মেঘবতী পর্ব-০৫

0
2177

#গল্পঃমেঘবতী
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিসার যখন ঘুম ভাঙে তখন প্রায় বিকেল হয়ে যায়।প্রিসা ফ্রেস হয়ে নিচে এসে দেখে কেউ নেই মানে সবাই এখন ঘুমাচ্ছে।প্রিসা আস্তে আস্তে কিচেনে গিয়ে কিছু খেয়ে নেয় কারণ তার প্রচুর খিদে পেয়েছে।খাওয়া শেষ হলে ছাদে চলে যায়।কানে হেয়ার ফোন গুজে দোলনায় বসে গান গুনতে গুনতে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে সে।আহ্ কি সুন্দর আকাশ কোথাও লাল কোথাও কমলা আবার কোথাও নীল এসব চিন্তা করছে তখনই কেউ তার কান থেকে হেয়ার ফোনের দুই প্রান্ত দুইদিক থেকে খুলে নেয়।প্রিসা পেছনে ফিরে দেখে অয়ন আর সায়ন দাঁড়িয়ে আছে তারমানে ওরাই খুলেছে।

প্রিসাঃকি হয়েছে?আমার হেয়ার ফোন খুলেছেন কেন?দিন ওটা আমাকে।

সায়নঃওকে দেবো কিন্তু পরে।আচ্ছা কি করছিলে তুমি?

প্রিসাঃআপনাদের কেন বলবো?

অয়নঃহুম….ওসব বাদ দাও।আচ্ছা তুমি কি কখনো নোনতা অরেঞ্জ জুস খেয়েছো?

প্রিসাঃ অরেঞ্জ জুস আবার নোনতা হয় নাকি?

সায়নঃহয় হয় কেন তুমি জানোনা?অরেঞ্জ জুসে যদি তিন-চার চামচ লবণ মিশিয়ে দাওনা তাহলে সেটা নোনতা অরেঞ্জ জুস হয়ে যায়।

প্রিসাঃ(এইরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি ওনাদের জুসে লবণ মিশিয়েছিলাম।-মনে মনে)ও… আচ্ছা,আমি তো জানতাম না।

অয়নঃকোন লবণ মিশিয়েছিলে আমাদের জুসে?(হালকা রেগে)

প্রিসাঃআমি…..

সায়নঃআমরা জানি তুমিই মিশিয়েছিলে কারণ ফুফি ভুলেও ভুল করে এতোগুলা লবণ কোনদিনও মেশাবেনা।আর ফুফি গ্লাসগুলো তোমাকে দিয়েছিল তারমানে তুমিই মিশিয়েছিলে।

প্রিসাঃহুম,আমি লবণ মিশিয়েছি।তো কি করবেন আপনারা?

অয়নঃকেন মিশিয়েছো?

প্রিসাঃকারণ আপনারা আমাকে কাজের মেয়ে বলেছেন তাই।উঁহু….. আমাকে,এই প্রিসাকে কাজের মেয়ে বলেছেন আর আমি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো বলে আপনাদের মনে হয়।নো,কখনোই না,হু।

সায়নঃ আচ্ছা এবার বুঝতে পেরেছি।

প্রিসাঃহু।(কিছুক্ষণ চুপ করে সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রিসা।তারপর…..)লাল টি-শার্ট…….।(রেগে চিৎকার করে।)

অয়নঃও আল্লাহ গো।(কানে হাত দিয়ে)

সায়নঃকি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছো কেন?আর কে এই লাল টি-শার্ট?

প্রিসাঃআপনি হচ্ছেন লাল টি-শার্ট।

সায়নঃআমি?

প্রিসাঃহ্যাঁ আপনি,সেসব কথা বাদ দিন এটা বলুন আপনার সাহস কি করে হয় আমার প্রিয়,ফেভারিট,জানের জান,এত সুন্দর গাছ থেকে ফুল ছেঁড়ার?

সায়নঃওরে খোদা,এই সামান্য ফুলটার জন্য এভাবে চিৎকার করছো তুমি।

প্রিসাঃএটা সামান্য ফুল না এটা আমার প্রিয় ফুলগুলোর মধ্যে একটা আর আপনি কিনা আমার থেকে জিজ্ঞেস না করে ছিঁড়ে ফেললেন।(তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে)এইযে নীল টি-শার্ট কি লুকাচ্ছেন শুনি?হাতটা সামনে আনুন তো দেখি।

অয়নঃও কিছু না।(কাচুমাচু হয়ে)

প্রিসাঃকিছু আছে কি নেই সেটা পরের কথা আগে হাতটা সামনে আনুন।

প্রিসা অনেক জোরজবরদস্তি করে অয়নের হাত সামনে আনে।

প্রিসাঃনীল টি-শার্ট(রেগে)।আমার কাঠগোলাপ।

অয়নঃসরি সরি।

প্রিসাঃআরে রাখেন আপনাদের সরি,আপনাদের তো আমি আজকে……।

প্রিসা আশেপাশে মারার জন্য কিছু খুঁজতে থাকে সেই সুযোগে অয়ন আর সায়ন পালিয়ে যায়।

প্রিসাঃনীল টি-শার্ট,লাল টি-শার্ট….(রেগে)।এসেছে মাত্র কিছু ঘন্টা হয়েছে এখনিই আমাকে দুজনেই জ্বালিয়ে মারছে না জানি এরপর কি হবে।এ্যাঁ…আমার ফুল।

রাতে খাবার সময়,

প্রিসার বাবাঃকেমন আছো তোমরা দুজন?

অয়নঃএইতো ফুপু ভালো।তুমি কেমন আছো?শরীর ঠিক আছে?

প্রিসার বাবাঃআমি একদম ফাটাফাটি আছি।তা তোমাদের আব্বু-আম্মু কবে আসবে?

সায়নঃএইতো ফুপু পরের মাসেই চলে আসবে।

প্রিসার বাবাঃতাহলে তো ভালোই।তাহলে ওরা যতদিন না আসছে তোমরা ততদিন আমাদের সাথেই থাকো।

অয়নঃনা না ফুপু আমরা কালকেই চলে যাবো।

সায়নঃহ্যাঁ ভাই ঠিক বলছে।আমরা কালই আমাদের বাসাই চলে যাবো।

প্রিসার বাবাঃনা আমি তোমাদের কোন কথা শুনছি না।তোমাদের আব্বু-আম্মু যতদিন না আসছে তোমরা এখানেই থাকবে।

প্রিসার মাঃহ্যাঁরে,তোদের ফুপু ঠিকই বলছে।তোরা দুটো ছেলে কিভাবে একা একা ওখানে থাকবি বল।তারচেয়ে ভালো আমাদের সাথেই থাক।

অয়ন এবং সায়নঃঠিক আছে।

প্রিসাঃ(কি?আরো একমাস এদের সহ্য করতে হবে। ও মাই গড।একদিনেই আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে,এখন না জানি কি করবে।)

এরপর সবাই চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে গেলো।খাওয়া শেষ হওয়ার পর প্রিসা বসে বসে টিভিতে টাইম ট্রাভেলিং একটা কোরিয়ান ড্রামা দেখে শুরু করে।কিছুক্ষণ পর অয়ন আর সায়ন এসে প্রিসার দুপাশে বসে পরে।প্রিসার একবার ঘাড় বাঁকিয়ে দুজনকে দেখে আবার টিভি দেখে মনোযোগ দেয়।

অয়নঃকি দেখছো?

প্রিসাঃদেখতে পাচ্ছেন না।

অয়নঃপাচ্ছিতো কি দেখছো কিন্তু আধোও কিছু বুঝতে পারছো নাকি এমনিতেই তাকিয়ে আছো?

প্রিসাঃহ্যাঁ বুঝতে পারছি না বুঝলে কি আর দেখতাম।

সায়নঃকি তুমি কোরিয়ান ভাষা বুঝতে পারো?

প্রিসাঃআরে ধুর,আমাকে শান্তিতে টিভিও দেখতে দিবেনা দেখছি।ওই দেখতে পারছেন না নিচে ইংলিশ সাবটাইটেল দেওয়া আছে।

অয়নঃও আচ্ছা এবার বুঝতে পেরেছি তাই তো বলি তুমি আর কোরিয়ান ভাষা,হু।(অনেকটা তাচ্ছিল্যভাবে)

প্রিসা চোখ ছোট করে অয়ন দিকে তাকাই তবে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ন বলে উঠে—

সায়নঃআচ্ছা এসব বাদ দাও,চলো নতুন কিছু দেখি।

প্রিসাঃনতুন কিছু আবার কি?

সায়নঃসেটা তো জানি না।

অয়নঃআচ্ছা চলো হরর মুভি দেখি।কি বলো?

প্রিসাঃহ..রর…. মু…ভি…।তাও এতো রাতে।(কিছু ভীত গলাই)

সায়নঃহ্যাঁ দেখা যায়।তুমি ভয় পাও নাকি প্রিসা?

প্রিসাঃহুম এই একটুআধটু।

অয়নঃধুর কিছু হবে না,আমরা আছি না।

এরপর তিনজনে মিলে হরর মুভি দেখতে শুরু করলো।প্রথমে ভয় না লাগলেও এখন প্রিসার প্রচুর ভয় লাগতে শুরু করেছে।এদিকে অয়ন আর সায়ন চোখে চোখে ইশারায় কি যেন বলছে একে অপরকে।

অয়ন এবং সায়নঃ থ্রী…. টু…. ওয়ান…..এন্ড…. ভাও……..।

প্রিসাঃআ…………….।এ্যাঁ………… মা……।

আসলে অয়ন আর সায়ন আচমকা চিৎকার করার কারণে প্রিসা ভয় পেয়ে যায়।এমনিতেই হরর মুভি দেখে তার অবস্থা খারাপ তার উপর আবার এরা দুজন ভয় দেখিয়েছে।সব মিলিয়ে ভয়ে কান্না করে দেয় প্রিসা।প্রিসার কান্না শুনে তার বাবা-মা তাদের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

প্রিসার বাবাঃকি হয়েছে মা?

প্রিসার মাঃপ্রিসা?

প্রিসা তার মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

প্রিসার মাঃকিরে ভয় পেয়েছিস কিছু দেখে?

প্রিসা কান্নার কারণে কিছু বলতে পারছে না।এদিকে সায়ন আর অয়নও গিলটি ফিল করছে,তারা বুঝতে পারেনি প্রিসা এতোটা ভয় পেয়ে যাবে।

অয়নঃসরি ফুপি আসলে ভুলটা আমাদের।আমরাই ওকে ভয় দেখিয়েছি।

সায়নঃআমরা বুঝতে পারিনি ও এতটা ভয় পেয়ে যাবে,সরি প্রিসা।

প্রিসার বাবাঃআচ্ছা ঠিক আছে এতে এতো মন খারাপ করার কি আছে শুনি,তোমরা ওর সাথে একটু মজা করেছো এতে সরি বলার কি আছে।আসলে ও ছোটবেলা থেকেই এরকম একটুতেই ভয় পেয়ে যায়।আচ্ছা তোমরা যাও এবার ঘুমিয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।

অয়ন আর সায়ন নিজের রুমে চলে যায়।প্রিসাকে তার মা তার(প্রিসার) রুমে নিয়ে যায় এবং ঘুম পাড়িয়ে দেয়।প্রিসা ঘুমিয়ে গেলে তার মা চলে যায়।

মধ্যরাত,

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই।ঘুমের মধ্যে প্রিসা অনুভব করছে যে কেউ তাকে খুব কাছ থেকে দেখছে কিন্তু ঘুমের কারণে চোখ খুলতে পারছে না।আগন্তুকটি অনেকটা সময় প্রিসার দিকে তাকিয়ে তার কপালে কিস করে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।

সকালে,

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে শুরু হয় প্রিসা।

অয়নঃএত সেজেগুজে কোথাই যাওয়া হচ্ছে শুনি?

প্রিসা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন।প্রিসা সেদিকে মন না দিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।

প্রিসাঃকোথাই যাচ্ছি সেটা আপনাকে কেন বলবো?আমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো আপনার কি?

অয়নঃওকে,তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাও।

বলে অয়ন চলে যায়।রেডি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য রওনা হয় প্রিসা।সিঁড়িতে তার সাথে সায়নের দেখা হয়।

সায়নঃকোথাই যাচ্ছো?

প্রিসাঃআপনাকে কেন বলবো,হু।

বলে আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে।তারা ব্রেকফার্স্ট করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দেয় প্রিসা।

ভার্সিটি এসে নিজের জায়গায় বসে পরে প্রিসা তখনই একটা মেয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়াই।

প্রিসাঃকি সমস্যা?(হালকা বিরক্ত হয়ে)

—- তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার জায়গায় বসেছো।

প্রিসাঃকোথাও কি তোমার নাম লেখা আছে?যদি নাম লেখা থাকে তাহলে আমি উঠে যাবো।

—- তোমাকে তো আমি…..

প্রিসাঃকি করবে?

—- কি করবো?তোমার দুই গালে… দুইটা চুমা দিবো,হিহিহিহি।

প্রিসাঃ ছিঃ।

—- এতে ছিঃ কি আছে?

প্রিসাঃআচ্ছা সেসব বাদ দে,এবার বল বেড়ানো কেমন কাটলো?

—- একদম ফাটাফাটি।তোর জন্য মা অনেক কিছু পাঠিয়েছে।

প্রিসাঃতাই নাকি,তাহলে দে।

চলুন মেয়েটি সম্পর্কে কিছু বলি—
(মেয়েটির নাম হচ্ছে স্মিতা ইসলাম।প্রিসার একমাত্র আর জানের জিগরা বন্ধু।পুরো ক্লাসে প্রিসা একমাত্র স্মিতার সাথেই বেশি টাইম স্পেন্ড করে আর বেশি কথা বলে।আপাতত এতটুকুই বাকিটা পরে বলছি)

প্রিসা আর স্মিতা ক্লাস শেষ করে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসে থাকা একটা বড় গাছের নিচে বসে গল্প করে।তারপর বসাই যাওয়ার জন্য রওনা হয় কিন্তু গেট পর্যন্ত এসে প্রিসা থেকে যায়।

স্মিতাঃপ্রিয়ু কি হয়েছে?হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?

প্রিসাঃগেটের বাইরে দেখ।

স্মিতা প্রিসার দৃষ্টি অনুসরণ করে গেটের বাইরে থাকাই আর যা দেখে তাতে তার ভ্রু-কুচকে যায়।

চলবে………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে