Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1460



মেঘবতী পর্ব-০৮

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসাঃভাইয়া আমাকে আর মেরো না আমার লাগছে।(কান্না করতে করতে)

ব্যথায় প্রিসা কান্না করছে কিন্তু অয়নের থামার নাম নেই,সে এখনও মেরেই চলেছে।আধাঘন্টা যাবত ধরে অয়ন প্রিসাকে জানোয়ারের মতো মারছে।এক সময় অয়ন মারা বন্ধ করে তারপর প্রিসার হাত ধরে থাকে টেনে দাঁড় করাই তাকে।প্রিসার চোখ দুটো কান্না করার কারণে ফুলে গিয়েছে,গাল দুটো গাল হয়ে গিয়েছে,হাতেও বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দাগ হয়ে গিয়েছে।অয়ন হাত দিয়ে প্রিসার গাল চেপে ধরে।এমনিতেই গাল দুটো ব্যথা তার উপর অয়ন এভাবে চেপে ধরাই আরো বেশি ব্যথা লাগছে তাও প্রিসা কিছু বলেনি।

অয়নঃখুব ভালো লাগে না ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে,একা একা দেখা করতে যেতে,রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে?কি হলো কথা বলছিস না কেন?

প্রিসাঃচুপ।

অয়নঃকি হয়েছে এখন মুখে কুলো পেতেছিস কেন?রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব তো প্রেমিকের সাথে কথা বলতে পারিস।তাহলে আমার সামনে মুখে তালা দিয়ে রেখিস কেন?

প্রিসাঃচুপ।

অয়নঃফুফা-ফুপি কি তোকে প্রেম করার জন্য এতো পড়াশোনা করাছে?পড়াশোনা মন না বসলে বাসায় বলে দেয়,সেই সাথে প্রেমিকের কথাও বলে দে সময় থাকতে।কোন আকাম-কুকাম করার পর বলিস না।

প্রিসা এবার চোখ তুলে অয়নের দিকে তাকাই।চুলগুলো এলোমেলো আর উস্কোখুস্কো,চোখগুলো আগুনের মতো লাল।

প্রিসাঃ অয়…ন.. ভা….ই…. য়া…. কি…. ক..রে..ছি.. আ…মি?আ…প..নি এম…ন কর….ছেন… কে…ন?

প্রিসার কথা শুনে অয়ন রেগে গিয়ে আরো জোরে প্রিসার গাল চেপে ধরে।ব্যথায় প্রিসার চোখ পানি জমে যায়।

অয়নঃএই একদম আমার সাথে নাটক করবি না,একদম না।তোর সাথে কথা বলা তো দূর এখন আমার তোর মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না।

বলে অয়ন প্রিসাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়,তারপর রেগে বাইরে চলে যায়।প্রিসা নিচে বসেই কাঁদতে থাকে।প্রিসা বুঝতে পারছে না কেন অয়ন থাকে মেরেছে।প্রায় ১৫/২০সেকেন্ড পর অয়ন আবার ফিরে আসে।

অয়নঃতোকে আমি জাস্ট ২ মিনিট সময় দিলাম,এর মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আয়।২ মিনিট পর আমি এসে যদি দেখে ফ্রেশ না হয়ে বসে আছি তাহলে আমার চেয়ে খাপার আর কেউ হবে না।

এরপর অয়ন আবার চলে যায়।প্রিসা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।তারপরও আস্তে আস্তে ওয়াশরুম গিয়ে কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।বাইরে এসে দেখে অয়ন এখনো আসেনি।প্রিসা আস্তে আস্তে খাটে বসে।বাইরে তাকিয়ে দেখে আকাশটা অন্ধকার।প্রিসা অনুমান করে এখন রাত ৮/৯ হবে।তখনি দরজা খোলার শব্দ হয়।প্রিসা ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে অয়ন এসেছে,হাতে তার একটা প্লেট।প্লেটটা প্রিসার সামনে রেখে দেয়।

অয়নঃকোন তামাশা ছাড়া খেয়ে নে।(অন্যদিকে তাকিয়ে)

প্রিসাও আর কোন কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে কারণ তার প্রচুর খিদে পেয়েছিল।খাওয়া শেষ হলে অয়ন প্লেট নিয়ে যায়।তারপর কিছু ওষুধ এনে প্রিসাকে খেতে দেয় এবং হাতে আর মুখে মলম লাগিয়ে দেয়।

অয়নঃহিজাবটা ভালো করে বেঁধে নে যাতে মুখের দাগগুলো দেখা না যায় আর এই নে তোর চশমা।(গম্ভীরভাবে)

প্রিসা অয়নের কথা মতো হিজাবটা বেঁধে নেয়।প্রিসার হিজাব বাঁধা শেষ হলে অয়ন প্রিসার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।গাড়ির দরজা খুলে প্রিসাকে সামনে বাসাই তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।এতক্ষণ অয়নদের বাগান বাড়িতে ছিলো যেটা তাদের বাসা থেকে অনেকটা দূরে।সিটের সাথে হেলান দেয় প্রিসা,চোখ তার বাইরে স্থির।ভাবছে কিছুক্ষণ আগের কথা,হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।এরকম কিছু হবে সে ভাবতেও পারেনি।

ফ্ল্যাসবেক……

শুভ প্রিসাকে প্রপোজ করার পর প্রিসা কিভাবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে যখনই প্রিসা কিছু বলতে যাবে তখনই কেউ শুভর হাত থেকে ফুলটা নিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।প্রিসা অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে আর ফুলটা তার পাশের নিচে যেটাকে যে জুতো দিয়ে পিষে ফেলেছে।অয়ন এবার প্রিসার দিকে তাকাই তারপর কয়েক সেকেন্ড পর ঠাস করে প্রিসাকে থাপ্পড় মেরে দেয়।এতো জোরে মেরেছে যে প্রিসা তার জায়গা থেকে সরে যায়।প্রিসা ছলছল চোখে অয়নের দিকে তাকাই,অয়ন সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে প্রিসার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।এতো শক্ত করে হাতটা ধরেছে প্রিসার মনে হচ্ছে এখুনি হাতটা খুলে চলে আসবে।

শুভঃএই কে তুই?আর ওকে কোথাই নিয়ে যাচ্ছিস?

অয়ন পেছনে ফিরে শুভর দিকে রেগে তাকাই।

অয়নঃওকে আমি যেখানে খুশি নিয়ে যাবো এর কৈফিয়ত আমি তোর মতো বাইরে মানুষকে দেবো না।

এরপর প্রিসার দিকে তাকিয়ে তাকে টানতে টানতে গাড়িতে বসাই আর তাদের বাগানবাড়িতে নিয়ে আসে।এরপর বাকিটাতো আপনারা জানেন।

ফ্ল্যাসবেক এন্ড…….

প্রিসা তার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে।প্রিসা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে অয়ন গাড়িটা নিয়ে চলে যায়।প্রিসা অয়নের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সেও বাড়ির ভিতরে চলে যায়।বাসাই এসে এদিক-ওদিক না সোজা নিজের রুমে চলে যায়।ব্যাগ আর চশমাটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে সাওয়ারের দাঁড়িয়ে পরে প্রিসা।চোখ থেকে তার টপটপ করে পানি পড়ছে তার কিন্তু সেটা সাওয়ারের পানির সাথে এক হয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে।প্রায় ১ ঘন্টা পর সাওয়ার অফ করে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসে প্রিসা।বাইরে এসে ভিজা চুলগুলো না মুছেই শুয়ে পরে।একদৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সে,চোখের কার্নিশ বেয়ে জল পড়ছে তার।একসময় আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে প্রিসা,ঘুম পাচ্ছে তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।সেই রাতে প্রিসা আর বাইরে যাইনি।

পরেরদিন সকালে,

কপালে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতে পিটপিট করে চোখ খুলে প্রিসা।মাথাটা প্রচুর ভারী লাগছে তার,চোখ খুলতেও কষ্ট হচ্ছে তাও অনেক কষ্টে চোখ দুটো খুললো।চোখ খুলে প্রিসা দেখে তার পাশে একদিকে তার মা বসে তার মাথায় জলপটি দিচ্ছে অন্যদিকে তার ভাইয়া বসে তার হাত ম্যাসাজ করছে।প্রিসা আস্তে আস্তে করে উঠে বসার চেষ্টা করে।

অন্যঃথ্যাঙ্ক গড অবশেষে তুই চোখ খুলেছিস।জানিস তোকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আমরা কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ফুল।

অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে এটা শুনে প্রিসা অবাক হয়ে যায়।

প্রিসার মাঃকে বলেছিল কালকে ওতো রাতে স্নান করতে?আর স্নান করার পর ভিজা চুলেই ঘুমিয়ে পেরেছিস।তুই জানিস না ঠান্ডাতে তোর সমস্যা হয়,দেখ এখন জ্বর উঠে গিয়েছে।সবসময় বলি একটু সাবধানে চলিস কিন্তু কে শুনে কার কথা।

প্রিসা বুঝতে পেরেছে সবাই ভাবছে ঠান্ডা লাগার কারণে তার জ্বর এসেছি কিন্তু তারা তো আর জানেনা এটা ঠান্ডা লাগার জন্য না মারের জন্য।

তখনিই মিলা একটা বাটি নিয়ে রুমে আসে।বাটিটা দেখেই প্রিসা ভ্রু-কুচকে তাকাই।কারণ সে জানে বাটিতে তার অপছন্দের জিনিসটা আছে সেটা হচ্ছে সুপ তাও আবার ভেজিটেবল সুপ।

মিলাঃআহ্ চাচি পাখি আর বকো নাতো,এমনিতেই মেয়েটা অসুস্থ।এই নাও এই সুপটা ওকে খাইয়ে দাও।

প্রিসাঃআমি খাবোনা।(মুখে হাত দিয়ে)

অন্যঃমিলা তুই বাটিটা আমাকে দে।ফুল দেখি মুখের সামনে থেকে হাতটা সরাতো।

প্রিসাঃআমি খাবোনা ভাইয়া।

অন্যঃফুল বোন আমার প্লিজ খেয়ে নে,কাল রাত খেতে তুই কিছু খাসনি।প্লিজ খেয়েনে ফুল।

এতো কিউট করে যদি কোন ভাই তার বোনকে কিছু বলে তাহলে কি সে আর না করতে পারে,প্রিসাও পারেনি।ভালো না লাগলেও চোখমুখ খিঁচে কয়েক চামচ সুপ খেলো প্রিসা এরপর আর খাইনি।অন্যও তাকে আর জোর করেনি।সুপ খেয়ে প্রিসাকে ঔষুধ খাইয়ে সবাই চলে যায়।সবাই চলে যাওয়ার পর প্রিসা শুয়ে পরে কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই।ফোনের আওয়াজে প্রিসার ধ্যান ভাঙ্গে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে এখন প্রায় দুপুর ১২ বাজে। শোয়া অবস্থায় প্রিসা ফোন রিসিভ করে।

প্রিসাঃহ্যাঁ স্মিতু বল।

স্মিতাঃকিরে তুই আজ ভার্সিটিতে এলি না যে?

প্রিসাঃএমনিই।

স্মিতাঃএকদম মিথ্যা বলবিনা।আমি জানি তুই এমনি এমনি ক্লাস মিস করার মতো মেয়ে নোস তাই বল কি হয়েছে?

প্রিসাঃআরে না সেরকম কিছু না জাস্ট ঠান্ডা লাগার কারণে একটু জ্বর এসেছে এই যা।

স্মিতাঃকি তোর জ্বর হয়েছে?এই তুই এতো ইরেস্পন্সাইবেল কেন বলতো?তুই জানিস তো ঠান্ডায় এলার্জি আছে তাও তুই একটু সাবধানে চলিস না।

প্রিসাঃআরে বাবা এবার তুইও বকিস না প্লিজ।

স্মিতাঃআচ্ছা ঠিক আছে এখন বকবো না তবে আমি আসছি বিকালে তোর বাসাই তখন দেখ তোকে আমি কি করি আর তোকে কিছু বলারও ছিল।ভেবেছিলাম ফোনেই বলবো কিন্তু যেহেতু বিকালে দেখা হচ্ছে তাই বিকালেই বলবো।

প্রিসাঃকি বলবো?

স্মিতাঃবিকালো বলবো এখন রাখছি।

প্রিসাঃআচ্ছা।

প্রিসা ফোন রেখে দেয় আর শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে তাকে স্মিতা কি এমন বলবে যেটা সে ফোনে না বলে সরাসরি তাকে বলতে চাইছে?

চলবে……..

মেঘবতী পর্ব-০৭

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

মাঝে আরও বেশ কিছুদিন চলে যায়।প্রিসার মামা-মামীরা আসার পর অয়ন আর সায়ন তাদের বাসাই চলে যায়।তাদের বাসা প্রিসাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা।এ কয়দিন প্রিসা অয়ন আর সায়নকে প্রচুর মিস করেছে কিন্তু কেন করেছে সেটা সে জানেনা আর কাকে বেশ মিস করেছে সেটাও জানেনা।

আজ শুক্রবার তাই প্রিসার বাবা-মা,অন্যের সবার অফিস বন্ধ আর প্রিসার ভার্সিটিও বন্ধ।তাই প্রিসা ঠিক করেছে আজ তারা অয়নদের বাড়িতে যাবে।প্রিসার মা নিজের ভাইয়ের পরিবারের জন্য একগাদা আইটেম রান্না করে দেয়।বাসাই সব কাজ মিটিয়ে অন্য,প্রিসা আর মিলা অয়নের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।মিলা প্রথমে যেতে চাইছি কিন্তু প্রিসাই তাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।কিছুক্ষণ পর তারা অয়নের বাড়িতে পৌঁছে যায়।তারা এসেছে দেখে প্রিসার মামা-মামী খুব খুশী হয়।তাদের তিনজনকে বসিয়ে প্রিসার মামী রান্না ঘরে চলে যায় তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে আর প্রিসার মামা অন্য আর মিলার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।সেই সুযোগে প্রিসা চুপিচুপি সবার চোখের আড়ালে ওখান থেকে উঠে উপড়ে চলে আসে।উপরে এসে প্রিসা প্রথমে সায়নের রুম খুঁজে শুরু করে।বেশ কিছুক্ষণ পর প্রিসা কাঙ্খিত সায়নের রুমটা পেয়ে যায়।আস্তে আস্তে দরজা খুলে প্রিসা আশেপাশে একবার ভালো করে দেখে তারপর আস্তে আস্তে রুমের ভিতর ঢুকে।রুমে এসে একটা কাজ টেবিলের উপর রেখে তার উপর একটা ফাইল চাপা দিয়ে দেয় প্রিসা।তারপর তাড়াতাড়ি সায়নের রুম থেকে বেরিয়ে এসে অয়নের রুমে চলে যায় এবং তার রুমেও ঠিক একই কাজ করে যেটা সে সায়নের রুমে করেছে।তারপর সেখান থেকেও বেরিয়ে যায়।

এদিকে,

মিলাঃএই পাখিটা(প্রিসা) আবার কোথাই গেলো?গেলো তো গেলো আমাকেও নিয়ে গেলো না কেন?

এদিক সেদিন ঘুরে প্রিসাকে খুঁজছে মিলা আর নিজে নিজে বিরবির করছে।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় অসাবধানতাবসত পা পিচলে পড়ে যেতে নিলে কেউ থাকে পেছন থেকে ধরে ফেলে।তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় মিলা।পেছনে ফিরে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে তারমানে সেই মিলাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।

মিলাঃসরি আসলে আমি খেয়াল করিনি।

অয়নঃইটস ওকে বাট কে তুমি?তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।

মিলাঃআমি মিলা পাখির না মানে প্রিসার চাচাতো বোন।

অয়নঃও আচ্ছা নাইস টু মিট ইউ।

মিলাঃহুম,আচ্ছা আমি আসছি আর আপনি প্রিসাকে কোথাও দেখতে পেলে ওকে বলবেন নিচে চলে আসতে,আমাদের এবার যেতে হবে।

অয়নঃওকে।

এরপর মিলা ওখানে আর না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে আসে।অয়ন পেছন ফিরে মিলার যাওয়া পানে তাকিয়ে মুচকি হসে আবার উপরে উঠতে থাকে।আসলে সে আর সায়ন কিছু কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিল কিন্তু সায়ন কিছু কাগজ ফেলে চলে যায় আর সেগুলো নিতেই সে আবার বাসাই আসে।

অয়নঃএখানে কি করছো তুমি?

হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে প্রিসা ঘাবড়ে যায়।পিছন ফিরে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে এটা দেখে যেন তার আত্মা ফিরে এসেছে।

প্রিসাঃআরে আপনি?আমি তো আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

অয়নঃএখানে কি করছো তুমি?

প্রিসাঃআমি?ওই… বাড়িটা ঘুরে দেখছিলাম আরকি।

অয়নঃআচ্ছা ঠিক আছে বাড়ি পরে এসে আবার দেখো এবার নিচে যাও মিলা তোমার খোঁজ করছিল,বাড়িও তো যেতে হবে তোমাদের।

প্রিসাঃও শিট,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আচ্ছা আমি আসছি,পরে আবার দেখা হবে।

অয়নঃহুম।

প্রিসা দৌড়ে নিচে চলে আসে।তারপর আরো কিছু সব থেকে তারা তিনজন বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ি চলে আসে।
_____________________________________

ক্লাস শেষ হওয়ার পর স্মিতা বায়না করে ফুসকা খাবে বলে।তাই তারা দুজন ভার্সিটির কাছে একটা ফুসকার দোকানে যায়।দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর কথা বলছে,মাঝেমাঝে হাসাহাসি করছে।তখন পেছন থেকে কেউ প্রিসাকে ডাকে।পেছন ফিরে প্রিসাকে যাকে দেখে তাতে তো সে অবাক কারণ এই ব্যক্তিকে সে এখানে মোটেও আসা করেনি।প্রিসার ভ্রু-কুচকে উঠে কিন্তু সেটা বিরক্ততে নাকি অবাক হওয়ার কারণে সেটা সে জানে না আসলে জানতে চাইনা।এদিকে স্মিতাও ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে তবে সেটা অবাক হওয়ার কারণে।

প্রিসাঃমিস্টার শুভ আপনি?আপনি এখানে কি করছেন?

স্মিতাঃ(শুভ?ও আচ্ছা এটাই তাহলে সেই শুভ।এর নাম তো শুভ না হয়ে অশুভ হওয়া উচিত ছিল— মনে মনে)

শুভঃ তোমার সাথে অনেকদিন ধরে দেখা করবো ভাবছিলাম অবশেষে আজ তোমার সাথে দেখা হলো তাহলে।

প্রিসাঃআমার সাথে?কিন্তু কেন?আমার সাথে কেন দেখা করতে চাইছিলেন আপনি?

শুভঃবলবো একটু সবুর করো।আচ্ছা তোমার পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে ওটা নিশ্চয়ই তোমার বান্ধবী।তোমার বান্ধবীও তোমার মতো সুন্দর।হ্যালো আমি শুভ।

স্মিতাঃ(ব্যাটা লুইচ্চা কোথাকার–মনে মনে)
হ্যালো,স্মিতা।

শুভঃতো স্মিতা তুমি একটু সাইডে যাও ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

প্রিসাঃও সাইডে কেন যাবে?যা বলার ওর সামনেই বলুন।

স্মিতাঃহুম,কেন সাইডে যাবো?আমি থাকলে কি সমস্যা?

শুভঃআসলে ওর সাথে না আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে।

স্মিতা একবার প্রিসার দিকে তাকিয়ে তারপর আবার শুভর দিকে তাকাই।

স্মিতাঃপার্সোনাল?

শুভঃহুম খুবই পার্সোনাল।

স্মিতা আর কথা না বাড়িয়ে সাইডে চলে যায়।

প্রিসাঃকি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।

শুভঃওকে ওকে।এই নাও এই কাজটা।

প্রিসাঃকি আছে এতে?(কাগজটা নিয়ে)

শুভঃএতে একটা ঠিকানা আছে।কাল ঠিক বিকেল ৫ টার সময় ওখানে পৌঁছে যাবে।

প্রিসাঃমগের মুলুক নাকি যে আপনি আর আমিও নাচতে নাচতে চলে যাবো।

শুভঃমগের মুলুক নাকি কিসের মুলুক সেটা আমি তোকে পরে বোঝাবো এখন যেটা বলছি সেটা শোনো।

প্রিসাঃআমি যাবো না কি করবেন আপনি?

শুভঃকি করবো?যদি তুমি কাল না আসো তাহলে আমি সোজা তোমার বাসাই চলে আসবো।আর আমি যদি যেটা করি তাহলে এরপর আর কি কি করবো সেটা তুমি ভাবতেও পারবে না।তাই বলছি আমার কথা শুনো কাল ঠিক সময়ে চলে এসো,বাই।

কথাগুলো বলে শুভ ওখান থেকে বাইক নিয়ে চলে যায়।শুভ চলে যেতেই স্মিতা প্রিসার কাছে চলে আসে।

স্মিতাঃকিরে কি বলেছে ও?

প্রিসা স্মিতাকে সব খুলে বলে।

স্মিতাঃকি বলছিস তুই?এখন কি করবি?

প্রিসাঃজানিনা রে।চল বাসাই চলে যাই আর ভালো লাগছে না।

এরপর তারা ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।এদিকে এতক্ষণ এসব কিছু দূর থেকে লক্ষ্য করছিল কেউ কিন্তু সেটা সবার অজান্তে।

পরেরদিন,

পরেরদিন কাঙ্ক্ষিত সময়ে শুভর দেওয়া ঠিকানায় প্রিসা পৌঁছে যায়।প্রথমে ভেবেছিলাম আসবে না কিন্তু পরে মত বদলে ফেললো।কারণ বলা তো যায়না যদি সে না যায় তাহলে না সত্যি সত্যি বাসাই চলে যায়।

প্রিসা সেখানে গিয়ে তো অবাক কারণ জায়গাটা ফুল,বেলুন এছাড়াও নানা জিনিস দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো।প্রিসা এসব দেখতে ব্যস্ত তখন সেখানে শুভ চলে আসে।

শুভঃআমি জানতাম তুমি আসবে,আমার বিশ্বাস ছিল।

প্রিসাঃকেন ডেকেছেন আমায়?

শুভঃও মা এসেছো আগে একটু বসো।

প্রিসাঃদেখুন আমি এখানে বসতে আসিনি,আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে তাই কেন ডেকেছেন সেটা তাড়াতাড়ি বলুন।

শুভঃওকে।

এরপর শুভ যেটা করে সেটাতে প্রিসা মোটেও অবাক হয়নি কারণ এখানে এসেই সে এটা আন্দাজ করতে পেরেছিল।

শুভঃদেখো আমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারিনা তাই সরাসরি বলছি,”আই লাভ ইউ মিস প্রিসা”।যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিনই ভালো লেগে গিয়েছিল।তারপর থেকে আমি সবসময় শুধু তোমার কথাই ভাবতে থাকি।সবসময় এটাই চাইতাম যে যাতে তোমার সাথে আমার আরেকবার দেখা হয়।এখন আমার সবকিছুতে শুধু তুমিই আছো।আই লাভ ইউ,আই রিয়েলি লাভ ইউ।

প্রিসার এখন কি বলা উচিত সে কিছু বুঝতে পারছে না।

চলবে……….

মেঘবতী পর্ব-০৬

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসা গেট পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।এদিকে স্মিতা তাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।

স্মিতাঃওই তুই কোথাই যাচ্ছিস?

সায়নঃআরে এসেছো তুমি,আমরা কতক্ষণ যাবত তোমার অপেক্ষা করছি।

আসলে প্রিসার অবাক হওয়ার কারণ গেটের বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অয়ন আর সায়ন।গাড়ির ডিকির উপর বসে ফোন টিপছিল সায়ন আর বাইরে গাড়ির সাথে হেলান গিয়ে অয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে গেমস খেলছিল।এদিকে তাদের আশেপাশে হাজারটা মেয়ে তাদের চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে অবশ্য খাওয়ারিই কথা কারণ দুটোই যে সাদা মুলা আর হ্যান্ডসাম দেখতে।

স্মিতাঃহ্যাঁরে প্রিসা এ দুটো সাদা মুলা মানে এই দুটো কেরে?(ফিসফিস করে)

প্রিসাঃএরাই হচ্ছে সে উজবুকগুলো যাদের কথা তোকে বলেছিলাম।(ফিসফিস করে)

স্মিতাঃওমা তাই নাকি কিন্তু যাই বলিস না কেন দুটোই কি হেব্বি জোস।

প্রিসাঃআস্তে কথা বল আর এসব কি শব্দ ব্যবহার করছিস তুই?দিন দিন তুই অনেক শয়তান হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু।

অয়নঃওই তোমরা কি এত ফিসফিস করছো?

প্রিসাঃও কিছু না।এবার এটা বলুন এখানে কি করছেন আপনারা?

সায়নঃতোকে দেখার জন্য….. না মানে তোমার কাছে এসেছিলাম।

প্রিসাঃকেন?(ভ্রু-কুচকে)

অয়নঃআসলে প্রিসা উই আর সরি প্রিসা।

প্রিসাঃসরি কেন?

সায়নঃকালকের জন্য।আসলে আমরা জানতাম না তুমি এতোটা ভয় পেয়ে যাবে।যদি জানতাম তাহলে আমরা এরকম কিছু করতাম না।

অয়নঃআসলে দোষটা আমার,আমিই ওকে এরকম করতে বলেছিলাম।

প্রিসাঃআরে এতে এতো সরি বলার কি আছে শুনি?আমি কালকের ঘটনাটা ভুলে গিয়েছি সো আপনারাও ভুলে যান।

সায়নঃতার মানে সরি এক্সপেক্টড?

প্রিসাঃইয়েস।(হালকা হেসে)

সায়নও প্রিসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

অয়নঃওকে তাহলে চলো।

প্রিসাঃকোথাই?

সায়নঃআজকে আমরা তিন ঘুরবো আসলে তুমি আমাদের ঘুরাবে মানে আমাদের শহরটা ঘুরে দেখাবে।

প্রিসাঃআমি?আমি পড়বো না আরে আমি নিজেই তো কিছু চিনিনা।

অয়নঃকিছু হবে না চলো তো।

সায়নঃআচ্ছা ও কে?(স্মিতাকে নির্দেশ করে)

স্মিতা এতক্ষণ দর্শকের মতো এদের দিকে তাকিয়ে ছিল,সায়নের কথাই ও তার দিকে তাকাই।

প্রিসাঃআরে পরিচয় করিয়ে দিতেই ভুলে গিয়েছিলাম।ও হচ্ছে স্মিতা আমার বেস্টু।

অয়নঃহ্যালো স্মিতা।

সায়নঃহ্যালো তিতা সরি স্মিতা।

স্মিতাঃহ্যালো।(স্মিতা অয়নের সাথে কুশল বিনিময় করে সায়নের দিকে চোখ ছোট করে তাকাই।)

সায়নঃসরি সরি একটু মজা করলাম ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।

স্মিতাঃইটস ওকে,প্রিসা তাহলে আমি আজ আসছি।

অয়নঃআরে তুমি কোথাই যাচ্ছো?তুমিও চলো আমাদের সাথে।

স্মিতাঃনা ভাইয়া,আজ না অন্য কোনদিন।আজ এমনিতেও দেরি হয়ে গিয়েছে।

অয়নঃআচ্ছা ঠিক আছে,সাবধানে যেও।

স্মিতাঃহুম,প্রিসা আসছি।

প্রিসাঃঠিক আছে পরে কথা হবে।

এরপর স্মিতা চলে যায় আর অয়ন,প্রিসা আর সায়নও শহরভ্রমণের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।প্রিসা পেছনের সিটে বসে আর অয়ন,সায়ন সামনে।প্রথমে তারা একটা রেস্টুরেন্টে যাই লাঞ্চ করার জন্য তারপর সেখান থেকে আশেপাশে কয়েকটা জায়গায় যায় ঘুরতে।বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় তাদের।যেহেতু বাসাই প্রিসার বাবা-মা জানতো তাই আর কোন সমস্যা হয়নি।
______________________________________

বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে প্রিসা।মাঝে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে।সেইদিনের পর থেকে অয়ন আর সায়নের সাথে প্রিসা অনেকটাই ফ্রী হয়ে গিয়েছে।দুজনে এখনো তার সাথে দুষ্টমি করে কিন্তু এমন কোন কাজ করেনা যেটাতে প্রিসা ভয় পায় বা হার্ট হয়।প্রতিদিন নিয়ম করে দুজনে তাকে পড়াতে বসাই এখন।একদিন অয়ন পড়ালে আরেকদিন সায়ন পড়াই।
এসব ভাবছিল প্রিসা তখন কেউ পেছন থেকে হাত দিয়ে তার চোখ চেপে ধরে।প্রিসা বুঝতে পেরে যায় এটা কে।

প্রিসাঃকেন এসেছেন এখানে?চোখ ছাড়ুন আমার।

—- আমার পাখিটা বুঝি রাগ করেছে?

প্রিসাঃহ্যাঁ রাগ করেছে খুব খুব রাগ করেছে।

—- ওলে বাবারে,আমার সোনা পাখিটা এতো বেশি রাগ করেছে।

প্রিসাঃআহ্ আপুনি চোখ ছাড়ো তো এবার,আমার চশমাটা না আবার ভেঙে যায়।

যে প্রিসার চোখ চেপে ধরেছিল সে হচ্ছে প্রিসার চাচাতো বোন মিলা(আপন)।মিলা প্রিসা থেকে দু’বছরের বড়।মিলার কোন ভাইবোন না থাকাই সে প্রিসাকে নিজের ছোট বোনের মতো আদর করে।তাই তো মিলার নামের সাথে মিল রেখে প্রিসার নাম অসমিলা চৌধুরী প্রিসা রাখা হয়েছিল।মিলা আর প্রিসারা একই সাথে থাকে শুধু পার্থক্য এটাই মিলারা উপরে তালাই থাকে আর প্রিসারা নিচের তালায়।

মিলাঃতা আমার পাখিটা কেমন আছে?

প্রিসাঃএখন কেন জিজ্ঞেস করছো?নানাবাড়ি গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছিলে।(মুখ ফুলিয়ে)

মিলাঃকে বলেছে ভুলে গিয়েছিলাম তোকে কি আমি ভুলে থাকতে পারি?

প্রিসাঃতাহলে ফোন দাওনি কেন?যেদিন গিয়েছিলে সেদিনই একবার ফোন দিয়েছো এরপর তো আর দাওনি।

মিলাঃএতে আমার কি দোষ বল এটা তো নেটওয়ার্কের দোষ।তুই তো জানিস গ্রামের নেটওয়ার্কের অবস্থা।(মন খারাপ করে)

প্রিসাঃআরে আপুনি তুমি মন খারাপ করো নাতো,আমি তো এমনিই বলছিলাম।

মিলাঃচাচির কাছ থেকে শুনলাম তোদের বাসাই কে জানি এসেছে?

প্রিসাঃহুম শান্ত মামার ছেলেরা,অয়ন আর সায়ন ভাইয়ারা।

মিলাঃও আচ্ছা।শুনলাম আমেরিকায় ছিল নাকি ওরা?

প্রিসাঃহুম আমাকে তো তাই বলেছে।

মিলাঃও আচ্ছা তার মানে বিদেশি মুলা।

প্রিসাঃহাহাহা…. বিদেশি মুলা।সবাই ওনাদের বলে সাদা মুলা আর তুমি বলছো বিদেশি মুলা।

মিলাঃহুম ইউ নো না আমি সবার থেকে আলাদা।

প্রিসাঃইয়েস আই নো,হাহাহা।আচ্ছা এবার চলো চাচা-চাচির সাথে দেখা করে আসি।

মিলাঃআচ্ছা চল,তোর জন্য অনেক কিছু এনেছি আমি।

প্রিসাঃতাই নাকি?তাহলে তাড়াতাড়ি চলো।

প্রিসা আর মিলা নেমে মিলাদের বাসাই চলে যায়।

সন্ধ্যাবেলা,

প্রিসাঃভাইয়া আজকে না পড়লে হয়না?

সায়নঃকেন?(গম্ভীরভাবে)

প্রিসাঃভালো লাগছে না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে,

সায়নঃঠিক আছে।(গম্ভীরভাবে)

বলে সায়ন চলে যায়।সায়ন চলে যাওয়ার পর প্রিসা বই বন্ধ করে টেবিল মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।কিছুক্ষণ পর কারো আওয়াজে মাথা তুলে প্রিসা।

অয়নঃসায়ন বলেছে তুমি নাকি আজ পড়বে না।

প্রিসাঃহুম।(মাথা নিচু করে)

অয়নঃকেন?

প্রিসাঃভালো লাগছে না।

অয়নঃশরীর খারাপ লাগছে?মাথা ব্যথা করছে কি?

প্রিসাঃনা,এমনিই ভালো লাগছে না।

কিছু একটা ভেবে অয়ন প্রিসার দিকে কিছুক্ষণ তাকাই,প্রিসা তখনও মাথা নিচু করে রয়েছে।

অয়নঃআচ্ছা ঠিক আছে শুয়ে পরো আর বেশি খারাপ লাগলে আমাকে নয়তো অন্য কাউকে ডেকো।

প্রিসাঃহুম।

অয়ন চলে যাওয়ার পর প্রিসা শুয়ে পড়ে আসলে তার প্রচুর চোখ এবং মাথা ব্যথা করছে।সকাল থেকেই করছিল তবে সেটাকে ওতোটা গুরুত্ব দেয়নি তবে এখন বেশি করছে।

পরেরদিন সকালে,

কারো হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় পিটপিট করে চোখ খুলে প্রিসা।চোখ খুলে যেটা দেখে তাতে প্রিসা ভুত দেখার মতো চমকে যাই,প্রিসা তাড়াতাড়ি উঠে বসে।আশেপাশে হাতড়ে চশমাটা খুঁজে তাড়াতাড়ি সেটা পড়ে নেয় কিন্তু না এখনও দেখতে পাচ্ছে সে।প্রিসা এবার নিজের হাতে চিমটি কাটে,ব্যথা পেয়েছে তার মানে এটা সত্যি।প্রিসা খুশিতে চিৎকার করে উঠে।

প্রিসাঃভাইয়া।(জরিয়ে ধরে)

—- আরে ফুল আস্তে আস্তে।

এটা হচ্ছে প্রিসার ওয়ান এন্ড অনলি বড় ভাই অন্য চৌধুরী স্নিগ্ধ।বেশ কয়েকবছর দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছে তারপর দেশে এসে বাকিটা কমপ্লিট করেছে দেন এখন নিজের বিজনেস র্স্টাট করেছে।কিছুদিন আগে বিজনেসের কাজে কয়েকদিনের জন্য আবার দেশের বাইরে গিয়েছিল।

প্রিসাঃভাইয়া তুমি কখন এসেছো?তোমার না আরো কয়েকদিন পরে আসার কথা?আর এলে তো এলে আসার আগে আমাকে একবারো বললে না কেন?

অন্যঃফুল(প্রিসা)আস্তে আস্তে এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি কোনটার উত্তর দেবো।

প্রিসাঃএকটা একটা করে সবগুলোর উত্তর দাও।

অন্যঃআমি ভোরেই এসেছি,তুই ঘুমিয়েছিলিস তাই তোকে ডাকিনি।আমার কাজ আগে শেষ হয়ে গেছে বিদায় তাড়াতাড়ি চলে এলাম আর তোকে বলেনি কারণ ভেবেছিলাম তোকে একটা সারপ্রাইজ দিয়।

প্রিসাঃহু… পচা।(মুখ ফুলিয়ে)

অন্যঃওরে আমার মিষ্টি ফুল(গাল টেনে)।আচ্ছা এবার তুই তাড়াতাড়ি নিচে আয় তোর জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।

প্রিসাঃকি সারপ্রাইজ?(কৌতূহল হয়ে)

অন্যঃতুই তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় তাহলে দেখতে পাবি।(যেতে যেতে)

প্রিসা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়।নিচে এসে যেটা দেখে তাতে তো সে প্রচুর অবাক।

প্রিসাঃমামা-মামি তোমরা?

প্রিসার মামাঃআরে আমার প্রিন্সেস,কতোদিন পরে দেখলাম।

প্রিসার মামীঃমামণি তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।মাশাল্লাহ দেখতেও খুব সুন্দর হয়েছে।

প্রিসাঃকেমন আছো তোমরা?আর কখন এসেছো?

প্রিসার মামাঃআলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি,তুমি কেমন আছো প্রিন্সেস?

প্রিসাঃআমিও ভালো আছি।তোমরা কখন এসেছো আর কে তোমাদের এয়ারপোর্টে থেকে ড্রপ করেছে?

অন্যঃআমি করেছি আসলে আমরা একি ফ্লাইটেই এসেছি।

অয়নঃআব্বু-আম্মু?(অবাক হয়ে)

সায়ন আর অয়ন গিয়ে তাদের বাবা-মাকে জরিয়ে ধরে।

সায়নঃকখন এসেছো তোমরা?আর আমাদের জানাওনি কেন?তাহলে আমরা নিয়ে আসতাম।

প্রিসার মামীঃআমরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।

অয়নঃতোমাদের অনেক মিস করেছি।

সায়নঃএন্ড আমিও।

প্রিসার মামীঃআমরাও করেছি।

সায়নঃআচ্ছা তোমাদের কে নিয়ে এসেছে?

প্রিসার মামাঃকে আবার আমাদের অন্য।

অয়নঃআরে ব্রো কেমন আছিস তুই?কতদিন পর তোকে আবার দেখতে পেলাম।

সায়নঃএখানে এসে তো আমাদের ভুলেই গিয়েছিস।

অন্যঃআরে ধুর কে বলেছে ভুলে গিয়েছি।

প্রিসাঃভাইয়া তুমি ওনাদের আগে থেকেই চেনো?

অন্যঃহ্যাঁ,আসলে আমি বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম না তখন আমরা একিই সাথে পড়াশোনা করেছি।এরা আমার ভাই কিন্তু তার আগে আমার বেস্টফ্রেন্ড।(দু’জনকে একহাতে জরিয়ে ধরে)

সায়নঃইয়াপ।

প্রিসাঃ(সবাই এনাদের আগে থেকেই চিনতো শুধু আমিই চিনতাম না — মনে মনে)

এরপর সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।অন্য,সায়ন,অয়ন অন্যের রুমে চলে যায়,প্রিসার বাবা আর মামা যায় বাজারে আর প্রিসার মা আর মামী রান্নাঘরে।বেচারি প্রিসায় একা রয়ে যায়,তাই সে নিজে নিজে বকবক করতে করতে রুমে চলে যায় আর ভার্সিটির জন্য তৈরি হতে থাকে।

চলবে……….

মেঘবতী পর্ব-০৫

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসার যখন ঘুম ভাঙে তখন প্রায় বিকেল হয়ে যায়।প্রিসা ফ্রেস হয়ে নিচে এসে দেখে কেউ নেই মানে সবাই এখন ঘুমাচ্ছে।প্রিসা আস্তে আস্তে কিচেনে গিয়ে কিছু খেয়ে নেয় কারণ তার প্রচুর খিদে পেয়েছে।খাওয়া শেষ হলে ছাদে চলে যায়।কানে হেয়ার ফোন গুজে দোলনায় বসে গান গুনতে গুনতে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে সে।আহ্ কি সুন্দর আকাশ কোথাও লাল কোথাও কমলা আবার কোথাও নীল এসব চিন্তা করছে তখনই কেউ তার কান থেকে হেয়ার ফোনের দুই প্রান্ত দুইদিক থেকে খুলে নেয়।প্রিসা পেছনে ফিরে দেখে অয়ন আর সায়ন দাঁড়িয়ে আছে তারমানে ওরাই খুলেছে।

প্রিসাঃকি হয়েছে?আমার হেয়ার ফোন খুলেছেন কেন?দিন ওটা আমাকে।

সায়নঃওকে দেবো কিন্তু পরে।আচ্ছা কি করছিলে তুমি?

প্রিসাঃআপনাদের কেন বলবো?

অয়নঃহুম….ওসব বাদ দাও।আচ্ছা তুমি কি কখনো নোনতা অরেঞ্জ জুস খেয়েছো?

প্রিসাঃ অরেঞ্জ জুস আবার নোনতা হয় নাকি?

সায়নঃহয় হয় কেন তুমি জানোনা?অরেঞ্জ জুসে যদি তিন-চার চামচ লবণ মিশিয়ে দাওনা তাহলে সেটা নোনতা অরেঞ্জ জুস হয়ে যায়।

প্রিসাঃ(এইরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি ওনাদের জুসে লবণ মিশিয়েছিলাম।-মনে মনে)ও… আচ্ছা,আমি তো জানতাম না।

অয়নঃকোন লবণ মিশিয়েছিলে আমাদের জুসে?(হালকা রেগে)

প্রিসাঃআমি…..

সায়নঃআমরা জানি তুমিই মিশিয়েছিলে কারণ ফুফি ভুলেও ভুল করে এতোগুলা লবণ কোনদিনও মেশাবেনা।আর ফুফি গ্লাসগুলো তোমাকে দিয়েছিল তারমানে তুমিই মিশিয়েছিলে।

প্রিসাঃহুম,আমি লবণ মিশিয়েছি।তো কি করবেন আপনারা?

অয়নঃকেন মিশিয়েছো?

প্রিসাঃকারণ আপনারা আমাকে কাজের মেয়ে বলেছেন তাই।উঁহু….. আমাকে,এই প্রিসাকে কাজের মেয়ে বলেছেন আর আমি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো বলে আপনাদের মনে হয়।নো,কখনোই না,হু।

সায়নঃ আচ্ছা এবার বুঝতে পেরেছি।

প্রিসাঃহু।(কিছুক্ষণ চুপ করে সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রিসা।তারপর…..)লাল টি-শার্ট…….।(রেগে চিৎকার করে।)

অয়নঃও আল্লাহ গো।(কানে হাত দিয়ে)

সায়নঃকি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছো কেন?আর কে এই লাল টি-শার্ট?

প্রিসাঃআপনি হচ্ছেন লাল টি-শার্ট।

সায়নঃআমি?

প্রিসাঃহ্যাঁ আপনি,সেসব কথা বাদ দিন এটা বলুন আপনার সাহস কি করে হয় আমার প্রিয়,ফেভারিট,জানের জান,এত সুন্দর গাছ থেকে ফুল ছেঁড়ার?

সায়নঃওরে খোদা,এই সামান্য ফুলটার জন্য এভাবে চিৎকার করছো তুমি।

প্রিসাঃএটা সামান্য ফুল না এটা আমার প্রিয় ফুলগুলোর মধ্যে একটা আর আপনি কিনা আমার থেকে জিজ্ঞেস না করে ছিঁড়ে ফেললেন।(তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে)এইযে নীল টি-শার্ট কি লুকাচ্ছেন শুনি?হাতটা সামনে আনুন তো দেখি।

অয়নঃও কিছু না।(কাচুমাচু হয়ে)

প্রিসাঃকিছু আছে কি নেই সেটা পরের কথা আগে হাতটা সামনে আনুন।

প্রিসা অনেক জোরজবরদস্তি করে অয়নের হাত সামনে আনে।

প্রিসাঃনীল টি-শার্ট(রেগে)।আমার কাঠগোলাপ।

অয়নঃসরি সরি।

প্রিসাঃআরে রাখেন আপনাদের সরি,আপনাদের তো আমি আজকে……।

প্রিসা আশেপাশে মারার জন্য কিছু খুঁজতে থাকে সেই সুযোগে অয়ন আর সায়ন পালিয়ে যায়।

প্রিসাঃনীল টি-শার্ট,লাল টি-শার্ট….(রেগে)।এসেছে মাত্র কিছু ঘন্টা হয়েছে এখনিই আমাকে দুজনেই জ্বালিয়ে মারছে না জানি এরপর কি হবে।এ্যাঁ…আমার ফুল।

রাতে খাবার সময়,

প্রিসার বাবাঃকেমন আছো তোমরা দুজন?

অয়নঃএইতো ফুপু ভালো।তুমি কেমন আছো?শরীর ঠিক আছে?

প্রিসার বাবাঃআমি একদম ফাটাফাটি আছি।তা তোমাদের আব্বু-আম্মু কবে আসবে?

সায়নঃএইতো ফুপু পরের মাসেই চলে আসবে।

প্রিসার বাবাঃতাহলে তো ভালোই।তাহলে ওরা যতদিন না আসছে তোমরা ততদিন আমাদের সাথেই থাকো।

অয়নঃনা না ফুপু আমরা কালকেই চলে যাবো।

সায়নঃহ্যাঁ ভাই ঠিক বলছে।আমরা কালই আমাদের বাসাই চলে যাবো।

প্রিসার বাবাঃনা আমি তোমাদের কোন কথা শুনছি না।তোমাদের আব্বু-আম্মু যতদিন না আসছে তোমরা এখানেই থাকবে।

প্রিসার মাঃহ্যাঁরে,তোদের ফুপু ঠিকই বলছে।তোরা দুটো ছেলে কিভাবে একা একা ওখানে থাকবি বল।তারচেয়ে ভালো আমাদের সাথেই থাক।

অয়ন এবং সায়নঃঠিক আছে।

প্রিসাঃ(কি?আরো একমাস এদের সহ্য করতে হবে। ও মাই গড।একদিনেই আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে,এখন না জানি কি করবে।)

এরপর সবাই চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে গেলো।খাওয়া শেষ হওয়ার পর প্রিসা বসে বসে টিভিতে টাইম ট্রাভেলিং একটা কোরিয়ান ড্রামা দেখে শুরু করে।কিছুক্ষণ পর অয়ন আর সায়ন এসে প্রিসার দুপাশে বসে পরে।প্রিসার একবার ঘাড় বাঁকিয়ে দুজনকে দেখে আবার টিভি দেখে মনোযোগ দেয়।

অয়নঃকি দেখছো?

প্রিসাঃদেখতে পাচ্ছেন না।

অয়নঃপাচ্ছিতো কি দেখছো কিন্তু আধোও কিছু বুঝতে পারছো নাকি এমনিতেই তাকিয়ে আছো?

প্রিসাঃহ্যাঁ বুঝতে পারছি না বুঝলে কি আর দেখতাম।

সায়নঃকি তুমি কোরিয়ান ভাষা বুঝতে পারো?

প্রিসাঃআরে ধুর,আমাকে শান্তিতে টিভিও দেখতে দিবেনা দেখছি।ওই দেখতে পারছেন না নিচে ইংলিশ সাবটাইটেল দেওয়া আছে।

অয়নঃও আচ্ছা এবার বুঝতে পেরেছি তাই তো বলি তুমি আর কোরিয়ান ভাষা,হু।(অনেকটা তাচ্ছিল্যভাবে)

প্রিসা চোখ ছোট করে অয়ন দিকে তাকাই তবে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ন বলে উঠে—

সায়নঃআচ্ছা এসব বাদ দাও,চলো নতুন কিছু দেখি।

প্রিসাঃনতুন কিছু আবার কি?

সায়নঃসেটা তো জানি না।

অয়নঃআচ্ছা চলো হরর মুভি দেখি।কি বলো?

প্রিসাঃহ..রর…. মু…ভি…।তাও এতো রাতে।(কিছু ভীত গলাই)

সায়নঃহ্যাঁ দেখা যায়।তুমি ভয় পাও নাকি প্রিসা?

প্রিসাঃহুম এই একটুআধটু।

অয়নঃধুর কিছু হবে না,আমরা আছি না।

এরপর তিনজনে মিলে হরর মুভি দেখতে শুরু করলো।প্রথমে ভয় না লাগলেও এখন প্রিসার প্রচুর ভয় লাগতে শুরু করেছে।এদিকে অয়ন আর সায়ন চোখে চোখে ইশারায় কি যেন বলছে একে অপরকে।

অয়ন এবং সায়নঃ থ্রী…. টু…. ওয়ান…..এন্ড…. ভাও……..।

প্রিসাঃআ…………….।এ্যাঁ………… মা……।

আসলে অয়ন আর সায়ন আচমকা চিৎকার করার কারণে প্রিসা ভয় পেয়ে যায়।এমনিতেই হরর মুভি দেখে তার অবস্থা খারাপ তার উপর আবার এরা দুজন ভয় দেখিয়েছে।সব মিলিয়ে ভয়ে কান্না করে দেয় প্রিসা।প্রিসার কান্না শুনে তার বাবা-মা তাদের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

প্রিসার বাবাঃকি হয়েছে মা?

প্রিসার মাঃপ্রিসা?

প্রিসা তার মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

প্রিসার মাঃকিরে ভয় পেয়েছিস কিছু দেখে?

প্রিসা কান্নার কারণে কিছু বলতে পারছে না।এদিকে সায়ন আর অয়নও গিলটি ফিল করছে,তারা বুঝতে পারেনি প্রিসা এতোটা ভয় পেয়ে যাবে।

অয়নঃসরি ফুপি আসলে ভুলটা আমাদের।আমরাই ওকে ভয় দেখিয়েছি।

সায়নঃআমরা বুঝতে পারিনি ও এতটা ভয় পেয়ে যাবে,সরি প্রিসা।

প্রিসার বাবাঃআচ্ছা ঠিক আছে এতে এতো মন খারাপ করার কি আছে শুনি,তোমরা ওর সাথে একটু মজা করেছো এতে সরি বলার কি আছে।আসলে ও ছোটবেলা থেকেই এরকম একটুতেই ভয় পেয়ে যায়।আচ্ছা তোমরা যাও এবার ঘুমিয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।

অয়ন আর সায়ন নিজের রুমে চলে যায়।প্রিসাকে তার মা তার(প্রিসার) রুমে নিয়ে যায় এবং ঘুম পাড়িয়ে দেয়।প্রিসা ঘুমিয়ে গেলে তার মা চলে যায়।

মধ্যরাত,

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই।ঘুমের মধ্যে প্রিসা অনুভব করছে যে কেউ তাকে খুব কাছ থেকে দেখছে কিন্তু ঘুমের কারণে চোখ খুলতে পারছে না।আগন্তুকটি অনেকটা সময় প্রিসার দিকে তাকিয়ে তার কপালে কিস করে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।

সকালে,

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে শুরু হয় প্রিসা।

অয়নঃএত সেজেগুজে কোথাই যাওয়া হচ্ছে শুনি?

প্রিসা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন।প্রিসা সেদিকে মন না দিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।

প্রিসাঃকোথাই যাচ্ছি সেটা আপনাকে কেন বলবো?আমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো আপনার কি?

অয়নঃওকে,তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাও।

বলে অয়ন চলে যায়।রেডি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য রওনা হয় প্রিসা।সিঁড়িতে তার সাথে সায়নের দেখা হয়।

সায়নঃকোথাই যাচ্ছো?

প্রিসাঃআপনাকে কেন বলবো,হু।

বলে আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে।তারা ব্রেকফার্স্ট করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দেয় প্রিসা।

ভার্সিটি এসে নিজের জায়গায় বসে পরে প্রিসা তখনই একটা মেয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়াই।

প্রিসাঃকি সমস্যা?(হালকা বিরক্ত হয়ে)

—- তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার জায়গায় বসেছো।

প্রিসাঃকোথাও কি তোমার নাম লেখা আছে?যদি নাম লেখা থাকে তাহলে আমি উঠে যাবো।

—- তোমাকে তো আমি…..

প্রিসাঃকি করবে?

—- কি করবো?তোমার দুই গালে… দুইটা চুমা দিবো,হিহিহিহি।

প্রিসাঃ ছিঃ।

—- এতে ছিঃ কি আছে?

প্রিসাঃআচ্ছা সেসব বাদ দে,এবার বল বেড়ানো কেমন কাটলো?

—- একদম ফাটাফাটি।তোর জন্য মা অনেক কিছু পাঠিয়েছে।

প্রিসাঃতাই নাকি,তাহলে দে।

চলুন মেয়েটি সম্পর্কে কিছু বলি—
(মেয়েটির নাম হচ্ছে স্মিতা ইসলাম।প্রিসার একমাত্র আর জানের জিগরা বন্ধু।পুরো ক্লাসে প্রিসা একমাত্র স্মিতার সাথেই বেশি টাইম স্পেন্ড করে আর বেশি কথা বলে।আপাতত এতটুকুই বাকিটা পরে বলছি)

প্রিসা আর স্মিতা ক্লাস শেষ করে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসে থাকা একটা বড় গাছের নিচে বসে গল্প করে।তারপর বসাই যাওয়ার জন্য রওনা হয় কিন্তু গেট পর্যন্ত এসে প্রিসা থেকে যায়।

স্মিতাঃপ্রিয়ু কি হয়েছে?হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?

প্রিসাঃগেটের বাইরে দেখ।

স্মিতা প্রিসার দৃষ্টি অনুসরণ করে গেটের বাইরে থাকাই আর যা দেখে তাতে তার ভ্রু-কুচকে যায়।

চলবে………..

মেঘবতী পর্ব-০৪

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসাঃআপনারা?(অবাক হয়ে)

(প্রিসা দরজা খুলে দেখে লম্বা চওড়া দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।একজন নীল টি-শার্ট এবং আরেকজন লাল টি-শার্ট পরিহিত।দুজনের কাঁধেই বড় একটা ব্যাগ এবং হাতে একটা লাগেজ।এদের কাউকেই প্রিসা চেনেনা তাই হঠাৎ দেখাই অবাক হয়ে গিয়েছে।)

—- হেই ইউ,এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(লাল টি-শার্ট ওয়ালা)

—- ইয়াপ,এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেন এন্ড হু আর ইউ?তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।(নীল টি-শার্ট ওয়ালা)

—- দেখো মনে হচ্ছে কাজ করে এই বাড়িতে কাজ করে।(লাল টি-শার্ট ওয়ালা।)

প্রিসাঃ(কি!কাজের মেয়ে?রিয়েলি?-মনে মনে)দেখুন,আমি……….

—- তাই নাকি।তাহলে এই নাও(প্রিসার দিকে নিজের ব্যাগটা বাড়িয়ে)এটা নিয়ে ভিতরে এসো।(নীল টি-শার্ট ওয়ালা)

বলে ভিতরে যেতে নেবে তখন প্রিসা তাদের পথ আটকে দাঁড়ায়।

প্রিসাঃকোথায় যাচ্ছেন হ্যাঁ?আর কে আপনারা?কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করেই কোথা থেকে উড়ে এসে ঘরে ভেতরে চলে যাচ্ছেন।

লাল টি-শার্ট ওয়ালাঃএই পিচ্চি মেয়ে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাদের পথ আটকাচ্ছো।(হালকা রেগে)

প্রিসাঃতো আটকাবো নাতো কি বাড়ির ভেতরে ঢোকার জন্য নিমন্ত্রণ করবো?দেখুন আমার মনে হচ্ছে আপনারা ভুল ঠিকানায় চলে এসেছেন।

নীল টি-শার্ট ওয়ালাঃএটা ডাঃআকাশ এবং ডাঃমিতা চৌধুরীর বাড়ি তো?

প্রিসাঃহ্যাঁ কিন্তু……

নীল টি-শার্ট ওয়ালাঃতাহলে ঠিক আছে।ব্রো চলে আয়।

বলে প্রিসাকে ওভারটেক করে নীল টি-শার্ট ওয়ালাটা ভিতরে চলে যায়।

প্রিসাঃআরে ওই নীল টি-শার্ট…….

লাল টি-শার্ট ওয়ালাঃএইযে শুনো আমার আর ভাইয়ের ব্যাগগুলো নিয়ে ভেতরে চলে আসে।

বলে লাল টি-শার্ট ওয়ালাও ভিতরে চলে যায় আর এদিকে প্রিসা হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছে।

প্রিসাঃএটা কি হলো?আমার বাড়িতে এসে আমাকেই কাজের লোক বানিয়ে দিলো আবার নিজেদের ব্যাগগুলোও রেখে চলে গেলো।এই নবাবজাদারা কে?কোথা থেকে উদয় হয়েছে এরা?ভিতরে যাই নয়তো কেমনে জানবো।আরে ধুর আবার এই নবাবজাদাদের ব্যাগগুলোও নিতে হবে।নাহলে না জানি আবার কি করে।

প্রিসা ব্যাগগুলো অনেক কষ্টে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত নিয়ে আসে কিন্তু ড্রয়িং রুম এসে প্রিসা যেটা দেখে তাকে তার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।কারণ প্রিসার মা আর ছেলে দুটো খুব হেসে হেসে কথা বলছো।

প্রিসার মাঃআরে প্রিসা মা এ তুই কি করছিস?

নীল টি-শার্ট ওয়ালাঃফুপি এই মেয়েটা কে?

প্রিসাঃফুপি?(অস্ফুট স্বরে)

প্রিসার মাঃআরে ওতো প্রিসা,আমার মেয়ে।

ছেলে দু’টোঃমেয়ে!(অবাক হয়ে)

প্রিসাঃমা তুমি ওনাদের চেনো?

প্রিসার মাঃআরে চিনবো না কেন,ওরা তো আমার ভাইয়ের ছেলে।তোর মামাতো ভাই অয়ন আর সায়ন।

প্রিসাঃশান্ত মামার ছেলে?

প্রিসার মাঃহুম।

(অয়ন আহমেদ এবং সায়ন আহমেদ দুই ভাই তারা।এতোদিন পুরো পরিবারসহ আমেরিকায় ছিল।কিছুদিন আগেই বিজনেস স্টাডি শেষ করেছে।অয়ন,সায়ন দুজনেই দেখতে অনেক সুন্দর। লম্বা,ফর্সা দুজনের চোহারা,গায়ের সব উচ্চতা প্রায় সবই অনেকটা মিল।শুধু তাদের চোখের মণির রঙের পার্থক্য আছে।অয়নের চোখের মণিগুলো হালকা নীল রঙের আর সায়নেরগুলো ব্রাউনিস টাইপের।)

অয়ন(নীল টি-শার্ট ওয়ালা)ঃফুপি ও তোমার মেয়ে?মানে এ বাড়ির মেয়ে ও?

প্রিসার মাঃহ্যাঁরে বাবা।

সায়ন(লাল টি-শার্ট ওয়ালা)ঃআমরা তো আরো ভেবেছিলাম যে…..।

প্রিসার মাঃকি বলেছিলিস তোরা?

প্রিসাঃকি হলো বলুন কি ভেবেছিলেন?(দাঁতে দাতঁ চেপে)আচ্ছা আমি বলছি,মা ওনারা ভেবেছিলেন যে……

অয়নঃকিছু না ফুপি।আব… ফুপি কিছু খেতে দাও প্লিজ,প্রচুর খিদে পেয়েছে।

প্রিসার মাঃআরে আগে বলবি না,তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় ততক্ষণে আমি খাবার নিয়ে আসছি।

প্রিসার মা ওখান থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে গেলো।

সায়নঃহাই।(জোরপূর্বক হেসে)

প্রিসাঃ(আমাকে কাজের মেয়ে বলে এখন আমার হাই বলা হচ্ছে।-মনে মনে)

নিজের মনে মনে কথাগুলো বিরবির করে অয়ন আর সায়নের ব্যাগগুলো তুলে তাদের গায়ে ছুড়ে মারে।

অয়নঃআউচ… এই পিচ্চি তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি?এভাবে কেউ ব্যাগ ছুড়ে মারে?

প্রিসাঃকেউ মারে কিনা জানি না কিন্তু আমি মেরেছি আর বেশ করেছি মেরে।আমাকে কাজের মেয়ে বলা না,একদম বেশ হয়েছে।

সায়নঃতো এই কারণে পিচ্চি রেগে বোম হয়ে গিয়েছে।(দুষ্টুমি করে)

প্রিসাঃএই যে শুনুন নবাবজাদারা আমি পিচ্চি নয় কারণ আমার বয়স ১৮+।সো ডোন্ট কল মি পিচ্চি,ওকে।

অয়নঃওকে,বুড়ি।

প্রিসাঃওই বুড়ি কেন বললেন?

অয়নঃকারণ তুমি বললে না তোমার বয়স ১৮+ তুমি পিচ্চি না তার মানে তো তুমি বুড়ি।কি ঠিক বলছি না ব্রো?

সায়নঃএকদম ঠিক ভাই।

প্রিসাঃআহ…… এই আপনারা আমার চোখের সামনে থেকে যানতো।ধুর আপনাদের যেতে হবেনা আমিই চলে যাচ্ছি।

বলে প্রিসা রেগে নিজের রুমে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর,

প্রিসার মাঃপ্রিসা শুন না মা তুই এই দুটো গ্লাস অয়ন আর সায়নকে দিয়ে আয় না,আসলে আমার একটা ইম্পর্টেন্ট কল এসেছে।

প্রিসাঃহু… ঠিক আছে মা।

প্রিসার মা জুসের গ্লাস দুটো প্রিসাকে দিয়ে কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলেন।প্রিসা কিছু একটা ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।

প্রিসাঃঠক…ঠক…. ভেতরে আসবো?

সায়নঃএসো।

প্রিসা দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো।ভিতরে ডুকে দেখলো সায়ন বিছানায় বসে মোবাইল টিপছে কিন্তু অয়ন কোথাই নেই।

প্রিসাঃ নীল টি-শার্ট…. না মানে অয়ন ভাইয়া কোথাই?

সায়নঃভাই তো……..

সায়ন এর আগে কিছু বলবে তার আগেই কট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে গেলো।প্রিসা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো আর সাথে সাথে দিলো একটা চিৎকার।

প্রিসাঃআ…………….।(চোখ বন্ধ করে)

অয়নও হঠাৎ প্রিসাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো।এখন প্রিসা আর অয়ন চিৎকার করছে তাহলে সায়ন কেন বাদ যাবে।সেও চিৎকার দিয়ে উঠলো।

অয়নঃআ………….।ওই তুই চিৎকার করছিস কেন?

সায়নঃকেন করছি?আব… তোরা করছিস তাই আমি করছি।

অয়নঃডাফার একটা আর তুই বলিসনি কেন রুমে কেউ এসেছে।(হালকা রেগে)

সায়নঃওতো এখন এলো তো তোমাকে বলবো কখন?

প্রিসা অনেক আগেই চিৎকার বন্ধ করে দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

প্রিসাঃআমি কি চোখ খুলবো?

অয়নঃআবার আমাকে টাওয়াল পরা অবস্থায় দেখার ইচ্ছে আছে বুঝি?

প্রিসাঃএই না না।

অয়নঃতাহলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকো,যতক্ষণ না আমি খুলতে বলছি।

অয়ন তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম গিয়ে কাপড় পরে আসে তারপর প্রিসাকে চোখ খুলতে বলে।

প্রিসাঃওই আসলে মা আপনাদের জন্য জুস পাঠিয়ে ছিল।আমি এখানে রেখে দিচ্ছি।(পাশেই একটা টেবিলে ট্রে টা রেখে দেয়)আমি এবার আসছি।

আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি করে ওদের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।বাইরে এসে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে তারপর দরজায় কান পাতে।কিছুক্ষণ পর ভেতরের থেকে কিছু আওয়াজ আসে।

অয়নঃওয়াক… থু থু,ছিঃ এটা কি?(মুখ কুচকে)

সায়নঃএটা কোন জুস?আমার তো মনে হচ্ছে এটা লবণের ফ্যাক্টরি।

প্রিসা আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে আসে।তারপর দরজা বন্ধ করে হাসতে শুরু করে,পুরোই বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।

প্রিসাঃহাহাহাহা…… কেমন লেগেছে নবাবজাদারা হুম?আমাকে কাজের মেয়ে বলা না তারপর আবার নিজেদের ব্যাগ আমাকে দিয়ে আনানো।একদম ঠিক হয়েছে।আসলেই ওটা জুস ছিল না লবণের ফ্যাক্টরিই ছিল।প্রথমে ভেবেছিলাম মরিচের গুঁড়ো মিশাবো কিন্তু পরে ভাবলাম এটা খুবই পুরোনো আইডিয়া তাই লবণ মিশিয়ে দিলাম।তাও দুজনের গ্লাসে তিন চামচ করে মোট ছয় চামচ,হিহিহিহি।

এসব কিছু বিরবির করতে করতে প্রিসা ঘুমিয়ে পরে,দুপুরের খাবার না খেয়ে।

চলবে………

মেঘবতী পর্ব-০৩

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা দেখছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।সবাই বাইরে এসে দেখলো একটা মেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,চোখদুটো লাল আর ফোলা ফোলা।তার সামনে অর্কে দাঁড়িয়ে আছে।কারো বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়েটা কে।

প্রিসাঃকি হয়েছে মিস্টার অর্ক?আপনি আপু করে মেরেছেন কেন?আপনি কি কাপুরুষ যে কাপুরুষের মতো কাজ করছেন?

অর্কঃহ্যাঁ আমি কাপুরুষ।ওকে মারার কারণে যদি আমাকে সবাই কাপুরুষও বলে তাতেও আমার কিছু যায় আসেনা।তুমি জানো ও কি করতে যাচ্ছিল?এই দেখো।

বলে ছোট একটা বোতল প্রিসার দিকে এগিয়ে দিলো।প্রিসার বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা কিসের বোতল। হাই পাওয়ারি ঘুমের ঔষধ আছে সেটাতে।

অর্কঃদেখেছো।এখন বুঝতে পেরেছো কেন আমি ওকে মেরেছি?আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমার কি হতো?কাকে নিয়ে বাঁচতাম আমি?

প্রিসাঃএটা কি হওয়ার কথা নয় মিস্টার অর্ক,হুম?আমি তো মনে করি তাপসি আপু ওনার জায়গায় ঠিক।আজকে যদি সায়নি আপু সাহস করে পালিয়ে না যেতো তাহলে তো অনেক আগেই আপনাদের বিয়ে হয়ে যেতো।তখন,তখন কি করতেন আপনি?

অর্কঃচুপ।

প্রিসাঃআর তাপসি আপু ওনার বা আপনাদের ভালোবাসার কথা না হয় বাদ দিলাম।কিন্তু আপনার জীবন।সবাই বলে জীবনে ভালোবাসা একবারই আসে কিন্তু আমি বলবো সেটা ভুল।জীবনে ভালোবাসা হাজার বার আছে,সত্যিকারের ভালোবাসাও আসে।কিন্তু জীবন,এটা যদি একবার হারিয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয়বার সেটা কখনোই আসে না।ভালোবাসা থেকেও মূল্যবান হচ্ছে জীবন।আজ যদি আপনি সুইসাইড করতেন তাহলে কি কিছু হতো?হ্যাঁ হতো কিন্তু যাই হতো না কেন মৃত্যুর পর যদি আফসোস করার সুযোগ থাকতো তাহলে আপনি শুধুই আফসোস করতে।যদি সায়নি আপুর সাথে মিস্টার অর্কের বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে হয়তো কয়েকমাস উনি কষ্ট পেতেন কিন্তু একসময় উনি সায়নি আপুর সাথে মানিয়ে নিতেন।আর যদি এখন উনি আপনাকে জীবিত অবস্থায় না পেতেন তাহলে হয়তো পাগল হয়ে যেতো নয়তো কিছু মাস বা বছর অনুশোচনা করে আবার নিজেকে গুছিয়ে নিতো।কারণ কারো জীবন অন্য কারোর জন্য থেমে থাকে না।

তাপসিঃআই এম সরি।(কান্না করতে করতে)

প্রিসাঃঠিক আছে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।এখন যান এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আর দেরি করা ঠিক হবে না।আর এই যে মিস্টার অর্ক আজ মেরেছেন ঠিক আছে কিন্তু আর কোনদিন যদি তাপসি আপুর গায়ে হাত তুলেছেন তো।

অর্কঃআমি কোনদিনও ওকে আর কষ্ট দেবোনা।

প্রিসাঃঠিক আছে,এখন যান।এই যে আপনারা ওনাদের নিয়ে যায়।

এরপর সবাই ওদের তৈরি করে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়।এক সাইডে দাঁড়িয়ে প্রিসা এসব দেখছে তখনই কারো কথা তার কানে আসে।

—- আমাকে বিয়ে করার জন্য বুঝি এতো কষ্ট করে অর্ক জিজুর সাথে বিয়েটা ভেঙেছো?

ভ্রু কুঁচকে প্রিসা তার পাশে তাকাই।হুম,যেটা ভেবেছিল সেটা,এটা ওই বেয়াদব শুভ।এ হচ্ছে দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে প্রিসা দুচোখ সহ্য করতে পারেনা।কেনো পারে না সেটা বলার আগে শুভ কে সেটা আগে বলেনি।শুভ হচ্ছে সালমা মানে সায়নির ফুপির ছেলে।এর নম্বরের শয়তান আর ছেচরা একটা ছেলে।মেয়ে মানেই তার কাছে খেলার জিনিস।শুভ যে এরকম সেটা প্রথম দেখাই প্রিসা বুঝতে পেরে গিয়েছিলো।

ফ্ল্যাশব্যাক……….

কোণায় একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে গান শুনছে প্রিসা।তখন কোথা থেকে যেন শুভ এসে ধুপ করে তার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।প্রিসা একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিলো।

শুভঃহাই।

ঘাড় বাঁকিয়ে শুভ দিকে চেয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দেয়।

শুভঃকি হলো কিছু বলছো না যে?তোমাকে হাই বললাম তুমি কোন রিপ্লাই দিলেনা?

প্রিসার এবার রাগ হতে শুরু করলো।প্রথমত অচেনা কাউকে তুমি করে বলার কারণে দ্বিতীয়ত প্রিসা বুঝতে পেরেছে শুভ ওর পাশে কেন বসেছে।সেটা ভেবে আরো রাগ হচ্ছে।তাও নিজেকে শান্ত করে শুভকে জবাব দিলো কারণ সে কারো সাথে বেয়াদবি করতে চাইনা।

প্রিসাঃ আসসালামু আলাইকুম।(ফোনের দিকে তাকিয়ে)

শুভঃআব…ওয়ালাইকুম আসসালাম।হাই,আমি শুভ,শুভ মির্জা।সায়নির ফুফাতো ভাই।তুমি?

প্রিসাঃপ্রিসা,সায়নি আপুর দুরসম্পর্কের কাজিন।

শুভঃশুধুই প্রিসা?আর কিছু নেই।

প্রিসাঃ(কুল প্রিসা কুল,এখানে কিছু বললে ঝামেলা হয়ে যেতে পারে।আর এই অভদ্র ছেলেও না জানি কোন কথার কি অর্থ বের করে নেয়।–মনে মনে)
অসমিলা চৌধুরী প্রিসা।

সরি আপনাদের তো প্রিসা সম্পর্কে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম।তো চলুন প্রিসা সম্পর্কে কিছু জেনে নিয়।
(প্রিসা হচ্ছে আমাদের নায়িকা।পুরো নাম অসমিলা চৌধুরী প্রিসা।বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছে।প্রিসা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মায়াবী,চোখের চশমাটার কারণে তাকে আরো বেশি কিউট লাগে,প্রিসার গায়ের রং উজ্জ্বল।শ্যামলা,চুলগুলো প্রায় কোমড় পর্যন্ত লম্বা।মোটামুটি শান্ত স্বভাবের একটা মেয়ে সে।আপাতত এটুকুই বাকিটা আস্তে আস্তে জেনে যাবেন।)

শুভঃবাহ্ নাইস নেইম।আচ্ছা তুমি কি আকাশ চাচার মেয়ে?তখন তোমাকে ওনার সাথে দেখলাম কথা বলতে?

প্রিসাঃ(বেটা জানিস যখন তখন আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন?—মনে মনে)হ্যাঁ।

এটা বলেই প্রিসা ওখান থেকে উঠে চলে গেলো,নাহলে আরো কিছু জিজ্ঞেস করতো শুভ।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড……..

প্রিসা ওদিকে পাত্তা না দিয়ে ওখান থেকে সরে পানি খেতে চলে যায়।

শুভঃওই কি হলো?আমি ঠিক বলছিনা?আমাকে বিয়ে করার জন্যই তুমি এতো কিছু করেছো না?

প্রিসাঃদেখুন ভাইয়া,আমি আপনাকে চিনোও না,না আপনার সম্পর্কে কিছু জানি।তাই বিয়ে করার প্রশ্ন কেন চিন্তাও দূর দূর পর্যন্ত আমার মাথাই আসেনি।সেই সাথে আমি আপনার বোন লাগি।তাই বোনকে সম্মান করুন।বোনকে বোনের চোখেই দেখুন,এর থেকে বেশি দেখতে যাবেন না,নাহলে পরে চোখের সমস্যা হবে।

শুভঃএই তুমি আমার কোন জন্মের বোন?

প্রিসাঃআমি আপনার এই জন্মের বোন তাও দুই ভাবে।প্রথমত আমি আপনার চাচার মেয়ে মানে আমি আপনার চাচাতো বোন আর চাচাতো বোন আর এমনি বোনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।দ্বিতীয়ত আমি আপনার জাতীয়গত বোন।এবার বলি সেটা কেমনে।দেখুন সবাই বলে ছেলেরা যেন মেয়েদের মা-বোনের চোখে দেখে।আর ছেলেমেয়ের অধিকার তো সমান সমান।সেই জন্য আমাদেরও তো উচিত সব ছেলেদের ভাইয়ের চোখে দেখা তো সেই হিসেবে আপনি আমার ভাই।এবার বুঝতে পেরেছেন।তাই বোনকে বোনের চোখে দেখুন।
_______________________________________

সারাদিনের সব ঝামেলা শেষ করে সবাই খেতে বসেছে।প্রিসার একপাশে তার মা,অন্যপাশে তার বাবা।দুজনেই তাকে এটা সেটা উঠিয়ে দিচ্ছে কিন্তু প্রিসা শুধু খাবারগুলো নাড়িয়ে যাচ্ছে কিছু খাচ্ছে না।খাবে কেমন করে প্রিসা,তার সামনে তো শুভ বসেছে আর পা দিয়ে বারবার প্রিসাকে বিরক্ত করছে।

প্রিসার মাঃকি হয়েছে মা খাচ্ছিস না কেন?

প্রিসাঃ(খেতে দিলে তো খাবো।-মনে মনে)এইতো খাচ্ছি।

একসময় বিরক্ত হয়ে প্রিসা নিজের জুতা দিয়ে শুভের পায়ে পারা দেয়।এরপর শুভ আর কিছু করেনি।
__________________________________________

মাঝে বেশ কিছু দিন চলে যায়।সেই দিনের পর ওই বাড়ির কারোর সাথে প্রিসার যোগাযোগ হয়নি।তবে মাঝে এক-দুবার অর্ক এবং তাপসির সাথে তার কথা হয়েছে।আজ ভার্সিটি বন্ধ থাকার কারণে প্রিসা নিজের মায়ের কাজে কিছুটা সাহায্য করছে।প্রিসা ড্রয়িং রুমে থাকা শো পিসগুলো পরিষ্কার করছিলাম তখন বেল বেজে ওঠে।প্রিসা ভেবেছে তার বাবা এসেছে তাই ওই অবস্থাতেই দরজা খুলে দেয় কিন্তু দরজা খেলে যাদের দেখে প্রিসার তখন হার্টফেল করার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।

প্রিসাঃআপনারা?

চলবে……….

মেঘবতী পর্ব-০২

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসাঃকি হলো সবাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

সালমাঃএই মেয়ে তুমি ওনাদের উল্টোপাল্টা কি বুঝিয়েছো হ্যাঁ?আর ভাবি আপনারাও ওর কথামতো সবকিছু মেনে নিচ্ছেন।

অর্কের মাঃহ্যাঁ মেনে নিচ্ছি কারণ ওই আমাদের ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছে।

প্রিসাঃএই যে মিস্টার অর্ক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওনাদের কথা শুনবেন নাকি তাপসি আপুকে ফোন করেও ডাকবেন?

অর্কঃআমি এখুনি যাচ্ছি।

সালমাঃভাবি আপনারা এভাবে হুট করে বিয়ে দিতে পারেন না।

বিয়ে,তাপসি,ঠিক-ভুল এগুলো এতোক্ষণ কি হলো কিছুই বুঝতে পারলেন নাতো।এগুলো বুঝতে হলে আমাদের দু’ঘন্টা পেছনে যেতে হবে।

বিফোর টু আওয়ার্স ইন দ্যা রুম,

প্রিসাঃআসসালামু আলাইকুম।

অর্কের মা-বাবাঃহুম,ওয়ালাইকুম আসসালাম।

অর্কের বাবাঃতুমি আমাদের এখানে কেন এনেছো?

প্রিসাঃবলছি।আচ্ছা প্রথমে আপনাদেরকেই জ্ঞিজ্ঞেস করি।আপনারা কি বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই বিয়ে করবে কি করবে না বা ওনার কোন পছন্দ আছে কিনা এটা ওনার থেকে একবারো জ্ঞিজ্ঞেস করেছিলেন?

অর্কের মাঃমেয়ে দেখার আগে একবার বলেছিলাম কিন্তু সে কিছু বলেনি,তাই আমরা মৌনতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে বাকি কথা আগাই।

প্রিসাঃআচ্ছা।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ওনার থেকে জ্ঞিজ্ঞেস করেছেন?

অর্কের বাবাঃনা।

প্রিসাঃআচ্ছা।আবার আমি একি প্রশ্নই করছি।বিয়ের ব্যপারে সায়নি আপুর সাথে কোন কথা বলেছেন?

অর্কের মাঃনা।

প্রিসাঃতো মিস্টার অর্ক,যেদিন দেখতে এসেছিলেন সেদিন সায়নি আপুর সাথে বিয়েতে মতো অমতের ব্যপারে কোন কথা বলেছিন কি?

অর্কঃনা।

প্রিসাঃএবারো না।ঠিক আছে কোন ব্যপার না।আচ্ছা আপনারা কি বিয়ের ব্যপারটা মিস্টার অর্কে বলার পর ওনার মধ্যে কোন পরিবর্তন খেয়াল করেছেন?

অর্কের মাঃহুম কেমন যেন সারাদিন মন মরা হয়ে থাকতো,ঠিকমতো খেতো না,কারোর সাথে ঠিক মতো কথা বলতো না।

প্রিসাঃকারণ জিজ্ঞেস করেছিল?

অর্কের বাবাঃনা।(মাথা নিচু করে)

প্রিসাঃহাহ্,আপনারা জানেন আজকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার একটা বড় কারণ আপনারাও?

অর্কের বাবা-মাঃআমরা?(অবাক হয়ে)

ওনাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অর্কের দিকে তাকালো।অর্ক এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল।

প্রিসাঃতো মিস্টার অর্ক সেই মেয়েটা কে?

অর্কের মাথা তুলে অবাক হয়ে প্রিসার দিকে তাকালো।

অর্কের বাবা-মাঃমেয়ে?কোন মেয়ের কথা বলছো তুমি?

প্রিসাঃআমি সেই মেয়ের কথাই বলছি যাকে আপনার ছেলে ভালোবাসে।আপনারা জানেন আমি আপনাদের এতো প্রশ্ন কেন জ্ঞিজ্ঞেস করেছি?আসলে আমি আমি সিউর হতে চেয়েছিলাম আমার ধারনাটা ঠিক কিনা।আমি যখন থেকে এসেছি তখন থেকেই আমি খেয়াল করেছি মিস্টার অর্ক কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে আছেন আর মাঝে সবার আড়ালে চোখের জল মুছছেন।তখনই আমার সন্দেহ হয় তাই আমি আপনাদের সাথে আলাদা করে কথা বলতে চেয়েছিলাম।শুনুন আঙ্কেল-আন্টি বিয়ে হচ্ছে একটা পবিত্র বন্ধন।বিয়ে মানে শুধু দুটো মানুষের একসাথে থাকা না,বিয়ে মানে জোড় করে মানিয়ে নেওয়া না।বিয়ে দুটো মানুষের মনকে একত্র করে।আপনাদের একবার উচিত ছিল ওনাকে জিজ্ঞেস করার ওনি কাউকে পছন্দ করে কিনা।

অর্কের বাবাঃঅর্ক ও যেটা বলছে সেটা ঠিক?

অর্কঃহুম।(মাথা নিচু করে)

অর্কের মাঃকে সেই মেয়ে?

অর্কঃওই মা আসলে…….

অর্কের মাঃবল কে সে?

অর্কঃতাপসি।

অর্কের মাঃতোর বন্ধু তাপসি?

অর্কঃহুম।

অর্কের বাবাঃআগে কেন বলিসনি?

প্রিসাঃআমি বলছি।উনি ভয়ে আপনাদের বলেন নিয় কারণ ওনার ধারণা ছিল উনি যদি আপনাদের বলতেন তাহলে আপনারা মেনে নিবেন না আর মেনে নিলেও ওনার অগোচরে ওনার ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দেবেন।কি মিস্টার অর্ক আমি ঠিক বলছি না?

অর্কঃ(মাথা নিচু করে রেখে)

অর্কের মাঃতুই আমাদের আগে বললি না কেন?তুই তো জানিস আমরা তোর কথা ফেলতে পারবো না।প্রথমবার না মানলে আমাদের আবার বুঝাতি কিন্তু এবার বলে তো দেখে পারতিস।

প্রিসাঃআন্টি ঠিক বলেছেন,আপনি ভয় পাচ্ছিল যদি আপনার ভালোবাসা তারা মেনে না নেয় তখন কি হবে সেটা ভেবে।কিন্তু আপনার উচিত ছিল একবার ওনাদের বলার।সেই সাথে একবার সায়নি আপুর সাথেও এই বিষয় কথা বলা উচিত ছিল।

অর্কের মাঃমা তুমি বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে।কি সুন্দর করে আমাদের ভুলটা ধরিয়ে দিলে।আজ যদি তুমি না থাকতে তাহলে……(ভেজা ভেজা গলায়)

প্রিসাঃআহ্ আন্টি এখন ইমোশনাল হওয়ার টাইম না।এখন তাড়াতাড়ি চলুন এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।

এরপর তারা চারজনেই বাইরে চলে এলো।

সালমাঃএতোক্ষণ লাগে কথা বলতে?আচ্ছা যাইহোক চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।

অর্কের মাঃআগে তো বউ আনতে হবে তারপর না বিয়ে হবে।

সালমাঃবউ!আরে বউ তো আপনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।

অর্কের মাঃও কেন বউ হতে যাবে?বউ তো হবে তাপসি যাকে আমার ছেলে ভালোবাসে।

সবাই অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাই।

প্রিসাঃকি হলো সবাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

ফ্লাশব্যাক এন্ড……..

সালমাঃতুমি না বলেছিলে তুমি বিয়েতে রাজি?তোমাকে ওনাদের সাথে কথা বলতে না দিলে বিয়ে হবে না।তাহলে এখন এসব কি?

প্রিসাঃকখন বলেছিলাম?আমি তো বলেছিলাম আমি রাজি কিন্তু এটা তো বলিনি বিয়ের জন্য রাজি।দ্বিতীয়ত আমি বলেছি বিয়ে হবে না কিন্তু এটা বলিনি যে মিস্টার অর্ককে আমি বিয়ে করবো না।মোটকথা আমি কখনই বলি আমি মিস্টার অর্ককে বিয়ে করবো।আর রইলো ওই কথাগুলো কেন বললাম।এগুলো বলেছিলাম কারণ আমি জানত এইকথাগুলোর অর্থ আপনারা এটা বুঝবেন যে আমি মিস্টার অর্কে বিয়ে করতে রাজি।কিন্তু মোটেও সেটা নয়।আসলে আমার কিছু ডাউট ক্লিয়ার করার ছিল তাই আপনাদেরকে একটু বোকা বানালাম।

সালমাঃএই মেয়েতো দেখছি ধূর্ত চালাক।

প্রিসাঃও ধন্যবাদ।আমি কিছু জরুরি কথা বলবো আপনাদের।তাই সায়নি আপুর বাবা-মা,দাদি,ফুপি এবং মিস্টার অর্কের মা-বাবা এবং আমার বাবা-মা ছাড়া বাকি সবাই প্লিজ বাইরে চলে যান।

সালমাঃকেন সবাই বাইরে কেন যাবে?

প্রিসাঃকারণ আমি সে কথাগুলো বলবো সেগুলো যদি সবাই জানতে পারে তাহলে আমার মনে হয়না আপনারা কাউকে মুখ দেখাতে পারবেন।(সালমার কানে কানে)

এরপর তারা ছাড়া বাকি সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রোকেয়া হাসানঃবলো কি বলবে?

প্রিসাঃতো বিয়ের সম্বন্ধটা কে এনেছিল?

সালমাঃআমি এসেছি।কেন কোন সমস্যা?

প্রিসাঃনা না কোন সমস্যা নেই।আচ্ছা চাচা-চাচি যখন উনি বিয়ের সম্বন্ধ এনেছেন বা মিস্টার অর্কের পরিবার সায়নি আপুকে দেখতে এসেছিলেন তার আগে আপনারা কি সায়নি আপুর সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন?তার মতামত জানতে চেয়েছিলেন?

সালমাঃওর আবার কিসের মতামত শুনি।

প্রিসাঃআমি আপনার থেকে জিজ্ঞেস করেছি?নাতো।তাহলে যতক্ষণ না কিছু জিজ্ঞেস করবো ততক্ষণ আপনি কিছু না বললে খুশি হবে।(চাপা রেগে)

জয়নাব(সায়নির বাবা)ঃনা জিজ্ঞেস করিনি।

প্রিসাঃএখানেও না।ওকে,তাহলে মিস্টার অর্কের পরিবার সায়নি আপুকে দেখে যাওয়া পর আপু মিস্টার অর্কে পছন্দ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেছেন?নাকি এটাতেও কিছু জ্ঞিজ্ঞেস করেননি?

জয়নাবঃনা।আমাদের পছন্দ হয়েছে তাই…..

প্রিসাঃআপনাদের পছন্দ হয়েছে তাই আপনারা বিয়ে পাকা করে ফেলেছেন।তাই তো?আচ্ছা,বিয়েটা কি আপনারা করবেন?বিয়ের পর সংসারটাকি আপনারা করবেন নাকি ওনারা দুজন?কি হলো উওর দিন।কেন ওনাকে একটা বারের জন্যও জিজ্ঞেস করেননি?উনি মেয়ে বলে কি ওনার কোন ইচ্ছে নেয় নাকি?

রোকেয়া হাসানঃএই মেয়ে তুমি কিন্তু…..

প্রিসাঃআমি আপনার সাথে কথা বলিনি তাই যার সাথে কথা বলছি সে ছাড়া বাকি সবাই কথা না বললে খুশি হবো।

জয়নাবঃ হ্যাঁ জিজ্ঞেস করিনি কিন্তু ওতো আমাদের……..

প্রিসাঃপ্লিজ এবার এটা বলবেন না যে আপু যদি আপনাদের বলতো তাহলে আপনারা মেনে নিতে।চাচা-চাচি না এটা আমি আঙ্কেল-আন্টিকেও বলছি।ওনারা দুজন যদি আপনাদের প্রথমে বলতো তারা অন্য কাউকে পছন্দ করে তাহলে আপনার কি আসলেই মেনে নিতেন?

সবাইঃচুপ।

প্রিসাঃকি হলো নেই তো কোন উওর?আপনাদের কাছে নেই কিন্তু আমার কাছে আছে।আমি বলছি তখন আপনারা কি করতে।সায়নি আপু এ কথাটা বলার পর চাচা আপুকে বকতো,তার ফোন কেড়ে নিতো,তাকে ঘরবন্দী করে রাখতো হয়তো কারো উসকানিতে তাকে মারধোরও করতো।আর আঙ্কেল- আন্টি আপনারা,আপনারা মিস্টার অর্কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতেন যাতে তিনি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতো।

তারা চারজনেই মাথা নিচু করে রেখেছে।

প্রিসাঃআজকে যদি সায়নি আপু সাহস করে না পালাতো তাহলে কি হতো জানেন আপনারা।এখন অবশ্যই জানেন কি হতো।চার চারটা জীবন নরকে পরিণত হতো।মিস্টার অর্ক আর সায়নি আপু একই ঘরে থাকতো,আপনাদের সামনে হ্যাপি কাপল হওয়ার নাটক করতো কিন্তু তারা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যেতো।এটাও হতে পারতো তারা একসময় ডিভোর্স নিয়ে নিতো নয়তো পরক্রিয়ায় লিপ্ত হতো।আর না হয় বিয়ের দিনেই চারজনেই মারা যেতো।তখন হা হতাশ করেও কিছু হতোনা।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রিসা আবার বলে শুরু করলো—

প্রিসাঃসায়নি আপু চলে যাওয়ার পর আপনারা যে মিস্টার অর্কের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন,কেন?আজ যদি আমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হতো আর সে যদি তখন চুপচাপ বিয়েটা করে নিতো তখন কি হতো জানেন?যদি ওনার সাথে আমার/অন্যকোন মেয়ের বিয়েটা আদৌও হয়ে যেতো তাহলে উনি কখনোই আমাকে/ওই মেয়েটাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতেন না।আমরা/তারা একিই ছাদের তলায় থেকেও আলাদা থাকতাম।এখন বুঝতে পেরেছেন আজ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ কারা,আপনারা।

জয়নাবঃআমরা বুঝতে পেরেছি ভুলটা আমাদের ছিল কিন্তু এখন কি করবো।সায়নি তো আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।

প্রিসাঃসায়নি আপু আপনাদের ছেড়ে কোথাও যায়নি।আমার যতটুকু মনে হয় তারা এখন কোন কাজী অফিস আছে।তাই আশেপাশে কাজী অফিসগুলোতে খুঁজলেই আমার মনে তাদের পেয়ে যাবে।সেই সাথে আপনি সায়নি আপুকে ফোন করে দেখুন।ফোন সম্ভব বন্ধ থাকবে তাও চেষ্টা করুন নয়তো ওনার কাছের কোন বান্ধবীকে ফোন করুন আসা করি তাদের পেয়ে যাবে।

জয়নাবঃঠিক আছে আমি এখুনি যাচ্ছি।

প্রিসাঃদাঁড়ান চাচা,আমার আরো কিছু কথা আছে।
(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)আজকে সায়নি আপুকে পাওয়া যাচ্ছে না এটা জানার কিছুক্ষণ পর আপনারা সবাই এটা সিদ্ধান্ত নিলেন সায়নি আপুর বদলে আমার সাথে মিস্টার অর্কের বিয়ে দেবেন।কেন?

জয়নাবঃকারণ আমাদের আত্মীয়দের মধ্যে তোমার থেকে বড় খুব কম মেয়েই আছে,সেই সাথে তুমি তাদের থেকে দেখতে শুনতে কিছুটা ভালো আর তোমার বাবার সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে তাই…।

প্রিসাঃআচ্ছা।কিন্তু এটা কেন করেছেন আপনারা?আপনাদের মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে বলে আপনারা অন্য কারো মেয়েকে জোর করে অপরিচিত কারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবেন।কেন?সম্মানের জন্য।আপনারা আপনাদের সম্মান বাচাঁনোর জন্য অন্যকারো লাইফ হেল করে দেবেন,এটাতো ঠিক না।আজ যখন আপনারা আমার সাথে মিস্টার অর্কের বিয়ের কথা বলছিলেন তখন বাবা-মা প্রথমেই বারণ করে দিয়েছিল প্রস্তাবটা কিন্তু আপনারাতো আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন।আজ যদি আমি না আসতাম তাহলে এই কাজটা নিশ্চয়ই অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে করতে।(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)শুনুন,জীবনটা কোন সিনেমা বা নাটক নয় যে যা খুশি করা যায়।এটা রিয়েল লাইফ তাই আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ সাবধানে ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত।

সবাইঃচুপ।

প্রিসাঃঅনেক হলো কথা।এবার বাইরে চলুন দেখি মিস্টার অর্ক তাপসি আপুকে নিয়ে এসেছে কিনা।

সবাই বাইরে চলে গেলো।কিন্তু বাইরে এসে এমন কিছু দেখতে হবে তারা কখনই ভাবতে পারেনি।

চলবে……….

মেঘবতী পর্ব-০১

0

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

— আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেবোনা।মেয়েটা আমাদের তাই সিদ্ধান্তটাও আমাদের।

— আপনি এতো কথা কেন বলছেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না।আমরা যখন বলেছি বিয়ে হবে তারমানে হবেই,তাও আজ।

কি হলো কিছুই বুঝতে পারলেন না তো।আচ্ছা ঠিক আছে আমি প্রথম থেকে বলছি।চাচাতো বোনের বিয়েতে এসেছিল প্রিসা কিন্তু এটাই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়ালো।প্রিসার চাচাতো বোন সায়নি,সায়নি প্রিসার আপন চাচাতো বোন না দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন।আসলে সায়নির বাবা প্রিসার বাবার চাচাতো ভাই।সায়নির সাথে অর্ক নামের একটা ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সায়নিকে আর পাওয়া যাচ্ছে না মানে সায়নি কারো সাথে পালিয়ে গিয়েছে।এখন সবাই প্রিসাকে চেপে ধরছে সায়নির জায়গায় অর্ককে বিয়ে করার জন্য।প্রিসা কখনই আসতো না শুধুমাএ তারা বাবার জন্য এসেছে।প্রিসার বাবা-মা কোন মতেই তাদের এই সিদ্ধান্তে রাজি নয়।এখানে প্রিসা তার বাবা-মা ছাড়া কাউকেই চিনেনা।ইম্প্যাক্ট তাকেও কেউ চিনেনা কিন্তু সবাই তার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেছে।

—- শোন,আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে।এই মেয়ের সাথেই অর্কের বিয়ে হবে।এর থেকে বেশি আমি কিছু শুনতে চাইছি না।(গম্ভীরভাবে)

এই কথাটা যিনি বলেছেন তিনি হচ্ছে রোকেয়া হাসান,সায়নির দাদী।এই মহিলাকে প্রিসা মোটেও সহ্য করে পারেনা এখন।কেন পারেনা চলুন সেটা একটু জেনে আসি।

ফ্ল্যাশব্যাক…….

কোণায় একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপছে প্রিসা।আপাতত তার আশেপাশে তার বাবা-মা কেউ নেই।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কোথা থেকে যেন একজন বয়স্ক টাইপের মহিলা এসে তার পাশে বসলো,সে আর কেউ না রোকেয়া হাসান।প্রিসা সেদিকে মন না দিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।

—-তুমি আকাশের(প্রিসার বাবা)মেয়ে না?(গম্ভীরভাবে)

প্রিসা এবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে রোকেয়া হাসানের দিকে তাকাই কিন্তু কিছু বলেনা।

রোকেয়া হাসানঃকি হলো?কথা বলতে পারো না নাকি?

প্রিসা ভ্রু-কুচকে ওনার দিকে তাকাই।

প্রিসাঃজ্বি,আমি আকাশ চৌধুরীর মেয়ে।

রোকেয়া হাসানঃহুম।তা কি করো তুমি?

প্রিসাঃপড়াশোনা।(বিরক্ত নিয়ে)

রোকেয়া হাসানঃও বাবা,তুমি এখনও পড়াশোনা করো।(অবাক হওয়ার ভান করে)

প্রিসাঃচুপ।

রোকেয়া হাসানঃতা বিয়ে-টিয়ে করেছো নাকি?

প্রিসাঃনা।(গম্ভীরভাবে)

রোকেয়া হাসানঃকেন?কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক-টম্পর্ক আছে নাকি?

এ কথাটা প্রিসাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।প্রিসা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা তাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেলো।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড…..

কারো কথাই প্রিসা বর্তমানে ফিরে আসে।

প্রিসার মাঃআমি আমার মেয়েকে যেখানে-সেখানে হুট করে বিয়ে দেবোনা।

রোকেয়া হাসানঃজয়নাব(সায়নির বাবা)ওদের দুজনকে বলে দে আমার কথাই শেষ কথা।এরচেয়ে বেশি আমি কিছু শুনতে চাইনা।

সালমা(সায়নির ফুপি)ঃহুম মা যেটা বলছে সেটা একদম ঠিক।আর এই মেয়ের জন্য অর্কের মতো এতো ভালো ছেলের সম্বন্ধ কোনদিনও আসবে বলে মনে হয়না।আমাদের সায়নি এর চেয়ে হাজারগুণ ভালো ছিল।এই মেয়ে তো চোখে কম দেখে,সেইসাথে কিছুটা বেঁটেও,গায়ের রঙটাও একটু চাপা।এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য কোন সুদর্শন পুরুষ আসবে শুনি।তাই বলিকি অর্কের সাথেই এর বিয়ে দিয়ে দাও।তাহলে তোমাদেরই লাভ,নাহলে এই মেয়ে সারাজীবন কুমারীই থেকে যাবে আর তোমাদের ঘাড়ে বসে বসে খাবে।আর এখন জানোই তো যুগটা কি রকম।এতো বড় মেয়েকে ঘরে রাখা ঠিক না,না জানি কখন আবার তোমাদের মুখে চুনকালি মেখে দেয়।

প্রিসার মাঃমুখ সামলে কথা বলুন।(রেগে)

সালমাঃওমা,রেগে যাচ্ছেন কেন?আমি তো শুধু সত্যি কথা বলছিলাম।আসলে কি জানেন তো সত্যি কথা বললে না সবারই গায়ে লাগে।

রোকেয়া হাসানঃআহ্..আমি এতো কথা শুনে চাচ্ছি না।আমার কথাই শেষ কথা।অর্কের সাথেই এই মেয়ের বিয়ে হবে।তোমরা সবাই ওকে তাড়াতাড়ি তৈরি করে দাও।

প্রিসাঃঅসহায় দৃষ্টিতে তার বাবা-মার দিকে তাই।

প্রিসার মাঃআমি বলেছিনা আমি আমার মেয়েকে এভাবে হুটহাট কারো সাথে বিয়ে দেবো না।আর আমার মেয়েও এভাবে অপরিচিত কাউকে বিয়ে করবে না।

প্রিসার বাবাঃআর আমার মেয়ে এখনো ছোট।পড়াশোনা করছে সে এখনো।সেই সাথে তারও একটা ইচ্ছে আছে।আমরা কখনই তোমাদের বা আমাদের ইচ্ছে তার উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা।

সালমাঃওর আবার কিসের ইচ্ছে।মেয়েদের কোন ইচ্ছেটিচ্ছে তাকতে নেই।মেয়ের কাজ হচ্ছে বড়রা যেটা বলে সেটা চুপচাপ মাথা নিচু করে মেনে চলা।আর মেয়েকে আর কত পড়াবে শুনি।এমনিতেই এত পড়িয়েছো আরো পড়ালে তো মেয়ের বিয়ের বয়সই পার হয়ে যাবে।

প্রিসার মাঃআমি…..

জয়নাব(সায়নির বাবা)ঃআকাশ প্লিজ তোরা মায়ের কথাই রাজি হয়ে যা।দেখ এমনিতেই সায়নি আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে,এখন যদি বিয়েটা না হয় তাহলে আমরা আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবো নারে।প্লিজ ভাই,আমাদের কথাটা একটু চিন্তা কর।

প্রিসার মাঃদেখুন,আপনাদের সমস্যা সেটা পুরোটাই আপনাদের।আপনারা নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যেই ঠিক করেনিন না।কেন আমার মেয়েটা এসবের মধ্যে টানছেন।আপনাদের সমস্যার সমাধানের জন্য কেন আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।আর আমার মেয়েকে আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবোনা।বিয়ে দিয়ে সংসার করার জন্য তো আমরা ওকে এতো পড়াশোনা করাই নিয় আর না ও বিয়ে করে সংসার করার জন্য এতো পরিশ্রম করে পড়াশোনা করছে।

সাইমা(সায়নির মা)ঃআমি বলিকি,ভাবি ঠিকই বলছে।কেন শুধু শুধু আমাদের ঝামেলার মাঝে ছোট মেয়েটা টানছো।

সালমাঃএই তুমি চুপ থাকো তো।তোমার থেকে কেউ কিছু জ্ঞিজ্ঞেস করেছে।(স্নিগ্ধার মায়ের দিকে তাকিয়ে)আর আপনি এই বাড়ির বউ,এতো কথা আপনার মুখে মানাই না।তাই আমরা যা বলবো তাই হবে।

প্রিসার মাঃপ্রথমত আমি আপনাদের বাড়ির বউ না আর আমি মেয়ে বলে চুপ থাকবো এটা কখনই মনে করবেন না।আকাশ চলো এখান থেকে।এখানে যত থাকবো ততই ঝামেলা বাড়বে।

জয়নাবঃভাবি প্লিজ এরকম করবেন না।আকাশ প্লিজ তুই কিছু বল।আমি জানি তোর কথা ওরা কেউ ফেলতে পারবেনা।

প্রিসার বাবাঃদেখ ভাই,তোর ভাবি যেটা বলছে সেটা একদম ঠিক।মেয়েটা এখনো ছোট,ওর এইসব বিয়ে,সংসার বোঝার সময় হয়নি।আর তাছাড়া ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন আছে,ওরও একটা স্বপ্ন আছে।আমি এভাবে ওর স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবো না।তাছাড়া ওর ভাইও এখন এখানে নেই।ও এসে যদি এসব কিছু জানতে পারে তবে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।

জয়নাবঃও আচ্ছা তাহলে এই সমস্যা।তুই আমাকে আগে বলবি না।তুই দ্বারা আমি এখুনি ওর সাথে কথা বলছি।

প্রিসার বাবাঃনা প্লিজ,তুই ওকে ফোন করিস না।ও যদি এসব এভাবে জানতে পারে তাহলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।

জয়নাবঃধুর কিছু হবে না।আমি ওকে বুঝিয়ে বললে দেখবি ও ঠিক রাজি হয়ে যাবে।

এটা বলেই জয়নাব নিজের ফোন বের করে প্রিসার বড় ভাইকে ভিডিও কল দেয় কারণ সে এখন দেশে নেই।প্রিসার ভাইয়া এসব জানার পর প্রচুর রাগারাগি করে আর এটাও বলে সে তার বোনকে এখন কোন মতেই বিয়ে দেবেনা।

এতক্ষণ এসব চুপচাপ শুনে গিয়েছে প্রিসা।এতক্ষণে সে উঠে দাঁড়াই।সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকাই।

প্রিসার বাবাঃপ্রিসা মা কি হয়েছে?খারাপ লাগছে?

প্রিসার মাঃকি খারাপ লাগছে?তাহলে চল বাসায় চলে যাই।

সালমাঃযতসব ঢং,হু।

প্রিসার মাঃআপনি প্লিজ চুপ করুন।তুই চিন্তা করিস না মা আমরা তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করবো না।

প্রিসাঃআমি রাজি।

প্রিসার বাবাঃকি!

প্রিসার কথা শুনে সবাই অবাক।প্রিসার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে।কারণ তারা জানে তাদের মেয়ে কেমন।

সালমাঃবাহ্,এই মেয়ের তো দেখছি কথাও বলতে পারে।এই তোরা সবাই ওকে নিয়ে গিয়ে তৈরি করে দে।অর্করা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।

প্রিসাঃআরে দাঁড়ান,দাঁড়ান।এতো তাড়াহুড়ো কিসের?আগে আমার পুরো কথাটাতো শুনেনিন।

সালমাঃআবার কি কথা?

প্রিসাঃআমি রাজি কিন্তু আমি আগে একবার অর্ক এবং তার বাবা-মার সাথে কথা বলতে চাই।

রোকেয়া হাসানঃওদের সাথে তোমার কি কথা?(গম্ভীরভাবে)

সালমাঃহুম সেটাই আর কিছুক্ষণ পর তো তুমি এমনিতেই ওই বাড়ির বউ হয়ে যাবে।তাই সব কথা তখন বলো এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হতে যাও দেখি।

প্রিসাঃআমি বলেছি আমি ওনাদের সাথে কথা বলবো আর যদি আপনারা সেটা করতে না দেন তাহলে বিয়ে হবে না।(বাঁকা হেসে)

অবশেষে বাধ্য হবে তারা প্রিসার সাথে অর্ক এবং তার বাবা-মায়ের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর তারা বের হলো এবং বের হয়ে যেটা বললো সেটা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পরলো।

চলবে

হৃদয়ে তুমি পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়ে_তুমি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
অন্তীম পর্ব

৫ বছর পর_
গুটিগুটি পায়ে পুরো বাড়ী ভ্রমন করছে আরোহি।আর কিছুসময় পর পর এসে জিজ্ঞাস করছে
“আম্মুই আব্বু কখন আসবে ”
আমি ব্যাগ গোছাচ্ছিলাম
আমার চোখে মুখে বিরক্তির চাপ কিন্তু মেয়েকে তা বুঝতে দিলাম না এক গাল হেসে বললাম
“এইতো মা একটুপরই চলে আসবে”
এই নিয়ে আধা ঘন্টায় প্রায় দশ বার এসেছে আমিও একই জবাব দিতে দিতে হাপিয়ে গিয়েছি। পাঁচ মিনিট পর আবার এসে জিজ্ঞাস করছে
“আম্মু
মেয়ে এতোটুকু বলতেই আমি বেশ কড়া গলায় ধমক দিয়ে উঠলাম
” বার বার একই প্রশ্ন কেনো করছো বলেছি না একটু পর তোমার আব্বু চলে আসবে। এসো এদিকে এসো জামা কাপড় সব তো নোংরা করে ফেলেছো।আসো আমি চেঞ্জ করে দিই।উফফ এই বাপ মেয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে

আমি আবারো আরোহীর দিকে তাকাতে দেখলাম আরোহী দরজার সামনে টলমল চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো আমার কথা গুলো তার ভালো লাগে নি। আমি মুচকি হেসে ব্যাগ সাইডে রেখে মেয়েকে গিয়ে কোলে নিবো এমন সময় উনি এসে আরোহীকে কোলে নিয়ে নরম গলায় বললেন
“কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসটার কাঁদছে কেনো সে।
বাবার এমন কথায় আরোহীর কান্না আরো গতি বেগে বেড়ে গেলো
এবার উনি আরোহীর কপালে একটা আলতো করে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন
” কে মেরেছে আমার প্রিন্সেসটা কে?কে বকেছে বলো মা
এবার আরোহী দুই হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে হাত দিয়ে আমার দিকে ইশারা করে বললো
“আম্মুই”
এবার উনি মেয়েকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন
“দেখুন মিস ওহ সরি মিসেস নিহা।আপনাকে এই বাড়ীতে থাকতে দিয়েছি তাই বলে আপনি ভাববেন না যে আপনি আমার মাথা কিনে নিয়েছেন।আর প্রিন্সেসকে তুমি ধমক দাও কোন সাহসে।নেক্সট টাইম ধমক দিলে একদম বাপের বাড়ি দিয়ে আসবো তোমায় গট ইট।

উনার কথায় আরোহী খিলখিল করে হেসে উনার গালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
” আব্বু আমরা কখন যাবো বেড়াতে ”
উনি এবার মেয়ের নাকে নাক ঘসে বললেন
“এইতো একটুপরেই যাবো আমরা।কিন্তু প্রিন্সেস তোমার ড্রেস তো নোংরা করে ফেলেছ।এদিকে আসো আমি চেঞ্জ করে দিই এটা”
এবার উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“যাও আমার প্রিন্সেসের ড্রেস নিয়ে আসো ”

আমি আরোহীকে কোলে নিয়ে গাড়ীর পেছনের সিটে উঠে বসলাম_উনি এসে আমার কোল থেকে আরোহীকে নিজের কোলে নিয়ে স্টাইল মেরে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
“এই যে মিস” আমি কোনো ড্রাইভার না সো সামনে এসে বসো।
আমি মুখে ভেংচি কেটে এসে সামনের সিটে এসে বসলাম
আমাদের যাত্রা পথ চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাচ্ছি। ওখান থেকে জাফলং যাওয়ার প্ল্যান আছে।আপাতত সিলেট হোটেল ব্রিটানিয়ায় উঠবো।

এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো (২)
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো
তুমি বলো
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো

কোন রাখালের ওই ঘর ছাড়া
বাশিঁতে সবুজে
ওই দোল দোল হাসিতে রাখালের
কোন ঘর ছাড়া বাশিঁতে সবুজের
ওই দোল দোল হাসিতে
মন আমার মিশে গেলে বেশ হয়।
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো

নীল আকাশের
ওই দূর সীমা ছাড়িয়ে এই গান
যেনো যায় আজ হারিয়ে আকাশে
নীল দূর সীমা ছাড়িয়ে এই গান
যেনো যায় আজ হারিয়ে
প্রানে যদি এগানের রেশ রয়

যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে
কেমন হতো তুমি বলো তো

গাড়ির কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছি আমি। আর “এই পথা যদি না শেষ হয়” গানটা আয়ান ড্রাইভ করতে করতে গাইছেন। গানটা উনার মুখে অসম্ভব গেয়েছেন।

রাত আটটায় আমরা হোটেলে পৌছালাম। সারা শরীর কেমন অবোশ হয়ে আছে।হয়তো এতো দূরের যাত্রা পথের জন্য। আরোহীকে আমার পাশে শুইয়ে আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আরোহী ঘুমিয়ে আছে। আয়ান নিচে নাস্তা আনতে গেলেন। মানুষটা পুরোটা রাস্তা ড্রাইভ করেছেন না জানি মানুষটার কেমন লাগছে।

রাত একটা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আমার।এক পাশে উনি আর অন্য পাশে আরোহী বেশ জড়োসড়ো ভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। আমি বাপ মেয়ে দুজনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালাম।

কাঁচের জানালা দিয়ে মধ্য রাতে বাহিরের লাইটিং গুলো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হোটেলে আমাদের ঘর ছিলো ৭তলায়। সেখান থেকে নিচের মানুষগুলোকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। পুরো শহর জুড়ে লাল নীল সবুজ হলুদ লাইটিং টা বেশ ভালো লাগছে। এর মাঝে আয়ান আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুমঘুম চোখে বললেন
“উমম এখানে কি করছো চলো ঘুমাবে
আমি এবার উনার দিকে তাকিয়ে উনার দুই কাঁদে হাত রেখে বললাম
” দেখুন পুরো শহর টা অদ্ভুত সুন্দর লাগছে” আকাশটাও কেমন যেনো থমথমে হয়ে আছে।

উনি এবার বললেন
“কিছু মানুষ আলো হয়ে আমাদের জীবনে আসে আর হঠাৎ কালো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যার আর রেখে যায় অসংখ্য স্মৃতি”

আমি এবার উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
” সাদা শার্টে অসম্ভব সুন্দর লাগছে মশাই। আমাকে কি দ্বিতীয় বারের মতো মেরে ফেলার প্ল্যান করতেছেন নাকি?
এবার উনি মুচকি হেসে বললেন
“তোমাকে তো তার থেকেও বেশী সুন্দর লাগছে। ওই মায়াবী চোখের নেশায় আমি আসক্ত।
আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে চাই। আমার #হৃদয়ে_তুমি।কেবল আর কেবল তুমি।

সমাপ্ত

হৃদয়ে তুমি পর্ব-০৮

0

#হৃদয়ে_তুমি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
অষ্টম পর্ব (রহস্যভেদ)

আমি উনি আর মিহির ভাইয়া একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।কারো মুখে কোনো শব্দ নেই।কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে মিহির ভাইয়া বললেন
“কিরে দোস্ত কিছু বলছিস না কেনো এনি প্রব্লেম?আর আজকে তুই এতো নিস্তব্ধ কেনো
এবার উনি মিহিরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন
” আমি তোর কি হই?
মিহির ভাইয়া অবাক চোখে অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন
“তুই তো আমার কলিজার টুকরা জানে জিগার দোস্ত।এক কথায় তুই আমার সব।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড
এবার উনি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন
” বেষ্ট শব্দটা তোর মুখে মানায় না রে দোস্ত
মিহির ভাইয়া সরু চোখে তাকিয়ে বললেন মানে?
এবার উনি আমাকে বললেন
“নিহা আসল ছবি টা আমাকে দাও তো
উনি বলার সাথে সাথেই আমি ব্যাগে হাত দিয়ে মিহির ভাইয়ার আর বের করে উনার হাতে ধরিয়ে দিলাম।উনি ছবিটা মিহির ভাইয়ার সামনে ধরে জিজ্ঞাসা করলেন
” দেখতো মিহির ছবিটা চিনিস কি না
মিহির ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন
“হ্যা চিনবো না কেনো” এটা তো আমার আর রাত্রির বিয়ের ছবি
এবার উনি বললেন
“হ্যা তোদেরই বিয়ের ছবি কিন্তু কথা তো এইটা না কথা হচ্ছে তুই রাত্রিকে কবে বিয়ে করেছিস?
এবার মিহির ভাইয়া বললেন
” এটা আমার আর রাত্রি ছাড়া তো কারো কাছে ছিলো না তুই কোথায় পেয়েছিস?
উনি এবার একটা হাসি দিয়ে বললেন
“এটা আমার বউয়ের শাড়ীর ভাজে পেয়েছি আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়েও এতো বড়ো কথা টা আমার কাছ থেকে লুকিয়েছিস।আমি জানতাম যে তুই রাত্রিকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করিস কিন্তু ব্যাপার টা এতো দূর পৌছাবে আমি ভাবি নি।তোকে নিজের ভাইয়ের মতোই জানতাম বাট আজ
এতোটুকু বলতেই মিহির ভাইয়া বললেন
” আমি তোকে জানাতে চেয়েছি কিন্তু রাত্রি ওর কসম দিয়ে বলেছিলো যেনো তোকে ব্যাপার টা এখন না বলি।আর আমি আর রাত্রি তোর বিয়ের ছয়দিন পরই বিয়ে করেছি।ও আমাকে হঠাৎ কল দিয়ে বলে বিয়ে করবে আমায়।
এবার উনি আর কিছু না বলে উনার আর রাত্রির এডিট করা ছবিটা মিহির ভাইয়ার হাতে দেয়
মিহির ভাইয়া হতাশ গলায় বলেন
“এএটা তো আমি কিন্তু আমার জায়গায় এখানে তোর ছবি কেনো?
এবার উনি বলেন
” আমার ও তো একই প্রশ্ন তোর জায়গায় এখানে আমার ছবি এডিট করা কেনো?
কে করেছে এইসব?যে এসব করেছে শুধু এতোটুকুতেই সে সীমাবদ্ধ নয়।
এবার উনি আমার ফোনটা নিয়ে উনার আর রাত্রির অশ্লীল ছবিটা দেখালেন মিহির ভাইয়া কে। ছবিটা দেখেই মিহির ভাইয়ার মাথায় যেনো বাজ পড়লো।
উনি অস্থির হয়ে বললেন
“এএএই ছবি ততুই কোথায় পেয়েছিস?আর ছছবিতে আমার জায়গায় তুই কেনো?এটা তো আমার আর রাত্রির পার্সোনাল ছবি
এবার উনি ও স্বাভাবিক গলায় বললেন
” আমারও তো একই প্রশ্ন ছবিতে তোর জায়গায় আমি কেন?আর কে এসব করছে

স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মিহির ভাইয়ার চোখে পানি টলমল করছে উনি মিহির ভাইয়ার কাঁদে হাত রেখে বললেন
” বিয়ের ছবিটা নিহার শাড়ীর ভাজে রেখে গিয়েছিলো কেউ আর অশ্লীল ছবিগুলো নিহার মেসেঞ্জারে কোনো ফেইক আইডি থেকে পাঠানো হয়েছিলো।
মিহির ভাইয়া এবার শান্তগলায় বললেন
“কে করেছে এসব
এবার উনিও বললেন
” হুম প্রশ্ন সেটাই
এসব কে করেছে?কেনো করেছে জানতে চাই আমি? কি লাভ তার এসব করে? কিন্তু তার থেকেও বড় কথা আমাকে আগে জানতে হবে এই “কে” টা কে? কার আমার সাথে এমন শত্রুতা যে আমার এতো বড় ক্ষতি করতে চাইছে

এবার মিহির ভাইয়া চোখের কোণে জমে থাকা পানি গুলো মুছে শান্ত গলায় বললেন
“রাত্রি”
উনি অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন
“মানে”
মিহির ভাইয়া আবারো বললেন
“এই সব করছে রাত্রি
উনি এবার মিহির ভাইয়ার কাধে হাত রেখে বললেন
” তুই এতো টা শিউওর কিভাবে হচ্ছিস৷ মাঝে মাঝে আমাদের বোঝার ও ভুল হতে পারে।আর রাত্রি এমন না
এবার মাহির ভাইয়া হো হো করে হেসে উঠে বললেন
“হ্যা ও এমন না” আসলেই
ও এমনই এটাই বাস্তবতা হয়তো আমরা ওর আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারি নি ওকে চিনতে পারিনি।
এসব কাজ যে ওর তার প্রথম প্রমান হচ্ছে এই বিয়ের ছবি টা রাত্রির ফোনে তোলা।আর আমাদের বিয়ের ব্যাপারে এখনো কেউ জানেনা তাই ছবিটা সোশ্যাল মিডিয়ার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম কোনো কিছুই দেওয়া হয় নি।
আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমার আর ওর এমন পার্সোনাল ছবি তো আর অন্য কারো কাছে যাওয়া সম্ভব না যদি আমি বা ওর মধ্যে কেউ কাউকে না দিই।
উনি মাথা নাড়িয়ে শায় দিয়ে বললো
“এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য রাত্রির প্লান কি তা জানতে হবে

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন আয়ান ভাইয়া।আমি পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম
” সরি”আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আমি বুঝতে পারি নি
এবার উনি মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আমার কপালে একটা আলতো করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললেন
“ক্ষমা তুমি কেনো চাইবে।এতে তোমার তো কোনো দোষ নেই পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো যে তুমি এসব বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছো। আসলে আমাদের জীবনটাই এমন সব সময় চোখের দেখাও সত্য হয় না আমাদের দেখার মাঝে ও ভুল থাকে।তোমার বিশ্বাস রাখা উচিত ছিলো আমার ওপর”।
আমি এবার উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
” আর কখনো এমন ভুল হবে না”
এবার উনি মুচকি হেসে বললেন
“উহু ভুল যখন করেছো শাস্তি তো পেতেই হবে তোমাকে”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
” কি শাস্তি.।।। মাত্রই তো বললেন আমি কোনো ভুল করি নি তাহলে শাস্তি কেনো পাবো হুহ”
উনি এবার বললেন
“হুহ এতো দিন তো রাগ অভিমান নিয়ে দূরে দূরে ছিলে কিন্তু আজ কি করবে মহারাণী

আমি উনার বুকে ছোট্ট একটা ঘুষি মেরে বললাম
” অসভ্য
উনি এবার রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বললেন
“হ্যা নিজের বউয়ের সাথে একটু অসভ্যতামি করলে তাতে দোষ কোথায়” আর আমি এমনিতেই অনেক হ্যান্ড সাম আমার বউ কেনো যেকোনো মেয়েই আমাকে কিস করতে চাইবে”
উনার কথায় জ্বলে উঠলাম আমি
তেড়ে গিয়ে উনার ঠোটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম উনিও পরম আবেশে আমাকে কোলে তুলে নিলেন

আধাঘন্টা যাবৎ রাত্রির বাসায় বসে আছি।ও বাহিরে গিয়েছে বাসায় শুধু একটা কাজের মেয়ে আমি উনি আর মিহির ভাইয়া আছেন।অবশেষে রাত্রিএলো
আমাদের তিনজনকে একসাথে দেখে রাত্রি বেশ খানেকটা অবাকও হলো আবার ভয়ও পেয়ে গেলো।একটু জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললেন
“কি রে তোরা এখানে?
মাহির ভাইয়া হেসে বললো।
” কেনো অন্য কাউকে আশা করেছো নাকি সুইটহার্ট
এবার রাত্রি কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন উনি এবার ব্যাগ থেকে রাত্রির আর উনার এবং রাত্রির আর মিহির ভাইয়ার বিয়ের ছবি দুটোই বের করে রাত্রির মুখে ছুড়ে মেরে জিজ্ঞাসা করলেন
“এসবের মানে কি?
রাত্রি চওড়া গলায় উত্তর দিলো
” জানিনা
এবার উনি রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে রাত্রিল গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন রাত্রি চিটকে কাঁচের টি-টেবিলের উপর গিয়ে পড়লো।রাত্রির কপাল টাও বেশ খানিক টা কেটে গেলো। রাত্রি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে এসে আয়ান ভাইয়ার কলার চেপে ধরে বললেন।
“হ্যা আমি করেছি এইসব কিছু করেছি শুধু তোকে পাওয়ার জন্য” আমি সেই ছোটো বেলা থেকেই তোকে ভালোবাসি আর তুই পড়েছিলি একটা বাচ্চা মেয়ে তোর নিজের মামাতো বোনের পেছনে” ওকে তুই বিয়ে করেছিস সেটা আমি সহ্য করতে পারি নি তাই আমি মিহির কে বিয়ে করেছি যাতে মিহির কে দিয়েই তোকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করতে পারি আমি। আর তিন বছর আগে পার্কে বসে আমি আর আয়ান ফুচকা খাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ নিহাকে দেখেই আমি আয়ানকে বলি আমার চোখে কিছু একটা পড়েছে। আয়ান যখন আমার চোখ দেখছিলো নিহা তখন অন্য সাইড থেকে দেখেছে যার কারণে ওর মনে হচ্ছিলো যে আয়ান আমাকে কিস করছিলো। কিন্তু আমি যানতাম না যে আয়ান শেষে ওকেই বিয়ে করবে আমি ভেবেছিলাম ওদের সম্পর্ক টা হয়তো সেখানেই শেষ। আয়ানের বিয়ের খবর টা যখন আমি পাই তখনই এই ধারণা টা আমার মাথায় আসে আমি মিহিরকে কল করে বলি বিয়ে করবে আমায় আজ এক্ষুনি।মিহিরও রাজি হয়ে যায় মিহির চেয়েছিলো আয়ানকে জানাতে।মিহির চেয়েছিলো আয়ান আর নিহা হবে আমাদের বিয়ের প্রধান সাক্ষী।কিন্তু আমি মিহির কে আমার কসম দিয়ে বলি যেনো আয়ান কোনো ভাবেই আমাদের বিয়ের কথাটা না জানতে পারে।আর মিহির বেচারাও আমি যা বলেছি তাই শুনেছে বাধ্য ছেলের মতো। কারণ ও যে বড়ো ভালোবাসতো আমায়

এতোটুকু বলেই রাত্রি হাসা শুরু করলো এবার ওর কথা মিহির ভাইয়া সহ্য করতে না পেরে ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে জোড়ে একটা থাপ্পড় বসালেন ওর গালে। রাত্রি চিটকে পড়লো সোফায়।মিহির ভাইয়া এবার দেওয়ালে একটা বারি মেরে বললেন
“বেইমান,,,,বিশ্বাসঘাতক।তোদের মতো মেয়েদের জন্য আজ সমাজ এতো টা বিশৃংখল। তোদের মতো কিছু নষ্টা মেয়ের জন্য প্রতিনিয়ত হাজার ছেলেরা সুইসাইড নামক অপশন টা বেচে নেয়।
এবার উনি রাত্রিকে উদ্দেশ্য করে বললেন
” তোর এমন বাজে আশা কখনোই পূরণ হবে না।আয়ান নিহার আছে নিহারই থাকবে। হোক সেটা মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত
এবার রাত্রি হো হো করে হেসে বললেন
“ঠিক আছে তুই না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।তোর এই ইচ্ছা টাও আমি পূরণ করে দিবো কিন্তু অন্য স্টাইলে।”
এতোটুকু বলেই রাত্রি টেবিল থেকে একটা চুরি নিয়ে আমার গলায় ধরলো
আমি আহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
রাত্রি চুরি টা আরো বেশী চেপে ধরে আয়ান ভাইয়া কে বললেন
“তোকে আজকেই আমাকে বিয়ে করতে হবে আর যদি না করিস তাহলে আয়ান নিহার গল্প এখানেই শেষ”
উনি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলেন
“ততুই ওকে ছেড়ে দে
রাত্রি হেসে বললো
” হ্যা ছাড়বো তো কিন্তু তোকে আমাকেই বিয়ে করতে হবে
এবার আমি বললাম
“প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দিত্বীয় বিয়ে করা টা ঠিক নয় আর এই ক্ষেত্রে আমি চাইলে তোমাকে জেল এর ভাত ও খাওয়াতে পারি। আর কেমন মেয়ে তুমি নিজের স্বামী ছেড়ে অন্য পুরুষের দিকে নজর দাও

আমার কথায় রাত্রী চুরিটা আরো বেশ জড়োসড়ো ভাবে চেপে ধরলের যার ফলে আমার গলাটা হালকা কেটে গেলো আমি ব্যাথায় কাতরে উঠলাম। এবার উনি টলমল চোখে বললেন
” রাত্রি ওকে ছেড়ে দে আমি তোর সব কথা শুনবো”
এবার মিহির ভাইয়া নিজের পা দিয়ে রাত্রির পায়ে আঘাত করলেন যার ফলে রাত্রির হাত থেকে চুরি টা পরে যায় আর চুরিটা মিহির ভাইয়া তুলে রাত্রির গলায় চেপে ধরলেন।আর উনি এসে আমাকে সাইডে নিয়ে গেলেন
রাত্রি এমন অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। রাত্রি শক্ত গলায় বললো
“ছাড়ো আমায়”
মিহির ভাইয়া এবার হেসে বললো
“হ্যা ছাড়বো
বলেই মিহির ভাইয়া রাত্রির গলা থেকে চুরি টা সরিয়ে নিজের গলায় নিজে গেলেন।আয়ান ভাইয়া চিৎকার করে ওঠেন
” মিহির
রাত্রিও মিহির বলে চিৎকার করে ওঠে।

মিহির ভাইয়া হো হো করে হেসে বলতে শুরু করেন
“জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিলে তুমি রাত্রি।সেই ক্লাস নাইন থেকে আমার অবুঝ মনে ভালোবাসা জাগিয়েছিলে তুমি।প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম মুগ্ধ হয়ে তোমার মুখে তাকিয়েছিলাম জানিনা কি ছিলো ওই মুখে। কেমন মায়া দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধলে আমাকে।আসলে ভুল টাই আমার ছিলো আমি ভুলে গিয়েছিলাম সবাই ভালোবাসার প্রতিদানে ভালোবাসতে পারে না। বিশ্বাসের মর্যাতা সবাই রাখতে পারে না।ভুলটা যেহেতু আমারই ছিলো তাই সেটা আমিই সুধরে নিবো। তোমাকে সারাজীবনের জন্য মুক্তি দিয়ে।আমি নিজে মরে গিয়ে পারলে ক্ষমা করে দিও রাত্রি অনেক ভালোবাসতাম তোমায়।

মিহির ভাইয়া চুরিটা আরো কাছে যখন নিয়ে যাচ্ছিলো রাত্রি তার হাত থেকে চুরি টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে মিহির ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো
” ভুল করে ছি আমি।ক্ষমা করে দাও আমি বুঝতে পারি নি।আসলে আয়ানের ভালোবাসাটা আমার জন্য বরাদ্দই ছিলো না। ভুল তো মানুষ করে তাই না আমিও ভুল করেছি ক্ষমা করে দাও আমাকে।আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও তোমাকে ভালোবাসার তোমাকে চেনার।
এবার মিহির ভাইয়াও জড়িয়ে ধরলেন রাত্রিকে
অবশেষে সব ভুল বোঝাবুঝির অবশান ঘটলো

চলবে_