Saturday, June 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1580



ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১১

2

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১১ : #confession
লেখিকা : #Lucky

“আপনাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।” বিড়বিড় করে বলে ফেললাম আমি।
বলার পরেই বুঝলাম কি বলে ফেলেছি।
আমি বিস্ফোরিত চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
“কি বিড়বিড় করছ?” ইথান এমনভাবে প্রশ্নটা করলো যেন শুনতেই পায়নি।
“কিছুনা।” বলেই আমি দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
তারপর জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।
আর হার্টবিটের কথা ত বাদই দিলাম!
যেমন হার্ট তেমন তার বিট।
ফালতু।
ভাগ্যিস বিড়বিড় করেই বলেছিলাম। শুনে নিলে কি হতো!
“কিছুই হত না, মজা হত।” মনের মধ্যের শয়তান এরিন বলল।
আমি ভালো এরিনের থেকে কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সে শুধু কাপতে কাপতে বলল, বুহিন ঠান্ডা লাগে, দয়া করে ড্রেস চেঞ্জ কর।
সাথে সাথেই মনে পরল।
এখন সত্যিই ঠান্ডা লাগছে।
কিন্তু জামাকাপড় ত আনলাম না। হায় হায়!
আর ইথানও ত ভিজে চুপসে আছে।
ওর ঠান্ডা লাগবে ত।
আমি চট করে বাথরুমের দরজা খুলে উঁকি দিলাম কিন্তু তাকে দেখতে পেলাম না। তাই গলার স্বর উঁচু করে বললাম, এইযে শুনছেন?
উনি বেলকোনি থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে এসে বিরক্ত হয়ে বললেন, “তুমি এখনো চেঞ্জ করোনি।”

আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে বললাম, “আপনার চেঞ্জ করাও শেষ?”
“তো তোমার মত বসে থাকবো?” উপহাসমূলক স্বরে বলল ইথান।
বেলকোনিতেই তিনি চেঞ্জ করে নিয়েছেন।
যাক ভাল।
আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “জামা দিন আমার। জলদি।”
উনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে আলমারি খুললেন তারপর এগিয়ে গিয়ে একটা জামা নিয়ে আমার সামনে ধরলেন।
আমি নিতে নিতে ভ্রু উঁচু করে বললাম, সালোয়ার কে দেবে?
উনি বিরক্ত ভঙ্গিমায় তাকিয়ে আবার আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন আর সালোয়ার নিয়ে এসে সামনে ধরলেন।
আমি নিলাম। আর এবার বললাম, তোয়ালে দিন।
ইথান রাগে কটমট করে তাকিয়ে আবার গিয়ে তোয়ালে নিয়ে এলেন আর আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, হয়েছে এবার?
আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
সাথে সাথে ইথান রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসলো। আর আমি চমকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে কাপতে কাপতে বিছানায় বসলাম।
এখন মনে হয় আমার অবস্থা বেহাল হবে। অনেক বেশিই ঠান্ডা লাগছে।
দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মুখ দিয়ে বড়বড় নিঃশ্বাস বের করতে লাগলাম। কিন্তু গা কাপাকাপির কোনো থামাথামি নেই।
“ডিনার রেডি।” বলতে বলতে ইথান রুমে এসে ঢুকলো।
আমি শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
আমার অবস্থা বুঝতে ওনার দেরি হলো না।
“তোমাকে আগেই বলেছিলাম।” চোখেমুখে একরাশ অসস্তি নিয়ে বলতে বলতে আমার কাছে এসে দাড়ালো ইথান। তারপর কম্বল খুলে গায়ে জড়িয়ে দিতে লাগল।
তাও যেন ঠান্ডা কমছেই না।
ইথান পাশে দাড়িয়ে আমার মাথায় প্যাচানো তোয়ালে খুলে, মাথা মুছে দিতে লাগল।
আমি স্থির দৃষ্টিতে ওনার কোমড়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পাশে বসে নিলে হয়ত মুখটা দেখতে পেতাম।
উনি ভালোভাবে মাথা মুছে দিয়ে তোয়ালে নিয়ে বেলকোনিতে রাখতে গেলেন।
আমি এলোমেলো চুলে ওভাবেই বসে রইলাম।
গা এখনো অল্প অল্প কাপছে।
ইথান বেলকোনি থেকে বের হয়ে বেলকোনির দরজা বন্ধ করে দিল।
ঠান্ডা হাওয়া যেন না আসতে পারে সেজন্যই হয়তো।
তারপর উনি আলমারি খুলে আরেকটা কম্বল বের করে এনে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন।
এতে আমার খুশি হওয়ার জায়গায় হচ্ছে রাগ।
একটু আগে বলল, the moon really is beautiful! কিন্তু কাজবাজ দেখে মনে হচ্ছে the moon really is sorrowful.
ভাই, আমি এত ডিসেন্ট ছেলে দিয়ে কি করব?
“আমাকে কি বাধা কপি বানাতে চান?” জোড়ালো গলায় বললাম আমি।
ইথান বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে বলল, মানে?
“মানে আপনি জীবনেও বুঝবেন না।” বলেই আমি রাগে ফুলতে ফুলতে গায়ের কম্বলগুলো সরাতে লাগলাম।
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করতে লাগল।
তবে সে যে বুঝবে না এটা আমি কয়েক কোটি সিওর।
কারণ ছেলেরা গাধা হয়, গাধা। এসব জিনিস তাদের বোধগম্য হতে গেলে ওদের কয়েকশো বার জন্ম নিতে হবে।
হাতে গোনা দুই একটা ভালো গাধা থাকতে পারে বাংলাদেশে। তবে বিদেশে অভাব নেই।
আমি কম্বল সরিয়ে উঠে দাড়ায়ে ইথানকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু সে আমার একটা হাত ধরে নিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছ?
আমি কড়া হাসি মুখে টেনে বললাম, “বেলকোনিতে যাব। গরম লাগছে আমার।”
“হোয়াট! এখনো কাপছ। গাও ঠান্ডা হয়ে আছে তোমার।” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
“তাতে আপনার কি?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
“ফালতু কথা বন্ধ করো। আর শুয়ে পরো।” বলতে বলতে ইথান কম্বলটা হাতে তুলল।
আমি দাত কিড়মিড় করে এক টান দিয়ে ওনার হাত থেকে কম্বলটা নিয়ে নিলাম আর বিছানায় উঠে বসে গায়ে মুড়ো দিতে দিতে বললাম, “যান আপনি। যথেষ্ট করেছেন। এখন আমাকে শান্তিতে একা থাকতে দিন।”
আপাতত সে হয়ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। থাকুক। মুর্খ কোথাকার।
“ডিনার?” উনি প্রশ্ন করলেন।
“করেছি আমি। ঘুমাবো এখন।” থমথমে গলায় মিথ্যাটা বলে দিলাম আমি।
কম্বল মুড়ো দেওয়া অবস্থায় বুঝলাম উনি লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
বাহ!
কত বাধ্য!
ভাইসব একেই বলে নিরামিষ জীবনযাপন।
তাই moon তুমি নিরামিষফুল।

কিছুক্ষণ পর উনি আবার ফেরত এলেন আর আমার মাথার উপর থেকে কম্বলটা টেনে সরিয়ে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কি করছেন?
সে আমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলল, “ডিনার করতে চলো।”
“করেছি বললাম না?” ঝাঝানো গলায় বললাম আমি।
ইথান গম্ভীরমুখে আমার দিকে ঝুকতেই আমি মাথাটা হালকা পিছিয়ে নিলাম।
“আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কে দিলো তোমাকে?”
“কেনো? কাউকে দিতে কেন হবে! আমার নিজেরই আছে।” টিটকারি মেরে বললাম আমি।
শুনেই ইথান আরেকটু ঝুকলো। সাথে সাথেই যেন আমি চুপসে গেলাম।
“চুপচাপ নিচে চলো।” ইথান বলল।
“না গেলে?” ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“একটা বাচ্চাও হয়তো তোমার থেকে বেশি obedient.” ইথানের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে গেল।
“হ্যা জানেন না! আমি ত বাচ্চার চেয়েও বাচ্চা।” একটু রাগমিশ্রিত চোখ তাকিয়ে বললাম।
“তোমার মনে হয় না, একটা বাচ্চা হিসেবে তোমার এটা খুব বেশিই বড়?” উনি বাকা হাসির সাথে আমার বুকের দিকে ইশারা করে বললেন।
হঠাৎ উনি এমন কিছু বলতে পারে চিন্তাও করিনি। আমি অনেক চমকে গিয়েই নিজের দিকে তাকালাম।
ওড়নাও নেই গায়ে।
ওনার মুখে এখনো সেই হাসি বিদ্যমান।
আমি ঝড়ের বেগে কম্বলটা গায়ে টেনে নিলাম। আর কপাল কুচকে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সত্যিই অসভ্য।
“জলদি নিচে আসো।” বলে উনি উঠে দাঁড়িয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন।
আমি মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে জলদি বিছানা থেকে উঠে আলমারি থেকে ওড়না বের করলাম। আর সেটা ঠিকঠাক করে পরে নিচে নেমে এলাম।
বুকের মধ্যে এখন ধকধক শব্দ বিদ্যমান। থামাথামির নাম নেই।
সেই ডাক্তার এখনো আছে। সাথে ওই দিশা মেয়েটা আর সেদিনের সেই ভদ্রমহিলা যে বৌভাতে এসেছিলো।
তারমানে এরা সবাই এক পরিবারের! আমি ভদ্রমহিলার সাথে কুশল বিনিময় করে দিশার দিকে তাকালাম।
দিশা একটু শুকনো মুখই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত বেশি রিএক্ট করে ফেলেছি তখন।
তাতে অবশ্য আমার অনুশোচনা হচ্ছে না কারণ এই মেয়ে ইথানকে বহুত জ্বালিয়েছে। মেয়ের মতিগতি যখন তখন পালটে গেলে!
“বসো।” ইথান ওর পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল।
আমি এগিয়ে গিয়ে বসলাম।

ডিনার শেষে ওনাদের চলে যাওয়ার সময় এসে গেলো।
ভদ্রতা হিসেবে ইথান তাদের বাহির পর্যন্ত ছেড়ে দিতে যেতে চাইল।
যদিও ডাক্তার আংকেল বললেন দরকার নাই।
আমিও চাচ্ছিনা উনি যাক।
দিশা পেত্নিটা আছে যে। ওটার বিয়ে হলেও আমি ওকে ভরসা করি না। কারণ তার তাকানোর ধরণ আমার এখনো সুবিধাজনক লাগছে না।
ইথানের যাওয়া কিভাবে আটকাবো! আটকাতেই হবে আমার।
চিন্তা করতে করতেই আমি পেয়েও গেলাম।
দ্রুত সিঁড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে দুই সিড়ি উঠে ঝপ করে বসে পড়লাম। আর নাটক শুরু করে দিলাম, “উফ আমার পা।”
সাথে সাথে আমার দিকে সবাই ঘুরে তাকালো।
ইথান দ্রুত এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলল, “দেখে উঠবা না?”
ইথানের মাও এগিয়ে এসে বলল, “বেশি লেগেছে?”
“অল্প, বেশি না।” মিনিমিনে গলায় বললাম আমি।
ততক্ষণে ইথান এক হাটু ভাজ করে আমার পা স্পর্শ করল।
যাক নাটক সাকসেসফুল।
ডাক্তার আংকেল চিন্তিত হয়ে বললেন, “আমি দেখছি।”
এই ডাক্তারের কথা ত আমি ভুলেই গেছিলাম।

সাথে সাথে আমি ঘাবড়ে গেলাম আর বলে উঠলাম, “না। প্লিজ আমি কোনো ইনজেকশন নিব না। অল্প শুধু লেগেছে।”
ইথান বাদে সবাই শব্দ করে হেসে উঠল।
আর তার চোখের চাহনিই বলে দিচ্ছে সে আমার নাটক ধরে ফেলেছে। কারণ ইতিমধ্যে সে আমার পায়ে চাপ দিয়েছে। আমি তাতে ব্যথাই পাইনি।

এগুলো ভালই বুঝবে। কিন্তু যেগুলো বুঝার সেটাই বুঝবে না।
“আ…আমাকে উপরে নিয়ে যান প্লিজ।” ইথানকে অনুরোধের সুরে বললাম আমি।
“হ্যা নিয়ে যা। আমি ওনাদের ছেড়ে দিয়ে আসি।” বলতে বলতে ইথানের মা ওনাদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
ইথান গম্ভীরমুখে তাকিয়ে একদম আস্তে আস্তে বলল, “আমি ভাল করেই জানি কিছু হয়নি। সোজা উপরে যাও।”
আমি তার কথায় কান না দিয়ে মোটামুটি আওয়াজে বললাম, “পা ব্যথা। প্লিজ ধরে ধরে নিয়ে চলুন।”
সবাই একটু মুচকি হেসে তাকালো আমাদের দিকে।
দিশা মেয়েটাই শুধু হাসছে না। ম্লানমুখে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ এই মেয়ের মতিগতি সত্যিই ভাল না।

ইথান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে গলার আওয়াজ নামিয়ে বলল, “আমি জানি তুমি হেটে একাই যেতে পারবা।”
“পারব না। আপনিই নিয়ে যাবেন।” আমিও মুখ ফুলিয়ে ফিসফিস করে বললাম।
ইথান উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি বসে থেকেই অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
আমার আলাদা রকম খারাপ লাগছে। আমাকে নিয়ে যেতে ওনার কি সমস্যা!
যথেষ্ট হয়েছে। এখন আমার পালা। ভালোবাসি বলে ইগনোর গুলোও সহ্য করবো, এটা ভেবেছেন উনি?
আমি নিজের চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে, সিঁড়ির রেলিং ধরে উঠে দাড়ালাম।
ওনার দিকে, বা পিছনের ব্যক্তিগুলোর কারো দিকে একবারো না তাকিয়ে সিড়ি দিয়ে ওঠার জন্য ঘুরলাম।
আর পা বাড়ানোর আগেই আচমকা ইথান আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আমি চমকে ওনার মুখের দিকে তাকালাম।
সে ভ্রুকুচকে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে লাগলো।

আমি হা হয়ে গেলাম কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। এত সহজে আমি ভুলছি না।
উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। হয়তো আমার মতিগতি দেখছেন।
কিন্তু আমি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছি ত রেখেছি।
“শুয়ে পরো৷” উনি শান্ত গলায় বললেন।
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুচকে রইলাম।
“আবার এইরকম শুরু করেছ?” ইথান অধৈর্য হয়ে বলল।
আমি একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে গায়ে কম্বল টেনে নিলাম। আর তার মুখের দিকে না তাকিয়েই বললাম, “কালই আমি বাড়ি যাব।”
“What do you mean?” উনি আকাশ থেকে পড়ে বললেন।
“আটটার সংবাদ একবারই।” বলে আমি কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে নিলাম।
“কিজন্য?” থমথমে গলায় বলল ইথান।
আমি আর উওর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না। এদিকে শরীর দিয়ে গরম ভাপ বের হচ্ছে।
জ্বর ত আসবেই। একে ত সিজন চেঞ্জের সময়, আর সেই সময়েই বৃষ্টিতে ভিজেছি।
নিঃশ্বাসও কেমন ঘন হয়ে আসছে।
“কিজন্য যাবা?” ইথান কিছুক্ষণ পরে আবার প্রশ্ন করল।
আমি চুপ করে কম্বলের মধ্যে গুটিশুটি হয়ে রইলাম।
ইথান রেগে বলে উঠল, ”শুনতে পাচ্ছ না?”
আমি এবার কম্বল সরিয়ে ঝট করে উঠে বসলাম। আর রাগমিশ্রিত গলায় বলতে লাগলাম, “পাচ্ছি শুনতে। শুধু এটাই বুঝতে পারছি না যে আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন! আমার ভালো লাগছে না। তখন আপনি আমাকে ছাদে ওগুলো বললেন তাই আমি মনে করলাম…।” বলতে বলতে আমার চোখে পানি চলে এলো। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
সে আপাতত থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
বেশি রেগে গেলে চোখে পানি আসার বিষয়টা অনেক বিরক্ত লাগে আমার।
একে ত রাগ লাগছে।
অন্যদিকে জ্বর আসবে আসবে অবস্থা। তাই ঠোঁটটাও শুকিয়ে যাচ্ছে। শরীরটাও কেমন লাগছে। মাথাব্যথা ত শুরু হয়েই গেছে।
উনি আচমকা আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওনার দিকে ঘুরালেন। কিন্তু যা বলতে চেয়েছিলেন সেটা বলতে পারলেন না। কারণ তার আগেই আমার শরীরে যে জ্বর চলে আসছে সেটা বুঝতে পেরে অস্থির হয়ে বলে উঠলেন, “তোমার ত গা গরম হয়ে যাচ্ছে।”
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, “আপনি আপনার কাজ করেন। আমাকে টাচ করবেন না।”
সে আমার কথায় পাত্তাই দিল না। বরং ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমার বুঝতে দেরি হলো না যে কোনো এক ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছেন।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালাম।
ইথানের ফোন কাঙ্খিত ডাক্তার ধরলো না।
তাই ইথান বিরক্ত হয়ে নিজের ফোনটা রেখে, আমার কপালে হাত দিলো।
আমি ইথানের মুখের দিকে তাকালাম।
“বেশি খারাপ লাগছে?” ইথান ব্যস্ত হয়ে বলল।
আর আমার কি হলো জানিনা। আমি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।
“শুয়ে পরো আমি মেডিসিন দিচ্ছি আপাতত। তারপর ডক্টরকে কল করছি।” বলতে বলতে উনি আমার গায়ে কম্বল টেনে দিতে চাইলেন।
কিন্তু আমি ওনার হাত ধরে নিয়ে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম, “সামান্য জ্বরের জন্য এত রাতে দয়া করে ডাক্তার ডাকতে হবেনা।”
মুখ দেখেই বুঝলাম যে আমার কথাটা ইথানের পছন্দ হয় নি।
আমি অনুরোধের চোখে তাকিয়ে বললাম, “প্লিজ, সকাল অব্দি সুস্থ হয়েই যাব বিশ্বাস করুন।”
“বেশি কথা না বলে আগে ঔষধ খাও।” বলেই ইথান ড্রয়ার থেকে মেডিসিনের বক্স বের করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
তারপর বের করে আমার হাতে একটা ট্যাবলেট আর এক গ্লাস পামি ধরিয়ে দিল।
আমি বিরাট বিরক্তির সাথে গিলে নিলাম।
ইথান আমার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে আমাকে শুয়ে পরার জন্য ইশারা করল আর লাইট অফ করে দিল।

আমি শুয়ে পরতে পরতে ইথান এসে আমার পাশে শুয়ে আমার দিকে ঘুরে আমার গায়ে ঠিকমতো কম্বলটা দিয়ে দিতে লাগল।
আমি শুধু মুদ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। আর দেখতে দেখতে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
“কি করছ তুমি?” অবাক হয়ে গেল ইথান।
“এভাবে ঘুমাবো আমি।” বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি ইথানকে।
ইথান কিছু বলল না।
যদিও আমার গায়ের জ্বরের কারণে তার অনেক অসস্তি হবার কথা। তাও আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
“আপনি সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন তারমানে?” আমি জড়িয়ে ধরেই প্রশ্ন করলাম।
“কি?” উনি না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন।
“ওইযে, চাঁদটা অনেক সুন্দর! ওইটা।” প্রশ্ন করলাম আমি।
“হুম।” উওর দিল ইথান।
“এখন বলেন আমার দুল কেনো রেখে দিয়েছিলেন। উওর দিতেই হবে।” আমি জেদ করে বললাম।
ইথান সিক্ত গলায় বলল “আমি বলতে বাধ্য না।”
আমি এবার চোখ তুলে ইথানের দিকে তাকালাম আর চোখ পাকিয়ে বললাম, “থাক, বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি। ফুলসজ্জা কি বললেন? আমি নাকি প্লানিং করেছি! আপনি ত আমারো আগে প্লানিং করেছেন। কিন্তু এটা বুঝলাম না যে এতদিন কেন এমন করলেন?”
আমি কড়া দৃষ্টিতে উওরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ইথান কোমলভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি কিছুসময় তাকিয়ে থাকতে পারলাম। কিন্তু বেশি সময় পারলাম না। তাই চোখ সরিয়ে নিলাম।
“আমাকে এভাবে কোনো মেয়ে ইনসাল্ট করার সাহস পায়নি। তোমার মনে হয় সহজে ছেড়ে দিতাম আমি?” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
আমি হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “ত দুল?”
“ওটা রেখেছিলাম পরে তোমাকে শায়েস্তা করতে। বাট তার আগেই একটা কাজের জন্য ফিরে আসতে হলো। আর নিপার ভুল ব্যাখ্যার কারণে মাও ভুল বুঝে বসলো। কিন্তু সে যে বিয়ে অব্দি ঠিক করবে কে জানতো!” বলল ইথান।
আমি হতাশ চোখে তাকিয়ে বললাম, “তারমানে আপনি জানতেনই না? সত্যি?”
ইথান একটু চিন্তা করার ভান করে বলল, “মেবি।”
সাথে সাথে আমি সরু চোখে তাকিয়ে ওর বুকের উপর একটা কিল বসিয়ে দিলাম। আর অভিমানী সুরে বললাম, “মিথ্যুক আপনি। অনেক বড় মিথ্যুক। মনে যেটা আছে সেটা বলে দিলে কি হয়? অসহ্য লোক একটা!”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “বলে দিলেই ত শেষ। তাই কিছু জিনিস না বলা থাকলেই ভাল। বলা হয়ে গেলে কিছুই বাকি থাকে না।”
আমি চোখ পিটপিট করে তাকাতে লাগলাম। কারণ এমনভাবে আমি কোনোদিনো ভেবে দেখিনি!
“কি?” ইথান বলল।
আমি না সূচক মাথা নেড়ে ইথানের বুকে মাথা গুজে দিলাম।
সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
যদিও জ্বর কমছেই না তাও খারাপ লাগছে না। কারণ আমার প্রতিষেধক ত আমার খুব কাছেই আছে।

চলবে

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১০

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১০ : #moon_really_is_beautiful
লেখিকা : #Lucky

“আ…আমি…” আমার মুখ থেকে কিছুই বের হলো না।
“তোমার সাহস কি করে হয় ওই কথা উচ্চারণ করার।” ইথান রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল।
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলাম।
“স্নিগ্ধার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আর তুমি যে কোনো কিছু ভেবে নিয়ে সন্দেহ ত করেছই, আবার অন্য একটা ছেলের কাছে যাওয়ার কথা বলছ!”
এখন কি হবে আমার!
কি করলাম এটা আমি।
আমি এখনো চোখে চোখ মিলাতে পারছি না।
“আর বলব না, সরি।” মিনমিনে গলায় বললাম আমি। তারপর ওনার চোখের দিকে তাকালাম।
রাগ ত কমে নি এখনো।
“সরো।” ঠান্ডা গলায় বলল ইথান।
আমি ঠোঁট উলটে বললাম, “আমাকে সেদিন শুধু কথা বলতে দেখেই মেজাজ দেখালেন। তাহলে আমি একই ফ্ল্যাটে আপনাদের দেখলে কি ঠান্ডা থাকব? এটা মনে হয় আপনার?”
“সরতে বলেছি।” বলল ইথান।
এখন আমারই মেজাজ বিঘড়ে যাচ্ছে।
“না সরব না। এভাবেই চিপকে থাকবো। কি করবেন? বেশি কথা বললে আবার কামড়ে দেব আমি।” রেগে বললাম আমি।
“সারারাত এভাবে থাকতে চাচ্ছ?” ইথান নির্বিকার চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।
“আমার কোনো সমস্যা নেই। আশা করি আপনারও কোনো সমস্যা নেই।” হাসিমুখে বললাম আমি।
“আমার আছে সমস্যা।” বলে উঠল ইথান।
“চুপচাপ থাকুন। আপনার কিসের সমস্যা?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
ইথান কিছু না বলে তাকিয়ে রইল।
“কেনো? আপনার কিছু করতে ইচ্ছে করছে?” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
সাথে সাথে ইথানের মুখটা দেখার মত হয়ে গেল। হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল সে।
হয়তো নির্লজ্জ ভাবছে আমাকে।
তাতে আমার কি!
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, “যাই হোক, ইচ্ছে করলেই ত আর হবেনা। অনেক ভাব নিয়েছেন আপনি। এখন আগে স্বীকার করবেন ‘ভালোবাসি’ তারপর কাছে আসার ধান্দা করবেন। তার আগে যদি আসেন আমি চিৎকার করে লোক জড় করব বলে দিলাম। আমি এরিনও কম যাই না।” গড়গড় করে বললাম আমি।
ইথান শুনে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
“ওকে ঘুমাবো। আসেন ঘুমাই।” বলেই আমি ইথানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার উপরেই শুয়ে পরলাম।
|
|
সকাল সকাল ইথান আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল।
আমি ঘুম ঘুম চোখে মুখ তুলে তাকিয়ে বললাম, “কি?”
“অফিস যাব আমি। দেরি হচ্ছে।” বলল ইথান।
মেজাজ বিঘড়ে গেল আমার আবার।
“কি হলো, সরো?” ভ্রুকুটি করে বলল ইথান।
এসব – ‘সরো, ছাড়ো, দেরি হচ্ছে’ এগুলো লাইন বলবে মেয়েরা। কিন্তু এখানে দেখো!
যত্তসব আন-রোম্যান্টিক।
“কি হলো?” বলল ইথান।
আমি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম, “সরে যাব যদি আমার একটা প্রশ্নের উওর দেন তাহলে।”
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“আমার কানের দুল, যেটা আমি সেই বিয়ে বাড়িতে হারিয়ে ফেলেছিলাম, আপনার ড্রয়ারের মধ্যে কিভাবে এলো?” ভ্রু উঁচু করে বললাম আমি।
ইথান শোনার সাথে সাথে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে গেল। আর আলমারির কাছে যেতে যেতে বলল,”জানিনা আমি।”
আমি মুখ বাকা করে বললাম, “ফালতু এক্সকিউজ দিয়েন না।”
“তো তোমার কি মনে হয় আমি নিজের কাছে রাখবো?” ঘাড় ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়ে বলল ইথান। তারপর আলমারি থেকে নিজের কাপড় বের করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমি মনে মনে ফুসতে লাগলাম।
সে নিজের মত গোসল করতে চলে গেল।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
সন্ধ্যার দিকে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দিতেই আমি সেই ডাক্তারকে দেখলাম।
উনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ভালো আছো এখন?”
আমি হাসিমুখে বললাম, হ্যা, ঠিক আছি। ভিতরে আসেন।
উনি ভিতরে এসে সোফায় বসতে বসতেই ইথানের মা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন আর বললেন, নন্দিনীরাও নাকি আসবে?
“রাস্তায় আছে। আমি ত চেম্বার থেকে এসেছি। মেঘ করেছে বাহিরে। জানিনা বৃষ্টি হবে কিনা।” বললেন উনি।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”বসো, মা এখানে। আর ইথানকে দেখছি না! সে কোথায়! দুই-তিন মাস দেখা হলোনা। ইন্ডিয়ায় ছিলাম তাই বিয়েতেও আসতে পারলাম না আমি।”
আমি মৃদু হেসে বসলাম আর বললাম, “আসেনি। আসবে।”
হঠাৎ এই ডাক্তারের লাস্ট দুই লাইন কথা আবার মনের মধ্যে রিপিট করলাম। কারণ শেষ কথাগুলো ঠিক বোধগম্য হলো না।
তাই আমি অনেক কৌতুহল নিয়ে বললাম,”আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে এসে ইথানের সাথে কথা হয়নি?”
“না। কেনো?” ডাক্তার আংকেল প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
তাহলে কোলে বসিয়ে রাখলে পেটব্যথা চলে যাবে এটা আবার কোন ডাক্তার বলেছিল ইথানকে?
নাকি উনি মিথ্যা বলেছিলেন!
আমি চোখ ছোটো ছোটো করে বিড়বিড় করে বলে উঠলাম,”আসুক আজকে।”
ডাক্তারটা না বুঝে হা করেই তাকিয়ে রইল।
“কিছুনা। একটু আসছি।” বলে আমি নিজেদের রুমে চলে এলাম।
এসেই আমার পাইচারি শুরু হলো।
সবকিছু পাজেলের মত হয়ে যাচ্ছে।
এই দুল, ফুলদানি, জেলাসি, কোলে বসানো। এগুলো মিলিয়ে ত মনে হয়…। উফ না, কিচ্ছু মনে হয়না। গতদিন অনেক কিছু মনে করলাম। কিন্তু হলো কি??
কিছুই না।
আমি একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসলাম।
তখনি কলিং বেলে চাপ পড়লো।
সাথে সাথে মনে হলো ইথান এসেছে। আমি চট করে নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম।
ঠোঁটটায় একটু লিপিস্টিক না দিলেই নয়। তাই দ্রুত লাল খয়েরী লিপিস্টিক টা নিয়ে নিলাম।
যাক এখন বেশি সুন্দর লাগছে।
আমি আয়নার কাছ থেকে সরে এসে বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিন্তু সে ত আসছেই না!
আমি বার বার দরজার দিকে তাকাতে লাগলাম।
খানিক বাদেই মনে পরল ডাক্তার আংকেলের সাথে হয়তো কথা বলছে।
তাই আমিও নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম।
তখনি রুমের থেকে একটু দূরেই ইথান আর ওই দিশা মেয়েটাকে দেখলাম।
দিশা মাথা নিচু করে মিনমিন করে কি যেন বলছে।
আর সেটা শুনে ইথান শুধু একটা মৃদু হাসি দিলো।
আর সেটা দেখেই ত আমার গা জ্বলে গেল। দিশা মেয়েটাকে নিয়ে আমার সন্দেহ প্রথম থেকেই।
এই মেয়ে সুবিধার না।
তাছাড়া এমন হাসি ইথান শুধু আমাকে দিবে, আমাকে। আর কাউকে না।
আমি রেগে এদিক ওদিক তাকাতেই হাতের কাছে একটা কাঠের টুলের উপর কাচের হাঁস রাখা দেখলাম।
ওনাদের এসব খোশগল্প আমার সহ্য হচ্ছেনা। এতই গল্প যে আমাকে চোখে দেখতেই পাচ্ছে না। তাই এক ধাক্কা দিয়ে কাচের হাঁসটা মেঝেতে ফেলে দিলাম।
সশব্দে সেটা মেঝের টাইলসে পড়ে গুড়োগুড়ো হয়ে গেল।
তবে এর বিনিময়ে তাদের খোশগল্প গল্প বন্ধ হলো।
তারা দুইজনই চমকে আমার দিকে তাকালো।
আমি আর দাঁড়ালাম না। সোজা বাসার ছাদের দিকে হাটা শুরু করলাম।
অসহ্য লাগছে।
ইথানের আশেপাশে মেয়ের অভাব নেই!
আমার ত এখন সত্যিই মৃদুলের গলা জড়িয়ে ধরে গল্প করতে ইচ্ছে করছে।
.
আমি ছাদে এসে দাড়াতেই দেখলাম সত্যিই বৃষ্টি নামবে নামবে অবস্থা।
এখন কি করবো! ফিরে যাব?
অসম্ভব।
কি করছে উনি কে জানে? এত দেরি করছে আসতে?
নাকি ওই মেয়ের সাথে আবার গল্প জুড়ে দিলো!
আমি রাগে ফুলতে ফুলতে ছাদের রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লাম।
আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম, এটাও আবার কোনো স্টুডেন্ট!
দেখে ত বয়স ইথানের সমান মনে হয়।
উফ। চিন্তা করেই নিজের মাথার চুল দুইহাতে চেপে ধরে হাটুতে মাথা গুজে দিলাম।
সাথে সাথেই শুরু হলো বৃষ্টি। আমি মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালাম।
ঘন কালো মেঘ করেছে।
মনে মনে ঠিক করলাম নীচে যাব। কারণ ওই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। আমার ইথানের সাথে কিছু করে দিলে?
ভালো এরিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ছাদের রেলিং দিয়ে হাটতে হাটতে বলল, “সবাই কী তোর মত লুচ্চা!”
“এরিন তুই নিচে যা, আর ঠাটিয়ে দুই থাপ্পড় লাগাবি ওই মেয়েকে।” খারাপ এরিন বলল।
আমি মনে মনে তাই-ই করার জন্য ঠিক করে নিলাম।
কিন্তু উঠে দাড়ানোর আগেই ইথান ছাদে ঢুকলো।
আর ঢুকেই আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালো।
তাকে দেখেই আমি মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। এত সময়ে এসেছে সে।
সে বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই হেটে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি কপাল কুচকে ফেললাম।
কোনো কিছু না বলেই সে আমার পাশে বসে পরল যেদিকে আমি মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম।
তাই সাথে সাথে আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
কথা বলবই না আমি। দেরি করে এসেছে কেনো?
“ঠান্ডা লাগবে নীচে চলো।” বলল ইথান।
আমি কিছুই বললাম না। মুখ ফুলিয়েই রইলাম।
যদিও আরেকটু হলেই কিনা আমি গলে যাব।
এই ছেলের থেকে দূরে থাকাই যায় না।
কারণ বিশ্বাস আছে সে আমাকে ধোকা দেবে না।
আমাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে সে বলতে লাগল, “দিশা পছন্দ করত আমাকে।”
শুনেই আমি সরু চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

“আমি না করে দিয়েছিলাম। তাও বিভিন্নভাবে আমাকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করত। বোঝানো থেকে তা এক পর্যায়ে পাগলামিতে চলে গেল। সুইসাইড করবে, নিজের হাত কাটবে, ব্লা ব্লা। তার মা-বাবা তার পাগলামি ভয় পেত। কিন্তু তারা এটা জানত না যে আমার জন্য এমন করছে। আমি ওকে অনেক ইগনোর করেই চলতাম। ওর মা বাবা ওকে অনেক বুঝানোর পর একটু ঠিক হলো। যদিও তারা এখনো জানেনা যে আমার জন্যই দিশা এমন করত। then তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল।” কথা শেষ করে ইথান আমার দিকে তাকালো।
আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে ঝাঝানো গলায় বলতে লাগলাম “তাহলে আজকে ওর সাথে কেন আপনি…?”
“সবকিছুর জন্য সরি বলছিল। আর করবে না এমন। আর আগের বিষয় ভুলে যেতে। এখন একজন ক্ষমা চাইলে কি করা উচিত?” কপাল কুচকে বলল ইথান।
আমি এবার কি বলব চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু বলার মত কিছু না পেয়ে ওর মুখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম।
দুজনেই ভিজে বিড়ালের মত ভিজে চুপসে যাচ্ছি। ঠান্ডাও লাগছে। হয়তো ইথানেরও লাগছে।
আমাদের ওঠা উচিত। নাহলে আমার জন্য ওর ঠান্ডা লেগে যাবে।
আমি আড়চোখে ইথানের দিকে তাকিয়ে বললাম, “নিচে চলুন। নাহলে ঠান্ডা লাগবে আ..আপনার।”
ইথান নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “The moon really is beautiful, Isn’t it?”
সাথে সাথে আমি চমকে ইথানের দিকে তাকালাম।
তার ঠোঁটের কোনে আবার সেই হাসি। যা সেদিন ছিলো।
এই ঠান্ডা বৃষ্টির জলে গা ভিজলেও এখন ঠান্ডা লাগছে না। এদিকে চোখের পলকও কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফেলতে ভুলে গেছি। কারণ এটা সত্যিই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।
তবে নিজের মধ্যে হুস ফিরে আসার সাথে সাথে আমি উঠে দাড়িয়ে ছুট লাগালাম নিচে নামার জন্য।
তবে লজ্জার জন্য না। বিষয়টা হজম করার জন্য।

ছাদ থেকে রুম পর্যন্ত পানি পানি বানিয়ে ফেলেছি। শরীর শীতে কাঁপছে সেদিকে খেয়াল নেই।কারণ ইথানের বলা কথাটা এখনো কানে বাজছে।
হয়তো এখন আমি সব প্রশ্নের উওর মেলাতে পারব।
চিন্তা করেই মুখ ফুটে হাসি এলো।
আর সাথে সাথেই ইথান রুমে এসে ঢুকলো।
তখনি আমি মুখ থেকে হাসিটা সরিয়ে আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। তারপর পুরোপুরিই তাকালাম।
“এখনো চেঞ্জ করো নি?” ইথান স্বাভাবিক ভাবেই বলল।
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
Hot শব্দের উপরে যদি কোনো শব্দ থাকে তাহলে সেটাই লাগছে ইথানকে। গাড় বেগুনি শার্টটা ভিজে গায়ে একদম লেগে আছে।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রুকুচকে ফেললেন আর বললেন, “কি?”
“আপনাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।” বিড়বিড় করে বলে ফেললাম আমি।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৯

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৯ : #spy
লেখিকা : #Lucky

ইথান আমার কপালে গভীর ভাবে কিস করল।
সাথে সাথে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম আর চোখ বন্ধ করে নিলাম।
ইথান আমার চোখের উপরেও ঠোঁট স্পর্শ করলো। আর তারপর গালে।
“আ..আপনি….”আমার ঠোঁট রীতিমতো কাপতে লাগল।
আমার কথা শেষ হবার আগেই ইথান আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল।
আমি চমকে উঠলাম। এটা কি হচ্ছে হঠাৎ!
ইথান আমার ওড়নায় হাত দেওয়ার সাথে সাথে আমি বলে উঠলাম, “এক মিনিট, ইথার আমি…।”
কিন্তু উনি ত শুনছেনই না।
আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, “ইথান…ইথান…।”

হঠাৎই আমার এক হাত টান দিয়ে কেউ আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।
আমি উঠে বসেই অবাক হয়ে গেলাম আর ইথানের দিকে তাকালাম।
“Are you stupid? ঘুমের মধ্যে এভাবে ইথান ইথান করছ কেন?” ইথান বিরক্ত হয়ে বলল।
তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে তার কাচা ঘুমের বারোটা বাজানো হয়েছে।
আমি লজ্জায় জলদি হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম।
“আজব।” বলেই ইথান আবার শুয়ে পরল।
এসব বখাটে মার্কা স্বপ্ন কেউ দেখে!
ছি এরিন! তোর ডুবে মরা উচিত।
.
আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে তিনটার বেশি বাজে। এখনো সকাল হতে দেরি।
তাই গুটিগুটি মেরে আবার শুয়ে পরলাম।
এবার এক ঘুমে সকাল হয়ে গেল।
কিন্তু একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল।
হয়তো এতসময়ে সবার খাওয়া দাওয়াও শেষ।
আমি দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে গেলাম।
আপাতত থ্রিপিস-ই পরছি। হাত কেটে গেছে বলে কথা।
তবে ইথান বেরিয়ে গেছে। কালকের জন্য সরি বলা ত হলো না।
রাতেই বলতে হবে আজ।

নিজের জামাকাপড়ের অবস্থা বেহাল। মানে আলমারিতে রাখা আমার জামাকাপড় গুলো। গোছাতে হবে আজ সব।
এখান থেকে টেনেটুনে বের করে শুধু পরার কাজ পরলেই ত হবে না, গোছাতেও ত হবে।
তাই আমি নিজের জামাকাপড় গুলো সুন্দর ভাবে গোছানো শুরু করে দিলাম।
তবে নিজের টা শেষ করে মনে হলো ইথানের টাও গোছাই। যদিও তার টা গোছানোই আছে তাও ঘাটাঘাটি করতে ভালো লাগছে।
আমি তার সম্পুর্ন আলমারির জিনিস বের করে করে দেখতে লাগলাম।
আর দেখতে দেখতেই একটা ড্রয়ারে আমার দুলটা পেয়ে গেলাম।
দুলটা হাতে নিয়ে ভালমতো দেখলাম। হ্যা এটা আমারই দুল।
আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।
অদ্ভুত ত! এটা উনি কোথা থেকে পেলো? মানে ওনার আলমারিতে এলো কিভাবে।
আমি হন্তদন্ত করে নিজের সাজার জিনিসের বক্সটা বের করলাম এটা দেখার জন্য যে আমার একটা দুল আছে কি না।
বক্সটার মধ্যে অন্য দুলটা পেয়ে আমি হা হয়ে গেলাম।
ইথান আমার দুল নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল? ওনার কাছে কিভাবে এলো! কোথা থেকে পেল? আর পেলেও নিজের কাছে রেখে দিয়েছে কেনো?

কিছুই ত বুঝতে পারছি না।
আমি চোখদুটো সরু করে মনে মনে বললাম, আসেন আজ বাসায়। আপনাকে কাচা কাচা চিবিয়ে খাব আমি। ভাব নেওয়া?!
.
অপেক্ষা আর অপেক্ষা। কিন্তু আজ যেন সন্ধ্যা আর হচ্ছেই না।
আমি ত দুল হাতে নিয়ে বসে আছি।
আর মনে মনে নানা চিন্তাভাবনা করছি।
উনি তাহলে কবে থেকে আমাকে পছন্দ করে?
সেই ছোটো বেলা থেকে!
ছোটোবেলার সেই কথা আবার মনে পরে গেলো।
ইথানের মা সেদিন শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার সময় গল্প করছিলেন।
ওনারা যেদিন আমাদের বাড়িতে প্রথম যান আমার বয়স তখন চার বা সাড়ে চার হবে।
আর ইথানের এগারো।
সেই বাসাতে আমাদের গেস্ট রুম না থাকায় ইথানদের আমার রুম টা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
তখন সে ভুলবশত আমার ফুলদানি ভেঙে দিয়েছিল।
আর আমি ত কান্নাকাটি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছিলাম।
সবাই বুঝালো নিউ একটা কিনে দেওয়া হবে। কিন্তু আমার তাও থামার নাম নেই।
আমার এই ভাঙাটাই এখনি ঠিক করে দিতে হবে। সবাই পরে গেল মহা ঝামেলায়।
ছোটো থেকে বাবা না থাকায় আদর দিয়ে দিয়ে বাদর বানিয়েছিল মা।
পরে আর কি!
ইথান নিজের হাতে গ্লু কিনে এনে আমার ফুলদানি জুড়ে দিলো।
সেটা পেয়ে আমি মহা খুশি হয়ে গিয়েছিলাম।
আর এত খুশিতে আমি বলেছিলাম যে আমরা একসাথে পুতুল খেলব আর নিজেদের পুতুলের বিয়ে দিব।
কিন্তু ইথান বলেছিলো যে সে পুতুল খেলে না।
আমি একটু চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আমি পরক্ষণেই এক ঝলক হাসি দিয়ে বলে ফেলেছিলাম, তাহলে আমরা বিয়ে করে বিয়ে বিয়ে খেলতে পারি।
ইথান নিরলসভাবে বলেছিল, আমি তোমার মত অদ্ভুত মেয়েকে বিয়ে করব না।
ব্যাস এটুকুতেই আমার কান্না আবার শুরু।
তখনি ইথানের মা আমাকে থামানোর জন্য বলেছিলো, তুমি কেদো না। ও বিয়ে করবে না, ওর ঘাড় করবে! আমি নিজে বিয়ে দিবো তোমাদের। ঠিক আছে?
“সত্যি!” বলে আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলাম।
কিন্তু ইথান ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
.
ফোন বেজে উঠার সাথে সাথে আমার ধ্যান ভাঙলো।
ফোনের দিকে তাকাতেই প্রেমার নামটা দেখলাম।
আমি ফোন তুলে কানে দিলাম।
“হ্যা বল। কি করছিস?” জিজ্ঞেস করলাম আমি।
“তুই আমাদের বিল্ডিংয়ে বাসা নিলি অথচ আমাকে বললিও না।” প্রেমা অভিমানী সুরে বলল।
“কি বলছিস আবোলতাবোল?!”
“নিস নি বাসা?” প্রেমা অবাক হয়ে বলল।
“না এখানেই ত আছি এখনো। তোর কেন মনে হলো? বললাম আমি।
“না, ইথানকে আমাদের বিল্ডিংয়ে দেখলাম। একটা মেয়ের সাথে একটা ফ্ল্যাটে ঢুকলো। ইথানকে ভালো মত দেখতে পেয়েছিলাম। আর মেয়েটাকে যদিও দেখিনি তাও হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো। আমি মনে করলাম তুই কিনা। মানে তোরা এখানে বাসা নিলি কিনা। তাও আমাকে না বলে।”
“মেয়ের সাথে! ফ্ল্যাটে! কোন ফ্ল্যাটে?” শুনেই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। তাও আবার নাকি হাসতে হাসতে!
“হ্যা। ছয় তলার। আমি ছাদ থেকে সিড়ি দিয়ে নামছিলাম তখন দেখেছিলাম লিফট থেকে বের হতে। আচ্ছা শোন কাল কলেজ যাবি?…।”
আমি ফোন কেটে দিলাম। এখন আমার কিছু শোনার ইচ্ছে হচ্ছেনা।
এখন এই মেয়ে আবার কে!
ময়ূরী না দিশা? কোনটা? নাকি আরেকটা।
উফ মেজাজ বিঘড়ে যাচ্ছে আমার। আমি নিজের মাথার চুল দুই হাত দিয়ে টেনে ধরে মনে মনে বললাম, যদি গিয়ে দেখি অন্য মেয়ের সাথে গল্প করে বেড়াচ্ছেন তাহলে আপনার একদিন কি আমার একদিন।
কিন্তু ওই মেয়ে যদি ইথানের সাথে কিছু করে ফেলে।
চিন্তা করেই আমার কলিজা উড়ে গেল।
আমি দ্রুত পার্স নিয়ে ছুটলাম।
পিছন থেকে ইথানের মা অনেক বার ডাকলো আর বলল, কি হয়েছে!
পরে এসে বলব। বলেই আমি বের হয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে বাসার একটা গাড়ি নিয়ে ইথানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম।
এখন ত মনে হচ্ছে রাস্তাই শেষ হচ্ছে না।
“জলদি চালান একটু।” বিরক্ত হয়ে বললাম আমি।
ড্রাইভার একটু ইনিয়েবিনিয়ে বলল, “এর চেয়ে জোরে চালালে ত এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।”
এই ড্রাইভার বেটার মাসিক বেতন কমিয়ে যদি না দিয়েছি আমি!
“যেটা বলি সেটা শোনেন। এত বেশি পটপট করেন কেন?” রেগে বলে উঠলাম আমি।
ড্রাইভার ভ্যাবাচেকা খেয়ে একটু স্পিড বাড়ালো।

তাও পৌছাতে বেশ টাইম লাগলো। আমি একটুও সময় নষ্ট না করে দ্রুত নেমে ছয় তলাতে সিড়ি দিয়েই উঠে গেলাম।
তারপর হাপাতে হাপাতে ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাড়ালাম।
এতটা পথ এসে এখন আমার কলিং বেল চাপ দিতে কেমন অসস্তি লাগছে।
মনে হচ্ছে, যদি খারাপ কিছু দেখি তাহলে!
যা শুরুই হয়নি তা আগেই শেষ হয়ে গেলে?
আমার হাত কাঁপতে লাগলো। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে পরপর দুইবার কলিং বেল চাপলাম।
দরজা খোলার অল্প একটু দেরিও সহ্য হচ্ছে না। অজানা ভয় ঝেকে ধরেছে আমাকে। হার্টবিটও প্রচন্ড বেড়ে গেছে। তবে তা ভয়ে।
এক মিনিট পরেই একটা মেয়ে এসে দরজা খুলল। তাও পুরোটা না হালকা খুলে উঁকি দিলো।
সে অচেনা কাউকে দেখে ভ্রুকুচকে ফেলেছে রীতিমতো।
আর আমি তার গায়ের জামা দেখে প্রচন্ড ভাবে বিরক্ত হয়ে গেছি।
টাইট-ফিট ওয়েস্টার্ন পড়েছে কিন্তু ওড়না নেই গায়ে।
দেখেই গা জ্বলে গেল আমার। এটাকে দেখে প্রেমার আমার কথা মনে হলো কিভাবে? আমি এসব পড়ি?

যাইহোক এই মেয়ের সাথে সত্যিই ইথান এক ফ্ল্যাটে এত সময় আছে!
“কে আপনি? কাকে চান?” মেয়েটা প্রশ্ন করল।
আমি হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে নিলাম আর নিজেকে সামলে নিয়ে শক্ত মুখে তাকিয়ে বললাম, “ইথান কোথায়?”
মেয়েটা হা হয়ে গেল আর বলল, “ইথান? তার সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”
আমি রাগে জ্বলে কিছু বলার আগেই ইথান এসে মেয়েটার পাশে দাড়ালো।
সাথে সাথে আমার ভিতরটা মুচড়ে উঠল।
ইথান আমাকে দেখে বেশ কিছুটা অবাক হলো।
হবে না-ই বা কেনো?
আমাকে ভুল সময়ে কিভাবে এক্সপেক্ট করবে?
“তুমি এখানে কিভাবে?” বলল ইথান।
আমি শুকনো মুখে তাকিয়ে রইলাম কিছুই বললাম না।
“তুমি চেনো? কে এটা?” মেয়েটা আকাশ থেকে পড়ে প্রশ্ন করল।
আমি রাগে জ্বলে উঠে বললাম, “চিনবে না কেনো? আমি ওর বউ হই ও আমার বর হয়। জামাকাপড় নেই? কিনে দেব? এসব পড়ে আমার ইথানকে…”
আমি আর বলতে পারলাম না। বলতেও বাধছে আমার। শ্বাসও দ্রুত গতিতে চলছে।
চোখে পানি আসতে চাইলেও আসতে দেবই না।
এই ফালতু মেয়েকে আমি বুঝে নিব।
তারা দুইজনই স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে।
বেশি কিছু বলতে চেয়েও বললাম না কারণ ইথান নিজ ইচ্ছায় এসেছে। তাও নাকি হাসতে হাসতে।
কুত্তা একটা।
রাগ লাগলেও ইথানকে একা রেখে যাব না আমি।
তাই আমি ইথানের হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বাহিরে বের করে নিয়ে এলাম। আর আগে পিছে না তাকিয়ে ওনাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে হনহনিয়ে নেমে আসতে লাগলাম।
উনি কিছুই বলছেন না।
ভাল মন্দ কিছুই না।
আমি ওনার মুখের দিকে তাকাচ্ছিও না। আমার ভিতরটা জ্বলে গেলেও আমি চুপ করেই আছি।
পার্কিং এ ওনার গাড়ির কাছে এসে আমি ওনার হাত ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু ওনার দিকে তাকালাম না। নিজের মত গাড়িতে উঠে বসে সিট বেল্ট বেধে নিলাম।
আমার বসার কয়েক সেকেন্ড পরেই ইথানও এসে গাড়িতে বসল।
আমি জালানার কাচের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
আমার মনের মধ্যে কেমন হচ্ছে সেটা শুধু আমিই জানি।
সবচেয়ে বেশি অবাক লাগছে যে উনি কিছুই বলছেন না।
আমি গাড়ির কাচের দিকে তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝলাম সে যেন এটা গায়েই মাখায় নি এমন অবস্থা। তার মন মেজাজও স্বাভাবিক।
আমি অন্যমনস্ক হয়ে মাথা জালানার দিকে কাত করে রাখলাম।
জ্যাম না থাকায় জলদিই বাসায় এসে গেলাম। আর সবাইকে উপেক্ষা করে রুমে চলে এলাম।
আমাদের দুজনকে একসাথে আসতে দেখে শাশুড়ী আর কোনো প্রশ্ন করেনি। শুধু মুচকি মুচকি হাসছিলো।
আমি রুমে এসে ঘর অন্ধকার করে ডিমলাইটা জ্বালিয়ে দিলাম। তারপর বিছানায় বসে হাটুতে মাথা গুজে নিলাম।
খুবই অসস্তি লাগছে। কান্না আসছে না কিন্তু অনেক কষ্ট হচ্ছে।
তাও আমি ইথানকে কোনো প্রশ্ন করতে চাই না।
যদি বলে, হ্যা ওই মেয়েটাকে আমি পছন্দ করি। এজন্যই তোমাকে ভালো লাগে না!
যদি ডিভোর্স চায়?
ভেবেই শিউরে উঠলাম আমি।
.
ইথান রুমে এসে ঢুকলো। আমি তাও মাথা তুললাম না।
ইথান লাইট জ্বালালো না। বরং না জ্বালিয়েই ফ্রেস হয়ে জামা চেঞ্জ করে আমার পাশে এসে নিজের মতো শুয়ে পড়লো।
আমি মাথা তুলে তাকালাম। সে সোজা হয়ে শুয়ে মাথার নিচে এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
আমি অবাক ছাড়া কিছুই হচ্ছি না।
তারমানে কি আমি যা ভাবছি তাই-ই সত্যি?
এতদিন তাহলে কি ছিলো? আমার দুলটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো কেনো?
মাথা ব্যথাই হয়ে যাবে চিন্তা করে করে। তাও উওর ত পাব না। আর না প্রশ্ন করতে পারব।
তাছাড়া উনি ত কোনোদিনো বলেই নি ‘ভালোবাসি’ কথাটা।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নামতে লাগলাম।
সাথে সাথে ইথান আমার এক হাত ধরে নিল।
আমি থমকে গেলাম আর আস্তে আস্তে মুখ ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম। সাথে সাথে চোখে পানি চলে এলো আমার।
“আমি তোমাকে….”
ইথান কথা শেষ করার আগেই আমি ঝট করে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর উপরই শুয়ে পরলাম। আর কাদতে কাদতে বলতে লাগলাম, “আমি মোটেও আপনাকে ডিভোর্স দেব না। মোটেও না, মোটেও না। মরে গেলেও না। আপনি শুধু আমার। ওই মেয়ে যা পড়ে আমিও পরব। ওই মেয়ে যা করে আমিও করব। প্লিজ প্লিজ আপনি….”
আমি আর বলতে পারলাম না। গলা ধরে এলো।
আমি শার্ট ভিজিয়ে ফেললাম ইথানের।
ইথান আমার মাথার উপর এক হাত আর পিঠে উপর আরেক হাত রেখে হালকা হাসির সাথে বলতে লাগল, “আমার স্টুডেন্ট সে। আগে পড়াতাম। আর তার বাবা আমার কলেজ থেকে ভার্সিটি লাইফের স্যার। আপাতত তিনি অনেক অসুস্থ যার কারণেই ওখানে যাওয়া। অতগুলো কথা না বলে ভিতরে যেতে পারতে।”
শোনার সাথে সাথে আমার মাথায় বাজ পড়ল।
নিজের নাক কাটা গেল আমার। আমি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকিয়ে নিলাম ইথানের বুকে।
“স্ট্রেঞ্জ! তুমি আমাকে সন্দেহ করেছো। মনে মনে সন্দেহটাকে সত্যিও ভেবে নিয়েছো। তাও ডিভোর্স দিবা না!” রসিকতা করে বলল ইথান।
সাথে সাথে আমি মুখ লুকানো অবস্থাতেই ওনার পেটে জোরে চিমটি কেটে দিলাম।
উনি তাও থামলেন না। বলতে লাগলেন, “অদ্ভুত তুমি।”
“হ্যা আমিই ত অদ্ভুত। আর আপনার ওই স্টুডেন্টই ত অনেক সদ্ভুত, তাইনা?” আমি রেগে বলে উঠলাম।
যদিও সদ্ভুত বলে কিছুই নেই। নতুন বাংলা শব্দ বানালাম আমি।
ইথান সেদিকে খেয়াল না করে বলল, হ্যা ঠিক।
সাথে সাথে আমার মেজাজ বিঘড়ে গেল।
আমি মাথা তুলে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “ওকেই ত ভালো লাগবে! অসভ্য একটা মেয়ে। ওকে পড়াতে গেলে আপনার খবর আছে বলে দিলাম। তাছাড়া স্যারকে তুমি তুমি করে বলবে কেন?”
“ও অনেক ভালো মেয়ে, তুমিই উল্টো বুঝেছ।” অবাক হয়ে বলল ইথান।
এই কথা শুনে আমি রাগে লাল হয়ে বললাম, আপনি যদি আরেকবার ওকে নিয়ে সাফাই গান, আমিও মৃদুলের সাথে এক ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবো বলে দিলাম।

ওনার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল আমার শেষ কথাটা শুনে।
“কি বললা মাত্র?” থমথমে গলায় বলল ইথান।
“যা বলেছি তা আপনি ঠিকই শুনেছেন। আমি মৃদুলের সাথে…” বলতে বলতে ওনার চোখে মুখে রাগের ছাপ দেখে আমি চুপ হয়ে গেলাম।
“শেষ করো যা বলছিলা।” রাগী স্বরে বলল ইথান।
আমি ভড়কে গেলাম আর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
কথাটা বলে শেষ ত করতে পারব কিন্তু পরবর্তীতে যা বাঁশ দেবে সেটা ত নিতে পারব না।
“Dare You finish the line.” দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেলাম।
ভালো এরিনের আত্মা আমার কানে কানে বলল, “নিজের কবর নিজেই খোড়ছস ছেমড়ি, আমি স্বর্গে গেলাম, তুই নরকে যা। যা মর।”

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৮

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৮ : #প্রাইভেসি
লেখিকা : #Lucky

সাথে সাথে আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে একশ্বাসে বলে উঠলাম, “এখন না প্লিজ, আমি এখনো রেডি না।”
.
কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করেই রইলাম কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।
তাই আস্তে আস্তে এক চোখ প্রথমে খুললাম। আর ঘটনা বুঝেতে পেরে দুই চোখই খুললাম।
উনি আমার গলার পেন্ডেনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
আমি বোকা সেজে গেলাম।
এই নিয়ে দুইবার একই ভুল করলাম। কি লজ্জার বিষয়। এ জীবন রেখে কি লাভ!
তাছাড়া এই পেন্ডেন টা ওনার এভাবে হাত দিয়ে ধরে দেখার কি আছে! যত্তসব।
আমি পেন্ডেনের চেইন ধরে হালকা টান দিয়ে বললাম, “ছাড়ুন এটা।”
কিন্তু উনি শক্ত করেই ধরে রইলেন। আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“কি করছেন আপনি! ছিড়ে যাবে ত।” আমি বিরক্ত হয়ে বললাম।
উনি হঠাৎই ছেড়ে দিলেন। তারপর আবার আমার শাড়ির দিকে মনোযোগ দিলেন।
আশ্চর্য! ভালো মন্দ কিছুই বলল না!
কিছু ত বলতেই পারত। অসহ্য।
.
উনি শাড়ির বিষয়টা আমলে আনতে পারছেন না। তাও যতটুকু পারছেন চেষ্টা করছেন।
উনি আমাকে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন আর আমি গুজে নিচ্ছি।
বেচারার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।
ইচ্ছে করছে মুছে দিই।
কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
উনি কুচি করতে লাগলেন।
কুচি করতে অনেক সময় লেগে গেল তার।
কিন্তু শেষ অব্দি ভালই হলো।
উনি কুচি করে নিজেই কুচিটা গুজে দিতে গেলেন।
কিন্তু গুজে দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে আমাকে গুজে নেওয়ার জন্য বললেন।
আমি ওনার হাত থেকে কুচিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি গুজে নিলাম।
ইথান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “চলো এখন।”
“পার্সটা ফেলে এসেছি। নিয়ে আসি?” চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম।
“চলো।” চোখ দিয়ে ইশারা করে বের হতে বললেন উনি।
আমি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম।
উনি নিজের কোটটা হাতে নিয়ে বের হয়ে এলেন।

দুইজনেই একসাথে ভলেন্টিয়াদের রুমের সামনে এসে হাজির হলাম। উনি দরজার কাছে দাড়ালেন।
আমি ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রেমা বলল, “যাস নি এখনো? সব কাজ শেষ। সবাই গেছে। আমরাও যাব এখনি।”
“হলে ছিলাম। শাড়ি পুরো খুলে গিয়েছিল। কি একটা অবস্থা!” কপাল কুচকে পার্সটা খুজতে খুজতে বললাম আমি।
শিলা সুর টেনে বলল, “অহ~~, তা খুলে গেছিলো নাকি ইথান খুলে দিয়েছিল।”
আমি চমকে উঠে চোখ পাকিয়ে তাকালাম ওর কথা শুনে।
ইথান বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো শুনেও নিয়েছে।
আমি ইশারায় বললাম, চুপ করতে।
কিন্তু সে থামার মত না।
“শেষমেশ হল রুমে! বাসরঘরে করলেই ত পারতি। যাইহোক কি কি করেছিস রে?” ভ্রু উঁচু করে বাজে ইশারা করলো শিলা।
“বাহিরেই আছে। চুপ কর।” ফিসফিস করে হাতজোড় করে বললাম আমি।
“আছে ত কি হয়েছে! আমাদেরই ত জিজু।” বলল শিলা।
প্রেমা সরু চোখে তাকিয়ে মাথায় হালকা করে বাড়ি মারলো শিলার। আর বলল, “অনেক হয়েছে চুপ কর। তোর বিয়ের পর নিজেই দেখে নিস কি কি হয়।”

শিলা মুখ ফুলিয়ে নিজের মাথা ডলতে লাগলো।
“তুই যা৷ এখানে থাকলে আরো উল্টোপাল্টা শুনাবে ও।” প্রেমা আমাকে বলল।
আর কি বাকি আছে! ইথান ত মনে হয় শুনেই ফেলেছে।
আমি নিজের পার্সটা নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলাম।
ইথান এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে অন্য হাতে কোটটা ধরে দাড়িয়ে ছিল।
আমাকে দেখে একটা ঠান্ডা চাহনির সাথে তাকিয়ে হাটা শুরু করে দিল। দেখেই বুঝলাম তার মেজাজ বিঘড়ে আছে।
এখন আবার কি হলো!
এতসময় ত ঠিক ছিলো।
নাকি শিলার কথাগুলো শুনে ফেলেছে!
.
চুপচাপ গাড়িতে বসে সিট বেল্ট বাধলাম। ইথান সীটে বসে নিজের টাই টা ঢিলে করে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আমি ওর দিকে আড় চোখে তাকাতে লাগলাম।
সে গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে ব্যস্ত।
আর সেই মুহুর্তেই আমার চোখ পড়লো ওনার ঘাড়ের কাছে। যেখানে আমি কামড় বসিয়ে দিয়েছিলাম।
জায়গাটায় লালচে দাগ হয়ে গেছে। টাই ঢিলে করায় আর অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে রাখায় এখন ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।
আমার গত একদিন আগে বেকুবের মত করা কাজটা আবার মনে পরে গেল। তাই তৎক্ষনাৎ আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
যদিও আমার ইচ্ছে করছে ভালোভাবে দেখতে ঠিক কতটা লাল হয়ে গেছে।
হঠাৎই মনে হলো দাগ হয়ে গেলে!
আমি আবার ওর দিকে তাকালাম।
ইথান সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে এখনো তার মেজাজ বিঘড়েই আছে।
কি হয়েছে কে জানে!
আমি চিন্তা করতে করতে সামনে ঘুরলাম। কিন্তু চিন্তা করে ফলাফল হলো জিরো।

ঢাকা শহর মানেই জ্যামের জটলা। বাসায় ফিরতে ফিরতে আটটা বাজল।
রাত হয়ে গিয়েই ঝামেলা। সারাদিন এত দৌড়াদৌড়ি করে এখন গোসল না করলেই নয়। কিন্তু ঠান্ডাও লেগে যেতে পারে। যদিও সকালে গোসল করেছিলাম।
তাই ইথানের মা আগেই বলে দিল, এখন গোসল করোনা।
কিন্তু আমাকে ত করাই লাগবে। নাহলে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না।

রুমে এসে ঢুকতেই দেখলাম ইথান ড্রেস চেঞ্জ না করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চাহনি দেখে বুঝলাম সে এখনো খারাপ মুডে আছে। আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে তারপর আলমারি থেকে নিজের ড্রেস নিতে গেলাম। কারণ আমি কিছু করেছি বলে আমার মনে পরে না।
হঠাৎই বুঝলাম ইথান দরজা বন্ধ করে দিলো।
আমি থ মেরে আলমারির মধ্যেই তাকিয়ে রইলাম।
দরজা কেন বন্ধ করছেন উনি!
পরক্ষণেই মনে হলো করতেই পারে। কাজ আছে হয়ত কোনো!
আমি নিজের মত জামা নিয়ে আলমারিটা বন্ধ করে ঘুরতেই ইথানকে আমার সামনে পেলাম।
“কিছু বলবেন?” আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম।
উনি কিছু না বলে শক্ত মুখ করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম তবুও চুপচাপ জায়গায় দাড়িয়ে রইলাম।
উনি আমার একদম কাছে এসে থামলেন।
আমি দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে রাখলাম। হার্টবিট বেড়ে গেছে। আর কিছুক্ষন এভাবে দাড়িয়ে থাকলে আমার খবর হয়ে যাবে।
উনি ত কিছু বলছেনও না। তবে কড়া কিছুই শুনাবে যা তার চাহনিতে বুঝলাম।
তাই আমি ওনার সামনে থেকে সরে গিয়ে বললাম, “আমি কি করেছি!”
“আমার যেটা পছন্দ না সেটাই করেছ।” বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
“তোমার ফ্রেন্ডরা কি করে সেই বিষয়ে আমি interest দেখাই?” শক্ত গলায় বলতে লাগল ইথান।
আমি না বুঝে বোকা সেজে তাকালাম।
“দেখাই?” উনি আবার প্রশ্ন করলেন।
আমি ভয়ে ভয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
“তাহলে তোমার সাহস কি করে হয় ওদের সাথে আমাদের পারসোনাল বিষয় নিয়ে আলোচনা করার!” দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
আমি কাপা গলায় বললাম, “ক.. কি বলেছি আমি?”

“আমি তোমার সাথে যা করি, না করি সেটা আমার আর তোমার মধ্যে থাকবে। লাইক সিরিয়াসলি?! ফুলসজ্জায় যদি কিছু হতও সেটা তুমি অন্যদের কাছে আলোচনা করতা? কমন সেন্স নেই তোমার? প্রাইভেসি বলে ত কিছু থাকা উচিৎ। তুমি এসব বিষয় কি করে তোমার ফ্রেন্ডদের বলো?” রেগে এতগুলো কথা গড়গড় করে বলল ইথান।
আমি শুধু থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলাম। ফ্রেন্ডদের সাথে ত এমন আলোচনা হয়ই। এগুলো হলে কি সমস্যা!
প্রশ্ন করতে চেয়েও করলাম না। না জানি আবার রেগে কিনা ফেটে যায়!
“চুপ করে আছ কেনো এখন? কি কি বলেছ ওদের! যেমন কিভাবে কিস করেছ? কিভাবে বাইট করেছো?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সাথে তাকিয়ে বলল ইথান।
বলতে চাইলাম যে, বলিনি কিছুই। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কিছুই বের হলোনা।
যদিও আমি বলে দিতাম ফ্রেন্ড দের। কারণ আলোচনা করতে করতে মুখ ফস্কে বলা হয় যায় এগুলো।
কিন্তু এগুলোও যে এত গুরুতর ঝগড়ার বিষয় হতে পারে জানতাম না।
উনি কয়েক সেকেন্ড রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন।

আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়।
সরি বললে রাগ কমে যাবে!
উফ কি অসহ্য।
এক মিনিট তারমানে উনি শিলার কথা সব শুনেছেন!
হায়রে কপাল।

আরেকটা বিষয় হলো, উনি যে বললেন আমাদের মধ্যে কিছু হলে বলে দিতাম কিনা!
আমাদের মধ্যে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাহলে!
আমি হা হয়ে বাথরুমের দরজার দিকে তাকালাম।
তারপর ঠোঁট উলটে বিড়বিড় করে বললাম, তাহলে কবে হবে! বেকুব শিলার বাচ্চা, আমার জীবন তছনছ করে দিল! ওর ফুলসজ্জায় যদি আমি বোম না মারি ত আমিও এরিন না।
.
ইথান ফ্রেস হয়ে বের হয়ে এলো। আপাতত সে আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। থম মেরে আছে।
আমি আহত চোখে তার মতিগতি দেখে যাচ্ছি।
সে ফ্রেস হয়ে বেলকোনিতে তোয়ালেটা রেখে দিয়ে এসেই রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি মুখ ফুটে কিছু আর বলতে পারলাম না।

আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ফ্রেস হতে গেলাম। আর হালকা পাতলা গোসল দিয়ে বের হয়ে এলাম।
তারপর হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিলাম। নাহলে ইথানের মা বুঝতে পেরে যাবে।

তারপর ডিনারের জন্য নিচে নামলাম। ডান হাত কেটে গেছে বলে এক প্লেট মাখা ভাত আমার সামনে দিলেন ইথানের মা।
“হাত নাকি কেটে গেছে? কতটা কাটলো দেখি।” বললেন উনি।
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে চুপচাপ বসে আছে। অবশ্য এখন অত চরা মেজাজে নেই। রাগ ঝাড়া হয়ে গেছে যেহুতু।
হয়তো সে ই বলেছে হাত কাটার কথা।
কারণ বাসায় ঢোকার সময় ইথানের মা খেয়াল করেন নি। রান্নাঘর থেকেই আমার সাথে কথা বলছিলেন।

“বেশি না।” উওর দিলাম আমি।
ইথানের মা আমার হাতটা ধরে দেখতে লাগলেন।
“আহারে। আচ্ছা চামচ দিয়ে খাও। নাকি আমি খাইয়ে দিব?” বললেন তিনি।
আমি হাত নাড়িয়ে বলে উঠলাম, “না না, আমি একাই পারব।”

পুরো ডিনার করার সময়টা উনি থম মেরেই রইলেন।
খাওয়া শেষে ইথানের মা আমাকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল, ঝামেলা করেছ তোমরা?
আমি সাথে সাথে না সূচক মাথা নাড়লাম।
কারণ উনি বলেছেন আমাদের ব্যাপার কাউকে না বলতে।
তাই আমি কাউকে কিছু বলব না। কাউকে না।
.
আমি রুমে এসে ইথানকে দেখলাম না।
কই গেল সে!
বেলকনিতে একটা উঁকি দিলাম। সেখানেও নেই।
তাই মন মরা হয় এসে বিছানায় বসলাম।
তখনি ইথান রুমে ঢুকল।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
একদফা চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
ইথান বিছানার সামনে এসে আমার কোলের উপর এন্টিসেপটিক ক্রিম ফেলল। মুখটা খুলে তারপরই আমার কোলে ফেলল আর কর্কটা পাশে ফেলে রাখল। যাতে দ্বিতীয়বার বলতে না হয় আমার যে, খুলে দিন।
আমি ক্রিমটা হাতে নিয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে তার মত বিছানায় শুয়ে উল্টো দিকে ঘুরে রইল।
আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হাতে লাগিয়ে নিলাম।
যদিও রাগ হচ্ছে কারণ উনি আরেকটু ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।
ওনার কি পছন্দ! কি পছন্দ না! আমি কিভাবে জানবো!
হুহ।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৭

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৭ : #শাড়ি_পড়াতে_পারেন?
লেখিকা : #Lucky

বিছানায় মাথা থেকে পা অব্দি চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে শুয়ে আছি।
আমার হার্ট বিট এতটা বেড়ে গেছে যে আমি এই অস্থিরতায় ঘুমাতেও পারছি না।
আধা ঘণ্টা হতে চলল ইথান রুমে আসেনি।বেলকনিতেই আছে।
না আসলেই ভালো।
নিজের মুখ আর রাখলাম কই!
দিন দিন ত আমিই বখাটে হয়ে যাচ্ছি।
ছেলেরা ফার্স্ট মুভ নেয়। এখনে ত উল্টো হচ্ছে।
চোখ মুখ কুচকে নিজেকে নিজে গালি দিলাম। আর মনে মনে শপথ নিলাম যে এমন ভুল আর করব না।


শাড়ি পরে কলেজে যেতে হবে। কিন্তু অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য না, নবীন বরণে ভলেন্টিয়ার হিসেবে।
আর সব ভলেন্টিয়াররা শাড়ি পড়বে। যাতে সবাই চিনতে পারে যে আমরা ‘ভলেন্টিয়ার কামলা’।
যেহুতু আমি শাড়ি পরতে পারিনা। আর পরলেও কুচি জঘন্য হয় তাই শাশুড়ীর হেল্প নিলাম। ঘরে নাহয় যেমন তেমন কুচি দিয়ে পরা যায়। কিন্তু বাহিরে ত তা করা যাবে না।
ইথান সকাল সকালই বের হয়ে গেছে। নাহলে সেও দেখতে পেত আমাকে কত কিউট লাগছে। কালো ব্লাউজের সাথে কালো পারের নীল শাড়ি সত্যিই অন্যরকম সুন্দর। এর সাথে হাতে নীল কাচের চুড়ি ও কপালে কালো টিপ পরে নিলাম। আর ঠোঁটে হালকা খয়রী লিপস্টিক নিয়ে নিলাম। সাথে চুলগুলো খোলাই ছেড়ে দিলাম।
.
তাড়াতাড়ি করতে গিয়েও দেরি হয়ে গেল।
আমার বাড়ি থেকে কলেজ কাছে ছিল। কিন্তু ইথানের বাসা থেকে দূরে। এজন্য আরেকটু দেরি হলো। যদিও ইথানের মা বার বার বলছিলো এই অবস্থায় যেতে হবে না। তাও এলাম। কারণ এখন আর ব্যথা নামক সমস্যা নেই।
সবাই মোটামুটি চলেই এসেছে।
আমি তড়িঘড়ি করে কাজে লেগে পড়লাম। নবীনদের ফুল দেওয়া হবে। একটা করে গোলাপ আর একটা করে গাদা ফুল। এই দুইটা ফুল একসাথে করে বাধার দায়িত্ব আমরা যারা ভলেন্টিয়ার তাদের। এর পরে খাবার প্যাকেজিং এর কাজসহ আরো কাজ ত আছেই।
“তোর এত দেরি?” জিজ্ঞেস করলো প্রেমা।
আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড প্রেমা।
আমি দুইটা ফুল একসাথে বাধতে বাধতে বললাম, “হ্যা। কামলা খাটার জন্য জলদি এসে কি করব?”
“বাই দ্যা রাস্তা, এত সুন্দর করে সেজে কাকে দেখাবি?” ভ্রু উঁচু করে বলল প্রেমা।
আমি শুধু সরু চোখে তাকালাম।
“তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।” হাসিমুখে বলল প্রেমা।
আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কি।
প্রেমা ওর পার্সটা থেকে একটা রূপালি চেইন বের করলো। চেইনের মাঝ বরাবর ইংলিশ অক্ষরে ইথান লেখা।
আমি হাতে নিয়ে হা করে থেকে গেলাম। কারণ এটা অনেক সুন্দর।
প্রেমা একটু ভাব নিয়ে বলল, “কেমন?!”
আমি হাসিমুখে হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললাম, অনেক সুন্দর।
“আমি অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি বলে কথা।” গর্বের সঙ্গে বলল প্রেমা।
“আয় পড়িয়ে দিই।” বলল প্রেমা।
আমি খুশি মনে সেটা গলায় পড়ে নিলাম।
“অনেক সুন্দর মানিয়েছে।” প্রেমা বলল।
আমি হাসি মুখে গলার পেন্ডেনটা দেখতে লাগলাম।
“শীলা আসে নি?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“না আসে ত নি এখনো! আসবে হয়ত। আমরা করতে থাকি আপাতত।” বলল প্রেমা।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে মনে হয়। কারণ চীপ গেস্টদের আসতে দেরি হয়েছিল। কারণ এদেরকে স্কুল লাইফ থেকে পানচুয়ালিটি শেখানো হয়নি মনে হয়। আমরা কাজ করে রীতিমতো সবাই হাপিয়ে গেছি।
ভলেন্টিয়ার বলে শুধু আমরাই কাজ করছি। অন্য কেউ ধারে কাছেও হেল্প করতে আসেনা।
এমনকি ভয়ে শাড়িও পরে নি তারা।
দুই একজন রাগ করে চলেও গেছে। কিন্তু আমরা যারা দ্বিতীয় বর্ষের তারা কেউই যেতে পারি নি। আমরাই ত সবচেয়ে ছোটো ব্যাজ আপাতত। নতুনরা ত মাত্র আসবে। তাই আমাদের দিয়েই গাধার খাটুনি করিয়ে নিবে। পরের বছর এই নতুনরা খাটবে। এটাই নিয়ম।
.
“বল তো কাকে দেখেছি?” লাফাতে লাফাতে এসে শিলা বলল।
কাজ করে করে ক্লান্ত আমি। তাই ওর দিকে বিরক্তির সাথে তাকিয়ে বললাম, “আমি কি করে বলব? আর তুই লাফানোর মত এত এনার্জি পাচ্ছিস কি করে? আমি ত কাজ করে করে শেষ।”
শিলা মুখটা একটু বাকিয়ে বলল, “হুহ! শুনলে ত তুই নিজেই লাফাবি।”
আমি ওর কথায় গুরত্ব না দিয়ে বললাম, “আমার অত এনার্জি নেই। অনেক কাজ করেছি। এগুলা আগে থেকে করালে এত কষ্ট হয় আমাদের? দুইদিন বসে বসে করলে তাও রিল্যাক্স হয়। কিন্তু না। তারা অনুষ্টানের দিন সকাল সকাল আমাদের এনে খাটাবে। খাটাশের দল।”
“ইথান এসেছে।” ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল শিলা।
শুনে আমি অনেক বেশিই চমকে গেলাম। আদৌ কি ঠিক শুনলাম!
“কে এসেছে?!” আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম।
শিলা হাই তুলতে তুলতে বলল, “এত সময় আমার কথায় পাত্তাই দিলি না। এখন এত কিসের প্রশ্ন!”
“ইথান কেন আসবে!” বললাম আমি।
“তোকে নিতে এসেছে হয়তো রে গাধা।” নিজের কপাল চাপড়ে বলল প্রেমা।
আমাকে নিতে!
হয়তো ইথানের মা-ই বলেছে ওনাকে আসতে।
আমার মুখ জুড়ে এখন শুধু হাসি আর হাসি।
আমি প্রেমার দিকে ঘুরে বললাম, “আমার সব ঠিক ঠাক আছে?”
“হ্যা বাবা আছে।” মুচকি হেসে বলল প্রেমা।
“সত্যি?” সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
“দরকার হলে ওয়াসরুমের আয়নার দেখে আয় যা।” বলল শিলা।
হ্যা এটাই করা যেতে পারে।
আমি ওয়াসরুমে চলে গেলাম। তারপর নাকমুখে পানি দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে নিলাম।
.
নিজেকে সুন্দর ভাবে পরিপাটি করে নিয়ে বের ত হয়ে এলাম। কিন্তু ইথানকে কোথায় দেখেছে শিলা সেটাই ত প্রশ্ন করিনি। হায়রে কপাল।
ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগেই পিছন থেকে কেউ বলল, “এই তুমি নিউ সেকেন্ড ইয়ার থেকে ভলেন্টিয়ার না?”
আমি মুখ কালো করে পিছনে ঘুরলাম।
একটা সিনিয়র আপু।
অসহ্য এখনি কাজে লাগিয়ে দেবে।
কিন্তু কিছু করার নেই।
আমি করুন দৃষ্টিতে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
সে আমার হাতে কয়েকটা টিস্যুর বক্স দিয়ে বলল, “এগুলো হল রুমে রেখে আসো। এগুলো লাগবে না।”
বলেই সেই সিনিয়র স্থান ত্যাগ করল।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে হল রুমে গিয়ে টিস্যু গুলো রাখলাম।
তারপর হল রুম থেকে বের হতেই মৃদুলের সামনে পরলাম।
সে কিছু না বলে হতাস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
বেচারার অবস্থা দেবদাসের মত হয়ে গেছে।
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম, কিছু বলবেন?
মৃদুল অত্যন্ত আহত গলায় বলতে লাগল, “বিয়ে করার আগে একবার বলতে পারতা। আমি সেই কবে থেকেই তোমাকে….যাই হোক। এভাবে মুখের উপর ব্লক দিয়ে দিবা বুঝিনাই। ভালো মত বললেই আমি বুঝতাম।”
তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মৃদুল বলল, “আমি আর জ্বালাবো না। ভালো থেকো।”
আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম। বেচারা ছেলেটা।
যদিও ইথান ব্লক দিয়েছিল রেগে।

“বাই।” বলল মৃদুল।
আমি কিছুই বললাম না। শুধু কিছুই জানিনা এমন ভান করে রইলাম।
মৃদুল কথা শেষ করে উল্টোদিকে ঘুরে হাটা শুরু করল।
যাই হোক। ওর জ্বালানো থেকে আমি শেষ অব্দি বাচলাম।
ভেবেই মুখে অনেক বড় হাসি চলে এলো। সেই হাসিমাখা মুখটা নিয়ে আমি পিছনে ঘুড়েই থমকে গেলাম। আর মুখের হাসিও সীমিত হয়ে গেল।
ইথান শক্ত মুখে তাকিয়ে আছে।
অফিসের গাড় খয়রী শার্টের সাথে কালো টাই আর কালো জিন্স।
কোটটা ভাজ করে এক হাতে ধরা আর অন্য হাতে ফোন।
কোটের কারণে হাতের কালো ঘড়িটা ঢাকা পরে গেছে।
কখন এসে দাঁড়িয়েছেন উনি কে জানে।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, “আ..আপনি কখন এসেছেন এখানে?”
“কেনো? ডিস্টার্ব করে ফেলেছি?” ঠান্ডা গলায় বলল ইথান।
তার চাহনিই বলে দিচ্ছে যে সে ভুল সময় এসে দাড়িয়েছিল এখানে। আর সব উল্টো বুঝেছে।
“আপনি ভুল বুঝচ্ছেন।” আমি বলে উঠলাম।
“ফোন দিচ্ছি কখন থেকে?” বলল ইথান।
“ফো..ফোন?” আমি বিড়বিড় করে বললাম।
আসলে ফোন সাইলেন্ট করা ছিল আর কাজের চাপে পার্সটা এক জায়গায় ফেলে রেখেছিলাম।
-“এখানে বসে ছেলেদের সাথে গল্প করছ একা একা!”
-“আমি ত…”
-“তোমাকে এই অনুষ্ঠানে আসতেও বারন করেছিলাম আমি।”
আসা থেকে বকাবকি শুরু ওনার। এখন ত আমারো উল্টো চিল্লাতে মন চাচ্ছে। কিন্তু আমি মাথা নিচু করে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম কি বলব!
ইথান কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে উল্টো দিকে হেটে চলে যেতে লাগলো।
“থামুন প্লিজ।” বলেই আমি দ্রুত হাটতে গিয়ে শাড়িতে পা দিয়ে ফেললাম আর ধপাস করে পরে ফেলাম।
তারপর..?
তারপর সবচেয়ে লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেললাম আমি।
শাড়ি পুরো খুলে গেল শুধু আঁচলটাই গায়ে রয়ে গেল।
আমি ঘটনার আকস্মিকতায় মাথা নিচু করেই রইলাম।
এদিকে কাচের কয়েকটা চুড়িও ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেছে।
এখন কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, দশা কাকে বলে?
হয়ত একেই বলে।
ইথান আমার কাছে এসে হাটু ভাজ করে ঝুকে বসে আমার হাত ধরে দেখতে লাগল কেটেছে কিনা।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করেই রইলাম।
এভাবে ওনার চোখের সামনেই পরতে হলো!
হাত চেক করে দেখলো ডান হাত অল্প কেটেছে।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ইথান আমাকে বলল, “শাড়ি সামলাতেই পারো না, তাও পড়া লাগবে কেনো? আর তোমাকে আগেই বলেছি না পরতে।”
ওনার শেষের কথাটা মোটেই পছন্দ হলো না আমার।
শাড়িতে মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে। আমাকেও লাগে। এই আনরোম্যান্টিক বলে কিনা শাড়ি না পরতে?!
আমি মুখ ফুলিয়ে ফেললাম কিন্তু মাথা নিচু করেই রাখলাম।
ইথান একটা রুমাল বের করে ডান হাত বেধে দিল আমার। তারপর নিজের কোটটা আমার গায়ের সামনে দিয়ে রেখে আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আমি চমকে বলে উঠলাম, “কি করছেন আপনি? কেউ দেখে নিলে।”
ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কেউ নেই এখানে।”
.
ইথান হল রুমে নিয়ে এসে আমাকে কোল থেকে নামালো।
শাড়ির আঁচল বাদে সব মেঝেতে লুটিয়ে পরলো।
“তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করো।” বলল ইথান।
আমি মিনমিনে গলায় বললাম, “আমি ত পড়তে পারিনা।
ইথান রেগে আমার দিকে দুইপা এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেলাম।
“আমি না আসলে আজ কি করতা তুমি? ওভাবে বসে থাকতা?” বলল ইথান।
আমি একটা ঢোক গিলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
ওনার জন্যই ত হলো।
“বাসায় কিভাবে পরতা?” বলল ইথান।
“মাত্র দুইবার পরেছিলাম। প্রথমদিন রাতে পেচিয়ে পেচিয়ে আর সকালে এবড়োখেবড়ো কুচি দিয়ে। ওগুলো ত সুতির ছিল। এটা সিল্কের। পারিনা কুচি দিতে। আর পেচিয়ে পরলে ত হাটতে পারব না। আপনার মা পরিয়ে দিয়েছিল।” শাড়ির আঁচল অাঙুল প্যাচাতে প্যাচাতে নিচু গলায় বললাম আমি।
“তাহলে এখন?” দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
“আপনি পারেন না? আপনি পড়িয়ে দিন।” আমি ইথানের দিকে মিনতিপূর্ণ চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম।
ইথান সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “হোয়াট?”
আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
“For your kind information, আমি শাড়ি পরাতে পারিনা।” বলল ইথান।
শুনেই মন খারাপ হয়ে গেল আমার।
কি পারে তাহলে?
আমি ঠোঁট উলটে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান আমার সামনে থেকে চলে যেতে লাগল।
সাথে সাথে আমি ওর হাত চেপে ধরে বললাম, “আমাকে একা রেখে যাবেন না প্লিজ। আমি সত্যিই পারিনা।”
ইথান আমার হাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো আর বলল, “যাচ্ছি না। হাত ছাড়ো। আর যেমন পারো তেমন পড়ো।”
এটা কি বলল!
কি একটা অবস্থা। আমার ফোনটাও আনি নি যে প্রেমাকে ফোন দিব। তাছাড়া প্রেমাও শাড়ি পড়তে পারেনা, আমাকে কি পড়াবে!

ইথান আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে দাড়ালো আর আমাকে ইশারায় শাড়ি পড়তে বলল।
আমি মনে মনে ওকে কয়েকটা গালি দিয়ে শাড়ির দিকে নজর দিলাম। আচলটা শুধু গায়ে ফেলে রাখা আছে পিন মেরে রাখার কারনে। বাকি সব মাটিতে।
আসলে শাড়ি খুলত না।
পেটিকোট টাইট দিয়ে বাধিনি। শাশুড়ী বার বার বলেছিল। আমি গায়ে লাগাইনি। তিনি আরো সেফটি পিনও মারতে বলেছিল। সব আমার দোষ।
এখন নিজেই ভুগছি।
ইথানের দিকে তাকালাম সে আমার সোজাসুজি দাড়িয়ে ফোনের দিকে দেখতে ব্যস্ত।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ি পরতে লাগলাম।
শাড়ি পরার সময় মনে মনে সিল্কের শাড়িকেও গালি দিতে লাগলাম। কুচি তিনটা করি ত, দুইটা ফসকে যায়। হাত কেটে যাওয়াতে আরোই সমস্যা হচ্ছে।
“কুচি করার আগে শাড়ি একবার গুজে নিতে হয়। এইযে…।” সরু চোখে তাকিয়ে নিজের ফোনটা আমার দিকে ঘুড়িয়ে বলল ইথান।
ইউটিউবে শাড়ি পরার ভিডিও বের করে ফেলেছে সে।
আমি হতাশ চোখে নিজের দিকে তাকালাম।
হায়রে কপাল। আমি শাড়ি এক প্যাচ না দিয়েই কুচি করছিলাম।
“এটা দেখো।” ইথান নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলো।
আমি ফোনটা হাতে নিলাম।
সেই মুহুর্তে কয়েকজন কথা বলতে বলতে হল রুমের দিকে আসছিলো।
আমি আর ইথান দুইজনই চমকে গেলাম।
ইথান এক টান দিয়ে আমাকে এক সাইডে একটা আলমারির আড়ালে নিয়ে এলো। আর আমার সামনাসামনি খুব কাছে এসেই দাঁড়ালো। আমি ত থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম কিন্তু আমার হার্টবিট বাড়তে শুরু করে দিল।

উনি হাতটা এখনো ধরে আছেন।
যদিও সে কারা এসেছে সেটা পর্যবেক্ষণ করতেই ব্যস্ত।
আর আমি ইনিয়েবিনিয়ে তাকে দেখতে ব্যস্ত।
.
ওরা কিছু জিনিস রেখে চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইথান গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর আমার কাছে এসে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, “আমিই পড়াচ্ছি। কারণ তোমার সারাজীবন লেগে যাবে।”
“আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?” হা হয়ে প্রশ্ন করলাম আমি।
উনি শাড়ির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে শাড়ি হাতে নিতে নিতে বললেন, “ইউটিউব।”
আমি মনে মনে বললাম, অহ আচ্ছা।
ইথান আমার হাত থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে তারপর ভিডিও চালু করলো।
আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে ফাকে ফাকে ওনার দিকে তাকাতে লাগলাম। হার্টবিট এখনো বেড়েই চলছে। আর পেটের মধ্যেও কেমন কেমন হচ্ছে।

উনি কয়েক সেকেন্ড দেখে ভিডিও পজ করলেন। তারপর আমার শাড়ির আঁচল ধরে কাধে উঠিয়ে দিলেন।
একটু কেমন কেমন লাগলেও আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। আর যত সম্ভব স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।
উনি এক অংশ হাতে ধরে পেটে গুজে দিলেন। আমি সাথে সাথে কেপে উঠলাম।
ইথান আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“সুড়সুড়ি লাগছে।” চোখের দৃষ্টি রুমের ফ্লোরের দিকে আবদ্ধ রেখে নিচু গলায় বললাম আমি।
ইথান কিছু না বলে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে রইল।
এতে আরো বেশিই কেমন কেমন লাগছে আমার।
উনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন!
আমি আস্তে আস্তে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমার গায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।
সাথে সাথে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে নিলাম। আর দুইহাত একসাথে ধরে কচলাতে লাগলাম।
উনি হঠাৎই আমার বুকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
সাথে সাথে আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে একশ্বাসে বলে উঠলাম, “এখন না প্লিজ, আমি এখনো রেডি না।”
.
কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করেই রইলাম কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।
তাই আস্তে আস্তে এক চোখ প্রথমে খুললাম। আর ঘটনা বুঝেতে পেরে দুই চোখই খুললাম।
উনি আমার গলার পেন্ডেনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৬

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৬ : #good_vs_bad_Arin
লেখিকা : #Lucky

আমাদের বেডরুমের পাশেই ফুলদানিটা রাখলাম যেটা ইথান দিয়েছিল।
আমি ফুলদানিতে ফুল রাখি না।
ফাকা ফুলদানিই ভালো লাগে আমার।
আমি ফুলদানিটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এটা ইথানের দেওয়া প্রথম উপহার। যত্নে রাখতে চাই।
কিন্তু আমি ত ইথানকে কিছুই দিলাম না।
কি দেব আমি! ওনার কি পছন্দ! তা ত জানিনা। কিন্তু একটা জিনিস আমি অনেক ভালো বানাই সেটা হলো পায়েস।
পায়েস ত সবাই-ই প্রায় পছন্দ করে। আপাতত এটাই বানাই। ওনার জন্য পরে ভেবেচিন্তে কিছু কেনা যাবে।

আমি সবার জন্য পায়েস বানাতে লেগে পরলাম।
ইথানের মা ত আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দিতেই রাজি না। তাও আমি তাকে রাজি করিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম।
আর অনেক সুন্দর করে পায়েসও বানিয়ে নিলাম আর ইথানের জন্য আলাদা করে তুলে রাখলাম। কারণ তার অফিস থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

সবাই খেয়ে খুব প্রশংসা করলো। অর্থাৎ ভালই হয়েছে। আমি বানিয়েছি বলে কথা।

কিন্তু সন্ধ্যার আগে আগেই আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পরলাম পিরিয়ডের কারণে। পিরিয়ডে আমার ভয়ানক অবস্থা হয়।
বমি আর প্রচন্ড পেট ব্যাথা। বাসায় থাকাকালীন প্রতিমাসে এই দিনে ডাক্তার ডেকেও আনা লাগে হীট থেরাপি দেওয়ার জন্য। বাসার সবাই সহ পাড়া প্রতিবেশীও জেনে যায় আমার চিল্লানির কারণে।

যদিও আজ অনেক চেষ্টা করলাম স্বাভাবিক থাকার। কিন্তু হয়ে উঠল না। এক পর্যায়ে ব্যথার কারণে রুমে চলে এলাম আর বিছানা শুয়ে দুই হাত দিয়ে বালিশ চেপে ধরে দাতে দাত চিপে রাখলাম। চোখ জলে ভিজে এসেছে।
আমি ত আর এক মূহুর্তের জন্যও সহ্য করতে পারছি না।
হঠাৎ ইথানের মা আমার মাথায় হাত রাখলেন। আমি চমকে ওনার দিকে তাকালাম।
“কি হয়েছে?” অবাক হয়ে বললেন উনি।
আমি কিছু বলতে পারলাম না শুধু বাচ্চাদের মত কাদতে শুরু করে দিলাম।
ইথানের মা হতবুদ্ধি হয়ে গেল।


“এখন আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। বেশি খারাপ লাগলে গরম সেঁক নিলেই হবে।” বলল ডাক্তার।
“আমি ত চিন্তাতেই পরে গেছিলাম। বোকা মেয়ে আমাকে না বলেই কাদতে শুরু করে দিয়েছিল।” বলল ইথানের মা।
আমি ইথানের মায়ের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারলাম না।
মৃদু হেসে ডাক্তার আংকেল বললেন,”আচ্ছা মামোনি ভালো থাকো।”
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম।
“ইথান এখনি চলে আসবে। আমি ওকে জানিয়েছি।তুমি রেস্ট নেও আমি ডাক্তারবাবুকে ছেড়ে আসি।” বলেই ইথানের মা ডাক্তারের সাথে বাহিরে চলে গেলেন। অন্যরাও একে একে চলে গেল। আর যাওয়ার আগে বলল, “রেস্ট নেও।”
দিবা আমার গায়ে একটা পাতলা চাদর টেনে দিল আর বলল, “আমি আবার পানি গরম করে হট ব্যাগে আনছি থামো।”
দিবা চলে গেল।
এতটুকু সময়ে অনেক বার মা ফোন করে ফেলেছে। পারলে সে এখনি চলে আসে।
আমি বার বার বুঝালাম যে আমি ঠিক আছি।
সে তাও কালই আসতে চায়। অনেক কষ্টে মাকে বুঝালাম আসা লাগবে না। কারণ প্রথম দিনই এত সমস্যা হয় আমার। তারপরের তিনদিন সব ঠিকঠাক।

ব্যথা এখনো অল্প অল্প আছে। এভাবে শুয়ে থাকতেও ভাল লাগছে না। তাই আমি আস্তে আস্তে উঠে বসে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে সামনের দিকে হালকা নুয়ে রইলাম। আমার অগোছালো চুলগুলো মুখের সামনে এসে পরে রইল। মায়ের কাছে আমারই যেতে ইচ্ছে করছে। মা যে কত কেয়ার করত তা এখন টের পাচ্ছি। চিন্তা করেই আমার চোখে জল চলে এলো।
তখনি এক হাত দিয়ে ইথান আমার ডান সাইডের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো।
আমি অনেক বেশিই অপ্রস্তুত হয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
“you ok?” শান্ত গলায় বলল ইথান।
আমি মুখ একটু ঘুড়িয়ে নিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। তারপর ওড়না দিয়ে ঝট করে চোখের জল মুছে নিলাম।

“বসে আছ কেনো? শুয়ে পরো।” বলতে বলতে ইথান নিজে আমাকে শুইয়ে দিলো।
আমি অবাক চোখে শুধু দেখতে লাগলাম।
ইথান আমার গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নীল টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরে বের হয়ে এলো।
দিবাও তখন হট ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো।
“এইযে এনেছি।” আমাকে বলল দিবা।
ইথান এগিয়ে গিয়ে দিবার হাত থেকে নিলো হটব্যাগটা।
“আমাকে ত আর লাগবে না মেবি। যাই আমি। গুডনাইট।” দিবা মিষ্টি হেসে বের হয়ে চলে গেল।
ইথান আমার পাশে এসে বসল।
আমি ওর দিকে তাকালাম। হঠাৎ উনি এত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছেন দেখে আমিই অবাক হচ্ছি।
ইথান আমার গায়ের চাদরটা সরিয়ে আমার পেটের উপর হটব্যাগটা রাখল।
বুঝতে পারছি না। ছেলের হয়েছে টা কি?
মায়ের কথায় বিয়ে করেছে! এখন কি মায়ের কথায় বউয়ের সেবাও করবে?
নিজের কোনো মতামত নেই?
দুইদিন পর তার মা বলবে নাতিনাতনি লাগবে তখন?
আজব।
“আমি ডিনার এখানে আনার ব্যবস্থা করছি।” বলেই উঠে দাড়ালো ইথান।
সাথে সাথে আমি বলে উঠলাম, “আমি খাব না। খেলেই বমি হবে।”
“হবে না।” বলতে বলতে ইথান ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এক প্লেট ভাত নিয়ে এলো।
চামচসহ প্লেট আমার সামনে ধরলো ইথান।
দুধভাত! এখন এই দুধভাত খাওয়া লাগবে!
“কি হলো? নেও।” বলল ইথান।
অনিচ্ছার সত্বেও নিলাম।
ইথান খাওয়ার জন্য ইশারা করল। আমি নাকমুখ কুচকে চামচে করে মুখে দিতে লাগলাম। আর ইথানের দিকে তাকালাম।
কিন্তু তার কোনো মায়া হলো না আমার উপর। সে জোর করে পুরোটাই খাওয়ালো আমাকে।
তারপর আমাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে প্লেট নিয়ে চলে গেল।
আমি আমার ফোনটা নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকলাম।
সাথে সাথে মৃদুলের হাজারটা মেসেজের বন্যা বয়ে যেতে লাগল।
আমি মেসেজ সিন করতে না করতেই মৃদুল কল করে দিল।
আমি বিরক্তির সাথে ফোন তুলে হ্যালো বললাম।
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মৃদুল বকবক শুরু করল।
তার কথা গুলো হলো, সিনিয়রের মুখের উপর ফোন কেন কাটলাম, এতবার ফোন দিচ্ছে ধরিনি কেন, ব্লা ব্লা।
আমি মাঝপথে তাকে থামিয়ে দিয়ে কঠোর গলায় বলে উঠলাম, “দেখুন বিয়ে হয়ে গেছে আমার। দয়া করে যখন তখন কল দিবেন না।”
মৃদুল চুপ হয়ে গেল। মনে হয় বড়সড় শক পেয়েছে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিলাম।
যাক বাবা, এটা আর জ্বালাবে না।
কিন্তু সাথে সাথে আবার ফোন করলো মৃদুল।
উফ কি অসহ্য!
সাথে সাথে ইথানও এসে রুমে ঢুকল।
ইথানের সামনে ফোন তুলতে বিব্রত বোধ করতে লাগলাম।
এদিকে ফোন বেজেই চলছে।
ইথান আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি ফোনটা কেটে দিতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎই মনে হলো একটা জিনিস পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
গাড়িতে যেমন করেছিলেন সেটা কি মুড অফ এর জন্য নাকি জেলাসির জন্য!

আমি ফোন তুলে কানে দিলাম আর মুখের হাসি অনেক কষ্টে আটকে রেখে বললাম, “হ্যা শুনেন, আপনি পাঞ্জাবি পরবেন বলছিলেন না! পড়েন। আর আমি শাড়ি পরব। তারপর একসাথে অনুষ্ঠান পরিচালনা করব। আপনি যে শাড়ি বলেছেন ওটাই পরব।”
আমি আড় চোখে তাকিয়ে ইথানকে পর্যবেক্ষণ করে নিলাম। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ওপাশ থেকে মৃদুলের শুধু একটাই প্রশ্ন, কবে বিয়ে করেছ।
সে ব্যস্ত হয়ে এটাই জিজ্ঞেস করছে কিন্তু আমার সে প্রশ্নের উওর দেওয়ার ইচ্ছে নেই।
“আমি খেয়েছি আপনি খেয়েছেন?” বললাম আমি।
“কে ফোন করছে?” প্রশ্ন করল ইথান।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বলার আগেই সে এক টান দিয়ে আমার কান থেকে ফোনটা নিয়ে নিল ইথান।
তারপর রাগমিশ্রিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আবার এই ছেলে! কে এটা? আর তোমাকে কেন বার বার ফোন করে?
আমি অবুঝ হবার ভান করে বললাম, “কেন? উনি সিনিয়র আমার কলেজের। সামনে অনুষ্ঠান আছে সেটাতে আমি আর সে পরিচালনা করব..।”
“কোনো দরকার নেই।” আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ইথান।
আমি চোখে বড় বড় পলক ফেলে তাকাতে লাগলাম। সে প্রচুর রেগে গেছে।
কিন্তু তাতে আমার প্রচুর আনন্দ লাগছে।
ইথান আমার ফোন হাতে নিয়ে কি যেন করতে লাগল।
“কি করছেন আপনি?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম আমি।
“ব্লক।” উওর দিল ইথান।
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
সে সব জায়গা থেকে মৃদুলকে ব্লক দিয়ে ফোনটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখল।
আমি চুপচাপ তার কান্ড দেখতে লাগলাম।
“ঘুমাও।” বলে ইথান লাইট অফ করে দিল।
আমি মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলাম কারণ আমি সিওর যে এটা জেলাসি।

মাঝ রাতে ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে গেল। আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। ব্যথার কারণে কষ্ট হচ্ছে।
আমি পেটে হাত দিয়ে মাথা নুড়ে রাখলাম।
তখনি কাধে ইথানের হাতের স্পর্শে আমি একটু চমকে উঠলাম।
“আপনি ঘুমান নি?” আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
“তোমার জন্য শান্তিতে ঘুমানো যায়?” উঠে বসতে বসতে বলল ইথান।
আমি ঘুমাতে দিচ্ছি না! আশ্চর্য৷ শুনেই গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
যদিও অন্যদিকে তাকিয়ে আছি তাও বুঝতে পারছি যে উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি কপাল কুচকে অন্যদিকেই তাকিয়ে রইলাম।
এদিকে ব্যাথাও হচ্ছে প্রচুর।
ইথান বিছানা থেকে নেমে আমার পাশে এসে দাড়ালো আর আমার গায়ে থাকা চাদরটা নিজের হাতে তুলে নিলো।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম।
“আসো।” বলেই ইথান আমার দিকে অন্য হাতটা বাড়িয়ে দিল।
উনি কি করতে চাচ্ছেন বুঝতে না পেরে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান নিজেই আমার হাত ধরে নামিয়ে নিল আর বেলকোনিতে নিয়ে এলো।
আমি শকে আছি বলতে গেলে।
উনি বেলকোনির চেয়ারের সামনে আমাকে দাড় করিয়ে নিজে বসে পরলেন।
আমি প্রশ্ন করে বসলাম “কি করতে চাচ্ছেন আপনি?”
উনি আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে নিজের কোলের উপর হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন,”এখানে বসো।”
আমি চোখ ছানাবড়া করে বললাম, “মা..মাথা ঠিক আছে আপনার? এসব কি বলছেন আপনি?”
ইথান একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
আমি থ মেরে ইথানের দিকে তাকালাম। এদিকে হার্ট বিট আবার বাড়তে শুরু করল। দুইপাশে পা দিয়ে ওনার কোলে এভাবে, একদম কাছে উনি আমাকে বসিয়ে দিয়েছেন। কেমন যে অনুভব হচ্ছে তা বুঝতে পারব না।
আমি ত চোখ নামিয়ে রেখেছি ত রেখেছি আর উঠাই নি।
উনি আমার গায়ে চাদরটা জড়িয়ে দিলেন।
যদিও আমি চোখ নামিয়ে রেখেছি তাও বুঝতে পারছি যে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
উনি কি করতে চাচ্ছেন সেটাই বুঝতে পারছি না আমি। সারারাত কি এভাবেই থাকতে হবে নাকি!
অনেক্ষন ইতস্তত করার পর মাথা নিচু করে রেখেই আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম, “আ..আপনি.. এভাবে আ..আমাকে…?”
“ডাক্তার এভাবেই বসিয়ে রাখতে বলেছে তোমাকে। পেইন কমে যাবে।” আমার প্রশ্ন শেষ হবার আগেই বলে উঠল ইথান।
আমি চমকে ইথানের চোখের দিকে তাকালাম।
সে নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
আমি চোখ সরিয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম, পেইন কমে যাবে! এভাবে থাকলে!
.
আসলে সত্যি সত্যিই পেইন অনেক কমে গেছে। আশ্চর্য ত!
ইথান চেয়ারের ব্যাকসাইডে নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হয়ত তার ঘুম আসছে।
আমি নেমে পরার জন্য চিন্তা করলাম। কারণ আমার জন্য ওনাকে এভাবে জাগিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে না।
কিন্তু আমি একটু নড়ার সাথে সাথে ইথান চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই বলে উঠল, “চুপচাপ বসে থাকো।”
আমি ভয়ে আর নড়লাম না।
কি আর করার!

আমি বসে বসে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। সে এক সাইডে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে।
তার চুল, চোখ, ঠোঁট সবকিছুই কত সুন্দর।
কিন্তু সবচেয়ে যে জিনিসটা নজর কেড়ে নিচ্ছে সেটা হলো তার গলা থেকে কাধের অংশটা, যেটা কালো টি-শার্ট ফুটিয়ে তুলেছে।
ইচ্ছে করছে একটা কামড় বসিয়ে দিই।
মনের মধ্যের শয়তান এরিন বলছে, ‘হ্যা বসিয়ে দে।’
কিন্তু ভালো এরিন বলছে, ‘না, ভুলেও না। ছেলেটা কত নিস্পাপ। তুই এগুলো কি ভাবছিস!’
শয়তান এরিন বলল, ‘আরে রাখ তোর নিষ্পাপ! পৃথিবীর কোনো ছেলে নিষ্পাপ না। তুই কামড় বসা এরিন।’
ভালো এরিন বলল, ‘তুই শয়তানের কথায় কান দিস না এরিন। তুই ভালো মেয়ে।’
কিন্তু আমার ত শয়তানের কথাতেই কান দিতে ইচ্ছে করছে।
নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে তার গলার দিকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে তারপর কাছে এগিয়ে গেলাম।
ভালো এরিন রেলিং এর ফাঁক দিয়ে লাফ দিয়ে সুইসাইড করল। কারণ আমি সত্যি সত্যিই কামড় বসিয়ে দিলাম।
“আহ” বলে কপাল কুচকে ইথান চোখ খুলল।
তারপর এক হাত দিয়ে তার গলা স্পর্শ করে কপাল কুচকে অনেক অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি যে তার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে এমন কিছু করে দিব তা সে হয়তো ভাবতেও পারেনি।
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কারণ এটা ঘটিয়ে আমার হুশ হলো। তাই আমি লজ্জায় দ্রুত ইথানের কোল থেকে উঠে রুমে চলে এলাম।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৫

0

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৫ : #Something_is_fishy
লেখিকা : #Lucky

আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,”কি করছেন! ছাড়ুন।”
ইথান আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে সিক্ত গলায় বলল, “কেনো? এখন ছাড়তে বলছ কেনো!”
আমার সারা শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে গেল।
ইথান আমার কোমড়ে হালকা চাপ দিতেই আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলে উঠলাম, “আহ! কি করছেন আপনি! লাগছে ত!”
“শাট আপ ইডিয়ট। বোকার মত চিল্লাচ্ছ কেনো?” গলার স্বর নামিয়ে দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
আমি অত আস্তে আস্তে কথা বলতে পারিনা। তাই চোখ মুখ কুচকে স্বাভাবিক স্বরেই বলে উঠলাম, “চিল্লাবো না? লাগছে আমার। এভাবে কেউ চাপ দেয়!”
“আস্তে কথা বলতে পারছ না?” এক ধাপ বিরক্তি বাড়িয়ে নিয়ে বলল ইথান।
“না, পারছি না। আপনি আমার কোমড়ে এভাবে চাপ দিলেন কেন? আহ ব্যাথায় জ্বলে যাচ্ছে।”
-“তোমাকে বলেছি শব্দ না করতে।”
আমি রেগে গেলাম। আর ইচ্ছা করেই শব্দ করতে লাগলাম, “আহ~~ উহ~, আমি শেষ।”
ইথান এবার রেগে আমার মুখ চেপে ধরল আর বলল, “মাথা কি ফাপা তোমার?”
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু আওয়াজ বের হলো না।
শুধু ‘উম উম’ শব্দ বের হলো।
ইথান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে থ্রেট দিয়ে বলল, “আর একটা টু শব্দ করলে খবর আছে তোমার।”
ইথান আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল।
আমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।
সত্যিই খুব রাগ হচ্ছে। আসলে রাগ না, অভিমান। উনি এত cold behave করেন কেন আমার সাথে এটাই আমি বুঝিনা।
ইথান আমার চোখের দিকে তাকালো। সাথে সাথে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ডিম লাইটের আবছা আলোতে মোটামুটি সবই দেখা যাচ্ছে।
“এখানে আসো।” গম্ভীর গলায় বলল ইথান।
আমি শুনেও না শোনার মত করে রইলাম।
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার আমার কাছে এলো।
আমি ওর দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালামই না।
রাগ করেছি আমি।
ইথান আমার এক বাহু ধরে আস্তে আস্তে বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে বসালো।
আমি এখনো মুখ ফুলিয়েই আছি।
“শোও।” বলল ইথান।
আমি এবারো মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম।
“সমস্যা কি তোমার? কথা কানে যাচ্ছে না!” বলল ইথান।
আমি রাগ মিশ্রিত চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। ভাল মত কথাই বলতে পারেনা আমার সাথে।
ইথান ইশারায় শুয়ে পরতে বলল।
আমি পাত্তা দিলাম না।
ইথান ধৈর্য হারিয়ে ফেলল। আর আমার এক হাত চেপে ধরে ঠেলে শুইয়ে দিল।
“আহ, লাগছে আমার।” বলে উঠলাম আমি।
“তোমাকে বলেছি এই ধরনের সাউন্ড না করতে আর আস্তে কথা বলতে।” চোখ পাকিয়ে বলল ইথান।
“ত ব্যথা পেলে কি করব? অহো কি আনন্দ! কি মজা! এগুলো বলব?” ব্যাঙ্গাত্বক সুরে বললাম আমি।
কান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে ইথান বলল, “করতে থাকো যা ইচ্ছা। এত সময় বলে যেহেতু হয়নি, আরো বললেও হবে না। IQ low তোমার।”
আমি হা হয়ে বললাম, “আমাকে বোকা বললেন!”
ইথান আর কথা না বাড়িয়ে আমার পাশে গিয়ে শুয়ে উলটো দিকে ঘুরে রইল।
আমিও রেগে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম।
|
|
কোমড় ব্যথা এখনো হালকা হালকা রয়ে গেছে। যার জন্য হাটতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তার উপর শাড়ি। অবস্থা বেহাল আমার।
আমার এই অবস্থা দেখে সবাই সান্ত্বনা কি দেবে! উলটো মুচকি মুচকি হাসছে।
এলমা জিজ্ঞেস করেছিলো, “কি হয়েছে?”
আমি বললাম, পরে গেছিলাম।
কিন্তু ওরা কেউই বিশ্বাস করছে না কেন!
উলটো বলছে হ্যা কত ব্যথা পেলি তা ত জানিই আমরা।
ওরা কি উল্লেখ করে এসব বলছে বুঝতে চেয়েও বুঝতে পারলাম না।

দুপুরের পর আবার ফিরে আসার জন্য তৈরি হলাম।
আমি গাড়িতে উঠে বসতে না বসতেই মেসেঞ্জারে মৃদুলের কল ঢুকলো।
আমার ভার্সিটির সিনিয়র এই মৃদুল। অনার্স ফোর্থ ইয়ার। আর আমি সেকেন্ড ইয়ারে মাত্র উঠলাম। অনেক বেশিই অসহ্য লাগে একে আমার। যদিও সে খারাপ ছেলে না। তার ভাব ভঙিতে বুঝি যে আমাকে পছন্দ করে সে। ফার্স্ট ইয়ার থেকেই করে। কিন্তু আমি করি না। তাই এড়িয়ে চলি সবসময়।
কিন্তু এই গাধা বুঝেনা। আমি মুখের উপর বলতেও পারিনা। সিনিয়র বলে কথা তাই একটা ভয় কাজ করে। তাছাড়া বলবই বা কি! সরাসরি ত প্রপোজ করেনি যে একেবারে রিজেক্ট করে দিব।

ফোন হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করব! হঠাৎই মনে এলো এখন ত আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন ত আমাকে ওর জ্বালানো বন্ধ হয়ে যাবে যদি বলি আমি বিবাহিত।
এই কাজটা আরো সহজ হতো যদি ফেইসবুকে বিয়ের ছবিগুলো দিতে পারতাম। কিন্তু খেয়ালই ছিল না।
ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে গেলো। তখনি ইথান গাড়িতে ঢুকলো।
আমি ইথানের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান আমার পাশে বসে সিট বেল্ট পড়তে লাগল।
হঠাৎই আবার কল এসে গেল। আমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম।
আবার মৃদুল!
আমি এক পলক ইথানের দিকে তাকালাম।
সে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ফোন না তুলে কেটে দিলাম।
ইথান কিছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
একটু পরেই আমার মৃদুল কল দিল।
যত সময় না ধরব হয়ত দিতেই থাকবে। তাই আমি ফোন তুলে কানে দিলাম।

“কি করছিলা! এত সময় লাগলো কেনো!” মৃদুল ব্যস্ত হয়ে বলল।
আমি কিছু বলার আগেই সে বলতে শুরু করে দিল।
“যাই হোক শোনো। সামনে কলেজে নবীন বরন অনুষ্ঠান আছে। এবারে তুমি আর আমি পরিচালনা করব।” মৃদুল উৎসাহী কন্ঠে বলল।
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং করছে। আর মাঝে মাঝে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

ইথানের কারণে আমি মৃদুলকে ওই কথাগুলো বলতেও পারছি না।
“কি চুপ কেনো?” প্রশ্ন করল মৃদুল।
“আ…আমি কাল ফোন দিব। বাই।” বলেই আমি ফোন কেটে দিলাম আর ডাটা কানেকশন অফ করে দিলাম। আর আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
রীতিমতো সে বিরক্ত হয়ে আছে।
আমি চোখ সরিয়ে সামনের দিকে মনোযোগ দিলাম।
কিছুক্ষণ পর মৃদুল সরাসরি আমার ফোনেই ফোন করলো।
আমি মনে মনে বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালাম। এই লোক সত্যিই একটা অসহ্য।
আমি ফোন তুললাম।
“বলেন।” বিরক্ত হয়ে বললাম আমি।
“শাড়ি পরলে ভালো। আমি পাঞ্জাবি পরব। সাদা শাড়ি লাল পাড়। কেমন?”
“দেখুন আমি….পারব না।” বললাম আমি।
“আমি অলরেডি নাম দিয়ে দিয়েছি।” বলল মৃদুল।
শুনেই মাথা গরম হয়ে গেল আমার।
“আপনি আমাকে না বলেই কিভাবে দিয়ে দিলেন!” অবাক হয়ে বললাম আমি।
“আরে, মজা হবে করে দেখো।” বলল মৃদুল।
আমি আর কিছু বলার আগেই ইথান ব্রেক কষে দিলো। আমি হকচকিয়ে গেলাম।
ইথান এক টান দিয়ে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে গেল। এতে আমি পুরো হা হয়ে গেলাম।
ইথান কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা গাড়ির সামনের বক্সটার মধ্যে ঢুকিয়ে বক্সটা বন্ধ করে দিলো।
আমি হা করেই রয়ে গেলাম।
“আপনি এটা কি করলেন?” বললাম আমি।
“কেনো! কথা বলা হয়নি? কখন থেকে বকবক করে আমার মাথা ব্যাথা বানিয়ে দিয়েছ।” রেগে বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। এটুকু কথা বললাম তাতেই মাথা ব্যাথা হয়ে গেল।
ইথান আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। উনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে আছেন।
আমি ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে তারপর আবার সামনের দিকে তাকালাম। কিছুই বুঝতে পারছি না।
ওনার সমস্যা কি!
তখনি আবার আমার ফোন বেজে উঠল।
আমি ফোনটা বের করার জন্য হাত বাড়াতেই আবার গাড়ির ব্রেক কষল ইথান।
আমি হালকা সামনে ঝুঁকে পরলাম।
ইথান রেগে ফোনটা বের করে পুরো সুইচড অফ করে দিল।
আমি শুধু অবাক চোখে দেখতে লাগলাম। আর বুঝতে চেষ্টা করলাম যে উনি এত রেগে যাচ্ছেন কেনো!
ওনার কি মুড অফ! দুপুর অব্দি ত ভালই ছিল। কিন্তু এখন কি হলো আবার?

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৪

0

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৪ : #ফুলদানি
লেখিকা : #Lucky

আমি ইথানের পাশের সীটে বসলাম। আজ নিজের বাড়ি যাচ্ছি। বৌভাতের পরের দিন নাকি যেতে হয়।
ব্যাপারটা রোম্যান্টিক করার জন্য আমার শাশুড়ী আমাকে আর ইথানকে এক গাড়িতে দিয়েছেন আর ইথানের কয়েক জন কাজিনরা অন্য গাড়িতে যাচ্ছে। যদিও বা শাশুড়ী রোম্যান্টিক কিছু ভেবে আমাদের একসাথে দিয়েছে কিন্তু এখানে রোম্যান্স কম বোরনেছ বেশি।
অনেক সময় চুপ করে থেকে আমি বললাম, “আমার উপর আপনি ওই বিয়ের ঘটনার জন্য এখনো রেগে আছেন? মানে বখাটে বলে….”
ইথান আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে গেলাম।
“না মানে আমাকে সহ্যই করতে পারেন না কেনো?” আমি হতাশ চোখে তাকিয়ে বললাম।
তখনি ইথানের ফোন বেজে উঠল। আমি বিরক্তির সাথে ফোনের দিকে তাকালাম। সীটের পাশেই ফোনটা রাখা ছিল। ময়ূরী নামের কেউ ফোন দিয়েছে।
এখন এই ময়ূরী টা কে!
ইথান ফোন তুলে হ্যালো বলল।
ওদিকের কথা ত কিছু শুনলাম না। ইথান বলল, “ওকে আমি এসে দেখা করব।”
আমি মুখ ঘুরিয়ে জালানার বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
“আজ না, আজ যাচ্ছি এক জায়গায়।” ইথান বলল।
আমার গা জ্বলে গেল। তাই আমি বলে উঠলাম, “এক জায়গায় যাচ্ছি মানে কি?”
ইথান আমার কথায় একপলক আমার দিকে তাকিয়ে ওই ময়ূরীকে বলল, “পরে কথা বলছি। বাই।”
ইথান ফোন রেখে আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো তারপর গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল।
“কে এই মেয়ে? আর আপনি কেনো দেখা করবেন ওর সাথে?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
ইথান কোনো উওর দিল না।
আমি রেগে ওর বাহুর কাছের শার্টের হাতা ধরে টান দিলাম।
ইথান গাড়ির ব্রেক কষল আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কি শুরু করেছ?
“আপনি উওর কেন দেন না কোনো কথার?” আমার চোখে পানি চলে এলো।
রেগে গেলে আমার চোখে পানি চলে আসে। অসহ্যকর বিষয় এটা।
ইথান আমার চোখে পানি দেখে হতবাক হয়ে গেল।
“কাদছ কিসের জন্য?” বলল ইথান।
আমি চোখ মুছে নিয়ে বললাম,”খারাপ আপনি।”
বলেই আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
ইথান কয়েক সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আমি সারারাস্তায় আর কোনো কথাই বললাম না। ওর দিকে তাকালামও না।
|
বাড়িতে লোকজনে ভরে আছে। সবাই ইথানকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার কোনো পাত্তাই নেই!
রাতে আমাদের দুইজনকে এক রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজিনরা মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। এরা ত কত কিছু ভেবে বসে আছে।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসলাম। ইথান নিজের ফোনটা রেখে ওয়াসরুমে গেল।
জানিনা কেনো কিন্তু ওনার ফোন চেক করতে ইচ্ছে করছে আমার।
কত গুলো মেয়ের সাথে কথা বলে আমারো ত জানা দরকার।
আমি ইথানের ফোনটা হাতে নিলাম আর বাথরুমের দিকে তাকালাম।
ইথান বের হবার আগে চেক করতে হবে।
আমি ফোন ত হাতে নিলাম কিন্তু পাসওয়ার্ড দেওয়া। এখন!
আমি কয়েকটা পাসওয়ার্ড লিখলাম কিন্তু একটাও কাজ করল না।
“334259 পাসওয়ার্ড।” ইথান পিছন থেকে বলল।
আমি অনেক বেশিই চমকে উঠলাম আর ইথানের দিকে তাকালাম।
চোর ধরা পরলে যে অবস্থা হয় সেটাই হয়েছে।
আমার মুখ থেকে কোনো বাহানা বের হলো না। এভাবে ধরা পরবো বুঝিনি।
সে তার মত হাত মুখ তোয়ালে দিয়ে মুছতে ব্যস্ত। ইথানের চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নিলাম।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, “ন..না আমি ত মনে করেছিলাম ফো..ফোনটা আমার। আসলে আমারটার মতই।”
বলেই তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে গায়ে কম্বল টেনে নিয়ে শুয়ে পরলাম। যদিও শীতের শেষ তাও অল্প অল্প ঠান্ডা আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো একটা কম্বল দিয়ে গেছে।
এগুলা যে আমার কাজিনদের কাজ তা বুঝতে আর বাকি রইল না।
ইথান আমার পাশে এসে শুয়ে পরল।
ওর ত অবশ্যই শীত করবে। আমি কি শেয়ার করব!
কিন্তু শেয়ার করার কথা বলতে গেলে যদি উল্টো কথা শুনিয়ে দেয়?
যাই হোক, লাগুক ঠান্ডা, আমার কি?
ময়ূরীকে গিয়ে বলুক কম্বল এনে দিতে। হুহ।
আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে উঠে আমি সবচেয়ে বেশি চমকে গেলাম। ইথান আমার দিকে ঘুরে আমার সাথে এক কম্বলে শুয়ে আছে। এত কাছাকাছি আছি সেটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। এদিকে আমার হার্ট বেচারার আবার সেই একই অবস্থা।
আমি উঠে পরার জন্য চিন্তা ত করলাম, কিন্তু শয়তান মন বলছে শুয়েই থাকতে। তাই শুয়েই রইলাম।
হঠাৎই একটা সেলফি তোলার ইচ্ছে হলো। এই ইচ্ছেটা পূরণ না করলেই নয়। আমি কোন শব্দ না করে পাশ ফিরে নিজের ফোনটা নিলাম। তারপর ইথানের দিকে ঘুরলাম আর ক্যামেরা অন করে আমাদের দুইজনের ছবি তুলে নিলাম।
কয়েকটা তুললাম। তারপর ছবি গুলো দেখতে লাগলাম।
কি সুন্দর আসছে ছবিগুলো! দেখে নিজেই ফিদা হয়ে গেলাম।
“what?!” ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি চমকে উঠলাম আর হাত থেকে ফোনটা ফসকে গেলো।
ইথান আমার ফোনের দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে ফোনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে হুমড়ি খেয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলাম।
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
“ক…কিছু না।” বলেই আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
গাধার মতো সবকিছুতেই ধরা পরে যাচ্ছি।
মাত্রই উঠেছে হয়তো। নাকি জেগেই ছিলো!
তার চেয়েও বড় কথা হাত থেকে ফোনটা ফসকে গেলো তখন কি ছবিটা দেখে ফেলেছে?
উফ! কি অসহ্য!
হঠাৎই রুমের মধ্যে কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ এলো। আমি দৌড়ে আবার ফিরে এলাম।
আমার প্রিয় ফুলদানিটা ভেঙে পরে আছে। আমি হা হয়ে ভাঙা ফুলদানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান আমার দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “সরি। খেয়াল করিনি এটা এখানে ছিল।”
ততক্ষণে মাও এসে রুমে ঢুকল।
“কি হয়েছে বাবা?” মা একটু ঘাবড়ে গেছে।
“রিল্যাক্স আন্টি কিছু হয়নি। আমি খেয়াল করিনি, ভুল করে ভেঙে ফেলেছি এটা।” ইথান ফুলদানির দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি বুঝিনা ওনার আমার ফুলদানির সাথে কিসের শত্রুতা! ছোটো বেলায়ও ত একটা ভেঙে দিয়ে গেছিল।
আমার মা হেসে বলে উঠল, “কোনো ব্যপার না। ভাঙতেই পারে। এটা আমি পরিষ্কার করে ফেলছি।”
মায়ের কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।
“আমিই করতে পারব।” বলল ইথান।
“না না।” সাথে সাথে বলল মা।
“কারো করা লাগবে না। আমার ফুলদানি আমি বুঝে নিব।” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
“আচ্ছা কর। নতুন কিনে দিব রাগ করিস না।” একটু সান্ত্বনার সুরে বলল মা।
“তুমি নাস্তা করে নেও আসো। তুইও আয় এরিন।” বলে মা চলে গেল।
আমি বসে ফুলদানির টুকরো গুলো তুলতে লাগলাম। ইথানও আমার সাথে ভাঙা টুকরো গুলো তুলতে লাগল।
আমি ভালমন্দ কিছুই বললাম না।
“আবার আমার ঘড়ি ভেঙো না।” সরু চোখে বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে ইথানের দিকে তাকালাম। ওনার মনে আছে?
ইথান টুকরো গুলো একপাশে একত্রে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
|
|
সন্ধ্যার সময় নিজের রুমে নতুন ফুলদানি দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আগেরটার চেয়েও সুন্দর এটা। কিন্তু এটা কে আনলো? মা?
ফুলদানিটায় সাদা আর হালকা গোলাপী রং এর কাজ।
আমি খুশিতে মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
কিন্তু মা বলল এটা নাকি সে কিনে আনে নি।
আমি অবাক হয়ে গেলাম, “তাহলে…?”
“তাহলে আর কে বুঝিস না তুই!” মুচকি হেসে বলল আমার কাজিন নিরা।
আমার মাও মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
সব কাজিনদের মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝলাম ওরা ইথানের বিষয়ে বুঝতে চাচ্ছে।
ভেবেই আমি নিজেই হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। সে দেবে?
যদিও মনে মনে খুবই খুশি লাগছে।
“ছাদে আছে, যা।” বলল এলমা।
আমি নিজের মুখের হাসিটা সরিয়ে দিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম।
সবাই হাসতে লাগল।
আমি আর দাড়ালাম না সোজা ছাদে উঠে এলাম।
ইথান ছাদে থাকা এক বেঞ্চে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি গুটি গুটি পায়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। যদিও একটু দূরত্ব রেখেই বসলাম।
ইথান আমার দিকে তাকালো তারপর আবার আকাশের দিকে তাকালো। এই নিস্তব্ধতার ভিতরে চাঁদের আলোয় ওর মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আর নিস্তব্ধতা ভেঙে আমার একটা কথাই বলতে ইচ্ছে হলো। সেটা হলো “ভালোবাসি।”
যদিও এই কথাটা বলা অনেক কঠিন। আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কথা এটাই।
তাই “আমি আপনাকে ভালোবাসি” এই কথাটা বলার বদলে আমি বললাম, “আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর, তাই না?”
কারণ কিছু কথা বলার সাহস সবসময় হয়ে ওঠে না। হয়তো বা লজ্জার কারণে, কিংবা ভয়ের কারণে।
আমি মুখ ফিরিয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কপাল কুচকে।
আমি চিন্তায় পরে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
‘উনি কি জানে যে জাপানিজ নোভেলে চাঁদকে সুন্দর বলা মানে, I love you?’
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে এখন চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।
তবে এখন তার মুখে একটু হাসির আভা আছে।
এর কি মানে? আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম।
হার্ট আবার দ্রুত গতিতে ছুটছে। ওর পাশে বসা থেকেই শুরু হয়েছে।
ইচ্ছে করছে এই হার্ট নামক জিনিসটা বের করে ছুড়ে বাহিরে ফেলে দিই।
উঠে চলে যাবো! কিন্তু কোনো এক অজানা কারনে তাও পারছি না।
আমি দোটানায় পরে গেলাম।
“Did you get the vase?” বলল ইথান।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
সে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।
আমি দ্রুত হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
ইথান আবার সামনের দিকে তাকালো।
মনটা অনেক ভাল লাগছে এখন। কারণ ইথান স্বাভাবিক ভাবে আমার সাথে কথা বলছে।
ইথান বেঞ্চ থেকে উঠে ছাদের প্রান্ত ভাগের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে তার মন অনেক ভালো আছে৷ কিন্তু কেনো?
আমি উঠে ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। কিন্তু আমার হাইট ফোবিয়া আছে। তার একটু ঘাবড়ে গেলাম।
ইথান হালকা পিছিয়ে এসে দাঁড়ালো।
আমি একটু অবাক হলাম।
অল্প অল্প বাতাস বইছে। এরমধ্যে দুইজন একসাথে দাড়িয়ে থাকতে বেশ ভালো লাগছে।
আমি ফাকে ফাকে ইথানের দিকে তাকাচ্ছি।
হঠাৎই কি মনে হলো আমি ইথানের গালে একটা কিস বসিয়ে দিলাম।
ইথান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
কাজটা করে আমি নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। তাই দ্রুত ছাদ থেকে নেমে এলাম।
আজ মায়ের রুমে ঘুমালাম। মা ত প্রথমে রাজিই হয়নি। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা।
তবে রাতে হয়ে গেল আরেক কান্ড।
রাতে পানি খাবার জন্য উঠলাম। ঘুম ঘুম চোখে ডায়নিং থেকে পানি খেয়ে আমি ভুল করে নিজের রুমে ঘুমোতে চলে গেলাম।
রুমে ঢুকেই বিছানায় শুয়ে পরলাম। আর ইথানকে কোলবালিশ মনে করে জড়িয়ে ধরলাম।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় মনে হলো এটা কোনো কোলবালিশ না তাই হাত দিয়ে হাতর। ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকালাম।
ইথান অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ভুত দেখার মত চমকে পিছিয়ে গেলাম আর খাট থেকে পরে গেলাম।
কোমড়ে আর মাথায় ভালই ব্যথা পেলাম।
ব্যথায় বলে উঠলাম, ওহ রে, আমার কোমড় শেষ হয়ে গেল রে।
“চিল্লাচ্ছ কেনো!” নীচু আওয়াজে বলল ইথান।
আমি আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালাম।
কোমড়ে সত্যিই ব্যথা পেয়েছি ভালই।
ইথান এত সময় বিছানায় চুপচাপ বসে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে ছিল। আমি দাঁড়ানোর পর সে নিজের মত গায়ে চাদর টেনে নিয়ে শুয়ে পরল।
দেখেই আমার মাথা গরম হয়ে গেল।
এই ধরনের স্বামী দিয়ে আমার কি লাভ? বউয়ের কষ্ট দেখতে পায় না।
আমি কোমড়ে এক হাত রেখে ড্রেসিং টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলাম। আর নিঃশব্দে ড্রয়ার খুললাম। এখানেই কোথাও মুভ রাখা ছিল। উপরের ড্রয়ার দুটো ত খুজলাম কিন্তু নিচের দিকের গুলো খুজতে গেলে ঝুকতে হবে। কোমড় ব্যথা নিয়ে কিভাবে ঝুকবো?
“কি খুঁজছ?”
আমি একটু চমকে উঠলাম হঠাৎ পিছন থেকে ইথানের গলা শুনে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
সে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
“কি!” ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
“মুভ।” আমি ইশারায় ড্রয়ার দেখিয়ে দিলাম।
ইথান ড্রয়ার খুজে মুভ ক্রিম বের করে আমার হাতে দিলো।
আমি ইথানকে জ্বালানোর জন্য বললাম,”খুলে দিন।”
ইথান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তারপর আমার হাত থেকে নিয়ে খুলে দিল।
আমি এবার বললাম, “বের করে দিন।”
আমি অনেক কষ্টে হাসি আটকে রাখলাম।
ইথান ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। সে হয়তো বুঝতে পারছে যে আমি ইচ্ছে করেই এমন করছি।
মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে ইথান নিজের আঙুলে লাগিয়ে নিল। তারপর আমার কোমড়ের কাছ থেকে জামা সরিয়ে ওর আঙুল স্পর্শ করিয়ে দিলো।
আমি সাথে সাথে চমকে সরে যেতে চাইলাম। কিন্তু ইথান আমার হাত ধরে টান দিয়ে আবার ওর সামনে দাড় করিয়ে দিল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,”কি করছেন! ছাড়ুন।”
ইথান আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে সিক্ত গলায় বলল, “কেনো? এখন ছাড়তে বলছ কেনো!”
আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৩

0

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৩ : #কালপ্রিট
লেখিকা : #Lucky

“মেয়ে দেখলেই ছুতে ইচ্ছে করে?” রেগে বলে উঠলাম আমি।
ছেলেটা অনেক বেশি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
“অনেক ক্ষণ ধরে খেয়াল করছি। টাচ করার ধান্দায় থাকেন তাই না? আপনাদের মত অসভ্য কতগুলো ছেলের জন্য আজ সমাজের এই অবস্থা।” আমি চোখ পাকিয়ে বললাম।
ছেলেটার সারা মুখে হলুদ লাগানো। এই আবছা অন্ধকারে চেহারা ভাল বুঝাও যাচ্ছেনা।
আমার চেয়ে লম্বা। আমি নিজেই ত পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। এই ছেলে পাঁচ ফুট আট হবে হয়তো। আর দেখে ভদ্র পরিবারেরই ছেলে মনে হয়।
কিন্তু ভদ্র মনে হলেই কি আর ভদ্র হয়!
গ্রামের এক বিয়েতে এসেছি আমি। আজ হলুদ। হলুদের অনুষ্ঠানেও মনে হলো কেউ আমার কোমড় স্পর্শ করল। যদিও তখন খুজে পাইনি। তাহলে সেখানেই পুতে দিতাম। তবে এর পরেও গায়ে অনেক বার মোড়ানো কাগজও মেরেছিল। এত লোকের মধ্যে বুঝতেও পারি নি। এখন হাত মুখ ধুতে কলের কাছে এসেছিলাম। তখনি কেউ পিছন থেকে আবার আমার পিঠে ছোটো মোড়ানো কাগজ মারল। পিছনে ঘুরে এই ছেলেকে দেখলাম। আর কি! সব জায়গায় বখাটে।
কিন্তু এই ছেলে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি বখাটে, আর সে নির্দোষ।
আমি নাক মুখ কুচকে বললাম, এরপরে যদি এগুলো করেন তাহলে ফল ভাল হবেনা।
“What do you mean?” ভ্রুকুচকে বলল ছেলেটা।
ন্যাকা সাজচ্ছে এখন। যত্তসব। আশেপাশে আর কেউ নেই। এই ছেলেই সব করেছে আমি জানি। এরা এক্সট্রা অর্ডিনারী বখাটে। দোষ করবে উপর থেকে ভাবও নিবে।
“বখাটে কোথাকার। আবার ভাব নেওয়া হচ্ছে?” ক্ষেপে বললাম আমি।
ছেলেটা রেগে গেল।
তাতে কি! আমি ভয় পাইনা।
তখনি কয়েকজন ছেলে কথা বলতে বলতে কলের কাছে এলো।
“কিরে ইথান, একে চিনিস তুই?” একটা ছেলে বলল।
“বখাটের নাম ইথান তাহলে!” মুখে একরাশ বিরক্তি এনে আমি বলে উঠলাম।
ছেলেগুলো হতভম্ব হয়ে গেল।
ইথান নামের ছেলেটা ত রেগে আগুন হচ্ছে।
সবার সামনে অপমান করাই দরকার। নাহলে এসব ছেলেরা শিখবে না।
“বখাটে! কে?” অবাক হয়ে বলল আরেকটা ছেলে।
“এইযে এই ছেলে। আমার সাথে সেই কখন থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টায় আছে। এসব ছেলেদের থাপড় দিয়ে ঠিক করা লাগে।” বললাম আমি।
আশেপাশে আরো কয়েকজনও এসে হাজির হলো।
সবাই হাত মুখ ধুতেই আসছে। হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে।
ইথান রেগে কিছু বলার আগেই আমার ডাক পরল।
“এরিন, জলদি আয়।”
আমি ইথানের দিকে একটা চোখ ঝাঝানি দিয়ে বললাম,”সময় থাকতে ভাল হন। নির্লজ্জ কোথাকার।”
আশেপাশের মানুষ ফিসফিসিয়ে কথা বলতে লাগল। কেউ কেউ ইথানের দিকে ঘৃণার চোখে তাকালো।
এতে ভালই লাগল। এটাই হওয়া উচিত।
আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
হলুদের অনুষ্ঠানে আমার মা তার এক পুরোনো বান্ধবীর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
তারা অনেক ভালো ফ্রেন্ড। আজ অব্দি মায়ের মুখেই শুনেছিলাম ওনার কথা।
“মনে আছে আমার কথা? তুমি ছোটো থাকতে একবার গিয়েছিলাম তোমাদের বাসায়।” বললেন উনি।
আমি ঠোঁট উলটে না সূচক মাথা নাড়লাম। আমার মনে নেই সে কথা।
“আমার ছেলে ভুল করে তোমার ফুলদানি ভেঙে ফেলেছিলো তাই তুমি ওর ঘড়ি ভেঙে দিয়েছিলে! মনে নেই?” উনি উজ্জ্বল হাসির সাথে বললেন।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম। সেভাবে ত মনে আসছে না, তবে ঘড়ি ভেঙে ছিলাম হয়ত ছোটো বেলায় কারো।
“অনেক ছোটো ছিল, মনে কি থাকবে? চার বছরের কম ছিল তখন।” আমার মা বলল।
“তাও ঠিক।” বললেন উনি।
“তোর ছেলে কই?” মা জিজ্ঞেস করল।
উনি এদিকে ওদিকে চোখ বুলিয়ে বললেন, “হবে এখানে কোথাও!”
একটু থেমেই উনি বলে উঠলেন, “ওই ত!…..ইথান এদিকে আয়।” ডাকলেন উনি।
আমি নাম শুনেই চমকে উঠলাম।
ইথান ওর মায়ের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আমাকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলল।
ছেলেটা দেখতে সুন্দর। তখন হলুদ চেহারায় লেগে থাকার কারনে চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না। এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ইথান ওর মায়ের কাছে এসে দাড়াতে না দাড়াতেই আমি বলতে লাগলাম, “এই বখা…”
ইথানের রাগমিশ্রিত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি চুপ করে গেলাম।
‘এই বখাটেটা আন্টির ছেলে? How!’ মনে মনে বললাম আমি।
“তোরা চিনিস একে অপরকে?” জিজ্ঞেস করল ইথানের মা।
“kind of.” আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে দাতেদাত চিপে বলল ইথান। রাগ দমন করে রেখেছে বুঝাই যাচ্ছে।
“কিভাবে চিনিস?” ইথানের মা অবাক হয়ে গেল।
ইথান কিছু বলল না।
“কত বড় হয়ে গেছে ছেলে তোর।” বলল আমার মা।
“মনে আছে ছোটো বেলায় আমরা বলেছিলাম যে আমাদের ছেলে আর মেয়ে হলে দুইজনের বিয়ে দিব!” বলল ইথানের মা।
আমি চমকে গেলাম, “বিয়ে? এই বখা…” এটুকু বলেই আমি চুপ করে গেলাম।
ইথান রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম।
আমার মা গল্পে ব্যস্ত হয়ে গেল আর আমাদের দুইজনকে রেখে চলে গেল।
আমি সরু চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে ত রেগে আগুন।
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?” ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“You are not my type. So Don’t flatter yourself.” তাচ্ছিল্যের সাথে বলেই ইথান চলে গেল।
আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিল না।
কত বড় সাহস! রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।
আমি হেটে এগিয়ে গিয়ে ইথানের সামনে দাড়ালাম আর বললাম, “আপনিও আমার টাইপের না। বখাটে কোথাকার!”
ইথান রেগে আগুন হয়ে গেল।
আশেপাশে কয়েকজন আমাদের দিকে তাকালো। আমি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলাম না। নিজের মত হেটে চলে এলাম। আরো কিছু মানুষও শুনলো। যাক এখন শান্তি লাগছে।
.
পরেরদিন সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেল। হলুদ হয়েছে। আজ বিয়ে। আমি জলদি ফ্রেস হয়ে বের হয়ে এলাম।
পুরো বাড়ির উঠোন রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
কিন্তু একটা সুতা ঢিলা হয়ে গেছে যার কারণে সেই সুতার কাগজগুলোও নিচে নেমে এসেছে।
আমি সেটা ঠিক করার জন্য লেগে পরলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বাশের কাছে বাধা ওই একটা সুতা টাইট দিতে গিয়ে ভুলে সব সুতা খুলে ফেললাম। আরকি খুলে গেল।
সম্পূর্ণ সাজানো মাটিতে গেল। মানে, এক সাইডের
সুতার রঙিন কাগজ গুলো সব খুলে গেল।
কতগুলো ছেলে দৌড়ে এসে নিজেদের কপাল চাপড়াতে লাগল।
আমি দোষী চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“আপু সেই সকাল থেকে সাজাচ্ছি! কি করলেন এটা! রাতে শিশির পরে তাই আগে সাজালে কাগজ নষ্ট হয়ে যেত। তাই সকাল সকাল ঘুমের বারো বাজিয়ে কাজ করলাম। এটা কি করে দিলেন।” বলল একটা ছেলে।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম। কি করতে কি হয়ে গেল।
“Do it Again.” বলল ইথান।
আমি পিছন ফিরে তাকালাম।
ইথান আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, “এবার খেয়াল করবেন যাতে যে সে এসে বিগড়ে দিতে না পারে। যাদের করার কাজ নেই তারা এসব করতে ভালোবাসে।”
আমি বুঝলাম যে উনি আমাকে খোটা মেরে বললেন।
আমি দাতেদাত চিপে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলাম। তারপর ছেলেগুলোর দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বললাম, “সরি ভাইয়া। ভুল হয়ে গেছে। আপাতত এই বখাটে যা বলছে তাই ই করেন। আবার ঠিক করেন। আমি আর আসব না।” বলেই আমি ইথানের দিকে ব্যাঙ্গত্মক চোখে তাকালাম।
তার নাক মুখ শক্ত হয়ে গেছে আর হাতও মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে এই ছেলেগুলোও হা হয়ে রইল।
“আর আপনাদের মা বোন থাকলে সাবধান। এই ছেলে প্রচুর লুচ্চা।” বললাম আমি।
বুঝুক মজা এখন! আমি নিজের মতো ভাব নিয়ে চলে এলাম।

বিয়ের অনুষ্ঠানেই সারাদিন কেটে গেল। মাঝে একবার দুইবার ইথানের দিকে চোখ পরেছিলো। সে ত তার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি সেটা গায়ে মাখাচ্ছি না।
কিন্তু ব্যাপারটা অনেক ভাল লাগছে।
কিন্তু এই ভালো লাগাটা কি এমনিই ভালো লাগা? নাকি অন্যকিছু!
আমি নিজেকে ধমকে মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেললাম। একটা লুচ্চা ছেলেকে কি করে পছন্দ করব আমি! ছি! অসম্ভব।
কিন্তু উনি কি সত্যিই খারাপ?

সন্ধ্যার পরে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। আর শেষ হতেই খেয়াল হলো যে আমার এক কানের দুল নেই। এখন কোথায় খুজবো! এটা আমার প্রিয় দুল ছিল। একটা অর্ধচন্দ্রাকার দুল। দুলটা কালো আর এর প্রান্তভাগ হালকা সবুজ। সেই সবুজের মধ্যে কয়েকটা ছোটো তারা আকা।
বাহিরের দেশের। গিফট দিয়েছিল কাকা।
আমি সব জায়গায় খুজে এলাম। কোথাও নেই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
মন মরা হয়ে ফিরে এসে বিছানায় বসলাম।
হঠাৎ মনে পরল বাগানের কথা। অইখানে অনেক ছবি তুলেছিলাম।
সাথে সাথে আমি বাগানে চলে এলাম। কিন্তু সঙ্গে করে ফোনটা আনতে ভুলে গেলাম। চাদের আলো আছে কিন্তু তাও দুল খোজার জন্য লাইট লাগবে।বাগানটা একটু নির্জন জায়গায়। কোনো লাইট নেই আসেপাশে। মনে করেছিলাম লাইট থাকবে। গ্রামে এই এক সমস্যা।
ফোন না আনলে খুঁজে পাবই না। তাই ফিরে যেতেই হবে।
কিন্তু সেই মুহুর্তেই মনে হলো কেউ আমার পিছনে এসে দাড়ালো।
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
পিছনে ঘুরতেও ভয় লাগছে। ভুত হলে?
আমি ঠিক করলাম কোনো দিকে না তাকিয়ে বাড়ির দিকে হাটা শুরু করব।
তাই সত্যিই পিছনে ফিরলাম না।
কিন্তু দুই পা বাড়াতেই পিছন থেকে তিনটা ছেলে আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।
আমি অনেক ঘাবড়ে গেলাম আর বললাম, “কারা আপনারা?”
“পুরো হলুদ জুড়ে তোমাকে সিগনাল দিচ্ছি, তুমি নোটিশই করছ না।” একটা ছেলেটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল।
ওর চেলাপেলা গুলোও দাত কেলাতে লাগল।
তারমানে এরা! কিন্তু তিনজনের সাথে আমি পেরে উঠব কিভাবে!
ভয়ে শুকিয়ে গেলাম আমি। ওদিকে সাউন্ড বক্সে জোরে জোরে গান বাজছে। আমি চিৎকার করলে কেউ শুনবেও না।
কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।
আমি সাহসী হবার ভান করে মিথ্যে বললাম,”আ..আমার বাবা পুলিশ। মেরে লক আপে দিয়ে দিবে একদম।”
ছেলেগুলো ভয় পেল না। বরং পাশের একটা ছেলে বলল, “ওহ তাই? আমার বাপ র‍্যাব।”
ছেলেগুলো হাসতে লাগল।
আমি ভয়ে ঢোক গিলে নিলাম।
“তোমাকে ভালোবাসি আমি।” একটা ছেলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল।
আমি দ্রুত পিছিয়ে গেলাম আর পিছনে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।
ধাক্কা খেয়ে সাথে সাথে আমি জড়সড় হতে এক সাইডে সরে দাড়ালাম কারণ আমি মনে করলাম পিছনের লোকটাও এদের দলের।
কিন্তু সামনের ছেলেগুলো ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
তারপর পাশে ফিরে তাকালাম।
ইথান! সে এখানে কি করছে? যদিও ওকে দেখে আমার ভয় দূর হয়ে গেল।
হঠাৎই ইথান ওই ছেলেটার কলার চেপে ধরলো। তাই ভয়ে বাকি দুইটা ছেলে দৌড়ে পালালো।
“So, you are the culprit?” গম্ভীরমুখে বলল ইথান।
ছেলেটা থতমত খেয়ে গেল।
“স…সরি ভাই আর হবে না।” ভয় পেয়ে বলল ছেলেটা।
“নাম কি?” বলল ইথান।
ছেলেটা আমতা আমতা করতে লাগল।
ইথান রেগে কলার আরো জোরে চেপে ধরতেই বখাটে টা ভয়ে বলে উঠল, “হি..হিরো।”
নাম শুনেই আমার মুখ ভেটকি মাছের মতো হয়ে গেল। বখাটের নাম যদি হয় হিরো!
“আসল নাম জানতে চেয়েছি।” বলল ইথান।
“ভাই আর জীবনেও এমন ভুল করব না। এটা আপনার গার্লফ্রেন্ড, জানতাম না ভাই। সরি ভাই। মাফ করেন ভাই! বোন সরি বোন।” ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে মিনতি করে বলল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমি কবে গার্লফ্রেন্ড হলাম!
ইথান ভ্রুকুচকে ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। ছেলেটা সাথে সাথে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
আমি আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথানও আমার দিকে তাকালো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উনি কিভাবে এখানে এলেন! আমাকে ফলো করছিলেন! নাহলে এত রাতে এই বাগানে কে আসবেন!
“আ…আপনি এখানে কি জন্য….!” আমি প্রশ্ন করে ফেললাম।
ইথান উওর না দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
আমি চমকে পিছিয়ে যেতে যেতে বললাম,”ক…কি?”
উনি এগিয়েই আসতে লাগলেন।
এটাই বাকি ছিল! ভুল মানুষকে বখাটে বলে বলে পচিয়েছি। অপমানও করেছি। এখন কি সহজে ছেড়ে দেবে?
সরি বলব! নাকি বাচানোর জন্য ধন্যবাদ বলব!
কিন্ত এখন ত রেগে আছে। কি করবে!
“কি ক..করতে চ…চাচ্ছেন?” ভয়ে ভয়ে পিছাতে পিছাতে একটা ঢোক গিললাম।
ইথান আমার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আমি অনেক চমকে গেলাম। আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগল।
ইথান আমার পিছনের দিকে তাকালো।
আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আস্তে আস্তে আড় চোখে পিছনে তাকালাম।
পিছনেই একটা গোলাপ গাছ ছিল। এজন্যই উনি আমার হাত ধরে টান দিয়েছেন।
হঠাৎই আমাদের উপর কেউ লাইট মারলো।
ইথান লাইট ধরে থাকা মেয়েটাকে দেখে সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দিল।
প্রথমে মেয়েটা একটু থ মেরে গেল কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে সুর টেনে বলল, “ভাইয়া~~, এখানে কি~~করছিস তুই!”
বলেই সে ভ্রু উঁচু করলো!
তার কথার স্টাইলেই বোঝা যাচ্ছে সে ভুল বুঝছে আমাদের।
মেয়েটা মুচকি হেসে সাথে সাথে ঘুরে হাটা শুরু করল আর জোরে জোরে ডাকতে লাগল, “মাসি মাসি, ভাইয়া প্রেম করছে। হট রোম্যান্স ইন গার্ডেন।”
“Damn it.” বলেই ইথান বিরক্তির সাথে মেয়েটার পিছনে চলে গেল।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
বিয়ে বাড়িতে ইথানের সাথে পরের দিন আর দেখা হলো না। নিজের অজান্তে আমি বার বার এদিক সেদিক তাকিয়ে ওকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু আর পেলাম না।
তাই মনে করলাম এটাই হয়তো শেষ দেখা!
কিন্তু না…।এই বিয়ে বাড়ি থেকে বাসা ফিরে যাওয়ার দুইদিন পরেই ইথানের মা আমাদের বাড়িতে এলেন।
আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে ওনাকে দেখে একটু অবাক হলাম।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হলাম যখন শুনলাম উনি ইথানের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।
“দুইজনই যখন দুইজনকে ভালোবাসে তখন আমি বাধা দেওয়ার কে!” ইথানের মায়ের এই কথাতে আমি মনে করেছিলাম যে উনি আমাকে ভালোবাসেন।
কিন্তু আমি ত ভুল ছিলাম।
তাও মনে এখনো একটাই প্রশ্ন, সত্যিই কি উনি একদমই জানতেন না যে বিয়েটা আমার সাথে ছিল!
আমি ইথানের দিকে ফিরলাম। ইথান আমার দিকে ফিরে ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। আমার মুখে মৃদু হাসি চলে এলো।
আমি ইথানের একটু কাছে এগিয়ে এলাম। আর ওকে দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই আমার হাত বাড়িয়ে ওর গাল স্পর্শ করলাম।
সেই মুহুর্তেই ইথান আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার হাতের দিকে তাকালো।
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। আর হাতটা ওর গালের উপর থেকে উঠিয়ে এদিক ওদিক নাড়াতে নাড়াতে বললাম, “ম..মশা। মশা ছিল।”

ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো। হয়ত বুঝে গেছে!
হায় হায়! এত পাতলা ঘুম! আরেকটু গভীর ঘুম হলে কি হত! এখন!
“Do you think I’m a fool?” বলল ইথান।
আমি একটু সাহস যুগিয়ে বললাম, “নিজেকে অত বেশি চালাক মনে করার কিছুই নেই।”
ইথান তাচ্ছিল্য চোখে তাকিয়ে বলল,”তোমারো নিজেকে over smart ভাবার কিছুই নেই। কার মায়ের বড় গলা জানো?”
আমি রেগে গেলাম। উনি চোর বলছেন আমাকে!
“এখানে চুরির কি দেখেছেন? বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের আর আপনি এখন আমার। আমি ছুতেই পারি আপনাকে।” আমি রাগে জ্বলে বলে ফেললাম।
বলার পরে খেয়াল হলো কি বলে ফেলেছি। আমি এক হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে বিস্ফোরিত চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথানের তাচ্ছিল্য ভাব এখন গাম্ভীর্যে পরিনত হয়েছে।
ভাইরে ভাই, আমি আর আমার মুখ। কি করে ফেললাম এটা!
আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম। আর দ্রুতো উল্টো দিকে ঘুরলাম।
ওপাশ থেকে ইথান আর কোনো কথা বলল না।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০২

0

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_২ : #’বখাটে_at_first_sight’
লেখিকা : #Lucky

বৌভাতে অনেক লোকজনই এলো। আমার বাড়ির লোকজনও সকালের মধ্যেই চলে এলো। আমি তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। যদিও মা আসে নি। আসার নিয়ম নেই, নাকি ওইবাড়ির কাজে ব্যস্ত, কে জানে!
কারণ কালই ত মনে হয় নিজের বাড়িতে যেতে হবে।

আমার ফোনেও টাকা নেই যে মাকে ফোন দিব।
কিছুই ভাল লাগছে না।
আমাকে বউ সাজিয়ে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হলো। বৌভাত বলে কথা। কিন্তু আমার গুনধর বরের খবর নেই।
কোথায় সে?
আমি আসেপাশে চোখ বুলিয়ে খুজতে লাগলাম। কিন্তু কোথায় ত নেই। অসহ্য একটা। এসব আনরোম্যান্টিক বর আমার কপালেই জুটল?
কিছুক্ষণ পরেই নিঝুম ইথানকে কোথা থেকে টেনে নিয়ে এসে আমার পাশে বসিয়ে দিল।
কিন্তু ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে উনি বসতে চাচ্ছেন না।
আমি আড়চোখে ওনার হাবভাব দেখতে লাগলাম। উনি গম্ভীর মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
এখনো এত রাগ পুষে রেখেছেন! অবশ্য রাখারই কথা। আমিই ত সব উল্টো পালটা কথা বলেছিলাম সেদিন।
“আরে, ভাবি মাথা তোলো, এত কিসের লজ্জা! পিক তুলব ত!” বলল দিবা।
আমি মুখ কালো করে মাথা নিচু করে ছিলাম। দিবার কথায় চমকে মাথা তুললাম।
দিবা আমাদের দুইজনের ছবি তুলতে চাচ্ছে।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম। ইথান গম্ভীর মুখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ওদিকে দিবা ছবি তুলেই যাচ্ছে।
“ভাইয়া, হাসতে পারিস না!” দিবা বিরক্ত হয়ে বলল।
“না।” বলল ইথান।
“আজব! আর ভাবি, তুমি হাসছ না কেনো? কি হয়েছে? বিয়ের দুইদিন হলোনা, এর আগেই ঝগড়া করে ফেলেছ?” দিবা বলল।
আমি দিবার দিকে হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
“যাই হোক, কি আর করার! থাকো তোমরা, আগে ঝামেলা মিটাও, পরে ছবি তুলে দিব।” দিবা হাই তুলতে তুলতে চলে গেল।
যদিও আশেপাশে লোকজনের হৈচৈ দিয়ে ভরা তাও মনে হচ্ছে কেউ নেই, শুধু আমি আর ইথানই আছি।
হার্টবিট আবার বাড়তে শুরু করেছে।
উনি আমার পাশে বসে আছেন, ভাবা যায়!
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ঠিক সেই মুহুর্তেই ইথান আমার দিকে তাকালো।
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম আর একটা ঢোক গিললাম।
হঠাৎই খুবই নার্ভাস লাগতে শুরু হলো। আমি ইথানের থেকে একটু সরে বসলাম।
তখনি ইথান আমার পাশ থেকে উঠে চলে যেতে লাগল।
আমি সাথে সাথে ইথানের হাত ধরে নিলাম আর বলে উঠলাম, “কোথায় যাচ্ছেন!”
ইথান ভ্রুকুচকে আমার হাতের দিকে তাকালো।
আমি সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম, “ন…না মানে…।”
আমি চুপ হয়ে গেলাম।
ইথান কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চলে গেল।

আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বুঝিনা, আমার পাশে বসলে কি ওর গা জ্বলে যায়?
চিন্তা করেই আমারই গা জ্বলে যাচ্ছে।
যত্তসব ঢং।
আমারো ইচ্ছে করছে উঠে হেটে বেড়াতে। কিন্তু কিছুই করার নেই। ওভাবেই বসে রইলাম।
অনেকক্ষণ পরে আর বসে থাকতে না পেরে উঠলাম।

উঠতেই ইথানের দিকে চোখ পরলো। ইথান ওর কয়েকজন ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিল।
তাদের মধ্যে একজন ইশারা করে আমাকে ডাকলো।
ডাকলে ত যেতেই হবে। তাই এগিয়ে গিয়ে ইথানের পাশে দাড়ালাম। তবে একটু দূরত্ব রেখে।
“ভালই মানিয়েছে।” বলল একটা মেয়ে।
আমি কিছু না বলে শুধু একটু হাসলাম।
“ত ভাবি, শেষমেশ বখাটে ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেললা!” বলল এক ছেলে।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
সবাই হেসে দিল।
ইথান বিরক্ত হয়ে ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল।
“আরে রাগছিস কেন? আমি ত প্রথমেই বুঝেছিলাম এই মেয়ের প্রেমেই তুই পরবি। তোদের প্রেমের কাহিনীর নাম হওয়া উচিত ‘বখাটে at first sight’.” বলেই হাসতে লাগল ছেলেটা।
অন্যরাও হাসতে লাগল।
আমি দ্বিধায় পরে মাথা নিচু করে ফেললাম।
“ওকে তোরা কথা বল আমরা আগে পেট পূজা করে নিই।” বলেই ওরা সবাই চলে গেল।
তখন আবার আমি আর ইথান একা রয়ে গেলাম।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথানও গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
তখনি এক মহিলা এসে আমাদের সামনে দাড়ালেন।
মহিলাটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “অনেক সুন্দর।”
আমি ওনাকে ঠিক চিনলামও না। আরকি অনেক জনকেই চিনি না।
“ছোট্ট ইথান কত্ত বড় হয়ে গেছে, এখন বিয়েও হয়ে গেছে!” ইথানের দিকে তাকিয়ে বললেন ভদ্র মহিলা।
ইথান স্বাভাবিক হাস্য উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।
আর কি সবার দিকেই স্বাভাবিক ভাবে তাকায়, শুধু আমার দিকে বাদে।
“মা কোথায়?” বললেন ওই ভদ্র মহিলা।
“এখানেই কোথাও হয়ত। অনেক লোক ত, বিজি তাই।” ইথান ওনাকে বলল।
“যাই খুজে আসি।” মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে উনি চলে গেলেন।
উনি চলে যাওয়ার পরেই পিছনের মেয়েটার দিকে আমার নজর পরল।
মেয়েটাকে আমি খেয়াল করতাম না। কিন্তু কর‍তে হলো।
কারণ ওই ভদ্র মহিলা সরে যাওয়ার পর মেয়েটার দিকে ইথানের চোখ পরতেই ওর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল।
সেইজন্যই আমি সামনের দিকে তাকালাম।
মেয়েটা একপ্রকার নিরাশ চোখে ইথানের দিকে তাকিয়ে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মেয়েও হয়তো আন্দাজ করে ফেলতে পারবে যে এদের দুইজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়তো ছিল।
আমার ভিতরটা মুচড়ে উঠল। কারণ সম্পর্ক ছিল নাকি এখনো আছে!
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিল। সেই ম্লান হাসি আমার ভয়ের কারণ হয়ে উঠল।
মেয়েটা আমাদের দিকে এগিয়ে এলো।
“কেমন আছ?” মেয়েটা হাসার চেষ্টা করে ইথানকে বলল।
“I am good.” শক্ত মুখে বলে ইথান চলে গেল।
এতে আমি আরোই নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
আমার চোখে জল চলে আসতে চাইল কিন্তু আমি জোর করে আটকে রাখলাম। কেন জল আসতে চাচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না।
মেয়েটা ইথানের চলে যাওয়ার দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো। আমি একটু হাসার চেষ্টা করে মেয়েটার কাছ থেকে সরে আসার জন্য ঠিক করলাম। কেন জানিনা, কিন্তু ভালো লাগছে না।
“ইথান আর তোমার কি লাভ ম্যারেজ?” মেয়েটা প্রশ্ন করে উঠল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
কি উওর দেব আমি?
“অহ আমার পরিচয়ই ত দিলাম না! আমি দিশা। ইথানের ফ্রেন্ড।” মেয়েটা ম্লান মুখে বলল।
“আমি এরিন।” স্বাভাবিক ভাবেই বললাম।
তখনি পিছন থেকে ডাক পরল আমার। আমার মা ফোন করেছে। আমি ফোন তুলতে গেলাম।
যদিও মনের মধ্যের চিন্তাটা থেকেই গেল।
যদি সত্যিই এই দিশার সাথে ইথানের সম্পর্কে থেকে থাকে! আর যদি এখনো উনি এই দিশা নামের মেয়েটাকে পছন্দ করে থাকেন!
কিন্তু এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, যদি আমার সাথে ইথানের বিয়েটা ইথানের মা জোর করে দিয়ে থাকে! তাহলে ত বিষয়টা এমন দাঁড়াবে যে আমি ওনাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি। তাহলে আমার কি হবে!

সন্ধ্যার পরে অনুষ্ঠান শেষ হলো। খুবই ক্লান্ত লাগছে। শারীরিক ভাবেও আবার মানসিক ভাবেও। ওই দিশা মেয়েটার কি দরকার ছিল আসার?

আমি রাতের খাওয়া শেষ করে বিছানায় এসে বসলাম।
ইথান সেই মুহুর্তেই রুমে ঢুকল।
আমি ওর দিকে তাকালাম না। বরং আমার মত বালিশ ঠিক করে নিয়ে শুয়ে পরার জন্য তৈরি হতে লাগলাম।
কিন্তু যেই মুহুর্তে শুয়ে পরব সেই মুহুর্তেই ইথান বলে উঠল,”ওঠো।”
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “মানে!”
ইথান গম্ভীর মুখে তাকিয়ে বলল “মানে, ওঠো আর…”
আমি ইথানের কথার মাঝখানে বলে উঠলাম, “আমাকে আপনি নিচে ঘুমাতে বলছেন?”
আমার সত্যিই আশ্চর্য লাগছে! ওই মেয়ের জন্য উনি এখন আমাকে নিচে ঘুমাতে বলছেন? গতদিন ত এমন করেন নি!

ইথান একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”যেটা বলছি সেটা করো।”
আমি হতাশ চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথান বলতে লাগল, “আর শাড়ি খোলো…।”
আমি চমকে গেলাম আর বলে উঠলাম, “ক..কি বলছেন এসব আপনি!”
“শাড়ি পরে ঘুমানোর কোনো দরকার নেই তোমার।” গম্ভীর গলায় বলল ইথান।
“কেনো?” আমি বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম।
ইথান কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালো।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আমি বুঝলাম যে উনি কেন এই কথা বলেছেন।
সাথে সাথে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।
ইথান বেলকনিতে চলে গেল।
আমি জলদি বিছানা থেকে উঠে আলমারির থেকে একটা থ্রি পিচ নিয়ে বাথরুমে চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম।
ইথান নিজের জায়গায় শুয়ে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম।
ইথান উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।
মনে ত হয়না এখনো ঘুমিয়েছে!
আমি যদি ওই মেয়ের বিষয় কিছু জিজ্ঞেস করি উনি কি উওর দিবে?
না দিলে নিজেরই ইনসাল্ট হবে। তাছাড়া উনি ত আমাকে ভালোই বাসে না।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে অতীতে ডুব দিলাম, যেদিন আমার সাথে ইথানের প্রথম দেখা হয়েছিল। বলতে গেলে সেটা দ্বিতীয় দেখা ছিল।

(চলবে…)