Friday, August 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1003



অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১১+১২

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১১ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

চারিদিকে আঁধার আলোর ছিটে ফোটাও নেই। আধার অম্বরিতে চাঁদ তারার দেখা নেই। দূরে বা কাছ থেকে রাত পোকা আর শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। কাছে কোথা থেকে রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। কৌতুহলে ৬ মানব-মানবীর নিশ্বাসের যেন কয়েকগুন বেরে যাচ্ছে। জারা নিজেকে গড়ে তুলেছে পরিশ্রম করে। আজ সে এডভোকেট এটা তার দ্বিতীয় কেস। প্রথম কেসে সহজে জিতে গেলেও এই কেসটাই বড্ড কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে।পরশুদিন কেসের লাস্ট ডেট তার মধ্যেই সকল প্রমান জোগার করতে হবে। আর তাই সবাই মিলেই এসেছে সত্যউনেচ্চন করতে।

নিস্তব্ধ জায়গায় প্রীতি ব্যথাতুর শব্দ তুলে পা ধরে বসে বলল

-‘ আমার পা..’

সকলে থেমে গেলো প্রীতির দিকে সকলে স্থির দৃষ্টি দিয়ে সতর্ক বানী দিয়ে রুহান ফিসফিস করে বলল

-‘ হিশশ চুপ আস্তে কথা বল চিৎকার করছিস কেনো? কি হইছে? ‘

পলক প্রীতির পাশে গিয়ে বসে বলল

-‘ কি হইছে পায়ে দেখি ‘

পলক প্রীতির পা থেকে সু খুলে দেখলো জুতার সাথে কাচ বেঁধে পায়ে বিঁধে গেছে। পা বেশি কাটি নাই কিন্তু রক্ত বের হচ্ছে। জারা তারাতাড়ি করে ব্যাগ থেকে ফাস্টএডেট বক্স বের করে শায়রীর হাতে দিলো শায়রীও চটপট প্রীতির পায়ে ব্যান্জে করে দিলো। রুহান ধমক দিয়ে বলল

-‘ কেমনে হাঁটিস যে পায়ে কাচ বিঁধে যায়? ‘

-‘ আমি জানি। কাচে কেটে গেলে আমি কি করবো? ‘
রুহান বিরক্তিসুচক শব্দ বের করে বলল

-‘ এই পা নিয়ে হাঁটতে পারবি না তার চেয়ে এককাজ কর তোরা সকলে এখানে থাক আমি পজিশন বুঝে আসি ‘

জারা চাপা সুরে বলল

-‘ পাগল তুই? একা যাবি মানে কি? আমি ও যাবো ‘

সাইম চোখ মুখ কুঁচকে বলল

-‘ আমরা জানি তুই পুলিশ তাই বলে এমন ভাবে হিরোগিরি দেখাতে একা যাবি? আমিও যাবি ‘

পলক দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘ আর আমরা কি ধুমা দিবো? ‘

সাইম মুখ চেপে হেসে বলল

-‘ না তোরা ডিম পাড় আমরা এসে পোস্ট করে খাবো ‘

শায়রী রেগে বলল

-‘ এখানে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে আর তোরা? সব কিছু তোদের মজা লাগে না? ‘

জারা হাত তুলে ঝ’গ’ড়া থামানোর চেষ্টা করে বলল

-‘ স্টপ স্টপ আমি বলি তোরা কোনো কথা না বলে শোন পলক প্রী…’

পলক জারাকে থামিয়ে বলল

-‘ তুই আমার নাম আগে নিলি কেন? ‘

জারা বিরক্ত হয়েও ঠান্ডা গলায় বলল

-‘ ইনপ্টেন কথা হচ্ছে দয়া করে থাম

পলক চুপ করলো জারা আবার বলতে লাগলো

-‘ পলক, প্রীতি, শায়রী তোরা এখানে থাকবি আমি, রুহান আর সাইম যাবো তো…’

শায়রী অধৈর্য্যে গলায় বলল

-‘ কেনো আমি যাবো না আমার সাথে এমন করছিস কেনো? ‘

জারা এবার আর বিরক্তি প্রকাশ করে বলল

-‘ তোরা ঠিক কর তোরা কি করবি আমি চললাম ‘

বলে জারা হাঁটা ধরলে রুহান জারার হাত ধরে আটকে বলল

-‘ কি বলছিলি বল আর তোরা যদি একটাও কথা বলিস কথার মাঝে তার অবস্থান খারাপ হবে এর পরের কেসে তোদের আনা হবে না ‘

সবার চুপ হয়ে গেলো জারা বলল

-‘ শোন পলক তুই প্রীতি আর শায়রীকে গার্ড দিবি কেনো না আমরা বলতে পারছি না এই জঙ্গলে কোথায় কোন বিপদ লুকিয়ে আছে আর শায়রী তোকে নিয়ে যাচ্ছি না কারণ আমরা যদি কোনো ভাবে আঘাত পাই তুই ড্রেসিং করে দিতে পারবি কেন না তুই নার্স ‘

সাইম ফোঁন কেটে বলল

-‘ তুই নার্স আর তোর ভাব ডক্টরের ওপরের ডক্টর ‘

শায়রী চোখ বাঁকা করে তাকালো। জারা গম্ভীর কন্ঠে বলল

-‘ সাইম এতো লাফাস না তোকেও নিয়ে যেতাম না তোর কাছে ক্যামেরা আছে বলে তোকে নিয়ে যাচ্ছি ‘

সাইম বলল

-‘ যা যাবো না ‘

জারা বিরক্ত হয়ে বলল

-‘ ভাব দেখাস না চল ‘

রুহান বলল

-‘ দাঁড়া পলক শোন শায়রী,প্রীতিকে নিয়ে তুই গাড়িতে গিয়ে বস এখানে তোরা সেভ নস পলক তুই ড্রাইভিং সিটে বসে থাকবি সব রেডি করে যেনো আমরা আসলেই গাড়ি এস্টেট দিতে পারিস ‘

সকলে রুহানে কথায় সাই দিলো।

জারা, রুহান, সাইম এগোলো গভীর জঙ্গলে আব্দেও প্রাণ নিয়ে ফিরবে তো। গিয়ে পৌঁছালো সঠিক গন্তব্যে বুক ঢিপঢিপ করছে অজানা অচেনা আতংকে। রুহান পুরনো অন্ধকার আচ্ছন্ন ভুতুড়ে বাড়িটার চারিদিকে ঘুরে এসে ফিসফিস করে বলল

-‘ শোন আমাদের ভিতরে যেতে হবে কোনো শব্দ করলে চলবে না দ্বিতীয় তালায় আলো জ্বলছে। আর সাইম শোন তুই ক্যামেরা অন রাখ ‘

দুরুদুরু বুকে সকলে নিঃশব্দে বাড়ির ভিতরে ডুকলো জারার দুইপাশের দুজন। একপাশে সাইম আর একপাশে রুহান জারার হাত ধরে রাখছে। উপরে গিয়ে কয়েকজনে কথার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ওরা থেমে গেলো। সাইম ক্যামেরার ভিডিও রেকর্ড অন করে দিয়ে লুকিয়ে ভিডিও করতে লাগলো কিছুক্ষণ পর চারজন লোক বেড়িয়ে গেলো রুহান জারাকে ইশারায় লুকিয়ে থাকতে বলে ওখান থেকে কই যেনো গেলো। জারা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার প্রয়াশ চালানোর চেষ্টা করছে। তখনি কারোর ব্যথাতুর আওয়াজ ভেসে আসলো সাথে কয়েক জন পুলিশ ইউনিফর্ম লোক এসে কয়েকজনকে ধরলো। জারা থাকতে না পেরে বেড়িয়ে এলো দেখলো দুজন লোক কি যেনো মুখে পুরে দিলো আর কয়েক জন দিতে গেলে ধরে ফেললো পুলিশ গুলো। হঠাৎ কোথা থেকে একজন এসে জারার গলায় চু/রি ধরে বলল

-‘ ছেড়ে দে ওদের না হলে এর গলায় চু/রি চালিয়ে দিবো ‘

সকলের মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট জারা ভয়ে দোয়া পড়তে লাগলো এই বুঝি শেষ দিন রুহান দু-হাত তুলে বলল

-‘ ওকে ওকে ছেড়ে দিবো আগে ওকে ছেড়ে দাও ‘

-‘ না না সেটা হচ্ছে না তোরা পুলিশরা হচ্ছে পাল্টিবাজ আগে তোরা ছাড়…. ‘

আর কিছু বলতে পারলো না লোকটা। সাইম এসে পিছন দিক থেকে লোকটার মাথায় বারি মা/র/লো লোকটা নিজস্তেস হয়ে গেলেও জারাকে আ/ঘা/ত করতে ভুলল না। জারা ব্যাথায় ব্যথাতুর শব্দ তুলল।
.
.
শানের সারারাত ঠিক মতো ঘুম হলো না পায়চারি করেই রাতটা পার করে দিলো। সকালে ক্লান্ত হয়ে থাকতে না পেরে ঘুমিয়ে গেছিল। শান্তি বেগম রাতে উঠে শানের রুমে লাইট জালানো দেখে আনমনে হেসে দিয়ে নিজ মনেই বলল

-‘ ছেলেটা বউ পাগল হয়ে যাচ্ছে দেখছি। কত অস্থিরতা তার জন্য ‘
______________

জারা সকালে বাসায় এসেছে। তখন সকলে ঘুমে জারা নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফ্রিজ থেকে আপেল নিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সুমি উঠে ছিল জারা বলে দিয়েছে যেনো কেউ ডিস্টার্ব না করে।

সকালে সকলে নাস্তা করতে বসলো তখন ইশা বলল

-‘ আম্মু আপু কখন আসবে ফোন করে কিছু জানিয়েছে ‘

-‘ জারা সকালেই বাসায় এসেছে সুমি বলল ‘

ইশা খাবার ছেড়ে উঠে বলল

-‘ আচ্ছা পরে খাবো আগে আপুকে ডেকে আনি একসাথে খাবো ‘

-‘ না বস ও রেস্ট নিচ্ছে ওর সময় হলে ও আসবে নি তোকে যেতে হবে না সারারাত জাগা মেয়েটা এখন তুই যাচ্ছিস জ্বালাতে বস ‘

ইশা মুখটা পেচার মতো করে বসে পরলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

সূর্য ঠিক মাথার মাঝখানে ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার নীল আকাশে রোদের তীব্র ঝাঁজ গরমে অতিষ্ট মানুষ জন। বাসায় কেউ নেই বললেই চলে শান্তি সাওয়ার নিচ্ছে। সীমা কাজ করছে কিচেনে। আসলাম সাহেব বাসায় নাই অফিসে জরুরি মিটিংয়ে ইশার কলেজের এক্সাম চলছে এখনো সে বাসায় আসে নি। জারা ড্রাইংরুমে বসে টিভিতে কার্টুন ছেড়ে ফোনে ইনপটেন ডকুমেন্টস চেক করছে কালকেই কোটের রায় দিবে মেয়েটার ধ-র্ষ-ণে-র সঠিক বিচার নিতে হবে। অ’প/রা’ধীদের শা’স্তি দিতে হবে না হলে তারা বার বার অন্যায় করে সমাজে বুক উঁচু করে চলবে আর সমাজে দেশে অন্যায় বাড়তে থাকবে তখন অন্যায় করতে দ্বিধা বোধ করবে না কেউ।

জারা পুরো মনোযোগ ফোনে ছিল চারিপাশে কি হচ্ছে সে দিকে ওর খেয়াল ছিল না। হঠাৎ হেঁচকা টানে স্তম্ভিত ফিরে পেলো। চমকে দাড়িয়ে পরলো সামনে তাকিয়ে শানকে শক্ত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে শান বলল

-‘ কাল সারারাত কোথায় ছিলি? কোন ছেলের সাথে ছিলি? খুব সাহস বেড়েছে না তোর? ‘

-‘ মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি? মুখ সামলে কথা বলবেন! ‘

-‘ মুখ সামলে রাখার মতো কোন কাজটা করিস তুই? রাত-বিরাতে ছেলেদের সাথে বাইরে রাত কাটাস ‘

জারা রেগে হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে বলল

-‘ জাস্ট সাটআপ ওকে। একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না। আপনার এসব কথা বলতে বাঁধছে না একটু ও? ওফ্ফ সরি আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনার মিনিমাম কমনসেন্সে নাই কিছু নাই। আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আপনি আপনার মতো থাকুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। কেনো বার বার এমন করছেন? ‘

-‘ তোর সাথে এবাড়ির সম্মান জড়িয়ে আছে। আর তুই রাতে বাইরে থেকে এখন বড়বড় কথা বলছিস? ‘

-‘ সম্মান সম্মান আর সম্মান আপনার সম্মান বোধ আছে? আপনি সম্মান দিতে জানেন? আপনাকে কি বলছি আমার সাথেই সবসময় এমন করেন আপনি আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না আপনার ‘

-‘ গলা নিচে নামিয়ে কথা বল। ন্যায় করে আবার গলা বাজি করছিস লজ্জা লাগে না তোর? ‘

-‘ আমার কেনো লজ্জা লাগবে? যেখানে আমার কোনো দোষ-ই নেই! আর গলা নিচে নামিয়ে কেনো কথা বলবো? জানেন আমার এখন আফসোস হয় খুব আফসোস যে সেই দিন কেনো আমার এই সাহস টা হলো না কেনো সেদিন গলা জোর দিয়ে বলতে পারলাম না যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না এই আফসোসটা হয়ত আমার সারাটা জীবন থেকে যাবে। চিন্তা করবেন না আমি আপনাকে এই বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিবো কোনো বাঁধা থাকবে না আর ‘

শান চমকালো জারার দুই বাহু ধরতেই জারা ব্যথাতুর শব্দ তুলে ছলছল চোখে তাকালো শানের দিকে। শান বুঝতে না পেরে আরো জোরে বাহু খামছে ধরে বলল

-‘ কি বললি তুই? ‘

-‘ যেটা শুনছেন সেটাই ‘

আরো জোরে চেপে ধরতেই জারা আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠে বলল

-‘ ছাড়ুন আমার লাগছে ‘

শান হাতে তরল পদার্থ অনুভব করলো সাথে সাথে বিষময় নিয়ে হাতে দিকে তাকালো জারা নিজের বা হাত দিয়ে ডান হাত চেপে ধরে নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো। শান তখন স্তব্ধা মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। স্তম্ভিত ফিরতেই সেও জারা পিছনে গেলো।

জারা রুমে গিয়ে ডান হাতের থাকা ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো। খতটা গভীর ধারালো ছু/রি লাগছে কাল যখন লোকটাকে সাইম মারছিল তখনি লোকটা সুযোগ বুঝে জারাকে আ’ঘা’ত করছিল। কাল রাতে শায়রী ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিল আর খুলেলি অলসেমী করে কিন্তু এখন কিছুই করার নাই খুলতেই হবে কা*টা জায়গায় চাপ লেগে রক্ত বের হচ্ছে আবারও শুভ্র রংয়ের ব্যান্ডেজটা লাল রংয়ের হয়ে ভিজে চপচপ করছে। জারা হাতের ব্যথায় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

জারা হাত নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিল যে দরজা আটকাতে ভুলে গেলো। শান রুমে ঢুকে এসে ফাস্ট এডেট বক্স নিয়ে জারার পাশে বসে জারার হাত টেনে নিজের কাছে আনলো জারা নিজের জেদ বজায় রেখে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না শান লাল চোখে তাকিয়ে রইলো যেনো এখনি ঔ চোখ দিয়ে সব ভর্স করে দিবে জারা ভশ পেলেও বলল

-‘ ছাড়ুন কি করছেন? আমি ব্যান্ডেজ করতে পারবো ছাড়ুন ‘

-‘ আর একবারও হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর তোর হাত কেটে রেখে দিবো ‘

জারা কিছু বলল না। শুধু চুপচাপ ব্যথা সহ্য করতে লাগলো দাঁতে দাঁত চেপে। চোখ দিয়ে অনলগল অঝর ধারায় পানির পরছে আর ফুপাচ্ছে। ব্যান্ডেজ শেষ শান বলল

-‘ এমনটা কিভাবে হলো? কে করেছে এমনটা? ‘

জারা কান্নারত অবস্থায় বলল

-‘ যে-ই করুক আপনি তো খুব খুশি হয়েছেন না। আমার কষ্টে তো আপনার খুশি হবারই তো কথা এই খুশিতে পার্টি দেন একটা ‘

শানের ইচ্ছে করছে জারাকে গাল ফাটিয়ে চ-ড় মারতে কিন্তু শান সেটা করলো না নিজেকে সংযত করে জারাকে ধমক দিয়ে বলল

-‘ আমি যেটা বলছি সেটার উত্তর দে না হলে খুব খারাপ হবে ‘

জারা কিছুটা দমে গেলো ভয় পেলো। মিনমিন করে কালকের ঘটনা সর্টকাটে শানকে বলল। সব শুনে শান বলল

-‘ গুড ‘

বলে উঠে চলে যাচ্ছিল গুড বলায় জারার মনোক্ষুন্ন হলো তবুও জারা নিজেকে সামলিয়ে তখন জারা বলল

-‘ এসব কথা মনিকে বলবেন না প্লিজ মনি টেনশন করবে আর আমি সেটা চাইছি না আশা করি আমার কথাটা রাখবেন ‘

শান শুনলো কি-না কে জানে গটগট করে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-১০

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১০ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

আজ অন্তরিক্ষে ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ি দুপুরের সময় হলেও এখন এই কালো মেঘের ভেলার জন্য এখন সন্ধ্যা নামছে মনে হচ্ছে। চারিদিকে নির্ঝুম বৃষ্টি আসার আগমুহূর্ত। বাতাসের তীব্রতা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে গাছপালা সব লন্ডভন্ড। পাখিগুলো ডানা ঝাপটে নিড়ে ফিরছে। সেদিন ওমন ভাবে কথাগুলো বলে জারা চলে আসছিলো আর পিছু ফিরে চাই নি শান অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে ছিল জারার দিকে জারা। আর কিছু আলাদাভাবে বলে নি সেদিনের পর জারাও শানকে যতসম্ভব এড়িয়ে চলছিল শানকে আর অপমান করার সুযোগ দেয় নি। বাসার সব আত্মীয় স্বজনরা চলে গেছে। জারা আজ বাসা থেকে বের হবার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগটাই সে কাজে লাগাতে চাই এরপর আর আব্দেও সুযোগ হবে কি-না কে জানে।

জারা বাসা থেকে অনেক দূরে সাথে আছে ফেন্ড সার্কেল। জারার আগের কথা ভাবলে হাসি পায় আগে ফেন্ডদের জন্য কত মন খারাপ কত কান্নাকাটি আর এখন ভাগ্য করে ক’টা ফেন্ড পাইছে। সাত বছরের ফেন্ডশিপ তাদের কলেজ ফেন্ড তারা কলেজে উঠেই সকলের সাথে দেখা হয়েছে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্বতা গভীর হয়েছে। এই ক’বছরে কত মান-অভিমান, ঝগড়া, মারামারি করেছে তবুও কেউ ছেড়ে যায় নি। সবাই আলাদাভাবে নিয়ে পড়াশোনা করলেও দিনশেষে সকলে একটা সময় বের করে নিয়েছে নিজেদের মতো সময় কাটানোর জন্য। জারাকে নিজের এখন লাকি মনে হয় ওদেরকে পেয়ে। জারার সম্পর্কে A to Z সব কিছু জানে। জারাও ওদের থেকে কিছু লুকাই নি। জারাকে ওরাই বদলে দিয়েছে ওরাই সাহস জুগিয়েছে।

জারা এদিক ওদিক হেঁটে হেঁটে ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছে না হাটতে হাটতে কিছু দূর চলে এলো এখানে যা একটু নেটওয়ার্ক পাচ্ছে। সাথে সাথে কল দিলে শান্তির কাছে শান্তি তখন দুপুরে সকলের খাবার বেরে দিচ্ছে ইশা আর শানকে আজ অফিস থেকে আসলাম সাহেব বাসায় আসেনি। শান্তি ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে বলল

-‘ হ্যালো জারা কোথায় তুই দুপুর হয়ে গেলো এখনো বাসায় আসলি না কেনো? ‘

-‘ মনি শুনো না আ……. ‘

বলে থেমে গেলো ওপাশ থেকে জারার কন্ঠ ভেসে আসলো

-‘ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি হচ্ছে পালক এসব এখানে এটা তোদের বেড রুম নায় পাবলিক প্লেস আর তোরা ওফ্ফ কন্ট্রোল করতে শেখ ‘

পলক বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুচকে বলল

-‘ তুই এইহানে কোথা থেইক্কা টপকাইলি যা ভাগ এনতে আমি আমার বউয়ের লগে রোমাঞ্চ করি তাও তোগো এতো সমস্যা সবসময় আমাদের রোমাঞ্চের ১২ বাজায় দেওয়ার জন্য তোরা তো আছিস ‘

প্রীতি লজ্জায় লাল হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো জারা সবটা দেখে ভেংচি কেটে বলল

-‘ হুহ্ যাইতাছি তোগো প্রিত দেখার কোনো ইচ্ছা বা শখ কোনোটাই নেই ‘

জারা অন্য দিকে গিয়ে ফোন কানে দিয়ে বলল

-‘ মনি তুমি কিছু শুনো নি তো? ‘

শান্তি হেসে বলল

-‘ না আমি কিছু শুনি নাই তুই নিশ্চিতে থাক ‘

পাশ থেকে ইশা বলল

-‘ আমি কিন্তু অনেক কিছু শুনছি ‘

-‘ হ্যা তুমি তো পাজির হাড্ডি তুমি তো শুনবাই ‘

-‘ এভাবে বলতে পারলে আপু তুমি যাও তোমার সাথে কথা নাই ‘

-‘ আচ্ছা যা কথা বলতে হবে না শুনো না মনি আজ না আমি বাসায় ফিরতে পারবো না কাল ও ফিরতে পারবো কি-না সন্দেহ আমি তোমাকে একজ্যাক্ট টাইম বলতে পারছি না ‘

শান্তির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল

-‘ আচ্ছা খাইছিস কিছু? ‘

-‘ না একটু পরে খাবো তোমরা খেয়ে নাও আমার জন্য অপেক্ষায় থেকো না ‘

-‘ আমার চিন্তা হয় তুই সাবধানে থাকিস নিজের খেয়াল রাখিস তোদের সাথে রুহান আছে তো? ‘

-‘ হ্যাঁ আছে মনি তুমি এতো টেনশন করো না প্লিজ ‘

-‘ আপু তারাতাড়ি বাসায় এতো আমি তোমার থেকে গল্প শুনবো কিন্তু ‘

-‘ শুনিস এখন রাখছি আর শুনো আমাকে যদি ফোনে না পাও তাহলে টেনশন করার দরকার নাই এখানে নেটওয়ার্ক নাই আবার আমার ফোনের চার্জ ও তেমন নাই ‘

-‘ আচ্ছা তুই সাবধানে থাকিস রাখছি ‘

জারা ফোন রেখে দিলো। এতোক্ষণ শান চুপচাপ সব শুনছিল জারা ফোন কেটে দিতেই বলল

-‘ ও বাসায় আসবে না মানে রাতে বাসার বাইরে থাকবে?? ‘

ইশা কোনো কিছু না ভেবেই ফট করে বলে ফেললো

-‘ হ্যাঁ প্রায় বাসার বাইরে থাকে কেসের জন্য ‘

শান এবার রেগে খাবার ছেড়ে উঠে বলল

-‘ বাড়ির বউ বাইরে থাকবে এটা কেমন কথা আম্মু তুমি ওকে অন্তত শাসন কর ‘

শান্তি বেগম শান্ত কন্ঠে বলল

-‘ তুমি জারাকে বউ হিসেবে মানো? সম্মান করো? জারাকে সবসময় সবার সামনে তুমি ছোট করে কথা বলো যে দিন নিজে ঠিক হবে সেদিন এসব কথা বলতে আসবে ‘

শান দমলো না উল্টো উত্তর দিলো

-‘ আচ্ছা আমি সব মানলাম তাই বলে রাতে বাসার বাইরে থাকবে কেনো? ‘

শান্তি বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলল

-‘ তোমাকে এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে জারাকে নিয়ে ভাবার জন্য অনেকের সময় আছে ‘

-‘ ও তাই না-কি কি যেনো নাম বললে রুহান নাকি ঔ ছেলের সাথে জারার বিয়ে ঠিক করছ? কালও আমি রুহানের নাম শুনছি ‘

-‘ যায়ই করি তুমি কি জেলাস? ‘

শান চেয়ারে শব্দ করে ফেলে চলে গেলো। শান্তি বেগম তাকিয়ে রইলো ছেলের যাবার দিকে তিনি ছেলের মনভাব বুঝতে পারছেন না। শান নিজই কাউকে নিজেকে বুঝতে দিচ্ছে না। শানের কিছু ব্যবহার জঘন্য আবার কিছু বিষয় ভাবার মতো যা অন্য রকম। শান্ত বেগম আনমনে হাসলেন মনে মনে তিনি ছক কষে নিলেন কিভাবে দুজনকে এক করা যায় মুখে বলল ‘ এবার পালাবি কোথায়? প্রকাশ করতেই হবে ভালোবাসার কথা’

ইশা মুখে ভাত নিয়ে সবটা দেখলো খাবার কথা ভুলে গেছে যেনো। মায়ের কথা শুনে পানি দিয়ে ভাত গিলে বলল

-‘ কি করবে আম্মু তুমি? ‘.

-‘ দেখ না কি করি! ‘

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৯

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৯ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

নতুন স্নিগ্ধ সকাল। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে রোদের মিষ্টি আলো। বিশাল নীল আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের ভেলা এদিক সেদিক ছুটে বেড়াছে। অভিমানি ফুল গুলো মৃদু বাতাসে দুলছে। বাগানের দোলায় প্যাচানল বাগানবিলাস গাছের ফুলগুলো দোলায় পরে নিচে ছড়িয়ে গোলাপী সাদা রংয়ের নতুন অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। জারা নিজের রুমের বেলকনি থেকে সবটা দেখছে ভেবেছে আজ দেরিতে নিচে নামবে। মনটা বিষন্নতা ছেয়ে আছে। মাথায় চিন্তা পোকাগুলো অনবরত নড়ছে। এখন বাসা থেকেও বের হতে পারবে না সকলে চলে গেলে তারপর বাসা থেকে বের হতে পারবে না কেননা শান এতো দিন পর বাসায় আসছে ব্যাপারটা দৃষ্টি কটু দেখায়। সকালে সকলে উঠার পর থেকে হইচই পড়ে গেছে। জারা আজ দেরি করে নিচে নামলো। সকলে শানকে ঘিরে বসে আছে সামনে দুইটা লাগেজ খোলা তাতে বিভিন্ন জিনিসপত্র জারা একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। জারাকে ওদিকে যেতে দেখে শান্তি ও এসে বললেন

-‘ কি রে মা তোর মাথা ব্যথা কমছে?’

-‘ হ্যাঁ মনি তোমরা সকালের নাস্তা খেয়েছ?’

-‘ হ্যাঁ আআমি আর তুই বাদে সবার খাওয়া শেষ তোর মাথা ব্যথা করছিল বলে তোকে আর ডাকিনি বস খেয়ে নে ‘

-‘ বসো তুমি ও খেয়ে নাও ‘

জারা আর শান্তি দু’জনে গল্প করতে করতে খেয়ে নিলো। শান্তির সাথে জারাও থালা বাসনগুলো পরিষ্কার করলো। ইশা এসে জারা আর শান্তিকে বসার রুমে নিয়ে গেলো জারা আসতে না চাইলেও ইশা জোর করে আনলো। ইশা হেসে বলল

-‘ কি রে ভাইয়া আপুর জন্য কি আনছিস দেখা আমাদের ‘

শান একবার জারার দিকে তাকিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ তোরা তো বলে দিয়েছিলি তোদের জন্য কি আনতে হবে অন্য কেউ তার বলে নি তাই আমার ওতো মনে ছিলো না ‘

জারা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে ওপরে যেতে যেতে বলল

-‘ আমি কারোর কাছে কখনো একসেপ্ট ও করি না আর আমার কিছু লাগবেও না আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছে নিজের জিনিসপত্র নিজে কেনার আর আল্লাহ না করুক অন্যর কাছ থেকে কিছু নেওয়ার আর যদি এমন পরিস্থিতি আসেও না ভিক্ষা করে খাবো তবুও অন্যর কাছে চাইবো না নিশ্চনতে থাকবেন’

শান চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলো জারার যাওয়ার পানে। জারা যে প্রতিটা কথা শানকে উদ্দেশ্য করে বলছে সেটা সবাই বুজতে পারছে। সকলে একে অন্যর মুখের পরিবেশ শান্ত শান উঠে চলে গেলো। শান্তি বেগম হাসিমুখে দেখলেন সবটা । শানের অপমান দেখে তিনি হাসলেন না হাসলেন জারাকে দেখে। মনে মনে বললেন ‘মেয়েটা বড্ড বদলে গেছে আগের মতো আর সহজসরল নেই কি জানি মেয়েটার হঠাৎ কি হলো আর দুম করে পাল্টে গেলো আলহামদুলিল্লাহ আমি এমনটাই চেয়েছিলাম’

এদিকে ইশা মুখ গোমড়া হয়ে বসে রইলো তান্ডব বয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে ওর দোষী মনে হচ্ছে। ভরা সভা থেকে উঠে ইশা জারার রুমে গেলো। জারা তখন রুমে এসে কি যেনো খুঁজছিলো ইশা দরজায় নক দিয়ে বলল

-‘ আপু আসবো?’

জারা থেমে ইশার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল

-‘ রুমে আসবি তা পারমিশন নেওয়ার কবে থেকে’

ইশা গোমড়া মুখো হয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে বলল

-‘ আপু তুমি কষ্ট পেয়েছ না? ‘

-‘ ওমা আমি কেন কষ্ট পাবো?’

-‘ ঔ যে ভাইয়ার কথায় আমি না বুঝতে পারি নাই যে…..’

-‘ দূর পাগলি আমি জানি লোকের সম্ভব কথাবার্তা কখনো পাল্টায় না তারা আজীবনই এমন থাকে মানুষকে কষ্ট দিতে ভালোবাসে অন্যকে কষ্ট দিয়ে খুশি থাকে তাতে তোর দোষ কোথায় বলতো একদম আজেবাজে কথা বলবি না ‘

-‘ তবুও আমার মন খারাপ হচ্ছে ‘

-‘ তো বলে ফেলেন আপনার মন খারাপ কমানোর জন্য আমি কি করতে পারি? ‘

-‘ সত্যি বলছ তো পরে পাল্টি খাবে না তো?’

-‘ না তারাতাড়ি বলে ফেল’

-‘ আগে প্রমিজ করো’

-‘ ওফফ আচ্ছা যা প্রমিজ বল এবার ‘

-‘ শুনো না আজ না আমরা সবাই মিলে বিকালে পদ্মাসেতুর ওখানে যাবো তাছাড়াও আরো অনেক জায়গায় বেড়াতে যাবো তুমি ও যাবে আমাদের সাথে’

জারা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল

-‘ সেটা কখন হয় না ইশা আমি কথা ফিরিয়ে নিলাম আমি তোর একথাটা রাখতে পারলাম না’

-‘ এমন করছ কেনো আপু চল না প্লিজ আর ক’দিন পরে তো বিয়ে করে শশুর বাড়িতে চলেই যাবো তখন আর তোমাকে জ্বালাবো না তখন আর বলবো না বেড়াতে যাবার কথা ‘

-‘ এমন ইমশন কথা বলে লাভ নাই। আমি যাচ্ছি না প্লিজ জোর করিস না এমনিতেও শান ভাইয়া যাবে আমাকে খোঁচাবে সেটা আমি চাইছি না আশা করছি তুই ও সেটা চাস না’

ইশা চুপ হয়ে গেলো আর কোনো কথা বলল না ও ব্যাপারে কথা ঘুরিয়ে বলল

-‘ কাল রাতে রুহান ভাইয়া তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমাকে ফোন করে তোমার কথা শুনছিল আমি বললাম মাথা ব্যথা করছে হয়ত ঘুমিয়েছে। তুমি কথা বলে নিও’

-‘ হ্যাঁ আমিও রুহানকে কল দেওয়ার জন্য সকালে ফোন হাতে নিয়ে দেখি চার্জ নাই’
__________

রাতের অন্ধকার আকাশে আজ পূর্ণ চন্দ্র। সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে খন্ড খন্ড মেঘেরা এদিকে ওদিকে ছুটে বেড়াছে। জারা ছাদের দোলায় বসে কানের পিটে কাঠগোলাম গুজে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে সেদিকে আনমনে তাকিয়ে রইলো।

গান–তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো
ভোরের রং রাতের মিশে কালো
কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় মিশিয়ে দিয়ে ভাবি আবছা নীল তোমার ডাকে আলো

কারোর উপস্থিত টের পেতেই জারা চুপ হয়ে গেলো। ব্যাক্তিটির কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে ফুলের ঘ্রাণের সাথে মিশে গেছে। সে ঘ্রাণ জারার মস্তিষ্কে গিয়ে লাগতেই হঠাৎ মাথা ঝিম ধরে গেলো। বুঝতে অসুবিধা হলো কে এসেছে। তবুও জারা নিজেও মতো বসে রইলো বাতাসে তার গম্ভির কন্ঠ কানে এসে বারি খেলো

-‘ কি করছিস এখানে? ‘

জারা চুপ না থেকে জবাব দিলো

-‘ দেখতে পারছেন না পাশের বাসার ছেলের সাথে প্রেম করছি’

শান এবার আর সহ্য করতে না পেরে জারার খুব কাছে গিয়ে জারার মুখ চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল

-‘ কাজকাল দেখছি তোর মুখে খই ফুটেছে খুব চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বের হচ্ছে যে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না সে মুখে যদি আর কখনো আমার মুখে ওপর কথা বলিস তোর মুখ আমি ভে/ঙে দিবো’

দুইজনের গরম শ্বাস-প্রস্বাস একে ওপরের মুখের ওপর আচরে পরছে। হার্ট বিট বেড়ে গেলো। জারা প্রথমে চমকে গেলেও পরে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে শানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল

-‘ আপনি আমার কে হন যে আপনার মুখের মুখে কথা বলতে পারবো না মগের মুল্লুক পাইছেন না-কি? আপনার বাবার টাকার খেয়েছি পড়েছি আপনার টাকায় নয় তাই আপনি যেটা বলবেন সেটা শুনতে আমি বাদ্ধ নই। নিজে ও নিজের মতো থাকুন আর আমাকেও থাকতে দিন’

চলবে ইনশাআল্লাহ

কালও গল্প দিবো ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৮

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৮ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

সময় আর স্রোত বহমান এরা কারোর জন্য অপেক্ষা করে না বা কেউ এদেরকে থামাতে পারে না এরা নিজ গতিতে চলতে থাকে। দিন যায় আরো একটা সুন্দর দিন আসে সেই সুন্দর দিনটা কারো জন্য ভালো বা কারো জন্য খারাপ। দেখতে দেখতে আজ ৭ টা বছর পার হয়ে গেলো। বদলে গেছে অনেক কিছু পাল্টেছে শহরতলীর অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট বদলেছে মানুষের মনমানসিকতা বদলেছে ভালোবাসার আকাশের রং। থমকে আছে দুজনের মিলন। অনুভূতি গুলো শূন্যে ভাসছে।

আজ সাত বছর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরছে বাসার পরিবেশটা অন্য রকম সকলের মন হয়ে আছে পুলকিত। বাসায় আত্নীয় স্বজনে ভরপুর। শানের বাবা আসলাম আজ আর অফিসে যায় নি সব কিছু তদারকি করছে। শান্তি বেগম তো ছেলে কি খাবে না খাবে তা নিয়ে রান্নায় ব্যস্ত তিনি সব রান্না করছে সাথে জারা আর ইশা হেল্প করছে। জারার মুখে কোনো কথা নেই তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে খুশি হয়েছে কি কষ্টে আছে। সে আর আগের মতো নেই পাল্টে গেছে। আগের মতো আর অবুঝ নেই বুঝতে শিখেছে, খোলামেলা বইয়ের মতো নেই, চুপচাপ, শান্তশিষ্ঠ, উদাসিন।

সন্ধ্যায় শানকে পিক করতে গেলো কাজিনমহল, শানের বাবা,মামা, চাচা। ইশা জারাকে এতো করে যেতে বললেও জারা গেলো না। শান্তি বেগম কিছু বললেন না কি-ই বা বলবে এখন ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে বুঝতে শিখেছে তাদের ওপরে কি আর সেই আগের মতো জোর খাটে। জারা রুমে গিয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলো কিন্তু বইয়ের পাতায় তার মন নেই বুকে চলছে অজস্র মিশ্র অনুভূতির খেলা বইয়ের পাতায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। চোখের গোল ফ্রেমর চশমাটা খুলে চোখ কোচলে উঠে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাঁদে চলে এলো ছাদের রংবেরংয়ের আলো গুলো বন্ধ করে দিলো। বুক ক্রমশ কাঁপছে জারা অন্ধকারে রেলিং ধরে নিচে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বাসায় পরপর তিনটা গাড়ি এসে ডুকলো জারার বুকের ধুকপুকানি বারতে লাগলো। ক্রমশ শ্বাস-প্রশ্বাস এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো। জারা উশখুশ চোখে তাকিয়ে রইলো একে একে সকলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। সকালের শেষে ফ্রন্ট সিট থেকে বেড়িয়ে এলো শান। শানকে দেখে শ্বাস আঁটকে এলো। আগের রোগা পাতলা ছেলেটা এখন বলিষ্ঠ সুপুরুষ হয়ে উঠছে। কয়েক মুহুত তাকিয়ে থাকলো শানের দিকে সকলে বাসার ভিতরে চলে গেলে জারা চোখ বন্ধ করে রেলিং ঘেঁষে বসে পড়লো। তোমাকে দেখার তৃষ্ণা কভু না মেটে।

জারা রুমের দরজা আটকে শুয়ে আছে। নিচ থেকে হইচই চেচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। রাতের বেলা ইশা খেতে ডাকলো জারা গেলো না। শান্তি কয়েকবার ডাকলো জারা গেলো না বলল মাথা ব্যথা করছে।

জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো জারা নিজেও জানে না। রাতে তার ঘুম হয় না কিছু অতিত তারা করে বেড়ায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু অদ্ভুত দৃশ্য। জারার ঘুম ভাংলো রাত তিনটার দিকে চোখ খুলতেই মাথা দপদপ করে উঠল আস্তে আস্তে উঠে বসে মাথা হাত দিল চোখ কচলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে চশমা পড়ে নিয়ে মাইগ্রেরিয়ামের ঔষধ ছিলে হাতে নিতেই দেখলো জগে বা গ্লাসে পানি নাই। জারা অলস পায়ে ডাইনিংরুমের দিকে এগোলো এখন পুরো বাড়ি শান্ত কেউ জেগে নেই সারাদিনের ক্লান্তিতে এখন সবাই ঘুমে। জারা পানির সাথে ঔষধটা গিলে ফেললো। কিছুক্ষন ড্রায়ইংরুমের চেয়ারে বসে উঠে দাঁড়ালো পেটে ক্ষুদা অনুভব করলো কিন্তু ওর খেতে ইচ্ছে করছে না কিছু মাথাটাও ঘুরছে এখন আবছা আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যারা ফ্রিজ খুলে একটা জুসের মিনি বোতল আর চকলেট নিলো রুমে গিয়ে খাবে বলে। জারা রুমের দিকে পা বাড়ালো কষ্ট করে ধরে ধরে সবগুলো শিরি বেরে উপর উঠে দাঁড়াতেই মাথা চক্রর দিয়ে উঠলো নিজেকে আর সামলাতে পারলো না হাত থেকে চকলেট আর জুসের মিনি বোতলটা ঠাস করে পড়ে গেলো শান্ত বাড়িতে ঠাস করে শব্দ হলো। সে শব্দে কারোর ঘুম ভাংবে না। জারা শিরি দিয়ে পড়ার আগেই কোথা বলিষ্ঠ হাত এসে জারাকে আকরে ধরলো জারা চোখ বন্ধ করে রইলো মনে মনে ভাবলো আজ-ই বোধহয় শেষ দিন যা হবে মেনে নিবো অবশ্য আমার কিছু হলে কারোর কিছু যায় আসবে না বরং সকলে দায়িত্বের হাত থেকে বেঁচে যাবে। জারা ব্যথা না পাওয়ায় আশ্চর্য হলে আস্তে আস্তে পিটপিট করে চোখ খুললো নিজের খুব কাছে কোনো পুরুষকে অনুভব করে ছিটকে দূরে সরতে চাইলো কিন্তু পারলো না। বলিষ্ঠ হাতটি নিরাপদ জায়গায় জারাকে দাঁড় করিয়ে দূরে সরে দাড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল

-‘ কি হচ্ছিল এখানে? ‘

জারা চমকালো! থমকালো! দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে হলো কিন্তু পা জোড়ায় যেনো আটা লেগে আছে নড়াচড়া করতে পারছে না। শরীরে অদৃশ্য কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। যার থেকে পালাতে চাই তার কাছে এসেই পরলো এ কেমন বিচার? জারাকে কিছু বলতে না দেখে পূনরায় গম্ভীর কন্ঠে বলল

-‘ কি হলো? একটা কোয়শ্চন করছি এন্সার দিতে হয় জানো না? ‘

জারা কেঁপে উঠলো। কম্পিত কণ্ঠে উত্তর দিলো

-‘ আ আ স লে মাথা ঘুরছিল ‘

শান নিচে পড়ে থাকা খাবারগুলো দেখে বলল

-‘ অন্য জন্য নিজের ক্ষতি করা আমি সমর্থন করি না ‘

জারা শানের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বলল

-‘ মানে? ‘

-‘ মানে কিছুই না নিজের কাজ করো ‘

শান গটগট করে নিচে চলে গেলো। জারা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। পরে শানের কথা বুঝতে পেরে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। নিচে পড়ে যাওয়া জিনিসগুলো হাতে নিয়ে শিরি দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। শান কিচেনে কিছু বানাছে জারার ভ্রু কুচকে এলো। নিচে আসতে গিয়ে পা বারাতে গিয়েও পিছিয়ে নিলো। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে-ও আর কৌতুহল দমাতে না পেরে নিচে এসে কিচেন গিয়ে বলল

-‘ কি বানাছেন? দিন আমাকে আমি করে দিচ্ছি ‘

শান গম্ভীর কন্ঠে বলল

-‘ নো নিড ‘

জারা আর কিছু বলল না দাঁড়িয়ে রইলো শানের পাশে বেশ দুরত্ব নিয়ে শান আগের মতো করে বলল

-‘ এখানে কি? বললাম না নিজের কাজে যেতে ‘

জারা আর দাঁড়ালো না। বিরবির করে বকতে বকতে চলে গেলো নিজের রুমে। রুমে গিয়ে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে তখনকার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মুখ রক্তিম আভায় ছড়িয়ে গেলো। বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। নিজ মনেই বলল

-‘ আচ্ছা আপনি কি আগের মতোই আছেন না-কি পাল্টে গেছে? কি জানি? যেমন-ই হন না কেন আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি সব কিছু থেকে আপনাকে মুক্ত করে দিবো ‘

কথাটা বলেই জারা মলিন হাসলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৭

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৭ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

আমাদের কোনো প্রিয় জিনিস বা প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেলে বা দূরে চলে গেলে আমরা মন খারাপ করি কাঁদি। আবার সময়ের সাথে সাথে সেটা ভুলে যায় কিংবা আমাদের আগের পাগলামি কমে যায়। নিজেকে বুজতে শিখি। কিংবা পাগলামি গুলো কোনো অজানা দূর দেশে হারিয়ে যায়। নিজে ধীরে ধীরে পাথর মানবে কিংবা যান্ত্রিক মানবে পরিনত করে।

শানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে জারার আবার জ্বর চলে আসলো আগের চেয়ে এবার জ্বরটা বেশি ধরেছে জারাকে জ্বরের ঘোরে পাগলের প্রলাপ উল্টো পাল্টা বকতে লাগলো বাসার সবাই দিসে হারা জ্বর কিছুতেই কমে না দিন দিন জারার শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে। জারা শুধু বলছে

-‘ শান ভাইয়া তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না আমাকে শুধু বকা দাও বড় হয়ে আমি ও তোমাকে বকা দিবো দেখো’

খুলনা থেকে জারার ছোট মামা চলে আসবো ভাগ্নের অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি হসপিটালে ভর্তি করলো। জারা ক দিনে সুস্থ হলো। জ্বরে ঘোরে শানকে নিয়ে নানান কথা বলায় বাসায় সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো। জারার জ্ঞান আসতেই ইশা জারারকে এটা নিয়ে খেপালো। জারা লজ্জায় শেষ কাউকে মুখ দেখাবে কি ভাবে সেটাই বুঝতে পারছিল না। পারলে এখনি মাটি ফাঁক হয়ে যাক সেখানে ডুকে যাক। জারাকে বাসায় আনা হলো। জারা সন্ধ্যায় নিজের রুমে বসে বই পরছিল আর একমাস পরে এসএসসি পরিক্ষা জারা নিজেও জানে না কিভাবে পরিক্ষা দিবে এবছরে তার প্রচুর প্রেশার গেছে মেন্টাল সাপোর্ট, প্রিপারেশ কোনোটাই ভালো না। জারা আনমনে বইয়ের পাতায় তাকিয়ে ছিলো শান্তি এসে কখন যে জারার পাশে বসলো জারার নিজেও জানে না।

-‘ বইয়ের পাতা খুলে আপনি কোন ভাবনায় ডুবে আছেন মা ‘

জারা চমকালো শান্তিকে দেখে সোজা হয়ে বসে বলল

-‘ তোমার ছেলের চিন্তায় গো তোমার ছেলে আমাকে পাগল বানিয়ে রাখছে ‘

-‘ আমার ছেলের চিন্তা করলে হবে? না-কি নিজের খেয়াল রাখতে আর পড়া শোনাটাও করতে হবে? ‘

-‘ পড়াশোনায় মন বসে না মনি তোমার ছেলের কাছে পাঠিয়ে দাও আমাকে ‘

-‘ আগে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়া যখন তুই নিজের ওপরে ডিপেন করে চলতে পারবি তখন তুই চাইলে আমি শানের কাছে পাঠাবো ‘

-‘ তার আগে কেন না? ‘

-‘ তার আগে কেন না? তুই জানতে চাস? আমার মতে প্রতিটা মেয়েরই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর বিয়ে করা উচিত কারণ তাকে যেন কেউ দূর্বল না ভাবে তাকে যেন টোকা দিয়ে উড়িয়ে না দিতে পারে ‘

-‘ আচ্ছা তাহলে আমার সাথে ভাইয়ার এতো তারাতাড়ি বিয়ে কেনো দিলে? বড় হলে নিজের পায়ে দাঁড়ালে তখন দিতে পারতে ‘

-‘ হুম কারণ আছে বলে দিয়েছি ‘

-‘ কি কারণ বল না আমায় ‘

-‘ উম একটা কারণ না কয়েকটা কারণ আছে কিন্তু এখন বলবো না সময় হলে তোকে আর শানকে একসাথে বলব ‘

-‘ এখন বললে কি? ‘

-‘ কারণটা তোদের দুজনকে নিয়েই। তোদের দু’জন একসাথে হলে যদি তোরা দু’জন দুজনকে ভালোবাসিস সেদিন বলবো। আমি জানি শান আমার ওপরে মনে মনে অভিমান করে আছে এই বিয়েটা নিয়ে। কিন্তু কি বলত মা-বাবা কখনো সন্তানের খারাপ হয় এমন কিছুই করবে না ‘

-‘ কিন্তু আমার এখনই শুনতে ইচ্ছে করছে মনি ‘

-‘ পাগলি মেয়ে পড়াশোনা কর না করলে আমি তোমাকে পিটানি দিবো বুঝলে? ‘

-‘ বুঝলাম ‘

-‘ শুধু বুঝলে হবে না কাজেও করে দেখাতে হবে বল বড় হয়ে কি করার বা কি হওয়ার ইচ্ছা তোর? ‘

-‘ আব্বুর মতো এ্যাডভোকেট আর তোমার আর আম্মুর মতো বিচক্ষণ ‘

জারার কথা শুনে শান্তির চোখ মুখে আধার নেমে এলো শান্তি ভায়র্ত চোখে বলল

-‘ নাহ ‘

জারা ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কেনো না? এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? ‘

-‘ না এসব করার দরকার কি এমনিতেই তুই সাইন্স নিয়ে পরছিস ডক্টর হ ইন্জিনিয়ার হ সচারাচর সবাই এমনটাই হতে চাই ‘

-‘ আমি আব্বুর মতোই হবো তাদের শাস্তি দেওয়া বাকি যে আমি দিবো তাদের শাস্তি ‘

-‘ জারা এসব ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল এতে তোর বিপদ আর আমি এটা কখনো চাই না ‘

-‘ কিছু হবে না তুমি এতো ভয় পেও না মনি তুমি আমাকে এতো সাহস দাও তুমি যদি এভাবে ভয় পাও তাহলে আমি কি করবো? ‘

_____________________

দিন যায় দিন আসে। শান ফোন দিলে জারা সামনে বসে শানের কন্ঠ শুনে ১ম দিন একবার ফোনে কথা বলার জন্য হ্যালো বলতেই শান ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিয়েছিল সেদিন খুব কেঁদেছিল জারা তার পর থেকে জারা আর কখনো শানের ফোনে কথা বলে চায় নি। শানও কখনো জারার সাথে কথা বলতে চায় না। জারার এসএসসি পরিক্ষা এসে গেছে স্কুলে ক্লাস করে না তার দরুন কোনো ফেন্ড ও নাই সেদিন খুব ভয় লাগছিল জারার নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিল আগের ফেন্ডের কথা খুব মনে পরছিল বিষন্ন মনে পরিক্ষা দিল ১ম পরিক্ষা খারাপ হল জানা জিনিসও ভুল লিখে আসছে বাসায় এসে খুব কান্না করল শান্তিকে বলল

-‘ আমি আর পরিক্ষা দিবো না মনি আমার পরিক্ষা খারাপ হয়েছে জানি ফেল করবো তুমি আমাকে জোর করবে না প্লিজ’

শান্তি ধমকে উঠে বলল

-‘ প্রথমটা খারাপ হয়েছে বলে কি পরে গুলো খারাপ হবে না-কি হলে হক ফেল করলে করবি তাও পরিক্ষা দিবি এতো নরম হলে চলে নিজেকে শক্ত বানাতে শেখ ‘

শানের বাবা আসলাম বলল

-‘ আহ শান্তি তুমি মেয়েটাকে বকছ কেনো? ভাবরে গেছে বেচারি তুমি শুধু শুধু বকছ তুমি চুপ থাকো আমি কথা বলছি’

আসলাম জারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

-‘ কি হয়েছে আম্মু তুমি কি আপসেট?’

জারা ওপর নিচ মাথা নাচালো যার অর্থ হ্যা।

-‘ কি সেটা বলবে আমাকে?’

-‘ আমার ওখানে কোনো ফেন্ড নাই আমার কেমন হয় আমার আগের ফেন্ডদের কথা খুব মনে পরে খুব মিস করি ওদের’

-‘ তাই বলে পরিক্ষা দিবে না? এটা কোনো কথা? তারাও ভালো করে পরিক্ষা দিচ্ছে জীবন তো থেমে থাকে না জীবনে বেঁচে থাকলে আরও ফেন্ড আসবে যাবে আর যদি তুমি বল তাহলে এক্সাম শেষ হলে তাদের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবো ওকে?’

জারা মাথা নাড়ালো।আসলাম, শান্তি, ইশা জারাকে অনেক বোঝালো জারার ছোট মামাও ফোন দিয়ে জারাকে সাহস জোগালো। জারা যেনো মনে সাহস পেলো। পরের এক্সাম গুলো জারা দিলো খারাপ না হলেও মোটামুটি দিয়েছে। জারার রেজাল্টের দিন ধরেই নিয়ে ছিল যে ফেল আসবে আসা অনুরূপ রেজাল্ট আসলো এ গ্রেট জারা অবাক হলো ও তো ভেবেছিল ফেল আসবে তার চেয়ে অন্তত ভালো হয়েছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৬

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৬ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

দরিদ্র, ধনী, ছোট, বড় সকলের জন্য প্রতিদিন ২৩ ঘন্টা ৪৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড বরাদ্দ থাকে।
সময় আর স্রোত বহমান এরা কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। নিজের মতো চলতে থাকে। ঘড়ির ব্যটারি ফুরিয়ে গেলে সময় থামে না মাঝে মাঝে কিছু মুহুর্তে মনে হয় সময়টা এখানেই থেমে যাক। কিছু সুন্দর মুহুর্ত চলে গেলে আপসোস হয় কেনো চলে গেলো সময়টা আর কি ফিরে পাওয়া যাবে না? সময়টা ধীরে গেলে কি হতো?

সাতদিন কেটে গেলো দেখতে দেখতে। জারা আগের থেকে এখন অনেক সুস্থ হয়ে গেছে। জারার মন খারাপ বাড়ছে। আজ সন্ধ্যায় শানের ফ্লাইট কতগুলো দিন, কতগুলো মাস, কতগুলো বছর দেখা হবে না শানের সাথে ভাবতেই জারার কান্না পাচ্ছে। শানের মা শান্তি শানের ব্যাগ গুছিয়ে দিতে লাগলো। জারা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শান বিছানায় শুয়ে নিজের মতো ফোন টিপছে। শান আর জারার সাথে তেমন খারাপ ব্যবহার করে নি। কিন্তু জারা কোনো কাজে ভুল করলে শান জারাকে চোখ রাঙিয়েছে তাতে জারার অন্তর আত্না কেপে উঠেছে। শানের মা শানকে বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছেন কি করবে কি না করবে। কি খাবে কি খাবে না সব ডিটেইলসে বলে দিচ্ছে। মা তো ছেলের জন্য তো মন কাঁদে। নিচ থেকে শানের বাবা ডাকতেই শান্তি চলে গেলো নিচে। শান্তি যেতেই যারা জারা বলল

-‘ চলে যাবেন ভাইয়া? ‘

-‘ কেনো তুই জানিস না? কোন দেশে থাকিস তুই? ‘

-‘ নাহ। জানি ভালো থাকবেন ওখানে গিয়ে ‘

-‘ হ্যাঁ ওখানে গিয়ে ভালোই থাকবো তোকে ওতো জ্ঞান দিতে হবে না ‘

-‘ আমি জানি ভালো থাকবেন কেননা ওখানে তো আর আমি থাকবো না আমার মতো অলক্ষীর মুখ আপনাকে দেখতে হবে না আমি আর আপনাকে জ্বালাবো না ‘

শান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

-‘ আবার কোন নাটক শুরু করলি এগুলা? তোর এসব ড্রামা অন্য জায়গায় গিয়ে কর আমার চোখের সামনে থেকে যা ‘

জারা মলিন হেসে বলল

-‘ হ্যাঁ চলে যাচ্ছি আমার মুখটা আর দেখা লাগবে না আপনি ভালো থাকবেন আর আমি কোনো ভুল করে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন নিজের খেয়াল রাখবেন ‘

-‘ ওফ হোয়াট এ্যা জোস ডায়লগ? শেষ তাহলে এখন যা ‘

জারা মলিন হেসে শানের মুখোপানে কয়েক মিনিট তাকিয়ে বলল

-‘ আসি ‘

-‘ ওফ্ফ যা তো ‘

জারা ধীর পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। চোখের পানিতে তার দুচোখ টলমল করছে। বুকে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে অস্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস চলছে। কান্না আর দমিয়ে রাখতে পারলো দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ওপর ওয়ালার কাছে নিজের নামে অভিযোগ করছে।

-‘ কেনো আল্লাহ আমি যাকে মন থেকে এতো ভালোবাসি তাকে কেনো আমার থেকে বার বার দূরে সরিয়ে দাও আল্লাহ কি দোষ আমার আমার মা-বাবা কেও তুমি কেরে নিলে আমি মা-বাবাকে খুব মিস করি। আল্লাহ তুমি তো জানো এই বিশাল পৃথিবীতে একটা মেয়ে বাবা-মা ছাড়া কতটা অসহায়! আমার নিজেকে হেল্পলেস লাগে কষ্ট হয় খুব রাতে যখন ঘুম ভাংঙে আগের মতো আমার দুপাশে মা-বাবাকে দেখতে পাই না মা আমাকে আর বকে না বাবা আমাকে আদর করে মা বলে ডাকে না অফিস থেকে এসে কেউ আমাকে চকলেট দেয় না। আমি কষ্ট পেলে কেউ বুঝে না। আমার অভিমান দেখে আর বাবা কান ধরে সরি বলে না। আমি সবার চোখের বিষ সবাই আমাকে উপরে ফেলতে চাই শান ভাইয়া আমাকে কখনো মেনে নিবে না আমার মনে হয় তিনি আর দেশেই ফিরবেন না। ভালোবাসা কখনো জোর করে হয় না আর আমি চাইও না ভাইয়াকে একপ্রকার জোর করে বিয়ে করছি জোর করে সংসার তো আর করা যাবে না। মনির যদি কখন মনে হয় তিনি ভুল করেছেন তখন আমি কোথায় যাবো আমার তো যাবার জায়গা নেই। আল্লাহ তুমি আমার আম্মু আব্বুকে ফিরিয়ে দাও না গো আর কিছু চাই না আমি জানি এটা কখনোই সম্ভব নায় তবুও তুমি একটা ম্যাজিক করে দাও ‘

জারা আজ সারাদিন কারোর সামনে যায় নি সারাদিন খাইও নি। বাসার কারোরই জারার দিকে খেয়াল নাই সবাই শানকে নিয়ে ব্যস্ত শান চলে যাবে বলে আপসেট। সন্ধ্যায় শান্তি জারার রুমে এসে বলল

-‘ জারা রেডি হয়েছিস চল এখনি বের হতে হবে না হলে দেরি হয়ে যাবে ‘

জারা মলিন কন্ঠে বলল

-‘ মনি আমি যাবো না ‘

-‘ ওমা সে-কি যাবি না কেনো? শান চলে যাচ্ছে আর তুই যাবি না’

-‘ না মনি আসলে শরীরটা খারাপ লাগছে একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবো তোমরা যাও আমি যাবো না প্লিজ জোর করো না ‘

শান্তি জারার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-‘ কান্না করছিস? মন খারাপ করিস না শান ফিরে আসলে তোদের ধুমধামে বিয়ে দিবো দেখিস’

জারা ছলছল চোখে তাকালো শান্তির দিকে শান্তি জারাকে বুকে আগলে বলল

-‘ এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেনো? আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে ‘

-‘ মনি তোমার কখনো মনে হবে না তো তুমি ভাইয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে ভুল করছো?’

-‘ তোকে আমি সেভাবেই গড়ে তুলবো একদম আমার মনের মতো যাতে আমার কখনো এমনটা মনে না হয়’

-‘ আমার ভয় হয় আমাকে গড়ে তোলার আগে যদি তোমার কখনো মনে হয় তখন?’

-‘ তখন তুই আমাকে মনে করিয়ে দিস এই দিনের কথা এখন চল রেডি হয়ে নে এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না পাগলী মেয়ে আমার ‘

-‘ আমি যাবো না মনি ভাইয়ার চলে যাওয়া আমি দেখতে পারবো না আমার কষ্ট হবে আমাকে জোর করো না প্লিজ’

শান্তি আর কিছু না বলে চলে গেলো। সবাই বাসা থেকে বের হলে জারা এক ছুটে ছাঁদে চলে এলো শানকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য। শান ব্ল্যাক জ্যাকেট ও প্যান্ট, ভিতরে সাদা টি-শার্ট, আর সাদা সুস, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, চুলগুলো বরাবরের মতো এলোমেলো। জারা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে এ তৃষ্ণা মেটার নয়। শান গাড়িতে উঠলো সাই সাই করে গাড়ি চলে গেলো। জারার আজ ভুতের ভয় করছে না। বুক ফেটে আসছে কান্না প্রিয় মানুষটও দূরে চলে যাবার কষ্ট। জারা পাগলের মতো কাঁদল ছাদে। সেই চোখের জলের সাক্ষী ওপর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ হলো না। রুমে গিয়ে ডাইরি খুলে এলোমেলো অগোছালো শব্দ লিখলো হাত চলছে না চোখের পানিতে ঝাপছা দেখছে তবুও লিখল।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৫

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৫ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

গানঃ
আলো-আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না …
চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না (২)
হবে না হবে না……

অন্তরিক্ষে নতুন চাঁদ ওঠেছে। বাতাসে বেলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। চারিদিকে মিটমিটে আলোই সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জারার রাতে ঘুম আসছিল না তাই ছাঁদে বেড়াতে এসেছিল। ছাঁদে যে শান ছিল সেটা জারা জানত না এসে দেখে শান রেলিং এর ওপরে উঠে বসে চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। পাশেই ধোয়া ওঠা কফির মগ। জারা গান শুনতে শুনতে কখন যে শানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জারা নিজেও জানে না। গান শুনতে শুনতে স্থির চোখে নিচ থেকে বেড়ে ওঠা বড় কাঠগোলাপ গাছের দিকে তাকিয়ে ছিলো গোলাপি রংয়ের ফুলটা টুপ করে পরতেই জারা দৌড়ে গিয়ে ফুলটা তুলে নিয়ে কানের পিটে গুঁজে দিলো। কাঠগোলাপ জারার বড্ড প্রিয় এবাড়িতে আসার পর থেকে প্রতিদিনই এই গাছ থেকে ফুল নিয়ে কানের পিটে গুঁজে। শান গান শেষ করে চোখ খুলে জারাকে দেখে রেগে গিয়ে বলল

-‘ তুই এখানে এতো রাতে কি করছিস? ‘

জারা চমকে গেলো। সে-তো ভুলেই গেছিলো শান এখানে আছে। জারা শুকনো ঢোক গিলে বলল

-‘ না মানে ভাইয়া ঘুম আসছিলো না তাই…. ‘

-‘ তাই? দেখতে আসছিস পাশের বাসার তোর প্রেমিক ছাদে আছে কি না থাকলে চুটিয়ে প্রেম করতি? ‘

জারা অবাক হয়ে গেলো শান কি বলছে তার কথা জারার বোধগম্য হচ্ছে না।

-‘ মানে কি বলছেন এগুলা? ‘

-‘ জানিস না কি বলছি না-কি জেনেও না জানার ভান করছিস ‘

জারা এবার ফুঁসে ওঠে বলল

-‘ আপনি সবসময় এমন করেন কেনো ভাইয়া ‘

-‘ গলা নিচে। আর কি করি তোর সাথে তুই কি মনে করিস আমি কিছু জানি না ছাদে পাশের বাসার ছেলেটা তোর দিকে তাকিয়ে থাকে আর তুই তাকে ভাব দেখাস ‘

জারা যেনো আকাশ থেকে টপ করে পড়লো অবাক গলায় বলল

-‘ কি বলছেন এগুলা আমি মটেও এগুলা করি না আর পাশের বাসায় যে কোনো ছেলে আছে এটাই জানি না ‘

-‘ তো কি করতে আসছিস তোর চেহারা দেখাতে যা এখান থেকে জানিস না রাতে ছাঁদে ভুত থাকে ‘

জারা ভয়ার্ত চোখে চারিদিকে অবলোকন করলো। শান আবার বলল

-‘ কি হলো যা রুমে যা ঘুম না আসলে পড়তে বস তোর না সামনে এসএসসি পরীক্ষা পড়াশোনা যা অবস্থা দেখছি তুই ফেল মারবি নিশ্চিত ‘

জারা ভয় পেয়ে ও বলল

-‘ তোমার সাথে আর একটু থাকি না ভাইয়া ‘

শান জারার মুখ পানে গভীর দৃষ্টি দিলো জারা শানের থেকে মুখ ফিরিয়ে বলল

-‘ ভাইয়া তুমি ভিনদেশে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে? আমার কথা তোমার একটুও মনে পড়বে না? ‘

-‘ কে তুই? তোর কথা ভেবে কেনো আমার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করবো? আর আমি সেখানে পড়াশোনা করতে যাচ্ছি তোর মতো আমার কাছে ফাও সময় নাই বুঝলি? ‘

শানের কথা শুনে জারার ছোট মনটায় বড্ড অভিমান জমলো। শান অবলিলায় কোনো কিছু না ভেবে কত সহজে কথাগুলো বলে দিলো অভিমানে জারার কান্না পেলো কিন্তু সে কাদলো না। এক বুক অভিমান নিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলল

-‘ ভিনদেশে গিয়ে সাদা চামড়ার মেয়ের প্রেমে পড়বেন? তারা তো অনেক সুন্দর দেখতে ‘

শান ভ্রু কুচকে ঠোঁট কামড়ে ধরে কি জেনো ভেবে বলল

-‘ কাউকে ভালো লাগলে প্রেমে পড়তেই পারি এটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়! ‘

জারা ছোট করে বলল

-‘ ও আচ্ছা আপনি থাকেন আমি যায় ‘

কথাটা বলে হাটা দিলো শান ও জারার পিছে পিছে গিয়ে বলল

-‘ আর ইউ জেলাস? ‘

-‘ কেনো আমি আপনার কে যে জেলাস হবো? ‘

-‘ জেলাস হওয়ার মতোই কেউ একজন ‘

জারা তাড়াতাড়ি করে শিড়ি দিয়ে নামতে গেলে অন্ধকারে পা পিছলে যায় শান বুঝতে পেরে হাতে থাকা চায়ের কাপটা ছেড়ে দিলো সেটা পড়ে ঝনঝন শব্দ তুলে ভেংগে গেলো শান জারাকে দুহাতে আগলো নিলো। জারা তো ভয়ে শেষ চোখ বন্ধ করে ভাবল আজ-ই শেষ দিন কিন্তু কোনো ব্যাথা না পেয়ে চোখ খুলে দেখলো শান জারার খুব কাছে জারা শানকে ছেড়ে কয়েক শিরি দূরে দাঁড়ালো শান ধমকে উঠে বলল

-‘ এভাবে দৌড়া ছিলি কেনো? এখনি তো পড়ে যেতিস! ‘

-‘ আ আমি আসলে বুঝতে পারি নি ‘

-‘ তুই কখনো কিছু বুঝতে পারিস না জানিস না তাহলে কি পারিস? কি জানিস? যা রুমে যা আর কখনো যেন রাতের বেলা ছাদে না দেখি ‘

শানের ধমকে জারা ভয়ে দৌড় দিল শান কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

_________________

সকালে জারার শরীর এখন দূর্বল থাকায় মনি জারাকে স্কুলে যেতে দিলো না। জারা স্কুলে যাবে না দেখে ইশা বলল

-‘ আমিও তাহলে আজ স্কুলে যাবো না ‘

জারার মুখে হাসি ফুটলো। সারাদিন বসে না থেকে তো বকবক করার মানুষ হলো কিন্তু পরক্ষণেই জারার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো শানের কথা শুনে

-‘ তুই স্কুলে যাবি না কেনো? তুই ওর মতো রুগী হয়ে গেছিস? ‘

-‘ একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না ভাইয়া। এমনিতেই ভালো লাগছে না যেতে প্রতিদিনই তো যায় আজ না গেলে কিছু হবে না ‘

-‘ ফাঁকিবাজ আমি প্রতিদিন ই স্কুল কলেজে যেতাম তোদের মতো ফাঁকি দিতাম না ‘

-‘ হ্যাঁ তুমি প্রতিদিন ই যেতে কিন্তু পড়াশোনা করতে না মারপিট করতে দুষ্টুমি করতে ‘

ইশা শব্দ করে খিলখিল করে হাসলো। জারা মুখটিপে হাসলো।

-‘ আম্মুউ। তোমার মেয়ের না সামনে জেএসসি পরীক্ষা আর জারা না সামনে সামনে এসএসসি পরীক্ষা তো তুমি ওদের লাই দিচ্ছো আবার আমার নামে বদনাম গাচ্ছো

-‘ বদনাম গাইলাম কই যেটা সত্যি সেটাই বললাম ‘

-‘ তোমার মেয়ে ফাজিল এটা নিয়ে সারাক্ষণ কানের কাছে প্যান প্যান করবে কার ভালো লাগে প্যান প্যান শুনতে’

-‘ কি আমি কি করি? গুন্ডা ছেলে ‘

-‘ দেখছ আম্মু? ‘

শান্তি হাসলেন কিছু বললেন না কতদিন পরে এমন হাসিখুশি দেখলেন ছেলেকে। ক’দিন পরে ছেলে পারি দিবে দূর দেশে ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো। কিভাবে থাকবে তার ছেলেকে ছেড়ে? কখন তো এতোদিন ছেলেকে ছাড়া থাকেনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৪

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৪ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

জারা পিটপিট করে চোখ খুলতেই সারাশরীর ব্যথা অনুভব করলো মাথা ভার ভার লাগলো জারা মাথায় হাত দিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র রং দেখে চমকে গেলো মুখ থেকে আপনা আপনি বেড়িয়ে এলো

-‘ আমি কি মরে গেছি?’

-‘ ম’রে’লে তাও বাঁচতাম’

চমকে পাশে তাকিয়ে দেখে শান ওর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে জারার দিকে শানের চোখ জোরা লাল করে তাকিয়ে আছে। আঁতকে উঠে বলল

-‘ ক কি হ হয়েছে আ আমার’

-‘ ম’রি’স নি মরতে ম’র’তে বেঁচে আসিস’

তখনই শান্তি কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে আসলো শানের কথা শুনে শানকে জোরে ধমক দিয়ে বলল

-‘ শান মুখ সামলে কথা বলো মেয়েটা অসুস্থ আর তুমি ছিঃ আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে তুমি আমার ছেলে হয়ে একটা মেয়ে সাথে এভাবে কথা বলছে তাও আবার মেয়েটা কি না তোমার স্ত্রী’

শান মাথা নিচু করে স্থীর চোখে ফ্লোরে দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো প্রতিউত্তর করল না। জারা হাসার চেষ্টা করে বলল

-‘ মনি তুমি ভুল বুঝছো ভাইয়া তো আমার সাথে মজা করছিল’

শান্তি কঠিন কন্ঠে বলল

-‘ তুমি ছোট ছোটর মতো থাকো আর তুমি আমাকে শিক্ষাছ কোনটা মজা আর কোনটা কটাক্ষ করে বলা? তুমি চুপ করে থাকো আর শান বেরিয়ে যাও আর যেনো তোমাকে এখানে না দেখি’

শান চলে গেলো। কিন্তু বাসায় গেলো না। ফেন্ডের বাসায় গেলো। শান চলে যেতেই জারা বলল

-‘ মনি তুমি ভাইয়াকে শুধু শুধু বকলে’

-‘ চুপ একদম চুপ আগে বলবি না শান সবার অগোচরে তোর সাথে এমন বিহেভিয়ার করে তোকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে আমরা তোর কেউ না না-কি? আমরা ম’রে গেছি?

-‘ মনি এমন করে বলো না প্লিজ আমার কষ্ট হয় তো বুঝ না কেনো?’

-‘ শোন আমাদের যদি কিছু ভাবতিস তাহলে বলতিস’।

জারা মুখটা ছোট করে বলল

-‘ সরি মনি প্লিজ কষ্ট পেও না’

-‘ আচ্ছা হয়েছে থাক আর কথা না বলে খেয়ে নে তোর জন্য স্যুপ আর পাতলা করে সুজি বানিয়ে আনছি খেয়ে নে দেখবি শরীর ভালো লাগবে’

-‘ এখন ক’টা বাজে মনি’

-‘ দুপুর ২ টা’

-‘ ওহ’

-‘ জী এবার উঠেন কাল থেকে কিছু খান নি আমরা তো সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম এতো জ্বর পরে তোকে ডাক্তার কাছে আনলাম তোকে স্যলাইন দিল জ্ঞান ছিল না দেখে আর টেনশনে পরে গেছিলাম ডক্টর বলল তোকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে আমার ছেলে তো তোর জন্য পাগলের মতো করছিল তখন মনে করছিলাম হয়ত তোকে মেনে নিয়ে ভালোবেসে করছে কিন্তু না সুমি বলল (বাসার মেড) শানই না-কি তোকে ছাদে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে তখন বুঝলাম আমার ছেলে নিজের গিলটি ফিলের জন্য করছে সারা রাত না ঘুমিয়ে তোর পাশেই বসে ছিলো জানিস!’

জারা চমকালো। কথা ঘুড়িয়ে জেদ ধরে বলল

-‘ মনি আমি বাসায় যাবো হসপিটালে থাকবো না প্লিজজ কিছু করো’

কেউ জারার জেদের সাথে পারলো না। সেইদিনই জারাকে বাসায় আনা হলো।
_________

তারপরে দিন শান বাসায় এলো। শানের উসখুসক এলোমেলো চুল, পাতলা শরীরে ঢিলা চেকের শার্ট, শার্টের হাতা ফোল্ট করা। জারা তখন বসার রুমে বসে বিরক্তি নিয়ে ফল আর দুধের গ্লাস নিয়ে বসে আছে সামনে টিভিতে জারার ফেবারিট ওয়াগি কার্টুন হচ্ছে ওয়াগি ছেনোরিতাকে বিভিন্ন ভাবে ইমপ্রেস করছে। শান জারাকে ক্রস করার সময় আর চোখে তাকালো একবার। জারার হার্ট বিট বেড়ে গেলো শ্বাস আটকে গেলো শানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো সাথে সাথে টিভিতে দিলো। ওয়াগি আর ছেনোরিতার কিসিং সিন চলছে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো টিভির স্কিনে। ঠাস করে টিভি ওফ হয়ে গেলো। জারা চোখ মুখ কুঁচকে পাশে তাকাতে আঁতকে উঠল কি করবে ভেবে পেলো না এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে গেলে টাল সামলাতে না পেরে আবার বসে পড়লো। শান শক্ত চোখে জারার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ তুই না-কি বাচ্চা তো টিভিতে এসব কি দেখিস বলবো মা’কে তার গুণধর বউ মার চরিত্রের কথা?’

-‘ আ আসলে ভাইয়া আ আমি বুঝতে পারি নাই’

-‘ হ্যাঁ কি বুঝতে পারিস নি তুই সবই বুঝিস শুধু না বোঝার নেকামো করিস’

শান দাড়ালো না শিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল

-‘ টিভি দেখা ওফ’

আরও আস্তে আস্তে কি কি জানি বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলো শান। জারা মন খারাপ করে সোফায় পা তুলে গোল হয়ে বসে বাচ্চাদের মত মুখ ফুলিয়ে বিরবির করে বলল

-‘ আমার কি দোষ আমি কি জানতাম না-কি এখনি সব হবে আর এসব কার্টুন কে বানায় হ্যাঁ তাকে সামনে পেলে খবর আছে শুধু শুধু আমি একগাদা বকা খেলাম দূর তারি ছাই ভালো লাগে না কিছু আমি যে তার বউ তার কি মনে থাকে না দেখা হলেই চোখ রাঙানি আর ধমকে তেঁতো তেঁতো কথা শুধু আমার বুঝি কষ্ট হয় না? ‘

সুমি হেসে বলল

-‘ কি গো আম্মা আস্তে আস্তে কি কও পাগল টাগল হইয়া গেলে না-কি গো?’

জারা মুখ ফুলিয়ে বলল

-‘ না হয়ে যাবো দেখো সেদিন আর বেশি দূরে নাই আমাকে দেখতে পাগলা গারদে যাবে তো?’

সুমি এবারও হেঁসে বলল

-‘ দূর পাগলি মেয়ে এসব কথা কইতে নাই’

-‘ শুনো খালা তোমার সাথে আমার অনেক বুঝা পড়া আছে বুঝলে?’

-‘ কেন আম্মাজান আমি আবার কি করলাম’

জারা গম্ভীর কন্ঠে মুখ ভার করে বলল

-‘ কি করো নি সেটা বলো সব পাকিয়ে রাখছ তুমি ‘

সুমি ভয় পেয়ে দৌড়ে জারার কাছে ফ্লোরে বসে বলল

-‘ ও আম্মাজান আমি কি করছি গো?’

-‘ তুমি আমারে মেলা কষ্ট দিছো’

-‘ ও আম্মা তুমি আমার কষ্ট পাইছ? কোন কথায় কষ্ট পাইছ গো?’

-‘ তুমি মনিকে সব সত্যি বলে দিসো কেনো? জানো মনি ভাইয়াকে কতটা বকা দিসে’

-‘ তো কি করতাম আব্বাজান আম্মাজানকে কষ্ট দিসে আমার মাথার ঠিক ছিল না আব্বাজান তোমারে লইয়া কোলে কইরা যখন হসপাতালে লাইয়া গেলো তখন তোমার অবস্থা দেখে হড়বড় করে সব বলে দিয়েছি। ‘

-‘ খুব ভালো করছ আমার সাথে কথা বলবে না আমি তোমার ওপরে রাগ করেছি কাট্টি’

-‘ ও আম্মা তুমি কও আমি কি করলে তোমার রাগ পরে জাইবো?’

-‘ সত্যি রাখবা তো?’

-‘ তুমি খালি কইয়া দেখো না ‘

-‘ শুনো না এই দুধ টা নিয়ে যাও এটা খাইলে আমার মাথা ভনভন করে আর এই ফলগুলো নিয়ে যাও এগুলা চিবিয়ে খেতে গেলে মনে হয় আমি গরুর মতো ঘাস পাতা চিবাচ্ছি’

-‘ গরুর মাথায় তাও বুদ্ধি আছে তোর মাথায় তো তাও নাই তোকে গরুর সাথে তুলনা করলে গরুর অসম্মান করা হবে’

শানের কথা শুনে জারার রাগ লাগলো। রাগে কিছু বলতে পারলো না চোখ দিয়ে পানি এলো। শান সুমিকে উদ্দেশ্য করে বলল

-‘ খালা ওর সাথে ফাও কথা না বলে এদিকে এসে আমাকে খেতে দাও’

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৩

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৩ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

সকাল ৬ঃ৪৫ মিনিট চারিদিকে বৃষ্টির প্রবল বাতাসে সব লন্ড ভন্ড এই সকালে যারা রাস্তায় ছিল সবাই আশ্রয় নিলো কোনো না কোনো ছাওনির নিচে। টুপটাপ বৃষ্টি আর ঝড়োবাতাসে জারার দেহ ছুয়ে গেলো মন অব্দি আর পৌঁছাতে পারলো না। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁটতে হাঁটতে কাক ভেজা হয়ে পৌঁছে গেলো কোচিং-এ বসে পরলো পিছনের বেঞ্চে নতুন কোচিং নতুন স্কুলে জারার এখনো ভালো কোনো ফেন্ড হয়নি প্রয়োজনে টুকটাক সকালে সাথে কথা বলে। আসার সময়ও সেকি বৃষ্টি। বৃষ্টি জারাকে দমাতে পারলো না আগের মতোই এবারও কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরলো। বসার রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে হেয়ারড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে বাইরে আসলো। বড়মামা খেয়ে চলে গেছে তারা নিজেদের মতো ঘুরতে কিংবা খালুর সাথে অফিসে এখন বাড়ির ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে। জারাকে দেখে শান্তি বলল

-‘ জারা আয় বস খেতে নে। কখন ফিরলি?’

জারা চেয়ার টেনে বসতে বসতে কন্ঠ সর খাদে নামিয়ে মলিন কন্ঠে বলল

-‘ একটু আগে’

জারার ছোট মামা জারাকে ডেকে উঠে বলল

-‘ জারা মা এদিকে আয় তো’

জারা উঠে মামার কাছে গেলো মা-বাবার পরে জারাকে তার মামা আর মনি বেশি ভালোবাসে। জারাকে নিজের পাশে বসিয়ে মাথা হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে বলল

-‘ তোর চোখ দুটো ফোলাফোলা কেনো রাতে ঘুমাস নি না-কি ভালো ঘুম হয়নি কোনটা’

-‘ কোথায় মামা তুমি চোখে বেশি দেখছ’

-‘ আচ্ছা শোন আজ-ই তো আমরা সবাই মিলে খুলনায় রওনা দিচ্ছি তোর হাতখরচের টাকা আমি এসে এসে দিয়ে যাবো বুঝলি কাউকে বলার দরকার নাই নিজের মতো খরচ করবি যা মন চাই তাই করবি ঘুরবি দেখবি মন ভালো থাকবে’

-‘ না মামা আমার লাগবে না আর যা লাগবে সবই আছে আমার জন্য অযথা কেনো খরচ করবা বলতো এমনিতেই অনেক খরচ হচ্ছে আমার জন্য তোমাদের’

-‘ এক চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো তোমার বেশি বড় হয়ে গেছ তুমি? আমাদের কথার কোনো দাম নাই তোমার কাছে?’

জারার বলতে ইচ্ছে করলো “তোমাদের কথা মতোই তো বিয়ে করলাম এখন দেখ আমি তার জীবনে বিষকাটা সে আমাকে উপড়ে ফেলতে চাই আমি ও চাই”

-‘ কি হলো মেয়েটাকে বকছ কেনো? কি হয়েছে?’

জারা আর জারার ছোটমামা চমকে উঠল। ছোট মামা ভালোবাসলেও মামি সুবিধার নয়। জারা হেসে বলল

-‘ কিছু না মামি ঔ নতুন স্কুলে কি করবো কেউ কিছু বললে কিভাবে উত্তর দিবো সেটা শিখাচ্ছিল’

-‘ কেনো জারা ছোট না-কি ও এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে যথেষ্ট বুদ্ধি-জ্ঞান আছে তুমি এসব উল্টো পাল্টা শিখিয়ে ওর মাথা বিগড়ে দিও না’

মামা বলল

-‘ আচ্ছা যা খেয়ে নে সকাল থেকে তো কিছু খাস নি যা খেয়ে নে’

মামি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে চলে গেলো। জারা বুঝলো মামি কিছু আচ করতে পারছে বাসায় গেলে মামা মামির ঝ-গ-ড়া লাগবে ভেবেই জারার মন খারাপ হলো তবুও মামাকে কিছু বলল না জানে বলে কিছু লাভ হবে না মামা টাকা দিবে বলেছে তখন দিবেই।

সবাই টুকটাক কথা বলল। শান এতোক্ষণ চুপ থাকলে-ও এখন গম্ভীর কন্ঠে শান্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল

-‘ আম্মু আমার ১ সপ্তাহ পর ফ্লাইট’

-‘ সেকি এতো তাড়াতাড়ি? ‘

-‘ যত তারাতাড়ি যাওয়া যায় ততোই ভালো। ‘

কথাটা বলে শিরি দিয়ে উঠার সময় জারাকে উদ্দেশ্য করে বলল

-‘ জারা রুমে আয় কাম ফাস্ট’

শান কথাটা বলে চলে গেলো। জারার গলায় খাবার বেঁধে চোখে পানি চলে এলো মনি জারাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। শান্তি জারার পাশ থেকে সরতেই সব কাজিন সার্কেলরা মিলে জারাকে পচাতে লাগলো। জারা অবশ্য এসবে লজ্জা বা হাসি পাচ্ছে বা তবুও মলিন হেসে খাবার ছেড়ে উঠে পরলো।

শানের রুমের দরজায় দুরুদুরু বুকে টোকা দিয়ে কাঁপা গলায় বলল

-‘ আসবো?’

ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে জারা দরজায় মোচড় দিয়ে দরজা খুলে রুমের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ নেই। দরজা খুলে রুমে ডুকে ওয়াশরুমের দরজা দেখলো নাই ফিরে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই বেলকনি থেকে শান এসে বলল

-‘ কোথায় যাচ্ছি?’

জারা দাঁড়িয়ে গেলো। পিছনে ফিরে মাথা নিচু করে বলল

-‘ না মানে আপনাকে দেখতে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম’

শান জারাকে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে দরজা লক করে জারাকে দরজার সাথে দু’হাতে আটকিয়ে বলল

-‘ আজ সকালে কই গিয়ে ছিলি?’

জারা ভয়ার্ত চোখে বলল

-‘ ক কো চিং এ’

-‘ ও রেলি? তুই পড়াশোনা করতে যাস না-কি নিজের শরীরের প্রতিটা ভা’জ রাস্তার লোককে দেখাতে যাস?…’

শানের ধমকে জারা কেঁপে উঠলো। শান আবার বলল

-‘ এই বাড়িতে ন-ষ্টা-মি চলবে না। আমার বাবার একটা সম্মান আছে আর তোর মেয়ের জন্য তার সম্মানে এতটুকু আ’ঘা’ত লাগুক সেটা আমি চাই না? আর আমি বেশ বুঝতে পারছি আমি না থাকলে তুই কি কি করতে পারিস। মাথায় রাখবি তুই এই বাড়ির বউ। আমি যদি এদিক থেকে ওদিকে কিছু শুনছি তোকে নিজের হাতে খু-ন করবো মাইন্ড ইট ‘

“তুই এই বাড়ির বউ” জারার কানে বার বার প্রতি ধ্বনি হয়ে বাজতে লাগলো। ওখানেই আটকে রইল আর কিছু মাথায় ডুকলো না। শান সরে যেতেই শান বলল

-‘ গেট আউট’

জারা ধীর গতিতে বেড়িয়ে এলো। নিজের রুম থেকে সারাদিন আর বের হলো না খাবারটাও রুমেই খেলো।

কাঠফাটা রোদের দিনে অর্ধেক স্কুল করে বাসায় আসলো জারা স্কুলের হেডটিচার শানের বাবার বন্ধু হওয়ায় আগে থেকে বলে রাখা জারার প্রয়োজনে। শরীরটা ভালো না তার শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। শাওয়ার নিয়ে বসার রুমে আসলো কালকে মামারা চলে যাবার পর থেকে বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ফ্রিজ খুলে দেখলো কি কি আছে। ফল, চকলেট, জুস, কোল্ডিস…. ইত্যাদি জারার কিছু খেতে ইচ্ছে করলো না। শান পানির গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রেখে বলল

-‘ তোর শাস্তি তুই এখন থেকে আমি যখনক্ষণ না তোকে নিচে আসতে বলবো ততক্ষণ তুই ছাদে ঠিক মাঝক্ষানে দাঁড়িয়ে থাকবে’

-‘ এ এই র রোদে?’

-‘ তোর শাস্তি’

-‘ ক কিসের শা শাস্তি?’

-‘ কালকে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসার শাস্তি তখন দিতে পারি নাই বাসাই সবাই ছিল বলে বাট এখন কেউ তোকে এই শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না’

জারা ভয় পেলো। শান আবার বলল

-‘ খালি পায়ে কিন্তু নো শিলিপার…. কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো না গেলে বল অন্য কিউট কিউট শাস্তি দি’

-‘ না না যাচ্ছি’

চলবে ইনশাআল্লাহ

অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০২

0

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

-‘ শ শা শান ভা ইয়া প্লিজ আ মাকে ছেড়ে দিয়েন না প্লিজ এখা… ন থেকে প পড়লে ম ম’রে যাবো প্লিজ ছাড়বেন না প্লিজ’

-‘ যা মরে যা তোকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ? তুই ম-র-লে-ই আমি এই বিয়ের হাত থেকে বাঁচবো ‘

জারা থমকে গেলো। শানের শক্ত করে ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিলো। শান জারার হাত টান দিয়ে ছাদের নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল

-‘ আমাকে তোর খুব বিয়ে করার শখ না? আমি এই দেশে যে কইদিন আছি তোর জীবনটা আমি নড়ক বানিয়ে দিবো জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ‘

শান চলে গেলো। জারার চোখ ছাপিয়ে জল এলো। এতো কষ্ট কেনো তার জীবনে?

সূর্য অস্তমান রক্তিম অন্তরিকক্ষে পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া বাতাসে রংবেরঙের ফুলের ঘ্রাণ। সেই বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে জারার দেহ মন। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে গেলো নীলাভ অম্বরিতে পূর্ণ চন্দ্রীমা জারার মনে চট করে প্রশ্ন উদায় হলো আজ পূর্ণিমা? তখনি শান কোথা থেকে এসে জারাকে ছাদে বাইরের দিকে ঝুঁকে দাঁড় করালো। জারা প্রথমে ভয় পেয়ে বাঁচার আকুতি করলেও শানের কথায় জারার কোথায় যেন লাগলো। বাঁচার ইচ্ছে যেনো মরে গেলো। নিজের ওপরে বিতৃষ্ণা আসলো। মনে পড়লো কাউকে আকরে ধরে বাঁচার মতো কেউ নেই যারা ছিল তারা পারি দিয়েছে দূরে না ফেরার দেশে। জারা রেলিং ধরে নিচে তাকালো লাফ দেওয়ার সাহস হলো না। রেলিং ঘেঁষে বসে পড়লো হাঁটুতে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো

-‘ তোর ভাগ্য এতো খারাপ কেনো জারা? তোকে কেউ কেনো ভালোবাসে না? তুই দেখতে খারাপ জারা সেজন্য তোকে কেউ ভালোবাসে না। জোর করে আর যায় হোক ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা মন থেকে আসে। কিন্তু ভাইয়া? কি যেনো বলল ভাইয়া আ আমি ম…রে গেলে ভালো। তাহলে আমি-ই সব নষ্টের মূল? না এতো অপমানের পর ভাইয়াকে বিয়ে করা মানে নিজেকে ছোট করা না আমি কিছুতেই এ বিয়ে করবো না ‘

চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়ালো জারা। পা আগোতে গেলে কেমন ভার ভার লাগলো। চোখ ছাপিয়ে জল আসতে লাগলো। ধীরগতিতে নিচে এসে বলল দেখলো হুজুরের পাশে বড় মামা, ছোট মামা, আর খালু বসে আছে চোখ বুলিয়ে মনিকে খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যথ হলো পেলো না কোথাও পাশের রুমে চলে গেলো যেখানে কিনা সবাই আছে। কাজিনগুলো জারাকে সাজাতে লাগলো জারার কোনো বাঁধা মানলো না। জারার বুকের দুরুদুরু বেড়েই চলেছে। কি হবে? কি হবে করে? চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো আমি এ বিয়ে করবো না কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হলো না। বিয়ে জন্য বসার রুমে ডাকা হলো। জারা আর শানকে পাশাপাশি বসানো হলো। জারা চোখ তুলে দেখলো শান লাল চোখে স্থির হয়ে বসে আছে। কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না জারা। জারা নিজের ওপরেই বিরক্ত হলো এতো ভিতু কেনো সে?

ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়ে গেলো। কথা হলো শান বিদেশ থেকে এলো বড় করে অনুষ্ঠানে করা হবে। শান আর জারা এখনও পাশাপাশি বসে আছে। বড়রা যদি না থাকতো তাহলে এতক্ষণ শান এখান থেকে চলে যেত। জারা চেয়েও বিয়েটা আটকাতে পারেনি। জারা যখন নিজের কল্পনা জল্পনা করতে ব্যস্ত তখনই শান কানের কাছে ফিসফিসয়ে বলে উঠলো

-‘ মিসেস জারা আর ইউ রেডি? আপনার জীবন ধীরে ধীরে বিষক্রিয়াময় করে তুলবো। জীবনে বেঁচে থাকতে আর ইচ্ছে হবে না দেখিস বিয়ে করার সাধ একে বারে মিটিয়ে দিবো তোর ‘

জারা নিশ্চুপ হয়ে শুনলো শানের প্রতিটা কথায় বুক কেঁপে উঠলো। বুঝলো আগে তো কঠিন জীবন ছিলই এখন দ্বিগুন কঠিব তার জীবন। সে-তো বিয়ে করতে চাই নি। আর সে-তো কখনো বলিই নি শানকে বিয়ে করবে। তাহলে তাকে কেনো সব কষ্ট সহ্য করতে হবে। জারা মনে মনে দোয়া করলো ‘আল্লাহ আমার ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে দাও। তুমি আমার স্বামীকে ভালো রেখো। এ পরিবারের সকলকে ভালো রেখো।

আজ শান আর জারার বাসররাত হওয়ার স্বত্বেও। শানের মা শান্তি বলল

-‘ ওরা এখনো ছোট যেহেতু সেহেতু একসাথে থাকার প্রশ্ন উঠছে না। আগের মতোই যে যার মতো যার যার রুমে থাকবে ‘

শান্তির কথায় আর কেউ দ্বিমত করলেন না সবাই মেনে নিলেন।

জারা রাতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ঘুম আসছে না। চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এপাশ ওপাশ করেও শত চেষ্টা করেও জারার ঘুম হলো না উঠে ডাইরি খুলে। মনের অজস্র কথা ক্ষুদ্র ভাষায় লেখার প্রচেষ্টা চালানো। চোখ দিয়ে দূর্লভ অবাধ্য জল গুলো টুপটাপ ডাইরির পাতায় পড়ে সাদা পৃষ্ঠা ভিজে নরম হয়ে উঠলো। জারা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না। বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে কান্না করতে লাগলো। কট করে দরজার লক খুলে গেলো জারার কান্না থেমে গেলো অতি সাবধানে চোখে জল মুছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। দরজা লক করারও শব্দ শুনতে পেলো জারা। জারা মনে করলো মনি এসেছে। কিন্তু আচমকা হাত টান দিয়ে উঠে বসালো জারাকে। জারা চমকে তাকালো মানুষটির দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। জারা ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো মনে মনে দোয়া করতে লাগলো

-‘ আমাকে অশান্তিতে রেখে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছ খুব শান্তি না তোর। তোর শান্তি ছুটাবো ‘

জারা শানের এমব বিহেভিয়ার দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেলো জারা কিছু বলার আগে শান জারাকে ধাক্কা দিয়ে শুয়িয়ে দিল। কিছু বুঝার আগের অধর মিলিয়ে দিলো। জারা অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। জারা ঠোঁটে ব্যথা পেতেই শানকে জোরে ধাক্কা দিলো কিন্তু কাজ হলো না কিছুক্ষণ পর শান নিজেই ছেড়ে দিয়ে বলল

-‘ আজ না আমাদের বাসর রাত চল বাসর করি আস… ‘

আর কিছু বলার আগে জারা ডুকরে কেঁদে উঠলো। শান বলল

-‘ এইটুকু তেই এতো চোখের পানি নষ্ট করলে তার হবে না। চোখের পানি জমিয়ে রেখে দাও আভি তো পিকচার বাকি হে এবার সারারাত কাঁদো এবার আমার শান্তির ঘুম ‘

শান সিস বাজাতে বাঝাতে চলে গেলো। জারা অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো শানের যাওয়ার পানে।

চলবে