Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1574



মায়া পর্ব-০৯

0

#মায়া
#পর্ব_০৯
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

আফসানা তো প্রেগন্যান্ট ছিল বাবা। কিছু বলেছে কি? ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?

হ্যাঁ মা, ওয়াহেদের সাথে কথা হয়েছে আজ। আফসানার মেয়ে হবে।
সুরাইয়া তখন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে। এটাই মনে হয় প্রকৃতির প্রতিশোধ। মেয়ে সন্তান হওয়ার জন্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে আফসানাকে বিয়ে করেছে। তার পেটে আবার মেয়ে সন্তান। না জানি আফসানার সাথে কেমন ব্যবহার করছে ওয়াহেদ আর শ্বাশুড়ি। দোয়া করি আমার সাথে যেমন হয়েছে আফসানার সাথে না হয়। পরিবার নিয়ে সব সময় সুখে থাকুক আফসানা ওয়াহেদ।

ভালো মন্দ কথা বলে সুরাইয়ার ফোন রেখে দেয়। আজ স্কুলে একটা প্রোগ্রাম আছে। সেখানে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে প্রোগ্রাম থেকে ফিরে আসে সুরাইয়া। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিচ্ছে। ঠিক তখন সুরাইয়ার বাবার নাম্বার থেকে ফোন আসে।

~হ্যালো বাবা!

~আমি আপনার বাবা না।

~তাহলে কে বলছেন আপনি? আর আমার বাবার ফোন আপনারা কাছে কেন?

~আসলে আমি আপনার বাবার প্রতিবেশী বলছিলাম। আপনার বাবা হাসপাতালে ভর্তি আছে। হার্ট অ্যাটাক করেছেন। ডায়াল নাম্বারে প্রথমে আপনার নাম্বার ছিল তাই আপনাকে ফোন দিলাম। আপনি তাড়াতাড়ি পপুলার হাসপাতালে চলে আসেন।

আর কথা না বলে ফোন রেখে সুরাইয়া তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসে।‌ দুই ঘন্টার পথ যেতে অনেকটা সময় লেগে যায় আফসানার। হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে দেখে কান্না করে দেয় সুরাইয়া। তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে সুরাইয়ার।

আমি কি আমার বাবাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারি ডাক্তার সাহেব।

আজ নিয়ে যেতে পারবেন না। আজকের দিনটা হাসপাতালে থাকতে হবে। তারপর কাল সকালে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন।

আমি কি জানতে পারি ডাক্তার আমার বাবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ?

প্রধানত অনেক টেনশন করার কারণে আপনার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

ডাক্তারের সাথে কথা শেষে সুরাইয়া মারিয়ার কাছে ফোন দিয়ে বলে।
~হ্যালো মারিয়া আমি সুরাইয়ার বলছি।
~হ্যাঁ সুরাইয়া বল?

আমি আজ বাসায় আসতে পারব না। আজ বাবার কাছে থাকতে হবে। তুই একটু পূর্ণতাকে দেখে রাখিস। কাল দেখা হবে।

পরেরদিন সকালে হাসপাতালে বিল পরিশোধ করে সুরাইয়া বাসায় যাই। সাথে আফসানার বাবা ছিল। বাসায় গিয়ে বাবাকে বলে তোমার যা যা প্রয়োজন আমি গুছিয়ে নিচ্ছি। আজ তুমি আমার সাথে যাবে। তোমাকে এখানে আর একা একা থাকতে হবে না।

সুরাইয়ার বাবা তখন বলে না মা এখানে তোর মায়ের স্মৃতি আছে। এই জায়গা ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারব না। চিন্তা করিস না তুই।

ডাক্তারে বলেছেন তুমি বেশি টেনশন করো তাই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এখানে আর থাকা যাবে না। আর তোমাকে মাঝে মাঝে এখানে নিয়ে আসব।

আর তুমি এতো চিন্তা করো কেন?

কই চিন্তা করি আমি?

তাহলে ডাক্তার কি ভুল বলল অতিরিক্ত চিন্তা করার জন্য তোমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তুমি আর পূর্ণতা ছাড়া আমার এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তোমার যদি কিছু হয়ে যায় আমি থাকব কাকে নিয়ে।

অনেক বুঝিয়ে তারপর বাবাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় সুরাইয়া।

বাবা আর পূর্ণতার সাথে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছে সুরাইয়ার। আজ একটা নতুন চাকুরীর ইন্টারভিউ আছে সুরাইয়ার। ইন্টারভিউ দিয়ে এসে কয়েকদিন পরে চাকুরীর সুসংবাদ আসে। আজকের দিনটা অনেক আনন্দময় সময় সুরাইয়ার জন্য। বেতন বেশ আগের থেকে ভালো। কিন্তু টিউশনি এখনো চালিয়ে যাচ্ছে সুরাইয়ার।

দেখতে দেখতে অনেকদিন কেটে যায়। সময় যেন বাতাসের সাথে অতিবাহিত হচ্ছে। বুঝতেই পারছে না সময় কখন পার হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে প্রায় ৯ মাস আগে ওয়াহেদের কাছে থেকে চলে আসে সুরাইয়া। ওয়াহেদের থেকে বিচ্ছেদ কোনো ভাবেই নিতে পারতো না । কিন্তু সময়ের সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে আর সুরাইয়া মনটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর ওয়াহেদের কথা মনে পড়ে না সুরাইয়ার। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।

আফসানা প্রায় ১০ মাস ধরে প্রেগন্যান্ট। আজ বাড়িতে কেউ নেই। ওয়াহেদ গিয়েছে অফিসে আর শ্বাশুড়ি গিয়েছে ব্যাংক, টাকা তুলতে। আফসানা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু খুব কাছাকাছি। খুব কষ্টে ওয়াহেদকে ফোন দেয় আফসানা।

ভাঙ্গা কন্ঠে বলে হ্যালো ওয়াহেদ তুমি কোথায়?

এইতো আমি অফিসে আছি। কি হয়েছে তোমার কোন দরকার?

একটু বাসায় আসতে পারবে আমার পেটের মধ্যে খুব যন্ত্রণা করছে।

তুমি আম্মার সাথে হাসপাতালে চলে আসো। আমি অফিস থেকে হাসপাতালে চলে যাচ্ছি।

কিন্তু মা বাড়িতে নেই ব্যাংকে গিয়েছে। তুমি একটু বাসায় আসতে পারবে।

অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে আসে তারপর আফসানাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডাক্তার বলেছে সিজার করাতে হবে। আর জরুরি রক্ত ম্যানেজ করতে। “এ” পজেটিভ রক্ত লাগবে। ব্লাড ব্যাংকে “এ” পজেটিভ রক্ত নেই। ওয়াহেদ আম্মাকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে আসতে বলে।

হ্যালো মা তুমি কোথায়?

এইতো আমি রাস্তায় আছি। কেন কি হয়েছে?

তুমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসো আফসানা কে নিয়ে হাসপাতালে আসছি।
ওয়াহেদের মা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসে।

কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক সেদিনই সুরাইয়া তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসে। কোনো এক মাধ্যমে জানতে পরে একটা সিজারের রোগী আছে তার “এ” পজেটিভ রক্ত লাগবে। তারপর সুরাইয়া নিজ ইচ্ছায় রক্ত দিয়ে যায়। রক্তের ফ্রম পূর্ণ করে সুরাইয়া। রক্ত দিয়ে চলে যায় সুরাইয়া।

ব্লাড ডোনেট করার সময় একটা ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেটা হাতে নিয়ে ওয়াহেদ দেখে। রক্ত তো সুরাইয়া দিয়েছে। নিজের নাম বাবার নাম তো একদম এক। আর লাস্ট ব্লাড ডোনেট তারিখ দেয়া আছে আমি যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলাম আর সুরাইয়া রক্ত দিয়েছিল সেই তারিখ। এটা সুরাইয়ার ছাড়া আর কেউ না। হাসপাতাল খুঁজে কোথাও পায়নি সুরাইয়াকে। নাম্বারের জায়গা ফাঁকা। ফর্মে নাম্বার দেয়া নেই। নাম্বার থাকলে দিয়ে কথা বলতো। অনেকটা কাছে পেয়ে হারিয়ে ফেলে সুরাইয়াকে।

আফসানার সিজার চলছে। বাহিরের ওয়াহেদ আর আফসানার শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াহেদ অনেক চিন্তা মধ্যে আছে। দোয়া করছে আফসানা আর সন্তান সুস্থ থাকে কোনো বিপদ না হয়।

কিছুক্ষণ পর সিজার সম্পন্ন হয়। ডাক্তার জানিয়েছেন মা ও সন্তান দুজন সুস্থ আছে। ওয়াহেদ ছুটে সিজার রুমে যায়। কিন্তু ওয়াহেদের মা বাহিরে বসে থাকে। মেয়ে হয়েছে বলে খুশি না। একবারে জন্য দেখতেই গেল না।

ওয়াহেদ সিজারের রুমে গিয়ে দেখ,, এটা কিভাবে সম্ভব ডাক্তার তো বলেছিল আপনাদের মেয়ে সন্তান হবে কিন্তু এটা তো ছেলে সন্তান। ওয়াহেদ তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের সাথে বলে। আপনি তো বলেছিলেন আমাদের মেয়ে সন্তান হবে কিন্তু ছেলে সন্তান কিভাবে।

তখন ডাক্তার বলে আল্ট্রাসনোর মাধ্যমে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া যাই না ছেলে নাকি মেয়ে হবে। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। বাচ্চাটা উল্টে থাকায় রিপোর্টে ভুল হয়েছিল। সিজার করে জানতে পারি ছেলে হবে।

ওয়াহেদ গিয়ে সব কথা মাকে বলে। রিপোর্ট ভুল ছিল মেয়ে না ছেলে হয়েছে। ওয়াহেদের মা অনেক খুশি ছেলে হয়েছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে কোলে নেয়। ওয়াহেদের মার চোখে মুখে খুশি আর ধরে না।

হঠাৎ করেই আফসানা,,,,

চলবে,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

মায়া পর্ব-০৮

0

#মায়া
#পর্ব_০৮
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আলট্রাস্নোগ্রাফ রিপোর্টে জানা যায় আফসানার মেয়ে সন্তান হবে। ওয়াহেদ, আফসানা আর শ্বাশুড়ি অপেক্ষা করছিল রিপোর্টের জন্য। রিপোর্ট নিয়ে এসে ডাক্তার বলে। কনগ্রাচুলেশন ওয়াহেদ আফসানা আপনাদের মেয়ে সন্তান হবে।

রিপোর্ট শুনে আফসানার চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। কিন্তু ওয়াহেদের মুখে বিষন্নতার ছাপ নেই। ওয়াহেদের মুখে খুশির ছাপ। কারণ সুরাইয়ার একটা কথা এখনো ওয়াহেদের মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠে। সুরাইয়া তার চিঠিতে লিখে যায় তুমি যে মেয়ে সন্তান জন্য আজ আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে সেই মেয়ে সন্তানের পেটেই কিন্তু একটা ছেলে বা মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ওয়াহেদ তার ভুল বুঝতে পেরেছে।

হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসে সবাই। বাসায় এসে আফসানা চিন্তায় পড়ে যায়। মেয়ে সন্তান হওয়ার জন্য ওয়াহেদ সুরাইয়াকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করেছিল। অনেক যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছে সুরাইয়াকে। নিজের স্বামী কে অন্য মেয়ের সাথে শেয়ার করা সত্যিই অনেক কষ্ট কর। আবার কি ওয়াহেদ অন্য বিয়ে করবে নাকি আমাকে চাপ সৃষ্টি করবে সন্তানের জন্য। অনেক চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে খেলতে থাকে আফসানার।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ওয়াহেদ অফিস থেকে বাসায় আসে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে তারপর খাবার খেতে আসে। খাবারের টেবিলে ওয়াহেদ আর ওয়াহেদের মা বসে আছে কিন্তু আফসানা নেই।
আফসানা নেই কেন মা?

জবাবে ওয়াহেদের মা গম্ভীর গলায় বলে। জানি না আসেনি কেন। তুই গিয়ে দেখ।

ওয়াহেদ আফসানার রুমে গিয়ে দেখে কান্না করছে। ওয়াহেদ আফসানার পাশে গিয়ে বলে কি হলো কান্না করার কারণ কি?
কিছু হয়েছে কি?

আফসানা চোখ মুছে বলে তুমি সুরাইয়ার মতো কি আমাকেও ছেড়ে দিবে? আফসানার সাথে তুমি, শ্বাশুড়ি আমরা অনেকে অন্যায় করেছি‌। ছেলে সন্তান হবে নাকি মেয়ে সন্তান হবে সেটা আমরা নির্ধারিত করি না। এটা তো একমাত্র আল্লাহ নির্ধারণ করে।

ওয়াহেদ আফসানাকে খাওয়ার টেবিলে নিয়ে আসে। আফসানার শ্বাশুড়ি তখন বলে আমাদের সময় এমন ছিল না। আমাদের স্বামী আমাদের হাত ধরে খাবারের টেবিলে নিয়ে আসেনি। আমরা তো আগে থেকেই খাবার টেবিলে এসে খাবার গুছিয়ে রাখতাম। স্বামী, শ্বাশুড়ি, শ্বশুর কে খেতে দিয়ে তারপর আমরা খাওয়া দাওয়া করতাম।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওয়াহেদের মা বলে তোর সাথে কিছু কথা আছে ওয়াহেদ।

হ্যাঁ মা বলেন?

তোর আগের বোউ সুরাইয়ার মেয়ে হয়েছিল তখন তুই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিস। এখন তো আর তৃতীয় বিয়ে করা যাবে না। মানুষ খারাপ বলবে। তুই কাল গিয়ে আফসানার এবোরশন করিয়ে নিয়ে আসবি।

আফসানা তখন অবাক চোখে বলে এসব কি বলছেন আম্মা এবোরশন কেন করবো। কারোর কি মেয়ে সন্তান হতে পারে না? তাই বলে কি এবোরশন করতে হবে?

শ্বাশুড়ি তখন ধমক দিয়ে বলে তুমি চুপ থাকো তোমার কাছে কি কোনো অনুমতি চেয়েছি? আমি ওয়াহেদের সাথে কথা বলছি আমরা যাই বলব সেটা করবে তুমি।

আফসানা তখন খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আপনার কি মনে হয় আমি সুরাইয়ার মতো নরম না যা ইচ্ছা বলে যাবেন যা ইচ্ছা করে যাবেন। এটা আমার আর ওয়াহেদের সন্তান যা করার আমরা করব আশা করি আপনি আমাদের বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করবেন না। তারপর আফসানা নিজের রুমে চলে যায়।

ওয়াহেদের মা তখন ওয়াহেদকে বলে দেখছিস বোউ এর সাহস কত আমার সাথে কিভাবে কথা বলে। তোর জন্য এমন হয়েছে বেশি মাথার তুলে ফেলেছিস। আজ থেকে বোউ কে লায় দিবি না শাসনের মধ্যে রাখবি।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওয়াহেদ বলে। আফসানা একদম ঠিক বলেছে মা‌। আফসানার কথায় ভুল দেখছি না আমি।

কি সব আজেবাজে বলিস তুই। মায়ের থেকে কি বোউ বড় হয়ে গিয়েছে এখন তোর কাছে? আর এখন আফসানার পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস।

আমি কারোর পক্ষে নিয়ে কথা বলছি না মা। তুমি একটা জিনিস গভীর ভাবে ভেবে দেখো। আফসানা কিন্তু ঠিক বলেছে এটা আমার আর আফসানার বিষয়। মেয়ে সন্তান হলেই কি এবোরশন করতে হবে।

তাহলে আমার কথায় কোনো দাম নেই।

আচ্ছা মা তুমিও তো একজন মেয়ে তাহলে মেয়ের প্রতি এতো ঘৃণা কেনো? তোমার জন্মের সময়ই কি তোমার বাবা, মা আর নানা নানি কি তখন তোমার মাকে বলেছিল এবোরশন করে নিতে। আচ্ছা এটা বাদ দাও তোমার যখন মেয়ে হয় মানে আমার বোনের সংবাদ যখন তোমার বাসায় পৌছে তখন কি তোমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি তোমার স্বামী কি তোমাকে বলেছিল আমাদের ছেলে সন্তান লাগবে মেয়ে সন্তান লাগবে না। তখন কি বলেছিল এবোরশন করে নিতে। একজন মেয়ের গর্ভে কিন্তু একটা সন্তানের জন্ম হয় সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। একটা মেয়ে হয়ে একজন মেয়েকে ঘৃণা করতে তোমার লজ্জা করে না?

ওয়াহেদের মা আর কিছু বলছে না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে‌।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওয়াহেদ বলে। এখন আমার অনেক আফসোস হয়। সুরাইয়ার সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি। তোমার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও অনেক নির্যাতন করেছি। দ্বিতীয় বিয়ে করেছি ঠিক মতো কথা বলিনি সময় দেয়নি তার সাথে। সুরাইয়া কে ছাড়া এই বাসা শূন্য শূন্য লাগে। যে মানুষটার সাথে দশ বছর সংসার করলাম সন্তান বাদে নিঃস্বার্থ ভাবে। আর যেই মেয়ে হলো তোমার উস্কানিমূলক কথায় কথায় সুরাইয়ার সাথে নির্মমভাবে আচরণ করলাম। যেভাবেই হোক আমি সুরাইয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আর আফসানার বিষয়ে তুমি নাক গলাতে আসবে না। এটা বলে ওয়াহেদ চলে যায়।

অফিস শেষে পরেরদিন আবার সুরাইয়ার বাসায় যায় ওয়াহেদ। সুরাইয়ার বাবা কে বলে সুরাইয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বাবা।

না সুরাইয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আপনার কোনো আত্মীয়ের বাসায় খোঁজ নিয়ে দেখেছেন কি সেখানে আছে কি?

হ্যাঁ আমি খোঁজ নিয়েছি কোথায় নেই।

বাবা আপনি যদি অনুমতি দেন আমাকে তাহলে আমি পুলিশ রিপোর্ট করতে পারি? আর আপনিও জানেন না সুরাইয়া এখন কোথায়। আমার মনে পুলিশ রিপোর্ট করলে ভালো হবে। জানিনা কোথায় কোন বিপদে আছে।

সুরাইয়া কোথায় যেতে পারে এটা তুমি ভালো জানো। আমি কিভাবে বলব। তোমার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্যই তো বাসা থেকে চলে গিয়েছে। এখন কেনো বারবার খোঁজ নিতে আসো সুরাইয়ার। আবারও নির্যাতন করতে চাও। আমার বাসায় যদি সুরাইয়ার থাকতো তাহলে আমার মেয়েকে তোমার মতো কাপুরুষের হাতে কখনো তুলে দিতাম না।

আর হ্যাঁ পুলিশ রিপোর্ট করলে তুমিই বিপদে পড়বে। রিপোর্ট করার পর তোমাদের সাথে কথা বলবে। তখন কি বলতে পারবে তুমি আর তোমার মা কতটা পরিমাণ নির্মমভাবে অত্যাচার করেছ।

ওয়াহেদের মুখে আর কথা নেই। অনুশোচনা দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে বাবা তো ঠিক বলছেন। বাবার দিকে তাকিয়ে বলে হ্যাঁ আমি সব বলতে পারব। আমি সব শাস্তি গ্রহণ করতে রাজি আছি বাবা। আমি শুধু সুরাইয়াকে ফিরে পেতে চাই।

সুরাইয়ার বাবা তখন বলে কিছু করতে হবে না তোমার, পুলিশ রিপোর্ট ও করতে হবে না। সবকিছু আমি দেখব। তুমি যদি সুরাইয়াকে ফিরে পেতে চাও তাহলে চুপচাপ বাসায় চলে যাও যা করার আমি করব।
আর হ্যাঁ শুনো তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী তো প্রেগন্যান্ট ছিল তার কি খবর। নিশ্চয়ই ছেলে সন্তান হবে। ছেলে সন্তান হওয়ার কথা কারণ ছেলে সন্তানের জন্য তো দ্বিতীয় বিয়ে।

না বাবা আবারও মেয়ে হবে। ওয়াহেদ আর কিছু না বলে লজ্জা মাথায় চুপচাপ সুরাইয়ার বাসা থেকে চলে আসে। ১০২২

ওয়াহেদ চলে যাওয়ার পরে। সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়াকে ফোন দিয়ে সব কথা বলে। আর এটাও বলে যে তুই চলে আই মা। ওয়াহেদ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ওয়াহেদের সাথে আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।

না বাবা এমন টা আর হবে না। ওয়াহেদ আফসানার সাথে সাথে সুখে থাকুক। আর আফসানা তো প্রেগন্যা‌ন্ট ছিল। কিছু বলেছে কি? ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?

হ্যাঁ আফসানার,,,,,

চলবে,,,

মায়া পর্ব-০৭

0

#মায়া
#পর্ব_০৭
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

আফসানা তখন শয়তানি হাসি দিয়ে বলে। বাসায় সবার কাছে ভালো হওয়ার জন্য এমন করছে। কিন্তু সুরাইয়া আসলে একটা চোর। দেখো আবার বাসা থেকে কিছু চুরি করে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে কি?

ওয়াহেদ আফসানার কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে। একদম আজেবাজে কথা বলবে না। সে বাসায় সবার কাছে ভালো হওয়ার জন্য হোক বা এমনি হোক আল্লাহ তার উছিলায় তোমার আর তোমার সন্তানের জীবন বাঁচিয়েছে। কাল যদি সুরাইয়ার না থাকতো তাহলে তুমি আর তোমার সন্তান এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে না। উপকারের মূল্য দিলে সম্মান নষ্ট হয়ে যায় না। সে উপকার করছে তোমার তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

ওয়াহেদের কথা শুনে নিচের তাকিয়ে আছে আফসানা। কিন্তু মুখে বিন্দু পরিমাণ লজ্জা বা অনুশোচনা নেই।

ওয়াহেদ আফসানার কাছে গিয়ে রাগান্বিত হয়ে বলে, সত্যি করে বলবে কোন প্রকার মিথ্যা বলবে না। আম্মার রুমে থেকে কানের দুল চুরি করে সুরাইয়ার বেডের নিচে কে রেখেছিল? তুমি রেখেছিলে?

আফসানা তখন বলে আমি কেনো এমন কাজ করবো। আমাকে চোর মনে হয় কি? আর আম্মার রুম থেকে কানের দুল চুরি করে সুরাইয়ার বেডের নিচে রেখে আমার লাভ কি হবে।
তখন ওয়াহেদ বলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। একদিন না একদিন সত্য প্রকাশ পাবে। সেদিন আমি তাকে নিজ হাতে শাস্তি দিব।
আর কিছু না বলে ওয়াহেদ নিজের রুমে চলে যায় সুরাইয়ার লেখা চিরকুট নিয়ে।

আফসানা মনে মনে হাসতে থাকে‌। সুরাইয়া এই বাসা থেকে চলে গিয়েছে ভালো হয়েছে। এখন এই বাড়িতে সম্পূর্ণ নিজের স্বাধীনতা। নিজের মতো চলতে পারবে। ওয়াহেদ কে হারানো ভয় থাকবে না। সুরাইয়ার প্রতি ওয়াহেদের আর কোনো ভালোবাসা থাকবে না।

সুরাইয়ার বাবার ফোনে ওয়াহেদ ফোন দেয় কিন্তু ফোন যায় না। পরেরদিন সকালে ওয়াহেদ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সুরাইয়ার বাসায় যায়। কিন্তু সুরাইয়ার বাসায় গিয়ে ওয়াহেদ হতাশ হয়। সুরাইয়া ওর বাবার বাসায় যায়নি। তাহলে কোথায় যেতে পারে। আর কোনো উপায় না পেয়ে সুরাইয়ার বাসা থেকে চলে যায় ওয়াহেদ। সুরাইয়ার ভালোবাসা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ওয়াহেদ। কিন্তু এখন উপলব্ধি করে কি লাভ। কথায় আছে না দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না। এখন এমন পরিস্থিতিতে আছে ওয়াহেদ।

কিন্তু কাল সকালে সুরাইয়া বাবার কাছে ছিল। ওয়াহেদের বাসা থেকে সোজা বাবার বাসায় আসে। বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলে এতদিন যা হয়েছে।
তখন বাবা বলে তুই আমাকে কিছু বলিস নাই কেন মা? আমাকে একবার বলতে পারতি।আমি ওয়াহেদের সাথে কথা বলে ঠিক করে দিতাম। তুই এখানে থাক আমি ওয়াহেদের সাথে কথা বলে দেখি কিছু করতে পারি কি।

সুরাইয়া তখন বাবাকে বলে না বাবা আর কিছু করতে হবে না। আমি অনেক সহ্য করে ছিলাম। ওই বাসায় গিয়ে আমি আর নির্যাতিত হতে চাই না। তার থেকে আমি দূরে কোথাও চলে যায় আমার মেয়ে পূর্ণতাকে নিয়ে।

সুরাইয়ার বাবা তখন বলে দূরে কেন যাবি? আমার এখানে থাক। তোমার মা যদি বেঁচে থাকতো আজ, তাহলে তোকে দূরে কোথাও যেতে দিত না।

না বাবা আমি এখানে থাকতে পারবো না ওয়াহেদ আমাকে খুঁজতে নিশ্চয়ই এখানে আসবে। আমি আমার বান্ধবী মারিয়ার ওখানে থাকবো। পূর্ণতাকে নিয়ে ওখানে চলে যাব‌। কিছুদিন পরে একটা চাকরি পেলে আমি তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো বাবা।

আমার একটা কথা রাখবে বাবা?

হ্যাঁ মা বল একটা কেন তোর সব কথা আমি রাখবো। কি কথা রাখতে হবে বল?

ওয়াহেদ যদি এখানে আমার খোঁজে আসে তাহলে তুমি বলবে না, আমি এখানে এসেছি। আর কোথায় আছি সেটাও বলবে না। আমার মনে হয় না ওয়াহেদ এখানে আমার খোঁজে আসবে। যদিও আসে তাহলে আমার কথা কিছু বলবে না তুমি।

পরের দিন সকালে ওয়াহেদ আসার আগে সুরাইয়া পূর্ণতার সাথে করে বান্ধবী মারিয়ার বাসায় চলে যায়। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সুরাইয়াকে কিছুদিন পরেই একটা চাকরি হয়ে যায় সুরাইয়ার। ইন্টার পরিক্ষার পরে সুরাইয়ার শ্বশুরি বাড়ি থেকেই অনার্স পাশ করে।

প্রথমে শ্বশুর বাড়ির কেউ রাজি ছিল না যে বাসার বোউ পড়াশোনা করুক। ওয়াহেদ বলেছিল তুমি পড়াশোনা কেনো করবে? নিশ্চয়ই চাকরি করার জন্য পড়াশোনা করবে। আমি থাকতে তুমি কেন চাকরি করবে?

ওয়াহেদের এই কথাটা মনে পড়লে সুরাইয়া মুচকি হাসি দেয়। সেদিন তো ঠিকই বলেছিল তোমার পড়াশোনা করে চাকরি করার দরকার নেই আমি তোমার পাশে আছি কিন্তু কথা রাখেনি আমার জীবন আমাকে তৈরি করে নিতে হচ্ছে। নিজেকে চাকরি করতে হচ্ছে। এখন আর ওয়াহেদ আমার পাশে নেই।

বাসায় যখন কেউ রাজি ছিল না, তখন সুরাইয়ার শ্বশুর সুরাইয়ার সাথে ছিল। সুরাইয়ার শ্বশুর তখন পড়াশোনা করার জন্য অনুমতি দেয়। তারপর থেকে সুরাইয়া পড়াশোনা করে। অনার্স শেষ করে। কিন্তু আজ যদি সুরাইয়ার শ্বশুর বেঁচে থাকতো তাহলে সুরাইয়াকে এমন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর থেকে শ্বাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে হয় সুরাইয়া কে ।

বান্ধবী মারিয়ার বাসায় আসার প্রায় দশ দিন পরে একটা চাকরি পেয়ে যায় সুরাইয়ার বেতন খুব বেশি না হলেও মোটামুটি ভালোই চলে যাবে।

কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি। মাসে আট হাজার টাকা বেতন
আর টিউশনি করিয়ে প্রায় সাত আট হাজার টাকা পায়। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার পেয়ে থাকে। দেখতে দেখতে এক মাস চলে গেল। বাবার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে যোগাযোগ হয় না সুরাইয়ার।

এই মাসে প্রথম বেতন পেয়েছে সুরাইয়া। সবকিছু প্রয়োজন মিটিয়ে মাস শেষে হাতে আর তিন হাজার টাকা আছে। নিজের একটা ফোন ও নেই। যেটা ছিল সেটা আসার সময় ইচ্ছে করেই শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসছে। বান্ধবী মারিয়ার ফোন দিয়ে বাবার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে। এই মাসের তিন হাজার টাকা অবশিষ্ট ছিল তার মধ্যে থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে একটা ফোন কিনে নিয়ে আসে। অন্যের ফোন দিয়ে আর কতদিন চলবে।

আর বাকি টাকা রেখে দেয় পূর্ণতার জন্য, আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, পূর্ণতার পিছনে খরচ বেশি হচ্ছে। কয়দিন পরে বাবাকে আনতে হবে । বাবা একা একা থাকে। অনেক সমস্যা হয়‌। পূর্ণতা বড় হলে এই বেতনে চলা প্রায় অসম্ভব। এই চাকরি টা করছে আর একটা নতুন চাকরি খুঁজছেন এর থেকে ভালো বেতনের।

সুরাইয়া পূর্ণতাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে বিকালে। ঠিক এমন সময় সুরাইয়া বান্ধবী মারিয়া রুমে আসে। আর সুরাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে অনেকদিন তো হলো তুই ওয়াহেদের ওখান থেকে চলে এসেছিস। ওয়াহেদকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিতে বল।তারপর তুই একটা বিয়ে করে ফেল ভালো ছেলে দেখে‌। এভাবে আর কতদিন চলবি বল। পূর্ণতা বড় হচ্ছে। তোর একার পক্ষে সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। তুই একটা বিয়ে কর তাহলে পূর্ণতা, বাবা মা দুজনের পরিচয়ে বড় হবে। আর যদি বিয়ে না করিস তাহলে শুধু মায়ের পরিচয়ে বড় হবে।‌ পূর্ণতার জন্য বাবার ভালোবাসা অনেক প্রয়োজন।

সুরাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বল না রে আর বিয়ে করব না। এভাবেই জীবন পার করে দিব। এখন থেকে পূর্ণতার মা আর বাবা দুজনেই আমি। আলাদা করে বাবার ভালোবাসা পাওয়ার দরকার নেই। দ্বিতীয় স্বামী ও যদি ওয়াহেদের মতোই হয় তাহলে কি হবে।

মারিয়া বলে তুই সব জানিয়ে তারপর বিয়ে করবি। তাহলে তো সমস্যা হবে না।

প্রথম প্রথম সবাই আশা ভরসা দিয়ে থাকে। কথা দিয়ে থাকে কিন্তু পূরণ করে না।

আজ অফিস ছুটির দিন। সকালে বারান্দায় বসে আছে ওয়াহেদ। আফসানাকে ডেকে এক কাপ চা দিতে বলে ওয়াহেদ। চা তৈরি করতে গিয়ে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে আফসানার। কয়েকদিন থেকে এমন সমস্যা হচ্ছে। বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলে রেস্ট নিতে আর কাজ করা যাবে‌।

ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আলট্রাস্নোগ্রাফের মাধ্যমে জানতে পারে আফসানার..

চলবে,,,,,

মায়া পর্ব-০৬

0

#মায়া
#পর্ব_০৬
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

চিকিৎসা করানোর কিছুক্ষণ পরে আফসানার জ্ঞান ফিরে আসে। আফসানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুরাইয়ার, ওয়াহেদ আর শ্বাশুড়ি। ডাক্তার বলেছে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে আফসানাকে কিন্তু কোনো প্রকার কাজ করা যাবে না। রেস্টে থাকতে হবে সময়। শ্বাশুড়ি আর সুরাইয়া এ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় চলে আসে আফসানাকে নিয়ে। ওয়াহেদ হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে যায়।

বিল পরিশোধ করতে আসার সময় সেই আফজাল সাহেবের সাথে দেখা যেই আফজাল সাহেব বলেছিলেন যে, সুরাইয়া কে ডিভোর্স দিয়ে দিতে কারণ বিয়ের দশ বছর পরেও এখনো বাচ্চা হয়নি। বদ্ধা মেয়েকে নিজের বোউ করে রাখলে জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। সুরাইয়া কে ডিভোর্স দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করতে বলেন। অত্যন্ত একটা সন্তান পাবেন। শুধু এটাই শেষ না।‌ আরো বলেছিলেন এতো বছর পর বাচ্চা হয়েছে তাও আবার একটা মেয়ে। খোঁচা মেরে কথা বলেছিলেন। আফজাল সাহেবের সাথে দেখা হওয়া মাত্র ওয়াহেদ বললেন—

কি ব্যাপার ভাই আপনি এখানে অনেকদিন থেকে তো অফিসে দেখি না।

অফিসে আর যায়নি কারণ অফিস থেকে আমাকে বরখাস্ত করে দেয়া হয়েছে। কাজের প্রতি অনেক দিন থেকে অমনোযোগী ছিলাম। মানসিক সমস্যার কারণে কোনো কাজ করতে পারতাম না।

আর আমাদের বাচ্চা হচ্ছে না চেষ্টা করার পরেও। চেকাপ করে জানতে পারি আমি কখনো বাবা হতে পারব না কিন্তু আমার স্ত্রী চাইলে মা হতে পারবে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি। এখানেই নার্সের চাকরি করে আমার স্ত্রী। আমার চাকরি চলে গিয়েছে প্রায় একমাস এখনো কোনো চাকরি পাইনি কিন্তু এটা নিয়ে আমার স্ত্রীর কোনো অভিযোগ নেই। হাসিমুখে আমার সাথে মানিয়ে নিয়েছে।

আমিই ভুল ছিলাম ভাই সেদিন আপনাকে বলেছিলাম বদ্ধা মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে হয় আর মেয়ে সন্তান না ছেলে সন্তান হলে ভালো হয় তাহলে বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের পাশে থাকে। আর মেয়েরা তো একদিন শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে বিয়ে হলেই মেয়েদের গুরুত্ব শেষ বাবা মায়ের প্রতি। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। একজন মেয়ে হয়ে যদি স্বামীর দায়িত্ব নিতে পারে হাসিমুখে। একজন মেয়ে হয়ে যদি তার স্বামীর পাশে থাকতে পারে এটা জেনে যে তার স্বামী কখনো বাবা হতে পারবে না শারীরিক ভাবে অক্ষম। সেই মেয়ে জাতির প্রতি কখনো অবহেলা করতে হয় না।
আজ আমি প্রতিনিয়ত আফসোস করি যদি আমি বাবা হতে পারতাম তাহলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম। আমার যেন একটা মেয়ে হয়।

আফজাল সাহেবের সাথে কথা বলে ওয়াহেদ অফিসে চলে যায়। কিন্তু অফিসের কোনো কাজে মন বাসে না। প্রতিনিয়ত শুধু সুরাইয়া আর আফজাল সাহেবের কথা ভাবতে থাকে। আজ যদি আফজাল সাহেবের মতো আমার পরিস্থিতি হতো তাহলে কি সুরাইয়া আমাকে ছেড়ে চলে যেত। না কখনো আমাকে ছেড়ে যেত না সুরাইয়া। এতো অবহেলার পরেও যখন আমাকে ছেড়ে যায়নি সব বিপদে আমার পাশে ছিল আর সব সময় আমার পাশে থাকতো। দশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে একটা সন্তানের জন্য। আমি চেয়েছিলাম একটা ছেলে সন্তান কিন্তু হয়েছে একটা মেয়ে, এটার জন্য তো আমি সুরাইয়ার প্রতি অনেক অবিচার করেছি। দ্বিতীয় বিয়েও করে এনেছি।

অনেক কথা ভাবতে ভাবতে রাতে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে মনে মনে খুঁজতে থাকে সুরাইয়াকে। কিন্তু কোথাও দেখতে পারছে না। ওয়াহেদ মনে করছে সুরাইয়া হয়তো রুমে রেস্ট নিচ্ছে। সুরাইয়ার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় ওয়াহেদ কিন্তু কি মনে করে সুরাইয়ার রুমের দরজার ঠিক নিকট থেকে ফিরে আসে।

রুম এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় ওয়াহেদ, তারপর আফসানার কাছে যায়। আফসানা ঘুমিয়ে আছে। আজ অনেক অসুস্থ বাথরুম থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছ তাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। তাছাড়া এই সময়ে ঘুমানোর কথা না। ঘুমিয়ে যখন আছে তাহলে আর ডেকে তুলছি না।

মা রুমে আছে আজ বাহিরে কেউ নেই।

সুরাইয়া তো প্রতিদিন ডাইনিং এ এসে বসে থাকে আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমি রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ না করলে সুরাইয়া খায় না।‌ আজ কেমন জানি সব কিছু উল্টা পাল্টা লাগছে। অনেক কিছু চিন্তা করে ওয়াহেদ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সুরাইয়ার রুমের যায় ওয়াহেদ। কিন্তু সুরাইয়া রুম নেই সারা বাড়ি খুঁজে দেখে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। ওয়াহেদ ভাবছে সারা বাড়ি কোথাও যখন নেই তাহলে নিশ্চয়ই ছাদে আছে কারণ আগে যখন সুরাইয়ার মন খারাপ থাকতো বা কিছু হতো তাহলে ছাদে গিয়ে বসে থাকে। ছাদে গিয়ে দেখে কিন্তু ছাদে নেই সুরাইয়া।

চিল্লাচিল্লি করে আম্মা কে ডাকছে ওয়াহেদ। ডাক শুনে বাইরে বেরিয়ে আসে আম্মা

কি হলো এতো চিল্লাচিল্লি করিস কেন?

সুরাইয়া কোথায় আম্মা। বাড়িতে কোথাও দেখছি না তুমি কি জানো কিছু?

কোথায় আবার থাকবে রুমে আছে দেখ।

না আম্মা সুরাইয়া রুমে নেই। সারা বাড়ি কোথাও নেই ছাদে ও দেখেছি কিন্তু নেই।

মনে হয় বাইরে গিয়েছে কোনো কাজে। চলে আসবে হয়তো পরে।

না মা সুরাইয়া এভাবে কোথাও যাবে না আমাকে না বলে। যদি কোথাও যায় তাহলে তো পূর্ণতাকে সাথে নিয়ে যাবে না। পূর্ণতাকে ঘুম পাড়িয়ে বাইরে যাবে , তাছাড়া না। অত্যন্ত আমাকে একবারে জন্য হলেও বলে যেত। দাঁড়াও তুমি আফসানা হয়তো জানে। আফসানার কাছে গিয়ে বলে কিন্তু আফসানা কিছু জানে না।

তাহলে কোথায় যেতে পারে। আবার সুরাইয়ার রুমে ফিরে আসে। বাসায় পূর্ণতা ও নেই। তারপর সুরাইয়ার ফোনে কল দেয়। কল দেয়ার পর রিং এর শব্দ শুনতে পাই মোবাইল টেবিলের উপর রেখে দিয়েছে। আর মোবাইলের নিচে একটা চিরকুট। ওয়াহেদ কিছুটা বিস্মিত হলো এটা আবার কিসের চিরকুট। ওয়াহেদের এতে কোন সন্দেহ থাকলো না এটা সুরাইয়ার লিখে রেখে গিয়েছে। চিরকুট টা খুলে ওয়াহেদ পড়তে থাকে। চিরকুট লেখা আছে।

প্রিয় ওয়াহেদ,
তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। দোয়া করি সব সময় ভালো থাকবে। শ্বাশুড়ি আমাকে একদিন সময় দিয়েছিলেন যে, প্রমাণ করো কানের দুল তুমি চুরি করোনি। আর যদি প্রমাণ করতে না পারো তাহলে এই বাসা থেকে চলে যাবে চিরদিনের জন্য, আর কখনো ফিরে আসবে না। আমি প্রমাণ করতে পারিনি। তাই আমি আজ এই বাসা থেকে চলে যাচ্ছি তোমাদের সবাইকে ছেড়ে।

তোমাদের সবার থেকে তুমি আফসানা শাশুড়ির থেকে অনেক লাঞ্ছনা কষ্ট পেয়েছি অনেক নির্যাতিত হয়েছি। কিন্তু এত কিছুর পরেও তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।

আফসানা আর তুমি সব সময় খুশি থাকবে এই দোয়া রইল। তোমাদের একটা সুন্দর ছেলে বাচ্চা হবে আমি সব সময় চাই তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক। তোমার অনেক ইচ্ছা তোমার একটা ছেলে সন্তান থাকবে। আর যদি তোমাদের ছেলে না হয় তাহলে আফসানাকে কখনো ছেড়ে দিও না কারন আমার মতন আফসানা সহ্য করতে পারবেনা।

একটা কথা সবসময় মনে রাখবে যেই মেয়ে সন্তানের জন্য তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ সেই মেয়ের পেটেই কিন্তু দশ মাস দশ দিন থাকার পর, মা অনেক কষ্ট সহ্যের পরে একটা ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

সুরাইয়ার রেখে যাওয়া চিঠি পড়ে অঝোরে কান্না করতে থাকে ওয়াহেদ। নিজেকে মাফ করতে পারেনা। কাল রাতে যদি সুরাইয়া রুমে গিয়ে মাফ চেয়ে নিত তাহলে হয়তো সুরাইয়া এভাবে চলে যেত না‌।

ওয়াহেদের এমন পরিস্থিতি দেখে আফসানা বলে একটা চোরের জন্য এতো কান্না কেন করো। চলে গিয়েছে ভালো হয়েছে।
ঠিক তখনি ওয়াহেদ আফসানার গালে একটা থাপ্পর মেরে দেয়। আর বলে তুমি আর তোমার সন্তান বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ হল সুরাইয়া। কাল তুমি যখন বাথরুমে পড়ে যাও তখন তোমাকে হাসপাতাল একে নিয়ে গিয়েছিল জানো সুরাইয়া নিয়ে গিয়েছিল। কাল যদি সঠিক সময়ে সুরাইয়া তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে না যেত তাহলে কত বড় বিপদে হয়ে যেত তুমি বুঝতেই পারতে না। আর তাকে তুমি চোর বলছো। লজ্জা করা দরকার তোমার।

চলবে,,,,,

মায়া পর্ব-০৫

0

#মায়া
#পর্ব_০৫
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

ফ্যানের সাথে উর্না বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় সুরাইয়া। ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ার সময় ঠিক তখনি পূর্ণতা কান্না করে উঠে। এতোক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণে কান্না করতে থাকে। পূর্ণতার কান্নার আওয়াজ শুনে গলার ফাঁস খুলে নিচে নেমে আসে সুরাইয়া। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আর ঝুলে পড়া হলো না সুরাইয়ার। নিচে নেমে পূর্ণতাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুম পাড়াতে থাকে পূর্ণতাকে আবারও।

পূর্ণতার ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অঝোরে কান্না করতে থাকে সুরাইয়া। কিছুক্ষণ আগে আত্মহত্যা করতে যাওয়াটাকে মনে করতে থেকে কান্না করে দেয় সুরাইয়া। আর মনে মনে ভাবতে থাকে আজ যদি আমি আত্মহত্যা করতাম তাহলে পূর্ণতার কি হতো, আমি ছাড়া এই দুনিয়াতে পূর্ণতার আর কেউ নেই। মেয়ে হওয়ার কারণে বাবা তো আগে থেকেই তো ছেড়ে দিয়েছে তার মধ্যে, তারপর থাকে এখনতো পূর্ণতার সব দায়িত্ব আমার উপর।

রাতে কান্না করে আর পুরনো দিনের কথা ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে দেখে আফসানা বমি করছে, প্রথমে সবাই ভেবেছিল হয়তো পেটের সমস্যার জন্য বমি করছে কিন্তু কয়েকবার বমি করার পর হাসপাতালে নিয়ে যায় শাশুড়ি আর ওয়াহেদ। কিছুক্ষণ পর আফসানা ওয়াহেদ এবং শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে বাসায় আসে। ওয়াহেদের কাছে পরে জানতে পারে ডাক্তার চেকাপ করে বলেছে আফসানা প্রেগন্যান্ট।

বাসায় সবাই খুশি কারণ আফসানা প্রেগন্যান্ট সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করে আফসানার যেন, একটা সুন্দর ফুটফুটে ছেলে হয়। আফসানা যেন, ছেলে হয় সেই জন্য মসজিদে দশ হাজার টাকা দান করেছে ওয়াহেদ। আর শাশুড়ি মা ছেলে হওয়ার পর ছাগল দান করবেন মাজারে বলে রেখেছেন আগে থেকেই।

স্বামী শাশুড়ী সবাই বেশ ভালই আদর যত্নে রাখছে আফসানাকে । প্রেগনেন্সির প্রথম সপ্তাহ চলছে আফসানা এখন থেকে বেশ আদর যত্নে রাখছে আফসানাকে, বাসার সবাই কোন প্রকার কাজ করতে দিচ্ছে না। এভাবে বেশ অনেক দিন চলে যায়। প্রায় তিন সপ্তাহ।

আজ সকালে মেয়ের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল শ্বাশুড়ির। মেয়ের বাসায় যাবে কয়েকদিন থাকবে। তাই সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু শ্বাশুড়ি কানের দুল খুঁজে পাচ্ছে না। যেটা তৈরি করেছিল নিজের মেয়েকে দেয়ার জন্য। কিন্তু আজ হঠাৎ খুঁজে পাচ্ছে না। শ্বাশুড়ির মাথায় কাজ করছে না কে নিতে পারে এটা। বাসায় তো কেউ আসেনা বাইরে থেকে। বাসায় তো চোর ঢোকা একদম অসম্ভব প্রায়। বাসায় শুধু মাত্র আফসানা, ওয়াহেদ আর সুরাইয়া আছে। নিলে এদের মধ্যে কেউ নিবে। কিন্তু এরা নিবে কেন। শ্বাশুড়ি সবাই কে রাতে ডাক দেয়। তারপর ঘটনা খুলে বলে।

শ্বাশুড়ির কথা শেষে আফসানা বলে আপনার কি কারোর উপর সন্দেহ হয় মা। আপনার কি এমন মনে হয় যে আমাদের মধ্যে কেউ নিতে পারে?

শ্বাশুড়ি কিছুক্ষণ ভেবে বলে। তোমাদের কারোর উপর সন্দেহ আমার হয় না। কিন্তু বাসায় তো বাইরে থেকে কেউ আসেনি। তাহলে কি নিবে?

আফসানা বলে তাহলে সবার রুম তল্লাশি নেয়া দরকার আপনার। ওয়াহেদ তখনি আফসানাকে চুপ করিয়ে বলে কিসব কথা বলো এগুলা। নিজের ছেলে আর ছেলের স্ত্রীর ঘর তল্লাশি করা হবে। আমাদের মধ্যে এমন জঘন্য কাজ কেউ করবে না। আর করার কথা ভাবতেও পারে না। আফসানা ওয়াহেদকে বলে তল্লাশি নেয়ার দরকার আছে‌। তল্লাশি নিলে আমাদের কারোর সম্মান নষ্ট হবে না। এতে সন্দেহ দূর হবে‌। সুরাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে আমার মনে হয় চোর এই বাসাতে আছে। আজ কানের দুল চুরি হয়েছে কাল না জানি কি চুরি হবে।

শ্বাশুড়ি সবার রুম তল্লাশি করছে প্রথমে আফসানা আর ওয়াহেদের রুম। কিন্তু কিছু খুঁজে পেলেন না। তারপর সুরাইয়ার রুমে তল্লাশি করে। সুরাইয়ার রুমের বেডের নিচে থেকে খুঁজে পেলেন কানের দুল টা।

এটা দেখে সুরাইয়া একদম অবাক এটা কিভাবে হতে পারে। এখানে কানের দুল কিভাবে আসতে পারে। শ্বাশুড়ি রাগি দৃষ্টিতে সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আফসান মিটমিট করে হাসতে থাকে।

ওয়াহেদ এমন অবস্থা দেখে সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ছি ছি ছি সুরাইয়া আমার ভাবতেই অবাক লাগে তুমি এতটা নিচে নেমে গিয়েছ। আম্মার রুম থেকে কানের দুল চুরি করলে। সুরাইয়া ওয়াহেদকে বোঝানোর চেষ্টা করছে আমি এটা করিনি দুল টা এখানে কিভাবে এসেছে আমি জানি। কিন্তু কেউ সুরাইয়ার কথা বিশ্বাস করছে না। আফসানা সুরাইয়াকে বলে যদি আপনি চুরি না করে তাহলে কানের দুল টা এখানে কিভাবে আসল। এটার তো আর পা হয়নি যে, হেঁটে হেঁটে এখানে চলে এসেছে।

শ্বাশুড়ি সুরাইয়া কে পরিষ্কার ভাবে বলে দেয় তুমি যদি চুরি না করো তাহলে এটা প্রমাণ করো। তুমি যদি চুরি না করো তাহলে তো এই বাসায় কেউ এটা তোমার বেডের নিচে রেখে দিয়েছে। তাহলে তাকে ধরে প্রমাণ করো আমি তাকে নিজ হাতে শাস্তি দিব। আর যদি প্রমাণ করতে না পারো তাহলে কালকেই এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে তোমার। প্রমাণ করার জন্য আমি তোমাকে একদিন সময় দিচ্ছি। সুরাইয়া কিছু বলছে না চুপ করে আছে। কথা বলার মতো কোনো মুখ নেই। প্রতিবাদ করার মতো কোনো প্রমাণ ও নেই। পরিস্থিতির জন্য চুপ করে থাকতে হচ্ছে।

সবাই চলে যায় আর সুরাইয়া কান্না করতে থাকে। আর ভাবতে থাকে দশ বছর ধরে আমি এই বাড়িতে আছি।‌ কোনো কিছু চুরি করা তো দুরের কথা এমন কাজ করার কথা আমি ভাবতেই পারি না।‌ দোষ না করার পরেও আজ সবাই আমাকে চোর বলে অপবাদ দিচ্ছে। দশ বছর ধরে ওয়াহেদের সাথে সংসার করছি কিন্তু সেও আমাকে বিশ্বাস না করে অবিশ্বাস করলো। কিন্তু বিয়ের রাতে বলেছিল সব খারাপ সময়ে আমি তোমার পাশে থাকব।

আজ রাতে সুরাইয়ার কপালে খাবার জুটে নাই। সবাই একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করে যে যার মতো রুমে চলে যায়। কিন্তু সুরাইয়া কে এক বারের জন্য ডাক দেয়নি। এমন কি ওয়াহেদ ও না। আর শ্বাশুড়ি সবার সমানে বলে দিয়েছে কোনো চোরের জায়গা আমার বাড়িতে নেই এমনকি খাবারের টেবিলে না।

মেয়ে পূর্ণতাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায় সুরাইয়া। রাতের খাবার টা খায়নি সুরাইয়া। এবার মনে হয় সুরাইয়া কে এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে। কাল তো প্রমাণ করতে পারবে না কানের দুল চুরির আসল চোর কে। আর শ্বাশুড়ি বলে দিয়েছে প্রমাণ করতে না পারলে এই বাসা থেকে চলে যেতে হবে। তাই সকালে উঠে নিজের ব্যাগ তৈরি করছিলেন সুরাইয়া। এমন হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনতে পারে সুরাইয়া।

আফসানা পা পিছলে পড়ে গিয়েছে বাথরুমের মধ্যে। বাথরুমের মধ্যে থেকে জোরে শব্দ শুনে সুরাইয়া দৌড়ে ছুটে যায় । গিয়ে দেখে পা পিছলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আফসানা। তখন বাসায় কেউ ছিল না,

“”শাশুড়ি গিয়েছিলেন পাশের বিল্ডিংয়ে কোনো এক কাজে। ওয়াহেদ ছিল অফিসে।””

বাসায় শুধুমাত্র ছিল সুরাইয়া আর আফসানা। বাসায় শুধুমাত্র একা থাকায় বুঝতে পাড়ছে না সুরাইয়া কি করবে। বাথরুম থেকে তুলে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দেয় আফসানাকে। তারপর রান্নাঘর থেকে পানি নিয়ে এসে আফসানার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। কিন্তু তাও জ্ঞান ফিরে না আফসানার।

তাড়াতাড়ি করে ওয়াহেদকে ফোন দেয় সুরাইয়া। ওয়াহেদকে সবকিছু বিস্তারিত বলে। আর একটা এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিতে বলে অতি জরুরী।

তারপর শ্বাশুড়িকে ডেকে নিয়ে আসে সুরাইয়া। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই এ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। আফসানাকে এ্যাসুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যায় শ্বাশুড়ি আর সুরাইয়ার। হাসপাতালে পৌঁছে ওয়াহেদ কে ফোন দিয়ে জরুরি হাসপাতালে আসতে বলে। বিশ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে চলে আসে ওয়াহেদ। ডাক্তার ভিতরে আফসানার চিকিৎসা করছে। বাইরে সুরাইয়া, ওয়াহেদ আর শ্বাশুড়ি বসে আছে।‌সবার মুখে চিন্তার ছাপ, বিষন্নতা ফুটে উঠেছে।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বাইরে এসে বলে চিন্তার কোনো কারণ নেই আফসানা ঠিক আছে‌ বেবি ও ঠিক আছে। আপনারা যথাসময়ে এসেছেন আর একটু দেরি হলে অনেক বড় একটা সমস্যা হতে পারতো। আপনি অনেক ভালো করেছ সুরাইয়া যথাসময়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। ওয়েল ডান সুরাইয়া।

ওয়াহেদ আর শ্বাশুড়ি মুগ্ধতার দৃষ্টিতে আছে সুরাইয়ার দিকে।আজ যদি সুরাইয়ার না থাকতো তাহলে না জানি কি কত বড় ঘটতে পারতো।

এখন কি স্বীকার করবে কেউ যে, কানের দুল চুরি করে কে রেখেছিল সুরাইয়ার বেডের নিচে? নাকি সুরাইয়া চুরি করেছিল? সুরাইয়ার কি এই বাসায় জায়গা হবে নাকি বাপের বাড়িতে চলে যেতে হবে?

চলবে,,,,,,,,

মায়া পর্ব-০৪

0

#মায়া
#পর্ব_০৪
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

ওয়াহেদ সুরাইয়ার হাত ধরে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। তা দেখে আফসানা তেলে বেগুনে জ্বলতে থাকে। আফসানা শুধু চায় সুরাইয়া এই বাসা থেকে চলে যাক আর না হয় এই বাসায় থেকে নির্যাতিত হতে থাকুক। ইদানিং সুরাইয়ার প্রতি ওয়াহেদের অল্প অল্প কেয়ারিং, ভালোবাসা মোটেও সহ্য হচ্ছে না আফসানার

কিছুক্ষণ পর ওয়াহেদ সুরাইয়ার রুম থেকে আফসানার রুমে চলে আসে । সুরাইয়া হাত ধরে নিয়ে আসে। ডাক্তারে একা একা চলাফেরা করতে মানা করেছে। এক্সিডেন্টের পরে মাথায় আর পায়ে অনেক আঘাত পেয়েছে। সে জন্যই একা একা চলা ফেরা করতে মানা করেছে।

ঘুমানোর সময় আফসানা ওয়াহেদকে, বলে আমাকে বললেই তো আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসতাম। সুরাইয়ার প্রতি এতো ভালোবাসা আসছে কেনো তোমার। তুমি কি বুঝতে পারছো না সুরাইয়ার জন্য তোমার এমন অবস্থা হয়েছে। সুরাইয়া যদি সেদিন ফোন না করতো তাহলে আজ তোমার আর আমার এমন খারাপ পরিস্থিতিতে থাকতে হতো না। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছ। বিয়ের দশ বছর পর কোনো সন্তান দিতে পারেনি। যদিও একটা সন্তান হয়েছে সেটাও মেয়ে। আসলে সুরাইয়া মেয়েটা অলক্ষ্মী। দেখে নিও ওর জন্য একদিন বাসায় সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।

ওয়াহেদ রাগান্বিত স্বরে বলে, কি সব শুরু করলে তুমি বক বক না করে চুপ থাকবে একটু। আর সুরাইয়ার কি জানতো তার ফোন দেয়ার কারণে আমাদের এক্সিডেন্ট হবে। জানলে তো ফোন করতো না। আর কিছু না বলে দুজনে চুপ হয়ে যায় আফসানা।

সকালে উঠে বাসায় হৈচৈ হয় অনেক। শ্বাশুড়ি, আফসানা আর ওয়াহেদ গিয়ে দেখে সুরাইয়া কান্না করছে অনেক। কয়েকদিন আগে মেয়ে পূর্ণতা খাট থেকে পড়ে যায়। আর মাথায় আঘাত পায়‌। মাথায় আঘাত পেয়ে সামান্য ফুলে যায় কিন্তু সুরাইয়া সেদিকে খেয়াল করেনি তেমন। এতো কিভাবে খেয়াল রাখবে। ওয়াহেদ এক্সিডেন্ট করেছিল তাকে নিয়ে ব্যস্ত। মাথায় আঘাত পেয়ে চোখের পাশে কালো কালো বর্ণ ধারণ করেছে।

তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ওয়াহেদ এসে পূর্ণতাকে কোলে নেই। কিন্তু সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি এসে ওয়াহেদের হাত টানতে টানতে অন্য রুমে নিয়ে চলে যায় আর বলে ভালোবাসা দেখাতে হবে না। এতো ভালোবাসা পেলে মা মেয়ে দু’জনে মাথায় উঠে বসবে। সব সময় কড়া শাসনে রাখতে হবে। সুরাইয়া পূর্ণতাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া সময় ওয়াহেদ ও সাথে যেতে চায় কিন্তু সুরাইয়া নিষেধ করে, তুমি এখনো অনেক অসুস্থ, যেতে হবে না। তোমার রেস্টের প্রয়োজন। আমি নিজেই সবকিছু করতে পারব।

সুরাইয়া পূর্ণতা কে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যায় ওখানে গিয়ে ভালো মতো ডাক্তার দেখান। ডাক্তার বলে চিন্তার কোন কারণ নেই। বেশি চিন্তা করতে হবে না। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এমন হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে আসার পথে অনেক দিন পর সুরাইয়ার এক বন্ধুর সাথে দেখা। এইচএসসি পরিক্ষার পর সুরাইয়া বিয়ে হয়ে যায়, তখন থেকে আর কারো সাথে যোগাযোগ নেই। অনেকদিন পরে যখন দেখা কথা তো বলতেই হবে। তাই দুজন রাস্তার পাশে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে গল্প করছিল।

কথায় কথায় সুরাইয়ার বন্ধু সুরাইয়াকে জিজ্ঞেসা করে কিরে তুই একা কোনো তোর হাসব্যান্ড কোথায় একা কেন এসেছিস সব কিছু ঠিক আছে তো।

সবকিছু লুকিয়ে সুরাইয়া বলে তেমন কিছু না আমার হাসব্যান্ড অসুস্থ তাই আসতে মানা করেছি। ও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিই আসতে মানা করলাম। এমনিতেই অসুস্থ রেস্ট নিচ্ছে ওয়াহেদ।

আফসানার শ্বাশুড়ি আফসানা কে বাইরে থেকে খাবার পার্সেল আনতে বলে। কাজের মেয়েটা আজ আসেনি আর সুরাইয়া বাড়িতে নেই তাই আজকের খাবার টা বাইরে থেকে আনতে বলে।

বাইরে পার্সেল নিয়ে আসতে যাওয়ার সময় আফসানা সুরাইয়াকে পার্কের বেঞ্চে একটা ছেলের সাথে গল্প করতে দেখে আর পূর্ণতা সেই ছেলেটার কোলে ছিল। এটা দেখে আফসানা সুরাইয়াকে সন্দেহ করতে লাগলো। আর মোবাইল দিয়ে দুজনের একসাথে একটা ছবি তুলে রেখে দেয় এটা ভেবে যে ব্লাকমেইল করতে কাজে লাগবে‌।

কিছুক্ষণ পর পার্সেল কিনে নিয়ে বাসায় চলে আসে আফসানা। সুরাইয়া ও বাসায় চলে আসে পূর্ণতার ডাক্তার দেখিয়ে আর পুরোনো বন্ধুর সাথে গল্প শেষে করে। আজ বেশ ভালোই লাগছে সুরাইয়া অনেকদিনের পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা।

বাসায় এসে সুরাইয়া পূর্ণতা কে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। ঠিক এমন সময় হাসতে হাসতে সুরাইয়ার রুমে আসে আফসানা। শয়তানের মতো হাসি দিয়ে সুরাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে নতুন বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ভালোই তো পার্কের চিপায় চাপায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন।

সুরাইয়া তখন অবাক চোখে তাকিয়ে বলে কি সব আজেবাজে কথা বলেন। আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড মানে! আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিল না আর এখনো নেই। আমি শুধু ওয়াহেদকে ভালোবাসি আর কাউকে না।

আফসানা হাসতে হাসতে ফোন থেকে ছবি গুলো সুরাইয়াকে দেখায়।

সুরাইয়া তখন মুচকি হেসে বলে এটা আমার বয়ফ্রেন্ড না। এটা আমার অনেক আগের বন্ধু। অনেকদিন পরে দেখা তাই গল্প করছিলাম। আর আপনি এখানে পার্কের চিপায় চাপায় কোথায় পাচ্ছেন। আমি তো খোলা জায়গায় আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।

আফসানা তখন শয়তানি হাসি দিয়ে বলে। আমি জনি আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকতেই পারে না। কিন্তু আমি যদি এটা শ্বাশুড়ি আর ওয়াহেদ কে গিয়ে দেখাই তাহলে কি হবে বুঝতে পারছেন তো। সবাই মেনে নিবে আপনার আলাদা সম্পর্ক আছে‌ অন্য জায়গায়। আর এই বাড়িতে আপনার যতটুকু সম্মান বা জায়গা আছে সেটাও থাকবে না। তখন এরা তোমাকে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবে। সারাজীবনের জন্য বাপের বাড়িতে থাকতে হবে।

সুরাইয়ার বুঝতে বাকি থাকলো না আফসানা তাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে আর ওয়াহেদের থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে‌। সুরাইয়া তখন করুণ দৃষ্টিতে আফসানার দিকে তাকিয়ে বলে। এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আপনি কি লাভ পাবেন। আমি আপনার সাথে এমন কি অপরাধ করেছি যে আপনি আমাকে এতো বড় ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। এই বাসা থেকে তাড়িয়ে ওয়াহেদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।

আফসানা তখন হাসতে হাসতে বলে না না ভুল বুঝলে তোমাকে এই বাসা ওয়াহেদ কে ছেড়ে যেতে বলছি না। এই বাসায় থাকতে হলে আমার কথা অনুযায়ী থাকতে হবে। না হলে বুঝতেই পারছো ছবি গুলো দেখিয়ে তোমার নামে কি কি বলব। ৭৬০

এমন অবস্থায় সুরাইয়া কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে। সব দিক থেকে যেন, বিপদ ঘনিয়ে আসছে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে আত্মহত্যা করতে। গলা থেকে উর্না টা খুলে ফেলে সুরাইয়া। একটা টেবিল নিয়ে ঠিক ফ্যান সোজাসুজি রাখে অনেক কিছু ভাবতে থাকে। জীবনের ভালো মন্দ সময়গুলো। কিন্তু ভেবে দেখে জীবনের খারাপ সময় টা দিয়ে ভরপুর সুরাইয়ার জীবন। বিয়ের দশ বছর পর্যন্ত মা ডাক শুনতে না পারা, যদিও দশ বছর পর মা ডাক শুনতে পরেছে কিন্তু মেয়ে হয়েছে বলে শ্বাশুড়ির নির্যাতন। ওয়াহেদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।

সব থেকে কষ্ট টা তখন পেয়েছে যখন ওয়াহেদ দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে‌। কোনো স্ত্রী চায় না তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে। কিন্তু শুধুমাত্র স্বামীর খুশির জন্য হাসি মুখে সেটাও ত্যাগ করে দিয়েছে।

কিন্তু আত্মহত্যা করার আগে একটা চিঠি লিখে যায়।

প্রিয় ওয়াহেদ
সব কিছু আমার ধৈর্যের বাহিরে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সন্তান বাদেও তো দশ বছর আমার সাথে ছিলে তাহলে মেয়ে হওয়ার পরে এখন কেন আমার সাথে এমন করো? ছেলে সন্তান না হওয়ায় জন্য কি শুধু মেয়েরা দায়ি? এটা তো আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। দোয়া করি আফসানাকে নিয়ে সারাজীবন সুখে থেকো আর তোমাদের একটা সুন্দর ফুটফুটে ছেলে সন্তান হবে।

আর কিছু না ভেবেই সুরাইয়া টেবিলের উপর উঠে যায় উর্না টা নিয়ে ফ্যানের সাথে শক্ত করে বাঁধে দেয়। মেয়ে পূর্ণতার দিকে এক নজর হাসিমুখে দেখে তারপর গলার মধ্যে ফাঁস বেঁধে দেয়।

চলবে,,,,,

মায়া পর্ব-০৩

0

#মায়া
#পর্ব_০৩
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

মেয়ে পূর্ণতার কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় সুরাইয়া। রুমে গিয়ে দেখে পূর্ণতা নিচে পড়ে গিয়েছে খাট থেকে। এতক্ষণে সুরাইয়ার হুঁশ আসে। পূর্ণতার কাপড় চেঞ্জ করার সময় তাকে খাটের এক কোনায় রেখে শ্বাশুড়ির কাছে গিয়েছিলেন রান্না করার জন্য অনুমতি নিতে কারণ তরকারিতে ঝাল বেশি হওয়ায় শাশুড়ি খেতে পারেনি। ছোট বাচ্চা হওয়াতে পূর্ণতার মাথায় লেগে মাথা ফুলে যায়। ব্যথা পাওয়াতে পূর্ণতা কান্না করতে থাকে। মেয়েকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেই যে কখন ঘুমিয়ে যায় বুঝতেই পারেনি সুরাইয়া।

কিছুক্ষণ পর শাশুড়ির চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় সুরাইয়ার। শাশুড়ি রেগেমেগে বলতে থাকে জমিদারের মেয়ে হয়েছে যখন তখন ঘুমানো এত ঘুমালে রান্না করবে কে?

সুরাইয়া তখন করুণ কন্ঠে বলে মা আজ শরীর টা খারাপ লাগছে অনেক। আজ কাজের মেয়ে টা রান্না করুক কাল থেকে আমি প্রতিদিন রান্না করবো। আর পূর্ণতা খাট থেকে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে ওর কাছে থাকতে হবে। অনেক কান্না করছে।

শ্বাশুড়ি তখন মিট মিট করে হাসতে থাকে আর বলতে থাকে তুমি থাকতে কাজের মেয়ের কেনো প্রয়োজন । কাজের মেয়েকে নিষেধ করে দিয়েছি তাকে আর আসতে হবে না। আজ থেকে বাসার সব কাজ তুমি করবে সারাদিন তো বসে থাকা ছাড়া কোন কাজ নেই। এতো আরামে থাকা চলবে না। কিছু টাকা বেঁচে যাবে।

কিন্তু মা ডাক্তার তো আমাকে ভারি কাজ করতে মানা করেছে মাত্র দশ দিন হয়েছে সিজার করেছি। আর কয়েকদিন রেস্ট নিতে হবে। না হলে সমস্যা হবে। বেশি কাজ করলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারি। কাজের মেয়েটা আর কয়দিন আসুক তারপর থেকে সব কাজ আমি করব।

শ্বাশুড়ি তখন সুরাইয়ার কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছ আগেই বলে দিয়েছি এই বাসায় থাকতে হলে আমার কথা অনুযায়ী থাকতে হবে‌ । আর না হলে এই বাসা থেকে চলে যেতে পারো।

সুরাইয়া কাজ করেছিল আর ওয়াহেদের কথা মনে করছিল। ওয়াহেদ কে একদিন প্রশ্ন করেছিল আচ্ছা আমি যখন প্রেগন্যান্ট থাকব তখন তো কাজ করতে পারব না আমি। তখন তোমাকে কাজে সাহায্য করতে পারব না। তখন ওয়াহেদ মুচকি হেসে বলেছিল স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক । একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। আমি তো আছি চিন্তা করার দরকার নেই। আর মা তো আছে তোমাকে অনেক কাছে সাহায্য করবে।
কিন্তু আজ সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কেউ কথা রাখেনি। নিজের স্বপ্নগুলো নিজের মধ্যে দাফন করতে থাকে সুরাইয়া।

ওয়াহেদের কথা মনে পড়ায় সুরাইয়া ওয়াহেদকে ফোন দেয়। দুই বার ফোন দেয়ার পর ওয়াহেদ ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ওয়াহেদ হ্যালো বলে।
সুরাইয়া বলে কেমন আছো কিন্তু কোনো শব্দ আসে না ওপাশ থেকে। অনেকবার ওয়াহেদ বলে ডাকার পরেও কোনো শব্দ আসে না। ওয়াহেদ কোনো কথা বলে না।

সুরাইয়া ভাবছে হয়তো ওয়াহেদ কথা বলবে না তার সাথে। তাই ফোনে রেখে আবার কাজে মনোযোগ দিতে থাকে। আধাঘণ্টা পরে ওয়াহেদের নাম্বার থেকে সুরাইয়ার নাম্বারে ফোন আসে। কিন্তু ওপাশ থেকে ওয়াহেদ না অন্য কেউ কথা বলে। সে বলে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। আপনার নাম্বার কল লিস্টের প্রথমে আছে তাই আপনাকে ফোন দিলাম। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসেন। সুরাইয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না ছেলে মেয়ে দুটা বলতে আর কেউ নয় ওয়াহেদ আর আফসানাকে বুঝিয়েছে। সুরাইয়ার মনে হচ্ছে পায়ের নিচে থাকে মাটি সরে যাচ্ছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।

সুরাইয়া দৌড়ে শ্বাশুড়ির কাছে চলে যায় আর সব খুলে বলে।
গিয়ে শ্বশুড়ি কে সব বলার পর প্রায় অজ্ঞান মতো অবস্থা শ্বাশুড়ির। তারপর শ্বাশুড়ির মাথায় পানি দিয়ে তেল দিয়ে নিজ হাতে ধরে শ্বাশুড়ি কে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

শ্বাশুড়ি কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ছেলের অবস্থা দেখে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। ওয়াহেদ ও অজ্ঞান অবস্থায় আছে। মাথা ফেটে রক্ত বাহির হচ্ছে। শরীরের থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে।

ডাক্তার এসে বললেন অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে রক্ত দিতে হবে। রক্তের গ্রুপ “এ” পজেটিভ। আপনাদের মধ্যে কারো থাকলে দিতে পারেন। আর যদি না থাকে তাহলে অন্য জায়গা থেকে ম্যানেজ করেন। ওখানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন কিন্তু কারোর গ্রুপ পজেটিভ না। ওয়াহেদের শ্বশুরের রক্তের গ্রুপ মিল থাকলেও না করে দিলেন কারণ তার নাকি রক্ত দিতে ভয় করে।

শ্বাশুড়ির কাছে থেকে ফিরে এসে সব জানতে পেরে সুরাইয়া রক্ত দিতে রাজি হলো। কিন্তু সুরাইয়ার তো কয়েকদিন আগে সিজার হয়েছে। সে কিভাবে রক্ত দিবে আর রক্ত দিলে অনেক সমস্যা হবে‌। কিন্তু কারোর কোনো কথা উপেক্ষা না করে ওয়াহেদ কে রক্ত দিলেন সুরাইয়া। হাজার হলেও স্বামী বলে কথা। স্বামীর খারাপ সময়ে স্ত্রী পাশে না থাকলে থাকবেই বা কে।

আফসানার অবস্থা ততটা মারাত্মক না। কারণ বাইক চালানোর সময় হেলমেট টা আফসানার মাথায় ছিল ওয়াহেদ নিজে ইচ্ছায় হেলমেট দেয়নি। আফসানা কে হেলমেট টা মাথায় দিতে বলে। খুব বেশি ব্যথা না পেলেও ভালো ব্যথা পেয়েছ। হাত দিয়ে রক্ত বাহির হয়েছে। ওয়াহেদ হাসপাতালে থেকে যায় আফসানা বাসায় চলে যায়।

মোট এক সপ্তাহে থাকতে হয়েছিল ওয়াহেদ কে হাসপাতালে কিন্তু এক মূহুর্তের জন্য ওয়াহেদের কাছে থেকে দূরে যায়নি সুরাইয়া। সব সময় ওয়াহেদের পাশে ছিল সুরাইয়া। এই এক সপ্তাহ ধরে শুধু ওয়াহেদের সেবা যত্ন করেছে সুরাইয়া।

কিন্তু আফসানা এই এক সপ্তাহে একবারের জন্যও দেখতে আসেনি ওয়াহেদ কে। ওয়াহেদ সুরাইয়া কে অনেকবার বলেছে আফসানা আসছে না কেনো আমাকে দেখতে। কিন্তু সুরাইয়া আফসানার প্রতি একবারের জন্যও কোনো অভিযোগ করেনি। চাইলে সুরাইয়া আফসানা কে নিয়ে অনেক খারাপ খারাপ বলতে পারতো।
ওয়াহেদ কে অনেক ভাবে বুঝিয়ে যে আফসানা বাসায় রেস্ট নিচ্ছে আফসানাও এক্সিডেন্টে অনেক ব্যথা পেয়েছ। কিন্তু সত্যি হলো আফসানা গুরুতরভাবে কোন আঘাত পাইনি। চাইলে সে এখানে এসে ওয়াহেদের সেবা যত্ন করতে পারতো। অত্যন্ত দেখে যেতে পারে।

সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি ও আফসানার প্রতি অনেক নারাজ। আট দিন পর আজ ওয়াহেদ কে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডাক্তার বলে দিয়েছে দেখে শুনে রাখতে হবে। মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছে মানসিক ভাবে তাকে যেনো আঘাত না দেয়া হয়। বাসায় এসে শ্বাশুড়ি সুরাইয়া কে বলে মা যাও তুমি রেস্ট নাও তুমি অনেক ক্লান্ত। সুরাইয়া শ্বাশুড়ির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। শ্বাশুড়ির মাঝে অনেক পরিবর্তন। আজ কোনো খারাপ ব্যবহার করছে না। কোনো কাজ করতে বলছে না। ঘরের দরজা দিয়ে আটকিয়ে রাখছে না। খাবার খেতে দিচ্ছে না।

শ্বাশুড়ি আফসানাকে ডেকে বলে আজ দুপুরের রান্না টা তুমি করবে। তরকারিতে ঝাল কম দিবে। সুরাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আফসানা। শ্বাশুড়ি কে উদ্দেশ্য করে বললো কাজের মেয়ে আসবে না?
শ্বাশুড়ি বললেন না। মানা করে দিয়েছিলাম কিন্তু কাল থেকে নিয়মিত আসবে।

সুরাইয়া হাসি মুখে গিয়ে গোসল করে ঘুমিয়ে আছে। বিকালে সুরাইয়াকে ডাক দেয়া হলো খাওয়ার জন্য। আজ খাবার পরিবেশন করছে আফসানা। ওয়াহেদ ও খাবারের টেবিলে বসে আছে। তরকারি দেয়ার সময় মাংসের ঝোল পড়ে যায় সুরাইয়ার কাপড়ে। কিন্তু সুরাইয়া কিছু না বলে কাপড় পরিষ্কার করে এসে আবার খাবারের খাওয়া দাওয়া করে‌।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ওয়াহেদ, আফসানাকে বলে আজ সুরাইয়া কাছে থাকবে। সুরাইয়ার প্রতি সবার ভালোবাসা আফসানার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।

সকালের খাওয়ার সময় আফসানা সবার উদ্দেশ্যে বলে। সেদিনের এক্সিডেন্টের জন্য দায়ী আর কেউ না সুরাইয়া। শ্বাশুড়ি অবাক চোখে বলে কি বলছো এসব সুরাইয়া কেন দায়ী হবে‌।
আফসানা তখন মুচকি হেসে বলে সেদিন যদি আফসানা ওয়াহেদ কে ফোন না করতো তাহলে সেদিন এক্সিডেন্ট হতো না। বাইকে থাকা অবস্থায় সুরাইয়ার ফোন ধরতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হয়েছে। সেদিন যদি সুরাইয়ার ফোন না করতো তাহলে আমার আর ওয়াহেদের এমন অবস্থা হতো না। সুরাইয়া কে আবার শ্বাশুড়ির চোখে খারাপ করার জন্য এমন কথা বলে আফসানা।

আফসানার কথা শুনে শ্বাশুড়ি সুরাইয়ার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর খাবারের প্লেট টা সামনে থেকে নিয়ে নেই। আর কিছু বলার আগেই ওয়াহেদ সুরাইয়ার হাত ধরে অন্য রুমে নিয়ে যায়।

চলবে,,,,

মায়া পর্ব-০২

0

#মায়া
#পর্ব_০২
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

সুরাইয়া নিজের স্বামীর সদ্য বিয়ে করা বাসর ঘরে ঢুকে গেলেন সবার সামনে দিয়ে। এটা দেখে সবাই হতবাক। বাইরে অনেকেই অনেক কথা বলছে। ঘরে ঢুকেই সুরাইয়া নতুন বোউ এর ঘোমটা খুলে তার উদ্দেশ্যে বললেন তুমি যদি কখনো ওয়াহেদ কে কষ্টি দিয়ে কথা বলেছো বা খারাপ ব্যবহার করেছো তাহলে আমি নিজ হাতে তোমাকে সেদিন শাস্তি দিব। আমার কথা ভালো করে শুনে নাও। ওয়াহেদ আর নতুন বিয়ে করা বোউ সুরাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ওয়াহেদ ভাবতেই পারছে সুরাইয়া এমন করতে পারে‌।

সুরাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই শ্বাশুড়ি এসে সুরাইয়ার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে সবার সামনে থেকে অন্য ঘরে নিয়ে চলে যায়। আর একটা থাপ্পড় মরে বলে আমার কথা ভালো করে মনে রাখ আমার ছেলে তোকে ছেড়ে দিয়েছে। এই বাসায় তোর কোনো অধিকার নেই। যদি এখানে থাকতে হয় তোর, আমার কথা অনুযায়ী থাকতে হবে। আরো অনেক কথা শুনিয়ে সুরাইয়ার ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা মেরে চলে যায়।

মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অনবরত কান্না করতে থাকে সুরাইয়া। মাত্র দুই সপ্তাহের ছোট বাচ্চা। মায়ের দুঃখ আর কি করে বুঝবে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে সুরাইয়া বলতে থাকে তোর যদি জন্ম না হতো তাহলে আমি আমার এই জীবন শেষ করে দিতাম। রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যায় তাও দরজা খুলে দেয়নি এখনো কেউ‌। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল হয়ে যায় তাও কেউ দরজা খুলে দেয়নি। পরের দিন ও দরজা খুলে দেয় না কেউ। এদিকে সুরাইয়া দুইদিন থেকে কিছু খাওয়া দাওয়া করে নাই। মেয়েকে খেতে দেয়ার জন্য বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ নেই। আর দুধ দিলে সুরাইয়ার শরীর দূর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

দুইদিন পরে সুরাইয়ার শ্বশুরি এসে দরজা খুলে কিছু খাবার রেখে যায় আর যাওয়ার সময় বলে যায় আজ ওয়াহেদের শ্বশুর বাড়ি থেকে মানুষ আসবে ওয়াহেদ আর ওয়াহেদের স্ত্রীকে নিতে। আমি কোনো ঝামেলা চাই না তোর জন্য। যতক্ষণ না ওরা এখান থেকে চলে যায় তোকে আর তোর মেয়েকে এই ঘরে মধ্যে বন্দি হয়ে থাকতে হবে। এটা বলে সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি আবার ঘরের তালা দিয়ে চলে যায়।

ক্ষিধা পেয়েছে অনেকে সুরাইয়ার, মেয়ে এদিকে কান্নায় ছটফট করছে তাড়াতাড়ি দুধ দিতে হবে। আর কোনো কথা না ভেবেই তাড়াতাড়ি করে খেয়ে মেয়েকে দুধ দেয়। এবার মেয়েটা কান্না বন্ধ করে। কোনো কিছু মেনে নিতে পারছে না সুরাইয়া ‌। সুরাইয়া সব সময় চাই ওয়াহেদ ভালো থাকুন। কিন্তু আজ তিন দিন একটুও খোঁজ খবর নিলো না ওয়াহেদ তার। কিন্তু এক সময় ওয়াহেদ, সুরাইয়াকে ছাড়া থাকতে পারতো না। অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে ওয়াহেদ।

ওয়াহেদের ফোনে অনবরত ফোন দিয়ে চলছে সুরাইয়া কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। আর ফোন গেলেও ফোন রিসিভ করছে না। যেভাবে হোক ওয়াহেদের সাথে দেখা করতে হবে‌। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না সুরাইয়া। ঘরে তালা দেয়া ফোন যাচ্ছে না।

কিছুক্ষণ পরে সুরাইয়ার কানে একটা আওয়াজ ভেসে আসে। ওয়াহেদ সুরাইয়া সুরাইয়া করে সারা বাড়িতে চিল্লাচিল্লি করছে।

দরজার ওপাশে থেকে সুরাইয়া বলে আমি এখানে ওয়াহেদ।

কিন্তু ঘরে তো তালা দেয়া। ওয়াহেদের চিল্লাচিল্লি শুনে ওয়াহেদের মা চলে আসে আর বলে–

কি হয়ছে বাবা চিল্লাচিল্লি করো কেনো।

ওয়াহেদ তখন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কাল বললে সুরাইয়া বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছে ওর বাবা অসুস্থ। কিন্তু তুমি তো ঘরে তালা দিয়ে রেখে দিছো। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও। আমি সুরাইয়ার সাথে কথা বলবো। চাবি নিয়ে এসে সুরাইয়ার শ্বশুরি দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলার সাথে সাথে ওয়াহেদ সুরাইয়ার হাত ধরে অন্য রুমে নিয়ে যাওয়ার সময়। ওয়াহেদের নতুন স্ত্রী আফসানা এসে সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে কি এমন কথা বলবেন যেটা আমার সামনে বলা যাবে না। যা বলার আমার সামনে বলেন এখন আপনার প্রতি আমার অধিকার আছে।

ওয়াহেদ রাগি চোখে আফসানার দিকে তাকিয়ে বললো সুরাইয়া আমার স্ত্রী যেমনটা তুমি। তোমার সাথে যেমন পার্সোনাল বিষয় আছে ঠিক তেমনি সুরাইয়ার সাথেও পার্সোনাল বিষয় আছে।

সুরাইয়া লক্ষ্য করলো শ্বাশুড়ি তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে দিবে। তাই কিছুটা ভয় পেয়ে ওয়াহেদ কে বললো যা বলার এখানেই বলো সমস্যা নেই কোনো।

সুরাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ওয়াহেদ বললো এতো কিছু হয়ে গেলো আমাকে জানালে না কেন? একটা ফোন তো দিতে পারতে। আম্মা আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছে তুমি বাপের বাড়িতে আছো এখনো কয়েকদিন পরে আসবে ওর বাবা অসুস্থ কয়েকদিন থেকে।

তোমার ফোনে তো কয়েকবার ফোন দিলাম ফোন যায় না। সুরাইয়া তখন কান্না কন্ঠে বলে আমিও তোমার সাথে কথা বলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। ফোন দিয়েছি অনেকবার কিন্তু যায় না। পাশে থেকে সুরাইয়ার শ্বশুড়ি মিটমিট করে শয়তানের মতো করে হাসি দিচ্ছে। তখন আর কারো বুঝতে রইলো না। কেউ তাদের ফোন নিয়ে দুজনের ফোন থেকে দুজনের নাম্বার ব্লকলিস্ট করে রেখে দিয়েছে। সে জন্য ফোন যাচ্ছে না।

এসব কথা বলতে বলতেই আফসানার বাসার লোকজন চলে এসেছে। প্রায় পাঁচ জনের মতো মানুষ এসেছে। অনেক মিষ্টি নিয়ে এসেছে অনেক তরকারি নিয়ে এসেছে মাছ, মাংস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব জিনিস দেখে সুরাইয়ার শ্বশুড়ির মুখে আর হাসি ধরে না। এই মেয়েটা সব সময় লোভি প্রকৃতির। যে যত দিতে পারবে সেই তার কাছে ভালো। আর যে দিতে পারবে না সে ভালো না।

সুরাইয়া কিচেনে রান্না করছে এমন সময় আফসানা এসে সুরাইয়াকে বললো তুমি ওয়াহেদের থেকে দূরে দূরে থাকবে। ওয়াহেদ শুধু আমার। বেশি অধিকার দেখাতে আসলে তখন বুঝবে আমি কি জিনিস। আর হ্যাঁ ওয়াহেদ নাকি তোমাকে দয়া দেখিয়ে বিয়ে করেছে ছোট লোক ঘরের মেয়ে। আমার বাসা থেকে অনেক কিছু পাঠিয়েছে। বিয়ের সময় তোমার বাসা থেকে নাকি কিছু দেয়নি। আর আমি যেন এসে তোমাকে এখানে না দেখি।

সুরাইয়া কাজ করছে আর অনবরত কান্না করছে। এমন সময় শ্বাশুড়ি এসে বললো বেশী ঢং না দেখিয়ে ভালো করে রান্না কর। রান্না যদি খারাপ হয় তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।

রান্না শেষে সুরাইয়া সবাইকে খাবার পরিবেশন করছে। আর ওয়াহেদ গিয়েছে বাইরে দোকান থেকে পানি কিনতে। খাবার পরিবেশন করার সময় মাংসের এক ফোঁটা ঝোল আফসানার শাড়ি লেগে যায়। রাগান্বিত অবস্থায় আফসানা খাবারের হাত দিয়ে সুরাইয়ার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিয়ে বলে
ছোটলোকের বাচ্চা জানিস তুই এই শাড়ির দাম কত। আর তুই এটা নষ্ট করে দিলি। তোর বাবার ক্ষমতা আছে কি এতো টাকার শাড়ি কেনার।

সুরাইয়ার মুখ ধুয়ে এসে আবার খাবার পরিবেশন করতে শুরু করে। থাপ্পড়ে সুরাইয়ার মুখে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে গিয়েছে। ওয়াহেদ যাতে বুঝতে না পেরে সেজন্য শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়াহেদ বাসায় চলে আসে। ওয়াহেদ আর সুরাইয়ার শ্বশুড়ি কে খেতে দিচ্ছে সুরাইয়া ‌এমন সময় ওয়াহেদের মা খাবারের প্লেট টা আছাড় দিয়ে ফেলে দিয়ে ওয়াহেদের দিকে তাকিয়ে বলে তোর এই বোউ আমাকে আমাকে মেরে ফেলবে তরকারিতে আমি বেশি ঝাল খেতে পারি না আমি। সে জন্য বেশি করে ঝাল দিয়েছে।

ওয়াহেদ তরকারি খেয়ে বুঝতে পারে তরকারিতে বেশি ঝাল হয়নি। মা ইচ্ছা করে এমন করছে। যাতে সুরাইয়াকে ডিভোর্স দিয়ে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিই। সুরাইয়াকে তার চোখে খারাপ করতে চায়। কিন্তু মায়ের মন রাখার জন্য সুরাইয়াকে একটু বকে দেয়। আর বলে দেয় এরপর থেকে যেন ঝাল কম দেয়া হয়।

ওয়াহেদ পরে সুরাইয়া কে ডেকে বলে তখন বকা দিলাম কিছু মনে করোনা প্লিজ। সুরাইয়া তখন মুচকি হেঁসে বললো কিছু মনে করে নাই। কিছুক্ষণ পরে বাসা থেকে সবাই চলে যায় শুধু থেকে যায় সুরাইয়া, সুরাইয়ার শ্বশুড়ি আর মেয়ে। সুরাইয়ার অনেক ভয় করছে শ্বশুড়ি যদি খারাপ কিছু করে বসে তার সাথে। এখন তো ওয়াহেদ নেই।

কিছুক্ষণ পরে সুরাইয়া রুমে থেকে বাহির হয়ে ডাইনিং এ গিয়ে দেখে শ্বাশুড়ি খাবার খাচ্ছে। সুরাইয়া তখন বললো মা আমি রান্না করে দিচ্ছি আবার, বেশি ঝালের তরকারি খেতে হবে না। শ্বাশুড়ি তখন ভিলেনের মতো হাসতে হাসতে বলে তোমার কি মনে হয় আমি সত্যি বলেছি। ওয়াহেদের চোখে খারাপ করার জন্য এমন করেছি। তোমাকে এই বাসায় শান্তিতে থাকতে দিব না।

পাশের রুম থেকে সুরাইয়ার মেয়ে পূর্ণতার কান্নার আওয়াজ আসে। সুরাইয়া ছুটে পাশের রুমে পূর্ণতার কাছে চলে যায়। আর এখানে সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি চিৎকার করতে করতে হাসতে থাকে।

চলবে,,,,,

মায়া পর্ব-০১

0

#মায়া
#পর্ব_০১
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

অনেক প্রতিক্ষার পরে আজ জন্ম নিয়েছে এক ফুটফুটে শিশু। দশ বছর অপেক্ষার পর। কিন্তু ওয়াহেদ সাহেবের মুখে বিন্দু মাত্র খুশির ছাপ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ওয়াহেদ সাহেবকে তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার কথা। মুখে বিষন্নতার কারণ হলো পুত্র সন্তান না হয়ে কন্যা সন্তান হয়েছে। অনেক আশা ছিলো একটা পুত্র সন্তান হবে। কন্যা সন্তান কে কোলে না নিয়ে বাসা থেকে বাইরে চলে যায় ওয়াহেদ সাহেব। রাতে বাসায় ফিরে এসে মেয়েটাকে এক নজর দেখলেন না।

ওয়াহেদ সাহেবের স্ত্রী সুরাইয়ার বুঝতে বাকি থাকলো না ওয়াহেদ কেন এমন করছেন। সুরাইয়া, স্বামীর পাশে গিয়ে বসে থাকলেন তারপর বলে উঠলেন দেখো ছেলে আর মেয়ে কি আসে যায় সন্তান তো আমাদের। এতো বছর পরে একটা ফুটফুটে সন্তান হয়েছে হাসিমুখে মানিয়ে নাও প্লিজ। দেখো আমাদের মেয়েটা কতটা সুন্দর হয়েছে। একদম তোমার মতো হয়েছে। অত্যন্ত একবার কোলে নিয়ে দেখো।

স্ত্রী সুরাইয়ার অনুরোধে মাহমুদ সাহেব নিজের কন্যা সন্তান কে একবার নিজের বাহুতে নিলেন। কিন্তু মুখে হাঁসির বিন্দু মাত্র ছাপ দেখা যায় না। স্ত্রীর অনুরোধে সন্তান কে কোলে নিয়েছে। নিজের থেকে নিজের স্ত্রী কে বেশি ভালোবাসে। আর সেই জন্যই তো বিয়ের দশ বছর পরেও সন্তান না হওয়ার কারণে তার সাথে আছে। না হলে তো ডিভোর্স দিয়ে দিতেন। কোলে নিয়ে দুই মিনিট পরে আবার রেখে দিলেন।

সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন আর যাওয়ার সময় মিষ্টির দোকান থেকে তিন কেজি মিষ্টি কিনলেন‌। মিষ্টি ক্রয় করার ইচ্ছা ছিলো না ওয়াহেদ সাহেবের কিন্তু কি করার আছে। অফিসের সবাই জানে ওয়াহেদ সাহেবের সন্তান হয়েছে কিন্তু ছেলে নাকি মেয়ে তা জানেন না। এখন যদি, অফিসের সবাই কে মিষ্টি মুখ না করানো হয় তাহলে সবাই ওয়াহেদ সাহেব কে কিপ্টা ভাববে। তাই ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করার জন্য মিষ্টি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। ওয়াহেদ সাহেব সবার উদ্দেশ্যে মিষ্টি বিতরণ করছেন।

অফিসে মানুষকে খোঁচা মেরে কথা বলা একটা লোক আছে যারা নাম আফজাল হোসেন। তার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে শুধু খোঁচা মেরে কথা বলা। মুখ বেঁকিয়ে তিনি ওয়াহেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন। শুনলাম আপনার নাকি মেয়ে সন্তান হয়েছে। কি আফসোস এতো বছর পরে জন্ম তাও আবার মেয়ে হয়েছে, ছেলে না। আমি আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম আরেক টা বিয়ে করেন। আপনার এই স্ত্রী কে ডিভোর্স দিয়ে দিন। কিন্তু তখন আপনি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। তখন আমার কথা শুনলে এখন পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।

এমনিতেই ওয়াহেদ সাহেব তার কন্যা সন্তান মেনে নিতে পারছে না। তারপর আফজাল হোসেন তার মাথায় মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে। আরো অনেকেই বলছেন মেয়ের থেকে যদি ছেলে হতো তাহলে ভালো হতো। অনেক বছর পর সন্তান তাও আবার মেয়ে। মেয়ে মানুষ করে বিয়ে দিতে গিয়ে তো বুড়া হয়ে যাবেন। তারপর আবার মেয়ের বিয়ে অনেক খরচ। কিন্তু ছেলে হলে নিজের জীবন নিজেই করে নিতো।

অনেকেই অনেক কথা বলছেন।এসব বিষয় নিয়ে ওয়াহেদ সাহেব বেশ রেগে আছে। রাগান্বিত অবস্থায় বাসায় এসে সুরাইয়াকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিলেন আমি দ্বিতীয় বিয়ে করবো। তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দশ বছর তোমার সাথে একসাথে ছিলাম কিন্তু আমাকে সন্তান দিতে অক্ষম হয়েছো। হাঁসি মুখে তোমার সাথে সংসার করেছি। এখন তোমাকে আমার ডিভোর্স দিতে হবে।

সুরাইয়ার মুখে কোনো কথা নেই। কি বলবে বুঝতে পারছে না। যার সাথে এতোটা বছর ধরে সংসার করছে। তাকে কিভাবে অন্য মেয়ের হাতে তুলে দিব। কান্না কন্ঠে সুরাইয়া বললো তোমার খুশিতে আমার খুশি। তুমি যদি চাও দ্বিতীয় বিয়ে করবে তাহলে আমি কোনো বাঁধা দিবো না। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ রাখবে প্লিজ?

হ্যাঁ বলো সুরাইয়া আমি চেষ্টা করবো তোমার কথা রাখার। কি কথা বলো?

আমি চায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার বাসায় থাকতে। তোমার কাছে থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চায়। এখন যদি আমি সারাজীবনের জন্য বাসায় চলে যায় তাহলে আমাকেও বিয়ে দিয়ে দিবে। তোমার মতো আমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। আমাকে আর আমার সন্তানকে তোমার বাসায় থাকতে দাও। চিন্তা করো না আমাকে আর আমার সন্তানের খরচ তোমার বহন করতে হবে আমি। আমি নিজেই কিছু একটা করবো।

কিছুক্ষণ চিন্তা করার পরে ওয়াহেদ সাহেব বললেন। আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার কথা মেনে নিলাম। কিন্তু আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা তোমাকে মেনে নিতে হবে। সে যেটা বলবে সেটাই করতে হবে।

সুরাইয়া তখন হাস্যোজ্জ্বল মুখে ওয়াহেদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন তুমি কোনো চিন্তা করো না। তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী যেটা বলবে সেটাই হবে।

স্বামীর বিয়ের জন্য বাসা থেকে সবাই মেয়ে খুঁজছে। সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন কারণ অনেক আগে থেকেই বাসা থেকে বলেছে আরেকটি বিয়ে করতে। কিন্তু কারোর কথা মেনে নেয়নি ওয়াহেদ। প্রথম প্রথম বাসার সবাই কে সুরাইয়া পছন্দ করলেও আস্তে আস্তে তাকে কেউ পছন্দ করতেন না। কারণ সুরাইয়া সন্তান দিতে অক্ষম। দশ বছর পরে যখন সন্তান হবে এটা শুনে ওয়াহেদ সাহেব অনেক খুশি হলেও খুশি টা বেশিক্ষণ ছিল না। কারণ হলো মেয়ে সন্তান।

এক সপ্তাহ পর আজ ওয়াহেদের বিয়ে। বাসার সবাই অনেক আনন্দ করছে। সব আত্মীয় আজ বাসায় এসেছে। বিয়ে বলে কথা সবাই আনন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একমাত্র খুশি বিহীন মুখ সুরাইয়ার। পৃথিবীর কোনো মেয়ে চায় না তার স্বামী দ্বিতীয় কোনো বিয়ে করুক। ওয়াহেদ সাহেব ঘরে বসে ছিলেন। এমন সময় সুরাইয়া ওয়াহেদের কাছে গিয়ে বললো।
আমি কি আজ তোমায় সাজিয়ে দিতে পারি?

ওয়াহেদ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বললেন। আচ্ছা ঠিক আছে দিতে পারো।

সুরাইয়া নিজের হাতে নিজের স্বামী কে সাজিয়ে দিলেন। সবকিছু গুছিয়ে দিলেন। স্বামীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বললেন, তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে একদম সেদিনের মতো সুন্দর লাগছে যেদিন বর সেজে আমাকে নিতে এসেছিলে।

দুপুর নামাজের পর সবাই বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। সুরাইয়ার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ইচ্ছে করেই যায়নি। কারণ স্বামীর বিয়ে কিসের জন্য যাবে। সবার সামনে হাসিমুখে থাকলেও ভিতরে ভিতরে তার কলিজা টা পুড়ে যাচ্ছে। সবাই চলে গেলেও সুরাইয়া বাসায় থেকে যায়। কারণ স্বামীর বাসর ঘর সাজানোর দায়িত্ব টা সুরাইয়া নিজের হাতে নিয়েছে। বাসর ঘর সাজাতে সাজাতে সুরাইয়ার মনে মনে ভাবে ওয়াহেদের সাথে বিয়ের সময় ও এই ঘরে বাসর সাজানো হয়েছিল। বোউ সেজে তখন এই বাসায় এসেছিলেন। কিন্তু আজ নিজের স্বামীর বাসর ঘর তৈরি করে। বাসর ঘরে আজ অন্য মেয়ে বোউ সেজে বসে থাকবে।

বাসর ঘর সাজিয়ে সুরাইয়া বসে আছে আর পুরোনো দিনের কথা মনের মধ্যে কল্পনা করছে। হঠাৎ করে সুরাইয়ার কাছে ফোন আসে বিয়ের উদ্দেশ্যে যে গাড়িতে ওয়াহেদ ছিল সেই গাড়িটা এক্সিডেন্ট করছে। ওয়াহেদ এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। একটা পা কেটে বাদ দিয়ে দিতে হবে। আর কোনো দিন হাঁটতে পারবে না। কথাটা শোনার পরে সুরাইয়ার কাছে কল্পনার মতো মনে হচ্ছে।

হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দে সুরাইয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এতোক্ষণ সুরাইয়া বুঝতে পারে এটা বাস্তবতা না শুধু স্বপ্ন ছিল।

গাড়ির শব্দ শুনে সুরাইয়া দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে যায়। তারপর ওয়াহেদের কাছে গিয়ে মুখে হাত দিয়ে বলে তোমার তো কিছু হয়নি ঠিক আছো। এটা দেখে বিয়ে বাড়ির সবাই অবাক, হচ্ছে টা কি।

এটা দেখে সুরাইয়ার শ্বশুরি সুরাইয়ার হাত ধরে টানতে টানতে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে মুখে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। আর কড়া ভাবে বলে দিলেন আমার পিছন তুমি ছেড়ে দাও। তুমি কি মনে করো আমার ছেলের নতুন জীবন তুমি ভেঙ্গে দিবে? নতুন বোউ এর আশেপাশে তোমাকে না দেখি। আর যদি কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করো তাহলে এই বাসা থেকে তোমার লাশ বাহির হবে। এটা বলে সুরাইয়ার শ্বশুরি রুম থেকে বাহির হয়ে যায়।

সুরাইয়া রুমের মধ্যে নিজের মেয়ে পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আর বলতে থাকে সব দোষ তোর। সন্তান বাদেও আমি সুখি ছিলাম কিন্তু তোর জন্মের পর থেকে সব উল্টা পাল্টা হয়ে গিয়েছে। আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে দিয়ে নতুন বিয়ে করছে। এখন আমি তোকে নিয়ে কোথায় যাবো বল। আত্মহত্যা করেও তো আমার শান্তি হবে না। তোকে দেখার মতো কেউ নেই এই বাসায়। অবহেলা পেয়ে পেয়ে তুই মারা যাবি।

নতুন স্ত্রীকে সবার সবাই বরণ করে নিচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লি বাকি সবার খুশিতে সুরাইয়ার কান্নার আওয়াজ কারো কানে গিয়ে পৌঁছায় না। আর পৌঁছে বা কি হবে সুরাইয়ার কান্নায় কারো যায় আসে না। কারণ এই বাড়িতে সুরাইয়ার কোনো অধিকার নেই।

সুরাইয়া নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ওয়াহেদের বাসর ঢুকে যায় সবার সামনে দিয়ে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। বাহিরের সবাই অবাক। ওয়াহেদ আর নতুন স্ত্রী দেখে অবাক তারপর সুরাইয়া নতুন স্ত্রীর ঘোমটা খুলে দিয়ে বলে তুমি যদি,,,,,,,

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-৪৩ এবং শেষ পর্ব

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#অন্তিম পর্ব
#Suraiya_Aayat

কমিউনিটি সেন্টার থেকে ওরা সকলেই ফিরেছে, খুব টায়ার্ড তারপরে আবার কালকে ওদের বিয়ে তা নিয়ে সকলের মাঝে হাজারো ব্যস্ততা…..
আরু ছাদে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রান্তে আরিস 1 মগ কফি নিয়ে আরূর পাশে দাঁড়ালো, কফি থেকে ধোঁয়া উঠছে এইমাত্র যে আরিশ এটা বানিয়ে আনলো তারই প্রমাণ ৷
আরু মুচকি হেসে আরিশের দিকে তাকালো……
__”এত রাত্রে আপনি এবার কফি বানিয়ে নিয়েছেন কেন!”
কফিতে একটু চুমু দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” এনিথিং ফর ইউ আরুপাখি ৷”
কফির কাপটা আরু হাতে তুলে নিয়ে বেশ শব্দ করে চুমুক দিল আরিশ যে জায়গাটা স্পর্শ করেছে সেখানে ৷
আরিশ সামনের দিকে একইভাবে তাকিয়ে বলল,,,,, __”কেমন লাগছে আরুপাখি আবার নতুনভাবে সবকিছু ! নতুনভাবে হলুদ , নতুন ভাবে আবার বিয়ে, সবকিছুতেই একটা অদ্ভুত ভালো লাগা আছে তাই না!”
আরু আরিসের কাছে গিয়ে শক্ত করে আরিশ কে জরিয়ে ধরল,,,,,
__”কেন এত ভালোবাসেন আমায়? এতটা না বাসলেও তো পারেন ৷”
আরিশ ও ঠিক তেমনভাবেই আরুকে জড়িয়ে ধরল,,,,
__”তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি তা ঠিক জানি না তবে এটুকু জানি তোমার মাঝেই আমার অস্তিত্ব, তোমাতেই আমি ৷”
আরুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে আরিশ বলল,,,,,
__”আজকে আর কোন ভালোবাসায় দিতে পারলাম না আরুপাখি,সব ভালোবাসাগুলো কালকের জন্যই তুলে রাখলাম না হয় , একেবারে সবটা উজাড় করে দেব ৷”
আরু মুচকি হেসে আরিশের বুকে মুখ লুকালো লজ্জায়…..
সবসময়ের মতো আজকেও আরু বলল,,,,,
__” কেন বারবার এভাবে আমাকে লজ্জা দেন বলুন তো !”
__”আমার বউটা লজ্জাও পায় বুঝি, আগে তো জানা ছিল না ৷”

__” ধ্যাত !”( আরিশের বুকে কিল মেরে ৷)

আরিশ মুচকি হেসে আরূকে নিজের সাথে জাপটে ধরল ৷

আজ ওদের বিয়ে,,,,,,

কমিউনিটি সেন্টারে অনেকক্ষণ আগেই সানা আর আরু সাজুগুজু করে বসে আছে, এখন শুধু কাজী এসে বিয়ে পড়ানোর অপেক্ষা ৷
আরুর শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছে না আজকে ,বমি বমি ভাব টা না থাকলেও কেমন অস্বস্তি হচ্ছে সারা শরীর জুড়ে ৷
আর এদিকে তো সানা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, আরাভের কাজিনরা সানাকে নানান কথা বলে লজ্জা দিচ্ছে, আরু সানান দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, ৷ ওর ও আজ মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দিনের কথা যেদিন একটা ভুল মানুষের সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল আর আরিশ কিভাবে আরুকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নিয়েছিল ৷
(সবই আল্লাহর ইচ্ছা,তিনি সবাইকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেন আর আমাদেরকে একইসঙ্গে পৃথিবীতে পাঠান , তাই বৃথা আলাদাভাবে কাউকে পছন্দ করা বা ভালোবেসে একটা সম্পর্কে জড়িত হয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়াটা ভুল ৷ লেখিকার একান্ত মতামত আর সেটাই বিশ্বাস করি ৷)

সানা লেহেঙ্গা পড়েছে তবে আরু লেহেঙ্গা পরেনি শাড়িই পড়েছে কারণ আরিশ ওকে শাড়িতেই দেখতে চেয়েছে , হাত ভর্তি চুড়ি, গয়না , মুখের ভারী মেকআপ আর সম্পূর্ণ লাল বেনারসীতে আরিশের মায়াবতী লাগছে ৷

কিছুক্ষণ পর কাজী এসে বিয়ে পড়িয়ে চলে গেলেন , সানা-আরাভের বিয়ে সম্পন্ন হলো তার সঙ্গে আরু আর আরিশ দ্বিতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলো , কতজনের ই বা এমন সৌভাগ্য হয় নিজের প্রিয় মানুষটাকে বারবার নিজের করে পাওয়ার , সে ক্ষেত্রে আরু হয়তো খুবই ভাগ্যবতী ৷
মাঝখানে একটা পর্দা রেখে আরিশ আর আরুশিকে বসানো হলো , আরোশী সানা আর আরাভের-আরিশকে বসানো হলো সামনাসামনি তবে মাঝখানে রয়েছে একটা পর্দা , সামান্য কয়েক ইঞ্চি দূরত্বের মধ্যে তবুও ভালোবাসাগুলো তা ভেদ করে একে অপরের সঙ্গে প্রকাশ পাচ্ছে ৷ হয়তো ভালোবাসাটা এমনই , চাইলেও কেউ আটকে রাখতে পারেনা ৷
আয়না দিয়ে আরিশ আরুর মুখটা দেখছে, এতক্ষণ ধরে এই সময়টারই অপেক্ষায় ছিল আরিশ ৷ যেমনটা ও কল্পনা করেছিল তার থেকেও হাজারগুণ বেশি সুন্দর লাগছে আরুশিকে…..
আয়নাতে আরু আরিশকে দেখছে তবে মাঝে মাঝে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচ্ছে যেন প্রথমবার দুজন দুজনকে দেখছে সেরকমই একটা অনুভূতি কাজ করছে ওদের দুজনের মধ্যে…..

সানার কে আরাভের পরিবারের সবাই নিয়ে চলে গেছে , যাওয়ার সময় প্রচুর কান্নাকাটি করেছে ও, যতই হোক বাবা-মা কে ছেড়ে থাকা একটা সন্তান এর পক্ষে খুবই কষ্টকর ৷
তবে তারা সকলেই নিশ্চিন্ত যে সানার হাতটা তারা সঠিক মানুষের হাতে ধরিয়ে দিতে পেরেছেন ৷

বাসর ঘরে বসে আছে আরু তবে আজকে আর সেই প্রথম দিনের মতো ভয় লাগা কাজ করছে না, প্রথম দিন যেমনটি ছিল তবে আজকের অনুভূতিতে তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা , তখন মানুষটার প্রতি ভয় থাকলেও এখন মানুষটার প্রতি হাজারো ভালোবাসা কাজ করছে…..
বাসর ঘরটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যেমনটা আরিশ আর আরু দুজনেই চেয়েছিল, বিছানাটা সম্পূর্ণ ফুলের সজ্জায় সজ্জিত , অবশ্যই তা গোলাপ ফুলের কারণ গোলাপ আরুর ভীষণ প্রিয় ৷
সমগ্র ঘরজুড়ে এমন একটা ভালোবাসা ময় অনুভুতি কাজ করছে,আর বিছানার মাঝখানে বসে আরু অপেক্ষা করছে আরিসের জন্য…
কিছুক্ষণ পর আরুর প্রতীক্ষার অবসান ঘটে আরিস রুমে আসলো, আরু তাড়াতাড়ি করে উঠে গিয়ে আরিশের পায়ে সালাম করতে গেলেই আরিশ আরুকে বাধা দিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল ৷
তোমার স্থান আমার পায়ে নয় আরুপাখি আমার বুকে ,এটা কবে বুঝবে তুমি ! কদিন পরে বাবুর মা হবে আর এখনো বুঝতে শিখলে না এগুলো, বলে আরুশির নাকে হালকা করে ঠোঁট ছোঁয়ালো আরিস ৷

আরু নেশাগ্রস্থ চাহনিতে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__”ভালোবাসি অনেক, খুব বেশি ভালোবাসি আপনাকে, আপনার বুকের মাঝেই সারা জীবন থাকতে চাই , এই স্থানটাই যে আমার কাছ থেকে সব থেকে নিরাপদ বলে মনে হয় , সারা জীবন এভাবেই আমার পাশে থাকবেন আর আপনার হৃদয়ে স্থান টা যেন সারাজীবন অক্ষুন্ন থাকে আমার জন্য ৷”

তবে এই হৃদয় এখন কি শুধুই তুমি ? তুমি ছাড়াও যে আরো একজন আছে আরুপাখি ৷

কথাটা শুনে আরুর ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল, তারপর কৌতুহল নিয়ে বলল:কে সে?

আমি তোমার আর আমার ছোট্ট আরুপাখির কথা বলছি, যে তোমার মাঝেই তার অস্তিত্বকে বহন করছে ৷
শাড়ি ভেদ করে হাতটা আরুর পেটে রাখতেই আরুর শরীরটা কেপে উঠলো ৷
আরিসের স্পর্শে যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছে আরুশি, চাইলেও মানুষটাকে ও আজ আটকাবে না ৷

আরিশ আরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে নেশাগ্রস্থ কন্ঠে বলে উঠলো:
__” আজ তুমি না চাইলে সমস্ত ভালোবাসা এনে দেবো তোমার কাছে তুমি চাইলেও না করতে পারবে না আরুপাখি ৷”
কথাটা শোনা মাত্রই আরু চোখ দুটো বন্ধ করে আরিশের পাঞ্জাবির কলার টা শক্ত করে চেপে ধরল,আরিশ মুচকি হসে আরুকে নিজের কাছে টেনে নিল ৷

চোখটা বন্ধ করা অবস্থায় মাঝে মাঝে ছোট ছোট দুটো চোখ কয়েকবার পিটপিট করে তাকিয়ে দেখেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলছে অরি, দৃশ্যটা এতক্ষণ আরুর নজরে না পড়লেও হঠাৎ চোখে পড়ল ওর ৷
__”অরি মামনি তুমি এখনো ঘুমাওনি? কখন থেকে আমি তোমাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছি তবুও কেন ঘুমাচ্ছো না , তুমি দুপুরেও তো ঘুমাওনি , আর দেখোতো এখন কটা বাজে !”
__”11:58 মাম্মাম ৷”
আরু আরির কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, ওর মেয়েটাকে কে ঘড়ি দেখাতে শেখিয়েছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না তাছাড়া ও নিজেও তো শেখায়নি ঘড়ি দেখাতে, তাহলে ও কি করে শিখল ?
__” আম্মু তুমি কি করে ঘড়ি দেখা শিখলে?আমি তো শেখাইনি ৷”
আরিশ পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে রুমের ভিতর ঢুকলো তারপর অরির কাছে গিয়ে বিছানা থেকে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,,,,,
__” আমি শিখিয়েছি আমার অরি মামনি কে ঘড়ি দেখানো, কেন তোমার কোন সমস্যা আরুপাখি! “চোখ দুটো ছোট ছোট করে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে ৷

আরিসের কথা শুনে আরু আর কিছু বললনা ,ওখান থেকে উঠতে গেলেই আরিশ আরুর হাতটা ধরে ফেলল ৷

আরিশ হাতটা ধরতেই আরু আরিশের দিকে ঘুরল, আরিশ প্রশ্ন করল,,,,
__” কোথায় যাচ্ছো আরুপাখি?”

__”কোথাও না ৷”

হঠাৎ করে অরি চেঁচিয়ে উঠে বলল,,,,
__” পাপা দেখো বারোটা বাজে ৷”

অরির কথা শুনে আরিস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিই বারোটা বাজে ,তারপর অরির দিকে একবার তাকিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,
__” হ্যাপি 3rd ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি আরুপাখি ৷”

আরু যে এটা শুনে অবাক হয়ে গেল ঠিক তেমনটা নয় , ও ভেবেছিল আরিসের হয়তো ব্যাপারটা মনে নেই তাই সময়টা পার করার জন্যই ব্যালকনির দিকে যাচ্ছিল ৷
অরিকে কোলে নিয়েই আরিশ আরুকে ওর কাছে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল…..
অরি ওদের দুজনের কান্ড দেখে খিলখিল করে হাসছে ৷ দু বছর বয়সী বাচ্চা মেয়েটা ভালোবাসা জিনিসটা ঠিক কি তা বুঝতে শিখেছে নিজের বাবা মা কে দেখে, ওর পুরো নাম আরিশফা , ভালবেসে সবাই ছোট করে অরি বলেই ডাকে….
ঘড়ি দেখাটা আরিশ ই অরি কে শিখিয়েছে যাতে বারোটা বাজলেই অরিও আরুকে উইশ করতে পারে ৷ অরির তো উত্তেজনার শেষ ছিল না যখন জানতে পারল যে ওর মাম্মাম আর পাপার বিবাহ বার্ষিকের কথাটা ৷ বিবাহ বার্ষিকী জিনিসটা ঠিক কি তা অরির ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ধারনায় না থাকলেও এটা যে কোন একটা বিশেষ দিন ওর জন্মদিনের মতোই তা ওর মনে গেঁথে গিয়েছিলো তা নিয়ে ওর এত উত্তেজনা আর কৌতুহল ছিল ৷
অরি আরিশের কোল থেকে নেমে গেল ৷
আরিস অরির দিকে তাকিয়ে বলল :
__”কি হলো মাম্মাম ?”

__”আজ তোমার আর মাম্মাম এর ডে তাই তুমি রোজ মাম্মামের কপালে আর গালে যেভাবে কিসি দিয়ে আদর করো আজকেও করবে আমি জানি আর আমি দেখে নিলে আমার বুঝি লজ্জা করে না !”
বলে ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে নিল লজ্জাই ৷

আরিশ আর আরু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হেসে ফেললো তা দেখে অরি একটু ভাব নিয়ে বলল,,,,
__” জানি তো এখন আমার কথা শুনে হাসি পাবেই, তার জন্যই তোমাদের দুজনের মাঝখানে এখন থাকতে চাইছি না বাপু , আমি এখন সানা আন্টির ঘরে গেলাম ওখানে হৃদয় ভাইয়া একা একা আছে, আমিও ওর সাথেই ঘুমাবো ,বলে গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল , যাওয়ার আগে অল দ্যা বেস্ট জানালো দুজনকেই ৷

আরু তো ওর মেয়ের কান্ড দেখে হতভম্ব ৷

আরিশ মুচকি হেসে ওর দিকে তাকাল, তাকিয়ে আরুর চোখের পাতাতে ভালোবাসার পরশ একে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের পেন্ডেন্ট বার করে আরুর গলায় পরিয়ে দিল ৷

আরুর চোখ দুটো ছলছল করছে আজ , দেখতে দেখতে তিন বছরের ভালোবাসার দীর্ঘ সময় পার করলো ওরা, এভাবেই আমৃত্যু পর্যন্ত চলবে ওদের ভালোবাসা , আর বারবারই আরু আর আরিশের ভালোবাসা আর আরিসে ভালোবাসা গভীর হবে ৷

আরিশ আরুর কোমর ধরে নিজের কাছে এনে বললো,,,,
__” আমি তোমাতেই আসক্ত ছিলাম আজও আছি আর আজীবন থাকবো আরুপাখি ৷”
__”আমিও ভালোবাসি , খুব বেশি ভালোবাসি ৷”

“#তোমার_নেশায়_আসক্ত ৷”

___সমাপ্ত___