এই মুহূর্তে আমার হুয়ায়ুন আহমেদের লেখা দুটো লাইন মনে পড়ছে
“প্রিয় মানুষের কাছে কখনো যেতে নেই তাতে আকর্ষণ কমে যায়”
সারা বাড়ি খুশির আমেজে ভরপুর।ফুফা ফুফি ও খুশিতে আত্মহারা।খুশি তো থাকারই কথা। ইতিমধ্যে আয়ান ভাইয়া পুরো এলাকা মিষ্টি বিতরণ করে দিয়েছে।চারদিকে এতো খুশির মাঝে আমার অস্থিরতা গতি বেগে বেড়ে যাচ্ছে_
সন্ধ্যায় ছাদে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে সূর্যের হারিয়ে যাওয়াটা দেখছি।পশ্চিম আকাশে চারদিকে ছড়িয়ে আছি সূর্যের লাল রক্তিম আভা।সূর্যের মতোই আমার জীবন থেকে সব আনন্দ হারিয়ে গেছে।জানিনা আর কখনো কি এই আনন্দ ফিরে পাবো আবার।এসব ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি চলে এলো।আমি দু হাত দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিলাম যে আমার অগোচরে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে তার জন্য বৃথা চোখের পানি না ফেলাই উত্তম
রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় চা বসিয়ে দিলাম সবার জন্য এর মাঝেই ফুফি আমাকে রান্নাঘরে দেখে বকাবকি শুরু করে দিয়েছে। ভাবিও সেইম কাজ করেছে। তারা আমাকে কোনো কাজই করতে দিচ্ছে না।
সবাই বিশ্বাসের কথা বলে,,,, আর যে আমাকে একআকাশ পরিমাণ ভালোবেসেছে তাকে আমি,,,,আমাকেই ঠকাতে দেখেছি। বিশ্বাস সবাইকে করা যায় কিন্তু সবাই বিশ্বাসের মুল্য দিতে পারে না। বাস্তবতা এমনই যাকে বিশ্বাস করবে সেই পেছন থেকে এসে চুরি মারবে। বিশ্বাস শব্দে বিশ ও আছে আবার শ্বাস ও আছে এবার ঠিক ভুল বেছে নেওয়া টা আমাদের দ্বায়িত্ব। বিশ্বাস তৈরি করতে পুরো জীবন লেগে যায় আর নষ্ট হয়ে যায় এক মুহুর্তে।
আলমারি গোছানোর সময় শাড়ির ভাজে চোখে পড়লো উনার আর ওই মেয়েটার বিয়ের ছবি। ছবিটা দেখেই বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা লম্বা নিশ্বাস এর মাঝেই উনি পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।উনার আভাস পেয়েই আমি টেবিল থেকে দিয়াশলাইয়ের একটা কাঠি দিয়ে ছবিতে থাকা মেয়েটার মুখের অংশ টা পুড়িয়ে দিলাম আমার হাত থেকে ছবি টা নিচে পড়ে গেলো।আমাকে এখন আবার এক অজানা ভয় গ্রাস করছে আমি আপাতত উনাকে এই বিষয়ে কিছু জানাতে চাই না।ডিভোর্সের পরে শুধু উনাকে একটা কথা জিজ্ঞাস করতে চাই কেনো করলেন উনি এমন।কেনো আমার সাজানো গোছানো জীবন টাকে অগোছালো করে দিলো।
উনি ছবিটা দেখলেন।উনি তোলার আগেই তাড়াতাড়ি করে আমি তুলে হাত পেছনে নিয়ে শাড়ি দিয়ে ডেকে পেললাম। উনি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বললেন
“কি লুকাচ্ছো তুমি
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা উনি আবার বললেন
” হাতে কি দেখি
আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম
“ককই ককিছু না তো”
কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা আমার হাতে কি আছে দেখবেই দেখবে
আমি এবার উনাকে ধাক্কা মেরে বের হওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু কোনো লাভ হলো না উনি আমার এক হাত ধরে ফেললেন
হাত টা মুছড়িয়ে অন্য হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নিলেন। মুহুর্তেই উনার মুখে নেমে এলো অন্ধকারের কালো ছায়া।
আমি উনার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।উনার কোনো কথাই আমার মাথায় ডুকছে না উনি নিজের শরীরের সর্বো শক্তি দিয়ে চিল্লাচ্ছেন।
“আমি জানতে চাই এটার মানে কি” কোথায় পেলে তুমি এই ছবি।আর কে এই মেয়ে আন্স মি ড্যাম ইট
আমি উত্তর দিলাম না উনি আমাকে ঝাকুনি মেরে বললেন
“এভাবে তুমি বলবে না ওকে তাই তো”তোমার মুখ থেকে কিভাবে কথা বের করতে হয় আমি খুব ভালো করেই জানি”আমি তোমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। তাই এবার আমার ক্ষতি হলে তো তুমি অবশ্যই সবটা বলবে।
এতোটুকু বলেই উনি কিচ্ছুক্ষণ খোজাখুজি করে রান্নাঘর থেকে একটা ফল কাটার চুরি নিয়ে এলেন
“আমাকে আবারো জিজ্ঞাসা করলেন বলো এই ছবির মানে কি” আমার সাথে এই ছবি আর আমি বরের পোশাকে কেনো আর এই ছবি তুমি কোথায় পেয়েছো।আন্স মি”
এবার আমি শক্ত গলায় জবাব দিলাম
“এই ছবির মানে কি সেটা আমি না আপনি বলুন? বলুন কেনো আমার জীবনটাকে? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার?নিজে থেকেই তো আমার জীবনে এসেছিলেন? এই মেয়েকেই যখন এতো ভালোবাসেন তো আমাকে বিয়ে কেনো করেছেন বলুন? কেনো বলুন?
উনি অবাক চোখে আমার কথায় বললেন
” মানে?
আমি আবারো জোরে বললাম
“মানে টা আমার নয় আপনার বলা উচিত? আমার জীবন্টাকে কেনো নরক বানিয়ে দিয়েছেন? বলুন কেনো করলেন? এবার ওই মেয়ে যখন আপনাকে নিজের হাসবেন্ড হিসাবে দাবি করবে তখন আমার সন্তান ও তো পিতৃপরিচয় হীন হবে_
উনি আর জবাব দিলো না সরু চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছবিটা নিয়ে কোথাও একটা চলে গেলেন।
ভালোবাসার প্রতিদানে সবাই ভালোবাসে না। কাউকে ভীষণ ভালোবাসলে তার থেকে অবহেলা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।দিন শেষে সেই আমার আমিটাকে নিজে একাই সামলাতে হয়।দুনিয়ায় এমন কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের নিজের কাছে আটকে ও রাখবে না আবার ছেড়েও দেবে না তারা শুধু তাদের প্রয়োজনে আমাদের ব্যবহার করবে।প্রয়োজন শেষ হলে আঘাত করবে কষ্ট দেবে_অবহেলা করবে বারবার ছেড়ে যাওয়ার বাহানাও খুজবে।
আয়ান ভাইয়াও ঠিক এমন। আমাকে ধরে ও রাখছে না আবার ছেড়েও দিচ্ছে না।নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করছে। আকাশে মিটি মিটি তারা জ্বলছে আমি একা ছাদে দাড়িয়ে তারাগুলোকে দেখছি তারা যেনো মিটিমিটি হাসছে। আগে একটা সময় ছিলো যখন আমি এই রুম থেকে ওই রুমে যেতেও ভয় পেতাম কিন্তু এখন আর ভয় করে না অন্ধকার রাতে খোলা চুলে ছাদের দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ কেউ পেছন থেকে আলতো হাতে আমার চুল গুলো সুন্দর করে খোপা করে দিলেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
” এতো রাতে একা খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো_এতো কেয়ারলেস হলে চলবে।বেবীর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
এবার আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম
” যা ক্ষতি হবার তো হয়ে গেছে আবার নতুন করে কি কিছু হওয়ার বাকী আছে?
বলেই ধীরে পায়ে নিচে নেমে এলাম।
পরের দিন বিকালে হঠাৎ করে আয়ান ভাইয়া হুরমুরিয়ে ঘরে ডুকলো। আমাকে বললো “তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও একটা জায়গায় যেতে হবে
আমি বিষ্ময় নিয়ে বললাম
” কোথায়?
উনি ব্যাস্ততা দেখিয়ে বল্লো
“তোমার সব প্রশ্নের জবাব আজকে পেয়ে যাবে
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম
আধাঘন্টা যাবৎ রিক্সা চলছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না উনাকে জিজ্ঞাসা করলে উনি শুধু এতোটুকুই বলেছেন আমিও আর কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলছি,,,,আমাদের রিক্সা টা গিয়ে থামলো তুষার স্টুডিও নামক একটা দোকানের সামনে। উনি নেমে রিক্সার ভাড়া দিয়ে আমাকেও খুব সাবধানে নামিয়ে আমি সহ দোকানের ভেতরে গেলাম।দোকানে একটা ছেলে ছিলো।ছেলেটার বয়স বারো কিংবা তেরো এর মাঝামাঝি হবে।ছেলেটা দেখতেও বেশ হ্যান্ডসাম।
উনি পকেট থেকে থেকে উনার আর সেই মেয়েটার বিয়ের ছবিটা বের করে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“দেখো তো এই ছবিটা কবে চাপানো হয়েছিলো এবং এই ছবির কোনো কপি আছে কি না
ছেলেটা কিছুক্ষন ছবিটাকে উল্টে পাল্টে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উনার দিকে ফিরে বললেন
“আমি তো জানিনা এই ছবির বিষয়ে তবে মামা জানে উনি বলতে পারবে
এবার উনি বললেন
“তোমার মামা কোথায়
এবার ছেলেটা আবার বললেন
” একটা কাজে গেছে
এবার উনি হতাশ দৃষ্টিতে বললেন
“উনার আসতে কতো সময় লাগবে?
ছেলেটা কিছু সময় ভেবে বললেন
” পনেরো মিনিট বা তার বেশী”
এবার উনি আচ্ছা বললেন ছেলেটা আমাদের ভেতরে গিয়ে বসতে বললো__
প্রায় আধা ঘন্টা পর লোকটা দোকানে এলো। লোকটার বয়স চল্লিশের উর্ধে।
উনি লোকটাকে ছবিটা দেখিয়ে জানতে চাইলেন
“ভাইয়া এই ছবিটা কবে চাপানো হয়েছে বলতে পারবেন?
লোকটা কিছুক্ষণ ছবিটাকে নেড়েচেড়ে উনাকে বললেন
” দেখুন আমাদের একটা নিয়ম আছে_এক কাস্টমারের কথা অন্য কাস্টমারকে বলা আমাদের উচিত না
উনি এবার করুন চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন
“এই ছবির কোনো কপি দিতে পারবেন?দেখুন আপনি যদি আমাদের এই ছবির আসল কপিটা না দেন তাহলে আমরা থানায় গিয়ে আপনাদের দোকানের নামে মামলা করবো আপনারা ভুয়া ছবি চাপান।
এবার লোকটা খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো।আমি পাশে বসে সব কিছু খেয়াল করছি। কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই আমার মাথায় ডুকছে না সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এসব কি উনার নতুন কোনো ফন্দি আমি ভাবতে পারছি না আর মাথা ধরছে
উনার কথায় লোকটা ছবিটা বের করে দিলো যা দেখে উনার মেজাজ চরম পর্যায়ে খারাপ হয়ে গেলো।উনার সাথে ওই মেয়েটার ছবি।উনি অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন
” রাত্রির আর আমার ছবি
উনি লোকটাকে আবারো উদ্দেশ্য করে বললেন
” দেখুন ভালোয় ভালোয় বলছি আসল ছবিটা দিন।এটা আমি হতেই পারি না এটা এডিট করা ছবি।
লোকটা এবার বললেন
“এইটাই আসল ছবি।যান তো ভাই আর ঝামেলা কইরেন না
এবার উনি রেগে লোকটার কলার চেপে ধরলেন ভয় পেয়ে লোকটা আসল ছবিটা বের করে দিলেন।
ছবিটা দেখে আমার চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা।মিহির ভাইয়া আর ওই মেয়েটার বিয়ের ছবি আর আমাকে যেটা দেখা নো হয়েছিলো সেটা ভুয়া ছিলো। উনি একহাতে ছবিটা নিয়ে অন্য হাতে আমার ডানহাত শক্ত করে ধরে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন
আমি এখন উনার চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছি না।উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি উনি রাগী গলায় বললেন
” ছবিটা কোথায় পেয়েছো
আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম
“আমি যখন আমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম তখন আমার শাড়ীর ভাজে পেয়েছিলাম
এবার উনি অবাক দৃষ্টিতে বললেন
” তোমার শাড়ীর ভাজে এই ছবি এলো কি করে আর কে ইবা এসব করছে ভাববার বিষয়
এবার আমি শক্ত গলায় উত্তর দিলাম
“এটা না হয় মিথ্যা মানলাম কিন্তু আপনার আর ওই মেয়ের অশ্লীল ছবীটাও কি মিথ্যে
এবার উনি বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
“অশ্লীল ছবি মানে”
আমি এবার নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জার থেকে সেই ছবি বের করে উনাকে দেখিয়ে বললাম
“আপনার তো চরিত্র ও ঠিক নেই আবার এতো রাগ নিয়ে কার সাথে কথা বলেন,
এবার উনি আমার গলা টিপে ধরে বললেন
তুই কোন সাহসে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলিস? তুই দেখেছিস কোনো মেয়ের সাথে এমন অবস্থায় আমাকে? আগের টা এডিট করা ছিলো এটাও নিশ্চই এডিট করা।
এবার আমি উনাকে এক ধাক্কা দিয়ে বললাম
“এটা এডিট করা কিন্তু আমার চোখ তো আর এডিট করা নয়
বলুন আপনি সেদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলে পরে রাস্তার পাশে ওই মেয়ের সাথে আইস্ক্রিম হাতে গল্প করতে করতে হাটছিলেন না?
বলুন তিন বছর আগে ওই মেয়ের সাথে আপনাকে কিস করতে আমি পার্কে দেখেছিলাম কি না?
এবার উনি অবাক হয়ে বললেন
” রাত্রি আমার স্কুল ফ্রেন্ড ওর সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক আর অনেকদিন পর দেখা হয়েছিলো তাই ও অনুরোধ করলো আইস্ক্রিম খাবে সেই অনুযায়ী।
আর মানুষের চোখের দেখার মাঝেও ভুল থাকে তাই তুইও ভুল দেখেছিস।সেদিন বসে ওর সাথে ফুচকা খাচ্ছিলাম ও হঠাৎ বললো ওর চোখে কিছু একটা পড়েছে আমি সেটাই দেখছিলাম
ছিহ।ভালোবাসায় এতোটুকু বিশ্বাসও রাখতে পারলি না তুই
কে না কে তোকে কিসব দেখিয়েছে আর তুই আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছিস।
“ভুল” শব্দটি ছোটো হলেও এর গভীরতা বিশাল।একটা ভুলের মাশুল মানুষকে সারাজীবন দিতে হয়।
“আমরা সব সময় ভুল মানুষের জন্য অনুভুতি পুষে রাখি”
ভুল মানুষকে ভালোবেসে নিজেদের গোছালো জীবন টাকে আগোছালো করে দি। কিন্তু ভুলগুলোই মাঝে মাঝে আমাদের বাস্তবতা শেখায়।মানুষ চেনায়।কিছু চেনা মানুষের অচেনা রূপ দেখায়।
“নিজেকে নিজেই সামলাতে শেখো
যা দেখেছো সবটাই মোহ মায়া
বাকীটা প্রয়োজন আর স্বার্থ
আর মানুষ!সে তো আবহাওয়া”
নিজেকে সামলানো শেখা উচিত।কারণ মানুষ স্বপ্ন দেখাতে জানে কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে কয়জন পারে?মানুষ বড় স্বার্থ পাগল। নিজের স্বার্থ শেষ তো সম্পর্ক শেষ করে দিতে দু বারও ভাবে না।মানুষ আবহাওয়ার চেয়েও ভয়ানক।মুহুর্তে বদলে যায়।
জানালার পর্দা সরাতেই সূর্যের আলো প্রবেশ করলো ঘরে। আকাশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম আমি।আকাশটার মন আজকে ভীষণ ভালো মনে হচ্ছে। চার দিকে প্রখর রোদের তাপ দিচ্ছে সূর্য।আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি
হঠাৎ আয়ান ভাইয়া আমাকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে জোরে একটা থাপ্পর মারলো আমি চিটকে পড়লাম টেবিলের কোণায়।মানুষটার চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমার হচ্ছে না। ঘৃণা লাগছে ভীষণ।কিভাবে এতো সুন্দর করে মানুষকে ঠকানো যায় তা উনাকে না দেখলে হয়তো কখনো বুঝতেই পারতাম নাহ”
আয়ান ভাইয়া আমার মুখের উপর প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট গুলো ছুড়ে মেরে জোরে চিৎকার করে বললেন
“হোয়াট দ্যা হেল” এসব কি
আমি মাথা নিচু করে রইলাম উনি আবার বললেন
“এসব এর মানে কি? এই বিষয়ে আমাকে কিছু জানাস নি কেনো তুই?নিজেকে কি মনে করিস।
আমি আবারো চুপ করে রইলাম। উনি এবার আমাকে টেনে তুলে সোজা করে দাঁড়িয়ে বললেন
” আরেকটা থাপ্পর না খেতে চাইলে বল। এতো বড় একটা খুশির সংবাদ আমি পাই নি কেন।
আমি আবারো চুপ রইলাম
এবার উনি আমার দুই গালে উনার দুই হাত রেখে শান্ত গলায় বললেন
“লুক এট মি নেহু।লাইক সিরিয়াসলি আমি বাবা হতে যাচ্ছি এতো বড় একটা খুশির সংবাদ টাও তুমি আমায় দিলে না।কেনো এমন খুশির সংবাদ কি আমার শোনার অধিকার নেই।আমি বাবা হচ্ছি এটা শোনার অধিকারও কি আমার নেই।”আজ আট দিন পরও তুমি আমায় বলো নি
উনি এতো টুকু বলেই চোখ থেকে দুইফোটা পানি ফেললেন
এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না উঁচু গলায় বললাম
“না নেই এমন সংবাদ আপনার শোনার অধিকার নেই।বাহিরে অন্য মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবেন। ঘরে বউকে ঠিক ভাবে সময় দিবেন না তো এমন সংবাদ শুনে কি করবেন?
উনি এবার এক হাতে চোখ মুচে ভ্রু কুচকে বললেন
” মেয়ে নিয়ে ফুর্তি মানে
হোয়াট ডু ইউ মিন
আমি জোরে চেচিয়ে বললাম
“আই মিন আপনি যাকে বিয়ে করেছেন যার সাথে সময় কাটান”
এবার উনি বললেন
“মানে কাকে বিয়ে করেছি
আমি এবার চেচিয়ে বললাম
” থাক আর অভিনয় করার কোনো দরকার নেই।আপনি কি জানেন আপনি খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন।আপনি তো পারেন মানুষ কে খুব সুন্দর ভাবে গড়ে নির্মম ভাবে ভেঙে দিতে।আমি আপনার হাতের পুতুল নাকি যে ইচ্ছা হলে খেলবেন আবার মন ভরলে ছুড়ে পেলে দেবেন
এতোটুকু বলেই ওখান থেকে সরে এলাম।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমি।দম টা বন্ধ হয়ে আসছে
ভোরে পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশটা যেনো নিস্তব্ধ হয়ে আছে।কাঁধ ঘুরিয়ে দেখলাম উনি ঘুমিয়ে আছে।”ঘুমান তবে কারো ঘুম কেড়ে নিয়ে নয়”।
ঘুমন্ত মানুষটাকে অনেক নিষ্পাপ লাগছে। কে জানত এই নিষ্পাপ চেহারার পেছনে বিশ্বাসঘাতক একজন মানুষ লুকিয়ে আছে। উনার প্রতিটা নিশ্বাসের শব্দ যেনো আমার কাবে বাজছে। কিন্তু এই নিশ্বাসে যে বিষ আছে।জীবন আধারে ডুবে যেতে বেশী সময় নেয় না,,,কিন্তু আধার কাটিয়ে উঠতে পুরো জীবনটাই চলে যায়
আজ তিনদিন আমাদের মাঝে কোনো কথা নেই। উনি বলার চেষ্টা করলেও আমি এড়িয়ে যাই। আর রাতে উনি আসার আগেই ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।আজকে ঔষধ খাওয়ার সময় দরজা লক করতে ভুলে গেছি।উনি বাহিরে থেকে আমার ঔষধ খাওয়ার বিষয় টা দেখে দ্রুত গতিতে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে আমার হাত থেকে ঔষধের প্যাকেটটা ছিনিয়ে নেয়।ঔষধের প্যাকেটটা উনি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে চিৎকার দিয়ে উঠেন
“মানে কি এইসবের? আমাকে বুঝা তুই এইসবের মানে কি। আমাকে ইগনোর করে তুই কি বুঝাস বল”
আমি চুপটি করে পাশ ফিরে শুয়ে কাথা দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেললাম এবার উনি আরো চিৎকার করে বলে ওঠেন
“আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি?
আমি আবারো সাড়া না দেওয়ায় উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন
ঘুম পাচ্ছে প্রচুর।এর মাঝে উনি একটা গ্লাসে করে তেঁতুলের টক নিয়ে এলেন। এক হাতে গ্লাস আর অন্য হাতে আমাকে টেনে তুলে বললেন “এটা খেয়ে নাও
আমি ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে বললাম
” সরুন ঘুমাবো”আমি
এবার উনি জোর করে আমাকে টক টা খাইয়ে শান্ত গলায় বললেন
“নেহু বমি আসছে তোমার”
আমি মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিলাম উনি আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিকে হাটা ধরলেন
আমি এখন স্বাভাবিক কিন্তু উনি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন যার কারণে নড়তেও পারছি না। মুচরামুচরি করেও কোনো লাভ হলো না উনি ধমকের স্বরে বললেন
“থাপ্পড় না খেতে চাইলে ঘুমাও এমনিতে অনেক জ্বালিয়েছো এই কয়দিনে।
আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে আছে তার সাথে পড়ছে ঝুম বৃষ্টি।জানালা দিয়ে বৃষ্টির কিছু ফোটা এসে আমার গায়ে লাগছে,,,বৃষ্টির এই কয়েকটা ফোটা যেনো আমার শরীরে এক অদ্ভুত অনুভুতি সৃষ্টি করছে।পাখিরা এদিক ও দিক ছোটাছুটি করছে কিছু পাখি ভিজেও গিয়েছে।রাস্তায় কিছু বাচ্চা ছেলে বৃষ্টিতে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে,,,,যেনো তারা বৃষ্টির সাথে খেলা করছে,,,,
এর মাঝেই আমার পাশে এসে দাড়ালেন উনি।আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেম
“চলুন না বৃষ্টিতে ভিজবো
এবার উনি হালকা কেশে বললেন
” একদম না ওইদিন ভিজে জ্বর বাধিয়েছিলে আজকে আর তোমাকে ভিজতে দেওয়া হবে না
মুহুর্তেই আমার মুখ টা মলিন হয়ে গেলো আমি আবার বললাম
“কতো রোমান্টিক একটা ওয়েদার,,,,চলুন না ভিজবো
এবার উনি আমার কোমরে হাত রেখে আমার নাক টেনে বললেন
” চলো রোমান্টিক ওয়েদারে রোমাঞ্চ করি তাহলে
উনার কথায় আমি চোখ বড় করে বললাম
“মুখে কি কিছুই আটকায় না নাকি
উনি সয়তানি হাসি দিয়ে বললেন
” কয়দিন পর এক ডজন বাচ্চার বাবা হবো এখন মুখ সামলে আর কি করবো
তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গানটা এতোটুকু বেজেই কেউ কল দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেলো আর ফোনের স্ক্রিনে সেই প্রিয় নাম ভেসে উঠলো। “Ammu”। আম্মুর কল দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললাম
” আসসালামু আলাইকুম।আম্মু কেমন আছো?আব্বু কেমন আছে
আম্মু হালকা হেসে বললেন
“ওয়ালাইকুম আসসালাম
তোর বাবা ভালোই আছে আর আমরা সবাই ভালো আছি
তুই কেমন আছিস বল”
আমি হেসে বললাম
“হুমম অনেক ভালো আছি।
খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি সবাই মিলে_তার মাঝে ফুফা ভাইয়া আর উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
“নিশান আয়ান_শোন
আমি আর তোর মা কিছুদিনের জন্য ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি
উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই নিশান ভাইয়া প্রশ্ন ছুড়লেন
“কেনো যাচ্ছো
ফুফা বললেন
” কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই_আর তোর মা ও অনেক দিন ধরে বায়না করছিলো কোথাও যাওয়ার জন্য তাই ভাবলাম
এবার উনি বললেন
“কয়দিন থাকবে তোমরা
ফুফা জবাব দিলেন
” পাঁচ থেকে ছয় দিন
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে শুধু তোমায় ভালোবেসে
নিশান ভাইয়া গিটার হাতে এই গানটা গাইলেন_অসম্ভব সুন্দর হয়েছে,,,ছাদে বসে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি,,,,ফুফা ফুফি বাসায় নেই,,,ফুফার ঢাকার বাহিরে একটা কাজ ছিলো যাওয়ার সময় ফুফিকেও নিয়ে গেছে__সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি উনি ভাইয়া ভাবি আমরা চারজন মিলে আড্ডা দিচ্ছি_
উচলে পড়ছে জোৎস্নার আলো চারজনের মুখেই_এবার এলো আয়ান ভাইয়ার গান গাওয়ার পালা_নিশান ভাইয়া বললেন
‘আয়ান তুই এবার তোর প্রিয় গান টা গাওয়া শুরু কর’
আয়ান ভাইয়া খুব ভালো গান গায়।কিন্তু এই কয়েক বছরে তার সাথে দেখা না হওয়ায় তার গান ও আর শোনা হয় নি
শুধু একটা মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে শুনতাম_গানটা ভিডিও করেছিলাম দুষ্টুমি করে_
আয়ান ভাইয়া সোজা জানিয়ে দিলেন যে উনি গান গাইবে না
ভাইয়া ভাবি আমি উনি সবাই নিস্তব্ধ_উনার হাত টা আমার পাশেই ছিলো হঠাৎ আমি উনার হাতের উপর হাত রেখে করুন গলায় বললাম
“প্লিজ আমার জন্য হলেও গান গাওয়া শুরু করুণ প্লিজ”
আমার কথায় উনি গিটার হাতে নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলেন
“যদি থাকতে তুমি বাচতে আমার লাগতো না কঠিন যদি থাকতে তুমি”
(বাকীটা নিজ দ্বায়িতে ইউটিউব থেকে শুনে নিবেন)
উনার গানের সাথে আমিও মুখ মেলানোর চেষ্টা করছি।
আমাদের জীবনে সুখ শব্দটা চিরস্থায়ী নয়,,,,সুখ চিরকাল থাকে না।দিন বদলায়,,,,সময় বদলায়,,,,মানুষও বদলায়।
মোবাইল হাতে নিয়ে ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারে কোনো ফেইক আইডি থেকে ২ টা ছবি এলো।সাধারণত আমি মেসেঞ্জার কম ইউজ করি কিন্তু আজ কেন জানিনা দেখতে ইচ্ছা হয়েছে ফেইক আইডি থেকে কেমন ছবি সেন্ড করেছে আমায়।আমি বিষ্ময় নিয়ে ফটো দুটো দেখতে মেসেঞ্জারে ডুকলাম।
ছবি দুটো দেখে আমার পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো।
আয়ান ভাইয়ার একটা মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি।এতোটাই ঘনিষ্ঠ যেটা দেখে কোনো স্ত্রী সহ্য করতে পারবে না।।ছবিটা ভালো করে লক্ষ করে বুঝতে পারলাম এটা সেই মেয়ে যাকে আয়ান ভাইয়ার সাথে পার্কে দেখেছিলাম।তারপরও আরো দুই তিন বার ও ওদের একসাথে দেখেছিলাম।উনাকে জিজ্ঞাস করলে বলে স্কুল ফ্রেন্ড।স্কুল ফ্রেন্ড হলে এতো ঘনিষ্ঠ কিভাবে হতে পারে।ছিহ এসব আর ভাবতে পারছি না আমি।মাথা টা ঝিম ধরে আসছে।
আকাশটা কালো মেঘে ভরপুর। চারদিকে বৃষ্টির পানি থৈ থৈ করছে।বৃষ্টির মধ্যে আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।বৃষ্টির পানির সাথে আমার চোখের পানি গুলোও উচলে পড়ছে।বার বার শুধু একটা কথা ই মাথায় আসছে “কেনো সে আবার আমাকে ঠকালো”
সেইদিন মনে হয়েছিলো রোমান্টিক ওয়েদার হচ্ছে বৃষ্টির দিন,,,,আর আজ মনে হচ্ছে বেদনাদায়ক দিন হলো বৃষ্টির দিন।বৃষ্টির পানির সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলছে আমার চোখের নোনা পানি গুলোও। তারা যেনো আজ কোনো বাধা মানছে না।চোখ দুটো কিছুতেই মানছে না।
রাতে শুয়ে আছি একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে।প্রচুর ঠান্ডা লাগছে আর অন্যদিকে শরীর টা গরম।
উনি টেবিলে বসে বই পড়ছিলেন_একটুপর উঠে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন
“কোনো সমস্যা
আমি উত্তর দিলাম না
উনি এবার আমার কপালে হাত দিলেন আর চমকে উঠে ধমক দিয়ে বললেন
“শরীর এতো গরম কেনো নিশ্চই আজকে বাড়িতে ছিলাম না আমি আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছো
আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম।উনি একটুপর ফার্মেসী থেকে কিছু জ্বরের ঔষধ নিয়ে এলেন।এতো রাতে ডক্টর পাওয়া মুশকিল তার ফার্মেসী থেকেই ওষধ এনে আমাকে খেতে বললেন কিন্তু আমি কোনো সাড়া দিলাম না।
এবার উনি আমার গাল চেপে ধরে ঔষধ গুলো খাইয়ে দিয়ে নরম গলায় বললেন
” কি হয়েছে কথা বলছো না কেনো
আমি আবার কোনো রেসপন্স করলাম না উনি আবার বললেন
” কি হয়েছে আমি কোনো অন্যায় করেছি,,,,যদি কোনো দোষ করে থাকি তাহলে তোমার যা ইচ্ছা শাস্তি দাও কিন্তু প্লিজ এভাবে কথা না বলে থেকো না।তোমাকে চুপ থাকতে দেখতে ভালো লাগে না,,,
আমি আবার কোনো কিছু বললাম না উনি ঘুমাও গুড নাইট বলে উঠে চলে গেলেন বারান্দায়_এবার আমার চোখ থেকে টুপটুপ করে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
সকালে উনি ঘুম থেকে উঠে কোনো একটা কাজে বেরিয়ে গেলেন। আমি ভাবিকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।ভাবিও আমার সাথে যেতে চাইলেন।কিন্তু আমি বারণ করলাম।
বেশ কিছুদিন ধরেই কোনো খাবারই মুখে তুলতে পারছি না। ভমি ভমি ভাব আসছে।সব খাবারে কেমন যেনো গন্ধ লাগে।কিছু মুখে দিলেই যেনো তা পেট থেকে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।
আমি বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। তারপর একটা রিক্সা নিয়েই হসপিটালে পৌছালাম।ডক্টর কিছু পরিক্ষা দিলেন সেগুলো শেষ করে বেরিয়ে এলাম_আর এক মুহুর্তও এখানে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি আমার নেই_পুরো শরীর যেনো অবোশ হয়ে আছে।শারা শরীর ঝি ঝি করছে
আমি একটা রিক্সা ডেকে বাসায় চলে গেলাম_কালকে সব রিপোর্ট আসবে।কে জানে হয়তো আমার বড়ো কোনো রোগ হয়েছে কি না মরে যাবো কি না।
পরদিন উনাকে বললাম রিপোর্ট গুলো নিয়ে আসতে।উনি বললেন উনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে,,,,আমার শরীরের অবস্থা একদম ভালো নয়।মাথা ব্যাথাও প্রচন্ড করছে।সাহস নিয়ে বেরিয়ে গেলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
রিপোর্ট গুলো হাতে পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম।আমার প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট।যাতে স্পষ্ট লিখা আছে মা হতে চলেছি আমি।এতো কষ্টের মাঝেও এটা অনেক বড় প্রশান্তি।অজান্তেই নিজের পেটের উপর হাত টা রাখলাম।রিপোর্টে স্পষ্ট লিখা আছে আমার মধ্যে অন্য একটা মানুষের আগমনের কথা।চোখ দিয়ে দুফোটা নোনা পানি গড়িয়ে পড়লো। হয়তো এই পানি কষ্টের না আনন্দের।
মা হবার অনুভুতি সত্যি অন্য রকম,,,,_”ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা বাবা”
রিপোর্ট হাতে নিয়ে আমি সব কষ্টের কথা ভুলে গেলাম।উনাকেও দুই তিনবার কল করেছি কিন্তু উনি কল কেটে দিয়েছে।আমি ভাবলাম হয়তো ব্যাস্ত তাই।আমি একটা ফুলের দোকানে গিয়ে লাল ও সাদা রঙের দুইটা গোলাপ নিলাম। সূর্যের প্রখর তাপের মধ্যে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি আমি রাস্তার পাশে।কিন্তু কোনো রিক্সার দেখা মেলে নি। আমি এবার রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে শুরু করলাম। এখান থেকে বাসায় যেতে প্রায় পনেরো মিনিটের মতো লাগবে_কিন্তু এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো আমার মধ্যে থাকা ছোট্টো প্রাণটা কষ্ট হতে পারে ভেবে হাটা শুরু করলাম।
রোদের প্রখর তাপে কপাল থেকে ঘাম ঝরছে। কিছুদূর যাওয়ার পর যা দেখলাম তা দেখে আমার মধ্যে আর আনন্দটা থাকলো না।মুহুর্তেই আবার আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো
রাস্তার পাশে পায়ে পা মিলিয়ে উনি আর ছবিতে দেখা মেয়েটা হাটছে। দুজনের হাতে আইস্ক্রিম।একজন অন্যজনের সাথে গল্প করছে।আমি দূর থেকেই বিষয়টা দেখলাম
আমার আর সহ্য হচ্ছে না আমি আর পারছি না এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে।হাত থেকে ফুল গুলো ছুড়ে পেলে দিলাম। আবার হাটা শুরু করলাম।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।এক হাতে রিপোর্ট আর অন্য পাত দিয়ে চোখের পানি মুছে কোন রকম বাসার দরজায় গিয়ে পৌছালাম।
দুইবার কলিংবেল চাপতেই নিশান ভাইয়া দরজা খুললেন
আমি দ্রুত গতিতে নিজের ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দরজা টা লাগিয়ে দিলাম। নিশান ভাইয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকেয়ে আছে।
আমি ঘরে গিয়েই রিপোর্ট গুলো আলমারিতে শাড়ির ভাজে রেখে দিলাম।তখনই ভাবি ঘরে এলো
আমি কোনোরকম নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বললাম
“আরে ভাবি তুমি
ভাবি জবাব দিলেন
” আয়ান ফোন করেছিলো
তোমার নাম্বার নাকি বন্ধ তাই আমাকে বলেছে তোমাকে যেনো বলে দিই ও আজকে বাসায় আসতে পারবে না
আমি টলমল চোখ বললাম
“ওহ
ভাবি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো
২ ঘন্টা যাবৎ ওয়াশরুমে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।চোখ বেয়ে পড়ছে অজস্র নোনা পানি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার অগোচরে উনি আমাকে ঠকাচ্ছে।ছিহ লোকটা এতো নিচ মনের মানুষ। বিশ্বাস ঘাতক সে।তাকে বিশ্বাস করে আমি আবারো ঠকেছি। মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। যদি আমার ভেতর আরেকটা প্রাণ না থাকতো হয়তো এখন আর বেচে থাকতাম না।
প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় ডিভোর্স জায়েজ হয় না নয়তো উনাকে ডিভোর্স দিয়ে এতোক্ষনে চলে যেতাম বহুদূরে।ওই মেয়েটার সাথে অবৈধ সম্পর্ক না রেখে ওকে বিয়ে করলেই পারতো।আমাকে কেনো বিয়ে করেছে।কি ক্ষতি করেছিলাম আমি।আমার জীবন সঙ্গে আমার ভেতরের প্রাণটার জীবন টাও উনি নষ্ট করে দিলো।। আমাকে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে ডিভোর্স এর জন্য।
এই মুহূর্তে হয়তো এমন সংবাদে আমার আনন্দে আত্মহারা হয়ে থাকার কথা ছিলো কিন্তু আমার এখন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ভেবেছিলাম উনাকে এই সংবাদ টা দিবো উনি অনেক খুশি হবে। কিন্তু সে যে আমারই চোখের আড়ালে অন্য একটা মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।ভাবতেই চোখ ভরে কান্না আসছে আমার।
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে আম্মুকে কল করলাম প্রথমবার রিং হতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো
“আপু কেমন আছিস
আমি বুঝতে পারলাম যে কল টা নুযহাত রিসিভ করেছে আমি বললাম
” আমি ভালো আছি”আম্মুকে ফোনটা দেয় কথা আছে আম্মুর সাথে”
নুযহাত ভারী কন্ঠ নিয়ে আচ্ছা বলে ফোনটা আম্মুকে দিলো
আমি আবার বললাম
“আম্মু
আম্মু জবাব দিলেন
” হুম,,,ওখানে সব ঠিক আছে তো মা?
আমি বললাম
” হ্যা সব ঠিক আছে আমি বাড়ী আসতে চাই_তুমি আব্বুকে পাঠিয়ে দাও আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য”
আম্মু আশ্চর্য হয়ে বললো
“তুই বাড়ী আসতে চাস
আমি এবার অভিমানি স্বরে বললাম
” ঠিক আছে।। যাবো না তোমাদের বাড়ি।।তোমরা তোমাদের ছোটো মেয়েকে নিয়েই থাকো।।বিয়ে দিয়ে তো পর করে দিয়েছো। এখন আমার ও বাড়ি আসাও বারণ
বলেই কল টা কেটে ফোন অফ করে দিলাম
বিকালে আব্বু এলো আমাকে নিতে।আয়ান ভাইয়া ও ছিলো না তাই যেতে আর অসুবিধা হয় নি।
আমাদের বাড়ীতে থাকা অবস্থায় একদিন আমার শাড়ীর ভাজে একটা ছবি পাই।যেটা তে উনি বরের পোশাকে আর ওই মেয়েটা বউয়ের সাজে।ছবিটা দেখে বুঝতে পারলাম তারা স্বামী স্ত্রী।আবারো বুকের ভেতর থেকে একটা লম্বা শ্বাস বেরিয়ে এলো।কিন্তু চোখে পানি এলো না। চোখের পানি সব শুখিয়ে গেছে।আর কতো সহ্য করতে হবে আমায়।আর কতো??
আমার এই কষ্টের কি অবসান ঘটবে কখনো।নিশান ভাইয়া আমাকে নিতে এলো। আমিও কিছু বললাম না চুপচাপ চলে এলাম।বাসায় এসে ভাবিকে উনার কথা জিজ্ঞাস করায় ভাবি বললো
“আয়ান এখন বাড়ীতেই থাকে না।সন্ধ্যায় বের হয় আর সকালে আসে।এই চারটা দিনে একদিন ও বাড়িতে ছিলো না রাতে
এবার আমি মুখটা মলিন করে বললাম
” ওহ
#হৃদয়ে_তুমি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
চতুর্থ পর্ব
আমাদের রান্না নষ্ট করার প্ল্যানটা ছিলো নিশান ভাইয়ার।ফুফা ফুফিকে ডেকে আর উনি আমায় ঘরে পাঠিয়ে সুযোগ টা কাজে লাগিয়েছে।সেই সুযোগে রান্নার ঝাল লবন হলুদ সব বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এখন ফুফি কিছুতেই হার মানবে না সে আবার কম্পিটিশন করার জন্য বলেছে। এবার ফুফি নিজে রান্না পাহারার দায়িত্বে থাকবে।এই নিয়ে ফুফা ফুফি তুমুলঝগড়া করলেন। দুজন যেনো ১২ বছরের কিশোর কিশোরী।
রাত ১১ টা
আমি ঘরে গিয়ে দেখলাম উনি খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন।আমি এগিয়ে একটা বালিশ আর একটা কাথাঁ নিয়ে সোফায় সুয়ে পড়লাম।আমার এমন কান্ড দেখে উনি হতভম্ব হয়ে বললেন
“কি ব্যাপার ওখানে কি করছো
আমি উত্তর দিলাম না
উনি আবার বললেন
“” কিছু জিজ্ঞাস করছি আমি
আমি আবারো উত্তর দিলাম না
এবার উনি উঠে এসে আমাকে সোফা থেকে কোলে তুলে ধপ করে বিছানায় ফেললেন
আমি আবারো উঠে সোফায় যেতে চাইলে উনি হাত টা হেচকা টান দেন।আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উনার বুকের উপর গিয়ে পড়ি উনি আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন।
তাও আমি নিজের ভাব ঠিক রাখার জন্য কথা না বলে উনার হাত সরানোর চেষ্টা করছি।
উনি এবার রাগী গলায় বললেন
“মাঝরাতে চড় না খেতে চাইলে
চুপচাপ ঘুমা….
আমিও ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে উনাকেও জাগিয়ে দিলাম তারপর রান্নাঘরের দিকে গেলাম।চুলায় চা বসালাম
ফ্রিজ খুলতে গিয়ে হঠাৎ কোনো প্যাকেটের দিকে আমার চোখ পড়লো।। প্যাকেট টা হাতে নিয়ে দেখলাম কোনো রেস্টুরেন্টের প্যাকেট।।
এবার বিষয়টা একটু সন্দেহ লাগলো
তারমাঝেই ভাবি রান্নাঘরে এলো।প্যাকেট টা দেখলো।বুঝতে পারলাম খুব ভালো করেই যে কাল রাতের খাবার গুলো ফুফা ভাইয়া আর উনি তৈরি করে নি রেস্টুরেন্টে থেকে আনিয়েছেন_এর মধ্যেই ফুফিও রান্নাঘরে এলো।
প্যাকেট গুলো দেখে ফুফি তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দেয়।
ফুফি সোজা কথা বলে দেয় আজ থেকে সে ফুফা ভাইয়া আর উনার জন্য রান্না করবে না
ফুফির কথায় ফুফা কাচুমাচু হয়ে বললো
” তোমার বড়ছেলের প্ল্যান সব
এবার নিশান ভাইয়া তেতে উঠে বললো
“ইশ বড় ছেলের প্ল্যান বললেই হলো
রেস্টুরেন্টে ফোন করে খাবার তো তুমিই অর্ডার দিয়েছিলে
এবার উনি এগিয়ে এসে বললেন
” আরে তোমরা ঝগড়া করছো কেনো
ভাইয়া আব্বু আমরা কি রান্না করতে জানি না নাকি?আমরাও জানি রান্না করতে সো ওদের খাবার আমরা খাবো না আর বাট সেটা কালকে থেকে, আজকে না হয় শেষবারের মতো মা জননীর হাতের খাবার খাই
পরদিন থেকেই শুরু হলো বাবা আর দুই ছেলের যুদ্ধ। নিশান ভাইয়া তেলের ভেতর মাছ দিতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে পেলেছে উনি মাছ কাটতে গিয়ে হাত কেটে অবস্থা খারাপ করে পেলেছে।আর ফুফা তো নাজেহাল অবস্থা।যা দেখে ফুফির হাসছে।সে যেনো হাসি থামাতেই পারছে না।পরে ভাইয়া আর উনি এসে ফুফিকে বললেন আর জীবনেও এমন কাজ করবে না।
এভাবেই কেটে যায় দিন।হাসি কান্না তামাশা খুনশুটি আর ভালোবাসায়।তারমাঝে খবর আসে আব্বুর গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে খুবই শোচনীয়।
আমার পৃথিবী যেনো অন্ধকার হয়ে গেলো “যার বাবা আছে তার একটা পৃথিবী আছে” আমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না।
‘হসপিটালে আইসিউর বাহিরে বসে আছি।আম্মুকে সামলানো আর সম্ভব হচ্ছে না।আম্মু বার বার আইসিউর ভেতরে ডুকতে চাইছেন।আমি আম্মুকে সামলাতে পারছি না।কান্নায় চোখ ভরে আসছে।দুদিন আগেও আব্বুর সাথে দেখা হয়েছিলো সব ঠিক ছিলো কিন্তু কোথায় থেকে কোন ঝড় এসে জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলো
“হয়তো জীবনে দুঃখ আছে বলেই সুখ এতো মূল্যবান”
আইসিউর লাইট অফ হয়ে গেলো ভেতর থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসতেই উনি আর ফুফা এগিয়ে গেলো।উনি হতাশ গলায় বললেন
“পেশেন্টের অবস্থা এখন কেমন
ডক্টর বললেন
” অবস্থা তেমন ভালো না উনার পায়ে চোট লেগেছে হয়তো উনি আর হাটতেও পারবে না
এবার আম্মুকে আর থামানো গেলো না হো হো করে কেঁদে দিলো বাচ্চাদের মতো।আমি ধীরে পায়ে এগিয়ে ডাক্তারের সামনে গিয়ে বললাম
” আমার আব্বু ঠিক হয়ে যাবে তো”
ডক্টর আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো
“সবই আল্লাহর হাতে মা।ভরসা রাখো নিশ্চই ভালো কিছু হবে
৩ ঘন্টা পর আব্বুর জ্ঞান ফিরলো আম্মু দৌড়ে গিয়ে আব্বুর হাত দুটো ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করে দিলো।আমি আর ফুফিও গেলাম।আব্বুকে এভাবে বেড এ শুয়ে থাকতে দেখে ভীষণ কষ্ট লাগছে,,,,বুকের ভেতর থেকে যেনো কলিজা টা ছিড়ে বের হয়ে আসছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।
১২ দিন পর আব্বুকে রিলিজ দেওয়া হলো।আব্বু এখন মোটামুটি ভালো।ডক্টর বলেছে অবস্থা ভালোর দিকে এগোচ্ছে
এই বারোটা দিন আমার কিভাবে কেটেছে নিজেও জানিনা বাসা হসপিটাল,,,হসপিটাল বাসা শুধু এভাবেই জার্নি ছিলো৷
আব্বুকে একটা হুইলচেয়ার দেওয়া হলো_
আব্বুর দিকে তাকাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।যেই মানুষটা একটা মিনিট চুপ করে বসতে চাইতো না সেই মানুষটা এখন সারাদিন চুপ থাকে,,,,,
আম্মুর মুখের দিকে তাকালে বোঝা যায় কতোটা কষ্টে আছেন৷ তবুও কাউকে বুঝতে দেয় না। মুখে একটা কষ্টের হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
তিনমাস পর
আব্বু এখন অনেকটাই সুস্থ
হাটতেও পারে।বাচ্চাদের মতো কিছুদূর গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু আম্মু ধরে পেলে,,,,
সূর্যাস্ত শব্দটা অনেক প্রিয় মুহুর্ত আমার জন্য_মোমবাতি যেমন শেষ হয়ে যাওয়ার আগে নিজের সব শক্তি দিয়ে জ্বলে ওঠে,,,,সূর্যাস্তটাও তেমনই সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে নিজের সবটুকু দিয়ে আলো দেয়_
সূর্য টা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে একটুপরই হারিয়ে যাবে অচেনা অজানা দেশে_
আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি হাত ভাজ করে হঠাৎ কারো আগমনের আভাস পেলাম আমি_ বুঝতে আর বাকী রইলো না মানুষটা কে_আমি না তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম
“দূর আকাশে মেঘেদের মেলা
আকাশ জুড়ে ছুটে চলে সাদা বকের ভেলা”
উনি ধীরে পায়ে এসে পেছন থেকে আমার কোমরে হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন
“আজ কাল যেনো আমার বউটার মাঝে কবি কবি ভাব চলে এসেছি
উনার কথায় আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই হাত উনার কাঁধে রেখে বললাম
” বর যদি কবি হয় তবে বউ কবি হলে অসুবিধা কি”
আমার কথায় উনি হেসে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়__
ভোরের আলো ফোটিনি এখনও,,
আকাশে চাঁদ এখনও উকিঁ মারছে,,জানালা দিয়ে শীতল হাওয়া এসে পুরো শরীর কাপিয়ে দিচ্ছে,,,অস্পষ্ট পাখির কিচিরমিচিরও শোনা যাচ্ছে,,,
হঠাৎ ঘুম ভাঙায় উঠে অজু করে জানালা খুলে চেয়ে আছি ওই আকাশ পানে,,,,
“দুঃখ গুলো উড়িয়ে দাও
ওই আকাশের নীড়ে
অসীম সুখ বয়ে আসুক
সবার জীবন জুড়ে”
পাখিদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে,,,,পাখিরা সব খাবার খুজতে বেরিয়েছে,,,,জানালা দিয়ে আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি পৃথিবী এতো সুন্দর,,,,পৃথিবী কতো বৈচিত্রময়,,,,ভালো-মন্দ সুখ-দুঃখ মিলেই মানুষের জীবন_মানুষ সব সময় খারাপ থাকে না ভালো দিনও আসে,,,
কথায় আছে “সবুরে মেওয়া ফলে” ধৈর্য ধরলে আল্লাহ একদিন সব দেয়_
হাজার ভাবনার প্রহর কাটিয়ে আমি জায়নামাজ নিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যাই।
নামাজ শেষে উনাকেও জাগিয়ে দিই_উনার ও এখন তাড়াতাড়ি ওঠাটা অভ্যাস হয়ে গেছে_
নিয়তি এক অদ্ভুত জিনিস_
কখন কার সাথে কিভাবে কি ঘটে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।
বিয়ের দিন সকালে অনিতা আর নুযহাত আমার পাশে বসে আছে
নুযহাত বললো
“আপু তুই দুলাভাই কে দেখেছিস?
আমি বললাম
” না 😪
অনিতা এবার বলে উঠলো
“নিহা তুই বিশ্বাস করবি না
তোর বর কালো কুচকুচে
আমি পাত্তা না দিয়ে বললাম
” তাতে আমার কি
এবার নুযহাত বলে উঠলো
“জানিস আপু দুলাভাই এত্তো গুলা মোটা
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” কতো গুলা?
অনিতা অসহায় দৃষ্টিতে বললো
“শুনেছি দুলাভাইর ওজন নাকি ৯৫ কেজি।আর কালো কুচকুচে।মাথায় কোকরা চুল।মোটা পেট
এবার আমার হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে
আগে বাবা মায়ের চয়েজের উপর ভরসা ছিলো কিন্তু এখন নুযহাত আর অনিতার কথায় সেই ভরসাটুকুও হারালাম আমি
ম্যারেজ রেজস্ট্রি পেপারে সই করেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম আমি_যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে একটা ঘরে আবিষ্কার করলাম।
বাসর ঘরে লম্বা একটা ঘোমটা টেনে বসে আছি আমি।অপেক্ষা করছি আমার বর বাবুর জন্য
একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন বাবা মা কেমন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন আমার_ বিছানার চারদিকটা বেলী আর গোলাপ ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করানো
কিন্তু আমার চিন্তা অন্য জায়গায়
নুযহাত আর অনিতার কাছে তার রুপের বর্ণনা শুনে গা গুলিয়ে এলো আমার হয়তো নিজের বরকে দেখে আমি হার্ট অ্যাটাক করবো__
রাত ১ টা বাজে
কারো পায়ের শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার_
আমি নিজেকে স্থির রেখে আমার বরকে দেখে পুরোপুরি অজ্ঞান হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তাকাতেই অজ্ঞান না হয়ে অবাক হয়েছি_
বিষ্ময় নিয়ে বললাম
” আপনি এখানে এতো রাতে কি করতে এসেছেন?
দেখুন একটু পরে আমার বর চলে আসবে সে যদি পরপুরুষের সাথে আমাকে দেখে নেয় তাহলে হয়তো আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে_আপনি এখান থেকে যান প্লিজ
আমার কথায় আয়ান ভাইয়া হালকা হেসে আমার মাথায় বারি মেরে বললেন
“তোর বরকে দেখেছিস?
আমি মাথা নারিয়ে উত্তর দিলাম
” না কিন্তু অনিতা বলেছে কালো কুচকুচে আর মস্ত বড় একটা পেট না পেট না ভুড়ি
আমার কথায় হাসিতে ফেটে পড়লেন আয়ান ভাইয়া আর বললেন
“ছবি দেখলি না ঠিক আছে বাট কাবিননামায় নাম টা তো একবার দেখতে পারতি
এমন অন্ধের মতো বিয়ে কেউ করে আজিব_তোর বিয়ে আমার সাথেই হয়েছে
আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম
ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে উঠলেন
“এই জীবনে ভালো দিন পেতে হলে
খারাপ দিনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়”
আমিও করেছি__
একদিন না একবছরও না
পুরো ৩ টা বছর যুদ্ধ করেছি
নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি আমি_
“শেষটা সুন্দর হওয়ার জন্য প্রচুর অপেক্ষার প্রয়োজন”
আমিও অপেক্ষা করে ছি
একদিন না একবছরও না
পুরো ৩ টা বছর অপেক্ষা করেছি
নিজের ভালোবাসার জন্য নিজের প্রেয়সীর জন্য__
এই টুকু বলেই ভাইয়া থামলেন
একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে আবার বলে উঠলেন
সেদিন চিঠিটা মামনির হাতে পড়ার পর মামনি আমাকে বলেছিলো ৩ বছর তোমার থেকে যেনো দূরে থাকি_ কারণ তুমি তখন ছোটো ছিলে_বাস্তবতা বোঝার মতো ক্ষমতা তোমার ছিলো না।তুমি ছিলে আবেগে ভরপুর এক কিশোরী।যাকে যে কেউ খুব সহজেই যত্ন করে গড়ে নির্মম ভাবে ভেঙে দিতে পারে।
তাই মামনির ভয় ছিলো যদি তার মেয়ে ভুল পথে চলে যায়।
আম্মু আব্বু তখনই মামনির সাথে কথা বলে রাখে।তখন মামনি আম্মুকে সর্ত দেয় তিন বছর যেনো আমি তোর থেকে দূরে থাকি কোনো কন্টাক্ট না রাখি। আমার তিন বছর পর ইচ্ছে ছিলো তোকে জানানোর কিন্তু সবাই ভেবেছে তোকে সারপ্রাইজ দেবে তাই কেউ কিছু বলে নি।
আমি বিষ্ময় নিয়ে বললাম
“মিথ্যে বলছেন কেনো
এইটা আপনাদের বাড়ী না
আর এটা তো আপনার ঘর ও না
ভাইয়া এবার হালকা হেসে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন
” হ্যা,,,এটা নতুন ফ্ল্যাট আমাদের
আমি এবার একটু অলসেমি দেখিয়ে বললাম
“আমি ঘুমাবো
গুড নাইট বাই
কালকে সকালে কথা হবে
আমার কথায় ভাইয়া চোখ গরম করে বললেন
” আজকে কিসের ঘুম হ্যা
আজকে বাসর রাত আমাদের
সো আজকে নো ঘুম
আমি এবার কিছু না বলে গিয়ে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম
ভাইয়া এবার আমাকে টেনে উঠিয়ে বললেন
“আরে কেমন মেয়ে তুই
এতো ভারী ভারী গহনা আর এই মস্ত বড় লেহেঙ্গা নিয়েই শুয়ে পড়লি চেঞ্জ করবি না?
আমি তো আজকে তোকে চেঞ্জ করিয়ে দেওয়ার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি”
ভাইয়ার কথায় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম আমি
“লাইক সিরিয়াসলি
বিশ্বাস করেন ভাইয়া আপনার মতো লুচি পরোটা আমি আমার লাইফে দুটো দেখিনি
ভাইয়া আমার কথায় হেসে বললো
” লুচু হলে সেটা নিজের বউয়ের জন্য বাহিরের মানুষের জন্য তো আর নাহ
বাই দা ওয়ে এই সাজ তোকে অনেক দারুণ লাগছে”
আমি এবার ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম_হাতে একটা থ্রী পিছ নিয়ে।
জামা কাপড় চেঞ্জ করে ভারী গহনা সব খুলে একটু হালকা হয়ে একটা সস্তির নিশ্বাস পেললাম
“এতো বাধাঁর পরও মানুষটাকে যে নিজের করে পাবো এটা কখনো ভাবি নি”
আমি আর ভাইয়া ছাদের সাইডে ফুলগাছ গুলোর থেকে হালকা দূরে বসে আছি।দুজনের পা দু টো নিচের দিকে ঝুলানো_আমি ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছি_কিছুক্ষণ পর ভাইয়া সরে গেলে আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম
“কি হলো সরে গেলেন কেনো?
ভাইয়া আমার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে বললেন
” অনেক্ষণ রাজরাণীর মতো আপনার সেবা করেছি এবার আপনি আমার করুণ
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম
“হুহ রাজরাণীর মতো কি? আমি তো রাজরাণী
ভাইয়া আমার কথায় হেসে উঠলেন উঠে বসে শক্ত করে আমার হাত দুটো ধরলেন
আমি বলে উঠলাম
” কখনো ছেড়ে যাবেন না তো?
হারিয়ে যাবেন না তো কখনো
ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো
“” হারাতে দিলেই তো মানুষ হারায়
আর রাখতে জানলে একসাথে শেষ সূর্যাস্তও দেখা যায়””
পরদিন আমি ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে অজু করে নামাজ পড়ে নিলাম_তারপর উনাকে ডাকতে গেলাম।তার মুখ দেখেই আমার পৃথিবী থমকে গেলো। উনাকে নিষ্পাপ লাগে ঘুমন্ত অবস্থায়।আমার হৃদস্পন্দন যেনো তখন একটাই কথা বলছিলো
“থমকে যাক সময়
থমকে যাক পৃথিবী
দাঁড়িয়ে যাক ঘড়ির কাটা
আমার এই সুখময় জীবন থাকুক আজীবন”
সব ভাবনা কে আপাতত সাইডে রেখে উনাকে ডাক দিলাম
“””উঠুন নামাজ পড়বেন না।নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি উঠুন।
উনি ঘুমন্ত অবস্থায় বললেন
“পরে
কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না আমি উনাকে টেনে বসিয়ে বললাম
” পরে লাগবে না উঠুন এখন তাড়াতাড়ি মসজিদে নামাজ পড়তে যান।
উনি বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলেন ওয়াশরুমের দিকে।।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
রান্নাঘরে (উনার ভাবি নিশান ভাইয়ার বউ তিশা) সকালের নাস্তা তৈরি করছে সাথে ফুফি ও আছে।
আমাকে দেখে ভাবি মুচকি হেসে বললো_
“নিহা ভেতরে এসো।
আমিও মুচকি হেসে ভেতরে গেলাম
ফুফি বললো”
“এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছিস কেনো।আরেকটু পরে উঠলে তো পারতি
আমি ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করতে করতে বললাম
” ফুফি তুমি তো জানো এটা আমার অভ্যাস
আমার কথায় ফুফি মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বললেন
“এখনো ফুফি ডাকবি?
আমি তোর এখন শাশুড়ী তাই আর ফুফি ডাকা চলবে না।
আম্মু ডাকবি।
আর এখন থেকে আমি হুকুম করবো আর তুই তা পালন করবি”
এই টুকু বলেই ভাবি আর ফুফি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।ফুফি এমনই সারাক্ষন তার মুখে হাসির আভা দেখা যায়।আমাদের কথার মাঝেই খাবার টেবিল থেকে ফুফা ফুফিকে উদ্দেশ্য করে বললো
” আজকে কি খাওয়া কপালে জুটবে।নাকি শাশুড়ী আর বউমাদের হাসি শুনেই পেট ভরাতে হবে।
ফুফার কথায় ফুফি ঝাঝালো গলায় বললো
“প্রতিদিন তো আমরা মেয়েরা রান্না করি।
কখনো তো বাপ আর ছেলেরা মিলে রান্না করতেও তো পারো”
ফুফির কথায় উত্তরে বাহিরে থেকে উনি পাঞ্জবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো
“ওকে ডান
তাহলে একটা গেইম খেলি চলো
আজকে ডিনার আমরা বাবা ছেলেরা তৈরি করবো আর তোমরা শাশুড়ী বউমা মিলেই তৈরি করবা
আর গেইমের নাম হবে
বাবা ছেলে VS শাশুড়ী বউমা
ভাইয়ার কথায় ফুফি বললো
” না কোনো দরকার নেই
তোরা বাপ ছেলে রান্না করলে আজকে না খেয়ে থাকতে হবে”
এবার ফুফা বললো
“দেখেছিস তোর মা ভয় পাচ্ছে
যদি আমাদের কাছে হেরে যায়
ফুফি এবার রেগে বললো
” আমরা হারবো কেনো হারবে তো তোমরা
(আমি ফুফি আর ফুফার ঝগড়া করা দেখে মুচকি মুচকি হাসছি।
এই বয়সেই এতো ঝগড়া আল্লাহ মালুম এরা বিয়ের পর পর তখন নিশ্চই কোপাকুপি করতো)
ফুফি আর ফুফার কথা মতো বাবা ছেলে VS শাশুড়ী বউমা গেইমের আয়োজন করা হলো।
আর রান্নার ভালো খারাপ নির্ণয় করার জন্য পাশের বাড়ীর আন্টি কে ডিনারের জন্য দাওয়াত দেয়া হলো।
এক পাশে আমি ফুফি ভাবি রান্না করা নিয়ে ব্যাস্ত আর,,,, অন্য পাশে ফুফা ভাইয়া আর উনি ব্যাস্ত।উনাদের ব্যাস্ততা টা ঠিক রান্না করা নিয়ে না । উনাদের ব্যাস্ততা আমাদের বিরক্ত করা নিয়ে।
রান্না শেষে ফুফি রান্না টা কেমন হয়েছে চেক করলো সব ঠিকঠাক হয়েছে।তখন আমি আর ফুফি ছিলাম রান্নাঘরে
ফুফা ফুফিকে ডাক দিলো তাই ফুফি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে ফুফার কাছে গেলেন।
আমি রান্নাঘরে পায়চারি করছিলাম তখন উনিও আমাকে ডাকলেন
“নিহা একটু এদিকে এসো তো”
আমি ধীরে পায়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
“কি হয়েছে
উনি আমাকে বললেন
” ঘরে টেবিলের ড্রয়ারে আমার একটা ঘড়ি আছে নিয়ে আসো তো
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
“এতো রাতে ঘড়ি দিয়ে কি করবেন
উনি আমার কথায় বিরক্ত প্রকাশ করে বললেন
” গিলে খাবো
যাও নিয়ে আসো
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঘরের গিয়ে ঘড়ি খুজতে লাগললাম কিন্তু পেলাম না
একটু পর বেরিয়ে এলাম
উনি বললেন
“ঘড়ি কোথায়
আমি বললাম
“খুজে পাই নি
উনি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন “গুড
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” গুড মানে?
উনি আরেকটু হেসে বললেন এতো কিছু তোমার বুঝতে হবে না।
পুরো টেবিল নানা রকম সুস্বাদু খাবার দিয়ে সাজানো।
আমি ফুফি আর ভাবী তৈরি করেছি “ভাত,,পোলাও,,রুই মাছ,,আলুর ভর্তা আর চিংড়ি মাছ।আন্টিকে ফোন করে জানতে পারলাম যে এগুলো তার প্রিয় খাবার।
আর অন্যদিকে উনারা তৈরি করেছে,,,চিকেন বিরিয়ানি,,,পুডিং_ ভেজিটেবল বার্গার,,,রোল
গেইমের শর্ত অনুযায়ী আন্টি ও তার ছোট্টো দুই মেয়ে চলে এসেছে।
রাত ৯ টা আন্টি তার মেয়ে ২ টো নিয়ে খাবার টেবিলে বসেছেন।তার পাশে ফুফি,,,আর ফুফির পাশে ফুফা
নিশান ভাইয়া আর উনি অন্য পাশে বসেছেন,,,নিশান ভাইয়া আর উনার মুখে এক রহস্য ময় হাসি ঝুলানো
আমি আর ভাবি মিলে খাবার সার্ভ করছি
প্রথমে উনাদের খাবার গুলো সার্ভ করলাম
আন্টি উনাদের রান্নার বেশ প্রসংশা করলেন
তারপর আমাদের খাবার গুলো সার্ভ করলাম
খাবার মুখে দিতেন আন্টির মুখ মলিন হয়ে গেলো আর মুখ থেকে সব খাবার পেলে দিলেন
ভাবি ভ্রু কুচকে বললেন
” খাবার টেস্টি হয় নি আন্টি
তখন আন্টি টা বললেন
“ভাতের মধ্যে এতো লবন দেয় কেউ
আর মাছের মাঝে এতো ঝাল কেনো?
ফুফি একটু মুখে দিয়ে আবার সেটা মুখ থেকে বের করে পেললেন
আর রাগী গলায় বললেন
” এএই বাপ ছেলে কিছু করেছে নিশ্চই তখন চেক করেছি সব ঠিকঠাক ছিলো
বর্তমানে
বিয়ে বাড়িতে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমার নেই তবুও বিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম বিয়ের দিন বিকেলে নিশি আপুর আম্মুকে বুঝিয়ে সুজিয়ে অসুস্থতার নাম করে বাসায় চলে এসেছি_
শুধু বার বার একটা কথাই মাথায় বাড়ি খাচ্ছিলো যে মানুষটা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো নিজের ইচ্ছাতেই,,,সে আবার কেনো ফিরে আসতে চাচ্ছে
বাসায় এসে আমি নিজেই শকড
চারদিক ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করানো,,,, বিয়ে বাড়ীর মতোই লাগছে
আমাদের বাসায় তো আমি আর নুযহাত (আমার ছোটো বোন) ছাড়া আর কোনো মেয়ে বা ছেলেও নেই তবে কার বিয়ে
আর আমার বোনের বয়স ১৪ এই বয়সে ওকে বিয়ে এসব ভাবতে আর ভাইয়ার চিন্তা করতে করতে আমার মাথা ঘুরছে,,,,
চারদিক একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম__
আমার উপস্থিতিতে অনেকের কানা ঘুসা শুরু হয়েছে
পাশ থেকে এক কাকীমার গলার আওয়াজ আমার কানে এলো
“কাল বিয়ে আর আজকে দেখো কোথায় থেকে এসেছে
আমি বিষ্ময় নিয়ে বিষয় টা বোঝার চেষ্টা করলাম
কিন্তু যা বুঝেছি এতে আমি হতাশ।
পর মুহুর্তে আম্মু এসে আমাকে ঝাড়ি মেরে বললো
“তোর এখন আসার সময় হলো?যা গিয়ে রেডি হয়ে নে
বলেই আম্মু রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন
আমি নিজের রুমে এসে দেখি আমার কাজিনরা সব ফুফাতো বোন কাকাতো বোন মামা তো বোন সবাই পুরো বিছানা দখল করে আছে
কেউ সাজ গোজ নিয়ে ব্যাস্ত
তো কেউ গল্প করা নিয়ে
আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমার বোন নুযহাত বললো
“তোর এখন আসার সময় হলো আপু
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” বেশী তাড়াতাড়ি চলে এসেছি নাকি
ও এবার বিরক্ত নিয়ে বললো
“ফ্রেশ হয়ে আম্মুর ঘরে আসিস
আম্মু তোকে ডেকে পাঠিয়েছে
আমি বিষ্ময় নিয়ে বললাম
” কেনো?
নুযহাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাহিরে থেকে ওকে কেউ ডাক দিলো আর ও চলে গেলো
আমি হাত মুখ ধুঁয়ে আম্মুর ঘরের দিকে উঁকি দিলাম
আম্মু ফুফি আর মামনি কি নিয়ে আলোচনা করছিলেন__
আমাকে দেখেই ফুফি আর মামনি মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন
আমি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম
আম্মু বললো
“দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে এখানে আয়
আমি বিষয়টা বুঝতে আম্মুর কথা মতোই ঘরের দরজা লাগিয়ে দিতেই বলে উঠলাম
” আম্মু এসব কি হচ্ছে
পুরো বাড়ী এমন সাজানো কেনো
বাই দা ওয়ে তুমি আর আব্বু কি আবার বিয়ে করছো?
তো আমাকে আগে বললেই পারতে,,,,আমি আসার সময় গিফট নিয়ে আসতাম
আমার কথায় আম্মু মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বললেন
“কাল তোর বিয়ে
আম্মুর কথায় আমি আশ্চর্যের সবোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলাম
” মানে কি এসব এর
আম্মু বললেন
“মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিতে হয়
আর আমরা মনে করি এখন তোর বিয়ের সঠিক বয়স তাই তোর বাবা তোকে না জানিয়েই সব এরেঞ্জ করেছে_তোদের এখনকার জেনারেশনের ছেলে মেয়েদের বিশ্বাস করা মুশকিল_হয়তো আগে থেকে বিয়ের কথা জানলে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতি?তোদের তো বাবা -মায়ের উপর ভরসা নেই_নিজেদের চয়েজ নিজারাই ঠিক করিস
আম্মুর কথায় আমার অভিমান আরো বেড়ে গেলো
” ছেলে কি করে কোথায় থাকে ছেলে কেমন সেটা জানলামই না আর বিয়ে°ইম্পসিবল একজন অচেনা অজানা লোকের সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকবো
আর সবথেকে বড় কথা হচ্ছে আমি বিয়ে করবো না আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই
আর তোমাদের কি একবার ও এতো কিছু করার আগে আমার মতামত টা জেনে নেওয়া উচিত ছিলো না?
আমার কথায় আম্মু শান্ত গলায় বললেন
“দেখ কোনো বাবা মা তার সন্তানের ক্ষতি চায় না-আমরা যা করছি তা তোর ভালোর জন্যই করছি_আর মতামতের কথা আসলে আমি বলবো যে তোর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত তোর বাবা তোর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি_আমরা আশা করবো যে তুই ও আমাদের কথার বাহিরে কোনো কাজ করবি না
আমি আম্মুর কথা মেনে নিতে না পেরে বললাম
আমি পারবো না এটা করতে
আম্মু আমার হাত দুটো ধরে নরম গলায় বললেন
“তোর বাবার বিশ্বাস নষ্ট করিস না প্লিজ
আমি হতাশ দৃষ্টিতে আম্মুর দিকে তাকিয়ে ছোটো করে বললাম
ওকে তোমরা যেটাকে ভালো মনে করো
আমার কথায় আম্মু খুশিতে গদগদ করে উঠে বললেন
” যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে
সন্ধ্যায়_
সবাই আমাকে হলুদ লাগাতে ব্যাস্ত সবার আনন্দ উচলে পড়ছে
কিন্তু আমার মন যে কিছুতেই মানছে না আমি কি করবো কি হবে আমার_আয়ান ভাইয়াকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না
আমি আবারো ডুব দিলাম অতীতে
ফ্ল্যাশব্যাক__
সেদিন আয়ান ভাইয়ার প্রোপজালের স্টাইল টা দেখে আমি অবাক হলাম
সাজিয়ে গুছিয়ে ও কিছু বলতে পারলো না মানুষটা
কিন্তু তার প্রতিটি কথা হৃদয়ে গেথেঁ গেছে_
বৃষ্টিতে ভেজার পর আসার সময় ভাইয়া আমার হাতে ২ টা ঔষধের প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন
আমি বিষ্ময় নিয়ে বললাম
“এগুলো কেনো?
আয়ান ভাইয়া হেসে বললো
” তোর মতো গাধীর তো কোনো কমন্সেন্স নেই একে তো বৃষ্টিতে ভিজেছিস_তার উপর আবার তুই একটা শীত কাতুরে
গিয়ে নিশ্চই জ্বর বাধাবি
তখন কে দেখবে _তাই মনে করে ঔষুধ গুলো খেয়ে নিস
আমি আর কিছু না বলেই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম
ঘরে এসেই জামাকাপড় চেঞ্জ করে মোবাইল হাতে নিতেই আয়ান ভাইয়ার টেক্সট আসলো
“ঔষধ খেয়েছিস?
আমি উত্তর দিলাম
” হ্যা
ভাইয়া আবার মেসেজ দিলো
“একটা থাপ্পড় দিবো
মিথ্যা কথা কেনো বলিস?
যা ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়
আমি ওষুধ খেয়ে টেবিলে বসলাম_ডাইরিটা হাতে নিয়েই ভাইয়ার বলা প্রতিটা কথা কাগজে বন্ধি করলাম
পরদিন থেকে ৪ দিন আর ভাইয়ার কোনো খোজ মেলে নি
আম্মুর কাছ থেকে জানতে পারলাম ভাইয়ার জ্বর হয়েছে বিছানা থেকে ও নড়তে পারছে না_এভাবেই কাটতে যায় আমাদের দিন
ভাইয়ার পাগলামি গুলো আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে দিতো
প্রতিদিন একবার হলেও আমাদের দেখা হতো_
কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি ভালোবাসি তোমায়
কখনো বলা হয় নি আমার #হৃদয়ে_তুমি শুধুই তুমি
এভাবে কেটে যায় দিন
আমি যখন নাইনে পড়ি তখন আমার মডেল টেষ্ট পরিক্ষা চলছিলো_আর একমাস পরেই ফাইনাল পরিক্ষা
পরিক্ষা শেষে আসার সময় পার্কের দিকে দেখতে পাই একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে_তাদের দেখেই আমার রাগ উঠলো_কারণ ছেলেটি আর কেউ না আয়ান ভাইয়া_উনাকে মেয়েটির এতোকাছাকাছি দেখে আমি সহ্য করতে পারলাম না
ভাইয়াকে বাড়ীতে ডেকে অনেক বাজে বিহেভ করি
পরে ভাইয়ার নাম্বার ব্লক করে দিই_ফেসবুক থেকেও ব্লক করি_ভাইয়া আমার সাথে যোগাযোগ না করতে পেরে বাধ্য হয়ে লুবাবা (আমার কাকাতো বোন) কে দিয়ে একটা চিঠি পাঠায়,,, লুবাবার বয়স ৯ বছর
ঘরে ভুকতেই লুবাবা আম্মুকে দেখে ভয় ভয় পেয়ে চিঠিটা আম্মুর হাতে তুলে দেয়__
তারপর আম্মু আমাকে অনেক মারে_অনেক ঝামেলা ও হয় এসব নিয়ে
আর আম্মু ভাইয়াকে বারণ করে দেয় যাতে আমাদের বাসায় আর না আসে।তারপর ভাইয়ার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয় নি ৩ বছর।প্রথমে আমি যোগাযোগ করতে চাইলে ও ভাইয়া আমাকে ইগনোর করে।বাট পরে আমি চেয়েছিলাম সে যখন নিজের ইচ্ছাতে চলে গেছে আমার তার জীবন থেকে দূরে সরে আসা উচিত তাই আর উনার নাম্বার কখনো আনব্লক ও হয়নি যোগাযোগ ও ছিলো না
বর্তমান
ভাবনার সাগর পাড়ি দিতেই আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোটা নোনা জল_
আমি বিছানার মাঝ বরাবর চুপ করে বসে আছি।
পার্লার থেকে দু জন মহিলা এসেছে আমাকে সাজানোর জন্য_তারা আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে।
আমি হলুদের মধ্যে লাল পাড়ের একটা শাড়ী পরেছি।দুই হাত ভরা কাঁচের চুড়ি,,,, চোখে গাঢ় কাজল,আর ঠোঁটে লাল টকটকে লিপষ্টিক,,,,
রাত তিনটা আমি এখনো হলদে পাখির সাজে_ভাবলাম শেষ বারের জন্য হলেও ভাইয়ার সাথে আমার একবার কথা বলে নেওয়া দরকার।
ছাদের দিকে রওনা দিতে নিশান (আয়ান ভাইয়ার বড় ভাই) ভাইয়াকে দেখে বললাম (ভাইয়া আমাদের ব্যাপার টা জানতো)
“ভাইয়া একটু শোনো
নিশান ভাইয়া ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
” কি বলবি তাড়াতাড়ি বল তোর ভাবি আমাকে ডাকছে যেতে হবে
আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম
“আয়ান ভাইয়াকে বলো যে আমি ছাদে আছি আর তার জন্য অপেক্ষা করছি
নিশান ভাইয়া বললো
” আয়ান তো ছাদেই আছে
আমি হালকা হেসে বললাম
“ঠিক আছে”
সিড়ির সামনেই দেখা হলো মামনির সাথে_মামনি বললেন
“কোথায় যাচ্ছিস এতো রাত্রে?
আমি বললাম
” অনিতা ছাদে আছে আমাকেও যেতে বলেছে
মামনি আমার কথায় জবাব দিলেন
“বিয়ের কনে কে এভাবে কোথাও যেতে নেই
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” কেনো
মামনি হেসে আমার গাল টিপে বললেন
“ভুত পেত থাকে ছাদে
আর এখন তুই একদম যাবি না
আমি এবার বললাম
” যাবো আমি
মামনি বললেন
“তোর সাথে কথায় আমি পারবো না।এক মিনিট দাড়া আমি আসছি
মামনি একটু পর হাতে একটা দিয়াশলাই নিয়ে আমার শাড়ির এক কোণা হালকা পুড়িয়ে আমার কপালে আলতো একটা চুমু দিয়ে বললেন
” এভাবে ছাদে যাওয়া ঠিক না মা।জীন পরি অনেক কিছুই ছাদে থাকে
আমি আর কিছু বললাম না হালকা হেসে ছাদের দিকে আবার হাটা শুরু করলাম
ছাদে গিয়ে দেখলাম আয়ান ভাইয়া ছাদের এক কোণায় চুপটি করে দাড়িয়ে আছেন
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন
“বিয়ের কনে কে এভাবে ছাদে আসতে নেই
এবার আমার রাগ চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলো_আয়ান ভাইয়ার সামনে গিয়েই উনার বুকে কিল ঘুষি দিতে ফুফিয়ে কান্না করে দিলাম
আয়ান ভাইয়া আমাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন_আমার কান্নার বেগ আরো বাড়তে লাগলো_উনি আমার চুলে হাত বুলালেন_শান্ত গলায় বললেন
” এভাবে কাঁদার কি আছে?
আমি কি মরে গেছি নাকি?
এবার আমি উনার বুক থেকে সরে গলা টিপে ধরে বললাম
“এমন বাজে কথা যদি আরেকবার শুনি তো একেবারে জানে মেরে পেলবো_
ভাইয়া মুচকি হাসলেন
তারপর সামনে থাকা হলুদের বাটি থেকে আমার মুখে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে নিজের মুখ আমার মুখের সাথে হালকা ঘসে নিজের মুখেও লাগিয়ে নিলেন
আমি সন্দেহ নিয়ে বললাম
” এখানে হলুদের বাটি এলো কিভাবে?
ভাইয়া হেসে বললেন
“আমি জানতাম যে আমার মিষ্টি পাখিটা আমার সাথে দেখা করতে আসবেই
আমি এবার ভাইয়াকে আবার জড়িয়ে ধরে বললাম”
“আমি পারবো না প্লিজ
এতোটুকু বলেই আমি দৌড়ে নিচে নেমে এলাম
আমার দুই হাত দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার সাথে লেপ্টে আছেন আয়ান ভাইয়া_
আমি সরানোর চেষ্টা করেও মানুষটাকে একটু নড়াতে ও পারছিনা_
আমার কাজিন নিশি আপুর বিয়েতে এসে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবতেই পারিনি
৩ বছর পর আজ আয়ান ভাইয়ার মুখোমুখি হয়েছি __গলা টা বেশ ভারী হয়ে আসছে যেনো কিছু মুহুর্ত পরই কান্নায় ভেঙে পড়বো আমি
যে মানুষ টাকে নিজের থেকেও বেশী ভালোবেসেছি সে কিভাবে আমার সামনে এতো নিরব দাঁড়িয়ে আছে
তার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
সে কি সত্যিই আমায় ভালোবেসেছিলো নাকি সবটাই অভিনয় ছিলো তার??
(আমি ওয়াজিহা জাহান নিহা। inter 2nd year এ পড়ি।বাবা মায়ের আদরের ২ মেয়ের মাঝে আমি বড় মেয়ে।আর আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে আয়ান ইসলাম। আমার ফুফুর ছেলে। সে আমার থেকে ৫ বছরের বড়।সে আমার ফুফাতো ভাই আর আমি তার মামাতো বোন।ফুফুর দুই ছেলের মাঝে সে ছোটো।৩ বছর আগে আমার আর তার রিলেশন ছিলো।কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিলো যে সে আমাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়
সে ডিগ্রি 2nd ইয়ারে পড়ে
গায়ের রঙ ফর্সা_চুল গুলো স্পাইক করা)
৩ বছর এর মধ্যে আর ভাইয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নি আমার।আজ নিশি আপুর বিয়েতে এসেছি। আব্বুর একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় আসতে পারেনি তাই আম্মুও আসে নি_
নিশি আপুর আম্মু বারবার বলেছিলো বিয়েতে যেনো আমরা সবাই এটেন্ড করি__
আত্মীয়তার খাতিরে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আম্মুর কথায় আসতে হলো_
এখন রাত প্রায় আড়াই টা বাজে_
সবাই বিয়ে বাড়ীতে গায়ে হলুদ নিয়ে ব্যাস্ত এখন
তাদের বাড়ীর উঠোনে স্টেজের ডেকোরেশন করা হয়েছে সেখানে সবাই নিশি আপুর হলুদ নিয়ে ব্যাস্ত।
এর মাঝে নিশি আপুর আম্মু আমাকে আর অনিতা কে পাঠালো ছাদ থেকে কয়েকটা চেয়ার আনতে___এতো রাতে অনিতা নাকি ছাদে যেতে ভয় পাচ্ছে ভুত থাকে যদি।
মাঝ সিড়িতে গিয়েই
অনিতা কাচুমাচু হয়ে বললো
“নিহা তুই যা আমি এখানেই আছি,,
আমি চোখ গরম করে তাকালাম কিন্তু কাজ হলো না,,,,
অনিতা আবার বললো
“” প্লিজ যা না
আমি আর কিছু না বলেই সামনের দিকে পা বাড়ালাম
শুধু শুধু এই মেয়ের সাথে এখানে কথা বললে সময় নষ্ট হবে
বর্তমান__
আমাকে এভাবে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া বললো
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
জীবনে দেখিসনি আমাকে
এবার আমার রাগ উঠলো ভীষণ__তিন বছর পর দেখা হলো আজও সে এরকম কথা বলছে
আমি রেগে বললাম
“এভাবে গায়ের সাথে চিপকে আছেন কেনো আপনি?
কি সমস্যা আপনার?
আমার কথা পাত্তা না দিয়ে ভাইয়া বললো
“আমি কই চিপকে আছি
তুই নিজেই তো আমার সাথে চিপকে আছিস তাকিয়ে দেখ
আমি তাকিয়ে দেখলাম যে তার হাত দুটো পকেটের মধ্যে ডুকিয়ে স্টাইল মেরে দাঁড়িয়ে আছে উনি__
“আপনি এতোক্ষন আমাকে ধরে দাড়িয়ে ছিলেন
আয়ান ভাইয়া বললো
“আমি না তুই ছিলি
আমি আর কথা বাড়াতে চাইলাম না তাই উল্টো দিকে হাটা ধরতেই উনি খপ করে আমার হাত টা আবারো চেপে ধরলেন
“আহ লাগছে
ছাড়ুন আন্টি আমাকে চেয়ার নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছে এখানে।আমাকে যেতে হবে।আর অনিতা অপেক্ষা করছে আমার জন্য ছাড়ুন বলছি
.
আয়ান ভাইয়া শান্ত গলায় তার ফ্রেন্ড মিহির কে ডাক দিলেন
“মিহির,শোন একটু
মিহির ভাইয়া দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন
“এনি প্রব্লেম?
হেই নিহা কেমন আছো?
অনেক দিন পর দেখলাম তোমায়
আমি কিছু বলার আগেই আয়ান ভাইয়া বললো
“নিচে মামনি কে কয়টা চেয়ার দিয়ে আয় তো।
আর সিড়ির মাঝে অনিতা দাঁড়িয়ে আছে
ওকে বলিস যে নিহা একটু পরে আসছে
আমি ওদের কথার মাঝে রেগে বললাম
“একটু পরে নয় আমি এখনই যাবো
আয়ান ভাইয়া মিহির ভাইয়াকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে যেতে বললেন__ উনিও তার ইশারা বুঝেই চলে গেলেন
আমি মনে মনে ভাবছি বেচারি আমি এখন আমার সম্পর্কে অনিতা কি ভাববে…ছিহ এতো রাতে আমি ছাদে একা কি করছি
আমার ভাবনার মাঝেই আয়ান ভাইয়া আমাকে ঝাকুনি দিয়ে বললেন_
“আমার নাম্বার ব্লকে রেখেছিস কেনো?
আমি বললাম
“ছাড়ুন আমার লাগছে
আয়ান ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে এক টানে আমাকে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বললেন
“দেখো আমি এখন তোমাকে চড় মারতে চাইছি না সো বলো কেনো ব্লকে রেখেছো আমার নাম্বার?আর তোমার ফোন কি করেছো?তোমার নাম্বার বন্ধ কেনো?
আমি কোনো রেসপন্স না পেয়ে উনি আবার বললেন
আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি
এবার আমি শান্ত গলায় বললাম
“আপনার নাম্বার ব্লকেই মানায়
আয়ান ভাইয়া বললো মানে?
আমি এবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলাম
আয়ান ভাইয়া আবার প্রশ্ন ছুড়লেন আমার দিকে
~“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
এবার আমি আর থেমে থাকতে পারলাম না
চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো
আয়ান ভাইয়ার শার্টের কলার চেপে ধরে শক্ত গলায় বললাম
“কি চান কি আপনি?
আয়ান ভাইয়া বললো
“তুই এতো গুন্ডি হয়েছিস জানতাম না তো নেহু
এবার আমি কলারটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললাম
“কেনো আবার এসেছেন বলুন
আমার জীবন শেষ করে এখনো শান্তি হয় নি আপনার??
আর কি চান আমার কাছে বলুন?
আমি কি আপনার হাতের খেলার পুতুল যে ইচ্ছে হলে খেলবেন আবার পর মুহুর্তে ছুড়ে ফেলে দেবেন?
৩ বছর আগে কি আপনার একবার ও ভাবার দরকার ছিলো না যাকে মাঝ পথে ছেড়ে যাচ্ছেন তার আপনাকে কতোটা প্রয়োজন?
আয়ান ভাইয়া মাথা নিচু করে রইলেন
আমি কথা গুলো বলে আর এক মুহুর্ত ও ওখানে দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না
দৌড়ে নিচে চলে এলাম
ফ্ল্যাশব্যাক_
আয়ান ভাইয়া সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই।
আমাদের বাসা থেকে তাদের বাসায় যেতে প্রায় ১৫ মিনিট লাগে।আমার আর আয়ান ভাইয়ার সম্পর্ক টা ছোটো থেকেই সাপে নেউলের মতো।আবার অন্য দিকে টম আন্ড জেরির মতো__একজন আরেকজনে না দেখলে যেনো থাকতেও পারি না
ফুফির বাসায় গেলে আমার প্রথম বাক্য হয় ভাইয়া কোথায়?
সবাই এই নিয়ে অনেক হাসাহাসিও করে।
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন বর্ষাকালে একদিন রাতে ফেসবুক ঘাটাঘাটি করছিলাম তখন আয়ান ভাইয়ার আইডি থেকে মেসেঞ্জারে মেসেজ আসে
-ছাদে আয়
আমি আশ্চর্য হয়ে যাই অনেকটাই
আমি মেসেজের রিপ্লাই মেসেজ পাঠাই
-এখন ছাদে কেনো
আর ইউ ক্রেজি?
আয়ান ভাইয়া আবার মেসেজ দেয়
-১০ মিনিটের মাঝে ছাদে না এলে তোর কি অবস্থা করবো আমি নিজেও জানিনা
আমি আবার রিপ্লাই পাঠাই
-আম্মু রান্নাঘরে আছে আর আব্বু বসার ঘরে টিভিতে নিউজ দেখছেন সো এখন আসতে পারবোনা
আয়ান ভাইয়া দুটো agry রিয়েক্ট দিয়ে আবার মেসেজ পাঠালেন
-বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি আমি তাড়াতাড়ি আয়।জ্বর টর হয়ে মরে গেলে তখন ভুত হয়ে তোকে জ্বালাবো বলে দিলাম
(কাথাঁ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি তাই বুঝতেও পারি নি যে বাহিরে এমন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে)
আমি উঠে জানালা টা মেলে দিতেই শীতল হাওয়া আমার পুরো শরীল শীতল হয়ে গেলো_
তারপর বসার ঘরের দিকে উকিঁ দিলাম।আম্মু আব্বু পাশাপাশি বসে বসে চ্যানেল একুশে টিভি তে নিউজ দেখছেন।তাদের টপকে ছাদে যাওয়ার সাহস আমার হচ্ছে না
আবারো ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো আয়ান ভাইয়ার আরেকটা মেসেজ
“আর সময় মাত্র ৩ মিনিট আছে তোর হাতে
তাড়াতাড়ি আয়
“মানুষটার জন্য চিন্তাও হচ্ছে আবার এদিকে আব্বু আম্মুর ভয় ও এবার কিছু না ভেবেই আমি আবার হাটা শুরু করলাম
দরজার দিকে যেতেই আম্মুর আওয়াজ কানে এলো
“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি কিছু না ভেবেই বললাম
“রিখিয়া কল করেছে কিছু নোট আনতে যেতে হবে
আম্মু আবারও প্রশ্ন ছুড়লেন
“সকালে নিয়ে আসিস
আমি করুণ গলায় বললাম
“সকালে নিয়ে এলে পড়বো কখন
আম্মু আর না করলো না যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো
আম্মু পড়াশোনার ব্যাপারে খুব নজরদারি করে
তাই আর আটকালো না
হালকা পায়ে সিড়ি দিয়ে ছাদের দরজার সামনে এসেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি
দরজা খুলে দেখলাম কেউ তো নেই_ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে বৃষ্টির কিছুটা ফোটা এসে আমার শরীরেও পড়ছে যা আমাকে উত্তাল করে দিচ্ছে। তারপর চারদিক আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম কেনো জানিনা মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিলো ভাইয়া আমাকে নিরাশ করবে না নিশ্চই সে এসেছে।আমার হাতে থাকা ছাতা টা মেলে ছাদের মাঝ বরাবর এলাম_আর একটু এগোতেই কারোর হেচকা টান অনুভব করলাম আমি__আচমকা টান দেওয়ায় আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ভাইয়ার বুকের উপর গিয়ে পড়লাম আর ছাতা টাও হাত থাকে সাইডে পড়ে গেলো।ভাইয়ার দিকে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো__সাদা শার্ট পরেছে সে।বৃষ্টির পানিতে ভিজে শার্ট গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।খোচা খোচা দাড়ি গুলো যেনো তার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে দিচ্ছে।
ভাইয়ার আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙলো
“এভাবে গায়ের উপর চিপকে আছিস কেনো?
কোনো কমন্সেন্স নেই
ভাইয়ার কথায় আমার প্রচন্ড রাগ হলো
উঠে যেতে নিলাম তখন ভাইয়া হালকা হেসে আমাকে আরো আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন তারপর ভাইয়াকে ছাড়িয়ে আমি উঠে দাড়ালাম
তারপর ভাইয়া হাটু গেড়ে বসে হাত কয়েকটা কাঠ গোলাপ আমার সামনে ধরে বললেন
“প্রহর শেষে আলোয়
রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভাইয়া আবার উদাসীন ভাবে কাঠগোলাপ গুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন:
“এক গুচ্ছ কাঠগোলাপের প্রস্তাবে
তুমি কি আমার প্রেয়সী হবে?
“কথা দিচ্ছি ভালোবাসার অভাব কি কখনো বুঝতে দেবো না
“আমার অনুপস্থিতি অনুভব করতে দেবো না
ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো তোমায়
“তোমার জন্ম থেকেই শুরু আমাদের প্রেমালাপ
খুব যতনে তার নাম রেখেছি আমি কাঠ গোলাপ
আমাকে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া বললো
” কি ব্যাপার পায়ে ব্যাথা হচ্চে তো আমার ফুল গুলো নিয়ে আমাকে একটু উউদ্ধার কর
আমি ফুল গুলো হাত থেকে নিয়ে নিলাম
এর পর ভাইয়া সোজা হয়ে দাড়ালেন
আমি স্থির গলায় বললাম
“এমনটা কখনই সম্ভব নয়
আপনি আমার ভাইয়া
আমার কথায় উনি ধমক দিয়ে বললেন
কিসের ভাইয়া হ্যা।আমি তোর ফুফাতো ভাই।ফু-ফা-তো ভাই
নিজের ভাই তো আর না
আর আমি তোকে কখনো বোনের চোখে দেখি নি আর দেখবোও না।
আমি এবার করুণ গলায় বললাম
“এমন টা হয় না ভাইয়া
লোকে কি ভাববে”
ভাইয়া এবার ধমক দিয়ে বললেন
“লোকের কথায় তো আর জীবন চলবে না
আমি তোকে ভালোবাসি তোরও আমাকে ভালোবাসতে হবে ব্যাসস
আমি আবারো বললাম
ফ্যামিলি জানলে কি হবে
ভাইয়া বললেন
” ওকে ফাইন
এখনো তুই ছোটো অনেকটাই ছোটো
তাই এখন রিলেশনে যাওয়া ঠিক হবে না
তুই পড়াশোনায় মন দে
আর তোর বিয়ের বয়স হলেই বাকীটা আমি দেখবো।
দিন যতো যেতে লাগলো ভাইয়ার প্রতি আমার দুর্বলতা টাও বাড়তে লাগলো হয়তো এটাই ভালোবাসা
যদিও আমি ভাইয়াকে ছোটো বেলা থেকেই পছন্দ করতাম কিন্তু বলা হয় নি
ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসার শুরু আমিও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি
আমার হৃদয়ে ঘর তৈরি করে নিয়েছে সে
যে হৃদয়ে শুধুই আছে সে
আর আমাদের গল্পের নাম হোক #হৃদয়ে_তুমি
আমার হৃদয়ে শুধুই সে
আলো দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলো।চোখ পেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দরজার সামনে আর কেউ নয় তারই আপনজন। তার আদরের ছোট ভাই আকরাম। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আলোর ভাই, ভাইয়ের বউ ও তাদের মেয়ে।
আকরাম নিজের বোনকে দেখে ঝাপটে ধরলো। দুই ভাই বোন কাদছে৷ ফাতেমাও কেদে দিয়েছে।
আকরামঃ আপারে আমাকে রেখে তুই কেন চলে এসেছিস। একবার আমাকে বলতে পারতি৷ আমাকে জানাতে পারতি। এভাবে আমাকে একা করে কেন চলে এলি। (কাদছে আকরাম।)
আশেপাশের মানুষ কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। আলো নিজেকে স্বাভাবিক করে ওদের ঘরে ডুকালো। আলো ফাতেমার কোলের বাচ্চাটির দিকে চেয়ে আছে।
।
আকরাম নিজের মেয়েকে কোলে নিলো।
আকরামঃ তোর কথা কিন্তু সত্যি হলো আমাদের মেয়ে হয়েছে আপা। এই নে আমাদের আফরা। তোর বানানো জামা পড়িয়ে এনেছি। একদম পরির মতো লাগছে তাই না।
আলো নিজের কাপাকাপা হাতে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে নিলো। বাচ্চাটা আলো দিকে চেয়ে আছে হাত নাড়াচাড়া করছে। নিজের হাত আলো গালে ছোয়াচ্ছে। আলোর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। একদম নিজের মতো হয়েছে। হবেই না কেন আলো ও আকরামের চেহারাই অনেকটাই মিল।
আলো আফরাকে বুকে জড়িয়ে রাখছে। অন্যরকম শান্তি লাগছে।
আলোঃ আম্মু আমি তোমার ফুপ্পি হই বুঝেছো। তুমি যলদি বড় হয়ে যাও। স্কুলে যাবা খেলা করবা।নিজের মতো করে বাচবা।
আফরা ও মুখ দিয়ে হালকা আওয়াজ করছে হেসে দিচ্ছে। আলোকে এখন বেশ পরিবর্তন লাগছে৷ লাগবেই না কেন মানুষের খাওয়া আর ঘুম বেশ প্রয়োজন। কিন্তু শাওনদের বাড়িতে এই দুটির একটিও হতো না।
আলো ওদের শরবত বানিয়ে দিয়ে রান্না শুরু করবে। আপাতত ঘরে তেমন কিছু নেই। ভাত আর ডিম ভুনা করে দিবে ভাবছে।
ফাতেমা আলোকে উঠিয়ে নিজে বসে গেলো। আর আলোকে তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে কথা বলতে বলল। প্রথমে মানা করলেও ফাতেমার জোড়াজুড়িতে উঠলো।
আলো আকরামে সাথে কথা বলছে। খাট কেনা হয়নি তাই মেঝেতেই ঘুমায় কিন্তু তোশক বানিয়েছে তাতে শুয়ে থাকে। একা মানুষ এতো কিছু দিয়ে কি করবে আর সব না হয় আস্তে আস্তে কিনে নিবে।
বাচ্চাটা কোনো মতে বসতে পারে। বসিয়ে দিয়েছে সে তার মতো খেলা করছে। এরপর আলো ওর ভাইকে সব বলল এখানে কিভাবে এসেছে কি কি হয়েছে। শাওন কি কি করেছে সব। শাওনকে ডিভোর্স এর পেপার তোহ পাঠিয়ে দিয়েছে কিন্তু বাকি অনেক কাজ বাকি। আকরাম বলল বাকিটা সে দেখে নিবে।সে একটা কোম্পানিতে ছোট খাটো কাজ নিয়েছে তাই করছে।
ওদের কথার মাঝে মনিরা এসে হাজির। মনিরা রোজ আলোকে দেখতে আসো। দুইজন গল্প করে। আজকে মানুষ দেখে একটু অবাক।আলো মনিরাকে ওর ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সাথে ফাতেমা ও আফরামনির সাথেও।
মনিরা ফাতেমাকে রান্না করতে মানা করলো। বলল আজকে তার বাসায় খেতে অনেক মানা করেও কাজ হলো না। সাথে ফাতেমারা মনিরার বাসায়ই থাকবে। বাচ্চা নিয়ে এমন ছোট একটা ঘরে কিভাবে থাকবে।
মনিরা চলে গেল। রান্না করতে হবে তাই।
কথার মাঝে আকরাম বলল জরুরি কথা আছে। আলো জানে এখানে আকরাম কিভাবে এসেছে তাই আর জিজ্ঞেস করেনি। আকরাম আলোকে বলল
আকরামঃ আপা আমি তোকে আজ নিতে এসেছি।
আলোঃ এটা সম্ভব নারে। আমি সব ছেড়ে এসেছি। পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না।
আকরামঃ আপা দেখো আমি তোমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে বলছি না। আমি চাচ্ছি তুমি সামনে ফিরো। কিন্তু তা আমার বাড়িতে। তোমার সাথে আমি আছি ফাতেমা আছে। সাথে আফরা মনিও আছ। তোমার যা সিদ্ধান্ত হবে তাই।
আলোঃ আকরাম দেখো আমি এখানে নতুন করে শুরু করেছি। তার (আলোকে থামিয়ে দিয়ে আকরাম বলল)
আকরামঃ আপা একবার আমার মেয়েটাকেও দেখো । সে তার ফুফু আদর থেকে বঞ্চিত হবে। আর যদি তার দাদীও আমাদের দাদীর মতো আচরন করে। আমাদের তোহ ফুফু ছিলো না কিন্তু আফরার তো ফুফু আছে সেকি আফরাকে আগলে রাখতে পারবে না।
আকরাম আলোকে নানান ভাবে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। অত:পর অনেক ভেবে আলো যাওয়ার জন্য রাজি হয়।
পরেরদিন সকাল সকাল আকরাম ফাতেমাকে নিয়ে যায়।ওরা পরেরদিন আসবে বলল।আলো বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে সব ঠিক ঠাক করলো। মনিরা এসে সব কিছু গুছাতে সাহায্য করছে। মনিরাও খুশি আলো তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।
অত:পর আলো আজ নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনিরাকে ধরে হালকা কান্না করেছিলো। তার দুঃক্ষের সময় মনিরাই তাকে সাহায্য করেছে যা সহজে মানুষ করে না।
আলো নিজের বাড়িতে ডুকতে কেমন যেনো লাগছে। কিছুক্ষন পর আলোর মা এসে তার মেয়েকে ঝাপটে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে৷ আলোর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই৷ আলোর মা আলোকে নিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কোথাও তার দাদীকে দেখা যাচ্ছে না হয়তো নিজেকে গুটিয়ে রুমে বন্ধি করে রেখেছে। আলো আকরামকে জিজ্ঞেস করলো দাদী কোথায় আকরাম বলল তার রুমে। আলো আর কিছু বলল না। আলো তার দাদীর সাথে মুখোমুখি হতে চায় না। তাই খাবার দাবার খেয়ে নিজের রুমেই আছে।
নতুন সেলায় মেশিন তার রুমে রাখা। যা যা নিজের টাকা দিয়ে কিনেছিলো সব নিজের রুমে সাজিয়েছে।আর ওই এলাকাটা ছেড়ে আসার কারন আঁধার। সে আঁধারের জীবনে এখন জড়াতে চায় না। তাই চলে এসেছে।
শাওনের কাছে খবর যায় আলো এসেছে। কিন্তু সে আসেনি।
আকরাম তার বন্ধুর মামার সাথে কথা বলে যিনি উকিল। উকিল কাগজ পত্র দেখে বাকি কাজটা করে ফেলবে। নতুন করে নোটিশ পাঠানো হয়।
শাওন ও আলো আদালতে এসেছে। শাওন আলোর সাথে ৫ মিনিট কথা বলতে চায়।
শাওন আর আলো একটা সাইডে এসে বসল।
শাওন কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো।
শাওনঃ আলো দেখো আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমাকে শাস্তি দিয়েছি অনেক। কষ্ট দিয়েছি। আজ আমি অনুতপ্ত আমি চাই তুমি ফিরে এসো। আচ্ছা নতুন করে কি আমরা আবার শুরু করতে পারিনা৷ আমরা এক সাথে ছিলাম৷ এবার আমি তোমার সব কথা শুনবো। ডিভোর্স দিয়ে কি হবে বলো।
আলো কিছুক্ষন চুপ থেকে জবাব দিলো।
আলো ঃ আপনি নতুন করে কেনো শুরু করতে চান। কারন আপনি অনুতপ্ত। আচ্ছা একটা কথা বলুন তোহ আমি আপনার কাছে কেন ফিরবো। ফিরে যাওয়ার তোহ কোনো কারন পাচ্ছি না। আপনি তোহ আমায় ভালোবাসেন না। আপনি অনুতপ্ত তাই নতুন করে শুরু করতে চান। আপনি আমার জন্য কি করেছেন। না আপনি ভালোবাসেন আর না আপনি আমার কোনো দায়িত্ব পালন করেছেন। বিয়ে করে টিস্যুর মতো ব্যবহার করা ছাড়া আর কিছু কি করেছেন। আপনি যদি আমায় ভালোবাসতেন তাহলে আমি নাহয় আপনার কাছে আসতাম। আপনি আমায় ভালোবাসেন না,সম্মান করেননা, আমার দায়িত্ব নেননা। আমার খোজ নেননা। তাহলে কেনো আমি আপনার কাছেই যাবো।
আলো এবার দম নিলো।
শাওনঃ দেখো আলো একটা সম্পর্ক এভাবে হুট করেই শেষ করা যায় না। তুমি আমাদের বাড়িতে ছিলা। থাকা খাওয়া সংসার করা।সবই তোহ করেছো।
আলোঃ একটা কাজের লোককেও ফ্রিতে থাকতে দেওয়া হয় খেতে দেওয়া হয়। আর আমাকে তোহ না শান্তিতে খেতে দিয়েছেন না ঘুমাতে।
শাওনঃ আচ্ছা আমাকে কি মাফ করে দিয়ে নতুন করে শুরু করা যায় না।
আলোঃ কোন কোন কাজের জন্য আপনাকে মাফ করবো৷ আমাকে অসম্মান এর জন্য,অবহেলার জন্য,নিষ্ঠুর আচরনের জন্য, নাকি ভালো না বাসা আর দায়িত্বহীনের জন্য। আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমার সাথে আপনি কি কি করেছেন দাড়ান মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনি সেই লোক যে খাবারে লবন বেশি হওয়ায় রাত ১ টায় ৮ কেজি মাছ এনে আমাকে সারারাত নির্ঘুম রেখেছেন। আপনি সেই লোক যে আমার জামা কাপর কুচি কুচি করে কেটে ফেলেছেন। আপনি সেই লোক যে বাচ্চা না হওয়া জন্য আমাকে দোষারোপ করেছেন। আপনি সেই লোক যে আমাকে না বলে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা এনে জুয়া খেলায় শেষ করেছেন। আপনি সেই লোক যে আমার বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া একটা আংটি বিক্রি করে জুয়াতে সব টাকা শেষ করেছেন। আপনি সেই লোক যে আমাকে নিজে থেকে একটা শ্যাম্পুও কিনে দেননি। আপনি সেই লোক যে কথায় কথায় আমাকে বাবার বাড়ির খোটা দিয়েছেন। আপনারাই সেই লোক যারা আমাকে বাচ্চা না হওয়ায় কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করেছেন। আপনিই সেই লোক যে কখনো আমায় জিজ্ঞেস করেনি আলো তুমি কি খেয়েছো। আপনি সেই লোক যার জন্য রাত ১ টা পর্যন্ত না খেয়ে নির্ঘুম থাকতাম৷ আপনি সেই লোক যার বাড়িতে কতো রাত কতো দিন না খেয়ে থেকেছি। আপনি সেই লোক যে কখনো আমায় কিছু কিনে দেননি বা জিজ্ঞেস করেননি যে আলো তোমার কি কিছু লাগবে। আপনিই সেই লোক যে কখনো আমায় বলেননি যে আমায় ভালোবাসেন। বিয়ে করেছেন তাই আমার সাথে থেকেছেন। আর আপনিই সেই লোক যে আমায় বলেছেন আপনি আমায় বিয়ে না করলেও কেউই এমন মেয়েকে বিয়ে করতো না। আমার বয়স বেশি, রুপ নেই,গুন নেই কিছু নেই৷ আচ্ছা কখনো কি আমার কাজে প্রশংসা করেছেন। আমার রান্না করা খাবারের কোনো প্রশংসা করেছেন৷ আমাকে কখনো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গিয়েছেন, আমাকে কখনো কোনো উপহার দিয়েছন। আরে উপহার বাদ ঈদেও তোহ কিছু দেননি।
(আলো এবার একটু দম নিলো শাওন চুপচাপ আলোর কথা শুনছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আলোঃআচ্ছা বললেন না যে মাফ করে নতুন করে শুরু করতে। আপনি কি কখনো আমায় মাফ করে ছাড় দিয়েছেন। খাবারে লবন বেশি হওয়ায় কি আমায় মাফ করা যেতো না৷ আপনি তা করেছেন কি৷ আমি সেলায় মেশিন বিক্রি করে আমার ভাইয়ের টাকা ফেরত দেওয়ায় আমার জামা কাপর কেটে ফেলেছেন যেখানে আপনার দোষ ছিলো কই তখনও তোহ মাফ করেননি। রাতের বেলা চালের গুড়ো এনে পিঠা বানাতে বলেন কই তখনও তোহ মাফ করেননি। যেখানে নিজে ছোট ছোট কাজের জন্য আমায় মাফ করেননি সেখানে এতো বড় বড় অন্যায়ের মাফ আমি কেন করবো। আমি কেনো মানিয়ে নিবো আপনি কি মানিয়ে নিতে পারতেন না। কিন্তু না আপনি তেমন কিছুই করেন নি। যখন যেটা নিজে পারবেন না সেটা অন্যের কাছে আশা করবেন না। আর আপনাকে মাফ করে দিলাম কিন্তু নতুন করে ঘর বাধার সপ্ন আপনার সাথে দেখার কোনো ইচ্ছা নেই।
আলো উঠে চলে যাচ্ছিলো৷ যাওয়ার আগে শেষ একটা কথা বলে গিয়েছে।
আলোঃ আর শুরুতেই তোহ আপনি বুঝিয়ে দিলেন আমি আপনার সাথে থাকলে সুখী হবো কি না। আপনি এসেই আমায় নতুন করে ঘর বাধার কথা বলছেন কই একবারও তোহ জিজ্ঞেস করলেন না আমি কেমন আছি। অনুতপ্ত হয়েছেন কিন্তু বদলাননি। যাক শেষ কথা বলি আপনি বলেছিলেন টাকা না নিয়ে এলে মুখ দেখাতে না৷ আমি কিন্তু আপনার কথাটা রেখেছি। আর একটা কথা থুথু ফেলে দিলে সে থুথু আর মুখে নেওয়া যায় না।
আলো সোজা হেটে যাচ্ছে আত্নসম্মান থাকতে হয়। সব সময় মানিয়ে নেওয়া যায় না। মানুষ এর সাথে সংসার করা যায় কিন্তু এইসব জানোয়ারদের সাথে সংসার না করাই ভালো৷ সব সময় সবাইকে নতুন করে সুযোগ দেওয়া যায় না। তাদের যদি সুযোগ দেই তাহলে নিজের কাছেই হেরে যাবো।নিজের কাছে নিজে নিচু হবো।
অত:পর আলো ও শাওনের তালাক হয়ে গেলো । আলো পিছু ফিরে আর তাকাতে চায় না।
এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। আলো একদিন ঘরে বসে সেলায় করছে। এমন সময় আকরাম আসলো এসে আলোকে ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে গেলো। বাহিরে গিয়ে আলো দেখলো কয়েকজন মানুষ বসে আছে। তিনজন মহিলা আর একজন পুরুষ। আলো ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেলো। বুঝার চেষ্টা করছে কারা। লোকটাকে দেখে একটু অবাক হলো ঔষধ এর দোকানি আর পিঠা নিতে এই লোকটাকে দেখেছে অনেকবার৷ তার পাশে একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখতে পাচ্ছে তার চেহারাটা চেনা চেনা লাগছে। অনেকক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবছে কারা এরা। লোকটা আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
বয়স্ক মহিলাটি আলোকে চুপ দেখে বলল
” কেমন আছো আলোমনি”
আলোমনি নামটা শুনে অবাক হয়ে গেলো। মূহুর্তেই মনে পড়ে গেলো।এই নাম তোহ দুইজন ডাকতো এক আলোর বাবার আরেকজন আঁধারের মা।আদর করে আলোমনি ডাকতো। তাহলে কি ইনি
আলো লোকটার দিকে তাকালো চোখ ছলছল করছে। লোকটারও লোক ছলছল করছে। আলোর কিছু বলার আগেই গলা বসে যাচ্ছে। একটা ঢোক গিলে বলল
আলোঃ আ..আঁধার
আঁধারঃ আঁধারের_আলো।
আলো নিজের দাতে দাত চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে বসলো। এতে কেউ অবাক হয়নি আকরাম, আলোর মা আর আধারের মা বলল আধারকে আলোর কাছে যেতে।
আলো বিছানায় বসে কাদছে আধার দরজাটা হালকা চাপিয়ে মেঝেতে এসে বসলো। আলোর বিছানায় ঘুমাচ্ছে আফরা।
আলোকে কাদতে দেখে সে নিজেও কাদছে। আলোর দিকে নিজের রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল
আঁধারঃ কেমন আছো তুমি?
আলো অনেক কষ্টে নিজে সামলাচ্ছে। আঁধারের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো আধার উঠে দাড়িয়ে রুম টা দেখছে। আলো মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে৷ তিন মিনিট নিজের দিকে চেয়ে বেড়িয়ে এলো। গিয়ে খাটে বসে আঁধারকে বসতে বলল।
আলোঃ অনেক বছর পর আমাদের দেখা। তুমি কেমন আছো আঁধার। বিয়ে করেছো কি বাচ্চা আছে, ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে?
আলোর এইসব প্রশ্নের উত্তর জানে তারপরও প্রশ্ন করছে
আধার চুপ করে থেকে এরপর উত্তর দিলো।
আধারঃ তোমার কথা রেখেছি আলো। তোমারই অপেক্ষা করছি। তোমার বলা শেষ কথা গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। তুমি কিন্তু তোমার বলা কথা গুলো রাখোনি।
আলোঃ কোন কথা বলছো। আমার তোহ মনে পড়ছে না।
আঁধার একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
আধারঃ দেখো আলো আমি তোমার জন্য শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবো আমি তোমার সব সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। কখনো তোমায় জোর করবো না। আচ্ছা আসল কথা বলি আমার পরিবার আর তোমার পরিবার আমাদের বিয়ে কথা বলতে এসেছে। আমি জানি তুমি ভালো নেই। আমি শুধু তোমার মতামত চাই, তোমার চাওয়া, তোমার ইচ্ছার কথা শুনতে চাচ্ছি।
আলো কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো কথা গুলো বলার মতো কাউকে পাচ্ছে না আঁধারকে নিজের আপন অনেক কাছের মনে হয়। যার কাছে সব কিছু বলা যায়।
আলোঃ আঁধার আমি চাইলেই তোমাকে বিয়ে করে নিতে পারি। এতে কি হবে সবাই আমাকে নানান কথাও বলবে। নানান অপবাদ দিবে। তোমার বাড়ির লোকজনও বলতে পারে অনেক কিছু। আধার আমি ডিভোর্সি। আমার বাচ্চা হয়নি। সব সময় মেয়েদের দোষ দেওয়া হয়। মানুষ ভাবে বাচ্চা না হওয়ায় আমার তালাক হয়েছে। এমনও হতে পারে তোমাকে বিয়ে করে তোমার জীবনটা নষ্ট হবে। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি এমন কিছু করতে চাই যাতে কেউ আমায় অসম্মান না করে। কেউ বলতে না পারে যে আমি নিজের বোঝাটা তোমার ঘাড়ে ফেলেছি। তোমাকে ফাসিয়েছি। আমি তোমার যোগ্য নই আধার। আমার কাছে কিছুই নেই তোমার জন্য। আমার কাছে তোহ নিজের সম্মান টুকু নেই। আমি তোমাকে বিয়ে করে বোঝা হয়ে থাকতে চাচ্ছি না। কিছু করতে চাই। পড়াশোনা তোহ করতে পারিনি কিই বা করবো।
আঁধার কিছুক্ষন বসে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে।
আধারঃ আমি তোমায় সসম্মানে নিয়ে যাবো। কেউ বলতে পারবে না আমি কোনো অযোগ্য মেয়ে বিয়ে করেছি। তোমার কি যোগ্যতা তা সবার সামনে খুব যলদি আসবে। আর আমি তোমার জন্য সব সময়ই অপেক্ষা করবো।
এই বলে ওইদিন আধাররা চলে যায়। কেউ আলোকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আলো জানালা দিয়ে আধারের যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে। ইচ্ছে করছে আটকাতে কিন্ত সে তা চায় না।
দুইদিন পর আকরাম আলোর কাছে এসে বলল। একটা দোকান দিবে তাতে যেনো আলো তাকে সাহায্য করে।
আলোঃ দোকান দেওয়ার জন্য টাকা প্রয়োজন তা এতো টাকা কোথায় পাবে।
আকরামঃ এতো চিন্তা করো না যা হবে ভালোই হবে।
এইদিকে আকরাম ও ফাতেমা মিলে তাদের বাড়ির সামনেই দোকান বসাচ্ছে। ইটের দেয়াল আর উপরে টিন।
কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফাতেমা ও ওর শাশুড়ী মিলে এদিকের কাজ দেখছে। আকরাম আলোকে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁতে গেলো। সেখানে আঁধারের সাথে বসা একটি মেয়েকে দেখলো। আলো সেখানে যাওয়ায়
আধার মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
আধারঃ আলো ইনি জিনিয়া আমার বন্ধু স্ত্রী। ইনি একটি এনজিওতে কাজ করে। ইনি অসহায় নারীদের নিয়ে কাজ করছে। তাদের হাতের কাজ সেলাই কাজের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে৷
আলোঃ ওহ আচ্ছা।
জিনিয়াঃ শুনলাম আপনি নাকি হাতের কাজ ও সেলাই ভালো পারেন।
আলোঃ জিইই আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। মোটামুটি অনেক কাজই পারি।
জিনিয়াঃ (একটা কাগজ এগিয়ে দিলো।)
আলো আমাদের কাজের জন্য একজনকে দরকার যিনি ভালো করে সেলাই কাজ, হাতের কাজের প্রশিক্ষন দিতে পারবে। আপনি কি রাজি আছেন।আমি আপনাকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।
আলো আঁধারের দিকে তাকালো। আধার কি সত্যি তার বলা কথা গুলো পূরণ করতে যাচ্ছে। আকরামের ডাকে হুস এলো।
আকরামঃ আপা সাইন করে দে। এমন সুযোগ সব সময় আসে না।
এরপর আলো রাজি হয়ে যায়। আরো কিছুক্ষন কথা বলে তারা চলে যায়।
আলো বাসায় এসে আকরামকে নিজের ঘরে ডাকে। আকরাম আসে।
আলোঃ আকরাম এতো টাকা তুই কোথায় পেয়েছিস যার জন্য দোকান দিচ্ছিস।
আকরামঃ দিয়েছে একজন।
আলোঃআকরাম কে দিয়েছে।
আকরামঃ আপা থাক না এতো কিছু দিয়ে কি করবি।
আলোঃ আকরাম যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে। তুই কি আধারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিস।(হালকা রাগী ভাবে)
আকরামঃ টাকা গুলো দাদী দিয়েছে।
আলো অবাক হলো। দাদী টাকা দিয়েছে মানে।
আকরামঃ দোকানটা তোর জন্য দিচ্ছি এখানে তুই থ্রিপিস এর দোকান দিতে পারবি সাথে এলাকার কিছু অসহায় নারীদের সেলায় শিখিয়ে তাদের দিয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে পারবি। তোর জন্য দাদী টাকা দিয়েছে।
আলো ঃদাদী আমার জন্য টাকা দিয়েছে। আর এই আইডিয়া তুই কোথায় পেলি।
আকরামঃ আইডিয়া আধার ভাইয়ের।
আর দাদী টাকা কোথায় পেয়েছে তা দাদীকে গিয়ে জিগ্যেস কর আমার কাজ আছে আমি গেলাম।
আকরাম চলে গেল। আলো আস্তে আস্তে তার দাদীর ঘরে পা বাড়াচ্ছে। এতোদিনে তার দাদী তার সামনে আসেনি। আলোও তার দাদীর কাছে যায়নি।
আলোর মুখে দাদী শুনে কান্না করে আলোকে জড়িয়ে ধরলো। আলোও কান্না করে দিলো
আলোর দাদীঃ মাগো আমাকে মাফ করে দেও । আমার ভুল হয়ে গেছে।
আলো কিছু বলছে না কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। দাদীকে শান্ত করলো। বয়স হয়েছে অনেক। আলো দাদীকে শান্ত ভাবে টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে তার ভাইয়ের ছেলেরা দিয়েছে। বাবার বাড়ি থেকে কোনো কিছুই নেয়নি কিন্তু জায়গায় তার নাম আছে সেটা ভাইয়ের ছেলেদের দিয়ে টাকা নিয়ে নিয়েছে। তার বাবার বাড়ির অনেক জমি জমা আছে। সেখানে তার নামও আছে।এতো বছরে আলোর জন্য কিছু করেনি বা করতে পারেনি। আকরাম ও ফাতেমার কথা শুনে আলোর দাদী টাকা দেয়।
আলো কিছুক্ষন কথা বলে জানতে পারে আকরাম ওর মেয়েকে দাদী ধারে কাছেও আনেনি।
এরপর আলো চলে যায়।
আলো দোকান চালু করে দিয়েছে। জিনিয়ার সাথেও কাজ শুরু করে দিয়েছে।
প্রতিদিন জিনিয়ার সাথে গিয়ে তিন ঘন্টা করে বিভিন্ন নারীদের সেলায় কাজ, হাতের কাজ শেখায়।নিজেদের দোকান চালু করেছে। এক পাশে থ্রিপিস বিক্রি করবে। আরেক পাশে সেলাই কাজ ও হাতের কাজ শুরু করবে।। এলাকার কয়েকজন নারীদের খুজে বের করেছে। তাদের কাজ শিখিয়ে শুরু করে দিয়েছে। তাদের কাজের জন্য প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে বেতন দেয় যাতে করে তারা চলতে পারে।আলো ওইসব নারীদের নিয়ে কাজ করে যেখানে কেউ কেউ ডিভোর্সি, বিধবা, কেউ স্বামীকে সাহায্য করার জন্য। কারো বাবা নেই সংসারের হাল ধরার জন্য।
আলোকে একটা ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে আকরাম। ১৫ দিন ল্যাপটপ চালানো শিখে নেয় আলো। সব কিছু তারাতারি করে কাজ শুরু করে। সেখানে নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলে একটা পেজ খুলেছে। পেজে নকশি পিঠা,কেক নিয়ে কাজ করছে। অনলাইনে কেক, নকশি পিঠা বিক্রি করে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য লোক রেখেছে।
আধার আলোকে বিভিন্ন গ্রুপে এড করিয়ে দেয়। আরো অনেক কিছু শিখিয়ে দেয় কিভাবে কাজ করবে। বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেওয়ার জন্য তা নিজে লিখে সাজিয়ে দেয়। এভাবে আস্তে আস্তে আলোর উন্নতি হচ্ছে আলো নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের পরিচয় বানাচ্ছে। মোটামুটি অনেকটা পরিচিত পেয়ে গেছে আলো। আঁধারের আরেকটা কথায় সে হাতের কাজের, নিজের বানানো থ্রিপিস,ফ্রোক, আরও অনেক কিছু অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছে। সব কাজে আধার দূরে থেকেও সাহায্য করেছে। আলো এখন অনেক জায়গায় যায়। নিজের হাতে বানানো অনেক কিছুই এখন নিজের এলাকার পাশাপাশি দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিচ্ছে। নিজের এলাকা ছাড়াও আশেপাশের এলাকার মানুষজনও আলোকে চিনে। আলোদের দোকন থেকে থ্রিপিস গুলো কিনে। বানানো থ্রিপিস দামও কম সাথে বিভিন্ন কাজ করাও আছে। আলোর দোকান থেকে বানানো থ্রিপিস গুলো বিভিন্ন শপিং মলের দোকানেও দিয়ে থাকে।
আলোকে এখন সবাই চিনে। এভাবে কেটে গেল দেড় বছর। আলোর দিনকাল ভালোই যাচ্ছে।
একদিন আলোর দাদী তার ঘরে আসে। তখন সে অনলাইনে কাজ করছিলো।
আলোঃকিছু বলবেন আপনি।
দাদীঃ আমার মতে আঁধারকে বিয়ে কইরা ফালানো উচিত তোমার।
দাদীর কথা অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
দাদীঃ হো আজ তুমি যে নাম কামাইছ যে সম্মান পাইছো সব আধারের কারনে হইছে। আধার কতো জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করছে। আকরামকে বলে দোকান দেওয়াইছে। এই টিভিটার(ল্যাপটপ) মধ্যে কাম করার কথা বলছে। তোমার জন্য পোলাটায় অনেক কষ্ট করছে। ওরে আমি কইছিলাম কিছু করলে তোমারে ওর হাতে তুইল্লা দিমু ওয় সেই কথা রাইখা বিদেশ গেছে গা। কিন্তু আমি দেইনি আমার কথা রাখি নাই। আজ সুযোগ আছে কথা রাখনের।আমি চাই তুমি ওর সাথে নতুন কইরা সব শুরু করো। ওয় তোমার জন্য ভালো। ওর মতো পোলা তুমি পাইবা না। ওয় তোমারে যতডা বুঝে তা কেউ বুঝবো না।
দাদী কথা গুলো বলে চলে গেলো। ঠিকই তোহ আঁধার কতো কিছু করলো। আধার যে তার বলা কথা গুলো রেখেছে আর রাখে তাহলে আমি কেন আমার বলা কথা গুলো থেকে পালিয়ে যাচ্ছি।
আলো আকরাম ও ফাতেমাকে ঢেকে ওদের সাথে কথা বলে। আকরাম বলে আঁধার অনেক কাজ করেছে বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে আলোর কাজের প্রচার করেছে। তার বন্ধু বান্ধুবদের জানিয়ে দিয়েছে।এভাবে অনেক অনেক কষ্ট করেছে। জিনিয়াকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে আলোকে কাজে নিতে বলেছে। কাজের জন্য জায়গা না থাকা সত্বেও আলোকে নিয়েছে। আধার বলেছে আলো তাদের নিরাশ করবে না। আলো কাজের সফলতার পেছনে আঁধারের অবদান অনেক।
আলো অনেক চিন্তা ভাবনা করে আঁধারকে ডাকে। আকরামকে সাথে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁতে যায়। আকরাম একটু দূরে থেকে দুইজনকে কথা বলার সুযোগ দেয়।
৫ মিনিট দুজন নিরবতা পালন করে আলো বলে
আলোঃ আমি আঁধারের_আলো হয়ে থাকতে চাই। আমাকে কি নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নতুন সম্পর্কের নাম দিতে পারবে কি?
আধার মুচকি হাসলো। সে এই কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলো। অবশেষে পেয়ে গেলো সে তার আঁধারের_আলোকে।
অত:পর আধার আলোর বিয়েটা হয়ে গেলো সামান্য ঘরয়া ভাবে বিয়েটা হলেও। তাদের বিয়েতে অনেক মানুষ আসে। মনিরাও আসে যে আলোকে সাহায্য করেছিলো এমনকি গার্লস গ্রুপে মনিরা আঁধার ও আলোর কথা গুলো শেয়ার করে। আলো অনেক মেয়ের অনুপ্রেরণা।
বাসর ঘরে বসে আছে আলো। অবশেষে সে আঁধারের_আলো হয়েই গেলো। আধার তাকে সসম্মানের সাথে তার যোগ্যতা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েই আপন করে নিয়েছে। সে প্রমান করে দিয়েছে আলো কখনো অযোগ্য ছিলো না।
আলো আঁধারের রুমটালে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। এরপর সে রুমে আসে দুজন নামাজ আদায় করে এক সাথে বসে গল্প করতেতে। এত বছরে কত কথা জমে আছে। আলো পেপারে মুড়ানো একটি প্যাকেট আঁধারের দিকে এগিয়ে দেয়। আধার হালকা হেসে তা নিয়ে নেয়।
পেপার খুলে দেখে বিস্কুটের প্যাকেট তাও নতুন। প্যাকেটটা ছিড়ে দুজনে বিস্কুট খাচ্ছে। আঁধার আলোকে একটা নাকফুল উপহার দেয়।
আঁধারঃ তোহ নিজের দেওয়া বিস্কুট এর প্যাকেট এক দেখায় চিনে ফেলেছো।আর এটা কি আগের বিস্কুট আমাকে খাওয়ানো হচ্ছে নাকি নতুন।
আলোঃ ভ্রু কুচকে বলল কালকে রাতে কিনে মুড়িয়ে রেখেছি। আর আমার দেওয়া বিস্কুট আমার স্টাইলে ফেরত দিলে চিনবো না কেন আর ওই বিস্কুট আমি একমাত্র তোমায় দিয়েছি আর কাউকে না।তোমাকে দেওয়ার পর না কখনো ওই বিস্কুট কিনেছে। আর ওই সময়ের বিস্কুট আমার স্টাইলে তুমি ছাড়া কে ফেরত দিবে তার উপর আবার চিরকুটও লিখে দিয়েছো। আর একটা কথা এতোদি সামনে থেকেও পরিচয় দেওনি কেন।
বলেই একটা কিল বসিয়ে দিলো আধারের পিঠে।
লেখনীতেঃ ইনসিয়া আহমেদ হায়াত
আধার হেসে দিতে বলল
আধারঃ এই আমার পিঠে কিল দেওয়ার অভ্যাস গেলো না তোমার।
আলোঃ সম্মান দিয়ে কথা বলো আমি তোমার দুই মাসের বড়।
আঁধার হেসে দিলো কতো বছর পর এই কথাটা তার প্রিয়তমার মুখ থেকে শুনছে।
আধারঃ তা তোহ দিতেই হবে৷ আমার বাচ্চার মা আর আঁধারের_আলো বলে কথা।
তাই কথা গুড়িয়ে বলল
আঁধারঃ তোমাদের এলাকার ঐ মোটু টা কেমন আছে।
আলোঃ কোন মোটু ওই মোটু যার হাতে ছোট বেলায় পিটুনি খেয়েছো আর আমাকে গিয়ে বাচাতে হয়েছে৷
আঁধারঃ এটাও মনে আছে।
আলোঃ থাকবে না কেন। আমার সব মনে থাকে। আর মোটু বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা স্কুলে পড়ে।
এভাবে কত শত কথা বলছে।কয়দিন পর আলো ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপ করিয়ে আসে৷ ডাক্তার সব নরমাল বলে৷
আলোর ভাসুর বিদেশ থেকে আসে। এইবাড়ির সবাই ভালো আলো শ্বশুর নেই। ভাসুর ও জায়ের একটা মেয়ে আছে তারা দুজন আমাকে বোনের মতো দেখে অনেক ভালোবাসে। আগের শাশুড়ীর চেয়ে এই শাশুড়ী অনেক ভালো একদম নিজের মেয়ের আদর করে। ননাসও ভালো। আলোর বাড়ির দোকান ফাতেমা দেখাশোনা করে। আধার বলেছে যা টাকা আসবে সব আফরার। ওই দোকান থেকে ভালো ইনকাম হয়। আকরামের চাকরিও ভালো চলছে৷ ঘরে সাথে হওয়ায় আকরামের মাও দোকানে থাকে মাঝে মাঝে দাদীও থাকে। যেহেতু আলো তার মায়ের কাছ থেকে কাজ শিখেছে তাই ঝামেলা হলে তার মা দেখিয়ে দেয়। সাথে ইউটিউব তোহ আছেই।নতুন কিছু জানার ও শিখার জন্য ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে। আকরামের শাশুড়ী আলোর কাছে মাফ চেয়েছে। আলো মাফ করে দিয়েছে। সাথী ও সূচি আলোর কাজের জন্য খুশি। তারাও দেখা করে গিয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু ধাক্কা থেকে উপরে উঠা যায় যদি উপরে উঠার জন্য কেউ সঙ্গ দেয়। আলো শশুর বাড়ির এখানে দোকান দিয়েছে কয়েকজন মেয়েদের নিয়ে কাজ করছে। সাথে তার কেক ও পিঠার ব্যবসাও চলছে।
আঁধারের ঔষধ এর দোকান ভালোই চলছে। দোকান থেকে ফিরতে দেরি হলে আলোকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। এখন আর রাত ১,২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে না। এখন আলো আঁধারের জন্য অপেক্ষা করে। কারন আঁধার যত দেরি করেই আসুক। এসেই আলোকে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছে কিনা। যখন শোনে খায়নি তখন বকাঝকাও করে। আলো শাওনকে ধন্যবাদ দিয়েছে। সে দুঃক্ষগুলো না দিলে এতো সুখ পেতো না। আর সুখ কি জিনিস তাও বুঝতে পারতো না। আজ আলো আর আঁধার বাকি সব সুখি স্বামী স্ত্রীদের মতো জীবন যাপন করছে।
১ বছর পর আলো প্রেগন্যান্ট। অনেক কষ্টে গর্ভবতী হয়েছে অবশেষে। অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছিলো কিন্তু আলোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।
একদিন আলো গোসল করে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আধার কল দিয়েছিলো। আর একটা মেসেজ।
” হোয়াটসঅ্যাপ এ যাও একটা জিনিস দেখাবো”
আলো হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দেখল আধার তরমুজের ছবি পাঠিয়েছে। তরমুজ আলোর পছন্দ ছিলো যেদিন বাবা মারা যায় ওইদিন পছন্দের জিনিস অপছন্দে পরিনত হয়। কারন ওইদিন আলো ওর বাবাকে তরমুজ কিনে আনার জন্য বায়না ধরে ছিলো আর তরমুজ তোহ আসেনি এসেছে তার বাবার লাশ। রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছিলো ওর বাবার সবাই আলোকে তখন দোষারোপ করেছিলো। আজ আলোর ভয় করছে বাবার মতো যদি আঁধারের কিছু হয়ে যায়। দেশে সড়ক দূর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।
আলো তারাতারি কল ব্যাক করে। দুইবার রিং হওয়ার পর একজন রিসিভ করে।
আলোঃ হ্যালো আধার কোথায় তুমি।
অপর পাশ থেকে কেউ বলল
” জিই আসলে এই ফোনের মালিক বাস চাপায় নিহত হয়েছে তার পকেটে দুইটা ফোন এইটাতে আপনার কল আসায় জানালাম। আপনি তার পরিবারকে জানিয়ে দিয়েন আর তারাতারি এসে পড়েন।আর ”
ফোনটা কেটে গেলো। আলো যা ভেবছে তাই সত্যি হলো। ভয়ে সারা শরির কাপছে। বাসায় কাজ করা কাজের মহিলা আলোর রুমে এসে খাবার নিয়ে। আলো ঢলে পড়ে
কাজের মহিলা রতনা খাবার রেখে আলোকে ধরে আর চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে
রতনার ডাকে সবাই এসে আলোকে নিচে দেখে ওকে ধরে বিছানায় উঠালো। হাত পা ঢলছ। চোখে পানি দিচ্ছে।
১৫ মিনিট পর আলোর জ্ঞান ফিরে। আলো চোখ মেলে দেখে সে বিছানায় শুয়ে আছে আর তার পাশে আধার বসে আছে। আঁধারকে পাশে দেখে উঠে দুটি কিল বসিয়ে দেয়।
আলোঃ তোর ফোন কোথায়। আর তুই কাকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলেছিস তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে।
।বলেই কিল ঘুশি দিতে লাগলো।
আধার আলোকে থামিয়ে বলল
আঁধারঃ আরে আমি তোমার জন্য তরমুজ কিনে নিয়ে আসছি। বাসায় এসে দেখি রতনা আপা চিল্লাচ্ছে। এসে দেখি তুমি ফিট খেয়ে বসে আছো। পড়ে শুনলাম ফোন হাতে নিয়ে ফিট খেয়েছো। তোমার ফোন নিয়ে দেখি আমার নাম্বারে কথা বলেছো রেকর্ড শুনে বুঝলাম পকেট মার এক্সিডেন্ট হয়েছে আমি কি জানি নাকি যে আমার ফোন কখন পকেট মারলো।
এসে দেখি ফোন নাই।
আলো আঁধারকে জড়িয়ে ধরলো। আলো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। আঁধারকে হারানোর ভয়টা ঘিরে ধরেছিলো তাকে। আঁধার অনেক কষ্টে আলোকে শান্ত করে। পুরো প্রেগ্ন্যাসির সময় সাথে ছিলো।
অবশেষে আধার ও আলোর দুইটি জমজ সন্তান হয় এক মেয়ে এক ছেলে। আধার ও আলো ভালোভাবেই জীবনযাপন করছে।
শাওন নাকি বিদেশ চলে গিয়েছে। রুপার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু তার বর তাকে অনেক অত্যাচার করে। মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নেই। রুপা কোনোদিন মা হতে পারবে না। পর পর দুটো বাচ্চা নষ্ট হয়েছে। এরপর আর বাচ্চা নিতে পারেনি। রুপার বর আরেকটা বিয়ে করে তার সেই স্ত্রীর ঘরে সন্তান হয়ে গিয়েছে। সে এখন কোনো রকম দিন পার করছে। রুপা আজ টের পাচ্ছে নিসন্তান থাকা কষ্ট আর অন্যকে কাজের অর্ডার দিলে কেমন লাগে। যারা অন্যের সংসার নষ্ট করতে চায় তাদের কোনো না কোন এক সময় তা নিজের কাছেই ফিরে আসে। আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না।
আলোর কাজ ভালোই চলছে। সম্মানের সাথে আজ সে সংসার করছে। যেই বাচ্চার জন্য এক সময় কথা শুনতে হতো আজ সে দুই সন্তানের মা। যেখানে স্বামী ভালোবাসা পায় নি সেখানে আজ আলো আঁধারের কাছ থেকে ভালোবাসার অভাব নেই। ভালোবাসা, সম্মান, অধিকার কোনো কিছুর অভাব নেই আলো কাছে। যেখানে বাবার বাড়ির অবস্থা ভালো না বলে কথা শুনতে হতো আজ সেই বাবার বাড়ির অবস্থা আরো ভালো। সব মিলে শেষটা ভালোই হয়েছে। অবশেষে একটাই কথা আঁধারের_আলো হয়ে বাচতে চাই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।
রিফাতের মায়ের সামনে বসে আছে আলো। আর তাকিয়ে আছে রিফাতের দিকে। রিফাত এক যায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে এই মেয়ে তার বাসা চিনলো কিভাবে নিশ্চয়ই তার মায়ের কাছে নালিশ করে দিয়েছে। কিভাবে নিজেক বাচাবে তাই ভাবছে। তার ভাবনায় পানি ঢেলে দিলো আলো।
আলোঃরিফাত এদিকে এসো।
রিফাতের মা হাসি মুখে রিফাতকে ডাক দিলো। রিফাতের গা শিউরে উঠলো তার মা হাসি মুখে ডাকছে কেনো নিশ্চয়ই আজ তার খবর আছে।
রিফাত তাদের সামনে গিয়ে আমতা আমতা করছে। আলো রিফাতকে কিছু বলার সুযোগ না বলল
আলোঃ আন্টি আপনার ছেলে এতো ভদ্র।এতো ভালো কি যে বলবো। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে।আর ওইদিন আমায় সাহায্য করেছে তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনি ভালো শিক্ষা দিয়েছেন তাই আজ এতো ভালো ভালো কাজ করছে রিফাত।
রিফাতের মাঃ আমি আমার ছেলেকে সব সময় বলি মানুষ বিপদে পড়লে সাহায্য করতে। আজ আমি স্বার্থক। সত্যি খুব ভালো লেগেছে তুমি যে এসেছে আমি খুশি হলাম। এভাবে আসা যাওয়া করো। রিফাত যখন তোমাকে বড় বোন বলেছে এই বাড়ি নিজের মনে করো।
রিফাত অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছে তার মায়ের আর আলোর কথপোকথন শুনে আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তাই সাত পাচ না ভেবে প্রশ্ন ছুড়লো আলোর দিকে
রিফাতঃ আব আপনি কিসের কথা বলছেন আপু আমি বুঝতে পারছি না?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আলোঃএমা ভুলে গেছো কালকের কথা।
রিফাতের কালকের কথা শুনেই গলাটা শুকিয়ে গেলো। আলো রিফাতের অবস্থা দেখে হালকা হেসে বলল
আলোঃ আরে কালকে না আমাকে কিছু বখাটে ছেলে উত্যক্ত করছিলো আর তুমি আর তোমার বন্ধুরা আমায় বাচালে।আমাকে সুন্দর করে সাবধানে বাসায় পৌঁছে দিয়েছো মনে নেই।
রিফাত আলোর কথা শুনে টাস্কি খেয়ে আছে।
আলোঃ জানেন আন্টি রিফাত যাওয়ার আগে বলল “আপনি আমার বড় বোনের মতো কোনো সমস্যা হলে আমাদের বলবেন আমরা সাহায্য করবো। আপনার ছোট ভাইগুলো আছে চিন্তা করবেন না।” কথা গুলো বলে চলে গেলো। এমন ছেলে কয়জন পায় আন্টি আপনি খুবই ভাগ্যবতী যে এমন একটা ছেলে পেয়েছেন। নয়তো আজকালকার ছেলেরা যেই পরিমান ফাজিল আর লম্পট হচ্ছে মেয়ে দেখলে বাজে কথা বলতে মনে চায়। মেয়ে বড় হোক বা ছোট তাদের যায় আসেনা।তাই না রিফাত।
আলো রিফাতের দিকে তাকালো। রিফাতের মা রিফাতের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে এই প্রথম তার ছেলে প্রশংসা শোনে বেশ ভালো লাগছে।রিফাতের মাঝে কেমন জানি অপরাধবোদ কাজ করছে সে নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে।
রিফাতের মাঃ ঠিক বলেছো আলো আজকাল ভালো ছেলে খুজে পাওয়া মুশকিল আমার ছেলের জন্য অনেক চিন্তা হতো ভাবতাম বাজে ছেলেদের সাথে মিশে যদি খারাপ হয়ে যায় কিন্তু আজ তোমার কথা শুনে আমার গর্ব হচ্ছে। আমার ছেলে আমার বিশ্বাস রেখেছে।আমি সব সময় বলি মেয়েদের সম্মান করবা। আজ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে সত্যি আমার কথা রেখেছে।
আলোঃ আরে আন্টি শুধু আমি না এমন আরো কতো মেয়েদের সাথে এই ব্যবহার করে থাকে ৷ তাই না রিফাত।
এবার রিফাত করুন চোখে তাকিয়ে আছে। অনুশোচনা বোদ কাজ করছে।
আলোঃআচ্ছা আন্টি আমি এবার আসি। আসসালামু আলাইকুম।
রিফাতের মাঃ কি বলো মা খেয়ে দেয়ে যাও।
আলোঃ না আন্টি অন্য একদিন।
রিফায়ের মাঃ তুমি একদম আমার বড় মেয়ের মতো আজ আমার মেয়েটা বেচে থাকলে তোমার মতো থাকতো। ৫ বছর বয়সে মারা যায় আমার মেয়েটা। এরপর অনেক পরে গিয়ে রিফাত হয়। এখানে আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
বলে হালকা জড়িয়ে ধরলো।
আলোঃ আন্টি আমাকে নিজের মেয়ে ভাবতে পারেন। আর রিফাত ভালো কাজ করছে তাই ভাবলাম আপনার সাথেও দেখা করে যায়। একজন মাই তোহ পারে তার সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।
রিফাতের মাঃ আলো দাড়াও রিফাত তোমায় দিয়ে আসুক।
আলো রিফাতের দিকে তাকালো রিফাত চুপ করে আছে।
আলো মুচকি হেসে বলল
আলোঃ না আন্টি রিফাত অনেক করেছে আর দরকার নেই আমি যেতে পারবো। আসি আন্টি।
রিফাতের মাঃ আচ্ছা যাও মা।
আলো বেরিয়ে গেলো। রিফাত তারাহুরো করে নিজের রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সাগর আর অনিক ওকে কল দিয়েছে কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় টের পায়নি। রিফাত সাথে সাথে ওদের কল দিলো। কল দিয়ে জানতে পারলো সাগর আর অনিকের বাড়িতেও আলো নামের মেয়েটি একই কান্ড করেছে। ওদের মা তোহ খুশিতে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছা। আজ পরিবার থেকে খুব ভালোবাসা পাচ্ছে।
রিফাত খাটের উপর বসল। আলো বাসায় এসে ওদের নামে নালিশ না করে প্রশংসা করে চলে গেলো। তার এমন ব্যবহারে চিন্তায় পড়ে গেলো মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রিফাতের ভাবনার মাঝেই ওর মা এসে ওর পাশে বসলো।
রিফাতের মাঃ রিফাত আজ আমি অনেক খুশি। এই প্রথম কেউ তোমার প্রশংসা করলো। আমি তোমায় নিয়ে অনেক চিন্তিত থাকতাম। তুমি আমার কথা শুনেছো আজ আমি খুবই খুশি রিফাত। আমি জানতাম তুমি কখনো মেয়েদের অসম্মান করবে না।তোমায় সুশিক্ষা দিতে পেরে আমি আদর্শ মা হতে পারলাম।কেউ তোমার দিকে আংগুল তুলে বলতে পারবে না আমি তোমায় শিক্ষা দেই নি। আচ্ছা তোমার বাবাকে কল করে বলে আসি। আজ তোমার পছন্দের খাবার রান্না করবো ভালো কাজ যে করেছো তার জন্য।
রিফাতের মা চলে গেলো। রিফাতের কেন যেনো অনেক লজ্জা লাগছে যেটা সে করেনি সেটার প্রশংসা পেয়েও মনে শান্তি পাচ্ছে না। মাথা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
পরেরদিন
রিফাত, সাগর, অনিক ওই একই জায়গায় বসে বসে একজনের জন্য অপেক্ষা করছে।
যার জন্য অপেক্ষা করছে তাকে দেখতে পেয়ে উঠে দাড়ালো সে ওদের সামনে আসলো।
রিফাতঃ আলো আপু আমাদের মাফ করেদিন আমরা ওইদিনের আচরণ এর জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃক্ষিত।
অনিকঃ কালকের আপনার প্রশংসার জন্য আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।
সাগরঃ না ঠিক মতো খেতে পারছিলাম আর না ঘুমাতে পারছিলাম।মাথায় একটাই প্রশ্ন আপনি এমনটা কেনো করলেন।
আলো মুচকি হাসলো। তারপর বলল
আলোঃতোমাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। নালিশ করে কি হতো তোমাদের মা লজ্জিত হতো এরপর বাবাকে বলতো বাবার হাতে মার খেতে। এরপর এক সময় ভুলে যেতে কিন্তু এতে কি হতো কালকের মতো কি লজ্জাবোধ কাজকরতো। নিজেকে অপরাধী মনে হতো। না হতো না। আসলে তোমাদের প্রশংসাই বড় শাস্তি। জানো কালকের কান্ডে বুঝতেই পেড়েছো তোমাদের বাবা মা তোমাদের উপর কতো বিশ্বাস করে কতো ভালোবাসে। চিন্তা করে দেখো সামান্য মিথ্যা প্রশংসায় তারা কতো খুশি হয়েছে। তোমরা যদি সত্যি সত্যি ভালো কাজ করো তাহলে তারা কতই না খুশি হবে।
তিনজন আলোর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।সত্যিই তোহ বাবা মা কতো বিশ্বাস করে আর তারা কি না।
আলো আবার বলা শুরু করলো।
আলোঃ সন্তান কোনো দোষ করলে আমরা তাদের নানান কথা বলে ফেলি প্রথমে বলে থাকি পরিবার থেকে শিক্ষা দেয়নি। মা বাবাই মনে হয় এমন।ভদ্র পরিবারের সন্তান হলে এমন করতো না এমনকি আমরা জন্ম নিয়েও কথা তুলে ফেলি। কেন জানো তোমাদের কার্যকলাপের কারনে। আচ্ছা তোমাদের কি পরিবার থেকে সুশিক্ষা দেয়নি বলতে পারবা যে তোমাদের পরিবার তোমাদেরকে ভালো কাজ করার কথা বলেনি। না পারবা না কারন অবশ্যই বলেছে কিন্তু তোমরা সেই শিক্ষা নেওনি। পরিবার থেকে শিক্ষা ঠিকই দিয়ে থাকে কিন্তু কয়জন সন্তান সেই শিক্ষা নিয়ে থাকে। তারপরও সব কিছুর মাঝে বাবা মাকে দোষারোপ করা হয়।বাবা মা অপমানিত হয়। বাবা মা গালি খায় শুধু মাত্র ওই সব সন্তানদের জন্য যারা সুশিক্ষা পেয়েও তা গ্রহন করেনি। পরিবার থেকে শিক্ষা ঠিকই দেওয়া হয় কিন্তু সেই শিক্ষা গ্রহন করে কাজ করা অনেক বড় ব্যাপার। অনেকেই আছে সেই শিক্ষা গ্রহন করে না ফলে তাদের কার্যকলাপে কথা শুনতে হয় পরিবারকে।আমি তোমাদের থেকে বয়সে অনেক বড়। আমি এটাও জানি যে আরো অনেকের সাথে তোমরা এইধরনের ব্যবহার করেছো। আচ্ছা কেন শুধু শুধু বাবা মাকে অপমানিত হতে দিতে চাচ্ছো,কেন বাবা মাকে গালি খাওয়াতে চাচ্ছো। তাদের বিশ্বাসকে কি ধরে রাখতে পারবে না।
বলেই দম নিলো ওরা মাথা নিচু করে আছে।
আলোঃ আমি তোমাদের অনুশোচনাবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছি। তোমাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। আশা করি আমার কথা গুলো বুঝতে পেড়েছো। আমি আসি আল্লাহ হাফেজ।
লেখনীতেঃInsia Ahmed Hayat
আলো চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিলো।
রিফাতঃ আপু
আলোঃ জিই কিছু বলবা
রিফাত, অনিক,সাগর আলোকে স্যালুট দিলো।
রিফাতঃ অসংখ্যা ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর করে আমাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
অনিকঃ এতো দিন আমরা যা করেছি তা আর করবো না। আপনার কথা গুলো অবশ্যই মান্য করবো। আর আমরা ওয়াদা করছি আমাদের বাবামায়ের বিশ্বাস কখনো ভাঙবো না।
সাগরঃ এই পর্যন্ত যাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো। ধন্যবাদ আপু আমাদের ভুল গুলোকে শুধরে দেওয়ার জন্য।
আলোঃ আমাকে তোমাদের বড় বোন মনে করতে পারো। আর ভালো থেকো তোমরা। এক সময় তোমরাই বাবা মায়ের নাম উজ্জ্বল করবে তাদের গর্বের কারন হবে। শুভ কামনা রইলো।
হাসি মুখে আলো চলে গেলো।
রিফাতরাও চলে গেলো আজ ওদের মন হালকা লাগছে অনেক।
আকরাম তার মেয়েকে নিয়ে খুব খুশি। আলোর দাদী যতবার আকরামের মেয়েকে দেখে আর কাদে একদম আলোর মতো দেখতে। মেয়ে হয়েছে বলে ছুয়েও দেখেনি উনি আলোকে। আজ তার আদরের নাতীর ঘরে কন্যা সন্তান হয়েছে।আকরামকে সে অনেক ভালোবাসে আকরাম রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিলো তার। আকরাম প্রতিদিন নতুন করে তার দাদীকে আলো উপর করা জুলুমের কথা মনে করিয়ে দিতো।
এভাবে একটা বছর কেটে গেলো। আধার আলোকে কতো শত জায়গায় খুজেছে। শেষ ফলে হার মেনে নিয়েছে। সে ধরে নিয়েছে তার আর আলোর হয়তো মিল হবে না। আর কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না৷ সব দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। নিয়তিতে হয়তো তাদের আলাদা থাকাই লেখা আছে।
দুইদিন পর শীতের সময় একটু দেরি করে দোকানের গেলো আঁধার। চুপচাপ বসে বসে পেপার পড়ছে। আর তার কর্মচারী কাজ করছে। হঠাৎ একজন নারী এসে বলল।
“নাপা দেন তোহ” (ভাঙা গলায় বলল) বুঝা যাচ্ছে ঠান্ডা লেগেছে তার। আঁধার তখনো পেপারে মুখ গুজে আছে।
কর্মচারী ছেলেটা এক পাতা নাপা বের করে দিলো।
তখন সেই নারী বলল
” পুরো পাতা লাগবে না আমাকে দুইটা দেন”
আঁধার মহিলার কথা শুনে পেপার থেকে মুখ তুলে পাশে তাকালো। কে ২ টা নাপা টেবলেট নিতে এসেছে। আঁধার মহিলার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।হাত থেকে পেপার পড়ে গেলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তার বুক ধরফর করছে। গা ঘেমে যাচ্ছে এই শীতের মাঝেও।
কর্মচারী ছেলেটি বলছে।
” আপা ২ টা বেচি না”
মহিলাটি হালকা চিন্তা করে বলল
“ঠিক আছে পুরো পাতা দিয়ে দিন।এখানে যেই ঠান্ডা আবার দরকার পড়তে পারে হাহাহা”
কর্মচারী ছেলেঃআপা আপনি এখানে নতুন নাকি আগে দেখিনি।
মহিলাটিঃ ১ বছর ধরে আছি এখানে আসিনি তোহ তাই দেখেননি।
আধার এখনো চুপ করে আছে।সে তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না তাহলে কি ভাগ্যে তাদের এক হওয়া লেখা আছে। সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন দরজা খুলে আলোকে দেখতে পেলো।হ্যা আলো এই সেই আলো। এযে আঁধারের_আলো।
আঁধার উঠে দাড়ালো। আলো একবার আঁধারের দিকে চেয়ে ঔষধ নিয়ে হাটা ধরলো। হয়তো চিনতে পারেনি তার ভালোবাসার আঁধারকে। আঁধার সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কর্মচারীর ডাকে হুস আসলো।আর কিছু না বলে আলো পেছনে দৌড় দিলো। আঁধার আলোর পেছন পেছন হাটছে।কেন যে সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। খুব ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে বলতে যে আলো আমি তোমার আঁধার। কিন্তু সব শেষ এ একট প্রশ্ন থেকে যায় আলো কি আঁধারকে মেনে নিবে।আপন করে নতুন সম্পর্কে জড়াবে। এই কিন্তুর কারনে সামনে যেতে পারছে না আঁধার। আঁধার আলোর পেছন পেছন ওর বাড়ি পর্যন্ত এসে থেমে গেলো। বাড়িটা চিনে উলটো পথে হাটা ধরলো আর নিজের বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলল
আঁধারঃ আঁধারের_আলো তুমি আমার এতো কাছে থেকেও আমি তোমায় সারা দেশের আনাচে কানাচে খুজেছি এখন যখন পেয়ে গিয়েছি। তখন আর দূরে যেতে দিবো না।
আঁধার নিজের বাসায় গেল যাওয়ার আগে মিষ্টি কিনে নিয়ে গেলো। খুশির খবর মিষ্টি ছাড়া কি হয়। সবাইকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিলো৷ আঁধারের বড় ভাই দেশে আসার ব্যবস্থা করছে। দেশে এসে নিজের ভাইকে বিয়ে করাবে।
আঁধার আকরামকে খুশির খবর জানাতে চাচ্ছিলো কিন্তু তার আগে সে একটা জিনিস জানতে চায়। সেটা যে করেই হোক জানবেই।
আঁধার আলোর ব্যাপারে সব খোজ নিয়েছে আলো কি করে না করে সব।
শীতের সময় আলো পিঠা বিক্রি করে নিজের ঘরের সামনে। আধার রোজ সকালে আলোকে দেখার জন্য পিঠা কেনার বাহানায় চলে যায়। দুই একবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আলো তেমন কথা বলে না। আঁধারের বড্ড ইচ্ছে করে নিজের পরিচয়টা দিয়ে দিতে কিন্তু তা যে সে পারছে না। নিজের চোখের সামনে প্রিয়তমাকে দেখছে। এই অনুভূতি কেমন তা বলে বুঝানো যাবে না।
একদিন আলো পিঠা বানাচ্ছিলো ওই দিন প্রচুর কোয়াশা আশেপাশে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না আঁধার এসে পিঠা কিনে। আলো কখনো টাকা হাতে নেয় না পাশে একটা ঝুড়ি রেখেছে সেখানে টাকা আর একটা প্যাকেট রেখে দ্রুত পায়ে হাটা দেয় আধার আলো টাকা নিয়ে প্যাকেট এর দিকে চেয়ে আশেপাশে চোখ ভুলায় হয়তো কেউ ভুলে রেখে গিয়েছে। আলো দুটানায় পড়ে যায় প্যাকেটটা নিবে কি না। অনেক ভেবে চিনতে প্যাকেট টা হাতে নিলো। খবরের কাগজ দিয়ে মোড়ানো যা দেখে বেশ অবাক হয় আলো।কারন আলো সব সময় মানুষকে উপরহার দিতে গেলে খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। এটা তোহ তার কাছের মানুষ ছাড়া কেউ জানে না। আলো হালকা ঘাবড়ে যায় যলদি প্যাকেট খুলে ফেলে।
হতবম্ভ হয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষন চেয়ে থেকে উঠে দাড়িয়ে একটু সামনে গেলো। চারপাশে কাউকে খুজছে কুয়াশার কারনে দেখা যাচ্ছে না কিছু। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলো। আজ আর পিঠা বানাতে ইচ্ছে করছে না সব কিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে মেঝেতে বসলো। আলো গা থরথর করে কাপছে।
আলো প্যাকেট এর দিকে তাকালো। তার মধ্যে একটু বিস্কুট এর প্যাকেট আছে যেটা ১৫ বছর আগে একজনকে উপহার দিয়েছিলো। হালকা ঘোলাটে হয়ে আছে প্যাকেট এর উপরের লেখা গুলো। ভেতরে বিস্কুট গুলো হালকা গুড়ো হয়ে আছে। এই জিনিসটা এতো বছর ধরে কেউ যত্ন সহকারে রাখবে ভাবতে পারেনি আলো। প্যাকেটটা দেখে মনে করার চেষ্টা করলো। যাকে দিয়েছে তার সেই ১৫ বছর আগের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। বিস্কুটের প্যাকেট এর সাথে একটা চিরকুট পেলো। চিরকুটটা খুলল তাতে লেখা
” মনে আছে কি নিজের শেষ বলা কথাগুলো”
আলো চিরকুট টা পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো চোখ দিয়ে আপনা আপনি নোনা জ্বল গড়িয়ে পড়ছে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট একটি শব্দ বের হলো।
আলোঃআ..আধার
আলো এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। এই কান্না কারো কানে পৌছাবে না। কিছুক্ষন কেদে নিজেকে শান্ত করল। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল
আলোঃ হ্যা মনে আছে ১৫ বছর আগে আমার বলা শেষ কথা গুলো মনে আছে কিন্তু আমি যে আমার কথা গুলো রাখতে পারিনি আঁধার। এতো বছর পর তুমি যে আমায় খুজে বের করবে তারও আশা ছিলো না। তুমি আমার আশেপাশেই ছিলো আমি বুঝতে পারিনি। আমি তোমার জীবনে আসতে পারিনি। নিজের শেষ কথা গুলো রাখতে পারিনি আঁধার। পারলে ক্ষমা করে দিও।
আলো বসে বসে বিস্কুটের প্যাকেট এর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে পড়ে গেলো ১৫ বছর আগের কথা
তখন সবে মাত্র প্রাইমারির গন্ডি পার করে হাইস্কুলে উঠেছে দুজন। দিনকাল ভালো যাচ্ছিলো একই স্কুলে পড়তো আলো ও আঁধার। হঠাৎ শুনলো আঁধাররা চলে যাবে একেবারের জন্য । কথাটা শুনে খুবই মন খারাপ হলো।নিজেকে গুটিয়ে নিলো। আঁধার আলোর সাথে দেখা করতে এসেছিলো শেষ বারের মতো কিন্তু আলো করেনি।
পরেরদিন যখন আঁধার চলে যাবে তখন আলো দৌড়ে আঁধারের কাছে গিয়ে খবরের কাগজে মুড়ানো একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। আর বলে
” আমি আঁধারের আলো হয়ে থাকবো চিরজীবন। ভুলে যেয়ো না আমায় সৃতি হিসেবে আর কিছু দিতে পারিনি তোমায়। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আশা করি তুমিও আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি যে এই আঁধারের_আলো। আমি তোমারি আছি তোমারি থাকবো।♥)
বলে ওইদিন ওইসময় পেপারে মুড়ানো প্যাকেট আঁধারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় আলো একবারও পিছু ফিরে তাকায় না। এতোদিন একসাথে থেকে আজ চলে যাচ্ছিলো বহুদূরে আজীবনের জন্য। যেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
আলোর ভাবনা জগত থেকে বেরিয়ে আসে দরজার কড়া নাড়ার শব্দে। দরজা খুলে দেখলো মনিরা আপু হাতে বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এইমানুষ টা এতো ভালো কেন রোজ কিছু না কিছু নিয়ে আসবে আমার জন্য। তাকে ঘরে ডুকালাম। দুজনে মেঝেতে বসলাম। সে আমার দিকে বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বলল
আলোঃ গরুর মাংস রান্না করেছি। গরুর মাংসের ঝোল দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। এই নেও খেয়ে নিও আমি অফিসে যাবো দেরি হচ্ছে। আলো মনিরাকে কয়েকটা পিঠা দিয়ে দিলো।
খাবারের প্লেট সাইডে রেখে ভাবছে।
আলোঃ এর মানে কি আঁধার তার জন্য অপেক্ষা করেছে বা এখনো করছে না এটা কিভাবে সম্ভব আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তা শুনে তোহ বিয়ে করে ফেলা উচিত ।সেটা কি সে করেনি। তার উপর দাদী বলেছে আধার আর আসবে না। নাকি সত্যি আমার শেষ বলা কথা গুলো রেখেছে।
কথাগুলো ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠলো। প্রচন্ড শীতেও আলো ঘেমে যাচ্ছে। আলো কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এতো বছর পর আঁধার তার সামনে এসে প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবো। নিজের বলা কথা গুলো রাখতে পারিনি। সে কি বুঝবে আমি পরিস্থিতির শিকার। হয়তো বুঝবে সেতো এসেছিলো আমাকে নিজের করে নিতে কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। কিন্তু আজ সে এসেও এলো না। প্রচুর ভাবাচ্ছে আলোকে।
যেদিন সে এসেছিলো দাদী আমাকে ঘরে বন্দী করে দিয়েছিলো। এক নজর দেখার ইচ্ছে ছিলো এই বড় আঁধার দেখতে কেমন। তা আর হলো কোথায় জানিনা দাদী কি এমন বলেছে বা করেছে যে আধারে চলে গিয়েছে। আমাদের ভাগ্য এক হওয়া লেখা ছিলো না তাই হইনি। কিন্তু আঁধারের চিরকুট দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে আমি যে আমার কথা রাখিনি তা নাকি সে আমার কথা রেখে আমার জন্য আজও অপেক্ষা করছে ।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না এখন তার ঘুমের প্রয়োজন আলো দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
আজ সারাদিন ঘরে বন্দি করে রেখেছে নিজেকে আলো।
সন্ধ্যায় দরজায় কড়া পড়লো আলো তোহ ভয় পেয়ে গেল কে হতে পারে। দরজা খুলতে ভয় করছে। ভেতর থেকে ২,৩ বার জিজ্ঞেস করলো কে কোনো উত্তর পেলো না। কিন্তু দরজার কড়া বার বার নরছে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে কিছু বলবে।
দরজা খুলে বাহিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ছে আলোর।
দরজার বাহিরে আর কেউ নয় তারই আপনজন দাঁড়িয়ে আছে।
শাওনের দুই বোনের চিল্লাচিল্লিতে পুরোবাড়ি মাথায় উঠে গেছে পাশের বাসার চাচীরাও চলে এসেছে। শাওনের বড় বোন সাথী রুপার চুল ধরে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। সূচি শাওনের অপেক্ষা করছে। শাওনকে ৫ মিনিটের মধ্যে বাসায় আসতে বলছে। শাওনের মা তার দুই মেয়ে কান্ড দেখে বুঝতে পারছে না কি করবে।
সাথীঃ তোকে এইবাড়ি থাকতে দিয়েছি খেতে দিয়েছি কি অন্যের সংসার ভাঙ্গার জন্য। (বলেই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রুপার পিঠে দুটো কিল মেরে দিলো)
সূচিঃ এতোদিন ধরে মায়ের জন্য চুপ করে আছি। কারন মায়ের বোনের মেয়ে বলে কিন্তু অনেক সহ্য করেছি। আমাদের বাসায় থেকে খেয়ে আমাদেরই ক্ষতি করতে চলে এসেছিস।ডাইনি তোকে তোহ (আরো দুইটা চড় বসিয়ে দিলো)
শাওনের মা দুই বোনের কাছ থেকে রুপা ছাড়িয়ে নিলো।
শাওনের মাঃ কি হয়েছে এমনে আমার বোনঝি টারে মারতাছোস কেনো।
সূচিঃ মা তুমি আজ আমাদের মাঝে এসো না তোমার কোনো কথা আমরা শোনবো না। আজ তুমি শোনবা অপেক্ষা করো শাওন আসুক। (এই প্রথম নিজের বড় ভাইকে নাম ধরে ডাকায় সবাই অবাক। বুঝতে আর বাকি রইলো না কতোটা রেগে আছে)
রুপা রীতিমতো কান্না শুরু করে দিয়েছে। শাওনের বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। আজ দুই বোন প্রচুর রেগে আছে রাগের কারন কেউ জানে না। কিছুক্ষন পর
শাওন এসে হাজির। শাওন বাসায় ডুকার সাথে সাথে সাথী নিজের ছোট ভাইকে দুই গালে চড় বসিয়ে দিলো। নিজের বোনের এমন কান্ডে স্তব্ধ হয়ে আছে শাওন। ঘটনাটা আচমকা হওয়ায় বুঝে উঠতে পারছে না আসলে হলো টা কি।
শাওনঃ আপা! কি হয়েছে। (অবাক হয়ে)
শাওনের কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
সাথীঃ আলো কোথায় (জোরে)
শাওনঃ আলো ওর বাবার বাড়ি গিয়েছে।
সূচিঃ আচ্ছা বাবার বাড়ি গিয়েছে। যদি বাবার বাড়ি যায় তাহলে আকরাম এসে তোকে শাসিয়ে গেলো কেন।
শাওনের মাঃ সূচি আমরা কেমনে কমু আলো কই গেছে আমগো তোহ আর কইয়া যায় নাই। আর আমার পোলারে এমনে তোরা মারতাছোস কেন।
সাথীঃ হ্যা আপনার পোলা এই পোলা পোলা করে পোলাকে জুয়াখোর, জানোয়ার বানিয়েছেন। কখনো পোলাকে কিছু বলেন নাই। চুপ থেকে ঠান্ডা মাথায় কিভাবে অত্যাচার করা যায় সেটা ঠিকই শিখিয়েছেন।
সূচিঃ একটা মেয়েকে আপনারা এতো অত্যাচার করেছেন যে সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কতোটা খারাপ মানুষ আপনারা। আল্লাহ আমাদের বাচিয়েছে যে আমাদের কপালে আপনাদের মতো শশুর বাড়ি পরেনি।
সাথীঃ আর তুই(রুপা) এখনি এই বাড়ি থেকে বের হো।নইলে আজ তোকে এমন মার মারবো আজীবন বিছানায় পড়ে থাকবি।
সূচি তেড়ে গিয়ে রুপার চুলের মুঠি ধরে চড় বসিয়ে দিলো ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিলো। রাগে গা কাপছে দুবোনের। এদের শায়েস্তা করার জন্য সকালে রওনা দিয়ে চলে আসছে আজ চুপ থাকলে চলবে না।
শাওনের মাঃ আরে মাইয়াডারে এমনে মারতাছোস কেন? কি করছো রুপায়?
সূচিঃ কি করছে জানতে চান। কিছুদিন আগে তোহ বড় গলায় আলোকে ভাতের জন্য কথা শুনিয়েছিলেন এইযে এই আপনার বোনঝি ভাত ফেলে দিতো যাতে করে আলো খেতে না পারে। আর তার প্রমান আমার কাছে আছে। কতোটা খারাপ হলে আরেকজনের খাবার দেখতে পারে না। রোজ রোজ ভাত নিয়ে বাড়ির পেছনের পুকুরে ফেলে দিতো। ওইদিন পুকুরে না পড়ায় আপনি দেখে আলোকে কথা শুনিয়েছেন যা নয় তাই বলেছেন। আর রুপাযে ভাত গুলো ফেলে দিতো তার প্রমান আছে দিবো নে প্রান ভরে নিজের বোনঝির কার্যকলাপ দেইখেন।
শাওনের মা সহ সবাই অবাক রুপা কেদে বাসিয়ে ফেলছে। এভাবে ধরা খাবে ভাবতে পারেনি। শাওন অবাকের শেষ পর্যায় চলে গেছে। বলে কি এরমানে এতোদিন যা শাস্তি দিয়েছে তার জন্য আলো নির্দোষ ছিলো। বিনা দোষে শাস্তি পেয়েছে।
সাথীঃ ওইযে গরুর মাংসে লবন বেশি হওয়ার জন্য যে আলোকে কথা শুনিয়েছিলেন সেটাও আপনার বোনঝি করেছে যাতে করে আমরা খেতে না পারি। কতোবার বলেছি একে এইবাড়িতে রাখবেন না কিন্তু কথা শুনেনি।
আর তুই শাওন তোরে কি বলবো। জুয়াখোর, নির্দয়, পাষাণ তোর কারনে একটা মেয়ে রাত ১,২ টা পর্যন্ত জেগে থাকে কখনো কি একবার জিজ্ঞেস করেছিস যে আলো তুমি কি খেয়েছো। আরে কখনো কি একটা সূতাও কিনে দিয়েছিস বা জিজ্ঞেস করেছিস আলো তোমার কিছু লাগবে। বিয়ে করেছিস ব্যস দায়িত্ব শেষ। কোনো দায়িত্ববোধ নামক জিনিস আছে নাকি নাই।
সূচিঃআরে নিজে গামলা ভরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তা। তুমি দেরি করে আসছো নিজে বেড়ে খেতে পারোনা। আর কোনখানের নিয়ম রাখছেন মা যে জুয়াখোর ছেলে জুয়া খেলে রাত ১, ২টা পর্যন্ত তারপর বাসায় আসবে আর তার জন্য না খেয়ে বসে থাকবে তার স্ত্রী। আলো কি মানুষ না আপনাদের কি বিবেক বলতে কিছুই নাই।
শাওনের মাঃ এইখানে ভুলের কি সংসার তোহ আমিও করছি। আলো একলা করে নাই। আর ওই মাইয়ার লিগা এতো ঝগড়া করতাছোস কেন।
সাথীঃ ঝগড়া করবো না কেন। নিজে তোহ ছেলেকে শিক্ষা দেননাই। আমরা ভালো করার জন্য একজন সাংসারিক মেয়েকে বিয়ে করাইছি। ভাবলাম ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু কে জানতো যে শাওন অমানুষ হয়ে গেছে রাত ১ টা বাজে মাছ কিনে আনে আবার সকালে খাবে তাই সারারাত মাছ কাটতে দিয়ে নিজে আরামে ঘুমাই। কেন আলোর ঘুম পায় না নাকি সে মানুষ না সে রোবট।
শাওন মাথা নিচু করে আছে। নিজের বোনদের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে।
সূচিঃ আচ্ছা ভাই আজ যদি তোর মতো আমাদের বরও এমন আচরন করতো তখন কেমন হতো বল। তোমরা সবাই যে একটা মানুষকে এতো অত্যাচার করলা এটা কি ঠিক করলা। আরে রোজ রোজ ভাত কম পড়ায় কতোদিন না খেয়ে ছিলো কে জানে৷ এই রুপা এতো কিছু করলো তোমাদের কি চোখে পড়ে নাই। নাকি চোখে ছানি পড়েছে।
শাওনের মা, শাওন কি বলবে বুঝতে পারছে না।
শাওনের মাঃ তোরা এতো কথা কিভাবে জানোস।
সাথীঃ এখনো আপনার এটা নিয়ে মাথা ব্যাথা যে আমরা কিভাবে জানি এতো কথা। একটুও অনুতপ্ত নাই। ছি ছি ছি কেমন ঘরে আমাদের জন্ম হলো।
সূচিঃ মা আলোর বাচ্চা হয় না একবারও কি ডাক্তার দেখাইছেন। মানুষের কথা শুনে শুনে এই কবিরাজ সেই কবিরাজের কাছে নিয়ে গেছেন। পোলা আর পোলার বউরে নিয়ে ডাক্তার দেখাইতেন কিন্তু তা করেন নাই। আমাদের পাশের বাসার চাচী বিয়ের ২২ বছর হয়ে গেছে নিসন্তান কই তারা তো সুখে সংসার করছে। তোদের যদি কখনো ফোনে কল দেই তখনো আলোর দোষের লিস্টে আমাদের শোনাতি।কখনো কি তার গুনের কথা বলেছিস তোরা।
শাওনের মা মুখ কালো হয়ে গেলো। কিছু কিছু মানুষকে শত বুঝালেও তারা বুঝবে না।তেমনি শাওনের মা।
শাওনঃ আমি কেন ডাক্তার দেখাবো সমস্যা আমার না আলোর।
সূচিঃ তুই ডাক্তার হ্যা তুই কি ডাক্তার নাকি। আরে ডাক্তারও তোহ বলতে পারবে না যে সমস্যা তার নাকি তার বউ এর। একবার চেকাপ করাতি। আর সমস্যা কি খালি মেয়েদেরই থাকে ছেলেদের থাকেনা। তোরে বলে লাভ নাই।
সাথীঃএই রুপা এই মহূর্তে এই বাড়ি ছেড়ে তুই চলে যাবি।আর তুই এইবাড়িতে থাকলে আমরা এই বাড়িতে কখনো আসবো না।
সুচিঃ আর শাওন তোরে কয়েকদিনের সময় দিচ্ছি আলোর কাছে মাফ চেয়ে সসম্মানে আলোকে এই বাড়িতে নিয়ে আসবি। আলো যদি না থাকে তাহলে মনে রাখ তোর বোনেরা মরে গেছে।
শাওনের মাঃ হায়হায় আল্লাহ দেখছো কালসাপিনী গেলো তোহ গেলো আমার সংসারটারে ভেঙে দিয়ে গেলো( বলে কান্না করছে)
শাওনের বাবাঃ চুপ একদম চুপ তোর কান্না আজ আমার সহ্য হচ্ছে না। কখনো তোকে কিছু বলি নাই। কিন্তু আজ চুপ থাকতে পারলাম না। আমি মুখ বুঝে তোদের কাহিনি দেখতাম কিছু বলার সাহস থাকতো না। নিজেকে দোষ দিতাম কেন একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করলাম। আলোরে পছন্দ করে বউ বানিয়ে এই বাড়িতে আনছি। মাইয়াটা এতো ভালো। আর তারে কালসাপিনী বলস। আরে বল তোহ কখনো কি আলো তোর সাথে উচু গলায় কথা বলছে। শাওন তুই বল কখনো ও তোর কথার অমান্য করছে। তোদের কাছে কি কখনো কিছু চেয়েছে। তোরা যা বলতি তাই করতো। কিন্তু তার বিনিময়ে তোরা কি দিলি চিন্তা কর। সুযোগ পেলেই তোর এই বোনঝি কাজের ওর্ডার দিয়ে বসতো। রাত বিরাতে শাওনের ঘরে গিয়ে এইখাবে সেই খাবে বলে আলোর ঘুম হারাম করে দিছে। এইগুলো কি তোর(শাওনের মার) চোখে পড়তো না। শাওনের মারে কতো বড় ভুল করলি। সংসার আলো না তোরাই ভেঙে দিলি। সোনার হরিনকে চিনতে পারলি না। এখনো সময় আছে আলোর কাছে মাফ চেয়ে নিয়ে আয় এই বাড়িতে।
শাওন চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। কথা গুলো তীরের মতো লাগছে। সত্যি তোহ কি না করেনি আলোর সাথে। মানুষিক ভাবে অত্যাচার করেছে। কতো রাত না খেয়ে নির্ঘুমে থেকেছে। আজ সত্যি নিজের মাঝে অপরাধবোদ কাজ করছে।
সাথীঃ আর একটা কথা কি জানিস তুই না সত্যি আলোর যোগ্য না। তুই থাক তোর মতো। আর তুই রুপা তুইও থাক। আজ আমি এই বাড়ি একেবারের জন্য ছেড়ে দিলাম। অমানুষরা আমার আপনজন হতে পারে না।
সূচিঃ রুপারে কি করলি তুই এইগুলো কেন করলি। একটা মানুষকে তিলে তিলে এইভাবে মারলি ছি ছি ছি। আপা চল এইবাড়িতে থাকলে আমাদের উপরও এমন প্রভাব ফেলবে। আব্বা আপনিও আইসা পড়েন আমাদের সাথে। এরা থাকুক।
সুচি আর সাথী বের হয়ে গেলো। পেছন পেছন শাওন ও শাওনের মাও বেরিয়ে এলো। সাথী আর সূচিকে ধরে রাখছে।
শাওনঃআপারে আমাকে মাফ করে দে আমি অনেক বড় ভুল করেছি। সূচি আমাকে মাফ করে দে।আমি আলোকে খুজে নিয়ে আসবো। তোরা এইভাবে চলে যাবি না প্লিজ।
বলেই দুইবোনের পায়ের কাছে বসে পড়লো
শাওনের মাঃ মাগো যাইয়ো না আমারে রাইখা। আমার ভুল হইয়া গেছে। রুপারে আর রাখমুনা আমার পোলার বউরে বাড়ি আনমু আর কষ্ট দিমু না। সত্যি বলতাছি মাগো যাইয়ো না (কাদছে আর বলছে)
শাওনের বাবার চোখও ছলছল করছে। এভাবে সংসারটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।
রুপাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলো। শাওন আলোর ভাইয়ের বাড়িতে গেলো। সেখানে আকরাম ও ফাতেমা তাকে অপমান করে বাড়িতে ডুকতে দেয়নি। অনেক জায়গায় খুজেও আলোর কোনো খোজ পেলো না শাওন।
আলো নিজে বিয়ের কাবিননামার একটা ফটোকপি নিয়ে গিয়েছিলো। আর প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে গিয়েছে।একজন কাজির সাথে কথা বলে ডিভোর্স পেপার তৈরি করে পাঠিয়ে দিলো শাওনের কাছে। আলো নিজের সোনার চেইন ও আংটিটা মনিরার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে যা তার বাবার দেওয়া ছিলো। আর মনিরার কাছে বিক্রি করার কারন হলো নিজের কাছে টাকা হলে যেনো আবার কিনে নিতে পারে। মনিরা টাকা দিতে চেয়েছে কিন্তু আলো নেয়নি একটা মানুষের কাছ থেকে আর কতো কি নিবে। কাবিননামার টাকা নেওয়ারও ইচ্ছা নেই আলোর। সে আর পেছন ফিরে তাকাতে চায় না।
শাওনের বোনরা সত্যি এইবাড়িতে আসবে না সাফ সাফ জানিয়ে। এরচেয়ে বড় শাস্তি আর কিছুই না।শাওনের বাবা অনেক কষ্টে জমি বিক্রি করে মুদির দোকান দিয়েছিলো।যাতে শাওন কোনো কাজ করে কিন্তু কাজ কম জুয়া খেলায় সব শেষ তাই দোকান তিনি ফেরত নিয়ে নিজেই দোকানদারি করছে।শাওনকে উনি আলাদা করে দিয়েছে।বলেছে শাওন এখানে থাকলে তার মেয়েরা আসবে না তাই শাওন যেনো অন্য কোথাও চলে যায়। শাওন আজ শূন্য। শত অনুতপ্ত হলে পূরনোদিন ফিরে পাওয়া যায় না।
শাওনের মা তার এমন ভাঙা সংসার দেখে আফসোস করছে।কি হয়ে গেলো।
আলো চলে যাওয়ার ২ মাস হয়ে গেলো। আলো নিজের জন্য একটা রুম ভাড়া নিয়েছে। সেখানে সে কিস্তিতে একটা সেলাই মেশিন কিনেছে।আপাতত ঘরে কিছু নেই।সামান্য টাকা ছিলো তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেছে। একটা ঘরে কি না লাগে সেগুলো আস্তে আস্তে কিনবে প্রথমে অল্প করে শুরু করতে চায়। মনিরা অনেকবার বলেছে তার সাথে থাকতে আলো কারো উপর বোঝা হতে চায় না।কিন্তু মনিরা তাকে একটা ভালো ঘর নিয়ে দিয়েছে। মনিরার পরিচিত হওয়ায় ঘর ভাড়া কমিয়েছে। মানুষ বড়ই অদ্ভুত চেনা নাই জানা নাই একজনকে সাহায্য করছে। মনিরার এই ঋণ কোনোদিন পূরন করতে পারবে না আলো। 8 পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছে তাই আশেপাশের ছোট ছোট প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের পড়ায়। মনিরা বাচ্চাগুলোকে জোগাড় করে দিয়েছে। আশেপাশের দর্জি তেমন না থাকায় আলোর জন্য সুবিধা হয়েছে। নিজের এই কাজ দিয়েই নতুন জীবন শুরু করছে আলো। প্রথম জামা প্রথম কাস্টমার মনিরাই ছিলো। সে অনেক গুলো জামা বানায় কিন্তু বিনিময়ে আলো তার কাছ থেকে টাকা নেয় না। নিতে চায় না থাকনা বড় বোনের কাছ থেকে কি টাকা নেওয়া যায়। তারপরও মনিরা জোড় করে আলোকে কয়েকটা থ্রিপিস উপহার দেয়। টাকা না দিয়ে উপহার দিয়ে টাকাটা যেমন শোধ করলো তেমনি আলোর প্রয়োজনও মিটলো।
আলোর দিনকাল ভালোই যাচ্ছে। নতুন কিছু শুরু করেছে একটু কষ্ট হবে।আস্তে আস্তে নিজের ঘরকে সুন্দর করে নিজের মতো সাজাবে আলো। নিজের কষ্টের টাকায় সাজানো নতুন জীবন নতুন সংসার।
ওইদিকে আঁধারকে খোজে বের করে আকরাম । সব জানায় আঁধারকে। নিজের প্রিয়তমার এমন নির্মম কষ্টের কথা সহ্য হচ্ছে না আঁধারের।কোথায় খুজবে আঁধার আলোকে। আকরাম যাওয়ার আগে আলোর একটা ছবি দিয়ে যায় বয়স তখন ২৪ ছবিটা আলোর বিয়ের দিনে তোলা। আকরাম তুলে নিজের কাছে রেখেছে। যে করেই হোক তার বোনকে সুখ এনে দিবে আর সেই সুখ আধারের সাথে থাকলেই পাবে।
আসলে এমনিতে হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়া বড়ই কষ্টকর ব্যাপার।
আঁধার নিজের হাতে প্রিয়তমার ছবিটি নিয়ে রেখেছে। ছবিটি দেখতে হাত কাপছে ঠিক কতো বছর পর দেখতে যাচ্ছে তার আলোকে। অনেক চেষ্টা করেছিলো আলোকে দেখার কিন্তু পারেনি। আলোর বাড়িতে ডুকতে দিতো না তার দাদী। আলোকে বাহিরে বের হতে দিতো না।প্রয়োজনে বের হলে ওর মা সাথে করে বের হতো। এখান থেকে যেতে আমার অনেক সময় লাগতো। অনেক অপেক্ষা করতাম এক নজর দেখার জন্য। অবশেষে দেখতে পারবো আধারের_আলোকে সরাসরি না হোক ছবিই দেখি। নতুন করে আশার আলো যখন পেয়েছি তখন আর হাতছাড়া করবো না। চেষ্টা করে যাবো তোমাকে আমার জীবনের সাথে নিয়ে চলতে।
লেখনীতেঃInsia Ahmed Hayat
অবশেষে আধার তার প্রিয়োতমার ছবিটি দেখেই ফেলল। ভালোবাসার মানুষ যেমনই হোক তার কাছে সবচেয়ে সুন্দরী রমনী লাগে। মন ভরে ছবিটা দেখছে। সাথে চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। বাসায় গিয়ে সবাইকে আলোর ছবি দেখালো। সবাই অনেকটা চিন্তিত কিন্তু আঁধার খুব খুশি। এবার আলোকে খোজার পালা। আলোকে যে করেই হোক খুজতে হবে।
এভাবে ৬ মাস কেটে গেলো আলো এখন ভালোই আছে। সে সেলাইয়ের পাশাপাশি থ্রি-পিস বিক্রি করে। নিজের ঘরের সামনেই রমজান মাসে ইফতার বানিয়ে বিক্রি করেছে। চিন্তা করে রেখেছে পিঠাও বিক্রি করবে। এলাকাটা শহর হওয়ায় বাজার একটু দূরে হওয়ায় কেনাবেচা ভালোই চলে আলোর। সাথে বাচ্চাদের পড়ানো এই নিয়েই তার জীবন চলছে। এখন আর খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। না খেয়ে ঘুমাতে হয় না।নির্ঘুমে থাকতে হয় না। আলো নিজের বর্তমান পরিস্থিতির কথা গার্লস গ্রুপে শেয়ার করে।সবাই খুশি হয়েছে। অনেকে আবার বলছে মনিরার মতো কাউকে পেলে চলে যাবে। আলো সেখানে বলেছে সবাই মনিরা আপুর মতো ভালো হয় না অনেক প্রতারক ধোকাবাজও আছে। তাই যা করার ভেবে চিনতে করতে হবে। নিজেকে চিনতে হবে তুমি কি পারো তা দিয়েই শুরু করো বাকিটা না নয় আল্লাহ ঠিক করে দিবে। কেউ পাশে থাকুক আর না থাকুক সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমাদের পাশে থাকে।
ওইদিকে আকরাম আলোর চিঠিটা লুকিয়ে রেখেছে চিঠিতে কি আছে ফাতেমা জানে না একদিন ফাতেমা চিঠিটা চুরি করলো। চিঠি পড়ে তার চোখ বেয়ে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়লো
চিঠিতে
প্রিয় ছোট ভাই
আশা করি ভালো আছিস আর ভালো থাকবি। আজকে কথা গুলো লিখছি হয়তো আমার প্রথম ও শেষ কথা মনোযোগ দিয়ে পড়বি। যখন তোর জন্ম হয়েছিলো সারা বাড়ির সবাই অনেক খুশি ছিলো আমিও অনেক খুশি ছিলাম আমি তোকে দেখার জন্য কোলে নেওয়ার জন্য ব্যকুল ছিলাম কিন্তু তখনো দাদী তোর আর আমার মাঝের তফাত বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে একটা রুমে আটকে দিয়েছিল। তখন বাবা সবে মাত্র বিদেশে গিয়েছে। আমি সারাদিন ওই রুমে ছিলাম। এরপর পাশের বাসার ছোট দাদী এসে আমায় নিয়ে গিয়েছিলো। জানিস তোকে না আমার কোলে নিতে অনেক ইচ্ছে করতো কিন্তু কখনো হয়ে উঠেনি। ভাবছিস এতো ছোট বেলার কাহিনি কিভাবে মনে আছে আসলে আমরা সুখের চেয়ে দুঃক্ষের কথা খুব বেশি মনে রাখি। আস্তে আস্তে আমরা বড় হচ্ছিলাম তুই ছোট থেকেই কম কথা বলতি। কিন্তু সারাদিন আমার পিছু পিছু ঘুরতি আর আমার জামা পড়ে ফেলতি। সেই জামা আমি ছোট করে নতুন করে বানিয়ে দিয়েছি জামাটা তোর পছন্দের ছিলো তাই নিজের কাছে রেখে দিতাম। তোর যদি মেয়ে হয় আমার পক্ষ থেকে দিয়ে দিস। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি কিন্তু প্রকাশ করিনি। মনে আছে আমার রিং কানের দুল দাদী খুলে নিয়ে গিয়েছিলো আর তুই দাদীর সাথে ঝগড়া করে আমায় এনে দিয়েছিলি সেটা আমি তোকে দিয়ে দিলাম এটা তোর মেয়েকে দিয়ে দিস। এর চেয়ে বেশি কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেইরে ভাই।
যাক অনেক কথা বললাম বলার কারনও আছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তুই একদম চুপচাপ ছিলি তুই আমার কাছে কম আসতি কিন্তু দূরে থেকেও আমায় সাহায্য করতি।সবাই যখন আমায় দোষারোপ করছিলো বাবার মৃত্যুর কারনে তুই তখন এক কোনায় চুপ করে ছিলি অসহায়ের মতো আমার দিকে চেয়ে ছিলি। আমার জন্য তুই এটা সেটা নিয়ে আসতি। অবশেষে ফাতেমাকে নিয়ে এলি যাতে আমার কষ্ট কম হয়।ফাতেমাকে পারলে আগেই নিয়ে আসতি কিন্তু তোদের বয়স কম হওয়ার পারিসনি। ফাতেমা মেয়েটা খুবই ভালো আমার বেশ পছন্দ হয়েছেরে ওর খেয়াল রাখিস। আমার জন্য কিছু আনলে ফাতেমাকে দিয়ে পাঠাতে প্রথমে বলতি ফাতেমার জন্য এনেছিস পছন্দ হয় নাই তাই আমাকে দিয়ে দিলি। এতে দাদীও কিছু বলতো না আমাকে সাহায্য করতে পারলে। আমার বিয়ে করতে করতে ২৪ বছর হয়ে যায় দাদী আমাকে যার তার সাথেই বিয়ে দিয়ে দিতো কিন্তু তুই তার মাঝে থাকায় দিতে পারেনি। তুই নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ নিয়েছিলি যাতে করে আমার কষ্ট কম হয়। ছোট হয়ে বড় ভাইয়ের মতো দায়িত্ব পালন করেছিস। শাওন যখন টাকার জন্য আসে তুই কেন টাকা দিয়ে দিলি আরে বোকা আমায় জিজ্ঞেস করতি। তুই যেদিন টাকা দিয়েছিস তার পরের দিন আমি এসেছিলাম তোর শাশুড়ী আমায় তোর বাড়িতে যেতে মানা করে।সে আমায় বলেছে আমি যদি এইবাড়িতে আসি তাহলে ফাতেমাকে নিয়ে যাবে আর দিবে না তাই।আমি আসিনি। তুই ওনাকে কিছু বলিস না। সব মাই চায় তার মেয়ে ভালো থাকুক। এখানে উনি চেয়েছে উনার মেয়ে যেনো ভালো থাকে উনি তোমার কথাও ভেবেছে তুমি কতো কষ্ট করে কাজ করছো তার উপর এতো গুলো টাকা দিয়ে দিলে।আমি কখনো আর আসবো না। হ্যা ঠিকই আসবো না ওনার কথার জন্য না নিজের জন্য চলে যাচ্ছি বহুদূর। এক অচেনা শহরে যেখানে কষ্ট দেওয়ার মতো কেউ থাকবেনা। অনেক কথা বললাম এবার শেষ কথা শোন তোর মেয়ে হলে মেয়ের জন্য কিছু করে যাবি নয়তো তারও অবস্থা আমার মতো হবে।আর বিয়ে দেওয়ার আগে দেখেশোনে বিয়ে দিস। বিয়ে দিয়ে খোজ খবর নিবি।বাবা হওয়ার সব দায়িত্ব পালন করাবা ভালো মতো আর একটা কথা শাওনের সাথে আমি সুখি ছিলাম না তাদের নানান অত্যাচারে আমি দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। না ঠিক মতো খেতে পেরেছি না ঘুমাতে কিন্তু শাওনের দুইবোন খুব ভালো আমায় অনেক ভালোবাসে। শাওন আজকে আমায় বলেছে তোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতাম। টাকা না নিলে যেনো আমার মুখ না দেখাই শাওনের এই কথাটা আমি রাখলাম সত্যি আমার মুখ আর দেখাবো না শাওনকে। শেষ বারের মতো তোকে সব বলে দিলাম কারন তোর জানার দরকার আমি কেন চলে গিয়েছি। আমাকে খোজে লাভ নেই পাবি না আমায় তার চেয়ে ভালো নিজের খেয়াল রেখে ভালোভাবে সংসার করো। ফাতেমার খেয়াল রেখো মায়ের যত্ন নিও। আর দাদীরও খেয়াল রেখো।ভালো থেকো।
তোকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তোর সাথে দেখা হলে তুই আমাকে দেখলে যেতে দিবি না তাই আমি তোর আড়ালেই চলে যাচ্ছি ভাই।
ইতি
তোমার বড় বোন আলো
ফাতেমা চিঠিটা পড়ে তার মায়ের সাথে অনেক রাগারাগি চিল্লাচিল্লি করছে। চিঠি পড়ে সে খুব করে কাদছে। এখন বুঝলো আকরামের কেমন লেগেছে সে কেনো এতো কেদেছে আর কেনো কাদে। ৮ মাসের শেষের দিকে পড়েছে ফাতেমা এভাবে চিল্লাচিল্লির ফলে পেটে অনেক ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। ফাতেমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। অবশেষে আকরাম ও ফাতেমার কোল জুড়ে এলো ছোট একটি পরী একটি মেয়ে বাবু জন্ম হলো। এটাই আকরাম চেয়েছে । পরম আদরে নিজের মেয়েকে ভালোবাসছে আদর করছে। নিজের মাকে সবাইকে বলছে তার মেয়ে হয়েছে। নিজের দাদীকে ৫০ বার জানিয়েছে তার মেয়ে হয়েছে।
মিষ্টি নিয়ে সবার প্রথম দাদীকে খাইয়ে বলেছে ” আমার মেয়ে হয়েছে ছেলের জন্য অনেক দোয়া করছিলেন আপনার দোয়া কবুল হয় নাই দাদী। আমার মেয়ের সাথে যদি উলটা পালটা কিছু করেননা খবর আছে আপনার ”
মেয়ের নাম রাখা হয় আফরা ইসলাম ফারজানা।
আলোর দাদী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তিনি নিজের নাতনির কাছে ক্ষমা চাইবে। অনেক বড় ভুল করেছে উনি। আকরামকে বলেছে আলোকে নিয়ে আসতে। অনেক খোজাখুজি করছে।
একদিন আলো বাজার করে বাসায় ফিরছিলো তো সামনেই কিছু স্কুল কলেজের ২,৩ জন ছেলে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
আলোর থেকে বয়সে অনেক ছোট। আলো হেটে হেটে যাচ্ছিলো হঠাৎ ছেলেগুলো আলোকে দেখে বাজে মন্তব্য করছিলো। আলো এক নজর ছেলেদের দেখে চলে গেলো।
একটু সামনে গিয়ে আশেপাশের কয়েকটা দোকানদারদের জিজ্ঞেস করলো ছেলেদের ব্যাপারে। দোকানি বলল এলাকার স্থানীয় ছেলে গুলো। ভদ্র পরিবারের ছেলে এখানেই বসে থাকে। আলো তাদের নাম জিজ্ঞেস করলো। একজন রিফাত,অনিক,সাগর। তাদের ঠিকানা নিয়ে নিলো। এরপর বাসায় চলে গেলো।
পরের দিন সকালে রিফাত ঘুম থেকে উঠে নিজেদের ড্রইং রুমে এসে অবাক। মূহুর্তেই ঘা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।
কি করবে বুঝতে পারছে না। কারন তার মায়ের সামনে বসে আছে গতকালকের সেই মেয়ে। দুজনে কথা বলছে। রিফাত তার মাকে খুব ভয় পায়। রিফাত যলদি ঘুরে নিজের ঘরে পা বাড়ালো আর ওমনি তার মায়ের ডাক।