Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1543



নিয়তি পর্ব-০৮

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৮

-আমি এখানে কেন?

জ্ঞান ফিরতেই ভয়ার্ত কন্ঠে নার্সকে প্রশ্ন করে হৃদি।নার্স শান্ত গলায় হৃদির কথার জবাব দেয়।এবং বাইরে অপেক্ষা মান নারী কনস্টেবলকে জানায় যে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।নারী কনস্টেবল কেবিনে প্রবেশ করতেই হৃদি ভয়ে কুঁকড়ে উঠে।অসহায় কন্ঠে আকুতি জানায় হৃদি যাতে সে হৃদির কাছে না আসে।নার্স ডাক্তারকে খবর দেয়।কিন্তু সেই একই অবস্থা।ডাক্তারকে দেখেও হৃদি ভয় পাচ্ছে।কোনো উপায় না পেয়ে নারী কনস্টেবল অফিসার বুখারীকে ফোন লাগায়।বিভোর তখন থানার কাজ সামলাতে ব্যস্ত।কনস্টেবল হাসপাতালের পরিস্থির সবটা খুলে বলে।এই মুহুর্তে থানায়ও কাজের চাপও বেশি আবার হাসপাতালেও যেতে হবে যেহেতু ওপরমহল থেকে হুকুম দেওয়া আছে মেয়েটার যাবতীয় ভালো মন্দের খোঁজ বুখারীকে নিতে হবে।এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফাইল গুলোকে টেবিলে ছুড়ে ফেলে বুখারী।বাইক নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়।হাসপাতালে গিয়ে সেই একই পরিস্থির সম্মুখীন হয় বুখারী।ডাক্তার জানায় হৃদি এখনো মানসিক চাপের মধ্যে আছে।আশে পাশের মানুষকে সে ভয় পেতে শুরু করেছে।বুখারী আস্তে আস্তে করে হৃদির কাছে যেতে লাগে।হৃদিও ভয় পেয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে থাকে।বুখারী হৃদিকে নির্ভয় করার জন্য শান্ত গলায় বলে,,

-ভয় পাবেন না।আমি পুলিশ। আপনাকে আমি সাহায্য করবো।
-প্লিজ কাজে আসবেন না।
-আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।টাস্ট মি
-আমি বলেছি আমার কাছে আসবেন না।

বুখারী বুঝতে পারে এভাবে হৃদির মুখ থেকে কোনো কিছু শোনা যাবে না।উলটে হৃদি আরও নিজেকে গুটিয়ে নেবে।বুখারী হৃদির বেডের পাশে একটা টুল নিয়ে বসে।আর বলে,,

-আচ্ছা আমি কাছে আসছি না।আপনি দূর থেকেই আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।আপনার বাবার নাম কী?আর বাড়ির ঠিকানা নাম্বার মনে আছে?

বুখারীর কথা শুনে হৃদি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।যার মা মারা গেছে তার আর বাবা!বাবা নামক প্রানীটা মা মারা যাওয়ার সাথে সাথেই বদলে গেছে।হৃদির এমন অস্বাভাবিক হাসি দেখে বুখারী কিছুটা চমকে যায়।মানসিক চাপের কারণে মেয়েটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো না তো!

-আর ইউ ওকে?

হৃদি ইশারায় হ্যা বোধক উত্তর দেয়।বুখারী শান্ত গলায় হৃদিকে আবার প্রশ্ন করে,,

-আপনার নাম ঠিকানা কিছু কি মনে আছে?
-নাম হৃদি।মা মারা গেছে বহুদিন হলো।বাবা থেকেও নেই।মা মারা যাওয়ার পর, বাবা পর হওয়ার পর মামার বাড়িতেই থেকে মানুষ হয়েছি।
-তো আপনি নারী ও শিশু পাচারকারী এবং মাদক সম্রাজ্ঞী বিউটি আম্মার ডেরায় গেলেন কিভাবে?

হৃদি আর কিছু বলে না।চুপচাপ বসে থাকে।অদ্ভুত দৃষ্টিতে আনমনে তাকিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। বুখারী আবার প্রশ্ন করলে তার ধ্যান ভাঙে।লম্বাশ্বাস নিয়ে হৃদি বলে,,

-আপনি আসতে পারেন।আমায় একা থাকতে দিন।আর হা আমার সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর নিবেন না।আল্লাহর দোহাই লাগি।

বুখারী বুঝতে পারে হৃদি এখনো মানসিক ভাবে ঠিক হয়ে উঠতে পারেনি।তবে তার ধারণা সম্পুর্ণ ভুল। হৃদি সুস্থ মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর মামা বাসায় ফিরবে না।মানুষের ঘাড়ে বোঝা হয়ে সে আর থাকতে চায় না।

রাত তখন প্রায় দেড়টা।পুরো হাসপাতাল তখন নিঃস্তব্ধ।গা ছমছমে একটা পরিবেশ।তার মধ্যে মেডিসিনের গন্ধ পরিবেশটা আরও ভুতুরে করে তুলুছে।এই রকম পরিবেশে যে কারও গা শিউরে উঠবে।কিন্তু হৃদি সে সম্পুর্ন স্বাভাবিক।পা টিপে টিপে হাসপাতালের মেইন গেটের দিকে যাচ্ছে সে।যেভাবেই হোক আজ পালাতেই হবে।পুলিশ দিয়ে বিশ্বাস নেই।তারা যতই আশ্বাস দিক যে হৃদির ব্যপারে কোনো খোঁজ খবর নেবে না কিন্তু তলে তলে তারা ঠিকই হৃদির সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিচ্ছে।তাই হৃদিকে পালাতেই হবে।শরীর দুর্বল থাকায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছিলো তাকে।সুঁচটা ঠিক মতো খুলতে পারেনি হৃদি।কোনোরকমে সুঁচটা খুলে ফেলে রেখে এসেছে সে।বা হাতটায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছিলো।সেখান দিয়ে গল গল করে রক্ত ঝড়ছে।ব্যথাও করছে প্রচন্ড।
এদিকে আলভী ও তার মা হৃদির ডান পায়ের তলায় খুন্তি গরম করে ছ্যাকা দিয়েছিলো।হাঁটার কারণে ফোস্কাটা গলে গেছে।প্রচন্ড জ্বালা হচ্ছে পায়ে।কতবার যে হোঁচট খেয়েছে হিসাব নেই।
ঠিক হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে এসে হৃদির মাথা ঘুরাতে শুরু করে।ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশটা।মুহুর্তেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হৃদি।


জ্ঞান ফিরতেই পাশে বুখারীকে দেখতে পায় হৃদি।মাথা নীচু করে দুই হাত কপালে মুষ্টিবদ্ধ করে টুলে বসে আছে বুখারী।হৃদির জ্ঞান ফিরতেই সে উঠে দাঁড়ায়।এবং কাছে এগিয়ে আসে।হৃদিও কিছুটা গুটিয়ে নিতে লাগে নিজেকে।

-প্রবলেম কি আপনার? পালাইতে চাইছিলেন কেন?
-পালানো?এইখানে পালানো আসলো কিভাবে?
-তো হাসপাতালের গেটের সামনে পড়ে আছিলেন কিভাবে?
-ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস আছে।হাঁটতে হাঁটতে হয়তো…!
-হ্যা।খুব বুদ্ধিমান আপনি!কি ভাবছেন যা বলবেন তাই বিশ্বাস করবো?ঘুমে হাঁটার অভ্যাসের সময় মানুষ হ্যাঁচকা টান দিয়া স্যালাইন খুলে?পায়ের ফোস্কা গলে গেছে তাও সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে!

বুখারীর যুক্তির কাছে হৃদি কি বলবে ভেবে উঠতে পারে না।মামা না বলতো পুলিশরা মাথামোটা হয়।কিন্তু এই বেটা তো প্রচুর সিয়ানা।বুখারী হৃদির সামনে তুরি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙে।

-পালানোর কারণটা কি জানতে পারি?
-ঘুমে হাঁটা।
-মিথ্যা বলিয়েন না।পাপ হবে।
-পুলিশরা না মাথামোটা হয়।আপনি এত সিয়ানা হলেন কিভাবে?

বিড়বিড় করে কথাটা বলে হৃদি।হৃদির কথার কিছু হলেও বুখারী শুনতে পায়।

-মাথামোটা,সিয়ানা মানে?
-কিছু না।
-কারণটা বললেন না।
-মন চাইছে তাই পালাইতে চাইছিলাম।
-আমায় বোকা ভাববেন না।আমি আন্দাজ করতে পারছি আপনি কোনো বড় এক কারণে পালাতে চাইছিলেন।আপনি কোনো ভাবে ওই মাদক কারবার আর নারী পাচারের সাথে যুক্ত নন তো!
-আস্তাগফিরুল্লাহ!এইগ্লা কী বলতেছেন?
-তো পালানোর কারণ কি?
-আপনি যদি আমায় আবার মামা মামির কাছে দিয়ে আসেন।
-আপনি ফিরতে চান না?
-একদম না।
-কেন?উনারা কী আপনার ওপর কোনো ধরণের টর্চার করছে?
-নাহ।উনারা খুব ভালো মানুষ তবে মানুষের ঘাড়ে আর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
-দেখে তো মনে হচ্ছে ক্লাস নাইন টেনের বাচ্চা মেয়ে।
-মোটেও না।আমি এইচএসসি দিছি।
-তো মামাবাসায় যাবেন না তো যাবেন কই?
-যেখানে দু চোখ যায়।
-আমার বাসায় যাবেন?

বুখারীর কথা শুনে হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।আলভীকে বিশ্বাস করে ঠকেছে।সাম্যও পালটে গেছে।আর কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না।

-সরি। লাগবে না আপনার দয়া করুণা।
-তো যাবেন কোথায়?
-বললাম তো জানি না।আপনি আসতে পারেন।একা থাকতে দিন আমায়।
-পালাবেন না তো!
-জানেন আপনি পায়ের ফোস্কা গলে গেলে।পালানোর কোনো উপায় আছে?
-কি জানি।যে মেয়ে বিউটি আম্মার মুখে মুখে কথা বলতে পারে।তার মার খেয়ে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে তার দ্বারা কোনো কিছুই অসম্ভব না।

কথাটা বলে বুখারী কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।হৃদি মুখ ভেংচি কেটে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।


-কিরে মেয়েটার কী খবর?

কথাটা বলে টেবিলের ওপর কফির কাপ রাখেন মিসেস ছায়া।বুখারী টাওয়েল দিয়ে মুখটা মুছে বেল্কনিতে রোদে দিয়ে বলে,,

-বুঝোই তো বিউটি আম্মার সঙ্গে লাগতে পারে যে মেয়ে। সে তো আর কোনো সাধারণ মেয়ে না।
-বাড়ির খোঁজ খবর নিয়েছিস?
-হু নিয়েছি।কিন্তু উনি যেতে নারাজ।
-তো কই যাবে মেয়েটা?
-বলে যেখানে দু চোখ যায় চলে যাবে।
-আমাদের বাসায় আনলেই তো পারিস।
-বলেছিলাম।কিন্তু উনি না করেছেন।
-আমি কালকে যাবো হসপিটালে?
-যাবে?আচ্ছা যেও।

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০৭

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৭

-আম্মু হৃদি কই?

অফিস থেকে সবে মাত্র এসেছিলো সাম্য।ফ্রেশ হয়ে খবরের কাগজ নিয়ে বসে সেই।এই সময় হৃদির রান্না ঘরে থাকার কথা। কিন্তু সেই নেই।হৃদিকে দেখতে না পেয়েই প্রশ্নটা করে সাম্য।বিলকিস বেগম মুখ ভেংচি কেটে উত্তর দেন,,

-টিউশন করানোর নাম করে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো।সন্ধ্যা হয়ে গেছে কোনো খোঁজ নেই।দেখ গিয়ে কোনো ছেলের সাথে ভেগে গেছে।
-উফফ আম্মু চুপ করো।হৃদি সে রকম মেয়েই না।সব মেয়েই কী তোমার ভাইঝি সরি সিঁথির মতো ক্যারেক্টারলেস হয়?

সাম্যের কথাটা যেন সিঁথির কলিজায় গিয়ে আঘাত করে।প্রতিটা কথা কলিজা ভেদ করে কলিজাটাকে ক্ষতবিক্ষত করছে।কিন্তু বিষয়টা স্বাভাবিক। সিঁথি ভুল করেছে।আর সেই ভুলের মাশুল ওকে সারাজীবন দিতে হবে।মেনে নিয়েছে সত্যটাকে সিঁথি।আবেগ মানুষকে অন্ধ করে দেয়।আর অন্ধ হয়ে মানুষ যে ভুল করে তার মাশুল তাকে সারাজীবন দিতে হয়।

হৃদির না আসায় সাম্য হৃদিকে কল দেয়।কিন্তু ফোন বন্ধ দেখায়।মেয়েটা কোথায় গেলো ফোন বন্ধ করে।আর হৃদি তো সেরকম মেয়েও না যে কাওকে না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে এবং বাসায় ফিরতে দেরি করবে।রাস্তায় কোনো কাজে আটকে গেলে হৃদি অবশ্যই বাসায় জানায়।আলভীর ফোন নাম্বার বোধহয় সাম্যের কাছে আছে।হৃদি দিয়েছিলো।আর হৃদি তো আলভীরই বাসায় গেছে অভিকে পড়াতে।এই মুহুর্তে হৃদির সম্পর্কে যদি কেউ কিছু বলতে পারে তাহলে আলভীই পারবে।সাম্য আর দেরি করে না।সে আলভীকে ফোন লাগায়।

-জ্বী কে বলছেন?
-আলভী আমি সাম্য।হৃদি কোথায়?
-হৃদি কোথায় আমি কিভাবে বলবো?ও তো অভিকে পড়িয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলো।
-কোথায় যাবে কিছু বলেছে তোমাকে?
-অদ্ভুত তো!আপনার বোন আমায় কেন বলতে যাবে যে সে কোথায় যাচ্ছে বা না যাচ্ছে!

কথাটা বলেই আলভী ফোন কেটে দেয় সাম্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই।আলভীর হঠাৎ এই রকম আচরণের কারণ ঠিক সাম্যের মাথায় ঢুকে না।ফোন কেটে দিতেই আলভীর চোখ ঘড়ির কাটার দিকে পড়ে।ঘড়ির কাটা নয় ছুঁই ছুঁই।মেয়েগুলোকে এখন খাবার দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। আলভী নিজের মায়ের ঘরে যায়।গিয়ে দেখে তিনি বিছানায় রাজকীয় ভাবে বসে হুক্কা টানায় ব্যস্ত। ঠিক সেই ভাবেই তিনি বসেছেন ঠিক যেমনটা রাজা বাদশারা বসতো।

-আম্মু মেয়ে গুলোরে তো খেতে দিতে হতো।
-ফ্রীজে দেখ কিছু বাসি তরকারি আছে।আর বুয়া রুটি ভেজে রেকে রেখে দিয়ে গেছে।ঐগুলাই দে।

কথাটা বলে আলভীর মা হুক্কায় লম্বা একটা টান দেন।মায়ের কথা মতো আলভী বাসি তরকারি আর রুটি মেয়েদেরকে খাবার হিসাবে রেডি করে।এক এক করে প্লেট গুলো ঘরে নিয়ে যেতে হবে।পাঁচটা প্লেট একসাথে নেওয়া ত সম্ভব না!প্রথম প্লেটটা এক হাতে নিয়ে দরজা খুলতেই দরজা খোলার শব্দে আঁতকে উঠে মেয়ে গুলো।কেঁপে উঠে তাদের রুহ।না জানি কত মানসিক আর শারিরীক নির্যাতন নেমে আসে ওদের ওপর।সব মেয়েরা ভয়ে কাঁপলেও হৃদির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া আলভী খুঁজে পায় না।ঘরের একটি কোণে চুপচাপ হাত পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে সে।চোখের কার্ণিশে এক বিন্দু জল মুক্তার মতো দেখাচ্ছে।অতি শীঘ্রই তা হৃদির গাল গড়িয়ে মেঝেতে পড়ে।আলভী একে একে সব প্লেট নিয়ে আসে।তারপর মেয়েদের বাঁধন খুলে দেয় খাওয়ার জন্য।কিন্তু তার আগে সাবধান করে দেয় যদি কেউ কোনো শব্দ করে তাহলে আজই তার শেষ দিন।বাকী মেয়ে গুলো খাওয়া শুরু করলেও হৃদি করে না।সে চুপচাপ থ মেরে বসে থাকে।তা দেখে আলভী,,

-খাচ্ছিস না কেন?
-আমি খাবো না।

হৃদির মুখে এমন কথা শুনে সব মেয়ে গুলো একসাথে বলে উঠে,,

-যা দিয়েছে খেয়ে নেও। নয়তো সকালের আগে এখানে দানাপানিও জুটবে না।
-এগ্লা খাবার হলো?বাড়ির ঝি চাকররাও তো এর থেকে ভালো খাবার খায়।

মেয়েগুলোর কথার জবাবে হৃদি কথাটা বলে।তা শুনে আলভী এক পৈশাচিক হাসি দেয় আর বলে,,

-বাব্বাহ!এত দেমাগ।মামার বাড়িতে থাকতে তোর এই খাবার গুলো জুটতো কি না সন্দেহ।
-নিজের সন্তানের থেকে কোনো অংশে কম দেখেনি আমায় মামা মামি।
-বেশ তো তাহলে তোর খোঁজ খবর নিতে তো দেখলাম না।যা দিছি চুপ চাপ খেয়ে নে।

হৃদি আর কিছু বলে না।এইগ্লাস পানি খেয়ে নিজের ক্ষুদার জ্বালা মেটায়।যতই কষ্ট হোক তার। সে এইসব খাবার মুখেও তুলবে না না জানি কী মিশিয়ে দিয়েছে।পানিটা খাওয়ার সময়ও হৃদি ভরসা পাই নি।তাই নিজ চোখে চোখ থেকে ঢালা পানি সে আয়েশ করে খেয়েছে।হৃদির বিশ্বাস খুব শীঘ্রই কেঊ একজন আসবে।আর হৃদি সহ সব মেয়েদের উদ্ধার করে আপনজনদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।আর বিউটি আম্মার আর আলভীর সাজা হবে।মেয়েগুলোর খাওয়া হয়ে গেলে আলভী একে একে সব মেয়েদের হাত পা মুখ বাঁধা শুরু করে।হৃদিও বাদ যায় না।

নিকষকালো অন্ধকার ঘরে ভোরের আলো ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রবেশ করে সোজা হৃদির মুখে পড়ে।ঘুম ভেঙে যায় তার।শরীর ব্যথায় গোঙাতে লাগে সে।কাল রাতে তো আর হৃদির ওপর দিয়ে কম ঝড় ঝাপটা যায় নি!হৃদি বরাবরই ঘাড় ত্যাড়া আর সোজা কথার মেয়ে।তবে নিজের পরিবারের জন্য সে সব ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।মা মারা যাওয়ার পর মামার পরিবারই হৃদির পরিবার।তাই সর্বস্ব দিয়ে সে পরিবারকে আগলে রাখতে চেয়েছে।আলভীও বরাবর জানতো হৃদি খুবই সেন্সিটিভ মেয়ে।কিন্তু কাল রাতে সে অন্য হৃদিকে দেখতে পায়।আগের অর্ডারটা ক্যান্সেল হয়েছে।ক্রেতারা ন্যায্য মুল্য দিতে অস্বীকার করেছে।কাল রাতে ক্রেতারা মেয়েদের দেখতে এসেছিলো।ক্রেতারা মেয়েদের নিজ হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে।অন্যান্য মেয়ে চুপচাপ তা সহ্য করে নেয় কিন্তু হৃদি তা পারে না।ক্রেতারা হৃদির শরীর স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালে হৃদি প্রতিবাদে জ্বলে উঠে।মা বাবা মারা গেছে তো কী হয়েছে?হৃদি নিশ্চয়ই কোনো সস্তা মেয়ে মানুষ নয় যে অন্যকে নিজের শরীর স্পর্শ করতে দেবে!আর এই সামান্য কারণেই তার ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগে বিউটি আম্মা।নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মা ছেলে হৃদির গায়ে সিগারেট, গরম খুন্তির ছ্যাকা দেয়।সেগুলো সহ্য করতে না পেরে হৃদি অজ্ঞান হয়ে যায়।আর তারা তাকে আগের মতো ফেলে রেখে চলে যায়।হৃদি নিখোঁজ হয়েছে প্রায় একসপ্তাহ হলো।সাম্য আর সালাম সাহেবও হৃদির খোঁজ না পেয়ে পাগল হয়ে গেছে।বিশেষ করে সালাম সাহেব।পাগল হবেন না ই বা কেন?ভাগ্নির মধ্যেই যে নিজের বোনকে খুঁজে পেতেন তিনি।

দরজার ওপাশে মা ছেলের কথোপকথন স্বষ্ট শোনা যাচ্ছে।নতুন ক্রেতা পেয়েছে মনে হয়।

-বুঝলি আলভী?কপাল আজকে খুব ভালো।একটা কাস্টমার যেতে না যেতেই আরেকটা আসলো।কিন্তু সাবধান।হৃদি নামের মেয়েটাকে বেশি লাফাতে দেওয়া যাবে না।

হৃদি আশা কিছুটা হলেও ছেড়ে দিয়েছে।কারণ এতদিন ধরে সে বন্দী অথচ কেউ তাকে বা তাদেরকে বাঁচাতে আসলো না।আইয়ামে জাহালিয়া যুগের মতোই আজ তাকে এবং বাকী মেয়েদের হয়তো আবার নিলামে দেওয়া হবে।যে যেমন দাম দেবে সে তেমন মেয়ে পাবে।কেয়ামত আর বেশি দূরে নেই।অনেক আলামতই পাওয়া গেছে।মানুষের অপরাধ প্রচণ্ড মাত্রায় বেড়ে গেছে।চারদিকে খুন খারাবি,রেশারেশি,ধর্ষণ, ব্যভিচার, মার হাতে মেয়ে খুন,মেয়ের হাতে মা খুন,বাবার হাতে ছেলে খুন,ছেলের হাতে বাবা খুন,আরও কত কী!
এইতো কয়দিন আগেই ফেইসবুক, খবরের কাগজের পাতায় মোটা অক্ষরে ছাপা হয়েছিলো নামাজরত মেয়েকে খুন করলো মা।কারণটা কিন্তু খুব ছোট এবং সামান্য।মেয়ের বিয়ে হচ্ছিলো না।তাই বোঝা কমাতে নামাজরত মেয়েকে খুন করে গর্ভধারিণী মা।কেউ কারও কাছে নিরাপদ নয়।

সন্ধ্যায় কালো শার্ট পরিহিত একদল মানুষ আলভীর বাড়িতে ঢুকে।আলভী তাদের সেই ঘরে নিয়ে যায় যেখানে মেয়ে গুলো আছে।বেশ খানিকক্ষণ যাওয়ার পর বাইরে থেকে আওয়াজ আসে।বোধহয় পুলিশ হবে।অন্ধকারে সুক্ষ্ম আলোর রেখার মতো হৃদি আশার আলো দেখতে পায়।

-আপনাদের চারপাশ থেকে ঘেরাও করা হয়েছে।চুপচাপ মেয়েগুলোকে আমাদের হাতে তুলে দিন।

আলভী আর বিউটি আম্মা বন্ধুক বের করার প্রস্তুতি নিলে লোক গুলো তাদের জাপটে ধরে ফেলে।ফলে মা ছেলের কোনো কিছু করার সুযোগ থাকে না।লোকগুলো তাদের নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলে।আর বাকী যারা ছিলো তারা মেয়েগুলোর হাত পার বাঁধন খুলে দেয়।হৃদিও বাদ যায় না।অন্য মেয়ে গুলো উঠে দাঁড়ালেও হৃদি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পায় না।একটা লোক ফোন করে বলে,,

-স্যার এখানে একটা মেয়ে গুরুতর ভাবে অসুস্থ। মেয়েটাকে মনে হয় মারধর করা হয়েছিলো।
-আমি আসছি।

ফোনের ওপাশের লোকটা শান্ত গলায় জবাব দেয়।হৃদি নিজের সর্বস্ব দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।উলটে পড়ে গিয়ে আরও ব্যাথা পায়।ঝাপসা চোখে কাওকে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখে।বেশ লম্বা লোকটা।সুঠাম দেহের অধিকারি লোকটা।তিনিও কালো শার্ট পরিহিত।হাতা ফোল্ডার করা।লোকটা হৃদির কাছে আসতেই হৃদি অজ্ঞান হয়ে যায়।

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০৬

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৬

ঘরের এক কোণায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিঁথি।পাশে হৃদি।সামনে বসে আছে সিঁথির মা বাবা আর সাম্যের মা বাবা। ঠিক ঘরের আরেক কণায় ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে সিঁথির দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে সাম্য।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে জ্যান্ত কবর দিতে।তাতেও সিঁথির প্রতি সাম্যের রাগ মিটবে কি না সন্দেহ।

-তোর কী আদো লজ্জা বলতে কিছু আছে?শেষে ঐ নেশাখোর…

গলা আটকে আসছে সিঁথির বাবা শফিক সাহেবের।মেয়ের এইরকম কাজের জন্য তিনি চোখ তুলে তাকাতে পারছেন না।বিয়ের সময় সাড়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণ দিয়ে সাজিয়ে আনা হয়েছিলো সিঁথিকে।সব ঐ নেশাখোর ছেলে নীরবে নিয়ে গেছে।সোফা থেকে উঠে কষিয়ে চড় বসিয়ে দেন মেয়ের গালে শফিক সাহেব।এম্নেতেই পুরো পরিবেশ থমথমে।তার ওপর এমন ঘটনা ঘটায় পুরো ড্রয়িংরুমে আরও নীরবতা ছেয়ে যায়।গালে হাত দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সিঁথি।হৃদি যে কিছু বলবে সে সাহস হৃদির হচ্ছে না।পাকনামির জন্য ইতিমধ্যে সে সাম্য আর মামার কাছ থেকে বকা খেয়েছে।তাই চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয়।

-ভাইজান তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে যাও।লাগবে না আমার এমন দুশ্চরিত্রা মেয়ে।এর চেয়ে ঢের গুনে ভালো মেয়ে আমি সাম্যের জন্য পাবো।

মুখে ভেংচি কেটে সোজাসুজি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় বিলকিস বেগম।বোনের কথা শুনে শফিক সাহেবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েন।তিনি আদোও কী তার মেয়ের সংসার টেকাতে পারবেন?পরে ত আর বিয়েও দিতে পারবেন না।ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে দিক।কিন্তু না।বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।তাই এই মুহুর্তে শফিক সাহেবেরও উচিৎ মাথা ঠান্ডা করে ব্যাপারটা সামাল দেওয়া।করুণ কন্ঠে বোনের কাছে আর্জি জানায় সে যাতে তার মেয়েকে মাফ করেন।কিন্তু বিলকিস বেগম নিজের সিদ্ধান্তে অটল।সে আর সিঁথিকে ঘরে রাখবেন না।শফিক সাহেব অসহায়ের মতো সালাম সাহেবের পায়ে পরেন।মেয়ের সংসার বাঁচাতে।সালাম সাহেবের করুণা হয়। আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। শান্ত গলায় তিনি বলেন,,

-আচ্ছা।তবে এটাই শেষ।

শফিক সাহেব হাফ ছেড়ে বাঁচেন।সিঁথি কেঁদে দেয়।ইনশাআল্লাহ ও এবার নিজেকে শুধরে নেবে।আর ভুল করবে না সে।

কিছুদিনের মধ্যেই সাম্য আর সিঁথির সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়।সেই সাথে বাসার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে যায়।একে একে হৃদির জন্য ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধও আসে।রূপে গুণে সব দিক দিয়েই হৃদি পরিপূর্ণ। তবে বেশির ভাগ সম্বন্ধ গুলোতেই ছেলে বয়স্ক হয়ে যায়।আর বাবা মা ছাড়া। হৃদি মা নেই।তাই সে শ্বশুর শ্বাশুড়ি ছাড়া বিয়ে করবে না।বিয়ের আগে মা বাবার আদর পাইনি বিয়ের পরে অবশ্যই মা বাবার আদর পেতে হবে।হৃদির এমন কথা শুনে বিলকিস বেগম বলেন,,

-শ্বশুর শ্বাশুড়ি ছাড়া বিয়ে করবি ঝামেলা নেই।

হৃদি মুচকী হেসে তখন একটাই উত্তর দেয়,,

-শ্বশুড় শ্বাশুড়ি চাই আমায় তোমায় কে বললো মামী?আমার মা বাবা চাই।

★★
-জ্বী।৪টা মেয়ে আছে।প্রতি মেয়ে ৭০হাজার।রাজী?
-হুম,রাজি।কিন্তু ৫টা হলে ভালো হয়।
-আচ্ছা আমায় কিছুদিন সময় দিন।ব্যবস্থা করছি।

কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয় আলভী।মেয়েদের গোঙানির শব্দে ঘরের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে এসেছে।সবার একই আর্জি তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক।কিন্তু আলভীর তাতে মন ভরে না।তার টাকা চাই।প্রচুর টাকা চাই।মেয়ে গুলো কে দেখে যে কারও জিভেই জল চলে আসবে।আলভীরও লালসা জাগছে মেয়ে গুলোকে দেখে।কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।কাস্টমার বলে দিয়েছে একেবারে খাটি ভার্জিন মেয়ে চাই।তাই ব্যবসার লাভের জন্য হলেও আলভীর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।হ্যাঁ আলভী নারী পাচার কারী দলের লোক।ওর টার্গেটে থাকে এতিম মেয়েরা।চারটা মেয়েকে আজই এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু একটা মেয়ে কম পড়ায় আজ আর আলভীর মেয়েগুলোকে সরানো হয়ে ওঠে না।হাতের কাছে আর কোনো মেয়ে না পাওয়ায় আলভীর হৃদির ওপর চোখ পড়ে।রূপে জান্নাতী হুর।মা মারা গেছে।বাবা তাই পর হয়ে গেছে।মামী আর মামাতো ভাইয়ের বউয়ের চোখের বালি।এই মেয়ে নিখোঁজ হলে কেউ খোঁজ খবর নেবে না।তবে আজ না।লাস্ট বারের মতো মামাকে দেখে আসুক হৃদি।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটা পৈশাচিক হাসি দেয় আলভী।ঘরে থাকা মেয়েগুলো কেঁপে উঠে।এরই মধ্যে হৃদির ডাক আসে,,

-আলভী।
-যাই।

কথাটা বলেই আলভী ঘর থেকে বেরোয়।ভালো করে দরজা আটকিয়ে হৃদির কাছে যায়।হৃদি ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে,,

-তোমার ভাই কিন্তু পড়াশোনায় ঢিল দিছে।হোমওয়ার্ক দুই দিন ধরে পাই না।কাল যেন পাই।
-এই বলদ।এত ভালো একটা টিউটর আনলাম তাও তুই… আজকে তোর হচ্ছে।

হৃদিকে বিদায় করে দিয়ে প্ল্যান সাজায় আলভী।সেই প্ল্যানে সাহায্য করে আলভীর মা।নারী ও শিশু পাচার কারী লোকের কাছে তিনি বিউটিআম্মা নামে পরিচিত।নারী ও শিশু পাচার করা ছাড়াও তিনি মাদক ব্যবসায়ী। জেলে গিয়েছেন বহুবার।কিন্তু কুকুরের লেজ তো আর সোজা হয় না।

যথারীতি আর পাঁচটা দিনের মতো হৃদি বিকালে অভিকে পড়াতে আসে।আলভীর মা তাকে চা খেতে দেন।সেই চায়ের মধ্যেই মিশানো ছিলো নেশাদ্রব্য। চা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই হৃদির মাথা ঘুরাতে শুরু করে আর ঘুম ঘুম পায়।বিউটি আম্মা ওকে নিজের ঘরে শুয়ে রেস্ট নেওয়ার জন্য বলেন।শরীর খারাপ লাগায় হৃদিও তার কথা ফেলতে পারে না।হৃদি বিউটি আম্মার ঘরে প্রবেস করতেই আলভী ওর মুখ চেপে ধরে। বিউটি আম্মার ঘরটা একটু ভেতরের দিকে।ঘরের শব্দ বাইরে খুব একটা যায় না।হৃদি চিৎকার করে।কিন্তু ঐ!বাইরে শব্দ যায় না।তাই হৃদি কোনো সাহায্য পায় না।বিউটি আম্মা এসে হৃদির হাত পা বাঁধেন।আলভী পরে হৃদির মুখ বাঁধে।পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেই ঘরে।যেখানে মেয়েগুলো আছে।

হৃদির নেশারঘোর কাটে প্রায় ঘন্টা তিনেক পর।নিজেকে আবিষ্কার করে তখন অন্ধকার ঘরে।আশেপাশে শুধু মেয়েদের গোঙানির শব্দ।হাত পা মুখ বাধা থাকায় কেউ কিছু করতে পারছেনা।এই মুহুর্তে হৃদি কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।মাথা করছে না তার।অন্ধকারে আবছা আলোয় যা জিনিস দেখা যাচ্ছিলো এখন হৃদি তাও দেখতে পারছে না।ঝাপসা হয়ে আসছে চারপাশটা।

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০৫

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন (কন্ঠ)
#পার্ট৫

বাসার আশে পাশে তন্ন তন্ন করে সিঁথিকে খোঁজা হয়।সব বান্ধবীর বাসায় খোঁজ নেওয়া হয় যে সিঁথি কারও বাসায় গিয়েছে কি না।কিন্তু সবারই একই উত্তর সিঁথি তাদের কারও বাসায় যায় নি।তাহলে গেলো কোথায়?থানায় কী জিডি করা উচিৎ?কিন্তু পুলিশ কী আদোও মামলা নেবে?যেহতু এখনো বারো ঘন্টা পেরোয় নি সিঁথি নিখোঁজ।বাইরে থেকে এসে একরাশ হতাশা নিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে সাম্য।দুপুরের দিকে সিঁথির আচরণ এখনো হৃদির মনে নাড়া দিচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে,সিঁথির নিখোঁজ হওয়ার সাথে দুপুরের কলের কোনো কানেকশন আছে।মনে জমে থাকা কিছু প্রশ্ন নিয়ে সে সাম্যের কাছে যায়।হৃদি কাছে যেতেই সাম্য মাথা উঁচু করে হৃদির দিকে তাকায়।আর বলে,,

-আমি এখন খাবো না।তুই যা।
-না খেলে তো শরীর খারাপ করবে।
-এক্টা মানুষ নিখোঁজ আর তুই ভাবলি কিভাবে এই পরিস্থিতিতে আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে।

ঝাঝালো কন্ঠে ধমকের সুরে হৃদিকে কথা গুলো শুনিয়ে দেয় সাম্য।সাম্যের এমন আচরণে হৃদি কেঁপে উঠে।সাম্য খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে।সহজে রাগ করে না। তবে যখন রাগ করে তখন পুরো আগ্নিওগিরির মতো ফেটে যায়।আগ্নেয়গিরির আশে পাশে থাকা ভুমি,জিনিস গুলোর মতো হৃদি কেঁপে ওঠে।

-তোমায় কিছু বলতাম আমি সাম্যদা।
-কী?
-সিঁথি দি না আজকে দুপুরে কার সাথে যেন কথা বলো।আমি ঘরে ঢুকতেই সিঁথি দি রেগে যায়।আমার মনে হয় সিঁথি দির মিসিং হওয়া আর দুপুরের বিহেভিয়ার এবং কলের কোনো না কোনো কানেকশন আছে।
-কার সাথে কথা বলেছে জানিস?
-জানলে তোমায় বলতাম নাকি?ভাবলাম তোমার কাজে লাগবে তাই বললাম আর কী!?

কথাটা বলেই হৃদি সাম্যের ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।ওদিকে নির্জন রাস্তায় ব্যাগে গয়নাগাটি আর জামা কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিঁথি।সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু নীরবের খবর নেই।নির্জন রাস্তায় একা এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সিঁথির একটুও ভাল্লাগছে না।প্রচন্ড ভয় করছে।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।আল্লাহ না করুক কোনো যদিও অঘটন ঘটে যায়।প্রায় মিনিট পনেরো পরে কোনোরকমে হাঁটতে হাঁটতে নীরব আসে।নীরবের অবস্থা দেখে সিঁথির বুঝতে বাকী রইলো না যে নীরব নেশা করেছে।

-তুমি আবার নেশা করেছো?
-কী মনে হয়?তুমি তোমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে করে নেবে আর আমি আঙুল চুষবো?

টলতে টলতে সিঁথির কথার জবাব দেয় নীরব।সাথে পালটা উত্তরও করে।সিঁথিও সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে দেয়।

-আমি তো ইচ্ছে করে বিয়ে করেছি!বাবা মা আমায় জোর করে সাম্যের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
-কি জানি কার মনে কী থাকে সেই ভালো জানে।যাক গে বাদ দাও।যা যা বলেছিলাম এনেছো?
-হু।
-কই?

সিঁথি নীরবের সামনে ব্যাগ এগিয়ে দেয়।চিলের মতো ছো মেরে নীরব সিঁথির হাত থেকে নিয়ে যায়।ব্যাগ খুলে সব কিছু ঠিক আছে কি না দেখতে লাগে।ব্যাগে সিঁথি নিজের জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে রেখছিলো।নীরব সেগুলো এলোমেলো করে ব্যাগ থেকে বের করে ছুড়ে ফেলে মাটিতে।নীরবের এই রকম আচরণে সিঁথি কিছুটা ঘাবড়ে যায়।কাঁপা কন্ঠে সে বলে,,

-কী করছো এই সব নীরব?

নীরব সিঁথির কথার জবাব দেয় না।গয়না ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতে নেয়।সিঁথি বাধা দেয় তাকে।

-কই যাও আমায় রেখে?
-হাত ছাড়
-নাহ ছাড়বো না।তোমার জন্য আমি স্বামী সংসার ফেলে আসলাম আর তুমি আমায় ফেলে রেখে যাচ্ছো?

নীরব কী করবে ভেবে পায় না।পাশে থাকা ইটের টুকরো দিয়ে আঘাত করে সিঁথির মাথায়।সিঁথি অজ্ঞান হয়ে যায়।আশে পাশে তখন কোনো মানুষ ছিলো না।নীরব গয়নার ব্যাগটা নিয়ে পালিয়ে যায়।সবুজ ঘাসের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে সিঁথি।

শুনশান নীরব রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট নেই।চাঁদের জোসনা,টর্চ আর ফোনের ফ্লাস লাইটের আলোই ভরসা।মানুষ জনের সমাগমও কম এখানে।এক ব্যক্তি সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।চাঁদের জোসনায় তিনি আবছা আবছা দেখতে পায় যে রাস্তার ধারে ঘাসের ওপর কেউ পরে আছে।লোকটা সেখানে যায়।গিয়ে দেখে একটা মেয়ে ঘাসের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।লোকটা ফোনের রিঙটোন শুনতে পায়।খুঁজে দেখে কাপড়ের নিচে পড়ে ছিলো ফোনটা।সম্ভবত মেয়েটারই হবে।লোকটা কল রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে হৃদি,,,

-হ্যালো সিঁথি দি, তুমি কই?বান্ধবীর বাসায় যাবা বলে বের হইছিলাম।কোথাও তো পেলাম না।আর ফোন ধরতেছিলা না কেন?
-জ্বী হ্যালো!আপনি যাকে চাইছেন সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
-আপনি কে?
-জ্বী আমি আকাশ।রাস্তার ধার দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখি।কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটার ফোন বাজছে।রিসিভ করতেই আপনি…
-কোথায়?জায়গায় নাম বলেন।যলদি বলেন

আকাশ জায়গাটার ঠিকানা দেয় হৃদিকে।হৃদি আকাশকে সেখানে কিছুক্ষণ থাকতে অনুরোধ জানায়।দিন কাল ভালো না।জানোয়ারে ভরে গেছে দেশটা।খবরের কাগজ খুললেই শুধু ধর্ষণ ধর্ষণ আর ধর্ষণ।সবাইকে বিশ্বাস করা যায় না।আকাশ যেহেতু ফোন রিসিভ করে সব জানিয়েছে তাই ওকে বিশ্বাস করাই যায়।হৃদি আর সাম্য আকাশের বলা ঠিকানায় রওনা দেয়।রাত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া খুব একটা নেই।তাই হৃদি সাম্যের সিঁথির কাছে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগে নি।হৃদি আর সাম্য গিয়ে দেখে সিঁথি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।চারপাশটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিঁথির আনা জামা কাপড়।হৃদি গিয়ে সিঁথিকে ধরে।আকাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাম্য তাকে বিদায় করে দেয়।চারপাশটা ভালো করে দেখে সাম্য।

-গয়না গাটি নিয়েই তো বাসা ছাড়ছে।তো ঐগ্লা কই?
-উফফ সাম্যদা এখন এইসব নিয়ে ভাবার সময়?দেখো না সিঁথি দি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।প্লিজ কিছু একটা করো।আশে পাশে দেখো পানি পাও কি না।
-থাকুক অজ্ঞান হয়ে।ওর মতো চরিত্রহীন মেয়ের বেঁচে থাকারই অধিকার নাই।

ঝাঝালো কন্ঠে কথাটা হৃদিকে বলে সাম্য।সরল মনে মেয়েটা ভুল করে ফেলেছে।তাই বলে সাম্য এমন করবে?মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়।সাম্যের সিঁথির প্রতি এমন আচরণে হৃদির খুব রাগ হচ্ছে।সেও সাম্যকে পালটা ধমকের সুরে বলে,,

-তোমায় বলছি আমি পানি আনতে।না আনলে বলো আমি আনতেছি।এতই যদি রাগ সিঁথি দির ওপর তো আসলে কেন আমার সাথে?আমি একাই আসতাম।

সাম্য আর হৃদিকে কিছু বলে না।কথায় কথা বাড়ে।বাইকের কাছে গিয়ে দেখে বোতল আছে কিন্তু পানি নেই।আশে পাশে খুঁজে একটা পুকুর পায়।সেখান থেকেই পানি এনে হৃদির হাতে দেয়,,

-নে পানি নিয়ে আমায় উদ্ধার কর।

হৃদি মুখ ভেঙচি কেটে সাম্যের হাত থেকে পানি নেয়।সিঁথির মুখে পানির ছিটা দেয়।পর পর তিনবার পানির ছিটা দেওয়ার পর সিঁথির জ্ঞান ফিরে।এই মুহুর্তে সাম্যের ইচ্ছা করছে সিঁথির গালে কষিয়ে চড় মারতে।বেহায়া মেয়ে কোথাকার।গয়নাগাটি নিয়ে পালিয়েছে।এতই যদি সমস্যা তো সাম্যকে বলতেই পারতো।মুক্তি দিয়ে দিতো সাম্য তাকে।তারপর হৃদিকে নিজের করে নিতো সে।হৃদি ধরে সিঁথিকে দাঁড় করায়।সাম্য তেড়ে যায় সিঁথির দিকে।কিন্তু হৃদির চোখ রাঙানির কাছে হার মানতে হয় তাকে।

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০৪

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট৪

তিন দিন হলো হৃদি আলভীর ভাই অভিকে পড়াচ্ছে।মামার বাসা থেকে আলভীর বাসায় আসতে প্রায় দশ মিনিট লাগে রিক্সায় গেলে।আর হেঁটে গেলে আধঘন্টা লেগে যায়।কিন্তু একটা বিষয়ে হৃদির খটকা লাগছে।সে এখন পর্যন্ত আলভীর মা বাবাকে দেখেনি।এত বড় বাড়িতে একটা ছেলে একটা বাচ্চাকে নিয়ে তো কখনোই একা থাকতে পারবে না।হৃদি আবার সোজা কথার মেয়ে।সেদিন হৃদিকে আলভী এগিয়ে দিচ্ছিলো।এমন সময় হৃদি বলে উঠে,,,

-আচ্ছা পুরো বাসায় কী তুমি আর অভি একাই থাকো?
-আরেহ তুমি পাগল নাকি?আমি একা থাকবো কিভাবে?
-নাহ মানে তোমার বাবা মা কাওকে দেখলাম না তো!তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কী!

হৃদির কথা শুনে আলভী মুচকী হাসে।আর বলে,,

-বাবা ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছেন অনেক দিন আগে।মা চাকরি করেন তাই এখন পর্যন্ত মাকে দেখতে পাও নি।

হৃদি আর কিছু বলে না।আলভীর কথা শুনে মুচকী হাসে।ইদানীং হৃদির মুচকী হাসি দেওয়া খুব বেড়েছে।কথায় কথায় সে মুচকী হাসে।রিক্সা না পাওয়ায় আজ হৃদি হেঁটেই বাসায় যায়।বোরখাটা ছেড়ে মুখ ধুয়ে সিঁথির ঘরে যায়।সিঁথি তখন ফোনে কথা বলছিলো।হৃদি গিয়েই সিঁথিকে ডাক দেয়।হৃদির ডাকে সিঁথি অনেকটা চমকে যায়।সাথে রেগেও যায়।ধমকের সুরে হৃদিকে বলে,,

-জানিস না ? কারও ঘরে ঢোকার আগে নক করে ঢুকতে হয়!

সিঁথির এমন ব্যবহারের জন্য হৃদি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।একটু ঘাবড়ে যায় সে।কাঁপা কন্ঠে বলে,,

-স..স..সরি সিঁথি দি।আমি বুঝতে পারি নাই।
-কি জন্যে আসছিলি বল।
-মা..মা..মামী তোমায় ডাকছে।
-আচ্ছা আসছি।তুই যা।

সিঁথির কথা মতো হৃদি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। হৃদি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই সিঁথি আবার ফোনে কথা শুরু করে। হ্যা এতক্ষণ সে তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে কথা বলছিলো।অবশ্য প্রাক্তন বলাটা অত মানায় না।কারণ সিঁথি এখনো ছেলেটার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে।ছেলেটা সিঁথির নাম্বার যোগার করে সিঁথির সাথে যোগাযোগ করে।সিঁথি কয়েকদিনে ওর প্রাক্তনকে ভুলে গেলেও ছেলেটা যে চে সিঁথিকে ফোন করায় পুরোনো মায়াটা জেগে উঠে।আমারদের সমাজে না কিছু মানুষ আছে!খুব বোকা। সবাইকে নিমেষেই নিজের আপন ভেবে নেয়।হৃদিও তাদের একজন।হৃদি সিঁথিকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবলেও সিঁথি হৃদিকে আমলেই নেয় না। ফুপির মতো সিঁথির কাছেও হৃদি এই বাড়ির আশ্রিতা। আগে যা ভালো ব্যবহার করেছে সিঁথি হৃদির সাথে তা সব লোক দেখানো ছিলো।এক কথায় যাকে বলে আগলা পিরিত।মামীর মতো হৃদির সিঁথি দিও চায় সে বিদায় হোক।

-মা ডাকছিলে?

সিঁথির ডাকে পিছন ফিরে তাকায় বিলকিস বেগম।তার পাশে বসেই তরকারি কাটছিলো হৃদি।বিলকিস বেগম সিঁথিকে তরকারি কাটার নির্দেশ দেন আর হৃদিকে বলেন ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছে ফেলতে।হৃদি মামীর আদেশ পালনের জন্য লেগে পড়ে ঝাড়ু নিয়ে।ঘর ঝাড়ু দেওয়া হলে একে একে ঘর মুছে হৃদি।এরই মধ্যে বাসার সবাই গোসল সেরে ফেলে।ঘর মোছা শেষ করে সবে ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়েছে তো মামির ডাক পড়ে,,,

-হৃদি!কাপড়গুলো ধুয়ে দে।
-যাই মামী।

সাম্য বরাবরই অগোছালো টাইপের ছেলে।কোনো কিছুর ঠিক নেই।প্রায় এক সপ্তাহের জামা কাপড় জমে আছে।একরাশ বিরক্তি নিয়ে সিঁথি সেগুলো হৃদির দিকে ছুড়ে মারে।ইদানীং সিঁথির আচরণ হৃদির কাছে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে।আজ আরও বেশি লাগছে।নক না করে ঘরে যাওয়ার কারণে হয়তো সিঁথি রাগ করেছে।আর রাগ করাটা স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই কোনো দরকারি কথা বলছিলো।আর সেই সময় হৃদি ঢুকায় সিঁথি হয়তো বিরক্ত হয়েছে।কাপড় গুলো ধুয়ে ছাদে রোদে দিতে যায় হৃদি।তখনই সিঁথি চুল ঝাড়া দিতে দিতে ছাদে আসে।সিঁথিকে দেখে হৃদি গলা ঝেড়ে কাশে।সিঁথি হৃদির দিকে তাকিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে,,

-কিছু বলবি?
-হ্যা।সরি সিঁথিদি।
-কেন?
-নক না করে ঘরে ঢুকেছিলাম।তুমি মেইবি রাগ করছো আমার ওপর।

সিঁথি মুচকী হাসে।তোয়ালেটা রোদে শুকা দিয়ে হৃদিকে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে যায়।হাত দুটো রেলিঙে ভর দিয়ে বলে,,

-জানিস হৃদি?ইদানীং না নিজের একটা বেড সাইড নিজেই ধরছি।এই বেড সাইডটা না আগে ছিলো না।হঠাৎ করে কিভাবে এই বেড সাইডটা আমার মধ্যে এলো আমি নিজেই বুঝছি না।
-কী বেড সাইট সিঁথিদি?
-অল্প কিছুতেই রিয়াক্ট করে ফেলি।ঠিক যেমনটা তোর সাথে করেছিলাম!তুই রাগ করিস না প্লিজ।
-আরেহ রাগের কী আছে।আমার দোষ ছিলো বলেই তো তুমি আমায় ধমক দিয়েছিলে।

হাসতে হাসতে সিঁথির কথার জবাব দেয় হৃদি।সিঁথি মুচকি হেসে হৃদির গালে হাত দিয়ে বলে,,

-পাগলী মেয়ে।

অফিস থেকে আসতেই সাম্য হৃদির ঘরে যায়।হৃদি তখন বিছানায় হেলান দিয়ে বই পড়ায় ব্যস্ত।সাম্যকে দেখা মাত্রই হৃদি উঠে দাঁড়ায়।হৃদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাম্য বলে,,

-সিঁথি কই?
-বিকেলের দিকে বের হইলো।বললো বান্ধবীর বাসায় যাইতেছে বেড়াইতে।কোনো দরকার?
-আমার নীল টি শার্টটা খুঁজে পাচ্ছি না।
-আসো আমি দিতেছি।

বইয়ে বুক মার্ক দিয়ে হৃদি সাম্যের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সাম্যও পেছন পেছন যায়।সাম্যের ঘরে ওর জামা কাপড় রাখার জন্য আলাদা আরএফএল এর একটা ওয়ার্ডফ আছে।বিকেলে ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে এসে সাম্যের কাপড়গুলো ভাজ করে সেখানেই রেখেছিলো হৃদি।ড্রয়ার থেকে টিশার্টটা বের করে সাম্যের হাতে দেয় হৃদি।

-এত অলস হলে চলবে না।দুইদিন পর বাচ্চার বাবা হবা।আর এখনো তোমায় জিনিস খুঁজে দিতে হয়?!

কথাটা বলেই হৃদি রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়।অফিস থেকে এসে সন্ধ্যায় চা খাওয়ার অভ্যেসটা সাম্যের বেশ পুরোনো।আগে হৃদিই সাম্যকে চা বানিয়ে খাওয়াতো।বিয়ের পর সিঁথি সেই দায়িত্ব পালন করে। আজ সিঁথি না থাকায় হৃদিকেই সাম্যের জন্য চা বানাতে হচ্ছে।সাম্যের ঘরের চৌকাঠ পেরোনোর আগে হৃদিকে সাম্য পেছন থেকে ডাক দেয়।হৃদি পেছন ফিরে তাকায়।

-তোর কথায় তো সিঁথিকে বিয়ে করলাম।কী মনে হয় তোর সিঁথিকে বিয়ে করে আমি সুখে আছি?
-কম আসি তোমার সামনে।কথাও কম বলি যাতে তোমার মন আমার ওপর থেকে সরে যায়।আসলে কী জানো?একই ছাদের তলে আছি তো।তাই আমাদের কারও মায়া কাটতে চাচ্ছে না একে অপরের প্রতি।তাড়াতাড়ি এই বাসা থেকে বিদায় হতে পারলে আমিও শান্তি পাই আর তুমিও।
-হ্যা তাই কর।তবে আমি বলে দিলাম ভেতরে ভেতরে যে আগুনে আমি পুড়ে মরছি তার জন্য দ্বায়ী বাসার সবাই।বিশেষ করে তুই।
-জানি আমি।কিন্তু আমার কাছে নিজের ভালো থাকা থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মামা মামীর ভালো থাকা।মা মরা এতিম মেয়ের জন্য তারা যা করেছে তার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো কি না জানি না।বাবা-মার ভালো থাকার জন্য ছেলে হিসাবে তুমি এইটুকু সেক্রিফাইজ করতেই পারো।আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।

কথাটা বলেই হৃদি দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।সাম্য হৃদিকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে যায়।সাম্যের হাতে চায়ের কাপ খানা দিয়ে হৃদি আবার নিজের ঘরে যায়।চা খেয়ে সাম্য দেখে ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা সাতটা বাজে।অথচ এখনো সিঁথির আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।সে সিঁথিকে ফোন লাগায়।কিন্তু ফোন বন্ধ!হয়তো চার্জ শেষ।অফিসের কিছু ফাইল আলমারিতে ছিলো।সাম্য সেগুলো বের করতে আলমারি খুলে।আলমারি খুলতেই সে আকাশ থেকে পড়ে।আলমারি সিঁথির কোনো জামা কাপড় নেই।লকারটাও খোলা।সাম্য দেখে লকারে সিঁথির কোনো গয়না নেই।সব ফাঁকা।সাম্য হন্তদন্ত হয়ে বিলকিস বেগমকে ডাক দেয়।

-আম্মু সিঁথি কই?
-বান্ধুবীর বাসায় গেছে।
-কোন বান্ধবীর বাসায় গেছে কিছু বলছে?আর সঙ্গে কী ছিলো।
-কি আর থাকবে ছোট পার্স।ও নিজে থেকে বলে নাই কোন বান্ধুবীর বাসায় গেছে।আমিও যে চে জিজ্ঞাস করি নাই।
-বোকার মতো কাজ করছো।
-কেন কী হইছে?
-ঘরে সিঁথির জামা কাপড় গয়না গাটি কিছু নাই।
-কীহ?

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০৩

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট৩

-আচ্ছা তুমি কী বাচ্চা পড়াও?
-আগে পড়াইতাম।এখন পড়াই না।কেন?

ফোনের এপাশ থেকে আলভীর কথার জবাব দেওয়ার সাথে পালটা প্রশ্ন করে হৃদি।ফোনের ওপাশ থেকে আলভী জবাবে বলে,,

-আমার ছোট ভাই টা ক্লাস টু তে উঠলো।ওর জন্য প্রাইভেট টিউটোর খুজছিলাম।পড়াবে আমার ছোট ভাইটাকে?
-দেখি।আমি মামার সাথে কথা বলে তোমায় জানাবো নি।
-আচ্ছা।কয়টা বাজে খেয়াল আছে মেডাম?

ফোনের ওপাশ থেকে আলভীর বলা কথা শুনে হৃদি ঘড়ির দিকে তাকায়।দেখে দেড়টা বাজে।এত রাত হয়ে গেছে হৃদি বুঝতেই পারেনি।আলভীর সাথে কথা বললে সময় কেমন যেন তাড়াতাড়ি বয়ে যায়।

-কী হলো মেডাম?বললেন না তো কয়টা বাজে।

ফোনের ওপাশ থেকে হৃদির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে আলভী।লজ্জা মাখা কন্ঠে হৃদির আলভীর প্রশ্নের উত্তর দেয়।

-ইয়ে মানে…দেড়টা।
-ঘুমাবেন না?
-ঘুম আসছে না।
-ঘুমায় পড়ো।আবার সকালে উঠেই তো তোমাকে রাজ্যের কাজ করতে হয়।কখনো খারাপ লাগে না?
-খারাপ লাগবে কেন?নিজের ঘরে কাজ করতে কার খারাপ লাগে!
-নিজের ঘর?তুমি না তোমার মামাবাড়ি থাকো।
-মামা কী আপন না?মা মারা যাওয়ার পর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হই।তখন তো মামাই আমায় কাছে টেনে নিয়েছে।সাম্যদার থেকে মামা আমায় কোনো অংশে কম দেখে না।
-কিন্তু তোমার মামি?

আলভীর কথা শুনে হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।হাসি মাখা কন্ঠে বলে,,

-মামি তো আমায় আরও বেশি ভালোবাসে।তাই তো বকা ঝকা করেন।অনেক রাত হয়েছে।আল্লাহ হাফেজ
-হুম আল্লাহ হাফেজ।

হৃদি ফোন কেটে দেয়।স্টাডি টেবিলের পাশে চার্জিং পয়েন্ট।ফোন চার্জে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে হৃদি।সে জানে মামির কাছে হৃদি বোঝা।কিন্তু ঘরের কথা কী আর বাইরের মানুষকে বলা যায়?লোকে ছি ছি করবে।ছোট বেলায় হৃদি বেশ পেট পাতলা স্বভাবের ছিলো।কোনো কথাই গোপন রাখতে পারতো না।তাই হৃদির মা হৃদিকে বলতেন,,

-আমাদের কাছে বলছিস বল। কিন্তু বাইরের মানুষের কাছে ঘরের কথা কখনো বলবি না।লোকে ছি ছি করবে আর সুযোগ পেলে কটু কথা বলবে।

সময় আর পরিস্থিতি কত কিছুই বদলে দেয়।৪-৫বছর আগের সেই হৃদি এখন বদলে গেছে।কিছু হলেই বাড়ি মাথায় করতো যে মেয়ে আজ চুপচাপ থাকতে শিখে গেছে।গোপন রাখতে শিখে গেছে হাজারো কথা।যে মেয়ে গোসল করে বাথরুমে কাপড় ফেলে আসতো অন্য কেউ তার কাপড় ধুবে বলে সেই মেয়ে আজ ৪-৫জনের কাপড় দিব্যি ধুয়ে দিচ্ছে।হাত নষ্ট হয়ে যাবে বলে যে মেয়ে বাসন মাজতো না আজ সেই মেয়ে তিনবেলার এটোঁ বাসন ধুচ্ছে।কেউ নিজের জিনিসের দিকে তাকালে যে মেয়ে তাকে সহ্য করতে পেতো না।আজ সেই মেয়ে হাসি মুখে প্রিয় জিনিসটাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে।মেয়েদের জীবনটা ঠিক এই রকমই।সেক্রেইফাইজ আর মানিয়ে নিয়েই চলে যায়।দুটো চোখের একটি দিয়ে নিজের পরিবার আপনজনের সুখ দেখে।আর অন্য চোখ দিয়ে ভালোবাসার মানুষটার।নিজের দিকে তাকানোর সময় সুযোগ কোনোটাই নেই তার।কেন যেন ইদানীং রাত হলে হৃদির মায়ের কথা খুব মনে পড়ে।আজকেও মনে পড়ছে।হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখের কার্ণিশ থেকে জল গাল গড়িয়ে বালিশে পড়ে।

★★

-হৃদি তো এইচএসসি দিলি এইবার তাই না?
-জ্বী মামা।

কথাটা বলে সালাম সাহেবের প্লেটে তরকারি দেয় হৃদি।সালাম সাহেব রুটির টুকরো মুখে দিয়ে বলেন,,

-তা বিয়ে সাদি করার ইচ্ছা কী এখনো আছে?না আর একটু পরে করবি।
-তোমরা যা ভালো বুঝো।তোমরা তো আমার ভালোই চাইবে।কখনো খারাপ চাইবে না।
-তোর পছন্দের কেউ আছে?

কথাটা শোনা মাত্রই হৃদি সাম্যের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,

-মামি কিছু লাগবে তোমার?
-নাহ।

কারও বুঝতে বাকী রইলো না যে হৃদি কথাটা এড়িয়ে গেলো।সবার খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন হৃদি আর সিঁথি খেতে বসে।খাওয়া শেষে সালাম সাহেব উঠে যাচ্ছিলেন।তখন হৃদি তাকে বলে,,

-মামা আমি যদি একটা টিউশনি করি তো তোমাদের কী কোনো সমস্যা হবে?
-বাসায় গিয়ে পড়াবি নাকি স্টুডেন্ট বাসায় আসবে।

পানির গ্লাসটা টেবিলে রেখে হৃদিকে পাল্টা প্রশ্ন করে সাম্য।সাথে সাথে হৃদি জবাব দিয়ে দেয়,,

-বাসায় গিয়ে ভাইয়া।
-বাসা কই?
-তা তো জিজ্ঞাস করি নি।
-আচ্ছা আমায় জানাস।

কথাটা বলেই সাম্য অফিস ব্যাগ কাঁধে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সালাম সাহেব উঠে ঘরে যান।পেছন পেছন তার সহধর্মিণীও যান।

সিএনজিতে আনমনে বসে আছে সাম্য।শহুরে যান্ত্রিক জীবনের কলহল তার কান স্পর্শ করেনি।সেদিনই সাম্যের ফুপি পুতুলটাকে সাম্যের কোলে দিলো।দেখতে দেখতে পুতুলটা বড়ও হয়ে গেলো।হয়ে গেলো কৈশরের প্রেম।পরিস্থি পুতুলকে সাম্যের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।যাকে নিয়ে সাম্যের পুরো জীবন কাটানোর কথা ছিলো সে একদিন অন্যকারও হয়ে যাবে।ভাবতেই সাম্যের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।

রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। সাম্য ছাদে দাঁড়িয়ে নিজ মনে সিগারেট টেনে যাচ্ছে।হৃদি জানে যে এই সময় সাম্য সিগারেট টানে।তাই সে ছাদে আসে।সিঁথির সাথে বিয়ের কথা জানানো হয়েছিলো সাম্যকে।সে সোজা না করে দেয়।তা নিয়েই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন বিলকিস বেগম আর সালাম সাহেব।এবং তা হৃদি আড়াল থেকে শুনতে পায়।সবার মতো সেও চেষ্টা করে সাম্যকে রাজী করানোর।হৃদি ডাক দিলে সাম্য পেছন ফিরে তাকায়।হৃদিকে দেখে সাম্যের মলিন মুখে হাসি ফুটে।সিগারেটটা প্রায় শেষের দিকেই।সিগারেটের ফিল্টারটা ছুড়ে ফেলে মেঝেতে।ছাদের রেলিংয়ের সাথে ধাক্কা লেগে অনাদরে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে পড়ে থাকে সিগারেটের জলন্ত ফিল্টার।
সাম্য হৃদির কাছে গিয়ে বলে,,

-শুনলাম সিঁথির সাথে মা বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।তুই কিছু জানিস?
-হু জানি।এও জানি তুমি বলেছো সিঁথিদিকে তোমার দ্বারা বিয়ে করা সম্ভব নয়।
-ভুল কিছু বলেছি?আমার পুতুল থাকতে আমার অন্য কাওকে চাই না।
-অবশ্যই।সব কিছু সম্ভব না সাম্যদা।তুমি জানো আমি আশ্রিতা।
-আশ্রিতা তো কী হইছে!তোকে আমি বিয়ে করে পার্মানেন্টলি এই বাড়ির সদস্য বানাবো।

হৃদির গালে হাত দিয়ে একরাশ আশা ভরা কন্ঠে কথাটা সাম্য বলে।হৃদি এক ঝটকায় সাম্যের হাত সরিয়ে দেয়।হৃদির এমন আচরণের জন্য সাম্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।সে অবাক দৃষ্টিতে সাম্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।করুণ কন্ঠে বলে,,

-হৃদি!তোর কী কিছু হয়েছে?এমন করছিস কেন তুই?
-কী হবে কিছু না।
-তাহলে এমন করছিস কেন?তুই কী আমায় আর ভালোবাসিস না?
-সব ভালোবাসা পুর্ণতা পায় না সাম্যদা।অন্যের খুশীর জন্য কখনো কখনো নিজেদের সেক্রিফাইজ করতে হয়।
-কী বলতে চাইছিস তুই?
-সিঁথিদিকে এই বাড়িতে বউ করে নিয়ে এসো।

হৃদির মুখে এমন কথা শুনে সাম্যের মাথায় রক্ত চড়ে যায়।রাগে ওর চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।

-পাগল হইছিস?কী বলতেছিস এগুলা?ওর মতো মেয়েকে আমি বিয়ে করবো?নেশাখোর ছেলের সাথে সম্পর্ক। দুই তিন বার বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।
-জানো সাম্যদা মেয়েরা না অনেক সরল হয়!হতে পারে ছেলেটা সিঁথিদিকে ফুসলিয়ে বের করে নিয়ে গিয়েছিলো।অন্তত আমার খুশীর জন্য সিঁথিদিকে বিয়ে করো।

কথাটা বলে হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাম্য সিগারেটে আগুন ধরিয়ে এক টান দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,

-আমি ওকে বিয়ে করলে তুই খুশী হবি?
-কেন নয়?অবশ্যই খুশী হবো।
-কিভাবে?
-মামা মামি খুশী হবে।
-আর তুই? আমি?
-সব সময় নিজেদের কথা ভাবলে হবে?কবি বলেছেন ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।

হৃদির কথা শুনে সাম্য ফিক করে হেসে দেয়।এই মেয়েটার বাচ্চামি স্বভাব হুট করেই চলে আসে।তাও সিরিয়াস মোমেন্টে!তখন বা হেসে থাকা।যায় না।হৃদি চলে যাচ্ছিলো।ঠিক সেই সময় সাম্য হৃদিকে পেছন থেকে ডাকে।হৃদিও পেছন ফিরে তাকায়।সাম্য মুচকী হেসে বলে,,

-বেশ তাই হবে।আমি সিঁথিকেই বিয়ে করবো।কিন্তু একটা আবদার রাখবি?
-কী?
-কাছে আয়।

হৃদি সাম্যের কাছে যায়।সাম্য হৃদির কপাকে এঁকে দেয় তাদের ভালোবাসার শেষ চিহ্ন।হৃদিও চোখ বন্ধ করে তা পরম আয়েশে গ্রহন করে।

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০২

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট২

যে কয়েকদিন সালাম সাহেব হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সে কয়েকদিন প্রায়ই ছেলেটার সাথে হৃদির দেখা হতো।ছেলেটা যে চে হৃদির সাথে কথা বলতে আসতো।হৃদিও ভদ্রতার খাতিরে ছেলেটার সাথে কথা বলতো।বিষয়টা বিলকিস বেগম খেয়াল করেন।তিনি হৃদিকে ডেকে বলেন,,

-বাইরের ছেলের সাথে এত কথা কিসের তোর?
-মামী আমি তো আর যে চে উনার সাথে কথা বলতে যাই নাই।উনিই আসছেন আমার সাথে যে চে কথা বলতে।তো ভদ্রতার খাতিরে…
-বলতে হবে না ভদ্রতার খাতিরে কথা।এরপর যদি দেখি তো তোর একদিন কী আমার একদিন।

হৃদির কথা শেষ হওয়ার আগেই ধমকের সুরে হৃদিকে কথা গুলো বলেন বিলকিস বেগম।বিলকিস বেগম প্রায়ই হৃদির সাথে কর্কশ গলায় কথা বলেন।তবে আজ যেন কর্কশতার মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছিলো।তাই মামীর কথা শুরুর সাথে সাথে হৃদি কেঁপে ওঠে।প্রায় বিশ দিন হাসপাতালে অবস্থানের পর সালাম সাহেবকে বাসায় নেওয়া হয়।ছেলেটাও সেদিন হৃদিকে অনুসরণ করে হৃদির মামার বাসা চিনে যায়।রিসিপশনের মেয়েটার কাছ থেকে হৃদির মামার বাসার টেলিফোন নাম্বার নেয়।প্রথম দিন ফোন দিতেই সিঁথি কল রিসিভ করে।

-আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?কাকে চাই?
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।আমি হৃদির বন্ধু বলছি।হৃদিকে ফোনটা কী দেওয়া যাবে?আসলে আমি ওর নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি।
-হৃদি তো বাসায় নেই।বাহিরে গেছে।খুব আর্জেন্ট?
-জ্বী।
-তাহলে আপনি ওর নাম্বার নিয়ে নিন।

ছেলেটা সিঁথির কাছ থেকে হৃদির ফোন নাম্বার নেয়।আর তৎক্ষনাৎ হৃদিকে ফোন দেয়।হৃদি তখন রাস্তায় ছিলো।প্রায় ৩-৪বার কল দেওয়ার পরে হৃদি কল রিসিভ করে।

-জ্বী আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।হৃদি না?
-জ্বী কিন্তু আপনি কে?আর আমার নামই বা জানলেন কিভাবে?
-আমি আলভি।মনে আছে?হসপিটালের আলভি
-ওহ আচ্ছা।কেমন আছেন ভাইয়া? আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায়।
-তুমি ভাইয়া বলার আগ পর্যন্ত ভালো ছিলাম।কিন্তু এখন নেই।
-ওমা কী হলো?
-ভাইয়া ডাকটা পুরো কলিজায় লাগে বুঝলা?কষ্ট লাগে খুব
-ওহ আচ্ছা।তাহলে আমি আপনাকে কী বলে ডাকবো?
-নাম ধরেই ডাকতে পারো।প্রবলেম নাই।
-আচ্ছা আলভি।এখন আমি রাখি।রাস্তায় আছি তো!
-আচ্ছা।তাহলে রাতে কথা হবে।
-জ্বী আল্লাহ হাফেজ।

হৃদি কল কেটে দেয়।বাজারের ব্যাগটা ফুটপাত থেকে তুলে বাসার দিকে হাঁটা লাগায়।এম্নেতে বাজার ঘাট সালাম সাহেবই করেন।তিনি অসুস্থ থাকায় সাম্য বাজারঘাট করতো।কিন্তু আজ দুইদিন যাপত সাম্য বাসায় নেই।অফিসের কাজে বাইরে গেছে।তাই হৃদিকেই বাজার ঘাট করতে হচ্ছে দুইদিন যাপৎ হৃদিই বাজার করছে।বাসায় গিয়ে সিঁথির হাতে হাতে কাজ গুলো গুছিয়ে দেয়।আগে বাসায় রান্না বান্নার দায়িত্ব ছিলো বিলকিস বেগমের ওপর।এখন তিনি স্বামীর সেবায় ব্যস্ত। শ্বাশুড়ির পরে তো ছেলের বউয়ের ওপর সংসার সামলানোর দায়িত্ব আসে।সেই সিঁথি রান্নার দায়িত্বে আছে।
দুপুরের খাবার শেষে বাসন গুলো মেজে হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঘুম ঘুম পাচ্ছে খুব।আস্তে আস্তে হৃদি চোখ বুজে।হারিয়ে যায় অতল ঘুমের দেশে।

-তোরা দুজনে আমায় পাগল করে দিবি।কতক্ষণ ধরে তোদের পেছন ঘুরছি।খেয়ে নিলেই তো ঝামেলা শেষ হয়ে যায়।

হাঁপাতে হাঁপাতে কথাটা হৃদি সাম্যকে বলেন মিসেস হেনা।সাম্য আর হৃদি হাসতে হাসতে বলে,,

-হি হি হি আমাদেল ধলতে পালে না।
-তোরা খাবি না?
-নাহ খিতুলি আমাল ভাল্লাগে না ফুপ্পি।

আহ্লাদী কন্ঠে মিসেস হেনার কথার জবাব দেয় সাম্য।সাম্য তখন দশ বছরের বাচ্চা।কিন্তু বাচ্চামি স্বভাবটা তখনও সাম্যের মধ্যে ছিলো।আর সারাক্ষণ হৃদির সাথে থাকতে সেও আধো আধো কথা বলতো।হৃদি সাম্যর কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,,

-সাম্যদার ভাল্লাগে না তো আমালও ভাল্লাগে না।
-ওরে দুষ্টু।দুটোকে আজ এক সাথে বেঁধে খাওয়াবো।

কথাটা বলেই মিসেস হেনা আবার দুইজনের পেছন ছুটতে লাগেন।এবং ধরেও ফেলেন।দুজনকে নিয়ে সোফায় বসান।জোর করে খাইয়ে দেন দুজনকে।খেতে খেতে হৃদি সাম্যকে বলে,,

-সাম্যদা আজকে আমাল পুতুলের সাথে তোমাল পুতুলের বিয়ে দেবে না?
-আমি পড়া গুলো শেষ করে নেই।বিকেলে দেবো বিয়ে।
-আম্মু তুমি পায়েস লান্না কলে দিয়ো।পুতুলের বিয়েতে
-আচ্ছা।এখন খান আম্মাজান।

-হৃদি!এই হৃদি ওঠ।আসরের আজান দিয়েছে।নামাজ পড়বি না?

সিঁথি হৃদিকে ধাক্কা দিছে আর ডাকছে।বিকেল হয়ে গেছে।নামাজ পড়তে হবে না!এই বাসার নিয়ম সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।অনেক কিছু ছাড় দেওয়া গেলেও এই ব্যপারে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।সিঁথির ডাকে হৃদি চমকে উঠে।এতক্ষণ তাহলে হৃদি স্বপ্ন দেখছিলো!

-হ..হ..হ্যা যাই সিঁথি দি।

চোখ কচলাতে ওয়াশরুমে যায় অজুর উদ্দেশ্যে।ইদানীং ছোট বেলা নিয়ে স্বপ্ন খুব বেশিই দেখছে হৃদি।কিন্তু কেন তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না।কারণ আল্লাহ সর্বশক্তি মান।তিনি সব জানেন,শুনেন দেখেন।

খাওয়া শেষে বাসন গুলো মেজে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যায় অতল ঘুমের দেশে।রাত ১২টা নাগাদ হৃদির ঘুম ভাঙে তাও ফোনের শব্দে।ঘুম মাখা চোখ নিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায় সে।নাম্বারটা সেভ করা নেই কিন্তু পরিচিত পরিচিত লাগছে নাম্বারটা….আরেহ এটা তো আলভির নাম্বার।কিন্তু এত রাতে আলভি হঠাৎ ফোন দিলো কেন?নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে বা থাকতে পারে।ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে ক্লান্তিকর কন্ঠে হৃদি বলে,,

-জ্বী বলুন
-ঘুমায় পড়ছিলা নাকি?
-রাত বাজে বারোটা।এই সময় ঘুমানো কী স্বাভাবিক নয়?
-অহ আচ্ছা।তাহলে ডিস্টার্ব করলাম।সরি
-না না ঠিক আছে।কী জন্যে ফোন দিয়েছিলেন সেটা বলুন
-এম্নি। কথা বলতে মন চাইলো তাই ফোন দিলাম।
-হোয়াট?এমনি?মানে কী এগ্লার?
-তোমার মিষ্টি ভয়েজ শুনতে মন চাইলো তাই ফোন দিলাম।
-মশাই রাত বিরাতে এইভাবে অন্য মেয়েকে ফোন দিলে আপনার গার্লফ্রেন্ড রাগ করবে।

কথাটা বলেই হৃদি হেসে দেয়।হৃদির হাসির আওয়াজ ফোনের ও পাশেও যায়।হৃদির হাসি শুনে আলভীও মুচকী হাসে।আর বলে,,

-ও হ্যালো মেডাম।আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।আমি পিউর সিঙ্গেল।By the way আপনার বফ কেমন আছে?
-বফ নাই।
-কেন?
-ডোন্ট নো।আমার ঘুম পাইতেছে।
-আচ্ছা।আর ডিস্টার্ব করবো না।গুড নাইট মেডাম।

প্রতিদিন রাতেই প্রায় হৃদিকে আলভী ফোন দিতো।হৃদিও আলভীর সাথে কথা বলাটা খুব উপভোগ করতো।কোনো দিন ফোন দিতে দেরি হলে হৃদি খুব চিন্তায় পড়ে যেত।এত দিনে ছেলেটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে হৃদির।মেয়েদের মায়া বরাবরই বেশি থাকে।তারা আঠা নষ্ট হওয়া টিপ,ভাঙা চুড়ি,জোড়া হারানো কানের দুলটাও যত্ন করে রেখে দেয়।এই জন্য তাদের মায়াবতী বলা হয়।মায়াবতীর কোনো পুরুষবাচক শব্দ নেই।(হুমায়ুন আহমেদ)
মায়া ভয়ংকর সুন্দর।এই জিনিসটা একটা মেয়ের জীবনে যেমন সুখের জোয়ার বয়ে আনে।ঠিক তেমনই দুঃখ কষ্টও বয়ে আনে।ঠিক যেমনটা হয়েছিলো বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রীর সাথে।তিনি প্রথমে নবাবের মায়ায় পড়েন।পরে ভালোবেসে বিয়েও করেন। কিন্তু সুখ তার কপালে বেশিদিন সয় না।দুঃখ কষ্টের ভাটা পড়ে তার জীবনে।হত্যা করা হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে।বেগম লুৎফান্নেছা এতটাই বাংলার শেষ নবাবের মায়ায় পড়েছিলেন যে পরবর্তী জীবন সে নবারের কবরে প্রদীপ মোমবাতি জ্বালিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন।

চলবে,,,

নিয়তি পর্ব-০১

0

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১

নিজ হাতে প্রিয় মানুষটার বাসর ঘর সাজাচ্ছে হৃদি।বুকে পাথর চাপা দিয়ে মামাতো ভাই সাম্যের বিয়ের সব কাজ করেছে হৃদি।তো এই কাজটা বাদ যাবে কেন?সিঁথি যে এভাবে হৃদির প্রিয় জিনিসটায় ভাগ বসাবে হৃদি কল্পনাও করতে পারেনি।অবশ্য সবটাই হয়েছে পরিস্থিতির চাপে।নেশাখোর ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় সিঁথি।পরিবার উপায় না পেয়ে তড়িঘড়ি করে সাম্য আর সিঁথির বিয়ে দিয়ে দেয়।সাম্যর যে এই বিয়েতে মত ছিলো তা নয়।সে কৈশোর থেকেই হৃদিকে ভালোবাসে।কিন্তু হৃদি জানে তার মামী মানে সাম্যের মা তাকে কিছুতেই মেনে নেবে না।কারণ সে সাম্যদের বাড়ির আশ্রিতা।এম্নেতেই সে তার মামীর চোখের বালি।সে কোনোদিনও হৃদিকে নিজের পুত্রবধূ হিসাবে গ্রহণ করবেন না। তাই নিজে সাম্যকে বুঝিয়ে বিয়ের জন্য রাজী করায় হ্রদি।মাস দুয়েক আগে কাবিন হয়ে গেছে।আজ ঘটা করে অনুষ্ঠান করে সিঁথিকে তুলে আনা হচ্ছে।সিঁথি সাম্যের মামাতো বোন।দুর্সম্পর্কের আত্মীয় হলেও হৃদির খুব ভালো বন্ধু ছিলো সে।এতটাই ভালো বন্ধু যে নিজের প্রিয় জিনিসটাকেই সে সিঁথির হাতে তুলে দিলো।পুরো বাসা খালি। খালিও বলা চলে না।বাসায় শুধ হৃদি আর সাম্যের মা আছেন।বাসর ঘর সাজানো হয়ে গেলে রান্না ঘরে যায় হৃদি।নববধুকে বরণের জিনিসপত্র গুছাতে হবে তো!

হৃদি আর সাম্য পরস্পর মামাতো ফুফাতো ভাই বোন।হৃদির মা হৃদির চৌদ্দ বছর বয়সে অগ্নিদুগ্ধ হয়ে মারা যায়।মা মারা যাওয়ার তিন মাসের মাথায় হৃদির দাদা তাকে নতুন মা এনে দেয়।কিন্তু পর তো কখনো আপন হয় না!সৎমা হৃদির ওপর চালাতে থাকে নির্মম অত্যাচার। বোনঝির মধ্যেই নিজের বোনকে খুঁজে পেতেন সাম্যের বাবা।হৃদির কষ্ট তার সহ্য হলো না।তাই নিয়ে আসেন নিজের কাছে।কিন্তু এখানেও তার স্ত্রীর চোখের বিষ হয়ে যায় হৃদি।কিন্তু যতক্ষণ সাম্যের বাবা বাসায় থাকতেন তখন সাম্যের মা হৃদিকে ফুলের টোকা দেওয়ার সাহস অব্দি পেতো না।

হাতের কাজ গুলো সেরে ফ্রেশ হতে যায় হৃদি।ঠিক সেই সময় গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনোট পায় হৃদি।নিশ্চয়ই সাম্যদা সিঁথিদি কে নিয়ে এসেছে।কোনো রকমে ওড়না দিয়ে মুখ মুছে বেরোয় হৃদি।বধুবরণের নিয়ম কানুন শেষে সিঁথিকে বাসর ঘরে রেখে নিজের ঘরে যেতে নেয়।ঠিক সেই সময়ই সাম্য হৃদির পথ আটকায়। হৃদি সাম্যকে এড়িয়ে যেতে চায়।কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।

-আর কত চোখের জল লুকাবি আমার থেকে ?

হৃদির চোখের জল আর সবার চোখ এড়ালেও সাম্যের চোখ এড়ায় নি।তাই তো পথ আটকে হৃদিকে জিজ্ঞাস করে সাম্য।হৃদি হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বলে,,,

-পথ ছাড়ো সাম্যদা।কাজ আছে আমার।
-আর কত দূরে থাকার বাহানা দিবি।
-বাহানা মানে?আমার সত্যিই কাজ আছে।তুমি সিঁথি দির কাছে যাও।ও তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

কথাটা বলেই হৃদি চলে যায়।অন্যান্য দিনের মতো আজ হৃদির ওপর জোর খাটানোর অধিকার সাম্যের নেই।বিয়ের কাবিন নামায় সই করে সেই অধিকার হারিয়েছে সাম্য।

পহেলা বসন্তে মিসেস হেনার কোল জুড়ে আসে হৃদি।সাম্য তখন পাঁচ বছরের এক চটপটে বাচ্চা।হাসপাতাল থেকে ফুপি একটা পুতুল নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।সাম্য ছুটে যায় সেই পুতুলকে কোলে নেবে বলে।বিছানায় বসিয়ে দেওয়া হয় ছোট্ট সাম্যকে। পুতুল কোলে নিয়ে সাম্য কী খুশী!খেলার সাথী এসেছে সাম্যের। এখন আর একা একা থাকতে হবে না।সাম্যের বাবা বোনের সাথে মিলিয়ে পুতুলের নাম রাখেন হৃদি।সেই হৃদি হয়ে ওঠে সাম্যের কৈশরের প্রেম।আর যৌবনের অপুর্ণ ভালোবাসা।সেই অপুর্ণ ভালোবাসা যে বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিজ হাতে সাম্যের বিয়ের সব কাজ সামাল দিয়েছে।মেয়েরা বড়ই অদ্ভুত জাত।ছোট বেলায় যে মেয়েটি হোঁচট খেয়ে পড়ে ব্যাথা পেয়ে কান্নায় সারা বাড়ি মাথায় তুলতো আজ সেই মেয়েটি ই দিনে বুকে পাথর চাপা দিয়ে হাসি মুখে ঘুরে বেড়ায় আর রাতের আধারে আয়নার সামনে কেঁদে নিজেই নিজেকে স্বান্তনা দেয়।

সব কাজ গুছিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় হৃদি।কানে ইয়ারফোন গুজে প্লে করে অনুপম।রায়ের গান।অনুপম রায়ের গান যেন কেমন করে হৃদির কষ্টে ভাগ বসায়।

তুমি যাকে ভালোবাসো,,,,, স্নানের ঘরে ভাসবে ভাসো,,,তার জীবনে ঝড়,,,,…..তুমি অন্য কারও সঙ্গে বেঁধো ঘর..,,,

গান শুনতে শুনতে হৃদির গাল বেয়ে অশ্রু পড়ে।সবে আঠারো পড়েছে হৃদির।এখনো টিনেজার এইজেই আছে।ভীষণ খারাপ সময় এটা।এই সময় সব ছেলে মেয়েরাই খুব আবেগপ্রবণ হয়।হৃদির ক্ষেত্রেও হয়তো তার ব্যতিক্রম হয় নি।হতে পারে সাম্য তার বয়সের আবেগ।কিন্তু হৃদি?হৃদিও কী সাম্যের কাছে বয়সের আবেগ?কে জানে?হৃদির এখন একটাই চাওয়া।সাম্য সিঁথিকে নিয়ে সুখে থাকুক।

★★

সময় নদীর স্রোতের মতো বহমান।কেটে গেছে প্রায় ছয়টা মাস।এই কয়েক মাসে হৃদি সাম্যের সামনে খুব একটা দরকার ছাড়া যায় নি।কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছে সাম্যের সাথে।যাতে পুরোনো ক্ষতটা আবার দগদগে না হয়ে ওঠে।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে সোফায় গা এলিয়ে দেন সাম্যের বাবা সালাম সাহেব। শ্বাস নিতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে তার।বসন্তের শুরু সবে।শীত এখনো পুরোপুরি যায় নি।এই অবস্থায়ই তার গা হাত পা ঘেমে পুরো কাক ভেজা হয়ে গেছেন।বুকের বা পাশটায়ও কেমন যেন ব্যাথা করছে।তিনি হৃদির কাছে এক গ্লাস পানি চান।ডাইনীং থেকে হৃদি গ্লাসে করে পানি এনে দেখে মামার এই অবস্থা।অস্থির হয়ে পানির গ্লাসটা সালাম সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দেয়।কাঁপা হাতে হৃদির হাত থেকে গ্লাসটা নেন সালাম সাহেব।তড়িঘড়ি করে ফ্যান অন করে হৃদি।মামার এই অবস্থা দেখে হৃদি ঘাবড়ে যায়।চিৎকার করে সাম্যকে, সিঁথিকে আর মামিকে ডাকে হৃদি।বিলকিস বেগম স্বামীকে দেখে ভয় পেয়ে যান।সিঁথি বালতি করে পানি আনে।মাথায় পানি ঢালা হয়।সাম্য এম্বুল্যান্স ডাকে নিয়ে যাওয়া হয় সালাম সাহেবকে হাসপাতালে।
ডাক্তার জানায় তিনি হার্টেএট্যাক করেছেন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সার্জারী করা দরকার।এঞ্জিওগ্রাম করে জানা যায় তার হার্টে মোট ১৭টা ব্লক ধরা পড়েছে।সেগুলোর বেশীর ভাগ ব্লকেরই পার্সেন্টেজ ৯০এর ওপরে।তাই বাইপাস সার্জারি ছাড়া উপায় নেই।সাম্য টাকা যোগার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সার্জারী করিয়ে নেয়।সালাম সাহেবের সেবার জন্য বিলকিস বেগম আর হৃদি হসপিটালে থেকে যায়।সাম্য চাকরি সামলিয়ে যতটা সম্ভব হাসপাতালে থাকে।আর সিঁথি ঘর সামলায়।

-ভাইয়া জানো তুমি যখন আমার রাগ ভাঙাও না আমার তখন খুব ভাল্লাগে।
-আচ্ছা এর পর থেকে আমি আর তোর রাগ ভাঙাবো।আমি বুঝতে পেরেছি তুই কারণ ছাড়া রাগ করিস।

আহ্লাদী কন্ঠে সাম্য ছোট্ট হৃদির কথার জবাব দেয়।হৃদি উঠে দাঁড়ায়।দৌড় দেয় সন্ধ্যার কুয়াশার দিকে।হারিয়ে যায় কুয়াশার আড়ালে।
সাম্য চিৎকার করে ডাক দেয়,,,

-পুতুললল!

চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যায় সাম্য।সাম্যের চিৎকার শুনে সিঁথিও উঠে পড়ে।ঘুম মাখা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,,,

-কী হলো সাম্য?
-ক..ক..কিছু না।

খাটের পাশে টেবিলে থেকে গ্লাস নিয়ে পানি ঢগঢগ করে খেয়ে ফেলে সাম্য।তারপর চোখ বুজে।

সকালে বাসায় যাওয়ার সময় আচমকা একটা ছেলের সাথে হৃদির ধাক্কা লাগে।ছেলেটা তখন হসপিটালে ঢুকছিলো আর হৃদি বেরুচ্ছিলো।ধাক্কা লাগায় একে অপর মেঝেতে পড়ে যায়।হৃদি কোনো রকমে উঠে কাপড় থেকে ময়লা ঝাড়তে লাগে। ছেলেটাও নিজের জামা থেকে ময়লা ঝেড়ে বলে,,

-আই এম এক্সট্রেমলি সরি।দেখতে পাই নাই।
-না না ঠিক আছে।

শান্ত গলায় ছেলেটার কথার জবাব দেয় হৃদি।তারপর গন্তব্যে দিকে হাঁটা লাগায়।ছেলেটা অপলক দৃষ্টিতে হৃদির যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।

চলবে,,,

না চেয়েও তেমায় পেলাম পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0

#না_চেয়েও_তেমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#Part_19 ( Last)

আদি আর আরিয়ান সামনাসামনি বসে আছে,,আদির মুখে রাগের চাপ,,,

আরিয়ানে গাল চেপে ধরে,,

আদিঃ তোর তো সাহস,,, কম না আমার জানের ক্ষতি করার চেষ্টা করিস,,, তুর ভুল দুইটা,,,প্রথমতো তুই আমার জানের সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করেছিস,,,তার জন্য তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি,,,,এটাই আমার ভুল ছিলো,,ওইদিন যদি তোরে উচিত শিক্ষা দিতাম তাহলে আমাদের ক্ষতি করার কথা ভাবতিও না,,,,বাট মানতে হবে প্ল্যান টা খারাপ করিস নাই,,বাট ভুল মানুষের সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস,,আমাকে দেখে সবাই খুব ভালো বিজনেস ম্যান ভাবে কিন্ত এছাড়া আমার একটা পরিচয় আছে, তোর মতো পশুদের শিকার করার জন্য আনার জন্ম,,তোকে ছেড়েছিলাম কারণ আমার জান তোকে ভালোবাসে তাই,,, কিন্তু এখন অপরাধ টা বেড়ে গেছে,,সো রেডি তো মিঃ আরিয়ান আপনার ফল ভোগ করার জন্য,,,
( আদি আরেকটা পরিচয় আছে,,,, আরিয়ানে মতো খারাপ লোক,ধর্ষক,, এদের যখন প্রমানের অভাবে আইন শাস্তি দিতে না পারে,, তখন তাদের জন্য আদিই হয় আইনদাতা,, আর এসব পশুদের জন্য আদির একটাই আইন তা হলো মৃত্যুদন্ড,,,)

আরিয়ানঃ ভাই আমাকে মাপ করে দাও আমি আর কিছু করবে না,,,( ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে)

আদিঃ সেটাতো একবারই করে দিয়েছি আর তুই শুধু আমাকে না আমার কলিজার ক্ষতি করতে চেয়েছিস,,কেমনে ছাড়ি তোকে বল ,,হাসিব,,,

হাসিবঃ বল দেস্ত,,

আদিঃ ওর সাথে কি করাতে হবে তাতো বলার দরকার নাই,,

হাসিব বাকা হেসে,,,

হাসিবঃ তা আর বলতে তুই নিশ্চিত থাক,,,বাট ভাবীকে এসব বলবি না,,

আদিঃ না রে মেয়েটাকে এমনিতেই ঠিক করতে অনেক সময় লেগেছে আমি চাই না আর কোন বিষয় নিয়ে ওর চোখের পানি যাক,,,,,

হাসিবঃ ওকে,,,,

আদি বাড়ি আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো আসলো,,,এসে দেখি ঋতু না খেয়ে আমার জন্য বসে আছে,,,অনেক কষ্টে ওকে বুজালাম,,,বুজিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,,

সকালবেলা নাস্তা রেডি করছি এমন সময় আমার শাশুড়ী বলে ওনি নাকি গ্রামের বাড়ি,, আদির এক্সিডেন্টে এর জন্য থাকতে পারে নাই,,, তাই যাবে,,,আমাকে সব দেখিয়ে শুনিয়ে দিচ্ছ,,,হঠাৎ কিন্তু শাশুড়ী মা এমন কথা বলবে তা ভুলেও ভাবিনি,,,

শাশুড়ীঃ বিয়ের তো অনেক দিন হলে এবার আমার নাতি,,নাতনি আনবি তো,,এই বুড়ো বয়সে ওদের সাথে কাটাবো,,

আমি তো লজ্জায় শেষ,,,কি বলবো বুঝতে পারছি না,,,

শাশুড়ীঃ আরে এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন তুই তো আমার মেয়েই,,,মায়ের কাছে কেউ লজ্জা পায় নাকি,,,

আমি মুচকি হাসি দিলাম,,রুমে এসে নিজে নিজে ভাবছি,,,আমাদের বিয়ের আট মাস হয়ে গেছে,,আর আমি টেরই ফেলাম না,,,,সম্পর্কটা যদি ঠিক থাকতো হয়তো আম্মুর কথাটি সত্যি হতো,,,এখনও তো হতে পারে,,কিন্তু,, আদি তো আমি না বলা পর্যন্ত সম্পর্ক টা ঠিক করবে না,,আর আমি বা এসব কিভাবে বলবো,,,ভাবছি

আদি আমার সামনে এসে আমার কান্ড দেখছে,,,

আদিঃ আমার মহারাণী এতো কি ভাবছে শুনি মাঝে মাঝে দেখি ব্লেসিং হচ্ছে,,,

আমিঃ ভাবছি আমাদের বিয়ের কতোদিন হয়ে গেলো,,,

আদিঃ তো এখন,,সময়তো আর তোমার জন্য বসে থাকবে না,,,,,,

আমিঃ আম্মুরা এখন চলে যাবে,,ওনি কি বলেছেন?

আদিঃ কি বলেছে,,,

আমিঃওনি নাকি নাতি নাতনি মুখ দেখতে চায়,,( অনেক লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নললাম)

আদি আমার কথা শুনে অবাক হলো,,,আমার সাথে মজা করার জন্য,,,

আদিঃ তো নাতি নাতনি আনো কে বারণ করছে,,,

আমিতো আদির কথা শুনে কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে,,,

আমিঃ আমি কোথায় থেকে আনবো আজব,,,

আদিঃ আমি কি করে জানবো,,,

বলে ওয়াশরুম ডুকে গেল,,,

আমি হাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম,,,,

আম্মুরা চলে গেল,, বিকেলে আমি বেলকনিতে বসে আছি তখনি আদির কল আসলো,,

আদিঃ কি করে জানু?

আমিঃ কি করবো বসে আছি,,,

আদিঃ এখন বসে না থেকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচপ নামে একটু শপিং করবো,,

আমিঃ আচ্ছা,,, বাট গাড়ি চেক করছেন তো?

আদিঃ হুম বাবা ওইগুলা নিয়ে টেনশন করতে হবে না।

আমিঃ ওকে,,,

আমি একটা কালো শাড়ি কালো আদির প্রিয় কালার,,,,, রেডি হয়ে নিছে নামলাম,, দেখি ওনি নেয় ড্রাইভার পাঠিয়েছে,, মুখটা কালো হয়ে গেলো,, তবুও গাড়ি করে একটা শপিং মলে আসলাম,,,দেখি আদি বাইরে দাড়িয়ে আছে,, ওনার সাথে ভিতরে গেলাম,,ভিতরে গিয়ে আরিশা আর একটা ছেলেকে দেখলাম,,,,আদি পরিচয় করিয়ে দিলো,,ছেলেটা আরিশার হাসবেন্ড,,, ( আরিশার বিয়ের সময় আদি অসুস্থ ছিলো তাই যেতে পারিনি)আদি আমাকে ওনাদের কাছে কোথায় চলে গেল,,আমার রাগ সেই পর্যায় চলে গেছে,,এদের সামনে কিছু বলতেও পারছি না,,,,ইচ্ছে না থাকা সত্বেও ওদের সাথে শপিং আর ডিনার করলাম,,পরপ গাড়ি করে চলে আসলাম,,আদি একটু আমাকে নিতেও আসে নাই,, খুব অভিমান হলো,,,

বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিতে আদি দরজা খুলল,, পুরা রুম অন্ধকার,, আদি পিছন থেকে আমার চোখ বেঁধে দিলে,, আমাকে ধরে ধরে আমাদের রুমে নিয়ে গেলো,,আস্তে আস্তে চোখ খুললো,,, আমি দেখে হা হয়ে গেছি,, পুরা রুমে মোমবাতি আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,,আমিতো দেখে আমার সব রাগ,অভিমান সব ঝরে গেছে,,, আদি আমার সামনে হাত বাড়িয়ে হাঁটু গেটে বসলো,,

আদিঃ তুমি কি পাশে সব সময়ে থাকবে,,,তোমার ভালোবাসা লাগবেনা আমার ভালোবাসাই আমাদের জন্য যথেষ্ট,, শুধু সারাজীবন আমার পাশে থাকবে? সকল সুখ,দুঃখের সাথী হবে,,,?( হাত বাড়িয়ে)

আমিঃ ইয়েস,,আমি সব সময় সব সিচুয়েশনে আপনার সাথে থাকবো,,,কিন্তু আপনি আমাকে সারাজীবন এইভাবে ভালোবাসবেন?( ওর হাতে হাত রেখে)

আদিঃ আমার শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত তোমাকে এইভাবে ভালোবেসে যাবো৷,, একটু ও কমবে না,,

বলে আমার হাতে একটা রিং পরিয়ে দিলো,,,তারপর দাড়িয়ে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিলো,,

আদিঃ তো মেরি জান এবার কি আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে,,আম্মুর ইচ্ছেটা পূরণ করা যাবে,,,,

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম,,

আদি আমার মুখ তুলে,,,

আদিঃ নিরবতা কিন্তু সম্মতির লক্ষন,,,

আমি আদি কে জড়িয়ে ধরলাম,,মনে হচ্ছে এই বুকে নিশ্চিন্তে সারাজীবন কাটানো যাবে,, আদি আমার মুখ তুলে আমার ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নিলো,,,হঠাৎ এমন করাই আমি যেন কারেন্টের শকট খেয়েছি,, এক অন্যরকম অনূভুতি লাগছে,,আজ আদি কে বাধা দিচ্ছি না আমি চাই আমাদের পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণতা পায়,,,,অনেকক্ষণ পর আদি আমাকে ছেড়ে কোলে তুলে নিলে,,,,আমি তখনও লজ্জায় আদির বুকে মাথা লুকালাম,,

আদিঃ এতে লজ্জা পেলে তুমি আম্মু হবা কেমনে,,,,

বলে খাটে শুয়ে দিলো,,

আর আদি ঋতুকে উপহার দিলো এক সুন্দর ভালোবাসার রাত,,,পূর্ণতা পেলো আরেকটি ভালোবাসা,,🖤

আদি আমাকে আরো আগে থেকে চেয়েছে কিন্ত আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছে #না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤

সমাপ্ত 🖤

( জানি না গল্পটা কতোটা ভালো লেগেছে আপনাদের,,কিন্তু সব সময় ভালো লিখার চেষ্টা করেছি,,,,ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন,,এটাই আমার প্রথম গল্প,, হয়তো বা তেমন ভালো লিখতে পারিনি বাট চেষ্টা করেছি,,,,আমার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে 🙂)

না চেয়েও তোমায় পেলাম পর্ব-১৮

0

#না_চেয়েও_তোমায়_পেলাম🖤
#Ritu_Jahan
#Part_18

ওনার দিকে তাকাতে নার্ভাস লাগছে,,

তবুও ওনার সামনে গিয়ে,,

আদিঃকিছু বলবে?

আমিঃআপনি হাসপাতাল থেকে অনেক দিন পর এসেছেন তাই আপনাকে ফ্রেশ করিয়ে দিতে বলছে আম্মু ,,

আদিঃ কিন্তু আমার তো পায়ে বেন্ডেজ করা,,,

আমিঃ সমস্যা নেই আমি করিয়ে দিচ্ছি,,,

বলে শার্টের বোতাম খুলছি,,,ওনার গায়ে হাত লাগতেই কেঁপে ওঠলাম,,এক অজানা অনুভূতি কাজ করছে,,, এতো কাছে আদির কখনও আসি নাই,,,

আদি তার প্রেয়সী কে দেখতে ব্যস্ত,,,আজকে ঋতুকে এতো কাছে পেয়ে,,, আদি অনেক খুশি,,ও মনেমনে বলছে( তোমাকে এতো কাছে পাওয়ার জন্য হাজার বার আঘাত পেতে রাজি আছি)

ঋতু গরম পানি দিয়ে ওর শরীরটা মুছতেছে,,,,আদি কেমন নড়াচড়া করছে,,,

আমিঃআপনি এতো নড়ছেন কেন।

আদিঃ আরে আমার কাতুকুতু লাগছে তো( ইনোসেন্ট মুখ করে)

আমিঃ কি এতো বড় ছেলের কাতুকুতু লাগে! ছেলেদের কাতুকুতু লাগে এটা আমি এই প্রথম শুনলাম,,।

আদিঃ কেন লাগবে না,,আর সব ছেলে কি এক নাকি,,আমি হলাম কতো কিউট,,, হেন্ডসাম ছেলে সবার থেকে একটু আলাদা তো হতেই হবে,,,,,( ভাব নিয়ে)

আমিঃ সুযোগ পেলেই ভাব নেওয়া খালি। যেন নিজের থেকে সুন্দর আর কেউ নেই,,,, ডং,,

আদিঃ হুম আছে বাট আমার মতো কেউ নেই, তুমি তো আমাকে বুজবা না যখন দূরে চলে যাবো তখন আফসোস করবা,,,,

আদির কথায় আবার বুক কেঁপে ওঠলো,, ওইদিন ও এসব কথা বলেছে,,তারপর এক্সিডেন্ট হয়,,,এখন আদির মুখে এটা শুনে কান্না চলে আসলো,,
আমি কাঁদছি দেখে,,আদি ঘাবড়ে গেলো,,,

আদিঃ ঋতু তুমি কাঁদছ কেন,, আমি কিছু ভুল বলেছি?

আমিঃ আপনি সব সময় এসব বাজে কথা বলেন,, একটি বার ও ভাবেন না এগুলো বললে কতটা ভয় লাগে,,সবাই শুধু আমাকে কষ্ট দেয়,,( কাঁদতে কাঁদতে)

আদি এবার বুজলো ঋতুর কান্নার কারন,,, আদি ঋতুর মুখ তুলে,, বলল,,,

আদিঃ ভালোবাসো?

ঋতু কিছু বলল না নিচু হয়ে থাকলো,,,আদি আবার,,

আদিঃ ভালো যখন নাই বাসো তাহলে আমার কিছু হলে তোমার কি?

ঋতুর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,আদিকে জড়িয়ে ধরে,,,

আমিঃ জানি না ভালোবাসি কিনা,,,কিন্তু আপনাকে হারাতে পারবো না,,,আপনি আমরা অস্তিত্বে ঝড়িয়ে গেছেন,,আপনাকে ছাড়া আমি শূন্য,,,

আদি এটাই চেয়েছিলো,,, আজ সে স্বার্থক,,,আদি ঋতুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,,,,,,,,

আদিঃ এটাই আমার জন্য যথেষ্ট,, ভালোবাসা থেকে অস্তিত্ব মিশে থাকা আমার জন্য ভালো,,,তবে আমার একটা শর্ত আছে?

আমি ওনাকে ছেড়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে,,,,,

আমিঃ কি,, শর্ত?

আদিঃ তুমি আমাকে আপনি আপনি বলা অফ করো,,আপনি বললে কেমন জানি পর পর লাগে,,,তুমি আমাকে তুমি করেই বলবে,,, ওকে।

আমিঃ আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো,আর আপনাকে একটা কথা বলি?

আাদিঃ কি,,

আমিঃ আপনি গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগে গাড়ি চেক করেন নাই?

আদিঃ হুম করেছি তো সব তো ঠিক ছিলো,,

আমিঃ তাহলে হঠাৎ কেন গাড়ি ব্রেক ফেল করবে,,,,,নিশ্চয় কিছু প্রবলেম ছিলো, সামনে থেকে,, সব দেখে তারপর গাড়ি চালাবেন,,,,

আদিঃ ওকে,,,( চিন্তিত গলায়)

আমিঃ আচ্ছা আপনি রেস্ট নিন আমি একটু,, কিচেনে যাই,,

আদিঃ আচ্ছা,,,

ঋতু চলে গেলো আদি ভাবছে,, গাড়ি সব ঠিক ছিল তাহলে কেন এমন হলো,,আজ একটুর জন্য আমি আমার ঋতুকে বাচাতে পেরেছি,, না হলে আজ ঋতু,,,,,,গাড়ি তো ঠিক চলছিলো রেস্টুরেন্টে থেকে আসার সময় প্রবলেম দেখা দিয়েছে,,তাহলে কি এটা,,,,

আদি এসব ভেবে হাসিবকে কল দেয়,,,

হাসিবঃ দোস্ত কেমন আছিস এখন,,

আদিঃ আছি ভালো,,,,আমার একটা ইনফরমেশন লাগবে,,

হাসিবঃ কি?

আদিঃ( **********)

হাসিবঃ ওকে আমি খোঁজ নিচ্ছি,,,,

আদিঃ হুম,,,,,

এভাবে কেটে গেলো অনেক দিন,,,এখন আদির সাথে অনেক ক্লোজ হয়ে গেছি,,,,ও হাঁটতে পারতো না আমি ওকে ধরে ধরে হাটাঁতাম,,,,এখন আর আমাদের মাঝে কোলবালিশ থাকে না,,,,কিন্তু সম্পর্কটা এখনো স্বামী স্ত্রীর পূণতা পায়নি,,,আমি জানি আদি আমি যতক্ষণ না বলবো ও ততদিন আমার কাছে স্বামীর অধিকার খাটাতে আসবে না,,,।কিন্তু আমি এসব কেমন বলবো,,,এগুলা বলার বিষয় নাকি ও বুঝে নিতে পারে না,,,এসব ভাবছি বসে বসে,,,হটাৎ আদি বলল,,

আদিঃ ঋতু তোমার কি মুড অফ এভাবে বসে আছো যে,,

আমিঃ না এমনিতেই,,

আদিঃ ও আচ্ছা,,, আমি কাল থেকে অফিসে যাবো,,,

আমিঃ আর কয়েকদিন পর গেলে হয় না,,,

আদিঃ কেন আমাকে ছাড়া কি এখন থাকা যায় না,, ( চোখ টিপে)

আমি তোতলিয়ে,,,

আমিঃকেন থাকা যাবে না,,,আমিতো আপনাকে আরো কয়েকদিন রেস্ট নিতে বললাম,,

( এটা বলে কথা কাটালাম,, আসলেই ওনাকে ছাড়া আমার দিনই কাটে না,,ওনার খুনসুড়ি,, ভালোবাসা,, আমি আসক্ত হয়ে গেছে,,,, এখন এগুলো ছাড়া আমার দিনই ভালো কাটে না,,,।)

আদিঃ রেস্ট নিতে নিতে পিঠে ব্যাথা উঠে গেছে,,,আর না,,,

হটাৎ আদির কল আসলো,,হাসিবের কল দেখে আদি বেলকনিতে চলে গেলো,,,

আদিঃ হা বল কি খবর,,

হাসিবঃ,, *******

আদিঃ ওকে তুই ওকে গোডাউন এ রাখ আমি আসছি,,

বলে পিছন ফিরতে ঋতুকে দেখে ভয় ফেলাম ও কি শুনেছে সব,,না ঋতুকে জানতে দেওয়া যাবে না,,তাহলে ও আরো ভেঙে পড়বে,,এমনিতে অনেক আঘাত পেয়েছে আর না,,

আমিঃ কোথায় যাবেন এখন,,আবার,,

আদিঃ একটা কাজে,,আসতে দেরি হবে,,,

বলে চলে আসলাম,,,

গোডাউনে বসে আছে,,, আর আমার সামনে আরিয়ান কে বেধে রাখা হয়েছে,,,,আদির চোখে দিয়ে আগুন বের হবার উপক্রম,,,,,

চলবে,,,
আরিয়ানাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?