তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-৩০+৩১

0
2564

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:30
#Suraiya_Aayat

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আরু আর আরিশ দুজনেই শুয়ে আছে ৷ আজ অনেকদিন পর নিজেকে কেমন চিন্তামুক্ত লাগছে আরিশের ৷

আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুও চুপচাপ আরিশের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে কোন কথা বলছে না ,এটাই হলো ওর একমাএ নিরাপদ জায়গা ৷
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আরু বলে উঠল,,,,,

“আচ্ছা আপনি এত talented কেন?”

আরিশ আরুকে ওর নীচে শুইয়ে দিয়ে ওর ওপর ঝুকে গেল ৷

” আমি talented নই ৷”

আমি জানি যারা talented হয় তারা তাদের talent টাকে স্বীকার করতে চাই না , এই যে যেমনটা আপনি ৷”

“সত্তিই যদি তাই হয় তাহলে আমার ছোট্ট আরুপাখিটাও হবে talented ,কি বল?”

আরু আরিশের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল ৷

“আমার বউটা লজ্জাও পায়,বাবা আমার তো জানাই ছিল না তা ৷”

আরু আরিশের বুকে কিল মেরে বলল,,,,

“আপনি সবসময় আমাকে এভাবে লজ্জা দেন কেন বলুন তো !

“আমি তোমাকে কখন লজ্জা দিই আরুপাখি?”(চোখ মেরে)

আরু কথা ঘোরানোর জন্য বললল,,,,,

“আজকে একটা এত ভালো দিন চলুননা আমরা আজকে কোথাও ঘুরতে যাই ৷”

“কোথায় যাবে আরুপাখি?”

“এই আশে পাশের কোথাও , সবাইমিলে একসাথে অনেকটা সময় কাটাবো খুব ভালো লাগবে ৷”

“আচ্ছা,তাহলে বিকালে রেডি হয়ে থেকো ,সবাইমিলে একসাথে বেরোনো যাবে ৷”

আরুশি আরিশের গালে হালকা করে কিস করে বলল:Thank u ৷

আমাকেও তো এখন তার রিটার্ন দিতে হয় বলে আরুশির ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরল ৷

বিকালবেলা ওরা সবাই বেরিয়েছে আফজাল খান আর অনিকা খানকে ওরা নিতে চেয়েছিল তবে উনাদের মুখে একই কথা ” এসব ছোটদের মাঝখানে আমরা গেলে তোদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে আমরা বরং অন্য কোনো দিন যাবো ৷”

আরোশী অনেক বার তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে ওদের আনন্দ নষ্ট হবে না বরং গেলে আনন্দটা দ্বিগুণ হবে কিন্তু তা ওনারা দুজন গেলেন না৷

সানা ,আরু আর আরিশ তিনজনই দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে , আরাভের আসার অপেক্ষা করছে ৷

আরিশ : আচ্ছা আরুপাখি আরাভের জন্য আমরা যে অপেক্ষা করছি সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমাকে গাড়ি বার করতে দিলে না কেন ? গাড়ি না হলে আমরা যাব কিসে?

সানা : সত্যিই তো তোমরা যাব কিসে ?

ওদের কথা বলতে বলতেই আরাভ চলে এসেছে একটা রিক্সা করে আর তার পিছনে আর একটা ৷

আরোশী : ঐতো আরাভ ভাইয়া রিকশা নিয়ে চলে এসেছে,এখন আমার রিক্সায় যাব ৷

আরিশ আরুশির কথা শুনে মুচকি হাসলো , ও জানে মেয়েটা বরাবরই বাচ্চা স্বভাবের ৷ একদিন রিকশাতে গেলে মন্দ হবে না ব্যাপারটা , তাছাড়া এরকম সৌভাগ্য তো ওর আর কখনো হয়নি ৷

আরুশির কথামতো আরাভ আর সানা একটা রিকশাতে বসলো আর আরু আর আরিশ আরেকটাতে ৷

রিক্সায় উঠতেই আরিশ রিকশার ছাউনিটা মেলে দিল৷

আরুশি আরিশের দিকে তাকাল ৷

আরু: ছাউনিটা আপনি দিলেন কেন , এটার কি এখন খুবই প্রয়োজন ছিল!

আরিশ : আমার কেমন একটা লাগছে আরূপাখি !

আরুশি আর কিছু না বলে রিক্সার ঝাপটা ফেলে দিল,,,,

আরু : সৌন্দর্যটাকে ভালো লাগার চোখে দেখুন আর সেটার মাঝে যদি হাজারো আত্মসম্মানবোধ আর বিলাসিতার প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন তাহলে সেটা আর সৌন্দর্য থাকে না ,তখন সেটাও নগর সভ্যতার একটা কুলসিতার মধ্যেই যুক্ত হয়ে যায় ৷

আরিশ আরুশির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে , মেয়েটা অল্প বয়সী হলে কতটা বোঝে , কতটা গভীর ভাবে ভাবে এই ছোট ছোট. ব্যাপার-স্যাপার গুলো , কিন্তু আরিশ কখনো এই ব্যাপার গুলো ভেবে দেখার সুযোগই পাইনি ৷

মুচকি হাসি দিয়ে আরিশ আরুকে বলল,,,,

তুমি এত কিছু কি করে জানো আরূপাখি?

আরোশী শান্ত দৄষ্টিতে আরিস এর দিকে তাকাল ৷

আরু: এগুলো বোঝার জন্য কিছু জানার প্রয়োজন হয় না , ভালোবাসা চোখে দেখলেই আপনা আপনিই আপনার মধ্যে এই অনুভুতিটা চলে আসবে ৷

কথায় কথায় রিকশার ঝাকুনিতে আরিস টলোমলো হয়ে গেল তার সাথে ভয়ও পেয়ে গেল , কিন্তু পরক্ষনেই আরুশি আরিশের হাতটা ধরে নিল ৷

আরু: ভয় নেই আমি থাকতে আপনার কিছু হবে না৷

আরিশ শুধু আরুশিকে মুগ্ধ নয়নে দেখেই যাচ্ছে কারণ ও আজকে যেন একটা নতুন আরুশিকে দেখছে যে সব সময় বাচ্চাদের মত ব্যবহার করে, তাকেও যেন আজকে স্বাবলম্বী বলে মনে হচ্ছে,
এক অপরূপ সৌন্দর্য কাজ করছে অন্য দিনের তুলনায় ৷

রিক্সা চলছে আরিশ আর আরুশি দুজন দুজনের হাত ধরে বসে আছে ৷ আরিশ ক্রমাগত ভয় পাচ্ছে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার তাই আরু শক্ত করে আরিশের হাত তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে , বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল গুলো বারবার মুখে এসে আছড়ে পড়ছে তবে বিরক্ত হচ্ছে না , অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে আরুশির মাঝে ৷
রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ ,মানুষের কোলাহল এই সমস্ত কিছুই যেন আজ উপেক্ষিত ওদের ভালোবাসার কাছে ৷

আরুশির পছন্দ করে দেওয়া নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পড়েছে আরিশ আর নিজেও তার সঙ্গে ম্যাচ করে নীল রঙের শাড়ি পরেছে , হাতের কাচের চুড়ি আর হালকা একটু মেকআপ….

এই বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে আরিশ কি করে পড়ল সেটাই ভাবছে এখন……

আরিসের এখনো মনে আছে আরুর ভার্সিটির সেই প্রথম দিনের কথা ৷

ভার্সিটির বিরাট গেটটা পার করে একা একা হেঁটে আসছিল আর সবকিছুই ছিল সেদিন অজানা আরুর কাছে ৷ এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সবকিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিল আরু ৷ অনেককেই অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতে করতে আসছিল তবে শেষের গন্তব্যটি হল আরিশ ৷

মালিহার ম্যাথের একটা ক্যালকুলেশন মিলছিলনা, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পরও না পেরে আরিশের কাছে নিয়ে গেল ক্যালকুলেশন টা ৷ দেখা মাত্রই সলভ করার আইডিয়াটা আরিশের মাথায় চলে এল ৷ তবে তা শুরু করার আগেই হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো , বিরক্ত নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলে একটা অল্প বয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ শরীরের গঠনও বেশ , দেখে বয়সটা আন্দাজ করা যাবে না ৷
চোখ দুটো টানা টানা, কপালের চুল গুলো বারবার আছড়ে পড়ছে মুখে , চোখের কোনে জমে থাকা কাজলটাও চোখের সাথে লেপ্টে গেছে ৷ পরিধান করে থাকা হলুদ রঙের থ্রি পিসটাও মানিয়েছে বেশ ৷ পরিপাটি দেখাচ্ছিল বেশ ৷
এর আগে একটা মেয়েকে কক্ষনো এতটাও গভীরভাবে ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেনি আরিশ ৷
আরোশী হলো তার জীবনের প্রথম রমনী যাকে সে এতটা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে ৷

আরূ : আপু আপনি কি একটু বলতে পারবেন যে বায়োকেমিস্ট্রির ডিপার্টমেন্টটা ঠিক কোথায়?

মালিহা বেশ অবাক হয়েছিল আরুর কথা শুনে আর তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিল আরিশ কারন দুজনেই ভেবেছিল যে আরু হয়তো আরিশকে জিজ্ঞাসা করবে কারণ আরিশ অত্যন্ত একজন সুপুরুষ , গোটা ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ ৷নতুন সব মেয়েরা ইতিমধ্যেই ও সঙ্গে গভীর আলাপচারিতার চেষ্টা করেছে তবে কাউকে পাত্তা দেয়নি আরীশ ৷ কারো মধ্যে নতুন কিছু খুঁজে পাইনি আরিশ , সবাই প্রায় একই যারা ওকে পটানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আরু তার মধ্যে অন্যরকম একজন যে নিজে থেকে কোনো ইচ্ছা দেখায়নি আরিশের সঙ্গে কথা বলার ৷

মালিহা : তুমি কি আমাকে বললে?

আরু কিন্তু কিন্তু করে : হ্যাঁ আপু আমি তো আপনাকেই বললাম , কেন আপনার মনে হলো না? (আদো আদো স্বরে )

মালিহা: সেটা নয় আসলে এমনিতেই ৷ বায়ো কেমিস্ট্রির ডিপার্টমেন্ট হল থার্ড ফ্লোরে যে কর্নারে রুমটা রয়েছে 212 নম্বর সেটাই ৷

আরুশি : থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু বলে আরিসের দিকে কোন রকম দৄষ্টিপাত না করেই বিদায় নিল ৷

আরিস ততক্ষণ আরুর দিকে তাকিয়ে ছিল যতক্ষণ না আরুশি ওর চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেছে৷

মালিহা ও আরিশের কান্ড দেখে কিছু আর বলার সাহস পায়নি কারণ আরিশ ওর সিনিয়ার আর আরিশ এইসমস্ত মেয়েদের ব্যাপারে কথা বলতে একদমই পছন্দ করেনা….

সেই দিন আরুশির মাঝে আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল আরিশ এর ৷ সবার থেকে অন্যরকম আরু , কারো সঙ্গে ও মেলে না…

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আরূর হাতের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আরুকৈ জড়িয়ে ধরল ৷ আররু ও আরিশের কাঁধে মাথা রেখে ওদের যাত্রাটা কে অনুভব করতে লাগলো ৷

রিকশা থেকে নামতেই আরাভ আর সানা ওদের কাছে এগিয়ে এলো ৷

আরাভ আরিশকে কিছুটা কিন্তু কিন্তু করে বলল : আসলে কি বলতো,,,

আরাভের কথার টোন শুনে আরিশ বুঝতে পেরেছে যে আরাভ কি বলতে চাইছে তাই আর বেশি হেঁয়ালি না করে আরিশ বলল :
বুঝতে পেরেছি , তোদের আলাদা সময় চাই তাই তো? আচ্ছা যা তবে একসঙ্গে কিন্তু বাড়িতে ফিরতে হবে বলে দিলাম ৷

আরাভ: হ্যাঁ নিশ্চয়ই , বলে ওরা দুজন হাত ধরে বেরিয়ে গেল….

আরুশি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল তারপর আরিসের দিকে তাকিয়ে বলল : কত ভালোবাসে সানাকে আরাভ ভাই তাইনা!

আরিশ :হমমম!
যেমনটা আমি তোমাকে বাসি (মনে মনে)

তারপরে দুজন সামনে হাতে হাত ধরে এগিয়ে হাটতে লাগল ৷ একটা পার্কে বেড়াতে এসেছে ওরা দুজন৷ আশেপাশের কত ভালোবাসার মানুষ হাতে হাত রেখে বসে আছে , একান্ত সময় পার করছে…

হঠাৎ কিছুটা দূরে নজর যেতেই আরিশ আরুশিকে বলল:
আরুপাখি তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি ৷

আরূ: আপনি এখন আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছেন? তবে কথাটা হয়তো আরিশ শুনলো না , বলার আগেই চলে গেছে ও ৷

আরূশির একটু রাগ হলো আরিশের উপরে , না বলে হূট করে কোথায় চলে গেল তাই ৷

তারপর দৃষ্টি দিল নিক্ষেপ করল লেকের জলের দিকে, বিকালের সূর্যের আলোতে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে ৷ ওর খুবই ইচ্ছা হচ্ছে এখন জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার তবে যার সঙ্গে বসে থাকবে সেই মানুষটাই উধাও হয়ে গেল ৷

বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরূ বোর হয়ে চলেছে তবে আরিশের আসার নাম নেই ৷

হঠাৎ করে চুলে আলতো স্পর্শ পেয়ে ও বুঝতে পারল যে আরিশ এসেছে , আর তার সঙ্গে একটা খুব সুন্দর সুগন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে ৷ বুঝতে বাকি রইল না যে বেলি ফুলের মালাটা সযত্নে হাতখোপা করে আরিশ ওর মাথায় বেঁধে দিয়েছে ৷
মুচকি মুচকি হাসছে আরু আরিশের কাণ্ড দেখে ৷

আরিশের সমস্ত রোমান্টিকতা যেনো, আজকে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে ,অদ্ভুত এক ভালো লাগা সৃষ্টি করছে ৷

আরিশ তারপর আরুশিকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নেই আরূর গালে হাত রেখে বলল :
তোমার জন্য মালাটা আনতে গিয়েছিলাম আরুপাখি , আমি জানি আমার খুব লেট হয়েছে আই এম রিয়েলি সরি ৷(কান ধরে ৷)

আরিস এর কান্ড দেখে আরু মুচকি হেসে ফেলল কারণ এত লোকের মাঝখানে আরিশ ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কান ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনি ৷ আরুশি আরিশের হাতটা কান থেকে নামিয়ে নিয়ে বলল :
কান ধরতে হবে না , আমি আর রেগে নেই ৷

আরিশ আর আরু দুজনই মুচকি হাসতে লাগল….

আরূ: চলুন না ওই লেকের ধারে যাই , আমার খুব ইচ্ছা করছে ওখানে যেতে…

আরিস : আমার আরুপাখি বলেছে তার মানে যেতেই হয় বলে আরুর সঙ্গে সেখানে গেল….

দুজনের জলের মধ্যে পা ঢুবিয়ে বসে আছে আর ভালোবাসাগুলো মিলিয়ে দিচ্ছে একসঙ্গে….

হঠাৎ আরু কাঁধে আলতো একটা হাতের স্পর্শ পেতেই অত্যন্ত কৌতুহলের সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটা পিচ্চি বাচ্চা দাঁড়িয়ে খিলখিল করে মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে হাসছে আরুর দিকে তাকিয়ে ৷ বাচ্চাটার হাসি দেখে আরুর যেন মন ভরে গেল ৷

বাচ্চাটিকে দেখে আরূ আর আরিশ দুজনেই জল থেকে উঠে এলো ৷

আরিশ নীচু হয়ে বাচ্চাটাকে কলে তুলে নিল…..

আরু মেয়েটার গাল দুটো টেনে ,,,,,

তোমার নাম কি ?

আমাল নামম আয়ূশি ৷(আধোআধো কন্ঠে)

আরিশ আর আরূ মুচকি হাসছে ৷

আরূশি আরিশের থেকে আয়ূশিকে কলে নিল,,, ,

আরিশ : তোমার তো দেখছি আমার আরুপাখির মতো নাম ৷

আয়ূশি :তোমাল আরূপাখি আতে,কিইনতু যানোতো আমাদেল নেই ৷ আমাদেল তো টিয়াপাখি আতে সে আমাল সাথে কতা বলে ৷

আরিশ:তাই,,,,

আয়ূশি:তা তোমাল আরূপাখি টা কোথায় ?

আরিশ আয়ূশির গালে চুমূ দিয়ে বললল,,,,,
তুমি যার কোলে উঠেছ সে আমার আরূপাখি ৷

আয়ূশি:এ বাবা তোমাল পাখি তো ওলে না ,কি পতা ৷

আয়ূশির পাকা পাকা কথা শুনে ওরা দুজনে হাসতে হাসতে শেষ তারপর আধোআধো কোন্ঠে কথাগুলোর সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷

আরূশি:আম্মু তোমার এই সুন্দর নামটা কে রেখেছে?

আয়ূশি: আমাল দাদিমা রেখেছে ৷

আরূশি:তা তোমার দাদিমা কোথায়?

আয়ূশি:যানো তো আমাল দাদিমা রোজ নামাজ পলতে গিয়ে খুব কান্না কলে ৷

আরিশ আর আরূশি দুজন দুজনের দিকে অবাক চোখে তাকালো তারপর আরিশ বলল:
তা তোমার দাদিমাকে কি কেউ বকা দেয়?

আয়ূশী:না না,দাদিমা তো আমার ফুপ্পিআম্মুল জন্য কাদে ৷

আরূশি:কি হয়েছে তোমার ফুপ্পিআম্মুর ?

আয়ূশি:দাদিমা ফুপ্পিকে খুঁজে পায়না,কোথায় হালিয়ে গেতে ৷বলে আয়ূশি ও কান্না করে দিল ৷

ওদের কথায় কথায় আয়ূশির বাবা মা ওর কান্না শুনে ছুটে এলো….

আসিফ(আয়ূশির বাবা):আই এম রিয়েলি সরি ও আপনাদের কে বিরক্ত করলো ৷ আসলে আমার আম্মু একটু অসুস্থ তো তাই ওনাকে একটু খেয়াল রাখতে গিয়ে আয়ূশি এখানে চলে এসেছে ৷

আরুশি: কোথায় আপনার মা?

আসিফ : আসলে ওই দিকে বসে আছে একা একা,আমি আর আমার ওয়াইফ এতখন ওখানেই ছিলাম ,তার মাঝে আয়ূশি চলে এসেছ ৷

আরোশী : আপনার মা কি খুব অসুস্থ?

আসিফ: অসুস্থ তবে তা মানসিক দিক থেকে ৷

আয়ূশি যখন ওনার কথা বলছিলেন আরোশীর তখন কষ্ট হচ্ছিল ওনার কথা শুনে, আর এখন যখন উনি এখানেই আছেন তাহলে দেখা করতে সমস্যা কোথায়?

আরুশি: আমরা কি ওনার সাথে একটু দেখা করতে পারি?আই মিন এতদূর অবধি পরিচয় হয়ে দেখা না হলে খুব খারপ লাগত আর কি ৷

আসিফ: কোন সমস্যা নেই আসুন ৷

আরুশি আয়ূশিকে কলে নিয়ে আরিশের সাথে ওনাদের পিছন পিছন যেতে লাগল ৷

আরু যত এগিয়ে যাচ্ছি heartbeat টা যেন ততই বেড়ে চলেছে ,তবে কেন তা জানে না ৷

ওনার সামনে যেতেই বুকের ভিতর মোচঢ় দিয়ে উঠল ওর ৷

উনি একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন হয়তো দীর্ঘ কোনো ব্যথা নির্মূল করার চেষ্টা করছেন , পাশে বসে আছেন প্রায় 70 বছর বয়সের একজন বয়স্ক লোক , বুঝতে বাকি রইলো না যে ওটা ওনার স্বামী….

আরুশি ধীর পায়ে উনার সামনে যেতেই অদ্ভুত এক টানে উনি আলতো চোখে আরুর দিকে তাকালেন, চোখ দিয়ে ওনার আপনি জল গড়িয়ে পড়ল ৷
আরুশি হাঁটু গেড়ে বসে উনার চোখের জলটা মুছে দিলেন ৷

উনি নিস্তব্ধ , যেন কথা বলার ভাষাটা হারিয়ে ফেলেছেন এমন ৷

আরুশি : আপনি কাঁদবেন না প্লিজ, আপনাকে কাঁদতে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে….

উনি আরুশির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বললেন : আমার মেয়েটাও যদি আজ আমার কাছে থাকতো তাহলে সেও তোমার মতই হতো ৷ বড্ড মনে পড়ে তার কথা…

উনার স্বামী উনার কাঁধে হাত রাখলেন রেখে বললেন: সবার কপালে যেমন কন্যা সুখ থাকে না হয়তো আমাদের কপালেও নেই , আল্লাহ হয়তো রাখেননি…

উনাদের এমন আবেগপ্রবণ কথা শুনে আরুশির মনে হচ্ছে যেন ওনাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেতে, আর ওনার কষ্টে নিজেকেও সামলে করতে….

রিকশা করে বাড়ি ফিরছে আরু আর আরিশ তবে আরূকে আর আগের মত ঠিক প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছেনা, যতটা না আসার সময় দেখাচ্ছিল ৷ হয়তো ওই মহিলার কাতরতায় কষ্ট পেয়েছে খুব , তবে ব্যাপারটা নিয়ে একটু গভীরভাবেই ভাবতে চাই আরিশ….

সেখান থেকে আসার আগে ওনাদের বাড়ির এড্রেস টা নিয়ে এসেছে আরিশ যাতে যোগাযোগ বজায় থাকে, তবে এই মুহূর্তে আরুশিকে সামলানো টা দরকার ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:31
#Suraiya_Aayat

সারা রাস্তায় আরূ চুপচাপ ছিল , রিক্সাটা বাড়ির সামনে এসে থামতেই কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল আরু ৷

আরিশ বুঝতে পারছে আরূর মনের অবস্থা ৷

রিক্সার ভাড়াটা আরিশ মিটাতেই সানা বলে উঠলো:
ভাইয়া আরুর হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেল কেন? কিছু কি হয়েছে , নাকি তুই আবার ওকে কিছু বলেছিস বলতো ? রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে ৷

আরিস চিন্তিত হয়ে বলল : আরে উনাদের সঙ্গে কথা বলার পর থেকেই আরুপাখির মন খারাপ ,হয়তো উনাদের দুঃখে বড্ড বেশি কষ্ট পেয়েছে ৷

সানা : বড্ড বেশি নরম মনের ও, যেকোনো কারোর কষ্টকে সহজে নিজের করে নেয় , তার জন্য আরো বেশি কষ্ট পায় ৷

আরিশ : চিন্তা করিস না আমি সামলে নেব ৷

সানা দাঁত বার করে হেসে : সে আমি জানি না যে আমার ভাইয়া কি কি পারে আর কি কি পারেনা ৷

আরিশ সানার কানটা ধরে : বড্ড বেশি পেকে গেছ তুমি বুঝেছি , সবকিছু আরাভের কাছ থেকেই শিখছ৷ তাড়াতাড়িই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি চিন্তা করোনা ৷

অরিশের কথার পরিবর্তে সানা হাসতে লাগল ৷

ওরা ঘুরতে থেকে বাড়ি আসার পর আরিস আরুর সাথে আর ভালোভাবে সাথে সময় কাটাতে পারেনি ৷ আরু বাড়িতে এসেই রান্নাঘরে চলে গেছে , রাত্রে ডিনার টা নাকি ও বানাবে তাই আর আলাদা করে ওর সঙ্গে আর কথা বলা হয়নি ৷ তাছাড়া কিচেনে আরিশের মা ও আছেন তাই আর যেতে পারছেনা আরিশ ৷

কোন বাইরের লোক থাকলে আরিশ কিছু মনে করতো না কিন্তু বাড়ির লোকের সামনে একটু তো নিজেকে সংযত করে রাখতেই হবে না হলে তারা কি ভাববে!

হঠাৎ করে আরিশের ফোন আসতেই আরিশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল….

আরূ রান্নাঘরে সব সবজিগুলো কাটছে আর অনিকা খান ওর পাশে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছেন ৷ মেয়েটা একা সবকিছু সামলাতে পারবে কিনা সেই কারণেই উনি রয়েছেন…

আরু: জানোতো মামনি , আমার ওনাদের জন্য খুব খারাপ লাগছে ৷ উনারা নিজের সন্তানকে হারিয়েছেন, খুঁজে পাচ্ছেন না ৷ জন্ম দেওয়ার কয়েক মাস অব্দি নাকি উনারা পেয়েছিলেন নিজের সন্তানকে তারপরে নাকি হারিয়ে ফেলেছিলেন ‌ উনাদের কত কষ্ট তাই না!

আরিশের মা আর উত্তরে কিছু বললেন না ৷
মনে মনে বলতে লাগলেন : তুইও যে এরকমই কারোর সন্তান রে মামা ৷ তোকে যে ,,,,,,,,
এই বলে আর কিছু ভাবতে পারল না তখনই আরূ বলে উঠল ৷

” আল্লাহ যেন উনাদের সন্তানকে আবার ওনাদের কাছে ফিরিয়ে দেন , তাহলে উনারা এ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন ৷”

অনিকা খান : আল্লাহ যেন তোর দোয়া কবুল করে মামনি….

আরিস : আপনি সব ঠিকঠাক বলছেন তো ! মানে এটা কোন ভুল খবর না তো ?

অচেনা লোক : আমি যা বলছি একদম সত্যি বলছি , সব ঠিকঠাক খোঁজখবর নিয়েই আপনাকে বলছি স্যার , আর যা বলছি তাতে কোনো ভুল নেই , আপনি এবার আসল অপরাধীকে ধরতে পারবেন ৷

আরিস লোকটার সাথে হ্যান্ডশেক করে : থ্যাংক ইউ সো মাচ , আপনি অনেক বড় উপকার করলেন আমার ৷ আপনার এই খবরটা হয়তো অনেকগুলো জীবন পাল্টে দিতে পারে তা আফনি হয়তো জানেন না……

অচেনা : আমি জানি স্যার আপনি যা করবেন সবার ভালোর জন্যই করবেন ৷

অচেনা : স্যার ম্যাডাম ভালো আছেন?

আরিশ মুচকি হেসে বলল : হ্যাঁ ভালো, আল্লাহ যেন সবসময় এভাবেই ওকে হাসি খুশি রাখে ৷

অচেনা : আমিন ৷

রাত্রে ডিনার করে আরিশ রুমে যেতেই দেখল আরুশি ওয়াশরুমে গেছে….

তখনই পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই তা রিসিভ করার জন্য ফোনটা হাতে করে নিয়ে বাইরে চলে গেল আরিশ ৷ প্রিন্সিপালের ফোন এসেছে , হয়তো আরিশের এই সাফল্যের ব্যাপারেই কিছু বলবেন….

আরোশী রুমে এসে দেখল আরিশ রুমে নেই, ও ভাবল হয়ত এখনো নিচেই আছে তাই আরিশের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল ৷ রুমের ভিতর একটু বসে রইল , সেখানে বসে থেকে যেন দমটা বন্ধ হয়ে আসছে ভালো লাগছে না কিছুতেই , বারবার পাইচারি করছে আর বারবারই চোখে ভেসে আসছে সেই মহিলার কাতরোক্তি তার সন্তানকে ফিরে পাওয়ার৷ শুধু একটু পায়চারি করে শান্ত হলো না তাই না পেরে ছাদে চলে গেলে…

ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আরূ আর ব্যস্ত নগরীর দিকে দৃষ্টিপাত করছে ৷ এ শহরে মানুষ কত ব্যস্ত , কারোর কারো জন্য সময় নেই , কেউ বা সব কিছু পেয়েও অখুশি , আবার কেউ বা কিছু না পেয়েও সে সুখী ৷ এক অদ্ভুত নিয়মে যেন জীবনটা পরিচালিত হয়, যেভাবে সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তেমনভাবে এগোচ্ছে , হাসি , দুঃখ-বেদনা , আনন্দ সবকিছু মিলেই জীবনটা চলে যাচ্ছে ৷ জীবনের প্রতি অভিযোগ করলেও তা বৃথা কারণ সৃষ্টি কর্তা নিজেই তেমনটা চেয়েছেন ৷ তিনি যেমন দুঃখ দেয় আবার দুঃখের পরেও কষ্টটা নির্মূল করে দেন আনন্দ দিয়ে ৷ তাই সময়ের অপেক্ষা করে আর বিধাতার উপর ভরসা রাখা উচিত ৷

বাইরে ঠান্ডা বাতাস গুলো যেন আরুর শরীর আর মন ঊভয়কেই ছুঁয়ে যাচ্ছে ,এত ক্লান্ত আর ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে অনেকটাই স্নিগ্ধ লাগছে আরুর…
তবে পাশে যদি এখন আরিশ দাঁড়িয়ে থাকতো তাহলে মন্দ হতো না , এই কথাটা আরু মনে মনে ভাবছিল তখন হঠাৎ ই পেটে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো আরূ, বুঝতে বাকি রইল না যে প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়তেই সে হাজিরা দিতে এখন তার কাছে উপস্থিত….

খোপা করে রাখা চুলগুলো আলতো করে স্পর্শ করে খুলে দিল আরিশ, খোঁপাটা খুলে দিতেই চুলগুলো ছাড়িয়ে পরল আর তা প্রায় কোমর ছুঁই ছুঁই,
আরিশ এখন আরূর চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত…

আরশি: বড্ড ভালোবাসি আরূপাখি তোমাকে,
তুমি হীনা আমি নিঃস্ব, তুমি আমার জীবনের শেষ সম্বল ৷ আমার পরিণীতা ৷

আরূ আরিশের কথা শুনে মুচকি হাসলো…..

হাজারও কষ্টের মাঝেও আরিশের বলা কথাগুলো যেন ওর সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয় , অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে তখন ৷

আরুশিকে আরিশ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করল,,,,,,

এমন করছ কেন আরুপাখি ? আমি কি কোন ভুল করে ফেলেছি ?

আরুশি মুখের এক চিলতে হাসির রেখে টেনে আরিশের গালে আলতো করে স্পর্শ করে বলল: আপনি কেন কোন ভুল করতে যাবেন ? আমি জানি আপনি আমাকে কতটা ভালবাসেন তা আমি জানি৷ আপনি যদি আপনার ভালোবাসা প্রকাশে কখনো ব্যর্থ হন তবুও আমি ভাববো যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন ৷ হয়তো আমি একটু পাগলামো করি তবে আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তো করি ৷ আপনার কাছে যদি এই ছোট ছোট আবদার গুলো আর এই দুষ্টুমিগুলো না করতে পারি তাহলে আমার জীবনে আর অবশিষ্টাংশ হিসাবে কিছুই রইল না…..

আরিশ আজকে যেন এক অন্য আরুশিকে দেখছে৷ আজকে ওর মাঝে একজন রমণীর আভাস স্পষ্ট,যে সমস্ত জটিলতার সমাধান খোঁজার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পারে ৷

আরিশ খেয়াল করলো যে আরুশি কিছুটা হলেও বিকালের ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে তাই আর কোনভাবে আরুশিকে সেই সমস্ত কথাগুলো মনে করিয়ে ওর মুডটা খারাপ করতে চায় না…

হঠাৎ করে আরিশ খেয়াল করলো যে আরুশির চোখের কোনে জল জমে আছে এসেছে, মুহূর্তেই ওর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ৷

চোখের কোনে জমে থাকা জলটা এক কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়তেই আরিস ওর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে তা মুছে দিল ৷

আরিস : তোমার কি হয়েছে আরুপাখি, আমাকে বল৷

আরোশী আরিসের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল:
আমি আপনার পরিণীতা হয়ে আপনাকে পৃথিবীর সকল ভালোবাসা এনে দিতে চাই , সকল ভালোবাসা আপনার কাছে উজার করে দিতে চাই , নিজের সবটুকু দিয়ে ভালবাসতে চাই , আমিও একজন মা হতে চাই আর একজন মা হওয়ার সুখ অনুভব করতে চাই ৷

আরিশ আরুশির কথা শুনে অনেক অবাক হলো ৷
হঠাৎ করে আরুশির এমন পরিবর্তনে বাকরুদ্ধ , কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ৷

আরিশ নেশাগ্রস্থ কন্ঠে বলল : তুমি এখন বড্ড ছোট আরুপাখি…

আরুশি : দেবেন কি আমায় সেই সুযোগ ? ভালোবাসবেন কি আমায় ?

ভালোবাসার এমন একটা পর্যায়ে এসে আরিশের আর কিছু বলার নেই , ও নিজেও চাই আরুশিকে নিজের সমস্তটা দিয়ে ভালবাসতে ৷

তাই আর আরুর কথার কোন উওর না দিয়ে আরুশির চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ একে ওকে কোলে তুলে নিল…..

সকালবেলা এগারোটা,,,,,

আরিশের বাড়ির সবাই বসে আছে অডিটোরিয়ামের প্রথম সারিতে ভার্সিটির টপারের বাড়ির লোক হিসাবে৷ সবার মুখ খুশিতে ঝলমল করছে ৷
আরিশের বাড়ির লোকের মাঝে আরূকে বসতে দেখে সবাই যেন একটু অবাকই হচ্ছে তবে আরিশের সাথৈ আরুর ঠিক কি সম্পর্ক তা ঠিক বুঝতে পারছে না ৷ অনেকেই ভাবছে যে আরূ আরিশের বোন ৷ তবে যার জন্য এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সে নিজেই উপস্থিত নেই ৷

অনেকখন হয়ে গেল সবাই অপেক্ষা করছে তবে আরিশের আসার নাম নেই দেখে সানা আরুকে বলে উঠল:
ভাইয়া কোথায় রে ? ওকে, তো দেখতে পেলাম না কখন আসবে ও?

আরূ : আমি জানিনা ঠিক, আমার ফোনটাও তো তুলছেননা ৷

ওদের কথার মাঝে হঠাৎ তিথি এসে উপস্থিত হলো, বেশ হাসিমুখে আরূর পাশে বসলো ৷

তিথিকে হাসিমুখে দেখে আরুর মনটা যেন ভরে গেল, তিথির মুখে হাসি দেখে খুব ভালো লাগছে ওর,হয়তো কোন খুশির খবর আছে ৷

আরূ আর দেরি না করে তিথিকে জিজ্ঞাসা করল, আজকে মনে হচ্ছে তিথি ম্যাডামের মুডটা খুব ভালো, তা কোন খুশীর খবর নাকি ?

তিথি আনন্দে আরুকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল:এবার আমার বাড়ির লোক নাহিদকে ঠিক মেনে নেবে আমি সিওর, আর না করতে পারবে না ৷

আরো ভুরু কুঁচকে অনেক কৌতুহল এর সাথে বলল: হঠাৎ কি হলো রে?কোন মিরাক্কেল!

তিথি: আরে নাহিদ একটা কোম্পানিতে জব পেয়ে গেছে , খুব ভালো স্যালারি ও দেবে বলল , তাই আর কোন চিন্তা রইল না আমাদের ৷

আরু আনন্দে তিথিকে জড়িয়ে ধরে বলল: এতো খুব ভালো খবর ৷

সানা: আনন্দটা আজকে দ্বিগুণ হয়ে গেল ৷

ওদের কথার মাঝখানে হঠাৎ মাইক্রোফোন নিয়ে প্রিন্সিপাল বলতে শুরু করলেন ,,,,,
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হবে আর আমাদের কৃতি ছাত্র আরিশ খান খুব শীঘ্রই আসবে৷
কথাটা শুনে আরুশি আবার আরিশের ভাবনায় মগ্ন হলো , সত্যিই তো কি এমন কাজ যে আরিশ আসতে পারছে না ! এখানে ওদেরকে আগে আগে পাঠিয়ে দিয়ে বলল যে তাড়াতাড়ি চলে আসবে , অফিসে নাকি একটা জরুরি কাজ আছে তাই ৷

আরুশি এবার নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে সবার থেকে কিছুটা দুরত্বে গিয়ে দাঁড়ালো , ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশের নাম্বারে কল করতে গিয়ে ভুলবশত তুরানের কাছে কলটা চলে গেল ৷

তুরান ফোনটা ধরতেই আরোশী ফোনটা ধরেই চটজলদি তে বলতে লাগল : কোথায় আপনি ? আর এত দেরি হচ্ছে কেন ?সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ৷

তখনই হাসতে হাসতে তুরান বলে উঠলো : আরে এটা sir নয় ,এটা আমি রে তুরান বলছি ,sir তো কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেলেন অনেক তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলেন মনে হল, কিন্তু এখন তোর তাড়াহুড়ো দেখে বুঝতে পারছি যে সত্যিই ওনার কোনো তাড়া আছে৷

আরুশি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো তারপরে কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো: সরি আমি ভাবলাম উনি হয়তো ৷

তুরান : সমস্যা নেই , আসলে অফিসে একটা নিউ স্টাফ জয়েন হওয়ার জন্য তাকে sir সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কাজগুলো তাই একটু দেরী হয়ে গেল .৷ ছেলেটা আমাদের বয়সী প্রায় বা আমাদের থেকে হয়তো কিছুটা বয়সে বড় হবে, কি যেন নাম বেশ ৷ ওহহহ নাহিদ হয়তো ৷

নাহিদ নামটা শুনেই আরু অবাক হয়ে গেল কারণ কিছুক্ষণ আগেই তিথি আরুকে বলছিল যে নাহিদ ভাইয়া কোন জব পেয়েছে , তাহলে তা কি আরিশের অফিসে ?

তখনই তুরান বলে উঠলো :কোন অনুষ্ঠানে গেছিস?

আরুশি : আসলে কলেজ থেকে ওনাকে সম্বন্ধনা দেবে সেই জন্য এখানে এসেছে, আর উনি নিজেই এখন বেপাত্তা ৷

তুরান হাসতে হাসতে বললো : আচ্ছা তাহলে এই সময় আমি এভাবে নষ্ট করতে দিতে চাইনা, আমি এখন রাখলাম পরে কথা হবে ৷ বলে ফোনটা রেখে দিল ৷

আরু যেন সবকিছু মিলিয়ে উঠতে পারছে না ৷

পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো দৌড়ে দৌড়ে আরিশ ওর দিকে এগিয়ে আসছে, সম্পূর্ণ অগোছালো দেখাচ্ছে ওকে….

আরুর কাছে এসে আরিধ ক্রমাগত হাঁফাতে লাগলো৷

আরিস : আই এম রিয়েলি সরি আরুপাখি, একটা জরুরি কাজ ছিল বলেই দেরি হয়ে গেল ৷

আরু ভাবলো যে এ সমস্ত কথা পরে বলা যেতে পারে, এখনই বলে আরিশকে ব্যতিব্যস্ত করার কোন দরকার নেই ৷

আরু আরিশের কাছে গিয়ে ওর অগোছালো চুল টাকে নিজের হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করল, সামান্য কিছুটা পরিপাটি করে পাঞ্জাবির খুলে থাকা বোতামটা যত্নসহকারে লাগিয়ে দিল ৷

আরোশী মুচকি হেসে বলল : আমি জানি , তবে এখন সবার আপনাকে প্রয়োজন তাই আপনি চলুন ৷ বলে আরিশ এর হাত ধরে এগিয়ে গেল….

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে