Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1002



আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০১

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃসূচনা
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

নিজের বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ করে কারো স্পর্শ পেতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ জোড়া মেলাতেই অনুভব করলাম আমি ছাড়াও আমার রুমের মধ্যে অন্য করো উপস্থিতি। শরীরটা শিউরে উঠলো আমার। আমার রুমে এতো গভীর রাতে কে আসতে পারে? কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি অনুভব করলাম কেউ একজন আমার পিছন থেকে আমার কোমরের উপর হাত রাখলো। ভয়ে শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার। শরীরটা বেশ ভারী হয়ে গেছে। একটু নড়ে চড়ে উঠার শক্তি নেই আমার। হাতটা আমার কোমর থেকে সরে যেতেই আমার কানের আর গলার উপর কারো গভীর নিঃশ্বাস পরতে লাগলো। নিঃশ্বাস এর উষ্ণতা আমার অদ্ভুত রকম ভাবে কাছে টানছে। আমি বিছানা থেকে অনেক কষ্টে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আমি রুমের লাইটা অন করলাম। লাইট অন করে আমি বিছানার দিকে তাকাতেই আমার চোখ জোড়া ছানা বড়া হয়ে যায়। এ আমি কাকে দেখছি? আয়াদ ভাইয়া আমার রুমে, আমার বিছানায়, এতো রাতে! গলাটা এক মুহুর্তে শুকিয়ে আসে‌ আমার। একটা ঢোগ গিলে নিজেকে একটু শান্ত করতে চেষ্টা করলাম। আয়াদ ভাইয়ার উপস্থিতি আমার মনের মধ্যে এক অজানা ভয় সৃষ্টি করে দিলো। হাত পা কাঁপছে আমার। আয়াদ ভাইয়া আমার বিছানার পাশে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার শক্তি পাচ্ছি না। অনেকটা সাহস করে একটু শান্ত গলায় বলার চেষ্টা করলাম

— আয়াদ ভাইয়া এসব কি? আমার রুমে এতো রাতে আপনি, তাও আমার বিছানায়!

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিলো। আয়াদ ভাইয়া আমার রুমের দরজার কাছে দিয়ে দরজাটা বেশ শব্দ‌‌ করে বন্ধ করে দিলো। আয়াদ ভাইয়ার এমন ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত নই। আমার মনের মধ্যে ইতোমধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। আমি দৌড়ে আয়াদ ভাইয়ার কাছে ছুটে চলে আছি। দরজা খোলার চেষ্টা করতেই আয়াদ ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— ভূল করেও দরজা খোলার কোনো চেষ্টা করিস না অর্শি। আর যদি চিৎকার করিস তো তোর সম্মান নষ্ট হবে। আমি চাই না তোকে এই সমাজ নষ্টা মেয়ের নাম ধরে ডাকুক।

আয়াদের কথা শুনে অর্শি একদম চুপসে যায়‌। আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। অর্শি আয়াদের চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে আছে। অর্শির চোখ জোড়া আয়াদের দিকে ভিশন ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আয়ান অর্শির দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে অর্শির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অর্শি একপা একপা করে পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে তার পিঠ ঠেকে যায়।‌ আয়াদ অর্শির খুব কাছে চলে আসে। অর্শি এক দিক মুখ বাঁকিয়ে ফিসফিস করে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া প্লিজ! আমার কোনা ক্ষতি করিয়েন না। আমি আপনার বোন। প্লিজ ভাইয়া!

অর্শির কথা আয়াদের কানে যাচ্ছে না। আয়াদ অর্শির কোমরে নিজের হাত‌ রাখতেই অর্শি নিজেকে শান্ত করলো। অর্শি আপন মনে ভাবতে লাগলো “আয়াদ ভাইয়া আমাকে চুপচাপ থাকতে বললো আর আমি চুপচাপ নিজের সব থেকে দামী সম্পদ। আমার সম্মান তার হাতে তুলে দিবো! এটা কি করে সম্ভব? সম্মান নষ্ট হোক তবুও নিজেকে কারো কাছে নত করবো না আমি”। কথাটা ভাবতেই অর্শি আয়াদের হাত ধরে নিজের কোমড় থেকে সরিয়ে দিলো। আয়াদ অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— আমার কাজটা আমায় করতে দে অর্শি।

— আমি মরে যাবো তবুও নিজের সম্মান নষ্ট করতে দিবো না।

কথাটা শেষ করতেই অর্শি আয়াদের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়ের শব্দে পুরো রুমটা কেঁপে উঠলো। আয়াদ কিছুই বুঝতে পারলো না। কি থেকে কি হয়ে গেলো?

— ঠাসসসসসস, তোর বাবা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে বলে আমার সাথে নোংরামি করতে চলে আসবি আর আমি সব কিছু মেনে নিবো তা তো হতে পারে না। আমার কাছে আমার আত্নসম্মান পৃথিবীরর সব থেকে দামী। যেটা আমি কখনও কাউকে নিতে দিবো না। মাইন্ড ইট মিস্টার আয়াদ। বেড়িয়ে যান আমার রুম থেকে। সকাল হতেই আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

অর্শির কথা শুনে আয়াদ থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। অর্শির থাপ্পড়ে যতটা না রাগ হচ্ছে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি রাগ হচ্ছে অর্শি চলে যাবে এটা শুনে। আয়াদ অর্শির হাত জোড়া দুম করে চেপে ধরে অর্শিকে তার মুখের দিকে বরাবর থেকে ঘুরিয়ে নিলো। পিছন থেকে অর্শির কানের কাছে মুখ নিয়ে আয়াদ ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— আমার তোর শরীরের উপর কোনো ইন্টারেস্ট নাই। তবুও আমায় বাধ্য করিস না। আমি তোর রুমে তোকে ধর্ষণ করতে আসি নাই। আমি এসেছি তোর পিঠে লেপ্টে থাকা আমার এই চিপটা নিতে। এই তোকে লাস্ট অর্নিং দিলাম আমার রুমে ফার্দার তুই যাবি না।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ অর্শিকে একটা ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সামান্য দূরে সরিয়ে দিলো। অর্শিকে ধাক্কা দিয়ে আয়াদ হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আয়াদ চলে যেতেই অর্শি হাঁটু গেড়ে ধপাস করে ফ্লোরে বসে পরে। বুঝতে পারছে না কিছুই। ‘আয়াদ ভাইয়া হঠাৎ করে রাতের গভীরে আমার রুমে আসলো। যে কেউ হলে ঠিক এটাই ভাবতো যে নিশ্চই কোনো বাজে উদ্দেশ্যে আমার রুমে এসেছে। তাও আমার বিছানায়”।

অর্শি আপন মনে ভাবছে আয়াদের কথা। “আয়াদকে থাপ্পড় মারাটা উচিত হয়নি। কিন্তু উনি তো আমার শরীরে টাচ করেছে। এটাকি কি যুক্তিযুক্ত? আমি ভুল কিছু করিনি”। আজ আবারও মনে পরে গেলো পুরনো অতিতের কথা। আয়াদ ভাইয়া আমাকে মনে করিয়ে দিলো সেই বিষাক্ত অতিতেত কথা যা আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। আপনারা হয়তো ভাবছেন আয়াদের পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক কি? তা হলে বলি আমার নাম অর্শি। যখন আমার বয়স মাত্র ১১ তখন থেকে আমি আয়াদ ভাইয়াদের বাড়িতে থাকি। আয়াদ ভাইয়ার বাবাকে বাবা বলে ডাকি কারন আমার বাবা নেই। বাবা নেই বলতে আমি অনাথ ঠিক তবে সেটা আমার মা এর জন্য। আমার মা আমার বাবার খুনি। নিজ হাতে আমার মা আমার বাবাকে খুন করেছে। নিজের চোখের সামনে আমি আমার বাবাকে খুন হতে দেখেছি। আমার বয়স তখন ৯ বছর। প্রতিদিন দেখতাম বাবা অফিসে গেলেই আমাদের বাড়িতে অনেক লোক আসতো। লোক বলতে কিছু আংকেল আসতো। আমি তখন কতকিছু বুঝতাম না। একদিন ভুল করে আমি আমার মা এর সাথে এক আংকেলকে ভিশন নোংরা আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলি। তখন আমার অত কিছু ধারনা ছিলো না। কিন্তু এতোটুকু বুঝতাম যে তারা কোনো নোংরামি করছে। আমার মা আমাকে দেখার পরেও বিষয়টা হালকা করে দেখলো। উনি তার কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। বাবা অফিস থেকে ফিরতেই আমি বাবাকে বলে দেই কথাটা। সেই দিন আমার ভুল ছিলো এটাই যে বাবাকে সবটা বলে দিয়েছিলাম। ঐ দিন যদি বাবাকে না বলতাম তবে আমার বাবা আজ আমার কাছে থাকতো। বাবাকে কথাটা বলার পরে বাবা কিছু বলল না। পরদিন সকালে বাবা অফিস যেতেই ঐ আংকেল বাড়িতে আসলো। আমার জন্য কিছু চকলেট নিয়ে। আমি চকলেট নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে পুতুল নিয়ে খেলছি এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখি বাবা মা এর সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছে। মা আর ঐ আংকেল বাবা কথা গুলো শুনছে। আচমকা মা বাবার গালা চেপে ধরে। ঐ আংকেল টা বাবার হাত পা ধরে বেঁধে ফেলে আর আমার মা বাবাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে খুন করে। ঐ দৃশ্য বর্ণনা করার মতো নয়। নিজে নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে দেখলাম। অনেক কেঁদেছি আমি। দুদিন মুখে কিছু তুলিনি। কিছু দিন যেতেই আমি আমার মা এর আসল রূপ দেখতে পেলাম। রোজ রোজ একেক জন আমাদের বাড়ি আসতো আর আমার মা তাদের নিয়ে ফুর্তি করতো। একদিন এক আংকেল আমাকে দেখে আমার মা কে উদ্দেশ্য করে বলে

— তোমার মেয়ের কত দাম হবে? বয়স কত ওর?

মা হেসে জবাব দিলো

— এই তো ১০ বছর। আর একটু ধৈর্য ধরো ওকেও আমাদের লাইনে আনবো।

মা এর কথাটা শোনার পরে আমার দমবন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। আমি ঐ দিন রাতে যখন মা অন্য একজনের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত পার করছিলো ঠিক তখনি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি। লজ্জা করছে ঐ মহিলাকে মা বলে ডাকতে। আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে থানায় এসে পুলিশ আংকেল কে সব কিছু বলে দেই। আর সেই পুলিশ আংকেল হলো আয়াদ ভাইয়ার বাবা। উনি আমার কথা শুনে আমাকে নিজের সাথে এখানে নিয়ে আসে। তারপর থেকে এখানেই থাকি আর এখান থেকেই পড়াশোনা করি। বাকি কথা ধিরে ধিরে জানতে পাবেন।

* সকাল হতেই রুমের বাহিরে বেশ চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ কানে ভেসে আসতে লাগলো অর্শির। অর্শি তারাতাড়ি দরজা খুলে বাহিরে আসতেই অবাক হয়ে যায়। অর্শি দেখতে পায় আয়াদ………………………

#চলবে……………………

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৮ ও শেষ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

গোধূলি লগ্ন অম্বরিতে রক্তিম আলোর ছড়াছড়ি। পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া। মৃদু শীতল বাতাসে গাছপালা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ফুলের সুবাস ভেসে যাচ্ছে। শান দাড়িয়ে আছে ছাদের কার্ণিশ ঘেষে আজ দেড় মাস পর জারা শানকে ছাদে ডাকছে। সেদিন রাতে বাসায় এসে জারা কড়া গলায় শানকে তার আসে পাশে আসতে বারণ করেছে তারপর আসলেও জারার রাগারাগিতে আর সাহস পাই নি। আজ জারা নিজে থেকে ডেকেছে ভাবতেই শান পুলকিত হচ্ছে মনে মনে জারা এসে শানের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলল

-‘ কেমন আছেন? ‘

-‘ এতোদিন ভালো ছিলাম না এখন ভালো আছি ‘

-‘ হঠাৎ এনি রিজন? ‘

-‘ তুমি ‘

-‘ আমি? আমি কেনো? ‘

-‘ এই যে নিজে থেকে ডেকে কথা বলার সুযোগ করে দিল তো বল কি বলবে ‘

-‘ বেশি ব্যস্ত ‘

-‘ উহুম তোমার জন্য আমি সমসময় ফ্রী ‘

-‘ হঠাৎ তুমি করে বলছেন যে? ‘

-‘ নিজেকে পরিবর্তন করছি সম্পর্কটা সহজ করছি চাইলে তুমি ও তুমি করে ডাকতে পারো যেটাতে তুমি কমফোর্টেবল ফিল করবে ‘

জারা শানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। জারা নিজের মনে বলল ‘ লোকটা যেনো আগের থেকে বেশি সুদর্শন পুরুষ হয়ে গেছে না-কি আমি নতুন দেখছি? ‘

-‘ আপনি কি কষ্ট পেয়েছেন? ‘

-‘ কষ্ট পাবো কেনো? ‘

-‘ এই যে একছাদের নিচে থেকেও দুটো ব্যাক্তি দু’প্রান্তে না আছে কথা বার্তা না আছে দেখা শোনা। আচমকা যখন দেখা হয় তখন তাছাড়া তো তখন হয় না ‘

-‘ নাহ এটা আমার পাওয়ার দরকার ছিলো। এর চেয়ে বড় শাস্তি পাওয়ার দরকার ছিলো তোর কষ্টটা ফিল করার দরকার ছিল আর যখন আচমকা তোমার আর আমার দেখা হতো তখন শান্তি পেতাম ‘
জারা হেসে বলল

-‘ আপনি অনেক পাল্টে গেছেন আপনার কথায় প্রকাশ পাচ্ছে ‘

শান কাতর গলায় বলল

-‘ তাহলে কি এখন আমাকে কাছে টেনে নেওয়া যায়? ‘

জারা হেসে বলল

-‘ অবশ্যই যায় সেজন্য তো এসেছি সবটা আপনার কাছে শুনতে ‘

-‘ আচ্ছা বলো কি শুনতে চাও ‘

-‘ আমি জানতে চাই আপনি আমার সাথে এতো মিসবিহেব কেনো করতেন? আবার এখন হঠাৎ এতো ভালোবাসা? ‘

শান হেসে এলোমেলো দৃষ্টি দিলো। বলল

-‘ তোমাকে কি আমি আজ কই মাস ভালোবাসি? না-কি তোমার আগে থেকে? তোমার কি মনে হয়? ‘

জারা বিষময় চোখে তাকালো শানের দিকে শান ভাবলেশহীন আকাশ পানে তাকিয়ে আছে জারা বলল

-‘ মানে কি বলছেন আপনি? বুঝিয়ে বলুন ‘

-‘ আচ্ছা তোমার মনে কি প্রশ্ন জাগেনি? যে বিয়ের আগের শান আর বিয়ে কথা উঠার পর বা বিয়ের পরের শান একদম ভিন্ন একদম অচেনা এতো পরিবর্তন হওয়ার কারণ কি? ‘

-‘ হ্যাঁ অবশ্যই জাগছিল কিন্তু তখন আমি ভাবছিলাম আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন নাহলে আমার মতো মেয়েকে আপনি পছন্দ করেন না ‘

শান কিছু বলতে যাবে তার আগে আজানের ধ্বনি ভেসে আসলো। শান কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো। জারা মাথায় কাপড় টেনে দিলো ভালো করে।

-‘ নিচে যাও ‘

-‘ আমি সম্পূর্ণটা না শুনে কোথাও যাবো না ‘

আজান শেষ হতেই শান জারাকে দোল নায় বসিয়ে বলতে শুরু করলো

-” আমার এখনো মনে আছে তখন তোমার সদ্য জন্ম একেবারে সাদা কিউট পুতুল ঠোঁট গুলো লাল সেই ঠোঁট হা করে কান্না করছিলে। তোমার কান্না দেখে আমি তোমাকে আদর দিয়ে দি আর তখন তোমার কান্না থেমে গিয়ে আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকো আমি সহ সবাই অবাক তখন ছোট মামা বলল ‘ বাহ ভাইয়ের আদর পেয়ে চুপ আর এতোক্ষণ আমার এতো কিছু করলাম চুপ হলো না ‘ তখন মামার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম ‘ ও আমার বোন না আমি ওকে বউ বানাবো লাল টুকটুকে শাড়ি পড়িয়ে বিয়ে করবো ‘
আমার কথা শুনে সবার কি হাসি সে হাসির থামাথামি নাই। রাগে দুঃখে আমি কেঁদে দিলাম সাথে সাথে তুমিও কেদে উঠলে ”

জারা লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো শান বলল

-‘ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ‘

-‘ নাহ আপনি বলেন থামলেন কেনো? ‘

-” আচ্ছা বলছি তারপর আমরা দু’জন বড় হতে লাগলাম আমার লাল পুতুল টাকে খুব ভালো লাগত দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে হতো আদর করতাম তাকে চকলেট দিতাম তার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে তাকে দূর থেকে দেখতাম অন্য কোনো ছেলেকে তারপাশে ঘেঁষতে দিতাম না তারপর সে বড় হলো সবটা উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো। তার বাবামা মারা গেলো এক্সিডেন্টে। সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলো। সে কাদলো খুব কাদলো তার চোখের পানি দেখে আমার খুব কষ্ট হতো। কিন্তু আমি নিরুপমায়। অতঃপর তার আমার বিয়ে হলো তাকে কষ্ট দিতাম তার কান্না দেখতাম লুকিয়ে সেও কাঁদত কিন্তু কি করবো এই পিচ্চিটাতো বুঝে না জীবন সহজ নয় তার মনের মতো সহজসরল নয়। তাই তাকে কষ্ট দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরাতাম তোর মনে নিজের জন্য ঘৃণ্য জন্মালো। আমি চাইতাম সে অনেক বড় হোক নিজের পায়ে দাঁড়াক কিছু করুন। আর হ্যাঁ আজ সে সফল আজ যদি আমি তাকে কঠিন না বানাতাম তাহলে সে আগের মতো অবুঝ রয়ে যেতো পাগলামি করত ভালোবাসা দিয়ে সবটা বোঝানো যায় না আবার যায় ‘

জারার চোখে পানি চিকচিক করছে শান তাকাতেই পানি গড়িয়ে পড়লো। জারা শানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো জারা ফুপাতে ফুপাতে বলল

-‘ আপনি আগে কেনো এগুলা বলেন নি? আপনাকে আমি শুধু শুধু কষ্ট দিলাম আপনি তো আমার ভালোর জন্য করছেন ‘

-‘ উহুম কিছু কথা আমি বলতে চাই নি তাও আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে খুব জঘন্য কথাগুলো ‘

-‘ ভালোবাসি আপনাকে ‘

-‘ আমি তোমাকে একটু ভালোবাসি না ‘

-‘ আমি বাসি আপনাকে বাসতে হবে সারাজীবন পাশে থেকে হাতে হাত রেখে হাঁটলে হবে আর কিছু চাই না ‘

-‘ কিন্তু আমার যে তোমাকে খুুব কাছ থেকে চাই ‘

জারা লজ্জা পেয়ে শানের বুকে মুখ লুকালো। শান শরীর দুলিয়ে হাসলো।

-‘ আপনি খুব খারাপ জানেন ‘

-‘ বউদের কাছে সব স্বামী খারাপ ‘

শান জারা কপালে চু’মু খেলো। বলল

-‘ রাতে খেয়ে রুমে আসবি না হলে তোকে তুলে আনবো মাইন্ড ইট ‘

জারা লজ্জা পেলো। কিছুক্ষণ পর বলল

-‘ জানেন মনি আমাদেরকে কেনো বিয়ে দিয়েছে? ‘

-‘ কেনো?’

-‘ আমাকে যেনো কেউ খারাপ কথা বলতে না পারে এমন কি আপনিও না ‘

বলেই জারা মুখ চেপে হাসলো।

-‘ খুব না মজা বুঝাবো। আমার ভালোবাসার অম্বরিতে পূর্ণ চন্দ্র সাথে তোমার দেখা মিলবে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে। থাকবে না কোনো দূরত্ব মানবে না কোনো বাঁধা ‘

সমাপ্ত

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-২৬+২৭

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৬ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

কথা মতো মুষলধারা বৃষ্টি মাথায় বাড়ি ফিরল শান আর জারা। বৃষ্টির পানিতে শহরতলী পানিতে টইটম্বুর। বাড়ি এসে দেখলো জারার চিন্তায় শান্তি বেগমের প্রেসার লো হয়ে গেছে। তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেন না। শান্তির এমন অবস্থা দেখে জারা কেঁদে ফেললো।

-‘ মনি তোমার এমন অবস্থা কেনো? আমার জন্য তাই না সব আমার দোষ তোমাকে বলে যাওয়া উচিত ছিল। সব আমার দোষ ‘

-‘ পাগলি মেয়ে এভাবে না বলে গেলে আমার টেনশন হয় না জানিস না তুই তোর ফোনটাও বন্ধ তোর একটা খবর জানি না ‘

-‘ সরি মনি আর কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে। ‘

-‘ আচ্ছা হয়েছে যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে কিছু ‘

-‘ তুমি খেয়েছ কিছু? দাড়াও আমি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনি ‘

কথাটা বলে জারা দৌড়ে রান্না ঘরে এলো। শান্তি স্যুপ খেতে পছন্দ করে না তাই সুজি বানালো। বানিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।

—-

তারপরের দিন গুলো আলাদা হলেও আবার নিত্যদিনের মতোই। শান একটু একটু করে পাল্টাতে লাগল। জারাও ব্যস্ত হয়ে গেলো। পুতুলের কেসটা ওপরমহল থেকে স্থগিত রাখার আর্দেশ দিয়েছে। এটাতে জারা কেঁদে ফেলেছিল। মেয়েটার মৃত্যুর শাস্তি দিতে পারল না বলে। পুতুলের মা আর ছোট ভাই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছে।

আজ ছুটির দিন বাড়িতে সকলে। শান্তি বেগম সুস্থ হয়ে গেছে এখনো আগের মতো হাঁটা-চলা করতে পারে। জারা রুটি বেলছে আর শান্তি সেগুলো ভাজছে। সেদিনের পর জারা বাসা থেকে চলে যাওয়া নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করে নি।

-‘ জারা শান এতো চুপচাপ হয়ে গেলো কেনো? আগের মতো চিল্লাপাল্লা করে না ‘

-‘ তোমার ছেলে পাগল তো সেজন্য পাগলের ডক্টর দেখিয়েছে তাই চেজ্ঞ হচ্ছে আস্তে আস্তে ‘

শান্তি বেগম অবাক হয়ে বলল

-‘ কি বলিস এগুলা ‘

-‘ তোমার ছেলের কাছেই শুনো ‘

শব্দ করে ফ্রিজ লাগানোর শব্দে জারা শান্তি চমকে উঠল। জারা রেগে বলল

-‘ ওটা আছাড় দেওয়ার জিনিস না নিজের টাকায় কেনা না তো বাপের টাকায় কেনা সেজন্য মায়া লাগছে না নিজের টাকায় কেনা হলে মায়া লাগত মনি তুমি কিছু বলতে পারো না সারাদিন এখানে ওখানে না ঘুরে তো অফিসে বসতে পারে ‘

শান্তি বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। শান রেগে বলল

-‘ আমি কেনো কিছু করবো আমার বউ বড় এডভোকেট তার টাকায় হয়ে যাবে ‘

-‘ ওহ গুড আইডিয়া তাহলে আপনি বাসার সব রান্না ঘরের কাজ সবটা করবেন আর আমি বাইরেটা সামলাবো যদি রাজি থাকেন তাহলে জানাবেন ‘

শান রেগে চলে গেলো। শান্তি বেগম মুখ চেপে হাসলো।

-‘ মনি তুমি হাসছ? তোমার ছেলেকে আদর দিয়ে দিয়ে বাদর বানিয়ে ফেলছ সেদিকে খেয়াল আছে? এবার তো লাগাম টেনে ধরো? ‘

-‘ বউ আছে তো আমি কেনো বলবো তুই বলবি ‘

-‘ তোমার ঔ আদধামড়া ছেলেকে আমি মানুষ করতে পারবো না আমার ওতো ঠেকা পড়ে নাই বুঝলে? ‘

-‘ তাই বুঝি। ‘

-‘ হ্যাঁ তাই ‘

৪ জনে খেতে বসলো। শান তার বাবা আসলামকে বলল

-‘ বাবা আমি কাল থেকে অফিসে বসতে চাই ‘

-‘ ভালো কথা। আমি ও তোমাকে বলবো ভাবছিলাম তুমি সব দায়িত্ব নিলে আমার ছুটি। কাল ম্যানেজারকে বলে দিবো সব বুঝিয়ে দিবে তোমাকে ‘

জারা খেতে খেতে বিরবির করে বলল

-‘ মানুষ হচ্ছে তাহলে? ‘

শান তাকালো জারার দিকে মেকি হাসি দিয়ে মুখ ভেংচি দিলো।

—-

রাতের মিশমিশে কালো আঁধার রাত ছাদের চারিদিকে রংবেরঙের বাল্বগুলো জ্বলচ্ছে। ছাদের পানি জমছে অল্প। জারা ছাদের দোলনায় বসে মেঘযুক্ত আঁধার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো উদ্দেশ্যহীন আজ চাঁদ তারার দেখা নেই কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে। মৃদু শীতল বাতাস কাঠগোলাপ গাছের ফুল নেই বললেই চলে। হাতে স্পর্শ পেতেই জারা চমকে কেঁপে ওঠেল। পাশ ফিরে শানকে দেখে বলল

-‘ আপনি এখানে? ‘

-‘ আমি ও তো প্রশ্ন করতে পারি তুই এখানে? ‘

-‘ আমি প্রায় আসি ‘

-‘ আমিও প্রায় আসি ‘

-‘ আপনি আমাকে কপি করছেন? ‘

-‘ কখন কপি করলাম আমি তো জাস্ট বললাম ‘

-‘ কপি না তা কি আমি যা বলছি আপনি তাই বলছেন কেনো? ‘

-‘ উত্তর একই তাই বলছি ‘

-‘ একদম মিথ্যা বলবেন না ‘

-‘ আমি যখন মিথ্যা বলছি তাহলে তুই সত্যিটা বলে দে ‘

জারা চুপ করে গেলো। যতকথা বলবে ততই কথা বাড়বে চুপ থাকায় শ্রেয়। শানও চুপ জারাও চুপ। জারা আড়চোখে তাকালো শানের দিকে শানও তাকিয়ে ছিল দু-জনের দৃষ্টি এক হলো। জারা চোখ সরিয়ে নিলো। শান তখনো জারার দিকে তাকিয়ে আছে জারা না তাকিয়েও বুঝতে পারছে। শান কিছুক্ষণ পর গান ধরল

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অন্যন্ত মায়ায়

জারা শুনলো। জারা এই মূহুর্তে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হলো শানের কাঁধে মাথা রাখতে। কিন্তু জারা নিজেকে দমিয়ে নিলো। মনে মনে বলল ‘ সম্ভব নয় ‘
জারা চট করে গানের রিলিক্সের দিখে খেয়াল হলো। মনে মনে বলল ‘ আমার চোখে সত্যি কি মায়া আছে? নাকি ওনি অন্য কারোর জন্য গায়ছে? ‘
জারা গানের মধ্যে চট করে প্রশ্ন করলো

-‘ আপনি কার জন্য গান গাইছেন? ‘

শান ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক সেদিক তাকালো শানের দেখা দেখি জারাও তাকালো। বলল

-‘ কি? এভাবে কি খুঁজছেন? ‘

-‘ তুই ছাড়া এখানে কেউ আছে? ‘

-‘ কই না তো ‘

-‘ তাহলে আমি কার জন্য গাইবো? ‘

-‘ আপনি আমার জন্য গাইছেন? কিন্তু আমার চোখে কি মায়া আছে ‘

-‘ কি জানে আছে হয়ত যে মায়ায় একজন বারে বারে পা পিচ্ছলে পড়ে ‘

-‘ কি সত্যি কে সে? ‘

শান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল

-‘ কিছু বুঝিস না তুই? আমি বলতে পারবো না খুঁজে নে ‘

শান গম্ভীর মুখে জারার দিক থেকে মুখ ঘুড়িয়ে ওপর পাশে তাকিয়ে রইলো। জারা শান আর জারার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। আসা থেকে এখন পর্যন্ত এখনো শান জারার হাতটা একই ভাবে ছুঁয়ে আছে।
নিরবতাবিচ্ছিন্ন করে শান বলল

-‘ কাল সন্ধ্যায় রেডি থাকিস ‘

জারা হাতের ওপর দৃষ্টি রেখেই বলল

-‘ কেনো? ‘

-‘ একটা জায়গায় নিয়ে যাবো ‘

-‘ কোথায়? ‘

-‘ গেলেই দেখতে পাবি ‘

-‘ এতো ত্যাড়াম করেন কেনো? সরাসরি বলে দিলেই হয় ‘

শান উত্তর দিলো না জারা আবার বলল

-‘ কাল না আপনার অফিসের ফাস্ট ডে তাহলে আবার কাল কই যাবেন? ‘

-‘ তো? ‘

-‘ দূর থাকেন আপনি আমি যায় ‘

জারা যেতে নিলেই শান হাত ধরে থামিয়ে দিলো। জারা থেমে গিয়ে বলল

-‘ আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন ‘

-‘ তোর কথা শুনতে আমি বাদ্ধ্য নয় ‘

জারা চুপ করে থেকে বলল

-‘ হাত ছাড়ুন ‘

-‘ যদি না ছাড়ি ‘

কথাটা বলে শান জারাকে ঘুড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। জারার নিশ্বাস ভারি হয়ে উঠলো। বলল

-‘ এসব কি করছেন? আপনি কি ফাজলামো পাইছেন ‘

-‘ আমার বউয়ের সাথে আমি যা ইচ্ছে করবো তোর কি? ‘

জারা শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল

-‘ আমি কিন্তু এখনো আগের কোনো কথা ভুলি নি ‘

শান থেমে ছেড়ে দিলো। জারা পিছু না ফিরে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৭ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

সোনালী রোদের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। জারা সকাল থেকে অস্থির হয়ে আছে শান জারাকে কোথায় নিয়ে যাবে ভেবে ভেবে চিন্তায় অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না আমার অদ্ভুত এক্সাইটমেন্ট ও হচ্ছে এই প্রথম শানের সাথে কোথাও ব্যাড়াতে যাবে। অবশেষে কাক্ষিত মুহূর্তটা আসলো। জারা খুঁজে খুঁজে কালো রংয়ের স্টোনের কাজ করা একটা থ্রি পিচ পড়ে নিলো। আয়নায় এসে নিজেকে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখল জারা নিজেকে বলল

-‘ ওতোটাও খারাপ লাগছে না চলবে ‘

জারা চুল গুলো সামনে এনে পিছনের জামার ফিতায় হাত দিতেই কারোর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো চমকে আয়নায় দেখলো শানকে দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। জারা নিজেকেই প্রশ্ন করলো ‘ মানিয়েছে কি দুজনকে? ‘

শান ফিতা বেঁধে দিয়ে ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো জারা নড়েচড়ে দাঁড়ালো বিমূঢ় হয়ে শানের কাছ থেকে সরতে চাইলো শান সরতে দিলো না। কোমড় থেকে পেট জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুঁতনি ঠ্যাকালো। আয়নার মধ্যে দিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে জারার বিশ্বাস হচ্ছে না শান এমনটা করতে পারে তাও এখন। শান নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে জারার পানে জারা নড়াচড়া করতে করতে বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার বলল

-‘ কি করছেন ‘

-‘ দেখছি ‘

-‘ তোকে ‘

-‘ আমাকে দেখার কি আছে? আগে দেখেন নি? ‘

-‘ হুম দেখেছি তো কিন্তু ওড়না ছাড়া যে তোকে হ*ট লাগে সেটা এতো কাছ থেকে দেখি নি ‘

কথাটা বলে শান চোখ টিপ মারলল। জারা চমকে নিজের দিকে তাকালো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে শানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। জারার কান্ড দেখে শান হো হো করে হেসে উঠলো। জারা ওয়াসরুমের দরজা দিয়ে উঁকি মেরে বলল

-‘ শ-য়-তা-ন, লু-চ্চা-মি জায়গা পাস না বের হ আমার রুম থেকে ‘

-‘ যা দেখার তো দেখেই ফেলেছি এখন লুকিয়ে লাভটা কি? ‘

-‘ ছিঃ লু-ই-চ্চা ‘

-‘ শুধু বউয়ের কাছে অন্য কারোরর কাছে না রেডি হয়ে নে আমি ও যাচ্ছি রেডি হতে ‘

শান চলে যেতেই জারা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো দৌড়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিরবির করে শানকে বকতে লাগলো। আধ ঘন্টা পর শান জারাকে টেক্সট করে

-‘ লজ্জা সাজগোছ শেষ হলে তাড়াতাড়ি নিচে আসবেন আমি বাইরে ওয়েট করছি ‘

রেডি হয়ে নিচে এসে শান্তিকে বলল

-‘ মনি তোমার ছেলের সাথে বের হচ্ছি কই যেনো নিয়ে যাবে বলল ‘

শান্তি বেগম হেসে বলল

-‘ আচ্ছা সাবধানে যাস ‘

জারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ তোরা যে সবটা মেনে দুটোতে এক হয়েছিস এতেই খুশি দোয়া করে তোরা সুখি হ ‘

শান্তি বেগমকে বলে গাড়ির কাছে আসতেই জারা দেখলো শান ও ব্ল্যাক সুট পড়ছে। জারা হাসলো একটু আগের কথা মনে পড়তেই জারা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে নিলো। জারাকে দেখে শান বলল

-‘ আসেন হয়েছে আপনার ‘

জারা ছোট করে উত্তর দিলো

-‘ হুম ‘

জারা গাড়িতে উঠে বসতেই শান জারার দিকে একপলক তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল

-‘ এতো লজ্জা? বাবাহ! বি কম্ফোর্টেবল জারা ‘

শানের মুখে নিজের নাম শুনে জারার হার্ট বিট বেড়ে গেলো কবে যে শেষ নিজের নাম শানের মুখে এতো কিউট করে শুনেছে ও নিজেও জানে না। জারা চুপ করে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো হুট করে প্রশ্ন করলো

-‘ কোথায় যাচ্ছি বললেন না তো ‘

-‘ গেলেই দেখতে পাবি ‘

জারা চোখমুখ কুঁচকে বসে রইলো চারিদিকে অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে গেছে কৃত্রিম আলোই সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শান একটা বড় রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল

-‘ নাম এসে গেছি ‘

শান গাড়ি পার্ক করে জারার কাঁধ জড়িয়ে হাঁটা ধরলো জারা চমকে গিয়ে শানের মুখশ্রী তে তাকালো। হলদেটে মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে বড্ড মানিয়েছে শানকে। জারা শানের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো শান বলে উঠলো

-‘ দেখা হয়ে থাকলে সামনের দিকে তাকা নাহলে হোটচ খেয়ে পড়বি ‘

জারা চোরা চোখে তাকিয়ে বলল

-‘ এহহ যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা ‘

-‘ জারা মার খেতে না চাইলে ওফ হয়ে যা ‘

জারা মুখ ভ্যাংচি দিয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগল। রেস্টুরেন্টের টপে আসতেই জারা দেখলো কতগুলো ছেলে মেয়ে বসে আছে। শানকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো শান জারার থেকে দুরত্ব রেখে দাঁড়ালো ছেলেগুলো এসে সকলে শানের ওপর ঝাপিয়ে পরলো। জারা মুখে হাত দিয়ে মনে মনে বলল

-‘ ওনি বেঁচে আছেন তো ‘

মনে ধক করে উঠলো। চোখ ছলছল করে উঠল কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে তাকিয়ে রইলো। শান কিছুক্ষণ ওদের সাথে মা-রপিট করলো। শান ঠিক আছে দেখে জারা মুখ বাকালো। জারার দিকে খেয়াল আসতেই একজন বলল

-‘ জারা না? হ্যাঁ তো আ’ম রাইট ‘

জারা চমকালো। এরা চিনল কিভাবে তাকে? সে-তো এদের কখনো দেখেই নি। জারা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। সকলের সাথে পরিচিত হয়ে কুশল বিনিময় করল। সকলের মুখে ভাবি ভাবি শুনে জারা বড্ড লজ্জা পাচ্ছে। জারাকে লজ্জা পেতে দেখে ওরাও আরো লজ্জা দিচ্ছে। একজন বলে উঠলো

-‘ মিষ্টি ভাবি বিয়ে তো করছেন আগেই ফুপি ডাকটাও কিন্তু আগেই শুনবো ‘

জারা লজ্জায় গুটিসুটি মেরে গেলো। জারাকে লজ্জা পেতে দেখে শান দূর থেকে ওয়ইনে চুমুক দিচ্ছে আর দেখছে।

-‘ তুই খুশি শান ‘

-‘ দেখে কি মনে হয়? ‘

-‘ তুই খুশি নস ‘

-‘ এটা তোর ভুল ধারণা ও খুশি তো আমি খুশি ‘

-‘ আমি ভালোবাসি তোকে বুঝিস না তুই ‘

-‘ রিতা তোর হ্যাসবেন্ড আছে সংসার কর মন দিয়ে ‘

-‘ তুই বললে সব ছেড়ে চলে আসবো ‘

-‘ আমি জারাকে ছাড়া কখনোই কল্পনাও করতে পারি না ‘

-‘ কিন্তু আমার যে তোকে চাই ‘

-‘ আমার জারাকে চাই ‘

-‘ একদিন তুই খুব পচতাবি দেখিস ‘

শান কিছু বলল না জারার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বেশ রাত করে ওরা বাসায় ফিরল শান জারার কাছে শুনল

-‘ আজকের সন্ধ্যা কেমন লাগলো? ‘

-‘ অনেক সুন্দর সবাই কত ভালো ‘

-‘ আর আমি? ‘

-‘ আপনি লুইচ্চা ‘

শান হেসে উঠলো বলল

-‘ বললাম না? সেটা শুধু বউয়ের কাছে অন্য কারোর কাছে না যদি অন্যর কাছে হই তাহলে তুই খুশি হবি? ‘

-‘ একদম মে-রে ফেলবো ‘

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-২৫

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৫ পর্ব] {বোনাস}
তাসনিম তামান্না

-‘ বাবাহ্! এতো ভালোবাসা তাহলে দূরে আসলে কেনো? আমার জন্য? তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো জারা আমি তোমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে আসে নি জারা এতো ভয় পাওয়ার কিছু নাই ‘

জারা চমাকালো। কি বলল মেয়েটা? ও কি ঠিক শুনলো নাকি সব স্বপ্ন? মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেলো। শানের কাছ থেকে সরে এসে বলল

-‘ মানে কি বলছেন আপনি? ‘

তোয়ালেটা শানের হাতে দিয়ে বলল

-‘ তোর বউয়ের মাথা মুছে দে ‘

শান মাথা দুলিয়ে তোয়ালে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। জারা তখনো জিজ্ঞেসাসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হেসে বলল

-‘ আমি মিতু। মানে হলো আমি আর শান ফেন্ড বুঝলে? আর তুমি কি আমাকে উল্টো পাল্টা বুঝে দূরে সরে এলে। তোমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না…. ‘

জারা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো। তখনি ছোট একটা মেয়ে ‘ মাম্মা ‘ বলে দৌড়ে এলো। জারার মাথায় সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মিতু হেসে বলল

-‘ আমার মেয়ে নিতু। আমি ম্যারিড। আমি জানি না তুমি আমাদের কোথায় কিভাবে দেখছ তার জন্য তুমি এই স্টেপটা নিলে আই থিংক তুমি সেদিন বিকালে আমাদের একসাথে দেখছ। আর সেদিন ই তুমি বাসা থেকে চলে আসছ ‘

মিতু পা এগিয়ে জারাকে দেখিয়ে বলল

-‘ এই দেখো আমার পা কেটে গেছিল সেজন্য ও আমার হাতটা জাস্ট ধরছিল আর তুমি যে এতো জেলাস হবে… ‘

জারা দেখলো মিতুর আংগুলে শুভ্র রংয়ের ব্যান্ডেজ করা। জারা এবার ভিষণ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। মিতু হেসে বলল

-‘ থাক লজ্জা পেতে হবে না। মাম্মা মামনিকে হাই বলো ‘

নিতু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলল

-‘ হাই মামনি। তুমি মামার বউ তাই না আমি মামার ফোনে তোমাকে দেখেছি ‘

জারা হেসে নিতুকে কাছে নিয়ে গাল টেনে আদর দিয়ে বলল

-‘ তাই? ‘

-‘ হ্যাঁ তো তুমি অনেক প্রিটি ‘

-‘ তুমি ও অনেক কিউট বাচ্চা। কি খাবে তুমি চকলেট, আইসক্রিম? ‘

-‘ উহুম আমি চকলেট খায় না দাঁতে পোকা লাগবে আর আইসক্রিম খেলে গলা ব্যথা হয় ‘

-‘ ওরে গুড গার্ল তো বল কি খাবে ‘

-‘ আমরা কিছু খাবো না আমার এখনি চলে যাবো নিতুর বাবা বাসায় আসতে পারে আমাদেরকে না পেয়ে টেনশন করবে। ‘

জারা মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলল

-‘ আই এম সরি আপু একচুয়েলি আমি বুঝতে পারি নাই ‘

-‘ সরি তে তো কাজ হবে না ‘

-‘ তাহলে? ‘

-‘ তোমরা আর ৫/১০ টা হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো সংসার করবে নো ঝগড়াঝাটি বুঝলে ‘

জারা চুপ করে রইলো। শান বলল

-‘ আমি খাবার ওয়াডার দিয়েছি তোরা খেয়ে তারপর যাবি আর নিহানকেও বলে দিয়েছি ‘

-‘ শুধু শুধু এসব করতে গেলি কেনো? ‘

-‘ তুই চুপ থাক বেশি বকিস না ‘

জারার অর্ডার করা পিৎজা এসেছে শান গিয়ে নিয়ে আসলো। জারা তখনো চুপ করে বসে রইলো। শান পিৎজা এনে নিতুকে দিলো। জারা মুখেও ধরলো কিন্তু জারা ১ বাইট নিয়ে আর নিলো না। মিতু হাসলো। বলল

-‘ জারা আমি কিন্তু উত্তরটা পেলাম না ‘

শান ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কিসের উত্তর? ‘

-‘ এই যে তোরা আর ৫/১০ টা হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো সংসার করবি নো ঝগড়াঝাটি বুঝলি ‘

জারা বলল

-‘ না আপু সেটা কখনো হয় না ‘

মিতু শান অবাক হলো জারার কথা শুনে। শান বলল

-‘ মানে? ‘

-‘ মানে বুঝেন না আপনি আমি আপনার সাথে সংসার করবো না আই ওয়ান্ট ডিভোর্স! ‘

শান আর মিতু অবাকের শীর্ষ গেলো মিতু বলল

-‘ তোমার মাথার ঠিক আছে জারা? কি বলছ এগুলা? একটা বিয়ে ছেলেখেলা নয় যে চাইলেই ডিভোর্স দিয়ে দেওয়া যায়। এটা একটা পবিত্র বন্ধ তোমরা তোমাদের সমস্যা গুলো একে অপরকে মিটিয়ে নাও। ডিভোর্স সব সম্পর্কের সমাধান নয় তোমরা ভাবো এখনো তোমরা ঠিক ভাবে সংসার করতে পারো নি। এখনি ই এই সিদ্ধান্ত? এখনো তো বাকি জীবন পড়ে আছে তোমাদের সমস্যা তোমরা মিটাবে তার থ্যার্ড পারসোনকে নামবা না তাহলে সমস্যাটা জটিল হবে ‘

জারা চুপ থেকে বলল

-‘ আচ্ছা আপু আমি সব মানলাম কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর গুলো দিন তো ওনি আমাকে পদে পদে অপমান করে, সকলের সামনে আমাকে ছোট করে, আচ্ছা ওনি আমাকে কবে থেকে ভালোবাসতে শুরু করেছে? আমি যে ওনাকে এতো বছর ধরে ভালোবেসে আসছি কই ওনি তো আমার ভালোবাসার মূল্য দেয় নি আর এখন যখন ওনি ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসলো ওনার বেলায় সাত খু-ন মাফ। ওনার বিষবাক্য গুলো আমার মনটাকে বারে বারে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় ওনার প্রতি একআকাশ সমান ঘৃণ্য জন্মায় তবুও মনের কোণে ভালোবাসা থেকেই যায়। আর জানেন এমনকি ওনি আমাকে ম-রে যেতে পর্যন্ত বলছে। তবুও আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম ওনি আমাকে ভালোবাসবে কিন্তু না ওনি বাসায় ফিরেও আমাকে সবটা সময় অপমান করে গেছে। আবার এখন এসেছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আচ্ছা এই ভালোবাসার রং যে বদলাবে না তার কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন আপু? ‘

কথা বলতে বলতে জারার গলা ধরে এলো। শান চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। পরিবেশটায় থমথমে গুমট ভাব চলে এলো।নমিতু কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল

-‘ হুম। জারা ডিভোর্স ছাড়া তুমি শানকে শাস্তি দিবে আর আমি জানি শান জীবন দিয়ে হোক সেটা রক্ষা করবে তো বলো তুমি ওকে কি শাস্তি দিতে চাও? ‘

জারা চোখ মুছে নিলো শরীরটা আর পারছে না সব শক্তি ফুরিয়ে ফেলছে। খাবার আসলো মিতু গিয়ে রিসিভ করলো। শান চুপচাপ বসে আছে। কোনো কথা বলছে না। জারা খাবার নিয়ে টেবিলে সার্ভ করতে লাগল। মিতু শানের কাঁধে হাত রেখে বলল

-‘ মেয়েটা বড্ড কষ্ট পেয়েছে তোর এমনটা করা উচিত হয় নি ভালোবাসা দিয়ে সবটা জয় করা যায় তুই যদি ওকে ভালোবেসে সবটা বোঝাতি তাহলে ও নিশ্চয়ই বুঝতো ‘

শান চুপ করে রইলো মিতু একটু থেমে বলল

-‘ আয় খেতে বস দুদিন তোরা কেউ ঠিক তো খাস নি এমন করে চললে তোরা অসুস্থ হয়ে পড়বি। ‘

-‘ এতোকিছুর পরেও তোর মনে হয় আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে? ‘

-‘ সবটা দোষ তোর। ঠিক হয়ে যাবে চাপ নিস না। এতো দিনের অভিমান কষ্ট পড়তে তো সময় লাগবেই ‘

শান দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ডাইনিং টেবিলের বসলো। জারা নিতুকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। মিতু বলল

-‘ জারা তুমি খেতে বসো আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি ঠিক মতো ২ দিন খাওনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ‘

জারা কিছু না বলে খেতে বসলো। এটা সত্যি তার শরীর আর চলছে না। বিরিয়ানি তার প্রিয় হবার সত্ত্বেও কেনো জানি খাওয়ায় রুচি খুঁজে পাচ্ছে না সব কেমন এলোমেলো লাগছে। মিতু বলল

-‘ জারা বল তুমি কি চাও ‘

-‘ আমি চায় ওনি স্বাভাবিক হোক একটা মানুষের এতো রাগ কিভাবে হয়? ওনার বিহেভিয়ার সা/ই/কো দের মতো। আই থিংক ওনার ডক্টর দেখানো উচিত। ‘

শান এবার চুপ না থেকে বলল

-‘ হোয়াট? আমাকে তোমার মানষিক রোগী মনে হয়? ‘

মিতু শানকে চোখ রাঙিয়ে জারার কথায় সহ মত পোষন করে বলল

-‘ জারা ঠিক বলছে শান আমার ও মনে হয় এটাতে এতো রিয়াক্ট করার কি আছে? আর জারা তোমার কিন্তু ওর কথাগুলো শোনা উচিত ও কেনো এগুলো করলো সেটা ‘

-‘ হ্যাঁ আমি শুনবো যে দিন ওনাকে আমার কাছে সুস্থ স্বাভাবিক মনে হবে সেদিন আমি নিজে ওনার কাছে যাবো ওনার সবটা কথা শুনবো ‘

-‘ সেটায় হবে ‘

শান থমথমে গলায় বলল

-‘ সবটা মেনে নিলাম। কিন্তু যা হবে সব ও বাড়িতে আমি তোকে এবাড়িতে একা রেখে যেতে পারবো না। ‘

জারা প্রথমে যাবে না বললেও মিতুর জোরাজোরিতে রাজি হয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-২৩+২৪

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৩ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

-‘ কার বিয়ে জারার? জারা তো ম্যারিড ওর আবার বিয়ে লাইক সিরিয়াসলি? ‘

শানের কথায় জেনো বজ্রপাতের ন্যায় বিস্ফোড়ন হলো। মহিলাটি অবাকের শীর্ষে চলে গেছে। জিয়ার মুখটা হা করে তাকিয়ে আছে। শান্তি আর জারা চোখ বড়বড় করে শানের দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলাটি বলল

-‘ তুমি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছ ছেলে ‘

-‘ মটেও নয় আপনার সাথে কি আমার ইয়ার্কি মারার সম্পর্ক না-কি আর একটা মেয়ের সম্পর্কে কিছু না জেনে না শুনে দুম করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন তাও মেয়েটা কি না আমার বউ! ‘

শান যে এসব কথা বলবে তা শোনার জন্য কেউ ই প্রস্তুত ছিল না। জারা এসব নিতে না পেরে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গেলেই শান জারাকে কোমড় জড়িয়ে ধরলো।

——

পিটপিট করে চোখ খুলতেই শানকে একদম মুখের কাছে দেখে জারা ধড়ফড়িয়ে উঠল। ভয়ে ঘমতে লাগল। শান তখনো রাগি চোখে একদৃষ্টিতে জারার দিকে তাকিয়ে। জারার যেনো শাক্তি ফুরিয়ে গেলো। বহু কষ্ট করে বলল

-‘ সরুন ‘

-‘ সরবো কেনো? আমি তোর হাসবেন্ড আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। এভাবে থাকার এতো ছাড় দিয়ে দিয়ে তোর এই অবস্থা ‘

জারা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল

-‘ মানে কি বলতে চাইছেন আপনি ‘

-‘ আমি কি বলি বা বলতে চাই তুই বুঝিস না? শুধু তো পারিস ভুল বুঝে দূরে সরে যেতে আর আমাকে কথা শোনাতে ‘

-‘ মানে? এতো রহস্য করে কথা বলেন কেনো আপনি যা বলবেন স্ট্রেট বলবেন। আর কি বললেন? আমি আপনাকে কথা শোনা? আমি বুঝি ধোঁয়া তুলশী পাতা। আমাকে যে কথায় কথায় সবার সামনে অপমান করেন তার বেলা আবার আমাকে বলতে আসেন ‘

-‘ খুব বেশি খই ফুটছে দেখি তোর মুখে বাহ ভালো তো ‘

-‘ তা আমাকে কি আপনার আগের মতো বোকা মনে হয়। যা বলবেন সব চুপচাপ মেনে নিবো? নো নেভার কাভি নেহি। আপনি যদি আমাকে ১টা কথা শোনান তো আমি আপনাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিবো ‘

-‘ বাহ বাবাাবাহ একটা কথা জানিস তো যারা নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে তারা বোকা হয় আর তুই সেই বোকা কেনো তার ওপরের বোকা হয়ে গেছিস ‘

জারা রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল

-‘ একদম ইনসাল্ট করবেন না বলে দিলাম আর আপনি সবার সামনে ওগুলো কেনো বললেন লজ্জা করে না আপনার ‘

-‘ আমার কেনো লজ্জা করবে লজ্জা তো তোর করা উচিত বিবাহিত হয়ে সিঙ্গেল বলে নিজেকে দাবি করিস আবার বিয়ে করবি বলে ছেলেও ঠিক করছিস ‘

-‘ হ্যাঁ আমি বিয়ে করবো তো আপনার কি কে হোন আপনি আমার? আপনি তো আর এই বিয়েটা মানেন না আমি বিয়ে করি আর না করি আপনার কি? ‘

শান জারার অধর মিলিয়ে দিলো জারা চমকে গেলো। প্রতিক্রিয়া করতে ভুলে গেলো। স্থির হয়ে রইল। বুকের ধুকপুকানি বারতে লাগলো কয়েকগুন। এটা তাদের বিয়ের পর দ্বিতীয় স্পর্শ! জারার মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ল। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে শান বলল

-‘ আমি তোর কে হই আশা করি আমি বোঝাতে পারছি ‘

কথাটা বলে শান চলে গেলো। জারার স্তম্ভিত ফিরে পেতেই লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকালো বালিশে। এই সময়ও হঠাৎ জারার মন বলল

-‘ এগুলো কি আব্দেও ঠিক হলো? ‘

জারার হঠাৎ মন খারাপ করে ওয়াসরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। আয়নায় নিজের মুখ দেখে নিজেই লজ্জায় গট হয়ে গেলো জারা। শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখলো শান্তি বেগম এসেছে। জারা নিজের লজ্জা দূরে সরিয়ে মুচকি হেসে বলল

-‘ মনি তুমি এসেছ ভালো করছ। তোমার সাথে আমার কথা ছিল তার আগে বলো ইশারা আসছে? ‘

-‘ হ্যাঁ। কি কথা বলবি? আর এই সন্ধ্যা বেলা তুই শাওয়ার নিচ্ছিস কেনো? ‘

-‘ কিছু হবে না। তুমি আগে বল তখন আমি অজ্ঞান হওয়ার পর কি হলো? ‘

-‘ কি আর হবে আমার ছেলে তোকে নায়কের মতো এসে ধরল আর তারপর বলল…

ফ্ল্যাসব্যাক

শান জারাকে নিজের কাছে এনে বলল

-‘ ও এখন প্রেগন্যান্ট আপনার এসব বিয়ের কথার চাপ নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আর কি কি বলছেন আপনি আমার বউকে? ‘

মহিলাটা ঘাবড়ে গিয়ে তুতলিয়ে বলল

-‘ আ আ আমি কি বলবো আ জব ত তো ‘

-‘ নিশ্চয়ই কিছু তো বলছেন না হলে ও এমন ভাবে জ্ঞান হারেবে কেনো? ‘

-‘ আমি সত্যি বলছি কিছু বলি নি ‘

-‘ ওর যদি কিছু হয় না আপনাকে আমি দেখে নিবো ‘

মহিলাটার মুখ চুপসে গেলো। শান এবার শান্তির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ আম্মু তোমরা এসো আমি জারাকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি আর টেনশন করো না যেনো ‘

শান জারাকে নিয়ে চলে গেলো। শান্তি বেগম শানের এতো পরিবর্তন দেখে মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু জারার এমন অবস্থা দেখে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলেন। শান্তি বেগম মনে মনে বলল

– ‘মেয়েটার আবার কি হলো? শান যেটা বলল সেটা কি ঠিক? সেটা যদি সত্যি হয় তাহলো আমি দাদুমনি হবো? ‘

শান্তির চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠল।

বর্তমান

জারা টাস্কি খেয়ে বসে আছে এসব কি হচ্ছে? ভেবে কুল পেলো না। তবে কি শানের মতিভ্রম হলো? শান কি ভালো হয়ে গেলো নাকি নাটক মাত্র।

শান্তি জারার হাত দু মুঠোয় নিয়ে হাসিহাসি মুখে বলল

-‘ আমি সত্যি দাদু হবো? জানিস না আমি যে কত খুশি হয়েছিলাম কথাটা শুনে ‘

জারা ফাটা চোখে তাকিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল

-‘ মনি তুমি তোমার ছেলের সাথে পাগল হয়ে গেছো? জানো না তোমার ছেলে মিথুক? এসব কিভাবে সম্ভব? ছি ছি আর কি কি মিথ্যা বলছে বল তো? আর তুমি ওসব বিশ্বাস করে নিলে? ‘

শান্তি বেগম কাঁদো কাঁদো মুখে বলল

-‘ একটু তো আমাকে দাদু বানাতে পারিস না-কি? আমাদেরকে চমকে দিয়ে একটা ছোট সদস্যকে আনতে পারিস না? ‘

জারা বোকাবোকা চোখে তাকিয়ে রইলো কি বলবে বুঝতে পারছে না এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে বলল

-‘ মনি তুমি অবুঝের মতো কথা বলছ কেনো? এটা কখনো সম্ভব না ‘

-‘ কেনো সম্ভব না? তোরা সব মিটিয়ে নিলেই সম্ভব এর বিহিত তো আমি করেই ছাড়বো ‘

জারা বেয়াকেলের মতো বসে রইলো। শান্তি বেগম শানকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো। কি হচ্ছে না হচ্ছে সবই যেনো জারার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

তারপরের ১ দিন গেলো জারার ঘরবন্দী হয়ে। লজ্জায় কারোর সামনে যেতেই ওর মরি মরি অবস্থা খাবারটাও রুমে খেলো। শানের মুখমুখি যেনো না হতে হয় সেই ব্যাবস্থা আর কি?

নিজের সাথে যুদ্ধ করে জারা আজ বিকালে বন্ধুমহলের সাথে দেখা করতে গেলো পার্কে। তাছাড়াও রুহানের সাথে কেসের ব্যপারে কথা আছে। কথা বলতে বলতে জারার চোখ গেলো পার্কের কোণে যেখানে কি না শান আর সেই মেয়েটা হাত ধরে হাটছে। জারা শ্বাস নিতে ভুলে গেলো। চোখ ফেটে পানি আসল। মনে মনে ভাবল।

-‘ যখনি ভাবি সব ঠিক হয়ে যাবে তখনি সবটা সবটা এভাবে এলোমেলো হয়ে যায় ‘

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৪ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এই থামে তো আবার শুরু হয়। সেদিন রাতে জারা চিঠি লিখে বৃষ্টি মাথায় বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে কারোর সাথে কিছু বলে নি। সাথে করে দরকারী যা আছে সব নিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। আর ও বাড়িতে যাবে না ঠিক করে নিয়েছে। ও বাড়ি থেকে আসার পরের দিন-ই ডিভোর্স পেপারটা ও বাড়িতে গিয়েছে।

সেই বাড়িটায় আবারও ফিরে এসেছে যে বাড়িটায় প্রতিটা কোণায় সৃতি জমে আছে। কতশত হাসি মজা, খুনসুটি, অভিমান প্রতিটা কোন জুড়ে। প্রতিটা কোণায় সেই আগের মতো জীবন্ত নেই মা নেই বাবা নেই খিলখিল করে হাসার শব্দ নেই তো জীবন্ত থাকবে কেমন করে। খুব করে জারা তার মা বাবাকে মিস করছে। এই বাড়িতে জারাকে শান্তি বেগম আসতে দিতেন না তেমন আসলেও বেশিক্ষণ থাকতো না। জারা যখন কলেজে একা যাওয়া আসা করতো তখন কলেজ বাদ দিয়ে এখানে আসত প্রায় তারপর অনেক দিন আর আডা হয় না পড়াশোনার চাপে ভুলে নি তবে আসতে মন চাই তো কিন্তু উপায় ছিল না যে। যখনি আসত কেঁদে কেটে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলত। এখনো এই আশা পর্যন্ত সব সৃতিচারণ গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কান্না পাচ্ছে জারার। তাই তো কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

প্রতি মাসে এ বাড়িটা পরিষ্কার করে বাড়ির কেয়ারটেকার কিন্তু তাও ময়লা। জারার আগেই সেই ছোট বেলার রুমে গেলো যেখানে তার সব জিনিস গুছিয়ে রাখা পুতুল গুলোর ওপরে ময়লা পড়ে কালো হয়ে গেছে। জারা খুব শখ করে রুমটা পিংক কালার করছিল পিংক কালার তার বড্ড প্রিয় ছিল। জীবনটা কত রঙিন ছিল। আর এখন সাদা কালো ছাড়া কিছু দেখতে পায় না।

জারা ভাংগা গলায় নিজে নিজে বলল

-‘ মৃত্যু কি কাছে না-কি বহু দূরে? এই ক্লান্তি নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না সবটা বিষাদে ভরপুর একটুকরো কি সুখ মিলবে না আমার জীবনে? না-কি এভাবেই চলে যাবে বাকিটা জীবন। নতুন কিছু কি ঘটবে না? যে ঘটনায় আমার জীবনটা আবার রঙিন হয়ে উঠবে? কিছু তো ম্যাজিক হোক আমার জীবনে আর কত কষ্ট লিখে রেখেছেন আমার ভাগ্য? ‘

জারার চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।

-‘ নিজের নিজে ছাড়া আর কেউ নেই। আচ্ছা আমি বেঁচে আছি কিসের জন্য কার জন্য? নিজের জন্য? কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য তো কিছু থাকে কিছু তো একটা থাকে আমার তো তা-ও কিছু নেই ‘

কলিংবেল বেজে উঠলো। জারা চমকালো

-‘ এখন দুপুরে আবার কে এলো? ফুডপ্যাডা থেকে খাবার আসল না-কি? ‘

জারা চশমা খুলে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ভালো করে মুছে নিলো। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। শিরি দিয়ে দৌড়ে নেমে দরজা খুলে সেই মেয়েটা আর শানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জারার থমকে গেলো চোখমুখ শক্ত করে রইল আর যায় হোক নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে না রাজ জারা।

-‘ আপনারা? কি চায়? ‘

শান উত্তর না দিয়ে জারাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। জারা বাহুতে ব্যথা পেয়ে চোখ মুখ কুচকে গেলো। মেয়েটা এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জারা শানের পিছনে পিছনে গিয়ে চেচিয়ে উঠে বলল

-‘ কি সমস্যা কি? আপনাদের এখানে এসেছেন কেনো? ‘

শান থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে জারা গলা চে-পে ধরে ওয়ালের সাথে লাগিয়ে বলল

-‘ একদম চেচাবি না গলা টি-পে মে-রে ফেলবো বড্ড বাড় বেড়েছে তোর ‘

জারার চোখ উল্টে যেতেই মেয়েটা এসে শানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জারাকে আগলে রেগে বলল

-‘ কি করছিস তুই? মেয়েটা ম-রে যাবে তো ‘

জারা কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে আসলো। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো মেয়েটার থেকে সরে বেসিনের গিয়ে মাথায় পানি দিতে লাগলো কয়েকবার গলা টানলো। বমি করলো। মেয়েটা গিয়ে জারা চশমা খুলে মাথায় ভালো করে পানি দিয়ে দিলো। জারা ক্লান্ত হয়ে মেয়েটার গায়ে ঢলে পড়ল। শান জারাকে দেখে চমকালো। দু’দিনে মেয়েটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখ গুলো ফোলা চোখ মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। শানের নিজের প্রতি অপরাধ বোধ কাজ করলো। মেয়েটা কষ্ট করে জারাকে সোফায় এনে বসিয়ে অন্য দিকে গেলো তোয়ালে খুজতে লাগলো। শান জারার পাশে বসে দুহাতে মুখ ধরল। জারা ক্লান্ত চোখ মেলে তাকালো। শানকে দেখে ভয় পেলো। দূরে সরে আসতে চাইল শান দিল না। জড়িয়ে ধরলো জারাকে। জারা কিছু বলতে গিয়ে দেখলো গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ঘাড়ে গরম তরল পদার্থ অনুভব করতেই কেপে উঠল জারা বহু কষ্টে বলল

-‘ দূরে যান আমাকে মেরে ফেলতে আসছেন তাই না আমি সব জানি দূরে যান একদম আমার কাছে আসবেন না ‘

শান আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ একদম মেরে ফেলব তোকে একদম আমাকে কষ্ট দিয়ে তোর খুব ভালো লাগে তাই না? দূরে গিয়ে কি সাদ পাশ হ্যাঁ তোকে আমি কখনো দূরে যেতে দিবো না বুকে আগলে রাখবো। ভালোবাসি তবুও বুঝিস না? ‘

জারা চমকালো! থমাকলো! মেয়েটার গলা শুনতে পেলো জারা

-‘ শান ‘

জারা এতোক্ষণ শানকে দু-হাতে আগলে না নিলেও এবার দু-হাতে আগলে নিলো শানকে হারানোর ভয় জমলো বুকে তার সাথে তো কখনো ভালো হয় না। শান জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই মুচকি হাসলো। চোখে জল মুখে হাসি অদ্ভুত লাগছে শানকে। শান যেনো বুকে শান্তি পেলো।

-‘ বাবাহ্! এতো ভালোবাসা তাহলে দূরে আসলে কেনো? আমার জন্য? তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো জারা আমি তোমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে আসে নি জারা এতো ভয় পাওয়ার কিছু নাই ‘

জারা চমাকালো। কি বলল মেয়েটা? ও কি ঠিক শুনলো নাকি সব স্বপ্ন? মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-২১+২২

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২১ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

কষ্টের পরে সুখ আসবে ক্ষনিকের জন্য হোক বা বাকিটা জীবনের জন্য হোক সুখ আসবে। তার মাঝে আবার কষ্ট আসবে। মান-অভিমান হবে, প্রেম হবে, ভালোবাসা হবে, স্বপ্ন হবে আবার সেগুলো পুরন ও হবে।

জারা অঝর ধারায় কেঁদে চলছে। তার জীবনে এতো কেনো কষ্ট? এতো কেনো কান্না? সুখের সন্ধান কি মিলবে না? না-কি সারাটা জীবন এভাবেই বুকভরা কষ্ট নিয়ে একাকিত্বে কেটে যাবে? জারা কাঁদতে কাঁদতে থেমে গেলো আর কাঁদবে না সে এই সম্পর্কে যখন এতোই বাঁধা এতো কষ্ট যেখানে একটুকরো ভালোবাসার নৌকা নেই সেখানে থেকে কি হবে? কার জন্য থাকবে যার জন্য এতো কিছু তার জন্য কি? কিন্তু আর কত? যথেষ্ট হয়েছে আর নয় যত তারাতাড়ি সম্ভব এই সম্পর্কে ইতি টানা উচিত!

জারা শোয়া থেকে উঠে হাতে ফোন নিলো। ফোন করলো কাউকে….

—–

সেদিনের পর কেটে গেলো বেশ কিছু দিন। জারা শানের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। শানও বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত জারার মুখোমুখি হলে দু-একটা কথা বললেও জারা উত্তর দেয় না। ইগনোর করে চলে আসে। শান বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে জারার যাওয়ার পানে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে চাই না শান তাই মেজাজ ঠান্ডা করে রাখে। দেখতে দেখতে ইশার বিয়ের দিন ও ঘনিয়ে আসলো।

~ইশার হলুদ সন্ধ্যা~

জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান রংবেরঙের কৃত্রিম আলোই ভরপুর। জারা ছাদে এসে দেখলো ছোট বড় সকলেই মোটামুটি আছে। মিউজিক চলছে ইশা স্টেজে উঠে নাচছে ইশার সাথে কাজিন আর ফেন্ডরাও নাচছে বড়রা উৎসাহ দিচ্ছে। ইশাকে আজ মিষ্টি দেখাচ্ছে হলুদ শাড়ি সাথে মেকাপ আর ফুলের গহনা। জারার দূরে ফাঁকা জায়গায় দাড়িয়ে দেখছে সবটা জারার হাসি পেলো এই পাগলী মেয়েটার জন্য সেদিন কাঁদছিল আজ কি সুন্দর নাচছে। জারা আজ সুতির কলাপাতা রংয়ের শাড়ি পড়ে আছে চুলগুলো বেনি করে ছেড়ে দেওয়া চোখে গোলফ্রেমের চশমা থাকায় চোখে কাজল দেওয়া সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

-‘ সেদিন ওভাবে না বলে চলে আসলি কেনো? আমাকে বলে আসতিস ‘

জারা চমকে পাশে ফিরে মুখের হাসি উড়ে গেলো। শানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সাথে সাথে সাবধানে শ্বাস নিলো। সুঠাম দেহে শানের সাদা পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে একেবারে অন্য রকম। জারা চোখ ফিরিয়ে মনে মনে বলল ‘ আপনি নামক মায়ায় আমি আর আটকাতে চাই না সব ছিন্ন করতে চাই আপনাকে মুক্তি দিতে চাই ‘

জারা মুখে ছোট করে বলল

-‘ এমনি শরীর খারাপ লাগছিল তাই ‘

-‘ ওহ তো আমাকে বলে আসলে কি হত? ‘

-‘ আপনি বিজি ছিলেন ডিস্টার্ব করে আপনার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করতে চাই নি ‘

-‘ এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো? ‘

-‘ আমি আবার কেমন ভাবে কথা বললাম সবার সাথে যেভাবে বলি আপনার সাথেও সেভাবেই বলছি ‘

-‘ সবাই আর আমি এক? ‘

-‘ অবশ্যই। আলাদা কিছু তো দেখতে পাই না ‘

শান কিছু বলতে যাবে তখনি সেদিনকের মেয়েটা ‘শান’ বলে ডেকে উঠল শান আর জারার চোখ মেয়েটার দিকে গেলো। মিউজিক বাজায় কেউ আর দূরে থাকায় মেয়েটার শান বলে ডাকাটা শান আর জারা ছাড়া কেউ দেখতে পেলো না। জারা দেখলো মেয়েটার শাড়ি পড়েছে যে কেউ দেখলেই এককথায় সুন্দরী বলে আক্ষায়ীত করবে। মেয়েটা প্রায় কাছাকাছি চলে আসায় জারার শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করলো বুকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ছোট করে বলল

-‘ আসছি ‘

আর দাঁড়ালো না একপ্রকার ছুটে চলে আসল। স্টেজে ইশা ক্লান্ত হয়ে বসে থাকা ওখানে গেলো। এখন রুমে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। ইশার পাশে বসে জুসের গ্লাস ধরিয়ে বলল

-‘ কি ক্লান্ত? ‘

-‘ হু এটারই দরকার ছিল ‘

জারা মলিন হাসলো। কিছুক্ষণ পর শান ঔ মেয়েটাকে নিয়ে ইশার কাছে আসলো। জারা উঠে চলে আসলো ‘মনি ডাকছে’ মিথ্যা বলে চলে আসলো। নিচে এসে শান্তির সাথে সাথে থাকলো এখন একা থাকলেই ওর কান্না পাবে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চাই ওর এভাবে কেঁদে কিছু পাওয়া যায় না।

—–

~ ইশার বিয়ে ~

ইশা সকাল থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছে। সকলে এতো বুঝিয়েও ইশার কান্না থামাতে পারছে না। ইশা নিজের ইচ্ছেই থামছে আবার কেদে উঠছে। পার্লারের মেয়েরা মেকাপ করাতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। শান এসব শুনে ওপরে আসলো

-‘ শুনলাম তুই না-কি কাঁদুনি বুড়ি হয়ে গেছিসছ ‘

ইশা কিছু বলল না শানকে জড়িয়ে ধরে কাদলো। ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক এমনই যতই ঝগড়াঝাটি করুক না কেনো মনেপ্রাণে ভালোবাসে দুজন দুজনকে। শানের চোখেও পানি চিকচিক করছে জারা দেখলো সেটা।

-‘ এই পাগলী কাঁদছিস কেনো? হুম তুই কেঁদে মেকাপ নষ্ট করার কোনো মানে হয়? উল্টো সকলে তোর কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া পেত্নী মুখ দেখে হাসবে ‘

ইশাকে অনেক কথা বুঝিয়ে শান ইশাকে থামালো। ধীরে ধীরে ইশার বিয়ে হয়ে গেলো। কত কাদলো মেয়েটা। কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে বলেছিল

-‘ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাবো না ‘

শানও কেঁদে ফেলছিল। একমাত্র বোনের বিদায়ে। ইশার সাথে জারাকে পাঠানো হলো।

—-

ইশাকে বাসায় এনে সব রিচুয়াল মেনেই ইশাকে রুমে নিয়ে গিয়ে চেজ্ঞ করালো। জারা এতো অচেনা মানুষের ভিরে আনকমফর্টেবল ফিল করছে। জিয়া এসে জারাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো জারা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

ঝকঝকে তকতকে নীল আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের ভেলা। মেঘের ভেলাগুলো এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে অচেনা অপরিচিত আত্মীয় স্বজনদের ভীরে জারা একা হয়ে পড়েছে কখন ওবাড়ির চেনা পরিচিত মুখ গুলো দেখতে পাবে। এখানে আসার পর থেকে জারার মেজাজ ক্ষীটক্ষীটে হয়ে আছে। তার অবশ্য বিশাল কারণ আছে আর সেটা হলো জোহানের ফেন্ড ভিষণ বাজে ভাবে জারার পিছনে লেগেছে। তার মা-ও না-কি ছেলের জন্য জারার মতো মেয়েকে খুঁজছিল। এই তো কাল রাতে ঘটনা……

ফ্ল্যাসব্যাক

রাতে সকল হইহট্টগোলের পর জারা ক্লান্ত হয়ে রুমে এসে শুতেই চোখে ঘুমের ঢল নেমে আসে। তখনি ফোন বেজে ওঠে জারার। ধরপরিয়ে উঠে বসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর প্রথমে ধরবে না ধরবে না করেও ধরল।

-‘ হ্যালো! মিস. জারা। আমি মারুফ বলছি আপনি চিনতে পেরেছেন। জোহানের ফেন্ড ‘

জারা ফোনের ওপাশের কথা শুনে জারা অবাক না হয়ে পারল না এতো রাতে ইনি কেনো ফোন দিলো ইশা ঠিক আছে তো? কথাটা ভাবতেই জারা ভয় পেলো।

-‘ জী ভাইয়া আপনি? আই মিন ফোন দিলেন যে ইশা ঠিক আছে ‘

-‘ হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আসলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ‘

জারার ভ্রু কুচকে এলো মনে মনে বলল ‘ওনার সাথে আমার আবার কি কথা থাকতে পারে?’

-‘ জি বলুন ‘

-‘ আসলে আমি আপনাকে….’

-‘ জি বলুন শুনছি ‘

মারুফ একটু সময় নিয়ে বলল

-‘ আমি আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি। এনগেজমেন্টের দিন থেকে আমার ঘুম নাই শুধু আপনার কথা ভেবে। আপনাকে আমার লাগবে। উইল ইউ ম্যারি মি ‘

জারা এবার বিরক্তিতে মাথা চুঁইচুঁই তবুও হাসি মুখে বলল

-‘ সরি ভাইয়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার ফিউচার ওয়াইফের প্রাক্তন থাকুক? ‘

-‘ আমি বিশ্বাস করি না প্লিজ আমার ব্যাপারটা একটু….. ‘

মারুফকে আর বলতে না দিয়ে বলল

-‘ রাখছি ভাইয়া ‘

ফোন কাটতেই আবার ফোন এলো জারার মাথায় এখন ঘুম ছাড়া কিছু আসছে না মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে যেনো তার ওপরে আবার এই বাঁশ। জারা ফোন রিসিভ করে ওপাশে কিছু বলতে না দিয়ে বলল

-‘ দেখুন ভাইয়া প্লিজ এই রাতে ডিস্টার্ব করবেন না আমার যা বলার তো আমি বলেই দিয়েছি। আপনি অন্য মেয়ে খুঁজে নেন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে বললাম তো আর আপনার মিনিমাম কমনসেন্স থাকলে আপনি আর আমাকে ফোন দিবেন না আশা করি ‘

জারা খট করে ফোন কেটে নিজেই নিজেকে বলল

-‘ “পুরান পাগলে ভাত পাই না নতুন পাগলের আমদানি ” কবে জানি আমি পাগল হয়ে যায় ‘

নিজে নিজে বকবক করতে করতে জারা ঘুমিয়ে পড়লো।

বর্তমান

জারা দেখলো ও বাড়ির সকলে এসে গেছে। জারা ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। কুশল বিনিময়ের পরে শান্তি মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। জেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেলেন।

জারা আর শান পাশাপাশি দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান্তি আর অন্য অন্য আত্মীয়রা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জারা আর শান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ কারোর সাথে একটা কথাও বলে নি। জিয়া এসে বলল

-‘ আপু আমার সাথে একটু এদিকে আসো ‘

জারা জিয়ার সাথে যেতে যেতে বলল

-‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ‘

-‘ আরে চলোই না গেলেই দেখতে পাবে। আর আমার কি মনে হচ্ছে বল তো? ‘

-‘ তুমি না বললে তোমার কি মনে হচ্ছে আমি কেমন ভাবে যানবো? ‘

-‘ হুম তাও ঠিক জানো আমার মনে হচ্ছে খুব শীগ্রই আমার একটা বিয়ের দাওয়াত পাবো।

-‘ আবার কার বিয়ে তোমার না-কি? ‘

জিয়া লজ্জা পেয়ে বলল

-‘ আরে দূর কি যে বলো না? নিজের বিয়ের দাওয়াত কি নিজে খাওয়া যায় না-কি আমি তো তোমার বিয়ের কথা বলছি ‘

জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ মানে? ‘

-‘ আরে চলো গেলে-ই দেখতে পাবে।

জারা চিন্তিত হয়ে হাটতে লাগলো। কি অপেক্ষা করছে কে জানে? জারা গিয়ে দেখলো। শান্তি থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা হাসি মুখে জারার দিকে তাকিয়ে আছে। জারা শুকনো ঢোক গিললো মনে মনে ভাবলো ‘ আমি আবার কোনো ভুল করে বসলাম না তো? ‘

জারা মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল

-‘ মনি। তুমি ডাকছ? ‘

শান্তি বেগম মুখ কালো করে তাকিয়ে রইলো। মহিলাটা বলল

-‘ বাহ! মা-শা-আল্লাহ মেয়ে তো দেখি খুব সুন্দরী আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে ‘

মহিলাটি জারাকে নিজের কাছে আনলেন। মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-‘ মা তোমার নাম কি? ‘

জারা ইতি মধ্যে বুঝে গেলো কি হচ্ছে জারা হাসি মুখে বলল

-‘ অায়রিন জারা আন্টি ‘

-‘ বাহ! তোমার মতো তোমার নামটাও মিষ্টি জারা ‘

মহিলাটা থেমে হাসি মুখে শান্তির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ কি বলেন আপা আপনার মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হিসেবে দিবেন তো? ‘

শান্তি বেগম হাসার চেষ্টা করে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই জারা বলল

-‘ মাফ করবেন আন্টি আমি বিয়ে করতে চাইছি না। আমার ক্যারিয়ার পড়ে আছে। আর…’

জারাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মহিলাটি বলল

-‘ আমি জানি মা তুমি পড়াশোনা শেষ করে এখন এডভোকেট। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না তোমার কোনো কিছুতেই বাঁধা দিবো না তুমি বিয়ের পর ও তুমি এটা করতে পারো ‘

জারা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না শব্দ গুলো যেনো হারিয়ে গেলো। মাথা নিচু করে উপায় খুজতে লাগল ফাঁকা ফাঁকা লাগল। জারা এতোক্ষণে বুঝে গেছে এই মহিলা একে বারে নাছোরবান্দা ভ-য়ংক-র মহিলা।

-‘ এখানে কি হচ্ছে? কার বিয়ের কথা হচ্ছে?

জারা চমকে মুখ তুলে তাকালো। শান দাঁড়িয়ে আছে। কেউ উত্তর দিচ্ছে না দেখে শান রেগে বলল

-‘ কার বিয়ে জারার? জারা তো ম্যারিড ওর আবার বিয়ে লাইক সিরিয়াসলি? ‘

শানের কথায় জেনো বজ্রপাতের ন্যায় বি-ষ-ফোড়ন হলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১৯+২০

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৯ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

আজকের দিনটা অদ্ভুত কখনো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে বৃষ্টি তো কখনো বা আকাশে মিষ্টি রোদ সাথে শীতল মন মাতাল ছুঁয়ে যাওয়া বাতাস তো আছে। সেই আকাশ পানে গভীর উদাসীন চোখে তাকিয়ে আছে জারা। মনটা তার বিক্ষিপ্ত, অগোছালো, বিরক্তিতে ভরপুর। সেদিনের পর কয়েকদিন কেটে গেছে জারা নিজেকে শান্ত করতে পারি নাই উতলা মনে নিজেকেই বার বার দোসারোপ করছে আগের চেয়ে এখন একেবারে শান্ত হয়ে গেছে শান ঝগড়া করতে আসলেও জারা চুপ থাকে কিছু বলে না প্রয়োজনীয় কথা একটা কথাও তার মুখ দিয়ে বের হয় না।

ইশার বিয়ের আর বেশিদিন বাকি নেই। বাড়ির সবাই হুলুস্থুল বাধিয়ে দিয়েছে। আজ সকলে মিলে ইশার বিয়ের শপিং করতে যাবে। তাতে জারা বাঁধ সাধলেও শান্তির ধমক খেয়ে আর কিছু বলে নি এখন সাদামাটা হয়ে রেডি হয়ে সবার আগে ড্রাইংরুমে এসে বসে আছে। এক এক করে সকলে আসলো। জারা চুপচাপ বসে আছে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে শান ড্রাইভিং সিটে বসে জারার দিকে আড় চোখে তাকাছে বার বার পিছনে বসে কাজিনরা গল্পের আড্ডা জমিয়েছে হাসাহাসির রোল পড়ে গেছে। জারার খুব বিরক্ত লাগছে। কিছু বলতেও পারছে না। চোখ মুখ কুঁচকে বসে রইল। শপিং মলে এসে জারা এককোনায় চুপ করে ঘাপটি মেরে বসে রইল। শপিংয়ে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে ওরা। জারা একটা কিছু ও কিনে নাই শুধু চুপচাপ বসপ সব দেখছে। শান এগুলো দেখতে দেখতে নিজেও বিরক্ত হয়ে গেছে জারার ওপর। শান বিরক্তি নিয়ে জারার কাছে গিয়ে জারাকে হ্যাচকা টানে উঠিয়ে দাঁড় করালো জারা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো শান কি করতে চাইছে। কিন্তু শান কিছু না বলে জারার হাত ধরে টেনে সকলের চোখের আড়ালে নিয়ে গেলো জারা হাত ছাড়াতে চাইলেও পারল না পুরুষালীর শক্তির সাথে।

-‘ কি সমস্যা তোর?

জারা কিছু বলল না শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে। শানের রাগের মাত্রা তিরতির করে বাড়তে লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘ কি হলো কথা বলছিস না কেনো বোবা তুই? কথা বলতে পারিস না? ‘

জারা কিছু বলতে যাবে তখনি জিহানের বোন জিয়া এসে বলল

-‘ তোমরা এখানে কি করছ সকলে খুঁজছে জারাপু তোমাদের ‘

শান বলল

-‘ জিয়া আপনি গিয়ে বলুন জারার মাথা ব্যথা করছে সেজন্য আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি ‘

-‘ কিন্তু…. ‘

-‘ আপনি প্লিজ কষ্ট করে বলে দিবেন ‘

জারা মুখ খুলে বলল

-‘ না না আমি কখন….’

শান ধমক দিয়ে বলল

-‘ শাট আপ এতোক্ষণ যখন কথা বলিস নি তখন এখনো কথা বলবি না ‘

কথাটা বলে জারাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো জিয়া হা করে তাকিয়ে দেখলো। জারা মনে মনে ভয়ে শেষ এখন না জানি শান আবার কি করে বসে। একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে জারাকে বাসায় আনল শান। বাসা এখন ফুল ফাঁকা সুমি ও নাই। জারাকে সোফায় বসিয়ে শান গ্লাসে পানি এনে জারাকে দিলে জারা একচুমুকে শেষ করে বলল

-‘ বাসায় আনলেন কেনো? মনি জানলে কষ্ট পাবে ‘

-‘ ওহ রেলি। মনি কষ্ট পাবে? মনি যে তোর এই চুপচাপ বসে থাকা দেখে যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা তোর চোখে পড়ে না? ‘

জারা চুপ করে থাকলো। শান আবারও বলল

-‘ তুই কিছু বুঝিস বা এতো অবুঝ কেনো তুই? তোর চুপ করে থাকায় একজনের বুকটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। হৃদয় দহনটা তুই একমাত্র নেভাতে পারবি বুঝিস না তুই কিছু বুঝিস না অবুঝ রয়ে যাবি সারাজীবন। একজন যে তোকে দিনের পর দিন ভালোবাসে সেটা তুই বুঝিস না তার খারাপ গুলোই শুধু দেখে গেলি ভালো গুলো তোর চোখে পড়ে না তার কষ্ট তোর চোখে পড়ে না তার কষ্টে তোর কষ্ট হয় না? ‘

শানের এমন প্যাচানো কথায় জারা স্তব্ধ হয়ে গেলো বুঝতে অসুবিধা হলো না শান কি বলছে। অজান্তেই মনটা পুলকিত হয়ে গেলো চোখে পানি ভির জমলো। কিছু বলার আগেই বাসার সবাই চলে আসলো। অতি সাবধানে লুকিয়ে চোখের অশ্রু কণাগুলো মুছে নিলো।

জারা শান চলে আসায় কেউ কোনো কথা জিজ্ঞেসা করলো না একটু এসপ্সেচ দেওয়া উচিত তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হওয়া দরকার আর কতদিন তারা এমন দূরে দূরে থাকবে? আব্দেও কি তাদের ভালোবাসা, প্রেম নামক শব্দ গুলো দুজন দুজনকে বলতে পারবে?

সকলে ক্লান্ত হয়ে যার যার রুমে চলে গেলো জারা নিজেও চলে গেলো। শানের সামনে কেনো জানি হঠাৎ লজ্জা লাগতে শুরু করছে।

সন্ধ্যার দিকে সকলে মিলে ইশার বিয়ের শপিং গুলো দেখতে লাগলো। জারা নিজেও সেখানে ছিল। যতসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। সকলের সাথে থেকে ডিপ্রেশন থেকে বের হবার চেষ্টা করছে। ইশা বলল

-‘ জারা আপু তুমি তো কিছুই নেও নি তাহলে? ‘

-‘ আমার যা আছে তাতে হয়ে যাবে কেনা লাগবে না কিছু ‘

শান্তি বেগম বাঁধ সাধলেন বলল

-‘ না কাল তুই আর শান গিয়ে নিজের পছন্দ মতো কিনে আনিস শানও কিছু কিনে নি ‘

-‘ লাগবে না মনি ‘

-‘ আমি বলছি মানে লাগবে ‘

জারা চুপ হয়ে গেলো। মনি কষ্ট পাই এমন কিছু করতে চাইছে না তাছাড়া শানের সাথে কিছু কথাও আছে। শান কি সত্যি তাকে ভালোবাসে নাকি সেটা তার মনের ভুল? না-কি সে শুনতে ভুল করলো।

রাতে খাবার টেবিলে সকলে থাকলেও শান ছিল না। জারার অদ্ভুত লাগলো গেলো কোথায় মানুষ টা?
কথায় কথায় জানতে পারলো শান আজ ফেন্ডদের সাথে রাতে বাইরে বারবিকিউ পার্টি করবে। জারা আকাশ থেকে পড়ল এই বৃষ্টির সময় রাতে পার্টি তাও আবার বারবিকিউ। জারা নিজে নিজে ভাবলো জারা নিজে পাগল নাকি শান আর শানের ফেন্ডরা পাগল।

এটা নিয়ে সকলে হাসাহাসি করলো অনেক।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২০ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

লাল র-ক্তে চারিদিকে ভেসে যাচ্ছে মানুষজন ব্যথায় কাতরাচ্ছে। রক্তের বিঘুটে গন্ধে জারা চোখ মুখ কুচকে মুখ ওড়না দিয়ে চেপে ধরে ভয়ে তার সারা শরীর কাটা দিচ্ছে যেনো কোনো এক মৃত্যু পুরী। জারা এই অদ্ভুতদেশ থেকে বের হবার জন্য এদিক ওদিক দৌড়ে পথ খুঁজতে লাগল কিন্তু ও যেদিকেই যাচ্ছে সেদিকেই ব্যথায় কাতরানোর শব্দ জারা নিজের মাথা দু-হাত দিয়ে চেপে ধরল। হঠাৎ জারার কাঁধে কেউ হাত রাখলো জারা চমকে কিছু না ভেবেই পিছনে ফিরে তাকালো। শানকে দেখে জাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর বলতে লাগল

-‘ কোথায় ছিলেন হ্যাঁ কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন আপনি আমি কতটা ভয় পাইছিলাম। ‘

পেটের তীব্র ব্যথায় জারা পেটে হাত দিয়ে পিছিয়ে এলো শানের থেকে পেট থেকে র-ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। জারার মাথা ঘুরে গেলো। শরীরে শক্তি ফুড়িয়ে এলো। ছলছল চোখে শানের দিকে তাকিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। শানের হাতে র-ক্ত মাখা ধারালো ছু-রি। জারা থমকে গেলো ঝাপসা চোখে শানের অধরে লেগে থাকা অদ্ভুত সুন্দর হাসিটা যেটাতে বার বার ম/রে যেতে ইচ্ছে হত। আজ সেই হাসিতেই খু/ন হলো!

জারা চিৎকার দিয়ে উঠে বসল। দরদর করে ঘাম কপাল বেয়ে পরতে লাগল। জারা চারিদিক দেখল ড্রিম লাইটের আলো বাইরে ভোরের আলো ফুটছে থাই খোলা থাকাই স্পষ্ট সবকিছু। না সে রুমেই আছে জারা পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ডেলে ঢকঢক করে পানি খেলো নিজ মুখেই বলল

-‘ কি ভ-য়ং-কর স্বপ্ন! তাও আবার শান আমাকে খু-ন! না না শান ভাইয়া আর যায় করুক এটা করতে পারে না এটা আমার বিশ্বাস করি না। ‘

জারা এপাশ ওপাশ ফিরে আর ঘুম হলো না উঠে নামাজ আদায় করে মন স্থির হলো। ছাদে কিছুক্ষণ পায়চারি করে রুমে এসে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলো। ৮টার দিকে নিচে নামলো জারা অনেকে তখনো ঘুমাচ্ছে আবার অনেকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করছে। নিচে এসে দাঁড়াতেই শানের ফুফু বলে উঠলো

-‘ কি রে শান্তি বউকে এতো ছাড় দিস কেনো? বোনের মেয়ে বলে? দেখিস একদিন মাথায় উঠে নাচবে এতো লায় দিস না পড়াশোনা করছে এবার স্বামী সংসারের হাল ধরুক তা না আবার কি না-কি করে রাতের বেলায় ও বাসার বাইরে থাকে এগুলো কিভাবে মানিস? রাতবিরেতে বাইরে থেকে কি করে খোঁজ খবর রাখিস তো না-কি সেটাও করিস না? ‘

শানের আরেক ফুফু বলে উঠলো

-‘ শান্তি তোমার ছেলে আর ছেলের বউ আলাদা থাকে না-কি? তেমন টাই তো দেখলাম বাবা তোমাদের ব্যাপার স্যাপারই তো আলাদা তা কি সমস্যা বউয়ের…..’

পরের কথাটা কি সেটা জারা বুঝতে পারলো। এমনিতেই সকালের স্বপ্নটার জন্য মন খারাপ ছিল। তার ওপরে বিষবাক্য শুনে বড্ড কান্না পেলো মন বিষিয়ে উঠলো জারার কিন্তু কাদলো না পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে থাকলো মাথা নিচু করে। কষ্টে কান্নায় চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। জারা জানে শানের বড় ফুফু মেয়েকে শানের সাথে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তাই তো যতবারই আসে ততবারই জারাকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করে উল্টো পাল্টা কথা বলে জারাকে ছোট করে দেয়।

শান্তি মুচকি হেসে বলল

-‘ আমার সংসারে তোমরা হস্তক্ষেপ না করলেই খুশি হবো আর কি বললে ও আমার বউমা নয় ও আমার মেয়ে আর ও কি হবে ওরা এখনো সংসার শুরু করে নি আর না ওরা সংসার ব্যাপারে কিছু বোঝে এখনো তো ওদের পুরো জীবন পড়ে আছে আস্তে আস্তে শুরু করুন ডিসিশন নিক ওরা কি করবে তোমরা আমি বললেই কি ওরা শুরু করতে পারবে? না তার জন্য ওদের প্রিপারেশনেও দরকার তাই ওদের ব্যাপার ওদের বুঝতে দাও ‘

জারার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো । অপমানে তাদের মুখ থমথমে হয়ে আঁধার নেমে আসল। জারা এগিয়ে এসে বলল

-‘ মনি কিছু লাগবে করে দিবো? ‘

-‘ না তুই চা খাবি চা করে দিবো? ‘

-‘ না মনি ইচ্ছে করছে না আমি রুমে গেলাম দরকার পরলে ডেকো। ‘

জারা রুমে এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। জারার চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো জারা মুছল না ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ল কখন জারা নিজেও জানে না। ঘুম ভাংগলো শান্তির ডাকে। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল

-‘ হ্যাঁ মনি বলো’

-‘ কি বলবো তোর এতো ঘুম কোথা থেকে আসলো? রাতে ঘুম হয় নি তোর? ‘

-‘ হ্যাঁ রাতে ঘুমাইছি তো এখন একটু আগেই ঘুমালাম ‘

-‘ একটু আগে? আমি তোকে দু-বার এসে দেখে গেছি ডাকি নাই সকালপ খাস নি এখন দুপুর দুইটা বাজে দুপুরেও কি খাবি না? না-কি ঘুমাবি? ‘

জারা আকাশ থেকে পড়ল লাফ দিয়ে উঠে বসে বলল

-‘ মানে এখন দুপুর? ‘

শান্তি বেগম হেসে বলল

-‘ জি হ্যা ম্যাডাম উঠে খেয়ে সাওয়ার নিয়ে রেডি হন শপিংয়ে যাবেন না? উঠেন ‘

জারা মুখটা প্যাচার মতো করে বসে রইলো। শান্তি তারা দিয়ে চলে গেলো।

জারা উঠে অগোছালো চুলগুলো খোলা হাতে খোপা করে নিজেকে বকতে বকতে বলল

-‘ সত্যি আজ এতো ঘুম কোথা থেকে আসলো এখনো ঘুম পাচ্ছে আমার দূর ‘

জারা ঝটপট সাওয়ার নিয়ে নিচে চলে আসলো তখন নিচে কেউ ছিল না। শান্তি রান্নাঘরে কি যেনো করছিল জারা যেতেই বলল

-‘ এতো দেরি হলো কেনো আয় বস খেয়ে নে। ‘

-‘ সাওয়ার নিয়ে আসলাম আসো বসো তুমি ও তো খাও নি’

-‘ কেমন করে বুঝলি? ‘

-‘ আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া খাও না’

-‘ পাকা বুড়ি তো তুমি ‘

জারা হাসল।

——–

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলল সূর্যের রক্তিম আভা ছড়ানো চারিদিকে। গাড়িতে বসে আছে শান আর জারা দুজনেই চুপ নিরবতা ভেঙে জারা বলল

-‘ আপনি জানি কাল কি বলছিলেন? ‘

শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

-‘ কখন? ‘

জারা বলতে নিয়েও মনে মনে বলল

-‘ আচ্ছা আমি যদি ওনাকে সরাসরি জিজ্ঞেসা করি ওনি আমাকে ভালোবাসে কি না আর ওনি যদি আমাকে অপমান করে তখন। না থাক কিছু জিজ্ঞাসা করে মুখ নষ্ট না করায় ভালো ‘,

জারা ছোট করে উত্তর দিলো

-‘ কিছু না ‘

শানও আর কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো। আর ওদের মাঝে কথা হলো না। টুকটাক যাও হলো শপিংয়ের বিষয় এ।

শপিংয়ের মাঝে হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে শানকে জড়িয়ে ধরলো। শানও হাসি মুখে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো। জারার পৃথিবী যেনো উল্টে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১৭+১৮

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৭ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

আত্মীয় স্বজনরা এখনো যায় নি। জারা শান্তিকে সাইডে নিয়ে গিয়ে বলল

-‘ মনি আমি কিন্তু এ বাসা থেকে চলে যাবো ‘

শান্তি অবাক হয়ে বলল

-‘ ওমা কেনো কি হইছে? কেউ কি কিছু বলছে তোকে? বল কে কি বলছে? তাকে এখন দেখে নিচ্ছি ‘

-‘ ওফ্ফ মনি আমাকে কে কি বলবে করছে তো তোমার গুনধর ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে ‘

শান্তি বেগম চমকে উঠে বলল

-‘ ও কি করছে আবার? ‘

জারা কাঁদো কাঁদো মুখে বলল

-‘ কি করে নি সেটা বলো? কাল রাতে আমার রুমে ছিল আমি ইশার রুমে ছিলাম ইনফেক্ট কাল অনুষ্ঠানে যে শাড়িটা পরছিলাম সেটা কা-চি দিয়ে কেটে রেখে কোথায় চলে গেলো। আমার রুমটা এলোমেলো করে রাখছে। আমার আর ভালো লাগছে না মনি আমি চলে যাবো কিন্তু বলে দিলাম’

শান্তি বেগম অবাক হয়ে গেলো মনে মনে খুশি হলেও মুখে বলল

-‘ মানে? ও এগুলো করছে? ‘

-‘ তা আর বলতে মনি তোমার ছেলে আমাকে খুব জ্বালাছে আমি কিন্তু চলে যাবো ‘

-‘ এমন করিস না মা আমার আচ্ছা আমি ওকে বকে দিবো খুশি ‘

-‘ না আর বলে দিবে আমার পিছনে যেনো না লাগে বলে দিলাম ‘

জারা নিজে নিজে বকবক করতে করতে চলে গেলো। শান্তি বেগম হাসলেন হেসে বললেন ‘পাগল দুইটা ‘

জারা রুমে গিয়ে রুম পরিষ্কার করলো কাঁ-চি দিয়ে কাটা শাড়িটা একবার হাত বুলালো এই শাড়ি প্রিয় ছিল সেটাই নষ্ট হয়ে গেলো।

আসলে প্রিয়/ পছন্দের মানুষ বা বস্তু কখনো থাকে না। সেগুলোই সবার আগে নষ্ট হয়ে যায়।

জারা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে গুছিয়ে নিলো সবটা।

সকালে নাস্তা করে অনেক আত্মীয় স্বজনরা চলে গেছে। রয়ে গেছে মামাবাড়ির সবাই ১৫ দিন পর বিয়ে এখন থেকে সবাই সব প্লান শুরু করে দিসে। কে কি পড়বে, কে কিভাবে সাজবে, কে কিভাবে নাচবে আরও কত কি! ইশা মন খারাপ করে রুমে বসে রইলো জারা গেলো ইশাকে দেখতে শান্তি রান্নাঘরের দিকটা দেখছে এতোজনের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। জারা ইশার রুমে গিয়ে দেখলো ইশা জানালা ধরে মেঘলা আকাশ পানে উদাসীন চোখে তাকিয়ে আছে। জারা অবাক হলো ইশার এমন মন মরা অবস্থা দেখে। অবাক হবারই কথা ইশা হাসি খুশি প্রাণ উচ্ছল মেয়ে। তার মন খারাপ কারোরই সহ্য হবে না। জারা ইশাকে ডাকলো

-‘ ইশা!….. তোমার কি মন খারাপ? ‘

ইশা চমকে জারাকে দেখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বিছানায় বসে জারা কেউ বসিয়ে বলল

-‘ আপু তুমি! আরে না কি যে বলো আমার আবার মন খারাপ ‘

-‘ আমি জানি তোমার মন খারাপ বিয়েতে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে সে জন্য তাই না? ‘

ইশা ছলছল চোখে তাকালো জারার দিকে জারা দু-হাত বারিয়ে দিলো ইশা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না হাওমাও করে কেঁদে উঠলো। মন খারাপের সময় যখন কেউ আদুরে কন্ঠে কথা বলে ওপর ব্যক্তিটা আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে দেয়। জারা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিছু বলল না ইশা কান্না থেমে গেলে জারা বলল

-‘ এভাবে কাঁদলে হয় না-কি? তোমার বিয়ে হচ্ছে তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে তুমি নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে বিয়ে করবে তা না তুমি কাঁদছ? আর তুমি মন খারাপ কেনো করছ বলতো তুমি যখন খুশি তখন এবাড়িতে আসবে কোনো বাঁধা নাই। ‘

-‘ কিন্তু তোমাদের খুশিতে নাচ দেখে মনে হচ্ছে আমাকে বিদায় দিতে পারলে তোমরা খুশি ‘

জারা অবাক হয়ে আকাশ থেকে পড়ল

-‘ মানে? আমরা কখন নাচলাম? এই ইশা বল তো কি হয়েছে এতোক্ষণ ভালোভাবে কথা বলছিলাম সহ্য হয়নি তোর? ‘

-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি আমি তোমাদের কেউ না আমাকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচো? ‘।

-‘ তুই এসব কি বলছিস? কি হয়েছে বলতো?’

-‘ কি আর হবে? ভাইয়া তো বলল আমার বিয়ে হলে পুরো বাড়ি ওর আমি না-কি ওকে জ্বালায় আমি না থাকলে ওর শান্তি আর দেখো সকলে নিচে বিয়েতে নাচ, গান, সাজ নিয়ে কথা বলছে সবাই আমার দিকে কারোর খেয়াল নেই ‘

জারার হাসি পেলো কিন্তু হাসলো না বলল

-‘ দূর পাগলি চল নিচে চল এনজয় কর এসব কারনে কেউ মন খারাপ করে আর তোর ভাই আস্ত শ-য়-তা-ন কি করেছে জানিস? ‘

ইশা সোজা হয়ে বসে চোখ মুখ মুছে বলল

-‘ আমার সাধের শাড়িটা কাঁ-চি দিয়ে কেটে নষ্ট করে দিসে। যেটা তোর এনগেজমেন্টে পরছিলাম সামনে পেলে কি যে করবো আমি নিজেও জানি না। ‘

ইশা ঝংকার তুলে হেসে উঠলো। জারাও হাসলো। জারা ইশাকে নিয়ে নিচে চলে গেলো।

সারাদিন আর শানের দেখা মিললো না। সন্ধ্যায় সবাই নিচে ড্রাইংরুমে বসে নাস্তা আর আড্ডা দিচ্ছে। জারাও আড্ডায় যোগ দেওয়ার জন্য রুম থেকে বের হতেই শানকে ফোন টিপতে টিপতে এদিকেই আসছে। জারার মাথার আগুন ধপ করে জ্বলে উঠলো। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে শানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল

-‘ আপনার সাহস তো কম না আমার রুমে থেকে আমার রুম নোংরা করে আমার ফেভারেট শাড়ি কেটে শেষ করে দিলেন কেমন লোক আপনি? ‘

শানের চলন্ত পা থেমে গেলো ফোন থেকে চোখ তুলে জারাকে রেগে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখে বাঁকা হেসে বলল

-‘ আমি বারণ করছিলাম শুনিস নি তার ফল এটা ‘

-‘ তাই বলে শাড়িটা নষ্ট করে দিবেন? এমন করছেন কেনো আপনি? ‘

-‘ আমার কথা না শুনলে ওমন হবে ‘

-‘ কে আপনি? কোন দেশের প্রেসিডেন্ট যে আপনার কথা শুনতে হবে ‘

-‘ আমি তোর প্রেসিডেন্ট! ‘

-‘ মানে?’

-‘ ওতো মানে জানতে হবে না। তুই না-কি আমাকে সামনে পেলে কিস করবি বলেছিস ইশাকে ‘

জারা অবাক হয়ে লজ্জায় কান গরম হয়ে মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। মনে মনে ইশাকে ইচ্ছা মতো ধুয়ে দিলো। জারার মনে হচ্ছে এখনি মাটিটা ফাঁক হোক আর ও ঢুকে পরুক।

শান জারার দিকে ঝুঁকে গেলো জারা পিছিয়ে গেলো। শান বলল

-‘ লজ্জা পাচ্ছিস না-কি? ‘

জারা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনার সাথে ফাউল প্যাচাল পাড়ার টাইম নাই ‘

কথাটা বলে জারা আর একদণ্ড দাঁড়ালো না এক প্রকার ছুটে পালিয়ে গেলো। শান ঠোঁট চেপে হাসালো।

—–

সকালে সূর্যের রক্তিম আলো চারিদিকে আলোকিত বেশ বেলাও হয়ে গেছে সকলে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। জারা নিজেও আছে। রান্না ঘরে শান্তি আর মামিদের কাজে হেল্প করতে গেছিল সেই লেভেলের ঝাড়ি খেয়ে এখন মুখ গোমড়া করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। শান মুচকি মুচকি হেসে চলেছে।

হঠাৎ ঝংকার তুলে ফোন বেজে উঠলো জারার। ফোন কানে নিয়ে এমন কথা শুনে জারার হাতে পায়ে কম্পন শুরু হয়ে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৮ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

পরিবেশটা নিশ্চুপ হয়ে গেলো সকলে দৃষ্টির মধ্যে মনি জারা। জারার ঠোঁট তিরতির করে ক্রমশ কাঁপছে। চোখ লাল হয়ে পানি টলমল করছে কিন্তু কাঁদছে না জারা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে কাপা কন্ঠে বলল

-‘ কো থায় তু ই? ‘

-‘ ……… ‘

-‘ আমি আসছি ‘

জারা ফোন কেটে সকলের দিকে তাকালো। ইশা বলল

-‘ কি হয়েছে আপু? তুমি কাপছ কেনো ‘

জারা ইশার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল

-‘ তোমরা গল্প করো আমার একটা কাজ পড়ে গেছে আমি আসছি ‘

কথাটা বলে জারা আর কারোর প্রশ্ন করার সময় না দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে রেডি হতে আর দাঁড়ালো না। জারা তারাতাড়ি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হবার সময় শান্তি বেগম এসে বলল

-‘ কি হইছে তোর? এমন বিদধস্ত লাগছে কেনো? ‘

জারা তারাহুরা গলায় বলল

-‘ মনি আমি এখন কিছু বলতে পারবো না আমাকে যেতে হবে আমি এসে সব বলব এখন সময় নেই বলার আমি আসছি ‘

-‘ তুই একা জাবি বাসার গাড়ি নিয়ে যা আমি শানকে বলছি ‘

-‘ লাগবে না মনি তুমি টেনশন করো না আমি ঠিক মতো চলে আসবো ‘

বাসার কারোই বোধগম্য হলো না। জারার কি হইছে। শান বাইরে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছিল জারা আসতেই বলল

-‘ আসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি ‘

জারা চলন্ত পায়ে বলল

-‘ লাগবে না ‘

শান জোর করতে গিয়ে ও পিছিয়ে এলো এই মুহূর্তে জারার সাথে ঝগড়া করে মুড খারাপ করার মানে হয় না জারাকে দেখেই মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু হয়েছে এখন কিছু না বলায় বেটার । বাসার সামনে যেতেই জারা ভাগ্যক্রমে সিএনজি পেয়ে গেলো।
.
.
জারা হসপিটালের করিডোর দিয়ে দৌড়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসে রুহানকে দেখতে পেলো হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল

-‘ রু হান পু তু ল কই? ঠিক আছে ও? সুস্থ আছে ও বল না কি হলো কথা বলছিস না কেনো? ‘

রুহান জারাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল

-‘ শান্ত হ এখানে বস আগে ‘

জারা চোখ গেলো চেয়ারে বসে থাকা পুতুলের মা আর ছোট ভাইয়ের দিকে পুতুলের মা মুখে শাড়ি গুঁজে অঝর ধারায় কাঁধছে। জারা ধীর পায়ে মাথা নিচু করে পুতুলের মায়ের সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসে বলল

-‘ আ’ ম সরি আন্টি আমাকে মাফ করবে আমি অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারলাম না আবার পুতুলকেও সুরক্ষা দিতে পারলাম না ‘

পুতুলের মা ছলছল চোখে জারার দিকে তাকিয়ে অগোছালো ভাবে বলল

-‘ না মা এমন বলবে না আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট করছ কিন্তু কি বলতো আমাদের নিম্নবিত্ত দের কপালে কিছু থাকে না সবসময় খারাপটাই হয় দেখ না আমার মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে ও আমার প্রথম সন্তান আমাকে প্রথম মা বলে ডেকেছে আমি ওর কষ্ট কিভাবে সহ্য করব বল তো ও বাবা আজ বেঁচে থাকলে হত এমনটা হত না ভাগ্য আমাদের পালটে যেত কিন্তু হলো না সব এলোমেলো হয়ে গেলো ‘

কথা গুলো বলে আবারও অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো। পুতুলের ছোট ভাইটা বড়বড় চোখ তাকিয়ে আছে অবুঝ বাচ্চা কিছু বুঝতে পারছে না জারার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। জারা আর পুতুলের মাকে কিছু বলল না কি-ই বা বলবে? কি বলে শান্ত না দিবে? একটা মায়ের মেয়ের তার সবটা হারিয়ে ফেলেছে তার জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলে কখনোই সান্ত্বনা আসবে না। জারা চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে রুহানের কাছে গিয়ে কঠিন গলায় বলল

-‘ আমি তোকে বলছিলাম না পুতুলদের বাসায় পুলিশ ফোঁস দিতে তুই আমার কথা শুনলি না? দেখলি এখন ঔ শ-য়-তা-ন গুলো কি করলো? ‘

-‘ আমি পুলিশ ফোঁস দিয়েছিলাম জানি না কিভাবে কি হলো পুলিশ গুলো ওখানেই ছিল গু-লির আওয়াজ শুনতে ওরা ভিতরে গিয়েছে ‘

-‘ কেমন পুলিশ যে ওয়ান ডিউটিতে কাজের ঢিলেমি করে আজ তারা যদি ঠিক মতো ডিউটিটা করতো না তাহলে এখন পুতুল সুস্থ থাকতো আর অপরাধীও ধরা পরত ‘

রুহানের কিছু বলার মুখ থাকলো না চুপ হয়ে গেলো। জারা পুতুলের মায়ের পাশে বসে দোয়া করতে লাগলো যেনো পুতুল সুস্থ হয়ে যায়।

কয়েক ঘন্টা পর দুপুর ১২ টার ওটি থেকে ডক্টর বের হলো। সবাই ডক্টরের কাছে গেলো।

-‘ সরি! সি ইজ নো মোর ‘

পুতুলের মা হাওমাও করে কেঁদে উঠলো এতোক্ষণ আশা করে বসে থাকা মায়ের আর্তনাদ জারা থমকে গেলো চোখ দিয়ে পানি পড়ল না বিরবির করে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো।

সন্ধ্যা হয়ে আসল জারার ব্যাগে অনবরত ফোন বেজে চলেছে জারা পুতুলদের বাসার সিমেন্টের বাধায় করা ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলছে কিছুক্ষণ আগেই পুতুলের শেষ বিদায় দিয়েছে। পুতুলের মা কেঁদে যাচ্ছে সকাল থেকে কেউ কিছু খায় নি না খাওয়া আছে সবাই এতো সব কাহিনির পর কে খেতে পারে কোনো মা-ই খাবার মুখে তুলতে পারবে না রুহান জারার কাছে এসে বলল

-‘ জারা ওঠ বাসায় চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাসাস দিয়ে আসি তোকে ‘

জারা ছলছল চোখে তাকালো রুহানের দিকে রুহান দিয়ে আশাস দিলো। জারা পুতুলের মায়ের পাশে বসলো কিছুক্ষণ।
.
.
জারা বাসায় আসতেই দেখলো সকলে ড্রাইংরুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। জারাকে দেখে শান উঠে এসে জারার সামনে এসে বলল

-‘ তোকে কতবার ফোন দিয়েছি আর তুই একবারও ফোন তুললি না নিজেকে কি ভাবিস? তোর জন্য সকলে চিন্তায় মরে যাচ্ছে আর তোর কিছু যায় আসে না ফোনটা ধরে তো কথা বলে জানাতে পারিস কোথায় আছিস? ‘

জারা শানের দিকে তাকালো মুখ দিয়ে কোনো টু শব্দ করলো না। শান সহ সকলে চমকে উঠল জারার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে ফুলে আছে। জারা কিছু না বলে উপরে চলে গেলো রুমে গিয়ে ফ্রেশ না হয়ে বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। শান্তি বেগম এসে জারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

-‘ কি রে কি হইছে বল আমাকে ‘

জারা শান্তির কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল

-‘ জানো মনি আমি ওকে বাঁচাতে পারি নি ও ও চলে গেছে আব্বু আম্মুর মতো জানো মনি ঔ শ-য়-তা-ন গুলো ওকে মেরে ফেলেছে ঔ শ-য়-তা-ন গুলোর আমি শাস্তি দিতে পারি নি ওরা মেয়েটাকে মে-রে ফেললো। জানো মনি ও মা খুব কাঁদছিল আমি অ-ল-ক্ষী তাই না মনি আমার জন্য সবটা হলো আমার জন্য এতো খারাপ হলো কেনো হলো আমি এতো খারাপ কেনো মনি কেনো মনি ‘

শান্তি চুপ করে শুনে বলল

-‘ এটা তো তোমার হাতে ছিল না এটার জন্য কেনো নিজেকে ব্লেম করছো এতো কেদো না মাথা ব্যাথা করবে ‘

জারা কেঁদে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১৫+১৬

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৫ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

অগোছালো সৃগ্ধ মেঘলা বিকাল চারিদিকে ভেজা বৃষ্টির পানির কনা শীতল মৃদু বাতাসে বৃষ্টিতে ভিজে সজিব হয়ে ওঠা গাছের পাতাগুলো এলোমেলো হয়ে দুলছে। বিকালটা সুন্দর করে দিতে এক চিলতে খুশি হয়ে শায়রী, পলক, রুহান, সাইম, প্রীতি এসে হাজির জারা সহ সকলে খুশি। শান্তি তো কি খাবে রান্না করা শুরু করে দিয়েছে। সকলে ড্রাইংরুমের সোফায় বসলো জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ তোরা আসবি আগে বললি না যে? ‘

সাইম বলল

-‘ ক্যান আগে জানলে কি করতে বাড়ি থেকে ভাইগা যাইতিস না-কি আমাদের আসতে মানা করছি ‘

জারা ভাব নিয়ে বলল

-‘ বাসার দরজায় খুলতাম না ‘

শায়রী বলল

-‘ দেখছিস কত বড় দুশমন ‘

রুহান ওদেরকে থামিয়ে বলল

-‘ জারা তুই হসপিটাল থেকে আসলি একবারও বলছিস আমাদের? আমার সকালে হসপিটালে গেছিলাম দেখতে কিন্তু তুই… ‘

-‘ সরি দোস্ত কিন্তু হসপিটাল থেকে এসে তো টেক্সট করে দিয়েছিলাম এতো রাগ করিস না ‘.

প্রীতি বলল

-‘ রাগ করলেই বা তোর কি? ‘

পলক বলল

-‘ আচ্ছা বাদ দে এখন শরীর কেমন তোর? ‘

-‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ‘

রুহান জারার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না। শান তখন শিরি দিয়ে নাম ছিল। জারার কপালে রুহানের হাত দেখে রেগে গেলো হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই। তখন শান্তি বেগম এসে রুহানকে ওনার সাথে নিয়ে গেলো কি যেনো ইনপটেন কথা বলবে। শান আর নিচে নামলো না উল্টো ঘুরে ওপরে চলে গেলো। জারা এক পলক তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। ওরা গল্প করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর রুহানও আসলো।

ইশা সকলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল

-‘ এটেনশন প্লিজ ‘

সকলে ইশার দিকে তাকালো। ইশা গলা ঝেড়ে বলল

-‘ শুনো সবাই পৌশু দিন তোমরা সকলে আসবে সন্ধ্যায় তোমাদের ইনভাইট কিন্তু তোমরা সকলে সকালে আসবে ‘

পলক বলল

-‘ বাট ইনভাইটের রিজন কি? ‘

ইশা হিহিহি করে হেসে বলল

-‘ গেস্ট করো ‘

কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর শায়রী বলল

-‘ জানি না তুমি বলে দাও ‘

ইশা হেসে বলল

-‘ আমার এনগেজমেন্ট ‘

সাইম অবাক হয়ে আফসোসের সুরে বলল

-‘ কি? এতো পিচ্চি মেয়ের বিয়ে? আমি জীবনে কি করলাম কি করতে বেঁচে আছি আমার মরে যাওয়া উচিত আমি একটা প্রেম ও করতে পারলাম না ‘

সবাই মিলে হেসে উঠলো প্রীতি বলল।

-‘ তোর দ্বারা প্রেম ট্রেম কিছু হবে না বিয়ে তো অনেক দূরের কথা ‘

-‘ এই একদম আমাকে ইনসাল্ট করবি না আমি একটা কাউকে কিছু না বলে হুট করে বিয়ে করে বউ এনে সকলকে তাক লাগিয়ে দিবো দেখিস ‘

জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ সাইম একটা কথা সত্যি করে বলতো তুই কি চুপিচুপি ট্রেন চালাছিস না-কি? ছিঃ তোর লজ্জা করলো না আমাদেরকে না জানিয়ে এসব করতে? ‘

সাইম ভাব নিয়ে বলল

-‘ জানবি জানবি আস্তে আস্তে সব জানবি ‘।

পলক আর রুহান সাইমকে চে/পে ধরলো। কিন্তু সাইমের মুখ থেকে কিছুই বের করতে পারলো না। সন্ধ্যার আরো কিছুক্ষণ পর ওরা বাসায় রওনা হলো।

★★★

পরের দুদিন গেলো খুব অদ্ভুত ভাবে। আত্মীয় স্বজন দের দেখাশোনায় আর কাজকর্মের ব্যস্ততায়। বাড়ি ভর্তি এতো আত্মীয় স্বজন যেনো মনে হচ্ছে আজ-ই ইশার বিয়ে। জারা এর মাঝে শানকে কয়েক মুহুর্ত চোখের পলক দেখেছিল। অদ্ভুত ভাবে এরমধ্যে একবার জারা আর শানের কোনো রকম কথা হয় নি। জারা নিজেও নিজেকে লুকিয়ে বা শানের সামনে যেনো না পড়ে তেমন ভাবেই ছিল। কিন্তু যতটুকু শানের সামনে পরছে শান একবারও জারার দিকে তাকায় নি। জারা নিজের মনে খুঁতখুঁত করছিল কিন্তু পরে ভেবে দেখলো তাকে ছাড়া তো থাকতেই হবে একদিন এতো মায়া বারিয়ে কি লাভ? যত দূরে থাকবে ততই ভালো।

দোতালা বাড়িটা রঙবেরঙে ফেরিলাইট, ফুল দিয়ে সাজানে এযেনো এক রূপকথার রাজপ্রাসাদ রাজ্যকিয় ব্যাপার আর সেই রাজ্যের রাজকন্যার আজ এনগেজমেন্ট। ইশা আজ মিষ্টি কালারের গাউন পড়েছে আর ইশার বাগদত্তা জিহান কালো সুট পরছে দুজনকে আজ পাশাপাশি মেড ফর ইচ আডার লাগছে একেবারে কিউট কাপল। জারা জুস হাতে নিয়ে এগুলো দেখছে আর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। জারা মনে মনে কল্পনা জল্পনা করছে

-‘ আজ যদি আমার বাবা-মা থাকত। আমার রাজ্যর রাজা-রানি থাকত তাহলে আমিও আজ রাজকন্যা হতাম অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাকে টেনশন করা লাগত না তারা আমাকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতো। কিন্তু না আজ তারা নাই আমার নিজের ওপরে নিজের সব দায়িত্ব চাপিয়ে অন্যের বাড়ির আশ্রিতা ট্যাগ লাগিয়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে ‘

জারা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। চোখ গেলো শানের দিকে শান আজ ব্লু সুট পরছে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, হাতে ওয়াইনের গ্লাস ফেন্ডদের সাথে কথা বলতে বলতে চুমুক দিচ্ছে। জারা নিজের দিকে তাকালো আজ সে ওফ ওয়াইট কালারের সিলকের শাড়ি তার ওপরে স্টোনের কাজ করা শাড়ি পরছে, মুখে হালকা মেকাপ, চুলগুলো খোঁপা করে সামনের বেবি হেয়ার গুলো ছেড়ে রাখা দেখতে মিষ্টি লাগছে। জারা চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো। শান্তি বেগম আর আসলাম সাহেব গেস্ট দের সাথে কথা বলছে। জারার ফেন্ডগুলা আসছে অনেকক্ষণ তারা কি নিয়ে কথা বলছে সেখানে জারার যাওয়া বারণ জারাও বিরক্ত নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও তাদের পাত্তা নেই। জারার এবার ওদের কাছে গিয়ে বলল

-‘ হলো তোদের? কি এতো কথা বলছিস? আসার আগে বাইরে থেকে বলে আসতে পারিস নি অসহ্য সব কইটা ‘

প্রীতি ঢং করে বলল

-‘ ও তুই আয় তোর কথা তো ভুলেই গেছিলাম ‘

জারা রেগে বলল

-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো ভুলে যাবাই আমি তো তোমাদের কেউ হই না ‘

সাইম বলল

-‘ এমন করে রাগ করিস কেন বউ? তুই ছাড়া আমার কে আছে বল? তোকে ছাড়া তোর বরটা যে অসহায় ‘

-‘ হ্যাঁ তার পরিণাম তো এতোক্ষণ দেখলাম ‘

পলক বলল

-‘ থাক কষ্ট পাস না ওরা এমন-ই ‘।

জারা কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল

-‘ তা আপনি আবার কেমন শুনি? আপনিও তো আমাকে ডাকেনি ‘

রুহান বলল

-‘ আচ্ছা থাক এতো রাগিস কেন? ‘

-‘ এটা রাগার জিনিস তো রাগবো না? ‘

কেউ আর কিছু বলল না।

কথা ঘুরিয়ে শায়রী বলল

-‘ আচ্ছা শোন জারা আর রুহান তোরা দুইটা কি প্লান করে এক রংয়ের মিলিয়ে পরছিস? আমাদেরও বলতিস আমরাও পরতাম’

জারা রুহান অবাক হয়ে নিজেদের দিয়ে তাকিয়ে হেসে ফেললো। জারা বলল

-‘ হোয়াট এ কোইনসিডেন্স! ‘

পলক বলল

-‘ বুঝি বুঝি আমরা জানি তোরা মিলিয়ে পরছি এখন ঢং করবি ‘

রুহান জারার হাত জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ আমাদেরকে কাপল লাগছে না? ‘

প্রীতি বলল

-‘ হ্যাঁ পলক তুই কখন আমার সাথে এমন করে মিলিয়ে পরছিস? ‘

কথাটা বলে কোনা চোখে তাকালো প্রীতি পলক শুকনো ঢোক গিললো। রুহাম প্রীতির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল

-‘ তাহলে আমাদের এখনি বিয়ে করা উচিত ‘

জারা হেসে রুহানের বাহুতে চাপর মেরে বলল

-‘ ফাজলামি করিস কেন? ‘

-‘ এই তুই কার গায়ে হাত তুলছিস খেয়াল আছে তোর আমি চাইলেই তোকে জেলে পুরে দিতে পারি কিন্তু দিবো না ‘

-‘ কেন দে দিবি না কেন?’

ওয়েটার কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসলো। ধাক্কা লেগে জারা শাড়ীতে পারলো। ওয়েটারটা অপরাধী মুখে তাকিয়ে বলল

-‘ সরি ম্যাম আসলে তাড়াহুড়ায়…. ‘

জারা শাড়ী ঝাড়তে ঝাড়তে বলল

-‘ ইট’স ওকে দেখে কাজ করবেন যান ‘

ওয়েটারটা চলে গেলো জারা বলল

-‘ তোরা থাক আমি আসছি ‘

জারা ওপরে এসে টিস্যু দিয়ে শাড়ী মুছ ছিল তখন দরজা আটকানোর শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৬ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

জারা ওপরে এসে টিস্যু দিয়ে শাড়ী মুছ ছিল তখন দরজা আটকানোর শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো। চমকে উঠল শান এখানে? জারার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে কাঁপা কন্ঠে বলল

-‘ আ আপনি? এ খানে? দরজা আটকালেন কেনো? ‘

-‘ তোর সাথে হিসাব নিকাশ মিলাতে আসছি ‘

-‘ মানে? কিসের হিসাব নিকাশ? ‘

-‘ তুই বুঝিস না আমাকে? একটুও বুঝিস না! কখনো কি বুঝবি না? ‘

শানের কথা শুনে জারা হতভম্ব হয়ে গেলো। শানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শানের চোখের ভাষা কিছু বলছে কথার খেলা চলছে কিন্তু জারা সেটা বুঝতে ব্যর্থ হলো। শান বিয়ের পর বা বিয়ের কথা উঠার পর থেকে কখনোই জারার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে নি সবসময় ধমকা ধমকি করে কথা বলেছে। বিয়ে আগের শান আর বিয়ে পরের শান দু’টোই অদ্ভুত ভাবে আলাদা চিনতে খুব কষ্ট হয় জারা মাঝে মাঝে তো মনে হয় তার জন্যই শানের এতো পরিবর্তন তারই সব দোষ তার জন্যই এতো কিছু। শান হয়ত কখনো গায়ে হাত তোলে নি। কিন্তু তার কথা মন মস্তিষ্ক এমন ভাবে আ-ঘা-ত করে যাতে ম-রে যেতে ইচ্ছে হয় জারার।

নিস্তব্ধ দুই মানব-মানবী দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ তাদের কথা বলছে। কিন্তু চোখের ভাষা বুঝতে তারা ব্যর্থ। কেউ তো কাউকে কখনো নিজের মনকে বুঝতে দেয় না। দূরে দূরে থাকে।

জারা নিজের মনে বলল

-‘ আচ্ছা ভালোবাসলে না-কি তার চোখের ভাষা বোঝা যায় কই আমি ও তো শান ভাইয়াকে ভালোবাসি তাহলে তার চোখের ভাষা কেনো বুঝতে পারছি না? তাহলে কি আমি ওনাকে ভালোবসি না?’

জারা অস্থির হয়ে উঠলো। শানের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি দিলো গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। জারা আবার চোখ তুলে তাকালো শানের দিকে শানের মুখে কেমন অদ্ভুত হাসি জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ হাসছেন কেনো? এখানে কি মিরাক্কেল হচ্ছে? ‘

-‘ তার থেকে বড় কিছু। বাই দ্যা ওয়ে শাড়ি পড়ছিস কেনো? তাও আবার সাদা বাহ তোর বর ম-রে গেছে? ‘

ম-রা-র কথা শুনে জারা রেগে বলল

-‘ কি সব যাতা বলছেন একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না ফাউল লোক যান তো এখান থেকে ‘

শান এক ভ্রু উঁচু করে বলল

-‘ আমার বাড়ি, আমি যেখানে খুশি থাকবো তুই বলার কে?’

জারা মুচকি হেসে বলল

-‘ ফাস্ট টফল এটা আপনার বাবার বাড়ি আপনার নয় আপনি তার ছেলে ফিউচারে মালিক হবেন সেকেন্ড হলো হ্যাঁ আমি জানি আমি এ বাড়ির কেউ নয় একজন আশ্রিতা বা আত্মীয় মাত্র কিন্তু যতদিন এখানে আছি এই রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ আমি চলে গেলে এই রুমে যা ইচ্ছে করেন নো প্রবলেম আর একটা মেয়ের রুমে আসার সময় অবশ্যই আপনার নক করে আসা উচিত ছিলো এতটুকু সেন্স আপনার নাই? ‘

শান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জারার মুখ পানে জারা স্বাভাবিক ভাবে কত অবলীলায় কথা গুলো বলে দিলো কিন্তু ওপর ব্যক্তিটার কোথাও আঘাত করলো। অদৃশ্য র-ক্ত ক্ষরন হলো। শানের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো ‘আশ্রিতা?’

জারা তাচ্ছিল্য হেসে বলল

-‘ হ্যাঁ আশ্রিতা ছাড়া কি? আপনি কি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না মানবে যে আমি নিজেকে এ বাড়ির বউ হিসেবে দাবি বা অধিকার খাটাবো? আপনি তো বিয়েটাই মানেন না আর সেখানে বউ ‘

শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে শক্ত গলায় বলল

-‘ এই শাড়ি পড়ে যেনো বাইরে না দেখি। যদি দেখি না তাইলে আজকে আমার হাতে খু-ন টু-ন হয়ে যাবি ‘

জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ আমি যা-ই পড়ি যা-ই করি আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি আমার ওপর অধিকার খাটাচ্ছেন না-কি হুকুম চালাছেন? ‘

শান বাকা হেসে বলল

-‘ আদেশ করছি।

-‘ যদি না শুনি? ‘

-‘ তার ফল তোকে পদে পদে ভোগ করতে হবে মাইন্ড ইট ‘

শান চলে গেলো। জারা তাকিয়ে রইলো শানের দিকে কি হয় মাঝে মাঝে এই লোকের এমন ভাবে অধিকার খাটাই মনে হয় তিনি সব মেনে নিয়েছেন আমাকে ভালোবাসেন আদেও কি তাই? ‘

জারা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আগে শাড়ি চেজ্ঞ করার কথা ভাবলেও বর্তমানে সিচুয়েশনে মনে মনে ভেবে নিলো এই শাড়ি পড়েই পার্টিতে যাবে। করলোও তাই শান রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো জারা শানকে পাত্তায় দিলো না। পার্টি শেষ করতে রাত হলো সকলের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় বাসায় চলে গেলো থেকে গেলো কয়েকজন আত্মীয় স্বজনরা। ইশার বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো ১৫ দিন পর।

জারা খেয়ে ওপরে রুমে চলে আসলো। এসেই থমকে গেলো শান জারার বেডে শুয়ে ফোন টিপছে জারা স্ট্যাচু হয়ে গেলো। স্তম্ভিত ফিরে পেতেই বলল

-‘ আপনি আবার এখানে কি করছেন? ‘

-‘ ভাবছিলাম আজ রাতটা এখানেই ঘুমাবো ‘

জারা চমকে বলল।।

-‘ মানে?’

-‘ যা শুনছিস সেটাই ‘

-‘ আশ্চর্য তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো?

-‘ যেখানে খুশি থাক। মন চাইলে আমার পাশেও ঘুমাতে পারিস আমি মাইন্ড করবো না’

-‘ অসহ্য ফাজিল লোক ফাইজলামি পাইছেন না-কি আমি কিন্তু চিৎকার দিয়ে সকলকে ডাক।

-‘ ডাক স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকবে তাতে কে কি বলবে আমিও দেখি ‘

জারা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনার মাথায় কি চলছে সত্যি করে বলেন তো আমার আপনাকে সুবিধার লাগছে না ‘

শান ঝংকার তুলে হেসে উঠে বলল

-‘ বাহ তোর মাথায় তো দেখছি বুদ্ধি হয়েছে তাহলে ‘

জারা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল

-‘ আপনি যাবেন? ‘

শান অকপটে বলল

-‘ না! ‘

জারা ফোঁস ফোঁস করতে করতে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে থেকে চেজ্ঞ করে আসলো। জারার কাজে তার রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। সব কাজ জোরে জোরে শব্দ করে করলো। থাকলো না এ রুমে ইশা রুমে গেলো। সব শুনে ইশা হাসি থামছেই না। জারা তাতে আরো বিরক্ত হলো বালিশ নিয়ে কান চেপে শুয়ে রইলো।

—-

সকালে সকলে বসে চা খাচ্ছে জারা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। নিজের রুমে আর যায় নি। সারারাত ঠিক মতো ঘুমাতে পারি নি। সকালের নাস্তা খেয়ে ওপরে আসলো এখন শান নেই খাবার খেয়ে কোথায় যানি গিয়েছে। জারা রুমে এসে স্তব্ধ হয়ে গেলো কালকের শাড়িটা কাঁ/চি দিয়ে কেউ কু’চিকু’চি করে কেটেছে। কে কাজটা করেছে যারার বুঝতে অসুবিধা হলো না। জারা রেগে গিয়ে বিচার দিতে গেলো শান্তির কাছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১৩+১৪

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৩ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

-‘ তুই আর শান কি ঝগড়া করছিস? ‘

-‘ তেমন কিছুই না মনি। তোমার এসব কে বলল মনি? ‘

-‘ আমাকে কে বলবে আমি শুনতে পাইছি রুম থেকে ‘

-‘ খালা বলছে না? খালা…’

সুমী রুমের বাইরেই ছিল জারা ডাকতেই রুমে আসলো। জারা সুমীর দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

-‘ তুমি আমার সাথে কথা বলবে না খালা ‘

-‘ ও আম্মা কি কও এসব ‘

-‘ ওকে বকছিস কেনো? কি হইছে সেটা আমাকে সরাসরি বল নাহলে আমি বুঝবো কেমন করে ‘

-‘ তেমন কিছুই হয় নি মনি তোমার ছেলে সারাক্ষণই আমার সাথে পাগলা ষাঁড়ের মতো হমড়িতমড়ি করে বাদ দাও তো পাগলা ষাঁড়ের কথা আমি ধরি না ‘

শান জারার রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিল। তখনি জারার কথা শুনে থেমে যায় রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে ডুকে বলল

-‘ কি বললি তুই? আমি পাগলা ষাঁড়! ‘

জারা ঘাবরালো না। জারা মুখ বাকিয়ে বলল

-‘ ওমা আমি কখন বললাম আপনি তো নিজেই নিজের মুখে শিকার করলেন আপনি পাগলা ষাঁড় ‘

শান্তি বেগম আর সুমী মুখ টিপে হাসলো ওদের হাসতে দেখে শান রেগ বলল

-‘ তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো ‘

জারা কোনো কিছু না ভেবেই ভাব নিয়ে বলল

-‘ পরে কেনো দেখবেন এখনি দেখেন আমি আপনার সামনেই দাড়িয়ে আছি। ‘

শান বাঁকা হেসে বলল

-‘ উহুম না থাক এখন দেখলে তুই লজ্জা পাবি পরেই দেখে নিবো ‘

বলে চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। শান কি মিন করছে সকলে বুঝতে পারলো জারা লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। শান্তি বেগম কিছু না শোনার ভান করে চলে গেলেন সাথে সীমাকেও নিয়ে গেলে সকলে চলে যেতেই জারা বিরবির করে বলতে লাগলো

-‘ অ’স’ভ্য বেহা/য়য়া নি/ল/জ্জ ছেলে একে বারে ঠোঁট কাটা কোথায় কি বলতে হয় জানে না। বিদেশের ছোঁয়া লাগছে তো এমন তো হবেই ‘

জারার বিরবিরের মাঝে নিচ থেকে ডাকলো। শান্তি খেতে ডাকছে। আসলাম আর ইশাও চলে এসেছে। জারা চিৎকার দিয়ে বলল

-‘ আসছি ‘

জারা কিছুক্ষণ পর পরই নিচে নামলো শান্তি বেগম সার্ভ করে দিচ্ছিলেন। জারা ইশা পাশে বসে পড়লো উল্টো পাশে শান বসেছে। জারা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ইশাকে প্রশ্ন করলো

-‘ পরিক্ষা কেমন হলো? ‘

-‘ হয়েছে মোটামুটি জানি না কি হবে ‘

শান ফোড়ন কেটে বলল

-‘ ফেল করলে বাসা থেকে বের করে দিবো ‘

ইশা রেগে বলল

-‘ তুই চুপ কর শান ‘

-‘ আমি তোর বড় রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি ‘

-‘ পারতাম না ‘

আসলাম বললেন

-‘ আহা হচ্ছে টা কি? ‘

-‘ তোমার ছেলেই তো আমাকে খেচাছে কেনো? ‘

আসলাম কৃত্রিম কপট রাগ দেখিয়ে বলল

-‘ শান চুপ করে খাও ‘

ইশা শানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিলো।
জারা বলল

-‘ আর কয়টা এক্সাম আছে? ‘

-‘ আর দুইটা ‘

শান্তি বেগম ভাজি দিতে দিতে বলল

-‘ জিহানের মা ফোন দিয়ে ছিল আমাদেরকে ওদের বাসায় যেতে বলছিল ইশার এক্সাম শেষ হলে এনগেজমেন্টটা করিয়ে রাখতে চাইছেন আমি তেমন কিছুই বলতে পারলাম না তোমার আর শানের কাছে শুনে বলবো বলছি ‘

ইশা স্থির হয়ে গেলো। শুকনো ফাঁকা ঢোক গিললো। অস্বস্তি আর লজ্জায় টইটম্বুর হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে বসে রইলো ইশা অবস্থা দেখে জারা মুচকি হাসলো কিছু বলল না সব মেয়েরাই বিয়ের কথা শুনলে লজ্জা ভয়ে আরোস্ট হয়ে যায়।

শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

-‘ হুম ছেলে ভালো আমি খোঁজ নিয়েছি আর ইশাও যখন ছেলেটাকে ভালোবাসে তখন আর না করার কিছু নাই আম্মু ‘

আসলাম বলল

-‘ ওরা সুখী হলেই সব আর যেখানে ইশার অমত নেই ছেলেও ভালো না করার কোনো প্রশ্ন আসছে না ‘

আর কেউ কিছু বলল না পরিবেশটা গুমোট হয়ে গেলো। একটা মেয়ের যখন বাসায় বিয়ের কথা উঠে তখন সেটা সুখের আবার অন্য দিকে বিদায়ের কষ্ট সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি।

_____________

হাতে ব্যথায় জারার রাতে জ্বর আসলো। জারা অল্প জ্বরেই ঔষধ খেলো তবুও জ্বর কমার নাম নেই। জারার যত বারই জ্বর আসুক না কেনো ততো বারই হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছে। হসপিটালে ভর্তি না হলে যেনো সে জ্বর কমতেই চাই না কি অদ্ভুত সে জ্বর।

সকালে উঠে জারার জ্বর একটু কমেছে তবুও মাথা ঝিম ধরে আছে। মাথায় ব্যথায় টিসটিস করছে। কিন্তু শুয়ে থাকলে তো চলবে না আজ কেসের লাস্ট ডেট সব প্রুফ পেস করতে হবে কোটে। জ্বর জারাকে দমাতে পারলো না জারা জ্বর গায়ে চলে গেলো কোটে সকালে খাই ও নি কেউ জানেও না জারার জ্বর।

কোটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জারা রুহানের অপেক্ষায় কিন্তু রুহান এখনো অপরাধীদের নিয়ে আসি নি। জারার দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তবুও দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পররেই রুহান এলো।

-‘ কি রে ওরা মুখ খুলেছে কিছু বলছে ‘

-‘ না রে দোস্ত তোদেরকে এতো মা’র’ছি কাল রাতে তবুও মুখ খুলে নি ‘

-‘ কিন্তু এখনো তো ১জন অপরাধী মিসিং ভিকটিমের দেওয়া ছবির বননার সাথে দুই জনের মিল আছে আর একজন কে সে? আর এর পিছনে এদের বস কে? ‘

-‘ হুম কিন্তু ও বলছি ৫ জন ছিল তার মধ্যে থেকে আমরা তিনজনকে পাইছি এখনো দুইজন মিসিং ‘

-‘ কি হবে তাহলে এই কেসটায় ‘

-‘ জানি না আর এতো টেনশন নিতে পারছি না ‘

-‘ আচ্ছা দেখা যাক কোটের রায় কি আসে আরো কয়দিন ডেট বারায় ‘

-‘ হুম দেখা যাক তুই কি অসুস্থ? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো? ‘

-‘ আরে দূর না আমার কি হবে? চল ভিতরে চল ‘

কোটের জারা একে একে সকল প্রমান কোটে পেস করলো। জারা তাকালো দূরে বসে থাকা ভয়ার্ত কিশোরী মেয়েটার দিকে মেয়েটার নাম ও পুতুল দেখতেও পুতুল গায়ের রং শ্যামলা হলেও চেহারা একটা মায়া আছে যে মায়ায় জারাকে খুব করে কষ্ট হয়। এতটুকু মেয়ে এই বয়সে কি-না এতো বড় দাগ লাগলো তার জীবনে। মেয়েটার তো এখন হেসেখেলে জীবন কাটানো উচিত কিন্তু না তার জীবনের পৃষ্ঠা ভিজে উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে কিছু জা/নো/য়া/রদের জন্য।

কোলাহল সৃষ্টি হলো জারা পুতুলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে দেখলো অপরাধীগুলো নিচে পড়ে আছে। জারা চমকালো। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কি হলো বুঝতে পারছে না এইতো ঠিক ছিল আবার কি হলো? রুহান জারার কাছে এসে বলল

-‘ সব শেষ দোস্ত ওরা সু/ই/সা/ই/ড করছে’

জারা মাথা ব্যথা বারতে লাগলো। কোটের ভিতরে হইচই চেচামেচি বেঁধে গেলো লা-শ গুলো বাইরে নিয়ে গেলো।

ল্যান্ড লাইনে ফোন বাজছে সুমি এসে ফোন রিসিভ করলো পুরোটা না শুনেই কান্নাকাটি জুড়ে দিলো। বাসার সকলে জড়ো হলো এক জায়গায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৪ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

নিকষ গভীর আঁধার রাত চারিদিকে কৃত্রিম আলোই ভরপুর হসপিটালের সামনের রাস্তায় জনজাট রাত গভীর হলেও মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। ফিনাইলের গন্ধে ক্লান্ত চারি দিক। নির্ঘুম রাত চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে অক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়শীর দিকে। অস্থির মনে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে অপেক্ষা তার চোখ খুলে তাকানোর। মাথায় টিসটিস ব্যাথা নিয়ে জারা নড়েচড়ে উঠে শান মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেয় জারা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায় ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে চারিদিক বুঝতে অসুবিধা হলো না সে কোথায়। হঠাৎ নিজের ওপর বিরক্ত আসলো বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ‘চ’ শব্দ করে ঘুমঘুম কন্ঠে নিজেই বলল

-‘ জীবনে ভালো হবি না তুই সবাইকে টেনশন দিতে এতো ভালো লাগে তোর ওফ্ফ কাল আরও কয়েকটা ঔষধ খেলাম না কেন? তাহলে আর জ্বর আসতো না ‘

জারা মাথায় হাত দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। শান শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ঘুম কন্ঠ শুনে তার হার্ট বিট যেনো কয়েকগুণ বেরে গেছে। শান নিজের বুকের বা পাশে হাত দিলো। নিঃশব্দে সাবধানে শ্বাস ফেলতে লাগলো।

হসপিটালের জারার সাথে কে আছে মাথায় আসতেই জারা চট করে চোখ খুলে নিলো চোখ ডলতে ডলতে পাশে তাকিয়ে শানকে দেখতে পেয়ে থেমে গিয়ে ঘুম কন্ঠে বলল

-‘ আপনি? এখানে? ‘

শান গলা ঝেড়ে বলল

-‘ অন্য কেউ থাকার কথা ছিল না-কি? ‘

জারা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না এই লোকটা সবসময় ত্যাড়ামো করে কোনো কথা সোজাসাপটা উত্তর দিতে পারে না। যা বলবে সব ঘুড়িয়ে প্যাচিয়ে যা জারার মোটেও পছন্দ নয়। জারা অকপটে বলল

-‘ থাকার লোকের তার অভাব নাই তাই শুনছিলাম এতো ভালোবাসার লোক থাকতে আপনি ই কেনো? ‘

-‘ বাবা জানতাম না তো তোর এতো ভালোবাসার মিলিয়ন বিলিয়ন লোকজন আছে জানলে আর থাকতাম না ‘

জারা আর কিছু বলল না। কথায় কথা বাড়বে ঝগড়া লাগবে। ঝগড়া করার মুড বা মন মানসিকতা কোনোটাই নাই শরীরেও আর কুলাছে না। জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। শান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল

-‘ শরীর কি খুব বেশি খারাপ লাগছে? কিছু খাবে? ‘

জারা চুপ থেকে ভাবলো ২ মিনিট পর উত্তর দিলো।

-‘ খেতে ইচ্ছে করছে না ‘

জারার কথা শুনে শান বাইরে চলে এলো। জারা শব্দ পেয়ে চোখ খুলে দেখলো শান নেই। জারা বিরক্ত হয়ে নিজে নিজে বলল

-‘ আমার কথা যখন শুনবি না তখন জিজ্ঞাসা করার কি মানে খবিশ লোক কোথা কার এবার যদি আমারকে জোর করে খাওয়াতে এলে একটা কিক্ মেরে দিবো। দূর! বাসায় যাবো কাল-ই হসপিটালে কার ভালো লাগে? ‘

কথার মাঝে শায়রী আসলো সাথে শান ও। জারা তাকালো শায়রী দাঁত কেলিয়ে বলল

-‘ কি রে চাশমিশ কেমন আছে? হসপিটালে থাকবেন না কেনো হসপিটাল তো আপনার ফেবারিট জায়গা ‘

-‘ একেবারে ফাউল কথা বলবি না ‘

-‘ তাইলে খাস না কেন ঠিক মতো নিজের খেয়াল রাখিস না কেনো? ‘

-‘ তুই কথা না বলে ক্যানেলা খোল ‘

শায়রী জারার হাতের ক্যানেলু খুলতে খুলতে বলল

-‘ হুহ বুঝলাম আন্টিকে বলতে হবে তোর বিয়ের কথা বিয়ে দিলে তোর বর তোকে পি’টি’য়ে খাওয়াবে ‘

কথাটা বলে শায়রী আড়চোখে শানের দিকে তাকালো শান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে শায়রীর কথা জারার কানে গেলো ঠিকি কিন্তু প্রতিত্তোর করলো না। চোখ খিঁচে চাদর খামছে শুয়ে রইলো। ব্যাথা পেতেই ‘আহ’ করে উঠলো।

-‘ শেষ ‘

জারা চোখ খুলে বা হাত দিয়ে ডান হাত বুলিয়ে বলল

-‘ ডান হাতে দিসিস কেন বা হাতে দিতে পারিস নি ‘

-‘ তোর হাতের শিরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই ডান হাতেই দিসি ‘

-‘ খুব ভালো করছেন আপনি ‘

-‘ হ আমি জানি আমি সবসময় ভালো কাজেই করি তোর চোখে চশমা ছাড়া যে চোখে পরলো আমি ধন্য হয়ে গেলাম তো বলে ফেল কি খাবি কি খেতে ইচ্ছে করছে? ‘

-‘ তোরে খেতে ইচ্ছে করছে ‘

শায়রী লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে হেলে দুলে বলল

-‘ ছিঃ ছিঃ এসব কি কস আমার বর…’

শায়রী আর কিছু বলতে পারলো না জারা ধমক দিয়ে বলল

-‘ দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে ‘

শায়রী মুখ ভেংচি কেটে বলল

-‘ যাচ্ছি একেবারে বাড়ি যাচ্ছি আর আসবো না ‘

-‘ হ যা তোর তো আজ রাতে ডিউটি না তাহলে আছিস কে দূর হ কাল সকালে যেনো তোকে আমার সামনে না দেখি ‘

-‘ কিছু বললেন আপনি? ‘

শায়রী চলে গেলো চোখ বন্ধ করে নিলো। শান হটপট থেকে স্যুপ বোলে স্যুপ ঢেলে চামশ নিয়ে জারার পাশে বসলো। বাড়ি থেকে শান্তির পাঠিয়ে দিয়ে ফোন দিয়ে বলল দিয়েছে জারার ঘুম ভাংলেই জেনো জারাকে খেতে দেয়। শান বলল

-‘ উঠে বসো খেয়ে নাও ‘

জারা চোখ খুলে স্যুপ দেখে বলল

-‘ এটা কোথায় পেলেন এখন? ‘

-‘ বাসা থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো ‘

-‘ ও কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ‘

-‘ খেয়ে নে তারাতাড়ি তোর সাথে ঢং করার কোনো ইচ্ছে বা শখ কোনো টাই নাই মা বলে দিয়েছিল বলে তোকে খেতে বলছি না হলে তাও বলতাম না ‘

জারার উল্টো প্রশ্ন করে বলল

-‘ আপনি খেয়েছেন? ‘

শান চুপ থেকে উত্তর দেয়

-‘ কেনো আমি খাবো না কেনো? আমার শোক লাগছে যে আমি খাবো না? বেশি কথা না বলে উঠে বস খেয়ে নে ‘

-‘ বমি করে দিলে ‘

-‘ করবি তাও খাবি ‘

জারা জানে শানের সাথে পারবে না যত যায় করে হক জারাকে যখন খাবাবে বলছে তখন খাবাবেই জারা উঠে বসে বলল

-‘ দিন খাচ্ছি ‘

শান ফট করে বলল

-‘ হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি ‘

জারা চমকে তাকালো শানের দিকে শান জারা মুখে স্যুপ দিয়ে বলল

-‘ মটেও ভাববি না আমি তোকে ভালোবাসি তোর হাত ফুলে আছে ব্যথা তাই খাইয়ে দিলাম ‘

জারা কিছু বলল না খেয়ে নিলো। শান ঔষধ খাইয়ে দিলো জারা ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল ৭ টায় ঘুম ভাংতেই জারা শানকে বেডে হেলান দিয়ে ঘুমাতে দেখে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। হাত বাড়িয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিলো কোনো কাজ না পেয়ে গেম খেলতে লাগলো। হুট করে শান জারার ফোন কেরে নিয়ে বলল

-‘ ফোন দেখলে মাথা ব্যথা করবে ‘

-‘ করুক আপনি ফোন দিন ‘

-‘ নাহ ‘

জারা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো

-‘ তাইলে বাসায় নিয়ে চলুন আমার এখানে ভালো লাগছে না ‘

-‘ দেখছি ‘

১০ টার দিকে সকল কাজকর্ম শেষে জারা বাসায় ফিরলো। জারাকে দেখে শান্তি বেগম অস্থির হয়ে পড়লেন কি করবে না করবে দিক বেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। জারা শান্তিকে শান্ত হতে বলল। তিনি শান্ত হলেন না। ইশা পরিক্ষা দিতে গেছে। আসলাম অফিসের জরুরি মিটিংয়ে গেছে। জারাকে বাসায় দিয়ে শানও কোথায় উধাও হয়ে গেলো। জারা সাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে বলল

-‘ মনি কি করছ? এতো ব্যস্ত হওয়ার তো কিছু দেখছি না ‘

-‘ জানি তো আমরা তোর কেউ না ‘

-‘ এসব কথা কেনো বলছ?’

-‘ তোর যে হাত কাটছে একবারও বলছিস আমাকে? ‘

জারা শান্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ এমন করছ কেনো? তোমরা টেনশন করবে বলে কিছু বলি নি’

-‘ সর আমাকে মনি বলে ডাকবি না আমি তোর কেউ না ‘

জারা শান্তির অভিমান খুব কষ্টে ভাংগালো। শান্তি জারাকে খাইয়ে দিয়ে বললেন

-‘ রুমে গিয়ে রেস্ট নিবি একদম এই শরীর নিয়ে নিয়ে আসবি ‘

জারা মাথা নাড়িয়ে উঠে এসে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ভালো লাগছে না শুয়ে থাকতে। উঠে ছাদে চলে আসলো আজ আকাশ মেঘলা জ্যোষ্ঠ মাসের শেষের দিকে জারা দেখলো নিচে অনেক গুলো কাঠগোলাপ পড়ে আছে জারা মাথায় বুদ্ধি আসলো খুশিতে লাফিয়ে দৌড়ে নিচে গিয়ে সুই সুতা এনে কাঠগোলাপ ফুলের মালা বানাতে লাগলো। হাতে সুই ফুটে আহ শব্দ তুলে হাত দিয়ে আংগুল ধরে দেখলো র-ক্ত পরছে। কোথা থেকে শান এসে জারার আংগুল ধরে গালে দিলো। জারা কেঁপে উঠলো। শান ছেড়ে দিয়ে বলল

-‘ দেখে কাজ করতে পারিস না? এটা কি করছিস? ‘

জারা এখনো অবাকের রেস কাটিয়ে উঠতে পারি নি শুকনো ঢোক গিলে বলল

-‘ মালা ‘

শান সুই সুতা নিয়ে মালা বানাতে বানাতে বলল

-‘ অকর্মা ঢেকি’

জারা আরো অবাক হলো। কি হচ্ছে এসব জারা কি স্বপ্ন দেখছে? বিষময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে মালা বানানো শেষে শান জারার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল

-‘ রুমে যা অসুস্থ না তুই মাথা ঘুরে পরলে আরেক কান্ড ‘

জারা হতভম্ব হয়ে রুমে আসলো। থম মেরে বসে রইলো অনেকক্ষণ। খুশি হবে কি দুঃখ পাবে বুঝে উঠতে পারলো না। জারা হাতের মালাটা ডাইরির মাঝে রেখে দিলো। লিখলো…

১৬ জুন ২০২২

ভালোবাসা আর কাঠগোলাপ
দুটোই খুব প্রিয়…❀

চলবে ইনশাআল্লাহ