মেঘবতী পর্ব-০৩

0
3164

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা দেখছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।সবাই বাইরে এসে দেখলো একটা মেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,চোখদুটো লাল আর ফোলা ফোলা।তার সামনে অর্কে দাঁড়িয়ে আছে।কারো বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়েটা কে।

প্রিসাঃকি হয়েছে মিস্টার অর্ক?আপনি আপু করে মেরেছেন কেন?আপনি কি কাপুরুষ যে কাপুরুষের মতো কাজ করছেন?

অর্কঃহ্যাঁ আমি কাপুরুষ।ওকে মারার কারণে যদি আমাকে সবাই কাপুরুষও বলে তাতেও আমার কিছু যায় আসেনা।তুমি জানো ও কি করতে যাচ্ছিল?এই দেখো।

বলে ছোট একটা বোতল প্রিসার দিকে এগিয়ে দিলো।প্রিসার বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা কিসের বোতল। হাই পাওয়ারি ঘুমের ঔষধ আছে সেটাতে।

অর্কঃদেখেছো।এখন বুঝতে পেরেছো কেন আমি ওকে মেরেছি?আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমার কি হতো?কাকে নিয়ে বাঁচতাম আমি?

প্রিসাঃএটা কি হওয়ার কথা নয় মিস্টার অর্ক,হুম?আমি তো মনে করি তাপসি আপু ওনার জায়গায় ঠিক।আজকে যদি সায়নি আপু সাহস করে পালিয়ে না যেতো তাহলে তো অনেক আগেই আপনাদের বিয়ে হয়ে যেতো।তখন,তখন কি করতেন আপনি?

অর্কঃচুপ।

প্রিসাঃআর তাপসি আপু ওনার বা আপনাদের ভালোবাসার কথা না হয় বাদ দিলাম।কিন্তু আপনার জীবন।সবাই বলে জীবনে ভালোবাসা একবারই আসে কিন্তু আমি বলবো সেটা ভুল।জীবনে ভালোবাসা হাজার বার আছে,সত্যিকারের ভালোবাসাও আসে।কিন্তু জীবন,এটা যদি একবার হারিয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয়বার সেটা কখনোই আসে না।ভালোবাসা থেকেও মূল্যবান হচ্ছে জীবন।আজ যদি আপনি সুইসাইড করতেন তাহলে কি কিছু হতো?হ্যাঁ হতো কিন্তু যাই হতো না কেন মৃত্যুর পর যদি আফসোস করার সুযোগ থাকতো তাহলে আপনি শুধুই আফসোস করতে।যদি সায়নি আপুর সাথে মিস্টার অর্কের বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে হয়তো কয়েকমাস উনি কষ্ট পেতেন কিন্তু একসময় উনি সায়নি আপুর সাথে মানিয়ে নিতেন।আর যদি এখন উনি আপনাকে জীবিত অবস্থায় না পেতেন তাহলে হয়তো পাগল হয়ে যেতো নয়তো কিছু মাস বা বছর অনুশোচনা করে আবার নিজেকে গুছিয়ে নিতো।কারণ কারো জীবন অন্য কারোর জন্য থেমে থাকে না।

তাপসিঃআই এম সরি।(কান্না করতে করতে)

প্রিসাঃঠিক আছে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।এখন যান এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আর দেরি করা ঠিক হবে না।আর এই যে মিস্টার অর্ক আজ মেরেছেন ঠিক আছে কিন্তু আর কোনদিন যদি তাপসি আপুর গায়ে হাত তুলেছেন তো।

অর্কঃআমি কোনদিনও ওকে আর কষ্ট দেবোনা।

প্রিসাঃঠিক আছে,এখন যান।এই যে আপনারা ওনাদের নিয়ে যায়।

এরপর সবাই ওদের তৈরি করে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়।এক সাইডে দাঁড়িয়ে প্রিসা এসব দেখছে তখনই কারো কথা তার কানে আসে।

—- আমাকে বিয়ে করার জন্য বুঝি এতো কষ্ট করে অর্ক জিজুর সাথে বিয়েটা ভেঙেছো?

ভ্রু কুঁচকে প্রিসা তার পাশে তাকাই।হুম,যেটা ভেবেছিল সেটা,এটা ওই বেয়াদব শুভ।এ হচ্ছে দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে প্রিসা দুচোখ সহ্য করতে পারেনা।কেনো পারে না সেটা বলার আগে শুভ কে সেটা আগে বলেনি।শুভ হচ্ছে সালমা মানে সায়নির ফুপির ছেলে।এর নম্বরের শয়তান আর ছেচরা একটা ছেলে।মেয়ে মানেই তার কাছে খেলার জিনিস।শুভ যে এরকম সেটা প্রথম দেখাই প্রিসা বুঝতে পেরে গিয়েছিলো।

ফ্ল্যাশব্যাক……….

কোণায় একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে গান শুনছে প্রিসা।তখন কোথা থেকে যেন শুভ এসে ধুপ করে তার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।প্রিসা একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দিলো।

শুভঃহাই।

ঘাড় বাঁকিয়ে শুভ দিকে চেয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দেয়।

শুভঃকি হলো কিছু বলছো না যে?তোমাকে হাই বললাম তুমি কোন রিপ্লাই দিলেনা?

প্রিসার এবার রাগ হতে শুরু করলো।প্রথমত অচেনা কাউকে তুমি করে বলার কারণে দ্বিতীয়ত প্রিসা বুঝতে পেরেছে শুভ ওর পাশে কেন বসেছে।সেটা ভেবে আরো রাগ হচ্ছে।তাও নিজেকে শান্ত করে শুভকে জবাব দিলো কারণ সে কারো সাথে বেয়াদবি করতে চাইনা।

প্রিসাঃ আসসালামু আলাইকুম।(ফোনের দিকে তাকিয়ে)

শুভঃআব…ওয়ালাইকুম আসসালাম।হাই,আমি শুভ,শুভ মির্জা।সায়নির ফুফাতো ভাই।তুমি?

প্রিসাঃপ্রিসা,সায়নি আপুর দুরসম্পর্কের কাজিন।

শুভঃশুধুই প্রিসা?আর কিছু নেই।

প্রিসাঃ(কুল প্রিসা কুল,এখানে কিছু বললে ঝামেলা হয়ে যেতে পারে।আর এই অভদ্র ছেলেও না জানি কোন কথার কি অর্থ বের করে নেয়।–মনে মনে)
অসমিলা চৌধুরী প্রিসা।

সরি আপনাদের তো প্রিসা সম্পর্কে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম।তো চলুন প্রিসা সম্পর্কে কিছু জেনে নিয়।
(প্রিসা হচ্ছে আমাদের নায়িকা।পুরো নাম অসমিলা চৌধুরী প্রিসা।বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছে।প্রিসা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মায়াবী,চোখের চশমাটার কারণে তাকে আরো বেশি কিউট লাগে,প্রিসার গায়ের রং উজ্জ্বল।শ্যামলা,চুলগুলো প্রায় কোমড় পর্যন্ত লম্বা।মোটামুটি শান্ত স্বভাবের একটা মেয়ে সে।আপাতত এটুকুই বাকিটা আস্তে আস্তে জেনে যাবেন।)

শুভঃবাহ্ নাইস নেইম।আচ্ছা তুমি কি আকাশ চাচার মেয়ে?তখন তোমাকে ওনার সাথে দেখলাম কথা বলতে?

প্রিসাঃ(বেটা জানিস যখন তখন আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন?—মনে মনে)হ্যাঁ।

এটা বলেই প্রিসা ওখান থেকে উঠে চলে গেলো,নাহলে আরো কিছু জিজ্ঞেস করতো শুভ।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড……..

প্রিসা ওদিকে পাত্তা না দিয়ে ওখান থেকে সরে পানি খেতে চলে যায়।

শুভঃওই কি হলো?আমি ঠিক বলছিনা?আমাকে বিয়ে করার জন্যই তুমি এতো কিছু করেছো না?

প্রিসাঃদেখুন ভাইয়া,আমি আপনাকে চিনোও না,না আপনার সম্পর্কে কিছু জানি।তাই বিয়ে করার প্রশ্ন কেন চিন্তাও দূর দূর পর্যন্ত আমার মাথাই আসেনি।সেই সাথে আমি আপনার বোন লাগি।তাই বোনকে সম্মান করুন।বোনকে বোনের চোখেই দেখুন,এর থেকে বেশি দেখতে যাবেন না,নাহলে পরে চোখের সমস্যা হবে।

শুভঃএই তুমি আমার কোন জন্মের বোন?

প্রিসাঃআমি আপনার এই জন্মের বোন তাও দুই ভাবে।প্রথমত আমি আপনার চাচার মেয়ে মানে আমি আপনার চাচাতো বোন আর চাচাতো বোন আর এমনি বোনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।দ্বিতীয়ত আমি আপনার জাতীয়গত বোন।এবার বলি সেটা কেমনে।দেখুন সবাই বলে ছেলেরা যেন মেয়েদের মা-বোনের চোখে দেখে।আর ছেলেমেয়ের অধিকার তো সমান সমান।সেই জন্য আমাদেরও তো উচিত সব ছেলেদের ভাইয়ের চোখে দেখা তো সেই হিসেবে আপনি আমার ভাই।এবার বুঝতে পেরেছেন।তাই বোনকে বোনের চোখে দেখুন।
_______________________________________

সারাদিনের সব ঝামেলা শেষ করে সবাই খেতে বসেছে।প্রিসার একপাশে তার মা,অন্যপাশে তার বাবা।দুজনেই তাকে এটা সেটা উঠিয়ে দিচ্ছে কিন্তু প্রিসা শুধু খাবারগুলো নাড়িয়ে যাচ্ছে কিছু খাচ্ছে না।খাবে কেমন করে প্রিসা,তার সামনে তো শুভ বসেছে আর পা দিয়ে বারবার প্রিসাকে বিরক্ত করছে।

প্রিসার মাঃকি হয়েছে মা খাচ্ছিস না কেন?

প্রিসাঃ(খেতে দিলে তো খাবো।-মনে মনে)এইতো খাচ্ছি।

একসময় বিরক্ত হয়ে প্রিসা নিজের জুতা দিয়ে শুভের পায়ে পারা দেয়।এরপর শুভ আর কিছু করেনি।
__________________________________________

মাঝে বেশ কিছু দিন চলে যায়।সেই দিনের পর ওই বাড়ির কারোর সাথে প্রিসার যোগাযোগ হয়নি।তবে মাঝে এক-দুবার অর্ক এবং তাপসির সাথে তার কথা হয়েছে।আজ ভার্সিটি বন্ধ থাকার কারণে প্রিসা নিজের মায়ের কাজে কিছুটা সাহায্য করছে।প্রিসা ড্রয়িং রুমে থাকা শো পিসগুলো পরিষ্কার করছিলাম তখন বেল বেজে ওঠে।প্রিসা ভেবেছে তার বাবা এসেছে তাই ওই অবস্থাতেই দরজা খুলে দেয় কিন্তু দরজা খেলে যাদের দেখে প্রিসার তখন হার্টফেল করার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।

প্রিসাঃআপনারা?

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে