Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1576



তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-২২+২৩

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:22
#Suraiya_Aayat

অন্ধকার ঘরের মধ্যে থাকা রকিং চেয়ার টেনে বসে দুলছে আরিশ , হাতে রয়েছে আরূর লেখা সেই চিঠি….

চিঠির প্রত্যেকটা লাইন ও পড়ছে আর বারবারই মুখে ফুটে উঠছে চিরচেনা সেই মিষ্টি হাসি…..

আরুর লেখা শেষের লেখা লাইনটা,,,,

______”আমার আসক্তিতে কেবলই আপনি৷ “____

কথাটা পড়তেই সামনে বিছানার উপরে শুয়ে থাকা আরুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিল ৷

এখনো তো অনেক কিছুই বাকি আরুপাখি ৷ যতদিন না আগে নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখবে ততদিন আমার থেকে দূরে দূরেই থাকবে তুমি, তারপরে তোমাকে কাছে টেনে নেব তার আগে নয় ৷

চিঠিটা রেখে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল আরিশ ৷

বাইরে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে আর বেলকুনিতে থাকা
ছোট সাদা সাদা মরিচ বাতি গুলো জ্বলজ্বল করছে, আর ঝুলিয়ে রাখা স্টিলের স্টিকগুলো হাওয়ায় দোলা দিয়ে বারবার এক অপরূপ শব্দ সৃষ্টি করছে…..

সেখান থেকে দাঁড়িয়ে রুমের ভিতরে ঘুমন্ত আরুশির দিকে তাকাল আরিশ ৷

ঘুমের ওষুধের ডোজটা আর কিছুক্ষণ পরই কেটে যাবে সুতরাং কিছুক্ষণের মধ্যে আরোশী জেগে যাবে….

কিছুক্ষণ পর হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে আরুশি জেগে গেল , চোখ খুলে চারিপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো ও৷ এখন কোথায় আছে তা জানার জন্য বেশ কিছুক্ষণ চারিপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল , করার পর সবকিছু যেন আশ্চর্যজনক লাগছে ওর কাছে কারণ কিছুক্ষণ আগের ঘটনা থেকে ওর যা মনে হয়েছিল তাতে এত কিছু আশা করার কথা নয়….
নিজের আর আরিশের ভালোবাসার সেই ছোট্ট ঘরটাকে খুঁজে পেয়ে আরু জোরে জোরে কাঁদতে লাগল ৷ এই ঘরে পুনরায় পা রাখতে পারবে সেটা ও ভাবেনি, সবই যেন কল্পনার মত লাগছে ৷ চোখ থেকে অনর্গল জল গড়িয়ে পড়ছে আর তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো বারবার আরিশকেই খুজছে ৷ বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সমস্ত দৃশ্য , ভয়ে বিছানাটা থেকে পা ও যেন নামতে চাইছে না , বারবার মনে হচ্ছে এখনই যেন সর্বনাশী মানুষগুলো তার সর্বনাশ করে ফেলবে…..

এই মুহূর্তে আরিশ কে দেখে চোখ দুটো জুড়াতে চায় আরুশি তাই বিছানার থেকে চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগলো , অবশেষে রুমের মধ্যে কাউকে দেখতে না পেয়ে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে বিছানা থেকে নামল৷
একপা দুপা করে সামনে এগোচ্ছে আর বড্ড জানান দিচ্ছে প্রিয় মানুষের উপস্থিতি, আরিশ যে এই ঘরেই আছে সেটা অনুভব করতে পারছে আরূ ৷
পিছন ফিরে তাকিয়ে আরিশ কে দেখেই দৌড়ে ছুটে গেল আরিশের কাছে, তারপর আরিশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে উন্মাদের মতো কাঁদতে লাগল আরু…..

আরু কাদতে কাদতে : আপনি আমাকে প্লিজ নিজের থেকে কখনো ছাড়াবেন না , না হলে ওরা আমাকে নিয়ে চলে যাবে ৷ সব সময় আপনার বুকের মাঝে আপনার সাথে আগলে রাখবেন আমাকে , আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি প্লিজ আমাকে দূরে সরাবেন না….

আরু: কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না, কখনো অন্যের কথা বিশ্বাস করব না , আপনি যা বলবেন তাই শুনে চলব , আপনার কথার অবাধ্য হবো না ,আপনি যা বলবেন তাই শুনবো কিন্তু প্লিজ আমাকে নিজের থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না….

আরুশি আরিশ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে কিন্তু আরিশ কোন রেসপন্স করছে না….

আরিশ একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নিজের শরীরটাকে আরুশির হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত করল৷ আরুশির হাতদুটোকে ছাড়িয়ে আরুশির মুখোমুখি হলো আরিস ৷

আরিশ আরূর দিকে ফিরে বলতে শুরু করল : আরুশি রহমান আর ইউ ম্যাড?আপনি কি মেন্টালি সিক…. এভাবে হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন? আর আপনি সকালেই বলছেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, আর এখন বলছেন ভালোবাসি , এটা কি খুবই হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?

আরূ যেন আরিশ এর প্রত্যেকটা কথায় মুহূর্তে মুহূর্তে অবাক হচ্ছে ৷ এই প্রথমবার আরিশ আরূর নাম ধরে ডাকলো , এর আগে কখনো আরুশি বলে ডাকতে শোনেনি , তার ওপর আরিশের অদ্ভুত ব্যবহার ওকে আরো চমকে দিচ্ছে ৷

আরুশি আরিশের দু গালে হাত রেখে: আপনি কীসব বলছেন ? আর আপনি আমার নাম ধরে ডাকছেন কেন ? আমি তো আপনার আরুপাখি!

আরিশ: লাইক সিরিয়াসলি ! সকালবেলায় তো বললেন যে আমাকে ভালোবাসেন না , আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা মিথ্যা , আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছো তুমি , তাহলে এখন হঠাৎ কি হল? তোমার বাবা আর তোমার প্রাণপ্রিয় অভ্র কি তোমাকে স্থান দেয়নি একটুকুও…..

আরিশ ওদের নাম বলতেই আরূ জোরে চেচিয়ে উঠলো,,,,

আরোশী : আপনি ওদের নাম বলবেন না , আমি ওই দুটো মানুষকে বড্ড বেশি ঘৃণা করি , আর উনি আমার বাবা নই উনি একজন অমানুষ , বলে মেঝেতে বসে কাঁদতে লাগল জোরে জোরে…

(বিঃদ্র: আরুশির বাবার সত্্যতা আরুর অজানা,অর্থাত ও যে ওনার মেয়ে নয় ৷)

আরুশির চোখের প্রতি ফোঁটা জল যেন আরিশের বুকে ছুরির মতো এসে বিধছে তাও এই মুহূর্তে নরম হলে চলবে না , সত্যিটার মুখোমুখি আরুশিকে হতেই হবে , বাস্তবটাকে মানতে হবে, চিনতে হবে সবাইকে ৷ তাই এখন এই মুহুর্তে আরিশকে কঠোর থেকে কঠোরতম হতে হবে ৷

আরিস: বুঝেছি , ওখানে আপনার জায়গা হয়নি বলে আপনি এখানে এসেছেন তাই তো ! আচ্ছা আপনাকে আমি থাকতে দিতে পারি তবে এখানে থাকতে হলে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই থাকবেন বলে আরুশিকে উপেক্ষা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷

রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিল ৷ বুকে পাথর চাপা দিয়ে কথাগুলো বলেছে ও , কঠোর নাহলে কখনোই এসমস্ত কথাগুলো ও আরুশিকে বলতে পারত না….

আরু মেঝেতে বসে ক্রমাগত কান্না করেই চলেছে , জীবন ওকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে এখন যেন ঠিক ভুলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছে, মানুষগুলোর আসল রূপ জানতে পেরেছে , কে ওর আপনজন আর কে পর এ সমস্ত কিছুই আজ বড্ড চেনা চেনা বলে মনে হচ্ছে কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ওর আগের আরিশকে হারিয়ে ফেলেছে….

শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে আরূ, নিজের জীবনের করা ভুল গুলো কিভাবে শুধরে নেওয়া যায় তারই হিসাব হিসাব নিকাশ কষেছে, আরিশকে আবার কিভাবে ফিরে পাবে এই সমস্ত কিছু ভাবছে ৷ অনেকক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো ও ….

বেরিয়ে আসতে দেখল আরিশ ল্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কোন কাজ করছে….

আরোশী ঠিক করে নিল যে করেই হোক আরিস কে ও মনিয়েই ছাড়বে ৷ হাতে থাকা টাওয়ালটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল আরিশকে দেখিয়ে ৷ আরিশ একপলক ফিরে তাকালো কোন গুরুত্ব না দিয়ে আবার ল্যাপটপের দিকে মন দিল….

মাথাটা না মুছে ভিজেমাথায় আরিশের পাশে বসে পড়ল আরুশি যতে টাওয়াল টা নিয়ে আরিশ ওর মাথাটা মুছিয়ে দেয় , কিন্তু ওর সব plan .এ জল ঢেলে দিয়ে আরিশ ল্যাপটপটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ,বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল : এসব আমাকে দেখিয়ে কিছু হবে না তোমার অভ্রকে দেখাও ৷

আরিশ এর বল কথাটায় যেন বড্ড কষ্ট পেয়েছে আরু৷ আরিশ চলে যেতেই আবার কান্না শুরু করে দিল, কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল ওকে কাঁদলে চলবে না আরিশকে ওকে ফিরে পেতেই হবে কিন্তু তার আগে ওর বাবার আর আভ্রের একটা ব্যবস্থা করা দরকার….

সবাই খেতে বসেছে আরিশের মা সবাইকে খেতে দিচ্ছেন , আরুশি কে ও বসতে বলেছে কিন্তু আরু বসেনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরিশের মায়ের পাশে…..

অনিকা খান : কিরে মামনি বস , সবাই খেতে বসেছে তুইও বসে যা ৷

আরিশ ওর মায়ের কথা শুনে একবার আরূর দিকে তাকালো…..

আরুশি : না মামনি আমি পরে তোমার সাথে খেতে বসছি ৷

অনিকা খান অনেকবার বলার পরেও আরু বসলো না ,তাই উনি না পেরে বাধ্য হয়ে ওদের তিনজনকে খেতে দিলেন ৷

আরোশী লক্ষ্য করলো সানা ও বেশ চুপচাপ ওর সাথে, কথা বলছে না ৷ তাহলে কি সকলেই জানে বাড়িতে ওর কথা, তাই কি সবা ওর উপরে রাগ করেছে!

অনিকা খান : আরিশ কালকে রাইসা আর তোর খালাম্মার আসবেন ৷

আরিশ খেতে খেতে : আচ্ছা,তা আমাকে কখন এয়ারপোর্ট আনতে যেতে হবে?

আফজাল সাহেব : সকাল সাড়ে নটায় ওদের বাংলাদেশের টেক অফ করবে তুই একটু দেখ কখন তোর বেরোনো উচিত সেই অনুযায়ী বেরিয়ে যাস ৷

আরিশ : ওকে ৷ এই বলে আরও আর কিছুক্ষণ পরে খেয়ে আরিশ উঠে চলে গেল ,আরুশিকে একবারও খাওয়ার কথা বলল না….

আরুশির খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু বলার নেই যেহেতু ভুলটা ওর নিজের ই….

আরূশি চুপচাপ আনমনা হয় সুইমিংপুলের পাশে বসে আছে, বড্ড একা একা লাগছে আজকে ওর নিজেকে৷
হঠাৎ কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেতেই ভাবল আরিশ এসেছে তাই আনন্দের সঙ্গে ঘুরে তাকাতেই দেখলো অনিকা খান , উনি তারপর আরুশির পাশে বসলেন….

অনিকা খান আরূর পাশে বসে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন: কি দরকার ছিল এতকিছু করার ? আমার ছেলেটাকে তো বলতে পারতিস না কি ! বিশ্বাস করিস না ওকে? জানিস তো ও তোকে কতটা ভালোবাসে ! তোর কথাতে ও কতটা কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পারছিস? ওমন না বললে আমার ছেলেটা কখনো তোর সাথে এমন ব্যবহার করার মতো মানুষই নয় ৷ বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস আমার ছেলেটাকে ৷

সকালে,,,,

আরু বেরিয়ে পরপরই আরিশ নীচে নামল,,,,,,,

অনিকা খান: আরু মামনি কোথায়ম বেরিয়ে গেল কাউকে কিছু না বলে ?আর তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস?

আরিশ এরপর সবঘটনা ওর মাকে খুলে বলল,,,,,,

অনিকা খান: ছিঃ একটা বাবা হয়ে এতটা নীচু মানসিকতার মানুষ কেউ কী করে হতে পারে !

আরিশ: আমার বোকা বউটা যদি এসব বুঝতো ৷.

অনিকা খান: আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য, ওর কোনো বিপদ হবে নাতো!

আরিশ: যতক্ষণ আমিও সঙ্গে আছি ওর কোন বিপদ হতে দেব না , আর ও যেখানেই যাক না কেন ফিরে ওকে আমার কাছে আসতেই হবে ৷ চিন্তা করো না শুধু তুমি আমাকে একটু সাপোর্ট করো ৷ ওকে এটুকু শিক্ষা দেওয়া বড্ড দরকার৷

অনিকা খান: মেয়েটা বড্ড অবুঝ , আবার কষ্ট পাবে খামোখা ৷ মেয়েটাকে আর কষ্ট দিস না তুই ৷

আরিশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে : তোমার বৌমা কি জাদু করেছে তোমার ওপর!🙄

অনিকা খান আরিশের কান ধরে : আর বেশি পাকামো করতে হবে না , তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয় ৷ যতক্ষণ না বাড়ি তোরা বাড়ি ফিরছিস ততখন কিন্তু আমার মনটা অস্থির অস্থির করবে বলে দিলাম ৷

আরিশ ওর মায়ের কপালে চুমু দিয়ে : আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি এখন ৷

অনিকা খান: সাবধানে ফিরিস ৷

অনিকা খান সবটাই জানেন , তাই আপাতত আরিশ ওনাকে যা যা করতে বলেছেন উনিও তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন ৷

আরুশি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না, না পেরে অনিকা খানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ৷

আরোশী : বিশ্বাস করো মামনি আমি যদি জানতাম আমার বাবা নামক ওই লোকটা আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবে তাহলে আমি কখনোই ওনার কথা বিশ্বাস করতাম না ৷ আর আমি উনাকে বলতে ভয় পেয়েছিলাম বলে আবারো কাঁদতে লাগলো ৷

অনিকা খান : বিশ্বাস যখন তুই ভেঙেছিস তাই জোড়া লাগানোর দায়িত্বটাও তোর, এখন আমার ছেলেকে যদি আবার ফিরে পেতে চাস তাহলে ওকে মানানোর চেষ্টা কর….

{এতসব কি করে হলো পরে বলব}

চলবে,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:23
#Suraiya_Aayat

পুল থেকে অনিকা খান যেতেই রুমে আরুশি কিছুক্ষণ সেখানেই বসে থাকল , অনেক কিছুর হিসাব-নিকাশ করছে ও , সব কিছু বোঝার চেষ্টা করছে , সকল মানুষদের আসল রূপটা ওর সামনে প্রকাশ পেয়েছে৷
আরিশকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আর তা দূর করার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ ওর , তাই যা করার ওকেই করতে হবে….

তাড়াতাড়ি করে রুমের সামনে গিয়ে গুটি গুটি পায়ে রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখলো রুমের লাইট অফ….
ঘরের ভিতরে জ্বলতে থাকা ছোট্ট ডিমলাইটের আলোতে আলোকিত হয়ে যাচ্ছে সব ৷ আরিশ ঘুমিয়ে আছে তা বোঝা যাচ্ছে , ধীরে ধীরে গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ল আরু….

ও ভেবেছিল যে আরিশ হয়তো ওকে কাছে টেনে নেবে কিন্তু তা হয়নি ৷ ও আরিশের পাশে ঘুমালেও আরিশ একবারও ওর দিকে ফিরেও তাকাল না….

অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে লাগলো আরূ কিন্তু তাও কিছু হচ্ছে না দেখে নিজেই আরিশের দিকে সরে গেল…
সরে আসতে আসতে একেবারে আরিসের গা ঘেঁষে শুয়ে পড়েছে ও ৷
আরিশ এতক্ষন ঘুমিয়ে থাকার ভান করছিল, আসলে আরুশির জন্যই এতখন অপেক্ষা করছিল ও , আর তখন ওর মায়ের সঙ্গে যে আরুশি কথা বলেছিল তার সব কিছুই জানে আরিশ ৷
আরিশ এবার ইচ্ছে করে আরুর উল্টো দিকে ফিরে গেল…..
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেছে কারন আরিশ উল্টোদিকে ফিরে গেছে ৷ না পেরে আরু কিছুটা আরিশের দিকে সরে যেতেই
আরিশ খাট থেকে পড়ে গেল ৷
আরিশ ঘুম থেকে জেগে উঠার ভান করে: আমাকে শান্তিতে ঘুমাতেও দেবেন না নাকি !
আরুশি ঠিক বুঝতে পারল না যে সামান্য একটু সরে যাওয়ায় আরিশ কি করে পড়ে গেল ? পড়ার তো কথা নয় ৷ আসলে আরিশ ইচ্ছা করেই পড়ে গেছে নিজে নিজেই ৷
আরুশি থতমত খেয়ে বলল : বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে ফেলিনি ৷
আরিশ : তাহলে তোমার কি মনে আমি নিজে ইচ্ছা করে পড়ে গেছি নাকি?
আরিশ: বুঝেছি তোমার ধান্দা ভালো নয় , আমি আর তোমার পাশে শোবো না ৷
আরু অবাক হয়ে : কেন আপনি আমার পাশে শোবেন না কেন?
আরিশ: দ্বিতীয়বার খাট থেকে পড়ে যাওয়ার রিস্ক আমি নিতে চাই না , আর তোমার উপর আমার ভরসা নেই তাই তুমি সোফাতে ঘুমাবে ৷

আরুর সোফাতে ঘুমানোর ইচ্ছা ছিলনা , আরিশ অনেকটা জোর করেই পাঠিয়েছ ওকে না হলে আরিশ ওকে বলেছিল ঘর যে থেকে বেরিয়ে গিয়ে গেষ্টরুমে গিয়ে ঘুমাতে , কিন্তু সেটা তো আরু কখনোই হতে দেবে না , তাই বাধ্য হয়ে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ল আরু ৷
আরুসি সোফাতে বারবার এপাশ ওপাশ করছে কোন ভাবে ঘুম আসছেনা , আর এদিকে আরিশ মুচকি মুচকি হাসছে আরুর কান্ড দেখে…

সকালে,,,,,

আরিশ জোরে চেচিয়ে বলতে লাগল : এই যে আপনি আমার পাশে শুয়ে আছেন কেন ? আপনাকে না আমি সোফায় শুতে বলেছিলাম ? আপনি আবার এখানে চলে এসেছেন আমার কাছে ! কেন?

আরুশি আরিসের চেঁচামেচিতে উঠে গেল , তারপরে উঠে নিজেকে আরিশের বিছানায় আবিষ্কার করল আর আরিশ সেই নিয়ে রামায়ণ মহাভারত রচনা করছে আরু দেখতে পেল…

আরোশী : সত্যি তো আমি এখানে এলাম কি করে, আমিতো সোফাতে ঘুমাচ্ছিলাম !

আরিশ : আপনার কোন ভরসা নেই , আপনি শুধু আমার সাথে সাথে ঘোরার জন্য ছঠফঠ করেন ,আর এখন নিজেই দোষ আমাকে দিচ্ছেন ৷

আরোশী অবাক হয়ে বিছানা থেকে নামল তারপর বললো : দেখুন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আর আমার রাত্রে জেগে হাঁটার অভ্যাস নেই যে আমি হেঁটে হেঁটে আপনার পাশে ঘুমাতে চলে আসব , আমি সত্যিই জানি না আমি এখানে কি করে এলাম ৷

আরিশ: আপনার মতিগতি ভাল নয় , আমার প্রথমেই আপনাকে দেখে সন্দেহ হয়েছিল যে আপনি আবার আপনার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আবার আমার কাছে কেন ফিরে এসেছেন তা নিয়ে !

আরুশির এবার অভ্রের কথা শুধতেই মাথা গরম হয়ে গেল , একে সকাল সকাল আরিশ এসব শুরু করে দিয়েছে আর তার ওপর অভ্রের নাম জপ ৷ আর এদিকে আরিশ ক্রমাগত আরুশিকে দোষ দিয়েই যাচ্ছে তাই আরুশি আর না পেরে তাড়াতাড়ি আরিশের কাছে গিয়ে আরিশের পিছনের চুলগুলো মুঠি করে ধরে নিজের কাছে এনে নিজের ঠোঁটের সাথে আরিশের ঠোঁট দুটো মিলিয়ে দিল ৷

আরিশ অবাক হয়নি কারন এরকম একটা চমক আরুশির কাছ থেকে আগেও একবার পেয়েছিল তাই আরোশী যে এরকম কিছু করতে পারে সেটা ও জানে….
তবে সময়টাকে বেশ ভালোই উপভোগ করছে আরিশ৷ আরুশির সাথে নিজেও রেস্পন্স করছে ৷দিনের শুরুতে এমন একটা ভালোবাসার পরশ আর দিন শেষে এরকম একটা ভালোবাসার পরশ পেয়ে ও সময়টাকে শেষ করতে চাই….

হঠাৎ আরুশির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল তাই যখন আরিশকে ছেড়ে দেবে তার আগে আরিসের ঠোটে জোরে একটা কামড় দিল , এতদিন কেবল আরিশ দিয়েছে আর আজকে ওর আরিশের প্রতি এক প্রকার রিভেঞ্জ নেওয়া হয়ে গেল….

আরুশি ঠোটে কামড়ে দিতেই আরিশ ব্যাথা পেলেও তা প্রকাশ করল না বরং উল্টো আরুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটদুটোকে আরো শক্ত করে চেপে ধরল৷ আরুশির একটা কামড় দেওয়ার পর আরিশ যে এরকম একটা ব্যবহার করবে সেটা ও ভাবেনি…

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আরূ আর মুখে একরাশ চিন্তার ছাপ তার কারণ আজকে সকালে ও জানতে পারল যে বাড়িতে নাকি নতুন গেস্ট আসবে না আর সেটা হল আরিসের খালাম্মা আর তার মেয়ে ৷ তার মেয়েটা হল তার ননদ , আর ননদরা যে অত্যন্ত একটা ডেঞ্জারেস জাতীয় বস্তু সেটা আরূ খুব ভাল করেই জানে , ও নিজের ফুপ্পি কে দেখেই বুঝেছে ৷

আরুশির ফুপি যখনই ওদের বাড়িতে আসেন তখন সারাদিন আরুশির মাকে খাটান, আর দোষ-গুণের বিচার করতে থাকেন, আরশির মা মুখ ফুটে কখনো তার প্রতিবাদ করেন না সব কিছু অন্যায় ভাবে সহ্য করে নেয় ৷ তাহলে এখন কি এই সমস্ত ঘটনার সাথে আরূশিকেও মুখোমুখি হতে হবে, এমন হাজারো প্রশ্ন ওর মাথায় ঘুরছে ৷

আরিশের মা রান্নাঘর থেকে আরুশিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন , একটা অদ্ভুত চিন্তা হচ্ছে আরূর সেটা উনি বেশ ভালই বুঝতে পারছেন, তবে এই মুহূর্তে আরুশিকে সাপোর্ট করতে পারছেন না উনি তাহলে মেয়েটাকে শিক্ষা দেওয়া যাবে না ৷ উনিও সবকিছু চান যে সবকিছু থেকে আরু শিক্ষা নিক তাহলে ভবিষ্যতে যেন কখনো এ ধরনের ভুল কাজগুলো না করে, আর নিজের ছেলেমেয়েকেও সেই শিক্ষা দিতে পারে যাতে তারা সঠিক দিকে চালিত হয়….

সানা সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে তা দেখে আরুশির আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরাভকে নিয়ে কিছু একটা ভাবছো…

সানাকে এখন প্রায় দিনই খুব খুশি খুশি দেখায় ৷ সেই দিনের পর থেকে সানা আরূর সঙ্গে ভালো করে কথা বলছে না সেটা আরু বেশ ভালই লক্ষ্য করেছে ৷ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে সানা ওর সঙ্গে কথা বলছে না তাই ৷সেই কলেজ লাইফ থেকে সানাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে , আজ একটা ছোট্ট ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিচ্ছে ওকে ৷

সানা একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিল ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আরূ তাই আরুশিকে দেখিয়ে সোফাতে গিয়ে বসলো সানা…
আরুশিও এবারে ধির পায়ে হেটে হেটে সানার কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল ৷
আরোশী বসতেই সোনা কিছুটা সরে গেল ৷
তারপর আবার আরুশি সানার দিকে খানিকটা সরে গেল তাতে সোনা আর একটু দূরে সরে যেতে আরুশির খুব রাগ হয়ে গেল ৷
সানার হাত ধরে টেনে নিয়ে ওর কাছে বসলো আরু ৷

আরু: আমার থেকে এভাবে দূরে দূরে বসছিস কেন ? আমি কি মানুষ না নাকি হ্যাঁ ? আমি একটা ভুল করেছি বলে তোরা সবাই এরকম ব্যবহার করবি আমার সাথে ? আরুর চোখে জল চলে এসেছে প্রায়, ও খুব ইমোশনাল আবেগটাকে প্রাধান্য দিয়ে চলে…

সানা আর যাই হোক আরুর কষ্টটাকে সহ্য করতে পারে না তাই সামান্য কিছুটা নরম হয়ে আরুশিকে বললো : এভাবে কান্নার কি আছে , আমি কি তোকে কিছু বলেছি?
আরোশী এবার কান্না কান্না করে দিয়ে: আমি কালকে থেকে দেখছি তুই আমার সঙ্গে কথা বলছিস না ৷ মানছি আমি একটা ভুল করেছি তার জন্য কি আমাকে ক্ষমা করা যায় না!

সানা কিছু একটা ভেবে বলল : আচ্ছা যা তোকে ক্ষমা করে দিলাম এবার তোমার হাত ছাড় ৷
আরোশী সানাকে জড়িয়ে ধরে বলল : আমি তোকে ছাড়বোনা , আমি জানি তুই আমাকে এখনো ক্ষমা করিস নি ৷

সানা মনে মনে : এই মেয়েটা দেখছি আমাকে মেরেই ছাড়বে , ও কি জানে না যে আমি ওর উপরে রাগ করে থাকতে পারি না ৷

সানা: আমি বলছিতো আমি রেগে নেই, এবার তো ছাড় ৷ অবশেষে অনেক বলার পর আরু ছেড়ে দিল৷

কিছুক্ষণ পর আর নিজের কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে আরু সানাকে জিজ্ঞাসা করল :
আরোশী কিন্তু কিন্তু করে: যারা আসছে মানে উনার খালাম্মা আর বোন , ওরা কি ভালো নাকি টিভি সিরিয়ালে যেমনটা হয় তেমনি?

আরুশির কথা শুনে সানার খুব হাসি পাচ্ছে , তারপর সামান্য একটু থেমে বলল : ওনারা কেমন আসলেই তুই বুঝতে পারবি কিন্তু একটা কথা শুনে রাখ ভাইয়াকে একটু রাইসা আপুর থেকে দূরে দূরে রাখিস৷ রাইসা আপু ভাইয়াকে খুব পছন্দ করে আর ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে , আর এখন ভাইয়ের সঙ্গে তোর ঝামেলা চলছে তাই কিছু বলা যায় না ভাইয়া ওকেও বিয়ে করে নিতে পারে ৷ আরুশিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল ৷

আরোশী শুনেই যেন চমকে উঠল , কারন ও ভেবেছিল অন্যরকম বিপদ কিন্তু এখন দেখছে তো সম্পূর্ণ আলাদা কেস ৷ এখন ও সব কি করে ঠিক করবে তা নিয়ে একপ্রকার চিন্তায় পড়ে গেছে ৷ আর যদি সত্যি রাইসাকে বিয়ে করে নে আরু কে ডিভোর্স দিয়ে দেয় আরিশ তখন ! তা কিছুতেই হতে দেবে না ও, আরিশকে কোন ভাবেই ছাড়বে না ও …..

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আরিশ এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সাড়ে নটায় ওদের আসার কথা ছিল এখন দশটা বাজে , ফ্লাইট যে আধ ঘণ্টা লেট করেছে তার খবরটা আগেই পেয়েছিল আরিস ৷
বিরক্তি লাগছে প্রচন্ড তবে সকালবেলা আরুশির সাথে অত সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটিয়ে এখন বেশ ভালই লাগছে, হাজারো বিরক্তি র মাঝেও বারবার আরুশির কথাই মনে পড়তেই আরিশের , অদ্ভুত এক ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছে ৷ মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে ৷

হঠাৎ করে দূর থেকে কেউ দৌড়ে এসে যেন আরিশের উপর ঝাপিয়ে পড়ল এমনই একটা কিছু অনুভূত হলো আরিস এর….
বুঝতে অসুবিধা হলো না যে রাইসার কাজ…

আরিশের গলা জরিয়ে ধরল রাইসা ৷

রাইসা : কতদিন পরে তোকে দেখলাম , জানিস আমি এখানে আসার জন্য কত এক্সাইটেড , কত প্ল্যান আছে ৷সবথেকে খুশি হয়েছি তোকে পেয়ে ৷

আরিশের খালাম্মা দূর থেকে হাসতে হাসতে বললেন : কেমন আছিস আরিশ?

আরিশ নিজেকে রাইসার থেকে ছাড়িয়ে বলল : এইতো ভালো আছি , তুমি কেমন আছো?

উনি আরিশের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললেন : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, এখন সবকিছু ঠিকঠাক ব্যবস্থা করে সবাই সুখী হলে আমিও খুশি ৷

আরিশ বুঝতে পারল যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন তাই একটু গলা ঝেড়ে কেশে বলল: দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের, এমনিতেই তোমাদের ফ্লাইট অনেক লেট করেছে ,আম্মু অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য চিন্তা করবে তাড়াতাড়ি চলো ৷
বলে গাড়িতে উঠে পড়ল ৷

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-২০+২১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:20
#Suraiya_Aayat

আর দুইদিন পরে আরিশ এর ফাইনাল এক্সাম খুব জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে যতই হোক সবাই ওর থেকে অনেক বেশি এক্সপেক্ট করে আর সেই অনুযায়ী ফলাফল না হলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না আরিশ ৷ তাছাড়া এ সঙ্গে ওর কলেজের নামও জড়িয়ে আছে ৷

সারাদিন পড়াশোনা তে খুবই ব্যস্ত থাকে আরিস আরুর সাথে ঠিকমত কথা বলার সময়ও পায়না, সকালবেলা উঠে পড়তে বসে যায় , লাঞ্চ , ব্রেকফাস্ট ডিনার করার জন্য সাধারণত রুম থেকে বের হয়৷ আরূ মাঝে মাঝে বাড়িতে টুকটাক কিছু কাজ করে ওর শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে ৷ আরিশের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা হয় না বলে আজকাল নিজেকেও বড্ড বেশি একা একা মনে হয় , তাছাড়াও সানাও এখন বেশিরভাগ সময়ই আরাভের সঙ্গে গল্প করতে থাকে আর এই সবকিছুর মাঝখানে আরিশকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যথাটা বড্ড বেশি ঝাঁঝরা করে দেয় ওর হৃদয় টাকে…..

আর কিছুক্ষণ পরেই সানা আর আরু বাইরে যাবে কিছু শপিং করতে, যদিও বা যাওয়ার উদ্দেশ্যটা সানার কারণেই ৷সানা আরাভের সঙ্গে দেখা করবে, দুজনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে বেশ , ততবেশি মনোমালিন্য হয় না এখন আর , দিনদিন ক্রমশ মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠছে ওদের মধ্যে তা নিয়ে সকলেই বেশ খুশি, কিন্তু এদিকে আরিশের এই ব্যস্ততা আরিশ আর আরুর মধ্যে সামান্য হলেও দূরত্ব সৃষ্টি করেছে ৷ এখন আর দুজনের আগের মত ঠিকঠাক কথা হয়না , অবশ্য আরুও এতে রাগ করে না কারণ ও জানে এক্সাম হয়ে গেলে আরিশ আবার আগের মতোই হয়ে যাবে কিন্তু হয়তো সেই দিনের সেই ভালো সময়টা ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে না আরূ ৷ তবে আজকাল অভিমান নামক জিনিসটা জেন বড্ড বেশি সুযোগ পেতে চাই ৷

হাতের পাশে থাকা কফির মগটায় চুমুক দিয়ে আবার টেবিলের উপরে রাখতেই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো আরিশ এর ৷

আরু পাশে এসে দাঁড়াতেই ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খপ করে হাতটা টেনে ধরে ওর কোলের উপরে বসিয়ে দিল আরিশ, আর শক্ত করে কোমরটাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে ও ৷

আরিস: তুমি আমার উপর রাগ করেছো আরূপাখি?

আরুশি অভিমান করে: আমি আপনার উপর কেন রাগ করতে যাব!

আরিশ : আমি বুঝি আরূপাখি তোমার মনের ভাষা গুলোকে, আমার কাছে যে বড্ড স্পষ্ট তুমি আর তোমার চাওয়াপাওয়া গুলো , কখন কি অনুভব করো সবকিছুই আমি বুঝি ৷ আমি খুব প্রেসার এর মধ্যে আছি আরুপাখি আশা করি তুমি বুঝতে পারছো….

আরোশী আবার আগের মতোই চুপ করে রইলো, চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে আরুর, আরিশ আর একটা শব্দ বললেই যেন তার বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে ৷

আরিস : আমার এক্সামটা হতে দাও সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে , পৃথিবীর সব ভালোবাসা আমি তোমার কাছে এনে দেবো , ভালবেসে বুকের মাঝে আগলে রাখবো তোমায় যেমনটা এখন রেখেছি ৷

আরিশের কথাগুলো শুনে আরূ আর পারল না নিজেকে আটকে রাখতে, আরিসের শার্টের কলার ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল….

আরিশ শক্ত করে আরুশির মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল ৷ আরিশের চোখের কোনেও জল জমে এসেছে ,ওর ও যে কষ্ট হচ্ছে না তা নয় বরং আরুশির থেকে হাজার গুন বেশি কষ্ট হচ্ছে….

আরিশ আরুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে নিজেকে ক্রমশ সংযত করে নিয়ে আরুকে খানিক্ষন নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো ৷

রিকশায় একা বসে আছে আরূ, গন্তব্য ওর নিজের বাড়ি….

সানা আর আরাভ দুজনেই একসঙ্গেই আছে আরূ নিজেও এতক্ষণ ওদের সঙ্গেই ছিল তবে দুজনের মাঝখানে থাকতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল আরুর, আর তাছাড়া সবে সবে ওদের সম্পর্কের একটা শুভ আরম্ভ হতে চলেছে তাই ওদেরকেও কিছু একান্তে সময় দেওয়া উচিত বলে আরুশি ওখান থেকে চলে এল ৷ সানা আর আরাভ যখন জিজ্ঞাসা করলো যে ও কোথায় যাচ্ছে তখন বলল যে ওর কিছু কেনাকাটা করার আছে ,তাই আরাভ আর সানা না করতে পারল না….

বুকের ভেতর টিপটিপ করছে আরুর ক্রমশ, ভয়ও লাগছে যদি আরিশ কোন ভাবে জানতে পারে তাহলে ওকে ছাড়বে না সেটা ও ভালোই জানে….
তবুও একরাশ সাহস নিয়েই যাচ্ছে ওর বাবার কাছে,এটা বলতে ওর বাবাকে যে ও আরিশকে ছাড়া থাকতে পারবেনা ৷ সিদ্ধান্ত নিতে ওর এক মিনিট ও সময় লাগেনি ৷আর এটা ওর সারা জীবনের ব্যাপার, প্রয়োজন হলে অভ্রকে বোঝানোর জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেবে আরূ তবে আরিশ কে ছাড়তে চায় না ও ৷ এইকদিন আরিশের থেকে ওর দূরত্বটা ওর ভালোবাসাকে জানান দিয়েছে , বুঝতে পেরেছে ও ওর আরিশের প্রতি ভালোবাসা ৷ এই ভালোবাসা কে ও হারাতে চাইনা ৷

আরুর মা: আরূ মা অনেকক্ষণ হলো তুই এসেছিস চল এবার কিছু খেয়ে নিবি, আমি নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দেবো ৷ তোকে বড্ড মিস করেছি এই কদিন এ বলে উনি কেঁদে দিলেন ৷

তখনই আরুর বাবা ধমকে বলে উঠলেন,,,,

আরমান সাহেব:ওসব খাওয়া-দাওয়া পরে হবে ,এখন এই মেয়ে কি বলছে শুনছো না ! এই মেয়ে বলছে যে ওই ছেলেটাকে নাকি ও ছাড়তে পারবে না, এটা কোন কথা হলো ! আমি অভ্রদের ফ্যামিলির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে আবার অভ্রর সাথে আরুর বিয়ে হবে ৷ এবার তো আমাকে ওরা নির্ঘাত জেলে পাঠাবে প্রতারনার দায়ে ৷ ওরা কি আমাকে ছাড়বে ?আর সে ভাবনা কি এই মেয়ের মাথায় আসেনা? জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন ৷

আরুর বাবা ওকে ধমকা দিতেই আরু বারবার চমকে উঠছে আর বুকের ভিতরটা বারবার কেঁপে উঠছে ৷ শুধু ভাবছে যে এসমস্ত ওর সঙ্গে না ঘটলেও পারতো ৷

আরু কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল:আমি যা চাই আমি তোমাকে তাই বলেছি বাবা !

আরমান সাহেব উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললেন: তার মানে তুই আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি তাই তো? এটাই তো তুই চাস তাই না! তাহলে মনে রাখিস আজ থেকে তোর সাথে আমার আর এ বাড়ির কারোর কোন সম্পর্ক নেই….

কথাগুলো যেন আরুর বুকে তীরের মত এসে বিধছে৷ নিজের বাবা তার মেয়েকে এতটা জোর করছে তার মেয়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ৷ এগুলো ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে ওর ৷

আরুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলল: তা বলে তুমি মেয়েটাকে এইভাবে বলবে? একটা মানুষের একটা মানুষের প্রতি ভালোবাসা হতেই পারে তাই বলে তুমি বুঝবেনা ? ও তো তোমারি মেয়ে….

কথাটা বলতেই আরমান সাহেব থামিয়ে দিলেন আরুর মাকে ৷

আরমান সাহেব: তুমি আমাদের মাঝখানে একটাও কথা বলতে আসবেনা , এখন ও যদি রাজি হয় তো ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকবে আর যদি মনে কর একটা বাইরের ছেলের জন্য আমাদের সাথে চিরতরের মত সম্পর্ক হারাবে তাহলে সেটা ওর ব্যাপার ৷

অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে কঠোর থেকে কঠোরতম বানানোর চেষ্টা করছে আরূ যেন বাবার মুখের উপর না করে দিতে পারে ৷ কিন্তু এখন ওর বাবা যা বলছেন তা শুনে আরুশী বলল: আমি তোমার কথাতে রাজি বাবা….

আরমান সাহেব মনে মনে নিজেকে সফলতার হুঙ্কার দিচ্ছেন কারণ উনি জানতেন আরুশিকে সামান্য ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করলেই ও গলে যাবে সেই জন্য এত নাটক করলেন সেই থেকে…..

কথাটা বলে আরু আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, ওখান থেকে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিল ৷

আরুর মা: মেয়েটার সর্বনাশ করে তোমার কি লাভ?

আরমান সাহেব : টাকা চাই আমার টাকা , অনেক বেশি টাকা চাই , তুমি তো জানো তাহলে কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাড়াও ?

আরুর মা: আমি কখনো অন্যায় কে সমর্থন কখনো করিনি আর আজও করবোনা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷

আরমান সাহেব মনে মনে বিজয়ীর হাসি দিলেন…..

ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ছটা ছুঁইছুঁই ৷ আরাভ আর সানা অনেকক্ষণ ধরেই আরুকে ফোন করার চেষ্টা করছে কিন্তু আরু কোনভাবেই ফোন ধরছেনা ৷ ওরা নিজেরাও চিন্তায় পড়ে গেছে যে আরুর কোনো বিপদে পড়ল কিনা….

সানা যখন আরেকবার আরুশিকে ফোন করতে যাবে তখনই দেখল আরুশি ধীরপায়ে মাটির দিকে তাকিয়ে অন্য মনষ্ক হয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে ৷ওকে দেখে কেমন উস্কোখুস্কো মনে হচ্ছে, সকালে যেমন প্রাণোচ্ছলতা ওর মুখে ছিল সেই প্রাণোচ্ছলতা ভাব এখন আর ওর মধ্যে নেই , চেহারায় বিসন্নতার ছাপ…

সানা আরুর কাছে ছুটে গিয়ে বলল: কিরে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি আর চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন?

আরূ ক্লান্তিমাখা স্বরে বলল : আমি বাড়ি যাব সানা, তাড়াতাড়ি চল ৷

সানা আর আরাভ আরুর অবস্থাটা বুঝতে পেরে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বাড়িতে চলে গেল…..

আরিশ সারাদিনে এতো ব্যস্ত ছিল যে আরুশিকে একবারও ফোন করে খোঁজ নেওয়ার সময়টুকু পায়নি, নিজেকে মনে মনে অনেক বকা দিচ্ছে যে এত কেয়ারলেস কি করে হয়ে গেল ও ৷ অনেকক্ষণ হয়ে গেল আরোশী রুমে আসলো না দেখে আরিস এবার একটু নড়েচড়ে বসল,,,,

সানার রুমে আরুশিকে খুজতে যেতেই দেখল গেস্ট রুমের দরজাটা খোলা , হঠাৎ দরজাটা খোলা তা দেখতে গিয়ে আরিশ দেখল আরোশী গুটিসুটি হয়ে এক পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷

দ্রুতপায়ে আরুশির কাছে গেল, যেতেই দেখল আরুশি ঘুমিয়ে আছে ৷ আরিশ এবার আরুশির কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো ৷

আরিশ : অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আরুপাখি তবে আর বেশিদিন নয় , সব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে, শুধু একটু অপেক্ষা করো , হার মেনো না সময়ের কাছে ,বিশ্বাস রাখো নিজের ওপর ৷
এই বলে আরুশিকে কোলে নিয়ে ওর নিজের রুমে চলে গেল ৷ আরুশিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল আরিশ৷
চোখ-মুখ বড্ড শুকনো লাগছে আরুর তাই ওয়াশরুম থেকে টাওয়েল ভিজিয়ে এনে পরম যত্নে চোখ মুখ মুছিয়ে দিলো এবং অবশেষে ঠোঁট দুটোতে হালকা করে ওর ঠোঁট দুটো ছোঁয়াল ৷ দিনশেষে এটুকু ভালোবাসা আরিশের জন্য খুবই দরকার ৷

চলবে,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:21
#Suraiya_Aayat

দীর্ঘ 14 দিন পর আজকে আরিশ এর এক্সাম এর শেষ দিন ৷
এই এক্সামের কদিন আরূর সঙ্গে আরিসের দূরত্বটা বেড়েছে বরং কমেনি ৷ এতোসব কিছুর মধ্যে আরুর খেয়াল রাখতে পারেনি আরিশ , কেবলমাত্র দিন গুনছে এক্সাম শেষ হওয়ার জন্য ৷ এক্সামের দিন যত এগিয়ে এসেছে আরুর আরিশকে ছেড়ে যাওয়ার ভয়টাও ক্রমশ বেড়েছে ৷ চারিদিক থেকে ওর বাবার প্রেসার , অভ্রর প্রেসার সমস্ত কিছুতে পাগলপ্রায় অবস্থা আরুর….

আরিশের মা কিচেনে আরিশ এর জন্য ওর সমস্ত পছন্দের খাবার রান্না করছেন, আরূ ও ওনার সঙ্গে হেল্প করতে চেয়েছিল কিন্তু উনি বারণ করে দিয়েছেন তাই না পেরে আরু ঘরে চলে এসেছে….
বিছানার উপরে আনমনা হয়ে বসে আছে আরু, ঘরের মধ্যে টিভি চলছে তার আওয়াজটা ও যেন ওর কানে এসে পৌঁছাচ্ছে না….
হঠাৎ ফোনে ফোন আসতেই চমকে উঠলো, কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা ধরতেই দেখল আরমান সাহেব ফোন করেছেন ৷

আরমান সাহেব : আর কতদিন সময় নিবি তুই? দেখতে দেখতে তো প্রায় 13 থেকে 14 দিন হয়ে গেল আর এদিকে অভ্রের বাড়ি থেকেও সবাই তোড়জোড় শুরু করেছে ৷ অভ্র অলরেডি কালকের টিকিট বুক করে ফেলেছে ৷ তুই কালকে ওই ছেলেকে সব বলে দিবি, আর সকালের মধ্যে যেন তোকে এই বাড়িতে দেখি ৷ সন্ধ্যে সাতটার সময় ফ্লাইট ৷

ফোনের ওপাশে আরু নিসতব্ধ ৷

আরমান সাহেব : নতুন করে যেন কোন ভুল ত্রুটি না হয় বলে আরূকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি ফোনটা কেটে দিলেন….

আরুর চোখের জলটাও যেন শুকিয়ে গেছে , এই কদিন ধরে আরু নিস্তব্ধ হয়ে চোখের জল ফেলেছে ৷
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আলমারি থেকে ডাইরি বের করে লিখতে বসে গেল আরূ…

প্রিয়,,,,,

আপনি কি জানেন যে আপনি মানুষটা বড়ই অদ্ভুত আমার কাছে ! আপনাকে বোঝার সাধ্য টা যেমন কারো নেই ঠিক তেমনি আমারও হয়ে ওঠেনি এখনো , জানিনা সেই সুযোগ আর কখনো পাবো কি তবুও না চাইতেও বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে৷

কখনো নিজের ভালোবাসাটাকে মুখে প্রকাশ না করলেও হৃদয় থেকে ভালোবাসা টা আপনার জন্যই ব্যক্ত হয় তা আপনি হয়তো জানেন ৷

যেদিন আমাকে আপনি হাত ধরে টানতে টানতে অচেনা সেই রুমটার বিছানায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছিলেন মুখে তখন একরাশ হিংস্রতা ফুটে উঠলেও তা আমার চোখে দৃশ্যমান হয়নি ৷ অদ্ভুত এক ভালোবাসা দেখেছিলাম আপনার চোখে আমার জন্য, তখন হয়তো এতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখি নি ব্যাপারটা কে ৷ আমারও তখন বিয়ের কিছুদিন আগে কার সময়, অভ্র কে ছাড়া কাউকে নিয়ে অতোটা ভেবে দেখিনি৷
ভার্সিটিতে আপনাকে দেখেও যে কখনো বিশেষ কোন অনুভূতি হয়েছে তাও নয় কিন্তু ভালবাসার সংজ্ঞা গুলো প্রতিটা মুহূর্তে আপনি আমাকে বোঝাতে শিখিয়েছেন…..

আপনার নেশায় বড্ড আসক্ত হয়ে পড়েছি ৷ আজ আপনার কথা গুলো বড্ড বেশী মনে করতে ইচ্ছা করছে ৷ আপনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার অনুভূতিতে আপনি থাকবেন , আমার আসক্তিতে পরিণত হবেন আপনি, আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান নেবেন সমস্ত টা জুড়ে , কেবল স্থান থাকবে শুধু আপনার ৷ সত্যিই আজ তাই , তবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ এ আমি ব্যর্থ ছিলাম….

আপনাকে যেদিন একান্তে কাছে টেনে নিয়ে ছিলাম সেদিন আবেগের বশে কিনা জানিনা তবে আপনার অশ্রুমাখা চোখগুলো দেখে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা অনুভব করেছিলাম, আটকে রাখতে পারি নিজেকে৷ আপন করে নিয়েছিলাম আপনাকে কষ্টের মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি এনে দেওয়ার জন্য ৷

আর কখনো একান্তে ভালোবাসা হবে কি জানি না, হয়তোবা হবে না তবে এটুকু জানবেন আমার সবটুকু জুড়ে শুধু আপনারই স্থান ৷ দূরে থাকলেও ভালোবাসা কমবে না কখনো ৷ শুধু বঞ্চিত হব আপনার সমস্ত স্পর্শ, আপনার আবেগ , অনুভূতি আর ভালোবাসা থেকে ,তবে সহ্য করে নেব সব ৷

আপনার এক্সামের এই কদিনে নিজেকে অনেকটাই শক্ত করে নিয়েছি ৷ জীবনের থেকে আর কিছুই বেশি আশা নেই ৷

জানেন সবথেকে অবাক হয়ে গেছিলাম যখন আমার বাবা তিনি আমাকে এতটা জোর করেছিলেন আপনার থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৷ কোন নিজের বাবা যে সন্তানের সঙ্গে এমনটা করতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না কখনো ৷ তবুও ভালোই হলো এতো কিছুর মাঝেও সমস্ত কিছু জানতে আর বুঝতে শিখেছে ৷

যখন আপনি এগুলো জানবেন তখন হয়তো আমি হয়ে যাব অন্য কারোর ,তাই আর ফিরে পাওয়ার বৄথা চেষ্টা না করায় শ্রেয় ৷

আমার আসক্তিতে কেবলই আপনি….
ভালবেসে যাব প্রিয় ||

ইতি,
আপনার আরূপাখি

ডাইরি থেকে পেজটা ছিঁড়ে আলমারির মধ্যে রেখে দিল ৷ কাগজটা কালকে চলে যাওয়ার সময় রেখে যাবে….

দুপুর বেলাতে আরিশ বাড়ি আসলো না ৷ আরু ফোন করেছিল একবার তবে জানালো যে ওর দেরি হবে আসতে ৷

রাত সাড়ে আটটা,,,,,

ড্রয়িং রুমে মধ্যে বসে আছে আরু, হঠাৎই গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো ৷ আরিশ বাড়ি এসেছে ৷ আর কিছুক্ষণ মাত্র সময় আরিসের সঙ্গে কাটাব তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ওর থেকে ৷

আরিশ ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই ওর মা জিজ্ঞাসা করে উঠলো,,,,

আরিশের মা : কিরে এত দেরি হল?

আরিশ ওর মা কে জড়িয়ে ধরে বলল:
এইতো আমি চলে এসেছি, আসলে আজকে সবাই মিলে বিকালবেলা একটা ছোটখাটো পার্টি করেছিল তাই সেখানে গিয়েছিলাম…..

আরিশের মা : মেয়েটা সেই দুপুর থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে কখন বাড়ি আসবি তাই এখনো খাইনি মেয়েটা ৷

আরিশের মায়ের কথা শুনে আরুর দিকে তাকাতেই দেখল আরূ মাথা নিচু করে বসে আছে , চোখ মুখ অনেক শুকনো শুকনো লাগছে….

আরূর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল আরিশ ৷ এই কদিনে মেয়েটা কেমন হয়ে গেছে , একেবারে যেন ঝিমিয়ে পড়েছে….

আরিশের মা: তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোদের দুজনের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি…

হঠাৎ করে আরূ উঠে গিয়ে রুমের ভেতরে চলে গেল,
আরিশ ওর পিছন পিছন গেল,,,,,,

রুমের ভিতর আরুশি যেতেই আরিশ পিছনদিকে আরুশিকে জড়িয়ে ধরল ৷

আরিস: সরি আরূপাখি আমার অনেকটা লেট হয়ে গেল ৷ আসলে আমি তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা আসতে দিলনা….

আরুশি: সারা দিন অনেক ধকল গেছে,ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার আনছি বলে আরিশ কে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরিস কোন কিছু একটা ভেবে হেসে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল….

রাত যতো গভীর হচ্ছে ততো আরিস আর আরু ভালোবাসায় মেতে উঠেছে ৷ ঘড়ির কাঁটা যতবারই টিকটিক করে বেজে উঠছে আর সময়টাকে জানান দিচ্ছে ততই আরুশির মনে আরিশকে হারানোর ভয়টাও তত বেড়েই চলেছে , তবে আরিসের থেকে ভালোবাসা পেয়ে যেন সমস্তটাই ভুলে যাচ্ছে আরু….

রাত সাড়ে তিনটে,,,,,,

আরিসের থেকে কোনরকম নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো আরোশী ৷ বিছানার চাদরটা ভালোভাবে শরীরের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ চাঁদের আলোটা এসে সরাসরি ওর মুখে পড়েছে ৷ চাঁদের আলোতে ওর সারা শরীর আলোকিত হয়ে যাচ্ছে….

চোখ থেকে এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল আরুশির ৷ পরিবর্তন হচ্ছে জীবনের নিয়মিত সূচি, হয়তো এরপরে জীবন টাই পাল্টে যাবে , সব ধারণা গুলো কোনোক্রমে পরিবর্তন হবে…..

হাত দিয়ে আলতো করে সাদা পর্দাটা সরাতেই জোছনা রাতে চাঁদের আলোটা সরাসরি আরিশের মুখের উপর গিয়ে পড়ছে , অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে ৷আরিশ কে দেখতে অতুলনীয় লাগছে ৷ এই ভাবে যেন আরিশের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর অতিক্রম করে দিতে পারে আরু…..

চোখ থেকে যখন ক্রমাগতই জল গড়িয়ে পড়ছে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না, ফ্লোরে বসে অনবরত কেদেই চলেছে আরূ….

সকাল আটটা,,,,

লাল রঙের একটা শাড়ি পরে অগোছালো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরূ ঘরের মাঝখানে , অপেক্ষা করছে আরিশের জেগে ওঠার , বিগত এক ঘন্টা ধরে একই জায়গায় এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে আরু ৷ আরিশকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না….

আরিশের ঘুম ভাঙতেই আরুর জায়গাটা হাত দিয়ে হাতেরে দেখতেই জায়গাটা ফাঁকা অনুভব করতেই উঠে পরল আরিশ ৷

আরিশকে উঠতে দেখে আরুশির সমস্ত শরীর টা কেঁপে উঠল….

চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রুমের মাঝখানে আরুশিকে দেখলো আরিশ ৷

আরিশ মিষ্টি হাসি দিয়ে : গুডমর্নিং বউ , আর তুমি ওখানে কি করছো?

আরুশি কোন কথা বলছে না ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে৷
আরিশ এবার বিছানা ছেড়ে উঠে আরুর এর কাছে গেল , গিয়ে আরূকে জড়িয়ে ধরল…..

হঠাৎ আরূ বলে উঠলো: আমি আপনাকে ভালোবাসি না , আমার সমস্ত ভালোবাসা মিথ্যা ছিল ৷ আপনাকে ভালোবেসে প্রতিটা স্পর্শানুভূতি , সমস্তটা মিথ্যে ৷ আপনাকে আমি কখনও ভালোই বাসিনি , আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন সেই কারণেই আপনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এত কিছু করেছি ৷

আরিসের হাতের বাঁধনটা ধীরে ধীরে আলগা হতে লাগলো , আরুশিকে ছেড়ে দিয়ে বললো : সকাল সকাল মজা করছো আরূপাখি?

আরোশী : আমি কোন মজা করছি না , আমি যা বলছি সত্যি কথা বলছি (দৃঢ়কণ্ঠে ৷)

আরিশ কিন্তু কিন্তু করে: আমি জানি তুমি আমার সাথে মজা করছো৷

আরুশি : আপনাকে আমি ভালোবাসি না আর আমি এগুলো মজা করছি না ৷ আপনার সাথে যা যা করেছি আমি তাই বলছি ৷ আর তাছাড়া আমি ভালোবাসে আপনাকে যতবারই গ্রহণ করেছি ততবার অভ্র আমাকে বাধ্য করেছে তাই করেছি ৷ ওহঅভ্র আর আমি দুজনেই মনে করেছি আপনাকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন সেই কারণে ৷

আরিশ ঠাস করে আরুশিকে একটা চড় মারলো৷

আরিশ : মজা করার একটা সীমা থাকে, তুমি এবার সব সীমা পার করছ আরুপাখি ৷

আরু উচ্চস্বরে হেসে উঠল আর বলল: মজা তো আমি এতদিন করেছি আপনার জীবনের সাথে আপনি যা যা করেছেন সমস্তটা আপনাকে আবার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা….

আরিশ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল,,,,,,

আরিশ : তুমি একটা প্রতারক ,প্রতারণা করেছো আমার সাথে ৷ ভালোবেসে তোমাকে নিজের কাছে এনে রেখেছিলাম কিন্তু আমার ভালোবাসাকে এভাবে যে তুমি অপমান করবে তা ভাবিনি ৷ ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে ভালবাসতে শুরে করেছ , কিন্তু তোমার ভালোবাসা নামক প্রতারণার পিছনেও যে এত বড় একটা উদ্দেশ্য আছে তা যদি জানতাম তাহলে এত, ভালোবাসা তোমাকে দিতাম না যার তুমি যোগ্যই ছিলে না কখনো ৷ কথা দিয়েছিলাম তোমাকে নিজের সাথে ভালোবেসে রাখার কিন্তু তুমি কি করলে!

আরোশী : যা করেছি বেশ করেছি আর এখন শুনে রাখুন আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না ৷ বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো,,,,,

আরু বেরিয়ে যেতেই ওকে বলল,,,,,

আরিশ ছলছল চোখে বললো : এটা মনে রেখো আরূপাখি , কাউকে ঠকিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না ‌ আমার এত বড় ক্ষতি করে তুমি নিজেও কখনো ভালো থাকবে না ৷

আরুশির পিছন ফিরে তাকানোর সাহস হল না , চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল গুলোকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল ৷

আরু চলে যেতে আরিশ হাতের পাশে থাকো ফুলদানীটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারল ৷ চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে আরিশের ৷ নিজের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছে ও ৷

রুম থেকে কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে আরুর সার শরীর কেঁপে উঠল তবুও আরিশ এর মুখোমুখি হওয়ার সাহস ওর আর, নেই তাই সবকিছু উপেক্ষা করে চলে গেল ৷

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-১৮+১৯

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:18
#Suraiya_Aayat

সকাল আটটার সময় এমারজেন্সি টিকিট কেটে আরূ আর আরিশ ঢাকায় পৌঁছেছে….

সেই ভোরবেলা থেকে সানা ফোন করেই চলেছে যাতে ওরা তারাতারি চলে আসে…..

আরূ বাড়ি এসে আসতেই আরূ কে সানা টেনে নিয়ে ওর ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে , ওকে চেঞ্জ অবধি করতে দেয়নি ৷

সারারাত ঠিক করে চিন্তায় চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি আরূ ৷ একদিকে আরিসকে নিয়ে চিন্তা, অন্যদিকে ওর বাবাকে নিয়ে চিন্তা , আর এদিকে সানার , সকলের চিন্তা একসঙ্গে ছোট্ট মাথাটায় বড্ড বেশি প্রেসার দিচ্ছে ৷ মাথাব্যথা করছে প্রচন্ড কিন্তু এখন যদি সে কথাটা ও সানাকে বলে তাহলে সানা ভাববে আরু হয়তো ওকে সাহায্য করবে না বলেই এমনটা বলছে তাই আরূ কিছু বলতে পারছেনা ৷

সানা: কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন? বল আমি কি করবো এখন?

আরূ নিজেকে ক্রমশ স্থির রাখার চেষ্টা করে বলল: দেখ সানা জেদ করিস না আমার মনে হয় তোর আরাভ ভাইয়াদের বাড়ি যাওয়া উচিত ৷আর তুই বললেও আমার মনে হয় না বাবা তোর কথা শুনবেন তাই বেকার জেদ করিস না তাহলে খামোখা বকা খাবি সকলের কাছে ৷

সানা : আরূ তুইও ওইরকম বললি তো সকলের মত! আমাকে কেউ বুঝলো না বলে ন্যাকা কান্না করে৷

আরু: দেখ সানা তুই যেটা ভাবছিস সেটা নয় , তোর ভালোর জন্যই বলছি ৷ তুই যদি আরাভ ভাইয়াকে বিয়েটা করতে না চায় তাহলে ওনার সঙ্গে একান্তে কথা বলে সরাসরি ওনাকে জানা যে তুই ওনাকে বিয়ে করতে চাস না তাহলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়৷

সানা : উনার সঙ্গে আলাদাভাবে আমি আর কথা !কোনভাবেই না ৷ বাবা উনি মানুষ না ডাকাত ৷আমার ওনাকে খুব ভয় লাগে ৷

আরু: সানা তুই কিন্তু এবার একটু বেশিই জেদ করছিস ৷ এরকম করলে আমি কিন্তু তোকে কোন সাহায্য করবো না বলে দিলাম ৷
সানা :আচ্ছা আমি ওনাকে গিয়ে সব বলবো তবে তোকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে ৷

হঠাৎ বাইরে থেকে আরিশ এসে বলল : হ্যাঁ তোর সঙ্গে যাবে তবে তার আগে আমার বউটাকে তুই আমার সঙ্গে যেতে দে ৷

সানা আরুকে হালকা করে ওর কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরে:উফফফ ভালোবাসা ৷

আরু সানার দিকে অবাক চোখে তাকালো ,তাকিয়ে বলল : সানাহহহ এসব কি কথা!

আরিস: আরূপাখি তাড়াতাড়ি এসো ৷

সানা : না ও যাবে না , আমি এখন ওর সঙ্গে একটা ইমপরটেন্ট কথা বলছি ,আমার কথা শেষ হলে তারপর যাবে ৷

আরিশ: আরূপাখি আসবে কি আসবে না?

আরু আরিশের দিকে কাচুমুচু মুখ করে রইল,,,,,

সানা : ভাইয়া ও একটু পরে যাচ্ছে, তুই এখন যা তো৷

আরিশ এবার আরুর কাছে গিয়ে আরুকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরু শক্ত করে আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরেছে ওর হাত দুটো দিয়ে ৷ অনেক ভরসা করে মানুষটাকে , জানে যে কখনও তাকে ছেড়ে যাবে না ৷ মাঝে মাঝে ওর খুব ইচ্ছা হয় আরিশকে ভালবাসতে তবে কোথাও যেন একটা দ্বিধা বোধ কাজ করে তাই জন্যই হয়তো এখনো ভালোবাসি কথাটা বলে উঠতে পারেনি ৷ ভালোবাসা শব্দটা নিয়ে ওর মনে কিঞ্চিৎ একটু সন্দেহ আছে কারণ সত্যিই কি এইকদিন এ একটা মানুষের প্রতি ভালোবাসা সম্ভব ? ভালোবাসার কোন সময় লাগে না সেটা মন মানলেও মস্তিষ্কটা কিছুতেই যেন মানতে চায় না , বারবার বিরোধিতা করে মনটার৷ ভালোবাসি শব্দটা বলার সুযোগ টা কি ও পাবে?

আরিশ ওকে কোলে করে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল ৷ ওয়াশ রুমে ঢুকতে দেখে আরূ আরিশকে বলল,,,,,

আরুশি: একি আপনি ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

আরিস আরুশিকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে নিজেও দাঁড়ালো তারপর শাওয়ারটা ছেড়ে দিতেই জল গুলো পড়ে দুজনের শরীরকে ভিজিয়ে দিল…..

আরিশ :তোমার যে মাথা ব্যাথা করছিল তাও তুমি ওখানে বসে ছিলে কেন ?সানাকে তো বলতে পারতে, বলে কি চলে আসা যেত না!

আরু অবাক চোখে আরিশের দিকে তাকালো ৷ মাথা থেকে টপটপ করে জলের ফোঁটা গুলো চোখে মুখে আছড়ে পড়ায় ঠিক করে তাকাতেও পারছে না তাই কোনোরকমে পিটপিট করে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল : আপনি কি করে জানলেন যে আমার মাথা ব্যাথা করছিল?
আরিশ আরুর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল : ভালোবাসা আরুপাখি ,সবই ভালোবাসা ৷ যেদিন তুমিও আমাকে আমার মত করেই ভালোবাসবে সেদিন তুমিও বুঝবে আমার প্রতিটা হৃদয়ের স্পন্দন, তোমার অনুভবে শুধু আমিই থাকবো, তোমার আসক্তিতে পরিণত হব আমি , তখন আমি বিহীন তুমি কিছুই নয় , প্রতিটা মুহূর্তে তুমি আমাকেই পেতে চাইবে ,এমনই এক ভালোবাসা বাসতে হবে তোমাকে যেমনটা আমি তোমাকে বাসি আরুপাখি , তাই বুঝতে পারি তোমার না বলা সত্ত্বেও তোমার এই অজানা অনুভূতিগুলো ৷ তুমিও এক এমন এক অনুভূতিতে একদিন জর্জরিত হবে তবে সেদিন হয়তো আর সুযোগ থাকবে না যদি কোন ভুল করো ৷

“সুযোগ থাকবে না “কথাটা শুনেই আরুর সমস্ত শরীরটা যেন কেঁপে উঠলো ৷ আরিশের কথার মধ্যে যে কোথাও একটা গভীর ইঙ্গিত রয়েছে সেটা আরূ বুঝতে পারল৷ তবে সত্যিই কি ভুল করছে ও আরিশকে এভাবে ঠকিয়ে , যেখানে ওর আরিশকে সমুদ্র সমান ভালোবাসার কথা ৷
আরিশ আরুশিকে ঝাকিয়ে: কি হলো আরুপাখি?কী ভাবছো এত?

আরুশি চমকে গিয়ে বলল : কই কিছু নাতো…

আরিশ আরুশিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো :সারা জীবন এভাবেই ভালোবাসবো তোমাকে সেদিন হয়তো তুমিও আমার অনুভূতি গুলো বুঝতে পারবে৷

আরুশি আরিসের বুকে মাথা রেখে মনে মনে বলতে লাগল : সত্যিই কি সেই দিন আসবে নাকি সবকিছু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে?

ওরা রেডী হয়ে আরাভদের বাসায় চলে গেছে ৷ সানা একটা লাল রংয়ের থ্রি পিস পরেছে আর আরু একটা সবুজ রঙয়ের শাড়ি পড়েছে সঙ্গে আরিশের পছন্দ করে দেওয়া ম্যাচিং করা জুয়েলারি আর লিপস্টিক পরেছে , সব মিলিয়ে অপ্সরীর থেকে কম লাগছে না ওকে ৷ আরিশ ও আরূর সঙ্গে ম্যাচিং করে একটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি, হাতে কালো ব্র্যান্ডের ঘড়ি আর চুলগুলোতে সামান্য জেল দিয়েছে ৷ আরূ তো আরিশকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছে ৷

ড্রয়িং রুমে সকলে বসে আছে আর সকলের নজর এখন সানার দিকে ৷ ভয়ে বেচারি গুটিসুটি হয়ে গেছে৷ আরূ ও বেশ নার্ভাস ফিল করছে সানাকে দেখে ৷ সারা রাস্তা সানাকে সাহস দিতে দিতে এসেছিল আরূ তবু এখানে এসে ভয়ে কেমন গুটিসুটি হয়ে গেছে মেয়েটা ….

আরাভের মা :আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল আমি সানাকে আমার বাড়ির বউ করে আনব৷ তবে ওকে আমার বউ নয় আমার মেয়ের মত করেই রাখবো….

আরিশ : আন্টি আরাভ কিন্তু ওর সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে , আমি ভাবি নি, যে সারাক্ষণ ভিজে বিড়ালের মত হয়ে থাকে সে এভাবে নিজের বিয়ের প্রস্তাবটা নিজেই দেবে ৷ আই এম ইমপ্রেসড ৷

আরাভ: তুই আমার কথা কি বলছিস ?তুই নিজেই তো একটা ভিজে বিড়াল ৷ মনে নেই 6 মাস আগের কথা, যখন ভাবির accident……

আরাভ কিছু বলতে যাবে তার আগে আরিশ ওকে থামিয়ে দিল…..

আরিস : সে তুই যাই বলিস না কেন তোর সাহস আছে ব্রো ৷

আরাভ কিছু বলতে বলতেই আরিশ যে ওকে থামিয়ে দিলে সেটা আরুর চোখে এড়ায়নি ৷

“ভাবির অ্যাক্সিডেন্ট” কথাটা মানে আরুশির অ্যাক্সিডেন্টের কথা ওরা বলছিল ৷আরাভ কথাটার মাধ্যমে যা ইঙ্গিত দিলো তা পুরোটা শুনতে পারল না আরিশের জন্য৷

আরুশির মনে এখন অনেক প্রশ্ন জাগছে ,তাহলে আরিশ কি আরুশিকে অনেক আগে থেকেই জানে? কিন্তু ওদের তো আলাপ সবে তিন মাস মাএ, তাহলে কিভাবে ?

এদিকে সকলের কথা শুনছে সানা আর প্রচন্ড অস্বস্তিতে ভুগছে , প্রচণ্ড বিরক্তি লাগছে ওর , তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারলে বাচে….

সানা আরুকে সামান্য খোঁচা দিয়ে বললো : আরূ আমার একটা ব্যবস্থা কর না , আমি আর কতক্ষণ বসে থাকবো? আর ভাইয়াকে দেখ আমার বিয়ে ভাঙতে এসে আরো উল্টে জোড়া লাগিয়ে দিচ্ছে ,বাড়ি যাই ওকে দেখাচ্ছি মজা ৷

আরূ:আমি ব্যবস্থা করছি তার আগে নিজে একটু নরমাল হ , কেমন আনইজি লাগছে তোকে দেখতে…

সকলের কথার মাঝখানে হঠাৎ আরু বলে উঠলো: আন্টি আমার মনে হয় আরাভ ভাইয়া আর সানার একান্ত কিছু কথা থাকতেও পারে তাই ওদের একটু ফ্রি স্পেস দিলে ভালো হতো….

আরাভের মা : অবশ্যই, তোমরা কথা বল আমি আসছি….

আরাভের মুখে একটা ডেভিল হাসি তা দেখেই সানার গলা শুকিয়ে আসছে, একেই আরাভের বাড়িতে এসেছে তাই আরাভের জোরটাও বেশি তার ওপর আবার দুজন একই সঙ্গে আলাদা কথা বলবে ৷ এতদিন আরাভকে যা যা বলে অপমান করেছে আজকে যদি আরাভ তার প্রতিশোধ নেয়, তখন কি করবে ও ? চেঁচামেচি করে হাঙ্গামা করলেও খারাপ দেখায় , তাই যথেষ্ট স্থির রেখে কাজগুলো করতে হবে ৷ আসার আগে আরূ ওকে যা যা শিখিয়ে দিয়েছিল সমস্ত লাইনগুলো একবার মনে করে নিচ্ছিল সানা , কোন একটা লাইন ভুল হলেই মুশকিল ৷ মনে মনে আরুকে হাজারটা থ্যাংকস জানাচ্ছে সানা কারণ আরু যে স্ক্রিপ্টটা ওকে বলতে বলেছে তা যদি যে কাউকে শোনানো হয় তাহলে সে বিয়ে ভেঙে দিতে অবশ্যম্ভাবী৷

আরাভের সাথে পা টিপে টিপে সানাও আরাভের ঘরে গেল,,,,

আরাভ:হ্যাঁ শুনলাম তোমার নাকি আমাদের বিয়েটা নিয়ে কোন কথা আছে তা বল ৷ আরাম করে সোফাতে বসে বলতে লাগলো আরাভ ৷
সানা দাঁড়িয়ে আছে আরাভের পাশে বসার সাহস টুকুও পাচ্ছে না ৷

আরাভ: দাঁড়িয়ে আছো কেন ? বস নাকি আমার পাশে বসতে ভয় পাচ্ছো ?

সানা: না না ভয় পাবো কেন ! আমার ভাল লাগছে তাই আমি দাঁড়িয়ে আছি আপনার কোন সমস্যা?

আরাভ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে: না সমস্যা নেই, তবে চোখের সামনে একটা অভাগী নারী দাড়িয়ে থাকবে সেটা আমার সহ্য হয় বল ! বলে মুখ টিপে হাসতে লাগলো ৷

সানার এই মুহূর্তে আরাভের প্রতি প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তবুও নিজেকে সংযত করে নিচ্ছে না হলে যে আরুর বলা স্ক্রিপ্টগুলো ভুলে যাবে….

আরাভ: আচ্ছা সে যাই হোক তুমি কিছু বলবে বলছিলে৷

সানা একটু গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল: বলছিলাম যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা তার কারণ ,,,,এটুকু বলে সানা পরের লাইনটা কি আছে ভুলে গেছে তাই থেমে গেলে মাঝপথে ৷

আরাভ: হ্যাঁ কি বল!

সানা মনে মনে : দূর লাইনটা যে এখন আর মনে পড়ছে না ৷

আরাভ :কি হল বল৷

সানা কাচুমুচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে পরের লাইনটা কোনভাবেই মনে করতে পারছে না , কিন্তু কিছু একটা তো বলতেই হবে….

আরাভ একটু জোরেই বলল: কি হলো বলছো না কেন? চুপ করে আছো কেন?

সানার এবার স্ক্রিপ্টটা মনে পড়ে গেল তাই আনন্দে জোরে চেঁচিয়ে বলল : হ্যাঁ মনে পড়েছে আমি নন-ভার্জিন’ ৷

সানার কথা শুনে আরাভ সামান্য ভ্রু কুঁচকে তাকাল,,,,,

আসলে ভার্জিন শব্দ টার অর্থ সানা জানে তবে গভীরভাবে ব্যাপারটা নিয়ে কখনও ভেবে দেখেনি বলে এ সম্বন্ধে বেশকিছু আইডিয়া ওর নেই তাই আরু যা শিখিয়েছে তাড়াহুড়োতে সেটুকুই বলেছে….

আরাভ এবার উঠে দাঁড়িয়ে সামান্য বাকা চোখে তাকালো,,,,

আরাভ: Do you have any idea what are u saying ? উত্তেজিত হয়ে ৷

সানার মনে মনে লাড্ডু ফুটছে ও ভাবছে আরাভ হয়ত ওর কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে কিন্তু যতক্ষণ ও ভাব ছিল ততক্ষণে আরাভ সানাকে কাছে টেনে নিয়ে সানার ঠোঁট দুটো দখল করে নিয়েছে, আর সানা আরাভের থেকে কোন ভাবেই নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা ৷

কিছুক্ষণ পর আর আরাভ নিজে থেকেই সোনা কে ছেড়ে দিল ৷

একহাতে পাঞ্জাবির হাতা টা দিয়ে ঠোঁট টা মুছে নিয়ে আরাভ বলল : নাও এবার তুমি non-virgin ৷

সানা চোখ বড় বড় করে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে , ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না আরাভের কথা ৷ তাহলে কি আরাভ যা বলছে তা কি সত্যি?

সানা : আপনি এসব কি ভুলভাল বলছেন!

আরাভ:আমি যা বলছি ঠিকই বলছি , তুমি জাননা যে কিস করলে সব মেয়েরাই নন-ভার্জিন’ হয়ে যায় ৷ আরে ওই নিব্বা নিব্বির ভিডিওগুলো তে দেখনি? কি করলে আর তুমি সারা জীবনে !

সানা আরাভের কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে৷ কি বলবে এখন কোন ভাষায় পাচ্ছে না , নিজে আরাভ কে ফাসাতে এসে নিজেই ফেঁসে গেল ৷

আরাভ: এখন যদি অন্য কোন ছেলে জানে যে তুমি নন ভার্জিন তাহলে কিন্তু কেউ তোমাকে বিয়ে করবে না আমি ছাড়া , এবার দেখো তুমি কি করবে ৷
সানা: না আপনি মিথ্যা বলছেন, এসব হতে পারে না৷

আরাভ : বিশ্বাস না হলে তোমার ভাবি কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো ৷ চোখ মেরে চলে গেল…..
সানা আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ হিতে বিপরীত হয়ে গেল, এবার কি হবে?

ছাদে দাঁড়িয়ে সমস্ত পায়রাগুলো কে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে আরূ সবগুলো সাদা রঙের পায়রা এক অপূর্ব সুন্দর একটা দৃশ্য…

আরিশ পিছন থেকে এসে আরুকে জড়িয়ে ধরল তারপর বলল:সামনে কেন এগিয়ে যাচ্ছো না আরুপাখি?

আরুশি:সৌন্দর্যকে সবসময় দূর থেকে উপভোগ করাই ভালো , কাছে গেলে সে সৌন্দর্য ফুরিয়ে যায়৷

আরিশ আরুকে নিজের দিকে ফেরালো তারপর আরুশির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে বলতে লাগলো:কিন্তু তোমার সৌন্দর্য কখন আমার কাছে ফিকে হয়ে যাবে না,তুমি যেমন আমার কাছে সারাজীবন তেমনটাই থাকবে….

আরুশি: বড্ড ভয় লাগে সমস্ত দূরত্বটা কে সরিয়ে দিয়ে একান্তে কাছেপেয়ে ভালোবাসতে , যদি ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় !

আরিশ আরূশির কথা শুনে হেসে আরুশির হাতটা ধরে সামনে এগিয়ে গেল , এগিয়ে যেতেই সমস্ত পায়রা গুলো ঝাক ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে গেল…..

আরিস : সমস্ত কিছু যদি তুমি প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করা তাহলে সেটা সব সময় যে বাস্তব জীবনে সত্য হবে সেটা কোন কথা নয় , আবার তা যে মিথ্যা হবে তাও নয় ৷ জীবনটাকে নিজের মত করে উপভোগ করতে হয় আরুপাখি ৷ যদি তোমার মনে হবে যে তোমার আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা উচিত তো তুমি সেটাই করবে ৷ ভালোবাসা দেখানোর জন্য বাহ্যিক কোন কারণের প্রয়োজন হয় না ৷ যে সমস্ত ভালোবাসায় কিন্তু নামক বস্তু থাকে তা কোনো ভালোবাসাই নই, নিছকই আবেগ যা একটা প্রকৃত ভালোবাসার সামনে তুচ্ছ প্রায়ই….. প্রকৃতিকে তুমি যতটা দেবে প্রকৃতিও তোমাকে তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে ঠিক তেমনি তুমি আমাকে যতটা ভালোবাসবে তার হাজার গুণ আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেবো তা তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও ৷ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার পরিবর্তন হবে না কখনোই….

আপনাআপনিই আরুশি নিজের মাথাটা আরিশের বুকে ঠেকালো ৷ আরিসের বুকে আরু মাথাটা রাখতেই অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করল আরূ , এটা যেন নিরাপদ আশ্রয় যেখান থেকে ও কখনো বঞ্চিত হবে না ৷ ভালোবাসার সংজ্ঞাটা যেন আরিশ নিজের ভালোবাসা দিয়ে আরূকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তাই হয়তো সবকিছু এত সহজ লাগছে….

আরিস ও পরম যত্নে আরুশিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল….

আরাভদের বাড়ি থেকে ওরা চলে এসেছে অনেকক্ষণ৷ সানা এখনও রুম থেকে বের হইনি , এদিকে বাড়ির সকলেই খুব চিন্তা করছে ৷ হঠাৎ কি হলো যে ওখান থেকে আসার পর সানা বাইরে আসছে না ৷

আরিশের মা : আরূ মামনি তুই একটু গিয়ে দেখ না সানা কি করছে, মেয়েটা সেই কখন ঘরে ঢুকেছে তারপরে তো আর কিছুই বলছে না যহযে আরাভ কে পছন্দ কি না !

আরূ: আচ্ছা মামনি তুমি টেনশন করো না আমি যাচ্ছি ৷

সানা দরজা দিয়ে বসে আছে আর আরাভের বলা কথাগুলো ভাবছে…..

দরজায় টোকা পড়তে বাস্তব জগতে ফিরে এলো সানা৷

সানা :কে?

আরুশি: আমি আরাভ ৷

আরুশির গলা শুনে সানা দরজা খুলে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে আরূশির হাত ধরে ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল,,,,,

আরোশী : কি রে দরজা খুলছিস না কেন? সবাই চিন্তা করছে তো!

সানা : আরে ওনাকে ফাঁসাতে গিয়ে তো আমি নিজেই ফেঁসে গেলাম ৷

আরূ: কেন কি হয়েছে?

সানা এরপর যা যা হয়েছে সবকিছু আরুকে বলে দিল, সানার কথা শুনে ওর হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে এরকম অবস্থা ৷সানার কথা শুনে যা বুঝেছে যে সত্যি ও আরাভ ভাইয়ার কথা বিশ্বাস করেছে ৷

সানা : কিরে তুই হাসছিস কেন বল , উনি সত্যি বলেছেন নাকি মিথ্যে?

আরোশী: যা বলেছেন একদম সত্যি বলেছেন একটু সিরিয়াস হয়ে কারণ এটাই একমাত্র পথ সানাকে মানানোর ৷ আরাভ যথেষ্ট ভাল একটা ছেলে তা সকলেই জানেন , তাই আরাভ সানার কখনো অযত্ন করবে না ৷ আর বিয়েটা হল সানা খুশি থকবে তা এখন না বুঝলেও পরে ও ঠিকই বুঝতে পারবে ৷

সানা ন্যাকা কান্না করে : আমার ওনাকে বিয়ে করা ছাড়া আর কোন গতি নেই ৷ তাহলে আমার ক্রাশের কি হবে এখন!

আরু চোখ বড় বড় করে বলল:তোর আবার ক্রাশ কে?

সানা : কলেজের তুরান sir .

আরুশি কতবার বলবো তোকে যে স্যার বিবাহিত৷

সানা:😏😒 ৷

চলবে,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:19
#Suraiya_Aayat

নিচে সবাই আনন্দে ব্যস্ত কারণ সানা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে , এখন সব কথা হওয়া বাকি ৷ সেই নিয়ে সবকিছু আলোচনা করছে সবাই , আরূও সেখানে বসেছিল সকলের মাঝে কিন্তু কোন একটা দরকারে রুমে আসতেই দেখল ফোনটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে,,,,,

আরূ ফোনটা হাতে নিতেই দেখল স্ক্রিনে বাপি শব্দ টা ভেসে উঠেছে ৷ শব্দ টা দেখতেই বুকের মধ্যে কেমন একটা করে উঠলো, তার বাবার কথা মনে পড়লেই খালি মাথায় আসে আরিশ এর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যথা ৷ ও এত সবকিছু সইবে কি করে!

আর বেশি কিছু না ভেবে আরূ ফোনটা তুললো৷

আরমান সাহেব : আরূ মা কাজ কতদূর?

আরুশি একটা দীর্ঘশ্বাস নিল নিয়ে বলতে লাগলো: আমি করছি, তুমি চিন্তা করো না , তুমি জেলে না গেলেইতো হল !

কথাটা খানিকটা অভিমান করেই বললো আরু কিন্তু সে অভিমান আরমান সাহেব যে কখনোই বুঝবেন না সেটা আরুর কাছে অজানা ৷

আরমান সাহেব ::কথাটা জানতেই কি পরিমান যে খুশি হয়েছে ছেলেটা তা কি করে তোকে বলি রে , খুবই খুশি হয়েছে আর তার সঙ্গে ওর বাড়ির সকলেই ৷ তবে এবার আর কোন ভুল ত্রুটি চায় না আমি , অভ্র নিজেও চায়না আর কোন সমস্যা হোক তাই আমি ঠিক করেছি আরিশ তোকে ফিরিয়ে দিলেই অভ্র আর তোকে ইজিপ্টে পাঠিয়ে দেব ৷আর অভ্র ও তাই চাই৷ নিজের সঙ্গে তোকে নিয়ে চলে যাবে তারপর নাহয় তোরা ওখানে গিয়ে বিয়ে করিস, আমি এখানে অন্তত আর কোন ঝামেলা চাই না , এখানে থাকলে বলা যায় না ওই ছেলে আবার কখন কি করে বসে ৷

আরূর চোখের কোনে জল জমে এসেছে ৷ কোন বাবা নিজের কথা ভেবে নিজের মেয়ের সম্পর্কের বলিদান দেওয়ার জন্য এতটা উঠেপড়ে লাগবে সেটা ও এই প্রথম দেখলো ৷
এতদিন জানতো যে বাবারা সন্তানের জন্য বলে আত্মবলিদান দেন কিন্তু আরমান সাহেব এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বিপরীত , পৃথিবীতে কত প্রকারের মানুষ হয় সেটাই এখন বোঝার চেষ্টা করছে আরু ৷

আরূ:তুমি চিন্তা করো না বাপি , আমি থাকতে তোমার কখনো কোনো ক্ষতি হতে দেব না এটুকু জেনে রেখো৷ (মনে মনে) তুমি আমাকে ভাল না বাসলেও আমি যে তোমাকে ভালোবাসি তাই জন্যই তো নিজের প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনেও একবারও পিছু ফিরে তাকাই নি ,শুধু তোমার কথা ভেবে ৷

আরমান সাহেব : আচ্ছা এখন আমি রাখছি শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছে না, বলে উনি ফোনটা রেখে দিলেন ৷

মনে আজ কষ্টের দীর্ঘ মেঘ জমে আছে ৷অভিমান হলেও নিজের মনটাকে কোনক্রমে সান্তনা দেওয়া যায় কিন্তু কষ্ট নির্মূল করা ততটাও সোজা নয় যতটা কষ্ট পেয়ে তার সাথে চলা ৷ কষ্ট দেওয়ার অধিকারটা সকলেরই নিয়ে রাখে কিন্তু তা নির্মূল করার দায়িত্বটা কেউ গ্রহণ করে না….

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরূ, চাঁদটাও মেঘে ঢেকে গেছে, চারিদিকে ঘন অন্ধকার ৷ সুইমিং পুলের ধারে লাইটা যেন সারা বাড়িটাকে আলোকিত করার চেষ্টা করছে কিন্তু চাঁদের আলো দ্বারা যতটা আলোকিত করা সম্ভব তা কি একটা সোডিয়ামের বাতি দ্বারা সম্ভব ? হয়তোবা নয় !

মেঘের গুরুগুরু শব্দ শোনা যাচ্ছে ,হয়তো ঝমঝমিয়েই বৃষ্টি নামবে ৷ আজ কাল বৃষ্টিটাও বড়ো অনিশ্চিত ,সবসময় নিজের ভাবনায় চলে তাই হয়তো হঠাৎ বর্ষণেই সমস্ত কিছুকে ভিজিয়ে দিয়েছে যায় ৷

হঠাৎ কাঁধে গরম নিশ্বাস পড়তেই আরুর মনে কষ্টটা আরো যেন দ্বিগুন হয়ে উঠল কারন এই মানুষটাকে ঘিরেই তো সব ,মানুষটার সঙ্গেই যদি আর না থাকতে পারে তাহলে সব অনুভূতিই মূল্যহীন ৷

আরিশ ::কি করছো এখানে আরূপাখি?

আরোশী:

আরিশ আরুর কাঁধে একটা গভীর ভাবে কিস করে ঠোঁট বুলাতে লাগল ৷

আরিশ : এখনই বৃষ্টি নামবে আরুপাখি ঘরে চলো৷

আরুশি আগের মতই স্হির শুধু চলমান তার চোখের নোনা জলগুলি যা ক্রমাগত চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে….

আরিশ :আরুপাখি ৷

আরুশি আবার আগের মতোই স্থির কোন কথা ওর কানে যাচ্ছেনা ,ও এখন আপন খেয়ালেই ব্যস্ত , আর ভাবনার মানুষটি হলো আরিশ ৷

আরুশি কোন রেসপন্স করছে না দেখে আরিস এবার আরুশি গলায় জোরে কামড়ে দিল ৷

আরু মুখে আওয়াজ না করলেও গোটা শরীরটা কেপে উঠলো যেন ৷ আজ নিজের আবেগ প্রকাশে ও যেন ব্যর্থ বলে ওর মনে হচ্ছে নিজেকে ৷

আরিস এবার আরুশিকে কোলে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো৷

(বাকিটা বুঝে নিন আপনাদের নিজেদের দায়িত্বে 😶৷)

আজকে ওরা কলেজে এসেছে তিনজনেই….

সানা :ভাইয়া হানিমুন তো করে এলি তা আজকে যে এক্সামের রুটিনটা দেবে তা সব ঠিকঠাক হবে তো?

আরিশ কিছু বলল না পরিবর্তে মুচকি একটা হাসি দিল ৷
আরিশ এর এই হাসি বোঝার ক্ষমতা এখনো কারোরই হয়ে ওঠেনি ৷ওর করা প্রতিটা জিনিসের একটা গভীর অর্থ আছে….

কালকে আরিশের ভালোবাসা পাওয়ার পর আর ততটাও মন খারাপ নেই আরুর ৷ এখন বেশ ভালই লাগছে….

আরো কিছু গল্প করতে করতে ওরা ভার্সিটিতে পৌছে গেল….

আরুশি আর সানা দাঁড়িয়ে আছে ততক্ষণ আরিশ গাড়ি পার্ক করতে গেছে…..

সানা আর আরু দুজনেই দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ দূরে অভ্রকে দেখে আরুর ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু করল কারণ এই মুহূর্তে আরিশ যদি ওকে দেখে তাহলে আরিশ আরুকে ভুল বুঝবে , আর তার থেকে বড় কথা হলো একটা বড়সড় সিনক্রিয়েট হবে কলেজের মাঝখানে, আর অবশেষে মার খেয়ে বাড়ি ফিরতে হবে অভ্রকে, আর এসবের কোনটাই আরু চায়না….

কিন্তু ভাগ্যক্রমে আরিশ আসার আগেই অভ্র সেখান থেকে চলে গেছে তা দেখে আরু অনেক স্বস্তি পেল৷ আর অভ্র ও আরিশের হাতে দ্বিতীয়বার মার খেতে চাইনা কারণ ও জানে যে আরু কাজটা সামলাতে পারবে তাই এত বড় রিস্ক নেওয়ার কোন দরকার নেই….

পরের সপ্তাহ থেকে এক্সাম হওয়ার জন্য ভার্সিটিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে যে আজ class হওয়ার পর যত দিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ততদিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে , আরু আর সানা তো খুশিতে লাফালাফি শুরূ করে দিয়েছে ৷

পড়াশোনাতে দুজনেই ফাঁকিবাজ, আরূ একটু আধটু ফাঁকিবাজি করলেও সানা ফাঁকিবাজিতে টপার ৷

আরিশ আর সানা দুই ভাইবোন তবে দুজনে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের ৷ এদিকে আরিশ ইউনিভার্সিটির টপার আর সেখানে সানা একটু ভালো নাম্বার পেলেই খুশি….

কলেজের sir রাও মাঝে মাঝে বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না যে আরিশ আর সানা দুই ভাই বোন….

আরিশের উপর অনেক প্রেসার ভার্সিটি থেকে তাই এই 1 সপ্তাহ টানা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে ওকে৷

লাঞ্চ টাইমে একটু সময় বার করে আরিশ, সানা আর আরু এক সঙ্গে ক্যান্টিনে গেল , সব নোটস কালেক্ট করতে গিয়েও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে আরিশ ৷ একসপ্তাহের জমে থাকা নোটস ওকে কাভার করতে হবে….

ক্যান্টিনে খেতে এসেছে ওরা আর এদিকে একতাড়া নোটস নিয়ে বসে আছে আরিশ আর তা দেখে সানা আর আরু দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করছে, ব্যাপারটা যেন একটু অবিশ্বাস্য৷ কই ওরা তো কখনো এরকম করে না🙄 ৷

আরোশী মনে-মনে : বাবা এত পড়ুকে ছেলে আমার জামাই! আগে কখনো দেখিনি কাউকে এমন পড়তে , ভাইয়াকে দেখেছি তবে এতো নয় ৷ এখন যা দেখছি মনে তো হচ্ছে আমাকে আর মনেই নেই ওনার😒৷

শর্ট টাইম ,অল্প কিছুই খেয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাবে তাই নিজের জন্য এক প্লেট ফ্রাইড রাইস আর আর চিলি চিকেন অর্ডার করেছে আরিশ , আর আরু ও সানা নিজেদের জন্য অল্প কিছু অর্ডার করেছে….

সানা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে তবে আরূ এখনো খাওয়া শুরু করতে পারছে না কারণ আরিশ সেই থেকে নোটস এর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে সামনে যে খাবারটা রয়েছে তার দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি , না পেরে আরূ বলে উঠলো ,,,,,,,

আরু: আপনার খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন ৷

আরিশ: তুমি খাওয়া শুরু করো আরূপাখি আমি একটু পরেই খাচ্ছি…

আরু বুঝতে পারল যে এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আজকে আর আরিশ এর খাওয়া হবে না তাই না পেরে একলোকমা ভাত আরিশের মুখের সামনে ধরল ৷

আরিশ মুচকি হেসে খেয়ে নিল….

এতক্ষণ এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো আরিশ, যে কখন আরুশি ওকে খাইয়ে দেবে ৷

আরিশ খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে মাঝে মাঝে আরূর হাতে কামড়েও নিচ্ছে কিন্তু আরূ কিছু বলতেও পারছেনা….

আরিশ এর সঙ্গে সঙ্গে আরু নিজেও খাচ্ছে কারণ এরপর ওর নিজের ক্লাস আছে আর লেট হয়ে গেলেই সমস্যা ৷

ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসার পর আরিশ সেই যে পড়তে বসেছে তারপর এখনও রুম থেকে বের হয়নি, আরূ রুমে ছিলো তবে আরিশকে একভাবে একই জায়গায় বসে থাকতে দেখে ওর নিজেরই বিরক্তি লাগছে তাই নিঃশব্দে সেখান থেকে উঠে আসলো আর সানার রুমে গেল….

সানা রুমে ঢুকতেই সামান্য একটু চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনেই ব্যাপারটা কি তা দেখার জন্য রুমে যেতে দেখল সানা ফোনে কথা বলছে মাঝে মাঝে ঝগড়া করছে কখনো কখনো আবার হেসেও ফেলছে, বুঝতে বাকি রইলো না যে আরাভের সাথেই কথা বলছে….

আরুশি যেতেই সানা ফোনটা কেটে দিলো৷

আরূ:ওহহহহো আমার ননদিনিও তাহলে লজ্জা পায়৷ তা সব ঠিক হয়ে গেছে তো?

সানা : আরে বলিস না আর ,ওনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল আমার , আর কি সমস্ত উল্টো-পাল্টা বলেছে তার জন্যই তো!(লজ্জা পেয়ে)

আরু সানাকে জড়িয়ে ধরে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিল ,,,,,,,, একটা শান্তির নিশ্বাস , প্রিয় মানুষদের খুশি থাকতে দেখে ভালোলাগার অনুভূতি ৷
অবশেষে সানাও সুখী হবে এটা ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছে আর ওর…..

আরু মনে করলো সানা আর আরাভকে একান্তে কিছু সময় দেওয়া উচিত তাই ও আরো কিছু কথা বলা সানার রূম থেকে বেরিয়ে গেল , গিয়ে ছাদে চলে গেল৷

ছাদে গিয়ে মনে পড়ল আরাভদের বাড়ির ছাদে সেই সুন্দর দৃশ্য যেখানে আরিস এর বুকে প্রশান্তির একটা জায়গা পেয়েছিল আরূ ৷ এক ঝাঁক পায়রা গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে গিয়েছিল আর চারিদিকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটা মুহূর্ত ছিল…..

সমস্ত কিছু ভাবছে আরূ হঠাৎ ওর ফোনে ফোন এল, তাকিয়ে দেখতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল,,,,, আহান ফোন করেছে…..

বহুদিন আহানের সঙ্গে যোগাযোগ নেই আরুর ৷ ভয়ে ফোন দিয়ে উঠতে পারিনি যদি ওর ভাইয়া কষ্ট পায় সেই কারণে…..

ফোনটা ধরতে ডুকরে কেঁদে উঠল আরু,,,,

বোনের কান্নার আওয়াজ শুনে কেদে ফেলল আহান৷ উভয় দিক থেকে দুই ভাই-বোনের কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর চলছে চরম নীরবতা ৷

আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল :কেমন আছিস ভাইয়া?

আহান নিজেকে সামলে নিয়ে : তোকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বল !

কথাটা শুনতেই আরুর কান্নার বেগ যেন আরো বেড়ে গেল….

আহান: আমি এসব কি শুনছি আরূ? তুই নাকি আবার অভ্রকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস !

আরুশি কাঁদতে কাঁদতে : আমি ওনাকে খুব ভালোবাসি ভাইয়া আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না ৷

আহান :কাকে ?অভ্র কে?

আরোশী : না ভাইয়া আরিশ কে ছাড়া ৷

আহান : তাহলে তুই এরকম করছিস কেন?

আরোশী : বাপির কথা ভেবে ভাইয়া , ওরা নাকি বাপের বিরুদ্ধে স্টেপ নেবে আর তোর বিরূদ্ধেও ৷

আহান: তাই বলে তুই নিজের ঘর সংসার ছেড়ে এত বড় আত্মবলিদান দিবি?

আরুশি: ভালোবেসে বিয়ে টা না করলেও এখন আমি ওনাকে ভালবাসতে শুরু করেছি কিন্তু আমি যে আর পিছিয়ে আসতে পারবো না , বাপির দেওয়া কথা যে আমাকে রাখতেই হবে….

আরুর কথা শোনার পর আহান ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু আহানের কোন কথাই যেন আরুর কানে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে না ৷

অবশেষে বিরক্তি হয়ে আহান ফোনটা কেটে দিল ৷

আরু ওখানে বসেই চোখের জল ফেলেছে নিঃশব্দে , যেন কেউ ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে না পাই ৷

এগুলোই একটা মেয়ের জীবন, শত কষ্ট হলেও পরিবারের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়তে পিছপা হয় না , আর সেখানেই তাদেরকে শুনতে হয় “বেইমান” নামক শব্দটি ৷

চলবে,,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:19
#Suraiya_Aayat

নিচে সবাই আনন্দে ব্যস্ত কারণ সানা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে , এখন সব কথা হওয়া বাকি ৷ সেই নিয়ে সবকিছু আলোচনা করছে সবাই , আরূও সেখানে বসেছিল সকলের মাঝে কিন্তু কোন একটা দরকারে রুমে আসতেই দেখল ফোনটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে,,,,,

আরূ ফোনটা হাতে নিতেই দেখল স্ক্রিনে বাপি শব্দ টা ভেসে উঠেছে ৷ শব্দ টা দেখতেই বুকের মধ্যে কেমন একটা করে উঠলো, তার বাবার কথা মনে পড়লেই খালি মাথায় আসে আরিশ এর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যথা ৷ ও এত সবকিছু সইবে কি করে!

আর বেশি কিছু না ভেবে আরূ ফোনটা তুললো৷

আরমান সাহেব : আরূ মা কাজ কতদূর?

আরুশি একটা দীর্ঘশ্বাস নিল নিয়ে বলতে লাগলো: আমি করছি, তুমি চিন্তা করো না , তুমি জেলে না গেলেইতো হল !

কথাটা খানিকটা অভিমান করেই বললো আরু কিন্তু সে অভিমান আরমান সাহেব যে কখনোই বুঝবেন না সেটা আরুর কাছে অজানা ৷

আরমান সাহেব ::কথাটা জানতেই কি পরিমান যে খুশি হয়েছে ছেলেটা তা কি করে তোকে বলি রে , খুবই খুশি হয়েছে আর তার সঙ্গে ওর বাড়ির সকলেই ৷ তবে এবার আর কোন ভুল ত্রুটি চায় না আমি , অভ্র নিজেও চায়না আর কোন সমস্যা হোক তাই আমি ঠিক করেছি আরিশ তোকে ফিরিয়ে দিলেই অভ্র আর তোকে ইজিপ্টে পাঠিয়ে দেব ৷আর অভ্র ও তাই চাই৷ নিজের সঙ্গে তোকে নিয়ে চলে যাবে তারপর নাহয় তোরা ওখানে গিয়ে বিয়ে করিস, আমি এখানে অন্তত আর কোন ঝামেলা চাই না , এখানে থাকলে বলা যায় না ওই ছেলে আবার কখন কি করে বসে ৷

আরূর চোখের কোনে জল জমে এসেছে ৷ কোন বাবা নিজের কথা ভেবে নিজের মেয়ের সম্পর্কের বলিদান দেওয়ার জন্য এতটা উঠেপড়ে লাগবে সেটা ও এই প্রথম দেখলো ৷
এতদিন জানতো যে বাবারা সন্তানের জন্য বলে আত্মবলিদান দেন কিন্তু আরমান সাহেব এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বিপরীত , পৃথিবীতে কত প্রকারের মানুষ হয় সেটাই এখন বোঝার চেষ্টা করছে আরু ৷

আরূ:তুমি চিন্তা করো না বাপি , আমি থাকতে তোমার কখনো কোনো ক্ষতি হতে দেব না এটুকু জেনে রেখো৷ (মনে মনে) তুমি আমাকে ভাল না বাসলেও আমি যে তোমাকে ভালোবাসি তাই জন্যই তো নিজের প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনেও একবারও পিছু ফিরে তাকাই নি ,শুধু তোমার কথা ভেবে ৷

আরমান সাহেব : আচ্ছা এখন আমি রাখছি শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছে না, বলে উনি ফোনটা রেখে দিলেন ৷

মনে আজ কষ্টের দীর্ঘ মেঘ জমে আছে ৷অভিমান হলেও নিজের মনটাকে কোনক্রমে সান্তনা দেওয়া যায় কিন্তু কষ্ট নির্মূল করা ততটাও সোজা নয় যতটা কষ্ট পেয়ে তার সাথে চলা ৷ কষ্ট দেওয়ার অধিকারটা সকলেরই নিয়ে রাখে কিন্তু তা নির্মূল করার দায়িত্বটা কেউ গ্রহণ করে না….

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরূ, চাঁদটাও মেঘে ঢেকে গেছে, চারিদিকে ঘন অন্ধকার ৷ সুইমিং পুলের ধারে লাইটা যেন সারা বাড়িটাকে আলোকিত করার চেষ্টা করছে কিন্তু চাঁদের আলো দ্বারা যতটা আলোকিত করা সম্ভব তা কি একটা সোডিয়ামের বাতি দ্বারা সম্ভব ? হয়তোবা নয় !

মেঘের গুরুগুরু শব্দ শোনা যাচ্ছে ,হয়তো ঝমঝমিয়েই বৃষ্টি নামবে ৷ আজ কাল বৃষ্টিটাও বড়ো অনিশ্চিত ,সবসময় নিজের ভাবনায় চলে তাই হয়তো হঠাৎ বর্ষণেই সমস্ত কিছুকে ভিজিয়ে দিয়েছে যায় ৷

হঠাৎ কাঁধে গরম নিশ্বাস পড়তেই আরুর মনে কষ্টটা আরো যেন দ্বিগুন হয়ে উঠল কারন এই মানুষটাকে ঘিরেই তো সব ,মানুষটার সঙ্গেই যদি আর না থাকতে পারে তাহলে সব অনুভূতিই মূল্যহীন ৷

আরিশ ::কি করছো এখানে আরূপাখি?

আরোশী:

আরিশ আরুর কাঁধে একটা গভীর ভাবে কিস করে ঠোঁট বুলাতে লাগল ৷

আরিশ : এখনই বৃষ্টি নামবে আরুপাখি ঘরে চলো৷

আরুশি আগের মতই স্হির শুধু চলমান তার চোখের নোনা জলগুলি যা ক্রমাগত চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে….

আরিশ :আরুপাখি ৷

আরুশি আবার আগের মতোই স্থির কোন কথা ওর কানে যাচ্ছেনা ,ও এখন আপন খেয়ালেই ব্যস্ত , আর ভাবনার মানুষটি হলো আরিশ ৷

আরুশি কোন রেসপন্স করছে না দেখে আরিস এবার আরুশি গলায় জোরে কামড়ে দিল ৷

আরু মুখে আওয়াজ না করলেও গোটা শরীরটা কেপে উঠলো যেন ৷ আজ নিজের আবেগ প্রকাশে ও যেন ব্যর্থ বলে ওর মনে হচ্ছে নিজেকে ৷

আরিস এবার আরুশিকে কোলে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো৷

(বাকিটা বুঝে নিন আপনাদের নিজেদের দায়িত্বে 😶৷)

আজকে ওরা কলেজে এসেছে তিনজনেই….

সানা :ভাইয়া হানিমুন তো করে এলি তা আজকে যে এক্সামের রুটিনটা দেবে তা সব ঠিকঠাক হবে তো?

আরিশ কিছু বলল না পরিবর্তে মুচকি একটা হাসি দিল ৷
আরিশ এর এই হাসি বোঝার ক্ষমতা এখনো কারোরই হয়ে ওঠেনি ৷ওর করা প্রতিটা জিনিসের একটা গভীর অর্থ আছে….

কালকে আরিশের ভালোবাসা পাওয়ার পর আর ততটাও মন খারাপ নেই আরুর ৷ এখন বেশ ভালই লাগছে….

আরো কিছু গল্প করতে করতে ওরা ভার্সিটিতে পৌছে গেল….

আরুশি আর সানা দাঁড়িয়ে আছে ততক্ষণ আরিশ গাড়ি পার্ক করতে গেছে…..

সানা আর আরু দুজনেই দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ দূরে অভ্রকে দেখে আরুর ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু করল কারণ এই মুহূর্তে আরিশ যদি ওকে দেখে তাহলে আরিশ আরুকে ভুল বুঝবে , আর তার থেকে বড় কথা হলো একটা বড়সড় সিনক্রিয়েট হবে কলেজের মাঝখানে, আর অবশেষে মার খেয়ে বাড়ি ফিরতে হবে অভ্রকে, আর এসবের কোনটাই আরু চায়না….

কিন্তু ভাগ্যক্রমে আরিশ আসার আগেই অভ্র সেখান থেকে চলে গেছে তা দেখে আরু অনেক স্বস্তি পেল৷ আর অভ্র ও আরিশের হাতে দ্বিতীয়বার মার খেতে চাইনা কারণ ও জানে যে আরু কাজটা সামলাতে পারবে তাই এত বড় রিস্ক নেওয়ার কোন দরকার নেই….

পরের সপ্তাহ থেকে এক্সাম হওয়ার জন্য ভার্সিটিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে যে আজ class হওয়ার পর যত দিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ততদিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে , আরু আর সানা তো খুশিতে লাফালাফি শুরূ করে দিয়েছে ৷

পড়াশোনাতে দুজনেই ফাঁকিবাজ, আরূ একটু আধটু ফাঁকিবাজি করলেও সানা ফাঁকিবাজিতে টপার ৷

আরিশ আর সানা দুই ভাইবোন তবে দুজনে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের ৷ এদিকে আরিশ ইউনিভার্সিটির টপার আর সেখানে সানা একটু ভালো নাম্বার পেলেই খুশি….

কলেজের sir রাও মাঝে মাঝে বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না যে আরিশ আর সানা দুই ভাই বোন….

আরিশের উপর অনেক প্রেসার ভার্সিটি থেকে তাই এই 1 সপ্তাহ টানা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে ওকে৷

লাঞ্চ টাইমে একটু সময় বার করে আরিশ, সানা আর আরু এক সঙ্গে ক্যান্টিনে গেল , সব নোটস কালেক্ট করতে গিয়েও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে আরিশ ৷ একসপ্তাহের জমে থাকা নোটস ওকে কাভার করতে হবে….

ক্যান্টিনে খেতে এসেছে ওরা আর এদিকে একতাড়া নোটস নিয়ে বসে আছে আরিশ আর তা দেখে সানা আর আরু দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করছে, ব্যাপারটা যেন একটু অবিশ্বাস্য৷ কই ওরা তো কখনো এরকম করে না🙄 ৷

আরোশী মনে-মনে : বাবা এত পড়ুকে ছেলে আমার জামাই! আগে কখনো দেখিনি কাউকে এমন পড়তে , ভাইয়াকে দেখেছি তবে এতো নয় ৷ এখন যা দেখছি মনে তো হচ্ছে আমাকে আর মনেই নেই ওনার😒৷

শর্ট টাইম ,অল্প কিছুই খেয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাবে তাই নিজের জন্য এক প্লেট ফ্রাইড রাইস আর আর চিলি চিকেন অর্ডার করেছে আরিশ , আর আরু ও সানা নিজেদের জন্য অল্প কিছু অর্ডার করেছে….

সানা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে তবে আরূ এখনো খাওয়া শুরু করতে পারছে না কারণ আরিশ সেই থেকে নোটস এর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে সামনে যে খাবারটা রয়েছে তার দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি , না পেরে আরূ বলে উঠলো ,,,,,,,

আরু: আপনার খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন ৷

আরিশ: তুমি খাওয়া শুরু করো আরূপাখি আমি একটু পরেই খাচ্ছি…

আরু বুঝতে পারল যে এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আজকে আর আরিশ এর খাওয়া হবে না তাই না পেরে একলোকমা ভাত আরিশের মুখের সামনে ধরল ৷

আরিশ মুচকি হেসে খেয়ে নিল….

এতক্ষণ এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো আরিশ, যে কখন আরুশি ওকে খাইয়ে দেবে ৷

আরিশ খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে মাঝে মাঝে আরূর হাতে কামড়েও নিচ্ছে কিন্তু আরূ কিছু বলতেও পারছেনা….

আরিশ এর সঙ্গে সঙ্গে আরু নিজেও খাচ্ছে কারণ এরপর ওর নিজের ক্লাস আছে আর লেট হয়ে গেলেই সমস্যা ৷

ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসার পর আরিশ সেই যে পড়তে বসেছে তারপর এখনও রুম থেকে বের হয়নি, আরূ রুমে ছিলো তবে আরিশকে একভাবে একই জায়গায় বসে থাকতে দেখে ওর নিজেরই বিরক্তি লাগছে তাই নিঃশব্দে সেখান থেকে উঠে আসলো আর সানার রুমে গেল….

সানা রুমে ঢুকতেই সামান্য একটু চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনেই ব্যাপারটা কি তা দেখার জন্য রুমে যেতে দেখল সানা ফোনে কথা বলছে মাঝে মাঝে ঝগড়া করছে কখনো কখনো আবার হেসেও ফেলছে, বুঝতে বাকি রইলো না যে আরাভের সাথেই কথা বলছে….

আরুশি যেতেই সানা ফোনটা কেটে দিলো৷

আরূ:ওহহহহো আমার ননদিনিও তাহলে লজ্জা পায়৷ তা সব ঠিক হয়ে গেছে তো?

সানা : আরে বলিস না আর ,ওনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল আমার , আর কি সমস্ত উল্টো-পাল্টা বলেছে তার জন্যই তো!(লজ্জা পেয়ে)

আরু সানাকে জড়িয়ে ধরে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিল ,,,,,,,, একটা শান্তির নিশ্বাস , প্রিয় মানুষদের খুশি থাকতে দেখে ভালোলাগার অনুভূতি ৷
অবশেষে সানাও সুখী হবে এটা ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছে আর ওর…..

আরু মনে করলো সানা আর আরাভকে একান্তে কিছু সময় দেওয়া উচিত তাই ও আরো কিছু কথা বলা সানার রূম থেকে বেরিয়ে গেল , গিয়ে ছাদে চলে গেল৷

ছাদে গিয়ে মনে পড়ল আরাভদের বাড়ির ছাদে সেই সুন্দর দৃশ্য যেখানে আরিস এর বুকে প্রশান্তির একটা জায়গা পেয়েছিল আরূ ৷ এক ঝাঁক পায়রা গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে গিয়েছিল আর চারিদিকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটা মুহূর্ত ছিল…..

সমস্ত কিছু ভাবছে আরূ হঠাৎ ওর ফোনে ফোন এল, তাকিয়ে দেখতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল,,,,, আহান ফোন করেছে…..

বহুদিন আহানের সঙ্গে যোগাযোগ নেই আরুর ৷ ভয়ে ফোন দিয়ে উঠতে পারিনি যদি ওর ভাইয়া কষ্ট পায় সেই কারণে…..

ফোনটা ধরতে ডুকরে কেঁদে উঠল আরু,,,,

বোনের কান্নার আওয়াজ শুনে কেদে ফেলল আহান৷ উভয় দিক থেকে দুই ভাই-বোনের কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর চলছে চরম নীরবতা ৷

আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল :কেমন আছিস ভাইয়া?

আহান নিজেকে সামলে নিয়ে : তোকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বল !

কথাটা শুনতেই আরুর কান্নার বেগ যেন আরো বেড়ে গেল….

আহান: আমি এসব কি শুনছি আরূ? তুই নাকি আবার অভ্রকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস !

আরুশি কাঁদতে কাঁদতে : আমি ওনাকে খুব ভালোবাসি ভাইয়া আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না ৷

আহান :কাকে ?অভ্র কে?

আরোশী : না ভাইয়া আরিশ কে ছাড়া ৷

আহান : তাহলে তুই এরকম করছিস কেন?

আরোশী : বাপির কথা ভেবে ভাইয়া , ওরা নাকি বাপের বিরুদ্ধে স্টেপ নেবে আর তোর বিরূদ্ধেও ৷

আহান: তাই বলে তুই নিজের ঘর সংসার ছেড়ে এত বড় আত্মবলিদান দিবি?

আরুশি: ভালোবেসে বিয়ে টা না করলেও এখন আমি ওনাকে ভালবাসতে শুরু করেছি কিন্তু আমি যে আর পিছিয়ে আসতে পারবো না , বাপির দেওয়া কথা যে আমাকে রাখতেই হবে….

আরুর কথা শোনার পর আহান ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু আহানের কোন কথাই যেন আরুর কানে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে না ৷

অবশেষে বিরক্তি হয়ে আহান ফোনটা কেটে দিল ৷

আরু ওখানে বসেই চোখের জল ফেলেছে নিঃশব্দে , যেন কেউ ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে না পাই ৷

এগুলোই একটা মেয়ের জীবন, শত কষ্ট হলেও পরিবারের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়তে পিছপা হয় না , আর সেখানেই তাদেরকে শুনতে হয় “বেইমান” নামক শব্দটি ৷

চলবে,,,,,,,,

গল্পে আর লাইক পড়ছে না😪

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-১৬+১৭

1

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:16
#Suraiya_Aayat

আরিশ আর আরূ দুজনেই একসঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ওখানে সময় কাটালো ৷ আরুশি নোনা জল আর বালিতে মাখামাখি হয়েগেছে , কিন্তু আজ যেন ও সেখান থেকে হোটেলে ফিরে যাবে না বলে প্ল্যান করেছে , আরিশের এখন ঠিক তেমনটাই মনে হচ্ছে ৷

আরিশ: আরুপাখি অনেক হয়েছে,এখন আর ভিজতে হবে না চলো আমরা ফিরে যাই ৷

আরু: প্লিজ আরেকটু থাকি না !আমার খুব ভালো লাগছে , আপনিও থাকুন, কত ইনজয় হচ্ছে বলুন তো৷

আরিশ: আর এক মিনিটও নয় , আমরা এক্ষুনি হোটেলে ফিরে যাব ৷

আরু জলের মধ্যে বসে আছে আর উঠবে না বলেই ঠিক করেছে ৷

আরিশ: আরূপাখি ওঠো ৷

আরুশি গাল ফুলিয়ে: আমি উঠবো না ৷

আরিশ : তুমি শিওর উঠবে না!

আরোশী: হ্যাঁ উঠব না, আমি আরো কিছুক্ষণ থাকবো ভললাম না আমার খুব ভালো লাগছে এখানে ৷

আরোশীর কোনরকম উঠার প্ল্যান না দেখে আরিশ আরুকে এইবার কোলে তুলে নিল, নিয়ে হাটা দিল হোটেলের দিকে ৷

আরুশি আরিসের কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করছে , আরু জোরে জোরে চেঁচাচ্ছে৷

আরু:আমাকে প্লিজ ছাড়ুন আমি ওখানে যাব, দেখুন সবাই কত মজা করছে ৷

আরিশ: একদম না আরুপাখি , এরকম পাগলামো করছো কেন ?আমরা আবার বিকালে আসবো তো!

আরিশ আর আরুর কান্ড দেখে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে কেউ কেউ আবার ওদের দেখে মুচকি মুচকি হাসছে ৷

আরূশি :দেখুন সবাই আমাদের দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে আর দেখে কিভাবে হাসছে ৷প্লিজ আমাকে নামান ৷

আরিস :কে কি ভাববে আই ডোন্ট কেয়ার…..

|
|❤
|

এদিকে,,,,,

আরাভ: দেখুন আঙ্কেল আন্টি আমি জানিনা আমি এখন যে কথাটা বলব আপনারা তাতে সম্মতি প্রকাশ করবেন কিনা, তবুও এটা আপনাদেরকে জানানো আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে ,বাকিটুকু আপনাদের ওপর ,আপনারা কি করবেন ৷ আপনাদের মতের অমতে আমি কোন কিছুই করবো না ৷

আফজাল সাহেব :কি বলবে আরাভ বাবা ?আমরাও তো শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছি আর তাছাড়া তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান একটা ছেলে,আর অ্যাডাল্ট একজন , আশা করি ঠিক ভুল বিবেচনা করার ক্ষমতা তোমার আছে তাই আমি মনে করি তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে ভুল কিছু নেবেনা ৷

আরিশের মা: বলো কি বলছিলে তুমি বাবা ৷

আরাভ: দেখুন আমি বেশি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে একদমই পছন্দ করিনা তাই সোজাসাপ্টা এই কথাটা বলতে চাই যে আমি সানা কে বিয়ে করতে চাই৷

আরাভের মুখ থেকে কথাটা শুনে আফজাল সাহেব আর কনিকা খান দুজন পরস্পরের দিকে তাকালেন তারপরে হেসে ফেললেন দুজনেই ৷ ওনাদের হাসতে দেখে আরাভ একটু চমকে গেল , মনে মনে ভাবতে লাগল তাহলে তারা কি ওকে ভুল বুঝল ?

আফজাল সাহেব উঠে আরাভ কে জরিয়ে ধরল তারপর বললেন : আমি জানতাম তুমি এরকম একটা কিছু বলবে , আর তোমার হাতে আমার মেয়েটাকে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকব সেটা আর বলতে বাকি রাখেনা ৷

আরিসের মা :তোমার আংকেলকে আমি এর আগে কথাটা একবার বলেছিলাম কিন্তু উনি তখন বলেছিলেন তুমি হয়তো রাজি হবে না সেই কারণে আর বলে উঠেনি ৷ কিন্তু এখন তুমি যখন বলেছ কথাটা দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে এগোতেই পারি৷

আফজাল সাহেব: আমাদের তরফ থেকে কোন অমত নেই আর আশাকরি আরিস বা আরু মামনির ও থাকবে না ৷তাহলে আর দেরি করে লাভ কি পাঠিয়ে দাও তোমার বাবা-মাকে আমাদের বাড়িতে ৷

আরাভ: আচ্ছা আঙ্কেল, তবে যতদিন না আরিশ আর ভাবী ফিরছে ততদিন কোন কাজই হবে না, আমি ওদের ছাড়া কিছু করতে চাই না ৷

আফজাল সাহেব : সে তো অবশ্যই , তবে সানার এই বিয়েতে মত আছে কি তাও তো আমাদেরকে জানতে হবে তাইনা, না হলে মেয়েটার সাথে খারাপ হবে ৷

আরাভ: আমি ওকে মানিয়ে নেব আন্কেল ,আপনি চিন্তা করবেন না বলে আরও টুকটাক কিছু কথা বলে বেরিয়ে গেল আরাভ ৷

আফজাল সাহেব আর আরিশের মা দুজনেই এখন বেশ নিশ্চিন্ত ৷

আফজাল সাহেব : আরূ মামনি আসতেই আরিশের জীবনটা কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, আর আমার ছেলেটার মধ্যে ও অনেক পরিবর্তন এসেছে, এবার মেয়েটার দায়িত্ব আরাভ নিলে তাহলে তো আমি চিন্তা মুক্ত….

|
|❤
|

লাঞ্চ করে এসে আরূ আর একমূহূর্তও দেরী করেনি ঘুমাতে কারণ আরিশ আরুকে বলেছে ও যদি না ঘুমায় তো বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাবে না , সেই ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে আরুশি ৷

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ দেখতে ব্যাস্ত ৷ হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা মাঝে মাঝে টেনে ধোঁয়া উড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে আর চারিদিকে কর্কশ একটা গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে৷

সিগারেটের ধোঁয়া আরুর নাকে পৌঁছতেই আরূ ঘুমের মধ্যে থেকেই কাঁশতে শুরু করল,,,, আরিশ পিছন ফিরে একবার বাঁকা একটা হাসি দিল তারপর আবার আগের মতোই তাকালো সমুদ্রের দিকে ৷

টেবিলের উপরে থাকা মোবাইল ফোনটা বেজে উঠতেই রুমে গেল, গিয়ে আরুশির থুতনিতে থাকা তিলটার দিকে প্রথমে নজর যেতেই আলতো করে তিলটা স্পর্শ করে ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে গেল ৷

অচেনা : স্যার আপনি যা যা করতে বলেছিলেন তাই তাই করেছি ৷

আরিশ: ওনাকে পেয়েছো?

অচেনা : উনি যেখানে থাকেন সেখানকার এড্রেসটা আমরা জানতে পেরেছি তবে এখন উনি আগের জায়গায় থাকেন না , সেখান থেকে অন্য জায়গায় চলে এসেছিলেন এটা জানতে পারলাম ৷

আরিশ: ইমিডিয়েট কাজটা করো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় ৷ ওনার ঠিকানাটা কোথায়?

অচেনা : স্যার ওনার বাসা হল সিলেটে , কিন্তু বহু বছর আগে উনি ধানমন্ডিতে থাকতেন তারপর ওখান থেকেই সিলেটে চলে আসেন ৷

আরিশ: ওকে , পুরোটা খোঁজখবর নিয়ে আমাকে জানাবে….

সিগারেটটা আরেকবার টান দিয়ে বাইরে ফেলে দিল আরিস ৷ এতদিন শুধু শুনেছে যে সিগারেট নাকি একটা পুরুষের ব্যথা নির্মূল করতে অনেকটা কার্যকরী একটা উপাদান কিন্তু তা আজকে কতটা কার্যকর সেটা ও বুঝতে পারছে ৷ এক প্রকার ব্যথা আছে ওর বুকে,ভালোবাসার মানুষটাকে না পাওয়ার কষ্ট, আরুশির ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কষ্ট ৷ আরিশ এগুলো ভেবেই কষ্ট পাচ্ছিল যে কবে সেই দিন আসবে যেদিন আরূশি ভালোবেসে ওকে গ্রহণ করে নেবে, আর সেদিনের অপেক্ষায়ই আছে আরিশ ৷

|
|❤
|

বিচের ধার দিয়ে হেঁটে চলেছে আরূ আর আরিশ ৷ আর কিছুক্ষণ পরেই সূর্য অস্ত যাবে ৷ বিচের ধারে মানুষজনের কোলাহলে পূর্ণ, সকলেই তাদের ভালোবাসার মানুষ এবং পরিবারের সঙ্গে একান্তে ভালো সময় কাটানোর জন্য এখানে এসেছেন….

দুজনে পাশাপাশি হেঁটে চলেছে তবে আজকে আরিশ নিস্তব্ধ , আর তার সঙ্গে আরূ ও ৷ আরশিকে আজকে দেখে খুবই অবাক লাগছে আরুর ৷ কারন ও যেই আরিশকে চেনে সেই আরিশ আর এখনকার আরিশের মধ্যে হাজারো তফাৎ ৷ এই আরিশকে দেখলে কেউ কখনোই বলবে না যে ইনি হলেন সেই মানুষ যিনি আরূশির উপর রাগ ,অভিমান ,ভালোবাসা সমস্ত কিছুই দেখায় ৷ এই সমস্ত কথাগুলো আরুশি ভাবছে আর ভাবার চেষ্টা করছে যে এমন কি হলো যার জন্য আরিশের এমন নিস্তব্ধতা৷ সকালে তো বেশ ভালই ছিল তাহলে কি দুপুরে কিছু হয়েছে তার জন্য আরিশের মুডটা অফ ৷

আরোশী না পেরে বলে উঠলো : আপনার কি কোন কারনে মুড অফ ?

আরিশ সামনের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল: নাহহহ ৷

আরুশি: ওহহ ৷

তারপর দুজনের মধ্যে আবার নীরবতা ৷ অন্যদিনের আরিশ আর এখনকার আরিশ এর মধ্যে কোন মিল খুজে পাচ্ছে না আরুশি , ও একটু না হলেও অনেকটাঔই পুরানো আরিশটাকে বড্ড মিস করছে, যে বারবার ওর উপর অধিকার ফলাত আরুশির না চাইতেও ৷ আরূশির এখন কেন জানিনা খুব ইচ্ছা হচ্ছে আরিশের উপর অধিকার ফলানোর ৷

আরোশী হঠাৎ জোরে চেঁচিয়ে : ওই দেখুন না ওখানে কত সুন্দর সুন্দর জুয়েলারি বিক্রি হচ্ছে আমিও কিনবো৷

আরিশ : আমি কি বারণ করেছি তোমাকে ৷

আরুশি: না তা করেননি তবে আপনি চয়েজ করে দেবেন বলে আরূ আরিশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল….

সেখানে গিয়ে আরুশি ইচ্ছা করেই নিজে কিছু পছন্দ করছে না বারবার আরিসের সামনে এটা-ওটা ধরছে, আর যেটাই ধরেছে আরিশ সেটাতেই মাথা নাড়াচ্ছে,ওর মনোযোগ যে কেন অন্যকিছুতে সেটাই বুঝতে পারছি না আরূ….

শেষমেষ আরিশের এরকম ব্যবহার দেখে আরূশির রাগ হলো আর তার সাথে একটু খারাপও লাগলো , রাগ করে জুয়েলারি গুলো আর কিনল না আরূ….
কিছুক্ষণ বিচের ধারে কাটিয়ে সন্ধ্যা হতেই ওরা হোটেলে ফিরে গেল ৷

|
|❤
|

রাত 10:30 ,,,,,,

ডিনার করে এসে ওরা অনেকক্ষণ আগেই হোটেলে ফিরে এসেছে, আরুশি ঘরের মধ্যে থাকলেও আরিশ ব্যালকনিতেই ছিল এতোক্ষণ ধরে…..
আরুশি না পেরে আরিশের কাছে গিয়ে আরিসের পাশে দাঁড়ালো তারপর নির্লিপ্ত ভাবে আরিশের কাছে আবদার করল…..

আরূ: চলুন না এখন একটু বিচের ধারে যাই ,আমার এখন যেতে ইচ্ছা করছে ৷

আরিশ অবাক চোখে আরুশির দিকে তাকিয়ে, তারপরে শান্ত দৃষ্টিতেই বলল : অনেক রাত হয়েছে আরুপাখি, ঘুমিয়ে পড়ো ৷

আরু: আমি যখন একবার বলেছি যাবো তখন যাব, আপনি না যেতে চাইলে বলেন আমি একা একাই যাচ্ছি ৷(ইচ্ছা করে কথাটা বলল যেন আরিশ ওকে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় ৷)

আরিশ : পাগলামো করো না আরুপাখি, ঘুমিয়ে পড়ো৷

আরূ: ও বুঝতে পেরেছি আপনি নিয়ে যাবেন না তাই তো ! আচ্ছা আমি একাই যাচ্ছি , বলে বেরিয়ে যেতে গেলেই আরিশ আরুশির হাত ধরে ফেলল ৷

আরিশ : এ হাত যখন একবার ধরেছি তখন কখনো একা ছাড়বো না বলেও আরিশ ও আরুর সাথে সি বিচের ধারে গেল ৷

জোছনা রাত ৷ চারিদিকে জনমানব শূন্য ৷ আকাশের উজ্জ্বল চাঁদও যেন দীর্ঘ বছর ধরে প্রতীক্ষারত৷
জলের মাঝখানে দুজন দুজনের হাতেটা ধরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে, চাঁদের উজ্জলতা সারা শরীরে মাখামাখি….
নীরবতা কাটিয়ে আরিশ বলে উঠলো: একটা কবিতা শুনবে আরূপাখি?

আরুশি সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে : বলুন ৷

আরুশি (মনে মনে): আমি তো আপনার কথা শোনার জন্যই , অপেক্ষায় রত৷

আরিশ:

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার ৷

তুমি ডাক দিলে
নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমেষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌঁছাব
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতটুকুও দেরী করবোনা ৷

তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরুদ্দ্যান হব,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো৷

একবার আমন্ত্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরন পাখি হয়ে যাব,– খাবো মৌনতা তোমার ৷

কবিতাটা শেষ হতেই আরিশ এর চোখের কোনে জল জমে এল ৷

এরপর আরুশি আরিশের দিকে ফিরে আরিসের কাধের উপর নিজের হাত দুটোকে রেখে পা দুটোকে সামান্য উঁচু করে আরিশের ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করল৷ আরিশ হয়ত এই মুহূর্তে আরুশির থেকে এতটাও ভালোবাসা আশা করেনি, পরম আবেশে আরুশিকে নিজের সঙ্গে আরও জড়িয়ে ধরল আরিশ ৷

আরোশী আরিশের থেকে অনেকটাই বেটে ৷নিজের মাথাটাকে আরিশের বুকে ঠেকাতে পারলেও আরিশ এর ঠোটদুটোকে স্পর্শ করা ওর পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয় তাই একটু ভালোবাসা দেওয়ার জন্য এতোটুকু করেছে আরুশি ৷ সমুদ্রের জল গুলোও পরম আবেশে ভালবাসার দুটি মানুষকে ক্রমাগত ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ৷

আরোশী আরিশকে ছেড়ে বলল: আপনার কবিতার কাতরোক্তি আমার হৃদয় স্পর্শী….
আমি যদি আপনাকে আহবান জানাই এ রাতে আমাকে একান্তই নিজের করে পাওয়ার আপনি কি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন ? একটু ভালবাসবেন আমায় ? মুড়িয়ে নেবেন কি আমাকে আপনার ভালোবাসার চাদরে ৷

আরিশ যেন এবার অবাক এর চূড়ান্ত পর্যায়ে , আরুশির থেকে এত কিছু এত তাড়াতাড়ি আশা করে নি ও ৷ তাহলে কি ওর ভালোবাসা আরূর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছে!

আরিশ : দেখো আরুপাখি তুমি হয়তো আবেগের বশে সমস্তটা বলছ ৷ যেদিন ভালোবেসে একান্তে আমাকে গ্রহণ করবে সেদিন তোমাকে আমি ফিরিয়ে দেব না৷

আরু: এটা আবেগ নাকি ভালোবাসা সেটা আমি জানি না তবে আমি খুব অদ্ভুত এক অনুভূতিতে জর্জরিত ৷

আরুশি: বলুন ভালোবাসবেন না আমায়!

আরিশ: ভালোবেসেই নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে চেয়েছি তোমায় , তো কি করে আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব তা আমার জানা নেই ৷

আরিশ এবার আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে হোটেলের দিকে এগিয় গেল ৷

চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:17
#Suraiya_Aayat

বিচ থেকে আরিশ আরূকে কোলে করে হোটেলে নিয়ে আসলো…..

রুমের ভিতর এসে আরূকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিল আরিশ ৷ ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে ব্যালকনির দিকে থাকা পর্দা গুলো সরিয়ে দিল, চাঁদের আলোটা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে সারা ঘরকে আলোকিত করে দিচ্ছে, যেখানে পূর্ণতা পাবে একটা নতুন ভালোবাসার আর সৃষ্টি হবে একটা ভালোবাসার রাত সেখানে কৃত্তিম জিনিস কে উপেক্ষা করে আসল আর প্রকৃত জিনিসটার মধ্যে দিয়েই ভালোবাসাটা শুরু করছে ওরা দুজনে ৷

সাদা পরদা সরাতেই এক ঝাক আলো এসে আরূর মুখে পড়ল ৷ আরূকে এখন দেখতে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে , আরিশ ক্রমাগত আরূর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে, এই মুহূর্তে হয়তো নিজেকে আর আটকে রাখা সম্ভব নয় কোনভাবেই ৷

আরিশ ধীরপায়ে আরূর দিকে এগোচ্ছে আর ওর বুকের হার্ট বিট যেন ততই বেড়ে চলেছে ক্রমশ৷

আরিশ আরুর কাছে এসে আরুর গালে আলতো করে স্পর্শ করে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল….

আরিশের ঠোটের প্রথম স্পর্শে আরূ একটু কেঁপে উঠল ৷ এক অদ্ভুত অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে সারা শরীর জুড়ে , ক্রমশ শিহরিত হচ্ছে ও ….

আরিশ নেশা ভরা কন্ঠে বলল : অনেক ভালোবাসি আরুপাখি তোমাকে , নিজের থেকেও বেশি ৷ সারা জীবন তোমার সাথে তোমাকে ভালোবেসে কাটাতে চাই, বার্ধক্যও যেন কখনো আমাদের ভালবাসাকে স্পর্শ না করতে পারে….

আরুর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না, এক অদ্ভুত অনুভূতি যা হয়তো ডায়েরির পাতাতেও লিখলে তা ব্যক্ত করা সম্ভব নয়…

আরিশ এবার আরূর ঠোঁট দুটোকে দখল করে নিল আর আরুও পরম আবেশে আরিশের শার্টের কলারটা খামচে ধরল, গলার কাছে নখ দিয়ে অনেক আচড় ও দিয়েছে….

আরিশ আস্তে আস্তে নিজের শরীরের সমস্ত ভার আরুর উপর ছেড়ে দিতে লাগল ৷ ওদের ভালোবাসায় মায়াবী রাত টাও যেন সঙ্গ দিচ্ছে বেশ ৷

রাত যতো গভীর হচ্ছে দুজনের ভালোবাসাও যেন আরও বেশী গভীর হচ্ছে ৷ দুজন দুজনকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত….

(Just ইমাজিন করেন ৷ বেশী কিছু ভাবতে যাবেন না😑)

সকালবেলা সূর্যের আলো ফুটতেই তা আরুশির মুখে পড়তেই আরুর ঘুম ভেঙে গেল ৷ আজকে আর ওর সূর্যোদয় দেখা হলো না….

ঘুম ভাঙতেই আরিশ এর দিকে চোখ গেল আরুর৷ কপালে চুল গুলো ছড়িয়ে পড়ছে , মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে আর তার মাঝে আকর্ষণীয় হল আরিশের ঠোঁট দুটো যাতে যে কেউ আসক্ত হতে বাধ্য….

নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতেই খানিকটা লজ্জা পেলো আরূ, হঠাৎই কিছু মনে হলো তারপর নিজে থেকেই আরিশ এর কপালের চুলগুলো সরিয়ে ভালবাসার একটা পরশে একে দিল , তারপর উঠতে গেলেই আরিশ ওর হাত ধরে আবার ওকে বিছানায় ফেলে দিলে….

আরিশ আরুর ওপর উঠে : তুমি কি ভেবেছো তুমি আমাকে একা আদর করে চলে যাবে , আমি তোমাকে তোমার আদর ফেরত দেবো না?

আরোশী থতমত খেয়ে গেল , ও ভেবেছিলো আরিশ হয়তো ঘুমাচ্ছে কিন্তু আরিশ যে জেগে আছে সেটা বুঝতে পারলে কখনই এমন করত না ও ৷ এখন নিজের বোকামির জন্যই নিজেকে দুটো চড় থাপ্পড় দিতে ইচ্ছা করছে আরুর ৷

আরু: আপনি এসব কি বলছেন! আমি এসব কিছুই করিনি ৷ আর আপনি হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন ৷

আরিশ: ওহহ আচ্ছা তাই নাকি, তাহলে তো ঘুমের ঘোরে তুমি আমার ভার্জিনিটিটাও নষ্ট করে দিয়েছে আরুপাখি ৷ ই বাবা , এবার আমার কি হবে!

আরূ আরিশ কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল আর ভাবছে এ ছেলে বলে কি!

আরোশী: আমি কখন কি করলাম আপনিই তো ! বলে চুপ হয়ে গেল ৷

আরিশ : হে আমিই তো ,,,,,, কি বল, বাকিটুকু তারপরে ৷

আরু: কিছু না , আমাকে উঠতে দিন, আমি এখন ফ্রেশ হব ৷

আরিস :: তার আগে আমার পেনডিং কিসটা তো আমাকে ঠিকঠাকভাবে পেমেন্ট করতে হবে তাই না! তুমি একাই দেবে আমি তা ফিরিয়ে দেব না এটা কেমন খারাপ হয় না বলো ৷ বলে আরুর দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠল আরিশের ৷

আরিশ : সত্যিই সবাই আমাকে প্রচন্ড হিংসে করে, কেউ চায় না আমার ভালো ৷ সবাই রোমান্স এ বাধা দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে , এত সকালে আবার কে?

আরুশি : এত সকাল নয় এখন প্রায় সাড়ে নটা বাজে, আপনি তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরুন অনেকক্ষণ ধরে বেজেই চলেছে ৷

আরিশ এবার ফোনটা ধরতে গেলেই আরূ তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমের দিকে ছুটল আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ৷

আরিশ : এটা কিন্তু ঠিক না আরুপাখি , পালিয়ে যাবে কোথায় ? ফিরে তো আমার কাছেই আসতে হবে সারাজীবন ৷ ফোনটা হাতে নিতেই দেখল সানা ফোন করেছে…..

আরিস : এই মিষ্টির দোকানের ছানা সকাল সকাল আমার রোমান্সের বারোটা তুমি বাজালে কেন?

সানা : ভাইয়া কতবার বলেছি না তুই এই নামে আমাকে ডাকবি না ৷

আরিস : তুই যা তোকে তাই বলেছি ৷

সানা মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো:: তা কেমন চলছে তোদের হানিমুন মানে প্রথম রাত ভাইয়া!

আরিশ :: কানের নিচে একটা দেব, ছোটবোন হয়ৈ ভাইয়াকে একথা জিজ্ঞাসা করিস লজ্জা করে না৷

সানা :: মান সম্মান ,লজ্জা-শরম অনেক আগেই বিসর্জন দিয়েছে তাই আর এ সমস্ত বলতে কোনো দ্বিধা নেই ৷ আচ্ছা সেসব কথা ছাড় , তোকে একটা কথা বলার জন্য ফোনটা করলাম ৷

আরিস: বল কি বলবি ৷

সানা : আম্মু বলল যে আরুর খেয়াল রাখার জন্য৷

আরিস : তুই এই জন্য আমার রোমান্সের ডিস্টার্ব করলি?

সানা উচ্চস্বরে হেসে : সরি ভাইয়া আমি ভাবলাম তুই হয়তো রুমেন্স করছিস আর আমি কি করে তা সহ্য করি বল ওই জন্য ডিস্টার্ব করার জন্য ফোনটা করলাম ৷আচ্ছা আমার ডিস্টার্ব করা শেষ এখন রাখি৷

আরিশ সানাকে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে সানা ফোন কেটে দিল…..
,❤
শাওয়ার এ নিচে দাঁড়িয়ে আছে আর আরুশি , ক্রমশ শরীরটা কাঁপছে ৷ এত বড় একটা কাজ করে ফেলল সেটা ও ভাবতে পারছেনা ৷ অনবরত চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, আজ ওর বাবার কারণেই ওর এই অবস্থা ৷ আরিশ কে ও ঠকাচ্ছে ৷

আরোশী মনে মনে : যে মানুষটা আমাকে এতো ভালোবাসে , আমার জন্য এতো ভাবে আজ আমি তাকেই ঠকাচ্ছি ৷ আল্লাহ হয়তো এ পাপের কোন ক্ষমা করবেন না আমাকে , বল হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল ৷

2 দিন আগের কথা,,,,,,,

আরিশের উপর রাগ করে আরূ যখন কলেজের ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল তখন ওর মা র থেকে ফোন আসতেই ছুটে গেল ওর বাবার কাছে ৷

আরুশি ছুটে ওর বাবার সামনে গিয়ে ওর বাবাকে বলতে লাগলো: বাবা তোমার এই অবস্থা কেমন করে হল ? কি হয়েছে তোমার?

আরমান সাহেব কাতর স্বরে : তুই তো জানিস মা আমার শরীরটা সব সময় খুব একটা ভালো থাকে না, আর তারপরে তুই যে আমাদের সবাইকে এত বড় একটা ধোকা দিবি তা আমি মেনে নিতে পারিনি৷ এই টেনশনে টেনশনে শরীরটাও খারাপ হয়ে পড়েছে৷

আরুশি যেন নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না, আর আজকে ওর বাবার এ অবস্থার জন্য নিজেকেই দায়ী করছে ও ৷

বিরাট এক অনুশোচনা কাজ করছে ওর , তার উপরে আরিশের উপরে রাগ রয়েছে যা যা হলো সেই কারণে৷

হঠাৎ একটা সময় আরমান সাহেব সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলেন তার নাকি আরূর সঙ্গে একান্তে কোন কথা আছে সেই কারণে৷ এটা শুনে আরুও বেশ অবাক হয়েছিল তবে ওর বাবা কি বলবে তারই অপেক্ষায় ছিল ও ৷

আরমান সাহেব: মা রে আমার এই বিপদের সময় তুই আমাকে সাহায্য কর না হলে ওরা যে আমাকে ছাড়বেনা , আমাকে জেলে পাঠাবে আর তোর ভাইয়ের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে ৷

আরুশি : বাপি তুমি হঠাৎ এই সমস্ত কথা কেনো বলছ?

আরমান সাহেব : বলছি তার কারণ হলো অভ্রের বাবা-মা বাড়ি এসে বলে গেছেন যে অভ্রের সঙ্গে তোর বিয়েটা না হয় যদি তাহলে উনারা আমাকে জেলে দেবেন ৷ অভ্রর তো প্রায় পাগল পাগল অবস্থা৷ ছেলেটার অবস্থা নাকি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, এটা ওর বাবা-মা কি করে সহ্য করবে তুই বল৷ছেলেটা বড্ড ভালোবাসে তোকে ৷

কথাটা শুনতেই আরূশির বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো….

আরুশি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল :: আমাকে তাহলে এখন কি করতে হবে বাপি?

আরমান সাহেব:: আরিসের থেকে মুক্তি পেতে হবে তোকে ৷ এটাই একমাত্র পথ ৷

কথাটা শুনতেই আরুর চোখের কোনে জল চলে এলো, বেশিদিন আরিশ-এর সঙ্গে আলাপ পরিচয় না হলেও এই কদিনে বেশ অদ্ভুত এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল আরূর আরিশের জন্য ৷

আরমান সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন: তুই আরিশের সঙ্গে এমন ব্যবহার করবি যাতে আরিশ ভাবে যে তুই ওকে ভালোবাসিস, তারপরে তুই ওকে জানাবি যে তুই এতদিন ওর সঙ্গে ভালোবাসার নাটক করেছিস কিন্তু ওকে কখনো ভালবাসিসনি তাহলে দেখবি আরিশ নিজেই তোকে ছেড়ে দেবে ৷ এত বড় বেইমানি ও কখনোই সহ্য করবে না ৷

আরু খুব অবাক হয়েছিল ওর বাবার সেদিনের কথা শুনে , ওর বাবার ব্যবহার ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম যেটা উনি আরুশির সঙ্গে সচরাচর করেন না , তবুও বাবা বলে বড্ড বেশি মায়ায় পড়ে গিয়েছিল আরূ ৷ ওনার কথাগুলো বিশ্বাস করে ছিল এবং রাজি হয়ে যায়৷

আরুর বাবা: দেখ মা তুই আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা কর ৷

সেদিন না চাইতেও মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আরুশিকে ওর বাবার কথা মেনে নিতে হয়েছিল , আর এতক্ষণ যা করছে সব ওর বাবার কথা অনুযায়ী করেছে ৷ও
ভাবেনি আরিশের মায়ায় পড়ে আবেগমিশ্রিত হয়ে ভালোবাসায় মেতে উঠবে ৷ তবে আরিশের প্রতি ওর ভালবাসাটা যেন আরো বেড়েই চলেছে দিন দিন ৷ কি করে ও অভ্রকে বিয়ে করবে এটা ও জানেনা৷

আরু ওইসব কথা ভাবছিল হঠাৎই আরিশ এর কন্ঠ শুনতে পেল ৷

আরিশ: আরূপাখি আর কতক্ষণ !খিদে পেয়েছে তো,ব্রেকফাস্ট করতে যাব ৷

আরুশি : আসছি ৷

ওরা এইখানে আর একদিন থাকবে, তারপর কলকাতা টা সম্পূর্ণ ঘুরে ঘুরে দেখবে এরকমই একটা প্ল্যান করল ৷ এই মুহূর্তে বেশিদিন থাকাটা ঠিক হবে না তাহলে আরিশ এর এক্সাম এর ক্ষতি হবে….

|
|❤
|

দুপুরবেলা সমুদ্রে স্নান করতে এসেছে দুজন ৷ চারিদিকের লোকজন ৷ দু’জনে খুব মজা করছে, এই ওর দিকে জল ছুড়ে মারছে , এ ওকে জলে ফেলে দিচ্ছে এরকমই চলছে ৷

ক্যামেরাম্যান: এই যে দাদা ছবি তুলবেন নাকি?

আরিশ : তুলুন ভাইয়া ৷

এই বলে দুজনে নানা ধরনের পোজ দিয়ে ছবি তুলতে লাগল ৷ সবকটা ছবিতেই ওদের ভালোবাসাটাই ফুটে উঠেছে ৷ কোনটাই আরিশ আরুর দিকে জল ছুঁড়ে দিচ্ছে , কোনটাই আরু আরিশের দিকে রাগি ফেস নিয়ে তাকিয়ে আছে , আবার কোনটাই আরিশ পিছন থেকে জড়িয়ে আছে আরুকে , এই ধরনের নানান পোজ দিয়ে ছবি তুলল ….

প্রচুর ছবি তুলে স্নান করে ওরা আবার হোটেলে ফিরে গেল , বিকেলে আবার ঘুরতে আসবে….

|
|❤
|

বিকালে ঘুরতে এসে দুজনে সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়েছে, চটপটি খেয়েছে, টুকটাক কিছু জিনিস কিনেছে সকলের জন্য , আর একসঙ্গে সূর্যাস্তটা উপভোগ করেছে….

সন্ধ্যাবেলা দুজনে বিচের ধারে বসে আছে, প্রচণ্ড হাওয়া বইছে, এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ৷

আরোশী: আচ্ছা এখানে কলকাতায় ঘোরার আর দেখার মত কি কি জায়গা আছে ৷

আরিশ হেসে বলল: এখানে প্রচুর জায়গায় আছে যা তুমি দু’তিনদিন ও ঘুরে শেষ করতে পারবো না ৷ এটাকে বলা হয় ❤” দা সিটি অফ জয় “❤ ৷এখানে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল , ওয়াটার পার্ক, নিকো পার্ক,ইকো পার্ক , সাইন্স সিটি , বিরলা তারামন্ডল সহ আরো প্রচুর জায়গা আছে ৷

(ফ্রীতে কলকাতার একটা ছোটখাটো প্রমোট করে দিলাম 😋😜৷)

আরু: তবে আমার এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না , বড্ড বেশি ভালো লেগেছে জায়গাটাকে ৷

আরুপাখি: পরে আবার আসব আরুপাখি যখন আমাদের বেবি হবে ৷

ওরা বসে আছে হঠাৎ আরুশির ফোনে ফোন এল৷

আরুশি : সানা ফোন করেছে ৷

আরিশ : আমাকেও সকালে ফোন করে রোমান্সের বারোটা বাজিয়েছে ৷

আরুশি ফোনটা ধরতেই সানা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো : তোরা ওখানে মজা করছিস আর এখানে জানিস আমার কি অবস্থা?

আরোশী উত্তেজিত হয়ে: তোর আবার কি হলো?

সানা : জানিস বাবা আমাকে না বলে আরাভ ভাইয়ার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করেছে , আমি ওনার সাথে বিয়ে করব না ৷ তোরা তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় , আবার পরে না হয় ঘুরতে যাস , আগে আমার বিয়েটা ভেঙে দে ৷

আরুশি: কিন্তু আরাভ ভাইয়াতো যথেষ্ট ভাল একজন ছেলে , কেন তুই ওনাকে পছন্দ করিস না ৷

সানা : আমি সেসব কিছু এখন বলতে পারছিনা, তোরা বাড়ি আয় এসে তাড়াতাড়ি বিয়েটায় ভাঙচি দে না হলে আমি কিন্তু বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবো বলে দিলাম ৷ এমনিতেই উনি কালকে আমাকে ওনার বাড়িতে যেতে বলেছেন, ওনার আম্মূ নাকি আসতে বলেছেন ৷ আমি যাব না ৷ তোরা তাড়াতাড়ি আই ৷
বলে ফোনটা রেখে দিল ৷

আরিশ: কি হয়েছে?

আরু: সানা ইমিডিয়েট বাড়ি যেতে বলল ৷ এরপর আরূ আরিশকে সবটা বলল ৷

আরিশ: তাহলে আমাদের কালকেই ফিরতে হবে আরুপাখি ৷

কথাটা শুনতেই আরুশির মন খারাপ হয়ে গেল ৷

আরু: আগে সানার ব্যাপারটা দেখা উচিত , ঘুরতে তো পরেও আসা যাবে ৷

সমস্ত জামাকাপড় প্যাকিং করে আরিশ আর আরুশি ব্যালকনিতে বসে আছে আর বাইরে সমুদ্রের ঢেউ দেখছে ৷

কথার মাঝখানে হঠাৎ আরিশ বলে উঠলো,,,,

আরিস: তোমার কখনো ইচ্ছা হয় না আরুপাখি এটা জানতে যে তোমার বাবা কেন তোমাকে পছন্দ করেন না , কেন সবসময় খারাপ ব্যবহার করেন তোমার সাথে?

কথাটা শুনতেই আরুর বুকের ভিতর ধক করে উঠল, তাহলে কি আরিশ সব জেনে গেছে?

আরুশি কাঁপা কাঁপা গলায় : আপনি হঠাৎ এই সমস্ত কথা বলছেন! না মানে আপনি তো আর এসব বলেন না কখনোই তাই জিজ্ঞাসা করলাম আরকি ৷

আরিশ :আসলে তা না , আমি এটাই ভাবি যে কেন উনি তোমার সাথে এমন করেন ৷

এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা প্রশ্ন আমিও উত্তরটা জানতে চাই আরু মনে মনে বলল ৷আপনার সঙ্গে আমিও জানতে চাই , তবে আমি আপনার সঙ্গে যা যা করছি তার জন্য আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন ৷

আরিশ: তবে যা খুশি হয়ে যাক আরুপাখি এটা মনে রেখো যে কখনো আমার থেকে তোমাকে আলাদা হতে দেবো না সে যা কিছূই হয়ে যাক ৷সবসময় নিজের সাথেই আগলে রাখব ৷

চলব,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-১৪+১৫

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#parr:14
#Suraiya_Aayat

আরূর ফিরতে অনেক লেট হয়েছে প্রায় দু ঘন্টা ৷ ও কোথায় গিয়েছিল কি করছিল কেউ জানে না ৷কলেজ ছুটি হয়েছে সাড়ে চারটের সময় আর এখন বাজে সাড়ে সাতটা, বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত ৷ সানা বার্থডে পার্টি থেকে চলে এসেছে তাড়াতাড়ি ৷ ড্রয়িংরুমে আরিশের মা আর সানা দুজনেই আরুর জন্য অপেক্ষা করছে ৷

আরিশের মা : এত রাত হয়ে গেল মেয়েটা এখনো বাড়ী ফিরল না , না জানি কোন বিপদে পড়ল কিনা দিনকাল খারাপ, আমার খুব চিন্তা হচ্ছে সানা ৷ তোর ভাইয়াকে বলনা একবার যেন মেয়েটাকে একটু খুঁজতে বের হয় ৷

সানা : আমিতো ভাইয়াকে বললাম কিন্তু ভাইয়া বলল আরূ ঠিক ফিরে আসবে সে যেখানেই থাকুক না কেন৷ ও এখন ওর ঘরে বসে কাজ করছে৷

আরিশের মা : কোথায় মেয়েটাকে খুঁজে আনবে তা না!

আরিশের বাবা এসে বললেন : চিন্তা করোনা, তোমার ছেলে যখন একবার বলেছে যে আরু মামনি ফিরে আসবে তার মানে ফিরে আসবে , এটুকু বিশ্বাস আমি আমার ছেলের উপর রাখি ৷ কখনো আরু মামনির কোন বিপদ হতে দেবে না ও ৷

আরিশের মা: বুঝিনা তোমার ছেলে এত কনফিডেন্স কোথা থেকে পায় , আল্লাহ যদি ওর মতো কনফিডেন্স একটু আমাদের দিত তাহলে এত চিন্তা করতে হত না৷ আবার শুনলাম রাইসারা আসছে ৷ আপু তো আজকে ফোন করেছিলেন ফোন করে বললেন যে আরিশ কে যেন ঠিক করে বোঝাই বিয়েটার জন্য, কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব নয় কোনভাবেই ৷

ওরা এই সমস্ত কথা বলছে আর তখন দরজার বেল বাজতেই সানা দৌড়ে ছুটে গেল , দরজা খুলতেই দেখল আরু দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷

আরু ঘরে ঢুকতেই আরিশের মা জিজ্ঞাসা করল’:
কোথায় ছিলি রে মা এতক্ষন ? কত চিন্তা করছিলাম আমরা ,আর একটা ফোন তো করবি , একেই দিনকাল ভাল নয় ৷

আরু:তোমরা খামোখা চিন্তা করছিলে ,মামনি দেখো আমি ঠিক আছি ৷

সানা : তোর এত দেরি হলো !তুই কি কোথাও গেছিলি?

আরূ মাথা নিচু করে রইল : হ্যাঁ গিয়েছিলাম৷

আরিশের বাবা : কোথায় গিয়েছিলি মামনি এই ভরসন্ধ্যায় , কাউকে কিছু না বলে ৷

আরু: আসলে বাবা আমার বাপির খুব শরীর খারাপ ছিল তাই ওই বাড়িতে আমাকে যেতে হয়েছে ৷

আফজাল সাহেব: উনি এখন কেমন আছেন , আই মিন ঠিক আছেন তো?

আরূ: আগের থেকে ভালো আছেন ৷

আরিশের মা : কলেজ করে তুই আবার ওখানে গিয়েছিস অনেকটা ধকল হয়েছে তোর উপরে আমি জানি , তুই আর এখানে বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে রুমে যা আর আরিশকে একটু বুঝিয়ে বল দেখবি ঠিকই বুঝবে আরিশ ৷

আরু: হমম, বলে মাথা নিচু করে ঘরের দিকে চলে গেল ৷

আরূর মধ্যে ভাবাবেগের কোন পরিবর্তন নেই, ওর মাথায় এখন ওর বাবার বলা কথাগুলোই ঘুরছে….(কি বলেছে সময় হলে জানাবো )

আসলে কলেজ ছুটির পর আরূ যখন আরিশের উপর রাগ করে ওখান থেকে চলে আসছিল তখনই হঠাৎ ওর ফোনে ওর মায়ের থেকে কল আসলো ৷ ওর মায়ের কল দেখে অনেকটা খুশি হলো আরূ, কল ধরতেই ওর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওকে তাড়াতাড়ি ও বাড়িতে যাওয়ার কথা বললেন , ওর বাবা নাকি খুব অসুস্থ আর ওকে দেখতে চাইছেন বারবার৷ আরু তাই বেশিক্ষণ দেরী না করে চলে গেল আরিশ কে বা কাউকে বলার সময়টুকু পায়নি ৷

|
|❤
|

আরু রুমে গিয়ে দেখল আরিশ রুমে নেই,আরিশ নেই দেখে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ব্যাগটা রেখে ওয়াশ রুমে চলে গেল ৷ এখন একটু সাওয়ার নেবে ও ৷ সারাদিনের ধকলে আর কিছু ভালো লাগছে না ওর৷

প্রায় আধঘন্টা ধরে শাওয়ার নিয়ে এলো আরু….

বৃষ্টির দিন ঠান্ডা পরিবেশ , মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে প্রচন্ড , বাইরের আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে ৷ ঘরের তাপমাত্রা টা মনোরম হওয়ায় এসি টা অফ করে দিলো আরু ৷ ভেজাচুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে আর তাতে ব্লাউজের পিছনের অংশটা ভিজে গেছে অনেকখানি…
আরূ তোয়ালে দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ বাইরে প্রচন্ড হাওয়া বইছে আর তা ওর শরীরদিয়ে বয়ে যাচ্ছে, অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে আরুর মধ্যে ৷ নির্জনতায় নিজেকে যেন বারবার খুঁজে পাচ্ছে আরূ ৷

হঠাৎ পেটে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে একটু কেঁপে উঠল , বুঝতে পারল যে আরিশ এসেছে৷আরিশ ছাড়া এরকম কাজ কেউ করবে না আর করার সাহস ও পাবেনা ৷

আরিসের সঙ্গে আরু বেশি কথা বলতে চায় না তাই ঠান্ডা লাগলেও চোখ মুখ খিচে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কোন আবেগ প্রকাশ করছেনা ৷

আরিস আরূর চুলে মুখ ডুবিয়ে বলতে লাগলো : কি শ্যাম্পু ইউজ করো আরুপাখি যে এত ঘ্রাণ আসছে আর তাতে আমি পাগল হয়ে যাই বারবার ৷

আরু এখনো কথা বলছেনা, আগের মতোই দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷

হঠাৎই কাঁধে আরিশ কামড়ে দিতেই আরূ আহ করে আওয়াজ করে উঠলো ৷

আরুশি একটু চেচিয়ে : ভ্যাম্পায়ার নাকি আপনি যে এভাবে সব সময় যখন তখন কামড় দেন ৷

আরিস : তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি,আর তুমি উত্তর দিচ্ছ না বলেই তো এরকম করেছি….

আরু : আবার আগের মতো শান্ত রইল,আরিশের প্রশ্নের কি উত্তর দেবে ও ! কিছুই বলার নেই ওর….

আরিশ আরূর গালে আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করে বলল : তা কোথায় গিয়েছিলে আরুপাখি?

আরুশি একটু থেমে : ও বাড়িতে গিয়েছিলাম ৷

আরিশ : আচ্ছা তা কেমন আছেন তোমার বাবা?

আরু একটু অবাক হল আরিশ এর কথা শুনে কারণ ও তো আররিশকে এখনো সমস্তটা বলেননি তাহলে কিভাবে জেনে গেল আরিশ ৷

আরোশী : ভালো ৷

আরিশ আরূকে সামনের দিকে ফিরিয়ে আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওর কাছে নিয়ে আসলো তারপর বলল : তা তোমার অভ্র কে দেখতে যাওনি?

আরুশি রাগ দেখিয়ে : সব কথার মাঝখানে উনাকে টেনে আনবেন না ৷

আরিশ এবার আরুর চুলের মুঠি ধরে ওর মুখের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বলল : আজ যদি তোমার কোন একটা নোংরা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় তাহলে ভাল লাগবে তো তোমার?

আরুশি: আহ লাগছে আমার , আপনি ছাড়ুন আর আপনি এসব কি বলছেন?

আরিস : কি বলছি বুঝতে পারছ না তাইনা, ওয়েট বলে আরুশিকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল…

আরিশ এবার ওর ফোনটা এনে আরুশির সামনে ধরল : আরিস এই নাও দেখো ৷

আরুশি ভিডিওটা দেখে অবাক তার কারণ ও ওর বাবার কাছে গিয়েছিল সেখানকার ভিড়িও ৷ ও আজ কলেজে শাড়ি পড়ে গিয়েছিল, তারপর ওখান থেকে ওর বাবার কাছে গিয়ে ছিল, ভিড়িওতে দেখাচ্ছে ওর শরীরের বিভিন্ন অংশ গুলো কেউ ক্যামেরাতে স্পষ্টভাবে তুলেছে ,ভিডিওটা নোংরা মানসিকতা নিয়েই বানিয়েছে কেউ ৷

আরোশী ভিডিওটা দেখে অবাক হয়ে গেল,,,,

আরিস : কি ভালো লাগছে তো এবার?

আরুশি: আপনি এটা কোথায় পেলেন ?

আরিশ:তোমার সব খবরা খবর জানতে আমার দু সেকেন্ডেরও সময় লাগে না আরুপাখি ৷

আরু: তা মানলাম বাট আপনি কিভাবে শিউর হইলেন যে এটা উনিই বানিয়েছেন, না জেনে শুনে কারো ব্যাপারে এভাবে দোষ দেওয়াটা ঠিক না, আর উনি ওখানে ছিলেন না তাহলে ভিডিও টা কিভাবে বানাবেন!

আরিশ আরূর কথা শুনে রেগে ফোনটা নিয়ে ছুড়ে মারল দেওয়ালে , নিমেষেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল
ফোনটা, ফোনটা ভাঙতেই আরু চমকে উঠল ৷ সামান্য একটা কথা তে এভাবে রেগে যাবে সেটা আগে বুঝতে পারিনি ও ৷

আরিশ : এত ভালোবাসা! থাকতে হবে না তোমার আমার কাছে, চলে যাও যে তোমাকে ভালবাসে , তার কাছে যাও ৷ তোমার বার আর ওই অভ্রর কাছে ৷ এটাইতো তুমি চাও বলে রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরিশ চলে যেতেই আরুর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ল , এটা আরিস এর প্রতি রাগ নাকি, অভিমান নাকি ওর করা ভুলের জন্য এই চোখের জল সেটা ও জানে না ৷ বাইরে গাড়ি স্টার্ট হওয়ার আওয়াজ শুনতে ই আরুর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আরিশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে রাগ করে…

আরু:উনি এত সহজে বলে দিলেন চলে যাওয়ার কথা?আচ্ছা বেশ থাকবো না আমি ৷ওনার তো ভালোবাসার মানুষ আছে তাই না ! আমার থেকে কি লাভ….

|
|❤
|

সমুদ্রের ধারে বসে আছে আরিশ আর আরাভ ৷

আরাভ: দোস্ত ভাবীর উপর রাগ করিস না , হয়তো ভুল করে ফেলেছে, অল্প বয়স সবকিছু এত তাড়াতাড়ি বুঝে উঠতে পারেনি ৷

আরিশ : একটা মিনিমাম সেন্স টুকুও তো মানুষের মধ্যে থাকে নাকি, এমন বলদ এর মত বুদ্ধি কেন ওর! কবে বুঝবে সব ৷ কবে বুঝবে কে ওর ভালো চাই আর কে ওর ক্ষতি চাই ৷

আরাভ: এসব ছাড় ,আর বাড়িতে যা নাহলে ভাবি কষ্ট পাবে ৷

আরিস : কোথাও যাব না আমি,তোর যদি আমার সাথে থাকতে সমস্যা হয় তুইও চলে যা , কাউকে দরকার নেই আমার ৷ আর কষ্ট ! আমি ওর সাথে না থাকলে ও খুশি হয় তাই জন্য তো কিভাবে বলল যে কাজটা অভ্র কিছুতে.ই করতে পারে না ৷ আচ্ছা অভ্রের প্রতি ওর এত বিশ্বাস কোথা থেকে আসে?কেন বোঝেনা অভ্র কি চাই !,

আরাভ: আচ্ছা তুই রাগ করিস না সব ঠিক হয়ে
যাবে ৷

আরিশ শান্ত অশ্রুমাখা দৃষ্টি নিয়ে দীর্ঘ সমুদ্রের ভেসে যাওয়া ঢেউ এর দিকে দৄষ্টি নিক্ষেপ করছে, কারণ চোখের জলটা কাউকে দেখাতে চায় না ও ৷

আরু সব জামা কাপড় গুছিয়ে নিয়েছে চলে যাবে বলে ৷ একরাশ অভিমান থেকে কথাগুলো যে মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে তা ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে… আরু তখন অভ্রের কথাটা বলেছে তার কারণ ও ওখানে অভ্রকে ওখানে দেখেনি ৷ আর আরিশ একটা ছোট্ট কথার জন্য ওকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কথা বলল৷

|
|❤
|

সকালবেলা,

ঘুমের মধ্যে যেন কেমন একটা দম বন্ধ হয়ে আসছে আরূর,কারোর একটা গরম নিঃশ্বাস ওর মুখের উপর অনবরত এসে বাড়ি খাচ্ছে , দম আটকে আসার উপক্রম ৷ চোখ খূলে তাকাতেই দেখলো আরিশ ওর ঠোঁট দুটো কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রখেছে…

আরু অনেক কষ্ট করে আরিশকে নিজের থেকে ছাড়ালো তারপর উঠে বসে হাঁফাতে লাগলো , এতক্ষণ যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ও ৷

আরিস কাচুমুচু মুখ করে: এটা কিন্তু ঠিক না আরুপাখি ! সব সময় আমি রোমান্স করব আর তুমি তাতে ব্যাঘাত দেবে এটা আমি কখনোই মেনে নেব না৷
বলে আরুশিকে আবার বিছানায় ফেলে আরোশী কাছে গিয়ে বলতে লাগল : ভালোবাসি আরুপাখি!
অনেক বেশি ভালোবাসি বলে আরুশিকে জড়িয়ে ধরল ৷

আবেগে আরুশির চোখের কোন থেকে ক্রমাগত জল গড়িয়ে পড়ছে , আর মুখে কিঞ্চিৎ একটু হাসি ফুটেছে৷

আরিশ পাশে থাকা লাগেজটা দেখে বলল: ওটা কি আরুপাখি ? আমাদের হানিমুন ট্রিপের জন্য জামা কাপড় নিয়েছো তুমি?

আরু বিছানা থেকে নেমে বলল: আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাব বলে জামাকাপড় pack করেছি, আর এখন আটটা বাজে দশটা বাজবে তখন আমি বেরিয়ে যাব৷ ইচ্ছা করে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো বলল ৷

আরিস : আচ্ছা যাও বলে বিছানায় আরাম করে শুয়ে ৷

আরোশী অবাক হয়ে: আপনি আমাকে এত সহজে যেতে দেবেন ? আমাকে আটকাবেন না!

আরিস বিছানা থেকে নেমে আরুর কোমরটা জড়িয়ে নিজের কাছে এনে: আমার কাছেই তো সেই ফিরে আসতে হবে তোমাকে বারবার , পালিয়ে আর যাবে কোথায়৷ বলে হালকা করে আরূশির ঠোঁটে একটা কিস করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ৷
যাওয়ার আগে বলল লাগেজের জামা কাপড়গুলো রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হও , শপিং এ যাবো ,আর সানা কেউ বলে দিও বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরিশ চলে যেতেই আরুশি একটা মুখ ভাংচি দিল,
আরু: জানি জানি আমাকে তো যেতে দেবে না খামোখা আমাকে ভয় দেখায় ,আমিও কত ভয় পেয়ে গেছিলাম কথাটা শুনে😣 ৷

আরিশ ,আরূ আর সানা তিনজনের শপিং এসেছে৷ আরু আর সানা জামা দেখছে আর আরিশ ওদের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে , তবে বিরক্ত লাগছে না ওর ৷ আরুশির সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে দিলে ওর আর কি চাই , আরুশিকে সব সময় নিজের সঙ্গে রাখতে চায় তাই ওর সাথে সময় কাটানোর কোন মুহূর্তও আরিশ ছাড়তে চায় না….

আরু আর সানা শপিং করছে আর আরিশ ওদেরকে বলল কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়াতে ও একটু দরকারি কল করে আসছে ৷

কলে,,,,,

আরিস: কি ব্রো , লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করা হচ্ছে!

অভ্র একটু ঘাবড়ে গেল , ওভাবে যে আরিশ বুঝতে পারবে ও ভাবেনি ৷

অভ্র: আচ্ছা জেনে গেছে তাহলে তা ভালোই, তবে নিজের বউকে একটু সামলে সামলে রেখো বলা যায় কখন কে কিডন্যাপ করে নেয় ৷ বলে হাসতে লাগল৷

অভ্রের কথা শুনে আরিশ উচ্চস্বরে হেসে বলল : রিয়েলি ! সেদিন না হয় ড্রিংক করেছিলে, আজকে তো নিজের হুসে আছ, তবে এসব কথা!

আরিশ এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো: ঠিক 10 সেকেন্ড আছে তোর হাতে, এক্ষুনি এখান থেকে বেরিয়ে যা না হলে তোর পিছনে কালো রঙের ড্রেস পরা যে দুটো লোকটা কে দেখছিস ও সারাক্ষণ শুট করার জন্যই বসে থাকে , আমি বললেই শুট করে দেবে তোকে , এখন ব্যাপারটা তোর ৷ এখন যাবি নাকি ওর বন্দুকের গুলিতে ঝাঝরা হবি ৷

অভ্র :ধমকাচ্ছিস আমাকে?

আরিস: ধমকাচ্ছি না তবে সাবধান করছি , আমি আর দশ কাউন্ট করব তার মধ্যে বেরিয়ে যা না হলে আজকে বেঁচে বাড়ি যেতে পারবি না ৷

আর এক মুহূর্ত ও অভ্র ওয়েট করল না শপিং মল থেকে বেরিয়ে গেল,,,,ও খুব ভয় পেয়েগেছিল ৷

আরিশ এবার হেসে বলল : হানিমুনে যাচ্ছি , বলা যাইনা তুই হইতো মামু ও হয়ৈ যেতে পারিস৷ কংগ্রাচুলেশন জানাতে ভুলিস না আবার ৷

অভ্র : এগুলো তোর ড্রিম , আর তোর আর আমার মধ্যে ডিল হয়েছে, যতদিন না আরু তোকে মেনে নেবে ততদিন তুই ওকে টাচ করবি না ৷আমার মনে লয় না ও তোকে কখনও মেনে নেবে ৷

আরিস : আমার কথা রাখতে আমি জানি, তুই চিন্তা করিস না বলে ফোন রেখে দিল ৷

আরিশ ওদের কাছে ফিরে যেতেই আরুশি জিজ্ঞাসা করল শান্ত কণ্ঠে : কোথায় গিয়েছিলেন?

আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন দেখতে দেখতে: তোমার অভ্র কে ধমকাতে ৷

তোমার অভ্র কথাটা শুনে আরূর মুডটাই অফ হয়ে গেল ৷ আরিসের সঙ্গে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে টুকটাক জামাকাপড় কিনে বাড়িতে চলে গেল ওরা ৷

চলবে,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:15
#Suraiya_Aayat

রাত প্রায় 11:30 ,আরিশের বুকে মাথা রেখে মাথার উপরে থাকা জ্বলন্ত ঝাড়বাতির টার দিকেই তাকিয়ে আছে আরূ ৷ হাজারো কল্পনা জল্পনার মাঝে ব্যস্ত আরু আর এদিকে আরিশ নিজের মতো আরুর সঙ্গে বকবক করেই চলেছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই আরূর ৷ হঠাৎ আরিশ বলে উঠলো,,,,,,

আরিশ : বুঝলে আরুপাখি!

আরুসির থেকে নো রেসপন্স ৷

আরিশ (সুর করে): আরুওওপাখি!

আরুশি চমকে উঠে : আপনি কিছু বললেন?

আরিস আরুশিকে ওর বুক থেকে নামিয়ে আরুশির ওপরে উঠে ওর দিকে ঝুকে বলল: তুমি কিছু শোনোনি , আমি এতক্ষণ ধরে কি কি বলছিলাম?

আরিশ ওর ওপর ঝুকে গেছে তা দেখে ও ভয় পেয়ে গেল , তার পরে কাপা কাপা কন্ঠে বলল: না শুনিনি, আপনি কি বললেন আরেকবার বলবেন প্লিজ ৷

আরিশ আরুশির দিকে আরো ঝুঁকে বলল : আমি বললাম যে আমরা ইন ফিউচার দশটা বেবি নেব৷

আরিশের কথা শুনে আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ,,,,

আরিস: এবার শুনেছো আরূপাখি? বললে আরূশির গালে হালকা করে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো৷

আরুশি : আপনি এসব কি বলছেন ?আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন!

আরিশ : তোমার জন্যই তো পাগল আমি ৷

আরোশী : অনেক রাত হয়েছে আপনি এবার ঘুমিয়ে পড়ুন , কালকে সকালে ফ্লাইট , তাড়াতাড়ি উঠতে হবে৷

আরিশ: কিন্তু আমার তো এখন তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে আরূপাখি ৷

আরুসি তোতলাতে তোতলাতে: আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ৷ (ও ভয় পেয়ে গেল )

আরিস আরুর ওপর থেকে উঠে এসে ওর পাশে শুয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগল,আর তা দেখে আরু অবাক হয়ে গেল ৷

আরু অবাক হয়ে : আপনি এমন করে হাসছেন কেন?

আরিশ : তোমার ফেস দেখে ৷আমি যেই বললাম আদর করার কথা তুমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলে জানো! পুরো গোলু গোলু ফেস ৷

আরিশ : চিন্তা নেই , তুমি ঘুমাও ৷ আরুশিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল….

আরুশি মনে মনে : উনি কখন কি চায় বোঝা মুশকিল, বড্ড জটিল ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ ৷ এই ভালোবাসেন আবার এই বকাঝকা করেন ৷ কখনো কি হবে আমার ওনাকে বোঝার ক্ষমতা!

|
|❤
|

সকালবেলা,,,,

আফজাল সাহেব : এয়ারপোর্ট থেকে নেমে দেখবা একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে, নাম্বারটা তোমাকে আমি সেন্ড করে দিচ্ছি সেই গাড়িতে উঠবে, ওটা তোমাকে নিয়ে যাবে হোটেল অবধি ৷

আরিশ : ওকে বাবা(চোখ মেরে)

আরিশের মা : সাবধানে যাস তোরা দুজনে ৷ তোদেরকে নিয়ে বড্ড চিন্তা হয় আমার ৷ আর আরিশ তুই যা অগোছালো , মেয়েটার একটু খেয়াল রাখিস৷

সানা: হ্যাঁ ভাইয়া খেয়াল তো রাখবেই , যতই হোক ওর আরুপাখি বলে কথা ৷ আরুশিকে দেখে চোখ মেরে ৷

সানার এরকম কর্মকাণ্ডে আরুশি একটু ঘাবড়ে গেল কিছু বললো না তবে , বড়োদের মাঝে এরকম কথা বলে সানা প্রায় ই ৷

আরিশ : তাহলে আসছি আমরা ৷আরাভ বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷

সানা : উনি দাঁড়িয়ে আছেন মানে ! উনিও কি আমাদের সঙ্গে যাবেন নাকি?

আরিশ : আরাভ যেতে চাইলো না করতে পারলাম না, তুই আর বেশি কথা বাড়াস না তাড়াতাড়ি চল ৷

সানা :উনি যাচ্ছি মানে আমি যাব না ৷

আফজাল সাহেব: এটা কোন কথা হল ! তুমি যাবে৷ আর আরাভ অত্যন্ত ভালো একটা ছেলে , আশাকরি তোমার কোন সমস্যা হতে দেবে না ও ৷

আরিসের বাবা বলাতেই সানা আর না করতে পারল না , ওদের সাথে গেল ৷

সারাটা রাস্তা সানা আর আরু দুজনে মিলে বকবক করতে করতে এসেছে ৷যদিও সানা বেশী কথা বলেছে ৷ আগের দিন আরাভ কে অনেক কিল ঘুষি মারায় ও লজ্জায় বেশি কথা বলতে পারেনি ৷

এয়ারপোর্টে নেমে আরাভ আরিশকে আলাদাভাবে ডেকে বলল: দোস্ত তোর বোনটাকে বলনা আমার সাথে .রিলেশনে যেনো রাজি হয়ে যাই ৷

আরিশ : পছন্দ তোমার, বিয়ে করবে তুমি ,আমি কেন রাজি করাবো হ্যাঁ ! (একটু ভাব নিয়ে)

আরাভ: দোস্ত তুইও এরকম করতে পারলি তো আমার সাথে, মনে রাখব ৷ বাই দ্যা ওয়ে যাচ্ছিস যখন তখন গোল করে বাড়ি ফিরিস , নাহলে তোর মান-ইজ্জতের ফেলুদা করে দেবো আমি ৷

আরিশ : আগে নিজের কেসটা সামলা ,তারপর আমাকে বলিস ৷

সানা: ওই বিরক্তিকর লোকটার সাথে আমাকে আবার বাড়ি ফিরতে হবে ,উফ অসহ্য কর ৷

আরোশী: সমস্যা কিসের?ওনাকে দেখে যথেষ্ট ভাল মনে হয় ৷

সানা : ভালো না তো ছাই, ওনার কথা ছাড় তুই , সাবধানে থাকিস আর ভালো খবর নিয়ে আসিস আরুপাখি ৷(চোখ মেরে)

আরোশী চোখ গরম করে : সানা আমি কিন্তু তোর ভাবী হই ৷

|
|❤
|

আরমান সাহেব : তোমার কি মনে হয় অভ্র আরূ কি রাজি হবে এত কিছু বলার পর ও ৷

অভ্র : আঙ্কেল আমার মনে হয় আরূ যে এত সহজে রাজী হবে না ,আর তাছাড়াও হয়তো আরিস ওকে আসতে দেবে না, তবুও ওকে যে করে হোক আমি আমার কাছে আনবোই , না হলে আমার নামও অভ্র নয় ৷

আরমান সাহেব : অনেক বড় মুখ নিয়ে তো বলছ তা কাজটা ঠিকঠাক হবে তো?

অভ্র মনে মনে: আপনাকে কি করে বলি আংকেল আমি যা করি সবই আরিস আগে থেকে জেনে যায় , ব্যাপারটা এত সহজ ভাবে বললেও সহজ নয় ৷

অভ্র: আমি যখন একবার বলেছি কাজটা করব তো করবোই না হলে আপনি তো আছেন ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে আসবেন , যতই হোক নিজের মেয়ে বলে কথা বলে হাসতে লাগল ৷

|
|❤
|

আরিশা আর আরুকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে রেখে সানা আর আরাভ দুজনেই বাড়ি যাচ্ছে,,,,,

সানাকে না চাইতেও ওকে অভ্রের পাশের সিটে বসতে হয়েছে যদিও বা ও চাইনি ৷

মাঝ রাস্তায় গিয়ে আরাভ গাড়িটা থামিয়ে দিল,,,,,,

সানা: এ কি আপনি মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালেন কেন ?

আরাভ: আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে সেইজন্য ৷

সানা : দেখুন আমার সঙ্গে আপনার কোন দরকারি কথা নেই ৷ আপনি এখন প্লিজ তাড়াতাড়ি চলুন আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছাতে হবে ৷

আরাভ সানার দিকে খানিকটা ঝুকে গিয়ে: যতক্ষণ না আমার কথা তুমি শুনবে ততক্ষণই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবো না তুমি ৷

সানা একটু ভয় পেয়ে গিয়ে বলল : আপনার ইচ্ছা নাকি?

আরাভ: হমম আমার ইচ্ছা ৷

সানা: জানি প্রত্যেক বারের মতো সেই একই কথা বলবেন যে আপনি আমাকে ভালবাসেন আর আমিও যেন আপনাকে ভালোবাসি এই কথাটাই তো ! যদি এটা ভেবে থাকেন তাহলে খুব বড় ভুল করছেন ৷

আরাভ: আমি কি একেবারেই অযোগ্য যে তুমি আমাকে মানতে পারছো না ৷

সানা: সে উত্তর আমার কাছে নেই ৷

সানার থেকে এমন একটা উত্তর শুনে আরাভের খুব রাগ হলো কারণ পজেটিভ হোক বা, নেগেটিভ যেকোন একটা উত্তর আরাভ শুনতে চেয়েছিল ৷ আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিল…..

আরাভ(মনে মনে): ভালো কথার মেয়ে তুমি না বুঝতে পেরেছি ৷ এবার আমার টেকনিকেই তোমাকে মানাতে হবে ৷ বাঁকা একটা হাসি দিয়ে ৷

|
|❤
|

কলকাতা এয়ারপোর্টে অনেকক্ষণ আগেই প্লেন থেকে নেমেছে ৷ দশ মিনিট হল দাঁড়িয়ে আছে ওরা গাড়িটার জন্য , অপেক্ষা করছে ৷ যদিও বা আরিশ এর আগে অনেকবারই কলকাতা এসেছে ঘুরতে তবে আরূশির কখনো আসা হয়নি তাই সব কিছুই চোখে যেন কেমন নতুন নতুন লাগছে ৷

আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল : ভালো লাগলো কলকাতা?

আরুশি মুখে হাসি নিয়ে: হ্যাঁ ভালো লেগেছে ,আপনি এর আগে এসেছেন?

আরিস : হ্যাঁ এসেছি অনেকবার তবে তোমার সাথে এই প্রথম সুযোগ হয়ে উঠল ৷

ওরা কথা বলতে বলতেই গাড়ি চলে এল, ওরা দেরি না করে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেল ৷

বেশ অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি চলছে , আরূর খুব বিরক্ত লাগছে এতক্ষণ ধরে বসে থাকতে ৷

আরুশি আর না পেরে আরিশ কে জিজ্ঞাসা করল: আর কতক্ষণ লাগবে?

আরিশ : এখনো বেশ অনেকক্ষণ , তোমার যদি ঘুম পায় তো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে পারো৷

আরুশি একটু ইতস্তত বোধ করলেও না করতে পারলো না তাই আরিশের কাধে মাথা রাখল আর কখন যে চোখ দুটো এক হয়ে এসেছে বুঝতেই পারলো না ৷

আরূকে সাইট থেকে জড়িয়ে ধরল আরিশ যাতে গাড়ির ঝাকুনি তে ওর ঘুম ভেঙে না যায় ৷ প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে আছে আরিশ, হয়তো এ দেখার যেন কোন শেষ নেই…..

ঘুম ভাঙতেই কোন একটা তীব্র আওয়াজ পেয়ে আরুশির মনে কৌতুহল যেনো আরও বেড়ে গেল ৷এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছিল তাই কিছু জানতেই পারেনি ৷

আরিশকে কোথাও দেখতে পেল না কিন্তু তার থেকেও বড় কৌতুহল যে আওয়াজটা আসছে কোথা থেকে অনেকটা ?
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতই শুনতে তাই তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল চারিদিকে সমুদ্র আর প্রচন্ড ঢেউ পাড়ে এসে আছড়ে আসার জন্য তার তীব্র আওয়াজ ৷

ঘুম থেকে উঠে এরকম যে একটা দৃশ্য দেখতে পাবে আরুশি সেটা হয়তো ও ভাবতেই পারেনি ….

ওর রুমটা সমুদ্র থেকে সামান্য একটু দূরেই,দুই মিনিট হাটতেই সেখানে যাওয়া যাবে….

আরোশী আনন্দটা উপভোগ করার জন্য দুহাত মেলে জোরে জোরে প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে তখন আরিস পিছন থেকে এসে আরুশির কোমরটাকে জরিয়ে ধরে ওর মুখে কিস করে বলল: পছন্দ হয়েছে আরুপাখি?

আরুশি : ভীষণ ৷ কিন্তু আপনি আমাকে আগে বলেননি কেন?

আরিশ : আগে বললে এটা কি আর সারপ্রাইজ থাকতো !

আরোশী এবার আরিশ এর দিকে ফিরে হুট করেই আরিশের গালে হালকা করে একটা কিস করে বলল : থ্যাংক ইউ সো মাচ ফর দিস সারপ্রাইজ বলে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে বিচের ধারে চলে গেল ৷

আরশি ও আরুশির পিছন পিছন গেল ৷ভালোবাসার মানুষটাকে কখনো একলা হতে দেবে না ও, সব সময় নিজের সাথে আগলে আগলে রাখবে ৷

জলের মধ্যে পা ডুবিয়ে হাতে হাত রেখে হাঁটছে আরূ আর আরিশ ৷ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা আর সমুদ্রের ঢেউ গুলো ক্রমশ পায়ের ছাপগুলোকে মিলিয়ে দিচ্ছে তার নোনা জল দিয়ে….

আরুশি: আচ্ছা গাড়ির ড্রাইভারকে কি বাবা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন এখানে আসার জন্য?

আরিশ: আসলে বাবাকে আমিই বলেছিলাম সবকিছু একটু অ্যারেঞ্জ করার জন্য , আর বাবা কে কথাটা বলতেই বাবা একেবারে রাজি হয়ে গেল ৷

আরুশি: তাহলে আপনার অফিসের কাজ ?

আরিশ হাসতে হাসতে : ওটা তো একটা বাহানা তোমাকে এখানে আনার জন্য , আর প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য ৷ উনাকে যদি এই কথাটা না বলতাম তাহলে এই সিচুয়েশনে উনি আমাকে কখনই ছুটি দিতেন না ৷

আরু: সত্যিই তো আপনার ফাইনাল এক্সাম আর আপনি ছুটি নিলেন কেন?

আরিশ: আমার এই বউটার জন্য, বড্ড ভালোবাসি যে আমার এই বউটাকে ৷

আরুশি লজ্জা পেয়ে কথা ঘুরানোর জন্য বলল : আচ্ছা জায়গাটা কিন্তু খুব সুন্দর কক্সবাজার এর মতোই ৷

আরিস : হ্যাঁ জায়গাটা খুব সুন্দর , এটা হল দীঘা ৷ আরো সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে দেখার মত, সব তোমাকে দেখাবো ৷

আরুশি : পরে দেখব সব আগে আপনাকে একটু ঢেউ এ ভিজিয়ে দিই ৷ এই বলে ধাক্কা মেরে আরিসকে জলে ফেলে দিল , তবে আরিশ ও ওর হাত ধরে থাকার জন্য আরুশিকে নিয়েই পড়লে ৷ জলে পড়ে দুজনেই হাসতে লাগল….

সমুদ্রের ঢেউ এসে দুজনকেই ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে , মিলে মিশে যাচ্ছে সবকিছু, একাকার হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসায় ৷ হয়তো শুরু হতে চলেছে কোন এক নতুন ভালোবাসার অধ্যায়….

চলবে,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-১২+১৩

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:12
#Suraiya_Aayat

ভিতরে থাকা লোকটা আরুকে গাড়ির ভিতরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে দিল ৷ ড্রাইভ সিটে বসে থাকা লোকটাকে আরু দেখে চিনতে পারল না , ওর গলা যেন আরো শুকিয়ে আসছে, না জানি লোকটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আর তার উদ্দেশ্যই বা কি কিছু জানে না ও ৷ আরু ইচ্ছামতো কিলঘুসি মারছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য৷

আরূ: আপনি গাড়ি থামান, না হলে আমি কিন্তু এক্ষুনি গাড়ি থেকে ঝাঁপ দেবো বলে দিলাম ৷

লোকটা: সেই ভুলটা একদম ই করবেন না ৷

কথাটা বলতেই আরূ জোরে দুম করে আরো একটা কিল বসালে লোকটার কাঁধ বরাবর , লোকটার রীতিমতো খারাপ অবস্থা, প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে ৷

শেষমেষ না পেরে সিটের পাস থেকে ক্লোরোফর্মের বোতলটা নিয়ে আরুর মুখের সামনে স্প্রে করতে.ই কিছুক্ষণের মধ্যেই আরূ অজ্ঞান হয়ে গেল , আর তার সঙ্গে লোকটাও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ৷ এত কিল-ঘুসি লোকটাকে আরু মেরেছে তা সারা জীবনেও এত কিল-ঘুসি পাইনি সে ৷

|
|💖
|

চেয়ারে হাত-পা অবস্থায় আরূকে বেঁধে রেখেছে, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷

এতক্ষণে গায়ের ভিজে জামা কাপড় গুলোও প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে এসেছে , কতক্ষণ যে ওখানে পার করল তার হিসাব নেই ৷ জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করেছে ,জোরে জোরে চেঁচাতে লাগল আরূ ৷

হঠাৎ একটা গায়ের উপর দিয়ে আরশোলা যেতেই আরূ আরো বেশীকান্না করতে লাগলো ৷

আরূ: প্লীজ হেলপ , কেউ আমাকে বাঁচান ,আমি বাড়ি যাব , প্লিজ কেউ হেল্প করুন , আমি ওনার কাছে ফিরে যাবো , প্লিজ হেল্প বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল৷

হঠাৎ কারও পায়ের আওয়াজ শুনে কান্নার মাত্রাটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল আরূর ৷

হঠাৎ মুখের উপরে আলো পড়তেই সামনে তাকাতেই চমকে গেল কারণ সামনে আরিস রয়েছে আর তার পাশে একজন আরিসের সমবয়সী ছেলে , তাকে অবশ্য আরূ কখনো দেখেনি তবে সেই ওকে এখানে এনেছে এটুকু মনে আছে ৷

তবে আরিসের হাতে ধারালো ছুরির টা দেখে আরুর প্রাণ যায় যায় অবস্থা ৷

আরূ : আপনি এসে গেছেন! প্লিজ এখান থেকে আমাকে নিয়ে যান , আর এই লোকটা আমাকে এখানে এনেছে , আপনি ওনাকে মারূন ধরে ৷ আর আমি আর কখনও আপনার কথার অবাধ্য হবো না প্লিজ আমাকে নিয়ে জান এখান থেকে ৷

আরিস আরূর কথার কোন উত্তর দিল না , জোরে জোরে ভয়ঙ্কর একটা হাসি দিতে লাগল তা শুনে আরূর প্রাণ যায় যায় অবস্থা , ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না আরিশ কেন এমন পাগলামো করছে ৷ আর ওর সামনে আরূ বসে আছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাও কেন আরিশ ওকে বাচাচ্ছেনা ?

আরূ ভয়ে ভয়ে: আপনি এভাবে হাসছেন কেন আর আপনার হাতে ছুরি কেন?

আরিশ এবার ধীর পায়ে ছুরিটা হাতে নিয়ে আরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ তারপর ও আরুর গলায় ছুরি ঠেকাতেই আরূ হাউ হাউ করে কেঁদে দিল ৷

আরূ: আমাকে মারবেন না প্লিজ , আপনি যা বলবেন আমি তাই করব তবে ছুরিটা হাত থেকে ফেলে দিন৷ আমার খুব ভয় করছে , আমি আপনার থেকে আপনার জীবন থেকে চলে যাব তবুও আমাকে মারবেন না প্লিজ ৷ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো গলায় আটকে আসছে তা ও কে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তো কথাগুলো বলতেই হবে , যদি এতে আরিশের ওর প্রতি মায়া হয় ৷

আরিশ ছুরিটা আরুর গলায় জোরে চেপে ধরল,ছুটি ধরা জায়গায় মাংসটা সামান্য কেটে গিয়ে একটু রক্ত গড়িয়ে পড়তেই আরূর চোখের জল যেন সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেল ৷

আরিশ: সাহস হয় কি করে তোমার আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার , কোন অধিকার নেই তোমার তা করার ৷ তোমাকে সারা জীবন আমার সাথেই থাকতে হবে , সে তুমি চাও আর না চাও, এই কথাটা আমাকে যদি আর দুবার বলেছ তবে আর আসত থাকবে না তুমি ৷

আরু : আমি আপনার সাথেই থাকবো , আমাকে প্লিজ ছাড়িয়ে দিন এখান থেকে, ৷

আরিশ আগের অবস্থান থেকেই বললো : আজকে তো তুমি শেষ বলে ছুরিটা আরেকটু জোরে চেপে ধরতেই আরূ অজ্ঞান হয়ে গেল তারপর কি হল ওর আর মনে নেই ৷

|
|💖
|

অর্ধেক রাতে নিজের উপর সামান্য কিছুটা ভারী ভারী বলে মনে হতেই আরূ চোখ খুললো তারপরে ও কোথায় সেটা যখন ও মনে করতে লাগলো তখনই মনে পড়ে গেল আরিস এর সেই ভয়ঙ্কর চেহারার কথা,
কথাটা ভাবতেই জোরে চেচিয়ে উঠল আরূ৷

আরিসের ঘুম ভেঙে গেল , ও হুড়মুড় করে উঠে পরল৷

আরিশ : কি হয়েছে আরূপাখি এমন করছ কেন?

আরিশ কে দেখে যেন আরূর ভয়টা দ্বিগুণ হতে লাগলো , আরিশকে ধাক্কা দিল সাথে সাথে ও নিচে পড়ে গেল ৷

আরু: ছোবেন না আপনি আমাকে , আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন ৷ কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার যে আপনি এরকম করছেন আমার সাথে! আজ আমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে ,?আর আমাকে এখানেই বা কে আনলো?

আরিশ হাতের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল: আমি এনেছি তোমাকে, এনি প্রবলেম !

আরূ: আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না এক্ষুনি চলে যাব ৷ বলে যেই দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে যাবে তখনই খপ করে আরিশ আরূর হাত ধরে ফেলল৷

আরুশি : আপনি আমাকে ছাড়ুন , আমি আপনার সাথে থাকবো না আপনি আমার ক্ষতি চান ৷

আরিশ আরুশির হাত জড়িয়ে ধরে ওর সাথে মিশিয়ে নিল তারপরে গভীর আর শান্তকণ্ঠে আরুশিকে বলল : আই লাভ ইউ আরুপাখি ৷

আরূ আরিশ কে ধাক্কা মেরে : আপনি আমাকে ভালোবাসেন না , যদি বাঁসতেন তাহলে ছুরিটা ওভাবে আমার গলায় ধরতে পারতেন না ৷

আরিশ এবার আরুশিকে কোলে তুলে নিল ৷

আরিশ আরুকে নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল আর সাথে একটা blanket নিল ৷

আরূশি : আপনি এবার আমাকে ব্যালকনি থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাই না ! আমাকে নামান, আমি আর এক মুহূর্তও আপনার সাথে থাকবো না ৷

বেলকুনিতে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসে আরুশিকে কোলে নিল আরিশ ৷

কি সবসময় পালানোর কথা বল হ্যাঁ ? জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি , আর তোমার মনে সন্দেহ থাকতেই পারে আমাকে নিয়ে, অবশ্যই আমি তা তোমাকে বলব ৷

আরুশি: আমি আপনার কোন মনগড়া কথা শুনতে চাই না আপনি আমাকে ছাড়ুন ৷

আরিশ ধমক দিতেই আরূ একদম চুপ হয়ে গেল,

আরিশ : এবার আমি যা বলবো তুমি শুধু শুনবে৷

আরিশ : তোমাকে যে কিডন্যাপ করে নিয়েছিল সে আর অন্য কেউ নয় ও হচ্ছে আর আমার ফ্রেন্ড আরাভ ৷ তোমাকে আমি বলেছিলাম যে কলেজে শেষে দাঁড়াতে কিন্তু তুমি কি করলে না, দাড়াওনি, আমাকে উপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি এসেছিলে ৷ খবরটা আমার কানে পৌঁছেছে ঠিকই তবে অফিসের একটা ইমপর্ট্যান্ট কাজ থাকার কারণে সঙ্গে সঙ্গে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না তাই আরাভের অফিস ছুটির সময় ওকে বললাম যে মাঝ রাস্তা থেকে তোমাকে যেন গাড়িতে তুলে নেয়, নিয়ে ওখানে তোমাকে বেঁধে রাখে , যতক্ষণ না আমি আসছি ততক্ষনে যেন তোমাকে না ছাড়ে ৷

আরোশী : এতে আপনার লাভ কি হল?

আরিস: এতকিছু করার কারন তোমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য , আর এটা বোঝানোর জন্য যে আমি যা বলব সেই কথাটা যদি তুমি না শোন তবে প্রত্যেক পদে পদে তুমি বিপদে পরবে ৷ আর সব সময় তো তোমাকে রক্ষা করার জন্য আমি সেখানে থাকবো না তাই আমি যা বলব তার বাইরে গিয়ে এক পা-ও চলবে না তুমি ৷ তোমার অজান্তেই তোমার অনেক বিপদ আছে যা হয়তো তুমি জানোনা , তোমাকে আমি হারাতে দেব না কখনো নিজের থেকে ৷ (বলে ওকে বুকে জড়িয়ে নিল)

আরুশি চুপচাপই রইল শান্ত হয়ে কারন এত কিছু জিনিস আরিশ ভেবে করেছে তা ওর ধারণার বাইরে….

সেদিনের রাতটা ওভাবে আরিশের বুকেই কাটাল আরূ ৷

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে,,,,,,

আফজাল সাহেব : আরিশ আর একমাস পরেই তো্মার ফাইনাল exam , তা কী ডিসিশন নিলে? এরপর কি করবে আই মিন আমি বলতে চাইছিলাম যে আমার অফিস সামলাবে নাকি বিদেশে চলে যাবে?

আরিশ : সেরকম কোন প্ল্যান নেই তবে ইচ্ছা আছে যে বিদৈশে গিয়ে প্রফেসরি করার,৷ কলেজ থেকে যে ফাস্ট হবে তাকে সুযোগটা দেওয়া হবে এখন সবকিছুই ডিপেন্ড করছে রেজাল্টের উপর , দেখি কি হয় ৷

আরিসের মা: অফিসের এত কাজের প্রেসার তাছাড়া কলেজেও যেতে পারছিস না , সবকিছু ম্যানেজ করতে পারবি একা?

আরিশ একটা মুচকি হাসলো : আমি জানিনা ৷ আমি শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি ৷

সানা : ভাইয়া ধর তুই গোটা ইউনিভার্সিটি টপার হলি,আর হবিও আমি কেন সবাই জানে, তাহলে সে সুযোগ পাবি তুই ,তখন কি তুই চলে যাবি?

আরিস : ইচ্ছা তো আছে দেখি কি হয় ৷

সানা : তাহলে আরূর কি হবে ? আই মিন ওর পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাব, তোর সঙ্গে যদি যায়৷

আরিস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাঁকা চোখে দেখে বলল: আমি কি একবারও বলেছি যে আমার সঙ্গে ওকে নেব ! আর তাছাড়া আমি ওকে নিয়ে যেতে চাইলে ও যাবে না তাই না আরুপাখি ?

আরোশী মাথা নিচু করে চুপ চাপ খাচ্ছে কোন কথা বলছে না, কিই বা বলবে ? ওর তো এখনও আরিশের প্রতি কোন অধিকারবোধ জন্মায়নি যে আরিশকে জোর গলায় বলবে যে আমি আপনার সঙ্গে যাব৷ অধিকার দেখালে বলত ৷

আরিশ : যার ইচ্ছা হবে যাবে , আর যার ইচ্ছা হবে যাবে না , বলে ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করে ঘরে চলে গেল…..

কিছুক্ষণ পরে ঘরে আসলো আরু দেখলো আররিস টাই পড়ছে ৷

আরিশ দেখল আরুশি কিছু বলল না , হয়তো আরিশের বলা কথাগুলোর কারনে কিছুটা হলেও খারাপ লেগেছে….

অনেকক্ষণ ধরে আরুশি চুপচাপ বসে আছে , কেউ কিছু বলছে না দেখে আরিশ নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বলে উঠলো : আজকে তোমার ক্লাস নেই?

আরোশী শান্তকণ্ঠে : আছে ৷

আরিস : তাহলে এখনো রেডি হওনি কেন?

আরূশি : আমার আজকে যেতে ইচ্ছা করছে না তাই আমি যাব না ৷

আরিশ মনে মনে: কথাটা ম্যাডামের মনে লেগেছে দেখেছি , বেশ ভালো ৷
তুমি না চাইলেও যেতে হবে , আমি বলছি তুমি যাবে তো যাবে ৷

আরোশী বিরক্ত হয়ে : আমি বললাম তো যাব না আপনি কেন আমাকে জোর করছেন?

আরিস : যাবে তার কারণ প্রিন্সিপালের থেকে তুমি এক সপ্তাহের ছুটি নেবে সেই কারণে ৷

আরোশী অবাক হয়ে: প্রিন্সিপালের থেকে আমি কেন ছুটি নেব?

আরিশ : সেটা তোমার এখন না জানলেও চলবে, আগে রেডি হয়ে এস ৷

আরুশি: আমি যাব না বলেছি তো যাবো না দেখি আপনি কি করতে পারেন ৷ বলে মুখ গম্ভীর করে বসে রইল ৷

আরিশ : তাহলে এখন দেখছি আমাকেই ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিতে হয় ৷

আরূ তাও আগের মতো করেই বশে আছে তা দেখে আরিশ খানিকটা অবাক হলো ৷

আরিশ: আসলে না আরুপাখি আমার এখন খুব রোমান্স রোমান্স পাচ্ছে , এসো এখন বাকি কাজটুকু সেরে ফেলি ,অফিসে পরেও যেতে পারব ৷

কথাটা শোনামাত্রই আরুশি আর এক মিনিটও দেরি করল না , একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল৷

আরিশ : শেষমেশ কাজ হয়েছে ৷

চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:13
#Suraiya_Aayat

আরিশ আরুকে কলেজে পৌছে দিচ্ছে আর সেখান থেকে ও অফিসে যাবে ৷ যেহেতু এক সপ্তার ছুটি নিতে হবে সেই কারণে সমস্ত কাজ আগে থেকেই করে রাখার চেষ্টা করছে…..

সানার আজকে একটা বার্থডে পার্টি আছে তাই সেখানে অ্যাটেন্ড করতে যাবে বলে কলেজে আসেনি, না হলে আজকে সানা আর আরু দুজনে একসঙ্গে আসত ৷ আরিশের সাথে আসার কোনো ইচ্ছা আরূর ছিল না ৷

গাড়ি আপন গতিতেই চলছে, কেউ কোনো সাড়া শব্দ করছে না ৷ সকাল থেকে আরূ বেশ চুপচাপ ৷.আরিশ ভেবেছিল যে আরূ হয়তো কৌতুহলী হয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করবে যে কেন এক সপ্তাহ ছুটি নিচ্ছে? ওরা কোথায় যাবে ? বা অন্য কোন ব্যাপার হয়েছে কী? কিন্তু সে সমস্ত কোন উত্তেজনাই আরূর মধ্যে নেই, বরং আরো যেন বেশি শান্ত হয়ে গেছে ৷
আরিশ যতদূর জানে আরূ অত্যন্ত শান্ত হলেও প্রাণোচ্ছল একটা মেয়ে , আনন্দটাকে সঠিক সময় ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে ও ৷ তবে কী সকালের বলা কথাটা কী খুব বেশি ইফেক্ট করেছে!

আরিশ গলা পরিষ্কার করে বলল: কালকে কটা কিল ঘুষি মেরেছিলে তুমি আরাভকে?

আরিশের কথা শুনে আরু আরিশের দিকে তাকালো৷

আরিশ : আরাভ আমাকে বলেছে তুমি ওকে অনেক কিল ঘুষি মেরেছ, বেচারা তো আজকে ব্যথায় উঠতেই পারছেনা ৷ আচ্ছা এতো কিল ঘুসি মারার কি দরকার ছিল ?

আরু শান্ত দৃষ্টি আরিশের উপর নিক্ষেপ করে আবার পুনরায় বাইরের দিকে তাকাল ৷ ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি হচ্ছে,কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি মুখের উপর আছড়ে পড়তেই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিল আরূ ,হয়তো একঘেয়েমি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এই প্রকৃতির মাঝে থেকেই ৷
আরিশ শুধু আরুকে দেখছে কিন্তু আরুকে আটকাচ্ছে না কারণ আরূর বলা সেই কবিতা আরিশ এর অজানা হলেও আরুর প্রতি ওর অনুভূতিগুলোও ঠিক আরুর বলা সেই কবিতার মতোই ৷

কিছুক্ষণ বৃষ্টির পর আকাশটা পরিষ্কার হয়ে গিয়ে বৄষ্টিটা যেন কমে গেল ৷ আরূ তো এরকম একটা বৃষ্টিভেজা দিনই চেয়েছিল৷ হয়তো প্রকৃতিও আজকাল ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সকলের মতই ৷ এই সমস্ত ভাবনা ওর মনে আসছে তবে কেন আসছে সে প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা ওর এখনো জানা নেই ৷

আরাভের প্রসঙ্গ তুলল আরিশ জাতে আরূ একটু হলেও কথা বলে, কিন্তু আরূ যে এভাবে ওর ঈশারায় তিরটা আরিশের বুকে নিক্ষেপ করবে তা ভাবেনি আরিশ৷ কিছুটা হলেও অদ্ভুত লাগল ওর যে ব্যাপারটা নিয়ে আরূ কিছু বলল না….

কলেজের সামনে আসতেই গাড়িটা থামিয়ে দিল আরিশ ৷

দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল ৷

গাড়ি থেকে নামতেই আরু আরিশ এর দিকে না তাকিয়েই বলল : আপনার ফ্রেন্ড কে বলে দেবেন যে আমি আসলে বুঝতে পারিনি উনি এতটা ব্যাথা পাবেন ৷ আসলে একটা মেয়ের সম্মান তার কাছে অনেক বড় জিনিস , আর সেই সম্মানে কেউ আঘাত করতে চাইলে একটা মেয়ে তার প্রতিবাদ করবেই আর সেই মুহূর্তে আমিও তাই করার চেষ্টা করেছি , অনেক কিল ঘুষি মেরেছি নিজের আত্মরক্ষার জন্য, তখন হয়তো এগুলো আমার মাথাতেও আসেনি যে আপনি এত কিছু করতে পারেন ৷ তাই আপনার ফ্রেন্ড কে বলে দেবেন কালকের ব্যবহারের জন্য আমি খুব দুঃখিত৷ বলে আরু আরিশের দিকে একবারও না তাকিয়ে কলেজে ঢুকে গেল….

কথাগুলো শুনতে আরিশ এর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল , অদ্ভুত এক কষ্ট ছিল আরুর বলা কথা গুলোর মধ্যে , তা যে অভিমান থেকে ও অরিস কে কথাগুলো বলেছে সেটা বুঝতে পারল আরিশ ৷

আরিশ এবার মনে মনে ভাবছে : সকাল বেলা কি আমার বলা কথাটা বড় বেশি ইফেক্ট পরেছে আরুপাখিকে?এত বেশি না বললেও কি পারতাম! তাছাড়া আমি তো ওটা মজা করেই বলেছিলাম তা আরুপাখি কেন বোঝেনা!
এটা বলে অফিসে চলে গেলো আরিশ ৷

|
|❤
|

অভ্র: আঙ্কেল যত তাড়াতাড়ি হোক আপনি আরূশিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন না হলে আমার কাজটা আটকে থাকবে, দূজনেই ফেসে যাব ৷মনে রাখবেন দু’জন ই কিন্তু সমান টাকা নিয়েছি ৷

ইমরান সাহেব: চিন্তা করোনা , আমি যখন বলেছি আরুকে তুমি পাবে তখন তুমি পাবে ৷ মাঝখানে ওই আরিশ বলে ছেলেটা এসে সব কিছু গন্ডগোল করে দিল ৷

অভ্র: আজকে ওর জন্য আমার এই অবস্থা, গায়ের ব্যথা এখনো যায় নি ৷ সেদিন শুধু আমি নেশার ঘোরে ছিলাম তাই না হলে ওখান থেকে ওকে বেচে ফিরতে দিতাম না ৷ একমাত্র পথের কাঁটা ও , একেবারে শেষ করে দিতাম ৷

ইমরান সাহেব: এসব কথা এখন তুমি ভাবতে যেওনা, আগে ভাবো কি করে আরূকে ওই ছেলেটার কাছ থেকে আনা যায় না হলে তোমার আমার দুজনের ই বিপদ ৷

অভ্র মনে মনে : আরু উনার নিজের মেয়ে তাও উনি নিজের মেয়েকে জেনে শুনে আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন কেন? ব্যাপারটা কি! সেই কারণটা তো উনি আমাকে বলেননি ৷ সে যাই হোক আমার সঙ্গে তো উনিও রয়েছেন সেটাই বড় কথা ৷

ইমরান সাহেব: কি এত ভাবছো অভ্র? ভয় পেয়ে গেলে নাকি?

অভ্র: ভয় পাইনি আঙ্কেল , ভাবছিলাম যে আরু আপনার মেয়ে তাও আপনি আপনার নিজের মেয়েকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কারণটা কি আঙ্কেল?

ইমরান সাহেব :কারণ তো আছেই ৷ ওর জন্য আমি আমার বাবা সমস্ত প্রপার্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছি৷

আরমান সাহেব : আমার বাবা বলেছিলেন যে তার মৃত্যুর আগে উনি ওনার সমস্ত প্রপার্টি আমার নামে করে দেবেন ৷ অমাকে না দিলেও আহান কেও সব দিলে প্রপার্টি সব আমাদেরই থাকতো, কিন্তু আমার বাবা আরুকে খুব ভালোবাসতেন তাই উনি উনার প্রপার্টির সমস্তটাই আরুর নামে করে দিয়েছেন যখন আরুর ছয় বছর বয়স তখনই দলিল তৌরি হয় ৷আর দলিলে লেখাই আছে 20 বছর হলে সবকিছু আরুর ৷ সেটা এখনো কেউ জানে না আমি ছাড়া ৷ তাই সব সম্পত্তি থেকে আমি তখন বঞ্চিত হয়েছি , আহান বা আরূ বা আরুর মা কেউই এই সমস্ত কথা জানেন না, তারপর থেকে আমার আরুর উপরে রাগ ৷ সব থেকে বড় কথা হলো আরূ আমার নিজের মেয়ে নয় , ওকে আমরা কুড়িয়ে এনে মানুষ করেছিলাম ৷ যখন আমি চাকরি সূত্রে ধানমন্ডিতে থাকতাম তখন আরূকে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম আমরা আহান তখন খুব ছোট তাই বোঝার বয়স ছিল না ৷ আর অরুর মায়ের মেয়ের খুব শখ ছিল তাই উনি আরু কে ফেলে আসতে পারেননি, মায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন ৷ 4 বছর পর আরুকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেই বাবা ভাবলেন আরু হয়তো আমাদেরই মেয়ে ৷ আরুর প্রতি ওনার ভালবাসাটা আলাদাই ছিল, কিন্তু তাই বলে একটা বাইরের মেয়ের নামে এভাবে নিজের সব সম্পত্তি লিখে দেবেন তা মানতে পারিনি, সম্পত্তি আমাকে দেননি ৷ আর আহানও হয়েছে বাবার মত, সারাক্ষন আরূকে আগলে আগলে রাখে ৷

অভ্র : কিন্তু তাহলে তো ওকে ছেড়ে দিলে তো আপনি সব প্রোপার্টি থেকে বঞ্চিত হবেন !

আরমান সাহেব : দলিলে লেখাই আছে আরূর 20 বছর পূর্ণ হলেই এই সমস্ত প্রপার্টি আরুর নামে চলে যাবে , আর তখনই আরুর থেকে সব প্রোপার্টি আমি নিজের নামে করে নেব ৷
আরুর 20 বছর হতে আর কিছুদিন মাত্র বাকি আছে, ভেবেছিলাম আমার হাতের মুঠোয় সব , কিন্তু সব একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল ৷

অভ্র:তাহলে আঙ্কেল আরুকে আপনাকে মেনে নিতে হবে এখন না হলে আপনি তো কোন প্রপার্টি পাবেন না , আর ও আপনার থেকে দূরে দূরে থাকলে কিছুই পাবেন না আপনি ৷ যে করেই হোক আরু কে এই বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করূন ৷

আরমান সাহেব: ঠিকই বলেছ, দেখছি কি করা যায়৷

|
|❤
|

আরিশ একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইল চেক করছে তখনই দরজায় নক করতেই আরিস বলে উঠলো…

আরিশ: ইয়েস কাম ইন ৷

জেরিন: sir ল্যান্ডলাইনে আপনার কল এসেছে৷

আরিশ: কোথা থেকে?

জেরিন: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ৷

আরিশ: কে ফোন করেছেন জানো?

জেরিন:বললেন যে কলেজের প্রিন্সিপাল ৷

আরিশ: ওকে তুমি যাও আমি দেখছি ৷

জেরিন : ওকে স্যার ৷ বাই দা ওয়ে স্যার কফি?

আরিশ : একটা ব্ল্যাক কফি আনো , উইথ আউট এনি সুগার ৷

জেরিন জানত যে আরিশ এই কফিই খাবে তাও একবার জিজ্ঞাসা করল আরিশ এর মুখ থেকে কথা শুনতে ৷ আরিশের কথাগুলো শুনতে খুবই ভালো লাগে জেরিনের ৷ আরিস এর উপর এক দফা ক্রাশ খেয়ে বসে আছে জেরিন তা আরিশের অজানা ৷

আরিশ মনে মনে: কলেজে কি কোন প্রবলেম হলো নাকি আরুপাখির কোন সমস্যা হয়েছে! যদি তাই হতো তাহলে আমাকে পার্সোনালি ফোন না করে ল্যান্ডলাইনে কেন ফোন করবে? এই সব ভেবে তাড়াতাড়ি করে প্রিন্সিপালের কাছে ফোন করল আরিশ৷

আরিশ: হ্যালো স্যার ৷ হাউ আর ইউ ৷

প্রিন্সিপাল : আই এম ফাইন আরিশ ৷ তুমি অনেকদিন তো কলেজে আসছো না শুনলাম sir রা বলছিলেন ৷ অফিসে জয়েন করেছ তাও শুনলাম ৷ আজকে কী একবার সময় হবে অফিসের পর কলেজে আসার?

আরিশ: অফ কোর্স অফ কোর্স ৷অফিস শেষে আমিও ভাবছিলাম আপনার সঙ্গে দেখা করবো , কিছু কথা ছিল আপনার সাথে ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : ভেরি গুড ৷ আচ্ছা তাহলে তাড়াতাড়ি এসো ৷

আরিশ: ওকে স্যার ৷

আরিশ ফোনটা রাখল রেখে ভাবতে লাগল যে হঠাৎ প্রিন্সিপাল স্যার ওকে ডাকলেন কেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আরিশ ৷

|
|❤
|

প্রিন্সিপালের রুমে,,,,,

আরিশ বসে আছে আর তার সঙ্গে পাশে বসে আছে আরূ , ওর মুখে কথা নেই, সেই সকাল এর মতোই নিশ্চুপ আর বিরাট অভিমানের ছায়া যেন রয়েছে ওর মুখে ৷

আরুশির দিকে একবার তাকিয়ে প্রিন্সিপালের দিকে আবার মনোযোগ দিল আরিশ ৷

আরিশ প্রিন্সিপালের দিকে তাকাতেই দেখলো প্রিন্সিপাল মুচকি মুচকি হাসছেন ৷ ওনার হাসি দেখে কিঞ্চিত লজ্জায় পড়ে গেল আরিশ, তার মানে এতক্ষণ উনি লক্ষ্য করেছেন ৷

আরিশ পরিস্থিতি সাম্লানর জন্য : আপনি কিছু বলছিলেন ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : ও হ্যাঁ, যেটা বলতে চাইছিলাম, শুনলাম তুমি নাকি এক সপ্তাহের ছুটি নিচ্ছো ৷বাট সামনে তো তোমার এক্সাম ৷

আরিশ: দরকারে ছুটি নিতে হচ্ছে ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : কাজটা কি খুব ইম্পর্টেন্ট?

আরিশ:একচুয়ালি কলকাতা তে একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং থাকার জন্য সেখানেই যেতে হচ্ছে ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : আরুশি ও বললো যে এক সপ্তাহ ছুটি নেবে, ও না হয় ফার্স্ট ইয়ার , ওদের ছুটি নিতে সমস্যা নেই কিন্তু তোমার তো এবার পি.এইচ.ডি র ফাইনাল , একবার ভেবে দেখতে পারতে ৷

আরিশ মুচকি হেসে : চিন্তা করবেন না আমি ম্যানেজ করে নেব ৷ বিশ্বাস রাখতে পারেন , কলেজের নাম খারাপ করবো না ৷

প্রিন্সিপাল স্যার মুচকি হাসি দিয়ে: সে বিশ্বাসটুকু আছে আমার তোমার উপরে , সেই কারণে ছুটিটুকু দিচ্ছি তবে হ্যাঁ ঘুরে এসে যেন পড়াশোনায় মনটা থাকে৷

আরিশ: অবশ্যই স্যার ৷

প্রিন্সিপাল : কংগ্রাচুলেশন ৷

আরিস : ফর হোয়াট স্যার?

প্রিন্সিপাল স্যার : এইযে তুমি আর আরুশি বিয়ে করেছ সে নিউজটা শুনেই কংগ্রাচুলেশন দু’জনকেই৷

আরিশ : থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, তবে আরু কিছু বলল না চুপচাপই রইল ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : আরুশি যে চুপচাপ , কিছু বলছে না ৷

আরোশী কিন্তু কিন্তু করে : একচুয়ালি স্যার আমি আসছি আপনারা কথা বলুন ৷ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : মেয়েটা লজ্জা পেয়ে গেল আমার কথা শুনে, আমারই ভুল,ওর সামনে বলা উচিত হয়নি আমার এটা ৷

আরিশ: ইটস ওকে স্যার ৷

তারপরে স্যারের সঙ্গে টুকটাক কিছু কথা বলে বেরিয়ে আসলো আরিশ ঘর থেকে ৷আরুর অভিমানগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেটা প্রিন্সিপাল বুঝতে না পারলেও আরিশ ঠিকই বুঝতে পেরেছে…

আরিশ : তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না আরুপাখি, সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রিন্সিপালের রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে আরিশ থেমে গেল৷

মেঘা: আরিশ ভাইয়া কেমন আছো?

আরিশ : এই ভালো , তুমি কেমন আছো?

মেঘা : এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো আছি ৷ শুনলাম আপনার আর রাইসার বিয়ে পরের মাসে৷ আই মিন আপনার এক্সামের পর ৷

আরিশ অবাক হয়ে : তোমাকে এসব কে বলল?

মেঘা : কেন রাইসাই তো বলল যে আপনার সাথে নাকি ওর বিয়ে তাই ও বাংলাদেশ ব্যাক করছে ৷

আরিশ মনে মনে : এই মেয়ে বিদেশে থেকেও আমার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে , আমাকে ঠিক ফাসিয়েই ছাড়বে আরুপাখির কাছে ৷

আরিস : একচুয়ালি তুমি যা ভাবছো সেটা নয়৷

মেঘা : থাক ভাইয়া আপনাকে আর বলতে হবে না বুঝতে পারছি আপনি লজ্জা পাচ্ছেন ৷

আরিস : না না, তুমি বুঝতে পারছ না আমি কি বুঝাতে চাইছি ৷

হআরিস অনেকবারই মেঘাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও মেঘা এমন ঘাড়তেড়া যে ও রাইসা কথাটাকে বিশ্বাস করছে আর আরিশের টা নই৷

আরিশ মনে মনে : আচ্ছা মুশকিল , এই মেয়েকে আমি এখন কি করে বোঝাই ৷ এ কে বোঝানো আমার কাম্য নয় ৷

আরিস : আচ্ছা মেঘা আমি এখন আসি , আমার লেট হচ্ছে বলে তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে গেল৷

তাড়াহুড়া করে গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে বসতেই পাশে তাকিয়ে দেখল আরুশি নেই , পিছনের সিট টাও চেক করে দেখল যেম নাহ ওখানৈও আরুশি নেই তাহলে আরুশি কোথায় গেল ?

আরিশ রেগে গিয়ে :আজকেও কি বাড়ি চলে গেছে!আগের দিন এত কাণ্ড করার পর আজকেও মেয়েটার শিক্ষা হলো না , আমার কথার অবাধ্য হয়ে ঠিক চলে গেছে , আজকে বাড়িতে যাই তারপর মজা দেখাচ্ছি , আমার কথা না শোনার শাস্তি আজকে দেব ৷

এদিকে আরুশি আরিশের জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ ধরে ৷আরিশ আসছে না দেখে আরু গাড়ি থেকে নেমে দেখল যে দূরে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে আরিশ , তাদের মধ্যে বেশ তর্ক-বিতর্ক চলছে দেখে আর সে ভাবলো হয়তো মেয়েটার সঙ্গে একান্তই কোন সম্পর্ক আছে তাই কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আর তাই জন্য এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ৷ দৃশ্যটা যেন কোনোভাবেই সহ্য হলো না আরুর,তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথে হাটা দিল ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-১০+১১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:10
#Suraiya

আরুকে পিছন থেকে সুইমিংপুলে ধাক্কা মেরে মাথাভর্তি রাগ নিয়ে আরিশ ও জলে নেমে পড়ল ৷

হঠাৎ আচমকা ঘটনাটা হয়ে যাওয়ার কারণে আরু বেশ অবাক হয়ে গেল, এত রাত্রে কে এমন কাজ করলো তা দেখার জন্য সামনে তাকাতেই দেখলো আরিশ জলে নামছে , আর মুখটা লাল হয়ে রয়েছে, চোখ দুটো দিয়ে যেন আগুন ঝরছে…..

আরূ মনে মনে ভাবছে : হঠাৎ কি হলো যে উনি এভাবে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেন আর এত রেগে আছেন কেন ? তাহলে আমাকে কি এখনই এই সুইমিংপুলে ,,,,,,,,, না না এসব আমি কী ভাবছি ! এ কথা ভাবতেই আরু চমকে উঠলো ৷ আরিসের রাগী ফেস দেখে আরু পিছাতে লাগল….

আরিশ যত এগিয়ে আসছে আরু তত পিছিয়ে যাচ্ছে ৷

আরিসের একেই মাথায় রাগ করে রয়েছে তার উপরে আরুশিকে পিছিয়ে যেতে দেখে রাগটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল ৷

আরিশ : আর একপাও যদি ওখান থেকে সরেছ তো আজই তোমার শেষ দিন এটা মনে রেখো৷

আরু আর পিছিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাল না , যা হওয়ার এমনিতেও হবে তাই আরিশের এর ভয়য়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে ৷

জলে ফেলে দেওয়ার কারণে আরুশির গোটা শরীর ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে ৷ মাথার চুলগুলো ভিজে গিয়ে একত্রিত হয়ে আছে, শাড়িটা একেবারে শরীরের সাথে লেপ্টে রয়েছে , দেখতে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে, তবে এই মুহূর্তে আরিশের ঠিক চোখে ধরবে কি সেটা ও জানেনা ‌৷

আরিশ গিয়ে আরূর চুলের মুঠি ধরে ওর কাছে নিয়ে আসলো ৷

চুলের মুঠিটা ধরার কারণে ব্যথায় আরূ আহ করে শব্দ করে উঠল ৷

আরিশ : কি খুব কষ্ট হচ্ছে ? এখন আমার থেকে ছাড়া পেতে ইচ্ছা হচ্ছে তাই না? খুব ইচ্ছা আমাকে ছেড়ে তোমার ওই প্রেমিক অভ্রের কাছে যাওয়ার তাই না?

পানির মধ্যে আরুর হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে আরিশের ধমকানিতে ৷ ওর প্রশ্নটা হল যে অভ্র যে এখানে এসেছিল আরিশ সেটা জানল কি করে?

আরিশ : কি হল চুপ করে আছো কেন উত্তর দাও ৷ খুব ইচ্ছা তাই না আমাকে ছেড়ে ওর কাছে চলে যাওয়ার?

আরুশি কোন কথা বলছে না দেখে আরিশ এবার আরুর মুখ মুখটা জোরে চেপে ধরল ৷

আরিশ: আমার কাছ থেকে ভালোবাসা পাওনা বলে খুব কষ্ট হয় তাই না ? আর ওই অভ্র তোমাকে পৃথিবীর সব ভালোবাসা এনে দেবে তাই তো ? নিজের চোখকে সঠিকটা দেখতে শেখাও, এখনো তো বুঝতে শেখোনি নিজের ভালো-মন্দ , আর কবে শিখবে ? কবে শিখবে ? (জোরে ধমক দিয়ে)

আরিশ মুখটা এতটাই জোরে চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় আরুর চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়েছে ৷ চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে আর তা মাথা থেকে ঝরে যাওয়া সুইমিং পুলের জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, সেই চোখের জল টুকু কতটা আরিশ অব্দি পৌঁছাচ্ছে তা আরুশি জানে না ৷

আরু কোন কথা বলতে পারছেনা ৷

আরিশ এবার ধাক্কা দিয়ে আরুকে দূরে সরিয়ে দিয়ে পাগলের মতো করতে লাগল ৷

আরিশ নিজের মাথার চুলগুলো জোরে টেনে ধরেছে আর জোরে জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে : এতই যখন ভালোবাসো ওই অভ্রকে তাহলে কেনই বা আমার জীবনে এলে?কেন? আমাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য? একটা কথা মনে রেখো যতদিন আমি বেঁচে থাকব তুমি আমার সাথেই থাকবে , সে তোমার ইচ্ছা হোক আর না হোক ৷ আমার থেকে তোমা নিসতার নেই,#তুমিই_আমার_আসক্তি ৷

আরিশ এবার আরুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর মুখে আলতো করে স্পর্শ করে বললো : তুমি তো আবার আমাকে ভালোইবাসোনা , আর চাও না যে আমি তোমার জীবনে থাকি,তাই তোমার মুক্তির পথ একটাই, তুমি আমাকে মেরে ফেলো ৷

আরুশির চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়েছে আরিশ এর পাগলামো দেখে ৷ ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা কারণ এর আগে ও আরিশকে কখনও এত পাগলামি করতে দেখেনি, ৷আর আরুর মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে যে আরিশ অভ্র কে নিয়ে এত বেশি কেন ভাবছে? সে তো আর অভ্রর কাছে ফিরে যাচ্ছে না তাহলে !
এই সমস্ত কথা আরুশি ভাবছে আর তখনই আরিশ আবার ও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল : কি বলছি আমি, বললাম না মেরে ফেলো আমাকে ৷এটাইতো তুমি চাও ৷

আরিশের ধমক শোনামাত্রই আরুশির হার্টবিট যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম ৷ আরিশের পাগলামিটা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে তাই ওকে এখন থামানোর প্রয়োজন দেখে আরুশি আরিশের আরো কাছে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে ওর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল , এ ছাড়া আর কোন উপায় ও দেখল না ৷

আচমকা আরুশির থেকে এমন কিছু হবে তা ভেবে আরিশ বেশ অবাক হল , কিন্তু আরিশ আরুশিকে দূরে ঠেলে দিল না বরং আরো নিজের কাছে নিয়ে এলো, ঠান্ডায় আর আরিশের থেকে নিজেকে আর না ছ্রাড়িয়ে আরুশি আরিশের জামার কলারটা আঁকড়ে ধরল…..

বেশ কয়েক মিনিট পর আরিশ শান্ত হলেই আরিসকে ছেড়ে দিয়ে পাশে দাঁড়াল আরু, ক্রমশ হাপাচ্ছে আরুশি , বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে তার সঙ্গে আরিশ ও ৷

আরিশের আরুর উপর সমস্ত রাগ গলে জল হয়ে গেছে ,পুরনো সমস্ত কথা ভুলে গেছে ও ৷

আরুশির এখন খুব লজ্জা লাগছে , হঠাৎ আচমকা ও নিজেও যে এরকম কিছু করে ফেলবে সেটা হয়তো ভাবতেই পারেনি নিজেও , তবুও যে করেই হোক আরিশকে ও থামাতে সক্ষম হয়েছে…..

আরিশ এবার আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিল ৷

রুমে এসে দুজনেই চেঞ্জ করে নিল, এরমধ্যে আরুশি অনেকবারই হাচ্ছি দিয়েছে ৷ বৃষ্টিতে ভিজতে ও বরাবরই খুব ভালোবাসে কিন্তু রাতে ভিজলে ওর সমস্যা হয়…..

আরিশ দেখলে আরোশী বারবার হাচ্ছি দিচ্ছে তাই আর বেশিক্ষণ দেরী না করে কিচেনে গিয়ে দুকাপ কফি করে আনল দুজনের জন্য ৷

আরোশী ব্ল্যাঙ্কেট এর নিচে চুপচাপ গুটিসুটি হয়ে শুয়ে রয়েছে আর আরিশ হঠাৎ এসে ওকে ডাকলো,,,,

আরিশ ধীর কন্ঠে: এই নাও তোমার কফি ৷

আরু কফিটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিল,

আরিশ : কেমন হয়েছে?

আরুশি : ভালো হয়েছে বাট এটা কি আপনি করেছেন?

আরিশ: বাঁকা চোখে তাকিয়ে: তোমার কি মনে হয় এত রাতে আমার অন্য কোন বউ এসে তোমার জন্য কফি করে দিয়ে যাবে!

আরুশি : ঠিক তা না , আসলে আপনি নিজেই এত হট তার ওপরে আবার কফি ৷ আনবিলিভএবল ৷

আরিশ আরুশির মুখের কাছে গিয়ে বলল: রিয়েল আরুপাখি!

আরোশী : এই না না , আমি সে ভাবে বলতে চাইনি যেভাবে আপনি ভাবছেন ৷

আরিস : তুমি যদি বল তো এক্ষুনি আমি শুরু হয়ে যাব ৷ বাকা হসে ৷

আরোশী: একদম না ৷ বলে আর একবার কফি তে চুমুক দিয়ে blanket এর নিচে ঢুকে গেল আর আড় চোখে আরিশের দিকে তাকাতে লাগলো, আর দেখল যে আরিশ মুচকি হেসে ওর খাওয়া কফির কাপটা নিয়ে ব্যালকনির দিকে চলে গেল ৷

আরোশী : লোকটা বড়ই অদ্ভুত , কখন কি চায় বোঝা মুশকিল ৷
|
|
|💖
|
|

সকালবেলা,,,,,,,

আজকে ওদের বৌভাত তাই সকাল থেকে বাড়ি সাজানো শুরু হয়ে গেছে , বাইরে বেশ কোলাহলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ৷
কাল রাতে অনেক বেশি দেরি করে ঘুমানোর কারণে আরোশীর সকাল বেলা উঠতে দেরি হয়ে গেছে ৷ ঘুম থেকে উঠে পাশে দেখল যে আরিশ নেই ৷

তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে যেতে লাগল, এমনিতেও আজকে দেরি হয়ে গেছে ,প্রথম দিন এবাড়িতে আর আজই দেরী, না জানি সকলে কি ভাববে ৷

নিচের যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হতেই দেখল যে সানা ওর রুমের দিকেই আসছে আর হাতে ট্রে, তাতে ব্রেকফাস্ট সাজানো , বুঝতে পারল যে অনেক বেশী দেরী হয়ে যাওয়ার কারণে সকলের ব্রেকফাস্ট হয়ে গেলেও ওর হয়নি ৷ এই মুহূর্তে আরিশের উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর , কেন ডাকলো না ওকে, সবাই ওকে এখন কী ভাববে!

সানা আরুশি রুমে ঢুকে বিছানায় খাবারটা রেখে আরুশিকে বলল : তা রোজ রোজ আমার ভাইয়া তোকে এত ভালোবাসা দিলে তুই বেঁচে থাকবি তো জানু ৷(দাঁত বার করে হেসে বলল )

আরুসি ঘাবড়ে গিয়ে : মানে !

সানা : ওরে আমার অবুঝ বালিকা যে ,মেয়ে এখনো মানে বুঝলো নারে !

আরুশি : আরে বলবি তো কি হয়েছে , না হলে আমি বুঝবো কি করে?

সানা : কালকে রাতে সুইমিংপুলে বেশ রোমান্টিক সিন চলছিল তা কিন্তু আমি দেখেছি,( চোখ মেরে)

আরুশি: কি দেখেছিস তুই? (ও ভাবল হয়তো সানা আরিশের করা পাগলামো গুলোর কথাও জেনে গেছে)

সানা : তোরা যা সিনেমা দেখালি তাই দেখলাম,একদম সুপার ডুপার হিট একটা মুভি ৷ বাট দুর্ভাগ্য এটলাস্ট কিছুই দেখতে পারলাম না তার কারণ হিরো হিরোইন কে নিয়ে রোমান্টিক ভাবে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেল ৷ তারপরে কি হয় সেটা আমি না জানলেও তুই আশাকরি ভাল করেই জানিস( দাঁত বার করে হেসে)

আরোশী কথা ঘোরানোর জন্য বলল :তোরা সবাই ব্রেকফাস্ট করেছিস? না করলে আমার সঙ্গে করে নে৷

সানা : ব্রেকফাস্ট আমরা সবাই করেছি কিন্তু তুমি কথা ঘুরিয়ো না এখন ৷

আরোশী :যেমননটা তুই ভাবিস ঠিক তেমন টা হয় না সবসময় ৷

সানা : বুঝি বুঝি, তুমি আর আমাকে বোঝাতে এসো না বাবু ৷

|
|
|💖
|
|

সন্ধ্যাবেলা আরুশিকে বসানো হয়েছে, বেশ ভালই ডেকোরেশন করেছে অল্প সময়ের মধ্যে , আর প্রচুর লোকজন এসেছেন ৷ সবাই গিফট দিয়ে যাচ্ছে আর কথা বলে যাচ্ছেন আরুশির সাথে, আরুশি কেবল হ্যাঁ হু করে মাথা নাড়িয়ে তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে ৷ সানা আর তিথি ওর পাশে বসে বেশ হাসি মজা করছে ওকে নিয়ে…..

সকলে উপস্থিত থাকলেও আরিশ উপস্থিত নেই৷

তিথি আরুশির কানে কানে ফিসফিস করে বলল: তা আমাদের জিজু কোথায় ? সে কি লজ্জায় পালিয়েছে নাকি?

সানা: তার আবার লজ্জা ! কালকে রাতে তো,,,,,,

সানা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তাই কথা ঘোরানোর জন্য জন্য আরু বলে উঠলো :
আমাকেও ঠিক বলে যাননি যে কোথায় যাচ্ছেন , তাই আমি জানিনা ৷

ওদের কথা বলতে বলতেই আরিশ এসে পৌছালো
মুখে সেই মন মাতানো হাসির সঙ্গে , যেটা দেখলে যে কোন মেয়েই ক্রাশ খাবে ৷

আজকে আরিশকে দেখে আরূও একদফা ক্রাশ খেয়েছে, তবে সঙ্গে সঙ্গে তা হজম করে নিয়েছে আরিশের করা কর্মকাণ্ড গুলোর কথা ভেবে ৷ ওগুলো ভাবলেই ও আতঙ্কিত হয়ে যায় ৷ তার সাথে মনে পরল কালকে রাত্রে আরিশের করা পাগলামো গুলো ৷ আরিশ ওদের কাছে গেল ৷

তিথি : কি জিজু কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? আপনার বউ যে আপনাকে অনেক মিস করছিল ৷

আরু তিথির দিকে অবাক চোখে তাকালো ৷

আরিশ তারপর আরুশির দিকে তাকিয়ে বলল: বড্ড ভালোবাসে কিনা আমাকে, তাই মিস করছে , তাই দেখো আমিও তাড়াতাড়ি চলে এলাম ৷

তিথি : আরুশি বলছিল আপনি কত রোমান্টিক৷

আরিশ: ওহহ রিয়েলি ! ফাইনালি আমার রোমান্টিসিজম আমার বউয়ের মনে ধরেছে ,ভেবে খুশি হলাম , ক্যারি অন ৷ বলে আরুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে অন্য দিকে চলে গেল ৷

আরোশী : তুই সব বানিয়ে বানিয়ে কেন মিথ্যা কথা বললি?

তিথি: সে সব ছাড় ,আজ দেখিস আরিশ ভাইয়া তোকে কেমন আদর করে ৷

💖

সব আত্মীয়-স্বজন চলে যেতে লাগল, এই মুহূর্তে আহানের কথাটা খুব মনে পড়ছে আরুর ৷ এতক্ষণ ওখানে বসে ছিল একটাই আশা নিয়ে যে আজ হয়তো আহান আসবে বা তার বাড়ি থেকে কেউ আসবে ৷ এতটা হয়তো তাকে দূরে সরিয়ে দেবে না৷ কিন্তু কিছুই হলো না তেমন ৷

এসব ভেবে ওর মনটা খুবই খারাপ লাগছে ৷

রাত সাড়ে এগারোটার সময় আরুশিকে আরিশের ঘরে আরুকে বসিয়ে থেকে সানা বাইরে থেকে দরজা দিয়ে চলে গেল ৷

চারিদিকে লাল রঙের মোমবাতি জ্বলছে , পুরো খাটটা গোলাপ ফুলের পাপড়িতে সাজানো, মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো রয়েছে অনেক, একটা খুব সুন্দর ঘ্রান ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রুমজুড়ে ৷ খুবই রোমান্টিক পরিবেশ ,খাটের মাঝখানে আরিশের অপেক্ষায় আপেক্ষারত হয়ে আরূ বসে আছে ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:11
#Suraiya_Aayat

বাসর ঘরে একা বসে আছে আরূ আরিশ এর জন্য অপেক্ষা করছে ৷ প্রথম দিন ওর সাথে কি কি ঘটেছে না ঘটেছে সেগুলো আর কিছুই মনে নেই কিন্তু এতদিনে দ্বিতীয়বার আর এরকম কোন কিছু হয়নি আরিশের থেকে , তাই আজও আরিস ওর উপরে হামলে পড়বে কি সেই নিয়ে কিঞ্চিৎ প্রশ্ন আছে আরুর মনে৷

সাড়ে 11 টার সময় ওকে সানা বসিয়ে রেখে চলে গেছে আর এখন প্রায় ঘড়ির কাঁটা একটা ছুঁই ছুঁই, এতক্ষণ ধরে এক জায়গায় বসে রয়েছে আরূ ঘুমাতেও পারছে না শুধু মনে হচ্ছে এখনি আরিশ যদি এসে ওকে ঘুমাতে দেখে তাহলে ভাববে ও আরিশ এর জন্য অপেক্ষা করেনি তখন তো আরিস বকাবকি করবে ওকে ৷ এই সব কথা এখন ওর মাথর ভিতরে চলছে ৷

এক জায়গায় এতক্ষণ ধরে বসে থেকে হাঁসফাঁস করছে আরূ, না পেরে গায়ের কোন পোশাক পরিবর্তন না করেই ঘুমিয়ে পড়ল , এর মাঝে যদি আরিস বাড়ি আসে, যদি ওকে বকে তাহলে ওর কিছু করার নেই কারণ ও নিজে জানে যে ও অনেকক্ষণ আরিশ এর জন্য অপেক্ষা করেছে……

অনেকক্ষণ ড্রাইভ করার পর ফার্মহাউস এ পৌঁছেছে আরিশ ৷ সারাদিন অত্যন্ত ধকল গেছে তাই খুব ক্লান্ত৷ দারোয়ানকে কিছু একটা বলে ঘরের ভেতর চলে গেল আরিস, গায়ে থাকা পাঞ্জাবিটা খুলে শুয়ে পড়ল৷
শুয়ে পড়েছে আর মাথায় চলছে আরুশিকে নিয়ে হাজার জল্পনা-কল্পনা ৷

আজকে এমন একটা দিনের রাতে ও এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে কারণ ও জানে আরুশিকে দেখলে হয়তো নিজে কে আর কন্ট্রোল করা সম্ভব নয় কোনোভাবেই তাই তার থেকে ভালো আজকের দিনটায় ওর থেকে একটু ডিসটেন্স রেখে থাকা ৷ এমনিতেও আরিশ কখনো আরুশিকে খারাপভাবে স্পর্শ করেনি , প্রথম দিন কেবলমাত্র আরুশিকে ভয় দেখানোর জন্যই সবকিছু করেছিল তবে কোনো রকম শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেনি আরুশির সঙ্গে , আর এতটা নিচ মানসিকতার মানুষ নয় আরিশ ৷ ও আরুশিকে ভয় দেখাবে কি তার আগেই আরুর জ্ঞান হারিয়ে যায় তার জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায় ওর কাছে ৷ যতখন আরু অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল ততক্ষণ আরিশ আরুর থেকে এক পলকও সরাইনি , হয়তো এটাই নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দেখার সুখ ৷

ভালোবাসি কথাটা আরূ কে না বলতে পারলেও কখনো ভালোবাসার কমতি রাখেনি ও ৷ সব সময় ভয় হয় ওর এই ভেবে যে এই বুঝি ওর আরূপাখি ওর থেকে হারিয়ে গেল , হয়তো কেউ কেড়ে নিল ওর থেকে ৷

হাজারো কল্পনা জল্পনা করতে করতে কখন চোখের পাতা দুটো হয়ে গেল তা আরিশের খেয়ালই নেই…..

|
|💖
|

হঠাৎ দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আরুশির ৷ সারারাত ঘুম খুব একটা ভাল হয়নি , অনেকটা টেনশন মিশ্রিত ঘুম ছিল ৷ তবে এখন ঠিক কয়টা বাজে আরুশি জানে না, ও ভাবল হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে তাই কেউ ডাকতে এসেতে ৷ চোখ খুলেই ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো ভোর সাড়ে চারটে বাজে ৷

আরুশি : ঘড়ি টা কি খারাপ হয়ে গেল? কিন্তু কাল তো ঠিকই ছিল ৷

এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আবার দরোজায় টোকা পড়ল ৷

আরুশি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে দিল, হয়তো আরিশ এসেছে এই ভেবে , আর ঠিক তাই হলো ৷ আরিশ এসেছে ৷

আরু দরজা খুলতেই আরিশ শান্ত কন্ঠে বলল: ঘুম হয়েছে সারারাত?

আরুশি চুপ করে আছে…

আরিশ : ঘুম তো ভালো হবেই, আমি বিহীন একটা রাত কাটালে তাই ৷ তা ভালো ঘুমোলে চোখ মুখের এ অবস্থা কেন ? কেমন ফোলা ফোলা লাগছে চোখদুটো৷

আরুশি শান্তকণ্ঠে : আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম অনেক রাত অব্দি, তবে আপনি আসেননি ৷ কোথায় গিয়েছিলেন আপনি ? মাথা নিচু করে কথাগুলো বলল ৷

আরিশ শব্দ করে হেসে ফেললো তারপরে আরুশিকে ওর বুকে জড়িয়ে নিল ৷

আরিস : আমার ছোট্ট বউটা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল রাত জেগে শুনে খুশি হলাম ৷ আচ্ছা এখন আমি চলে এসেছি এখন আমার সাথে ঘুমাবে ৷

আরিশ : তুমি এখনও জামাকাপড় পড়ে চেঞ্জ করোনি কেন?

আরোশী : আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই আর মনে নেই ৷

আরিশ: আচ্ছা করনি যখন আমি এখন করিয়ে দিচ্ছি৷

আরূর চোখ দুটো যেন বার হয়ে আসবে এরকম অবস্থা ৷ তাড়াতাড়ি আরিশৈর থেকে দূরে সরে গেল ৷

আরু: না না , আপনাকে কিছু করতে হবে না , আমি আসছি বলে তাড়াতাড়ি একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল ৷

আরু চলে যেতে আরিস হেসে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে লাগলো আরূর কান্ড দেখে ৷ আরু যে সত্যিই ওর কথা বিশ্বাস করে নেবে এটা আরিশ ভাবেনি, তবে এটুকু করার ক্ষমতা রাখে আরিশ সেটা হয়তো আরু ভালোই বুঝতে পেরেছে ৷

আরুশি ড্রেস চেঞ্জ করে এসে দেখল আরিশ ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ আরিশ এর কাছে গিয়ে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে বেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল আরিশ ঘুমিয়ে আছে কি! তারপর দেখল যে আরিশ ঘুমিয়ে পড়েছে, এটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস নিতেই আরিশ আরুর হাত ধরে বিছানায় ফেলে দিল…..

আরিশ : কি ভেবেছিল আরূপাখি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ৷ নাহহহ !

আরোশী : আমি ভাবলাম আপনি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন তাই দেখছিলাম আর কি!

আরিশ : কেন গো ঘুমিয়ে পড়লে কি অনেক কিছু মিস করে যেতে আরূপাখি ৷

আরু: আপনি এসব কি যা তা বলছেন , মোটেও না৷

আরিশ : ওয়েট. , আমার একটা খুব একান্ত ব্যক্তিগত কাজ বাকি আছে সেটা আমাকে করতে দাও ৷

আরোশী : এই ভোরবেলা আপনার আবার কি কাজ?

আরিশ সাথে সাথে আরুর কোমর ধরে নিজের কাছে এনে হালকা করে আরুশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো ৷

আরিস : কালকে রাতের পেনডিং কাজটা এখন করছি ৷

আরুশি আর কিছুই বলল না চুপ করে রইল কারণ আর কিছু বললে যদি আরিস আবার বেশি কিছু করে ফেলে সেই ভয় ৷

আরিশ : এখন তুমি নিজে ঘুমাও আর আমিও ঘুমাই বলে আরুশিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল…..

|
|💖
|

আজকে আরিশ অফিসে যাবে, কলেজে বেশি যাচ্ছে না এই কদিন অফিসের চাপে , আর সমস্ত নোটস ও পেয়ে যায় বলে ব্যাপারটাতে বেশি কিছু মনে হয় না ৷ এই বছরের ওর পিএইচডির শেষ বছর, ওর ইচ্ছা ছিল বিদেশে প্রফেসরি করার তবে আপাতত সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে এখনও ভেবে দেখেনি ৷

আরুশিকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিল আরিশ ৷

আরিশ: ঠিক টাইমে আমি তোমাকে নিতে আসবো আরুপাখি, আর সামান্য দেরি হলেও এক পাও নড়বে না বলে দিলাম ৷আমি যতক্ষণ না আসব ততক্ষন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে ৷ আর আজকে সানা কলেজে আসেনি বলে এটা ভেবো না যে আমি কিছুই জানতে পারবো না , তোমার অগোচরে সমস্ত কিছু আমি জেনে যাব এটা মনে রেখো ৷ বলে গাড়িটা নিয়ে চলে গেল ৷

আরূ: কেমন মানুষ উনি, যাওয়ার আগেও শাসিয়ে গেল আমাকে ,” আরুপাখিই কোথাও যাবেনা” আরিশের মিমিক্রি করে ৷
এই বলে কলেজে ঢুকে গেল আরূ….

💖

অফিসে ,,,,,,,

আরিশ ওর কেবিনে বসে ইম্পরট্যান্ট ফাইল টা একটু চেক করছে তখনই আফজাল সাহেবের রুমে আসল,উনি কখনো আরিশ এর পারমিশন নেন না কারণ আরিশ সেটা পছন্দ করেনা ৷

আরিশ: বাবা কোন দরকারি কাজ ? না হলে তুমি তো সচরাচর আমার কেবিনে আসো না ৷

আফজাল সাহেব হেসে বললেন : তোমার খালাম্মা ফোন করেছিলেন ৷

আরিশ: তো !(ফাইলে চোখ রেখে)

আফজাল সাহেব : উনারা আর একমাস পরে এখানে শিফট হচ্ছেন, আর তুমি তো জানো যে তোমার খালাম্মা কি চান?

আরিশ : একথম নাহ ৷ ওনার মনে কি আছে ,উনি কি চান না চান সেটা আমি কি করে জানব বাবা ? উনি তোমাকে হয়তো বলতে পারে কিন্তু আমাকে তো বলেননি তাই আমি জানিনা ৷

আফজাল সাহেব শান্ত ধীর কণ্ঠে বললেন : রাইসার সাথে তোমার বিয়েটা দিতে চান ৷

আরিশ আগের মত থেকেই বললো : এটাতো একেবারে সহজ কাজ ৷

আফজাল সাহেব : কিভাবে?

আরিশ: সরাসরি জানিয়ে দাও যে আমি বিয়েটা করতে পারব না ৷আমার বউ আছে ৷

আফজাল সাহেব দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন: আমি জানিয়ে দিয়েছি তবে কথাটা এখনো পৌঁছায়নি রাইশার কান অবধি ৷

আরিশ : পৌঁছায়নি , পৌঁছে যাবে কোন টেনশন করো না ৷ আর এটা নিয়ে তুমি এত বেশি ভেবো না , আই উইল ম্যানেজ ৷

আরিশ : বাই দ্যা ওয়ে, হট কফি নাকি কোল্ড কফি?

আফজাল সাহেব: কোল্ড কফি চ্যাম্প , আই এম প্রাউড অফ ইউ , এত সহজভাবে আমি ব্যাপার গুলো ভেবে দেখি না তাই হয়তো আমার কাছে কমপ্লিকেটেড হয়ে গেল, কিন্তু তুমি যে কি করে এগুলো পারো , বুঝতে পারিনা ৷

আরিশ ফিসফিস করে: টপ সিক্রেট বাবা ৷(বলে চোখ মারল)

বাবা-ছেলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো….

|
|💖
|

বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে ৷ আষাঢ় মাস শেষ করে শ্রাবণ মাসের আগমন হওয়ার সাথে সাথেই যেন বৃষ্টির ধারা টাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে , আর তার সাথে চঞ্চল হয়ে উঠছে আরুর মন ৷ ও খুব বৃষ্টি তে ভিজতে ভালোবাসে ৷ এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে বাইরে গিয়ে দুই হাত মেলিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ৷
এটা ওর লাস্ট ক্লাস এরপরে আর কোন ক্লাস নেই তাই নিঃসন্দেহে ভিজবে এ রকমই মনস্থির করল আরু….

ছুটির সাথে সাথে ছাতাটা মেলিয়ে কোনরকমে বাইরে একটা নিরাপদ জায়গায় এসে দাঁড়াল আরূ তবে মনটা আনচান করছে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ৷ আরিশ এর কথাটা যেন প্রায় ভুলেই গেছে , অবশেষে মস্তিষ্ক আর মনের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতের পর মন জয়ী হল৷ কোন পিছুটান না রেখে নেমে গেল বৃষ্টির মাঝে ৷ বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোটা শরীরকে স্পর্শ করছে আর তেমনই আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে আরু ৷

এখন একটা কবিতা ওর প্রচন্ড মনে আসছে আর অপেক্ষা না করে মুখের বুলিতে কবিতাটা ফুটে উঠল,,,,,

“মাসটা নাকি শ্রাবণের”!
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি মুখর পরিবেশ,,,,
চারিদিকে মেঘের ঘনঘটায় আচ্ছন্ন,,,,

একাকিত্ব জিনিসটা যেন আজকাল
বড়ই গ্রাস করেছে আমাকে|| ||

কোনো এক শ্রাবণে,,,,,
তোমার হাতটা ধরেই আমি হাঁটতে চেয়েছিলাম,,,,, কোন এক বৃষ্টি ভেজা পথে৷৷৷৷

বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে,,,,,
বাতাসে যেমন সুগন্ধ ছড়িয়ে,,,,
এক প্রেমময় পরিবেশের সৃষ্টি করে,,,,,
তখন সেই ঘ্রাণটাই আমি তোমার সাথে নিতে চেয়েছিলাম ৷

যখন বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে শরীর নিয়ে,,,,,,
তোমার সামনে এসে দাঁড়াতাম…..
তখন কোন রকম লোভাতুর দৃষ্টিতে নয়,,,,,
হয়তোবা ভালোবাসার চাহনিতেই দেখতে আমাকে!!!! তখন আলতো করে গালে স্পর্শ করে বলতে,,,,,
” পাগলী আমার “৷৷৷৷

কোনো রকম কোনো বিরক্তি ছাড়াই চুলগুলোকে আলতো করে মুছে দিতে,,,,,,
হয়তো এটার মাধ্যমেই তুমি আমার সৌন্দর্যটাকে খোঁজার চেষ্টা করতে!!!!

বৃষ্টিতে ভেজা সন্ধ্যার সময় ধোঁয়া ওঠা কফির মগটা যখন তুমি আমার হাতে ধরিয়ে দিতে,,,,,,
আর আমার সাথে তাল মিলিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুনতে মও হতে তখন তুমি বলতে,,,,
“তুই যে আমার বৃষ্টি বিলাসী”৷৷৷৷
……………………………………..সুরাইয়া🍁( বৃষ্টিবিলাসী)
(Plz don’t copy this)

তবে ওর কল্পনার মত আরিশ ও কি কখনো এই বৃষ্টির মধ্যে ওর সৌন্দর্যটা খুঁজে পাবে ? এই সমস্ত প্রশ্ন আরুর মাথায় আসছে কিন্তু মন থেকে উত্তর এলো যে যেদিন দুজন দুজনকে ভালবাসবে সেদিন হয়তো এই অনুভূতি গুলো কাজ করবে দুজনেরই…

ভিজতে ভিজতে প্রায় কাকভেজা হয়ে গেছে আরূ, প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে বৃষ্টিতে ভেজার পরও আরিশকে আসতে না দেখে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল আরূ,
হাটতে হাটতে রাস্তার পাশ দিয়ে একটা গাড়ি যেতেই জামা কাপড়ে কাদা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল ৷

গাড়ি টা আরুকে ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে যেতেই আরুর প্যাচাল শুনে হয়তো গাড়িটা থেমে গেছে৷

গাড়িটার কাছে গিয়ে আরূ জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো: স্টুপিড আপনি ? দেখে চালাতে পারেন না? চোখ কি বাড়িতে রেখে এসেছেন নাকি বউকে যত্ন করে রেখে দিতে বলেছেন?

এসমস্ত কথা বলতে বলতে গাড়ি ভিতরে থাকা মানুষটা হাত ধরে আরুশিকে গাড়ির ভিতরে টেনে নিতেই আরুশি চিৎকার করে উঠলো বাঁচাও বলে , আর তার আগেই গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করলো….

চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৯

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:9
#Suraiya_Aayat

রুমে ঢুকতেই আরূ দেখল আরিশ বসে আছে আর মুখে আছে একরাশ রাগ ৷আরুর এখন আর অসুবিধা হয় না যে কখন আরিশ রেগে থাকে তা বুঝতে , আরিশকে দেখলেই বুঝে যায় যে আরিশ এর মুডটা কেমন ৷আগে না বুঝলেও এখন বেশ ভালই বুঝতে পারে ৷ দিন দিন আরিশের অভ্যাসগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে আরু না চাইতেও ৷

আরুশি ঘরে ঢুকে চুপচাপ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনের দিকে একপাও এগোচ্ছে না আর আরিশ ও একইভাবে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে, ও নিজেও কোনো কথা বলছে না ৷ আবহাওয়া যে বেশ গরম তা ওর স্বভাব থেকেই প্রকাশ পাচ্ছে ৷

অনেকক্ষণ ধরে আরূকে সেই একই জায়গায় স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিস ধোমকে আরুকে বলল : দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছো কেন? দরজা দিয়ে আমার কাছে এসো ৷

আরোশী চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিল ,দিয়ে আরিশ এর সামনে গিয়ে দাঁড়াল ভয়ে ভয়ে৷

আরিশ : এতক্ষণ নিচে তুমি কি করছিলে ? আর আমি 12 মিনিট 37 সেকেন্ড ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, আমাকে এরকম অপেক্ষা করে রাখার মানে কি সেটা কি জানতে পারি , যদি আপনার আমার ওপর আবার দয়া হয় ৷ আপনার তো আবার দয়া মায়ার স্বভাব ৷

আরুশি : এভাবে আপনি কেন বলছেন ! আসলে আপনার মা মানে আন্টি উনি তো আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাকে আটকে রেখেছিলেন বলে আমি আসতে পারিনি ৷

আরিশ এবার উঠে দাঁড়ালো, উঠে দাঁড়িয়ে ক্রমশ আরুর দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে লাগল আর আরু তত পিছিয়ে যেতে লাগল ৷

আরিশ : মা না ডাকলে বুঝি আমার কাছে চলে আসতে এক্ষুনি?

আরুশি: আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেন?

আরিশ : এই যে এখুনি তুমি বললে যে মামনি আটকে না রাখলে তুমি আমার কাছে আসতে তার জন্যই তো তোমার কাছে যাচ্ছি ৷

বলতে বলতে এক পর্যায়ে আরুর পিঠ দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেল ৷

আরূ: আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসবেন না, প্লিজ সরে দাঁড়ান আমার খুব ভয় করছে ৷

খরিশ দাঁতে দাঁত চেপে :তাহলে আমার কথার অবাধ্য কেন হও আমাকে যখন এতই ভয় পাও! মনে হয় না যে উনি বলে গেছেন ঘরে আসতে তাড়াতাড়ি তাই আমি তাড়াতাড়ি যাই ৷

আরুশি : তাই বলে আপনি আমাকে এত বকাঝকা করবেন ? আর মাত্র 12 মিনিটে তো ৷

আরিশ: সময়টা তোমার কাছে মাত্র মনে হলেও আমার কাছে অনেক ৷ সময়ের মূল্য দিতে তুমি জানো? জানো না ! জানলে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে না ৷

আরু বুঝতে পারছে না যে মাএ 12 মিনিটে কি এমন যায় আসে যে, যার জন্য আরিশ ওকে এত কথা শোনাচ্ছে ৷

আরিশ : নেক্সট টাইম যদি আমার কথা মত যদি না চলো তো ওই বেলকনি দেখছো , ওখান থেকে ধাক্কা মারে ফেলে দেবো ৷

আরুশি প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে : আমি আপনার সব কথা শুনব প্লিজ আমাকে ধাক্কা মারবেন না ৷

আরুশির কাচুমাচু ফেস দেখে আরিশের খুব হাসি পাচ্ছে , তবুও কোনভাবে আরুশির সামনে হাসতে চায় না ৷

আরিশ কিছুটা দূরে সরে গিয়ে: ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে যাব ৷

আরশি : আচ্ছা ৷

দুপুরবেলা,,,,,

আরিশ সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে গেছে , খুব একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে ৷ আর সানা আর আরিশ এর মা ও বাড়িতে নেই , শপিং এ গেছেন ৷ কালকে আরুশির আর আরিশের বৌভাত বলে সব কেনাকাটা করতে গেছেন ওদের জন্য৷ সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে তাই অতি দ্রুত হাতে সব কাজ নিজেরাই সামলাচ্ছেন ৷

কাজের লোকগুলোও যে যার মতো কাজে ব্যস্ত , খুব একটা বেশি কাজের লোক বাড়িতে নেই ৷ দুটোই রয়েছে ৷ একজন বাগান পরিষ্কার , গাড়ির ধোঁয়া এই সমস্ত কাজের জন্য আর একজন ঘর পরিষ্কার করার জন্য , এত বড় বাড়ি একা পরিষ্কার করা সম্ভব নয় সেই কারণেই ৷ রান্না করার জন্য আরিশ এর মা কাউকে রাখেননি, তার কারণ আরিশের বাবা আরিশের মায়ের হাতের রান্না খেতে খুব পছন্দ করেন, অন্যের হাতে রান্না খুব একটা খান না ৷ তাই সকাল , দুপুর ও রাত্রেবেলা রান্নাটা আরিশের মা নিজেই করেন৷

আরু খুবই বোর ফিল করছে একা একা , তাই ভাবল যে সারা বাড়িতে একটু ঘুরে ঘুরে দেখা যাক ৷ দেখতে দেখতে আরিসের ঘরের ব্যালকনিতে গেল, গিয়ে দেখল নিচে একটা বিশাল বড় সুইমিং পুল আর সেখানে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা করা আছে , অপরূপ সুন্দর , আর সেই দৃশ্যটা বেশ চোখে ধরল আরুশির ৷ সুইমিংপুলের কাছে যাবে বলে যেই নিচে নামতে গেল তখনই ফোনে ফোন আসতেই থেমে গেল ও ৷

ফোনটা ধরতেই দেখল তিথি ফোন করেছে,,,,,

আরুশি কিছু বলবে তার আগেই তিথি বলে উঠলো:

তিথি : হ্যা রে দোস্ত কালকে আরিশ ভাইয়ের সঙ্গে কি কি করলি?

আরুশি : আজিব প্রশ্ন ! এসমস্ত কথা কেন জিজ্ঞাসা করছিস আমাকে তুই? সকালবেলা সানা আর এখন তুই ৷ বলছি তোদের কি লাজ লজ্জা বলে কিছু আছে নাকী? ফ্রেন্ড বিয়ের রাতে কি করেছে তাই নিয়ে মাতামাতি করছিস ৷

তিথি: লজ্জা পাচ্ছিস কেন ? বলনা রে ৷

আরুশি : আমার আর উনার মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি যে তোকে বলবো ৷

তিথি : বুঝতে পেরেছি এখন তুই বোলবি না ৷ থাক তোকে আর বলতে হবে না , আমার যখন বিয়ে হবে তখন তো আমি জানতেই পারব ৷ লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ৷

আরুশি : বজ্জাত একটা ৷

তিথি: হ্যাঁরে , আঙ্কেল-আন্টি তোদেরকে মেনে নিয়েছেন? আমি তো তাড়াতাড়ি করে চলে এলাম তার পরে কি হল কিছুই জানিনা ৷

ওর বাবা-মার কথা শুনে আরুর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ৷ সত্যিই খুব মিস করছে ওদেরকে , বিশেষ করে আহান কে ৷ শেষমেশ আহান ও ওকে ভুল বুঝল এটাই সবথেকে বড় কষ্ট ওর , আর কালকের পর থেকে আহান এখনো ওকে একবার ফোনও করল না৷ কথাগুলো ভাবতেই চোখ থেকে অটোমেটিকলি কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷

আরুশি কিছু বলছে না চুপ করে আছে ৷

তিথি : কিরে ? কিছু বলছিস না কেন ?

তখনই দ্রুত পায়ে কারোর হাঁটার শব্দ পেয়ে আরুশি দরজার দিকে তাকাতেই অবাক এর থেকেও বেশি অবাক হল , অভ্র এসেছে এখানে ৷

তিথি : কিরে বল?

আরুশি আমতা আমতা করে : অভ্র এসেছে!

তিথি :অভ্র ভাইয়া! অভ্র ভাই ওখানে কি করছে?

আরোশী : আমি জানি না রে আমি এখন রাখছি বলে ফোনটা রেখে দিল ৷

অভ্র এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঘরের ভিতরে৷

আরু কাঁদো কাঁদো হয়ে: তুমি !এখানে তুমি কি করে এলে?

অভ্র: তুমি এখানে কষ্টে আছো আর আমি কি করে না এসে পারি বল , তাই ছুটে চলে এলাম তোমার কাছে৷ আমি তোমাকে ওই মানুষটার হাতে একা ছেড়ে দেব না ৷ না জানি কখন কি ক্ষতি করে বসে তোমার৷

আরশির মনে অভ্রর জন্য একরাশ দুঃখ রয়েছে, ওর বারবার শুধু ভাবে যে ও অভ্র কে ঠকিয়েছে ৷

অভ্র : আমি তোমাকে নিতে এসেছি, তুমি এক্ষুনি আমার সাথে যাবে ৷

আরুশি ; এটা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয় ৷

অভ্র আরুর কাছে এসে ওর হাতে হাত রেখে বলল: কেন সম্ভব নয় আরুশি ? তোমার ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব , আমি তোমাকে আর এক মুহূর্তও এই বাড়িতে রাখতে চাইনা ৷ তুমি আমার সাথে চলো ৷ বলে আরুশির হাত ধরে নিয়ে যেতে গেলেই আরুশি বলে উঠলো ,,,,,,,

আরূশি: আপনি প্লিজ চলে যান, আর আমাকে ফেরাতে আসবে না প্লিজ ৷ উনি যদি একবার জানতে পারেন যে আপনি এখানে এসেছেন তাহলে আপনাকে শেষ করে দেবে উনি আর আমি চাইনা আমার জন্য আপনার দ্বিতীয়বার আবার কোন ক্ষতি হোক৷

অভ্র কাঁদো কাঁদো হয়ে : তোমাকে হারিয়ে আমার যে বড় ক্ষতি হয়েছে তা তুমি হয়তো তুমি জানো না ৷ তুমি শুধু আমার সাথে চলো , দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ৷

আরুশি: আপনি প্লিজ চলে যান , তাছাড়া বাড়ির অন্য লোক দেখলে খারাপ বলবে ৷ আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না ৷

অভ্র রেগে গিয়ে : আজ খালি হাতে ফিরছি ঠিকই, তবে তোমাকে তো আমি এখান থেকে নিয়েই যাব না হলে যে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ৷ বলে রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

অভ্র চলে যেতেই আরু মেঝেতে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল, বারবার ওর মধ্যে অনুশোচনা কাজ করছে যে ও অভ্রকে ধোঁকা দিয়েছে ৷ ওর মনে হচ্ছে যে ও যদি বিয়ের দিন সবটা অভ্রকে বলে দিতে তাহলে এই পরিস্থিতি হত না, আর এতদিনের নিজের মনের অভ্র কিছুটা হলেও জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই আরুর ৷ একদিকে ওর পরিবার আর অন্যদিকে আরিশ ৷দোটানার মধ্যে পড়ে গেছে আরূ ৷
বয়সটা নিতান্তই কম , 18 পার করে 19 এর দোরগোড়ায় পা দিয়েছে, নতুন কলেজে ভর্তি হয়ে এত সব কিছু ঘটে গেলো তা ওর জীবনটাই বদলে দিল ৷ এমনটা ও কখনই চাইনি , সুখে-শান্তিতে একটা মানুষের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিল কিন্তু সবকিছুই যেন কেমন ওলট পালট হয়ে গেল……

বারে বসে ড্রিঙ্ক করছে অভ্র, চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, নিজের মধ্যে কোনও হুস ই নেই ৷ চারিদিকে মেয়েদের নাচ দেখতে মগ্ন ও ৷ একটা অন্য জগতে যেন চলে গেছে ও , আশেপাশে কি হচ্ছে তার সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই ৷ হঠাৎই নাকের উপর একটা ঘুসি দিতেই গল গল করে রক্ত বের হতে লাগল নাক দিয়ে৷
মেঝেতে পড়ে গিয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে আরিশ কে দেখলো কিন্তু ওর এখন কি করা উচিত তার কোন ধ্যান ধারণায় ওর নেই ৷

আরিশ ওকে মেঝে থেকে তুলে আর একটা ঘুসি দিলে ওর মুখে সবাই এখনও আরিশ আর অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ শহরের কমবেশি সবাই আরিশ কে জানে আর চেনে ,তাই সবাই এখন অবাক ৷

অভ্রের জামার কলার ধরে বলল : তোর সাহস হয় কি করে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার বেডরুমে ঢুকে আমার বউকে তোর কাছে নিয়ে আসার কথা বলার ৷

অভ্র : যা করেছি বেশ করেছি , আর করবো , শুধু তোর বেডরুম কেন তোর বউয়ের শরীর টা ছিড়েকুড়ে খাব , তখন দেখবি তুই কিছুই করতে পারবি না ৷

আরিশ অভ্র কে ধরে বেধড়ক পেটাতে লাগলো , কথাটা যেন ওর বুকের মধ্যে তীরের মত বিধেছে৷

আশেপাশের লোকজন আরিশকে থামালো ৷মার খেয়ে মাটিতে পড়ে আছে অভ্র ৷

আরিশ : আর যদি তোকে কখনো আমার বউয়ের আশেপাশে দেখেছি তো সেদিনই তোকে শেষ করে দেবো বলে বেরিয়ে গেল ওখান থেকে ৷

আরিসের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেছে, ঠিক ভুলের কোন জ্ঞান হিতাহিত জ্ঞান ওর এখন নেই ৷
এদিকে রাত অনেক হয়ে গেছে প্রায় এগারোটা ছুঁইছুঁই ,এখনো বাড়িতে যাইনি আরিশ…..

প্রচন্ড স্পিডে গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে গেল আরিশ ৷ ওর বাবা-মাও অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে না পেরে ঘরে চলে গেছেন ৷ অবশ্য আরুও যে অপেক্ষা করে আছে তেমনটি নয় ৷ ভালো লাগছেনা বলে ঘরে না থেকে সুইমিংপুলে নিজের পা দুটো ডুবিয়ে বসে আছে আরুশি, কিছুটা হলেও রিলাক্স ফিল করছে এখন ৷

রুমে ঢুকে আরুশিকে খুঁজে না পেয়ে ব্যালকনির দিকে নজর পড়লো , দেখল যে আরুশি নিচে বসে আছে জলে পা ডুবিয়ে ৷
এতো রাতে ও রুমে না থেকে সুইমিংপুলে দেখে যেন আরিশের রাগ আরো বেশি বেড়ে গেল ৷ দ্রুত পায়ে সুইমিং পুলের পাশে গিয়ে পিছন থেকে আরুশিকে জলের মধ্যে ধাক্কা মারলো আর নিজেও জলে নেমে গেল ৷

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৮

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:8
#Suraiya_Aayat

আরিশ ক্রমাগত আরূর দিকে ঝুকে যাচ্ছে তা দেখে আরু ভয়ে শেষ ৷

আরূ: আপনি আমার দিকে এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন ? প্লিজ সরে যান ৷

আরিস : তোমাকে আদর করবো না আরুপাখি!

আরুশি : প্লিজ সরে যান, আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে৷

আরিশ ওর কথা শোনার পাত্র নয় ৷ ও ক্রমশ আরুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই হঠাৎ আরিশের ফোনে ফোন এলো ৷

আরিস : এই সময় আবার কে? আমার সুখ যেন কারো সহ্য হয় না ৷ ঠিক জানে যে এখন আমি বাসর করছি তাই ডিস্টার্ব করার জন্য ফোন করেছে ৷

আরুশি( কাঁপা কাঁপা গলায়): আপনার ফোন বাজছে ফোনটা প্লিজ ধরুন , কোন দরকারি ও তো হতে পারে আর আমি তো আছি নাকি! নাকি পালিয়ে যাচ্ছি৷

আরিশ : চাইলেও তুমি পালাতে পারবে না আরুপাখি৷

এই বলে আরিশ পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই ফোনটা দিকে তাকিয়ে একটু ভ্রু কুচকালো ৷

আরিশ : এক মিনিট আমি কলটা করেই আসছি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল….

আরিশ : ফোনে,,,,,,
বলেছিলাম না তোর সাথে আমি আরুপাখির বিয়েটা হতে দেব না, দেখলি তো !

অভ্র: প্রথম বাজিটা তুই জিতে গেলেও, পরেরটা আমি জিতব ৷ তোর আরুপাখি কে আমি তোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আমার সাথে ওকে নিয়ে চলে যাবে ইজিপ্টে , তারপর সেখান গিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে দেব ৷ একটা পার্টি ওকে দেখে বেশ চড়া দাম দিয়েছে ,আর ওর যা ফিগার ,ওফফফ!

আরিশ( উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো ): কল্পনা! হ্যাঁ সেটাও ঠিক , কল্পনায় তো আবার মানুষকে বাঁচতে শেখায় ৷ যদিও শোনা কথা তবে আজ মনে হচ্ছে তোর কথা শুনে বিশ্বাস করতে হবে ৷ আর ওর শরীরটাকে ভোগ করার কথা বলছিস?ওর শরীর কেন, আরুপাখি অবধি আমি কখনো কাউকে পৌঁছাতেই দেবো না ৷

অভ্র: প্রথম বাজিতে জিতে গিয়ে তোর আরূপাখিকে বাঁচিয়ে ভাবছিস ও পার পেয়ে যাবে? ওকে আমি ঠিক আমার কাছে নিয়ে আসবো ৷

আরিস : কল্পনা করতে থাকো ব্রো , দেখো শেষ অবধি কি হয় ৷

অভ্র: তুই আমাকে একটা কথা বলতো, তুই আরুশিকে যে বিয়ে করলি তুই কি ওকে ভালবাসিস?

আরিশ খানিকটা চুপ হয়ে গেল , তারপর বলল : আমি ভালোবাসি কিনা বাসিনা সেটা একান্ত আমার ব্যাপার , দ্যাট ইজ নট ইওর বিজনেস ৷

অভ্র : গুড আনসার , তবে আমি ওকে যদি তোর কাছ থেকে কেড়ে না নিয়ে ওকে আমি বিদেশে পাচার না করেছি তো আমার নাম ও অভ্র নয় ৷

আরিস: চেষ্টা তো কম কোরিস নি , কখনো সফল হয়েছিস কী?

অভ্র: আর তুই কি ভাবছিস আরুশি তোকে ভালোবাসে? ও কখনো তোকে ভালবাসে না ,ও তোকে শুধু ঘৃণা করি ঘৃণা আর কিছুই না ৷ ও তো আমাকে ভালোবাসে ৷

আরিশ : সেই ঘৃণাটাকেই আমি আরও বাড়িয়ে দেব তবে তোর মত একটা মানুষের হাতে ওকে তুলে দেবো না ৷
আর তোর টাইমিংটা খুব খারাপ জানিস তো , এক্ষুনি বউটা কে আদর করতে যাচ্ছিলাম আর তুই ডিস্টার্ব করলি ৷

অভ্র : একটা কথা মনে রাখিস তুই ওর শরীর পেতে পারিস তবে ওর মনটা কখনো পাবিনা ৷ ওর মন অবধি আমি তোকে কখনো পৌঁছাতেই দেবো না৷

আরিস : চ্যালেঞ্জ করলাম তোকে, প্রথমে ওর মন অবধি পৌঁছাব তারপরে ওর সমগ্রটা জুড়ে আমি থাকবো শুধু , আর সেই দিন তোর সঠিক ব্যবস্থা আমি করব ৷
বলে আরিশ ফোনটা রেখে দিলে, মাথার ভিতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে ৷ অভ্রের কথাগুলো ওকে বড্ড জ্বালাচ্ছে ৷এটা শুনে আরিশের বেশী রাগ হচ্ছে যে অভ্র ওকে বলেছে যে আরুশি অভ্র কে খুব ভালোবাসে ৷

আরিশ রাখতে পারছে না নিজেকে কোনরকম কন্ট্রোল করতে, ইচ্ছা করছে এখন এই মুহূর্তে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে কিন্তু তা ও করবে না ৷ তাড়াতাড়ি করে ও রুমে গেল,এখন ওকে জানতেই হবে যে আরুশি সত্যিই কী অভ্রকে খুব ভালোবাসে? যদি হয় তো খুব খারাপ হবে ৷

দ্রুত পায়ে রুমে এসে আরিশ দেখলো রুমে আরোশী নেই ৷ ব্যালকনির দিকে দরজাটাও খোলা কিন্তু আরুশি যে সে দিক থেকে পালাবে না আরিশ সেটা ভালোই জানে, তাহলে আরু কোথায়?

আরিশ এবার রেগে জোরে চেঁচাতে লাগলো: আরূ পাখি কোথায় তুমি ? এক্ষুনি বেরিয়ে আসো এখনই , না হলে কিন্তু ভালো হবে না ৷

তাও আরুর থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আরিসের রাগটা যেন ক্রমশ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৷ আবারো আরুশির নাম ধরে জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো,
জোরে জোরে চেঁচাতেই হঠাৎ দেখল আরুশি ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসছে….

আরুশি ভয়ে ভয়ে সামনে কিছুটা এগিয়ে আসতেই আরিশ আরুর কাছে গিয়ে ওর হাত দুটো জোরে চেপে ধরে বলতে লাগলো : আমি ডাকলে শুনতে পাওনা ? উত্তর দিতে কি খুব কষ্ট হয় ?

আরোশী ভয়ে ভয়ে ধীর কন্ঠে উত্তর দিল : আমি তো ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে গেছিলাম ৷

তারপর আরিশ আরুশির থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে দেখল যে সত্যিই আরূশি ওয়াস রুম থেকে চেঞ্জ করে এসেছে ৷ এখন আরিশ অভ্রর বলা কথাগুলো প্রায় এখন ভুলেই গেছে ৷

আরিশ চুপ করে আছে দেখে আরুশি আবার বলতে শুরু করল : আসলে অত ভারি ভারি শাড়ি আর গয়না পরে আমার কেমন অসস্তি লাগছিল তাই change করতে গেছিলাম ৷ আপনাকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি ফোনে খুব ব্যস্ত ছিলেন বলে আপনাকে আর ডাকিনি তাই অনেক খোঁজাখুঁজি করে ওয়ারড্রব থেকে একটা শাড়ি পেলাম ৷তাই এটা পরে নিলাম৷

আরিশ এখনো আগের মতই শান্ত ৷ আরূশির মনে একটা কথা অনেকক্ষণ ধরেই আসছে কিন্তু ভয়ে আরিশ কে জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারছে না , অবশেষে নিজের কৌতুহল টা চেপে না রেখে আরিশকে বলেই ফেলল :
আচ্ছা ওই ওয়ারড্রবে দেখলাম আরো বেশ কয়েকটা শাড়ি আছে তা ওগুলো কার ? এগুলো কি আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের জন্য তুলে রেখেছিলেন?

আরুশির এরকম বোকা বোকা উত্তর শুনে আরিশের রাতটা যেন সপ্তম আসমান ছাড়িয়ে গেল ৷ শাড়িগুলো যে ওর জন্য রাখা সেই মিনিমাম সেন্স টুকুও ওর মধ্যে নেই….

আরিশ : হ্যাঁ! আমার তো দশটা বউ তাই জন্য ওখানে 10 জনের জন্য শাড়ি রেখে দিয়েছি , যাতে সবাই একদিন করে এসে ওগুলো পরতে পারে ৷ stupid.

আরুশি : তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেন?

আরিশ এবার আরূকে কোলে তুলে নিল তারপরে দ্রুতপায়ে বিছানায় গিয়ে আরুশিকে শুইয়ে দিল আর
আরুশির কানে ফিসফিস করে বলল: বাসর করার জন্য ৷

আরুশির ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা , কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে আরিশ ওর পাশে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল ৷ আরুশি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো৷

অন্ধকার ঘরে কেবল একটা লাল রঙের আলো জ্বলছে আর তা ঘরটাকে সম্পূর্ণ আলোকিত করে দিয়েছে , আর আরুসি খাট বরাবর মাথার ওপরে থাকা ঝাড়বাতিটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে আর আর জীবনের ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাগুলোর হিসাব-নিকাশ করছে ৷

হঠাৎই আরিস আরূকে ওর কাছে টেনে নিয়ে ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল ৷ ঘটনাটা এতই তাৎক্ষণিক হলেও যে আরোশী কিছুই বুঝতে পারলো না ৷

আরিশ এবার আরুশির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো৷

আরুশির কাতুকুতু লাগছে তাই ওর এখন খুব হাসি পাচ্ছে , না পেরে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে হেসে ফেললো আর আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল ৷

আরিশ বিরক্ত হয়ে বলল:এভাবে লাফাচ্ছে কেন?

আরুশি হেসে : আমার না খুব কাতুকুতু লাগছে ৷

আরিস: একটা থাপ্পর মারলে সব কাতুকুতু বার হয়ে যাবে ৷

আরিসের ধমকে আরু বেশ শান্ত হয়ে গেল ৷

আরিস নেশা ভরা কন্ঠে আরুশির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো : তুমি অভ্রকে খুব ভালোবাসো তাই না?

আরুসি ভয়ে ভয়ে: হমমম৷

আরিশ এবার আরুশির উত্তর শুনে খুব রেগে গেল, রেগে গিয়ে আরুশির গলায় জোরে একটা কামড় দিলো , তারপরে গলা থেকে মুখ সরিয়ে ঠোঁটে একটা কামড় দিল বেশ জোরেশোরে ৷

আরুশি ব্যথায় ছটফট করছে, আর আরিশ ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়েছে আরামে , অবশ্য নিজের বুকের মাঝে আগলে রেখেছে আরুকে ৷ ওকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর হাজার ঝড় তুফান এলেও আরিশের কাছ থেকে আরুকে আলাদা করতে পারবে না…..

সকালবেলা,,,,,,

আরিশ ঘুম ঘুম চোখে ওর হাতটা দিয়ে বিছানায় হাতরে দেখতে লাগলো , হঠাৎ অনুভব করল যে আরুশি ওর পাশে নেই ৷ ঝটপট করে উঠে গেল আরিশ ৷ উঠে দেখল আরুশি সবে গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে ৷ মাথা থেকে টাওয়েলটা খুলে দিতেই চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে নিচে পড়ল ৷ অপরূপ সুন্দর লাগছে দেখতে আরুশিকে , আরিশ যেন ক্রমশ নেশার ঘোরে চলে যাচ্ছে,,,,

আরুশি ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো , আরুশি এতক্ষণ লক্ষ করেনি যে আরিশ ঘুম থেকে উঠে গেছে, তাহলে হয়তো ব্যালকনিতে আসার সাহস দেখাতে পারত না৷

আরিশ আরুরর কাছে গিয়ে পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরল , তারপর চুলের ভিতরে মুখ ডুবিয়ে দিলো ৷ অদ্ভুদ এক সুন্দর ঘ্রান আসছে আরুশির শরীর থেকে , আরুশির নেশায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে আরিশ ৷

পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই আরুশ একটু কেঁপে উঠল ৷

আরিশ :#তোমার_নেশায়_আসক্ত আরুপাখি তা কী তুমি বোঝনা !

আরু:এসব আপনি কি বলছেন ?আর আমার খুব ঠান্ডা লাগছে আপনার হাতটা সরান প্লিজ ৷

আরিশ আগের অবস্থানে থেকেই বলল: এত ঠান্ডার মধ্যে তুমি গোসল করলে কেন?

আরোশী : আরে আপনি জানেন না যে বিয়ের প্রথম রাতের পর তো মেয়েরা সকালে গোসল করে তাই আমিও করলাম ৷

আরুশির থেকে এমন উত্তর পেয়ে আরিশ চমকে উঠলো , তারপর আরুশিকে বলল ধমক দিয়ে: এই মেয়ে , বুদ্ধিশুদ্ধি আছে তো তোমার? তোমার সাথে কালকে রাত্রে আমার কি তেমন কিছু হয়েছে যে তুমি গোসল করেছ এই ঠান্ডার মধ্যে ৷

আরুশি চুপচাপ হয়ে গেছে , সত্যিই তো আরিশ যা বলছে সব ই তো ঠিক ৷

আরিশ : তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমরা বাড়ি ফিরব ৷(বলে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেল)

|
|
|💖
|
|

আরিশের মা ড্রইংরুমে আরুশির সঙ্গে বসে রয়েছেন৷ খুশিতে ঝলমল করছে উনি তা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷ আরিশের বাবাও বেশ খুশি ৷ উনিও আরুশিকে বেশ পছন্দ করতেন , তবে হুট করে আরিশ যে এরকম ভাবে হূট করে বিয়ের সিদ্ধান্তটা নেবে সেটা ঈনি ভাবতে পারেননি কখনও , তবুও উনি ওনার ছেলের উপর ভরসা রাখেন, বিশ্বাস করেন জে আরিশ কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না ৷ আর তার থেকে বড় কথা হল, এটা ভেবে উনি বেশী খুশি হলেন যে আগের মত আরিশ আর বেখেয়ালিপনা করবে না ,দেরী করে বাড়ী ফিরবে না, আবার সবকিছু আগের মতোই ঠিকঠাক হবে ৷

আরিশের মা আরুর কপালে চুমু দিয়ে বললেন:তুই আমার বউমা না আমার মেয়ের মত ৷ সানা আর তুই দু’জনেই আমার মেয়ে , আর এখন তো আরও নিজের হয়ে গেলি…

আরিশের মা: সানা তোর ভাবিকে ওর রূম টা দেখিয়ে দে ৷

সানা : ভাবি! সেটা আবার কে?ওতো আমার বোন, আমার জানু , আমার বেস্টি…

সকলের কর্মকাণ্ড দেখে আরূ মুচকি মুচকি হাসছে৷ দীর্ঘ সময় পর আরিশের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে একটু সকলের মাঝখানে খোলামেলা হয়ে কথা বলতে খুবই ভালো লাগছে ওর ৷আর আরিশের সাথে থাকলেই তো সবসময় আরিসের রোমান্টিক অত্যাচার গুলো সহ্য করতে হয় ওকে ৷

সানা : জানু চল, তোকে তোর ঘরে নিয়ে যায় ৷

আরূ আর সানা আরিশের ঘরের দিকে যাচ্ছে তখন সানা আস্তে আস্তে আরুশিকে বলল:
কাল রাতে কি কি করলি রে জানু আমাকে বল ৷

আরোশী সনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল ৷

আরুশি: ছি ! এসব কি সব বলছিস ৷

সানা: লজ্জাবতী লতা , আচ্ছা পরে শুনবো আগে তুই ফ্রেশ হয়ে নে ,রূমে যা ৷

সানা আর আরুশি অনেকক্ষণ ধরে আরিশের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঘরের মধ্যে ঢুকছে না আরুশি বরং ঢুকতে চাইছে না , যদি আবার রুমের ভীতর ঢুকে আরিশ কিছু করে তখন ?

সানা: কিরে যা!

আরোশী : আমার না খুব ভয় লাগছে ৷

সানা : গোটা একটা রাত দুজন দুজনের সাথে কাটানোর পরে এখন বলছিস ভয় লাগছে , যা ৷ এই বলে আরুশিকে আরিশের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল ৷

রুমে ঢুকতেই আরুশি দেখল আরিশ গম্ভীর মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ বেশ রেগে আছে তা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷

আব কেয়া হো গা?

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৭

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:7
#Suraiya_Aayat

গোটা বিয়েবাড়ী নিস্তব্ধ , একটা পিন পড়লেও যেন তার শব্দ টা শোনা যাবে এরকম ৷ কারোর মুখে কোন কথা নেই , সবাই যেন বাকহারা হয়ে গেছে ৷ সকলের সাথে চুপ করে আছে আরু আর তার সঙ্গে ওর গোটা পরিবার ৷ আহান রাগ করে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে , ওর মা ঘরে নিজেকে বন্ধ করে রেখে কান্নাকাটি করছেন ক্রমাগত ৷ ওর বাবার মুখে আছে একরাশ হতাশা আর রাগ ৷ সকলের মাঝখানে বসে আছে আরিশ মুখে ডেভিল মার্কা হাসি নিয়ে ৷
|
|💖
|
কিছুক্ষণ আগের কথা,,,,,,

আরুকে অভ্রের পাশে বসানো হয়েছে , সামনে কাজী বসে আছেন ৷ বিয়ে পড়ানো কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে , সব আত্মীয়স্বজনরা ভিড় করে রয়েছে, সকলের নজর এখন নতুন বর আর কনের উপরে….

আরুর বাবাকে আজকে বেশ খুশী দেখাচ্ছে , আরুকে খুব একটা স্নেহের চোখে না দেখলেও এই বিয়েটা হয়ে উনি যে বেশ খুশি তা উনাকে দেখে সহজেই বুঝতে পারবে যে কেউ ৷

আরুর বুকের ভিতর টিপটিপ করছে ভয়ে৷ অভ্র পাশে বসে থাকলেও সাহসে কুলাতে পারছে না , আর না পারছো অভ্রর সঙ্গে কথা বলতে ৷ অভ্রের সাথে কথা হলে সমস্তটা খুলে বলত কিন্তু তা হয়নি কারন আগের দিন অভ্র আরুর সঙ্গে যা ব্যবহার করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্র আরুকে সরি পর্যন্ত বলে নি৷
এমনকি সারাদিনে ফোনও করেনি ৷
আরু ভেবেছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে অভ্র ওকে ফোন করতে পারেনি কিন্তু কি কারণে ফোন করেনি তার সঠিক কারণটা এখনো আরূ জানেনা, হয়ত জানার চেষ্টাও করেনি ৷

কাজী এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন ৷রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে অভ্র তিনবার কবুল বলল বেশ হাসি মুখে ৷ বিয়েটা তে ও বেশ খুশি ৷

এবার আরূর পালা,,,,,

কাজী সাহেব : বিনতে আরুশি রহমান তুমি কি অভ্র মাহমুদের সাথে এই বিয়েতে কবুল ? যদি কবুল হও তাহলে বল কবুল ৷

আরুশির এখনো রেজিস্ট্রি টা বাকি ৷ আরূশির বাবা চেয়েছিল যে আরু প্রথমে কবুল বলে বিয়েটা করুক তাই উনার কথা মতোই আরূশির সইটা এখনো বাকি আছে ৷

আরুশি : ক….

আর কিছু বলতে পারল না আরু, কথাগুলো যেন গলায় আটকে গেছে বললেই হয়তো সামনে মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি ওকে খুন করে ফেলবে৷

কাজী সাহেব: মা তুমি কি কবুল?

আরুশি:______

কাজী সাহেব : মা তুমি যদি এ বিয়েতে কবুল হয়ে থাক তাহলে বলো কবুল ৷

আরু তাও কোন কথা বলছে না , মনে হচ্ছে ওর গলাটা কেউ যেন চেপে ধরে আছে, ওকে কথা বলতে দিচ্ছে না , কারণ আরিশ এর নজর ওর দিকে আগের মতোই স্থির ৷

কাজী সাহেব এতবার বলার পরেও আরু কোন কথা বলছে না দেখে এবার আরমান সাহেব অত্যন্ত রেগে গেলেন, না পেরে তিনি জোর গলায় বলতে লাগলেন,,,,,,

আরমানি সাহেব :এভাবে চুপ করে থাকার মানে কি? এখানে কি সবাই মজা দেখার জন্য এসেছে? আর এভাবে চুপ করে আছ কেন ? বিয়েটা কি আমরা জোর করে দিচ্ছি তোমাকে ৷

পিছন থেকে আরিশ বলে উঠলো : অবশ্যই জোর করে দিচ্ছেন , না হলে একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার শর্তেও সে আবার কি করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার জন্য রাজি হয় ৷

এই কথাটার ভয়ই এতক্ষণ আরু করছিল ৷আরিশের মুখ থেকে কথাটা শুনতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো আরুর ৷

না পেরে অভ্র এবার বলতে শুরু করল: এসবের মানে কি ? আর এসব কি বলছ তুমি?

আরিশ এবার অভ্রের দিকে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে: কেন তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না? আমি তো খুব সহজভাবে বলতে চাইলাম যে একটা বিবাহিতা মেয়ের দ্বিতীয়বার তার অমতে বিয়ে দিতে গেলে এরকমই তো হবেই ৷ এটাই তো স্বাভাবিক তাই না!

আরমান সাহেব : এই ছেলে তুমি এসব কি বলছ? আর গোটা বিয়ে বাড়ির সামনে মজা করছ ? আর কে তুমি?

আরিশ : আমি কে সেটা তো আপনার মেয়ে ভালো করে বলতে পারবে আঙ্কেল ৷ ওকেই না হয় জিজ্ঞাসা করুন ৷

আরমান সাহেব আরুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন , উনি আরুকে জিজ্ঞাসা করলেন: এই ছেলেটা কে? আর ও এ সমস্ত কথা কেন বলছে? এই ছেলেটা যা বলছে তা কি সত্যি?

আরুর আর বলার কোনো ভাষা নেই , চোখ থেকে অনবরত টপটপ করে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে, এই দিনটা দেখাই বাকি ছিল ,,,,,,যেখানে গোটা বিয়ে বাড়ির লোকের সামনে ওকে এভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে ৷

আহান ও আর না পেরে বলল: কিরে চুপ করে আছিস কেন বল উনি যা বলছে তা কি সত্যি?

আরু কোন কথাই বলছে না কেবল নির্বাক হয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে ৷ আর কিই বা বলবে ও কারন আরিশ যা বলছে সবই তো সত্যি কথা ৷ ওর সঙ্গে সত্যি ই তো আরিশের বিয়ে হয়ে গেছে ৷

আরিশ : আসলে ও বলতে লজ্জা পাচ্ছে, আমি বলছি আপনাদের আর প্রমাণও দেখাচ্ছি ৷

এই বলে আরিশ ওর আর আরুর ম্যারেজ সার্টিফিকেটটা সকলের সামনে দেখালো, যেখানে স্পষ্ট দুজনের সই রয়েছে , আর সাক্ষী হিসেবে রয়েছে আরিশ এর একটা ফ্রেন্ড….

সানা আরিশের কাছে এগিয়ে আসলো এসে বলল: ভাইয়া তুই এসব কি বলছিস, তোর মাথা ঠিক আছে?

আরিস : সানা তুই তো জানিস তোর ভাইয়া কখনো মিথ্যা কথা বলে না , তুই নিজেই দেখ আমার আর আরুপাখির বিয়ের পেপারসগুলো ৷

সানা সহ আরুর বাবা, আহান,অভ্র সবাই পেপারস গুলো দেখতে লাগল , তারপর দেখল যে সত্যিই ওদের বিয়ে হয়ে গেছে….

আরুর বাবা রেগে গিয়ে আরু কে যেই চড় মারতে এগোবেন সামনে তখনই আরিশ ধীর কন্ঠে বলল : আর এক পাও এগোবেন না , যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন ৷ ও আপনার মেয়ে ছিল কিন্তু এখন আমার বউ তাই অধিকারটা আপনার থেকে আমার কিছুটা হলেও বেশি ৷আর ওর গায়ে হাত দিবেন না তাহলে ভালো হবে না….

অভ্র: আমি এসব মানি না , আমি আরুশিকেই বিয়ে করবো ব্যাস্ , ও হাজারটা বিয়ে করলেও আমি ওকেই বিয়ে করব ৷

অভ্রের কথা শুনে আরুর কান্নার বেগ যেন আরও দ্বিগুন হয়ে গেল , কারণ ও অভ্র কে ধোঁকা দিয়েছ৷ আরিস যে ওকে আজকে যেভাবেই হোক বিয়ে করবে সেটা আরুকে বলেছিল আর তা আরূর অভ্রকে জানানো উচিত ছিল , তাহলে সকলের মাঝে এত বড় সিনক্রিয়েট করতে পারত না আরিশ ,অভ্র কোন না কোন ব্যাবস্থা করত ৷

আরিশ : এতদিন জানতাম বেহায়া শব্দটা মেয়েরা মেয়েদেরকেই বেশি ইউজ করে , কিন্তু আপনাকে দেখে আমার আজ থেকে ছেলেদের উপর এই ট্যাগটা দেওয়ার জন্য মনটা আনচান করছে ৷ সত্যি বলছি বড্ড বেহায়া আপনি ৷ অন্যের বউকে তার সামনে বিয়ে করার কথা বলছেন হ্যাঁ !সাহস আছে আপনার, না হলে কি আর……..
এইটুকু বলে আরিশ থেমে গেল আর কিছু বলল না৷

আরিশের বলা কথাগুলো অভ্রর বড্ড গায়ে লেগেছে বোধ হয় তাই আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল ৷ অভ্রর সাথে সাথে বাকি বরযাত্রীরাও বেরিয়ে গেল নিস্তব্ধ হয়ে ৷

কনেপক্ষে সকলের মাথা হেঁট , সবাই যেন চমক’ টা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না এখনও ৷

আরিশ আরুর কাছে গেল গিয়ে ওর চোখের জলটা মুছে দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিল ৷

আরিশ : একদম কাঁদবে না আরুপাখি, আমি আছি না !যতদিন আমি থাকবো কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা ৷ আরমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে৷
|
|💖
|
বর্তমানে,,,,,
|
আরিস : আরুপাখি চলো অনেক দেরি হয়ে গেছে, মা আর বাবা অপেক্ষা করছে বাড়িতে আমাদের জন্য৷
( সানা তো আগেই চলে গেছে ,আগে থেকে সবকিছু রেডি করার জন্য , যতই হোক নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড সে বাড়িতে ওর ভাবি হয়ে যাচ্ছে তাই প্রচুর এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে ওর মধ্যে ৷ সে এর আগে যত কিছুই হোক না কেন ৷)

আরু নিস্তব্ধ হয়ে চুপচাপ উঠে দাঁড়াল , কারন না চাইলেও আরিশ এর সঙ্গে ওকে যেতেই হবে ৷ আর ও না চাইলেও আরিশ জোর করে ওকে নিয়ে যাবে৷ আরিশ যে ওর জীবনটাকে ধ্বংস করার জন্যই এতকিছু করছে সেটাও বেশ ভালই বুঝতে পারছে আরু ……..

আরু আর কোন পিছুটান না রেখে আরিসের সঙ্গে হাঁটতে লাগলো,,,,,

আরোশী দরজার কাছে যেতেই আরমান সাহেব কড়া কণ্ঠে বলে উঠলেন : একবার এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছ মনে রেখো এই বাড়ীর দরজা তোমার জন্য চির কালের জন্য বন্ধ…..

আরু একবার পিছন ফিরে ওর বাবার দিকে তাকালো, চোখের জলটা ও যেন আর আড়াল হতে চাইল না, গড়িয়ে পড়ল এক কোণা থেকে ৷
|
|
|💖
|
|
একমনে গাড়ি চালাচ্ছে আরিশ, বেশ সুন্দর একটা রোমান্টিক গান বাজেছে গাড়িতে , আর মাঝে মাঝে গানের তালে সঙ্গে গুনগুন করে গানটার সাথে সুর মেলাচ্ছে ৷ আরিসের মনের কোন বিশেষ কিছু পাওয়ার একরাশ আনন্দ হচ্ছে এখন আর সেটা এখন আর বলতে বাকি রাখে না…..

হঠাৎই গাড়ি অন্যদিকে ব্যাক নিতেই আরু বলে উঠলো,,, ,

আরু: আপনি এ রাস্তায় যাচ্ছেন কেন?আপনার বাড়ি তো এদিকে না ৷ আমরা তো রাস্তা পার করে চলে এসেছি অন্য দিকে ৷

আরিশ জোরে জোরে হাসতে লাগলো তারপর বলল: শশুরবাড়ির রাস্তা টা তো ভালই চিনে রেখেছ দেখছি৷ বেশ ভালো ৷ পথ ভুলবেনা কখনো আর আমি কখনো ভুলতেও দেব না ৷

আরু: আমরা তার মানে আপনার বাড়ি যাচ্ছি না!

আরিশ: একদমই তাই ৷

আরু : আপনি আমাকে তাহলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

আরিস আরূর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল :তোমাকে মেরে গুম করে দেওয়ার জন্যই এদিকে যাচ্ছি ৷

আরু ভয় পেয়ে : আপনি প্লিজ আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন , আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না৷

আরিস : তুমি না চাইলেও আমার সাথে যাবে যেমনটা এতদিন তুমি না চাইতেও হয়ে আসছে ৷ আর না চাইলেও ভালোবাসতে হবে আমাকে ৷(অস্তে আস্তে)
আর তুমি তো দেখছি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলে ৷

আরিশ কথাটা বলতে বলতেই গাড়িটা থেমে গেল একটা ফার্ম হাউসের সামনে ৷

আরূ : এটা কোথায়?

আরিস : চলো গেলেই দেখতে পাবে কোথায়৷

আরূ: আমি কোথাও যাব না , আমি এখানেই বসে থাকবো ৷

আরিশ : তুমি কোথাই থাকবে না থাকবে সেটা তো আমি দেখব বলে আরূকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোলে তুলে নিল….

বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আরূর বেশ একটু ভয় ভয় লাগলো কারন সারা বাড়িতে কেউ নেই , একটা সার্ভেন্ট অবধি ও নেই ৷ ঢোকার সময় দারোয়ানকে দেখেছিল আর কাউকে দেখেনি ৷

আরিশ একটা রুমের ভেতরে ঢুকল,দরজা টা আগে থেকেই খোলা ছিল ,হয়ত ওরা আসবে সেটা বাড়ির সার্ভেন্ট খুব ভালোভাবেই জানতো তাই জন্যই খুব পরিপাটি করে গুছিয়ে রেখেছে সবকিছু ৷

রুমে ঢুকতেই আরিস আরুকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিল ৷

হাতে কিছু নরম বস্তু স্পর্শ হতেই আরূ সেদিকে তাকিয়ে দেখল গোলাপের পাপড়িতে সাজানো বিছানাটা আর ঘরটার ডেকোরেশনও সেভাবেই করা….

আরিশ আরুর পাশে বসে আরুর দিকে ঝুঁকে গেল, দুজনের মাঝখানে দূরত্বটা এতই কম যে আরিশের মুখের নিঃশ্বাসগুলো আরুর মুখের ওপর এসে পড়ছে….

আরিশ: আরুপাখি পছন্দ হয়েছে ডেকোরেশন?

আরু: এসবের মানে কি?( তোতলাতে তোতলাতে)

আরিশ আঙুল দিয়ে আরুল ঠোঁট দুটোকে আলতো করে স্পর্শ করে বলল: কিছুই বুঝতে পারছ না আরুপাখি যে এসব কেন? আজ তোমার আর আমার বাসর মনে নেই?

ভয়ে আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে৷
আরুর অবস্থা দেখে আরিশ বলল:
এখনই ভয় পেয়ে গেলে চলবে ? এখনো তো অনেক কিছুই বাকি ৷

চলবে,,,,,,