ছাদের রেলিংয়ে বিভোরের কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলো হৃদি।বিভোরের কথা শুনে সে কাঁধ থেকে মাথাটা উঠায়।সন্দিহান কন্ঠে বলে,,
-কেন?হঠাৎ এই প্রশ্ন!
-বলো না!
-হ্যাঁ বিশ্বাসী।প্রথম প্রেম আবেগ শেখায় আর শেষ প্রেম ভালোবাসতে।একটা পুরুষের প্রথম প্রেম হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হলে শেষ প্রেম হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার
-জানো তুমি না আমার শেষ প্রেম।যা আমায় ভালোবাসতে শিখিয়েছে।
-তুমিও।আমায় বেঁধে ফেলেছো তুমি
-কিভাবে?
-সহজ তো অনেক তাই টের পাওনি।আমায় বেঁধে রাখা সহজ।সামান্য কেয়ারিং আর কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভালোবাসলেই আঙুলে আঙুল রেখে তার সাথে পাড়ি দেবো আমি বহুদুর।
কথাটা বলে হৃদি পরম আয়েশে বিভোরের কাঁধে মাথা রাখে।বিয়ের একমাস পুর্ণ হলো। কিন্তু হৃদি বিভোরের প্রেম সেই আগের মতোই আছে। দুজনেই ষোলো বছর বয়সী প্রেমিক প্রেমিকা।ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হয়েছে।মিসেস ছায়ার ইচ্ছা ছিলো বেশ ধুমধাম করে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করবে।কিন্তু বিভোর সায় দেয় নি।ছেলের বিয়ের জন্য মিসেস ছায়া যে সব টাকা রেখেছিলেন সেই সব টাকা দিয়ে হৃদি বিভোর শহরের ছিন্নমূল মানুষদের সাহায্য করে।
প্রিয়জনের কাঁধে মাথা রেখেও যে একটা আলাদা স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়।যা আজকাল ছেলে মেয়ে জানে না।এখনকার বেশির ভাগ প্রেমেই মিশে আছে অশ্লীলতা।নষ্টামি।নব্বই দশকের প্রেম গুলো ছিলো হৃদয় ছোয়া।শুধু নব্বই দশক কেন?প্রাচীন যুগের সব প্রেমই ছিলো হৃদয় ছোঁয়া।ইতিহাসে শাহজাহান – মমতাজের প্রেমের কথা বার বার উল্লেখ করা হলেও আমি কখনোই বলবো না যে শাহজাহান মমতাজকে মন থেকে ভালোবেসেছে।যদি ভালোবাসতই তো মমতাজ বেঁচে থাকতেই ভালোবাসা দিতেন। যাকে ভালোবাসবে সে বেঁচে থাকতেই ভালোবাসা দিও।তাজমহল পুরো পৃথিবী দেখলেও মমতাজ দেখেন নি।সে জানেন না শাহজাহানের ভালোবাসা সম্পর্কে।
কখনো কারও জন্য কেঁদে বালিশ ভেজানোর দরকার নেই।ওপরওয়ালা রিজিক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন।শুধু সময়ের অপেক্ষা।একটা কথা সব সময় মাথায় রাখা উচিৎ আল্লাহ কাওকে খালি হাতে ফেরান না।সময় হলে আল্লাহ তোমায় উজার করে দেবেন। ধৈর্য ধারণ করতে হবে।পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,,
‘শীগ্রই তোমার রব তোমাকে এতো বেশি দিবেন
যে তুমি খুশী হয়ে যাবে।’
[ সূরা: দুহা আয়াত নং ০৫]
আল কোরআনকে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান বলা হয়।হ্যাঁ ঠিকই বলা হয়।অন্ধকারে সুক্ষ্ম আশার আলো দিয়ে আল কুরআন মানুষকে পথ দেখায়।এই কিতাব পড়লে তো সওয়াবই।বুঝে পড়লে আরও লাভ।একদিকে যেমন কোরআনের কথার মানে বুঝা যায় ঠিক তেমন ভাবে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।আল্লাহ তায়ালা এতই মহান যে কোরআনের দিকে তাকালেও তিনি আমাদেরকে সওয়াব দেন।একটা গল্প আছে।
এক ব্যক্তি মারা যায়।তাকে কবর দিতে গিয়ে একজনের পকেট থেকে একটা দরকারি কাগজ কবরে পড়ে যায়।পরে সেই কাগজ বের করতে কবর খুড়ে দেখা যায় কবরের ভেতর ফুলে ভরা।যে ব্যক্তির কাগজ কবরে পড়ে গিয়েছিলো সেই ব্যক্তি ঐ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করেন যে সেই মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা কালে কি করতেন।জবাবে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বলেন তার স্বামী রাতের আঁধারে একটা বই দেখতেন আর কাঁদতেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেই ব্যক্তি পবিত্র কোরআন দেখতেন আর কাঁদতেন।ইশ!এই কিতাব পড়তে পারলে আমি আল্লাহর বলা কত আদেশ উপদেশই জানতে পারতাম!
হয়তো তার এই কাজের চোখের পানির জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে জান্নাতের টুকরা করে দিয়েছেন।সুবহানআল্লাহ।
এইবার আসা যাক জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে। মহান আল্লাহ তায়ালা যীনা করতে না করেছেন।পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে তুমি যেমন ঠিক তেমনই জীবনসঙ্গী পাবে।ঠিক যেমনটা সাম্য-সিঁথি, হৃদি বিভোরের সাথে হয়েছে।
সাম্যের ক্ষেত্রে অনেকটা এই রকম হয়েছে নিজের নাই চরিত্র। বউ খুঁজে পবিত্র।কিন্তু সে ভুলে গিয়েছে কোরআনের কথা। তাই সে যেমন তার জীবন সঙ্গীও পেয়েছে তেমন।
-তোর সাম্যদা আর সিঁথি দির বাচ্চা দেখে কষ্ট লাগলো না?
হৃদি আবার দিয়ার সাথে সব শেয়ার করে।এইবারও তার ব্যাতিক্রম হয় না।সবটা শুনে দিয়া কথাটা বলে।তার জবাবে হৃদি বলে,,
-কী লাভ কষ্ট করে!যা হয়েছে সব মেনে নিয়েছি।নিয়তিতে হয়তো ওপরওয়ালা আমার জন্য আরও ভালো কিছু রেখেছে যা আমি ভেবে রেখেছি। আর জ্বলে পুড়ে মরার চেয়ে সব কিছুকে ভাগ্যের লেখন হিসেবে মেনে নেওয়াই ভালো।
-শুনলাম সিঁথিও নাকি বিভোর ভাইয়ার এক্স?তো বিভোর ভাইয়া?
-উনিও মেনে নিয়েছেন।
-তুই এখনো উনারে আপনি বলিস?
-হু তুমি থেকে আপনি ডাকটা সুন্দর।কেমন যেন একটা রাজকীয় ভাব থাকে!
দিয়া আর কিছু বলে না।হৃদি মন্দ বলে নি।আজ কালকার বেশিরভাগ লাভ মেরেজেই স্বামী স্ত্রী একে অপরকে তুই বলে সম্বন্ধ করে।সেখানে হৃদির বিভোরকে আপনি করে ডাকা নেহাৎই খারাপ শোনাচ্ছে না।সম্পর্কের মুল জিনিসটা হচ্ছে একেঅপরকে বিশ্বাস করা আর সম্মান দেওয়া।যেটা বিভোর আর হৃদির মধ্যে অনেকটাই আছে।খুব মিষ্টি একটা সম্পর্ক!হয়তো হৃদির বিশ্বাসই ঠিক!ওপরওয়ালা হৃদির কপালে নিশ্চয়ই ভালো কিছু লিখে রেখেছেন।কেমন যেন দিয়ার মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই হৃদি সুখের মুখ দেখবে।
দিয়া ফেসবুকিংয়ে ব্যস্ত আর হৃদি আনমনে বসে কি যেন ভাবছে।বিভোরের হর্ণের আওয়াজে হৃদির ভাবনাচ্ছেদ ঘটে।কোনো এক কাজের জন্য আজ বিভোরের দেরি হয়ে গেছে।
হৃদি বিভোরের কাছে যেতেই মিন্টের গন্ধ পায়।নিশ্চয়ই বেটা আবার সিগারেট খেয়েছে!পাব্লিক প্লেসে সিনক্রিয়েট না করাটাই বেটার।হৃদি আর কিছু না বলে চুপচাপ বাইকে উঠে।রাস্তায় সে বলে,,
-কি খান?
-চুইংগাম।খাবা?বা পাশের পকেটে আছে।বের করে নেও।
-আরেহ নেও ই না!এত লজ্জা পেতে হবে না।তোমার অধিকার আছে।
হৃদি কাঁপা হাতে বা পাশের পকেট থেকে চুইংগাম বের করে নেয়।মুখে দিয়ে খেতে খেতে বলে,,
-আপনি আবার সিগারেট খাইছেন তাই না?
এই রে এই মেয়ে বুঝলো কিভাবে বিভোর সিগারেট খেয়েছে!বিভোর কথাটাকে অন্যদিকে নেওয়ার জন্য বলে,,
-চুইংগাম নেওয়ার সময় কিছু ফিল করলা?
-কি ফিল করবো?
-হার্ট বিট ফিল করো নাই?
-অহ। ওটা স্বাভাবিক।
-জানো বিটগুলা কি বলে?
-কি?
-হৃদি,হৃদি,হৃদি।
-ফাইজলামি কমায় করেন
-আমার সব কিছুই তোমার কাছে ফাইজলামি লাগে।বুঝলানা আমায়।বুঝলানা আমার ভালোবাসা।
-ভালোবাসা প্রকাশ করলে কেমন যেন কম কম লাগে।তাই প্রকাশ করতে চাই না।আপনি ফিল করলে করেন নইলে নাই।
একটা মলের সামনে বিভোর বাইক থামায়।হঠাৎ মলে কেন হৃদি বুঝে উঠতে পারে না।হয়তো বিভোরের কোনো কেনাকাটা আছে।
ছেলেদের ড্রেসের শো রুমে গিয়ে বিভোর কালো কাওয়ালী সেট কিনে।তারপর যায় জুয়েলারির দোকানে।বেশ ভারী গয়নার সেট কেনে।হৃদি কিছু বুঝে উঠতে পারে না।সে থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে আর বিভোর নিজের কাজ করে যায়।শাড়ির দোকানে গিয়ে কালো রঙের একটা কাতান কেনে।হৃদিকে শাড়িটা দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বলে,,,
-পার্ফেক্ট।
হৃদি পুরোই বোকা বনে যায়।এই লোক সব কিছু কালো জিনিস কিনছে কেন?ভাইরে ভাই এই লোক তো বেলুনও কালো কিনলো!কেমনে কী?কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না হৃদির।
শপিং করা জিনিস গুলো বাসায় ঢুকে সোজা মিসেস ছায়ার হাতে দেয় বিভোর।মিসেস ছায়া দুজনকে খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে বলেন।হৃদি আবার মিসেস ছায়ার কথা অমান্য করে না।লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়ে।খাওয়ার আগে ফোন চালাচ্ছিলো হৃদি।খাওয়ার সময় পাশেই রাখে ফোন।শুতে যাওয়ার সময় আর ফোন নিতে মনে থাকেনি হৃদির। টেবিলেই রেখে যায়।বিভোর সেখান থেকে দিয়ার নাম্বার নেয়।দুষ্টুমির ছলে মাঝ রাতে ফোন দেয়।আননোওন নাম্বার থাকায় দিয়া কলটা রিসিভ করে না দিয়া।কিন্তু একটানা কল দেওয়ায় সে বিরক্ত হয়ে যায়।কলটা রিসিভ করে ঝাঁঝালো গলায় বলে,,
-এই মিয়া আপনার প্রবলেম কী?মাঝরাতে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করতেছেন!
-আমি পুলিশ অফিসার বলছি।আপনার নামে ছেলেদের টিজ করার অভিযোগ আছে।
-তো দিনে ফোন করতেন। রাত্রে একটা মেয়েকে ফোন দিয়ে এমন কথা বার্তা বলা কোন আইনে আছে?
-কালকে সকালে অফিসার বিভোরের বাসায় যাবেন
-কে..কে..কেন?
-আপনাকে দিয়ে কাজ করানো হবে!কতদিন শুধু ছেলেদের টিজ করলে তো হবে না!একটু কাজের কাজ করেন
-আপনি বিভোর ভাইয়া তাই না?
-এই যাহ!ধরে ফেলছো?
-কালকে আপনার বাসায় কেন?
-সারপ্রাইজ আছে।আর অনেক দায়িত্বও পালন করতে হবে কালকে!বাই দ্যা ওয়ে বউ সাজাইতে পারো?
-অহ বুঝছি।হ্যা টুকটাক সাজাইতে পারি।
-চুপ।হৃদি যেন জানে না।
-আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
-হৃদির ফোন থেকে নিছি
-ভয় পাওয়ায় দিছেন।মাঝরাতে এমন করে কেউ?
-এক্টু দুষ্টুমি করলাম!
★
-এই হৃদি ওঠ।
দিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙে হৃদির। চোখ কচলাতে কচলাতে দিয়ার দিকে তাকায়।মনে হয়েছিলো মনের ভুল।কিন্তু না!এ যে সত্যি দিয়া!
-তুই?
-চইলা আসলাম
-কেন?আজ তো ক্লাস নাই।
-তাই ই তো আসলাম।এখন আর কথা বলে সময় নষ্ট করিস না।যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হ।
হৃদি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায়।বের হয়ে দেখে সালাম সাহেব,বিলকিস বেগম,সাম্য, সিঁথি আর কোলে সাবা।ড্রয়িংরুমে বসে আছে।পুরো বাড়িটায় কেমন যেন সাজ সাজ রব।মিসেস ছায়া হৃদির হাতে হলুদ রঙের একটা শাড়ি দিয়ে বলেব,,
-যাও শাড়িটা পরে এসো।
-কিন্তু কে…
-যা বলছি তাই করো।
-এমনে টান দেয় কেউ?আর একটু হলেই আত্মা খাঁচা ছাড়া হতো।
-শাড়ি পরায় দে।ছায়া আন্টি হাতে দিয়ে বলে পরে এসো।কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পাই না।
-এজন্যই মহারানী ক্যাম্পাসের ফাংশনে সেলোয়ার-কামিজ পরে আসতো?
-জ্বী।এখন পরায় দেন মেডাম।
দিয়ার আবার একটা গুণ আছে।সে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে শাড়ি পরাতে পারে।হৃদিকে শাড়ি পরানো হলে দিয়া হৃদিকে হালকা সাজিয়ে দেয়।গাঢ় লিপস্টিক আর মোটা করে কাজল পরিয়ে দেয়।সব মিলে হৃদিকে পুরো বাঙালি বধুর মতো লাগছে।ড্রয়িংরুমে গিয়ে হৃদি কোণায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে।মিসেস বিলকিস আর ছায়া ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার সাজান।কোনো অনুষ্ঠান আছে হয়তো।এরই মধ্যে বিভোর হলুদ পাঞ্জাবি পরে হাতা ফোল্ডার করতে করতে বের হয়।হৃদি তো দেখে পুরোই অবাক।এই মুহুর্তে অসম্ভব সুন্দর লাগছে বিভোরকে। ঠিক যেন হুমায়ুন আহমেদের অমর সৃষ্টি হিমুর মতো!আসলে হলুদ পাঞ্জাবিতে সব ছেলেকেই হিমুর মতো লাগে।এটা নতুন কিছু নয়।
হৃদি গিয়ে পাটিতে বসে।কিছুক্ষণ বিভোরও এসে পাটিতে বসে।সালাম সাহেবকে দিয়ে শুরু হয় হলুদের পর্ব।যেহেতু তিনি উপস্থিতিদের মধ্যে বয়সে বড়।মিষ্টি মুখ করানোর পর হৃদি মামাকে জিজ্ঞেস করে,,,
-মামা হলুদ!বুঝলাম না!
-ঘটনা হইতেছে আমি আর মিসেস ছায়া তোর সাথে বিভোরের বিয়ে ঠিক করি।কিন্তু পরে জানতে পারি তোরাও একেঅপরকে পছন্দ করিস।তাই আর কী হুট করে!ছোটখাটো ভাবে ফরজ কাজটা সেরে ফেলবো
হৃদি কি বলবে ভেবে পায় না।লজ্জায় মাথা নীচু করে।মামাকে সালাম করে আশীর্বাদ নেয় হৃদি বিভোর।একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়ায় হৃদি বিভোরকে। তবে সাম্য যখন হৃদিকে হলুদ ছোঁয়ায় তখন সাম্য যেন কেমন করে হৃদির দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখে মুখে কেমন যেন অপরাধীর ছাপ দেখা যাচ্ছে।কোনো রকমে হলুদ ছুঁয়ে সাম্য চলে যায়।গোসল করে হৃদি যখন ছাদে যায় রোদে কাপড় দিতে তখন সাম্যও হৃদির পেছন পেছন আসে।সাম্যের মনে হচ্ছে হৃদিকে সবটা বলে দেওয়া উচিৎ।
-হৃদি!
-হুম বলো সাম্যদা।
-তোকে একটা কথা বলতাম।
-হুম বলো।
-আসলে আমি তোকে ঠকাইছি।তুই ছাড়াও আমার সিঁথির সাথে….
-জানি।তাও ভালো দুজনের কাছে তুমি কাপুরুষ হও নাই।
-কাপুরুষ?
-এক্টা মেয়ের বিশ্বাসের সব টুকু অর্জন করে যখন কোনো ছেলে সে বিশ্বাসের ভার বহন করতে না পেরে তা হারিয়ে ফেলে তখন সে ছেলেটি মেয়েটির কাছে কাপুরুষ হয়ে যায়।
কথাটা বলেই হৃদি চলে আসে।সাম্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে হৃদির যাওয়ার পানের দিকে চেয়ে থাকে।
★
-আলহামদুলিল্লাহ কবুল
কবুল বলে একেঅপরের হাতে নিজেকে তুলে দেয় বিভোর হৃদি।কথা ছিলো লাভ মেরেজের কিন্তু হয়ে গেলো এরেঞ্জ।বর কনে ও তাদের পরিবার সবাই খুশী। এটাই সার্থকতা।যুগ পাল্টেছে।মেনে নেওয়া হয় প্রেমের মতো পবিত্র সম্পর্ককে।যদিও এখনকার প্রেম কে পবিত্র বললে ভুল হবে!অধিকাংশ গুলোই নষ্টামিতে ভরা।তাছাড়াও আজকাল কার প্রেমের সম্পর্কটা খুবই ঠুনকো।অথচ আগেকার দিনে প্রেমের সম্পর্ক গুলো ছিলো অনেক মজবুত।কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকারা অধিকাংশ সময় এক হতে পারেনি। যেসব মানুষরা ভালোবাসার মানুষের সাথে পরিবারের সম্মতিতে এক হতে পেরেছে আমি বলবো তাদের পৃথিবীর সবচে ভাগ্যবান ব্যক্তি।কারণ তারা যা সম্ভব করেছে মানুষ তা পায় না।
হৃদি কখনো পায় নি সে বিভোরকে এভাবে পাবে।আসলে আল্লাহ তায়ালা কখনো মানুষকে নিরাশ করেন না।আল্লাহ সব সময় সঠিক সময়ে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দেন।সে কখনো তাড়াতাড়িও কিছু করেন না আবার দেরিতেও কিছু করেন না।সে সবসময় সঠিক সময়ে আসেন।আমরা মানুষরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের ভুলকে আল্লাহ তায়ালার ওপর চাপিয়ে দেই। “ইশ এই কাজটা করতে পারলাম না!সবই কপাল।”
কেন?আমরা কী একটু ধৈর্য ধরতে পারি না?আল্লাহ তায়ালার সারপ্রাইজের জন্য হৃদির মতো একটু ওয়েট করতে পারি না?আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা চাওয়ার থেকে অনেকটাই বেশি দেবেন।ঠিক যেমনটা হয়েছে হৃদির ক্ষেত্রে!নিয়তি আজ হৃদিকে এক সমুদ্র দুঃখ পাড়ি দিয়ে সুখের চুড়ায় এনে পৌঁছিয়েছে।
বিভোরের কথা শুনে হৃদি থেমে যায়।আবার হনহনিয়ে সে বিভোরের কাছে আসে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,
-সিগারেট ফেলেন
-মানে?এই মাত্র ধরাইলাম।আর দুই একটা টান দেই।
-ফেলেন বলতেছি
-আর একটু।
হৃদি আর কিছু বলে না।বিভোরের হাত থেকে সিগারেটটা এক ঝটকায় ফেলে দেয়।ছাদের রেলিংয়ের সাথে ধাক্কা লেগে সিগারেটটা নিচে পড়তেই হৃদি তা পা দিয়ে পিশিয়ে দেয়।হৃদির হঠাৎ এই রকম আচরণে বিভোর আকাশ থেকে পড়ে।যে মেয়ে দামি ব্র্যান্ডের এক প্যাকেট সিগারেট গিফট করলো বিভোরকে!সেই এখন সিগারেটটা পা দিয়ে পিশে নষ্ট করে দিলো?তা দেখে বিভোর,,
-সিগারেটটা নষ্ট করলা যে!জানো না অপচয় কারী শয়তানের ভাই!
-টাকা অপচয় করা কোন হাদিসে আছে শুনি!
-বুঝলাম না
-আপনি যে টাকা দিয়ে সিগারেট কিনেন ঐ টাকা দিয়ে ভালো কিছু কিনলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়?
আজব এই মেয়ে হঠাৎ এত গরম হলো কেন?ঝাড়ির ওপর ঝাড়ি দিচ্ছে বিভোরকে।
কথাটা বলে হৃদি হনহনিয়ে ছাদের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়।বিভোরের ঐ আধ সিগারেটে মন ভরেনি তাই আরেকটা ধরায় সে।লম্বা টান দিয়ে হৃদির কাছে যায়।হৃদি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে না পেরে কাশতে লাগে। তা দেখে বিভোর সিগারেট নিয়ে দূরে চলে যায়।যাতে হৃদির কোনো অসুবিধা না হয়।দূর থেকে হৃদি বিভোরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মনে হচ্ছে এখনই বিভোরকে জ্যান্ত পুঁতে দেবে।বিভোরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে হৃদি বলে,,
-খান না খান!জন্মের খাওয়া খেয়ে নেন।আল্লাহ যদি চান ইনশাআল্লাহ পরে আপনার খবর আছে।সিগারেটের ‘স’ চিনবেন না।মরিচ লাগায় রাখবো ফিল্টার মুখে দিলেই লেগেছে লেগেছে আগুন!ধুম তা না না না!
মুখ ভেংচি কেটে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় হৃদি।মেয়ের এখন চরম ভাবে মেজাজ গরম আর কিছু বললেই মেয়ে সেই ক্ষেপা দেবে। অশান্তি যুদ্ধ থেকেও ভয়াবহ। মেয়েকে আর পেছন থেকে ডাক দিয়ে কাজ নেই।
★
ক্যাম্পাস থেকে সোজা হসপিটালে আসে হৃদি বিভোর।এসেই দেখে করিডোরে পাইচারি করছে সাম্য আর হৃদির মামা।চেয়ারে বসে আছেন সিঁথির মা আর সাম্যের মা।অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে সিঁথিকে।সালাম সাহেবের ফোন পেয়ে দৌড়ে আসে হৃদি।আগে থেকেই মামাকে বলে দিয়েছিলো হৃদি,যেনো সিঁথির সিজারের দিন তাকে খবর দেওয়া হয়।ভাগ্নির আবদার ফেলতে পারেন নি সালাম সাহেব।
কিছুক্ষণের মধ্যেই থিয়েটারের দরজার ওপাশ থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ আসে।হ্যাঁ নতুন সদস্য এসে গেছে।নার্স টাওয়েলে পেচিয়ে সিঁথি আর সাম্যের বাচ্চাকে আনে।সাম্য কোলে নিতে গেলে নার্স বলে,,
সাম্য আর কিছু বলে না।পা বাড়ায় মিষ্টির দোকানের দিকে।নার্স বাচ্চাটাকে হৃদির কোলে দেয়।বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে হৃদির খুশী দেখে কে?হালকা গোলাপী গায়ের রঙ। চোখ বন্ধ করে অনবরত চিৎকার করে যাচ্ছে নতুন সদস্য।তার মানে বাচ্চা সুস্থ।হৃদি চেয়ারে বসে আঙুল বাড়িয়ে দেয় নবজাতকের দিকে।নবজাতক হৃদির আঙুলটা শক্ত করে ধরে।হৃদি সালাম সাহেবের কোলে দেয় বাচ্চাটাকে।নাতনি পেয়ে সালাম সাহেব যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছেন।এরই মধ্যে সাম্য মিষ্টি নিয়ে হাজির।হসপিটালের সবাইকে দেওয়ার পর সাম্য মিষ্টির প্যাকেটা চেয়ারে রাখে।মিষ্টি দেখলে আবার সালাম সাহেব নিজেকে সামলাতে পারেন না।কোনো রকমে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে মিষ্টি হাতে নেন।মুখে দেওয়ার আগেই হৃদি তা দেখে ফেলে,,,
-মামু!
-এক্টু?
-নোহ।ডায়বেটিস আছে তোমার।মুখে না রক্তে বেশি মিষ্টি।তাই ছাড় দেওয়া গেলো না।
পরিবারে এই আনন্দের মধ্যে বিভোর যেন সম্পুর্ন একা হয়ে গিয়েছে।এক কথায় যাকে বলে কাবাব মে হাড্ডি।করিডোরের এক কণায় সে ফোন নিয়ে ব্যস্ত।হৃদি মিষ্টি নিয়ে গিয়ে বিভোরকে খাইয়ে দেয়।আর বলে,,
-ভালো কিছু তো গলা দিয়ে নামবে না।তাই জোর করে খাইয়ে দিলাম।
কথাটা বলেই হৃদি হেসে দেয়।সাথে বিভোরও।দূর থেকে দুজনের হাসি দেখে সাম্য।কেমন যেন অন্য রকম একটা ফিলিংস হচ্ছে সাম্যের।নার্সের ডাকে ধ্যান ভাঙে সাম্যের।সিঁথি ডাকছে।কেবিনে সিঁথির কাছে যায় সাম্য।
এরই মধ্যে সাম্যের মেয়ের নামও ঠিক করে ফেলেছে হৃদি। ‘সাবা’
ভালো নাম যাই হোক।ডাক নাম যেন সাবা হয়।বাড়ি ফেরার পুর্বে সিঁথির সাথে দেখা করে যায় হৃদি বিভোর।এক জোড়া কানের দুল সিঁথির হাতে দিয়ে বলে,,,
বাহির থেকে এসেই বিভোর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি দেখতে থাকে।এরই মাঝে হৃদি কফি নিয়ে হাজির হয়।উঁকি দিয়ে আবছা আবছা একটা মেয়ের ছবি দেখতে পায়।হৃদি গলা ঝাড়তেই বিভোর লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।
-কাকে দেখছিলেন?
-ক..ক..কই!কাওকে দেখছি না।
-নাহ মনে হলো কোনো মেয়েকে দেখছেন তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কী!বাই দ্যা ওয়ে,, এই নিন আপনার কফি।
কথাটা বলে হৃদি বিভোরের হাতে কফির কাপটা দেয়।বিভোর কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে,,
-আপনার ভাবির সিজারের ডেট কবে?
-সামনে সপ্তাহের মঙ্গল বারে, কেন?
-নাহ এমনি।
-সিঁথি দি তো বিয়ে করে বাচ্চার মা হতে চলেছে।আপনি জোড়া বাধবেন কবে?
-শীঘ্রই। আপনার সাম্যদাও তো বাবা হবে দু দিন পরে।আপনি মিসেস হচ্ছে কবে তাহলে মিস?
-মনের মতো মানুষ পেলে করে ফেলবো ফরজ কাজটা।
-আপনার আর অন্যকাওকে পরে ভাল্লাগে নাই?
-লাগবে না কেন?লাগছে।
-অহ আচ্ছা তাহলে ফোনে তার ছবিই দেখছিলেন?বাই দ্যা ওয়ে সে জানে?
-নাহ।
-হেল্প লাগলে বলিয়েন।
-ভাবতেছি তাকে মনে কথাটা বলে দেবো,কিন্তু কিভাবে বলবো?
-কিভাবে বলবো মানে?আপনি বাচ্চা ছেলে নাকি?শিখিয়ে দিতে হবে?
-শিখিয়ে দিলে খারাপ কী?
হৃদি হাসতে হাসতে বলে,
-কে শেখাবে আপনাকে?
-আপনার মতো বন্ধু থাকতে আর অন্য কাওকে লাগে?
-আচ্ছা আমি লিখে আপনাকে দেবো নি
কথাটা বলেই হৃদি চলে যায়।রাত্রে খাওয়ার পরে হৃদি বিভোরের ঘরে আসে।হাতে একটা কাগজের পাতা।বিভোর তখন ফোনে ব্যস্ত।হৃদি বিভোরের হাতে কাগজটা দিয়ে বলে,,
-এটা পড়ে দেখুন।
বিভোর মন দিয়ে কাগজটায় চোখ বুলায়।কাগজের লেখা দেখে বিভোরের চক্ষু চড়কগাছ। কাগজটায় লেখা ছিলো,,
প্রিয় (তার নাম),,
জানিনা তোমার মধ্যে আমি কী দেখলাম।প্রথম দেখায়ই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।মায়ারী চোখ,দীঘল কালোচুল,মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতের হাসি আমায় পাগল করে দিয়েছে।ঘুম কেড়ে নিয়েছে আমার।আমি এখন প্রতিরাতে বেল্কনিতে বসে থাকি।রাতের আকাশে চাঁদের জায়গায় তোমায় দেখতে পাই।
i can feel that..তুমি আমার সব.. দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ…
At last I want to say i love you…will you be my mather’s daughter in law??
কাগজটা পড়ে বিভোর কী করবে বুঝতে পারছে না।হৃদির কাছে সে এক গ্লাস পানি চায়।পানি এনে দিলে বিভোর সেই পানি ঢগঢগ করে খেয়ে ফেলে।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,
-এইগ্ল্যা কী লেখছেন?এভাবে কাওকে প্রপোজ করলে সে জুতা ছুড়ে মারবে।
-মেয়েরা ডিফ্রেন্ট কিছু পছন্দ করে তো!তাই আর কী…
-থামেন ভাই!বুঝছি আমি
হৃদির কথা শেষ হওয়ার আগে বিভোর কথাটা বলে হৃদিকে থামিয়ে দেয়।হৃদি কী করবে বুঝতে পায় না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যেতে নিতে নেয়।ঠিক তখনই বিভোর পেছন থেকে ডাক দেয়,,,
-জ্বী বলুন
-আপনার কী ফুল পছন্দ?
-কেন?
-বলেনই না মিয়া!
-সাদা গোলাপ।
-আচ্ছা এখন যান
হৃদি আর কিছু বলে না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যায়।
★
বিভোরের ডাক শুনে হৃদি ছাদে এসেছে অথচ বিভোরেরই দেখা নেই!এই লোকটা নাকি আবার পুলিশ।১০মিনিট যাপৎ দাঁড়িয়ে আছে হৃদি অথচ তার খবর নেই।চিলেকোঠার বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো হৃদি। এমন সময়ই বিভোর আসে।নিঃশব্দে হৃদির পেছন গিয়ে দাঁড়ায়।
-প্রিয় অমক আই মিন হৃদি,,
জানি না তোমার মানে আপনার মধ্যে কী দেখলাম।প্রথম দেখায়ই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।মায়াবী চোখ, দীঘল কালোচুল,যদিও আপনার চুল কিছুটা বাদামি!গজ দাঁতের হাসিতে আমি প্রথমে পাগল না হলেও ধীরে ধীরে পাগল হতে চলেছি। আমি প্রতি নয় হঠাৎ রাতে বেল্কনিতে বসে থাকি।
I can feel that আপনি আমার সব, দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ।
At last i Want to say i love you…will you be my mother’s daughter in law?
কথাগুলো বিভোরের মুখ থেকে শুনে হৃদি চমকে যায়।কিছু বুঝে উঠতে পারে না।হা করে তাকিয়ে থাকে সে।বিভোর তার সামনে তুরি বাজালে হৃদির ধ্যান ভাঙে।
-কী হলো?
-আপনি মেইবি রঙ এড্রেসে আসছেন।
-নাহ ঠিকানা ঠিকই আছে।আর এই নিন আপনার সাদা গোলাপ।আমি সিনামার স্টাইলে প্রপোজ করতে পাই না।যা শিখায় দিছেন তাই করছি।
কথাটা বলে বিভোর চলে যায়।হৃদি হা করে তাকিয়ে থাকে বিভোরের যাওয়ার পানে। সে একবার ফুলের দিকে তাকায় একবার বিভোরের দিকে তাকায়।নিজের চোখে বিশ্বাস হচ্ছে না।একটু আগে যা ঘটে গেলো সেগুলো কী আদোও সত্য?
চলবে,,,
#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১৬
-উনি সিগারেট খায় জানতাম।কিন্তু গাঁজা খান জানতাম না।তা না হলে…দেখলো একজনকে প্রপোজ করলো আমায়?হয়তো রিহার্সাল ছিলো।নাহ!রিহার্সাল থাকলে তো পরে জিজ্ঞেস করতেন কেমন হয়েছে।আর ফুলই বা দিতেন কেন?
রাত তিনটা অথচ হৃদির চোখে ঘুম নেই।বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে আর নিজে নিজে কথাগুলো বিড়বিড় করছে সে।খাটের পাশে জানালাটা খুলে দেয় হৃদি।শীতল হাওয়ায় ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়।কেন জানি আজ খুব হাওয়া বইছে!চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগে। কাটা দিয়ে হালকা করে খোঁপা বেঁধে অবাধ্য চুল গুলো নিয়ন্ত্রণে আনে হৃদি।চোখ বন্ধ করে শীতল হাওয়া উপভোগ করতে লাগে হৃদি।কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ঘটনার দৃশ্যটা হৃদির চোখের সামনে ভেসে উঠে।খাটের এক কর্ণারে বিভোরের দেওয়া ফুল গুলো অনাদরে পড়ে ছিলো।হৃদি সেগুলো তুলে নেয়।আলতো করে ফুল গুলোকে গালে ছোঁয়ায়।এক অদ্ভুত অজানা অনুভূতি ঘিরে ধরেছে হৃদিকে।
হৃদিকে ক্যাম্পাসে এখন বিভোরই আনা নেওয়া করে।সকালের ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে হৃদি বিভোরকে বলে,,
-কাল্কে কী আপনার মাথা ঠিক ছিলো?
-কেন?
-সন্ধ্যায় কী করছিলেন ঐগ্লা?
-মন বললো করছি।
-সিরিয়াসলি?
-হু
-তো উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে এলেন!
-লজ্জা লাগলো তখন!আর আমি জানি আপনি সরাসরি উত্তর দিতেন না।
অ্যাহ! এই লোকটা হৃদির ভেতরের খবর জানলো কিভাবে?হৃদি গলা ঝেড়ে কাশে আর বলে,,
-কিভাবে দিতাম তাহলে?
-রিটার্ন গিফট বা অন্য ভাবে হয়তো!
হৃদি আর কিছু বলে না।হৃদিকে নামিয়ে গিয়ে থানায় যায় বিভোর।
★
ক্লাস শেষে আনমনে বসে আছে হৃদি।দেখে মনে হচ্ছে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে।দিয়া এসে হৃদির কাঁধে হাত রাখতেই সে চমকে উঠে।তা দেখে দিয়া,,
-কী হলো?এভাবে লাফিয়ে উঠলি কেন?আর কী ভাবিছিলি?
-কিছু না
-আরেহ বল না কি হইছে!
হৃদি এ টু যেড সব খুলে বলে দিয়াকে।সব শুনে দিয়া বলে,,
-যেহেতু তুইও উনারে পছন্দ করিস কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছিস না।তো আমি মনে করি উনাকে রিটার্ন গিফট দেওয়াই বেটার।
-কী দিতাম?
-উনি সিগারেট খান না?
-হু
-তুই সিগারেট গিফট কর।
অ্যাহ! সিগারেট?লাইক সিরিয়াসলি? দুনিয়ায় এত জিনিস থাকতে শেষে সিগারেট?কেউ এমন উদ্ভট গিফট নেয় না দেয়!শেষে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করতে হবে!
-রাখ।আমায় ফকির বানাইলি।বাকী টাকা পরিশ্রমিক
-তাই বলে বিশ টাকা।
-রাখ ছাগল।আর ভাগ
সিগারেটের দাম সহ বারতি কিছু টাকা দিয়ে জয়কে বিদায় করে হৃদি।এরই মধ্যে বিভোরও হাজির।হৃদি ভিষণ ঘাবড়ে যাচ্ছে।যদি উলটা পাল্টা কিছু হয়!তো দিয়া শেষ।কাঁপতে কাঁপতে ক্লাস রুম থেকে বের হয় হৃদি।হৃদিকে এমন অবস্থায় দেখে বিভোরের মনে প্রশ্ন জাগে।আড়চোখে হৃদির দিকে তাকিয়ে সে হৃদিকে বলে,,
-এনি প্রবলেম?
-উহু কিছু না।
-তো এমন করছেন কেন?
-এমনি
কথাটা বলে হৃদি ব্যাগ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে কাঁপা হাতে বিভোরের হাতে দেয়,,,
-আ..আ..আ..আপনার রিটার্ন গিফট
কথাটা বলেই দাঁতে দাঁত কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে হৃদি।সিগারেট দেখে বিভোরের মুখে হাসি ফুটে।এক রাশ হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলে,,
-থ্যাংক ইউ।আর আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।
বিভোরের কথা শুনে হৃদি বিভোরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।উনি রাগ করেন নি!যাক বাবা তিনশ টাকা গচ্চা গেলো না।হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন ছেলেরা নাকি সিগারেট গিফট পেলে খুশী হয়।ভুল কিছু বলেন নি।বিভোরের হাসিই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
আজ সিঁথির সাধ।সাধারণত গর্ভধারণের পাঁচ বা সাত মাসে বাঙালি সমাজে সাধ নামে একটা উৎসব পালিত হয়।এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু থাকে গর্ভধারিণী মা।তার পছন্দ মতো খাবারের পদ রান্না করা হয়।আমন্ত্রিত অতিথিরা গর্ভবতী মায়ের জন্য বিভিন্ন রকমের উপহার সামগ্রী আনে।হৃদি সকাল সকালই এসে পড়েছে সব আয়োজন করতে।সিঁথি সাম্যের বিয়ের কাজ সব হৃদি করেছে তো এটা কেন বাদ যাব?
হৃদি আর সাম্যের যে সামনাসামনি দেখা হয় নি তা কিন্তু নয়!কিন্তু হৃদি সাম্যকে এড়িয়ে চলে গেছে।মামা মামি ছাড়া কারও সাথে খুব একটা কথাও বলে নি।থানায় যাওয়ার আগ দিয়ে বিভোর হৃদিকে রেখে যায়।মিসেস ছায়া দুপুরের দিকে আসবেন।হৃদিকে সালাম সাহেবের বাসায় নিয়ে আসার সময় পথে হৃদিকে বিভোর বলে,,
-আচ্ছা আপনি সিঁথির বরের সামনা সামনি পড়বেন।তো তখন কষ্ট হবে না?
-আপনাদের সাথে কতদিন ধরে থাকছি বলতে পারবেন?
-ছয় মাস তো হলোই।
-এই ছয়মাসে সাম্যদার প্রতি যত মায়া ছিলো সব কাটায় উঠছি।একটা কথা কী জানেন?মানুষ বলে না যে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না!এটা সম্পুর্ন মিথ্যা।ছেড়ে চলে গেলে কেউ মরে যায় না।শুধু মায়া কাটাতে একটু সময় লেগে যায়। ঠিক যেমনটা আমার আপনার সাথে হয়েছে।
হৃদির কথা শুনে বিভোর হেসে দেয়।এই মুহুর্তে বিভোরের খুব হাসি পাচ্ছে কারণ একসময় বিভোর আর সিঁথিও বলেছিলো যে তারা একেঅপরকে ছাড়া বাঁঁচবে না।অথচ এখন দুজনেই দিব্বি ভালো দিন কাটাচ্ছে।
-জানেন আমি আর সিঁথিও না একসময় একেঅপরকে বলেছি যে আমরা একেঅপরকে ছাড়া বাঁচবো না।অথচ আমরা দুজনেই এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি।
বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে হৃদি বিভোরকে জিজ্ঞেস করে সে সিঁথির সাধে আসবে কি না।জবাবে সে বলে যে সে চেষ্টা করবে।অনেক দিন ধরে বিভোর সিঁথিকে দেখে না।আজ না হয় সাধের অনুষ্ঠানের বাহানায় প্রথম প্রেমকে চোখের দেখা দেখবে।
সালাম সাহেব ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিলেন।হৃদি এই ঘর থেকে ঐ ঘর দৌড়াচ্ছে।এই বাসায় আসলে কাজ যেন হৃদির পিছু ছাড়ে না।ঠিক মায়ের মতোই হয়েছে।
দুপুরের দিকে বিভোর আর মিসেস ছায়া আসেন।প্রথম দেখায়ই বিভোর সিঁথিকে চিনে ফেলেছে।গ্রামীন বধুর মতো শাড়ী পড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে।কৈশোরের চেহারা আর বর্তমান চেহারার সাথে বিভোরের চেহারার কোনো মিল নেই।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। শ্যাম গায়ের রঙ। বলিষ্ঠ চেহারা।সব মিলিয়ে আগেকার হেংলা পাতলা বিভোরের আর এখনকার অফিসার বিভোরের অনেক পার্থক্য।
বিভোর নিজে পছন্দ করে এক জোড়া ঝুমকো কিনে এনেছে সিঁথির জন্য।ঝুমকো সিঁথির খুব পছন্দ ছিলো স্কুল জীবনে।এখন হয়তো তার পছন্দেরও পরিবর্তন হতে পারে।যেহেতু মানুষ পরিবর্তনশীল।
-শুভকামনা এবং দোয়া রইলো আপনার নতুন জীবনের জন্য আর ভালোবাসা ও দোয়া রইলো নতুন সদস্যের জন্য।
কথাটা বলে বিভোর সিঁথির হাতে বক্সটা দেয়। সিঁথি বক্সটা ওর মায়ের হাতে দিয়ে বিভোরকে ধন্যবাদ জানায়।
সালাম সাহেব হৃদিকে জোর করেই বিভোর আর মিসেস ছায়ার সাথে খেতে বসিয়ে দেন।তাদের সাথেই হৃদি বেরিয়ে যাবে নি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হৃদিকে তিনি বিদেয় করবেন।এম্নেতেই মেয়েটা বেশ কয়েকবার সাম্যের মুখোমুখি হয়েছে।সালাম সাহেব চাননা হৃদির কষ্ট আরও বাড়ুক।তিনি কখনোই হৃদিকে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানাতেন না।কিন্তু তার স্ত্রী…!যাক গে ওসব কথা বাদ দেয়া যাক।সালাম সাহেব হৃদিকে ডাক দিয়ে খেতে বললে হৃদি বলে,,,
বিভোর বিনয়ীর সাথে হৃদিকে খেতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু হৃদি সেই এক কথা।সবার খাওয়া হলে সে খাবে।
-হ্যাঁচকা টান দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যাও তো বিভোর।আমি অসুস্থ। তা না হলে আমিই করতাম।
বিভোর কী করবে বুঝতে পারছে না।হাত বাড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নেয়।হঠাৎ করে বিভোরের কী হলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না।হ্যাঁচকা টানে হৃদিকে খাবারের জায়গায় নিয়ে যায়।বিশাল আয়োজন করেছেন বিলকিস বেগম সিঁথির সাধ উপলক্ষে। সাম্যের কাজিন আর সাম্য খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে আছে।খেতে খেতে একসময় হৃদির গলায় খাবার আটকে যায়। সে কাশতে লাগে।সাম্য দৌড়ে পানি নিয়ে আসে।কিন্তু তার আগেই দেখে বিভোর হৃদিকে পানি এগিয়ে দিয়েছে।সাম্যের পানি আনা আবার হৃদির চোখ এড়ায়নি।সাম্যের হয়তো ধারণা হৃদি কিছুই জানে না।তাই হয়তো আলগা দরদ দেখাতে এসেছিলো।
★
রাত তখন প্রায় ১টা। হৃদির ঘুম আসছে না।কি জন্যে হৃদিও জানেনা।বেলকনিতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে আনমনে চেয়ে আছে আকাশের পানে।মাঝে মাঝে চোখ বুঝছে তখন চোখের কার্ণিশ থেকে দু ফোটা জল গাল বেয়ে মেঝেতে পড়ছে।এমনিতে হৃদির ইমোশনাল গান ভাল্লাগে না।তবে ইদানীং তানভীর ইভাবের অভিমান গানটা খুব শুনছে।সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ ঝড় তুলেছে গানটা।অজান্তেই হৃদি গানের সাথে গলা মিলিয়ে বসে।
“কখনো যদি আনমনে চেয়ে আকাশের পানে,, আমাকে খুঁজো,,কখনো যদি হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরে বলো ভালোবাসো,,,,আমি প্রতিরাত হ্যাঁ প্রতিক্ষণ খুব অজানায় খুব অভিনয়,,,করে বসি তো তোমায় ভেবে,,,”
পাশের বেলকনি থেকে বিভোরও ওর গলার সাথে গলা মেলায়।সেও আনমনে আকাশের পানে চেয়েছিলো।বিভোরের গলা শুনে হৃদি গান থামায়।
-আচ্ছা আপনি তো বললেন না যে আপনি সিঁথিদিকে কিভাবে চিনলেন।
হৃদির ক্যাম্পাসে কোনো কাজের জন্য এসেছিলো বিভোর। মনে হলো হৃদির সাথে দেখা করে যাক।ক্লাস রুমের সামনে বারান্দার এক কোণায় হৃদির আর বিভোর দাঁড়িয়ে কথা বলে।কথার মাঝখানে হঠাৎ করেই হৃদি সিঁথির কথা জিজ্ঞেস করে বসে বিভোরকে।যেহেতু হৃদি আর বিভোরের মাঝে বন্ধুত্বের মতো একটা মিষ্টি সম্পর্ক হয়েছে তাই কোনো কিছু গোপন রাখা হয়তো ঠিক হবে না।কিন্তু কিভাবে হৃদিকে কথা গুলো বলবে তা বিভোর বুঝতে পারছে না।
-আচ্ছা আপনার কী আরও ক্লাস আছে?
-নাহ নাই তবে কিছু নোট তুলতে হতো।
-যা বলতাম মনে হয় এখানে বলা ঠিক হতো না।
-আপনি একটু ওয়েট করুন।আমি পিক তুলে আনছি।
কথাটা বলে হৃদি দৌড়ে ক্লাসের ভিতর যায়।ক্লাসমেটের খাতার কয়েকটা পিক তুলেই আবার বিভোরের কাছে চলে আসে।
-চলুন।
বিভোর আর কিছু বলে না।হাঁটা লাগায়। দোতলা থেকে হৃদি আর বিভোর যখন এক সাথে নীচে নামছিলো অন্যান্য স্টুডেন্টরা হা করে তাকিয়ে ছিলো।বিশেষ করে মেয়েরা,বিভোরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়েরা বরাবরই এখন লম্বা ছেলে পছন্দ করে।বিভোরও বেশ ভালোই লম্বা আছে।উচ্চতা মোটা মুটি পাঁচ ফিট নয়-দশের মতো হবে।তার মধ্যে পুলিশ ইউনিফর্ম পড়া। যে কোনো মেয়ের রাতের ঘুম কাড়ার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।মেয়েরা যে বিভোরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে তা হৃদির চোখ এড়ায় না।সে মুখ টিপে হাসতে লাগে।তা দেখে বিভোর,,,
-কী হলো মুখ টিপে হাসতেছেন কেন?
-কিছু না।
বিভোর শ্যাম বর্ণের।ছেলেদের শ্যাম বর্ণেই মানায় ভালো।সাম্যের গায়ের রঙ আবার ছিলো ধবধবে ফর্সা।দেখতেই ভালো দেখা গিয়েছে শুধু।বাহিরে ফিটফাট ভেতরে সদর ঘাট।বাহিরটা সাদা।কিন্তু ভেতটা কালো।ঠিক যেম৷ মাক্কাল ফল।হৃদি নানির কাছ থেকে শুনেছিলো এ ফলের বাহিরটা সুন্দর হলেও ভেতরটা নাকি খুবই বিশ্রী।তার নাতিও হয়েছে তেমন।ভেতটা বিশ্রী।এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে সাম্যের সাথে হৃদির জোড়া করে দেন নি ওপর ওয়ালা।ফর্সা ছেলে হৃদির কাছে বর হিসাবে পার্ফেক্ট না।ফর্সা ছেলে মানেই বদ।আলভীও তো বেশ ফর্সা ছিলো।পরে তো দেখিয়েই দিয়েছে নিজের রূপ।এখন জেলে আছে।বেশ হয়েছে।না জানি কতগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে মা ছেলে।
বিভোর বাইক চালাচ্ছে।আর হৃদি পেছনে বসে আছে।দুরত্ব বজায় রেখেই বসেছে হৃদি।কিন্তু আশে পাশের লোকজনের চাহনীতে মনে হচ্ছে সদ্য প্রেমে পড়া যুবক যুবতী ডেটে বেরিয়েছে।বর্তমান ছেলেমেয়েদের ভাষায় যাকে বলে নিব্বা নিব্বি!
-তখন জানেন কেন মুখ টিপে হাসছিলাম?
-জিজ্ঞাস করলাম তো কারণ বললেন না।তো কিভাবে বলবো আপনি কেন হাসছিলেন!
-মেয়েরা আপনার দিকে টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।তাই হাসছিলাম
-টাস্কিত মিন্স?
-মানে সাহিত্যিক ভাষায় যাকে বলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে।
-তাকায় ছিলো কেন?
-আমি কিভাবে জানবো?মেয়ে গুলো জানে ওরা কি জন্য আপনার দিকে টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।
বিভোর বাইক একটা পার্কের সামনে দাঁড়ায়।হৃদিকে একটা ব্রেঞ্চে বসতে দিয়ে ফুচকার অর্ডার দিতে যায়।কিছুক্ষণ পর দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে হাজির হয় বিভোর।
-হঠাৎ ফুচকা!
-লম্বা আর হাসির কাহিনী তো। ফুচকা সাথে থাকলে মজাটা ডাবল হবে।
কথাটা বলে বিভোর ব্রেঞ্চে বসে।এ টু যেড সব বলে দেয় হৃদিকে।সবটা শোনার পর হৃদি বলে,,
-কষ্ট লাগতেছে না আপনার?
-কষ্ট কিসের?ঐ সব ঘটনার কথা মনে পড়লে আমার আরও হাসি পায়।সব নষ্ট আবেগ।
-আমিও না নষ্ট আবেগের পাল্লায় পড়েছিলাম।
-মানে?
-সিঁথিদির বর মানে সাম্যদা আমার নষ্ট আবেগ। We are same broo…
কথাটা বলে হৃদি হেসে দেয় সাথে বিভোরও।হাসতে হাসতে বিভোর বলে,,
-আমার কাহিনী তো শুনলেন।তো আপনারটা কী শুনতে পারি?
-প্রায় সেইমই। আপনাকে যেমন সিঁথিদি আপনাকে আগে প্রপোজ করেছিলো সাম্যদাও আমায় আগে প্রপোজ করেছিলো।আর সেইম কাহিনি দুর্বলতা থাকায় আমিও ফিরিয়ে দিতে পাই নি।শুধু পার্থক্য হলো সিঁথি দি আপনাকে অনেক আগে ছেড়ে গেছে আর সাম্যদা আমায় কয়েকদিন আগে।
★
কাজের চাপ কম থাকায় এখন প্রায়ই হৃদিকে ক্যাম্পাস থেকে বিভোর নিয়ে আসে।স্টুডেন্টরা তো ধরেই নিয়েছে হৃদি আর বিভোর একেওপরকে ভালোবাসে।হ্যাঁ ভালোবাসে তবে তা বন্ধু হিসাবে।বিভোর এম্নেতে সব সময় ক্লিন শেইভে থাকে।তবে ইদানীং বিভোরের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি হয়েছে।তাতে অবশ্য বিভোরকে মন্দ লাগছে না।বিভোর বাইক চালাচ্ছিলো আর হৃদি পেছনে বসে ছিলো।বাইকের আয়নায় বিভোরের মুখ পড়েছে।হৃদি প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে ঠিকই খেয়াল করে।
-এক্টা কথা বলবো?
-কী কথা?
-কিছু মনে করবেন না তো?
-উমমম,,,নাহ।বলেন।
-আপনি না এইরকম হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখিয়েন।ভালো লাগবে দেখতে আপনাকে!
-তাতে কী মেয়েরা টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় থাকবে?
কথাটা বলে বিভোর হেসে দেয়।বিভোরের কথা শুনে হৃদিও হাসি আটকাতে পায় না।সেও হেসে দেয়।
বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।এরই মধ্যে বিলকিস বেগমের ফোন আসে।
-হ্যাঁ মামি বলো।
-সুখবর আছেরে হৃদি।
-কী সুখবর।
-তোর সাম্যদা বাবা হতে চলেছে।
হৃদি অপ্রস্তুত হয়ে যায়।পেছন ফিরে বিভোরকে দেখতে পায়।সারাদিন ডিউটি করে এত রাত পর্যন্ত লোকটা জেগে আছে?অন্যকেউ হলে এতক্ষণে মরার মতো ঘুমোতো।তোতলাতে তোতলাতে বলে,,,
-আপনি জেগে আছেন?
-হু ঘুম আসছিলো না।
-সারাদিন ডিউটি করে এসে বলছেন ঘুম আসছিলো না?লাইক সিরিয়াসলি?আপনি মানুষ না এলিয়েন।
-যেটা ধরে নেন।
হৃদি আর কিছু বলে না।মুচকী হেসে নোট তুলতে লাগে।বিভোর কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হৃদিকে বলে,,
বিভোর কথা শুনে হৃদি ভ্রু কুঁচকে বিভোরের দিকে তাকায়।
-এক মিনিট!
কথাটা বলেই বিভোর নিজের ঘরের দিকে যায়।কিছুক্ষণ পরে একটা বড় ডিব্বা নিয়ে আসে।ল্যাম্পের আবছা আলোয় হৃদি ডিব্বার মধ্যে কিছু প্যাকেটজাত খাবার দেখতে পায়।বিভোর ডিব্বার ঢাকনা খুলতে খুলতে বলে,,,
-চিপস না বিস্কিট?
-অ্যাহ!
-আরেহ বলেন না কী খাবেন!অনেক ধরণের চিপস বিস্কিট পাবেন এখানে।
-হ্যাঁ তা তো কিচেনেও আছে বিস্কিট।তবে এত বড় ডিব্বায় আলাদা ভাবে চিপস বিস্কিট রাখার কারণটা কী জানতে পারি?
-হাসবেন না তো?
-অদ্ভুত!হাসির কথা হলে অবশ্যই হাসবো।
কথাটা বলে হৃদি হাসতে লাগে।বিভোর শান্ত গলায় বলে,,
-থাক শুনতে হবে না।
-আরেহ ভাই রাগ করছেন কেন?আচ্ছা হাসবো না।আপনি বলেন।
-আসলে আমার ভাত খাইতে ভাল্লাগে না।কিন্তু আম্মু জোর করে ভাত খাওয়ায়।মাঝে মাঝে রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়তাম।রাত্রে ক্ষুধা লাগতো।একদিন রাত্রি বেলা বিস্কিট খেতে গিয়ে আম্মু দেখে ফেলছিলো।তার পর থেকে সেই ঘটনা নিয়ে আম্মু ক্ষেপায়।আর যাতে কিচেনে না যেতে হয় তার জন্য একটা বড় ডিব্বা কিনে এনে বিস্কিট চিপস রাখি।
-ভাইরে ভাই তাই বলে আলমারিতে রাখবেন ডিব্বা?
-আম্মু দেখে ফেললে আবার ক্ষেপাতো
-স্বাভাবিক।
কথাটা বলেই হৃদি হাসতে লাগে।বিভোরের কথা শুনে হৃদির হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে।কিছুতেই হৃদি হাসি থামাতে পারছে না।অনেকদিন পর মনে হয় মেয়েটা প্রাণ খুলে হাসলো।হৃদির হাসি দেখতে বিভোরের বেশ ভালোই লাগছে।
দেখতে দেখতে কিভাবে দিন কেটে যায়।সেদিনই হৃদিকে বিউটি আম্মার ডেরা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় আনলো।হাসপাতালে এত জোরাজোরির পর যার মুখ থেকে টু শব্দ পর্যন্ত বিভোর বের করতে পারে নি আজ সে বিভোরের সাথে এতটা ক্লোজ!মানুষ পরিবর্তনশীল। সময়ই মানুষকে পালটে দেয়।
সিঁথির অনুপস্থিতিও হয়তো একটা সময় বিভোরকে সাময়িক ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিলো।সে ধাক্কা বিভোর সামলেও নিয়েছিল।ভুলে গিয়েছিলো সিঁথিকে।কিন্তু হৃদির প্রশ্নে….
যাক গে যা হওয়ার হয়ে গেছে।সে তো আর জেনে বুঝে এমন করে নি।আর বিভোরও সিঁথির ঘটনাটাকে বয়সন্ধিকালের নষ্ট আবেগ হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছে।আর সিঁথি যদি বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তো বিভোর কেন থাকতে পারবে না।হ্যা সিঁথি বিভোরের প্রথম প্রেম।আর কৈশরের। যা যে কেউ আবেগ হিসাবে উড়িয়ে দিতে পারে।এম্নেতেও টিনেজার এইজে ছেলেমেয়েরা বেশি আবেগী হয়।
-কী খাবেন বললেন না!
বিভোরের কথা শুনে হৃদি পেছন ফিরে তাকায়।মুচকী হেসে বলে,,
-আপনি যা দেন
বিভোর ডিব্বা থেকে ওরিও বিস্কিট বের করে দেয়।এই বিস্কিটটা বিভোরের খুব পছন্দের।বিভোরের জানামতে ছোট বড় সবাই এই ওরিও বিস্কিটটা পছন্দ করে।হৃদিও অবশ্যই করে।বিভোরের আন্দাজ ভুল হয় নি।ওরিও বিস্কিটটা হৃদিরও খুব পছন্দের।হৃদি প্যাকেট থেকে একটা বিস্কিট নিয়ে কামড় দেয়।
-এই দেখছেন!দুধই আনা হয় নাই।
-আরেহ,লাগবে না।
-না না ওরিও দুধ ছাড়া জমেই না।
কথাটা বলে বিভোর কিচেনের দিকে যায়।ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করে দুই গ্লাস দুধ নিয়ে এসে হাজির হয়।টুকটাক কথা বলতে বলতে যে কখন দুজনে আড্ডায় চলে গেছে কেউ খেয়াল করেনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে তিনটা বাজে। এত রাত হয়ে গেলো!
-সাড়ে তিনটা বাজে।ঘুমাবেন না?সকালে তো ডিউটি আছে না আপনার?
-হ্যাঁ।আচ্ছা গুড নাইট।ঘুমিয়ে পড়ুন আপনিও
কথাটা বলে বিভোর গ্লাস দুটো নিয়ে কিচেনের দিকে যায়।তা দেখে হৃদি,,
-আপনি যান ঘুমান।আমি গ্লাস পরিষ্কার করছি।
-আমিই করি!
-নাহ।আপনি যান
হৃদির মুখে সাম্যের কথা শুনে সালাম সাহেবের মন চাইছে ছেলেকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে।কিন্তু সে হৃদির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে সে সাম্যকে কিছুই বলবে না।মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়েছে।সারাজীবন শুধু অন্যের দোষটা আড়াল করে গেলো।অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে বারবার নিজে বিপদে পড়ে।তাও অন্যকে নির্দোষ প্রমাণ করতে,অন্যকে রক্ষা করতে পিছপা হয় না।অনেক হয়েছে।এবার মেয়েটাকে বুঝতে হবে স্বার্থপর দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে নিজেকেও স্বার্থপর হতে হবে।
মিসেস ছায়ার মাতৃস্নেহে হৃদি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।ঠিক সেই পুরোনো হৃদি।প্রয়োজন ছাড়া যে মেয়ে কোনো কথা বলতো না আজ সেই মেয়েই সারাদিন বকবক করে সবাইকে জ্বালাচ্ছে।হৃদির এমন আচরণ আর কেউ উপভোগ করুক বা না করুক মিসেস ছায়া ঠিকই উপভোগ করছেন।বিভোর তো প্রায় সময়ই বাহিরে থাকে। আগে একা একা লাগলেও এখন মিসেস ছায়ার একাকিত্ব করার কোনো সুযোগই নেই।পর পর দুইটা বড় বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে হৃদি।মিসেস ছায়ার মমতায় আজ হৃদি সম্পুর্ন সুস্থ স্বাভাবিক।
মিসেস ছায়া সেদিন গিয়েছিলেন বোনের বাড়ি।হৃদির ভার্সিটিও সেদিন তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছিল।আলভীর সাথে কাটানো লোমহর্ষক মুহুর্ত গুলো হৃদি মন থেকে সরাতে পারছেনা।সাম্যের ধাক্কাটা হৃদি ভাগ্যের লিখন হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু আলভী….
ঘটনাটা এখনো হৃদিকে আঘাত করে চলেছে।সব ছেলের মাঝে হৃদি আলভীর আর সাম্যের ছায়ার সম্মিলিত রূপ দেখতে পায়।শুধু বিভোর বাদে।ছেলেটাকে সম্পুর্ন আলাদা লাগে হৃদির।কেমন একটা যেন ভিন গ্রহের প্রানী।
মিসেস ছায়া কোথাও যাওয়ার হলে বিভোর আর হৃদিকে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে যান।ক্যাম্পাস থেকে এসেই হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।হৃদির আগে হয়তো বিভোর এসেছিলো।পুরো ফ্ল্যাটটা কেমন অগোছালো যেন!কি খুঁজছিলো কে জানে!আন্টিকে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়?আজ হৃদি যদি পুরো ফ্ল্যাটটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে মা ছেলেকে সারপ্রাইজ দেয়!বিষয়টা নিশ্চয়ই খারাপ হবে না!
হৃদির আবার শ্বাসকষ্টের প্রবলেম আছে।তো মাস্ক পড়ে কাপড় দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে লেগে পড়ে সে।বিভোরের ঘর বাদে বাকী সব ঘর একটু ঝাড় মোছাতেই হয়ে যায়।বিভোরের ঘরে ঢুকতেই হৃদির যেন কেমন ইরিটেড লাগতে শুরু করে।লাইক সিরিয়াসলি? এই ঘরে মানুষ থাকে?জানালা না খোলায় ঘরের মধ্যে কেমন যেন একটা গ্যাস জমে আছে।হৃদি গিয়ে জানালা খুলে দিতেই গ্যাস গুলো বেরিয়ে যায়।তারপর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা কাপড় গুলো বাথরুমে নিয়ে যায়।সেগুলো কেচে রোদে দিয়ে ঘর ঝাড়ুর কাজে লেগে পড়ে।
এ কেমন ছেলেরে বাবা!কতদিন ধরে ঘর পরিষ্কার করে না আল্লাহই জানেন।যেখানেই হাত দেয় সেখানেই চিপস চকলেটের প্যাকেট পায় হৃদি।বিশেষ করে চিপা চাপায়।সাম্যেরও এই রকম বদভ্যাস ছিলো।কত যে এ নিয়ে মামীর কাছে বকা খেয়েছে!যাক গে অতীত টেনে এনে লাভ নেই।বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে হৃদিকে ভাবতে হবে।নিজের কথা ভাবতে হবে।অনেক হয়েছে অন্যের কথা ভাবা।
স্টাডি টেবিল গুছাতে গিয়ে হৃদির হাত লেগে একটা ডায়েরি পড়ে যায়।ডায়েরীটা তুলতে গিয়ে হৃদি যেন পুরো আকাশ থেকে পড়ে।সিঁথির ছবি বিভোরের কাছে এলো কিভাবে?ডায়েরিটার ভেতর হয়তো ছিলো।মানুষের ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়া কখনো ভদ্রতার মধ্যে কাতারে যায় না।আপাতত ছবিটা রেখে দিক তারপর কোনো একসময় বিভোরকে জিজ্ঞাস করা যাবে নি।
মিসেস ছায়া ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আজকে আসতে পারছেন না।রান্না করে তিনি রেখে গিয়েছেন সময় মতো গরম করে হৃদি আর বিভোরকে খেতে বলেছেন।রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা।কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে হৃদি।বিভোর ঘরে প্রবেশ করে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরে যায় বিভোর।বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দেয়।হঠাৎ করেই চারপাশটা সে খেয়াল করে!আরে!এটা তো বিভোরের ঘর নয়।হৃদি বা মার ঘরে চলে এলো না তো বিভোর!নাহ এটা তো বিভোরেরই ঘর।কিন্তু এমন কেন?
-অবাক হওয়ার বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই।আপনার ঘর আমি আজ পরিষ্কার করেছি।
রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলে হৃদি।বিভোর ক্লান্ত গলায় হৃদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে বিভোর।ঢগঢগ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় বিভোর।তারপর হৃদিকে কাজে সাহায্য করতে গেলে হৃদি বলে,,
-এমা আপনি আসছেন কেন?সব প্রায় শেষের দিকে।আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি।সারাদিন ডিউটি করে আসছেন।আমায় হেল্প না করলেও চলবে।
বিভোর বরাবরই শান্ত প্রকৃতির ছেলে।তাই আর কথা বাড়ায় না।টেবিলে গিয়ে বসে।হৃদি খাবার গরম করে এনে বিভোরের সামনে পরিবেশন করে।খাবার খেতে খেতে অনেকটা অসস্থি মাখা কন্ঠে হৃদি বলে,,
-আপনার কাছে সিঁথি দির ছবি আসলো কিভাবে?
সিঁথির কথা শুনে বিভোর যেন খাবার খেতে গিয়েও থেমে যায়।রুটির টুকরোটা বিভোরের অজান্তেই হাত থেকে পড়ে যায়।সিঁথি!এই মেয়ে সিঁথির কথা জানলো কিভাবে?আর ও কী সিঁথিকে চেনে?কৈশোরের প্রথম প্রেম সিঁথি।সিঁথি আর বিভোর একই স্কুলে পড়তো।প্রেম নিবেদনটা সিঁথিই করেছিলো বিভোরও সিঁথির প্রতি দুর্বল থাকায় ওকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।কিন্তু এসএসসির পর আর বিভোর সিঁথির দেখা হয় নি।
-আপনি ওকে চিনেন?
-চিনবো না কেন?ও তো আমার ভাবি আগে।কিন্তু আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না!
হুহ!উত্তর!যাকে নিজের করার কোনো সুযোগ নেই তখন আর কী বলার।বিভোর মুচকী হেসে বলে,,
-আমার ক্লাস মেট।এম্নেই ছবিটা রেখে দিয়েছিলাম।
-কিন্তু আপনার কথায় তো অন্যকিছু মনে হলো।If you feel comfortable you can share with me…
বিভোর দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সেই শ্বাসের মধ্যে হাতাশার উপস্থিতি হৃদির চোখ এড়ায় নি।বেশি জোর করা ঠিক হবে না।এম্নেতেই উনি একটু অন্যরকম ধাচের মানুষ। হৃদি আবার বলে,,
-যখন আপনার মনে হবে যে আমার সাথে আপনি সিঁথিদির ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারেন তখন করিয়েন।
যা ভাবা ছিলো তাই ই।হৃদিকে হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পথে মিসেস ছায়া হৃদির জন্য শপিং করে।একজন অচেনা অজানা মেয়ের জন্য মহিলাকে এমন করতে দেখে হৃদি খুব অবাক হয়।এখনকার দিনে মিসেস ছায়ার মতো মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন ব্যপার।তার আচার আচরণে মনে হচ্ছে হৃদি যেন তার বহুদিনের চেনা।অল্পসময়েই মহিলা হৃদিকে আপন করে নিয়েছে।হৃদিরও কেমন যেন মন চাইছে মিসেস ছায়াকে আপন করে নিতে।কিন্তু কিছুটা হলেও খুতখুতানি মনে ভেতর কাজ করছে।অনেকটা দোটানায় পড়েছে হৃদি।
-হৃদি ফুচকা খাবে না ভেলপুরি নাকি ঝালমুড়ি বা চানাচুর মাখা?
হৃদি কী বলবে ভেবে পায় না।একটা অচেনা অজানা মহিলা এভাবে হৃদিকে খাওয়ার জন্য অফার দিচ্ছেন।হৃদি মুখ ফুটে কিভাবে বলবে যে সে এটা খাবে!ওটা খাবে!আত্মসম্মানে ভিষণ লাগছে হৃদির।মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের মনে হয় আত্মসম্মানটা একটু বেশিই থাকে।এদের জীবনের লক্ষ্যই থাকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মার জন্য কিছু করতে পারা।আর পাঁচটা মেয়ের মতো হৃদিরও জীবনের লক্ষ্য তাই ছিলো।কিন্তু তা তো শুরুতেই শেষ হয়ে গেলো।
-হৃদি বললে না তো কী খাবে!
মিসেস ছায়ার ডাকে হ্রদির ধ্যান ভাঙে।হৃদি মুচকী হেসে বলে
– কিছু না আন্টি।
-মামা ভেলপুরি দাও তো।
অ্যাহ!এই মহিলা কিভাবে বুঝলো হৃদির ভেলপুরি খেতে মন চাচ্ছে?ভেলপুরি হৃদির খুব প্রিয়।কলেজ থেকে যখন হৃদি সাম্যের সাথে আসতো তখন প্রায়ই ভেলপুরি খেতো।কিন্তু এখন সে গুলো স্মৃতি মাত্র।আর স্মৃতি মানুষকে অনেক কষ্ট দেয়।হৃদির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হই নি।
-আফা বাটি নেন।
ফুচকাওয়ালার ডাকে হৃদির ধ্যান ভাঙে।বাটিটা হাতে নিয়ে আনমনে ভেলপুরি খেতে লাগে।মিসেস ছায়া বুঝতে পারেন হৃদি একটু হলেও মানসিক চাপে আছে।আর থাকাটাই স্বাভাবিক। কম ঝড় ঝাপটা তো যায় নি মেয়েটার ওপর দিয়ে।বিভোরের কাছ থেকে শুনেছেন মিসেস ছায়া।ছোটবেলা থেকেই নাকি মেয়েটা অনেক সংগ্রাম করেছে।বাস্তবতাকে খুব অল্প বয়সেই সে বুঝতে পেরে গেছে।ভেলপুরি খাওয়া হয়ে গেলে দাম মিটিয়ে মিসেস ছায়া হৃদিকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেন।
বাসায় গিয়ে হৃদি ফ্ল্যাটটা ঘুরে ঘুরে দেখে।সব ঘর খুব পরিপাটিভাবে গুছানো শুধু একটা ঘর বাদে।নিশ্চিয়ই এটা অফিসার বিভোরের ঘর।লোকটা তো বাইরে বেশ পরিপাটি কিন্তু তার ঘর যে এমন হবে কে জানতো!
এক কথায় যাকে বলে বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। সাম্যদাও অনেকটা এই রকমই ছিলো।হৃদি নিজ হাতে প্রতিদিন সাম্যের ঘর গুছাতো এখন দায়িত্ব পড়েছে সিঁথিদির ওপর।
-কী দেখছো?বিভোরের ঘর? আর বলো না।ছেলেটাকে গুছাতে পারলাম না।একা মানুষ আমি আর কতটুকুই করতে পারতাম।তাও যতটুকু পারি চেষ্টা করি।
হৃদি আর কিছু বলে না।মুচকী হাসে।দুপুর দুটো বাজে।হৃদিকে দেখে মনে হচ্ছে হৃদির নাওয়া খাওয়া হয় নি।মিসেস ছায়া হৃদির হাতে টাওয়েল আর জামা কাপড় দিয়ে বলে,,
-যাও গা ভিজিয়ে আসো।
মিসেস ছায়াকে দেখে হৃদির মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো।হৃদির মাও হৃদির হাতে টাওয়েল জামা কাপড় দিয়ে গোসল করতে বলতেন।কেন যেন মিসেস ছায়ার মধ্যে হৃদি নতুন করে নিজের মাকে খুঁজে পাচ্ছে।।
★
-স্যার আসসালামু আলাইকুম।
-জ্বী ওয়ালাইকুম আস সালাম।
-স্যার আমার মেয়েটা..
-কোন মেয়ে। নাম বলুন।
-হৃদি।
মুহুর্তের মধ্যেই ফাইল থেকে চোখ সরে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক বয়স্ক ব্যক্তির ওপর পড়ে বিভোরের।তিনিই হয়তো হৃদির মামা।বেশ কয়েকবার ফোনে উনার সাথে কথা হয়েছে।
-আপনার ভাগ্নি তো আপনাদের বাসায় যেতে রাজী নয়।
-হাসপাতালেই কী আছে ও?শুধু চোখের দেখা দেখেই আসবো।আর জিজ্ঞাস করবো কি জন্য ও ফিরতে চায় না।
-নাহ উনি হসপিটালে আর নেই।আমার মা উনাকে আমাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছেন।আপনি এক্টু ওয়েট করুন।কিছুক্ষণ পরেই বাসায় যাবো।সঙ্গে আপনাকেও নিয়ে যাবো।প্লিজ সিট।
বিভোরের আহবানে সালাম সাহেব বসেন।কাজ গুছানো হয়ে গেলে সালাম সাহেবকে বাইকের পেছন চাপিয়ে রওনা দেন বাসার দিকে।
*
-হৃদি!
রান্না ঘরে মিসেস ছায়ার হাতে হাতে কাজ গুলো করে দিচ্ছিলো হৃদি।সালাম সাহেবের ডাকে পিছন ঘরে তাকায় হৃদি। প্রথমে ভেবেছিলো মনের ভুল হয়তো।কিন্তু না। ঘুরে দেখে পিছনে সয়ং সালাম সাহেবই দাঁড়িয়ে আছেন।
সত্য লুকিয়ে আর লাভ কী?আর মিথ্যা বলেও পাপের বোঝা বাড়ানোর ইচ্ছে আর হৃদির নেই।সালাম সাহেবকে নিয়ে একটা আলাদা ঘরে যায় হৃদি। গোঁড়া থেকে শুরু করে সব বলে দেয় মামাকে।সবটা শুনে সালাম সাহেব বলেন,,,
-কিহ?সাম্যের তোর সাথেও সম্পর্ক ছিলো?
-সাথেও মানে?বুঝলাম না মামা।
-সাম্য তো বলেছিলো ওর শুধু সিঁথির সাথে সম্পর্ক ছিলো।তাই তো সিঁথির সাথেই ওর বিয়ে দিয়েছি।আগে যদি জানতাম ওর তোর সাথে।সম্পর্ক ছিলো তাহলে কখনো ওই মেয়েকে আমি ঘরে তুলতাম না।
সালাম সাহেবের কথা শুনে।হৃদির পায়ের তলার মাটির সরে যায়।একটা মানুষ কিভাবে এরকম করতে পারে?তাহলে সব কি নাটক ছিলো?হতেও পারে!মানুষ দ্বারা তো কোনো কিছু অসম্ভব না।ভালোই হয়েছে হৃদি সরে এসেছে।
-মামা,তোমার কাছে তো আমার এক্সামের সার্টিফিকেট গুলা আছে তাই না?
-হু।
-কষ্ট করে সেগুলা দিয়ে যাবা?
-কী করবি আগে সেটা বল।
-প্রথমে একটা ছোটখাটো চাকরি জোগার করবো।তারপর আবার পড়াশোনা শুরু করবো।
-চাকরি এখনই করা লাগবে না।পড়বি তুই।খরচ আমি দেবো।
-কিন্তু মামা…..!
-কোনো কিন্তু না।যা বলছি তাই করবি।
(হিরোর নাম চেইঞ্জ করা হইছে । হিরোর নাম বদলে দিলাম বিভোর)
-বিভোর মেয়েটা যেন কোন হাসপাতালে আছে?
বিভোরের আলমারি গুছাতে গুছাতে প্রশ্নটা করেন মিসেস ছায়া।বিভোরও তখন থানায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে,,
-সদরেই ভর্তি করাইছি।ওপর মহল থেকে অর্ডার আসছিলো।আল্লাহর রহমতে মেয়েটা সুস্থ হইছে।কিন্তু ঐ মামাবাড়িতে যাবে না।তাই হাসপাতালে পড়ে আছে।বাচ্চা পেশেন্টদের সাথে দুষ্টুমি করে দিন ভালোই কাটছে মেয়েটার।
-কিছু টাকা দিয়ে যাস তো থানায় যাওয়ার আগে।
বিভোর ওয়ালেট বের করে মিসেস ছায়ার হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দেয়।চাকরি হওয়ার পর থেকে বিভোর মায়ের কাছেই স্যালারি রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু মিসেস ছায়া তাতে সায় দেন না।ছেলে বড় হয়েছে।মার কাছে কেন স্যালারি রাখবে!তার চেয়ে ভালো হয় নিজে রাখবে আর মিসেস ছায়া দরকারের সময় চেয়ে নেবেন। হৃদির মতো বিভোরও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।বাবা ছিলেন সৎ পুলিশ অফিসার।স্ট্রোক করে দুনিয়ার মায়া ছেড়েছেন বহুদিন হলো।ছোটবেলা থেকে বিভোরেরও স্বপ্ন ছিলো বাবার মতো সৎ পুলিশ অফিসার হবে।দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আজ সে তা করে দেখিয়েছে।বিউটি আম্মা কতবার বিভোরকে টাকা দিয়ে হাত করতে চেয়েছে তার হিসাব নেই।কিন্তু পারেনি।অন্যান্য পুলিশ অফিসারকে টাকা দিয়ে হাত করতে পারলেও বিভোরকে টাকা দিয়ে হাত করতে সে ব্যর্থ। তাই তো বিভোর এখন বিউটি আম্মার দুই চোখের বিষ।
ছেলেকে থানায় পাঠিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রেডি হোন মিসেস ছায়া।পারলে আজই হৃদিকে নিয়ে আসবেন। একা থাকতে মোটেও ভাল্লাগছে না।সাথে কিছু টাকা নিলেন।যদি হৃদিকে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে আসার সময় ওর জন্য কেনাকাটা করবেন।
বিল্ডিং থেকে বেরুতেই এলাকার কুকুর বিড়ালগুলো মিসেস ছায়াকে ঘিরে ধরে।একা মানুষ মিসেস ছায়া।বিভোর কাজে ব্যস্ত থাকায় এলাকার কুকুর বিড়ালগুলোকে খাওয়াতেন মাঝে মাঝে তিনি।কখন যে তারা মিসেস ছায়াকে আপন করে নিয়েছে!মিসেস ছায়ায় তাদের সন্তানের মতো দেখে।মানুষ আর কুকুর বিড়ালের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। মানুষকে আপনি নয় দিন খাওয়ান।একদিন খাওয়াননি। সেই এক দিনটার কথাই মনে রাখবে সে।আর কুকুর বিড়ালকে একদিন খাওয়ান। তারা সেই দিনটার কথা সারাজীবন মনে রাখবে।নিজের জীবন দিয়ে হলেও সেই ঋণ শোধ করবে। মানুষকে ভালোবেসে ঠকতে হয় কিন্তু কুকুর বিড়ালকে নয়।সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিস্রুতি দিয়েও মানুষের বিচ্ছেদ হয়।অন্যদিকে সঙ্গী হারালে পাখি উপোসে মরে।সত্যি বলতে অবলা প্রানীগুলোর ভালোবাসাই খাঁটি হয়।
কুকুর বিড়ালগুলোকে খাইয়ে মিসেস ছায়া হাসপাতালের দিকে রওনা দেন।হাসপাতালে গিয়ে বিভোরকে ফোন দেয়।তাড়াহুড়োর মাথায় হৃদির কেবিন নাম্বার জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছিলেন মিসেস ছায়া।বিভোরের বলা কেবিনে যান মিসেস ছায়া।কিন্তু গিয়ে দেখেন কেউ নেই।ওয়ার্ডবয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন এই কেবিনের পেশেন্ট বাচ্চাদের ওয়ার্ডেই সারাদিন থাকে।ওয়ার্ডে গিয়ে মিসেস ছায়া দেখেন হৃদি একটা বাচ্চাকে খাইয়ে দিচ্ছে।বিভোর তাকে হৃদির ছবি দেখিয়েছিলো।তাই তিনি হৃদিকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেন।
-হৃদি?
মিসেস ছায়ার ডাকে হৃদি ঘুরে তাকায়।মিসেস ছায়াকে হৃদি চিনে না।কিন্তু একটা অচেনা অজানা মহিলা হৃদির নাম জানলো কিভাবে?হৃদি অবাক হয়।আর অবাক হওয়াটাই তো স্বাভাবিক নয় কী!হৃদি উঠে দাঁড়ায়।মিসেস ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
হৃদি বাচ্চাটাকে টুলে বসে খাওয়াচ্ছিলো।মিসেস ছায়ার জন্য সে টুলটা ছেড়ে দেয়।বিছানায় বসে বাচ্চাটাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,,
-বসুন আন্টি।
হৃদির কথা মতো মিসেস ছায়া টুলে বসে।হৃদি বাচ্চাটাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,,
-আমার কাছে তো ঠিকই খাচ্ছো?মার কাছে খেলে কি হতো?
-মা তো তোমার মতো গল্প শুনিয়ে খাইয়ে দেয় না
-এরপর থেকে মাও গল্প শুনিয়ে খাইয়ে দেবে।মার একটু মন খারাপ তো।তাই গল্প বলেন না। তুমি কিন্তু দুষ্টুমি করবে না।ডক্টর আঙ্কেল তোমায় রেস্টে থাকতে বলছে।খাওয়া শেষ হলেই ঘুম দিবা।
-আচ্ছা আন্টি।
বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিয়ে হৃদি মিসেস ছায়াকে নিয়ে নিজের কেবিনে যায়।হৃদি ইলেকট্রিক কেটলিতে চা বানানোর জন্য পানি গরম দেয় হৃদি।মিসেস ছায়া হৃদির দিকে তাকিয়ে বলে,,
-বিভোরের কাছে শুনলাম তোমার মামা বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
-জ্বী ভুল শুনেন নি।মানুষের ঘাড়ে বসে আর খেতে চাই না।
-তো যাবে কোথায়?
-যেখানে দু চোখ যায়।
-আমার সাথে যাবে?
-কোথায়?
-আমার বাসায়।
হৃদি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।মিসেস ছায়ার হাতে কাপ দিয়ে বলেন,,
-বুজতেছি না আপনি আর আপনার ছেলে বাসায় নেওয়ার জন্য এমন উঠে পরে লাগছেন কেন?
-ভুল করলে একটু মা।আমার ছেলে না শুধু আমিই।ওকেই আমি বলেছিলাম তোমায় আমাদের বাসায় নেওয়ার প্রস্তাব দিতে।
-কেন?
-একা মানুষ। তারমধ্যে ছেলে আইনী পেশার সাথে জড়িত।কখন বেরিয়ে যাবে কখন আসবে!কোনো কিছুরই ঠিক নেই।
হৃদি খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।এভাবে উনাকে কি খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া আদৌ ঠিক হবে?আর কত দিনই বা এভাবে হাসপাতালে পড়ে থাকবে।তার চেয়ে বরং উনার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাই।