Sunday, July 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1387



তোমাকে চাই পর্ব-০৬

0

#তোমাকে_চাই
#মারিয়া_তুন_রিয়া
#পর্ব_৬
এটা বলে আমিও ষ্টেজ থেকে নেমে যাই। ষ্টজে থেকে নেমে কিছু দুর এগিয়ে যেতেই কিছু সাথে পা পিছলে পরে যেতেই আমি আম্মু আমার কোমোর বলে চিৎকার দিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করি। কিছুখন পর মনে হলো কেউ আমাকে ধরে আছে। তাই আমি পিট পিট করে চোখ খুলাম। সমনে থাকা বক্তিকে দেখে আমি একটা সস্তির নিশ্বাস ফেললাম। কারন যে আমাকে ধরেছে সে আর কেউ না সে হলো রিক।
আমি রিককে দেখে বলে উঠলাম…………….
মারিয়াঃ Tank you দোস্ত।
রিকঃ আরে রাখ তোর Tank you. এখনি তো পরে যেতি।
মারিয়াঃ আরে পরলেইবা কি। একটু কমরি ভাংতো এই আর কি।
রিকঃ নাউজুবিল্লাহ,নাউজুবিল্লাহ। তোর কমর ভাংলে আমি শেষ।
মারিয়াঃ ক্যান আমার কমরের সাথে তোর কি।😒😒
রিকঃ আমারিতো সব।
মারিয়াঃকিভাবে। 🤔🤔
রিকঃ এ যেমন তোর যদি কমর ভেংয়ে যাইতো তাইলে তুই হুয়িলচেয়ারে বইসা থাকতি। কলেজ তেমন আসতি না। আসলেও আগের মতো আড্ডা দিতিনা। এতে কি হয়তো আমার আর তিশার মধ্যে সেটিং করাই পারতি না। তালে আমার লস না।
মারিয়াঃ কি তুই আমারে এর জন্য বাচালি। আমিতো ভাবসি আমার জন্য চিন্তা করস। বাট তুই তো দেখি…………….. আমি তোর আর তিশার মধ্যে আর নাই।
রিকঃ দেখ জানু (মরিয়ার আরেক নাম জানুভি। তাই রাফি আর রিক ওকে জানু ডাকে) এমন করিস না। তুই না ভালো।
মারিয়াঃ নাতো আমি একদম ভালোনা।
রিকঃ দেখ তুই যা বলবি তাই করব। তাও এরকম করিস না।
মারিয়াঃসিরিয়সলি😒😒
রিকঃ এমনে তকানোর কিছু নাই। সত্যি করমু।
মারিয়াঃ ওক। ১০০ কিটক্যাট আর একটা আাইসক্রিম।
রিকঃ কি…………. এতোগুলা (অবাক হয়ে)
মারিয়াঃ দিলে বল না দিলে গেলাম।
রিকঃ এই না না দিমু। বাট তুই এতোগুলা করবি কি? 😒🤔
মারিয়াঃ ওটা পরে দেখতে পারবি।
রিকঃ রাখসি (বিরবির করে)
মারিয়াঃ কি?
রিকঃ না কিছু না
।।
দুর থকে এদের এই দৃশ্য দেখে একজন রাগে কাপছে। কখন যেনো সব শেষ করে দেয়। মারিয়া আর রিক চলে যাওয়ার পর সে কাওকে ফোন করলো। একবার রিং হতেই ও পাস থেকে ফোন ধরলো। ও পাস থকে ফোন ধরতেই সে বলে উঠলো…………………
সেঃ একজনকে তুলতে হবে।
………………..
সেঃ ১১টার দিকে যাবো।
………………..
সেঃ না ওসব কিছু করা লাগবে না। আমি এসে যা করার করবো।
…………………
সেঃ কাজটা যেন ঠি মতো হয়।এখন রাখি।
…………………




আমি রিকের সাথে কথা বলে ওয়াসরুমের দিকে যাচ্ছিলাম। ওয়াসরুমটা একটা বন্ধ ঘর টপকে যেতে হয়। আমিও ঠিক ও ঘর টপকে যেই ওয়ারুমের দিকে যাবো ঠিক তখনি কে যেনো আমার হাত ধরে ওই রুমের ভিতর নিয়ে গেলো। প্রথমে ভয় পলেও পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিলাম। অন্ধকার এর কারনে ঠিকমতো মুখ দেখা যচ্ছে। আমি লোকটাকে কিছু বলব তার আগেই লোকটা আমাকে দেওয়ালের সাথে জোরে চেপে ধরলো। আর বলে উঠলো……….
আয়ানঃ ছেলেদের সাথে তোর এতো কিসের ডলাডলি। (রাগে হালকা চিৎকার করে)
ওর কথা শুনে আমি বুঝতে পরলাম এটা আয়ান ছারা আর কেউ না। তাই আমি ওকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলাম……………
মারিয়াঃ মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ান। এসব কি বলছে তুমি। আমি কার সাথে ডলাডলি করছি।
আয়ানঃ তহলে ঐ ছেলেটা কে শুনি।
মারিয়াঃ ও আমার ফ্রেন্ড।আর শুধু ফ্রেন্ড না ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর তুমি তুই তুকারি করছো কেনো। আর আমার হাত ছারো।
আয়ানঃ ও আমি ধরলেই এখন বিরক্ত লাগে না। আর ও ধরলে মনে আনন্দ লাগে না।
মারিয়াঃ তুমি কোন কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।
আয়ানঃ যেখানকার কথা আমি সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। ও যদি তোমাক ভালোনাবাসতো তো জানু কেনো ডাকলো। আমার যানা মতে জানু তো গালফ্রেন্ডেকে ডাকে তাই না
মারিয়াঃ এই ওয়েট ওয়ট তুমি কি করে যানলা ও আমাকে জানু বলেছে।
আয়ানঃ আমি নিজের কানে শুনেছি।
মারিয়াঃ পুরোটুকু না শুনে শুধু এতোটুকু শুনলে।
আয়ানঃ কেনো তুমি কি চাইছো তোমাদের প্রেম আলাপ শুনি।
মারিয়াঃ তুমি আবার অর্ধেক কথা শুনে আমাকে ভুল বুঝলে। থাক আমিও আর এই ভুল ভাংগাবোনা। (মনে মনে)
হ্যা আমি ওর গালফ্রেন্ড তো।
আয়ানঃ লিসেন মারিয়া এখন কিন্তু আমার মাথা খারাপ আছে আমাকে আর রাগিও না।
মারিয়াঃ কেনো রাগলে কি হবে শুনি। কিহবে।
আয়ানঃ আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।
মারিয়াঃ কি করবা তুমি। আমিও একটু দেখি।
আয়ানঃ আমি কিন্তু সত্যি কিছু একটা করে ফেলবো।
মারিয়াঃ দেখি তুমি কি করো। তোমার চ…………….
আর কিছু বলার আগে আয়ান আমাকে দেওয়ালের সাথে আরও জোরে চেপে ধরলো। আর আমার ঠোঁট ওর নিজের আওত্তায় নিয়ে নিলো। আমি যত ছারানের চেষ্টা করছি ও তত আকরে ধরছে। পরে আমি হাল ছেরে দিলাম। কিছুক্ষন পর ও আমাকে নিজে নিজে ছেরে দিলো। আমি ওর দিকে ঘৃনার দৃষ্টি নি তাকিয়ে বলে উঠলাম…………
মারিয়াঃ ছিহ তুমি এতো নিচে নেমে গেছো। ভাততেই পারছি না।
বলেই আমি ওখান থকে বেরিয়ে আসলাম।
আর এ দিকে আয়ান…….
আয়ানঃ আই এম সরি মারিয়া। আমি কি করতে কি করে বশি নিজেও জানিনা। তোমাকে আমি বলেছিলাম আমাকে রাগিওনা তরপরও তুমি তো তুমি। কিছু শোনার মেয়ে না। এটা বলে আয়ান রুম থেকে বরিয়ে যায়।




রাত ১১টা……………
অন্ধকার রুমে হাত পা বাধ অবস্তায় বসে আছে রিক। কিছুক্ষন পর পিট পিট করে চোখ খুললো সে। নিজেকে এই অবস্তায় দেখে ঘাবরে যায় সে। রিক শুধু ভাবছে কে তাকে এখানে নিয়ে আাসতে পারে, কার সাথে ওর এতো শত্রুতা যে ওকে এখানে বেধে নিয়ে আসা হলো। এমন সময় রুমে ঢুকলো কেউ রুমে ঢুকে রিকের সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো সে। বসে তাদের মাথার ওপর যে বাল্প টা আছে সেটা জালিয়ে দিলো।










#চলবে………..

তোমাকে চাই পর্ব-০৫

0

#তোমাকে_চাই
#মারিয়া_তুন_রিয়া
#পর্ব_৫
লোকটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এগিয়ে আসতে আসতে সে তার হুর্ডি খুলে ফেলে। এখন কিছুটা চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কে।লোকটা এসে রিদম ভাইয়ার সাথে হ্যানসেক করে তার মুখের মাক্স খুলে ফেললো। লোকটাকে দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়েগেছে।তখনি রিদম ভাইয়া হ্যানসেক করে বললো………….
রিদমঃ ওয়েলকাম, ওয়েলকাম মিস্টার আয়ান খান।
আয়ানঃ থ্যাক্নস।
রিদমঃ আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না। আপনার একটা মিটিং আছে তাই।
আয়ানঃ হুম ছিলো। বাট এখানে আসাটা যতটা ইম্পটান মিটিং ততটা ইম্পটেন না। (আমার দিকে তাকিয়ে।)
রিদমঃ মানে।🤨
আয়ানঃ মানেটা না জানলেও চলবে। বাই দা ওয়ে এনারা কে। (আমাদের দিকে তাকিয়ে)
মারিয়াঃ উম্হ! এমন একটা ভান করছে যেন চেনেই না। শালা হনুমান।গিরগিটি! মুহুর্তে রং পালটায়। (মনেমনে)
রিদমঃ হ্যা অবশ্যই করাবো।
বলেই রিদম ভাইয়া আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আয়ানও সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে আর হ্যানসেক করছে। এবাও ও আমার সামনে এসে বলে উঠলো……………..
আয়ানঃ হ্যালো মিসেস মারিয়া।
মারিয়াঃ সরি মিসেস না মিস। (হাত বারিয়ে)
আমার কথা শেষ হতেই ও ওর মুখ আমার কানের কাছে এনে বললো……………..
আয়ানঃ বাট তুমিতো কালকেই মিসেস হয়ে গেছো। (বাঁকা হেসে)
মারিয়াঃ এখানে আসার কারন টা কি?
আয়ানঃ তুমি।
বলেই আয়ান চলে গেলো। আর আমি এখনো ওর যাওয়ার মানে তাকিয়ে আছি। তখনি সম্পা আমাকে ডাক দিলো। আমি ওদের কাছে যাতে রিদম ভাই আমাকে আর আয়ানকে একটা গান গাইতে বললো। প্রথমে আমি না করলেও পরে আমি রাজি হয়ে যাই।
আমি একটা গিটার আর আয়ান একটি গিটার হাতে নি গাইতে শুরু করলাম…………………
……Tadpaye mujhe teri sabi bate
Ek bar ae deewJhaa
Jhaatha hi sahi pter to kar
Mane vula nehi hasi mulakat
Bechain karke mujko
Mujse you na fer najar
Rutega na mujse
Mere sat ye wada kar
Tere bina muskil he
Jina meri meri dilpar.
Zara zara behekta hai
Mehekta hai
Aj to nera tan badan me pyase huu
Muje varle apni bahome
Zara zara behekta hai
Mehekta hai muje varle apni bahome…………..
( বাকিটা নিজ দাইত্বে শুনে নিবেন)
গান গাওয়া শেষ হতেই সবার করতালিতে ভরে গেলো। রিদম ভাইয়া হাততালি দিতে দিতে আমার কাছে আসলো আর বললো।
রিদমঃ ওয়াও তোমাদের ♬ ♩ ♪ গান পুরা ওসাম হইছে।
মারিয়া+আয়ানঃ থ্যাক্নস।
রিদমঃ আর একটা রিকুয়েষ্ট।
মারিয়াঃ কি?🤔🤔
রিদমঃ ভালোবাসা নিয়ে কিছু মন্তব্য করে যাও।
এবার আর না করলাম না……… রাজি হয়ে গেলাম।প্রথমে আয়ান বলতে শুরু করলো……………
আয়ানঃ ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা দুজন মানুষকে কাছে আনে। দুটো মোন কে এক করে। সবকিছু বিনিময়ে শুধু তাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা থাকে।দুজন দুজন মানুষকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। কিন্তু র বিশ্বাস ভেংয়ে গেলে দুটো মানুষ আলাদা হয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষে ইগনোর গুলো শুইয়ের মতো লাগে। তাকে হারিয়ে ফললে দুনিয়া থমকে যায়। সে একটু একটু করে তরপাতে থাকে। এ ভালোবাসা একজন মানুষকে শেষ করে দেয়। শেষে করে দেয় তাকে…………..

আয়ানের কথা শেষ হতেই সবার করতালিতে ভরে যায়।রিদম ভাইয়া আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে…………….
রিদমঃ তো আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন………..
আয়ানঃ হুম
রিদমঃ তো সে এখন কোথায়?
আয়ানঃ কাছে থেকেও কাছে নেই।
রিদমঃ মানে……
আয়ানঃ যখন তাকে পুরোপুরি কাছে পাবো তখন জানাব। (আমার দিকে তাকিয়ে)
এটা বলে আয়ান ষ্টেজ থেকে নেমেযায়।
রিদমঃতো মারিয়া এবার তুমি বলো…………

মারিয়াঃ ভালোবাসা একটা পবিত্র বন্ধন।দুটি মনের মিলন। কিন্তু আজকাল এটা একটা খেলনা হয়ে গছে। সবাই সবার মন নিয়ে খেলছে।কোনো ছেলে যদি কোন একটা ময়েকে সত্যি ভালোবাসে আর ময়েটা যদি তাকে ধোকা দেয় তাহলে ঐ মেয়েটার জন্য ছেলেটা নিজেকে একটু একটু করে শেষ করেফেলে।আর সেম জিনিস যেদি ময়েদের সময় হয় তখন ময়েটা নিজেকে একবারে শেষ করে। হ্যা ওনেক ছেলেমেয়ে হয়তো ভুলে থাকতে পারি বাট 80% ছেলে মেয়েই পারেনা। তাই ভালোবাসাকে কোনো খেলনা না বস্তবতার সাথে তুলনা করা উচিৎ। কারন ভালোবাসায় একবার মোন ভাংলে জোর দেওয়া খুব কঠিন। যার মেন ভংয়ে সে বুঝতে পারে এর কষ্ট কেমন।

এটা বলে আমিও ষ্টেজ থেকে নেমে যাই। ষ্টজে থেকে নেমে কিছু দুর এগিয়ে যেতেই কিছু সাথে পা পিছলে পরে যাতেই আমি আম্মু আমার কোমোর বলে চিৎকার দিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করি। কিছুখন পর মনে হলো কেউ আমাকে ধরে আছে। তাই আমি পিট পিট করে চোখ খুলাম। সমনে থাকা বক্তিকে দেখে আমি একটা সস্তির নিশ্বাস ফেললাম। কারন যে আমাকে ধরেছে স আর কেউ সে………………










#চলবে………

তোমাকে চাই পর্ব-০৪

0

#তোমাকে_চাই
#মারিয়া_তুন_রিয়া
#পর্ব_৪
।।
মুশল ধারা বৃষ্টির মদ্ধ ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে আয়ান। রাগের কারনে তার মাথার রগ ফুলে উঠেছে। ২ঘন্টার পথ সে আধঘন্টা পোছে যায়। আয়ান এজটা গোডাউন এর সামনে এসে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে সোজা গোডাউন এর ভিতর প্রবেশ করে। গোডাউন এর ভিতর ঢুকতেই একটা লোককে হাতপা বাধা অবস্তায় দেখতে পায়। আয়ানকে ভতরে আসতে দেখ বর্ডিগাড ঐলোকের সামনে একটা চেয়ার রাখে। আয়ান শোজা এসে চেয়ারে বসে। লোকটার ভয়ে হাতপা কাপতে থাকে। তখনি আয়ান বলে উঠলো…………….
আয়ানঃ কি ব্যাপার আঙ্কেল আপনি তো দখি ভয়ে কাপাকাপি করছেন।
লোকটাঃ বাবা আমি তো তোমার আব্বুর বন্ধু তাই। তুমি তোমার আব্বুর বন্ধুকে মারতে পারবা।
আয়ানঃ যখনে আব্বুই নাই সেখানে আব্বুর বন্ধু। আমার আব্বু আম্মুকে মারার শান্তি তো আপনাকে পেতেই হবে আঙ্কেল।
লোকটাঃ ক কি করবে তুমি।
আয়ানঃ এখনি বলছি……….
বলেই আয়ান বর্ডিগাড দের কিছু একটা আনতে বললো। কিছুখন পর বর্ডিগাডরা কিছু লোকদের ধরে নিয়ে আসলো। আয়ান আবার বলতে শুরু করলো………….
আয়ানঃ চিনতে পারছেন আঙ্কেল আপনার বোউ,মেয়েএবং আপনার জামাই। এখন এদের সাথে কি করব জানেন একটা একটা করে শুট করবো।
লোকটাঃ না আমার পরিবার কি করেছে। ওদের কেনো মারবা। আর আমার মেয়ে ৬ মাসের প্রেগনেন্ট।
আয়ানঃ তো আমার আম্মুও ৯ মাসের প্রেগনেন্ট ছিলো।আাকে তো আপনি মারেছেন। তাহলে আমি ক্যানো পারবোনা।
বলেই আয়ান লোকটার ময়েকে শুট করে তারপর তার জামাইকে এরপর তার বোউ কে। আর বর্ডিগাডদের উদ্দেশ্য বললো……….
আয়ানঃ ওনাকে এমন ভাবে পেটাও যাতে ওনি পরকাল গমন করতে পারে।
বলেই আয়ান গোডাউন থেকে বেরিয়ে যায়।




রাতে………….
আজ আমরা সম্পসার বোউভাতে যাবো। অবশ্য আজকে আম্মু আব্বু আপু ভাইয়া কেউ যাবেনা শুধু আমরা ৫জন জাবো। আজ আমি গোল্ডেন কালার ল্যাহেংগা পরে হালকা সাজ পুরো পুরি তৈরি। আমি ড্রসিংটেবিলের সামনে থেকে উঠে হাতো ফোনটা নি সোজা WhatsApp গ্রুপে ঢুকে পরলাম। তারপর গ্রুপে কল দিলাম কল দেওয়ার কিছুখন পর একে একে সবাই জয়েন হলো। জয়েন হওয়ার পরপরি আমি বলে উঠলাম……………
মারিয়াঃ ঐ তোরা সব আজ আসবি তো।
তিশাঃ হুম আসবো।আমি তো রেডিও হয়ে গেছি।
রুহিঃ আমিও রেডি। এখন শুধু বের হবো।
রাফিঃ আমিতো বেরিয়েও গেছি।
রিকঃ হেহেহে আমিতো ড্রাইভ করছি। তার মানে চমি ফাস্ট।
মারিয়াঃ ফাস্টের বচ্চা……
রিকঃ কি হইছে এমনে চিল্লাস ক্যান।
তিশাঃ তো চিল্লাইবোনাতো কি করবো। তুই ড্রাইভ করতে করতে গাড়ি চালাস ক্যান। ফোন রাখ।
রিকঃ আরে শো………..
তিশাঃ তেরে ফোন রাখতে বলছিনা।😡😡
রিকঃ ওকে বাবা রাখছি। আমার মতো একরা মাসুম পিচ্চি বাচ্চারে পাইয়া সবাই ধইরা বসছে। 🥺🥺🥺🥺🥺
এরা বলে রিক ফোন কেটে দিলো। আর ওরা রিকের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। তারপর তারা ফোন কেটে যে যার মতো বপরিয়ে পরলো।।




পার্টিতে…………..
আমরা সবাই একসাথে পার্টির ভিতর ঢুকলাম। আমাদের আসতে দেখে সম্পা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে কোন কথা ছারাই রিক আার রাফির কান ধরে বলে উঠলো……………
সম্পাঃ এই হারামি কালকে আসিসনাই ক্যান।
রিক শুধু আমাদের ক্যান বলতাছিস ওই দুইটাকেও বল। (রুহিআর তিশাকে দেখিয়ে)
সম্পাঃ ওরা ক্যানো আসেনাই আমি জানি। তোরা ক্যান আসিসনাই সেটা বল।
রাফিঃ দোস্ত আমি আসছিলাম।
সম্পাঃ কখন আমি যাওয়ার পর।
রাফিঃ হুম তুই কমনে জানলি।
সম্পাঃ মানে…..
রাফিঃ তুই তো জানোস আমি আমাদের অফিসের কাজে ১৫ দিনের জন্য লন্ডন গিয়েছিলাম। তো আমি কালকে দেশে আসছি।তারপর আমি এয়ারপোর্টে থেকে সোজা তোর বিয়েতে আসছি। কিন্তু আমি যখন আসি ততখনে তো বিদায় হয়েযায়।
সম্পাঃ ও আচ্ছা। কিন্তু তু কেনো আসিসনাই। (রিককে উদ্দেশ্য করে। কান ছারতে ছারতে)
রিকঃ হেহেহে। আসলে হয়েছে যে আমিনা ভ ভুলে গেছিলাম। তাইআসতে পারিনি। তাছারা দোস্ত আমিতো নিজের জন্মদিন ভুলেযাই এরা কি করে মনে রাখি বল।
সম্পাঃ তোরে দারা কিছু আসাও করা যায় না।
আমাদের কথার মাঝে রিদম ভাইয়া (সম্পার হাসবেন্ড)এসে বলে উঠলো…………….
রিদমঃ আমার শালক শালিকা কে নিয়ে কি কথা বলছো তুমি।
মারিয়াঃ তেমন কিছু না। এমনি।
রিকঃ ভাইয়া আপনিও জয়েন করুন আমাদের সাথে।
রিদমঃ হ্যা অবশ্যই করবো কিন্তু এখন না। এখন তোমাদের একটা কথা জানাতে আসছি।
মারিয়াঃ কি কথা ভাইয়া।
রিদমঃ আজ আমাদের মদ্ধ একজন স্পেশাল মানুষ আসছে।
তিশাঃ কে?
রিদমঃ সেটা তো সারপ্রাইজ। আসলেই দেখতে পারবা।
বলেই রিদম ভাইয়া চলে যায়।আর আমারা আমাদের মতো গল্প করতে শুরু করি।
।।

কিছুখনপর………..
আমারা গল্প করছি এর মাঝে ১০থেকে১২ জন কালো পোশাক পরা লোক পার্টিতে আসে। দেখে বর্ডিগাড মনে হচ্ছে। তর কিছুখন পর তাদের ভিতর থেকে একটা লোক বেড়িয়ে আসলো। পরনে তার নিল প্যান্ট। সাদা সার্ট।মুখে মাক্স, চোখে নিল সানগ্লাস। আর এটটা ওা থেকে মাথা পযন্ত হুর্ডি পরা।লোকটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এগিয়ে আসতে আসতে সে তার হুর্ডি খুলে ফেলে। এখন কিছুটা চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কে।লোকটা এসে রিদম ভাইয়ার সাথে হ্যানসেক করে তার মুখের মাক্স খুলে ফেললো। লোকটাকে দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়েগেছে।










#চলবে………

তোমাকে চাই পর্ব-০৩

0

#তোমাকে_চাই
#মারিয়া_তুন_রিয়া
#পর্ব_৩
।।
বৃষ্টি ভেজা রাত। চারিদিকে ঠান্ডা আবহাওয়া। মন শিতল করা বতাস। এ বাতাস যে কারো খারাপ লাগাকে নিমিষেই ভালো করে দিতে পারে। বেলকোনির দোলনায় বসে এক দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে আয়না। সত ভালোলাগা খারাপলাগার ভিরে বসে আছে সে। হঠাৎ আয়ান নিজে নিজে বলতে লাগলো………….
আয়ানঃ যানিনা কবে তোমাকে আবার পূর্নরায় কাছে পাবো। যানিনা কবে আবার ভালোবাসার কথা বলতে পারবো। যানিনা কবে আবার তোমার ঐ কাজোল রাঙা চোখে তলিয়ে যেতে পারবো। বিশ্বাস করো তোমাকে ভালো না বাসলে আমি জানতামই না, যে কাউকে এতোটাও ভালোবাসা যায়!৩ বছর আগের একটা ছোট্টো ভুলের কারনে আজ আমরা আলাদা। (চোখের পানি মুছে)।
তারপর একটা গিটার নিয়ে শুর তুলে গাইতে শুরু করলো আয়ান…………
……….ঐ তোমার নামে রোদ্দুরে,
আমি ডুবেছি সমুদ্রে……….
………..যানিনা যাবো কতদুরে এখনো।
আমার পোরা কপালে……..
………..আর আমার সন্ধে সকালে
তুমি কেনো এলে জানিনা এখনো……….
………….ফন্দি আটে মন পারাবার
বন্দি আছে কাছে সে তোমার…………….
………….যদি সত্যি যানতে চাও #তোমাকে_চাই #তোমাকে_চাই
যদি মিথ্যা মানতে চাও
#তোমাকে_চাই………….
……………………উমমমম………………………
……..যদি সত্যি যানতে চাও #তোমাকে_চাই #তোমাকে_চাই
যদি মিথ্যা মানতে চাও #তোমাকে_চাই…………..
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)




সকালে………….
আজ আমি ৫দিন পর মেডিকেল যচ্ছি। তাই সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে মিডেকেল গেলাম।
মেডিকেল……………
৩টা ক্লাস শেষ করে আমরা ৫ বেষ্ট ফ্রেন্ড কেন্টিনে গেলাম। আমরা ৫ জন একটা টিম। 5star gang. (আসুন পরিচয় পর্ব শেষ কির।
রুহি ও আমার মতো ভবিষ্যৎ গাইনি ডাক্তার। বিজনেসম্যান আসাদ রহমান এর একমাত্র মেয়ে।
রাফি ও ভবিষ্যৎ সার্জারি ডাক্তার + রাজিব ইন্ডাস্ট্রির একমাএ মালিক।
রিক সেও ভবিষ্যৎ সার্জারি ডাক্তার। লন্ডন সেটেল।
তিশা ও আমার আর রুহির মতো গাইনি ডাক্তার। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।)
আমার সবাই কেন্টিন আসি। চিয়ারে বসতে না বসতে সবাই আমার দিকে প্রশ্ন ছুরে মারল।
তিশাঃ দোস্ত তুই নাকি কিডনাপ হয়ছিলি।
রিকঃ দোস্ত তোরে কেডা কিডনাপ করছে।
রুহিঃ তোরে ক্যান কিডনাপ করছে।
রাফিঃ তোরে কিডনাপ কইরা আবার ছাইরা দিলোক্যান।
মারিয়াঃ তোরা যদি এভাবে একের পর এক কথা বলস তো আমি কি ভাবে বলবো। আর তোদের কথা শুনে মনে হচ্ছে কোন উগান্ডা থেকে আসছিস। তোদের কথা শুনে কেউ বলবে না যে তোরা ভবিষ্যৎ ডক্টর।
রিকঃ আরে রাখ তোর ভবিষ্যৎ ডক্টর। আগে বল কে তেরে কিডনাপ করছে।
মারিয়াঃ ঐটা বকার জন্য তো আজকে কলেজ আসছি।
রুহিঃ তো বল না।
মারিয়াঃ তোরা তো জানোস যে আমি কিডনাপ হয়ছি। আর হয়তবা এটাও শুনেছিস যে আমি বলছি আমাকে ভুলে কিডনাপ করা হয়ছে।
রাফিঃ হুম শুনছি।
মারিয়াঃ ওরা পুরটাই মিথ্যা।
তিশাঃমানে…..
মারিয়াঃমানে সেদিন আনাকে ভুল কে না যেনেশুনে কিডনাপ করছে। আর যে আমাকে কিডনাপ করছে সে আর কেউ না আমার ex।
আমার কথা শুনে সবার উপর একরা ছোট খাটো বমা ফাটল। তখনি রুহি বলে উঠলো……..
রুহিঃ দোস্ত তুই না বলিস তুই কখনো রিলসন করিসনি। তাহলে তোর ex কিভাবে আসলো।
মারিয়াঃ আজ থকে প্রায় ১১ কি ১২ বছর আগে আমি আর আপু কানাডা আমার ফুপির বসায় যাই। যেহেতু ফুপির কোনো ছেলে মেয়ে ছিলোনা তাই তিনি আমাদের নিজের সন্তান এর মতো আদর করতো। আমি যখন class 8 এ পরি তখন ভাইয়া আর আপুর রিলেশন হয়। ভাইয়া আর আপুর মাদ্ধমে আমার আর আয়ানের দেখা। আর এই আয়ানই ইন্টারন্যাসনাল খান ইন্ডাস্ট্রির মালিক + মাফিয়া কিং।
রিকঃ কি বলছিস তুই। আয়ান খান তোর ex।
মারিয়াঃহুম।
রাফিঃ তারপর কি হলো।
মারিয়াঃ আর আয়ান ছিলো ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।আর সেই সুবাদে দেখা হওয়া + কথা বলার মাদ্ধমে আমরা দুজন দুজনকে ভালেবেসে ফেলি। আর সেটা আমাদের ফেমেলির সবাই জানতো। কারো কোনো আপত্তি ছিলোনা। আমি যখন ইন্টার শেষ করি তখন একদিন আমার কাজিন রিফাত ভাইয়া আমাদের বসায় আসে। তখন বসায় আর কেউ ছিলোনা। তার ৫ দিন আগে আপু আর ভাইয়ার বিয়ে হয়। আর তার অভিনন্দন জানাতে রিফাত ভাইয়া বাসায় আসে। ভাইয়া সবার জন্য অনেক গিফট এনেছিলো আর স্পেসালি আমার জন্য ওনেক গুলো চকলেট আনে। আমি চকলেট দেখে খুশি হয়ে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরি। আর বলি ভাইয়া I Love You। কিন্তু ভাগ্যা কি খেলা শুধু i love you টুকু শুনে আর আমাদের জরিয়ে ধরাটা দেখে কিন্তু তার আগে ভাইয়া শব্দটা শুনেনি। যার কারনে ও আমাকে ভুল বুঝে চলে যায়। আমি ওকে ওনেক মানানোর চেষ্টা করি কিন্তু কোনো কাজে লাগেনি। ওনেকবার চেষ্টা করার পরও যখন মানলোনা তখন আমার ইগোতে লাগতে শুরু করলো। তারপর আমি বিডিতে চলে আছে। আর কখনো ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। যানিসতো নিজেকে সামলিয়ে উঠেছিলাম এ ৩ বছরে। কিন্তু ও আবার আমার সামনে এসে আবারো আমাকে দুর্বল করে দিলো। (কান্না আটকে)
তিশাঃ দোস্ত উনি তোকে কিডনাপ কেনো করলো।
মারিয়াঃ বিয়ে করার জন্য।
রাফিঃ মানে
মারিয়াঃ মানে ও যাতে আমাকে বিয়ে করতে পারে তার জন্য কিডনাপ করছে।
রুহিঃ কিন্তু উনি তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছে কেনো।
মারিয়াঃ হয়তবা ও ওর ভুল বুঝতে পারছে তার জন্য।
রিকঃ তুই কি ওনাকে বিয়ে করে ফেলছিস।
মারিয়াঃ হুম। ও বলেছিলো……..
১.তুমি আমাকে বিয়ে করে আরামে তোমার বাড়ি যাও আর না হলে
২. তোমার বাবা মার লাস দেখ।
তাই ওকে বিয়ে করতে হয়েছে।
রুহিঃ ও বললেই হলো তোর বাবামাকে মেরে ফলবে।
মারিয়াঃ তোরা ওকে চিনিসনা। ও যা বলে তাই করে।
রিকঃ এখন কি করবি।
মারিয়াঃ জানিনা।
তিশাঃ তুই কি ওকে এখনো ভালোবাসিস।
মারিয়াঃ হুম।
রাফিঃ তোর ভিতোর যে এতো চাপা কষ্ট আমরা বুঝতেও পারলাম না।
ওর কথা শুনে আমি একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলাম। তারপর আমরা আরও কিছুখন কথা বলে যার যার বাসায় চলে গেলাম।










#চলবে……….

তোমাকে চাই পর্ব-০২

0

#তোমাকে_চাই
#মারিয়া_তুন_রিয়া
#পর্ব_২
কমিউনিটি সেন্টার যাওয়া মাত্রই আম্মু এসে আমাকে জোরিয়ে ধরলো। আর কাদতে কাদতে বলল………………
আম্মুঃ কোথায় গেছিলি মা। আমরা তোর জন্য কত চিন্তা করছিলাম জানিস।
আম্মুর বলা শেষ হতেই আমার বড়ো বোন ফারিয়া বলে উঠলো…………….
ফারিয়াঃ তোকে কে নিয়ে গেছিলো।
আমি তাদের কথা শুনে মুচকি হেসে বললাম………
মারিয়াঃ আরে চিন্তা করোনা। আসলে হয়েছে যে জারা আমাকে কিডনাপ করেছিলো তারা আসলে আমাকে কিডনাপ করতে চায়নি।
সম্পাঃ তাহলে কিডনাপ কেনো করলো।
মারিয়াঃ আরে বলতে তো দিবি।
সম্পাঃ আচ্ছা বল।
মারিয়াঃ ওরা আসলে ওদের ফ্রেন্ড কে কিডনাপ করতে চেয়েছিলো। বর্ডের জন্য সাপ্রাইজ দিবে তাই কিন্তু ভুলে আমাকে কিডনাপ করে।(সরি আব্বু আম্মু মিথ্যা বলার জন্য। মনে মনে)
ফারিয়াঃ সত্যি বলছিস তো।
মারিয়াঃ ম মানে। ত তুই ক কি বলতে চাইছিস। আ আামি ম মিথ্যা বলছি।
আব্বুঃ আচ্ছা হইছে। আর কথা বারাতে হবেনা। তোকে পাওয়া গেছে এটাই ওনেক। মা তুই ভিতরে এসে বস। আর সম্পা মা তুমি বিয়ের পিরেতে বসো।
সম্পা+মারিয়াঃ জী।




আয়ান মারিয়া একটা ছবি হাতে নিয়ে বলে উঠলো…….
আয়ানঃ আই এম সরি মারিয়া। ট্রাষ্টমি এটা ছারা কোনো উপায় ছিলোনা। আই এম এক্সট্রেমলি সরি।সত্যি #তোমাকে_চাই এগুলো বলতে বলতে হটাত আয়ানের ফোনে কল আসলো। সাথে সাথে আয়ান কল টা রিসিভ করো। আয়ান কল রিসিভ করতেই ও পাস থেকে একজন বলে উঠলো……..
…………..কিরে তুই কাজটা করে ফেলছোস…….
আয়ানঃ হুম।
……………আমাকে একবার বললিও না……..
আয়ানঃ আমি এখনি বলতাম।
……………হুম জানিতো কতো বলতি………..
আয়ানঃ রাগ করিসনা প্লিজ।
……………আচ্ছা যা রাগ করলাম না। বাই দা ওয়ে কিভাবে করলি…………….
আয়ানঃ থ্রেট দিয়েছিলাম।
……………..কি থ্রেট দিয়েছিলি………………..
আয়ানঃ বাবা মাকে মারার।
……………..জিও দোস্ত তোকে দেয়ে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল……………
আয়ানঃ মজাকরছিস।
…………….আরে না। আমি কি তোর সাথে মজা করতে পারি। আচ্ছা বাই এখানে ওনেক কাজ রাখি এখন…………………..
আয়ানঃ আচ্ছা।
বলেই আয়ান ফোন কেটে টেবিলের উপর রাখলো। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।




বাড়িতে………….
আমি বাড়িতে এসে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম। রুমি গিয়ে সোজা ওয়াসরুমে ঢুকে পরলাম। একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলাম ওয়াসরুম থেকে।রসে হাতে ফোন আর হেডফোন নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে আরাম চেয়ারে বসে কানে হডফোন গুজে চোখ বন্ধ করলাম।
।।
মারিয়ার রুমে এসে দেখি পুরো রুম অন্ধকার। রুমের লাইট জালিয়ে দেখি মারিয়া কোথাও নেই। আসতে আসতে বেলকনিতে গিয়ে দেখি ও আরাম চেয়ারে বসে চোখ বন্ধকরে বসে আছে।
।।
কারও উপস্থিতি টের পেয়ে কানের হেডফোন খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি আপু (ফারিয়া) দারিয়ে আছে। আপুকে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলাম……………
মারিয়াঃ কিছু বলবি।
ফারিয়াঃ বোলতাম তো ওনেক কিছু। উত্তর কি দিবি।
মারিয়াঃ মানে।
ফারিয়াঃ মানে বলছি, আগে ঘরে আয়।
এটা বলেই আপু ঘরে গিয়ে বিছানায় বসলো। আমিও গিয়ে ওর পাসে বসলাম। আমি বসতেই আপু বলে উঠলো…………..
ফারিয়াঃ এখন বল তোর কি হয়েছে।
মারিয়াঃ ক কোথায় কিছু ন না তো।
ফারিয়াঃ তাহলে তোতলাচ্ছিস কেনো।
মারিয়াঃ ন না তো আ আামি ক কেনো তোতলাবো।
ফারিয়াঃ তুই জানিস তো তুই মিথ্যা বলতে পারিসনা তাহলে কেনো বলছিস।
মারিয়াঃ আমি কোনো মিথ্যা বলছি না। (কান্না আটকে অন্য দিক তাকিয়ে)
ফারিয়াঃ তাহলে মুখ লুকচ্ছিস কেনো। আমি জানি তোর কিছু হয়েছে। তাই তারাতারি বলে ফেল।
আপুর কথায় আর নিজের কান্না আটকে রাখতে পারলাম না।হুহু করে কেদে উঠলাম। আর বলতে লাগলাম………….
মারিয়াঃবিশ্বাস কর আপু আমি এমনটা করতে চাই নি।
ফারিয়াঃ কি করতে চাসনি। সেটা তো বলবি।
মারিয়াঃ আমি ওকে বিয়ে করতে চাই নি।
ফারিয়াঃ মানে?
তারপর আমি আপুকে সব খুলে বললাম। আমার কথা শুনে আপু আমাকে সান্তকরার চেষ্টা করলো।………….
১৫ মিনিট পর……………
এখন আমার কান্নার বেগ একদম কমে গেছে। আমি আর আপু নিজেদের মদ্ধো কথা বলছি। এমন সময় রুমে ঢুকলো ভাইয়া।
(আরিয়ান শেখ। দেশের ২nd বিজনেসম্যান। শেখ ইন্ডাস্ট্রি এর একমাত্র মালিক। ফারিয়া শেখ অথাৎ আমার বোন ফারিয়ার হাসবেন্ড। আর আরিয়ান ভাইয়া আমার আপন ভাই এর থেকেও বেশি। দুজন দুজনের কলিজা।)
আরিয়ানঃ দু বোনের মদ্ধো কি কথা হচ্ছে।
মারিয়াঃ তেমন কিছু না এমনি।
আরিয়ানঃ একটা খুশির সংবাদ আছে।
মারিয়াঃ কিতা
আরিয়ানঃ তুই খালামনি + ফুপু দুটি একসাথে হবি
মারিয়াঃ সিরিয়াসলি 😀😀( খুশিতে লাফ দিয়ে)
আরিয়ানঃ হুম।
মারিয়াঃ কিরে আপু তুই তো কিছু বললিনা।
ফারিয়াঃ এখনি বলতাম তার আগে ও বললো।
আরিয়ানঃ আমার কিন্তু একটা জিনিস চাই বনু।
মারিয়াঃ তুমি চাইবা আর আমি দিবোনা। তা কখনো হয়।
আরিয়ানঃ সত্যি দিবি।
মারিয়াঃহুম।
আরিয়ানঃ প্রমিস কর।
মারিয়াঃ ওকে প্রমিস। এবার বলো।
আমার বলা শেষ হতেই ভাইয়া রুমির বাহিরে চলে গেলো। কিছুখন পর একটা গিটার নিয়ে আসলো ভাইয়া। আমি গিটার দেখে বলে উঠলাম………..
মারিয়াঃ এটা দিয়ে কি হবে।
আরিয়ানঃ তুই আজকে গান গাবি।
মারিয়াঃ তুমি জানো ভাইয়া আমি ৩বছর আগে গান গাওয়া ছেরে দিছি।
আরিয়ানঃ ওসব নিয়ে পরে থাকনে হবেনা। তোকে এগোতে হবে। আয়ান কে নিয়ে বাচতে হবে। (শেষের টুকু বির বির করে)
মারিয়াঃ কি বললে।
আরিয়ানঃ ক কিছুনা।
এভাবে আপু আর ভাইয়ার জোরাজুরিতে বাদ্ধ হলাম গান গাইতে। হাতে গটার নি শুর তুলে গাইতে লাগলাম……..
Paas aaye
Duriyafir vikam naa hui
Ak adhur si
Hamari kahani rahi
Asma ko zamin
Ye jaruri nehi ja mile
Jaa mile
Isqu sacca ohi
Jisko milti nehi
Manjile. Manjile
Rang tenur tha
Jab karib tu tha
Ak jannat sa tha yea jaha.
Bakt ki ret me
Kus mere nam sa
Likke jo de gaya
Tu kaha.
Hamari aduri kahani.
Hamari aduri kahani……………..
(বাকিটা নিজের দায়িত্ব শুনে নিবেন)










#চলবে……..
গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।

তোমাকে চাই পর্ব-০১

0

#তোমাকে_চাই
#মারিয়া_তুন_রিয়া
#পর্ব_১

বিয়েতে বউ কিডনাপ হয় সবার জানা বউ এর বোন কিডনাপ হয় তাও মানাযায়। কিন্তু বান্ধবী কিডনাপ হওয়া কেমন আজবনা। ঠিক তেমনি কখনো ভাবিনি বান্ধীর বিয়েতে এসে নিজে কিডনাপ হয়ে যাব। আজ আমার ফ্রেন্ড সম্পার বিয়ে। একসাথে র্পারলার থকে সাজগোজ করে বহিরে বের হয়ে যেইনা গাড়িতে উঠতে যাব তখনি একটা কালো গাড়ি এসে আমার মুখে একটা রুমাল ধরলো। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে একটা অফিসের কেবিনে আবিষ্কার করলাম। চারোপাশ একবার চোখ বুলিয়ে দেখেনিলাম। তখনি রুমে একটা ছেলে প্রবেশ করলো। তাকে দেখে আমি কিছু বলব তার আগে ছেলেটি বলে উঠলো……………
ছেলেটিঃ কেমন আছেন ম্যাম।
মারিয়াঃ আরে রাখুন আপনার কেমন আছেন। আগে বলুন আমাকে এখানে কেনো এনেছেন।
ছেলেটাঃ স্যার বলেছে তাই।
মারিয়াঃ স্যার বলেছে মানে। আপনি কি আমাকে ভুল করে কিডনাপ করেছেন। বাট আমি তো এতো র্গজিয়াস করে সাজিনি। আপনি আমার ফ্রেন্ড সম্পাকে কিডনাপ করতে চয়েছেন। পরে ভুলে আমাকে কিডনাপ করছেন তাইতো।
ছেলেটিঃ নো ম্যাম আমরা ঠিক মানুষকে কিডনাপ করছি। স্যার আপনার কথায় বলেছে।
মারিয়াঃ কে আপনার স্যার?
ছেলেটাঃ ওই টা আসলেই দেখতে পারবেন।
মারিয়াঃ ওকে। বাই দা ওয়ে আপনি কে?
ছেলেটাঃ আমি রাশেদ। স্যার আর এই কম্পানির পিয়ে।
মারিয়াঃ আচ্ছা। আপনার স্যার কে ডাকেন। আমিও তো দেখি আমাকে কে কিডনাপ করেছে (বিরক্তি + কান্নার শুরে)।
রাশেদঃ ও কে। আমি তাহলে যাই।
এটা বলে রাশেদ চলে গেলো।
।।
(আমি মারিয়া আহম্মদ। বাবা মার দুই মাত্র সন্তান। আমার বড় বোন ফারিয়া আহম্মেদ।
আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট।………
এবার তাহলে গল্পে ফেরা যাক।)
রাশেদ নামের ছেলেটা চলে যাওয়ার কিছুখন পর আর একটা ছেলে কেবিনে ঢুকলো। কিন্তু একে দেখে আমার চোখ কোটর থকে বেরিয়ে আসার উপক্রমে। কারণ এ আর কেউ না আমার প্রাক্তন আয়ান খান। যাকে এখনো নিজের সব কিছু মনে করি। কিন্তু ও তা করে না।
(আয়ান খান। দা ইন্টারনেসনাল খান গ্রুপ ওফ ইন্ডাষ্ট্রির এক মাত্র মালিক। মাফিয়া কিং।)
আমি শুধু ওর দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি। আমি কিছু বলব তার আগে ও বলে উঠলো…………………
আয়ানঃ কেমন আছো জান?
মারিয়াঃ কে জান?
আয়ানঃ তুমি।
মারিয়াঃ এসব আবল তাবল কথা বাদ দিয়ে আসল কথায় আসো। কেনো কিডনাপ করেছো।
আয়ানঃ ফাইন। সাইন করো ( আমার সামনে একটা কাগজ রেখে)।
মারিয়াঃ কি এটা।
আয়ানঃ রেজিস্ট্রারি পেপার।
মারিয়াঃ মানে
আয়ানঃ মানে তোমাকে আমাকে বিয়ে করতে হবে।
মারিয়াঃ এসবের মানে কি। তুমিকি আমাকে খেলনা মনে করো। ৩বছর আগে তুমি নিজে আমাকে ছেরে এসছিলে। এখন ৩ বছর পর এসে বলছো বিয়ে করতে হবে। মজা করছো আমার সাথে। ( রাগে চিৎকার করে)

আয়ানঃ কুল, কুল এতো হাইপার হচ্ছো কেনো। তোমাকে তো আজ বিয়ে করতেই, এটা তুমি চাও বা না চাও তাতে আমার কোনো যায় আসে না।
মারিয়াঃ আমি তোমাকে বিয়ে কোরবোনা মানে কোরবোনা। দেখি তুমি কি করো।
আয়ানঃ ওকে ফাইন। তোমার কাছে এখন দুটি ওফসন আছে।
১.তুমি আমাকে বিয়ে করে আরামে তোমার বাড়ি যাও আর
২. তোমার বাবা মার লাস দেখ।
বাই দা ওয়ে তুমি আমাকে ভালো করে চেনো আমি যা বলি তাই করে।
আয়ানের কথা সোনা মাত্র আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। বুঝতে পারছি না কি করবো। যাকে এতোটা ভালোবেসেছি সে আজ আমার বাবা মা কে মারতে চায়।আমার ভাবনার মাঝে আয়ান বলে উঠলো…………..
আয়ানঃ তো তোমার উত্তর টা কি?
মারিয়াঃ একবার লাইফ টা শেষ করে মন ভরেনি তাইনা।
আয়ানঃ তুমি যামনে করবে তাই। এখন তারাতারি বলো কি করবা।
আমি কাপা কাপা গলায় বললাম…..
মারিয়াঃ তুমি এমন টা করতে পারোনা। (কান্নার শুরে)
আয়ানঃ আমি সব পারি।
মারিয়াঃআমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
আয়ানঃ ওকে ফাইন।
এটা বলে আয়ান কাওকে কল করলো। তারপর আয়ান বলতে লাগলো………
আয়ানঃ শেষ করে দে।
ওর কথা শুনে আমার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। সাথে সাথে চিৎকার করে বলে উঠলাম………….
মারিয়াঃ না…..আ আমি বিয়ে করবো।
ও আমার কথা শুনে বলে উঠলো…………..
আয়ানঃ দ্যাটস লাইকে গুডগাল।
তার পর ফোনের অপর পাশের ছেলেটিকে বলে উঠলো…………….
আয়ানঃ কিছু করার দরকার নাই। ছেরে দে।
এটা বলে আয়ান ফোন কেটে দিলো।
আয়ান আমার সামনে আবার সেই কাগজ টা দিলো। কাপা কাপা হাতে সাইন করলা। এর মদ্ধো আইনতো ভাবে আামাদের বিয়ে হয়ে গেলো। আমার সাইন করার সাথে সাথে আয়ান বাহির থেকে কাজি সাহেবকে ডাকলো… কাজি সাহেব ভেতরে এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আয়ানকে বলার সাথে সাথে ও তিনবার কবুল বলে দিলো। আমার হাজারো না থাকা সর্তেও কবুল বলতে হলো। এভাবে আমাদের ইসলামিক বিয়েটাও সম্পুর্ন হলো। আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই কাজি সাহেব চলে গেলো। তারপর আয়ান আমার সামনে এসে বললো………….
আয়ানঃ চলো তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসি।
মারিয়াঃ না! তা আর দরকার নেই। ওনেক হেল্প করছো আর করা দরকার নেই আমি একাই যেতে পারবো।
এটা বলে আমি ওখন থেকে বেরিয়ে আসলাম।
ওখান তকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলাম কমিউনিটি সেন্টার। সেকানে যাওয়া মাত্রই……………….










#চলবে…..

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-৪৫ এবং শেষ পর্ব

0

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৪৫

পাত্র পক্ষের সামনে বসে থাকাটা হয়তোবা প্রায় মেয়ের কাছেই কিছু টা ভয়ের, কিছু টা বিরক্তের,কিছু টা আতঙ্কের।কিন্তু এই পাত্র পক্ষ টা যদি হয় ভালোবাসা পক্ষ তাহলে পরিস্থিতি হয় একেবারে ই উল্টো টা।তখন পরিস্থিতি হয় কিছু টা জড়তা আর লজ্জামিশ্রিত।ঠিক যেটা এখন আমার হচ্ছে।

নিজেকে বারোহাত শাড়িতে মুড়িয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে গুনে গুনে পাঁচ জন ব্যক্তির সামনে বসে আছি। একজন হলো ফারাবী ভাইয়া, একজন হলো মিথিলা আপু, একজন সজল ভাইয়া, একজন স্বয়ং আলআবি ভাইয়া আর সবশেষে রয়েছেন নাহার মাশরুখ। যিনি আলআবি ভাইয়ার মা।

বাসায় আজকে সাদু,সার্থক ভাইয়া,রাফিদা আপু আর সেই সাথে খালা, খালু এসেছেন।আলআবি ভাইয়ার কারণেই মূলত আসা তাদের।

রাকিব আর মিথুনের গ্যাঙ্গের করা ঘটনার আজ ২ দিন চলছে। ওদের সকলকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওখানের মেয়ে গুলোকে স্বসম্মানে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।আজকে আলআবি ভাইয়ার পরিবার থেকে আমাকে দেখতে এসেছেন।আলআবি ভাইয়া নাকি আর দেরি করতে চান না।একসপ্তাহ এর মধ্যে নাকি সে আমাকে বিয়ে করতে চান।আর এমন লজ্জা শরমবিহীন কথা যেদিন রাকিব আর মিথুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেদিন আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাওয়ার সময় সে নিজে বাবাকে বলেছেন।দিন দিন ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে নির্লজ্জ বলে কোনো সাবজেক্ট থাকলে তাতেও উনি এ প্লাস পেতেন।

আলআবি ভাইয়ার বাবার মৃত্যুর পর তার মা স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে পারেননি।তার মা কারো সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই ভুলে যাবে সে কার সাথে কথা বলছেন।সকালে বলতে পারবে না গতরাতে সে কি খেয়েছেন।২ বা ১ দিন আগে কারো সাথে কথা দেখা হলে তা ভুলে যাবেন।এমন ছোট ছোট অনেক জিনিস ই নাকি ভুলে যান।মিথিলা আপুর থেকেই এসব জানতে পেরেছি।তার সাথে সবসময় শ্যামলি নামের একটা মেয়ে থাকে।

কথাবার্তার একপর্যায়ে মিথিলা আপু বাবা কে বলে উঠলো,,,

–আঙ্কেল আলআবি আর জুইঁকে যদি একটু আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয় তাতে আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?

–না আপত্তি থাকবে কেন?জুইঁ আলআবি কে নিয়ে ছাঁদ থেকে ঘুরে আসো।(বাবা)

এমনিই খুব লজ্জা লাগছিল সবার সামনে বসে থাকতে। তারউপর বাবার কথায় আরো লজ্জা লাগছে।হঠাৎ যে কি হলো আল্লাহ ই ভালো জানে।এতো লজ্জা লাগার কারণ কি?

আলআবি ভাইয়া অনুরোধ করার মতো করে বলে উঠলেন,,,

–জুইঁ চলো।

আমি ধীর পায়ে তার সঙ্গে ছাঁদে আসলাম। ছাদে বসার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। দুজন রেলিংয়ের গা ঘেঁষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। ক্ষণে ক্ষণে মৃদু মাত্রায় ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আমার রেলিংয়ের ওপর রাখা হাতের উপর আলআবি ভাইয়া তার হাত রাখলেন। তার দিকে দৃষ্টি দিতেই লক্ষ্য করলাম উনি আশেপাশের মেঘ বিহীন নিলাভ আকাশে উড়তে থাকা ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তার দিকে তাকানোর পরেও তিনি আমার দিকে তাকালেন না। একভাবেই রয়েছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই তিনি চুপ হয়ে গেছেন। বিগত দুই দিনে মাত্র একবার আমাদের ফোনে কথা হয়েছে। তাকে যখন নিবিড় ভাবে আমি পর্যবেক্ষণ করছিলাম তখন কন্ঠে কিছুটা গম্ভীরতা টেনে বললেন,,,

–তোমার কি কখনো জানতে ইচ্ছে করেনি গত দেড় বছর আগে হঠাৎ করে ই কেন আমি তোমার জীবন থেকে উধাও হয়ে গেলাম?

তার কথায় আমি আমার হাতের উপর থেকে তার হাতটা উঠিয়ে আলতো করে চেপে ধরলাম। তারপর বললাম,,,

–ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে কখনো কোন কথা লুকিয়ে শান্তিতে জীবন যাপন করা যায় না। দৈনন্দিন জীবনের একেবারে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কথা গুলো ও ভালবাসার মানুষটার কাছে ব্যক্ত করতে চাই আমরা। কারণ প্রিয় মানুষটার কাছে যখন আমরা একটা খোলা বই-এর রূপ ধারণ করি তখন মস্তিষ্ক আমাদের একটা তৃপ্তির অনুভূতি প্রেরণ করে। আমি জানতাম আপনি আপনার সময় হলে একদিন ঠিকই আমাকে বলবেন। আর আমি এখন পুরোপুরি ভাবে বুঝে গিয়েছি আপনি কি বলতে চান।

কথাগুলো আমি এক দৃষ্টিতে আলআবি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম। কথাগুলো যখন তার দিকে তাকিয়ে বলছিলাম তখন মনের মধ্যে অসম্ভব রকমের ভালোলাগা কাজ করছিল। প্রিয়তমের চোখে চোখ রেখে কথা বলার অনুভুতি চকলেটের চেয়েও অধিক মিষ্ট,আইসক্রিমের চেয়েও অধিক শীতল আর ফুচকা খাওয়ার চেয়েও অধিক মজার।কাব্যিক ভুবনে ঘুরতে গিয়েও সম্পূর্ণ ঘোরা হয়ে উঠলো না। কারণ তখন আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

–তোমার কাছ থেকে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা লুকানো হয়েছে।

আমি আলআবি ভাইয়ার দিকে হালকা ভ্রু কুঁচকে একটু প্রশ্নসূচক ভাবে তাকালাম।উনি আবার বললেন,,,

— আমার আব্বুর কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে খুন করা হয়েছে।

হঠাৎ করে এমন একটা কথা কানে ভেসে আসতে আমার বুক কেঁপে উঠলো। হতবাক হয়ে আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আলআবি ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে মুখ ঘোরালেন আর বলতে লাগলেন,,,

— সেদিন ছিল তোমার জন্মদিন। কথা ছিল সেদিনই তোমাকে দেখতে আসবো।আব্বুর জরুরী একটা কাজ পড়ে যায় বলে সেদিন আর পরিবার নিয়ে আসা হয় নি তোমাদের বাসায়। আমি একাই আসি সজলকে নিয়ে। যেহেতু মা বাবাকে আনতে পারেনি তাই তোমার সামনে আসার পুরো প্ল্যান টাই চেঞ্জ করে ফেলি। চিন্তা করি তোমাকে ছাদে নিয়ে এসে সারপ্রাইজ দিব।

উনি ইশারায় ছাঁদ দেখিয়ে বললেন,,,

–তোমার জন্য যখন ঠিক এইখানে, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম তখন আমার ফোনে একটা ফোন আসে। ফোনটা করেছিল শাফিনের আব্বা মিজান মামা।মিজান মামা আব্বুর অনেক পুরানো আর বিশ্বস্ত লোক ছিলেন। বলতে গেলে খুব ভালো বন্ধুর মতো ছিলেন তারা। মিজান মামা সেদিন আহত কন্ঠে বলেছিল,,,

— আলআবি ওরা তোমার আব্বুকে মেরে ফেলছে। তুমি তাড়াতাড়ি আমার দেয়া ঠিকানায় চলে আসো।

কল কেটে কোন দিক চিন্তা না করে দৌড়াতে থাকি। তখন ভুলবশত আমার অজান্তে তোমার সাথে ধাক্কা লেগে যায়। তখন আমি আব্বু কে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছিলাম না। আমি এটাও বুঝতে পারিনি যে আমার সঙ্গে কারো ধাক্কা
লেগেছে। মিজান মামার দেয়া ঠিকানা মত যেতে যেতে রাত ১২ টা বেজে যায়। গিয়ে দেখি একটা সরু গলি তে ঢোকার আগে আব্বুর গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে আর গলির শেষ মাথায় দুজন মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় আছে। একজন মিজান মামা আর একজন আমার নিজের জন্মদাতা পিতা। মিজান মামার কোলে আব্বুর মাথা রাখা। তাদের দেখতে পেয়ে দ্রুত দৌড়ে তাঁদের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার আব্বুর গলা থেকে গড়গড়িয়ে টকটকে লাল রক্ত পড়ে রাস্তার কিছু অংশ ভিজে গেছে।আব্বুকে মিজান আঙ্কেল এর থেকে সরিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। আমাকে দেখে আব্বুর বয়সী মিজান মামাও হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলেন।জীবনের সবচেয়ে কাছের ব্যক্তির প্রাণহীন নিথর শরীরটা আমার কোলে নিতে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।অথচ ওই শরীরটার ই এক হাত সকালে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল।ওই শরীর টার সাথেই রাতে অনেক গল্প করেছিলাম।একসাথে এক টেবিলে বসে খাবার খেয়েছিলাম।

খেয়াল করলাম আলআবি ভাইয়ার কণ্ঠ কথা বলার সময় বারবার কেঁপে উঠছে। তার চোখে অশ্রুকণা চিকচিক করছে। তখন আবারও আলআবি ভাইয়া বলতে লাগলেন,,,

–আব্বুকে তৎক্ষণাৎ হসপিটালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেদিন হসপিটালে নেয়াতে কোন লাভ হয়নি। হসপিটালে বসে মিজান মামার কাছে জানতে চাই আমার আব্বুর সাথে এরকম টা কেমন হলো? কিসের জন্য হলো এমন? তখন মিজান মামা বলতে থাকেন।

তার ভাষ্যমতে, আব্বু আর মিজান মামা ঢাকা থেকে কাজ শেষ করে গাজীপুর ব্যাক করছিলেন। গাজীপুর ঢোকার ওই রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে টং দোকানে বসে মিজান মামা আর আব্বু চা খাচ্ছিলেন।রাস্তায় তখন একটা দুইটা করে দ্রুতগামী দূরপাল্লার ট্রাক চলাচল করছিল। মাঝে মাঝে দু একটা প্রাইভেট কার ও আসা যাওয়া করেছিল। যখন দোকানে তারা চা খাচ্ছিল তখন দোকানদার সহ আরো দুজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিল ওখানে। হঠাৎ করে টং এর পেছনে কয়েকজনের মৃদু স্বরের চিৎকার শুনে দোকানে থাকা দুজন লোক আব্বু আর মিজান মামা সরু গলিটার দিকে একটু এগিয়ে যায়।সেখানে ৮-৯ জন ছেলে মিলে একটা মেয়েকে জোরজবরদস্তি করে টেনে-হিঁচড়ে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এরূপ পরিস্থিতি দেখে ওই দু’জন লোক আগেভাগেই ওখান থেকে চলে যায়। আব্বু আর মিজান মামা ধীরে ধীরে ছেলেগুলোর কাছে যেতেই দেখতে পায় মেয়েটাকে জোর করে ড্রাগস নেয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছিল।আব্বু আর মিজান মামা ওখানে যেতেই ছেলেগুলো একটু ভড়কে কে যায়। সেই সুযোগে তখন মেয়েটা এক দৌড়ে গলি থেকে বের হয়ে মেইন রোডে আসতেই দ্রুতগামী একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায় আর সাথে সাথে ই স্পট ডেড। তখন ওদের মধ্যে থেকে একজন এসে আব্বুর গলায় ছুরি বসিয়ে দেয়। মিজান মামা বাধা দিতে গেলে তাকেও আহত করে ওরা।এরপর ওই মেয়েটার মৃত দেহটাকে নিয়ে ই একটা মাইক্রোতে করে চলে যায়। ছেলেগুলো অন্য কেউ ছিল না। ছিল মিথুন আর রাকিবের দলবল। তবে মিথুন বা রাকিব দুজনের কেউই আব্বুকে মারেনি। মেরেছে ওদের আরেক ফ্রেন্ড তিতাস। আর মেয়ে টা ছিল আফসানা। গরীব ঘরের মেয়ে ছিল।

আব্বুর দাফন-কাফনের পরে নিয়াজের কাছ থেকে তোমার কথা শুনতে পাই। একেতো আব্বুর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার উপর আবার তোমার এই অবস্থা। সব মিলিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। হসপিটালে তুমি প্রায় তিন দিনের মতো অচেতন অবস্থায় ছিলে। তোমার জ্ঞান থাকা অবস্থায় তোমার সামনে দাঁড়ানোর মত সাহস আমার ছিল না। তোমার অচেতন অবস্থার সুযোগ নিয়ে তোমাকে দেখে আসতাম। জ্ঞান ফেরার পর আর তোমার সামনে কখনো যাইনি।এর মাঝে শুরু হয়ে যায় আম্মুর পাগলামি। সে কোনভাবেই বুঝতে চাই তো না যে আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। নিয়াজকে বলেছিলাম আব্বুর এই ঘটনা যেন কাউকে না বলে। আত্মীয়-স্বজন ছাড়া বাইরের মানুষ আব্বুর ঘটনাটা জানে না। সবদিক মিলিয়ে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। ভেবে নেই যারা আব্বুকে এই দুনিয়ায় থাকতে দেয়নি তাদের চরম শাস্তি দেবো।

রাকিব, মিথুন আর তিতাসের ফ্রেন্ডসার্কেল নিয়ে রিসার্চ করি। সর্বপ্রথম যা পাই তা হলো, ওরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো বখে যাওয়া সন্তান। প্রত্যেকেই রাজনীতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া হচ্ছে তিতাস। ওর নামে খারাপ রেকর্ডের শেষ নেই। মেয়েদের বিক্রি থেকে শুরু করে খুন করা পর্যন্ত ওর রেকর্ডে আছে। যখন ওদের নামে কমপ্লেন করতে যাই তখন ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেউ নিতে চায়নি।

অনেক ঘোরাঘুরি করেও যখন ওদের নামে কোন অভিযোগ করতে পারলাম না আর তার ওপর আবার কোন প্রমাণ নেই তখন অন্যায় ভাবে পুলিশকে টাকাও অফার করি।কিন্তু ওরা টাকা নিতে রাজী হয়না। উল্টো আমাকে শাসিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কারণ আমি তিতাসের মত সঙ্গে করে বন্দুক নিয়ে ঘুরি না, ওদের মতো দিন দুপুরে খুন করি না, আমার নামের পিছনে কোন ভাইয়ের ট্যাগ লাগানো নেই। এক থেকে দেড় মাসের মতো একা একাই আত্মগোপন করে লড়ে যাই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। তখন হঠাৎ একদিন নিয়াজ আর সজল কিভাবে যেন আমার সন্ধান পেয়ে যায।এরপর নিয়াজ আমি আর সজল মিলে সার্থক আর সার্থক এর বাবা ও চাচার সাহায্য নিয়ে তিতাসের ছয় জন ফ্রেন্ড কে জেলে ঢোকাতে পারি। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। কয়েকদিন পরেই তিতাস ওর ফ্রেন্ডদের জেল থেকে বের করে নেয়। বুঝতে পারি ওদের সঙ্গে এভাবে হবেনা। নিজেকেও তখন রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলি।আমার নামের পাশে বড় ভাই নামের ট্যাগ লাগিয়ে নেই। তবে ওদের মতন খারাপ কাজে লিপ্ত না হয় ভাল কাজ করে সকলের বড় ভাই হয়ে উঠি।

সবচেয়ে খুশির সংবাদ পাই সেদিন যেদিন শুনতে পাই় তিতাস মারা গিয়েছে। আল্লাহ নিজে ওকে পৃথিবী থেকেই শাস্তি দিয়ে মৃত্যু দিয়েছেন। তিতাস বহুদিন ধরে নেশা করতে করতে এক পর্যায়ে ওর ভিতরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো পঁচে যায়। আর ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তিতাসের মৃত্যুর পরে রাকিব আর মিথুন বিদেশে পাড়ি জমায়। তার কারণ হলো আমার হাত থেকে একমাত্র তিতাসই ওদের বাঁচাতে পারত। এখন যেহেতু তিতাস নেই তাই ওরা বিদেশে গিয়ে আত্মগোপন করে।

দেড় বছরেও তোমার সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি। কারন আমার জন্য তোমার লাইফে অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভার্সিটিতে সেদিন অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোমার সামনে আসতে হয়। অনেকদিন পরে আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনীকে দেখে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারিনি। ভার্সিটিতে দেখার পর প্রতিদিন তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করতো আবার অন্যদিকে অপরাধবোধ ও কাজ করতো। তখন নিয়াজ আমাকে অনেক কিছু বোঝানোর পড়ে ধীরে ধীরে তোমার সামনে আসি আর সেই থেকে আজ এ পর্যন্ত আসা। এখন যদি তুমি আমাকে শাস্তি দিতে চাও তাহলে আমি বিনা বাক্যে তা মেনে নিতে রাজি আছি।

এতক্ষণ তার কথা শুনে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলাম। শাস্তির কথা বলতে ই আমি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,,,

–আর কোনদিনও আমার থেকে দূরে যেতে পারবেন না। এটা আপনার শাস্তি। সারা জীবন আপনাকে আমার সাথে বেঁধে রাখবো। যেতে চাইলেও যেতে দিব না।একেবারে আঁচলে বেধে রাখব।ছাড়ব না কোনো দিন।

মোমবাতির কালচে হলদেটে আলোয় ফুলেসজ্জিত শুভ্র রঙা বিছানায় বসে আছি।আগে ভালো লাগা কাজ করলেও এখন ভয় করছে অনেক।কারণ পেটে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে। কিসের ব্যাথা তা বুঝতে কোনো সমস্যা হলো না।ভারি শাড়ী টা খুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এখনও উনি আসছেন না।তাই শাড়ীটাও খুলতে পারবো না।কারণ হলো আজ আমাদের পবিত্র বন্ধনের প্রথম রাত।যাকে বলে বাসর।তিন কবুল বলে একটু আগেই ভালোবাসার ব্যক্তিকে সারাজীবনের জন্য নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি।

হঠাৎ করেই দরজা খোলার শব্দে একটু নড়েচড়ে বসলাম। আলআবি ভাইয়া রুমে ঢুকতেই সালাম দিলাম তাকে।সেও সালামের জবাব দিলেন।আমার কাছে এসে আমাকে বললেন,,,

–যাও শাড়ীটা চেঞ্জ করে নরমাল জামা পড়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

তার কথা মতো আমি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই উনি আবার বললেন,,,

–শোনো!

আমি পিছনে তার দিকে তাকাতােই বললেন,,,

–একসাথে ওযু ও করে এসো।নামাজ পড়ব দুজন।

আমি তাকে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বললাম,,,

–আচ্ছা।

তাকে মুখে তো বলে দিলাম আচ্ছা কিন্তু নামাজ পড়তে পারব কিনা সেটা নিয়ে ভয় হচ্ছে এখন। ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম এখন আর একসাথে আমরা নামায পড়তে পারব না। তলপেটের সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। কারণ প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে করে নিয়ে আসিনি। এভাবে অনেক সময় ধরে ওয়াশ রুমে বসে আছি। হঠাৎ করে আলআবি ভাইয়া ওয়াশরুমের দরজায় নক করলেন। দুই তিনবার নক করার পর দরজা খুলে বের হয়ে আসলাম। বের হয়ে বেডের এক কোনায় জবুথবু অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলাম। পেট ব্যথায় বারবার কপাল কুঁচকে আসছে।আলআবি ভাইয়া হুট করে আমার অনেক কাছে এসে আমার দুই হাত তার দুই হাতের মধ্যে নিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞেস করলেন,,,

— কোন সমস্যা?

এই মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে জড়তা কাজ করছে আমার মধ্যে। কিছু বলতে পারছিনা। তখন আলআবি ভাইয়া আবার আগের মতন করেই জিজ্ঞেস করলেন,,,

— কি সমস্যা? বল আমাকে।

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমতা আমতা করে বললাম,,,

–আসলে নামাজটা পড়তে পারবো না।

আলআবি ভাইয়া তৎক্ষণাৎ আমার হাত ছেড়ে কাবার্ডের কাছে চলে গেলেন।তারপর আমার কাছে এসে একটা ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,

–তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী আর আমি তোমার অর্ধাঙ্গ। যার মানে হল এখন থেকে অর্ধেক তুমি আমার আর অর্ধেক আমি তোমার। আমার অর্ধেক দায়িত্ব তোমার আর তোমার অর্ধেক দায়িত্ব আমার। তাই দায়িত্ব যখন নিয়েছি সেটা সবদিক থেকেই পালন করার চেষ্টা করব। যাও এবার ওয়াশরুমে যাও।

ওয়াশ রুমে এসে দেখি আমার সকল প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাক টাতে রয়েছে মুহূর্তের মধ্যেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। যে হাসি ছিল আমার বিজয়ের হাসি।

আজ আমাদের বিয়ের বয়স একসপ্তাহে পা দিয়েছে এই বাসায় মানিয়ে নিতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। আম্মুর সাথে আর মিথিলা ভাবির সাথে খুব ভালোভাবেই দিন কেটে যায়। এখন রাত প্রায় ন’টা বাজে। আমি আমাদের রুম থেকে কেবল বের হচ্ছিলাম ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি ড্রইংরুমে আসতেই দেখি শ্যামলী দরজা খুলে দিয়েছে তখন ড্রইংরুমে মিথিলা ভাবি আর ফারাবী ভাইয়া বসে টিভি দেখছিল। দেখলাম আলআবি ভাইয়া এসেছেন। সবাই যেহেতু টিভি দেখছিলা তাই আমি দরজার দিকে আর না গিয়ে সোজা সোফায় বসে পড়লাম। আলআবি ভাইয়া রুমে গিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে এসে সকলের সামনেই আমাকে বললেন,,,

–জুইঁ একটু এদিকে আসো তো।

মিথিলা ভাবি তখন আলআবি ভাইয়াকে কে উদ্দেশ্য করে দুষ্টুমির সুরে বলে উঠলো,,,

–এখন বিয়ে করে বউ ছাড়া একদম থাকতে ভালো লাগে না তাই না।

— বিয়ে তো বউকে সাথে রাখার জন্যই করেছি ড্রইংরুমে বসিয়ে রাখার জন্য নাকি।(আলআবি ভাইয়া)

–এইতো।আমার বউতো এটাই বোঝে না(ফারাবী ভাইয়া)

–আমার বউ টাও বোঝে না।আমি আমার টাকে একটু বুঝিয়ে নিয়ে আসি।থাকো তোমরা।(আলআবি ভাইয়া)

আলআবি ভাইয়া যে লাগামহীন কথা বার্তা বলেন তা আগে জানা থাকলেও এরা দুজনও যে কম না তা জানা ছিল না। এদের মাঝে না থেকে রুমে চলে আসলাম। রুমে আসতেই আলআবি ভাইয়া ও পিছু পিছু রকেটের গতিতে এসে পরলেন।এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন,,,

–কি বলেছিলাম ভুলে গেছ?

আমি জানি সে কিসের কথা বলছে।তাও বললাম,,,

–কিসের কথা বলছেন।

–আসো দেখাই।

বলেই আমার গালে, কপালে, নাকে আর থুতনিতে তার ঠোঁটের ছোঁয়া দিলেন।তার ছোঁয়ায় কিছুটা কেঁপে উঠলাম।আসলে তার কথা হলো বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে আবার বাসায় এসে সর্বপ্রথম আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে। তার এমন অদ্ভুত কাণ্ড এক সপ্তাহ ধরে চলছে। শুধু এতটুকু নয়, রাতে ঘুমানোর সময় একবালিশেই তার মাথার কাছাকাছি আমার মাথা দিয়ে শুতে হবে।

রাতে খাবার খেয়ে রুমে এসে বেডের উপর বসতেই উনি বলে উঠলেন,,,

–কালকে কোথায় যাবো না আমি। তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাব। তাই রেডি থেকো সকালবেলা।

আমি উৎসুকভাব বললাম,,,

–কোথায় যাবো আমরা?

–গেলেই দেখতে পাবে।(আলআবি ভাইয়া)

আলআবি ভাইয়া সকালে উঠে নাস্তা করে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন।আমাকে নিয়ে সেই কবর স্থান এর সামনে এলেন যেখানে নিশি আপুকে কবর দেয়া হয়েছে। এখানে নিয়ে আশায় যতটা না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি কবর স্থানে জায়েফকে দেখে।আমি বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি ভিতরে গিয়ে জায়েফ কে নিয়ে আসলো। আমার সামনে আসতেই জায়েফ বলে উঠলো,,,

— আই এম সরি জুঁইফুল। তোমার কথা রাখতে পারিনি। যে দেশে নিশি নেই সে দেশে আমি গিয়ে কি করবো বলো। নিশা কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। তাই আবার এখানে এসে পড়েছি।

জায়েফের কথার কোন কিছুই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আমি একবার জায়েফের দিকে আরেকবার আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। আমার এরূপ অবস্থা দেখে জায়েফ বলে উঠলো,,,

— বুঝতে পারছ না কিছু? আসলে ওই যে নিশি যেখানে শুয়ে আছে ওটাই আমার থাকার জায়গা। সারাদিন এখানেই থাকি।ওকে ছাড়া ভালো লাগেনা। মাঝে মাঝে আমরা গল্প ও করি। রাত হলেই ওকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। শুধু রাত টুকু বাসায় থেকে আবার ভোরবেলাই় এখানে এসে পড়ি। ওই যে সামনের বিল্ডিং দেখছ না এটার চার তলায় থাকি আমি।

আরো কিছু সময় কথা বলে আমরা দুজন জায়েফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পড়লাম। আলআবি ভাইয়া তখন বললেন,,,

–জায়েফ কিন্তু আরও ছয় মাস আগে বাংলাদেশে এসেছে। গান গাও বাদ দিয়ে দিয়েছে। সারাদিন রাত একখানে পড়ে থাকে।

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম একদৃষ্টিতে। বাইকে উঠে আলআবি ভাইয়া কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে মাথাটা হালকা এলিয়ে দিয়ে মনে মনে বললাম,,,

–ভালো থাকুক সকল পাওয়া না পাওয়ার ভালোবাসার মানুষ গুলো।

“আর এখানেই সমাপ্ত আলআবির #বর্ষণ_সঙ্গিনীর কল্পকাহিনী”।

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-৪৪

0

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৪৪

আমার জ্ঞান ফিরতেই চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখতে পেলাম। হাত পা নাড়াচাড়া করে উপলব্ধি করলাম আমাকে কোথাও বেঁধে রাখা হয়েছে। সেইসাথে মুখ বাধা। এভাবে কত সময় আছি তা জানি না। তবে বেশ কিছু মুহূর্ত কেটে যাওয়ার পরে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম আমার মুখমণ্ডলসহ পুরো মাথা অব্দি কোন কালো কাপড় দিয়ে হয়তো ঢেকে রাখা হয়েছে।

মনে হচ্ছে আমি এখানে একা নই। আমার আশেপাশে হয়তো আরো অনেক মানুষ রয়েছে। কারণ একসঙ্গে অনেকের চাপা আর্তনাদ এর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

হঠাৎ ক্যাচ ক্যাচ করে দরজা খোলার একটা আওয়াজ কানে ভেসে আসলো। এরপরই পায়ের শব্দ আর কয়েকটা পুরুষালী কন্ঠের আওয়াজ পেলাম।তারা বলতে লাগলো,,,

–সব গুলিরে মঞ্চের পেছনে নিয়ে যা।(প্রথম কন্ঠ)

–স্পেশাল মাল গুলিরে কি করমু?(দ্বিতীয় কন্ঠ)

— বস ওই গুলিরে পরে উঠাইতে কইসে।(প্রথম কন্ঠ)

তাদের কথোপকথন এর মাঝেই আমার আশেপাশের আর্তনাদ গুলো কিছুটা তীব্র হয়ে উঠলো। তখনই কেউ একজন এসে আমার পায়ের বাধন খুলে বাহু ধরে দাড় করিয়ে দিল। আমার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে কোথায় যেন নিয়ে যেতে লাগল। মনের ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের দুর্বলতাও প্রখর হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে হাত পা অসাড় হয়ে আসছে। ঠিক মতো হাটতে পারছি না। ঠিক যেমনটা এখানে ধরে নিয়ে আসার আগে হয়েছিল। হাটতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিচ্ছি। কিন্তু কেউ একজন আমাকে ধরে রাখায় পড়ে যাওয়া থেকে বারবার বেঁচে যাচ্ছি।

কয়েক কদম হাঁটার পরে থেমে গেলাম। পাশ থেকে শুনতে পেলাম একজন লোক বলে উঠলো,,,

–এইখানে ই সবগুলারে দাঁড়া করা।

যেখানে দাঁড় করানো হয়েছে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ করে কানে ভেসে আসলো,,,

–পন্ঞ্চাশ হাজার।

এরপর আবার শুনতে পেলাম,,,

–পন্ঞ্চান্ন হাজার।

এখানে কি হচ্ছে তা সঠিকভাবে বুঝতে পারছি না। কিসের দাম দর চলছে এখানে? চিন্তার মধ্যে আবার শুনতে পেলাম,,,

–পন্ঞ্চান্ন হাজার এক,পন্ঞ্চান্ন হাজার দুই,পন্ঞ্চান্ন হাজার তিন

–এক লক্ষ।

–এক লক্ষ এক,এক লক্ষ দুই,এক লক্ষ তিন,এক লক্ষ চার,এক লক্ষ পাঁচ।

এই কথাগুলো আগের থেকে একটু সময় বেশি নিয়ে বলা হয়েছে। বলার ভঙ্গিতে বুঝতে পারলাম কোনকিছু নিলামে তোলা হয়েছে।

যত সময় পার হচ্ছে ততই মনের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে বেশকিছু সময় পাড় হয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি ভাবে আমি নিশ্চিত এখানে কোন জিনিস নিলামে তোলা হচ্ছে।

মনের মধ্যে নিজে নিজেই একটা কথা বারবার ভেবে চলছি। কোনভাবে মস্তিষ্কের মধ্যে পজেটিভ ভাবনা আনতে পারছি না। নানা দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরছে। আল্লাহর কাছে শত দোয়া করছি যেন আমার ভাবনাটা সত্যি না হয়ে যায়। নিজের অজান্তে ই চোখ থেকে দড়দড়িয়ে গাল বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো।

একে একে প্রিয় মানুষগুলোর প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠলো। নিয়াজ ভাইয়ের সাথে বসে বসে গল্প করা, আমার প্রতি ভাবির নেয়া যত্ন, বাবার আদর, আমার আর সাদুর খুনশুটির মুহূর্ত। আর সব শেষে ভেসে উঠলো হৃদ মাঝারে যত্ন করে রাখা মানুষটার ভালোবাসা।

আমার বাঁ বাহুতে ধরে খুব জোরে টান মারতেই আমার হুঁশ ফিরে আসলো। আমাকে ধরে আবারো কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মনে হলো দুই তিন ধাপ সিঁড়ি পাড় করে কোনো উঁচু জায়গায় আমাকে দাঁড় করানো হয়েছে। আমার মাথা থেকে কালো কাপড় জাতীয় কিছু সরিয়ে ফেলতেই আমি হতভম্ব হয়ে আমার সামনে তাকিয়ে রইলাম।

এই মুহূর্তে আমি একটা মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমার সামনে আনুমানিক পন্ঞ্চাশ থেকে ষাট জন এর মতো পুরুষ মানুষ চেয়ারে বসা।তারা কেউ যুবক, কেউ মাঝ বয়সি,কেউ আমার বাবার বয়সি।আশপাশের পর্যবেক্ষন করতেই খেয়াল করলাম পুরনো সেঁতসেঁতে আধভাঙ্গা দালান আর প্রাচীরে ঘেরা পুরো এড়িয়াটা।আমার ডান পাশে চোখ পরতেই দেখি আরো দুটো মেয়ে আমার থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে।দুজনের ই মুখোমন্ডল সহ পুরো মাথা কালো কাপড়ে ঢাকা।হাত দুটো পিছনে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে।এভাবে আমাকেও বেধে রাখা হয়েছিল।

যখন মেয়ে দুটোকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম ঠিক তখনই কেউ একজন বলে উঠল পাচঁ লক্ষ।আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে বা পাশে তাকাতেই পাঁচ টা চেনা মুখ দেখতে পেলাম।সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে আগের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে ভয় আর আত্মঙ্ক মিশ্রিত অনুভূতি অনুভব করলাম।ভয়ে শরীরে লোম দাঁড়িয়ে গেল।এতক্ষণ যেই ভয় টা পাচ্ছিলাম ঠিক তাই হলো।এখানে মেয়েদের নিলামে তোলা হচ্ছে।আর এই জঘন্যতম কাজটা করছে সেদিনের সেই রাকিব নামের ছেলেটা।এখানে সেদিনের পাঁচ জনই উপস্থিত। সাথে আজকে আবার একজন এক্সট্রা রয়েছে।আজ ওরা মোট ছয়জন।তাদের প্রত্যেকের মুখে লেগে আছে এক ভয়ংকর হাসি।ওদের হাসিতে আমার বুক কেঁপে উঠলো। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। কারন আমার যা বোঝার আমি এতক্ষনে বুঝে গিয়েছি। তখনই রাকিব বলে উঠলো,,,

— হেই বেবি! ডোন্ট ক্রাই! তোমাকে আমরা সুখের ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। কোথায় ধন্যবাদ দেবে তা না করে ড্রামা শুরু করে দিয়েছ।

তার কথায় আমি দ্বিগুণ জোড়ে কাদঁতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,,,

–প্লিজ ছেড়ে দিন।আল্লাহর দোহাই আমাদের সকল কে ছেড়ে দিন।দয়া করে ছেড়ে দিন।

তখন ওদের সাথে থাকা অপরিচিত লোকটা বলে উঠলো,,,

–এতো কাঠখড় পুড়িয়ে তোর ওই প্রেমিককে ধোঁকা দিয়ে তোকে ধরে এনেছি কি ছেড়ে দেয়ার জন্য?এনিওয়েজ অনেক সময় নষ্ট করে ফেলছিস।রাকিব শুরু কর।

তখন রাকিব আবার বলতে শুরু করলো,,,

–পাঁচ লক্ষ।

আমার সামনে বসে থাকা মানুষরূপি অমানুষ গুলো শুরু করে দিল তাদের দামদর করা।প্রত্যেকের চোখে রয়েছে লালসার ছাঁপ।প্রতি শ্বাস নেয়ার সময় মনে হচ্ছে পরের শ্বাস টা বুঝি না নিতে পারলেই ভালো হবে। প্রত্যেক পলকে পলকে আলআবি ভাইয়ার চেহারা টা ভেসে উঠছে।এমুহূর্তে যে পীড়াদায়ক অনুভূতি কে আলিঙ্গন করছি তাতে মনে হচ্ছে মৃত্যু ও বুঝি এর থেকে কম যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে।জীবনে আমল করা সকল দোয়া দুরুদ মস্তিষ্ক থেকে খুব কষ্টে উগ্রে বের করছি।কারণ হলো এমন কুৎসিত আর লোমহর্ষক পরিস্থিতিতে দোয়া-দুরুদ সঠিকভাবে পাঠ করতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।আল্লাহর কাছে অনবরত দোয়া করে যাচ্ছি যেন আল্লাহ এমন কাউকে পাঠিয়ে দেন যে আমাকে আর এখানে থাকা সকল মেয়েগুলো কে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।

আমার দাম বেড়ে এখন নয় লক্ষে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাও আবার বাবার বয়সি লোকটা এই নয় লক্ষ পর্যন্ত টেনে এনেছেন। ঠিক যে মুহূর্তে নয় লক্ষ চার বলা হয়েছে সেই সময় একজন একেবারে পিছন থেকে বললেন,,,

–বিশ লক্ষ।

সকলের দৃষ্টি এখন সেদিকে ই।আমি ও দেখার জন্য সেদিকে দৃষ্টি দিতে ই মনে হলো দেহে প্রাণ ফিরে পেলাম।হয়তোবা আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করে নিয়েছেন।কারণ এখানে স্বয়ং আলআবি ভাইয়া উপস্থিত।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

ঠিক তখনই রাকিব এর সাথে থাকা অপরিচিত ছেলেটি তেড়ে এসে আলআবি ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। এতক্ষণে আলআবি ভাইয়া ও মঞ্চের অনেকটা সামনে এসে পড়েছেন।আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে ওই অপরিচিত লোকটা বলল,,,

— তুই মচকাবি তবু ভাঙবি না তাইতো?

–আমি কি হই সেটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু তুই এখন মচকাবি, ভাঙবি আর একেবারে গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবি।(আলআবি ভাইয়া)

–সে না হয় দেখা যাবে। কিন্তু এখন বল তোর প্রেমিকাকে এই মঞ্চে দেখে কেমন লাগছে? তোর মালটা কিন্তু হেব্বি। একবার পেছনে তাকিয়ে দেখ সবাই কেমন নেয়ার জন্য পাগলা কুত্তার মত করছে।(অপরিচিত লোক)

আলআবি ভাইয়া লোকটার দিকে তাকিয়ে রহস্যে পরিপূর্ণ একটা হাসি হেসে বললেন,,,

–প্রশ্ন যখন তুই ই করেছিস উত্তরটা না হয় তুই ই দে।

তখন আলআবি ভাইয়া মঞ্চের উপর উঠে এসে আমার কিছুটা দূরত্বে থাকা মেয়ে দুটোর মাথার উপর থাকে কালো কাপড় সরিয়ে মুখের বাধন খুলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে অপরিচিত লোকটা কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,,,

— মম!এমি!তোমরা।

আমার পাশের যে দুজন কে মেয়ে মনে করছিলাম তাদের মধ্যে আসলে একজন মেয়ে আমার সমবয়সী আর একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা। মধ্য বয়স্ক মহিলা বলে উঠলো,,,

— ছিঃ! এই কুলাঙ্গার ছেলেকে আমি পেটে ধরে ছিলাম?এখন মনে হচ্ছে তুমি ছোট থাকতেই তোমাকে মেরে ফেললাম না কেন?

আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

— কিরে এবার তুই বল এই মঞ্চে তোর মা আর বোনকে দেখে কেমন লাগছে? শুধু এতোটুকুই জানতে চাই।তোর মতো ভাষা আমি ব্যাবহার করতে পারব না। তাই আর বেশি কিছু বললাম না।এবার উত্তরটা দে।

এমি নামের মেয়ে টা বলে উঠলো,,,

–ব্রো তোকে দিয়ে অন্তত এমন জঘন্য ধরনের কাজ আশা করি নি কখনই।

এখানে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ নিশ্চুপ হয়ে আছে। ওই ছেলেটা ও মাথানত করে রেখেছে। নিরবতা কাটিয়ে আলআবি ভাইয়া ছেলে টাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,,,

–শোন মিথুন যেমন কুকুর তেমন মুগুর, বলে কথাটা নিশ্চয়ই শুনেছিস।যে যেমন তাকে তেমন ভাবেই বোঝাতে হয়।আজ তোর মা বোনকে নিলামের মঞ্চে দেখে তোর ভিতরে যেমন লাগছে ঠিক তেমন এখানে থাকা প্রতিটা মেয়ের পরিবার যখন জানবে তাদের আদরের মেয়ের সাথে কি হচ্ছে বা হতে চলেছিল তখন তাদেরও অনুভূতি তোর মতই হবে। আজ একবার ভেবে দেখ দেড় বছর আগের আফসানা নামের মেয়েটার পরিবারের অবস্থা কি হয়েছিল। আজ তুই তোর মা-বোনকে এখানে জীবিত দেখতে পাচ্ছিস। কিন্তু আফসানার পরিবার মেয়েটাকে জীবিত দেখতেও পায়নি।

একটু থেমে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ছেলেটাকে অর্থাৎ মিথুন নামের ছেলেটাকে বললেন,,,

— তোকে আজ এই পরিস্থিতিতে দাঁড় না করিয়ে এই কথাগুলো তোকে যদি আমি সুন্দরভাবে সাবলীলভাবে বলতাম তাহলে এই কথাগুলোর মর্ম কোনদিনও বুঝতি না।শুধুমাত্র তোকে বোঝানোর জন্য আমাকে তোর মতই খারাপ পন্থা অবলম্বন করতে হলো।

আলআবি ভাইয়া মিথুনের মায়ের দিকে তাকিয়ে তাকে বললেন,,,

–আন্টি আপনাদের এমন একটা বাজে পরিস্থিতিতে দাঁড় করানের জন্য আমি খুবই দুঃখিত। এমনটা না করলে আপনার ছেলে কে থামানো যেত না।

–তোমাকে আমি চিনি না। তবে তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।তোমার দুঃখিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো বেশি। এক্ষুনি তুমি পুলিশ কে ইনফর্ম করো।ওকে পুলিশে দেও।(আন্টি)

–সেটা তো আপনি বললেও দিব না বললেও দিব।(আলআবি ভাইয়া)

এরপর আলআবি ভাইয়া বলে,,,

–এই কাজের সাথে জড়িত এবং যারা এখানে বসে আছেন তাদের মধ্যে যুবকদের বলছি, এতোই যখন রাতের সঙ্গী প্রয়োজন তাহলে বিয়ে করে নেও।এখান থেকে যে মেয়েটাকে নিচ্ছ সেও তো তোমার বোন হতে পারতো।মধ্য বয়সী আঙ্কেল দের বলছি,বাসায় গিয়ে আন্টি কে সময় দিন।তার সাথে গল্প করুন।তার সাথে রাত্রিযাপন করুন। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না।বরং আল্লাহ নিজে আপনার স্ত্রী কে আপনার জন্য হালাল করে দিয়েছেন। আর বাবার বয়সীদের বলছি,আপনারা ও নিজেদের স্ত্রী কে নিয়ে ভাবুন না।এখানে এসে মেয়ের বয়সী একটা মেয়ে কে নিয়ে টানাটানি করছেন কেন।

আলআবি ভাইয়া তার কথা শেষ করতেই পুলিশ এসে হাজির হলো এখানে।শাফিন ভাইয়াও আছে সাথে।মিথুনকে সহ রাকিবদেরও এরেস্ট করে নিয়ে যাওয়া।আর মেয়েগুলোকেও আপাতত থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।

আলআবি ভাইয়া আমার কাছে এসে৷ আমার হাতের আর মুখের বাধন খুলতেই আমি তাকে জাপটে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে লাগলাম।

চলবে…………

[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-৪৩

0

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৪৩

সকালে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতেই হুড়মুড়িয়ে বসে পরলাম। উপলব্ধি করলাম আমি একাই রয়েছি বিছানায়। ডান পাশে দৃষ্টি পরতেই দেখি দরজায় আর জানালায় যে পর্দা ছিল সেগুলো একটা রশির সাহায্য টানিয়ে দেয়া।

মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো এসব পর্দা এভাবে টানিয়ে রাখা কেন?আর এখানে কিভাবে আসলাম আমি? আলআবি ভাইয়া কোথায়? তার না গতরাতে জ্বর এসেছিল?

বিছানা থেকে নেমে পর্দা সরাতেই দেখতে পেলাম আলআবি ভাইয়া চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন। তাকে এ অবস্থায় দেখে দ্রুত তার কাছে ছুটে গেলাম। প্রথমে তার কপালে হাত দিয়ে দেখে নিলাম জ্বর এখন অব্দি আছে কিনা।কপালে হাত রেখে টের পেলাম তার শরীরের তাপমাত্রা এখন একেবারে স্বাভাবিক। তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

এতক্ষণে উপলব্ধি করতে পারলাম পর্দা দেয়ার রহস্য কি।এরমধ্যে ই দেখি আলআবি ভাইয়া পিটপিট করে চোখ খুললেন। আমাকে তার সামনে দেখেই আলতো করে হেঁসে উঠলেন।এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এর মতো তার ঘুম জরানো চেহারা দেখলাম। মনে হচ্ছে সেই দিনের মতো ই সেই স্নিগ্ধতা আজও বিরাজ করছে তার মুখমন্ডলে।তাকে নড়াচড়া করতে দেখে আমি হুঁশ ফিরে পাই।তাকে উদ্দেশ্য করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলা শুরু করি,,,

–আমরা এখানে আসলাম কখন?আপনার তো জ্বর ছিল। এর মধ্যে ই আপনার জ্বর ভালো হয়ে গেল?আর ভালো হলেও আপনি এভাবে চেয়ারে বসে বসে ঘুমিয়েছেন কেন?বেডেই তো…..

আমার কথার মাঝে ই তিনি ব্যাঘাত ঘটিয়ে বললেন,,,

–আরে আস্তে। এতো কথা মানুষ একসাথে কিভাবে বলে?

একটু থেমে গিয়ে আবার বললেন,,,

–কি যেন বললে?চেয়ারে বসে বসে ঘুমিয়েছি কেন?ইশ আগে কেন বললে না তুমি আমার সাথে বেডেই ঘুমাতে চাও।তোমার কোনে ইচ্ছে ই আমি অপূর্ণ রাখতে চাই না।এই ইচ্ছা টাও পূরন হবে।

আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি উনি মিটমিটিয়ে হাসছেন।তার হাসি দেখে অনেক লজ্জায় পরে গেলাম। এখন আর তার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না।আলআবি ভাইয়া আবারও বলে উঠলেন,,,

–শুধু বলেছি এতেই এতো লজ্জা?এই লজ্জা মাখা মুখটা তো এখন বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে।এখন যদি আমরা বিবাহিত হতাম না, তাহলে আরো ভয়ানক লজ্জায় ফেলে দিতাম তোমাকে।

তার এমন লাগামহীন কথাবার্তায় মনে হচ্ছে শুধু আমি একা নই এই পুরো ঘরটাই লজ্জা পাচ্ছে। অন্য সময় হলে হয়তো আমি অনেক রেগে যেতাম।কিন্তু এখন আর তা পারবো না।কারণ কাল রাতে অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকেও বলে দিব আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই।সারাজীবন তার সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাই।

তার সামনে এখন আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হবে না।দ্রুত পায়ে দরজার কাছে আসতেই আলআবি ভাইয়া আমার আগে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরলেন।আমার মাথা এখনো নত করা।তখনি আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

–কোথায় যাও।আমার সব কথা শেষ হয়েছে নাকি? শোনো কাল রাতে আমি ই তোমাকে এই ঘরে এনেছি। তুমি ঘুমের মধ্যে ছিলে তাই হয়তো বুঝতে পারো নি। আর জ্বর এর কথা যেটা বললে,আসলে বৃষ্টির পানি আমার মাথায় পরলেই আমার জ্বর আসে।তবে সেটা কয়েক ঘন্টার জন্য আসে।বেশি হলে একরাত থাকে। এর থেকে বেশি আর থাকে না।

আলআবি ভাইয়া আমার সামনে থেকে সরে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ইশারা করলেন এবার আমি যেতে পারি।

আমরা পাড়ার সবাই কে বিদায় জানিয়ে পাড়া থেকে বের হয়ে একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।এই গাড়ি টাই সরাসরি আমাদের গাজীপুর নিয়ে যাবে।আলআবি ভাইয়া নিয়াজ ভাইয়াদের সাথে কন্টাক্ট করে জানিয়ে দেয় তারা যেন আমাদের জন্য বসে না থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।আর এও বলে দেয় আমাদের দুজনের আসার ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে।

গাড়ীর সামনে বসেছেন ড্রাইভার। আমি আর আলআবি ভাইয়া বসেছি পিছনে। উনি মোবাইলে কিছু একটা করছেন। আমি জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি রেখে ভাবতে লাগলাম আলআবি ভাইয়ার কাছ থেকে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি।আমার কাছে তাকে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চোখটা লেগে এসেছিল।একপর্যায়ে ঘুমিয়ে ও পড়ি।

আমার ঘুম ভাঙ্গে কারো ডাকে। চোখ মেলতে ই দেখি আলআবি ভাইয়া আমাকে ডাকছেন আর বলছেন,,,

–জুইঁ!জুইঁ!নামতে হবে আমাদের।

গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে চোখ বুলাতেই টের পাই জায়গাটা আমার জন্য একেবারে ই অপরিচিত।তখনই আলআবি ভাইয়া পাশ থেকে আমার হাত ধরে সামনে একটা বহুতল ভবনের দিকে পা বাড়াতে লাগলেন।আমি তাকে প্রশ্ন করে বসলাম,,,

–এটা কোথায়?আপনি কোথায় এনেছেন আমাকে?

–বিক্রি করে দিতে।(আলআবি ভাইয়া)

–আমি ছোট বাচ্চা নই,যে বললেন আর বিশ্বাস করে ফেললাম। (আমি)

উনি আমার কথার পৃষ্ঠে কোনো কিছু বললেন না।আমি আবারও বললাম,,,

–বলুন না প্লিজ।

–কাজ আছে তাই এসেছি। (আলআবি ভাইয়া)

–এখানে আবার কি কাজ আপনার?(আমি)

কথা বলতে বলতে ই গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম আমরা।গেট দিয়ে প্রবেশ করতে ই মাঝ বয়সী একটা লোক আলআবি ভাইয়া কে সালাম দিয়ে বললেন,,,

–কি ব্যাপার এতোদিন পরে মনে পরলো এই বাড়ির কথা?

-আসলে এতোদিন বান্দরবান ছিলাম।(আলআবি ভাইয়া)

লোকটা আমাকে দেখে ই আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

–তা তোমার সাথে এইটা কে।?

–ধরে নেও তোমার বৌমা।(আলআবি ভাইয়া)

–বাহ্।বাহ্।সুখী হও তোমরা। (লোকটা)

লোকটা ভাবছে হয়তো আমরা বিবাহিত। আমি তারাহুরো করে বলতে নিলাম,,,

–না না।আমরা……

আলআবি ভাইয়ার জন্য আর বলতে পারলাম না।তিনি আমাকে টেনে নিয়ে আসলেন।লিফটের কাছে আসতেই আমি তার কাছ থেকে হাত ছুটিয়ে একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,,,

–সবার কাছে আমি আপনার বউ বলে বলে ঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?আমাদের এখনো বিয়ে হয়েছে নাকি?

উনি লিফটের বাটনে প্রেস করতে করতে বললেন,,,

–হতে কতক্ষণ? চাইলে তো আমি এখনি তোমাকে বিয়ে করতে পারি।সবাই জানে তুমিই আমার হবু #বর্ষণ_সঙ্গিনী।

–আমি কোনো কানা ব্যাটাকে বিয়ে করব না।(আমি)

এর মধ্যে ই লিফটের দরজা খুলে গেল।আমরা দুজন একসাথে লিফটে প্রবেশ করলাম।লিফটে প্রবেশ করে ই আলআবি ভাইয়া লিফটের ১৪ তে প্রেস করতে করতে বললেন,,,

–সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি তো তোমাকে ই বিয়ে করব।

আহা! তার কথায় মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। ইশ!বিয়ের কথা শুনে যেই মেয়ে আগে লজ্জা পেত।ভয় পেত।সেই মেয়ে এখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার মানুষ টা নিজে এসে বলছে আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।এর থেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে।কিন্তু এখন তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলাম,,,

–আমি বিয়ে করব না।

–আমি করব।(আলআবি ভাইয়া।)

–করব না।(আমি)

–করব।(আলআবি ভাইয়া)

–না।(আমি)

–হ্যাঁ।(আলআবি ভাইয়া)

–না।(আমি)

–হ্যাঁ।(আলআবি ভাইয়া)

–না(আমি)

–না।(আলআবি ভাইয়া)

–হ্যাঁ(আমি)

আমার মুখ ফসলে হ্যাঁ বের হতেই আলআবি ভাইয়া অট্ট হাসিতে ফেটে পরলেন।হাসতে হাসতে বললেন,,,

–বলেছি না তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করব।এখন তো তোমাকে বিয়ে না করে ছাড়বোই না।

–আপনি আমাকে কনফিউজড করে মুখ থেকে হ্যাঁ বের করেছেন।আমি ইচ্ছে করে হ্যাঁ বলিনি।(আমি)

–যেভাবেই বলো না কেন।হ্যাঁ তো বলেছ।(আলআবি ভাইয়া)

আমাদের কথপোকথনের মধ্যে ই লিফট খুলে গেল।লিফট খুলতেই আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরে বা দিকে এগিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।আমি তার থেকে হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম আর বললাম,,,

–আপনি কি আমার হাত না ধরে হাঁটতে পারেন না।

–না।কানা ব্যাটারা কারো হাত না ধরে হাঁটতে পারে না।সারাজীবন এভাবেই হাত ধরে হাঁটব। (আলআবি ভাইয়া)

আমার কথায় যে আমিই ফেঁসে গিয়েছি এখন তা খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারছি।আলআবি ভাইয়া আমাকে নিয়ে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেড়িয়ে সোজা ছাঁদে চলে এলেন।ছাঁদে আসতেই আমি বলে উঠলাম,,,

–ছাঁদে আপনি কি কাজ করতে এসেছেন।

আমার কথার কোনো জবাব না দিয়েই উনি ছাঁদের এককোণে থাকা একটা রুমের দরজা খুলে আমাকে ভিতরে নিয়ে আসলেন।

রুমটায় প্রবেশ করেই বুঝতে পারলাম এটা সিঙ্গেল একটা রুম।পুরো রুমের চার দেয়ালের এক পাশে দেয়াল এর পরিবর্তে থাইগ্লাস লাগানো।এখান দিয়েও বের হওয়া যায়।এখান থেকেই থাইয়ের মোটা কাঁচ ভেদ করে পুরো ছাঁদটাকে পরখ করা যায়।দেখতে পেলাম একপাশে একটা দোলনা ঝুলছে আর রেলিং ঘেঁষে অনেক গুলো গাছ সারি সারি দাঁড় করানো।অবাক করা কান্ড হলো সব গুলো জুইঁফুলের গাছ।এখন বাজে ঠিক দুপুর তিনটা।সূর্যের তেজ এখনো কমেনি।হলদে রোদ এসে গাছ গুলোর সাথে লেপ্টে রয়েছে।

আলআবি ভাইয়ার কথায় আমার সম্বিৎ ফিরলো।উনি আমাকে ওয়াশ রুমের দিকে ইশারা করে বললেন,,,

–যাও বোরখা খুলে ফ্রেশ হয়ে নাও।এখান থেকে আমরা বিকেলের দিকে গাজীপুরের জন্য রওনা দিব।আমার অনেক ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ আছে।আমাকে এখনি যেতে হবে আর তোমার দুপুরের লাঞ্চ টা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ফ্রেশ হয়েই কিন্তু খেয়ে নেবে।ভয় পাবে না এটা আমারই বাড়ি।

তার কথার মাঝে তার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা কেটে দিয়ে আমাকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,,,

–ওখানে টেলিফোন আছে। দরকার পরলে কল করো।

উনি কথা শেষ করে ই খুব ব্যস্ততার সহিত চলে গেলেন।তার ব্যস্ততা বলে দিচ্ছিল খুব দরকারি কোনো কাজ আছে তার। তিনি চলে যেতেই আমি পুরো রুমটায় চোখ বুলাতে লাগলাম। রুমটা মোটামুটি বড় ই।শুভ্র রঙা এই তিন দেয়ালের রুমের মাঝ বরাবর রয়েছে একটা বেড। বেডের দুপাশে মাথার কাছেই টেবিলে রয়েছে টেবিল ল্যাম্প।একপাশে রয়েছে ছোট সাইজের একটা সোফাসেট।বিনোদনের উপকরণ হিসেবে রয়েছে টিভি।আরেক সাইডে ছোট করে একটা বুকসেল্ফ ও আছে। মোটামুটি ভাবে রুমটাকে গুছানোই বলা চলে।

ওয়াশরুমে গিয়ে বোরখা খুলতে গিয়ে আশ্চর্যের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলাম। শাওয়ার নেয়ার স্পেসটুকুতে মাথার উপরে একে বারেই ফাঁকা। মানে মনের সুখে নীল আকাশ দেখে দেখে ই শাওয়ার নেয়া যাবে।ছিঃ!ছিঃ! এই খচ্চর ব্যাটার তো দেখি রুচিতে ও সমস্যা আছে। এভাবে কেউ কি করে শাওয়ার নিবে। ভালো করে পরখ করে দেখতেই মনে হলো এই বিল্ডিং টাই সবচেয়ে বড়।এখানে আর বোরখা না খুলে রুমে এসেই খুলে নিলাম। এরপর আবার গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম। রুমে এসে বেডের উপর বসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা আমাকে বলল,,,

–এইডা বড় ভাই দিছে।খাইয়া লন।

ছেলেটার হাত থেকে খাবার এর প্যাকেট টা নিয়ে ওকে একটা মুচকি হাসি ফেরত দিয়ে দরজা পুনরায় বন্ধ করে এসে বেডে বসলাম।

আসরের নামাজ পরে রুম থেকে বের হয়ে ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লাম। চারপাশে যতদূর চোখ যায় ততোদূর পর্যন্ত শহরে জীবনের ছোঁয়া রয়েছে। আশেপাশে বড় বড় অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে। তবে আমি যেখানে দাঁড়ানো এটা সবচেয়ে বড় অট্টালিকা। আমি ঠিক কোথায় আছি তা এখনো আমার অজানা। আলআবি ভাইয়া সেই যে গেছে আশার নামগন্ধও নেই। হেঁটে এসে পাশের দোলনায় বসে পরলাম। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম তিনজন লোক ছাঁদে উঠেছে। লোক বললে ভুল হবে বরং বলতে হবে যুবক।তিনজনকে দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো।কারণ এরা আমাদের ভার্সিটির সেই তিনটা ছেলে।এরা ই তো সেই রাকিব নামের ছেলেটার সঙ্গে ছিল।

ওদের দেখা মাত্র ই আমি দৌড়ে রুমে আসতে নিলাম। কিন্তু রুম পর্যন্ত আর আসতে পারলাম না। তার আগেই দুপাশ থেকে দুজন আমার হাত ধরে ফেলল। আমি চিৎকার করে বললাম,,,

–সমস্যা কি?আমার হাত ধরে রেখেছেন কেন এভাবে। ছাড়ুন আমাকে।

আমার কথা শেষ হতে ই আরেক জন এসে আমার গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে,,,

–এই তেজে আজকে কোনো কাজ হইবো না।তোর জন্য যে কি অপেক্ষা করতাছে তা তুই কল্পনাতেও ভাবতে পারবি না।

হঠাৎ করেই মনে হলো আমার কাঁধে সূঁচালো কিছু একটা খুব জোড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতক্ষণে আমার হাত পা আর মুখ বেধে ফেলা হয়েছে। আমি তারপর ও ছোটাছুটি করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নিজেকে মুক্ত করার জন্য।ওদের মধ্যে থেকে দুজন আমার বাহু ধরে আমাকে লিফট অব্দি টেনে টেনে নিয়ে এসেছে।

হঠাৎ করেই আমার মনে হচ্ছে আমি শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলছি। চোখের পাতা ভাড়ি হয়ে আসছে।আমি বারবার চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করছি।আমার সম্পূর্ণ শরীর অবশ হয়ে এসেছে। হাত পা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দিয়েছি।আমার সাথে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।কিন্তু এতোটুকু জানি ভয়ংকর কোনো কান্ড হতে যাচ্ছে। ঢুলু ঢুলু চোখে দেখতে পেলাম আমাকে একেবারে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে আসা হয়েছে।তখনই আমার চোখ পরলো সেই লোকটার দিকে যাকে এবাড়িতে ঢোকার সময় দেখেছিলাম। লোকটা আমাকে দেখতে পেয়েই সামনে এসে ওদের বাঁধা দিতে লাগলো।সে মুখ দিয়ে কিছু একটা বলছে ওদের ,যা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। একপর্যায়ে ওদের তিনজনের মধ্যে থেকে একজন এসে লোকটার মাথা দেয়ালের সঙ্গে স্বজোড়ে বাড়ি মারলো।এখানেই আমার চোখের পাতা লেগে আসলো।আর খুলতে পারলাম না চোখের পাতাজোড়া।

চলবে…………

[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]

বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-৪২

0

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৪২

জীবন চলার পথে পড়ালেখা করতে গিয়ে বা কাজের ক্ষেত্রেই হোক না কেন অনেক মেয়ের সঙ্গে ই দেখা হয়েছে, ওঠাবসা হয়েছে।তাদের কে ঘিরে মনে কখনোই কোনো অনুভূতি জন্মায় নি। কিন্তু কখনো ভাবিনি কোনো একদিন ১৬ বছরের একটা কিশোরী মেয়ের জন্য হুট করেই নিষিদ্ধ এক অনুভূতির জন্ম হবে।নিজের অজান্তে ই করে ফেলা ঘোর অপরাধের জন্য নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানাতাম।কারণ ততক্ষণে মেয়েটার জীবনে স্বামী নামক ব্যক্তিটির আগমন ঘটে গিয়েছিল।মেয়ে টার ঠিক বিয়ের দিনই তাকে প্রথম দেখি।

তার প্রশস্ত ললাটের জোড়া ভ্রুযুগলের নিচে থাকা ঘন লম্বাটে পল্লব বিশিষ্ট আঁখিদ্বয় দেখে তার মোহে পরে গিয়েছিলাম।তার ভরাট আর ফোলা ফোলা গাল দুটোর সঙ্গে গজ দাঁতের হাসিটা আমার হৃদপিণ্ডের স্পন্দনকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে উঠে পরে লেগেছিল। তারার হাসি কেবল একটাই পরিচয় বহন করে যাচ্ছিল আর তা হলো গজদন্তিনী।তার থুতনিতে থাকা গর্তটা তাকে দ্বিতীয় বার দেখার জন্য আমাকে বাধ্য করেছিল।তাকে দেখার পরমুহূর্ত থেকেই যে ভয়ংকর আর তীব্র অনুভূতি টা জাগ্রত হয়েছিল তা ঠিক সেই সময়ই নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়ে যায়। কারণ সেই দিনই আল্লাহ প্রদত্ত বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধে সে নিজেকে মুড়ে নেয়।

এরপর তার প্রতি জন্মানো অনুভূতিগুলো কে ধীরে ধীরে নিংড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকি।নিজের জীবনে টাকে ব্যস্ততার আঙ্গিনায় সপে দেই।হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেও দিনশেষে তন্দ্রা-নিদ্রার খেলায় মত্ত হওয়ার আগে একবার করে নিষিদ্ধ অনুভুতির দাড়ে গিয়ে অনুভূতি গুলোকে নেড়েচেড়ে দেখে নিতাম।নিরব মনে অনুভূতি গুলোকে নিজের বোবা খাঁচায় পুড়ে রাখতাম।

তার প্রতি জন্মানো আমার অনুভূতির বয়স যখন এক বর্ষা পেড়িয়ে অন্য বর্ষায় পদার্পণ করে তখন আধো ইতিবাচক আর আধো নেতিবাচক এক সংবাদ এসে আমার অনুভূতি গুলোকে বোবা খাঁচা থেকে বের করে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়।আমার অনুভূতিগুলোর ছাড়া পাওয়ার জন্য একটা কাগজই যথেষ্ট ছিল আর তা হলো তালাক নামা। যাকে ইংরেজিতে বলে ডিভোর্স পেপার। ডিভোর্স পেপার এর মাধ্যমে আমার সেই গজদন্তিনী আবার বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জীবনের বড় খুশির দিন ছিল সেই দিনটা। যেদিন জানতে পারি আমার গজদন্তিনী চিরতরে মুক্ত হয়ে গিয়েছে।

ফ্রান্সে সব কাজ শেষ করে তার কয়েকদিন পরেই দেশে চলে আসি নিজের গজদন্তিনী কে একান্ত ভাবে আপন করে নেয়ার জন্য। দেশে ফিরে যেদিন প্রথম দেখায় তার মাথা আমার বুকে এসে স্থান পায় সেদিন মনে হয়েছিল আমার শতশত রাতের তৃষ্ণা এক মুহূর্তেই কর্পূর এর ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল।

আমার দেশে ফিরে আসার কারণ শুধুমাত্র আমার মা বাবা আর আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু নিয়াজ ছাড়া কেউ জানত না।আমার গজদন্তিনী কে দেখার পর মনে হয়েছিল আমার গজদন্তিনীর মনে কি রয়েছে তা জানতে হবে আর সেই সাথে আমাকেও তার মনের আঙিনায় প্রবেশ করতে হবে। তার মনেও কেবল আর কেবলমাত্র আমার নামের ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে।তাই ওকে আরো সময় দিচ্ছিলাম।

এরই মাঝে ই একদিন গজদন্তিনীর সাথে একটা পাবলিক যাত্রী ছাউনিতে দেখা হয়ে যায়। কিন্তু তাকে দেখার পর মুহুর্তেই তার ভয়ার্ত মুখখানা দেখে আমি নিজেই ভয়ে পড়ে যাই। কারণ যে কোন পুরুষই অগোচরে তার প্রিয়তমার কান্নায় কাঁদবে, তার প্রিয়তমার হাসিতে হাসবে, তার প্রিয়তমার দুঃখে ব্যথিত হবে আর তার প্রিয়তমার ভয়ে নিজে ই ভয়ের সমমুখীন হবে। তাই আমার ক্ষেত্রেও ওই মুহূর্তে ব্যতিক্রম হয়নি।

আমার গজদন্তিনীর ভয়ের কারণ আচঁ করতে পেরে দ্রুত তাকে আমার বাইকে চড়িয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বৃষ্টিস্নাত রাত আর পিছনে ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত মানুষটি।আহা!সে কি যে সুখের অনুভূতি তা বলে প্রকাশ করার মতো নয়।ওই মুহূর্ত থেকে ই ভেবে নিলাম সারাজীবনের জন্য তাকে এই ভাবেই আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনী বানিয়ে রাখব।যদিও আমার বৃষ্টির ফোঁটা সহ্য হয় না কিন্তু তবুও এইভাবেই সারা জীবন তাকে #বর্ষণ_সঙ্গিনী করে বর্ষণের জল ফোঁটায় নিজেকে ভেজাতে চাই।

যত দিন অতিবাহিত হতে লাগল ততই আমার #বর্ষণ_সঙ্গিনীর প্রতি ভালবাসার মাদকতা বাড়তেই লাগলো।চিঠি দিয়ে আমার সুপ্ত অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে লাগলাম। আমাদের দুজনের সব ঠিকঠাক ই চলছিল।তাকে কথা দিয়েছিলাম তার ১৯ বছর পূর্ণ হলে তার সামনে এসে তাকে দেখা দিব।

তার ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন মা বাবা, ভাইয়া ভাবি সকলে মিলে প্ল্যান করেছিলাম সেদিন তার বাড়িতে গিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিব।নিয়াজ কে আগে থেকে ই বলে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই দিন বাবার একটা জরুরি কাজ এসে পরে বিধায় আমরা আমাদের পরিকল্পনা পাল্টে ফেলি।সিদ্ধান্ত নেই তার জন্মদিনের পরের দিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেবল মা আর বাবাকে পাঠাব।

আলআবি ভাইয়া একটানে কথা গুলো বলে চুপ হলেন।আমি স্তব্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি।তাকে বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।আলআবি ভাইয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবারও বললেন,,,

–কিন্তু প্রকৃতি তো আর আমাদের নিয়মে চলে না বরং আমরাই চলি প্রকৃতির নিয়মে।

আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে পরলেন।আমি তখনে টুলের উপরই বসা।আমি কিছু করার বা বলার আগেই উনি আমার সামনে আরাম করে আসামপেতে বসে আমার কোলে তার মাথা ঠেকিয়ে দিলেন।তার কাজে আমি হকচকিয়ে তাকে বলে উঠলাম,,,

–একি! আপনি এখানে মাথা রাখলেন কেন?

আলআবি ভাইয়া বিরক্তের সহিত মুখ দিয়ে “চ” মূলক শব্দ করে আমাকে জবাব দিলেন,,,

–ডোন্ট নয়েস।

আমার দুই হাত নিয়ে তার মসৃণ চুলগুলোর মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন আর বললেন,,,

–একটু টেনে দেও তো।অনেক ঘুম পাচ্ছে।

তার কথা শেষ হতেই আমি ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলাম,,,

— আরে! আরে! আপনি এখানে ঘুমাবেন নাকি? আপনি ঘুমালে আমি কি করব? সারারাত মশার সাথে পিনপিন করে গল্প করবো নাকি?আর আপনাকে এখন আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনি…..

হঠাৎ করে আমার হাত তার কপালে ছোয়া লাগতেই অনুভব করলাম তার কপাল অতিরিক্ত মাত্রায় উষ্ণ। আমি আরো ভালো ভাবে তার কপালে গালে হাত বুলাতেই নিশ্চিত হলাম তার জ্বর এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,

— আপনার তো জ্বর এসেছে। চলুন তাড়াতাড়ি চলুন আমরা ঘরে যাই।কি ব্যাপার শুনতে ছেন না আপনি?

আলআবি ভাইয়া ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

–এখন আমি নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে এখান থেকে যেতে পারব না।সো প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।

তার কথায় তাকে আর ডাকাডাকি করলাম না। কিন্তু এভাবে তো থাকলে ও হবে না। কিছু একটা করতে হবে। ভাবতে ভাবতে আমি সন্তর্পণে আলআবি ভাইয়াকে নিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম। তার মাথাটা আমার কোলে রেখে ধীরে ধীরে চুল টানতে লাগলাম, মাথা টিপে দিতে লাগলাম।

ওভাবে কতো সময় ছিলাম তা ঠিক বলতে পারবো না।কিন্ত সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ মেলে অনেক অবাক হয়ে যাই।

চলবে…………

[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]