ভরবে না এখানে এসে খেতে হবে।” আমি তার কথা শুনে টেবিলে তাকালাম। খাবার এনেছে আমার জন্য। সেগুলা সব সাজিয়ে রাখছে। আমি কোন কথা বলছিনা। শুধু তার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি সে কি করতে চাচ্ছে। আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল “কি হল কথা বলছি শুনতে পাচ্ছনা।” তার কথা শুনে আমি এবার একটা হাত টেবিলে রেখে তার দিকে ভালো করে তাকাই। এই প্রথম সে আমাকে তুমি বলেছে। আমাকে তার দিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু না। অনেক হয়েছে। আমি বারাবার তার আচরনে সব ভুলে তার দিকে ছুটে যাই। কিন্তু সে বারবার আমাকে কোন না কোন কারনে অবহেলা করে। আমার কষ্ট সে বুঝতে চায়না। কিন্তু এবার আমার কষ্ট তাকে বুঝতেই হবে। আমার চুপ করে থাকা দেখে সে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। আমি কিছু না বলে তার সাথে গিয়ে বসলাম। সে খাবার হাতে তুলে আমার মুখের সামনে ধরল। আমি আবারো অবাক হয়ে গেলাম। মনে মনে একটু হেসে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম। সামনে আরও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। ফারিয়া আরও এমন অনেক কাজ করবে যাতে আমি বারবার অবাক হব। তাই এই মুহূর্তে আমি নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে নিলাম। কোন কথা না বলে মুখ খুলে খাবার মুখে নিলাম। সে পরম যত্নে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়া শেষ করে সে একটু রেগে বলল “আমি খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করলেনা?” আমি কিছু না বলে উঠে একটু এগিয়ে গিয়ে ঘুরে বললাম “কেন এসেছ?” খাওয়ার পরে আসলে এরকম প্রশ্ন শুনে ফারিয়া কি ধরনের রিয়াকশন দেবে তা ভেবে পাচ্ছেনা। কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো অসহায় হয়ে। আমার বুকের ভিতরে কষ্ট হলেও আমি তা চেপে রাখলাম। তাকে বুঝতে দিলাম না।

আমি ঘরে গিয়ে দেখি জারিফ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে বুঝতে চাইছেনা। কিন্তু আমি হাল ছাড়তে চাইনা। আমার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সে একবারও আমার দিকে তাকালনা। তাকালে হয়তো আমার কষ্টটা বুঝতে পারতো। আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। সে একটু চমকে উঠলো। হয়ত ভাবতেও পারেনি আমি এমন কিছু করবো। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। সে আমার হাত ধরে আমাকে সামনে টেনে এনে বলল “কেন করছ এসব?” আমি কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলাম। সে এবার খুব শান্ত কণ্ঠে বলল “ভালোবাসা মানে কি জানো? ভালবাসা মানে হচ্ছে একজনকে নিজের সুখ দুঃখ সব কিছুর সঙ্গী করে নেয়া। ভালোবাসার মানুষের সাথে নিজের জিবনের সব কিছু ভাগ করে নেয়াই ভালবাসা। তোমার যখন সুখ আসবে তখন শুধু মানুষটাকে সুখে ভরিয়ে দিবে আর যখন দুঃখ আসবে তখন সেই মানুষটার কথা না ভেবে শুধু নিজের দুঃখটাকে প্রাধান্য দিবে সেটা কিন্তু ভালবাসা না। স্বার্থপরতা। তুমি একবারও আমার কথা ভাবলে না। তোমার জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি সেটা দেখলেনা। কেন পারতেনা আমার সাথে তোমার সব দুঃখ ভাগ করে নিতে। আমি কি পারতাম না তোমার কষ্ট একটু কমাতে। কিন্তু আফসোস তুমি তো আমাকে সেটার যোগ্যই মনে করনি। আমি সত্যিই ব্যর্থ তোমার মনে জায়গা করে নিতে।“ বলেই সে চলে যাচ্ছিলো। আমি তার হাত টেনে ধরি। সে আমার দিকে ঘুরে তাকায়। আমি হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে তার সামনে বসে পড়ি। আমি হাত জোর করে তার সামনে ধরে বললাম “আমাকে মাফ করে দাও জারিফ। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি তোমাকে বুঝতে চাইনি। আমি তোমার ভালবাসাকে অসম্মান করেছি। তোমার চাওয়া পাওয়া সব কিছুকে ছোট করেছি। সব কিছুর উপরে নিজের আবেগ অনুভুতিকে প্রাধান্য দিয়েছি।“ সে আমাকে টেনে তুলে খুব শান্ত ভাবে বলল “বুঝতে পেরেছ এটাই আমার জন্য অনেক।” বলেই সে চলে যেতে নিলে আমি এবার তাকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকি। তারপর আমার মুখ তুলে তার দিকে একবার তাকিয়ে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেই। কিছুক্ষন পর ঠোঁট সরিয়ে নেই। আমার কাজে সে অবাক হয়ে যায়। আমি লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছিনা। তার থুতনিতে নিজের কপাল ঠেকিয়ে নিচের দিকে চেয়ে আছি। সে আমার মুখটা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসে। তারপর আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।

ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারিয়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আছড়াচ্ছে। সদ্য গোসল করে বেরিয়েছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। সে একটু হেসে বলল “ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। আমি নিচে যাচ্ছি।” “সব কথা শুনব আগে একটু আদর কর।” সে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। আমি তাকে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। সে আলতো করে আমার গালে চুমু দিলো। তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম “যাও আসছি।” বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।

সকাল থেকেই শরীরটা খারাপ লাগছিলো। সারাদিন ঘরেই শুয়ে ছিলাম। দুপুরে খাবার জন্য নিচে গেলাম। মার সাথে টেবিলে খাবার রেডি করছিলাম। হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠলো। আমি টেবিলটা ধরে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না।

চোখ খুলে দেখি সবাই আমার সামনে দাড়িয়ে আছে আর ডাক্তার আমাকে দেখছে। আমার মাথায় হাত দিয়ে ডাক্তার বললেন “এখন কেমন লাগছে?” “ভালো লাগছে।” বলেই আমি উঠতে গেলাম। কিন্তু উনি বললেন “তোমার এখন রেস্ট দরকার।” সবাই ডাক্তার এর দিকে তাকাল। বাবা জিজ্ঞেস করলেন “কেন? ওর কি হয়েছে?” ডাক্তার হেসে বললেন “আপনি দাদা হতে যাচ্ছেন। ও প্রেগন্যান্ট।” কথাটা শুনেই সবাই খুব খুশি হলেন। মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। বাবা মা দুজনেরি চোখে পানি। বাবা বললেন “আমি আজ সব থেকে খুশি হয়েছি। তুমি আমাকে আমার জিবনের সব চেয়ে বড় খুশি এনে দিয়েছ মা।” এই সব কিছু জারিফ পিছনে দাড়িয়ে দেখছিল। মা ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে বললেন “ওখানে কেন দাড়িয়ে আছিস? ভেতরে আয়।” মার কথা শুনে সে আসতে আসতে ভেতরে এলো। কিছুক্ষন পর সবাই বের হয়ে গেলেন। জারিফ আমার পাশে বসে আমাকে দেখছে। কিছুক্ষন পর আমাকে তার সাথে জড়িয়ে নিলো। আমি বুঝতে পারছি সে কাঁদছে। হয়ত মানুষ সব থেকে কষ্ট আর আনন্দের দিনে নির্বাক হয়ে যায়। তাই আজ সে কোন কথা বলছেনা। নিরবে চোখের পানি ফেলে এই মুহূর্ত টা অনুভব করতে চাইছে। এটা তার জিবনের সব থেকে সুখের মুহূর্ত। আমি তাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি। কিন্তু আজ আমি তাকে বাধা দিচ্ছিনা। তার জিবনের সমস্ত সুখ নিজের মতো করে অনুভব করতে দিচ্ছি।
(আপনাদের সবার প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আপনারা আমার গল্পটি ভালবেসেছেন। সবাইকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের জন্য নতুন গল্প নিয়ে আসবো)

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১৪

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১৪

হঠাৎ করেই জারিফ আজ ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার কাজ নাকি এখনো বাকি আছে। আমি তাকে বারবার জিজ্ঞেস করলেও সে কোন উত্তর দেয় না। কিন্তু আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারছি তার চেহারায় চিন্তার ছাপ। কারন টা সে কিছুতেই আমাকে বলছেনা।আমরা পৌঁছে গেলাম। বাসায় ঢুকতেই মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ধরে বললেন “সব ঠিক হয়ে যাবে।” তার কথার মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি তার পিছনে দাড়িয়ে থাকা সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম একবার করে। সবার চেহারা অনেক মলিন তা ভালভাবে বুঝতে পারছি। আমি জারিফের দিকে তাকাতেই সে বলল “ফারিয়া আমাদের হসপিটাল যেতে হবে এখনি।” কথাটা শুনেই বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো। “হসপিটাল কেন?” সে আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে বলল “আগে চল। নাহলে দেরি হয়ে যাবে।” তার কথা শুনে এবার আমার আরও ভয় করতে লাগলো। আমরা দেরি না করে গাড়িতে উঠে বসলাম। কিছুক্ষন পর হসপিটাল পৌঁছে গেলাম। গিয়েই দেখি সেখানে ফুপা ফুপু সাইফ ভাইয়া সবাই দাড়িয়ে আছে। চার পাশে চোখ বুলিয়ে দেখি বেঞ্চের এক কোনায় আব্বু চোখ বন্ধ করে বসে আছে। আব্বুকে দেখে আমার বুকের ভিতরে আবার মোচড় দিয়ে উঠলো। আমি দৌড়ে গিয়ে আব্বুর পায়ের কাছে বসতেই আব্বু চোখ খুলে আমাকে দেখলেন। তারপর আমাকে দেখেই ধরে কাঁদতে লাগলেন। “কি হয়েছে আব্বু?” আমি খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম। কাঁদতে কাঁদতে বলল “তোর মা…।” আব্বুর কথাটা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে ডাক্তার বের হয়ে বললেন “সরি। আমরা ওনাকে বাচাতে পারিনি।” কথাটা শুনেই সবাই কাদতে শুরু করে দিলো। চারিদকে চোখ বুলিয়ে দেখছি কি হচ্ছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। বড় বড় চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছি। আব্বু কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আমি দাড়িয়ে সব কিছু দেখছি। জারিফ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আমি তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। একটা রুমে গিয়ে দেখি সাদা কাপড়ে ঢাকা কেউ একজন শুয়ে আছে। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে তার মুখের কাপড় উঠিয়ে দেখি আম্মু। আমি সেন্স হারিয়ে ফেলি।

ফারিয়ার আম্মু স্ট্রোক করে মারা গিয়েছে অনেকদিন হয়ে গেলো। কিন্তু ফারিয়া এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। ঠিক মতো কারও সাথে কথা বলেনা।একা একা থাকে। ঠিক মতো ভার্সিটিতেও যায়না। বিষয়টা হয়ত সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। খুব কষ্ট পেয়েছে।অফিস থেকে ফিরে দেখি সে অন্ধকার ঘরে মেঝেতে বসে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে বসে বললাম “মন খারাপ?” আমার কথা শুনে সে চমকে উঠলো। হয়ত অন্য মনস্ক হয়ে ছিল। কিছু না বলে শুধু মাথা নেড়ে না বলল। বলেই উঠে যেতে লাগলো। আমি ওর হাত ধরে উঠে ওর সামনে দাঁড়ালাম। ওর একটু কাছে গিয়ে বললাম “কি হয়েছে আমাকে বল?” “কিছু হয়নি।” আমার উপরে বিরক্ত হয়ে কিছুটা চেচিয়ে কথাটা বলল। আমিও তার হাতটা ছেড়ে দিলাম। তাকে আর বিরক্ত করতে চাইনা। সে চলে গেলো। আমি একটুখন দাড়িয়ে থেকে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।

স্নিগ্ধ সকালের আলোর সাথে ঠাণ্ডা হাওয়া। বেশ ভালো লাগছে। দূর আকাশে সূর্য উঠছে লালা আভা নিয়ে। আমি নিশ্চুপ দাড়িয়ে দেখছি। কিন্তু এসবের কিছুই আমার মন ছুঁতে পারছেনা। নিজেকে কেমন অসহায় লাগছে। এমন সময় জারিফ হাপাতে হাপাতে কোথা থেকে আসলো। আমি শব্দ পেয়ে তার দিকে ফিরে তাকালাম। তাকাতেই দেখলাম সে অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বুঝতে না পেরে তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম। সে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলল “এতো সকালে একা একা ছাদে কি করছ? কাউকে কিছু না বলে এখানে এসেছ কেন?” “কিছুনা” বলেই মাথাটা নিচু করে নিলাম। সে আমার আর একটু কাছে এসে দাড়িয়ে গেলো। তারপর আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম। সে আমার হাত ধরে আমাকে তার সামনে এনে দাড় করাল। খুব শক্ত করে হাত ধরার কারনে আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছিলাম। কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালাম। কিন্তু তার চোখে তাকিয়েই থমকে গেলাম। রাগ নেই। আছে কষ্ট আর এক রাশ অভিমান। “তুমি কি নিজেকে মৃত ভাবছ। তোমার আচরণ তাই বলছে। প্রতিটা মানুষের জীবনে কষ্ট থাকে। কেউ প্রকাশ করতে পারেনা আর কেউ করে। কিন্তু সব কিছুর পরেও বাকি মানুষ দের কথা ভাবতে হয়।এটা একজন জীবিত মানুষের দায়িত্তের মধ্যে পড়ে। তার আশে পাশের মানুষের উপরে কোন আচরনের কি প্রভাব পড়বে তা ভাবতে হয়। কিন্তু তুমি তো এসবের বাইরে। তোমার মাঝে কোন অনুভুতি নেই। থাকলেও সেটা প্রকাশ করার ভাষা তুমি জাননা। তুমি কারও কথা ভাবনা। কারও কষ্ট তোমাকে ছুঁতে পারেনা। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এতো দিনেও আমি তোমার মনে এতো টুকু জায়গা করে নিতে পারিনি যাতে আমার কষ্ট তুমি অনুভব করতে পার। আমি ব্যর্থ।” কথা শেষ করেই জারিফ আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে গেলো। কথা গুলা সে খুব স্বাভাবিক ভাবে বললেও আমার মনে দাগ কেটে গেলো। আমি তার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছি। দু চোখ বেয়ে পানি আপন মনে গড়িয়ে পড়ছে। আমি নিচে বসে পড়লাম। সত্যিই তো আমি জারিফের কথা ভাবিই নি। ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট পেতে দেখলে কত কষ্ট হয় তা যেন জারিফের শেষের কয়েকটা কথা ভালো করে বুঝিয়ে দিলো। কিভাবে সহ্য করেছে জারিফ। আমি তো পারছিনা। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না।চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।

জারিফ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। আমি তার সামনে দাড়িয়ে আছি। সে একবারও আমার দিকে তাকালনা। রেডি হয়ে নিচে চলে গেলো। আমিও তার পিছু পিছু নিচে গেলাম। কিন্তু সে নিচে গিয়ে বলল “আম্মু আমার ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। আমি অফিসে যাচ্ছি।” “খেয়ে যা বাবা।” “না আম্মু দেরি হয়ে যাবে।” বলেই বেরিয়ে গেলো। আমি তার পিছনে দাড়িয়ে থাকলাম। এক বার আমার দিকে তাকালনা। মা আমার দিকে তাকিয়ে দেখল। আমি তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আমার চোখের পানি বাধ মানলনা। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। মা আমাকে সামলিয়ে নিয়ে বললেন “জারিফের সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি?” আমি মাথা নেড়ে না বললাম। “তাহলে?” “অভিমান করেছে।” বলতেই মা হেসে ফেললেন। আমিও হাসলাম। আমার হাসি দেখে উনি বললেন “এভাবে সব সময় হাসবে। মন খারাপ করে থাকলে দেখতে ভালো লাগেনা।” আমি মাথা নেড়ে ওনার কথায় সম্মতি দিলাম। উনি আবার মাথায় হাত দিয়ে বললেন “তাহলে এখন বরের অভিমান ভাঙ্গার মিশন শুরু কর।” আমি ওনার কথা বুঝতে পেরে একটু হেসে রান্না ঘরে চলে গেলাম। জারিফের পছন্দের খাবার রান্না করে আমি অফিসে নিয়ে যাব। তাই তাড়াতাড়ি করে রান্না করতে শুরু করলাম। মা এসে একবার দেখে গেলো। সব কিছু জারিফের পছন্দ মতো আমাকে বলে দিয়ে গেলো। আমি খুশি মনে রান্না করছি আর ভাবছি জারিফ কি এগুলো খাবে। একটু ভেবে নিজে নিজেই বলে উঠলাম “খাবেনা মানে খেতেই হবে।আমিও দেখি কিভাবে না খেয়ে থাকে। আমার অনুভুতি আছে আর সেটা প্রকাশ ও করতে পারি।”
চলবে……

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১৩

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১৩
মুখে কারও গরম নিশ্বাস পড়তেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখি জারিফের উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ভাল করে খেয়াল করলাম সে ফর্মাল ড্রেসেই শুয়ে আছে।তার মানে মাঝ রাতে এসেছে। খুব টায়ার্ড ছিল তাই চেঞ্জ করেনি। আমি তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। এমন সময় সে চোখ বন্ধ করেই বলল “আমাকে দেখে তোমার পেট ভরে যাবে কিন্তু আমার ভীষণ খুদা পেয়েছে। রাতে কিছুই খাইনি।” তার কথা শুনে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম সাথে কষ্টও। কষ্টের পরিমানটাই বেশি ছিল তাই বলে উঠলাম “আমাকে ডাকেননি কেন?” সে চট করে আমাকে নিচে দিয়ে তার মাথা উপরে তুলে আমার মুখের কাছে এসে বললেন “এমন মায়াবি চেহারা নিয়ে ঘুমালে কি ডাকতে ইচ্ছা করে। বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে ইচ্ছা করে। তখন এই চেহারা দেখেই মন পেট সব ভরে গেছিলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতটা খুদা পেয়ছে।” আমি একটু হেসে তাকে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম। সেখান থেকে বের হয়ে খাবার রেডি করলাম। কিন্তু উনি আবার ঘুমিয়ে গেছেন। আমি ওনার কানের কাছে গিয়ে বললাম “আমি খাবার রেডি করেছি। খাবেন না।উঠুন।” আমার কথা শুনে উনি উঠে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলেন। খেতে খেতে বললেন “আজ অফিসে কাজ নেই। খাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নাও। আমরা বেড়াতে যাব।” “কথায় যাব?” “এরকম সব কথার পিছনে প্রশ্ন করাটা কি তোমার স্বভাব?” “সেটা তো আপনিও করেন।” আমার কথা শুনে সে আর কিছু বললনা। খাওয়া শেষ করে রেডি হতে চলে গেলো।আমিও কিছু না বলে রেডি হচ্ছিলাম। কিন্তু ব্লাউজের ফিতা বাধতে পারছিলাম না। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজে নিজে দেখে বাধার চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় জারিফ এসে আমার পিঠে হাত দেয়। তার শীতল হাতের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠি। সে খুব যত্ন করে আমার পিছনে ফিতাটা লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজের ঠোঁট আমার পিঠে ছুয়ে দেয়। আমি আরও কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেই। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমার কানের কাছে এসে বলে “খুব সুন্দর লাগছে জান।ভাবছি আজ আর বাইরে যাবনা।” বলেই একটু হেসে দিলো। তার কথা শুনে আমি তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করলাম। উনি আরও জোরে আমাকে চেপে ধরল। আমিও প্রান পনে নিজেকে ছাড়ার চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কিন্তু ওনার শক্তির সাথে পেরে উঠছি না। ব্যর্থ হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। উনি এবার আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন “পালিয়ে যেতে চাও আমার কাছ থেকে। পারবেনা।” বলেই আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।

সারা রাস্তায় বরফ পড়ছে। প্রকৃতি যেন আমাদের সাদরে আমন্ত্রন করছে। ট্যাক্সির জানালা দিয়ে আমি হাত বাড়িয়ে সেই বরফ ধরছি। জারিফ আমাকে দেখছে। এক জায়গায় এসে ট্যাক্সি থেমে গেলো। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। নেমেই আমি ঠাণ্ডায় জমে গেলাম। শিরশির করে যাচ্ছে সারা শরীর। জারিফ বুঝতে পেরে আমাকে তার সাথে জড়িয়ে নিলো। তার উষ্ণ স্পর্শে আমি একটু স্বস্তি পেলাম। আমরা হেটে সামনে গেলাম। রাস্তার পাশে একটা রেস্টুরেন্টে খাবার খেলাম। কিন্তু আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়ায় আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। হোটেলে ফিরতেই জারিফ আমাকে বলল “তুমি রুমে যাও আমি একটু অফিস থেকে আসছি। বেশিক্ষণ থাকবনা। দেখা করেই চলে আসব।” বলেই সে চলে গেলো আমি রুমে চলে আসলাম।

অফিস থেকে ফিরে আমি দরজার কাছে দাড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ যাবত। কিন্তু আজও সে দরজা খুললোনা আমি অপেক্ষা করে কিছুক্ষন পর নিজেই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি ফারিয়া বিছানায় নেই। এদিক ওদিক চোখ ফেরাতেই দেখলাম সে নিচে পড়ে আছে। আমি দৌড়ে তার কাছে গেলাম। তার মাথাটা আমার কোলে তুলে নিতেই চমকে গেলাম। জরে গা পুড়ে যাচ্ছে। একি! বাইরে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। ঠাণ্ডা লেগে জর এসে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি করে ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলাম। নিজের হাত দিয়ে তার হাত ঘষতে লাগলাম। পায়ে ঘষতে লাগলাম কিন্তু কোন কাজ হলনা। তাকে ভালো করে ঢেকে দিলাম। তারপর তার মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলাম। কিন্তু কোন ভাবেই না তার জর কমছে না জ্ঞ্যান ফিরছে। আমি বুজতে পারছিনা কি করবো। মাথায় হাত দিয়ে ভাবছি এখন কি করবো। কোন বুদ্ধি না পেয়ে আমার পরিচিত এক ডাক্তার কে ফোন দিলাম। সে বলল এই সময়ে তাকে উষ্ণ রাখা খুব দরকার। এই জরে যদি তার শরীরের তাপ মাত্রা স্বাভাবিক না হয় তাহলে খুব বিপদ হয়ে যাবে।আমি একটু ভেবে নিজের শার্ট টা খুলে শুয়ে পড়লাম। তাকে নিজের শরীরের সাথে লেপটে নিয়ে শুয়ে আছি। ভাবতেও পারিনি আজ এমন কিছু হয়ে যাবে। আমার খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু ফারিয়ার যদি জ্ঞ্যান না ফেরে তাহলে ওকে হসপিটালে নিতে হবে। আমি ফারিয়াকে জড়িয়ে নিয়ে ভাবছি। অনেক টা সময় পার হয়ে গেছে। ফারিয়ার জর কমে গেলেও এখনো জ্ঞ্যান ফেরেনি। আমি তাকে জড়িয়েই আছি। কিছুক্ষন পর ফারিয়া নড়ে চড়ে উঠলো। আমি আমার হাতের বাধন একটু আলগা করে দিলাম জাতে সে ভালভাবে নড়া চড়া করতে পারে। সে খুব আলতো করে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল। তার জ্ঞ্যান ফেরা দেখে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। তাকে ছেড়ে উঠে গেলাম খাবার বানাতে। এই মুহূর্তে তার কিছু খাওয়া দরকার। তারপর ঔষধ খেতে হবে। আমার উঠে যাওয়া দেখে সেও উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু দুর্বলতার কারনে উঠতে পারলনা। তারপর মিন মিনে সরে আমাকে জিজ্ঞেস করলো ”কোথায় যাচ্ছেন?” আমি কোন কথা না বলে নিজের কাজ করতে লাগলাম। সে পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “আমার না মাথা ঘুরাচ্ছে।” এবার আমি তার হাত ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম। নিয়ে বললাম “গায়ে অনেক জর। মাথা তো ঘুরবেই। উঠে আসলে কেন?” একটু জোরেই কথাটা বলে ফেলেছিলাম। সে ভয়ে কেঁপে উঠে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি “সরি জান। ভয় পেয়েছ।” সে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে মাথা নাড়ায়। “তোমাকে বকিনি। একটু টেনশনে ছিলাম তো।” সে আমার কথা বুঝতে পেরে আমাকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি তার জন্য খাবার রেডি করে নিয়ে তাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলাম। তারপর তার মুখে খাবার তুলে তাকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ করে তাকে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। সে ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জারিফ চেয়ারে বসে বাইরে দেখছে। মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। তবুও কষ্ট করে উঠলাম। তার পাশে দাড়াতেই সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলল “এখন কেমন আছ?” আমি একটু ভ্রু কুচকে তাকালাম। রাতের কথা আমার কিছুই মনে নেই। “কি হয়েছিল?” জিজ্ঞেস করতেই সে আমাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে নিয়ে বলল “ম্যাডাম আপনার কাল রাতে জরে কোন সেন্স ছিলোনা।” আমি মিন মিন করে বললাম “আমি তো কিছুই বলতে পারছিনা।” “তুমি যা করেছো।“ আমার দিকে তাকিয়েই বলল। আমি তার কথায় ভাবনায় পড়ে গেলাম। আমি কি এমন করেছি। একটু ভেবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম “কি করেছি?” সে আমার কথা শুনে একটু মুচকি হাসল। তারপর বলল “থাক সেসব না বলি।” আমি তার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেলাম।
চলবে……

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১২

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১২

বাবা সকালে জারিফ কে ডেকে বললেন “তোমাকে অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে। কিছুদিনের জন্য লন্ডন যেতে হবে। আমি ভাবছি ফারিয়ারও এখন ক্লাস নেই। ওকেও সাথে নিয়ে যাও।” বাবার কথা শুনে জারিফ কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর বাবা আবার বলল “তোমরা গোছ গাছ করে নাও। আমি টিকেটের ব্যাবস্থা করছি।” আমি বাবার কথা মতো ঘরে এসে গুছিয়ে নিতে লাগলাম। জারিফ এসে আমার সামনে বসে একটু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “হানিমুনটা তাহলে সেরেই আসি।” তার কথায় আমি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালাম। হানিমুন শব্দটা বুকের ভিতরে কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি করলো। অদ্ভুত সেই অনুভুতি। আমার ভাবনার মাঝেই জারিফ আমাকে এক টানে তার কাছে নিয়ে আসলো। তারপর আমার কপালের সাথে তার কপাল ঠেকিয়ে বলল “ভাবছি হানিমুন থেকে সবার জন্য এবার বড় উপহার আনবো।” “কি উপহার?” আমি তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করি। সে এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার পেটে হাত দিয়ে বলল “আমাদের ভালবাসার অস্তিত্ব।”আমি তার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম। সে আমাকে চোখ টিপ দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।

অবশেষে আমরা রওনা হলাম নতুন এক শহরের উদ্দেশ্যে যেখানে আমাদের ভালবাসার সাক্ষি হয়ে থাকবে সেই শহরের সব কিছু। আমরা পৌঁছে সোজা গাড়ি নিয়ে হোটেলে গেলাম। সেখানে পোঁছাতে রাত হয়ে গেলো। ভীষণ টায়ার্ড। আমি সব ঠিক করেই সাওয়ার নিতে চলে গেলাম। সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। জারিফ বিছানায় আধ শোয়া হয়ে ফোন টিপছে।

আমি সামনে তাকাতেই ফারিয়ার দিকে চোখ গেলো। ভেজা চুল। টপ টপ করে পানি পড়ছে।হাল্কা আকাশি রঙের একটা জামা পরেছে। আমাকে তার সব কিছু খুব ভালো ভাবে আকর্ষণ করলো। আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না।

আমি সামনে আয়নায় দেখলাম জারিফ আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। আমার কাছে এসে আমার পিঠ থেকে চুল গুলো সরিয়ে তার ঠোঁট ছোঁয়াল। আমি তার উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠি। এক হাত আমার পেটে চেপে ধরে আরেক হাত আমার পিঠে স্লাইড করছে। তার চোখ আয়নায় আমার দিকে। আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম। সে এবার আমার পিঠে তার বুক ঠেকিয়ে গলায় নাক ঘোষতে লাগলো আর নেশা ভরা কণ্ঠে বলল “তোমার শরীরের ঘ্রান আমাকে পাগল করে। আমি নিজেকে আটকাতে পারিনা।” বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি হঠাৎ এমন আচরনে চমকে উঠি।সে আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে আমার উপরে শুয়ে পড়ে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে।জারিফ বেশ রকমের বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে চোখ বন্ধ করে বলে ”দিলো রোমাঞ্চের বারটা বাজিয়ে।” বলেই আমার উপর থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আমি বসে একটু হাসলাম। রাতের খাবার দিতে এসেছে। সে খাবার টা রেখে আমার দিকে আসতে গেলেই আমি বলি “অনেক রোমাঞ্চ হয়েছে। এখন ফ্রেশ হতে জান।” আমার কথায় সে বেশ রাগ করে। রাগ করে ওয়াশ রুমে চলে যায়। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে সে আমার দিকে না তাকিয়েই আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো।বুঝলাম বেশ রাগ করেছে। চুল ঠিক করে বারান্দায় গেলো। বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে কেবল জালাতে যাবে তখনি আমি তার ঠোঁট থেকে সিগারেট নিয়ে নিচে ফেলে দেই।এবার আরও রাগ করে আমার দিকে তাকায়। “কেন সারাক্ষন এসব খান? এখন খাবার খাবেন।” সে আমার কথার কোন উত্তর না দিয়েই চলে যায় ভিতরে। বিশাল জানালার সামনে একটা চেয়ারে বসে সামনে টেবিলে পা তুলে ল্যাপটপে কাজ করছে। তার পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কি হল?” আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে একবার তাকাল।আমি একটু ভেবে দুই কাপ কফি বানিয়ে ওনার সামনে একটা কাপ ধরলাম। উনি কাপটার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো। আমি টেবিলের উপরে একটা কাপ রেখে আর একটা কাপ হাতে ধরে তার পায়ের উপরে বসে পড়লাম দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।উনি এবার রাগ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “কি সমস্যা?” “কফি?” আমি একটু হেসে বললাম। “তোমার সমস্যা কি?” এবার আমি তার কথায় একটু রেগে বললাম “সব কিছুতেই সমস্যা থাকতেই হবে? আমি এতো কষ্ট করে কফি বানালাম সেটার কোন মুল্য নেই আপনার কাছে?” বলেই উঠতে যাচ্ছিলাম। উনি আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে টেবিলে রেখে সেখান থেকে পা নামিয়ে নিলেন।আর আমি তার পা নামানোর কারনে একদম তার মুখের কাছে চলে এলাম। উনি আমার চুল টেনে ধরলেন। তারপর তার মুখটা আমার ঠোটের কাছে এনে বললেন “তোমার সব কিছুর মুল্য আছে আমার কাছে। কিন্তু আমার অনুভূতির মুল্য তোমার কাছে নেই।” বলেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার কথাটা আমার বুকের মাঝে একটা চাপা কষ্টের অনুভুতি তৈরি করলো। আমিও তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর তার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। ভিতরের সমস্ত আবেগ যেন এক মুহূর্তেই সমস্ত শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। সে আবেগের তারনায় আমি আজ তার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি। নিজেকে আটকাতে পারছিনা আর। আমি দুই হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম। খানিকক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে আমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলেন। আমিও আজ এই অদ্ভুত ভালবাসার অনুভূতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। বেশ কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আমার চুল ছাড়লেন না। আমার মুখ থেকে গলা পর্যন্ত তার দুই আঙ্গুলে স্লাইড করে আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি তার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে খুব জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলাম। উনি সামনে তাকিয়েই হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললেন “সারারাত এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকলে চলবে নাকি খাবারো খেতে হবে।” আমি তার কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে তার দিকে তাকালাম। সে সামনে তাকিয়েই কফিতে চুমুক দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। আমি কোন কথা না বলে আমার কফির কাপটা তুলে নিলাম।

আমি সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। অফিসের কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। প্রায় মাঝরাতে ফিরছি। ফারিয়া একা একা হোটেলে কি করছে কে জানে। আমি সারাদিন আজ বেশ ব্যাস্ত ছিলাম। তাকে ফোন করার সুযোগ ও পাইনি। ফোনটা হাতে তুলে নিয়েও কি মনে করে ফোন করলাম না। হোটেল এ এসে বেশ কয়েকবার দরজায় নক করেও খুলল না। আমি কান পেতে শুনতে চাইলাম ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসছে কিনা। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা।আবার নক করলাম। কোন আওয়াজ পেলাম না। অনেক রাত হয়েছে তাই হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই আমার কাছে আরেকটা চাবি ছিল সেটা দিয়ে খুলে ঢুকে দেখলাম সারা ঘর অন্ধকার। ফারিয়া ঘুমাচ্ছে। আমার ভীষণ টায়ার্ড লাগছিলো তাই একটু খানি বিছানায় গিয়ে বসলাম। সারা ঘর অন্ধকার কিন্তু সামনের জানালা খুলে রাখায় কোথা থেকে যেন হালকা একটা আলো এসে ফারিয়ার মুখে পড়েছে। সেই আলোয় তাকে ভীষণ মায়াবি লাগছে। আমি চোখ ফেরাতে পারছিনা। তার মুখের উপরে কিছু চুল পড়ে আছে। সেগুলা আমি আলতো করে সরিয়ে দিলাম। তার কপালে একটা চুমু দিয়ে কিছুক্ষন তার মায়াবি মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে একটু নড়ে উঠলো। আমি ঠিক হয়ে শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে আমকে জড়িয়ে ধরল ঘুমের মাঝেই। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। এক নিমেষেই সমস্ত ক্লান্তি চিন্তা সব কিছু যেন হারিয়ে গেলো। কি অদ্ভুত শক্তি ভালবাসার। আমিও তার সাথেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়লাম।
চলবে…।

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১১

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১১
আমি গাড়ির সামনের দরজা খুলতেই ঝুমা এসে বলল “ভাবি আমি সামনে বসি?” আমি কোন কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে তাকে বসতে বলে নিজে পিছনে গিয়ে বসলাম। গাড়ি চলছে আমি পিছনে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি বাইরে।জারিফ সামনে মিররে আমার দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। জারিফের চাহুনি তে আজ রাগ ছিল। যা আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু কেন? আমরা অবশেষে পৌঁছে গেলাম। সব কাজ শেষ করে জারিফ ঝুমাকে বলল “কিছু খাবি?” “আইস্ক্রিম খাবো” ঝুমা বলে উঠলো। আমরা গাড়িতে উঠে একটা আইস্ক্রিম পার্লারে গিয়ে নামলাম। জারিফ ওয়েটার কে ঝুমার পছন্দের আইস্ক্রিম দিতে বলল। ঝুমা আমাকে জিজ্ঞেস করলো “ভাবি তুমি কোন আইস্ক্রিম খাও?” আমি ঝুমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললাম “আমি আইস্ক্রিম খাইনা।” আমার কথা শুনে জারিফ আমার জন্য কফি দিতে বলল। আমি চুপ করে কফি খাচ্ছি আর ঝুমা কে দেখছি। সে খুব মজা করে আইস্ক্রিম খাচ্ছে।খাওয়া শেষ করে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। আমি পিছনে বসে সামনে জারিফ কে দেখছিলাম। কিন্তু সে আমার দিকে একবারও তাকালনা।

খাবার টেবিলে বসতে যাব তখনি ঝুমা এসে জারিফের পাশে বসে পড়লো। আমি দাড়িয়ে দেখলাম। কোন কথা না বলে রত্না খালার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। ঝুমা বলল “ভাইয়া তুমি আমাকে ছোট বেলায় খাইয়ে দিতেনা। এখন দাও।আমার হাত ব্যাথা করছে।” জারিফ একবার আমার দিকে তাকিয়ে ওর প্লেট টা সামনে নিয়ে ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।বুকের মাঝে এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। না পারছি বলতে না পারছি সহ্য করতে।খুব কষ্ট হচ্ছে। এসবের মাঝে জারিফের এমন আচরণটাও আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে ঘরে গেলাম। দরজায় দাড়িয়ে দেখছি জারিফ আর ঝুমা কি যেন গল্প করছে আর হাসছে। আমি একটু সময় দাড়িয়ে তাদের গল্প শুনলাম। সেই ছোটবেলার গল্প। তারা দুজন গল্পে এতোটাই ব্যস্ত যে আমার ঘরে আসার কথা কেউ জানেনা। আমি একটু শব্দ করতেই দুজনে আমার দিকে ঘুরে তাকায়। আমি কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। বাইরে বসে টিভি দেখছি। এমন সময় ঝুমা এলো। “ভাবি কি করছ?” আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে উত্তর দিলাম “কিছুনা।বস”। বলেই ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম জারিফ কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে। কিন্তু ছুটির দিন তো সে সাধারনত বাইরে যায়না। আমি উঠে তার কাছে দাড়াতেই আমার দিকে একবার তাকাল। “কোথাও যাচ্ছেন?” “কাজ আছে।” আমার দিকে না তাকিয়ে হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল। আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আমি পিছনে ঘুরে তার যাওয়া দেখলাম।
চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। হালকা একটু খানি আলো। সেই আলোয় আমার মুখটা দেখা যাচ্ছে। সাথে আমার চোখের পানিও। হ্যা আমি কাদছি। জারিফের এই অবহেলা আমার আর সহ্য হচ্ছেনা। আমি আর পারছিনা এই সব মেনে নিতে। আমি না বুঝে জারিফ কে যে কষ্ট দিয়েছি তার কিছুটা হলেও আজ পাচ্ছি। কিন্তু সেই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার বুকের ভিতরে অদ্ভুত রকমের এক ঝড় চলছে। সেই ঝড় এক মাত্র জারিফ থামাতে পারে। কিন্তু সে তো আমার সাথে কথাই বলছেনা। কিন্তু কেন?

“ফারিয়ার ক্লাস কবে থেকে শুরু?” বাবা খেতে খেতে কথাটা আমাকে বলল।“জানিনা বাবা। ফারিয়া বলতে পারবে।” আমি নিচে তাকিয়ে বললাম।“আমি সব কথা বলে দিয়েছি। আমার পরিচিত। ওখানে ফারিয়ার কোন সমস্যা হবেনা।আমি সব ব্যাবস্থা করে ফারিয়া কে বলতেই সে রাজি হয়ে গেলো।” বাবার কথা শুনে আমি খাবার হাতে নিয়ে ফারিয়ার দিকে তাকালাম। সে মাথা নিচে করে খাচ্ছে আর বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তার মানে এটা ফারিয়ার ডিসিশন ছিলোনা।কিন্তু আমি না বুঝেই মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছি। তার মনটা ভীষণ খারাপ। তার কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি কারন মুখে কষ্টের ছাপ টা স্পষ্ট। সে আমার দিকে একবারও তাকালনা। আমি ঘরে গিয়ে দেখি ফারিয়া বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আমি তার সামনে গিয়ে পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “মন খারাপ?” সে আমার কথায় একটু অবাক হল। আমি যে তার সামনে সেটা বিশ্বাস করতে পারছেনা মনে হয়। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি আর সে সামনে। মাথা নাড়িয়ে না বলল। “তাহলে এখানে দাড়িয়ে আছ যে?” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। সে কিছু না বলে চলে যেতে নিলে আমি তার হাত ধরে ফেলি। সে দাড়িয়ে যায়। আমি একটানে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসি। তারপর তার হাত ছেড়ে কোমর ধরে তাকে আমার বুকের সাথে আটকে নেই। সে খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে আমার বুকে। আমি তার কপালে আমার কপাল ঠেকিয়ে বলি “সরি জান। খুব কষ্ট পেয়েছ?” সে আর কিছু বলতে পারলনা। কেদে ফেলল। আমি তার মাথাটা আমার বুকে চেপে ধরি। সে পরম আবেশে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আজ আমাদের মাঝে বাধা সংকোচ লজ্জা কিছুই নেই। শুধু আছে ভালবাসা। আমি তাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে গেলাম। আজ সেও আমার ভালবাসার স্পর্শ পেতে চায়।

আমি আজ অনেক সকালে উঠেছি। সূর্য উঠা দেখব বলে। মাঝে মাঝে এমন সকালে সূর্য উঠতে দেখতে খুব ভালো লাগে। নিচে গিয়ে দেখি কেউ উঠেনি। আমি চা বানিয়ে নিয়ে উপরে গেলাম। বারান্দায় দাড়িয়ে ধোঁয়া উঠা গরম চায়ে চুমুক দিয়ে অপেক্ষা করছি সূর্যের জন্য। কিন্তু আজ খুব বেশি সময় নিচ্ছে সূর্যটা উঠতে। এমন সময় আমার পেটে কারও উষ্ণ হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি চমকে উঠলাম। “রিলাক্স জান।” আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে জারিফ বলল। “আমি ছাড়া তোমাকে এভাবে কে ধরবে বল।“ বলেই আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। তারপর কানে আসতে আসতে বলল “এতো সকালে এখানে কি করছ?” “সূর্য উঠা দেখব।” আমি একটু হেসে উত্তর দিলাম। “মানে?” আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে এসে বললেন। “মানে আবার কি? সূর্য উঠবে আর আমি সেটা দেখব।অপেক্ষা করছি।” উনি আমার কথা শুনে সামনের আকাশে তাকালেন। সূর্যটা সবে তার লাল আভা ছড়িয়েছে। আকাশে মেঘের মাঝে লাল সাদা মিলে অসাধারন এক রুপ নিয়েছে। উনি নিজের অজান্তেই বলে ফেললেন “অপূর্ব!” তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন “আমি আগে কখনো সূর্য উঠা এভাবে দেখিনি। সত্যি অনেক সুন্দর।” “জানেন আমি না মাঝে মাঝেই সূর্য উঠা দেখতাম। গ্রামের আকাশে সূর্যটা অন্য রকম লাগতো। সকাল সকাল মনটা ভীষণ ভালো হয়ে যেত।” “আর আমার শহরের সূর্য?” আমার দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন। “সেটার লালা আভা আমার জীবনে প্রেমের ছন্দ ছড়িয়ে দেয়।” আমি একটু হেসে বললাম। উনি আমার কাছে এসে তার দুই হাতে আমার দুই গাল ধরে পরম আদরে আমার ঠোঁটে চুমু দিলো। কিন্তু আমি আজ তাকে বাধা দিলাম না। তার ভালবাসার পরম ছোঁয়ায় আমিও আজ সায় দিলাম।

আজ ঝুমারা চলে যাবে। আমি রত্না খালার সাথে অনেক গল্প করলাম। তাদের এক্সজন্য কিছু উপহার এনেছি। খালা কে তার উপহার দিয়ে দিলাম। খালা খুব খুশি হয়েছে। কিন্তু ঝুমার বোধ হয় তেমন ভালো লাগেনি। মুখে কিছু না বললেও তার চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারছি। মুখটা ভার করে জারিফের সাথে কথা বলছে। সে যেতে চাচ্ছেনা। কিন্তু তার মায়ের কিছু কাজ থাকায় বাধ্য হচ্ছে যেতে। তার খুব মন খারাপ। আর আমার উপরে একটু বেশিই। আমার সাথে তেমন কোথাও বলছেনা। জারিফ তাদেরকে গাড়িতে করে ট্রেনে উঠিয়ে দিতে গেলো। কিন্তু ঝুমা খুব কাঁদছিল। আমি তার সামে গিয়ে বললাম “কাজ শেষ করে আবার চলে আসবে কেমন?” কিন্তু সে আমার কথার কোন উত্তর না দিয়েই জারিফ কে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। জারিফ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খুব সহজ ভাবে বিষয়টা মেনে নিলাম। কারন আমি জানি জারিফ আমাকে ভালবাসে।
চলবে…

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১০

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১০
মা তাদের দেখে খুব আগ্রহ নিয়ে উঠে গেলেন। “আরে রত্না যে! ভিতরে আয়।“ বলেই সেই বয়স্ক মহিলা কে জড়িয়ে ধরলেন। পাশে থাকা মেয়েটিকে দেখে বললেন “ঝুমা কেমন আছ মা?” বলেই তাকেও জড়িয়ে ধরলেন। আমি উঠে গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালাম। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো দুজন। তারপর মা বলল “আমার বোন হয়। গ্রাম থেকে এসেছে।আর এটা বোনের মেয়ে।” আমি সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। রত্না খালা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন “বাহ! কি সুন্দর বউ। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।” আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতেই সে আমার পাশ কাটিয়ে এক দৌড়ে গিয়ে জারিফ কে জড়িয়ে ধরল। ধরেই বলল “ভাইয়া কেমন আছ? তোমাকে কত মিস করেছি।” জারিফ কিছু বলতে যাবে তার আগে আমাকে দেখে নিলো ভালো করে। আমি বড় বড় চোখে চেয়ে আছি। তারপর কি মনে করে তাকে জড়িয়ে নিলো। তারপর বলল “কতদিন পর এলি। আমিও তোকে খুব মিস করেছি।” সবাই নিজেদের মতো কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। রত্না খালা বাবার সাথে কথা বলছে। কিন্তু আমার দৃষ্টি তাদের দুজনের দিকে। একে অপরকে পরম সুখে জড়িয়ে রেখেই কথা বলছে। ছাড়ার কোন নামই নেই। এক এক পা করে হেটে তাদের কাছে গেলাম। একটু জোরেই জারিফ কে বললাম “আপনার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।” আমি কথাটা শেষ না করতেই ঝুমা বলে উঠলো “এতদিন পর আমি আসলাম। আর তুমি অফিসে যাবে ভাইয়া?” তার কথা শুনে জারিফ খুব শান্ত ভাবে বলল “আচ্ছা ঠিক আছে। আজ আর কোথাও যাবনা।” “থ্যাংক ইউ ভাইয়া।” বলে আবার জড়িয়ে ধরল। আমি শুধু চেয়ে থাকলাম কিছু বললাম না।

সবাই সোফায় বসে গল্প করছে। বিকেলে চায়ের সাথে হালকা কিছু নাস্তা বানালাম। এখন আমি বাসায় থাকি তাই আমি নিজেই সব কাজ করি। পড়ালেখা নেই জন্য মাও আর তেমন কিছু বলেনা।চা বানিয়ে নিয়ে সবাইকে দিচ্ছিলাম। “বাহ! বউ মা যেমন সুন্দর। তেমন কাজও পারে। খুব লক্ষি মেয়ে।” রত্না খালা তার এক হাত আমার মুখে ধরে বললেন। আমি একটু হেসে ওনাকে চায়ের কাপ দিলাম। মাকেও চা দিয়ে ঝুমাকে খুজতে লাগলাম। আচমা খালা বলল “জারিফ বাবা আর ঝুমা মামনি ছাদে।” আমি ছাদের দিকে হাটা ধরলাম। আচমা খালা আমার পিছনে পিছনে আসছিল। তার হাতে ৩ টা চায়ের কাপ। হঠাৎ ই বললেন “মামনি একটু সাবধানে থাইকেন।” আমি তার কথার মানে বুঝতে না পেরে একটু ভ্রু কুচকে তাকাই। উনি আবার বললেন “মা টা ভালা কিন্তু মাইয়া টা ভালা না। ছোট থেইকাই জারিফ বাবার দিকে নজর। আমি তো ভাবছিলাম ওর লগেই জারিফ বাবার বিয়া হইব। কিন্তু আপনার লগে বিয়ে হইতেই আমি খুব খুশি হইছি।” বলেই সে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলো। আমি একটু ভেবে তার পিছু পিছু উঠতেই যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেল।জারিফের কাধে মাথা দিয়ে ঝুমা বসে আছে। আর সামনে ফোন দিয়ে সেলফি তুলছে। আমি গিয়ে তাদের পিছনে দাড়াতেই ঝুমা বলল “ভাবি সরে যাও। দিলে তো ছবিটা নষ্ট করে।” তার কথায় জারিফ পিছনে তাকিয়ে দেখল আমি রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চাহুনি দেখে জারিফ একটু সরে বসলো। আমি তাদের চা হাতে দিয়ে বললাম “ঝুমা তোমাকে নিচে ডাকছে।” ও চলে গেলো। আমিও রাগ করে চলে যেতে নিলে জারিফ আমার হাত ধরে ফেলে। আমার সামনে এসে বলে “বিকেলের এই রোমান্টিক ওয়েদারে আমার সাথে কি এক কাপ চা খাওয়া যায়?” আমি তার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললাম “কেন এতক্ষন মন ভরেনি বুঝি?” সে আমার কথায় একটু হকচকিয়ে গেলো। আমি আবারো দাঁত কেলিয়ে বললাম “কত সুন্দর ওয়েদার! সাথে ছোট বেলার খালাতো বোন…ওহ সরি!ছোট বেলার সাথি। একসাথে কাধে মাথা দিয়ে।আমার আর কি দরকার।” বলেই আমি নিচে চলে আসলাম। জারিফ বেশ বুঝতে পারছে আমার রাগ করার কারন। সেও আমার পিছে পিছে নিচে নেমে এলো। আমাকে দেখেই ঝুমা এগিয়ে এসে বলল “মিথ্যে কথা কেন বললে ভাবি? আমাকে তো কেউ ডাকেনি।” আমি তার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম “সন্ধ্যা হয়ে আসছে এই সময় এভাবে এলো চুলে ছাদে মেয়ে মানুষ থাকে? গ্রামে বড় হয়েছ এটাও জাননা।” আমার কথা শুনে খালা বললেন “ঠিকই তো বলেছে বউমা।” কিন্তু আমার কথাটা ঝুমার পছন্দ হলনা। একজন কিন্তু বেশ অবাক হল আমার কথা শুনে। জারিফ হা করে তাকিয়ে আছে। সে ভাবেইনি আমি এরকম কিছু বলব। আমি উপরে চলে গেলাম।

রাতে খাবার শেষ করে ঘরে যাব সেই সময় ঘর থেকে জারিফ আর ঝুমার হাসির শব্দ আসছে। আমি একটু রেগে ঘরে গিয়ে দেখি দুজন বারান্দায় বসে চন্দ্র বিলাস করছে। আমি একটু জোরে শব্দ করেই জানালাটা লাগালাম। সেই শব্দে দুজনি কেঁপে উঠলো। আমি কোন কথা না বলে ঘরটাকে গুছিয়ে ফেলছি। এমন সময় ঝুমা বলল “ভাবি তোমার কি ঘুম পেয়েছে। আমরা একটু গল্প করছি। অসুবিধা হবেনা তো?” আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম “না না অসুবিধা কেন হবে? পারলে তোমার ভাইয়া কে আজ রাতে তোমার ঘরেই নিয়ে যাও। অনেক গল্প করবে দুজন মিলে।” “ওয়াও খুব ভালো আইডিয়া।” বলেই ঝুমা উঠে দাঁড়ালো। জারিফ নিচে বসেই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। স্বপ্নেও বোধ হয় ভাবেনি আমি এমন কিছু বলতে পারি। সে এবার ঝুমার দিকে তাকিয়ে বলল “আমার ঘুম পেয়েছে। তুইও শুয়ে পড়। আমরা কাল গল্প করবো।” ঝুমা কিছু না বলে মন খারাপ করে চলে গেলো। আমি বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই জারিফ কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল “চাঁদটা খুব সুন্দর।” আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললাম “এতক্ষন খেয়াল করেন নি বুঝি?” “মানে?” সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। আমি খুব শান্ত ভাবে বললাম “এতক্ষন তো ছোট বেলার সাথি কে নিয়ে চন্দ্র বিলাস করছিলেন কিন্তু কি বলেন তো তার কথা ভেবে চাঁদটাকেই দেখতে ভুলে গেলেন।” সে কিছু না বলে উঠেই আমাকে টেনে তার সাথে জড়িয়ে নিলো। আমি একটু রাগ দেখাতেই সে বলল “জেলাস?” আমি কোন কথা না বলে তার কাছ থেকে ছুটে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। সেও এসে আমার সাথে শুয়ে পড়লো। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেই আমি বাধা দেই। একটু রাগ করে বলে “ঝুমার সাথে রাতে আড্ডা দেয়ার ব্যপারটা আমার ভাবা উচিৎ ছিল ।” কথাটা বলেই উলটা দিকে ঘুরে ঘুমালেন।

ভোর বেলা হালকা চোখ মেলতেই দেখি ফারিয়া আমার বুকে। আশ্চর্যের বিষয় হল আজ সে নিজে থেকেই আমাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ঝুমার কারনে আমাকে নিয়ে তার মধ্যে ইন্সিকিরিটি কাজ করছে। আর এটা তারই বহি প্রকাশ। এবার দেখি তুমি আমাকে তোমার কাছে আনতে আর কি কি করতে পার। আমি একটু হেসে তাকে আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে আবার ঘুমে গেলাম।

সকালে চোখ খুলতেই দেখলাম ফারিয়া নেই। তার মানে সে উঠে পড়েছে। আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে গেলাম।নিচে গিয়েই আচমা খালা বলল “বাবা আপনাকে ভাইজান ডাকে।” আমি বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম। “বাবা ডেকেছ?” “হ্যা আসো।” আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম। “ফারিয়াকে আজ ভর্তি করাবে। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। এই নাও ফর্ম। তোমার আজ অফিসে যাওয়ার দরকার নাই। আমি সামলে নিবো।“ আমি মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলাম। সব কিছু ঠিক করে ফেলল কিন্তু আমাকে কিছুই জানালনা।আমার সাথে এই বিষয়ে তার কথা বলা উচিৎ ছিল। আমাকে জানানো উচিৎ ছিল। যাক ডিসিশন যখন নিয়েই ফেলেছে তখন আর আমার কি করার। আমি টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম। মাথা নিচু করে খেয়েই যাচ্ছি। ফারিয়া রেডি হয়ে নামল। আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। সে আমার সামনে এসে বসে পড়লো। আমি আর তার দিকে তাকালাম না। ঝুমা এসে আমার পাশের চেয়ারে বসে আমাদের দুজন কে দেখে বলল “তোমরা কি কোথাও জাচ্ছ?” “তোর ভাবিকে ভর্তি করাতে যাচ্ছি।” আমি খেতে খেতে উত্তর দিলাম। “আমিও যাব।” সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম “রেডি হয়ে নে।” ফারিয়াও আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার চাহুনি দেখে বুঝতে পারছি সে খুব অবাক হল। কিন্তু আমার তার উপরে আজ ভীষণ অভিমান। তার জীবনে যে আমার কোন গুরুত্তই নাই।
চলবে…।

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৯

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৯
বারান্দায় মেঝেতে বসে পা লম্বা করে দিয়ে পড়ছিলাম। জারিফ আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। প্রচণ্ড রকমের নড়াচড়া করছে। তার কারনে আমি পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। একটু বিরক্ত হলাম। সেটা জারিফের চোখে পড়তেই সে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে যেতে যেতে বলল “আমি ঘরে যাচ্ছি। পড়া শেষ হলে আসিও।” কথাটা শেষ হতেই আমি তার হাত ধরে ফেলি। উনি খুব অবাক দৃষ্টিতে একবার হাতের দিকে তাকালেন তারপর আমার দিকে।ভাবতেও পারেন নি আমি এমন কিছু করবো। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম “বিরক্ত হয়েছিলাম ঠিকি। কিন্তু যেতে তো বলিনি। বসে থাকেন এখানে।” সে আর কিছু না ভেবে আমার পাশে বসে পড়ল। সে সামনে তাকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। আমি তার চোখের দিকে তাক করে তাকাতেই দেখলাম সামনের বাড়ির ছাদে একটা মেয়ে কে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আমি রাগ করে উঠে ঘরে গেলাম। জারিফ আমার পিছু পিছু এসে বলল “কি হল? পড়া শেষ?” আমি তার দিকে রাগ করে তাকিয়ে বললাম “আমি পড়ছিলাম তাই আমার পাশে বসতে বলেছিলাম। অন্য মেয়েকে দেখতে বলিনি।” সে একটু মুচকি হেসে বলল “আজ কাল ভালই খেয়াল রাখছ। ব্যাপার কি?” আমি আরও রেগে গেলাম। একটু চিৎকার কররেই বললাম “আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন তাতে আমার কি?” কথাটা বলতে দেরি হল কিন্তু জারিফের আমার কাছে আসতে দেরি হলনা। দ্রুত আমার কাছে এসে দুই হাতে গাল চেপে ধরে আমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। বেশ কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে আবার সেই আগের জায়গায় দাড়িয়ে আমার দিকে দেখছে।

আমার কাজে সে এতোটা অবাক হল যে লজ্জা পেলো না অনুভব করলো তাকে দেখে সেটাই বুঝতে পারছিনা। হা করে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে চোখ নামাতে ভুলে গেছে। আমি একটু শুকনা কেশে বললাম “যা ইচ্ছা তাই করতে বললে। করে ফেললাম।” তবুও সে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এই বার আমার একটু ভালই অস্বস্তি হচ্ছে। এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? আমি ভাল করে বুঝার জন্য আবার তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তার মুখে ফু দিলাম। এবার সে একটু বিরক্ত হয়ে সোজা রুমের বাইরে চলে গেলো। কি হল বুঝলাম না। বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো নাকি? যাই হোক ফিলিংস টা কিন্তু জোস ছিল।

একটু পর পর গাড়ির হর্ন বাজছে। জারিফ গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে। আমি রেডি হয়ে গাড়ির কাছে দাড়িয়ে গেলাম। একটু ভেবে পিছনে বসে পরলাম।তারপর জানালা দিয়ে বাইরে দেখলাম। সে মিররে আমাকে একটু দেখে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। আমি হাফ ছেড়ে একটু চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কিছুক্ষন পর চোখ খুলে চারপাশে দেখেই আমার মাথা ঘুরায়। এটা তো আমার কলেজের রাস্তা না। তাহলে? কোথায় যাচ্ছি? “কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?” আমি চিৎকার করে বললাম। জারিফ মিররে আমার দিকে একবার তাকাল। কোন কথা বললোনা। কিন্তু তার সেই চোখ দেখেই আমি বুঝতে পারলাম এটা আমার পিছনে বসার শাস্তি। আর কিছুই বললাম না। কারন কিছু বলেও এই মুহূর্তে কোন লাভ নেই। কিছুক্ষন পর গাড়ি দাড়াতেই আমি চারিদিকে দেখলাম। সামনে একটা বড় বিল্ডিং এর উপরে লেখা আছে জে আর গ্রুপ অফ ইন্ডাসট্রিজ। ভালো করে বুঝতে পারলাম এটা জারিফের অফিস। জারিফ গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো। আমি নেমে তার দিকে তাকালাম। কিন্তু উনি আমার দিকে না তাকিয়েই সামনে হাটতে লাগলো। আমিও তার সাথে হেটে গেলাম। লিফটে উঠে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। লিফট এসে ৮ তলায় দাঁড়ালো। বের হয়ে চারিদকে দেখছি আর জারিফের পিছনে পিছনে হাঁটছি। কিছুক্ষন হাটার পর জারিফের রুমে এসে পৌছালাম। রুমটা অনেক গোছানো। ঢুকেই মনটা ভরে গেলো। আমি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছি। তাতেই জারিফ আমার হাত টেনে তার চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে টেবিলে উঠে বসলো। কোন কথা বলছেনা শুধু তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর আমি বিরক্ত হয়ে বললাম “কিছু বলছেন না কেন? আমাকে এখানে কেন এনেছেন?” উনি আমার কোন উত্তর দিলনা।গেট এ কেউ একজন নক করলো সে টেবিল থেকে নেমে দাড়িয়ে বলল “কামিং!” একজন মেয়ে ভিতরে ঢুকে বলল “স্যার আপনার মিটিং আছে। ক্লায়েন্ট অপেক্ষা করছে।” জারিফ খুব শান্ত গলায় বলল “আসছি। আর হ্যা ম্যাডামের জন্য আইস্ক্রিম আনতে বল।” তার কথা শেষ হতেই মেয়েটা চলে গেলো। উনি আমার দিকে ঘুরে চোখ লাল করে বললেন “আমি না আসা পর্যন্ত এক পাও নড়বে না।” আমি তার ভয়ে কিছু না বলে মাথা নাড়লাম শুধু।আমি ঘুরে ঘুরে চারিদিকে দেখছিলাম। এমন সময় সেই মেয়েটি আইস্ক্রিম নিয়ে ঘরে ঢুকল। ঢুকেই আমার দিকে একটু হেসে বলল “ম্যাম আপনার আইস্ক্রিম। আর কিছু লাগলে বলবেন। স্যার আপনার খেয়াল রাখতে বলেছেন আর আপনার সাথে থাকতে বলেছেন।” “আপনার নামটা যেন কি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। “রিনি।” “আচ্ছা রিনি আপনি আমাকে আগে থেকে চেনেন নাকি আপনার স্যার বলার পর থেকে? ” সে একটু হেসে বলল “কি জে বলেন ম্যাডাম। আমাদের পুরো অফিসে আপনাকে সবাই চিনে। আর জানেন স্যার যে কত মেয়ের কাছ থেকে প্রপোজাল পেয়েছিল তা হিসেব করার মতো না। কিন্তু উনি যে আপনাকে বিয়ে করবে তা আসলে সবাই অবাক হয়েছে।” কথাটা শেষ করতেই জারিফ রুমে ঢুকল। জারিফ কে দেখে রিনি বের হয়ে চলে গেলো। রিনি বের হতেই উনি দরজাটা লক করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার চাহুনি দেখে আমি একটু ঢোক গিললাম। আমি ভালো করেই বুঝতে পারলাম তার চাহুনি কি বলছে। আমার হাতের আইস্ক্রিম টা গলে পড়ে যাচ্ছিল সেদিকে আমার খেয়াল নেই। উনি বললেন আইস্ক্রিম টা শেষ কর। আমি এবার একটু সস্তি পেলাম। উলটা দিকে ঘুরে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে খেতে লাগলাম শেষ করে বাকি অংশ টা বিনে ফেলে দিলাম। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে উনি একটু সময় ও আমার থেকে চোখ ফেরান নি। আমি আবার তার দিকে তাকালাম। উনি একটু একটু করে এগিয়ে এলেন। তারপর আমার চুলের মুঠি ধরে আমার ঠোঁট আয়ত্তে নিয়ে নিলেন।অনেকটা সময় পর ছেড়ে দিলেন। আমি হাপাচ্ছি। কিন্তু আমাকে ছাড়লেন না। আমার কোমরে হাত দিয়ে আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলেন। আমি কিছুই বলতে পারছিনা। খুব অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। “তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমার থেকে দূরে গিয়ে আমার অত্যাচার থেকে বেঁচে যাবে। তাহলে সেটা তোমার ভুল ধারনা। দূরে গেলে আরও অত্যাচার বাড়বে।” বলেই আমাকে ছেড়ে দিলো।আমি তার কাজে হা হয়ে গেলাম। কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুধু মাথা নাড়ালাম। আমাকে হাত ধরে তার চেয়ারে বসে দিলো। তারপর একটা চেয়ার নিয়ে সামনে বসে পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।আমার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছেনা। আমার চেয়ার টা তার কাছে এনে বলল “আজ ২৪ ঘণ্টা তুমি আমার সামনে থাকবে।এটাই তোমার শাস্তি।” আমি কোন কথা না বলে মাথা নাড়ালাম।

আজ থেকে নিজের মাথা কে রেস্ট নিতে দিবো। আর কখনও বেশি বুঝতে যাবনা। কেন যে পন্ডিতি করে পিছনে বসতে গেলাম। কি দরকার ছিল। সবই তো সহ্য করছি আর একটু করলে কি হতো। নিজের উপরে ভীষণ রাগ হচ্ছে। খেতে বসে বিড়বিড় করে বকছি নিজেকে। ওনার খাওয়া শেষ। আমার জন্যই বসে আছেন। আমার খাওয়া শেষ হলে আমাকে নিয়ে তারপর ঘরে যাবে। আমার ধিরে ধিরে খাওয়া দেখে উনি রাগি চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লাম। উঠেই ওনার পিছু পিছু ঘরে গেলাম। ঘরে যেতেই উনি আমার কোমর ধরে টান দিয়ে আমাকে তার বুকের সাথে চেপে ধরলেন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি ঘামছি। “আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে এতো ভয় পাচ্ছ?” তার ধমক শুনে এইবার আমার গ্যান হারানোর উপক্রম। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ওনার ফোন বেজে উঠলো। আমাকে ছেড়ে ফোন তুলতে গেলেন। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে তাড়াতাড়ি বারান্দায় চলে গেলাম। কিন্তু সেখানেও রক্ষা হলনা। একটু পর উনি এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গেলেন ঘরে। তারপর বিছানায় বসিয়ে দিলেন। গতদিনের মতো আজকেও এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিলেন। আমাকে শুয়ে দিয়ে কম্বল উড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেলেন। আমি বোকার মতো চেয়ে থাকলাম। তারপর ভাবলাম এখন ঘুমিয়ে জাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।

আমি সিগারেট খেতে খেতে হাসলাম। আজ বেশ জব্দ হয়েছে মেয়েটা। আর জীবনেও আমার কাছ থেকে দূরে থাকার কথা ভাববে না। তারপর গিয়ে বরাবরের মতো তাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। সেও আমার বুকের ভিতরে ঢুকে শুয়ে ঘুমাল।

কিছুদিন পর আমার পরিক্ষা তাই আমি পড়াশুনা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আর জারিফও এখন অফিসে কম যাচ্ছে। আমার পড়াশুনায় খুব হেল্প করে। আমার খেয়ালও রাখে অনেক।আমার সব ছোট ছোট বিষয়ের উপরে খুব বেশি কেয়ার করে। এভাবে আমিও ধিরে ধিরে জারিফের উপরে অনেক টা নিরভর করে ফেলেছি। আমিও তার উপরে এখন চরম ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। এভাবেই আমার পরিক্ষাও শেষ হয়ে গেলো। আর এই কয়দিনে জারিফের সাথে আমার সম্পর্কটাও অনেকটা ভালো হয়েছে। সকালে টেবিলে বসে নাস্তা করছিলাম। এমন সময় বাবা বললেন “ফারিয়ার তো পরিক্ষা শেষ হল। এখন ভালো জায়গায় ভর্তি হতে হবে। তুমি কি বল জারিফ?” “হ্যা বাবা। ও নিজেই ঠিক করুক কোথায় পড়তে চায়।” বলেই জারিফ আমার দিকে তাকাল। “আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাই বাবা।” আমি বলতেই বাবা বলল “বেশ ভালো কথা।তাহলে এখন সরকারি ভার্সিটিতে পড়বে নাকি বেসরকারি ভার্সিটি তে?” “আসলে বাবা আমি ওর উপরেই সব ছেড়ে দিতে চাই। ও যা চাবে সেভাবেই সব হবে।ওকে একটু ভাবার সময় দেই। ভেবে জানাবে ।” বলেই আমার দিকে তাকাল। আমার ভর্তি নিয়ে এই কথোপকথনের মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো। “আচমা দরজা টা খোল।” মা বললেন। আচমা খালা দরজা খুলে দিতেই মাঝ বয়সি একজন মহিলা আর তার সাথে একজন কম বয়সি মেয়ে প্রবেশ করলো। আমি খুব ভালো করে তাদের দিকে তাকালাম কিন্তু চিন্তে পারলাম না।
চলবে……

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৮

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৮
আলো এসে চোখে পড়তেই খুব বিরক্তি নিয়ে চোখ খুললাম।চোখ খুলেই অবাক হলাম। অনেকটা বেলা হয়েছে। এই প্রথম আমি এতো বেলা করে উঠেছি। তাতেই মনে পড়ল কাল রাতের কাহিনি। খানিকটা লজ্জা পেলাম। পাশেই দেখলাম জারিফ ঘুমাচ্ছে। তাই আসতে করে উঠে গেলাম। আমি নাস্তা রেডি করছিলাম তখনি জারিফ এসে বলল বাসায় যাওয়ার কথা। অফিস থেকে কল এসেছে জরুরী কাজ আছে। এখন বের হলে বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাব। ফুপুরা যেতে দেরি হবে তাই আমরা আগে রওনা দিলাম। যাওয়ার সময় মা খুব কাদছিলেন। আমারও একটু কান্না পাচ্ছিলো কিন্তু তার চেয়ে জারিফের সাথে যাওয়ার আনন্দটাই মনে হয় বেশি।মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন সেই ভালবাসার মানুষটার সানিদ্ধ্য পেতে কাছের মানুষ গুলোর এই অবাধ আবেগও তুচ্ছ মনে হয়। আমারও এখন তেমন মনে হচ্ছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।

বাসায় পৌঁছে জারিফ আমাকে নেমে দিয়ে সোজা অফিসে গেলো। আমি বাসায় ঢুকে সবার সাথে অনেক গল্প করলাম। অনেকটা সময় গল্প করার পর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর খেয়ে শুয়ে পড়লাম। অনেক রাত হয়ে গেছে এখনও জারিফ আসেনি।আমি শুয়ে শুয়ে জারিফের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু চোখটা লেগে আসতেই কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম। দৌড়ে গিয়ে গেট খুললাম। খুলতেই জারিফ কে দেখে মুখে হাসি চলে এলো। “কি ব্যাপার! মিসেস জারিফ রহমান। কারও জন্য অপেক্ষা করছিলেন বুঝি।” সে হাসি মুখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো। কি অদ্ভুত! তার মুখে নিজের নামটা এভাবে শুনে মনের মাঝে একটু ভালো লাগা কাজ করলো। আমি চাইতেও নিজের সেই ভাললাগার আবেগময় হাসি আটকাতে পারলাম না। “এতো দেরি হল যে?” আমি স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলাম। “একটা মিটিং ছিল।” সে ঢুকতে ঢুকতে বলল। “আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।” “খেয়ে এসেছি। উপরে এসো।” বলেই চলে গেলো। আমিও উপরে গেলাম। জারিফ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখল আমি বিছানায় বসে আছি। সে এসির টেম্পারেচার অনেকটা কমে দিলো। “কি করছেন? ঠাণ্ডা লাগছে তো?” আমি বিরক্ত হয়ে বললাম। “কিন্তু আমার তো গরম লাগছে। তুমি কম্বল উড়ে শুয়ে পড় তাহলেই আর ঠাণ্ডা লাগবেনা।” বলেই উনি একটু বাকা হাসলেন। আমি তার হাসি দেখতে পেলাম ঠিকি কিন্তু মানে বুঝতে পারলাম না। আমি কোন কথা না বলে কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়লাম। পরিবেশ টা কিন্তু বেশ লাগছে। ঘরটা হালকা ঠাণ্ডা। তার মাঝে কম্বল নিয়ে ঘুমানো। ঘুম টা বেশ হবে।

বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছি আর পিচ্চি টাকে দেখছি। এতক্ষণে মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও সিগারেট টা শেষ করে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কম্বল টা উড়ে মাঝখান থেকে কোল বালিশ টা সরিয়ে ফেললাম।খানিক্ষন পিচ্চি টাকে দেখলাম মন ভরে। তারপর দুই হাতে তাকে জড়িয়ে নিলাম। আর এসির ঠাণ্ডায় সে একটু উষ্ণতা পেতে আমার বুকের মাঝে এসে ঢুকে পড়ল। আমিও তাকে জড়িয়ে নিলাম শক্ত করে। কাল অনিচ্ছাতেই আমার হাত তোমার গায়ে লেগে যাওয়ায় তুমি সিন ক্রিয়েট করেছিলে তাই তো আজকে নিজে থেকেই তোমাকে আমার সাথে জড়িয়ে ঘুমাতে বাধ্য করলাম। আমি এতো সহজে ছাড়ার পাত্র নই। যা করবে তার ফল তুমি খুব তাড়াতাড়ি পাবে। আমি ভেবেই একটু হেসে ঘুমিয়ে গেলাম।

নিজের উপরে একটা চাপ অনুভব করতেই চোখ খুললাম। খুলেই দেখলাম আমি জারিফের সাথে লেপটে আছি। এক ঝটকায় আমার প্রেসার নিল হয়ে গেলো। হাত পা অবস হয়ে আসছে। আমি ঘামছি। কারন জারিফ আমাকে দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আর তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। সেই নিশ্বাসের উষ্ণতা আজ আমার কাছে ১০০ ডিগ্রির চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে। এই উত্তাপ আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। কিন্তু নিজেকে ছাড়াতেও পারছিনা। কারন জারিফ আমাকে অনেক শক্ত করে ধরে আছে। মনে মনে দোয়া পড়ছিলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছুক্ষন পর জারিফ নিজে থেকেই ছেড়ে দিয়ে উলটে ঘুমিয়ে গেলো। আমি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। যাই হোক এই লোকটা তো আর আমাকে এই ভাবে দেখেনি। ঘুমের মধ্যেই ধরেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি। আমি তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।

ফারিয়ার ওয়াশ রুমে যাওয়ার পর আমি চোখ খুলে তাকে দেখে হাসলাম। খুব শাস্তি হয়েছে আজ। আমি কারও জন্য শাস্তি বাকি রাখিনা। আমিও উঠে পড়লাম। ফারিয়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আমাকে বিছানায় বসে ফোন চাপতে দেখে একটু থমকে গেলো। লজ্জায় নাকি ভয়ে আমি বুঝতে পারলাম না। আমি তার দিকে তাকালাম না। আজ ছুটি তাই ফ্রেশ হয়ে বিছানায় ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। ফারিয়া দুই কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। আমি ভালো করে তার দিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলাম। তারপর বললাম “তোমার সামনে পরিক্ষা। সময় নষ্ট না করে পড়তে বস।” সে কিছু না বলে আমাকে কাপটা দিয়ে টেবিলে বসে পড়ছে। মেয়েটার অনেক ধৈর্য। একবার পড়তে বসলে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। কোন দিকে তার আর খেয়াল থাকেনা। তার চুল গুলো খুব বিরক্ত করছিলো। তাই চুল গুলোকে উঠিয়ে খোপা করে নিলো। পেছন থেকে তার ফর্সা পিঠ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেয়েও পারছিনা। এই মেয়েটা এভাবে আমার সামনে থাকলে আমি কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করবো। নিজের মন আর ব্রেনের সাথে রীতিমতো চতুর্থ বিশ্ব যুদ্ধ করছি। কিন্তু অবশেষে ব্রেইনকে পরাজিত করে মনের টানে আমি উঠে গেলাম। পিছনে দাড়িয়ে তার পিঠে স্লাইড করছি।

হঠাৎ ই কোন হাত আমার শরীরে স্পর্শ করায় আমি কেঁপে উঠলাম। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কিন্তু ওনার স্পর্শ আরও গভীর হতে লাগলো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। উনি বুঝতে পেরে আমার দিক থেকে উলটো ঘুরে গেলেন। তার উলটা ঘুরায় আমি সাহস পেলাম আর তার দিকে ফিরে তাকালাম।উনি উলটা দিকে ঘুরেই বললেন “সরি!”। কিন্তু এই শব্দটা আমার ভেতরটা খত বিক্ষত করে দিলো। কিছুক্ষনের জন্য ওনার কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারলাম। হয়ত খুব বেশিই ভালবেসে ফেলেছে আমাকে। যার কারনে আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারছেনা। কিন্তু আমার কি উচিৎ। আমি বুঝতে পারছিনা।তার দিকে তাকিয়ে আছি করুন দৃষ্টিতে। কিন্তু সেই দৃষ্টি তিনি ফিরেও দেখলেন না। দেখলে হয়ত বুঝত। উনি বারান্দায় গিয়ে সিগারেট জালালেন। আমি আবার টেবিলে বসে পড়লাম। বই খুলেও কিছুই পড়তে পারছিনা। সেই ছোট কথাটা বার বার কানে বাজছে। আমি টেবিলে বসেই বুঝতে পারছি উনি একটার পর একটা সিগারেট জালিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু তার এই সিগারেটের আগুন মনে হচ্ছে আমার বুকে জলছে। আমি সহ্য করতে না পেরে উঠে বারান্দায় যাই। উনি এতোই গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন যে আমার উপস্থিতি বুঝতেও পারলেন না। আমি তার পাশে গিয়ে তার ঠোঁট থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দেই। উনি চমকে আমার দিকে তাকালেন। জিবনেও বোধ হয় কারও কাজে এতোটা অবাক হননি। আমি রাগি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। এতো কিছুর পর তার সাথে এরকম আচরণ টা মনে হয় উনি হজম করতে পারছেন না। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল “কিছু বলবে?” “এতো বেশি সিগারেট কেন খান?”। আমার কাছ থেকে এরকম প্রশ্ন উনি আশা করেন নি। “জানিনা।” এক রাশ হতাশা নিয়ে ছোট করে উত্তর দিলো। “কোন কারন ছাড়া কেউ কিছুই করেনা।” “তাই। তাহলে আমার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেয়ার কারণটাও নিশ্চয় তুমি জানো।” আমার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলি। “সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়।” আমি মাথা নিচু করেই বললাম। “আমি মরে গেলে তো তুমি বেচেই যাবে।” উনি সামনে তাকিয়ে বললেন। কিন্তু আমার বুকের ভিতরে কেমন যেন একটা কষ্ট নাড়া দিলো। কষ্টের চাপে চোখের পানি বাধ মানলনা। উপচে বেরিয়ে এলো। আমি উলটো দিকে ঘুরে চোখের পানি মুছে নিলাম। উনি বারান্দায় দাড়িয়ে থাকলেন। আমি ঘরে বসে ভাবছি এই দূরত্ব টা কি আসলেই ওনার প্রাপ্য। আমি কি নিজের লজ্জা সংকোচের কাছে ওনার ভালবাসাকে অসম্মান করছি। ছোট করছি তার অনুভুতি গুলোকে।

দুই হাতে মাথাটা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছি। খুব ব্যাথা করছে। “মাথা ব্যাথা করছে?” জারিফের কথায় চোখ খুলে দেখি উনি বাইরে যাবার জন্য রেডি হয়ে সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি কথাটাও ঠিক মতো বলতে পারছিলাম না তাই মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। “রেডি হয়ে নাও বাইরে যাব।” আমি তার কথায় অবাক হয়ে তাকালাম। আমার মাথা ব্যাথা করছে আর উনি এসব কি বলছেন বাইরে যাবে মানে। আমি মাথা নেড়ে না বললাম। উনি আমার হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আর বলছেন “থাক রেডি হতে হবেনা। এভাবেই চল। রাতের বেলা কেউ তেমন খেয়াল করবেনা।” আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। নিচে যেতেই মা বলল “কি রে ওভাবে ওকে টেনে কই নিয়ে যাচ্ছিস?” “একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি”। ওনার কথা শুনে মা একটু মুচকি হেসে মাথা নেড়ে যেতে বললেন। আমি দরজা থেকে বের হওয়া অব্দি মার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। উনি আমাদের এভাবে যেতে দেখে খুব খুশি হলেন। আমরা দুজন দুজন কে যে এভাবে মেনে নিবো তা হয়ত ভেবেই তিনি এতো খুশি।রাস্তায় হাঁটছি কিন্তু উনি আমার হাত টা এখনো শক্ত করে ধরে আছে যেন ছেড়ে দিলে আমি পালিয়ে যাব। আমি কিছু বলছিনা। বেশ ভালই লাগছে।তার সাথে এভাবে রাতে রাস্তায় হাঁটব তা আমি কখনও ভাবিনি । “ব্যাথা কমল?” জারিফ সামনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। আমি তার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো। রাস্তার নিয়ন আলোয় জারিফকে আজ একেবারে অন্য রকম লাগছে। আমার চোখ আজ বড্ড বেহায়া হয়ে উঠেছে। “আমাকে দেখা শেষ হলে আমার প্রশ্নের উত্তর টা মনে করে দিয়েন ম্যাডাম!” তার কথায় আমি লজ্জা পেয়ে সামনে তাকালাম। খেয়াল করলাম সত্যি তো মাথা ব্যাথা একে বারেই নেই। “এভাবে রাস্তায় হাটলে মাথা ব্যাথা ঠিক হয়?” আমি প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম তার দিকে। সে আমার দিকে না তাকিয়েই বলল “যা শুনতে চাই তা তো কখনই বলনা। উলটা প্রশ্ন করে বস।” তার কথাটার চেয়ে তার গলার কষ্টটা আমাকে বেশি ঘায়েল করলো। আমি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ফেললাম।
চলবে………

আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-০৭

0

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৭
আমি বাসায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে নাম্বার টা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ফারিয়া! এতো রাতে? ওর তো এতক্ষণ জেগে থাকার কথা না। কোন সমস্যা হল না তো। আমি ফোনটা ধরতেই ও পাশ থেকে ফিকরে ফিকরে কান্নার আওয়াজ পেলাম। “কি হয়েছে? কাদছ কেন?” আমি একটু বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। সে কাদতেই থাকলো। “কথা বল।” আমি খুব শান্ত গলায় বললাম। “আপনি আমাকে কবে নিতে আসবেন?” সে কাঁদতে কাঁদতে বলল। আমি কথা শুনে খুব অবাক হলাম। ফারিয়া আমাকে এমন কথা বলবে তা আমার ধারনা ছিলোনা। আমি খুব শান্ত ভাবে বললাম “কেন?আর থাকতে ইচ্ছা করছেনা?” “না। আমি আপনার কাছে যাব।” বলেই সে জোরে কেদে ফেলল। “ঠিক আছে। এখন ঘুমাও।” বলেই আমি ফোনটা রেখে দিলাম। ফোনটা রেখে কিছুক্ষন ভাবলাম। তারপর শুয়ে পড়লাম।

আমি গোসল শেষ করে ভেজা কাপড় মেলে দিচ্ছিলাম উঠোনে। হঠাৎ সীমা আর ছোট মা এসে আমার সামনে দাড়িয়ে গেলো। আমি একটু ভ্রু কুচকে তাকাতেই বলল “জামাই এসেছে।” বলেই ছোট মা চলে গেলো। এতো খুশির কারন হচ্ছে সে কাউকে না জানিয়েই এসেছে। তাই তার আগমনের সেই খুশি সবার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। আমার মুখেও একটা হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু কেন সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। সীমা আমার কাছে এসে বলল “তোকে সবাই বারান্দার সাথের ঘর টাতে ডাকছে।” আমি দেরি না করে সীমার পিছনে পিছনে চলে গেলাম। সবাই ডেকেছে। কোন জরুরী কথা হবে মনে হয়। ঘরে ঢুকেই দেখি জারিফ একা দাড়িয়ে আছে। আবার সেই কঠিন দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে আমার দিকে এক পা করে এগিয়ে আসছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। আমার সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি আর একটু পিছাতেই দেয়ালে আটকে গেলাম। জারিফ আমার কাছে এসে আমার সামনে থাকা চুল গুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। “কোন অনুভুতি হয়?” আমি তার কথায় চোখ খুলে তার দিকে তাকালাম। তার চোখ আজ অন্য কথা বলছে। সেই ভাষা বোঝা আমার সাধ্যের বাইরে। আমি লজ্জায় আবার চোখ বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষন পর তার কোন অনুভুতি না পেয়ে আমি চোখ খুলে দেখি সে আমার থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে। আমি এবার চলে যেতে নিলে তার পাশ কাটতেই সে আমার হাত ধরে ফেলে। আমি দাড়িয়ে যাই। “ভালবাস আমাকে?” তার কণ্ঠের আবেগ আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমি তার কাছ থেকে পালাতে চাইছি। আমার কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো। তারপর আমার উলটা দিকে তাকিয়েই খুব শান্ত গলায় বলল “ তুমি এতটাও ছোট না যে আমার কথা বুঝতে পারনি।তুমি নিজেকে আমার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখতে পার কিন্তু তোমার চোখের ভাষা আমার প্রতি তোমার সমস্ত আবেগ আমার কাছ থেকে গোপন করতে পারবেনা। তোমার চোখ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে আমার প্রতি তোমার অনুভুতি। যার টানে আমাকে এতদুর নিয়ে এলে।” তার কথা গুলো আমার বুকের মাঝে এক অনুভুতি তৈরি করলো। কিন্তু এই অনুভুতি আমার চেনা। জারিফ আমার আশে পাশে থাকলেই শুধু এই অনুভুতি হয়। আর আমি এই অনুভূতির নামটাও জানি। ভালবাসা! হ্যা আমি জারিফ কে ভালবাসি কিন্তু এই অনুভুতি তার সামনে প্রকাশ করার সাহস আমার নাই। আমি সব সময় তার কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি যাতে সে আমার এই অনুভুতি বুঝতে না পারে। জিবনে প্রথম ভালবাসার অনুভুতি তার সামনে লজ্জায় প্রকাশ করতে পারছিনা। আজ আমার আবেগ অনুভুতি লজ্জার কাছে হার মেনে দমে যাচ্ছে। কিন্তু অবশেষে সে বুঝেই নিলো। “তুমি যতদিন না নিজেই আমাকে তোমার ভালবাসার কথা বলবে ততদিন আমি অপেক্ষা করবো।” জারিফের কথায় আমি বাস্তবে ফিরলাম। “আমার ভালবাসার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ রইল। যেদিন নিমন্ত্রণ গ্রহন করবে সেদিন তোমাকে সাদরে গ্রহন করবো। সেদিন আমার ভালবাসা পূর্ণ হবে।” তার কথায় আমার মনে প্রেমের জোয়ার উঠল। আমি আর তার সামনে থাকতে পারলাম না। এক দৌড়ে চলে গেলাম।

দুপুরে খাওয়া শেষ করে জারিফ আর সাইফ ভাইয়া বারান্দায় বসে কি নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলো। আমি চা নিয়ে গেলাম। সাইফ ভাইয়ার ফোন বাজতেই সে উঠে গেলো। জারিফ আমার দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আমি না তাকিয়েও বুঝতে পারছি। কিন্তু তার এই চাহুনি আজ আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাই আমি সেখানে দাড়াতে চাইলাম না। চলে আসতে নিলেই জারিফ আমার ওড়না টেনে ধরে। আমি সামনের দিকে ওড়না ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছি। নিমেষেই সব কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। আমার হার্ট বিট এতোটা বেড়ে গেলো যে তার শব্দে নিজের কান ফেটে যাচ্ছে।অসহনীয় এক ভাললাগা আবার ভয়। কোন অনুভুতি টাকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ আমার জানা নেই। “কি সমস্যা তোমার?” তার ধমকে ঘোর কাটে। “কো…কোন সমস্যা নেই।” কাপা কাপা গলায় বললাম। “তাহলে আমার কাছে আসছনা কেন?” “কা… কাজ করছিলাম।” “আমি এতদুর থেকে শুধু তোমার জন্য এসেছি।” ওড়না টা ছেড়ে দিয়ে চাপা অভিমান নিয়ে বলল। বুকের ভিতরে কেমন যেন চাপা কষ্ট নাড়া দিয়ে গেলো। তার দিকে ঘুরে বললাম “কিছু লাগবে?” “তোমাকে!” একটু হেসে বলল। লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলাম। সাইফ ভাইয়া চলে আসলো। আমি আর না দাড়িয়ে চলে আসলাম।

রাত ১০ টা মানে গ্রামে অনেক রাত। চারিদিকে সব স্তব্ধ। শুধু ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দুই একটা জোনাকি পোকা উড়ে যাচ্ছে। আমি জানালার পাশে বসে দেখছি। “ওখানে বসে কি করছ?” জারিফের কথায় ভয় পেয়ে যাই। আমাকে ওভাবে ভয় পেতে দেখে সে শব্দ করে হেসে উঠলো। আমি রাগ করে তার দিকে তাকালাম। “হাসার কি হল?” “কি ভেবেছিলে ভুত?” বলেই আবার হাসল। আমি তার দিকে রাগ করেই তাকিয়ে থাকলাম। “তুমি ভুতে ভয় পাও?” “কেন আপনি পান না?” “না। ভয় পাওয়ার কি আছে?” “সামনে ওই যে তাল গাছটা আছে। ওই টাতে ভুত আছে।” সে আমার কথা শুনে জানালার কাছে এলো তাল গাছটা দেখার জন্য। “তুমি দেখেছ?” তাল গাছের দিকে তাকিয়ে বলল। “না অনেকেই দেখেছে।তারা গল্প বলেছে আমি শুনেছি।” “এসব ভুত বলে কিছু হয়না। সবই মানুষের সাব-কনসাচ মাইনডের খেলা। তুমি তো সাইন্সে পড়। তবুও কিভাবে ভুত বিশ্বাস কর।” “ভুত বিশ্বাস করার জন্য পড়ালেখার প্রয়োজন হয়না। যারা দেখেছে তারা গল্প শোনালে আপনিও বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন।” “আমার এসব বিশ্বাস করে লাভ নাই। আমার উপরে এমনিতেই তো একটা পেত্নি ভর করে আছে।” “তাই নাকি?” কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল “কিন্তু আমার পেত্নি কে আমি ঘাড় থেকে নামিয়ে সারাজিবনের জন্য বুকে রাখতে চাই।” আমি তার কথা বুঝতে পেরে উলটা দিকে ঘুরে একটু হেসে জানালা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সেও আর কথা না বলে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

শরীরে কারও একটা শিতল হাত অনুভুত হতেই আমি চিৎকার করে বসে পড়লাম। জারিফ ঘুম থেকে চমকে উঠলো আমার চিৎকারে। উঠেই দেখল তার হাত আমার গায়ে পড়েছে। আর এই জন্যই আমার এই জঘন্য চিৎকার। “সরি! আসলে ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারিনি।” বলেই সে মাঝখানে কোল বালিশ টা দিয়ে উলটো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল। আমি এরকম একটা কাণ্ডে ভীষণ লজ্জা পেলাম। পুরো বাড়ি হয়ত শুনে ফেলল। আর তাছাড়াও জানিনা সে কি ভাবল। কিন্তু ঘুমানোর আগে ভুতের গল্প করায় আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। তাই ঘুমের মাঝেই এমন হওয়াতেই ভয় পেয়ে চিৎকার দেই। কি একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। ধুর! মাঝে মাঝে এমন সব কান্ড করে বসি। আগে চোখ খুলে দেখে নেয়া উচিৎ ছিল। তারপর তার হাত টা আলতো করে সরে দিতে পারতাম। শুয়ে শুয়ে ভাবছি। ঘুম আসছেনা কিছুতেই। জারিফ কি ভাবল সেটাই বার বার মাথায় ঘুরছে।
চলবে……