Wednesday, July 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1089



স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-১২

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ১২
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

স্নিগ্ধা কোথায় তুই, তাড়াতাড়ি বাইরে আয় এই কি সর্বনাশ হলো রে তোর?
বাইরে থেকে ফুপির এমন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমি তড়িঘরি করে ডায়েরি টা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে নিচে এলাম। বাসায় কেউ নেই, বাসার বাইরে থেকে ফুপি এইভাবে চেঁচামেচি করছে আর আমাকে ডাকছে, কয়েকজনের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে একটু অবাক হয়ে বাইরে গেলাম। বাসার বাইরে গিয়ে আমার সামনের দিকে তাকিয়ে পাথর হয়ে গেলাম আমি,আর একটুও নড়াচড়া করার শক্তি নেই আমার মধ্যে। নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার, চোখের কোণা বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আমার। সামনে একটা লাশের খাটিয়া রাখা হয়েছে, লাশের মুখ টা খোলা।খাটিয়ার পাশে বসে হাহুতাস করে কাঁদছে মামা মামি সাথে আরো অনেকেই, আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেলাম খাটিয়ার দিকে, এগিয়ে গিয়ে খাটিয়ার পাশে বসে পড়লাম।খাটিয়া তে যে শুয়ে আছে আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আশেপাশের সবাই কে জিজ্ঞেস করলাম,,, এটা কি ধরনের নাটক হচ্ছে এখানে?হৃদান ভাই কে এইভাবে লাশ সাজিয়ে রাখার কি মানে হ্যা? একটু ঝাকুনি দিয়ে হৃদান ভাই কে বললাম,,,
নাটক বন্ধ করে এইবার উঠো তুমি,দেখো এইভাবে নাটক করা কিন্তু মোটেও উচিত নয়।
মামি আমার পাশে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,,আর উঠবে না রে আমার ছেলে টা, ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। বলেই মামি হু হু করে কাঁদতে শুরু করলেন, আমি মামির দিকে তাকিয়ে বললাম,, ছেড়ে চলে গেছে মানে কি?

কাজ শেষ করে আসার পথে হৃদানের এক্সিডেন্ট হয়েছিল তখনই ও,,,আর কোনো কথা কর্নগোচর হলো না আমার। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে এলো, সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের সামনে, শুধু একটা কথাই কানে এলো হৃদান ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল।

যখন জ্ঞান ফিরে এলো আমার তখন মধ্য রাত।ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি মামনি মামি ফুপি সবাই আমার পাশে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে মামনি আমাকে ধরে উঠে বসালো, আমি বসে মামনি কে বললাম,,, মামনি হৃদান ভাই কোথায়?ওই সময় মামী মিথ্যা কথা বলেছে তাই না,হৃদান ভাইয়ের কিছু হয় নি আমি জানি।
মামনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি ভুল জানো স্নিগ্ধা,হৃদান আর নেই।

আমি জিজ্ঞাসু সুচক দৃষ্টি তে মামনির দিকে তাকালাম,আমার চাহনি দেখে মামনি আস্তে আস্তে বললো,,,আজ হৃদানের বাসায় ফেরার কথা ছিল,ও আমাদের কে ফোন করে বলেছিল যেন ওর বাসায় আসার কথা আমরা তোমাকে না বলি তাই তুমি জানতে না। বাসায় ফেরার পথে হৃদানের গাড়ির সাথে একটা ট্রাকের মুখোমুখি এক্সিডেন্ট হয় আর হৃদান ওখানেই, এইটুকু বলে মামনি আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করল। একটু পরে কান্না থামিয়ে বললো,, পুলিশ পরে গাড়ির মধ্যে হৃদানের আইডেন্টিটি চেক করে দেখে বাসায় লাশ নিয়ে আসে, প্রথমে পুলিশের কথা শুনে আমরা কেউই বিশ্বাস করিনি কিন্তু পরে হৃদানের লাশ দেখে এই নির্মম সত্যি টা মেনে নিতে হয়েছে। তুমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরেই হৃদান কে দাফন করা হয়েছে, তোমার জ্ঞান ফিরে আসা অব্দি অপেক্ষা করেছিল সবাই কিন্তু তোমার জ্ঞান ফিরেনি দেখে দাফন করে ফেলেছে।

আমি মামনির কথা শুনে কিছুক্ষণ মুর্তির মতো বসে রইলাম তারপর কঠিন স্বরে বললাম,, আমার রুম থেকে এখন সবাই চলে যাও, আমার এখন কিছু ভালো লাগছে না একা থাকতে দাও আমাকে।
মামনি আমার কথায় সঙ্গে সঙ্গে উঠে চলে গেল সাথে ফুপি আর মামীও চলে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পর আমি উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ডায়েরি টা টেবিল থেকে নিয়ে এসে জানালার পাশে বসলাম।যেই পৃষ্ঠায় আমি কয়েক ঘণ্টা আগেই হৃদান ভাই কে নিয়ে লিখেছিলাম সেই পৃষ্ঠা বের করে তাতে হাত বুলাতে লাগলাম।কি আশ্চর্য আমার এখন একটুও কান্না পাচ্ছে না, বরং খুব অভিমান হচ্ছে হৃদান ভাইয়ের উপর।প্রথম ভালোবাসায় ধোঁকা খেয়ে তোমাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালো বাসতে শুরু করেছিলাম এমন কি ভালোও বেসে ফেলেছিলাম আমি তোমাকে।যাকে নিয়ে ভাবা অনুভূতি গুলো মিথ্যে হয়েছিল তাকে ছেড়ে আমি তোমাকে নিয়ে ভাবা অনুভূতি গুলো সত্যি ভেবেছিলাম। মনের মধ্যে তোমাকে একটা জায়গা দিয়েছিলাম আমি, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার জায়গা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। এই পৃষ্ঠায় তোমাকে নিয়ে আমি আমার মনের অনুভূতি গুলো লিখতে শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম একদিন তুমি আমার লিখা গুলো ঠিক দেখবে, বুঝতে পারবে আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তুমি কি করলে? তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে অনত্র, আমার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার সুযোগ টুকু দিলে না আমাকে, তোমার স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় জড়িয়ে যেতে দিলে না, তুমি বলেছিলে না তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো? তাহলে এই তোমার ভালোবাসা, বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে এখন একা করে ছেড়ে চলে যাওয়া টা কি তোমার ভালোবাসা? এখন আমাকে কে বলবে স্নিগ্ধ আমি তোকে খুব ভালোবাসি,কে আমার কথায় অভিমান করবে? স্নিগ্ধ বলে কে ডাকবে আমাকে? তুমি এই কাজ টা মোটেও ঠিক করো নি, আমাকে একা করে দিয়ে এতো তাড়াতাড়ি তোমার চলে যাওয়া উচিত হয় নি, তোমার উপর আমি রাগ করেছি খুব বেশি রাগ করেছি আমি।
এইসব ভাবতে ভাবতে হু হু করে কেঁদে উঠলাম আমি, আস্তে আস্তে সব কান্না একসাথে বের হয়ে আসছে আমার। বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতে পারছি,হৃদান ভাই কে হাড়ানোর ব্যাথা। চোখের পানি তে ডায়েরীর পাতা গুলো ভিজে ভিজে লেখা গুলো ঝাপসা হয়ে গেল। আবছা বুঝা যাচ্ছে লেখা গুলো,কত স্বপ্ন দেখেছিলাম হৃদান ভাই কে নিয়ে, ভেবেছিলাম হৃদান ভাই আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবে না, আয়াশের মতো হৃদান ভাই আমাকে কাদাবে না।কয় দিন হলো আর আমাকে বলার যে হৃদান ভাই আমাকে ভালোবাসে,এক মাস ও হয় নি হৃদান ভাই আমার জীবনে সুখ পাখি হয়ে এসেছিল,সুখ পাখি আর বেশি দিন রইল না সে তার আপন মায়ায় আমাকে ছেড়ে চলে গেলো আর দিয়ে গেল এক রাশ কষ্ট। আমি যে হৃদান ভাই কে ভালোবাসি সেই কথা টা আর বলা হলো না তাকে,আজ ভাবছিলাম হৃদান ভাই ফিরলে সবার আগে তাকে ভালোবাসি এই কথা টা বলবো, বলে দেবো তাকে আমার সমস্ত অনুভূতির কথা গুলো।তার প্রেমের মায়ায় আমি আস্তে আস্তে জড়িয়ে যাচ্ছি এই কথা বলবো তাকে কিন্তু তা বলার আগেই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। চোখের পানি তে ডায়েরীর পাতাটা এখন সম্পূর্ণ ভিজে গেছে,লেখা গুলো আর আলাদা করে বুঝা যাচ্ছে না।হৃদান ভাই চলে গেছে বলেই হয়তো লেখা গুলো ও আর আমার গোপন অনুভূতি হয়ে থাকতে চাইলো না। আমি চোখ মুছে ডায়েরী টা বন্ধ করে বাইরে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললাম,, তোমার মতো আজ আমিও একা হয়ে গেলাম। দুই বার ভালোবেসে হাড়িয়েছি আর পারছি না কষ্ট সহ্য করতে। একজন বেঁচে থেকেও মরে গেছে আমার কাছে,আর যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছিল সে বাস্তবিকেই মরে গেছে। আমার কপালে ভালোবাসা সইলো না, এখন আমি কি করে থাকবো আমার হৃদান ভাই কে ছাড়া? সেই যে আমার জীবনের সবকিছু হয়ে উঠেছে, সমস্ত ধ্যান ধারণা যে তাকে নিয়েই আমার। আচ্ছা চাঁদ তুমি বলো তো,হৃদান ভাই তো আমাকে ভালবাসে তাহলে সে আমাকে ছেড়ে একা একা থাকবে কি করে?তার তো আমাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে,ও না পুরো একটা বোকা ছেলে,কষ্টই যখন পাবে তাহলে আমাকে একা করে চলে গেলো কেন?

চলবে……. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-১১

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ১১
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

নিজের মুর্খামির জন্য এখন মাথা ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার। একটু লাজুক মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম, আমার লজ্জা পাওয়া দেখে হৃদান ভাই মুচকি হেসে বলল,,থাক আর লজ্জা পেতে হবে না তোকে। নূপুর গুলো নে,দেখতো পছন্দ হয়েছে কি না? আমি ওনার হাত থেকে নূপুর গুলো নিয়ে বললাম পছন্দ হয়েছে আমার, তার পরেই দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলাম। এইখানে থাকতে এখন লজ্জা করছে আমার, ভীষণ লজ্জা করছে।

বন্ধ একটা রুমের মধ্যে চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে আয়াশ। হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করেও কোনো লাভ হয়নি,গত এক ঘন্টা ধরে এখানে বন্দি অবস্থায় বসে আছে আয়াশ। কিছুক্ষণ আগে যখন আফিফ স্নিগ্ধার ঘরে ওর বয়ফ্রেন্ডের সম্পর্কে কিছু জানতে খুজাখুজি করছিল তখন একটা ডায়েরি তে ও আয়াশের নামে কিছু ভালোবাসাময় কথা লিখা দেখে বুঝতে পারে এই স্নিগ্ধার বয়ফ্রেন্ড, সাথে ওর একটা ছবিও ছিল। ব্যাস আফিফের কাজ হয়ে গেছে,ও তখনি বেরিয়ে পড়ে আয়াশের খোঁজে, একটু পরে পেয়েও যায় আর তার পরেই ওকে কিডন্যাপ করে এইখানে নিয়ে আসে। একটু পরে বন্ধ রুমের দরজা খুলে গেল,আধো অন্ধকার দরজার সামনে একটা চেয়ারে বসে আফিফ আয়াশ কে জিজ্ঞেস করল,,, কেমন আছো আয়াশ?
আয়াশ নিজের হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,,

কে আপনি? আমাকে এইভাবে নিয়ে আসার কারণ কি?
ওফ তোমাকে তো বলাই হয়নি তাই না? তবে এখন বলছি শোনো, তুমি তো স্নিগ্ধার বয়ফ্রেন্ড তাই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তুমি এখন কারন জেনে গেছো তাই পরবর্তী তে তোমার সাথে যে যে ঘটনা গুলো ঘটবে তার জন্য প্রস্তুত থাকো।

আফিফ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো তার পর বললো,,
আমার হাত থেকে তোমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না, তুমি স্নিগ্ধার,,,,,,আর কিছু না বলে আফিফ একটু হেসে রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেল।আফিফ চলে যাওয়ার পর আয়াশ একটা শুকনো ঢোক গিললো। মনে মনে ভাবতে লাগলো,,ও যে স্নিগ্ধা কে ঠকিয়েছে তার কারনেই হয়তো এই ছেলেটা ওকে এইভাবে বন্দি করে রেখেছে। স্নিগ্ধা ওকে ঠকানোর প্রতিশোধ নিচ্ছে, ওর পাপের শাস্তি ওকে এই ছেলেটা দিবে। অজানা এক ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো আয়াশের।
______________________________________
এক সপ্তাহ পর,,,,,,,

সবকিছু কেমন যেন বদলে গেছে,হৃদান ভাই অফিসের কাজে শহরের বাইরে গেছে দুই দিন আগে, আমাদের বিয়ের তারিখ ও ঠিক করা হয়েছে।আর মাত্র চার দিন পরে আমার আর হৃদান ভাইয়ের বিয়ে, আমি এই প্রস্তাবে বিনা বাক্য ব্যয়ে রাজি হয়েছি। কেন এমন ভাবে রাজি হয়েছি তা নিজেও বুঝতে পারিনি,দুর্বল হয়ে পড়েছি হৃদান নামক মানুষটির উপর। মনে হচ্ছে যেন আস্তে আস্তে আমিও হৃদান ভাইয়ের স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় জড়িয়ে পড়ছি, এখন ওনার কথা ভাবলেই লজ্জা লজ্জা লাগে আমার।
বাগানের বেঞ্চে বসে বেলি ফুলের গাজরা বানাচ্ছিলাম এমন সময় ভাইয়া আমার পাশে এসে বসে বললো,,
জানিস স্নিগ্ধা, আয়াশ কে কিছুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ করে কালকে কে যেন ওকে ওদের বাসার সামনে আধামরা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়, এখন আয়াশ হসপিটালে আছে বাচে না কি মরে তার ঠিক নাই।ডক্টরেরা বলছে প্রচুর টর্চার করা হয়েছে না কি ওর উপরে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম।আয়াশের মতো এতো ধুর্ত একটা ছেলেকে কে কিডন্যাপ করে টর্চার করতে পারে,তাও আবার কিছুদিন ধরে। একটু পরে ভাইয়া কে বললাম,,
আয়াশ বলে নি যে ওকে কে কিডন্যাপ করেছিল?
ভাইয়া কিছুটা চিন্তিত মুখে বললো,, না রে, আয়াশ কিছু বলার অবস্থাতেই নেই।এক কাজ করি চল, তুই আর আমি গিয়ে হসপিটালে আয়াশ কে দেখে আসি,ও যতোই তোর সাথে প্রতারণা করে থাকুক, একটা সময় তুই ওকে ভালোবাসতি তো।
আমি ভাইয়ার কথায় প্রতিবাদ করলাম না, চুপ চাপ রাজি হয়ে গেলাম আয়াশ কে দেখতে যাওয়ার জন্য। একটু পরে হসপিটালে পৌঁছে গেলাম।
হসপিটালের সাদা বেডে হালকা নীল রঙের পোশাকে শুয়ে আছে আয়াশ।দেখেই মনে হচ্ছে অবস্থা খুব বেশিই খারাপ, মাথায় হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা,স্যালাইন চলছে। আমি মনে মনে বললাম,, আল্লাহ পাপিদের শাস্তি ঠিক দেয়, আমাকে ও বিনা দোষে শারীরিক যন্ত্রনার চেয়ে বেশি কষ্ট মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছিল। আল্লাহ তাই ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে দিয়েছে সেটা যেভাবেই হোক না কেন। কিছুক্ষণ ওখানে থাকার পর আমরা চলে এলাম, আসার সময় দেখলাম নেহা আই সি ইউ এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ লাল হয়ে গেছে ওর। আমি শুধু আস্তে করে বললাম ওকে,পাপীরা ঠিক শাস্তি পায় নেহা, দেখেছিস তো আয়াশ ওর কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে কে জানে হয়তো তুই ও পাবি, ভালো থাকিস। ভাইয়া আমার কথা শুনে হাসলো শুধু কিন্তু কিছু বললো না।

আফিফ স্নিগ্ধা কে দেখছে আর অবাক হচ্ছে, নিজের বয়ফ্রেন্ডের এমন অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও ও এতো টা স্বাভাবিক কি করে? দিব্বি হাসছে ঘুরছে আনন্দ করছে, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? এতোক্ষণে তো ওর কেঁদে কেটে অস্থির হওয়ার কথা অথচ ও তা না করে ও মজা করছে।আফিফের মাথা হালকা কাজ করা বন্ধ করে দিলো, বিষয় টা নিয়ে ও গভীর ভাবনায় পড়ে গেছে। যেভাবেই হোক ওকে জানতেই হবে যে স্নিগ্ধা এতো টা স্বাভাবিক কেন না কি ওকে দেখানোর জন্য নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে যাতে ও স্নিগ্ধা কে দুর্বল না ভাবতে পারে।

আমি ছোট ফুপির সাথে বসে গল্প করছিলাম তখন আফিফ কে আমার দিকে ওইরকম বন মানুষের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলাম। আমাকে কি দেখতে আজব প্রাণী লাগে না কি, একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ পরে আমি আমার রুমে চলে এলাম, রুমে এসে হৃদান ভাই কে একটা ফোন করলাম।হৃদান ভাই ফোন রিসিভ করার পর একটু কথা বলে ফোন কেটে দিয়ে জানালার পাশে নিজের ডায়েরী টা নিয়ে বসলাম। এই ডায়েরী তে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে, আয়াশের সাথে রিলেশনশিপ এ থাকা অবস্থায় ওকে নিয়ে মনের সমস্ত অনুভূতি গুলো এইখানে লিখে রাখতাম। ওকে নিয়ে যতো চিন্তা ভাবনা ছিল আমার সবকিছু এই খানে লিপিবদ্ধ আছে। একদিন এই গুলোর খুব দাম ছিল আমার কাছে কিন্তু আজ আর কোনো মূল্য নেই এইগুলোর। এইগুলো আয়াশের মতোই মূল্যহীন এখন আমার কাছে, ওকে নিয়ে যতো গুলো পৃষ্ঠায় লেখা ছিল সবগুলো পৃষ্ঠায় ক্রস চিহ্ন দিয়ে দিলাম।তার পর নতুন পৃষ্ঠায় হৃদান ভাই কে নিয়ে লিখতে শুরু করলাম,,,

৫ এপ্রিল ২০২২

তুমি কি জানো হৃদান, আমি তোমাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি,জড়িয়ে গেছি তোমার মায়ায়। আগে তোমাকে ভালোবাসবো এমন টা ভাবিনি কখনো, ভাবিনি তোমায় আমার প্রিয় মানুষ হিসেবে। সবসময় ভেবেছিলাম মামাতো ভাই হিসেবে কিন্তু যেদিন তুমি বললে তুমি আমাকে ভালোবাসো সেদিন থেকে আমার মনের মধ্যে তোমাকে নিয়ে একটা সুক্ষ্ম অনুভূতি জাগতে শুরু করেছে। না চাইলেও তোমার কথা ভাবছি, তোমাকে নিয়ে ভেবে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছি, নিজের অজান্তেই তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাকে বলবো না আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে না বলা থাকবে। তুমি নিজে থেকে বুঝে নিবে আমার ভালোবাসা,যেদিন তুমি সেটা বুঝতে পারবে সেদিন আমার কাছে খুব আনন্দের হবে কারণ আমার ভালোবাসার মানুষ টি আমাকে বুঝেছে। জীবনের প্রথম ভালোবাসা আমাকে ঠকিয়েছে কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে কখনো ঠকাবে না, তোমার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। তুমি ওর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানুষ যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তুমি কবে আসবে ফিরে, তোমার অপেক্ষায় দিন গুনছি এখন।

চলবে…………… ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-১০

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ১০
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

প্রতি মুহূর্তে মন তোকে কাছে চাইছে শুধু, মনের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম যন্ত্রনা হচ্ছে তোকে কাছে না পাওয়ার। তোর ওই স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় আমি জলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি তুই কি তা বুঝিস না?
আমি বড় বড় চোখ করে হৃদান ভাইয়ের কথা শুনছি, ওনার কথা শুনে শরীর হিম হয়ে আসছে আমার। হালকা ধাক্কা দিয়ে আমার থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম,,, কি যা তা বলতে শুরু করেছো তুমি?
একটু আগেই তো বড় মুখ করে বলেছিলে যে খালি বাসায় তুমি আমার সাথে মিস বিহেভ করবে না তাহলে এটা কি ছিল?

হৃদান ভাই একটু রেগে গিয়ে বলল,, এটা মিস বিহেভ ছিল তোর কাছে? আমি আমার মনের অনুভূতি গুলো বলছিলাম তোকে আর তুই বাজে ভাবে নিচ্ছিস কেন? আমি তো তোকে সেরকম কিছুই বলিনি।

আমি কিছু বললাম না আর, চুপ করে রইলাম। এমনিতেই আফিফের কথা গুলো মনে হচ্ছে বারবার,ও আমার কোন প্রিয় মানুষটাকে কেড়ে নেওয়ার কথা বললো কে জানে।ওর মতো একটা ছেলে যা ইচ্ছে করতে পারে,বড় মুখ করে তখন বলে এসেছি যে ওর হুমকি তে আমি ভয় পাই না কিন্তু এখন তো ভয়ে মরে যাচ্ছি। এইসব ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটতে লাগলাম, আমি কিছু বলছি না দেখে হৃদান ভাই আমাকে বললো,,,,,

তুই কি কিছু নিয়ে ভাবছিস স্নিগ্ধ? কোনো সমস্যা হলে বল আমাকে। এইভাবে দাঁত দিয়ে নখ কাটার কি মানে?
আমি একটু ভেবে নিয়ে থেকে বললাম,, আমার এখন খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে, বাসায় আইসক্রিম আছে কি?
হৃদান ভাই আমার কথা শুনে একটু কাচুমাচু হয়ে বললো,, না রে বাসায় তো আইসক্রিম নেই। তুই একটু অপেক্ষা কর আমি কাছেই দোকান আছে ওখান থেকে আইসক্রিম নিয়ে আসছি। বলে হৃদান ভাই আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না, তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আমি থামাতে গিয়েও কেন জানি থামালাম না,হৃদান ভাই চলে গেছে এখন শান্তি মতো আফিফের কথা গুলো নিয়ে ভাবতে পারবো এই ভেবে আর থামালাম না ওকে। আমার প্রিয় মানুষ বলতে বাবা মামনি আর ভাইয়াই,এরা ছাড়া আগে ছিল আয়াশ কিন্তু এখন এরাই আমার প্রিয় মানুষ।আফিফ কি তবে এদের কোনো ক্ষতি করবে?নাহ তা কি করে হয়, ওরা তো ওর কোনো কিছু করে নি,যদিও আমিও কিছু করি নি কিন্তু আফিফ সেটা মানছে না। আল্লাহ না করুক,আফিফ তো আমাদের বাসাতেই আছে যেন ওদের কিছু না করে।

প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো হয়ে গেছে এখনো হৃদান ভাই আসছে না দেখে আমার একটু চিন্তা হচ্ছে।হৃদান ভাই তো বললো কাছেই দোকান তাহলে এতো দেরি হওয়ার তো কথা না, এখনো আসছে না কেন। একটু পরে আমার ফোনে একটা এসএমএস এলো, আমি এসএমএস টা ওপেন করে দেখি সম্পূর্ণ ইংরেজি ক্যাপিটাল অক্ষরে লেখা আছে,,,,
TOMAR PRIO MANUS TAKE AMI PEYE GECI.EKHON CHOKHER PANI FELAR JONNO TOIRY THAKO.BYE BYE SNIGDHA..
এসএমএস টা দেখে চমকে উঠলাম আমি,আফিফের নাম্বার থেকেই এস‌এম‌এস টা এসেছে।ও কার কথা বললো আমাকে, আমার কোন প্রিয় মানুষটাকে সে পেয়ে গেছে। মাথা কাজ করছে না আর, বাসায় ফোন করলাম তাড়াতাড়ি করে। ফোন করে দেখি বাসায় সবকিছু ঠিক আছে, কারো কোনো কিছু হয় নি তাহলে কি আফিফ হৃদান ভাইয়ের কথা বললো আমাকে?সে কি হৃদান ভাই কে পেয়ে গেছে যে আমাকে এই কথা গুলো বললো,হৃদান ভাইয়ের আবার কোনো ক্ষতি করে দেবে না তো ও? তাড়াতাড়ি করে হৃদান ভাইয়ের নাম্বারে ডায়াল করলাম কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে নাম্বার টা।ওফ কি করবো আমি এখন বুঝতে পারছি না, কোনো এক অজানা শঙ্কায় বুক টা কেঁপে উঠছে আমার,হৃদান ভাইয়ের যেন কিছু না হয়। একটু পরেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল, আমি গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলাম, না জানি কি দেখবো দরজার বাইরে।আফিফ কে যদি দেখি তাহলে ওর মাথা ফাটিয়ে দেবো আমি যাতে ও হৃদান ভাইয়ের কোনো কিছু না করতে পারে।হাত সেই পজিশনে উঠিয়ে দরজা খুলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে যেই একশন করতে যাবো তখনি কে যেন আমার হাত ধরে ফেলল আর বললো,,,,
এই এই কি করছিস তুই? একটু দেরি হয়ে গেছে বলে মারিস না আমাকে, লাগবে তো আমার।
আমি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি হৃদান ভাই আমার সামনে এক হাতে আইসক্রিমের বক্স নিয়ে আরেক হাতে আমার হাত আটকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।হৃদান ভাই কে দেখে আমার ভিতরে যেন প্রান ফিরে এল, আমি ওনার হাত থেকে আমার হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,,,, এতো দেরি হলো কেন তোমার,আর ফোন টা বন্ধ ছিল কেন?
হৃদান ভাই আমাকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকে সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে বললো,,, কাছের যেই দোকান টা ছিল ওখানে আইসক্রিম পাইনি তাই আইসক্রিম পার্লারে যেতে হয়েছিল আমাকে।তোর জন্য আমি অনেক দূরে থেকে আইসক্রিম আনতে গিয়েছিলাম আর ফোনে চার্জ ছিল না তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আমি ওনার পাশে এসে বসে হাত থেকে আইসক্রিমের বক্স টা নিয়ে খুললাম। যদিও আমার তখন আইসক্রিম খেতে একটুও ইচ্ছে করছিল না কিন্তু মিথ্যে কথা বলে যখন ওনাকে এতো কষ্ট করিয়েছি তখন খেতে তো হবেই। আমি আইসক্রিম খাচ্ছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার খাওয়া দেখছেন, আমি খেতে খেতে ইশারায় জিগ্গেস করলাম, খাবে না কি?
উনি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আমি মুচকি হেসে আইসক্রিম খাওয়ায় মন দিলাম, এখন পুরোপুরি নিশ্চিন্ত আমি। বাসায় সবাই ঠিক আছে,হৃদান ভাইয়ের ও কিছু হয়নি তাই আমার ও কোনো চিন্তা নেই,আফিফ কোন হনুমান কে আমার প্রিয় মানুষ ভেবেছে কে জানে। একটু পর আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে আমি হৃদান ভাই কে একটা বড় করে ধন্যবাদ দিলাম। বেচারা কষ্ট করে এনে খাইয়েছে তাকে তো একটা ধন্যবাদ দেওয়াই উচিত আর সেই ধন্যবাদ হিসেবে আমি হাতের মধ্যে একটু আইসক্রিম ছিল ওইটুকু ওনার গালে মাখিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালালাম ওখান থেকে। মামির রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলাম। বাইরে এসে একটু থতমত খেয়ে গেলাম,হৃদান ভাই হাতে কি যেন একটা নিয়ে হাত পিছনে করে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে একটা শয়তানি হাসি লেগে রয়েছে।নাহ ওইদিন বেঁচে গিয়েছিলাম কিন্তু আজ হয়তো আর বাঁচবো না, আমাকেও কিছু একটা মাখাবে এখন। আমি তাড়াতাড়ি করে দুই হাতে মুখ ঢেকে বললাম,সরি আমাকে কিছু মাখিও না প্লিজ। তুমি তো জানো আমি একটু দুষ্টুমি করতে ভালোবাসি তাই তোমাকে আইসক্রিম মেখে দিয়েছিলাম, তুমি কিছু মাখিও না আমাকে। তাছাড়া তুমি তো ভালো ছেলে, আমার ভালো হবু বর তাই না?
হৃদান ভাই একটু হেসে বললো,,

আচ্ছা আমি ভালো ছেলে? তুই আমাকে তোর ভালো হবু বর বলে মানছিস?

হ্যা ম মানবো না কেন? কয়েক দিন পরেই তো তোমার আর আমার বিয়ে হবে আমি তো তাও মেনে নিয়েছি।

হৃদান ভাই আমার কথা শুনে পিছন থেকে হাত বের করে এক জোড়া নূপুর আমার সামনে ঝুলিয়ে বললো,,, আমি তো তোর জন্য এই নূপুর জোড়া এনেছিলাম আসার পথে ভাবছিলাম তুই খুশি হবি। কিন্তু এখন তো আমি এখানে এসে নতুন কিছু জানতে পারলাম, তুই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছিস।
আমি জিভে কামড় দিলাম, কিছু না দেখেই ফটফট করে এইসব কেন যে বলতে গেলাম আমি?

চলবে……….. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৮ও০৯

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৮&৯
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

আপুই কেমন আছো তুমি,
পিছন থেকে এমন একটা কথা শুনে আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি আমার ছোট্ট ফুপির মেয়ে ইলিয়ানা দাঁড়িয়ে। আমাকে ঘুরতে দেখে দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,,, আমাকে ভুলে গিয়েছিলে তাই না আপুই?
আমি ইলিয়ানা কে কোলে তুলে নিয়ে বসে বললাম,,
নাহ আমি কি আমার এই পিচ্চি আপুই টাকে ভুলে যেতে পারি? আমি তো তোমাকে খুব মিস করছিলাম ইলি।
ইলিয়ানা মুখ টা কালো করে বললো,, মোটেও না তুমি আমাকে মিস করছিলে না।যদি মিস করতে তাহলে আমাদের বাসায় যেতে আমার সাথে দেখা করতে কিন্তু তুমি যাও নি হুম।

ঠিক তখন কোথা থেকে যেন আফিয়া ওখানে চলে আসলো। আমার কোলে ইলিয়ানা কে দেখে মনে হয় আফিয়ার হিংসে হলো খুব, কাছে এসে ইলিয়ানা কে আমার কোল থেকে নামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,,,
তোদের বাসায় যায় নি বেশ করেছে। তুই আমার আপুর কোলে উঠেছিস কেন, এক্ষুনি নাম বলছি এটা আমার আপু তোর না।
আমি আফিয়া কে থামিয়ে দিয়ে বললাম,, এমন করে না আফিয়া।ও আমাদের বাসায় মেহমান হয়ে এসেছে তাছাড়া ও ছোট ফুপির মেয়ে। তুমি ওর সাথে এই বিহেব করছো কেন?
আফিয়া আমার কথায় কাঁদো কাঁদো চোখে বললো,, তুমি এখন আমাকে ভুলে ইলিয়ানা কে আদর করছো তাই না আপু,যাও তোমার সাথে কোনো কথা নেই আমার তুমি পঁচা আপু, ভালো আপু না।
আফিয়া চোখ মুছে দৌড়ে এখান থেকে চলে গেল। আমি ওর ব্যাপার স্যাপার কিছুই বুঝতে পারলাম না, ইলিয়ানা কে কোলে নিতে দেখে ও এমন করলো কেন কে জানে। আফিয়া চলে যাওয়ার পর ইলিয়ানা আমার গাল হালকা করে টানতে টানতে বললো,,
জানো আপুই আমার সাথে মাম্মাম পাপাই আর আফিফ ভাইয়াও এসেছে। আমি আফিয়ার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে একটু করে মুচকি হাসলাম আর বললাম,, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও অনেক টা জার্নি করে এসেছো তো।

তুমি যাবে না আপুই?

আমার একটা কাজ আছে সেটা শেষ করে আসছি, তুমি যাও কেমন?
ইলিয়ানা হেসে বললো ঠিক আছে আপুই, তার পর আমার কোল থেকে নেমে বাসায় চলে গেল। ইলিয়ানা চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমি একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেললাম।যেই বিপদের মুখোমুখি আমি কোনদিন হতে চাই নি সেই বিপদ নিজে থেকে এসে আমার সামনে ধরা দিয়েছে।ফুপিরা যতো দিন আমাদের বাসায় আছে ততদিন পর্যন্ত আমার এই বাসায় থাকাটা সেইফ নয়। কারন আমার বিপদ হচ্ছে ফুপির ছেলে আফিফ। আগের সেই ভয়ানক স্মৃতি গুলো আবার জেগে উঠেছে মনের মধ্যে,নাহ আমি সেই স্মৃতি গুলো শুনে করতে চাই না। আমি এই কয়দিন মামার বাসায় গিয়ে থাকবো, ওখানে হৃদান ভাই আছে, আমার কোনো ভয় নেই। আমার কোন ক্ষতি হৃদান ভাই হতে দেবে না এটা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। এখানে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না, উঠে বাসার দিকে যেতে লাগলাম।তখন আফিফ বাসা থেকে বের হচ্ছিল, আমাকে দেখে একটু থমকে গেল, মুখের মধ্যে একটা বাঁকা হাসির রেখা টেনে আমাকে বললো,,, ভালো আছো তো স্নিগ্ধা?
আমি যার সামনে পড়তে চাইছিলাম না, ঘুরে ফিরে প্রথমে তার সামনেই আমাকে পড়তে হলো। ওর এই হাসি সুবিধার মনে হচ্ছে না, একটু ভয় পেয়ে গেলাম আমি। কাঁপা কাঁপা গলায় আস্তে করে বললাম,,হ্যা আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?

আফিফ মনে হয় আমার দ্বিতীয় কথা টা শুনতে পেলো না, তাই বললো,, এতো দিন ভালো থাকার জন্য অভিনন্দন তোমাকে স্নিগ্ধা, কিন্তু এখন আর ভালো থাকতে পারবে না কারণ আমি এসে গেছি এখন। তোমার জীবনের ভালো থাকা খারাপ থাকা সব কিছু এখন আমি ডিসাইড করবো। আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসছি বলে আফিফ আমার সামনে থেকে চলে গেল। আমি ওকে দেখে তো এমনিতেই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এখন ওর কথা শুনে আরো বেশি ভয় করতে লাগলো। একটা সাইকো এই আফিফ,যেটা ভাবে ঠিক সেটাই করে,ওর যেটা চাই সেটা ও যেভাবেই হোক আদায় করে তবে ছাড়বে। আমি তাড়াতাড়ি করে বাসায় এসে রুমে চলে এলাম। ফুপি আর মামনি আমাকে ডাকছিল ওদের সাথে গল্প করার জন্য কিন্তু আমি মাথা ব্যথা করছে এই আল দিয়ে চলে এসেছি। রুমে এসে দরজা টা বন্ধ করে ধীরে ধীরে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম, মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমার। দুই বছর আগের সব কিছু এখন আবার মনে পড়ছে,,,,,,,,,
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার তাই হাফ কলেজের পর বাসায় ফিরছিলাম একা একা। সাথে নিয়ে আসা গাড়ি টা খারাপ হয়ে গেছে তাই ড্রাইভার ওটাকে ঠিক করতে ম্যাকানিকের কাছে নিয়ে গেছে। হেঁটে হেঁটে আসতেছি তখন হঠাৎ দেখি রাস্তার পাশে কিছু ছেলে মিলে একটা মেয়ে কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন ওরা মেয়ে টাকে ডিস্টার্ব করছে। আমি এগিয়ে গেলাম ওদিকে, কাছাকাছি গিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে আর ওদের কে বলছে ওরা যেন ওকে ছেড়ে দেয়। আমি এই ব্যাপার দেখে চুপি চুপি আমার ফোন দিয়ে পুলিশ কে ফোন করে এখানে আসতে বলে পাশেই একটা গাছ ছিল তার আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। একটু পরে যখন পুলিশ আসছিল, তখন পুলিশের গাড়ির শব্দ পেয়ে ওরা সবগুলো পালিয়ে যায়। ছেলে গুলো পালানোর সময় আমি একটা ছেলে কে দেখে চমকে উঠলাম, অবাকের চরম সিমায় পৌঁছে গেছি আমি কারন ছেলে টা আর কেউ নয় ছোট ফুপির ছেলে আফিফ।আফিফ ও আমাকে দেখে নিয়ে ছিল। আমি ওখানে আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম, মাথায় বার বার একটা কথাই ঘুরছে আফিফ একটা বাজে ছেলে। রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে, ছিঃ আমি কখনো এটা ভাবিও নি যে আফিফ এমন একটা ছেলে।

সন্ধ্যার দিকে আমি রুমে বসে নোটস গুলো দেখছিলাম তখন আফিফ আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার পাশে এসে বসল। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম আফিফ কে এমন করে আসতে দেখে,একে তো ও একটা বাজে ছেলে তার উপর ও আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করেছে কেন? আগে ও আমার সাথে ঘুরতে গেলেও কোনো ভয় লাগতো না কিন্তু এখন ও বাসায় আমার রুমে এসেছে এতেই ভয় লাগছিল। একটু রাগি গলায় বললাম,,

কি ব্যাপার আফিফ, তুমি আমার রুমে এইভাবে দরজা বন্ধ করে এসেছো কেন?

তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে স্নিগ্ধা।

কি দরকারি কথা?আর আমার কোনো দরকারি কথা শোনার ইচ্ছা নেই, তুমি যাও এখান থেকে।

তুমি শুনতে না চাইলেও তোমাকে শুনতে হবে।আজ তুমি যা দেখেছো সেটা মন থেকে মুছে ফেলো, কাউকে বলবে না যেন ঐ কথা টা।

আমি আফিফের কথা শুনে ওর সাথে তর্ক জুড়ে দিলাম, কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর ও এমন একটা কথা বললো যেটা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। বললো,যদি আমি কাউকে ওর ব্যাপারে কিছু বলি তাহলে ও আমার এমন অবস্থা করবে যাতে আমি আর কখনো কাউকে কিছু বলার অবস্থায় না থাকি।ওর মতো একটা ছেলে আমার কি অবস্থা করতে পারে সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি কিন্তু আমি ওর হুমকি তে ভয় না পেয়ে পরদিন ফুপি কে সবকিছু বলে দিলাম। ওনার ছেলে যে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করে একটা জেনে ফুপি খুব রেগে গেলেন।আফিফ কে অনেক বকাঝকা করেন তিনি,এর কিছুদিন পর আফিফের নামে একটা মেয়ে রেপ কেস করে যার জন্য ওকে জেলে যেতে হয়। পরে কিভাবে জানি ছাড়াও পেয়ে যায়, কিন্তু আফিফের ধারণা ও আমার জন্য জেলে গেছে তাই জেল থেকে বের হওয়ার পর আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারে নি।তার কারণ ও ছাড়া পাওয়ার কয়েক দিন পরেই ফুপা ওকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন,আর আজ যখন ও ফিরেছে তখন সোজা আমাদের বাসায় এসেছে।

বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল। উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে দেখি মামনি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দরজা খুলতে দেখে মামনি বললো,, স্নিগ্ধা তুমি কি করছো? বাইরে আফিফ কখন থেকে খুজছে তোমাকে,যাও গিয়ে ওর সাথে কথা বলো।
আমি মামনির কথা শুনে একটু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,, মামনি আর কয়েক দিন পর তোমার মেয়ের বিয়ে। এখন সে তার হবু বরের সাথে কথা না বলে অন্য ছেলের সাথে কেন কথা বলবে?

আরে তা নয়।আফিফ তো তোমার ভাইয়ের মতোই তাই না। তুমি ওর সাথে কথা বললে এমন কিছু হবে না, তাছাড়া ও আফিফ এতো দিন পরে দেশে ফিরেছে। একটু ভালো মন্দ কথা তো বলতেই পারো তুমি।

আমি পানসে মুখ করে বললাম,, আমার এখন আফিফের সাথে কথা বলার মতো মুড নেই মামনি তুমি যাও।

ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন আফিফের উদয় হলো, মামনির পিছনে থেকে বেরিয়ে এসে বললো,,, চিন্তা করছো কেন স্নিগ্ধা। তোমার মুড নেই ভালো কথা, আমি মুড তৈরি করে দিচ্ছি।এসো আমার সাথে এই বলে আফিফ প্রায় এক রকম টানতে টানতে আমাকে বাসার বাইরে নিয়ে এলো। আমি ভিতরে ভিতরে ভয়ে কাপছি, আল্লাহ না করুক আফিফ আমার সাথে যেন কোনো মিস বিহেভ না করে। বাসার বাইরে বাগানের শেষ মাথায় নির্জন জায়গায় নিয়ে এলো আমাকে, তখন হয়তো ও নির্জন জায়গা খুঁজতে বের হয়েছিল। ওখানে নিয়ে এসে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,, স্নিগ্ধা তুমি হয়তো আন্দাজ করতে পারছো আমি তোমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছি।

আমি ভয় পাওয়া চোখে ওর দিকে তাকালাম শুধু, কিন্তু কিছু বললাম না।
আমার চাহনি দেখে আফিফ একটু হেসে বললো,, একদম ঠিক ভেবেছো আমি তোমাকে এখানে তোমার ভুলের শাস্তি দিতে নিয়ে এসেছি। মিথ্যে মামলা করে মিথ্যে কেসে আমাকে ফাঁসিয়ে তুমি জেলে পাঠিয়ে ছিলে তাই না? এখন আমি তোমাকে তোমার মিথ্যে নাটকের শাস্তি দেবো।

আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,, আমি কিছুই করিনি তোমার সাথে। এমন কি তোমার নামে কে কেস করেছিলো আমি তো সেটাও জানি না, তুমি ভুল ভাবছো আমাকে।হ্যা আমি হয়তো ফুপি কে তোমার ওই দোষের কথা বলে দিয়েছিলাম কিন্তু তার মানে তো এটা নয় যে আমি তোমাকে মিথ্যে মামলায় ফাসাবো।আর তোমার মতো ছেলে কে ফাঁসানোর দরকার পরে না কি, তুমি তো এমনিতেই খারাপ একটা ছেলে।কত মেয়ে কে তুমি রেপ করেছো কে জানে, ওই মেয়েটি কেও হয়তো করেছিলে তাই ও তোমার নামে কেস করেছে।

আফিফ আমার কথা শুনে প্রায় চেঁচিয়ে বললো,,শাট আপ। একদম চুপ, একটা কথাও যেন মুখ থেকে আর বের না হয় তোমার। আমার চরিত্রের সাফাই তোমাকে গাইতে হবে না, আমি তোমাকে যে কারণে এখানে নিয়ে এসেছি তুমি সেটা শোনো।

আমি ওর ধমক শুনে একটু কেঁপে উঠলাম,আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে ওর কথায় হ্যা বললাম।আফিফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তার পর বললো,,
তোমাকে আমি একটা শর্তে ক্ষমা করে দেবো যদি তুমি আমার শর্ত টা মানো তাহলে আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না।
আমি একটু ভয় পাওয়া গলায় বললাম,,ক..কি শর্ত তোমার,বলো?

আফিফ উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,, তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিবো যদি তুমি আমাকে বিয়ে করো তাহলে।
আমি আফিফের কথা শুনে চমকে উঠলাম, এই এইটা কি বলছে আফিফ। আমি ওকে বিয়ে করব মানে টা কি, ওর মতো একটা বাজে ছেলে কে আমি বিয়ে করবো এটা ও ভাবছে কি করে?
আমি কিছু বলার আগেই আফিফ আবার বললো,,, আমি জানি যে তোমার হৃদানের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে আর তুমিও ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো। কিন্তু কোনো ব্যাপার না, তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও বাকি কিছু আমি হ্যান্ডেল করে নেবো তুমি কিচ্ছু চিন্তা করোনা।
এতক্ষণ ধরে আমার আফিফ কে ভয় লাগছিল কিন্তু এখন ওর উপর রাগ হচ্ছে, প্রচুর রাগ হচ্ছে আমার। রাগে গজগজ করতে করতে বললাম,,আর যদি বিয়ে না করি তাহলে তুমি কি করবে আমার?
আফিফ আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে একটু হেসে বললো,, তাহলে তোমার প্রিয় মানুষটাকে আমি কেড়ে নেবো। আমার জীবনে তুমি জেলে ঢুকার কলঙ্ক লেপে দিয়েছিলে আর আমি তোমার জীবনে কষ্ট লেপে দিবো।
আমি হাসলাম, তার পর বললাম,,,যা খুশি করতে পারো তুমি, আমি তোমাকে বিয়ে করব না।

গুড,ভেরি গুড। এবার শুধু দেখতে থাকো আমি কি করি তোমার সাথে, ওকে বেইবি?
আমি একটা ঝারি দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। বাসায় এসে মামনি কে বললাম, মামনি আমি একটু মামার বাসায় যেতে চাইছি,যাবো কি?
মামনি আমাকে যেতে দিলেন,বাধা দিলেন না আর। আমি একটু পরে রেডি হয়ে মামার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।ড্রাইভার আমাকে মামার বাসার সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল, বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি ভেতরে যাবো কিভাবে? কালকে হৃদান ভাই কে আমি যা বলেছি তার জন্য এখন হৃদান ভাই যদি আমাকে কিছু বলে তখন কি হবে আমার? ধুর যা হওয়ার হবে এতো কিছু না ভেবে আমি বাসার ভিতরে ঢুকলাম, বাসায় ঢুকেই প্রথমে হৃদান ভাইয়ের সামনে পড়লাম আমি।হৃদান ভাই তখন সোফায় বসে টিভি দেখছিল, হঠাৎ করে আমাকে দেখে একটু চমকে উঠলো সে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,, স্নিগ্ধ ম্যাডাম হঠাৎ আমার বাসায় যে?
আমি কিছু না বলে ওর পাশে গিয়ে বসে বললাম,,মামী কোথায়,ডাকো তাকে।

হৃদান ভাই একটু মন খারাপ করার ভান করে বললো,, কেন মা কে কি দরকার এখন? তুই আমার কাছে এসেছিস আমার সাথে একটু কথা বল,আর এমনিতেও মা এখন বাসায় নেই। উনি উনার বান্ধবীর বাসায় গেছেন কাল কে, দুই দিন পর ফিরবেন তিনি।

আমি বললাম, আমি তো তোমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম কিন্তু মামীই তো বাসায় নেই তাহলে আমি থেকে কি করবো এখন। আচ্ছা আমি এখন যাই হ্যা বলে বসা থেকে উঠে দাড়ানো মাত্রই হৃদান ভাই আমার হাত ধরে টেনে আবার ওর পাশে বসিয়ে দিলো।তার পর বললো,, এতো যাওয়ার শখ কেন তোর?মা নেই তো কি হয়েছে, আমি তো আছি না কি? আমাকে ওইরকম ভাবিস না যে খালি বাসায় আমি তোর সাথে কোনো রকম মিস বিহেভ করবো?
আমি একটু রাগি গলায় বললাম,,
আমি কি তোমাকে বলেছি এই রকম কিছু বলেছি তোমাকে?

না বলিস নি। কিন্তু তোর ভাব ভঙ্গিতে তো তাই বুঝা যাচ্ছে।
আমি কটমট করে তাকিয়ে বললাম,,
কি বললে তুমি?

হৃদান ভাই আমার কানের কাছে এসে স্লো ভয়েজে বললো,, বললাম তোকে ছাড়া আমি আর এক মুহূর্তও থাকতে পারছি না।

চলবে………… ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৭

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৭
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

তা তোমার অভিমান হয়েছে আমার এই কথার জন্য বুঝি? আচ্ছা ঠিক আছে আমি সরি বলছি ওকে। এবার বলো কেমন আছো তুমি?
হৃদান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন তোকে দেখে আমি ভালো আছি। তুই এখানে একা একা বসে কি করছিলি, কেউই তো নেই এখানে।

আমি হৃদান ভাইয়ের কথার কোন উত্তর দিলাম না, ভাবছি হৃদান ভাই কে কথা টা বলা ঠিক হবে কি না।যদি ওনাকে বলি আমার আর ভাইয়ার ব্যাপারে সব কিছু তাহলে তো হৃদান ভাই নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে। আমাকে কিছু বলতে না দেখে হৃদান ভাই আবার জিজ্ঞাসা করল কিরে স্নিগ্ধ কিছু বলছিস না কেন?
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম,,

আসলে হৃদান ভাই তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাইছিলাম, বলবো কি।

হ্যা বল, এতে এতো আমতা আমতা করার কি আছে? তুই আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি।

হৃদান ভাইয়ের সম্মতি পেয়ে আমি আমার সাথে আয়াশ আর নেহা যা যা করেছে তার সব কিছু বললাম সাথে ভাইয়াকে ও কিভাবে ঠকিয়েছে ওরা সেটাও বললাম।তার পর বললাম,,
প্লিজ হৃদান ভাই তুমি আমাকে সাহায্য করবে? ওই দুই বেইমান কে উপযুক্ত শাস্তি দিতে তুমি আমাকে সাহায্য করো। নাহলে ওরা যেই অন্যায় টা আমার আর ভাইয়ার সাথে করেছে সেটা তো অন্য কারো সাথেও করতে পারে টাকার জন্য।ওরা যা করেছে তার শাস্তি তো ওদের পেতেই হবে, দুটি নির্দোষ মানুষকে ঠকিয়েছে ওরা সেটা তো ঠিক নয় বলো।

এতক্ষণ ধরে হৃদান ভাই চুপ চাপ আমার কথা শুনছিলো। সেদিন হৃদান বুঝতে পেরেছিল যে আয়াশ ছেলে টা সুবিধার নয় কিন্তু ও যে এতো টা নিচ এটা মাথায় আসে নি তার। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হৃদান ভাই বললো,,
ঠিক আছে তুই কোন চিন্তা করিস না। ওদের কে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় সেটা আমি দেবো ওদের, এতো বড় সাহস ওদের যে আমার স্নিগ্ধ কে কাঁদায়।এর শাস্তি তো ওদের পেতেই হবে নাহলে আমি শান্তি পাবো না। তুই কিছু চিন্তা করিস না আর, just wait and see আমি কি করি ওদের সাথে।
আমি মুচকি হাসলাম শুধু, আমাকে আর কিছু করতে হবে না,ওদের কে যা শাস্তি দেওয়ার সেটা হৃদান ভাই নিজেই দেবে।

রাত দশটার দিকে রুমে জানালার পাশে চুপচাপ বসে আছি আমি, আপাতত কিছু ভালো লাগছে না আমার। একটু আগে হৃদান ভাই মামনির সাথে দেখা করে চলে গেছে, মামনি ওনাকে থাকতে বলেছিল কিন্তু ওনার নাকি কি এক আর্জেন্ট কাজ আছে সেজন্য থাকতে পারবে না। সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে এখন,মন না চাইলেও হৃদান ভাইয়ের কথা মাথায় আসছে। ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না, কি কারণ সেটা নিজেও বুঝতে পারছি না। আচ্ছা আমি কি ওনার প্রেমে পড়ে গেছি না কি ওইরকম কথাবার্তা শুনে,নাহ এটা কি করে সম্ভব। আমি তো কখনো ওনাকে নিয়ে এইসব কিছুই ভাবিনি তাহলে প্রেমে কি করে পড়বো আর প্রেমে পড়া ভালো কথা নয় এতে পা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কি জানি এক টানে ওনাকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ, ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব, মনের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম অনুভূতি কাজ করছে তার জন্য। উনি চলে যাওয়ায় হালকা খারাপ লাগছে জানি না কেন,কই আয়াশ কে নিয়ে তো এরকম কোন অনুভূতি হয় নি আমার কোনো খারাপ লাগা কাজ করে নি ওর জন্য। আজকাল কি যে হচ্ছে আমার কিছুই বুঝতে পারি না।
এইসব ভাবতে ভাবতে জানালার পাশে বসেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙল আমার,আড়মোড়া ভেঙ্গে পাশ ফিরে শোয়ার সময় ধপ করে চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে গেলাম।আউচ কোমর টা গেল রে, ভালো করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি মেঝেতে বসে।তার মানে সারারাত এই ভয়ানক জানালার পাশে ঘুমিয়েছি। এটা ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো আমার,বাপস্ ভাগ্যিস আমার রাতে ঘুম ভাঙেনি নাহলে চিৎকার শুরু করে দিতাম। একটু কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম, কোমরে ভালই ব্যাথা পাইছি আজ।ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের বাইরে গেলাম। বুড়ির মতো কোমর ধরে ধরে নিচে নামতে দেখে ভাইয়া মামনি কে বললো,,,

মামনি বাসায় কি নতুন বুড়ির আমদানি হয়েছে না কি?এই সকালে বুড়ির দেখা পেলাম যে।
ভাইয়ার কথা আমার উপরে জাদুর মতো কাজ করলো, কোমরের ব্যাথা সব উধাও হয়ে গেছে। ভাইয়ার কাছে গিয়ে ইচ্ছে মতো কিছুক্ষণ মারলাম, আমাকে বুড়ি বলা হুহ। মামনি এসে আমাকে থামিয়ে বললো,,কি ব্যাপার স্নিগ্ধা এই সকাল বেলা তোমরা ঝগড়া শুরু করেছো কেন?

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,, ঝগড়া কোথায় করলাম মামনি? আমি তো তোমার ছেলে কে মারছিলাম ঝগড়া করিনি তো।

সেটাই করছিলে কেন?

ও আমাকে বুড়ি বলেছে কেন? তোমার মেয়ে কি এই বয়সেই বুড়ি হয়ে গেছে।
ভাইয়া আমাদের কথার মাঝখানে বললো,, তোকে বুড়ি বলবো না তো কি বলবো? বুড়ির মতো কোমর ধরে হাটছিলিস তাই বুড়ি বলেছি।

আমি আর মুখ খুললাম না, মুখ খুললে বিপদ আছে আমার কপালে।যদি ভাইয়া শোনে যে আমি চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি তাহলে সারাদিন আমাকে এই ব্যাপার নিয়ে পঁচাবে সেটা আমি চাই না। চুপ চাপ গিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে মামনি কে ব্রেকফাস্ট দিতে বললাম। ভাইয়া আমার পাশে বসে বললো,,কি রে কাল কে হৃদানের সাথে এতোক্ষণ ধরে কি গল্প করলি?
আমি ভাইয়ার দিকে চোখ পাকিয়ে বললাম,, বোনের প্রেম কাহিনী শোনার এতো সখ কেন?
ভাইয়া একটু থতমত খেয়ে বললো,, না মানে তুই তো সব কিছু বলিস আমাকে তাই এইটাও বলবি ভাবলাম।
আমি একটু মুখ কালো করে বললাম,,

ওনার সাথে কোনো গল্প করিনি আমি, ঝগড়া করছি।

কি বললি তুই? আমার হবু বোনের বরের সাথে তুই ঝগড়া করছিস কেন।

কি আর করবো বলো? দুই দিন যেতে না যেতেই আবার বাসায় এসে হাজির হয়েছে তাই।
ভাইয়া কিছু টা রাগি গলায় বলল,,
নাহ তোর সাথে আর পারা যাবে না, তুই বদমাইশের হাড্ডি ওই হাড্ডিই থাকবি।
আমি দাঁত বের করে হাসলাম, মিথ্যা কথা বলেছি ভাইয়া কে তার পরেও ধরতে পারে নি এটা ভেবে মজা লাগছে আমার। একটু পরে ব্রেকফাস্ট শেষ করে বাগানের দিকে এলাম। গোলাপ গাছ গুলোতে অনেক গোলাপ ফুল ফুটেছে সুন্দর লাগছে খুব গাছ গুলো। গাছের পাশে একটা বেঞ্চে বসে একটা গোলাপ ফুল হাতে নিলাম। হালকা লাল রঙের ফুল, অদ্ভুত মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে ফুল থেকে।ফুলটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি আচ্ছা এই ফুলের মতোই যদি মিষ্টি হয় হৃদান ভাই তাহলে কেমন হয়। কিন্তু উনি তো আমাকে তুই ছাড়া আর কিছু বলেনই না, যেখানে একটু ভালো করে কথাও বলতে পারেন না সেখানে এই এতো সুন্দর একটা ফুলের মতো মিষ্টি হওয়া দূরে থাক। আমার সব ধ্যান ধারণা এখন হৃদান ভাই জুরে, উনাকে নিয়ে এখন যত খুশি ভাবতে হবে নাহলে বিয়ে টা করবো কি করে। আস্তে আস্তে ভাই ডাকা বন্ধ করে দিতে হবে, কিন্তু ভাই না ডাকলে কি বলে ডাকবো নাম ধরে? নাম ধরে ডাকলে তো বয়স্ক মহিলারা আমাকে বেয়াদব মেয়ে বলবেন। এই বলবেন যে আমি স্বামীর নাম ধরে কেন ডাকছি, ওনারা যদি কোন ভুল ধরে তাহলে আমি ওদের কে বলবো যেন আমাকে বলে দেয় আমি উনাকে কি বলে ডাকবো?

চলবে…………. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৬

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৬
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

আমি শান্ত গলায় বললাম, ভাইয়া নেহা একজন খুব ভালো একটা নাটক বাজ।নাটক করতে ও ভালোই জানে,ও এখনো তোমার সাথে এই কারণে রিলেশন রেখেছে যাতে ও তোমার থেকেও টাকা আদায় করতে পারে। আমার জীবন তো নষ্ট করেই ছে প্লাস তোমার জীবন টাও শেষ করে দিবে এই মেয়েটা মিথ্যে নাটক করে।
ভাইয়া আমার কথার মাঝে হঠাৎ করে বললো,,দাড়া দাড়া এক মিনিট, নেহা আমাকে তখন বলেছিল যে ওর কিছু টাকার খুব দরকার এখন, আমি যেন ওকে বিকাশে কিছু টাকা দিয়ে দেই। আমি ওকে টাকাটা দিতেই যাচ্ছিলাম তখন তোকে এখানে বসে থাকতে দেখলাম।তোর কথা শুনে আমার কাছে এখন সবটা ক্লিয়ার, এখন বুঝতে পারছি নেহা কেন এতো ঘনঘন টাকা চাইতো আমার কাছে। ওহ শিট, কেন আমি ওর এই ধান্দাবাজি বুঝতে পারি নি,মন প্রাণ দিয়ে ভালো বেসেছি ওকে আর ও আমার সাথে নাটক করেছে।
তার পর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
জানিস স্নিগ্ধা, আমি নেহা কে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছি, হাজারো স্বপ্নের জাল বুনেছি ওকে নিয়ে। সুন্দর একটা জীবন আমাদের দুজনের এই স্বপ্ন টা আমি সবসময় দেখতাম আর ওকেও বলতাম আমার স্বপ্নের কথা।ও শুনে শুধু হাসতো কিছু বলতো না এবার আমি বুঝতে পারলাম ও কেন আমার কথা শুনে হাসতো।
আমি ভাইয়ার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম, একদম স্বাভাবিক লাগছে তাকে। অবাক হয়েই বললাম,,, ভাইয়া তোমার খারাপ লাগছে না নেহার এতো বড় একটা সত্যি জেনে?যাকে এতো ভালোবাসলে সে তোমাকে এই ভাবে ঠকালো তোমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করলো তার জন্য কি তোমার একটুও খারাপ লাগছে না?
ভাইয়া আমার কথা শুনে আলতো হাসলো তার পর বললো,, না খারাপ লাগছে না। বরং আমার ভালো লাগছে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম,কি বলছে ভাইয়া। গার্লফ্রেন্ড ধোঁকা দিয়েছে এটার জন্য ভাইয়ার খারাপ না লেগে ভালো লাগছে মানে কি বুঝতে পারলাম না।প্রায় হালকা চেঁচিয়ে উঠে বললাম,

কি বললে? তোমার ভালো লাগছে, তার মানে তুমি চাইতে নেহা তোমাকে ধোকা দিক, তোমার সাথে নাটক করুক?

না রে আমি সেটা কেন চাইবো? আমার এই ব্যাপার টা ভেবে ভালো লাগছে যে আমি আরো বেশি নেহার মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ার আগেই ওর সব কিছু জানতে পেরে গেছি।যদি আরো বেশি ওর মায়ায় জড়িয়ে যেতাম আরো বেশি ভালো বেসে ফেলতাম ওকে তাহলে ওর ব্যাপারে এইসব কিছু জানতে পারলে খুব কষ্ট হতো আমার, মানতে কষ্ট হতো ব্যাপার টা। তবে আফসোস হচ্ছে আমার,যাকে এতো ভালোবাসলাম নিজের সব কিছু ভাবলাম যাকে তাকেই চিনতে পারলাম না আমি। ভালো মুখের আড়ালে যে একটা কুৎসিত রূপ লুকিয়ে আছে সেটা বুঝতে পারলাম না আমি। সেইজন্য কষ্ট হচ্ছে আমার।

নেহার থেকে পাওয়া ধোকায় তুমি এতো টুকুও কষ্ট পাচ্ছো না? এতক্ষণে আমি বা অন্য কেউ হলে হয়ত কেঁদে সারা করতো আর তুমি কি না এতো টা স্বাভাবিক?

কেন তুই কি ভাবছিস আমি ন্যাকার মতো কাঁদবো? দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াবো না কি ও এমন কেন করেছে তাকে সেটা জিজ্ঞেস করবো?যদি সেটা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল ভাবছিস আমি সেটা কখনো করবো না। আমি অন্য কারো মতো প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেঁদে কেটে দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়ানোর মানুষ নই, আমি স্ট্রং।ও আমাকে ঠকিয়েছে ভালো করেছে খুব ভালো করেছে,আই উইশ ও আরো ঠকাক আমাকে, ভবিষ্যতে ও একদিন চরম ভাবে ঠকে যাবে আমার কিছু বলার বা করার দরকার পড়বে না। তুই এইসব বাদ দে আর আমাকে ছবি টা ফেরত দে, বলে ভাইয়া আমার হাত থেকে নেহার ছবি টা নিয়ে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো। আমি শুধু হা করে তাকিয়ে দেখছি আর ভাইয়ার কথা কানে ঢুকাচ্ছি।ওর কথা আমার এক কান দিয়ে ঢুকছে আর আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে ওইরকম ভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো,, মুখ টা বন্ধ কর নাহলে মশা সব হজম করে নিবি।
ভাইয়া দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে স্টাইল করে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল আমি মুখ বন্ধ করে একটা বিষম খেলাম।নাহ ব্যাপার টা ঠিক লাগছে না আমার,সদ্য ছ্যাকা খাওয়া মানুষ টা এতো স্বাভাবিক কি করে? না কি অতিরিক্ত দুঃখে মানুষ যে বলে অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর তাই হইছে। না না কি ভাবতেছি আমি, আমার ভাই পাথর হবে কেন? এই নেহা আমাকে তো ধোঁকা দিয়েছে দিয়েছেই সাথে আমার ভাইকেও ধোঁকা দিয়েছে এই মেয়েটা কে তো আমি আর ছাড়বো না। ওকে আমি শাস্তি দিয়ে তবে ছাড়বো একে তো আমার সাথে নাটক করেছে তার উপর আমার ভাইকেও ও জড়িয়েছে। ভাইয়া কে দেখে যতো টা স্বাভাবিক লাগছে ততো টা স্বাভাবিক হয়তো ও নয়, আমার সামনে চোখের পানি ফেলতে চায় না এই কারণেই হয়তো আমাকে ও মিথ্যা কথা বলেছে।

সামনের দিকে তাকিয়ে না থেকে একটু পাশ ফিরে তাকালেও তো পারিস স্নিগ্ধ?
আমি এই টাইপের কথা শুনে ঘুরে তাকালাম, তাকিয়ে চোখ কপালে উঠেছে আমার।হৃদান ভাই পানসে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝলাম না কিছু, এই লোক টা মাত্র দুই দিন আগেই এই বাসা থেকে গেছে আর আজ আবার চলে এসেছে। অতিরিক্ত অবাক হওয়ার কারণে মুখ ফসকে বলেই ফেললাম,,,

তুমি এতো তাড়াতাড়ি আবার চলে এলে হৃদান ভাই? দুই দিন ও তো হয় নি তুমি গেছো।

কেন আমি কি আমার হবু শ্বশুর বাড়িতে আসতে পারি না না কি?তোর এতে বাঁধছে কেন।

না তুমি আসতেই পারো কিন্তু আমাকে স্নিগ্ধ বলে ডাকছো কেন? আমার নাম তো স্নিগ্ধা।
হৃদান ভাই আমার পাশে বসে বললো,,
সে যাই হোক আমি তোকে স্নিগ্ধ বলেই ডাকবো। আমার কতো দিনের ইচ্ছে তোকে আমি আমার মতো করে ভালোবাসবো, আমার মতো করে তোর খেয়াল রাখবো আমি একটুও চোখের আড়াল হতে দেবো না তোকে তাই আর বাসায় মন মানছিল না। চলে এসেছি তোকে একটা বার দেখতে আর তুই কি না আমাকে বলছিস আমি এতো তাড়াতাড়ি কেন আবার তোদের বাসায় চলে আসলাম। সত্যি তুই না একটুও বুঝবি না

আমি চুপ করে থাকলাম কিছু বললাম না, এই ভাবে কথা টা বলা হয় তো উচিত হয়নি আমার। একটু পরে নিরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম,, কেমন আছো তুমি?

হৃদান ভাই কিছু না বলে গোমড়া মুখ করে বসে রইল, এটা দেখে রাগ হলো আমার। জিজ্ঞেস করছি কেমন আছে তা না বলে মেয়েদের মতো ভাব নিচ্ছে।

একটু রাগি গলায় বললাম, তোমার কি আজকাল মেয়ে সাজার ইচ্ছে হচ্ছে না কি হৃদান ভাই?

কেন?

জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো তার উত্তর দিলে না তো তাই।

কেন উত্তর দেবো তোকে? আমার আসাতে তো তুই খুশি হস নি আবার জানতে চাইছিস কেমন আছি, নিজের হবু বরের কোনো খেয়াল রাখিস না তুই।

এইবার বুঝতে পারছি কেন উনি মেয়ের পার্টে অভিনয় করছেন, মনে মনে একটু হাসলাম আমি।যাক কেউ তো আছে যে আমার কথায় অভিমান করে, একজন কে ভরসা করে ঠকেছি আমি কিন্তু এইবার আর ঠকবো না।চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি এই মানুষ টা কে।

চলবে………. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৫

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৫
#লেখিকা – সাদিয়া জান্নাত সর্মি

আটচল্লিশ ঘন্টা আগেও যদি মামনি আমাকে বলতো হৃদান ভাই কে বিয়ে করার কথা তাহলে আমি মুখের উপর না করে দিতাম মামনি কে কিন্তু এখন আর না বলার কোনো কারণ নেই আমার।আয়াশ আমাকে ঠকিয়েছে, আমাকে ছেড়ে চলে গেছে এক পৃথিবী পরিমাণ কষ্ট দিয়ে সে হয়তো ভাবছে খুব সুখে থাকতে পারবে। কিন্তু পারবে না,এক জন কে কষ্ট দিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হওয়া যায় না জীবনে। আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। বিয়েতে রাজি হবো কি হবো না মাথা কাজ করছে না আর,আজ যদি আমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাই তাহলে হৃদান ভাই আমার হাজব্যান্ড হয়ে যাবে যেটা আমি কখনো ভাবিনি আর যদি বিয়ে তে রাজী না হই তাহলে বাবা মামনি কষ্ট পাবে।নাহ আমি এই বিয়ে টা করবো, আয়াশ কি ভেবেছে ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বলে আমি ভাঙ্গা মন নিয়ে ঘুরে বেরাবো তা আর হবে না। রিয়েল খুশি না হলেও বাইরে থেকে খুশি থেকে দেখিয়ে দিবো ওকে যে ও আমাকে ছেড়ে গেছে বলে আমি ভেঙে পরি নি। আমি আমার লাইফ গুছিয়ে নিয়েছি, আমাকে খুশি থাকতে দেখে ওরা হজম করতে পারবে না ব্যাপার টা।

তোর সাথে একটু কথা ছিল স্নিগ্ধা।

এই কথা শুনে আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি হৃদান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি উঠে বসে হৃদান ভাই কে ভিতরে আসতে বললাম,হৃদান ভাই ভিতরে এসে বিছানার এক পাশে বসে বললো,

ফুপি কি তোকে কিছু বলেছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম, আমার উত্তর শুনে হৃদান ভাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
দেখ স্নিগ্ধা আমি যা বলছি তোকে সবকিছু সরাসরি বলছি। আমি তোকে ভালবাসি স্নিগ্ধা,হ্যা আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস না সেজন্য এই বিয়ে তে রাজী নাই হতে পারিস কিন্তু আমি তোকে বলছি তুই যদি আমাকে বিয়ে করিস তাহলে সারাজীবন তোকে এই বুকে আমি আগলে রাখবো। কখনো ছেড়ে যাবো না তোকে আর তোকে ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ যে নেই আমার কাছে।তোর ওই স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় আমি এমন ভাবে জড়িয়ে গেছি যেটা থেকে বের হওয়ার আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে।
পরক্ষনেই হৃদান ভাই আমার হাত দুটো ধরে বললো, স্নিগ্ধা তুই বিয়ে করবি তো আমাকে? তখন শপিং মলে আয়াশ নামের ছেলে টা বললো ও না কি তোর এক্স বয়ফ্রেন্ড, বিশ্বাস কর ওই কথাটা শুনে আমার খুব রাগ হয়েছিল তোর উপর তাই ওমন আচরণ করেছিলাম তোর সাথে।তুইই বল তুই যাকে ভালোবাসিস সে যদি তোকে ভালো না বেসে অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে তোর রাগ হবে কি না?প্লিজ স্নিগ্ধা তুই এই বিয়ে তে রাজী হয়ে যা, তুই আমাকে ভালো না বাসলেও ক্ষতি নেই আমি কখনো জোর করবো না তোকে।
আমি অবাক চোখে হৃদান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি, এই মানুষ টা কে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে আমার।হৃদান ভাই আমাকে ভালোবাসে এটা কখনো উনার বিহেবিয়ার এ প্রকাশ পায় নি, সবসময় ঝগড়া করেছে আমার সাথে। একটু দোষ করলেই শাস্তি দিয়েছে আর সেই হৃদান ভাই বলছে কিনা সে আমাকে ভালোবাসে।আর এমন ভাবে বলছে যেন কোনো কিছু চাইছে আমার থেকে, আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদান ভাই একটু শুকনো ঢোক গিলে বললো,

কি হলো স্নিগ্ধা,বল তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
আমি একটু চুপ থেকে বললাম,,দেখো হৃদান ভাই আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে নাও চাই তারপরও তোমাকে বিয়ে করতে হবে।কারন আমার বাবা মা নাহলে কষ্ট পাবে, কখনো ওদের কোনো কথা শুনিনি।আর আজও যদি ওদের কথা না মানি তাহলে ওরা খুব কষ্ট পাবে সেজন্য আমি এই বিয়ে টা করবো কিন্তু,,

কিন্তু কি স্নিগ্ধা?

আমি বিয়ে করবো তোমাকে কিন্তু এখন নয় আরো কয়েকমাস পরে। আমি এখন বিয়ের জন্য কোনো ভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই, আমি তো কখনো তোমাকে ভাই ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখি নি সেই কারণেই তোমাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে কিছুদিন সময় লাগবে। সেই সময় টা বিয়ের পরে নয় বিয়ের আগেই চাইছি আমি, এখন বাকি টা তোমার ইচ্ছে।
হৃদান ভাই খুব খুশি আমার কথা শুনে। অতিরিক্ত খুশি হলে গলার স্বর আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছে তার। হাসি মুখে বললো,, তোর যতদিন সময় লাগে তুই নে আমার এতে কোনো সমস্যা নেই। তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস এটাই আমার কাছে অনেক। আমি গিয়ে আঙ্কেল ফুপি কে বলছি আমাদের বিয়ে এখন নয় আরো কিছুদিন পরে হবে।

হৃদান ভাই আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল, আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি অদ্ভুত এই মানুষ টা, শুধু বিয়ে করতে রাজি হয়েছি বলেই এতো খুশি তাহলে যদি বলতাম ভালোবাসি তাহলে কি অবস্থা হতো কে জানে।

দুই দিন পরে আমি আমার ছোট্ট বাগানের বেঞ্চে বসে আছি। ওইদিনই হৃদান ভাই বিকেলে চলে গিয়েছিলেন, বাবা মামনি হৃদান ভাইয়ের কথায় সম্মত হয়েছে কিছুদিন পরে আমাদের বিয়ে দিতে। এই সময়ে ভাইয়া আমার পাশে বসে মাথায় একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,,

কার ধ্যানে বসেছিস তুই?
আমি ভাইয়ার দিকে বোকার মত তাকিয়ে থেকে বললাম,,
কার ধ্যানে বসবো আবার?

তাহলে আমি যে এসেছি সেটা কি বুঝতে পেরেছিস তুই? আমার তো মনে হচ্ছে তুই হৃদানের ধ্যানে বসেছিস।

ভাইয়া, উল্টো পাল্টা কি বকছো এইসব। আমি আমার হবু ভাবীর ধ্যানে বসেছি, এতো বড় একটা ভাই আমার এখনো বিয়ে টা করতে পারলো না। বাবার কোনো আন্দাজ নেই না কি, এতো বড় একটা ছেলে ঘরে থাকতে আগে মাছুম বাচ্চা মেয়ে টাকে বিয়ে দিতে চাইছে।
আমার কথা শুনা মাত্রই ভাইয়া আমার মাথায় ঝড় বৃষ্টি শুরু করে দিলো। এই একটা বাজে অভ্যাস ভাইয়ার, কোনো কথা নেই বার্তা নেই ধুমধাম মাথায় মা’রতে শুরু করে। আমি ভাইয়ার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে বললাম,,
আমি ঠিক বলেছি না ভাইয়া?
ভাইয়া আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,, আমার কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে না কি?

তো আমার বুঝি খুব বিয়ের বয়স হয়ে গেছে?

হয়েছেই তো। মেয়েদের বেশি দিন ঘরে রাখতে নেই নাহলে শেয়াল কুকুরে টেনে নিয়ে যেতে পারে।তাই তো আমি বাবাকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।

আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম।আমি বুঝে গেছি শেয়াল কুকুর বলতে ভাইয়া কাকে বুঝিয়েছে,তাই আর কিছু বললাম না ভাইয়া কে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া বললো,, তোর জন্য একটা ভাবী পছন্দ করেছি আমি,দেখবি তাকে।

আমি ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম, একটু আগেই বিয়ের কথা বললাম দেখে মারলো আমাকে আর এখন বলছে আমার জন্য ভাবী পছন্দ করেছে।
আমি বললাম,কই দেখাও আমার ভাবীকে।
ভাইয়া তার বুক পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আমার হাতে দিলো। ছবির মেয়েটার দিকে আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম, মেয়ে টা আর কেউ নয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নামের বেস্ট শত্রু নেহা। ভাইয়া শেষ পর্যন্ত কি না এই বেইমান টাকে পছন্দ করেছে নিজের বউ হিসেবে যার তিন দিন আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,, কেমন মেয়েটা পছন্দ হয়েছে তোর। অবশ্য তোর পছন্দ হবে এটা আমি আগে থেকেই জানতাম কারন মেয়ে টা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। তার পর ভাইয়া লাজুক স্বরে বলল,,
আর আমরা এক বছর হলো রিলেশনশিপ এ আছি।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারলাম না, এটা কি বলছে ভাইয়া।সে নেহার সাথে এক বছর ধরে রিলেশনে ছিল এই কথা টা ঠিক মানতে পারছি না আমি। থেমে থেমে ভাইয়া কে বললাম,, ভাইয়া তুমি এতো বড় একটা ভুল কি করে করতে পারলে? নিজের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে তুমি এতো বড় ভুল করলে কেন?
ভাইয়া আমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না তাই জিজ্ঞাসা করল,,কি বলছিস এসব তুই? আমি ভুল করেছি মানে।আরে বোকা নেহা আমাকে ভালোবাসে আর আমি নেহা কে ভালোবাসি।এতে ভুলের কি আছে?
আমি ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম,, তার পর বললাম,, এবার আমি যা বলবো তার জন্য তুমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত তো ভাইয়া? বিশ্বাস করতে পারবে তো আমার কথা?

হ্যা, তুই কি বলবি বল। আমি আমার বোন কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি।

আমি একটু চুপ করে রইলাম, তার পর বললাম,,,
ভাইয়া নেহার বিয়ে হয়ে গেছে তিন দিন আগে।তাও আবার কার সাথে জানো ওই ঠকবাজ আয়াশের সাথে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আয়াশ আর নেহা অনেক দিন ধরে রিলেশনশিপ এ আছে। ওরা দুজনে প্ল্যান করে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য আয়াশ আমার সাথে রিলেশন করেছিল। তোমার বোনের চোখের পানি তোমার পছন্দের মানুষ নেহা ঝরিয়েছে।
ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে মুর্তির মতো বসে রইলো। একটু পরে বললো,, তুই কি বলছিস স্নিগ্ধা আমি ওকে ভালবাসি আর ওউ আমাকে ভালোবাসে।ও এটা কখনো করতে পারে না,ও আমাকে কথা দিয়েছে যে ও আমাকে বিয়ে করবে তাহলে ও আয়াশ কে কি করে বিয়ে করতে পারে। একটু আগেও তো ওর সাথে আমার কথা হয়েছে কই আমি তো ওইরকম কিছু বুঝিনি ওর কথায়।

চলবে………….. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৪

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৪
#লেখিকা – সাদিয়া জান্নাত সর্মি

একটু পরে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এলাম, সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে আমিও গিয়ে টেবিলে বসলাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার স্নিগ্ধা তুই এই নোজ পিন কোথায় পেলি?
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, ভাইয়া কালকে আমার বার্থডে তে কেউ একজন এই নোজ পিন টা গিফট করেছে তাই পড়লাম আজ। কেন দেখতে ভালো লাগছে না কি?
ভাইয়া একটু হাসল তারপর বললো,নাহ ভালোই লাগছে তোকে কিন্তু আগে তোকে নোজ পিন পড়তে দেখিনি তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
আমি কিছু বললাম না,হৃদান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আমি ওনার এই মিচকে হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না।তাই জিজ্ঞাসা করলাম,হৃদান ভাই তুমি আমাকে দেখে হাসছো কেন? আমাকে দেখে কি জোকার মনে হচ্ছে?

হৃদান ভাই হালকা কাশি দিয়ে বলল, না তোকে খুব সুন্দর লাগছে তো তাই হাসছি, কেন আমি হাসলে কি কোনো দোষ আছে?
আমি মুখ কালো করে বসে রইলাম আর কোনো কথা বললাম না। একটু পরেই মা সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিয়ে এলো।ব্রেকফাস্ট করে সোফায় বসে মাকে বললাম,
মামনি আমি একটু শপিং এ যাবো আজ, ফিরতে দেরী হতে পারে আমার।
মা আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
আজ আবার কিসের শপিং এ যাবে তুমি?পরশু দিনেই তো শপিং করে এলে।
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম,
না মানে হয়েছে কি, আমার কিছু দরকারি জিনিস কেনার আছে যেগুলো ওইদিন কিনতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই আজ যেতে চাইছি।
আমার কথা শুনে বাবা বললেন,
ঠিক আছে তুমি শপিং এ যাবে যাও, তবে একা নয় তোমার সাথে হৃদান ও যাবে।কি হৃদান তুমি যেতে পারবেনা?

হৃদান ভাই বাবার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো, আমার রাগ হলেও বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারছিনা।

গাড়ি তে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছি। পাশেই হৃদান ভাই বসে সাপের মত ফুসছে কিন্তু কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ পর আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম,, তোমার সাপের মতো ফুসা শেষ হলে এবার কি বাসায় যেতে পারি?
হৃদান ভাই আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো, আমি ওর সেই চাহনিতে ঠোঁটে হাত দিয়ে চুপ করে গেলাম।

কিছুক্ষণ আগে,,,,,
শপিং মলে একটা থেকে আরেকটা জিনিস দেখছি, কোনোটাই পছন্দ হচ্ছেনা আমার। পাশে সিকিউরিটি গার্ডের মতো হৃদান ভাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কান্ডকারখানা দেখছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে কে যেন বললো, কালকের সারপ্রাইজ টা কেমন ছিল স্নিগ্ধা?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আয়াশ দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন টা ওই করেছে আমাকে, আয়াশের কথা হৃদান ভাই কিছু বুঝতে না পেরে ওকে আবার জিজ্ঞাসা করল,
এই কে তুমি আর স্নিগ্ধা কে এইসব কি জিজ্ঞাসা করছো?
আয়াশ হাসিমুখে বললো,
আপনি বুঝি ওর নতুন বয়ফ্রেন্ড? আমি স্নিগ্ধার এক্স বয়ফ্রেন্ড,কাল ওর বার্থডে ছিল না তাই ওকে আমি অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দিয়েছি সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে সারপ্রাইজ টা ওর কেমন লেগেছিল।
হৃদান ভাই আয়াশের কথা শুনে একেবার আমার দিকে তাকালো আরেক বার আয়াশের দিকে তাকালো তার পর আর কোনো কথা না বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ি তে এনে বসিয়ে দিলো।
আমি হৃদান ভাইয়ের কাজকর্মে রীতিমতো অবাক হয়ে গেছি, বেচারা এমন করছে যেন আমি ওর বউ লাগি আর ওর বউ হয়ে অন্যকারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি। একটু পরে আবার হৃদান ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি হয়েছে হৃদান ভাই? তুমি আয়াশের কথা শুনে এমন করছো কেন,ও যে তোমাকে আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড বলছে এইজন্য এমন করছো? চিন্তা করোনা আমি আয়াশের দেখা পেলে এই কথার জন্য দুই গালে দুইটা স্ট্যাম্প বসিয়ে দেবো।হৃদান ভাই আমার দিকে ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে বললো, তুই অন্য কারো সাথে রিলেশনে ছিলি?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম,হৃদান ভাই আমাকে হ্যা সুচক উত্তর দিতে দেখে চোখ মুছে চুপ করে রইলেন। আমি হা করে ওনাকে দেখছি, ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে বিশাল বড় একটা ছ্যাকা খাইছেন উনি তাই এই বিহেবিয়ার করছেন। কিন্তু আমি উনার ছ্যাকা খাওয়ার কারন খুজে পেলাম না, উনার দেখাদেখি আমিও একটু মুখ ভার করে থাকলাম। একটু পরে হৃদান ভাই ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে যেতে বললো। গাড়ি চলতে শুরু করেছে, আমি গ্লাস নামিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হৃদান একটু পর পর চোখ মুছছে আর ভাবছে, স্নিগ্ধা এটা কি করলো? এতো তাড়াতাড়ি অন্য কারো সাথে রিলেশনে জড়িয়ে গেল, ওর কি বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছিল না কি যে যার তার সাথে রিলেশন করছিল। আমার সরল সোজা মনটাকে এইভাবে কষ্ট না দিলেও পারতো স্নিগ্ধা, এতো দিন পরে যখন ওর কাছে এলাম তখন ও অন্য কাউকে মন দান করে দিয়ে বসে আছে।
একটু পরে গাড়ি বাসার সামনে এসে দাড়ালো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম তার পর হৃদান ভাই নামলো।হৃদান ভাই গাড়ি থেকে নেমে আমার সাথে কোনো কথা না বলে হনহন করে বাসার ভিতরে চলে গেল, আমি ওটা পাত্তা দিলাম না বাসায় এসে মামনি কে দেখি সোফায় বসে টিভি দেখছে। আমি মামনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম, আমাদের কে এতো তাড়াতাড়ি করে চলে আসতে দেখে মামনি একটু অবাক হলো। আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে স্নিগ্ধা মা? তোমরা এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে, শপিং করো নি?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম, তার পর আস্তে আস্তে বললাম, মামনি হৃদান ভাই কেন জানি না আমার উপরে রেগে আছে তাই শপিং করতে দেয় নি।থাক অন্য দিন তোমার সাথে গিয়ে শপিং করবো।
মামনি আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর আমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,,
তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো করেও বলা হয় নি স্নিগ্ধা। আসলে তোমার বাবা চাইছিলেন যে হৃদানের সাথে তোমার বিয়ে দিতে, তুমি পড়াশোনা কমপ্লিট করেছো এবং এখন তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউর। নিজের ভালো তুমি এখন নিজেই ভালো বুঝবে।আর হৃদান ও অনেক ভালো একটা ছেলে, আমার ভাইয়ের ছেলে বলে বলছি না, তুমি নিজেও যদি একটু ভেবে দেখো তাহলে বুঝবে। সেজন্য আমরা চাইছিলাম হৃদানের সাথে তোমার বিয়ে দিতে।
আমি মামনির কথা শুনে চমকে উঠে বসলাম, এইসব কি বলছে মামনি।হৃদান ভাই কে বিয়ে, সেটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় ওকে তো আমি ভাইয়ের নজরে দেখি সেই জায়গায় বর হাউ ইটস পসিবল?

মামনি হয়তো আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো তাই বললো, স্নিগ্ধা তুমি হৃদান কে ভাই হিসেবে দেখলেও হৃদান তোমাকে বোন হিসেবে দেখে না।ও তোমার অনেক কেয়ার করে, যখন হৃদান দেশের বাইরে ছিল তখন প্রতিদিন ও তোমার খোঁজ নিতো তুমি কেমন আছো কি করছো ইত্যাদি। সেটা দেখেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাছাড়াও আমার মেয়ের জন্য একটি ভালো ছেলের দরকার যেটা হচ্ছে হৃদান। তুমি এখন সিদ্ধান্ত নাও, তোমাকে ভাবার জন্য সময় দিলাম ‌যদি তোমার মনে হয় হৃদান তোমার জন্য ঠিক তাহলে আমাদের জানিও।
আমি মামনির কথা শুনে ধীর পায়ে আমার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম,মামনির কথা গুলো কানে বাজছে আমার। রুমে এসে দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ভাবছি আয়াশের কথা, মাত্র আটচল্লিশ ঘন্টা আগেও আমার সবকিছু জুরে আয়াশ ছিল, ওকে ছাড়া অন্য কারো সাথে আমি নিজেকে ভাবতেই পারতাম না।

চলবে………….. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৩

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৩
#লেখিকা- সাদিয়া জান্নাত সর্মি

আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা মা ভাইয়া সহ আরো অনেকে আমাকে উইশ করেছে। আমি ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম, বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,আজ আমার মামনির বার্থডে তাই আপনাদের সবাইকে আমাদের বাসায় ইনভাইট করা হয়েছে এই আনন্দে যোগদান করার জন্য। তখন পিছন থেকে কে যেন বললো, ভুল বললে আঙ্কেল, আমাকে ইনভাইট করো নি তুমি। আমি বিনা ইনভাইটে চলে এসেছি ওয়েল কাম জানাও আমাকে। আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি বড় মামার ছেলে হৃদান ভাই দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে আমি মুখ ভেংচে বললাম তোমাকে কি ইনভাইট করতে হয় না কি তুমি তো এমনিতেই চলে আসতে জানো, বিনা দাওয়াতের মেহমান তুমি। হৃদান ভাই আমাকে কিছু বলতে যাবে তখন বাবা বললেন,সব কথা বাদ পরে ওসব নিয়ে কথা বলা যাবে, এখন মামনি কেক কাটবে সবাই এখানে চলে এসো। আমি বাবার সাথে কেক টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, আমার এক পাশে বাবা আরেক পাশে মা।আর বাকি সবাই পাশেই দাঁড়ালো, আমি আস্তে করে ফু দিয়ে মোমবাতি গুলো নিভিয়ে হাতে ছুরি নিয়ে কেক কাটলাম।সবাই হ্যাপি বার্থডে গান গাইছে কেক কাটার সময়, আমি কেক কেটে নিয়ে প্রথমে বাবা কে খাইয়ে দিলাম তার পর মাকে। ওনারও আমাকে কেক খাইয়ে দিলেন, এটা দেখে ভাইয়া মুখ কালো করে বলল,বাহ কি সুন্দর দৃশ্য, আচ্ছা স্নিগ্ধা তোর ভাই টা কি মরে গেছে ওকেও তো একটু কেক খাওয়াতে পারিস। আমি একটু কেক হাতে নিয়ে ভাইয়া কে খাইয়ে দিলাম, তার পর হৃদান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম তুমিও কি কেক খাবে আমার হাতে? আমার কথা শুনে তো হৃদান ভাই খুব খুশি হয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো, আমি এগিয়ে গিয়ে কেক খাইয়ে দিতে গিয়ে পুরো মুখে কেক মাখিয়ে দিলাম।হৃদান ভাই রেগে গিয়ে বলল এটা কি করলি তুই? খাওয়াতে বলেছিলাম মুখে মাখাতে নয়। আমি একটু জিভ ভেংচে নিয়ে চলে এলাম ওর সামনে থেকে।হৃদান ভাই শুধু রাগে ফুঁসতে লাগলো কিছু বললো না আর।

__________________________________

ছাদের এক কোণে আমি বসে আছি আর আরেক কোণে হৃদান ভাই। একটু আগেই সব মেহমান বিদেয় হয়েছে, আমি আপাতত এখানে বসে আছি শাস্তি হিসেবে। তখন মুখে কেক মাখিয়ে দিয়েছিলাম তার শাস্তি দিয়েছে হৃদান ভাই পুরো দুই ঘণ্টা ধরে ছাঁদে বসে থাকতে হবে। শাস্তি দিয়ে মনে হয় হৃদান ভাই শান্তি পায়নি তাই নিজেও এখন ছাদে এসে বসে আছে। আমি গালে হাত দিয়ে বসে বসে মনে মনে হৃদান ভাইয়ের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি,খাটাশের বাচ্চা আর কোনো কাজ পায়নি ছাদে বসিয়ে রেখেছে আমাকে।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আরো আধঘন্টা বসে থাকতে হবে এই মশার আড্ডায়। হাত পা মশা আদর করে ফুলিয়ে দিয়েছে, একটু ধীরে ধীরে হৃদান ভাই কে বললাম,, এবার যাই হৃদান ভাই? মশা কামড়াচ্ছে খুব হাত পা ফুলে গেছে আমার।
হৃদান ভাই ওখান থেকে উঠে এসে আমার পাশে বসে বললো, কেন তখন তো আমার মুখে খুব কেক মাখিয়ে দিয়েছিলি, তখন মনে ছিল না মশার কামড়ের কথা?
আমি একটু কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,সরি আমি তো এমনি তোমার সাথে মজা করছিলাম। সত্যি বলছি আর কখনো এমন করবো না, যাই আমি?
হৃদান ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে যা। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়, রাত জাগিস না আর।
হৃদান ভাইয়ের কথা শুনে এতোক্ষণ মনে মনে যাও বলছিলাম এখন মুখ ফসকে বলেই ফেললাম,, এতোই যখন দরদ আমার প্রতি তাহলে এতোক্ষণ ধরে মশার কিস খাওয়াইলা কেন?
হৃদান ভাই আমার কথা শুনে কি রিয়েকশন করলেন তা অন্ধকার থাকার জন্য বুঝতে পারলাম না, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়লাম, পুরো বিছানা জুরে গিফট ছড়ানো। ভাইয়া একটা কাজ ও ঠিক মতো করতে পারে না, বলেছিলাম গিফট গুলো আমার রুমে এনে রাখতে আর ও বিছানায় এনে রেখেছে। চোখে আর কোনো জায়গা দেখতে পেল না, জায়গা না পেলে আমার মাথাতেই রাখতো অসহ্য। গিফট গুলো সব বিছানা থেকে সরিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। খুব ঘুম পাচ্ছে এখন না ঘুমালে চোখ জ্বালা করবে পরে, একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল নয়টার দিকে চোখে মুখে পানির ঝাপটায় ঘুম ভাঙল আমার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে দেখি হৃদান ভাই হাতে পানির গ্লাস নিয়ে দাড়িয়ে দাত কেলিয়ে হাসছেন। বুঝতে পারলাম না আমি ঘুমাচ্ছি এতে সমস্যা টা কি ওনার, একটু রাগি ভাব নিয়ে বললাম,, এটা কি হৃদান ভাই? এই সাত সকালে আমার ঘুম টা না ভাঙ্গালে চলছিল না তোমার।
হৃদান ভাই আরো বেশি দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বললো,নাহ চলছিল না।কি জানিস তুই কালকে আমাকে সবার সামনে সঙ বানিয়ে দিয়েছিলি তাই আজ আমি তোর ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
কথা গুলো বলে হৃদান ভাই শীষ দিতে দিতে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল, আমি ওনার যাওয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম,দাড়াও কাল তোমাকে সঙ বানিয়েছি আর আজ তোমাকে কি যে করবো নিজেও বুঝতে পারছি না।
বিছানা থেকে নেমে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম। গিফট গুলো রাতে দেখা হয় নি তাই ওগুলো নিয়ে দেখতে বসলাম। অনেক গিফট পেয়েছি কালকে, সবগুলোই অনেক অনেক সুন্দর।কতো মানুষের ভালোবাসা পেলাম কালকে, গিফট গুলো দেখতে দেখতে একটা নীল রঙের গিফট বক্সের উপর নজর আটকে গেল আমার। কৌতুহলী হয়ে গিফট বক্স টা খুলে ফেললাম,কপাল টা মনে হয় সত্যিই ফাটা আমার এই কারণে ভিতরে একটা খাম ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ভেবে পেলাম না কোন হারকিপটা এই টা দিয়েছে, গিফট দিতে পারবে না ভালো কথা কেউ তো চায়নি। তাহলে এই খাম দিয়ে মজা করার কি দরকার ছিল, একটু আস্তে আস্তে খাম টি খুললাম দেখি ভিতরে একটা নোজ পিন রাখা।নোজ পিন দেখে হাসি পেল আমার,কি কিপটা মানুষ, শেষে কি না খামের ভেতর নোজ পিন রেখে এতো বড় একটা গিফট বক্স দিলো।নোজ পিন টা হাতে নিলাম, দেখে মনে হচ্ছে বেশি দাম নয় এটার তবে জিনিস টা সুন্দর খুব। গিফট বক্সে নাম খুঁজলাম কিন্তু কোনো নাম খুঁজে পেলাম না,যাক কে দেয় দিক আমার তো জিনিস টা পছন্দ হয়েছে।ড্রেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে নোজ পিন টা পড়লাম, একটু বউ বউ ফিলিংস হচ্ছে।

চলবে………….. ইনশাআল্লাহ

স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০২

0

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ২
#লেখিকা -সাদিয়া জান্নাত সর্মি

হাতের জন্য কান্না পাচ্ছে খুব আমার, একটু আগে একটা বেইমানের জন্য কাদলাম আর এখন হাতের জন্য কান্না আসছে আমার। জীবনের দুঃখের শেষ নেই আমার, ভাবছি পৃথিবী তে কতো ধরনের মানুষ আছে যাদের কেউ মানুষ কে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে আর কেউ কাঁদায়। অদ্ভুত এই পৃথিবীর মানুষ সব, এখন আমি এই হাতের কি করি? মামনি যদি দেখে আমার হাতের এই অবস্থা তাহলে চেঁচিয়ে পুরো বাসা মাথায় করে তুলবে। ছিঃ আর কোনো দিন পেলি না তোরা, শেষমেশ আমার জন্মদিনেই আমাকে এই সব কিছু বলতে হলো। গালে হাত দিয়ে এইসব ভাবছি তখন বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেলাম।হাত টা পিছনে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে দেখি আমার ভাই মি.ভদ্র শয়তান দাঁড়িয়ে আছেন। আমি কিছুটা বিরক্তি স্বরে বললাম, ভাইয়া এই সময়ে তুমি আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি করছো?আর কোনো কাজ নেই তোমার, একটু বাইরে থেকে এসেছি রেস্ট ও কি নিতে দেবে না আমাকে।
ভাইয়া নির্বাক ভঙ্গিতে উত্তর দিলো, না দেবো না। এতক্ষণ বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটিয়ে আসতে পারলি আর নিজের ভাইয়ের সাথে একটু গল্প করতে পারবি না?
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,কে আমার বয়ফ্রেন্ড? আমার বয়ফ্রেন্ড মরে গেছে আজ,কবর দিয়ে এসেছি ওকে।
আমার কথা শুনে যেন ভাইয়া খুব খুশি হয়েছে এমন একটা ভাব নিয়ে বললো,, সত্যি না কি,বলনা ওর মরে যাওয়ার দোয়া পড়ানো কবে হবে? বোনের বয়ফ্রেন্ড বলে কথা, একটু ভালো মন্দ খাওয়া যাবে ওখানে।
ভাইয়ার কথা শুনে রেগে গিয়ে ওকে মা’রতে শুরু করলাম,মা’রতে মা’রতেই বললাম,
পেটুক আমাদের বাসায় কি ভালো মন্দ খেতে পাওনা তুমি? না কি তোমায় খেতে দেয় না বাবা মা যে ওই বেইমান টার দোয়া পড়ানোতে গিয়ে খাওয়ার আশা করছো?
ভাইয়া আমাকে থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,বইন আর মা’রিস না আমাকে, আমি তো এমনিতেই একটু মজা করছিলাম তোর সাথে।
আমি ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসে পরলাম।ভাইয়াও আমার পাশে এসে বসল, তার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে তোর স্নিগ্ধা?যখন বাসায় আসিস তুই তখন খেয়াল করেছি আমি তুই কাদছিলি,আর এখন তোর এই হাতটা লাল।বল কি হয়েছে তোর,,
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হাত টা তাড়াতাড়ি করে পিছনে লুকিয়ে ফেললাম, তখন ভাইয়া কে মা’রতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম হাতের কথাটা। আমি কিছু বলছি না দেখে ভাইয়া আমাকে একটু অভয় দিয়ে বলল,বল না বোন কি হয়েছে তোর? আমার হাসিখুশি বোন টাকে একটুর জন্যেও মন খারাপ করে থাকতে দেখে ভালো লাগছে না,কি হয়েছে আমাকে বল,প্রমিস আমি কাউকে কিছু বলবো না।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম তার পর চোখ নামিয়ে নিয়ে বললাম, আয়াশ আমাকে ঠকিয়েছে ভাইয়া।ও আমার সাথে শুধু টাকার জন্যে প্রেম করেছে আর আজ যখন ওর প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে তখন নেহা কে বিয়ে করে আমাকে আমার জন্মদিনের সারপ্রাইজ উপহার দিয়েছে।
আমার কথা গুলো শুনে ভাইয়া একটুও অবাক হলো না, স্বাভাবিক ভাবেই বললো, আয়াশ যে তোর সাথে এমন টা করবে এটা আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু আফসোস তুই অনেক দেরীতে তা বুঝলি। বাবা তো তোকে অনেক বার বারণ করেছিল তুই তো তা শুনিস নি, তোর কাছে আয়াশ খুব ভালো একটা ছেলে, এখন বুঝেছিস তো ও কেমন ছেলে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে শুধু মাথা নাড়লাম, ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
যা হবার তা হয়ে গেছে এখন এটা নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই।আয়াশ তোর সাথে যা করলো তার জন্য আমার যদিও ওর উপর খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু আমি ওকে কিচ্ছুটি বলবো না।ও যা করেছে তার শাস্তি আল্লাহ নিজেই ওকে দেবেন আমাদের কিছু করার দরকার পরবে না, একটা কথা জেনে রাখিস সবসময় যারা অন্যকে ধোঁকা দেয় শেষে তারাও আপনজনের কাছ থেকে ধোঁকা পায়। তুই এখন ওসব কিছু নিয়ে না ভেবে রেডি হয়ে নে, তোর বার্থডে উপলক্ষে বাবা বাসায় হালকা পাতলা একটা পার্টি রেখেছে। মানুষজন সব চলে আসছে এখনই আর তুই যদি সময় মতো ওখানে উপস্থিত না থাকিস তাহলে কেমন দেখায়? আমি যাচ্ছি, তুই দশমিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আয়।
ভাইয়া উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, ভাইয়া যাওয়ার পর আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে জানালার পাশে এসে বসলাম।মন টা নিমিষেই ভালো হয়ে গেছে আমার, হবে নাই বা কেন?যার কপালে এমন একটা সার্পোটিড ভাই আছে সে তো হাজার কষ্টের মধ্যেও সুখী।অন্য কারো ভাই হলে হয়তো এতক্ষণে ওকেই বকাঝকা করতো ভুল মানুষের সাথে সম্পর্ক করার জন্য কিন্তু আমার ভাই আমাকে সেটা নিয়ে কোনো কিছুই বললো না। আরো আমাকে এটা বললো যেন যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর না ভাবি। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুটে উঠল আমার, আয়াশ তোকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছিলাম, আরো বেশি ভুল করেছিলাম বাবার কথা না শুনে। কিন্তু সেই ভুল শোধরানোর সুযোগ আমি পেয়েছি,আর সেটা হচ্ছে তোকে মন থেকে একেবারে মুছে ফেলে। তোকে যদি আমি আরো মনে রাখি তাহলে মনটাকে জেনে শুনে কষ্ট দেওয়া হবে,কি কাজ আমার নিজেকে কষ্ট দিয়ে?

জানালার পাশ থেকে উঠে এসে পার্টির জন্য রেডি হতে লাগলাম। নীল রঙের একটা লং গাউন আর তার সাথে ম্যাচিং করে নীল জিন্স পড়লাম। হালকা ফর্সা গড়নের মেয়ে আমি, এই রঙটাই আমার সাথে মানিয়েছে।রেডি হয়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে নিচে এলাম, সন্ধ্যা হয়ে গেছে ততক্ষনে। নিচে এসে মহাবিপদে পড়ে গেলাম, বসার রুম পুরো অন্ধকার হয়ে আছে কোথাও কিছু দেখতেও পাচ্ছি না।সবাই আমাকে রেখে কোথায় চলে গেল, একটু ভয় পাওয়া গলায় ভাইয়া কে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না। এবার সত্যি সত্যিই ভয় লাগতে শুরু করলো আমার,ভয়ের কারণে যখনি চেঁচাতে যাবো তখন হঠাৎ করে বাসার সবগুলো লাইট জ্বলে উঠলো আর সবাই একসাথে বলে উঠল হ্যাপি বার্থডে স্নিগ্ধা।

চলবে……………. ইনশাআল্লাহ