আজকে আরূ-আরিশ, সানা-আরাভের গায়ে হলুদ একসঙ্গে , আজকে ওদের এঙ্গেজমেন্ট হবে….
সারা বাড়ি ফাঁকা লোকজন নেই কারণ বিয়ের সমস্ত টা কমিউনিটি সেন্টারেই হবে তাই সেখানে লোকজনের ভর্তি, আলাদাভাবে আর পার্লারে যায়নি ওরা , সেখান থেকে লোক আনা হয়েছে ওদের কে সাজানোর জন্য কারণ এই সময়ে আরূর এতটা ধকল নেওয়া ঠিক হবে না বলে সবকিছু বাড়িতেই ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
তবে আরূর বেশ কেমন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে কারণ সানার আরাভের প্রথমবার বিয়ে হচ্ছে আর ওদের তো এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার , যদিওবা প্রথম বিয়েটার কথা ঠিকঠাক ভাবে কেউই জানে না সেই কারণে আরিশ আবার নতুনভাবে চাইছে সব কিছুটা ৷ কথাটা ভাবতেই পরমুহূর্তে আরূর মনে পড়ে গেল আরিশের বলা কথাটা যে আমি যেমন কাউকে পরোয়া করি না তুমিও কাউকে করবেনা ৷
হঠাৎ শানার কন্ঠে আরূর ভাবনা ভেঙে গেল,,,,
__”কিরে তোর ফোনটা এতক্ষণ ধরে বেজেই চলেছে ধরছিস না কেন?কি এত ভাবছিস ?ওহ বুঝেছি আমার ভাইয়ের কথা ভাবছিস !
আরু সানার কান ধরে বলল,,,,
__”আরাভ ভাইয়ার কথা তুমি যেন ভাবোনা! আমি ভাবলেই দোষ তাই না!”
সানা দাত বার করে হেসে বলল: ফোনটা ধর, দেরি হয়ে গেলে কিন্তু আবার বকাবকি করবে ৷
ফোনের রিংটোন টা যে আরূশি শুনতে পাইনি তা নয় তবে আরিশের ভাবনা ভেঙ্গে অন্য কিছু যেন ভাবতেই আর ইচ্ছা করছিল না ওর ৷
তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরতে অপর পাশ থেকে আরিশ বলে উঠলো,,,,
__” আবার নতুন করে আমাদের বিয়ে হবে আরুপাখি, নতুন করে হবে তোমার আর আমার হলুদ যেটা প্রথমবার লুকিয়ে লুকিয়ে হয়েছে,আমার হলুদের স্পর্শ পেলেও এইবার সকলের সামনে তোমাকে হলুদ ছোঁয়াবো তবে তুমি তো জানো যে আমি কারো পরোয়া করি না তাই যেকোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থেকো ৷
আরিশ কি করতে চলেছে আরূ তা বুঝতে পারল ভেবে মুচকি হাসি দিল,,,
__” আপনি কোথায়?”
এইতো আরাভের বাসা থেকে ওকে পিক করতে গিয়েছিলাম এরপর কমিউনিটি সেন্টারে যাচ্ছি ৷ আরাভের বাড়ির লোক সবাই চলে গেছে ৷
আর সাবধানে এসো কিন্তু আমার বেবিটার ও খেয়াল রেখো , আমি আম্মুর সঙ্গে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব দেরি হলে কিন্তু পানিশমেন্ট হাই হয়ে যাবে বলে দিলাম ৷
আরোশী মুখের হাসির রেখা টেনে বললো,,,,,
__” আমার কাছে ছবি চাইলেন না তো? আপনার কী আমাকে দেখতে ইচ্ছা করছে না যে হলুদের পোশাকে আমাকে কেমন লাগছে !”
আরিশ মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলতে লাগলো,,,, __”নতুন ভাবে নতুন সাজে যখন তোমাকে দেখব তখন সামনাসামনি থেকেই দেখব মোবাইলের স্ক্রিনে নয় ৷
আচ্ছা আমি এখন ড্রাইভ করছি রাখছি এখন,নিজের আর আমার বেবিটার খেয়াল রেখো আর তাড়াতাড়ি আসো আমার আর তর সইছে না তোমাকে দেখার জন্য…..”
ফোনটা কেটে দিলো আরিশ,
__”ভাবিকে খুব ভালবাসিস তাই না?”
আরিশ আরাভের কথার পরিবর্তে বরাবরের মতোই ওর চিরচেনা হাসিটা মুখে ফুটিয়ে তুলল,,,, হাসিটা অনেক কিছুর প্রকাশ করে তাই আর কিছু বলল না
হয়তো আরাভ আরিশের এই মানেটা খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছে ৷
কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়ি থামতেই আরূ আর সানা দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে গেল….
চারিদিকে গান বাজছে, বিয়ে বাড়ির পরিবেশটা বেশ ভালোই জমেছে ৷
দূরে স্টেজে আরূর দুই পরিবার তার সঙ্গে আফজাল সাহেব দাঁড়িয়ে রয়েছেন ৷
আরিশ আর আরাভ ধীর পায়ে ওদের দুজনের দিকে এগিয়ে গেল , আরূর চোখটা ছলছল করছে , ভালোবাসার পুরনো স্মৃতিগুলোকে রঙিন করতে চাইলে হয়তো ভালোবাসাটা হয়তো দ্বিগুন হয়ে যায় যেমনটা আজকে আরূ অনুভব করছে ৷
তবে আজকের দিনে চোখের জল নয় মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে চাইছে আরূ, তাই ঝটপট করে চোখের জলটা মুছে নিল নিয়ে আরিশের দিকে হাসিমুখে তাকালো,,,,,,
আরিশ একনজরে আরূকে দেখেই যাচ্ছে , চোখের পলক টাও পড়ছেনা যেন , এত দিনের অপেক্ষায় ছিল আরিশ ৷ আজ যেন চোখটা আরূকে দেখে সার্থক , হলুদ শাড়িতে , হলুদ ফুলের মালায় পুরো হলুদ পরী লাগছে আরুশিকে, এমন ভাবে কখনো দেখা হয়ে ওঠেনি আরূশিকে, আরিশের চোখেও জল চলে আসার উপক্রম তবুও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে রাখছে ও ৷আজ ওদের ভালবাসার পূর্ণতার প্রথম ধাপ….
হঠাৎ করে আরিশ আরূকে কোলে তুলে নীয়ে স্টেজের দিকে হাটতে লাগল, আরো তাড়াতাড়ি করে আরিশের গলাটা জড়িয়ে নিল, আরিশ ওকে কখনো আঘাত পেতে দেবে না ৷ আরু অবাক হলো না আরিশের কাজে কারণ ও প্রথম থেকেই এর জন্য প্রস্তুত ছিল, আরাভও সানাকে কোলে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো , এতদিনে আরাভ ও রোমান্টিক হয়ে গেছে৷
সবার সামনে আরুকে নিয়ে গিয়ে আরিশ নামিয়ে দিল আরুকে ৷ সবাই মুচকি মুচকি হাসছে, অন্য সময় হলে আরু হয়তো লজ্জা পেত কিন্তু আজকে ওর মধ্যে কোনো জড়তা বা কোন আরষ্টতা কোন কিছুই নেই অত্যন্ত স্বাভাবিক আছে, কিন্তু এদিকে সানা লজ্জায় শেষ ৷
আরাভের ঐ খানিকটা হলেও লজ্জা লাগছে না পেরে মুচকি মুচকি হাঁসছে ৷
আরুর পরিবারের সবাই এগিয়ে এলো ওদের দিকে,
আরুর আম্মু ,,,,,
__”এবার তাহলে অনুষ্ঠানটি শুরু করা যাক ৷”
রেজোয়ানা আহমেদ,,,,
__” এইবার শুরু করলেই ভালো তাছাড়া আরূ মার শরীরটা যদি খারাপ হয় পরে! , তার দিকে একটু নজর রাখতে হবে ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল ,,,
__”চিন্তা করবে না যতক্ষণ আমি ওর সাথে আছি ততক্ষনে ওর কিছু হতে দিব না ৷”
আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে হয়তো ভালো হবে কারণ সানা আর আরাভের ইংগেজমেন্ট যদি এখন হয় তাহলে আই থিঙ্ক বেটার হবে ৷
আফজাল সাহেব বললেন,,,,,
__” এখনই হয়ে যাক তাহলে ৷”
সানার আর আরাভের হাতে দুটো আংটি দেওয়া হল, ওরা দুজন দুজনকে পরিয়ে দিল ৷ আরাভের পরিবারের সকলেই খুশি , সানাকে ওনার খুব পছন্দ করতেন প্রথম থেকে ৷
সানা আর আরাভ স্টেজে বসে আছে, আরুশি সেদিকে যেতে গেলে আরিশার খপ করে ওর হাত ধরে ফেললো ৷ আরু আরিশের দিকে ঘুরে তাকালো….
চোখের ইশারা করে আরিশ কে জিজ্ঞাসা করলো যে কি হয়েছে?
আরিশ এক ঝটকায় আরুর হাত টেনে ওর সাথে মিশিয়ে নিল, আশেপাশে কি আছে না আছে কোন কিছুই জানো ওর ধরাছোঁয়ার মধ্যে পড়ছে না ৷
আরুশি এবার বেশ লজ্জা পাচ্ছে ৷
আরিশ আরুর থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে বলল,,,, __”লজ্জা পাচ্ছ? বলেছিলাম না একদম লজ্জা পাবে না ৷”
আরূ আস্তে আস্তে বলল,,,,
__” কি হচ্ছে কি ছাড়ুন এখানে আশেপাশে সবাই দেখছে ,আর ক্যামেরাতেও রেকর্ড হচ্ছে ৷”
আরিশ এবার আরূকে বলল,,,,
__” যা হচ্ছে হতে দাও ৷”
বলে নিজের পকেট থেকে আংটি বার করে আরূর হাতে পরিয়ে দিল , তারপর ওর হাতে একটা চুমু দিল ৷
চারিদিকে সবাই হাততালি দিচ্ছে ৷
আরু তো ভাবতেই পারিনি যে আরিশ এমনটা করবে৷
__”আপনি কিভাবে?”
__”হমম আমি, বলে আরএকটা আংটি আরূর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ,
_””” এটা তুমি আমাকে পরিয়ে দাও৷”
আরো খুশি হয়ে আরিশের হাতে আংটিটা পরিয়ে দিল….
আংটি বদল শেষে আরআশ ওকে জড়িয়ে ধরল….
চারিপাশে সবার চোখেই জল ওদের ভালোবাসা দেখে….
দুজনকে স্টেজে বসানো হয়েছে…..
একে একে সবাই আরাভ আর সানাকে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে, আরিশকে হলুদ ছোঁয়াতে আসলেই আরিস অনিকা খানকে থামিয়ে দিলেন ৷
__”আম্মু ওয়েট ,বলে বাটি থেকে সামান্য হলুদ তুলে নিয়ে নিজের গালে লাগিয়ে নিলো তারপর আরুর মুখটা ধরে আরুর মুখে নিজের মুখটা লাগিয়ে ও আরুর মুখে হলুদ মাখিয়ে দিল, আরূশির কপালে ভালবাসার পরশ একে দিল ৷ ভালোবাসা গুলো যেন নতুন করে রঙিন হয়ে যাচ্ছে ৷
__”নাও এবার তুমি হলুদ দাও ৷”
একে একে সবাই হলুদ দিচ্ছে,,,,,
চারিদিকে গান বাজছে, আরাভ আর সানার হাত ধরে নিয়ে গেল আরিশ আর আরাভের কাজিনরা , নাচ করেছে সবাই আর আরু আর আরিশ দুজনেই বসে বসে দেখছে,ওরা গেলে ভিড়ের মধ্যে আরুর সমস্যা হতে পারে সেই কারণে ৷
আরু আরিশের কানে কানে বলল,,,
__” আপনি যে আমাদের এংগেজমেন্টের করবেন বলেন নিতো?”
বিছানা থেকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আরূ, পা টা বারবার দোলাচ্ছে অস্থিরতায় ৷ আরিশকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও ভাল লাগছে না ওর, সেই কখন থেকে একা একা ঘরের মাঝখানে বসে আছে ৷ অস্থিরতায় ঘড়িটার দিকে তাকাতেও এখন বিরক্তি লাগছে তবুও তাকাচ্ছে ঘড়িটার দিকে না পেরে ৷ সময়টাও আজকে যেন ওর সামনে বিরাট প্রাচীর গড়ে তুলেছে হয়তো ওর অপেক্ষার দীর্ঘ পরীক্ষা নিচ্ছে….
ঘড়ির ছোট কাঁটাটা এখন দশের ঘরে আর বড় কাটাটা নয়ের ঘরে , অর্থাত 10.45 বাজে এখন ,এই মুহূর্তে আরুর ইচ্ছা করছে ঘড়ির কাঁটাটাকে নিজের ইচ্ছেমত চালাতে যাতে সময় টা ওর হিসাবেই চলে কিন্তু এই ঘড়িটাকৈ থামিয়ে দিতে পারলেও জীবনের বাস্তবতার ঘড়িটাকে তো আর পাল্টাতে পারবে না কোনভাবেই ৷ পারলে আরু এবার কেঁদেই ফেলে,
এমনিতেই সকালথেকে কিছু খাইনি আরিশ ,আর ওর ও মন টানছে না যে আরিশকে ছাড়া কিছু করতে এমনকি কিছু খেতেও , না জানি মানুষটা সারাদিন কিছু খেয়েছে কি ! আরিশ মুখে যতই বলুক অফিসে গিয়ে লাঞ্চ করে নেবে কিন্তু আরু বেশ ভালোই জানে যে একবার কাজের মধ্যে ঢুকে গেলে আরিশের কোন দিকে খেয়াল থাকে না ৷ আরু এখন নিজেকেই নিজে বকা দিচ্ছে এটা ভেবে যে ও নিজে যদি একটু নিজের প্রতি যত্নশীল হতো তাহলে হয়তো আজকে ওকে নিয়ে এতটা ধকল আরিশকে সহ্য করতে হতো না , এগুলো ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসে আরুর ৷ আজ ওর জন্যই মানুষটা এত কষ্ট করছে ৷
আপনা আপনিই চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে তা চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়তেই তাড়াতাড়ি করে জামার হাতা দিয়ে মুছে নিল আরু , এভাবে আর চলবে না আরিশকে ফোন করতেই হবে এবার ৷
তাড়াতাড়ি করে আরিশের এর নাম্বারে ফোন করলো….
ফোনটা কানে ধরে আছে আরু , বেশ কয়েকবার রিং হচ্ছে তবে ওপাশ থেকে রিসিভ করছে না আরিশ , শেষ মুহূর্তে একরাশ রাগ আর হতাশা নিয়ে ফোনটা যখনই কাটতে যাবে তখনই আরিশ ক্লান্তিমাখা কন্ঠে বলে উঠলো ,,,,,,
__” এইতো আমি আসছি আরূপাখি, আর পাঁচ মিনিট লাগবে ৷”
আরু আরিশের কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলেন ৷ আরিশ ওকে মিথ্যা কথা বলেনি,রাস্তায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে আরূ বুঝতে পেরেছে যে আরিশ বাড়িতে ফিরছে ৷ আরিশের ক্লান্তিমাখা কন্ঠ শুনে আরুর ভিতরে যেন ছারখার হয়ে গেল , আরিশের সঙ্গে কথা বলার অবস্থায় ছিল না ও , ফোনটা কেটেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আরু , প্রিয় মানুষের কষ্টে আজ ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছে খুব , আজ ও বুঝতে পারছে তাহলে ওর সামান্য কিছু হলে আরিশ কতটা কষ্ট পায় ৷ তাহলে ভালোবাসা বুঝি এমনই হয় !
কিছুক্ষণ পর গাড়ির আওয়াজ শুনেই দৌড়ে ছুটে ব্যালকনিতে চলে গেল আরু , ডাক্তার ওকে বারণ করে দিয়েছে যাতে কোনরকম লাফালাফি বা দৌড়াদৌড়ি না করে তবুও এই মুহূর্তে যেন এই সমস্ত কিছুই উপেক্ষিত ওর কাছে, কোনো বারণ শুনবে না এখন ৷
আরিশকে এক পলক দেখে রুমের ভিতর চলে এলো৷
মনে মনে ভাবছে,,,,,,
__” কাঁদবেনা আর কারণ আমি কাঁদলে উনি আমার থেকে আরো বেশি কষ্ট পায়….”
আরূ রুমে বসে আছে তখনই চিরচেনা মানুষটা ওর কাছে এগিয়ে আসতেই বুকের হৃদস্পন্দন টা যেন বেড়ে গেল, কয়েক ঘণ্টা আগে দুজনের মধ্যে দেখা হলেও এখন যেন মনে হচ্ছে যে বহু যুগ পরে আবার ওরা দেখা পেয়েছে নিজেদের ৷
আরিশ দেখল আরু অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে, ধীরে ধীরে এগিয়ে আরুর পাশে গিয়ে বসলো,,,,,
__” তুমি এখনো জেগে আছো আরুপাখি? তোমাকে না আমি বললাম যে আমার ফিরতে লেট হবে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো ৷
তাও তুমি জেগে আছো ?”
খানিকটা ধমকের সুরেই বললো আরিশ ৷
আরিশের কথা শুনে আরু আরিশের দিকে তাকালো গভীর দৃষ্টিতে,,,,,,
আরুর চোখের দিকে তাকাতেই আরিশের বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল, চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, ভয়ঙ্কর কষ্টে মানুষ যেমনটা জর্জরিত হয় তেমনিই রাঙা সেই চোখ দুটো….
আরিশ আর কিছু বলার সাহস পেলো না , বাকরুদ্ধ এই মুহূর্তে ৷ ও কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা , আর আসল কারণটাই ব কি?
আরোশী দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,,,,,,
__” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন ৷”
বলে উঠে চলে গেল ৷
আরিশ কিছুই বুঝতে পারছে না যে কি হয়েছে আরুর ৷ মনটা ওর বড্ড আনচান করছে , সারাদিন এত ধকল এরপর আবার এতকিছু হওয়াতৈ চিন্তাটা যেন আরও দ্বিগুন হয়ে গেল ৷
আরুশি নিচে গেছে দেখে আরিশ আর কোনরকম সময় নষ্ট না করে জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল ৷
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের সমস্ত ক্লান্তি দূর করছে আরিশ আর মনে মনে ভাবছে,,,,
” তাহলে আরুপাখিকে কি কম সময় দিয়ে ফেলছি? ঠিকঠাকই সময় দিয়ে উঠে পড়তে পারছি না যখন এই মুহূর্তে ওর আমাকেই সব থেকে বেশি প্রয়োজন ৷”
সমস্ত কিছুই আজ এলোমেলো আরিশের কাছে আরুশির চোখ দুটো দেখে…..
আরু ঝটপট করে নিচে গিয়ে খাবারগুলো গরম করে নিল ৷ ফ্রিজ থেকে মাছ আর চিকেনটা বের করে গরম করে নিল তারপর গরম করে রাখা বাটিগুলো ট্রে তে বসিয়ে নিয়ে ঘরের দিকে রওনা দিল ৷ খাবারগুলো সামান্য বেশি করেই নিয়েছে কারন ও নিজেও কিছু খাইনি ৷ অনিকা খান অনেকবার জোর করা সত্বেও ওকে খাইয়ে উঠতে পারেনি , একটাই কথা আরিস না আসলে ও খাবেনা….
রুমের দিকে পা বাড়াতেই মনে পড়লে সিংগারার কথাটা যেটা মামনি সন্ধ্যাবেলা বানিয়েছিল ওর জন্য৷ সারাদিনে কিছু না খাওয়ার পর সিঙ্গারা খেলে এসিডিটি হয়ে যেতে পারে তা জেনেও আরোশী সিঙ্গারা টাও নিয়ে গেল কারণ মামনি অত্যান্ত যত্ন আর ভালোবেসে ওর জন্য বানিয়েছে, না খেলে তাকে অপমান করা হয় ৷ তারাও যেমন ওদের কথা ভাবে তাই আরুর ও কর্তব্য তাদের কথা ভাবা ৷
শাওয়ার শেষে আরিশ দেখল খাটের উপরে ট্রেতে করে অনেক খাবার সাজানো রয়েছে, আর আরুশি বোতল থেকে গ্লাসে জল ঢালছে…..
ভেজা চুল গুলোকে হাত দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে তোয়ালেটা দিয়ে আর একবার সমস্ত শরীর টা মুছে নিয়ে সোফার ওপরে রাখা শার্ট টা পড়ে নিল….
ধীর পায়ে এগিয়ে আরুশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল আরিশ ৷
অদ্ভুত এক সুগন্ধ ভেসে আসছে আরিশের শরীর থেকে আর যাতে আরু ক্রমাগত পাগল হয়ে যাচ্ছে, মানুষটি সত্যিই ওকে পাগল করে দেয় ৷ এতটা কাছে না আসলেই কি নয় !
যদিও এটা আরিশের ভালোবাসা ৷ দিন শেষে নিজের প্রাপ্য ভালোবাসাটুকু নিজের করে নিতে ভোলেনা আরিশ ৷ হাজার ব্যস্ততার মাঝেও যে আরুকে ভালোবাসার দায়িত্ব ওর ৷
আরুশি নিজে থেকে আর আরিশকে ছড়ালো না , দিনশেষে এটুকু ভালোবাসা ওর নিজের জন্যও খুব দরকার ৷
__” বিয়ে করবো আবার আরুপাখি, আবার গড়ে তুলব নতুন করে সংসার একরাশ ভালোবাসা দিয়ে ৷”
আরু কোন উত্তর দিল না আরিসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আরিশ কে বিছানায় বসতে বলল,,,,
আরিশ বিছানায় বসতেই আরু বাটি থেকে একটু তরকারি নিয়ে ভাত মেখে আরিশের মুখের সামনে ধরল ৷
__”নিন হা করুন ৷”
__” তুমি খেয়েছ আরুপাখি?”
__” আমি খেলাম কি না খেলাম সেটা বড় কথা নয়, আমি আপনাকে এখন খেতে বলেছি তো আপনি খাবেন ৷”
আরিশ এবার রেগে গেল ,,,, ধমকের সুরে বলল :
__”তারমানে তুমি খাওনি তাইতো? এতটুকু বোঝেনা যে তুমি আর একা না তোমার সাথে আর একটা প্রান ও বেড়ে উঠছে তাই তুমি কিছু না খেলে তুমি যেমন কষ্ট পাবে সে ও সমানভাবে কষ্ট পাবে , এতটা কেয়ারলেস কেন তুমি !”
আরুশি এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বেয় ৷
আরিশ তাড়াতাড়ি করে আরুর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল ৷ওর নিজের চোখের কোনেও জল ৷ আজকে দুজনের মনের মাঝেই দীর্ঘ কালো মেঘ ৷
আরুশির কপালে ভালবাসার পরশ একে আরিশ জিজ্ঞাসা করল:
__” কি হয়েছে আরুপাখি কাঁদছো কেন তুমি? তুমি কি জানো না যে তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় ৷”
আরু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল :
__” আপনি নিজের কখনো কোনো যত্ন নেন না , আপনি নিজেও তো দুপুরে লাঞ্চ করেননি আর আপনি আমাকে বকছেন ৷ সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে দিনশেষে আপনি নিজেই ভালো নেই সেটা কেন মানতে চান না আপনি ? কেন সবাইকে দেখান যে আপনি হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও ভালো আছেন যা আপনি নেই ৷ কি হবে এত কাজ করে ? দিনরাত এক করে সামান্য কিছু টাকার জন্য অফিসে পড়ে থাকার কি খুব দরকার ? আমাদের তো ভালোভাবেই দিনটা চলে যাচ্ছে তাই না ! আর আমার খুব কষ্ট হয় আপনাকে এত স্ট্রাগল করতে দেখে , আমার নিজের ও ভালো লাগেনা ৷”
আরিশ আরুশিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগলো ,,,
__’ বুঝেছি আমার বউটা খুব কষ্ট পেয়েছে , আসলে তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয় , আমার সত্যিই কোন কষ্ট হয়না ৷”
আরুশি এবার রেগে গিয়ে বলল ,,,,,,
__” তাই বুঝি ! তাহলে আমিও ভালোবাসা থেকে কিছু অনুভব করলে তাও বুঝি আজকাল মিথ্যে হয়?”
আরিশ এখানেই থেমে গেল, বুঝতে পারছে যে আরুশির সাথে তর্ক করে লাভ নেই তাই আরুশিকে থামানোর জন্য আরশির ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করে বলল :
__” লেট হবে না কখনো প্রমিস ৷”
__” এটুকুতেই নয়, এটাও বলেন যে ঠিকঠাক নিজের যত্ন নেবেন আর ঠিকঠাক টাইমে লাঞ্চ করবেন ৷”
__” আচ্ছা বাবা সব মেনে চলবো আমি , চলোতো এবার আমাকে খাইয়ে দাও , আমার খুব খিদে পেয়েছে আর পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে ৷”
আরু ফিক করে হেসে দিল আরিশের কথা শুনে, তারপরে আরিশকে সামনে বসিয়ে আরিশকে খাইয়ে দিল,আর তার সাথে নিজেও খেলো….
আরিসের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আরূ, আর মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেনো আজ এক জায়গায় হয়ে ওদের কাছে এসেছে ৷ প্রিয় মানুষটার সাথে একসঙ্গে সুখ অনুভব করা এক অদ্ভুত ভালো লাগা , এভাবে যেন দুজনে শত শত যুগ পার করে দিতে পারে….
আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুকে বলছে,,,,,
__”আরুপাখি আমরা আবার বিয়ে করব ৷ কালকেই আব্বুকে বলবো বিয়ের ডেট ঠিক করার কথা ৷”
আরু চমকে আরিশের দিকে তাকাল,তাকিয়ে বলল :
_”না না তার কোন দরকার নেই এখন আবার নতুন করে কি সব বলছেন পাগল হয়ে গেছেন আপনি?”
আরুশিকে নিচে শুইয়ে দিয়ে আরূশির উপরে উঠে বলল:
__” কেন দরকার নেই হমম ? আলবাত দরকার আছে, তাছাড়া তোমার আমার বিয়েটা ঠিকঠাকভাবে হয়নি তাই আমি চাই আরো বড় করে ধুমধাম করে আমাদের বিয়েটা হোক , তারপরে আমাদের বেবি যখন আসবে তখন তাকেও তো বলতে হবে তাই না যে একবার তা আম্মুকে আমি জোর করে বিয়ে করেছি আর একবার ভালোবেসে ৷”
আরোশী আরিশের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল , লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে , কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ৷
লজ্জায় আরুর গাল দুটো চকচক করছে, আরুশির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিতেই আরিশকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে শক্ত করে ৷
ওদের ভালোবাসাটা কত অদ্ভুত তাইনা ! সারা জীবন যেন এভাবেই সুখে থাকে দুজনে ৷
Suraiya Aayat
চলবে,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:41
#Suraiya_Aayat
আজকে আরিশ আর কলেজে যাইনি কারন আজকে অফিসে অনেক কাজ আছে ওর ৷ তাছড়া এখন থেকে আরুর সম্পূর্ণ খেয়াল ওকে রাখতে হবে তাই একটু বেশি বেশি করে সময় দিতে চাই আরুকে ৷
|
অফিসে,,,,,,
__” আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিল দরকারি ৷”
|
__” তোর দরকারি কথা মানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ,তা তো শুনতে হবেই ,,,,,,,, তা কি কথা মাই সন ৷”
|
__” আরিশ চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথাটা এলিয়ে দিল চেয়ারে ,নিজের ক্লান্তি দূর করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল:
__”আমি আবার বিয়ে করতে চাই বাবা ৷”
|
আফজাল খান মুচকি হাসি দিয়ে বললেন:
__”তা কবে?”
|
আরিশ শান্ত দৄষ্টি নিক্ষেপ করে বলল:
__” খুব তাড়াতাড়ি,,,,,,আমি চাইছি আগামী 23 শে নভেম্বর ৷”
|
আফজাল খান আরিশের কাছ থেকে পুনরায় বিয়ের কথা শুনে অবাক হলেন না কারন উনি যানেন যে ওনার ছেলে এমন কিছু করবে না যাতে আরু কষ্ট পাই ৷
|
__” মুখে চিন্তার রেখা ফেলে আফজাল খান বললেন:
|
__”তাহলে আর বেশি দেরি নেই,এই কদিন পরেই ৷”
|
__”আমি চাই সানার বিয়েটাও আমাদের সাথে হোক ৷”
|
__”আরাভের বাড়ির সবাই কি তাতে একমত হবে?
|
__”আমার আরাভের সাথে কথা হয়েছে ওউ আমার সাথে একমত ,আর তাছাড়া ওর family ও চাইছে যে বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হহহোক, তাই আর দেরি করে লাভ কি!”
|
__” ওদের তো এখোনো এনগেজমেন্ট টাও হয়নি,তাহলে কেমন কি !”
|
__” আমাদের গায়ে হলুদের দিন ই ওদের এনগেজমেন্ট হবে ৷”
|
__” আচ্ছা তবে তাই হোক, আমি ও এতমত ৷”
|
__” আমি তাহলে সবকিছুর এরেনজমেন্ট করছি ,তুমি চিন্তা করোনা ৷”
|
__” তুই থাকতে আমার চিন্তা কিসের !”
|
__” আচ্ছা বাবা আমি এখন তাহলে আসি,আমাকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে, নাহলে আরুপাখি রাগ করবে ৷”
|
__” ভালো করে যত্ন নিস আর যা চাইবে না করবি না ৷”
|
আরিশ মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল ৷
|
|
|
আরূ বসে বসে আচার খাচ্ছে, আমের আচার ,সিজেন পার হয়ে গেছে তাই মুখে যেন বেশি ধরছে আচার টা ৷ আরুর আম্মু বানিয়ে রেখেছিলেন ওর জন্য সেটা দিয়ে গেছেন ৷
|
প্রতিবার আচারে কামড় দিচ্ছে আর চোখ মুখ টেনে ধরেছে আরু আচারটা প্রচন্ড টক তবুও ও খাবেই, মুখে ধরেছে বেশ ৷ আজকাল তো আর কিছুই খেতে পারে না তাই এখন যখন এটা ভালো লাগছে তখন সহজে আচারের বয়মটা রাখছে না ৷
|
আগের দিন আরোশী অভিমান করেছিল দেখে আরিশ আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছে , বেশি বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে ওকে ৷
|
আরিশ রুমে ঢুকতেই ভেবেছিল আরুশিকে দেখতে পাবে কিন্তু আরুশিকে দেখতে না পেয়ে নিচে গেল গিয়ে ওর মাকে জিজ্ঞাসা করল যে আরোশী কোথায়?
|
__”আরে আর বলিস না মেয়েটা সেই কখন থেকে ছাদে বসে আছে ৷”
|
__” এরকম টাইমে ছাদে বসে কি করছে?”
|
আসলে ওর আম্মু আচার বানিয়ে দিয়েছে সেটাই বসে বসে খাচ্ছে ৷ আমিও আর না করিনি , এই সময়ে যেটা মুখে ভালো লাগে সেটাই খাক ৷ সানাও গিয়েছিল,সানাকে জোর করে খাওয়াতে গেছে আচারটা , আর সানা রাগ করে নিচে চলে এসেছে, সানাতো এসব আচার একদমই পছন্দ করেনা ৷”
|
আরিশ আঙ্গুল দিয়ে চুলগুলোকে সামান্য আলতো করে বুলিয়ে বলল :
__”আচ্ছা আমি আসছি ৷”
|
অফিসের পোশাকটাও এখনো চেঞ্জ করেনি আরিস,অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আরুশি কে না দেখতে পেরে মনটা ছটফট করছে এখন ৷
|
তাড়াতাড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠল , তিন ধাপের সিড়ি এক ধাপে পার করেছে ও ব্যস্ততায় ৷
|
ছাদে উঠে সামান্য হাফছেড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরোশী দোলনায় বসে পা দোলাচ্ছে আর আচার খাচ্ছে মনোযোগী হয়ে, কেউ যে সেখানে উপস্থিত সেটা যেন ওর চোখে ধরছেনা ৷
|
আরিস ফেরার সময় আজ আরুশির জন্য শখ করে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি আর একজোড়া নুপূর কিনে এনেছে , অনেক দিনের ইচ্ছা ওর আরুশিকে এগুলো নিজের হাতে করে পরিয়ে দেবে , আর যেহেতু আজ তাড়াতাড়ি অফিস ছুটি হয়েছে তাই অফিস থেকে ফেরার পথে এগুলো কিনে এনেছে রাস্তার একটা দোকান থেকে ৷
|
চুড়িগুলো একটা প্যাকেট ছিল বলে সেটা ঘরে রেখে দিয়েছে কিন্তু নুপুরটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছিল ৷
|
আরিশ ধীরে ধীরে আরূর সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে আরূর পা টাকে নিজের পায়ের উপর রাখল রেখে নূপুরটা পরাতে শুরু করতেই হাতের স্পর্শ পেয়ে আরূ চমকে গেল ৷
এতক্ষণ ধরে দূরের ফ্ল্যাটে ছাদে দুটো পায়রাকে দেখছিল ও, পায়রাগুলো কে দেখে ওর আরাভদের বাড়িতে দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেছিল, সেটা নিয়েই এতক্ষণ গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিল ও ৷
|
আরিশ নুপুরটা পরিয়ে দিচ্ছে যত্নসহকারে ৷
|
আরু আরিশকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল, চমকে বলল,,,,,
__”এটা আপনি কি করছেন! আপনি আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন ? উঠুন !”
|
আরিশ রাগী চোখে আরুর দিকে তাকাল,,,,
|
__”চুপ করে বস যেমনটা আগে বসেছিলে না হলে আজকে তোমার খবর আছে ৷”
|
আরিসের চোখদুটো দেখে আর ওর গলার ভয়েস শুনে আরুর কাজ শেষ , ভয়ে ভয়ে চুপচাপ বসে পড়ল ও ৷ এই মুহূর্তে আরিশকে ওর কাজ থেকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না, ও যা করছে ওকে সেটাই করতে দেওয়া ভালো ৷
|
আরিশ আরুর এক পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়ে আর একটা পা ওর পায়ের উপর রেখে সেটাতো নুপুর টা পরিয়ে দিল, শেষে পায়ের পাতায় আলতো করে চুমু দিল ৷
|
আরিসের স্পর্শ পেয়ে আরুশির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো, সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে ৷
|
আরিশ এবার উঠে আরুশির হাত ধরে ওর কাছে টেনে নিয়ে আসলো আর কোমরটা জড়িয়ে ধরেছে আলতো করে….
কাছে টেনে এনে আরুশির ঠোঁটের কোণে আলতো করে স্পর্শ করে দিল, সেখানে অল্প একটু আচার লেগেছিল সেটা আরিশ খেয়ে নিল ৷
|
আরুশি আরিসের জামার কলারটা জোরে চেপে ধরেছে , চোখ দুটো বন্ধ করে নিল ৷
|
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে দেখল আরুশি চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আরিশ মুচকি মুচকি হাসতে লাগল….
|
আরুশি একটা চোখ খুলে দেখল আরিশ হাসছে তা দেখে ও নিজেও খানিকটা লজ্জায় পড়ে গেল তারপর তাড়াতাড়ি করে আরিশের কাছ থেকে সরে গেল….
|
__” আমার বউটা দেখি লজ্জা পেয়ে গেছে , জানো তো তোমাকে এখন লজ্জা পেতে দেখে পুরো গুলুগুলু লাগছে বলে আরশির গালদুটো টেনে দিল হালকা করে ৷”
|
আরুশি লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে চলে যেতে নিলেই আরিশ আরুর হাতটা ধরে ফেলল,,,,,
|
__”বললেনাতো নুপুর টা কেমন লাগছে!”
|
আরুশি আরিশের কাছে ফিরে এসে ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল ,,,,,,,
__”আপনি ঠিক যেমন নুপুর টাও থেকে ঠিক তেমন…”
|
__”আচ্ছা তাহলে এখন একটু ভালোবাসি ৷”
|
বলে আরুশিকে কোলে তুলে নিল ৷
|
আরুশিকে কোলে করে ঘরে এনে খাটে বসাল…
|
আরুশি দাঁড়িয়ে আরিশের টাই টা খুলে দিতে লাগলো,
|
__”আরুপাখি আজকে বাবাকে বলেছি বিয়ের কথা ৷”
কথাটা শোনামাত্রই আরুশি থেমে গেল , তারমানে আরিশ সত্যিই নতুন করে আবার ওদের বিয়ের প্ল্যান করছে , ও ভেবেছিলাম হয়তো মজা করছে কিন্তু তা আরিশ যে এত সিরিয়াসলি নেব সেটা ও বুঝতে পারেনি ৷”
__”আর ইউ সিরিয়াস?”
__”আমাদের পরশুদিন হলুদ সন্ধা হবে তার সঙ্গে আরাভ আর সানার ও হলুদ একসঙ্গে হবে ৷”
আরু অবাক হয়ে বলল
__”ওদের এঙ্গেজমেন্ট?”
__”সেদিনই হবে৷”
__”ওহ আচ্ছা , তা না হয় ঠিক আছে কিন্তু আমাদের ভিয়েটা আবার না করলেই কি নয় !”
আরিশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে,,,,,
__” কেন তোমার কি কোন সমস্যা আছে?”
আরু কিন্তু কিন্তু করে বলল,,,,,
__” ঠিক তা নয় মানে একবার বিয়ে হয়ে গেছে তারপরে আবার একবার বিয়ে করাটা কেমন একটা দেখায় না !”
__”তুমি তো জানো আই ডোন্ট কেয়ার টু এনিওয়ান, কে কী ভাবল না ভাবল আমার তাতে কোনো যায় আসে না ৷ কখনও ভাবিনি’ আর কখনো ভাববোও না, আই হোপ তুমিও ঠিক তেমন ভাবেই চলবে ৷”
আরূর খবর শুনেই রেজোয়ানা আহমেদ তড়িঘড়ি করে ছুটে এসেছেন , প্রথমে তিনি জানতেন না যে আরুর ঠিক কি হয়েছে , তারপর যখন জানলেন যে তার মেয়ে মা হতে চলেছে তখন আনন্দে আটখানা হয়ে পড়লেন ৷
এ আনন্দ উনি কোথায় রাখেন….
সেই কখন থেকে আরূর সঙ্গে বসে গল্প করছেন, মা মেয়ে মিলে বেশ ভালই গল্প জমিয়েছে ৷
__”আরিশ কোথায় ওকে তো কোথাও দেখছি না?”
__”আসলে মা উনি একটু বাইরে গেছেন দরকারে, এক্ষুনি চলে আসবেন ৷”
__”আচ্ছা ৷ যখন শুনেছিলাম যে তুই অসুস্থ তখন মনে হচ্ছিল হৃদয়টা যেন বেরিয়ে এসেছে ৷”বলে আরুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ৷
আরূ ওর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে আবেগে উৎফুল্ল হয়ে গেল , যতই হোক নিজের মা বলে কথা,এত বছর তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এখন উনাকে পেয়ে খুব খুশি আরু…
তড়িঘড়ি করে আরূর আম্মু ছুটতে ছুটতে আরুর ঘরে এলেন ,এসেই বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে দিলেন,,,,,,
হঠাৎ এমনটা হওয়াই আরু চমকে গেল তারপর বুঝতে পারলেন যে ওর আম্মু প্রচন্ড কান্নাকাটি করছে, দুই মাকে পেয়ে বেশ খুশি আরূ, দু জনকেই সমানভাবে ভালবাসে ও ৷
__”কয়েক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিল যে আমার জীবন টাকেই আমি হারিয়ে ফেলেছি ৷ নিজের একটু যত্ন নিয়ে হয় তো নাকি?এত কেয়ারলেস কেন তুই? এত বছরেও তোকে আমি শুধরাতে পারলাম না৷”
আরূ ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
__” আমি যদি পাল্টে যাই তখন কি আমি আর তোমার সেই আগের আরু থাকবো ? আমি যাতে না চেঞ্জ হয়ে যাই সেই জন্যই তো আমি এমন অবাধ্য মেয়ের মত হয়ে থাকি তোমার কাছে সব সময় ৷ তোমার কি ভালো লাগে না সেটা?”
উনি আরুর কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,,,
__” তুইতো আমার সেই ছোট্ট আরু মা ই থাকবি , তুই কি আমার কাছে কখনো বড় হবি নাকি রে! ‘
ওনার চোখের কোনে জল চলে এলো ৷
হঠাৎ করে ওনার নজর গেল রেজোয়ানা আহমেদের দিকে , উনি এতক্ষণ রেজোয়ানা আহমেদ কে লক্ষ্য করেননি , উনি সেই ঘরে কে কে উপস্থিত তা দেখেননি ,আসলে আরূ কে নিয়ে এতো চিন্তায় ছিল যে আশেপাশে কোন কিছুতেই নজর দেন নি ৷
__”আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে আপনি এই ঘরে রয়েছেন ৷”
বলে আরুশির আম্মু মাথাটা নীচু করে নিল ৷
উনার মধ্যে আজ একটা অনুশোচনা কাজ করছে অপরের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে নিজের সন্তানের মত লালন-পালন করার জন্য , তবুও উনি আজও এখনও আরুকে আগের মতই ভালবাসেন, মায়ের ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয়না ৷
রেজোয়ানা আহমেদ মুচকি হেসে বললেন ,,,,,,
__”একজন মা হয়ে আপনার থেকে এমনই ব্যবহারটাই আশা করেছিলাম আপু , আপনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কেন উল্টো আমার আপনার কাছে আরও কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত কারণ আপনি এতগুলো বছর একটা মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন , যেটা আমিও করতে পারিনি ৷ আপনি এত বছর ওর মায়ের মতো ওর পাশে ছিলেন, ওকে ভালোবেসে গেছেন,ওর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ আমি আপনার কর্মের বিন্দু পরিমাণ মাত্রও কিছু করতে পারিনি শুধু দূর থেকে চোখের জল ফেলে গেছি ৷
আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার মত মুখ আমার নেই তবে আপনার প্রতি ভালোবাসার হাতটা বাড়িয়ে দিতে পারি ৷”
আরুশির আম্মু এবার কেঁদে ফেললেন , কারণ উনি ভেবেছিলেন রেজোয়ানা আহমেদ হয়তো মায়ের অধিকার চাওয়ার জন্য ওনাকে আরুশির কাছে এলাও করবেন না, এ সমস্ত হাজারো আজগুবি কথা উনি ভেবেছিলেন নিজের মনে মনে ৷
আরুশি ছলছল চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, কত সুন্দর ভাবে দুজন দুজনকে মানিয়ে নিয়েছেন ওর সঙ্গে সম্পর্কটা নিয়ে কোনো বিবাদ ছাড়াই ৷ এইভাবে ভালবাসার মানুষগুলো সুখে থাক , আনন্দে থাক…..
❤
জোর করে আরুশির মুখে ডিমের শেষ টুকরোটা ঢুকিয়ে দিল আরিশ ৷ এখন থেকে ওকেই আরুশিকে খাইয়ে দিতে হবে কারণ আরিশ জানে যে ও যদি আরুর খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর না দেয় তাহলে দুদিন পর আরুশিকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না৷ এমন অবস্থায় আরূশির বেশি বেশি চিপস , কোলড্রিংস,চকলেট খাওয়া এগুলোকে বন্ধ করতে হবে, তবে সেগুলো একদিনে সম্ভব নয় তাই বেশ একটু খাটাখাটনি করতে হবে আরিশকে ৷
ডিমের শেষের অংশটুকু আরূশির মুখে একটু বেশিই ছিল কারণ এতক্ষণ ধরে যা যা খাচ্ছিল তার সমস্ত টা খেয়ে উঠতে পারছিল না তাই বেশির ভাগটাই মুখে রয়ে গেছে , আর এই অবস্থায় ও আরিশকে কিছু বলতে চায় তবে মুখের খাবার গুলোর জন্য কিছু বলতে পারছে না ঠিকঠাক ৷
আরিশ ধমক দিয়ে বলল,,,,,
__” মুখের খাবার গুলো আগে শেষ করো তারপর যা খুশি বলবে তার আগে একটা কথা বললে আরো ডিম নিয়ে আসবো ৷”
আরুশি আরিশের ধমকে তাড়াতাড়ি করে মুখের খাবারটুকু শেষ করে নিয়ে ট্রে র উপর থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিলে ,কারন এই মুহূর্তে ও আরিশকে যেটা বলবে সেটা বলা খুবই প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে ও , এটা না বলতে পারলে হয়ত পেটের খাবার গুলো হজম হবে না ,তা পেটের মাঝেই ওর বেবির সাথে তিড়িংবিড়িং করে খেলা করবে ৷
জলটা খাচ্ছে আর ক্রমাগত হাত নাড়াচ্ছে আরূ, তারমানে ও আরিশকে কথাটা ভীষণভাবে বলতে চাই৷
আরুর কর্মকান্ড দেখে আরিশ রেগে যাচ্ছে কারণ খাওয়ার সময় কথা বললে গলায় খাবার আটকে গেলে বিপদ আর এখন জল খেতে গিয়ে যদি গলায় আটকে যায় তখন আরেকটা সমস্যা হবে , মেয়েটাকে নিয়ে কোনভাবেই ও পেরে ওঠেনা আরিশ, বড্ড বেপরোয়া নিজেকে নিয়ে ৷কবে যে নিজেকে ঠিকভাবে গুছিয়ে নেবে সেটা আরিশ জানে না ৷ আরিশ তো ভেবেই নিয়েছে যে সারা জীবন ওর বেবিকে আর আরুর টেক কেয়ার করার দায়িত্বটা ওরই ৷ কারণ মা যেমনটা কেয়ারলেস , বেবি ও যদি তেমনটাই কেয়ারলেস হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই ৷
__”জলটাকে শেষ করো তারপর কথা বলবে ৷”
আরুশি ঢকঢক করে সমস্ত টা খেয়ে নিল,তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ট্রের দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,
__”ওই যে দেখছেন দুধের গ্লাস টা , আমি কিন্তু দুধটুকু আর খাব না ৷”
আরুশির কথা শুনে আরূশির দিকের ভ্রু কুঁচকে তাকাল আরিশ অর তার সঙ্গে চোখ দুটোও ছোট ছোট হয়ে এল ৷ সামান্য এই কথাটুকু বলার জন্য আরূর মধ্যে এত ব্যস্ততা দেখে আরিশ অবাক ৷ মাঝেমাঝে নিজেকে পাগল বলে মনে হয় আরিশের ৷ আরুশি যা যা করে তাতে ও হাসবে না কাঁদবে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা ৷
আরুশি এবার গ্লাসটার দিকে মেনশন করে বললো,,,,,
__” ওই যে ওদিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন,আর আমার মনে হচ্ছে আপনি হয়তো ঠিক দেখতে পাচ্ছেন না তাই আমার দিকে এভাবে ড্য৷ব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন ৷”
আরিস আরুর দিকে রাগী চোখে তাকালো, নিজের অবাক হওয়াটাকে আটকাতে হবে ওকে, এবার একটু স্ট্রিকট হতে হবে না হলে আরুশিকে কোনভাবেই শায়েস্তা করা যাবে না….
আরিশ আরুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আরু বললো,,,
__” এই যে আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে , আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”
আরিশ,,,,
__” তুমি বাঘও না আর ভাল্লুকও না ,তুমি আমার আরুপাখি আর আমার বাবুর আম্মু তাই আমার বাবুর এখন খিদে পেয়েছে তাই তুমি এখন খাবে…”
আরোশী দেখছে যে কোনোভাবেই কোনো কাজ হচ্ছেনা তাই ও আস্তে আস্তে আরিশের দিকে সরে গেল গিয়ে আচমকা আরিসের জামার কলার ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো,,,,,,
__”আপনি কি এখন আমাকে ভালোবাসবেন ? যেমনটা আপনি আমাকে বাসেন ৷”
আরিশ একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো আর বুঝতে পারলো যে আরুশির মতলবটা কি ৷ অন্য দিন আরু প্রচণ্ড লজ্জা পাই, কখনো এমন কিছু বলে উঠতে পারে না ৷
__”অনেক ভালোবাসবো তোমায় আরুপাখি , ভালবাসায় ভরিয়ে দেবো তবে আপাতত ওই এক গ্লাস দুধ তোমাকে শেষ করতেই হবে ৷”
বলে আরুকে কিছু আর বলার সুযোগ না দিয়ে দুধের গ্লাস টা নিয়ে জোর করে খাইয়ে দিলো ৷
এই দুধের গন্ধটাই যেন আরুশির একদম সহ্য হয় না ৷
দুধটুকু আরুশিকে খাইয়ে গ্লাসটা ট্রেতে রাখার অপেক্ষা তারমধ্যেই আরোশী হড়হড় করে বমি করে দিল আরিশের গায়ে ৷
আরিসের বেহাল অবস্থা , জামা কাপড়ের উপরে সব বমি লেগে গেছে ৷
আরুশি ভয় পেয়ে গেল , তাহলে এবার কি আরিশ ওকে খুব বকা ঝকা করবে এই নিয়েই ভেবে কিন্তু না, আরিশ আগের মতই শান্ত যেমনটা সব সময় থাকে৷ ওকে অবাক করে দিয়ে আরিশ আরিশিকে কলে তুলে নিলো,তারপর প্রথমে আরুশিকে চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে তারপরে নিজের ফ্রেশ হয়ে নিল….
মানুষটিকে আরুশি যতই দেখে ততই যেন অবাক হয়ে যায় বারবার , একটা মানুষ এতটা শান্ত ভাবে কি করে সমস্তটা সমাধান করে যেখানে আরোশী কখনো এত শান্ত দৃষ্টিতে কখনো কোন কিছুই ভাবে না সমস্ত কিছুতেই ও তাড়াহুড়ো করে ৷বারবার মানুষটার প্রেমে পড়ে যায় ও তার জন্য কোন কারন লাগে না ৷
আরিশ কোলে তুলে নিতেই আরুশি শক্ত করে শার্টের কলারটা খামচে ধরল, আজ ওর ও খুব ইচ্ছা করছে আরিশের ভালোবাসা পেতে, ও জানে যে আরিশ তাকে কখনোই ফিরিয়ে দেবে না…..
আরুশিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আরিশ আরুশির দিকে ঝুকে বলতে লাগলো,,,,,,
__”কেন সব সময় তোমার নেশায় আমাকে ঘায়েল করো , তুমি কি জানো না যে বারবার আমি তোমার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ি !”
বলে আরোশীয দুই গালে হাত রেখে ওর ঠোঁট জোড়াকে আঁকড়ে ধরল ৷ আরুশি ও পরম আবেশে আরিশকে ওর নিজের কাছে টেনে নিল….
চলবে,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:39
#Suraiya_Aayat
❤
ক্যাম্পাসের মধ্যে বসে আছে ওরা তিনজন, তিথি সানা আর আরু….
তিনজনের মধ্যে নানান ধরনের গল্প চলছে আর তা নিয়ে হাসাহাসি চলছে নানান রকমের ৷
মূলত সেখানে যে যার নিজেদের জামাইকে নিয়ে চর্চা করছে ৷
তিথি নাহিদ কে নিয়ে নানারকম কথা বলছে ,আর সানা বলছে আরাভ কে নিয়ে ৷ কিঞ্চিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ভঙ্গিতেই বলছে কথাগুলো ওরা দুজনে ৷
আরু ওদের দুজনের কথাই শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ৷ ওর কাছে তো আরিশকে নিয়ে অভিযোগ করার মতো কোন বিষয়বস্তুই নেই তাই কিছু না বলে চুপ করে ওদের কথা শোনায় শ্রেয় বলে মনে করছে ও ৷
এতদিন ধরে আরিশকে যতটা কাছ থেকে জেনেছে আর চিনেছে তাতে আরূর চোখে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেখেনি ৷ মানুষটা কি করে এতটা পারে সেটার উত্তর আজো বুঝে উঠতে পারেনি আরু….
বারবারই মানুষটার প্রেমে পড়ে যাই আর তখন একটাই কথা মনে হয়,,,,,
__” বৃথা একটা সংজ্ঞাহীন অথৈ সাগর এর মত মানুষকে হয়তো পুরোটা নাই বা জেনে উঠতে পারলাম ,থাক না তার প্রতি কিছু অজনা ভালোবাসা ৷”
তিথি এবার আরূকে ধরে বলল :
__” কিরে তুই চুপ করে আছিস যে, তোর কি আরিশ ভাইয়াকে নিয়ে কিছু বলার নেই?”
সানা মুচকি মুচকি হেসে বলল ,,,,,
__”ওর ভাইয়ার প্রতি কোন অভিযোগ থাকতেই পারে না কারন ভাইয়া কখনো কোনো অভিযোগ করার সুযোগ রাখে না ৷”
তিথি আরুকে ডাকতেই আরূ চমকে গেল কারণ এতক্ষণ ধরে আরিসের রুমটার দিকে তাকিয়ে ছিল ও, মানুষটা রুমে নেই ক্লাস নিতে গেছে,আর দরজাটা হাট করে খুলে রেখে গেছেন তাই রুমের ভীতরটাতে স্পষ্ট দৃষ্টিপাত করতে পারছে আরূ ৷ আরিশ ওখানে না থাকলেও আরু সেই চেয়ারটায় আরিশ কে কল্পনা করার চেষ্টা করছে বারবার , হয়তো কাজের সময় ব্যস্ততার খাতিরে ওই চেয়ারটায় বসে মানুষটা হয়ত মুখে কলম গুজে কাজটাকে সহজ করার চেষ্টা করেতেন,আবার হয়তোবা মাঝে মাঝে অগোছালো চুল গুলো কে আঙ্গুল দিয়ে মঠি করে পিছন দিকে ঠেলে দিতেন তখন হয়ত শার্টের কলারটা কেও একটু নামিয়ে নিয়েন নীচের দিকে যাতে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কিঞ্চিৎ স্বস্তি মেলে ৷
এসবই হাজারো কল্পনা জল্পনা করছিলো আরিস কে নিয়ে, তখনই তিথি ডাকতেই চমকে গেল ও ৷
আরোশী মুখের হাসিটা চওড়া করে বলতে শুরু করল,,,,,
__”কি শুনতে চাইছিস তোরা বল আমি নিশ্চয়ই বলবো যদি তার সঠিক উত্তরটা আমার কাছে থাকে ৷”
__”এটাই জানতে চাইছি যে আরিশ ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে,আই মিন তোর প্রতি ওনার ভালোবাসাটা ঠিক কেমন সেটাই জানতে চাইছি , তাহলে আমি বুঝতে পারবো যে নাহিদ আর আরিশ ভাইয়ার ভালোবাসার গাঠনিক পার্থক্যটা ঠিক কোথায় !”
__” আসলে ভালোবাসায় পার্থক্য বলে কোন জিনিস হয় না ৷ শব্দটা যেন বড্ড বেমানান এই ভালোবাসা নামক সম্পর্কটার সাথে , আমি ঠিক কখনো ভালোবাসার ভেদাভেদ করতে চাইনি আর করলেও হয়তো বারবার ব্যর্থ হতাম কারণ আমি নিজেই কখনো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা গড়ে তুলতে পারিনি নিজের মতো করে ৷ উনিই আমাকে শিখিয়েছেন ভালোবাসা জিনিসটা কেমন হয় ৷ উনি নিজের সম্পূর্ণ ভালবাসাটাকে অনুভূতির আকারে প্রকাশ করেছেন আমার কাছে তাই হয়তো কখনো এমন পার্থক্য করে বোঝার চেষ্টা করে ওঠা হয়নি আর ৷
তুই যদি জানতে চাস যে আমার প্রতি ওনার ভালোবাসাটা ঠিক কেমন তাহলে আমি এটাই বলব যে আলাদাভাবে উনি কখনো ভালবাসার ডেফিনেশন আছে বলে মনে করেন না , ওনার মতে আমি ওনাকে ভালোবাসা কি তা শিখিয়েছি এবং আমাকেও যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তো আমিও একই কথাই বলবো যে আমি উনার থেকে ভালোবাসা জিনিসটা কি তা শিখেছি ৷ আমরা দু’জনে একে অপরের পরিপূরক তাই সবটা এত সহজ বলে মনে হয় ৷
ভালোবাসা একটা অনুভূতি যা সকল মানুষের প্রতি আসে না যেমন তোর নাহিদ ভাইয়া ছাড়া এত বছরেও অন্য কোন পুরুষের প্রতি আসেনি তেমনি উনিও আমাতে আকৃষ্ট , আমার ভালোবাসায় আসক্ত , আমি উনাকে হাজার বার দূরে ঠেলে দিলে তুমি কখনও দ্বিধাবোধ করবেন না পুনরায় আমার কাছে ফিরে আসতে….
আসলে ভালোবাসা জিনিসটা ঠিক কেমন সেটা বুঝে উঠতে পারলেও উনার আমার প্রতি ভালোবাসাটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না আজো ৷ উনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভালবাসেন যেগুলো হয়তো উনি আমার জীবনে না আসলে জানতেই পারতাম না যে কতটা চাইলে একটা মানুষ কে নিজের করে পাওয়া যায় ৷
আর তাছাড়া উনি ভালোবেসে যে কাজগুলো করেন সেগুলোর কথা নাহয় আমি নাই বললাম ৷ আমার কুড়ি বছর বয়সেও আমার বাচ্চামো স্বভাব গুলোকে ভালবাসার চোখেই দেখেন, কখনো বিরক্ত বোধ করেন না, হালকা কুয়াশা মাখা রাতেও ওনার গায়ে বমি করে দিলেও মুখদিয়ে আবেগজনিত একটা শব্দটিও উচ্চারণ করেন না , আমার কিছু হলে যেন নিজের প্রাণটাই যেন হারিয়ে ফেলেছেন এমনটাই অনুভব করেন উনি….
আমি হিনা উনি কিছুই নয় এই জিনিসটা উনি বড্ড বিশ্বাস করেন তাই আমিও উনার দীর্ঘ বিশ্বাসের দেয়ালটা কখনো ভাংতে চাইনা ৷
আজো ভালোবাসি আর আজীবন ভালোবাসবো,,,,,, অনুভুতিতেই বিরাজ করুক সকল ভালোবাসা ৷ ভালোবাসা অবিরাম ৷”
এতক্ষণ ধরে তিথি আর সানা দুজন আরূর কথা মন দিয়ে শুনছিল, ওরা এত বছর ধরে আরূকে দেখছে,তাই ওকে ভালোভাবে চেনে যে ও ঠিক কেমন স্বভাবের,তাই আজ আরুর মধ্যে পরিবর্তনটা ওরা লক্ষ্য করতে পারছে , দীর্ঘ পরিবর্তন হয়েছে ওর মাঝে ৷
ওদের দুজনের গভীর দৃষ্টি উপেক্ষা করে আরু আবার মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাটা দিল সামনের দিকে, কারন সেখানে আরিশ পকেট এ্ হাত রেখে আরুর জন্য অপেক্ষারত আর মুখে রয়েছে বরাবরের সেই মন মাতানো হাসি , যা আরূকে বারবার ঘায়েল করার জন্যই যথেষ্ট ৷
আরু নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে, নিজের ম্যাচিউরিটি টাকে বাড়াতে চাইছে কারণ ও জানে ওর অনেক কাজ কর্মের জন্য আরিশকে অনেক ধকল সামলাতে হয়, ওর বাচ্চামো স্বভাবগুলো মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে চলেছে দিনদিন, আর এগুলো যে দিন শেষে আরিশ এর জন্য বড়ই কষ্টদায়ক আর ক্লান্তিকর সেটা আরিশ কখনো প্রকাশ না করলেও আরু ঠিক বুঝতে পারে….
সানা আর তিথির মধ্যে এখন অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে ৷ আরূর বলা প্রত্যেকটা শব্দ যেন ওদের ভাবনাচিন্তা কে পরিবর্তন করে দিয়েছে৷ এতক্ষণ ধরে ওরা যে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছিল আরুশির কথাগুলো হলো তার যোগ্য জবাব ৷ আসলে সত্যিই ভালবাসার মানুষটাকে যদি সঠিকভাবে না ই ভালোবাসতে পারো তাহলে তারা অপরের চোখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নজরে আসে , আর আরু ওর কথাতেই প্রমাণ করে দিল ৷ অরিশ আর আরুর ভালোবাসাটা এক অদ্ভুত রকমের, যেমনটা আরুশিও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি আজও তেমনি হয়তো বাইরের তৃতীয় ব্যক্তি চেষ্টা করলেও কখনো বুঝে উঠতে পারবে না কারণ তা যে দীর্ঘ মহা সাগরের মতই যেখানে শুরু থাকলেও কোনো শেষ নেই ৷
আরিশ আর আরু দুজনে সামনের দিকে হেটে যাচ্ছে, দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা ৷ নীরবতা ভেঙে আরিশ বলল,,,,,
__” আমার রুমের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলে আরুপাখি?”
আরিশের থেকে এরকম একটা প্রশ্ন আরু শুনবে সেটা হয়তো আশা করেনি ও ৷ হাটতে হাটতেই বলল,,,
__”কই না তো ৷”
__”ওহ আচ্ছা তাই ! তাহলে এখন তো ধরে নিতেই হয় যে আজকাল ভালোবাসার নজরে কিছু দেখলেও সেটা ভুল হয় ৷”
আরু এবার থেমে গেল, থেমে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__”আমি আপনার রুমের দিকে তাকিয়েছিলাম কারণ ওই ফাঁকা রুমটার মধ্যে আপনি উপস্থিত না থাকলেও সেখানে আপনাকে অনুভব করতে চাইছিলাম আমি ৷ ভালোবাসার মানুষটা চোখের সামনে না থাকলেও মনের মাঝে কল্পনা করতে অসুবিধা কোথায় ?”
অন্য সময় হলে আরু হয়তো প্রশ্নটা কে এড়িয়ে যেত কিন্তু আরিশের বলা শেষের কথাটা যেন বড্ড স্পর্শকাতর , কারণ আরিশ বললো যে ও ভালবাসার চোখ দিয়ে কিছু দেখলে তাও আজকাল ভুল দেখায়,কিন্তু সেটা তো সত্যি নয় ৷ আরিশের ভালোবাসা নিখাদ, সেটা আরু জানে তাই এখন সত্যিটাকে অস্বীকার করলে ওদের ভালোবাসাকে অসম্মান করা হয়, তার জন্যই উত্তরটা দেওয়া জরুরি বলে ও মনে করলো ৷
মুখের হাসিটা টেনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরুকে চোখের ইশারায় আবার পুনরায় সামনের দিকে এগোতে বলল , একসাথে আরো পথ চলা বাকি ওদের, জীবনে একবার থেমে গেলে সেখানেই পড়ে থাকতে হবে নাহলে সামনে এগোনোর রাস্তাটা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসবে….
❤
সামনে নানান ধরনের খাবার রয়েছে আর আরিশ আর আরূ দুজনেই বসে আছে ৷ আরূ খাবার গুলো দেখছে আর কেমন একটা হচ্ছে তবু এখন ভাবছে যে ওর কষ্ট হলেও নিজের বেবির কথা ভেবে আর আরিশের কথা ভেবে ওকে খেতেই হবে কারণ ও আরিশ কে বারবার কষ্ট দিতে চায় না, যদিও বা আরিশ এগুলো জানলে খুবই রাগ করবে যে ওর ভালোবাসাটাকে আরোশী কষ্টের চোখে দেখে তবুও এত ব্যস্ততার মাঝেও আরিশকে যদি একটু ফ্রী স্পেস দেওয়া যায় তাহলে সমস্যা কিসের….
আরুশি খাবার হাত নিতেই আরিস বলে উঠলো,,,
__”তোমাকে হাত দিতে হবেনা আমি খাইয়ে দিচ্ছি৷”
আরুও আর না করলো না কারণ এগুলোর সাথে ও পরিচিত ৷ আরিশ কখনো কাউকে পরোয়া করেনি আর আজ করবে না , আগে ক্যান্টিনে খুব লাঞ্চ করার সময় আরিশ খুব একটা না আসলেও তবে এখন আরিশ প্রতিনিয়ত আসে, আর ওদেরকে এমনভাবে দেখে দেখে সকলেই অভ্যস্থ, কেউ আর আগের মতো বিষয়টা দেখে হাসাহাসি করে না ৷ আগে আরূও এই সমস্ত বিষয় নিয়ে অনেকটা ভাবলেও এখন আর ভাবে না কারণ যার যা ভাবার সে সেটাই ভাববে, ওর ভাবনাতে কারোরই ভাবনা-চিন্তার পরিবর্তন হবে না…..
আরিশ আরুকে খাইয়ে দিচ্ছে মনোযোগ সহকারে আর আরু ও খাচ্ছে কিন্তু আরিস এখনো খাচ্ছে না দেখে আরু বলে উঠলো,,,
__”আপনি সেই থেকে আমাকে খাইয়ে যাচ্ছেন আর নিজে তো কিছু খাচ্ছেনা৷”
__”আগে তোমার খাওয়া শেষ হোক তারপরে আমি অফিসে গিয়ে লাঞ্চ করে নেব ৷”
__”আপনি কি আবার অফিসে যাবেন ?”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল কারণ আরিশের এত কষ্ট আরু আর নিতে পারছে না, মানুষটা বড্ড বেশি স্ট্রাগেল করে সারাদিন ৷
__”হ্যা অফিসে যেতে হবে , অফিসে কাজের প্রচণ্ড চাপ , তাছাড়া বাবা একা হাতে কতটা সামলাবেন বলো!আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে কিনা ! বাবারও বয়স হয়েছে বেশি প্রেসার দেওয়া ঠিক না তাই নিজেই হ্যান্ডেল করা যায় তারই চেষ্টা করছি ৷”
__”কিন্তু তুমি খাওয়া থামালে কেনো? তাড়াতাড়ি খাও ৷”
খানিকটা ধমকের সুরেই বললো আরিশ ৷ আসলে এক্সট্রা 5 মিনিট ক্লাস নিতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে ওর ৷
আর আজকে অফিসের কাজটাও একটু বেশি সেই কারণে ৷
আরুশির খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আরিশ আর আরু ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এল ৷ আরূ আরিশকে অনেকবার খাওয়ার কথা বলেছে তবে আরিশ খাইনি ৷ আরুর আন্দাজ হয়ে গেছে যে অফিসে গিয়েও আরিশের আর খাওয়া হবে না , একবার কাজের মধ্যে ঢুকে গেলে খাওয়া-দাওয়ার কথা আর কিছু মনেই থাকে না আরিশের, এতদিনে এগুলো বেশ ভালই বুঝতে পেরেছে আরূ ৷
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,,,
__” কখন ফিরবেন?”
আরিশ ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে আরু কে বলল,,,,
__” আজ হয়তো ফিরতে লেট হবে আরুপাখি, তুমি যেন বেশি রাত জেগো না কেমন!”
বলে আরুশির গালে আলতো করে স্পর্শ করে কপালে ভালবাসার পরশ একে দিল….
আরুর চোখের কোনায় জল জমে রয়েছে,
হয়তো পলক পড়লেই টপটপ করে গড়িয়ে পড়বে৷ মানুষটার কষ্ট দেখে নিজেরও প্রচন্ড কষ্ট হয় ৷ সারাদিন অফিস কলেজ করে নিজের কেয়ার টুকু নিতেই ভুলে যাই আরিশ ৷
আরুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷
আরিশ যেতেই আরুর চোখের কোনে জমে থাকা জলগুলো অবাধ্য হয়ে গড়িয়ে পড়ল চোয়াল বেয়ে ৷ কেন এতটা কষ্ট পায় মানুষ টা ? কেন এত কষ্ট করে? উত্তর একটাই,,,,, প্রিয়জনকে ভালো রাখার জন্য ৷
কিন্তু সকলকে ভাল রাখতে গিয়ে দিনশেষে আরিশের নিজের আর ভালো থাকা হয়ে ওঠে না….
❤
অনেকক্ষণ ধরে ঘরে বসে থাকতে থাকতে আরুসি বোর হয়ে গেছে ৷ একপলক ঘড়ির দিকে তাকাতেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখটা নিচে নামিয়ে নিল , ঘড়িটার দিকে তাকালেই বুকের ভেতরটা কেমন একটা করে ওঠে ৷ কত তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায় দিনটা ৷ শীতকালের আবহে সূর্য্যটাও আজ কাল তাড়াতাড়ি নিজের গন্তব্য ফিরে যায়, যদি তাকে কোনভাবে আটকে রাখা যেত তাহলে হয়তো প্রিয় মানুষটার জন্য অপেক্ষার প্রহরটাও আরো দীর্ঘ তো….
সন্ধ্যা হতেই আরো বেশ কিছুক্ষন বাকি আছে তাই একটু গার্ডেন থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছা হল আরুশির, সানা কলেজ থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই ওর সাথে আজকের গল্প করার সুযোগটা আজ নেই ৷ এমনিতেও আজকে মনটা ওর কেমন একটা করছে, খুব একটা ভালো লাগছে না , বড্ড একা একা ফিল করছে আরিশকে ছাড়া ৷
বিছানা থেকে ওড়নাটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরূ ৷
আস্তে আস্তে বাগানের মধ্যে হাঁটছে আর ফুল গাছ গুলোকে মাঝে মাঝে আলতো করে স্পর্শ করে দেখছে, দিনের শুরুতে কত সহজ ভাবে ফুটে ওঠে আর দিনশেষে কেমন নেতিয়ে পড়ে ৷
তবে আরিস সারাদিন নিজেকে সতেজ প্রমাণ করার চেষ্টা করে তবুও ভীতর থেকে ওর নিজের শরীরটা যে আর চলে না সেটা ও নিজেও বুঝলেও কাউকে বুঝতে দেয়না , কথাগুলো বারবার ভাবছে আরূ….
কিছুটা হাটতেই নিজেকে যেমন ক্লান্ত ক্লান্ত বলে মনে হল তাই আর বেশি না হেঁটে দুরে দোলনাটাই গিয়ে বসে পড়ল ৷ দোলনার শিকলটার সাথে মাথা ঠেকিয়ে নিজের ক্লান্তি দূর করতেই কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখলো অনিকা খান হাতে একটা প্লেট নিয়ে ওর পাশে বসে আছেন….
__”কিরে তুই এখানে কি করছিস? আমি তোকে কখন থেকে খুঁজেই চলেছি, তোর রুমে গেলাম তোকে না পেয়ে তাই গার্ডেনে এলাম, দেখলাম তুই এখানে বসে আছিস ৷”
আরু মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” কিছু বলবে মামনি?”
__”কিছু বলবো তো অবশ্যই আর তার সঙ্গে আমার নাতিনাতনীটার পেটপুজোটাও সেরে যাব ৷ তোর জন্য গরম গরম চিকেন দিয়ে সিঙ্গারা বানিয়েছি আমি, তুইতো খুব ভালবাসিস ! তাই জন্য নিয়ে এলাম বানিয়ে ৷সানা তো ঘুমাচ্ছে, ওর জন্য কয়েকটা রেখে দিয়েছি আর আরিশের জন্যও রাখলাম ৷ তাড়াতাড়ি খেয়ে নে না হলে আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷”
আরু প্লেটটার দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,
__”তুমি রেখে যাও মামনি আমি খেয়ে নেব ঠিক ৷”
__”আমি জানি তুই খাবি না তাই তুই আগে খা তারপর আমি যাবো ৷”
তখনই বাড়ির কাজের মেয়েটা অনিকা খানকে ডেকে উঠতেই তাড়াহুড়ো করে ব্যস্ততা নিয়ে আরুশিকে সিঙাড়াটা খেতে বলে উনি চলে গেলেন ৷
সিঙাড়ার প্লেটটা নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিল আরু, আরিশ আসলে তারপর দুজনে একসঙ্গে খাবে ৷
আরুশির বার্থডে উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করেছে আরিশ, যতই হোক আরুশির খুশি টাই ওর কাছে আগে, আর তাছাড়া আজকে আরুশির জীবনের সমস্ত সত্য উদ্ঘাটন করেই ছাড়বে এটা ঠিক করল ৷ যে করেই হোক আরুশিকে সমস্ত খুশি এনে দেবে ও ৷
সারাদিনটা আরুর খুব ভালোই কেটেছে , তবে সকাল থেকে মনটা খারাপ কারণ সকাল বেলা ওর মা একবার ওকে ফোন করেছিল, খুব কান্নাকাটি করেছেন , তবে আহানের সাথে আর কথা হয় নি, এতদিন ধরে ও আহানের সাথে কথা না বলে আছে সেটা ও নিজেই বিশ্বাস করতে পারেনা মাঝেমাঝে , কারণ ওর বিয়ের আগে ওদের দুই ভাইবোনের মধ্যে সম্পর্কটা এমন ছিল যে তা এভাবে একটা দূরত্বে পরিণত হবে সেটা ও কখনোই কল্পনাতে আনেনি, সময়ের পরিবর্তনের কারণে সময় মানুষকে কত কিছু শিখিয়ে দেয় আবার মানুষের জীবনে কত কিছু এনে দেয় ৷
অরিশের কিনে দেওয়া লাল রঙের শাড়িটা আরূ পরে আছে , একদম নতুন বউয়ের মত টুকটুক করছে ৷ সানা আর আরু বসে বসে গল্প করছে তার মাঝে আরিশের মা ঘরে এসে ওর কাছে গিয়ে উনার নিজের চোখ থেকে একটুখানি কাজল নিয়ে আরূর ঘাড়ে পিছনে দিয়ে দিলেন ৷
“আমার মেয়েটার ওপর যেন কারোর কখনো নজর না লাগে , সব সময় যেন ভালো থাকে ৷”
আরূশি মুচকি মুচকি হাসছে,,,,,,
আরুশি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করল : আমার আম্মু এসেছে?
” উনি তো অনেকক্ষণ আগেই এসেছে নিচে বসে আছে, তোর জন্য অপেক্ষা করছে ৷”
” আরে মামনি সাজুগুজু করছিলি তাই তোকে বলতে পারিনি ৷”
আরুসি তাড়াহুড়ো করে বলল : মামনি আমি এখুনি দেখা করে আসছি ৷
অনিকা খান আর কিছু বলবেন তার আগেই আরূ কথাটা না শুনে ওর মায়ের কাছে চলে গেছে….
ড্রয়িংরুমের সোফায় একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে না আরুর মা, কেমন যেন বিচ্ছিন্ন লাগছে ওনাকে , জীবন থেকে বড় কিছু যেনো হারিয়ে ফেলেছেন তারই ছাপ মুখে…
এতদিন পর আরূর ওর মাকে দেখে ওর চোখে জল চলে এলো, দৌড়ে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরল ৷ হঠাৎ আচমকা ওনাকে কেউ জড়িয়ে ধরায় উনি বেশ চমকে গেলেন ৷
তাকিয়ে দেখলেন পাশে আরূ, উনি ছলছল চোখে আরূর গালে হাত রাখলেন ৷
কেমন আছিস মা?
এবার ওনাকে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আরূ,,,,
তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে ভালো লাগে না আমার,তুমি পারলে কি করে এতদিন আমার সাথে না দেখা করে থাকতে, আর তুমি আর ভাইয়া আমাকে একেবারে পর করে দিয়েছো ৷ যেমন তুমিও কোন যোগাযোগ রাখো না তেমনি ভাইয়াও আমার সাথে আর কথা বলে না ৷
আরূর মা ওর চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন: তোর ভাইয়া এতো দিন তোর উপরে অভিমান করে ছিল তবে এখন আর তা নেই ৷
আরূ তাও কেদেই চলেছে , যতই হোক এতদিন ধরে একটা মান-অভিমানের পালা চলেছে তা এত সহজে যে ঠিক হওয়ার ছিল না সেটাও ভালোই বুঝতে পেরেছিল ৷
তা ভাইয়া কোথায় ? ভাইয়াকে তো কোথাও দেখছি না ?
তোর ভাইয়া আরিশের সঙ্গে কথা বলছে তাই অন্যদিকে কোথাও গেছে হয়তো….
আরূ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে, আজ অনেকদিন পর ওর মাকেও পেয়েছে তাই এত সহজে ওনাকে ছাড়বে না ৷
তখনই রেজোয়ান আহমেদ আর ওনার গোটা পরিবার এলেন ৷ আরিশের জোরাজুরিতে উনি না এসে আর পারলেন না তাছাড়া মেয়েটার ওপরে অদ্ভুত একটা টান কাজ করে উনার তাই মনটা আনচান করছিল ৷
আরূকে ওর মাকে জড়িয়ে থাকতে দেখে ওনাল নিজের চোখেও জল চলে এলো , আজ যদি উনার মেয়েটাও উনার কাছে থাকতেন তাহলে হয়তো এমন ভাবেই ওধাকে জড়িয়ে ধরে থাকত, এভাবে ধুমধাম করে হয়তো ওনার মেয়ের জন্মদিন পালন করতেন….
নিজেকে কোনরকম ভাবে সামলে নিয়ে উনি আরুর কাছে গেলে ৷
উনারা আরূর কাছে যেতেই আরূ ওর মাকে ছেড়ে মুখে হাসি নিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলেন ৷
কেমন আছো আন্টি? আর তোমার শরীর ভালো আছে?
আমি ঠিক আছি,আরূর গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন , তুমি কেমন আছ?
এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো , তা আয়ূশিকে দেখছিনা ও কোথায়?
তখনই আরিশ আয়ূশিকে কলে করে নিয়ে আরুর কাছে আসল ৷
এইতো আয়ূশি ৷
আরু ওকে কলে নিয়ে আদর করতে লাগল ৷
যে মুহুর্তে রেজোয়ান আহমেদ আরুশিকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছিল তখন আরুর মায়ের মনে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল , বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তার মেয়েটা তার কাছ থেকে হারিয়ে গেল ৷ তখনই আবার পর মুহূর্তেই নিজের মনে মনে ভাবল মেয়েটা যে তার নয় তবুও যে নিজের মেয়ের মতোই ভাবে সে আরূকে….
কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শুরু হতেই আরিশ আরূর হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে গেল,,,,
কেকটা কাটো ৷
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে : আমি একা না আপনিও কাঁটবেন আমার সাথে ||
আরিশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে মুচকি হেসে আরূর সাথে কেকটা কাটলো ৷
আরো প্রথম আরিস কে দিল তারপর ওর মাকে তারপর একে একে সবাইকে দিল….
সবাই খুব খুশী ৷
আরু দেখলে অনেক দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহান, চোখের জল চলে এলো ওর এতদিন পর আহান কে দেখে ৷ সেই দিন ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল তারপর থেকে আর আহানের মুখোমুখি হয়নি ও ৷
ও আহানের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল ৷
তোর কি আমাকে আর মনে পড়ে না ভাইয়া , তুই তো ছোট বোনটার আর খোঁজ নিসনা ৷
আহান আর পারল না নিজেকে আটকাতে , ওউ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো , চোখে ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে , বড্ড বেশি ভালোবাসে আরূকে, নিজের বোনটাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও ৷
আমি নিশ্চিন্তে আছি কারণ আমি জানি আমার বোনের জামাই তাকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবে না ৷ বলে আরুশির হাত ধরে আরিশের কাছে নিয়ে গেল…
আহান : আমার বোনটার সবসময় খেয়াল রেখো ৷
আরিশ মুচকি হাসল, সবাইকে একটু অপেক্ষা করতে বলল তারপর নিজের রুমে চলে গেল ৷
আরুশি সহ সবাই বেশ অবাক হল ,তবে আহান অবাক হলো না কারণ সমস্তটাই ও জানে যে এর পর কি হতে চলেছে ৷
কিছুক্ষণ পর আরিশকে সাথে করে একটা কাগজ আনতে দেখি আরুশির ভ্রু কুঁচকে গেল ৷
আরুপাখি এটা তোমার ভাইয়াকে দিয়ে দাও
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল : কিন্তু এটা কিসের পেপার ?
কাল রাতে যেটাতে তুমি সিগনেচার করেছে সেই কাগজ ৷
আরূ কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করল, তারপরে অবাক চোখে আহানের দিকে তাকাল ৷
এগুলো কি ভাইয়া ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা ৷
আজ আমি সব বলছি আরুপাখি একটু অপেক্ষা করো ৷
উপস্থিত সবাই বেশ অবাক কারণ হঠাৎ এমন একটা সুন্দর মুহূর্তের মাঝে একটা সিরিয়াস টপিক চলে আসায় পরিবেশ থমথমে ৷
আরুপাখি তোমার মনে কি প্রশ্নটা আসেনা যে তোমার বাবা তোমার সাথে আমন টা করলেন কেন , অভ্র তোমার সাথে এমন টা করল কেন? বা তোমার বাবার তোমার প্রতি এত অনীহা কি কারনে ?
আরু এবার চমকে যাচ্ছে আরিশের এর প্রত্যেকটা কথায় ৷
তবে এই সমস্ত অদ্ভুত কথা শুনে রেজোয়ানা আহমেদ আর তার পরিবারের সবাই বেশ অবা হচ্ছে কিন্তু আসলে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না….
আপনি প্লিজ একটু বলবেন যে কি বলতে চাইছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা ৷
সবগুলো বলব আরুপাখি সব ৷
তুমি যাকে তোমার বাবা বলে মনে করো আই মিন আমরান সাহেব উনি আসলে তোমার বাবা নয় , ইভেন তুমি উনার পরিবারের কোনো সদস্য নও, না উনি তোমার মা , না আহান ভাইয়া তোমার নিজের ভাইয়া৷
কথাটা শোনা মাত্রই আরূর যেন পা এর নীচ থেকে মাটি সরে গেল, নিজের কানে যেন এসমস্ত কথা আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে না হঠাৎ করে কি থেকে কি সমস্ত শুনছে ৷
আপনি এসমস্ত কি বলছেন ,আমি বিশ্বাস করি না ৷
আরিশ আরুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল ,
যাকে তুমি তোমার নিজের মা বলে মনে করো উনি তোমাকে ধানমন্ডি থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন যখন তোমার এক বছর বয়স ছিল…
আইমিন আজকের এই দিনটাতে ৷
আমি এসব বিশ্বাস করি না , আপনি কি সমস্ত আজগুবি কথা বলছেন ?
তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করো উনি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবেন না ৷
আরু ওর মায়ের দিকে তাকাতেই ওর মা মাথাটা নিচু করে দিলেন আর অনবরত যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে তা উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷
আরিসের কথা শুনে রেজওয়ানা আহমেদ এবং তার স্বামী যেন নতুন এক আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন, কারণ ধানমন্ডিতেই উনারা নিজেদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছিলেন , একটা মীরাক্কেলের অপেক্ষা করছেন ওনারা ৷
আরিশ: যে পেপার টা দেখছো সেটা একদম সঠিক, তোমার দাদুভাই তোমাকে খুবই ভালোবাসতেন সেই জন্য নিজের সমস্ত প্রপার্টি তোমার নামে দিয়েছিলেন, আর একজন বাইরের মানুষ হয়ে তোমার বাবা মানে আরমান সাহেব উনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি যে সমস্ত প্রপার্টির মালিক আহান না হয়ে তুমি হবে ৷ তবে পেপারে ভালো করে লেখা ছিল যে তোমার কুড়ি বছর হলেই সমস্ত প্রপার্টির মালিক তুমি হবে তাই আমি চাই তুমি এখন সমস্ত প্রপার্টি আহানকে ফিরিয়ে দাও, আমি চাইনা অপরের কোন জিনিস তুমি নাও , তাই কালকে তোমার থেকে সিগনেচারটা নিয়েছিলাম সেই কারনেই ৷
আরু যেন এবার মাটিতে বসে পড়বে এরকম অবস্থা, মুহূর্তের মধ্যে কেমন উলট পালট হয়ে গেল সব ৷
আরিশ আবার বলতে শুরু করল ,,,,
আর এটাও জেনে রাখ যে তোমাকে বিয়ে করার পিছনে অভ্রের উদ্দেশ্য ছিল যা হলো ও তোমাকে বিক্রি করে দিতো , আর সে ক্ষেত্রে তোমার বাবা ও তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন , আর উনিও টাকার লোভে তোমাকে বেচে দিতে একবারোও দ্বিধাবোধ করেননি ৷
যেদিন তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলে আমি জানতাম তোমার সন্ধ্যাবেলা ফ্লাইট তাই তোমাকে সন্ধ্যা বেলা ওরা নিয়ে যাবে , কিন্তু তখন তোমার মা আমাকে ফোন করতেই আমার জানতে সুবিধা হলো ৷
” আরিস বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাও, আরূ খুব বিপদে আছে এক্ষুনি এয়ারপোর্ট এর দিকে চলে যাবে তুমি ওকে বাঁচাও ৷”
বলে ফোনটা রেখে দিলেন ৷
উনি ভেবেছিলেন আমি হয়তো কিছু জানি না তবে আমি যে সমস্তটাই জানতাম , তাই এক মুহূর্ত আর দেরী করলাম না তোমার কাছে যেতে ৷ আশা করি পরের টুকু নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে ৷
আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : হ্যা মনে আছে, আমি গাড়িতে উঠে পড়েছি, হঠাৎ করে আমার ফোনে আম্মুর কাছ থেকে ফোন আসতেই ফোনটা ধরতেই আম্মু কান্না করতে করতে বললো :
আরু মা ফিরে আয় ,অভ্র আর তোর বাপির উদ্দেশ্যে খারাপ , তুই আরিশের কাছে ফিরে যা ৷
আমি অপেক্ষা করছিলাম যে কেউ একজন আমাকে বলুক যে আপনার(আরিশ) কাছে ফিরে আসার জন্য তাহলে নিজের মনোবল টা আরো শক্ত হবে তবে আম্মু বলতেই দুবার আর ভাবি নি যে আমাকে আর কি করতে হবে তা নিয়ে ৷
যখনই গাড়ি থামাতে বললাম তখনই বাপি বলে উঠলো :
“কোথাও যাবিনা তুই, আমার সাথে তুই যাবি আর ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে ৷”
“আমি ওনার কাছে ফিরে যাবো ৷”আরূ জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে বলল ৷
আরমান সাহেব এবার একটু ধমক দিয়ে বললেন ,,,,,
“তোকে যদি এখন অভ্রের সাথে না পাঠাতে পারি তাহলে আমার সমস্ত পরিকল্পনা জলে মিশে যাবে, আর আমি এতো বড় লস কিছুতেই হতে দিতে পারি না ৷” কথাটা বলার পর কি হল তা শুনতে পেল না আরু কারণ তার আগেই অভ্র ক্লোরোফরম দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছে…
এটুকু বলে আরু থেমে গেল আর তখনই আরিশ বলতে শুরু করল :
” তারপরেই এয়ারপোর্টে আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে বাড়ি আসলাম , আর প্রমাণসহ ওনাদেরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলাম ৷ আর উনি যে এত সহজে উনার কাজটা হাসিল করতে চেয়েছিলেন তা আমি বেশ ভালই জানতাম ৷
ভার্সিটিতে যখন তুমি পড়তে তোমার প্রতি আমার ছিল অদ্ভুত এক ভালো লাগা,আর তা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিণত হতে থাকে ৷ তোমাকে চোখে চোখে রাখার সমস্ত দায়িত্ব কারোর ওপর না দিয়ে নিজেই নিয়েছিলাম , তখন দেখেছিলাম অভ্রকে তোমার সাথে সাথে ঘুরতে , প্রথমে উদ্দেশ্যটা ঠিক লাগলেও পরে খুব একটা ভালো লাগেনি আমার ৷ তার পরে জানতে পারলাম ওর আসল উদ্দ্যেশ্য , আর এক মুহূর্তও তোমাকে কাছছাড়া করতে দিতাম না , সবসময় চোখে চোখে রাখতাম আর তাতেই আমার কাজে আরো সুবিধা হল ৷”
আরু এবার কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেল , তখনই আরুর মা ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ৷
” কাঁদিস না মা , তুই আমার নিজের মেয়ে না হলেও আমি কখনো তোকে সেই নজরে দেখি নি, নিজের মেয়ের মতোই বড় করেছি,আর ভালোবেসেছি “…
রেজোয়ান আহমেদ কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন : আরু আমার মেয়ে ৷
আরু কাঁদতে কাঁদতে ওনার দিকে অবাক চোখে তাকাল ৷
তখন আরিস মুচকি হেসে বলল : হ্যাঁ ও আপনারই মেয়ে , আপনার হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট আরুশি যার জন্য আপনারা এত বছর ধরে চোখের জল ফেলছেন ৷”
এবার আজিজ আহমেদ বলতে শুরু করলেন :
” আমরা তখন ধানমন্ডিতে থাকতাম , আমার ছেলেটাও তখন সবে সাত বছর বয়স, সেদিন ছিল আরুশির প্রথম জন্মদিন ছিল , পরীর মত সাজিয়ে ছিলাম নিজের মেয়েটাকে, তারপরে পার্কে ঘুরতে যেতেই একটু বেখেয়ালী হতেই মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন ৷”
আরিশ এবার বলতে শুরু করল :
” তার পরে যিনি নিয়েছিলেন তিনি হলেন একজন বাচ্চা পাচারকারী, আরমান সাহেব ওনাকে একটা বাচ্চা জোগাড় করতে বলেছিলেন তারপর উনিই বাচ্চাটা রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছেন আর তারপরে যা হয়েছে সব আশা করি সকলেই জানেন ৷”
আরূ যেন নিজের মধ্যে নেই, জীবনের বড় সত্যি আজ জানতে পেরেছে, এতদিন যাদেরকে নিজের পরিবার ভেবেছে এখন তারা কেউ নিজের নয় , আজকের নতুন বাবা-মা পেয়েছে , পেয়েছে একটা পরিচয় আর একটা পরিবার ৷
দীর্ঘ উনিশ বছর পরে রেজোয়ানা আহমেদ নিজের মেয়েকে খুঁজে পেয়ে আরুশিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ৷ আজ সকলের চোখে জল , অবসান হলো সমস্ত দুঃখের ৷
চলবে,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#patt:37
#Suraiya_Aayat
আরিশ ক্লাস নিচ্ছে আর আরু চুপচাপ মন দিয়ে আরিশ এর লেকচার শুনছে ৷ আরোশী খুবই অ্যাটেনটিভ আরিশের ক্লাসে, যতই হোক প্রিয় মানুষের বলা প্রত্যেকটা কথাই যেন মধুর লাগে , খুব ভালো লাগে ওর আরিশের ক্লাস টা করতে….
আজকে সানা আসেনি , সামনে আরাভের সাথে ওর এনগেজমেন্ট বলে তাই আরাভ ভাইয়া সানাকে নিয়ে শপিং এ গেছে….
আরিশ বোর্ডে লিখে লিখে বোঝাচ্ছে,,,,
বোর্ডে মার্কারটা বুলিয়ে বলল :
এই মলিকিউলটার সঙ্গে যদি এই মলিকিউল বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাহলে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটতে পারে তাই সব সময় আমরা এই বিক্রিয়াটি এড়িয়ে চলব , অন্যভাবে বিক্রিয়া ঘটানোর পদ্ধতি অবলম্বন করবো ৷
হুট করে আরু উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,,
মে আই গো টু ওয়াশরুম?
মুখে হাত চেপে বললো কারণ ওর খুব বমি বমি পাচ্ছে,
আরূর কথা শুনে আরিশ ওর দিকে ফিরে তাকাতেই আরিশের ভ্রু কুঁচকে গেল , মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরু, খুব যেন অস্বস্তি বোধ করছে দাঁড়িয়ে থাকতেও ৷
আরিশ আরুকে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরু আরিশের পারমিশন না নিয়েই মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে,আরেকটু দেরী করলেই হয়তো ক্লাসরুমেই বমি করে দেবে ৷
আরিশ বুঝতে পারল আরুশির শরীরটা একটু খারাপ বমি করতে গেছে ৷ বেশ কয়েকদিন ধরেই আরোশী কিছু খাচ্ছে না সেটাও বেশ ভালই লক্ষ্য করছে ও ৷ আরুশিকে বারবার জিজ্ঞাসা করলেও আরোশী বলতো যে খেতে ভালো লাগেনা , জোর করে খাওয়াতে গেলে আরূ শুধু বলে আপনি আমাকে আর ভালোবাসেন না তাই আর কিছু বলতে পারেনা আরিশ ৷
আরুশিকে অমনভাবে ছুটে যেতে দেখে আরিসের কপাল কুঁচকে গেল , মনটা আনচান করছে আরিশের, হয়তো শরীরটা খুবই খারাপ না হলে আর অমনভাবে বেরিয়ে যেত না ৷
আরিশ কপালে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামটা মুছে কনুই দিয়ে মুছে একটু কাঁপা কাঁপা গলায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,,
আরিশ ব্যস্ততার খাতিরে সকলের সামনে থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷
আরিশ চলে যেতেই স্টুডেন্টরা মুচকি মুচকি হাসছে, সবাই বলাবলি করছে ,,,
আরুশিকে কত ভালোবাসেন স্যার , আর কতো কেয়ারিং ,সবার যদি এরকম একটা হাজবেন্ড থাকতো! এই ধরনের নানান কথা সবাইকে সবাই নিজেদের মধ্যে বলা-কওয়া করছে…
গার্লস ওয়াশ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিস তবে ভিতরে ঢুকতে পারছে না, ঢুকলে একটা বাজে ব্যাপার হবে তাই বাইরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করছে ৷ কপালের ঘাম মুছতেই তা আবার পুনরায় বিন্দু বিন্দু হয়ে জমা হচ্ছে কপালে , যতক্ষণ না আরূকে নিজের চোখের সামনে ঠিক দেখছে ততক্ষণ ওর চিন্তা যাচ্ছে না….
কিছুক্ষণ পর আরোশী ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে এলো, বেরিয়ে আসতেই আরিশকে দেখল ৷
আরিশ আরুশির কাছে ছুটে গিয়ে আরুকে জরিয়ে ধরল, আশেপাশে অনেক স্টুডেন্টরাই দেখছে ওদেরকে কিন্তু সে নিয়ে আরিশ কখনও ভাবেনি’ আর কখনো ভাববেও না ৷
আরিস আরুশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর হাত ধরে ওর নিজের রুমে নিয়ে গেল ৷
আরুশিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আরুশির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো আরিস ৷ আরূশির হাত দুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে আরিশ ৷ আরুশির শরীর এখনো কাঁপছে, বমি হয়ে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে ৷ একেই খাওয়া দাওয়া করে না তার ওপর নিজের যত্নও নেয় না , যতটুকু আরিশ করে ততটুকুতেই ওর যত্ন সীমাবদ্ধ থাকে, নিজে থেকে বাড়তি যত্ন নেয় না আরোশী ৷
আরুশি চোখটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আরিশের দিকে মুচকি হেসে বলল :
আরে আপনি চিন্তা করছেন কেন , এই দেখুন আমি একদম ঠিক আছি ৷
আরিশ এবার একটা ধমক দিল আরুশিকে ৷
” সব সময় আমাকে মিথ্যা কথা বলে কোন লাভ আছে ? আমার নিজের কি সেন্স অফ হিউমার নেই যে কে সুস্থ আর কে অসুস্থ তা বোঝার ক্ষমতা আমার থাকবে না ৷
বারবার বলি নিজের যত্ন নাও ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করো তা নয়…”
আরোশী কাচুমাচু ফেস করে বলল : আপনি আমাকে এভাবে বকছেন কেন ? আর আপনি তো নেন আমার যত্ন , আপনি আমার কল্পনার থেকেও বেশি যত্ন করেন তাই নিজের খেয়াল রাখার প্রয়োজন বোধ করি না ৷
আরিশ আরুর দুই গালে হাত রেখে বলল:
তোমাকে নিয়ে আমি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি তা কি তুমি বোঝনা ! তুমি জানোনা তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না ৷ বলে আরুশির কোমর জড়িয়ে ধরল ৷
আরুশি মুচকি মুচকি হাসছে , আরিশের ব্যবহারে মাঝে মাঝে ও নিজেও চমকে যায়, ভালো লাগে অবশ্য ৷
আরিশ মাথা তুলে বললো :
চলো তোমাকে এক্ষুনি আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো ৷
ডক্টর এর নাম নিতেই আরুশির মাথায় এলো সবার প্রথমে স্যালাইনের বোতল আর ইনজেকশনের কথা, ভাবতেই ঢোঁক গিলে বলল :
আমি একদম ঠিক আছি দেখুন , আমার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই ৷
আরিস : তা বললে আমি শুনবো না , আমি যখন বলেছি তুমি যাবে তখন যাবেই ৷
আরু এবার আরিশকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো ৷
“আমি যাব না প্লিজ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না , আমার খুব ভয় করে বলে একটু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেই আরিশ ঘাবড়ে গেল , তারপর আরুকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল :
আচ্ছা যাব না , তবে তুমি প্রমিস করো ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করবে আর নিজের যত্ন নিবে ৷
” আমি বললাম তো ,আমি নিজের যত্ন নেব,এবার প্লিজ আপনি চিন্তা করবেন না , আর আপনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলেন কেন?”
আরিশ রেগে গিয়ে বলল : কানের নিচে এক থাবড় দেবো , তুমি ওভাবে চলে এলে আর আমি ওখানে ক্লাস নেব তাই না?
“সবাই কি ভাববে বলুন তো?”
কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার তুমি কি তা জানো না যে আমি কাউকে পরোয়া করিনা , যে যা ভাববে সেটা তার একান্তই পার্সোনাল ব্যাপার আমার তাতে কিছু যায় আসে না ৷
তবে আপনি এখন ক্লাসে যান, অন্তত ক্লাস টা কমপ্লিট করে আসুন ৷
আরিশ একটু ভেবে বলল :
আচ্ছা ,তবে তুমি এখানে বস যতক্ষণ না আমি আসবো ততক্ষণ কোথাও যাবেনা ৷
আচ্ছা আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি, আপনি ক্লাসটা করে আসেন ৷
আরিশ আরুর কপালে একটা কিস করে বলল: আমি আসছি কেমন , এক পাও নড়বে না, যদি এক পা ও নড়েছ তো তোমার খবর আছে ৷
আরিশ ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে, এখন ঠিক বুঝতে পেরেছে যে আরুশি কিছু না কিছু বলে ওকে ডাক্তার দেখাতে বারণ করে দিয়েছে কিন্তু বাড়ি ফিরে ও ডক্টরের চেকআপ করিয়েই ছাড়বে সে আরুশি যত বাহানায় করুক না কেন ৷
❤
সোফাতে বসে আছে আরুশি আর অনিকা খান একের পর এক বকা দিয়ে চলেছেন আরুশিকে, আরুশি শুনছে ঠিকই কিন্তু আর এক কান দিয়ে তা বার করে দিচ্ছে , কারণ ও এই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে ভাল করে চেনে এবং জানে, এটাও বোঝে যে সবাই ওকে কতটা ভালোবাসে তাই ওগুলো বলাটাই স্বাভাবিক ৷
অনিকা খান আরুশিকে বকছেন আর তখনই আরুশি ফিক করে হেসে ফেললো , ওকে হাসতে দেখেই অনিকা খান অবাক হয়ে গেল কারণ উনার এত বকাঝকা শর্তেও মেয়েটা কিভাবে হাসে সেটা উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ৷
আমি বকছি আর তুই হাসছিস , আমি কি তোকে কোন হাসির কথা বলেছি?
আরশি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল : সরি আর হাসবো না,তুমি বলো ৷
আসলে আরুশি যে আরিশ কে কিভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে পেরেছে সেটাই মনে পড়তেই খুব হাসি পেল ওর,তাই ফিক করে হেসে ফেললো….
আর এদিকে অনিকা খান আরুকে আবারো বকাবকি করেই চলেছেন ৷
এবার থেকে যদি ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া না করেছিস তো আমি তোর সব দায়িত্ব কিন্তু এবার আরিশের উপর ছেড়ে দেবো , আর যদি আরিশ তোর সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে নেয় , টেক কেয়ার করে তাহলে বুঝতেই পারছিস কি হবে তোর ৷
আরু অনিকা খানকে জড়িয়ে ধরে বলল:
ও মামনি তুমি এমন করছ কেন বলোতো, আর আমার আমাদের মা মেয়ের মাঝে উনাকে ডেকে আনার কি দরকার ? তুমি তো আমার কত যত্ন করো বলো ৷
আরু জানে আরিশ যদি ওর খেয়াল রাখতে শুরু করে তাহলে ওর আর রেহাই নেই….
❤
নিচের ঠোটটা কে দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরে রেখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে আরোশী হয়তো খুবই একটা ইম্পোর্টেন্ট জিনিস হচ্ছে ফোনে আর তা দেখায় মগ্ন ও ৷
আরিশ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো, ভেজা চুল গুলোকে হাত দিয়ে একবার ঝেড়ে নিয়ে আরুশির দিকে চোখ যেতেই দেখল আরোশী একমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে, ফোনে ঠিক কি এমন হচ্ছে যার জন্য আরুশি ওভাবে তাকিয়ে আছে তা নিয়ে আরিশের ও একটু বেশ কৌতূহল হল ৷ তবে তা দেখার জন্য আরিশ আরূশির পিছন দিক দিয়ে উঁকি মারতেই আরুশি জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো :
গেল গেল গেল, শাশুড়ি টা এবার গেল ৷ বউটা কিভাবে মারছে , কি ডেঞ্জারেস রে বাবা ৷ আরূ এসব বলেই যাচ্ছে আর. এদিকে যে আরিশ এসেছে তাতে ওর খেয়াল নেই…
আরোশী যে এমন টপিকের কিছু জিনিস দেখে তা আরিশ ও আজ দেখে খানিকটা হলেও চমকে গেছে৷ লাইক সিরিয়াসলি ! এত বড় মেয়ে এসমস্ত দেখে ? এগুলো তো ছোট ছোট পিচ্চিরা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেওয়ার জন্য ,এখন আরূ এই বউ শাশুড়ি র ঝগড়া দেখে !
এসব ভাবলেই আরিশের যেন নিজেকে পাবনা থেকে ফেরত পাগল বলে মনে হলো ৷
আরিশ আর আরুশিকে ডিস্টার্ব করলো না , ওয়ারড্রব এর দিকে এগিয়ে গেল শার্টটা আনার জন্য তখনই আরুশির গলার আওয়াজ পেতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আরুশি ছুটেছে ওয়াশ রুমের দিকে,
অরিশের আর বুঝতে বাকি রইল না যে আরু আবার বমি করতে গেছে , ও নিজেও আর দেরি না করে আরুশির পিছন পিছন ওয়াশরুমে গেল ৷
আরশির অবস্থা খারাপ বমি করতে করতে ৷
আরিশ ওর হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল৷
আরেকটা বার তুমি এখান থেকে নড়ো দেখো কি করি ৷ তুমি দাড়াও আমি এক্ষুনি ডক্টর আংকেলকে ফোন করছি ৷
প্লিজ আপনি ওনাকে ফোন করবেন না ৷
আমি তোমার কোন কথা শুনছি না বলে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ…
ইতিমধ্যেই আরুশির ভয়ে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে ৷ ইনজেকশন নামক জিনিসটা কে বড্ড ভয় পায় ও ৷ ওর মনে আছে ছোটবেলায় একবার টিটেনাস দিতেই দুদিন ওর জ্বর ছিলো তারপর থেকে ইনজেকশন এর প্রতি তীব্র ভয় ওর ৷
ডাক্তার গম্ভীরমুখে আরুর সামনে বসে আছে আর আরোশী ভয়ে মুখ কাচুমাচু করে রেখেছে ৷
ডাক্তারের মুখ দেখে কোন কিছুই বোঝা সম্ভব নয় যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন , আরু এবার ভয়ে কান্না করে দেওয়ার অবস্থা ৷
ডাক্তার গম্ভীর কণ্ঠে বলল:
তুমি কি খাওয়া-দাওয়া কিছু করো না? এত কেয়ারলেস কেন ? নিজের প্রতি যত্নশীল হও , এখনই যদি নিজের কেয়ার না করো তাহলে পরে কি হবে, তোমার শরীরে যে ছোট্ট প্রাণটা বেড়ে উঠছে তার কি হবে!
ডক্টর ঠিক কি বলতে চাইছেন তার কিছুই আরু বুঝতে পারছেনা, কারণ ডাক্তার এমন কথা এর আগে ওকে কখনও বলেনি ৷.
আমার কি খুব বড় কোন সমস্যা হয়েছে ডক্টর, প্লিজ বলুন না কাঁদো কাঁদো গলায় আরু বলল…..
ডাক্তার জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললেন : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো খবর আপনাদের পরিবারে, আপনারা দাদা দাদিমা হতে চলেছেন তুমি মা হতে চলেছ….
সানা তো খুশিতে আরুকে জড়িয়ে ধরলো, সারা পরিবারজুড়ে আনন্দের বড় বন্যা বয়ে যাচ্ছে ৷
আরিশ রুমের এক কোণে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে , ডাক্তারের মুখ থেকে এতক্ষণ এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো ও ৷ কিছু আন্দাজ করতে পারেনি তেমনটা নয় , আন্দাজ করেছিল তবে শিওর ছিল না ৷
আরুশির চোখে জল চলে এলো, এ এক অদ্ভুত প্রাপ্তি, মা হওয়ার একটা অদ্ভুত আনন্দ যে কি তা ও আজকে বুঝতে পারছে,আর এটাও বুঝতে পারছে যে এতবছর ধরে ওর মা কতটা কষ্ট পেয়েছেন ওকে ছাড়া থাকতে ৷চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই আরিশের দিকে তাকাতেই আরিশকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেই আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ তাহলে কি আরিশ এই খুশির খবরে খুশি নয় ? ও কি চায়না এই বেবিটা কে ?
এসমস্ত হাজার আজগুবি কথা আরূর মাথায় আসছে এখন ৷
আরু কাঁদছে আর এসব কথা ভাবছো তখনই অনিকা খান আরুর কাছে গিয়ে ওর কপালে ভালবাসার পরশ একে চোখের জলটা মুছে দিয়ে বললেন :
এমন খুশির দিনে কাঁদতে নেই রে মা , এ এক আনন্দের দিন ৷ কথাটা বলেই আরূকে জড়িয়ে ধরলেন….
ডাক্তার অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছেন তবে এখনও আরিশ রুমে আসছে না দেখে আরূর চিন্তায় কাতর হয়ে যাচ্ছে , তাহলে কি আরিশ সত্যিই বেবীটা কে চায় না, কিন্তু ও তো চাই এই বেবিটা কে ভীষণভাবে আর তার সাথে আরিশ কেও চায় ও ৷ দুজনকে নিয়ে একসাথে ভালোভাবে থাকতে চায় আরূ, এখন যদি আরিশ বলে নেগেটিভ কথা বলে তাহলে আরূ কি করবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ৷
গুটি গুটি পায়ে সারা বাড়িতে ঘুরেও খুঁজে খুঁজে আরিশ কে পেল না আরূ , তাহলে হয়তো ছাদে আছে এই ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়ালো ও ৷
জোসনা রাতে আকাশের চাঁদটাও তীব্রভাবে উজ্জল, মাঝে মাঝে একরাশ সাদা মেঘগুলো তাকে ঢেকে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে, তারপর আবার ক্লান্ত হয়ে সরে যাচ্ছে একে অপরের থেকে , হয়তো মেঘগুলোও অভিমান করে চাঁদের থেকে দুরত্ব বজায় করে চলছে৷
ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার উপরে চাঁদের আলো পড়ে তার সৌন্দর্যতা যেন আরো দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷ মানুষটার প্রেমে হাজারবার পড়লেও আরু কখনো বিরক্তবোধ করবে না ৷
ধীর পায়ে আরিশের কাছে যেতেই আরিস আরূশির হাতটা টেনে আরুশিকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ হঠাৎ আচমকা এ মনটা হওয়াই আরূ ও বেশ একটু ভয় পেয়ে গেল ৷
আরিস কাঁপা কাঁপা গলায় বললো :
তুমি কি ভাবলে আরূপাখি আমি বেবি টা কে চাইনা ? তুমি এটা ভাবলেই বা কি করে ৷ তুমি আর আমার বেবিটাই তো আমার জীবনের একমাত্র সম্বল যাদেরকে আঁকড়ে ধরে আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারি, বলে আরুশির কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল:
থ্যাংক ইউ আরূপাখি আমার জীবনের সবথেকে বড় সুখ এনে দেওয়ার জন্য ৷
তোমাকে না পেলে হয়তো জানতেই পারতাম না জীবনটাকে কতভাবে আর কতটা সুন্দর ভাবে রঙিয়ে দেওয়া যায় , কতভাবে একটা মানুষকে ভালোবাসা যায়, কতটা গভীর ভাবে চাইলে একটা মানুষ কে নিজের করে পাওয়া যায়….
আরিশূর কথা শুনে আরূও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, সব সময় নেগেটিভ কথাই আরূশির মাথায় আসে বারবার, আর সব সময় আরিস তা ভেঙে দিয়ে ওর ভাবনার পরিবর্তন করে দেয় ৷
আসলে আরিশ তখন ওখান থেকে চলে এসেছে কারণ খুশিতে ওর চোখে জল চলে এসেছিল আর ও নিজের চোখের জলটা কারো সামনে দেখাতে চায় না তাই এতক্ষণ ছাদে সে চোখের জল ফেল ছিল কিন্তু এ হলো খুশীর , আনন্দের, এক অদ্ভুত প্রাপ্তির ,ওর আর আরুর ভালোবাসার ফসল ৷
আসলে আরু আর আরিশ হলো একে অপরের পরিপূরক , যারা বিশ্বাস করে যে তারা একে অপরকে ভালবাসতে শিখিয়েছে ৷
এভাবেই বেঁচে থাকুক হাজার হাজার ভালোবাসা , পূরন হোক তাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নবিলাস , ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠুক সকলের জীবন,
পূর্ণতা পাক সকলের ভালোবাসা ৷
আরুশি : আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন ? আমি কি ভুল করেছি যে আপনি কথা বলছেন না আমার সাথে !
আরিস : তোমাকে অত রাত্রে গোসল করতে বলেছি আমি যে তুমি গোসল করতে গেলে! যদি এখন জ্বর কাশি হয় তখন কি হবে , তুমি তো অসুস্থ হয়ে পড়বে ৷
আরু কান ধরে : আই এম রিয়েলি সরি, আপনি তো জানেন যে আমার ওই অবস্থায় বেশিখন থাকতে ভালো লাগে না, গোসল না করলে অস্বস্তি লাগে ৷
আরিশ আগের মতোই ড্রাইভিং এ মন দিলো, আরুর উপর খুব রাগ করেছে ও , তাই এখন কথা বলার মুডে নেই ৷
আরু: আমি কিন্তু এবার কান্না করে দেব ৷
আরিস তাও কিছু বলছে না দেখে আরুশি এবার আরীশের হাত ধরে ঝাকাতে লাগলো ৷ আরিশের হাত ধরে ঝাকুনির ফলে গাড়িটা ডিসব্যালেন্স হয়ে গেল সামান্য ৷
আরিশ গাড়িটাকে কোনরকম কন্ট্রোল করে আরুশির দিকে রাগি চোখে তাকালো ৷
আরিশ : এখনই তো একটা বড়সড় বিপদ হয়ে যেতে তখন !
আরুশি কাচুমাচু ফেস করে : আপনি তো আমার সাথে কথা বলছেন না তাই আমি এমন টা করলাম, আপনি আমার সাথে কথা বললে আমি কি আর আপনার আমনভাবে হাত ধরে ঝাকালাত?
আরিশ : একদম চুপচাপ বসে থাকো না হলে এক্ষুনি গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবো মাঝে রাস্তায়….
আরুশি আরিশের ধমক শুনে একদম চুপ হয়ে গেল বাচ্চাদের মত, ও ভাবল সত্যিই হয়তো আরিশ ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে ৷
সারা রাস্তায় চুপ করে এসেছে আরু আর আরিশের ধমক খেয়ে আরিশের সঙ্গে আর কোনো কথা বলার সাহস পায়নি আরূ….
এখন প্রায় রোজই আরিশ আরুকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসে , আর কখনো কখনো আরু একা একাই আসে যখন আরিশ খুব ব্যস্ত থাকে…..
কলেজের সামনে গাড়ি এসে থামতেই আরু চুপচাপ নেমে গেলো তবে আজকে আরিশ ও গাড়ি থেকে নামল ৷ সাধারনত আরিশ গাড়ি থেকে নামে না , ওকে ড্রপ করে দিয়ে চলে যায় কিন্তু আজকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে অবাক হলো আরু ৷
আরু আরিশকে জিজ্ঞাসা করল,,,,,,
আরূ : আপনি নামলেন যে, আপনি কি আজকে ভার্সিটির ভিতরে যাবেন ?
আরুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে আরিশ এবার ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতে লাগল ৷
আরোশী অবাক হয়ে গেল কারণ আরিশ ওর কথার উত্তর না দিয়ে ভার্সিটির ভেতর যাচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক কি তা এখনো বুঝতে পারছেনা ও ৷
আরোশী আরিশের সাথে হেঁটে উঠতে পারছে না ,আরিশ অনেক ফার্স্ট হাঁটছে ৷ আরু কোনোক্রমে দৌড়ে গিয়ে আরিশের পাশে দাঁড়ালো ৷
আরুশিকে দৌড়াতে দেখে আরিশ থেমে গেল, তারপর বলল : এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি , এভাবে দৌড়াচ্ছ , যদি এখনি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো !
আরু আরিশের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে, হেসে হেসে বলল : আপনি আছেন তো আমার খেয়াল রাখার জন্য….
আরিশ আবার রাগী রোখে তাকিয়ে নিয়ে আবার হাটতে লাগল , ও জানে আরুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে ওর কাজ নেই কারণ এখন বাচ্চামো করাটা ওর স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে , আরিশ আরুর বাচ্চামোটাকেই সবথেকে বেশী ভালোবাসে তবে ওর কেয়ারলেস স্বভাবগুলো একদমই পছন্দ নয় আরিশের ৷ বয়সের সঙ্গে ম্যাচিউরিটিটা এখনো আসেনি আরুর , সবসময় আরিশকেই আরুর খেয়াল আর যত্ন রাখতে হয়….
আরুশি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশ প্রিন্সিপালের রুমের দিকে ঢুকে গেল….
ক্লাস রুমে একাএকা বসে আছে আরূ , সানা এখনো আসেনি আরাভের সঙ্গে আসবে আর কিছুক্ষণ পরেই , আর তিথি তো এখন আসতে পারবে না কারণ সবে তিন দিন হল ওর নাহিদ ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে, এখন হয়তো হানিমুনে ব্যস্ত ৷ এত সবকিছুর মাঝে আরূ বসে বসে বোর হচ্ছে ৷
আজকে যেন পৃথিবীর সবথেকে রোর জিনিস গুলো আরুর সাথে ঘুরছে ৷ প্রথমত আরিশ কথা বলছে না ওর সাথে তারপর সানা এখনো কেউ আসেনি ও হুদাই একা একা বসে আছে ৷
জানালার দিকে তাকিয়ে ভার্সিটির গার্ডেন এর দিকে নজর দিলো আরুশি, এতদিন লক্ষ্য করেনি যে ওখানে দুটো দোলনা রয়েছে, মনটা খুশি হয়ে গেল একেবারেই তা দেখে ৷ আরিশদের বাড়িতেও রয়েছে তবে তাতে বেশি উঁচুতে উঠে দোল চড়া যায় না ৷আরুর মনে পড়ল যে এইরকম একটা দোলনা আরূশির বাড়ির পিছনের আম গাছটাই ছিল যেখানে ছোটবেলায় ও বসে থাকতো আর আহান দোল দিত ওকে ৷ সবকিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোথায় যেন হারিয়ে যায় কিছুই বুঝে ওঠা যায় না….
আরুশির আর ভাবতে বাকি রইলো না যে এরপরে ও কি করবে , ভার্সিটির ক্লাস শেষ হয়ে গেলেই বেরিয়ে গিয়ে দোলনাটা চড়বে না হলে একটা ক্লাস মিস দেবে😁৷
বাইরের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে আরু তখনই পরিচিত কন্ঠের ধমক শুনে সামনের দিকে তাকালো…..
ক্লাসেয সকলেই দাঁড়িয়ে আছে শুধু ও এতক্ষণ জানলার দিকে তাকিয়ে সমস্ত আকাশ পাতাল ভাবতে গিয়ে ক্লাসে কি হচ্ছে কোন কিছুই ওর কানে পৌঁছায় নি….
দেখল যে ক্লাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আরিশ আর ওর সঙ্গে প্রিন্সিপাল স্যার ৷ আরু সে দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতেই পাশ থেকে সানা একটা চিমটি কাটলো ৷
আরূ: কিরে তুই কখন এলি ?আর এই সব কি হচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা….
আরুশি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আরিশ ধমক দিয়ে বলল : এটা কি তোমার গল্প করার ক্লাস ?
আরিসের কথা শোনা মাএই আরুর চোখদুটো যেন গোল গোল হয়ে গেল ,ও ভবছে এসব উনি কি বলছেন?
প্রিন্সিপাল স্যার আরিশের কাজ দেখে একটু মুচকি হাসলেন কারণ দুজনের মধ্যে যা চলছে তা দেখে কেউ বলবে না যে ওরা দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ….
প্রিন্সিপাল স্যার শুকনো কেশে বললেন : আচ্ছা আরিশ আমি বলি কি তুমি শান্ত হও ৷
সো স্টুডেন্ট তোমরা সবাই আরিশকে চেনো , আমাদের কলেজের ছাত্র সে ৷ আমাদের কলেজ থেকে সম্মধনা দেওয়া হল কলেজ টপার হিসাবে তার জন্য বেশ কয়েকদিন আগে একটা অনুষ্ঠানও করা হয়েছিল, আই হোপ তোমাদের সকলের মনে আছে৷
সকলে একসাথে চেঁচিয়ে অনেক জোরে বলল : ইয়েস স্যার…
সবার কথা শুনে আরু মুখ ভাংচি দিল তা শুনে ,,,,,
মনে মনে : নিজের বউয়ের সাথে যে নিরামিষ হয়ে কথা বলে না সে আমার নাকি ক্লাস টপার ৷
প্রিন্সিপাল স্যার : আরিশের কাছে একটা সুযোগ ছিল দেশের বাইরে গিয়ে প্রফেসারি করার , কিন্তু আমাদের সকলের কথা ভেবে আমাদের এই কলেজের কথা ভেবে, কলেজের স্টুডেন্ট এর কথা ভেবে আমাদের কলেজের প্রফেসর হিসেবে ক্লাস করাবে ও তোমাদের সবাইকে , আই থিঙ্ক তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না,কারন ও এলিজেবল ৷আমার কথাটা আরিশ রেখেছে তার জন্য আমি খুবই খুশি ৷
প্রিন্সিপালের কথা শুনে সব মেয়েরা আরিশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে , কারণ এত দিন আরিশের উপর সকলে ক্রাশ খেয়েছে একজন সিনিয়র হিসেবে তবে আজকে একজন টিচার হিসেবে পেয়ে এখন সবাই ওকে গিলে গিলে খাচ্ছে , যদিওবা সবাই জানে যে আরিশ বিবাহিত তবুও ক্রাশ খেতে সমস্যা কোথায়….(আমার(লেখিকার) মতো😕)
প্রিন্সিপালের কথা শুনে আরূ অবাক হয়ে গেল,এ ঝটকাটার মধ্যে থেকে বেরিয়ে ও আসতে পারছেনা ৷
সানা ফিসফিস করে বলল : মুখটা বন্ধ কর নাহলে মুখে মাছি ঢুকে যাবে তারপরে সেটা পেটে গিয়ে ভো ভো করবে ৷
সানার কথা শুনে আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে মুখটা বন্ধ করে নিল , তারপর ও সানাকে বলতে লাগল :
উনি তো আমাকে বলেননি আগে যে এই কলেজের প্রফেসর হিসেবে যোগদান করছেন ৷
সানা: সে তো আমিও জানতাম না তবে এখন বেশ ভালোই হলো, সবাই ভাইয়ার উপর crush খাবে আর তুই হাঁ করে সবার দিকে তাকিয়ে তকিয়ে দেখবি কিছু বলতে পারবি না ৷
আরূ সানার দিকে রাগি চোখে তাকালো ৷
প্রিন্সিপাল স্যার : আশা করি তোমরা সবাই ক্লাসে এটেন্ডটিভ হবে ,আর আরিশ যা যা বলবে সেগুলো ফলো করবে , কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ৷
স্টুডেন্ট : ইয়েস স্যার ৷
প্রিন্সিপাল আরিশের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে তার পরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন,,,,,,
আরিশ সকলকে বসতে বলল ৷
সবাই আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে , আরিশ আজকে একটা ব্লু কালারের শার্ট পরে এসেছে যাতে ওর সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে….
আরিশ এক এক করে সকলের নাম জানতে চাইছে, সবাই নাম বলছে ৷সানার কাছে আসতেই সানা বলে উঠলো: আমি সানা খান ৷
আরিস : ওকে বসো ৷
এবার আরুশির পালা…..
আরোশী উঠছে না, ওর এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে আরিশের উপরে কারণ ক্লাসে ঢুকেই আরিশ ওকে বকাবকি করেছে, আর তার উপরে সকাল থেকে কথা বলছে না আবার তার সঙ্গে কলেজে জয়েন করেছে সেটাও বলিনি ৷ আরু খুশি হয়নি তা নয়, খুব খুশি হয়েছে তবে সেই খুশিটা যেন রাগ দিয়ে চাপা পড়ে গেছে ৷ তাই এই মুহূর্তে মুডটা বেশ গরম আছে….
আরোশী উটছে না দেখে আরিশ বলে উঠলো : আপনাকে কি আবার ডেকে ডেকে তুলতে হবে?
আরুশি রাগি মুড নিয়ে বলল: বিনতে আরুশি রহমান ৷ অন্য সময় হলে আরুশি বলতো বিনতে আরশি খান তবে আজকে আরিশের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে বলে খান না বলে রহমান বলেছে ৷
আরিশ ক্লাস করাচ্ছে সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে ওর কথা , তার মধ্যে থেকে তাহিরা বলে মেয়েটা আরিশের দিকে অনেকক্ষণ ধরে অদ্ভুত এক নজরে তাকিয়ে আছে….
আরু ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে , দেখে খুব রাগ হচ্ছে ওর ৷ এভাবে একটা বিবাহিত পুরুষকে দেখার কি আছে সেটা ও বুঝতে পারছে না ৷
হঠাৎই তাহিরা উঠে দাঁড়ালো , তারপর আরিশকে জিজ্ঞাসা করল….
তাহিরা: sir এই আমি ইকুয়েশনটা ঠিক বুঝতে পারিনি , আপনি প্লিজ একটু বলবেন ? যদি এখানে এসে বলতেন তাহলে একটু সুবিধা হত ৷
আরিশ তাহিরার কাছে এলো , তা দেখে আরু সানাকে বলল :
দেখ তোর ভাইয়া ওই মেয়েটা ডাকতেই চলে এল, কত লুচু ছেলে একটা ৷ আবার সকলের সামনে আমাকে অপমানও করল ৷
সানা : আরু এটা ভার্সিটি , আর ভাইয়া প্রফেশনাল কাজের মধ্যে কখনো পারিবারিক সম্পর্ক কে এন্টার করতে দেয় না, তাই ভার্সিটিতে এসে ভাইয়ের থেকে এরকম ব্যবহার পাবি সেটা ভুলে যা ৷
আরিশের কথা শুনে আরু প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল…..
চোখের জল টলটল করছে , এক পলক পড়লেই হয়তো গড়িয়ে পড়বে ৷
মনে মনে ভাবছে : উনি এখন আর আগের মতো আমাকে ভালোবাসে না….
হঠাৎ করে বেল পড়ে গেল লাঞ্চের জন্য , এখন ক্লাস শেষ তাই চাইলেও আর ক্লাস নিতে পারবে না ৷
আরিশ : এবার বুঝেছো?
তাহিরা: না sir বুঝতে পারিনি এখনো ৷
আরিশ : তাহলে তুমি লাঞ্চ কমপ্লিট করে এসো ৷
তাহিরা: ওকে স্যার….
আরিস ওর রুমের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে , কখন ওখান দিয়ে আরু যাবে সেই অপেক্ষায় , বেশিই বকাবকা করে ফেলেছে ৷ লাঞ্চ টাইম বলে সমস্ত স্টুডেন্ট চারিপাশে ঘোরাঘুরি করছে…
সানা আর আরু দুজনে হেঁটে যাচ্ছে আর আরুর চোখে জল টলমল করছে ৷ সানা বুঝতে পারলেও কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারছে না কারণ ও যদি এখনও কিছু বোঝাতে যায় আরু কিছু বুঝবে না উল্টা ওকেই আরো দু’চারটা কথা শুনিয়ে দেবে ৷
আরু জানেনা যে আরিশের নতুন রুম টা কোথায় তাই আরিশের রুম পার করে যখন যাচ্ছিল তখনই হাতে হালকা টান দিয়ে হ কেউ একজন ওকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলো, এরকমই অনুভব করল আরু….
সানা দেখতে পেলে আরিশকে ৷ আরিশ ইশারায় ওকে ক্যান্টিনে যাওয়ার জন্য বললো,, আর ওরাও আসছে….
আরু আরিশকে দেখে বলল : আমার হাত ধরেছেন কেন, ছাড়ুন , আমার হাতে লাগছে , হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে ৷
আরু : আপনি আমাকে সবার সামনে তখন অপমান করেছেন , আমার দোষটা কি বলবেন ? আমি জানি তো আপনার আর এখন আমাকে ভালো লাগেনা , আপনি সমস্ত কিছু এখন আমার থেকে এড়িয়ে যান, কোন দিন হয়তো বলবেন আরুপাখি তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও ৷(কাঁদতে কাঁদতে)
আরুকে বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে ওর ঠোঁটজোড়া দখল করে নিল আরিশ ৷
বেশ কিছুক্ষণ পর আরুকে ছেড়ে দিয়ে বলল : আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথাটা কখনো মুখে আনবে না , তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্তও ভাবতে পারি না আমি , তুমি কি তা জানো না , আয আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটাও জানো তারপরও কেন এসব মুখে আনো বলোতো ৷
আরিস: কারণ তুমি খুব অমনোযোগী তাই , তুমি কি জানো তুমি যখন অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলে তখন আমি আর sir আসতেই যখন সবাই যখন উঠে দাড়াল,তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলে তাই সবাই তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল….
আরোশী : আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করার কি আছে? আমাকে দেখে কি হাসি পাই ?
আরিশ : তুমি তো আমার আরুপাখি, তোমাকে দেখে কেন হাসতে যাবে ৷
ওরা তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল😍৷
আরিশ : আমি তো ওদের ক্রাশ তাই না ! আরুর দিকে চোখ মেরে ৷
আরু রাগি চোখে আরিশের দিকে তাকালো,,,
আরু: খবরদার এসব কথা দুবার মুখে আনলে আমি আর আপনাকে আসত রাখব না ৷
আরিশ ভ্রু নাচিয়ে : কেন হিংসা হয় বুঝি ?
আরু আরিশকে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে : তা হবে কেন , আমিও তো ভাবছি একটা নতুন করে প্রেম করব , কি ভাল হবে তাইনা….
আরিশ: তুমি করলে আমিও করতে পারি ৷
আরু আরিশের কলার ধরে : সে কথা ভুলেও ভাববেন না , বলে আরিশ কে জড়িয়ে ধরলো আর আরিশ ও পরম আবেশে আরিশকে জরিয়ে ধরল….
❤
একটা কফিশপে বসে আছে আরিশ , আর তার সামনে বসে আছে আহান….
আহান: তুমি আরূকে সমস্ত সত্যি কথা বলেছো?
আরিস : আমি এখন ওকে সমস্তটা বলিনি তবে কালকে বলবো ৷
আহান চিন্তিত হয়ে : না জানি ওর মনের ওপর দিয়ে কতটা প্রেসার যাবে যখন সমস্ত টা জানাবে ৷
আরিশ: চিন্তা করবেন না ভাইয়া, আপনার বোনের সারা জীবনের দায়িত্ব যখন নিয়েছেন তখন ওর দুঃখটাকে নিজেও ভাগ করে নেব আর নিজের সমস্ত সুখ টাকে উজাড় করে দেব ৷ কালকে ওর সব আমি ওকে ফিরিয়ে দেবো আমি যা ওর প্রাপ্য ৷
আহান : আমার বাবা এতদিন ধরে এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন তবে আরুর এই কুড়িতম জন্মদিনের কথা বলতেন বারবর তবে তার পিছনে যে এতটা কুৎসিত একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা যদি আমরা আগে জানতাম তাহলে এতটা খারাপ পথে ওনাকে এগোতে দিতাম না ৷
আরিশ : ওনার জায়গায় উনি ঠিক ভাইয়া,আজকাল কে চাই বলুনতো একটা বাইরের মেয়েকে নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি দিতে ৷
আহান: তুমিও একথা বলছ?
আরিশ মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল : এটা ওনার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে আমি কথাটা বলছি , আর আমিও চাইনা যে আরূপাখি অন্য কারোর সম্পত্তি নিক ৷তার কোন প্রয়োজনই নেই, আমার যা আছে তাতে ওর চলে যাবে ভালোভাবেই , আর আশাকরি ভবিষ্যতে আমার সন্তানের কোন অসুবিধা হবে না….
আমি নতুন সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি , আরুপাখি সই দিয়ে আপনাকে আপনার সমস্ত সম্পত্তি টা দিয়ে দেবে ৷
আহান : কিন্তু আমার ওই সম্পত্তি চায়না ৷
আরিস : কিন্তু ভাইয়া ওটা আপনার প্রাপ্য অধিকার, তাই না চাইলেও আপনাকে তা নিতে হবে , আমি চাইনা আমার আরুপাখি কোন খারাপ কাজের তকমা লাগিয়ে ঘুরুক, সেটা আপনি হয়তো না মানলেও আপনার বাবা সারা জীবন এটাই বিশ্বাস করবেন ৷ তাই উনি যা চাইছেন সেটাই পূরণ করবো আমি ৷
আহান চুপ করে আছে মাথা নিচু করে , ওর বাবার করা কাজকর্মের কারনে ও খুবই লজ্জিত , এখন আরিশকে ভরার মতো আর মুখ নেই ৷
আরিশ : ভাইয়া কালকে আপনি আর মামনি কালকে আসবেন আমাদের বাড়িতে আরূর জন্মদিন উপলক্ষ্যে , যতই হোক আপনারা ওর নিজের মানুষ ৷
আহান: নিজের মানুষ আর হতে পারলাম কই, নিজের মানুষ হলে ওকে খারাপ মানুষদের থেকে রক্ষা করতে পারতাম ৷
আরিস : আপনারা দুজনেই হলেন এমন একজন যারা ওকে এতদিন ভালোবেসে এসেছেন, ওকে ভালোবেসে বড় করে তুলেছেন, তাই নিজেদেরকে একটা মানুষের খারাপ কাজের কারণে ছোট ভাববেন না ||
আহান আরিশের হাতে নিজের হাতটা রেখে বলল : আমার বোনকে তুমি ভালো রেখো , ছোটবেলা থেকে কখনো খারাপ মানুষের ছায়া লাগতে দেই নি আমি , ওর সাথে কথা না বলে আমি নিজেও কষ্ট পাই ৷
আরিস : ভাইয়া আপনি কোন চিন্তা করবেন না আরূপাখিকে নিয়ে , আর কালকে একটু তাড়াতাড়ি আসবেন ,ও নাহলে মন খারাপ করবে ৷
❤
সন্ধ্যাবেলায় আরুশিকে নিয়ে আরিশ ওদের ফার্ম হাউসে চলে এসেছে ৷ আরুশিকে একান্তে জন্মদিনের শুভেচ্ছাটা ভালোবেসে জানাতে চায় , আর তার সঙ্গে নিজের সমস্ত ভালোবাসার প্রকাশ করতে চাই ৷
সুইমিং পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে দুজনে , আরিশের কাধে মাথা রেখে যেন অদ্ভুত এক শান্তি পাচ্ছে আরু…..
আরু: হঠাৎ আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন আপনি?
আরিশ: ইচ্ছা হল তোমার সাথে একান্ত সময় কাটানোর সেই কারণে ৷
আরিশ : আমি ভাবছি আবার একবার বিয়ে করবো ৷
আরিসের কথা শুনে আরূর বুকের ভিতর ধক করে উঠল , তার মানে কি সত্তিই ওকে ছেড়ে দেবে?
পরমূহূর্তেই আরু সরে এলো আরিশের থেকে ৷
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল : আরে পাগলি আমাদের আবার বিয়ের কথা বলছি ৷ তোমার সাথে ভাবছি আবার বিয়ে করবো, বলে আরুকে আবার নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল ৷
আরু যেন এবার প্রাণ ফিরে পেল , আরিশের বুকে মাথা রেখে চোখটা বন্ধ করে নিল ৷আর হাত দিয়ে আরিশের শার্ট খামচে ধরে বললো : কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না তাহলে সেদিনই আমি ….
আরিশ আর আরূকে বেশি কিছু বলতে দিল না, আরুশি ঠোঁট দুটোকে আকড়ে ধরল পরম আবেশে….
চলবে,,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:35
#Suraiya_Aayat
একটা কালো কাপড় দিয়ে আরুর চোখটা বেঁধে আরিশ আরুর কে সামনের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর আরুর যেহেতু চোখটা বাধা তাই আরিশ ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে , আর এরপরই বা কি হতে চলেছে সেগুলো ওর ধারণার বাইরে, ওর যে আজ জন্মদিন সেটা ওর মনে নেই যদি মনে থাকত তাহলে বুঝতে পারতে যে আরিশ ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এমনটা করছে, কিন্তু বরাবরের মতই আরু তো একটা বলদ 😒 ৷
আরূ চোখে হাত দিতেই আরিশ বলে উঠলো : একদম নয় আরুপাখি, আমি যখন তোমাকে চোখ খুলতে বলবো তখনই তুমি চোখ খুলবে তার আগে নই….
আরু : আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বলবেন তো, না হলে আমি বুঝবো কি করে !
” তোমাকে যদি এখন বলি তাহলে এভাবে আনার মানে কি? আর এত কথা বলার কি আছে , একটু চুপ করো,আর একটু পরেই তো সবকিছু দেখতে পাবে ৷”
আরূ বুঝতে পারল যে আরিশ নাছোড়বান্দা , ওকে কোনমতেই বলবে না তাই ও শান্তশিষ্ট মেয়ের মতো চুপ হয়ে গেল ৷
আরিশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে আর ক্রমাগত কাউন্টডাউন করছে,,,3…..2……1…..
তারপরে আরুর চোখটা খুলে দিতেই হঠাৎ করে কানে তীব্র একটা আওয়াজ ভেসে এলো….
শব্দটার উৎস খুঁজতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো বড় বড় অক্ষরের বাজির আলোতৈ লেখা আছে❤” হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি”❤,আর তার সঙ্গে অজস্র সাদা আর লাল রঙের বেলুন আকাশে উড়ে যাচ্ছে ৷
অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য , এমনটা আরু এর আগে কখনো দেখেনি….
আরিস আরুর কাঁধে চুমু দিয়ে বলল :
হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি , আমার ছোট্ট আরুপাখি আজ 20 বছরে পা রাখলো ৷
আরিসের থেকে এরকম একটা সারপ্রাইজ পেয়ে আরুর চোখে জল চলে এলো , কখনো এসব কল্পনাও করেনি , তারপরে আরু আরিশের দিকে ঘুরে তাকালো…
আরু ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলল : আপনি আমার জন্য এতটা,,,,,
এরপর আর কিছু বলতে পারল না আরিশ আরুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে বলল:
একদম এমন কথা বলবে না আরুপাখি , তোমার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো ? আমার কি আর দশটা পাঁচটা বউ আছে যে তাদের জন্য আমি করবো, তুমিই তো আমার সব বলে আরুকে জড়িয়ে ধরল…
আরিশ আরুকে নিজের সাথে আরও জোরে চেপে ধরল : একদম কাঁদবে না আরুপাখি, তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না….
আরিশ এর কাছ থেকে ও ওর জীবনে নতুন করে বাঁচতে শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছে, জীবন টাকে কিভাবে সঠিক পথে আর আনন্দ করে সবার সাথে কাটাতে হয় সেটা ও আরিশকে ভালোবেসে বুঝেছে ৷
আরু এখনো কেদেই চলেছে আরিশের বুকে,,,
আরিশ এবার আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো : আরুপাখি দেখো এখন 12:05,অলরেডি 5 মিনিট তুমি এভাবেই কেদে কেদে কাটিয়ে ফেলেছ, এবার কেকটাও তো কাটতে হবে নাকি, তারপর তোমাকে আবার অনেক অনেক আদরও করতে হবে তাই আর দেরী করা ঠিক হবে না….
আরিসের কথা শুনে আরু লজ্জা পেয়ে গেল, তারপর আরিশকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল : আপনি কেন সবসময় এভাবে আমাকে এমন কিছু বলে লজ্জা দেন বলুন তো….
আরিশ চোখ মেরে বললো : শুধুই কি বলি,কিছু কি ,,,,,,
আরু আরিশের মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে ৷
“আপনাকে বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি৷”
আরিশ আরুর কথা শুনে হাসতে লাগল তারপর আরুর হাত ধরে সামনের টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল যেখানে কেক রাখা রয়েছে…..
টেবিলের কাছে যেতেই হঠাৎ করে আরিশ আরুর সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল ৷
হঠাৎ এমন একটা সময়ে এই কাগজটার কি তাৎপর্য সেটা বুঝতে না পারে আরু আরিসকে জিজ্ঞাসা করল: এটা কিসের কাগজ?
আরিশ আরুর হাতে পেনটা ধরিয়ে দিতে দিতে বলল: এখানে একটা সই করে দাও ছোট্ট করে ৷
আরু: আমার সই কেন লাগবে?
আরিশ আরুর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলল : বিশ্বাস করো তো আমাকে?
” নিজের থেকেও বেশি”, বলে কাগজটায় কি লেখা আছে তা না পড়ে আরু সিগনেচার করে দিল৷
আরিশ আরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল: আমি চাই না কখনো কারো খারাপ আঁচ তোমার গায়ে লাগুক তাই সকল খারাপের থেকে সারা জীবন এভাবেই আগলে রাখব তোমায় , কোনো খারাপ কাজের তকমা তোমাকে পেতে দেব না ৷
“আপনি কি এত ভাবছেন ?’
আরুর কথাই আরিশের ধ্যান ভাঙ্গলো , তারপরে আরিশ বলল : তেমন কিছু না আরুপাখি,এটাই ভাবছিলাম যে তোমার বয়স এখন 20 তাহলে আমাদের বেবিও তার আম্মুর থেকে প্রায় কুড়ি,তারমানে আমাদের বেবি তোমার থেকে20 বছরের ছোট হবে,আমার থেকে আরো 26 বছরের ছোট হবে,তুমি আমার থেকে 6 আর আমি তোমার থেকে 6 এর ছোটবড়ো মানে অলসেট ৷ বলেই আরিশ হাসতে লাগলো ৷ আসলে ও আরূকে কনফিউজড করার জন্য এমনটা বলল ৷
আরিশ কি বলল তা আরুর মাথার উপর দিয়ে গেল, কথায় কোনো লজিক নেই , আউলাঝাউলা কথাসব৷
আরিশ কি বললো আরু আর কানে নিল না কারণ সত্যিই কথাটাই কোনো লজিক নেই , যে তা থেকে বুঝে কোন মানে বার করবে আরু ৷
” আচ্ছা আর বেশি দেরি না করে ম্যাডাম আপনি এবার কেকটা কেটে ফেলুন ৷”
“আপনিও আমার হাতে ধরবেন, “আরিশ আরুর কথা রাখতে ছুরিটা আরূর সাথে ওউ ধরলো ৷
কেকটার দিকে আরুশি এতক্ষণ নজর দেয়নি , কিন্তু যখন সেদিকে তাকালো অবাক হয়ে গেল খুব কারণ কেকটার ওপরে আরুর একটা ছবি রয়েছে যেখানে আরু পাউট করে একটা পোজ দিয়েছে সে রকমই৷ ছবিটা আরুর খুব পছন্দের, ছবিকাকে আরো কিউট লাগছে কেকটার ওপরে দেখতে ৷
এরপর দুজন মিলে কেক কাটলো….
দুজন দুজনকে খাইয়ে দিয়ে আরিশ আরুশির কোমর ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো ৷
” আমি জানিনা তুমি কি মনে করবে, তবে আমি আজ তোমার জন্য কোন গিফট নিয়ে নি আরুপাখি ৷”
আরু আরিশের গালে স্পর্শ করে বলল :
আমার আবার কিসের গিফটের দরকার , যেখানে আপনি নিজেই আল্লাহর দেওয়া আমার সর্ব শ্রেষ্ঠ উপহার , আপনাকে পেয়েই আমি খুশি আর কিছু চাইনা আমার ৷
আরিশ মুচকি হাসলো , তারপর আরুর হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল…..
পিছন থেকে একটা মিউজিক বাজতে লাগলো ৷
“একদিন আকেলে থে হাম তুম….
তুম মূঝমে মে ,মে তুমমে তুম ,
একদিন আকেলে থে হাম তুম,
তুম মুঝমে,মে তুমমে তুম,
মেরে কানোমে আহিসতা সে,
উস রোজ কাহাথা যো তুমনে,
কিসি ওর সে না বো কেহনা,,,,,
তুম মেরে হো,মেরে রেহনা,
তুম মেরে হো মেরে রেহনা,
তুম সাথ মেরা হার দাম দেনা
তুম মেরে হো,মেরে রেহনা….”
গানের সাথে সমান তালে নাচছে দুজন , আর দুজন দুজনের মাঝে যেন হারিয়ে গেছে…
গান থামতেই আরূ নিজেই আরিশের ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল, এই দ্বিতীয়বারের মতো আরূ নিজে থেকে আরিশকে ভালোবাসছে, আর আরিশ কোনোভাবেই তা ফিরিয়ে দিতে চায় না…..
❤
” মামনি আর কত খাওয়াবে বলো তো , সেই থেকে খাইয়েই যাচ্ছ আমাকে , এবার তো আমি পুরো ফুটবল হয়ে যাব, প্লিজ মা মণি আর না ৷”
” নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস, কি অবস্থা চেহারাটার,আর এর উপরে আবার একটা নাতি-নাতনি আসলেই উল্টে যাবি তখন কি হবে বলতো, তোকে সামলাবো নাকি তাকে সামলাবো কোনটা?”
কথা গুলো শুনতেই আরু চুপ হয়ে গেল ৷ এই একটা জিনিস নিয়ে কোন কথা হলেও আরু আর কোন কথা বলে উঠতে পারে না , খুব লজ্জা পায় ও ৷
আরু চুপ হয়ে গিয়েছে, অনিকা খান ওকে খাওয়াচ্ছেন আর ও মুখ বুজে সব খেয়ে নিচ্ছে না হলে আবার লজ্জায় পড়বে ওনার কথা শুনে ৷
আরুকে চুপ থাকতে দেখে অনিকা খান মুচকি মুচকি হাসছেন সানার দিকে তাকিয়ে হাসছে ৷
” তা এই যে আপনার জন্মদিন , তার ট্রিট কোথায়?”
আরু সানার দিকে অবাক চোখে তাকালো ,,,,,
” কিসের ট্রিট ? কবেকার ট্রিট?জন্মদিন তার জন্য আবার ট্রিট দিতে হয় ! কোথায় তুই আমার একটু কেয়া করবি, তা না !”
“সত্যিই তো , তোর খেয়াল রাখা উচিত ওর, আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুখবর আসতে চলেছে আমাদের পরিবারে ৷”
আরু কথাটা শুনেই মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল, সত্তিই ওদের পরিবারের একজন সদস্য বাড়তে চলেছে তবে তা খুব শীঘ্রই, কিন্তু আপাতত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সঠিক নই আরু নিজেও…
❤
অনেকক্ষণ ধরে আরিশ ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে মানাচ্ছে যাতে তারা আজকে আরুর জন্মদিনে যায়….
” আজ আরু যদি আজ আপনার নিজের মেয়ে হতো তাহলে কি আপনি যেতেন না ?”
কথাটা শুনে রেজওয়ানা আহমেদ কেঁদে ফেললেন , করে কারণ আজকের দিনেও যে তার মেয়ের জন্মদিন ছিল ৷ এরকমই একটা দিনেই তিনি তার মেয়েকে হারিয়েছিলেন সে কথাটা বারবার চোখে ভাসছে ৷ চোখে জমে থাকা জল নিয়ে ঝাপসা চোখে দূরে ফ্রেমে বাঁধানো বাচ্চাটার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন : দেখো বাবা তোমাকে আমি কি করে বোঝাই যে আজ নয় অন্য দিন যাবো আমরা ৷
” তা আমি জানিনা তবে আপনারা না গেলে আরূপাখি খুবই কষ্ট পাবে ৷”
আজিজ আহমেদ রেজওয়ানা আহমেদের কাঁধে হাত রেখে বললেন: ছেলেটা তো ঠিকই বলছে, আজ নিজের সন্তানের কাছে নেই বলে অপরের সন্তানের খুশিতে শামিল হবো না সেটা কি করে হতে দেই বল , যতই হোক সেও একটা সন্তান ৷”
রেজোয়ান আহমেদ চোখটা মুছে আরিশের দিকে তাকিয়ে বললেন : আচ্ছা বাবা আমরা যাব ৷
” শুধু আপনারা দুজন গেলে হবে না , আপনাদের গোটা ফ্যামিলিকে যেতে হবে তার সাথে আয়ুশিকেও৷”
বলে আরিস আয়ূশির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল , আর পকেট থেকে চকলেটটা বার করে আয়ূশির হাতে দিল ৷
চকলেটটা আয়ূশির হাতে দিতেই খুব খুশি হলো ও, আর আরিশের গালে চুমু খেলো…..
রেজওয়ানা আহমেদ (মনে মনে):মেয়েটা বড়োই ভাগ্যবতী যে এমন একজন স্বামী পেয়েছে ৷ আল্লাহ সবসময় ওদেরকে ভালো রাখুক ৷ আমিন ৷
আরু আরিশের হাত ধরে কিছুটা এগিয়ে গেল সামনের দিকে তারপর কিছুটা ভিড়ের মাঝে যেতেই আরিশের হাতটা ছেড়ে দিল….
আরু আরিশের হাতটা ছেড়ে দিতেই আরিশ আরুর দিকে তাকাল,,,,,
আরিশ : কি হলো আরুপাখি হাতটা ছেড়ে দিলে যে! বাকিটুকু কি আমার সাথে চলবে না ?
আরোশী মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল : জীবনের সফলতার এতটা পথ যখন নিজে একাই চলে এসেছেন তখন সাফল্য অর্জনের সময় সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা আপনারই থাক , তাই আপনি একাই যাবেন ৷
আরিশ আরুর কথা শুনে মুচকি হেসে আরুর হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরল তারপরে বলতে লাগলো,,,,,
জীবনের সফল হওয়ার যখন চেষ্টা করেছি তখন আমি হয়তো একা ছিলাম কিন্তু সফলতায় চূড়ান্ত শিখরে গিয়ে আমি তোমাকে পেয়েছি তাই মাঝপথে এসে তোমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে কাপুরুষের মত একা একা সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা নেওয়া আমার স্বভাব এর মধ্যে পড়ে না ৷
যাদের যা প্রাপ্য তাদেরকে তার সম্পূর্ণ মর্যাদাটুকু দিতে আমি কখনোই দ্বিধাবোধ করব না , সে তুমি হোক আর যেই হোক….
আরিশ যে আরুর প্রকৃত জীবন সঙ্গী তা আগেই বারবারই প্রমাণ করে আরিশ ৷ কেবল কথাতেই নয় কাজেও তা বারবার প্রমাণ করেছে তা ৷ ও জানে যে আরিশ স্বার্থপরদের মত নয় যারা জীবনে সফলতা পেয়ে সকলকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যর চোখে দেখবে ৷
হঠাৎ আরিশ আরুশিকে বলল : আমাকে কি আজকে কি খুবই সুন্দর লাগছে আরুপাখি ? মানে মেয়েরা কি আজকে আমাকে দেখে পাগল হয়ে যাবে? (ইচ্ছা করেই বলল)
আরুশি আরিশের পাশে গিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল ৷
আরু: এই হাত যখন একবার ধরেছি তখন অন্য সকল হাতের স্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রাখবো, তাই সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন ৷
আরিশ: দেখেছো তুমি এই সহজ কথাটাকে কত সহজ ভাবে বুঝলে কিন্তু আমার সাফল্যের ব্যাপারটাকে নিয়ে তুমি কত জটিলতা সৃষ্টি করলে !
আরু মুচকি হেসে বললো :চলুন ৷
আরিশ আরুর নাকটা টেনে দিয়ে :চলো আরুপাখি ৷
আরিশ আরুর হাতটা ধরে ওকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল , সবার ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে , বুঝতে পারছে যে ৷ দুজনের মধ্যে কোন একটা সম্পর্ক আছে ৷
কে কি ভাবলো তাতে বরাবরই দৃষ্টিপাত করে না আরিশ, তাই আজকেও ওর দিকে কে কিভাবে তাকিয়ে আছে তা নিয়ে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই….
আফজাল সাহেব : এতক্ষণ কোথায় ছিলি ? সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য , প্রোগ্রামটাও থেমে রয়েছে ৷
আরিশ : আসলে বাবা অফিসের একটা কাজ এ গিয়ে লেট হয়ে গেছে সেই জন্য….
প্রিন্সিপাল স্যার : এবার আমরা আমাদের অনুষ্ঠান শুরু করতে চলেছি, আরিশ ও ইতিমধ্যে চলে এসেছে৷
প্রিন্সিপাল স্যার : এবার আমরা মঞ্চে ডেকে নেব আমাদের কৃতি ছাত্রকে যার জন্য এই বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন….
সঙ্গে সঙ্গে করতালির আওয়াজ আরুর কানে ভেসে এলো ৷
এত জোরে করতালির আওয়াজ শুনে আরু শিউরে উঠল , এক টানটান উত্তেজনাময় মুহূর্ত যেখানে পরিবারের সকলেই আজ গর্বিত আরিশ কে নিয়ে ৷
আরিশ স্টেজের উপরে উঠতেই একটা মেয়ে এসে হাতে একটা ফুলের তোড়া দিয়ে গেল,
আরিসের মুখে সেই মন মাতানো হাসি যা দেখে যে কেউ পাগল হয়ে যেতে পারে ৷ এমনিতেই আরিশ অত্যন্ত সুন্দর তার ওপরে পাঞ্জাবীটাও মানিয়েছে বেশ ,আর অগোছালো চুল গুলো আরু কিছুটা পরিপাটি করে দেওয়াতে আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে ৷
প্রিন্সিপাল স্যার :আরিশ আমাদের কলেজের কৃতি ছাত্র , আমি সত্যিই গর্বিত আজ এরকম একজন স্টুডেন্ট কে পেয়ে ৷ এরকম চূড়ান্ত ফলাফল আজ অব্দি আমরা খুব কমই পেয়েছি চেষ্টা করব যেন ভবিষ্যতে আরিস এর মত স্টুডেন্ট আরো বানাতে পারি…
আমি এখন চাই আমাদের কৃতি ছাত্র আরিশ সে এখন যেন সবাইকে উদ্দেশ্য করে তার জীবনের এই সাফল্যের চাবিকাঠির আসল রহস্যটা সকলকে জানাই…বলে মাইক্রোফোনটা আরিশের হাতে ধরিয়ে দিলেন ….
মাইক্রোফোন টা হাতে নিতেই আরিশ কোনরকম ইতঃস্তত বোধ করলো না নির্বিঘ্নে নির্দ্বিধায় বলতে লাগলো,,,,,
আরিস: জীবনের লক্ষ্য টা হলো একটা বিরাট যুদ্ধের মাঠের মতো যা অনেক বড়, তাকে প্রশস্ত করার জন্য নিজের সম্পূর্ণ প্রচেষ্টাই দরকার হয় ৷ আজকে আমি সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছি এর মানে এটা নয় যে আমার জীবনের লক্ষ্য সকলের থেকে আলাদা , তা নয়, আমিও একজন সাধারন মানুষ এর মতই যে নিজের পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সমানতালে মেতে থাকে ৷ পরিবারের সাপোর্ট টা হলো সব থেকে বড় জিনিস যা কেউ হয়তো পাই আর কেউ হয়তো পায় না , তবে আমি খুবই লাকি আমার পরিবারে প্রত্যেকটা সদস্যকে পেয়ে , তারা আমার জীবন টাকে রঙিন করে দিতে সমানভাবে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে , তাই আমি চাইব আমার এই সাফল্যের দিনে আমার আনন্দের সঙ্গে তাদেরকেউ সামিল করতে ৷ তাই আমি চাই তারা যেন স্টেজে উঠে আসেন….
আরিশ ডাকামাত্রই একটা স্টুডেন্ট ওদের সকলকে নিয়ে গেল স্টেজ এর কাছে , আরু যেতে না চাইলে সানা আরুর হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে গেল ৷
স্টেজে সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে আর আরু সানার পিছনে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে….
আরিশ আবার বলতে শুরু করল ,,,,,,
মা বাবা জীবনের সবথেকে বড় একটা অংশ , ছোট থেকে তারাই লালন-পালন করেছেন , সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন তাই তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার মতো চূড়ান্ত পাপ আমি কখনো করতে চাইনা ,তারা আমার সব ৷ এটা হল আমার বোন সানা , সানা কে উদ্দেশ্য করে ,,, আমার জীবনের একটা অংশ যে সব সময় আমার জীবনটাকে ঝলমলে করে রেখেছে ৷
আর লাস্ট বাট নট দা লিস্ট, বলে কিছুটা হেঁটে গিয়ে পিছন থেকে আরুর হাতটা ধরে সামনে এনে সাইট থেকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে ৷ আরিশ ওকে চেপে ধরে আছে আর সমস্ত শরীরটা যেন কাঁপছে , সত্যিই আরিশ ওর জন্য এতটা করতে পারে তা আজ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না ৷
আরিশ : ইনি হলেন আমার ওয়াইফ বিনতে আরশি খান , আমার জীবনের সবথেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ৷ যাকে আমি চাইলেও কখনো নিজের থেকে আলাদা করতে পারবোনা ৷ কিভাবে একটা মানুষকে ভালবাসতে হয় তা আমি আমার আরুপাখির থেকেই শিখেছি , আর জীবনের শেষ সময় অব্দি আমি তারই হাত ধরে চলতে চাই ৷
আরূর চোখটা ছল ছল করছে আরিশের কথা শুনে,না পেরে আরূ সকলের সামনে আরিশকে জড়িয়ে ধরল , আর কেঁদে দিল ৷
চারিদিক থেকে হাততালির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, কলেজের ছেলে গুলো কেউ কেউ সিটি দিচ্ছে , নানান উৎসাহ জনিত কথা বলছে ৷
জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে এত বড় পাওয়া আরূর জীবনে পূর্ণতা এনে দিয়েছে….
❤
ছাদের উপরে আরোশী বসে আছে দোলনায় আর আরিশ পিছন থেকে ওকে দোল দিচ্ছে….
আরুশি এবার উঠে গিয়ে আরিশের হাত ধরে আরিসকে ও দোলনাতে বসালো….
শক্ত করে আরূ আরিশের হাতটা ধরে বলল : আপনি আমাকে এত ভালবাসেন কেন বলুন তো?
আরিশ আরূর নাকে হালকা করে কিস করে বলল : তোমাকে দেখেই আমার ভালবাসতে ইচ্ছে করে তাই আর না ভালবেসে পারি বল !
আরূ: আমি কিন্তু মজা করছি না, আমি সত্যি কথা বলছি , বলুন আপনি কেন এত ভালবাসেন আমাকে?
আমার মধ্যে আপনি এমন কি পেয়েছেন যাতে আপনি আমার প্রেমে পড়েছেন, আমার থেকেও তো আরো অনেক ভালো আর সুন্দরী মেয়ে আছে ৷
আরীশ: আমি তোমাকে ভালোবাসি কারণ তুমি সবার থেকে আলাদা…
আরুশি: যেমন,,,,
আরিশ : এই যে কদিন পরেই তুমি আমার বাবুর আম্মু হবে তাই ৷(চোখ মেরে)
আরূ বুঝতে পারল যে আরিশ এখন লজ্জা দেওয়ার জন্য ওকে এসব কথাই বলবে , তাই দরকার নেই ওর উত্তর জানার তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল : নাহিদ ভাইয়া কে আপনি অফিসে কাজ দিয়েছেন তাই না?
আরিশ: কই নাতো৷
আরোশী : আপনি যতই বলুন যে না,আমি জানি যে আপনিই জবটা দিয়েছেন ৷
আরিস একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল : হ্যাঁ দিয়েছি কারণ ওনার এটার বড্ড দরকার ছিল ৷ জবটা না থাকলে ওনাকে নিজের ভালবাসার মানুষকে হারাতে হবে আর আমি তা কি করে দেখি বল ৷
আরু: কিন্তু আপনি নাহিদ ভাইয়াকে চিনলেন কি করে?
আরিস: মনে আছে সানা যেদিন ঘুরতে গেছিল সেদিনের কথা! তুমি বোর ফিল করছিলে আর তোমাকে বাড়ির গেটের সামনে ড্রপ করে আমি বেরিয়ে গেলাম নাহিদ ভাইয়া কে খোঁজার জন্যই গেছিলাম , অবশেষে উনাকে পেলাম ৷ সবকিছু জানার পর এক মুহুর্তও ভাবলাম না আর সিদ্ধান্ত নিতে তাই ওনার জব টা দিয়েদিলাম অফিসে , আর এরপরেও যদি তিথির বাড়ি থেকে না মানে তাহলে আমি নিজের দায়িত্বে ওদের বিয়ে দেবো ৷
আরূ: আপনি কত ভাবেন সবার জন্য , বলে আরিশের কাধে মাথা রাখলো ৷
আমাকে এভাবেই সারা জীবন ভালোবেসে যাবেন৷ আমি আর কিছু চাইনা….
আকাশের উজ্জ্বল চাঁদটার দিকে তাকিয়ে মুচকি আরিশ হাসলো…. চাঁদটাও যেন আজ সমানতালে ওর সঙ্গে খুশি ৷
চলবে,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:33
#Suraiya_Aayat
সকালবেলা আরূ রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে, যদিওবা অনিকা খান নিজেই বানাচ্ছে আর আরু কেবল হাতে হাতে হেল্প করে দিচ্ছে , কারণ আরূ কিছু করতে চাইলেও অনিকা খান করতে দেন না ওকে সেই কারণে ৷
আরু ওঠার সাথে সাথেই আরিশকে ডেকে দিয়েছিল, তারপর দুজনের কিছু খুনসুটি চলার পর আরু নিচে নেমে এল আর আরিশ এখন ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে…..
কিছুক্ষণ পর আরিশ নিচে নেমে আসতেই দেখল পরিবেশটা সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ , সকলে সেখানে উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনো কথা বলছে না ৷ সকলের মাঝে দেখতে পেল ওর খালাম্মা রেনু খান আর রাইসাকে , তবে হাতে রয়েছে লাগেজ….
তার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে গাড়ির ড্রাইভার ৷সে হয়তো সেগুলো গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছে….
আরিশ রাইসা আর ওর খালাম্মুকে দেখে কৗতুহল নিয়ে বলল:হোয়াট আ সারপ্রাইজ !তোমরা কখন এলে?
রাইসা কিন্তু কিন্তু করে বলল : আমরা কালকে রাতেই এসেছি তোর এমন খুশির খবর শুনে তবে তুই ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিলি আর সারাদিনের ধকলে ক্লান্ত ছিলি তাই আর তোকে ডাকলাম না, যদিও বা আমাদের আসতেও অনেকটা দেরি হয়েছিল ৷
রেনু খান কিছুটা রেগে আছেন তা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিন্তু কি কারণ সেটা বুঝতে পারছে না ৷ তাহলে এতক্ষণে কি আরুশিকে নিয়ে আবার কোন ঝামেলা করলো উনি?
তখনই আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে দেখল আরূশির মুখটা বেশ খুসি খুসি তার মানে এমন কিছু হয়েছে যে আরুশি তাতে খুব খুশি , কিন্তু কি হয়েছে সেটা এখন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে , কেউ কিছুই বলছে না সকলেই নিস্তব্ধ প্রায়….
আরিস : তাহলে তোদের হাতে এত লাগেজ কেন? তোরা কি আবার কোথাও যাচ্ছিস আবার?
রেনু খান মুখ বেকিয়ে বললেন আরুশিকে উদ্দেশ্য করে,,,,
তোর বউয়ের জন্য আর থাকতে পারলাম কই , ওর জন্যই তো আমার মেয়ে এত অপদস্থ হয়েছে, বারবার ওকে হেনস্ত করেছে আর সেই দুঃখেই তো আমার মেয়েটা চলে যাচ্ছে ,নাহলে তুই তো জানিস যে ও তোকে কতটা চাই !
রাইসা হাতের ইশারা করে ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল : আহ মা তুমি থামবে, এসব কথা কেন তুমি শুরু করলে আবার ৷ আর যেটা সত্যি সেটা কেন বলছোনা, আমার এখানে ভালো লাগছে না তাই আমি থাকছি না এটাই ৷ সব থেকে বড় কথা হলো যখন ভালো লাগবে তখন আবার আসব ৷
হয়তো সেদিন আর আরিশকে পাবো না, এইটুকু কথা আস্তে আস্তে বলল রাইসা ,,,, কথাটা কেউ শুনতে না পেলেও আরূ ঠিক বুঝতে পেরেছে যে সেরকমই কোন একটা কথা রাইসা বলেছে ৷
আরিস: দেখ রাইসা আমার মনে হয় তুই যদি আরুপাখির উপর রাগ করে চলে যাস তাহলে সেটা খুব ভুল করছিস ৷
রাইসা সামনে এগিয়ে গিয়ে আরিশকে জড়িয়ে ধরল তারপর ফিসফিস করে বলল :
হয়তো আমার ভাগ্যে তুই নেই তাই তৃতীয় ব্যক্তি হয়েও তোর মনের মাঝে প্রবেশ করতে পারলাম না সেখানে যে কেবল তোর আরুপাখির. স্থান ৷
আরিশকে ছেড়ে বলল: ভালো থাকিস ৷
বলে আরূশির দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রাইসা ৷
ওর সাথে সাথে রেনু খান ও বেরিয়ে গেলেন ৷
আনিকা খান কাঁদছেন , যতই হোক নিজের বোন আর বোনঝি হয় ওরা , হাজার ভুল করলেও ভুলটা মেনে নিয়ে আবার নতুন করে শুরূ করতে হয় ৷উনি নিজেও জানেন যে আরূশির কোন দোষ নেই তবুও উনারা আজকে চলে যাচ্ছেন দেখে উনার খুবই কষ্ট হচ্ছে….
গোটা বাড়ি যেন কেমন একটা থমথম করছে সবকিছু যেন আরূর মাথার উপর দিয়ে গেল ৷ যে সমস্ত কাজে ওর হাতে নেই সেই সমস্ত কাজে দোষারোপিত হল ৷
সকলে খেলেও আরূ না খেয়ে উপরে চলে গেল, ওর তো কোন দোষ নেই ৷ নিজের স্বামীকে ভালোবেসে তার জন্য যদি কিছু করা অপরাধের হয় , অন্যায় হয় তাহলে সেই ভুল আরু হাজার বার করতে পারে ৷
মন মরা হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরেটা দেখছে একমনে ৷ দূরের আম গাছে দুটো পাখি বসে আছে পাশাপাশি, কত সুন্দরই না লাগছে তাদের দুজনকে একসঙ্গে , যেমনটা ওর আর আরিশকে লাগে একসঙ্গে থাকলে ৷
আজ খুব কষ্ট হচ্ছে আরূর তবে কেন তা জানে না , কারোর ওপর অভিমান , না কি অন্যকিছু , নাকি ওকে অপমান করেছে তাই ওর দুঃখ , কি আসল কারণটা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা ও ৷ আজকে আহানের কথা মনে পড়ছে খুব ৷ আগে ওর বাবা যখন ওকে কথা শোনাতেন কোন ভুল হলে তখনই আহান প্রতিবাদ করত ওর হয়ে ৷ অনেকদিন হল আহানের সঙ্গে কথা হয় না ওর ৷ অনেকটা রাগ করেই আহান আর ফোন করেনি আরুকে ৷
ওর এখনো মনে আছে ছোটবেলায় ওদের দুই ভাই-বোনকে ওর মা একই রঙের আর একই ধরনের দুটো গেঞ্জি এনে দিয়েছিলেন ৷ সেটা পড়ে ওরা একটা ছবি তুলেছিল ৷
ছবিটা ওর জামা কাপড়ের মধ্যে রাখা আছে, আজকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ছবিটা ৷ তাই আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছবিটাকে আনতে গেল তখনই ছবিটা বার করতে গিয়ে খসখসে একটা জিনিস হাতে পড়তেই সেটা আসলে কি তা জানার জন্য বার করতেই দেখল একটা কাগজ , তাতে কিছু লেখা আছে….
লিখাগুলো বাংলাতে নয়, ইংরেজিতে লেখা তবে উচ্চারণগুলো বাংলাতেই ৷ আসলে সেটা কি তা জানার জন্য চিঠিটা খুলতেই অবাক হলো আরু ৷
ডিয়ার আরুশি ,,,,,,,
জানো তো তুমি বড্ড বেশি লাকি , যার জন্য তুমি আরিশ এর মতো একজন লাইফ পার্টনার পেয়েছো ৷ আমিও ওকে খুব ভালোবাসি তবে একজন তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ৷ আর সব সময় একজন তৃতীয় ব্যক্তি প্রত্যাক্ষিত হয় একটা সম্পর্ক থেকে ৷ যদিও বা আমারই ভুল ছিল তোমাদের মাঝে গিয়ে ভালোবাসা আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা করার ৷
আরিশ কে আমি সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করি, তবে একসাথে বড় হওয়া টা শুরু হতে না হতেই বহুদূরে চলে গেলাম ওর থেকে ৷ সেই 11 বছর বয়স থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকি ফ্যামিলির সাথে , আরিসের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা ছিল সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ৷ আরিশকে ছেড়ে আসতে কষ্ট হয়েছিল খুব ৷তখন এই সমস্ত আবেগ ভালোবাসা কি তা ঠিক বুঝতাম না , তবে এখন বুঝি বেশ ৷
যখন শুনেছিলাম যে আরিশের সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারিনি তোমাকে৷ মনে হচ্ছিল তখনই সবকিছু শেষ করে দিই৷ আমার তোমার উপর রাগ হয়েছিল , আমি ভেবেছিলাম যে করেই হোক আরিশের জীবন থেকে তোমাকে আমি সরাবোই , আর এটাই ছিল আমার আসল উদ্দেশ্য ৷
তবে যখন দেখলাম ও তোমাকে খানিকটা হলেও ইগনোর করছে তা দেখে আমি ভাবলাম হয়তো কাজটা সহজ হবে তাই নানানভাবে চেষ্টা করতাম ৷ কিন্তু ওর বাইরের ইগনোর এর থেকেও বেশি কেয়ারটা ছিল তোমার প্রতি হাজার গুণ বেশি ৷
সেটা আমার প্রথমে চোখে পড়েনি অবশ্য আমি নিজের চোখে সেগুলো আনতে চাইনি কখনো,যত এড়িয়ে চলা যায় এগুলো থেকে ৷
আচ্ছা আজকে আমি যাকে ভালবাসি তাকে ছেড়ে কেন চলে যাচ্ছি প্রশ্নটা তোমার মনে আসছে না?না আসাটাই স্বাভাবিক, এতে অস্বাভাবিক এর কিছু নেই ৷
তাহলে বলি ,,,,,,,,
সেদিন যখন আরিস এর অফিসে গেলাম তখন আমি বাইরে অপেক্ষায় ছিলাম তুমি কখন বেরোবে আর আমি অফিসে ঢুকবো , তুমি বের হতেই অফিসে ঢুকলাম তারপর আরিসের সঙ্গে ঘুরতে গেছিলাম…
সেদিন,,,,,,
রাইসা যখন বলল যে আরিশ যেখানে ওকে নিয়ে যাবে সেখানেই ও যাবে , তখন আরিশ আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে গেল নদীর ঘাটে ৷ সেখানে বড় বড় স্টিমার, জাহাজ আর লঞ্চ গুলো দেখতেই মনটা আমার খুশিতে ভরে গেল….
রাইসা : আমি জানতাম তুই আমাকে এমনই একটা সারপ্রাইজ দিবি এখানে এনে৷
আরিশ মুচকি হাসল তারপর ওর হাত ধরে লঞ্চে উঠালো ৷
রাইসা তো মনে মনে খুব খুশি কারণ ওই যতই চাইছে যে আরিশকে নিজের কাছে আনতে আর সফল হচ্ছে ৷ আর এখন নিজেকে সফল দেখে ওর খুবই খুশি লাগছে ৷
লঞ্চ চলছে আর হওয়ায় আরিসের সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে , এক অপরূপ সৌন্দর্য কাজ করছে আরিশের মাঝে ৷ রাইসা মাঝে মাঝে আরিসের দিকে লজ্জা চোখে তাকাচ্ছে ৷
হঠাৎ নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আরিশ বলে উঠলো,,,,
জানিস তো মেয়েটাকে (আরু) আমি বড্ড ভালোবাসি তবে মেয়েটা বুঝতেই চায় না বড্ড অবুঝ, অল্প বয়স কিনা , তাই কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তার মাঝে পার্থক্য করে উঠতে পারেনা এখনো ৷ সেই জন্যই তো বেশি রাগ করে থাকতে পারি না, নিজেকে কন্ট্রোল করা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে ৷তবে অনেক চেষ্টা করছি বারবার কেবল ওকে একটু বুঝানোর জন্য যে বাস্তবটা আসলে কী !
কথাটা শুনে রাইসা আরিশের দিকে তাকালো,,,,
আরিশ আবার বলতে শুরু করল :
জানিনা মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে, তবে মেয়েটার বাচ্চা স্বভাব দেখেই ওর প্রেমে পড়েছিলাম ৷ও সবার থেকে আলাদা, ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটাও একটা অব্যক্ত চিঠির মত যেখানে হাজার অক্ষরে পরিপূর্ণ থাকলেও তা কখনো পড়ে শেষ করা যাবেনা….
রাইসা এবার রেগে গিয়ে বলল : তাহলে আমার কি হবে ? আমি তো তোকে ভালোবাসি ৷আমি জানিনা আমি তোকেই বিয়ে করবো তা যে করেই হোক ৷
আরিশ মুচকি হেসে রাইসার দিকে তাকালো আর বলল : জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় শুনেছিস ?
কথাটা শুনে রাইসা মাথা নিচু করে নিল কারন সত্যিই জোর করে আর সবকিছু পেলেও ভালোবাসা পাওয়া যায় না ৷
আরিশ: তুই হাজার চেষ্টা করলেও আমি আরুপাখিক ছাড়বো না , ও আমার পাজরের এক একটা টুকরা ৷ তোর জন্য এটাই ভালো হবে যে তুই একটা পারফেক্ট জীবনসঙ্গী খুঁজে না , যে আমার থেকেও তোকে বেশি ভালবাসবে….
বৃথা একতরফা ভালোবাসা কখনো পূর্ণতা পায় না৷
রাইসা চুপ করে আছে আরিশের বলা কথাগুলো বুকে এসে বড্ড লাগছে, কিন্তু আরিশ যা বলছে সেগুলো সমস্তটাই সত্য….
জানিস 16ই এপ্রিলে একবার ওর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল৷
ভার্সিটিতে সবে নতুন নতুন এসেছে , শান্তস্বভাবের তবে , খুবই বেখেয়ালিপনা আছে ওর মধ্যে ৷ একা একা বাড়ি ফেরার জন্য ভার্সিটির গেট পার হতেই বড় রাস্তা পার করতেই একটা বাইক এসে পাশ থেকে ধাক্কা মারতেই রাস্তার এক সাইডে পড়ে গেল , মাথা কেটে ক্রমাগত রক্ত বেরোচ্ছিল সেদিন ৷ আর হাতে পায়ে চোট পেয়ে সমস্ত জায়গা থেকে ছিটছিট করে রক্ত বেরোচ্ছিল ৷
দূর থেকে সমস্ত দেখতেই মনে হল জীবনটা আমার মধ্যে আর নেই , সেটা যেন থেমে ছিল সেখানেই ৷ তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম , পরিচয়টা যখন জানতে চেয়েছিল তখন স্বামীর পরিচয়ে ভর্তি করিয়েছিলাম হসপিটালে কারণ আমি ভাবতাম যখন ভালোবাসি তখন ওকে নিজের জীবনসঙ্গী বানাবো এমন একটা উদ্দেশ্য নিয়েই ওকে ভালোবেসেছিলাম ৷ ও সমস্ত বেখেয়ালি ভালোবাসা আমার পছন্দ নয় ৷
যারা এভাবে ছেড়ে চলে যায় তাদেরকে বড্ড ঘৃণা করি আমি ৷
মেয়েটার প্রচুর ব্লাড শরীর থেকে বেরিয়ে গেছিল সেদিন, O- রক্তের গ্রুপের মানুষ খুবই কম তাই ব্লাড পাওয়াটা প্রচণ্ড টাফ ছিল ৷
ইমিডিয়েট রক্তের প্রয়োজন ছিল ওর,সারা হসপিটাল তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পেলাম না একটা মানুষকেও, কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি তখন….
নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হয়েছিল তখন আর এটাও মনে হয়েছিল যে ওর কিছু হয়ে গেলে আমিও আর বাঁচব না ৷
আরাভকে বলতেই ওউ বেরিয়ে পড়েছিল রক্তের খোঁজে, সমস্ত ব্লাড ব্যাংকে গিয়েও পেল না ৷ আরাভ সমস্তটাই জানত ৷
কথাগুলো যখন আরিশ বল ছিল তখন আরিশের চোখের কোনে জল জমে এসেছিল , তা রাইসা বেশ ভালই অনুভব করতে পেরেছে৷
অরিশের ভালোবাসার কথা শুনে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে ,বুঝতে চেষ্টা করছে যে ভালোবাসা কত প্রকার হয় আর কিভাবে একটা মানুষকে কতটা গভীরভাবে ভালবাসতে হয়….
একটা সময় যখন ব্লাড পেলাম না তখন
মনে হয়েছিল ওর নয় আমার কিছু একটা হয়ে যাবে, নিজেকে নিয়ে আমি কখনোই ভাবিনি’ আর ভাবতেও চাইনা কখনো…. কেবলই ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো ৷
রাইসা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : তারপর!
চোখের কোন থেকে জমে থাকা জলটা মুছে নিয়ে পাগলের মতো হাসতে হাসতে আভার বললো আরিশ , হয়তো নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে ৷
আরিশ : আমি তখন এতটাই পাগল হয়ে গেছিলাম যে আমার নিজেরই যে ও নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ তা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ৷
ভালোবাসার ডেফিনেশনটা ঠিক কি তা আমি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি তবে মজার ব্যাপার কি জানিস তো , আরূপাখি মনে করে যে ওর ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আমি ওকে শিখিয়েছি৷ কি অদ্ভুত তাইনা ! আমরা হলাম একে অপরের পরিপূরক, স্বয়ং আল্লাহপাক আমাদের নিজের হাতের তৌরী করে পাঠিয়েছেন ৷
আরিশ এর কথা শুনে রাইসা আর সাহস পায়নি একটা শব্দও উচ্চারণ করার ৷আরিশের ভালোবাসার কথা শুনে ও বাকরুদ্ধ , তবুও আরুশির প্রতি হিংসা হয়েছিল খুব ৷ এমন ভালোবাসা যদি আরুশির বদলে ও পেত তাহলে হয়তো পৃথিবীর সবথেকে সৌভাগ্যবতী রাইসা নিজেই হত….
______
তোমার কি জানতে ইচ্ছা করে না যে আমি কেন আমার আম্মুর সঙ্গে তার ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম? আমি তো চাইলেই আরিসের কাছে কাছে থাকতে পারতাম তবে কেন থাকেনি ?
অবশ্য প্রশ্ন না হওয়ারই কথা কারন আমি তোমাদের সম্পর্কের মাঝে একজন তৃতীয় ব্যক্তি ৷ তবুও উত্তরটা আমার বলতে খুব ইচ্ছা করছে তোমাকে, তা তুমি চাও আর না চাও ৷ জানো আমি এই কদিন শুধুমাত্র আরিশকে ভোলার চেষ্টা করছি,,,,, জানিনা কতটা ভুলতে পেরেছি তবে দূরে থাকার অভ্যাসটা করে নিয়েছি ৷
তবে সে যাই হোক আরিশ তোমাকে বড্ড ভালোবাসে,সেই ভালোবাসার মর্যাদা দিও ৷ আর আশা করব তুমিও আরিশকে খুব ভালবাসবে আর ভালো রাখবে ৷ তোমাদের আগামী দিনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল ৷
আর ক্ষমা আমি তোমার কাছে চাইবো না কারণ তুমি নিজেও জানো যে ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সীমাটাও লংঘন করা যায় , সেটা তুমিও করো আর আমিও করেছি , তাই আমরা দুজনেই সমপর্যায়ে ৷ তাই না তোমার আমাকে সরি বলার আছে আর না আমার তোমাকে ৷
ভালো থেকো ৷
ইতি,
রাইসা 🙂
কথাগুলোর মাঝে যে রাইসার আরিশকে না পাওয়ার কাতরউক্তি ছিল তা আরুশি প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে অনুভব করতে পেরেছে ৷
সত্যি ভালোবাসা এমনই হয় ৷ তা যে পায় সে সব থেকে ভাগ্যবান আর যে না পায় সে হলো পৃথিবীর সবথেকে হতভাগা মানুষ….
চিঠিটা পড়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না আরূ ৷ আরিশ যে ওকে ভালবাসে সেটা আরিশ বারবার মানুষের সামনে প্রমাণ না করলেও ওর ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দেয় বারবর কিন্তু ওর অজান্তে আরিশ এতটা করেছে তা ও আজকে জানতে পারল চিঠিটা থেকে ৷ রাইসা না বললে ওর জীবনের এমন একটা ঘটনা হয়তো না জানা অধ্যায়ের খাতায় নাম লেখাত ৷
জীবনটা বড়োই অদ্ভুত ৷
আরু চিঠিটা আঁকড়ে ধরে অনবরত কেদেই চলেছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে,,,,
সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার হাত দুটো ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিতেই কান্নার মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গেল ৷
আরুকে কাছে টেনে আরিশ আরুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল….
ভালোবাসার সুখে আজ কারোর চোখে জল আবার কারোর চোখে ভালোবাসা না পাওয়ার চোখের জল ৷
কিভাবে জীবনটা পার হয়ে চলেছে ক্রমাগত ৷ বেশিরভাগ সময়টাই এমন হয় যে আমরা যাকে চাই তাকে আর পাওয়া হয়ে ওঠে না আর অপ্রত্যাশিতভাবে এমনই একজন মানুষ জীবনে চলে আসে যার প্রতি পূর্বের ন্যায় ভালবাসাটা ঠিক আর হয়ে ওঠে না ৷ থেকে যায় কিছু ব্যর্থ ভালোবাসার মতো ঘটনা ৷
এই ভাবেই দিন পার করছে হাজার হাজার মানুষ আর নিজেকে সামিল করছে না পাওয়া ভালোবাসার ভিড়ে ৷( লেখিকা🙂র একান্ত মতামত ৷)
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আরু আর আরিশ দুজনেই শুয়ে আছে ৷ আজ অনেকদিন পর নিজেকে কেমন চিন্তামুক্ত লাগছে আরিশের ৷
আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুও চুপচাপ আরিশের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে কোন কথা বলছে না ,এটাই হলো ওর একমাএ নিরাপদ জায়গা ৷
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আরু বলে উঠল,,,,,
“আচ্ছা আপনি এত talented কেন?”
আরিশ আরুকে ওর নীচে শুইয়ে দিয়ে ওর ওপর ঝুকে গেল ৷
” আমি talented নই ৷”
আমি জানি যারা talented হয় তারা তাদের talent টাকে স্বীকার করতে চাই না , এই যে যেমনটা আপনি ৷”
“সত্তিই যদি তাই হয় তাহলে আমার ছোট্ট আরুপাখিটাও হবে talented ,কি বল?”
আরু আরিশের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল ৷
“আমার বউটা লজ্জাও পায়,বাবা আমার তো জানাই ছিল না তা ৷”
আরু আরিশের বুকে কিল মেরে বলল,,,,
“আপনি সবসময় আমাকে এভাবে লজ্জা দেন কেন বলুন তো !
“আমি তোমাকে কখন লজ্জা দিই আরুপাখি?”(চোখ মেরে)
আরু কথা ঘোরানোর জন্য বললল,,,,,
“আজকে একটা এত ভালো দিন চলুননা আমরা আজকে কোথাও ঘুরতে যাই ৷”
“কোথায় যাবে আরুপাখি?”
“এই আশে পাশের কোথাও , সবাইমিলে একসাথে অনেকটা সময় কাটাবো খুব ভালো লাগবে ৷”
“আচ্ছা,তাহলে বিকালে রেডি হয়ে থেকো ,সবাইমিলে একসাথে বেরোনো যাবে ৷”
আরুশি আরিশের গালে হালকা করে কিস করে বলল:Thank u ৷
আমাকেও তো এখন তার রিটার্ন দিতে হয় বলে আরুশির ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরল ৷
❤
বিকালবেলা ওরা সবাই বেরিয়েছে আফজাল খান আর অনিকা খানকে ওরা নিতে চেয়েছিল তবে উনাদের মুখে একই কথা ” এসব ছোটদের মাঝখানে আমরা গেলে তোদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে আমরা বরং অন্য কোনো দিন যাবো ৷”
আরোশী অনেক বার তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে ওদের আনন্দ নষ্ট হবে না বরং গেলে আনন্দটা দ্বিগুণ হবে কিন্তু তা ওনারা দুজন গেলেন না৷
❤
সানা ,আরু আর আরিশ তিনজনই দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে , আরাভের আসার অপেক্ষা করছে ৷
আরিশ : আচ্ছা আরুপাখি আরাভের জন্য আমরা যে অপেক্ষা করছি সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমাকে গাড়ি বার করতে দিলে না কেন ? গাড়ি না হলে আমরা যাব কিসে?
সানা : সত্যিই তো তোমরা যাব কিসে ?
ওদের কথা বলতে বলতেই আরাভ চলে এসেছে একটা রিক্সা করে আর তার পিছনে আর একটা ৷
আরোশী : ঐতো আরাভ ভাইয়া রিকশা নিয়ে চলে এসেছে,এখন আমার রিক্সায় যাব ৷
আরিশ আরুশির কথা শুনে মুচকি হাসলো , ও জানে মেয়েটা বরাবরই বাচ্চা স্বভাবের ৷ একদিন রিকশাতে গেলে মন্দ হবে না ব্যাপারটা , তাছাড়া এরকম সৌভাগ্য তো ওর আর কখনো হয়নি ৷
আরুশির কথামতো আরাভ আর সানা একটা রিকশাতে বসলো আর আরু আর আরিশ আরেকটাতে ৷
রিক্সায় উঠতেই আরিশ রিকশার ছাউনিটা মেলে দিল৷
আরুশি আরিশের দিকে তাকাল ৷
আরু: ছাউনিটা আপনি দিলেন কেন , এটার কি এখন খুবই প্রয়োজন ছিল!
আরিশ : আমার কেমন একটা লাগছে আরূপাখি !
আরুশি আর কিছু না বলে রিক্সার ঝাপটা ফেলে দিল,,,,
আরু : সৌন্দর্যটাকে ভালো লাগার চোখে দেখুন আর সেটার মাঝে যদি হাজারো আত্মসম্মানবোধ আর বিলাসিতার প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন তাহলে সেটা আর সৌন্দর্য থাকে না ,তখন সেটাও নগর সভ্যতার একটা কুলসিতার মধ্যেই যুক্ত হয়ে যায় ৷
আরিশ আরুশির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে , মেয়েটা অল্প বয়সী হলে কতটা বোঝে , কতটা গভীর ভাবে ভাবে এই ছোট ছোট. ব্যাপার-স্যাপার গুলো , কিন্তু আরিশ কখনো এই ব্যাপার গুলো ভেবে দেখার সুযোগই পাইনি ৷
মুচকি হাসি দিয়ে আরিশ আরুকে বলল,,,,
তুমি এত কিছু কি করে জানো আরূপাখি?
আরোশী শান্ত দৄষ্টিতে আরিস এর দিকে তাকাল ৷
আরু: এগুলো বোঝার জন্য কিছু জানার প্রয়োজন হয় না , ভালোবাসা চোখে দেখলেই আপনা আপনিই আপনার মধ্যে এই অনুভুতিটা চলে আসবে ৷
কথায় কথায় রিকশার ঝাকুনিতে আরিস টলোমলো হয়ে গেল তার সাথে ভয়ও পেয়ে গেল , কিন্তু পরক্ষনেই আরুশি আরিশের হাতটা ধরে নিল ৷
আরু: ভয় নেই আমি থাকতে আপনার কিছু হবে না৷
আরিশ শুধু আরুশিকে মুগ্ধ নয়নে দেখেই যাচ্ছে কারণ ও আজকে যেন একটা নতুন আরুশিকে দেখছে যে সব সময় বাচ্চাদের মত ব্যবহার করে, তাকেও যেন আজকে স্বাবলম্বী বলে মনে হচ্ছে,
এক অপরূপ সৌন্দর্য কাজ করছে অন্য দিনের তুলনায় ৷
রিক্সা চলছে আরিশ আর আরুশি দুজন দুজনের হাত ধরে বসে আছে ৷ আরিশ ক্রমাগত ভয় পাচ্ছে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার তাই আরু শক্ত করে আরিশের হাত তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে , বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল গুলো বারবার মুখে এসে আছড়ে পড়ছে তবে বিরক্ত হচ্ছে না , অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে আরুশির মাঝে ৷
রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ ,মানুষের কোলাহল এই সমস্ত কিছুই যেন আজ উপেক্ষিত ওদের ভালোবাসার কাছে ৷
আরুশির পছন্দ করে দেওয়া নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পড়েছে আরিশ আর নিজেও তার সঙ্গে ম্যাচ করে নীল রঙের শাড়ি পরেছে , হাতের কাচের চুড়ি আর হালকা একটু মেকআপ….
এই বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে আরিশ কি করে পড়ল সেটাই ভাবছে এখন……
আরিসের এখনো মনে আছে আরুর ভার্সিটির সেই প্রথম দিনের কথা ৷
ভার্সিটির বিরাট গেটটা পার করে একা একা হেঁটে আসছিল আর সবকিছুই ছিল সেদিন অজানা আরুর কাছে ৷ এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সবকিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিল আরু ৷ অনেককেই অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতে করতে আসছিল তবে শেষের গন্তব্যটি হল আরিশ ৷
মালিহার ম্যাথের একটা ক্যালকুলেশন মিলছিলনা, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পরও না পেরে আরিশের কাছে নিয়ে গেল ক্যালকুলেশন টা ৷ দেখা মাত্রই সলভ করার আইডিয়াটা আরিশের মাথায় চলে এল ৷ তবে তা শুরু করার আগেই হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো , বিরক্ত নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলে একটা অল্প বয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ শরীরের গঠনও বেশ , দেখে বয়সটা আন্দাজ করা যাবে না ৷
চোখ দুটো টানা টানা, কপালের চুল গুলো বারবার আছড়ে পড়ছে মুখে , চোখের কোনে জমে থাকা কাজলটাও চোখের সাথে লেপ্টে গেছে ৷ পরিধান করে থাকা হলুদ রঙের থ্রি পিসটাও মানিয়েছে বেশ ৷ পরিপাটি দেখাচ্ছিল বেশ ৷
এর আগে একটা মেয়েকে কক্ষনো এতটাও গভীরভাবে ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেনি আরিশ ৷
আরোশী হলো তার জীবনের প্রথম রমনী যাকে সে এতটা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে ৷
আরূ : আপু আপনি কি একটু বলতে পারবেন যে বায়োকেমিস্ট্রির ডিপার্টমেন্টটা ঠিক কোথায়?
মালিহা বেশ অবাক হয়েছিল আরুর কথা শুনে আর তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিল আরিশ কারন দুজনেই ভেবেছিল যে আরু হয়তো আরিশকে জিজ্ঞাসা করবে কারণ আরিশ অত্যন্ত একজন সুপুরুষ , গোটা ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ ৷নতুন সব মেয়েরা ইতিমধ্যেই ও সঙ্গে গভীর আলাপচারিতার চেষ্টা করেছে তবে কাউকে পাত্তা দেয়নি আরীশ ৷ কারো মধ্যে নতুন কিছু খুঁজে পাইনি আরিশ , সবাই প্রায় একই যারা ওকে পটানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আরু তার মধ্যে অন্যরকম একজন যে নিজে থেকে কোনো ইচ্ছা দেখায়নি আরিশের সঙ্গে কথা বলার ৷
মালিহা : তুমি কি আমাকে বললে?
আরু কিন্তু কিন্তু করে : হ্যাঁ আপু আমি তো আপনাকেই বললাম , কেন আপনার মনে হলো না? (আদো আদো স্বরে )
মালিহা: সেটা নয় আসলে এমনিতেই ৷ বায়ো কেমিস্ট্রির ডিপার্টমেন্ট হল থার্ড ফ্লোরে যে কর্নারে রুমটা রয়েছে 212 নম্বর সেটাই ৷
আরুশি : থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু বলে আরিসের দিকে কোন রকম দৄষ্টিপাত না করেই বিদায় নিল ৷
আরিস ততক্ষণ আরুর দিকে তাকিয়ে ছিল যতক্ষণ না আরুশি ওর চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেছে৷
মালিহা ও আরিশের কান্ড দেখে কিছু আর বলার সাহস পায়নি কারণ আরিশ ওর সিনিয়ার আর আরিশ এইসমস্ত মেয়েদের ব্যাপারে কথা বলতে একদমই পছন্দ করেনা….
সেই দিন আরুশির মাঝে আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল আরিশ এর ৷ সবার থেকে অন্যরকম আরু , কারো সঙ্গে ও মেলে না…
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আরূর হাতের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আরুকৈ জড়িয়ে ধরল ৷ আররু ও আরিশের কাঁধে মাথা রেখে ওদের যাত্রাটা কে অনুভব করতে লাগলো ৷
রিকশা থেকে নামতেই আরাভ আর সানা ওদের কাছে এগিয়ে এলো ৷
আরাভ আরিশকে কিছুটা কিন্তু কিন্তু করে বলল : আসলে কি বলতো,,,
আরাভের কথার টোন শুনে আরিশ বুঝতে পেরেছে যে আরাভ কি বলতে চাইছে তাই আর বেশি হেঁয়ালি না করে আরিশ বলল :
বুঝতে পেরেছি , তোদের আলাদা সময় চাই তাই তো? আচ্ছা যা তবে একসঙ্গে কিন্তু বাড়িতে ফিরতে হবে বলে দিলাম ৷
আরাভ: হ্যাঁ নিশ্চয়ই , বলে ওরা দুজন হাত ধরে বেরিয়ে গেল….
আরুশি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল তারপর আরিসের দিকে তাকিয়ে বলল : কত ভালোবাসে সানাকে আরাভ ভাই তাইনা!
আরিশ :হমমম!
যেমনটা আমি তোমাকে বাসি (মনে মনে)
তারপরে দুজন সামনে হাতে হাত ধরে এগিয়ে হাটতে লাগল ৷ একটা পার্কে বেড়াতে এসেছে ওরা দুজন৷ আশেপাশের কত ভালোবাসার মানুষ হাতে হাত রেখে বসে আছে , একান্ত সময় পার করছে…
হঠাৎ কিছুটা দূরে নজর যেতেই আরিশ আরুশিকে বলল:
আরুপাখি তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি ৷
আরূ: আপনি এখন আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছেন? তবে কথাটা হয়তো আরিশ শুনলো না , বলার আগেই চলে গেছে ও ৷
আরূশির একটু রাগ হলো আরিশের উপরে , না বলে হূট করে কোথায় চলে গেল তাই ৷
তারপর দৃষ্টি দিল নিক্ষেপ করল লেকের জলের দিকে, বিকালের সূর্যের আলোতে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে ৷ ওর খুবই ইচ্ছা হচ্ছে এখন জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার তবে যার সঙ্গে বসে থাকবে সেই মানুষটাই উধাও হয়ে গেল ৷
বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরূ বোর হয়ে চলেছে তবে আরিশের আসার নাম নেই ৷
হঠাৎ করে চুলে আলতো স্পর্শ পেয়ে ও বুঝতে পারল যে আরিশ এসেছে , আর তার সঙ্গে একটা খুব সুন্দর সুগন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে ৷ বুঝতে বাকি রইল না যে বেলি ফুলের মালাটা সযত্নে হাতখোপা করে আরিশ ওর মাথায় বেঁধে দিয়েছে ৷
মুচকি মুচকি হাসছে আরু আরিশের কাণ্ড দেখে ৷
আরিশের সমস্ত রোমান্টিকতা যেনো, আজকে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে ,অদ্ভুত এক ভালো লাগা সৃষ্টি করছে ৷
আরিশ তারপর আরুশিকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নেই আরূর গালে হাত রেখে বলল :
তোমার জন্য মালাটা আনতে গিয়েছিলাম আরুপাখি , আমি জানি আমার খুব লেট হয়েছে আই এম রিয়েলি সরি ৷(কান ধরে ৷)
আরিস এর কান্ড দেখে আরু মুচকি হেসে ফেলল কারণ এত লোকের মাঝখানে আরিশ ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কান ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনি ৷ আরুশি আরিশের হাতটা কান থেকে নামিয়ে নিয়ে বলল :
কান ধরতে হবে না , আমি আর রেগে নেই ৷
আরিশ আর আরু দুজনই মুচকি হাসতে লাগল….
আরূ: চলুন না ওই লেকের ধারে যাই , আমার খুব ইচ্ছা করছে ওখানে যেতে…
আরিস : আমার আরুপাখি বলেছে তার মানে যেতেই হয় বলে আরুর সঙ্গে সেখানে গেল….
দুজনের জলের মধ্যে পা ঢুবিয়ে বসে আছে আর ভালোবাসাগুলো মিলিয়ে দিচ্ছে একসঙ্গে….
হঠাৎ আরু কাঁধে আলতো একটা হাতের স্পর্শ পেতেই অত্যন্ত কৌতুহলের সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটা পিচ্চি বাচ্চা দাঁড়িয়ে খিলখিল করে মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে হাসছে আরুর দিকে তাকিয়ে ৷ বাচ্চাটার হাসি দেখে আরুর যেন মন ভরে গেল ৷
বাচ্চাটিকে দেখে আরূ আর আরিশ দুজনেই জল থেকে উঠে এলো ৷
আরিশ নীচু হয়ে বাচ্চাটাকে কলে তুলে নিল…..
আরু মেয়েটার গাল দুটো টেনে ,,,,,
তোমার নাম কি ?
আমাল নামম আয়ূশি ৷(আধোআধো কন্ঠে)
আরিশ আর আরূ মুচকি হাসছে ৷
আরূশি আরিশের থেকে আয়ূশিকে কলে নিল,,, ,
আরিশ : তোমার তো দেখছি আমার আরুপাখির মতো নাম ৷
আয়ূশি :তোমাল আরূপাখি আতে,কিইনতু যানোতো আমাদেল নেই ৷ আমাদেল তো টিয়াপাখি আতে সে আমাল সাথে কতা বলে ৷
আরিশ:তাই,,,,
আয়ূশি:তা তোমাল আরূপাখি টা কোথায় ?
আরিশ আয়ূশির গালে চুমূ দিয়ে বললল,,,,,
তুমি যার কোলে উঠেছ সে আমার আরূপাখি ৷
আয়ূশি:এ বাবা তোমাল পাখি তো ওলে না ,কি পতা ৷
আয়ূশির পাকা পাকা কথা শুনে ওরা দুজনে হাসতে হাসতে শেষ তারপর আধোআধো কোন্ঠে কথাগুলোর সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷
আরূশি:আম্মু তোমার এই সুন্দর নামটা কে রেখেছে?
আয়ূশি: আমাল দাদিমা রেখেছে ৷
আরূশি:তা তোমার দাদিমা কোথায়?
আয়ূশি:যানো তো আমাল দাদিমা রোজ নামাজ পলতে গিয়ে খুব কান্না কলে ৷
আরিশ আর আরূশি দুজন দুজনের দিকে অবাক চোখে তাকালো তারপর আরিশ বলল:
তা তোমার দাদিমাকে কি কেউ বকা দেয়?
আয়ূশী:না না,দাদিমা তো আমার ফুপ্পিআম্মুল জন্য কাদে ৷
আরূশি:কি হয়েছে তোমার ফুপ্পিআম্মুর ?
আয়ূশি:দাদিমা ফুপ্পিকে খুঁজে পায়না,কোথায় হালিয়ে গেতে ৷বলে আয়ূশি ও কান্না করে দিল ৷
ওদের কথায় কথায় আয়ূশির বাবা মা ওর কান্না শুনে ছুটে এলো….
আসিফ(আয়ূশির বাবা):আই এম রিয়েলি সরি ও আপনাদের কে বিরক্ত করলো ৷ আসলে আমার আম্মু একটু অসুস্থ তো তাই ওনাকে একটু খেয়াল রাখতে গিয়ে আয়ূশি এখানে চলে এসেছে ৷
আরুশি: কোথায় আপনার মা?
আসিফ : আসলে ওই দিকে বসে আছে একা একা,আমি আর আমার ওয়াইফ এতখন ওখানেই ছিলাম ,তার মাঝে আয়ূশি চলে এসেছ ৷
আরোশী : আপনার মা কি খুব অসুস্থ?
আসিফ: অসুস্থ তবে তা মানসিক দিক থেকে ৷
আয়ূশি যখন ওনার কথা বলছিলেন আরোশীর তখন কষ্ট হচ্ছিল ওনার কথা শুনে, আর এখন যখন উনি এখানেই আছেন তাহলে দেখা করতে সমস্যা কোথায়?
আরুশি: আমরা কি ওনার সাথে একটু দেখা করতে পারি?আই মিন এতদূর অবধি পরিচয় হয়ে দেখা না হলে খুব খারপ লাগত আর কি ৷
আসিফ: কোন সমস্যা নেই আসুন ৷
আরুশি আয়ূশিকে কলে নিয়ে আরিশের সাথে ওনাদের পিছন পিছন যেতে লাগল ৷
আরু যত এগিয়ে যাচ্ছি heartbeat টা যেন ততই বেড়ে চলেছে ,তবে কেন তা জানে না ৷
ওনার সামনে যেতেই বুকের ভিতর মোচঢ় দিয়ে উঠল ওর ৷
উনি একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন হয়তো দীর্ঘ কোনো ব্যথা নির্মূল করার চেষ্টা করছেন , পাশে বসে আছেন প্রায় 70 বছর বয়সের একজন বয়স্ক লোক , বুঝতে বাকি রইলো না যে ওটা ওনার স্বামী….
আরুশি ধীর পায়ে উনার সামনে যেতেই অদ্ভুত এক টানে উনি আলতো চোখে আরুর দিকে তাকালেন, চোখ দিয়ে ওনার আপনি জল গড়িয়ে পড়ল ৷
আরুশি হাঁটু গেড়ে বসে উনার চোখের জলটা মুছে দিলেন ৷
উনি নিস্তব্ধ , যেন কথা বলার ভাষাটা হারিয়ে ফেলেছেন এমন ৷
আরুশি : আপনি কাঁদবেন না প্লিজ, আপনাকে কাঁদতে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে….
উনি আরুশির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বললেন : আমার মেয়েটাও যদি আজ আমার কাছে থাকতো তাহলে সেও তোমার মতই হতো ৷ বড্ড মনে পড়ে তার কথা…
উনার স্বামী উনার কাঁধে হাত রাখলেন রেখে বললেন: সবার কপালে যেমন কন্যা সুখ থাকে না হয়তো আমাদের কপালেও নেই , আল্লাহ হয়তো রাখেননি…
উনাদের এমন আবেগপ্রবণ কথা শুনে আরুশির মনে হচ্ছে যেন ওনাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেতে, আর ওনার কষ্টে নিজেকেও সামলে করতে….
❤
রিকশা করে বাড়ি ফিরছে আরু আর আরিশ তবে আরূকে আর আগের মত ঠিক প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছেনা, যতটা না আসার সময় দেখাচ্ছিল ৷ হয়তো ওই মহিলার কাতরতায় কষ্ট পেয়েছে খুব , তবে ব্যাপারটা নিয়ে একটু গভীরভাবেই ভাবতে চাই আরিশ….
সেখান থেকে আসার আগে ওনাদের বাড়ির এড্রেস টা নিয়ে এসেছে আরিশ যাতে যোগাযোগ বজায় থাকে, তবে এই মুহূর্তে আরুশিকে সামলানো টা দরকার ৷
Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:31
#Suraiya_Aayat
সারা রাস্তায় আরূ চুপচাপ ছিল , রিক্সাটা বাড়ির সামনে এসে থামতেই কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল আরু ৷
আরিশ বুঝতে পারছে আরূর মনের অবস্থা ৷
রিক্সার ভাড়াটা আরিশ মিটাতেই সানা বলে উঠলো:
ভাইয়া আরুর হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেল কেন? কিছু কি হয়েছে , নাকি তুই আবার ওকে কিছু বলেছিস বলতো ? রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে ৷
আরিস চিন্তিত হয়ে বলল : আরে উনাদের সঙ্গে কথা বলার পর থেকেই আরুপাখির মন খারাপ ,হয়তো উনাদের দুঃখে বড্ড বেশি কষ্ট পেয়েছে ৷
সানা : বড্ড বেশি নরম মনের ও, যেকোনো কারোর কষ্টকে সহজে নিজের করে নেয় , তার জন্য আরো বেশি কষ্ট পায় ৷
আরিশ : চিন্তা করিস না আমি সামলে নেব ৷
সানা দাঁত বার করে হেসে : সে আমি জানি না যে আমার ভাইয়া কি কি পারে আর কি কি পারেনা ৷
আরিশ সানার কানটা ধরে : বড্ড বেশি পেকে গেছ তুমি বুঝেছি , সবকিছু আরাভের কাছ থেকেই শিখছ৷ তাড়াতাড়িই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি চিন্তা করোনা ৷
অরিশের কথার পরিবর্তে সানা হাসতে লাগল ৷
ওরা ঘুরতে থেকে বাড়ি আসার পর আরিস আরুর সাথে আর ভালোভাবে সাথে সময় কাটাতে পারেনি ৷ আরু বাড়িতে এসেই রান্নাঘরে চলে গেছে , রাত্রে ডিনার টা নাকি ও বানাবে তাই আর আলাদা করে ওর সঙ্গে আর কথা বলা হয়নি ৷ তাছাড়া কিচেনে আরিশের মা ও আছেন তাই আর যেতে পারছেনা আরিশ ৷
কোন বাইরের লোক থাকলে আরিশ কিছু মনে করতো না কিন্তু বাড়ির লোকের সামনে একটু তো নিজেকে সংযত করে রাখতেই হবে না হলে তারা কি ভাববে!
হঠাৎ করে আরিশের ফোন আসতেই আরিশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল….
আরূ রান্নাঘরে সব সবজিগুলো কাটছে আর অনিকা খান ওর পাশে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছেন ৷ মেয়েটা একা সবকিছু সামলাতে পারবে কিনা সেই কারণেই উনি রয়েছেন…
আরু: জানোতো মামনি , আমার ওনাদের জন্য খুব খারাপ লাগছে ৷ উনারা নিজের সন্তানকে হারিয়েছেন, খুঁজে পাচ্ছেন না ৷ জন্ম দেওয়ার কয়েক মাস অব্দি নাকি উনারা পেয়েছিলেন নিজের সন্তানকে তারপরে নাকি হারিয়ে ফেলেছিলেন উনাদের কত কষ্ট তাই না!
আরিশের মা আর উত্তরে কিছু বললেন না ৷
মনে মনে বলতে লাগলেন : তুইও যে এরকমই কারোর সন্তান রে মামা ৷ তোকে যে ,,,,,,,,
এই বলে আর কিছু ভাবতে পারল না তখনই আরূ বলে উঠল ৷
” আল্লাহ যেন উনাদের সন্তানকে আবার ওনাদের কাছে ফিরিয়ে দেন , তাহলে উনারা এ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন ৷”
অনিকা খান : আল্লাহ যেন তোর দোয়া কবুল করে মামনি….
❤
আরিস : আপনি সব ঠিকঠাক বলছেন তো ! মানে এটা কোন ভুল খবর না তো ?
অচেনা লোক : আমি যা বলছি একদম সত্যি বলছি , সব ঠিকঠাক খোঁজখবর নিয়েই আপনাকে বলছি স্যার , আর যা বলছি তাতে কোনো ভুল নেই , আপনি এবার আসল অপরাধীকে ধরতে পারবেন ৷
আরিস লোকটার সাথে হ্যান্ডশেক করে : থ্যাংক ইউ সো মাচ , আপনি অনেক বড় উপকার করলেন আমার ৷ আপনার এই খবরটা হয়তো অনেকগুলো জীবন পাল্টে দিতে পারে তা আফনি হয়তো জানেন না……
অচেনা : আমি জানি স্যার আপনি যা করবেন সবার ভালোর জন্যই করবেন ৷
রাত্রে ডিনার করে আরিশ রুমে যেতেই দেখল আরুশি ওয়াশরুমে গেছে….
তখনই পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই তা রিসিভ করার জন্য ফোনটা হাতে করে নিয়ে বাইরে চলে গেল আরিশ ৷ প্রিন্সিপালের ফোন এসেছে , হয়তো আরিশের এই সাফল্যের ব্যাপারেই কিছু বলবেন….
আরোশী রুমে এসে দেখল আরিশ রুমে নেই, ও ভাবল হয়ত এখনো নিচেই আছে তাই আরিশের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল ৷ রুমের ভিতর একটু বসে রইল , সেখানে বসে থেকে যেন দমটা বন্ধ হয়ে আসছে ভালো লাগছে না কিছুতেই , বারবার পাইচারি করছে আর বারবারই চোখে ভেসে আসছে সেই মহিলার কাতরোক্তি তার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার৷ শুধু একটু পায়চারি করে শান্ত হলো না তাই না পেরে ছাদে চলে গেলে…
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আরূ আর ব্যস্ত নগরীর দিকে দৃষ্টিপাত করছে ৷ এ শহরে মানুষ কত ব্যস্ত , কারোর কারো জন্য সময় নেই , কেউ বা সব কিছু পেয়েও অখুশি , আবার কেউ বা কিছু না পেয়েও সে সুখী ৷ এক অদ্ভুত নিয়মে যেন জীবনটা পরিচালিত হয়, যেভাবে সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তেমনভাবে এগোচ্ছে , হাসি , দুঃখ-বেদনা , আনন্দ সবকিছু মিলেই জীবনটা চলে যাচ্ছে ৷ জীবনের প্রতি অভিযোগ করলেও তা বৃথা কারণ সৃষ্টি কর্তা নিজেই তেমনটা চেয়েছেন ৷ তিনি যেমন দুঃখ দেয় আবার দুঃখের পরেও কষ্টটা নির্মূল করে দেন আনন্দ দিয়ে ৷ তাই সময়ের অপেক্ষা করে আর বিধাতার উপর ভরসা রাখা উচিত ৷
বাইরে ঠান্ডা বাতাস গুলো যেন আরুর শরীর আর মন ঊভয়কেই ছুঁয়ে যাচ্ছে ,এত ক্লান্ত আর ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে অনেকটাই স্নিগ্ধ লাগছে আরুর…
তবে পাশে যদি এখন আরিশ দাঁড়িয়ে থাকতো তাহলে মন্দ হতো না , এই কথাটা আরু মনে মনে ভাবছিল তখন হঠাৎ ই পেটে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো আরূ, বুঝতে বাকি রইল না যে প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়তেই সে হাজিরা দিতে এখন তার কাছে উপস্থিত….
খোপা করে রাখা চুলগুলো আলতো করে স্পর্শ করে খুলে দিল আরিশ, খোঁপাটা খুলে দিতেই চুলগুলো ছাড়িয়ে পরল আর তা প্রায় কোমর ছুঁই ছুঁই,
আরিশ এখন আরূর চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত…
আরশি: বড্ড ভালোবাসি আরূপাখি তোমাকে,
তুমি হীনা আমি নিঃস্ব, তুমি আমার জীবনের শেষ সম্বল ৷ আমার পরিণীতা ৷
আরূ আরিশের কথা শুনে মুচকি হাসলো…..
হাজারও কষ্টের মাঝেও আরিশের বলা কথাগুলো যেন ওর সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয় , অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে তখন ৷
আরুশিকে আরিশ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করল,,,,,,
এমন করছ কেন আরুপাখি ? আমি কি কোন ভুল করে ফেলেছি ?
আরুশি মুখের এক চিলতে হাসির রেখে টেনে আরিশের গালে আলতো করে স্পর্শ করে বলল: আপনি কেন কোন ভুল করতে যাবেন ? আমি জানি আপনি আমাকে কতটা ভালবাসেন তা আমি জানি৷ আপনি যদি আপনার ভালোবাসা প্রকাশে কখনো ব্যর্থ হন তবুও আমি ভাববো যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন ৷ হয়তো আমি একটু পাগলামো করি তবে আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তো করি ৷ আপনার কাছে যদি এই ছোট ছোট আবদার গুলো আর এই দুষ্টুমিগুলো না করতে পারি তাহলে আমার জীবনে আর অবশিষ্টাংশ হিসাবে কিছুই রইল না…..
আরিশ আজকে যেন এক অন্য আরুশিকে দেখছে৷ আজকে ওর মাঝে একজন রমণীর আভাস স্পষ্ট,যে সমস্ত জটিলতার সমাধান খোঁজার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পারে ৷
আরিশ খেয়াল করলো যে আরুশি কিছুটা হলেও বিকালের ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে তাই আর কোনভাবে আরুশিকে সেই সমস্ত কথাগুলো মনে করিয়ে ওর মুডটা খারাপ করতে চায় না…
হঠাৎ করে আরিশ খেয়াল করলো যে আরুশির চোখের কোনে জল জমে আছে এসেছে, মুহূর্তেই ওর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ৷
চোখের কোনে জমে থাকা জলটা এক কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়তেই আরিস ওর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে তা মুছে দিল ৷
আরিস : তোমার কি হয়েছে আরুপাখি, আমাকে বল৷
আরোশী আরিসের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল:
আমি আপনার পরিণীতা হয়ে আপনাকে পৃথিবীর সকল ভালোবাসা এনে দিতে চাই , সকল ভালোবাসা আপনার কাছে উজার করে দিতে চাই , নিজের সবটুকু দিয়ে ভালবাসতে চাই , আমিও একজন মা হতে চাই আর একজন মা হওয়ার সুখ অনুভব করতে চাই ৷
আরিশ আরুশির কথা শুনে অনেক অবাক হলো ৷
হঠাৎ করে আরুশির এমন পরিবর্তনে বাকরুদ্ধ , কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ৷
আরিশ নেশাগ্রস্থ কন্ঠে বলল : তুমি এখন বড্ড ছোট আরুপাখি…
আরুশি : দেবেন কি আমায় সেই সুযোগ ? ভালোবাসবেন কি আমায় ?
ভালোবাসার এমন একটা পর্যায়ে এসে আরিশের আর কিছু বলার নেই , ও নিজেও চাই আরুশিকে নিজের সমস্তটা দিয়ে ভালবাসতে ৷
তাই আর আরুর কথার কোন উওর না দিয়ে আরুশির চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ একে ওকে কোলে তুলে নিল…..
❤
সকালবেলা এগারোটা,,,,,
আরিশের বাড়ির সবাই বসে আছে অডিটোরিয়ামের প্রথম সারিতে ভার্সিটির টপারের বাড়ির লোক হিসাবে৷ সবার মুখ খুশিতে ঝলমল করছে ৷
আরিশের বাড়ির লোকের মাঝে আরূকে বসতে দেখে সবাই যেন একটু অবাকই হচ্ছে তবে আরিশের সাথৈ আরুর ঠিক কি সম্পর্ক তা ঠিক বুঝতে পারছে না ৷ অনেকেই ভাবছে যে আরূ আরিশের বোন ৷ তবে যার জন্য এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সে নিজেই উপস্থিত নেই ৷
অনেকখন হয়ে গেল সবাই অপেক্ষা করছে তবে আরিশের আসার নাম নেই দেখে সানা আরুকে বলে উঠল:
ভাইয়া কোথায় রে ? ওকে, তো দেখতে পেলাম না কখন আসবে ও?
আরূ : আমি জানিনা ঠিক, আমার ফোনটাও তো তুলছেননা ৷
ওদের কথার মাঝে হঠাৎ তিথি এসে উপস্থিত হলো, বেশ হাসিমুখে আরূর পাশে বসলো ৷
তিথিকে হাসিমুখে দেখে আরুর মনটা যেন ভরে গেল, তিথির মুখে হাসি দেখে খুব ভালো লাগছে ওর,হয়তো কোন খুশির খবর আছে ৷
আরূ আর দেরি না করে তিথিকে জিজ্ঞাসা করল, আজকে মনে হচ্ছে তিথি ম্যাডামের মুডটা খুব ভালো, তা কোন খুশীর খবর নাকি ?
তিথি আনন্দে আরুকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল:এবার আমার বাড়ির লোক নাহিদকে ঠিক মেনে নেবে আমি সিওর, আর না করতে পারবে না ৷
আরো ভুরু কুঁচকে অনেক কৌতুহল এর সাথে বলল: হঠাৎ কি হলো রে?কোন মিরাক্কেল!
তিথি: আরে নাহিদ একটা কোম্পানিতে জব পেয়ে গেছে , খুব ভালো স্যালারি ও দেবে বলল , তাই আর কোন চিন্তা রইল না আমাদের ৷
আরু আনন্দে তিথিকে জড়িয়ে ধরে বলল: এতো খুব ভালো খবর ৷
সানা: আনন্দটা আজকে দ্বিগুণ হয়ে গেল ৷
ওদের কথার মাঝখানে হঠাৎ মাইক্রোফোন নিয়ে প্রিন্সিপাল বলতে শুরু করলেন ,,,,,
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হবে আর আমাদের কৃতি ছাত্র আরিশ খান খুব শীঘ্রই আসবে৷
কথাটা শুনে আরুশি আবার আরিশের ভাবনায় মগ্ন হলো , সত্যিই তো কি এমন কাজ যে আরিশ আসতে পারছে না ! এখানে ওদেরকে আগে আগে পাঠিয়ে দিয়ে বলল যে তাড়াতাড়ি চলে আসবে , অফিসে নাকি একটা জরুরি কাজ আছে তাই ৷
আরুশি এবার নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে সবার থেকে কিছুটা দুরত্বে গিয়ে দাঁড়ালো , ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশের নাম্বারে কল করতে গিয়ে ভুলবশত তুরানের কাছে কলটা চলে গেল ৷
তুরান ফোনটা ধরতেই আরোশী ফোনটা ধরেই চটজলদি তে বলতে লাগল : কোথায় আপনি ? আর এত দেরি হচ্ছে কেন ?সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ৷
তখনই হাসতে হাসতে তুরান বলে উঠলো : আরে এটা sir নয় ,এটা আমি রে তুরান বলছি ,sir তো কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেলেন অনেক তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলেন মনে হল, কিন্তু এখন তোর তাড়াহুড়ো দেখে বুঝতে পারছি যে সত্যিই ওনার কোনো তাড়া আছে৷
আরুশি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো তারপরে কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো: সরি আমি ভাবলাম উনি হয়তো ৷
তুরান : সমস্যা নেই , আসলে অফিসে একটা নিউ স্টাফ জয়েন হওয়ার জন্য তাকে sir সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কাজগুলো তাই একটু দেরী হয়ে গেল .৷ ছেলেটা আমাদের বয়সী প্রায় বা আমাদের থেকে হয়তো কিছুটা বয়সে বড় হবে, কি যেন নাম বেশ ৷ ওহহহ নাহিদ হয়তো ৷
নাহিদ নামটা শুনেই আরু অবাক হয়ে গেল কারণ কিছুক্ষণ আগেই তিথি আরুকে বলছিল যে নাহিদ ভাইয়া কোন জব পেয়েছে , তাহলে তা কি আরিশের অফিসে ?
তখনই তুরান বলে উঠলো :কোন অনুষ্ঠানে গেছিস?
আরুশি : আসলে কলেজ থেকে ওনাকে সম্বন্ধনা দেবে সেই জন্য এখানে এসেছে, আর উনি নিজেই এখন বেপাত্তা ৷
তুরান হাসতে হাসতে বললো : আচ্ছা তাহলে এই সময় আমি এভাবে নষ্ট করতে দিতে চাইনা, আমি এখন রাখলাম পরে কথা হবে ৷ বলে ফোনটা রেখে দিল ৷
আরু যেন সবকিছু মিলিয়ে উঠতে পারছে না ৷
পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো দৌড়ে দৌড়ে আরিশ ওর দিকে এগিয়ে আসছে, সম্পূর্ণ অগোছালো দেখাচ্ছে ওকে….
আরুর কাছে এসে আরিধ ক্রমাগত হাঁফাতে লাগলো৷
আরিস : আই এম রিয়েলি সরি আরুপাখি, একটা জরুরি কাজ ছিল বলেই দেরি হয়ে গেল ৷
আরু ভাবলো যে এ সমস্ত কথা পরে বলা যেতে পারে, এখনই বলে আরিশকে ব্যতিব্যস্ত করার কোন দরকার নেই ৷
আরু আরিশের কাছে গিয়ে ওর অগোছালো চুল টাকে নিজের হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করল, সামান্য কিছুটা পরিপাটি করে পাঞ্জাবির খুলে থাকা বোতামটা যত্নসহকারে লাগিয়ে দিল ৷
আরোশী মুচকি হেসে বলল : আমি জানি , তবে এখন সবার আপনাকে প্রয়োজন তাই আপনি চলুন ৷ বলে আরিশ এর হাত ধরে এগিয়ে গেল….
আরিশ আর রাইসা দুজনকে একসঙ্গে গাড়ি থেকে নামতে দেখে আরূর খুব কষ্ট হলো , এত কিছুর পরেও এগুলো ঠিক আর মেনে নেওয়া যায় না ৷ সব সময় এগুলো প্রতিনিয়ত ওর চোখের সামনে ঘটেই চলেছে, বারবারই মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে আরু, তাছাড়া আরিশের যদি রাইসার সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছাই হতো তাহলে ও যখন দুপুরে অফিসে গেল ওকে একবার বলতে পারতো , এই জিনিসটাই বড্ড বেশি কষ্ট পেয়েছে আরু ৷
দৃশ্যটা চোখে যেন আর সইতে না পেরে রুমের ভিতরে চলে আসলো আরূ, এসে বই নিয়ে পড়তে বসে গেল৷ যদিও বা ইচ্ছা করে বসেনি আরিশের উপর রাগ দেখিয়েই বসেছে ৷ পড়াশোনাটা আজকাল আর ঠিক হয়ে উঠছে না সেই কারণে সমস্ত কিছু গোল্লায় গেছে , কি করবে ও , ওর মাথায় শুধু আরিশের কথায় ঘোরে পড়তে বসলে , বইয়ের মধ্যে যেন আরিশের মুখ ফুটে ওঠে বারবার ৷
বইটা ধরে আছে আর ক্রমাগত চোখের জলের ফোঁটাগুলো টপটপ করে বইয়ের পৃষ্ঠা তে পড়ে পাতাটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে বারবার , বইয়ের মোটা মোটা অক্ষর গুলোও চোখে ঝাপসা দেখছে এখন , চোখটা বড়ই অবাধ্য , ওর কথা শুনতে চায় না….
বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর আরিশ ভাবছে যে রুমে গিয়ে আরুশিকে সব সত্যি কথা বলবে যে ওর আসতে কেন এত দেরি হলো, আর রাইসাই বা ওর সঙ্গে কি করছিল ৷ (আরিশ লক্ষ্য করেছিল যে আরুশি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছে আর ওদের দুজনকে একসঙ্গে দেখেছে ৷)
সারাদিন রাইসাকে আরু বাড়িতে দেখেনি আর এমনিতেও রাইসাকে নিয়ে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই তাই আর ব্যাপারটাকে নিয়ে ভেবে দেখেনি ৷
পায়ের আওয়াজ শুনে আরু সঙ্গে সঙ্গে চোখের জলটা মুছে নিয়ে বইটাকে মুখের সামনে ধরল আড়াল করে যাতে আরিশ ওর মুখ দেখতে না পায় , ও চায়না নিজের চোখের জলটা আরিশকে দেখাতে ৷ এখন ভাবছে যে যখন নিজের ভালবাসাটাকেই প্রকাশ করতে ও ব্যর্থ তাহলে চোখের জলটাও ওর না দেখানোই ভালো ৷
আরিশ রুমে ঢুকে দেখল আর একটু অবাক ও হলো কারণ আরু বইটা পুরো মুখের সামনে নিয়ে পড়ছে যাতে ওর মুখটা ঢেকে গেছে আর দেখা যাচ্ছেনা ঠিকঠাক ৷
আবেগটাকে কাটিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে আরুর কাছে যেতে গিয়েও গেল না আরিশ ,,,,
ভাবলো যে ফ্রেশ হয়ে এসে তারপর আরুশিকে সবটা জানাবে আর এখন যেহেতু আরু বই পড়ছে তাই ওকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না ৷
আরিশ একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল , শাওয়ার নেবে ও এখন ৷ আজকে রাইসা ওকে যা জ্বালিয়েছে তাতে মাথা পুরা হ্যাং করে আছে ওর ৷ আরুর সাথে কথা বলার জন্য একটা ফ্রেশ মাইন্ড এর প্রয়োজন ওর ৷
আরিশ ওয়াশরুমে চলে যেতেই আরুশি বইটা মুখের সামনে থেকে নামল তারপরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো….
আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল: জানি আমাকে আর ভালোবাসেন না উনি ,সেই জন্যই তো আমাকে উপেক্ষা করে ওয়াশ রুমে চলে গেলেন কোন কিছু বলার প্রয়োজনও বোধ করলেন না , যদি আমাকে আগের মতো আর ভালোবাসতেন তাহলে আমার মান অভিমান গুলো বোঝার চেষ্টা করতেন , একবারও হয়তো বলতেন যে আরূপাখি সরি আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না….
থাকবো না আমি আর এখানে বলে বইটা পাশে ধপ করে রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ যাওয়ার আগে দরজাটায় এত জোরে ধাক্কা মারল যে ওয়াশরুমেও থেকেও আরিশের কানে শব্দটা পৌছৈ গেছে….
আরিশ মনে মনে : এবার আমি সবকিছু একটু বেশি বেশিই করে ফেলছি ,তবে আর না ৷ওকে কষ্ট দিয়ে আমি নিজেই তার থেকে বেশী কষ্ট পাচ্ছি ৷
রাত প্রায় 10:30 ,,,,,,,
আরুশি ওর রুম থেকে বেরিয়ে হনহন করে
নিজের রুম থেকে বের হতেই যখন সানার রুমের দিকে যাচ্ছিল তখনই রাইসার রুমটা পার করে আসতে গিয়ে রাইসার রুম থেকে হাসির আওয়াজ ওর কানে আস্তেই দাঁড়িয়ে গেলো সেখানেই , তারপর উঁকি মেরে দেখতে লাগল যে ব্যাপারটা কি ৷
রেনু খান : তুই আর আরিশ আজকে খুব ইনজয় করেছিস বল ?
রাইসা: ভিষন ! আরিশ এতটা ভালোবাসতে পারে তা আমার কল্পনাতেও ছিল না ৷
বাদ বাকিটুকু রাইসা কি বলল তার আরু আর কানে নিল না কারণ যেটুকু শুনেছে তাতেই ও আলাদা একটা ভাবনা ভেবে ফেলেছে….
বেশি দেরি না করে আরু তাড়াতাড়ি করে সানার রুমের দিকে গেল ৷
সানার রুমে গিয়ে বিছানার উপর বসে পড়ল ,সানা তখন আরাভের সঙ্গে কথা বলছিল .আর হঠাৎ আরুশি আচমকা এভাবে যেতেই ও ভয় পেয়ে গেল৷
সানা (ফোনে) :আমি আপনাকে একটু পরে ফোন করছি ৷
আরাভ :ওকে ৷
সানা : কি হয়েছে তোর এত রেগে আছিস কেন?
আরুশী : কিছু হয়নি আমার , আমি আজকে রাত্রে তোর কাছে ঘুমাবো, তুই কি আমাকে ঘুমাতে নিবি? না নিলে বল আমি গেস্টরুমে চলে যাচ্ছি ৷
সানা থতমত খেয়ে : কেন ভাইয়ার সাথে কি কোনো সমস্যা হয়েছে তোর?
আরু একটু রাগী চোখে তাকাতেই সানা ভয়ে ভয়ে বলল :
আরে তুই ঘুমাবি সেটা কোন ব্যাপার না , আমি আসলে জানতে চাইছি যে ভাইয়া কি তোকে কিছু বলেছে?
আরূ:বুঝতে পেরেছি তোর কোন ইচ্ছা নেই আমাকে এখানে ঘুমাতে নেওয়ার, আচ্ছা আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি বলে আরূ উঠতে গেলে সানা ওর হাত ধরে আবার বসিয়ে দিল…
সানা : আরে রাগ করছিস কেন , আমি সেই মাইন্ডে বলিনি ৷ তোর যতদিন ইচ্ছা হয় তুই আমার রুমে থাক৷
আরূ সানার দিকে আবার তাকিয়ে বলল: যতদিন ইচ্ছা ততদিন নয় , আমি শুধু আজকের দিন টা থাকবো তারপর কালকে আমি চলে যাব ৷
সানা অবাক হয়ে :কোথায় যাবি তুই?
আরু: আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাবো , কেউ আমাকে ভালবাসে না , কেউ না , উনিও না , ৷(বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল…)
সানা আরুকে কাঁদতে দেখে ও নিজেও ইমোশনাল হয়ে গেল , তারপর আরূকে জড়িয়ে ধরে বলল : তুই কোথাও যাবিনা , আমার সাথেই থাকবি এরুমে , ভাইয়া যখন তোর সঙ্গে এরকম ব্যবহার করেছে ওর কাছে তো যাওয়ার দরকার নেই ৷
সানা যদিওবা জানে যে আরূ অভিমানের থেকেই সমস্ত কথাগুলো বলছে ৷ আরিশ আরূকে কতটা ভালবাসে সেটা সকলেরই জানা কারোরই অজানা নয় ,শুধু আরূ ভালোবাসাটা বুঝলেও মানতে চায় না৷
সানা আরূর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে শুরু করল: তুই ঘুমিয়ে পড় আমি আছি এখানে ৷
আরূ তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজা বন্ধ করে দিল ৷
আরূ এসে শুয়ে পড়ল বিছানায় ৷
আরু: উনাকে একদম ঢুকতে দিবি না আর আমি জানি যদিও বা আমার থাকা বা না থাকাই ওনার কোন যায় আসে না তাই উনি আসবে না , আর যদিও বা আসে তাহলে একদম ঢুকতে দিবি না , আমি ওনার কাছে আর যাব না ৷
সানা মনে মনে : আচ্ছা মুশকিল হল এদেরকে নিয়ে, ভাইয়া ওকে নিয়ে যাবে সেটা আমিও খুব ভাল করেই জানি, আর ও নিজেও জানে ৷ ওকে নিয়ে গেলে আরু সকালে আমাকে শেষ করে দেবে ৷
সানা : আচ্ছা ৷
লাইট অফ করে দুজনেই শুয়ে পড়ল ৷আরাভকে সানার আর ফোন করা হলো না ,আর এদিকে আরাভ বারবার ওকে ফোন করেই যাচ্ছে, সানা বারবার ফোনটা কেটে দিচ্ছে , না পেরে আরাভকে একটা মেসেজ করল :
আমি খুব সমস্যায় আছি আরূকে নিয়ে , আজকে আর কথা হবে না , বাই ৷
অপর দিক থেকে আরাভ মেসেজের রিপ্লাই দিলো কান্নার ইমোজি দিয়ে, যা দেখে সানা হেসে ফেলল ৷
ফোনটা রেখে দিয়ে আরূকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল৷
কয়েক মিনিটের মধ্যে সানা ঘুমিয়ে পড়লেও আরুর চোখে ঘুম নেই , মনটা বারবার আনচান আনচান করছে, আরিশকে ছাড়া যে থাকতে পারে না…..
আরিশ কোন রকমে তাড়াতাড়ি করে সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো, চুলগুলো থেকে এখনও টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে , ভালো করে মাথাটা মোছা হয়নি , রুমে এসে দেখল আরূ নেই , ও যা ভয় পেয়েছিল তাইই হল ৷ এখন যে মেয়েটাকে মানাতে গিয়ে ওকে বেশ ভালই খাটতে হবে তা ও বুঝতে পারছে , তবুও কিছু করার নেই , আরূকে ছাড়া ঘুম আসে না ওর , তছাড়া আরুকে ছাড়া থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় ৷
তাড়াতাড়ি করে অগোছালো হয়ে সানার রুমে গেল আরিশ ৷ ও খুব ভালোভাবেই জানে যে আরূ সানার রুমে যাবে তাই অন্য কোথাও আর না গিয়ে সানার রুমেই গেল ৷
সানার রুমে গিয়ে দরজায় নক করতেই সানার ঘুম ভেঙে গেল , আরূও ঘুমিয়ে পড়েছে আরিশের কথা ভাবতে ভাবতে ৷
সানা বিছানা থেকে নেমে বলল: এসেছে এদের দুজনকে নিয়ে আমার জ্বালা , কখন কি করে বোঝা দায় ৷
সানা দরজাটা খুলতেই আরিশ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলেই সানা আটকে দিল ওকে ৷
সানা : ভাইয়া যেখান থেকে এসেছিস সেখানেই ফিরে যা না হলে এত রাতে তোর বউ আবার দাঙ্গা-হাঙ্গামা করবে আর আমি সেটা এখন চাইনা ৷ একেই তোর জন্য আমার কাচা ঘুমটা ভেঙে গেছে ৷
আরিস :কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা হবে না , আমাকে যেতে দে আমি ওকে নিয়েই চলে যাব ৷
সানা : সেটা হচ্ছে না , বউয়ের সাথে ঝামেলা করে তাকে কষ্ট দিয়ে এখন এসেছেন উনি মাখন লাগাতে৷ তাড়াতাড়ি নিজের রুমে যা আমার ঘুম পেয়েছে ৷
আরিশ :তুই ওর হয়ে কথা বলছিস?আচ্ছা বেশ, তবে এটা তো জানিস যে ও কতটা অবুঝ , কিছু বুঝতে চায়না বোঝালেও ৷ আর ও যা দেখেবে সবসময় যে সটাই সত্যি তা কিন্তু নয় ৷
সানা মনে মনে ভাবলো যে হয়তো কোন মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর জন্য আরূ এরকম করছে তাই ভাবলো আরিশকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত ৷
সানা: তোর বউকে নিয়ে যা, আর হ্যাঁ নেক্সট বার যদি শুনেছি ওকে বকা ঝকা বা আর অন্য কিছু বলেছিস তাহলে তোর খবর আছে ৷
আরিশ রুমে ঢুকে আরুশির দিকে এক পলক তাকালো ৷কাঁদতে কাঁদতে চোখের নোনা জল গুলোও এতক্ষণে শুকিয়ে গেছে তার চিহ্ন স্পষ্ট ৷
আলতো করে আরুশিকে কোলে তুলে নিল তারপর সানার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিল ৷
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে আরূ অনুভব করলো যে ও যেন হাওয়ায় ভাসছে ৷ তাহলেও কি কোন পরীদের রাজ্যে চলে এসেছে ? কেউ কি ওকে তুলে নিয়ে গেছে ? এরকম ভাবনা ভাবতেই হঠাৎ আস্তে করে চোখ খুলতেই পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল যে ও আরিশ ওকে কলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ৷ আরিশকে একপলক দেখেই আরু চোখটা বন্ধ করে নিল….
আরিশ ওকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷
আরু হালকা করে চোখ পিটপিট করে দেখলো আর মনে মনে বলল : আমাকে এখানে ঢং করে এনে এখন রাইসার কাছে গেছে প্রেমালাপ করতে , আসুক ঘরে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করুক আমি উত্তর দেবো না, সব সময় আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া তাইনা!
আরিশ কলটা সেরেই রুমে ঢুকলো, কলটা অনেক আগেই এসেছিল তবে আরুশিকে আনার ব্যস্ততায় আর ধরতে পারেনি তাই এখন কল টা অ্যাটেন্ড করল ৷
রুমে এসে আরুশির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল:
আমি জানি আরুপাখি তুমি জেগে আছো তাই এসব ঘুমের নাটকটা বন্ধ করো ৷ এখন আমি যা বলছি তাই শুনবে তুমি ৷ সবসময় না জেনে শুনে তুমি রাগ করো এটা তো ঠিক না , আমি তোমাকে সব বলতাম কিন্তু তোমার সাথে কথা বলার জন্য একটা ফ্রেশ মাইন্ড এর প্রয়োজন ছিল তাই আর কিছু বলিনি…
আরোশী তাও কোন কথা বলছে না ,আগের মতোই চুপ করে শুয়ে আছে ৷
আরিশ : আরুপাখি কথা বল, চুপ করে আছো কেন?
আরুশির থেকে তাও কোন রেসপন্স নেই ৷
আরিশ: তুমি যদি এবার কিছু না বলো তাহলে আমি কিন্তু আবার তোমার উপর টর্চার শুরু করব , তখন কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবে না ৷
আরুশির থেকে নো রেসপন্স ৷
আরিশ এবার না পেরে আরুশিকে ভালোবাসতে শুরু করলেই হঠাৎ করে আরুশি কেঁদে উঠলো ৷
হঠাৎ করে আরূকে কাদতে দেখে আরিশ ঘাবড়ে গেল,,,,,
আরিশ আরুর থেকে সরে এসে : আই এম রিয়েলি সরি আরূপাখি, আমি এরকমটা করতে চাইনি ৷
আরুশি আরিশের জামার কলার ধরে নিজের কাছে টেনে এনে কাদতে কাদতে :
আমাকে তো এখন আর ভালো লাগেনা তাইনা , সব ভালোবাসা তো রাইসার জন্য ৷ রাইসার সাথে মজা করে এসে এখন আমার কাছে এসেছেন ? আমি কি বুঝিনা !
আরিশ বুঝতে পারলা আরুশির অভিমানের কারণ, তাই আরূশির কপালে ভালোবাসার পরশ একে আরুকে চুপ করিয়ে দিল ৷
আরিশ: কে বলল আমি তোমাকে ভালোবাসি না, নিজের থেকেও বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে, সারা জীবন বেসে যাব ৷ তুমি তো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলে না , তবে তুমি যেমন আমাকে কোন সুযোগ দিলে না আমিও দেবো না তোমাকে ৷
আরুশিও আরিশের কথায় চুপ হয়ে গেল একদম ৷ আরিশ মেতে উঠল আরূশির ভালোবাসায় ৷
আজকে আরিশ, আরু , সানা তিনজন মিলে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে ৷ আরু আর সানার নরমাল ক্লাস হবে তবে আরিশকে প্রিন্সিপাল স্যার ডৈকেছেন ৷ কালকে ওদের রেজাল্ট আর তা নিয়ে সকলের মাঝেই চিন্তা ৷ আরিশ নিজেও যে খুব একটা চিন্তাই নেই তেমনটা নয় , নিজের উপর বিশ্বাস থাকলেও তবুও কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে ওর , যতই হোক ফাইনাল এক্সাম বলে কথা ৷
হঠাৎ প্রিন্সিপাল স্যার কেন ডাকলেন সেটাই বুঝতে পারছে না….
তবে সারাদিন আরুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে এটা ভেবেই খুশি ৷ রাইসা নামক প্যারার থেকে মুক্তি পেল আজকে ৷
সারা রাস্তায় ওরা গল্প করতে-করতেই এসেছে..
আজকে সানা আর আরাভের ঘুরতে যাওয়ার কথা আছে , তাই সানা কয়েকটা ক্লাস করেই বেরিয়ে যাবে কিন্তু আরুকে তো একা থাকতে হবে এই কথাটা ভেবেই ওর মন খারাপ লাগছে খুব….
সানা কি নিয়ে তিথি একটু আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে গেল , আরু কে অপেক্ষা করতে বলেছে ওর জন্য , তারপর এসে একসঙ্গে তিনজন মিলে ক্লাসে যাবে…
আরিশ দাঁড়িয়ে রয়েছে আরুর পাশে ৷
আরিশ: আমার আরুপাখির কি মুড অফ?
আরোশী বাচ্চাদের মত করে মাথা নাড়িয়ে বলল: নাহ ৷
আমার বউটার মুডটা যে অফ সেটা বেশ ভালই বুঝতে পারছি, আমাকে কি বলা যায় না যে কারণটা কি?
আরু: সানা আরাভ ভাইয়ার সঙ্গে ঘুরতে চলে যাবে তখন আমি একা একা বসে থাকব ৷
আরিশ হা হা করে হেসে উঠল : তো এই ব্যাপার!
আরুশি : আপনি হাসছেন ৷
আরিশ আরুর গাল টেনে দিয়ে: হমমম আমি হাসছি, আচ্ছা এবার তুমি এখন তুই ক্লাসে যাও, প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলে আমি আসছি ৷
আরু: হমম ৷
আরিশ: কলেজ ছুটির পর আমি তোমাকে নিতে আসবো তাই একা একা যাবে না , যদি যাও তো খবর আছে ৷
আরিস তারপর কিছু ভেবে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে গেল ৷
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই আরিশ আরুর জায়গাটা হাতেরে দেখল কেউ নেই অর্থাৎ আরু উঠে পড়েছে অনেকক্ষণ আগেই ৷
আসলে কালকে রাতের ঘটনায় আরু খুব লজ্জা পেয়েছে সেই কারণে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে , আরিশ এর মুখোমুখি হবে কি করে ও ! লজ্জায় ওর দিকে হয়তো তাকাতেই পারবেনা ৷
আরিশ জানে আরুশির ওকে ঘুম থেকে না ডেকে দেওয়ার কারণ ৷ অন্য দিন আরু ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই ওকে ডেকে দেয় কিন্তু আজকে ডাকেনি লজ্জায় ৷
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতেই বুঝতে পারল যে অনেকটাই লেট হয়ে গেছে ওর উঠতে , আসলে আগের দিন আরুকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে সময়টা যে কিভাবে কেটে গেছে সেটা ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে….
ঘুমের ভাবটা কাটতেই বিছানা ছেড়ে উঠতেই দেখতে পেল বিছানার উপরে ওর অফিসে যাওয়ার জন্য শার্ট আর সমস্ত যাবতীয় কিছু রেডি করে রাখা আছে৷ আরু এই সমস্ত কাজগুলো যে তার নিজের প্ল্যানমাফিক করেছে সেটাও বুঝতে হয়তো আর অসুবিধা হলো না আরিশের ৷ বিছানার পাশে থাকা টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলো কফি রয়েছে , তা থেকে ধোঁয়া উড়ছে অর্থাৎ কফিটা যে কিছুক্ষণ আগেই দিয়ে গেছে তা আন্দাজ করতে পেরেছে বেশ ৷
কফির কাপটা তুলতেই তার নিচে থেকে একটা চিরকুট পেল আরিশ আর তাতে লেখা আছে ,,,,,,
“__আপনার সমস্ত কিছু রেডি করে দিয়েছি, কফিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷”
লেখাটা যে অনেকটা চটজলদিতেই লিখেছে আরুশি সেটা ওর আঁকাবাঁকা হাতের লেখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷
আরিশ মুচকি হাসি দিয়ে কফিতে চুমুক দিল তবে আজকে কফি র টেস্ট টা একটু অন্যরকম, অন্যদিনের থেকে সামান্য কিছুটা আলাদা ৷ অন্যদিন কফি বানিয়ে দেয় ওর মা , তবে আজকেরটায় একটু একটা ভিন্ন ধরনের স্বাদ আছে তাতে বুঝতে পারল যে আরু কফিটা বানিয়েছে ৷ মুচকি একটা হাসি দিয়ে কফিটা শেষ করে শার্ট আর প্যান্ট এর দিকে তাকালো আরিশ ৷ আরুশি বেছে বেছে আরিশ এর জন্য একটা অ্যাস কালারের শার্ট আর ব্লু কালারের প্যান্ট রেখেছে৷ ব্লেজার রাখেনি কারণ আরূ সবসময় বলে যে ওকে নাকি শুধু শার্ট এই বেশি ভালো লাগে তাই হয়তো ব্লেজার রাখেনি ৷ কোন পারফিউম টা দেবে সেটাও রেখে দিয়ে গেছে আরূশি ৷
জামা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে আরিশ বলতে লাগলো ,,,,,,
“___তোমার পছন্দের সমস্ত জিনিস আমি পরবো তবে আজকে নয় , আজকে তোমার কথাটা যেন রাখতে পারছিনা আমি কারণ তোমার শাস্তির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি, যতদিন না সব ঠিকঠাক হচ্ছে ততদিন তোমার বিরুদ্ধে যেতেই হবে আমাকে , জানি তুমি কষ্ট পাবে তবে পরে আমি ভালোবাসা দিয়ে তা সুদে আসলে উসুল করে দেব সব ৷
ওয়াশ রুমে ঢুকেই শাওয়ারটা অন করতেই সমস্ত শরীরটা ভিজে গেল আরিশ এর , ভেজা চুলগুলো চোখের ওপর এসে আছড়ে পড়ায় সামনের দেওয়ালে আটকে রাখা চিরকুটটাতে কি লেখা আছে সেটা বুঝতে পারছে না ও ৷ আছড়ে পড়া চুলগুলোকে হাত দিয়ে মাথার পিছন দিকে ঠেলে চিরকুট টাতে কি লেখা আছে বোঝার চেষ্টা করলো আরিশ ৷
“___আচ্ছা কফি খাবার সময় অন্য একটা স্বাদ পেয়েছিলেন আজকে ? জানি পেয়েছিলেন ! আর এটাও জানেন যে আজকে কফিটা আমি বানিয়েছি, আর কফির প্রথম চুমুকটাও আমিই দিয়েছি , তারপর আপনি দিনশেষে ভালোবাসার পরশটাও আমিই দেবো ৷ আমি চাই আমার ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করে আপনার দিনের শুরু এবং সমাপ্তি দুটোই ঘটুক৷ তাই যতদিন বেঁচে আছি ভালোবেসে যাবো ৷ অজস্র ভালবাসা প্রিয় ৷___”
আরুশির লেখা শব্দ গুলো পড়ে কিছুক্ষণের জন্য আরিশের হৃদস্পন্দন গুলো যেন বেড়ে গিয়েছিল, কারণ কথাগুলো এতই আবেগী যে আরিশের হৃদয়কে স্পর্শ করে গেছে ৷ মনে মনে মহান আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছে আরিশ , যে এত কিছু উপভোগ করতে দেওয়ার জন্য ৷ আজ যদি আরু এই পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতো তাহলে হয়তো নিজের ভালবাসার প্রকাশ ঠিকঠাক করতে পারত না আর আরিশের ও হয়ত পাওয়া হতোনা আরুশির এমন আবেগ মাখা ভালোবাসা ৷
রুমের ভিতরে ঢুকতেই চোখ পড়ল আরুশির পছন্দ করে রাখা শার্ট এর উপরে ৷মনটা বারবার টানছে শার্ট টা পরার কিন্তু এখন তা সম্ভব নয় , তাই অনেক উপেক্ষা করার চেষ্টা করে অবশেষে সফল হয়ে ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা রঙের শার্ট বার করে আনল আরিশ ৷ আর একটা কালো রঙের ব্লেজার ও পরেছে ৷
আজকে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে আরুশি , অনিকা খানের আজকের দিনের মত আপাতত ছুটি ৷ সারা বছর তো উনিই কাজ করেন, আরুশিকে কিছু করতে দেন না তাই অনেকটা জোর করেই ওনাকে বসিয়ে রেখেছে আরু ৷
সুজির হালুয়া, পরোটা , ডিম ভাজা , জুস , আলু ভাজা আর পায়েস বানিয়েছে আরুশি ৷ মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে থাকতে ওর মায়ের থেকে এগুলো শিখে নিয়েছিল তাই বানাতে খুব একটা অসুবিধা এবং কারোর সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি….
আরুশিকে দেখে খুব খুশি খুশি লাগছে তা দূর থেকে অনিকা খান এবং সানা দুজনেই দেখতে পাচ্ছেন আর আরুশিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ৷
অনিকা খান সানার কানে কানে বললেন : মেয়েটাকে বেশ খুশী দেখাচ্ছে আজকে ৷ আল্লাহ যেন সারাজীবন ওকে এভাবেই খুশি রাখে , কখনো যেন ওর মুখ থেকে হাসিনা কেড়ে না নেয় , তবে কি এই খুশির কারণ সেটাইতো বুঝতে পারছিনা ৷ আরিশের সাথে সব ঝামেলার কি সমাপ্তি হয়েছে? তোকে কি কিছু বলেছে এ ব্যাপারে ?
সানা উদাস চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল: আমাকে কিছু বলেনি , তবে ওকে খুশি দেখে রাইসা আপু যে লুচির মতো ফুলে যাবে সেটা ভালভাবেই বুঝতে পারছি ৷ (বলে দুজনেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগল ৷)
ওরা দুজন এভাবে হাসাহাসি করছিল তখনই অনিকা খানের বোন রেনু খান এলেন ৷
রেনু খান বলতে বলতে আসছিলেন : আজকে সকালে ব্রেকফাস্ট কি পাবো নাকি পাবো না ! সেই কখন থেকে ওয়েট করছি ৷ আজকে মনে হয় এই মেয়ে খেতে দেবে না, সবাইকে না খাইয়েই ছাড়বে ৷
কিচেন থেকেই কথাগুলো আরুশী শুনতে পাচ্ছিল কিন্তু আপাতত এই কথাগুলো কানে নেওয়ার মুডে নেই খুব ভালো মুডে আছে এখন ,তাই উনার কথা শুনে সকাল সকাল নিজের মুডটাকে আর খারাপ করতে চায় না আরু , আর তার উপর যদি এখন উনার মেয়ে এসে টেপ রেকর্ডারের মতো চালু হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই ৷
আনিকা খান রেনু খানকে নিজের পাশে বসিয়ে : আরে আপু আরেকটু বসো না , আরু মামনির প্রায় হয়ে গেছে , আর তাছাড়া আরিশ আসুক তারপর…
আরুশির ইতিমধ্যে সব রান্না কমপ্লিট, এক এক করে সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে গেল , হঠাৎই তখনই আরিশ এল , আরিশ দেখতে পেলে যে আরূ কিচেনে রয়েছে , কফিটা খাওয়ার সময়ই আন্দাজ করতে পেরেছিল যে সকালে ব্রেকফাস্টটা আরুই বানাবে ৷
আরিশ আসতেই ঝটপট করে আরোশী রান্নাঘর থেকে পায়েশ নিয়ে এল….
সবাই খেতে বসেছে তবে অনিকা খান বসেনি দেখে ওনাকে জোর করে বসাল আরূ ৷
এতক্ষণেও আরূ আরিশের দিকে লক্ষ্য করেনি , হঠাৎ আরিশকে খাবার দিতে গিয়ে বুঝতে পারল আরিসের সাজগোজের পার্থক্যটা ৷ ও যা যা পছন্দ করে দিয়েছিল আরিশ তার কোন কিছুই পরেনি , এমনকি ঘড়িটাও নয়, পারফিউমটা অব্দি আলাদা ৷
কালকের পর আরিশ এর থেকে অমন ব্যবহারের পাওয়ার পর আরূশি ভেবেছিল আরিশ হয়তো ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু আরিশ যে এখনও ওর উপরে রাগ করে আছে এগুলোই হল তার প্রমান ৷
আরুশি সবকিছুই লক্ষ্য করলো কিন্তু কিছু বললো না চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিল ৷ মনের ভিতর কষ্ট যে হচ্ছে না তা নয় , কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তা এখন সকলের সামনে প্রকাশ করতে চাইছেনা ৷
আরিশ : ওহহ ৷ (আরিশ অবাক যে হয়নি তা নয় বরং বেশ ভালোই অবাক হয়েছে ৷ )
আরিশের চোখ মুখের অবস্থা দেখে ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার জন্য রেনু খান বললেন ,,,,,
রেনু খান : আসলে কালকে তোর বউ যা করলো তারপর থেকে ওর শরীরটা খুবই খারাপ খারাপ লাগছে ৷ আর মেয়েটা প্রচন্ড কান্নাকাটি করেছে, না জানি তোর বউ আবার কখন কোন ক্ষতি করে দেয়৷ শরীরটা ভালো নেই বলেই হয়তো উঠতে পারেনি তাড়াতাড়ি ৷ও তো সবসময় 6.30 টাই ওঠে ৷( মিথ্যা কথা😒)
আফজাল সাহেব : আমি যতদূর শুনলাম রাইসা কেবলমাত্র একবার চুমুক দিয়েছে কিন্তু আরুশি যে পুরো কফিটা খেল কিন্তু এখন আরূ মামনিকে বেশ ঠিক দেখাচ্ছে তাহলে !
আরু চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে , আরিসের থেকে সকাল সকাল এরকম একটা ব্যবহার পেয়ে কোন ভাবেই খুশি নয় ও , ভালো মুডটা যেন খারাপ হয়ে গেল তাই এখন কে ওকে কে কি অপমান করল আর কে ওকে সান্তনা দিলো তার কোন কিছুতেই যায় আসে না ওর ৷
কথাটা শোনামাত্রই আরিশ আরুর দিকে তাকাল ,,,,
আরিশ : মেয়েটার মুখটা কেমন চুপসে গেছে, কিছুক্ষণ আগে বড্ড বেশি প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছিলো ৷ ওর ব্যতিক্রমী কিছু কাজ যে ওকে এতটা দুঃখ দেবে তা আগে জানলে কখনোই এ ধরনের কাজ করার সাহস পেত না আরিশ ৷ আরুশিকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর , ভাবছে সামান্য জামাকাপড়ের ব্যাপার ছিল পরে নিলেই পারত ৷
কিন্তু এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ৷
অফিসে এসে বসে আছে আরিশ ,এতদিনের একগাদা কাজ পড়ে আছে, কোন কাজে মন বসছে না ৷ সকালবেলা আরুশির ওই রকম মনখারাপ দেখে আরিশের মনটা যেন কেমন আনচান আনচান করছে৷
ল্যাপটপের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আরিশ, আর তাতে নিজের ঘরে সিসিটিভি ফুটেজটাই ফুঁটে উঠছে স্ক্রিনে , আরুশিকেই দেখছে laptop এ ৷
অনেকখন ধরেই উদাস হয়ে বসে আছে মনমরা হয়ে ৷
আরিশের ইচ্ছা করছে এখনি ছুটে যেতে আরুর কাছে, মেয়েটাকে আজানাই বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলে ও ৷
❤
আরু চুপচাপ হাত পা গুটিয়ে বসে আছে তখনই সানা রুমের মাঝে প্রবেশ করল ৷
সানা:আমম্মু ডাকছে তোকে ৷ আর সকাল থেকে দেখছি তোর মন খারাপ ৷ কি হয়েছে তোর ?
সানা : আরে ভাইয়ার খাবার দিতে তোকে অফিসে তোকে যেতে বলেছিল ৷
আরু:আমি যাব না , রহিম চাচাকে বল দিয়ে আসতে ৷
সানা: না তুই ই যাবি, নাহলে আম্মু খুব রাগ করবে ৷
আরু: আচ্ছা আমি যাচ্ছি ৷ আরু এতক্ষন এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল ,সানার কাছ থেকে কথাটা শুনতেই খুশি আর ধরলো না ,তাই ঝটপট রাজি হয়ে গেল ৷
আরু রান্না করেছে সব আরিশের. জন্য,আর তারপর রুমে এসে মনমরা হয়ে বসেছিল এতক্ষন ৷
যাওয়ার কথা শুনেই একপ্রকার উৎফুল্লতা কাজ করলো আরুর মাঝে ৷
তাড়াতাড়ি করে একটা black colour এর শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল আরু ৷
এতক্ষণে আরিশের মনটা খুব খারাপ ছিল কিন্তু হঠাৎ আরু আসবে জেনে মনটা ওর খুশিতে ভরে গেল আর এত কষ্টের মধ্যেও একপ্রকার শান্তি পেল আরুর মুখে হাসি দেখে , যা দেখে ও সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে ৷
আরিশ অপেক্ষা করছে আরুর আসার জন্য৷
চলবে,,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:27
#Suraiya_Ayat
একটা ব্ল্যাক কালারের শাড়ি পরেছে আর সাজগোজ বলতেও খুবই নরমাল , বেশি সাজুগুজু খুব একটা পছন্দ হয় না ওর, নিজেকে যেন জোকার জোকার ভাবে বেশি সাজগোজ করলে ৷
আরিশ বলে যে ওকে নাকি অতিসাধারণ এই খুব ভালো লাগে ৷
নিজের ভালবাসার মানুষটার চোখে যখন সাদামাটা হিসেবেও বেশ আছে তখন লোকের সামনে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য বাহ্যিকভাবে আলাদা কোনো সাজগোজের প্রয়োজন হয় বলে আরু সেটা মনে করে না ৷
হাতে কালো রঙের কাঁচের চুড়ি পড়েছে আর গলায় একটা সিম্পল চেন দেওয়া লকেট আর চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে , খুব সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে….
আরুশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে :
নিজেই নিজের উপর ক্রাশ খেয়ে যাই না জানি আমার জামাই দেখলে তো পাগলই হয়ে যাবে ৷
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো আরু ৷
আরিশ এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে আর হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে আরুর কথা শুনে ৷ মেয়েটা সত্যিই খুব বাচ্চা , তা ওর হাবভাবেই ভাবে বোঝা যায় ৷
হঠাৎ করে সানার ডাক কানে এলো , ,,,,
সানা: আরু তুই রেডি, আম্মু সব গুছিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি আয় নিচে ৷
আরূ : হ্যাঁ আমি আসছি ৷
তাড়াতাড়ি করে নিজের ওপর আর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দেখে নিলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা , তারপর তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তবে ফোনটা বিছানার ওপরই রেখে গেছে সেটা নিয়ে যেতে আর মনে নেই ৷
আরিশ ল্যাপটপটা বন্ধ করে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দিলো , আর কিছুক্ষণ পরেই আরু আসবে , আর আরুকে দেখলে মনোযোগটা যে বিন্দু পরিমান থাকবে সেটা ওর মনে হয় না ৷ ওই একটা মেয়েই ওর মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে যথেষ্ট ৷
রাইসা রেডি হচ্ছে ৷ একটা প্লাজো আর একটা টপ পরেছে , পারফিউমটা বাতাসে ওড়াতেই রুমটা সুগন্ধে ভরে গেল,,,,
রেনু খান : কিরে আর কত পারফিউম লাগাবি? আর দিস না এবার একটু বেশিই বিধঘুটে লাগছে৷
রাইসা : আমার নেশায় আরিশকে আমি পাগল করতে চাই ৷ আরিশ কে আমি আজকে আমার করেই ছাড়বো , ওকে বিয়ের জন্য রাজি করাবো আমি৷
রেনু খান : সে ঠিক আছে তবে তুই একটু পরে যাস ৷
রাইসা অবাক হয়ে বলল : কেন একটু পরে যাব কেন ? আরিশের সঙ্গে দেখা করার জন্য কি আমাকে এখন টাইম মেনটেন করতে হবে নাকি!
রেনু খান : আরে ওই মেয়েটা এক্ষুনি আরিশের সেজন্য লাঞ্চ নিয়ে গেল , তুই এখন গেলে ব্যাপারটা ঘেটে যাবে সম্পূর্ণ ৷ আর ওই মেয়েটার প্রতি আরিশের টানটা তোর থেকেও বেশি , মনে হয় না ও থাকলে আরিশ তোর কথা ভাববে ৷
রাইসা ওর মায়ের কথা শুনে রেগে গেল, তারপর বলল: তুমি কি এখন ওই মেয়েটার হয়ে কথা বলবে নাকি আমার হয়ে?
রেনু খান : আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো, আরিশ যতই দেখাক যে ও মেয়েটাকে ইগনোর করছে কিন্তু আমার মনে হয় না ও সম্পূর্ণ ইগনোর করতে পারছে ৷ দেখ সারা দিন টা ও কাছে না পেলেও কিন্তু সারারাত ও মেয়েটার সঙ্গে থাকে একই রুমে ৷ আর একটা মেয়ের একটা ছেলেকে বশ করার জন্য একটা রাতই যথেষ্ট, তোর আগে বিয়ে হোক তারপরে তুইও বুঝবি ৷
রাইসা : যত তাড়াতাড়ি হোক না কেন ওই মেয়েকে আরিশের কাছ থেকে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে না হলে আমি আরিশকে কখনোই পাবো না ৷ বলে ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ল ৷
❤
সারা রাস্তাটা আরুশির মুডটা খুব ভালো ছিল ৷ সকালে আরিস এর কাছ থেকেও রকম একটা ব্যবহার পেয়ে তার পরে এটা একটা খুবই ভালো শুভারম্ভ তাই এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে নিজেকে৷ আরিশ যত কষ্টই দিকনা কেন তাও যেন মিলিয়ে গেছে সব ৷ ও নিজে লাঞ্চ করেনি তবে খাবার টা একটু বেশি করেই নিয়েছে ৷
কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ল্যাপটপের দিকে একবার তাকাল আরিশ, তাকাতেই দেখলো আরু আসছে ৷ দেখল যে সিকিউরিটি গার্ড দরজাটা খুলে দিতেই আরু ভিতরে ঢুকলো, মুডটা ভালো , বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে ওকে ৷ আরুকে হাসতে দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল আরিশের ৷ ওর কাজটা খুব একটা ইম্পরট্যান্ট ছিল বলে আরুর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফাইলের উপরে নজর দিল আরিশ ৷
হয়তো আর এক মিনিটও লাগবেনা আরুর আসতে, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার ৷
আরু এই প্রথম আরিশের অফিসে আসল তাই সেইভাবে কাউকে চেনে না ৷কিছুটা পথ যেতেই
অন্যমনস্ক হয়ে আরু এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতেই একটা ছেলেটা কে জিজ্ঞাসা করল :
ভাইয়া আরিশ খানের রুম কোনটা বলতে পারবেন?
কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগলো তুরানের কাছে তাই আর বেশী দেরী না করে ও সামনের দিকে তাকাতেই খুশিতে তুরানের মুখটা ঝলমল করে উঠল….
তুরান খুশি হয়ে বলে উঠলো : আরুশি তুই
হঠাৎ এখানে !
একটা অচেনা মানুষের থেকে নিজের নাম শুনে তাছাড়া তাও আবার তুই বলে সম্বোধন করে বলার কারণে আরু সামনের দিকে তাকালো ৷
তুরানকে দেখে আরোশী খুশিতে গদগদ , খুবই ভালো লাগছে ওকে দেখে ৷
আরু: বেশ কয়েক বছর পরে তোর সঙ্গে দেখা আবার৷
তুরান এবার নিজের জায়গা থেকে বেরিয়ে এল তারপর আরুশিকে বলল : হঠাৎ তুই এখানে ?
অনেকদিন পর তোর সঙ্গে দেখা খুব ভালো লাগছে তোকে দেখতে পেয়ে ৷
আরুশি তুরানের গাল দুটো টেনে দিয়ে :আমারও তোকে দেখে খুব ভালো লাগছে , সত্যিই অনেকদিন পর তোর সঙ্গে দেখা ৷ সেই দু’বছর আগে যখন ড্রয়িং ক্লাস ছেড়ে দিয়েছি তারপর থেকে তোর সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই ৷
তুরান: এই কয়েক বছরে তোকে বড্ড মিস করছি রে , তোর ছোট ছোট পাগলামিগুলো , তারপর দুজনে একসঙ্গে ফুচকা খাওয়া , তোকে বাড়ি অব্দি দিয়ে আসা, সবকিছুই বড্ড মনে পড়ে আজ ৷ কিন্তু হঠাৎ ওর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এখন খুব ভালো লাগছে৷ এখন আমরা আগের মতোই হতে পারব, আর আমাদের ফ্রেন্ডশিপটাও ৷
আরু মুচকি একটা হেসে : হ্যাঁ ৷
তুরান :তুই এখানে হঠাৎ ! জবের ইন্টারভিউয়ের জন্য এসেছিস নাকি?
আরুশি মুচকি হেসে : আমি ওনার ওয়াইফ ৷
তুরান খুশি হয়ে আরুশিকে জড়িয়ে ধরল : কংগ্রেটস অবশেষে স্যারের মত একজন লাইফ পার্টনার কে পেলি তুই ৷
আরুশি তুরান কে ছাড়িয়ে: ঠিক বলেছিস, সত্যি আমি উনাকে পেয়ে খুব খুশি ,,,,,,,,
আশেপাশে অনেকেই ওদের দিকে তাকাচ্ছে তবে ওদের কথোপকথন দেখে সবাই বুঝতে পারল যে ওরা খুব ভালো একটা ফ্রেন্ড তাই কেউ কিছু মনে করেনি….
তুরান আরুর হাতে লাঞ্চ বক্স দেখে বলল :sir এর জন্য নিশ্চয়ই লাঞ্চ এনেছিস ৷
আরোশী লজ্জা পেয়ে: হমম ৷
তুরান্: লাঞ্চ টাইম পার হয়ে গেছে অনেকখন তবে sir আজকে এখনো lunch করেননি ৷ স্যারের বোধহয় খুব খিদে পেয়েছে তুই তাড়াতাড়ি যা তবে আমার নাম্বারটা নিয়ে যা , তুই আমার নাম্বারটা নোট করে নে৷
আরুশী ব্যাগ হাতড়েও ওর ফোনটা পেল না,,,
আরশি: তুই আমার নাম্বারটা নোট করে নে,আমি ফোন আনিনি ৷ এরপর তুরান নাম্বারটা নোট করে নিল ৷
আরুশি আর বেশি লেট করল না ৷ ও জানে যে আরিসের খুব খিদে পেয়েছে, আর তাছাড়া ওর নিজেও সকাল থেকে কিছু খাইনি তাই খুব খিদে পেয়েছে ওর ৷ তাই তাড়াতাড়ি করে তুরাণের দেখানো ডাইরেকশন টার দিকেই গেল আরোশী৷
আরিশের রুমের দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছে আরোশী হার্টবিট ক্রমশ বেড়েই চলেছে , বলতে পারবে না ও যে কেন এরকম হচ্ছে , নিজের চিরচেনা মানুষের কাছে যেতে গিয়ে হঠাৎ এই অনুভূতির কারণ ওর অজানা৷
আরিশ ফাইলটা চেক করছে হঠাৎই শুনতে পেল দরজা খোলার আওয়াজ , কেউ রুমের মধ্যে প্রবেশ করল তার থেকে বুঝতে পারল যে আরুশি এসেছে৷ তাই তাড়াতাড়ি করে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার নরমাল আগের অবস্থায় ফিরে গেল আরিশ….
আরুশি ধীরে ধীরে আরিস এর কাছে গেল তারপর আরিস এর পাশে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়ানোর পরও আরিশ ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না বলে আরু এবার গলা পরিষ্কার করে বলল: এহেম এহেম, আপনার জন্য লাঞ্চটা এনেছি , আপনার কি সময় হবে ওটা খাওয়ার ?
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল: কারও রুমে ঢোকার আগে তার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয় সেটুকু জ্ঞান কি আছে?
কথাটা শুনেই আরোশী ভড়কে গেল , অবাক করা কথাবাত্রা বলছে আরিশ ৷ ও তো আরিসের নিজের বউ আর তার পারমিশন লাগে বলে আরূ মনে করেনা৷
আরুশির মাথাটা গরম হয়ে গেল এবার, তাই টিফিনটা টেবিলের উপর রেখে ফাইলটা আরিস এর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আরিশের কোলের উপর বসে পড়ল তারপর আরিশের গলা জড়িয়ে বলতে লাগল :
আমি মনে করি না যে নিজের জামাইয়ের রুমে ঢোকার জন্য পারমিশন এর প্রয়োজন হয় ৷ সো মাই ডিয়ার হাজব্যান্ড আমার সাথে আর কথা কাটাকাটি না করে আপনি যদি লাঞ্চটা তাড়াতাড়ি করতেন তাহলে আমার খুবই ভাল লাগত ৷
আরিশ আরুশির কান্ড দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছে না , মেয়েটা ওকে জব্দ করে ফেলে প্রতি পদে পদে…..
আরিস : এটা আমার অফিস , আমাদের বেডরুম নয় যে যখন তখন না বলে ঢুকে পড়বে ৷
আরূশী এবার রেগে গেল রেগে গিয়ে আরিশের কানে জোরে একটা কামড় দিল ৷
আরিশ: পাগল হয়ে গেছে নাকি , সারাদিনে কি কিছু খাওনি নাকি যে আমাকে এখন খেয়ে ফেলেছো!
আরোশী আরিশকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি হয়ে বলল : আপনি ছাড়া আর কেই বা আছে আমার, আপনাকে খেয়ে ফেলবো আমি ৷ জানেন সেই আমি সকাল থেকে আমি কিছু খাইনি , আমার কি খিদে পায় না !
কথাটা শুনতেই যেন আরিশের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ সারাদিনের ব্যস্ততায় আরু কিছু খেয়েছে কি সেটুকুও নিয়েও ভেবে উঠতে পারেনি ও৷ মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খেয়ে রয়েছে আর এখন প্রায় দুটো পনেরো বাজে…..
আরিশ আবার নিজেকে সামলে নিয়ে বললো :আমার খুব খিদে পেয়েছে , আমাকে কি কিছু খেতে দেবে নাকি এভাবেই না খাইয়ে রাখবে কোনটা?
আরুশি ঠিক আগের অবস্থান থেকেই বললো : আমাকে একটু খাইয়ে দেবেন নিজের হাতে করে !
আরুশির বলা প্রত্যেকটা কথা যেন আরিশ এর বুকে গিয়ে লাগছে ৷ মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খেয়ে রয়েছে কত কষ্টই না পেয়েছে , আর এত কষ্টের মাঝেও ওর জন্য খাবার এনেছে ৷ এতোটুকু তো করতেই পারে আরিশ, তাছাড়া ও নিজে চেয়েছিল আরুর হাতে খেতে …
নিজের রাগ অভিমান সমস্ত কিছুকে দূরে রেখে আরিস খাবার গুলো খুলতে শুরু করলো কিন্তু আরুশী ঠিক আগের মতোই রয়েছে , ও আরিশের বুক থেকে নড়বে না বলেই হয়তো ঠিক করেছে…
আরোশী জানত যে আরিশ যতই রাগ করে থাকুক না কেন কখনো ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবে না ৷ কতগুলো ভাবতেই দাঁত বার করে হি হি করে হাসছে আরু আর আরিশ তা বেশ ভালই বুঝতে পারছে ৷ আর এই ছোট ছোট মিষ্টি ব্যবহারগুলোর কারণেই তো আরিশ আরুর প্রেমে পড়েছিল ৷
আরিশ ভাতটা মেখে প্রথম লোকমা আরুর গালে তুলে দিলো ৷ আরূও না করল না , ভালোভাবে জমিয়ে খেতে লাগলো ৷ আরিশ নিজেও খাচ্ছে আর চুপ করে আছে , আরু বকবক করেই চলেছে , আরিশ ও বাধ্য ছেলের মতো আরুর সব কথা শুনছে ৷ তবে তুরাণের কথা আরু এখনো আরিশ কে বলেনি, বলতেই ভুলে গেছে ৷
খাওয়া ওদের প্রায় শেষ ৷
আরূশি আরিশ এর কোন থেকে নেমে বলল( হাসিমুখে ):জানেন তো আজকের রান্না আমি করেছি ৷
আরিশ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো: তাই বলি রান্নার টেস্টটা আজকে এত বাজে কেন!
আরোশী কোমরে হাত দিয়ে বলল : আপনি একথা বলতে পারলেন ! ওহহ, আমিতো এখন পুরনো হয়ে গেছি তাইনা, নতুন অনেক মানুষ এসেছে তারা তো আমার থেকেও ভালো সব পারে…..
আরিশ : একদম তাই , একদম ঠিক বুঝেছো তুমি ৷ তুমি তো আমার এক্স তাইনা, বলে আরুশির কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল ৷
আরুশি সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ,
আরিশের বুকের সাথে লেপ্টে গেছে ও ৷
আরুশির মুখের ওপর পড়া চুলগুলো আরিশ হাত দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল৷
আরিশ এবার আরূশির কানের কাছে গিয়ে বলল : আর একটা বিয়ে করবো আমি, তুমি পুরনো হয়ে গেছে তাই ঠিক আর ইন্টারেস্ট পাচ্ছিনা ৷(ফিসফিস করে বলল)
আরোশী চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল , ভেবেছিল যে আরিশ হয়তো ওকে কিস করবে কিন্তু আরিস এর কাছ থেকে এরকম একটা কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে আরিশ কে ধাক্কা মারলা….
আরিশ কোনক্রমে নিজেকে সামলে নিল…
আরোশী : হ্যাঁ বিয়ে করেন , আমিও করবো ৷ আপনাকে দেখিয়ে দেবো যে আমিও কিছু কম যায় না ৷
বলে আরিশ এর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরুশি গাড়িতে উঠে বসলো,তারপরে গাড়ি ছেড়ে দিতেই নিমেষেই চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল আরু আর এই সমস্ত কিছু লক্ষ্য করছিল রাইসা এতক্ষণ ধরে,অপেক্ষা করছিল অফিসে ঢোকার জন্য, আরু বেরিয়ে যেতেই রাইসা অফিসের মধ্যে ঢুকল৷
আরিশ বসে বসে ল্যাপটপ ল্যাপটপ চেক করছে আর তখনই দরজার-নক পড়ার শব্দে বাইরে থাকা ব্যক্তিকে ঘরে ঢোকার অনুমতি দিল ও ৷
রাইসা:তুই কি খুব বিজি?
আরিস রাইসাকে দেখে চমকে গেল হঠাৎ এমন একটা সময়ে রাইসাকে মোটেও আশা করে নি ও ৷
আরিশ : হঠাৎ তুই এখানে?
রাইসা একা একা বাড়িতে বসে খুব বোর ফিল করছিলাম তাই ভাবলাম তোর সঙ্গে দেখা করতে চলে আসি ৷ তাছাড়া অনেকদিন বাংলাদেশের আসা হয়নি, সবকিছুই বড্ড অচেনা অচেনা লাগছে, তাই ভাবলাম তুই যদি ফ্রি থাকিস তোর সঙ্গে একটু বার হবো ৷
আরিশ মনে মনে : এই মেয়েটা আমার সংসারটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে দেখছি ,বিরক্তিকর !
আরিশ : তাহলে তোকে আধঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে কারন আমি এখন খুবই বিজি আধঘন্টা পর ফ্রি হবো৷
রাইসা: ওকে তুই কাজ কর আমি বসে আছি কোন সমস্যা নেই….
আরিস : ওকে ৷
আরিশ মনে মনে : তুই বাড়িতে গিয়ে আমার আরূপাখিকে পাঠিয়ে দে , তোর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে আমার কোন কাজ নেই, ওর সঙ্গে গেলে তাও দুজনে কিছু ভালো সময় কাটাতে পারব ৷
তারপরে আরিশ আর রাইসা বেরিয়ে গেল চারটের দিকে….
আরিশ ড্রাইভ করছে আর রাইসা পাশে বসে আছে৷
আরিশ : কোথায় যেতে চাস তুই?
রাইসা : তুই যেখানে নিয়ে যাবি ৷
আরিশ মনে মনে: বিরক্তিকর সব কথাবার্তা ৷
রাইসা : আমি ঠিক করেছি প্রথমে বেশকিছু শপিং করে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে ফিরব৷
আরিশ: এতো লেট?
রাইসা : আমি বাড়িতে সবাইকে বলে এসেছি চিন্তা করিস না ৷
আরিশ মনে মনে: আমার জানটাকে যে বাড়ি একা ফেলে আমি এখানে রয়েছি আমি ,কি করে ঠিক থাকি ৷
রাত প্রায় সাড়ে নটা , আরিশ বাড়ি ফিরছে না দেখে আরুশির খুব চিন্তা হচ্ছে ৷ আরিশকে অনেকবারই কল করেছে কিন্তু বারবারই নট রিচেবল বলছে , কোন বিপদে পড়লে না তো! নাকি অফিসের কোন কাজে আটকে গেছে সেটা বুঝতে পারছে না আরূ ৷ জানলে চিন্তাটা কম হতো….
না পেরে তুরান কে একটা কল করলো,,,,,
আরুশি: হ্যালো তুরান , উনি এখনো বাড়ী আসেনি জানিস ৷ অফিসে কি আজকে কোন জরুরী কাজ রয়েছে যার জন্য উনি আটকা পড়ে গেছেন !
তুরান: এতদিন sir অফিসে ছিলেন না , .অনেক কাজ ওনার জমে ছিল তবে উনি তো সেই চারটের সময় বেরিয়ে গেছেন ৷
আরু: ওহহহ!
এরপর তুরানের সাথে আরো কিছু কথাবার্তা বলল আরু ৷ কোন কিছুই ভাল লাগছে না ওর আরিশকে ছাড়া ৷ তুরানের সাথে কথা বললেও মনটা রয়েছে আরিস এর কাছে খুব চিন্তা হচ্ছে ওর ৷
হঠাৎই গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারল যে আরিশ এসেছে তাই তুরান কে তাড়াতাড়ি বাই বলে ফোনটা কেটে দিল….
বেলকনি থেকে দাঁড়িয়ে আরুশি দেখছে , মুখটা ওর খুশিতে ভরে গেছে আরিশকে নামতে দেখে, তবে গাড়ি থেকে রাইসাকে নামতে দেখে ওর খুশিটা যেন মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল….
সারা রাস্তায় রাইশা আরিশের সঙ্গে বকবক করতে করতে এসেছে আরিশ কেবলমাত্র হ্যাঁ হু করছে আর মাথা নাড়াচ্ছে , আর রাইসা আছে নিজের তালে , আর ওর সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরিশের খালাম্মা ৷
রাইসা বুঝতে পারল যে আরিস ওকে সামান্য কিছুটা হলেও ইগনোর করছে ৷ মনে মনে ও ভেবেই নিয়েছে একবার আরিসে সঙ্গে ওর বিয়েটা হয়ে গেলে তারপরে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেবে ৷
এয়ারপোর্ট থেকে আরিশের বাড়ি প্রায় 45 মিনিটের ডিসটেন্স তাই 45 মিনিট পর আরিশ ওদেরকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো ৷ গাড়ির হর্ন দিতেই সবার মধ্যে উৎফুল্লতা আর ব্যস্ততার , তার মাঝে উদাস হয়ে বসে আছে আরু ৷ ওর যেন কিছুতেই ইন্টারেস্ট লাগছে না ব্যাপারটা নিয়ে, যখন থেকে শুনেছে যে রাইসা নাকি আরিশকে পছন্দ করে তখন থেকেই মনের মাঝে গভীর চিন্তা চলছে যে কি করে রাইসার থেকে দূরে রাখা যায় আরিশকে ৷
গাড়ি থেকে লাগেজ পত্র বাড়ির সার্ভেন্ট রার করে নিতেই হঠাৎ রাইসার চেঁচানোর শব্দ আরিশের কানে এলো , সঙ্গে সঙ্গে রাইশার দিকে তাকিয়ে দেখতেই দেখল যে ও মাটিতে পড়ে গেছে ৷
আরিস তাড়াতাড়ি করে রাইসাকে তুলে ধরে: কি হয়েছে তোর আর পড়লি কিভাবে?
রাইসা এমন একটা ভাব করছে যেন ও ব্যথায় কথা বলতে পারছেনা ৷
রাইসা : পায়ে কি ব্যথা পেয়েছি !
আরিশের খালাম্মা : কি হলো রে মা তোর হঠাৎ? এতক্ষণ তো ঠিকই ছিলি তুই ৷
আরিস : সেই তো, তুই হঠাৎ পড়ে গেলি কিভাবে?
রাইসা আরিশের দিকে ইশারা করল ওর পায়ের দিকে ইশারা করল যা থেকে বোঝা যায় যে লম্বা হিল পরার কারণে পা মচকে গেছে ৷
আরিস : কি দরকার এসব পরার, এমনিতেই তো তুই লম্বা ৷
রাইসা : আরে কখনোই এরকম হয়না কিন্তু আজকে কিভাবে হলো জানি না, কিন্তু আমি এখন হাটবো কিভাবে?
আরিশ বাঁকা চোখে রাইশার দিকে তাকিয়ে : তুই কি আমাকে এখন কোলে নিতে বলছিস ?
সঙ্গে সঙ্গে রাইসা খুশি হয়ে বলল : হ্যাঁ আমাকে তুই কলে নে, না হলে আমি যাব কিভাবে?
আরিশ মনে মনে কিছু একটা ভাবল তারপরে রাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল, রাইসা তো বেজায় খুশি আর তার সঙ্গে আরিসের খালাম্মাও ৷
আরিসের রাইসাকে কোলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে একটাই যে যখন সকলের সামনে ওকে নিয়ে যাবে তখন আরুশি তখন বেশি অবাক হবে আর জ্বলবে সেই দৃশ্যটা আরিশ একবার দেখতে চাই , একটু হলেও বেশ মজা নেওয়া যাবে এটা ভাবল ৷
আরিশ রাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই সবার চোখ যেন অপ্রত্যাশিতভাবে ছানাবড়া হয়ে গেল ৷
সবথেকে অবাক হলো আরু ৷
আরিশকে ও যে এই ভাবে রাইসার সঙ্গে দেখবে সেটা হয়তো আন্দাজ করতে পারেনি আরু ৷
আরিশ রাইসাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর নিজেও ওর পাশে বসলো ৷
আরিসের মা : কি হয়েছে রাইসার?
রেনু খান (আরিশের খালাম্মা ) : আর বলিস না আসার সময় মেয়েটার পা মচকে গেছে তাই আরিশ ওকে কোলে করে নিয়ে আসলো , না হলে এতটা রাস্তা আসতো কি করে ?(কথাটায় কিছুটা মসলা মাখিয়ে উনি বললেন যাতে সবাই একটু অবাক হয় ৷)
সানা রাইশার পাশে গিয়ে বলল : এখন ঠিক আছো আপু ?
রাইসা : হ্যাঁ এখন ঠিক আছি , আর আরিশ আমাকে কোলে করে না আনলে যে কি হত !
রাইশা এতক্ষণে আরুশিকে খেয়াল করেনি….ও জানে যে আরিশের বিয়ে হয়ে গেছে , আশার কিছুক্ষণ আগেই ওর মা ও কে বলেছে, কথাটা শুনে প্রচন্ড রেগে গেছিল রাইসা ৷ প্লেনের মধ্যে ছিল বলে সিন ক্রিয়েট করতে পারেনি, না হলে একটা লজ্জার ব্যাপার ঘটে যেত ৷ আরুশিকে দেখে মনে মনে রেগে ফেটে পড়ছে রাইসা….
রেনু খান :: এই যে সেই মেয়ে যাকে তুই আরিস এর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিস ৷ মেয়েটার কোন শিক্ষা আছে বলে তো মনে হয় না ! বাড়িতে যে একজন মুরব্বি এসেছেন তাকে সালাম করতে হয় সেটুকুই শিক্ষা মেয়ের মধ্যে নেই , কেমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এখনো! আর আমার রাইসাকে তো এইসব কথা দ্বিতীয় বার বলতেই হয় না….
রাইসা ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এবার বলেই ফেলল,,,,,,,,
রাইশা : কি দেখে তুই এই মেয়েকে বিয়ে করেছিস? তোর চয়েজ বলে কি কিছু নেই নাকি?আর তাছাড়া তুই আমার জন্য আর কদিন অপেক্ষা করতে পারলি না, শেষমেষ এই মেয়েকে বিয়ে করলি, আমি জানি এই মেয়েটির কোন যাদু মন্ত্র করে তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, না হলে তুই কখনো বিয়েতে বিয়ে করতে রাজি হতিস না…
রাইসা আর আরিশের খালাম্মার বলা কথাগুলো আরুর বুকে এসে যেন তীরের মত বিধছে , সবেমাত্র হল ওনারা এসেছেন আর এসেই এত খারাপ খারাপ কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন ৷ আরু যা ভেবেছিল এরা তার থেকেও আরো বাজে ব্যবহার করছে ওর সাথে ৷
কথাগুলো শুনে আরুর খুব খারাপ লেগেছে তবে আশা রেখেছিল মনে মনে যে আরিশ এসবের প্রতিবাদ করবে তাই ও কিছু বলেনি চুপ করে ছিল, আরিশের কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিল আরোশী৷ কিন্তু অনেকক্ষণ রাইসার এই সমস্ত কথা বলার পরও আরিশ একটা কথাও বলল না চুপ করে আছে আর তা থেকে আরুর চোখের কোনে জল চলে এলো ৷
রাইসা বলতে শুরু করেছে আর থামার নাম নেই দেখে আরিশ বলল : ছাড় না রাইসা , সব সত্যি না হয় সকলের সামনে নাইবা বললি…..
আরিসের কথাটা শুনে আরু চোখে জল নিয়ে আরিশের মুখের দিকে তাকাল কারন আরিশ যা বলেছে সম্পুর্ন মিথ্যা কথা , সত্যিটাকে এড়িয়ে গেল৷ আরিশ ওকে জোর করে বিয়ে করেছে সেটা আর বলল না বরং আরুকে দোষারোপ করল ৷
রাইসা : আমি ঠিক জানতাম যে এই মেয়ে ছলে-বলে-কৌশলে তোকে বিয়ে করেছে না হলে এই মেয়ের মাঝে এমন কি আছে যা আমার মাঝে নেই ৷ তুই চিন্তা করিস না আমি এসে গেছি আর কিছু হতে দেব না…
একেতো রাইসা আর রেনু খান দুজন মিলেই নানান বাজে বাজে কথা শোনাচ্ছে আরুকে আর তার উপর আরিশ ও তাদের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে দেখে আরু পারল না নিজেকে আটকাতে , চোখের জল গুলো বাঁধ ভেঙে চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে টপটপ করে৷ আরু তাড়াতাড়ি করে ওর রুমে চলে গেল…
সানা: ভাইয়া তুই এসব,,,,,
সানা আর কিছু বলবে তার আগেই আরিশ সানাকে থামিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেল ৷
আরিশ রুমে গিয়ে দেখল আরু বিছানার উপরে বসে গুটিসুটি হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে , আর কান্নার ক্ষীন শব্দটা হালকা ওর কানে ভেসে আসছে ৷ মানুষ তার মনের ভিতর কষ্ট দূর করতে যেভাবে কান্না করে আরু ও ঠিক সেভাবেই কাদছিল….
আরিশ এসে আরুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর আরু এদিকে কেদেই চলেছে ক্রমাগত…
আরু জলে ভেজা চোখ নিয়ে পিট পিট করে আরিশের দিকে তাকালো , দেখতেই যেন আরুর রাগটা দ্বিগুন হয়ে গেল ৷ চোখে এখন কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সমস্ত কথাগুলোই ভাসছে ৷
আরিশ কে দেখে যেন রাগটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে , তাই বিছানা থেকে নেমে আরিশের জামার কলার ধরে বলতে লাগলো,,,,
আরুশি :: আপনার সাহস কি করে হয় ওই মেয়েকে কোলে নেওয়ার ! জানেন কিভাবে আপনাকে জড়িয়ে ছিল ! আপনার শরীরে ওর স্পর্শ রয়েছে ! কেন থাকবে? আপনার উপর শুধু আমার অধিকার আর কারো নয় ৷ আর আপনি তখন সবার সামনে এভাবে মিথ্যা বললেন কেন যে আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করেছি , সত্যিটা বলার সাহস কি আপনার নেই? আপনি কি পারতেননা আমার হয়ে কথা বলতে!
এতক্ষণ রেগে রেগে কথাগুলো বলছিল আরু কিন্তু এখন আর নিজেকে পারছে না সামলাতে , তাই এবার অঝোরে কেঁদে দিল আরুশি ৷
আরুশির চোখের জল দেখে এমনিতেই আরিস বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে ,আর তার ওপরে নিজে সেখানে প্রতিবাদ না করে এখন আরিশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ৷ আরিশ ভেবেছিল আরু হয়তো নিজের অধিকারের জন্য রাইসাকে উল্টে দু’চারটে কথা শুনিয়ে দেবে , আরোশীর রূপটা দেখার জন্য আরিশ আরুর সাথে এসমস্ত কাজ করলো কিন্তু এতে হিতে-বিপরীত হলো ৷ এখন আরু ক্রমাগত কেদেই চলেছে আর তার প্রত্যেক কষ্টের ব্যথা অনুভব করছে আরিশ নিজেই ৷
আরিশ আবার আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার ওপর ফেলে দিল,,,,
হঠাৎ আরিশের দিকে থেকে এমন একটা প্রতিক্রিয়ায় আরু চমকে গেল ৷
যতক্ষণে ও আরিশকে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরিশ ওর হাতদুটো বিছানার সাথে শক্ত করে চেপে ধরেছে , ধরে ওর মুখের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলল,,,,,,
আরিশ : আমাকে দোষারোপ করছো তুমি ! নিজের অধিকারটা নিজে বুঝে নিতে পারো না ? তুমি কি পারতেনা সত্যের জন্য প্রতিবাদ করতে ? নিজে তো মুখ লুকিয়ে চলে এলে ! এতে যে প্রতিপক্ষ আরো সুযোগ পায় তা কি বোঝনা ? কবে সমস্ত কিছু বুঝতে শিখবে? তোমাকে সব কিছু বোঝানোর দায়িত্বটা কি আমার!
কথাগুলো অত্যন্ত জোরে চেচিয়ে চেচিয়ে বলছিল আর প্রত্যেকটা কথার আওয়াজ শুনে আরুর বুকের ভিতর ধক ধক করে উঠলো ৷
আরিশ : নিজের অধিকারটা বুঝতে শেখো , এমন কিছু করো না যাতে কেউ তোমার জায়গায় নিজের ভাগ বসিয়ে নেই,তবে সেইদিন কিন্তু বড্ড বেশি আফসোস করতে হবে তোমাকে আরুপাখি ৷ বলে আরুশির গলায় জোরে একটা কামড় দিল ৷
আরোশী যেন এতক্ষণ আরিশের কথার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ আরিশ জোরে কামড়ে নিতেই আহ করে চেঁচিয়ে উঠলো ৷ নিজেকে যে আরিশের থেকে ছাড়াবে সে শক্তি টুকুও নেই ওর ৷আরিশ ওর হাত দুটোকে চেপে ধরে রেখেছে…
আরিশ : তোমাকে আমি কষ্ট দেবো , বকব আর তারপর আমিই তোমাকে ভালোবাসবো , আর এ বিষয় নিয়ে যদি মনের মধ্যে কোন সন্দেহ থাকে তাহলে তা মুছে ফেলাই ভাল, কারণ তোমার ওপর শুধু আমার অধিকার , শুধু আমার ৷ বলে কামড়ে দেওয়া জায়গাটায় গভীরভাবে একটা কিস করে আরুশিকে ছেড়ে উঠে গেল ৷
আরিশের কাজকর্মে যেন আরুশি হতভম্ব ৷ একটা মানুষ কত ভাবে কত রূপে নিজেকে প্রকাশিত করে তা হয়তো আরিশকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না আরূ ৷
অনিকা খানের সঙ্গে রান্নাঘরে কিছু টুকটাক কাজ করছে আরূ , যদিও বা উনি করতে দিতে চাননি তবুও আরোশী নিজে থেকেই জোর করে করছে ৷ মাঝে মাঝে হাতে হাতে কাজ করে দিতে ওর বেশ লাগে ৷ আগে ওর মায়ের সঙ্গে কাজ করে দিত তবে আজকে ওর মাকে বড্ড মিস করছে ৷ ওর বাবা ওর প্রতি এমন খারাপ ব্যবহার করলেও ওর মা কখনো ওর প্রতি এমন ব্যবহার করেনি , কথাগুলো ভাবতেই আরুশির চোখে জল চলে এলো, তবু নিজেকে সংযত করে নিয়ে আবার নরমাল হয়ে গেল ৷
আরিশ রুমের ভিতরে ল্যাপটপে কাজ করছে আর রাইসা সানার সঙ্গে গল্প করছে আর আরিশের খালাম্মা রুমের মধ্যে শুয়ে আছেন ৷ এতটা লং জার্নি করার পর উনি বেশ ক্লান্ত….
হঠাৎই রুম থেকে আওয়াজ এল কফি বলে ৷
তা শুনে অনিকা খান বললেন : আরূ মা আমি খুব ব্যস্ত , তো তুই কি একটু ফ্লাক্স এর মধ্যে থাকা কফিটা ওদের দুজনকে একটু দিয়ে আসবি !
আরূ: আচ্ছা মামনি আমি দিয়ে আসছি ৷
বলে দু কাপ কফি ঢালল আর ইচ্ছা করে রাইসার কফিতে চার চামচ গুঁড়ো লঙ্কা মিশিয়ে দিল ৷
আরুশি কফি টা নিয়ে যাচ্ছে ওদের কাছে আর বলছে মনে মনে : আমার জামাইয়ের কোলে ওঠার বড্ড শখ তাই না , এবার আমি দেখাচ্ছি মজা…..
সানা কফিতে চুমুক দিয়ে টিভির দিকে মন দিল, আরোশী অপেক্ষা করে আছে যে রাইসা কখন কফিতে চুমুক দেবে ৷ তবে বেশিক্ষণ আর দেরি না করে রাইসা কফিটা মুখে দিতেই চোখ মুখের অবস্থা বেহাল হলো,চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ৷ জোরে চেচিয়ে উঠল রাইসা…
রাইসা : এই মেয়ে তুমি এটা কি বানিয়েছ? এটা কি কফি না অন্যকিছু?( চেঁচাতে চেঁচাতে)
ওর চেঁচামেচি শুনে আরিশ নিচে নেমে এলো , দেখতে গেল যে কি হচ্ছে আসলে ৷
আরিশ এসে দেখে রাইসার অবস্থা খারাপ ৷
সানা: কিন্তু আমার কফিটা তো ঠিকই আছে ৷
আরিস আরুশির দিকে চেঁচিয়ে বলল :কি মিশিয়েছ তুমি কফিতে? রাইসার চোখমুখ তো লাল হয়ে গেছে৷তো ঝাল মিশেছে কেন তুমি ওর কফিতে?
আরোশী : আমি কিছু করিনি ডোন্ট কেয়ার ভাবনিয়ে৷
আরিশ : তুমি যখন মিথ্যা বলছো না তাহলে তুমি কফিটা খেয়ে দেখাও…
আর যাইহোক আরূঝি কফিটাতো খাবেইনা ৷মঅনেকবার না না করল কিন্তু এবার আরিস জোর করে কপি টা খাইয়ে দিল আরুকে ৷ কফিটা খেয়ে আরুর খুব বাজে অবস্থা ৷ যেখানে রাইসা কফিতে একটা চুমুক দিয়েছে সেখানে আরু সমস্ত কফিটা আরুকে খাইয়েছে ৷ শরীরটা যেন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে আরুর….
চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়েছে আর অস্থিরতা কাজ করতে গোটা শরীরের মধ্যে ৷ আরশি আর দেরি না করে দৌড়ে রুমে গেল ৷
আরিশ ভেবেছিল রাইসা হয়তো মিথ্যা কথা বলছে আরুশিকে কথা শোনানোর জন্য কিন্তু আরোশী যে সত্যিই কফিতে ঝাল মিশিয়েছে সেটা ও বুঝতে পারেনি ৷ আরিশ ও পিছনে পিছনে গেল কারণ আরুশির অবস্থা বেহাল….
ওয়াশরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিল আরুশি, শরীর ক্রমশ নেতিয়ে আসছে, আনছান আনছান করছে ও ৷
আরিশ রুমে ঢুকে দেখল যে আরুশি বমি করছে, আরিশ ওয়াশরুমে ঢুকে আরুশির হাত-মুখ ধোঁয়াল, তোয়ালে দিয়ে চোখ মুখ মুছে দিল , দিয়ে আরুশিকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করালো জোর করে ৷
একেই আরুর ঝালে বেহাল অবস্থা তার ওপর আরিশ ওকে জোর করে সবকিছু করাচ্ছে ৷আরিশকে বাধা দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে তখন আরিশ আরুশিকে ধরে শাওয়ার নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল ৷ আরুশে ছটফট করছে ঝালে ৷ আরিশ আরো শক্ত করে চেপে ধরে আছে আরুকে ৷ দুজনেই ভিজে যাচ্ছে , হঠাৎ করে আরুশির ছটফটানিটা বন্ধ হয়ে যেতেই আরিস আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো আরুশি জ্ঞান হারিয়েছে ৷
#suraiya_Aayat
চলবে,,,,,,
#তোমায_নেশায়_আসক্ত
#part:25
#Suraiya_Aayat
আরুর থেকে কোনরকম কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আরিস আরূর দিকে তাকাতেই দেখল আরূর শরীরটা নেতিয়ে পড়েছে , আর ওর বুকে মাথা রেখে জ্ঞান হারিয়েছে ৷
আরিশ বুঝতে পারল আরুশির এখন কি অবস্থা ! আরু বেশি ভয় পেয়ে আর প্রচন্ড শরীরের অস্বস্তিতে সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷
হঠাৎই বাইরে থেকে সানার আওয়াজ শোনা গেল,,,
সানা : ভাইয়া আরুর কি অবস্থা ? ও কি ঠিক আছে ? আমাকে কি দরকার ?
আরিশ আরুশিকে শক্ত করে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বলল : ও এখন সেন্সলেস হয়ে গেছে আর জামাকাপড় ও সম্পূর্ণ ভিজে ৷
সানা : আমি কি হেল্প করব ? আই মিন আমি কি চেঞ্জ করিয়ে দেবো ?
আরিস : তার কোন দরকার নেই আমি নিজেই পারবো ৷ তুই চিন্তা করিস না আর তুই নিচে গিয়ে আম্মুকে বল যে আরুপাখির শরীরটা খারাপ , আমি সবটা সামলে নেবো , না হলে খামোখা চিন্তা করবে আর আর যতক্ষণ না আরুপাখির সেন্স ফিরে আসে ততক্ষণ আমি নিচে যাব না ৷
সানা মুচকি মুচকি হেসে : আচ্ছা ভাইয়া…..
সানা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরিশ আরুশির শরীর থেকে ভেজা জামা কাপড়গুলো খুলে একটা টাওয়েল দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে দিল আরূশির শরীরে,,,,,,
তাড়াতাড়ি করে আরুশিকে বিছানায় শোয়ালো আর নিজে দু মিনিটের মধ্যেই চেঞ্জ করে আসলো তাড়াতাড়ি করে ৷
আরুশির ভিজে চুল থেকে পড়া জলগুলো বিছানায় পড়ে বিছানা ভিজে গেছে অনেকটাই ৷ আরিশ আরুশিকে এবার নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল তারপর আরশির গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলো,,,,
আরিস : এই আরুপাখি ওঠো, কি হলো তোমার?
আরু উঠছে না দেখে গ্লাস থেকে জল নিয়ে আরিশ আরুর মুখে ঝাপটা দিল….
তাতেও কোনো কাজ হচ্ছেনা ৷
কিন্তু আরুশির শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমেই চলেছে…
আরিশের চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল ৷ দেরী না করে ওয়ারড্রব থেকে ব্ল্যাঙ্কেট বার করে এনে আরুশির শরীরে জড়িয়ে দিল….
কোন ভাবেই কোন কাজ হচ্ছে না , আরুশির শরীর আগের থেকেও বেশী ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ৷
আরিশ বুঝলো যে এভাবে কোন কিছুই হবে না তাই নিজেকেও আরশির সঙ্গে জড়িয়ে নিল আর দিতে শুরু করলো ওর ভালোবাসার ছোঁয়া ৷
ধীরে ধীরে আরুশির জ্ঞান ফিরে আসায় অরিশের দেওয়া ব্যাথা গুলোকেও ক্রমশ অনুভব করতে পারল আরু ৷
নিজেও মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে আরিস এর ভালোবাসায় ৷
কিছুক্ষণ পর আরিশ দেখল যে আরুশি ক্রমশ নরমাল হয়ে আসছে , আর এখন চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে বাচ্চাদের মতো , চোখের জল জমে আসার কারণে মাঝে মাঝে একটা পাপড়ি অপর পাপড়ির সঙ্গে লেপটে যাচ্ছে ৷
আরুশিকে আবার নরমাল হয়ে আসতে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেল আরিশ ৷ কিছুক্ষণের জন্য যেন ওর মাথা আর কাজ করছিল না ৷
আরুর খুব দুর্বল লাগছে তাই কিছু বলছেনা ৷ কেবল ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে….
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে তারপর ওর ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল…..
আরুশির কাছে আরিশ যেন একটা নিরাপদ আশ্রয়, এখানে থাকলে কোন বিপদে ওকে ছুঁতে পারবে না এটা আরু বিশ্বাস করে ৷সারা জীবনটা আরিস এর বুকে এভাবেই কাটাতে চায় আরূশী ৷
❤
ওই মেয়ের সাহস কি করে হয় আমার কফিতে লঙ্কাগুঁড়ো মেশানোর ! আমি তো ওকে শেষ করে ফেলব ৷ নাটক করে নিজেকে অসুস্থ প্রমাণ করে আরিশ এর কাছ থেকে সিমপ্যাথি আদায় করতে চাই তাই না ! আমি তা কিছুতেই হতে দেবো না,ও এই বাড়িতে এভাবে কতদিন টেকে আমিও দেখবো, ওর আরিশের সঙ্গে ডিভোর্স করিয়ে দিয়ে আমি ওকে বিয়ে করব যদি না করি তাহলে আমার নাম ও রাইসা নয়…
রাইসার রুমে ঢুকতেই কথাগুলো শুনতে পেল সানা, বুঝতেই পারলো যে রাইসা ব্যাপারটা নিয়ে তুমুল দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাবে ৷ আর রাইসা যদি একবার জানতে পারে যে আরিশ আর আরু ওই ভাবে রয়েছে তা হলে তো জমে যাবে ৷ সানা এবার মজা নেওয়ার জন্য রাইসার কাছে গেল ৷
সানা যেতেই রাইসা আবারও শুরু করলো,,,,,
রাইসা: তুই বল সানা মেয়েটার কত সাহস যে আমার কফিতে লংকা মিশিয়েছে ,রাইসার কফিতে !
সানা মনে মনে : হ্যাঁ তুমি তো বিরাট কিছু যে তোমার কফিতে কিছু মেশানো যাবে না , যত্তসব আজাইরা ৷ আরূমন যা করেছে ঠিক করেছে, আমি হলে তো আরও বেশিকরে মেশাতাম ৷
সানা এবার তবু নিজের রাগটাকে চেপে নর্মাল হয়ে বলল : সে ওর মেশানো ঠিক হয়নি , কিন্তু ও সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷ ভাইয়া ওর ড্রেসটা চেঞ্জ করে দিয়েছে , বলে হাসি টাকে আটকে রাখার চেষ্টা করলো তবুও যেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে….
কথাটা শুনে রাইসা যেন আরো তিনগুণ হাইপার হয়ে গেল , কোনভাবেই আরিসের সঙ্গে আরূকে ও সহ্য করতে পারে না সেই ছোটবেলা থেকে,,,,
রাইসা : আমি এক্ষুনি যাব আরিশের কাছে , ওই মেয়ের কাছ থেকে নিয়ে আসবো আরিশকে ৷ আমি এক মুহূর্তও আরিশকে ওর কাছে রাখবো না ৷ আজকে আমার সাথে এরকম করেছে , না জানি অন্য দিন আরিস এর সাথে কি করে !
সানা মনে মনে: ও আরিশ ভাইয়া কে কেন , কাউকে কখনো কিছু করবে না , তোমাকেও কিছু করত না কিন্তু সকালে তুমি ওর সঙ্গে যে ব্যবহারটা করেছো তার কারনে এটা তোমার পাওনা ছিল রাইসা আপু৷
রাইসা যেই যেতে যাবে তখনই সানা ওর হাতটা ধরলো, যে করেই হোক ওদের এত সুন্দর মুহূর্তটাকে কেবলমাত্র রাইসার জন্য নষ্ট হতে দিতে পারেনা ও কখনোই ৷ এমনিতেই ওদের দুজনের মধ্যে এই কদিনের যা হয়েছে তাতে আরুর অসুস্থতায় যেন আরিশ এর ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছে আর সব পিক হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ৷ এই সব কথাগুলো মনে মনে ভাবছে সানা ৷
রাইসা : কি হলো তুই আমাকে আটকাচ্ছিস কেন?
সানা : আপু তুমি এখন যেও না, ওরা নিজেদের মধ্যে প্রাইভেট কিছু সময় কাটাচ্ছে তাই আমার মনে হয় না তোমার এখন যাওয়াটা ঠিক হবে ৷
রাইসার রাগ তো এবার সপ্তম আসমানে ছাড়িয়ে গেল৷
রাইসা : আরিশ শুধু আমার , শুধু আমার আর কারো নয় ৷
❤
আরুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আরিশ ,ঘুম অনেকক্ষণ আগেই ভেঙ্গে গেছে , উঠছে না কেবলমাত্র আরুশির কারণে ৷ আরুশি বাচ্চাদের মত গুটিসুটি হয়ে ওর বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে , এখন বিছানা ছেড়ে উঠে গেলে আরুশি জেগে যাবে তাই এখন আরুশিকে জাগানো ঠিক হবে না তাই উঠতেও পারছেনা আরিশ ৷
সকালের ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে আরু যে এমনকিছু ঘটাবে সেটা হয়তো আরিশ কল্পনাও করেনি ৷ কথাটা ভেবে খুব হাসি পেল আরিশের কারণ এমন বাচ্চাদের মত কাজগুলো আরুশির দ্বারাই সম্ভব ৷মেয়েটা এখনো বড়ো হলো না ৷ কপালে ভালোবাশার একটা পরশ একে অনেকক্ষন আরুশির দিকে তাকিয়ে রইল আরিশ ৷ মেয়েটাকে নিজের থেকেও বড্ড বেশি ভালোবাসে আরিশ , ওর কেউ কখনো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তাকে আরিশ ছাড়বে না ৷
❤
গুটি গুটি পায়ে অনিকা খানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল আরূ, সরাসরি রুমে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না ৷ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে , রাত 11 টা প্রায়, আরিশ ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল , আরশকে ছাড়িয়ে কোনক্রমে ওনাদের রুমে এসেছে আরু ক্ষমা চাওয়ার জন্য ৷ আফজাল সাহেবের রুমে আছেন তবে ওনাকে খেয়াল করেননি আরুশী….
আরুশী আর একবার উঁকি মারতেই আফজাল সাহেব পেপার পড়তে পড়তে হেসে ফেললেন ৷ওনাকে হাসতে দেখে অনিকা খান অবাক হয়ে বললেন : পেপারে কি কোন সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়েছে যে তাকে দেখে তোমাকে হাসতে হবে , নাকি আবার নতুন করে বিয়ে করার শখ জেগেছে , কোনটা ?
শ্বশুর-শাশুড়ির এমন প্রেমের কথোপকথন শুনে আরুশির নিজেরও বেশ খানিকটা লজ্জা লাগছে৷
আফজাল সাহেব চোখের ইশারায় অনিকা খানকে দরজার কাছে যেতে বললেন , অনিকা খান প্রথমে কিছু বুঝলেন না তবে উনার ইশারা বুঝতে পেরে দরজার কাছে গিয়ে দেখল আরুশী দাঁড়িয়ে আছে৷
অনিকা খানকে এভাবে দেখে আরুশি চমকে গেছে সঙ্গে খানিকটা লজ্জায়ও পড়ে গেছে , কারণ উনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে এতক্ষণ ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে উনাদের প্রেমের কথোপকথন শুনছিল ও ৷
অনিকা খান আরুশিকে রুমের ভেতর নিয়ে গেলেন,,,,,
আফজাল সাহেবের সামনে কাচুমুচু মুখ করে বসে আছে আরুশি কিছুই বলছে না ভয়ে যেন কাঠ হয়ে গেছে ৷ বারবার ভাবছে যে যদি দুপুরের ঘটনার জন্য আফজাল সাহেব ওকে কিছু বলেন তাহলে !
আফজাল সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন : আমি যা শুনলাম তা কি ঠিক আরু মামনি ৷
আরু থর থর করে কাঁপছে, কি বলবে ও এখন ! এই ঘটনাটার কারণে আফজাল সাহেব যদি এখন ওকে বাড়ি থেকে বার করে দেয় সেই ভয় পাচ্ছে ও , আর
অনিকা খান তো আরুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন
হঠাৎ করে আফজাল সাহেব জোরে উৎফুল্লতা সঙ্গে বলে উঠলেন : এটাই তো আশা করেছিলাম মামনি তোর থেকে , কেউ তোকে অপমান করবে আর তুই তাকে এত সহজে ছেড়ে দিবি , পাল্টা জবাব দিবি না এটা জানলে আমিও খুব রেগে যেতাম ৷ কিন্তু তুই যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস , নিজের অধিকারটা সবার আগে , কখনো নিজের অধিকার ছাড়বি না ৷
আফজাল সাহেবের কথা শুনে আরুশি ছলছল চোখে তার দিকে তাকালো ৷ আরিশের বাবা মায়ের মত একজন শ্বশুর-শাশুড়িকে পেয়ে আরু নিজেকে ধন্য মনে করে ৷ কতজন মেয়ের কপাল এমন সৌভাগ্য হয়?
মাঝে মাঝে নিজের বাবার সঙ্গে আফজাল খান কে মেলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আরূ যেন কখনোই মিলিয়ে উঠতে পারে না কারণ দুটি চরিত্রের মধ্যে যে বড্ড তফাৎ , কেউ নিজের সন্তানকে কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দেয় আবার কেউ পড়ে সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো করে কাছে টেনে নেয় ৷