Sunday, August 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 449



এক মুঠো প্রণয় পর্ব-০১

0

#এক_মুঠো_প্রণয়
#সূচনা_পর্ব
#লেখনীতে_একান্তিকা_নাথ

“ছিঃ ছিঃ রাত দুপুরে একঘরে একটা জোয়ান ছেলে আর একটা যুবতী মেয়ে থাকে কোন আক্কেলে আম্মা!তাও আবার এই ভরা বিয়ে বাড়িতে।মা যেমন ন’ষ্টা চরিত্রের ছিল মেয়েও ঠিক তেমনই ন’ষ্ট চরিত্রের তৈরি হয়েছে।রাজের মতো ভালো ছেলে দুটো আছে?সে ছেলেকে পর্যন্ত ফাঁ’সি’য়ে এসব ন’ষ্টা’মো’তে জড়িয়ে নিল ও?তারপরও আপনি বলবেন ওর কোন দোষ নেই আম্মা?ও একদম ধোঁয়া তুলসী পাতা?”

বিয়ে বাড়ির এত লোকের সামনে আমার চুলের মুঠি ধরে চিৎকার করে কথাগুলো বলেই থামল সেঝ চাচী।কন্ঠে উনার ক্ষোভ আর রাগ।আম্মা অন্য পুরুষের হাত ধরে নতুন সংসার বাঁধার পর এমন একটা দিনও যায়নি যে আমাকে আম্মার চরিত্র তুলে কথা শোনানো হয়নি।আব্বা তো উঠতে বসতেই রেগে যান আমার উপর।আব্বার দ্বিতীয় স্ত্রী,মানে ছোট আম্মাও যখনই পারেন আমাকে কথা শুনাতে ছাড়েন না।একটু থেকে একটু হলেই সোজা গালে চ’ড় পড়ে।থাকার মধ্যে আছে শুধু দাদী।আমার খাওয়া, দাওয়া, ঘুমানো, থাকা সব দাদীর সাথেই।তবে দাদী ও যে একদম আদরে আমায় মাথায় তুলে রাখেন এমন নয়।দাদী বেশ কঠোর প্রকৃতির।দাদী ভালোবাসলে তা অল্প প্রকাশ করবেন, কিন্তু রেগে গেলে তা ভয়ানক রূপ ধারণ করে।

আর মেহেরাজ ভাই হলো আমার কিশোরী বয়সের প্রথম অনুভূতি,প্রথম ভালোবাসা।বুকের ভেতর অনুভূতিরা ডানা ঝাপটালে আমার তার নামই সর্বপ্রথম মনে পড়ে।অলস দুপুর বেলায়, কিংবা মধ্যরাতে হুটহাট আমি তাকে নিয়েই ভাবি।চঞ্চলতায় মগ্ন থাকা আমি হঠাৎ হঠাৎ এই বিষাদের সাগরে ডুব দিই উনাকে মনে করেই।উনার প্রতি একটা ভালোলাগা ছোটবেলা থেকেই ছিল। তবে কৈশোর থেকে যখন বুঝতে শিখেছি ভালো লাগা, ভালোবাসা তখন থেকেই মেহেরাজ ভাইয়ের প্রতি আমার আকর্ষন গাঢ় হলো।উনার কথা বলা, চলাফেরা, রাগ সবই ভালো লাগত।যদিও তা আমি কখনোই প্রকাশ করিনি।তবুও দাদী যেন কিভাবে টের পেয়ে গেল আরো প্রায় বছর দুই আগে। দাদীই প্রথম জানতে পেরেছিলেন মেহেরাজ ভাইয়ের প্রতি আমার দুর্বলতার কথা।এখন নিশ্চয়ই দাদীও আমায় দোষী ভাবছে।নিশ্চয় ভাবছে আমিই মেহেরাজ ভাইয়ের সাথে খারাপ কোন কিছু করতে চেয়েছিলাম।দাদীর কঠোর রূপ বেশ ভয়ঙ্কর।এই কারণেই দাদীকে আমি ভীষণ ভয় পাই। ভয়ে ভয়ে দাদীর দিকে তাকালাম।দাদীর কুচকানো গাল যেন রাগে লাল হয়ে আছে। চোখ রাঙ্গিয়ে আমার দিকেই যেন আগুন ঝারছেন।আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়েই বলে উঠলাম,

“আমি মেহেরাজ ভাইকে…”

বাকিটা আমি শেষ করতে পারলাম না।তার আগেই বাম গালে দাদীর শক্তপোক্ত হাতের চ’ড় পড়ল।সঙ্গে সঙ্গে গালটা জ্বলে উঠল।হাত দিয়ে গাল ঘষতে ঘষতেই দাদীর দিকে নিষ্প্রভ চাহনিতে তাকিয়ে রইলাম আমি।দাদীর ভেতরটা নরম হলেও বাইরেটা পাথরস্বরুপ।আমি সেই পাথরস্বরূপ রূপটাকেই ভয় পাই বেশি।চ’ড় খেয়ে যেন কোন কথায় আমার মুখ দিয়ে আসল না আর।মাথাটা যেন একেবারে শূণ্য হয়ে গেল।বোকার মতো এদিক ওদিক চাইলাম।পায়ের নখ দিয়ে উঠোনের মাটিটাকে খা’মচে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।কিন্তু কাজ হলো না।কান্নারা দম মানল না।আর সে কান্না দেখেই বোধহয় দাদী আরেক দফা বিরক্ত হলেন।নিজের হাত জোড়া দিয়ে আমার চুলের মুঠি ধরেই সেঝ চাচীর থেকে ছাড়িয়ে নিলেন।দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,

” এত রাইতে তোর কি কাম থাকতে পারে ওর লগে ?এত্ত বড় একটা দেঙ্গী মাইয়া হইয়া এত বড় পোলাসহ এক ঘরে ক্যান থাকবি এত রাইতে?এইসব শিখাইছি তোরে? তোর মায় তো তার চরিত্তির জানান দিয়া কুকিত্তি কইরা বেড়াইয়া আমাগো মুখ পুঁ’ড়াইল।চোয়ারম্যানের পোলার হাত ধইরা রাইতের আন্ধারে ঢ্যাং ঢ্যাং কইরা চইলা গেল।তাই বইলা তুইও?তোরে যে কষ্ট কইরা ছোড থেইকা মানুষ কইরলাম তার এই প্রতিদান দিলি তুই?”

দাদীর কথাগুলো শুনেই কান্নার বেগ দ্বিগুণ হলো আমার।মাথা তুলে এক পলক তাকানোর আগেই দাদীর হাত থেকে কেউ আমাকে টে’নে হিঁ’চ’ড়ে নিয়ে গেল অন্য পাশটায়। তারপরই বলিষ্ঠ হাতে দুই গালে দুটো দাবাংমার্কা চ’ড় বসিয়ে দিল।আহ!গালটা যেন ভে’ঙ্গে গেল!ব্যাথায় অস্ফুট স্বরে কাঁত’রাতেই চোখে পড়ল আব্বার ভয়ঙ্কর চাহনী।আব্বার হাত বেশ শক্তোপোক্ত!ছোটবেলায় মা চলে যাওয়ার পর আব্বার হাতে অনেকবার চ’ড় খেয়েছি আমি।প্রত্যেকবারই চ’ড় মা’রা’র পর জ্বর চলে আসত আমার।সে জ্বর এক সপ্তাহের আগে ছাড়তই না।আমি হতবিহ্বল চাহনী নিয়ে আব্বার দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই আব্বা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলেন,

” বেয়া’দব মেয়ে!এসব করে বেড়াচ্ছিস তুই রাত-বিরাতে।ছিঃ!কোন কুক্ষণে যে তোর মাকে বিয়ে করেছিলাম।তার মাশুল আজ এতবছর পরও আমায় দিতে হচ্ছে।গেছিলই যখন পালিয়ে সাথে করে তুই নামক আপদটাকেও নিল না কেন?”

আমি ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলাম।ততক্ষনে দাদী এসে আমার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াল।আমাকে আগলে নিতে নিতেই চেঁচিয়ে বলল,

” আহ আনোয়ার!আমি ওরে শাসন করতাছি দেখস না?এত বড় মাইয়ার গায়ে হাত তোলার সাহস হয় কি কইরা তোর?ঠোঁট কাঁইটা রক্ত ঝরতাছে মাইয়াডার।”

দাদীর কথা শুনেই ঠোঁটের কোণে হাত রাখলাম।তরল কিছু অনুভব করেই বুঝলাম কেঁ’টে গেছে আব্বার চ’ড়ের আ’ঘা’তে।মা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আব্বা আমাকে তেমন একটা সহ্য করতে পারে না।শুধু আব্বা না,এই বাড়ির কেউই আমাকে পছন্দ করে না। মেহেরাজ ভাইও আমায় খুব একটা পছন্দ করেন না।উনার সাথে পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকেই।পাশাপাশি বাড়ি আমাদের।মেহেরাজ ভাইয়ের মা বাবা নেই। শুধু একটা বোন আছে।নাম মেহেরিন।আমি মেহু আপু বলেই ডাকতাম।আপু আমায় বেশ ভালোও বাসত।কিন্তু মেহেরাজ ভাই আমায় কোনকালেই তেমন একটা পাত্তা দেয়নি।ছোটবেলায় বেহায়ার মতো উনার আশপাশটায় পড়ে থাকতাম আমি।উনার সাথে খেলার জন্য কত কান্না করতাম।কিন্তু উনি প্রতিবারই আমায় কোন না কোন কিছু বলে বা করে কষ্ট দিয়েছেন।কোন বার ঝাল তরকারি খাইয়ে, নয়তো কোনবার উঠোনে রোদে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দিতেন।একবার তো কি ভীষণ নির্দয়ভাবে হাতে মেরেছিলেন উনি।বড় হওয়ার পর অবশ্য মেহু আপু,মেহেরাজ ভাই কাউকেই তেমন কাছ থেকে দেখিনি।মেহেরাজ ভাইদের শহরের বিল্ডিংটা তৈরি করার পর উনারা ওখানেই থাকতেন।মাঝেমাঝে গ্রামে আসতেন।দাদীর সাথে ভালো সখ্যতা থাকায় আমাদের বাড়িতেও আসতেন।আসলে এক পলক দেখা হতো।বেশ ঐটুকুই!তারপর যখন থেকে বুঝতে পারলাম মেহেরাজ ভাইয়ের প্রতি আমার কোন এক দুর্বলতা কাজ করে,তখন থেকেই আমি মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে কখনো মুখ তুলে তাকাইনি। বরাবরই এড়িয়ে চলেছি।উনি আমাদের বাড়ি আসলে ঘর থেকে বের হতাম না যাতে উনার সম্মুখীন না হতে হয়।মেহু আপু উনাদের বাসায় বারবার যেতে বললেও কখনো যাইনি ঐ একই বাসায় মেহেরাজ ভাইও থাকেন বলে। এত এড়িয়ে যাওয়ার পরও দেড়বছর আগে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা ঘটল। মেহেরাজ ভাই কিভাবে যেন আমার ডায়েরীটা হাতে পেয়ে গেল।তারপর কি ভীষণ অপ’মান করলেন পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে।আমি যে উনার যোগ্য না তা উনার প্রত্যেকটা কথায় পরতে পরতে বুঝিয়ে দিলেন।শুধু এইটুকুতেই থেমে ছিলেন না। শাস্তিস্বরুপ কাঁচের টুকরোর উপর হেঁটে পা জোড়া র’ক্তা’ক্ত ও করতে হয়েছিল আমায়। আমার অপরাধ ছিল উনার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো আমার ডায়েরীর পাতায় জড়ো করেছিলাম।

যখন কাঁচের টুকরো গুলো পায়ের চামড়া ভেদ করে পুকুরের সিঁড়িটা র’ক্তা’ক্ত করছিল তখন আমার কলিজা ছি’ড়ে যাচ্ছিল।যন্ত্রনায় শরীরের শিরা উপশিরা কাঁ’তরে উঠছিল।কিন্ত উনি আমার এই কষ্টে একটুও কষ্ট পেলেন না।উনার মুখে ছিল পৈশাচিক এক আনন্দানুভূতি।সেইদিনের পর আমি মেহেরাজ ভাইকে চরম রকমে ঘৃণা করি।মানুষটার নাম শুনলেই ঘৃণায় নিং’ড়ে উঠে মন, রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক বিষাক্ত অনুভূতি রাজ করে।আর সেই ঘৃণাটা এখন আরো বেশি জলজ্ব্যান্ত হয়ে উঠল।এই মুহুর্তে যা যা ঘটছে সবকিছুর জন্য তো উনিই দায়ী।অথচ উনার উপর একটাবারও কোন কথা উঠল না।এতে যে আমার কোন দোষ নেই উনি একটাবারও তা বলে গেলেন না।একটা মেয়ের চরিত্রে কলঙ্ক লাগিয়ে উনি উনার প্রেমিকার রাগ ভাঙ্গাতে চলে গেলেন।কি ভীষন নির্দয় মানুষ উনি।আজ নিশ্চয় আম্মা থাকলে এমন কিছুই হতো না।আম্মা থাকলে সবাই আমাকে পছন্দ করত।মেহেরাজ ভাইও হয়তো পছন্দ করত ।আমার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠত না।আব্বাও আমায় এভাবে মারতেন না। তবে আব্বা আমারে মা’রু’ক,পি’টু’ক আব্বার প্রতি আমার কোনকালেই কোন অভিযোগ নেই।আমার সকল অভিযোগ শুধু আমার আম্মার প্রতি।হয়তো গরিব ছিলাম আমরা কিন্তু কোনকিছুরই তো অভাব ছিল না। কেন মা আমাকে আর মিথিকে একা ছেড়ে পালিয়ে গেল?এর সকল দায়ভার কি শুধু আমারই?এই যে সারাজীবন সবাই আমারে মায়ের জন্য কথা শুনাল, মায়ের চলে যাওয়ার কারণটা কি আমি ছিলাম?আম্মা কেন আমাকে সকলের চোখের বালি করে রেখে গেল?কেন?

আমার ভাবনার মাঝেই আব্বা আবারও তেড়ে এলেন আমায় মা’র’তে। এবার হাতে একটা বাঁশের মতো লাঠি।আমি আৎকে উঠলাম।ভয়ে গুঁটিশুঁটি মেরে দাদীর আঁচলটা খা’মচে ধরেই নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করলাম।আব্বা রাগে কাঁপতে কাঁপতেই যেন লাঠিটা দিয়ে মে’রে উঠবেন। সেঝ চাচা আর ছোট চাচা ধরে বেঁধেও আব্বাকে আটকাতে পারল না যেন।আব্বা তেড়ে আরো দু পা এগোতেই দাদী আমার হাতটা শক্ত করে ধরে টে’নে নিয়ে গেল ঘরে। তারপর হনহনিয়ে ঘর থেকে বের হয়েই বাইরে দিয়ে দরজা লাগাল।আমি দম ফেললাম।দরজার ওপাশ থেকে শোনা গেল আব্বার ক্ষ্রিপ্ত গলা।

” ও ওর চরি’ত্রহীন মায়ের মতোই তৈরি হয়েছে আম্মা।এরপরও শাসন করব না বলছেন?সারাজীবন খাইয়ে পড়িয়ে একটা কালসাঁপ পুষে এসেছি।ভাগ্যিস আজ বাড়ির কেউ দেখল ব্যাপারটা। নয়তো জানতামই না এই বেয়াদব মেয়ে কিসব করে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছে করছে জুতো দিয়ে পি’টি’য়ে জ্যা’ন্ত মাটিতে পুঁ’তে দিতে।”

দাদীও বলে উঠল কর্কশ গলায়,

” চুপ কর আনোয়ার।ও তোর মাইয়া হয়।”

দাদীর কথা শেষ হতেই শোনা গেল ছোট আম্মার গলা।ছোট আম্মা যেন এরই অপেক্ষাতেই ছিল এতক্ষন।অবশেষে সুযোগ পেয়ে মুখটা খুলেই ফেললেন।

” তা আপনার গুণধর নাতনি বুঝি খুব একটা সাধুকাজ করেছে আম্মা? আপনিই ওকে আস্কারা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছেন।আপনার জন্যই আজ এই মেয়েটা এমন কুকৃত্তি করার সাহস পেয়েছে বুঝলেন।শেষে মুখ তো পু’ড়বে আমাদের।”

” দেখ মেঝ বউ তোমার লগে তো জ্যোতিরে নিয়া কোন কথা কইতাছি না।যাক,যাও ঘরে যাও হগ্গলে।ঘটনা কি ঘটছে না ঘইটছে তা নিয়া কাইলকাই কথা হইব। এহন এইহানে হগ্গলে নাই।হগ্গলের সামনেই কথা হইব।সেঝ বউ সইত্ত কইছে কিনা তারও তো ঠিক নাই।তাই কইতাছি,যাও ।কাইলকাই কথা হইব এই নিয়া।”

দাদীর শেষের কথাগুলোতে যেন সেঝ চাচী বড্ড দুঃখ পেলেন।গলা নিচু করেই বললেন,

” সে কি আম্মা?আমি মিথ্যে কথা বলব এই ব্যাপারে?ওকে কি আমি ছোট থেকে বড় করিনি?মেয়ের মতো দেখিনি?ওর চরিত্রে দোষ দিয়ে আমার লাভ কি?”

” তা আমি কেমনে জানুম? রাতদুপুরে এমনে চিৎকার দিয়া এতগুলা মানুষরে কথাডা জানাইয়া লাভ কি হইছে তোমার? মাইয়ার মতো দেখলে তো তুমি এই কাম করতা না। যাও ঘরে যাও, ঘুমাও।”

তারপর আর কেউ দাঁড়াল না। সবাই যার যার মতো ঘরে চলে গেল।আমি একটা তপ্ত শ্বাস ফেললাম।মাথার উপর ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম, এই জীবনের শেষ হবে কবে!

.

আজ আরমান ভাইয়ের হলুদ ছিল।আরমান ভাই আমার ফুফাত ভাই।ফুফা মারা যাওয়ার পর থেকে ফুফু আর আরমান ভাই এখানেই থাকেন।আরমান ভাইয়ের হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন বাড়ির সামনে খালি জায়গাটায় করা হয়ছে।বেশ বড়সড়ো খোলামেলা জায়গায়।এখনো সবাই সেখানেই হৈ হুল্লোড়ে মেতে আছে।আমার এসব হৈ হুল্লোড় ভালো লাগে না।তবুও ভাই-বোনদের চাপে পড়ে একটা বাসন্তীরাঙ্গা শাড়ি পরে উপস্থিত হতে হলো সেখানে ।খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হতেই কোন রকমে তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে আসলাম।বাড়িতে তখন চাচী,ফুফু সহ অল্প কয়েকজন মুরুব্বি ছিল।আমি কলে গিয়ে মুখ চোখ ধুঁয়ে দাদীর ঘরে গেলাম।দাদীর ঘরটা টিনের,মাটির মেঝে, ভীষণ স্যাঁতস্যাঁতে। আসবাবপত্র বলতে দুই রুমে দুটো খাট, একটা কাঠের আলমারি,একটা কাপড় রাখার আলনা, একটা পড়ার টেবিল আর দুটা কাঠের পুরোনো চেয়ার ।ঘরটায় এক রুমে আমি আর অন্যরুমে দাদী থাকেন।পাশ দিয়ে চালা দেওয়া রান্নাঘর।ব্যস! এই হলো আমার আর দাদীর ছোটখাটো সংসার।

আমি দু পা বাড়িয়ে আমার রুমে উঁকি দিলাম।ফুফু সহ আরো বেশ কয়েকজন জড়োসড়ো হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।ধীর পায়ে দাদীর রুমে গেলাম।দাদীর রুমের ছিটকিনিটা নষ্ট।দরজা লাগানো যায় না।ঘরে শুধু আমি আর দাদী থাকি বলে ছিটকিনি লাগানোর প্রয়োজন ও পরেনি এতদিন।আমি দরজা ভিড়িয়ে ফ্যানের সুইচ দিলাম।মাথা ব্যাথা আর শাড়ি পরার অস্বস্তিতে বিরক্তি লাগছিল।দাদীর রুমটা ফাঁকা দেখেই তৃপ্তি পেলাম। ক্লান্ত শরীরটা ধপ করে মেলে দিলাম দাদীর স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায়।ঘুমে চোখজোড়া লেগে আসবে ঠিক সেই মুহুর্তেই মনে হলো শাড়ি খুলে জামা পরা উচিত।সবাই এমনিতেও হলুদের অনুষ্ঠানে।কেই বা এখন এখানে আসবে?এই ভাবনা মাথায় নিয়েই দাদীর রুমে আলনা থেকে জামা নিলাম।তারপর একে একে ব্লাউজ থেকে সেইফটিপিন গুলো খুলে ফেলতেই আঁচলটা গড়িয়ে পড়ল মাটির মেঝেতে।হাত দিয়ে কুঁচিগুলো খুলব ঠিক সে সময়েই বিদ্যুৎ চলে গেল।আমি কপাল কুঁচকে বিরক্ত হলাম।গ্রামের বাড়ি!দিনে চৌদ্দবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা দেখতে দেখতে বিরক্ত হওয়া নিত্যদিনের ঘটনা।অন্ধকারে দু পা হেঁটে টেবিলের ড্রয়ারে কিছুক্ষন মোমবাতি খোঁজার চেষ্টা করলাম।কি আশ্চর্য!একটা মোমবাতিও আজ নেই।আবার ও উল্টোদিক ঘুরে দু পা হাঁটব তার আগে কেউ একজন তীব্র আলো ফেলল আমার চোখে।তৎক্ষনাৎ চোখ কুঁচকে এল আমার।আলোটা আমার দিকে থাকায় লোকটা কে তাও বুঝলাম না।কিছু একটা বলতে যাব ঠিক তখনই লোকটা তার মোবাইলের আলো নিভিয়ে ফেলল।অপ্রস্তুত গলায় বলল,

“বোধবুদ্ধি কিছু আছে তোর মাথায়? র্ রুমের দরজা লাগাসনি কেন?আশ্চর্য!দাদীর জন্য পানের বাটা নিতে বলল চাচী।পানের বাটা কোথায় আছে ?দেখ তো।সামান্তা আসবে, ওকে দিস।”

আমি থমকে গেলাম।এটা মেহেরাজ ভাইয়ের কন্ঠ।উনি এইখানে এই মুহুর্তে আসবে বা আসতে পারে আমি কল্পনাও করিনি কখনো।আমার বুকে যে আঁচল নেই তা বুঝতে পেরে মুহুর্তেই নিজেকে নিজের কাছে ভীষণ ছোট মনে হলো।ঘন অন্ধকারে আঁচলটা কোনরকমে খুঁজে টেনেটুনে পরব তার আগেই মেহেরাজ ভাই ঠা’স করে পড়লেন আমার উপর।আকস্মিক ধাক্কা আমি সামলে উঠতে পারলাম না।মেহেরাজ ভাইয়ের শরীরের ধা’ক্কায় আমিসহ পড়ে গেলাম মাটির মেঝেতে। ঠিক সেই মুহুর্তেই দরজার ওপার থেকে আবারও কেউ আলো ছুড়ল আর বলতে লাগল,

” রাজ? জ্যোতি তো আছে মনে হয় রুমে।ওকে বললেই তো হয়
পানের বাটা কোথায় আছে ও তো জানে।এই মেয়েটা কোন কাজের না।কি যে করে কিজানি।আম্মা এই মেয়েটারে শুধুু শুধ্……”

বাকিটুকু বলার আগেই সেঝ চাচী আমাকে আর মেহেরাজ ভাইকে এই অবস্থায় লক্ষ্য করলেন।তারপরই চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগলেন।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি থম মে’রে গেলাম।কিছুই বোধগম্য হলো না। পরমুহুর্তে চাচী যখন সবাইকে ঘটনার বর্ণনা বলতে লাগল অপমানে আমার শিরা উপশিরা জ্বলে উঠল।ঘৃণ্য অনুভূতিতে মন নিং’ড়ে উঠল।আর ঠিক তখনই সামান্তা আপুও এসে হাজির হলেন।সামান্তা আপু মেহেরাজ ভাইয়ের চাচাতো বোনও বলা যায় আবার প্রেমিকাও বলা যায়।বছর চারেকের সম্পর্ক উনাদের।এতদিনের ভালোবাসার মানুষ!এতদিনের প্রনয়!সেই মানুষটা সম্পর্কেই এমন ঘটনা শোনার পর সামান্তা আপু নিজেকে সামলাতে পারলেন না।শত হোক নিজের প্রেমিক অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিল কথাটা মানা যায় না। কান্না করতে করতে উনার অবস্থা খারাপের দিকে গেল।এক পর্যায়ে উনি অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।মেহেরাজ ভাই উনাকে কোলে তুলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন।বাকি রয়ে গেলাম আমি।তারপর যার যত রাগ, যত অপবাদ, যত অপমান সব আমার নামেই লিখে দিচ্ছে।কেউ একটিবারও আমার কথা শুনতে চাইল না।একটিবারও আমাকে বুঝতে চাইল না কেউ।এমনকি দাদীও না।

এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ গড়িয়ে উষ্ণ পানি বইল।বুকের ভেতর অস্থিরতা অনুভব হলো।এতটা কষ্ট,এতটোা অপমান আমার জীবনে না আসলেই কি হতো না?

.

ভোর হলো।বাইরে থেকে পাখিদের কিচিরমিচির ডাকের আওয়াজ আসল।জানালার ফাঁক দিয়ে কিঞ্চিৎ আলোও ডুকল ঘরে।আমি উঠে বসলাম। জানালাটা মেলে দিয়েই পর্দা সরালাম।কিছুক্ষন ঠাঁই বসে থেকেই জামাকাপড় নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে কলঘরে গেলাম।একটা গোসল করলে শান্তি লাগবে।গায়ে এক বালতি পানি ঢেলেই কোনভাবে গোসল সেরে বের হয়ে চারদিকে তাকালাম।কেউ কোথাও নেই।সবাই ঘুমোচ্ছে। আমি ভেজা কাপড় গুলো উঠোনের সামনের জায়গাটায় দড়িতে মেলে দিলাম।পরমুহুর্তেই ধীর পায়ে এগোতে গিয়ে মেহেরাজ ভাইকে দেখে চমকে গেলাম।আমি দাঁড়ালাম না। দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুত পায়ে চলে আসতে নিতেই মেহেরাজ ভাই গমগমে কন্ঠে বলে উঠলেন,

” জ্যোতি শোন।”

আমার পা জোড়া থেমে গেল।তবে দৃষ্টি পেছন ফিরল না।মাথা নাড়িয়ে বললাম,

” জ্বী, বলেন ভাইয়া।”

মেহেরাজ ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।তবুও আমি চাইলাম না তার দিকে।আমার মনে তখন তার জন্য চরম ঘৃণারা জ্যান্ত হয়ে উঠল।উনি চাইলেই পারতেন কালকে সবার সামনে সবটা বলতে।আমাকে এই দোষ থেকে মুক্ত করতে।কিন্তু উনি তা করেননি।আমায় এক সমুদ্র অপমানে ভাসিয়ে দিয়ে উনি গা বাঁচিয়ে পালালেন।সেসব মনে করেই আমি রাগে জ্ব’লে উঠলাম।মেহেরাজ ভাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।এবার এই অবস্থায় দেখেও যদি কেউ কোন কিছু বলে তাও সব দোষ আমারই হবে।আমি সরে যেতে লাগলেই মেহেরাজ ভাই আবারও বলে উঠলেন,

” দাঁড়াতে বললাম না তোকে?কথা কানে যায় না তোর?”

আমি আবার দাঁড়ালাম।বললাম,

“আমার একটু কাজ আছে।”

” কি কাজ?”

” আপনি কি বলবেন বলুন।”

” এড়িয়ে যাচ্ছিস তুই?তোর স্পর্ধা দিন দিন বাড়ছে জ্যোতি।”

আমি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম। মৃদু গলায় বললাম,

” কি যে বলেন!কোথায় আপনি আর কোথায় আমি।আপনার নখেরও যোগ্য না। আপনাকে এড়িয়ে যাব?সাধ্য আছে আমার?”

মেহেরাজ ভাই আবারও চুপ রইল।উনি যা বলতে চাইছেন তাতে যেন রাজ্যের সংকোচ। তারপর কিছুটা সময় পর কি বুঝেই বললেন,

“স্যরি,আমি অন্ধকারে পা বাড়াতেই কিছুর সাথে হোঁচট খেয়ে তোর উপর গিয়ে পড়েছিলাম।দোষটা হয়তো আমারই ছিল।”

পুণরায় তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।উনি এসব বলছেন তা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যও হলো না।তবুও বিশ্বাস করলাম।বললাম,

” তো?এসব শুনে আমি সবাইকে বলে বেড়াব আমি নির্দোষ?নাকি দোষটা আপনার সেটা বলে বেড়াব?এসব বলার মানে কি মেহেরাজ ভাই?”

” আমার মনে হয়েছে তোকে স্যরি বলা উচিত তাই।আর কিছু না।”

” একটা স্যরিতে সব মিটে গেল?যদি মিটে যেত তাহলে নাহয় বললে লাভ হতো।যাক, বাদ দিন।আমি কষ্ট সহ্য করতে পারি, অভ্যাস আছে আমার।সেভাবে বদনামও সহ্য করে নিব।”

মেহেরাজ ভাই বোধহয় রেগে গেলেন এবার।নিরেট কন্ঠে শুধাল,

“তুই এমনভাবে বলছিস যেন আমি তোর উপর প্রতিশোধ নিতে এসব করেছি।”

” যদি প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে করেই থাকেন তাহলেও কি?আপনার তো কোন বদনাম হয়নি।তবে আমি কিন্তু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আপনি ইচ্ছে করেই এই প্রতিশোধটা নিয়েছেন।ইচ্ছেকরেই!”

মেহেরাজ ভাইয়ের রাগ দ্বিগুণ হলো।গলাটা কিছুটা উঁচিয়েই বললেন,

” তুই কি বলছিস জানিস তুই?আন্দাজে কথা বলবি না জ্যোতি!”

এবার আমার ভেতরকার অভিযোগ গুলো নড়ে চড়ে উঠল এক মুহুর্তেই।তৎক্ষনাৎ আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসল,

“জানি আমি,সবটা জানি।কেন করলেন এমনটা মেহেরাজ ভাই?কি ক্ষতি করেছিলাম?দেড়বছর আগে সে ডায়েরীটা আপনার সামনে চলে এসেছিল বলে?আমি তো মুখে কিছু বলিনি কোনদিন।শুধু একপাক্ষিক কিছু অনুভূতি বহন করে চলছিলাম।ডায়েরিতে লিখে ফেলেছিলাম।বিশ্বাস করুন, সেবারের পর আপনাকে নিয়ে আর কোনদিন লিখিনি কিছু।আপনার দিকে তাকিয়েও দেখিনি।দুইবছর আগে আমাকে ভাঙ্গা কাঁচের উপর দিয়ে হাঁটিয়ে মজা নিলেন,উপহাস করলেন।আর এখন এতগুলো দিন পর এই জঘন্য শাস্তিটা?আপনাকে নিয়ে কয়েক পাতা লিখা আমার এমনই জঘন্য অন্যায় ছিল? আমার চরিত্রে এতবড় একটা দাগ না দিলেই কি হতো না মেহেরাজ ভাই?”

মেহেরাজ ভাই কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।বোধহয় রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করল।তবে বিশেষ লাভ হলো না।পরমুহুর্তেই ক্রোধ নিয়ে বলে উঠলেন,

” তোকে স্যরি বলাটাই ভুল হয়েছে।তুই একটা অসহ্যকর, বিরক্তিকর মেয়ে।শুধুমাত্র কালকে রাতের ঘটনাটার জন্য সামান্তা আমার সাথে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আমার এতবছরের ভালোবাসা,বিশ্বাস! সব শেষ!কিচ্ছু নেই আমার।কিচ্ছু না।এতকিছুর পরও তোকে স্যরি বলতে আসাটা চরম রকমের বোকামো! ”

তারপর আর দাঁড়ালেন না মেহেরাজ ভাই।চোখ মুখ লাল করে উল্টো দিকটায় হাঁটা দিয়ে সোজা চলে গেলেন।আমি সেদিক পানে তাকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেললাম শুধু।মনের ভেতর প্রশ্নরা জমাট বাঁধল।উনি কি অস্পষ্টভাবে উনাদের বিচ্ছেদের দায় দিয়ে গেলেন আমাকে?

চলবে।

ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#অন্তিম_পর্ব

#নুজাইফা_নূন

-“আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার চরকায় তেল দাও।”

-” ঠিক আছে বলে রুকু রুম থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম এগোনোর সাথে সাথেই ফ্লোরে পিচ্ছিল জাতীয় কিছুর উপর পা লেগে রুকু ঠাস করে পড়ে গেল।যার দরুন ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো রুকু। রুকুর আর্তনাদ শুনে রাদ রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো রুকু নিচে পা ধরে বসে রয়েছে। চোখে মুখে ব্যাথার স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে।রাজ কিছু একটা ভেবে রুকু কে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বললো, কানা তুমি?দেখে চলতে পারো না? এক্ষুনি বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতো পারতো।”

-” যা হবার আমার হতো তাতে আপনার কি আসে যায়? আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। পুরুষ মানুষ আসলেই সৌন্দর্যের পুজারী।মনে হয় যেন সৌন্দর্য ধুয়ে তারা পানি খাবে।”

-” বেশি কথা না বলে দেখো হাঁটতে চলতে পারবে কিনা?নাকি ডক্টর কে কল করবো?”

-“ডক্টর ডাকার মতো তেমন কিছু হয় নি আমার। আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে।”

-” তুমি ভাঙ্গবে তবু চমকাবে না । পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।নয়তো বাবার বাড়ি তোমার একা একাই যেতে হবে।”

-” প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে রুকু বোরকা হিজাব পরিধান করে নিচে এসে দেখে রাদ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রুকু কে দেখা মাত্রই রাদ হুংকার ছেড়ে বললো, তোমার কাছে সময়ের মূল্য না থাকলেও আমার কাছে সময়ের মূল্য অনেক বেশি।তোমাকে রেডি হবার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিলো।সেখানে তুমি ত্রিশ মিনিট সময় ব্যয় করেছো।”

-” বাহ্ ! আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন না।আবার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য দেখছি তর সইছে না আপনার।”

-” প্রতিত্তরে রাদ কিছু না বলে ড্রাইভার সিটে গিয়ে বসে পড়লো।রুকু ও কিছু না বলে চুপচাপ রাদের পাশের সিটে গিয়ে বসে ফোনে মনোযোগ দিলো। রাস্তায় তাদের মধ্যে আর কোনো কথা হলো না। রুকু মনোযোগ সহকারে তার পেজের কমেন্ট পড়ছিলো কে কি কমেন্ট করেছে। হুট করে রাদের গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার জন্য রুকু ফোন থেকে মনোযোগ উঠিয়ে রাদের দিকে তাকালো।রাদ কিছু না বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারের দিকে চলে গেলো।প্রায় এক ঘন্টা পরে রাদের দেখা মিললো।তবে রাদ একা নয়।তার সাথে হালকা পাতলা গড়নের কম বয়সী দুইটা ছেলে রয়েছে। একজনের হাতে রয়েছে মিষ্টি সহ নানা ধরনের ফলমূল।অন্য জনের হাতে রয়েছে বড় বড় দুইটা মাছ, বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি।এতো বাজার মিষ্টান্ন দেখে রুকুর চোখ বড়বড় হয়ে গেল।সে ভাবতে ও পারে নি রাদ তাদের জন্য এতো কিছু করবে।রাদ ছেলেগুলোর থেকে সবকিছু নিয়ে গাড়িতে রেখে দিয়ে দুজনের হাতে পাঁচশত টাকার দুইটা নোট ধরিয়ে দিলো।টাকা দেখে খুশি তে ছেলে দুটোর চোখ ছলছল করে উঠলো।তারা দুজনে বিনয়ের সাথে রাদ কে সালাম জানিয়ে প্রস্থান করলো।রাদ ড্রাইভিং সিটে এসে বসলে রুকু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাদ বললো,

-” ভেবো না তোমাকে ভালোবেসে আমি এসব কিছু করেছি।যা কিছু করেছি আমার মানসম্মান রক্ষার্থে করেছি। বিয়ের পর প্রথম বার তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি। তোমাদের গ্ৰামের সবাই জানে তোমার বড়লোক চাকরিজীবী ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে।বড়লোক , চাকরিজীবী ছেলে হয়ে যদি এটুকু খরচা পাতি না করি তাহলে আর আমার সম্মান থাকলো কোথায় বলো?”

-” রুকু প্রতিত্তরে কিছু না বলে ফোনে মনোযোগ দিলো।”

___________________________________________

-” রুকুদের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়।রুকু গাড়ি থেকে নেমে দেখে তার মা ভাই তাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।রুকু কালবিলম্ব না করে দৌড়ে গিয়ে ভাই কে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো , কেমন আছিস ভাই?”

-” রিমন মুখ ভার করে বললো, তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো।এখন তোমার মনে আমার জন্য একটু ও ভালোবাসা নেই। এখন তোমার সব ভালোবাসা ঐ লম্বু ব্যাডার জন্য।এই লম্বু ব্যাডা ভালো না। আপারে ফোনের মধ্যে বকা দিতে শুনেছি আছি। কথাটা শুনে লিমা বেগম ধমকের স্বরে বললেন, এটা কোন ধরনের বেয়াদবি রিমন? তোকে কতোবার বলেছি বড়দের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। মানুষ টা দুলাভাই হয় তোর। ”

-” লিমা বেগম রিমন কে বকাবকি করছে দেখে রাদ এগিয়ে এসে বললো, আহ্ আন্টি! অসুস্থ্য বাচ্চা একটা ছেলেকে এইভাবে বকছেন কেন? ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি।”

-” তুমি আর ওকে মাথায় তুলো না বাবা। ওকে বেশি লাই দিলে তোমার মাথায় চড়ে নাচতে শুরু করে দিবে।”

-” লিমা বেগমের কথা শুনে রাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজন শেখ এসে বললো, বুড়ি হয়ে গেলে তবু ও তোমার কাণ্ডজ্ঞান হলো না।মেয়ে জামাই কতো দূর থেকে এসেছে তুমি তাদের কে ভেতরে না নিয়ে গিয়ে এখনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছো?”

-” সরি সরি! ভুল হয়ে গেছে আমার।চলো বাবা ভেতরে চলো।”

-” রাদ গাড়ি থেকে সবকিছু বের করে রাজন শেখ আর লিমার হাতে দিলো।রাজন শেখ কিছু টা অবাক হয়ে বললো, এসবের দরকার কি ছিলো বাবা?তোমরা এসেছো তাতেই আমরা অনেক খুশি হয়েছি। আচ্ছা বাবা ভেতরে চলো।যদিও তোমাদের মতো এতো বড় বাড়ি না আমাদের। গরীবের ঘরে একটু মানিয়ে নিও বাবা।”

-” রাদ রাজন শেখ ,লিমা বেগমের ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হলো।সে মুচকি হেসে ভেতরে প্রবেশ করলো।রুকু রাদ কে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।রাদ রুকুর রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। রুম টা খুব বেশি বড় নয়।তবে অনেক সুন্দর করে রুম টা গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ততোক্ষণে রুকু বোরকা হিজাব খুলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বললো, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

-” রাদ বাধ্য ছেলের মতো ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

_______________________________________

-” রুকুর রুমে কোনো সোফা নেই।রাদ ডিনার শেষ করে রুমে এসে চিন্তায় পড়ে গেলো। বুঝতে পারছে না কে কোথায় থাকবে?রাদের ভাবনার মাঝে রুকু রুমে প্রবেশ করে বললো, নিশ্চয় এটা ভাবছেন যে আপনি কোথায় থাকবেন?নো টেনশন ডু ফুর্তি।আপনি আমাদের বাড়ির মেহমান। আমাদের বাড়িতে মেহমানদের কোনো অযত্ন অবহেলা হয় না।আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন।”

-” তুমি কোথায় থাকবে ?”

-” আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।আমি নিচে বিছানা করে থাকবো।”

-“তুমি বরং বিছানায় থাকো। ফ্লোরে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে তোমার।”

-” আপনার লাগবে না বুঝি?”

-” আমি পুরুষ মানুষ। মেয়েদের মতো ননীর পুতুল না । নিজের বাড়িতে নিজের সোফায় থাকতে হচ্ছে।আর এটাতো অন্যের বাড়ি।এখানে যে আমার ফ্লোরে থাকার জায়গা মিলছে এটাই অনেক।”

-“আপনার যদি সমস্যা না হয় আমরা দুজনেই বিছানায় থাকি? ”

-” ঠিক আছে।তবে একদম আমার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে না।”

-” রুকু দুজনের মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে বললো ,রুকু গরীব হতে পারে।কিন্তু ছোটলোক না বলে রুকু রাদের থেকে বিপরীতমুখী হয়ে শুয়ে পড়লো।যা দেখে রাদ ও অন্য দিকে মুখ দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছু সময় অতিবাহিত হ‌ওয়ার এক পর্যায়ে দুজনেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।”

-” বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করতেই ঘুম থেকে গেলো রাদের।রাদ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রুকু তার বুকের উপর বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে পড়ে রয়েছে। অথচ মেয়েটা রাতে কতো বড়ো মুখ করে বলেছিলো সে গরীব হতে পারে কিন্তু ছোট লোক না।”

________________

-” দেখতে দেখতে কে’টে গেলো পাঁচ মাস।রুকু রাদের সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। রাদের আর এখন রুকুর মুখের দিকে তাকালে বিরক্তি লাগে না। বরং সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসায় ফিরে রুকু কে দেখলে প্রশান্তি তে তার মনটা ভরে উঠে।হয়তো এটাই বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কের জোর।এই পবিত্র সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে না চাইতেও একজন অন্যজনের প্রতি টান অনুভব করে। ঠিক এখন যেমন টা রাদ করে।রাদ এখন রুকু কে অনুভব করতে পারে।তার আশেপাশে থাকতে চায়। কিন্তু রুকু যেন তাকে পাত্তাই দেয় না।সে সেই বাসর রাতের কথা ধরেই পড়ে আছে। প্রতিদিন একবেলা নিয়ম করে ডিভোর্সের কথা মনে করিয়ে দেয়।রাদ নিজের কেবিনে বসে ভাবছে অনেক হয়েছে আর নয়। আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।রুকুর ভাবনায় রাদ ক্লাসেও মনোযোগ দিতে পারে না।সে কোনো মতো ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু রাদ রুমে এসে রুকু কে পায় না।রাদ নিচে আসতে যাবে তখনি তুলির রুম থেকে হাসাহাসির আ‌ওয়াজ পায়।রাদ না চায়তেও ভেতরে উঁকি দিয়ে রুকু কে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে সে যেন থমকে গেল। আবার অবাক ও হলো তুলির সাথে তাকে এভাবে হাসাহাসি করতে দেখে।তুলি মেয়েটা প্রথম প্রথম রুকু কে পছন্দ করতো না।এমনকি তার হাতের পানি টুকু পর্যন্ত খেতো না। এরপর আবার তুলি তাদের বিয়ের পরের দিন যখন কিচেনের পাশে দাঁড়িয়ে তমা আর পাশের ফ্ল্যাটের মিলির কথা শুনে জানতে পারে রাদ তার নিজের আপন ভাই না। তখন থেকে যেন রুকুর প্রতি তার ঘৃণা আরো বেড়ে যায়।সে রুকু কে নানা ভাবে আঘাত করতে থাকে। কখনো ফ্লোরে তেল ফেলে, কখনো তার খাবারে লবণ, লঙ্কা গুঁড়ো মিশিয়ে কখনো বা তার জন্য রাখা খাবারে পানি ঢেলে দিয়ে। যদিও রুকু বুঝতে পেরেছিলো এসব তুলিও কাজ । তবু ও রুকু কিছু বলে নি। নিজের বোন মনে করে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এভাবেই তুলির অত্যাচার চলতে থাকে কিছুদিন।তুলি সবার আড়ালে রিলেশন করতো। হুট করে একদিন তুলির বয়ফ্রেন্ড রাকিব তাকে নিজের বাবা মায়ের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেবার নাম করে একটা ক্লাবে নিয়ে এসে তুলি কে কুপ্রস্তাব দেয়‌।এক পর্যায়ে তুলি
রাকিবের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে তার উপর জবরদস্তি শুরু করে।আর তখনি রুকু পুলিশ নিয়ে এসে হাজির হয়।রুকু কে দেখে যেন তুলি প্রাণ ফিরে পায়।সে রুকু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো,

-” তুমি না থাকলে আজ হয়তো আমি শেষ হয়ে যেতাম।আমি তোমাকে এতো অপমান করেছি,তোমাকে আঘাত করেছি। আর তুমিই আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে ?”

-” রুকু তুলির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, তুমি আমাকে পছন্দ নাই করতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে আমার নিজের বোন মনে করি। বোন হয়ে বোনের বিপদে এগিয়ে আসবো না?’

-” কিন্তু আমি তো তোমাকে কখনো রাকিবের ব্যাপারে কিছু বলি নি। তুমি কিভাবে জানলে?”

-” গতরাতে যখন তুমি রাকিবের সাথে কথা বলছিলে আমি তখন তোমার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।আর তখনি তোমাদের বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে পারি। এরপর যখন তুমি ফোন রেখে ওয়াশরুমে চলে যাও , আমি তোমার ফোন চেক করি। রাকিবের মতো একটা ছেলে তোমার বয়ফ্রেন্ড ভাবতেই আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে। রাকিব ছেলেটা একদম ই ভালো নয়। মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করার জন্য কয়েক বার জেলেও গিয়েছে।তোমরা কোথায় মিট করবে কখন বের হবে সেই ব্যাপারে জেনে আমি রুমে ফিরে আসি। সেদিন সারারাত তোমার টেনশনে আমি ঘুমোতে পারি না।পরের দিন যখন তুমি বের হ‌ও তোমাকে আমি ফলো করতে শুরু করি।আর যখনি দেখলাম তোমাকে রেস্টুরেন্ট থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে তখনি আমার পুলিশ ফ্রেন্ড রাজ কে কল করি।ব্যাস হাতেনাতে ধরা পড়ে রাকিব।”

-” আজ যা হয়ে গেলো এই ব্যাপারে তুমি বাড়ির কাউকে কিছু বলো না আপু।আমি লজ্জায় তাদের সামনে মুখ দেখাতে পারবো না।”

-” আরে পাগলি এটা আবার বলে দিতে হয় নাকি? তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।আমি কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলবো না।”

-” আমি তোমার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। সেদিনের পর থেকে তুলির বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায় রুকু।”

-” রাতে ডিনার শেষ করে রুকু তুলির রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।রাদ রুকু কে রুমে না পেয়ে তুলির রুমে গিয়ে দেখে বিছানায় রুকু শুয়ে রয়েছে। কিন্তু তুলি রুমে নেই।এই সুযোগে রাদ রুকু কে পাঁজা কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুকু নামার জন্য ছটফট করলে রাদ রুকুর কপালে চুমু দিয়ে দেয়। রাদের এহেন কার্যে রুকু যেন জমে বরফ হয়ে যায়।তার মধ্যে এক রাশ লজ্জা এসে ভর করে।যা দেখে রাদ রুকুর হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বললো,

-” আসলে ভালোবাসা কখনো ধর্ম বর্ণ গায়ের রং দেখে হয় না।এই কথাটা উপলব্ধি করতে বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছি আমি। বিশ্বাস করো যেদিন থেকে তোমাকে আমার মনের চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করেছি , সেদিন থেকে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী তুমি। তোমার এই শ্বেতী দাগ তোমার সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।”

-” রুকু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাদ রুকুর ঠোঁটে ‌আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো, হুঁশ আজ কোন কথা হবে শুধু ভালোবাসা বাসি হবে।চলো না রুকু পুরোনো সব ভুলে আমরা নতুন করে সবকিছু শুরু করি।চলো না আমরা একে অন্যের রঙ্গ নিজেদের গায়ে মাখিয়ে নেয়। দুজন দুজনের আপন হয়ে যায়।যতটা আপন হলে কেউ কারো থেকে দূরে যেতে পারবো না।”

-” রুকু প্রতিত্তরে কিছু না বলে লাজুক হেসে রাদের বুকে মুখ লুকালো। এতেই যেন রাদ নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেল।সে রুকু কে নিয়ে এক অজানা সুখের সাগরে পাড়ি জমালো।”

________________________

-” সময় বহমান।সময় তার আপন গতিতে বয়ে চলে।যেন চোখের পলকে’ই দিন থেকে সপ্তাহ , সপ্তাহ থেকে মাস , মাস থেকে বছর পেরিয়ে যায়। ঠিক তেমনি দেখতে দেখতে রুকু রাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল পাঁচটা বছর। রুকু এখন নিজেও একজন ভার্সিটির টিচার।সাথে একজন কন্যা সন্তানের জননী।আজ তাদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী। তাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুরো বাড়ি বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে।যেটা প্রতিবছরই হয়ে থাকে।তুলি রাজ আর তাদের তিন বছরের ছেলে তানজিল ও এসেছে তাদের বিবাহ বার্ষিকী তে। সেদিনের দুর্ঘটনার পর রাজ রাদের কাছে তুলি কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।রাজের প্রস্তাবে কেউ দ্বিমত করে না।মহা ধুমধাম করে তুলি রাজের বিয়ে হয়‌।এখন তারা তাদের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন পার করছে।”

-” রাতে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ইতিমধ্যে মেহমান আসতে শুরু করেছে। রুকু রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে এমন সময় রাদ এসে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে কানের লতিতে চুমু দিয়ে রুকুর হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং পরিয়ে হাতে চুমু দিয়ে বললো,

-” দেখতে দেখতে কিভাবে যে বিবাহিত জীবনের পাঁচ টা বছর কে’টে গেলো টের ও পেলাম না। আজকের এই খুশির দিনে তোমাকে দেওয়ার মতো কোনো উপহার খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ছোট্ট একটা গিফট। পছন্দ হয়েছে তোমার?”

-” রুকু রাদ কে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিশ্বাস করুন আমার ধন দৌলত মণি মুক্তা কিছু চাই না।আপনি শুধু সারাজীবন ভালোবেসে আপনার পরাণে আমার ঠাঁই দিবেন। এতেই আমি অনেক খুশি।”

-” রাদ তৎক্ষণাৎ রুকুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার দিকে এক গুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো, আমি তোমারি প্রেম‌ও ভিখারি, #ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে।

☘️☘️ সমাপ্ত☘️☘️

ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০৪

0

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#পর্ব_০৪

#নুজাইফা_নূন

-” রুকু চোখের পানি মুছে রিমনের কল কেটে দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিলো।আর তখনি কোথা থেকে রাদ এসে রুকুর হাত থেকে ছো মে’রে ফোন কেড়ে নিলো।”

-” এটা কোন ধরনের অ’স’ভ্য’তা ?”

-” অ’স’ভ্য’তার কি দেখলে?”

-” আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলেন কেনো?”

-” নিয়েছি বেশ করেছি।তোমার সাহস হয় কি করে আমার ফোনে হাত দেওয়ার?বাই দ্যা ওয়ে তুমি আমার ফোনের পাসওয়ার্ড জানলে কিভাবে?”

-” মামার গায়ের রঙের মতো অন্য কারো গায়ের রং হলেই সেটা আপনার মামা হয়ে যাবে না মিস্টার।ভালো করে দেখুন এটা আপনার নয় , আমার ফোন। কাকতালীয় ভাবে আমাদের দুজনের ফোন এক‌ই রকম দেখতে। আপনার হাতের টা আমার ফোন।আর আপনার ফোন এতিমের মতো সোফায় পড়ে রয়েছে।”

-” রাদ দেখলো সত্যিই তার ফোন সোফায় পড়ে রয়েছে।সে আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রাদ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রুকু আবারো ও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিলো।এই ফোন টা রুকুর নিজের টাকায় কেনা।রুকু ছোট খাটো একজন লেখিকা।যেটা তার পরিবারের কেউ জানে না। নিজের একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে লেখালেখি কে বেছে নেয় সে। প্রথমে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করলেও এখন আর তার লেখা ফেসবুকে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে সে একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার। তার লেখা গল্প দ্বারা নাটক , শর্টফিল্ম তৈরি হয়।যার দরুন লেখালেখি থেকে মাস শেষে বেশ ভালো টাকা আসে রুকুর।রুকু প্রথমে ভাবে নিজের চিকিৎসার কাজে টাকাগুলো ব্যবহার করবে। পরক্ষণেই তার মনে হয় সে তো নিজে হাতে খেতে পারছে।নিজে পায়ে চলতে পারছে। কিন্তু তার ভাই তো সেসব কাজে অক্ষম।রুকু সব দিক বিবেচনা করে প্রতিমাসে টাকাগুলো খরচা না করে জমিয়ে রাখছে ভাইকে বড় কোনো ডক্টর দেখাবে বলে।রুকু রিমনের সাথে কথা বলা শেষ করে কিচেনে এসে দেখে তমা মির্জা রান্না করছেন।রুকু কি করবে বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করে বললো,

-” আমি কি আপনাকে রান্নার কাজে সাহায্য করবো আন্টি?”

-” রুকুর আন্টি ডাকে তমা মির্জা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি অনেক টা ধমকের সুরে বললেন,কাকে আন্টি বললে তুমি? তুমি নাকি অনেক শিক্ষিত? এই তোমার শিক্ষার নমুনা? ”

-” রুকু ভাবলো তিনি এতো বড়ো বাড়ির মালকিন।তিনি হয়তো তার মতো সামান্য মেয়ের মুখে আন্টি ডাক শুনতে চায়ছেন না। আকাশকুসুম চিন্তা করে রুকু মাথা নিচু করে বললো, সরি ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

-” এই মেয়ে কি সব আবোল তাবোল বকছো? একবার আন্টি একবার ম্যাডাম। ইয়ার্কি করছো আমার সাথে?বরের মা আন্টি , ম্যাডাম হয় এটা কোন ব‌ইয়ের পাতায় লেখা আছে?আর একবার যদি মা বাদে তোমার মুখে আন্টি বা ম্যাডাম ডাক শুনেছি , তাহলে তোমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে ।এই আমি বলে দিলাম।”

-“কথাটা শোনা মাত্রই খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো রুকুর ।সে ভাবতে পারে নি তমা মির্জা এতো তাড়াতাড়ি তাকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবে। রুকু খুশি তে তমা মির্জা কে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি অনেক বড় মনের মানুষ মা।আমি কখনো ভাবিনি আপনি আমার মতো একটা মেয়েকে আপনার পুত্রবধূ হিসেবে গ্ৰহন করবেন। যেখানে আমি এই বাড়ির বউ হবার যোগ্যতায় রাখি না।”

-“থাক হয়েছে! আমার নিয়ে না ভেবে রাদ কে নিয়ে ভাবো। ভুল করে হোক আর যেভাবেই হোক তোমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয় ।এটা রাদ কে তোমার বোঝাতে হবে। তোমাকেই রাদের মনে নিজের জন্য ভালোবাসার সঞ্চার করতে হবে মা।”

-” তমা মির্জার কথা শুনে রুকু মনে মনে বললো, যে মানুষ টা বিয়ের রাতেই বলে দিয়েছে সে আমার মতো শ্বেতী রোগী কে নিয়ে সংসার করতে পারবে না। সেই মানুষটার মনে কি আদৌ আমার জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? আদৌ কি ভালোবেসে তার পরাণে ঠাঁই দিবে আমাকে?”

___________________________________________

-” দেখতে দেখতে রুকু রাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় দুইটা দিন।রাদের ছুটি প্রায় শেষ হয়ে আসছে ।এর মধ্যে আবার রুকুর বাবা বারবার ফোন দিচ্ছেন তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাদ রুকুদের বাড়ি যেতে নারাজ।রাদ যাবে না শুনে রুকুর মন খারাপ হয়ে যায়।সে নিজেও যাবে না বলে রাজন শেখকে জানিয়ে দেয়। তমা মির্জা রুকুর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।তিনি নিজের কাজ ফেলে রাদের রুমে এসে দেখেন রাদ কারো সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।তমা মির্জা কে দেখে রাদ কল কে’টে দিয়ে বললো, কিছু বলবে ?”

-“তুমি একজন শিক্ষক। একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। কিন্তু ইদানিং তুমি যা করছো তাতে মনে হচ্ছে তোমার মধ্যে একজন শিক্ষক হবার কোনো যোগ্যতা নেই। তুমি নিজেই যদি বড়দের সম্মান করতে না জানো।তাহলে বাচ্চাদের কি শিক্ষা দিবে তুমি? তোমার থেকে তোমার ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিক কি শিখবে? রুকুর বাবা অসুস্থ্য অবস্থায় জামাই আদর করবেন বলে হাজার টাকা খরচা করে বাজার করেছেন।তিনি বারবার বলে দিয়েছেন আমি যেন তোমাকে আর রুকু কে সকাল সকাল ঐ বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।তোমরা যাবে বলে আমি তাকে কথা দিয়েছি ।এখন তুমি যদি ঐ বাড়িতে না যাও আমার কথার কোনো দাম থাকবে ?”

-“ঠিক আছে আমি যাবো।তবে আমি সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারবো না।আমি শুধু মাত্র মেয়েটাকে রেখে চলে আসবো।”

-” এটা ভালো দেখায় না বাবা। রুকু এমনিতেই মানুষের কটুক্তির স্বীকার হয়।এরপর যদি তুমি আবার রুকু কে একা রেখে চলে আসো ।তাহলে তারা আরো কথা শোনাবে রুকু কে।”

-” ঠিক আছে আমি তাকে সাথে করেই ফিরবো।”

-” তমা মির্জা রাদের কপালে চুমু দিয়ে বললো এইতো সোনা ছেলে আমার।আমি জানতাম আমার রাদ কখনো আমার কথার অবাধ্য হবে না।রাদ প্রতিত্তরে কিছু না বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রাদ শা‌ওয়ার নিয়ে এসে দেখে তার প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে।রাদ বুঝতে পারে এটা রুকুর কাজ।রাদ মনে মনে বললো মেয়েটা অনেক পরিপাটি।সব কাজ বেশ গুছিয়ে করতে পারে। পরক্ষণেই রুকুর চেহারা তার সামনে ভেসে উঠতেই রাদ সমস্ত জিনিস এলোমেলো করে নিচে ছুড়ে ফেলে দিলো।রুকু তখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তার বান্ধবী সাথীর সাথে প্রাইমারির পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলছিলো।কয়েকমাস আগে রুকু প্রাইমারি তে আবেদন করেছিলো। গতকাল নাকি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।এটা নিয়েই দুই বান্ধবীর মধ্যে কথা হচ্ছিলো। রুমের মধ্যে কিছু পড়ার আ‌ওয়াজ শুনে ফোন কে’টে রুকু রুমে এসে দেখে রাদের জন্য তার গুছিয়ে রাখা জামাকাপড় , ওয়ালেট , ঘড়ি নিচে পড়ে রয়েছে।যা দেখে রুকু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-” এসবের মানে কি রাদ?”

-” বুঝতে পারছো না , নাকি বুঝতে চায়ছো না?আমি তোমাকে বারবার বলার পরেও আমার জিনিসে কেন হাত দিয়েছো তুমি?”

-” আপনার ভালোর জন্যই তো করেছিলাম।”

-” আমার ভালো খারাপ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার চরকায় তেল দাও।”

-” ঠিক আছে বলে রুকু রুম থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম এগোনোর সাথে সাথেই ফ্লোরে পিচ্ছিল জাতীয় কিছুর উপর পা লেগে রুকু ঠাস করে পড়ে গেল।যার দরুন ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো রুকু।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০৩

0

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#পর্ব_০৩

#নুজাইফা_নূন

-“শেষে কিনা একজন শ্বেতী রোগীর সাথে এমন সোনার টুকরো ছেলের বিয়ে দিলেন ভাবি? এইভাবে ছেলেটার জীবন নিজে হাতে শেষ করে দিতে পারলেন ভাবি?আমার বোনের মেয়ে সোনিয়া দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি স্মার্ট।কোটি কোটি টাকার একমাত্র ওয়ারিশ। ভবিষ্যতে সব টাকার মালিক সোনিয়ার জামাই হবে। আপনাকে কতো বার বললাম সোনিয়াকে আপনার বাড়ির পুত্রবধূ করে নিন। কিন্তু আপনি আমাকে পাত্তাই দিলেন না।অথচ এমন মেয়ের সাথেই রাদিয়াতের বিয়ে দিলেন , যে মেয়েকে কখনো রাদিয়াতের ব‌উ হিসেবে কারো সামনে দাঁড় করাতে পারবেন না।এমনটা কেনো করলেন ভাবি? আজ যদি আপনি রাদিয়াতের রাদিয়াতের গর্ভধারণী মা হতেন তাহলে কি রাদিয়াতের সাথে এমন অন্যায় করতে পারতেন?”

-” সকালে তমা মির্জা কিচেনে ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিলেন এমন পাশের ফ্ল্যাটের মিলি ভাবী রাদিয়াতের ব‌উ দেখতে এসে উপরোক্ত কথাগুলো বললেন। কথাগুলো শুনে তমা মির্জার মনে হলো যেন কেউ তার বুকে ছুরি দ্বারা আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। হ্যাঁ সে রাদিয়াত কে নিজের গর্ভে ধারণ করে নি।তাকে দুনিয়ার আনার জন্য প্রসব বেদনা সহ্য করে নি। কিন্তু জন্ম দিলেই যদি মা হ‌ওয়া যেতো তাহলে নর্দমায়, ঝোপ ঝাড়, বনে জঙ্গলে হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুর মৃত দেহ পড়ে থাকতো না।সেসব মা তাদের কে দুনিয়ার আলো দেখার আগেই নিজে হাতে হ’ত্যা করে রাস্তায় রাস্তায় কুকুরের খাদ্য হিসেবে ফেলে রেখে যেতো না।রাদিয়াত যখন ছয় মাসের তখন রাদিয়াতের মা সোহানা মির্জা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা’রা যান। প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েন রাদিয়াতের বাবা রফিকুল মির্জা। এতটুকু বাচ্চা ছেলে মা ছাড়া কিভাবে তাকে একা হাতে বড় করবে ভেবে পান না রফিকুল মির্জা।সকলে তাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি মনে করেন সৎ মায়ের কাছে আমার ছেলে কখনো মায়ের আদর ভালোবাসা পাবে না।তাই তিনি রাদিয়াত কে নিয়ে’ই নিজের অফিসে যাওয়া আসা করতেন। কিন্তু এহেন কার্যে তার উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে যায়।দুই দিক সামলাতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেন তিনি। ব্যাপার টা নোটিশ করেন‌ তার অফিসের কর্মচারী গফুর মিয়া।গফুর মিয়ার বাসা অফিসের পাশেই ছিলো। তিনি রাদিয়াত কে তাদের বাড়ি নিয়ে যান। গফুর মিয়ার মেয়ে তমা রাদিয়াত কে পেয়ে নিজের বুকে টেনে নেন।আর আশ্চর্যজনক ভাবে রাদিয়াত ও তমার বুকে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে পড়ে থাকে। এভাবেই কেটে যায় কিছুদিন। রফিক মির্জা লক্ষ্য করেন তার ছেলে যতোটুকু সময় তমার সাথে থাকে ততক্ষণ সে হাসিখুশি থাকে।এক পর্যায়ে নিজের ছেলের খুশির জন্য রফিক মির্জার তমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া বাড়তে থাকে।এই নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে গফুর মিয়া তার মেয়ে তমাকে বিয়ে করার জন্য রফিক মির্জার কাছে তার আর্জি জানান। গফুর মিয়া রফিক মির্জার অত্যন্ত বিশ্বস্ত একজন লোক।তার পরিবারের সবাই অনেক ভালো।রফিক মির্জা এর আগেও কয়েকবার গিয়েছেন তাদের বাড়ি। গফুর মিয়ার পরিবারের সদস্যদের আন্তরিকতা দেখে তিনি বরাবরই মুগ্ধ হয়েছেন। মানুষ টা অনেক সহজ সরল। অনেক টাকা পয়সা খরচা করে তার একমাত্র মেয়ে তমাকে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের পর তমার স্বামী প্রতিনিয়ত তাকে মেন্টালি , ফিজিক্যালি টর্চার করে। কিছুদিন পর পর তমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় টাকা নিয়ে আসার জন্য। গফুর মিয়া তার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সমাজের কাছে সে হয়ে যায় একজন ডিভোর্সি মেয়ে। বখাটে ছেলেদের কুপ্রস্তাব, নানান লোকের নানান কথা শুনতে হয় তাকে।এসব কথা কানে এসেছে রফিক মির্জার। কিন্তু তার যে করার কিছুই ছিলো না। তিনি অপরাগ ছিলেন। গফুর মিয়া যখন তমাকে বিয়ে করার জন্য তার কাছে প্রস্তাব দেন, তিনি ভেবে দেখেন মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। প্রতিনিয়ত পুড়েছে।সে নিশ্চয় অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারবে।অন্যের ছেলেটাকে নিজের ছেলে হিসাবে গ্ৰহন করতে তার কোনো আপত্তি থাকবে না। তাছাড়া রফিক মির্জা রাদিয়াতের জন্য তমার চোখে ভালোবাসা দেখেছেন ।সব দিক ভেবে রফিক মির্জা আর দ্বিমত করেন না। তিনি তমার সাথে দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।তমা সবসময় রাদিয়াত কে নিজের ছেলে মনে করেন। কক্ষনো রাদিয়াতের কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি। বরং তিনি তুলির থেকে ও রাদিয়াত কে বেশি ভালোবাসে।তার এমন ভালোবাসার জন্য রাদিয়াত কখনো বুঝতে পারে নি তমা তার সৎ মা।রাদিয়াত তমাকে তার নিজের গর্ভধারিনী মা হিসেবে জানে।তাকে সম্মান করে ,ভালোবাসে। কিন্তু রাদিয়াত যখন এই সত্যিটা জানতে পারবে, তখন রাদিয়াত অনেক ভেঙ্গে পড়বে ভাবতেই আতঙ্কে কেঁপে উঠেন তমা মির্জা।তিনি মিলির হাত ধরেন বলেন,

-” জন্ম , মৃত্যু , বিয়ে আল্লাহর হাতে ভাবী। আল্লাহ তায়ালা যার রুজি যেখানে লিখে রাখছে সে কোনো না কোনো মাধ্যমে সেখানে পৌঁছে যায়। আল্লাহ তায়ালা রাদের জন্য রুকু কে হয়তো আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তাছাড়া রুকু অত্যন্ত ভদ্র , শিক্ষিত একটা মেয়ে। শুধু মাত্র শ্বেতী রোগটা’ই ওর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শ্বেতী কোনো ছোঁয়াচে বা প্রাণঘাতী রোগ নয়। সাধারণত শরীরের কোনো বিশেষ স্থানের ত্বকের রং উৎপাদনকারী কোষ বা মেলানোসাইট রোগাক্রান্ত হলে বা সংখ্যায় কমে গেলে অথবা ম’রে গেলে মেলানিন নামক ত্বকের রঞ্জন তৈরি বন্ধ হয়ে যায় এবং ঐ নির্দিষ্ট স্থানে সাদা সাদা দাগ পড়ে।আমাদের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট কোষে থাকে মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করে। মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয় শ্বেতী। শ্বেতী বা ধবল বংশগত কারণে হতে পারে। প্রতি ১০০ জন শ্বেতী রোগীর মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই শ্বেতী হয় বংশগত ধারায়, মাতৃ বা পিতৃকুলের কারও না কারও থেকে জিনের প্রভাবে। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতী সাদা দাগ ছড়াতে থাকে নিজস্ব কারণে, যার মূলে রয়েছে মেলানিনের কারসাজি।বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ শ্বেতীতে আক্রান্ত। প্রয়াত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনও এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাই প্রতিবছর ২৬ জুন তাঁর প্রয়াণ দিবসে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো ডে’ বা বিশ্ব শ্বেতী দিবস হিসেবে।[ সোর্স : গুগল]আমরা আসলে শ্বেতী রোগ নিয়ে নিজেদের মধ্যে অনেক কুসংস্কার পোষন করে রাখি। কিন্তু কুসংস্কার এড়িয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। আমি রুকু কে ভালো ডক্টর দেখাবো ।রুকু একদিন ঠিকই আপনার আমার মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।তবে আপনার কাছে আমার একটাই অনুরোধ আপনি রাদের ব্যাপারে যা জানেন কখনো রাদ কে ওর সত্যিটা বলবেন না প্লিজ ভাবী।আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পাবে।”

-” ঠিক আছে ভাবী ।যদি ও সোনিয়ার জন্য আমার খারাপ লাগছিলো। সোনিয়া রাদ কে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু আমি ও তো একটা মা। আপনার কষ্ট টা আমি বুঝতে পারছি ভাবী।আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন রাদ কে আমি কিছুই বলবো না। হঠাৎ তমার মনে হলো কেউ হয়তো তাদের কথা শুনছিলো।সে একটা ছায়া কে সরে যেতে দেখলো।তমার ধারণা কে সত্যি করে দিয়ে অবয়ব টা একটু দূরে এসে পৌশাচিক হেসে বললো, এটাই তাহলে আসল ঘটনা।এবার জমবে মজা।”
___________________________________

-” রুকু ফজরের নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে নিজের কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছে এমন সময় তার ফোনের স্ক্রিনে রিমন নামটা ভেসে উঠে।রিমন নাম টা দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে রুকুর।রিমন বারো বছর বয়সী হলেও অন্য ছেলেদের তুলনায় সে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠে নি।তার বোধশক্তি ও কম।রুকু ছাড়া কিছু বোঝে না সে।তার গোসল , খাওয়া দাওয়া সবটা করতে হতো রুকুকে।তাকে ছাড়া ছেলেটার পাগলামি নিশ্চয় আরো বেড়ে গিয়েছে ভাবতেই রুকুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।রুকু চোখের পানি মুছে রিমনের কল কেটে দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিলো।আর তখনি কোথা থেকে রাদ এসে রুকুর হাত থেকে ছো মে’রে ফোন কেড়ে নিলো‌।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০২

0

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে

#পর্ব_০২

#নুজাইফা_নূন

-“তুমি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলো মেয়ে। আমার থেকে তুমি দূরত্ব বজায় রাখবে ব্যাস।আমার কোনো জিনিসপত্রে ভুলেও যেনো তোমার টাচ না লাগে। রুকু একথা শোনা মাত্রই রাদের সামনে এসে রাদ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাদ কে জড়িয়ে ধরলো। রুকুর এহেন কার্যে রাদ যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো।সে ভাবতে ও পারে নি একটা মেয়ে প্রথম সাক্ষাতেই তাকে জড়িয়ে ধরবে।না মেয়েটার সাথে আগে কখনো তার কথা হয়েছে।না তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। তবু ও মেয়েটা বিনা বাক্যে তাকে জড়িয়ে ধরলো।হাউ স্ট্রেঞ্জ? রাদ বিরক্ত হয়ে রুকু কে এক ঝটকায় তার নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-” হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে রাদিয়াত মির্জা কে জড়িয়ে ধরার?”

-” এখন তো শুধু মাত্র জড়িয়ে ধরলাম। এরপর যদি আর কখনো আমাকে টাচ করবে না , আমার জিনিসপত্রে হাত দিবে না এটা বলেন তাহলে আপনার গালে ঠাস ঠাস করে চুমু দিয়ে দিবো।আপনি তো আবার অশিক্ষিত লোকেদের মতো কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন।আপনার হিসাব মতে আমি আপনাকে চুমু দেওয়ার ফলে আমার এই শ্বেতী রোগ যখন আপনার হয়ে যাবে তখন বুঝতে পারবেন কতো গমে কতো আটা হয়?”

-” তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো? এই রাদিয়াত মির্জা কে? তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। তুমি কি নিজেকে আমার স্ত্রী ভাবতে শুরু করেছো?ভুলেও এটা করবে না। শুধু মাত্র তোমার বাবার উপর দয়া করে তোমাকে আমি বিয়ে করেছি।নতুবা তোমার মতো মেয়ে আমার পায়ের তলায় থাকার ও যোগ্য না।”

-“বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। মানুষ কে মানুষ ভাবতে শিখুন।আমি সত্যিই আপনার মতো একজন শিক্ষিত , বিচক্ষণ মানুষের থেকে এটা আশা করি নি।জানেন আমার এই শ্বেতী রোগের জন্য কেউ আমার সাথে মিশতো না ।আমার সাথে খেলতো না।সবাই আমাকে এড়িয়ে চলতো। এমনকি স্কুলে গেলে আমার পাশেও কেউ বসতো না।আমি একা একটা বেঞ্চে বসতাম। স্কুল , কলেজে থাকাকালীন আমার কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো না।আমি সবসময় চাইতাম আমার জীবনে এমন কেউ আসুক সে যেনো আমার এই আস্ত আমি টাকে ভালোবাসে , আমার বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়।তমা আন্টির থেকে যখন আপনার কথা শুনেছিলাম এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো আপনি হয়তো সেই ব্যক্তি যাকে আমি আমার মোনাজাতে চেয়েছি।আপনি হয়তো সেই ব্যক্তি যার বুকে মাথা রেখে আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো। আমার সুখ দুঃখ গুলো অকপটে আপনার নিকট তুলে ধরতে পারবো।বড্ড বোকা ছিলাম আমি। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার সবটা জেনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু না ।আমি ভুল ছিলাম। পুরুষ মানুষ আসলে সৌন্দর্যের পূজারী।আপনি ডিভোর্স চেয়েছেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।যতো দ্রুত পারেন ডিভোর্স পেপার রেডি করেন।আমি চোখ বন্ধ করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো। শুধু শুধু একটা মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না।”

-” বোঝার জন্য ধন্যবাদ। অনেক রাত হয়েছে।এখন ভালোই ভালোই আমার রুম থেকে বিদেয় হ‌ও।ঘুমোবো আমি।”

-” আমি কোথায় ঘুমোবো ?”

-“এটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো মেয়ে? আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।”

-” বিয়ে টা আপনার সাথে হয়েছে । আপনার আম্মুর সাথে না। তাছাড়া সমস্যা যেহেতু আপনার সেহেতু সমাধান ও আপনাকেই করতে হবে।”

-” রাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো , বাসায় অনেক মেহমান রয়েছে।কোনো রুম খালি নেই।আজকের মতো ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে থাকো।সকালে আম্মুকে বলে তোমাকে রুমের ব্যবস্থা করে দিবো।”

-” আমি ফ্লোরে শুতে পারবো না । আপনি বরং আজকের মতো ফ্লোরে থাকুন বলে রুকু বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।রাদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দরজায় লা’থি মে’রে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।”

___________________________________

-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি কর্ণপাত হয় রুকুর। মসজিদ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে আসছে (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) অর্থ : ঘুম থেকে নামাজ উত্তম!!আযান শুনে রুকু বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় রাদ কে নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য মসজিদে যেতে বলে। কিন্তু রাদের কোনো ‌সাড়া শব্দ পায় না । রুকু এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে রুমে এসে কোথাও জায়নামাজ পায় না। রুকু বাধ্য হয়ে ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি এনে রাদের মুখের উপর ঢেলে দিলো। মুখের উপর পানির পড়ার সাথে সাথে রাদ ধড়ফড় করে উঠে বসে পড়লো।যা দেখে রুকু খিলখিল করে হেসে উঠলো।রুকুর হাসি দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো রাদ।সে যেনো অন্য এক রুকু কে দেখছে।রুকুর পরণে সুতি একটা থ্রি পিস রয়েছে। মাথায় ঘোমটা টেনে রেখেছে মেয়েটা‌ ।চোখে মুখে পানি মুক্ত দানার মতো চকচক করছে। রুকুর হাসি দেখে রাদের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু রাদের যখনি রুকুর মুখমণ্ডল এর দিকে নজর গেলো তখনি তার মনটা বিষিয়ে উঠলো।রুকুর মুখে , চোখের পাশ দিয়ে ,নাকের দুই পাশে , ঠোঁটের কোণ দিয়ে অসংখ্য শ্বেতীর সাদা সাদা ছোপ রয়েছে।যা তাকে শ্রীহীন করে তুলেছে।এই শ্রীহীন মেয়েটায় তার বিবাহিত স্ত্রী ভাবতেই রাদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।রাদ সোফা ছেড়ে উঠে এসে রুকু কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, তুমি কি আমার হাতে খু’ন হতে চায়ছো?একে তো নিজে সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়েছো। তোমার নাক ডাকার শব্দে আমি সারারাত এপাশ ওপাশ করেছি ।একটু ও ঘুমোতে পারি নি। শেষ রাতে যখন একটু চোখ লেগে এসেছে আর তখনি তুমি আমার মুখের উপর পানি ছুঁড়ে দিলে। তুমি কি ভাবছো এসব করলে আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো?তোমাকে ভালোবেসে পরাণে ঠাঁই দিবো? কক্ষনো না।”

-” রুকু এক হাত দিয়ে নাকে কাপড় চেপে ধরে বললো, ওয়াক থু!কি বিশ্রী গন্ধ রে বাবা। আপনার আমাকে খু’ন করে খু’নী হতে হবে না ভাই।আপনি ব্রাশ না করে আর একবার যদি আমার মুখের সামনে কথা বলেন আমি এমনিতেই আপনার মুখের গন্ধে শহীদ হয়ে যাবো।এরপর প্রেস , মিডিয়া , সাংবাদিকরা খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে মির্জা প্যানেলে ছুটে চলে আসবে। আজকের হেডলাইনে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে প্রফেসর রাদিয়াত মির্জার মুখের গন্ধে তার ওয়াইফ রুকু মির্জা নিহত হয়েছেন।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাবেন আপনি।”

-” স্টপ অল দিস ননসেন্স। অনেকক্ষণ যাবৎ তোমার আজে বাজে কথা সহ্য করছি।আর একটা বাজে কথা যদি বলো তোমাকে আমি … বাকিটা বলতে পারলো না রাদ ।তার আগেই রুকু রাদ কে নিজের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো, আপনার মতো এমন পিচটে পুরুষ জীবনে আর দুইটা দেখি নি। আমার তো মনে হয় আপনি শীতকালে দিনের পর দিন গোসল না করে কাটিয়ে দেন। আপনার এসব অপকর্মের ব্যাপারে যদি আগে থেকে জানতাম বিশ্বাস করেন আমি সারাজীবন কুমারী রুকু থাকতাম ,তবুও আপনাকে বিয়ে করতাম না বলে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেল রুকু। রুকুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রাদ বললো,

-” এই মেয়েকে যতটা অবলা নারী ভেবেছিলাম ততটা অবলা সে নয়। জেনে শুনে খাল কে’টে শুধু কুমির না, কুমিরের চৌদ্দ গুষ্টি তুলে নিয়ে এসেছি। যত্তসব ফালতু মেয়ে। আমার পাটা আমার নোরা আমার ভে’ঙ্গে দিলো দাঁতের গোড়া।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে পর্ব-০১

0

#ভালোবেসে_ঠাঁই_দিও_পরাণে
#সূচনা_পর্ব
#নুজাইফা_নূন

-” আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।একটা শ্বেতী রোগীর সাথে আমার পক্ষে সংসার করা সম্ভব নয়। ভার্সিটির সবাই যখন জানতে পারবে রাদিয়াত মির্জার ওয়াইফ একজন শ্বেতী রোগী আমার তো লজ্জায় মাথা কা’টা যাবে।আমি চাইলেও তোমাকে আমার কলিগদের সামনে দাঁড় করাতে পারবো না। একজন টিচার হিসেবে সবাই আমাকে যে সম্মানটুকু দেয় , আমি চাই না তোমার জন্য আমার সেই সম্মানটুকু ধুলোয় মিশে যাক।তাই আমি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।যদিও ডিভোর্সের জন্য কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে। যতোদিন না আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে ততোদিন তোমার আর আমার রাস্তা আলাদা। তুমি তোমার মতো থাকবে ।আর আমি আমার মতো।তবে তোমার কোনো টেনশন নেই। ডিভোর্সের পর তোমাকে তোমার প্রাপ্য টাকার অধিক টাকা দিয়ে দিবো আমি। এই টাকার জন্যই তো আমাকে ঠকিয়ে তোমার বাবা মা তোমাকে এই মির্জা পরিবারের ব‌উ বানিয়ে পাঠিয়েছে তাই না?একে তো তুমি শ্বেতী রোগী , আবার বয়স পঁচিশের কোঠায়।তোমার বাবা শত চেষ্টা করেও তোমাকে বিয়ে দিতে পারছিলো না।তাই তো তারা আমার সাথে ছলনা করে তোমার মতো বুড়ি , শ্বেতী রোগীকে হ্যান্ডসাম টিচারের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে তাদের আপদ বিদায় করেছে।হয়তো তুমি ও এটাই চেয়েছিলে।আফটার অল মির্জা বাড়ির বউ বলে কথা।তোমার তো খুশিতে আটখানা হয়ে যাওয়া উচিত।যতো পারো খুশি হয়ে নাও। কিন্তু তোমার সেই খুশি বেশি দিন স্থায়ী হবে না। খুব শ্রীঘ্রই ডিভোর্সে পেপার চলে আসবে।”

-” বাসর রাতে বরের মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে একটু ও অবাক হয় নি রুকু।যেনো এটাই হ‌বার ছিলো।সে খুব ভালো করে জানে তার মতো শ্বেতী রোগীকে কোন পুরুষ’ই ভালোবেসে পরাণে ঠাঁই দিবে না।রুকু চোখের পানি মুছে মাথায় থাকা ঘোমটা সরিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষ কে দেখে যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।বিয়ের আগে মানুষ টা কে দেখার সৌভাগ্য হয় নি তার। শুধু জানতো মির্জা পরিবার থেকে তাদের একমাত্র ছেলে রাদিয়াত মির্জার সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ‌।সবাই ভালোবেসে তাকে রাদ বলে ডাকে। যে কিনা পেশায় একজন টিচার। এমন বড় পরিবার থেকে রুকুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে শুনে রুকু যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারে না।সে দেখতে কালো বা খাঁটো এমনটা না। বরং তার দুধে আলতা গায়ের রং, ডাগর ডাগর মায়াবী চোখ , হাঁটু পর্যন্ত ঢেউ খেলা চুল,উচ্চতায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির হালকা পাতলা গড়নের মিষ্টি একটা মেয়ে। কিন্তু শ্বেতী রোগ টার কারণে যেন তার সব সৌন্দর্য চাঁপা পড়ে গিয়েছে।রুকু মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার বাবা রাজন শেখ একজন প্রাইমারির টিচার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।এর মধ্যে আবার তার একমাত্র ছেলে রিমন মানসিক ভারসাম্যহীন।তার বেতনের অর্ধেক টাকা প্রায় রিমনের চিকিৎসার পেছনে চলে যায়। তার সাধ্যে কুলায় নি রুকুর শ্বেতী রোগের জন্য ভালো কোনো চিকিৎসা দেওয়ার। অবশ্য দু একটা হাতুড়ে ডক্টর দেখিয়েছে ।তারা ঔষধ, মলম দিয়েছে। যেগুলো তে রুকুর কোনো পরিবর্তন হয় নি।এক পর্যায়ে রুকু হাল ছেড়ে দিয়ে তার শ্বেতী রোগের জন্য আর কোনো চিকিৎসা নেয় নি।তার এই রোগের জন্য সমাজের লোকেদের নানান কথা শুনতে হয়।সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। তবুও রুকু থেমে থাকে নি। আশেপাশের মানুষের মন্দ কথা উপেক্ষা করে গ্ৰাজুয়েশন শেষ করে।যতো দিন যায় রুকুর বাবা মায়ের রুকু কে নিয়ে টেনশন ততো বাড়ে।রুকুর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়ে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে অথচ রুকুর জন্য ভালো কোনো ছেলের থেকে প্রস্তাব আসে না।যারা আসে তারা রুকু শ্বেতী রোগী দেখে তাদের বাড়ি থেকে পানি টুকু ও মুখে না দিয়ে চলে যায়। কতোবার যে রুকু পাত্রপক্ষের থেকে রিজেক্ট হয়েছে সে হিসেব নেই।রুকুর বাবা মা তার দুই ছেলেমেয়ে কে অনেক বেশি ভালোবেসেন।তারা সিদ্ধান্ত নেন তারা আর কখনো রুকু কে পাত্রপক্ষের সামনে এনে নিজের মেয়েকে অপমানিত করবেন না।প্রয়োজনে রুকু কে তারা সারাজীবন নিজেদের কাছে রেখে দিবেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঠিক দু’দিন পরে রাদিয়াতের মা তমা মির্জা বোন তুলি মির্জা রুকুদের বাড়ি এসে রুকুর বিয়ের প্রস্তাব দেন।এতো বড় বাড়ি থেকে রুকুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে শুনে রুকুর মা লিমা বেগমের খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠে।তিনি তাদের আদর আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখেন না।রুকু কেও সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে তাদের সামনে নিয়ে আসা হয়।তমা মির্জা রুকু কে দেখে যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই তিনি ভাবেন তার ছেলে পছন্দ করেছে বলে কথা।যে ছেলে এতো গুলো বছর বিয়ে করতে রাজি হয় নি , সেই ছেলে স্বেচ্ছায় এই মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছে ভেবে তিনি আর দ্বিমত করেন নি।রুকু কে আংটি ,বালা পরিয়ে বিয়ের দিন পাকা করে আসেন।রাতে তমা মির্জা রাদের রুমে গিয়ে দেখেন রাদ ল্যাপটপে কাজ করছে।তিনি এগিয়ে গিয়ে রাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

-” এখনো সময় আছে রাদ। তুমি ভেবে দেখতে পারো‌।বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়।এটা সারাজীবনের ব্যাপার।”

-” এমনভাবে বলছো কেনো আম্মু? মেয়ে দেখে তোমাদের কি পছন্দ হয় নি?”

-” সংসার তুমি করবে রাদ। তোমার পছন্দ’ই আমার পছন্দ। তবু ও আমার মনে হচ্ছে মেয়েটার সাথে তোমার ফেস টু ফেস কথা বলা উচিত।একে অপরকে জানা উচিত।”

-” না না আম্মু। তার কোনো প্রয়োজন নেই।তার সাথে যতো কথা সব বাসরঘরে হবে।”

-“ঠিক আছে। তোমার যখন কোনো আপত্তি নেই, তাহলে আমার আর বলার কিছু নেই বলে তমা মির্জা নিজের রুমে চলে আসেন।”

-“দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে।সব কিছু ঠিকঠাক মতো চলছিলো কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন রাদ রুকুর ছবি দেখে।তুলি মজা করে রুকুর সাথে সেলফি তুলে সেটা রাদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয়।ছবিটা দেখা মাত্র রাদ এর বুঝতে বাকি রইলো না সে যে মেয়েকে পছন্দ করেছিলো এই মেয়ে সেই মেয়ে নয়। মূহুর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়িতে এক প্রকার হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে যায়।রাদ বিয়ের আসর ছেড়ে চলে আসে।রুকুর টেনশনে রাজন শেখ হার্ট অ্যাটাক করেন।এসব দেখে তমা মির্জা স্থির থাকতে পারেন না। তিনি রাদ কে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রুকুর সাথে বিয়ে সম্পন্ন করেন।রুকু জানতো আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে স্বামীর সংসার করতে পারবে না সে।তাই তো বাসর ঘরে ডিভোর্স এর কথা শুনে একটু ও ঘাবড়ে যায় নি সে। রুকু কে এতো গুলো কথা বলার পরেও রুকু বিছানা থেকে না নেমে ঠাঁই সেখানেই বসে থাকে ।যা দেখে বিরক্তি নিয়ে রাদ রুকুর সামনে গিয়ে বললো,

-” এই মেয়ে কি জানি নাম তোমার ? রুকাইয়া না কি জানি একটা।যাই হোক তোমার সাহস হয় কি করে আমার বিছানায় বসে থাকার।নামো এক্ষুনি আমার বিছানা থেকে।তোমাকে আমার আশেপাশে ও যেনো না দেখি। তোমার এই রোগ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার খুব ইচ্ছে তোমার তাই না?”

-” আপনি নাকি পেশায় একজন টিচার? টিচার কি আদৌ পড়াশোনা করে হয়েছেন ? না মানে আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও অশিক্ষিত লোকের মতো কথা বলছেন। আপনি ও এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করেন?আপনি বোধহয় জানেন না শ্বেতী রোগ কোনো ছোঁয়াচে বা প্রাণঘাতী রোগ নয়।”

-” তোমার থেকে কোনো জ্ঞান নিতে চাইছি না আমি। বেশি কথা না বলে চুপচাপ আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও।”

-” আপনার মতো নিচু মানসিকতার লোকের সাথে থাকার কোনো ইচ্ছাও আমার নেই।যে লোক সামান্য একটা মেয়েকে সম্মান দিতে জানে না সে নাকি আবার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা আপনার থেকে ঠিক কি শিখবে মিস্টার রাদিয়াত মির্জা ?”

-” তুমি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলো মেয়ে।আমার থেকে তুমি দূরত্ব বজায় রাখবে ব্যাস।আমার কোনো জিনিসপত্রে ভুলেও যেনো তোমার টাচ না লাগে।রুকু একথা শোনা মাত্রই রাদের সামনে এসে রাদ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাদ কে জড়িয়ে ধরলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।

প্রেম পুকুর পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#প্রেম_পুকুর
[১৪] শেষ পর্ব
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

ভালোবাসায় মোড়ানো দিন গুলো খুব দ্রুত চলে যায় বিপরীতে দুঃখে মোড়ানো সময় গুলো যেতে চায়না একদিনকে মনে হয় হাজার দিনের চেয়েও বড়।
আসালে এগুলো সব কিন্তু আমাদের চিন্তা ভাবনারই ফসল।

সাফোয়ান, শিমু, আয়ান, অনিকা সবার জিবনে পরিবর্তন এসেছে। সবাই এখন যার যার জিবনে নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত।

সেদিন আয়ানের জেদের কাছে হারমেনে আলতাফ আর লায়লা বেগম বাধ্য হয়েছিলেন তাকে একমাসের মধ্যে বিয়ে দিতে।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আয়ান পাত্রীর মুখটা অবদি দেখে ছিলোনা। যখন জানতে পারলো মেয়েটা তোহা তখন তার কাছে কোনো উপায় ছিলোনা।
যে মেয়েটার সাথে আয়ানের সম্পর্ক ঝগড়াটে শালিকের ন্যায় সেই মেয়েটার সাথে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় নিজের অজান্তেই।
সারাদিন দুজনের মাঝে টোকাটুকি লেগেই থাকে যদিও তারা বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে বিয়ের পরপরই।
কিন্তু অভিযোগ গুলো ফোন দিলেই শুনতে পারা যায়।
আর অনিকা এখন ছ’মাস এর প্রেগনেন্ট। আমান তাকে সর্বদা আগলে আগলে রাখে। কোন রকম কাজই তাকে করতে দেয়না। আমানের বাবা সিরাজুল সাহেব ছেলের বউয়ের জন্য এক কথায় পাগল বলা চলে। আমানের মায়ের মেয়ে না থাকায় একটা মেয়ে পেয়ে সে যেন ভীষণ খুশি ।

পরিবর্তন এসেছে সাফোয়ান আর শিমুর জিবনেও তারা আজকে প্রথম বারের মতো বাবা মা হতে যাচ্ছে।
সাফোয়ান ওটি রুমের সামনে পায়চারী করছে। লায়লা বেগম আল্লাহর কাছে ধোয়া করছেন।
শিমুর বাবা তার দুই মেয়েকে নিয়ে এককোণে দাড়িয়ে আছে শুকনো মুখ করে।
আলতাফ পূর্বের মতো মুখ গম্ভীর করে দাড়িয়ে আছেন।কি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি সময় যেন গড়ায় না প্রতি সেকেন্ড কে মনে কয়েক ঘন্ঠার সমান।
এমন অভিজ্ঞতা হয়তো সকল হবু বাবারই হয়।

প্রায় চল্লিশ মিনিট পর একজন নার্স ওটি থেকে বেড়িয়ে আসে। তার হাতে সদ্যজন্মানো এক পুত্র সন্তান। যার কান্নার শব্দে নিরাবতা ভেঙে গেছে কিছুক্ষন পূর্বেই।
যেন এই ছোট শিশু নিজের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে সকলের মাঝে।
বাচ্চার কান্নার শব্দ পেয়ে সাফোয়ান নার্সের দিকে দৌরে গেল।
নার্স নিজের কোলে থাকা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাকে সাফোয়ানের কোলে তুলে দিলেন।
লায়লা বেগম দৌরে এলেন নিজের নাতির কাছে।
সাফোয়ানের পিতৃসত্তা আন্দোলিত হলো। এক বিন্দু সুখ যেন পুরো শরীর গ্রাস করে নিলো। আহ! কি আনন্দ সেটা কখোনোই বোঝানো সম্ভব নয়।
লায়লা বেগম নিজের নাতি কে কোলে নিয়ে বললেন আলহামদুলিল্লাহ।
অনিকা আর রাজিয়া বেগম নিজেদের শারীরিক
অসুস্থতার কারনে হসপিটালে উপস্থিত নেই তুবুও তারা বার বার ফোন কল করছে আলতাফ নিজে তাদের কে সুখবর দিলেন। তার গম্ভীর মুখে হাসি ছড়িয়ে পরল।দৌরে গেলেন নিজের নাতি কে দেখতে। ফিহা রিহাও বাদ গেলেনা।

সাফোয়ান নার্স কে উদ্দেশ্য করে বলল,”সিস্টার আমার স্ত্রী কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ আপনার স্ত্রীও অনেক ভালো আছেন।”
“আমি ওর সাথে কখন দেখা করতে পারবো?”

“আর কিছুক্ষন পরেই। ”

সাফোয়ানের সত্তা শান্ত হলো। আনন্দিত হলো এই ভেবে তার স্ত্রী সন্তান উভয়ই সুস্থ আছে।
_________
বেশ কিছুক্ষন পরে সাফোয়ানকে শিমুর কাছে যেতে দেওয়া হলো।শিমু চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। এক হাতে স্যালাইন চলছে।
ধীরে পায়ে হেটে সাফোয়ান শিমুর পাশে বসল।
শিমুর একহাত নিজের দুই হাতের মাঝে পুরে নিলো।

“কেমন লাগছে এখন তোমার?”

শিমু স্বামীর কণ্ঠ পেয়ে চোখ খুলে তাকালে।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল,”বাবু কে দেখেছেন।”

সাফোয়ান উপর নিচ মাথা নারালো।
“জানো একদম তোমার হতো হয়েছে দেখতে।”

শিমু ঠোঁঠের কোণের হাসি আরো প্রশস্ত হলো।

একজন নার্স ওদের বাচ্চাকে নিয়ে এসে সাফোয়ানের কোলে দিলো। শিমু স্বামী আর বাচ্চকে দেখে খুশিতে দুইচোখ বন্ধ করে নিলো।তার জিবনের সর্বোত্তম পাওয়া হয়তো এটা। ওর আজ নিজেকে পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে।
ওর মতো সাধারন মেয়ে যে এত কিছু পেয়ে যাবে সেটা ও কল্পনাও করতে পারেনি।
________________

শিমুকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে এক মাস হলো।ও এখন সম্পূর্ন সুস্থ।
ওর সমস্ত খেয়াল লায়লা এবং রাজিয়া বেগম রাখে।রাজিয়া বেগম এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলতে গেলে শিমুর অমায়িক ব্যাবহার তাকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।
গুরুগম্ভীর আলতাফ সাহেবও এখন বেশ হাসি খুশি থাকে নাতিকে নিয়ে।
আয়ান আর তোহাও এসেছে ছোট সাদমান কে দেখতে।
তোহার কোলে ছোট সাদ চোখ বন্ধ করে আছে।
তোহা আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,”দেখো আমারো কিন্তু খুব দ্রুত একটা পুচকি চাই।”

“নিজেই নিজেকে সামলাতে পারেনা সে আবার পুচকা পুচকি সামলাবে।”

কথাটা মোটেও পছন্দ হলো না তোহার। রাগ করে সাদমান কে শিমুর কোলে দিয়ে গটগট করে নিজের কক্ষে চলে গেলো।

শিমু আয়ানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই আয়ানও তোহার পিছনে হাটা দিলো।
তাদের এই কাণ্ড দেখে লায়লা বেগম হাসতে হাসতে ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন।
“যাই বল বউমা আয়ানের জন্য কিন্তু তোহা একেবারে পারফেক্ট। ”
“জ্বী আম্মা পারফেক্ট ম্যাচ। ”

________

আয়ান গিয়ে তোহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
“এত রাগ কর কেন কথায় কথায়?”
“তুমি তো সব আজে বাজে কথা বলে রাগিয়ে দাও।”

“ওকে,আর রাগাবোনা আমাদের এক ডজন বাচ্চা হবে এবার খুশিতো।”

“কিন্তু এত বাচ্চা দিয়ে কি করবো।”

“ফুটবল টিম বানাবো। ”

তোহা পিছন দিকে ঘুরে আয়ান নাক টিপে দিল।

“ওক্কে।”

__________

শিমুকে দেখে রাখার জন্য বাবুকে টেক কেয়ার করার জন্য সাফোয়ান শিমুকে বাড়িতেই রেখে গেছে।
বাড়িতে এসেই পুত্রকে নিয়ে এইযে মড়িয়া হয়ে উঠেছে দিন দুনিয়া সব ভুলে বসেছে একদম।
শিমু কয়েকবার ডেকে গেছে খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু সাফোয়ানের কোন পাত্তা নেই।
তাই আর না পেরে খাবার বেড়ে একেবারে নিজেদের ঘরে নিয়ে এসেছে।
“এই যে সাহেব খেতে তো হবে নাকি। আপনি নিজেও খাচ্ছেননা আমার ছেলেকেও খেতে দিচ্ছেন না।”

“খাওয়া দাওয়া সব পরে হবে।”

শিমু আর সাফোয়ানের সাথে তর্কে জড়ায় না এক প্লেট ভাত মেখে নিয়ে সাফোয়ানের কাছে যায়।
এক লোকমা ভাত সাফোয়ানের সামনে ধরে।

“আসার পরে কিছুই খাওয়া হয়নি আপনার তাই কোন দ্বিরক্তি না করে এগুলো মুখে পুরুন চটপট।”

সাফোয়ান আর মানা করেনা। কিন্তু বউয়ের সাথে দুষ্টুমি করতে ছাড়েনা।
শিমু বিরক্ত হয়ে বলল,”এক বাচ্চার বাবা হয়ে গেলেন তবুও দুষ্টুমি গেলোনা।”

“আরেক বাচ্চার বাবা হওয়ার প্লান করছি কি বলো আব্বু।”
সাফোয়ান নিজের ছেলেকে কথা টা বলে শিমুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে।

“আপনার লজ্জা জিবনেও হবেনা হয়।”

“স্ত্রীর কাছে লজ্জা পেলেতো সন্ন্যাসী হতে হবে।”

শিমু সাফোয়ানকে আলতো চাপর মেরে সাফোয়ানের কাধে মাথা রাখল।
“আমি আপনার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই সাফোয়ান।আপনাকে ভালোবেসে আপনার প্রেমপুকুরে ডুবে যেতে চাই। শুধু এতটুকু পেলে আমার কিছুই চাইনা।”

“আমি তোমার প্রেম পুকুরে ডুবে নিজের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছি এমন সংকটে আমি বার বার পড়তে চাই।তোমার প্রেমের পুকুরে আমি এক সাধারন মাঝি হয়ে বাচঁতে চাই।
আমি তোমাকে ভালোবেসে জান্নাতে যেতে চাই।”

“আমিও আপনাকে এপার ওপারে দুপারেই পেতে চাই।”
ওদের কথার মাঝে সাদমান জোড়ে কেদে উঠে।
দুজনেই নিজেদের হুশে ফিরে আসে।
দুজনে মুচকি হেসে আগলে নেয় নিজেদের ছেলেকে।এটাই যে তাদের ভালোবাসজর সর্বোত্তম চিহ্ন।

সমাপ্ত

প্রেম পুকুর পর্ব-১৩

0

#প্রেম_পুকুর
[১৩] বোনাস পার্ট❤️
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

ফুলে ফুলে সাজিয়ে রাখা ঘরে বসে আছে অনিকা। কখনো পরিবারের কথা মনে পরে চোখ
ভেসে যাচ্ছে আবার কখনো অজানা শিহরণে বুক কেপে উঠছে কেমন সব ছন্ন ছাড়া অনুভুতি তাকে আবদ্ধ করে নিচ্ছে।

আমান কক্ষে প্রবেশ করে অনিকাকে সালাম দিলো। অনিকা আমানের কণ্ঠ পেয়ে কিছুটা বিচলিত হলো কিন্তু পর মুহুর্তে সেও সালামের জবাব দিলো।

আমান সপ্তপর্ণে নিজ স্ত্রীর পাশে গিয়ে বসলো।
চিবুক উঁচু করে ধরল নিজের সামনে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে অনিকা মাথা নিচু করে নিলো।
আমান নিজের স্ত্রীর লজ্জা দেখে খুশি হলো।
নিজ পকেট থেকে একটা ফিঙ্গার রিং বের করে স্ত্রীকে পড়িয়ে দিল। স্ত্রীর হাতে চুমু খেতে ভুললো না। লজ্জায় অনিকা নিজেকে আরো বেশি গুটিয়ে নিলো।

আমান মুচকি হাসি দিয়ে বলল,”জনাবা আপনি আমার জন্য কি উপহার এনেছেন।”

অনিকা নিজের জিভে কামড় বসালো অতিরিক্ত লজ্জার কারনে সে সব ভুলে গেছে।

লেহেঙ্গা গুটিয়ে নিজের লাগেজের দিকে এগুলো।আমান চুপচাপ স্ত্রী কান্ড দেখতে লাগলো।অনিকা নিজের লাগেল খুলে একটা বাক্র বের করে আমানের হাতে দিলো।

“যদিও এটা তোমার উপহারের মতো দামী নয় কিন্তু আমি আমার সাধ্য মত তোমায় এটা দিয়েছি।”

আমান বাক্র খুলে দেখলো একটা ব্রান্ডের ঘড়ি।
“আমি কিন্তু তোমার কে নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়ছি তাই তুমিও,,,

অনিকা আমানের হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিলো।

“তোমার নিশ্চই ভারী পোশাকে কষ্ঠ হচ্ছে তুমি এই পোশাক গুলো পরিবর্তন করে এসো। আমার কাছে তুমি না সাজলেও অপরূপা।”

অনিকা স্বামীর কথা শুনের নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিলে প্রতিটা স্ত্রী চায় তার প্রিয় পুরুষের থেকে এই বাক্য গুলো শুনতে।
আমান নিজে অনিকার লাগেজ থেকে নিজের পছন্দ মতো ড্রেস অনিকার হাতে তুলে দেয়।অনিকা সেই জামা নিয়ে ওয়াস রুমে চলে চায় দীর্ঘক্ষন শাওয়ার শেষে অনিকা বের হয়ে আসে।

তার ছোট ছোট ঘাড় পর্যন্ত কেশ ছেড়ে দেয় যেগুলো থেকে টপটপ করে পানির ফোটা পড়ছে।
অনিকা ধীর পায়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসে। তোয়ালে দিয়ে নিজের চুল মুছতে থাকে।আমান অনিকার পাশে গিয়ে অনিকাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
“তুমি একজন হার্ট সার্জনের হার্ট কে কোমায় পাঠিয়ে দিয়েছো। এখন একে তোমারই ঠিক করতে হবে।”

আমান হুট করে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলো প্রেয়সীকে।
এই আলিঙ্গন সেই উষ্ণ যে আলিঙ্গনে কোনো পাপ নেই। আছে শুধু আল্লহর সন্তুষ্টি আর সাওয়ার।

__________________

অনিকার বিয়ে কেটে যাওয়ার পরে কেটে গেছে গোটা বিশ দিন। আয়ান বেচারা তার ওয়াদা রক্ষা করার জন্য মড়িয়া হয়ে উঠেছে।
মাকে সে সাফ সাফ জানি দিয়েছে,”আম্মাজান আমি কালো, নুলা, কানা কিচ্ছু নই। আপনি আমাকে দ্রুত দশ দিনের ভিতরে বিবাহ দিবেন। নাহলে আমি সন্ন্যাস নিবো। ”

ছেলের করা থ্রেটে লায়লা বেগম হতভম্ব। তিনি জানেন তার ছোট ছেলে ভীষণ ঠোঁঠ কাটা কিন্তু তার পাশাপাশি নাক কাটাও।
খুব শিঘ্রই আয়ানকে ফিরতেও হবে। দেশে এসেছে গোটা ছয়মাস হলো। আর দু একমাস হয়তো ও আছে। ছেলে তাকে এও জানিয়ে দিয়েছে মেয়েকে সে দেখতেও চায়না। লায়লা বেগম যেমন পাত্রী পাক না কেন হোক সে সমস্যাময়ী তবুও সে বিয়ে করবেই।
অতঃপর সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগে তিনি এই ব্যপারে আলতাফকে জানালেন।
আলতাফ চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন আগামী দশ দিনের মাঝেই ছেলেকে সে বিয়ে দিবেন। তাই আর দেড়ি না করে তার ছোট বোনকে ফোন দিলেন। ছেলের এ পাগলামো থামাতে তার ছোট বোনের সাথে কথা বলাটা ভীষণ প্রয়োজন।
___________

শিমুকে সাফোয়ান একটি লাল শাড়ি উপহার দিয়ে বলেছে এটা পড়ে আজ রাতে তার জন্য তৌরি থাকতে।সাফোয়ানের ইশারা শিমু ঠিকই বুজতে পেরেছে।

শাড়িটা একদম ফিনফিনে পাতলা। পরলে শরীরে অনেক অংশ দৃশ্যমান হবে।যদি ও শিমুর কাছে সাফোয়ানের এটা দ্বীতিয় আবদার।আজও প্রথম দিনের কথা মনে পরলে তার শরীর ক্ষনে ক্ষনে শিউরে ওঠে।লজ্জায় আড়ষ্ঠ হয় যায় ওর সমস্ত শরীর। সাফোয়ান ওর লজ্জা দেখে নাকের মাথায় কামড় দিয়ে বলে,”বলোতো বউ তোমার লজ্জা আমি কবে ভাঙতে পারব”।সেই কথা শুনে শিমু আরো বেশি লজ্জায় নুইয়ে যায়।

রাজিয়া বেগমের সাথে তার সম্পর্কটা এখন স্বাভাবিক। সাধারন দাদী শাশুড়িরদের সাথে নাতী বউয়ের সম্পর্ক যেমন হয়। মাঝে মধ্যই সে জিগ্যেস করে নতুন অতিথি আসবে কবে।

দুঃখ গুলো শিমুর এখোন কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে প্রত্যাকের ভালোবাসা পেয়ে এখন তার নিজেকে ভীষণ সুখি মনে হয়।
শিমু একটা জিনিস গভীর ভাবে অনুভব করছে। পৃথিবীতে একটি মেয়েকে তার স্বামী যদি তাকে প্রকৃত ভালো বাসে তাহলে কোন দুঃখই সেই মেয়েটাকে স্পর্শ করতে পারেনা।

_______
রাত নেমে গেছে আকাশ জুড়ে। সাফোয়ানের পছন্দ মতো শিমু নিজেকে সাজিয়েছে। চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে পুরো পিঠ জুড়ে।

সাফোয়ান আর শিমু দাড়িয়ে আছে বেলকোনিতে । সাফোয়ান অতি সপ্তপর্ণে নিজ স্ত্রীর কোমড়ে হাত রাখলো। শিমুর কাছে যদিও এটা প্রথম বার নয় কিন্তু তবুও তার শরীর শিউরে উঠল।

সাফোয়ান আর শিমু চাদের আলোয়া দাড়িয়ে কিছুক্ষন চন্দ্র বিলাস করল।

সাফোয়ান অবশেষে পেরেছে তার প্রেয়সীকে প্রেম পুকুরে ডুবিয়ে মাতাল করে দিতে। অভিমানী প্রেয়সীর অভিমান ভেঙে দিয়ে আপন করে নিতে আজ শিমুর মনে সাফোয়ানের জন্য কোন অভিযোগ নেই আছে শুধু এক বুক ভালোবাসা।
শিমুকে কোলে নিয়ে সাফোয়ান নিজের কক্ষের উদ্দেশ্য রওনা হলো। নিজের অর্ধভাগ কে আবার ও পবিত্র ছোয়ায় রাঙিয়ে দেবার জন্য।

ভালোবাসাময় এই রাতের সাক্ষী হলো আকাশের রঙিন তারারা।চারিদিকে মৃদু হাওয়া এক জোড়া চুড়ুই পাখিকে আরো মাতাল করে দিলো।

এই পবিত্র ভালোবাসা সত্যি সুন্দর।

চলবে,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-১২

0

#প্রেম_পুকুর
[১২]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

সুদর্শন দুই পুরুষের মাঝে বসে আছে এক সুশ্রী রমণী। খুশিতে তার দু’চোখ চকচক করছে। প্রিয় পুরুষকে পারিবারিক সম্মতিতে কজনই বা নিজের করে পায়।
হলুদ শাড়ি পরিহিতা রমণীর রূপ যেন ঝলমল করছে।
দু’ভাইয়ের হৃতপিণ্ড প্রিয় বোনের আনন্দে পুলকিত হচ্ছে।

__________

সারাদিনের ধকলে শিমু ভিষণ ক্লান্ত শরীর আর তার সায় দিচ্ছেনা। পরনের শাড়ি এলোমেলো হয়েগেছে। এখোন ওর একবার শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন।
শিমু দ্রুত নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
সাফোয়ান ও ক্লান্ত হয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করল।
কিন্তু ঘরে নিজের স্ত্রী কে না দেখতে পেয়ে হতাশ হলো।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর শাওয়ার শেষে শিমু বের হলো। পরনে ডিলেডাল সাদা রঙের কামিজ।
সাফোয়ান শিমু কে দেখে মুখ একটু গোমড়া করে বলল,”আমরা চাইলে কিন্তু একসাথে শাওয়ার নিতে পারতাম।”

মুহুর্তেই শিমুর লজ্জায় কান গরম হয়ে গেল।

কাছে এসে সাফোয়ানের সামনে কোমড়ে হাত রেখে দারালো,”আপনি কিন্তু দিনদিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছেন।”
সাফোয়ান শিমু কোমড়ে রাখা হাত টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।দু হাত গলিয়ে কোমড়ে হাত রাখল।ঘাড়ে নাক ঘষতে লাগল।

শিমু ছোটার চেষ্টা করতে চাইলে সাফোয়ান শিমুর কানের লতিতে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিল।শিমু লজ্জায় লাল নিল হলো বারবার।
অতঃপর সাফোয়ানের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শিমু সাফোয়ানের হাতে চিমটি কেটে দেয়।
সাফোয়ান আহ শব্দ করে শিমু কে ছেড়ে দেয়।

শিমু খলখলিয়ে হেসে উঠে।
সাফোয়ান শিমুর হাতের দিকে লক্ষ্য করে দেখে শিমুর হাতে মেহেদী লাগিয়েছে।
সাফোয়ান শিমুর দিকে এগুতে চাইলে শিমু সাফোয়ানের দিকে বালিশ ছুড়ে মারে।

“আর এগোবেন না আমি ক্লান্ত আমার ঘুম প্রয়োজন। ”
সাফোয়ান শিমু কে উদ্দেশ্য করে চোখ টিপ দেয়। মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলল,এ কয়দিন দুরে থাকো সমস্যা নেই আর পাঁচ দিন তার পর তোমার এই পালাই পালাই লজ্জা সব ভেঙে দিবো প্রমিজ।”

সাফোয়ান ওর জামার দিকেইশারা করে শিস বাজাতে বাজাতে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
শিমু জামার পিছনে দিকে তাকাতেই লাল রঙ দেখতে পেল।
দ্রুত ক্যালেন্ডারে তারিখ লক্ষ্য করে ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না সাফোয়ান ওকে কি ইশারা করেছে।

শিমু বিছানায় বসে লজ্জায় মুখ ডেকে ফেলল। ওর লজ্জা ভীষণ লাগছে।লজ্জায় ও আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে বারবার।সাফোয়ান ওকে লজ্জায় ফেলার কোন কারন ছাড়ছেনা।

____________

একটি মিষ্টি সকাল, নতুন একজোড়া কবুতরের মিলনের জন্য সেজে উঠেছে পুরো বাড়ি। সকাল থেকে বিয়ে বাড়ি হৈহুল্লরে মুখরিত।
অনিকা বার বার আয়নায় নিজেকে দেখছে আর লজ্জায় লাল নিল হচ্ছে। শরীরে হলুদ আভা ছড়িয়ে আছে।
জুমার নামাজের পড়ে সে তার প্রণয় কুমারের হবে ভাবতেই অন্তর শিহরিত হচ্ছে বারেবার।
নিজের মানুষটাকে আপন করে পাবার আনন্দ কতক্ষানি অনিকা সেটা বারবার অনুভব করছে।
আনন্দ দুষ্টু মিষ্টি লজ্জা ওর শরীর কে শিহরিত করছে।

আয়ান বোনের কক্ষে ডুকতেই দেখতে পেলো অনেক গুলো মেয়েদের হাসাহাসি। সে ডুকতেই সবাই কিছুটা চুপ হলো।

কিন্তু এতগুলো মেয়ের মাঝে অনিকার এক বান্ধবি বলে উঠল,”ভাইয়া অনিকাতো আপনার পাঁচ বছরের ছোট সেই বিয়ে করে নিচ্ছে কিন্তু আপনার সিঙ্গেল থাকার রহস্য কি?”

আয়ান এটিটিউড নিয়ে বলল,”আমি এইসব বিয়ে টিয়ে এখনই করতে চাই না।”

অনিকার ইচ্ছে করল ভাইকে একটু পচাতে কিন্তু বন্ধু মহলে আর কাজিন মহলের সামনে প্রিয় ভাইকে লজ্জা দিতে মন চাইলো না।
কিন্তু ভীরের মাঝে আয়নদের ছোট ফুপির মেয়ে বলে উঠল,”ওহ জানি!তুমি কেমন বিয়ে পাগলা।
আসলে কোনো মেয়েই তোমায় পাত্তা দেয়না এই ব্যাপার। ”
মুহুর্তেই ঘর জুড়ে হাসি শব্দ ছড়িয়ে পরল।

আয়ান তার ছোটা ফুপির মেয়ে তোহার দিকে রাগি চোখ করে তাকালো ।মেয়েটা তার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু সম্পর্ক দা আর মাছের ন্যায়।

“দেখ তুই আমাকে বললি আমাকে মেয়েরা পাত্তা দেয়না। আজকেই আমি দশটি মেয়ে পটাবে আগামী এক মাসের ভিতরে বিয়ে করে হানিমুনেও যাবো।”

আয়ান নিজের কথা শেষ করে রেগে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো এই পুচকি মেয়ে তাকে অপমান করার সাহস কোথায় পেলো ।
সেই হয়তো প্রথম ছেলে যে বোনের বিয়েতে বউ খোজার মিশনে নেমেছে।
তাকে নাকি তোহা বলে মেয়েরা পাত্তা দেয়না। ওই তাইতাই কে ও দেখিয়ে দিবে ও কি জিনিস।

আয়ান বেড়িয়ে যেতেই তোহার আত্মা স্যাত করে উঠল।এ ছেলে যদি গার্ল ফ্রেন্ড মিশনে তবে তার কি হবে।

_____________

অনিকার বিয়ের বর যাত্রী নিচে এসেগেছে। অনিকার কাজিন মহল আর বন্ধুমহল ছুটে গেছে নিচে।
অনিকাও নিজের লেহেঙ্গা টা উঁচু করে বেলকোনির দিকে ছুটলো।
ওর কাঙ্ক্ষিত পুরুষকে দেখে ওর চক্ষুদ্বয় শিতল হলো। এই মুহুর্তে মনে হলো ওর পাশে হাজারো প্রজাপতি উড়ছে। কি নিদারুণ ভালোলাগা কাজ করছে ওর মাঝে।

আমান কে হালকা মিষ্টি মুখ কড়িয়ে বাড়িতে প্রবেশ করালো সবাই। আমান বাড়িতে প্রবেশ করার সময় অনিকার বেলকোনির দিকে তাকালো এক বার। কিন্তু তার দেখার পূর্বেই অনিকা নিজেকে পর্দার আড়াল করে নিলো।
আমান যদিও কিছুটা হতাশ হলো কিন্তু পরক্ষনেই ওর ঠোটঁ জুড়ে মুচকি হাসি ছড়িয়ে পরল।

____________

অনিকার আর আমানের শুভ বিবাহ সমপন্ন হলো। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মিষ্টি মুখ করল।
একটু পরেই চলে এলো বিদায়ের সময়। অনিকার হাসি মুখটা কালো হতে লাগলো।ওর ভাবতেই অবাক লাগছে ওর এতো ভালোবাসার পরিবার ছেড়ে ওকে চলে যেতে হবে এবার।

শিমু ধীর পায়ে হেটে গিয়ে অনিকার কাধে হাত রাখে। নিজের কাধে প্রিয় ভাবীর হাত পেয়ে অনিকার ছলছল চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরে।
বোনের মতো ভাবীকে শক্ত করে আকড়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে।
লায়লা বেগম মেয়ের কান্না দেখে নিজের কান্না সমালাতে পারেনা। রাজিয়া বেগম গিয়ে ছেলে বউকে নিজের বুকে আগলে নেয়। আলতাফের শক্ত খোলসের ভিতর থেকে পিতৃসত্তা হাহাকার করে উঠে। সাফোয়ান আর আয়ান নিজ বোনের বিদায়ে কলিজা ছিড়ে যাওয়ার বেদনা অনুভব করে। কি নিদারুণ মর্মবেদনা।

মেয়ের, বোনের বিয়ে দেওয়াটা যতটা সুখের তার থেকে বেশি কয়েকগুন কষ্টের। এই দুঃখ শুধু মাত্র মেয়ের পরিবারই বুঝতে পারে। কিন্তু ওইযে সমাজ বলে একটা কথা আছে যার নিয়মে আমরা বাধা সেই নিয়মকে উপেক্ষা করার সাধ্যি কোন ভদ্র লোকের নেই। দীর্ঘ সময় কান্না কাটি চলল।অনিকা কিছুতেই তার পরিবার ছেড়ে যেতে চায়না।
কিন্তু ওইযে স্বামীর ঘরে যেতেই হবে।

সবাই অনেক কষ্টে অনিকাকে আমানের গাড়িতে তুলে দিলো। সাফোয়ান আমানের হাত ধরে বলল,”ভাই তুমি আমার কলিজা টুকড়া কে নিয়ে যাচ্ছো ওকে একটু দেখে রেখো।তোমার সাধ্য অনুযায়ী ওকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখো। ও ভুল করলে শাসন ও করো। ও আমার একমাত্র বোন আমি যেহেতু তোমাকে ওর হাতে তুলে দিলাম আমি আশা রাখছি ওকে তুমি আগলে রাখবে।”

আমান সাফোয়ানের হাতের ওপর নিজের হাত রেখে বলল,”ভাইয়া এখোন ও আমার স্ত্রী। আমি কখনোই চাইবোনা আমার স্ত্রী কখনো কোনো কষ্ট পাক।আপনি আমার ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন।
আমি আপনার বিশ্বাসের অমর্যাদা কখোনোই করবোনা।”

আয়ান এগিয়ে গিয়ে আমানের কলার ধরে বলল,”দোস্ত তোর কারনে যদি আমার বোন কষ্ট পায় তবে তোরে আমি যে কি করমু তুই নিজেও জানিস না।আর বোনের বড় ভাই হিসেবে বলছি আমাদের কলিজাটাকে একটু দেখে রাখিস।ওকে অবহেলা করিস না দোস্ত।”

“অবহেলা করলে না হয় তুই আমাকে শুলে চড়াস “।

শেষ বারের মতো বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল আমান।

অনিকা নিজের ভাইদের দিকে তাকিয়ে হাওমাও
করে কাদতে শুরু করল।আমান অনিকাকে নিজের বুকে আগলে নিলো।

চলবে,,,,,

প্রেম_পুকুর পর্ব-১১

0

#প্রেম_পুকুর
[১১]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

রোজ আকাশে সূর্য উঠতে দেখি আবার সন্ধ্যায় সূর্যকে অস্ত যেতেও দেখি। এই দেখাদেখির মাঝে আমাদের জীবন থেকে অনেকটা সময় চলে যায়।জীবনের এই উত্থান পতনের শেকলে আমরা সবাই জড়িয়ে।

দেখতে দেখতে অনিকা আর আমানের বিয়ের দিন চলে এসেছে। বেশ জমকালো আয়োজনে সাফোয়ানদের বাসার ছাদে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।
শিমু আর অনিকার কাজিনরা অনিকাকে গায়ে হলুদের জন্য প্রস্তুত করছিল।

মাঝেমধ্যে দু’একটা দুষ্টুমিও করছে অনিকার গাল বার বার রাঙা হয়ে যাচ্ছে তাতে ।
শিমু অনিকার গাল টেনে দিয় বলল,”ননদী তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আমান ভাই তোমাকে দেখল অজ্ঞানই হয়ে যাবে।
রুমে উপস্থিত সবাই খলখলিয়ে হেসে উঠল।
অনিকার মুখ আবারো লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল।
“হয়েছে আর লজ্জা পেয়োনা।”

__________

সাফোয়ানের বাসার ছাদ অনেকটা বড় হওয়ায় আয়োজন খুব সুন্দর ভাবেই করা হয়েছে।একপাশে খাবারে ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আরেক পাশে নাচ গান ও অনিকাকে বসানোর জায়গা করা হয়েছে।

সাফোয়ান তার স্ত্রীর দেখা সকাল থেকে এই পর্যন্ত পায়নি। বড় ভাই হিসেবে ব্যাস্ততা একটু বেশি বলতে গেলে।
এখোনো গোসল করা হয়নি ওর।

সব কিছু সুন্দর ভাবে হয়েছে কিনা আবারো দেখে নিলো। একমাত্র বোন বলে কথা কোন রকম ত্রুটি রাথা যাবেনা।

আয়ান রান্নার দিকটা সামলাচ্ছে। দাদী এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে তদারকি করছে সব ঠিক হচ্ছে কিনা। লায়লা বেগম রান্না কাজকর্ম অতিথি আপ্যায়ন সব মিলিয়ে সেও ভীষণ ব্যাস্ত।

দুপুরের দিকে অনিকাকে সম্পূর্ন প্রস্তুত করে শিমু নিজে তৌরি হতে চলে যায়।
মোটামাটি ননদের বিয়ে উপলক্ষে সে এসেছে সাত দিন আগে ঢাকা থেকে আর সাফোয়ান এসেছে বিয়ের তিন দিন আগে।
আসার পর থেকে সাফোয়ান ও ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে একমাত্র বোন বলে কথা দু ভাইয়ের নয়নের মণি।
শিমু নিজেদের রুমে এসেছে ফ্রেস হতে বিছানার ওপর একটি শপিং ব্যাগ দেখে অবাক হলো। সেটা খুলবে কি খুলবেনা সেটা ভাবতে ভাবতেই সাফোয়ান রুমে এসে পরল শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে। ঘর্মাক্ত শরীর শার্টের ওপরের দু’টো বোতাম খোলা ।
সাফোয়ান এসেই ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় বসে পররল।শিমু কে ইশারা করল এসি পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে। শিমু তাই করল।
তবুও সাফোয়ানের গরম না কমায় একটানে শার্ট খুলে ফেললো। শিমু তা দেখে দ্রুত কাবার্ড এর কাছে গেল পোশাক নিয়ে ওয়াশ রুমে যাবার জন্য।
“ওদিকে কি করছো তুমি?।”
“শাড়ি নিচ্ছি এখন ফ্রেস হওয়া প্রয়োজন অনিকা কে মেহেদী দেওয়া হচ্ছে মেহেদী শুকালে ওকে গোছলে নিয়ে যেতে হবে।সেই পর্যন্ত ভাবছি আমি ফ্রেস হয়ে নেই।”

সাফোয়ান এগিয়ে গিয়ে শিমুর পিছনে গিয়ে দারালো।শিমু কাবার্ড আটকিয়ে পিছনে ঘুরতে সাফোয়ানে প্রশস্ত বুকে ধাক্কা খেল।
শিমু চলে যেতে চাইলে সাফোয়ান দুইহাত দিয়ে কোমড় আকরে ধরল।
সাফোয়ান শিমুর থুতনিটা একটু উচু করে ধরল।
“আমার থেকে এতো পালাই পালাই কর কেন?”
শিমু ভ্রুজোড়া কুচকে নিল।
সাফোয়ান শিমুর কুচকে যাওয়া ভ্রু দ্বয়ের মাঝখানে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালো।

শিমু মনের জেগে ওঠা প্রশ্ন সাফোয়ান আর করতে দিলোনা।
নিজেই উত্তর দেবার ভঙ্গিতে বলল,”এই সব আপনি টাপনিতে আমার রোমান্টিক ফিল আসেনা। পরের বউ পরের বউ মনে হয়। নিজের বউকে তুমি বলতে ভীষণ শান্তি বুঝলা। ”

সাফোয়ান শিমুর কপালের দিকে আরেক বার এগুতে গেলেই শিমু সাফোয়ান কে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল,”দূরে থাকুন। ”

“বউর থেকে আমি আর দূরে থাকতে পারছিনা। ”

সাফোয়ানের অকপটে উত্তরে শিমু স্তব্ধ এ লোকটা এত নির্লজ্জ কেমন করে হলো?
সাফোয়ান বিছানার ওপর থেকে ব্যাগটা এনে শিমুর হাতে ধরিয়ে দিল।
“এটা পরে নাও অনেক খোজাখোজির পর এটা পছন্দ হয়েছে আমার। ”

শিমু সাফোয়ানের সাথে আর ভালো মন্দ কথা বলল না এই ভয়ে লোকটা যদি আবার ঠোটঁ কাটা কথা বলে ফেলো।
অতি দ্রুত শপিং ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
সাফোয়ান সে দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠল,”বউকে পটানোর থেকে মশারি টানানে সহজ।”

সাফোয়ানের নিজেরো ফ্রেস হওয়া প্রয়োজন তাই সে আয়ানের রুমের দিকে ফ্রেস হতে চলে গেল।

আয়ান একগাদা পান্জমী বিজানার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। কোনটা পরবে সেই নিয়ে সে ভীষণ কনফিউজড।
সাফোয়ান আয়ানের কর্মকাণ্ড দেকে বিরক্ত হয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল,”এগুলো কি করছিস তুই।”
আয়ান হতাশ হয়ে উত্তর দিল,”ভাইয়া আমি একটাও সিলেক্ট করতে পারছিনা। ”

সাফোয়ান আয়ানের পিঠে চাপর দিল জোড়ে করে।আয়ান ব্যাথায় আহ্ শব্দ করে উঠল।
“তুই দিন দিন মেয়েদের স্বভাবের হয়ে যাচ্ছিস এত ড্রেস কেও একসাথে নামায়। ইডিয়ট।”

“ভাইয়া কি করি বল মেয়েদের ইমপ্রেস করতে হবে। না হলে আমার আর বিয়েই হবেনা।”

“তুই কি বড় হবিনা।”

“আমি তো ছোট হয়েই রইলাম কয়েকদিনপর ছোট বোনের বাচ্চা মামা বলে ডাকবে।”

“হয়েছে আর আফসোস করিস না। আমি ওফ ওয়াইট রঙের একটা পান্জমী পরি আর তুই গাঢ় খয়েরি রঙের পান্জমী টা পরবি ওকে।”

“হুম এবার ঠিক আছে তাহলে তুমি দাড়াও আমি ফ্রেস হয়ে আসি।”

“দ্রত বের হবি কিন্তু ।”
______________

শিমু বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে বিছানায় শাড়িটা মেলে ধরল।ওফ হোয়াইট রঙের একটি শাড়ি আর মাঝে সুতোর কাজের হলুদ টকটকে ফুল।আর ব্লাউজটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ফুল হাতা দিয়ে বানানো হয়েছ।
শিমু সাফোয়ানের রুচির প্রশংশা না করে পারলোনা। ভীষণ সুন্দর একটা শাড়ি এটা।
সাফোয়ানের এই হুটহাট সারপ্রাইজ দেওয়ার অভ্যাস ভীষণ ভালো লাগে ওর।
চুল দ্রুত হেয়ার ড্রায়ার দ্বারা শুকিয়ে হাত খোপা করে নিলো। শাড়িটা সুন্দর করে পরা শেষে আয়নার সামনে নিজের ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
এর মাঝেই সাফোয়ান আবার রুমে প্রবেশ করল।

শিমু শাড়ি গায়ে পড়ে বোকার মতো দারিয়ে আছে কি করবে বুঝতে পারছেনা।
শুতি শাড়ী হওয়ার জন্য শিমু একা হাতে সেগুলো ঠিক করতে পারছেনা।
সাফোয়ান ধীর পায়ে হেটে গিয়ে শিমু পায়ের কাছে বসল।শিমু সাফোয়ান দেখে একটু দূরে সরে যেতে চাইলো।
সাফোয়ান চোখের ইশারায় চুপ করে দাঁড়াতে বলল।তারপর খুবই সপ্তপর্ণে নিজের স্ত্রীর কুচি গুলো ঠিক করতে লাগলো।তার পর উঠে গিয়ে আচঁলের কুচি টা করে দিয়ে সেপ্টি পিনের সাহায্য আটকে দিল।
শিমু কে ঘুরিয়ে দেখলো কয়েকবার তার পর ম্যাকাপ বক্স থেকে হালকা গোলাপি কালার লিপস্টিক নিজে শিমুকে ঠোঁঠে পড়িয়ে দিলো।
চোখে হালকা কাজল ও দিয়ে দিলো।
চুলের কাঠিটা খুলে চুলের বাধন মুক্ত করে দিল।পিঠ জুড়ে একঝাক কালো কেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরল।
সাফোয়ান সেগুলোকে সুন্দর করে আচড়ে খোলা রেখে দিল।
স্ত্রীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।
অতঃপর মাথা আচঁল দ্বারা ডেকে দিলো।

“তোমার এই সুন্দর কেশ দেখার অধিকার শুধু আমার আছে অন্য কারোনা।”
শিমু তার প্রিয় সুদর্শন পুরুষের কথা শুনে মুগ্ধ হলো।
তার প্রিয় পুরুষটা কত যত্নশীল আর দায়িত্ববান স্ত্রীর প্রতি তার কত নিখাদ ভালোবাসা।

এই পুরুষটা শরীর ছোয়ার আগে তার মন ছুয়ে দিয়েছে কজন পুরুষ পারে নিজের স্ত্রীকে এরকম করে ভালোবাসতে।
আজকে তার নিজকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে ।

স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসা শুধু শারীরিক চাহিদায় সিমাবদ্ধ থাকেনা। এটা দুজন মানুষের সার্বিক প্রয়োজনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু অনেক যুগলই এর প্রকৃত অর্থ বুজতে পারেনা যার জন্য সংসারে লেগে থাকে অশান্তি আর বিতৃষ্ণা।

শিমুর মনে হলো তার সুদর্শন পুরুষটাকে বেশি সুদর্শন লাগছে।তার মনে ভয় হচ্ছে যদি অন্য কেও তার পুরুষটির দিকে নজর দেয়।

“আপনি একটু নিচু হবেন সাফোয়ান”।
সাফোয়ান বউয়ের এক কথায় নিচু হয়ে দাড়ায়।

শিমু তিন কুল পড়ে সাফোয়ানকে ফু দেয়।

সাফোয়া শিমু কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,”তুমি আমাকে ফু দিচ্ছো কেন?”

“যেন কারো বদ নজর না লাগে।”

সাফোয়ান মুখের কোনে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,”সে তো আমার ওপর তোমার কবেই লেগে গেছে ।”

শিমু মেকি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু
সাফোয়ান যেতে দেয় না। নিজের স্ত্রী কে নিজের দিকে ঘুরায়।
প্রথম বারের মতো নিজ স্ত্রীর ঠোটঁ উষ্ণ স্পর্শ করায় কেপেঁ উঠে শিমুর সমস্ত শরীর স্বামীর থেকে প্রথম এমন উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে শিমু মূর্ছা যায় লজ্জায়।
আর মাথা তুলে তাকায় না।

নিচ থেকে রাজিয়া বেগম শিমুকে ডাকছিল। শিমু আর এক মুহুর্ত দেরি করে না নিচের দিকে ছুট লাগায়।
সাফোয়ান শিমুর লজ্জা রাঙা মুখ দেখে অমায়িক একটা হাসি দেয়।

চলবে,,,,