Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1541



হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-০১

0

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_1
#sarika_Islam

জোরে ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে গেল অন্তরা,,জোরে জোরে কান্না করতে লাগল,,আর বলতে লাগল,

_আপনি কি চোখে দেখেন না এভাবে ফেলে দিলেন কেন?(কান্না করতে করতে)

জিসান হা করে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে আর ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্কেন করছে,অন্তরা শরির থেকে ওড়না সরে গেছে দুই বেনি করা খুবি মিস্টি একটি মেয়ে,,জিসান যেন ওর সুন্দরের প্রেমে পরে গেল,,মনে মনে নানান জিনিস আওড়াতে লাগল,,হঠাত অন্তরার চিৎকারে ধ্যান ভাংগে,,

_আমাকে নিচ থেকে উঠাননননন,,,

জিসান অন্তরার হাত ধরে টেনে উঠালো,,অন্তরা জিসানকে তার হাত দেখাচ্ছে,,

_দেখুন দেখুন আমি কত্ত বেথা পাইসি এইখানে,, আপনি অনেক পচা,,, (বলেই কান্না করতে লাগল)
_ব্যাথা পাইসো আহারে,,আসো আমি আদর করে দেই,,

অন্তরা জিসানের দিকে নিজের হাত বারিয়ে দিল,,জিসান অন্তরার হাত ধরে ফু দিতে লাগল আর অন্তরার বুকের দিকে তকিয়ে রইল খারাপ নজরে,,

_অন্তরা ওই অন্তরায়ায়ায়ায়া,,
_কিরে পিংকু তুই এইখানে কি করছিস?(জিসানের থেকে নিজের হাত সরিয়ে বলল)
_তোরে আমি পুরো গ্রাম খুজছি তুই এইখানে কি করস?চল তোর শহরের আন্টি আইসে,
_আন্টি আইসেএএএএএ চললল,,

অন্তরা আর পিংকু দৌড়িয়ে চলে গেল,,আর জিসান এইখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল,,

_পুরাই ফুটন্ত গোলাপ ওর সুবাস আমাকে নিতেই হবে,,,(বলেই সয়তানি হাসি হেসে চলে গেল)

(অন্তরা প্রেমতলা গ্রামের মাতবরের একমাত্র আদরের মেয়ে,বয়স 17,ক্লাস 8 এ পরে দুইবার ফেল করে এইখানে আছে,,বয়স 17হলেও 10 বছরের বাচ্চার মতো আচরন তার)

_পাখি তুমি কই আসিলা, আমি তোমাকে কতো খুজছি দেখ তোমার আন্টি আইসে,,
_আমি আন্টিকে খুজতে গেসিলাম বাবা,কোথায় আন্টি?

হুট করে হেনাকে পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরায় ঘাবড়ে গেল,,পিছে ফিরে দেখল অন্তরা তাকে জরিয়ে ধরেছে,,অন্তরা হেনা চৌধুরীর শাড়ির আচল ধরে টানাটানি করতেসে আর দেখতাসে,,

_এত্ত সুন্দর শাড়ি পরস তুমি,,তোমার কানের দুল গুলা কত্ত সুন্দর আমাকে দিবে?

আরও অনেক কিছু বলতে লাগল,,হেনা চৌধুরী বিরক্তকর চেহারা নিয়ে হাসান চৌধুরীর(হেনার স্বামী) দিকে তাকালো,হাসান চৌধরী তার বউয়ের বেপারটা বুজতে পেরে বলল,,

_হেনা এইটা খালেদের মেয়ে,,মানি আমাদের মাদবরের মেয়ে,,ইশারায় বলল ওর একটু প্রবলেম আছে,,

হেনা চৌধুরী বুজতে পারায় অন্তরার দিকে তাকালো,,

_মাসাল্লাহ কতো সুন্দর মেয়ে,ইসসস ওর প্রবলেম হওয়াটাকি খুব প্রয়োজন ছিল?(মনে মনে বলতে লাগল)

(হাসান চৌধুরী প্রেমতলা গ্রামের চেয়ারম্যান থাকে ঢাকা,, প্রায় প্রায় গ্রামে এসে দেখে যায়, গ্রামে বড় একটি বাংলো আছে তাদের সব মাদবরের দায়ভাড়ে আছে)

দুপুরে খাবার দাবারের শেষে অন্তরার আম্মু তাদের জন্য নানান ধরনের পিঠা দিল,,খাওয়ার পর্ব শেষ করল,,হেনা চৌধুরী অন্তরার আম্মুর সাথে কথা বলছে, এক পর্যায় অন্তরার কথা জিজ্ঞেস করল,,

_অন্তরার এমন হলো কি করে?
_ছোট বেলায় ওর অনেক জর হয়েছিল,ডক্তর বলেছিল ওর কোন একটি সমস্যা হবে হয়তো এটিই ছিল সেই সমস্যা, হাত পায়ে ঠিকি বড় হয়েছে কিন্তু আচরন বাচ্চাসুলভ,,(বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল)
_তার পর আর কোন ডক্তর দেখাননি?
_আর দেখিয়ে কি হবে?ও কি আর ঠিক হবে?
_ওহ আচ্ছা,,

অন্তরা তাদের সামনে বসে বসে এইসব কথাগুলো শুনছে,চুপচাপ বসে নেই সে এইটা খায় তো ওইটা খায় গলার থেকে ওড়না পরে যায় বারে বারে,,হেনা চৌধুরীর খুব মায়া কাজ করে অন্তরার জন্য,,,

রাতে খাওয়ার পর সবাই ঘুমিয়ে গেল,হেনা চৌধুরী তার জামাইকে বলল,,

_আচ্ছা আমরা অন্তরাকে আমাদের ছেলের কাছে দেখালে কেমন হয়?আমাদের ছেলে ওতো এইসব নিয়েই ডাক্তার হচ্ছে,সামনের সপ্তাহে চলে আসবে তো ও,অন্তরাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো তুমি কি বলো?
_হুম ঠিকি বলেছ,কিন্তু খালেদকি তার মেয়েকে দিবে আমাদের সাথে?
_আচ্ছা সকালে জিজ্ঞেস করে দেখবনে,,

সকালে,,,

_অন্তরা অন্তরা কোথায় তুই?

অন্তরাকে তার মা সারা বাড়ি খুজে বেরাচ্ছে কিন্তু তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না,, অন্তরার মার চিল্লাচিল্লি শুনে হেনা চৌধুরী ঘুম থেকে উঠে আসল,,

_ভাবি কি হয়েছে এমন চেচাচ্ছেন কেন?
_আরে ভাবি আর বইলেন না অন্তরা টাওনা সকাল সকাল কোথায় যেন চলে গেল না বলে,,
_আচ্ছা ভাবি অন্তরাকে যদি আমদের সাথে নিয়ে যেতে চাই?আমার ছেলে এইসব নিয়ে পড়াশুনা করে এইবার ডাক্তার হয়ে লন্ডন থেকে ফিরবে আমি চাইছি অন্তরাকে ওর কাছে দেখাবো,,আপনি কি বলেন?

অন্তরার মা কান্না করে দিল,,

_অন্তরার এমন বাচ্চাসুলভের জন্য আমি ওকে কোথাও রাখি না ভাবি, ও কখন কি চেয়ে বসবে,,
_আরে ভাবি চিন্তার কোন কারন নেই আমরা ওকে নিজের মেয়ের মতো আদর করব,,
_আচ্ছা ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখি,,

অন্তরা পিংকুর সাথে মনের শুখে পুরা গ্রাম ঘুড়ে বেরাচ্ছে,,হঠাৎ কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনলো,,

_কিরে পিংকু ময়না আপু এমন চেচাচ্ছে কেন?
_কেন তুই জানিস না আজ তার বাচ্চা হবে,,
_চল দেখে আসি,
_হোপ পাগল নাকি আমি যাবো না,,
_তুই না গেলে নাই আমি যাই,,

বলেই অন্তরা পিংকুকে রেখে একাই গেল,,পিংকু অনেক বার ডাক দিল তাও শুনল না, ঢেং ঢেং করে সে চল্ল,অন্তরা ময়নাদের বাসার সামনে গেল দেখল অনেক মানুশভিড় হয়ে আছে, সে ভীড় ঠেলে সামনে গেল,,ময়নার বাবাকে জিজ্ঞেস করল,,

_চাচা ময়না আপু এমন চেচাচ্ছে কেন?
_অন্তরা তুই বুজবি না তুই যা এখান থেকা,,

বলেই অন্তরাকে পিছে ঠেলে দিল,,সবাই অন্তরাকে পিছে ঠেলে একদম দরজার বাহিরে ফেলে দিল,,

_ময়না আপুকে মারছে কেন?সে এমন চেচাচ্ছে কেন?মনে মনে বলল

অন্তরার ভিতরে কৌতুহল যাগছে,,কি হচ্ছে দেখার জন্য, সে বাড়ির পিছনে গেল,,বেড়ার ফাক দিয়ে দেখল ময়না মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে,,অন্তরা আর একটু গভির ভাবে দেখল,অন্তরা এইসব দেখছে আর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে লাগল,,ময়না আপুর অনেক কষ্ট হচ্ছে চোখের কোন বেয়ে পানি পরছে, হঠাৎ একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে উঠল,আর ময়না আপুর কান্নার বেগ থেমে গেল,, দাই মহিলা বলে উঠলো “ময়না আর বেচে নেই”অন্তরা এইসব জিনিস দেখে খুব কান্না করতে লাগল,,কান্না করতে করতে দৌড়িয়ে পিংকুর কাছে গেল,,

_কিরে তোর কি হয়েছে এভাবে কান্না করছিস কেন?

অন্তরা কিছু বলার হালাতে নেই সে অঝরে কান্না করছে,,পিংকু তাকে তার বাসায় পৌছিয়ে দিল,,তার মা বাবা মেয়ের কান্না দেখে ঘাবড়িয়ে গেল,অন্তরাকে তার মা নানান কথা জিজ্ঞেস করছে কেন কান্না করছে কি হয়েছে,,কিন্তু অন্তরা কেউকে কিছু না বলে এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে নিচে দুই হাটুর মাঝে মুখ গুজে কান্না করতে লাগল,,বাহিরে অন্তরার মা দরজা পেটাচ্ছে কিন্তু ভিতর থেকে শুধু ” মরে গেছে মরে গেছ” বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগল,

চলবে 🖤

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৯_শেষ
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

পরের দিন~~~~~~

অনু নিচে গিয়ে দেখলো ওর মামা মামী আর কাজিনরা সব ড্রয়িংরুমে বসে আছে৷ অনু ওদেরকে দেখে খুশি হলেও ওর মামা মামীর হঠাৎ আগমনটা বুঝতে পারছেনা৷ অনু ধীর পায়ে এগিয়ে আরুহির পাশে বসলো৷

আবির আর অনুর অনেকবার চোখাচোখি হয়েছে৷ যতবার অনু আবিরের দিকে তাকিয়েছে ততবারই দেখলো আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে৷

মাঃবাচ্চারা তোমরা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসো৷ আমরা কিছু দরকারি কথা বলতে চাই৷

ওরা সবাই অনুর মায়ের কথা শুনে চলে গেলো৷ অনু ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে যেতেই আবির এসে হাত দিয়ে আটকে দিলো৷ অনু আবিরকে দেখে দুকদম পিছিয়ে গেলো৷

“আপনি!!!আপনি কেনো এসেছেন আমার রুমে?
.
তুমি সত্যি বুঝতে পারছনা।
.
কী বুঝতে পারবো।আমার কিছুই বুঝার নেই৷
.
তুমি আমাকে ভালোবাসো না৷
.
না বাসি না৷ আর হঠাৎ ভালোবাসার কথা উঠছেই বা কেনো৷
.
ভালোবাসো না ঠিক আছে৷ আমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে সেটা টলারেট করতে পারবে তো৷
.
কেনো পারবনা৷
.
সিরিয়াসলি৷ কিন্তু আমি যে জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো৷
.
মিথ্যা কথা৷
.
তাই৷
.
আবির ওর পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা অনুর হাতে দিলো অনু কাগজটা দেখেই চমকে উঠলো৷ বুঝতে আর বাকি নাই কী লিখা আছে এই কাগজে৷

এটা আপনি কোথায় পেলেন৷
.
সামান্তার ডায়েরিতে৷
.
অনু কথাটা শুনে জিভে কামড় দিলো৷ সেদিন আবেগের বশে সামান্তার ডায়েরিতেই সব লিখে রেখে চলে আসলো৷

“আমি জানতাম এই কাগজটা কাজে লাগবে তাই সাথে করে নিয়ে এলাম৷
.
অনু কিছু বলছেনা মাথা নিচু করে রেখেছে৷
.
কী হলো৷ দেখো রাগ অভিমান করা উচিৎ ছিলো আমার৷ কিন্তু আমি সব অভিমান দূরে টেলে দিয়ে আবারও তোমার কাছে ফিরে এসেছি তুমি কী এবারো আমাকে ফিরিয়ে দিবে অনু৷
.
অনু আবিরের কথা শুনে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো৷

“আর কক্ষনো আপনাকে ফিরিয়ে দিবনা৷ আমি যে খুব বড় ভুল করে ফেলেছিলাম আবির৷ আপনার ভালোবাসা যে আমার লাইফে বৃষ্টি হয় নামার মতোই
.
আবিরও অনুকে তার বুকে পেয়ে পরম যত্নে জড়িয়ে ধরলো৷
🍁
আদনান অনেক্ষন যাবৎ সামান্তার পিছন পিছন ঘুরছে কিন্তু সামান্তা আদনানকে পাত্তাই দিচ্ছেনা৷ আদনানের এবার খুব রাগ হচ্ছে।

“এনাফ সামান্তা কী মনে করছিস নিজেকে৷ এতো সময় ধরে তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু তুই আমায় পাত্তাই দিচ্ছিস না৷ হুয়াই৷
.
কেনো পাত্তা দিব৷ পাত্তা দেওয়ার মতো তো একজন আছেই৷ আমাকে আবার কিসের দরকার৷ যে আমার পিছন পিছন আসছো৷
.
আরেকজন মানে৷ কে আরেকজন৷
.
সেটাতো আমার চাইতে তুমিই ভালো জানো৷ কেনো মনে নেই সেদিন যে বলেছিলে৷
.
আদনান এবার বুঝতে পারলো সামান্তার রাগ করার আসল কারন৷

“ও এই ব্যাপার৷ সেটাতো আমি ফান করে বলেছিলাম৷ দেখতে চাইছিলাম সামান্তা রাগ বা জেলাস ফিল করে কী না৷ এবার দেখি রাগ আর জেলাস করে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে৷
.
শয়তান৷

সামান্তা আদনানের বুকে কিল ঘুষি দিচ্ছে আর আদনান খিলখিল করে হাসছে৷

“তুমি হাসছো৷
.
তো কাঁদব নাকি৷ এই কিল ঘুষি দেওয়ার জন্যই তো তুই আমার কাছে এসেছিস৷

আদনানের কথা শুনে সামান্তা পিছিয়ে গেলো৷
🍁
ছোঁয়া আর শ্রাবন ছাঁদে দাড়িয়ে আছে৷ কেউই কোনো কথা বলছেনা শুধু একজন আরেক জনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে৷

“এই এভাবে তাকাচ্ছো কেন৷
.
তুই আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কোনো সেটা বল৷
.
আমি তাকাইনি৷
.
স্ট্রেঞ্জ!!!! তাহলে দেখলি কী করে আমি তোর দিকে তাকিয়ে আছি৷
.
ছোঁয়া এবা কিছু বলতে পারছেনা৷ শুধু আমতা আমতা করছে৷
.
শ্রাবন ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে ওসে ওর হাত শ্রাবনের হাতে নিলো৷

“তুই এখনো বুঝতে পারিসনা ছোঁয়া তুই কী এতটাই অবুঝ৷
.
মানে৷
.
মানে আমি তোকে ভালোবাসি ছোঁয়া৷
.
ছোঁয়ার চোখ ছলছল করছে৷ সে শ্রাবনের দিকে একবার তাকিয়ে ওর বুকে মাথা রাখলো৷
শ্রাবন মুচকি হাসছে৷ সে তার উত্তর পেয়ে গেছে৷
🍁
আদিল আর আরুহি তো বিয়ে করার জন্য একপায়ে খাড়া৷

“এট লাস্ট আমরাও বিয়ে করতে যাচ্ছি৷
.
হুম৷
.
তুই তো এটাই চাইছিলিস?
.
আর তুমি বোধহয় চাওনি৷
🍁
আদনান,আদিল,আবির,শ্রাবন ওরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে৷ পাশে বসে আছেন ওদের মা বাবা৷
উনারা আজকেই ওদের এংগ্যাজমেন্ট করিয়ে ফেলতে চান৷ আদিলরা এক এক করে সবাই সবার হবু স্ত্রীদের আঙুলে রিং পরিয়ে দিলো৷

অনুর মা আবিরের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

অনুর মাঃতাহলে এখন থেকে আমরা বেয়াইন তাইতো৷এখন থেকে কিন্তু তোমাদের বাড়িতে গেলে বড় বড় মাংসের পিস খাবো৷ শত হোক নিজের ছেলে আর মেয়েদের শশুড় বাড়ি বলে কথা৷
.
আবিরের বাবাঃতুই আবার ছোট ছোট পিস কবে থেকে খাচ্ছিস৷

আবিরের বাবা আর অনুর মায়ের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো

____________সমাপ্ত___________

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৮

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৮
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আদিল চা বানিয়ে কাপে করে এনে অনুর হাতে দিলো৷ অনু ছলছল চোখে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আদিল একটু হাল্কা হেঁসে অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো৷
.
বাবাঃআমরা খুব খুশি আদনান আর আদিলের মতো ভাই তোমাদের উপহার দিতে পেরে৷ পৃথিবীতে হয়তো এদের মতো ভাই খুব কমই আছে৷
.
অনুঃএকদম তাই৷ আমার খুব ভয় করে মা আমি সবসময় এরকম ভালোবাসা পেয়ে যাব তো৷ নাকি তোমাদের ছেড়ে হারিয়ে যাব কোথাও?
.
আদনানঃএকটা চড় মারবো৷ এসব কী ধরনের কথা হুম৷ আর এরকম কথা বলবিনা৷আমাদের ছেড়ে কোথায় হারিয়ে যাবি তুই৷
.
অনুঃআমার খুব ভয় করে ভাইয়া৷ যতই তোমাদের ভালোবাসা পাচ্ছি ততই মনে হচ্ছে আমার মায়া যেমন কমে যাচ্ছে৷ আর বোধহয় তোমাদের ভালোবাসা পাবোনা৷ তার আগেই ঝরে পরে যাব৷ আমি তোমাদের ছেড়ে যেতে চাইনা ভাইয়া৷
.
আদিলঃমা তোমার মেয়েকে চুপ করতে বলো৷
.
মাঃঅনু এসব কী ধরনের কথা হুম৷ কেন তুমি ঝরে পরে যাবে৷ যে জায়গায় আদিল আর আদনানের মতো ভাই তোমাদের ছায়া হয়ে আছে৷
.
অনুঃইদানীং আমার এমনই মনে হয় মা৷ কেমন যেন মনে ভয় ঢুকে গেছে৷
.
ছোঁয়াঃভয়কে দূরে টেলে আবার আগের মতো হয়ে যা৷ আমি তো আদিল আর আদনানের মতো ভাই পেয়ে খুব হ্যাপি৷ মনে হয় আমার মতো সৌভাগ্যবান বোন আর নেই৷ সো প্যারা নাই চিল৷
🍁
আদনানের মা সবাইকে রাতের খাবারের জন্য ডাকছেন৷ আদিল আর আদনান ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখলো সবাই আছে কিন্তু অনু নেই৷

আদিলঃএকি মা অনু কোথায়?
.
আদনানঃহ্যাঁ মা বোন কোথায়?ও খাবেনা?
.
মাঃআমি ওকে ডেকেছি ও বললো শরীর নাকি ভালো না৷
.
আদিলঃআমাদের আগে জানাওনি কেনো?
.
আদনানঃচল গিয়ে দেখে আসি৷

আদিল আর আদনান অনুর রুমে গিয়ে দেখলো অনু গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে আছে৷ আদনান গিয়ে অনুকে ডাক দিলো৷ অনুর কপালে হাত রাখতেই দেখলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে একেবারে৷

আদনানঃআদি বোনের শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে৷ তুই এক কাজ কর তুই বোনের জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে আয় আর আমি ওকে জল পট্টি দিচ্ছি৷খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিব।

আদনান একটা বাটিতে করে পানি এনে তাতে তোয়ালে ভিজিয়ে অনুর মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো৷ আদনানের মন যেন ধুকপুক ধুকপুক করছে৷ শুধু আজ অনুর বলা কথাগুলো মনে পরছে৷
আদিল প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো৷ আদনান অনুকে তুলে বসিয়ে দিলো৷ আদিল নিজ হাতে অনুকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আদনান অনুর একপাশে বসে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে৷ আদিল ওকে খাইয়ে দিয়ে ঔষুধ খাইয়ে চলে গেলো৷ আদনান এখনো মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে৷

আদনানঃভয় পাস না বোন৷ কাল হয়তো বৃষ্টিতে ভিজে তারপর আবার শরীরে বাতাসও লেগেছে তাই জ্বর এসেছে৷ কমে যাবে চিন্তা করিস না৷ কাল সকালে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব৷

আদনান উঠে গিয়ে ছোঁয়াকে ডাক দিলো৷ ছোঁয়া প্লেট রেখে আদনানের কাছে এলো৷

ছোঁয়াঃডাকছিলে ভাইয়া?
.
আদনানঃহুম৷ তুই ওকে খাইয়ে দিতে পারলি না৷
.
আমি ওকে ডেকেছি কিন্তু ও বললো ও খাবেনা৷ তাই৷
.
ঠিকাছে ওর দিকে খেয়াল রাখবি৷ জ্বরের সময় বেশি পানির তেষ্টা লাগে৷ ওকে জিজ্ঞেস করে দেখিস পানি খেতে চায় কী না৷
.
সে নাহয় জিজ্ঞেস করবো তুমি খাবেনা৷
.
রুমে পাঠিয়ে দিস৷
🍁
আরুহি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে৷ আর সামান্তা ওর পাশে বসে আছে৷ ঔষুধের পাতা থেকে ঔষুধ বের করছে৷

আবির আর শ্রাবন কথা বলে বলে এক সাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো সামান্তা আরুহিকে ঔষধ খাওয়াতে দেখে ওদের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো৷

আবিরঃকী হয়ে রুহির৷
.
সামান্তা আর আরুহি কিছু বলছেনা৷

শ্রাবনঃকী হলো সামু বলছিস না কেনো?
.
সামান্তাঃকী বলবো তোমাদের হ্যাঁ?কী বলবো?এই দু’ঘন্টা যাবৎ রুহি মাথা ব্যাথায় চটপট করছে সেদিকে কারও খেয়াল আছে৷ অনুর ভাইদের দেখেছো অনু সামান্য হাঁচি দিয়েছিলো বলে ওর ভাইরা চা আর মেডিসিন নিয়ে হাজির৷ হাজার হোক তোমরা ওদের মতো হতে পারবেনা৷
.
আবিরঃআমরা জানতাম নাকি?আর কে বলেছে আমরা ওদের মতো হতে পারবনা। আমাদের ভালোবাসা পেয়েছিস বলেই এত বড় হয়েছিস৷
.
শ্রাবনঃআর মাথা ব্যথাই তো কমে যাবে৷ তুই তো মেডিসিন দিয়েছিস ওকে৷
.
আবিরঃআর পরের বার থেকে আমরাও খেয়াল রাখবো৷ আমরাও দেখবো কীভাবে আদনানদের মতো কেয়ারিং ভাই না হতে পারি
🍁
আদনান এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে৷ আজ কেন জানেনা সামান্তাকে খুব মনে পরছে৷ ঝুম ধারায় বৃষ্টি পরছে বাইরে৷ আদনানের কালকের বৃষ্টির কথা মনে পরে গেলো৷কাল সামান্তা যেভাবে মাথায় আঁচল দিয়ে দৌড়াচ্ছিলো সেই দৃশ্যটা আদনানের চোখে ভেসে উঠেছে৷ কাল কেন আদনানের ঔ কথাটা শুনে সামান্তা রাগ করছে সেটাও জানতে পারলোনা। সে তো মজা করে বলেছিলো। তবে সামান্তার মনে যে কিছু চলছে সেটা ও বুঝে গেছে৷ আদনান আদিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ফোনে কার সাথে কথা বলছে৷ আদনান ব্যালকনি থেকে চলে গেলো সোজা অনুর রুমে৷ গিয়ে দেখলো অনু হাত দিয়ে কী যেন খুঁজছে৷

আদনানঃকী হয়েছে বোন৷
.
ভাইয়া আমি পানি খাবো জগটা কোথায়৷
.
দাঁড়া আমি দিচ্ছি৷
.
আদনান অনুকে পানি খাইয়ে দিয়ে ওর রুম থেকে চলে গেলো৷
🍁
এদিকে আবিরের খুব ইচ্ছে জাগছে অনুর কন্ঠ শুনতে৷তাই সে হুয়াট্সআ্যাপ থেকে ফোন দিলো৷

অনুর ফোন ওর পাশে ছিলো৷ ফোন সাইলেন্ট না থাজায় বেজে উঠলো৷ এত রাতে আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসাতে অনু বেশ বিরক্ত বোধ করলো৷ জরুরী ফোন ভেবে রিসিভ করলো৷

“হ্যালো কে বলছেন?

এপাশ থেকে কোনো উত্তর আসছেনা৷

অনু আবারো কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,,

“কী হলো কথা বলছেন না কেনো৷ কে আপনি৷ আর জরুরী ফোন নাহলে এতো রাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন কেন৷ এটা কী ধরনের ম্যানার্স৷
.
আবির খট করে ফোন কেটে দিলো৷ অনুর কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শুনে এটা বুঝতে পারছে যে অনু অসুস্থ৷
🍁
আদিল সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে অনুর রুমে গেলো৷ কিন্তু না অনু রুমে নেই৷ ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো অনু রেলিঙে হাত দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে৷

আদিলঃএখন কেমন লাগছে৷
.
আগের চাইতে অনেকটাই ব্যাটার৷
.
ঠিকাছে৷
🍁
বাবাঃআবির অনেকদিন তো হলো এবার কিছুতে জয়েন করো৷
.
আবিরঃসেসব পরে দেখা যাবে৷
.
সামান্তাঃতোমরা ভাইয়ার জয়েন নিয়ে পরে আছো!আমার মনে হয় ভাইয়ার আগে বিয়ে করা উচিৎ৷ তখন দেখবে বউয়ের প্যারায় এমনিতেই জয়েন করবে৷
.
আবিরঃডিরেক্টলি বলে দে তোর বিয়ে করা দরকার৷ আমাকে এর মধ্যে টানিস কেনো?
.
মাঃতোমাদের চারজনের একসাথে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়৷
.
শ্রাবনঃদারুণ!!! দুইজন যাবে আর দুইজন আসবে৷
.
আরুহিঃমা আমার মনে হয় শ্রাবন ভাইকে আর সিংগেল রাখা যাবেনা৷
.
আবিরঃরুহি তোর মাথা ব্যাথা কমেছে৷
.
আরুহিঃহুম৷
.
সামান্তাঃনা কমেনি৷ এখন কমেছে৷ তোমরা যে জিজ্ঞেস করেছো তাই কমে গেছে৷
.
শ্রাবনঃআমার খুব ভয় হয় সামু৷
.
সামান্তাঃহুয়াই৷
.
শ্রাবনঃতুই যেরকম প্যাচ করে কথা বলিস এটা নাহয় যে তোকে তোর শশুর থেকে ঝাড়ু পেটা করে বেড় করে দেয়৷
.
সামান্তাঃএকদম পিঞ্চ করবেনা হু৷
.
আরুহিঃকারও কোনো আপত্তি না থাকলে আমি কী একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা পেশ করতে পারি৷
.
বাবাঃহ্যাঁ করো৷
.
আরুহিঃআসলে বাবা হয়েছে কী তোমার দুই ছেলে তোমার দুই ভাগ্নির উপরে ফিদা৷ ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে মানে ভালোবাসে আরকি৷ এখন কথাটা হলো অনু আর ছোঁয়াকে ভাবি বানাতে কিন্তু আমাদের কোনো আপত্তি নেই৷ কী রে সামু তোর কোনো আপত্তি আছে৷
.
সামান্তাঃএকদম না৷
.
আবির তখন পানি খাচ্ছিলো৷ আরুহি আর সামান্তার কথা শুনে সেই যে কাশি উঠলো আর থামার নামই নেই৷ শ্রাবন আবিরের পিঠে চাপর দিতে দিতে ফিসফিস করে বললো,,

শ্রাবনঃএটুকু শুনেই এরকম অবস্থা৷ যখন আরও ভয়ানক কথা শুনবে তখন অবস্থাটা কেমন হবে ভাবতে পেরেছো৷
.
শ্রাবন মেকি হেসে ওর মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,,,

শ্রাবনঃমা বাবা শুধু আমরাই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিনা তোমার দুই মেয়েরাও কিন্তু ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে৷
.
মাঃমানে সামান্তা আর আরুহিও৷
.
শ্রাবনঃহ্যাঁ রুহি আদিল আর সামু আদনান৷
.
সামান্তাঃসেটআপ ভাইয়া না জেনে কিছু বলবেনা ওকে৷ আমার আর আদনানের মধ্যে কিচ্ছু নেই৷ তবে রুহিরটা সত্যি৷
.
আবিরঃকিছু নেই তো কী হয়েছ৷ কিছু হয়ে যাবে৷
.
সামান্তাঃসত্যি যদি কিছু হয়ে যেত(মনেমনে)

চলবে……

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৭

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

ঘুমের মধ্যেই অনু টের পাচ্ছে ওকে কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷ এমনকি অনুর মুখে তার শ্বাসপ্রশ্বাসও আঁচড়ে পরছে৷ অনু আর দেড়ি না করে ফট করে চোখ খুলে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা নিয়ে ফ্ল্যাশ অন করে দেখলো সামান্তা ওকে জড়িয়ে ধরেছে৷ অনু সামান্তাকে টেলে দূরে সরিয়ে দিলো৷

“সুবহানআল্লাহ৷ এমন ভাবে ধরেছিলো যেন মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি প্রানটা বেড়িয়ে যাবে৷
🍁
সকাল সকাল সামান্তার কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠলো অনু। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজে৷ কাল রাত করে ঘুমানোর জন্য আজ উঠতে লেট হয়েছে৷ কিন্তু সামান্তা কেনো কাঁদছে সেটাই বুঝতে পারছেনা৷ মাথা ব্যাথার পাশাপাশি গলাও ব্যাথা করছে৷ অনু সামান্তার কাঁধে হাত রাখতেই সামান্তা কান্নার বেগ ভারিয়ে দিলো৷

“কী হয়েছে সামু৷ কাঁদছিস কেন?
.
সামান্তা চোখের জল মুছে নাক টেনে টেনে বললো,,,

“আমার খুব পেঠে ব্যাথা করছে৷
.
তাই বলে কাঁদবি৷ঔষুধ খেলাইত কমে যাবে৷
.
খেয়েছি কমে না৷
.
দেখ ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে কমে যাবে৷
🍁
ড্রয়িং রুমে সবাই মন খারাপ করে বসে আছে৷ কারন আজ অনুরা ফিরে যাবে৷ছোঁয়া আঁড়চোখে শ্রাবনের দিকে তাকাচ্ছে৷শ্রাবন কয়েকবার ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে শেষে আর তাকায়নি৷

আদনানরা সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পরলো৷

বাড়িতে এসে ওরা চার ভাইবোন মন খারাপ করে বসে আছে৷ অনুর মনটাও ভারি হয়ে আছে৷ দুইদিন আবিরের কাছে থেকে থেকে এখন যেন আবিরকে না দেখলে তার ভালো লাগছেনা৷ অনু অনেক ভেবেচিন্তে আবিরকে ইনবক্স করলো৷ অনেক্ষন হয়ে গেছে কিন্তু আবির এখনো অনুর মেসেজের রিপ্লাই করেনি৷ রিপ্লাই করবে দূরের কথা সিনও করেনি৷করবেও না ফেসবুকে যেমন নাম দিয়ে ফেসবুক খুলেছে আবিরতো চিনতেই পারবেনা৷ নিজের পরিচয় দিতেও কেমন লাগছে।অনু মন খারাপ করেই একটা উপন্যাস নিয়ে বসলো৷ উপন্যাসের কয়েকপাতা পড়ে অনু আদনান আর আদিলের কাছে চলে গেলো৷ গিয়ে দেখলো ওরা দুইভাই কী কথা বলছে আর হাসছে৷ অনুকে দেখে দুজনই কথা বলা বন্ধ করে দিলো৷

আদনানঃবোন তোর গলা ব্যাথা কমেছে৷
.
অনুঃওই একটু একটু৷ আচ্ছা তোমরা কী নিয়ে ডিসকাস করছিলে৷
.
আদিলঃকিছুনা
.
অনুঃবলো বলো৷
.
আদনানঃআসলে কাল তোকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম৷
.
অনুঃমজা করছো আমার সাথে৷
.
আদিলঃনা বোন মজা না৷ সত্যি কথাই৷
.
অনুঃকিন্তু এটা তোমাদের কে বললো?
.
আদনানঃএকটু আগে আম্মু বললো৷
.
অনুঃদেখ ভাইয়া এসব নিয়ে মজা করবে না বলে দিলাম৷
.
আদিলঃঠিকাছে আর মজা করব না৷
.
আচ্ছা ভাইয়া তোমাদের খারাপ লাগছেনা?
.
আদনানঃকেন৷
.
মামার বাসা থেকে চলে আসার জন্য৷
.
আদনানঃহ্যাঁ খারাপ তো লাগছেই৷

আদিল কিছু বলার আগেই ওর ফোনে কল আসল৷ অনু উঁকি দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে আরুহির নাম দেখে কিছুটা অবাক হলো৷ আদিল অনুর দিকে তাকাতেই অনু চোখ সরিয়ে এমন ভাব নিলো যেন সে দেখেইনি৷

আদিলঃতোরা থাক আমি একটু কথা বলে আসছি৷
.
অনুঃকে কল দিয়েছে ভাইয়া
.
আদিলঃওই আমার এক ফ্রেন্ড স্পেশাল ফ্রেন্ড আরকি৷
.
আচ্ছ স্পেশাল ফ্রেন্ড!!! বলো বলো কথা বলো৷
🍁
সন্ধ্যায়,,,,,,

ছোঁয়াঃআম্মা নুডুলসের পাকোড়া বানাইয়া দেও৷ কতদিন ধইরা খাইনা৷
.
অনু প্লেট হাতে নিতে নিতে বললো,,,

অনুঃহ্যাঁ মা সাথে তোমার হাতের সেই বিখ্যাত মালাই চা টাও বানিয়ে দিও৷
.
আদনান কিচেনে ঢুকতে ঢুকতে বললো,,,,

আদনানঃআর পাটিসাপটা হলে তো কথাই নেই৷

অনুর মা হাতের খুন্তিটা রেখে ওদের দিকে একটু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,,,,

“আরেক নবাব কই৷ সেও আসুক এসে হুকুম করুক৷
.
আদিলঃএই তো মা আমি এসে গেছি৷আজ এই ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদারে পরোটা খেলে মন্দ হয়না৷
.
অনুর মা ড্রয়িংরুমে উঁকি দিয়ে আদনানের বাবাকে বললেন,,,,

“কই গো শুনছো তোমার ছেলেমেয়েরা হুকুম করছে তা তুমি করবেনা৷ তুমিও করো৷ তুমি বাদ যাবে কেন৷
.
হ্যাঁ হুকুম তো করবই৷ আমার হুকুম হলো আজ আমার ছেলেমেয়েরা আমাদের স্ন্যাকস বানিয়ে খাওয়াবে৷
.
আদনানঃকী আমরা৷
.
বাবাঃহুম৷
.
আদিলঃআচ্ছা এটা কোনো ব্যাপারনা৷ আজ নাহয় আমরাই বানাবো৷
.
আদনান কথা বলার মধ্যেই খেয়াল করলো অনু থালা বাসন নিয়ে ভেসিনের দিকে যাচ্ছে৷ আদনান তারাতাড়ি গিয়ে ওর হাত থেকে বাসন নিয়ে নিলো৷

অনুঃকী করছো ভাইয়া এগুলো দাও আমি ধুবো৷
.
আদনানঃআমি ধুয়ে দিব৷ তুই গিয়ে অন্যকিছু কর৷
.
অনুঃকিন্তু কেন
.
আদনানঃতোর এমনিতেই ঠান্ডা লেগেছে এখন আরও পানি লাগালে আরও বেশি ঠান্ডা লাগবে৷ তুই বরং অন্য কিছু কর গিয়ে
.
ছোঁয়াঃআমি পাকোড়া বানাবো৷
.
আদিলঃতাহলে আমি পরোটা
.
অনুঃআমি মালাই চা৷

আদনানঃআর আমি পাটিসাপটা
.
অনুঃব্যস হয়ে গেলো৷ তা আর লেট কিসের কাজে লেগে পরো৷
🍁
আবির হাতে কফি নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে৷ দুইদিন তো ছলে বলে অনুর কাছাকাছি থাকতে পেরেছে আজ কেমন যেন বড্ড একা একা লাগছে৷ অনুকে দেখতে খুব মন চাইছে৷ যতই হোক ভালোবাসে সে অনুকে৷ অনুর কান্না কান্না ফেস, রাগী মুড সবকিছুই আবির খুব মিস করছে৷ ঘড়ির সাথে শাড়ির আঁচলও আবিরই আটকে ছিলো যাতে অনু আবিরের সাথে কথা বলে৷ পাশে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে তাকিয়ে দেখলো সামান্তা এসেছে৷

অনুকে খুব মিস করছো তাই না ভাইয়া৷
.
একদম না৷
.
তাহলে দৃষ্টি লুকাচ্ছো কেন৷ আমার দিকে তাকিয়ে বলো৷
.
ওই আসলে না৷
.
আমি জানি ভাইয়া অনুর জন্য তোমার মনে এখনোও ভালোবাসা আছে যেমনটা আগেও ছিলো৷
.
অনু এটা বুঝলো কই৷
.
বুঝেছে ভাইয়া অনুও তোমাকে খুব ভালোবাসে৷
.
মিথ্যা বলিস কেন৷
.
ওয়েট৷

সামান্তা ওর রুম থেকে একটা ডায়েরি নিয়ে এলো৷

“এটা তো তোর ডায়েরি৷
.
হুম৷ কাল অনু নিজের ডায়েরি মনে করে কিছু লিখে রেখে দিয়েছিলো৷
.
আবির ডায়েরিটা বের করে পড়তে লাগলো

,,,তাকেই ভালোবাসো যে তোমাকে ভালোবাসে৷ আমার ক্ষেত্রে তা ভিন্ন হয়ে গেছে৷আমি যাকে ভালেবাসি সে আর আমাকে ভালোবাসে না৷ ভালোবাসা দূরে থাক দুচোখেও সহ্য করতে পারেনা৷ সামান্য একটু অপমানের জন্য যে আমাকে এত তারাতাড়ি ভুলে যেতে পারে তাকে আমি কী করে ভালোবাসি৷ আবির যখন বিদেশে চলে যায় তখন খুব কান্নাকাটি করি আমি৷ যে আমার দোষে তাকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আবির চলে যাওয়ার পর থেকে আমি কোনো ছেলের সাথে আজ পর্যন্ত কথা বলিনি৷ শুধু এটাই মনে হতো কথা বললে আবির রাগ করবে৷আমি বাইরে থেকে আবিরের সাথে যতই রুড হইনা কেন ভিতর থেকে তার দিকে একেবারেই দুর্বল৷ আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি৷ আর এটার জন্য আমার খুব আফসোসও হয়৷ যে আমি আবিরের মতো একজন প্রেমিককে দূরে টেলে দিয়েছি।সব শেষে বলবো ভালোবাসি আবির।,,,,,,,,

আবির সামান্তার হাতে ডায়েরিটা দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

“এখন আমার তাহলে কী করা উচিৎ৷
.
অনুকে দেখবে৷
.
কীভাবে৷
.
ভিডিও কলে৷
.
আচ্ছা কল দে৷
.
সামান্তা ছোঁয়ার হুয়াট্সআ্যাপে ভিডিও কল দিলো৷ ছোঁয়ার কাছেই ফোন থাকার জন্য সে সাথে সাথে কল রিসিভ করে নিলো৷

“হাই সামু৷
.
হাই৷
.
অনু কোথায়
.
অনু ওখানও ওই৷
.
ছোঁয়া ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে অনুকে দেখাচ্ছে৷ অনু তখন চুলায় পাতিল বসিয়ে আদনান আর আদিলকে কী যেন দেখিয়ে দিচ্ছে৷
.
ছোঁয়াঃঅনু সামান্তা কল করেছে৷
.
দে আমার কাছে৷
.
সামান্তার সাথে কথা বলার সময় অনুর চোখ পরলো আবিরের শার্টের দিকে ওর একটু শার্ট দেখা যাচ্ছে৷ সামান্তাকে বিজি বলে ফোন রেখে দিলো৷
.
আবিরঃফোন রাখলে কেনো৷
.
সামান্তাঃঅনু বোধহয় তোমাকে দেখে ফেলেছে তাই কল কেটে দিয়েছে
🍁
অনু,ছোঁয়া,আদনান,আদিল ওরা স্ন্যাকস বানিয়ে ওদের বাবা মার সামনে রাখলো৷ ওদের বাবা মাও খুব খুশি৷ সব কিছুই অনেক ভালো হয়েছে৷ অনু আড়ালে গিয়ে কাশছে৷ আদিল মুখে পাকোড়া দিতে গিয়েও দিলোনা অনুর কাছে গেলো আগে৷

আদিলঃবোন কাশছিস৷
.
হ্যা ভাইয়া খুব কষ্ট হচ্ছে৷
.
বাসায় হিস্টাসিন নেই৷
.
না শেষ হয়ে গেছে৷
.
দাঁড়া আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি৷ একটু ধৈর্য্য ধর৷
.
ভাইয়া খেয়ে তারপর যেয়ো৷
.
আগে আমার বোন তারপর খাওয়া দাওয়া৷
.
আদিলকে বেড়িয়ে যেতে দেখো আদনান ওকে ডাক দিলো৷

“আদিল কই যাস৷
.
অনুর জন্য ঔষধ আনতে৷
.
কী হয়েছে বোনের৷
.
ও কাশছে৷
.
তাহলে দাঁড়া আমিও আসছি৷
.
আদনানও আদিলের সাথে চলে গেলো

ছোঁয়াঃধুর আমার যে কেন অসুখ হয়না৷

ছোঁয়ার কথা শুনে ওর মা বাবা হেসে দিলেন৷ মনের মতো ছেলে মেয়ে পেয়েছেন উনারা৷ বোনদের এত ভালো কেয়ারিং ভাই দিতে পেরে নিজেদের কাছে নিজেদের খুব ভালো লাগছে৷

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওরা দুইভাই ঔষধ নিয়ে হাজির৷ আদনান পাতা থেকে ঔষধ বের করছে আর আদিল পানি আনতে গেছে৷
অনুকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ওর গায়ে শাল জড়িয়ে দিলো আদনান৷

অনুঃআমি চা টা বানিয়ে আনছি৷

আদিলঃএকদম নড়াচড়া করবি না৷ সোফায় চুপটি মেরে বসে থাকবি৷ আমি চা বানিয়ে আনছি৷ দুধ দিয়ে চা খেলে কাশ আরও বারে৷ আমি লিকারের চা বানিয়ে আনছি৷আর আমরা আজ সবাই লিকারের চা খাবো৷ মালাই চা অনুর অসুখ কমলে তারপর খাবো৷

চলবে…….

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৬

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৬
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু আরুহির দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আবির ওর শাড়ির আঁচল ধরে রেখেছে৷ অনুর রাগ এবার সপ্তম আকাশে৷ রেগে তেড়ে গেলো আবিরের দিকে৷

অনুঃএক্সকিউজ মি!যখন আমাকে আজেবাজে কথা শুনান তখন কিচ্ছুনা আর এখন যে আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছেন সেই বেলায়৷
.
আবির ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর হাতের ঘড়ির সাথে অনুর আঁচল আটকে আছে৷

আবিরঃআমি তোমাকে আগেও বলেছি আর এখনও বলছি যে তুমি আমাকে যতটা নোংরা মনে করো আমি ততটা নোংরা না।যদিও তোমার কাছে আমি অলওয়েজ নোংরা৷
.
দেখুন বেশি কথা বলবেন না৷ আপনি আমার শাড়ির টেনে ধরেছেন৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখুন৷
.
আমি দেখেছি কিন্তু মনে হয়না তুমি ভালো করে দেখেছো৷
.
অনু আবিরের কথা শুনে ওর হাতের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো শাড়ির আঁচল ঘড়িতে আঁটকে আছে৷
আবির অনুর আঁচল ওর ঘড়ি থেকে সরিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷

অনুঃধুর!!আমি সবসময়ই আবিরকে ভুল বুঝি৷ ভালো করে যাচাই বাচাই না করেই ওর উপরে দোষ চাপিয়ে দেই৷
🍁
আবিরের মামা থেকে যাওয়ার জন্য ওদেরকে খুব রিকোয়েস্ট করেছেন কিন্তু আবিরের বরাবর উত্তর সে থাকবেনা৷ তাই আবিরের জেদের কাছে হার মেনে সবাইকে চলে আসতে হলো৷ অনু গাড়ির পাশে গিয়ে দেখলো এখনও তার জন্য আবিরের পাশের সিটটাই বরাদ্দ রয়েছে৷ অনু ব্যাক সিটে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো ভালো করে৷ শ্রাবন ওকে ইশারায় আবিরের পাশে বসতে বলছে৷অনেক্ষন হয়ে গেছে অনু গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে৷ আবির রেগে জোড়ে গালির হর্ন বাজালো৷ অনু বুকে ফু দিয়ে তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো৷

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে৷ অনু মাথা বের করে বাইরে তাকিয়ে আছে৷ চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসছে৷ একে একে গ্রামের ছোট ছোট ঘরগুলে আলোতে ভরে উঠছে৷ চারিদিকে সবুজ শ্যামল গাছপালা বাতাসে নরছে৷ মৃদু বাতাসের তালে তালে অনুর চুলও উরছে৷ আবির একবার অনুর দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দিলো৷

ছোঁয়া আর আরুহি গাড়িতে উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো৷সামান্তা মন খারাপ করে বসে আছে সাথে অরিজিৎ সিংয়ের স্যাড সং শুনছে৷

আদনানঃকী হয়েছে তোর বলতো সামু৷গাড়িতে বসার পর থেকে দেখছি মন খারাপ করে বসে আছিস আবার এখন অরিজিৎ সিংয়ের ফেমাস স্যাড সংও শুনছিস কী ব্যাপার হুম৷
.
সামান্তাঃআমাকে নিয়ে তোমাকে এত ভাবতে হবে না।আমারটা আমি নিজেই ভেবে নিবো৷ আমার মন চাইছে তাই আমি স্যাড সং শুনছি তোমার কোনো সমস্যা?৷
.
আদনানঃনা না আমার কোনো সমস্যা নেই তুই গান শুন৷
.
এদের ঝগড়ার মধ্যেই হঠাৎ জোড়ে ব্রেক কষে গাড়ি থেমে গেলো।সবাই ভেবেছে সামান্তা আর আদনানের ঝগড়ার কারনে আবির রেগে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছে৷
সামন্তা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,

সামান্তাঃকী হয়েছে ভাই গাড়ি থামালে যে?
.
আবিরঃআই ডোন্ট নো সামু নেমে দেখতে হবে৷
.
আবির ওর ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে গাড়ি চেক করলো৷ না গাড়িতে কোনো প্রবলেম হয়নি৷ গাড়ির চাকা চেক করতেই দেখলো সামনের একটা চাকাতে লোহা ঢুকে গেছে যে কারনে চাকা লিক হয়ে গেছে৷

আবিরঃড্যাম ইট৷
.
আদিলঃকী হইসে আবির৷
.
আবিরঃগাড়ির চাকা লিক হয়ে গেছে৷
.
সামান্তা আরুহি আর ছোঁয়াকে ডাক দিলো৷

সামান্তাঃওই ঘুম থেকে উঠ তোরা আজ কীভাবে বাড়ি যাবি সেটা ভাব৷
.
আরুহিঃকেনো গাড়ির আবার কী হয়েছে৷
.
সামান্তাঃগাড়ির চাকা লিক হয় গেছে৷
.
ছোঁয়াঃওই মাই গড এখন কী হবে৷
.
শ্রাবনঃদাঁড়া দেখছি বাবাকে কল করে৷কোনো গাড়ি পাঠানো যায় কী না?

শ্রাবন ওর বাবাকে ফোন দিলো কিন্তু ফোন যাচ্ছেনা৷ নেটওয়ার্ক চেক করে দেখলো নেটের চিহ্ন পর্যন্ত নেই৷

শ্রাবনঃধুর নেটও নাই৷
.
আবির অনুর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মধ্যে কোনো ভাবান্তরই নেই৷এখনও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে৷

সামান্তাঃঅনু কী করছিস৷
.
অনুঃকী করবো আবার ন্যাচার দেখছি৷
.
অনেক্ষন হয়ে গেছে সবাই চুপচাপ বসে আছে৷ ছোঁয়া নিরবতা ভেঙে বললো,,

ছোঁয়াঃভাইয়া আমার খুব খিদে পেয়েছে৷
.
সামান্তাঃআামারও৷
.
আরুহিঃআমারও৷
.
অনুঃএক কাজ করি চলো গাড়িতে বসে না থেকে এগিয়ে গিয়ে দেখি কোনো দোকান বা দাবা পাই কী না৷
.
শ্রাবনঃহুম ঠিক বলেছিস৷ আকাশে মেঘে গর্জন করছে যেকোন সময় বৃষ্টি চলে আসতে পারে৷যা করার তারাতাড়ি করতে হবে৷
.
ছোঁয়াঃকেন যে এত দূর আসতে গেলাম আসতে যেতেই দশ ঘন্টা তার মধ্যে আবার গ্রামে৷ খুন করে ফেলে রেখে গেলে ওতো কেউ টের পাবেনা৷
.
আরুহিঃদিলি তো ভয় পাইয়ে৷
.
ছোঁয়াঃএই দেখ গাড়িটা আবার তেঁতুল গাছের নিচে এসে নষ্ট হয়েছে এরমানে বুঝতে পারছিস
.
সামান্তাঃকী
.
ছোঁয়াঃএই তেঁতুল গাছে ভুত আছে৷ আর ভুত গাড়িটা নষ্ট করেছে৷ এখন আমাদের সবাইকে মারবে তারপর আমরা সবাই মরে ওই তেঁতুল গাছে পেত্নি হয়ে ঝুলে থাকবো আর মানুষকে ভয় দেখাবো৷ হিহিহি৷
.
শ্রাবনঃতোর মরার শখ বেশি হইসে গিয়ে তুই মর৷ চল তোকে তেঁতুল গাছের নিচে রেখে দিয়ে আসি৷
.
ছোঁয়াঃআরে কই যাইতাম৷ আমি কোনাক্ষানো যাইতাম না আমি ডরাই৷
.
শ্রাবনঃওরে সিলেটি৷
.
আদিলঃসিলেটির আর দেখলে কী৷আরও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে৷
.
আবিরঃতোরা ভাব কম দেখা আর গাড়ি থেকে নাম৷
.
ওরা আটজন গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো৷ একটু দূরেই একটা বাড়িতে লাইট জ্বলছে৷ আদিলরা সেই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো৷ কোনো সাহায্য পাওয়া যায় কী না সেই আশায়

আদনান আদিলদের এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে বাড়িতে গেলো।বাড়ির বারান্দায় একজন মধ্য বয়স্ক লোক একটা বেতের চেয়ারে বসে আছে৷ আদনান উনাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো খাবার পাওয়া যায় এমন কোনো দোকান বা দাবা আছে কী না৷
উনি বললেন এখান থেকেই কিছুটা দূরে ডানে গিয়ে বামে একটা ছোটখাটো দাবা আছে সেখানে চা নাস্তা পাওয়া যায়৷ আদনান উনাকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজেই দাবায় গেলো৷ দাবায় খাওয়ার মতো শুধু চা আর সিংগাড়াই আছে৷ আদনান একটা আধা লিটারের বোতলে চা নিলো আর আটটা নয়টা সিংগারা নিলো কাগজ মুড়ি দিয়ে৷ সাথে নিলো কয়েকটা ওয়ান টাইম গ্লাস৷

সবাই আবার ইউ টার্ন দিয়ে হাঁটতে লাগলো৷ তার মধ্যেই ঝিরিঝিরি করে বৃষ্টি পরা শুরু হলো৷ আস্তে আস্তে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মুষলধারে বৃষ্টিতে রুপ ধারন করলো৷ সামান্তা,ছোঁয়া,অনু আর অারুহি ওরা মাথায় আঁচল দিয়ে দৌড়াতে লাগলো৷ সাবাই এক প্রকার দৌড়ে গাড়িতে উঠে গেছে অনুও উঠতে যাবে তার আগেই গাছের শিকরে হোঁচট খেয়ে পরে গেলো৷ পাও মুচড়ে গেছে৷ অনু পা ধরে বসে আছে৷ ভিজেও গেছে খানিকটা৷ আদনান অনুকে টেনে তুলে সিটে বসিয়ে দিলো৷

অনুঃভাইয়া আমি ভিজে গেছি খুব ঠান্ডা লাগছে৷
.
আদিল অনুর কথা শুনে ওর গা থেকে শার্ট খুলে দিলো৷

আদিলঃআাপাতত এটা দিয়েই ডেকে বসে থাক ঠান্ডা কম লাগবে৷ আদনান চা দে যদি চা খেলে বোনের একটু ঠান্ডা কমে৷
.
আদনান সবাইকে ওয়ান টাইম গ্লাস করে চা দিলো৷ সাথে সিংগাড়া৷

আদনানঃখাওয়ার মতো শুধু এগুলোই ছিলো৷
.
আদিলঃকিন্তু পানি কোথায় পাবো৷
.
আবিরঃগাড়ির পিছনে পানির বোতল রাখা আছে৷
.
শ্রাবনঃতাহলে তো আবার গাড়ির পিছন খুলতে হবে৷

শ্রাবন গাড়ি থেকে নেমে পানির বোতল আনতে গিয়ে দেখলো একটা চাকাও আছে৷

শ্রাবনঃআবির ভাইয়া পিছনে তো একটা চাকাও আছে৷
.
আবিরঃতাই৷ তাহলে তো ভালোই৷ লাগিয়ে দেখতো৷
.
শ্রাবন গাড়ির চাকা লাগিয়ে আগের চাকাটা আবার গারির পিছনে রেখে দিলো৷

শ্রাবনঃএবার স্টার্ট দাও৷
.
আবির গাড়ি স্টার্ট দিলো কত সুন্দর করে এখন গাড়ি চলছে৷ অনুর ঠান্ডা এবার ভেরে গেলো৷ সামনে বসার কারনে বাতাসটা বেশি লাগছে৷তারমধ্যে আবার প্রচন্ড ঘুমও পেয়েছে৷ আদিল অনুকে ঝিমুতে দেখে আবিরকে গাড়ি থামাতে বললো,,

আবিরঃকী হয়েছে৷
.
আদিলঃতুই ব্যাক সিটে আয় আমি ড্রাইভিং করছি৷
.
কিন্তু কেন?
.
আয়৷ তুই এতক্ষণ ধরে ড্রাইভিং করছিস৷
.
যাক কেউ তাহলে অন্তত আমার দরদ বুঝলো৷
.
আবির ব্যাক সিটে এসে বসলো আর আদিল ড্রাইভিং সিটে৷
অনু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো৷ আদিল আলতো করে অনুর মাথা ওর কাঁধে এনে রাখলো৷ আবিরের কাছে এবার স্পষ্ট আদিল কেন ড্রাইভিং সিটে বসছে৷

আরুহি,সামান্তা, ছোঁয়া একটা একটার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে৷ আর আবিররাও ঝিমুচ্ছে৷

প্রায় তিন ঘন্টা পর ওরা এসে বাসায় পৌঁছালো৷অনু পায়ে ব্যাথার জন্য হাঁটতে পারছেনা তখন পা মুচড়ে গেছিলো তাই৷ আদিল অনুর কাছে এসে ওকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো৷
.
ছোঁয়াঃভাইয়া তুমি শুধু অনুকে আদর কর আমাকে কেন করোনা৷
.
আদনানঃওরে আমার বোন রে৷
.
আদনানও ছোঁয়ার কাছে এসে ওকে কোলে তুলে নিলো৷

আদনানঃএখন ঠিকাছে৷
.
ছোঁয়াঃহিহিহি একদম৷

আদনান আর আদিল ওদের দুবোনকে কোলে করে বাসায় ঢুকলো৷ ড্রয়িংরুমে ওদের মা বাবা সবাই বসে আছেন৷ অনু আর ছোঁয়াকে কেলে দেখে ওদের মা বাবা খুব ঘাবড়ে গেলেন৷
.
মাঃকী হয়েছে ওদের
.
আদিলঃমা তোমার মেয়ে অনুর পা মুচড়ে গেছে হাঁটতে পারছিলনা তাই ওকে কোলে নিয়েছিলাম এখন তোমার ছোট মেয়ের মন্তব্য হলো তাকে নাকি কেউ ভালোবাসে না৷ তাই আদনানও ওকে কোলে নিয়েছে৷
.
আবিরের মাঃবাহ রুমানা তোর ছেলেগুলো কিন্তু তাদের বোনকে খুব ভালোবাসে৷
.
আদনানঃভালোবাসব না৷ আমাদের দুইবোন আমাদের দুই ভাইয়ের চোখের মনি৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ দেখোনা আমরা তে গাঙ্গের জলে ভেসে ভেসে আসছি৷ দুই ভাই থেকে একটা ভাইয়েরও আমাদের দুইবোনের দিকে নজর পরেনা৷
.
শ্রাবনঃপরে কোলে নিব এখন না একেবারে বিয়ের সময়৷কোলে করে গাড়িতে দিয়ে আসবো৷
.
আরুহিঃলিসেন বিয়ের সময় কোলে নিতে হবেনা আমরা নিজেই হেঁটে যেতে পারব৷
.
অনুর মাঃএই তোরা কী শুরু করেছিস যা গিয়ে চেঞ্জ করে এসে ডিনার কর৷
🍁
রাত সাড়ে বারোটা৷ অনু একের পর এক হাঁচি দিয়ে যাচ্ছে৷ কিছুক্ষণ পর আদনান হাতে করে কয়েকপাতা মেডিসিন নিয়ে এলো৷

আদনানঃবোন এগুলো খা দেখিস বেটার ফিল করবি৷
.
অনু ছলছল চোখে ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো৷ খুব ভালোবাসে ওর ভাইরা ওকে৷ অনু আদনানক হাল্কা করে জড়িয়ে ধরলো৷ আদনানও বোনের মাথায় একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো৷ আদনান চলে যাওয়ার পরই আদিল হাতে করে চা নিয়ে এলো৷
.
চা কেন বাইয়া
.
আদিলঃচুপ কোনো কথা না৷ আদা দিয়ে কড়া কড়ে চা বানিয়ে এনেছি৷ তুই না আমার হাতের চা খেতে খুব ভালোবাসিস তাহলে এবাট চুপটি করে চা খেয়ে তারপর মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পরবি কেমন৷
.
ভাইয়া৷ আসলেই তোমরা খুব ভালো খুব কেয়ারিং৷ তোমাদের মতো ভাই যাতে সবার হয়৷ খুব গর্বিত আমি তোমাদের মতো ভাই পেয়ে৷
.
পাগলি একটা৷
.
আদিল অনুর কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো৷

সামান্তাঃআমার কিন্তু এবার হিংসে হচ্ছে৷
.
কেন৷
.
তোর ভাইরা তোকে কত ভালোবাসে আর আমার ভাইয়েরা৷
.
তোর ভাইয়ারাও তোদেরকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আমার ভাইদের মতো প্রকাশ করতে পারেনা৷ চল শুয়ে পর৷

চলবে…….

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৫

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু গাড়ি থেকে নামতে যাবে হঠাৎ আবিরকে ওর খুব কাছে দেখে সে ভীষণ ঘাবরে গেলো৷ আবির অনুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ অনু আবিরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো এই মুহুর্তে অনু একেবারে ফ্রিজড্ হয়ে গেছে নড়া ছড়ার শক্তিও পাচ্ছেনা৷ অনেক্ষন হয়ে গেছে অনু চোখ খুলে দেখলো আবির বোতল থেকে পানি খাচ্ছে৷ অনুর কাছে এবার স্পষ্ট হলো আবির পানির বোতল নেওয়ার জন্য অনুর দিকে এগিয়ে এসেছিলো৷ কারন বোতলটা অনুর পাশে একটা মিনি ব্যাগে রাখা ছিলো৷অনু বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে একাই বক বক করছে৷ বাকিরা সবাই আগেই চলে গেছে৷ এখান থেকে তাদের মামার বাড়িতে হেঁটে হেঁটে যেতে হবে৷ আবিরও গাড়ি থেকে নামছেনা৷ অনু আবিরের দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেই সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো৷মাটির রাস্তা তার মধ্যে আবার উঁচু নিচু৷ অনুর পায়ে হিল জুতা থাকার কারনে সে বারবার পায়ে মুচড় খাচ্ছে৷এতে পাও ব্যাথা করছে৷

অনুঃধুর সামু, রুহি, ছোঁয়া ওরা আমাকে ফেলে রেখে চলে গেলো৷ কেন যে তখন ঘুমাতে গেছিলাম৷ যদি না ঘুমাতাম তাহলে হয়তো এত বড় বিপদে পড়তে হতো না৷ এখন কী করবো আমি৷
.
অনু এবার জুতা হাতে নিয়ে নিলো৷বর্ষাকাল হওয়াতে রাস্তার চারিপাশের খাল বিল সব পানিতে টুইটুম্বুর৷ অনু চারিদিকে দেখছে আর হাটঁছে৷ পিছনে তাকিয়ে দেখলো আবির ওর থেকেই কিছুটা দূরে এগিয়ে আসছে৷ অনুর দৃষ্টি সামনে পরতেই দেখলো পানার উপরে একটা হলদেটে সাপ গোল হয়ে বসে আছে৷ অনু এটা দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো৷ এই প্রথম এত কাছ থেকে সে সাপ দেখছে৷ অনু সামনে একবার পিছনে একবার তাকিয়ে আবিরের কাছে দৌড়ে চলে গেলো৷

আবিরঃকী হয়েছে৷ তুমি আবার ইউ টার্ন মারলে যে৷
.
আসলে সামনে সাপ আছে৷ আমি ভীষন ভয় পাই সাপকে৷
.
আবির আরেকটু এগিয়ে দেখলো সত্যি এখানে সাপ আছে৷ ঢোঁড়া সাপ৷ আবির সাপের দিকে একবার অনুর দিকে একবার তাকিয়ে সাপকে পেরিয়ে সামনে চলে গেলো৷আবির জানে এই সাপ কামড় দেয়না আর দিলেও ক্ষতি হয়না৷ অনু আবিরকে সামনে এগিয়ে যেতে দেখে কেঁদে দিলো৷ সে কী করে যাবে যদি কামড় বসিয়ে দেয়৷ অনু মনকে শক্ত করে নিলো৷ মরে গেলে মরে যাবে তারপরও আবিরকে দেখিয়ে দিবে যে সেও ভয় পায় না৷ অনু আল্লাহর নাম জপ করে সাপকে ক্রস করে গেল৷আবিরও একবার পিছনে তাকিয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে এটিটিউড নিয়ে হাঁটতে লাগলো৷

“এটিটিউড দেখানোর আর জায়গা পায়না হুহ৷ নিজেকে কী মনে করে আল্লাহই জানেন৷
.
আবির অনুর খোঁচা দেওয়া কথা শুনে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো৷

আবিরঃতুমি আমাকে কী বলেছো৷
.
আমি কাউকে কিছু বলিনি৷
🍁
অনু বিয়ে বাড়ির সামনে এসে জুতা পায়ে দিলো৷ পা এখনও ব্যাথা করছে৷ অনু কে দেখে সামান্তা ওর দিকে এগিয়ে এলো৷

সামান্তাঃকী রে অনু এত সময় কেন লেগেছে তোর?
.
তুই বলছিস এই কথা যখন ফেলে চলে এসেছিলিস তখন কই ছিলো তোর এই কথা৷
.
স্যরি রে৷ তুই তখন ঘুমিয়ে পরছিলি তাই তোকে ডাক দেইনি৷ তোর তো আবার ঘুম না হলে মাথা ব্যাথা করে৷
.
তোর কী মনে হচ্ছিলো আজ আমি গাড়িতেই ঘুমিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিই৷
.
না তেমনটা না একচুয়েলি।বাই দ্যা ওয়ে, ভাইয়া কোথায়৷
.
তোর ভাইয়ের খবর কী আমি রাখি নাকি?গিয়ে দেখ পারলে, কোথায় গেছে৷
.
ওরে ভাভা এত রাগ৷
🍁
আবির সোফায় বসে আছে৷ আর অনু চেয়ারে৷ হুট করেই একটা মেয়ে এসে আবিরের পাশে বসে পরলো৷ আবির তার দিকে একবার তাকিয়ে হেসে দিলো৷ আরুহির মেয়েটাকে দেখে ভীষণ রাগ লাগছে আরও রাগ লাগছে আবিরকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে৷
মেয়েটি আবিরের কানে কানে বললো,,

“কী ব্যাপার আবির আগে তো আমাকে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হতে আজ এই প্রথম আমার দিকে তাকিয়ে হাসলে তুমি৷ নিজেকেই নিজের কাছে খুব আনন্দিত লাগছে৷
.
আবিরও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো৷মেয়েটি একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে ভালো করে তাকিয়ে বললো,,

“ওয়াও আবির তুমি তো দেখছি আগের চাইতেও আরও বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ আমার ভাই হ্যান্ডসাম ড্যাশিং এখন কী হয়েছে৷
.
আরুহিঃএক্সাক্টলি৷ সত্যি নীলা আপু তুমি পারও বটে৷
.
নীলাঃএই তোদের এত সমস্যা কেন৷
.
সামান্তাঃকারন আমরা অনুর ভাগ কাউকে দিতে চাইছিনা৷
.
আবির সামান্তার কথা শুনে ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো৷ আবিরের তাকানো দেখে সামান্তা একটা ঢুক গিলে নিজেকেই নিজে গালিগালাজ করতে লাগলো৷

সামান্তাঃধুর ধুর কথার তালে তালে মুখ ফসকে কী বলে ফেলেছি৷ এখন নীলা আপু যদি তিল কে তাল বানিয়ে দেয়৷ অবশ্য বানাবেই তো এটা তো তার অভ্যাসই৷
.
নীলাঃএক মিনিট এক মিনিট অনু মানে কী বলেছিলিস সামু৷
.
সামান্তাঃকিছু না তোমাকে সব কিছু বলতে হবে নাকি৷ সব বিষয়ে নাক গলাও কেন৷

আবির অনুর দিকে আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো সে নীলা আর তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে৷ আবির অনুকে জ্বালানোর জন্য নীলার সাথে কথা বলতে থাকল৷

আবিরঃনীলা তুমি কিন্তু আগের চাইতে অনেক কিউট হয়ে গেছো৷

কথাটা শুনে অনুর কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে গেলো।
.
নীলাঃতুমি আমাকে কখন দেখলে? ভালো করে তাকালে ওতো না৷
.
সামান্তাঃতো কী করবে এখন তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে নাকি আজব৷ আবির ভাইয়ার একবার তাকালেই হয়৷
.
আরুহিঃআর তুমি কিন্তু এতটাও সুন্দর না যতটা তুমি মনে করো৷
.
নীলাঃআমি সুন্দরের কথা কখন বললাম৷ আর তোরা তোদের এই অভ্যাস এখনি চেঞ্জ করলিনা৷ সব সময় আমাকে পিঞ্চ করিস৷
.
সামান্তাঃকারন তোমার অভ্যাস আমাদের ভালো লাগেনা৷
.
নীলা আরুহি আর সামান্তার দিকে চোখ পাকিয়ে চলে গেলো৷

ছোঁয়াঃএই মেয়েটা কে রে৷
.
আরুহিঃআমার মামাতো বোন নীলা৷
.
ছোঁয়াঃওহ৷ দুইহাতে চুড়িও দেখলাম বিবাহিত নাকি৷
.
সামান্তাঃহুম৷ হেতির দুইবছরের একটা মেয়েও আছে৷

ছোঁয়াঃছিঃ৷ কী লুচ্চা টাইপের মেয়ে৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ ও এরকমই৷
.
সামান্তাঃআবির ভাইয়াকে খুব পছন্দ করত৷ তারপর ভাইয়া বিদেশ চলে যাওয়ার পর আরেকটা ছেলেকে পছন্দ করে নেয় তারপর বিয়ে৷
🍁
ছোঁয়া ছাঁদের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর শ্রাবন ওর পিছনে৷

“ছোঁয়া
.
কিছু বলবে৷
.
না৷ আকাশটা দেখ কত সুন্দর৷
.
আকাশ তো সুন্দরই হয়৷
.
তবে আজকের আকাশটা একটু বেশিই সুন্দর৷
.
হুম৷
.
আর আমার কাছে মনে হচ্ছে আকাশে তুই এক জ্বলন্ত তারা৷
.
মানে?
.
মানে তুই বুঝবি না৷
.
তোমার কী হইসে বলতো? একটু প্রকাশ করো তো আরেকটু ভিতরে রেখে। দাও কেন?৷
.
এমনি৷
.
শ্রাবন ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷ ছোঁয়া মন খারাপ করে আকাশ দেখায় মন দিলো৷
🍁
“তুমি বুঝনি আমি বলিনি, তুমি স্বপ্নতে কেন আসনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে সব গিয়েছি৷

সামান্তা চেয়ারে পা দুলিয়ে বসে আছে আর আদনান ওর পাশে বসে গানটা গাইছে৷

সামান্তাঃওমা তাই? তা কিসের এত অভিমান তোমার আমার উপরে৷
.
আদনানঃতোর উপরে আবার কিসের অভিমান৷ অভিমান তো একজনের উপরেই আছে তাকে নিয়েই গানটা গাইলাম৷
.
সামান্তা কথাটা শুনে মন খারাপ করে ফেললো৷
🍁
“তুমি ছোঁয়ে দিলে হায়,আমার কী যে হয়ে যায়৷

আরুহি আদিলকে একটা গোলাপ দিয়ে বারি দিয়েছিলো তখনই আদিল গানটা গেয়ে বসলো৷

আরুহিঃপ্লিজ আদিল এই গানটা তুমি আমার সামনে গাইবেনা৷
.
আদিলঃগান তো গানই৷আচ্ছা একটা কথা বলতো বুকে শুধু চিন চিন করে কেন আই মিন আমেরিকা লন্ডন করে না কেন৷
.
আরুহি আদিলের কথা শুনে ফিক করে হেঁসে দিলো৷

” আরুহিঃআবুল কোথাকার৷
.
ওয়াট আবুল৷ আবুল আবার কী৷
.
তোমার মতো আবুল এইটা বুঝবে না৷
🍁
অনু উঠানে হেঁটে হেঁটে চারিদিকে দেখছে৷পাশে কারও উপস্থিতি টের পায়ে পাশে তাকালো৷ অপরিচিত একটা ছেলে৷

“হাই আমি বিহান৷আর আপনি?
.
অনিতা রহমান অনু৷
.
আই সি৷ তা আদিল খান আর আদনান খান কী আপনার কেউ হয়৷
.
কেন বলুনতো৷
.
না মানে আপনার চেহারা আর তাদের চেহারায় অনেক মিল আছে তো তাই৷
.
হ্যাঁ আমি ওদের আপন বোন৷
.
আচ্ছা একটা কথা বুঝতে পারছিনা তারা নিজেদের নামের সাথে খান টাইটেল লাগায় বাট আপনি যে রহমান লাগান৷
.
রহমান আমার বাবার নাম৷ আমি আমার বাবার নাম আমার নামের সাথে লাগাই৷
.
খুব ভালো৷ আপনার আর কোনো বোন নেই৷
.
কেন? .
.
এমনি৷
.
আছে৷ আমার জমজ বোন৷
.
ওয়াও শুনলাম আদিল আর আদনানও নাকি টুইন আর আপনারাও টুইন জাস্ট এ্যামাজিং৷
.
হুম৷

আবির অনুকে আরেকটা অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে রেগে গিয়ে পাশে রাখা একটা চেয়ারে একটা কিক দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷অনু ইচ্ছে করেই ছেলেটির সাথে কথা বলছিলো৷ আবিরকে রাগতে দেখে সেও বাঁকা হাসলো৷

চলবে…….

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৪

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আবির গিটার রেখে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো৷ অনু আবরিকে এভাবে ওর সামনে দেখে চমকে গেলো৷ লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে নিলো৷

“কী হলো তুমি এখনো যাওনি কেনো৷
.
ওই আসলে……
.
কী আসলে বলো?
.
আসলে আমার কানের দুল আপনার দরজার কাছে পড়ে গেছিলো তাই নিতে এসেছিলাম৷
.
বাহ মিথ্যা বলতেও শিখে গেছে দেখছি(মন মনে)
.
তারপর?
.
তারপর আপনি চলে আসলেন৷
.
অনু কথাটা বলে সেখান থেকে কেটে পরলো৷ আবির অনুর দিকে একবার তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলো৷ আর মনে করতে লাগলো আজ থেকে এগারো বছর আগের ঘটনা৷
.
অনুর বয়স তখন দশ বছর আর আবিরের ষোলো বছর৷ অনু যখন পৃথিবীতে এসেছিলো তখন সব চাইতে বেশি খুশি আবিরই হয়েছিলো৷ অনুর প্রতি ওর কেমন জানি টান অনুভব হতো৷ আবির সব সময় অনুর কেয়ার করতো ওর পাশাপাশি থাকতো৷ কাউকে ওর সাথে সহ্য করতে পারতনা তাই সে নিজের বাড়ি ছেড়ে অনুদের বাড়িতে এসে পড়ে থাকতো৷ এতে অনুর অস্বস্তি হতো৷ কারন আবির যতদিন ওদের বাড়িতে থাকত ততদিন আবির ওকে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দিতনা মিশতে দিতনা৷ অনু ছোটবেলা থেকেই নেগেটিভ মাইন্ডের ছিলো তাই আবিরের এমন ব্যবহার ওর কাছে ভালো লাগত না৷ আবিরকে বিদায় করার জন্য ওকে ক্ষ্যাত,গাইয়্যা বলে অপমান করত৷ আবির অনুর কথায় কষ্ট পেলেও সেসব গায়ে মাখত না৷আরেকদিন অনু ওর রুমে বসে বসে পড়ছিলো৷ আবির তখন ওর কাছেই যাচ্ছিলো ফ্লোরে তেল পড়ে থাকাতে সেটাতে স্লিপ খেয়ে অনুর উপরে পরে যায়৷ অনু চিৎকার করে উঠলো৷তারপর আবিরকে খারাপ নষ্টা এসব বলে অপমান করতে লাগল৷ বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে আবিরের বাবা আবিরকে খুব মারেন তারপর ওকে নিউইয়র্কে ওর চাচার কাছে পাঠিয়ে দেন৷

এসব মনে পরতেই আবিরের চোখ পানিতে ভেসে উঠলো৷

“হ্যাঁ ফুপিমনি ঠিক কথাই বলে অনুর ম্যাচিউরিটি একটু বেশিই৷ নাহলে দশ বছরের একটা মেয়ে এভাবে কেনো কথা বলবে৷ সেদিন আমি তোর উপরে ইচ্ছে করে পরে যায়নি তেল ছিলো সেখানে আর তেলটা কে ফেলেছিলে ছোঁয়া৷ হ্যাঁ বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে উনার আমাকে বুঝতে ভুল হয়েছে৷ ছোঁয়া চুলে তেল দিতে গিয়ে ফ্লোরে তেল ফেলেছিলো আর আমি সেখানে স্লিপ খেয়েই তোর উপরে পরে গেলাম৷ অনু তোর কী একটুকুও অনুশোচনা হয়না৷
.
হ্যাঁ আমার অনুশোচনা হয়৷ আমার ম্যাচিউরিটি বেশি থাকলেও তখন এতটাও ম্যাচউরিটি ছিলোনা যার উপরে ভিত্তি করে আমি বুঝতে পারব যে আবির আমাকে ভালোবাসত৷ আবিরের বয়স তখন ষোল ছিলো৷ পর্যাপ্ত বয়সেরই ছিলো ও৷আমাকে কারও সাথে মিশতে না দেওয়ার কারন তখন না বুঝতে পারলেও এখন পারছি এসব যে আবিরের ভালোবাসার ইঙ্গিত ছিলো৷ আবিরকে খুব অপমান করেছি কিন্তু তবুও সে আমার পিছু ছাড়েনি কিন্তু শেষে আমি এটা কী করেছিলাম ছিঃ ছিঃ ছিঃ৷না আবির আবিরের জায়গায় ঠিক আছে৷ ও যদি আমার জন্য নিউইয়র্ক গিয়ে দশ এগারো বছর কাটিয়ে আসতে পারে তাহলে আমি কেন ওর থেকে দূরে থাকতে পারবনা৷আবির আমাকে কয়েকটা কথা শুনিয়েছে তাতেই আমার এতো খারাপ লেগেছে আর আমি যে তাকে প্রতিনিয়ত অপমান করে গিয়েছি কতই না খারাপ লেগেছিলো তখন আবিরের৷

চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গরিয়ে পরছে। অনু চোখের জল মুছে কাত হয়ে শুয়ে পরলো৷ দুই মানুষ একই বাড়িতে একজন করিডোরের ওপারে আরেকজন এপারে৷ দুজনের চোখেই ঘুম নেই৷ দুজনই দুজনের কথা ভেবে চোখের জল ফেলছে৷
🍁
সকালে অনু ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না করেই ছাঁদে চলে গেলো৷আপাতত প্রকৃতির বাতাস ফিল করার দরকার৷কিন্তু সেখানে গিয়েও অনু বেশিক্ষণ টিকতে পারলোনা আবির চলে এলো৷ অনু আবিরকে দেখে তারাতাড়ি ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷

আদনানঃকী হয়েছে বলতো অনু৷ তোর চোখ মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন৷
.
না ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি(নাক টেনে)
.
আদিলঃমিথ্যা বলছিস?
.
না ভাইয়া
.
আদনানঃতাহলে নাক টানছিস কেন
.
এমনি৷

আদিলঃতোকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে৷ কী হয়েছে সত্যি করে বল৷
.
ট্রাস্ট মি ভাইয়া কিছু হয়নি৷
🍁
শ্রাবন সবার জন্য শপিং করেছে৷ অনু বুঝতে পারছেনা শপিং করার মানে৷ তাই সামান্তাকে জিজ্ঞেস করলো৷

সামান্তাঃআজ আমরা সবাই মামার বিয়েতে যাব৷ তোরাও যাচ্ছিস৷ আর এই জন্যেই তোদের আরও দুইদিন রাখা হয়েছে৷
.
অনুঃআমি যাব না প্লিজ৷
.
আরুহিঃকেন যাবিনা৷
.
এমনি৷
.
সামান্তাঃদেখ এমনি বললেই তো হবেনা তোকে যেতে হবে মানে যেত হবেই৷
🍁
অনু একটা পার্পল কালারের মধ্যে পাথরের খচিত জর্জেট শাড়ি পরেছে সাথে হাই হিল জুতা৷ অনুর একটা প্রতিভা খুব ভালো ও শাড়ি পরতে জানে খুব সুন্দর করে৷ এখন যাচ্ছে বাকিদের শাড়ি পড়িয়ে দিতে৷ অনু নিজের চুড়ি ঠিক করতে করতে সামনে এগুচ্ছিলো আবিরওও তখন ব্লেজার হাতে করে শ্রাবনের কাছে যাচ্ছিলো অনুর জুতা ওর শাড়ির কুচিতে পরে যাওয়ার জন্য সে তাল সামলাতে না পেরে আবিরের উপর পরে গেলো৷ আবিরের হাত থেকে ব্লেজার পরে গেছে সে এক হাত দিয়ে অনুর কোমড় চেপে ধরেছে আরেক হাত দিয়ে দরজার কার্নিশ৷ অনু এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখ খুলে আবিরের দিকে তাকালো৷ আবিরকে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে চট করে আবিরের থেকে দূরে সরে এলো৷

“আ’ম এক্সট্রিমলি সরি৷ আসলে আমি লক্ষ্য করিনি৷
.
হ্যা যখন তুমি আমার উপরে পরবে তখন কিচ্ছুনা আমি পরলেই তো নষ্ট খারাপ হয়ে যাই৷
.
অনু আবিরের খোঁচা দেওয়া কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো৷ আবিরও ব্লেজারটা তুলে সেখান থকে চলে গেলো৷

“হ্যাঁ আল্লাহ আমার সাথেই কেন এমন হয় যত চাচ্ছি আবিরের সামনে পরবো না তত যেন আরও বেশি ওর সামনে পরছি ধ্যাত৷
🍁
ছোঁয়া সিড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ শ্রাবন ছোঁয়াকে দেখে সিটি বাজাতে বাজাতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷

শ্রাবনঃবাহ্
.
কী (ভ্রু কুঁচকে)
.
সুন্দর লাগে গো আজকে তোমারে,
তুমি আমার মনটা কাইরা নিলে,
.
ধুর এসব কী বলে৷
.
সত্যি তোকে খুব সুন্দর লাগছে৷ এক কথায় অসাধারন৷
.
তোমাকেও এই পাঞ্জাবিতে খুব স্যুট করেছে৷ এক কথায় বিউটিফুল৷
.
যাক অবশেষে ছোঁয়া আমার দিকে একটু নজর দিলো৷
🍁
সামান্তা শাড়ি পরে ফোনে কথা বলছিল। আদনান তখন ওর রুম থেকে পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বেড়োচ্ছিলো সামান্তাকে দেখে এই মুহুর্তে যেনো ও একটা ভ্রমে চলে গেছে৷ সামান্তা আদনানকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফোন কেটে ওর দিকে এগিয়ে গেলো৷
.
এহেম…কী হয়েছে বলোতো তোমার৷ হুম৷
.
নাথিং সামু তোকে খুব সুন্দর লাগছে৷
.
জানি আমি৷ তবে তুমি কী জানো তোমাকে আমার চাইতে আরও কতগুন বেশি সুন্দর লাগছে৷
.
সামান্তা কথাটা বলে মুচকি হেসে চলে গেলো৷
🍁
আদিল রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পারফিউম দিচ্ছে৷ আর আরুহি দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷
.
এত সময় ধরে দাড়িয়ে আছিস কেন৷
.
আমি দেখতে চাই আদিল খানকে আমার পছন্দ করা পাঞ্জাবিতে দেখতে কেমন লাগে৷
.
আদিল পারফিউম ড্রেসিং টেবিলের রেখে মুচকি হেসে আরুহির দিকে এগিয়ে এলো৷
.
ইউ নো হুয়াট আমাকে সব কিছুতেই স্যুট করে৷
.
জানি আমি৷
.
তা কেমন লাগছে৷
.
খুব সুন্দর৷
🍁
গাড়ি ঠিক করা হয়েছে দুইটা৷ একটাতে বড়রা আরেকটাতে ছোটরা৷ অনু গাড়িতে উঠে দেখলো সিট ফুল ওর বসার জায়গা নেই৷

অনুঃএকি আমি কোথায় বসবো৷
.
সামান্তাঃফ্রন্ট সিটে৷
.
অনু সামনে তাকিয়ে দেখলো আবির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে৷

অনুঃইম্পসিবল৷ আমি ফ্রন্ট সিটে বসে যেতে পারবনা প্লিজ সামু তুই যা৷
.
পারব না৷
.
সামু,রুহি বেশি ন্যাকা ভালো লাগেনা৷ওর যাওয়া হলে যেন তারাতাড়ি সিটে বসে পরে নাহলে যেন চলে যায়৷আমি টাইম লস করতে পারবনা৷

অনু আবিরের কথা শুনে রেগে গাড়ির দরজা খুলে ধপ করে ফ্রন্ট সিটে বসে গেলো৷আবির অনুর দিকে তাকিয়ে ওর অজান্তেই মুচকি হাসলো৷ আবিরকে হাসতে দেখে বাকিরাও সবাই হেঁসে দিলো৷ সবাইকে হাসতে দেখে আবির ওদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷ আবির ড্রাইভিং করছে আর অনুর দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে৷ অনু একবারের জন্যও আবিরের দিকে তাকায়নি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে৷

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷আমি কাল বলেছিলাম যে আমি একদিন পর পর গল্প দিবো৷ তাতে অনেকেই বলেছে আমার নাকি ডিমান্ড বেশি আরও হেনতেন৷ তা একটা কথা না বললেই নয়৷ প্রবলেম তো সবারই থাকে অনেক সময় দেখা যায় মানুষের ব্যস্ততার জন্য তাদের গল্প পড়তে পর্যন্ত সময় থাকেনা৷গল্পের এক পার্ট পড়তে সময় লাগে বড়জোর হলেও পাঁচ থেকে সাত মিনিট আর একটা গল্প লিখতে গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগে৷ এখন বুঝতেই পারছেন আমার কতটা সময় ব্যয় হয়৷ এবার অনেকেই বলবে যে তাহলে আমি কেন গল্প লেখি৷কী করবো গল্প লিখা যে অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে৷তাই গল্পতেও সময় দিই আর লেখাপড়াতেও৷যারা আমার নিয়মিত পাঠক তারা জানে যে আমি বেশি সমস্যায় পরলে তবেই গল্প মিস দেই৷ সপ্তাহে দুদিন মিস দেই কী না ডাউট আছে৷ কিন্তু এখন মিস দিতে হবে৷আজ পড়া কম ছিলো তাই লিখতে পেড়েছি।গল্পের আগে আমার লেখা পড়া৷ সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন৷ আর কেউ আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করবেন৷ ]

চলবে…………

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৩

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনুঃআপনি!!আপনি এখানে কী করেন৷ তাও এতো রাত্রে৷
.
আবিরঃসেম কুয়েশ্চন তো আমারও আপনি এখানে কী করেন৷
.
আমি এখানে কী করি মানে৷ এটা আমার মামার বাসা৷ এখানে আমি থাকবো না তো কে থাকবে৷
.
সিরিয়াসলি!!এটা আমার নিজের বাসা এখানে আমি থাকবোনা তো কী আমার ভুত থাকবে নাকি৷
.
আপনার বাসা মানে৷ কী নাম আপনার৷
.
আবির রায়হান চৌধুরী নামটা নিশ্চয় শুনেছেন৷
.
আপনি আবির৷ কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব৷
.
কেন সম্ভব নয়৷ তা আপনার নামটা কী?
.
আমার নাম….. না কিচ্ছু না৷
.
অনু দৌড়ে নিচে চলে গেলো৷ আবির অনুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো৷
🍁
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই৷ অনু বারবার আবিরের দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে৷ আবির ব্যাপারটা বুঝে পিছন ফিরে বসলো

অনুঃবাহ এতো এটিটিউড৷ অবশ্য এটিটিউড থাকারই কথা৷ (মনে মনে)
.
আবিরের মাঃঅনু আমরা সবাই গল্প করছি তুমি কিছু বলছনা যে৷
.
এমনি মামী ভালো লাগছেনা৷
.
অনুর মা চা মুখে দিতে দিতে বললেন,,,

“তা ভাবি ছেলে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন কবে৷
.
আবির যদি হ্যাঁ বলে দেয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্৷
আবির যখন বাহিরে ছিলো তখন ওর জন্য একের পর এক মেয়ে দেখতাম আমি৷ আর সবগুলো মেয়েরই ফটো কালেক্ট করে রেখে দিয়েছি৷ দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি৷

আবিরের মা হাতে করে কতগুলো ফটো এনে সেগুলো সেন্ট্রার টেবিলে রাখলেন৷

“ভাবি দেখেন তো মেয়েগুলো কেমন৷অনু, ছোঁয়া তোমরাও দেখ৷

অনু শুধু আবিরের দিকে তাকাচ্ছে৷ ওর যেন বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে এটা আবির৷ আবির কিচ্ছু বলছেনা আরও মুচকি হেঁসে ফোন টিপছে৷ হয়তো আবিরও বিয়েতে রাজী তাই৷অনু মন খারাপ করে ছবিগুলো হাতে নিলো৷

অনুঃসবাই খুব কিউট মামী৷ আমার সবাইকেই খুব ভালো লেগেছে এক কাজ করো সবাইকেই তোমার পুত্র বধু করে বরং নিয়ে আসো৷

অনুর কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো৷ কিন্তু আবির অনুর এই কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো৷

আবিরের মাঃসবাই কিউট হলেও তোমার চাইতে কিন্তু কিউট না৷
.
অনুঃকি যে বলো না মামী৷এরাই কিউট৷ এই দেখ সাদা ড্রেস পরা মেয়েটা কিন্তু বেশ কিউট একে মানাবে৷

আবির এবার রেগে সোফায় ফোন ছুড়ে মেরে দাঁড়িয়ে গেলো৷

আবিরঃলিসেন!!!!আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো সেটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ আর এই ব্যাপারে কেউ ইন্টারফেয়ার না করলেই আমি সব চাইতে বেশি খুশি হবো৷তাই আমার বিয়ের বিষয় দয়া করে আমার উপরে ছেড়ে দাও কারও নাক গলানোর দরকার নেই(অনুর দিকে তাকিয়ে)
.
অনু আবিরের কথা আর ওর তাকানো দেকে চোখ নামিয়ে নিলো৷

আবিরের মাঃআবির এতে রাগ করার কী আছে৷ বসো বলছি৷ জাননা বড়দের সামনে উঁচু গলায় কথা বলতে নেই৷ এত রাগ আসে কোথায় থেকে তোমার৷
.
আবির ওর মায়ের কথায় সোফায় বসে গেলো৷ অনুর চোখে অজান্তেই পানি চলে এসেছে৷ কোন রকমে চোখের পানি আড়াল করে মেকি হেঁসে মামীর দিকে তাকালো৷
.
আবিরের মাঃতা নাজনীন তুমি কবে তোমার বাচ্চা কাচ্চাদের বিয়ে দিচ্ছো৷
.
আমার বাচ্চারা সবাই বিয়ের বয়সের৷ ছোঁয়া আর অনু তো জমজ বোন,আর আদিল আর আদনান ওরাও জমজ৷ওদের ম্যাচিউরিটি হলেও কিন্তু ছোঁয়ার অনুর চাইতে ম্যাচিউরিটি কম৷ তাই আমি চাচ্ছিলাম অনুর বিয়েটা আগে দিয়ে দিতে৷
.
অনুঃএসব কী বলছো তুমি মা৷ এসব কথা কোথায় থেকে আসছে৷ প্লিজ এখন এসব থাক না৷ আমরা কী বিয়ে নিয়ে ডিসকাস করতে এসেছি নাকি৷ এসব পরেও বলা যাবে৷ আর দেখো ছোঁয়ার ম্যাচিউরিটি কিন্তু এতটাও কম নয় যতটা তুমি মিন করছো৷
.
শ্রাবন হাতে দুটো চিপসের প্যাকেট নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে আসতে আসতে বললো,,,

শ্রাবনঃফাইনালি ছোঁয়ার তাহলে বিয়ে হচ্ছে৷ তাইতো ছোঁয়া৷
.
ছোঁয়াঃমুটেও না৷মা কী বললো শুননি৷ আমার এখনো ম্যাচিউরিটি হয়নি৷
.
শ্রাবনঃহ্যাঁ এটাইতো আমার সব চাইতে বড় সমস্যা৷ (মিনমিন করে)
.
ছোঁয়াঃকিচ্ছু বললে শ্রাবন ভাইয়া৷
.
না।আর তোকে না বললাম আমাকে ভাইয়া না ডাকতে৷ ভাইয়া ডাকলে কেমন যেন লাগে৷
.
ভাইয়া কে তো ভাইয়াই ডাকবো৷ তা কেন না করছো ভাইয়া ডাকতে?
.
এমনি৷ এই নে তোর জন্য চিপস এনেছি৷
.
ব্যাপার কী আমার জন্য আনলে আর কারও জন্য তো আনলে না হুম৷
.
তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটা না৷ শুনলাম তুই নাকি চিপস খেতে ভালোবাসিস তাই তোকে দিলাম।না খেলে দিয়ে দে আমি চিপস সামান্তাকে দিয়ে দিচ্ছি৷
.
জীবনেও না৷
.
আবিরের মা অনুর মায়ের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

আবিরের মাঃরাত বারোটা হয়ে গেছে বাচ্চাদের খিদে পেয়েছে বোধ-হয়৷ কিন্তু আদনান আর আদিল কোথায় ওদের তো অনেক্ষন যাবত দেখছি না৷
.
অনুর মাঃহ্যাঁ তাইতো৷ অনু ওদের ফোন লাগা তো৷
.
হ্যাঁ মা৷
.
অনু আদনানের ফোনে কল দিলে কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো৷

আদনানঃহ্যাঁ অনু বল৷
.
কোথায় তোমরা৷
.
এইতো একটু বাইরে এসেছি কোনো সমস্যা হয়েছে কী৷
.
না৷ ডিনার করতে আসো৷
.
আচ্ছা৷
.
অনুর মাঃকী বললো
.
আসছে৷
.
আবিরের মা আর অনুর মিলে খাবার ভেরে টেবিলে রাখছে৷

আবিরঃমা আমি রুমে যাচ্ছি আমি ডিনার করবো না
.
আবিরের মাঃসে কী কেনো করবেনা আবির
.
আমার খিদে নেই৷
.
আবির একবার অনুর দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে রুমে চলে গেলো৷
.
অনুঃবুঝতে পেরেছি আমি থাকলে সে খাবারই খাবেনা কাল সকালেই আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি৷আবির এতটা ঘৃনা করে আমাকে। (মনে মনে)
.
মাঃকী রে অনু তোর আবার কী হলো খেতে আয়৷
.
অনু মাথা নাড়িয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো৷
🍁
আরুহির রুমে এসে পায়চারি করছে অনু৷কারন কিছুক্ষণ আগেই আবিরের মা বাবা বলে দিয়েছে অনুরা যাতে আরও দুইদিন থাকে৷অনু পায়চারি করছে আর আরুহির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে৷ কার সাথে এত সময় ফোনে কথা বলছে কে জানে৷
অনু শেষমেশ বিরক্ত হয়ে আরুহির কান থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিলো৷

অনুঃএটা তো নাম্বার৷ কারও নামও সেভ করা নেই৷ কার সাথে ফোনে কথা বলছিলি রুহি সত্যি করে বলতো৷
.
আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড ঝুমার সাথে কথা বলছিলাম
.
সত্যি তো (সন্দেহের চোখে তাকিয়ে)
.
হ্যাঁ রে বাবা৷
.
ফোনটা রেখে দিয়েছে তা নাহলে আজ সত্যিটা ফাঁস হয়ে আসতো৷
.
ধুর ঘুমা তো৷
🍁
রাত একটা৷ অনু শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিছুতেই ঘুম আসছে না তার৷

অনুঃধুর সামান্তা আর ছোঁয়ার কাছে যাই এই আরুহির পাশে ঘুমালে চোখে ঘুমও আসবে না৷যাই গিয়ে দেখি ওই বান্দরনি দুইটা কী করছে৷
.
অনু রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷আরুহির রুম থেকে সামনের রুমের ডানপাশের রুমটাতে গিয়ে সোজা ঢুকে পরলো৷গরম বেশি লাগার কারনে আবির তখন সবেমাত্র শাওয়ার সেরে রুমে আসছিলো। এতে রাতে অনুকে দেখে সে ঘাবড়ে গেলো৷ অনুও আবিরকে দেখে জিভে কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো৷

আবিরঃকারও রুমে আসতে গেলে নক করে আসতে হয় সেটাও কী জানোনা তুমি৷
.
স্যরি স্যরি আমি জানতাম না এটা আপনার রুম৷
.
জানতে না৷ নাকি ইচ্ছে করেই এসেছো৷আর এই রুমকে অন্য কারোর রুম ভাবার কী আছে। তুমি সব সময় দেখেছ যে আমি এই রুমেই ঢুকি৷ যেহেতু আমি এই রুমে আসি তখন নিশ্চয় এটা আমার রুমই হবে৷
.
আমি ফলো করিনি অতটা৷
.
আবির এবার অনুর কাছে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো৷

“কেনো আসো তুমি আমার আশেপাশে?আমি যে তোমাকে একটুকুও সহ্য করতে পারিনা৷ আমি অনেক কষ্টে নিজেকে ঘুছিয়ে নিয়েছি৷শুধু মাত্র তোমার জন্য৷তাই নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে আসবেনা বলে দিলাম৷
.
অনু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো৷ আবির এমন ভাবে ওকে চেপে ধরেছে যেন এখুনি হাত একেবারে ভেঙে যাবে৷ আবির অনুর চোখে পানি দেখে ওকে ছেড়ে দিলো৷

যা বললাম তা যেন স্মরণ থাকে৷নাও গেট আউট ফ্রম হেয়ার৷
.
আপনি খুব খারাপ খুব৷ আমি বললামই তো যে আমি জানতাম না এটা আপনার রুম৷ জানলে কখনো আসতাম নাকি৷
.
অনু চোখ মুছে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।আবির কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসলো
.
তখন ওর সাথে এমন বিহেভ না করলে পারতাম৷ কিন্তু আমারই বা কী করার ছিলো ওকে কাছে দেখলে যে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা৷
.
আবির নিজের মুড ঠিক করার জন্য গিটার হাতে ব্যালকনিতে গেলো৷

আমি পারিনি তোমাকে আপন করে রাখতে
আমি পারিনি তোমাকে আবার আমার করে রাখতে৷

তুমি বুঝনি আমি বলিনি তুমি স্বপ্নতে কেনো আসনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে সব গিয়েছি৷ (২)

গানে গানে সুরে সুরে কতো কথা বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝনি বুঝনি……

আবির গান গেয়ে ওর রুমের দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো কারও ছায়া দেখা যাচ্ছে৷ রুমে আবছা আলো থাকায় ছায়াটা যেন আরও প্রকট ভাবে দেখা যাচ্ছে৷ আবির মুচকি হেঁসে ওর গিটারের দিকে তাকালো৷আগেও অনু এমন করত এখনও করে৷আগে আবিরের সাথে যখন রাগ করত তখন আবির ওর রুমে এসে গিটার বাজাতো,গান গাইতো৷ আবির জানে ওর গান শুনলে অনুর মন ভালো হয়ে যায়৷ আজও আবির এই জন্যেই গান গেয়েছে৷ ও জানতো অনু ওর গান শুনার জন্য আসবে৷ ওর ধারনাই সত্যি হলো৷

চলবে………

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০২

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু একবার পিছন ফিরে আবিরের দিকে তাকিয়ে চুল নাড়িয়ে চলে গেলো৷

রুমিঃঅনু ওই ছেলেটা তোকে ডাকলো তুই শুনলি না কেন৷
.
ধুর চেনা নাই জানা নাই কী দরকার তার সাথে কথা বলার আর আমি জানি নিশ্চয় অপমান করার জন্য ডেকেছিলো ভালো হয়েছে চলে আসছি৷
.
হুম৷আচ্ছা আমি যে তোর কাছে আমার ডায়েরি দিয়েছিলাম ডায়েরিটা দে৷
.
অনু হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর হাতে শুধু বায়োলজি বই আর আরেকটা খাতা পড়ে আছে৷ ডায়েরির চিহ্নও নাই৷
.
কী রে দে৷
.
আসলে ডায়েরি আমার কাছে নাই তো৷
.
কী করেছিস আমার ডায়েরির?
.
হারিয়ে ফেলেছি মনে হয়৷
.
হারিয়ে ফেলেছিস মানে৷ তুই জানিস ডায়েরির ভিতরে কত টাকা ছিলো৷
.
কত ছিলো৷
.
এক টাকা না দুই টাকা না পাঁচ টাকা ছিলো৷
.
ওহ মাই গড তাহলে তো আমি তোর কোটি টাকা হারিয়ে ফেলেছি যত্তসব৷ চল দেখি আশে পাশেই আছে হয়তো৷

অনু আর রুমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আবার শপিং মলে গেলো৷

“আমার কী মনে হয় জানিস তখন যে তোকে ছেলেটা ডাক দিয়েছিলো সেটা মেইবি ডায়েরির জন্যই ডেকেছিলো হয়তো সেখানেই পড়েছিল৷

অনু আর রুমি বর বড় কদম ফেলে এগিয়ে গিয়ে দেখল ডায়েরি ঠিক সেখানেই আছে৷

অনুঃডায়েরি তো পেয়ে গেছিস এবার চল বাসায় ফিরে যাই৷
🍁
অনু বাসায় ঢুকে দেখলো দুটি ছেলে সোফায় বসে আছে৷ অনু তাদের দেখে এক মুহুর্তে নিস্তব্ধ হয়ে গেলেও পরে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো৷

“ভাইয়া তোমরা কখন এলে?
.
আদিলঃএকটু আগে এসেছি৷
.
তোমরা আজ ফিরছো বললে না যে৷
.
আদনানঃসারপ্রাইজ৷
.
হঠাৎ কেনো ফিরলে কারনটা কী৷

আদিলঃআবির আসলো আর আমরা আসবোনা তা কী করে হয়৷

অনু মন খারাপ করে চলে গেলো৷ সে ভেবেছিলো তাই ভাইরা তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসেছে৷
অনু রুমে গিয়ে দেখলো ছোঁয়া ওর খাটে বসে বসে চিপস খাচ্ছে৷

অনুঃকী তোর না পেটে ব্যাথা তাহলে চিপস খাচ্ছিস যে৷
.
ছোঁয়াঃপেটে ব্যাথা কমে গেছে৷বাই দ্যা ওয়ে তুই এতো তারাতাড়ি চলে এলি যে৷
.
ক্লাস করিনি৷
.
ওহ৷ আজ আমরা সবাই আবির ভাইয়াকে দেখতে যাবো৷
.
তাকে দেখার কী দরকার৷ এতই যখন দরকার তাহলে সে আসুক না আমরা কেন যাব ন্যাকা৷
.
এসব কী বলছিস অনু৷ দেখতে যাব এতে ন্যাকার কী আছে৷ আর হে তুইও যাচ্ছিস৷
.
জীবনেও না৷
.
তাহলে আমিও যাব না৷ তুই তো জানিস তোকে ছাড়া আমি কোথাও যাইনা৷ অনেকদিন ধরে মামার বাসায় যাইনা তাদের দেখিনা৷
.
আমি পারবনা ছোঁয়া
.
তাহলে আমিও যাব না৷
.
ছোঁয়া মন খারাপ করে ফেললো৷ অনু ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে বললো সে যাবে৷ ছোঁয়া তো।অনুর যাওয়ার কথা শুনে সেই লেভেলের খুশি৷
🍁
আবিরদের বাড়িতে এসে অনুর মনে শুধু ধুকপুক ধুকপুক করছে৷ না জানি কখন আবার আবিরের সামনে পরে যায়৷

অনুঃছোঁয়া সামান্তা আর আরুহি কোথায় ওদের তো দেখছিনা৷
.
জানিনা রে৷ দেখ কোনো রুমেই বসে আছে হয়তো৷
.
অনু দেখে দেখে সিড়ির বাম রুমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো৷

“সিঁড়ির ডান পাশের রুমে আবির ভাইয়া থাকতো৷ দেখি বাম পাশের রুমে আছে কী না৷

অনু দরজা টেলে রুমে গিয়ে দেখলো রুম একেবারে অন্ধকার৷পাশের রুমের আবছা আলোতে কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে৷

“এই দিনের বেলা রুমটাকে কে এতো অন্ধকার করে রেখেছে৷

অনু টেবিলে কাছে গিয়ে দেখলো দুই সেট বই৷ এক সেটে আরুহির নাম লিখা আরেক সেটে সামান্তার।

“তাহলে তো এই রুমে আরুহি আর সামান্তা থাকে৷

অনু আস্তে আস্তে খাটের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো কে যেনো কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে৷

“এটাতো নিশ্চিত সামান্তা৷ ওরই দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস৷
.
অনু আর কিছু না ভেবে ব্যক্তিটির পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো৷আস্তে আস্তে পিছন থেকে হাল্কা জড়িয়ে ধরলো৷

“সামান্তা এখনো ঘুমাবি নাকি৷ এতোদিন পর তোদের বাসায় আসলাম কোথায় একটু ভালো মন্দ গল্প করবো তা না পরে পরে ঘুমাচ্ছে৷

অনুর হাত গেলো ওর পাশে শুয়ে থাকা ব্যক্তিটির মাথায়৷

“এমা এর দেখি চুল ছোট ছোট তারমানে এটা ছেলে কিন্তু কে এটা৷

অনু লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে জুতা পায়ে না দিয়ে হাতে নিয়ে ভো দৌড়৷

পথেই সামান্তার সাথে দেখা৷

সামান্তাঃকী রে তুই এমন পাগল ছাগলের মতো ছুটছিস কেন৷
.
তুই এখানে তাহলে রুমে কে৷
.
রুমে তো আবির ভাইয়া৷ ভাইয়ার রুমে শ্রাবন ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে তাই ভাইয়া আজ আমার রুমে ঘুমিয়েছে৷
.
ওহ ঠিক আছে৷ আচ্ছা রুহি কোথায়
.
ও ছোঁয়ার সাথে ছাঁদে আছে৷
.
অনু সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর নিজেকে বকাঝকা করছে৷

“ও আল্লাহ গো আমি কী না আবির ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছি৷ ওই ক্ষ্যাত কে৷ ছিঃ ছিঃ ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে আসছে৷

আবিরের মাঃকী হয়েছে অনু কী বকবক করছো৷
.
কিছু না মামি৷ এমনি৷
.
আবিরের সাথে দেখা হয়েছে৷
.
না মামি৷
🍁
রাতে~~~~

ছাঁদে একা দাড়িয়ে আছে অনু৷ আর একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ বিকেলে এসেছিলো রাত হয়ে গেছে একবারো আবিরের সাথে দেখা হয়নি৷ অনুরও কেন জানি আবিরকে দেখতে খুব মন চাইছে৷ এই প্রথম আবিরদের বাড়িতে এসে সে মন খারাপ করেছে৷ আগে যখন আসতো তখন আবির অনুকে নিয়ে ছাঁদে যেত খেলা করতো ওর জন্য ফুল এনে কানে গুজে দিতো৷ কিন্তু এখন এসব কিচ্ছু নেই৷ ছাঁদে অন্য কারও উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে কিছুটা দূরে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে৷ অনু ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেলো৷

“কে আপনি?

কোনো মেয়েলি কন্ঠ শুনে আবির ফিছন ফিরে তাকালো৷

আবিরকে দেখে অনু যেমন শক খেয়েছে তেমন আবিরও৷

চলবে,,,,,

তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০১

0

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_১
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

বাড়ির বড় ছেলে আজ দেশে ফিরেছে৷ এতে কেউই খুশি না৷বরং সবাই ভয়ে আছে৷আবির বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই ওকে দেখে সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো৷ আবিরের বাবা আবিরের কাছে গেলে আবির ওর বাবাকে ইগনোর করে নিজের রুমে চলে গেলো৷

বাবাঃআমি জানতাম এমন কিছুই হবে৷ বাইরে থাকতেই যেভাবেই আমাদের সাথে কথা বলতো আর এখন তো স্বয়ং সামনাসামনি৷
.
মাঃ ছেলেটার সাথে এমন না করাই ব্যাটার ছিলো৷ কী দরকার ছিলো ওকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার৷
.
তো কী করার ছিলো তখন৷ অনুর জন্য ও যে পরিমানে পাগল ছিলো৷ওর জন্য মেয়েটা একটুও শান্তি পেতো না৷ এখানে আসলে তো সব সময় অনুর পিছন পিছন থাকতো৷ এতে দুজনেরই প্রবলেম হতো৷ না আমাদের ছেলে মানুষ হতে পারতো আর না আমার ভাগ্নি৷না খেয়ে সারাদিন অনুদের বাসায় পরে থাকতো৷
.
কথাটা সত্যি বাট এখন নিজের পাগল ছেলেকে কীভাবে সামলাবে৷
.
আমি না সামলাতে পারলে কী হবে একজন আছে যে ওকে সামলাতে পারবে৷
.
কে?
.
অনু৷
.
ওর তো মনে হয় অনুকে মনে নেই৷ আর অনু কেনো ওকে সামলাতে যাবে৷ অনু তো আবিরকে দু চোখেও দেখতে পারেনা৷
.
কী করবো কিচ্ছু মাথায় আসছেনা৷
.
আবিরের মা বাবার কথা বলার মধ্যেই ওর রুম থেকে ভাঙাচোরার আওয়াজ আসতে শুরু করলো৷

তোমার ছেলের পাগলামু শুরু হয়ে গেছো৷ এবার কী করে সামলাও সেটাই দেখবো৷
.
চলো দেখে আসি৷
.
আবিরের মা বাবা ওর রুমে গিয়ে দেখলেন একটা ফটোর ফ্রেম ভেঙে ফ্লোরে পড়ে আছে৷

মাঃকী হয়েছে আবির৷ তুমি এই ছবিটা কেনো ভেঙেছো৷
.
আবিরঃতোমরা কোন সাহসে আমার রুমে অনুর ছবি লাগিয়েছো ওকে আমি ঘৃনা করি৷ ওর ছবিতো দূর ওর ছায়াও আমি দেখতে চাই৷ নাও লিভ৷
.
বাবাঃআবির৷
.
আবিরঃআই সে লিভ৷
.
আবিরের মা বাবা চলে গেলেন আর আবিরকে সময়ের কাছে ছেড়ে দিলেন৷ আবির নিজেকে কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে গিটার নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলো৷

“অনু ছোটবেলায় তুই আমাকে খুব বকা খাইয়েছিস তোর জন্য আমি আমার মা বাবা বন্ধু বান্ধবকে ছাড়া এতোদিন দূরে দূরে থেকেছি৷ তোকে আমি ক্ষমা করবোনা৷ কী দোষ ছিলো আমার সেদিন৷মিথ্যা কথা বলে কী মজা পেয়েছিলি জানিনা তবে তোর এই মিথ্যা আমার মনে কতটা আঘাত দিয়েছে সেটা শুধু আমিই জানি৷ তোর জন্য আমার বাবা পর্যন্ত আমার গায়ে হাত তুলেছিলো৷ তোকে আমি ক্ষমা করবোনা কিছুতেই না৷

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গিটারে সুর তুললো,,,

মেনে জাব থা দেখা তুজকো
রাত ভি ও ইয়াদ হে মুজকো,তারে গিনতে গিনতে সো গায়া৷
.
দিল মেরা দারকা থা কাসকে,
কোচ কাহা থা তুনে হাসকে,মে উসি পাল তেরা হ গায়া৷
.
আসমান পে জো খুদা হে,উসে মেরি ইয়াহি দোয়া হে
চাঁদ য়ে হার রজ মে দেখো তেরে সাথ মে৷
.
আখঁ উট্টি মোহাব্বাত নে আঙ্গদাই লি,
দিল কা সদা হুয়া চাঁদনি রাত মে
.
হ তেরি নাজরো নে কুচ এসা জাদু কিয়া,
লুট গায়ে হাম তো পেহলি মুলাকাত মে৷
.(পছন্দের একটা গান)

আবির গিটার রেখে বাইরের দিকে তাকালো৷

“আমি আমার মা বাবার সাথে এতো রুড বিহেভ কেনো করছি৷ উনারা তো আর কোনো দোষ করেননি৷ বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তো ভালোর জন্যই পাঠিয়েছিলেন৷ আমার মা বাবার সাথে এতো রুড না হলেই ভালো হয়৷ শুধু শুধু উনাদের মনে কষ্ট দিচ্ছি৷

আবির আরও কিছুক্ষন ব্যালকনিতে থেকে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো৷
🍁
অনুর মা অনুর রমে এসে দেখলেন সে খাটে উপুর হয়ে শুয়ে দুই পা উপরে তুলে কলম কামড়াচ্ছে আর খাতায় কী যেনো লিখছে৷

অ”নু কী করছিস৷এভাবেই কেউ লেখাপড়া করে নাকি৷
.
কী করবো মা৷ ফিজিক্স, বায়োলজি,ক্যামিস্ট্রি,হায়ার ম্যাথ,জেনারেল ম্যাথ,আইসিটি এইসব আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছেনা৷
.
হুম৷ একটা খবর পেয়েছিস৷
.
অনু ওর মার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,,,

কী খবর৷ আমি কোনো খবর পাইনি৷
.
কাল রাতে আবির দেশে ফিরেছে৷
.
সো হুয়াট৷ দেশে ফিরুক বা না ফিরুক তাতে আমার কী৷ আমার কিছু যায় আসেনা৷
.
তুই এখনও ছেলেটার উপরে রেগে আছিস৷ছেলেটা এতো বছর বাদে দেশে ফিরেছে৷
.
দেখো মা এখানে রাগারাগি করার কিচ্ছু নেই৷ আর তুমি ভুলেও ওই আবিরের নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবে না৷ ওকে জাস্ট ঘৃনা করি আমি৷
.
দেখিস আবার এমন যাতে না হয় পরে তুই ওর প্রেমে না পড়ে যাস৷
.
ছিঃ ওই গাইয়্যার প্রেমে আমি পরবো৷ কক্ষনো না৷
🍁
পরেরদিন~~~

অনু ওর ক্লাসমেট কে নিয়ে কথা বলতে বলতে ভার্সিটিতে যাচ্ছে৷

অনুঃযাহ বাবা আজ তো ঠোঁটে লিপস্টিকও দেইনি৷ এই রুমি দাঁড়া আমি একটু লিপস্টিক লাগিয়ে নেই৷
.
রাস্তায় লিপস্টিক লাগাবি৷ তার চাইতে বড় কথা আয়না কোথায় পাবি৷
.
হ্যাঁ তাইতো৷
.
অনু চারিপাশে একবার চোখ বুলালো৷

পেয়ে গেছে৷

অনু দৌড়ে একটা কালো কারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো৷ তাতে গ্লাসে অনুকে দেখা যাচ্ছে৷ অনু গ্লাসে নিজে দেখে দেখে লিপস্টিক লাগাতে লাগলো৷

আবির তখন ফোনে কথা বলছিলো৷ একটা মেয়েকে ওর গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে গ্লাসটা নিচে নামিয়ে নিলো৷ অনু পুরো বেকুব বনে গেছে৷

অনুঃএই যে কারের গ্লাস নামালেন কেনো৷
.
আবিরঃআমার কার আমি যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে আপনার কী৷
.
আচ্ছা ভাই কে আপনি বলুন তো।মেয়েদের সম্মান করতে জানেননা নাকি৷
.
এখানে সম্মান কোথা থেকে এলো৷
.
আমি আপনার গ্লাস দেখে দেখে লিপস্টিক দিচ্ছিলাম৷ আপনি হুট করে গ্লাসটা নামিয়ে নিলেন৷ নিলেন তো নিলেন ওই গ্লাসটা আবার লাগিয়ে দিলেন না কেনো৷
.
আমার কার আমি যা ইচ্ছা তাই করবো৷ সাজুগুজু করার আর কোনো জায়গা নাই নাকি৷ আসছে কারের গ্লাস দেখে লিপস্টিক লাগাবে৷ বাসায় কী আয়না নাই ৷
.
আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন৷ আমাকে অপমান করার আপনার কোনো অধিকার নেই৷
.
এই মেয়ে তুমি কী পাবনা থেকে পালিয়ে আসা সেই পাগল যাকে গত চৌদ্দ দিন ধরে খুঁজা হচ্ছে৷
.
আপনি পাগল আপনার চৌদ্দ গুষ্টি পাগল৷
.
আবির অনুর দিকে একবার রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কার নিয়ে চলে গেলো৷ অনুর পাশে একটা সেভেন আপের বোতল পড়ে আছে অনু সেটা তুলে আবিরের কারে ছুঁড়ে মারলো৷

“শালা কুত্তা৷

রুমি এগিয়ে এলো অনুর দিকে৷

কী রে কী হয়েছে?
.
আর বলিস না শালা লুজার আমাকে অপমান করেছে৷
.
তোকে বলেছিলাম লিপস্টিক দেওয়ার দরকার নেই৷
.
হুম যাইহোক ছেলেটা কিন্তু সেই লেভেলের কিউট আর হ্যান্ডসাম৷
.
ঝগড়ার সময়ও এতকিছু ফলো করিস৷ শুনলাম আবির নাকি দেশে ফিরেছে৷
.
হ্যাঁ তো৷ তোকে কে বলল৷
.
আন্টিকে বলতে শুনেছি৷ যখন তোকে আনার জন্য গিয়েছিলাম তখন৷ওকে কী তুই আর দেখেছিস৷
.
না দেখিনি আর দেখতেও চাইনা৷
.
আচ্ছা একটা কথা বলতো তোর কেমন ছেলে পছন্দ৷
.
আমার পছন্দ, হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং,কিউট৷ যাকে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকবে৷
.
বাইরেরটা কী সব ভিতরেরটা কিচ্ছু নয়৷ বাহ্যিক দেখে পাগল হোস না ভিতরের টা দেখ৷
.
ধুর এখনকার ছেলেরা সবাই এক৷ চল আজ ক্লাস করবোনা আজ দোকানপাট হেঁটে হেঁটে দেখবো৷ তারপর যেগুলো চয়েজ হবে সেগুলো কাল এসে কিনে নিয়ে যাব৷

অনু রুমি কে নিয়ে একটা শপিং মলে গেলো৷ হেঁটে হেঁটে প্রত্যেক দোকানের জামা কাপড় দেখছে৷ কতগুলো মেয়েকে কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাদের দৃষ্টি অনুসরন করে সেও তাকালো৷

একি এটাতো সেই ছেলেটা যে আমাকে একটু আগে আমাকে ইনসাল্ট করেছিলো৷

রুমিও আবিরের দিকে একটু তাকিয়ে হাল্কা হেসে অনুকে বললো,,,,

তুই যেমন হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং,স্মার্ট বয় চাস এই ছেলেটা কিন্তু সেরকমই৷
.
হুম৷ অনেক হ্যান্ডসাম৷
.
আচ্ছা আবির এখন কেমন দেখতে হয়েছে৷
.
কী রকম আবার হবে যেমন ক্ষ্যাত তেমনই আছে৷ চল আরেক দোকানে যাই৷

অনু আরেকটু সামনে এগোতেই পিছন থেকে আবির ওকে ডাক দিলো৷

চলবে……..

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]