Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1577



তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৬

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#parr:6
#Suraiya_Aayat

আরু আরিশকে ধাক্কা মারলো,,,,,,

আরূ:আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? কেন এসমস্ত পাগলামি করছেন? আর কোন সাধারন মানুষরা এরকম পাগলামি করেনা, আমারতো মনে হয় আপনি মেন্টালি সিক ৷

আরিস হাসতে লাগলো, তারপর বলল : ইয়েস আমি মেন্টালি সিক বাট তোমার সাথে বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে, তোমাকে না বললাম আগের দিন যে একবার বিয়েটা করো তারপর দেখো আমি কি কি করি….

আরুশি আরিশের জামার কলার ধরে বলতে লাগল: আপনি প্লিজ আমার জীবন থেকে চলে যান , আমি আপনাকে ভালোবাসি না ৷ আমাকে সুখে শান্তিতে থাকতে দিন ৷(কাঁদতে কাঁদতে)

আরিশ আরুকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল, নিয়ে গিয়ে বাথটবের মধ্যে আরুকে ফেলে দিল৷

আরূ: আপনি পাগল ! আমাকে ভিজিয়ে দিলেন কেন?

আরিস আরুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল: ওয়েট আরুপাখি, আগে গায়ে হলুদ এর সেরেমনি টা কলপ্লিট করি ৷

এই বলে আরিশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমের ভিতরে গিয়ে বাড়ি থেকে আনা হলুদের বাটি আর ওর দেওয়া গায়ে হলুদের শাড়িটা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলো…

আরু উঠে দাঁড়ালো তখন আরিস ওয়াশ রুমের দরজা লক করে দিল ভিতর থেকে ৷

আরিশ: পালানোর চেষ্টা করো না আরুপাখি, গায়ে হলুদ আগে হোক তারপরে যা খুশি করো ৷

আরিশ : এদিকে আসো তো দেখি , আমার বউটাকে আগে হলুদ লাগাই ৷

আরু : আপনি একদম আমাকে টাচ করবেন না বলে দিলাম ৷

আরিশ : তোমার শরীরের কোথায় কোথায় টাচ করিনি তুমি সেটা আমাকে শুধু বলো !

আরিসের কথা শুনে আরু ঘাবড়ে গেল , চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে এককোনে ৷ আরিশ ওর দিকে এগিয়ে যেতেই আরু পিছিয়ে গেল ,অবশেষে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেল আরূর ৷

আরিশ :কেন সব সময় চেষ্টা করো আমার থেকে পালানোর?তুমি যেখানে থাকবে আমিও সেখানে থাকবো এটাই যে নীতি ৷

আরিশ এবার বাটি থেকে হলুদ নিয়ে প্রথমে ও নিজের গালে লাগালে তারপরে ওর মুখের হলুদটা আরোশীর মুখে ঘষে দিল ৷

আরিশের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকার কারণে আরুর মুখটা এখন বেশ জ্বালা করছে ৷

আরিশ: নাও আমাদের হলুদ কমপ্লিট ৷

আরোশী :আমাকে এবার তো যেতে দিন, নিচে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে ৷

আরিশ: সবাই অপেক্ষা করছে আর তুমি যান যে আমি তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি? সেটা তো জানো না, চলো এবার গোসলটা সেরে নিই ৷

আরু: গোসল সেরে নেব মানে?(তুতলিয়ে বলল)

আরিশ : মানেটা খুব সিম্পল ,বলে শাওয়ার টা অন করে দিল আর আরুশিকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করালো তার সঙ্গে নিজেও দাঁড়াল….

না চাইতেও আরুশিকে আরিশের সাথে ভিজতে হল৷

ওদের গোসল শেষ হয়ে গেলে আরিস আরূর রুমে অপেক্ষা করতে লাগলো ততখন আরু চেঞ্জ করছে৷
.
আরু কোন রকমে শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে রুমে আসলো…

তারপর আরিশ সযত্নে আরুর শাড়িটা পরিয়ে দিল আর মাথার ভিজে চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে লাগলো ৷ আরূ জানে এইগুলো যতক্ষণ আরিশ না করবে ততক্ষণ আরিশ ওকে ছাড়বে না ৷

আরিশ বলতে শুরু করল : আমার থেকে কখনো পালানোর চেষ্টা করবে না ঠিক আছে! তাহলে ফলাফল টা ভালো হবে না….

আরু: এবার প্লিজ আমাকে যেতে দিন, অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে৷ এর মধ্যে অনেকবার ডেকেও গিয়েছে ৷ প্লিজ এবার যেতে দিন আমাকে , প্লিজ!

আরিশ : এতক্ষণে মনে হয় তোমার প্রেমিকের হলুদ ছোয়ানো হয়ে গেছে ৷ আর আমার সাথে তো তোমার গায়ে হলুদ হয়ে গেল তাই তুমি এখন রেস্ট কর ওকে৷ বলে আরিশ আরুর হাতে ট্যাবলেটটা ধরিয়ে দিল৷

আরু: এটা কি?

আরিশ :ঔষুধ, এখন বেশি কথা না বলে আগে খেয়ে নাও তারপর বলছি ৷

আরূ: আপনি বলেন আগে এটা কিসের ঔষুধ, নাহলে আমি খাব না ৷ আর আমার কি হয়েছে যে আমি এই ওষুধটা খেতে যাব৷

আরিস : তোমার ভয়ানক রোগ হয়েছে আরুপাখি,আর যে রোগে তুমি আমাকেও জডাচ্ছো৷
এটা তাড়াতাড়ি খাও বলে , জোর করে আরিশ একসঙ্গে দুটো ওষুধ খাইয়ে দিল আরূকে ৷

আরিশ:নাও আরুপাখি এবার তুমি ঘুমাও, ওকে৷

আরুশি: এটা আপনি কী করলেন!

আরিশ : যা করেছি বেশ করেছি…এবার এই ঘুমের ঔষুধ খেয়ে তুমি ঘুমাও ৷
বলে আরুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল ৷

আরু: আপনি ছাড়ুন প্লিজ , আমাকে ওখানে যেতে হবে ৷

আরিশ : না তুমি এখন ঘুমাবে , বলে আরুর মাথায় হাত বোলাতে লাগল যাতে তাড়াতাড়ি ওর ঘুম চলে আসে ৷

আর ঠিক সেই অনুযায়ী ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরু ঘুমিয়ে পড়ল….

আরিশ : আরুপাখি তুমি একটু ঘুমাও বলে ঠোটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে আর ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে বেরিয়ে গেল রুম থেকে….
|
|
|
|
সকালবেলা পর্দার ফাঁক থেকে সূর্যের আলো আসতেই আরুর ঘুম ভেঙে গেল….

অনেকক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছে তাই কি কি এর মধ্যে হয়ে গেছে ওর কিছুই মনে নেই….
কিছু মনে নেই তাই আর মনে করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে না ৷ তারপর উঠে ওয়াশ রুমের দিকে যেতেই চোখ পরল দরজার দিকে ৷ সে দিকে তাকাতেই চমকে গেল আরুশি ৷ কারণ দরজাটা ভাঙ্গা পড়ে রয়েছে , ঝসেটাকে কোনরকম ভাবে ঠিক করেছে কেউ ৷

কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না তাই আর বেশি দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিচে চলে গেল জানার জন্য৷

নিচে যেতেই দেখল সবাই যে যার মতো ব্যস্ত কাজে,
আর সকলের মাঝে আহান কেও দেখতে পেল আরোশী ৷ আহান কে দেখতে পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে আহানের কাছে ছুটে গেল ৷

আরশি আহনাকে জড়িয়ে ধরে : ভাইয়া তুই কখন এলি? আর আমাকে কেন বললি না তুই আসছিস৷

আহান আরুশিকে ছেড়ে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখল
তারপর বলল :এখন কেমন আছিস?

আরু: কেমন আছিস মানে ! এটা আবার কেমন কথা?

আহান: কাল রাতে তোর জ্বর এসেছিল তোর মনে নেই?

আরূ: আমার জ্বর এসেছিল?

তখনই আরুর বাবা ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠলেন : তা আর মনে থাকবে কেন! গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা সমস্ত নষ্ট করে দিয়েও বুঝি আপনার শান্তি হয়নি ৷

আরু কিছুই বুঝতে পারছে না যে কাল রাতে ওর কি হয়েছে ৷

আরু আহানের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল: ভাইয়া তুই বল আমার কি হয়েছিল?

আহান : আমি তো হসপিটালে ছিলাম, আর হঠাৎই মা ফোন করে বলল যে তুই নাকি দরজা খুলছিস না অনেক ডাকাডাকির পরেও , তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসলাম ৷ কিন্তু ততক্ষণে দেখি সকলে দরজা ভেঙ্গে তোর রুমে ঢুকে পড়েছে ৷ কিন্তু এত শব্দের মাঝেও তোর ঘুম ভাঙলো না দেখে অবাক হলাম , তার পরে কপালে হাত দিতে দেখলাম তোর ভালোই জ্বর তাই একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দিয়েছিলাম ৷

আরূ :আমার অজান্তে এতো কিছু হয়ে গেল?

আহান : হ্যাঁ হয়েছে , তুইতো জ্বরে কাহিল হয়ে গেছিলিস ৷ তার কি করে জানবি !

আরো: ওহহ আচ্ছা….
|
|
|
|
আর কিছুক্ষণ পর পার্লারের লোকজন আসবে আরুকে সাজাতে তাই আরু শান্ত হয়ে বসে আছে আর পাশে বসে আছে সানা ৷

সানা চুপ করে আছো তার সঙ্গে আরূ ও ৷

কিছুক্ষণ আগের কথা,,,,,,

আরু: তুই আসতে এত দেরী করলি কেন? আমি তো আরো তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম ! কালকেও লেট আর আজকেও! তিথির কথা আমি বাদ ই দিলাম, ও চিরকালের দেরি করা পাবলিক ৷

সানা: আর বলিস না , ভাইয়ার জন্য আটকা পড়ে গেছিলাম ৷

আরূ কাঁপা কাঁপা গলায় ;কেন কি হয়েছে তোর ভাইয়ার?জ্বর নাকি?

সানা: আরে ভাইয়ার কেন কিছু হতে যাবে ? আজ ভাইয়া নাকি বাড়ি বউ নিয়ে আসবে, এটা শুনেই আমি হতভম্ব , আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ৷ কালকেই শুনলাম ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে আর আজকে বউ করে নিয়ে আসবে তাকে ৷ আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা ভাইয়ার কি হয়েছে!মা আর বাবাও বেশ অবাক ৷ কি হবে এখন জানিনা ৷ বাড়ি থেকে এটা বলেই বেরিয়েছে , আর কিছুই তো বলল না ৷

ভয়ে আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ ,একটা কথা বলারও সাহস পাচ্ছেনা , কিইবা বলবে কারণ বিপদ যে আসন্ন সেটা ওর আর বুঝতে বাকি নেই ৷
আগের দিন যা কাণ্ড ঘটিয়ে গায়ে ওর হলুদের অনুষ্ঠান নষ্ট করেছে ,ত দেখে আরিশের এর পক্ষে যে বাদবাকি কাজ ও সম্ভব ৷ এটা নতুন কোন কাজ নয় সেটাও এখন বেশ ভালই বুঝতে পারছে আরু ৷

আরু : ও!

সানা : ব্যাপারটা যত নরমাল লাগছে ততটা নয়, আমার তো এবার খুব চিন্তা হচ্ছে যে ভাইয়া কাকে না কাকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসবে তখন আর একটা সমস্যা হবে ৷নাজানি সে কেমন হবে ৷

তারপর থেকে আরু বেশ চুপচাপ কোন কথা ওর মুখ থেকে বের হচ্ছে না…..
|
|
|
|
বিয়েটা বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবেই হবে ৷ সকল সাজ-সরঞ্জাম রেডি ৷ আহান কোন কিছুতেই কোন ত্রুটি রাখেনি ৷ আহানের নয়নের মনি আরূ, কখনো কষ্ট পেতে দেয়নি নিজের বোনকে আর সেখানে ছোট বোনের বিয়েতে কিভাবে কোন ভুলত্রুটি করে৷

পার্লারের লোক অনেকক্ষণ আরুকে সাজিয়ে রেখে চলে গেছে, ঘরের মধ্যে আরু একা বসে রয়েছে ৷একটু আগে বর এসেছে বর এসেছে শব্দ টা শুনে সানা তিথি আর ওর কাজিন সহ সবাই সেখানেই গেছে ৷
বুকের ভিতর ধুকপুকানিটা ক্সমশ বেড়েই চলেছে৷

একরাশ ভয় কাজ করছে আরুর তার কারন আরিশ যদি ওর জেদ বজায় রাখতে বিয়েটা ভেঙে দেয় তখন কি হবে?

হঠাৎ ওর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আরিশ এর ফোন এল,,,,

আরোশী ভেবেই রেখেছে যে কোনভাবেই কলটা ধরবে না , ধরলেই ওকে আরিশের চক্রান্তের শিকার হতে হবে ৷ কথা বললেই আরিশ ওকে থ্রেড দেবে ওকে বিয়ে করার জন্য , আর এই ভুলটা আরু দ্বিতীয় বার করবে না….

বারবারই আরিশ ফোন করেই চলেছে কিন্তু আরু কোন ভাবেই ফোন ধরছেনা ৷

ফোনে মেসেজ এর টুংটুং আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই ফোনটা ধরলো আরু , একটা ভয়েস massage ৷

আরিশ (মেসেজ ): ফোনটা ধরো না হলে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ঢুকে যাব , এমনিতেও দরজাটা অনেকটাই ভাঙ্গা , তাই ঢুকতে বেশ অসুবিধা হবে না তুমি বুঝতেই পারছ আশা করি ৷ তাই আর দেরি করো না ৷ আরেকবার কল করব কল টা যেন রিসিভ হয়৷

আরূ: ভয়ে ভয়ে কলটা ধরল ৷

ফোন ধরতেই আরিশ নরম কণ্ঠে কথা বলতে লাগল যেন কোনকিছুই হয়নি এতক্ষন ৷

আরিশ: তোমাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে আরূপাখি৷ আমি তো চোখ ফেরাতেই পারছিনা, শুধু তাড়াতাড়ি তোমাকে বিয়ে করার অপেক্ষা ৷ আসছি আমি অপেক্ষা করো ৷ ভালোবাসি আমি ……….তারপর আর কিছুই বলল না আরিশ কলটা কেটে দিল ৷

ফোনটা কেটে দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইল আরু, চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল অজান্তেই গড়িয়ে পড়ল…….

এবার কী হবে???

চলবে,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৫

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:5
#Suraiya

আরিশ আর সানা বাড়ি পৌঁছে যেতেই সানা ঘখন ওর নিজের রূমের দিকে যাচ্ছিল তখন আরিশ সানাকে ডাকলো,,,,,,,,

সানা: ভাইয়া কিছু বলবি?

আরিশ : আজকে তোর ফ্রেন্ড এর গায়ে হলুদ তো তুই তো একটু পরেই যাবি তাই এই প্যাকেটটা তোর ফ্রেন্ড কে দিয়ে দিস ৷

সানা : কিন্তু ভাইয়া তুই এটা কখন কিনলি আর আমাকে তো বলিস নি !

আরিশ : আরে রিং কিনতে গিয়ে মনে পড়ে গেল যে তুই আজকে গায়ে হলুদে যাচ্ছিস তাই খালি হাতে যাওয়া যায় না সেই কারণে এই শাড়িটা নিলাম আর আমার বেশ পছন্দ ও হলো শড়িটা ৷

সানা : ওকে ভাইয়া ৷ আর ভাবীর জন্য?(চোখ মেরে)

আরিশ : তোর ভাবী অনেক special তাই special কিছুই করব 👽

সানা: ভাবীর সাথে আলাপ করাবি কবে?

আরিশ: পরশু দিন যখন বাড়িতে নিয়ে আসব তখন ই দেখতে পাবি ৷

সানা : কিন্তু পরশু তো আরুর বিয়ে তাহলে আমি তো বাড়ি থকব না ৷

আরিশ: সারপ্রাইজ ৷

সানা: ওকে ,ওয়েটিং ফর ইউর সারপ্রাইজ৷

আরিশ: রহিম চাচা কে বলিস তোকে ঠিক পৌঁছে দেবে টাইমে ৷

সানা: না চিন্তা করিস না , আব্বু মা সকলেই যাবে ৷ তোকেও ইনভাইট করেছিল ,কিন্তু আমি তোকে যাওয়ার জন্য বলিনি,তার কারণ এমনিতে তোকে বললে তুই যেতিস না বেকার বলে আমার মুখ নষ্ট ৷এই বলে সানা শাড়ির প্যাকেটটা হাতে ধরে ঘরের মধ্যে চলে গেল ৷

আরিশ : নিজের বিয়েতে আমার বউ নিজেই আমাকে ইনভাইট করেছে আর তা আমি কি করে না যেয়ে থাকতে পারি ৷
বিয়েটা প্রথমে কেমনজানি খাপছাড়া খাপছাড়া লাগছিল তবে এখন বাবা আর মা যে আজকে যাচ্ছে বিয়েতে টা ফাইনালি ফুলফিল ৷ ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে…..

আরু অনেকবার আহানকে কল করার চেষ্টা করছে, বারবার কল নট রিচেএবেল বলছে ৷ এমনিতেই সকাল থেকে মন খারাপ তার উপরে আহান আসবে না বলেছে, এই ঘটনাটা আরুকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে ৷

আরূশী বারবার আহানকে কল করার চেষ্টা করছে তখনই দৌড়ে এসে সানা আরুশির গলা জড়িয়ে ধরলো ৷

আচমকা এমনটা হওয়ার কারণে আরূ বেশ চমকে গেল ৷

সানা: জানু সারপ্রাইজ!

আরূ 🙁 রেগে গিয়ে )একটা থাপ্পর দিব,এটা কোন আসার সময়? আর এরকম করে কেউ ভয় দেখায়? আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম, আর কিসের সারপ্রাইজ এটা? তোকে আমি আরো আগে আসতে বলেছিলাম আর তুই এখন আসছিস? বরং উল্টো আমার দুঃখটা বাড়িয়ে দিলি ৷

সানা: সরি জানু, আমি চেষ্টা করেছি তাড়াতাড়ি আসার কিন্তু তুই তো জানিস আম্মু তোকে কত ভালোবাসে তাই তোর জন্য এটা-সেটা বানিয়ে আনতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে , আর তাছাড়া বাপিও অফিসে ছিল তার জন্য ৷ যদিও বা ভাইয়া অফিসে থাকলেও কাজের প্রেসার টা একটু কমেছেও তাও সব টা তো ওর উপর ছেড়ে দেয়া যায় না তাই না!

আরিশ অফিসে জয়েন করেছে শুনে আরূ খুব অবাক হল ৷

আরূ আমতা আমতা করে বলল : তোর ভাইয়া অফিস জয়েন করেছে?

সানা : হ্যারে , আমিও বিশ্বাস করতে পারছি না ৷ কত নতুন নতুন পরিবর্তন হচ্ছে ভাইয়ার মধ্যে ৷
প্রথমত ,,,ভাইয়া অফিস যাচ্ছে, আর
দ্বিতীয়তঃ ভাইয়ার একটা গার্লফ্রেন্ড রয়েছে যা এতদিন বাদে আজকে আমি জানতে পারলাম ৷
আর তৃতীয় : ভাইয়া নাকি কালকে কিছু একটা করবে সেটা কি ধামাকা টাইপের হবে ৷
আমি কিছূ জিজ্ঞাসা করতেই আমাকে বলল যে সেটা নাকি সারপ্রাইজ ৷

সানার কথা আরুশি যতই শুনছে ততই যেন বারবার ওর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছৈ ৷ কারণ আরিশ যে সত্যিই বড় কিছু একটা ঘটাবে সেটা আরু বেশ ভালই বুঝতে পারছে ৷

আরুর ভাবনা ভাঙিয়ে সানা বলতে লাগল….

সানা: দেখেছিস তো কথায় কথায় ভাইয়ার দেওয়া গিফটটাই তোকে দিতে ভুলে গেছি ৷ ভাইয়া অনেকবার বলেছে যেন মনে করে ওটা তোকে দিয়ে দিই ৷

আরুশি : কিসের গিফট ?কাঁপা কাঁপা গলায় ৷

সানা : ভাইয়া তোর গায়ে হলুদের জন্য একটা শাড়ি পাঠিয়েছি ৷ অন্য দিন পরে নিস ৷আচ্ছা এবার এটা ধর ৷

আরুর হাতে সানা যখন শাড়িটা দিল আরুশির হাত তখন অলরেডি কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে ৷ শাড়িটা নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না কারণ শাড়িটা নিলেই ওকে যে শাড়িটা পরতে হবে সেটা ও ভালোই জানে এটা আরিশের অর্ডার , আর শাড়িটা না পড়লে আরিশ নিজে পরিয়ে দেবে ৷ আর অভ্রের বাড়ির দেওয়া শাড়ি খুলে যদি অন্য শাড়ি পরতে হয় তো সেটা নিয়ে হাজার কথা উঠবে ৷ তবে যা খুশিহয়ে যাক আরু শাড়িটা কোনভাবেই পরবে না….

সানা : তুই একটু ওয়েট কর আমি আম্মুকে ডেকে আনি ৷

আরোশী : আচ্ছা ঠিক আছে যা তবে তাড়াতাড়ি আসবি ৷

সানা: ওকে ৷
____________

আরূ শারিটা নিয়ে বসে বসে ভাবছে যে কি করা যায় এখন ৷ তখনই ওর মাথায় এলো একটা প্ল্যান ৷ কোন রকম আর দেরি না করে টেবিলের উপরে থাকা কাচিটা নিয়ে শাড়িটার ঠিক মাঝখানে এমন একটা অংশে কাটলো যাতে শাড়িটা পড়লে শরীরের বিভিন্ন অংশ দৃশ্যমান হয় ৷

ওর যা ভাবা তাই কাজ ৷
তাড়াতাড়ি শাড়িটা কাটলো কাচি দিয়ে ,অল্প ই কাটল না হলে আরিশ সন্দেহ করবে ওকে ৷
কাটা শাড়ি আরিশ নিশ্চয়ই আরু কে পরতে বলবে না ৷

তখনই আরিশের কাছ থেকে কল এল, ৷ আরিশের থেকে কল আসবে আরু সেটা জানত কিন্তু তা যে তৎক্ষণাৎ আসবে সেটা ও আন্দাজ করতে পারেনি৷
তবুও অনেকটা সাহস নিয়ে ফোনটা ধরল….

আরিশ : শাড়িটা পরেছে আরুপাখি ?

আরুশি কিন্তু কিন্তু করে : আসলে হয়েছে কি শাড়িটার না মাঝখানে কাটা আছে , তাই ওটা কোনোভাবেই পরা যাবে না ৷

আরিশ ভ্রু কুঁচকে বললো : ওহ রিয়েলি ! তা আমি যখন কিনে আনলাম তখন তো ছিল না ৷

আরোশী : আপনি বিশ্বাস করছেন না কেন ,শাড়িটা পরা যাবে না ৷

আরিশ: সেটা ছেড়া হোক আর যাই হোক শাড়িটা ভালোই ভালোই পরে নাও না হলে আমি পরালে আশা করি ব্যাপারটা ভালো হবে না ৷

আরিশের সাথে আরু কথা বলছে তখনই তিথি ঘরে ঢুকলো ৷ ঘরে ঢুকতেই আরুকে ফোনে কথা বলতে দেখে তিথি বলে উঠলো,,,,,

তিথি: জিজুর সাথে কথা বলছিস নাকি?

আরিশ ফোনের ওপাশ থেকে আরূকে বলল : তিথিকে বল হ্যাঁ জিজুর সাথেই কথা বলছি ৷

আরূ তাউ কিছু বলছে না চুপ করে আছে দেখে আরিশ জোরে ধমক দিয়ে বলল: বল হ্যাঁ ৷

আরুশি চমকে উঠে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল : হ্যাঁ হ্যাঁ !

তিথি : তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন আরূ , আর এরকম ঘামছিস ই বা কেন ?

ফোনের ওপাশ থেকে আরিশ বলল : সত্যিই তো ! তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন ? এখনই ভয় পেয়ে গেলে পরে তো আমার কাছেই আসবে না , তখন তো আমাকে বিবাহিত হয়েও bachelor হয়ে থকতে হবে ৷ বলে হাসতে লাগল ৷

আরু: আমি এখন রাখছি ৷

আরিশ: সে রাখতে চাইলে রাখো ,তবে আমি কিন্তু আসছি ৷ এসে যদি দেখি যে শাড়িটা পরোনি তো খুব খারাপ হবে ৷

আরোশী তাড়াতাড়ি করে ফোনটা কেটে দিলো কারণ তিথি বা সানা যদি আরিশের কথাটা জানতৈ পেরে যাই তো খারাপ একটা ব্যাপার হবে ৷

___________

অনেকক্ষণ ধরেই আরু বসে আছে অভ্রের পাশে ৷ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এখনো শুরু হয়নি ৷

অভ্র ফিসফিস করে আরুর কানের কাছে গিয়ে বলল,,,,,

অভ্র : লুকিং সো হট বেবি ৷

আরু : প্লিজ ভদ্রভাবে কথা বললেন ৷(বিরক্তি বোধ করে)

অভ্র: এতে খারাপের কি আছে ? তোমাকে যে রকম লাগছে সেরকমই ই তো বলছি, আর একটা যাসট কমপ্লিমেন্ট ইউ নো ৷

আরু আর কোন কথা বাড়ালো না অভ্রের সাথে ৷ ও জানে অভ্রর সাথে কথা বাড়ালে কথা আরো বাড়বে….

চারিদিকে বক্স বাজছে , গান হচ্ছে ৷ তিথি , সানা তার সঙ্গে আরুর সমস্ত কাজিন রাও আছে, আনন্দ করছে সবাই ৷ আর আরিশের মা দূরে দাঁড়িয়ে আরুর মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন ৷

আরিশের মা আরূকে খুব ভালবাসেন, নিজের মেয়ের মতোই মনে করেন তিনি আরু কে ৷ আরিশের সাথে আরুর বিয়ের কথাটা উনি ভেবেছিলেন তবে তার আগেই অভ্রের সাথে বিয়েটা পাকা হয়ে যাই ওর ৷

অনুষ্ঠানে এখনো শুরু হয়নি কারণ আরুর বাবা এখনও এসে পৌছালো না ৷

সানা আরু আর অভ্রের হাত ধরে ওদের মাঝখানে নিয়ে আসলো ৷ ওদের সঙ্গে গানের তালে অভ্র নাচতে লাগলো আর আরুকে অনেক জোর করেছে ,কিন্তু কেউ নাচাতে পারেনি ৷ এমনিতেই ওর মন মেজাজ ভালো নেই ৷
হঠাৎ করে নাচের মাঝে অভ্র এসে আরুর পেটে ওর হাতটা স্লাইড করতেই আরু দূরে সরে গেল ,তখন ওয়েটারের সাথে আরূর ধাক্কা লেগে সমস্ত ড্রিংকস আর জুস গুলো আরুর শাড়ির উপরে পড়ে গেল….

ওয়েটার : সরি সরি আপু দেখতে পাইনি ৷

আরুশি: ভাইয়া ইটস ওকে, আর আমিও দেখতে পাইনি আপনি আসছেন ৷

অভ্র: ইটস ওকে মানে ! এই ওয়েটার আপনি কেন ওর গায়ে ফেলবেন জুসটা , দেখে চলতে পারেন না?

অভ্র আরো বাজে কথা ওয়েটারকে সোনাতে লাগল ৷আরু কখনও ভাবতে পারেনি যে অভ্র এরকম একটা আচরন করবে ৷
তবে ওয়েটারটা আশা করি অভ্রের কথায় কিছু মনে করবে না কারন আরিশ আরুর গায়ে জুসটা ফেলার জন্য ওয়েটারকে ভালো আ্যমাউণ্ট এর টাকা দিয়েছে ৷

সানা : আরু তুই ড্রেসটা চেঞ্জ করে আয় ৷

আরূ :হমম ৷

সানা: চল আমি তোর সঙ্গে যাচ্ছি ৷

অভ্র : আমি যাচ্ছি ওর সঙ্গে ৷

আরুর অভ্রের উপর অনেক রাগ রয়েছে ওর সাথে এমন খারপ ব্যবহার করার কারনে ৷ তাই আরু রেগে গিয়ে বলল : কাউকে যেতে হবে না আমি একাই যেতে পারবো ৷বলে আরূ নিজের ঘরের দিকে চলে যেতে লাগলো….

রূমে ঢুকেই দরজা দিতেই দেখল সোফাতে পায়ের উপর পা তূলে আরিশ বসে আছে, আর মুখে সেই হাসি যা আরুর গোটা শরীর জুড়ে শিহরন বইয়ে দেওয়ার জন্যই যথেষ্ট ৷

আরিশকে দেখেই দরজা খুলে পালাতে গেলেই আরিশ খপকরে আরুর হাতটা ধরে কোলে তুলে নিয়ে রুমের মাঝে দাড় করিয়ে দিল ৷

আরুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটানে গা থেকে শাড়িটা খুলে দিল ৷ আরু ভয়ে এখন কাঁপছে, কী করবে ও এখন!

আরিশ আরুর উন্মুক্ত কোমরটা ধরে ওর সাথে আরুকে মিশিয়ে নিল ৷

আরুর মুখের থুতনি টা ধরে আরিশ বলতে লাগল : লজ্জা লাগছে এবার? খুব লজ্জা !

আরু থরথর করে কাঁপছে, কিছু বলবে তার আগে আরিশ ওর ঠোঁটে একটা কামড় বসালো , কাঁমড় বসাতেই আরু আরিশকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিল ৷

Suraiya Aayat

চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৪

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:4
#Suraiya

আরিশ আরুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল…..

ঘরে এসি চলা সত্বেও আরু দর দর করে ঘামছে, গলা যেন ক্রমশ শুকিয়ে আসছে৷ এত রাতে নিজের বাড়িতে থেকেও আরিশের বিরুদ্ধে কোন স্টেপ নিতে পারছেনা আরু ৷

আরিশ: আমি চলে গেলে কি তোমার প্রেমিক অভ্র কে ডাকবে না কী?

আরুশি : আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আপনি এসব কি যা তা বলছেন নির্লজ্জের মতো! একের পর এক ভুল অভিযোগ করছেন আমার উপরে৷

আরিস: ওহ রিয়েলি ! তাহলে শপিংমলে ও যখন শরকম নোংরামো করতে যাচ্ছিল তুমি তখন প্রটেস্ট করলে না কেন ? আমি যদি ওখানে না থাকতাম তাহলে তো বেশ ভালই হতো তাইনা?

আরিসের চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে আর আরু ভয়ে গুটিসুটি হয়ে গেছে…..সত্যিই তো আরিশকে ও না দেখলে অভ্রকে ধাক্কা মারার সাহস পেত না তখন কি হতো?

আরু: তারমানে ওটা আপনি ছিলেন?(তোতলাতে তোতলাতে)

আরিস : কেন আমি না থাকলে খুশি হতে বুঝি!

আরুশির গাল দুটো চেপে ধরে বলল : দ্বিতীয় বার যদি ওকে তোমাকে স্পর্শ করতে দেখেছি তো প্রথমে ওকে নয় আগে তোমাকে শেষ করবো আমি এটা মনে রেখো ৷

আরিশ ওর মুখ চেপে ধরায় আরুশি কোন কথা বলতে পারছেনা ৷

আরিশ আরুশিকে ছেড়ে দিতেই আরূ বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে ৷ আরুশি মুখের যে অংশে আরিশ চেপে ধরেছে সেই জায়গায় আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে , লাল হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে জায়গাটা…

আরুশি : (জোরে শ্বাস নিয়ে )আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন , আর আমাকে একটু সুখে শান্তিতে থাকতে দিন ৷

আরূশির কথা শুনে আরিশ হো হো করে হেসে উঠলো তারপর বলল : শান্তি তাই না ! যদি আমি তোমাকে না পাই তাহলে শান্তি কেন শান্তির বাপ মা ও তোমার পাশে আসবে না এটা মনে রেখো ৷

আরু চুপ করে আছে আরিশের কাছ থেকে পজেটিভ কিছু শোনার আশায়,কিন্তু তা আর হচ্ছে কই ! বিভিন্ন সময় আরিশ বিভিন্ন রকম ব্যবহার করছে,তাই আসলে আরিশ কি চাইছে তা বোঝা মুশকিল….

আরিশ নরম কন্ঠে বলল: সরি আরুপাখি, এতো রাতে তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব করার জন্য ৷ কিন্তু কি আর করবো বলো , তোমার ওই প্রেমিক তোমাকে স্পর্শ করছিল আর আমি কি করে তা সহ্য করি বল? তাই তোমাকে দেখতে চলে এলাম আর একটু সাবধান করে দিলাম ৷ তাছাড়া কালকে তো আমাদের গায়ে হলুদ তাই রেডি থেকো আরুপাখি ৷

আরু : আমাদের গায়ে হলুদ মানে !

আরিশ : আমাদের মানে বুঝলে না? আমাদের মানে আমার আর তোমার || বিয়েটা তো অনেক আগে থৈকেই হয়ে আছে , আর কালকে হলুদ হবে….

আরূশি:দেখুন আপনি এসমস্ত পাগলামি বন্ধ করুন৷

আরিশ : চিন্তা করো না,আগে বিয়েটা বিয়েটা করি তারপর সব পাগলামি বন্ধ করে দেবো , শুধু তুমি দেখতে থাকো কি কি করি ৷ আর হ্যাঁ বলে রাখি কালকে হলুদের জন্য আমি তোমাকে যেই শাড়িটা পাঠাবো সেই শাড়িটাই তুমি পরবে , যদি অন্য শাড়ি পরতে দেখেছি তো আমি আবার নতুন করে পরিয়ে দেবো আরূপাখি চিন্তা করোনা ৷আমি কিন্তু বেশ ভালো শাড়ি পরাতে পারি ৷ (চোখ মেরে )

আরিশ :আচ্ছা বউ এখন আসি, অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমাও ৷ আমার সাথে বিয়ের পর এমনিতেও ঘুমাতে পারবে কি তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারছিনা৷বলে আরিশ ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যেতেই আরু অবাক হয়ে গেল ৷

আরু আর না বলে থাকতে পারলো না : আপনি ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন ?

আরিশ : কেন যেখান দিয়ে এসেছি সেখান দিয়েই যাচ্ছি ৷

আরুশি : আপনি তার মানে ……অবাক হয়ে ৷

আরিশ: হ্যাঁ ঠিকই ভেবেছো, পাইপ দিয়ে উঠেছি, আরে ভালোবাসায় সমস্ত কিছু যায়েজ ৷ আরুশির দিকে চোখ মেরে ৷

আরিশ ব্যালকনির দিকে গিয়ে আবার ফিরে এসে আরুশির কাছে এসে হালকা করে একটা কিস করে চলে যেতেই আরুশি যেন হাফ ছেড়ে বাচল, তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না , আরিশ আবার এসে ডিপলি কিস করে চলে গেল ,যাওয়ার আগে জোরে একটা কামড় ও দিয়েছে ৷

আরিশ : কালকের জন্য রেডি থেকো বউ…

আরিশ চলে যেতেই আরু বিছানায় বসে কাঁদতে লাগল ৷

আরুশি: আমার সঙ্গে ওনার কোন জনমের শত্রুতা যে উনি আমার সাথে এরকম করছেন , আর আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?

তখনই ওর ফোনে ফোন আসতেই আরিশের কলটা না চাইতেও ধরল আরুশি ৷

আরিস: তোমার কি দোশ সেটা পরে জানতে পারবে আরুপাখি , এখন একদম কাঁদবে না, আর একবার যদি দেখেছে তুমি কেঁদেছো তাহলে আবার কিন্তু আমি তোমার কাছে চলে যাবো ৷

আরুশি: আপনি জানলেন কি করে আমি কাঁদছি?(নাক টেনে) ৷

আরিশ : সেটা যখন তুমি জানো না তো এখন আর জানার চেষ্টাও করো না ৷

আরূশি রূমের চারিপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দেখতে লাগল যে সিসিটিভি জাতীয় কিছু আছে কি না , কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পেল না ৷

আরিশ : ভুলেও কিছু বোঝার চেষ্টা করো না, যেটুকু জানো সেটুকুতেই খুশি থাকো ৷আর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো,এক মিনিটের মধ্যে ৷ তোমাকে যেন আর জেগে থাকতে না দেখি ৷

আরুশি ভয়ে ভয়ে ফোনটা কেটে ঘুমিয়ে পড়ল ৷

পরের দিন,,,,,,

সেদিন সারারাত আরুশি ঘুমাতে পারেনি ৷ কোন একটা অজানা ভয় কাজ করছিল ওর ৷ তাহলে কি যা যা বলেছে সত্যিই কি তাই করে দেখাবে….

আরুশি মনমরা হয়ে বসে আছে কারন কিছুখন আগে আহানের ফোন এসেছিল,
আহান: সরি রে আরূ আজকে আমি থাকতে পারছি না তোর হলুদে ৷

আরু: কেন ভাইয়া তোর আবার কি হলো?

আহান: আর বলিস না, আসলে একটা এমারজেনসি অপারেশন আছে ৷

আরু: দেরি হলেও তুই আসতে পারবি না?

আহান: আমি চেষ্টা করব ৷ তাও হয়তো হবে না ৷
আচ্ছা বাবা তোকে আর কিছু বলেছে?

আরু:নাহ!আর কিছূ বলেনি,তবে আমি বাড়ি থেকে চলে গেলে উনি খুশি হবেন তা আমি জানি৷ (দীর্ঘশ্বাস নিয়ে )

আহান: মন খারাপ করিস না তোর ভাইয়া তোর পাশে সবসময় থাকবে ৷

আরু এবার কেদেই ফেলল আহনের কথা শুনে ৷

আহান:একদম কাদবি না,আমি তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করব ৷

আরূ: আচ্ছা ৷

মনমরা হয়েই বসে আছে ছাদে,বাড়িতে মেহেমানরা সবাই আসতে শুরু করেছে, এত লোকের ভিড়ে আরুর যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে ৷ সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো তাও অভ্রর থেকে কোন ফোন আসেনি এখন ৷ আরূ অনেক ভেবেছিল যে অভ্রকে কালকে রাতের সব কথা জানাবে , কিন্তু সে সুযোগ এখনও হয়নি ৷

মাঝে মাঝে সকলের মাঝে নাজেকে তুচ্ছ বলে মনৈ করে আরু নিজেকে ৷
বাবা ও তাকে আর আগের মতো ভালোবাসেনা,সবসময় কথা শোনাতে থাকেন ৷ বিগত কয়েক বছরের এই ঘটনা গুলোর সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত আরূ ৷

কারন টা ওর খুব জানতে ইচ্ছা করে যে উনি আরূর সাথে কেন এরকম ব্যবহার করেন ৷ আহান ওকে খুবই ভালোবাসে , কখনো দুঃখ পেতে দেইনি ৷

এসব কিছূ ভাবতে ভাবতেই সানার ফোন আসতেই মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে ফোন টা ধরল ৷

আরূ কিছু বলার আগেই সানা বলতে লাগল
সানা : তোর রিঙ সাইজ কত?

আরু:কেন বলতো?

সানা : আরে বলনা ৷

আরু :7.5 cm,বাট তুই এসব আমাকে কেন এসব জিজ্ঞাসা করছিস?

সানা : আরে বলিস না ,আজকে জানতে পারলাম যে ভাইয়ার নাকি একটা গার্লফ্রেন্ড আছে, তো তার জন্য রিং কিনবে,আর আজকেই নাকি তাকে দিতে হবে তাই জন্য ৷ আর তার আঙ্গুলের মাপ জানেনা,আর সে অনেকটা তোর মত তাই তোর কাছ থেকেই জানতে চাইছি,আর মাপটা নিতে বললো ৷

সানার কথা শুনে আরু চমকে গেল তার কারণ আরিশ ওকেই কি বুঝিয়েছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে…

আরূ: ওহহ৷

সানা : আচ্ছা রাখছি পরে কথা হবে ,আসছি জানু ৷

আরু:তাড়াতাড়ি আসিস আর তিথিকেও ও তাড়াতাড়ি আসতে বলিস ৷

সানা :ওকে বাবু ৷

_______

আরিশ: কি বলল তোর ফ্রেন্ড?

সানা : তুই যা আন্দাজটা করেছিলি সেটাই ঠিক৷

আরিশ: ঠিক তো হবেই৷

সানা :ভাইয়া তুই কি করে জানলি ওর আঙুলের সঠিক মাপ ?

আরিশ: সে তুই বুঝবি না….

চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০৩

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:3
#Suraiya

সকালবেলা আরু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠেছে কারণ আজকে ওদের বিয়ের শপিং এ যাবে ৷

আরু আরিশের কথা প্রায় ভুলেই গেছে , সম্পূর্ণ মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু চাইলেই কি আর সব চেষ্টা সফল হয় ! তেমনই আরূর ক্ষেত্রে হচ্ছে….

রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখল অভ্র ড্রইংরুমে বসে আছে, শপিং করার জন্য অভ্র আর আরু একাই যাবে, বড়রা তাদের সঙ্গে কেউ যাচ্ছে না….

অভ্র গাড়ি চালাচ্ছে আর আরুর সাথে নানান ধরনের কথা বলছে,আরু মাথা নাড়ালেও তা মন থেকে না, তার কারণ আরিসের বলা প্রত্যেকটা কথা তার কাছে যেন আতঙ্কের মতো মনে হচ্ছে, এতটা আতঙ্ক একটা মানুষের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব নয় ৷

শপিংমলে ওরা গেছে , প্রথমে আরুর জন্য বিয়ের লেহেঙ্গা টা কিনল রেড কালারের ৷ এই কালারটা একদমই পছন্দ করে না আরু তবুও অভ্রের পছন্দ বলে তাই আর না করতে পারেনি ৷তারপর অভ্র নিজের জন্য পাঞ্জাবি আর ব্লেজার কিনল…..

আরূ একটা জামা ট্রায়াল দেওয়ার জন্য ট্রায়াল রুমে যেতে গেলেই অভ্র ওর পিছন পিছন গেল , সেটা অবশ্য আরূর অজানা…..

জামাটা গায়ে দিয়ে যখন আরূ দেখছিল তখন হঠাৎ ট্রায়াল রুমের দরজায় নক পড়ায় আর অভ্রের গলার আওয়াজ পাওয়ায় আরু একটু বেশ অবাক হল, কারণ এখানে অভ্রের আসা একেবারেই উচিত হয়নি৷তার পর ভাবল হয়তো দেখতে চেয়েছে যে পোশাক টায় আরুকে কেমন লাগে তাই এসেছে হইত৷

এই ভেবে আরু দরজা খুলতেই তার হাতটা টেনে ওকে বাইরে বার করে এনে কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোটের দিকে এগোতে লাগলো অভ্র ৷ আশেপাশে কোন লোক ছিল না তাই কেউ দেখতে পাইনি আর সে সুযোগই নিতে চেয়েছে অভ্র ৷
আরূ নিজেই এত অবাক হয়েছে যে সমস্ত কিছু তার ভাবনার আগেই হচ্ছে ৷ হঠাৎ অভ্র যখন ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করবে তখনই অভ্রের পিছন দিয়ে আরিসের মত একজনকে দেখতেই আরূ ভয় পেয়ে গেল ৷ ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল ৷ ও যাকে দেখেছে সে মুখে একটা ডেভিল মার্কা হাসি নিয়ে আরূর দিকে তাকিয়ে হাসছে , আর সেই হাসি দেখে ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে আরু ধাক্কা মারলো অভ্রকে ৷ তারপরে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো মানুষটা আর নেই৷

অভ্র রেগে গিয়ে বলল: পাগল হয়ে গেছে তুমি ?এভাবে ধাক্কা মারলে কেন ?আর আমাকে কি তোমার ক্যারেক্টারলেস বলে মনে হয়?

আরু(আমতা আমতা করে): দেখুন বিয়ের আগে এসবকিছু ঠিক না , আর তাছাড়া আমি এসব পছন্দ করিনা ৷ আর পাবলিক প্লেসে আপনার এরকম করাটা মোটেই উচিত হয়নি, আর ধাক্কাটা আমি মারতে চাই নি ৷আপনি নিজের মধ্যে ছিলেন না তাই আমি বাধ্য হয়েছি….

অভ্র : (মনে মনে) কাম ডাউন অভ্র , বেশি হাইপার হওয়া উচিত হবে না ,কাম ডাউন ৷ কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় ৷
তারপরে ও নরম কন্ঠে বলল :
আই এম রিয়েলি সরি আরুশি , আমি ওরকম করতে চাইনি ৷রিয়েলি সরি ফর দ্যাট, আসলে আমি তোমাকে দেখে নিজের মধ্যে ছিলাম না তাই এরকম হয়ে গেছে৷
আর তাছাড়া বিয়ে হয়ে গেলে তো তুমি আমারই৷

আরু: ইটস ওকে বলে আবার ট্রায়াল রুমের ভিতরে চলে গেলো ৷

ট্রায়াল রুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে আরূ ৷
একটু আগেই ও আরিশ এর মতো একজনকে দেখল, তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি এখন সব জায়গাতেই ও আরিশ কে দেখছে?

মনের ভয় গুলো যেন আরো বেশি গভীর হচ্ছে….

আজকে আরিশ এর অফিসের প্রথম দিন ৷ কলেজে খুব একটা এটেণ্ট করে না ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছাড়া ৷আর কলেজ টপার হওয়ার কারণে টিচাররাও খুব একটা বেশি মাথা ঘামিয়ে দেখেন না এই ব্যাপারটা নিয়ে ৷

বাবা-মায়ের কথা রাখতেই ওর আজকে অফিসে জয়েন করা ৷ না হলে কোন কিছু নিয়ে পড়ার জন্য ফরেন কান্ট্রি তে চলে যেতে চেয়েছিল আরিশ , আটকা পড়ে গেল একটা কারণে যা হলো “আরুপাখি৷”

টেবিলের উপরে থাকা গ্লোবটাকে বার বার ঘোরাচ্ছে আরিশ , আর মনে মনে হাসছে ৷ এই মুহূর্তে অকে দেখলে কেও ওকে যে পাগল বলবে না সেটার গ্যারান্টি নেই….

হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই…..

আরিস : কাম ইন ৷

আরাভ: আজকে অফিসে যাইনি আমি তাই তোর সঙ্গে ভাবলাম কিছুটা সময় কাটাবো তাই তোর বাড়িতে গেলাম , আন্টি বললেন যে তুই নাকি অফিসে এসেছিস ৷ কথাটা শুনে বিশ্বাস হলো না আমার তাই চোখটাকে সার্থক করার জন্য এখানে আসা ৷
তো কেমন লাগছে নতুন অফিস নতুন সব কাজ?

আরিশ মুচকি হেসে : এই তো বেশ ভালই লাগছে৷ তোর খবর বল ৷ আমি যে কালকে তোকে আসতে বলেছিলাম আসিস নি কেন?

আরাভ: কি আর বলি তোকে !তোর বোনকে মানাতে গিয়ে সময় পার হয়ে গেছে ৷ আচ্ছা তোর বোন টা এমন কেন রে ? আমি কোনদিক থেকে খারাপ যে আমাকে পছন্দ করেনা ৷

আরিশ : তোর গোটা বদনটাকেই ও পছন্দ করেনা৷

আরাভ: মজা করিস না দোস্ত, আমি কিন্তু সিরিয়াস৷ তোর বোনকে একটু তুই বলনা , তোর বোন তো তোর সব কথা শোনে ৷

আরিশ: এ পেয়ার কা মামলা হে বস , তাই আমার থেকে কিছু এক্সপেক্ট করো না ৷
ভালোবাসা হলো অদ্ভুত এক অনুভূতি যা সকলের প্রতি আসে না, ওর ও হয়তো আপনার প্রতি আসেনি৷

আরাভ বুকে হাত রেখে : দোস্ত মজা করিস না,নইতো ছোটখাটো হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবো কিন্তু ৷ এত কবি কবি ভাব নিচ্ছিস কেন ? হুমায়ূন আহমেদ হয়ে যাবি নাকি?

আরিস : হুমায়ুন আহমেদ না হতে পারি তবে আমার আরুপাখির পারফেক্ট জীবনসঙ্গী হতে পারব ৷ ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে ৷

আরাভ: দোস্ত মেয়েটার পিছনে তুই এখনো পড়ে আছিস? ছেড়ে দে না মেয়েটাকে আর কিইবা আছে ওই মেয়েটার মধ্যে এমন?

আরিশ : তুই বুঝবি না ৷ পরশুদিন আমার বিয়ে আর কালকে হলুদ ইনভাইট রইল, চলে আসিস, বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷
আরিশ এর পিছন পিছন আরাভ ও বেরিয়ে গেল..

আরাভ: কিছুই তো বুঝলাম না, বুঝিয়ে বল৷

আরিশ : ও তুই বুঝবিনা…..

আরিসের দরজায় নক করতেই আরিশ সানাকে ঘরের ভিতরে আসতে বললল ৷

সানা : ভাইয়া কালকে আমাকে একটু শপিং এ নিয়ে যাবি?

আরিশ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে: কেন কালকে আবার তোর কি আছে ?বিয়েটিয়ে করছিস নাকি?

সানা : ভাইয়া সব সময় কেন মজা করিস বলতো! আমার কেন বিয়ে হতে যাবে, বিয়ে তো আরু মানে আরুশির ৷
পরশুদিনের বিয়ে আর কালকে হলুদ ৷ হলুদ অ্যাটেন্ড করার জন্য কিছুতো নতুন পরে যেতেই হবে , পুরনো ড্রেস পড়ে তো আর যাওয়া যায় না তাই না!

আরিশ: তা তোর ফ্রেন্ড বাড়ি এসে তো ইনভাইট করে গেল না ৷

সানা : আরুশির অন্য কি কি কাজ ছিল তাই আসতে পারেনি , তাই কলেজে কার্ডটা দিয়ে দিয়েছে ৷

আরিশ : আচ্ছাহহহ! ( একটা হাসি দিল তার কারণ আরুশির তার বাড়িতে না আসার কারণটা আরিশ বেশ ভালোই জানে)

আরিশ: আচ্ছা যাব রেডি হয়ে থাকিস…..

অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে আরুশি,ঘুমাতে রাতে হয়েছিল ৷ সারাদিন এত ধকল যাওয়ার পরে বাড়ি এসে অনেক কাজ সারতে হয়েছে ওকে ৷

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ আরুশি অনুভব করলো ওর নিঃশ্বাসগুলো আটকে আটকে আসছে , দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম ৷ তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য যখন চোখ খুলে দেখল তখন দেখল আরিস ওর মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে , তাই ওর নিশ্বাস আটকে আসছে ৷ আসাটাই স্বাভাবিক ৷

এই অবস্থায় আরিশ কে দেখে আরু চমকে গেল, কোনরকমে আরিশকে ছাড়িয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য যখন ধাক্কা মেরে উঠে বসলো তখন দেখল আরিশ মেঝেতে পড়েগিয়ে হাসছে পাগলের মত….

পাশে থাকা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল আরু ৷

আপনি এখানে কি করতে এসেছেন?

এটা আবার কি ধরনের প্রশ্ন আরূপাখি ? আমার শ্বশুরবাড়ি, আমার বউয়ের ঘর আমি আসতেই পারি তাইনা!

দেখুন আপনি পুরো পাগল হয়ে গেছেন, আপনি চলে যান৷ আপনাকে আমি এখানে একমুহূর্তও দেখতে চাই না ৷

আমি romance না করে তো যাবোই না আজকে ৷আর তুমি তো ঘুম থেকেই উঠছিলেনা দেখেই তো আমি অমন করলাম ৷

আপনি এখনই বেরিয়ে যান ৷ নাহলে আমি চেঁচাবো ৷

ওকে চেঁচাও ৷ বলে হাসতে লাগল ৷

আরু যেই দরজার দিকে পালাবে তখনই আরিশ আরুর হাতটা খপ করে ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল ৷

চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০২

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:2
#Aayat

সারারাত ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছে আরূ, নাজানি কোন নতুন বিপদের সম্মুখীন হতে হয় ওকে ৷ আরিশের ভয়টা বড্ড গ্রাস করছে ওকে ৷ আর তাছাড়া এই সমস্ত কথা যদি অভ্র জানতে পারে তাহলে অভ্র কখনোই ওকে বিয়ে করবে না, সে যতই অভ্র ওকে ভালোবাসুক না কেন ৷ হয়তো এটা আরূর ভুল ধারণা…..

অভ্র ইজিপ্টে থাকে, সেখানে ও কোন একটা কোম্পানিতে জব করে, আর বিয়ের পরে আরূ কে ও সেখানে নিয়ে যাবে এরকম একটা ভাবনা চিন্তা করে রেখেছে , এতে যদিও বা আরু বা ওর পরিবারের কোন সমস্যা নেই…..

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাওয়ার আগের মুহূর্তে ওর কাছে অন্য দিন অনেকটা আনন্দের হয় কিন্তু আজকে যেন তা সম্পূর্ণ অন্যরকম বলে মনে হচ্ছে ওর ৷
একটা আতঙ্কের সঙ্গে সময়গুলো পার করছে৷ মনে হচ্ছে এই বুঝি তার বড় কোন একটা ক্ষতি হয়ে গেল৷
ওর বাবা-মা ও চাইনা যে আরু আর বাড়ি থেকে বেরুক , যা যা হয়েছে পাড়া-প্রতিবেশীদের অনেক তা নিয়ে কানাঘুষো করছে , তাই হাজারো কথা শোনার ভয়ে তারা এরকম একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন আরুকে৷

কিন্তু আজকে আরিশের সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে না হলে কোন একটা বড় বিপদ হতে পারে সেটা ও ভালোই আন্দাজ করতে পারছে….
________________

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছে রিক্সা নেওয়ার জন্য , সেখানে দাঁড়িয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা আরুকে দেখে অনেক কানাঘুষো করছে ৷
আরুও নিজেকে তার মধ্যে কিছুটা অপ্রস্তুত মনে করলেও তা প্রকাশ করছে না ,না হলে তারা আরো চেপে বসবে ওর উপরে…..

_______________

অনেকক্ষণ ধরে আরূ দাঁড়িয়ে আছে আরিশ এর বাড়ির গেটের সামনে , কলিং বেলটা বাজানোর সাহস যুগিয়ে উঠতে পারছে না…..
ওর ভাবাবেগের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না , হঠাৎ ওর ফোনে ফোন আসতেই তাকিয়ে দেখল আরিস এর ফোন ৷

আরিসের ফোন দেখেই চমকে উঠল আরূ ,,,,,,,,

আরিশ: আরূপাখি বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? শ্বশুর বাড়িতে ঢুকবেনা ?নাকি আমাকে নিয়ে আসতে হবে , তুমি লজ্জা পাচ্ছো তাই ৷

আরু : আমি আসছি, বলে কলিং বেল বাজাতেই একটা সার্ভেণ্ট এসে দরজা খুলে দিল ৷ আরু তাকে কিছু না জিজ্ঞাসা করতেই তিনি আরুকে বললেন যে, উপরের ডান দিকের ঘরটা আরিসের ৷

সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর ক্রমাগত পা দুটো কাঁপছে কারণ সারা বাড়িতে একটা মানুষজন ও নেই, সার্ভেণ্ট গুলো নিজেদের কাজে ব্যস্ত, ও যদি কোন বিপদে পড়ে তাহলেও কেউ যে ওকে সাহায্য করার জন্য ছুটে আসবে না , তা বুঝতে আর বাকি নেই ওর ৷

সারভেণ্ট এর কথামতো বড় রুমটার সামনে যেতেই দরজা খুলে আরিশ আরুর হাতটা টেনে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে নিল , তারপরে সঙ্গে সঙ্গে কোলে নিয়ে ওকে বিছানার ওপর ফেলে দিল ৷

আরিশ এখন আরূর উপরে , ওর গরম নিশ্বাস গুলো ক্রমাগত আরুর ওর মুখের ওপরে এসে আছড়ে পড়ছে ৷চোখে রয়েছে হাজারো রাগের প্রকাশ কিন্তু সেই রাগের কারণ আরুশির অজানা ৷অদ্ভুদ এক নেশা রয়েছে আরিশের চোখে ৷

আরু ভয়ে ভয়ে: আপনি প্লিজ আমার উপর থেকে সরে যান ৷

আরু আর কিছু বলতে পারল না কারণ তার আগেই আরিশ আরুর ঠোটদুটোকে আঁকড়ে ধরল , হাত দুটোকে বিছানা সঙ্গে চেপে রেখেছে আরিশ, আরুশি ছটফট করছে আরিশের হাতের বাধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু পেরে উঠছে না ৷

অসংখ্য কামড়ে ভরিয়ে দিচ্ছে আরূশি ঠোটদুটোকে, আরুশী ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে , তবুও আরিশৈর সে দিকে খেয়াল নেই ৷ একপর্যায়ে আরুশির ঠোঁট কেটে রক্ত বেরচ্ছে দেখে আরিশ আরুকে ছেড়ে দিল ৷

আরুশি উঠে বসতেই ওর মুখে হাত দিয়ে দেখল ঠোঁট কেটে রক্ত বেরোচ্ছে ৷রক্ত টা দেখে আরু কেঁদে ফেলল ৷

আরিস আরুশির কাছে গিয়ে আরুশির ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল: আরুপাখি খুব ব্যথা পেয়েছে তুমি?

আরূ কিছু বলছে না শুধু কেদেই চলেছে , বলার ভাষা টুকুও নেই ৷ আরিশ আর কি কি করতে পারে সেটা ওর ধারণায় চলে এসেছে ৷ এখন এখান থেকে যেকোন ভাবে ও বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ,এমনিতেও যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে নতুনভাবে কিছুই হওয়ার আর বাকি নেই…..

আরু ক্রমাগত কেদেই চলেছে তা দেখে আরিশ চেঁচিয়ে বলল :
কাঁদছো কেন তুমি? আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি ! আরিশ যেন আর নিজের মধ্যে নেই ৷

আরু ভয়ে চমকে গেল , ওর কান্না যেন আরো বেড়ে গেল ৷

তারপরে ও কাঁদতে কাঁদতে বলল : আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন , আর আমার সমস্ত ভিডিও আপনি ডিলিট করে দিন, আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি , তাহলে আপনি কেন আমার সঙ্গে এরকম করছেন ? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন…..

আরুর কথা শুনে আরিশ হো হো করে হাসতে লাগলো তারপরে বলল:
তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো আমি এখানে আনিনি সুইটহার্ট , আজকে আবার বাসর না করে তোমাকে কি করে যেতে দিই বল?

” বাসর “কথাটা শুনে আরুশি বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে দরজার দিকে পালাতে গেলেই আরিশ আরুর হাতটা ধরে ফেলল ৷

আরিশ : এখানে এসেছ নিজের ইচ্ছায় কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছা হলে, তাই কোন পালানোর চেষ্টা না করে যা বলছি তাই শোন ৷ আশা করি তোমারই ভালো হবে….

” ঠিক দুই দিন পর তোমার আর অভ্রের যেমন বিয়ে হওয়ার কথা ঠিক তেমনটাই হবে , শুধু বিয়ের দিন বিয়েটা অভ্রের সাথে নয় আমার সাথে হবে ৷ আর আমার কথার বাইরে যদি একটা কিছুও হয়েছে তো তোমার বাবা মাসের শেষে যে পেনশনটা পান সেটাও আর পাবে না , তোমার ভাইয়া তার হসপিটালের চাকরি টা হয়তো হারিয়ে ফেলবে, বাড়িঘর সব নিলামে উঠে যাবে, রাস্তায় গিয়ে নামবে তোমরা ৷ আর তোমার অভ্র তার কথা না হয় আমি বাদই দিলাম ৷ ”

আরুশি এবার জোরে চেঁচিয়ে বলল: আমার সাথে আপনার এত কিসের শত্রুতা যে আপনি তার প্রতিশোধ নিচ্ছেন?

আরিশ : তোমার সাথে আমার কিসের শত্রুতা?আর আমি তোমার শত্রু এই কথাটা তুমি আমাকে বলতে পারলে আরুপাখি ! আমি না তোমাকে কত ভালোবাসি, একটু আগেই কত আদর করলাম মনে নেই , নাকি কম পড়ে গেছে ৷ বলে একটা হাসি দিতে লাগল ৷

আরুশি: আমি এ সব কিছুই করতে পারবো না৷( কাঁদতে কাঁদতে)

আরিশ : যদি না করো তো আমি যা বললাম আমি আমার কাজটা করে দেখাব,বাকিটুকু তোমার ব্যাপার৷ বলে আরিশ আরূর ঠোঁটে ছোট্ট করে কিস করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল…..

আরিশ চলে যেতেই ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো, ওর জীবনে এত বড় একটা পরিবর্তন হবে এটা ও ভাবেনি কখনও ৷ একদিকে অভ্র আর আরেকদিকে তার পরিবার…..

আরিসের বাড়ি থেকে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়েছে আরোশী , এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে কারণ কলেজ টাইম অনেকক্ষণ আগেই পার হয়ে গেছে আর এখন যদি ও বাড়ি ফিরে যাই তাহলে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বাড়িতে , যা আরুশি একদমই চায়না ৷ এখন কিভাবে সমস্যা থেকে সমাধান পাবে সেটাই ভাবছে…..

কোন কিছু একটা ভেবে ফোনটা অভ্র কে ধরালো, প্রথমবার রিং হতে ফোনটা না ধরলেও দ্বিতীয়বার রিংয়ে ফোনটা ধরলো ৷ তারপর বেশ মিষ্টি কথায় কন্ঠে অভ্র বলে উঠল,,,,,,,

অভ্র: আমার বউটা হঠাৎ আমাকে মনে করেছে তার কারণটা কি জানতে পারি?

আরূ: আপনি একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবেন একটা জরুরী দরকার আছে….

অভ্র: নিশ্চয়ই আসতে পারবো ,এই কদিন ই তো আমি ফ্রি আছি , তাছাড়া বিয়ের দু’দিন পরেই তো আমরা ইজিপ্টে চলে যাচ্ছি ৷ তাই একসাথে কোন সময় কাটাতে সমস্যা কোথায় ! তুমি বল কোথায় আসতে হবে আমি আসছি ৷

আরুশি : নিউ মার্কেটের দিকে যেতেই লেকের পাশে যে পার্ক টা রয়েছে ওখানেই আসুন ৷ আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে ৷

অভ্র : তুমি একটু ওয়েট কর, আমি এক্ষুনি আসছি….

________________

অনেকক্ষণ ধরে দুজন পাশাপাশি বসে আছে অভ্র আর আরূ৷
আরূ কথাটা যেন কোনোভাবেই বলে উঠতে পারছেনা, একটা দ্বিধা ওর মধ্যে কাজ করছে কিন্তু কথাটা অভ্রকে না জানালেও নয়…..

অভ্র এবার একহাত দিয়ে আরুর কোমর টাকে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসতে গেলেই আরূশী অভ্রের হাত ছাড়িয়ে একটু সরে বসল দূরে৷

অভ্র: কি হলো , সরে গেলে যে?

আরুশি অপ্রস্তুত হয়ে: আসলে আমার আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিল ৷( আসলে অভ্রর ছোঁয়ার ব্যাপারটা আরুশির ঠিক ভালো লাগল না , তাই অপ্রস্তুত হয়ে কিছুটা সরে গেল দূরে….

অভ্র বিরক্তি হয়ে : বল ৷

আরূ বলতে শুরু করল: দেখুন আমার সাথে আপনার বিয়ে হওয়ার আগে আমার সম্বন্ধে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই…..

অভ্র: কি বলতে চাও?

আরু: আমার বিয়ে হয়ে গেছে, আর তার সঙ্গে আমি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছি, যদিও বা আমার অনিচ্ছাকৃতভাবেই হয়েছে ঘটনাটা, এতে আমার কোন হাত ছিল না , জোর করেই সমস্ত কিছু আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে….
এখন আমার সঙ্গে আপনার বিয়েটা ঠিক হয়ে গেছে তাই আমি ভাবলাম আপনাকে কথাটা জানানো উচিত না হলে আপনাকে সারা জীবনের জন্য ঠকানো হবে৷ তাই জন্য আমি আপনাকে বললাম ৷ এবার আপনি ভেবে দেখুন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কি করবেন না ৷

অভ্র ফিসফিস করে : ওটাই তো তোমার ভবিষ্যৎ৷

আরূ: আপনি কি কিছু বললেন আমাকে?

অভ্র : কই না তো , আমি তো বলছিলাম যে কার এত সাহস যে তোমাকে বাজে ভাবে স্পর্ষ করে ,তার নামটা বল আমি তাকে ছাড়বো না ৷

আরুশি: আপনার কিছু করার দরকার নেই, আপনি শুধু বলুন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কি করবেন না !

অভ্র আরূর কাছে সরৈ এসে আরূর হাতে হাত রেখে বলল :একটা ছোট্ট ঘটনায় তোমার আর আমার সম্পর্কের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হতে পারে না, আমি তোমাকে অবশ্যই বিয়ে করব, তারপর তোমাকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব , তখন এই সমস্ত কোন দুঃঘটনাই আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না…..

আরূর চোখে কৃতজ্ঞতা ছাপা অভ্রের প্রতি ৷ চোখের কোনে জল জমে আছে , কেবল গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায় ৷ সবকিছু জেনেও অভ্র যে তাকে বিয়ে করছে এর থেকে বড় কিছু হতে পারে না….

অভ্র ; আমি নারীকে সম্মান দিতে জানি তাই তোমার এই অসম্মান মুছে দেওয়ার কর্তব্যও আমার, তাই তুমি চিন্তা করো না সঠিক সময়ে আমাদের বিয়ে হবে ভালো ভাবেই৷ বাইরের কোনো লোক কোন কিছু ঝামেলা করতে পারবে না , আর আমি তোমাকে ইজিপ্টে নিয়ে গেলে তো তোমাকে আর কোন চিন্তা করতে হবে না….
বলে একটা বাঁকা হাসি দিল ৷ এই মুহূর্তে হয়তো এর অর্থ আরূর বোঝার ক্ষমতার বাইরে…..
________________

রাত 11:30,,,,,,,,,

ড্রয়িংরুমে আরিশের বাবা আর মা দুজনেই বসে আছে , অপেক্ষা করছে আরিশের বাড়ি ফেরার৷ কারণে এটা তার নিত্যদিনের কাজ ৷ আরিশ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে এই সময়ে বাড়ি ফেরে,তবে ওনারা ঠিক করলেন যে আজ এর একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বেন ৷
সারা জীবন তো আর এইভাবে চলতে পারে না, এখন যদি তারা হাল না ধরেন তাহলে ভবিষ্যতে আরিশকে পাল্টানো খুব মুশকিল হয়ে পড়বে….

গাড়ির চাবিটা আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বাড়িতে ঢুকতেই আরিশ দেখতে পেল ড্রইংরুমে ওর বাবা-মা বসৈ আছে,,,,,, উনাদেরকে দেখে গুড নাইট বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাচ্ছে তখনই আরিশের বাবা বলে উঠলো:
আফজাল সাহেব : এইভাবে আর কতদিন ?তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারো না ?আর এই সমস্ত বাজে সঙ্গ ত্যাগ করো, না হলে তোমার ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে নিমজ্জিত তা আমি বেশ ভালই বুঝতে পারছি ৷

আরিশ এর মা: তুই জানিস তো আমার ব্লাড প্রেসার টা হাই থাকে , সবসময় তোকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমার না কোন দিন কি হয়ে যায় ৷ সেদিন দেখবি ৷( চোখের জলটা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে)

আরিশ ওর মায়ের কাছে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল : তুমি এত চিন্তা করো কেন আমাকে নিয়ে? আমি তো ঠিক আছি তাই না!

আফজাল সাহেব: না তুমি ঠিক নেই , আমার বয়স হচ্ছে, তোমার মা অসুস্থ ৷ ব্যবসার কাজটা তো তুমি সামলাতে পারে তাই না ? পড়াশোনায় ভালো বলে যে ছোটখাটো একটা জব তুমি করবে সে আশায় তো আর আমরা থাকতে পারবো না, আমার নিজের ব্যবসাটার হাল তোমাকেই ধরতে হবে না হলে তো আমার আর কোন ছেলে নেই যে তার দায়িত্ব টা আমি তার ওপর দেবো ৷ সানা পারলে ওকেই দিতাম ৷ এগুলো যদি এখন তুমি না বোঝ তাহলে আর কবে বুঝবে?বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কী?

আরিশ কোমরে হাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল: আচ্ছা আমি কালকে থেকে অফিস যাব, এবার হ্যাপি তো? এখন আমার খুব খিদে পেয়েছে আমার রুমে খাবারটা পাঠিয়ে দাও, বলে রুমের দিকে যাবে তখন ‘ আরিশের মা বলে উঠলো: একসাথে ডিনার করবো , বস, এখুনি সবাইকে খাবার দিচ্ছে…

আরিশ ওর বাবা মা আর বোন সানাকে খুব ভালোবাসে তাই উনাদের কথা ফেলতে পারেন না কখনো , তাই ও বসে গেল ওনাদের সঙ্গে ডিনার করার জন্য…..

_________________

কোনো রকম কোনো খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও অল্প একটু খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে আরু, চোখটা যেই বন্ধ করতে যাবে তখনই মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দে মেসেজে চেক করতেই দেখল আরিশ এর মেসেজ ৷ ও ভাবল যে আরিশ নিশ্চয় কোনো না কোনো থ্রেড দিবে ওকে তাই মেসেজটা চেক না করেই ঘুমিয়ে পড়ল……

আরিশ : মেসেজটা চেক করলেন না আরুপাখি, অনেক বড় ভুল করলে , রেডি থাকো….

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-০১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:1
#Suraiya

হাত ধরে টানতে টানতে আরিস নিয়ে আসলো আরুশিকে , এনে বিছানার ওপর ফেলে দিল৷

আরূশী কাঁদতে কাঁদতে: আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেন? প্লিজ আমাকে যেতে দিন , আমি বাড়ি যাব বলে খাট থেকে নেমে দরজার দিকে যেতেই তখনই আরিস হাত ধরে আবারো খাটের উপর ফেলে দিয়ে আরূশের উপরে উঠে বসে ওর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল, আর দুটো হাত শক্ত করে মুঠি বধ্য করে রেখেছে যে কারনে নড়াচড়ার ক্ষমতাটুকু পাচ্ছে না ৷

আরিশ আরুশিকে ছেড়ে : খুব শখ না তোমার আমার সাথে বিয়ে করার তাহলে এখন পালাচ্ছো কেন?
আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে, আমরা তো স্বামী আর তুমি স্ত্রীর সো লেটস ইঞ্জয় বেবি ৷

আরু হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করছে আরিসের সামনে ৷

অল্প দিনের পরিচয় আরিশের সাথে ওর , আর তিন দিন পর ওর অভ্রের সঙ্গে বিয়ে ,সেখানে আরিশকে বিয়ের কথা কখনোই ভাবেনি আরূ ৷

হঠাৎ আরূ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো যখন দেখল আরিশ নিজের শার্টের বোতাম টা খুলেছে ৷ কিছুই বুঝতে পারছি না ও যে নিজেকে কিভাবে আরিশের হাত থেকে রক্ষা করবে ৷

তবে শেষ রক্ষা করতে পারল না তার আগেই আরূ জ্ঞান হারালো…

আরূ অজ্ঞান হতে আরিস একটা শয়তানী হাসি দিল দিয়ে আরুশিকে গভীরভাবে কিস করল….

চারিদিকে সকলের চেঁচামেচিতে আরূশী চোখ মেলে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল কারণ ও ওর নিজের বাড়িতে রয়েছে , চারিপাশে ওর বাড়ির সবাই ওকে ঘিরে রেখেছে ৷ হঠাৎ নিজের পোশাকের দিকে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেল তার কারণ ও এই পোষাকে ছিল না ৷

আরুর জ্ঞান ফিরতেই ওর বাবা এসে ওকে ঠাস করে চড় মারল ৷

রায়হান আহমেদ: এই দিন দেখার জন্য তোকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ৷ এখন আমি কি জানাবো অভ্রর বাড়ির লোককে এই যে আমার মেয়ে একটা দুশ্চরিত্রা!

আরূ এবার কেঁদে ফেলল কারণ ওর বলার মত কোন মুখ নেই, নিজেই নিজের পক্ষে যে কোন কথা বলবে সে সুযোগও পাচ্ছে না ,, কেউ ওকে কোনো কথাই বলতে দিচ্ছে না….

আরুর মা: তোকে যে আমি কেন জন্ম দিয়েছিলাম? তার জন্য আমার এখন আফসোস হচ্ছে, জন্মের সময় কেন আমি তোকে মেরে ফেলে নি ৷

সকলের প্রত্যেকটা কথা আরুর বুকে গিয়ে তীরের মত বিধছে কারন আসল সত্যটা ওই জানে ৷

হঠাৎ এত কিছুর মাঝখানে আহান বলতে শুরু করল: ছেলেটাকে যখন এতই ভালবাসিস তাহলে চলে যেতিস ওর হাত ধরে, কেন ফিরে এলি তাও আবার দুশ্চরিত্রা হয়ে…..

কাঁদতে কাঁদতে আরুশী চোখ তুলে তাকাল কারণ কি হয়েছ ও কিছুই বুঝতে পারছে না, ও যা ভাবছে আহান সম্পূর্ণ বিপরীত কথা শোনাচ্ছে ওকে৷

আরুশি : আমি ওনাকে কখনোই ভালোবাসিনি , আর আমি উনাকে কেন ভালোবাসতে যাব যেখানে আমি জানি অভ্র সঙ্গে আমার বিয়ে ৷

আরুর মা: হ্যাঁ তার জন্যই তো শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্যই ওর কাছে তুই গেছিলি৷ পাড়া-প্রতিবেশীরা অনেক কানাঘুষাও করছেন, আমরা এবার সমাজে চলবো কি করে সেটা একবার ভেবে দেখেছিস? ওই ছেলে বাড়ি এসে বলে গেল তুই নাকি বিগত তিনমাস ধরে পড়ে আছিস , ওকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়েছিস ৷তুই ওকে বিয়ে করতে চাযস তাই সমস্ত কিছু করতে বলেছিলি ওকে ৷

আরুশি :মা বিশ্বাস করো আমি তেমন কিছুই করিনি বলে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো ৷
কিন্তু আজ ওর চোখের জলও সকলের কাছে অভিনয়ের সমান , কেউ ওর কথা বিশ্বাস করছে না৷

হঠাৎ ওর মাথায় এলো অভ্রের কথা ,ওর অর অভ্রের 3 দিন পর বিয়ে হবে ৷ বিয়েটা পারিবারিকভাবে হলেও আরু বেশ ভালই পছন্দ করে অভ্রকে ,আর আরিশের সঙ্গে তার গত চার মাস ধরে পরিচয় ৷ আরু আরিশকে কখনো পাত্তা দেয়নি, আরুশি একটা ভাইয়ার চোখেই দেখেছে আরিশকে ৷

আরু উচ্চ স্বরে বলে উঠলো : মা অভ্র!

আরুশির মা: ওরা কেউ জানেনা তোর এই কীর্তির কথা , কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না ৷ সব জেনেও যদি অভ্র তাকে মেনে নেয় তাহলে ভাববি তোর কপাল ভালো ৷ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন…..

আরু হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো তার কারণ ও এতটাও মনের দিক থেকে শক্তিশালী নয় যে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে…..

কিছুক্ষণ আগের কথা,,,,,

রাস্তায়,,,,,,

আরিশ গম্ভীর কণ্ঠে আরুশিকে বলল :গাড়িতে উঠ৷

আরোশী অবাক হযয়ে: কেন ভাইয়া, আপনার গাড়িতে উঠতে যাবে ? আর আমি হেটেই ঠিক আছি৷

আরিশ: যা বলছি তাই করো না হলে রাস্তার লোকের সামনে যা করব সেটা ভালো হবেনা , এবার তোমার ব্যাপার তুমি কি করবে না করবে ৷

বাধ্য হয়ে আরু আরিশের গাড়িতে উঠলো , কিন্তু কী কারণে আরিশ তাকে গাড়িতে উঠতে বললো,আর আরিশ ই বা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে সমস্ত কিছু জিজ্ঞাসা করলে আরিশ চুপচাপ ছিল৷ তার পরিবর্তে একটা উত্তর ও দেয়নি ৷

তারপর সেখান থেকে গেল কাজী অফিসের সামনে ৷ তা দেখে আরুশি আরো অবাক হল , সেখান থেকে গাড়ি থেকে নামতেই আরুশিকে টেনে টেনে নিয়ে গেল কাজী অফিসে ৷ ওর বাবকে ওকে খুন করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পেপারে সই করিয়ে নেয় আর কবুল বলিয়ে নেয়….

তারপরে এতসব ঘটনা হল ৷ কিন্তু আরিশ এর এই সমস্ত কাজ কর্মের কোন কারন আরু জানে না৷

সন্ধ্যেবেলা চুপচাপ ছাদের এক কোনে আরুশি বসে আছে আর বসে বসে অভ্রের সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবছে, হঠাৎ ওর ফোনে ফোন আসতেই চমকে উঠলো ও ৷

ফোনটা ধরতেই একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসল , কলটা ধরার ইচ্ছা না থাকলেও ধরতে হলো৷

আরিশ : হ্যালো আরুপাখি , কি করছো জান?

আরুশি : কে আপনি আর আপনি আমাকে এই সমস্ত নামে ডাকছেন কেন?

আরিশ : আমাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? সকালে না তোমাকে আমি বিয়ে করলাম৷ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে হয় আরুপাখি?

আরুশির যেন বুকের ভিতর ধক করে উঠল , বুঝতে পারল যে আরিস, নতুন আর কি ঘটানোর জন্য আরিশ ওকে ফোন করেছে সেটা ও বুঝতে পারছে না৷

আরুশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে : কি চাই আপনার? আপনি এসমস্ত কেন করেছেন ? আপনার সাথে তো আমার শত্রুতা নেই ৷

আরিশ খুবই শান্ত কন্ঠে বলল: তোমার সাথে আমার কি শত্রুতামি থাকতে পারে বলতো? তুমি আমার বউ আর বউয়ের সঙ্গে কখনও কারও শত্রুতা থাকে? সে যাই হোক তোমার না দুদিন পর বিয়ে, আমাকে ইনভাইট করলে নাতো?

আরোশী : আমার বিয়ে আপনি কি করে জানলেন?

আরিশ: সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো তুমি আমাকে ইনভাইট করো নি আমি কিন্তু খুব রেগে আছি!

অপরদিকে আরূশির মুখে কোন কথা নেই ৷আরিশের এর কথার পরিবর্তে কি উত্তর দেওয়া যায় সেটা ও জানে না….

আরিশ : সে বাদ দাও , তোমার কিছু জরুরী ভিডিও আমার কাছে রয়েছে সেগুলো পারলে নিয়ে যেও‌৷

আরুশি কিন্তু কিন্তু করে বলল: কিসের ভিডিও? আর আমার সাথে আপনার কোন ভিডিও?

আরিশ উচ্চস্বরে হেসে বলল : এ বাবা সকালবেলা আমি আর তুমি মিলে যে এত রোমেন্স করলাম, সেগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে হবে না ? সব ভুলে গেলে নাকি? ওগুলোই আছে ৷ বিয়ের আগে তোমার নতুন বরকে যদি দেখাতে চাও তো নিয়ে যেতে পারো৷
না হলে আমার কিন্তু আবার স্বভাব ভালো নয় সকলকে দেখাবো ৷

আরুশির গলা শুকিয়ে কাঠ কারণ যা হয়েছে আরিশ এর সবকিছুই ভিডিও করেছে, আর তা যদি অন্য কেউ দেখে ফেলে অভ্র কোনদিনই আরূকে বিয়ে করবে না ৷

আরুশি : আমি তাহলে এখন কি করব?

আরিশ: কাল সকাল দশটায়, ভার্সিটিতে নয় সোজা আমার বাড়িতে আসবে ৷ যদি না এসেছে তো জানতেই পারবে আমি তোমার সাথে কি কি করব৷ আশা করি তুমি আমাকে খুব ভালো করেই চেনো৷

আরিশ : বাই আরুপাখি ৷

আরুশি আর পারছেনা এতো কিছু সহ্য করতে, হাউমাউ করে কাঁদছে ও ৷ কি থেকে কি হয়ে গেল সব৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,

কলঙ্ক পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0

#কলঙ্ক
#২৯_তমো_এবং_শেষ_পর্ব(রম্যপর্ব)
#অনন্য_শফিক



আজ আমার গায়ে ধনিয়া।কী হলো! এই নাম শোনে ভীষণ অবাক হচ্ছেন তাই না?হওয়ার কথাও। এখন মূল গল্প বলি।
আমার এক মামা মওলানা। উনি এক সপ্তাহ আগে থেকেই কড়া নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা যাবে না।করলে তিনি বিয়েতে আসবেন না। এরপর বাবা বাড়িতে গায়ে হলুদ যেন না হয় এর জন্য কড়া নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।সে না হোক এতে আমার কিছুই যায় আসে না। এইসব গায়ে হলুদ টলুদ নিয়ে আমার অত মাথা ব্যথা নেই।আমি মেহরাবকে ফোন করে বলেছি ব্যপারটা। কিন্তু মেহরাব ব্যপারটা মেনে নিতে পারছে না। তাদের এখান থেকে নাকি কয়েকজন আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আমাদের বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আসার জন্য। এদের না করলে নাকি খুব সমস্যা হবে।
আমি উপায়হীন হয়ে শিশির ভাইয়াকে ডাকলাম। শিশির ভাইয়া আর মা আমাদের বাড়িতেই উঠেছেন।মেহরাবদের বাড়িতে যাননি।মা বলেছেন, আমার মেয়ের বিয়ের চেয়ে ভাগ্নের বিয়ে বড় নয়।
শিশির ভাইয়াকে ডাকলেও লাভ নাই। ভাইয়া আসতে পারছে না। বিয়ে বাড়িতে কত আত্মীয় স্বজনই তো আসে। আমাদের বাড়িতেও এসেছে। এদের মধ্যে এক মেয়ের নাম তৃপ্তি।বড় অসভ্য মেয়ে। শিশির ভাইয়াকে জ্বালিয়ে মারছে। কিন্তু শিশির ভাইয়ার পাত্তা পাচ্ছে না।পাত্তা পাবে কী করে? শিশির ভাইয়ার পেছনে কী আর একজন লেগেছে!

অগত্যা শিশির ভাইয়াকে ডেকে লাভ নাই।আমি মেহরাবকে আবার ফোন দিলাম।কড়াভাবে এবার বললাম,’সাবধান, তুমি যদি গায়ে হলুদের উদ্দেশ্যে কাউকে পাঠাও তাইলে খবর আছে। বিয়ে ক্যান্সেল!’
মেহরাব বললো,’আচ্ছা যাও পাঠাবো না।’
আমি বললাম,’মনে থাকে যেন?’
মেহরাব বললো,’মনে থাকবে।’
কিন্তু সমস্যা হলো সকাল বেলা এক বানর এসে উপস্থিত হয়েছে আমাদের বাড়িতে।তার সাথে চার মেয়ে। মেয়ে চারটাও এমন অসভ্য যে ছেলেটার গায়ে পড়ে যাচ্ছে একেকবার।এই ছেলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।
জিজ্ঞেস করেছে আমায়,’ভাবী কেমন আছেন?’
আমি শুকনো মুখেও হাসি ফুটিয়ে বললাম,’ভালো আছি।’
বাকী মেয়েরাও জিজ্ঞেস করলো আমায়।আমি সুন্দর করে উত্তর দিলাম।কুশল বিনিময় করলাম।
এবার এই ছেলে আমায় পরিচয় দিলো তার।সে নাকি মেহরাবের মামাতো ভাই।নাম অনন্য শফিক।এই ছেলেকে দেখতেই বানর কিসিমের মনে হয়।খালি ছটফট করে।হাত পা নাচিয়ে নাচিয়ে কথা বলে।এই মেয়ের গালে খোঁচা মারে তো ওই মেয়ের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।কী বিচ্ছিরি অবস্থা! আমার মনে হয় এর চরিত্রেও সমস্যা আছে। বিয়ের পর এর থেকে সাবধান থাকতে হবে!
ওদেরকে আসতে দেখেই মা এগিয়ে এলেন।মা এসে বললেন,’কিরে শফিক তুই হঠাৎ এখানে?’
শিশির ভাইয়ার মা আবার শফিকের ফুপু হন।
শফিক খিলখিল করে হেসে উঠে বললো,’ফুপু, গায়ে ধনিয়ার অনুষ্ঠানে আসছি।’
মা এমন অদ্ভুত ধরনের অনুষ্ঠানের নাম শুনে ভিরমি খেয়ে গেলেন। আমিও চমকে উঠলাম ভীষণ ভাবে। এই নাম তো জীবনেও শুনিনি কখনো!
মা শফিককে ধমক দিলেন।ধমক দিয়ে বললেন,’আসল কাহিনী বল।বানরামি এখন বন্ধ রাখ। এখনও তুই ছোট না!’
শফিক হাত পা নাড়িয়ে বানরের মতোই বলতে লাগলো,’ফুপু, ভাবীর মামার নাকি নিষেধ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করতে।এই জন্য আমি গায়ে ধনিয়ার অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছি।’
আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বললাম,’এটা আবার কেমন ধরনের?জীবনেও তো নাম শুনিনি!’
শফিক বললো,’সিম্পল।এর আবিষ্কারক আমি। গোসলের আগে গায়ে হলুদ দেয়ার বদল গায়ে ধনিয়া দেয়া হবে।আর হলুদ শাড়ির বদল পরবেন ধনিয়া রঙের শাড়ি।আমি ধনিয়া রঙের শাড়ি আর ধনিয়া গুড়া নিয়ে এসেছি।আপনারা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করুন।’
মা ওর কথা শুনে ওর কান টেনে ধরে বললেন,’বানরামি ছুটাবো তোর আজ।তুই এখানে কিসের জন্য এসেছিস আমি বুঝি না।মাথায় মেয়ে পটাবার চিন্তা ছাড়া আর কিছু নাই না? মেট্রিক তো তিনবারে পাশ করেছিস!ইন্টরমিডিয়েট মনে হয় তিরিশ বারেও ডিঙাতে পারবি না!’
শফিক বানরামি রেখে এখন হনুমানগিরি করছে।তার সুন্দর মুখ এখন লজ্জায় সে হনুমানের মতো করে ফেলেছে।তার সাথে যে চারজন মেয়ে এসেছিল ওরা ততক্ষণে কেটে পড়েছে।শফিক বললো,’ফুপু যাই।’
মা বললেন,’না দাঁড়া।আমি শিশিরকে ডাকি!’
শফিক মার কথা সবটা শুনলো না।এর আগেই দৌড়ে পালালো।
ও চলে যাওয়ার পর মা হাসতে লাগলেন। হেসে বললেন,’এই ছেলে এক নম্বরের বানর।আদর করলেই ঘাড়ে চেপে বসে। শিশির ওকে একদম সহ্য করতে পারে না। একবার করলো কী শোন। ও ঢাকায় আমাদের বাসায় গেল। তখন শিশিরের এক মেয়ে বন্ধু এসেছে আমাদের বাসায় একটা নোট নেয়ার জন্য। শিশির ঘরে নাই।নোট বের করে দিলো শফিক।নোটের ভেতর সে এক চিঠিও দিয়ে ফেলেছে। সেই চিঠির নিচে আবার লিখা,ইতি-তোমার ভালোবাসার শফিক।কেমন লাগে বল? শিশিরের বন্ধু চিঠি পড়ে শিশিরের কাছে নালিশ করেছে। এরপর বাসায় এসে শিশির এমন শাসালো শফিককে। তখন থেকেই বেচারা শিশিরের নাম শুনলে লেজ গুটিয়ে পালায়!’
মা হাসছেন।মার সাথে আমিও হাসছি। আমাদের হাসিতে সাড়া বাড়ি মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে।

আজ বিয়ের দিন।একটু পর বর আসবে। নিতুর শরীরটা এখন একটু সেড়ে উঠেছে। তবে ও এখনও হাঁটতে পারে না। শুয়ে থাকে।একটু পর পর কাঁদে।
মা গতরাতে নিতু সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‌।আমি তো এখন থেকে মেহরাবকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকবো তাই নিতুকে তিনি তার কাছে রাখতে চান।নিতুকে এখনও এই বিষয়ে জানানো হয়নি। বিয়ের পর সবকিছু জানানো হবে।

বর এসেছে। বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়েছে।এর মধ্যে ভাইয়া হঠাৎ দৌড়ে এলো ঘরে। এসে আমার কাছে বললো,’মেহরাব এসব কী পাগলামি শুরু করতে যাচ্ছে?’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’কী?কী করছে ও?’
ভাইয়া বললো,’তোর ব্যপারে সব নাকি গ্রামের মানুষদের সামনে চিৎকার করে বলবে!’
আমার তখন সবকিছু মনে পড়ে গেল। মেহরাব একদিন বলেছিল এসব কথা।যেদিন আমি সফল হবো সেদিন সে সবার সামনে উচ্চস্বরে এসব বলবে।
ভাইয়া এখানে থাকতে থাকতেই মেহরাবের গলা শোনা গেল। মেহরাব গলা উঁচিয়ে বলছে,’আমি যে মেয়েকে বিয়ে করছি এই মেয়ের নাম তূর্ণা।এই মেয়ের একটা অতীত আছে।তার আরেকটা বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তার বর তাকে ঠকিয়েছে। তূর্ণা
প্রতারিত হয়ে যন্ত্রণায় দীর্ঘ ছয় ছয়টি বছর ধুঁকে ধুঁকে মরেছে।আজ সে সফল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।ঢাকা শহরের বড় ব্যাবসায়ী।এই বিষয়টা আপনাদেরকে আগে জানানো হয়নি।না জানানোর কারণ জানেন?কারণ আপনারাই।আপনারা যদি আগে এই বিষয়টা জানতেন তবে তূর্ণার নামে কলঙ্ক রটাতেন।একটা নির্দোষ মেয়েকে কলঙ্কিনী বানাতেন।এই জন্য আপনাদের বলা হয়নি!’
মেহরাবের কথাগুলো শুনে সবাই এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।বিয়েতে চেয়ারম্যান সাহেব উপস্থিত ছিলেন। তিনি মেহরাবকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন,’বাবা আর লজ্জা দিওনা আমাদের। আসলে আমরা এতোটাই জঘন্য যে সারাক্ষণ অন্যের সমালোচনায় মুখর থাকি। নিজেকে নিয়ে কখনো সমালোচনা করি না। নিজের কথা ভাবি না।এই যে তূর্ণা সফল হয়েছে এই তূর্ণাকে নিয়ে কত আলোচনা। তূর্ণার কতো গুণগান। কিন্তু ও যদি আজ সফল না হতো,আর ওর আগের বিয়ের বিষয়টা মানুষ জানতো তখন দেখতে তার চরিত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়ে যেতো!এমনকি মাস্টার সাহেব নিজেও মুখ দেখাতে পারতেন না কাউকে। তারপর চেয়ারম্যান সাহেব উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন,’আপনি আমি আমাদের সবার শুধরাবার সময় এখন।আমরা শুধরে গেলেই আমাদের সমাজ বদলে যাবে।বদলে যাবে আমাদের পৃথিবী। আমাদের ছেলে মেয়েরা তখন হবে শিক্ষায় শিক্ষিত।ঘরে ঘরে জ্বলে উঠবে একেকটি জ্ঞানের বাতিঘর।’
সবাই চেয়ারম্যান সাহেবের কথা শুনে বলে উঠলো,’ঠিক বলেছেন চেয়ারম্যান সাহেব। ঠিক বলেছেন।’

মহা জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিয়ে সম্পন্ন হলো। নিজের বাড়ি থেকে শশুর বাড়িতে এসে গেছি আমি। কিন্তু ভয় পাচ্ছি। শাশুড়ি মা যদি কিছু বলে বসেন।হতেও তো পারে আমার পুরনো কোনো বিষয় নিয়ে কথা তুলতে পারেন তিনি। জিজ্ঞেস করে বসতে পারেন কিছু একটা তখন আমার কী হবে?কী উত্তর করবো আমি!
কিন্তু আমায় অদ্ভুত রকম চমকে দিয়ে তিনি আমার কাছে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে ফেললেন। তারপর কপালে চুমু খেয়ে বললেন,’মা,মাগো, আমার নিজের কোন মেয়ে নাই। এতো দিন পর্যন্ত বুকটা আমার খা খা করতো।সারা জীবন একটা কন্যা সন্তানের জন্য কত যে আফশোস করে গেছি আমি! আল্লাহ এতো দিনে আমার ডাক শুনেছেন। আমার ঘর আলো করে তিনি সোনার কন্যা দান করছেন!’
শাশুড়ি মার কথাগুলো শুনে আমার চোখ ভিজে উঠলো জলে।আমি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।আর বললাম,’মা,মা,ওমা!’
আমার চোখের জলে মার বুক ভেসে উঠতে লাগলো!

বাসর ঘরে গিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।এ কি!খাটের উপরে সুন্দর করে নানান ধরনের বই সাজিয়ে রাখা।ঘরের এদিকে ওদিকে সব খানেই বই আর বই।
আমি তখন মেহরাবকে বললাম,’এসব কী? ফুলশয্যার রাতে ফুল টুল বাদ রেখে বই দিয়ে ঘর সাজানো কেন?’
মেহরাব হা হা করে হেসে উঠে বলো,’এটা তোমার বানর দেবর অনন্য শফিকের আরেকটা বানরামি।সে বই দিয়ে ঘর সাজিয়েছে। তুমি বইয়ের ব্যবসায়ী।বইয়ের ব্যবসায়ীর বিয়েতে নাকি কোন ফুলসয্যা হয় না।হয় বইসয্যা।আসো আমরা এখন সারারাত ভর বসে বসে বই পড়ি!’
মেহরাব হাসছে।হা হা করে হাসছে।
আমি এবার ওকে এক ধাক্কায় বিছানার উপর ফেলে দিলাম। তারপর বললাম,আজ কোন বই পড়া নয়।আজ রাতভর আমি তোমাকেই পড়বো।আজ রাত শুধুই আমাদের—– ‘

___সমাপ্ত___

কলঙ্ক পর্ব-২৭+২৮

0

#কলঙ্ক
#২৭_তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক



পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। কথাটা আপনার পড়ার টেবিলের সামনের দেয়ালে রঙিন কালি দিয়ে লিখে রাখুন। তারপর পরিশ্রম করুন।যদি সফল না হন তবে আমি আপনার কাছে জবাবদিহি করবো! কিন্তু আপনি ফাঁকিবাজ হলে আমার ধারে কাছেও ঘেঁষবেন না!

আমার ইন্টারভ্যু ভালো হয়েছিল। এবং এক সপ্তাহ পরেই ডিপার্টম্যান্ট আমায় ডেকেছে।
আমি যে ভয় পেয়েছিলাম তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।ভিসির ভাগ্নে কিংবা ডিপার্টম্যান্ট হেডের ছোট ভাইয়ের চাকরি হয়নি।কারণ ওদের চেয়ে যোগ্যরাও এখানে ছিল।
আমার চাকরি হয়ে গেছে। কারণ ওদের চোখে আমি যোগ্য। এখন আমার একটা পরিচয় হয়েছে। ইউনিভার্সিটি লেকচারার।

মা খুশি হয়েছেন খুব।আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছেন একেবারে।আর বলেছেন,’আমি এটা আগেই জানতাম।প্রথম যেদিন তুই তোর হোস্টেলের সিট ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেছিলে তখনই বুঝে গিয়েছিলাম তোর দ্বারাই সবকিছু সম্ভব।তোর ভেতর একটা আগুন আছে।আমি শুধু তোকে এই আগুনের কথাটাই জানিয়ে দিয়েছিলাম!’

একটু খেয়াল করুন প্লিজ!হ্যা আপনাকে বলছি আপু, আমার একটা কলঙ্ক ছিল।এই কলঙ্কের জন্য অনেক কিছুই সয়তে হয়েছে আমার।মা,বাবা, ভাইয়া আর নিজের বাড়ি ছেড়ে দূরে লুকিয়ে থেকেছি দীর্ঘ পাঁচটি বছর। লজ্জায় মরতে গিয়েছি কতোবার!ভীতু হওয়ার কারণে মরতে পারিনি! কিন্তু এখন আমি নিজেকে ধন্যবাদ জানাই।কারণ সেদিন আমি মরে গেলে আমার এই সফলতা কিছুতেই দেখতে পেতাম না!

মেহরাবকে ফোন করেছিলাম।আজও সে ফোন ধরেনি।ও এমন মানুষ কেন?এতোদিন ওকে অনেক সহ্য করেছি। এখন আর না। এবার ওকে ইচ্ছে মতো বকে দিবো।কান টেনে ছিঁড়ে ফেলবো!
অবশ্য তা করা সম্ভব না।ওর প্রতি আমি খুব দূর্বল!
এই মানুষটা আমার জন্য যা করেছে তা কিছুতেই ভুলা সম্ভব নয়।আমি যদি সহজ করে বলি তবে বলবো আমি একটা ত্রিভুজের মতো।যার একদিকে আছে আমার পরিশ্রম আর দুদিকে আছে ম্যাম (মা)আর শিশির ভাইয়া।আর এই ত্রিভুজটি এঁকেছে মেহরাব। তাকে ছাড়া আমার কোন অস্তিত্ব নেই।যদিও বাহ্যিকভাবে দেখা যায় আমি এখন নিজের পায়েই দাঁড়াতে পেরেছি। কিন্তু সত্য হলো এটাই যে মেহরাব আমার পায়ের তলার মাটি! ওকে ছাড়া আমার আর কোন গন্তব্য নেই!


ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিন ক্লাস করিয়েছি।মনে খুব ফূর্তি। তাছাড়া আজ বাবা মা আর ভাইয়ার সাথে দেখা হবে।তারা ট্রেনে আছে। বাসায় আসছে।হয়তোবা দেখা যাবে হুট করে মেহরাবও এসে উপস্থিত হবে।ও এমনই। সবকিছুতেই চমকে দিতে ভালোবাসে।

ইউনিভার্সিটি গেটে এসে রিক্সা নিবো ঠিক তখন একজনকে দেখে আমি চমকে উঠলাম।নিতু!
চোখ মুখ শুকিয়ে একেবারে কেমন হয়ে আছে।
আমি ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে চাইছিলাম।কারণ আমি এখন আর চাই না অতীত নিয়ে ঘাঁটতে।
কিন্তু ও আমায় দেখেই তাড়াহুড়ো করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর বললো,’তূর্ণা,তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে। খুব জরুরি কথা!’
আমার ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে ওর গালে শক্ত করে দুটো চড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু চড় দিতেও আমার বাঁধে। ঘেন্না হয় কেমন।তাই আমি ওকে এড়িয়ে একটা রিক্সায় উঠে যেতে চাই। কিন্তু তখন সে আমার সামনে এসে বাঁধা হয়। আমার শাড়ির আঁচল শক্ত করে টেনে ধরে ফেলে।

#চলবে

#কলঙ্ক
#২৮_তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক



আমি বিরক্ত মুখে নিতুকে বলি,’কী সমস্যা তোর? আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছিস কোন সাহসে তুই?’
নিতু মুখ ভেঙে জড়জড় করে কেঁদে উঠে। তারপর কান্নাভেজা করুণ গলায় বলে,’আমায় দশটা মিনিট সময় দে না প্লিজ! শুধু দশটা মিনিট!’
আমার মায়া হয় ওর কান্না দেখে। আমি বলি,’ঠিক আছে।আয় ওই গাছটার নীচে গিয়ে দাঁড়াই।’
নিতুকে নিয়ে আমি দাঁড়াই একটা বড় রেইন্ট্রি গাছের নীচে ‌। তারপর বলি,’জলদি করে কী বলতে চাস তা বলে শেষ কর। দশ মিনিটের উপর আমি থাকতে পারবো না। আমার হাতে অনেক কাজ আছে!’
নিতু হঠাৎ ধপাস করে আমার পায়ে পড়ে যায়। তারপর আমার পা ছুঁয়ে বলে,’আমান আসলে আমার কাজিন ছিল না।সে ছিল আমার বড় বোনের হাসব্যান্ড!’
নিতুর কথা শুনে আমি চমকে উঠি।গা কাঁটা দিয়ে উঠে আমার।এটা কী শুনালো নিতু!যদি আমান ওর বোন জামাই হবে তবে ও আমার সাথে আমানকে কাজিন বলে পরিচয় করিয়েছিল কেন? কিংবা আমার সাথে প্রেম, বিয়ে,সাক্ষাত করিয়ে দেয়া এসবে সাহায্যই বা করেছিল কেন!’
আমি জিজ্ঞেস করতে যাবো কিন্তু এর আগেই নিতু হড়বড় করে বলতে শুরু করে।বলে যে,’আমান কতটা জঘন্য তুই ভাবতেও পারবি না নিতু!ওর কাছে আপুর বিয়ের পর থেকেই আমাদের দুর্দিন শুরু হয়। বিয়ের পর আপুর যখন প্রথম বেলা প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড চলে তখন আমাকে চারমাস ওদের বাসায় থাকতে হয়েছিল। তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি। ওখানে থেকেই পড়াশোনা করতাম।আপুর প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের শেষ দিকে তার শরীর বেশি খারাপ হয়।শরীরে পানি এসে যায়।ফুলে যেতে থাকে হাত পা। বিছানা থেকেই উঠতে পারে না।ঘরের সবকিছু আমাকেই করতে হয়। তাছাড়া তার শশুর শাশুড়িও তখন কাছে ছিল না।ওরা হজ্জ করতে চলে গিয়েছিল ।ঘরের সবকিছু আমার ঘাড়েই এসে চাপলো।আমানকে খাবার দেয়া,কাপড় ইস্ত্রি করে দেয়া,চা-কফি করে দেয়া এইসব কিছুও আমাকেই করতে হতো।
আমি যেদিনের ঘটনা বলবো সেদিন ছিল ঝড়।ঝড়ের সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি। বারবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো।বাজ পড়ছিলো বারবার আকাশ ভেঙ্গে! আবার ইলেকট্রিসিটিও নাই। শুধু দুটি মোমবাতি জ্বলছে দু ঘরে।একটা আপুর ঘরে।আর অন্যটা আমানের ঘরে।আমি ওদের বাসায় যাওয়ার পর থেকে আমি থাকতাম আপুর সাথে।আর আমান থাকতো তার মায়ের ঘরে।সে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর হঠাৎ আমান বললো, তার মাথাটা ঘুরছে। খারাপ লাগছে খুব।তাই সকাল সকাল গিয়ে শুয়ে পড়লো।এর খানিক পর আপু বললো, নিতু দেখে আয়তো তোর ভাইয়ার অবস্থা কী!মাথা ঘুরানো টা কমেছে কি না!না কমলে একটা ভারগন টেবলেট খেতে বল।সোকেশের উপর অষুধের বক্সে ভারগন টেবলেট আছে। সাথে করে নিয়ে যা।
আমি ভারগন টেবলেট আর গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে গেলাম আমানের জন্য। কিন্তু গিয়ে দেখি ভয়ংকর দৃশ্য।সে বিছানায় পড়ে আছে কেমন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে।চোখ কেমন লাল লাল।মুখ দিয়ে ফেনার মতো বেরুচ্ছে।আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। দৌড়ে গেলাম আপুর কাছে। গিয়ে বললাম সবকিছু। আপু কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে। তারপর বললো, বাথরুম থেকে বালতি ভরে পানি নিয়ে যা।ওর মাথায় পানি ঢাল গিয়ে জলদি করে।আমি আসছি।
আমি বললাম, তোমার আসতে হবে না আপু।এই শরীর নিয়ে তুমি আসলে উল্টো তুমিই অসুস্থ হয়ে যাবে।
আপুকে এই কথা বলে আমি বাথরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি আর মগ নিয়ে আমানের কাছে যাই।ওর মাথায় পানি ঢালতে শুরু করি। আমানের কোন সাড়া শব্দ নাই!
খানিক পর কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে আপু আসে।সে এসে আমানকে এই অবস্থায় দেখে নিজেই রোগা হয়ে যেতে শুরু করে।আরেকটু হলে মাথা ঘুরিয়ে পড়েই যাচ্ছিল।আমি ভাবি, এখানে যদি ও থাকে আর আমানকে এই অবস্থায় দেখে তবে আমানকে রেখে ওকে নিয়েই দৌড়াদৌড়ি শুরু করতে হবে!তাই আপুকে জোর করেই ধরে ধরে তার ঘরে দিয়ে আসি। এবং তখন একটা ভয়ংকর বোকামি করে ফেলি আমি।আপুর ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে আসি যেন সে বেরিয়ে আসতে না পারে। অবশ্য তা করা আমার উচিৎও ছিল তখন। দরজা বন্ধ না করলে সে আবার একা একাই উঠে আসতে চাইবে।আর মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তখন কী বিপদটা ঘটবে!
আপুকে ঘরে রেখে দরজা বন্ধ করে আমি আবার আমানের কাছে যাই। গিয়ে দেখি ওর দশা আরো করুণ।মুখ দিয়ে ফেনা এখনও বেরুচ্ছে।আর কেমন গোঙাচ্ছে ও।আর ওদিকে ঝড়টা দৈত্যকার রুপ ধারণ করেছে। বাতাসের ঝাপটায় মোমবাতি নিভে যেতে চাইছে।আমি জলদি করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসলাম। তারপর এসে আবার আমানের মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলাম।
হঠাৎ বাজ পড়লো। ভয়ংকর শব্দ।ঝড়ের তান্ডবও বাড়লো।শা শা শব্দে কান তব্দা খেয়ে যাচ্ছে।আর তখন আমান একটু কথা বললো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,নিতু, আমার কপালটায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে একেবারে কপালের রগগুলো।
আমি অতি কষ্টের মাঝেও তখন মৃদু হাসলাম।কারণ তখন মুমুর্ষু অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে আমান। আমি এবার ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।আর তখনই ভয়ংকর কান্ডটা করে সে। মৃত্যুসয্যা রোগী থেকে সে মুহূর্তে দানবে পরিণত হয়ে উঠে।এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরে টেনে শুইয়ে দেয় বিছানায় আমায়। আমি চিৎকার পর্যন্ত করতে পারিনি কারণ ও আমার মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। কিংবা চিৎকার করলেও তখন আপু শুনতে পেতো না।ঝড়ের তান্ডব অতটাই ছিল যে তখন আমি নিজেই নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দটা শুনতে পাচ্ছিলাম না!’
নিতুর কথা শুনে আমার শরীর কাঁপতে থাকে। এসব কী বলছে নিতু!
আমি তখন বলি,’নিতু, তারপর কী হলো?’
নিতু বলে,সে রাতেই আমার যা হারাবার হারিয়ে ফেলি আমি। কিন্তু সে রাতে সবকিছু শেষ হয়ে গেলেই বাঁচতাম। বাঁচার সুযোগ হয়নি।আমান তার ফোনের ক্যামেরা দিয়ে আমার কিছু ন্যুড পিক তুলে ফেলে। তারপর ভয় দেখিয়ে বলে যে আমি যদি কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলি তবে সে নাকি এইসব পিক সোস্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিবে!’
আমি অবাক হই এবং ভাবতে থাকি তখন নিতুর জীবনটা কী তবে আমার চেয়ে আঁধার?
নিতু আবার বলতে শুরু করে। অবশ্য তার চোখ জলে ভুরভুর করছে।সে তার ওড়নার কোনা দিয়ে জল মুছে আবার বলে।
বলে,’তূর্ণা, বোন বিশ্বাস কর আমায়। এরপর আমি কাউকে বলার সাহস শক্তি কোনটাই পাচ্ছিলাম না।ও তো দিনের পর দিন আমায় ভয় দেখাচ্ছিল।আর আমরা সবচেয়ে বেশি যা ভয় পাই তা হলো আমাদের মান সম্মান।আমি আমার মান সম্মান রক্ষা করার জন্যই ওর সব কথা শুনতাম।শুনতে বাধ্য হতাম।
একবার যখন তোর সাথে আমায় ও দেখলো তখন থেকেই আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগলো সে। যেভাবেই হোক তোর সাথে প্রেম করিয়ে দিতে হবে ওর। আমি বললাম,তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কিছুতেই এটা করা সম্ভব না। কিন্তু তখন সে আমায় আবার ভয় দেখাতে শুরু করে।বলে, সবকিছু কিন্তু ফাঁস করে দিবো।
আমি উপায়হীন হয়ে তখন তার কথামতো কাজ শুরু করি।তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই তাকে আমার কাজিন বলে। নিজের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল থাকা সত্ত্বেও বলি ফুলপুরের কথা। তারপর তোর সাথে মিছেমিছির বিয়ে। আমার সাথে থেকে থেকে ওর সব স্বার্থ শেষ হলে ও আমেরিকা চলে যায়। বলেছিল পরে এসে আপুকে নিয়ে যাবে। আর আমিও তখন আপুকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলাম। এছাড়া তো আর উপায় ছিল না আমার।তুই আমার বাসায় কখনো না গেলেও ঠিকানা জানতি।তুই যদি তখন আমায় খুঁজে বাসায় চলে যেতি তখন তোকে মুখ দেখাতাম কী করে বল?কী বলতাম তোকে?’
তূর্ণার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে আমার মাথা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠছে।গা গুলিয়ে বমি আসছে।কী ভয়ংকর কথাগুলো সে আমায় বলেছে! আবার প্রচন্ড রাগও হচ্ছে ওর প্রতি। ওর সাহায্যেই তো আমান আমার সর্বনাশ করেছে। শুধুমাত্র ওর জন্য আমার জীবনে কত কী বয়ে গেছে!
আমার এখন ইচ্ছে করছে নিতুকে গলা চেপে ধরে মেরে ফেলি। কিন্তু পারছি না।নিতু আমার পা ধরে আছে এখনও। খুব করে কাঁদছে। হাউমাউ করে কাঁদছে।
আমি চুপ করে আছি।একদম চুপ করে।
নিতু নিজেই আবার বলতে শুরু করলো।
সে বললো,’
আমি ইচ্ছে করে করিনি এসব তূর্ণা। নিজেকে বাঁচানোর জন্য শুধু এসব করেছি ‌।কিন্ত তখন আমি বুঝতে পারিনি অতকিছু। আসলে আমার নিজের মান সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে আরেকজনের জীবন জাহান্নাম করে দেয়াও যে ভয়ঙ্কর অপরাধ! তূর্ণা, বোন আমার, আমি তোর সাথে যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।তাই ক্ষমাও আমি চাইবো না। আমানের শাস্তি সে পেয়ে গেছে।আমেরিকা যাওয়ার পাঁচ মাস পরেই কার এক্সিডেন্টে মারা গেছে সে।ক্লাব থেকে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরছিলো ড্রাইভ করে। তখন এক্সিডেন্ট করে।ওর শাস্তি শেষ হলেও আমার শাস্তি পাওয়া এখনও বাকী।আমি তোর কাছে এসেছি শুধুমাত্র আমার শাস্তিটা মাথা পেতে নিতে।তুই আমায় যেভাবেই শাস্তি দিতে চাস তা আমি মাথা পেতে নিবো!’
নিতু কাঁদছে। খুব করে কাঁদছে।
আমি বুঝতে পারছি না এখন আমার কী করা উচিৎ!আমি কী ওকে মাফ করে দিবো?জানি সে ভুল করেছে। কিন্তু ভুল সে বুঝতেও তো পেরেছে।আর ভাইয়াই তো বলেছিলো একদিন,যে ভুল করে ভুল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করতে হয়!
তাছাড়া নিতু নিজেও তো ভোক্তভোগী!ও তখন এসব না করেই বা কী করতো তখন?
আমি ডাকলাম,’নিতু!’
নিতু উপর দিকে মুখ তুললো।অধিক কান্নার কারণে ওর চোখ মুখ লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।
আমি এবার ওকে বললাম,’আপু কোথায় আছে?’
নিতু বললো,’আপু নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় থাকে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে।ওর আট বছর বয়সী এক ছেলে।ছেলের পড়াশোনার খরচ, সংসারের খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়!’
‘আর তুই?’
নিতু বলে,’কিছুই করি না। নিজেকে নিয়ে সারাদিন ভাবি। নিজের অপরাধ নিয়ে ধুঁকছি শুধু।দেখিস না চেহারার কী হাল করেছি!’
আমি ওর একটা হাত ধরে বললাম,’আয় বাসায় যাই!’
নিতু বললো,’আমার সে যোগ্যতা নাই রে বোন আর।আমি সেই যোগ্যতা কবেই হারিয়ে ফেলেছি।’
আমি বললাম,’এমন করে বলছিস কেন?আমি তো তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি!’
নিতু তখন বললো,’তুই ক্ষমা করলেও আমি নিজে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আমি শুধু তোর সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম।শেষ দেখা।’
কথাটা বলেই আমায় আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না নিতু।বড় রাস্তা দিয়ে তখন একটানা বাস ট্রাক ছুটে যাচ্ছে ভয়ানক গতিতে।নিতু বড় রাস্তাটার দিকেই দৌড়ে গেল। এবং বড় রাস্তায় গিয়ে ভয়ানক কান্ডটা সে ঘটিয়েই ফেললো।

নিতুর এক্সিডেন্টের পর ওকে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছি। ডাক্তার বলছে অবস্থা আশঙ্কাজনক।রাত আটটায় অপারেশন। অপারেশনের আগে বলা যাচ্ছে না কী হয়!
আমার খারাপ লাগছে। খুব খারাপ লাগছে।আমি
ফোন করেছি মাকে।
মা (ম্যাম), শিশির ভাইয়া, মেহরাব,বাবা-মা,আর ভাইয়া এসেছে হসপিটালে।কত কত দিন পর ওদের সাথে দেখা। কিন্তু কারোর সাথেই আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। নিতুর জন্য খারাপ লাগছে।ভাবছি,ও কেন নিজের অতবড়ো ক্ষতিটা করতে গেলো!
মা (আমার মা) আমার কাছে এসে বললেন,’ওকে হসপিটালে নিয়ে এলি কেন?মরে পড়ে থাকতো!যে তোর সর্বনাশ করে ফেলেছে তার জন্য অত মায়া!’
তখন আমার আলোকদাত্রী মা মায়ের কাছে এলেন। এসে মার হাতটা ধরে বললেন,’মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।যে ভুল বুঝে ক্ষমা চায় তাকে ক্ষমা করতে হয়!আর যে ক্ষমা করতে জানে সে মহান হয়!’
মা মৃদু হাসলেন।এই হাসিটা দেখেই অনুভব করা যায় তিনি সব রাগ অভিমান ভুলে গিয়েছেন মুহূর্তে!

অপারেশন হয়ে গেছে।ডাক্তার এসে জানিয়েছে,’ আলহামদুলিল্লাহ পেশেন্ট আশঙ্কা মুক্ত।ভাগ্যিস মগজে প্রেশার পড়েনি!পড়লে আর বাঁচার পসিবিলিটি ছিল না!’
আমরা সবাই তখন বললাম, আলহামদুলিল্লাহ।

আজ ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ। নিতুকে হসপিটাল থেকে ছাড়বে তেরো তারিখ।মা (ম্যাম)আর বাবা আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করেন ডিসেম্বরের পনেরো তারিখ। বিয়ে হবে আমাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টায়।
বাবা, মা, ভাইয়া আর মেহরাব ওরা আগামীকাল সকালেই বাড়ি চলে যাবে। বাড়িতে অনেক কাজ করতে হবে।আমরা বাকীরা যাবো তেরো তারিখ সকাল বেলা।

#চলবে

কলঙ্ক পর্ব-২৬

0

#কলঙ্ক
#২৬_তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক

‘মেহরাব আজ থেকে গিয়েছে শিশির ভাইয়া দের বাসায়। মেহরাবের সাথে শিশির ভাইয়াদের সম্পর্কটাও জানা হয়েছে আমার।ওরা কাজিন। অর্থাৎ শিশির ভাইয়ার বড় খালার ছেলে মেহরাব। বয়সে ওরা সমান।তাই তুই তুকারি করেই একজন অপরজনকে ডাকে।
আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো আমার কাছ থেকে মেহরাবের নাম শুনে, তার পরিচয় শুনে মা মেহরাবের সাথে সেদিনই কথা বলেন।তারা গোপনে যোগাযোগ রাখেন ঠিকই কিন্তু আমায় কিছুই জানতে দেননি!

সে রাতে আরেকটা অদ্ভুত কান্ড করেন মা।মেহরাব আমি আর শিশির ভাইয়া মিলে ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলাম। তখন মা এসে হাজির। তিনি এসে বললেন,’মেহরাব,কিরে এখন কী মনে হয় তোর হবু বউ একটু চেঞ্জ টেঞ্জ হয়েছে?মানে ইমোশানটা কমেছে একটু?’
মেহরাব হেসে বলে,’একটু না অনেকটাই কমেছে !’
‘বাহ্। তাহলে দায়িত্ব দেয়া যায় কী বলিস তুই?’
‘এটা তোমার ইচ্ছে। তোমার হবু ভাগ্নে বউ, তুমি দায়িত্ব ফায়িত্ব কী দিবে এটা তুমি জানো, আমায় জিজ্ঞেস করছো কেন আবার?’
মা তখন ধমকে দেন মেহরাবকে।বলেন,’আমার ভাগ্নে বউ না ও।ও আমার মেয়ে।আমি তার মা।তুই আমার মেয়ের হবু বর।আমি তোর শাশুড়ি মা বুঝলে? এখন সালাম কর আমার পা ছুঁয়ে!’
শিশির মেহরাবকে গা ধাক্কা দিয়ে বলে,’কর শালা কর। মাকে সালাম কর।’
মেহরাব তখন শিশির ভাইয়ার গায়ে জোরে সুরে এক ধাক্কা দিয়ে বলে,’শালা তো তুই আমার রে।তোর বোনকে আমি বিয়ে করছি। তো তুই আমায় শালা শালা করছিস কেন রে?’
শিশির ভাইয়া তখন বলে,’শালা, পর জনম টনম বলে কিছু একটা থাকতো যদি রে তবে তখন তোর একটা এরকম বোন থাকতো দেখতি।আর আমি তোর ওই বোনটাকে বিয়ে করে শোধ নিতাম শালা!’
মেহরাব তখন হাসে। হেসে বলে,’আরে পর জনম টনম লাগবে না।তুই যে মেয়েকে বিয়ে করবি ওই মেয়েকে আমি বোন বানিয়ে ফেলবো। তখন কাটাকুটি হয়ে যাবে।ব্যস!’
শিশির ভাইয়া আরো কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইছিলো। কিন্তু মা সেই সুযোগ না দিয়ে বললেন,’অনেক বকাঝকা হয়েছে। এবার আসল কথায় আসি।এই তূর্ণা, এদিকে উঠে আয়!’
আমি মেঝেতে পাটির উপর বসে ছিলাম।মার কথায় তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এবার তিনি আমায় বললেন,’তোকে একটা বুক শপ খুলে দিচ্ছি।প্লেইসটা হেভি হবে। একেবারে কলেজ আর স্কুলের গা ঘেঁষে। সাথে বই খাতা আর পড়াশোনায় লাগে এমন সব সরঞ্জামাদি রাখবি!আপাতত ক্যাশটা আমি দিচ্ছি। তুই তিন বছর ব্যাবসা করে আমার ক্যাশ আমায় ফিরিয়ে দিবি। তারপর থেকে সব তোর।বুঝলে?’
আমি মার কথা শুনে থতমত খেয়ে যাই! পড়াশোনা রেখে এখন বিজনেস টিজনেসের কথা বলছে কী করে মা! তিনি না একজন শিক্ষক! তিনি কী করে পড়াশোনা রেখে এসব করতে বলেন?
আমি কিছু বলি না।চুপ করে থাকি।
শিশির ভাইয়া তখন হেসে বলে,’এ তো শুনেই ভয়ে ইঁদুরের মতো গর্তে ঢুকে গেছে। এই মেহরাব শোন,তোর বউকে কান ধরে টেনে গর্ত থেকে বের করে আন!’
শিশির ভাইয়ার কথা শুনে ঘরের সবাই হেসে উঠে। আমিও হাসি।
মা তখন বলে,’তূর্ণা ব্যাপারটা মোটেও বোঝেনি!না বোঝারই কথা।আমি বুঝিয়ে বলছি। পড়াশোনা নষ্ট করে তুই বিজনেস করবি না। বরং পড়াশোনা ঠিক রেখেই করবি।তোর মতো এমন অনেক অনেক স্টুডেন্ট ছিল যারা ছাত্র অবস্থায় বিজনেস শুরু করেছিল এবং তারা সাকসেসফুল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে তবে সবকিছুতেই আমরা সাকসেস হতে পারি!আর তুই একা যদি এটা করতে সাহস না পাস তবে শিশির তোকে কয়দিন সময় দিবে।দু তিন মাস ও তোর সাথে খাটবে।ও তো এমনিতেও এখন ফ্রি টাইম পাস করছে!’
আমি বলি,’আচ্ছা।’

পরদিন সকাল বেলা মেহরাব চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে,’লক্ষ্যে অটুট থেকো।জেদটা মনের ভেতর পোষে রেখো। তুমি কখনোই ওদের কথা ভুলে যেওনা যারা তোমায় কলঙ্ক দিয়েছিল। ওইসব কথা ভুলে গেলে জেদ গলে জল হয়ে যাবে। তখন আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না!’
আমি বলি,’আচ্ছা।’
যাওয়ার সময় মেহরাব আমার হাতটা শক্ত করে ধরে। তারপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,’এখন তোমাকে আমি অর্ধেক ভালোবাসি। একদিন পুরোপুরি ভালোবাসবো ইনশাআল্লাহ!’
আমি ওর দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হই।ওর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরের দিকে দ্রুত পা ফেলে চলে যায়। এমন ভাব করি যেন আমি ওর প্রতি খুব অভিমান করেছি।রাগ করেছি।
আসলে বিষয়টা ঠিক এমন না।মেয়েরা এমনই হয়। রহস্যময়।পুরুষেরা কোনদিন এদের পুরোটা জানতে পারে না!

পড়াশোনা করছি। পাশাপাশি বুকশপে সময় দিচ্ছি। প্রথম দু সপ্তাহ খুব মন খারাপ গিয়েছে।বিক্রিভাট্টা হয় না। শিশির ভাইয়ার অবশ্য এতে কিছুই যায় আসে না।তার কাজ দোকানে এসে বইয়ের ভেতর ঢু মেরে থাকা।আর আমি বসে বসে শুধু দুশ্চিন্তা করি। এবার আমি বোধহয় হেরে যাবো!তিন বছর না তিরিশ বছরেও বোধহয় ক্যাশ তুলে মাকে দিতে পারবো না!
মন খারাপ করে একদিন বাসায় ফিরি।মা মন খারাপ দেখে বলেন,’কিরে কী হলো?মুখ গোমড়া কেন এমন?’
আমি ধরা গলায় বলি,’মা, এইসব বিজনেস টিজনেস আমায় দিয়ে হবে না!সারাদিনে দু চারটা কাস্টমারও আসে না! ভালো লাগে না আর!’
মা আমার মাথায় তখন হাত বুলিয়ে দেন। বলেন,’অধৈর্য্য হোস না। মাত্র দুই সপ্তাহ হলো দোকান দিয়েছিস।আরো কটা দিন যাক। এরপর দেখবি ঠিক ব্যবসা হচ্ছে। আসলে এখনও তো তুই নতুন। নতুন বেলা এমন হয়ই!’
মার কথা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নাই।আমি মেনে নিতে বাধ্য হই।দিনের বেলা যতোক্ষণ ক্লাস হয় ততোক্ষণ ভার্সিটি থাকি।বাকী সময়টা দোকানে দেই।রাত আটটায় বাসায় ফিরি। তারপর রাতের খাবার খেয়ে পড়তে বসি। অনেক রাত অবধি পড়ি।হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করি। কিন্তু দুশ্চিন্তা আমার পিছু ছাড়ে না কিছুতেই।মনে হয় আমি হেরে যাবো!

মার কথা সত্যি হলো।মাস খানেক যেতেই দোকানে কাস্টমারের খুব আনাগোনা হতে লাগলো।উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েরা আসতে শুরু করলো। স্কুল কলেজের বইয়ের বাইরেও তারা নানান ধরনের উপন্যাসের বই চায়।আমি দোকানে তখন ভালো মানের লেখকদের চমকপ্রদ নতুন নতুন বই তুলি।খাতা কলম আর পড়াশোনায় আর যতো উপকরণ লাগে তার সবকিছুই প্রচুর বিক্রি হতে শুরু করে।আমি ওদের সাথে মোলায়েম আচরণ করি।ওরাও আমাকে ভালোবাসে। অনেকেই এসে আমার সাথে আড্ডা জমায়। কিন্তু বেশিরভাগ মেয়েদের দেখা যায় শিশির ভাইয়ার সাথে সময় কাটাতে।ওরা এসে শিশির ভাইয়াকে ধরে গল্প বলার জন্য। শিশির ভাইয়া গল্প বলে না। সুন্দর সুন্দর জোকস্ বলে।তার জোকস্ শুনে ওরা হাসতে হাসতে শেষ!

দিনগুলো দ্রুত ছুটে চলে।ব্যবসার তিনমাস অতিক্রম হয়। শিশির ভাইয়া চাকরিতে জয়েন করে। এখন সে শুধু শনিবারেই সময় দিতে পারে।কারণ শুক্রবার আর শনিবার দু’দিন তার সপ্তাহে ছুটি থাকে। কিন্তু শুক্রবারে তো দোকান বন্ধ থাকে।তাই সে শনিবারে দোকানে বসে। সারাদিন সময় দেয়।আর এইদিন সবচেয়ে বেশি মানুষের আনাগোনা হয় দোকানে।বিক্রিভাট্টা হয় দ্বিগুণ।

মানুষ বলে সময় এবং স্রোত কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। এরা দ্রুত গতির।একটা বছর হুট করে চলে যায় কীভাবে যেন!আর এই একবছরেই আমি ক্যাশটা দোকান থেকে তুলে ফেলি!
অবশ্য আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম টাকাটা তুলতে পারি কি না তিন বছরেও। কিন্তু আল্লাহর রহমতে একবছরেই ক্যাশ উঠেও অবশিষ্ট কিছু হাতে থাকে।মায়ের হাতে আমি ক্যাশটা তুলে দেই।মা তখন টাকাটা হাতে নিয়ে খানিক সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর আমার হাতে আবার টাকাটা দিয়ে বলেন,’এই টাকাটা আমি তোকে উপহার দিলাম।তুই এই টাকা দিয়ে তোর দোকানের সাথে আরেকটা ঘর নে।আমি খবর নিয়ে জেনেছি তোর পাশের ঘরে গার্মেন্টসের যে দোকানী আছে সে তার দোকান ছেড়ে দিবে।ব্যবসা বুঝে না বেচারা।শুনেছি কুয়েত চলে যাবে!’
আমি তখন বলি,’ওখানে আমি আবার কিসের ব্যবসা করবো?’
‘কাপড়ের। গার্মেন্টসের কাপড়।হেভি ব্যবসা হবে।মাঝের পার্টিশন খুলে দুই দোকান এক করে ফেলবি।ব্যস হয়ে গেল!’
‘আমি একা একটা মানুষ অতকিছু কীভাবে সামলাবো?’
মা হেসে বলেন,’তবে আমাদের প্রাইম মিনিস্টার কীভাবে একা অত বড়ো একটা দেশ সামলান?’
আমি অবাক হয়।প্রাইম মিনিস্টাটের কাজের সাথে আমার দোকানের কী তুলনা হলো!
মা আবার হাসেন। হেসে বলেন,’তুই খোঁজ খবর নিয়ে দেখ তোর আমার মতো কোন কোন মেয়ে এমন আছে যাদের অতীত আমাদের সাথে মিলে যায় এবং যারা এখনও তাদের এই সমস্যা নিয়ে ধুঁকছে। বাঁচার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এদেরকে ধরে এনে পথ দেখিয়ে দে।তোর এখানে কাজ দে।কাজ করে ওরা স্বাবলম্বী হোক।তুইও স্বাবলম্বী হ।’
আমি তখন বলি,’ওদের খুঁজে বের করলাম,কাজ দিলাম এটা ঠিক আছে। কিন্তু দোকান চলবে তো?ওই লোকই তো লসে পড়ে দোকান ছেড়ে দিচ্ছে!’
মা বলেন,’মনে জোর রাখ। লক্ষ্যে অটুট থাক।তুই সাকসেস হবে!’
আমি মার কথা মেনে গার্মেন্টসের দোকানটা শুরু করি।তিনটে নতুন মেয়েকে এনে কাজ দেই। একজনকে লাইব্রেরীতে আর দুজনকে গার্মেন্টসের দোকানে। এবার ভাগ্য এতোটাই কাজে দেয় যে নতুন ব্যবসায় সফলতার জন্য আমাকে একমাস তাকিয়ে থাকতে হয়নি।কারণ এখানে বুকশপ দিয়ে আমি এমনিতেই পরিচিত।স্কুল কলেজের বেশির ভাগ ছেলে মেয়ের সাথেই আমার খুব ভাব। তাছাড়া শিশির ভাইয়া এখনও মাঝেমধ্যে দোকানে আসে।সে আসলেই মেয়েদের ভিড় বেড়ে যায়।আর দোকান এমন এক জায়গা যেখানে ভিড় হলেই ক্রেতারা উৎসাহ পায়।ভিড় ঠেলে পণ্য কিনতেই তারা উৎসাহী।কারণ ক্রেতাদের এই বিশ্বাস, যে দোকানে ভিড় বেশি সে দোকানের পণ্য সবচেয়ে ভালো এবং স্বস্তাও হয় কিছুটা!

পড়াশোনা আর ব্যবসা এখন আমার জীবন সঙ্গী হয়ে গেছে।আমি এখন এসবেই অভ্যস্ত। মেহরাব এর মধ্যে একবার ঢাকায় এসেছিল। আমার সাথে দেখা করে গেছে।সে আমার সফলতা দেখে খুব উৎসাহ দিয়ে গেছে।
আর আমায় বলে গিয়েছে,’তুমি সফলতার স্বর্ণ শিখরে খুব শীঘ্রই পৌঁছাবে। কিন্তু মনে রেখো কিছুতেই পিছপা হওয়া যাবে না!’

আরো দুটো বছর চলে যায় হুট করে। অনার্স শেষ হয়ে যায় আমার। আমার পরিশ্রম আমার সাথে প্রতারণা করেনি।অনার্সে সব মিলিয়ে আমার রেজাল্ট ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়।বন্ধুরা কানাঘুষা শুরু করে যে আমিই নাকি বছর দুয়েকের ভেতর ইউনিভার্সিটির লেকচারার হবো।যে ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি সেই ইউনিভার্সিটিরই টিচার।শুনে আমার গা শিরশির করে।মনে মনে বলি, আল্লাহ এদের এই কানাঘুষা সত্যি করে দাও না প্লিজ!

আরো একটি বছর চলে যায়।মাস্টার্স শেষ হয় আমার।এখানেও ভালো রেজাল্ট করি। এবার শুনতে পাই ইউনিভার্সিটিতে নতুন টিচার নিয়োগ দিবে। আমাদের ডিপার্টম্যান্টে দুজন লেকচারার প্রয়োজন।স্যার ম্যামদের মধ্যেও আমায় নিয়ে একটা কানাঘুষা চলছে। কারণ আমাদের ডিপার্টম্যান্টের আমার সিনিয়র গ্রাজুয়েটদের চেয়ে আমার সিজিপিএ অনেক ভালো!
আর ওদিকে ব্যবসাও ফোলে ফেঁপে বড় হচ্ছে। আমার দোকানের উপরের তলায়ও দুটো ঘর নেয়া হয়েছে।লোক নেয়া হয়েছে আরো পাঁচজন।সবাই আমার মতো ভোক্তভোগী মেয়ে। ওদেরকে আমি সারা জীবন আমার দোকানেই কর্মচারী করে রেখে দিতে চাই না।আমি শুধু ওদেরকে একটা পথ দেখিয়ে দিতে চাই। যেভাবে মেহরাব,ম্যাম (মা) আর শিশির ভাইয়া আমায় পথ দেখিয়ে সফলতার ময়দানে পৌঁছে দিয়েছে!

আগামী মাসের এক তারিখ ইউনিভার্সিটিতে আমাদের ডিপার্টম্যান্টে একটা ইন্টারভ্যু আছে আমার।লেকচারার নিয়োগের ইন্টারভ্যু।আমি জানি আমার যোগ্যতা আছে লেকচারার হওয়ার।কারণ আমার রেজাল্ট আর সব প্রার্থীদের চেয়ে ভালো। কিন্তু সমস্যা একটাই। ভাগ্যে থাকতে হবে তো। তাছাড়া আরেকটা ভয় আছে। আমার সাথে যারা প্রতিযোগিতা করছে তাদের মধ্যে দুজনকে নিয়ে আমার বেশি চিন্তা। এদের একজন আমাদের বিভাগীয় প্রধানের ছোট ভাই।আর অন্যজন আমাদের ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যারের ভাগ্নে।

#চলবে

কলঙ্ক পর্ব-২৫

0

#কলঙ্ক
#২৫_তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক


দিন যাচ্ছে। খুব দ্রুত দিন যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি আবার খোলা হয়েছে।ক্লাস করছি রেগুলার।দু একদিনের ভেতর রেজাল্ট হবে।আমি জানি ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। তবুও ভয় করে।স্যার ম্যামরা যদি ভুল করে নম্বর কম দেন!
এখন আর পড়তেও মন বসে না। শুধু চিন্তা হয়। রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা।
মেহরাব দু’দিন আগে ফোন করেছিল।সে জিজ্ঞেস করেছিলো,’ রেজাল্ট কবে?’
আমি বললাম, ‘চারদিন পর।’
তারপর সে বললো, ‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। তবে পরীক্ষায় ফার্স্ট হলেই কেবল এই সারপ্রাইজ পাবে তুমি!’
আমার তখন থেকেই মন কেমন করছে।বুক ধড়ফড় করছে।আমি এখন সর্বক্ষণ উদগ্রীব হয়ে থাকি।মনে মনে আল্লাহকে ডাকি।বলি,আল্লাহ,দেও না আমায় ফার্স্ট বানিয়ে!প্লিজ আল্লাহ প্লিজ!
কতদিন নামাজ পড়া হয় না। এখন নামাজ ধরেছি। কোরান পড়েছিলাম ছোট বেলায়। তারপর আর পড়া হয়নি। গতকাল থেকে আবার পড়া ধরেছি।না এসব যে রেজাল্টের জন্য করছি তা না। মনকে প্রশান্ত করার জন্য। অবশ্য এতে কাজও কিছুটা হয়েছে।মন প্রশান্ত হয়েছে।
আমি জানি, এবং এটা তোমাদেরও জানা উচিৎ।যে তুমি যে ধর্মেরই হও না কেন তুমি যদি তোমার ধর্মের প্র্যাকটিসিং কাজগুলো নিয়মিত করো তবে তোমার অস্থির মন প্রশান্ত হবেই!

সন্ধ্যা বেলায় শুয়ে আছি বিছানায়। শিশির ভাইয়া খোঁচাতে এসেছিল আমায়। পাত্তা পায়নি।
অবশ্য আমায় কথা বলাবার জন্য কম চেষ্টা করেনি।
একবার বলেছে, এই শোন, আমার মনে হচ্ছে কী জানিস?তুই এই পরীক্ষায় লাড্ডু পাবি!
আমার তরফ থেকে কোন জবাব না পেয়ে বেচারা অন্য উপায় বের করলো।
বললো,’তূর্ণা,একটা কাজ করে দে না আমার প্লিজ!আসলে তোর কাছে এসেছি এই কাজটার জন্যই। আমার না গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছে আজ। ঝগড়া করে ওকে একটা চড়ও দিয়েছি। তারপর কোন কথা না বলে চলে এসেছি।জানি না ওর অবস্থা এখন কী! আমার মনে হয় ওর একটা কী দুটা দাঁত পড়ে যাওয়ার কথা।তুই কী একটু ওর ফোনে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবি ওর কয়টা দাঁত পড়েছে?’
শিশির ভাইয়ার এই কথাটা শুনে আমার ভীষণ হাসি পেয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে আমি স্থির করে রাখলাম।
শিশির ভাইয়া ব্যর্থ হয়ে স্থান ত্যাগ করলো।
ও চলে যাওয়ার পর দরজা আটকে দিয়ে আমি অনেকক্ষণ ধরে একা একা হাসলাম।
আসলে শিশির ভাইয়া অসাধারণ একটা মানুষ।সে ইচ্ছে করলেই আমায় এভোয়েড করতে পারতো। কিন্তু করেনি।বোনের মতো দেখেছে আমায়। বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে।আর কতো সাবলীলভাবে যে আমার ভুল আর আবেগগুলোকে আস্তে আস্তে কাটিয়ে তুলতে চেয়েছে!তুলেছেও অনেকটা।ওর সাথে কথা বলি না ঈদুল ফিতরের দিন সন্ধ্যা থেকেই।প্রায় পঁচিশ দিন হয়ে গেছে।ও বারবার চেষ্টা করে কথা বলতে।আমি ইচ্ছে করে কথা বলি না। তবে আমার মন থেকে কোন রাগ নেই ওর প্রতি। আমার ভালো লাগে ওর মজার মজার কথাগুলো। আমার কেন জানি মনে হয় আমি যদি ওর সাথে রাগ ভেঙে কথা বলে ফেলি তবে সে আর আমার সাথে মজা করতে আসবে না। মজার মজার কথাগুলো তার মুখ থেকে আর শুনতে পাবো না!

রাতে খাওয়ার পর ম্যাম বললেন,’তূর্ণা, তোমাকে আজকাল এমন চিন্তিত মনে হয় কেন?’
আমি মৃদু হাসার চেষ্টা করি।বলি,’কই? না তো!’
ম্যাম বলেন,’মার চোখ কী ফাঁকি দেয়া যায়?কী হয়েছে তোমার বলো তো?’
আমি কিছু বলি না।চুপ করে থাকি।
শিশির ভাইয়া তখন ম্যামের কাছে এসে বলে,তার পরীক্ষার রেজাল্ট। বেচারি ভয়ে তটস্থ।মনে হচ্ছে এবার ফেল মারবে!’
ম্যাম তখন শিশির ভাইয়ার মাথায় এক চাটি দেন। তারপর বলেন,’এখান থেকে ভাগ তো তুই।যতোসব অলোক্ষুণে কথা! আমার মেয়ে ফার্স্ট হবে দেখিস!’
শিশির ভাইয়া দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে যেতে বলে,’ও ফার্স্ট হলে আমি ওকে সুমদ্র দেখিয়ে আনবো মা।কথা দিলাম।আর হতে না পারলে ওকে এক প্লেট তেলাপোকা বাজি খাওয়াবো বললাম।মনে থাকে যেনো!’
ম্যাম হাসেন।বলেন,’পাগল ছেলে!’
শিশির ভাইয়া চলে যাওয়ার পর ম্যাম আমায় বলেন,’তোমার কাছে একটা আবদার আছে আমার। তুমি রাখবে তূর্ণা?’
আমি বলি,’কী আবদার বলুন ম্যাম।রাখবো। ‘
ম্যাম তখন আমার দিকে কেমন মায়া মায়া চোখে তাকান। তারপর আমার একটা হাত ধরে বলেন,’আমায় মা বলে ডাকবে তুমি?’
আমি জানি না আমার কী হয়েছে! হঠাৎ ম্যামকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি।
ম্যাম আবেগতাড়িত গলায় বলেন,’ডাকবে কি না বলো?প্লিজ বলো!’
আমি কান্নার জন্য কথা বলতে পারি না।দম আটকে আসে। তবুও বলি। কাঁদতে কাঁদতে বলি,’আমি আপনাকে মা বলেই ডাকবো।মা, আপনি কী আমায় তুই করে ডাকবেন? মায়েরা তো তার মেয়েকে তুই করেই ডাকেন না!’
ম্যাম তখন কান্নাভেজা গলায় বলেন,’ডাকবো।তুই করে ডাকবো । এখন থেকে তুমি আমার তুই।’
আমি মাকে জড়িয়ে ধরি।জন্মধাত্রী মা নন।আলোকদাত্রী মাকে।

রেজাল্ট হয়েছে। আমি রেজাল্ট দেখতে যাইনা।ঝিম মেরে বসে আছি ক্লাস রুমে।সবাই যাচ্ছে।তারা অবশ্য আমায় যাওয়ার জন্য তাড়াও করেনি।তাড়া করার কোন কারণও নাই। ওদের চোখে আমি ক্লাসের টপার কোন ছাত্র না!
ক্লাসরুমে বেঞ্চির উপর বসে থেকে ভয়ে ধুঁকছি।
সাহস হচ্ছে না বোর্ডের কাছে যাওয়ার।ওদের সাথে গিয়ে দেখি যদি আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে এই ভয়ে যাচ্ছি না।

হঠাৎ আমার বন্ধু উর্মি এসে আমায় অবাক করে দিয়ে বলে,’টপাররা আগে থেকেই জানে তার রেজাল্ট কী হবে! এই জন্য একা একা শান্তশিষ্ট হয়ে রেজাল্ট না দেখে ক্লাসরুমেই বসে থাকে!’
আমি কিছু বুঝতে পারি না ‌। ভয়ে ভয়ে বলি,’আমার রেজাল্ট কী হয়েছে রে?’
উর্মি বলতে যাবে কিন্তু এর আগেই ক্লাসের প্রায় সবাই হুল্লোড় করতে করতে আসে এদিকে।কেউ কেউ এসে আমায় জাপটে ধরে।আর বলাবলি করতে থাকে,কী কারিশমা দেখালি রে তূর্ণা!তুই একটা বই লিখে ফেল।শর্ট টাইমে ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার উপায়!’
ওদের কথা শুনেও আমার বিশ্বাস হতে চায় না।আমি তখন ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে বোর্ডের কাছাকাছি যাই। তারপর আমার রেজিঃ নম্বর খুঁজে বের করি। তারপর চোখ ভিজিয়ে কেঁদে উঠি।আমি ফার্স্ট হয়েছি। সিজিপি এ – প্লাস আসেনি। কিন্তু একেবারে কমও হয়নি।
বোর্ডের কাছ থেকে আমার তখন সড়তে ইচ্ছে করে না। ওখানে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এখানে শব্দ করে কাঁদা যাবে না।তাই আমি চুপি চুপি কাঁদি।আর তখন আমার পিঠের উপর কারোর একটা কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকাই।মা এসেছেন। আমার আলোকদাত্রী মা।
মা বললেন,’খুশি তো?’
আমি সঙ্গে সঙ্গে মাকে জড়িয়ে ধরি। কাঁদতে থাকি মার বুক ভিজিয়ে।মা আমার পিঠে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তারপর বলেন,’মেহরাবকে ফোন করে জানিয়ে দে।আমি শিশির ছাগলটাকে খবরটা দেই।ওর তো আবার তোকে সমুদ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা!’

মেহরাব আমার ফোন রিসিভ করলো না। পরপর তিনবার ফোন করার পর চতুর্থ বার যখন ফোন করলাম তখন কল হয় না।সুইচ অফ জানায়। আমার তখন খারাপ লাগে। কান্না আসে আবার!
মা আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,’কী হয়েছে ? ফোন ধরেনি?’
আমি বলি,’না মা। তিনবার কল হয়েছে। এখন সুইচ অফ করে ফেলেছে।মা আমার সাথে ও এমন করছে কেন?কত আশা করে ফোন করেছি রেজাল্ট জানাবার জন্য!’
মা আমায় সান্তনা দেন। বলেন,’হয়তোবা এখন সে বিজি আছে।সময় হলে ঠিকই ফোন দিবে দেখিস। এখন শোন, শিশিরকে ফোন দেয়ার পর ও হ্যালো বলার আগেই কী বললো জানিস?’
আমি বললাম,’কী বললো?’
বললো,’তূর্ণাকে নিয়ে আমি সমুদ্রে যেতে পারবো না। আরেকজনের হবু বউ নিয়ে আমি সমুদ্রে যাবো কোন দুঃখে!’
আমি মন খারাপ করি না এতে। সমুদ্র দেখার খুব একটা শখ নাই আমার। সমুদ্র তখন দেখবো যখন আমি সফল হবো।এর আগে নয়।

বাসায় যাই প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে। কিন্তু গিয়ে চমকে উঠি।গেইট খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবো ঠিক তখন হঠাৎ কেউ একজন খপ করে আমার হাত ধরে ফেলে ভেতর থেকে।আমি ভীষণ রকম ভয় পেয়ে ভেতরে চোখ রাখতেই দেখি মেহরাব।মেহরাবকে দেখে খুব রাগ হলো আমার। এমনিতেই ওর প্রতি আমার অভিমান জমে আছে। ওকে ফোন দিলাম কতোবার রিসিভ করেনি।
আমার খুব ইচ্ছে করছে ওর বুকের উপর এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে। কিন্তু তা আর এখন করতে পারছি না। আমার সাথে মা আছে। তাছাড়া এটা করাও আমার ঠিক হবে না।মেহরাবের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক নাই।ও আমায় এখনও ভালোবাসে না। একদিন বাসবে বলেছে।
মা মেহরাবের সাথে কথা বলেন না। চুপিচুপি ঘরে চলে যান।
আমি তখন আবেগপ্রবণ হয়ে মেহরাবকে বলি,’ফোন ধরোনি কেন?’
মেহরাব হাসে। হেসে বলে,’ভুলে গেছো?আমি তো আগেই বলেছিলাম তুমি ফার্স্ট হলে আমি তোমায় সারপ্রাইজ দিবো।এই তো সারপ্রাইজ দিলাম।বাড়ি থেকে তোমার জন্য ঢাকায় এসে গেছি। ফোন রিসিভ করলে তো অতটা অবাক হতে না তাই না?’
আমি কথা বলি না। আমার চোখ কেমন ছলছল করে। আবার কান্না পাচ্ছে। এখন কিছুতেই কাঁদা যাবে না।না না না।

মেহরাব বলে,’আসো পুকুর পাড়ে যাই!’
আমি অবাক হয়ে বলি,’এখানে আবার পুকুর পাড় কোথায় পাবে?’
মেহরাব বলে,’আছে।আমি চিনি।আসো আমার সাথে।’
বলে সে আমায় একটু দূরে একটা পুকুরের কাছে নিয়ে যায়। তারপর ওই পুকুরের পাড়ে আমায় বলে,’তূর্ণা, তুমি চোখ বন্ধ করো তো একটু!’
আমি কিছু বলি না।ওর নির্দেশ পালন করি।
এরপর অনুভব করি ও আমার হাতের আঙুলে কিছু একটা পরিয়ে দিচ্ছে। আমার শরীর তখন কেমন শিরশির করতে থাকে। বুকের ভেতরটা কেমন দা দ্রিম দ্রিম করে বাজতে থাকে।
মেহরাব এবার বলে,’প্লিজ! ওপেন ইউর আইস।’
আমি চোখ খুলি।চোখ খুলতেই দেখি ও আমার হাতের অনামিকায় রিং পরিয়ে ওই আঙুল ধরেই এখনও হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
আমি লজ্জা পাই।কান্না পায় আমার।
আমি ওর দিকে তাকাই জলভরা চোখে। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,’কী চায়?’
মেহরাব তখন বলে,’তোমাকে।’

সে রাতে আরেকটা অদ্ভুত কান্ড করেন মা।

#চলবে

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>