Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1001



আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-১২

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ দেখতে পেলো অর্শি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে খুব কাছা কাছি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। দৃশ্যটা দেখার পর আয়াদের বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব হলো। আয়াদ বুঝতে পারে না অর্শির পাশে অন্য কেউ থাকলে‌ তার‌ এই অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হয়? আয়াদ একটু রেগে গিয়ে নিজের হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। ইচ্ছে করছে তার ছেলেটিকে গিয়ে রিহানের মতো সাজা দিতে। ওহহহ আপনাদের‌ তো বলাই হয় নি। সেই দিন হোটেলে রিহানের ওমন হাল ওয়াসরুমে পরে গিয়ে হয়নি। আয়াদ করেছে রিহানের ওমন হাল। যাই হোক আয়াদ ক্লাসের দরজার দিকে দাঁড়িয়ে আছে রাগি একটা লুক নিয়ে। আয়াদের উপস্থিতি আর্শি আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করলো। আয়াদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরে নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। হনহন করে অর্শির দিকে ছুটে চলে‌ যায় সে। অর্শির সামনে গিয়ে আয়াদ অর্শি আর ঐ ছেলের মাঝ বরাবর প্রবেশ করে দেয়ালে একটু হেল দিয়ে দাঁড়ায়। আয়াদের এমন হুট করে‌ চলে আসা ছেলেটির একটুও পছন্দ হয়নি‌‌।‌ ছেলেটি একটু রাগ ও কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠস্বর নিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— হ্যালো মিস্টার, কে আপনি? আর এমন হুট করে আমাদের মাঝে চলে এলেন‌ কেনো? আপনার তো দেখি বিন্দুমাত্র ম্যানার নেই!

ছেলেটির কথা শুনে আয়াদ এমন একটা ভাব করলো মনে হচ্ছে আয়াদ তার কোনো কথাই শুনতে পায়নি। আয়াদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্শি। আয়াদকে নিশ্চুপ দেখে ছেলেটি একটু হাক ছেড়ে চেঁচিয়ে রাগি কন্ঠে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলতে লাগলো

— এই হ্যালো, আমি আপনাকে বলছি। কথা কানে যায় না?

আয়াদ এই বার একটু বাঁকা হাসি দিয়ে‌ ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কথা কানে যাবে না তো কোথায় যাবে? কথা কানে আসছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কথা গুলো কি আমায় বলছিস! নাকি অন্য কাউকে? যদি আমায় বলে থাকিস তবে উত্তর‌ দেয়া আমার কর্তব্য আমি কে? এটা জানে‌ না এমন লোক পুরো ভার্সিটিতে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। আমি আয়াদ। আর তোদের মাঝে আমি হুট করে চলে আসি নাই। বরং তুই আমাদের মাঝে ঢোকার চেষ্টা করছিস। আর বাকি রইল ভদ্রতা! সেটা আমার কোনো‌ কালেই ছিলো না। বাই দ্যা ওয়ে কাম টু দ্যা পয়েন্ট তোর তো ভদ্রতা জানা আছে তাই না। সো এখন ভদ্র‌তা বজায় রেখে এখান থেকে কেটে পর। নেক্সট টাইম অর্শির সাথে কথা বলা তো দূর ওর দিকে তাকাবিও না। আউট।

আয়াদের কথা শেষ হতেই ছেলেটি তাচ্ছিল্য পূর্ণ একটা হাসি দিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— যদি না যাই তা হলে কি হবে?

— উহু বেশি কিছু হবে না। যাস্ট তোর সাথে একটু অভদ্রদের মতো আচরন করবো। যা আমি খুব ভালো পারি।

আয়াদের কথা শেষ হতেই অর্শি হাতে তালি দিয়ে আয়াদকে বাহ! বাহ! জানাতে লাগলো। আয়াদ একটু অবাক হয়ে অর্শির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অর্শি বলতে লাগলো

— বাহ! আয়াদ সাহেব বাহ! মানে আমি কারো সাথে কথা বলতে পারবো না। আমার আপনার রেস্টিকশন মতো কাজ করতে হবে। আপনি নিজের মুখে নিজের পরিচয়টা বার বার দিচ্ছেন। বাহ! আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না। আপনি যে একটা নিচু লোক এটা শুধু আমি না। আপনি নিজেও জানেন।

— হাহাহাহা! আমি বাজে হুম সেটা আর কিভাবে প্রমান করবো বল? আর শোন তুই সবার সাথে‌ কথা বলতে পারবি। সবার সাথে আড্ডা দিতে পারবি। এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, কিন্তু তোর সাথে কেউ কথা বলতে পারবে না। আর যদি কেউ তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তবে তার অবস্থা যে কি হবে তা আমি নিজেও জানি না।

আয়াদের কথা শুনে অর্শি ভিশন রেগে গেলো। এমন সাইকো টাইপের কথা শুনে যে কেউ রেগে যাবে এটা স্বাভাবিক। অর্শি রেগে দিয়ে আয়াদের টিশার্টের কলার চেপে ধরলো। আয়াদ একটুও অবাক হলো না অর্শির ব্যবহারে। বরং আয়াদ মুচকি হেসে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তুই যখন রেগে যাস তখন আমার কেনো জানি ভিশন ভালো লাগে। আহহহ সো সুইট। একদম সুগার ফ্রি মিষ্টির মতো লাগে তোকে।

অর্শি আয়াদের কলার ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে আয়াদকে বলতে লাগলো

— তাই! এই কথা বলেই মনে হয় সবাইকে হাত করেন আপনি। রাইট?

— একদম রাইট।

অর্শি আর কিছু বললো না। আয়াদের সামনে থেকে দৌড়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় সে। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে অর্শির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

* ভার্সিটি থেকে আয়াদের সাথে‌ রাগা রাগি করে অর্শি বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো সে। “কেনো জানি ভিশন খারাপ লাগছে নিজের কাছে নিজেকে। আয়াদ কি প্রমান করতে চায়? আমি তো ওর থেকে দূরে থাকতে চাই। ও কেনো গায়ে পরে কথা বলে আমার সাথে? আমি কারো সাথে কথা বললে ও কেনো বাঁধা দেয়? তবে কি আয়াদ ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে? উহু ওনার মতো একটা নোংরা মানুষকে আমি পছন্দ করতে পারবো না। আর ওনার আসল রূপ আমি দেখে ফেলেছি। তারপর ও ওনার প্রতি দুর্বলতা থাকা আমায় শোভা দেয় না। কিন্তু যতই ওনাকে অপমান করি না কেনো ওনার পাশে কোনো মেয়েকে দেখলে আমার হিংসে হয় এটা কেনো? আচ্ছা সত্যি তো এমনটা কেনো‌ হয়‌ আমার? আমি তো নিজের ইচ্ছেতে এমনটা করি না। কেনো জানি ওনার পাশে কোনো নারীকে দেখলে আমার কষ্ট হয়, রাগ উঠে ভিশন”। অর্শি কথা গুলো আপন মনে ভাবতে লাগলো। এই অনুভূতির নাম আর যাই হোক কখনও ভালোবাসা বলা যাবে না। কারন ওনাকে আমি ভালোবাসি‌ না। অর্শি কাল রাতের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।

— হ্যালো আয়াদ, আপনি কোথায় আছেন? এই মুহূর্তে আমার আপনার সাথে দেখা করার খুব প্রয়োজন।

ফোন কলের ওপার থেকে এক নিঃশ্বাসে কথাটা গড়গড় করে বলে‌ যায় ডায়না। আয়াদ ভিশন বিরক্তি নিয়ে কলটা পিক করলো। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে বলল

— কেনো কি প্রয়োজন? আমার হাতে সময় নেই। আমি আসতে পারবো না।

— ওকে আমি আসছি।

— আপনি আসবেন মানে? অসহ্য কোথায় আসতে হবে? বলুন।

ডায়না ফোন করে আয়াদকে একটা এড্রেস বলল। আয়াদ নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সেখানকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। আজ এই ডায়নাকে বলে দিবে আয়াদ। তার এই সমস্ত কাজে আয়াদ আর নেই। আয়াদের বুঝতে আর বাকি নেই যে এটা একটা সাইবার ক্রাইম গ্যাংগ। আয়াদ ডায়নার দেয়া এড্রেস মতো আসতেই একটা বিশাল কালো গাড়ি থেকে ডায়না নেমে এলো। আয়াদ ডায়নার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়। যে মেয়ে জিন্স আর শার্ট পরতো আজ সে শাড়ি পরে এলো? ব্যাপারটা কি? আয়াদ ডায়নার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই ডায়না এসে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সরি মিস্টার আয়াদ। ঐ দিন মাথা ঠিক ছিলো না আমার। প্লিজ আমায় ক্ষমা‌ করে দিন।

— ইট’স ওকে। কিন্তু আমি দুঃখিত আমি আর আপনার হয়ে কাজ করতে পারবো না। কারন আমি ভালোর সাথে কাজ করি‌ খারাপের সাথে নয়। আসছি খোদা হাফেজ।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ ডায়নার সামনে থেকে চলে যেতে নিলো। আয়াদ একটু এগিয়ে যেতেই ডায়না আয়াদকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— স্টপ আয়াদ। আপনি জানেন না আমি কি কি করতে পারি?

আয়াদ ডায়নার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— আমি জানি আপনি কি করতে পারেন আর ভুলে যাবেন না আমি কি করতে পারি।

কথাটা শেষ করে আয়াদ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে এলো। কাউকে বেশি লাই দিতে নেই। পরে মাথায় উঠে নাচবে।

* আয়াদ ডায়নার সাথে কথা শেষ করে বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে আয়াদ নিজের রুমে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলো। সন্ধ্যার দিকে আয়াদ দেখতে পেলো বাড়িতে অনেক মানুষের আনাগোনা হচ্ছে। আয়াজ বিষয়টা একটু গভীরভাবে দেখতেই দেখতে পেলো অর্শিকে দেখা যাচ্ছে না। আয়াদ একটু কৌতূহলী হয়ে তার মাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে আয়াদকে চমকে দিলো তার মা। আয়াদ তার মা এর কথা শুনে একদম থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ তার মাকে…………………..

#চলবে…………………..

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-১১

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১১
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি দেখতে পেলো আয়াদের রুমের মধ্যে একটা মেয়ে। অর্শি এই দৃশ্যটা দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়ল। “আয়াদ রাতের আঁধারে নিজের ঘরে মেয়ে নিয়ে আসে”! কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো তার। কতটা নিচু হতে পারলে মানুষ রাতের গভীরে কোনো মেয়েকে একান্তে নিজের রুমে নিতে পারে? এই কথাটা বোঝার মতো বয়স অর্শির ঠিক হয়েছে। অর্শি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটি আর আয়াদের দিকে। অর্শি ভাবছে “এই দৃশ্য যদি মা বাবা দেখতো তবে কি হতো? হয়তো বুক ফেটে মরেই যেতো। এতো ভালোবাসার সন্তান এতোটা নোংরা হয়ে গেছে সেটা যে কোনো মা বাবার জন্য ভিশন লজ্জাজনক”।

অর্শি আয়াদের এই নোংরামি সহ্য করতে পারলো না। জানালার পাশ থেকে সরে যায় সে। হাত পা কাঁপছে অর্শির। এসব কি দেখলো সে? আয়াদের সাথে তার সম্পর্ক ঝগড়ার মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলেও আয়াদকে কখনও সে নিচু চরিত্রের মানুষ মনে করেনি। কিন্তু আজ এই সব দেখার পর অর্শির চোখে আয়াদ একটা নষ্ট ছেলে ছাড়া অন্য কিছু নয়। অর্শি দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে একটু সামলে নেয়। নিজের রুমে ফিরে এসে অর্শি দরজা বন্ধ করে দিলো। বার বার অর্শির মনে পরছে আয়াদের সাথে ঐ মেয়েটির দৃশ্যটি। ভাবতেই লজ্জা করছে এতো ভদ্র ঘরের একটা ছেলে এতোটা নিচু মানসিকতার পোষন করে।

— মিস্টার আয়াদ আপনার ফাইল রেডি? আপনাকে কন্ট্রাক করা যাচ্ছে না বলে আমি নিজে এখানে চোরের মতো চলে এসেছি।

মিস ডায়না নিজের মুখের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে দিতেই আয়াদ চমকে উঠলো। এতো রাতে চোরের মতো আয়াদের রুমে আসার কি প্রয়োজন ছিলো মিস ডায়নার? আয়াদের মাথায় আসছে না কিছু। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলতে লাগলো

— এতো‌ রাতে আপনি আমার রুমে কেনো? কেউ কি দেখেছে আপনাকে? প্লিজ! আপনি এখন এখান থেকে চলে যান।‌ কাল‌ আমি ফাইল নিয়ে আপনার সাথে মিট করবো। প্লিজ! কেউ যদি আপনাকে এতো রাতে আমার রুমে দেখতে পায় আমার মান সম্মান শেষ হয়ে যাবে।

ডায়না আয়াদের ভয়ে আতকে ওঠা চোখ জোড়া আর মুখে চলে আসা স্পষ্ট চিন্তার ছাপ দেখতে পেয়ে একটু হেসে উঠলো। ডায়নার হাসি দেখে আয়াদের চোখ জোড়া কৌতুহলী হয়ে উঠলো। “ডায়না হাসছে কেনো”? প্রশ্নটা মনের মধ্যে নাড়া দিচ্ছে আয়াদের। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলো

— আপনি পাগলের মতো হাসছেন কেনো? কি হয়েছে?

— আরে না এমনি হাসছি। ছেলে হয়ে এতোটা ভয় পাচ্ছেন ঐ দিকে আমি মেয়ে হয়েও কোনো ভয় না পেয়ে এখানে চলে এসেছি। যাই হোক আমাকে কেউ দেখতে পায়নি।

— বাঁচালেন আমায়। এখন আপনি আসুন কল ফাইল দিয়ে দিবো।

আয়াদের কথটা মিস ডায়নার পছন্দ হলো‌ না। উনি একটু রেগে গিয়ে ভিশন কর্কশ গলায় আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল

— উহু, আমার এখনি লাগবে ফাইলটা। কাল অনেক দেরি হয়ে যাবে।

— দেরি মানে? আমার যখন ইচ্ছা তখন দিবো। আর লিসেন ফার্দার আমার বাড়ি এমন হুট হাট করে চলে আসবেন না। এটা আমার পছন্দ না।

আয়াদের কথাটা শুনে বায়নার মাথা গরম হয়ে যায়। ফাইলটা আজই লাগবে তার। মিস ডায়না আয়াদের কথাটা শেষ হতেই আয়াদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। আয়াদ নিজেও রেগে আছে ডায়নার খামখেয়ালি কাজে। কিন্তু ডায়নার রাগটা আয়াদের রাগকে ছাড়িয়ে যায়। ডায়না রেগে গিয়ে আয়াদের শার্টের কলার চেপে ধরে আয়াদের বুকের উপর রিভালবারটা চেপে ধরে। রাগে গজগজ করতে করতে ডায়না আয়াদকে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— আমাদের একটা নিয়ম আছে। যাকে আমাদের প্রয়োজন পরে না। তাকে আমরা আর রাখি না। এখনি যদি ফাইলটা আমি না পাই তো ৬টা বুলেট তোর বুকটা এপার ওপার করে বেরিয়ে যাবে।

ডায়নার কথা শুনে আয়াদ থ মেরে যায়। এসব কি বলছে ডায়না? আয়াদ মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ফাইলটা ডায়নার হাতে তুলে দিলো। ডায়না আয়াদের কলার ছেড়ে দিয়ে ফাইলটা চেক করে দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।‌ ডায়না চলে যেতেই আয়াদ সোফার উপর ধপাস করে বসে পরলো। আয়াদ তো মানুষের উপকার করার জন্য কাজ করে থাকে। তবে কি আয়াদ কোনো মাফিয়া চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে? প্রশ্নটা আয়াদের মনকে বিষিয়ে তুলছে।

* সকাল হতেই অর্শির ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে ঘুম তেমন একটা হয়নি। আয়াদের ব্যাপারটা মাথায় চেপে বসেছে তার। অর্শি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তার টেবিলে বাবা বসে আছেন। অর্শি বাবার পাশে দাঁড়াতেই আয়াদের বাবা অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অর্শি মা কি খবর তোর? আজ কাল বড্ড ব্যস্ত নাকি তুই?

বাবার কথার বিপরীতে অর্শি বেশ শান্ত গলায় জবাব দিলো

— কোথায় ব্যস্ত? আমি ফ্রি আছি বাবা।

— হুম তোকে তো দেখতে পাওয়াই যায় না‌। আচ্ছা বস নাস্তা করে নে আগে।

— হুম।

অর্শি বাবার পাশে বসে বাবার দিকে তাকালো। “সত্যি বাবার ভালোবাসা হয়তো তার ভাগ্যে ছিলো না। কিন্তু এই বাবাটা নিজের বাবার থেকে কোনো অংশে কম না”। অর্শি বাবার দিকে তাকিয়ে কথাটা ভাবছে হঠাৎ অর্শির ভাবনার মাঝে আয়াদ চলে এলো।

— আয়াদ কোথায় থাকিস আজ কাল? তোকে তো বছরের দুই ঈদের মতো দুবার দেখতে পাওয়া যায়।

বাবার কথায় অর্শির ঘোর কাটে। অর্শি আয়াদের দিকে তাকাতেই কেমন একটা লাগছে তার। ভিশন রকম ঘৃণা কাজ করছে আয়াদের বিপরীতে। এতোটা ঘৃণা হয়তো অর্শি লাইফে অন্য কাউকে কখনও করে‌নি। অর্শি আয়াদের দিকে থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। আয়াদ চেয়ারে বসতে বসতে তার বাবা বলছে

— আমি বাসায়ই থাকি। তুমি কাজের চাপে বিজি থাকো বলে খোঁজ পাও না।

— হুম, ঠিক বলেছিস। বয়স হয়েছে‌ আর কত। রিটায়ের্ড এর ও সময় চলে এসেছে।

— হুম।

* আয়াদ খাবার খাচ্ছে আর আড় চোখে অর্শির দিকে তাকাচ্ছে। অর্শি মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে যায়। আয়াদ ও খাবার শেষ করে অর্শির সাথেই উঠে যায়। অর্শি রেডি হয়ে নিলো। ভার্সিটিতে যেতে হবে। আয়াদ বাইক নিয়ে বাড়ির নিচে অপেক্ষা করতে লাগলো। নির্দিষ্ট সময় পার হতেই অর্শি বাড়ির নিচে আসলো। আয়াদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি আয়াদের পাশ থেকে একটু এগিয়ে সামলে যেতেই আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আবার সেই নাটক শুরু হয়েছে! আমার বাইকে করে যেতে হবে বলে দিচ্ছি।

অর্শি আয়াদের কথার কোনো জবাব দিলো না। আরো একটু এগিয়ে যেতেই আয়াদ বাইক থেকে নেমে দৌড়ে অর্শির সামনে চলে যায়। অর্শি মাথা নিচু করে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— আয়াদ ভাইয়া আমার পা আছে আমি একা যেতে পারবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। প্লিজ! আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।

আয়াদ অর্শির কথার বিপরীতে একটু বাঁকা হাসি দিলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলতে লাগলো আয়াদ

— সরি আমি কাউকে একা থাকতে দেই না। আমার সাহায্য নিতেই হবে মানে নিতেই হবে।

কথাটা বলতে বলতে আয়াদ অর্শির হাত ধরলো। আয়াদ অর্শির হাত স্পর্শ করতেই অর্শি ভিশন রেগে যায়। রেগে গিয়ে অর্শি আয়াদকে চমকে দিয়ে আয়াদের হাত থেকে নিজের হাত এক টানে ছাড়িয়ে নিয়ে

— ঠাসসসস, ঠাসসসস। ঐ অপবিত্র, নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি।

সজোরে কসিয়ে থাপ্পড়টা আয়াদের গালে পরতেই আয়াদ অবাক হয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো আয়াদ

— অপবিত্র হাত মানে! কি করেছি আমি? সেটা বল।

— কি করেননি? রাতের গভীরে সকলের অগোচরে রুমের মধ্যে মেয়ে নিয়ে এসে সারা রাত ফুর্তি করে এমন একটা ভাব করছেন যেনো কিছুই করেন নি।

— মানে! কার সাথে ফুর্তি করলাম? কি সব বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর?

— এই ওয়েট ওয়েট আমার সামনে নাটক না একদম। আমি সব জানি কাল রাতে আমি নিজের চোখে দেখেছি সব টা।

অর্শির কথা শুনে আয়াদ বুঝতে পারলো অর্শি কি বলছে। আয়াদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অর্শি সত্যি টা জেনে মানুষকে অপবিত্র বলিস প্লিজ! সবটা না জেনে একতরফা মন্তব্য করিস না প্লিজ!

— ওহহহ তাই। সত্যিটা হলো ঐ মেয়ে বিপদে পরে রাতে মুখ ঢেকে আপনার রুমে এসেছিলো। আপনি তাকে সাহায্য করতে মদের খাওয়ালেন। তারপর দুজন মিলে ইনজয় করলেন সারা রাত। তারপর ও মেয়ের বিপদ কেটে গেলো আর সে চলে গেলো। তাই তো?

— যেটা ভাবার ভাবতে পারিস? আর কিছু বলবো না আমি।

— চুপ একদম। আমি যা জানি তাতেই হবে। আর কিছু জানার নেই আমার। নেক্সট টাইম আমার পথ আটকালে খারাপ কিছু হবে বলে দিলাম। নোংরা মানুষ একটা।

কথাটা বলে অর্শি আয়াদের সামনে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। আয়াদের চোখের কোন থেকে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরলো। আয়াদ সত্যিটা না পারছে বলতে আর না পারছে আড়াল করতে।

* ভার্সিটিতে এসে আয়াদ ক্যাম্পাসে এসে মন মরা হয়ে বসে আছে। সব বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। আয়াদ একটা কোনে চুপটি করে বসে আছে। অর্শির বলা কথা গুলো মনকে আঘাত করেছে ভিশন। আয়াদ একটু নিজেকে শান্ত করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অর্শির ডিপার্মেন্টের সামনে দিয়ে নিজের ক্লাসে যাবার সময় আয়াদ অর্শিকে দেখার জন্য অর্শির ক্লাসে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আয়াদ অর্শির ক্লাসে তাকাতেই থ মেরে দাঁড়িয়ে পরলো। এসব কি দেখছে আয়াদ? অর্শি হঠাৎ করে এসব কেনো করছে? আয়াদ দেখতে পেলো অর্শি………………………….

#চলবে…………………….

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-১০

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি দেখতে পেলো আয়াদ তার রুমের মধ্যে বসে বসে ড্রিংক করছে। অর্শি এর আগে কখনও আয়াদকে নেশা করতে দেখেনি। তাই প্রথমবার আয়াদকে এই অবস্থায় দেখে একটু চমকে যায় অর্শি। অর্শি দরজার নিকট দাঁড়িয়ে ভাবছে আপন মনে “আয়াদ ভাইয়া নেশা কেনো করে? এর আগে তো কখনও তাকে এমন অবস্থায় দেখি নাই আমি! কি এমন কষ্ট আয়াদ ভাইয়ের? তার কারনে এই নেশা হঠাৎ করে তার আপন হয়ে গেলো”? অর্শি আপন মনে ভাবছে কথা গুলো। একটা মানুষকে এতো কাছ থেকে দেখার পরেও ঠিক চিনতে পারলো না অর্শি। আয়াদ ড্রিংক করা শেষ করতেই দরজার দিকে চোখ পরলো তার। আয়াদের চোখের সামনে অর্শির ছবিটা দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু বেসুরো কন্ঠে বলে উঠলো

— কিরে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে পাহারা দিচ্ছিস নাকি?

আয়াদের কন্ঠেস্বর অর্শির কানে পৌচ্ছোতেই অর্শি একটু হকচকিয়ে উঠলো। সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে অর্শি বলতে লাগলো

— না না। কাউকে পাহারা কেনো দিবো আমি? এমনি দাঁড়িয়ে আছি।

— ওহহ।

আয়াদ বসা থেকে উঠে ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। ব্যল্কনি থেকে সাগরের দৃশ্যটা স্পষ্ট। আয়াদ ঐ সাগরের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের কিছু অব্যক্ত অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। মানব জীবন অদ্ভুত। আর অদ্ভুত তার প্রতিটি মোড়। আয়াদ পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে গুজে দিলো। লাইটার টা অন করতেই অর্শির কন্ঠ শুনতে পেলো সে। অর্শি তার পিছনে দাঁড়িয়ে একটু গভীর কন্ঠে বলল

— কবে থেকে নিকোটিনের ধোঁয়া আর এই মদের নেশা শুরু করেছেন?

আয়াদ মুখ ঘুরিয়ে অর্শির দিকে না তাকিয়ে ঠোঁটের কোণ থেকে সিগারেটটা নামিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— যবে থেকে নিজের জীবন নিজের মতো করে বাঁচতে শুরু করেছি‌। তবে থেকে এই নিকোটিন আর মদ আমাকে সামলাতে শুরু করেছে।

— কি হয়েছে আমায় কি বলা যাবে?

— উহু, হাসিটা আমার সবার জন্য আর কষ্ট বলি বা বেদনা সেটা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত।

অর্শি আর কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারলো না। এতোটুকু অর্শির কাছে স্পষ্ট যে আজ তার সামনে এক ভিন্ন আয়াদ দাড়িয়ে আছে। এই আয়াদের সাথে পূর্বের আয়াদের বিন্দুমাত্র মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্শি কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে মুখটা মলিন করে আয়াদের রুমের থেকে বেরিয়ে যায়।

— হ্যালো অর্শি কেমন আছো?

করিডোর থেকে নিজের রুমে যাওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে অর্শি শুনতে পায় তাকে কেউ ডাকছে। আনমনে অর্শি কথাটাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে আবারও অর্শি শুনতে পায়

— কি হলো? জবাব দিলে না যে?

অর্শির মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো ভার্সিটির সেই ছেলেটি তার সামনে। অর্শি একটু অবাক হয়ে যায় রিহানের উপস্থিততে। রিহান হলো অর্শির ক্লাসমেট। এই রিহান খুব ভালো একটা ছেলে। ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে অর্শির প্রতি একটু বেশিই দূর্বল সে। তবে কখনও অর্শিকে কিছু বলল সাহস করেনি। কারনটা হলো আয়াদ। ভার্সিটির মধ্যে হোক বা বাহিরে অর্শির দিকে যে তাকায় তাকে আয়াদ খুব ভালোবেসে সাজা দিয়ে থাকে। আয়াদ আর রিহানের মধ্যে তফাত হলো রিহান ভদ্র ছেলে। আর আয়াদ হলো অসভ্য। যদিও সবার কাছে আয়াদ ভালো ছেলে হলেও অর্শির কাছে সে বরাবরই খারাপ। রিহানকে দেখে অর্শি একটু অবাক হয়ে বলে উঠলো

— তুমি এখানে? হঠাৎ! বেড়াতে এসেছো বুঝি?

— উহু, আমি শুনেছি তোমরা সবাই চট্টগ্রামে এসেছো। তাই ভাবলাম আমিও চলে আসি‌। এক সাথে ঘুরতে যাওয়া যাবে। আর সময় ও কাটবে।

— ওহহহ। আচ্ছা তো সবার সাথে দেখা করে যাও।

— না না। একটু আগেই আসলাম। এখন ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট করবো। তারপর আসবো। আর তাছাড়া যার সাথে দেখা করার ছিলো তাকে তো দেখে নিলাম। বাকিদের পরে দেখা যাবে।

রিহানের কথাটা অর্শির ভিশন অবাক লাগে। যাকে দেখার মানে কি? অর্শি রিহানকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী হয়ে বলে উঠলো

— মানে? যার সাথে দেখা করার ছিলো মানে কি?

— না মানে হলো একজনের সাথে দেখা করার ছিলো। তো এসেই তার দেখা পেয়ে গেছি। এখন একটু রেস্ট করতে চাই।

— ওহহহ। আচ্ছা আসছি আমি।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই নিজের রুমে চলে যায়। আয়াদের কথা গুলো ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। “ছেলেটা কি এমন কারনে নিজের জীবনটা নষ্ট করেছে? জানতেই হবে আমাকে”।

* সকাল হতেই আয়াদ নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিতে লাগলো। আজ চলে যাবে সবাই। অর্শিও নিজের সব কিছু গুছিয়ে নিলো।

— মিলি তোর হলো? ট্রেন ছেড়ে দিবে তো। তারাতাড়ি কর।

— হুম এই তো শেষ।

অর্শি মিলি রেডি। অনু রেডি হয়ে আয়াদের রুমের দিকে চলে যায়। আয়াদ রেডি হয়েছে কি না তা দেখার জন্য। অনু আয়াদের রুমে আসতেই দেখতে পায় আয়াদ একদম রেডি। অনু দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— আয়াদ ভাইয়া আপনি রেডি হয়ে গেছেন?

দরজার দিকে তাকিয়ে আয়াদ অনুকে দেখতে পেয়ে একটু বিরক্ত হলো। আসলে এই মেয়ে কেনো যে আয়াদের পিছনে পরে‌ থাকে আয়াদের মাথায় আসে না। অনুর বদলে অর্শি আসলে কি হতো? আয়াদ ঠোঁটের কোণে একটা মিছক হাসির রেখা টেনে বলতে লাগলো

— হ্যাঁ, আমি রেডি। তোমরা রেডি তো?

— জ্বি ভাইয়া। আচ্ছা আপনি আসুন কেমন। আমি যাই রিহানের সাথে দেখা করে আসি।

— রিহান এখানে এসেছে?

ভ্রূকুচকে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো আয়াদ।

— জ্বি ভাইয়া‌। শুনেছি কাল রাতেই এখানে এসেছে।

— ওহহহ। আচ্ছা দেখা করে এসো।

* অনু আয়াদের রুমে থেকে বেরিয়ে চলে যায় অর্শির রুমের দিকে। অর্শি, মিলি, ফারজানা, অনু সবাই মিলে চলে যায় রিহানের সাথে দেখা করতে। রিহানের রুমের সামনে আসতেই দেখতে পেলো সবাই রিহানের রুমের দরজা খোলা। অনু দরজায় নক করে একটু চেঁচিয়ে বলতে লাগলো

— ভিতরে আসবো?

প্রচন্ড ব্যাথা মাখা কন্ঠে ভিতর থেকে রিহান বলতে লাগলো

— হ্যাঁ আসো।

সবাই ভিতরে আসতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। অর্শি চোখ জোড়া ছানা বড়া করে বলে উঠলো

— একি রিহান তোমার একি হাল হয়েছে? কে কেলালো তোমায়?

রিহান বিছানার উপর পরে আছে। পুরো শরীরে আঘাতের ক্ষত। হঠাৎ করে রিহানাকে এমন অবস্থায় দেখবে আশা করেনি কেউ। রিহান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— না না। কেউ মারবে কেনো? আমি ওয়াসরুমে স্লিপ করে পরে গেছিলাম। তাই আরকি….!

— ওয়াসরুমে পরে গিয়ে এই অবস্থা? কেনো জানি অবিশ্বাস্য লাগছে ব্যাপারটা।

কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠে বলল অর্শি।

— ঐ আরকি একটু অসাবধানতায় পরে গেছি।

— ওহহ। আচ্ছা আমরা চলে যাচ্ছি। নিজের কেয়ার করো কেমন।

অর্শি তার বান্ধবীদের নিয়ে রিহানের রুম থেকে চলে যায়। ট্রেনে বসে সবাই রিহানের বিষয় কথা বলছে। অর্শি কিছু বলছে না‌। আয়াদের দিকে তাকিয়ে ভেবে চলেছে আয়াদ কেনো এমন করছে? আয়াদ ও নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না।

* বাড়ি আসতেই আয়াদ নিজের রুমে হনহন করে চলে যায়। অর্শি বাড়ির মধ্যে এসে একটু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ রিতিমত তাকে উপেক্ষা করছে? কিন্তু কেনো? কি করেছে সে? অর্শি আয়াদের মা বাবার সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে অর্শি আপন মনে ভাবতে থাকে আয়াদের কথা। অর্শি ভাবছে “আয়াদ হয়তো তাকে ঐ গোসল করার ব্যাপারটার জন্য এমন উপেক্ষা করে চলছে। কিন্তু আমি তো ওর থেকে ক্ষমা চাইতেই গিয়েছি। আমার এটার সাথে ওর নেশা করার কি সম্পর্ক আছে”? এখন আয়াদ ভাইয়ার রুমে যাওয়া ও যাবে না। এখন আয়াদ ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করলে উনি চিৎকার চেঁচামেচি করে সবাইকে জানিয়ে দিবে। রাতে দেখি ওনার থেকে সত্যি টা জানতে পারি কি না”! অর্শি কিছুই মাথায় নিতে পারছে না।

রাত হয়ে আ এসেছে। অর্শি নিজের রুমেই বসে আছে। হঠাৎ করে অর্শি দেখতে পেলো কোনো এক লোক তার রুমের সামনে দিয়ে বেশ দ্রুত গতিতে ছুটে বেরিয়ে যায়। অর্শি একটু ভয় পেয়ে যায়। এমনিতেই সবাই নিজের‌ রুমে আছে। মা বাবা এমনকি আয়াদ ভাইয়া হলেও তো আমায় ডাকবে। কখনও চোরের মতো পালিয়ে যাবে না‌। অর্শি নিজূর রুম থেকে পা টিপে টিপে বেরিয়ে আয়াদের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। লোকটা এই দিকেই গিয়েছে। অর্শি আয়াদের রুমের জানালার কাছে যেতেই বেশ অবাক হয়ে যায়। অর্শি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্শি দেখতে পেলো…………………

#চলবে……………………

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৯

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ অর্শির রুমে এসে দেখতে পেলো অর্শি তার রুমে নেই। অর্শিকে রুমের মধ্যে না দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু অবাক হলো। এই সময়ে অর্শি গেলো কোথায়? অর্শির রুমমেট অর্শির বান্ধবীকে আয়াদ জিজ্ঞেস করলো

— আচ্ছা আপু অর্শি কোথায়? ওকে দেখছি না যে!

অর্শির বান্ধবী আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— আয়াদ ভাইয়া অর্শি তো আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। আপনার সাথে কথা হয়নি ওর?

মেয়েটার কথা শুনতেই আয়াদ থ মেরে যায়। আপনমনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আয়াদ “অর্শি আমার সাথে দেখা করতে গেলে আমার সাথে দেখা না করেই যে চলে এলো! অনুকে আমার রুমে আবার দেখে কি রাগ করলো নাকি? আচ্ছা রাগ কেনো করবে? আমি কি ওর বর নাকি যে আমার পাশে অন্য কেউ আসলে তাতে রিয়েক্ট করতে হবে! এখন আবার কোথায় গেলো আল্লাহ জানে। মেয়েটা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না” আয়াদ কথাটা ভাবতেই অর্শির বান্ধবী আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— আয়াদ ভাইয়া সব ঠিক আছে তো? আপনি কি চিহ্নিত?

মেয়েটির কথায় আয়াদের ঘোর কাটলো। আয়াদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলতে লাগলো

— উহু। আসলে ভাবছি অর্শি গেলো কোথায়? মেয়েটা বড্ড জেদি। দেখছি কোথায় গেলো!

*আয়াদ হোটেল থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলো। এই সময়ে অর্শি হোটেল থেকে বেরিয়েছে মানে আমি নিশ্চিত ও সাগর পাড়ে গিয়েছে। ওখানেই গিয়ে দেখতে হবে।

— অর্শি এমন ভাবে মন মরা হয়ে বসে আছিস কেনো? সাগর পাড়ে এসেছিস চল একটু গোসল করে যাই।

মিলির আনন্দিত কন্ঠেস্বর অর্শির কানে আসতেই অর্শি একটা বিরক্তি মাখা কন্ঠ নিয়ে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— তোর মনের মধ্যে এতো আনন্দ থাকলে যা না সাগরে গিয়ে ডুব দে। আমায় কেনো জ্বালাচ্ছিস? আমি একটু ডিপ্রাইজড। একটু একা থাকতে দে আমায়।

— ওমা ডিপ্রেশনের কারন কি? আমায় বল। আমি তোকে সাহায্য করছি।‌

— পারবি না রে। আচ্ছা আয়াদ ভাইয়া সব সময় এমন করে কেনো? মানে অনুর সাথে ওনার এতো কিসের কথা থাকবে? উনি কেনো অনুর সাথে আলাদা করে সময় কাটাবে? আমি কি এতোটাই খারাপ তার চোখে যে আমার সাথে বসে একটু কথা বলা যায় না।

অর্শির অভিমানি কন্ঠে বলা এক দীর্ঘশ্বাস যুক্ত কথার মানে মিলির কাছে স্পষ্ট। মিলি অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— ইমা এসব কি বলছিস? আচ্ছা তুই আবার আয়াদ ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করলি নাকি? এই সত্যি করে বল আমায়।

— মানে? ওনার মতো একটা হনুমানের বংশধরকে আমি ভালোবাসবো! হাউ ফানি। আমি ওনাকে ভালো টালো কিছু বাসি না। অনু ভালো মেয়ে না তাই আর সাথে আয়াদকে দেখলে আমার সহ্য হয় না। এছাড়া আর কিছু না।

— কিন্তু অনু খারাপ কি? ওকে তো যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে মনে হয়। আর‌ ওর পরিবার ও ভালো।

মিলির কথাটা শুনতেই অর্শি রেগে আগুন হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে অর্শি মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তুই সব সময় বেশি বুঝিস। অনু অনেক খারাপ আয়াদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়। যা আমার সহ্য হয় না। আর আমার সহ্য না হলে কি? মানুষ তো ঠিক অনুর সাথে ভালোই থাকে। আমি আর কি বলবো?

অর্শির কথাটা শেষ হতেই অর্শির পিছন থেকে একটা কন্ঠেস্বর ভেসে এলো

— অনুর সাথে আমি গল্প করেছি শুধু আমাদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক আছে নাকি? আর যদি থাকেও তাতে তোর কি? আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের দু চারটা গার্লফ্রেন্ড থাকবে না। সেটা কি জাতি মেনে নিবে?

অর্শি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে আয়াদকে দেখতে পেয়ে তার রাগ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অর্শি রাগে গজগজ করতে করতে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— ওরে আমার জাতির জনক রে। সবাক ঘরে ভালোবাসা পৌচ্ছে দেবার দায়িত্ব নিয়েছেন উনি। দেখলেই গা জ্বলে যায়। শুনুন আপনার চরিত্র সম্পর্কে আমার জানা আছে। আপনি একটা……

— হয়েছে হয়েছে আর গভীরে না যাই। আমার সরল মনের একটাই প্রশ্ন আমায় কিছু না বলে কেনো এখানে এসেছিস?

— আপনি কে ভাই? আপনাকে কেনো বলে আসতে হবে?

— কাল রাতের ঘটনা মনে নেই মনে হচ্ছে।

— এখন সকাল আর আমার সাথে মিলি আছে।

— ওহহহ।

* আয়াদ আর কথা পেঁচালো না। অর্শি এমনিতেই রেগে আছে। এখন আর লাগানো ঠিক হবে না।‌ আয়াদ একটা পাথরের উপর কোনো রকমভাবে বসে পরলো। অর্শি আয়াদের দিকে একটা মুখ ঝামটা মেরে মিলিকে বলতে লাগলো

— চল মিলি আমরা একটু গোসল করে আসি।

অর্শির কথাটা শুনতেই আয়াদ চমকে উঠলো। এই সব কি বলছে অর্শি? এর আগে কখনও তো অর্শি সবার সামনে গোসল করার কথা বলেনি। তবে আজ কেনো বলছে? তাছাড়া অর্শি তো একটা পাতলা পোষাক পরে আছে। কি করতে চায় ও? আয়াদ অর্শির উদ্দেশ্যে কিছু না বলে চুপ করে বসে অর্শির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সাগরের দিকে চলে যায়। আয়াদ অর্শির এমন অদ্ভূত আচরণে হতবাক। অর্শি সাগরে গিয়ে নিজের শরীরে একটু একটু করে পানি দিতে লাগলো। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে রাগে ফেটে যাচ্ছে। এতোটা নোংরা দেখাচ্ছে অর্শিকে। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পাতলা কাপড় ভেদ করে অর্শির শরীরের অবয়ক বাহির থেকে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। আশে পাশের মেয়েরাও ঠিক একি কাজ করছে। পানিতে নেমে শরীরের বিশেষ কিছু অঙ্গ দেখাচ্ছে সবাইকে। বাকিদের নিয়ে আয়াদের মাথা ব্যথা না থাকলেও অর্শিকে নিয়ে যথেষ্ট মাথা ব্যাথা আছে তার। অর্শি পানি নিয়ে ভালোই ইনজয় করছে। আয়াদ আর ধৈর্য ধারন করতে পারলো না। বসা থেকে উঠে রেগে গিয়ে দৌড়ে ছুটে চলে আসে অর্শির দিকে। আয়াদকে অর্শি নিজের সামনে হঠাৎ করে দেখতে পেয়ে একটু অবাক ও অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অর্শি আয়াদকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠল

— আপনি এখানে কেনো?

আয়াদ অর্শির কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। সজোরে কসিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো অর্শির গালে।

— ঠাসসসসস, ঠাসসসসস। নোংরামির লিমিট আছে। আজ তুই সব লিমিট ক্রস করেছিস। ব্লাডি স্টুপিট গার্ল। নিজের দেহ সবাইকে দেখাতে ভালো লাগে তাই না।

আয়াদের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে আসবে। অর্শি থাপ্পর খেয়ে মাথা নত মস্ত করে আছে। লজ্জায় মাথা উঁচু করার সাহস করতে পারছে না অর্শি। জেদের বসে কি করে ফেললো অর্শি? আয়াদ নিজের শরীরের উপর থেকে ব্লেজারটা খুলে অর্শির দিকে ছুড়ে মারলো। ব্লেজারটা অর্শির দেহের উপর পরতেই অর্শি ব্লেজারটা ধরে নিলো। আশেপাশের সবাই অর্শি আর আয়াদের দিকে নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি মাথাটা নিচু করে ব্লেজারটা পরে নিলো। আয়াদ অর্শিকে রেখেই হনহন করে চলে এলো সাগর পাড় থেকে। আয়াদের মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। অর্শির কাজে ভিশন কষ্ট পেয়েছে আয়াদ।

— এই অর্শি কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে?

সাগর পাড় থেকে ফিরে এসে অর্শি কান্না করতে লাগলো। অর্শির কান্নার কারন হলো আয়াদের করা অপমান। কিন্তু এতে আয়াদের দোষ নেই। আয়াদ যা করেছে তা ঠিক করেছে। কিন্তু জেদের বসে অর্শি এতোটা অশ্লীল কাজ কি করে করতে পারলো? এটা ভেবেই তার চোখে জল চলে আসছে। অর্শিকে শান্ত করতে তার মিলি বলল

— দেখ অর্শি যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন কান্না করিস না। একটু শান্ত হয়ে যা।

— উহু। আয়াদ ভাইয়া ভিশন কষ্ট পেয়েছে আমার কাজে। ওনার চোখে সারা জীবনের জন্য আমি ছোট হয়ে গেলাম।

— ধূর পাগলি এসব কিছুই না। মানুষ মাত্রই ভুল। আয়াদ ভাইয়া তোকে ক্ষমা করে দিবে। দেখে নিস।

— হুম।

* সন্ধ্যার দিকে অর্শি একটু শান্ত হয়ে যায়। আয়াদের সাথে কথা বলার জন্য খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার। অতিরিক্ত কান্না করার জন্য অর্শির চোখ ফুলে গেছে। অর্শি নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে আয়াদের রুমের দিকে চলে যায়। আয়াদকে সরি বলে আয়াদের থেকে ক্ষমা চাইতে হবে তার। এমন ভুল আর কখনও করা যাবে না। অর্শি আয়াদের রুমের সামনে আসতেই অর্শি অবাক হয়ে যায়। অর্শির চোখ জোড়া থমকে যায় একদম। অর্শি দেখতে পেলো আয়াদ তার রুমের মধ্যে…………………………..

#চলবে……………………….

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৮

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ দেখতে পেলো অর্শির রুমের মধ্যে অনু সহ বাকি মেয়েরা বসে আছে। সকলের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।‌ আয়াদ ভাবছে “সব তো ঠিক ছিলো। হঠাৎ করে সবাই এক রুমের মধ্যে অর্শিকেও দেখতে পাচ্ছিনা। কোনো ঝামেলা হলো না তো”? আপনমনে কথাটা বলল আয়াদ। আয়াদ করিডোর থেকে অর্শির রুমের দিকে এগিয়ে এলো। অর্শির রুমের কাছে আসতেই অনু আয়াদকে দেখে দৌড়ে আয়াদের দিকে ছুটে চলে এলো। আয়াদ অনুকে বিচলিত দেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তোমাকে দেখে চিহ্নিত দেখাচ্ছে ভিশন। সব ঠিক আছে তো? অর্শি কোথায়?

অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া অর্শি রুমে নেই। এখনে আসার‌ পরে হঠাৎ ও রুম থেকে বেরিয়ে কোথায়‌ যেনো চলে গেছে। ওর বোনটাও বন্ধ।

অনুর কথাটা আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। এই সব কি বলছে অনু? অর্শি একা একা কোথায় গেলো? অচেনা জায়গা। অর্শি তো এই অচেনা শহরের কিছুই চেনে না। মিনিটের মধ্যে আয়াদের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। আয়াদকে নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখে অনু মৃদু কান্না ভেজা কন্ঠে আয়াদকে বলতে লাগলো

— ভাইয়া কিছু একটা করুন আপনি। অচেনা শহরে অর্শির কোনো বিপদ হলো না তো? আপনি একটু ওকে খুঁজে নিয়ে আসুন। প্লিজ!

আয়াদ অনুকে শান্ত করতে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তোমরা চিন্তা করো না। নিজেদের রুমে যাও। আমি অর্শিকে নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, আমার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত কেউ রুম থেকে বের হবে না। ওকে

আয়াদ কথাটা শেষ করতেই দৌড়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে আয়াদ পরলো মহা ঝামেলায় এতো বড় শহরে অর্শি কোন দিকে গেছে? সেটা সে আঁচ করবে কি করে? আয়াদ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো রাস্তার পাশে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ দৌড়ে তাদের দিকে চলে যায়। পকেট থেকে ফোন বের করে আয়াদ তাদেরকে অর্শির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো

— ভাইয়া এই মেয়েটিকে দেখেছেন? ঘন্টা খানেক আগে এখানেই ছিলো। আপনারা কেউ কি দেখেছেন?

— না ভাই‌। আমরা একটু আগেই এখানে এসেছি। সঠিক বলতো পারবো না।

— ওহহ।

আয়াদ আবারও ছুটতে লাগলো। একে একে রাস্তার পাশের সব গুলো দোকান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা লোককে জিজ্ঞাসা করলো অর্শির ব্যপারে কিন্তু সবার থেকে হতাশার উত্তর ছাড়া আর কোনো উত্তর পেলো না সে। আর কোথায় খুঁজবে অর্শিকে? নানা ধরনের চিন্তা মাথায় এসে ভর করে চলেছে। অর্শি ঠিক আছে তো? আমায় না বলে কেনো হোটেল থেকে বের হলি? এতো জেদ তোর। এখন আমি কোথায় খুঁজবো তোকে? চিন্তায় চিন্তায় আয়াদের হাত পা কাঁপছে। চিন্তার ছাপ স্পষ্ট আয়াদের মুখে। আয়াদ আরো একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো রাস্তাটা ক্রমশ নিরব হয়ে আসছে। আয়াদ নিজেও জানে না সে কোথায় এসেছে? আয়াদ আরো একটু এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো একটা চা এর ছোট্ট দোকান। আয়াদ চা এর দোকানের দিকে দৌড়ে ছুটে আসতেই দেখতে পেলো একটা ষাট উর্ধ্ব বয়স্ক লোক চা বানিয়ে চলেছে। আয়াদ সেই লোকটির দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো

— আংকেল একটু দেখুন তো এই মেয়েটিকে কি আপনি দেখেছেন কি না! আনুমানিক ঘন্টাখানেক…….!

আয়াদকে সম্পূর্ন কথা শেষ করার পূর্বেই লোকটি ফোনের স্ক্রিনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে উঠলো

— হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগেই এই মেয়েটি এখানে এসেছিলো। ফোন রিচার্জ করাতে। কিন্তু আমি তো রিচার্জ করাই না। তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।

আয়াদের মলিন ফ্যাকাশে মুখের কোনে সেকেন্ডের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ উঁকি দিলো। আয়াদ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আংকেল দয়া‌ করে আমায় বলুন যে এই মেয়েটি তারপর কোন দিকে গেছে? প্লিজ! একটু মনে করে বলুন।

লোকটি আয়াদের কথা শুনে একটু চিন্তা করে উত্তর দিলো

— বাবা একদম সিওর হয়ে তো বলা যাবে না। কিন্তু আমার যতদূর মনে পরে তারপর এই মেয়েটি এদিকে দিয়ে চলে গেছে।

— ধন্যবাদ আংকেল। অনেক ধন্যবাদ।

আয়াদ চা এর দোকান থেকে বেরিয়ে ঐ চা এর দোকানির বলা পথে ধরে দৌড়ে ছুটে চলল আর অর্শি অর্শি বলে চিৎকার করতে থাকলো। পথটা একদম নিরব। আশে পাশে কোনো মানুষের শব্দ নেই। এমন একটা পরিবেশে অর্শি কি করে আসতে পারে তাও একা এটাই মাথায় ঢুকছে না তার। আয়াদ চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে গলা প্রায় শুকিয়ে ফেলেছে। এখন চিৎকার করতেও পারছে না ঠিক মতো। মনে হচ্ছে গলা ফেটে যাবে তার। আয়াদ আরো কিছু সময় দৌড়াতে থাকার পরে হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পরে যায় সে। পিচ ঢালা পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতেই আয়াদের হাত ও পা এর কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে আয়াদের। কিন্তু এই যন্ত্রণার থেকে মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অসহ্যকর যন্ত্রণাটা বড্ড বেশি কষ্ট দিচ্ছে তাকে। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার দৌড় দিলো। কিছু সময় দৌড়ে এগিয়ে আসতেই আয়াদ দেখতে পেলো দূরে একটা আবছা আলোয় কারো অবয়ক দেখা যাচ্ছে। আয়াদ দৌড়ে ছুটে চলল সেই অবয়ককে অনুসরন করে। চিৎকার করে ডাকছে আয়াদ। এটাই অর্শি। আয়াদের ডাকে অবয়কটা দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ আরো দ্রুত গতিতে ছুটে চলল। অবয়কটা পূর্ণ একটা মানুষ। আয়াদ অর্শিকে দেখতে পেলো। অর্শির কাছে আসতেই আয়াদ হাঁটুর উপর ভর করে হাঁপাতে হাঁপাতে অর্শির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অর্শির মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আয়াদকে দেখতে পেয়ে অর্শি দৌড়ে আয়াদের কাছে চলে আসে। আয়াদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে গজগজ করতে করতে বলতে লাগলো

— তোর কোনো‌ কমনসেন্স নাই? মাথার নাট বল্টু কি ঢিলে সব? একা একা কেনো বেশ হলি? যা প্রয়োজন ছিলো আমায় বললে কি পাপ হয়ে যেতো? আজ যদি একটা অঘটন ঘটে যেতো তখন কি হতো? কে দায় দিতো? বাবা মা কে বা কি জবাব দিতাম? আমার থাকার পরেও…..!

অর্শি আয়াদকে সম্পূর্ন কথা বলার সুযোগ দিলো না। দৌড়ে ছুটে চলে আসে আয়াদের বুকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়াদকে। অর্শির সম্পূর্ণ শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। ভয়ে মেয়েটা কাঁপছে। আয়াদ অর্শির অবস্থা ঠিক বুঝতে পারলো। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে অর্শির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো

— আরে পাগলি মেয়ে আমি চলে এসেছি আর ভয় পেতে হবে না তোকে।

অর্শি আয়াদের কথা শেষ হতে না হতে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আয়াদ অর্শিকে শান্ত করার জন্য অর্শিকে নানা রকম কথা বলতে লাগলো। কিন্তু অর্শির কান্না থামছে না। অর্শি কান্না করতে করতে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আপনি অনেক খারাপ লোক। আমি আপনার উপর জেদ করে বেরিয়েছি। আমি রিচার্জ না করতে পেরে আবার হোটেলেই ফিরে যেতে নিয়েছি কিন্তু আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই নির্জন জায়গায় একা একা ভয়ে আমি মরেই যাচ্ছিলাম। আমাকে প্লিজ বাড়ি নিয়ে চলুন। আমি আর এখানে থাকবো না।

আয়াদ অর্শির কথা শুনে মৃদু হেসে বলতে লাগলো

— এএএ এতো রাতে বাড়ি যাবি কি করে? আর শোন আমি তোর সিনিয়ার ওকে। আর আমাকে যাই ভাবিস না কেনো তাতে আমার কিছুই আসবে যাবে না। কিন্তু অর্শি একটা কথা। জেদের বসে কখনও আর এমনটা করবি না। আজ হয়তো কোনো বিপদ হয়নি তোর। কিন্তু সব সময় তো আর সেইফ থাকবি না। তাই বলছি রেগে গেলেও কিছুর দরকার হলে যাস্ট আমায় বলবি। হয়তো তোর আপন হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে নিজের থেকেও বেশি আপন মনে করি আমি। আমার সব থেকে কাছের হলি তুই। আর কখনও এমন করিস না। চল হোটেলে ফিরে যাই।

* আয়াদ অর্শিকে নিয়ে হোটেলের দিকে চলতে শুরু করলো‌। অর্শি এখনও ভয় পেয়ে আছে। আয়াদের হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে আছে অর্শি। আয়াদ অর্শির সাথে কথা বলতে থাকলো। যাতে করে একটু হলেও অর্শির ভয়টা কমে যায়। হোটেলে ফিরতেই অর্শিকে নিজের রুমে দিয়ে এসে আয়াদ নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসে আয়াদ আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়াদ সোফায় বসে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেললো। এতো সময় পরে নিজের মনকে একদম শান্ত লাগছে। প্রিয়জনের বিপদে বিচলিত হয়ে পরে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দায়।

* সকাল হতেই আয়াদ বিছানা থেকে উঠে পরলো। হাত পা এর অনেক জায়গা ছিঁড়ে গেছে বলে সামান্য একটু যন্ত্রণা হচ্ছে। আয়াদ ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই চমকে গেলো। আয়াদ রুমে এসে দেখতে পেলো অনু বসে আছে সোফায়। এতো সকাল সকাল অনু আমার রুমে! এই বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগলো। আয়াদ অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— কি ব্যাপার অনু? এতো সকাল সকাল আমার রুমে!

আয়াদের কন্ঠেস্বর পেতেই অনু সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো

— না আসলে ভাইয়া কাল রাতে তো আপনার সাথে কথা বলার তেমন একটা সুযোগ পাইনি। তাই সকাল সকাল চলে আসলাম ভাবলাম চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে। আপনি কি ফ্রি আছেন?

— হুম ফ্রি আছি।

“আজ আবার গল্প করতে আসার ছিলো? গতকাল ট্রেনের কথা মনে নেই মনে হয়। অর্শি এতো সকালে অনুকে আমার রুমে দেখতে পেলে আবার আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা শুরু করে দিবে। কি অশান্তি রে বাবা”। আপন মনে কথাটা শেষ করে আয়াদ ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা এঁকে অনুর বিপরীতে বসে পরলো। চা এর কাপ হাতে নিয়ে তা খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো আয়াদ।

— এই মিলি শোন আমি একটু আয়াদ ভাইয়ার রুম থেকে ঘুরে আসছি। সকাল সকাল বেরিয়ে আসবো সাগর পাড়ে। তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা শেষ করে দয়া করে আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দিস।

— ওকে। জানু তাই হবে।

”এই মেয়ে হয়েছে সারা দিন বয়ফ্রেন্ডের সাথে কি কথা বলে আল্লাহ ভালো জানে। এতো কথা বলার কি হলো? আর কথা বলতে বলতে কি এদের কাছে কথা শেষ হয়ে যায় না? কি জানি আমি তো কারো সাথে দু লাইনের বেশি কথা বলতেই আর কথা খুঁজে পাই না। যাই হোক আমি বরং আয়াদ ভাইয়ার রুম থেকে ঘুরে আসি”। কথাটা আপন মনে বলতে বলতে অর্শি চলে যায় আয়াদের রুমে। আয়াদের রুমের দরজার কাছে আসতেই অর্শি শুনতে পেলো অনুর হাসির শব্দ। হাস্যজ্বল মুখটার এক মিনিটের মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে যায় অর্শির। “আয়াদ ভাইয়ার রুমে অনু। এতো সকালে”! মনে মনে কথাটা বলল অর্শি। আয়াদের রুমের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ আর অনু গল্প করছে। অর্শির মুডটাই খারাপ হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখার পরে। অর্শি আয়াদের রুমে প্রবেশ না করে আবার নিজের রুমের দিকে ফিরে আসে।

* অনুর সাথে গল্প শেষ করে আয়াদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে অর্শির সাথে দেখা করতে অর্শির রুমে চলে আসে। অর্শির রুমে আসতেই আয়াদ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ অর্শির রুমে এসে দেখতে পেলো অর্শি………………………

#চলবে…………………….

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৭

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*ছেলেটি অর্শির মুখ চেপে ধরলো। যাতে অর্শি চিৎকার না করে। ছেলেটি অর্শিকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলছে “প্লিজ চিৎকার করিস না। আমার কাছে টিকেট নাই। প্লিজ ভাই”! অর্শি ভয়ের কারনে ছেলেটির বলা কোনো কথাই কানে নিলো না। ছেলেটি অর্শির মুখ চেপে ধরতেই অর্শি ভয় পেয়ে যায়। আত্নরক্ষার চেষ্টা করার জন্য অর্শি ছেলেটির মুখের উপর থাকা কাপড়টা টেনে খুলে ফেললো। ছেলেটির মুখের কাপড় সরে যেতেই অর্শি অবাক হয়ে যায়। চিৎকার এর শব্দ ছোট হয়ে এসে তার চোখে মুখে কৌতুহলের ছাপ উঁকি দিতে লাগলো। ছেলেটি আর কেউ নয় আয়াদ। আয়াদ অর্শির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু তা ছিলো কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি। আয়াদ কোনো শব্দ করছে না। অর্লির কোমল পিংকালার ঠোঁট জোড়া তার হাতের তালুতে স্পর্শ করছে। আয়াদ সেই স্পর্শের আবেশ নিজের মনের মধ্যে মাখছে। চোখ দিয়ে আয়াদ বারংবার প্রকাশ করে চলেছে অর্শিকে নিয়ে তার হৃদয়ের অনুভুতি। প্রকাশ করে চলেছে অর্শির প্রতি তার মুগ্ধতা অবিরত। অর্শি আয়াদের মতিভ্রম দেখে ভিশন বিরক্ত হয়ে যায়। রেগে গিয়ে অর্শি আয়াদের হাতের তালুতে নিজের পিওর দাঁত জোড়া বসিয়ে দিলো শক্ত করে। আয়াদ নিজের হাতের তালুর মধ্যে ব্যথা অনুভব করতেই নিজের ঘোরে ফিরে আসে। অর্শির মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠলো আয়াদ।

— উফফফফ! খোদা কি মেয়েরে বাবা! হাতে কামড় দিয়ে দিলো। এই তুই আমায় বলতে পারতিস তো কিছু? তা না করে কেনো আমার হতে কামড় বসিয়ে দিলি?

— আহহহহ রে…..! আপনি আমার মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছেন আর আমি আপনাকে কিছু বলবো তাই না। কি লজিক ভাই! আপনি এখানে কেনো আগে সেটা বলুন।

— আমি এখানে কেনো মানে? তুই একা একা কোথাও যেতে পারিস না। তাই তোকে নিরাপত্তা দিতে আমি নিরাপত্তা কর্মী হয়ে তোকে পাহাড়া মানে তোকে সেভ করতে এসেছি। যাতে করে‌ তোর ভ্রমণ পিপাসু মন বিনা ভয়ে ভ্রমণের মজা নিতে পারে।

— বাহহহ, বাহহহ! কবে থেকে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিলেন?

— যবে থেকে তুই একা চলতে ভয় পেতে শুরু করেছিস। তবে থেকে।

— তাই আয়াদ ভাইয়া! আচ্ছা আপনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ। কথাটার মানে জানেন?

অর্শির কথা আয়াদের হাস্যজ্বল মুখটার মধ্যে কালো আঁধার জমিয়ে দিলো। অর্শির কথার মনে সেই দিনকার কথা যে দিন অর্শির সাথে সে বাজে ব্যবহার করে ছিলো। আয়াদ এক মিনিটের মধ্যে নিশ্চুপ হয়ে যায়। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। আয়াদ মাথাটা নিচু করে ফেললো। “ভুল না হয় সেই দিন আমি করে ছিলাম। হ্যাঁ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। তবে তার সম্পূর্ণ দোষ আমার একার না। যদি ঐ দিনের জন্য আমাকে অপরাধী হতে হয় তবে সেই একি ভুলের সমান অপরাধী অর্শি তুই নিজেও। তুই আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে ছিলি বলেই এতো কিছু হয়েছে। কিন্তু অর্শি আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তোর থেকে দূরে চলে এসেছি। ক্ষমা চেয়েছি বারবার কিন্তু তুই ক্ষমা করতে পারছি না। নির্লজ্জ বেহায়া হয়তো আমি তাই বারবার তোর কাছে ফিরে আসি। যেচে অপমানিত হতে”। মাথাটা নিচু করে কথা গুলো ভাবতে লাগলো আয়াদ। অর্শি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। আয়াদ অর্শির পাশে বসে থাকলেও একটা ভাবনার উপর ভর করে আছে সে।”অর্শি‌র কাছে বারবার অপমানিত হবার থেকে দূরত্ব তৈরি করে ফেললেই হয় তো ভালো হবে। কারন অর্শি আমার উপস্থিতিতে চরম বিরক্তি বোধ করে। একটা মানুষকে শুধু শুধু বিরক্ত করার কোনো মানে হয় না”।

— আরে আয়াজ ভাইয়া কখন এসেছেন?

কৌতুহলপূর্ণ কন্ঠেস্বর টি অনুর।‌ অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটি। আসলে আয়াদের আসার কথা না থাকার পরেও আয়াদ চলে এসেছে তাই হঠাৎ করে আয়াদকে দেখতে পেয়ে যে কেউ একটু অবাক হবেই। আয়াদ অনুকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে জবাব দিলো

— তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে ছুটে আসলাম।

— সত্যি ভাইয়া আপনি না থাকলে ট্রিপে মজা নেই। আপনি কি ফ্রি আছেন?

— হ্যাঁ, ফ্রি আছি। কিছু বলবে?

— ভাইয়া আপনার সাথে গল্প করতে ভিশঞ ইচ্ছে হচ্ছে। আপনি আমার সাথে চলুন। কফি খেতে খেতে গল্প করা যাবে।

আয়াদ অনুর কথার অমর্যাদা করলো না। অর্শির পাশ থেকে উঠে গিয়ে চলে আসে অনুর সাথে। অর্শি ভাবনায় মগ্ন থাকায় আয়াদের চলে যাওয়া উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। আয়াদ অনুর সাথে অনুর কম্পার্টমেন্টে চলে আসে। অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে একটু লাজুক কন্ঠস্বর নিয়ে বলতে লাগলো

— আচ্ছা আয়াদ ভাইয়া আপনি এতো সুন্দর করে গল্প লিখেন! জানেন আমি আপনার বিরাট ফ্যান। আপনার গল্প পড়ে আপনার প্রেমে পরে গেছি।

অনুর কথা শুনে আয়াদ মৃদু হেসে ফেললো। কফির কাপে আলতো চুমুক দিতে দিতে আয়াদ অনুকে বলল

— ধন্যবাদ। কিন্তু যতটা বলছো ততটা ভালো গল্প লিখতে আমি পারি না। যাই হোক পড়াশোনার কি অবস্থা?

— আসলে ভাইয়া পড়াশোনার অবস্থা বেশ ভালো নয়। কারন আমি লেখকদের উপর ক্রাশ খেয়ে পড়াশোনা করতে ভুলে যাই। আর কতকাল যে সিঙ্গেল থাকবো! আমার সমস্যা গুলোর সমাধান কি? একটু বলবেন?

— এই সব শুধু মাত্র মনের ফাজলামি। আর কিছু না। মনকে শান্ত করে ফোকাস করো হয়ে যাবে।

— আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলুন। আপনার জিএফ আছে? সত্যি বলবেন প্লিজ!

কথাটা বলা শেষ করতেই অনু আয়াদের হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে নিলো। অনুর ব্যবহার আয়াদকে একটু বিচলিত করলো। এটা কেমন ব্যবহার? আয়াদ নিজের হাত অনুর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে যাবে এমন সময় আয়াদের কাঁধের উপর থেকে কেউ একজন ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠল

— বাহহহহ! ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট কে কি করে নিজেদের বেড রুম বানিয়ে ফেলতে হয়? তা মিস্টার আয়াদের থেকে শিখতে হবে।

আয়াদ মুখ ঘুরিয়ে দেখতে পেলো অর্শি দাঁড়িয়ে আছে। অর্শিকে দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। অনু আয়াদের হাত ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই সব কি বলছিস তুই? কাকে কি বলতে হয় ভুলে গেছিস?

অর্শি অনুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে বলতে লাগলো

— উঁহু। আমি ঠিক ঠাক কথা বলি সব সময়। আর যাকে যা বলতে হয় তাই বলছি।

অর্শির কথা শেষ হতেই আয়াদ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— অর্শি নিজের লিমিট ক্রস করিস না। আমি অনুর সাথে এমনি‌ গল্প করছিলাম। এই সাধারণ ব্যাপারটাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা আমি সহ্য করবো না।

— তাই আয়াদ ভাইয়া! আপনি যে কি তা আমার খুব ভালো জানা আছে। অসহ্যকর।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই রেগে গিয়ে হনহন করে চলে গেলো আয়াদের সামনে থেকে। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে যায়।‌ কিছু না করেও বার বার কেনো আমায় অপমানিত হতে হয়? কথাটা ভাবতে লাগলো আয়াদ। আয়াদকে চিহ্নিত দেখে অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— সরি ভাইয়া। আমার জন্য আপনাকে বাজে কথা শুনতে হলো। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ! ও পাগল হয়ে গেছে তাই যা তা বকে। প্লিজ, ওর কথায় কষ্ট পাবেন না।

আয়াদ অনুকে থামতে বলে অনুর সামনে থেকে চলে যায়। অর্শির উপর রাগ উঠার থেকে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতে লাগলো আয়াদের। আয়াদ নিজের কম্পার্টমেন্টে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। অর্শি নিজের সিটে বসে আছে।

*চট্টগ্রাম আসতেই আয়াদ নিজের ব্যাগ পত্র নিয়ে অর্শি অনু ও তার বান্ধবীদের সাথে ট্রেন থেকে নেমে পরলো। সন্ধ্যা হবে প্রায়। হোটেল বেশি দূরে নেই। যেতে প্রায় আধঘন্টার মত সময় লাগবে। আয়াদ অর্শির সাথে গাড়ি করে চলে আসে হোটেলের সামনে। ট্রেনের ঐ ঘটনার পর আয়াদ অর্শির সাথে বা অনু কারো সাথেই কোনো কথা বলেনি। কি করে বলবে? আপসেট মন নিয়ে কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে থাকে না। আয়াদ ভাবছে এখানে আসা টাই কি ভুল ছিলো? কিন্তু না আসলে অর্শিকে চোখে চোখে রাখতাম কি করে? ওকে চোখের আড়াল করলেই যে আমার বুকের মধ্যে তীব্র অশান্তির সৃষ্টি হয়।

আয়াদ গাড়ি থেকে নামতেই অর্শি অনু কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অনু তুই আর ফারজানা এক সাথে থাকবি। আমি আর মিলি এক সাথে দুটো রুম বুক করা আছে।

কথাটা শেষ করতেই অর্শি আয়াদের দিকে আড়চোখে তাকালো। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে আছে। দুটো রুম বুক করলে সে থাকবে কোথায়? “ওহহহ সিকিউরিটি গার্ডের বোধ হয় রুম থাকে না”। আপন মনে কথাটা বলল আয়াদ। অর্শি নিজের চুল গুলো ঝাপটা মেরে হনহন করে চলে যায় হোটেলের মধ্যে। অর্শি চলে যাবার পরেও অনু আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ অর্শির চলে যাওয়ার দিকে এক ঘোরে তাকিয়ে আছে।

— ভাইয়া আপনার জন্য কি একটা রুম বুকিং করে দিবো?

অনুর মায়া ভরা কন্ঠস্বর আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ অভিমানী মন নিয়ে অনুকে বলে উঠলো

— উহু আমার ব্যবস্থা আমি নিজেই করে নিতে পারবো। তুমি যাও তা না হলে পরে‌ তোমাকেও আমার মতো বাহিরে থাকতে হবে।

— হুম।

* হোটেলের নিচে রেস্টুরেন্টে বসে আয়াদ সিগারেট ফুকছে আর হালকা করে ড্রিংক করছে। স্বভাবত মাঝে মধ্যে ড্রিংক করাটা আয়াদের একটা হ্যাবিট। আয়াদ ড্রিংক শেষ করে নিজের বুক করা রুমের দিকে চলে যেতে লাগলো। করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে আয়াদের চোখ পরলো অর্শির রুমের দিকে। আয়াদ অর্শির রুমের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। আয়াদ দেখতে পেলো অর্শির রুমের মধ্যে………………………..

#চলবে……………………..

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৬

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ রুমের মধ্যে বসে আছে। আমার রুমে হঠাৎ করে আয়াদ! কি জন্য এলো? কথাটা মনে মনে ভাবতেই কেমন যেনো একটা ঘটকা লাগছে তার। অর্শি রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদে দরজার দিকে চোখ পরতেই সে দেখতে পেলো অর্শি দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে।

— এই অর্শি ওখানে কি করছিস? এদিকে আয়।

অর্শি কোনো কথা না বলে রুমের মধ্যে এগিয়ে এলো। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই অর্শি ভিশন কর্কশ গলায় আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এতো রাতে হঠাৎ আমার রুমে? কি জন্য এসেছেন?

— আসলে ফিরতে একটু লেট হয়ে গেছে। আসলে আমি তোর থেকে ক্ষমা চাইতে এসেছি।

অর্শি আয়াদের সামনে থেকে সরে গিয়ে টেবিলের উপর কফি প্লেটটা রেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আয়াদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো

— আমি না এই বিষয়টা বুঝতে পারি না। আপনি সারা দিন আমায় অপমান করবেন। ছোট করে কথা বলবেন। আর গভীর রাতে এসে ক্ষমা চাইবেন। মানে সত্যি আপনার ব্যবহার গুলো আমায় না সবাইকে চমকে দেয়।

অর্শির খোঁচা মেরে বলা কথাটা আয়াদ শুনতে পেয়েও কিছু বলল না। আয়াদ একটা প্যাক থেকে কিছু জিনিস বের করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অর্শি আমার দিকে ফিরে তাকা দেখ তোর রাগ ভাঙাতে কি নিয়ে এসেছি। এই দেখ এগুলো তোর জন্য।

আয়াদ হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে অর্শির দিকে কিছু গিফট এগিয়ে দিলো। আসলে গিফট আনার কারন রাগ ভাঙাতে নয়। আয়াদের প্রথম ইনকাম। সেই জন্য আর কি কিছু উপহার দেয়া। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে বলতে লাগলো

— আপনি আমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছেন। রাগ ভাঙাতে না অন্য কোনো মতলবে? আমি বুঝি না কিছু তাই না। এতোটা ছোট আমাকে ভাববেন না মিস্টার আয়াদ। আপনার সম্পর্কে আমার ধারনা হয়ে গেছে। আপনার এই দয়া আমি নিতে পারছি না। ক্ষমা করবেন।

অর্শির কথাটা আয়াদের বুকে এসে লাগলো। আয়াদের হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে যায়। আয়াদ মাথাটা নিচু করে ঠোঁটের কোণে মিথ্যে হাসি একে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— নারে বাজে কোনো মতলব নিয়ে আমি আসি নাই। আসলে তোকে তো কখনও কিছু দেই নাই। তাই এই প্রথম বার কিছু নিলাম। গিফট গুলো রেখে দে। আমি আসছি।

আয়াদ সোফার উপর গিফট গুলো রেখে অর্শির রুম থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে অর্শি চেঁচিয়ে বলে উঠলো

— এই আপনার এই ন্যাকামি অন্য কোথাও দেখাবেন। আমার সামনে কোনো ন্যাকামি না। আপনার পরিবার অনেক দয়া করেছে আমার উপর। আমি আর কারোর দয়া‌ নিতে চাই না। এই গুলো নিয়ে চলে যান।

অর্শি গিফট গুলো আয়াদের দিকে ছুড়ে দিলো। আয়াদ অর্শির দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো। এই সব অর্শি কি বলছে? মানছি আমি ওর পিছনে লাগি। আমায় নিয়ে যা খুশি বল। কিন্তু বাবা মা আমার পরিবারকে টানার কি হলো? আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে একটু কর্কশ গলায় বলতে লাগলো

— আমার দেয়া জিনিস গুলো ফিরিয়ে দিতেই পারিস তবে অর্শি আমার পরিবারকে নায়েক যেটা বললি ওটা সত্যি উচিত হয় নাই। আমার পরিবার তোকে নিজেদের মেয়ের মতো মনে করে। দয়া করে বা অন্য কিছু নয়। আমার মা বাবা কখনও তোকে আলাদা করে দেখে নাই। কিন্তু আফসোস তুই সব সময় তাদেরকে আলাদা করে দেখিয়েছিস। তুই আমার পরিবারকে আপন ভাবতে পারিস নাই। সেই জন্যই তাদের ভালোবাসা তোর কাছে দয়া মনে হয়।

আয়াদের কথা শেষ হতেই আয়াদের মা অর্শির রুমের সামনে চলে এলো।

— কিরে আয়াদ এখানে কি করছিস? আর অর্শিকে কি বলছিস তুই? সারা দিন ঝগড়া না করলে হয় না? দেখছিস তোর জন্য আমার মেয়েটা মন খারাপ করে থাকে। তুই একটু ঝগড়া না করলে কি হয়?

মা কথাটা বলে অর্শির রুমের মধ্যে চলে যায়। আয়াদ একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলে

— দেখ একে দয়া না ভালোবাসা বলে। তোকে বুঝিয়েও লাভ নেই।

আয়াদ গিফটের প্যাকেটটা ফ্লোর থেকে তুলে ডাসবিনে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে চলে এলো। ”অর্শির জন্য এতো শখ করে গিফট গুলো নিয়ে আসাই ভুল ছিলো। দয়া দেখাই আমি। আরে তোকে আমি কখনও দয়া দেখাইনি। এমনি খুশি হয়ে তোর জন্য কিছু জিনিস নিয়ে এসেছিলাম। আরে ভালো না লাগতে পারে। হয়তো‌ রেগে আছিস। তাও তো জিনিস গুলো না ফেলে দিয়ে রেখে দিতে পারতিস। আমি তো চলেই এসেছিলাম। যাক আমার ভুল ছিলো যে ভুলের সাজাটা মনে হয় আমাকে সারা জীবন ধরে পেতে হবে”। কথাটা আপন মনে বলছে আয়াদ। অর্শির কথা গুলো বড্ড কষ্ট দিচ্ছে তাকে। আয়াদ নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলো।

“আয়াদ ভাইয়া তো সত্যি বলেছে। মা বাবা কেউ তো আমায় তাদের মেয়ের থেকে মন মনে করে না। তবুও কেনো আমি তাদেরকে নিজের আপন মনে করতে পারি না? কেনো মনে হয় সবাই আমার নিজের মা এর মতো নিজের সার্থে আমাকে ব্যবহার করে। কেনো আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না? একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে বলে কি এমনটা হচ্ছে আমার”! বিছানায় শুয়ে শুয়ে অর্শি ভাবছে কথা গুলো। আয়াদের সাথে রাগ দেখিয়ে উল্টোপাল্টা কথা গুলো বলে দিলাম। উনি হয়তো রাগ করেছে। তবে ওনার এটাই প্রাপ্য। কারন উনি আমায় অনেক আঘাত করেছেন। তার কাছে এই আঘাতটা সামান্য।

*সকাল হতেই অর্শি ফ্রেশ হয়ে নিলো। অর্শি নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো। অর্শিকে রেডি হতে দেখে আয়াদের মা অর্শির রুমে আসতেই অর্শিকে রেডি হতে দেখে প্রশ্ন মাখা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো

— কিরে অর্শি এই সকাল সকাল রেডি হচ্ছিস যে! কোথাও কি বের হবি?

— হ্যাঁ, মা আমি একটু চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে যাবো। মনটা আজ কাল ভালো লাগছে না। তাই একটু বাহির থেকে সময় কাটিয়ে আসলে হয়তো ভালো লাগবে।

— ওহহহ। আচ্ছা টাকা নিয়েছিস?

— না। আমার কাছে যা আছে তাতে চলবে।

— মেয়ে মানুষ বাহিরে যাচ্ছিস টাকা না নিলে যদি কোনো বিপদ হয়। উহু এই দাঁড়া আমি টাকা নিয়ে আসছি।

— মা লাগবে না টাকা। শোনো আমার কথা…..

অর্শির কথা না শুনে মা চলে গেলেন। অর্শি মা চলে যেতেই আবার নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। আসলে অর্শি একটা যাচ্ছে না। সাথে অর্শির দুইজন বান্ধবী ও যাবে। এমনিতে একা কোথাও যাওয়ার মতো সাহস অর্শির নেই। অর্শি রেডি হয়ে আয়াদের মা এর থেকে টাকা নিয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আয়াদকে কোথাও দেখলো না অর্শি। মা এর থেকে শুনেছে আয়াদ নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। অর্শি লেট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

* বাড়ি থেকে বেরিয়ে অর্শি চলে যায় তার বান্ধবীর বাড়ি সেখান থেকে রেলস্টেশন যাবে। আর তারপর চট্টগ্রাম। অর্শি অনুর বাড়ি গিয়ে দেখলো অনু একদম রেডি। অনু অর্শিকে দেখে বেশ খুশি হয়ে হাস্যজ্বল মুখে নিয়ে বলতে লাগলো

— বাহ আজকে তো তোকে দারুন লাগছে। তো আয়াদ ভাইয়া কোথায়? দেখছি না যে!

— এই ওয়েট আয়াদ ভাইয়া কোথায় মানে উনি আসবেন কেনো?

— ওমা তোকে একা ছাড়বে বুঝি? আমরা তো ৫টা টিকেট নিয়েছি। গতবার ও তো আয়াদ ভাইয়া আমাদের সাথে গিয়েছে।

— হ্যাঁ, তবে আর যাবেন না।

— ওহহ।

আয়াদ আসছে না শুনে অনুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। অর্শির এই সব সহ্য হয় না। তাই অর্শি মুখে একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে অনু আর বাকি দুজন মিলি ফারজানা কে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। রেলস্টেশন এসে অর্শি ট্রেনে উঠে পরলো। অর্শির পাশের সিটূ আয়াদের বসার কথা। অর্শি একা বসে জানলা খুলে দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় যেতেই ট্রেন চলতে শুরু করলো। ট্রেন স্টার্ট হতেই অর্শি জানালা বন্ধ করে‌ দিলো। জানালা বন্ধ করতেই অর্শি দেখতে পেলো তার পাশের সিটে দুম করে একটা ছেলে এসে বসে পরলো। ছেলেটি বসতেই অর্শি চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল

— এই ছেলে এটা তোমার সিট না। এটা আমাদের সিট‌। এখান থেকে উঠে যাও।

— যদি না উঠি তো!

ছেলেটির কথা শুনে অর্শি রাগে গজগজ করতে লাগলো। কতবড় সাহস আমাদের সিটে উড়ে এসে বসে আবার বলছে উঠবে না। অর্শি চিৎকার করে টিটিকে ডাকতে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে ছেলেটি অর্শিকে অবাক করে দিলো। ছেলেটি অর্শির…………………..

#চলবে………………………

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৫

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাইক থেকে নেমে অর্শির হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরলো। অর্শি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আয়াদ অর্শিকে নিজের দিকে টেনে আনে। অর্শি একটু হকচকিয়ে উঠে আয়াদের ব্যবহারে‌ আয়াদ অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি বেশ বুঝতে পারছে আয়াদ প্রচন্ড রেগে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া এমন হঠাৎ করে রেগে গেলেন কেনো? কি হয়েছে? আমি আপনার রাগের কারন বুঝতে পারছি না।

— তাই না! আমার রাগের কারন বুঝতে পারছিস না? আমিও তোর ব্যবহারের কারন খুঁজে পাচ্ছি না। আমার কি মনে হয় জানিস? তুই চাচ্ছিস যে আমি তোর সাথে ঠিক সেই কাজটাই করি যা সে দিন করিনি।

আয়াদের রাগে ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা অর্শির মনে মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করলো। অর্শির বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হলো না যে আয়াদ কি বুঝিয়েছে। আয়াদের কথা শেষ হতেই অর্শির চোখ জোড়া ছলছল হয়ে এলো। আয়াদ অর্শির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে বলতে লাগলো

— এসব নাটক অন্য কোথাও করিস। আমার সামনে এসব নাটক দেখাস না। তোর এই নাটক গুলো বড্ড অসহ্য লাগে আমার।

অর্শি মাথাটা নিচু করে নিলো। আশে পাশে আয়াদের বন্ধরা নিশ্চুপ হয়ে অর্শির দিকে তাকিয়ে আছে। অর্শি লজ্জায় মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদকে কিছু বলার মতো ভাষা নেই তার মুখে। আয়াদ অর্শিকে নিরব দেখে আর কিছু বলল না। নিজের বাইকে উঠে বসে বাইক স্টার্ট করলো আয়াদ। অর্শি আয়াদের বাইকের পাশে এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ চরম বিরক্তি নিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এখানে কি সারা দিন রাত দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি? বাইকে উঠে বসতে কি চিঠিপত্র পাঠাতে হবে নাকি? অদ্ভুত মেরুদন্ডহীন মেয়ে একটা। গাড়িতে উঠে বস।

* আয়াদের কথা শেষ হতেই বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ আয়াদের বাইকের পিছনে চেপে বসলো অর্শি। অর্শি বসতেই আয়াদ বাইক নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পরে। অর্শি নিশ্চুপ হয়ে বাইকে বসে আছে। আয়াদ বাইক চালাচ্ছে। কিছু সময় যেতেই আয়াদ মনে মনে ভাবতে লাগলো “অর্শির সাথে কি বেশি করে ফেললাম? মেয়েটা আমার কথায় হয়তো কষ্ট পেয়েছে। তাই হয়তো চুপ করে আছে। আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কিরে ঐ ছেলেটার কি খবর?

অর্শি চুপ করে আছে। অর্শি আয়াদের কোনো কথার উত্তর দিলো না। আয়াদ আবারও অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কিরে চুপ করে আছিস কেনো? কিছু বলছিস না যে? বল তো ঐ যে ক্রাশ আছে না! তার কি খবর? সকালে করে না ব্রাশ উনি আবার ক্রাশ! বল বল তোর ক্রাশের খবর কি? কিছু বলেছে আর?

অর্শি এবারেও চুপ। আয়াদ স্পষ্ট বুঝতে পারছে আয়াদ তাকে উপেক্ষা করছে। আয়াদ নিজের বাইকের সাইডের লুকিং গ্লাসে অর্শির মুখটা দেখে একটা দুষ্টু হাসি দিলো। হাসিটা দিয়ে আয়াদ অর্শিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই চমকে দিলো। আয়াদ নিজের বাইকটা সজোরে ব্রেক করলো। ব্রেকের টাল সামলাতে না পেরে অর্শি পিছন থেকে সজোরে একটা ধাক্কা দিলো আয়াদকে। আয়াদ ধাক্কাটা অনুভব করতেই অর্শিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলে উঠলো

— এটা কি হলো? মানে বাইকে বসতে দিয়েছি বলে আমার সাথে চিপকে বসতে হবে? অসহ্য। আমি পর নারী একদম সহ্য করতে পারি না। তার উপর এই মেয়েটা ইচ্ছে করে আমার সাথে ধাক্কা ধাক্কি করেছে। ছিঃ!

অর্শি আর নিরব থাকতে পারলো না। আয়াদকে উদ্দেশ্য করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো

— সরি। আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নাই। বাইকটা থামান আমি নেমে যাবো।

— উহহহহ নেকা কান্না কাঁদছিস কেনো? ইচ্ছে হলে বাইক থেকে লাফ দিয়ে নেমে যা। আমি বাইক থামাবো না। আর বেশি থামুন থামুন করলে আবার ব্রেক করবো।

* অর্শি চুপ করে আছে। আয়াদ মিটমিট করে হাসছে। অর্শির চেহারায় চরম বিরক্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে। বাড়ি আসতেই আয়াদ নিজের বাইক থামাতেই অর্শি বাইক থেকে নেমে নিজের রুমের দিকে হনহন করে চলে যায়। আয়াদ পিছন থেকে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে

— একটা ধন্যবাদ ও দিলি না অর্শি! আর কখনও তোকে বাইকে করে নিয়ে আসবো না আমি। তোর থেকে রাস্তার একটা বিড়াল ভালো। অন্তত আমি লিফ্ট দিলে একটা ধন্যবাদ দিবে। বেয়াদব মেয়ে একটা।

অর্শি আয়াদের সাথে কোনো ঝগড়া করলো না। বিষয়টা আয়াদকে ভিশন ভাবিয়ে তুলেছে। যে মেয়ে কে ক বললে দশ লক্ষ্য করা শুনিয়ে দেয়। আজ সে একদম নিরব! বিশ্বাস হচ্ছে না এটা অর্শি না অন্য কেউ।

— অর্শি ফ্রেশ হয়েছিস? খাবার খেতে আয় মা।

আয়াদের মা এর কথা শুনে অর্শি বিছানা থেকে উঠে বসলো। মনটা আজ ভিশন খারাপ তার। আয়াদের অপমান গুলো আজ তার ব্যক্তিত্বকে ভিশন রকম আঘাত করেছে। সকলের সামনে আয়াদ তাকে যা নয় তাই বলে ছোট করেছে। অর্শি বিছানা থেকে উঠে বসে দেখতে পেলো মা তার পাশে বসে আছে। অর্শি মা কে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জল ফেলতে লাগলো। অর্শির এমন হুট করে কান্না করাটা আয়াদের মা এর মনের মধ্যে একটু ব্যাকূলতা সৃষ্টি করে দিলো। মা অর্শির কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— কি হয়েছে মা? তুই কাঁদছিস কেনো? মেয়েদের কান্না নয়। লড়াই করে বাঁচতে শিখতে হবে। তুই কান্না করিস না। তোকে কি কেউ কিছু বলেছে? আয়াদ তোকে কথা শুনিয়েছে? বল আমায়!

— উহু। বাবার কথা মনে পরছে খুব।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই কান্না করা শুরু করে দেয়। বাবা এমন একটা বড গাছ যার ছায়া একটিবার জীবনের উপর থেকে সরে গেলে বোঝা যায় রোদের তীব্রতা কতটা প্রখর। অর্শি দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের রুমে বসে রেস্ট করতে থাকে।

— হ্যালো, মিস্টার আয়াদ।

এক সুন্দরীর কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই ঘাড় ঘুরিয়ে আয়াদ নিজের পাশে লক্ষ্য করলো একটা লেডি কুইন দাঁড়িয়ে আছে‌। একটা কালো সানগ্লাস চোখের উপরে দিয়ে মেয়েটি আয়াদের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটির দিকে হাস্যজ্বল মুখ করে বলতে লাগলো

— ইয়া আই এম আয়াদ। ইউ মিস ডায়না!

— ইয়া আই এম ডায়না। নাইস টু মিট ইউ।

— থ্যাংক ইউ ম্যাম। টেক ইউর সিট প্লিজ। ইউর প্রজেক্ট ইজ রেডি।

— ওয়াও। গ্রেট ওয়ার্ক।

— থ্যাংক ইউ ম্যাম।

আয়াদ বিকেলের দিকে একটা কপি শপে চলে আসে একটা প্রজেক্ট হ্যান্ড ওভার করতে। প্রজেক্টটা ভেরি কনফেডিনশিয়াল। মিস ডায়নার সাথে মিট করে প্রজেক্ট হ্যান্ড ওভার করলো আয়াদ। আয়াদ ডায়নার সাথে নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলতে লাগলো।

* অর্শি নিজের রুমের মধ্যে মন মরা হয়ে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো তবে হয়তো তার ভাগ্যটা একটু অন্যরকম হতো। হয়তো তাকে আর কখনও কারো অপমান সহ্য করে বাঁচতে হতো না। হয়তো কারো দয়ার পাত্রী হতে হতো না তাকে। দয়া বলি কেনো জানেন? আরে পরের বাড়িতে আশ্রীতা হয়ে পরে থাকাকে দয়াই তো বলে। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। সুখ নামক চিরিয়াটা আমার কপালে নেই। আজ আয়াদ ভাইয়াও সকলের সামনে আমাকে নিজে বাজে মন্তব্য করলো। হাসি তামাশার পাত্রী হয়ে গেলাম আমি। সব ভাগ্য। কথাটা শেষ করতেই অর্শির বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। ভাগ্য খারাপ বলাটা কি আদু উচিত হয়েছে? আজ যদি সে তার মা এর কাছে থাকতো তবে কি হতো? নিশ্চয়ই তার জায়গা এতো দিনে কোনো পতিতালয় হতো। রোজ রোজ তার এই দেহের দাম কষাকষি হতো। সেই বিষাক্ত জীবনের থেকে এই জীবনটা হাজার গুনে ভালো।

* রাতের দিকে অর্শি নিজের রুমে বসে স্টার্ডি করছে। কিছু সময় স্টার্ডি করতেই অর্শির মাথা ঘুরতে থাকে। মাথার মধ্যে প্রচন্ড যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে তার। অর্শি পড়ার টেবিল থেকে উঠে এক কাপ কফি বানাতে চলে যায়। কফি নিয়ে অর্শি নিজের রুমে ব্যাক করতেই সে চমকে উঠলো। অর্শি নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো…………………………..

#চলবে…………………………

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৪

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি একটা থ্রি পিস পরে আছে। বুকের নির্দিষ্ট জায়গায় ওড়না টা না থেকে গলার উপর ওড়নাটা পরে আছে। ভার্সিটির বেশির ভাগ লোক অর্শির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেশ সুন্দর তো সে বটেই। একটা ছেলে অর্শির উদ্দেশ্যে এক গোছা রক্ত বর্ণ গোলাপ হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সব দৃশ্য দেখার পর আয়াদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। “এই সব নোংরামি করতে আর ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ভার্সিটিতে আসা হয় বুঝি”! বিড়বিড় করতে করতে বলছে আয়াদ। ছেলেটি অর্শির সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই আয়াদ আচমকা অর্শির সামনে হাজির হয়ে পরে। অর্শি আয়াদের চোখ দেখে বেশ বুঝতে পারছে আয়াদ রেগে আছে। অর্শি নিজেও একটু অবাক। হঠাৎ করে এই ছেলে প্রপোজাল দিচ্ছে কেনো? আয়াদ অর্শির চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— হুম প্রপোজ কর। সুন্দর করে এই সুন্দরী নারীর রূপের বর্ণনা করে করে প্রপোজ কর।

আয়াদের রাগান্বিত কন্ঠের ক্ষতবিক্ষত কথা গুলো ছেলেটি শুনতে পেতেই বসা থেকে উঠে আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আয়াদ ছেলেটির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল

— আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? ভয় পাস না। প্রপোজ কর। আমায় করিস না ভাই‌। এই অপরূপ সুন্দরী রমনীকে কর।

— আয়াদ ভাইয়া আসলে…….!

কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করার পূর্বেই আয়াদ ছেলেটির শার্টের কলার চেপে ধরে ছেলেটিকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে আয়াদ। ছেলেটি অর্শির ক্লাসমেট। আয়াদ তাদের সিনিয়র। আয়াজ ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে রাগে গজগজ করতে করতে ফিসফিসিয়ে বলল

— মেয়ে দেখলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। কন্ট্রোল হয় না। তাই না! ইচ্ছে করছে তোকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে বুঝিয়ে দেই যাকে তাকে প্রপোজাল দেয়া উচিৎ নয়। ব্লাডি স্টুপিট। এতঝটুকু কলিজা নিয়ে প্রপোজাল দিতে এসেছিস? আজ থেকে ভার্সিটিতে বোরখা পরে আসবি। স্টুপিড। গেইট লস্ট।

আয়াদ কথাটা শেষ করতেই ছেলেটিকে একটা ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। অর্শি কিছুই বুঝতে পারছে না। “আয়াদ হুট করে রেগে যাচ্ছে কেনো? অর্শি ভাবছে আয়াদের সাথে আসেনি বলে কি আয়াদ রেগে গেছে”? আয়াদ ছেলেটিকে ছেড়ে অর্শির দিকে এগিয়ে যায়। অর্শি আয়াদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ অর্শির সামনে দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলে অর্শির বুকের উপর থেকে ওড়না টা সরিয়ে নিজের হাতের মধ্যে ওড়নাটা নিয়ে আসে। আয়াদ ওড়না নিয়ে নিতেই অর্শি দ্রুত নিজের অর্ধ উন্মুক্ত বুকটা ঢাকতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আয়াদ অর্শির এই নাটক দেখে আরো রেগে যায়। অর্শি আয়াদের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আয়াদ ফিসফিসিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— তুই একটা নারী। লজ্জা তোর সম্মান। নিজেকে যদি সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দিস। তবে তোর আর ঐ পতিতার মাঝে তফাত কোথায়? মানছি আমি ছেলে মেয়ে সমান। তবে একটা কথা এই লজ্জা নয় ছেলেদের ভূষণ। নারীদের ভূষণ লজ্জায়। অপরের সামনে বুক দেখিয়ে নিজেকে মর্ডান ভাবা সত্যি এসব বোকামির পরিচয়। আয়াদের বাঁকা কথার বিপরীতে অর্শি রেগে গিয়ে বলতে লাগলো

— এইসব কি ধরনের অসভ্যতা? আমার ওড়না আপনি কেড়ে নিয়ে নিজেই নীতিবাক্যর লেকচার শুনাচ্ছেন? এই সব কি? আমি কি ওড়না ছাড়া ভার্সিটিতে এসেছি নাকি? আর ঐ ছেলের সাথে মিস বিহ্যাব করলেন কেনো? ঐ ছেলে আপনার কি ক্ষতি করেছে? আপনার সমস্যা কোথায়?

অর্শির কথার বিপরীতে আয়াদ বাঁকা হেঁসে একটু তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে বলতে লাগলো

— ওড়না টা তো সাথেই ছিলো তোর। কিন্তু এটার যোগ্য জায়গায় এটা ছিলো না। তাই তো আমায় বাধ্য হয়ে টেনে নিয়ে নিতে হলো। নিজের বুক দেখিয়ে ছেলেদের দূর্বল করার কৌশলটার মধ্যে কি লজিক আছে তা আমার জানা নাই। তোকে কোন ভাষায় বোঝালে বুঝতে পারবি যে আমার এই সব নোংরামি একদম পছন্দ না। আর সবার অধিকার আছে নিজেদের মতো করে থাকার কিন্তু তোর সেই অধিকার নেই।

— আমার নেই মানে? আমি আপনার আন্ডারে চাকরি করতে আসিনি যে আপনার সব পছন্দ অপছন্দের দাম আমায় দিতে হবে। আর আপনি তো এর থেকেও নোংরা। যা ঐ দিন রাতে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

অর্শির কথাটা শেষ করেই নিজের চোখ জোড়া ছলছল করে ফেলল। আয়াদ আর কোনো কথা বলার মতো সাহস করলো না। কি বা বলার আছে? অর্শির প্রতি তার দূর্বলতা, অর্শির পাশে অন্য কাউকে সহ্য করার মতো ক্ষমতা, অর্শির মুগ্ধতায় আয়াদ যে নিজের মধ্যে নেই। এটা হয়তো অর্শি কখনও বুঝতে পারবে না। আয়াদ অর্শির দিকে ওড়নাটা ছুঁড়ে দিতেই তার সামনে থেকে অর্শি হনহন করে চলে যায়।

— কিরে আয়াদ এতোটা মনোযোগ দিয়ে কি করছিস?

রাজের কন্ঠ শুনে আয়াদের একটু বিব্রত হয়ে দ্রুত ল্যাপটপটা অফ করে বলল

— উহু কিছু না তো।

— কিছু না হলে ল্যাপটপটা অফ করলি কেনো? ছিঃ! ছিঃ! ভার্সিটির ক্লাসে এসে ল্যাপটপে কি কি করছিস? তা আমার জানা নাই ভাবছিস! দেখি দেখি কি করছিস।

কথাটা শেষ করতে করতে রাজি আয়াদের ল্যাপটপের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আয়াদ কোনো মতেই রাজকে নিজের ল্যাপটপ দিচ্ছে না। রাজ জোর করে আয়াদের থেকে তার ল্যাপটপ টা কেড়ে নিয়ে ল্যাপটপ অন করতেই অবাক হয়ে যায়। আয়াদ রাজকে আর কিছু বলল না। মুখটা মলিন করে রাজকে উদ্দেশ্য করে বৃত্তে লাগলো আয়াদ

— আমি বললাম না তুই যা ভাবছিস তা নয়।

— হ্যাঁ, কিন্তু এসব কি? আয়াদ এগুলো কিসের কোড?

— আরে ভাই তেমন কিছু না। ঐ একটু আইসিটির কিছু কাজ করছিলাম। আচ্ছা বল আজ কি করলাম হবে না?

— কি জানি মনে হচ্ছে হবে না। আচ্ছা মামা বল তো অর্শির সাথে তোর এতো ঝামেলা হয় কেনো? মানে ও তোকে সহ্য করতে পারে না আর তুইও সেম। ব্যাপার কি? আজ সকালেও তোদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। কি জন্য এমন করিস? বেচারি মেয়েটা……!

— এই থাম থাম। ওরে বেচারি বলিস না। যখন কোনো মানুষ ইচ্ছে করে চায় কাউকে রাগাতে তখন তাকে বেচারি বলে না। ও জেনে শুনে এমন এমন কাজ করে যা আমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিতে বাধ্য করে।

— হুম।

* আয়াদ আর রাজ কিছু সময় কথা বলার পরে ক্লাস থেকে বেরিয়ে চলে আসে। অর্শি মন মরা হয়ে ক্লাসে বসে আছে। অর্শির। বেস্টফ্রেন্ড অনু অর্শির পাশে বসে আছে।

— এই অর্শি তোর কি হয়েছে? মন মরা হয়ে বসে আছিস যে?

— কিছু না।

— ওহহহ। আয়াদ ভাইয়া মনে হয় তোকে ভালো টালো বাসে। এই জন্য তোকে কেউ প্রপোজ করলে তার সহ্য হয় না, রেগে যায়।

— কিহহ! ভালোবাসে? ওর মতো একটা নোংরা ছেলে আমায় ভালোবাসবে আর আমিও দাঁত কেলিয়ে ওর মতো চলবো? অসম্ভব। ও ভালোবাসে না। যাস্ট আমার ভালো ওর সহ্য হয় না।

— হুম। কিন্তু আর যাই বলিস আ আয়াদ ভাইয়া কিন্তু দেখতে হেব্বি কিউট। ইশশশ যদি আমার সাথে এমন রাগা রাগি করতো না। আমি পাক্কা ওর সাথেই প্রেম করতাম। কি সুন্দর পরিপাটি একটা ছেলে। উফফফ!

অনুর কথা গুলো অর্শির শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। “আয়াদকে নিয়ে যা খুশি তাই বল। না প্রশংসা করার কি আছে? দেখতে তো হনুমানের মতো। তাকে নিয়ে এতো ঢং করার কি হলো? অদ্ভুত”। কথা গুলো মনে মনে বলে অর্শি ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। অসহ্যকর লাগছে সব কিছু। অর্শি ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ নিজের বাইক নিয়ে ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি চুপচাপ আয়াদের সামনের থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। আয়াদ অর্শিকে দেখে কিছু বললো না। অর্শি আয়াদের সামনে থেকে ক্রশ করতেই আয়াদ অর্শির হাত ধরে ফেললো। অর্শি ভিশন অবাক হয়ে যায় আয়াদের কাজে। আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— সরি। আমার ভূল হয়েছে। একটা ভুলের সাজা আর কত ভাবে দিবি?

অর্শি আয়াদের কথা শেষ হতেই বলতে লাগলো

— বাবা ভুতের মুখে রাম রাম। এতো ভদ্র হলেন কবে থেকে? আর লিসেন আমি আপনার ভুলের কোনো সাজা দিচ্ছি না। অসহ্য কর একটা মানুষ। হাত ছাড়ুন।

অর্শি তেজ দেখিয়ে আয়াদের থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। আয়াদের বন্ধুরা আয়াদের দিকে নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না কেউ। আয়াদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাইক থেকে নেমে অর্শির………………………

#চলবে…………………….

আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-২+৩

0

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০২_০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি দেখতে পায় আয়াদ তার রুমের দরজা বন্ধ করে আছে। এতো ডাকার পরেও খুলছে না দরজা। অর্শি আয়াদের রুমের সামনে যেতেই আয়াদের মা কান্না ভেজা কন্ঠে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই অর্শি তুই একটু দেখ না মা আমার ছেলেটা কেনো দরজা খুলছে না।

মা এর কথাটা অর্শির মনের মধ্যে একটু নাড়া দিলো। হঠাৎ করে আয়াদ ভাইয়া দরজা বন্ধ করে আছে কেনো? অর্শি দরজা নক করতেই আয়াদ হকচকিয়ে দরজা খুলে দিলো। প্রথমবার নক করতেই দরজা খুলে গেলো! অর্শি একটু অবাক হয়ে যায়। আয়াদ দরজা খুলতেই অর্শিকে দেখতে পেয়ে বেশ রেগে যায়। অর্শিকে দরজার বাহিরে দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— এখানে কি? কাল তোকে বলেছিলাম না আমার রুমের সামনে যেনো তোকে না দেখি! তারপরও নির্লজ্জের মতো আমার রুমের সামনের এলি কেনো? আবার বুঝি আমার গালে আদর দিতে ইচ্ছে হচ্ছে?

আয়াদের রাগান্বিত কন্ঠেস্বর অর্শিকে ঠিক বুঝিয়ে দিচ্ছে যে সে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছে। কাল রাতের কথা আয়াদ ভূলে পারেনি। অর্শি মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদের কথা শেষ হতেই আয়াদের মা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তোর সমস্যা কি আয়াদ? আমার মেয়েটাকে তোর সহ্য হয় না একটুও? আর কি সব বলছিস কাল আবার কি হয়েছে তোদের? আর তুই এতো ডাকার পরেও কেনো দরজা খুল ছিলি না? সমস্যা কি?

আয়াদ একটু মুখ বাঁকিয়ে অর্শির দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে তার মা কে উদ্দেশ্য করে একটু শান্ত গলায় বলে উঠলো

— কাল রাতে ঘুমাইনি একটু কাজ করেছি বলে উঠতে লেট হয়ে গেছে।

— ওহহহ। যা ইচ্ছে হয় কর। আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি। যাই হোক তুই ঠিক আছিস তাতেই শান্তি।

আয়াদের মা কথা শুনাতে শুনাতে চলে গেলো। আয়াদ দরজার উপর এক হাত রেখে একটু হেলে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি বোকার মতো দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলতে লাগলো

— ওরে নির্লজ্জ মেয়ে রে। কোন ভাষায় বললে যে বুঝবে এর মতো একটা বদমেজাজি মেয়েকে আমার সহ্য হয় আল্লাহ জানে। দেখো কেমন মেরুদন্ডহীনের মতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ঐ মিস নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। কথা কানে যায় না তোর? একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখলে এমন করে তাকিয়ে থাকতে হয়? আশ্চর্য। মনে হয় জিবনেও ছেলে দেখে নাই।

আয়াদের খোঁচা মারা কথা গুলো অর্শির কানে পৌচ্ছাতেই অর্শি আয়াদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলো

— আমার মেরুদন্ড নেই তা তোকে বলছে কে? তুই তো একটা হনুমানের বংশধর। অসহ্যকর ছেলে একটা। জংলিদের মতো দেখতে। তোকে তো চিড়িয়াখানায় থাকার কথা। এখানে কি? তোর রূপের জন্য তোকে দেখছি না। তোর মত একটা আজব প্রানীকে তো আর‌ সচরাচর দেখা যায় না। তাই মন‌ ভরে দেখে নিচ্ছি।

অর্পি কথাটা শেষ করতেই আয়াদের দিকে তাকিয়ে মুখটা ভেংচি কাটে। আয়াদ রেগে আগুন হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে অর্পির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অর্পি আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে‌ বলতে লাগলো

— কাল রাতের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত আয়াদ ভাইয়া। নেক্সট টাইম এমন ভূল হবে না।

— অর্পি আমি তোকে…….!

অর্পি আয়াদের কথা শেষ হবার আগেই আয়াদের সামনে থেকে পালিয়ে যায়। আয়াদ অর্শির চলে যাবার দিকে একদৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে চৌখ নামিয়ে নিলো।

— অর্শি সন্ধ্যা হতে চলল রেডি হয়েছিস তুই?

আয়াদের মা ভিশন চিৎকার করে কথা অর্শির উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো। আসলে আজ একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে আয়াদ ও তার ফুল পরিবার যাবে। আয়াদ একদম রেডি আর অর্শি নিজের রুমে এখনো রেডি হচ্ছে। আয়াদ গাড়িতে উঠতে যাবে‌ ঠিক এই মুহূর্তে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলতে লাগলো

— আয়াদ তুই আমাদের সাথে যাস না। অর্শিকে নিয়ে তোর বাইকে করে আসিস। আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।‌ আমরা আসছি।

— কিন্তু বাবা আমি তো…..!

— তোকে না বারন‌ করেছি আমার‌ মুখের উপর কথা বলতে না। অর্শিকে সাথে করে নিয়ে আসলে কোনো পাপ হবে না। আর আমি যেনো না শুনি যে আবার ঝগড়া করেছিস। সাবধানে আসিস।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদের বাবা গাড়ি নিয়ে আয়াদের সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। আয়াদ বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখের উপর থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে আয়াদ মনে মনে বলতে লাগলো “এটা কি হলো? এতো সুন্দর করে সেজে গুজে বিয়ের‌ অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। আমায় না নিয়ে বাবা মা চলে গেলো! তা না হয় মানতে পারলাম কিন্তু অর্শির মতো একটা বজ্জাত মেয়েকে নিয়ে আমি কেমন করে যাবো? মান সম্মান আর থাকলো না আমার”। আয়াদ কিছু সময় দুঃখ প্রকাশ করে বাড়ির মধ্যে চলে যায়। অর্শির রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে আয়াদ রাগান্বিত কন্ঠেস্বর নিয়ে বলতে লাগলো

— এই তোর হয়েছে? সবাই চলে গেছে। আর কত লেট করবি? তারপর তো বিয়েই শেষ‌ হয়ে যাবে।

— কি? সবাই চলে গেছে! হায় আল্লাহ এখন আমি যাবো কি করে? আমার‌ কত ফ্রেন্ড আশার কথা। আল্লাহ আমি এখন কি করবো?

— কি করবি মানে? আল্লাহরাস্তে তারাতাড়ি রেডি হবি আর কি করবি!

— রেডি হয়ে লাভ কি? আমার যাবো কাল সাথে?

— আমার সাথে যাবি। বাবা বলে গেছে আমার সাথে যেতে। কপাল আমার। আচ্ছা ঝামেলায় ফেসেছি আমি। যত্তসব

— ওহহ।

* অর্শির শান্ত জবাব শুনে আয়াদের একটু অবাক লাগলো। এই বদমেজাজি মেয়েটা এতো শান্ত গলায় কথা বলছে মানে নিশ্চই কোনো ব্যাপার আছে। আয়াদ অর্শির রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওয়েট করছে। কিছু সময় যেতে আয়াদ আবার অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আর কতক্ষন লাগবে?

— এই তো আর একটু।

— ভাই করছিস কিরে তুই? মানে এতোক্ষণ সময় লাগে রেডি হতে! বিয়েটা তো আফরিনের তোর না। একটু তো রহম কর। পরে আবার ওর জামাই নিয়ে টানাটানি পরবে।

আয়াদের কথার কোনো বিপরীত জবাব এলো না। প্রায় আরো ১৫ মিনিট যেতেই আয়াদের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে যায়। আয়াদ চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল

— এই তুই থাক আমি গেলাম।‌

— এই আয়াদ ভাইয়া যাবেন না প্লিজ! আমি একটা বিপদের মধ্যে ফেসে গেছি। প্লিজ.

অর্শির কান্না ভেজা কন্ঠ আয়াদের মনের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে দিলো। আয়াদ দরজায় নক করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই তুই ঠিক আছিস তো? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? আচ্ছা আমি যাচ্ছি না। তুই রেস্ট নে তা হলে।

— আরে না। আমি শাড়ি পরতে পারছি না। মা কে একটু ডেকে দিন না প্লিজ!

— লে এতোক্ষণ কি উগান্ডার ভাষায় বলছিলাম যে বাবা মা চলে গেছে? এখন বলে মা কে ডেকে দাও। প্রেসিডেন্টরে ঠেকে দাও। শাড়ি পরিয়ে দাও। ঢং যত

— আয়াদ ভাইয়া আমায় একা বাড়িতে রেখে যাবেন না প্লিজ! আমার ভিশন ভয় করছে। প্লিজ!

— উফফফ! আর কতক্ষণ থাকবো বলে আমায়। শাড়ি না পড়ে অন্যকিছু পরলে পাপ হয়ে যেতো। অসহ্যকর একটা মেয়ে। আমি আসবো কি?

— হু।

অর্শি দরজা খুলে দিতেই আয়াদ অর্শির রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। অর্শি শাড়ির কুচি এক হাতে ধরে অন্য হাতে নিজের বুকের উপর একটা কাপড় দিয়ে রেখেছে। আয়াদ অর্শির চোখের দিকে তাকাতেই অর্শি মাথা নিচু করে ফেললো। কি আর করবে? এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে না পরলে আয়াদের থেকে সাহায্য নেয়া তো দূর এরে তো সহ্য করাই যায় না। আয়াদ অর্শির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অর্শির শাড়ির কুচি ঠিক করে লাগলো। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। আয়াদ কুচি ঠিক করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই নে কুচিটা ধরে গুজে দে। আর আমায় উদ্ধার কর।

অর্শি শাড়ির কুচি ধরতেই কুচিটা আবার নষ্ট হয়ে যায়। কুচিটা নষ্ট হতেই আয়াদ রেগে বোম হয়ে যায়।

— একি করলি? আবার নষ্ট করে ফেললি! আল্লাহ আজ আর যাওয়া হবে না। কোনো কাজ তোর দ্বারা ঠিক মতো হয় না।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ আবার অর্শির শাড়ির কুচি ঠিক করতে লাগলো। অর্শি ছলছল চোখে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ বিষয়টা লক্ষ্য করে আর কিছু বলল না। আয়াদ কুচিটা ঠিক করে অর্পির পেটের দিকে গুজে দেয়ার চেষ্টা করতেই আয়াদের হাতের স্পর্শ অর্শির পেটে লাগে। আয়াদের স্পর্শ পেতেই অর্শির সমস্ত শরীর শিউরে উঠে। অর্শি নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আয়াদ শাড়িটা গুজে দিয়ে অর্শির পেটের দিকে তাকাতেই অর্শির নাভিটা আয়াদের চোখে পরে। আয়াদ এই প্রথম কোনো নারীর উন্মুক্ত পেটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আয়াদ বলছে “বাহ কি অপূর্ব সুন্দর”! আয়াদ অর্শির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অর্শি চোখ বন্ধ করে আছে। আয়াদ অর্শির সামনে থেকে উঠে দাঁড়ালো। বুকের উপর থেকে শাড়ি অনেক আগেই সরে গেছে। অর্শি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ অর্শিকে এমন অবস্থায় দেখে একটা ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যায়। অর্শির দিকে থেকে আয়াদ নিজের চোখ ফেরাতে পারছে না। এতোটা সুন্দরী মানুষ কি‌ করে হতে পারে? ভাবছে আয়াদ। আয়াদ অর্শির শাড়ির আঁচলটা সেফ্টি পিন দিয়ে আটকে দিতে নিলো। অর্শির বুকের উপরে আয়াদের স্পর্শ অর্শির মনের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম দিলো। অর্শি আয়াদের কাঁধের উপর হাত রেখে আয়াদের শার্টটা শক্ত করে চেপে ধরলো। অর্শির হাতের স্পর্শ আয়াদের মনের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে দিলো। হ্যাঁ আয়াদ‌ আর নিজের মধ্যে নেই। আয়াদ অর্শির শাড়ির আঁচল টা ফেলে দিয়ে অর্শির কোমড় ধরে স্লাট করে নিজের দিকে অর্শিকে টেনে আনে। অর্শি চোখ বন্ধ করে আছে। আয়াদ অর্শির চুল গুলো ঘাড়ের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে অর্শির ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে লাগলো। অর্শি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্শি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আয়াদের চুমু গুলো ফিল করতে লাগলো। আয়াদ একটু একটু করে অর্শির ঘাড় থেকে অর্শির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে। আয়াদ অর্শির ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতেই অর্শি আয়াদকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে তাকে আলাদা করে নিলো। অর্শি আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া এই সব ঠিক না। প্লিজ আপনি এখন যান। আমি চাই না এই সব প্লিজ!

আয়াদ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্শির কথা গুলো আয়াদের কান উবদি পৌঁছায় না। আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসে। অর্শি ছলছল দৃষ্টিতে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্শি পিছিয়ে যেতে যেতে বিছানার কাছে চলে আসে। আয়াদ অর্শিরকে এক ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। অর্শির উপর ঝাপিয়ে পরে আয়াদ। অর্শি কান্না ভেজা কন্ঠে আয়াদকে এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে

–প্লিজা ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিন। আমার এসব সহ্য হচ্ছেনা। আমি অবিবাহিত প্লিজ!

আয়াদ অর্শির কথা গুলো পাত্তা না দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— প্লিজ অর্শি প্লিজ। আমি নিজের মধ্যে নেই। আমরা আজ এক হবোই হবো। আই নিড ইউ। ইয়া আই রিয়েলি নিড ইউ অর্শি।

কথা খুলে বলতে বলতে আয়াদ অর্শির ঘাড়ে আবারও মুখ গুজে দিলো। অর্শি সহ্য করতে পারছে না। আঁতকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো সে। অর্শির কান্নার শব্দ আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ……………………

#চলবে…………………..

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অর্শির কান্নার শব্দ আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ থ মেরে যায়। আপন মনে আয়াদ ভাবতে থাকে ছিঃ! এসব আমি কি করছি? একটা মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্ষণ করছি আমি! আয়াদ একটু শান্ত হয়ে যায়। আয়াদ অর্শির উপর থেকে উঠে যায়। অর্শি বিছানায় অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে কেঁদে চলেছে। আয়াদ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শিকে কিছু বলে শান্ত করার মতো ভাষা তার জানা‌ নেই। আয়াদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে অর্শির রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। অর্শি নিজের‌ বিছানায় পরে আছে। এতোটা লজ্জা লাগছিল তার যে ইচ্ছে করছিলো মরে যেতে। অর্শি কাঁদছে আর ভাবছে “আয়াদ ভাইয়াকে সাহায্য করার জন্য না ডাকা উচিত ছিলো। আজ আমার ভুলের জন্য আয়াদ ভাইয়া আমার উপর জোর করে। আমি এই মুখ কাউকে দেখাতে পারবো না আর”। অর্শির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ প্রকাশ করে চলেছে আয়াদের করা ব্যবহার তার মনের মধ্যে কতটা আঘাত করেছে। আয়াদ নিজের রুমে সোফার উপর কপালে হাত দিয়ে বসে‌ আছে। অর্শির উপর এতোটা আকর্ষিত হয়ে কি করে পরলাম আমি? আপন মনে ভাবছে আয়াদ।

— কিরে এমন মুখ গোমড়া করে বসে‌ আছিস কেনো? অনুষ্ঠানে আসলি না যে? অর্শির সাথে ঝগড়া করেছিস?

আয়াদের মা‌ এর প্রশ্ন সূচক কন্ঠ শুনে আয়াদ কেঁপে উঠলো। আচমকা আয়াদের মা এর উপস্থিতি আয়াদকে বিব্রত করলো। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার মা কে উদ্দেশ্য করে ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে লাগলো

— তোমরা চলে এসেছো! বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ?

— হ্যাঁ, বিয়ের অনুষ্ঠান তো শেষ। কিন্তু তোকে এতোটা চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো? ঘেমে যাচ্ছিস যে? কি হয়েছে? সব ঠিক তো?

— হ্যাঁ মা সব ঠিক আছে। আসলে একটু অসুস্থ বোধ করছি বলে আর যাই নি।

— ওহহহ।

আয়াদের মা এর কথা শেষ হতেই আয়াদ রুমার দিয়ে নিজের মুখের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে ফেলতে লাগলো। আয়াদের মা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলে উঠলো

— অর্শি কোথায়?

কথাটা শুনতেই আয়াদ চমকে উঠলো। “অর্শি কোথায় মানে”? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো আয়াদ।

— হুম অর্শি কোথায়? নিজের রুমে আছে নাকি একা একা চলে গেছে বিয়েতে?

— না মা একা যায় নি। রুমে আছে হয়তো।

— ওহহহ।

আয়াদের রুম থেকে মা চলে যেতেই আয়াদ আবার সোফায় বসে পরলো। নিজের প্রতি নিজের ভিশন ঘৃণা হচ্ছে তার। এমন একটা কাজ করেছে সে যাতে করে সে নিজের কাছে সারা জীবনের জন্য ছোট হয়ে গেলো।

— অর্শি খাবার খেতে আয়। রাত অনেক হয়ে গেছে।

অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে কথাটা বলল আয়াদের মা। অর্শি সেই সন্ধ্যার ঘটনার পর আর নিজের রুম থেকে বের হয়নি। নিজের রুমের মধ্যে চুপটি করে বসে আছে সে। আয়াদের মা অনেক বার বলার পরেও অর্শি রাতের খাবার খেতে আসলো না। আসলে অর্শি একটা শকের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় গলা দিয়ে তার কিছুই নামবে না। আয়াদ অর্শির খাবার না খেতে আসার কারনটা জানে। আয়াদ খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে যায় নিজের রুমে। নিজের রুমে এসে আয়াদ ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে গুঁজে নিকোটিনের ধোঁয়া গ্রহণ করতে থাকে। মাথাটা জ্যাম ধরে আছে তার। তাই একটু হালকা হচ্ছে আয়াদ।

* রাত প্রায় গভীর। আয়াদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কিছু একটা ভেবে আয়াদ অর্শির রুমের দিকে এগিয়ে যায়। অর্শির রুমের লাইট অফ। আয়াদ অর্শির রুমের মধ্যে প্রবেশ করে দরজাটা আলতো শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। রুমের মধ্যে একটু বেশিই অন্ধকার। আয়াদ লাইটের সুইচ খুঁজতে লাগলো। লাইটের সুইচ অন করে আয়াত অর্শির বিছানার দিকে ঘুরে তাকাতেই বেশ চমকে যায়। আয়াদ দেখতে পায় অর্শি বিছানার একটা কোনে চুপ করে বসে আছে। চোখ জোড়া বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে তার। রুমের লাইট অন হতেই অর্শি আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আয়াদকে এতো রাতে নিজের রুমে দেখতে পেয়ে অর্শির আর বুঝতে বাকি নেই আয়াদ তার রুমে কি জন্য এসেছে? অর্শি আয়াদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— যেটা তখন করতে পারেননি ঐ টা এখন করতে এসেছে? হুম, শুরু করুন। আর বাধা দিবো না। আমি প্রস্তুত।

অর্শির কথাটা আয়াদের কান থেকে এসে বুকের মধ্যে আঘাত করলো। একটা ভুল আয়াদকে অর্শির চোখে কতটা নিচে নামিয়ে এনেছে তা দেখে আয়াদ মাথা নিচু করে ফেললো। অর্শি আয়াদের নিরবতা দেখে আবারও বলতে শুরু করলো

— তারাতাড়ি করুন। মা বাবা আবার চলে আসলে সমস্যা হবে।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আয়াদ সকল নিরবতা ভেঙ্গে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— একদম চুপ। অনেক কথা বলা শিখে গেছিস তুই। নিজেকে আমার রক্ষিতা ভাবিস নাকি? আমি ভুল করেছি। হ্যাঁ ঐ মুহুর্তে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তবে একটা কথা। আমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। তখন আমি তোকে ছেড়ে দিয়েছি।‌ তুই প্লিজ অর্শি আমায় ক্ষমা করে দে। আমি লজ্জিত তোর কাছে। প্লিজ!

— হুম। করে দিয়েছি ক্ষমা। তো এতো রাতে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছেন! আরো তো সময় ছিলো। তখন কেনো ক্ষমা চাইতে আসেননি? আপনাদের মতো ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ মানুষদের আমার খুব খুব ভালো চেনা আছে। আপনারা সুযোগ খোঁজেন। সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে লেট করেন না।

অর্শির কথা গুলো আয়াদকে বার বার আঘাত করছে। অর্শি বার বার এটাই বোঝাতে চাইছে যে সব ভুল আয়াদের। অর্শির কোনো ভুল নেই। হ্যাঁ আয়াদ ঠিক অর্শির উপর কিছুটা জোর করেছে কিন্তু পরিস্থিতি এমনটাই ছিলো। অর্শির কথার বিপরীতে আয়াদ কোনো কথা বললো না। প্লেটে করে আয়াদ অর্শির জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। অর্শির সামনে বসে আয়াদ অর্শির উদ্দেশ্যে খাবার প্লেট এগিয়ে দিতেই অর্শি মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আয়াদ মৃদু কন্ঠে অর্শিকে বলল

— প্লিজ অর্শি খাবার টা খেয়ে নে। আমি তোর কাছে ঐ ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইছি। দয়া করে আমায় ক্ষমা করে দে। তোর চোখের জলের কারন আমি। প্লিজ আর চোখের জল ফেলিস না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ!

অর্শি নিরব হয়ে আছে। আয়াদ নিজের হাতে অর্শির মুখের দিকে খাবার এগিয়ে দিতেই অর্শি খাবারটা খেতে লাগলো। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে অর্শির। আয়াদ অর্শিকে খাবার খাইয়ে অর্শির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো

— ক্ষমা করে দে অর্শি আমায়। জীবনে আর কখনো আমি এই ভুলের ২য় সুত্রপাত করবো না। প্লিজ! মন থেকে ক্ষমা করে দে আমায়।

আয়াদের কথার বিপরীতে অর্শি কিছু বললো না। আয়াদ প্লেটটা হাতে নিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে অর্শির রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

* সকাল হতেই আয়াদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে যে খুব ঘুম হয়েছে তার এমনটা নয়। সারা রাত আয়াদের মাথায় আজকের এই ঘটনাটা ঘোরপাক খাচ্ছিলো। তাই আয়াদের ঘুম শান্তিতে হলো না। আয়াদ ভোর হতেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।
সকালের নাস্তার টেবিলে আয়াদ বসে নাস্তা খাচ্ছে। অর্শি এখনও আসেনি খাবার টেবালে। আয়াদ বার বার অর্শির রুমের দিকে তাকাচ্ছে। কখন অর্শি আসবে? ভাবছে আয়াদ। কিছু সময় যেতেই অর্শি রেডি হয়ে খাবার টেবিলে চলে আসলো। আয়াদ অর্শি আসছে দেখে আর অর্শির দিকে তাকালো না। খাবার‌ শেষ হতেই আয়াদ বাইক নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রোজ অর্শিকে নিয়ে আয়াদ ভার্সিটিতে যায়। আয়াদ রোজকার মতো অপেক্ষা করছে। অর্শি বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে পাত্তা না দিয়ে আয়াদের সামনে এসে দাঁড়ায়। আয়াদ অর্শির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আয়াদকে দেখে বোঝা যাচ্ছে আয়াদ চাইছে অর্শি তার বাইকে করে ভার্সিটিতে যাক। কিন্তু না। অর্শি একটা রিক্সা থামিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। আয়াদ অবাক হয়ে অর্শির দিকে তাকিয়ে রইল। অর্শি তার মানে মন থেকে কালকের ব্যাপার্টার জন্য ক্ষমা করেনি। আয়াদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।

* ভার্সিটিতে এসে আয়াদ ক্যাম্পাসের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছে। অর্শি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই আয়াদ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ অর্শিকে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে অর্শির দিকে এগিয়ে যায়। অর্শি একটা…………………….

#চলবে…………………….